রমযানের বিষয়ভিত্তিক হাদিস : শিক্ষা ও মাসায়েল (৩য় পর্ব)
শাদ্দাদ ইব্ন আউস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে
বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার হাত ধরে ‘বাকি’ নামক
স্থানে এক ব্যক্তির নিকট আগমন করেন, যে শিঙ্গা লাগাচ্ছিল, তখন আঠারো রমযান। তিনি বললেন:
«أَفْطَرَ الحَاجِمُ والمحْجُومُ» رواه أبو داود وصححه أحمد والبخاري.
“যে শিঙ্গা লাগায় আর যার লাগানো হয় উভয় ইফতার করল”।[1]
সাওবান[2], রাফে ইব্ন খাদিজ[3] ও একদল সাহাবি থেকে অনুরূপ বর্ণিত আছে, এ জন্য একদল আলেম এ হাদিসকে মুতাওয়াতির বলেছেন।
ইব্ন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, “নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইহরাম অবস্থায় শিঙ্গা লাগিয়েছেন, তিনি সওম অবস্থায় শিঙ্গা লাগিয়েছেন”।
আবু দাউদের এক বর্ণনা আছে: “তিনি সওম অবস্থায় শিঙ্গা লাগিয়েছেন”।[4]
শু‘বা
রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: “আমি সাবেত আল-বুনানিকে বলতে শুনেছি, তিনি
মালিক ইব্ন আনাসকে জিজ্ঞেস করেছিলেন: আপনারা কি রোযাদারের জন্য শিঙ্গা
অপছন্দ করতেন” তিনি বললেন: না, তবে দুর্বলতার কারণে”।[5]
আবু দাউদের এক বর্ণনায় আনাস থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন: “দুর্বলতার কারণে আমরা রোযাদারের জন্য শিঙ্গা অপছন্দ করতাম”।[6]
শিক্ষা ও মাসায়েল:
এক. একাধিক হাদিস প্রমাণ করে যে, শিঙ্গা উভয়ের সওম ভঙ্গ করে: যে লাগায় ও যার লাগানো হয়। আবার
এর বিপরীতে অন্যান্য হাদিস রয়েছে, যা প্রমাণ করে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম সওম অবস্থায় শিঙ্গা লাগিয়েছেন। তাই শিঙ্গার ব্যাপারে
আলেমদের ইখতিলাফ সৃষ্টি হয়েছে। জমহুর আলেম বলেন রোযাদারের জন্য শিঙ্গা লাগানো বৈধ। নিষেধাজ্ঞার হাদিসগুলো বৈধতার হাদিস দ্বারা রহিত ও মানসুখ।[7]
ইমাম আহমদের মাযহাব হচ্ছে, শিঙ্গা সওম ভঙ্গকারী। শায়খুল ইসলাম ও তার শিষ্য ইব্নুল কাইয়্যেম এ মত গ্রহণ করেছেন।[8]
সৌদি আরবের লাজনায়ে দায়েমা অনুরূপ ফতোয়া প্রদান করেছে।[9]
সৌদি আরবের অধিকাংশ আলেম এটাই গ্রহণ করেছেন। অতএব রোযাদারের দিনে শিঙ্গা পরিহার করাই সতর্কতা, এতে কোন ইখতিলাফ থাকে না।
দুই. আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহুর
হাদিস প্রমাণ করে যে, শিঙ্গা রোযা দুর্বল করে, তাই নিষেধ করা হয়েছে। এটা
শরিয়তের এক বৈশিষ্ট্য, সে তার অনুসারীদের থেকে কষ্ট দূরীভূত করে।
তিন.
শিঙ্গা শরীর দুর্বল করে, তাই সওম ভঙ্গকারী। যে শিঙ্গা লাগায় তার সওম
ভঙ্গের কারণ হচ্ছে, রক্ত চোষণের ফলে তার মুখে রক্ত প্রবেশ করার সমূহ
সম্ভাবনা থাকে। হ্যাঁ যদি সে মুখে না চোষে, আধুনিক যন্ত্র দ্বারা টেনে বের
করে, তাহলে তার সওম ভঙ্গ হবে না।[10]
চার. অপারেশন দ্বারা বিষাক্ত রক্ত বের করলে সাওম পালনকারীর সওম ভেঙ্গে যাবে, তবে ডাক্তারের সওম ভঙ্গ হবে না।[11]
পাঁচ.
মাথা হালকা করা বা কোন কারণে স্বেচ্ছায় নাক থেকে রক্ত বের করলে সওম
ভেঙ্গে যাবে, অনিচ্ছায় অধিক রক্ত বের হলেও সওম ভঙ্গ হবে না।[12] রক্ত বের হওয়ার কারণে যদি শরীর দুর্বল হয় ও রোযা ভাঙ্গার প্রয়োজন হয়, তাহলে তার অনুমতি রয়েছে, কারণ সে অসুস্থ।
ছয়.
রক্ত পরীক্ষা করলে সওম ভঙ্গ হবে না, হ্যাঁ ইখতিলাফ এড়িয়ে থাকার জন্য এসব
কাজ রাতে করা উত্তম। তবে রক্ত বেশী বের হলে সওম ভেঙ্গে যাবে, তাই রাত
ব্যতীত এসব কাজ না করা উত্তম। অসুখের জন্য প্রয়োজন হলে করবে, তবে সওম ভেঙ্গে যাবে, পরে তা কাযা করবে।[13]
সাত.
অনিচ্ছাকৃতভাবে রোযাদারের শরীর থেকে দুর্ঘটনা অথবা যখমের কারণে অধিক রক্ত
বের হলে, সওম নষ্ট হবে না। যদি দুর্বলতার কারণে সওম ভাঙ্গতে বাধ্য হয়,
তাহলে সে অসুস্থ ব্যক্তির ন্যায় সওম ভাঙ্গবে ও কাযা করবে।[14]
আট.
দাঁত বের করার কারণে সওম ভাঙ্গবে না, যদিও বেশী রক্ত বের হয়, কারণ সে
রক্ত বের করার জন্য তা বের করেনি, রক্ত তার ইচ্ছা ব্যতীত বের হয়েছে,
কিন্তু সে রক্ত গিলবে না, যদি ইচ্ছাকৃত রক্ত গিলে ফেলে, সওম ভেঙ্গে যাবে।[15]
নয়.
ডাক্তারি যন্ত্র দ্বারা কিডনি পরিষ্কার করে সে রক্ত বিভিন্ন কেমিক্যাল
যেমন সুগার, লবন ইত্যাদি মিশিয়ে পুনরায় তা শরীরে প্রতিস্থাপন করলে সওম
ভেঙ্গে যাবে।[16]
দশ.
শিঙ্গার ন্যায় রক্ত দান করলে সওম ভেঙ্গে যাবে, তাই রাত ব্যতীত এ কাজ করবে
না, তবে কাউকে বাঁচানোর জন্য রক্ত দেয়ার প্রয়োজন হলে দিবে, রোযা ভঙ্গ
করবে ও পরে কাযা করবে।[17]
এগারো. খাদ্য জাতীয় ইনজেকশনের ফলে সওম ভেঙ্গে যাবে।[18]
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«الصِّيَامُ جُنَّة» رواه الشيخان.
«الصِّيَامُ جُنَّةٌ وحِصْنٌ حَصِينٌ من النَّار».
জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«إنَّ الصِّيامَ جُنَّـةٌ يَستَجِنُّ بها العَبدُ من النَّارِ».
উসমান ইব্ন আবুল আস সাকাফি রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি:
«الصِّيامُ جُنَّـةٌ مِنَ النَّارِ كَجُنَّةِ أَحَدِكُم من القِتَال».
আবু উবাইদাহ ইবনুল জাররাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি:
«الصَّومُ جُنَّـةٌ ما لم يَخْرِقْهَا».
الجُنَّةُ শব্দের অর্থ: সুরক্ষা ও পর্দা। অর্থাৎ সিয়াম জাহান্নামের আগুন থেকে সুরক্ষা ও পর্দা স্বরূপ।[24]
শিক্ষা ও মাসায়েল:
এক. সিয়াম কু-প্রবৃত্তিকে বশীভূত করে, যে কু-প্রবৃত্তি ব্যক্তিকে জাহান্নামে নিয়ে যায়। এ
জন্য সওম জাহান্নামের ঢাল স্বরূপ। ইরাকি বলেন: “সওম জাহান্নামের ঢাল, কারণ
সে প্রবৃত্ত থেকে বিরত রাখে, আর জাহান্নাম প্রবৃত্তি দ্বারা আবৃত”।[25]
দুই.
সওম ফযিলত পূর্ণ, মুসলিমদের উচিত অধিক পরিমাণ নফল সওম পালন করা, যদি সে
তার ক্ষমতা রাখে ও তার চেয়ে উত্তম আমলের প্রতিবন্ধক না হয়, যেমন জিহাদ
ইত্যাদি।
তিন.
সে সওম জাহান্নামের ঢাল স্বরূপ, যে সওমে সওয়াব হ্রাসকারী বা সওম
বিনষ্টকারী কথা বা কর্ম সংঘটিত হয়নি, যেমন গীবত, নামীমা, মিথ্যা ও গালি।
কারণ আবু উবাইদার বর্ণনা এসেছে: “সওম ঢাল, যতক্ষণ না সে তা ভেঙ্গে ফেলে”। সওম ভঙ্গ হয়
হারাম কর্ম দ্বারা, অতএব সওম পালনকারীর উচিত তার সওমকে সওয়াব বিনষ্টকারী
অথবা সওয়াব হ্রাসকারী কর্মকাণ্ড থেকে হিফজত করা, যেন তার সওম তার জন্য
জাহান্নামের ঢাল হয়।
চার. সওমের উদ্দেশ্য নফসকে পবিত্র করা ও অন্তর সংশোধন করা, শুধু পানাহার থেকে বিরত থাকা নয়।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿أُحِلَّ لَكُمۡ لَيۡلَةَ ٱلصِّيَامِ ٱلرَّفَثُ إِلَىٰ نِسَآئِكُمۡۚ﴾ [البقرة: 187]
﴿فَٱلۡـَٰٔنَ
بَٰشِرُوهُنَّ وَٱبۡتَغُواْ مَا كَتَبَ ٱللَّهُ لَكُمۡۚ وَكُلُواْ
وَٱشۡرَبُواْ حَتَّىٰ يَتَبَيَّنَ لَكُمُ ٱلۡخَيۡطُ ٱلۡأَبۡيَضُ مِنَ
ٱلۡخَيۡطِ ٱلۡأَسۡوَدِ مِنَ ٱلۡفَجۡرِۖ ﴾ [البقرة: 187]
“অতএব, এখন তোমরা তাদের সাথে মিলিত হও এবং আল্লাহ তোমাদের জন্য যা লিখে দিয়েছেন, তা অনুসন্ধান কর। আর আহার কর ও পান কর যতক্ষণ না ফজরের সাদা রেখা কাল রেখা থেকে স্পষ্ট হয়”।[27]
আয়েশা
ও উম্মে সালামা রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত: “রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রভাত কখনো হত এমতাবস্থায় যে,
স্ত্রীগমনের কারণে তিনি নাপাক থাকতেন। অতঃপর গোসল করতেন ও সওম রাখতেন”।[28]
মুসলিমের
এক হাদিসে উম্মে সালামা থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন: “রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বপ্ন দোষের কারণে নয়, বরং স্ত্রীগমনের
কারণে নাপাক অবস্থায় প্রভাত করতেন, অতঃপর সওম পালন করতেন, কাযা করতেন না”।[29]
মুসলিমের
অপর বর্ণনায় আছে: আবু বকর ইব্ন আব্দুর রহমান রহ. বলেন: “আমি আবু
হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহুকে ঘটনা বলতে শুনেছি, তিনি তার ঘটনায় বলেন:
নাপাক অবস্থায় যার ভোর হয়, সে সওম রাখবে না। আমি এ ঘটনা আবু বকরের পিতা
আব্দুর রহমান ইব্ন হারেসকে বললাম, তিনি অস্বীকার করলেন। আব্দুর রহমান
রওয়ানা করলেন, আমি তার সাথী হলাম, অবশেষে আমরা আয়েশা ও উম্মে সালামার
নিকট এসে পৌঁছলাম। আব্দুর রহমান তাদেরকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলেন: তিনি
বলেন: তারা উভয়ে বলেছেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বপ্ন দোষ
ব্যতীত নাপাক অবস্থায় ভোর করতেন, অতঃপর সওম রাখতেন। তিনি বলেন: আমরা রওনা
করে মারওয়ানের নিকট পৌঁছলাম, আব্দুর রহমান তাকে ঘটনা বললেন: মারওয়ান
বললেন: আমি তোমাকে বলছি তুমি অবশ্যই আবু হুরায়রার কাছে গিয়ে তার কথার
প্রতিবাদ কর। তিনি বলেন: আমরা আবু হুরায়রার নিকট গেলাম, আবু বকর এসব
ঘটনায় উপস্থিত ছিল। তিনি বলেন: আব্দুর রহমান তাকে এ কথা বললেন। অতঃপর আবু হুরায়রা বললেন: তারা
উভয়ে তোমাকে এ কথা বলেছে? তিনি বললেন: হ্যাঁ। আবু হুরায়রা বললেন: তারা
আমার চেয়ে বেশী জানেন। অতঃপর আবু হুরায়রা এ বিষয়ে যা বলতেন, ফযল ইব্ন
আব্বাসের বরাতে বলতেন। আবু হুরায়রা বলতেন: আমি ফযল ইব্ন আব্বাস থেকে শুনেছি, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শুনি নি।
তিনি বলেন: আবু হুরায়রা তার পূর্বের কথা থেকে ফিরে যান। আমি আব্দুল
মালেককে বললাম: তারা কি রমযানের ব্যাপারে বলেছেন? তিনি বললেন: হ্যাঁ, তিনি
স্বপ্ন দোষ ব্যতীত নাপাক অবস্থায় ভোর করতেন, অতঃপর সওম পালন করতেন”।[30]
আয়েশা
রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত: “এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামের নিকট ফতোয়া তলবের জন্য এসেছে, তিনি দরজার আড়াল থেকে শুনতে
ছিলেন, সে বলল: হে আল্লাহর রাসূল, আমার নাপাক অবস্থায় সালাতের সময় হয়,
আমি কি সওম রাখব? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন:
আমারও নাপাক অবস্থায় সালাতের সময় হয়, অতঃপর আমি সওম রাখি। সে বলল: হে
আল্লাহর রাসূল, আপনি আমাদের মত নয়, আল্লাহ আপনার অগ্র-পশ্চাতের সকল পাপ
মোচন করে দিয়েছেন। তিনি বললেন: আল্লাহর শপথ আমি তোমাদের মধ্যে অধিক আল্লাহ
ভীরু এবং তাকওয়া সম্পর্কে তোমাদের চাইতে অধিক জ্ঞাত”।[31]
শিক্ষা ও মাসায়েল:
এক.
রমযানের রাতে স্ত্রীগমন বৈধ, তা থেকে পরহেয করা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামের আদর্শের বিপরীত, তবে শেষ দশকে ইতিকাফকারী ব্যতীত।
দুই.
রমযানের রাতে সহবাস অথবা স্বপ্ন দোষের পর ফজর উদিত হওয়ার পরবর্তী সময়
পর্যন্ত যে গোসল বিলম্ব করল, সে সওম পালন করবে, তার ওপর কিছু আবশ্যক হবে
না। এ ব্যাপারে সকল আলেম একমত।[32]
তিন.
এ হাদিসে উম্মুল মুমিনীনদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ হয়, যারা নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামের ঘর ও তার পরিবার সংশ্লিষ্ট বিশেষ জ্ঞানের ধারক ও
প্রচারকারী ছিলেন।
চার. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পরিবার সংক্রান্ত জ্ঞানের ব্যাপারে উম্মুল মুমিনীনদের কথা অন্য সবার ঊর্ধ্বে।
চার. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পরিবার সংক্রান্ত জ্ঞানের ব্যাপারে উম্মুল মুমিনীনদের কথা অন্য সবার ঊর্ধ্বে।
পাঁচ. ফরয গোসল ভোর পর্যন্ত দেরি করা শুধু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বৈশিষ্ট্য নয়, বরং তা উম্মতের সবার জন্য প্রযোজ্য।
ছয়.
উম্মে সালামার বাণী: “নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সহবাসের কারণে
নাপাক অবস্থায় ভোর করতেন, স্বপ্ন দোষের কারণে নয়”। এখানে দু’টি শিক্ষা:
(১). নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বৈধতা বর্ণনা করার জন্য রমযানে সহবাস করতেন ও ফজর উদয় পর্যন্ত গোসল বিলম্ব করতেন।
(২).
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সহবাসের কারণে নাপাক অবস্থায় ভোর
করতেন, স্বপ্ন দোষের কারণে নয়, কারণ স্বপ্ন দোষ শয়তানের পক্ষ থেকে, তিনি
ছিলেন শয়তান থেকে নিরাপদ।[33]
সাত. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অধিক আল্লাহ ভীরু, অধিক মুত্তাকী ও তাকওয়া সম্পর্কে অধিক জ্ঞানের অধিকারী ছিলেন।
আট.
এসব হাদিস থেকে বুঝা যায়, নারী যদি মাসিক ঋতু বা নিফাস থেকে ফজরের পূর্বে
পবিত্র হয়, অতঃপর ফজর উদয় পর্যন্ত গোসল বিলম্ব করে, তার সওম বিশুদ্ধ,
ইচ্ছা বা অনিচ্ছা বা যে কারণে গোসল বিলম্ব করুক, যেমন নাপাক ব্যক্তি।[34]
নয়.
এসব হাদিসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদর্শ অনুসরণে উদ্বুদ্ধ
করা হয়েছে, নিন্দা জানানো হয়েছে চরম পন্থা, বৈধ বস্তু ত্যাগ করা ও
লৌকিকতাপূর্ণ প্রশ্নকে।[35]
দশ. রমযান বা গায়রে রমযান সর্বদা ফজরের পর নাপাক, হায়েস ও নেফাস থেকে পবিত্রতা অর্জনকারীদের সওম বিশুদ্ধ। এ ক্ষেত্রে ওয়াজিব অথবা মানত অথবা কাযা অথবা নফল সওমে কোন পার্থক্য নেই।
এগারো.
কোন বিষয়ে দ্বিধা বা বিরোধের সৃষ্টি হলে জ্ঞানীদের শরণাপন্ন হওয়া জরুরী,
যেমন আবু হুরায়রা বলেছেন: “তারা বেশী জানে” অর্থাৎ আয়েশা ও উম্মে সালামা
রাদিয়াল্লাহু আনহুমা। কারণ তারা পারিবারিক ব্যাপারে অন্যদের চেয়ে অধিক জ্ঞাত।
বারো. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নত বিরোধের সময় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ও অকাট্য দলিল।
তেরো. ভুল হলে ভুল স্বীকার করা ও ইলমের ক্ষেত্রে আমানতদারী রক্ষা করা জরুরী, যেমন আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু স্বীকার করেছেন তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শ্রবণ করেন নি, বরং অন্য কারো থেকে শ্রবণ করেছেন।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿وَعَهِدۡنَآ
إِلَىٰٓ إِبۡرَٰهِۧمَ وَإِسۡمَٰعِيلَ أَن طَهِّرَا بَيۡتِيَ
لِلطَّآئِفِينَ وَٱلۡعَٰكِفِينَ وَٱلرُّكَّعِ ٱلسُّجُودِ ١٢٥﴾ [البقرة: 125]
“আর আমি ইবরাহীম ও ইসমাঈলকে দায়িত্ব দিয়েছিলাম যে, ‘তোমরা আমার গৃহকে তাওয়াফকারী, ‘ইতিকাফকারী ও রুকূকারী-সিজদাকারীদের জন্য পবিত্র কর”।[36]
অন্যত্র বলেন:
﴿وَلَا
تُبَٰشِرُوهُنَّ وَأَنتُمۡ عَٰكِفُونَ فِي ٱلۡمَسَٰجِدِۗ تِلۡكَ حُدُودُ
ٱللَّهِ فَلَا تَقۡرَبُوهَاۗ كَذَٰلِكَ يُبَيِّنُ ٱللَّهُ ءَايَٰتِهِۦ
لِلنَّاسِ لَعَلَّهُمۡ يَتَّقُونَ ١٨٧﴾ [البقرة: 187]
আব্দুল্লাহ
ইব্ন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: “রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযানের শেষ দশক ইতিকাফ করতেন”।[38]
আয়েশা
রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
মৃত্যু পর্যন্ত রমযানের শেষ দশক ইতিকাফ করতেন, অতঃপর তার স্ত্রীগণ তার
পরবর্তীতে ইতিকাফ করেছেন”।[39]
শিক্ষা ও মাসায়েল:
এক. ইতিকাফ পূর্বের উম্মতে বিদ্যমান ছিল।
দুই. ইতিকাফ সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ। ইতিকাফ মহান ইবাদত, বান্দা এর মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বদা ইতিকাফ করেছেন”।
ইমাম
যুহরি রহ. বলেছেন: মুসলিমদের দেখে আশ্চর্য লাগে, তারা ইতিকাফ ত্যাগ করেছে,
অথচ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনাতে আসার পর থেকে মৃত্যু
পর্যন্ত কখনো ইতিকাফ ত্যাগ করেন নি”।[40]
আতা
আল-খুরাসানি রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: “আগে বলা হত: ইতিকাফকারীর উদাহরণ
সে বান্দার মত, যে নিজেকে আল্লাহর সামনে পেশ করে বলছে: হে আল্লাহ যতক্ষণ
না তুমি ক্ষমা কর, আমি তোমার দরবার ত্যাগ করব না, হে আমার রব, যতক্ষণ না
তুমি আমাকে ক্ষমা কর, আমি তোমার দরবার ত্যাগ করব না”।[41]
তিন.
মসজিদ ব্যতীত ইতিকাফ শুদ্ধ নয়, পাঞ্জেগানা মসজিদে ইতিকাফ শুদ্ধ। জুমার
জন্য মসজিদ থেকে বের হলে ইতিকাফ ভাঙ্গবে না, যদিও জুমআর সালাতে যাওয়ার
জন্য তাড়াতাড়ি মসজিদ থেকে বের হোক না কেন।
চার.
যার ওপর জামাতে উপস্থিত হওয়া ওয়াজিব নয়, সে এমন মসজিদে ইতিকাফ করতে
পারবে, যেখানে জামাত হয় না, যেমন পরিত্যক্ত মসজিদ, বাজারের মসজিদ ও কৃষি
জমির মসজিদ ইত্যাদি।[42]
পাঁচ.
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযানের শেষ দশক ইতিকাফ করতেন,
অনুরূপ তার স্ত্রীগণ ইতিকাফ করতেন। ইতিকাফের মূল উদ্দেশ্য লাইলাতুল কদর
তালাশ করা।
ছয়.
ইতিকাফ অবস্থায় স্ত্রীগমন বৈধ নয়, ইতিকাফ অবস্থায় স্ত্রীগমনের ফলে
ইতিকাফ নষ্ট হবে, তবে তার ওপর কাফফারা বা কাযা ওয়াজিব হবে না। ইব্ন
আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, “ইতিকাফকারী সহবাস করলে তার ইতিকাফ ভেঙ্গে যাবে, পুনরায় সে ইতিকাফ আরম্ভ করবে”।[43]
সাত. ইতিকাফকারী ভুলক্রমে সহবাস করলে তার ইতিকাফ ভঙ্গ হবে না, যেমন ভঙ্গ হবে না তার সিয়াম।
আবু
সালামা ইব্ন আব্দুর রহমান থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: “আমরা লাইলাতুল কদর
সম্পর্কে আলোচনা করলাম, অতঃপর আমি আবু সায়িদ খুদরি রাদিয়াল্লাহু আনহুর
নিকট যাই, তিনি আমার একান্ত বন্ধু ছিলেন। আমি তাকে বললাম: চলুন না খেজুর
বাগানে যাই? তিনি বের হলেন, গায়ে উলের কালো চাদর। আমি তাকে বললাম: আপনি কি
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে লাইলাতুল কদর সম্পর্কে
বলতে শুনেছেন? তিনি বললেন: হ্যাঁ,। আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামের সাথে রমযানের মধ্য দশক ইতিকাফ করলাম। তিনি একুশের সকালে বের
হয়ে আমাদেরকে খুতবা দিলেন। তিনি বললেন:
إني أُرِيتُ لَيلَةَ القَدرِ، وإنِّي نَسِيتُها أو أُنْسِيتُها، فَالتَمِسُوهَا في العَشْرِ الأَوَاخِرِ من كُلِّ وِتْرٍ، وإنِّي أُرِيتُ أَنِّي أَسْجُدُ في ماءٍ وطِين فَمن كَانَ اعْتَكَفَ مع رَسُولِ الله ﷺ فَليَرجِع،
“আমি
লাইলাতুল কদর দেখেছি, কিন্তু আমি তা ভুলে গেছি অথবা আমাকে তা ভুলিয়ে
দেয়া হয়েছে। অতএব তোমরা তা শেষ দশকের প্রত্যেক বেজোড় রাতে তালাশ কর।
আমাকে দেখানো হয়েছে আমি মাটি ও পানিতে সেজদা করছি, যে রাসূলের সাথে ইতিকাফ
করেছিল সে যেন ফিরে আসে”। তিনি বলেন:
আমরা ফিরে গেলাম, কিন্তু আসমানে কোন মেঘ দেখিনি। তিনি বলেন: মেঘ আসল ও
আমাদের উপর বর্ষিত হল, মসজিদের ছাদ টপকে বৃষ্টির পানি পড়ল, যা ছিল খেজুর
পাতার। সালাত কায়েম হল, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখলাম পানি ও মাটিতে সেজদা করছেন। তিনি বলেন: আমি তার কপালে পর্যন্ত মাটির দাগ দেখেছি”।[44]
আবু সায়িদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে
বর্ণিত অপর বর্ণনায় আছে, তিনি বলেন: “আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে মধ্যম দশক ইতিকাফ করেছি, যখন বিশ রমযানের সকাল
হল আমরা আমাদের বিছানা-পত্র স্থানান্তর করলাম, অতঃপর রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নিকট আসলেন, তিনি বললেন: যে ইতিকাফ
করছিল সে যেন তার ইতিকাফে ফিরে যায়, কারণ আমি আজ রাতে (লাইলাতুল কদর)
দেখেছি, আমি দেখেছি আমি পানি ও মাটিতে সেজদা করছি। যখন তিনি তার ইতিকাফে
ফিরে যান, বলেন: আসমান অশান্ত হল, ফলে আমাদের ওপর বৃষ্টি বর্ষিত হল। সে
সত্ত্বার কসম, যে তাকে সত্যসহ প্রেরণ করেছে, সেদিন শেষে আসমান অশান্ত
হয়েছিল, তখন মসজিদ ছিল চালাঘর ও মাচার তৈরি, আমি তার নাক ও নাকের ডগায়
পানি ও মাটির আলামত দেখেছি”।[45]
অপর বর্ণনায় আছে, আবু সায়িদ খুদরি রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন:
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযানের মধ্যম দশক ইতিকাফ
করতেন, যখন তিনি প্রস্থানরত বিশের রাতে সন্ধ্যা করে একুশের রাতে পদার্পন
করতেন, নিজ ঘরে ফিরে যেতেন। যে তার সাথে ইতিকাফ করত সেও ফিরে যেত। তিনি কোন
এক রমযান মাসে যে রাতে সাধারণত ইতিকাফ থেকে ফিরে যেতেন সে রাতে ফিরে না
গিয়ে কিয়াম (অবস্থান) করলেন, অতঃপর খুতবা প্রদান করলেন, আল্লাহর যা ইচ্ছা
ছিল তাই তিনি লোকদের নির্দেশ করলেন। অতঃপর বললেন:
«كُنْتُ
أُجَاوِرُ هَذِهِ العَشْرَ، ثُمَّ قَدْ بَدَا لي أَنْ أُجَاوِرَ هَذِهِ
العَشْرَ الأَوَاخِرَ، فَمَنْ كَانَ اعْتَكَفَ مَعِيَ فَلْيَثْبُتْ في
مُعْتَكَفِهِ، وَقَدْ أُريتُ هَذَهَ الَّليْلَةَ ثُمَّ أُنْسيتُهَا
فَابْتَغُوهَا في العَشْرِ الأَوَاخِرِ، وابْتَغُوهَا في كُلِّ وِتْرٍ،
وَقَدْ رَأَيْتُني أَسْجُدُ في مَاءٍ وَطِينٍ»
“আমি
এ দশক ইতিকাফ করতাম, অতঃপর আমার নিকট স্পষ্ট হল যে আমি ইতিকাফ করব এ শেষ
দশক, অতএব যে আমার সাথে ইতিকাফ করেছে, সে যেন তার ইতিকাফে বহাল থাকে। আমাকে
এ রাত দেখানো হয়েছিল, অতঃপর তা ভুলিয়ে দেয়া হয়েছে, তোমরা তা তালাশ কর
শেষ দশকে। আর তা তালাশ কর প্রত্যেক বেজোড় রাতে। আমি দেখেছি, আমি পানি ও মাটিতে সেজদা করছি”। সে রাতে আসমান গর্জন করে সৃষ্টি বর্ষণ করল। একুশের রাতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সালাতের জায়গায় মসজিদ ফোটা ফোটা বৃষ্টির পানি ফেলল। আমার দু’চোখ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখেছে, আমি তার দিকে
দৃষ্টি দিলাম, তিনি সকালের সালাত থেকে ফিরলেন, তখন তার চেহারা মাটি ও পানি
ভর্তি ছিল”।[46]
শিক্ষা ও মাসায়েল[47]:
এক. ইলম অন্বেষণের জন্য সফর করা এবং উপযুক্ত স্থান ও সময়ে আলেমদের জিজ্ঞাসা করা।
দুই. শিক্ষকদের কর্তব্য ছাত্রদের সুযোগ দেয়া, যেন তারা সুন্দরভাবে প্রশ্ন উত্থাপন করতে পারে।
তিন.
মুসল্লির চেহারায় সেজদার সময় যে ধুলা-মাটি লাগে তা দূর করা উচিত নয়,
তবে তা যদি কষ্টের কারণ হয়, সালাতের একাগ্রতা নষ্ট করে, তাহলে মুছতে
সমস্যা নেই।[48] মাটিতে সেজদা দেয়া ও সালাত আদায় করা বৈধ।[49]
চার.
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানুষ, তিনি মানুষের ন্যায় ভুলে
যান, তবে আল্লাহ তাকে যা পৌঁছানোর নির্দেশ দিয়েছেন তা ব্যতীত, কারণ সে
ক্ষেত্রে আল্লাহ তাকে ভুল থেকে হিফাজত করেন। নবীদের স্বপ্ন সত্য, তারা
যেভাবে দেখেন সেভাবে তা ঘটে।
পাঁচ.
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের লাইলাতুল কদর দেখার অর্থ তিনি তা
জেনেছেন, অথবা তার আলামত দেখেছেন। আবু সায়িদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে ইমাম বুখারি বর্ণনা করেন: জিবরিল তাকে সংবাদ দিয়েছেন যে, লাইলাতুল কদর শেষ দশকে।[50]
ছয়. আলেম যদি কোন বিষয় জানার পর ভুলে যায়, তাহলে সাথীদের বলে দেয়া ও তা স্বীকার করা।[51]
সাত. এ হাদিস প্রমাণ করে যে, রমযানে ইতিকাফ করা মোস্তাহাব। তবে প্রথম দশক থেকে মধ্যম দশক উত্তম, আবার মধ্যম দশক থেকে শেষ দশক উত্তম।[52]
আট. জনসাধারণের উদ্দেশ্যে ইমামের খুতবা দেয়া ও তাদের জরুরী বিষয় বর্ণনা করা বৈধ।
নয়. এ হাদিস প্রমাণ করে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মতকে তাদের কল্যাণের বস্তু জানানোর জন্য উদগ্রীব ছিলেন। লাইলাতুল কদর তালাশে তিনি ও তার সাহাবিগণ সচেষ্ট থাকতেন।
দশ.
রমযানের শেষ দশকে ইতিকাফ করার ফযিলত, বরং সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ, যেহেতু
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো তা ত্যাগ করেননি।
এগারো. লাইলাতুল কদর শেষ দশকে, বিশেষ করে বেজোড় রাতগুলোতে, আরো বিশেষ একুশের রাত।
বারো. সেজদায় কপাল ও নাক স্থির রাখা ওয়াজিব, যেরূপ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রেখেছেন।
তেরো.
এ হাদিস প্রমাণ করে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে
মুসলিমগণ দুনিয়ার সামান্য বস্তু ও সাধারণ জীবন-যাপনে অভ্যস্ত ছিলেন। তাদের
মসজিদ ছিল খেজুর পাতার, যখন বৃষ্টি হত, সালাতে থাকাবস্থায় তাদের ওপর
বৃষ্টির পানি ঝরে পড়ত।
চৌদ্দ. একুশে রমযানের ফযিলত, এটা সম্ভাব্য লাইলাতুল কদরের রাত, অতএব এ রাতে অবহেলা করা মুসলিমদের উচিত নয়।
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন (রমযানের) শেষ দশক উপস্থিত হত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম লুঙ্গি শক্ত করে বাঁধতেন, রাত্রি জাগরণ করতেন ও পরিবারের সদস্যদের জাগিয়ে তুলতেন”।[53]
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযানের শেষ দশকে এমন মুজাহাদা করতেন, যা তিনি অন্য সময় করতেন না।[54]
আলি রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযানের শেষ দশকে নিজ পরিবারকে জাগ্রত করতেন।[55]
হাদিসটি ইমাম আহমদ রাহিমাহুল্লাহ এভাবে বর্ণনা করেন: “রমযানের শেষ দশক শুরু হলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পরিবারে লোকদের জাগাতেন ও লুঙ্গি উঁচু করে নিতেন। আবু বকর ইব্ন আইইয়াশকে জিজ্ঞেস করা হল, লুঙ্গি উঁচু করে পরার অর্থ কী? তিনি বললেন : স্ত্রীদের সঙ্গ ত্যাগ।[56]
শিক্ষা ও মাসায়েল:
এক.
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইবাদতের জন্য অধিক পরিশ্রম করতেন,
অথচ আল্লাহ তার পূর্বাপর সকল গুনাহ মাফ করে দিয়েছেন, তবে অন্যান্য রাতের
তুলনায় রমযানের শেষ দশকের রাতসমূহে তার পরিশ্রম অধিক ছিল।
দুই. রমযানের শেষ দশকে স্ত্রী-সঙ্গ ত্যাগ করে সালাত, জিকির প্রভৃতি ইবাদতে আত্মনিয়োগ করে বিনিদ্র রাত কাটানো নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অন্যতম আদর্শ।
তিন. রমযানের শেষ দশকের রাতে পরিবারের সদস্যদের ঘুম থেকে ইবাদতের জন্য জাগিয়ে তুলা সুন্নত। যদি রমযানে তাদের রাত জাগার অভ্যাস হয়, তাহলে যেন গল্প-গুজব ত্যাগ করে সালাত ও জিকির-আযকারে লিপ্ত থাকে।
চার. গৃহকর্তা স্ত্রী-সন্তানদের উপর নফল ইবাদত আবশ্যক ও তার চাপ প্রয়োগ করতে পারেন, এ ক্ষেত্রে তার আনুগত্য তাদের উপর ওয়াজিব।[57]
পাঁচ. রমযানের শেষ দশকের রাতে সালাত ও যিকরে মগ্ন থাকা মোস্তাহাব। কারণ তা নবীজীর আমল, উপরের হাদিস তার প্রমাণ। আর সারারাত জাগ্রত থাকার ব্যাপারে যে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, তার অর্থ সারা বছর রাত জাগ্রত থাকা, তবে যেসব রাতে বিশেষ ফযিলত রয়েছে যেমন শেষ দশকের রাত, তা ব্যাপক নিষেধাজ্ঞা থেকে ব্যতিক্রম।[58]
ছয়. শেষ দশকের রাতগুলো জাগার উদ্দেশ্য লাইলাতুল কদর সন্ধান করা। আল্লাহর অশেষ
অনুগ্রহ যে তিনি লাইলাতুল কদর রমযানের শেষ দশকে সীমাবদ্ধ রেখেছেন, যদি
সারা বছর তার সম্ভাবনা থাকত, তাহলে তার অনুসন্ধানে অনেকের খুব কষ্ট হত, বরং
অধিকাংশ লোক তার থেকে মাহরুম থাকত।[59]
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿تَنَزَّلُ ٱلۡمَلَٰٓئِكَةُ وَٱلرُّوحُ فِيهَا بِإِذۡنِ رَبِّهِم مِّن كُلِّ أَمۡرٖ ٤ سَلَٰمٌ هِيَ حَتَّىٰ مَطۡلَعِ ٱلۡفَجۡرِ ٥﴾ [القدر: 4-5]
“সে রাতে ফেরেশতারা ও রূহ (জিবরাইল) তাদের রবের অনুমতিক্রমে সকল সিদ্ধান্ত নিয়ে অবতরণ করে। শান্তিময় সেই রাত, ফজরের সূচনা পর্যন্ত”।[60]
যির
ইব্ন হুবাইশ রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: “আমি উবাই ইব্ন কাবকে বলতে
শুনেছি: তাকে বলা হয়েছিল: আব্দুল্লাহ ইব্ন মাসউদ বলেন: যে ব্যক্তি সারা
বছর রাত জাগ্রত থাকবে, সে লাইলাতুল কদর লাভ করবে। উবাই বলেন: আল্লাহর শপথ
করে বলছি, যিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই, সন্দেহ নেই লাইলাতুল কদর রমযানে। তিনি
নির্দিষ্টভাবে কসম করে বলেন: আল্লাহর শপথ আমি জানি তা কোন রাত, এটা সে
রাত, যার কিয়ামের নির্দেশ আমাদেরকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম প্রদান করেছেন, তা হচ্ছে সাতাশের সকালের রাত, তার আলামত হচ্ছে
সেদিন সকালে সূর্য উদিত হবে সাদা, তার কোন কিরণ থাকবে না”। মুসলিম।
ইব্ন
হিব্বানের এক বর্ণনায় আছে: “তার আলামত হচ্ছে সেদিন সকালে সূর্য উদিত হবে
সাদা, তার কোন কিরণ থাকবে না, যেন তার আলো মুছে দেয়া হয়েছে।[61]
ইব্ন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«إِنَّ لَيْلَةَ القَدْرِ في النِّصْفِ مِنَ السَّبْع الأَوَاخِرِ من رَمَضَانَ تَطْلُعُ الشَّمْسُ غَدَاةَ إِذْ صَافِيَةً لَيْسِ لها شُعَاعٌ، قَالَ ابنُ مَسْعُودٍ: فَنَظَرْتُ إِلَيها فَوَجَدْتُها كَما قَالَ رَسُولُ الله ﷺ» رواه أحمد .
“নিশ্চয়
লাইলাতুল কদর হচ্ছে রমযানের শেষ সাতের মাঝখানে, সেদিন সকালে শুভ্রতা নিয়ে
সূর্য উদিত হবে, তার মধ্যে কোন কিরণ থাকবে না। ইব্ন মাসউদ বলেন: আমি
সূর্যের দিকে তাকিয়ে সেরূপ দেখেছি, যেরূপ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন”।[62]
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লাইলাতুল কদর সম্পর্কে বলেছেন:
«إِنَّها لَيْلَةُ سَابِعَةٍ أَوْ تَاسِعَةٍ وعِشْرينَ، إِنَّ المَلائِكَةَ تِلْكَ الَّليلَةَ في الأَرْضِ أَكْثَرُ مِنْ عَدَدِ الحَصَى» رواه أحمد.
“এটা হচ্ছে সাতাশ অথবা ঊনত্রিশের রাত, সে রাতে কঙ্করের চেয়ে অধিক সংখ্যায় ফেরেশতারা পৃথিবীতে অবস্থান করেন”।[63]
উবাদা ইব্ন সামেত রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«إِنَّ أَمَارَةَ لَيْلَةِ القَدْرِ أَنَّها صَافِيَةٌ بَلْجَةٌ - أَيْ مُسْفِرَةٌ مُشْرِقَةٌ- كَأَنَّ فِيهَا قَمَراً سَاطِعاً، سَاكِنَةٌ سَاجِيَةٌ - أَيْ فيهَا سُكُونٌ- لا بَرْدَ فيهَا وَلا حَرَّ، وَلا يَحِلُّ لِكَوْكَبٍ أَنْ يُرْمَى به فيهَا حَتى يُصْبِحَ، وإِنَّ أَمَارَتَها أَنَّ الشَّمْسَ صَبيحَتَهَا تَخْرُجُ مُسْتَويَةً لَيسَ لها شُعَاعٌ مِثْلَ القَمَرِ لَيْلَةَ الْبَدْرِ، لا يَحِلُّ لِلشَّيْطَانِ أَنْ يَخْرُجَ مَعَهَا يَوْمَئِذٍ» رواه أحمد.
“নিশ্চয়
লাইলাতুল কদরের আলামত, তা হবে সাদা ও উজ্জ্বল, যেন তাতে আলোকিত চাঁদ
রয়েছে, সে রাত হবে স্থির, তাতে ঠাণ্ডা বা গরম থাকবে না, তাতে সকাল
পর্যন্ত কোন তারকা দ্বারা ঢিল ছোঁড়া হবে না। তার আরো আলামত, সেদিন সকালে
সূর্য উদিত হবে সমানভাবে, চৌদ্দ তারিখের চাঁদের ন্যায়, তার কোন কিরণ থাকবে না, সেদিন শয়তানের পক্ষে এর সাথে বের হওয়া সম্ভব নয়”।[64]
জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«إِنِّي كُنْتُ أُريتُ لَيْلَةَ القَدْرِ ثُم نَسيتُهَا وَهِيَ في العَشْرِ الأَوَاخِرِ، وَهِيَ طَلْقَةٌ بَلْجَةٌ لا حَارَّةٌ ولا بَارِدَةٌ، كَأَنَّ فيهَا قَمَراً يَفْضَحُ كَوَاكِبَهَا لا يَخْرُجُ شَيْطَانُها حَتى يَخْرُجَ فَجْرُهَا» رواه ابن خزيمة وابن حبان.
“আমাকে
লাইলাতুল কদর দেখানো হয়েছিল, অতঃপর তা ভুলিয়ে দেয়া হয়েছে, আর তা হচ্ছে
শেষ দশকে। সে রাত হবে সাদা-উজ্জ্বল, না-গরম, না-ঠাণ্ডা, যেন আলোকিত চাঁদ
নক্ষত্রগুলোকে আড়াল করে আছে, ফজর উদিত হওয়ার আগ পর্যন্ত সে রাতের শয়তান
বের হতে পারে না”।[65]
ইব্ন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে লাইলাতুল কদর সম্পর্কে বলেন:
«لَيْلَةٌ طَلْقَةٌ لا حَارَّةٌ ولا بَارِدَةٌ تُصْبِحَ الشَّمْسُ يَوْمَهَا حَمْرَاءُ ضَعِيفَة»
“লাইলাতুল কদর সাদা-উজ্জ্বল, না গরম না ঠাণ্ডা, সে দিন ভোরে সূর্য উদিত হবে দুর্বল রক্তিম আভা নিয়ে”।[66]
শিক্ষা ও মাসায়েল:
এক.
আলেম যদি ভাল মনে করেন, তবে জানা ইলম গোপন করা বৈধ, যেমন ইব্ন মাসউদ
লাইলাতুল কদর গোপন করেছেন, যেন মানুষেরা অলসতা না করে ও পুরো দশ রাতের
কিয়াম থেকে বিরত না থাকে।
দুই. আলমগণ মানুষের জরুরী বিষয়গুলো বর্ণনা করবেন, যেমন উবাই ইব্ন কাব লাইলাতুল কদর বর্ণনা করেছেন।
তিন. মুসলিমদের স্বার্থ নিরূপণে আলেমদের ইজতিহাদ ও ইখতিলাফ বৈধ, এটা নিষিদ্ধ নয়, যদি সঠিক পদ্ধতি ও সত্য অন্বেষণের জন্য হয়।
চার.
লাইলাতুল কদর শেষ দশকে, এতে অধিক সম্ভাব্য রাত হচ্ছে বেজোড় রাতগুলো, এতেও
অধিক সম্ভাব্য রাত হচ্ছে সাতাশের রাত, যেমন উবাই ইব্ন কাব কসম করে
বলেছেন।
পাঁচ. লাইলাতুল কদরের অনেক আলামত রয়েছে:
(১). অধিক সংখ্যায় ফেরেশতা নাযিল হন। তাদের শুরুতে থাকে জিবরিল আলাইহিস সালাম, তারা মুসল্লিদের সাথে মসজিদের জমাতে অংশ গ্রহণ করেন। তাদের সংখ্যা কঙ্করকে পর্যন্ত ছাড়িয়ে যায়, তবে এ আলামত মানুষের নিকট প্রকাশ পায় না।
(২). সে রাতে আল্লাহর পক্ষ থেকে অধিক পরিমাণ সালাম বর্ষিত হয়, যেহেতু বান্দাগণ তাতে আল্লাহর ইবাদতে মশগুল থাকে।
(৩).
সে দিন সকালে সাদা ও উজ্জ্বলতাসহ সূর্য উদিত হয়, তার কিরণ থাকে না।
ওলামায়ে কেরাম এর কারণ সম্পর্কে বলেন: ফেরেশতাগণ আসমানে চড়তে থাকেন, ফলে
তাদের নূর ও পাখা সূর্যের কিরণের আড়াল হয়।[67] কারণ সে রাতে বহু ফেরেশতা অবতরণ করেন।
(৪).
এ রাত সাদা-উজ্জ্বল ও স্থির, না-গরম, না-ঠাণ্ডা, এটা তুলনামূলক বিষয়,
বিভিন্ন দেশের ভিত্তিতে ঠাণ্ডা-গরম ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। অর্থাৎ লাইলাতুল
কদর পূর্বাপর রাতের তুলনায় বেশী ঠাণ্ডা বা বেশী গরম হবে না।
(৫). শায়তান লাইলাতুল কদরের ভোরে সূর্যের সাথে বের হতে পারে না, লাইলাতুল কদর ব্যতীত সূর্য শয়তানের দুই শিঙের মধ্য দিয়ে উদিত হয়।
ছয়.
লাইলাতুল কদরের অধিকাংশ আলামত লাইলাতুল কদর শেষে জানা যায়। এর উপকারিতা
হচ্ছে: যারা লাইলাতুল কদর পেয়েছে, তারা আল্লাহর শোকর আদায় করবে, আর যারা
পায়নি তারা অনুতপ্ত হবে ও আগামী বছরের জন্য প্রস্তুতি নিবে।
সাত. এসব আলামত প্রত্যেক বছর লাইলাতুল কদরে প্রকাশ পায়, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগের সাথে খাস নয়।[68]
আট. মুসলিমদের উচিত লাইলাতুল কদর তালাশ করা, যেহেতু তাতে অনেক কল্যাণ বিদ্যমান।
আব্দুল্লাহ ইব্ন উনাইস জুহানি রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«أُرِيتُ لَيْلَةَ القَدْرِ ثُم أُنْسيتُها وأَرَاني صُبْحَهَا أَسْجُدُ في مَاءٍ وطِينٍ، قَالَ: فَمُطِرنَا لَيْلَةَ ثَلاثٍ وعِشرينَ، فَصَلَّى بنا رَسُولُ الله ﷺ فَانْصَرفَ وإِنَّ أَثَرَ الماءِ والطِّينِ عَلى جَبْهَتِهِ وَأَنْفِهِ، قَالَ: وَكَانَ عَبدُالله بنُ أَنيسٍ يَقُولُ: ثَلاثٍ وعِشرينَ»
“আমাকে লাইলাতুল কদর দেখানো হয়েছিল, অতঃপর তা ভুলিয়ে দেয়া হয়েছে। আমি দেখেছি আমি সে রাতের সকালে পানি ও মাটিতে সেজদা করছি। তিনি
বলেন: আমাদের তেইশ তারিখের রাতে বৃষ্টি হয়েছিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের সাথে সালাত আদায় করে ঘুরে বসেন, তখন তার কপাল ও
নাকের ওপর পানি ও মাটির আলামত ছিল। তিনি বলেন: আব্দুল্লাহ ইব্ন উনাইস
বলতেন: সেটা ছিল রমযানের তেইশ তারিখ”।[69]
ইমাম
মালেকের এক বর্ণনায় আছে, আব্দুল্লাহ ইব্ন উনাইস নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামকে বলেন: “হে আল্লাহর রাসূল, আমি খুব দূরের লোক, আমাকে একটি
রাতের নির্দেশ দেন যেন আমি আসতে পারি। তিনি বললেন:
«انْزِل لَيْلَةَ ثَلاثٍ وعِشْرينَ مِنْ رَمَضَانَ».
ইব্ন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: “আমি রমযানে ঘুমিয়ে ছিলাম, আমাকে নিয়ে আসা হল, বলা
হল: আজ কদরের রাত। তিনি বলেন: আমি তন্দ্রাসহ দাঁড়িয়ে রাসূলের তাঁবুর রশি
ধরে তার নিকট আগমন করলাম, তিনি সালাত আদায় করছিলেন। তিনি বলেন: আমি
লক্ষ্য করলাম সে রাত ছিল তেইশের রাত”।[71]
আবু
হুযাইফাহ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জনৈক সাহাবি
থেকে, তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন: তিনি
বলেছেন: “আমি লাইলাতুল কদরের সকালে চাঁদের দিকে দেখলাম, আমি তা গামলার
অর্ধেক টুকরার ন্যায় দেখলাম। আবু ইসহাক সাবিহি বলেন: তেইশের রাতে চাঁদ অনুরূপ হয়”।[72]
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:
«تَذَاكَرْنا لَيْلَةَ القَدْرِ عِنْدَ رَسُولِ الله ﷺ فَقَالَ: أَيُّكُم يَذْكُرُ حِينَ طَلَعَ القَمَرُ وَهُوَ مِثْلُ شِقِّ جَفْنَة» رواه مسلم.
“আমরা
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট লাইলাতুল কদরের
আলোচনা করলাম, তিনি বললেন: ‘তোমাদের মধ্যে কে স্মরণ করতে পারে সে সময়ের
কথা যখন চাঁদ উদিত হয় গামলার অর্ধেক টুকরার ন্যায়?”[73]
শিক্ষা ও মাসায়েল:
এক.
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে লাইলাতুল কদর ভুলিয়ে দেয়া
হয়েছে, এর হিকমত হয়তো: মানুষ যেন অলস না হয় ও অন্য রাতে ইবাদত ত্যাগ না
করে।
দুই. সাহাবিদগণ ইবাদত ও যিকর করার উদ্দেশ্যে ফযিলতপূর্ণ রাত অন্বেষণ করতেন ও তার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতেন।
তিন.
তেইশের রাত ফযিলতপূর্ণ, এ রাত লাইলাতুল কদরের একটি সম্ভাব্য রাত, অতএব
প্রত্যেক মুসলিমের উচিত এ রাতে জাগ্রত থাকা ও অধিক ইবাদত করা।
চার. তেইশের রাতে চাঁদ বড় গামলার [অর্ধেকের] ন্যায় হয়, এসব হাদিস দ্বারা বুঝা যায় উল্লেখিত রাত সে বছর লাইলাতুল কদর ছিল।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿إِنَّآ أَنزَلۡنَٰهُ فِي لَيۡلَةٖ مُّبَٰرَكَةٍۚ إِنَّا كُنَّا مُنذِرِينَ ٣ فِيهَا يُفۡرَقُ كُلُّ أَمۡرٍ حَكِيمٍ ٤﴾[القدر: 3-4]
“নিশ্চয় আমি এটি নাযিল করেছি বরকতময় রাতে; নিশ্চয় আমি সতর্ককারী। সে রাতে প্রত্যেক প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত অনুমোদিত হয়”।[74] আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:
﴿إِنَّآ
أَنزَلۡنَٰهُ فِي لَيۡلَةِ ٱلۡقَدۡرِ ١ وَمَآ أَدۡرَىٰكَ مَا لَيۡلَةُ
ٱلۡقَدۡرِ ٢ لَيۡلَةُ ٱلۡقَدۡرِ خَيۡرٞ مِّنۡ أَلۡفِ شَهۡرٖ ٣ تَنَزَّلُ
ٱلۡمَلَٰٓئِكَةُ وَٱلرُّوحُ فِيهَا بِإِذۡنِ رَبِّهِم مِّن كُلِّ أَمۡرٖ ٤
سَلَٰمٌ هِيَ حَتَّىٰ مَطۡلَعِ ٱلۡفَجۡرِ ٥﴾ [القدر: 1-5]
“নিশ্চয় আমি এটি নাযিল করেছি ‘লাইলাতুল কদরে। তোমাকে কিসে জানাবে ‘লাইলাতুল কদর’ কী? ‘লাইলাতুল কদর’হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। সে রাতে ফেরেশতারা ও রূহ (জিবরাইল) তাদের রবের অনুমতিক্রমে সকল সিদ্ধান্ত নিয়ে অবতরণ করে। শান্তিময় সেই রাত, ফজরের সূচনা পর্যন্ত”।[75]
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«مَنْ يَقُمْ لَيْلَةَ القَدْرِ إيمَاناً واحتِسَاباً غُفِرَ لهُ مَا تَقدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ» رَوَاهُ الشَيْخَان.
“লাইলাতুল কদরে যে ব্যক্তি ঈমান ও সওয়াবের নিয়তে কিয়াম করবে, তার পূর্বের সকল পাপ মোচন করা হবে”।[76]
হাদিসটি অন্য শব্দে এভাবে বর্ণিত আছে:
«مَنْ قَامَ لَيْلةَ القَدرِ إيماناً واحتِسَاباً غُفِرَ له مَا تَقَدَّمَ من ذَنبِهِ»
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লাইলাতুল কদর সম্পর্কে বলেছেন:
«إنَّهَا لَيْلَةُ سَابعةٍ أو تَاسِعَةٍ وعِشْرِينَ إِنَّ الملائِكَةَ تِلْكَ اللَّيلةَ في الأرْضِ أَكْثَرُ مِنْ عَدَدِ الحَصَى» رَواهُ أَحْمَد.
“লাইলাতুল কদর সাতাশ অথবা ঊনত্রিশের রাত, সে রাতে পৃথিবীতে ফেরেশতাদের সংখ্যা কঙ্করের চেয়ে অধিক হয়”।[78]
শিক্ষা ও মাসায়েল:
এক. লাইলাতুল কদরের ফযিলতের কয়েকটি দিক:
১. এ রাত আল্লাহর নিকট খুব মর্যাদাপূর্ণ।
২. এ রাত এক হাজার মাসের চেয়ে উত্তম, যেখানে লাইলাতুল কদর নেই; যা প্রায় তিরাশি বছর চার মাসের সমপরিমাণ।
৩. এ রাতে অগণিত ফেরেশতাদের অবতরণ হয়, যাদের সংখ্যা কঙ্করের চেয়ে বেশী।
৪. এ রাতে কুরআনুল কারিম নাযিল করা হয়েছে।
৫.
এ রাতে অধিক পরিমাণ আযাব থেকে নিরাপত্তা নাযিল হয়, কারণ এতে বান্দাগণ
অধিক পরিমাণ ইবাদত করে, যার ফলে আল্লাহ তাদেরকে রহমত, মাগফেরাত ও জাহান্নাম
থেকে মুক্তির সনদ দান করেন।
৬. এ রাত বরকতময়, কারণ এ রাতের ফযিলত অনেক।
৭. এ রাতে যে বিশ্বাস, আল্লাহর ওয়াদার ওপর আস্থা ও সওয়াবের আশায় কিয়াম করবে, তার পূর্বের পাপ মোচন করা হবে।
৮. এ রাতে পূর্ণ বছরের তাকদির লেখা হয়।
৯. এ রাতে যে কিয়াম করল ও জাগ্রত থাকল, সে অবশ্যই আল্লাহর রহমত ও মাগফেরাতের উপযুক্ত হল।
দুই. মুসলিমদের উচিত লাইলাতুল কদর তালাশ করা। এ জন্য শেষ দশকে কিয়াম, সালাত, দো‘আ ও যিকরে অধিক মশগুল থাকা। মাহরুম ও বঞ্চিত ব্যতীত কেউ ফযিলতপূর্ণ এ রাত থেকে গাফেল থাকে না। আল্লাহর নিকট দো‘আ করছি, তিনি আমাদেরকে এ ফযিলত অর্জনের তওফিক দান করুন।
তিন.
লাইলাতুল কদরের বরকতের অর্থ তাতে সম্পাদিত আমলের বরকত, কারণ এ রাতে যে
যত্নসহ আমল করবে, তার আমল হাজার মাসের আমলের চেয়ে উত্তম। এটা আল্লাহর মহান
অনুগ্রহ।
চার. এ উম্মতের ওপর আল্লাহর অনুগ্রহ যে, তিনি তাদেরকে প্রতি বছর এ রাত দান করেন।
পাঁচ.
লাইলাতুল কদর অন্য সকল রাত থেকে উত্তম, জুমার রাত লাইলাতুল কদর থেকে উত্তম
এ কথা শুদ্ধ নয়। হ্যাঁ যদি জুমার রাতে লাইলাতুল কদর হয়, তাহলে তার ফযিলত
বৃদ্ধি হয় সন্দেহ নেই।
ছয়.
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ক্ষেত্রে ইসরা ও মেরাজের রাত
লাইলাতুল কদর থেকে উত্তম। কারণ এ রাতে তাকে আসমানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, এ
রাতে তার সাথে তার রব কথা বলেছেন। এটা তার জন্য সবচেয়ে বড় সম্মান ও মহান
মর্যাদা। তবে অন্যান্য মুসলিমের বিবেচনায় ইসরা ও মেরাজের রাতের তুলনায়
লাইলাতুল কদর মহান ও অধিক মর্যাদাশীল।[79]
সাত.
কতক আলেম উল্লেখ করেছেন লাইলাতুল কদর এ উম্মতের বৈশিষ্ট্য, কতক দুর্বল
হাদিসে এ রকম বর্ণনা পাওয়া যায়। এর বিপরীতে কতক হাদিসে এসেছে আমাদের
পূর্বের উম্মত বা তাদের নবীদের মধ্যেও লাইলাতুল কদর ছিল, তবে এসব হাদিস
দুর্বল।[80]
আট. মুসলিমের বর্ণনায় এসেছে:
«مَنْ يَقُمْ لَيْلَةَ القَدْرِ فَيُوَافقُها إيمَاناً واحتِسَاباً غُفِرَ لهُ»
“যে ব্যক্তি লাইলাতুল কদর জেনে ঈমান ও সওয়াবের আশায় কিয়াম করবে, তার পাপ মোচন করা হবে”। এ হাদিস তাদের
দলিল, যারা বলে: লাইলাতুল কদর তার জন্যই হবে, যে জানে যে আজ লাইলাতুল কদর।
কিন্তু হাদিসের বাহ্যিক শব্দ তা প্রমাণ করে না, বরং হাদিসের অর্থ হচ্ছে,
যে লাইলাতুল কদরে কিয়াম করে লাইলাতুল কদরে কিয়াম করার নিয়তে, আর
বাস্তবিক তা লাইলাতুল কদর হয় কিন্তু সে তা নিশ্চিত জানে না সে লাইলাতুল
কদর লাভ করবে”।[81] অতএব
মুসলিমদের উচিত রমযানের শেষ দশকের প্রত্যেক রাতকে লাইলাতুল কদর জ্ঞান করে
কিয়াম করা, কারণ সে রাত লাইলাতুল কদর হতে পারে, আর বাস্তবিক পক্ষে যদি সে
রাত লাইলাতুল কদর হয়, তাহলে সে জেনে তাতে কিয়াম করল।
ইব্ন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে
বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একদল সাহাবিকে শেষ সাত
রাতে লাইলাতুল কদর দেখানো হয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বললেন:
«أَرَى رُؤْيَاكُمْ قَدْ تَوَاطَأَتْ في السَّبْعِ الأَوَاخِرِ، فَمَنْ كَانَ مُتَحَرِيْها فَلْيَتَحَرَاها في السَّبْع الأَوَاخِر» متفق عليه.
“আমি দেখছি তোমাদের সবার স্বপ্ন শেষ সাতের ব্যাপারে অভিন্ন, অতএব যে লাইলাতুল কদর তালাশ করতে চায়, সে যেন তা শেষ সাতে তালাশ করে”।[82]
অপর বর্ণনায় আছে:
«التَمِسُوهَا في العَشْرِ الأَوَاخِر، فَإِنْ ضَعُفَ أَحَدُكُمْ أَوْ عَجَزَ فَلا يُغْلَبَنَّ على السَّبْع البَواقِي».
“তোমরা শেষ দশে লাইলাতুল কদর তালাশ কর, যদি তোমাদের কেউ দুর্বল হয়, অথবা অপারগ হয়, তবে শেষ সাতে যেন তা অন্বেষণ করা ত্যাগ না করে”। অপর বর্ণনায় আছে:
«تَحَرُّوا لَيْلَةَ القَدْرِ في السَّبْعِ الأَوَاخِر».
শিক্ষা ও মাসায়েল:
এক.
এ উম্মতের সম্মিলিত বর্ণনা, সিদ্ধান্ত ও স্বপ্ন নির্ভুল। কারণ নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এখানে তাদের অভিন্ন স্বপ্নকে গ্রহণ করেছেন।[84]
দুই. লাইলাতুল কদর তালাশ করা ও তাতে রাত জাগা জরুরী, কারণ তাতে রয়েছে ফযিলত, বরকত ও কল্যাণ, তবে এটা ওয়াজিব নয়, সুন্নত।[85]
তিন. এ হাদিস স্বপ্নের গুরুত্ব প্রমাণ করে, সম্ভাব্য ঘটমান বিষয়ে তার ওপর নির্ভর করা বৈধ, যদি শরিয়তের নির্দেশের বিপরীত না হয়।[86] তবে স্বপ্নের ওপর অধিক নির্ভর করা ঠিক নয়, যা মূল উদ্দেশ্যে বিচ্যুত ঘটার কারণ হয়।
চার.
স্বপ্ন কখনো আল্লাহর পক্ষ থেকে হয়, কখনো হয় মনের ধারণা ও কল্পনাপ্রসূত,
আবার কখনো হয় শয়তানের পক্ষ থেকে। কোন বিষয়ে যদি মুমিনদের স্বপ্ন অভিন্ন
হয়, তাহলে সেটা সত্য, যেমন তাদের সম্মিলিত সিদ্ধান্ত ও বর্ণনা সত্য। কারণ
একজনের বর্ণনা অথবা সিদ্ধান্তে অসৎ উদ্দেশ্য গোপন থাকতে পারে, কিন্তু এ
ব্যাপারে সকল মুসলিম একমত হতে পারে না।[87]
পাঁচ. এ থেকে প্রমাণিত হয় যে, অধিকাংশের কথার ওপর আমল করা যায়, যদি কুরআন-হাদিস, ইজমা ও স্পষ্ট কিয়াসের বিরোধী না হয়।[88]
ছয়.
সাহাবিদের স্বপ্ন এ ক্ষেত্রে অভিন্ন যে, রমযানের শেষ সাতে লাইলাতুল কদর
বিদ্যমান, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সে বছর তাদেরকে শেষ সাতে
লাইলাতুল কদর তালাশ করার নির্দেশ দিয়েছেন, অতএব এ রাতগুলো অধিক সম্ভাবনাময়।[89]
সাত.
লাইলাতুল কদর কতককে স্বপ্নে অথবা জাগ্রত অবস্থায় দেখানো হয়, সে তার
আলামত দেখতে পায়, অথবা স্বপ্নে কাউকে দেখে, যে তাকে বলে: এটা লাইলাতুল
কদর। কখনো আল্লাহ তার বান্দার অন্তরে এমন নিদর্শন প্রকাশ করেন, যার দ্বারা
সে লাইলাতুল কদর স্পষ্ট বুঝতে পারে।[90]
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযানের শেষ দশকে ইতিকাফ করার কথা বলেন, আয়েশা তার কাছে অনুমতি চান। তিনি তাকে অনুমতি প্রদান করেন। হাফসা আয়েশার কাছে তার জন্য অনুমতি নেয়ার অনুরোধ করেন, তিনি তাই করেন। এ দেখে যয়নব বিনতে জাহাশ তাঁবু তৈরির নির্দেশ দেন,
তার জন্য তাঁবু তৈরি করা হল। আয়েশা বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত শেষে তার তাঁবুতে যান, তিনি সেখানে অনেক তাঁবু
দেখতে পান। জিজ্ঞেস করেন, এগুলো কী? তারা বলল: আয়েশা, হাফসা ও যয়নবের
তাঁবু। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: “এর দ্বারাই
কি তোমরা নেকির আশা করেছ?! আমি ইতিকাফই করব না”। তিনি ফিরে যান। অতঃপর
রমযান শেষে শাওয়ালের দশ দিন ইতিকাফ করেন”। বুখারি ও মুসলিম।
মুসলিমের এক বর্ণনায় আছে: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ইতিকাফ করার ইচ্ছা করতেন, ফজর সালাত আদায় করে ইতিকাফের স্থানে প্রবেশ করতেন। একদা তিনি মসজিদে তার জন্য তাঁবু টানাতে আদেশ করলেন, তাঁবু টানানো হল, তিনি রমযানের শেষ দশকে ইতিকাফ করার ইচ্ছা করে ছিলেন। যয়নব তার
জন্য তাঁবু টানাতে নির্দেশ করলেন, টানানো হল, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামের অন্যান্য স্ত্রীগণ তাঁবু টানাতে নির্দেশ করলেন, তাদের জন্য
তাঁবু টানানো হল। তিনি যখন ফজর সালাত আদায় করলেন, দেখলেন অনেকগুলো তাঁবু।
তিনি বললেন: তোমরা কি নেকির আশা করেছ? তিনি তার তাঁবু খুলে ফেলার নির্দেশ দেন ও রমযানের ইতিকাফ ত্যাগ করেন, অতঃপর শাওয়ালের প্রথম দশে ইতিকাফ করেন”।[91]
শিক্ষা ও মাসায়েল:
দুই. নারী তার স্বামীর অনুমিত ব্যতীত ইতিকাফ করবে না, এতে কারো ইখতিলাফ নেই।[93] যদি সে স্বামীর অনুমতি
ব্যতীত ইতিকাফ করে, তাহলে স্বামীর অধিকার রয়েছে তার ইতিকাফ ভঙ্গ করানো।
ইতিকাফের অনুমতি দেয়ার পর স্বামী যদি কোন কারণে তার ইতিকাফ ভাঙ্গতে চায়,
তাহলে তার অধিকার রয়েছে।[94]
চার. মসজিদ ব্যতীত ইতিকাফ শুদ্ধ নয়, যদি অন্য কোথাও ইতিকাফ বৈধ হত, তাহলে নারীর জন্য বৈধ হত তার সালাতের জায়গায় ইতিকাফ করা।[96]
পাঁচ. স্বামীর জন্য নিজ স্ত্রী ও পরিবারকে আদব শিক্ষা দেয়া, তাদের সংশোধন করা জায়েয। যেমন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্ত্রীদের ইতিকাফের অনুমতি দেন, অতঃপর তাদের মধ্যে অনাকাঙ্খিত ঈর্ষার আশংকায় তাদেরকে তা থেকে বারণ করেন।[97]
সাত. অতিরিক্ত ঈর্ষা খারাপ, কারণ তা হিংসার ফল, যা নিন্দনীয়।
নয়. শুধু নিয়তের কারণে ইতিকাফ ওয়াজিব হয় না।[100]
দশ. ইতিকাফকারী ইতিকাফের জন্য মসজিদের একটা অংশ নিজের জন্য খাস করে নিতে পারবে, যদি তাতে মুসল্লিদের সমস্যা না হয়। জায়গাটি নির্ধারণ করা চাই মসজিদের খালি অংশে বা শেষ প্রান্তে, যেন অন্যদের কষ্ট না হয়, এবং তার নির্জনতা ও একাকীত্ব অর্জন হয়।[101]
এগারো. স্ত্রীদের সাথে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্দর আখলাক ও তাদের সঙ্গে চমৎকার হৃদ্যতা। যেমন তাদেরকে তিনি ইতিকাফ থেকে বারণ করে, নিজেও তা ত্যাগ করেন, অথচ তিনি নিজে ইতিকাফ করতে পারতেন, কিন্তু আন্তরিকতা, সহমর্মিতা ও তাদের আনন্দে শেয়ার করার জন্য তা করেন নি।[102] অনুরূপ প্রত্যেক মুসলিমের উচিত স্ত্রীদের আদব শিক্ষা দেয়ার ক্ষেত্রে সীমালঙ্ঘন না করা, যা প্রতিশোধ ও জেদ দমনের পর্যায় পড়ে।
বারো.
যদি ইতিকাফকারী নারীর ঋতুস্রাব হয়, তাহলে ঋতুস্রাব তার ইতিকাফ ভেঙ্গে
দিবে, সে মসজিদ ত্যাগ করবে, অতঃপর পবিত্র হয়ে পূর্বের ইতিকাফ শুরু করবে।[103]
তেরো.
যদি কেউ নফল ইবাদতের নিয়ত করে, কিন্তু এখনো তা শুরু করেনি, তাহলে সে তা
একেবারে ত্যাগ করতে পারে, আবার ইচ্ছা করলে পরবর্তীতে আদায় করা বৈধ।[104]
চৌদ্দ.
যার মধ্যে কোন ইবাদতের রিয়া নিশ্চিত জানা যায়, তাকে সে ইবাদত থেকে নিষেধ
করা বৈধ। কারণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াল্লাম বলেছেন: “তোমরা কি নেকি
ইচ্ছা করেছ”। অর্থাৎ তোমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নৈকট্য ও
তাকে পাওয়ার আশা করেছ। এ জন্য তাদের ইতিকাফ নিষেধ করেন ও নিজের ইতিকাফ
পিছিয়ে দেন।[105]
পনের.
ইতিকাফে স্ত্রী, লোকজন ও অন্যদের থেকে নির্জনতা অবলম্বন করা মোস্তাহাব,
তবে যখন প্রয়োজন হয় তা ব্যতীত যেমন সালাত, খানা ইত্যাদি।[106]
ষোল.
রমযানে ইতিফাক করা সুন্নত, এটা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের
আদর্শ, এ হাদিস থেকে বুঝা যায় গায়রে রমযানে ইতিকাফ করা বৈধ, যেহেতু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শাওয়ালে ইতিকাফ করেছেন।[107]
সতের.
মসজিদের ভেতরের রুমে ইতিকাফ করা বৈধ, যার দরজা মসজিদের দিকে খোলা, তার
হুকুম মসজিদের হুকুম, আর যদি মসজিদের বাইরে হয়, তাহলে সেটা মসজিদের অংশ
নয়, যদিও তার দরজা মসজিদের দিকে।[108]
উবাদাহ ইব্ন সামেত রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:
«خَرَجَ النَّبيُّ ﷺ لِيُخْبرَنا بلَيْلَةِ القَدْرِ فَتَلاحَى رَجُلانِ من المُسلِمِين، فقَالَ: خَرجْتُ لأُخْبِرَكُم بلَيْلَةِ القَدْرِ فَتلاحَى فُلانٌ وفُلان، فَرُفِعَتْ، وعَسَى أَنْ يَكُونَ خَيرَاً لَكُم، فَالتَمِسُوها في التَّاسِعَةِ والسَّابِعةِ والخَامِسَة» رواه البخاري.
“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে লাইলাতুল কদরের সংবাদ দেয়ার জন্য বের হয়েছেন, অতঃপর দু’জন মুসলিম ঝগড়ায় লিপ্ত হল। তিনি
বলেন: আমি তোমাদেরকে লাইলাতুল কদরের সংবাদ দেয়ার জন্য বের হয়েছি, কিন্তু
অমুক অমুক ঝগড়া করল, ফলে তা উঠিয়ে নেয়া হয়। খুব সম্ভব এটা তোমাদের
জন্য কল্যাণকর। তোমরা তা নবম, সপ্তম ও পঞ্চম রাতে তালাশ কর”।[109]
আবু সাঈদ খুদরি রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:
«اعْتَكَفَ رَسُولُ الله ﷺ العَشرَ الأَوسَطَ من رَمَضَانَ يَلتَمِسُ لَيْلَةَ القَدْرِ قَبلَ أَنْ تُبَانَ لَه، فلَمَّا انْقَضَينَ أَمَرَ بالبِنَاءِ فقُوِّض، ثم أُبِينَت له أنَّها في الْعَشْرِ الأَوَاخِرِ، فأَمَر بالبِنَاءِ فأُعِيدَ، ثمَّ خَرَجَ على النَّاسِ فقال: يا أيُّها النَّاس: إنَّها كَانَت أُبِينَت لي لَيْلَةُ القَدْرِ، وإنِّي خَرَجْتُ لأُخبِرَكُم بها، فَجَاءَ رَجُلانِ يَحْتَقَّانِ – أي: يَخْتَصِمان- مَعَهُما الشَّيطَانُ، فَنُسِّيتُها فَالتَمِسُوها في الْعَشْرِ الأَوَاخِرِ من رمَضَان، فالتَمِسُوها في التَّاسِعَةِ والسَّابِعَةِ والخَامِسَة»
“রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লাইলাতুল কদর অন্বেষণে রমযানের মধ্যম দশক
ইতিকাফ করেন, যখন তা প্রকাশ করা হয়নি। যখন ইতিকাফ শেষ হয়, তিনি তাঁবু
গুটানোর নির্দেশ দেন, অতঃপর তাকে বলা হয় নিশ্চয় তা শেষ দশকে, ফলে পুনরায়
তিনি তাঁবু টানাতে নিদেশ দেন, পুনরায় তাঁবু টানানো হয়। অতঃপর তিনি
মানুষের নিকট এসে বলেন: হে লোক সকল: আমাকে লাইলাতুল কদর বলা হয়েছিল, আমি
তোমাদেরকে তার সংবাদ দিতে বের হয়েছি, ইত্যবসরে দু’জন ব্যক্তি ঝগড়া নিয়ে
উপস্থিত হয়, তাদের সাথে ছিল শয়তান, ফলে আমাকে তা ভুলিয়ে দেয়া হয়েছে,
তোমরা তা রমযানের শেষ দশকে তালাশ কর। তোমরা তা নবম, সপ্তম ও পঞ্চম রাতে
তালাশ কর।[110]
শিক্ষা ও মাসায়েল:
এক.
বিভেদ ও ইখতিলাফ নিষেধ। দু’জন মুসলিমের অন্যায় ঝগড়া কখনো তাদের ও
অন্যদের উপর অনিষ্ট ডেকে আনে। কল্যাণ ছিনিয়ে নেয়া হয়, যেমন এখানে
লাইলাতুল কদর একরাত থেকে অপর রাতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।[111] ঝগড়ার কারণে তাদের মাগফেরাত মওকুফ করা হয় এবং তাদের আমল বিবেচনাধীন রাখা হয়, যতক্ষণ না তারা আপোষ করে।[112]
দুই. এ হাদিস প্রমাণ করে, বিশেষ ব্যক্তিদের অপরাধের কারণে কখনো সাধারণ লোক তার খেসারত দেয়।[113]
তিন.
লাইলাতুল কদর বিদ্যমান, এতে কারো দ্বিমত নেই, তবে তার নির্দিষ্ট দিনক্ষণ
উঠিয়ে নেয়া হয়েছে, এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তা
ভুলিয়ে দেয়া হয়েছে।[114]
চার. লাইলাতুল কদর অনির্দিষ্ট করণে একটি কল্যাণ হচ্ছে শেষ দশকের ইবাদত।[115]
পাঁচ. লাইলাতুল কদরের সম্ভাব্য তারিখ শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলো।
ছয়. লাইলাতুল কদর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে প্রথমে গোপন ছিল, অতঃপর তাকে জানানো হয়, অতঃপর তা ভুলিয়ে দেয়া হয়।
সাত.
লাইলাতুল কদর তালাশে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আগ্রহ, শেষ
দশকে জানার পূর্বে তিনি মধ্যম দশকে তা তালাশ করেছেন, অথচ আল্লাহ তার
পূর্বাপর সকল পাপ ক্ষমা করে দিয়েছেন।
আট.
লাইলাতুল কদরের প্রতি গভীর আগ্রহ ও তা অন্বেষণ করা নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদর্শ, যা শেষ দশক জাগ্রত থাকা ব্যতীত অর্জন হয় না,
বিশেষ করে বেজোড় রাতগুলো।
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত:
«أنها كانت تُرَجِّلُ النبيَّ ﷺ وهي حَائِضٌ وهُوَ مُعْتَكِفٌ في المَسْجِدِ وَهِيَ في حُجْرَتِهَا يُنَاوِلُها رَأسَهُ» رواه الشيخان.
“তিনি ঋতুস্রাবের
সময় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চুল আঁচড়ে দিতেন, যখন তিনি
মসজিদে ইতিকাফ করতেন, আর আয়েশা ঘর থেকে তার মাথা গ্রহণ করতেন”। বুখারি ও মুসলিম।
মুসলিমের অপর বর্ণনায় আছে:
«وكانَ لا يَدخُلُ البَيتَ إلا لحَاجَةِ الإِنسَان».
“তিনি মানুষিক প্রয়োজন ব্যতীত ঘরে প্রবেশ করতেন না”।
আবু দাউদের এক বর্ণনায় আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:
«كَانَ رَسُولُ الله ﷺ يَكُونُ مُعْتَكِفَاً في المَسْجِدِ فَيُنَاوِلُنِي رَأْسَهُ من خَلَلِ الحُجْرَةِ فَأَغْسِلُ رَأْسَهُ».
“রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে ইতিকাফ করতেন, তিনি হুজরার ফাঁক
দিয়ে আমার কাছে তার মাথা দিতেন, আমি তা ধুয়ে দিতাম”।
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন:
«أَنَّهُ كَانَ إذَا اعْتكَفَ لم يَدخُلْ بَيتَهُ إلا لِحَاجَةِ الإنسَانِ التي لابدَّ مِنهَا» رواه النسائي.
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:
إنِّي كُنتُ لأدْخُلُ البَيتَ للحَاجَةِ والمَرِيضُ فيه فَما أَسأَلُ عَنْهُ إلاّ وأنَا مَارَّة» رواه مسلم.
“আমি ঘরে প্রবেশ করতাম, সেখানে রোগী থাকত, কিন্তু চলন্ত অবস্থায় ব্যতীত তার সম্পর্কে আমি জিজ্ঞাসা করতাম না”।[118]
আয়েশা
রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন: “ইতেকাফকারীর জন্য সুন্নত হচ্ছে রোগী দেখতে না
যাওয়া, জানাজায় হাজির না হওয়া, স্ত্রীকে স্পর্শ বা তার সাথে সহবাস না
করা, খুব জরুরী প্রয়োজন ব্যতীত বের না হওয়া, সওম ব্যতীত ইতিকাফ শুদ্ধ
নয়, অনুরূপ জামে মসজিদ ব্যতীত ইতিকাফ শুদ্ধ নয়”।[119]
শিক্ষা ও মাসায়েল:
দুই.
ইতিকাফকারী শরীরের কিছু অংশ মসজিদ থেকে বের করলে বাইরে গণ্য হবে না,
ইতিকাফ নষ্ট হবে না, যেমন মসজিদের জানালা অথবা দরজা থেকে যদি কিছু নেয়া
অথবা গ্রহণ করার ইচ্ছা করে, তাহলে এতে সমস্যা নেই।[122]
তিন. ইতিকাফকারীর মাথা ধৌত করা, চুল আঁচড়ানো, সুগন্ধি ব্যবহার করা, মাথা ন্যাড়া করা ও সৌন্দর্য গ্রহণ করা বৈধ।[123]
চার. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চুল খুব ঘন ছিল।
পাঁচ. যার চুল খুব ঘন, তার উচিত চুল পরিষ্কার রাখা, চিরুনি করা ও চুলের যত্ন নেয়া। পোশাক-আশাক ও শরীরের পবিত্রতা ত্যাগ করা সুন্নত কিংবা শরিয়ত নয়।[124]
ছয়.
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চুল চিরুনি করা থেকে
প্রমাণিত হয়, মানুষের শরীরের প্রয়োজনীয় সকল প্রকার খাদ্য, তেল ইত্যাদি
গ্রহণ করা বৈধ।[125]
সাত. ইতিকাফকারীর স্ত্রীর দিকে তাকানো এবং স্ত্রীর কাম স্পৃহা ব্যতীত স্বামীর শরীরের কিছু অংশ স্পর্শ করা বৈধ।[126]
আট. স্ত্রীর জন্য স্বামীর খিদমত করা বৈধ, যেমন তার মাথা ধৌত করা, চুল আঁচড়ে দেয়া, কাপড় ধোয়া ইত্যাদি।[127]
নয়.
মানুষিক প্রয়োজন ব্যতীত ইতিকাফকারীর মসজিদ থেকে বের হওয়া বৈধ নয়, যেমন
পেশাব-পায়খানা, অথবা পানাহার, যদি তা মসজিদে পৌঁছে দেয়ার কেউ না থাকে,
অনুরূপ প্রয়োজনীয় প্রত্যেক বস্তু, যা মসজিদে সম্পাদন করা সম্ভব নয়, তার
জন্য বের হলে ইতিকাফ নষ্ট হবে না”।[128]
দশ. যে ব্যক্তি ঘরে প্রবেশ না করার কসম করেছে, সে যদি ঘরে মাথা প্রবেশ করে, তাহলে তার কসম ভঙ্গ হবে না।[129]
এগারো.
ইতিকাফকারী জরুরী প্রয়োজনে বের হলে দ্রুত হাঁটা জরুরী নয়, বরং অভ্যাস
অনুযায়ী হাঁটা, তবে প্রয়োজন শেষে দ্রুত ফিরে আসা ওয়াজিব।[130]
বারো. ইতিকাফকারী রোগী দেখা অথবা জানাজায় হাজির হবে না, এটা জমহুর আলেমদের অভিমত।[131] তবে সে চলন্ত অবস্থায় রোগী সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতে পারবে, কিন্তু থামবে না।[132]
তেরো.
ইতিকাফকারী যদি জরুরী প্রয়োজনে বের হয়, যেমন পিতার মৃত্যু অথবা সন্তানের
মৃত্যু, তাহলে প্রয়োজন শেষে নতুন করে ইতিকাফ করবে, যদি সে বিনা শর্তে
ইতিকাফ করে।[133]
চৌদ্দ.
হাদিস থেকে প্রমাণিত হয়, নারী তার স্বামীর বাড়িতে অবস্থান করবে, স্বামীর
বাড়িতে যদিও কোন প্রয়োজন না থাকে, অথবা কোন শরয়ী কারণে সে বাড়িতে
প্রবেশ করতে না পারে, যেমন সফর ও ইতিকাফ। স্ত্রী স্বামীর অনুমতি ব্যতীত ঘর থেকে বের হবে না।[134]
পনের. ইতিকাফকারী প্রয়োজন ব্যতীত ইতিকাফের স্থান থেকে বের হলে ইতিকাফ নষ্ট হয়ে যাবে।[135]
ষোল.
ইতিকাফের জন্য সওম ও জামে মসজিদ শর্ত কি-না এ ব্যাপারে ইখতিলাফ রয়েছে।
বিশুদ্ধ অভিমত অনুযায়ী ইতিকাফের জন্য সওম শর্ত নয়, কারণ নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম শাওয়ালে ইতিকাফ করেছেন। পাঞ্জেগানা মসজিদে ইতিকাফ বৈধ,
যেখানে পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের জমাত হয়, কিন্তু জুমা হয় না। ইতিকাফকারী
জুমার সালাতের জন্য জামে মসজিদে যেতে পারবে, এ জন্য তার ইতিকাফ নষ্ট হবে
না, তবে উত্তম জামে মসজিদে ইতিকাফ করা।[136]
আয়েশা
রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি বলেছি: “হে আল্লাহর
রাসূল, আপনি কি লক্ষ্য করেছেন, আমি যদি লাইলাতুল কদর জানতে পারি, আমি তাতে
কি বলব? তিনি বললেন: তুমি বলবে:
«اللَّهُمَّ إنَّك عَفُوٌّ كَريمٌ تُحبُّ العَفوَ فَاعْفُ عنِّي»
“হে
আল্লাহ তুমি ক্ষমাশীল, মহানদাতা-সম্মানিত, ক্ষমা করা ভালোবাস, অতএব তুমি
আমাকে ক্ষমা কর”। ইমাম তিরমিযি হাদিসটি বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেছেন এ হাদিস
হাসান, সহিহ।[137]
ইব্ন মাজার শব্দ হচ্ছে: আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন: “হে আল্লাহর রাসূল, আপনি কি দেখেছেন, আমি লাইলাতুল কদর পেলে কি দো‘আ করব? তিনি বললেন: তুমি বলবে:
«اللَّهُمَّ إنَّكَ عَفُوٌّ كَريمٌ تُحبُّ العَفْوَ فَاعْفُ عَنِّي»
শিক্ষা ও মাসায়েল:
এক. লাইলাতুল কদরের ফযিলত এবং উম্মুল মুমেনিন আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার তা অন্বেষণ করা, তাতে কিয়াম ও দো‘আ করার গভীর আগ্রহ প্রমাণিত হয়।
দুই. কল্যাণকর বস্তু জানার জন্য সাহাবিদের প্রশ্ন করার আগ্রহ।
তিন. লাইলাতুল কদরের দো‘আ ফযিলতপূর্ণ এবং তা কবুলের সম্ভাবনা রাখে।
চার. ব্যাপক অর্থপূর্ণ শব্দের মাধ্যমে দো‘আ করা মোস্তাহাব। দো‘আয় লৌকিকতা ও এমন শব্দ পরিহার করা, যার অর্থ অস্পষ্ট।
পাঁচ. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাতলানো এ দো‘আ ব্যাপক অর্থপূর্ণ ও সবচেয়ে উপকারী। এ দো‘আতে
দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ নিহিত রয়েছে, কারণ আল্লাহ যখন দুনিয়াতে কোন
বান্দাকে ক্ষমা করবেন, তিনি তার থেকে শাস্তি দূরীভূত করবেন, তার ওপর
নিয়ামতরাজি বর্ষণ করবেন। আর যখন তিনি কোন বান্দাকে আখিরাতে ক্ষমা করবেন,
তিনি তাকে আগুন থেকে মুক্তি দেবেন ও জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।
ছয়. এ হাদিসে আল্লাহর ‘ভালোবাসা’ গুণটি প্রমাণিত হয়, যেভাবে তার জন্য ভালোবাসা গুণটি উপযোগী। আর তিনি ক্ষমা করা ভালোবাসেন।
সাত. মানুষদের ক্ষমা করার ফযিলত, কারণ আল্লাহ ক্ষমা করা পছন্দ করেন, অনুরূপ যারা মানুষদের ক্ষমা করে তাদের তিনি পছন্দ করেন।
আট. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজ উম্মতের কল্যাণ কামনা করেন ও তাদেরকে উপকারী বিষয় শিক্ষা দেন।
সাফিয়্যাহ
বিনতে হুইয়াই থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম ইতিকাফে ছিলেন, আমি রাতে তাঁর সাক্ষাতের জন্য আসি। আমি তার
সাথে কথা বলি, অতঃপর রওয়ানা দেই ও ঘুরে দাঁড়াই, তিনি আমাকে এগিয়ে দেয়ার
জন্য দাঁড়ালেন। তার ঘর ছিল উসামা ইব্ন যায়েদের বাড়িতে। ইত্যবসরে দু’জন আনসার অতিক্রম করল, তারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখে দ্রুত চলল, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের বললেন: থাম, এ হচ্ছে সাফিয়্যাহ বিনতে হুইয়াই। তারা আশ্চর্য হল: সুবহানাল্লাহ হে আল্লাহ রাসূল! তিনি বললেন: নিশ্চয় শয়তান মানুষের রক্তের শিরায় বিচরণ করে, আমি আশঙ্কা করছি, সে তোমাদের অন্তরে কুমন্ত্রণা দিতে পারে”। বুখারি ও মুসলিম।[138]
আলি
ইব্ন হাসান রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম মসজিদে ছিলেন, তার নিকট তার স্ত্রীগণ উপবিষ্ট ছিল, অতঃপর তারা
চলে গেল। তিনি সাফিয়্যাহ বিনতে হুইয়াইকে বললেন: দ্রুত কর না, যতক্ষণ না
আমি তোমার সাথে চলি। সাফিয়্যার ঘর ছিল উসামার বাড়িতে। নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সাথে বের হলেন, তার সাথে দু’জন
আনসারের সাক্ষাত হল, তারা নবীকে দেখল, অতঃপর দ্রুত চলল। তিনি তাদের
দু’জনকে বললেন: এ হচ্ছে সাফিয়্যাহ বিনতে হুইয়াই। তারা বলল: সুবহানাল্লাহ!
হে আল্লাহর
রাসূল! তিনি বললেন: নিশ্চয় শয়তান মানুষের রক্তের শিরায় বিচরণ করে, আমি
আশঙ্কা করছি, সে তোমাদের অন্তরে কিছু সৃষ্টি করতে পারে”।[139]
শিক্ষা ও মাসায়েল:
এক.
এ হাদিসে উম্মতের উপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দয়া, তাদের
স্বার্থ রক্ষা করা ও তাদেরকে সঠিক নির্দেশনা দেয়ার প্রমাণ মিলে, যাতে
রয়েছে তাদের আত্মা ও অন্তরের পরিশুদ্ধতা। কারণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম আশঙ্কা করেছেন যে, শয়তান তাদের অন্তরে তার সম্পর্কে খারাপ
ধারণা সৃষ্টি করতে পারে, আর নবীদের সম্পর্কে খারাপ ধারণা কুফর, তাই তিনি
তাদের সতর্ক করলেন।[140] ইমাম
শাফে‘ঈ রহ. বলেন: “তিনি তাদেরকে এ জন্য বলেছেন, কারণ তিনি তাদের উপর
কুফরির আশঙ্কা করেছেন, যদি তারা তাঁর সম্পর্কে কু-ধারণা করত, তাই তাদের
অন্তরে শয়তানের কুমন্ত্রণা সঞ্চার করার পূর্বে, যা তাদের ধ্বংসের কারণ
ছিল, তিনি দ্রুত জানিয়ে দিয়ে তাদের হিতকামনা করলেন।
দুই.
ইতিকাফকারীর সাথে সাক্ষাত করা বৈধ, মসজিদে স্ত্রী তার স্বামীর সাথে
সাক্ষাত ও কথা বলতে পারবে রাত-দিন যে কোন সময়, এতে ইতিকাফের ক্ষতি হবে না।
তবে অতিরিক্ত গমনাগমন ইবাদতে বিগ্ন সৃষ্টি করে, কখনো ইতিকাফ বিনষ্টকারী কর্মে লিপ্ত করে, তাই তা থেকে বিরত থাকা জরুরী।
তিন. মুসলিমদের উচিত অপবাদ ও সন্দেহের স্থান থেকে দূরে থাকা, যখন খারাপ ধারণার আশঙ্কা হয় স্পষ্ট করে দিবে যেন তা দূরীভূত হয়ে যায়। বিশেষ করে অনুসরণীয় আলেম ও নেককার লোকদের বিষয়, তাদের এমন কাজ করা বৈধ নয় যা মানুষের অন্তরে সন্দেহের জন্ম দেয়। অনুরূপ বিচারকের বিচার ব্যাখ্যা করে দেয়া উচিত, যদি বিবাদীর নিকট তার কারণ অস্পষ্ট থাকে ও পক্ষপাত তুষ্টের ধারণা জন্মায়।
চার. শয়তান ও তার ষড়যন্ত্র থেকে সতর্ক থাকা ওয়াজিব, কারণ সে বনি আদমের রক্তের শিরায় বিচরণ করে।
পাঁচ. আশ্চর্য হয়ে সুবহানাল্লাহ বলা বৈধ। যেমন আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার ওপর অপবাদের ঘটনায় আছে:
﴿سُبۡحَٰنَكَ هَٰذَا بُهۡتَٰنٌ عَظِيمٞ ١٦﴾ [النور: 16]
ছয়.
ইতিকাফকারীর বৈধ কাজে লিপ্ত হওয়া জায়েয। যেমন সাক্ষাতকারীকে উৎসাহ
দেয়া, তার সাথে দাঁড়ানো ও তার সাথে কথা বলা, তবে অতিরিক্ত না করা।
সাত. ইতিকাফকারীর পাঠ দান করা, শিক্ষণীয় প্রোগ্রামে অংশ গ্রহণ করা ও দ্বীনি বিষয় লেখা বৈধ, তবে বেশি পরিমাণে নয়, কারণ ইতিকাফের উদ্দেশ্য হচ্ছে শুধু ইবাদতের জন্য অবসর হওয়া।
আট. ইতিকাফকারী প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি ক্রয় করতে পারবে, যেমন খাবার ইত্যাদি।
নয়. স্ত্রীর সাথে ইতিকাফকারী নির্জনে মিলিত হতে পারবে, তবে স্ত্রীগমন থেকে সতর্ক থাকবে।
দশ. নিরাপত্তা থাকলে নারীদের রাতে বের হওয়া বৈধ।
এগারো.
যার সাথে তার স্ত্রী রয়েছে, তাকে সালাম দেয়া বৈধ, কারণ কতক বর্ণনায়
এসেছে তারা উভয়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সালাম করেছিল,
তিনি তাদের বিরত করেন নি।
বারো. যদি ব্যক্তির সাথে স্ত্রী বা মাহরাম থাকে, সে যে কাউকে সম্বোধন করতে পারবে, বিশেষ করে যদি তার প্রয়োজন হয়, কোন হুকুম বর্ণনা করা অথবা কোন অনিষ্ট দূর করা ইত্যাদি, এটা রুচি বিরোধী নয়।
তেরো.
কথা বা কোন মাধ্যমে ইতিকাফকারী নিজের ওপর খারাপ ধারণা দূর করতে পারবে,
অনুরূপ সে হাতের দ্বারা কষ্ট দূর করতে পারবে, যদি কেউ তার উপর সীমালঙ্ঘন
করতে চায়। ইতিকাফকারী মুসল্লির চেয়ে বেশী নয়, মুসল্লির জন্য বৈধ তার
সামনে দিয়ে অতিক্রমকারীকে বাঁধা দেয়া, অনুরূপ ইতিকাফকারী সে ব্যক্তিকে
বারণ করতে পারবে, যে তার উপর সীমালঙ্ঘন করে, এ জন্য তার ইতিকাফ নষ্ট হবে
না।
চৌদ্দ. একান্ত প্রয়োজন না হলে ধীরে কাজ করা ও দ্রুততা পরিহার করা, কারণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে বলেছেন: عَلَى رِسْلِكُمَا“তোমরা ধীরে চল”।
পনের.
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্ত্রীদের মাঝে ইনসাফ করতেন। কেননা
তাঁর স্ত্রীগণ তার ইতিকাফে তাকে দেখতে এসেছেন, যখন তারা যাওয়ার ইচ্ছা
করেন, তিনি সাফিয়্যাহকে বললেন: তাড়াহুড়ো করোনা।
সাফিয়্যাকে থাকার নির্দেশের কারণ সম্ভবত সে অন্যদের চেয়ে দেরীতে এসেছে,
তাই তাকে দেরিতে যেতে বলেছেন, যেন তার নিকট অবস্থানের সময় সবার সমান হয়,
অথবা তার বাড়ি অন্য স্ত্রীদের বাড়ি থেকে দূরে ছিল, তাই নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার ব্যাপারে আশঙ্কা করেছেন। মুসলিমদের উচিত অনুরূপভাবে
স্ত্রীদের মাঝে সমতা রক্ষা করা ও তাদের প্রতি যত্নশীল থাকা।
৫১. সাতাশে লাইলাতুল কদর অন্বেষণ করা
যির
ইব্ন হুবাইশ রহ. বলেন: “আমি উবাই ইব্ন কা‘বকে জিজ্ঞাসা করে বলি: তোমার
ভাই ইব্ন মাসউদ বলেন: যে ব্যক্তি সারা বছর রাতে কিয়াম করবে সে লাইলাতুল
কদর লাভ করবে। তিনি বললেন: আল্লাহ তার ওপর রহম করুন, তার উদ্দেশ্য মানুষ
যেন অলস না হয়, অন্যথায় তিনি ভাল করে জানেন যে, লাইলাতুল কদর রমযানে,
বিশেষ করে শেষ দশকে, বরং সাতাশে। অতঃপর তিনি শপথ করে বলেন, এতে সন্দেহ নেই লাইলাতুল কদর সাতাশে। আমি বললাম: আপনি তা কিভাবে বলেন, হে আবু আব্দুর রহমান, তিনি বললেন: নিদর্শন দেখে অথবা রাসূলের বাতলানো আলামত দেখে:
«أَنَّها تَطْلُعُ يَوْمَئذٍ لا شُعَاعَ لها»
«أَنَّ الشَّمْسَ تَطْلُعُ غَدَاةَ إِذْ كَأَنَّها طَسْتٌ لَيْسَ لَها شُعَاعٌ»
তিরমিযির
এক বর্ণনায় আছে, উবাই বলেছেন: “আল্লাহর শপথ ইব্ন মাসউদ নিশ্চিত জানে যে,
লাইলাতুল রমযানে, এবং তা সাতাশে, কিন্তু তিনি তোমাদেরকে সংবাদ দিতে চাননি,
যেন তোমরা অলস বসে না থাক”।[144]
মুয়াবিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«لَيْلَةُ القَدْرِ لَيْلَةُ سَبْعٍ وعِشْرينَ» رواه أبو داود.
আব্দুল্লাহ ইব্ন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন:
এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এসে জিজ্ঞাসা করে
হে আল্লাহর নবী, আমি খুব বৃদ্ধ ও অসুস্থ লোক, আমার দ্বারা দাঁড়িয়ে থাকা
খুব কঠিন, অতএব আমাকে এমন এক রাতের কথা বলুন, যেন সে রাতে আল্লাহ আমাকে
লাইলাতুল কদর দান করেন, তিনি বললেন: তোমার উচিত সাতাশ আঁকড়ে ধরা”।[146]
শিক্ষা ও মাসায়েল:
এক. আমাদের পূর্বসূরিগণ কল্যাণের প্রতি আগ্রহী ছিলেন, তারা ইবাদতে মগ্ন থাকার জন্য ফযিলতপূর্ণ সময় অনুসন্ধান করতেন।
দুই. কারণবশত কোন বিষয় না বলা আলেমের জন্য বৈধ, যেমন মানুষের অলসতা ও নেক আমলে ত্রুটির সম্ভাবনা ইত্যাদি।
তিন. নিশ্চিত জ্ঞান বা প্রবল ধারণার ওপর কসম করা বৈধ।
চার. কিরণহীন সাদা-উজ্জ্বলতা নিয়ে সকালে সূর্যের উদয় হওয়া, লাইলাতুল কদরের আলামত।
পাঁচ.
মুসলিমদের উচিত ফযিলতপূর্ণ মৌসুমের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করা, যেমন
লাইলাতুল কদর অন্বেষণে রমযানের শেষ দশক, যেন অল্প আমলে তার অধিক কল্যাণ
অর্জন হয়।
ছয়. আলেমদের বিশুদ্ধ মত হচ্ছে: লাইলাতুল কদর পরিবর্তনশীল, তবে সাতাশের রাত অধিক সম্ভাবনাময়, যেমন উবাই ইব্ন কাব শপথ করে বলেছেন।
সাত.
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বৃদ্ধ লোককে লাইলাতুল কদর সাতাশে
বলা অন্যান্য হাদিসের পরিপন্থী নয়, যেখানে অন্যরাতে লাইলাতুল কদর বলা
হয়েছে, কারণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে সে বছরের কথা
বলেছেন, যে বছর সে জিজ্ঞাসা করেছে। লাইলাতুল কদর সম্পর্কে সব হাদিসের মধ্যে সমতা রক্ষার জন্য এ ব্যাখ্যার বিকল্প ব্যাখ্যা নেই।
সাহাল ইব্ন সাদ থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«في الجنَّةِ ثَمَانِيَةُ أبْوَابٍ فيهَا بَابٌ يُسَمَّى الرَّيَّانُ لا يَدْخُلُهُ إِلاّ الصَّائِمُونَ»
“জান্নাতে আটটি দরজা, তাতে একটি দরজাকে “রাইয়ান” বলা হয়, তা দিয়ে রোযাদার ব্যতীত কেউ প্রবেশ করবে না”।[147]
বুখারির বর্ণিত শব্দে হাদিসটি এসেছে এভাবে:
«إِنَّ في الجَنَّةِ بَاباً يُقَالُ لهُ الرَّيَّانُ يَدخُلُ منهُ الصَّائِمونَ يَوْمَ القِيامَةِ لا يَدخُلُ منْهُ أحَدٌ غَيرُهُمْ، يقَالُ: أَيْنَ الصَّائِمونَ؟ فَيَقُومُونَ، لا يَدخُلُ منْهُ أَحَدٌ غَيرُهُم، فَإِذا دَخَلُوا أُغْلِقَ فَلَم يَدخُلْ مِنْهُ أَحَدٌ».
“নিশ্চয় জান্নাতে একটি দরজা আছে, যাকে বলা হয় রাইয়ান, কিয়ামতের দিন তা দিয়ে রোযাদার প্রবেশ করবে, তাদের ব্যতীত কেউ সেখান থেকে প্রবেশ করবে না। বলা হবে: রোযাদারগণ কোথায়? ফলে তারা দাঁড়াবে, তাদের ব্যতীত কেউ তা দিয়ে প্রবেশ করবে না, যখন তারা প্রবেশ করবে বন্দ করে দেয়া হবে, অতঃপর কেউ তা দিয়ে কেউ প্রবেশ করবে না”।[148]
তিরমিযির বর্ণিত শব্দ:
«إِنَّ في الجنَّةِ لبَاباً يُدعَى الرَّيَّانُ، يُدعَى لهُ الصَّائِمُونَ، فَمَنْ كَانَ مِنَ الصَّائِمِينَ دَخَلَهُ، وَمَنْ دَخَلَهُ لم يَظْمَأْ أَبَداً».
“জান্নাতে একটি দরজা আছে, যাকে রাইয়ান বলা হয়, তার জন্য রোযাদারদেরকে আহ্বান করা হবে, যে রোযাদারদের অন্তর্ভুক্ত হবে, সে তাতে প্রবেশ করবে, যে তাতে প্রবেশ করবে কখনো পিপাসার্ত হবে না”।[149]
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«مَنْ أَنفَقَ زَوجَينِ في سَبيلِ الله نُودِيَ مِنْ أبْوابِ الجَنَّةِ: يا عَبدَالله: هَذَا خَيْرٌ، فَمَنْ كَانَ مِنْ أَهْلِ الصَّلاةِ دُعِيَ مِنْ بَابِ الصَّلاةِ، ومَنْ كَانَ منْ أهْلِ الجِهادِ دُعِيَ من بَابِ الجِهادِ، ومَنْ كَانَ مِنْ أهْلِ الصِّيَامِ دُعِيَ من بَابِ الرَّيَّانِ، ومَنْ كَانَ مِنْ أَهْلِ الصَّدَقَةِ دُعِيَ من بَابِ الصَّدَقَةِ، فقَالَ أَبو بَكْرt : بِأَبي وأُمِّي يا رَسُولَ الله، مَا عَلى مَن دُعِيَ من تلكَ الأَبوَابِ مِنْ ضَرُورَةٍ فَهَلْ يُدْعَى أَحَدٌ من تِلكَ الأَبوَابِ كلِّها؟ قَالَ: نَعَم، وأَرجُو أن تَكُونَ مِنهُم» رواه الشيخان.
“আল্লাহর
রাস্তায় যে দু’টি জিনিস খরচ করল, তাকে জান্নাতের দরজাসমূহ থেকে ডাকা হবে:
হে আব্দুল্লাহ, এটা কল্যাণ। যে সালাত আদায়কারী তাকে সালাতের দরজা থেকে
ডাকা হবে। যে মুজাহিদ তাকে জিহাদের দরজা থেকে ডাকা হবে। যে রোযাদার তাকে রাইয়ান দরজা থেকে ডাকা হবে। যে দানশীল তাকে সদকার দরজা থেকে ডাকা হবে। আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন : হে
আল্লাহর রাসূল, আমার মাথা-পিতা আপনার উপর উৎসর্গ। যাকে এক দরজা থেকে ডাকা
হবে না, তার বিষয়টি পরিষ্কার, কিন্তু কাউকে কি সকল দরজা থেকে ডাকা হবে?
তিনি বললেন: হ্যাঁ, আমি আশা করছি তুমি তাদের অন্তর্ভুক্ত”।[150] বুখারি ও মুসলিমের অন্য শব্দে এসেছে:
«دعَاه خَزَنَةُ الجَنَّةِ، كُلُّ خَزَنَةِ بَابٍ: أَيْ فُلْ، هَلُمَّ».
ইমাম আহমাদের বর্ণিত শব্দ:
«لِكلِّ أَهْلِ عَمَلٍ بَابٌ مِنْ أَبْوَابِ الجَنَّةِ يُدْعَونَ بذَلكَ العَمَل، ولأَهْلِ الصَّيامِ بَابٌ يُدْعَوْنَ مِنهُ، يُقَالُ لَهُ: الرَّيَّان، فقَالَ أَبو بَكر: يا رَسُولَ الله، هَلْ أَحَدٌ يُدْعَى مِنْ تِلْكَ الأَبْوابِ كُلِّها؟ قَالَ: نَعَم، وأَرجُو أنْ تَكُونَ مِنهُم يا أَبا بَكْر».
“প্রত্যেক
আমলের লোকের জন্য জান্নাতে একটি করে দরজা আছে, তাদেরকে সে আমল দ্বারা ডাকা
হবে। রোযাদারদের একটি দরজা রয়েছে, তাদেরকে সেখান থেকে ডাকা হবে, যাকে বলা
হয় রাইয়ান। আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন: হে আল্লাহর রাসূল, কেউ কি সব দরজা থেকে ডাকা হবে? তিনি বললেন: হ্যাঁ, আমি আশা করছি তুমি তাদের অন্তর্ভুক্ত হে আবু বকর”।[152]
আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহুর উদ্দেশ্য, যাকে জান্নাতের এক দরজা দিয়ে ডাকা হল, তার জন্য এটাই যথেষ্ট, প্রত্যেক দরজা থেকে ডাকার প্রয়োজন নেই। কারণ
মূল উদ্দেশ্য জান্নাতে প্রবেশ করা, যা এক দরজা দিয়ে সম্পন্ন হয়। তারপরও
কাউকে কি সব দরজা থেকে ডাকা হবে? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে
হ্যাঁ বলে উত্তর দিলেন।
শিক্ষা ও মাসায়েল:
এক. রোযার ফযিলত যে, তার জন্য জান্নাতের আটটি দরজা থেকে একটি নির্দিষ্ট করা হয়েছে।
দুই. “বাবে রাইয়ান” জান্নাতের একটি দরজার নাম। “রাইয়ান”الرَّيَّانِ শব্দটি الرِّيِّ ধাতু থেকে নেয়া, যা পিপাসার বিপরীত, রোযাদার যেহেতু নিজেকে পানি থেকে বিরত রাখে, যা মানুষের খুব প্রয়োজন, সেহেতু তার যথাযথ প্রতিদান হিসেবে আখিরাতে তাকে পান করানো হবে, যারপর কখনো সে তৃষ্ণার্ত হবে না।
তিন. হাদিসে উল্লেখিত ইবাদত: সালাত, জিহাদ, সিয়াম ও সদকা জান্নাতের এক একটি দরজা। প্রত্যেক দরজা তার আমলকারীর জন্য খাস থাকবে, এখানে উদ্দেশ্য যার যে আমল বেশী তার জন্য সে দরজা বরাদ্ধ।
চার.
জান্নাতের দরজায় ফেরেশতাদের থেকে প্রহরী নিযুক্ত রয়েছে, তারা প্রত্যেক
আমলকারীকে তার আমল অনুসারে তার জন্য নির্দিষ্ট দরজা থেকে ডাকবে, এ থেকে প্রমাণ হয় যে, ফেরেশতারা নেককার আদম সন্তানদের মহব্বত করে ও তাদের কারণে খুশি হয়।[153]
পাঁচ.
আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহুর ফযিলত যে, তাকে প্রত্যেক দরজা থেকে ডাকা হবে,
কারণ সে প্রত্যেক আমল করত। আবু বকরের ব্যাপারে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামের আশা অবশ্যই সত্যে পরিণত হবে। ইব্ন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু
আনহুর হাদিসে এসেছে, আবু বকরকে প্রত্যেক দরজা থেকে ডাকা হবে, বরং জান্নাতের
প্রত্যেক গলি ও ঘর থেকে ডাকা হবে।[154]
সাত.
হাদিস থেকে আরো বুঝে আসে যে, এখানে উদ্দেশ্য নফল আমল, ওয়াজিব নয়, কারণ
ওয়াজিব আদায়কারীর সংখ্যা প্রচুর হবে, তবে তাদের সংখ্যা খুব কম হবে, যাদের
আমলনামায় অধিকহারে সবপ্রকার আমল থাকবে এবং যাদেরকে জান্নাতের সবদরজা থেকে
ডাকা হবে।[156]
আট. সামনে মানুষের প্রশংসা করা বৈধ, যদি তার উপর গর্ব ইত্যাদির আশঙ্কা না থাকে।[157]
নয়. যে সব আমল করে ও নিয়মিত করে, তাকে জান্নাতের সব দরজা থেকে ডাকা হবে, এটা তার প্রতি সম্মান ও ইজ্জত প্রদর্শন স্বরূপ, তবে সে প্রবেশ করবে এক দরজা দিয়ে।
দশ.
সাধারণত প্রত্যেক প্রকার নেক আমলের তওফিক একজন মানুষের হয় না, যার এক
আমলের তাওফিক হয়, তার থেকে অপর আমল থেকে ছুটে যায়, এটাই স্বাভাবিক। খুব কম লোকের তওফিক হয় প্রত্যেক প্রকার আমল করা, আর সে কমের অন্তর্ভুক্ত আবু বকর।[158]
এগার. যার যে আমল বেশি, সে আমল দ্বারা সে প্রসিদ্ধি লাভ করে ও সে আমলের সাথে তাকে সম্পৃক্ত করা হয়, দেখুন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের
বাণী: “যে সালাত আদায়কারীদের দলভুক্ত হবে”। তার উদ্দেশ্য যার যে আমল
বেশী, তাকে সে আমল দ্বারা ডাকা হবে, কারণ সব মুসলিম সালাত আদায় করে।[159]
[1] আবু দাউদ: (২৩৬৯), নাসায়ি ফিল কুবরা: (৩১২৬), ইব্ন মাজাহ: (১৬৮১), আহমদ: (৪/১২৩), আলি ইব্ন মাদিনি ও বুখারি হাদিসটি সহিহ বলেছেন, দেখুন: তালখিসুল হাবির: (২/১৯৩), আব্দুল্লাহ ইব্ন ইমাম আহমদ তার পিতার মাসআলা সমগ্রে নকল করেন: যে শিঙ্গা লাগায় এবং যার লাগানো হয়, উভয়ের সওম ভাঙ্গার ব্যাপারে এটা সবচেয়ে বিশুদ্ধ হাদিস। মাসায়েলে ইমাম আহমদ: (৬৮২), সহিহ ইব্ন হিব্বান: (৩৫৩৩), হাকেম: (১/৫৯২), মাজমু গ্রন্থে হাদিসটি ইমাম নববী সহিহ বলেছেন। তিনি বলেন: এ হাদিস ইমাম মুসলিমের শর্ত মোতাবেক: (৬/৩৫০)
[2] দেখুন: সাওবান রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদিস: আবু দাউদ: (২৩৭১), ইব্ন মাজাহ: (১৬৮০), দারামি: (১৭৩১), আহমদ: (৫/২৭৬), তায়ালিসি: (৯৮৯), সহিহ ইব্ন হিব্বান: (৩৫৩২), ইব্ন খুযাইমাহ: (১৯৬২-১৯৬৩)
[3] দেখুন: রাফে ইব্ন খাদিজ থেকে বর্ণিত হাদিস: তিরমিযি: (৭৭৪), আহমদ: (৩/৪৬৫), সহিহ ইব্ন হিব্বান: (৩৫৩৫)
[7] দেখুন: আবু সায়িদ খুদরি, ইব্ন মাসউদ ও উম্মে সালামা থেকে বর্ণিত সওম পালনকারীর জন্য শিঙ্গা লাগানো বৈধ। উরওয়া, সায়িদ ইব্ন জুবায়ের এবং প্রসিদ্ধ তিন ইমাম: আবু হানিফা, মালেক ও ইমাম শাফে‘ঈ অনুরূপ অভিমত ব্যক্ত করেছেন। আল-মুগনি: (৪/৩৫০), মুহাল্লা: (৬/২০৪-২০৫), ফাতহুল বারি লি ইব্ন হাজার: (৪/১৭৪-১৭৮), সুবুলুস সালাম: (২/১৫৮-১৬০), নাইলুল আওতার: (৪/২৭৫)
[8] দেখুন: যারা বলেছেন শিঙ্গার কারণে সওম ভেঙ্গে যাবে, তাদের মধ্যে আতা ও আব্দুর রহমান ইব্ন মাহদি অন্যতম, ইমাম আহমদের এ মাযহাব। ইসহাক, ইব্ন মুনযির ও ইব্ন খুযাইমাহ তদনুরূপ বলেছেন। ইব্ন কুদামা একদল সাহাবি থেকে বর্ণনা করেছেন, তারা রাতে শিঙ্গা লাগাতেন। তাদের মধ্যে ইব্ন ওমর, ইব্ন আব্বাস, আবু মূসা ও আনাস অন্যতম। আল-মুগনি: (৪/৩৫০), মাজমুউল ফাতাওয়া: (২৫/২৫৭), রিসালা হাকিকাতুস সিয়াম: (৮১-৮৪), তাহযিবুস সুনান: (৬/৩৫৪-৩৬৮), ইলামুল ময়াক্কিয়িন: (২/৫২), ইব্নুল কাইয়েম রহ. বলেন: রোযাদারের জন্য শিঙ্গা জায়েয মন্তব্যকারীগণ চারটি বিষয় নিশ্চিত হওয়া ব্যতীত এ কথা বলতে পারেন না:
(১). নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শিঙ্গা লাগিয়েছেন সুস্থ অবস্থায়, অসুস্থ অবস্থায় নয়।
(২). তিনি শিঙ্গা লাগিয়েছেন মুকিম অবস্থায়, মুসাফির অবস্থায় নয়।
(৩). তিনি ফরয সওমে শিঙ্গা লাগিয়েছেন, নফল সওমে নয়।
(৪). তিনি শিঙ্গা লাগিয়েছেন নিষেধ করার পর, আগে নয়। যখন এ চারটি বিষয় প্রমাণ হবে, তখন বলা যাবে যে, রোযাদারের জন্য শিঙ্গা লাগানো বৈধ, অন্যথায় নয়”। যাদুল মা‘আদ: (৪/৬১-৬২)
[11] দেখুন: ফাতাওয়ায়ে লাজনায়ে দায়েমা: (১০/২৬২), ফাতাওয়া নং: (৫৪৭), এটাই শায়খুল ইসলাম ইব্ন তাইমিয়ার পছন্দনীয় অভিমত। মাজমুউল ফাতাওয়া: (২৫/২৬৮), শায়খ মুহাম্মদ ইব্ন ইবরাহিম তার ফাতাওয়াতে এ মতটি প্রধান্য দিয়েছেন: (৪/১৯১)
[12] এটা শায়খুল ইসলাম ইব্ন তাইমিয়াহ ফি ইখতিয়ারুল ফিকহিয়্যাহ: (১০৮), ইব্ন ইবরাহিম: (৪/১৯১) ও উসাইমিন: (১৯/২৪৯) প্রমুখগণের অভিমত। দেখুন: ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ: (১০/২৬৪), ফাতাওয়া নং: (৩৪৫৫)
[13] দেখুন: ফাতাওয়া লাজনায়ে দায়েমা: (১০/২৬৩), ফাতাওয়া নং: (৫৬), মাজমু ফাতাওয়া ইব্ন বায: (৩/২৩৮-২৩৯), মাজমু ফাতাওয়া ইব্ন উসাইমিন: (১৯/২৫০-২৫১)
[22] আহমদ: (৪/২২), নাসায়ি: (৪/১৬৭), ইব্ন মাজাহ: (১৬৩৯), সহিহ ইব্ন খুযাইমাহ: (২১২৫), সহিহ ইব্ন হিব্বান: (৩৬৪৯)
[23] নাসায়ি: (৪/১৬৭), আহমদ: (১/১৯৫), তায়ালিসি: (২২৭), আবু ইয়ালা: (৮৭৮), দারামি: (১৭৩২), মুনযিরি হাদিসটি হাসান বলেছেন: (২/৯৪০), হাদিস নং: (১৬৪৩), শায়খ আহমদ শাকের হাদিসটি সহিহ বলেছেন: (১৬৯০), এ হাদিসের সনদে বাশ্শার ইব্ন আবু ইয়াসূফ আল-জুরমি রয়েছেন, যাকে ইব্ন হিব্বান ব্যতীত কেউ গ্রহণ যোগ্য বলেনি, দায়িফে সুনানে নাসায়িতে আলবানি হাদিসটি দুর্বল বলেছেন, তিনি হয়তো এ কারণে হাদিসটি দুর্বল বলেছেন, তবে অন্যান্য হাদিস দ্বারা এটি শক্তিশালী হয়।
[23] ইমাম কুরতুবি সওম সুরক্ষা ও ঢাল এর ব্যাখ্যায় বলেন:
ক. সওম প্রকৃত পক্ষে ঢাল, তাই সওম পালনকারীর কর্তব্য এ ঢালের হিফাজত করা, এ দিকে ইশারা করে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«فلا يرفثْ...».
খ. সওম উপকারিতার ভিত্তিতে ঢাল স্বরূপ, অর্থাৎ প্রবৃত্তিকে দুর্বল করে— এ হিসেবে। এদিকে ইশারা করে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«يذر شهوته وطعامه من أجلي»
“সে তার প্রবৃত্তি ও খানা আমার জন্য ত্যাগ করে”।
গ. সওম সওয়াবের হিসেবে ঢাল স্বরূপ, এ দিকে ইশারা করে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«من صام يوماً في سبيل الله باعد الله وجهه عن النار سبعين خريفاً».
“আল্লাহর রাস্তায় যে একদিন সওম পালন করল, আল্লাহ তার চেহারা জাহান্নামের আগুন থেকে সত্তর বছরের দূরত্বে নিয়ে যাবেন”।
[30] মুসলিম: (১১০৯), নাসায়ির এক বর্ণনায় আছে, আবু হুরায়রা এ হাদিস শুনেছেন উসামা ইব্ন যায়েদ থেকে। দেখুন: সুনানুল কুবরা: (২৯৩১), তাই কেউ বলেছেন: তিনি উভয় থেকে শ্রবণ করেছেন। দেখুন: শারহুন নববী: (৭/২২২), আল-মুফহিম: (৩/১৬৮), শারহু ইব্নুল মুলাক্কিন: (৫/১৯৭)
[32] শারহু ইব্ন বাত্তাল আলাল বুখারি: (৪/৪৯), শারহুল উমদাহ লি ইব্নিল মুলাক্কিন: (৫/১৯৫), ফাতহুল বারি লি ইব্ন হাজার: (৪/১৪৭), নাইলুল আওতার: (৪/৯১)
[33] দেখুন: আল-মুফহিম: ৩/১৬৭), ফাতহুল বারি: (৪/১৪৪), এ ব্যাপারে ইব্ন আব্বাস থেকে একটি দুর্বল বাণী বর্ণিত আছে, তিনি বলেন: “কোন নবীর স্বপ্ন দোষ হয়নি, নিশ্চয় স্বপ্ন দোষ হচ্ছে শয়তানের পক্ষ থেকে”। তাবরানি ফিল কাবির: (১১/২২৫), হাদিস নং: (১১৫৬৪), তাবরানি ফিল আওসাত: (৮০৬২), হায়সামি বলেছেন: আব্দুল্লাহ ইব্ন আব্বাসের এ বাণীর সনদে আব্দুল আযিয ইব্ন আবু সাবেত জনৈক ব্যক্তি রয়েছেন, যার দুর্বলতার ব্যাপারে সবাই একমত, যাওয়ায়েদ: (১/২৬৭), ইমাম নববী প্রমাণ করেছেন যে, নবীদের স্বপ্ন দোষ হয় না। এ হিসেবে হাদিসের অর্থ হচ্ছে যে, সহবাসের কারণে তিনি নাপাক অবস্থায় প্রভাত করতেন, তিনি স্বপ্ন দোষের কারনে নাপাক হতেন না, কারণ স্বপ্ন দোষ তার পক্ষে অসম্ভব। এ কথা মূলত আল্লাহর এ বাণীর ন্যায়:
﴿وَيَقۡتُلُونَ ٱلنَّبِيِّۧنَ بِغَيۡرِ ٱلۡحَقِّۗ﴾ [البقرة :61]
“এবং অন্যায়ভাবে নবীদেরকে হত্যা করত”। সূরা বাকারা: (৬১) আমরা সকলে জানি যে, নবীদের হত্যা কখনো হকভাবে হতে পারে না। শারহু মুসলিম: (৭/২২২), ইবনুল মুলাক্কিন ফি শারহিল উমদাহ: (৫/২০১)
[43] ইব্ন আবি শায়বাহ: (২/৩৩৮), আলবানি ইরওয়াউল গালিলে হাদিসটি সহিহ বলেছেন, তিনি বলেছেন: হাদিসটি বুখারি ও মুসলিমের শর্ত মোতাবেক। ইরওয়াউল গালিল: (৪/১৪৮)
[47] আত-তামহিদ: (২৩/৫১-৬৬), শারহুন নববী আলা মুসলিম: (৮/৬১), ফাতহুল বারি লি ইব্ন হাজার: (৪/২৫৭-২৫৯), উমদাতুল কারি: (১১/১৩৩), হাশিয়া সিনদি আলান নাসায়ি: (৩/৮০), আউনুল মাবুদ: (৪/১৮২), মিরকাতুল মাফাতিহ: (৪/৫১২-৫১৩)
[48] বুখারি হুমাইদি থেকে বর্ণনা করেন, মুসল্লির
জন্য সুন্নত হচ্ছে সালাতে চেহারা না মুছা। ইমাম নববী বলেছেন: আলেমগণ
অনুরূপ বলেছেন: সালাতে চেহারা না মোছা মুস্তাহাব। শারহু মুসলিম: (৮/৬১), ইব্ন মুলাক্কিন বলেছেন: এ ব্যাপারে কারো দ্বিমত নেই। শারহুল উমদাহ: (৫/৪২৩), দেখুন; ইকমালুল মুয়াল্লিম: (৪/১৪৮)
[58] শারহুন নববী আলা মুসলিম: (৮/৭১), ফাতাওয়াল কুবরা লি ইব্ন তাইমিয়াহ: (২/৪৯৮), দিবায: (৩/২৬৪), আউনুল মাবুদ: (৪/১৭৬), আদদুরারিল মুদিয়াহ লিশ শাওকানি: (১/২৩৪)
[63] আহমদ: (২/৫১৯), তায়ালিসি: (২৫৪৫), সহিহ ইব্ন খুযাইমাহ: (২১৯৪), ইব্ন কাসির তার তাফসিরে বলেন, এর সনদে সমস্যা নেই: (৪/৫৩৫), হায়সামি বলেছেন: এ হাদিসটি আহমদ, বায্যার ও তাবরানি আওসাত গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন, এর বর্ণনাকারী সবাই নির্ভরযোগ্য: (৩/১৭৫-১৭৬), সহিহ ইব্ন খুজাইমার টিকায় আলবানি হাদিসটি হাসান বলেছেন: (৩/৩৩২), আরো দেখুন: সিলসিলাতুল আহাদিসিস সাহিহা: (২২০৫)
[64] আহমদ: (৫/৩২৪), তাবরানি ফি মুসনাদিশ শামিয়্যিন: (১১১৯), দিয়া ফিল মুখতারাহ: (৩৪২), হায়সামি ফিয যাওয়ায়েদ: (৩/১৭৫), এ হাদিসের বর্ণনাকারীগণ নির্ভরযোগ্য।
[65] ইব্ন খুযাইমাহ: (২১৯০), ইব্ন হিব্বান: (৩৬৮৮), আলবানি অন্যান্য শাহেদের কারণে হাদিসটি সহিহ বলেছেন।
[67] দেখুন: ইকমালুল মুয়াল্লিম: (৪/১৪৮), শারহুন নববী আলা মুসলিম: (৮/৬৫), আল-মুফহিম: (২/৩৯১), দিবাজ: (৩/২৫৯), ফায়যুল কাদির: (৫/৩৯৬)
[71] আহমদ: (১/২৫৫), ইব্ন আবি শায়বাহ: (২/২৫০), তাবরানি ফিল কাবির: (১১/২৯২), হাদিস নং: (১১৭৭৭), হায়সামি মাজমাউয যাওয়ায়েদ: (৩/৭৬) গ্রন্থে বলেন: “আহমদের বর্ণনাকারীগণ সহিহ গ্রন্থের বর্ণনাকারী”।
[72] আহমদ: (৫/৩৬৯), নাসায়ি ফিল কুবরা: (৩৪১১), তার সনদ সহিহ। আহমদ এটা হুযায়ফা সূত্রে আলি থেকেও বর্ণনা করেছেন: (১/১০১), আহমদ শাকের তা হাসান বলেছেন: (৭৯৩)
[80] আমাদের পূর্বে লাইলাতুল কদর ছিল যেসব হাদিসে এসেছে, তার মধ্যে আবু যর রাদিয়াল্লাহু আনহুর হাদিস অন্যতম, তাতে এসেছে:
«قلت: تكون مع الأنبياء ما كانوا فإذا قبضوا رفعت أم هي إلى يوم القيامة؟ قال: بل إلى يوم القيامة»
“আমি বললাম: লাইলাতুল কদর কি নবীদের যুগ পর্যন্ত থাকে, অতঃপর তা উঠিয়ে নেয়া হয়, না কিয়ামত পর্যন্ত থাকে? তিনি বললেন: বরং কিয়ামত পর্যন্ত থাকে”। আহমদ: (৫/১৭১), নাসায়ি ফিল কুবরা: (৩৪২৭), হাকেম: (১/৩০৭), তিনি মুসলিমের শর্ত মোতাবেক হাকিম হাদিসটি সহিহ বলেছেন, ইমাম যাহাবি তার সমর্থন করেছেন। কিন্তু আলবানি ইব্ন খুজাইমার টিকায় তা দুর্বল বলেছেন: (২১৭০), তিনি উল্লেখ করেছেন এর সনদে মুরসিদ যামানি রয়েছে, সে মাজহুল। উকাইলি বলেছেন: তার হাদিসের কোন ‘মুতাবে’ পাওয়া যায় না।
আর যেসব হাদিসে এসেছে যে, লাইলাতুল কদর এ উম্মতের সাথে খাস, যেমন ইমাম মালেক বর্ণনা করেছেন:
«أن النبي ﷺ أُريَ أعمار الناس قبله أو ما شاء الله من ذلك فكأنه تقاصر أعمار أمته ألا يبلغوا من العمل مثل الذي بلغ غيرهم في طول العمر فأعطاه الله ليلة القدر خيراً من ألف شهر»
“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তার পূর্বের লোকের বয়স দেখানো হয়েছে, অথবা আল্লাহ যা ইচ্ছা তাকে দেখিয়েছেন, অতঃপর তিনি নিজের উম্মতের বয়স তুচ্ছ জ্ঞান করেন যে, তারা তাদের পূর্বের উম্মতের আমলের বরাবর হতে পারবে না, ফলে আল্লাহ তাকে লাইলাতুল কদর দান করেন, যা হাজার মাসের চেয়ে উত্তম”। মালেক ফিল মুয়াত্তা: (১/৩২১), হাফেয ইব্ন আব্দুর বারর বলেছেন: “আমি জানি না, এ হাদিস কেউ মুসনাদ হিসেবে বর্ণনা করেছেন কি-না, আমাদের জানা মতে মুয়াত্তা ব্যতীত কেউ এ হাদিস মুরসাল বা মুসানদে বর্ণনা করেন নি”। তামহিদ: (২৪/৩৭৩)
আনাস থেকে বর্ণিত হাদিস:
«إن الله عز وجل وهب لأمتي ليلة القدر ولم يعطها من كان قبلكم»
“নিশ্চয় আল্লাহ আমার উম্মতকে লাইলাতুল কদর দান করেছেন, যা পূর্বের কোন উম্মতকে দান করা হয়নি”। দায়লামি: (৬৪৭), দায়িফুল জামে: (১৬৬৯) গ্রন্থে রয়েছে এ হাদিসটি মওজু ও বানোয়াট। ইমাম নববী লাইলাতুল কদরের বৈশিষ্ট গণনায় বলেন: “লাইলাতুল কদর এ উম্মতের সাথে খাস, আল্লাহ এ রাতের সম্মান বৃদ্ধি করুন, এ উম্মতের পূর্বে কোন উম্মতে লাইলাতুল ছিল না... এটা বিশুদ্ধ ও প্রসিদ্ধ, আমাদের সাথী ও জমহুর আলেমদের এটা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত”। মাজমু: (৬/৪৫৭-৪৫৮)
উল্লেখ্য: আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত: “যে ব্যক্তি এশার সালাত জামাতে পড়ল সে লাইলাতুল কদর লাভ করল”। ইব্ন খুযাইমাহ হাদিসটি বর্ণনা করেছেন, আলবানি তার টিকায় তা দুর্বল বলেছেন: (৩/৩৩৩), খতিবে বাগদাদি: (৫/৩৩২) এ হাদিসটি আনাস থেকে বর্ণনা করেছেন, যা বানোয়াট। দেখুন: যাওয়ায়েদে তারিখে বাগদাদ আলাল কুতুবিস সিত্তাহ লিশ শায়খ খালদুন আল-আহদাব: (৪/৫৯৪), হাদিস নং: (৭৯২), মুয়াত্তায় সায়িদ ইব্ন মুসাইয়্যেব এর মুরসাল হাদিস হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে: (১/৩২১)
[89] ইব্ন বাত্তাল রহ. তার বুখারির ব্যাখ্যা গ্রন্থে ইব্ন ওমরের হাদিসের ব্যাখ্যায় বলেন: “লাইলাতুল কদর শেষ সাতে তালাশ কর”। এর অর্থ: এটা সে বছরের ঘটনা, যে বছর তাদের স্বপ্ন পরস্পর অভিন্ন ছিল, অর্থাৎ তেইশের রাত। কারণ তিনি আবু সায়িদের হাদিসে বলেছেন: “তোমরা লাইলাতুল কদর শেষ দশের বেজোড় রাতে তালাশ কর, আমি
দেখছি আমি মাটি ও পানিতে সেজদা করছি। (আবু সায়িদ বলেন:) আমাদের ওপর
একুশের রাতে বৃষ্টি বর্ষিত হয়েছিল। এ হিসেবে দেখা যায় আবু সায়িদের
হাদিসে লাইলাতুল কদর শেষ সাতে ছিল না। ইমাম তাহাভি বলেন: এ ব্যাখ্যা হিসেবে
হাদিসের মধ্যে কোন বৈপরিত্ব থাকে না”।
[92] শারহুন নববী: (৮/৭০), আল-মুফহিম: (৩/২৪৮), শারহু ইব্নুল মুলাক্কিন আলাল উমদাহ: (৫/৪২৯), ইব্নু আব্দিল বার আসরাম থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: আমি শুনেছি আহমদ ইব্ন হাম্বলকে ইতিকাফকারী নারীদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছে? তিনি বলেন: হ্যাঁ, নারীরা ইতিকাফ করেছে”। দেখুন: আত-তামহিদ: (১/১৯৫)
[95] ইব্ন বায রহ. বলেছেন: “বিশুদ্ধ মতে ইতিকাফ আরম্ভ করলে ওয়াজিব হয় না এবং জুমার কারণে তা ভঙ্গ হয় না”।
[97] শারহুন নববী: (৮/৬৯), আল-মুফহিম: (৩/২৪৫), মিনহাতুল বারি: (৪/৪৬৪), হাশিয়াতুস সিনদি আলান নাসায়ি: (২/৪৫)
[102] এটা ইমাম কুরতুবি উল্লেখ করেছেন, অতঃপর তিনি বলেছেন: “অথবা তার ইতিকাফে বহাল থাকলে এ আশঙ্কার জন্ম হত যে, ইতিকাফ শুধু তার জন্য খাস, নারীদের জন্য নয়”। আল-মুফহিম: (৩/২৪৬), ইব্ন বাত্তাল রহ. বলেছেন: “তিনি তাদের অন্তরকে খুশি করার জন্য ইতিকাফ পিছিয়ে দেন, যেন এমন না হয় তিনি ইতিকাফ করবেন, আর তারা ইতিাকাফ করবে না”। শারহুল বুখারি: (৪/১৬৯), শায়খ যাকারিয়া আনসারি উল্লেখ করেছেন, তিনি তাদেরকে কঠোরভাবে নিষেধ করার জন্য ইতিকাফ ত্যাগ করেছেন, অথবা মসজিদ সংকীর্ণ হয়ে যাবে আশঙ্কায়। দেখুন: মিনহাতুল বারি: (৪/৪৪)
[103] এটা জমহুরের অভিমত, যেমন যুহরি, রাবিয়াহ, মালেক, আওযায়ি, আবু হানিফা ও শাফি, ইব্ন বাত্তাল তাদের থেকে এ বাণী নকল করেছেন: (৪/১৭৪), ইমাম আহমদ অনুরূপ বলেছেন: (৪/৪৮৭)
[114] শারহু ইব্ন বাত্তাল: (৪/১৫৭), ইব্ন মুলাক্কিন ফি শারহিল উমদাতে বলেন: “নির্ভরযোগ্য সকল আলেম একমত যে, লাইলাতুল সর্বদা বিদ্যমান আছে এবং পৃথিবীর শেষ বছর পর্যন্ত বিদ্যমান থাকবে”। আত-তামহিদ: (২/২০০)
[116] দেখুন: মালেক: (১/৬০), বুখারি: (১৯৪১), মুসলিম: (২৯৭), আবু দাউদ: (২৪৬৯), সর্বশেষ বর্ণনা বুখারি: (১৯২৪) ও মুসলিম: (১/৩১) এর ভূমিকায় রয়েছে।
[117] দেখুন: মূল হাদিস বুখারি: (১৯৪১) ও মুসলিমে: (২৯৭), রয়েছে, তবে এ বর্ণনা নাসায়ি ফিল কুবরা থেকে নেয়া: (৩৩৬৯)
[119] আবু দাউদ: (২৪৭৩), দারা কুতানি: (২/২০১), তিনি বলেছেন এখানে ইমাম জুহরি রহ. এর কথা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বায়হাকি ফিস সুনান: (৪/৩২১), তিনি বলেছেন এটা উরওয়া রহ. এর বাণী। দেখুন: (ফাতহুল বারি: (৪/২৭৩), আত-তামহিদ: (৮/৩২০)
[120] আত-তামহিদ: (৮/৩২৪), তিনি এ ব্যাপারে ইজমা নকল করেছেন: (২২/১৩৭), অনুরূপ ইজমা নকল করেছেন ইমাম নববী শরহে মুসলিমে: (১/১৩৪), আরো দেখুন: শাহরু ইব্নু বাত্তাল: (৪/১৬৪))
[129] আবু দাউদের টিকায় মাআলেমুস সুনান: (২/৮৩৪), শারহু ইব্ন বাত্তাল: (৪/১৬৬), শারহু ইব্ন মুলাক্কিন আলাল উমদাহ: (৫/৪৩৭), আউনুল মাবুদ: (৭/১০২)
[137] তিরমিযি: (৩৫১৩), ইব্ন মাজাহ: (৩৮৫০), নাসায়ি ফিল কুবরা: (১০৭০৮), আহমদ: (৬/১৭১), হাকেম হাদিসটি সহিহ বলেছেন, এবং বলেছেন: বুখারি ও মুসলিমের শর্ত মোতাবেক: (১/৭১২)
[146] আহমদ: (১/২৪০), বায়হাকি: (৪/৩১২), তাবরানি ফিল কাবির: (১১/৩১১), হাদিস নং: (১১৮৩৬), হায়সামি ফি মাজমাউয যাওয়ায়েদ’: (৩/১৭৬) গ্রন্থে বলেন: হাদিসটি ইমাম আহমদ বর্ণনা করেছেন, এর সকল বর্ণনাকারী সহিহ গ্রন্থের বর্ণনাকারী। শায়খ আহমদ শাকের হাদিসটি সহিহ বলেছেন, (২১৪৯)।
[147] বুখারি: (৩০৮৪), মুসলিম: (১১৫৫), তিরমিযি: (৭৬৫), নাসায়ি: (৪/১৬৮), ইব্ন মাজাহ: (১৬৪০), আহমদ: (৫/৩৩৫)
[154] সহিহ ইব্ন হিব্বান: (৬৮৬৭), ইব্ন আব্বাসের হাদিসে দুর্বলতা রয়েছে, কিন্তু হায়সামি তাকে শক্তিশালী বলেছেন, মাজমাউয যাওয়ায়েদ: (৯/৪৬)
[159] আত-তামহিদ: (৭/১৮৫)
_________________________________________________________________________________
সংকলন: ইবরাহিম ইব্ন মুহাম্মাদ আল-হাকিল
অনুবাদক: সানাউল্লাহ নজির আহমদ
সম্পাদনা : আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া
সূত্র : ইসলাম প্রচার ব্যুরো, রাবওয়াহ, রিয়াদ, সৌদিআরব
আরও পড়ুনঃ লাইলাতুল কদর: রমাদানের উপহার
আরও পড়ুনঃ ‘লাইলাতুল কদর’ এ কি কি ইবাদত করবেন?
আরও পড়ুনঃ প্রশ্নোত্তরে রমযান ও ঈদ (১ম পর্ব)
আরও পড়ুনঃ প্রশ্নোত্তরে রমযান ও ঈদ (২য় পর্ব)
আরও পড়ুনঃ কুরআন ও সুন্নাহ্র আলোকে রাতের সালাত
আরও পড়ুনঃ রমযান মাসে যদি সব শয়তান শৃঙ্খলাবদ্ধ থাকে তাহলে এ মাসে মানুষ নিয়মিতভাবে পাপ করতে থাকে কীভাবে?
আরও পড়ুনঃ নামায নষ্ট করলে সিয়াম কবুল হয় না
আরও পড়ুনঃ রমজান বিষয়ক ফতোয়া
আরও পড়ুনঃ সিয়াম বিষয়ক নির্বাচিত ফাতওয়া (১ম পর্ব)
আরও পড়ুনঃ সিয়াম বিষয়ক নির্বাচিত ফাতওয়া (২য় পর্ব)
আরও পড়ুনঃ সিয়াম বিষয়ক নির্বাচিত ফাতওয়া (৩য় পর্ব)
আরও পড়ুনঃ সাওম বিষয়ক আধুনিক কিছু মাসআলা
আরও পড়ুনঃ রোযাবস্থায় বীর্যপাত এবং স্বপ্নদোষের বিধান
আরও পড়ুনঃ মাহে রামাযান: অসংখ্য কল্যাণের হাতছানি
আরও পড়ুনঃ রোযার ফযীলত ও শিক্ষা: আমাদের করণীয়
আরও পড়ুনঃ রমাদান মাসের ৩০ আমল
আরও পড়ুনঃ রাসূল যেভাবে রমজান যাপন করেছেন (১ম পর্ব)
আরও পড়ুনঃ রাসূল যেভাবে রমজান যাপন করেছেন (২য় পর্ব)
আরও পড়ুনঃ মুমিনদের জন্য মাহে রমজানের হাদিয়া
আরও পড়ুনঃ রোজার আদব
আরও পড়ুনঃ সাধারণ ভুল যেগুলো রমজানের সময় আমরা করে থাকি
আরও পড়ুনঃ রামাযানের ভুল-ত্রুটি
আরও পড়ুনঃ যাকাত বিধানের সারসংক্ষেপ
আরও পড়ুনঃ জাকাতের গুরুত্ব, ফজিলত ও ব্যয়ের খাতসমূহ
আরও পড়ুনঃ যাকাতুল ফিতর বা ফিতরা
আরও পড়ুনঃ রমজান ও পরবর্তী সময়ে করণীয়
“রমজান মাস” বিষয়ের উপর আরও পড়তে এইখানে ক্লিক করুন।
“রোজা” বিষয়ের উপর আরও পড়তে এইখানে ক্লিক করুন।
পোস্টটি ভালো লাগলে শেয়ার করতে ভুলবেন না কিন্তু।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন