কোরবানী শরিয়তের বিধান হওয়ার দলিল-প্রমাণ এবং এ দলিলগুলো কোরবানি ওয়াজিব হওয়া নির্দেশ করে; নাকি মুস্তাহাব হওয়া?
কোরবানী শরিয়তের বিধান হওয়ার দলিল-প্রমাণ এবং এ দলিলগুলো কোরবানি ওয়াজিব হওয়া নির্দেশ করে; নাকি মুস্তাহাব হওয়া?
প্রশ্ন: আমি আপনাদের ওয়েবসাইটে বিদ্যমান কোরবানী সংক্রান্ত ফতোয়াগুলো পড়েছি। সেগুলোতে কোরবানীকে সুন্নত হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু, এর পক্ষে জোরালো কোন দলিল ওয়েবসাইটে নেই। অনুগ্রহ করে আপনারা কোরবানী করা সুন্নত; ওয়াজিব নয়‑ এই মর্মে কিছু দলিল কি উল্লেখ করতে পারেন? বিশেষতঃ "যে ব্যক্তির সামর্থ্য রয়েছে, কিন্তু কোরবানী করল না, সে যেন আমাদের ঈদগাহের নিকটবর্তী না হয়" [সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং-৩১২৩] এ হাদিস সম্পর্কে কী বলবেন?
উত্তর:
আলহামদুলিল্লাহ।
এক:
এ মাসয়ালায় আলেমদের মাঝে মতভেদ সুবিদিত। অধিকাংশ আলেম কোরবানী করাকে সুন্নত মনে করেন; ওয়াজিব নয়।
হানাফি মাযহাবের আলেমগণ ও এক বর্ণনা মতে, ইমাম আহমাদ ও শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়ার মনোনীত অভিমত হচ্ছে‑ সামর্থ্যবানের জন্য কোরবানী করা ওয়াজিব।
ইবনে কুদামা (রহঃ) বলেন:
অধিকাংশ আলেমদের অভিমত হচ্ছে‑ কোরবানী করা সুন্নত; ওয়াজিব নয়।
এটি আবু বকর (রাঃ), উমর (রাঃ), বিলাল (রাঃ), আবু মাসউদ আল-বদরি (রাঃ) প্রমুখ সাহাবীর অভিমত হিসেবেও বর্ণিত আছে। এ অভিমত ব্যক্ত করেছেন: সুওয়াইদ বিন গাফালাহ, সাঈদ ইবনুল মুসায়্যিব, আলকামা, আল-আসওয়াদ, আতা, শাফেয়ি, ইসহাক, আবু ছাওর ও ইবনে মুনযির প্রমুখ আলেম। আর রাবিআ, মালেক, ছাওরি, আল-আওযায়ি, আল-লাইছ ও আবু হানিফা এর অভিমত হচ্ছে‑ এটি ওয়াজিব। যেহেতু আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
"যে ব্যক্তির সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কোরবানী করে না, সে যেন আমাদের ঈদগাহের নিকটবর্তী না হয়"।
এবং মিখনাফ বিন সুলাইম থেকে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
"হে লোকসকল! প্রত্যেক পরিবারের উপর আবশ্যক হল প্রতি বছর একটা কোরবানী ও একটা আতিরা দেয়া"।
"যে ব্যক্তির সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কোরবানী করে না, সে যেন আমাদের ঈদগাহের নিকটবর্তী না হয়"।
এবং মিখনাফ বিন সুলাইম থেকে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
"হে লোকসকল! প্রত্যেক পরিবারের উপর আবশ্যক হল প্রতি বছর একটা কোরবানী ও একটা আতিরা দেয়া"।
আর আমাদের দলিল হল যে হাদিসটি ইমাম দারাকুতনী ইবনে আব্বাস (রাঃ) এর সূত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন:
"তিনটি আমল আমার উপর ফরয করা হয়েছে; সেগুলো তোমাদের জন্য নফল"।
অপর এক বর্ণনায় এসেছে: "বিতির নামায, কোরবানী ও ফজরের দুই রাকাত সুন্নত"।
"তিনটি আমল আমার উপর ফরয করা হয়েছে; সেগুলো তোমাদের জন্য নফল"।
অপর এক বর্ণনায় এসেছে: "বিতির নামায, কোরবানী ও ফজরের দুই রাকাত সুন্নত"।
তাছাড়া যেহেতু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
"যে ব্যক্তি কোরবানী করতে ইচ্ছুক এমতাবস্থায় যিলহজ্জের (প্রথম) দশকে প্রবেশ করেছে সে যেন চুল বা চামড়ার কোন অংশ কর্তন না করে"। [সহিহ মুসলিম]
এ হাদিসে কোরবানী করাকে 'ইচ্ছা'-এর সাথে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। ওয়াজিব আমলকে ব্যক্তির ইচ্ছার সাথে সম্পৃক্ত করা হয় না। [আল-মুগনি (১১/৯৫) থেকে সমাপ্ত]
"যে ব্যক্তি কোরবানী করতে ইচ্ছুক এমতাবস্থায় যিলহজ্জের (প্রথম) দশকে প্রবেশ করেছে সে যেন চুল বা চামড়ার কোন অংশ কর্তন না করে"। [সহিহ মুসলিম]
এ হাদিসে কোরবানী করাকে 'ইচ্ছা'-এর সাথে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। ওয়াজিব আমলকে ব্যক্তির ইচ্ছার সাথে সম্পৃক্ত করা হয় না। [আল-মুগনি (১১/৯৫) থেকে সমাপ্ত]
দুই:
আলেমদের প্রত্যেক দল নিজেদের মতের পক্ষে একাধিক দলিল পেশ করেছেন। কিন্তু, কোন দলের দলিলগুলোর সনদ সমালোচনা মুক্ত নয় কিংবা দলিল দান প্রক্রিয়াটা বিতর্ক মুক্ত নয়। এখানে আমরা শুধু গুরুত্বপূর্ণ মারফু হাদিসগুলো উল্লেখ করব:
যারা কোরবানীকে ওয়াজিব বলেন তাদের প্রথম হাদিস:
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
"যে ব্যক্তির সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কোরবানী করে না, সে যেন আমাদের ঈদগাহের নিকটবর্তী না হয়"। [সুনানে ইবনে মাজাহ (৩১২৩)]
হাদিস বিশারদ ইমামগণের অনেকে এ হাদিসকে মারফু হাদিস হিসেবে মেনে নেননি। বরং তারা এটাকে আবু হুরায়রা (রাঃ) এর উক্তি হিসেবে হুকুম দিয়েছেন; নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী হিসেবে নয়।
"যে ব্যক্তির সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কোরবানী করে না, সে যেন আমাদের ঈদগাহের নিকটবর্তী না হয়"। [সুনানে ইবনে মাজাহ (৩১২৩)]
হাদিস বিশারদ ইমামগণের অনেকে এ হাদিসকে মারফু হাদিস হিসেবে মেনে নেননি। বরং তারা এটাকে আবু হুরায়রা (রাঃ) এর উক্তি হিসেবে হুকুম দিয়েছেন; নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী হিসেবে নয়।
বাইহাকী তার সুনান গ্রন্থে (৯/২৬০) বলেন: আমার কাছে আবু ঈসা তিরমিযি থেকে সংবাদ পৌঁছেছে যে, তিনি বলেন: সঠিক মতানুযায়ী এটি আবু হুরায়রা (রাঃ) এর উক্তি। তিনি বলেন: জাফর বিন রাবিআ ও অন্যান্য রাবীগণ এ হাদিসটিকে আব্দুর রহমান আল-আরাজ এর সূত্রে আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে মাওকুফ হাদিস (সাহাবীর বাণী) হিসেবে বর্ণনা করেছেন।[সমাপ্ত]
হাফেয ইবনে হাজার বলেন:
ইবনে মাজাহ ও ইমাম আহমাদ হাদিসটি সংকলন করেছেন। সনদের রাবীগণ সকলে ছিকাহ (নির্ভরযোগ্য)। কিন্তু, হাদিসটি কি মারফু হাদিস; নাকি মাওকুফ হাদিস এ নিয়ে মতভেদ রয়েছে। মাওকুফ এর অভিমতটিই শুদ্ধতার অধিক নিকটবর্তী। ইমাম তাহাবী ও অন্যান্য হাদিসবিদ এ কথা বলেছেন। এরপরেও হাদিসটি কোরবানী ওয়াজিব হওয়ার পক্ষে সুস্পষ্ট দলিল নয়।[ফাতহুল বারী (১২/৯৮) থেকে সমাপ্ত]
ইবনে মাজাহ ও ইমাম আহমাদ হাদিসটি সংকলন করেছেন। সনদের রাবীগণ সকলে ছিকাহ (নির্ভরযোগ্য)। কিন্তু, হাদিসটি কি মারফু হাদিস; নাকি মাওকুফ হাদিস এ নিয়ে মতভেদ রয়েছে। মাওকুফ এর অভিমতটিই শুদ্ধতার অধিক নিকটবর্তী। ইমাম তাহাবী ও অন্যান্য হাদিসবিদ এ কথা বলেছেন। এরপরেও হাদিসটি কোরবানী ওয়াজিব হওয়ার পক্ষে সুস্পষ্ট দলিল নয়।[ফাতহুল বারী (১২/৯৮) থেকে সমাপ্ত]
এ হাদিসকে মাওকুফ হাদিস হিসেবে অগ্রগণ্যতা দিয়েছেন: ইবনে আব্দুল বার্র, আব্দুল হক্ব তার 'আহকামুল উসতা' গ্রন্থে (৪/১২৭), আল-মুনযিরি 'আত-তারগীব ওয়াত-তারহীব' গ্রন্থে, ইবনে আব্দুল হাদী 'আত-তানকীহ' গ্রন্থে (২/৪৯৮), দেখুন: সুনানে ইবনে মাজাহ এর মুহাক্কিকগণ কর্তৃক লিখিত টীকাসমূহ (৪/৩০৩)]
দ্বিতীয় হাদিস:
আবু রামলা কর্তৃক মিখনাফ বিন সুলাইম থেকে বর্ণনাকৃত মারফু হাদিস:
"হে লোকসকল! প্রত্যেক পরিবারের উপর আবশ্যক হল প্রতি বছর একটা কোরবানী করা ও একটা আতিরা দেয়া"। [সুনানে আবু দাউদ (২৭৮৮), সুনানে তিরমিযি (১৫৯৬) ও সুনানে ইবনে মাজাহ (৩১২৫)]
আবু রামলা কর্তৃক মিখনাফ বিন সুলাইম থেকে বর্ণনাকৃত মারফু হাদিস:
"হে লোকসকল! প্রত্যেক পরিবারের উপর আবশ্যক হল প্রতি বছর একটা কোরবানী করা ও একটা আতিরা দেয়া"। [সুনানে আবু দাউদ (২৭৮৮), সুনানে তিরমিযি (১৫৯৬) ও সুনানে ইবনে মাজাহ (৩১২৫)]
আতিরা: প্রত্যেক রজব মাসে তারা একটা পশু জবাই করত। এটাকে 'রজবিয়্যা'ও বলা হত।
একদল আলেম এ হাদিসটিকে যয়ীফ (দুর্বল) বলেছেন। যেহেতু 'আবু রামলা' যার নাম হচ্ছে‑ আমের; অজ্ঞাত পরিচয়।
আল-খাত্তাবি বলেন: এ হাদিসটির সনদ যয়ীফ (দুর্বল)। আবু রমলা লোকটি 'মাজহুল' (অজ্ঞাত পরিচয়)।[মাআলিমুস সুনান (২/২২৬) থেকে সমাপ্ত]
আয্-যাইলাঈ বলেন: আব্দুল হক্ব বলেছেন: এর সনদ যয়ীফ (দুর্বল)। ইবনুল কাত্তান বলেছেন: এ হাদিসের ইল্লত বা সমস্যা হল‑ 'আবু রমলা' যার নাম হচ্ছে‑ আমের; এ রাবীর অবস্থা অজ্ঞাত থাকা। কারণ এ ব্যক্তিকে শুধু এ সনদেই পাওয়া যায়। তার থেকে হাদিসটি বর্ণনা করেছেন ইবনে আউন।[নাসবুর রাইয়া (৪/২১১) থেকে সমাপ্ত]
আর যারা কোরবানী করাকে মুস্তাহাব বলেন তারাও একাধিক মারফু হাদিস দিয়ে দলিল দেন। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে দুইটি হাদিস; যে হাদিসদ্বয় ইবনে কুদামা উল্লেখ করেছেন।
প্রথম হাদিস:
ইবনে আব্বাস (রাঃ) এর হাদিস যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
"তিনটি আমল আমার উপর ফরয; তোমাদের জন্য নফল: বিতির, কোরবানী ও সালাতুত দোহা"। [মুসনাদে আহমাদ (২০৫০) ও সুনানে বাইহাকী (২/৪৬৭)]
ইবনে আব্বাস (রাঃ) এর হাদিস যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
"তিনটি আমল আমার উপর ফরয; তোমাদের জন্য নফল: বিতির, কোরবানী ও সালাতুত দোহা"। [মুসনাদে আহমাদ (২০৫০) ও সুনানে বাইহাকী (২/৪৬৭)]
এ হাদিসটিকে পূর্ববর্তী ও পরবর্তী একদল আলেম যয়ীফ বা দুর্বল বলেছেন। ইবনে হাজার (রহঃ) বলেন: "এ হাদিসের সনদের কেন্দ্র হচ্ছে‑ আবু জানাব আল-কালবি এর উপর। তিনি বর্ণনা করেছেন ইকরিমা থেকে। আবু জানাব আল-কালবি‑ 'যয়ীফ' (দুর্বল) ও 'মুদাল্লিস' এবং এ সনদে তিনি عن (অমুক থেকে) শব্দ যোগে বর্ণনা করেছেন। ইমামদের অনেকে এ হাদিসকে যয়ীফ বলেছেন। যেমনটি বলেছেন: ইমাম আহমাদ, ইমাম বাইহাকী, ইমাম ইবনুস সালাহ, ইমাম ইবনুল জাওযি, ইমাম নববী ও অন্যান্য ইমামগণ।[আত-তালখিসুল হাবীর (২/৪৫) থেকে সংক্ষেপিত ও সমাপ্ত) আরও দেখুন: (২/২৫৮)]
দ্বিতীয় হাদিস:
উম্মে সালামা (রাঃ) এর হাদিস যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
"যে ব্যক্তি কোরবানী করতে ইচ্ছুক এমতাবস্থায় যিলহজ্জের (প্রথম) দশকে প্রবেশ করে সে যেন চুল বা চামড়ার কোন অংশ কর্তন না করে"। [সহিহ মুসলিম (১৯৭৭)]
উম্মে সালামা (রাঃ) এর হাদিস যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
"যে ব্যক্তি কোরবানী করতে ইচ্ছুক এমতাবস্থায় যিলহজ্জের (প্রথম) দশকে প্রবেশ করে সে যেন চুল বা চামড়ার কোন অংশ কর্তন না করে"। [সহিহ মুসলিম (১৯৭৭)]
ইমাম শাফেয়ি বলেন: "কোরবানী করা যে, ওয়াজিব নয় এ হাদিসটি তার দলিল। যেহেতু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন "ইচ্ছুক"। তিনি বিষয়টিকে "ইচ্ছা"-এর সাথে সম্পৃক্ত করেছেন। যদি কোরবানী করা ওয়াজিব হত তাহলে তিনি বলতেন: সে যেন কোরবানী করা অবধি চুলে হাত না দেয়" [আল-মাজমু (৮/৩৮৬) থেকে সমাপ্ত]
কিন্তু, এ দলিল দান প্রক্রিয়া সমালোচনা মুক্ত নয়। কারণ ইচ্ছার সাথে সম্পৃক্ত করাটা ওয়াজিব না হওয়ার পক্ষে কোন দলিল নয়।
শাইখ উছাইমীন (রহঃ) বলেন:
"আমার মতে, ইচ্ছার সাথে সম্পৃক্ত করাটা ওয়াজিব হওয়াকে নাকচ করে না; যদি ওয়াজিব হওয়ার পক্ষে অন্য দলিল পাওয়া যায়। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মীকাতের ক্ষেত্রে বলেছেন: "এ মীকাতগুলো তাদের জন্য যারা এ স্থানগুলোতে বসবাস করে কিংবা অন্য স্থানের অধিবাসীদের যারা এ স্থানগুলোর উপর দিয়ে গমন করে, যারা হজ্জ ও উমরা পালনে ইচ্ছুক"। এ হাদিসে ইচ্ছা শব্দের উল্লেখ থাকলেও অন্য দলিল দিয়ে হজ্জ ও উমরা ওয়াজিব হওয়ার পথে এটি প্রতিবন্ধক হয়নি। যেহেতু সামর্থ্যহীন ব্যক্তির কোরবানী করার ইচ্ছা থাকে না; তাই সকল মানুষকে কোরবানী করতে ইচ্ছুক ও অনিচ্ছুক এ দুইভাগে ভাগ করা সঠিক হয়েছে। এটি সামর্থ্য থাকা ও না-থাকার দৃষ্টিকোণ থেকে।[আহকামুল উযহিয়্যা ওয়ায যাকাত, পৃষ্ঠা-৪৭)]
সারকথা: যে হাদিসগুলো দিয়ে কোরবানী ওয়াজিব হওয়ার পক্ষে দলিল দেয়া হয় সেগুলো সমালোচনা মুক্ত নয়; যদিও কোন কোন আলেম সেসব হাদিসের কোনটিকে 'হাসান' বলেছেন।
আর যে হাদিসগুলোতে কোরবানী মুস্তাহাব হওয়ার দলিল রয়েছে সনদের দিক দিয়ে সে হাদিসগুলো আর বেশি যয়ীফ (দুর্বল)।
এ কারণে শাইখ উছাইমীন (রহঃ) 'আহকামুল উযহিয়্যা ওয়ায যাকাত' পুস্তিকার শেষে বলেছেন: "এই হচ্ছে‑ আলেমদের অভিমত ও তাদের দলিলাদি। ইসলামে কোরবানীর মর্যাদা ও গুরুত্ব তুলে ধরার উদ্দেশ্যে আমরা এখানে এসব উল্লেখ করলাম। এ সংক্রান্ত দলিলগুলো প্রায় সমমানের। তাই সতর্কতা হচ্ছে‑ সাধ্য থাকলে কোরবানী করা বাদ না দেওয়া। কেননা কোরবানীর মধ্যে আল্লাহ্র মহত্ব ও স্মরণ রয়েছে। এবং এতে বান্দার দায় নিশ্চিতভাবে মুক্ত হয়।[সমাপ্ত]
তিন:
কোরবানী করা ওয়াজিব না হওয়ার অভিমতকে দুইটি জিনিস মজবুত করে:
১. আদি দায়মুক্তি: যেহেতু কোরবানী ওয়াজিব হওয়ার পক্ষে সংঘর্ষমুক্ত কোন দলিল পাওয়া যায়নি তাই মূল অবস্থা হল‑ কোরবানী ওয়াজিব না হওয়া।
শাইখ বিন বায বলেন:
সামর্থ্যবান ব্যক্তির জন্য কোরবানী করা সুন্নত; ওয়াজিব নয়। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাদা-কালো রঙের দুটো ভেড়া দিয়ে কোরবানী করেছেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালামের জীবদ্দশায় ও তাঁর মৃত্যুর পরে সাহাবায়ে কেরামও কোরবানী করেছেন। এভাবে তাদের পরবর্তীতে মুসলিম উম্মাহ কোরবানী করেছে। কিন্তু, শরয়ি দলিলে এমন কিছু পাওয়া যায় না যা প্রমাণ করে যে, কোরবানী করা ওয়াজিব। সুতরাং ওয়াজিব বলার অভিমত দুর্বল।[মাজমুউ ফাতাওয়া বিন বায (১৮/৩৬)]
সামর্থ্যবান ব্যক্তির জন্য কোরবানী করা সুন্নত; ওয়াজিব নয়। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাদা-কালো রঙের দুটো ভেড়া দিয়ে কোরবানী করেছেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালামের জীবদ্দশায় ও তাঁর মৃত্যুর পরে সাহাবায়ে কেরামও কোরবানী করেছেন। এভাবে তাদের পরবর্তীতে মুসলিম উম্মাহ কোরবানী করেছে। কিন্তু, শরয়ি দলিলে এমন কিছু পাওয়া যায় না যা প্রমাণ করে যে, কোরবানী করা ওয়াজিব। সুতরাং ওয়াজিব বলার অভিমত দুর্বল।[মাজমুউ ফাতাওয়া বিন বায (১৮/৩৬)]
২. সাহাবায়ে কেরাম থেকে বর্ণিত সহিহ আছারগুলো:
আবু বকর (রাঃ) ও উমর (রাঃ) সম্পর্কে বর্ণিত আছে যে, তারা কোরবানী করতেন না; না জানি মানুষ কোরবানী করাকে ওয়াজিব ভাবে‑ এটাকে অপছন্দ করে।
ইমাম বাইহাকী 'মারিফাতুস সুনান ওয়াল আছার' গ্রন্থে (১৪/১৬, নং- ১৮৮৯৩) আবু সারিহা থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন: "আমি আবু বকর (রাঃ) ও উমর (রাঃ) কে পেয়েছি। তারা দুইজন আমার প্রতিবেশি ছিলেন। তারা দুইজন কোরবানী করতেন না।"
এরপর বাইহাকী বলেন: আমরা সুনান গ্রন্থে সুফিয়ান বিন সাঈদ আস্-ছাওরির হাদিস বর্ণনা করেছি, যা তিনি তার পিতা থেকে বর্ণনা করেছেন, এবং মুতার্রিফ-এর হাদিস বর্ণনা করেছি এবং ইসমাইল-এর সূত্রে শাবী-এর হাদিস বর্ণনা করেছি। তাদের কারো কারো হাদিসে রয়েছে যে, লোকেরা তাদের দুইজনকে অনুকরণ করার ভয়ে।
[আরও দেখুন: আস্-সুনান আল-কুবরা (৯/৪৪৪)]
ইমাম নববী 'আল-মাজমু' গ্রন্থে (৮/৩৮৩) বলেন: পক্ষান্তরে, আবু বকর (রাঃ) ও উমর (রাঃ) সম্পর্কে বর্ণিত আছারটি ইমাম বাইহাকী ও অন্যান্য আলেমগণ 'হাসান' সনদে বর্ণনা করেছেন।[সমাপ্ত]
হাইছামী বলেন: এ আছারটি তাবারানী 'আল-কাবির' গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন। এ আছারের সনদের রাবীগণ সকলে সহিহ হাদিসের রাবী।[মাজমাউয যাওয়ায়েদ (৪/১৮) থেকে সমাপ্ত; শাইখ আলবানী 'আল-ইরওয়া' (৪/৩৫৪) আছারটিকে সহিহ বলেছেন]
বাইহাকী (৯/৪৪৫) তার নিজস্ব সনদে আবু মাসউদ আল-আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন: আমি সামর্থ্যবান হওয়া সত্ত্বেও কোরবানী করি না‑ এই ভয়ে যে, আমার প্রতিবেশীরা মনে করবে, কোরবানী করা আমার উপর অপরিহার্য। [আলবানী 'আল-ইরওয়া গ্রন্থে এ আছারটিকেও সহিহ বলেছেন]
সংক্ষিপ্তসার:
এ মাসয়ালায় আলেমগণের মতভেদ ধর্তব্যযোগ্য। আমাদের কাছে কোরবানী মুস্তাহাব হওয়ার অভিমতটিই অগ্রগণ্য সাব্যস্ত হয়েছে।
সামর্থ্যবানদের মধ্যে যারা কোরবানী করা বাদ দেন না তারা উঁচুমানের তাকওয়া রক্ষা করেন। এটাই সতর্কতা ও শরয়ি দায়মুক্তির ক্ষেত্রে অধিক নিরাপদ; যেমনটি শাইখ উছাইমীনের বক্তব্য আমরা পূর্বে পেশ করেছি।
যে ব্যক্তি এ বিষয়ে আরও জানতে আগ্রহী তিনি শাইখ উছাইমীন লিখিত "আহকামুল উযহিয়্যা ওয়ায যাকাত" এবং শাইখ হুসামুদ্দীন আফাফা কর্তৃক রচিত "আল-মুফাস্সাল ফি আহকামিল উযহিয়্যা" পড়তে পারেন। এ কিতাবে তিনি সহজ সরল কথায় চমৎকার লিখেছেন।
আল্লাহ্ই সর্বজ্ঞ।
সূত্র: ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব ওয়েবসাইট
আরও পড়ুনঃ কুরবানী সংক্রান্ত কতিপয় ভুল-ত্রুটি
আরও পড়ুনঃ কোরবানি : তাৎপর্য ও আহকাম
আরও পড়ুনঃ কুরবানী: ফযিলত ও আমল
আরও পড়ুনঃ কুরবানীর ইতিহাস, উদ্দেশ্য ও কতিপয় বিধান
আরও পড়ুনঃ কুরবানীর মাসায়েল
আরও পড়ুনঃ যিলহজ, ঈদ ও কোরবানি
আরও পড়ুনঃ যিলহজের প্রথম দশক : ফযীলত ও আমল
আরও পড়ুনঃ কুরবানী ও ঈদের বিধি-বিধান
আরও পড়ুনঃ ঈদের বিধিবিধান
আরও পড়ুনঃ নবীগৃহে ঈদ
“প্রশ্নোত্তর” বিষয়ের উপর আরও পড়তে এইখানে ক্লিক করুন।
“ফতোওয়া” বিষয়ের উপর আরও পড়তে এইখানে ক্লিক করুন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন