মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল, ২০১৩

ইসলামে বন্ধুত্ব ও শত্রুতা

ইসলামে বন্ধুত্ব ও শত্রুতা



অনুবাদকের কথা
আল্লাহর বন্ধুদের সাথে বন্ধুত্ব এবং আল্লাহর দুশমনদের সাথে শত্রুতা থাকা একজন মুমিনের ঈমানের পরিচয় এবং এটি ঈমানের একটি গুরুত্বপূর্ণ রোকন। কিন্তু বিষয়টি সম্পর্কে মুসলিম উম্মাহর উদাসীনতা এতই প্রকট যে, বর্তমানে তারা অমুসলিমদের সাথে এমনভাবে সম্পর্ক রাখছে, তারা তাদের আসল ঐতিহ্য, শিক্ষা সংস্কৃতিকে ভুলে বিজাতিদের সাথে একাকার হয়ে যাচ্ছে। মুসলিম জাতিকে তাদের করুণ পরিণতি হতে বাঁচানো ও তাদের সজাগ করে তোলার জন্য শাইখ সালেহ ইবন ফাউযান আল-ফাউযান এর রিসালা-ইসলামে শত্রুতা ও বন্ধুত্ব টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
বাংলা ভাষা-ভাষি মুসলিমদের জন্য রিসালাটি অনুবাদ করা ও তাদেরকে বিষয়টি সম্পর্কে জানানোর তীব্রতার প্রতি লক্ষ্য করে তা অনুবাদ করে ইসলাম হাউসের বাংলা ভাষার পাঠকদের পাঠকদের জন্য পেশ করি। আশা করি আল্লাহ তাআলা এর দ্বারা পাঠকদের দ্বীনের সহীহ বুঝ দান করবেন।
রিসালাটি খুব সংক্ষিপ্ত ও আরবীতে হওয়ায়, পাঠকদের নিকট বিষয় বস্তুটি অধিক স্পষ্ট করা জন্য রিসালাটির অনুবাদের সাথে সাথে বিভিন্ন স্থানে ব্যাখা বিশ্লেষণ সংযোজন করা হয়েছে, যাতে পাঠক বিষয়টি ভালোভাবে অনুধাবন করতে ও বুঝতে পারে।
রিসালাটির অনুবাদ কর্ম ও ব্যাখা বিশ্লেষণ সংযোজন করতে গিয়ে ভুল হওয়া স্বাভাবিক। কোন বিজ্ঞ পাঠকের নিকট কোন ভুল-ত্রুটি ধরা পড়ার পর সংশোধন করে দিলে, কৃতজ্ঞ থাকব।
অনুবাদক

সোমবার, ২৯ এপ্রিল, ২০১৩

ইসলামে শ্রমিকের অধিকার

ইসলামে শ্রমিকের অধিকার



গত শতাব্দীতে আমেরিকার শিকাগো শহরে অধিকার আদায়ের একটি মিছিলে গুলি করে হত্যা করা হয় কয়েকজন নিরীহ শ্রমিককে। পরবর্তীতে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে দিনটিকে শ্রমিক দিবস হিসেবে পালন করা হয়। বর্তমানে বিশ্ব যখন একটি ছোট্ট গ্রামে (গ্লোবাল ভিলেজ) পরিণত হয়েছে। একটির সঙ্গে আরেকটি দেশের সীমান্ত লাগানো। এক দেশের সঙ্গে আরেক দেশের স্বার্থ জড়িত। তখন শ্রম দিবস পালিত হচ্ছে বিশ্বজুড়ে। ইংরেজি বর্ষের পঞ্চম মাস মের প্রথম দিনটি পালিত হয় আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস হিসেবে। এমতাবস্থায় আমাদের কর্তব্য আন্তর্জাতিক সম্মান, শ্রমিক ও মানবাধিকার প্রভৃতি দিবস উপলক্ষ্যে ইসলামে শ্রমিকের অধিকার কীভাবে নিশ্চিত করা হয়েছে তা সবার সামনে উপস্থাপন করা। কারণ ইসলামই সেই ধর্ম প্রথম যে মানবাধিকারের বিধান প্রবর্তন করেছে। যেমন ইসলামের সংবিধান পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে,
﴿ ۞وَلَقَدۡ كَرَّمۡنَا بَنِيٓ ءَادَمَ وَحَمَلۡنَٰهُمۡ فِي ٱلۡبَرِّ وَٱلۡبَحۡرِ وَرَزَقۡنَٰهُم مِّنَ ٱلطَّيِّبَٰتِ وَفَضَّلۡنَٰهُمۡ عَلَىٰ كَثِيرٖ مِّمَّنۡ خَلَقۡنَا تَفۡضِيلٗا ٧٠ ﴾ [الإسراء: ٧٠]
আর আমি তো আদম সন্তানদের সম্মানিত করেছি এবং আমি তাদেরকে স্থলে ও সমুদ্রে বাহন দিয়েছি এবং তাদেরকে দিয়েছি উত্তম রিজিক। আর আমি যা সৃষ্টি করেছি তাদের থেকে অনেকের উপর আমি তাদেরকে অনেক মর্যাদা দিয়েছি।’ {সূরা বানী ইসরাঈল, আয়াত : ৭০}
সত্যি কথা বলতে কী, শ্রম ইতিহাসে ইসলামই প্রথম শ্রমিকের প্রতি যথার্থ দৃষ্টি দিয়েছে। তাকে দিয়েছে সম্মান ও মর্যাদা আর শ্রমের স্বীকৃতি। পক্ষান্তরে  কোনো কোনো সনাতন ধর্মে শ্রমের অর্থ ছিল দাসত্ব ও বশ্যতা। আবার কোনো ধর্মে এর অর্থ ছিল লাঞ্ছনা ও অবমাননা।
ইসলাম সমাজের আর দশজন সদস্যের মতো নাগরিক হিসেবে তাদের প্রাকৃতিক অধিকারগুলোর স্বীকৃতি দিয়েছে। তেমনি শ্রমিক হিসেবে তাদের অধিকার নিশ্চিত করতে অনেক মূলনীতি ও বিধিও প্রবর্তন করেছে। যাতে সামাজিক সাম্য প্রতিষ্ঠা হয়। তাদের ইহ ও পরকালীন জীবনে তাদের ও তাদের পরিবারের সম্মানিত জীবন লাভ হয়।
একইভাবে ইসলাম শ্রমগ্রহীতার প্রতি আহ্বান জানিয়েছে শ্রমিকের সঙ্গে মানবিক ও সম্মানজনক আচরণ করতে। তার প্রতি মমতা দেখাতে। তার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করতে। তাকে বারণ করেছে তার সাধ্যাতীত কাজের নির্দেশ প্রদান থেকে। এমনবিধ নানা অধিকার সুযোগ নিশ্চিত করেছে ইসলাম শ্রমিকের জন্য। সংক্ষেপে সেগুলো নিচের উপশিরোনামসমূহে তুলে ধরা হলো

আন্‌-নওয়াবীর চল্লিশ হাদীস

আন্‌-নওয়াবীর চল্লিশ হাদীস



আন্‌-নওয়াবীর চল্লিশ হাদীস

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম


الحديث الأول
"إنما الأعمال بالنيات"

عَنْ أَمِيرِ الْمُؤْمِنِينَ أَبِي حَفْصٍ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم يَقُولُ:
إنَّمَا الْأَعْمَالُ بِالنِّيَّاتِ، وَإِنَّمَا لِكُلِّ امْرِئٍ مَا نَوَى، فَمَنْ كَانَتْ هِجْرَتُهُ إلَى اللَّهِ وَرَسُولِهِ فَهِجْرَتُهُ إلَى اللَّهِ وَرَسُولِهِ، وَمَنْ كَانَتْ هِجْرَتُهُ لِدُنْيَا يُصِيبُهَا أَوْ امْرَأَةٍ يَنْكِحُهَا فَهِجْرَتُهُ إلَى مَا هَاجَرَ إلَيْهِ" .
رَوَاهُ إِمَامَا الْمُحَدِّثِينَ أَبُو عَبْدِ اللهِ مُحَمَّدُ بنُ إِسْمَاعِيل بن إِبْرَاهِيم بن الْمُغِيرَة بن بَرْدِزبَه الْبُخَارِيُّ الْجُعْفِيُّ [رقم:1 ]، وَأَبُو الْحُسَيْنِ مُسْلِمٌ بنُ الْحَجَّاج بن مُسْلِم الْقُشَيْرِيُّ النَّيْسَابُورِيُّ [رقم: 1907  ] رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا فِي "صَحِيحَيْهِمَا" اللذِينِ هُمَا أَصَحُّ الْكُتُبِ الْمُصَنَّفَةِ.

হাদীস - ১

আমীরুল মুমিনীন আবু হাফস্ উমার ইবন আল-খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত হয়েছেতিনি বলেছেন—
আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি—
“সমস্ত কাজের ফলাফল নির্ভর করে নিয়্যতের উপরআর প্রত্যেক ব্যক্তি যা নিয়্যত করেছেতাই পাবে। সুতরাং যে ব্যক্তি আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের জন্য হিজরত করেছেতার হিজরত আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের দিকে হয়েছেআর যার হিজরত দুনিয়া (পার্থিব বস্তু) আহরণ করার জন্য অথবা মহিলাকে বিয়ে করার জন্য তার হিজরত সে জন্য বিবেচিত হবে যে জন্য সে হিজরত করেছে।”

[সহীহ্ আল-বুখারী: ১সহীহ্ মুসলিম: ১৯০৭। মুহাদ্দিসগণের দুই ইমাম আবু আব্দুল্লাহ্ মুহাম্মাদ ইবন ইসমাঈল ইবন ইব্রাহীম ইবন মুগীরা ইবন বারদেযবাহ্ আল-বুখারী এবং আবুল হাসান মুসলিম ইবন হাজ্জাজ ইবন মুসলিম আল-কুশায়রী আন্-নিশাপুরী আপন আপন সহীহ্ গ্রন্থে উল্লেখিত হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। যা সবচেয়ে সহীহ্ গ্রন্থদ্বয় বলে বিবেচিত হয়।]
الحديث الثاني
"مجيء جبريل ليعلم المسلمين أمر دينهم"

আত্মীয়তা-সম্পর্ক রক্ষা করা

আত্মীয়তা-সম্পর্ক রক্ষা করা



আত্মীয়তা-সম্পর্ক ও এর মাহাত্ম্য
এটি এমন এক বিষয় যার দ্বারা আল্লাহ তা‘আলা মানুষের রিজিক বাড়িয়ে দেন, হায়াত দীর্ঘ করেন, এবং মানুষের ধন-সম্পদে বরকত দেন। এটি হলো আত্মীয়তা-সম্পর্ক। আত্মীয়তা-সম্পর্ক বলতে বুঝানো হয়, পিতা-মাতা, ভাই-বোন, ছেলে-মেয়ে এবং এসবের উর্ধ্বতন ও নিম্নতন আত্মীয়।
আত্মীয়তা-সম্পর্ক রক্ষা করা যে জরুরী, আত্মীয়তা-সম্পর্ক ছিন্ন করা যে হারাম আর আত্মীয়দের ভালো-মন্দের খোঁজ-খবর রাখা, বিপদাপদে তাদের পাশে দাঁড়ানো এবং তাদের সার্বিক কল্যাণ কামনা করার ফযীলত সম্পর্কে কুরআনে কারিমে এবং হাদীসে অনেক বাণী উল্লিখিত হয়েছে। আল্লাহ যে সম্পর্ক অটুট রাখার নির্দেশ দিয়েছেন, যারা তা অটুট রাখে তাদের প্রশংসায় তিনি ইরশাদ করেন,

﴿وَالَّذِينَ يَصِلُونَ مَا أَمَرَ اللَّهُ بِهِ أَنْ يُوصَلَ وَيَخْشَوْنَ رَبَّهُمْ وَيَخَافُونَ سُوءَ الْحِسَابِ (21) ﴾

‘আর আল্লাহ যে সম্পর্ক অটুট রাখার নির্দেশ দিয়েছেন, যারা তা অটুট রাখে এবং তাদের রবকে ভয় করে, আর মন্দ হিসাবের আশঙ্কা করে।’[সূরা আর-রা‘দ : ২১]

শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০১৩

আক্বীদাহ সংক্রান্ত কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ মাসআলাহ

আক্বীদাহ সংক্রান্ত কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ মাসআলাহ 



১. প্রশ্ন: মহান আল্লাহ কোথায় অবস্থান করেন?

উত্তর: মহান আল্লাহ আরশে আযীমের উপর অবস্থান করেন। আল্লাহর কথাই এর দলীল। আল্লাহ তায়ালা বলেন:
﴿الرَّحْمَنُ عَلَى الْعَرْشِ اسْتَوَى﴾
অর্থ: ‘(তিনি আল্লাহ বলেন) পরম দয়াময় আরশের উপর সমুন্নীত রয়েছেন। [সূরা ত্বা-হা:৫] 
মহান আল্লাহ আসমানের উপর বা আরশে আযীমের উপর সমুন্নত আছেন, এই অর্থে কুরআন মাজীদের ৭টি আয়াত রয়েছে। অতএব যারা দাবী করেন যে, মহান আল্লাহ সর্ব জায়গায় বিরাজমান, অথবা তিনি মুমিন বান্দার ক্বলবের ভিতর অব্স্থান করেন, আর মু‘মিন বান্দার ক্বলব বা অন্তর হলো আল্লাহর আরশ বা ঘর। তাদের এ সমস্ত দাবী সবই মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।

২. প্রশ্ন: মহান আল্লাহর চেহারা অর্থাৎ মূখমন্ডল আছে কি? থাকলে তার দলীল কী?

উত্তর: হাঁ, মহান আল্লাহর চেহারা অর্থাৎ মূখন্ডল আছে। আল্লাহর কথাই এর দলীল ।
﴿كُلُّ مَنْ عَلَيْهَا فَانٍ ـ وَيَبْقَى وَجْهُ رَبِّكَ ذُو الْجَلَالِ وَالْإِكْرَامِ﴾
অর্থ: ‘[কিয়ামতের দিন] ভূপৃষ্ঠের সবকিছুই ধ্বংস হয়ে যাবে। তবে (হে রাসূল! সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আপনার মহিমাময় ও মহানুভব পালন কর্তার চেহারা মুবারক অর্থাৎ আল্লাহর সত্তাই একমাত্র বাকী থাকবে। (আর-রাহমান: ৩৬-৩৭)

বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০১৩

বিদ‘আতের দশটি কুফল

বিদ‘আতের দশটি কুফল

শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু



বিদ‘আতের দশটি কুফল

এমন অনেকের সাক্ষাত পাবেন যারা ইসলামী চেতনায় সমৃদ্ধ। কিন্তু বলেন,  বিদ‘আতের বিরোধিতায় এত বাড়াবাড়ির কি দরকার? কেহ একটু মীলাদ পড়লে, কুলখানি বা চল্লিশা-চেহলাম পালন কিংবা এ জাতীয় কিছু করলে দ্বীন ইসলামের কি এমন ক্ষতি হয়ে যায়?
আমি একদিন এক মাসজিদের ইমাম সাহেবের বক্তব্য শুনছিলাম। তিনি বলছিলেন শবে মিরাজ উপলক্ষ্যে এ রাতে কোন বিশেষ সালাত, ইবাদাত-বন্দেগী বা সিয়াম নেই। যদি শবে মিরাজ উপলক্ষ্যে কোন ‘আমল করা হয় তা বিদ‘আত হিসাবেই গণ্য হবে। তার এ বক্তব্য শেষ হতে না হতেই কয়েকজন শিক্ষিত শেণীর মুসল্লী বলে উঠলেন, হুজুর এ কি বলেন! রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের মুহাব্বতে এ রাতে কিছুকরলে বিদ‘আত হবে কেন? প্রশ্নকারী লোকগুলোযে বিভ্রান্ত বা বিদ‘আতপন্থী তা কিন্তু নয়। তাদের খারাপ কোন উদ্দেশ্য নেই। কিন্তু তারা যা করার ইচ্ছা করেছেন, উহার ভয়াবহ পরিণাম সম্পর্কে তাদের ধারণা নেই।
অবশ্যই রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের মুহব্বত ঈমানের অঙ্গ। আর সব ধরনের মুহাব্বতেই আবেগ থাকে। রাসূল সাল্লাল্লাহু‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের মুহব্বতেও থাকবে। কিন্তুসেই আবেগ যেন মুহব্বতের নীতিমালা লংঘন না করে। সেই আবেগভরা মুহাব্বত যেন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের আদর্শ  ও সুন্নাহর বিরুদ্ধে ব্যবহৃত না হয়। যদি এমনটি হয় তাহলে বুঝতে হবে যে, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের মুহাব্বতের নামে শয়তান তাকে ধোকায় ফেলেছে।
এ কথাতো মুসলিমদের কাছে দিবালোকের মত স্পষ্ট যে, খৃষ্টানরা বিদ‘আতী কাজ-কর্ম  করে ও তাদের নবীর মুহব্বতে বাড়াবাড়ি করে পথভ্রষ্ট হয়ে গেছে। এ কথা যেমন আল-কুরআনে এসেছে, তেমনি হাদীসেও আলোচনা করা হয়েছে। আমি অতি সংক্ষেপে এখানে বিদ‘আতের কতিপয় পরিণাম সম্পর্কে  আলোচনা করছি।

এ যে ভালোবাসা নয়; বিপদ ডেকে আনা!



এ যে ভালোবাসা নয়; বিপদ ডেকে আনা!

(ক) সদ্য কৈশোর পেরুনো রাসনা খান বরাবর ভদ্র ও শান্ত স্বভাবের মেয়ে। রোযা রাখার বয়সে  পৌঁছার আগ থেকেই সে রোযা রাখতে চাইতো। সাহরির সময় জাগিয়ে দেবার জন্য মা-বাবাকে বারবার বলে রাখতো। কিন্তু বাবা-মা তাকে ডাকতেন না মেয়ের জন্য এতক্ষণ উপোস থাকা কষ্টকর বিবেচনা করে। রাসনা এখন ইন্টারমিডিয়েটের ছাত্রী। ছোটবেলার সেই অনভ্যাসের জের হিসেবে আজও তার পক্ষে রোযা রাখা সম্ভব হয় না।

(খ) আতিক সাহেবের (ছদ্মনাম) অনেকগুলো ছেলে-মেয়ে। ওরা সবাই এখন পরিণত বয়সী। ছেলেরা ব্যবসা-বাণিজ্য করে বেশ অর্থ-কড়ির মালিকও হয়েছে। পিতার প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা আর শ্রদ্ধায় শারীরিক অসুস্থতার জন্য তারা তাকে অখণ্ড অবসরে রেখেছে। অফুরান অবকাশে বাবার সময় কাটাবার জন্য তাঁর ঘরে একটি রঙ্গিন টিভিও সেট করে দিয়েছে। অসুস্থ শরীর নিয়ে তিনি দু'এক ওয়াক্ত নামাজ মসজিদে গিয়ে পড়লে পড়েন নয়তো তা কাযাই হয়ে যায়। বাকি সময়গুলো বলতে গেলে তার টিভি সেটের সামনে দিয়েই বয়ে যায়।

বিদ’আতের অর্থ এবং তার কুপ্রভাব

বিদ’আতের অর্থ এবং তার কুপ্রভাব

শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু


বিদ’আতের অর্থ এবং তার কুপ্রভাব

বিদ’আতের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে: “নযীরহীনভাবে কিছু নব আবিস্কার করা ।” যেমন আল্লাহ তা’আলা বলেছেন : 
“তিনি (নযীরবিহীন) আসমান ও যমীনের স্রষ্টা” (সূরা বাকারাহ /১১৭)
পারিভাষিক অর্থে বিদ’আত বলা হয় : “ধর্মের মধ্যে যে নবাবিস্কৃত ইবাদাত , বিশ্বাস ও কথার সমর্থনে কুরআন ও সুন্নাহের মধ্যে কোন দলীল মিলে না অথচ তা ছাওয়াবের উদ্দেশ্যে করা হয় তাকেই বিদ’আত বলা হয় ।”
ব্যক্তি , সমাজ , ধর্মীয় মাসআলা মাসায়েলের উপর বিদ’আতের কুপ্রভাব অত্যন্ত ভয়ানক । তবে বিদ’আতের স্তর রয়েছে । স্তরভেদে বিদ’আতের ক্ষতিকর কুপ্রভাবগুলো প্রযোজ্য । একটি কথা মনে রাখতে হবে ক্ষেত্র বিশেষে বিদ’আতকে যত ছোটই ভাবা হোক , তা রাসূল (সাঃ) এর এ (শরী’আতের মাঝে প্রত্যেক নবাবিস্কারই বিদ’আত আর প্রত্যেক বিদ’আত ভ্রষ্টতা আর প্রত্যেক ভ্রষ্টতার পরিণাম জাহান্নাম) বাণীর আওতা হতে কোন অবস্থাতেই বের হবে না । অতএব বিদ’আতের ভয়ানক ক্ষতিকর কুপ্রভাবগুলো আমাদের জানা দরকার । এ করণেই নিম্নে সংক্ষেপে সেগুলো উল্লেখ করা হলঃ

দো‘আ করছেন কিন্তু সাড়া পাচ্ছেন না?

দো‘আ করছেন কিন্তু সাড়া পাচ্ছেন না?



দো‘আ করছেন কিন্তু সাড়া পাচ্ছেন না?

• কিছুলোক অনেক দো‘আ করেন কিন্তু কোনো সাড়া পান না। 

প্রশ্নঃ দো‘আ করলে তার উত্তর পেতে দেরি হয় কেন? কিছুলোক অনেক দো‘আ করেন কিন্তু কোনো সাড়া পান না; তারা দীর্ঘকাল ধরে চাইতে থাকেন। কিন্তু কোনো ফল পান না। এমন ক্ষেত্রগুলোতে আপনি দেখবেন শয়তান এমন লোকের কানে ফিসফিসানি শুরু করছে এবং স্রষ্টা সম্পর্কে তাদের নেতিবাচক চিন্তা করতে জন্য শিক্ষা দিচ্ছে।

উত্তর:
প্রশংসা মাত্রই আল্লাহ্‌র জন্য।

প্রথমত:
যে ব্যক্তির ক্ষেত্রে এটা ঘটে তার বিশ্বাস করা উচিৎ যে, দো‘আ করার পরও সাড়া না পাওয়ার মাঝে একটি কারণ ও বিশাল এক প্রজ্ঞা লুকিয়া আছে। আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা সার্বভৌমত্বের মালিক এবং কেউই তাঁর দয়াকে থামিয়ে দিতে বা ক্ষমতাকে নস্যাৎ করতে পারে না। তিনি দয়া করে কাউকে কিছু দিতে চাইলে বা ন্যায় বিচার করে কাউকে দিতে না চাইলে তার ইচ্ছেকে প্রভাবিত করে এমন কোনো শক্তি বা সত্ত্বা নেই। আমরা তাঁর বান্দা আর আমাদের সাথে তাই করেন যা তিনি ইচ্ছে করেন।
“আর তোমাদের প্রভু যা ইচ্ছা ও পছন্দ তা-ই সৃষ্টি করেন, এতে তাদের কোনো পছন্দের অবকাশ নেই।”   [আল-কাসাস ২৮:৬৮]

কোন যুক্তিতে একজন কর্মচারী মালিককে তাঁর প্রাপ্য সম্মান না করেই নিজের পাওনা পুরোটাই দাবী করতে পারে?
অবাধ্যতা নয় আনুগত্য, বিস্মরণ নয় স্মরণ, অকৃতজ্ঞতা নয় ধন্যবাদ পাওয়াটাই তাঁর অধিকার। আপনি যদি নিজের দিকে তাকান আর দেখেন কিভাবে নিজ দ্বায়িত্ব পালন করছেন, তবে নিজেকে খুবই নগন্য মনে হবে। আপনি অপমান বোধ করবেন আর উপলব্ধি করবেন যে, তাঁর ক্ষমা ও দয়া ছাড়া কোনো মুক্তিই নেই। তাই সৃষ্টিকর্তা ও নিয়ন্তা আল্লাহ্‌র দাস হিসেবেই নিজেকে দেখুন।

ইসলামের দৃষ্টিতে রাশিচক্র

ইসলামের দৃষ্টিতে রাশিচক্র

শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু


ইসলামের দৃষ্টিতে রাশিচক্র
আগেও উল্লেখ করা হয়েছে যে জ্যোতিষশাস্ত্র চর্চা শুধু হারামই নয় একজন জ্যোতিষবিদের কাছে যাওয়া এবং তার ভবিষ্যদ্বাণী শোনা, জ্যোতিষশাস্ত্রের উপর বই কেনা অথাব একজনের কোষ্ঠী যাচাই নিষেধ। যেহেতু জ্যোতিষশাস্ত্র প্রধানত ভবিষ্যদ্বাণী করার জন্য ব্যবহৃত হয়, যারা এই বিদ্যা চর্চা করে তাদের জ্যোতিষী বা গণক বলে গণ্য করা হয়।
ফলস্বরূপ, যে তার রাশিচক্র খোঁজে সে রাসূল (সা) প্রদত্ত বিবৃতির রায়ের অধীনে পড়েঃ
হাফসা (রাঃ) কর্তৃক বর্নিত, রাসূলুল্লাহ -সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ 
যে গণকের কাছে যায় এবং কোন বিষয়ে জিজ্ঞাসা করে তার চল্লিশ দিন ও রাত্রির নামাজ গ্রহণযোগ্য হবে না।” [Sahih Muslim, English trans, vol. 4, p.1211, no, 5540]
এমনকি জ্যোতিষের বক্তব্যের সত্যতায় সন্দিহান হওয়া সত্ত্বেও একজনের শুধু তার কাছে যাওয়া এবং প্রশ্ন করার শাস্তি এই হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। যদি কেউ জ্যোতিষ-সংক্রান্ত তথ্যাদির সত্য মিথ্যায় সন্দিহান হয়,তবে সে আল্লাহর পাশাপাশি অন্যরাও হয়তো অদৃশ্য এবং ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে জানে বলে সন্দেহ পোষণ করে। এটা এক ধরনের শিরক।

বইঃ আল-আদাবুল মুফরাদ (অনন্য শিষ্টাচার) – ফ্রী ডাউনলোড

বইঃ আল-আদাবুল মুফরাদ (অনন্য শিষ্টাচার) – ফ্রী ডাউনলোড


শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু

সংক্ষিপ্ত বর্ণনাঃ ইমাম বুখারী (রহঃ) সংকলিত সহীহ আল বুখারীর পর তার যে কিতাবটি মুসলিম সমাজে সর্বাধিক পরিচিত তা হচ্ছে ‘ আল আদাবুল মুফরাদ’।
এটি মূলত শিষ্টাচার সংক্রান্ত হাদিসের সংকলন। ইসলামি সমাজে মু’আমিলা তথা পারস্পরিক সম্পর্কের উপর অত্যন্ত গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। যারা ইসলাম প্রচারে নিয়োজিত তাদের শিষ্টাচারের উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। তাদের ব্যবহার, আচার-আচরণ, নৈতিকতা ইত্যাদি দেখেই মানুষ ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট হবে। যে নসিহত প্রদান করা হয় এবং সে অনুযায়ী তা অর্জনের শিক্ষা দেওয়া হয়। তাছাড়া মানব সম্প্রদায়কে অন্যান্য প্রাণী জগত থেকে স্বতন্ত্র করার পেছনে যে কয়টি কারণ কার্যকর রয়েছে তার মধ্যে শিষ্টাচার  অন্যতম। তাই মানব সভ্যতার  বিকাশেও শিষ্টচারের ভূমিকা অনন্য। এ দিক থেকেএ গ্রন্থের ভূমিকা অসাধারণ। এতে ১৩৩৯ খানা হাদিস ৬৪৫টি শিরোনামে বর্ণনা কড়া হয়েছে । আদাব ও নৈতিকতা সংক্রান্ত হাদিসের এতো বড় সমাহার আর দ্বিতীয়টি নেই।

মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০১৩

কুরআনে শব্দ খোঁজার জন্য ব্যবহার করুন “জিকর” নামে অসাধারণ সফটওয়্যার।

কুরআনে শব্দ খোঁজার জন্য ব্যবহার করুন “জিকর” নামে অসাধারণ সফটওয়্যার।

শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু

কুরআনে কোন কথাটি রয়েছে, কোনটি নেই, কোন আয়াত কত নং সূরার, তা একজন কুরআন বিশ্লেষক মুমীনের জানা খুব জরুরী। আজ আপনাদের পরিচয় করিয়ে দেব “জিকর” নামের একটি সফটওয়্যারের সাথে যেটি নিমিষেই জানিয়ে দেবে আপনার কাঙ্খিত শব্দটি। সফটওয়্যারটিতে বাংলায় সার্চ করার সুযোগ রয়েছে।

টিউটোরিয়াল

১. প্রথমে এই লিংক থেকে ৭.৭ মেগাবাইটের সফটওয়্যারটি ডাউনলোড করে ইন্সটল করে নিন। (এটি একটি ফ্রিওয়্যার তাই সিরিয়ালের দরকার নেই)
২. এই লিংক এ ক্লিক করে বাংলা অনুবাদের ফাইলটি (bn.hoque.trans.zip) সরাসরি ডাউনলোড করুন। তর্জমাটিজহুরুল হকের করা। বিস্তারিত জানতে এই লিংকে ক্লিক করুন।  অন্য ভাষার তর্জমা চাইলে এখানে ক্লিক করেডাউনলোড করে নিন।
৩. আপনার পিসিতে সোলায়মান লিপি বা যেকোন ইউনিকোড বাংলা ফন্ট ইন্সটল থাকতে হবে। না থাকলে এখান থেকে ডাউনলোড করে নিন।  তারপর কন্ট্রোল প্যানেল থেকে ফন্ট ফোল্ডারে পেস্ট করুন।
[সফটওয়্যারটি চালাতে জাভা রানটাইম ইনভায়রমেন্ট দরকার, যদি পিসিতে না থেকে থাকে তবে এখান থেকে জাভা ডাউনলোড করে ইন্সটল করে নিন]
৪. এবার সফটওয়্যারটি চালু করে নিচের স্ক্রিণশট অনুসরণ করুন। প্রথমে Tools>Add>Translation এ ক্লিক করুন।

শাইখ মতিউর রহমান মাদানী লেকচার সমগ্র - ফ্রি ডাউনলোড

শাইখ মতিউর রহমান মাদানী লেকচার সমগ্র - ফ্রি ডাউনলোড

শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু

ইনশাআল্লাহ শেইখ মতিউর রহমান মাদানীর নতুন লেকচার খুব শিগ্রহী আপলোড করা হবে।
Qualification
1. Secondary School Diploma from Madarasa Islahul Muslimeen Bhadu, Malda, West Bengal
3. B.A (Hadith), from Islamic University, Medina Monawwara, KSA
বক্তা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে, এইখানে ক্লিক করুন।

NEW: Torrent এর মাধ্যমে সব ফাইল এক সাথে ডাউনলোড করুন এই লিংক থেকে।
কিভাবে টরেন্ট দিয়ে ফাইল ডাউনলোড করবেন, এই ভিডিওটি দেখুন - http://vimeo.com/19545251 অথবাএইখানে ক্লিক করুন।

শেইখ মতিউর রাহমান কেন কিছু ওলামদের ভুল ধরেন? নিচের ভিডিওটা দেখুন।
ভিডিও লেকচার সমূহ


রবিবার, ২১ এপ্রিল, ২০১৩

কবর পাকা করা

কবর পাকা করা



কবর পাকা করা

সকল প্রশংসা একমাত্র মহান রাব্বুল আলামীনের জন্যে, যিনি জগত সমূহের একচ্ছত্র মালিক। অজস্র শান্তির ধারা বর্ষিত হোক নবীকুল শিরোমনী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, তাঁর পরিবারবর্গ এবং তাঁর সকল অনুসারীদের উপর। 
পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে কবর পাকা করা, চুনকাম করা, কবর উঁচু করার প্রবনতা দেখা যায়। বিশেষ করে আমাদের দেশ বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্থানে এ ধরণের কর্মকান্ড খুবই বেশী। প্রতিনিয়ত তা বেড়েই চলছে। মানুষের ধারণা হল এ সমস্ত কাজ শরীয়ত সম্মত এবং এতে ছোয়াব রয়েছে। তাই দেখা যায় করবস্থানে, রাস্তার আশে-পাশে, চৌরাস্তায় ও বটগাছ তলায় কবর পাকা করে, চুনকাম করে, তাতে উন্নত নেমপ্লেট ব্যবহার করে মৃত্যু ব্যক্তির জন্ম, মৃত্যু তারিখ ও বিভিন্ন বানী লিখে রাখা হয়। এ জাতীয় সকল কাজ শরীয়ত বিরোধী। শরীয়তে এর হুকুম হল বিদআত। কারণ এ গুলো করার পিছনে ইসলামী শরীয়তে কোন দলীল নেই, বরং এ গুলো থেকে দূরে থাকার ব্যাপারে শরীয়ত কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। বিশিষ্ট সাহাবী জাবের (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন,
نَهَى رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم أَنْ يُجَصَّصَ الْقَبْرُ وَأَنْ يُقْعَدَ عَلَيْهِ وَأَنْ يُبْنَى عَلَيْهِ.
“রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কবরে চুন কাম করা, তার উপর বসা এবং তার উপর বিল্ডিং নির্মান করতে নিষেধ করেছেন। (মুসলিম)
এ হাদীস দ্বারা স্পষ্ট প্রমাণ হল যে, কবরে প্লাস্টার লাগানো, চুন কাম করা, পাকা করা, কবরের উপর বিল্ডিং ও গম্বুজ নির্মাণ করা কঠোর ভাবে নিষেধ। তারা বলে থাকেন আমরা সৌন্দর্য প্রকাশ ও কবরকে হেফাযতের জন্য এ গুলো করে থাকি। জেনে রাখুন সোন্দর্য প্রকাশের জন্য হোক, মানুষকে আকৃষ্ট করার জন্য হোক কিংবা হেফাযতের জন্য হোক, তা শরীয়তে জঘন্যতম বিদআত। এ গুলো করার পিছনে কোন দলীল নেই।

বর্তমান কালে অধিকাংশ মুসলিম সমাজ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে চলছে। রাসূল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যা নিষেধ করেছেন, তারা তাতেই লিপ্ত হয়েছে। এতে করে তারা বড় শির্কে লিপ্ত হয়েছে। কবরে উপর নির্মাণ করছে মাসজিদ ও গম্বুজ। কবরকে পরিণত করছে মাযারে ও যিয়ারতের স্থানে। সেখানে তারা পশু যবেহ করা ও কবর বাসীর কাছে চাওয়া-পাওয়া, নযর-নেওয়াজ ইত্যাদি সকল প্রকার ইবাদতে লিপ্ত হয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ ওয়া সাল্লাম এর যুগে বদর, উহুদ, খন্দক, তাবুক যুদ্ধ ছাড়াও যে সকল সাহাবী শহীদ হয়েছেন অথবা মৃত্যু বরণ করেছেন তাঁদের কারও কবর উচু করা হয় নাই। তাঁদের কারও কবর পাকা ও চুনকামও করা হয়নি এবং তাতে নামও লিখা হয়নি। তাঁদের কারও কবর মোজাইক অথবা পাথর দ্বারা বাঁধানো হয়নি বরং এ সকল কাজ যেমন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিষেধ করেছেন, তাঁর পরে স্বর্ণ যুগের খোলাফায়ে রাশেদীনগণও কঠোর হস্তে দমন করেছেন। এর একটি উজ্জল উদাহরণ হল, প্রখ্যাত তাবেয়ী আবুল হাইয়্যাজ আল আসাদী বলেন, আমাকে আলী (রাঃ) বললেনঃ
أَلاَّ أَبْعَثُكَ عَلَى مَا بَعَثَنِى عَلَيْهِ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم أَنْ لاَ تَدَعَ تِمْثَالاً إِلاَّ طَمَسْتَهُ وَلاَ قَبْرًا مُشْرِفًا إِلاَّ سَوَّيْتَ
“তোমাকে কি আমি এমন একটি কাজ দিয়ে পাঠাবো না যে কাজ দিয়ে আমাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পাঠিয়েছিলেন? তা হল কোন প্রতিকৃতি ও মূর্তি পেলে তাকে চূর্ণ বিচূর্ণ করে ফেলবে, আর কোন উচুঁ কবর পরিলক্ষিত হলে তা সাধারণ কবরের সমপরিমান করে দিবে।” (মুসলিম)

আকীদাগত ক্ষতিঃ 
আমরা যদি দৃষ্টি নিক্ষেপ করি তবে দেখতে পাব এসব উচুঁ উচুঁ কবরের কারণে অধিকাংশ লোকের আকীদাহ বিপন্ন হতে চলছে। দেখুন আমাদের দেশে বিভিন্ন এলাকাতে কবর উচুঁ করা হয়েছে, তাতে মূল্যবান মোজাইক পাথর দ্বারা সৌন্দর্যমন্ডিত করা হয়েছে,সুন্দরভাবে বাঁধাই করা হয়েছে, বিভিন্ন রংবেরং এর বাতিও লটকানো হয়েছে। যা ইসলামী শরীয়ত আদৌ সমর্থন করে না। এসব কবরের কাছে নারী-পুরুষের আড্ডা বসে, তারা সেখানে কবরকে সামনে করে দীর্ঘ সময় তসবীহ জপে, কান্না-কাটি করে, আর্জি পেশ করে, মনের কাকুতি-মিনতি নিয়ে সকল সমস্যার কথা তুলে ধরে, আবার মাঝে মাঝে সেজদায় লুটিয়ে পড়ে। অথচ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কবরের কাছে বা কবরের দিকে মুখ করে নামায আদায় করতে নিষেধ করেছেন। মুসলমানরা তাঁর নিষেধ অমান্য করে কবরকে নামাযের স্থানে পরিণত করেছে। তিনি কবরকে মাসজিদ বানাতে নিষেধ করেছেন। তারা তাকে মাসজিদ বানিয়েছে। তিনি কবরে বাতি জ্বালাতে নিষেধ করেছেন। তারা বাতি জ্বালিয়ে প্রচুর অর্থ অপচয় করছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কবরের পাশে ওরশ-উৎসব করতে নিষেধ করেছেন এরা প্রতি বছর ঈদের মত ধুমধামের সাথে ওরশ অনুষ্ঠান পালন করে চলছে। কখন কখনও আল্লাহর ধ্যানে মগ্ন হওয়ার পরিবর্তে আল্লাহর যিকির-আযকারের ন্যায় যিকর করে। অনেক সূফী বিদআতী ভন্ড মুরীদরা নামায বাদ দিয়ে সেখানে সময় অতিবাহিত করে। আবার নামায পড়া অবস্থায় পীরের ধ্যান করে থাকে। আরও দেখা যায় এ ধরণের কবর যা রাস্তার পার্শ্বে অবস্থিত সেখান দিয়ে পথচারী পথ চলার সময় বিদআতী নিয়মে সালাম করে এবং বুযুর্গের অধিক তা’যিমের জন্য কবরে চুমু খায়, কবরের মাটি গায়ে মাখে, কখনও তওয়াফ করে, সাথে সাথে কিছু অর্থও দান করে যায়। অথচ দান করা, নযর-মানত করা, প্রার্থনা করা, দুআ করা, সেজদাহ করা, যিকির করা, আর্জি পেশ করা ইত্যাদি সকল কিছু হতে হবে একমাত্র আল্লাহ তাআলার জন্যে। এ সম্পর্কে কুরআনে ও হাদীসে যথেষ্ট আলোচনা করা হয়েছে, যাতে রয়েছে মানব জীবনের পূর্ণ দিক নির্দেশনা । আল্লাহ তাআলা বলেনঃ
قُلْ إِنَّ صَلَاتِي وَنُسُكِي وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِي لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ
“আপনি বলুন, নিশ্চয় আমার নামায, আমার হজ্ব ও কুরবানী, আমার জীবন-মরণ একমাত্র মহান আল্লাহর জন্য যিনি জগত সমূহের প্রতিপালক।” (সূরা আনআমঃ ১৬২)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
إِذَا سَأَلْتَ فَاسْأَلِ اللَّهَ وَإِذَا اسْتَعَنْتَ فَاسْتَعِنْ بِاللَّهِ
“কোন কিছু চাওয়ার হলে আল্লাহর কাছে চাইবে এবং সাহায্য চাইলে একমাত্র তাঁর কাছেই সাহায্য চাইবে।” (তিরমিযী)

সুপ্রিয় পাঠক বন্ধুগণ! কবরের ব্যাপারে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কি বলেছেন? আর এরা করছে কি? এরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সুন্নতের সম্পূর্ণ বিপরীত পথে চলছে। তাদের বিদআতী কাজ-কর্মের বর্ণনা দিয়ে শেষ করা যাবে না।

আরও লক্ষ্য করুন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে কেন কবর যিয়ারত করতে বলেছেন? আমাদেরকে কবর যিয়ারত করতে বলেছেন যাতে আমাদেরকে আখেরাতের কথা স্মরণ করিয়ে দেয় এবং যাতে কবরবাসীর পাশে গিয়ে কবরবাসীর জন্য দুআ করি, তাদের জন্য আল্লাহর রহমত ও ক্ষমা প্রার্থনা করতে পারি। আর বর্তমান যুগের মুসলমানেরা কবর যিয়ারতের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে সম্পূর্ণ পাল্টিয়ে ফেলেছে। তাদের উদ্দেশ্য হল সেখানে গিয়ে শির্কে লিপ্ত হওয়া। কবরবাসীর কাছে দুআ করা। সমস্যার কথা তুলে ধরা। তার উসিলা দিয়ে আল্লাহর কাছে দুআ করা, প্রয়োজন পূরণের আবেদন করা ইত্যাদি। এধরণের শিরক ও বিদআত কোথা থেকে চালু হয়েছে?
এ ধরণের শিরক ও জঘন্যতম বিদআত চালু হয়েছে ইহুদী-খ্রীষ্টানদের দ্বারা। এগুলো হল ইহুদী-খ্রীষ্টনদের রীতি। খ্রীষ্টানরা ঈসা ও মরিয়ম এবং ক্রশের পূজা করে থাকে। ইউরোপীয়ান, আমেরিকান এবং রাশিয়ানরা তাদের নেতাদের প্রতিমূর্তির পূজা করে এবং তাদের সম্মানার্থে তাদের সামনে মাথা নত করে। আর তাদের অনুকরণে অনেক মুসলিম উক্ত শিরক ও বিদআতে লিপ্ত হয়েছে। যা অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়। ইসলাম পূর্ব লোকেরা তাদের নবীদের কবরকে মাসজিদ বানিয়ে নিয়ে সেখানে ইবাদত করত। এ কথা হাদীসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পরিস্কার ভাবে বলে দিয়েছেনঃ
أَلَا وَإِنَّ مَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ كَانُوا يَتَّخِذُونَ قُبُورَ أَنْبِيَائِهِمْ وَصَالِحِيهِمْ مَسَاجِدَ أَلَا فَلَا تَتَّخِذُوا الْقُبُورَ مَسَاجِدَ إِنِّي أَنْهَاكُمْ عَنْ ذَلِكَ
“জেনে রাখা উচিৎ যে, তোমাদের পূর্বের লোকেরা তাদের নবীদের কবরসমূহকে মাসজিদে পরিণত করত। সাবধান! তোমরা কবরগুলোকে মাসজিদে পরিণত কর না। আমি তোমাদেরকে তা থেকে নিষেধ করছি।” (মুসলিম)
কবরকে মাসজিদে পরিণত করার অর্থ হল কবরের কাছে নামায আদায় করা। যদিও তার উপর মাসজিদ নির্মাণ করা হয়নি। মূলতঃ নামাযের জন্য কোন স্থানে গমণ করাই উক্ত স্থানকে মাসজিদে রূপান্তরিত করার শামিল। রাসূল সাল্লাল্লাহু ইহুদী-খ্রীষ্টানদের প্রতি লা’নত করেছেন, কেননা তারা তাদের নবীদের কবরকে মাসজিদ বানিয়েছে।

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কবর কি উঁচু করা হয়েছে? এর উত্তর হল, না। অর্থাৎ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কবর উঁচু করা হয় নি। তার কবর বাঁধানোও হয়নি, তার কবরকে মাযারও বানানোও হয়নি, কোন খানকাতে পরিণত করা হয়নি, তাতে কোন প্রকার বাতিও জ্বালানো হয়নি। বর্তমানে কোন কোন এলাকাতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কবরের উচুঁ ছবি পরিলক্ষিত হয়, যা দেখতে মাযারের মত তা মোটেই ঠিক নয়। এ ধরণের ছবি বানোয়াট। অতএব এ ধরণের জঘন্যতম অপরাধ থেকে আমাদেরকে ফিরে এসে সঠিক পথে চলা দরকার এবং আল্লাহর কাছে খালেছ ভাবে তাওবা করা দরকার। অন্যথায় পরকালে মুক্তির কোন উপায় নেই। আল্লাহ আমাদের মুক্তি দিন।


সূত্র : সালাফী বিডি



“বিদ’আত” বিষয়ের উপর আরও পড়তে এইখানে ক্লিক করুন।
“শিরক” বিষয়ের উপর আরও পড়তে এইখানে ক্লিক করুন।

পোস্টটি ভালো লাগলে শেয়ার করতে ভুলবেন না কিন্তু।