রমযানের বিষয়ভিত্তিক হাদিস : শিক্ষা ও মাসায়েল (৪র্থ পর্ব)
ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু
থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: “হে আল্লাহর রাসূল, আমি জাহেলি যুগে মানত করেছি, একরাত
মসজিদে হারামে ইতিকাফ করব। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন: তুমি
তোমার মানত পূর্ণ কর, অতঃপর তিনি একরাত ইতিকাফ করেন”। বুখারি ও মুসলিম।
মুসলিমের এক বর্ণনায়
রয়েছে, ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করেছেন “জিইরানা” নামক স্থানে, তায়েফ থেকে ফিরে। তিনি বলেন: হে আল্লাহর রাসূল, আমি জাহেলি যুগে মানত করেছি
মসজিদে হারামে একরাত ইতিকাফ করব, আপনার সিদ্ধান্ত কি? তিনি বললেন: যাও, একদিন
ইতিকাফ কর”।[1]
অপর বর্ণনায় রয়েছে, “আমি যখন ইসলাম গ্রহণ করেছি, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামকে এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছি, তিনি বলেছেন: তুমি তোমার মানত পূর্ণ কর”।[2]
শিক্ষা ও মাসায়েল:
এক. জাহেলি যুগে ইতিকাফ
ও মানত প্রচলিত ছিল।
দুই. ইসলাম পূর্বের
মানত ইসলাম গ্রহণ করার পর পূর্ণ করা বৈধ, কেউ তা পূর্ণ করা ওয়াজিব বলেছেন।
তিন. ওমর রাদিয়াল্লাহু
আনহুর জাহেলি যুগের মানত থেকে দায় মুক্ত হওয়ার আগ্রহ, এটা তার তাকওয়া ও পরহেযগারি
প্রমাণ করে।
চার. ওয়াদা পূর্ণ করার
গুরুত্ব, কখনো তার খেলাফ করা বৈধ নয়। নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওমরকে তা
পূর্ণ করার নির্দেশ দিয়েছেন, অথচ তা জাহেলি যুগের ওয়াদা ছিল।[3]
পাঁচ. এ হাদিস থেকে
প্রমাণিত হয় যে, একদিন অথবা একরাত ইতিকাফ করা বৈধ।
সাত. যারা বলেছেন সওম
ব্যতীত ইতিকাফ শুদ্ধ, আলেমদের দু’ধরণের বক্তব্য থেকে তাদের কথা সঠিক। এ কারণে রোগী ইতিকাফ করতে
পারবে, যে রোগের জন্য সওম ভঙ্গ করছে”।[5]
আট. অজানা বিষয় আলেমদের
নিকট জিজ্ঞাসা করা, যেমন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু তার মানত সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করেছেন। অনুরূপ যাকে প্রশ্ন করা হয়,
তার ওয়াজিব বলা, গোপন না করা।[6]
নয়. কেউ যদি তিনটি
মসজিদ ব্যতীত অন্য কোথাও ইতিকাফের মানত করে, আর সেখানে পৌঁছতে দীর্ঘ সফরের প্রয়োজন
হয়, তাহলে সে মানত পূর্ণ জায়েয নয়। কারণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন: “তিনটি মসজিদ ব্যতীত সফর করা যাবে না”। তবে যদি সফরের প্রয়োজন না হলে জায়েয
আছে।[7]
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«مَنْ مَاتَ وعَلَيهِ
صِيامٌ صَامَ
عَنْهُ وليُّهُ»
متفق عليه
.
ইব্ন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন:
«جَاءَ رَجُلٌ إلى
النَّبيِّ ﷺ
فَقالَ: يا رَسولَ الله، إن أُمِّي ماتَتْ وعَليها صَومُ شَهْرٍ، أَفَأَقْضِيهِ عَنْهَا؟ فَقالَ عَليهِ الصَّلاة
والسَّلام:
لَوْ كانَ على أُمِّكَ دينٌ أَكُنْتَ قَاضِيْهِ عَنها؟ قالَ:
نعم، قال:
فَدَينُ الله أَحَقُّ أَنْ يُقضَى»
رواه الشيخان.
“এক ব্যক্তি নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট আসল, অতঃপর সে বলল: হে আল্লাহর রাসূল, আমার
মা মারা গেছে, তার জিম্মায় এক মাসের রোযা রয়েছে, আমি কি তার পক্ষ থেকে কাযা করব? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: যদি তোমার
মায়ের ওপর ঋণ থাকে, তার পক্ষ থেকে তুমি কি তা আদায় করবে? সে বলল:
হ্যাঁ। তিনি বললেন: অতএব আল্লাহর ঋণ বেশী হকদার, যা কাযা করা উচিত”। বুখারি ও
মুসলিম।
বুখারি ও মুসলিমের অপর বর্ণনায় আছে:
«أنَّ امرأةً جاءَتْ إلى النَّبيِّ ﷺ فَقَالتْ: يا رَسُولَ الله، إنَّ أُمِّي مَاتَتْ وعَلَيْهَا صَوْمُ نَذْرٍ أَفَأَصُومُ عَنْهَا؟ قالَ: أرَأَيتِ لَوْ كَانَ عَلَى أُمُّكِ دَيْنٌ فَقَضَيتِهِ
أَكَانَ يُؤْدِي
ذلكَ عنها؟
قالت: نعَم،
قالَ: فَصُومِي
عَنْ أُمِّكِ».
“জনৈক নারী নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এসে বলল: হে আল্লাহর রাসূল, আমার মা মারা
গেছে, তার উপর মান্নতের সওম রয়েছে, আমি কি তার পক্ষ থেকে সওম রাখব? তিনি বললেন: তুমি কি মনে কর, তোমার মার ওপর যদি ঋণ থাকে, আর তুমি
তা আদায় কর, তাহলে কি যথেষ্ট হবে? সে বলল: হ্যাঁ, তিনি বললেন: তোমার মায়ের পক্ষ
থেকে তুমি সওম রাখ”।[9]
বুরাইদা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:
«بينَا أنَا جَالسٌ عندَ رَسولِ الله ﷺ إذ أتَتْهُ امرأةٌ فقالتْ:
إنِّي تَصَدَّقْتُ على أمِّي بجَاريةٍ وإنها ماتتْ.
قالَ:
فقالَ:
وجَبَ أَجرُكِ وردَّها عليكِ الميراث، قالتْ:
يا رسولَ الله، إنَّه كانَ عليها صومُ شَهرٍ أفَأَصُومُ عنها؟ قال:
صُومِي عنهَا، قالتْ:
إنَّها لمْ
تَحُجَّ قَطُ،
أفَأَحُجُّ عنهَا؟
قال: حُجِّي
عنها» رواه
مسلم.
“আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের
নিকট বসে ছিলাম, ইত্যবসরে তার নিকট এক নারী এসে বলল: আমি
আমার মাকে এক “দাসী” সদকা করেছি, কিন্তু সে মারা গেছে।
বর্ণনাকারী বলেন: সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন: তোমার সওয়াব হয়ে গেছে, তুমি তা মিরাস হিসেবে ফিরিয়ে নাও। সে বলল: হে আল্লাহর রাসূল, তার জিম্মায় একমাসের সওম ছিল, আমি কি
তার পক্ষ থেকে সওম রাখব? তিনি বললেন: তার পক্ষ থেকে সওম রাখ।
সে বলল: তিনি কখনো হজ করেননি, আমি কি তার পক্ষ থেকে হজ করব? তিনি বললেন: তার পক্ষ থেকে হজ কর”।[10] মুসলিম।
শিক্ষা ও মাসায়েল:
এক. শারীরিক ইবাদতে প্রতিনিধিত্ব হয় না এটাই মূলনীতি,
তবে সিয়াম এ নীতির অন্তর্ভুক্ত নয়, যেমন নয় হজ। হাফেয ইব্ন আব্দুল বার রহ: বলেছেন: “সালাতের ব্যাপারে
সবাই একমত যে, কেউ কারো পক্ষ থেকে সালাত আদায় করবে না, না ফরয, না সুন্নত, না নফল, না জীবিত ব্যক্তির পক্ষ থেকে, না মৃত ব্যক্তির। অনুরূপ
জীবিত ব্যক্তির পক্ষ থেকে সিয়াম, জীবিতাবস্থায় একের সওম অপরের পক্ষ থেকে
আদায় হবেনা। এতে ইজমা
রয়েছে, কারো দ্বিমত নেই। কিন্তু যে
মারা যায়, তার জিম্মায় যদি সিয়াম থাকে, তার ব্যাপারে পূর্বাপর আলেমদের ইখতিলাফ
রয়েছে”।[11]
দুই. মৃত ব্যক্তির জিম্মায় যদি সিয়াম থাকে, তার দুই
অবস্থা:
(১). কাযার সুযোগ না পেয়ে মারা যাওয়া, সময়ের সংকীর্ণতা,
অথবা অসুস্থতা, অথবা সফর, অথবা সওমের অক্ষমতার দরুন কাযার সুযোগ পায়নি, অধিকাংশ
আলেমদের মতে তার উপর কিছু নেই।
(২) কাযার সুযোগ পেয়ে মারা যাওয়া, এ ক্ষেত্রে সুন্নত
হচ্ছে তার অভিভাবক তার পক্ষ থেকে সওম রাখবে।
তিন. মৃত ব্যক্তিকে দায়মুক্ত করা বৈধ, আত্মীয়-স্বজন বা
অন্য কারো পক্ষ থেকে। হাদিসে বর্ণিত «صَامَ عَنْهُ وليُّهُ» অর্থ হচ্ছে ওয়ারিশ ও উত্তরসূরি, অধিকাংশ ক্ষেত্রে এমন
হয়, অন্যথায় তার পক্ষ থেকে তার নিকট আত্মীয়, অথবা দূরের কারো সিয়াম পালন করা বৈধ,
ঋণ আদায়ের ন্যায়। শায়খুল ইসলাম ইব্ন তাইমিয়াহ রহ. বলেছেন: “নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা ঋণের সাথে তুলনা করেছেন, ঋণ যে কেউ কাযা করতে পারে, অতএব
প্রমাণিত হয় যে, এটা যে কারো পক্ষ থেকে করা বৈধ, শুধু সন্তানের সাথে খাস নয়।[12]
চার. মৃত্যু ব্যক্তির
মানত কাযা করা ওয়াজিব নয়, যেমন নয় অভিভাবকদের উপর তার ঋণ পরিশোধ করা, তবে এটা মৃত
ব্যক্তিকে দায়মুক্ত করার জন্য তাদের পক্ষ থেকে অনুগ্রহ।[13]
পাঁচ. মৃতের জিম্মায় যদি অনেক সিয়াম থাকে, সে
সংখ্যানুসারে তার পক্ষ থেকে কতক লোক যদি একদিন সিয়াম পালন করে, তাহলে শুদ্ধ হবে,
তবে যে সওমে ধারাবাহিকতা জরুরী তা ব্যতীত, যেমন যিহার ও হত্যার কাফফারা, এ
ক্ষেত্রে একজন ধারাবাহিকভাবে সিয়াম পালন করবে।[14]
ছয়. যদি তার পক্ষ থেকে কেউ সিয়াম পালন না করে, তবে তার
অভিভাবকগণ তার পক্ষ থেকে প্রত্যেক দিনের পরিবর্তে একজন
মিসকিনকে খাদ্য দিবে, তার পরিত্যক্ত সম্পদ থেকে দেয়া বৈধ।[15]
সাত. ওয়ারিশগণ যদি
কাউকে সওমের জন্য ভাড়া করে, তাহলে শুদ্ধ হবে না, কারণ নেকির বিষয়ে ভাড়া করা বৈধ
নয়।[16]
আট. যদি মানত করে
মুহাররাম মাসে সিয়াম পালন করবে, অতঃপর সে যিলহজ মাসে মারা যায়, তার পক্ষ থেকে কাযা
করা হবে না, কারণ সে ওয়াজিব হওয়ার সময় পায়নি, যেমন কেউ মারা গেল রমযানের পূর্বে।[17]
নয়. যার ওপর রমযানের কতক দিনের সিয়াম ওয়াজিব, সে যদি তার
নিকট আত্মীয়ের কাযা অথবা কাফফারা অথবা মান্নতের সওম পালন করতে চায়, তার উপর ওয়াজিব
আগে নিজের সওম পালন করা, অতঃপর তার নিকট আত্মীয়ের সওম পালন করা।[18]
দশ. বিশুদ্ধ মত অনুযায়ী কাযা সওমে ধারাবাহিকতা শর্ত নয়,
তবে ধারাবাহিকভাবে কাযা করা উত্তম, কারণ তার সাথে আদায়ের মিল থাকে।[19]
এগারো. কাফফারার দু’মাস
সিয়ামের ধারাবাহিকতা ঈদের দিনের কারণে ভঙ্গ হবে না।[20]
আবু বাকরা রাদিয়াল্লাহু আনহু
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন:
«شَهْرانِ لا يَنْقُصَانِ: شَهْرا عِيدِ رَمضَانَ
وذُو الحِجَّة».
“দু’টি মাস কম হয় না: রমযানের ঈদ ও যিলহজের মাস”। অপর বর্ণনায় আছে:
«شَهْرا عِيدٍ لا يَنْقُصَانِ: رَمضَانُ وذُو الحِجَّةَ» رواه الشيخان .
এ হাদিসের অর্থ কেউ বলেছেন: এ দু’টি
মাস: রমযান ও যিলহজ, একবছর একসঙ্গে অসম্পূর্ণ হয় না। একমাস অসম্পূর্ণ হলে অপর মাস
পূর্ণ হয়। সাধারণত এমন
হয়।
শিক্ষা ও মাসায়েল:
এক. রমযান ও যিলহজ এ দু’মাসকে ইসলাম বিশেষ মর্যাদায়
ভূষিত করেছে, কারণ এর সাথে সিয়াম ও হজ সম্পৃক্ত।[23]
দুই. ঈদুল ফিতরকে রমযান মাসের সাথ সম্পৃক্ত করা বৈধ, অথচ
তা শাওয়ালের প্রথম তারিখে অনুষ্ঠিত হয়। ইমাম
আহমদ রহ.
কর্তৃক বর্ণিত এক হাদিসে এসেছে:
«شَهْرَانِ لا يَنْقُصَانِ
في كُلِّ
وَاحِدٍ مِنْهُما
عِيدٌ: رَمَضَانُ
وذُو الحِجَّة».
তিন. মাস আরম্ভের ক্ষেত্রে ভুল হওয়া স্বাভাবিক, তবে এতে
কোন সমস্যা নেই যদি লোকেরা বৈধভাবে চাঁদ দেখে অথবা চাঁদ দেখা অসম্ভব হলে ত্রিশ দিন
পূর্ণ করার উপর আমল করে।
চার. রমযান ও যিলহজ মাসের ফযিলত ও বিধান বান্দাগণ অবশ্যই
লাভ করবে, রমযান ত্রিশ দিন হোক অথবা ঊনত্রিশ দিনের, নবম দিন ওকুফে আরাফ হোক বা না অন্যদিনে,
যদি তারা যথাযথ চাঁদ দেখার দায়িত্ব পালন করে।[25]
পাঁচ. এ হাদিসের শিক্ষা: এসব হাদিসে তার মনের অতৃপ্তি ও
অন্তরের সন্দেহ দূর করা হয়েছে, যে ঊনত্রিশ দিন সিয়াম পালন করল অথবা ভুলে গায়রে
আরাফার দিন ওকুফ করল, যেমন কেউ যিলহজ মাসের চাঁদ দেখার মিথ্যা সাক্ষী দিল, ফলে
লোকেরা আট তারিখে ওকুফে আরাফা করল, এতে কোন সমস্যা নেই, ইবাদত বিশুদ্ধ ও সওয়াব পরিপূর্ণ হবে ইনশাআল্লাহ।[26]
ছয়. এ হাদিস প্রমাণ করে যে, আমলের সওয়াব সর্বদা কষ্টের
ওপর নির্ভর করে না, বরং কখনো আল্লাহ অসম্পূর্ণ মাসকে পূর্ণ মাসের সাথে যুক্ত করে
পরিপূর্ণ সওয়াব প্রদান করেন।[27]
সাত. এ হাদিস তাদের দলিল, যারা বলে রমযানের জন্য এক নিয়ত
যথেষ্ট, কারণ আল্লাহ তা‘আলা পূর্ণ মাসকে এক
এবাদত গণ্য করেছেন।
ইব্ন
ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:
«فَرَضَ رَسُولُ الله ﷺ زَكَاةَ الفِطْرِ صَاعَاً مِنْ تَمرٍ
أَوْ صَاعاً
مِنْ شَعِيرٍ
عَلَى الْعَبْدِ
وَالحُرِّ وَالذَّكَرِ
وَالأُنْثَى وَالصَّغِيرِ
وَالكَبِيرِ مِنَ المسْلِمِينَ وَأَمَرَ بها أَنْ تُؤَدَّى قَبْلَ خُرُوجِ النَّاسِ إِلى الصَّلاةِ» رَوَاهُ الشَّيْخَان.
“গোলাম, স্বাধীন, পুরুষ, নারী,
ছোট, বড় সকল মুসলিমের ওপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ‘সা’
তামার (খেজুর), অথবা এক ‘সা’ গম যাকাতুল ফিতর ফরয করেছেন এবং সালাতের পূর্বে তা
আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন”।[28]
বুখারির
অপর বর্ণনায় আছে, নাফে রহ. বলেছেন: “ইব্ন ওমর ছোট-বড় সবার পক্ষ থেকে তা আদায়
করতেন, তিনি আমার সন্তানদের পক্ষ থেকে পর্যন্ত আদায় করতেন। যারা তা গ্রহণ করত, ইব্ন
ওমর তাদেরকে তা প্রদান করতেন, তিনি ঈদুল ফিতরের একদিন অথবা দু’দিন পূর্বে তা আদায়
করতেন”।[29]
আবু
সায়িদ খুদরি রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: “আমরা যাকাতুল ফিতর
আদায় করতাম এক ‘সা’ খানা, অথবা এক ‘সা’ গম, অথবা এক ‘সা’ খেজুর, অথবা এক ‘সা’
পনির, অথবা এক ‘সা’ কিশমিশ দ্বারা”।[30]
ইব্ন
আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: “রোযাদারকে অশ্লীলতা থেকে
পবিত্র করা ও মিসকিনদের খাদ্যের ব্যবস্থা স্বরূপ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম যাকাতুল ফিতর ফরয করেছেন। সালাতের পূর্বে যে আদায় করল, তা গ্রহণযোগ্য
যাকাত, যে তা সালাতের পর আদায় করল, তা সাধারণ সদকা”।[31]
কায়স
ইব্ন সাদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: “যাকাত ফরয হওয়ার
পূর্বে আমাদেরকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সদকাতুল ফিতর আদায়
করার নির্দেশ দিয়েছেন, যখন যাকাত ফরয হল, তিনি আমাদের নির্দেশ দেননি, নিষেধও
করেননি, তবে আমরা তা আদায় করতাম”।[32]
শিক্ষা ও মাসায়েল:
এক.
যাকাতুল ফিতর সকল মুসলিমের ওপর ফরয, যা ফরয হয়েছে যাকাতের পূর্বে। যাকাত ফরযের পর পূর্বের নির্দেশের কারণে তা এখনো ফরয।
দুই.
প্রত্যেক মুসলিমের নিজ ও নিজের অধীনদের পক্ষ থেকে, যেমন স্ত্রী-সন্তান ও যাদের
ভরণ-পোষণ তার ওপর ন্যস্ত, যাকাতুল ফিতর আদায় করা ওয়াজিব।
তিন.
স্ত্রী-সন্তান যদি কর্মজীবী অথবা সম্পদশালী হয়, তাহলে তাদের প্রত্যেকের নিজের পক্ষ
থেকে যাকাতুল ফিতর আদায় করা উত্তম, কারণ তারা প্রত্যেকে যাকাতুল ফিতর প্রদানে আদিষ্ট।
হ্যাঁ, যদি তাদের অভিভাবক তাদের পক্ষ থেকে আদায় করে, তাহলে জায়েয আছে, যদিও তারা সম্পদশালী।
চার.
যাকাতুল ফিতরের মূল্য দেয়া যথেষ্ট নয়, এটা জমহুর আলেমের অভিমত। কারণ নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নির্দেশ দেননি, তিনি এরূপ করেননি, তার কোন
সাহাবি এরূপ করেনি, অথচ প্রতি বছর যাকাতুল ফিতর আসত। অধিকন্তু ফকিরকে খাদ্য দিলে সে
নিজে ও তার পরিবার তার দ্বারা উপকৃত হয়, অর্থ প্রদানের বিপরীত, কারণ সে অর্থ জমা
করে পরিবারকে বঞ্চিত করতে পারে। দ্বিতীয়ত মূল্য আদায়ের ফলে শরিয়তের এ বিধান তেমন
আড়ম্বরতা পায়না।
পাঁচ.
যাকাতুল ফিতর আদায়ের প্রথম সময় আটাশে রমযান, সাহাবায়ে কেরাম ঈদের একদিন অথবা
দু’দিন পূর্বে তা আদায় করতেন, সর্বশেষ সময় ঈদের সালাত, যেমন হাদিসে এসেছে।
ছয়.
হকদার ফকির-মিসকিনদের এ যাকাত দিতে হবে, কারণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন: “মিসকিনদের খাদ্য স্বরূপ”। প্রতিবেশী ও আত্মীয়দের দেয়া ভুল যদি তারা অভাবী
না হয়, যেমন কতক লোক কুরবানি ও আকিকার গোস্তের ন্যায় যাকাতুল ফিতর পরস্পর আদান
প্রদান করে, এটা সুন্নতের বিপরীত। কারণ এটা যাকাত, হকদারকে দেয়া ওয়াজিব, কুরবানি ও
আকিকার গোস্তের অনুরূপ নয়, যা হাদিয়া হিসেবে দেয়া বৈধ। আরেকটি ভুল যে, কতক মুসলিম
প্রতি বছর নির্দিষ্ট পরিবারকে যাকাতুল ফিতর আদায় করে, অথচ বর্তমান সে সচ্ছল হতে
পারে, কিন্তু পূর্বের ন্যায় যাকাত দিতে থাকে, এটা ঠিক নয়।
সাত.
নিজ দেশের অভাবীদের যাকাতুল ফিতর দেয়া উত্তম, তবে অন্য দেশে দেয়া জায়েয, বিশেষ করে
যদি সেখানে অভাবের সংখ্যা বেশী থাকে, তাদের চেয়ে বেশী অভাবী নিজ দেশের কারো
সম্পর্কে জানা না থাকে, অথবা তার দেশের অভাবীদের দেয়ার অন্য লোক থাকে।
আট.
যাকাতুল ফিতরের কতক বিধান ও উপকারিতা:
(১).
বান্দার ওপর আল্লাহর নিয়ামত প্রকাশ করা হয়, যেমন তিনি পূর্ণ মাস সিয়ামের তওফিক ও
রমযান শেষে পানাহারের অনুমতি প্রদান দিয়েছেন। আল্লাহ তা‘আলা
বলেন:
﴿وَلِتُكۡمِلُواْ ٱلۡعِدَّةَ وَلِتُكَبِّرُواْ ٱللَّهَ عَلَىٰ مَا
هَدَىٰكُمۡ وَلَعَلَّكُمۡ تَشۡكُرُونَ ١٨٥﴾ [البقرة: 185]
“আর যাতে তোমরা সংখ্যা পূরণ কর এবং তিনি তোমাদেরকে যে হিদায়াত
দিয়েছেন, তার জন্য আল্লাহর
বড়ত্ব ঘোষণা কর এবং যাতে তোমরা শোকর কর”।[33]
(২).
এটা শরীরের যাকাত, যা আল্লাহ পূর্ণ বছর সুস্থ রেখেছেন।
(৩).
যাকাতুল ফিতর বান্দার সিয়ামকে অশ্লীলতা থেকে পবিত্র করে, যেমন হাদিসে এসেছে,
যাকাতুল ফিতর রোযাদারকে অশ্লীলতা থেকে পবিত্র করে।
(৪).
যাকাতুল ফিতর দ্বারা ফকির-মিসকিনদের প্রতি অনুগ্রহ ও তাদেরকে ভিক্ষা থেকে মুক্তি
দেয়া হয়, যেন ঈদের দিন তারাও অন্যান্য মুসলিমদের ন্যায় আনন্দ ও বিনোদন করতে পারে।
(৫).
যাকাতুল ফিতর দ্বারা রোযাদারকে অনুগ্রহ ও অনুদানের প্রতি উৎসাহী করা হয় এবং তাকে
লোভ ও কৃপণতা থেকে রক্ষা করা হয়।
নয়.
এক মিসকিনকে এক পরিবার বা একাধিক ব্যক্তির সদকাতুল ফিতর দেয়া বৈধ, যেমন বৈধ একজনের
সদকাতুল ফিতর কয়েকজনকে ভাগ করে দেয়া।
দশ.
শেষ রমযানের সূর্যাস্তের ফলে সদকাতুল ফিতর ওয়াজিব হয়, যদি কেউ তার পূর্বে মারা
যায়, তার ওপর সদকাতুল ফিতর ওয়াজিব হবে না, কারণ সে ওয়াজিব হওয়ার আগে মারা গেছে।
অনুরূপ কেউ যদি সূর্যাস্তের পর জন্ম গ্রহণ করে, তার পক্ষ থেকে সদকাতুল ফিতর আদায়
করা ওয়াজিব নয়, তবে মোস্তাহাব।
এগারো.
কর্মচারী ও ভাড়াটে মজুরদের পক্ষ থেকে সদকাতুল ফিতর আদায় করা ওয়াজিব নয়, তবে
চুক্তির মধ্যে তাদের সাথে অনুরূপ শর্ত থাকলে আদায় করতে হবে। হ্যাঁ, অনুগ্রহ ও দয়া
হিসেবে তাদের পক্ষ থেকে মালিকের আদায় করা বৈধ।
বারো.
যদি সদকাতুল ফিতর আদায় করতে ভুলে যায়, ঈদের পর ছাড়া স্মরণ না হয়, তাহলে সে তখন
সদকা আদায় করবে, এতে সমস্যা নেই, কারণ ভুলের জন্য সে অপারগ।
তেরো.
যদি কাউকে সদকাতুল ফিতর ফকিরের কাছে পৌঁছে দেয়ার দায়িত্ব দেয়া হয়, তাহলে ঈদের আগে
তার নিকট তা পৌঁছে দেয়া জরুরী। তবে যদি কোন ফকির কাউকে সদকাতুল ফিতর তার জন্য
সংরক্ষণ করে রাখার দায়িত্ব দেয়, তাহলে ঈদের পর পর্যন্ত তার নিকট তা সংরক্ষণ করা
বৈধ।
উতাইবাহ
ইব্ন আব্দুর রহমান বলেন, আমার পিতা আব্দুর রহমান আমাকে বলেছেন: “আবু বাকরার নিকট
লাইলাতুল কদর উল্লেখ করা হল, তিনি বললেন: আমি যা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম থেকে শুনেছি, তা কখনো আমি শেষ দশদিন ব্যতীত তালাশ করি না। আমি তাকে
বলতে শুনেছি: লাইলাতুল কদর তোমরা রমযানের অবশিষ্ট নয় দিনে তালাশ কর, অথবা অবশিষ্ট
সাতদিনে তালাশ কর, অথবা অবশিষ্ট পাঁচদিনে তালাশ কর, অথবা অবশিষ্ট তিনদিনে তালাশ
কর, অথবা সর্বশেষ রাতে তালাশ কর”। তিনি বলেন: আবু বাকরাহ রমযানের বিশ দিন সারা
বছরের ন্যায় স্বাভাবিকভাবে সালাত আদায় করতেন, যখন শেষ দশক পদার্পণ করত, তখন তিনি
খুব ইবাদত করতেন”।[34]
মুআবিয়া ইব্ন আবু সুফিয়ান রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “তোমরা লাইলাতুল কদর সর্বশেষ
রাতে তালাশ কর”। ইব্ন খুজাইমাহ এ সম্পর্কে একটি অধ্যায় রচনা করেন: “রমযানের শেষ
রাতে লাইলাতুল কদর তালাশ করার নির্দেশ প্রসঙ্গে অধ্যায়, যদিও বছরের যে কোন সময় সে
রাত হতে পারে”।[35]
শিক্ষা ও মাসায়েল:
এক.
লাইলাতুল কদর শেষ দশকে, এর মধ্যে অধিক সম্ভাব্য হচ্ছে বেজোড় রাত, তবে অবশিষ্ট
রাতের বিবেচনায় জোড় রাতে হতে পারে যদি মাস ত্রিশ দিনের হয়, এ জন্য মুসলিমদের উচিত
শেষ দশকের প্রত্যেক রাতে লাইলাতুল কদর তালাশ করা।
দুই. সাহাবিদের
লাইলাতুল কদর অন্বেষণ করা ও তাতে রাত জাগার আগ্রহ।
তিন. কখনো
রমযানের সর্বশেষ রাতে লাইলাতুল কদর হতে পারে, যেমন বিভিন্ন হাদিস তার স্থানান্তর
হওয়া প্রমাণ করে।
চার.
ঊনত্রিশে রমযান অথবা ইমামের কুরআন খতমের পর সালাত, কুরআন তিলাওয়াত ও রাত জাগরণে
অলসতা না করা, কারণ মূল উদ্দেশ্য লাইলাতুল কদর, যা সর্বশেষ রাতে হতে পারে।
ইব্ন
ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«الشَّهْرُ
هَكَذا وَهَكَذا
وَهَكَذا، يَعْني:
ثَلاثينَ، ثُمَّ
قَالَ: وَهَكَذا
وَهَكَذا وَهَكَذا،
يَعْني: تِسْعاً
وعِشْرينَ، يَقُولُ:
مَرَّةً ثَلاثينَ،
ومَرَّةً تِسْعاً
وعِشْرينَ».
“মাস
এরূপ, এরূপ ও এরূপ। অর্থাৎ ত্রিশ দিন। অতঃপর তিনি বলেন: এরূপ, এরূপ ও এরূপ। অর্থাৎ
ঊনত্রিশ দিন। তিনি বলেন: কখনো ত্রিশ দিন, কখনো ঊনত্রিশ দিন”। বুখারি ও মুসলিম।
বুখারির
অপর বর্ণনায় আছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«إِنَّا
أُمَّةٌ أُمِّيةٌ
لا نَكْتُبُ
وَلا نَحْسُبُ،
الشَّهْرُ هَكَذا
وَهَكَذا، يَعْني:
مَرَّةً تِسْعَةً
وَعِشْرينَ، وَمَرَّةً
ثَلاثينَ».
“আমরা
উম্মী উম্মত, লেখা ও হিসাব জানি না, মাস হচ্ছে এরূপ ও এরূপ। অর্থাৎ কখনো ঊনত্রিশ ও
কখনো ত্রিশ”।
মুসলিমের
অপর বর্ণনায় আছে:
«الشَّهْرُ
كَذَا وكَذَا
وكَذَا، وصَفَّقَ
بِيَدَيْهِ مَرَّتَين
بِكُلِّ أَصَابِعْهما،
ونَقَصَ في
الصَّفْقَةِ الثَّالِثَةِ
إِبْهَامَ اليُمْنَى
أَوْ اليُسْرَى».
“মাস
এরূপ, এরূপ ও এরূপ। দুইবার উভয় হাতের পুরো আঙ্গুল দ্বারা ইশারা করলেন, তৃতীয়বার
ডান বা বাম হতের বৃদ্ধাঙ্গুলি কম দেখালেন”।
মুসলিমের
অপর বর্ণনায় আছে: ইব্ন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু এক
ব্যক্তিকে বলতে শুনেন:
«الَّليْلَةُ النِّصْفُ.
فَقَالَ لَهُ:
مَا يُدْرِيكَ أَنَّ الَّليْلَةَ النِّصْفُ؟ سَمِعْتُ رَسُولَ الله ﷺ يَقُولُ:
الشَّهْرُ هَكَذا وَهَكَذا، وَأَشِارَ بِأَصَابِعِهِ العَشْرِ مَرَّتَينِ، وَهَكَذا في الثّالِثَةِ، وَأَشَارَ بِأَصَابِعِهِ كُلِّهَا،
وَحَبَسَ أَوَ
خَنَسَ إِبْهَامَهُ».
“আজকের রাত মাসের অর্ধেক। তিনি
তাকে বললেন: কিভাবে বললে আজকের রাতটি মাসের অর্ধেক? আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি: মাস এরূপ ও এরূপ, তিনি দুই বার হাতের দশ আঙ্গুল
দ্বারা ইশারা করেন, তৃতীয়বার এভাবে ইশারা করেন, তিনি সব আঙ্গুল দ্বারা ইশারা করেন,
শুধু তার বৃদ্ধাঙ্গুলি বদ্ধ রাখেন”।[36]
সাদ
ইব্ন আবি ওয়াক্কাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে
বর্ণিত, তিনি বলেন: “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একহাত দ্বারা অপর
হাতের ওপর আঘাত করলেন, অতঃপর বলেন: “মাস এরূপ ও এরূপ, অতঃপর তৃতীয়বার এক আঙ্গুল কম
দেখান”।[37]
ইব্ন
আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন,
তিনি বলেছেন:
«أَتَاني جِبْريلُ عَلَيْهِ
السَّلامُ فَقَالَ:
الشَّهْرُ تِسْعٌ
وعِشْرُونَ يَوْماً»
رواه النسائي.
«لَما
صُمْنَا مَعَ
النَّبيِّ ﷺ
تِسْعاً وعِشْرينَ
أَكْثَرَ مما
صُمْنَا مَعَهُ
ثَلاثينَ»
“নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে আমরা অধিক সময় ঊনত্রিশ দিন সওম পালন করেছি,
ত্রিশ দিনের তুলনায়”।[39]
ইমাম
তিরমিযি বলেন: এ অধ্যায়ে ইব্ন ওমর, আবু হুরায়রা, আয়েশা, সাদ ইব্ন আবি ওয়াক্কাস, ইব্ন
আব্বাস, ইব্ন ওমর, আনাস, জাবের, উম্মে সালামা ও আবু বাকরা থেকে হাদিস বর্ণিত আছে
যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “মাস হয় ঊনত্রিশ দিনে”।[40]
শিক্ষা ও মাসায়েল:
এক.
চন্দ্র মাস, শরিয়তের বিধান যার উপর নির্ভরশীল, তা কখনো ত্রিশ, আবার কখনো ঊনত্রিশ
দিনের হয়।
দুই.
মাস যখন অসম্পূর্ণ হয়, সওয়াব পরিপূর্ণ হয়। ইব্ন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু
সংবাদ দিয়েছেন: তারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে অধিক সময় ঊনত্রিশ
সওম পালন করেছেন, ত্রিশ দিনের তুলনায়।
তিন.
এ হাদিস জ্যোতিষ্ক ও গণকদের প্রত্যাখ্যান করে। এ হাদিস আরো প্রমাণ
করে যে, শরয়ি বিধান সিয়াম, ফিতর ও হজ ইত্যাদি চাঁদ দেখার ওপর নির্ভরশীল, গণনার ওপর
নয়।
পাঁচ.
দুই মাস, তিন মাস ও চার মাস পর্যায়ক্রমে ঊনত্রিশে মাস হতে পারে, তবে চার মাসের
বেশী লাগাতার ঊনত্রিশ দিনে মাস হয় না।[42]
ছয়.
এ উম্মত উম্মী, কারণ এদের মধ্যে শিক্ষার হার কম, অনুরূপ তাদের নবী ছিলেন উম্মী,
যেমন আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন:
﴿هُوَ ٱلَّذِي بَعَثَ فِي ٱلۡأُمِّيِّۧنَ رَسُولٗا مِّنۡهُمۡ﴾ [الجمعة: 2]
﴿وَمَا كُنتَ تَتۡلُواْ مِن قَبۡلِهِۦ مِن كِتَٰبٖ
وَلَا تَخُطُّهُۥ بِيَمِينِكَۖ إِذٗا لَّٱرۡتَابَ ٱلۡمُبۡطِلُونَ ٤٨﴾ [العنكبوت: 48]
“আর তুমি তো
এর পূর্বে কোন কিতাব তিলাওয়াত করনি এবং তোমার নিজের হাতে তা লিখনি যে, বাতিলপন্থীরা এতে সন্দেহ পোষণ করবে”।[44]
এ
উম্মতের ওপর আল্লাহর মহান নিয়ামত যে, তিনি তাদেরকে এ মহান দ্বীন দান করেছেন। তারা অপর
থেকে এ কিতাব গ্রহণ করেনি, বরং তারা রাসূলের মাধ্যমে আল্লাহর পক্ষ থেকে গ্রহণ করেছে।[45]
সাত. এ উম্মত নিজেদের ইবাদত ও ইবাদতের সময়
নির্ধারণে শিক্ষা ও গণকদের মুখাপেক্ষী নয়, কারণ শরিয়ত তা ধার্য করেছে দেখার ওপর,
যা সবার নিকট সমান।[46]
আট. আমাদেরকে সিয়াম, সালাত ও অন্যান্য ইবাদত
সম্পাদনে শিক্ষা ও গণকের মুখাপেক্ষী হতে বলা হয়নি, তার নির্দেশ দেয়া হয়নি, বরং আমাদের
ইবাদতের সম্পর্ক প্রকাশ্য নিদর্শনের সাথে, যেখানে শিক্ষিত-অশিক্ষিত সবাই সমান।[47]
নয়. যে একমাস সিয়াম পালন করার মানত বা কসম করল,
যেমন রজব বা শাবান, অতঃপর যখন সিয়াম আরম্ভ করল, মাস ঊনত্রিশে শেষ হল, তাহলে সে
মানত বা কসম পুরো করল।[48]
দশ. কেউ যদি মানত করে অথবা কসম করে একমাস
সিয়াম পালন করবে, কিন্তু সে নির্দিষ্ট করেনি, সে যদি ঊনত্রিশ দিন সিয়াম পালন করে, ইনশাআল্লাহ যথেষ্ট হবে, কারণ মাস সাধারণত এরূপ হয়।[49]
এগারো. সন্দেহের দিন শাবানের মধ্যে গণ্য, তাকে
রমযান গণ্য করা ঠিক নয়, কারণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চাঁদ দেখার সাথে
রমযান সম্পৃক্ত করেছেন।[50]
বারো. হাদিস থেকে বুঝা যায়, চাঁদের জায়গা
নির্ধারণের জন্য আধুনিক যন্ত্র যেমন দূরবীন ইত্যাদির সাহায্য নেয়া দোষের নেই, চাঁদ
দেখার সুবিধার্থে। এটা হাদিসে নিষিদ্ধ গণনার অন্তর্ভুক্ত নয়, তবে চোখে দেখা অধিক
গ্রহণ যোগ্য।[51]
আবু আইয়ূব আনসারি রাদিয়াল্লাহু
আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«مَنْ صَامَ رَمَضَانَ
ثُمَّ أَتبَعَهُ
سِتاً مِنْ
شَوَّالَ كَانَ
كَصِيَامِ الدَّهرِ»
رواه مسلم.
“যে রমযানের সিয়াম পালন করল, অতঃপর তার অনুগামী করল শাওয়ালের ছয়টি,
তা পুরো বছর সিয়ামের ন্যায়”।[52]
সাওবান রাদিয়াল্লাহু
আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«صِيامُ رَمَضَانَ بِعَشرَةِ أَشْهُر، وصِيَامُ
السِّتَّةِ أيَّامٍ
بِشَهرَينِ فذَلك
صِيَامُ السَّنَة».
“রমযানের সিয়াম দশ
মাসের সমতুল্য, ছয়দিনের সিয়াম দুই মাসের সমতুল্য, এটাই পূর্ণ বছরের সিয়াম”। অপর বর্ণনায় রয়েছে:
«مَنْ صَامَ سِتَّةَ أيَّامٍ بَعْدَ الفِطْرِ كَانَ تَمامَ السَّنة ﴿مَنْ جَاءَ بِالحَسَنَةِ فَلَهُ عَشْرُ أَمْثَالِهَا﴾
[الأنعام:160]» رواهُ أحمدُ
وابنُ ماجه.
“যে ঈদুল ফিতরের পর
ছয়দিন সিয়াম পালন করবে, তা পূর্ণ বৎসরে পরিণত হবে। আল্লাহ তা‘আলা
বলেন: “যে সৎকাজ নিয়ে এসেছে, তার জন্য হবে তার দশ গুণ”[53]।[54]
শিক্ষা ও মাসায়েল:
এক. শাওয়ালের ছয় রোযার
ফযিলত প্রমাণিত হয়। প্রতি বছর রমযানের সিয়ামের সাথে যে শাওয়ালের ছয় রোযা পালন করল,
সে সারা বছর রোযা রাখল।
দুই. বান্দার ওপর
আল্লাহর অশেষ রহমত, তিনি বান্দার অল্প আমলের বিনিময়ে অনেক সওয়াব ও বিরাট প্রতিদান
প্রদান করেন।
তিন. ঈদের পর দ্রুত
শাওয়ালের ছয় রোযা পালন করা, যেন এ রোযা ছুটে না যায়, কিংবা কোন ব্যস্ততা এসে না
পড়ে।
চার. শাওয়ালের শুরু-শেষ
বা মাঝে, এক সঙ্গে বা পৃথকভাবে এ রোযা রাখা বৈধ। বান্দা যেভাবে তা সম্পাদন করুক, সে
আল্লাহর নিকট এর পূর্ণ সওয়াব লাভ করবে, যদি আল্লাহ তা কবুল করেন।[55]
পাঁচ. যার ওপর রমযানের কাযা রয়েছে, সে প্রথমে কাযা আদায় করবে, অতঃপর
শাওয়ালের ছয় রোযা আদায় করবে। হাদিসের বাণী থেকে এমন বুঝে আসে, কারণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “যে রমযানের রোযা রাখল” অর্থাৎ পূর্ণ রমযান। যার ওপর কাযা রয়েছে, সে পূর্ণ রমযান রোযা
রাখেনি। তার ওপর
পূর্ণ রমযান রোযা রাখা প্রয়োগ হয় না, যতক্ষণ না সে কাযা করে।[56] দ্বিতীয়ত নফল ইবাদতের চেয়ে ওয়াজিব কাযা আদায় করা বেশী শ্রেয়।
ছয়. আল্লাহ তা‘আলা ফরযের আগে নফলের বিধান রেখেছেন, যেমন নফলের বিধান রেখেছেন
ফরযের পর। যেমন পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের পূর্বাপর সুন্নত রয়েছে, অনুরূপ রমযানের
সিয়ামের পূর্বাপর সিয়াম রয়েছে। অর্থাৎ শাবান ও শাওয়ালের সিয়াম।
সাত. এসব নফল ইবাদত
ফরযের মধ্যে ঘটে যাওয়া ত্রুটিসমূহ দূর করে। কারণ এমন রোযাদার নেই যে অযথা
বাক্যালাপ, কুদৃষ্টি ও হারাম খাবার ইত্যাদি দ্বারা তার রোযার ক্ষতি করেনি।
আনাস
রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মদিনায় আগমন করেন, তখন সেখানে দু’টি দিন ছিল, সেদিন দু’টিতে
তারা আনন্দ-ফুর্তি করত। তিনি বললেন: এ দু’টি দিন কি? তারা বলল: আমরা জাহেলি যুগে
এতে আনন্দ-ফুর্তি করতাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
“আল্লাহ তোমাদের এ দিন দু’টির পরিবর্তে আরো উত্তম দু’টি দিন দান করেছেন: ঈদুল আদহা
ও ঈদুল ফিতর”।[57]
আবু
উবাইদ মাওলা ইব্ন আযহার বলেন: “আমি ওমর ইব্ন খাত্তাবের সাথে ঈদ করেছি, তিনি
বলেন: এ দু’টি দিনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সিয়াম নিষেধ
করেছেন: রমযানের সিয়াম শেষে তোমাদের ঈদুল ফিতরের দিন। দ্বিতীয় দিন
হচ্ছে ঈদুল আদহা, সেদিন তোমরা তোমাদের কুরবানি থেকে খাবে।[58]
আবু সায়িদ খুদরি রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: “নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম ঈদুল ফিতর ও কুরবানির ঈদের সওম পালন নিষেধ করেছেন”।[59]
ইব্ন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত: “নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদুল
ফিতর দিনে বের হন, অতঃপর দুই রাকাত সালাত আদায় করেন, তার পূর্বাপর কোন সালাত আদায়
করেননি”।[60]
উম্মে
আতিয়্যাহ রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: “আমাদেরকে রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নির্দেশ দিয়েছেন, আমরা যেন যুবতী, ঋতুবতী ও
কিশোরীদের নিয়ে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আদহাতে যাই, তবে ঋতুবতীরা সালাত থেকে দূরে থাকবে,
তারা দো‘আ ও কল্যাণে অংশ গ্রহণ করবে”।[61]
শিক্ষা ও মাসায়েল:
এক.
আল্লাহ তা‘আলা ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আদহা দান করে এ উম্মতের ওপর
অনুগ্রহ করেছেন। মুসলিম উম্মাহকে তিনি এর মাধ্যমে জাহেলি ঈদ ও উৎসব থেকে মুক্ত
করেছেন।
দুই.
আমাদের দু’টি ঈদ কাফেরদের ঈদ ও উৎসব থেকে বিভিন্ন কারণে আলাদা ও বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত,
যেমন:
(১).
আমাদের ঈদ চাঁদ দেখার উপর নির্ভরশীল, গণনার উপর নয়, যেমন কাফেরদের উৎসবগুলো গণনার
উপর নির্ভরশীল।
(২).
আমাদের দু’টি ঈদ মহান ইবাদত ও ইসলামের ঐতিহ্যের সাথে সম্পৃক্ত, যেমন সিয়াম,
যাকাতুল ফিতর, হজ ও কুরবানি।
(৩).
দুই ঈদে সম্পাদিত কাজগুলো ইবাদত, যা বান্দাকে আল্লাহর নৈকট্য দান করে, যেমন তাকবীর,
সালাতুল ঈদ ও খুতবা ইত্যাদি, কাফেরদের ঈদ ও উৎসবের বিপরীত, যেখানে কুফর ও গোমরাহির
প্রদর্শন হয়, বিভিন্ন প্রবৃত্তি ও শয়তানি কর্মকাণ্ড সংঘটিত হয়।
(৪).
দুই ঈদের দিনে অনুগ্রহ, দয়া ও পরস্পর দায়িত্বশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটে, যেমন সদকাতুল
ফিতর, হাদিয়া ও কুরবানি।
(৫).
আমাদের দু’টি ঈদ ভ্রান্ত আকিদা ও কুসংস্কারের সাথে সম্পৃক্ত নয়, যেমন নববর্ষ,
নক্ষত্রের জন্ম-মৃত্যু, কারো স্মরণ, কোন ব্যক্তির মর্যাদা অথবা সাম্প্রদায়িকতা ও
জাতীয়তার সাথে সম্পৃক্ত নয়, বরং এ ঈদ দু’টি একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার
জন্য।
আমাদের
ওপর ওয়াজিব হচ্ছে এসব নিয়ামতের মোকাবিলায় আল্লাহ তা‘আলার
শোকর আদায় করা, তার নির্দেশ পালন করা ও তার নিষেধ থেকে বিরত থাকা, ঈদ, খুশি ও
আনন্দের দিনে।
তিন.
ঈদের দিন আল্লাহর নিয়ামতের না-শোকরি হচ্ছে ফরয ত্যাগ করা, নারীদের পোশাক-আশাকে
শিথিলতা অবলম্বন করা ও পুরুষদের সাথে মেলামেশা করা। পোশাক-আশাক, পানাহার ও
অনুষ্ঠানে অপচয় ও গান-বাদ্য করা।
চার.
ঈদের দিন সুন্নত হচ্ছে ঈদের সালাতের জন্য গোসল করা ও সুন্দর পোশাক পরিধান করা।
আমাদের সালাফে সালেহীন বা উত্তম পূর্ব পুরুষগণ অনুরূপ করতেন।
পাঁচ.
ঈদুল ফিতরের দিন ঈদগাহে যাওয়ার পূর্বে সকালে খেজুর খাওয়া সুন্নত, কারণ নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অনুরূপ করেছেন। আল্লাহর নির্দেশ পালনার্থে ঈদের
দিন দ্রুত পানাহার করা সুন্নত।
ছয়.
ঈদের সালাতে বাচ্চা ও নারীদের যাওয়া সুন্নত, তারা সালাতে উপস্থিত হবে ও মুসলিমদের দো‘আয় অংশ গ্রহণ করবে। ঋতুবতী নারীরা সালাতের স্থান থেকে দূরে থাকবে,
তারা শুধু খুতবা ও দো‘আয় অংশ গ্রহণ করবে।
সাত.
ঈদের সালাতে হেঁটে যাওয়া সুন্নত, অনুরূপ এক রাস্তা দিয়ে যাওয়া ও অপর রাস্তা দিয়ে
ফিরে আসা, যেমন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে প্রমাণিত।
আট.
সালাত শেষে খুতবা শ্রবণ করা ও দো‘আয় আমীন বলার জন্য সালাতের
স্থানে বসে থাকা উত্তম। নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঋতুবতী নারীদের ব্যাপারে বলেছেন: ‘তারা কল্যাণ ও মুসলিমদের দো‘আয়
অংশ গ্রহণ করবে”।
নয়.
ঈদের সালাতে পূর্বাপর সালাত নেই, কিন্তু মুসলিম যখন মুসল্লা অথবা মসজিদে প্রবেশ
করে, সে দুই রাকাত সালাতের ব্যাপারে আদিষ্ট, নিষিদ্ধ সময়ে পর্যন্ত। কারণ
তাহিয়্যাতুল মসজিদ মসজিদে প্রবেশের কারণে জরুরী হয়, যা নিষিদ্ধ সময়ে আদায় করা বৈধ।
দশ.
ইমাম সাহেবের অপেক্ষার সময়ে তাকবীরে লিপ্ত থাকা উত্তম, কারণ এটা ইবাদতের সময়, এ
মুহূর্তে সে কুরআন তিলাওয়াত বা নফল সালাত আদায় করতে পারে, যদি নিষিদ্ধ সময় না হয়,
তবে তাকবীরে মশগুল থাকা উত্তম।
এগার.
যদি লোকেরা সূর্য ঢলার পূর্বে ঈদ সম্পর্কে জানতে না পারে, তাহলে পরদিন সালাত আদায়
করবে। যদি কেউ ঈদের সালাতে ইমামের তাশাহুদে অংশ গ্রহণ করে, সে
তার সাথে বসে যাবে, অতঃপর দু’রাকাত কাযা করবে ও তাতে তাকবীর পড়বে।
বার.
ঈদের সালাত ছুটে গেলে বিশুদ্ধ অভিমত অনুযায়ী তার কাযা নেই, কারণ ঈদের সালাত কাযা
করার কোন দলিল নেই।
তেরো.
ঈদের দিন আনন্দ করা বৈধ, যদি সীমালঙ্ঘন অথবা ওয়াজিব বিনষ্ট না হয়। মুসলিমদের উচিত
ঈদের দিন পরিবারে সচ্ছলতার ব্যবস্থা করা, কারণ ঈদের দিন আনন্দ করা দ্বীনের একটি
অংশ।
চৌদ্দ.
ঈদের দিন খাবারে অনেক লোক একত্র হওয়া ভাল, কারণ এতে ঈদের বৈশিষ্ট্য প্রকাশ পায়,
পরস্পর ভ্রাতৃত্ব বন্ধন দৃঢ় হয় ও মুসলিমদের জমায়েত হয়।
পনের.
ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়ে কোন সমস্যা নেই, আমাদের পূর্বপুরুষ থেকে বর্ণিত, ঈদের দিন
সাক্ষাতের সময় তারা পরস্পরকে শুভেচ্ছা বিনিময় করতেন। তারা বলতেন: تَقَبَّلَ اللهُ مِنَّا وَمِنْكُم. “আল্লাহ আমাদের থেকে ও আপনাদের থেকে কবুল করুন”।
তবে শুভেচ্ছার শব্দ দেশ ও অঞ্চল অথবা সময়ের ব্যবধানে ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে, যদি
হারাম শব্দ অথবা কাফেরদের সাথে সামঞ্জস্য না হয়, যেমন তাদের হারাম উৎসবে ব্যবহৃত
শুভেচ্ছা পদ্ধতি গ্রহণ করা।
সমাপ্ত
[4] ইতিকাফে
যারা সওম র্শত বলেন, তাদের মধ্যে ইব্ন ওমর, ইব্ন
আব্বাস, মালেক,
শাবি, আওযায়ি, সাওরি, আহনাফ
এবং এটা আহমদের এক ফাতাওয়া। ইমাম কুরতুবি ও ইব্নুল কায়্যিম এ অভিমতকে
শক্তিশালী করেছেন। আর যারা বলেছেন ইতিকাফে সওমের শর্ত করা না হলে, সওম
জরুরী নয়, তাদের মধ্যে আলি, ইব্ন মাসউদ, হাসান
বসরি, আতা ইব্ন আবি রাবাহ, ওমর ইব্নু আব্দুল আযিয ও
ইব্ন উসাইমিন রয়েছেন। লাজনায়ে দায়েমার ফাতাওয়া
এর উপর। দেখুন: আল-ইস্তেযকার: (১০/২৯১-২৯৩),
তাহযিবুস সুনান: (৭/১০৫-১০৯), শারহুন
নববী: (১১/১২৪-১২৬), আল-মুফহিম: (৪/২৪১), শারহু
ইব্নুল মুলাক্কিন আলাল উমদাহ: (৫/৪৪৬),
তুহফাতুল আহওয়াযি: (১৫/১১৯), আল-ইফহাম
ফি শারহি বুলুগুল মারাম: (১/৩৭২),
শারহুল মুমতি: (৬/৫০৬-৫০৭), ফাতাওয়া
লাজনায়ে দায়েমা: (৬৭১৮)
[9] বুখারি: (১৮৫২), মুসলিম: (১১৪৮), উভয় হাদিসের শব্দ মুসলিম থেকে নেয়া। ইমাম আহমদের বর্ণনায়
আছে: “আমার মা মারা
গেছে, তার জিম্মায়
রমযানের এক মাস রোযা রয়েছে, আমি তার পক্ষ থেকে তা কি কাযা করব? তিনি বললেন: তুমি কি লক্ষ্য করছ, যদি তার উপর ঋণ থাকত তুমি
তা পরিশোধ করতে? সে বলল: হ্যাঁ, তিনি বললেন: অতএব আল্লাহর
ঋণ কাযার বেশী দাবি রাখে”। মুসনাদে আহমদ: (১/৩৬২), শায়খ আহমদ শাকের হাদিসটি
সহিহ বলেছেন: (৩৪২০), অতঃপর তিনি বলেছেন: “এ হাদিস স্পষ্ট করে যে, রমযানের কাযা সম্পর্কে প্রশ্ন ছিল, কিন্তু হাফেয এ কথা বলেননি, আরো স্পষ্ট যে প্রশ্ন করার
ঘটনা কয়েকবার ঘটেছে, একবার মানত সম্পর্কে, একবার রমযান সম্পর্কে, প্রশ্নকারী কখনো ছিল পরুষ, কখনো ছিল নারী”।
আমি (লেখক) বলি: শায়খ শুআইব আরনাউতের
তত্ত্বাবধানে মুসনাদে আহমদের যারা তাহকিক করেছেন, তাদের নিকট
এ অতিরিক্ত ভুল, অর্থাৎ “রমযান মাস”, যদিও হাতে লেখা কতক মৌলিক কপিতে তা এসেছে, যার
ভিত্তিতে তারা মুসনাদের তাহকিক করেছেন। কারণ এসব মৌলিক কপির বর্ধিত অংশ “আতরাফে মুসনাদ” ও “ইতহাফে
মাহারাতে” বিদ্যমান হাদিসের বিপরীত, তারা
এ বর্ধিত অংশ ব্যতীত হাদিসকে সহিহ বলেছেন: (৩৪২০), এ বর্ধিত
অংশের উপর নির্ভর করেছেন শায়খ ইব্ন বায তার কতক দরসে। স্পষ্ট যে তিনি এ বর্ধিত
অংশকে সহিহ মনে করেছেন। যাই হোক হাদিসের ব্যাপকতা রমযানকে শামিল করে,
বিশুদ্ধ অভিমত অনুযায়ী মানতের সাথে খাস নয়। অতঃপর আমি হাফেয ইব্ন হাজারের “ইতহাফে মাহারাহ” দেখি, যা
জামেয়া ইসলামিয়াহ মদিনার সংরক্ষিত কপি, সেখানে আমি হাদিসটি
দেখি বর্ধিত অংশ ব্যতীত, হাফেয যার তাখরিজ করেছেন ইব্ন
খুযাইমাহ, আবু আওয়ানাহ, ইব্ন হিব্বান
ও দারা কুতনি থেকে: (৭/১০১), হাদিস নং: (৭৪১৯),
এসব থেকে প্রমাণিত হয় বর্ধিত অংশ হাদিসে অনুপ্রবেশ করেছে, মূল
হাদিসের অংশ নয়। আল্লাহ ভাল জানেন।
[10] মুসলিম:
(১১৪৯), আবু দাউদ: (২৮৭৭), তিরমিযি: (৬৬৭), নাসায়ি
ফিল কুবরা: (৬৩১৪), ইব্ন মাজাহ: (২৩৯৪)
[11] আল-ইস্তেযকার:
(৪/৩৪০), এ বিষয়ে ইজমা নকল করেছেন কাদি আয়াদ ফি ইকমালিল
মুয়াল্লিম: (৪/৪০৪) ও কুরতুবি ফিল মুফহিম: (৩/২০৮-২০৯)
[12] মাজমুউল
ফাতাওয়া: (২৪/৩১১), দেখুন: আল-মুগনি: (৪/৪০০), ফাতহুল
বারি: (৪/১৯৪), শারহুল মুমতি: (৬/৪৫২)
[13] দেখুন:
আল-মুগনি: (৪/৩৯৯-৪০০), শারহুল মুমতি: (৬/৪৫০), ওয়াজিব
না হওয়ার কারণ আল্লাহ তা‘আলার
বাণী: وَلَا تَزِرُ وَازِرَةٞ وِزۡرَ أُخۡرَىٰۚ ١٦٤ “আর কোন ভারবহনকারী অন্যের ভার বহন করবে না”। সূরা আনআম: (১৬৪), দ্বিতীয়ত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার তুলনা
করেছেন ঋণের সাথে, আর ঋণ পরিশোধ
করা অভিভাবদের ওয়াজিব নয়।
[14] বুখারি
হাসানের বাণী টিকা হিসেবে উল্লেখ করেছেন: “যদি একদিন ত্রিশ ব্যক্তি সিয়াম
পালন করে, বৈধ হবে”:
(২/৬৯০), দারাকুতনি
তা পূর্ণ সনদে উল্লেখ করেছেন,
যেমন হাফেয ইব্ন হাজার উল্লেখ
করেছেন: (৪/১৯৩), দেখুন: শারহুল মুমতি: (৬/৩৫২-৩৫৩), শায়খ
ইব্ন বায রহ. অনুরূপ বলেছেন,
কারণ এ ব্যাপারে হাদিসগুলো ব্যাপক।
তিনি মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে কাফফারার সিয়াম সম্পর্কে বলেন: “এ
সিয়াম এক গ্রুপের উপর ভাগ করে দেয়া বৈধ নয়,
বরং এগুলো এক ব্যক্তি
ধারাবাহিকভাবে পালন করবে, যেমন আল্লাহ অনুমোধন করেছেন”। মাজমু
ফাতাওয়া ইব্ন বায: (১৫/৩৭৫)
[16] শারহুল
মুমতি: (৬/৪৫৬), এ মাসআলাকে বদলি হজের ওপর কিয়াস
করা যাবে না। যেমন বর্তমান যুগে কতক লোক করে থাকে যে, তাদের
অভিভাবকের পক্ষ থেকে যে হজ করবে
তাকে তারা টাকা দেয়, যা
তার হজ পর্যন্ত সফর খরচ, কিন্তু সে কম খরচ করে ও তা থেকে কিছু বাচিয়ে রাখে। এ জন্য আলেমগণ এমন
লোককে হজে পাঠাতে নিষেধ করেছেন,
যার উদ্দেশ্য শুধু অর্থ উপার্জন।
[27] হাফেয
ইব্ন হাজার ফাতহুল বারিতে: (৪/১২৬) উল্লেখ করেছেন, কতক মালেকি আলেম এ হাদিস
দ্বারা তার দলিল পেশ করেছেন।
[31] আবু দাউদ: (১৬০৯), ইব্ন
মাজাহ: (১৮২৭), হাকেম বলেছেন হাদিসটি সহিহ, বুখারির
শর্ত মোতাবেক: (১/৫৬৮), আলবানি সহিহ আবু দাউদে হাদিসটি হাসান বলেছেন।
[32] নাসায়ি: (৫/৪৯), ইব্ন
মাজাহ: (১৮২৮), আহমদ: (৬/৬/), হাফেয
ইব্ন হাজার হাদিসটি সহিহ বলেছেন,
ফাতুহল বারি: (৩/২৬৭)
[34] তিরমিযি:
(৭৯৪), তিনি বলেন, হাদিসটি হাসান-সহিহ, আহমদ:
(৫/৩৯), নাসায়ি ফিল কুবরা: (৩৪০৩), বায্যার:
(৩৬৮১), তায়ালিসি: (৮৮১), তাবরানি ফি মুসনাদিশ শামিয়্যিন:
(১১১৯)
[36] বুখারি: (৪৯৯৬), মুসলিম:
(১০৮০), দ্বিতীয় বর্ণনা বুখারির: (১৮১৪), তৃতীয় ও চতুর্থ বর্ণনা মুসলিমের: (১০৮০)
[39] আবু দাউদ: (৩৩২২), তিরমিযি:
(৬৮৯), আহমদ: (১/৩৯৭), বায়হাকি:
(৪/২৫০), আলবানি সহিহ আবু দাউদে হাদিসটি সহিহ বলেছেন।
[49] আল-মুফহিম: (৩/১৩৮), খাত্তাবি
মাআলিমুস সুনানে: (২/৭৪০) উল্লেখ করেছেন, তার ত্রিশ দিন পুরো করতে
হবে, তবে আমার নিকট কুরতুবির অভিমত অধিক বিশুদ্ধ মনে
হয়। তিনি কেন ত্রিশ বললেন সেটা আমার নিকট স্পষ্ট নয়, অথচ
মাস হয় ঊনত্রিশ দিনে।
[51] শায়খ ইব্ন বায রহ. কে দূরবীন
দ্বারা দেখা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, তিনি বলেন এটা ব্যবহার করা
দোষের নয়, কারণ এটাও দেখার অন্তর্ভুক্ত, গণনার অন্তর্ভুক্ত নয়। মাজমু ফাতাওয়া ও রাসায়েল: (১৫/৬৯-৭০)
[54] সূরা আনআম: (১৬০) আহমদ: (৫/২৮০), ইব্ন মাজাহ: (১৭১৫), দারামি: (১৭৫৫), নাসায়ি
ফিল কুবরা: (২৮৬০), সহিহ ইব্ন খুযাইমাহ: (২১১৫৪), সহিহ ইব্ন হিব্বান: (৩৬৩৫)
[57] আবু দাউদ: (১১৩৪), নাসায়ি:
(৩/১৭৯), আহমদ: (৩/১০৩), আবু
ইয়ালা: (৩৮৪১), হাকেম হাদিসটি মুসলিমের শর্ত মোতাবেক সহিহ
বলেছেন: (১/৪৩৪), হাফেয ফাতহুল বারিতে সহিহ বলেছেন: (২/৪২২), আলবানি সহিহ আবু দাউদে সহিহ বলেছেন।
[61] বুখারি: (৯৩১), মুসলিম:
(৮৯০)
_________________________________________________________________________________
সংকলন: ইবরাহিম ইব্ন মুহাম্মাদ আল-হাকিল
অনুবাদক: সানাউল্লাহ নজির আহমদ
সম্পাদনা : আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া
সূত্র : ইসলাম প্রচার ব্যুরো, রাবওয়াহ, রিয়াদ, সৌদিআরব
আরও পড়ুনঃ লাইলাতুল কদর: রমাদানের উপহার
আরও পড়ুনঃ ‘লাইলাতুল কদর’ এ কি কি ইবাদত করবেন?
আরও পড়ুনঃ প্রশ্নোত্তরে রমযান ও ঈদ (১ম পর্ব)
আরও পড়ুনঃ প্রশ্নোত্তরে রমযান ও ঈদ (২য় পর্ব)
আরও পড়ুনঃ কুরআন ও সুন্নাহ্র আলোকে রাতের সালাত
আরও পড়ুনঃ রমযান মাসে যদি সব শয়তান শৃঙ্খলাবদ্ধ থাকে তাহলে এ মাসে মানুষ নিয়মিতভাবে পাপ করতে থাকে কীভাবে?
আরও পড়ুনঃ নামায নষ্ট করলে সিয়াম কবুল হয় না
আরও পড়ুনঃ রমজান বিষয়ক ফতোয়া
আরও পড়ুনঃ সিয়াম বিষয়ক নির্বাচিত ফাতওয়া (১ম পর্ব)
আরও পড়ুনঃ সিয়াম বিষয়ক নির্বাচিত ফাতওয়া (২য় পর্ব)
আরও পড়ুনঃ সিয়াম বিষয়ক নির্বাচিত ফাতওয়া (৩য় পর্ব)
আরও পড়ুনঃ সাওম বিষয়ক আধুনিক কিছু মাসআলা
আরও পড়ুনঃ রোযাবস্থায় বীর্যপাত এবং স্বপ্নদোষের বিধান
আরও পড়ুনঃ মাহে রামাযান: অসংখ্য কল্যাণের হাতছানি
আরও পড়ুনঃ রোযার ফযীলত ও শিক্ষা: আমাদের করণীয়
আরও পড়ুনঃ রমাদান মাসের ৩০ আমল
আরও পড়ুনঃ রাসূল যেভাবে রমজান যাপন করেছেন (১ম পর্ব)
আরও পড়ুনঃ রাসূল যেভাবে রমজান যাপন করেছেন (২য় পর্ব)
আরও পড়ুনঃ মুমিনদের জন্য মাহে রমজানের হাদিয়া
আরও পড়ুনঃ রোজার আদব
আরও পড়ুনঃ সাধারণ ভুল যেগুলো রমজানের সময় আমরা করে থাকি
আরও পড়ুনঃ রামাযানের ভুল-ত্রুটি
আরও পড়ুনঃ যাকাত বিধানের সারসংক্ষেপ
আরও পড়ুনঃ জাকাতের গুরুত্ব, ফজিলত ও ব্যয়ের খাতসমূহ
আরও পড়ুনঃ যাকাতুল ফিতর বা ফিতরা
আরও পড়ুনঃ রমজান ও পরবর্তী সময়ে করণীয়
“রমজান মাস” বিষয়ের উপর আরও পড়তে এইখানে ক্লিক করুন।
“রোজা” বিষয়ের উপর আরও পড়তে এইখানে ক্লিক করুন।
পোস্টটি ভালো লাগলে শেয়ার করতে ভুলবেন না কিন্তু।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন