নারী-পুরুষে দেখাদেখি, নির্জনে অবস্থান ও সহাবস্থান সংক্রান্ত বিবিধ ফাতওয়া (১ম পর্ব)
১ম পর্ব | ২য় পর্ব
সূচিপত্র
ক্রম বিষয়
1. ভূমিকা
2. শিক্ষার ক্ষেত্রে নারী-পুরুষে সহাবস্থানের বিধান
3. স্কুল, মাদরাসা ও বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে ছেলে-মেয়ের মাঝে মেলামেশার ভয়াবহ ঝুঁকি
4. নারী-পুরুষ সম্মিলিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে লেখাপড়ার বিধান
6. আল্লাহর দিকে আহ্বানের উদ্দেশ্যে নারী-পুরুষ সম্মিলিত বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়ার বিধান
7. নারী-পুরুষ সম্মিলিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতার বিধান
8. প্রাথমিক স্তরে নারী শিক্ষক কর্তৃক ছেলে সন্তানদেরকে পাঠদানের ভয়াবহ ক্ষতি
9. নারীদের ফিতনা থেকে বাঁচার নিরাপদ উপায়
10. দেবর খুবই বিপজ্জনক
11. নিয়ত ভালোর যুক্তি দেখিয়ে নারীদের সাথে উঠাবসা করার বিধান
12. পারিবারিক ড্রাইবার ও নারীগণ
13. নারী পুরুষে সহাবস্থান হারাম
14. পুরুষ ডাক্তার কর্তৃক অপরিচিত নারীকে ডাক্তারি পরীক্ষা করার বিধান
15. যানবাহনে নারী পুরুষে মেলামেশার বিধান
16. নারী-পুরুষ সম্মিলিত বাজারে প্রবেশের বিধান
17. শিল্প-কারখানা ও অফিস-আদালতে নারী-পুরুষে সহাবস্থানের বিধান
18. নারী-পুরুষ সহাবস্থানে নারী’র কাজ করার বিধান
19. ভাবির চেহারার দিকে দৃষ্টি দেওয়ার বিধান
20. নারীদের চেহারার দিকে তাকানোর বিধান
21. যৌন কামনা ব্যতীত হারাম শরীফে নারীদের দিকে তাকানো
22. ইচ্ছাকৃতভাবে হারাম শরীফে নারীদের দিকে তাকানোর বিধান
23. ছাত্র কর্তৃক ছাত্রীকে সালাম দেওয়ার বিধান
24. টেলিভিশনে সৌন্দর্য প্রদর্শনকারিনী নারীদেরকে দেখার বিধান
25. টেলিভিশনে নারীদের দিকে তাকানোর বিধান
26. পত্রিকা ও ম্যাগাজিনে নারীদের ছবির দিকে তাকানোর বিধান
27. এসব ধারাবাহিক (নাটকীয়) অনুষ্ঠান দেখা হারাম
28. পত্রিকা ও ম্যাগাজিনে নারীদের দিকে তাকানোর বিধান
29. অশ্লীল ম্যাগাজিন পাঠ করার বিধান
30. নারীদের ছবি সংগ্রহ করার বিধান
31. বিভিন্ন প্রকার প্রচার মাধ্যমে নারীদের দিকে তাকানোর বিধান
32. টেলিফোনে নারী পুরুষে কথা বলার বিধান
33. নারী ও পুরুষের মাঝে চিঠি আদান-প্রদান করার বিধান
34. অপরিচিত বা পরনারীর সাথে নির্জনে অবস্থান করা হারাম
35. বিবাহপূর্ব সম্পর্কের বিধান
36. মাহরাম পুরুষ সঙ্গী ছাড়া কোনো নারী সফর করবে না
37. মাহরাম পুরুষ ব্যতীত ভিন্ন এলাকা বা বিদেশ থেকে কাজের মেয়ে নিয়ে আসার বিধান
38. মাহরাম পুরুষ ব্যতীত ভিন্ন শহরে নারীর অবস্থান করার বিধান
39. শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রীদেরকে বিভিন্ন প্রদর্শনীতে ব্যবহার করার বিধান সম্পর্কে ফতোয়া
40. আমার শ্যালিকারা খোলামেলা থাকাবস্থায় আমি তাদেরকে গাড়িতে করে গন্তব্যস্থানে পৌঁছায়ে দেই
41. ভগিনীপতি বা দুলাভাই মাহরামদের কেউ নন
42. পুরুষদের সাথে পর্দা পরিহিতা নারীর বসার বিধান
43. অপরিচিত বা পরনারীদের সাথে মুসাফাহ (করমর্দন) করা নিষিদ্ধকরণের কারণ
44. ভাবির সাথে মুসাফাহ (করমর্দন) করার বিধান
45. মাহরাম নন এমন নারীদের সাথে মুসাফাহ (করমর্দন) করার বিধান
46. অপরিচিত নারীর সাথে কৌশলে আড়াল করে মুসাফাহ করার বিধান
47. বৃদ্ধা রমনীর সাথে মুসাফাহ (করমর্দন) করার বিধান
48. মাহরাম নন এমন আত্মীয়স্বজন ও অন্যান্যদের সাথে মুসাফাহ করা এবং তাদেরকে চুম্বন করার বিধান
49. মাহরাম নন এমন নারীদের সাথে বসার বিধান
50. পুরুষ ব্যক্তি কর্তৃক তার কন্যাকে চুম্বন করা বৈধ
ভূমিকা
সমস্ত প্রশংসা এক আল্লাহর জন্য। সালাত ও
সালাম নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লামের প্রতি, যাঁর পরে আর কোনো নবী নেই।
অতঃপর:
এগুলো হলো নারী-পুরুষে দেখাদেখি, নির্জনে অবস্থান ও সহাবস্থানের
বিধিবিধান সংক্রান্ত বিষয়ে কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ ফতোয়া, আর এ ফতোয়াগুলো ‘ইসলামী
ফতোয়াসমগ্র’ (مجموع
الفتاوى الإسلامية) -এর তৃতীয় খণ্ডে ‘বিবাহ অধ্যায়’ (كتاب النكاح)-এর মধ্যে একটি স্বতন্ত্র পরিচ্ছেদে পূর্বে
প্রকাশ করা হয়েছে। আর আমি এগুলোকে স্বতন্ত্রভাবে প্রকাশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি তার
গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তার দাবি এবং এ প্রসঙ্গে বেশি বেশি প্রশ্নের কারণে, বিশেষ করে
আরবী ও ইসলামী দেশ এবং দূর দেশের আমাদের ভাইদের পক্ষ থেকে বেশি বেশি প্রশ্ন আসার
কারণেই আমরা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমাদের মাওলা আল্লাহ তা‘আলার নিকট আবেদন করছি, যাতে
তিনি এর দ্বারা আমাদেরকে উপকৃত করেন, নিশ্চয় তিনি শুনেন, আবেদন নিবেদন কবুল করেন, আর তাওফীক
দানের মালিক তো আল্লাহই।
মুহাম্মাদ
ইবন আবদিল ‘আযীয আল-মুসনাদ
রিয়াদ,
১১৪৯১, পোস্টবক্স- ৪২২৪
শিক্ষার
ক্ষেত্রে নারী-পুরুষে সহাবস্থানের বিধান
আল-হামদুলিল্লাহ,
সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য আর সালাত ও সালাম রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি। অতঃপর....
আমি
২৪/০৭/১৪০৪ হি. তারিখে প্রকাশিত রাজনৈতিক সংবাদপত্রের ৫৬৪৪ সংখ্যায় সান‘আ
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধানের সাথে সম্পর্কিত একটি লেখার ব্যাপারে অবগত হয়েছি, যাতে
তিনি বর্ণনা করেছেন, ছাত্রদের থেকে ছাত্রীদেরকে আলাদা করার দাবি উত্থাপন করাটা
শরী‘আত বিরোধী, আর তিনি নারী-পুরুষ একসাথ হয়ে সহশিক্ষার বৈধতার ব্যাপারে দলীল পেশ
করে বলেন যে, মুসলিমগণ পুরুষ ও নারী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে একই মসজিদে
সালাত আদায় করতেন এবং তিনি বলেন: (আর এ জন্যই শিক্ষার কাজটি একই জায়গায় হওয়া
আবশ্যক)। আর একটি ইসলামী দেশের একটি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধানের পক্ষ থেকে এ
ধরনের বক্তব্য প্রকাশকে আমার কাছে উদ্ভট মনে হয়েছে, যার কাছ থেকে নারী ও পুরুষ
নির্বিশেষে তার জাতি এমন দিকনির্দেশনা আশা করে, যাতে দুনিয়া ও আখিরাতে তাদের
সৌভাগ্য ও মুক্তির ব্যবস্থা থাকবে; সুতরাং «إنَّا للّهِ وإِنا إليه راجعون ولا حول
ولا قوة إلا بالله» “আমরা তো আল্লাহরই,
আর নিশ্চয় আমরা তাঁর দিকেই প্রত্যাবর্তনকারী,
আর আল্লাহর সাহায্য ছাড়া পাপ কাজ থেকে বেঁচে থাকার এবং সৎকাজ করার কেনো ক্ষমতা
আমাদের নেই”।
আর
কোনো সন্দেহ নেই যে, এ কথার মধ্যে ইসলামী শরী‘আতের ওপর বড় ধরনের অপবাদ আরোপ করা
হয়েছে। কারণ, ইসলামী শরী‘আত আদৌ নারী ও পুরুষে সহাবস্থানের দিকে
আহ্বান করে নি; বরং শরী‘আত এটাকে নিষেধ করে এবং এ ব্যাপারে কঠোরতা আরোপ করে।
যেমন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿وَقَرۡنَ فِي بُيُوتِكُنَّ وَلَا
تَبَرَّجۡنَ تَبَرُّجَ ٱلۡجَٰهِلِيَّةِ ٱلۡأُولَىٰۖ ﴾ [الاحزاب: ٣٣]
“আর তোমরা নিজ ঘরে অবস্থান করবে এবং প্রাচীন
জাহেলী যুগের প্রদর্শনীর মতো নিজেদেরকে প্রদর্শন করে বেড়াবে না”। [সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ৩৩]
আল্লাহ তা‘আলা আরও
বলেন:
﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّبِيُّ قُل
لِّأَزۡوَٰجِكَ وَبَنَاتِكَ وَنِسَآءِ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ يُدۡنِينَ عَلَيۡهِنَّ مِن
جَلَٰبِيبِهِنَّۚ ذَٰلِكَ أَدۡنَىٰٓ أَن يُعۡرَفۡنَ فَلَا يُؤۡذَيۡنَۗ وَكَانَ ٱللَّهُ
غَفُورٗا رَّحِيمٗا ٥٩﴾ [الاحزاب: ٥٩]
“হে নবী! আপনি আপনার স্ত্রীদেরকে, কন্যাদেরকে ও মুমিনদের নারীগণকে বলুন,
তারা যেন তাদের চাদরের কিছু অংশ নিজেদের উপর টেনে দেয়। এতে তাদেরকে চেনা সহজতর
হবে, ফলে তাদেরকে উত্যক্ত করা হবে না। আর আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু”। [সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ৫৯]
আল্লাহ তা‘আলা আরও
বলেন:
﴿وَقُل لِّلۡمُؤۡمِنَٰتِ يَغۡضُضۡنَ
مِنۡ أَبۡصَٰرِهِنَّ وَيَحۡفَظۡنَ فُرُوجَهُنَّ وَلَا يُبۡدِينَ زِينَتَهُنَّ
إِلَّا مَا ظَهَرَ مِنۡهَاۖ وَلۡيَضۡرِبۡنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلَىٰ جُيُوبِهِنَّۖ
وَلَا يُبۡدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا لِبُعُولَتِهِنَّ أَوۡ ءَابَآئِهِنَّ أَوۡ
ءَابَآءِ بُعُولَتِهِنَّ أَوۡ أَبۡنَآئِهِنَّ أَوۡ أَبۡنَآءِ بُعُولَتِهِنَّ
أَوۡ إِخۡوَٰنِهِنَّ أَوۡ بَنِيٓ إِخۡوَٰنِهِنَّ أَوۡ بَنِيٓ أَخَوَٰتِهِنَّ أَوۡ
نِسَآئِهِنَّ أَوۡ مَا مَلَكَتۡ أَيۡمَٰنُهُنَّ﴾ [النور: ٣١]
“আর মুমিন নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের
দৃষ্টিকে সংযত করে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হিফাযত করে, আর তারা যেন তাদের
সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে, তবে যা সাধারণত প্রকাশ থাকে। আর তারা তাদের গলা ও বুক যেন মাথার কাপড় দ্বারা ঢেকে রাখে। আর তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভাই, ভাইয়ের ছেলে, বোনের ছেলে, আপন নারীরা ও তাদের মালিকানাধীন
দাসী ছাড়া কারো কাছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে”। [সূরা আন-নূর, আয়াত: ৩১]
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
﴿وَإِذَا سَأَلۡتُمُوهُنَّ مَتَٰعٗا
فَسَۡٔلُوهُنَّ مِن وَرَآءِ حِجَابٖۚ ذَٰلِكُمۡ أَطۡهَرُ لِقُلُوبِكُمۡ
وَقُلُوبِهِنَّۚ﴾
[الاحزاب: ٥٣]
“তোমরা তার পত্নীদের কাছ থেকে কিছু চাইলে পর্দার আড়াল থেকে চাইবে। এ বিধান
তোমাদের ও তাদের হৃদয়ের জন্য বেশি পবিত্র”। [সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ৫৩]
আর এসব আয়াতে সুস্পষ্ট
নির্দেশনা রয়েছে নারীদেরকে সার্বক্ষণিক তাদের ঘরের মধ্যে অবস্থান করার বিধানের
ব্যাপারে। অতঃপর আল্লাহ
তা‘আলা জাহেলী যুগের
প্রদর্শনীর মতো তাদের নিজেদেরকে
প্রদর্শন করে বেড়ানোর ব্যাপারে সতর্ক করে দিয়েছেন, আর জাহেলী যুগের প্রদর্শনী মানে
পুরুষদের মাঝে তাদের সৌন্দর্য ও আকর্ষণীয় অঙ্গ-প্রত্যঙ্গসমূহ প্রকাশ করে বেড়ানো। অথচ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বিশুদ্ধভাবে
বর্ণিত আছে, তিনি বলেছেন:
« مَا
تَرَكْتُ بَعْدِى فِى النَّاسِ فِتْنَةً أَضَرَّ عَلَى الرِّجَالِ مِنَ النِّسَاءِ»
হাদীসটি
ইমাম বুখারী ও মুসলিম রহ. উসামা ইবন যায়েদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন। আর ইমাম মুসলিম রহ. তাঁর
‘আস-সহীহ’ গ্রন্থে হাদীসটি উসামা ইবন যায়েদ ও সা‘ঈদ ইবন যায়েদ ইবন ‘আমর ইবন নুফাইল
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণনা করেছেন। আর সহীহ মুসলিমে আবু সা‘ঈদ খুদরী
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি নবী সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন:
«إِنَّ الدُّنْيَا حُلْوَةٌ خَضِرةٌ، وإنَّ
اللهَ مُسْتَخْلِفُكُمْ فِيهَا فَيَنْظُرَ كَيفَ تَعْمَلُونَ، فَاتَّقُوا
الدُّنْيَا وَاتَّقُوا النِّسَاء؛ فإنَّ أَوَّلَ فِتْنَةِ بَنِي إسرائيلَ كَانَتْ
في النِّسَاءِ»
“নিশ্চয় দুনিয়া মিষ্ট ও আকর্ষণীয়, আল্লাহ তোমাদেরকে দুনিয়ায় তাঁর
প্রতিনিধি করেছেন, যাতে তিনি দেখে নিতে পারেন তোমরা কেমন কাজ কর। কাজেই দুনিয়া
থেকে বাঁচো এবং নারীদের (ফিতনা) থেকেও বাঁচো। কারণ, বনী ইসরাঈলদের প্রথম ফিতনা
নারীদের মধ্যেই সৃষ্টি হয়েছিল।”[2]
আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম সত্যিই
বলেছেন। কারণ, তাদের কারণেই বড় ধরনের ফিতনা হয়ে থাকে বিশেষ করে
এ যুগে, যখন অধিকাংশ নারী পর্দা খুলে ফেলেছে এবং জাহেলী যুগের প্রদর্শনীর মতো নিজেদেরকে প্রদর্শন করে বেড়াচ্ছে, আর এর
কারণে অশ্লীলতা ও খারাপি বহুগুণে বেড়ে গেছে, আর বহু দেশে অনেক যুবক ও যুবতী আল্লাহ
তা‘আলা কর্তৃক শরী‘আতের বিধিবদ্ধ করে দেওয়া বিবাহ থেকে বিরত থাকছে। আর আল্লাহ
তা‘আলা পরিষ্কারভাবে বর্ণনা করে দিয়েছেন যে,
‘পর্দা ব্যবস্থাপনা নারী পুরুষ নির্বিশেষে সকলের হৃদয়ের জন্য বেশি পবিত্র।’ সুতরাং এটা নির্দেশনা প্রদান করে যে, পর্দার বিধান ধ্বংস হয়ে যাওয়াটা
তাদের সকলের হৃদয় কলুষিত হওয়ার এবং সত্যের পথ থেকে বিচ্যুত হওয়ার সম্ভাব্যতর একটি
উপায়, আর সর্বজনবিদিত যে, লেখাপড়ার আসনে ছাত্রের সাথে ছাত্রীর বসাটা ফিতনার অন্যতম
বড় ধরনের একটি কারণ এবং সাথে সাথে পর্দাকে বর্জন করারও একটি জ্বলন্ত উদাহরণ, যে
পর্দাকে আল্লাহ তা‘আলা মুমিন নারীগণের জন্য শরী‘আতের বিধিবদ্ধ করে দিয়েছেন এবং
আল্লাহ তা‘আলা সূরা আন-নূরের পূর্বে উল্লিখিত আয়াতে যাদের বর্ণনা দিয়েছেন তারা
ভিন্ন অন্যান্য পরপুরুষের জন্য তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ করতে তাদেরকে নিষেধ করেছেন,
আর যে ব্যক্তি বলে যে, পর্দার নির্দেশটি ‘উম্মুহাতুল মুমিনীন’ তথা মুমিনজননীগণের
জন্য খাস বা নির্দিষ্ট, সে ব্যক্তি বাস্তবতা থেকে দূরে সরে গেল এবং এমন বহু দলীল-প্রমাণের
বিপরীতে অবস্থান নিল, যেসব দলীল ব্যাপকভাবে সকল যুগের সকল নারীকে (পর্দার
বাধ্যতামূলক বিধানের) অন্তর্ভুক্ত করে; এমনকি সে আল্লাহ তা‘আলার নিম্নোক্ত বাণীর
পরিপন্থী কথা বলল, যাতে তিনি বলেছেন:
﴿ذَٰلِكُمۡ أَطۡهَرُ لِقُلُوبِكُمۡ
وَقُلُوبِهِنَّۚ﴾
[الاحزاب: ٥٣]
“এ বিধান তোমাদের ও তাদের হৃদয়ের জন্য বেশি পবিত্র”। [সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ১৫৮]
সুতরাং এ কথা বলা বৈধ
হবে না যে, “পর্দা মুমিনজননীগণ ও
পুরুষ সাহাবীগণের হৃদয়ের জন্য বেশি পবিত্র, তাদের পরবর্তীদের জন্য নয়।” বরং কোনো
সন্দেহ নেই যে, ‘উম্মুহাতুল
মুমিনীন’ তথা মুমিনজননীগণ ও পুরুষ সাহাবী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমের চেয়ে তাদের পরবর্তী
প্রজন্মের লোকজনের জন্য পর্দা মেনে চলার প্রয়োজন অনেক বেশি। কারণ, ঈমানের শক্তি ও সত্য উপলব্ধির ক্ষমতার ব্যাপারে তাদেরকে সেরা
প্রজন্মের অন্তর্ভুক্ত বলে ঘোষণা করা হয়েছে। কেননা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভাষায় উম্মুহাতুল মুমিনীনসহ সকল পুরুষ ও মহিলা সাহাবী
রাদিয়াল্লাহু তা‘আলা ‘আনহুম হলেন নবীগণের পর সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ ও সর্বোত্তম
প্রজন্ম, যা সহীহ বুখারী ও মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে। সুতরাং পর্দা যখন তাদের হৃদয়ের
জন্য বেশি পবিত্র, তখন তাদের পরবর্তীগণের জন্য এ পবিত্রতার প্রয়োজন আরও অনেক বেশি
এবং তারা তাদের পূর্ববর্তীগণের চেয়ে পবিত্রতার অনেক বেশি অভাব বোধ করে। তাছাড়া কুরআন ও সুন্নাহ’র মধ্যে বর্ণিত
বক্তব্যগুলোর দ্বারা সাব্যস্ত কোনো বিধানকে, নির্দিষ্টকরণের বিষয়টিকে প্রমাণ করে
এমন কোনে সহীহ দলীল ব্যতীত, উম্মাতের কোনো একজনের জন্য নির্দিষ্ট করা বৈধ নয়। সুতরাং এ বক্তব্যগুলো ব্যাপকভাবে যেমন নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগের উম্মতের জন্য প্রযোজ্য, ঠিক তেমনিভাবে তাঁর
পরবর্তীতে কিয়ামত পর্যন্ত সকল উম্মতের জন্যও সমানভাবে প্রযোজ্য। কারণ, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তাঁর যুগের ও তাঁর
পরবর্তী কিয়ামত পর্যন্ত সকল যুগের ও কালের মানুষ ও জিন্ন জাতির নিকট প্রেরণ
করেছেন। যেমন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿قُلۡ يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّاسُ
إِنِّي رَسُولُ ٱللَّهِ إِلَيۡكُمۡ جَمِيعًا﴾ [الاعراف: ١٥٨]
“বলুন, হে মানুষ! নিশ্চয় আমি তোমাদের সবার প্রতি
আল্লাহর রাসূল”। [সূরা সাবা, আয়াত: ২৮]
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
﴿وَمَآ أَرۡسَلۡنَٰكَ إِلَّا كَآفَّةٗ
لِّلنَّاسِ بَشِيرٗا وَنَذِيرٗا﴾ [سبا: ٢٨]
“আর আমরা তো আপনাকে সমগ্র মানুষের জন্যই
সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে প্রেরণ করেছি”। [সূরা সাবা, আয়াত: ২৮]
অনুরূপভাবে আল-কুরআনুল
কারীমও শুধু নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের
যুগের মানুষের জন্য নাযিল হয় নি, বরং তা তাদের জন্য ও তাদের পরবর্তী এমন প্রত্যেক
ব্যক্তির জন্যই নাযিল হয়েছে, যার নিকট (কিয়ামত পর্যন্ত) আল্লাহর কিতাব পৌঁছবে,
যেমনটি আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:
﴿هَٰذَا بَلَٰغٞ لِّلنَّاسِ
وَلِيُنذَرُواْ بِهِۦ وَلِيَعۡلَمُوٓاْ أَنَّمَا هُوَ إِلَٰهٞ وَٰحِدٞ
وَلِيَذَّكَّرَ أُوْلُواْ ٱلۡأَلۡبَٰبِ ٥٢﴾ [ابراهيم: ٥٢]
“এটা মানুষের জন্য এক বার্তা, আর যাতে এটা দ্বারা
তাদেরকে সতর্ক করা হয় এবং তারা জানতে পারে যে, তিনিই কেবল এক সত্য ইলাহ, আর যাতে
বুদ্ধিমানগণ উপদেশ গ্রহণ করে”। [সূরা ইবরাহীম, আয়াত: ৫২]
আল্লাহ তা‘আলা আরও
বলেন:
﴿وَأُوحِيَ إِلَيَّ هَٰذَا ٱلۡقُرۡءَانُ
لِأُنذِرَكُم بِهِۦ وَمَنۢ بَلَغَۚ ﴾ [الانعام: ١٩]
“আর এ কুরআন আমার নিকট অহী করা হয়েছে যেন
তোমাদেরকে এবং যার নিকট তা পৌঁছবে তাদেরকে এর দ্বারা সতর্ক করতে পারি”। [সূরা আল-আন‘আম, আয়াত: ১৯]
নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে নারীগণ পুরুষদের
সাথে সহাবাস্থান করতেন না, মসজিদেও না, আর বাজারেও না, যেমন সহাবস্থান করার
প্রশ্নে সংশোধনকারীগণ নিষেধ করেন এবং আল-কুরআন, সুন্নাহ ও জাতির আলেম সমাজ যার
ফিতনা থেকে সতর্ক ও সাবধান করেন; বরং নবী
সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের মসজিদে নারীরা পুরুষদের পেছনে পুরুষদের শেষ
কাতারের পরের কাতারে সালাত আদায় করতেন এবং তিনি নারীদের প্রথম সারি বা কাতারের
সাথে পুরুষদের শেষ কাতারের ফিতনার আশঙ্কা থেকে সতর্ক করার জন্য বলতেন:
«خَيْرُ صُفُوفِ النِّسَاءِ آخِرُهَا،
وَشَرُّهَا أَوَّلُهَا. وَخَيْرُ صُفُوفِ الرِّجَالِ أَوَّلُهَا، وَشَرُّهَا
آخِرُهَا»
“নারীদের সর্বোত্তম সারি বা
কাতার হলো শেষ কাতার এবং সবচেয়ে মন্দ কাতার হলো তাদের প্রথম কাতার, আর পুরুষদের
সর্বোত্তম কাতার হলো প্রথম কাতার এবং সবচেয়ে মন্দ কাতার হলো তাদের শেষ কাতার।”[3]
আর নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে পুরুষদেরকে (মসজিদ
থেকে) প্রস্থানের সময় বিলম্ব করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হত, যাতে নারীগণ প্রস্থান
করতে পারে এবং মসজিদ থেকে তারা এমনভাবে বের হতে পারে যাতে মসজিদের দরজায় তাদের
সাথে পুরুষগণ মিশতে না পারে, অথচ তাঁরা পরুষ ও নারী নির্বিশেষে সকলে ঈমান ও
তাকওয়ার যে মানে প্রতিষ্ঠিত ছিলেন, সে হিসেবে তাদের পরবর্তীগণের অবস্থা কেমন হওয়া
উচিত? আর পুরুষদের সাথে ঘষাঘষি এবং রাস্তায় পথ চলার সময় পাস্পরের মাঝে সংস্পর্শের
দ্বারা ফিতনার আশঙ্কা থেকে সাবধান ও সতর্ক করার জন্য নারীদেরকে রাস্তাজুড়ে চলতে
নিষেধ করা হতো এবং রাস্তার প্রান্তসীমায় চলার জন্য নির্দেশ দেওয়া হতো, আর ফিতনার
আশঙ্কা থেকে সতর্ক করার জন্য আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা মুমিন নারীদেরকে নির্দেশ
দিয়েছেন যে, তারা যেন তাদের
চাদরের কিছু অংশ নিজেদের উপর টেনে দেয়; যাতে তার দ্বারা তারা তাদের সৌন্দর্যকে
ঢেকে রাখতে পারে এবং তিনি তাদেরকে ঐসব ব্যক্তি ব্যতীত অন্যসব পরপুরুষের উদ্দেশ্য তাদের
সৌন্দর্য প্রকাশ করতে নিষেধ করেছেন, যাদের নাম আল্লাহ তা‘আলা তাঁর মহান গ্রন্থ
আল-কুরআনে উল্লেখ করেছেন, যাতে ফিতনার কারণগুলোকে নির্মূল করা যায়, আর উৎসাহিত করা
যায় পবিত্রতা ও সততার উপায় অবলম্বন করার ব্যাপারে এবং আরও উৎসাহিত করা যায় ফ্যাসাদ
ও নারী-পুরুষের সহাবস্থানের বাহ্যিক দৃশ্য থেকে দূরে থাকার ব্যাপারে। সুতরাং কীভাবে সান‘আ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধানের
(আল্লাহ তাকে হিদায়াত করুন এবং এসব কিছুর পরেও তাকে তাঁর সঠিক পথের দিশা দিন) জন্য
নারী-পুরুষের সহাবস্থানের দিকে আহ্বান করা বৈধ হবে এবং কীভাবে বৈধ হবে এ দাবি করা
যে, ইসলাম নারী-পুরুষের সহাবস্থানের দিকে আহ্বান করে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের
ক্যাম্পাস মসজিদের মতো, আর লেখাপড়ার সময়গুলো সালাতের সময়ের মত?! আর ঐ ব্যক্তির
নিকট এটা জানা কথা যে, (পুরুষের পেছনে নারীদের সালাত আদায়ের বিষয়টির সাথে তাদের
একই সাথে শিক্ষার বিষয়টির তুলনা করার মধ্যে) পার্থক্য অনেক বড় এবং ব্যবধান ও
দূরত্ব অনেক বেশি, যে ব্যক্তি আল্লাহর আদেশ ও নিষেধের ব্যাপারে সঠিকভাবে উপলব্ধি
করে এবং আল্লাহ তা‘আলার হিকমত সম্পর্কে জানে। আর কীভাবে একজন মুমিনের জন্য এ কথা
বলা বৈধ হবে যে, লেখাপড়ার আসনে ছাত্রের বরাবর ছাত্রীর বসাটা পুরষের পেছনে তার
বোনদের সারিতে তাদের সাথে বসার মতই; এ কথা এমন কোনো ব্যক্তি বলতে পারে না, যার
সামান্য পরিমাণ ঈমান আছে এবং যা বলে তা বুঝার মতো যার ন্যূনতম বুদ্ধি বা উপলব্ধি
আছে। আর আমরা যদি শরী‘আতসম্মত
পর্দার অস্তিত্ব বা বাস্তবতাকে স্বীকার করি, তাহলে কেমন লাগে, যখন লেখাপড়ার আসনে
ছাত্রের সাথে একজন প্রদর্শনকারিনী ছাত্রী বসে পড়ে? ‘লা-হাওলা ওয়া লা-কুওয়াতা ইল্লা
বিল্লাহ’ (لا حول
ولا قوة إلا بالله)। আর আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿فَإِنَّهَا لَا تَعۡمَى ٱلۡأَبۡصَٰرُ
وَلَٰكِن تَعۡمَى ٱلۡقُلُوبُ ٱلَّتِي فِي ٱلصُّدُورِ ٤٦﴾ [الحج: ٤٦]
“বস্তুত চোখ তো অন্ধ নয়, বরং অন্ধ হচ্ছে বুকের
মধ্যে অবস্থিত হৃদয়” [সূরা আল-হজ, আয়াত: ৪৬]
আর তার (সান‘আ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধানের) কথা: (আর
বাস্তবতা হলো মুসলিমগণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগ থেকে একই মসজিদে
পুরুষ ও নারী সালাত আদায় করে আসছে, আর এ জন্যই শিক্ষার কাজটি একই জায়গায় হওয়া
আবশ্যক) এর জবাব হলো: এ কথা বলাটা সহীহ; কিন্তু নারীগণ মসজিদের পেছনের অংশে
পর্দাসহকারে ফিতনার যাবতীয় কারণ থেকে সতর্কতা ও সাবধানতা অবলম্বন করে অবস্থান
করতেন এবং পুরুষগণ অবস্থান করতেন মসজিদের সামনের অংশে; অতঃপর তারা (নারীরা) উপদেশ
ও খুতবা শুনতেন, সালাতে অংশগ্রহণ করতেন এবং তারা যা শুনতেন ও দেখতেন, তা থেকে তারা
তাদের দীনের বিধিবিধানসমূহ শিখে নিতেন। আর নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম
ঈদের দিনে পুরুষদেরকে ওয়াজ নসীহত করার পর নারীদের নিকট যেতেন, অতঃপর তাঁর খুতবা শোনা
থেকে তাদের দূরে থাকার কারণে তিনি তাদেরকে (পৃথকভাবে) ওয়াজ নসীহত করতেন ও উপদেশ
দিতেন। আর এসব কিছুর মধ্যে কোনো সমস্যা নেই এবং কোনো অসুবিধাও
নেই; বরং শুধু সমস্যা হলো সান‘আ
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধানের (আল্লাহ তাকে হিদায়াত করুন, তার হৃদয়কে পরিশুদ্ধ করে দিন
এবং তাকে তাঁর দীনের সঠিক বুঝ দান করুন) এ উক্তির
মধ্যে, যাতে তিনি বলেছেন: “(আর এ জন্যই শিক্ষার কাজটি একই জায়গায় হওয়া আবশ্যক)।”
তার জন্য কীভাবে বৈধ হবে আমাদের বর্তমান যুগে একই মসজিদে পুরুষদের পেছনে নারীগণের
সালাত আদায় করার সাথে শিক্ষার বিষয়টিকে তুলনা করা, অথচ আজকের দিনে বিদ্যমান
প্রচলিত শিক্ষার মধ্যে এবং নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে পুরুষদের
পেছনে নারীগণের সালাত আদায় করার ঘটনার মধ্যে অনেক পার্থক্য ও ব্যবধান রয়েছে, আর এ
জন্যেই সংস্কারপন্থীগণ শিক্ষাব্যবস্থায় পুরুষদের থেকে নারীদেরকে আলাদা করার দিকে
আহ্বান করেন, যাতে তারা (নারীরা) আলাদা থাকবে এবং যুবকরাও আলাদা থাকবে, এমনকি
নারীগণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে কোনো প্রকার পর্দা ও অসুবিধা ছাড়া একেবারে আরামে ও
অনায়াসে শিক্ষা অর্জন করতে সক্ষম হবে। কারণ, সালাতের সময়কালের বিপরীতে শিক্ষার
সময়কাল হলো অনেক লম্বা। কেননা একটি বিশেষ স্থানে অবস্থান করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান
থেকে জ্ঞান অর্জন করা তাদের (নারীদের) সকলের জন্য নিরাপদ, যাবতীয় ফিতনা থেকে অনেক
দূরে নিশ্চিন্ত অবস্থান এবং তাদের দ্বারা ফিতনার শিকার হওয়া থেকে যুবকদের জন্যেও
সবচেয়ে নিরাপদ; তাছাড়া শিক্ষাব্যবস্থায় যুবকদেরকে যুবতীদের থেকে আলাদা করে দেওয়াটা
তাদের জন্য নিরাপদ হওয়ার সাথে সাথে লেখাপড়ার প্রতি তাদের মনোযোগ, নিবিড় মনোনিবেশ
করা এবং শিক্ষকগণের নিকট থেকে ভালোভাবে শ্রবণ করা ও তাদের থেকে জ্ঞান অর্জন করার
সবচেয়ে সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করবে, আর সাথে সাথে তারা দূরে থাকবে যুবতীদের প্রতি
দৃষ্টি দেওয়া ও তাদের নিয়ে ব্যস্ত থাকা থেকে এবং দূরে থাকবে তাদের পরস্পরের প্রতি
বিষাক্ত নজর বা কুদৃষ্টি দেওয়া থেকে ও পাপাচারের দিকে ধাবিত করে এমন কথাবার্তা বলা
থেকে।
আর
তার (আল্লাহ তাকে সংশোধন করে দিন) চিন্তাধারা ও দাবি “ছাত্রদের থেকে ছাত্রীদেরকে
আলাদা করার দিকে আহ্বান করাটা গোঁড়ামি ও শরী‘আত বিরোধী” এটা একটা অযৌক্তিক দাবি;
বরং এ ধরনের আহ্বান করাটা প্রকৃতপক্ষে আল্লাহরই উপদেশ, তাঁর বান্দাগণের কল্যাণ
কামনা করা, তাঁর দীনের সংরক্ষণ করা এবং পূর্বে উল্লিখিত আল-কুরআনের আয়াতসমষ্টি ও হাদীস
শরীফদ্বয়ের প্রতি আমল করা। আর সান‘আ
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধানের প্রতি আমার উপদেশ হলো তিনি যেন আল্লাহ তা‘আলাকে ভয় করেন
এবং তিনি যে বক্তব্য দিয়েছেন তার জন্য আল্লাহ তা‘আলার নিকট তাওবা করেন, আর ফিরে
আসেন সঠিক ও সত্যের দিকে। কারণ, এ দিকে ফিরে আসাটাই হলো প্রকৃতপক্ষে মর্যাদার বিষয়
এবং জ্ঞান অনুসন্ধানকারী যে সত্য ও ন্যায়ের চিন্তা করে তার একটা চমকপ্রদ দলীল। আর
আল্লাহ তা‘আলার নিকট সবিনয় নিবেদন হলো তিনি যেন আমাদের সকলকে সঠিক সরল পথ প্রদর্শন
করেন এবং আমাদেরকে ও সকল মুসলিমকে তাঁর ব্যাপারে না জেনে কথা বলা থেকে রক্ষা করেন,
আরও রক্ষা করেন ফিতনার ভ্রষ্টতা ও শয়তানের প্ররোচনা থেকে, অনুরূপভাবে আল্লাহ তা‘আলার
নিকট আবেদন করছি, তিনি যেন মুসলিম সমাজের আলেমগণ ও প্রতিটি স্থানের নেতৃবৃন্দকে
দেশ ও জাতির ইহকাল ও পরকালের মঙ্গল হয় এমন চিন্তা-চেতনা ও সিদ্ধান্ত দেওয়ার তাওফীক
দান করেন এবং সকলকে তাঁর সরল সঠিক পথে পরিচালিত করেন, তিনি হলেন দানশীল, মহানুভব।
صلى الله على نبينا محمد
و على آله و صحبه و التابعين لهم بإحسان إلى يوم الدين
(আল্লাহ সালাত
পেশ করুন আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর এবং তাঁর পরিবার-পরিজন, সকল সাহাবী এবং কিয়ামতের দিন
পর্যন্ত তাদের যথাযথ অনুসরণকারীগণের উপর)।
শাইখ
আবদুল ‘আযীয ইবন আবদিল্লাহ ইবন বায
শিক্ষা-গবেষণা,
ফতোয়া ও দা‘ওয়া ব্যবস্থাপনার মহাপরিচালক।
স্কুল,
মাদরাসা ও বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে ছেলে-মেয়ের মাঝে মেলামেশার ভয়াবহ ঝুঁকি
প্রশ্ন:
এক যুবক বলে: সে ধনী পরিবারের সন্তান, লেখাপড়া করে একটা নারী-পুরুষ সহাবস্থান করা
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, যার সুবাদে একটা মেয়ের সাথে তার খারাপ সম্পর্ক গড়ে উঠে এবং সে
পাপচারের মধ্যে ডুবে যায়। সুতরাং সে তা পরিত্যাগ করার জন্য এখন কী করবে? আর তার
জন্য তাওবার সুযোগ আছে কি? আর এ তাওবার জন্য শর্তগুলো কী কী?
উত্তর:
এ প্রশ্নে দু’টি মাসআলা:
প্রথমত: আমাদের জন্য
উচিত হলো ইসলামী রাষ্ট্রগুলোর শাসকবর্গের মনোযোগ আকর্ষণ করা এ জন্য যে, তারা তাদের
নাগরিকগণের জন্য শিক্ষার ব্যবস্থা করেছেন নারী ও পুরুষের সহাবস্থানে গড়া
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। কারণ, এ
অবস্থাটি ইসলামী শরী‘আতের বিরোধী এবং তার ওপর বিদ্যমান থাকাটা মুসলিমগণের জন্য
উচিত নয়।
নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«خَيْرُ صُفُوفِ النِّسَاءِ آخِرُهَا،
وَشَرُّهَا أَوَّلُهَا»
এটা এ
জন্য যে, তাদের প্রথম সারি পুরুষদের একবারে নিকটবর্তী সারি, আর শেষ সারি পুরুষদের
থেকে দূরবর্তী সারি। সুতরাং যখন সালাতের মতো ‘ইবাদাতের স্থানে নারী ও পুরুষদের
মাঝে দূরত্ব বজায় রাখার ও তাদের মাঝে সহাবস্থান না করার জন্য উৎসাহিত করা হয়,
যেখানে মুসল্লি (সালাত আদায়কারী ব্যক্তি) অনুভব করে যে, সে দুনিয়া সংশ্লিষ্ট
সবকিছু থেকে দূরে থেকে তার রবের সামনে উপস্থিত, তখন আপনার অবস্থাটা কী হওয়া উচিত যখন
নারী ও পুরুষে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে সহাবস্থানের মতো পরিবেশ সৃষ্টি হবে? তখন কি
তার থেকে দূরুত্ব বজায় রাখা ও সহাবস্থানের বিষয়টি বর্জন করাটা আরও অধিক উত্তম হবে
না? নারীদের সাথে পুরুষদের মেলামেশা ও উঠাবসার বিষয়টি একটি বড় ধরনের ফিতনা, যাকে
আমাদের শত্রুগণ রংচং লাগিয়ে আকর্ষণীয় করে দিয়েছে, শেষ পর্যন্ত আমাদের অনেকে সে
ফিতনার শিকার হয়েছে।
সহীহ
বুখারীতে উম্মু সালামা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:
«كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ
عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا سَلَّمَ قَامَ النِّسَاءُ حِينَ يَقْضِي تَسْلِيمَهُ
وَيَمْكُثُ هُوَ فِي مَقَامِهِ يَسِيرًا قَبْلَ أَنْ يَقُومَ قَالَتْ : نَرَى وَاللَّهُ أَعْلَمُ أَنَّ ذَلِكَ كَانَ
لِكَيْ يَنْصَرِفَ النِّسَاءُ قَبْلَ أَنْ يُدْرِكَهُنَّ أَحَدٌ مِنْ الرِّجَالِ»
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন (সালাতে) সালাম
ফিরাতেন, তখন তাঁর সালাম ফিরানোর কাজটি শেষ হওয়ার সাথে সাথে নারীগণ দাঁড়িয়ে যেত
এবং তিনি দাঁড়ানোর আগে তাঁর অবস্থানে কিছু সময় অবস্থান করতেন।
তিনি (বর্ণনাকারিনী) বলেন: আমরা মনে করতাম, (আর আল্লাহই ভালো জানেন) এর উদ্দেশ্য
হলো, যাতে পুরুষদের মধ্য থেকে কেউ নারীদেরকে নাগাল পাওয়ার আগেই তারা চলে যেতে পারে।”[5]
ইসলামী
রাষ্ট্রগুলোর দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গের জন্য আবশ্যকীয় কর্তব্য হলো, তারা এ
বিষয়টিকে তাদের দেখাশুনার দায়িত্ব হিসেবে গ্রহণ করা এবং তাদের নাগরিকগণকে যাবতীয়
খারাপি ও ফিতনার উপায়-উপকরণ বা উপলক্ষ্য থেকে রক্ষা করা। কারণ, তাদেরকে যে দায়িত্ব বা
ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে, অচিরেই আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে তাদের কর্তব্য সম্পর্কে
জিজ্ঞাসা করবেন। আর তাদের জেনে রাখা উচিত যে, তারা যখন আল্লাহ তা‘আলার আনুগত্য
করবে এবং কম হউক বেশি হউক তাদের সকল কাজে তাঁর শরী‘আত অনুযায়ী শাসনব্যবস্থা
পরিচালনা করবে, তখন আল্লাহ তা‘আলা অবশ্যই তাদের হৃদয়গুলোকে ঐক্যবদ্ধ করে
দেবেন এবং ভালোবাসা ও পারস্পরিক কল্যাণ কামনায় তাদের মনগুলো ভরে দেবেন, আর তাদের
জন্য তাদের কাজসমূহ সহজ করে দেবেন এবং তাদের প্রতি তাদের নাগরিকগণ বন্ধুত্ব ও
আনুগত্যের পরকাষ্ঠা প্রদর্শন করবেন।
নারী ও
পুরুষের এ ধরনের সহাবস্থানের মাঝে যেসব খারাপি ও ফিতনা-ফ্যাসাদের সৃষ্টি হয়, সেসব
ব্যাপারে মুসলিম মিল্লাতের শাসক ও সাধারণ নাগরিকগণের চিন্তাভাবনা করা উচিত, আর এর উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত ও
সবচেয়ে বড় প্রমাণ হলো এ প্রশ্নকর্তা খারাপ সম্পর্কের ব্যাপারে যা উল্লেখ করেছে,
যার কু-প্রভাব ও পাপসমূহ থেকে এখন সে পরিত্রাণ পাওয়ার চেষ্টা করছে।
বস্তুত নারী-পুরুষে
সহাবস্থানের মতো ফিতনাটিকে সঠিক পরিকল্পনা ও সংস্কারের ব্যাপারে দৃঢ় সিদ্ধান্ত
গ্রহণ করার দ্বারা নির্মূল করা সম্ভব, আর এটা হবে কতগুলো বিশেষ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান
তথা স্কুল, কলেজ, মাদরাসা ও বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি করার মাধ্যমে, যেগুলোতে শুধু
নারীরাই পড়াশুনা করবে এবং তাদের সাথে সেখানে পুরুষদের অংশগ্রহণ থাকবে না।
আর যখন
নারীগণ পুরুষগণের সহোদর হয়, তখন তাদের (নারীদের) জন্য অধিকার আছে তাদের (পুরুষদের)
কাছ থেকে উপকারী জ্ঞান অর্জন করার, যেমনিভাবে অধিকার আছে পুরুষদেরও; কিন্তু তাদের
(নারীদের) জন্য আমাদের পুরুষদের আবশ্যকীয় করণীয় হলো তাদেরকে শিক্ষা দেওয়ার ক্যাম্পাসটি
পুরুষদের শিক্ষার ক্যাম্পাস থেকে আলাদা করার ব্যবস্থা করা। সহীহ বুখারীতে আবূ সা‘ঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে
বর্ণিত, তিনি বলেন:
«جَاءَتِ امْرَأَة إِلَى رَسُولِ اللهِ
صلى الله عليه وسلم، فَقَالَتْ: يَا رَسُولَ اللهِ ذَهَبَ الرِّجَالُ بِحَدِيثِكَ،
فَاجْعَلْ لَنَا مِنْ نَفْسِكَ يَوْمًا نَأْتِيكَ فِيهِ، تُعَلِّمُنَا مِمَّا
عَلَّمَكَ اللهُ فَقَالَ: اجْتَمِعْنَ فِي يَوْمِ كَذَا وَكَذَا، فِي مَكَانِ
كَذَا وَكَذَا. فَاجْتَمَعْنَ، فَأَتَاهُنَّ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم،
فَعَلَّمَهُنَّ مِمَّا عَلَّمَهُ اللهُ ...»
“জনৈকা মহিলা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে
বলল: হে আল্লাহর রাসূল! আপনার হাদীস তো শুধু পুরুষ লোকেরাই শুনতে পায়। সুতরাং
আপনার পক্ষ থেকে আমাদের জন্য একটি দিন নির্দিষ্ট করে দিন, যে দিন আমরা আপনার নিকট
আসব, আল্লাহ আপনাকে যা কিছু শিক্ষা দিয়েছেন, তা থেকে আপনি আমাদের শিক্ষা দেবেন।
তখন তিনি বললেন, তোমরা অমুক অমুক দিন অমুক অমুক স্থানে সমবেত হবে।
তারপর (নির্দিষ্ট দিনে) তাঁরা সমবেত হলেন এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম তাদের কাছে এলেন এবং আল্লাহ তাঁকে যা শিক্ষা দিয়েছেন, তা থেকে তাদের শিক্ষা
দিলেন....”।[6]
আর এটা
হলো শিক্ষার জন্য নারীদেরকে বিশেষ কোনো স্থানে আলাদা করে নেওয়ার ব্যাপারে সুস্পষ্ট
বক্তব্য। কেননা
তিনি (নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম) তাদেরকে বলেন নি যে, তোমরা পুরুষদের সাথে উপস্থিত হতে পার না?! আল্লাহ
তা‘আলার নিকট প্রর্থনা করছি যে, তিনি যেন সকল মুসলিমকে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাহাবীগণের সুন্নাতের উপর চলার তাওফীক দান করুন, যাতে তারা এর
দ্বারা দুনিয়া ও আখিরাতে ইয্যত ও সম্মান লাভ করতে পারে।
দ্বিতীয়
মাসআলা: প্রশ্নকর্তার প্রশ্ন, যা সে নিজ
সম্পর্কে অবতারণা করেছে- তা হলো, সে একটা মেয়ের সাথে তার খারাপ
সম্পর্ক স্থাপন করার মাধ্যমে পাপাচারে নিমজ্জিত হয়ে গেছে, এখন সে কী করবে? তার
জন্য তাওবার সুযোগ আছে কি? থাকলে তার শর্তগুলো কী কী?
জবাবে আমি
তাকে সুসংবাদ দিচ্ছি যে, প্রত্যেক তাওবাকারীর জন্যই তাওবার দরজা খোলা আছে, আর আল্লাহ
তাওবাকারীগণকে ভালোবাসেন এবং যে ব্যক্তি গুনাহ্ থেকে তাওবা করে, তিনি তার সকল
গুনাহ্ ক্ষমা করে দেন।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿وَٱلَّذِينَ لَا يَدۡعُونَ مَعَ ٱللَّهِ
إِلَٰهًا ءَاخَرَ وَلَا يَقۡتُلُونَ ٱلنَّفۡسَ ٱلَّتِي حَرَّمَ ٱللَّهُ إِلَّا بِٱلۡحَقِّ
وَلَا يَزۡنُونَۚ وَمَن يَفۡعَلۡ ذَٰلِكَ يَلۡقَ أَثَامٗا ٦٨ يُضَٰعَفۡ لَهُ ٱلۡعَذَابُ
يَوۡمَ ٱلۡقِيَٰمَةِ وَيَخۡلُدۡ فِيهِۦ مُهَانًا ٦٩ إِلَّا مَن تَابَ وَءَامَنَ
وَعَمِلَ عَمَلٗا صَٰلِحٗا فَأُوْلَٰٓئِكَ يُبَدِّلُ ٱللَّهُ سَئَِّاتِهِمۡ
حَسَنَٰتٖۗ وَكَانَ ٱللَّهُ غَفُورٗا رَّحِيمٗا ٧٠ وَمَن تَابَ وَعَمِلَ صَٰلِحٗا
فَإِنَّهُۥ يَتُوبُ إِلَى ٱللَّهِ مَتَابٗا ٧١﴾ [الفرقان: ٦٧، ٧١]
“এবং তারা আল্লাহর সাথে কোনো ইলাহ-কে ডাকে না। আর আল্লাহ যার হত্যা নিষেধ করেছেন, যথার্থ কারণ ছাড়া
তাকে হত্যা করে না। আর তারা ব্যভিচার
করে না, যে এগুলো করে সে শাস্তি ভোগ করবে। কিয়ামতের দিন তার শাস্তি
বর্ধিতভাবে প্রদান করা হবে এবং সেখানে সে স্থায়ী হবে হীন অবস্থায়, তবে যে তাওবা
করে, ঈমান আনে ও সৎকাজ
করে, আল্লাহ তাদের গুণাহসমূহ নেক দ্বারা পরিবর্তন করে দেবেন। আর আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। আর যে তাওবা করে ও সৎকাজ করে, সে তো সম্পূর্ণরূপে আল্লাহর অভিমুখী হয়”। [সূরা আল-ফুরকান, আয়াত: ৬৭-৭১]
তাওবার শর্ত পাঁচটি:
প্রথম শর্ত: তাওবা হতে
হবে খালেস তথা নির্ভেজালভাবে আল্লাহ তা‘আলার উদ্দেশ্যে, যাতে কোনো প্রকার
প্রদর্শনী ও কোনো সৃষ্টিকে ভয় করার মত কোনো বিষয় থাকবে না; বরং তা হবে আল্লাহ তা‘আলার
সন্তুষ্টি অর্জনের জন্যে। কারণ, মানুষ তার রবের উদ্দেশ্য একনিষ্ঠ না হয়ে তাঁর
নৈকট্য হাসিলের জন্য যে আমলই করুক না কেন, তা অর্থহীন ও বাতিল বলে গণ্য হবে। আল্লাহ
তা‘আলা হাদীসে কুদসীতে বলেন:
«أنَا أغْنَى الشُّرَكَاءِ عَنِ
الشِّرْكِ ، مَنْ عَمِلَ عَمَلاً أشْرَكَ فِيهِ مَعِي غَيْرِي تَرَكْتُهُ
وَشِرْكَهُ»
“আমি শির্ককারীদের (মুশরিকদের) আরোপিত শির্ক বা অংশ থেকে মুক্ত।
যে ব্যক্তি এমন কোনো কাজ করল যার মধ্যে আমার সাথে অন্য কাউকে শরীক করল, আমি তাকে
এবং তার শির্ককে প্রত্যাখ্যান করি।”[7]
দ্বিতীয় শর্ত: সে যে
গুনাহের কাজ করেছে, তার জন্য অনুতপ্ত ও লজ্জিত হওয়া এবং এ ব্যাপারে নিজেকে অপরাধী
মনে করা, এমনকি আল্লাহ তা‘আলার কাছ থেকে ক্ষমা ও মার্জনা পাওয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভব
করা।
তৃতীয় শর্ত: যদি গুনাহের
কাজের সাথে লিপ্ত থাকে, তাহলে তা পরিত্যাগ করা। কারণ, গুনাহের কাজ অব্যাহত রাখলে
কোনো তাওবাই গ্রহণযোগ্য হবে না। সুতরাং গুনাহগার ব্যক্তি যদি বলে: আমি গুনাহ থেকে
তাওবা করলাম অথচ সে তা অব্যাহতভাবে সে অপরাধ করেই যাচ্ছে, তাহলে এটা আল্লাহ
তা‘আলার সাথে ঠাট্টা-বিদ্রূপ বলে গণ্য হবে। যেমন, তুমি
যদি কাউকে উদ্দেশ্য করে বল, আপনার সাথে আমি যে বেয়াদবি করেছি আমি তার জন্য লজ্জিত
ও অনুতপ্ত, অথচ তুমি তখনও তার সাথে বেয়াদবি করেই যাচ্ছ, তাহলে মনে হবে যেন তুমি
তার সাথে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করছ, আর মহান রব
আল্লাহ তা‘আলা তার চেয়ে অনেক বেশি মহামহিয়ান ও গৌরবময় যে, তুমি দাবি করবে, তুমি
তাঁর অবাধ্য হওয়া থেকে তাওবা করেছ, অথচ তুমি তা অব্যাহতভাবে চালিয়ে যাচ্ছ।
চতুর্থ শর্ত: ভবিষ্যতে এ
ধরনের অপরাধ পুনরায় আর করবে না বলে দৃঢ় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা।
পঞ্চম শর্ত: তাওবাটি তার
সময়মতো হওয়া, যে সময়ে তাওবা করলে তাওবাকারীর তাওবা গ্রহণ করা হয় অর্থাৎ তাওবাটি
হতে হবে মানুষের মৃত্যুর ঘন্টা বেজে যাওয়ার আগে এবং সূর্য পশ্চিম দিক থেকে উদয়
হওয়ার পূর্বে। কেননা, সূর্য
পশ্চিম দিক থেকে উদয় হওয়ার পরে তাওবা করলে সে তাওবা কোনো উপকারে লাগবে না। কারণ,
আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:
﴿هَلۡ يَنظُرُونَ إِلَّآ أَن تَأۡتِيَهُمُ
ٱلۡمَلَٰٓئِكَةُ أَوۡ يَأۡتِيَ رَبُّكَ أَوۡ يَأۡتِيَ بَعۡضُ ءَايَٰتِ رَبِّكَۗ
يَوۡمَ يَأۡتِي بَعۡضُ ءَايَٰتِ رَبِّكَ لَا يَنفَعُ نَفۡسًا إِيمَٰنُهَا لَمۡ
تَكُنۡ ءَامَنَتۡ مِن قَبۡلُ أَوۡ كَسَبَتۡ فِيٓ إِيمَٰنِهَا خَيۡرٗاۗ قُلِ ٱنتَظِرُوٓاْ
إِنَّا مُنتَظِرُونَ ١٥٨﴾ [الانعام: ١٥٨]
“তারা কি শুধু এরই প্রতীক্ষা করে যে, তাদের কাছে ফিরিশতা আসবে কিংবা আপনার রব আসবেন কিংবা আপনার রবের কোনো
নিদর্শন আসবে? যেদিন আপনার রবের
কোনো নিদর্শন আসবে, সেদিন তার ঈমান কোন কাজে আসবে না, যে পূর্বে ঈমান আনে নি অথবা
যে ব্যক্তি ঈমানের মাধ্যমে কল্যাণ লাভ করে নি। বলুন, ‘তোমরা প্রতীক্ষা কর, আমরাও প্রতীক্ষায় রইলাম’।” [সূরা আল-আন‘আম, আয়াত: ১৫৮]
আর সে কোনো নিদর্শন
মানেই সূর্য তার অস্ত যাওয়ার স্থান (পশ্চিম দিক) থেকে উদয় হওয়া, অনুরূপভাবে আরেকটি
নিদর্শন মৃত্যু উপস্থিত হওয়ার সময়টিও তাওবা কবুল না হওয়ার সময়। কেননা, আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:
﴿وَلَيۡسَتِ ٱلتَّوۡبَةُ
لِلَّذِينَ يَعۡمَلُونَ ٱلسَّئَِّاتِ حَتَّىٰٓ إِذَا حَضَرَ أَحَدَهُمُ ٱلۡمَوۡتُ
قَالَ إِنِّي تُبۡتُ ٱلۡـَٰٔنَ وَلَا ٱلَّذِينَ يَمُوتُونَ وَهُمۡ كُفَّارٌۚ
أُوْلَٰٓئِكَ أَعۡتَدۡنَا لَهُمۡ عَذَابًا أَلِيمٗا ١٨﴾ [النساء: ١٨]
“তাওবা তাদের জন্য নয়, যারা আজীবন মন্দ কাজ করে,
অবশেষে তাদের কারো মৃত্যু উপস্থিত হলে সে বলে, ‘আমি এখন তাওবা করছি’ এবং তাদের
জন্যও নয়, যাদের মৃত্যু হয় কাফের অবস্থায়। এরাই তারা যাদের জন্য আমরা কষ্টদায়ক
শাস্তির ব্যবস্থা করেছি”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১৮]
সুতরাং এ পাঁচটি শর্ত
যদি আপনার মধ্যে যথাযথভাবে বাস্তবায়িত থাকে, তাহলে আপনার তাওবা গ্রহণযোগ্য হবে
ইনশা-আল্লাহ।
শাইখ
মুহাম্মাদ ইবন সালেহ আল-‘উসাইমীন
নারী-পুরুষ
সম্মিলিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করার বিধান
প্রশ্ন:
আমি বিদেশে পড়ুয়া একজন ছাত্র এবং সেখানকার বিশ্ববিদ্যালয়টি নারী-পুরুষ সম্মিলিত,
আমার প্রশ্ন হলো: এ বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করাটা আমার জন্য বৈধ হবে কিনা?
উত্তর:
যে মুসিলম ব্যক্তি নিজের মুক্তি চায় আমরা তাকে উপদেশ দিচ্ছি যে, সে যেন অনিষ্টতা ও
ফিতনার যাবতীয় কারণ ও উপায়-উপকরণ থেকে দূরে থাকে, আর কোনো সন্দেহ নেই যে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যুবতীদের সাথে
মেলামেশা করাটা ফিতনা-ফ্যাসাদ সংঘটিত হওয়ার এবং যিনা-ব্যভিচার ছড়িয়ে যাওয়ার অন্যতম
কারণ। আর কোনো ব্যক্তি যদি নিজেকে হিফাযত করার উদ্যোগ গ্রহণ করে, তার জন্য আবশ্যক
হলো কঠিনভাবে সাধনা করা; কিন্তু ব্যক্তি যখন এর দ্বারা পরীক্ষার সম্মুখীন হবে, তখন
তার জন্য আবশ্যকীয় করণীয় হচ্ছে সতর্ক হওয়া, এর থেকে দূরে সরে থাকা, দৃষ্টিকে অবনমিত
রাখা, লজ্জাস্থানকে হিফাযত করা এবং নারীদের নিকটবর্তী না হওয়ার জন্য সাধ্যানুসারে
চেষ্টা করবে, আর আল্লাহই সবচেয়ে ভালো জানেন।
শাইখ
আবদুল্লাহ ইবন আবদির রহমান আল-জিবরীন
নারী
ও পুরুষে সহশিক্ষার ক্ষেত্রে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি
প্রশ্ন:
কিছু সংখ্যক ইসলামী রাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার ব্যাপারে ইসলামের
অবস্থান বা দৃষ্টিভঙ্গি কী, যেখানে বেশি বেশি অপরাধ, পাপাচার ও কুফুরী পরিলক্ষিত
হয়। কারণ, সেখানে যুবতীরা প্রায় উলঙ্গ এবং যুবকরা বিপথগামী পথভ্রষ্ট, আর নারী ও
পুরুষে খোলাখুলি সহাবস্থান এবং লজ্জাকর ও অশালীন পরিবেশকে ইসলাম পছন্দ করে না; বরং
ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে লেখাপড়ার সুষ্ঠু সুন্দর পরিবেশের ব্যাপারে উৎসাহিত করে
অথচ এ বিশ্ববিদ্যালগুলোর কোনো কোনো অনুষদে এক আল্লাহ তা‘আলাকে সাজদাহ করার জন্য
একটি মসজিদ পর্যন্ত পাওয়া যায় না, আর ইউনিফর্ম বা প্রাতিষ্ঠানিক পোশাক হিসেবে যে
পোশাক নির্ধারণ করা হয় তা হলো ইউরোপীয় মুশরিকদের পোশাক এবং এ নির্ধারিত পোশাক
পরিধান করা ব্যতীত জামা (কামিজ) ও পাগড়ীর মত পোশাক পরিধান করে কোনো ছাত্র পরীক্ষায়
অংশগ্রহণ করার সুযোগ পায় না। কেননা এটা তাদের নিকট সেকেলে ও মূর্খতা। সুতরাং
এমতাবস্থায় এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করার বিধান কী হবে?
উত্তর:
প্রথমত: উপকারী ও জনকল্যাণমূলক জ্ঞান-বিজ্ঞানের শাখা প্রশাখায় জ্ঞান অর্জন ফরযে
কিফায়া[8]। সুতরাং মুসলিম জাতির ওপর,
বিশেষ করে তাদের শাসকশ্রেণির ওপর আবশ্যক হলো, তার জাতির মধ্য থেকে নারী ও পুরুষদের
সমন্বয়ে বিজ্ঞানের বিভিন্ন প্রকার প্রয়োজনীয় ও জরুরি বিষয়গুলোর জ্ঞান অর্জনের জন্য
একটি গোষ্ঠীকে তৈরি করবে এবং তাদের জন্য সে জ্ঞান অর্জনের পথকে সহজ করে দেবে, যাতে
জাতি তার সভ্যতা ও সংস্কৃতিকে সংরক্ষণ করতে, অসুস্থদের চিকিৎসাসেবা দিতে এবং
বিপজ্জনক সময় বা স্থানগুলো এড়িয়ে চলতে সক্ষম হয়। সুতরাং যদি এ কাজটি সম্পন্ন
হয়, তাহলে গোটা জাতি দায়িত্বমুক্ত হবে এবং সাওয়াবের আশা করতে পারবে নতুবা
দুর্যোগের সম্মুখীন হওয়ার আশঙ্কা থাকবে এবং শাস্তির বাণী অবশ্যাম্ভাবী হয়ে যাবে।
দ্বিতীয়ত:
শিক্ষাব্যবস্থায় ছাত্রীদের সাথে ছাত্রদের এবং শিক্ষিকাদের সাথে শিক্ষকদের
সহাবস্থান করা হারাম। কেননা
তা ফিতনা, যৌন উস্কানি ও অশ্লীলতায় নিমজ্জিত হওয়ার দিকে ধাবিত করে, আর অপরাধ বহুগুণে বৃদ্ধি পাবে
এবং বড় বড় অন্যায় সংঘটিত হবে, যখন শিক্ষিকাগণ বা ছাত্রীগণ তাদের শরীরের গোপনীয়
বিষয়গুলোর কোনো কিছু প্রকাশ করে, অথবা তারা এমন পাতলা পোশাক পরিধান করে যার কারণে
ভিতরের সবকিছু দেখা যায়, অথবা সংকীর্ণ বা টাইটপিট পোশাক পরিধান করে, যা তাদের
অঙ্গগুলোর দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও উচ্চতা সবকিছু বুঝিয়ে দেয়, অথবা তারা ছাত্র বা
শিক্ষকবৃন্দের সাথে হাসি, রসিকতা, কৌতক করে, অথবা এ ধরনের এমন কোনো আচরণ করে, যা
সম্মানহানি, ধর্ষণ ও নৈরাজ্যের দিকে ধাবিত করে।
সুতরাং
রাষ্ট্রীয় প্রশাসনযন্ত্রের দায়িত্ব হলো সম্মানহানি, ধর্ষণ এবং জাতীয় জীবনে নৈরাজ্য
ও বিশৃঙ্খলা রোধ করার জন্য ছাত্রদের জন্য পৃথক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, স্কুল, কলেজ,
মাদরাসা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থা করা এবং অনুরূপভাবে ছাত্রীদের জন্য পৃথক
প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থা করা, আর এর মাধ্যমে আত্মমর্যাদাসম্পন্ন ও দীনদার
ব্যক্তিবর্গের পক্ষে কোনো রকম সংকট বা জটিলতা ছাড়াই শিক্ষাদান ও শিক্ষাগ্রহণের
কাজটি অত্যন্ত সুচারুরূপে সম্পন্ন করা সম্ভব হবে। আর প্রশাসনিক দায়িত্বশীলগণ যখন
তাদের দায়িত্ব পালন না করেন এবং শিক্ষাব্যবস্থায় মেয়েদের থেকে ছেলেদেরকে আলাদা
করতে ব্যর্থ হন, তখন ঐসব ব্যক্তিবর্গের চালচলনের সাথে যোগদান করা বা সংহতি প্রকাশ
করা বৈধ হবে না, তবে ব্যক্তি যখন নিজ উদ্যোগে উপদেশ প্রদান এবং এ ব্যাপারে তার
বন্ধু-বান্ধব ও শিক্ষকগণের সহযোগিতার মাধ্যমে অশ্লীলতা ও খারাপি কমাতে সক্ষম হবে
বলে মনে করবে এবং ফিতনা থেকে নিজেকে নিরাপদ মনে করবে, তখন ভিন্ন কথা (অর্থাৎ তখন
তাদের সাথে যোগদান করা বৈধ হবে)।
স্থায়ী
ফতোয়া বোর্ড
আল্লাহর
দিকে আহ্বানের উদ্দেশ্যে নারী-পুরুষ সম্মিলিত বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়ার বিধান
প্রশ্ন:
পুরুষ ব্যক্তির জন্য এমন বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করা বৈধ হবে কিনা, যেখানে একই
কক্ষে নারী ও পুরুষ সহাবস্থান করে, আপনার জ্ঞাতার্থে বলছি যে সেখানে আল্লাহর দিকে
আহ্বান করার ব্যাপারে ছাত্রের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে?
উত্তর:
আমার মতে কোনো মানুষের জন্য এমন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করা বৈধ নয়, যেখানে
নারী ও পুরুষ সহাবস্থান করে, চাই সে পুরুষ হউক অথবা নারী হউক। কারণ, তাতে তার সচ্চরিত্রতা,
সততা ও নৈতিকতার ব্যাপারে প্রচণ্ড রকমের বিপদ রয়েছে। কেননা মানুষ যতই পবিত্রতা, সততা
ও নৈতিকতাসম্পন্ন হউক না কেন, যখন সে তার চেয়ারের পাশের চেয়ারে কোনো নারীকে দেখতে
পাবে, বিশেষ করে সে যদি রূপসী ও সৌন্দর্য প্রদর্শনকারিনী হয়, তখন ফিতনা ও মন্দ
থেকে নিরাপদ থাকা তার পক্ষে কষ্টকর হয়ে যাবে। আর এমন প্রত্যেক বিষয় বা বস্তুই
হারাম ও অবৈধ বলে গণ্য হবে, যা ফিতনা ও খারাপির দিকে নিয়ে যায়। সুতরাং আমরা আল্লাহ
তা‘আলার নিকট আমাদের মুসলিম ভাইদের জন্য প্রার্থনা করি, তিনি যেন তাদেরকে এ ধরনের
বিষয়াদি থেকে মুক্ত রাখেন, যা তাদের যুবকদের জন্য শুধু অকল্যাণ, ফিতনা ও বিপর্যয়...
নিয়ে আসে এমনকি এ বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া যদি অন্য কাঙ্খিত বিশ্ববিদ্যালয় পাওয়া না
যায়, তাহলে লেখাপড়া ছেড়ে দিয়ে অন্য শহরে গিয়ে লেখাপড়া করতে হবে, যেখানে এ ধরনের
সহাবস্থান নেই। অতএব, আমি এটাকে জায়েয মনে করি না; হয়তো আমি ছাড়া কেউ কেউ ভিন্ন
মতও পোষণ করতে পারেন।
শাইখ
মুহাম্মাদ ইবন সালেহ আল-‘উসাইমীন
নারী-পুরুষ সম্মিলিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতার বিধান
প্রশ্ন:
যে শিক্ষক ছেলে ও মেয়ে সম্মিলিত ক্লাসে পাঠদান করেন অথবা পাঠদান করেন শুধু মেয়েদের
ক্লাসে, যারা বয়ঃসন্ধিতে উপনীত, তিনি যখন তাদের দিকে তাকান, তখন গুনাহগার হবেন কি?
উত্তর:
পুরুষ ব্যক্তির জন্য আবশ্যক হলো নারীদের দিকে তাকানো থেকে নিজ দৃষ্টিকে সংযত রাখা। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:
﴿قُل لِّلۡمُؤۡمِنِينَ يَغُضُّواْ
مِنۡ أَبۡصَٰرِهِمۡ وَيَحۡفَظُواْ فُرُوجَهُمۡۚ ذَٰلِكَ أَزۡكَىٰ لَهُمۡۚ إِنَّ ٱللَّهَ
خَبِيرُۢ بِمَا يَصۡنَعُونَ ٣٠﴾ [النور: ٣٠ ]
“মুমিনদের বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত করে এবং তাদের
লজ্জাস্থানের হিফাযত করে। এটিই তাদের জন্য অধিক পবিত্র। তারা যা করে নিশ্চয় আল্লাহ সে বিষয়ে সম্যক
অবহিত”। [সূরা আন-নূর, আয়াত: ৩০]
আর ইমাম মুসলিম ও আবু
দাউদ রহ. প্রমুখ জারির ইবন আবদিল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে হাদীস বর্ণনা
করেছেন, তিনি বলেন:
«سألت رسول الله صلى الله عليه
وسلم عن نَظَرِ الفَجْأَةِ , فَقَالَ :
اصْرِفْ نَظرَكَ».
“আমি
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে (অপরিচিত নারীর দিকে) হঠাৎ করে
দৃষ্টি পড়ার বিষয়ে প্রশ্ন করলাম। জবাবে তিনি বললেন: তুমি তোমার
দৃষ্টিকে ফিরিয়ে নাও।”
এ হাদীসের শব্দগুলো ইমাম আবু দাউদ রহ.-এর। আর শিক্ষার ক্ষেত্রে নারী ও
পুরুষের মাঝে সহাবস্থান বৈধ নয়। কেননা এটা
তাদের মাঝে অশ্লীল কাজ সংঘটিত হওয়ার অন্যতম উপায় ও মাধ্যম।
প্রাথমিক
স্তরে নারী শিক্ষক কর্তৃক ছেলে সন্তানদেরকে পাঠদানের ভয়াবহ ক্ষতি
শাইখ
আবদুল আযীয ইবন বায
সমস্ত
প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি একক, আর সালাত (দুরূদ) ও সালাম নবী
সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি, যার পরে আর কোনো নবী নেই। অতঃপর.... ৩০/০২/১৩৯৭
হি. তারিখে প্রকাশিত ‘আল-মাদীনা’ সংবাদপত্রের ৩৮৯৮তম সংখ্যায় ‘জীবন জীবনের জন্য’/‘হৃদয়
হৃদয়ের জন্য’ (وجها
لوجه) শিরোনামে ‘নূরাহ বিনতে...’-এর লেখাটি
সম্পর্কে অবগত হয়েছি এবং মূলকথা হলো উল্লিখিত নূরাহ জেদ্দায় শিক্ষা-বিষয়ক অনুষদের
ডিন ফায়েযা আদ-দিবাগের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত একটি বৈঠকে যোগ দেন এবং এক পর্যায়ে
উল্লিখিত নূরাহ প্রাথমিক স্তরে (যদিও তা পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত) আমাদের ছেলে
সন্তানদেরকে শিক্ষাদানের কাজে নারী শিক্ষক না থাকার কারণে ফায়েযাকে অদ্ভুত নারী
বলে সম্বোধন করেছেন, আর
উক্ত নূরাহ তার বক্তব্যে এর কতগুলো কারণও উল্লেখ করেছেন। আর ফায়েযা, নূরা ও তার
সহকর্মীগণ কর্তৃক আমাদের ছোট ছোট সন্তানদের শিক্ষাদানের বিষয়ে গুরুত্বারোপ এবং
শিশুদের কল্যাণমূলক ও স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে উদ্বুদ্ধ করার জন্য তাদের প্রতি আমার
পক্ষ থেকে ধন্যবাদসহ এ প্রস্তাবিত বিষয়ের মধ্যে যেসব ক্ষতি ও খারাপ পরিণতি রয়েছে
সেসব বিষয়ে সতর্ক করা আমার আবশ্যকীয় কর্তব্য বলে মনে করছি, আর এটা হলো নারীগণ কর্তৃক
প্রাথমিক স্তরে শিশুদের শিক্ষাদনের দায়িত্ব গ্রহণ করাটা তাদের সাথে বয়ঃসন্ধিতে
উপনিত হওয়া ছেলে বা পরিপক্ক বয়সের ছেলেদের সাথে মেলামেশা ও উঠাবসার মতো পরিবেশের
দিকে নিয়ে যায়।
কারণ, কিছু কিছু ছেলে প্রাথমিক স্তরের ছাত্র হিসেবে ভর্তি হয় বয়ঃসন্ধিতে উপনীত
হওয়া বয়সে এবং কখনও কখনও তাদের কেউ কেউ বালেগও (প্রাপ্তবয়স্ক) হয়ে যায়। কেননা শিশুর বয়স যখন দশ বছরে
উপনীত হয়, তখন তাকে বয়ঃসন্ধিকালে উপনীত বলে গণ্য করা হয় এবং তার স্বভাব তখন
নারীদের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে যায়। কারণ, এমন বয়সের ছেলে বিয়ে করতে সক্ষম এবং অন্যান্য
পুরুষগণ যা করে, সেও তা করতে পারে, আর সেখানে আরেকটি বিষয় হলো, নারীগণ কর্তৃক প্রাথমিক
স্তরে ছেলে শিশুদের শিক্ষাদনের বিষয়টি নারী-পুরুষে সহাবস্থান করার পরিবেশের দিকে
ধাবিত করে, অতঃপর এ প্রথাটি শিক্ষার অপরাপর স্তরসমূহে চলতে থাকে। কারণ, নিঃসন্দেহে এটা শিক্ষার
সকল স্তরে নারী-পুরুষে সহাবস্থান করার দরজা উন্মুক্ত করার একটা অন্যতম প্রক্রিয়া।
আর নারী-পুরুষ মিলেমিশে সহাবস্থানমূলক শিক্ষাব্যবস্থা থেকে উদ্ভূত অসংখ্য খারাপ
কাজের বিষয়টি সর্বজন বিদিত এবং এর অশুভ পরিণতি সম্পর্কে এমন প্রত্যেকে জানে, যে বা
যারা বিভিন্ন দেশে এ ধরনের শিক্ষাব্যবস্থা চালু করেছে। সুতরাং ইসলামী বিশেষজ্ঞগণের
মধ্য থেকে এমন প্রত্যেকেই আমাদের ছেলে ও মেয়েদের এ অবস্থা সম্পর্কে নিঃসন্দেহে
অবগত আছেন, যার ন্যূনতম জ্ঞান আছে শরী‘আতের দলীল-প্রমাণ সম্পর্কে এবং এ যুগের
উম্মতের বাস্তবতা সম্পর্কে। আর আমি বিশ্বাস করি যে, এ প্রস্তাবটি এমন প্রস্তাবের
অন্তর্ভুক্ত যা শয়তান অথবা তার প্রতিনিধিদের কেউ কেউ পেশ করেছে উপরিউক্ত ফায়েযা ও
নূরাহ’র ভাষায় এবং কোনো সন্দেহ নেই এটা এমন এক প্রস্তাব, যা খুশি করেছে আমাদের ও
ইসলামের শত্রুদেরকে এবং এটা এমন এক প্রস্তাব, যে দিকে তারা গোপনে ও প্রকাশ্যে
আহ্বান করে।
আর এ জন্য
আমি মনে করি যে, আমাদের আবশ্যকীয় কর্তব্য হলো এ দরজাটিকে চূড়ান্তভাবে তালাবদ্ধ করে
রাখা এবং আমাদের ছেলে সন্তানদেরকে সকল স্তরে পুরুষ শিক্ষকদের পাঠদানের আওতায়
অবশিষ্ট রাখা, যেমনিভাবে আবশ্যক হলো মেয়ে সন্তানদেরকে সকল স্তরে মহিলা শিক্ষকদের
পাঠদানের আওতায় বহাল রাখা। আর এর মাধ্যমে আমরা আমাদের দীন, ছেলে ও মেয়েদের
ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করতে পারব এবং আমাদের শত্রুদের লাভজনক পরিকল্পনার গতিরোধ
করতে সক্ষম হব, আর আমরা
সম্মানিত মহিলা শিক্ষকগণের নিকট আশা করি যে, তাঁরা শতভাগ নিষ্ঠা, সততা ও ধৈর্যের
সাথে সকল স্তরে আমাদের মেয়েদেরকে শিক্ষাদানের জন্য তাদের সকল চেষ্টা ও শ্রম
বিনোয়োগ করবেন। আর এটা সর্বজনবিদিত যে, শিক্ষার সকল স্তরে ছেলেদেরকে শিক্ষাদানের
ক্ষেত্রে মহিলা শিক্ষকগণের চেয়ে পুরুষ শিক্ষকগণ অধিক ধৈর্যশীল, শক্তিশালী ও বেশি
যত্নবান, অনুরূপভাবে এটাও সর্বজন বিদিত যে, শিক্ষার প্রাথমিক স্তরে এবং তার উপরের
অন্যান্য স্তরে ছেলেরা মহিলা শিক্ষকের চেয়ে পুরুষ শিক্ষককে অনেক বেশি সমীহ ও
সম্মান করে এবং তার কাথা ভালোভাবে মনোযোগ দিয়ে শ্রবণ করে এবং এসবের সাথে সাথে
শিক্ষার এ স্তরে তারা পুরুষ শিক্ষকদের নৈতিক চরিত্র, বিচক্ষণতা, মহত্ব, ধৈর্য,
শক্তি ও উদ্যমের প্রশিক্ষণ লাভ করে, আর নবী সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে তো সহীহভাবে হাদীস বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেছেন:
«مُرُوا
أَوْلاَدَكُمْ بِالصَّلاَةِ وَهُمْ أَبْنَاءُ سَبْعِ سِنِينَ, وَاضْرِبُوهُمْ
عَلَيْهَا وَهُمْ أَبْنَاءُ عَشْرِ سِنِينَ , وَفَرِّقُوا بَيْنَهُمْ فِى
الْمَضَاجِعِ».
“তোমরা তোমাদের সন্তানদেরকে সালাতে জন্য নির্দেশ দাও, যখন তারা সাত
বছর বয়সে উপনীত হয়, আর তাদেরকে সালাতের জন্য প্রহার
কর, যখন তারা দশ বছর বয়সে উপনীত হয় এবং তাদের শোয়ার স্থান পৃথক করে দাও।”[9]
শিক্ষার
সকল স্তরে ছেলে ও মেয়েদের সহাবস্থানের মধ্যে যে ভয়াবহ বিপদের কথা আমরা আলোচনা
করেছি, এ হাদীসটি তার প্রমাণ বহন করে। তাছাড়া এর উপর কুরআন, সুন্নাহ ও উম্মাতের
বাস্তবতা থেকে বহু দলীল-প্রমাণ রয়েছে, সংক্ষেপ করার চিন্তা থেকেই এখানে সেগুলোর
উল্লেখ করার প্রয়োজন মনে করি নি। আমাদের সরকার, মহামান্য শিক্ষামন্ত্রী ও নারী শিক্ষাবিষয়ক
সম্মানিত মহাপরিচালক -সকলকে আল্লাহ তা‘আলা জ্ঞান ও প্রজ্ঞা দান করেছেন এবং তাদেরকে
তিনি এ ব্যাপারে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার তাওফীক দান করেছেন। আর আমি মহান আল্লাহর
নিকট প্রার্থনা করছি যে, তিনি যেন আমাদেরকে এমন সব সিদ্ধান্ত নেওয়ার তাওফীক দান
করেন, যাতে রয়েছে জাতির কল্যাণ ও মুক্তি এবং সাথে আছে আমাদের ও আমাদের যুবক ও
যুবতীগণের দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ ও সৌভাগ্য, তিনি তো সব শুনেন এবং আমাদের অতি
আপনজন।
و
صلى الله على نبينا محمد و على آله و صحبه.
(আল্লাহ সালাত
ও সালাম প্রেরণ করুন আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর এবং তাঁর পরিবার-পরিজন, সকল সাহাবীর ওপর)।
শাইখ
আবদুল আযীয ইবন আবদিল্লাহ ইবন বায
নারীদের
ফিতনা থেকে বাঁচার নিরাপদ উপায়
প্রশ্ন:
আমি ঊনিশ বছর বয়সের অবিবাহিত যুবক এবং নারীর সৌন্দর্যে আমি প্রভাবিত হয়ে যাই, এখন
আমি কী করব, এমনকি আমি নারী থেকে দূরত্ব বজায় রেখে চলি (তারপরও সমস্যা), কেননা সে
তার প্রতি আমার মনোযোগ এমনভাবে আকর্ষণ করে ফেলেছে, যা আমাকে তার ব্যপারে সবসময়
চিন্তায় ফেলে রাখে?
উত্তর:
তোমার জন্য আবশ্যকীয় করণীয় হলো তুমি তোমার চক্ষুকে নারীদের প্রতি দৃষ্টি দেওয়া থেকে
অবনমিত রাখবে এবং তাদের ব্যাপারে তোমার চিন্তা করা বন্ধ করবে, আর আল্লাহ তা‘আলা নিষ্পাপ
পবিত্র বান্দাগণের জন্য যা প্রস্তুত করেছেন তা স্মরণ করবে এবং হারাম থেকে দূরে
থাকবে, আর
তোমার জন্য আরও আবশ্যক করণীয় হলো দ্রুত বিয়ের কাজ সম্পন্ন করবে। কারণ, তা দৃষ্টিকে সবচেয়ে বেশি
সংযত রাখে এবং লজ্জাস্থানকে হিফাযত করে, আর তা চিন্তা দূর করে এবং নিজেকে বৈধ ও হালালের ওপর
সীমাবদ্ধ রাখে। আর আল্লাহই সবচেয়ে বেশি জানেন।
শাইখ
আবদুল্লাহ ইবন আবদির রহমান আল-জিবরীন
দেবর
খুবই বিপজ্জনক
প্রশ্ন:
আমি ও আমার ভাইসব একই বাসায় বসবাস করি, আর আমরা ‘আল-হামদুলিল্লাহ’ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের
নির্দেশসমূহ পালন করে থাকি; কিন্তু আমরা কষ্ট অনুভব করি আমাদের মাঝে প্রচলিত একটি
প্রথার কারণে, যা আমরা উত্তরাধিকারসূত্রে আমাদের বাপ-দাদাদের নিকট থেকে পেয়েছি, আর
তা হলো পুরুষগণ সরাসরি নারীদের সাথে বসে অর্থাৎ ভাইগণ তাদের স্ত্রীদের সাথে সবাই
মিলেমিশে বসে যায়, আর
আল্লাহর দীনের ব্যাপারে আত্মসমানবোধসম্পন্ন ব্যক্তিবর্গের কেউ কেউ আমাদেরকে উপদেশ
দিয়েছেন, কিন্তু আমরা তাতে সাড়া দেই নি। কারণ, দীনের অনুসরণের দিক থেকে আমরা নতুন, আর কোনো একদিন আমি আমার পিতার
সাথে আলাপ আলোচনা করলাম এবং তাঁকে উদ্দেশ্য করে বললাম: আমাদের জন্য এ মন্দ কাজটির
উপর বদ্ধমূল না থাকাই আবশ্যক; বরং আমাদের জন্য আবশ্যক হলো তা বর্জন করা, তখন আমার
বাবা বললেন: আল্লাহর কসম! যদি তোমরা এ কাজ কর, তাহলে অচিরেই আমি তোমাদের থেকে
বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবো এবং আর কখনও তোমাদের সাথে বসব না, আর অনুরূপভাবে আমার ভাইগণের
মধ্যে কোনো কোনো ভাই এ ব্যাপারে আমার পিতার সাথে একমত পোষণ করেন। সুতরাং আপনাদের নিকট এ
ব্যাপারে দৃষ্টিভঙ্গি ও উপদেশ কামনা করছি, আর আমার অবস্থানের ব্যাপারে আমি
কি সঠিক পথে আছি?
উত্তর:
হ্যাঁ, শরী‘আতের বক্তব্যসমূহের পরিপন্থী এ মন্দ প্রথা থেকে নিষেধ করার প্রশ্নে
আপনি সঠিক পথেই আছেন। কারণ,
স্ত্রীগণের জন্য আবশ্যক হলো তারা তাদের স্বামীর ভাই তথা দেবরদের থেকে পর্দা করবে
এবং তাদের জন্য তাদের দেবরগণের সামনে তাদের চেহারা খোলা রাখা বৈধ নয়, যেমনিভাবে
বৈধ নয় বাজারে বা অন্য কোথাও পরপরুষগণের সামনে তাদের চেহারা উন্মুক্ত রাখা; বরং
দেবরগণের সামনে তাদের চেহারা খোলা রাখা আরও বেশি বিপজ্জনক। কারণ, স্বামীর ভাই তথা দেবর
ঘরের মধ্যেই থাকে, হয় বসবাসকারী হিসেবে, নতুবা আগত মেহমান হিসেবে অথবা অনুরূপ অন্য
কেনোভাবে, আর
যখন সে ঘরে প্রবেশ করে অনুমোদিত পন্থায় ও যৌক্তিকভাবে, তখন তার পক্ষ থেকে বিপদের
আশঙ্কাটাও অনেক বড় ধরনের।
আর এ
জন্যই নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম
নারীদের নিকট অনুপ্রবেশ করা থেকে (পুরুষদেরকে) সতর্ক করেছেন; তিনি বলেন:
«إيَّاكُمْ وَالدُّخُولَ عَلَى النِّسَاءِ
. قَالُوا : يَا رَسُولَ اللَّهِ , أَرَأَيْتَ الْحَمْوَ ؟ قَالَ : الْحَمْوُ
الْمَوْتُ».
“তোমরা পরনারীদের নিকট অনুপ্রবেশ করা থেকে বিরত থাক। সাহাবীগণ
বললেন: হে আল্লাহর রাসূল! দেবরের (অনুপ্রবেশের) ব্যাপারে আপনার মতামত কী? জবাবে
তিনি বললেন: দেবর তো মৃত্যুর মতো ভয়ঙ্কর।”[10]
অর্থাৎ
তার থেকে এমনভাবে পালিয়ে বেড়ানো উচিত, যেমনিভাবে মানুষ মৃত্যু থেকে পলায়ন করে।
আর এ
কথাটি, অর্থাৎ নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লামের বাণী: «الْحَمْوُ الْمَوْتُ» (দেবর তো
মৃত্যুর মতো ভয়ঙ্কর) হলো সবচেয়ে বড় ধরনের সতর্কবার্তা, এ জন্য আমি বলি: আপনার
কাজটি সঠিক অর্থাৎ যে কাজে (অনৈতিকভাবে) জনগণ অভ্যস্ত হয়ে গেছে, সে কাজ থেকে আপনার
নিষেধ করাটা যথাযথ হয়েছে। আর আপনার পিতার উক্তি: ‘যদি তোমরা এ কাজ কর’ অর্থাৎ যদি
তোমরা নারীদের মধ্যে তাদের স্বামীর ভাই তথা দেবরদের থেকে পর্দা করার বিষয়টি
প্রতিষ্ঠিত কর, তাহলে আমি তোমাদের সাথে থাকব না।’ আমি তাঁর নিকট উপদেশ প্রেরণ
করছি, আর তা হলো- তিনি তো সত্যের অনুসারী হবেন, সত্যের বিপরীত কোনো রীতিনীতি ও
প্রথাকে পাত্তা দেবেন না, তাঁর জন্য আবশ্যক হলো আল্লাহ
তা‘আলাকে ভয় করা এবং তিনিই হবেন (পরিবারের) প্রথম ব্যক্তি, যিনি এ কাজের নির্দেশ
দিবেন, অর্থাৎ মাহরাম নন এমন পুরুষদের থেকে নারীদেরকে পর্দা করার নির্দেশ দিবেন,
এমনকি তিনি এ ব্যাপারে যথাযথ দায়িত্বশীলের ভূমিকা পালন করবেন। কারণ, পুরুষ ব্যক্তি
হলেন তার ঘরের ব্যাপারে দায়িত্বশীল এবং তাকে তার দায়িত্বের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা
হবে।
শাইখ
মুহাম্মাদ ইবন সালেহ আল-‘উসাইমীন
নিয়ত
ভালোর যুক্তি দেখিয়ে নারীদের সাথে উঠাবসা করার বিধান
প্রশ্ন:
আমাদের মাঝে একটি খারাপ প্রথা দেখতে পাওয়া যায়, আর তা হলো নারীদের সাথে পুরুষদের
অবাধ মেলামেশা। কারণ
হলো আমরা তাদের সাথে অধিকাংশ কাজ করি এবং তাদের দিকে তাকাই, আর তারাও
তাদের কাজসমূহ করে চেহারা খোলা রাখা অবস্থায়, আর আমরা বলি যে, আমাদের নিয়ত ভালো, আর আমাদের
মধ্যে কোনো কোনো ব্যক্তি তার সহোদর ভাইয়ের স্ত্রী’র দিকে তাকায় এবং তাকে (ভাইয়ের
বউকে) তার মাহরাম সহোদর বোনের মতো মনে করে, আর তার প্রতিবেশীগণের
স্ত্রীদেরকে (যাদের সাথে বিবাহ হারাম এমন পর্যায়ের) মাহরামদের মতো বলে গণ্য করে;
সুতরাং আমাদের মাঝে এমন পুরুষ ব্যক্তি আছেন, যিনি তার সহোদর ভাইয়ের সাথে, তার
চাচাতো ভাইয়ের সাথে এবং তার শ্রেণীভুক্ত লোকজনের সাথে বসবাস করেন, আর তারা পুরুষ ও নারীগণ একসাথে
পানাহার করেন।
অতএব, এর বিধান কী হবে?
উত্তর:
এ কাজগুলো প্রথম শ্রেণির জাহেলী প্রথার অন্তর্ভুক্ত, আর শরী‘আত সম্মতভাবে আবশ্যক হলো
নারী কর্তৃক তার মাহরাম পুরুষের সামনে ব্যতীত অন্য কারও সামনে তার মুখমণ্ডল বা
চেহারা খোলা না রাখা, ঠিক অনুরূপভাবে নারীর জন্য বাধ্যতামূলক হলো চেহারা খোলা
অবস্থায় সে অপরিচিত বা পরপুরুষের সাথে উঠাবসা করবে না এবং তার ওপর আরও ওয়াজিব হলো
এমন কোনো স্থানে সে পরপুরুষের সাথে একান্ত নির্জনে সাক্ষাৎ করবে না, যেখানে তার
কোনো মাহরাম পুরুষের উপস্থিতি নেই। কেননা এর কারণে অগণিত ফিতনা-ফ্যাসাদের সৃষ্টি হতে পারে।
আর আল্লাহই হলেন তাওফীক দানের একমাত্র মালিক।
শাইখ
আবদুল আযীয ইবন আবদিল্লাহ ইবন বায
পারিবারিক ড্রাইবার ও নারীগণ
প্রশ্ন:
পারিবারিক ড্রাইবারের সাথে সে পরিবারের নারী ও যুবতীদের সহাবস্থান করা এবং তাদের
সাথে তার বিভিন্ন বাজার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্যে বের হওয়ার বিধান কী?
উত্তর: হাদীসে
বর্ণিত আছে, নবী
সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«لاَ يَخْلُوَنَّ رَجُلٌ بِامْرَأَةٍ
إِلَّا كَانَ ثَالِثَهُمَا الشَّيْطَانُ».
“কোনো ব্যক্তি কখনও কোনো মহিলার সাথে একান্তে নির্জনে সাক্ষাৎ করবে
না, তবে জেনে রাখবে এমতাবস্থায় তাদের সাথে তৃতীয় জন হলো শয়তান।”[11]
সুতরাং ‘একান্তে নির্জনে সাক্ষাৎ’-এর বিষয়টি ব্যাপক অর্থবোধক, যা
বাড়িতে, গাড়িতে, বাজারে, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ও অনুরূপ যে কোনো স্থানের বেলায় সমভাবে
প্রযোজ্য, আর তারা একান্ত নির্জনে নিরাপদ নয়। কেননা
তাদের কথাটাও লজ্জার বস্তুর মধ্যে গণ্য এবং যা কামভাবকে উস্কিয়ে দেয়।
তাছাড়া কোনো কোনো নারী অথবা পুরুষকে পাওয়া যায়, যারা আল্লাহকে ভয় করেন এবং
পাপাচারিতা ও খিয়ানত করাকে অপছন্দ করেন, তাদের মাঝেও শয়তান অনুপ্রবেশ করে, তাদের
জন্য গুনাহের কাজটিকে হালকা করে দেখায় এবং তাদের জন্য কুটকৌশলের
দরজাগুলো খুলে দেয়; সুতরাং এর থেকে দূরে থাকাটাই সবচেয়ে নিরাপদ।
শাইখ
আবদুল্লাহ ইবন আবদির রহমান আল-জিবরীন
নারী
পুরুষে সহাবস্থান হারাম
প্রশ্ন:
ব্রিটেনে কোনো কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্র-ছাত্রীদের অভিভাবকদের নিয়ে সমাবেশ
অনুষ্ঠিত হয় এবং তাতে পুরুষ ও মহিলারা উপস্থিত হয়; সুতরাং মুসলিম নারীর জন্য
মাহরাম পুরুষ ব্যতীত এ সমাবেশে পুরুষদের পাশাপাশি উপস্থিত হওয়া জায়েয হবে কিনা?
আপনার জানার জন্য বলছি যে, এক ভাই এটাকে জায়েয বলেছেন এবং তিনি সহীহ বুখারী ও
মুসলিমে বর্ণিত আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত হাদীসকে এর পক্ষে দলীল
হিসেবে পেশ করেছেন, তাতে আছে- জনৈক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট আসলেন, তারপর তিনি অনুসন্ধান করলেন, কে তার মেহমানদারি
করবে, তারপর আনসারদের মধ্য থেকে জনৈক ব্যক্তি তাকে
মেহমান হিসেবে দাওয়াত করলেন এবং তিনি উল্লেখ করেন যে, আনসার সাহাবী ও তাঁর স্ত্রী
ঐ পুরুষ ব্যক্তিটির বসলেন এবং তার কাছে এমনভাব প্রকাশ করলেন যে, তাঁরা দু’জন
খাচ্ছেন; আমরা এ মাসআলাটির প্রকৃত ব্যাখ্যা আশা করছি?
উত্তর:
প্রশ্ন থেকে এ বিষয়টি স্পষ্ট হয় যে, তাতে পুরুষ ও নারীদের মাঝে মেলামেশা বা
সহাবস্থানের বিষয় রয়েছে, আর পুরুষ ও নারীদের মাঝে মেলামেশা বা সহাবস্থানের বিষয়টি
ফিতনা ও অশ্লীলতার দিকে নিয়ে যায়, আর
এটাকে আমি অবৈধ মনে করি; কিন্তু যখন জরুরি প্রয়োজন দাবি করে পুরষদের সাথে নারীদের
উপস্থিত হওয়ার বিষয়টি, তখন আবশ্যকীয় কর্তব্য হলো নারীদেরকে এক পাশে বসার ব্যবস্থা
করা এবং অপর পাশে পুরুষদের জন্য বসার ব্যবস্থা করা, আর নারীগণ কর্তৃক শরী‘আত
নির্ধারিত পর্দা পরিপূর্ণভাবে মেনে চলা, যেখানে নারী তার চেহারাসহ পুরো শরীর ঢেকে
রাখবে।
আর যে হাদীসের
দিকে প্রশ্নকর্তা ইঙ্গিত করেছেন, তাতে নারী-পুরুষে সহাবস্থান ছিল না; বরং আনসার
সাহাবী ও তার স্ত্রী তার ঘরের এক পাশে ছিলেন, আর মেহমান ছিলেন আতিথিয়তা তথা
মেহমানদারির জায়গায়। তাছাড়া পর্দার বিষয়টির ব্যাপারে যেমন সর্বজন বিদিত যে, শরী‘আতের
প্রথম দিকে পর্দার বিষয়টি বাধ্যতামূলক ছিল না। কারণ, পর্দার বিষয়টিকে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের হিজরতের প্রায় পাঁচ
বা ছয় বছর পরে শরী‘আতে বাধ্যতামূলক করা হয়, আর যেসব হাদীসে পর্দা না করার
বিষয়টি স্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে, সেসব হাদীস পর্দার আয়াতসমূহ নাযিল হওয়ার পূর্বের
বর্ণনা বলে ধরে নিতে হবে।
শাইখ
মুহাম্মাদ ইবন সালেহ আল-‘উসাইমীন
পুরুষ
ডাক্তার কর্তৃক অপরিচিত নারীকে ডাক্তারি পরীক্ষা করার বিধান
প্রশ্ন:
পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে আমি একজন বিবাহিত পুরুষ অথচ আমার স্ত্রী সন্তান জন্ম দেয় নি। এমতাবস্থায় আমরা ডাক্তারের
নিকট যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম, তারপর ডাক্তার প্রথমে আমাকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করলেন
এবং তার ফলাফল হলো আমি সুস্থ ত্রুটিমুক্ত, আর পরীক্ষার বাকি থাকল আমার
স্ত্রী। সুতরাং
এমতাবস্থায় আমি যদি তাকে পরীক্ষা করানোর উদ্দেশ্যে (পুরুষ) ডাক্তারের নিকট পেশ করি,
তাহলে আমি কি গুনাহগার হব?
উত্তর:
পুরুষ ব্যক্তির জন্য নারীর সেসব ডাক্তারি পরীক্ষা করা বৈধ নয়, যা লজ্জা বা
লজ্জাস্থানের সাথে সংশ্লিষ্ট, তবে জরুরি মুহূর্তে ও সংকটময় অবস্থায় বৈধ, আর এখানে এ রকম জরুরি কোনো
ব্যাপার নেই। কারণ,
এখানে নারীদের বিষয়ে অভিজ্ঞ মহিলা ডাক্তার পাওয়া পর্যন্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার
কাজটি বিলম্বিত করা সম্ভব, আর দেশে ও বিদেশে এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ বহু মহিলা ডাক্তার
রয়েছে।
শাইখ
আবদুল্লাহ ইবন আবদির রহমান আল-জিবরীন
যানবাহনে
নারী পুরুষে মেলামেশার বিধান
প্রশ্ন:
আমাদের শহরে পরিবহণগুলো গণপরিবহণ এবং নারী-পুরুষ সম্মিলিত, আবার কখনও কখনও
অনিচ্ছাকৃতভাবে অথবা কোনো প্রকার আকাঙ্খা ছাড়াই কোনো কোনো নারীর সাথে সংস্পর্শ হয়ে
যায়, যা মূলত ভিড়ের কারণেই হয়ে থাকে। সুতরাং এমতাবস্থায় আমরা গুনাহগার হব কিনা? আমরা কী করব,
আর আমাদের তো এসব পরিবহণ ছাড়া চলাচল করার ক্ষমতা বা উপায়ও নেই?
উত্তর:
এ অবস্থায় পুরুষ ব্যক্তির জন্য আবশ্যক হলো নারীদের সংস্পর্শ এবং এমন ভিড়ের মধ্য
থেকে দূরে থাকা, যেখানে তার শরীর তাদের শরীরের সাথে মিলে যায়, যদিও তা পরিহিত
পোশাকের আড়াল থেকে হউক না কেন। কারণ, এটা ফিতনার সুড়সুড়ি দেয়, আর মানুষ নিষ্পাপ নয়, কখনও কখনও
সে মনে করে যে, সে এ কাজ থেকে নিজেকে রক্ষা করে চলছে এবং এর দ্বারা সে প্রভাবিত
নয়, কিন্তু শয়তান তো বনী আদমের রক্ত সঞ্চালনের শিরায় শিরায় চলাচল করে, ফলে কখনও
কখনও তার থেকে এমন উত্তেজনা সৃষ্টি হতে পারে, যা তার স্বাভাবিক কাজকে বিপর্যস্ত
করবে। সুতরাং
মানুষ যখন নিরোপায় হয়ে এ কাজে বাধ্য হয় এবং এর দ্বারা প্রভাবিত হবে না বলে মনে
করে, তখন আশা করি এতে তার গুনাহ হবে না। কিন্তু আমার ধারণা মতে তার জন্য এ ধরনের
নিরোপায় অবস্থাও উত্তরণ করা অসম্ভব নয়। কেননা তার পক্ষে এমন একটি স্থান খুঁজে নেওয়া সম্ভব,
যেখানে তার নারীর সাথে সংস্পর্শ হবে না, এমনকি যদি সে দাঁড়িয়েও থাকে, আর এর দ্বারা সে এ কাজ থেকে
বাঁচতে পারে, যা ফিতনাকে অপিরহার্য করে তুলে। আর পুরুষ ব্যক্তির জন্য আবশ্যক হলো—
সে সাধ্যানুসারে আল্লাহ তা‘আলাকে ভয় করবে এবং এসব কাজ বা বিষয়কে তুচ্ছ ও সহজ মনে
করবে না।
শাইখ
মুহাম্মাদ ইবন সালেহ আল-‘উসাইমীন
নারী-পুরুষ
সম্মিলিত বাজারে প্রবেশের বিধান
প্রশ্ন:
মুসলিম ব্যক্তি জানে যে, বাজারে এমন কিছুসংখ্যক নারী রয়েছে, যারা নগ্ন অর্ধনগ্ন
পোশাক পরিহিত অবস্থায় থাকে এবং তাতে নারী-পুরুষে এমনভাবে মেলামেশা বা সহাবস্থানের
ব্যবস্থা রয়েছে, যা আল্লাহ তা‘আলা পছন্দ করেন না, এমতাবস্থায় মুসলিম ব্যক্তির জন্য বাণিজ্যিক বাজারে
প্রবেশ করা বৈধ হবে কি?
উত্তর:
এ ধরনের বাজারে প্রবেশ করা উচিৎ নয়, তবে যিনি সৎকাজের নির্দেশ দেন এবং অসৎকাজে
নিষেধ করেন, তিনি প্রবেশ করতে পারেন অথবা প্রচণ্ড প্রয়োজনের কারণে দৃষ্টিকে অবনমিত
রাখার সাথে প্রবেশ করতে পারবে এবং সাথে সাথে ফিতনার যাবতীয় কারণ ও উপলক্ষ থেকে
সতর্ক থাকতে হবে যাতে এর থেকে তার মান-সম্মান ও দীনকে নিরাপদ রাখা যায় এবং যাবতীয়
মন্দের উপায়-উপকরণ থেকে দূরে থাকা যায়; কিন্তু মর্যাদাবান ব্যক্তিবর্গ ও প্রত্যেক
ক্ষমতাবান ব্যক্তির জন্য আবশ্যক হলো এ ধরনের বাজারে চলমান অশ্লীলতার প্রতিবাদ করার
জন্য তাতে প্রবেশ করা, যাতে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলার বাণীর প্রতি আমল হয়ে যায়,
যাতে আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:
﴿وَٱلۡمُؤۡمِنُونَ وَٱلۡمُؤۡمِنَٰتُ
بَعۡضُهُمۡ أَوۡلِيَآءُ بَعۡضٖۚ يَأۡمُرُونَ بِٱلۡمَعۡرُوفِ وَيَنۡهَوۡنَ عَنِ ٱلۡمُنكَرِ﴾ [التوبة: ٧١]
“আর মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারী একে অপরের বন্ধু, তারা সৎকাজের
নির্দেশ দেয় ও অসৎকাজে নিষেধ করে”। [সূরা আত-তাওবা, আয়াত: ৭১]
আল্লাহ তা‘আলা আরও
বলেছেন:
﴿وَلۡتَكُن مِّنكُمۡ أُمَّةٞ يَدۡعُونَ
إِلَى ٱلۡخَيۡرِ وَيَأۡمُرُونَ بِٱلۡمَعۡرُوفِ وَيَنۡهَوۡنَ عَنِ ٱلۡمُنكَرِۚ
وَأُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡمُفۡلِحُونَ ١٠٤﴾ [ال عمران: ١٠٤]
“আর তোমাদের মধ্যে এমন একটি দল যেন থাকে যারা
কল্যাণের দিকে আহ্বান করবে এবং সৎকাজের নির্দেশ দেবে ও অসৎকাজে নিষেধ করবে, আর তারাই সফলকাম”। [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১০৪] এ অর্থে আরও
অনেক আয়াত রয়েছে। তাছাড়া নবী সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«إِنَّ النَّاسَ إِذَا رَأَوْا
الْمُنْكَرَ ، فَلَمْ يُغَيِّرُوهُ ، أَوْشَكَ أَنْ يَعُمَّهُمْ اللَّهُ
بِعِقَابِهِ».
“মানুষ যখন অশ্লীল কাজ দেখবে, অথচ প্রতিরোধ করবে না, তখন অতি
শীঘ্রই আল্লাহ তা‘আলা গণহারে তাদেরকে তাঁর শাস্তি দিবেন।”[12] হাদীসটি ইমাম আহমাদ রহ. এবং কোনো কোনো ‘সুনান’ সংকলক আবু
বকর সিদ্দীক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে সহীহ সনদে বর্ণনা করেছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন:
«مَنْ رَأَى مِنْكُمْ مُنْكَرًا
فَلْيُغَيِّرْهُ بِيَدِهِ، فَإِنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَبِلِسَانِهِ، فَإِنْ لَمْ
يَسْتَطِعْ فَبِقَلْبِهِ، وَذَلِكَ أَضْعَفُ الإِيمَانِ» .
“তোমাদের কেউ যখন কোন অন্যায় কাজ হতে দেখে, তখন সে যেন তা হাত
দ্বারা (শক্তি প্রয়োগে) বন্ধ করে দেয়, আর
যদি সে এ ক্ষমতা না রাখে, তবে যেন মুখের (কথার) দ্বারা (জনমত গঠন করে) তা বন্ধ করে
দেয়, আর যদি সে এ ক্ষমতাটুকুও না রাখে, তবে যেন অন্তরের
দ্বারা (পরিকল্পিত উপায়ে) তা বন্ধ করার চেষ্টা করে বা এর প্রতি ঘৃণা পোষণ করে। আর
এটা হল ঈমানের সবচেয়ে দুর্বলতম স্তর।”[13] ইমাম
মুসলিম রহ. হাদীসটি তাঁর ‘আস-সহীহ’ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন, আর এ অর্থে আরও অনেক হাদীস
বর্ণিত আছে, আর
আল্লাহই হলেন তাওফীক দানের একমাত্র মালিক।
শাইখ
আবদুল আযীয ইবন আবদিল্লাহ ইবন বায
শাইখ আবদুল ‘আযীয ইবন আবদিল্লাহ ইবন বায
শাইখ মুহাম্মাদ ইবন সালেহ আল-‘উসাইমীন
শাইখ আবদুল্লাহ ইবন আবদির রহমান আল-জিবরীন
এবং
স্থায়ী ফতোয়া বোর্ডের ফতোয়া
অনুবাদক: ড. মো: আমিনুল ইসলাম
সম্পাদক: ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া
সূত্র: ইসলামহাউজ
পোস্টটি ভালো লাগলে শেয়ার করতে ভুলবেন না কিন্তু।
আরও পড়ুনঃ নারী-পুরুষ সংমিশ্রণের বিধান
আরও পড়ুনঃ অবৈধ সম্পর্কের কারণে বেদনা-উৎকণ্ঠা
আরও পড়ুনঃ বৈধ ভালবাসা বনাম নিষিদ্ধ প্রেম
আরও পড়ুনঃ প্রেম-ভালোবাসা
আরও পড়ুনঃ ব্যভিচার
আরও পড়ুনঃ শয়তানের প্রবেশপথ
আরও পড়ুনঃ গুনাহের দরজা সমূহ
“ফতোওয়া” বিষয়ের উপর আরও পড়তে এইখানে ক্লিক করুন।
“প্রশ্নোত্তর” বিষয়ের উপর আরও পড়তে এইখানে ক্লিক করুন।
আসস্লামুআলাইকুম,আলহামদুলিল্লাহ্। জাযাকাল্লাহ্। শুকরান। ১ম পর্ব পেলাম, তো পরবর্তী সকল পর্ব কোথায় পাওয়া যাবে?
উত্তরমুছুন