সালাতের আহকাম ও পদ্ধতি
সালাতের আহকাম ও পদ্ধতি
সালাতের শর্তাবলি:
সালাতের শর্ত নয়টি।
এক : মুসলমান হওয়া :
সালাত ছাড়াও অন্যান্য যে কোন ইবাদতের ক্ষেত্রেই মুসলমান হওয়া পূর্বশর্ত। মুসলমান বলতে উদ্দেশ্য হল, যে ব্যক্তি আল্লাহকে রব হিসেবে বিশ্বাস করে এবং মুহাম্মদ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -কে রাসূল বলে স্বীকৃতি প্রদান, আর ইসলামকে একমাত্র দ্বীন বলে মনে-প্রাণে গ্রহণ করে। অবিশ্বাসীর যাবতীয় ইবাদত প্রত্যাখ্যাত । অবিশ্বাসীদের কোন ইবাদতই আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য নয়, যদিও তারা জমিনভর স্বর্ণ কল্যাণকর কাজে ব্যয় করে। আল্লাহ তাআলা বলেন :
وَقَدِمْنَا إِلَى مَا عَمِلُوا مِنْ عَمَلٍ فَجَعَلْنَاهُ هَبَاءً مَنْثُورًا .الفرقان :23
আমি তাদের কৃতকর্মগুলো বিবেচনা করব, অতঃপর সেগুলোকে বিক্ষিপ্ত ধুলি-কণায় পরিণত করব। (সূরা আল-ফুরকান : ২৩)
দুই : বুঝার বয়সে উপনীত হওয়া:
বুঝার মত বয়সে উপনীত হওয়া হল শরীয়তের বিধানাবলী উপলব্ধি ও গ্রহণ করার একমাত্র উপায়। জ্ঞানহীন ব্যক্তির উপর শরীয়তের কোন বিধানই ওয়াজিব নয়। প্রমাণ :রাসূল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন :
رفع القلم عن ثلاثة: النائم حتى يستيقظ والمجنون حتى يفيق والصغيرحتى يكبر. رواه الترمذى:1343
তিন ব্যক্তি দায়মুক্ত, তাদের কোন গুনাহ লিখা হয় না। ক-ঘুমন্ত ব্যক্তি ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়া পর্যন্ত। খ-পাগল সুস্থ হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত।গ-ছোট বাচ্চা বড় হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত। (তিরমিযি:১৩৪৩)
তিন : ভাল মন্দের বিচার করা :
ভাল মন্দ বিচারের উপযুক্ত বয়সে উপনীত হওয়া। অবুঝ বা ছোট শিশু, যে নিজের জন্য কোন রূপ ভাল মন্দ চিণ্হিত করতে সক্ষম নয়, তার উপর সালাত ওয়াজিব নয়। শিশু যখন ভাল মন্দের পার্থক্য করতে পারে এবং সুন্দর ও অসুন্দর চিনতে পারে, তখন বুঝতে হবে যে, সে বিচার বিশ্লেষণ বা তাময়ীয করার মত বয়সে পৌঁছে গেছে। সাধারণত সাত বছর বয়সে বাচ্চারা ভাল-মন্দ বুঝতে পারে।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন :
مروا أبناءكم بالصلاة لسبع واضربوهم عليها لعشر وفرقوا بينهم في المضاجع . رواه أحمد:6467
তোমর সাত বছর বয়সে তোমাদের বাচ্চাদের সালাতের আদেশ দাও। আর সালাত না পড়লে দশ বছর বয়সে তাদের হালকা মার-ধর কর। আর তাদের বিছানা আলাদা করে দাও। (আহমাদ:৬৪৬৭)
চার : পবিত্রতা :
নির্দিষ্ট বিধান অনুযায়ী ওযু দ্বারা পবিত্রতা অর্জন হয়। আল্লাহ বলেন :
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا إِذَا قُمْتُمْ إِلَى الصَّلَاةِ فَاغْسِلُوا وُجُوهَكُمْ وَأَيْدِيَكُمْ إِلَى الْمَرَافِقِ وَامْسَحُوا بِرُءُوسِكُمْ وَأَرْجُلَكُمْ إِلَى الْكَعْبَيْنِالمائدة):(6
হে মুমিনগণ ! যখন তোমরা সালাতের উদ্দেশ্যে দণ্ডায়মান হও তখন তোমাদের মুখমণ্ডল ধৌত কর এবং হাতগুলোকে কনুই পর্যন্ত ধুয়ে নাও, আর মাথা মাসেহ কর এবং পা-গুলোকে টাখনু অবধি ধুয়ে ফেল। (মায়েদাহ:৬)
হে ঈমানদার সকল ! তোমরা যখন সালাতের ইচ্ছা কর, তখন তোমরা মুখমণ্ডল ধৌত কর, তোমাদের হাত-দ্বয় ধৌত কর, মাথা মাছেহ কর এবং উভয় পায়ের গোড়ালিসহ ধৌত কর।
পাঁচ : নাপাকী দুর করা :
তিনটি স্থান হতে সালাতের পূর্বে না-পাকী দূর করতে হবে।
শরীর পাক হতে হবে।
পোশাক পাক হতে হবে।
আল্লাহ বলেন :
وثيابك فطهر (المدثر: 4)
তুমি তোমার কাপড় পাক কর। )সূরা মুদ্দাছ্ছির : ৪)
সালাতের স্থান পাক হতে হবে।
রাসূল বলেন :
إن هذه المساجد لا تصلح لشيء من هذا البول والعذر. رواه مسلم:429
নিশ্চয় মসজিদ গুলোতে পেশাব পায়খানা করা কোন ক্রমেই সঙ্গত নয়। ( মুসলিম:৪২৯)
ছয় : সতর ঢাকা :
পুরুষের সতর নাভি হতে হাটুর নীচ পর্যন্ত। আর মেয়েদের ক্ষেত্রে শুধু চেহারা ও দু-হাতের কবজি ছাড়া সবই সতর। তবে অপরিচিত লোকের সামনে পড়লে চেহারা ও হাতের কবজিও ঢেকে রাখতে হবে। আল্লাহ বলেন :
(يَا بَنِي آَدَمَ خُذُوا زِينَتَكُمْ عِنْدَ كُلِّ مَسْجِدٍ) الأعراف:31
হে আদম সন্তান ! তোমরা প্রত্যেক সালাতের সময় তোমাদের পোশাক-পরিচ্ছেদ গ্রহণ কর কর। (আরাফ:৩১)
সাত : সময় হওয়া।
দিবারাত্রের মধ্যে পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের সময় নির্ধারিত আছে। এবং সময়ের শুরু আছে এবং শেষও আছে।
সময়ের বিস্তারিত আলোচনা নিম্নরূপ :
ফযরের সালাতের সময় : সুবহে সাদেক হতে সূর্যোদয় পর্যন্ত।
যোহরের ওয়াক্ত: সূর্য পশ্চিম আকাশে ঢলা থেকে আরম্ভ করে প্রতিটি বস্তুর ছায়া দ্বিগুণ হওয়া পর্যন্ত।
আছরের সালাতের সময় : প্রতিটি বস্তুর ছায়া তার সমপরিমাণ হওয়া থেকে আরম্ভ করে দ্বিগুণ হওয়া পর্যন্ত।
মাগরিবের সময় : সূর্যাস্ত থেকে আরম্ভ করে পশ্চিম আকাশের লালিমা অদৃশ্য হওয়া পর্যন্ত।
এশার সালাতের সময় : লালিমা অদৃশ্য হওয়ার পর অর্ধরাত্রি পর্যন্ত।
ওয়াক্ত শর্ত হওয়ার প্রমাণ, আল্লাহ বলেন:
إِنَّ الصَّلَاةَ كَانَتْ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ كِتَابًا مَوْقُوتًا. النساء:103
নিশ্চয় সালাত মুমিনদের উপর নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নির্ধারিত।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কর্তৃক নির্ধারিত সময়ে সালাত আদায় করার প্রমাণ : হাদিসে এসেছে –
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কর্তৃক নির্ধারিত সময়ে সালাত আদায় করার প্রমাণ : হাদিসে এসেছে –
حديث جبريل أنه أم النبي صلى الله عليه وسلم يوما في أول وقت كل صلاة ويوما في آخر محمد الصلاة بين هذين الوقتين )رواه مسلم:971) وقت كل صلاة ثم قال (يا
জিব্রাঈল আ: এর হাদীস, তিনি রাসূল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -কে প্রথম দিন সালাত পড়ান প্রত্যেক সালাতের শুরু ওয়াক্তে আর পরের দিন সালাত পড়ান প্রত্যেক সালাতের শেষ ওয়াক্তে। তারপর তিনি বলেন: হে মুহাম্মদ! এ সময়ের মধ্যবর্তী সময়ই হল সালাতের সময়। (মুসলিম:৯৭১)
আট : কিবলামুখী হওয়া :
ক্বিবলা বা কাবা শরীফকে সামনে রাখার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করা একজন নামাযির উপর ওয়াজিব। কাবা শরীফ যদি সরাসরি সামনে হয় তবে তাকে অবশ্যই পুরো শরীর দ্বারা কিবলা-মুখ হতে হবে। আর যদি দূরে হয় তবে ক্বিবলার দিককে সামনে রাখা তার উপর ওয়াজিব। বিভিন্নভাবেই ক্বিবলা চেনা যেতে পারে।
· সূর্য উদয় হওয়ার দিক।
· রাত্রের বেলা সূর্য অস্ত যাওয়ার দিক। রাত্রে ধ্রুবতারা দ্বারা, মসজিদের মেহরাব, কম্পাস দ্বারা অথবা কাউকে জিজ্ঞাসা করার দ্বারা। ক্বিবলা নির্ধারণের চেষ্টা করা নামাযির উপর ওয়াজিব।
আল্লাহ তাআলা বলেন :
قَدْ نَرَى تَقَلُّبَ وَجْهِكَ فِي السَّمَاءِ فَلَنُوَلِّيَنَّكَ قِبْلَةً تَرْضَاهَا فَوَلِّ وَجْهَكَ شَطْرَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ وَحَيْثُ مَا كُنْتُمْ فَوَلُّوا وُجُوهَكُمْ شَطْرَهُ (البقرة:144)
নিশ্চয় আমি আকাশের দিকে তোমার মুখমণ্ডল উত্তোলন অবলোকন করছি। তাই আমি তোমাকে ঐ কিবলামুখীই করব যা তুমি কামনা করছ। অতএব তুমি মাসজিদুল হারামের দিকে তোমার মুখমণ্ডল ফিরিয়ে নাও। এবং তোমরা যেখানেই আছ তোমাদের মুখ সে দিকেই প্রত্যাবর্তিত কর।
নয় : নিয়্যত করা
নিয়ত হল, কোন কাজ করার উদ্দেশ্যে দৃঢ় প্রত্যয়ী হওয়া, মুখে কোন কথা না বলা। ফরজ সালাত আদায়ের ইচ্ছা করলে তার মন ও অন্তর উপস্থিত থাকবে। প্রমাণ রাসূল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন :
إنما الأعمال بالنيات وإنما لكل امرء ما نوى...( رواه البخاري:01)
বান্দার সমস্ত আমল নিয়্যতের উপর নির্ভরশীল এবং প্রত্যেক মানুষ তার নিয়্যত অনুসারেই তার বিনিময় পাবে। (বুখারী:০১)
সালাতের বিধানাবলী
আল্লহ তাআলা কুরানে করীমে সালাতের আদেশ দিলেও এর পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেননি। তবে হাদীসে এর বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আল্লাহ বলেন :
وَأَنْزَلْنَا إِلَيْكَ الذِّكْرَ لِتُبَيِّنَ لِلنَّاسِ مَا نُزِّلَ إِلَيْهِمْ وَلَعَلَّهُمْ يَتَفَكَّرُونَ (النحل:44)
আর তোমার প্রতি কুরআন অবতীর্ণ করেছি মানুষকে বুঝিয়ে দেয়ার জন্য।
আর রাসূল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
صلوا كما رأيتموني أصلي. )رواه البخاري:595)
তোমরা আমাকে যেভাবে সালাত পড়তে দেখ ঠিক সেভাবে সালাত আদায় কর। (বুখারী:৫৯৫ )
একজন মুসলমান যখন সালাতে দাঁড়ায় তখন তার অন্তরে এমন একটি অনুভূতি থাকা উচিত যে, সে এখন মহান আল্লহর সম্মুখে দণ্ডায়মান, তিনি তার চোখের ইশারা অন্তরের অন্তসথলের বিরাজমান সব কিছুই জানেন। মনের চিন্তা চেতনা আকুতি-মিনতি সবই তার জ্ঞাত। যদি মানুষের মধ্যে এ ধরনের অনুভূতি জাগ্রত থাকে তবেই তার অন্তর সালাতে একমাত্র আল্লাহর দিকেই নিমগ্ন থাকবে। যেমনিভাবে তার দেহ-শরীর ক্বিবলার দিকে থাকে অনুরূপভাবে তার মনও ক্বিবলামুখী থাকবে। একজন নামাযির কর্তব্য হল, যখনই সে সালাতে দাঁড়াবে, তাকে বিশ্বাস করতে হবে যে, সে এখন আল্লাহর সম্মুখে উপস্থিত, আর যখন সালাত আরম্ভ করে তখন বিশ্বাস করবে যে, এখন সে আল্লাহর সাথেই কথোপকথন করছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন :
إذا قام أحدكم يصلي فإنه يناجي ربه. (رواه البخاري : 390)
যখন কেউ সালাতে দাড়ায় সে আল্লাহর সাথেই নিভৃতে আলাপ করে। (বুখারী:৩৯০)
অতঃপর সালাতে যখন বলে, আল্লাহু আকবার তখন সে বিশ্বাস করে যে আল্লাহই সব বড়র বড়, তার উপর আর কোন বড় নেই।
আর জাগতিক সবকিছুই তার নিকট তুচ্ছ। কারণ, সে দুনিয়াকে পশ্চাতে ফেলে সালাতে নিমগ্ন হয়। তাকবীর বলার সাথে সাথে দুই হাত কাঁধ বরাবর উঠায়, ডান হাতকে বাম হাতের বাহুর উপর রাখে, মাথাকে অবনত করে, উপরের দিকে চক্ষু উঠায় না এবং ডানে বামে তাকায় না। অতঃপর সে সালাত শুরুর দুআ পড়বে আর বলবে -
(سبحانك اللهم وبحمدك وتبارك اسمك وتعالى جدك ولا إله غيرك)
এছাড়া ও আরো যে সব দুআ বিশুদ্ধ হাদীস দ্বারা প্রমানিত, সেগুলোও পাঠ করা যেতে পারে।
তারপর আউজু বিল্লাহ (أعوذ بالله من الشيطان الرجيم) ও বিছমিল্লাহ (بسم الله الرحمن الرحيم ) পড়বে। তারপর সুরা ফাতেহা পড়বে আর সুরা ফাতেহার অর্থের মধ্যে গভীরভাবে চিন্তা করবে।
হাদীসে কুদসীতে বর্ণিত আল্লাহ তাআলা বলেন,
আমি সালাতকে আমার ও বান্দার মাঝে দুই ভাগ করি, এক অর্ধেক আমার জন্য, আর অর্ধেক আমার বান্দার, আর বান্দা আমার নিকট যা চায় তাই সে পায়। যখন সে বলে, আলহামদু লিল্লাহ আল্লাহ বলেন : আমার বান্দা আমার প্রশংসা করছে। আর যখন বলে আররহমানির রহীম الرحمن الرحيم আল্লাহ বলেন আমার বান্দা আমার গুনগান করছে এবং আমার মহত্বের র্বণনা দিচ্ছে। আর যখন বলবে, مالك يوم الدين আল্লাহ বলেন : مجدني عبدي অর্থাৎ আমার বান্দা আমার মহত্বের বর্ণনা দিচ্ছে। আর যখন বলে إياك نعبد وإياك نستعين আল্লাহ বলেন : ইহা আমার এবং আমার বান্দার মাঝে সীমাবদ্ধ আর বান্দা লাভ করে যা সে প্রার্থনা করে। আবার যখন সে বলে إهدنا الصراط المستقيم আল্লাহ বলেন: এ শুধু আমার বান্দার এবং সে লাভ করে যা সে প্রার্থনা করে। (মুসলিম:৫৮৯ )
আমি সালাতকে আমার ও বান্দার মাঝে দুই ভাগ করি, এক অর্ধেক আমার জন্য, আর অর্ধেক আমার বান্দার, আর বান্দা আমার নিকট যা চায় তাই সে পায়। যখন সে বলে, আলহামদু লিল্লাহ আল্লাহ বলেন : আমার বান্দা আমার প্রশংসা করছে। আর যখন বলে আররহমানির রহীম الرحمن الرحيم আল্লাহ বলেন আমার বান্দা আমার গুনগান করছে এবং আমার মহত্বের র্বণনা দিচ্ছে। আর যখন বলবে, مالك يوم الدين আল্লাহ বলেন : مجدني عبدي অর্থাৎ আমার বান্দা আমার মহত্বের বর্ণনা দিচ্ছে। আর যখন বলে إياك نعبد وإياك نستعين আল্লাহ বলেন : ইহা আমার এবং আমার বান্দার মাঝে সীমাবদ্ধ আর বান্দা লাভ করে যা সে প্রার্থনা করে। আবার যখন সে বলে إهدنا الصراط المستقيم আল্লাহ বলেন: এ শুধু আমার বান্দার এবং সে লাভ করে যা সে প্রার্থনা করে। (মুসলিম:৫৮৯ )
আর সুরা ফাতেহা শেষ করে সে آمين বলবে। অর্থাৎ, হে আল্লাহ ! আপনি আমার দুআ কবুল করুন।
সুরা ফাতেহা শেষ করার পর কুরআনের যে কোন অংশ থেকে সহজ কয়েকটি আয়াত তিলাওয়াত করবে। তারপর দুহাত তুলে আল্লাহ আকবর বলে রুকু করবে। রুকুতে দুহাত হাঁটুর উপর রাখবে। আঙ্গুলগুলো খোলা থাকবে আর দুই বাহুকে দুই পার্শ্ব থেকে দূরে রাখবে। মাথা ও পিঠ সমান রাখবে, বাঁকা করবেনা। রুকুতে গিয়ে কমপক্ষে তিনবার سبحان ربي العظيم বলবে। এবং বেশী বেশী করে আল্লাহর মহত্ব বর্ণনা করবে।যেমন, বলবে-
( سبحانك اللهم ربنا وبحمدك اللهم اغفرلي) (বুখারী)
অতঃপর আল্লাহু আকবার বলে মাথা উঁচু করবে এবং দুহাত কাঁধ পর্যন্ত অথবা দু কানের লতী পর্যন্ত উঠাবে, ডান হাত বাম হাতের বাহুর উপর রাখবে এবং বলবে, ربنا ولك الحمد অথবা ربنا لك الحمد অথবা اللهم ربنا لك الحمد উল্লেখিত দুআগুলি এক এক সময় এক একটি করে পড়া উত্তম। আর যদি নামাযি মুক্তাদি হয় তবে তাকে سمع الله لمن حمده বলতে হবে না, বরং সে উঠার সময় শুধু উল্লেখিত দুআগুলি পড়বে। এছাড়া সে এ দুআও পড়তে পারে ربنا ولك الحمد (বুখারী )
তারপর সেজদায় যাওয়ার জন্য তাকবীর বলবে। সেজদায় যাওয়ার সময় দুই হাত উঠানোর কোন প্রয়োজন নেই। সেজদায় যাওয়ার সময় হাত উঠানো বিশুদ্ধ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত নয়। প্রথমে দু হাঁটু জমিনে রাখবে তারপর দুই হাত তারপর কপাল তারপর নাক। মোটকথা, সাতটি অঙ্গের উপর সেজদা করবে কপাল নাক দুই ক্ববজি দুই হাঁটু দুই পায়ের আঙ্গুলি। আর বাহুদ্বয়কে খাড়া করে রাখবে, মাটির সাথে মেশাবে না এবং হাঁটুর উপরেও রাখবে না, আর দুই বাহুকে দুই পার্শ্ব হতে এবং পেটকে দুই উরু হতে আলাদা রাখবে। পিঠ উঁচু করে রাখবে, বিছিয়ে দিবে না। সেজদারত অবস্থায় তিনবার বলবে : سبحان ربي الأعلي এবং سبوح قدوس বলারও বিধান রয়েছে। (মুসলিম:৭৫২ )
আর সেজদায় বেশী বেশী করে আল্লাহর নিকট র্প্রাথনা করবে। রাসূল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেন :
أقرب ما يكون العبد من ربه وهو ساجد فأكثروا الدعاء ( رواه مسلم:(744
বান্দা আল্লাহর সবচেয়ে নৈকট্য লাভ করে যখন সে সেজদারত থাকে। সুতরাং, তোমরা সেজদারত অবস্থায় বেশী বেশী প্রার্থনা কর।(মুসলিম:৫৭৯)
কিন্ত মুক্তাদির জন্য দীর্ঘ দুআ করার অজুহাতে ইমামের চেয়ে বেশী দেরী করা : কোন ক্রমেই তা ঠিক নয়। কারণ, ইমামের অনুকরণ করা করা ওয়াজিব ও অধিক গুরুত্বর্পূণ বিষয়। তারপর তাকবীর বলে সেজদা হতে উঠবে এবং দুই সেজাদার মাঝে মুফতারেশ বসবে।
এর নিয়ম হল, বাম পা বিছিয়ে দিবে আর ডান পা ডান পার্শ্বে খাড়া করে রাখবে। আর দুই হাতের মধ্যে ডান হাত ডান উরুর উপর অথবা হাঁটুর মাথায় এবং বাম হাত বাম উরুর উপর অথবা হাঁটুকে মুষ্টি করে আঁকড়ে ধরবে। ডান হাতের কনিষ্ট, অনামিকা ও মধ্যমা অঙ্গুলীগুলো মিলিয়ে রাখবে। তর্জণী খোলা রাখবে শুধু দুআর সময় নড়া চড়া করতে থাকবে যেমন, رب اغفرلي বলার সময় উঠাবে এবং وارحمني বলার সময় উঠাবে। দুই সেজদার মাঝে বসা অবস্থায় এ দুআ পড়বে :
رب اغفرلي وارحمني واجبرني وارفعنبي واهدني وعافني وارزقني.
( আবুদাউদ :২৬২)
তারপর প্রথম সেজদার মতই দ্বিতীয় সেজদা করবে এবং প্রথম সেজদায় যা যা পড়েছে দ্বিতীয় সেজদাতেও তাই পড়বে। তারপর দুই হাঁটুর উপর ভর করে দ্বিতীয় রাকাআতের জন্য দাঁড়াবে। প্রথম রাকাতে যা যা করেছে দ্বিতীয় রাকাআতেও তাই করবে। তবে দ্বিতীয় রাকতে دعاء الاستفتاح পড়তে হবে না। দ্বিতীয় রাকাআত আদায় করা শেষ হলে তাশাহুদ পড়ার জন্য দুই সেজদার মাঝে যেভাবে দুই হাত ও পা রেখেছিল ঠিক একইভাবে হাত পা রেখে বসবে। তার পর তাশাহুদ পড়বে :
التحيات لله والصلوات والطيبات السلام عليك أيها النبي ورحمة الله وبركاته السلام علينا وعلى عباد الله الصالحين أشهد أن لا إله إلا الله وأشهد أن محمدا عبده ورسوله (বুখারী:৭৮৮)
তাশাহুদের অর্থ : যাবতীয ইবাদত ও অর্চনা মৌখিক শারীরিক ও আর্থিক সমস্তই আল্লাহর জন্য হে নবী আপনার উপর আল্লাহর শান্তি রহমত ও বরকত অবর্তীণ হোক আমাদের উপর এবং নেক বান্দাদের উপর শান্তি অবর্তীণ হোক আমি সাক্ষ্য দিচ্ছ যে আল্লাহ ছাড়া ইবাদতের যোগ্য কোন মাবুদ নেই এবং আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর বান্দা ও রাসূল।
আর যদি সালাত তিন রাকাআত অথবা চার রাকাআত বিশিষ্ট হয় তাহলে তাশাহুদ পড়ার পর তাকবীরে এহরামের সময় যেভাবে হাত ইঠায় সে ভাবে হাত উঠিয়ে দাঁড়িয়ে যাবে এবং বাকী সালাত আদায় করবে। তবে দ্বিতীয় ও তৃতীয় রাকাআতে শুধু সুরা ফাতেহা পড়বে।
তারপর তিন রাকাআত অথবা চার রাকাআতের পর শেষ তাশাহুদের জন্য বসবে। এবং তাওয়াররুক করে বসবে। অর্থাৎ ডান পা খাড়া করে রাখবে এবং বাম পা নলার নিচ দিয়ে বের দিবে এবং নিতম্ভদ্বয় জমিনে বিছিয়ে দিবে। অতঃপর শেষ তাশাহুদ পড়বে এবং দুরূদ শরীফ পড়বে :
اللهم صل على محمد وعلى آل محمد كما صليت على إبراهيم وعلى آل إبراهيم إنك حميد مجيد، اللهم بارك على محمد وعلى آل محمد كما باركت على إبراهيم وعلى آل إبراهيم إنك حميد مجيد) رواه البخاري:613(
হে আল্লাহ তুমি মুহাম্মদ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তার বংশধরদের প্রতি রহমত নাযিল কর যেমনটি করেছিলে ইব্রাহীম আলাইহিসসালাম ও তার বংশধরদের প্রতি নিশ্চয় তুমি প্রশংসনীয় ও সম্মানী
এ দুরূদ শরীফকে শেষ তাশাহুদের সাথে যোগ করবে। (বুখরী মুসলিম )
এছাড়াও যে কোন দুরূদ, যা নবী করীম রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হতে বর্ণিত, পড়তে পারবে।
তারপর এ দুআটি পড়বে :
اللهم إني ظلمت نفسي ظلما كثيرا ،ولا يغفر الذنوب إلا أنت فاغفرلي مغفرة من عندك، إنك أنت التواب الرحيم (رواه البخاري:5851)
অর্থ: হে আল্লাহ আমি আমার নিজের উপর অনেক বেশী যুলুম করেছি আর তুমি ছাড়া কেহই আমার গুনাহসমূহ আর কেহই মাফ করতে পারেনা সুতরাং তুমি তোমার নিজ গুনে আমাকে মার্জনা করে দাও এবং আমার প্রতি রহম কর তুমিতো র্মাজনা কারী ও দয়ালু।
এ দুআটিও পড়বে:
اللهم إني أعوذبك من عذاب جهنم ومن عذاب القبر ومن فتنة المحيا والممات ومن شر فتنة المسيح الدجال (رواه مسلم :5890)
অর্থঃ হে আল্লাহ ! আমি তোমার আশ্রয় চাচ্ছি জাহান্নাম থেকে, আশ্রয় চাচ্ছি কবর আযাব থেকে, আশ্রয় চাচ্ছি জীবন ও মৃত্যুর ফিতনা থেতে এবং মাসীহে দাজ্জালের ফিতনা হতে (মুসলিম :৫৮৯০)
এর পর দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যানের জন্য দুআ করবে।
যেমন, হাদীসে বর্ণিত :
ثم يدعوا لنفسه بما بدا له. (رواه مسلم:1293)
তার পর তার কল্যানের জন্য যে কোন দুআ করবে। (মুসলিম:১২৯৩)
সালামের পূর্বে বেশী বেশী করে দুআ করা উচিত। বিশেষ করে পুর্বোক্ত হাদীসে উল্লেখিত চারটি বিষয়ে আল্লাহর নিকট বেশী করে প্রার্থনা করবে। তার পর তার হাদীসে উল্লেখিত অন্যান্য দুআ করতে পারে। অতঃপর السلام عليكم বলে ডানে ও বামে সালাম ফিরাবে।
উল্লেখিত র্কাযাবলী সুন্নাতানুসারে সম্পাদনের পর গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল অন্তরকে হাজির রাখা। এবং শয়তানের প্রবঞ্চণা, যা দ্বারা ছাওয়াব বিনষ্ট হয়, তা হতে অন্তরকে মুক্ত রাখা। কারণ, শয়তানের সাথে তার যুদ্ধ ততক্ষণ পর্যন্ত শেষ হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত তার মৃত্যু হবে না। আল্লাহর নিকট আমরা আমাদের সুন্দর পরিণতি কামনা করি।
সালাতের রুকুন সমূহ
সালাতে অনেকগুলো রুকুন আছে যেগুলো আদায় করা ছাড়া সালাত শুদ্ধ হয় না।
1. সক্ষম ব্যক্তির জন্য ফরয সালাত দাঁড়িয়ে আদায় করা:
অর্থাৎ-ফরয সালাত দাঁড়ানোর ক্ষমতা থাকা অবস্থায় দাঁড়ানোর স্থানে দাঁড়িয়ে আদায় করা ফরয।
প্রমাণ, আল্লাহ বলেন :
وَقُومُوا لِلَّهِ قَانِتِينَ. (سورة البقرة : 238)
তোমরা আল্লাহর উদ্দেশ্যে বিনয়ের সাথে দাঁড়িয়ে থাক।
2. তাকবীরে ইহরাম:
সালাতের প্রারম্ভে আল্লাহু আকবার বলবে। প্রমাণ : রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বাণী:
تحريمها التكبير وتحليلها التسليم ) .رواه الترمذي :306(
রাসূল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, সালাতের শুরু হল তাকবীর আর শেষ হল সালাম। (তিরমিযি:৩০৬)
3. সুরা ফাতেহা পড়া:
ইমাম ও মুক্তাদি সকলের জন্য প্রতি রাকাআতে সুরা ফাতিহা পড়া ওয়াজিব।
প্রমাণ : রাসূল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন :
لا صلوة لمن لا يقرأ بفاتحة الكتاب.) رواه البخاري :714
যে ব্যক্তি সুরা ফাতেহা পড়েনা তার সালাত হয় না। (বুখারী:৭১৪)
4. রুকু করা।
5. রুকু হতে উঠা।
6. প্রতি রাকাআতে দুইবার সেজদা করা।
7. দুই সেজদার মাঝে বসা।
প্রমাণ্তআল্লাহর বাণী :
প্রমাণ্তআল্লাহর বাণী :
يا أيها الذين آمنوا اركعوا واسجدوا) سورة الحج:77
হে ঈমানদারগণ ! তোমরা রুকু কর এবং সেজদা কর। (সুরা হজ : ৭৭)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন :
ثم اركع حتى تطمئن راكعا ثم ارفع رأسك حتى تعتدل قائما ثم اسجد حتى تطمئن ساجدا ثم ارفع حتى تستوي جالسا ثم اسجد حتى تطمئن ساجداً. رواه البخاري:715
তারপর ভালভাবে রুকু কর। অত:পর রুকু হতে মাথা উঠাও এবং সম্পূর্ণ সোজা হয়ে দাঁড়াও তারপর ভালভাবে সেজদা কর। অত:পর সেজদা হতে মাথা উঠাও এবং ভালভাবে বস। তারপর পুণরায় ভালভাবে সেজদা কর। (বুখারী:৭১৫)
মনে রাখতে হবে, সেজদা অবশ্যই সাতটি অঙ্গের উপর করতে হব্তেকপাল-নাক, দুই ক্ববজি, দুই হাঁটু এবং দুই পায়ের তালু।
8. শেষ তাশাহুদ
9. শেষ বৈঠক
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন :
فإذا صلى أحدكم فليقل – أي أثناء جلوسه للتشهد الأخير:
যখন সে সালাত পড়বে শেষ বৈঠকে বলবে:
التحيات لله والصلوات والطيبات السلام عليك أيها النبي ورحمة الله وبركاته السلام علينا وعلى عباد الله الصالحين أشهد أن لا إله إلا الله وأشهد أن محمدا عبده ورسوله. رواه البخاري:788
10. সালাম
অর্থাৎ ডান দিকে বলবে السلام عليكم ورحمة الله এবং বাম দিকে বলবে السلام عليكم ورحمة الله প্রমাণ, রাসূল সা বলেন :
অর্থাৎ ডান দিকে বলবে السلام عليكم ورحمة الله এবং বাম দিকে বলবে السلام عليكم ورحمة الله প্রমাণ, রাসূল সা বলেন :
تحريمها التكبير وتحليلها التسليم . الترمذي : 306
সালাতের শুরূ হল তাকবীর আর শেষ হল সালাম। (তিরমিযি:৩০৬)
11. সালাতে সকল রুকুনকে ধীরস্থিরভাবে আদায় করা।
12. সমস্ত রুকনগুলি ধারাবাহিকভাবে আদায় করা।
প্রমাণ :
প্রমাণ :
حديث أبي هريرة أن رجلا دخل المسحد يصلي ورسو ل الله في ناحية المسجد فجاء فسلم عليه فقال له النبي صلي الله عليه وسلم ارجع فصل فإنك لم تصل قال في الثالثة فأعلمني: قال إذا قمت إلى الصلاة فأسبغ الوضوء ثم استقبل القبلة فكبر واقرأ بما تيسر معك من القرآن ثم اركع حتى تطمئن راكعاً ثم ارفع رأسك حتى تعتدل قائماً ثم اسجد حتى تطمئن ساجداً ثم ارفع حتى تستوي جالساً ثم اسجد حتى تطمئن ساجدا ثم افعل ذلك في صلاتك كلها ) رواه البخاري:715(
আবু হুরাইরা রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক লোক মসজিদে সালাত পড়তে প্রবেশ করল, তখন রাসূল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মসজিদের এক কোণে বসে ছিলেন, তারপর লোকটি এসে রাসূল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে সালাম দিলে রাসূল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন তুমি যাও আবার সালাত আদায় কর। কেননা, তোমার সালাত হয়নি। সে আবার সালাত আদায় করল এবং সালাম ফিরালো, তারপর আবারো রাসূল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে বললেন, তুমি আবার সালাত সালাত আদায় কর কারণ, তোমার সালাত হয়নি। তিন বারের সময় লোকটি বলল, আমাকে আপনি সালাত শিখিয়ে দিন। তখন রাসূল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, যখন সালাত পড়তে ইচ্ছা পোষণ কর, তখন প্রথমে ভালভাবে ওযু কর এবং ক্বিবলার দিকে মুখ কর, কোরানের যেখান থেকে সহজ হয় তিলাওয়াত কর, তারপর তুমি পরিপূর্ণ রুকু কর, রুকু হতে সোজা হয়ে দাঁড়াও, তার পর সেজদা কর, সেজদা হতে উঠে সম্পুর্ণ সোজা হয়ে বস, তারপর পরিপূর্ণভাবে সেজদা শেষ করে মাথা উঠাও এবং সোজা হয়ে দাঁড়াও, এভাবে তুমি তোমার সালাত সম্পন্ন কর।(বুখারী:৭১৫)
সালাতের ওয়াজিবসমূহ:
সালাতের ওয়াজিব নয়টি।
1. তাকবীরে এহরাম ছাড়া অন্যান্য তাকবীর বলা।
2. রুকুতে سبحان ربي العظيم বলা।
3. ইমাম ও মুনফারেদ (একা সালাত আদায়কারী) এর জন্য রুকু হতে উঠার সময় سمع الله لمن حمده বলা।
4. ইমাম মুক্তাদি ও একা সালাত আদায়কারীর জন্য ربنا ولك الحمد বলা।
5. সেজদায় سبحان ربي الأعلي বলা।
6. দুই সেজদার মাঝে رب اغفرلي বলা।
7. প্রথম বৈঠক।
8. প্রথম বৈঠকে তাশাহুদ পড়া।
9. শেষ বৈঠকে দুরুদ শরীফ পড়া।
রুকন ও ওয়াজিবের মধ্যে প্রার্থক্য
রুকন আদায় না করলে সালাত হয় না। যদি কোন মুসাল্লি ইচ্ছা করে কোন রুকন ছাড়ে তবে তার সালাত বাতিল হয়ে যায়, আর অনিচ্ছায় ছাড়লে তা স্মরণ করার পর আদায় করতে হবে এবং সালাতের বাকী কার্যাদি সম্পন্ন করে সেজদা সাহু করবে। আর যদি মুসল্লি ইচ্ছা করে ওয়াজিব ছেড়ে দেয়, তার সালাত বাতিল হয়ে যাবে। আর যদি ভুলে ছেড়ে দেয় সেজদা সাহুর মাধ্যমে ক্ষতি পুরণ দিবে।
সালাতের সুন্নতসমূহ
সালাতের ওয়াজিব ও আরকান ছাড়া বাকী অন্যান্য র্কাযাবলী সুন্নাতের অর্ন্তভুক্ত।
সুন্নাত দুই প্রকার :
এক: কথ্য সুন্নত
যেমন, সালাত শুরুর দুআ বা সানা পড়া, আমীন বলা। সকল সালাতে প্রথম দুই রাকাআতে সুরা ফাতেহার পর কুরআনের যে কোন স্থান হতে তিলাওয়াত করা, সালাতে দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ কামনা করা, বিশেষ করে সেজদায় বেশী বেশী করে দুআ করা এবং শেষ বৈঠকে বেশী বেশী করে প্রার্থনা করা। মাগরিব, এশার প্রথম দুই রাকাআত ফরযে আর জুমুআ ও ঈদের সালাতে ইমামের জন্য ক্বিরাত উচ্চস্বরে পড়া আর মুক্তাদির জন্য সব সময় ক্বিরাত নিম্নস্বরে পড়া।
দুই: অঙ্গ প্রত্যঙ্গের কার্যাদি
১-তাকবীরে তাহরীমার সময় দুই হাত কাঁধ বরাবর উঠানো। এছাড়া রুকুতে যাওয়া, রুকু হতে উঠা এবং প্রথম তাশাহুদের পর তৃতীয় রাকাআতের জন্য উঠার সময় দুহাত উঠানো।
২-দাঁড়ানো অবস্থায় ডান হাতকে বাম হাতের পিঠের উপর মিলিয়ে রাখা।
৩-সেজদার জায়গায় দৃষ্টি রাখা।
৪-রুকুতে দুই কব্জিকে দুই হাঁটুর উপর রাখা।
৫-সেজদার সময় প্রথমে দুই হাঁটু, তারপর দুই হাত, তারপর চেহারা মাটিতে রাখা।
৬-দুই সেজদার মাঝে প্রথম তাশাহুদ ও শেষ তাশাহুদে বসা অবস্থায় দুই হাতকে দুই উরুর উপর রাখা।
৭-বৃদ্ধা আঙ্গুল ও মধ্যমা দ্বারা বৃত্ত বানানো এবং তাশাহুদে দুআর সময় আঙ্গুল দ্বারা ইশারা করা।
৮-প্রথম সালামে ডান দিক আর দ্বিতীয় সালামে বাম দিক মাথা ঘুরানো।
৯- প্রথম রাকাআত ও তৃতীয় রাকাআত শেষ করার পর বিশ্রাম নেয়ার জন্য বসা।
আযান-ইকামতের প্রচলন ও বিধান
আযানের উদ্দেশ্য হল, সালাতের সময় সম্পর্কে মানুষদের অবহিত করা। ইকামতের উদ্দেশ্য হল, উপস্থিত লোকদের সালাত আরম্ভ হওয়া সম্পর্কে অবহিত করা। আযানও ইকামত বিশেষভাবে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ও জুমার সালাতেই হয়ে থাকে। এছাড়া অন্যান্য সালাত দুই ঈদের সালাত, ইস্তেসকার সালাত, কুছফের সালাত এবং তারাবীর সালাতে আযান ও ইকামত হয় না।
আযান ইকামতের বিধান হল মুকীম বা স্থানীয় পুরুষের ক্ষেত্রে ফরযে কেফায়া, তবে মহিলাদের ক্ষেত্রে নয়।
যদি উপযুক্ত কোন ব্যক্তি আযান ইকামত দেয় তবে অন্যরা দায়িত্বমুক্ত হবে।
আযানের বাক্য :
আযানের বাক্য ১৫টি: তাহল চার বার الله أكبر দুই বার أشهد أن لا إله إلا الله দুই বার أشهد أن محمدا رسول الله দুই বার حي على الصلاة দুই বার حي على الفلاح দুইবার ألله أكبر এবং একবার لا إله إلا الله বলা। ফযরের সালাতের আযানে حي على الفلاح বলার পর الصلاة خير من النوم বৃদ্ধি করে বলবে।
ইকামতের বাক্য :
ইকামতের বাক্য ১১টি
الله أكبر দুই বার أشهد أن لا إله إلا الله এক বার أشهد أن محمدا رسول الله এক বার حي على الصلاة এক বার حي على الفلاح এক বার قد قامت الصلوة দুই বার الله أكبر দুই বার لا إله إلا الله একবার।
আযান ও ইকামত শুনার সময় মুয়াজ্জেনের সাথে সাথে আযান ও ইকামতের বাক্যাবলী বলা সুন্নাত। তবে حي على الصلاة এবং حي على الفلاح বলার সময় لاحول لا قوة إلا بالله বলা সুন্নাত। তারপর নবী করিম রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উপর দুরুদ পড়বে এবং আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করবে।
اللهم رب هذه الدعوة التامة والصلاة القائمة آت محمدا الوسيلة والفضيلة وابعثه مقاما محموداً الذي وعدته.
সুন্নত সালাত
রাতদিনে মোট দশ রাকাআত সালাতের পাবন্দী করা সুন্নাত। রাসূল নিজেও এসব সালাতের বিশেষ পাবন্দী করতেন।
অর্থাৎ যোহরের সালাতের পূর্বে দুই রাকাআত এবং পরে দুই রাকাআত মাগরিবের সালাতের পরে দুই রাকাআত এবং ফযরের সালাতের পূর্বে দুই রাকাআত। প্রমাণ :
عن ابن عمر رضي الله عنه أنه قال حفظت من النبي صلي الله عليه وسلم عشر ركعات ركعتين قبل الظهر وركعتين بعدها وركعتين بعد المغرب في بيته وركعتين بعد العشاء في بيته و ركعتين قبل صلاة الصبحٍ )رواه مسلم:(1109
ইবনে উমার রা.-এর হাদীস তিনি বলেন : আমি রাসূল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হতে দশ রাকাআত সালাত সংরক্ষণ কর্তিযোহরের পূর্বে দুই রাকাআত এবং পরে দুই রাকাআত। মাগরিবের সালাতের পর দুই রাকাআত এশার সালাতের পর নিজ গৃহে দুই রাকাআত। আর ফযরের সালাতের পূর্বে দুই রাকাআত। (মুসলিম:১১০৯)
যোহরের সালাতের পূর্বে চার রাকাআত এবং পরে দুই রাকাআতের কথাও হাদীস দ্বারা প্রমাণিত।
তখন দিবারাত্রে মোট সালাত হবে বার রাকাআত। রাসূল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
ما من عبد مسلم يصلي لله كل يوم ثنتي عشرة ركعة تطوعاً غير فريضة إلا بنى الله له بيتاً في الجنة (رواه مسلم:(1119
কোন মুসলমান যদি ফরয সালাত ছাড়া প্রতিদিন বার রাকাআত সালাত আদায় করে আল্লাহ তাআলা তার জন্য বেহেস্তের মধ্যে একটি ঘর তৈরী করেন।(মুসলিম:১১১৯)
অনুরূপভাবে যোহরের পরে ও চার রাকাআত পড়া হাদীস দ্বারা প্রমাণিত।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন :
من حافظ علي أربع ركعات فبل الظهر وأربع بعدها حرمه الله علي النار(رواه الترمذي:(393
যে ব্যক্তি যোহরের পূর্বে চার রাকাআত এবং তার পরে চার রাকাআত সালাত আদায় করে আল্লাহ তার জন্য জাহান্নাম হারাম করে দেয়। (তিরমিযী:৩৯৩)
ফযরের দুই রাকাআত সুন্নাত সালাত রাসূল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সফরে এবং বাড়ীতে কখনোই ছাড়তেন না।
সালাত আদায়ের মাকরূহ সময়
বিশেষ কয়েকটি সময়ে সালাত পড়া মাকরূহ আর তা হল নিম্ন রূপ :
1. ফযরের নামাযের পর সূর্যোদয় পর্যন্ত। তবে যে ব্যক্তি ফযরের দুই রাকাআত পড়তে পারেনি, সে অবশ্যই দুই রাকাআত ফযরের সুন্নাত পরে পড়ে নিবে।
2. সূর্যোদয়ের সময় হইতে সূর্য এক ধনুক পরিমান উঁচু হওয়া পর্যন্ত।
3. সূর্য আকাশের মধ্যভাগে অবস্থানকাল থেকে পশ্চিম আকাশের দিকে ঢলে পড়া পর্যন্ত। (অর্থাৎ যোহরের সালাতের সামান্য পূর্বে)
4. আছরের সালাতের পর সূর্যাস্ত র্পযন্ত।
5. সূর্যাস্তের মুহূর্তে।
সালাতের দুআ সমূহ
সালাতের সালাম ফিরানোর পর সুন্নত হল তিন বার أستغفرالله বলবে। তারপর নিম্ন দুআগুলি পড়বে।
اللهم أنت السلام ومنك السلام تباركت يا ذا الجلال والإكرام.
হে আল্লাহ তুমি শান্তিময় আর তোমার নিকট হতেই শান্তির আগমন । তুমি কল্যানময় হে মহা মার্যাদাবান!
لاإله إلا الله وحده لاشريك له له الملك و له الحمد وهو علي كل شيء قديراللهم لا مانع لما أعطيت ولامعطي لما منعت ولا ينفع ذا الجد منك الجد.
আল্লাহ ছাড়া সত্যিকার কোন মাবুদ নেই, তিনি একক, তার কোন শরীক নেই । রাজত্ব ও র্কতৃত্ব এক মাত্র আল্লাহরই আর সকল প্রশংসা এক মাত্র আল্লাহরই, তিনি সকল কিছুর উপর ক্ষমতাবান। হে আল্লাহ তুমি যা প্রদান কর তা বাধা দেয়ার আর কেউ নেই আর তুমি যা দিবেনা তা প্রদান করার মত আর কেউ নেই তোমার আযাব হতে কোন বিত্তশীল পদর্মযাদার অধিকারীকে তার ধন সম্পদ বা পদর্মযাদা রক্ষা করতে পারেনা।
لا إله إلا الله وحده لاشريك له له الملك و له الحمد وهو علي كل شيء قدير لاحول ولا قوة إلا با لله لا إله إلا الله ولا نعبد إلا إياه له النعمة وله الفضل و له الثناء الحسن لا إله إلا الله مخلصين له الدين و لو كره الكافرون.
আল্লাহ ছাড়া সত্যিকার কোন মাবুদ নেই, তিনি একক, তার কোন শরীক নেই । রাজত্ব ও র্কতৃত্ব এক মাত্র আল্লাহরই আর সকল প্রশংসা এক মাত্র আল্লাহরই, তিনি সকল কিছুর উপর ক্ষমতাবান। কোন পাপকাজ, রোগ-শোক, বিপদ-আপদ হতে মুক্তি পাওয়ার কোন উপায় এবং সৎ কাজ করার কোন ক্ষমতা নেই আল্লাহর তাওফীক ছাড়া কারোই নেই। আল্লাহ ছাড়া ইবাদত যোগ্য কোন মাবুদ নেই, আমরা তারই ইবাদত করি। সকল নেয়ামত তার, সকল অনুগ্রহ এবং সকল উত্তম প্রশংসা তার। তিনি ছাড়া আর কোন সত্যিকার ইলাহ নেই। আমরা তার দেয়া জীবন বিধান এক মাত্র তার জন্যই একনিষ্টভাবে মান্য করি। যদিও কাফেরদের নিকট ইহা অপ্রীতিকর।
اللهم أعني على ذكرك شكرك و حسن عبادتك.
হে আল্লাহ! তোমার যিকির, তোমার শুকরীয়া এবং তোমার ইবাদত বন্দেগী সুন্দর ও সঠিকভাবে আদায় করতে আপনি আমাকে তাওফীক দান করুন।
اللهم إني أعوذبك من الجبن وأعوذبك أن أرد إلي أرذل العمر و أعوذبك من فتنة الدنيا وأعوذبك من عذاب القبر.
হে আল্লাহ! আমি আশ্রয় র্প্রাথনা করছি কাপুরুশষতা হতে আর আশ্রয় র্প্রাথনা করছি বার্ধক্যের চরম দুঃখ কষ্ট হতে আরো র্প্রাথনা করছি দুনিয়ার ফিৎণা-ফাসাদ এবং কবরের আযাব হতে।
اللهم إني أعوذبك من الكفر والفقر وعذاب القبر.
হে আল্লাহ! আমি আশ্রয় চাচ্ছি কুফর হতে এবং কবরের আযাব হতে।
তার পর سبحان الله ৩৩ বার, الحمد لله ৩৩ বার এবং আল্লাহু আকবর الله أكبر ৩৪ বার।
সুরা নাছ, ফালাক, এখলাছ প্রত্যেক সালাতের পর একবার করে আর মাগরিব ও এশার সালাতের পর তিন বার করে। এছাড়া প্রত্যেক সালাতের পর আয়াতুল কুরছি পড়া সুন্নাত।
সমাপ্ত
মূল: গবেষণা পরিষদ, আল-মুনতাদা আল-ইসলামী
تأليف: اللجنة العلمية بالمنتدى الإسلامي
অনুবাদ: জাকেরুল্লাহ আবুল খায়ের
ترجمة: ذاكر الله أبو الخير
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ শহীদ আব্দুর রহমান
مراجعة: عبد الله شهيد عبد الرحمن
সূত্র: ইসলাম প্রচার ব্যুরো, রাবওয়াহ, রিয়াদ, সৌদিআরব
المكتب التعاوني للدعوة وتوعية الجاليات بالربوة بمدينة الرياض
تأليف: اللجنة العلمية بالمنتدى الإسلامي
অনুবাদ: জাকেরুল্লাহ আবুল খায়ের
ترجمة: ذاكر الله أبو الخير
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ শহীদ আব্দুর রহমান
مراجعة: عبد الله شهيد عبد الرحمن
সূত্র: ইসলাম প্রচার ব্যুরো, রাবওয়াহ, রিয়াদ, সৌদিআরব
المكتب التعاوني للدعوة وتوعية الجاليات بالربوة بمدينة الرياض
আরও পড়ুনঃ ছালাতুর রাসূল (ছাঃ) - ১ম পর্ব
আরও পড়ুনঃ ছালাতুর রাসূল (ছাঃ) - ২য় পর্ব
আরও পড়ুনঃ সালাত আদায়ের পদ্ধতি
আরও পড়ুনঃ ছহীহ্ সুন্নাহ্র আলোকে বিতর নামায
আরও পড়ুনঃ কুরআন ও সুন্নাহ্র আলোকে রাতের সালাত
আরও পড়ুনঃ জামা‘আতের সাথে নামায আদায়
আরও পড়ুনঃ সালাত পরবর্তী দুয়া ও জিকির সমূহ
আরও পড়ুনঃ সালাতে বিনয়ী হওয়ার তেত্রিশ উপায় (১ম পর্ব)
আরও পড়ুনঃ সালাতে একাগ্রতা ও খুশু
আরও পড়ুনঃ সালাত বর্জনকারীর বিধান
ডাউনলোড করুনঃ বইঃ ছালাতুর রাসূল (ছাঃ) - ফ্রি ডাউনলোড
ডাউনলোড করুনঃ বইঃ সালাতুত তারাবীহ - ফ্রি ডাউনলোড
ডাউনলোড করুনঃ বইঃ তারাবীহ ও ই’তিকাফ - ফ্রি ডাউনলোড
“সালাত” বিষয়ের উপর আরো পড়তে এইখানে ক্লিক করুন।
পোস্টটি ভালো লাগলে শেয়ার করতে ভুলবেন না কিন্তু।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন