বৃহস্পতিবার, ৩ নভেম্বর, ২০১৬

কুরআন ও সহীহ হাদীসের আলোকে জামা‘আতে সালাত আদায় (২য় পর্ব)

[বিধানফযীলতফায়েদা ও নিয়ম-কানুন]


১ম পর্ব | ২য় পর্ব

জামা‘আতে সালাত আদায় করতে যাওয়ার নিয়ম-কানূন

জামা‘আতে সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে মসজিদে যাওয়ার অনেকগুলো নিয়মকানুন রয়েছে যা নিম্নরূপ:
১. নিজ ঘর থেকেই ভালোভাবে অযু করে নিবে:
আব্দুল্লাহ ইবন মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন:
«وَمَا مِنْ رَجُلٍ يَتَطَهَّرُ فَيُحْسِنُ الطُّهُوْرَ ثُمَّ يَعْمَدُ إِلَى مَسْجِدٍ مِنْ هَذِهِ الـْمَسَاجِدِ إِلاَّ كَتَبَ اللهُ لَهُ بِكُلِّ خُطْوَةٍ يَخْطُوْهَا حَسَنَةً وَيَرْفَعَهُ بِهَا دَرَجَةً، وَيَحُطُّ عَنْهُ بِهَا سَيِّئَةً».
“যে কেউ সুন্দরভাবে পবিত্রতার্জন করে মসজিদগামী হয় আল্লাহ তা‘আলা তাকে প্রতি কদমের বদৌলতে একটি করে পুণ্য দিবেন ও একটি করে তার মর্যাদা উন্নীত করবেন এবং একটি করে তার গুনাহ মুছে দিবেন”

২. মসজিদে আসার আগে দুর্গন্ধময় যে কোনো জিনিস খাওয়া বা ব্যবহার করা থেকে অবশ্যই দূরে থাকবে:
জাবির ইবন আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«مَنْ أَكَلَ ثُومًا أَوْ بَصَلًا فَلْيَعْتَزِلْنَا أَوْ لِيَعْتَزِلْ مَسْجِدَنَا وَلْيَقْعُدْ فِي بَيْتِهِ».
“যে ব্যক্তি রসুন অথবা পিয়াজ খেলো সে যেন আমরা কিংবা আমাদের মসজিদ থেকে দূরে থাকে। তথা ঘরে বসে থাকে”[73]
অন্য বর্ণনায় রয়েছে,
«مَنْ أَكَلَ الْبَصَلَ وَالثُّومَ وَالْكُرَّاثَ فَلَا يَقْرَبَنَّ مَسْجِدَنَا فَإِنَّ الْـمَلَائِكَةَ تَتَأَذَّى مِمَّا يَتَأَذَّى مِنْهُ بَنُو ادَمَ».
“যে ব্যক্তি পিয়াজ, রসুন ও কুর্রাস (পিয়াজ জাতীয় সমঘ্রাণের এক প্রকার উদ্ভিদ) খেলো সে যেন আমাদের মসজিদের নিকটবর্তী না হয়। কারণ, আদম সন্তান যে জিনিসে কষ্ট পায় তাতে ফিরিশতাগণও কষ্ট পান”
৩. সাধ্য মতো সুন্দর পোশাক-পরিচ্ছদ পরেই মসজিদে আসবে:
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿يَٰبَنِيٓ ءَادَمَ خُذُواْ زِينَتَكُمۡ عِندَ كُلِّ مَسۡجِدٖ﴾ [الاعراف: ٣١] 
“হে আদম সন্তানরা! তোমরা (জামা‘আতে সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে) যে কোনো মসজিদের নিকটবর্তী হতে চাইলে সুন্দর পোশাক-পরিচ্ছদ গ্রহণ করবে”[সূরা আল-‘রাফ, আয়াত: ৩১]
আব্দুল্লাহ ইবন মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إِنَّ اللَّهَ جَمِيلٌ يُحِبُّ الْـجَمَالَ».
“নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা সুন্দর এবং তিনি সুন্দরকেই ভালোবাসেন”[74]
৪. ঘর থেকে বের হওয়ার দো‘আগুলো পড়ে নিবে এবং শুধুমাত্র সালাতের নিয়্যাতেই ঘর থেকে বের হবে:
ঘর থেকে বের হওয়ার দো‘আগুলো নিম্নরূপ:
আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إِذَا خَرَجَ الرَّجُلُ مِنْ بَيْتِهِ فَقَالَ بِسْمِ اللَّهِ تَوَكَّلْتُ عَلَى اللَّهِ لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللَّهِ قَالَ: يُقَالُ حِينَئِذٍ : هُدِيتَ وَكُفِيتَ وَوُقِيتَ، فَتَتَنَحَّى لَهُ الشَّيَاطِيْنُ فَيَقُولُ لَهُ شَيْطَانٌ اخَرُ : كَيْفَ لَكَ بِرَجُلٍ قَدْ هُدِيَ وَكُفِيَ وَوُقِيَ».
“যখন কোনো ব্যক্তি ঘর থেকে বের হওয়ার সময় বলে: بِسْمِ اللَّهِ تَوَكَّلْتُ عَلَى اللَّهِ لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللَّهِ যার অর্থ: আল্লাহ তা‘আলার নামে এবং তাঁর ওপর ভরসা করেই ঘর থেকে বের হচ্ছি। কোনো অন্যায় কাজ থেকে বাঁচার শক্তি এবং কোনো পুণ্যময় কাজ করার ক্ষমতা একমাত্র তিনিই দিয়ে থাকেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: তখন (উক্ত দো‘আ পড়ে ঘর থেকে বের হওয়া ব্যক্তিকে) বলা হয়: তুমি হিদায়াতপ্রাপ্ত, তোমার জন্য তা একেবারেই যথেষ্ট ওপরন্তু তুমি একান্ত নিরাপদ। তখন শয়তানগুলো তার কাছ থেকে সরে যায়। আর তখন অন্য শয়তান তাকে বলে: এমন ব্যক্তিকে নিয়ে তোমার আর কিই বা করার আছে যে হিদায়াতপ্রাপ্ত, যার জন্য উক্ত দো‘আই যথেষ্ট এবং যে নিরাপদ”[75]
উম্মু সালামাহ রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«مَا خَرَجَ النَّبِىُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنْ بَيْتِىْ قَطُّ إِلاَّ رَفَعَ طَرْفَهُ إِلَى السَّمَاءِ فَقَالَ : اللَّهُمَّ إِنِّىْ أَعُوذُ بِكَ أَنْ أَضِلَّ أَوْ أُضَلَّ أَوْ أَزِلَّ أَوْ أُزَلَّ أَوْ أَظْلِمَ أَوْ أُظْلَمَ أَوْ أَجْهَلَ اَوْ يُجْهَلَ عَلَىَّ».
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখনই আমার ঘর থেকে বেরিয়েছেন তখনই তিনি আকাশের দিকে চোখ উঁচিয়ে বলেছেন: اللَّهُمَّ إِنِّىْ أَعُوذُ بِكَ أَنْ أَضِلَّ أَوْ أُضَلَّ أَوْ أَزِلَّ أَوْ أُزَلَّ أَوْ أَظْلِمَ أَوْ أُظْلَمَ أَوْ أَجْهَلَ اَوْ يُجْهَلَ عَلَىَّ যার অর্থ: হে আল্লাহ! আমি নিশ্চয় আপনার নিকট আশ্রয় চাচ্ছি পথ ভ্রষ্টতা থেকে কিংবা অন্যকে পথ ভ্রষ্ট করানো থেকে, পদস্খলন থেকে কিংবা অন্যকে পদস্খলন করানো থেকে, যুলুম থেকে কিংবা অন্যের ওপর যুলুম করা থেকে এবং মূর্খতা থেকে কিংবা অন্যের সাথে মূর্খতা প্রদর্শন থেকে”[76]
একদা আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা তাঁর খালা ও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রী মাইমূনাহ রাদিয়াল্লাহু আনহার কাছে রাত্রি যাপন করেছেন। তখন তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে ঘর থেকে সালাতের উদ্দেশ্যে মসজিদের দিকে বের হওয়ার সময় নিম্নোক্ত দো‘আ পড়তে শুনেছেন:
«اللَّهُمَّ اجْعَلْ فِيْ قَلْبِيْ نُوْرًا، وَفِيْ لِسَانِيْ نُوْرًا، وَاجْعَلْ فِيْ سَمْعِيْ نُوْرًا، وَاجْعَلْ فِيْ بَصَرِيْ نُوْرًا، وَاجْعَلْ مِنْ خَلْفِيْ نُوْرًا، وَمِنْ أَمَامِيْ نُوْرًا، وَاجْعَلْ مِنْ فَوْقِيْ نُوْرًا، وَمِنْ تَحْتِيْ نُوْرًا، وَعَنْ يَمِينِيْ نُوْرًا، وَعَنْ شِمَالِيْ نُوْرًا، وَاجْعَلْ فِي نَفْسِيْ نُوْرًا، وَأَعْظِمْ لِيْ نُوْرًا، وَعَظِّمْ لِيْ نُـوْرًا، وَاجْعَلْ لِيْ نُوْرًا، وَاجْعَلْنِيْ نُوْرًا، اللَّهُمَّ أَعْطِنِيْ نُوْرًا، وَاجْعَلْ فِيْ عَصَبِيْ نُوْرًا، وَفِيْ لَـحْمِي نُوْرًا، وَفِيْ دَمِي نُوْرًا، وَفِيْ شَعَرِيْ نُوْرًا، وَفِيْ بَشَرِيْ نُوْرًا».
“হে আল্লাহ! আপনি আমার অন্তরে আলো দিন, আমার জিহবায় আলো দিন, আমার শ্রবণ শক্তিতে আলো দিন, আমার দৃষ্টি শক্তিতে আলো দিন, আমার পেছনে আলো দিন, আমার সামনে আলো দিন, আমার উপরে আলো দিন, আমার নিছে আলো দিন, আমার ডানে আলো দিন, আমার বাঁয়ে আলো দিন, আমার প্রবৃত্তিতে আলো দিন, আমার আলো আরো অনেক বাড়িয়ে দিন, আমার জন্য আলো দিন, আমাকে আলোময় বানিয়ে দিন, আমাকে আলো দিন, আমার স্নায়ুতে আলো দিন, আমার গোস্তে আলো দিন, আমার রক্তে আলো দিন, আমার চুলে আলো দিন, এমনকি আমার শরীরের চামড়ায়ও আলো দিন”[77]
৫. মসজিদের দিকে যাওয়ার সময় আঙ্গুলগুলোর একটিকে অপরটিতে ঢুকিয়ে দিবে না এমনকি সালাতেও নয়:
কা‘ব ইবন উজরাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إِذَا تَوَضَّأَ أَحَدُكُمْ فَأَحْسَنَ وُضُوءَهُ ثُمَّ خَرَجَ عَامِدًا إِلَى الـْمَسْجِدِ فَلَا يُشَبِّكَنَّ بَيْنَ أَصَابِعِهِ فَإِنَّهُ فِيْ صَلَاةٍ».
“তোমাদের কেউ ভালোভাবে অযু করে জামা‘আতে সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে মসজিদের দিকে বেরুলে সে যেন আঙ্গুলগুলোর একটিকে অপরটিতে ঢুকিয়ে না দেয়। কারণ, সে তো তখন যেন সালাতেই রয়েছে”[78]
৬. ধীরে-সুস্থে মসজিদের দিকে রওয়ানা করবে:
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إِذَا سَمِعْتُمْ الْإِقَامَةَ فَامْشُـوْا إِلَـى الصَّلَاةِ وَعَلَيْكُـمْ بِالسَّكِينَةِ وَالْوَقَارِ وَلاَ تُسْرِعُوا فَمَا أَدْرَكْتُمْ فَصَلُّوا وَمَا فَاتَكُمْ فَأَتِمُّوا».
“যখন তোমরা সালাতের ইক্বামত শুনো তখন তোমরা ধীরে-সুস্থে তথা ভদ্রতার সাথে সালাতের দিকে রওয়ানা করো। তোমরা অতি দ্রুত সালাতের দিকে যেও না। অতঃপর তোমরা যতোটুকু সালাত ইমাম সাহেবের সাথে পাও পড়ে নাও। আর বাকিটুকু পুরা করে নাও”[79]
অন্য বর্ণনায় রয়েছে,
«إِذَا أُقِيمَتْ الصَّلَاةُ فَلَا تَأْتُوْهَا تَسْعَوْنَ وَأْتُوْهَا تَمْشُوْنَ وَعَلَيْكُمُ السَّكِينَةُ فَمَا أَدْرَكْتُمْ فَصَلُّوا وَمَا فَاتَكُمْ فَأَتِمُّوا».
“যখন সালাতের ইক্বামত দেওয়া হয় তখন তোমরা সালাতের দিকে দৌড়ে এসো না। বরং ধীরে-সুস্থে হেঁটে এসো। অতঃপর ইমাম সাহেবের সাথে যতোটুকু সালাত পাও পড়ে নাও। আর বাকিটুকু পুরা করে নাও”
৭. মসজিদে ঢুকার আগে নিজের জুতা-জোড়া ভালোভাবে দেখে নিবে এবং তাতে নাপাক দেখলে মাটি দিয়ে ঘষে নিবে:
আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إِذَا جَاءَ أَحَدُكُمْ إِلَى الْـمَسْجِدِ فَلْيَنْظُرْ فَإِنْ رَأَى فِيْ نَعْلَيْهِ قَذَرًا أَوْ أَذًى فَلْيَمْسَحْهُ وَلْيُصَلِّ فِيهِمَا».
“যখন তোমাদের কেউ মসজিদে আসে তখন সে যেন তার জুতা জোড়া ভালোভাবে দেখে নেয়। অতঃপর সে যদি তাতে কোনো নাপাক বা ময়লা দেখতে পায় তা হলে সে যেন তা কোনো কিছু দিয়ে মুছে ফেলে এবং উক্ত জুতা পরেই সালাত পড়ে”[80]
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إِذَا وَطِئَ أَحَدُكُمْ بِنَعْلَيْهِ الأَذَى فَإِنَّ التُّرَابَ لَهُ طَهُورٌ».
“যখন তোমাদের কেউ নিজ জুতা দিয়ে নাপাক মাড়ায় তখন মাটিই তার জন্য পবিত্রতা”[81]
৮. মসজিদে ঢুকার সময় ডান পা আগে বাড়িয়ে দিবে এবং নিম্নোক্ত দো‘আগুলো পড়ে নিবে:
«بِسْمِ اللهِ، وَالصَّلاَةُ وَالسَّلاَمُ عَلَى رَسُوْلِ اللهِ، اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِيْ ذُنُوبِيْ وَافْتَحْ لِيْ أَبْوَابَ رَحْمَتِكَ[82]  أَعُوذُ بِاللَّهِ الْعَظِيمِ وَبِوَجْهِهِ الْكَرِيمِ وَسُلْطَانِهِ الْقَدِيمِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ».
আবু হুমাইদ কিংবা আবু উসাইদ সাঈদী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إِذَا دَخَلَ أَحَدُكُمْ الْـمَسْجِدَ فَلْيُسَلِّمْ عَلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، ثُمَّ لِيَقُلْ اللَّهُمَّ افْتَحْ لِيْ أَبْوَابَ رَحْمَتِكَ فَإِذَا خَرَجَ فَلْيَقُلْ اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْاَلُكَ مِنْ فَضْلِكَ».
“যখন তোমাদের কেউ মসজিদে প্রবেশ করে তখন সে যেন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর সালাম পাঠায়। অতঃপর বলে: اللَّهُمَّ افْتَحْ لِي أَبْوَابَ رَحْمَتِكَ যার অর্থ: হে আল্লাহ! আপনি আমার জন্য আপনার রহ্মতের দরোজাগুলো খুলে দিন। আর যখন সে মসজিদ থেকে বের হয় তখন সে যেন বলে: اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْاَلُكَ مِنْ فَضْلِكَ যার অর্থ: হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট সমূহ কল্যাণ কামনা করি”[83]
ফাতিমা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا دَخَلَ الْـمَسْجِدَ يَقُولُ: بِسْمِ اللَّهِ وَالسَّلَامُ عَلَى رَسُولِ اللَّهِ اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِيْ ذُنُوبِيْ، وَافْتَحْ لِيْ أَبْوَابَ رَحْمَتِكَ، وَإِذَا خَرَجَ قَالَ: بِسْمِ اللَّهِ وَالسَّلَامُ عَلَى رَسُولِ اللَّهِ، اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِيْ ذُنُوبِيْ وَافْتَحْ لِيْ أَبْوَابَ فَضْلِكَ».
“যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে প্রবেশ করতেন তখন তিনি বলতেন: بِسْمِ اللَّهِ وَالسَّلَامُ عَلَى رَسُولِ اللَّهِ، اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِيْ ذُنُوبِيْ، وَافْتَحْ لِيْ أَبْوَابَ رَحْمَتِكَ যার অর্থ: আল্লাহর নামে প্রবেশ করছি এবং আল্লাহর রাসূলের ওপর যথাযোগ্য সালাম বর্ষিত হোক। হে আল্লাহ! আপনি আমার সকল গুনাহ ক্ষমা করুন এবং আমার জন্য আপনার রহ্মতের সকল দরোজা খুলে দিন”[84]
আব্দুল্লাহ ইবন আমর ইবন আস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে প্রবেশ করতেন তখন বলতেন:
«أَعُوذُ بِاللَّهِ الْعَظِيمِ وَبِوَجْهِهِ الْكَرِيْمِ وَسُلْطَانِهِ الْقَدِيْمِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ».
“মহান আল্লাহ, তাঁর সম্মানিত সত্তা ও চির ক্ষমতার আশ্রয় চাচ্ছি বিতাড়িত শয়তান থেকে”[85]
৯. মসজিদে ঢুকে আশপাশের লোকগুলো শুনতে পায় এমন স্বরে তাদেরকে সালাম করবে:
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«لَا تَدْخُلُونَ الْـجَنَّةَ حَتَّى تُؤْمِنُوا وَلَا تُؤْمِنُوا حَتَّى تَحَابُّوا أَوَلَا أَدُلُّكُمْ عَلَى شَيْءٍ إِذَا فَعَلْتُمُوهُ تَحَابَبْتُمْ؟ أَفْشُوا السَّلَامَ بَيْنَكُمْ».
“তোমরা কখনো জান্নাতে যেতে পারবে না যতক্ষণ না তোমরা খাঁটি ঈমানদার হবে। আর কখনো তোমরা খাঁটি ঈমানদার হতে পারবে না যতক্ষণ না তোমাদের মাঝে পরস্পর ভালোবাসা ও সৌহার্দ জন্ম নিবে। আমি কি তোমাদেরকে এমন একটি কাজ শিখিয়ে দেবো না যা করলে তোমরা একে অপরকে ভালোবাসবে। তোমরা নিজেদের মাঝে সালামের বিপুল বিস্তার ঘটাও”[86]
আম্মার ইবন ইয়াসির রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন:
«ثَلَاثٌ مَنْ جَمَعَهُنَّ فَقَدْ جَمَعَ الْإِيمَانَ : الْإِنْصَافُ مِنْ نَفْسِكَ وَبَذْلُ السَّلَامِ لِلْعَالَمِ وَالْإِنْفَاقُ مِنْ الْإِقْتَارِ ».
“তিনটি জিনিস যার মধ্যে এর সবগুলোই থাকবে সেই হচ্ছে পরিপূর্ণ ঈমানদার। সেগুলো হচ্ছে, নিজের ব্যাপারে ইন্সাফ প্রতিষ্ঠা করা, সবাইকে সালাম দেওয়া এবং নিজের প্রচুর প্রয়োজন থাকা সত্ত্বেও ধন-সম্পদ আল্লাহ তা‘আলার পথে ব্যয় করা”[87]
১০. মসজিদে ঢুকার সময়টি কোনো ফরয সালাতের সময় না হয়ে থাকলে অন্ততপক্ষে দু’ রাকাত তাহিয়্যাতুল-মাসজিদের সালাত পড়ে নিবে: আর তা কোনো ফরয সালাতের সময় হয়ে থাকলে তদুপরি নিজ ঘরে সে সালাতের নিয়মিত সুন্নাতটুকু না পড়ে থাকলে উক্ত সুন্নাতটুকু মসজিদেই পড়ে নিবে। এতে করে মসজিদে ঢুকে দু’ রাকাত তাহিয়্যাতুল-মাসজিদের সালাত আদায়ের দায়িত্বটুকু আদায় হয়ে যাবে। আর সে সালাতের নিয়মিত সুন্নাতটুকু নিজ ঘরে পড়ে থাকলে মসজিদে এসে শুধু দু’ রাকাত তাহিয়্যাতুল-মাসজিদের সালাতই পড়ে নিবে। এমনকি সে সালাতের আগে কোনো নিয়মিত সুন্নাত না থাকলে কমপক্ষে সে সালাতের আযান ও ইক্বামতের মধ্যকার দু’ রাকাত নফল সালাতই আদায় করে নিবে। এতে করে মসজিদে ঢুকে দু’ রাকাত তাহিয়্যাতুল-মাসজিদের সালাত আদায়ের দায়িত্বটুকুও আদায় হয়ে যাবে।
আবু ক্বাতাদা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إِذَا دَخَلَ أَحَدُكُمُ الْـمَسْجِدَ فَلَا يَجْلِسْ حَتَّى يُصَلِّيَ رَكْعَتَيْنِ».
“যখন তোমাদের কেউ মসজিদে প্রবেশ করে তখন সে যেন
অন্ততপক্ষে দু’ রাকাত তাহিয়্যাতুল-মাসজিদের সালাত আদায় না করে না বসে”
[88]
১১. মসজিদে ঢুকে পায়ের জুতা জোড়া পা থেকে খুলে ফেললে তা দু’ পায়ের মাঝখানে কিংবা জুতা রাখার নির্দিষ্ট জায়গায় রাখবে:
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إِذَا صَلَّى أَحَدُكُمْ فَخَلَعَ نَعْلَيْهِ فَلَا يُؤْذِ بِهِمَا أَحَدًا لِيَجْعَلْهُمَا بَيْنَ رِجْلَيْهِ أَوْ لِيُصَلِّ فِيهِمَا».
“যখন তোমাদের কেউ (মসজিদে) সালাত আদায় করতে এসে নিজ জুতা জোড়া পা থেকে খুলে ফেলে তখন সে যেন তা দিয়ে কাউকে কষ্ট না দেয়। সে যেন জুতা জোড়া নিজ দু’ পায়ের মাঝখানে রাখে অথবা তা পরেই সালাত পড়ে”[89]
অন্য বর্ণনায় রয়েছে,
«إِذَا صَلَّى أَحَدُكُمْ فَلَا يَضَعْ نَعْلَيْهِ عَنْ يَمِينِهِ، وَلَا عَنْ يَسَارِهِ ؛ فَتَكُونَ عَنْ يَمِينِ غَيْرِهِ ؛ إِلَّا أَنْ لَا يَكُونَ عَنْ يَسَارِهِ أَحَدٌ، وَلْيَضَعْهُمَا بَيْنَ رِجْلَيْهِ».
“যখন তোমাদের কেউ (মসজিদে) সালাত আদায় করতে আসে তখন সে যেন নিজ জুতা জোড়া পা থেকে খুলে নিজের ডানে কিংবা বাঁয়ে না রাখে। কারণ, তা সে ব্যক্তির বাঁ দিক হলেও তা কিন্তু অন্য মুসল্লির ডান দিক। তবে তার বাঁ দিকে কোনো মুসল্লি না থাকলে তা আর অন্য মুসল্লির ডান হচ্ছে না। বরং সে যেন তার জুতা জোড়া নিজ দু’ পায়ের মাঝখানেই রাখে”[90]
কারোর পায়ে ফিতা বিশিষ্ট কোনো জুতা কিংবা মোজো পরা থাকলে যা পা থেকে খোলা খানিকটা কষ্টকর তা হলে তা পরেই সালাত পড়া সুন্নাত: তবে মসজিদে ঢুকার পূর্বে নিজ জুতা জোড়া ভালোভাবে দেখে নিবে। তাতে কোনো নাপাক বা ময়লা দেখলে তা অতি সত্বর ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিবে। যাতে করে মসজিদের কার্পেট, পাটি ইত্যাদি নষ্ট না হয়। অতঃপর তা পরেই সালাত পড়বে।
শাদ্দাদ ইবন আউস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«خَالِفُوا الْيَهُودَ ؛ فَإِنَّهُمْ لَا يُصَلُّونَ فِي نِعَالِهِمْ، وَلَا خِفَافِهِمْ».
“তোমরা ইয়াহূদীদের বিরোধিতা করো। তথা জুতা কিংবা মোজা পরেই সালাত পড়ো। কারণ, ইয়াহূদীরা জুতা কিংবা মোজা পরে কখনো সালাত পড়ে না”[91]
১২. সালাত আদায়কারীদের প্রথম সারিতে বিশেষ করে ইমাম সাহেবের ডান দিকে বসার যারপরনাই চেষ্টা করবে। তবে এতে করে কোনো মুসলিমকে সামান্যটুকুও কষ্ট দিবে না:
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«لَوْ يَعْلَمُ النَّاسُ مَا فِيْ النِّدَاءِ وَالصَّفِّ الْأَوَّلِ، ثُمَّ لَمْ يَجِدُوا إِلَّا أَنْ يَسْتَهِمُوْا عَلَيْهِ لَاسْتَهَمُوا».
“আযান ও প্রথম সারিতে সালাত পড়ায় এতো বেশি সাওয়াব রয়েছে তা যদি মানুষ জানতে পারতো অতঃপর তা পাওয়ার জন্য লটারি দেওয়া ছাড়া আর কোনো গত্যন্তর না থাকতো তা হলে তারা তা পাওয়ার জন্য অবশ্যই লটারি দেওয়ারই আয়োজন করতো”[92]
বারা ইবন আযিব রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«كُنَّا إِذَا صَلَّيْنَا خَلْفَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَحْبَبْنَا أَنْ نَكُونَ عَنْ يَمِينِهِ، يُقْبِلُ عَلَيْنَا بِوَجْهِهِ قَالَ: فَسَمِعْتُهُ يَقُولُ: رَبِّ قِنِي عَذَابَكَ يَوْمَ تَبْعَثُ أَوْ تَجْمَعُ عِبَادَكَ».
“আমরা যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পেছনে সালাত পড়তাম তখন আমরা তাঁর ডান দিকে দাঁড়ানো পছন্দ করতাম। তিনি সালাত শেষে আমাদের দিকে ফিরে বসতেন। আমি একদা তাঁর মুখ থেকে শুনতে পেলাম তিনি বলছেন: رَبِّ قِنِي عَذَابَكَ يَوْمَ تَبْعَثُ أَوْ تَجْمَعُ عِبَادَكَ যার অর্থ: হে আমার প্রভু! আপনি আমাকে কিয়ামতের দিনের শাস্তি থেকে রক্ষা করুন। যে দিন আপনি আপনার সকল বান্দাহ্কে পুনরুত্থিত তথা কিয়ামতের মাঠে একত্রিত করবেন”[93]
১৩. ক্বিব্লামুখী হয়ে বসে কুর’আন মাজীদ তিলাওয়াত কিংবা যিকির-আয্কার করবে:
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إِنَّ لِكُلِّ شَيْءٍ سَيِّداً وَإِنَّ سَيِّدَ الْـمَجَالِسِ قُبَالَةَ الْقِبْلَةِ».
“প্রত্যেক জিনিসেরই একটি উত্তম বা শ্রেষ্ঠ দিক রয়েছে। অতএব, বৈঠকের মধ্যে উত্তম বা শ্রেষ্ঠ বৈঠক হচ্ছে ক্বিব্লামুখী বৈঠক”[94]
১৪. ইমাম সাহেব আসা পর্যন্ত সালাতের অপেক্ষার নিয়্যাতেই বসে থাকবে। এমন সময় দীর্ঘক্ষণ অযু রাখারই চেষ্টা করবে:
কারণ, জামা‘আতে সালাত আদায়ের জন্য অপেক্ষমান থাকলে ততক্ষণ নফল সালাত আদায়েরই সাওয়াব পাওয়া যায়। এমনকি সালাতের পূর্বে কিংবা পরে সালাতের জায়গায় বসে থাকলে ফিরিশতাগণের দো‘আও পাওয়া যায়।
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«لَا يَزَالُ الْعَبْدُ فِي صَلَاةٍ مَا كَانَ فِي مُصَلَّاهُ يَنْتَظِرُ الصَّلَاةَ وَتَقُولُ الْـمَلَائِكَةُ : اللَّهُمَّ اغْفِرْ لَهُ اللَّهُمَّ ارْحَمْهُ حَتَّى يَنْصَرِفَ أَوْ يُحْدِثَ قُلْتُ: مَا يُحْدِثُ ؟ قَالَ: يَفْسُو اَوْ يَضْرِطُ».
“যে কোনো ব্যক্তিকে সালাতরত বলে ধরে নেওয়া হয় যতক্ষণ সে সালাতের জায়গায় বসে সালাতেরই অপেক্ষায় থাকে। আর ফিরিশতাগণ তার জন্য এ বলে দো‘আ করেন: হে আল্লাহ! আপনি একে ক্ষমা করে দিন। হে আল্লাহ! আপনি একে দয়া করুন। যতক্ষণ না সে উক্ত জায়গা থেকে সরে যায় অথবা অযু ভঙ্গ হয় এমন কিছু ঘটায়। বর্ণনাকারী আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন: আমি বললামঃ অযু ভঙ্গ হয় এমন কিছু ঘটানো মানে? তিনি বললেন: যেমন, বায়ু ত্যাগ করা”[95]
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে অন্য আরেকটি বর্ণনায় বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«فَإِذَا دَخَلَ الـْمَسْجِدَ كَانَ فِيْ الصَّلاَةِ مَا كَانَتِ الصَّلاَةُ هِيَ تَحْبِسُهُ، وَالْـمَلَائِكَةُ يُصَلُّونَ عَلَى أَحَدِكُمْ مَا دَامَ فِي مَجْلِسِهِ الَّذِي صَلَّى فِيهِ يَقُولُونَ : اللَّهُمَّ ارْحَمْهُ اللَّهُمَّ اغْفِرْ لَهُ اللَّهُمَّ تُبْ عَلَيْهِ مَا لَمْ يُؤْذِ فِيهِ مَا لَمْ يُحْدِثْ فِيهِ».
“আর যখন সে মসজিদে প্রবেশ করে তখন তাকে সালাতরত বলেই ধরে নেওয়া হয় যখন একমাত্র সালাতই তাকে সেখানে আটকে রাখলো। এমনকি ফিরিশতাগণ তোমাদের কারোর জন্য যতক্ষণ সে সালাত শেষে সালাতের জায়গায় বসে থাকে এ বলে দো‘আ করেন: হে আল্লাহ! আপনি একে দয়া করুন। হে আল্লাহ! আপনি একে ক্ষমা করে দিন। হে আল্লাহ! আপনি এর তাওবা কবুল করুন। যতক্ষণ না সে মানুষ ও ফিরিশতাগণ কষ্ট পায় এবং অযু ভঙ্গ হয় এমন কিছু ঘটায়”
১৫. কোনো ফরয সালাতের ইক্বামত দেওয়া হলে তখন শুধু উক্ত ফরয সালাতই আদায় করতে হবে। অন্য কোনো সুন্নাত বা নফল সালাত নয়:
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إِذَا أُقِيمَتِ الصَّلَاةُ فَلَا صَلَاةَ إِلَّا الْـمَكْتُوبَةُ».
“যখন কোনো ফরয সালাতের ইক্বামত দেওয়া হয় তখন উক্ত ফরয সালাত ছাড়া অন্য কোনো সালাত পড়া যাবে না”[96]
আব্দুল্লাহ ইবন সারজিস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা জনৈক ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করলো। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের সালাত পড়ছিলেন। লোকটি মসজিদে ঢুকেই তার এক পার্শ্বে গিয়ে দু’ রাকাত সালাত আদায় করে অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে জামা‘আতে শরীক হলো। যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতের সালাম ফিরালেন তখন তিনি তাকে উদ্দেশ্য করে বললেন:
«يَا فُلَانُ بِأَيِّ الصَّلَاتَيْنِ اعْتَدَدْتَ؟ أَبِصَلَاتِكَ وَحْدَكَ أَمْ بِصَلَاتِكَ مَعَنَا».
“হে অমুক! তুমি কোনো সালাতটিকে ফজরের সালাত বলে গণ্য করলে? তোমার একা পড়া দু’ রাকাত না কি আমাদের সাথে পড়া দু’ রাকাত”?[97]
১৬. মসজিদ থেকে বের হওয়ার সময় বাম পা আগে বাড়িয়ে দিবে অথচ ঠিক এরই বিপরীতে মসজিদে ঢুকার সময় ডান পাই আগে বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিলো:
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُحِبُّ التَّيَمُّنَ مَا اسْتَطَاعَ فِي شَاْنِهِ كُلِّهِ : فِي طُهُورِهِ وَتَرَجُّلِهِ وَتَنَعُّلِهِ».
“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যথাসাধ্য প্রতিটি কাজ ডান দিক থেকে শুরু করাই পছন্দ করতেন। পবিত্রতার্জন, মাথা আঁছড়ানো এমনকি জুতা পরায়ও”[98]
আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«مِنَ السُّنَّةِ إِذَا دَخَلْتَ الْـمَسْجِدَ أَنْ تَبْدَأَ بِرِجْلِكَ الْيُمْنَى، وَإِذَا خَرَجْتَ أَنْ تَبْدَأَ بِرِجْلِكَ الْيُسْرَى».
“সুন্নাত হচ্ছে, যখন তুমি মসজিদে প্রবেশ করবে তখন ডান পা আগে বাড়িয়ে দিয়ে প্রবেশ করবে। আর যখন মসজিদ থেকে বের হবে তখন বাম পা আগে বাড়িয়ে দিয়ে বের হবে”[99]
মসজিদ থেকে বের হওয়ার সময় নিম্নোক্ত দো‘আটি পাঠ করবে:
«بِسْمِ اللهِ، وَالصَّلاَةُ وَالسَّلاَمُ عَلَى رَسُوْلِ اللهِ، اللَّهُمَّ إِنِّيْ أَسْأَلُكَ مِنْ فَضْلِكَ ... اللَّهُمَّ اعْصِمْنِي مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ».
«بِسْمِ اللَّهِ وَالسَّلَامُ عَلَى رَسُولِ اللَّهِ، اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِيْ ذُنُوبِيْ وَافْتَحْ لِيْ أَبْوَابَ فَضْلِكَ».
আবু হুমাইদ্ কিংবা আবু উসাইদ্ সা’ঈদী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إِذَا دَخَلَ أَحَدُكُمْ الـْمَسْجِدَ فَلْيُسَلِّمْ عَلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، ثُمَّ لِيَقُلْ اللَّهُمَّ افْتَحْ لِيْ أَبْوَابَ رَحْمَتِكَ فَإِذَا خَرَجَ فَلْيَقُلْ اللَّهُمَّ إِنِّيْ أَسْاَلُكَ مِنْ فَضْلِكَ».
“যখন তোমাদের কেউ মসজিদে প্রবেশ করে তখন সে যেন প্রথমে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর সালাম পাঠায়। অতঃপর বলে: اللَّهُمَّ افْتَحْ لِي أَبْوَابَ رَحْمَتِكَ যার অর্থ: হে আল্লাহ! আপনি আমার জন্য আপনার রহ্মতের দরোজাগুলো খুলে দিন। আর যখন সে মসজিদ থেকে বের হয় তখন সে যেন বলে: اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْاَلُكَ مِنْ فَضْلِكَ যার অর্থ: হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট সমূহ কল্যাণ কামনা করি”[100]
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إِذَا دَخَلَ أَحَدُكُمْ الْـمَسْجِدَ فَلْيُسَلِّمْ عَلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَلْيَقُلْ اللَّهُمَّ افْتَحْ لِيْ أَبْوَابَ رَحْمَتِكَ وَإِذَا خَرَجَ فَلْيُسَلِّمْ عَلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَلْيَقُلْ اللَّهُمَّ اعْصِمْنِيْ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ».
“তোমাদের কেউ মসজিদে প্রবেশ করলে সে যেন প্রথমে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর সালাম পাঠায় অতঃপর বলে: اللَّهُمَّ افْتَحْ لِي أَبْوَابَ رَحْمَتِكَ যার অর্থ: হে আল্লাহ! আপনি আমার জন্য আপনার রহমতের দরোজাগুলো খুলে দিন। আর যখন সে মসজিদ থেকে বের হয় তখন সে যেন প্রথমে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর সালাম পাঠায় অতঃপর বলে: اللَّهُمَّ اعْصِمْنِيْ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ যার অর্থ: হে আল্লাহ! আপনি আমাকে বিতাড়িত শয়তান থেকে রক্ষা করুন”[101]
ফাতিমা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا دَخَلَ الْـمَسْجِدَ يَقُولُ: بِسْمِ اللَّهِ وَالسَّلَامُ عَلَى رَسُولِ اللَّهِ اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِيْ ذُنُوبِيْ، وَافْتَحْ لِيْ أَبْوَابَ رَحْمَتِكَ، وَإِذَا خَرَجَ قَالَ: بِسْمِ اللَّهِ وَالسَّلَامُ عَلَى رَسُولِ اللَّهِ، اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِيْ ذُنُوبِيْ وَافْتَحْ لِيْ أَبْوَابَ فَضْلِكَ».
“যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে প্রবেশ করতেন তখন তিনি বলতেন: بِسْمِ اللَّهِ وَالسَّلَامُ عَلَى رَسُولِ اللَّهِ، اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِيْ ذُنُوبِيْ، وَافْتَحْ لِيْ أَبْوَابَ رَحْمَتِكَ যার অর্থ: আল্লাহর নামে প্রবেশ করছি এবং আল্লাহর রাসূলের ওপর যথাযোগ্য সালাম বর্ষিত হোক। হে আল্লাহ! আপনি আমার সকল গুনাহ ক্ষমা করুন এবং আমার জন্য আপনার রহমতের সকল দরোজা খুলে দিন”[102]

জামা‘আত সংক্রান্ত কিছু গুরুত্বপূর্ণ মাসায়েল

সর্বনিম্ন শুধু দু’ জন দিয়েই জামা‘আত সংঘটিত হয়। একজন ইমাম ও একজন মুক্তাদি। চাই উক্ত মুক্তাদি কোনো নাবালক ছেলেই হোক অথবা কোনো মাহ্রাম মহিলা:
আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«بِتُّ عِنْدَ خَالَتِيْ مَيْمُونَةَ بِنْتِ الـْحَارِثِ زَوْجِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَكَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عِنْدَهَا فِي لَيْلَتِهَا فَقَامَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُصَلِّيْ مِنْ اللَّيْلِ فَقُمْتُ أُصَلِّي مَعَهُ فَقُمْتُ عَنْ يَسَارِهِ فَأَخَذَ بِرَأْسِيْ فَأَقَامَنِيْ عَنْ يَمِينِهِ».
“আমি একদা আমার খালা ও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রী হযরত মাইমূনা বিনতে আল-হারিস-এর নিকট রাত্রি যাপন করেছি। সে রাত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর ঘরেই ছিলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাত্রি বেলায় সালাত আদায় করতে উঠলে আমিও তাঁর সাথে সালাত আদায়ের জন্য উঠলাম। অতঃপর আমি তাঁর বাঁয়েই দাঁড়ালাম। কিন্তু তিনি আমাকে আমার মাথা ধরে তাঁর ডানেই দাঁড় করিয়ে দিলেন”[103]
মালিক ইবন হুওয়াইরিস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«أَتَى رَجُلَانِ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُرِيدَانِ السَّفَرَ، فَقَالَ النَّبِـيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِذَا أَنْتُمَا خَرَجْتُمَا، فَأَذِّنَا، ثُمَّ أَقِيمَا، ثُمَّ لِيَؤُمَّكُمَا أَكْبَرُكُمَا».
“একদা দু’ ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট সফরের মানসিকতা নিয়েই দেখা করতে আসলেন। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের তাদেরকে উদ্দেশ্য করে বললেন: যখন তোমরা সফরের উদ্দেশ্যে বের হবে তখন তোমরা (জামা‘আতে সালাত আদায়ের জন্য) আযান-ইক্বামত দিবে এবং তোমাদের মধ্যে যিনি বয়স্ক তিনিই তোমাদের ইমামতি করবেন”[104]
প্রয়োজনবশতঃ একজন পুরুষ ও একজন মহিলা নিয়ে যে কোনো সালাতের জামা‘আত সংঘটিত হয়:
আবু সাঈদ ও আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত তারা বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إِذَا اسْتَيْقَظَ الرَّجُلُ مِنْ اللَّيْلِ وَأَيْقَظَ امْرَأَتَهُ فَصَلَّيَا رَكْعَتَيْنِ كُتِبَا مِنْ الذَّاكِرِينَ اللهُ كَثِيرًا وَالذَّاكِرَاتِ».
“যখন কোনো পুরুষ রাত্রি বেলায় জাগে এবং নিজ স্ত্রীকেও জাগায় অতঃপর উভয়ে দু’ রাকাত সালাত পড়ে তখন তাদের উভয়কে আল্লাহর অত্যধিক যিকিরকারী পুরুষ ও অত্যধিক যিকিরকারিণী মহিলাদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়”[105]
মূলতঃ দু’ জন পুরুষে যেমন জামা‘আত হয় তেমনিভাবে একজন পুরুষ ও একজন মহিলা নিয়েও জামা‘আত হবে। এটিই হচ্ছে একটি মৌলিক বিধান। আর এর বিপরীত কোনো প্রমাণ নেই। যে ব্যক্তি তা নিষেধ করবে তাকে অবশ্যই এর বিপরীত প্রমাণ দিতে হবে। তবে মহিলাটি উক্ত পুরুষের কোনো মাহরম মহিলা না হলে একান্তে তাদের উভয়ের জামা‘আত শুদ্ধ হবে না।
আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«لَا يَخْلُوَنَّ رَجُلٌ بِامْرَأَةٍ إِلَّا مَعَ ذِي مَحْرَمٍ فَقَامَ رَجُلٌ فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ! امْرَأَتِيْ خَرَجَتْ حَاجَّةً، وَاكْتُتِبْتُ فِي غَزْوَةِ كَذَا وَكَذَا، قَالَ: ارْجِعْ فَحُجَّ مَعَ امْرَاَتِكَ».
“কোনো পুরুষ কোনো বেগানা মহিলার সাথে কখনো একান্তে অবস্থান করবে না। তবে কোনো মাহরাম মহিলাকে নিয়ে একান্তে অবস্থান করা যায়। জনৈক ব্যক্তি তখন দাঁড়িয়ে বললেন: হে আল্লাহর রাসূল! আমার স্ত্রী তো একাকী হজ করতে বেরিয়েছে অথচ আমার নামটুকু অমুক যুদ্ধে যাওয়ার জন্য লেখা হয়েছে। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে উদ্দেশ্য করে বলেন: তুমি চলে যাও। তোমার স্ত্রীর সাথে হজ করো”। 
একজন নাবালক ছেলে যেমন ফরয বা নফল সালাতের ইমাম হতে পারে তেমনিভাবে তাকে নিয়ে জামা‘আতের একটি সারিও হতে পারে:
আমর ইবন সালামাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমার পিতা বলেন:  
«جِئْتُكُمْ وَاللَّهِ مِنْ عِنْدِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَقًّا فَقَالَ: صَلُّوا صَلَاةَ كَذَا فِيْ حِينِ كَذَا وَصَلُّوا صَلَاةَ كَذَا فِيْ حِينِ كَذَا فَإِذَا حَضَرَتِ الصَّلَاةُ فَلْيُؤَذِّنْ أَحَدُكُمْ وَلْيَؤُمَّكُمْ أَكْثَرُكُمْ قُرْآنًا، فَنَظَرُوْا فَلَمْ يَكُنْ أَحَدٌ أَكْثَرَ قُرْآنًا مِنِّيْ، لِمَا كُنْتُ أَتَلَقَّى مِنَ الرُّكْبَانِ فَقَدَّمُوْنِيْ بَيْنَ أَيْدِيْهِمْ، وَأَنَا ابْنُ سِتٍّ أَوْ سَبْعِ سِنِينَ، وَكَانَتْ عَلَيَّ بُرْدَةٌ كُنْتُ إِذَا سَجَدْتُ تَقَلَّصَتْ عَنِّي فَقَالَتْ امْرَأَةٌ مِنَ الْحَيِّ أَلَا تُغَطُّوا عَنَّا اسْتَ قَارِئِكُمْ فَاشْتَرَوْا فَقَطَعُوْا لِيْ قَمِيصًا فَمَا فَرِحْتُ بِشَيْءٍ فَرَحِيْ بِذَلِكَ الْقَمِيصِ».
“আল্লাহর কসম! আমি সত্যিই তোমাদের নিকট নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছ থেকে এসেছি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামবলেন: তোমরা এ সালাত এ সময়ে পড়বে এবং ও সালাত ও সময়ে পড়বে। যখন সালাতের সময় হবে তখন তোমাদের কোনো একজন আযান দিবে এবং তোমাদের মধ্যে যে কুর’আন বেশি জানে সে ইমামতি করবে। যখন তারা গোত্রের সবার ওপর চোখ বুলিয়ে দেখলো তখন তারা আমার চেয়ে বেশি কুরআন জানে এমন কাউকে খুঁজে পায় নি। কারণ, আমি তো ইতোমধ্যেই পথচারী আরোহীদের থেকে অনেক কিছুই শিখে ফেলেছি। তখন তারা আমাকে ইমামতির জন্য সামনে বাড়িয়ে দিলো। আমার বয়স ছিলো তখন ছয় বা সাত বছর। আমার গায়ে ছিলো তখন একটি চাদর। আমি যখন সাজদায় যেতাম তখন আমার চাদর খানা একটু উপরে চলে আসতো। তখন পাড়ার এক মহিলা বললো: তোমরা কি তোমাদের ইমাম সাহেবের পাছা খানা ঢেকে দিবে না। তখন তারা কাপড় কিনে আমাকে একটি জামা সেলাই করে দিলো। তাতে আমি এতো বেশি খুশি হলাম যা ইতোপূর্বে আর কখনো হই নি”[106]
উক্ত মজার ঘটনাটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবদ্দশায়ই ঘটেছিলো। তিনি অবশ্যই তা জেনেছেন ও সমর্থন করেছেন। তা না হলে আল্লাহ তা‘আলা তো তা অবশ্যই জানতেন। যদি তা সঠিকই না হতো তাহলে তিনি অবশ্যই তা ওহী মারফত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জানিয়ে দিতেন। কারণ, তখন তো ছিলো বিধান নাযিল হওয়ার যুগ। আর কিছু সংখ্যক সাহাবায়ে কিরাম দীর্ঘ সময় একটি ভুলের ওপর থাকবেন অথচ আল্লাহ তা‘আলা তা দেখেও নীরব থাকবেন তা কখনোই হতে পারে না।
আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«دَخَلَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَيْنَا وَمَا هُوَ إِلَّا أَنَا وَأُمِّيْ وَأُمُّ حَرَامٍ خَالَتِيْ فَقَالَ: قُومُوا فَلِأُصَلِّيَ بِكُمْ - فِي غَيْرِ وَقْتِ صَلَاةٍ - فَصَلَّى بِنَا، فَقَالَ رَجُلٌ لِثَابِتٍ: أَيْنَ جَعَلَ أَنَسًا مِنْهُ؟ قَالَ: جَعَلَهُ عَلَى يَمِينِهِ، ثُمَّ دَعَا لَنَا أَهْلَ الْبَيْتِ بِكُلِّ خَيْرٍ مِنْ خَيْرِ الدُّنْيَا وَالْآخِــرَةِ، فَقَالَتْ أُمِّيْ: يَا رَسُولَ اللَّهِ! خُوَيْدِمُكَ ادْعُ اللَّهَ لَهُ، قَالَ: فَدَعَا لِي بِكُلِّ خَيْرٍ، وَكَانَ فِيْ آخِـرِ مَا دَعَا لِيْ بِهِ أَنْ قَالَ: اللَّهُمَّ أَكْثِرْ مَالَهُ وَوَلَدَهُ وَبَارِكْ لَهُ فِيهِ».
“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামএকদা আমাদের ঘরে আসলেন। তখন আমাদের ঘরে ছিলাম আমি, আমার আম্মা ও আমার খালা উম্মু হারাম। তখন তিনি বললেন: তোমরা দাঁড়িয়ে যাও। আমি তোমাদেরকে নিয়ে সালাত পড়বো। তখন কোনো ফরয সালাতের সময় ছিলো না। অতঃপর তিনি আমাদেরকে নিয়ে সালাত পড়লেন। জনৈক ব্যক্তি বর্ণনাকারী হযরত সাবিত রহ. কে জিজ্ঞাসা করলো: আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কোনো পার্শ্বে ছিলেন? তিনি বলেন: তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ডান পার্শ্বে ছিলেন। অতঃপর তিনি আমাদের ঘরের সকলের জন্য দুনিয়া ও আখিরাতের সমূহ কল্যাণের দো‘আ করলেন। আমার আম্মু বললেন: হে আল্লাহর রাসূল! আপনি আপনার ছোট খাদেমটির জন্য বিশেষভাবে দো‘আ করুন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার জন্য সমূহ কল্যাণের দো‘আ করলেন। তিনি আমার জন্য সর্ব শেষ যে দো‘আটি করলেন তা হলো: হে আল্লাহ! আপনি এর সম্পদ ও সন্তান বাড়িয়ে দিন এবং সেগুলোর মধ্যে বরকত দিন”[107]
আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে আরো বর্ণিত তিনি বলেন:
«أَنَّ جَدَّتَهُ مُلَيْكَةَ دَعَتْ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِطَعَامٍ صَنَعَتْهُ فَأَكَلَ مِنْهُ ثُمَّ قَالَ: قُومُوا فَأُصَلِّيَ لَكُمْ قَالَ أَنَسُ بْنُ مَالِكٍ: فَقُمْتُ إِلَى حَصِيرٍ لَنَا قَدْ اسْوَدَّ مِنْ طُولِ مَا لُبِسَ فَنَضَحْتُهُ بِمَاءٍ فَقَامَ عَلَيْهِ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَصَفَفْتُ أَنَا وَالْيَتِيمُ وَرَاءَهُ وَالْعَجُوزُ مِنْ وَرَائِنَا فَصَلَّى لَنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَكْعَتَيْنِ ثُمَّ انْصَرَفَ».
“একদা তার দাদী মুলাইকাহ রাদিয়াল্লাহ আনহা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য কিছু খানা বানিয়ে তা খাওয়ার জন্য তাঁকে দাওয়াত করলেন। তখন তিনি এসে তা খেলেন অতঃপর বললেন: তোমরা দাঁড়িয়ে যাও। আমি তোমাদেরকে নিয়ে সালাত পড়বো। আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন: আমি একটি পুরাণ পাটির উপর যা দীর্ঘ দিন থাকতে থাকতে কালো হয়ে গিয়েছিলো তার ওপর পানি ছিঁটিয়ে দিলাম। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার উপর দাঁড়ালেন এবং আমি ও একজন এতিম তাঁর পেছনে দাঁড়ালাম। আর আমার দাদী আমাদের পেছনে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন আমাদেরকে নিয়ে দু’ রাকাত সালাত পড়লেন। অতঃপর চলে গেলেন”[108]
কেউ কোনো সালাতের একটি রাকাত জামা‘আতের সাথে পেলেই সে পুরো জামা‘আত পেয়েছে বলে ধরে নেওয়া হবে। তবে রুকু’ পেলেই কোনো রাকাত পেয়েছে বলে ধরে নেওয়া হয়। নতুবা নয়:
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«مَنْ أَدْرَكَ رَكْعَةً مِنْ الصَّلَاةِ فَقَدْ أَدْرَكَ الصَّلَاةَ».
“যে ব্যক্তি কোনো সালাতের একটি রাকাত (ইমামের সাথে) পেলো সে যেন পুরো সালাতই ইমামের সাথে পেলো”[109]
আবু বাকরাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, তিনি একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে রুকু অবস্থায় পেলে তিনি তখন সালাতের সারিতে না পৌঁছেই সারির পেছনেই রুকু’ করে ফেললেন। ব্যাপারটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জানানো হলে তিনি তাঁকে উদ্দেশ্য করে বললেন:
«زَادَكَ اللهُ حِرْصًا وَلَا تَعُدْ».
“আল্লাহ তা‘আলা তোমার সালাতের প্রতি আগ্রহ আরো বাড়িয়ে দিন। তবে এ কাজ তুমি আর কখনো করবে না। তথা সারিতে না পৌঁছেই সারির পেছনে কখনো দ্রুত রুকু’ করবে না”[110]
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إِذَا جِئْتُمْ إِلَى الصَّلَاةِ وَنَحْنُ سُجُوْدٌ فَاسْجُدُوْا وَلَا تَعُدُّوْهَا شَيْئًا وَمَنْ أَدْرَكَ الرَّكْعَةَ فَقَدْ أَدْرَكَ الصَّلَاةَ».
“যখন তোমরা আমাদেরকে সালাতের সেজ্দাহ্রত অবস্থায় পাও তখন তোমরাও সাজদাহ করো। তবে উহাকে রাকাত হিসেবে ধরবে না। আর যে ব্যক্তি রুকু’ তথা রাকাত পেলো সে যেন পুরো সালাতই পেলো”[111]
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে অন্য বর্ণনায় রয়েছে তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«مَنْ أَدْرَكَ رَكْعَةً مِنَ الصَّلاَةِ فَقَدْ أَدْرَكَهَا قَبْلَ أَنْ يُقِيمَ الإِمَامُ صُلْبَهُ».
“যে ব্যক্তি ইমাম সাহেব রুকু’ থেকে নিজ পিঠ উঠানোর আগেই তাঁর সাথে রুকু’ পেলো সে যেন পুরো সালাতই পেলো”[112]
তবে কোনো ব্যক্তি ওযরবশতঃ সালাতে হাজির হতে দেরি করে ফেললে এবং সে মসজিদে এসে সালাতের রুকু না পেয়ে তার কোনো একটি অংশ পেলে অথচ সে সর্বদা সালাতের পাবন্দ তবুও সে জামা‘আত পেলো না বলে ধরে নেওয়া হবে। কিন্তু তাকে নিয়্যাত ভালো ও ওযর থাকার দরুন জামা‘আতের সাওয়াব দেওয়া হবে।
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«مَنْ تَوَضَّأَ فَأَحْسَنَ وُضُوْءَهُ ثُمَّ رَاحَ فَوَجَدَ النَّاسَ قَدْ صَلَّوْا أَعْطَاهُ اللهُ جَلَّ وَعَزَّ مِثْلَ أَجْرِ مَنْ صَلَّاهَا وَحَضَرَهَا لَا يَنْقُصُ ذَلِكَ مِنْ أَجْرِهِمْ شَيْئًا».
“যে ব্যক্তি ভালোভাবে অযু করে মসজিদে গেলো অতঃপর দেখলো মানুষ সালাত পড়ে ফেলেছে তখন আল্লাহ তা‘আলা তাকে সালাত পড়ুয়াদের ন্যায় জামা‘আতের সাওয়াব দিয়ে দিবেন। এমনকি তাদের সাওয়াবে একটুও ঘাটতি করা হবে না”[113]
আবু মূসা আশ‘আরী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إِذَا مَرِضَ الْعَبْدُ أَوْ سَافَرَ كُتِبَ لَهُ مِثْلُ مَا كَانَ يَعْمَلُ مُقِيمًا صَحِيحًا».
“যখন কোনো বান্দা রোগাক্রান্ত অথবা সফররত অবস্থায় থাকে তখন তার জন্য তার আমলনামায় মুক্বীম (নিজ এলাকা অথবা তেমন কোনো এলাকায় ইক্বামতের নিয়্যাতে অবস্থানরত অবস্থা) ও সুস্থ অবস্থার আমলের ন্যায় আমল লেখা হবে”[114]
আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে তাবুক যুদ্ধ থেকে ফেরার পথে তিনি বললেন:
«إِنَّ أَقْوَامًا بِالـْمَدِينَةِ خَلْفَنَا مَا سَلَكْنَا شِعْبًا وَلَا وَادِيًا إِلَّا وَهُمْ مَعَنَا فِيهِ حَبَسَهُمْ الْعُذْرُ».
“কিছু সংখ্যক লোক এমন রয়েছে যাদেরকে আমরা মদিনায় রেখে এসেছি অথচ আমরা যে কোনো গিরি পথ ও উপত্যকায় গিয়েছিলাম তারা সেখানে আমাদের সাথেই ছিলো। তাদেরকে মদিনায় একমাত্র ওযরই আটকে রেখেছে”[115]
অন্য বর্ণনায় রয়েছে,
«إِنَّ بِالْـمَدِينَةِ أَقْوَامًا مَا سِرْتُمْ مَسِيرًا، وَلَا قَطَعْتُمْ وَادِيًا إِلَّا كَانُوا مَعَكُمْ، قَالُوا: يَا رَسُولَ اللَّهِ! وَهُمْ بِالـْمَدِينَةِ؟ قَالَ: وَهُمْ بِالـْمَدِينَةِ حَبَسَهُمْ الْعُذْرُ».
“মদিনায় এমন কিছু সংখ্যক লোক রয়েছে; তোমরা যে পথ বা উপত্যকাই অতিক্রম করেছো তারা তোমাদের সাথেই ছিলো। সাহাবীগণ বললেন: হে আল্লাহর রাসূল! তারা তো বস্তুতঃ মদিনায় রয়েছে অথচ তারা আমাদের সাথে থাকলো কি ভাবে? তিনি বললেন: তারা সত্যিই মদিনায়। একমাত্র ওযরই তাদেরকে সেখানে আটকে রেখেছে। তবে তারা মানসিকভাবে তথা আগ্রহ ও উৎসাহের দিক দিয়ে তোমাদের সাথেই রয়েছে”[116]
উক্ত হাদীসগুলো থেকে এ কথা সুস্পষ্ট হয়ে গেলো যে, কেউ কোনো শর’য়ী ওযরের কারণে কোনো সৎকর্ম করতে না পারলে তাকে উক্ত কর্ম সম্পাদনের সমপরিমাণই সাওয়াব দেওয়া হয়।
কেউ ইমাম সাহেবের সাথে প্রথম জামা‘আতে সালাত আদায় করতে না পারলে তার জন্য উক্ত মসজিদেই দ্বিতীয় জামা‘আত করা বৈধ:
একই মসজিদে দ্বিতীয় জামা‘আত করার কয়েকটি পদ্ধতি রয়েছে যা নিম্নরূপ:
১. একই মসজিদে নিয়মিত দু’ বা ততোধিক জামা‘আত করা। তথা প্রতি বেলায় কোনো মসজিদে দু’ বা ততোধিক জামা‘আত করা। এমনটি করা বিদ‘আত।
২. কখনো কখনো কোনো মসজিদে দু’ বা ততোধিক জামা‘আত করা। যা নিয়মিত নয়। তথা নিয়মিত ইমাম একটি জামা‘আত সম্পন্ন করে গেছেন। এ দিকে দু’ বা ততোধিক ব্যক্তি কোনো ওযরবশতঃ উক্ত জামা‘আতে হাজির হতে পারেনি। তখন তারা কি উক্ত মসজিদেই দ্বিতীয় জামা‘আত করতে পারবে? না কি নয়। তা নিয়েই আমাদের উক্ত আলোচনা।
কেউ কেউ বলেন: উক্ত মসজিদে দ্বিতীয় জামা‘আত আর করা যাবে না। বরং তারা একাকী সালাত আদায় করবে। আর কেউ কেউ বলেন: তাদের জন্য দ্বিতীয় জামা‘আত করা জায়িয ও মুস্তাহাব। এটিই সঠিক মত। যা নিম্নে প্রমাণ সহ বর্ণিত হবে। ইনশাআল্লাহ।
৩. কোনো রাস্তা-ঘাটের মসজিদ। যেখানে কোনো নিয়মিত ইমাম নেই। সেখানে প্রতি বেলায় দু’ বা ততোধিক লোক ঢুকছে। আর সালাত পড়ে চলে যাচ্ছে। আবার দু’ বা ততোধিক লোক ঢুকছে। আর সালাত পড়ে চলে যাচ্ছে। এ জাতীয় মসজিদে দ্বিতীয় জামা‘আত একেবারেই বৈধ। তাতে কোনো দ্বিমত নেই।
নিম্নে একই মসজিদে অনিয়মিত দ্বিতীয় জামা‘আত বৈধ হওয়ার প্রমাণ উল্লিখিত হয়েছে। যা উপরে বর্ণিত দ্বিতীয় পদ্ধতি।
আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীগণকে নিয়ে জোহরের সালাত আদায় করলেন। ইতিমধ্যে জনৈক সাহাবী মসজিদে প্রবেশ করলেন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে জিজ্ঞাসা করলেন: তুমি আমাদের সাথে জামা‘আতে উপস্থিত হলে না কেন? তখন তিনি কোনো একটি ওযর দেখিয়ে একাকী সালাত আদায় করতে শুরু করলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন:
«أَلَا رَجُلٌ يَتَصَدَّقُ عَلَى هَذَا فَيُصَلِّيَ مَعَهُ؟».
“এমন কি কেউ আছে যে এর ওপর সাদাকা করবে তথা এর সাথে সালাত পড়বে”?[117]
অন্য বর্ণনায় রয়েছে,
«أَيُّكُمْ يَتَّجِرُ عَلَى هَذَا؟ فَقَامَ رَجُلٌ فَصَلَّى مَعَهُ».
“এমন কি কেউ আছে যে এর সাথে ব্যবসা করবে তথা এর সাথে সালাত পড়বে? তখন জনৈক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে তার সাথে সালাত পড়লো”[118]
ইমাম শাওকানী রহ. বলেন: যিনি তাঁর সাথে সালাত আদায় করতে দাঁড়ালেন তিনি ছিলেন আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু[119]
উক্ত হাদীস থেকে দু’টি জিনিস সুস্পষ্ট। যার একটি হচ্ছে, কাউকে কখনো একাকীভাবে ওয়াক্তিয়া তথা তখনকার ফরয সালাত আদায় করতে দেখলে উক্ত ফরয সালাত কিংবা নফল সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে তার সাথে যে কেউ দাঁড়াতে পারে। যদিও সে ইতোপূর্বে নিয়মিত জামা‘আতের সাথে উক্ত ফরয সালাত আদায় করে থাকে। তেমনিভাবে হাদীসটি একই মসজিদে অনিয়মিত দ্বিতীয় জামা‘আত জায়েয হওয়া প্রমাণ করে। জামা‘আতের ফযীলত সংক্রান্ত হাদীসগুলোও দূর থেকে এর সমর্থন করে। কেউ যদি বলে, জামা‘আতের ফযীলতগুলো শুধু প্রথম জামা‘আতের সাথেই সীমাবদ্ধ তাহলে তাকে এ সংক্রান্ত অন্তত একটি বিশেষ প্রমাণ হলেও উল্লেখ করতে হবে।
আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু একদা কিছু সংখ্যক লোককে সাথে নিয়ে একবার জামা‘আত অনুষ্ঠিত হয়েছে এমন মসজিদে আযান ও ইক্বামত দিয়ে দ্বিতীয় জামা‘আত আদায় করেন।[120]
আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু এবং আলকামা, মাসরূক, আসওয়াদ, হাসান, ক্বাতাদাহ ও আত্বা রহ. তার এক বর্ণনায় উক্ত মত পোষণ করেন।
এদিকে আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত হাদীস যাতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«لَا تُصَلُّوا صَلَاةً فِي يَوْمٍ مَرَّتَيْنِ».
“একই দিনে একই সালাত দু’ বার পড়া যাবে না”[121]
তা থেকে উদ্দেশ্য একই দিনে একই ফরয সালাত ফরযের নিয়্যাতে দু’ বার পড়া। একই ফরয সালাত দ্বিতীয়বার নফলের নিয়্যাতে পড়া কখনো এর বিরোধী নয়।
একবার কোনো ফরয সালাত একাকী আদায় করলে তা দ্বিতীয় বার জামা‘আতের সাথে নফলের নিয়্যাতে আদায় করা যায়:
আবু যর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা আমাকে উদ্দেশ্য করে বলেন:
«كَيْفَ أَنْتَ إِذَا كَانَتْ عَلَيْكَ أُمَرَاءُ يُؤَخِّرُونَ الصَّلَاةَ عَنْ وَقْتِهَا أَوْ يُمِيتُوْنَ الصَّلَاةَ عَنْ وَقْتِهَا؟ قَالَ: قُلْتُ: فَمَا تَأْمُرُنِيْ؟ قَالَ: صَلِّ الصَّلَاةَ لِوَقْتِهَا فَإِنْ أَدْرَكْتَهَا مَعَهُمْ فَصَلِّ فَإِنَّهَا لَكَ نَافِلَةٌ، وَفِيْ رِوَايَةٍ: وَلاَ تَقُلْ: إِنِّيْ قَدْ صَلَّيْتُ فَلاَ اُصَلِّيْ».
“তুমি তখন কি করবে? যখন তোমার ওপর এমন সকল আমীর-উমারা’ নিযুক্ত হবে। যারা সময় মতো সালাত না পড়ে সালাতকে সত্যিকারার্থে নির্জীব করে দিবে। তিনি বলেন: তখন আমি বললাম: আপনি তখন আমাকে কি করার নির্দেশ দিচ্ছেন? তিনি বলেন: তুমি সময় মতো নিজের সালাতটুকু পড়ে নিবে। অতঃপর তুমি আবার তাদেরকে উক্ত সালাত জামা‘আতে পড়তে দেখলে তা দ্বিতীয়বার পড়ে নিবে যা তোমার জন্য নফল হিসেবেই বিবেচিত হবে। তুমি কখনো এমন বলবে না যে, আমি তো উক্ত সালাত একবার পড়ে ফেলেছি। তাই আর পড়বো না”[122]
ইয়াযীদ ইবন আসওয়াদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে হজ করতে গিয়েছিলাম। তখন আমি তাঁর সাথে মাস্জিদুল-খাইফে ফজরের সালাত আদায় করলাম। সালাত শেষে যখন তিনি মানুষের দিকে ফিরলেন তখন তিনি দু’ জন ব্যক্তিকে সবার পেছনে মসজিদের এক কোনায় সালাত না পড়ে বসে থাকতে দেখলেন। তখন তিনি সবাইকে উদ্দেশ্য করে বললেন: এদেরকে আমার কাছে নিয়ে আসো। অতঃপর তাদেরকে ভয়ার্তাবস্থায় তাঁর কাছে নিয়ে আসা হলে তিনি তাদেরকে বললেন: তোমরা আমাদের সাথে সালাত পড়লে না কেন? তারা বললো: হে আল্লাহর রাসূল! আমরা তো ইতোপূর্বে নিজ নিজ ঘরে সালাত পড়ে এসেছি। তখন তিনি বললেন:
«فَلَا تَفْعَلَا؛ إِذَا صَلَّيْتُمَا فِي رِحَالِكُمَا، ثُمَّ أَتَيْتُمَا مَسْجِدَ جَمَاعَةٍ، فَصَلِّيَا مَعَهُمْ ؛ فَإِنَّهَا لَكُمَا نَافِلَةٌ».
“তোমরা কখনো আর এমন করো না। তোমরা নিজ নিজ ঘরে সালাত পড়ে থাকলে অতঃপর মসজিদে আসলে সবার সাথে আবার মসজিদে সালাত পড়বে। যা তোমাদের জন্য নফল হবে”[123]
অন্য বর্ণনায় রয়েছে,
«لَا تَفْعَلُوا، إِذَا صَلَّى أَحَدُكُمْ فِي رَحْلِهِ، ثُمَّ أَدْرَكَ الْإِمَامَ وَلَمْ يُصَلِّ، فَلْيُصَلِّ مَعَهُ؛ فَإِنَّهَا لَهُ نَافِلَةٌ».
“তোমরা কখনো আর এমন করো না। তোমাদের কেউ নিজ ঘরে সালাত পড়ে থাকলে অতঃপর (মসজিদে এসে) আবারো ইমাম সাহেবকে উক্ত সালাত না পড়াবস্থায় পেলে সে যেন তার সাথে আবার সালাতটুকু পড়ে নেয়। যা তার জন্য নফল হবে”[124]
মিহজান রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট বসা ছিলাম। আর ইতিমধ্যে সালাতের আযান হয়ে গেলো। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখান থেকে উঠে গিয়ে সালাত পড়ে আবার ফিরে আসলেন অথচ আমি সেখানেই বসে ছিলাম। তাঁর সাথে আমি সালাত আদায় করতে যাই নি। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে উদ্দেশ্য করে বললেন:
«مَا مَنَعَكَ أَنْ تُصَلِّيَ أَلَسْتَ بِرَجُلٍ مُسْلِمٍ؟ قَالَ: بَلَى، وَلَكِنِّي كُنْتُ قَدْ صَلَّيْتُ فِي أَهْلِي، فَقَالَ لَهُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِذَا جِئْتَ فَصَلِّ مَعَ النَّاسِ، وَاِنْ كُنْتَ قَدْ صَلَّيْتَ».
“তুমি কেন আমাদের সাথে সালাত পড়লে না? তুমি কি মুসলমান নও? মিহজান রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন: আমি নিশ্চয় মুসলিম। তবে আমি ঘরে সালাত পড়ে এসেছি। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন: তুমি যখন (মসজিদে) আসবে তখন মানুষের সাথে সালাত পড়বে। যদিও ইতোপূর্বে সালাত পড়ে থাকো”[125]
উবাদাহ ইবন সামিত রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إِنَّهَا سَتَكُونُ عَلَيْكُمْ بَعْدِيْ أُمَرَاءُ، تَشْغَلُهُمْ أَشْيَاءُ عَنِ الصَّلَاةِ لِوَقْتِهَا، حَتَّى يَذْهَبَ وَقْتُهَا، فَصَلُّوا الصَّلَاةَ لِوَقْتِهَا، فَقَالَ رَجُلٌ: يَا رَسُولَ اللَّهِ! أُصَلِّي مَعَهُمْ؟ قَالَ: نَعَمْ، اِنْ شِئْتَ».
“অচিরেই আমার মৃত্যুর পর তোমাদের ওপর এমন কিছু আমীর-উমারা’ নিযুক্ত হবে যাদেরকে দুনিয়ার প্রচুর ঝামেলাময় কর্মকান্ড সময় মতো সালাত পড়া থেকে বিরত রাখবে। এমনকি কখনো কখনো সালাতের সঠিক সময়টুকুও পার হয়ে যাবে। তখন তোমরা সময় মতো সালাত পড়ে নিবে। জনৈক ব্যক্তি বললো: হে আল্লাহর রাসূল! আমি কি পরবর্তীতে উক্ত সালাত তাদের সাথে আবার পড়বো? হ্যাঁ। তোমার যদি মনে চায়”[126]
আব্দুল্লাহ ইবন মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা আমাকে উদ্দেশ্য করে বললেন:
«كَيْفَ بِكُمْ إِذَا أَتَتْ عَلَيْكُمْ أُمَرَاءُ، يُصَلُّونَ الصَّلَاةَ لِغَيْرِ مِيقَاتِهَا؟!، قُلْتُ: فَمَا تَأْمُرُنِي؟ إِنْ أَدْرَكَنِي ذَلِكَ يَا رَسُولَ اللَّهِ! قَالَ: صَلِّ الصَّلَاةَ لِمِيقَاتِهَا وَاجْعَلْ صَلَاتَكَ مَعَهُمْ سُبْحَةً».
“তোমরা তখন কি করবে? যখন তোমাদের ওপর এমন কিছু আমীর-উমারা’ নিযুক্ত হবে। যারা অসময়ে সালাত পড়বে। আমি বললাম: তখন আপনি আমাকে কি করার নির্দেশ দিচ্ছেন? হে আল্লাহর রাসূল! রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: তুমি সময় মতো নিজের সালাতটুকু পড়ে নাও এবং তাদের সাথে যে সালাত পড়বে তা হবে তোমার জন্য নফল”[127]
কেউ ইমাম সাহেবের সাথে পুরো সালাত না পেলে যতটুকু পেয়েছে তা পড়ে নিবে। যা তার শুরু সালাত বলেই বিবেচিত হবে। আর বাকি অংশটুকু সে সালামের পর পুরো করে নিবে:
মুগীরাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমরা তাবুক যুদ্ধে থাকাবস্থায় ফজরের সালাতের কিছু পূর্বে আমি ও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানুষজন থেকে একটু দূরে সরে গেলাম। ইতিমধ্যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উটের পিঠ থেকে নেমে প্রস্রাব করলেন। অতঃপর আমি ঘটি থেকে তাঁর হাতে পানি প্রবাহিত করলে তিনি সর্বপ্রথম তাঁর উভয় হাত কব্জি পর্যন্ত ধৌত করেন। এরপর তাঁর মুখমন্ডল ধৌত করেন। অতঃপর তিনি তাঁর উভয় হাত কনুই পর্যন্ত খুলতে চাইলে তা না পেরে তিনি হাত দু’টো জুববার নিচ থেকে বের করলেন। এরপর তিনি হাত দু’টো কনুই পর্যন্ত ধুলে এবং মাথা ও মোজা মাসেহ করলে আমি ও তিনি উটে সাওয়ার হলাম। আমরা সবার নিকট পৌঁছুলে দেখলাম, আব্দুর রহ্মান ইবন আউফ রাদিয়াল্লাহু আনহু সালাত পড়াচ্ছেন। ইতোমধ্যে ফজরের এক রাকাত সালাত শেষ হয়ে গেলো। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুসলিমদের সাথে সারিবদ্ধ হয়ে আব্দুর রহমান ইবন আউফ রাদিয়াল্লাহু আনহুর পেছনে দ্বিতীয় রাকাত আদায় করলেন। আব্দুর রহ্মান ইবন আউফ রাদিয়াল্লাহু আনহু সালাম ফিরালে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাকি সালাত পুরো করার জন্য দাঁড়িয়ে গেলেন। এ দিকে মুসলমানরা হতভম্ব হয়ে বার বার “সুব্হানাল্লাহ” “সুব্হানাল্লাহ” বলতে লাগলো। কারণ, তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আগেই তাদের সালাত শেষ করে ফেলেছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাম ফিরিয়ে তাদেরকে বললেন:
«قَــدْ أَصَبْتُـمْ أَوْ قَدْ اَحْسَنْتُـمْ».
“তোমরা ঠিক করেছো কিংবা ভালো করেছো”[128]
উক্ত হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালামের পর বাকি সালাতটুকু পুরো করলেন থেকে বুঝা যায় তাঁর পূর্বের সালাতটুকু তাঁর শুরু সালাত ছিলো। নিম্নোক্ত হাদীসও এর প্রমাণ বহন করে।
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إِذَا سَمِعْتُمْ الْإِقَامَـةَ فَامْشُوا إِلَى الصَّلَاةِ، وَعَلَيْكُمْ بِالسَّكِينَةِ وَالْوَقَارِ، وَلاَ تُسْرِعُوا، فَمَا أَدْرَكْتُمْ فَصَلُّوا، وَمَا فَاتَكُمْ فَأَتِمُّوا».
“তোমরা যখন ইক্বামত শুনবে তখনই সালাতের দিকে রওয়ানা করবে। চলার সময় প্রশান্তি ও ভদ্রতা বজায় রাখবে। দৌড়ে যাবে না। অতঃপর যা পাবে তাই ইমামের সাথে পড়ে নিবে। আর বাকিটুকু পুরো করে নিবে”[129]
কোনো কোনো বর্ণনায় فَاقْضُوْا শব্দ থাকলেও তা থেকে কোনো কাজ সম্পাদন করার অর্থই বুঝতে হবে। কোনো ছেড়ে যাওয়া কাজ হুবহু করার অর্থ নয়। তাহলে সবগুলো বর্ণনার মাঝে একটা সামঞ্জস্য সাধিত হবে।
মসজিদে এসে ইমাম সাহেবকে যে অবস্থায়ই পাবে সে অবস্থায়ই তাঁর সাথে সালাতে শরীক হবে। আগের রাক্’আতের সাজ্দাহ শেষ হওয়া পর্যন্ত এমনিতেই দাঁড়িয়ে থাকবে না:
আলী ও মুআয রাদিয়াল্লাহ আনহুমা থেকে বর্ণিত তারা বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إِذَا أَتَى أَحَدُكُمْ الصَّلَاةَ، وَالْإِمَامُ عَلَى حَالٍ، فَلْيَصْنَعْ كَمَا يَصْنَعُ الْإِمَامُ».
“তোমাদের কেউ যখন জামা‘আতের সালাতে উপস্থিত হয়। আর সে দেখতে পাচ্ছে, ইমাম সাহেব কোনো এক অবস্থায় রয়েছেন। তখন সে তাই করবে যা ইমাম সাহেব করছেন”[130]
তবে কোনো রাকাতের রুকু’ পেলেই উক্ত রাকাত পেয়েছে বলে ধরে নেওয়া হবে। নতুবা নয় যা ইতোপূর্বে বিস্তারিত উল্লেখ হয়েছে।
কাউকে জামা‘আতে সালাত আদায় করতে বাধা দেওয়া যাবে না:
কেউ কেউ নিজ প্রাইভেট ড্রাইভার কিংবা দোকানের কর্মচারীদেরকে জামা‘আতে সালাত আদায় করতে বাধা দিয়ে থাকে। তা করা কোনোভাবেই তার জন্য জায়িয নয়। কারণ, জামা‘আতে সালাত পড়া ওয়াজিব এবং তা আল্লাহ তা‘আলার একান্ত অধিকার তথা আনুগত্যও বটে। আর এ কথা জানা যে, আল্লাহ তা‘আলার অধিকার ও আনুগত্য সবার অধিকার ও আনুগত্যের ওপরতাই আল্লাহ তা‘আলার অধিকার খর্ব করার সাধ্য কারোর নেই।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿تَعَاوَنُواْ عَلَى ٱلۡبِرِّ وَٱلتَّقۡوَىٰۖ وَلَا تَعَاوَنُواْ عَلَى ٱلۡإِثۡمِ وَٱلۡعُدۡوَٰنِۚ وَٱتَّقُواْ ٱللَّهَۖ إِنَّ ٱللَّهَ شَدِيدُ ٱلۡعِقَابِ﴾ [المائ‍دة: ٢]
“তোমরা নেক ও আল্লাহ্ভীরুতার কাজে একে অপরকে সহযোগিতা করো। গুনাহ ও হঠকারিতার কাজে কাউকে সহযোগিতা করো না। সর্বদা আল্লাহ তা‘আলাকে ভয় করো। নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা কঠিন শাস্তিদাতা”[সূরা আল-মায়দাহ, আয়াত: ২]
জামা‘আতের কাতার সোজা করা সুন্নাত কিংবা ওয়াজিব:
জামা‘আতের কাতার সোজা করা সুন্নাত। তবে কেউ কেউ তা ওয়াজিব বলেও মত ব্যক্ত করেছেন।
নু‘মান ইবন বাশীর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিয়মিত আমাদের কাতারগুলো সোজা করতেন যেন তিনি তীর সোজা করছেন। যতক্ষণ না তিনি বুঝলেন, আমারা ব্যাপারটি বুঝে ফেলেছি। একদা তিনি সালাতের তাকবীর দিবেন দিবেন এমতাবস্থায় দেখলেন, জনৈক সাহাবীর ছাতি অন্যদের তুলনায় একটু সামনের দিকে বের হয়ে আছে তখন তিনি সকলকে উদ্দেশ্য করে বললেন:
«لَتُسَوُّنَّ صُفُوفَكُمْ أَوْ لَيُخَالِفَنَّ اللهُ بَيْنَ وُجُوهِكُمْ».
“তোমরা সালাতের কাতারগুলো সোজা করবে। নয় তো আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের মাঝে ভিন্নতা সৃষ্টি করবেন”[131]
রুকু, সাজদাহ, উঠা-বসা ইত্যাদিতে ইমাম সাহেবের আগে যাওয়া, সাথে সাথে যাওয়া অথবা অনেক পরে যাওয়া চলবে না। বরং যে কোনো কাজ ইমাম সাহেবের একটু পরেই করতে হবে।
“ইমাম সাহেব যখন তাকবীর দিয়ে পুরোপুরি রুকুতে চলে যাবেন তখন মুক্তাদিগণ রুকু করতে অগ্রসর হবেন। তেমনিভাবে ইমাম সাহেব যখন তাকবীর দিয়ে সাজদাহ’র জন্য জমিনে কপাল ঠেকাবেন তখনই মুক্তাদিগণ তাকবীর দিয়ে সিজদায় যাবেন। ইমাম সাহেবের আগে, বহু পরে ও সমানতালে কোনো রুকন আদায় করা যাবে না”
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«أَمَا يَخْشَى الَّذِيْ يَرْفَعُ رَأْسَهُ قَبْلَ الإِمَامِ أَنْ يُحَوِّلَ اللهُ رَأْسَهُ رَأْسَ حِمَارٍ أَوْ يُحَوِّلَ صُوْرَتَهُ صُوْرَةَ حِمَارٍ ».
“ঐ ব্যক্তি কি ভয় পাচ্ছে না যে ইমাম সাহেবের পূর্বেই রুকু থেকে মাথা উঠিয়ে নেয় যে, আল্লাহ তা‘আলা তার মাথাকে গাধার মাথায় রূপান্তরিত করবেন অথবা তার গঠনকে গাধার গঠনে পরিণত করবেন”[132]
আবু মূসা আশ‘আরী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«الإِمَامُ يَرْكَعُ قَبْلَكُمْ وَيَرْفَعُ قَبْلَكُمْ».
“ইমাম সাহেব তোমাদের আগেই রুকু করবেন এবং তোমাদের আগেই রুকু থেকে মাথা উঠাবেন”[133]
আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«لاَ تَسْبِقُوْنِيْ بِالرُّكُوْعِ وَلاَ بِالسُّجُوْدِ وَلاَ بِالْقِيَامِ وَلاَ بِالْقُعُوْدِ وَلاَ بِالاِنْصِرَافِ».
“তোমরা আমার আগে রুকু, সাজদাহ, উঠা-বসা ও সালাম আদায় করো না”[134]
আব্দুল্লাহ ইবন মাস’ঊদ্ ও আব্দুল্লাহ ইবন উমর রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত তারা একদা রুকন আদায়ে ইমামের অগ্রবর্তী জনৈক ব্যক্তিকে উদ্দেশ্য করে বলেন:
«لاَ وَحْدَكَ صَلَّيْتَ وَلاَ بِإِمَامِكَ اِقْتَدَيْتَ».
“(তোমার সালাতই হয় নি) না তুমি একা সালাত পড়লে। না ইমাম সাহেবের সাথে পড়লে”[135]
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إِنَّمَا جُعِلَ الإِمَامُ لِيُؤْتَمَّ بِهِ، فَإِذَا كَبَّرَ فَكَبِّرُوْا وَلاَتُكَبِّرُوْا حَتَّى يُكَبِّرَ، وَإِذَا رَكَعَ فَارْكَعُوْا وَلاَ تَرْكَعُوْا حَتَّى يَرْكَعَ».
“মূলতঃ ইমাম সাহেব হচ্ছেন অনুসরণীয়। তাই তিনি তাকবীর সমাপ্ত করলে তোমরা তাকবীর বলবে। তোমরা কখনো তাকবীর বলবে না যতক্ষণ না তিনি তাকবীর বলেন। তিনি রুকুতে চলে গেলেই তোমরা রুকু শুরু করবে। তোমরা রুকু করবে না যতক্ষণ না তিনি রুকু করেন”[136]
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে আরো বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إِذَا كَبَّرَ الإِمَامُ فَكَبِّرُوْا وَإِذَا رَكَعَ فَارْكَعُوْا وَإِذَا رَفَعَ رَأْسَهُ وَقَاْلَ: سَمِعَ اللهُ لِمَنْ حَمِدَهُ فَارْفَعُوْا وَقُوْلُوْا رَبَّنَا وَلَكَ الْـحَمْدُ وَإِذَا سَجَدَ فَاسْجُدُوْا».
“যখন ইমাম সাহেব তাকবীর সমাপ্ত করবেন তখন তোমরা তাকবীর বলবে। আর যখন তিনি রুকুতে চলে যাবেন তখন তোমরা রুকু শুরু করবে। আর যখন তিনি রুকু থেকে মাথা উঠিয়ে “সামি‘আল্লাহু লিমান হামিদাহ” বলবেন তখন তোমরা রুকু থেকে মাথা উঠিয়ে “রাববানা ওয়া লাকাল হাম্দ” বলবে। আর যখন তিনি সাজদায় যাবেন তখন তোমরা সাজদাহ শুরু করবে”[137]
বারা ইবন আযিব রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا انْحَطَّ لِلسُّجُوْدِ لاَ يَحْنِيْ أَحَدٌ ظَهْرَهُ حَتَّى يَضَعَ النَّبِىُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ جَبْهَتَهُ عَلَى الأَرْضِ».
“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামযখন সাজদাহ’র জন্য ঝুঁকে পড়তেন তখনো আমাদের কেউ নিজ পৃষ্ঠদেশ বাঁকা করতো না যতক্ষণ না নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামনিজ কপাল জমিনে রাখতেন”[138]
মুসল্লীদের কাতারগুলোর পেছনে একাকী দাঁড়িয়ে একই জামা‘আতে সালাত আদায়ের বিধান:
মূলতঃ উক্ত মাসআলার তিনটি দিক হতে পারে। অন্য কথায় বলা যেতে পারে, কেউ জামা‘আতে উপস্থিত হয়ে দেখতে পেলো, সামনের কাতারগুলো পরিপূর্ণ হয়ে গেছে। তখন সে নিম্নোক্ত তিনটি কাজের যে কোনো একটি করতে পারে:
ক. সে মুসল্লীদের কাতারগুলোর পেছনে একাকী দাঁড়িয়ে উক্ত ইমামের পেছনেই সালাত পড়বে।
খ. সামনের কাতার থেকে কাউকে টেনে নিয়ে ভিন্ন আরেকটি কাতার বানিয়ে সালাত পড়বে।
গ. ইমাম সাহেবের ডান পার্শ্বে গিয়ে তাঁর সাথেই কাতার বানিয়ে সালাত পড়বে।
এ দিকগুলো হচ্ছে যদি সে জামা‘আতে সালাত আদায় করতে চায়। আর যদি সে জামা‘আতে সালাত না পড়ে একাকী পড়তে চায় তা হলে তা হবে চতুর্থ আরেকটি দিক।
উক্ত চারটি দিকের প্রথমটিই হচ্ছে সঠিক মত। কারণ, লোকটির ওপর ছিলো মূলতঃ দু’টি ওয়াজিব। তার একটি হচ্ছে জামা‘আতে সালাত পড়া। অপরটি হচ্ছে জামা‘আতে কাতারবদ্ধ হয়ে দাঁড়ানো। যখন তার জন্য দ্বিতীয়টি করা সম্ভবপর নয় তখন সে শুধু প্রথমটিই করবে। যেমন: কোনো মহিলা একাকী হলে তাকেও কাতারগুলোর পেছনে একাকী দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করতে হয়।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
ﮪﭼ
“তোমরা যথাসাধ্য আল্লাহ তা‘আলাকে ভয় করো”[সূরা আত-তাগাবুন, আয়াত: ১৬]
বাকি তিনটি দিকের কোনোটি করা তার জন্য কোনোভাবেই সঠিক নয়। কারণ, দ্বিতীয়টি তথা সামনের কাতার থেকে কাউকে টেনে নিয়ে ভিন্ন আরেকটি কাতার বানিয়ে সালাত আদায় করতে গেলে নিম্নোক্ত তিনটি সমস্যা দেখা দিবে:
১. আগের কাতার থেকে একটি লোককে পেছনে টেনে নেয়ার কারণে তাতে একটি খালিস্থান সৃষ্টি হবে। যা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নির্দেশ কাতার পুরা করা ও তাতে কোনো খালি জায়গা না রাখা বিরোধী। যা কখনো চলতে দেওয়া যায় না।
২. উক্ত লোকটিকে একটি ভালো জায়গা থেকে তার চাইতে মানে নিম্ন এমন একটি জায়গায় নেওয়া হলো। যা করা সত্যিই অনুচিত।
৩. উক্ত লোকটিকে পেছনে টেনে নেওয়ার দরুন তার সালাতের মনোযোগে কিছুটা বাধা সৃষ্টি করা হলো। যা করাও সত্যিই অনুচিত।
তৃতীয় দিক তথা ইমাম সাহেবের ডান পার্শ্বে গিয়ে তাঁর সাথেই কাতার বানিয়ে সালাত পড়াও সঠিক নয়। কারণ, ইমাম সাহেবকে তো স্থানের দিক দিয়েও তাঁর মুসল্লীদের তুলনায় একটু বিশেষ অবস্থানে থাকা উচিৎ। যেমনিভাবে তিনি সালাতের যে কোনো মৌখিক যিকির ও কাজে অন্যান্যদের তুলনায় কিছুটা অগ্রবর্তী রয়েছেন। এ দিকে কোনো মুসল্লী তাঁর সাথে পাশাপাশি দাঁড়ালে তাঁর আর স্থানগত কোনো বিশেষত্ব থাকে না।
চতুর্থ দিক তথা এমতাবস্থায় জামা‘আতে সালাত না পড়ে একাকী পড়া তাও কোনোভাবেই সঠিক নয়। কারণ, লোকটির ওপর মূলতঃ রয়েছে দু’টি ওয়াজিব। যার একটি হচ্ছে জামা‘আতে সালাত পড়া। অপরটি হচ্ছে জামা‘আতে কাতারবদ্ধ হয়ে দাঁড়ানো। যখন তার জন্য দ্বিতীয়টি করা সম্ভবপর নয় তখন সে শুধু প্রথমটিই করবে। দ্বিতীয়টি করতে পারছে না বলে প্রথমটিও সে বাদ দিবে তা কখনোই সমর্থনযোগ্য নয়।
ইমাম সাহেবের বরাবর পেছন থেকেই জামা‘আতের কাতারগুলো শুরু করতে হয়:
জামা‘আতের যে কোনো কাতার ইমাম সাহেবের বরাবর পেছন থেকেই শুরু করতে হয়। প্রথমে ডান দিকে অতঃপর বাম দিকে। এভাবেই যে কোনো কাতার পুরা করতে হয়। কারণ, ইমাম সাহেবই তো হচ্ছেন জামা‘আতের কেন্দ্র বিন্দু। এ দিকে কাতারের ডান দিকের ফযীলত তো রয়েছেই।
কেউ কেউ আবার কাতারের ডান দিকের একেবারে শেষাংশ থেকে কাতার শুরু করে। তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
মসজিদে ঢুকে তাতে দাঁড়ানোর কোনো জায়গা না পেলে যা করতে হয়:
মসজিদের ভেতরের জায়গা যখন শেষ হয়ে যায় তখন বাকি মুসল্লীদের জন্য মসজিদের বাহির থেকেই মসজিদের ভেতরকার ইমামের পেছনে ইক্তিদা করে তাঁর সাথেই জামা‘আতে সালাত পড়া জায়িয। তখন তারা সুবিধে মতো মসজিদের পেছনে, ডানে বা বাঁয়ে দাঁড়াতে পারে। তবে তারা কখনোই ইমামের সামনের দিকে দাঁড়াবে না। এমতাবস্থায় ইমামকে দেখতে পাওয়ার কোনো শর্ত নেই। এমনকি এমতাবস্থায় মসজিদ ও মুসল্লীদের মাঝে কোনো রাস্তা, দেওয়াল বা পানির নালা থাকলেও কোনো অসুবিধে নেই। যখন তারা ইমাম সাহেবের আওয়াজ যে কোনোভাবে নিজ কানে শুনতে পাচ্ছে।
ইমাম সাহেবকে শেষ বৈঠকে পেলে যা করতে হয়:
যখন কেউ মসজিদে প্রবেশ করে দেখতে পায় যে, ইমাম সাহেব শেষ বৈঠকে রয়েছেন। এ দিকে সে নিশ্চিত যে, তার পক্ষে দ্বিতীয় জামা‘আতে সালাত পড়া সম্ভব। তা হলে সে দ্বিতীয় জামা‘আতে সালাত আদায়ের জন্য অপেক্ষা করবে। কারণ, অন্ততপক্ষে এক রাক’আত না পেলে জামা‘আত পেয়েছে বলে ধরে নেওয়া হয় না। আর যদি সে নিশ্চিত নয় যে, সে দ্বিতীয় জামা‘আতে সালাত আদায় করতে পারবে তা হলে সে শেষ বৈঠকেই ইমাম সাহেবের সাথে জামা‘আতে যোগ দিবে। কারণ, সালাতের কিছু অংশ জামা‘আতের সাথে পাওয়া তা একেবারে না পাওয়ার চাইতে অনেকটা ভালো।
আর যদি এমন হয় যে, সে দ্বিতীয় জামা‘আত পাবে না বলে প্রথম জামা‘আতের শেষ বৈঠকে ইমাম সাহেবের সাথে যোগ দিয়েছে অথচ এ দিকে দ্বিতীয় জামা‘আত শুরু হয়ে গিয়েছে। ক্বিরাত বা তাকবীর ধ্বনি সে শুনতে পাচ্ছে। তখন সে উক্ত একাকী সালাত ছেড়ে দিয়ে জামা‘আতে শরীক হতে পারে কিংবা নফলের নিয়্যাতে দু’ রাকাত আদায় করে সে জামা‘আতে যোগ দিবে অথবা একাকী সালাত চালিয়ে যাবে।
মসজিদে ঢুকে ইমাম সাহেবকে রুকু’ অবস্থায় পেলে যা করতে হয়:
কেউ মসজিদে প্রবেশ করে ইমাম সাহেবকে রুকু’ অবস্থায় পেলে সে তাকবীরাতুল-ইহরাম বলে দ্রুত রুকু’তে চলে যাবে। কারণ, তখন তার জন্য রুকু’র তাকবীর বলা সুন্নাত। ওয়াজিব নয়। তবে সে যদি রুকু’র তাকবীর বলারও সুযোগ পায় তাহলে তা হবে তার জন্য অতি উত্তম।
এমন পরিস্থিতিতে নিম্নে বর্ণিত তিনটি অবস্থার কোনো একটি ঘটতে পারে:
১. সে এ ব্যাপারে নিশ্চিত যে, ইমাম সাহেব রুকু’ থেকে উঠার আগেই সে তাঁর সাথে রুকু’ পেয়েছে। তখন সে উক্ত রাকাত পেয়েছে বলে ধরে নেওয়া হবে এবং এমতাবস্থায় সূরা ফাতিহা পড়ার বাধ্যবাধকতা আর তার ওপর থাকবে না।
২. সে এ ব্যাপারে নিশ্চিত যে, সে রুকুতে যাওয়ার পূর্বেই ইমাম সাহেব রুকু’ থেকে উঠে গিয়েছেন। তখন সে উক্ত রাকাত পায় নি বলে ধরে নেওয়া হবে এবং তাকে উক্ত রাকাত কাযা করতে হবে।
৩. সে এ ব্যাপারে সন্দিহান যে, সে ইমাম সাহেবকে রুকু’তে পেয়েছে না কি পায়নি। এমতাবস্থায় সে যে দিকে তার মন বেশি ধাবিত হয় তাই ধরে নিবে। যদি তার প্রবল ধারণা হয় যে, সে ইমাম সাহেবকে রুকু’তেই পেয়েছে তাহলে সে উক্ত রাকাত পেয়েছে বলে ধরে নিবে। আর যদি এ ব্যাপারে তার প্রবল ধারণা হয় যে, সে ইমাম সাহেবকে রুকু’তে পায়নি তাহলে সে উক্ত রাকাত পায়নি বলে ধরে নিবে। এমতাবস্থায় যদি সালাতের কোনো অংশ তার ছুটে গিয়ে থাকে তা হলে সে এ জন্য সালামের পর দু’টি সাহু সাজ্দাহ দিবে। আর যদি সালাতের কোনো অংশ তার না ছুটে থাকে। তথা উক্ত রাকাতটি যদি সে সালাতের প্রথম রাকাত হয়ে থাকে। আর এ দিকে তার প্রবল ধারণা হলো যে, সে রাকাতটি পেয়েছে তাহলে তাকে আর কোনো সাহু সাজদাহ দিতে হবে না। কারণ, তার সালাত তখন তার ইমাম সাহেবের সালাতের সাথে পুরাপুরি সম্পৃক্ত। আর ইমাম সাহেব তাঁর মুক্তাদির অন্যান্য সকল সাহু সাজ্দাহ বহন করে থাকেন যদি তাঁর মুক্তাদির সালাতের কোনো রুকন না ছুটে থাকে। আর যদি রাকাত পাওয়া না পাওয়া নিয়ে তার সন্দেহ হয় এবং তার মন কোনো দিকে প্রবলভাবে ধাবিত হয় না। তা হলে সে রুকু’ পায় নি বলেই ধরে নিবে। কারণ, তখন তার ব্যাপারে এটিই নিশ্চিত এবং এটিই স্বাভাবিক। আর তখন সে সন্দেহের জন্য সালামের আগে দু’টি সাহু সাজদাহ দিবে।
এখানে একটি কথা বিশেষভাবে স্মরণ করিয়ে দিতে হয়। আর তা হচ্ছে এই যে, কেউ কেউ মসজিদে ঢুকে ইমাম সাহেবকে রুকু’ অবস্থায় পেলে সে উচ্চ স্বরে ঘন ঘন গলাখাঁকারি দেয় যেন ইমাম সাহেব তার জন্য রুকু’তে আরেকটু দেরি করেন অথবা বলে:
 إِنَّ اللهَ مَعَ الصَّابِرِينَ “নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা ধৈর্যশীলদের সাথেই রয়েছেন”আবার বা কেউ কেউ জমিনে খুব জোরে পদক্ষেপণ করে নিজের উপস্থিতি জানা ন দেয়। উক্ত কর্মকান্ডগুলো কখনো করা ঠিক নয়। কারণ, তা ইমাম সাহেব ও অন্যান্য মুক্তাদিদেরকে বিরক্ত করার শামিল।
কেউ জামা‘আতের সাথে ছুটে যাওয়া বাকি সালাত একা পড়তে গেলে ইমাম সাহেবের সুত্রাহ আর তার জন্য সুত্রাহ থাকে না:
ইমাম সাহেবের সালাম ফেরানোর পর কোনো মুক্তাদি তার ছুটে যাওয়া সালাত আদায় করতে গিয়ে একা হয়ে গেলে তার সামনে দিয়ে কেউ চলা-ফেরা করতে পারবে না। কারণ, তখন আর ইমাম সাহেবের পূর্বেকার সুত্রাহ বা আড় তার জন্য সুত্রাহ বা আড় হিসেবে বাকি থাকে না। তখন সে একা বলেই বিবেচিত। তাই কেউ তার সামনে দিয়ে অতিক্রম করতে গেলে সে তাকে যথাসাধ্য প্রতিহত করবে।
আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إِذَا صَلَّى أَحَدُكُمْ إِلَىْ شَيْءٍ يَسْتُرُهُ مِنَ النَّاسِ فَأَرَادَ أَحَدٌ أَنْ يَجْتَازَ بَيْنَ يَدَيْهِ فَلْيَـدْفَعْهُ، فَإِنْ أَبَى فَلْيُقَاتِلْهُ، فَإِنَّمَا هُوَ شَيْطَانٌ».
“তোমাদের কেউ কোনো বস্তুর আড়ালে সালাত পড়াবস্থায় তার সম্মুখ দিয়ে কোনো ব্যক্তি অতিক্রম করতে চাইলে তাকে অবশ্যই প্রতিহত করবে। তাতেও সে নিশ্চেষ্ট না হলে তাকে শক্তি প্রয়োগে বাধা দিবে। কারণ, সে হচ্ছে শয়তান”[139]
কোন ইমাম সাহেব তাঁর নিজ মসজিদে এবং কোনো ঘরের মালিক তার ঘরে ইমামতির সর্বোচ্চ অধিকারী:
কোন ইমাম সাহেব তাঁর নিজ মসজিদে যেখানে তিনি নিয়মিত ইমাম হিসেবে নিযুক্ত রয়েছেন এবং কোনো ঘরের মালিক তাঁর নিজ ঘরে যেখানে কিছু সংখ্যক লোক তাঁর সাক্ষাতে এসেছে সেখানে সালাতের কোনো জামা‘আত প্রতিষ্ঠিত হলে তিনিই তখন ইমামতির সর্বোচ্চ অধিকারী। যদি তিনি ভালোভাবে ক্বিরাত পড়তে পারেন এবং সালাতের প্রয়োজনীয় বিধি-বিধানও জানেন। তবে তিনি কাউকে ইমামতির জন্য অনুমতি দিলে সে ইমামতি করতে পারে। আর যদি ঘরের মালিক অথবা নিয়মিত ইমামের চাইতে সাক্ষাৎকারী কেউ ভালো ক্বিরাত পড়তে পারেন তাহলে তখন তাঁকেই ইমামতির জন্য সুযোগ দেওয়া উচিৎ।
আবু মাসঊদ আনসারী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«يَؤُمُّ الْقَوْمَ أَقْرَؤُهُمْ لِكِتَابِ اللَّهِ فَإِنْ كَانُوا فِي الْقِرَاءَةِ سَوَاءً فَأَعْلَمُهُمْ بِالسُّنَّةِ فَإِنْ كَانُوْا فِيْ السُّنَّةِ سَوَاءً فَأَقْدَمُهُمْ هِجْرَةً، فَإِنْ كَانُوا فِيْ الْهِجْرَةِ سَوَاءً فَأَقْدَمُهُمْ سِلْمًا وَفِيْ رِوَايَةٍ: سِنًّا، وَلَا يَؤُمَّنَّ الرَّجُلُ الرَّجُلَ فِي سُلْطَانِهِ وَلَا يَقْعُدْ فِي بَيْتِهِ عَلَى تَكْرِمَتِهِ إِلَّا بِاِذْنِهِ».
“কোনো সম্প্রদায়ের ইমামতি তাদের মধ্যে যিনি কুরআন ভালোভাবে পড়তে পারেন তিনিই করবেন। যদি তারা সবাই সমভাবেই কুর’আন ভালোভাবে পড়তে পারে তাহলে তাদের মধ্যে হাদীস সম্পর্কে যিনি বেশি জানেন তিনিই তাদের ইমামতি করবেন। আর যদি তারা সবাই হাদীস সম্পর্কে সমজ্ঞান রাখে তাহলে তাদের মধ্যে যিনি সবার আগে হিজরত করেছেন তিনিই তাদের ইমামতি করবেন। আর যদি তারা সবাই সমসময়ে হিজরত করে থাকে তাহলে তাদের মধ্যে যাঁর বয়স বেশি তিনিই তাদের ইমামতি করবেন। কেউ কারোর অধীনস্থ এলাকায় তার অনুমতি ছাড়া ইমামতি করবে না এবং কেউ অন্যের ঘরে তার সম্মানজনক বসার জায়গায় তার অনুমতি ছাড়া বসবে না”[140]
যে ইমাম ভালোভাবে ক্বিরাত পড়তে পারেন না তাঁর ব্যাপারে যা করণীয়:
কোনো ইমাম সাহেব যদি ক্বিরাতে এমন ভুল করেন যে, যাতে আয়াতের মূল অর্থের পরিবর্তন ঘটে বিশেষ করে তা যদি সূরা ফাতিহার মধ্যেই হয়ে থাকে তাহলে যে কোনোভাবে তাঁর পরিবর্তন আবশ্যক। আর যদি তিনি এমন ভুল করেন না যা আয়াতের মূল অর্থের পরিবর্তন ঘটায় তাহলে তাঁর পেছনে সালাত পড়া যাবে। তবে তার ক্বিরাত আরো শুদ্ধ ও সুন্দর করার জন্য তাঁর প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।
এ দিকে কোনো ইমাম সাহেব যদি ক্বিরাত পড়তে গিয়ে হঠাৎ এমন কোনো ভুল করে ফেলেন যাতে আয়াতের মূল অর্থের পরিবর্তন ঘটে তাহলে তাঁকে পেছন থেকে যে কোনো মুক্তাদি উক্ত জায়গাটুকু স্মরণ করিয়ে দিবে। তবে হঠাৎ যে কোনো সামান্য ভুল যা অর্থের কোনো পরিবর্তন ঘটায় না তা স্মরণ করিয়ে দিতে গিয়ে কোনো ইমাম সাহেবকে বার বার বিরক্ত করা ঠিক নয়। কারণ, এতে করে তিনি একেবারে অস্থির হয়ে সম্পূর্ণরূপে ক্বিরাতটুকুও ভুলে যেতে পারেন। তখন আর তাঁর পক্ষে ক্বিরাত চালু রাখা কঠিন হয়ে পড়বে।
বিদ‘আতী ইমামের পেছনে সালাত আদায়ের বিধান:
কোনো এলাকায় আহলে সুন্নাত ওয়াল-জামা‘আতপন্থী ভালো ইমাম পাওয়া গেলে সেখানকার কোনো বিদ‘আতীর পেছনে জামা‘আতে সালাত আদায়ের প্রশ্নই আসে না। তবে যদি কোনো এলাকায় এমন কোনো ভালো ইমাম না থাকে তাহলে সেখানকার বিদ‘আতী ইমামকেই কুরআন ও সহীহ হাদীসের দৃষ্টিতে কোনো ভালো আলিম দিয়ে সংশ্লিষ্ট বিদ‘আত সম্পর্কে ভালোভাবে বুঝাতে হবে। যদি সে উক্ত নসীহত গ্রহণ করে বিদ‘আতগুলো ছেড়ে দেয় তাহলে তার পেছনে সালাত পড়া যাবে। আর যদি সে উক্ত নসীহত গ্রহণ না করে এবং তার বিদ‘আতটিও হচ্ছে কুফরি বিদ‘আত যেমনঃ সে বিপদাপদে আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া অন্যকে ডাকে অথবা সে আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া অন্য কারোর জন্য কোনো পশু জবাই ও মানত করে তাহলে তার পেছনে সালাত পড়া কোনোভাবেই জায়িয হবে না এবং বস্তুতঃ সে ইমাম হওয়ারও উপযুক্ত নয়। আর যদি তার বিদ‘আতটি কুফরি পর্যায়ের না হয়ে থাকে যেমন: সালাতে নিয়্যাত উচ্চারণের বিদ‘আত তাহলে তার পেছনে সালাত পড়া যাবে ঠিকই তবে তাকে সাধ্যমতো তা বুঝানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।
যাদুকর, শির্কী তাবিজদাতা ও গায়েবের দাবিদার ইমামের পেছনে সালাত আদায়ের বিধান:
যাদুকর, শির্কী তাবিজদাতা ও গায়েবের দাবিদার ইমামের পেছনে সালাত আদায় করা জায়িয নয়। কারণ, সে তো কাফির কিংবা মুশ্রিক। আর এ কথা তো সবারই জানা যে, কাফির কিংবা মুশরিকের পেছনে সালাত আদায় করা কোনোভাবেই জায়েয নয়।
ফাসিকের পেছনে সালাত আদায়ের বিধান:
কোনো ইমাম সাহেব যদি ধূমপান কিংবা দাঁড়ি মুণ্ডন করেন অথবা যে কোনো প্রকাশ্য গুনাহ করেন তখন তাঁকে অবশ্যই এ ব্যাপারে নসীহত করতে হবে। যদি তিনি উক্ত নসীহত গ্রহণ করেন তাহলে তো ভালোই। আর যদি তিনি উক্ত নসীহত গ্রহণ না করেন তাহলে সম্ভব হলে তথা ফিতনার কোনো ভয় না থাকলে তাকে ইমামতি থেকে বাদ দিতে হবে। তা না হলে তাঁর পেছনে সালাত না পড়ে অন্য কোনো নেককার ইমামের পেছনে সালাত পড়বে। যাতে তাঁর শিক্ষা হয়ে যায় এবং তিনি এমন কাজ থেকে বিরত হোন। আর যদি সে এলাকায় তেমন কোনো নেককার ইমাম না থাকে অথবা অন্য কারোর পেছনে সালাত আদায় করতে গেলে ফিতনার ভয় থাকে তা হলে তাঁর পেছনেই সালাত পড়বে। তখন শরী‘আতের সূত্র অনুযায়ী দু’টি ক্ষতির কমটিই গ্রহণ করতে হবে। যেমনিভাবে আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমা ও অন্যান্য সালফে সালিহীনগণ সে যুগের হাজ্জাজ ইবন ইউসুফের পেছনেই সালাত পড়েছেন অথচ সেই ছিলো তখনকার যুগের সব চাইতে বড়ো যালিম। আর তা ছিলো কেবল ফিতনা ও মহা দ্বন্দ্বের ভয়ে এবং মানুষের মধ্যকার সেই পূর্বের ঐক্যটুকু টেকানোর জন্যে।
সালাতের ক্বিরাত লম্বা বা খাটো হওয়ার মানদণ্ড:
বর্তমান যুগে ইমাম ও মুক্তাদির মাঝে ক্বিরাত খাটো ও লম্বা হওয়া নিয়ে মুসলিম বিশ্বের যে কোনো এলাকায় দ্বন্দ্ব-বিরোধ সর্বদা লেগেই থাকে। তাই এর আমূল নিরসন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাত দিয়েই করতে হবে। তাই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ক্বিরাতই হবে খাটো ক্বিরাতের মানদন্ড। তবে কখনো কখনো কোনো ব্যাপক প্রয়োজনের কথা খেয়াল রেখে ক্বিরাতকে আরো খাটো করা যায়। যা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও কখনো কখনো করেছেন।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বদা ইমামদেরকে ক্বিরাত খাটো করতেই আদেশ করতেন।
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামইরশাদ করেন:
«إِذَا أَمَّ أَحَدُكُمْ النَّاسَ فَلْيُخَفِّفْ، فَإِنَّ فِيهِمْ الصَّغِيرَ، وَالْكَبِيرَ، وَالضَّعِيفَ وَالـْمَرِيضَ، فَإِذَا صَلَّى وَحْدَهُ فَلْيُصَلِّ كَيْفَ شَاءَ».
“তোমাদের কেউ মানুষের ইমামতি করলে সে যেন খাটো ক্বিরাত পড়ে। কারণ, মানুষের মধ্যে ছোট-বড়ো, দুর্বল ও অসুস্থ সবই রয়েছে। তবে সে যদি একা সালাত পড়ে তাহলে সে নিজ ইচ্ছা মাফিক ক্বিরাত পড়বে”[141]
ক্বিরাত খাটো করার সর্ব প্রথম নির্দেশ আসে মু‘আয রাদিয়াল্লাহু আনহু এর ব্যাপারে। কারণ, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পেছনে সালাত আদায় করতেন। অতঃপর তিনি নিজ সম্প্রদায়ের নিকট গিয়ে তাদের ইমামতি করতেন। একদা তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পেছনে ইশার সালাত পড়েছেন। তখন ইশার সালাত হতো প্রায় সূর্য ডুবার দু’ তিন ঘন্টা পর। অতঃপর তিনি নিজ সম্প্রদায়ের নিকট গিয়ে সূরা বাক্বারাহ দিয়ে তাদের ইমামতি শুরু করলেন। এ দিকে জনৈক ব্যক্তি তা সহ্য করতে না পেরে তাঁর পেছন ছেড়ে একাকী সালাত পড়ে চলে গেলো। মু‘আয রাদিয়াল্লাহু আনহু কে তা জানানো হলে তিনি তাকে মুনাফিক বলে আখ্যায়িত করলেন। লোকটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট ব্যাপারটি জানালে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে উদ্দেশ্য করে বলেন,
«أَتُرِيدُ أَنْ تَكُونَ فَتَّانًا يَا مُعَاذُ!، إِذَا أَمَمْتَ النَّاسَ فَاقْرَأْ بِالشَّمْسِ وَضُحَاهَا، وَسَبِّحْ اسْمَ رَبِّكَ الْأَعْلَى، وَاقْرَأْ بِاسْمِ رَبِّكَ، وَاللَّيْلِ إِذَا يَغْشَى».
“হে মু‘আয! তুমি কি ফিতনা সৃষ্টি কারতে চাও। যখন তুমি মানুষের ইমামতি করবে তখন “ওয়াশ-শামসি ওয়াদ্বোহাহা”, “সাব্বিহিস্মা রাব্বিকাল-আ‘লা”, ‘ইক্বরা’ বিস্মি রাব্বিকা” ও “ওয়াল্লাইলি ইযা ইয়াগ্শা” পড়বে”[142]
এ দিকে আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَأْمُرُ بِالتَّخْفِيفِ وَيَؤُمُّنَا بِالصَّافَّاتِ».
“রাসূল সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে ক্বিরাত খাটো করতে আদেশ করতেন অথচ এ দিকে তিনি সূরা স্বাফ্ফাত দিয়ে আমাদের ইমামতি করতেন”[143]
এ থেকে বুঝা যায়, সূরা সাফ্ফাত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দৃষ্টিতে খাটো সূরা। তিনি বুঝাতে চেয়েছেন, যেন নাহ্ল, ইউসুফ ও তাওবাহ এর মতো বড়ো সূরা পড়া না হয়।
অন্য দিকে আবু বার্যাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقْرَأُ فِي الْفَجْرِ مَا بَيْنَ السِّتِّينَ إِلَى الْمِائَةِ ايَةً».
“রাসূল সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের সালাতে (মাঝারি পর্যায়ের) ষাট থেকে এক শত আয়াত পর্যন্ত পড়তেন”[144]
মাঝারি পর্যায়ের ষাট থেকে এক শত আয়াতের সূরা যেমন: আহযাব, ফুরক্বান, নামল, ‘আনকাবূত ইত্যাদি। এগুলো হচ্ছে ফজরের সালাতের স্বাভাবিক ক্বিরাত।
অতএব, কেউ যদি ফজরের সালাতে সূরা ক্বাফ থেকে সূরা মুর্সালাত পর্যন্ত যে কোনো সূরা পড়ে তখন সে বড়ো সূরা পড়েছে বলে তার সাথে কোনো ধরণের উচ্চবাচ্যই করা যাবে না। কারণ, এগুলো হচ্ছে মাঝারি পর্যায়ের ক্বিরাত, যা খাটো সূরা বলেই বিবেচিত।
নফল পড়ুয়ার পেছনে ফরয পড়ার বিধান:
আপনি তাহিয়্যাতুল-মাসজিদের সালাত অথবা কোনো নফল সালাত পড়ছেন এমতাবস্থায় কেউ এসে আপনাকে ইমাম বানিয়ে আপনার পেছনেই তার ফরয সালাতটুকু অথবা উক্ত নফলই জামা‘আতে পড়তে শুরু করলো তখন আপনি তাকে সরিয়ে দেবেন না। বরং তখন আপনি তার ইমাম বলেই বিবেচিত হবেন। আপনি আপনার সালাতটুকু ইমাম হিসেবে উচ্চ তাক্বীরেই পড়বেন। অতঃপর আপনার সালাত শেষে সে তার বাকি সালাতটুকু নিজেই পড়ে নিবে।
উপরোক্ত মু‘আয রাদিয়াল্লাহু আনহু এর ইশার সালাতই তা জায়িয হওয়ার প্রমাণ বহন করে। কারণ, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পেছনে ইশার সালাত পড়ে আবার নিজ সম্প্রদায়ের নিকট গিয়ে তাদের ইশার সালাতের ইমামতি করতেন। এতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে কোনো বাধা দেন নি।
এ দিকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা কিছু সংখ্যক সাহাবীগণকে নিয়ে ভয়ের মুহূর্তে যোহরের সালাত দু’ রাকাত পড়ে সালাম ফিরালেন। অতঃপর তিনি আবার আরো কিছু সংখ্যক সাহাবীগণকে নিয়ে আরো দু’ রাকাত সালাত পড়ে সালাম ফিরান। এতে করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’ বার যোহরের সালাত আদায় করলেন। তাঁর প্রথমকার সালাতটুকু ছিলো ফরয। আর দ্বিতীয়বারের সালাতটুকু ছিলো নফল। এতে বুঝা গেলো নফল পড়ুয়ার পেছনে ফরয সালাত পড়া যায়।[145]
আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«بِتُّ عِنْدَ خَالَتِيْ مَيْمُونَةَ بِنْتِ الْـحَارِثِ زَوْجِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَكَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عِنْدَهَا فِي لَيْلَتِهَا فَقَامَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُصَلِّيْ مِنْ اللَّيْلِ فَقُمْتُ أُصَلِّي مَعَهُ فَقُمْتُ عَنْ يَسَارِهِ فَأَخَذَ بِرَأْسِيْ فَأَقَامَنِيْ عَنْ يَمِينِهِ».
“আমি একদা আমার খালা ও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রী মাইমূনাহ বিন্ত আল-হারিস-এর নিকট রাত্রি যাপন করেছি। সে রাত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামতাঁর ঘরেই ছিলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামরাত্রি বেলায় সালাত আদায় করতে উঠলে আমিও তাঁর সাথে সালাত আদায়ের জন্য উঠলাম। অতঃপর আমি তাঁর বাঁয়েই দাঁড়ালাম। কিন্তু তিনি আমাকে আমার মাথা ধরে তাঁর ডানেই দাঁড় করিয়ে দিলেন”[146]
কোনো ইমাম সাহেব যদি তার অযু নষ্ট হওয়ার দরুন কোনো মাস্বূককে তথা যে ব্যক্তি ইমাম সাহেবের সাথে সালাতের শুরুর কিছু অংশ পায় নি তাকে ইমাম বানিয়ে দেন তখন বাকি মুসল্লীদের যা করণীয়:
সালাতের চতুর্থ রাকাতে জনৈক ইমাম সাহেবের অযু নষ্ট হয়ে যায় তখন তিনি এমন এক ব্যক্তিকে বাকি সালাতটুকু পড়ানোর দায়িত্ব দিলেন যে তাঁর সাথে তৃতীয় রাক্’আতে অংশ গ্রহণ করেছে তখন বাকিরা যারা ইমাম সাহেবের সাথে শুরু থেকেই সালাত পড়ছিলেন দ্বিতীয় ইমামের সাথে চতুর্থ রাকাত শেষ করে বসে থাকবেন যতক্ষণ না দ্বিতীয় ইমাম তাঁর সবটুকু সালাত শেষ করে। অতঃপর যখন তিনি তাঁর বাকি সালাতটুকু শেষ করে সালাম ফিরাবেন তখন বাকি মুসল্লীরাও তাঁর সাথে সালাম ফিরাবে। এর পূর্বে নয়।
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إِنَّمَا جُعِلَ الإِمَامُ لِيُؤْتَمَّ بِهِ، فَإِذَا كَبَّرَ فَكَبِّرُوْا وَلاَتُكَبِّرُوْا حَتَّى يُكَبِّرَ، وَإِذَا رَكَعَ فَارْكَعُوْا وَلاَ تَرْكَعُوْا حَتَّى يَرْكَعَ».
“ইমাম সাহেব হচ্ছেন অনুসরণীয়। তাই তিনি তাকবীর সমাপ্ত করলে তোমরা তাকবীর বলবে। তোমরা কখনো তাকবীর বলবে না যতক্ষণ না তিনি তাকবীর বলেন। তিনি রুকুতে চলে গেলেই তোমরা রুকু শুরু করবে। তোমরা রুকু করবে না যতক্ষণ না তিনি রুকু করেন”[147]
আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«لاَ تَسْبِقُوْنِيْ بِالرُّكُوْعِ وَلاَ بِالسُّجُوْدِ وَلاَ بِالْقِيَامِ وَلاَ بِالْقُعُوْدِ وَلاَ بِالاِنْصِرَافِ».
“তোমরা আমার আগে রুকু, সাজদাহ, উঠা-বসা ও সালাম আদায় করো না”[148]
কোনো মুসাফির যে কোনো ইমাম সাহেবের সাথে চার রাকাত বিশিষ্ট সালাতের শুধু শেষের দু’ রাকাত পেলে তার জন্য যা করণীয়:
তখন তার জন্য করণীয় হবে পূর্বের ছুটে যাওয়া বাকি দু’ রাকাত পড়ে সালাম ফিরানো। তখন সে নিজকে মুসাফির মনে করে উক্ত ইমামের সাথেই সালাম ফিরাবে না। কারণ, যখন সে উক্ত ইমামের পেছনেই সালাত আদায় করতে শুরু করলো তখন তাকে অবশ্যই তাঁর সাথে ছুটে যাওয়া বাকি সালাতটুকু আদায় করতে হবে।
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إِذَا سَمِعْتُمْ الْإِقَامَةَ فَامْشُوا إِلَى الصَّلَاةِ، وَعَلَيْـكُمْ بِالسَّكِينَةِ وَالْوَقَارِ، وَلاَ تُسْرِعُوا، فَمَا أَدْرَكْتُمْ فَصَلُّوا، وَمَا فَاتَكُمْ فَأَتِمُّوا».
“তোমরা যখন ইক্বামত শুনবে তখনই সালাতের দিকে রওয়ানা করবে। চলার সময় প্রশান্তি ও ভদ্রতা বজায় রাখবে। দৌড়ে যাবে না। অতঃপর যা পাবে তাই ইমামের সাথে পড়ে নিবে। আর বাকিটুকু পুরো করে নিবে”[149]


যে যে কারণে জামা‘আতে সালাত পড়া ছাড়া যায়

শরী‘আতসম্মত এমন কিছু কারণ রয়েছে যার কোনো একটি পাওয়া গেলে তৎসংশ্লিষ্ট ব্যক্তির জন্য জামা‘আতে সালাত পড়া বাধ্যতামূলক নয়। যা নিম্নরূপঃ
১. কোনো কঠিন রোগ অথবা শত্রুর মারাত্মক ভয় হলে:
আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«مَنْ سَمِعَ الـمُنَادِىَ بِالصَّلاَةِ فَلَمْ يَمْنَعْهُ مِنِ اتِّبَاعِهِ عُذْرٌ لَمْ تُقْبَلْ مِنْهُ الصَّلاَةُ الَّتِيْ صَلَّى، قِيْلَ: وَمَا الْعُذْرُ يَا رَسُوْلَ اللهِ؟ قَالَ: خَوْفٌ أَوْ مَرَضٌ».
“যে ব্যক্তি মুয়ায্যিনের আযান শুনেও মসজিদে না গিয়ে ঘরে সালাত পড়লো অথচ তার নিকট মসজিদে উপস্থিত না হওয়ার শরঈ কোনো ওযর নেই তাহলে তার আদায়কৃত সালাত আল্লাহর দরবারে কবুল হবে না। সাহাবীগণ বললেন: হে আল্লাহর রাসূল! আপনি ওযর বলতে কি ধরণের ওযর বুঝাতে চাচ্ছেন? তিনি বললেনঃ ভয় অথবা রোগ”[150]
উক্ত হাদীসটিতে কবুল ও ওযরের ব্যাখ্যা চাওয়া ছাড়া তার বাকী অংশটুকু শুদ্ধ। তবে উক্ত ব্যাপার দু’টো ওযর তো বটেই।
২. অতি বৃষ্টি কিংবা কাদায় পা পিছলে যাওয়ার ভয় হলে:
আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি একদা নিজ মুআয্যিনকে বলেন:
«إِذَا قُلْتَ: أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ فَلاَ تَقُلْ: حَيَّ عَلَى الصَّلاَةِ قُلْ : صَلُّوا فِىْ بُيُوتِكُمْ، قَالَ: فَكَأَنَّ النَّاسَ اسْتَنْكَرُوْا ذَلِكَ، فَقَالَ : قَدْ فَعَلَ ذَا مَنْ هُوَ خَيْرٌ مِنِّىْ».
“যখন তুমি আযানের শব্দ “আশ্হাদু আন্না মু’হাম্মাদার-রাসূলুল্লাহ” (আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, নিশ্চয় মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল) বলবে তখন এর পরপরই “হাইয়া আলাস সালাহ” (সালাতের দিকে আসো) শব্দটি বলবে না। বরং বলবে: “সাল্লূ ফি বুয়ূতিকুম” (তোমরা নিজ নিজ ঘরে সালাত পড়ে নাও)। যখন তিনি বুঝতে পারলেন সাধারণ লোকজন তাঁর এ কথা মেনে নিতে পারছে না তখন তিনি বললেন: এ কাজটি শুধু আমিই করছি না বরং তা একদা করেছেন আমার চেয়েও অতি মহান ব্যক্তিত্ব তথা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম[151]
৩. ঘোর অন্ধকারাচ্ছন্ন ঠাণ্ডা রাতে দমকা বায়ু প্রবাহিত হলে:
আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমা একদা দমকা বায়ুময় ঠান্ডা রাত্রিতে আযান দেওয়ার পর বললেন: “আলা স্বাল্লূ ফির-রিহাল” অর্থাৎ হে মানুষজন! তোমরা নিজ নিজ ঘরে ঘরে সালাত পড়ো। অতঃপর বললেন: আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বৃষ্টিময় ঠাণ্ডা রাত্রিতে মুআয্যিনকে নিম্নোক্ত কথাটি বলার আদেশ করতেন:
«أَلَا صَلُّوا فِيْ الرِّحَالِ».
“হে মানুষজন! তোমরা নিজ নিজ ঘরে ঘরে সালাত পড়ো”[152]
অন্য বর্ণনায় রয়েছে,
«كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَأْمُرُ مُؤَذِّنًا يُؤَذِّنُ، ثُمَّ يَقُولُ عَلَى إِثْرِهِ: أَلَا صَلُّوا فِيْ الرِّحَالِ فِي اللَّيْلَةِ الْبَارِدَةِ أَوْ الـْمَطِيرَةِ فِيْ السَّفَرِ».
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সফরে থাকাবস্থায় ঠান্ডা কিংবা বৃষ্টিময় রাত্রিতে মুআয্যিনকে আযান দেওয়ার পর এ কথা বলার আদেশ করতেন “আলা স্বাল্লূ ফির-রি’হাল” অর্থাৎ হে মানুষজন! তোমরা নিজ নিজ ঘরে ঘরে সালাত পড়ো”[153]
সহীহ মুসলিমের বর্ণনায় রয়েছে, আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমা একদা দমকা বায়ু ও বৃষ্টিময় ঠাণ্ডা রাত্রিতে আযান দেওয়ার পর বললেন: “আলা স্বাল্লূ ফি-রিহালিকুম” “আলা স্বাল্লূ ফির-রিহাল” অর্থাৎ হে মানুষজন! তোমরা নিজ নিজ ঘরে ঘরে সালাত পড়ো। হে মানুষজন! তোমরা নিজ নিজ ঘরে ঘরে সালাত পড়ো। অতঃপর বললেন: আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সফরে থাকাবস্থায় বৃষ্টিময় ঠাণ্ডা রাত্রিতে মুআয্যিনকে নিম্নোক্ত কথাটি বলার আদেশ করতেন:
أَلَا صَلُّوا فِيْ رِحَالِكُمْ».
“হে মানুষজন! তোমরা নিজ নিজ ঘরে সালাত পড়ো”[154]
জাবির রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে সফরে গেলে তখন সেখানে বৃষ্টি বর্ষিত হয়। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন:
«لِيُصَلِّ مَنْ شَاءَ مِنْكُمْ فِي رَحْلِهِ».
“তোমাদের কেউ ইচ্ছে করলে সে নিজ ঘরে সালাত আদায় করতে পারে”[155]
সর্বোত্তম নিয়ম হচ্ছে, পুরো আযানের পর বলবে:
«صَلُّوْا فِيْ بُيُوْتِكُمْ أَوْ صَلُّوْا فِيْ رِحَالِكُمْ».
“তোমরা নিজ নিজ ঘরে ঘরে সালাত পড়ো”
তবে এ শব্দগুলো “হাইয়া আলাস সালাহ” এর পরিবর্তে কিংবা তার পরপরই বলা যেতে পারে। যা উপরোক্ত হাদীসগুলো থেকে বুঝা যায়।
৪. খাবার উপস্থিত ও তা খাওয়ার প্রতি প্রচুর আগ্রহ অনুভূত হলে:
আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إِذَا كَانَ أَحَدُكُمْ عَلَى الطَّعَامِ، فَلَا يَعْجَلْ حَتَّى يَقْضِيَ حَاجَتَهُ مِنْهُ، وَإِنْ أُقِيمَتْ الصَّلَاةُ».
“তোমাদের কেউ খানা খেতে থাকলে সে যেন তা ছেড়ে দ্রুত উঠে না যায় যতক্ষণ না সে তা থেকে নিজ প্রয়োজন পুরো করে। যদিও ইতিমধ্যে সালাতের ইক্বামত হয়ে যায়”।’আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إِذَا وُضِعَ الْعَشَاءُ وَأُقِيمَتْ الصَّلَاةُ، فَابْدَءُوا بِالْعَشَاءِ».
“যখন রাতের খাবার উপস্থিত হয়ে যায় অথচ এ দিকে সালাতের ইক্বামত দেওয়া হয়েছে তখন রাতের খাবারই সর্বপ্রথম খেয়ে নাও”[156]
৫. মল-মূত্র ত্যাগের প্রচুর বেগ অনুভূত হলে:
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«لَا صَلَاةَ بِحَضْرَةِ الطَّعَامِ، وَلَا وَهُوَ يُدَافِعُهُ الْأَخْبَثَانِ».
“খাবার উপস্থিত ও তা খাওয়ার প্রতি প্রচুর আগ্রহ অনুভূত হলে তখন আর সে বেলার সালাত জামা‘আতে পড়তে হবে না। তেমনিভাবে মল-মূত্র ত্যাগের প্রচুর বেগ অনুভূত হলেও সে বেলার সালাত আর জামা‘আতে পড়তে হবে না”[157]
৬. কোনো নিকটতম ব্যক্তির মৃত্যু ও তার শেষ সাক্ষাৎ না পাওয়ার আশঙ্কা হলে:
আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি একদা জানতে পারলেন যে, সা’ঈদ্ ইবন যায়েদ ইবন আমর ইবন নাউফাল মুমূর্ষু অবস্থায় রয়েছেন। তখন ছিলো জুমু‘আর দিন। তবুও তিনি সূর্য আকাশে অনেক দূর উঠে যাওয়ার পরও তাঁর সাক্ষাতের জন্য রওয়ানা হোন। তখন ছিলো জুমু‘আর সালাতের নিকটবর্তী সময়। অতএব তিনি আর সে দিনকার জুমু‘আর সালাত আদায় করতে পারেন নি।[158]
আবুদ্দারদা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«مِنْ فِقْهِ الـْمَرْءِ إِقْبَالُهُ عَلَى حَاجَتِهِ حَتَّى يُقْبِلَ عَلَى صَلَاتِهِ، وَقَلْبُهُ فَارِغٌ».
“কোনো ব্যক্তির শরী‘আতের সত্যিকার বুঝ হচ্ছে এই যে, সে সর্বপ্রথম নিজ প্রয়োজনটুকু সেরে নিবে। অতঃপর সে সকল প্রয়োজনীয় কাজ থেকে সম্পূর্ণরূপে অবসর হয়ে শুধুমাত্র সালাতেই মনোযোগ দিবে”[159]
উক্ত আলোচনা থেকে জানা গেলো যে, সর্বমোট আটটি কারণে জামা‘আতের সালাত ছাড়া যায়। যা সংক্ষেপে নিম্নরূপ:
কোনো এমন রোগ যা মানুষকে দ্রুত দুর্বল ও অতি ব্যস্ত করে দেয়, জীবন, সম্পদ ও ইজ্জতের ভয়, অতি বৃষ্টি, পাঁক-কাদা, ঘোর অন্ধকারাচ্ছন্ন ঠান্ডা রাতের দমকা বায়ু, খাবার উপস্থিত ও তা খাওয়ার প্রতি প্রচুর আগ্রহ, মল-মূত্র ত্যাগের প্রচুর বেগ ও কোনো নিকটতম ব্যক্তির মৃত্যু ও তার শেষ সাক্ষাৎ না পাওয়ার আশঙ্কা।
৭. সালাতের নিকটবর্তী সময়ে পিঁয়াজ বা রসুন জাতীয় দুর্গন্ধযুক্ত কোনো কিছু খেলে:
জাবির রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«نَهَى رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ أَكْلِ الْبَصَلِ وَالْكُرَّاثِ فَغَلَبَتْنَا الْـحَاجَةُ فَأَكَلْنَا مِنْهَا فَقَالَ: مَنْ أَكَلَ مِنْ هَذِهِ الشَّجَرَةِ الْـمُنْتِنَةِ فَلَا يَقْرَبَنَّ مَسْجِدَنَا، فَإِنَّ الْـمَلَائِكَةَ تَأَذَّى مِمَّا يَتَأَذَّى مِنْهُ الْاِنْسُ».
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পিঁয়াজ ও কুর্রাস (দুর্গন্ধযুক্ত এক জাতীয় উদ্ভিদ) খেতে নিষেধ করেছেন। জাবির রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন: একদা আমরা প্রয়োজনের তাগিদে তা খেলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে উদ্দেশ্য করে বললেন: কেউ এ জাতীয় দুর্গন্ধযুক্ত উদ্ভিদ খেলে সে যেন আমাদের মসজিদের নিকটবর্তীও না হয়। কারণ, ফিরিশতাগণ সে জিনিসেই কষ্ট পান যে জিনিসে কষ্ট পায় মানুষ”[160]
তবে প্রয়োজনে এগুলোকে ভালোভাবে সিদ্ধ করে কিংবা পাকিয়ে খাওয়া যেতে পারে।
উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু একদা জুমু‘আর খুৎবায় এক পর্যায়ে বলেন:
«ثُمَّ إِنَّكُمْ أَيُّهَا النَّاسُ تَأْكُلُونَ شَجَرَتَيْنِ لَا أَرَاهُمَا إِلَّا خَبِيثَتَيْنِ هَذَا الْبَصَلَ وَالثُّومَ لَقَدْ رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا وَجَدَ رِيحَهُمَا مِنْ الرَّجُلِ فِي الـْمَسْجِدِ أَمَرَ بِهِ فَأُخْرِجَ إِلَى الْبَقِيعِ فَمَنْ أَكَلَهُمَا فَلْيُمِتْهُمَا طَبْخًا».
“হে মানব সকল! তোমরা এমন দু’টি উদ্ভিদ খাচ্ছো যা আমি নিকৃষ্ট বলেই মনে করি। তা হলো: পিয়াজ ও রসুন। আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে এমন কাজও করতে দেখেছি যে, তিনি মসজিদে কারো থেকে এগুলোর দুর্গন্ধ পেলে তাকে বাকী’ কবরস্থানের দিকে বের করে দেওয়ার নির্দেশ দিতেন। সুতরাং কেউ এগুলো খেলে সে যেন তা ভালোভাবে পাকিয়ে খায়”[161]
আল্লাহ তা‘আলা আমাদের সকলকে সর্বদা জামা‘আতে সালাত আদায়ের তাওফীক দিন। আমীন সুম্মা আমীন ইয়া রাব্বাল-আলামীন।
وَصَلَّى اللهُ عَلَى نَبِيِّنَا مُحَمَّدٍ وَّعَلَى آلِهِ وَصَحْبِهِ اَجْمَعِيْنَ
সমাপ্ত



জামা‌‘আতে সালাত আদায়: গ্রন্থটিতে কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে জামা‘আতের সাথে সালাত আদায়ের তাৎপর্য, ফযীলত, আহকাম, উপকারিতা ও আদাবসমূহ দলীল-প্রমাণসহ বর্ণিত হয়েছে।






[1] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৪৩১
[2] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৬৫৩
[3] আবু দাউদ, হাদীস নং ৫৫২
[4]; আবু দাউদ, হাদীস নং ৫৫১; বায়হাকী, হাদীস নং ৫৪৩১
[5] বায়হাকী, হাদীস নং ৪৭১৯, ৫৩৭৫
[6] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৬৭২
[7] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬২৮; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৬৭৪
[8] আহমদ, হাদীস নং ২০৭১৯;; আবু দাউদ, হাদীস নং ৫৪৭; নাসাঈ, হাদীস নং ৮৪৭
[9] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৬৫৫; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৭৪০
[10] ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৭৪১
[11] আহমদ, হাদীস নং ১৫৭০৮, ১৬৩৪০
[12] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৬৫৪; আবু দাউদ, হাদীস নং ৫৫০
[13] আহমদ, হাদীস নং ৭৯১৩
[14] ত্বাবারানী/কবীর, হাদীস নং ১৩০৮৫; ইবন আবী শাইবাহ: ১/৩৩২
[15] ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৮০১
[16] আবু দাউদ, হাদীস নং ৫৫৪; নাসাঈ, হাদীস নং ৮৪৩
[17] ইবন আবী শায়বাহ, হাদীস নং ৩৪৮৬
[18] ইবন আবী শায়বাহ, হাদীস নং ৩৪৮২
[19] ইবন আবী শায়বাহ, হাদীস নং ৩৪৮৩
[20] কিতাবুস-সালাহ/ইবনুল-কাইয়্যেম ৫৯৫
[21] মিফ্তাহুল-আফকারর/আব্দুল আযীয আল-সালমান ২/১০২
[22] সহীহ বুখারী: অধ্যায় ১০, অনুচ্ছেদ: ২৯
[23] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪৩২
[24] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৬৫০
[25] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৬৪৯
[26] বুখারী, হাদীস নং ২৯৯৬
[27] আহমদ, হাদীস নং ২০৭১৯; আবু দাউদ, হাদীস নং ৫৪৭; নাসাঈ, হাদীস নং ৮৪৭
[28] আবু দাউদ, হাদীস নং ৫৫৪; নাসাঈ, হাদীস নং ৮৪৩
[29] তিরমিযী, হাদীস নং ২৪১
[30] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৬৫৭
[31] তিরমিযী, হাদীস নং ৫৮৬
[32] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৬৫৬
[33] আবু দাউদ, হাদীস নং ৫৫৫
[34] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫৫৫; মুসলিম, হাদীস নং ৬৩২
[35] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৬৩৪
[36] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫৭৪; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৬৩৫
[37] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫৫৩
[38] আবু দাউদ, হাদীস নং ৪১৪; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৬৯১
[39] আহমদ, হাদীস নং ৪৮৬৬, ৫১১২
[40] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৬৪৯
[41] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৬৪৯
[42] আবু দাউদ, হাদীস নং ৫৫৪; নাসাঈ, হাদীস নং ৮৪৩
[43] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪৩০; আবু দাউদ, হাদীস নং ৬৬১
[44] বুখারী, হাদীস নং ৬১৫; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪৩৭
[45] আহমদ, হাদীস নং ২১২৩৩
[46] আহমদ, হাদীস নং ১৭৮৭৮, ১৮৬২১
[47] নাসাঈ, হাদীস নং ৮০২
[48] নাসাঈ, হাদীস নং ৮০৮
[49] ইবন মাজাহ, হাদীস নং ১০০৫
[50] ইবন মাজাহ, হাদীস নং ১০০৪; আহমদ, হাদীস নং ২৩৪৪৬, ২৪৫৮৭; ইবন খুযাইমাহ, হাদীস নং ১৫৫০
[51] আবু দাউদ, হাদীস নং ৬৬৬      
[52] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৭৮০; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪১০; আবু দাউদ, হাদীস নং ৯৩৬; তিরমিযী, হাদীস নং ২৩২
[53] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৭৮২; সহীহ  মুসলিম, হাদীস নং ৪১০; আবু দাউদ, হাদীস নং ৯৩৫
[54] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪০৪; আবু দাউদ, হাদীস নং ৯৭২
[55] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৪২৩; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১০৩১
[56] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৬৫৪; আবু দাউদ, হাদীস নং ৫৫০
[57] বুখারী, হাদীস নং ৬৪৭ মুসলিম, হাদীস নং ৬৪৯
[58] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৬৬৬
[59] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৫১; তিরমিযী, হাদীস নং ৫১; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৪৩৩
[60] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৬৬৩
[61] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬৫১; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৬৬২
[62] বুখারী, হাদীস নং ৬৫৬; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৬৬৫
[63] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৩২
[64] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬৬২; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৬৬৯
[65] আবু দাউদ, হাদীস নং ৫৬৪
[66] ইবন খুযাইমাহ, হাদীস নং ৪৩৯, ৪৪৭; হাকিম, হাদীস নং ৭৪৪
[67] আবু দাউদ, হাদীস নং ৫৫৮
[68] আবু দাউদ, হাদীস নং ২৪৯৪
[69] তিরমিযী, হাদীস নং ৩২৩৩, ৩২৩৪, ৩২৩৫
[70] ত্বাবারানী/কবীর, হাদীস নং ৬১৩৯, ৬১৪৫; ইবন আবী শাইবাহ, হাদীস নং ১৬৪৬৫
[71] ইবন আবী শাইবাহ, হাদীস নং ৩৫৭৫৮
[72] ইবন খুযাইমাহ, হাদীস নং ১৪৯১
[73] বুখারী, হাদীস নং ৮৫৫ মুসলিম, হাদীস নং ৫৬৪
[74] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৯১
[75] আবু দাউদ, হাদীস নং ৫০৯৫ তিরমিযী, হাদীস নং ৩৪২৬
[76] আবু দাউদ, হাদীস নং ৫০৯৪ তিরমিযী, হাদীস নং ৩৪২৭ ইবন মাজাহ্, হাদীস নং ৩৮৮৪
[77] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬৩১৬; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৬৩
[78] তিরমিযী, হাদীস নং ৩৮৭; আবু দাউদ, হাদীস নং ৫৬২
[79] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬৩৬, ৯০৮; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৬০২
[80] আবু দাউদ, হাদীস নং ৬৫০; ইবন খুযাইমাহ, হাদীস নং ১০১৭
[81] আবু দাউদ, হাদীস নং ৩৮৫
[82] আবু দাউদ, হাদীস নং ৪৬৫; ইবনুস-সুন্নী, হাদীস নং ৮৮
[83] আবু দাউদ, হাদীস নং ৪৬৫
[84] ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৭৭৮
[85] আবু দাউদ, হাদীস নং ৪৬৬
[86] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৫৪
[87] সহীহ বুখারী/কিতাবুল-ঈমান/বাবু ইফ্শায়িস-সালাম
[88] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৪৪; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭১৪
[89] আবু দাউদ, হাদীস নং ৬৫৫
[90] আবু দাউদ, হাদীস নং ৬৫৪
[91] আবু দাউদ, হাদীস নং ৬৫২
[92] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬১৫; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪৩৭
[93] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭০৯
[94] ত্বাবারানী/আওসাত, হাদীস নং ২৩৫৪
[95] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৬৪৯
[96] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭১০।
[97] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭১২; আবু দাউদ, হাদীস নং ১২৬৫।
[98] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৪২৬।
[99] হাকিম, হাদীস নং ৭৯১; বায়হাক্বী, হাদীস নং ৪৪৯৪।
[100] আবু দাউদ, হাদীস নং ৪৬৫; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৭৭৯।
[101] ইবন মাজাহ্, হাদীস নং ৭৮০
[102] ইবন মাজাহ্, হাদীস নং ৭৭৮
[103] বুখারী, হাদীস নং ১১৭, ৬৯৯ মুসলিম, হাদীস নং ৭৬৩
[104] বুখারী, হাদীস নং ৬৩০ মুসলিম, হাদীস নং ৬৭৪
[105] আবু দাউদ, হাদীস নং ১৩০৯ ইবন মাজাহ্, হাদীস নং ১৩৩৫
[106] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৪৩০২।
[107] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৬৬০।
[108] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৬৫৮।
[109] বুখারী, হাদীস নং ৫৮০ মুসলিম, হাদীস নং ৬০৭
[110] বুখারী, হাদীস নং ৭৮৩
[111] আবু দাউদ, হাদীস নং ৮৯৩।
[112] বায়হাক্বী, হাদীস নং ২৬৭৮; দারাক্বুত্ব্নী, হাদীস নং ১; ইবন খুযাইমাহ, হাদীস নং ১৫৯৫।
[113] আবু দাউদ, হাদীস নং ৫৬৪।
[114] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৯৯৬।
[115] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৮৩৮, ২৮৩৯।
[116] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৪৪২৩।
[117] আবু দাউদ, হাদীস নং ৫৭৪; আহমদ, হাদীস নং ১০৯৮০, ১১৩৮০, ১১৮০৮; ইবন হিববান, হাদীস নং ২৩৯৭-২৩৯৯; আবু ইয়া‘লা, হাদীস নং ১০৫৭।
[118] তিরমিযী, হাদীস নং ২২০।
[119] নাইলুল-আওত্বার ২/৩৮০।
[120] সহীহ বুখারী/জামা‘আতে সালাত পড়ার ফযীলত অধ্যায়।
[121] আবু দাউদ, হাদীস নং ৫৭৯; নাসাঈ, হাদীস নং ৮৬০।
[122] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৬৪৮।
[123] তিরমিযী, হাদীস নং ২১৯; নাসাঈ, হাদীস নং ৮৫৮।
[124] আবু দাউদ, হাদীস নং ৫৭৫।
[125] নাসাঈ, হাদীস নং ৮৫৭।
[126] আবু দাউদ, হাদীস নং ৪৩৩।
[127] আবু দাউদ, হাদীস নং ৪৩৩।
[128] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৮২; সহীহ  মুসলিম, হাদীস নং ২৭৪; আহমদ, হাদীস নং ১৭৪৮৫, ১৮১৯৪; আবু দাউদ, হাদীস নং ১৪৯।
[129] বুখারী, হাদীস নং ৬৩৬; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৯০৮।
[130] তিরমিযী, হাদীস নং ৫৯১।
[131] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৭১৭; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪৩৬।
[132] সহীহবুখারী, হাদীস নং ৬৯১; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪২৭; আবু দাউদ, হাদীস নং ৬২৩।
[133] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪০৪; ইবন খুযাইমাহ, হাদীস নং ১৫৯৩।
[134] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪২৬।
[135] উমদাতুল-ক্বারি ৮/৩৮৩; আবু দাউদ/আইনি ৩/১৫০।
[136] সহীহবুখারী, হাদীস নং ৩৭৮, ৮০৫, ১১১৪; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪১৪, ৪১৭; আবু দাউদ, হাদীস নং ৬০৩।
[137] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৭২২, ৭৩৪, ৮০৫; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪১৪।
[138] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬৯০, ৮১১; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪৭৪; আবু দাউদ, হাদীস নং ৬২১।
[139] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫০৯; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৫০৫; আবু দাউদ, হাদীস নং ৭০০।
[140] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৬৭৩।
[141] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪৬৭
[142] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪৬৫।
[143] আহমদ ২/২৬, ৪০, ১৫৭; নাসাঈ, হাদীস নং ৮২৭; ইবন খুযাইমাহ, হাদীস নং ১৬০৬।
[144] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪৬১।
[145] আবু দাউদ, হাদীস নং ১২৪৮
[146] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১১৭, ৬৯৯; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৬৩।
[147] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩৭৮, ৮০৫, ১১১৪; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪১৪, ৪১৭; আবু দাউদ, হাদীস নং ৬০৩।
[148] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪২৬।
[149] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬৩৬; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৯০৮।
[150] আবু দাউদ, হাদীস নং ৫৫১; বায়হাকী, হাদীস নং ৫৪৩১।
[151] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬১৬, ৬৬৮, ৯০১; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৬৯৯।
[152] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬৬৬।
[153] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬৩২।
[154] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৬৯৭
[155] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৬৯৮
[156] বুখারী, হাদীস নং ৬৭১ মুসলিম, হাদীস নং ৫৫৮
[157] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৫৬০
[158] বুখারী, হাদীস নং ৩৯৯০
[159] সহীহ বুখারী: আযান অধ্যায়, পরিচ্ছদ: যখন খাবার উপস্থিত হয় এবং সালাতের ইক্বামত দেওয়া হয়।
[160] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৫৬৪।
[161] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৫৬৭; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৩৪২৬।
_______________________________________________________________________________________


লেখক: মোস্তাফিজুর রহমান ইবন আব্দুল আযীয আল-মাদানী 
সম্পাদনা: ড. মোহাম্মাদ মানজুরে ইলাহী
সূত্র: ইসলামহাউজ


“সালাত” বিষয়ের উপর আরও পড়তে এইখানে ক্লিক করুন।

পোস্টটি ভালো লাগলে শেয়ার করতে ভুলবেন না কিন্তু।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন