জান্নাত ও জাহান্নাম এর সংবাদপ্রাপ্ত নারী-পুরুষগণ
দুনিয়াতে যাদের জান্নাতি বা জাহান্নামী বলে ঘোষণা দেয়া হয়
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম দুনিয়াতে যে সব নারী ও পুরুষদের জান্নাতি বা জাহান্নামী বলে ঘোষণা
করেছেন বা যারা দুনিয়াতে জীবিত থাকতেই জান্নাতলাভের সু-সংবাদ অথবা জাহান্নামের দুঃসংবাদ
পেয়েছেন এ নিবন্ধে আমরা তাদের নাম দলিল-প্রমাণ সহকারে উল্লেখ করতে চেষ্টা করব।
একটি হাদিসে একত্রে দশজন সাহাবীর কথা উল্লেখ করে তাদের জান্নাতি বলে রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘোষণা দিয়েছেন। অনেকে
মনে করেন, দুনিয়াতে কেবল এ দশজন সাহাবীকেই জান্নাতের সু-সংবাদ দেয়া হয়েছে আর কাউকে
জান্নাতের সু-সংবাদ দেয়া হয়নি।
কিন্তু না, এ
দশজনের বাহিরেও আরও কতক পুরুষ ও নারী সাহাবী আছেন, যাদের আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন না কোন কারণে দুনিয়াতে জান্নাতের সু-সংবাদ দিয়েছেন। তিনি তাদের কাউকে জান্নাতি, জান্নাতের সরদার, জান্নাতের বয়স্ক
লোকদের সরদার ইত্যাদি বলে ঘোষণা করছেন। নিম্নে
আমরা দুনিয়াতে
যাদেরকে জান্নাতের সু-সংবাদ এবং জাহান্নামের দুঃসংবাদ দেয়া হয়েছে, এমন পুরুষ ও
নারীদের বিষয়ে একটি আলোচনা দলীল-প্রমাণ
সহকারে তুলে ধরার চেষ্টা করব। আল্লাহই তাওফিক দাতা।
এখানে একটি বিষয় খুবই জরুরী
যে, যাদেরকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জান্নাতী বলে ঘোষণা করেছেন,
তাদের মধ্যে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোনো কোনো সিফাত, কুরবানী ও
গুরুত্বপূর্ণ আমল প্রত্যক্ষ্য করেছেন বলেই তাদের বিভিন্ন সময়ে ও বিভিন্ন
প্রেক্ষপটে এ ধরনের ঘোষণা দিয়েছেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার আমল,
কুরবানী ও ত্যাগের প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে তাকে বলেছেন যে লোকটি জান্নাতী। এ ধরনের
ঘোষণা প্রেক্ষাপটে আমাদের করনীয় হল, যে গুণ, আমল, কুরবানী ও ত্যাগের কারণে লোকটি
জান্নাতী হল বা রাসূল তাকে জান্নাতী বলে সু-সংবাদ ও ঘোষণা দিলেন, সে আমল, কুরবানী
ও গুণে গুণান্বিত হয়ে আমিও রাসূলের সু-সংবাদের আওতাভুক্ত হতে পারি। আমার জন্যও
জান্নাত অবধারিত হতে পারে। কারণ, আমল করার কারণে একজন জান্নাতী হয়, সে আমল যদি
উম্মতের কোন লোক করে থাকে তাহলে অবশ্যই সেও জান্নাতী হবে।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম সর্বপ্রথম জান্নাতে প্রবেশ করবেন:
সর্বপ্রথম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য জান্নাতের দরজা উন্মুক্ত করা
হবে। তার পূর্বে আর কারও জন্য
জান্নাতের দরজা খোলা হবে না। প্রমাণ-
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍرضي الله عنه قَالَ قَالَ رَسُولَ اللهُ صلى
الله عليه وسلم«آتِي بَابَ الْجَنَّةِ يَوْمَ
الْقِيَامَةِ فَأَسْتَفْتِحُ فَيَقُولُ الْخَازِنُ مَنْ أَنْتَ؟ فَأَقُولُ
مُحَمَّدٌ! فَيَقُولُ بِكَ أُمِرْتُ لَا أَفْتَحُ لِأَحَدٍ قَبْلَكَ »
رواه مسلم
“আনাস
ইবন মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহুথেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামবলেছেন, কিয়ামতের দিন আমি (সর্বপ্রথম) জান্নাতের দরজার সামনে আসব এবং তা খুলতে বলব, দ্বাররক্ষী (ফেরেশতা) বলবে কে তুমি? আমি বলব: মুহাম্মদ, তখন সে বলবে আমাকে এ নির্দেশ দেয়া হয়েছে যে, আপনার পূর্বে আর কারো জন্য দরজা না
খুলতে।[1]”
আরও হাদিসে বর্ণিত হয়েছে:
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍرضي الله عنه قَالَ قَالَ رَسُولَ اللهُ صلى
الله عليه وسلم«أَنَا أَكْثَرُ
الْأَنْبِيَاءِ تَبَعًا يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَأَنَا أَوَّلُ مَنْ يَقْرَعُ بَابَ
الْجَنَّةِ»
“আনাস ইবন মালেক
রাদিয়াল্লাহু আনহুথেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামবলেছেন: কিয়ামতের
দিন সবচেয়ে বেশি উম্মত আমার হবে। আর আমি সর্ব প্রথম জান্নাতের দরজায় করাঘাত করব।[2]”
আবু বকর ও ওমর রাদিয়াল্লাহু
আনহুমা জান্নাতি বয়স্কদের সরদার:
আবু বকর ও ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহুমাঐ সমস্ত জান্নাতিদের সরদার হবেন, যারা বয়স্ক বয়সে ইন্তেকাল করেছেন। প্রমাণ-
عَنْ عَلِيِّ بْنِ أَبِي طَالِبٍرضي الله عنه قَالَكُنْتُ مَعَ رَسُولِ
اللهُصلى الله عليه وسلمإِذْ طَلَعَ
أَبُو بَكْرٍ وَعُمَرُ فَقَالَ رَسُولَ اللهُ صلى الله عليه وسلم«هَذَانِ سَيِّدَا كُهُولِ أَهْلِ الْجَنَّةِ مِنْ
الْأَوَّلِينَ وَالْآخِرِينَ إِلَّا النَّبِيِّينَ وَالْمُرْسَلِينَ يَا عَلِيُّ
لَا تُخْبِرْهُمَا»
“আলী ইবন আবু তালেব রাদিয়াল্লাহু আনহুথেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি একদা রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামএর সাথে ছিলাম হঠাৎ করে আবু বকর ও ওমর রাদিয়াল্লাহু
আনহুমাও চলে আসলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামবললেন, তারা উভয়ে বৃদ্ধ
বয়সে মৃত্যুবরণকারী মুসলিমদের সরদার হবে- তারা পূর্ববর্তী উম্মতের লোক হোক আর
পরবর্তী উম্মতের। তবে নবী রাসূলগণ ব্যতীত। হে আলী, তুমি এ সংবাদ তাদেরকে দিও না।[3]”
হাসান ও হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুমা জান্নাতি যুবকদের সরদার:
হাসান ও
হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুমাজান্নাতে ঐ সমস্ত লোকদের সরদার হবে যারা যৌবনকালে মৃত্যুবরণ
করেছে। প্রমাণ-
عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّرضي الله عنه قَالَ قَالَ رَسُولَ
اللهُ صلى الله عليه وسلم«الْحَسَنُ وَالْحُسَيْنُ
سَيِّدَا شَبَابِ أَهْلِ الْجَنَّةِ»
“আবু সাঈদ
খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহুথেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামবলেছেন: হাসান হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুমাজান্নাতি যুবকদের সরদার হবে।[4]
দশজন জান্নাতি সাহাবী যাদের
রাসূল সা. জান্নাতি বলে ঘোষণা দেন:
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামদশজন সাহাবীকে নাম উল্লেখপূর্বক দুনিয়াতেই
জান্নাতি হওয়ার সুসংবাদ দিয়েছেন। তাদেরকে আশারা মুবাশ্শারা বলা হয়। প্রমাণ-
عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ عَوْفٍرضي الله عنهقَالَ قَالَ رَسُولَ
اللهُ صلى الله عليه وسلم«أَبُو
بَكْرٍ فِي الْجَنَّةِ وَعُمَرُ فِي الْجَنَّةِ وَعُثْمَانُ فِي الْجَنَّةِ
وَعَلِيٌّ فِي الْجَنَّةِ وَطَلْحَةُ فِي الْجَنَّةِ وَالزُّبَيْرُ فِي الْجَنَّةِ
وَعَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ عَوْفٍ فِي الْجَنَّةِ وَسَعْدُ بْنُ أَبِيْ وَقَّاصٍ
فِي الْجَنَّةِ وَسَعِيدُ بْنُ زَيْدٍ فِي الْجَنَّةِ وَأَبُو عُبَيْدَةَ بْنُ
الْجَرَّاحِ فِي الْجَنَّةِ»
“আব্দুর রহমান ইবন আওফ
রাদিয়াল্লাহু আনহুথেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামবলেছেন: আবুবকর জান্নাতি, ওমর জান্নাতি, ওসমান জান্নাতি, আলী জান্নাতি, তালহা জান্নাতি, যুবাইর জান্নাতি, আবদুর রহমান ইবন আওফ
জান্নাতি, সা‘দ ইবন আবূ ওক্কাস জান্নাতি, সাঈদ ইবন যায়েদ জান্নাতি, আবু ওবাইদা ইবনুল জাররাহ জান্নাতি।[5]
ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে
জান্নাতে একটি প্রাসাদের সু-সংবাদ প্রদান:
ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু-কে রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামজান্নাতে একটি ঘরের সুসংবাদ দিয়েছেন এবং তিনিজান্নাতে ওমর
রাদিয়াল্লাহু আনহু’র প্রাসাদ ও ঠিকানা দেখে
এসেছেন।
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ الْعَوَّامِرضي الله عنه قَالَ بَيْنَا نَحْنُ
عِنْدَ رَسُولَ اللهُ صلى الله عليه وسلمإِذْ قَالَ:«بَيْنَا أَنَا نَائِمٌ رَأَيْتُنِي فِي
الْجَنَّةِ فَإِذَا امْرَأَةٌ تَتَوَضَّأُ إِلَى جَانِبِ قَصْرٍ فَقُلْتُ لِمَنْ
هَذَا الْقَصْرُ فَقَالُوا لِعُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ فَذَكَرْتُ غَيْرَتَهُ
فَوَلَّيْتُ مُدْبِرًا فَبَكَى عُمَرُ وَقَالَ أَعَلَيْكَ أَغَارُ يَا رَسُولَ
اللهُ»
“আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহুথেকে বর্ণিত। তিনি বলেন আমরা একদা রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামএর নিকট ছিলাম তখন তিনি বললেন: আমি ঘুমন্ত অবস্থায়
ছিলাম হঠাৎ করে আমি আমাকে জান্নাতে দেখতে পেলাম? আমি একটি অট্টালিকার পাশে এক মহিলাকে ওজু করতে দেখে জিজ্ঞেস
করলাম যে, এ অট্টালিকাটি কার? তারা বলল: এটা ওমর ইবন খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু’র। আমি তখন তার আত্মমর্যাদা বোধের কথা চিন্তা করলাম। তাই
আমি ফিরে গেলাম। ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহুকেঁদে বললেন: হে আল্লাহর রাসূল! আমি কি আপনার ওপর আত্মমর্যাদা বোধ
দেখাব?[6] (বুখারী)
তালহা ইবন ওবাইদুল্লাহ
রাদিয়াল্লাহু আনহু জান্নাতি:
তালহা ইবন ওবাইদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহুকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামজান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছেন। প্রমাণ-
عَنْ الزُّبَيْرِ بْنِ الْعَوَّامِرضي الله عنه قَالَ كَانَ عَلَى
النَّبِيِّصلى الله عليه وسلميَوْمَ أُحُدٍ دِرْعَانِ فَنَهَضَ إِلَى الصَّخْرَةِ
فَلَمْ يَسْتَطِعْ فَأَقْعَدَ طَلْحَةَ تَحْتَهُ فَصَعِدَ النَّبِيُّصلى
الله عليه وسلمعَلَيْهِ حَتَّى اسْتَوَى عَلَى الصَّخْرَةِ
فَقَالَ سَمِعْتُ النَّبِيَّصلى الله عليه وسلم صلى الله عليه
وسلميَقُولُ «أَوْجَبَ طَلْحَةُ»
“যুবায়ের ইবনুল ‘আওয়াম রাদিয়াল্লাহু আনহুথেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, উহুদের যুদ্ধের দিন
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামদুটিবর্ম পরিধান করেছিলেন। তিনি একটি পাথরের
উপর আরোহণ করতে চাচ্ছিলেন কিন্তু তিনি তাতে চড়তে পারছিলেন না। তখন তিনি তালহা রাদিয়াল্লাহু আনহুকে
তাঁর নীচে বসালেন এবং তার ওপর আরোহণ করে তিনি তাতে ছড়লেন। যুবায়ের বলেন, এসময় আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে
বলতে শুনেছি তিনি বলেন, তালহার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে গেছে।[7]
সা‘দ ইবন
মু‘আয রাদিয়াল্লাহু আনহু জান্নাতি:
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, জান্নাতে সা‘দ ইবন মোয়াযের রুমাল উন্নতমানের
রেশমী কাপড়ের চেয়েও অধিক উন্নতমানের হবে। প্রমাণ-
عَنْ الْبَرَاءِ بْنِ عَازِبٍرضي الله عنه قَالَ أُتِيَ رَسُولُ اللهُصلى
الله عليه وسلمبِثَوْبٍ مِنْ حَرِيرٍ فَجَعَلُوا يَعْجَبُونَ مِنْ حُسْنِهِ
وَلِينِهِ فَقَالَ رَسُولَ اللهُ صلى الله عليه وسلم: «لَمَنَادِيلُ سَعْدِ بْنِ مُعَاذٍ فِي
الْجَنَّةِ أَفْضَلُ مِنْ هَذَ »ا رواه البخاري
“বারা ইবন ‘আযেব রাদিয়াল্লাহু
আনহুথেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামএর নিকট একটি
রেশমি কাপড় আনা হল। লোকেরা এর সৌন্দর্য এবং মিহি-সূক্ষ্নতা অবলোকনে আশ্চর্য বোধ করল। তখন
রাসূলুল্লাহ বললেন: জান্নাতে সা‘দ ইবন মু‘আয এর রুমাল এর চেয়েও উন্নত মানের।[8]
বদরের যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী এবং বৃক্ষের নীচে বাইয়াত
গ্রহণকারী সাহাবীগণ জান্নাতি।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামবলেছেন, বদরের যুদ্ধে এবং হুদাইবিয়ার
সন্ধিতে অংশগ্রহণকারী সাহাবীগণ কখনোই জাহান্নামে প্রবেশ করবে না। প্রমাণ-
عَنْ جَابِرٍرضي الله عنهقَالَ قَالَ رَسُولَ اللهُ صلى
الله عليه وسلم:«لَنْ يَدْخُلَ النَّارَ رَجُلٌ شَهِدَ
بَدْرًا وَالْحُدَيْبِيَةَ »
“জাবের
রাদিয়াল্লাহু আনহুথেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামবলেছেন: বদরের
যুদ্ধে এবং হুদাইবিয়ার সন্ধিতে অংশগ্রহণকারী কোন লোক জাহান্নামী হবে না।[9]”
হুদাইবিয়ার
সন্ধি ৬ হিজরি যিলকাদ মাসে সংঘটিত হয়। সাহাবিগণ হুদাইবিয়ার ময়দানে একটি গাছের নীচে
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র হাতে হাত রেখে তাঁর আনুগত্যে জীবন দেয়ার ওপর বাইয়াত গ্রহণ করেন।
আর ঐ বাইয়াতে অংশগ্রহণকারী সমস্ত সাহাবিগণকে আসহাবুস-সাজারা বলা হয়। তারা সবাই জান্নাতি তাদেরকে দুনিয়াতেই জান্নাতের
সু-সংবাদ দেয়া হয়।
আবদুল্লাহ ইবন সালাম রাদিয়াল্লাহু আনহু জান্নাতি:
আবদুল্লাহ ইবন সালামকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামজান্নাতের
সুসংবাদ দিয়েছেন।
عَنْ سَعْدٍرضي الله عنهيَقُولُ مَا سَمِعْتُ رَسُولَ اللهُ صلى
الله عليه وسلميَقُولُ لِحَيٍّ يَمْشِي إِنَّهُ فِي الْجَنَّةِ
إِلَّا لِعَبْدِ اللهُ بْنِ سَلَامٍ
“সা‘দ রাদিয়াল্লাহু আনহুথেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কোনো জীবিত চলমান ব্যক্তির ব্যাপারে একথা বলতে শুনি নাই যে সে
জান্নাতি, তবে শুধু আবদুল্লাহ
ইবন সালামকে একথা বলেছেন।[10]
সা‘দ রাদিয়াল্লাহু আনহুশুধু
আবদুল্লাহ ইবন সালাম রাদিয়াল্লাহু আনহুকেই এ সুসংবাদ দিতে শুনেছেন তাই তিনি তার
ব্যাপারেই বর্ণনা করেছেন। আর কারও
ব্যাপারে তিনি শুনেন নি। তার না শোনার অর্থ এ নয় যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আর কাউকে
জান্নাতের সু-সংবাদ দেননি। কিন্তু অন্যান্য সাহাবিগণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামথেকে অন্য সাহাবীদেরকেও জান্নাতের সু-সংবাদ দিতে শুনেছেন তাই তারা অন্যদের
কথাও বর্ণনা করেছেন।
যায়েদ ইবন আমর রাদিয়াল্লাহু
আনহু জান্নাতি:
যায়েদ ইবন আমর ইবন নুফাইলের জন্য জান্নাতে দু’টি স্তর নির্মাণ করা হয়েছে। প্রমাণ-
عَنْ عَائِشَةَ رضي الله عنها قَالَتْ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله
عليه وسلم«دَخَلْتُ الْجَنَّةَ فَرَأَيْتُ لِزَيْدِ
بْنِ عَمْرِو بْنِ نُفَيْلٍ دَرَجَتَيْنِ»
“আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ বলেছেন: আমি জান্নাতে প্রবেশ করে যায়েদ ইবন আমর ইবন নুফাইলের দু’টি স্তর দেখতে পেলাম।[11]
আবদুল্লাহ ইবন আমর ইবন হারাম রাদিয়াল্লাহু আনহু জান্নাতি
প্রমাণ-
عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهُرضي الله عنه يَقُولُ لَمَّا قُتِلَ
عَبْدُ اللهُ بْنُ عَمْرِو بْنِ حَرَامٍ يَوْمَ أُحُدٍ قَالَ يَا جَابِرُ أَلَا
أُخْبِرُكَ مَا قَالَ اللهُ لِأَبِيكَ قُلْتُ بَلَى قَالَ مَا كَلَّمَ اللهُ
أَحَدًا إِلَّا مِنْ وَرَاءِ حِجَابٍ وَكَلَّمَ أَبَاكَ كِفَاحًا فَقَالَ يَا
عَبْدِي تَمَنَّ عَلَيَّ أُعْطِكَ قَالَ يَا رَبِّ تُحْيِينِي فَأُقْتَلُ فِيكَ
ثَانِيَةً فَقَالَ الرَّبُّ سُبْحَانَهُ إِنَّهُ سَبَقَ مِنِّي أَنَّهُمْ
إِلَيْهَا لَا يَرْجِعُونَ قَالَ يَا رَبِّ فَأَبْلِغْ مَنْ وَرَائِي قَالَ
فَأَنْزَلَ اللهُ تَعَالَى {وَلَا تَحْسَبَنَّ الَّذِينَ قُتِلُوا فِي سَبِيلِ
اللهُ أَمْوَاتًا بَلْ أَحْيَاءٌ عِنْدَ رَبِّهِمْ يُرْزَقُونَ}
“জাবের ইবন আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহুথেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, উহুদ যুদ্ধের দিন যখন
আবদুল্লাহ ইবন হারাম রাদিয়াল্লাহু আনহুশহীদ হলেন, তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামবললেন: হে
জাবের! আমি কি তোমাকে ঐ কথা বলব না, যা আল্লাহ তোমার পিতা সম্পর্কে বলেছেন? আমি বললাম: কেন নয়? তিনি বললেন:
আল্লাহ্ কোন ব্যক্তির সাথে পর্দার আড়াল ব্যতীত কথা বলেন নি। কিন্তু তোমার
পিতার সাথে কোনো পর্দা ব্যতীত কথা বলেছেন এবং বলেছেন হে আমার বান্দা তুমি যা চাওয়ার তা চাও, আমি তোমাকে দিব। তোমার পিতা বলেছেন হে আমার রব? আমাকে দ্বিতীয় বার জীবিত কর যাতে আমি তোমার রাস্তায় শহীদ
হতে পারি। আল্লাহ বললেন: আমার পক্ষ থেকে এ বিষয়ে আগেই সিদ্ধান্ত হয়েছে যে, মৃত্যুর পর দুনিয়াতে আর ফেরত আসা যাবে না। তোমার পিতা বলল: হে
আমার রব! তাহলে তুমি আমার পক্ষ থেকে দুনিয়া-বাসীকে আমার এ পয়গাম শুনিয়ে দাও যে, (আমি দ্বিতীয়বার শহীদ হয়ে মৃত্যুবরণের আকাঙ্ক্ষা করছিলাম)
তখন আল্লাহ এ আয়াত অবতীর্ণ করলেন: “যারা
আল্লাহর পথে নিহত হয়েছে তাদেরকে মৃত মনে কর না। বরং তারা জীবিত। তারা তাদের পালনকর্তার নিকট রিজিক প্রাপ্ত হয়”।[12] (সূরা আল ইমরান: ১৬৯)
আম্মার ইবন ইয়াসের এবং সালমান ফারেসী রাদিয়াল্লাহু আনহুমা জান্নাতি:
عَنْ أَنَسِ بْنِ
مَالِكٍ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ:« إِنَّ الْجَنَّةَ تَشْتَاقُ إِلَى ثَلَاثَةٍ: عَلِيٍّ،
وَعَمَّارٍ، وَسَلْمَانَ»
“আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহুথেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামবলেছেন: জান্নাত তিন ব্যক্তির প্রতি আসক্ত। আলী, আম্মার, সালমান রাদিয়াল্লাহু আনহুম।[13]
জা‘ফর ইবন আবু তালেব এবং হামযা রাদিয়াল্লাহু আনহুমা জান্নাতি:
عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ رضي الله عهنما قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِصلى الله
عليه وسلم : «دَخَلْتُ
الْجَنَّةَ الْبَارِحَةَ فَنَظَرْتُ فِيْهَا فَاِذَا جَعْفُرٌ يَطِيْرُ مَعَ
الْمَلَائِكَةِ وَاِذَا حَمْزَةُ مُتَّكِئٌ عَلَى سَرِيْرٍ »
“ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুথেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামবলেছেন:
গতরাতে আমি জান্নাতে প্রবেশ করে দেখতে পেলাম যে, জা‘ফর ফেরেশতাদের সাথে উড়ে বেড়াচ্ছে। আর হামযা খাটে হেলান দিয়ে
বসে আছে।
যায়েদ ইবন হারেসা রাদিয়াল্লাহু আনহু জান্নাতি
عَنْ بُرَيْدَةَرضي الله عنه قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه
وسلم دَخَلْتُ الْجَنَّةَ فَاسْتَقْبَلَتْنِيْ جَارِيَةٌ شَابَّةٌ فَقُلْتُ لِمَنْ
اَنْتِ؟ قَالَتْ لِزَيْدِ بْنِ حَارِثَةَ
“বুরাইদা
রাদিয়াল্লাহু আনহুথেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামবলেছেন: আমি
জান্নাতে প্রবেশ করতেই আমাকে এক যুবতী স্বাগতম জানাল। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, তুমি কার জন্য? সে বলল: যায়েদ ইবন হারেসার জন্য।[14]
হারেসা ইবন নো‘মান
রাদিয়াল্লাহু আনহু জান্নাতি
عَنْ عَائِشَةَ رضي الله عنها، قَالَتْ قَالَ رَسُوْلُ اللهِصلى الله
عليه وسلم:«دَخَلْتُ
الْجَنَّةَ فَسَمِعْتُ فِيْهَا قِرَاءَةً فَقُلْتُ: مَنْ هَذَا ؟ قَالُوْا :
حَارِثَةَ بْنِ النُّعْمَانِ»، فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِصلى الله عليه وسلم: «كَذَلِكُمْ الْبِرُّ كَذَلِكُمُ الْبِرُّ»
“আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামবলেছেন: আমি
জান্নাতে প্রবেশ করে কেরাতের আওয়াজ শুনতে পেলাম। আমি জিজ্ঞেস করলাম এ কে? ফেরেশতা উত্তরে বলল: হারেসা ইবন নো‘মান। একথা শুনে তিনি বললেন: এটিই নেকীর প্রতিদান, এটিই নেকীর প্রতিদান।[15]
মুহাজির সাহাবীগণ জান্নাতি:
মক্কা থেকে মদিনায় হিজরতকারীদেরকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামজান্নাতের
সুসংবাদ দিয়েছেন।
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍورضي الله عنه، قَالَ : قَالَ لِيْ
رَسُوْلُ اللهِصلى الله عليه وسلم :«أَتَعْلَمُ أَوَّلُ زَمْرَةَ
تَدْخُلُ الْجَنَّةَ مِنْ أُمَّتِيْ ؟»قَالَ : اَللهُ وَرَسُوْلُهُ
أَعْلَمُ فَقَالَ : «اَلْمُهَاجِرُوْنَ يَأْتُوْنَ
يَوْمَ الْقِيَامَةِ إِلَى بَابِ الْجَنَّةِ وَيَسْتَفْتِحُوْنَ، فَيَقُوْلُ
لَهُمْ الْخَزَنَةُ، أَوْ قَدْ حُوْسِبْتُمْ؟ فَيَقُوْلُوْنَ بِأَيِّ شَيْءٍ
نُحَاسِبُ؟ وَإِنَّمَا كَانَتْ أَسْيَافُنَا عَلَى عَوَاتِقِنَا فِيْ سَبِيْلِ
اللهِ، حَتَّى مِتْنَا عَلَى ذَلِكَ؟ قَالَ : فَيُفْتَحُ لَهُمْ ، فَيَقِيْلُوْنَ
فِيْهِ أَرْبَعِيْنَ عَامًا قَبْلَ أَنْ يَدْخُلَهَا النَّاسُ»
“আবদুল্লাহ ইবন আমর রাদিয়াল্লাহু আনহুথেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামবলেছেন: তোমরা কি জান যে, আমার উম্মতের মধ্যে কোন দলটি সর্ব প্রথম জান্নাতে যাবে? আমি বললাম: আল্লাহ্ এবং তাঁর রাসূলই সর্বাধিক জ্ঞাত। তখন
তিনি বললেন: মক্কা থেকে মদিনায় হিজরতকারীরা কিয়ামতের দিন জান্নাতের দরজায় আসবে আর
তাদের জন্য দরজা খুলে যাবে। জান্নাতের দারওয়ান তাদেরকে জিজ্ঞেস করবে- তোমাদের
হিসাব নিকাশ হয়ে গেছে? তখন তারা বলবে
কিসের হিসাব? আমাদের তরবারি
আল্লাহর পথে আমাদের কাঁধে ছিল আর ঐ অবস্থায়ই আমরা মৃত্যুবরণ করেছি। তখন জান্নাতের
দরজা তাদের জন্য খুলে দেয়া হবে। আর তারা অন্যদের জান্নাতে প্রবেশের চল্লিশ বছর
পূর্বে সেখানে প্রবেশ করে আনন্দের অবস্থান করতে থাকবে।[16]
সাহাবী ইবনে দাহদাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু জান্নাতি:
عَنْ جَابِرِ بْنِ سَمُرَةَرضي الله عنه قَالَ صَلَّى رَسُولَ اللهُ
صلى الله عليه وسلمعَلَى ابْنِ الدَّحْدَاحِ ثُمَّ أُتِيَ بِفَرَسٍ عُرْيٍ
فَعَقَلَهُ رَجُلٌ فَرَكِبَهُ فَجَعَلَ يَتَوَقَّصُ بِهِ وَنَحْنُ نَتَّبِعُهُ
نَسْعَى خَلْفَهُ قَالَ فَقَالَ رَجُلٌ مِنْ الْقَوْمِ إِنَّ النَّبِيَّصلى
الله عليه وسلمقَالَ كَمْ مِنْ عِذْقٍ مُعَلَّقٍ أَوْ مُدَلًّى
فِي الْجَنَّةِ لِابْنِ الدَّحْدَاحِ
“জাবের ইবন সামুরা রাদিয়াল্লাহু আনহুথেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামইবনে দাহদার জানাযার সালাত পড়ানোর পর তাঁর পাশে উন্মুক্ত
পিঠবিশিষ্ট একটি ঘোড়া আনা হল। একব্যক্তি তা ধরল এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামতাতে আরোহণ করলেন। তখন তিনি তার উপর সওয়ার হয়েচলতে লাগলেন, আমরা সবাই তাঁর পিছনে পিছনে
চলছিলাম। হঠাৎ লোকদের মধ্য থেকে একজন বলে উঠল যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামবলেছেন: ইবনে দাহদার জন্য জান্নাতে
কত ফল ঝুলছে।
উক্কাসা ইবন আবী মিহসান
রাদিয়াল্লাহু আনহু জান্নাতি:
عَنْ عِمْرَانَ بْنِ حُصَيْنٍرضي الله عنهأَنَّ رَسُوْلَ اللهِ
قَالَصلى الله عليه وسلم قال: «ْيدخلُ الْجَنَّةَ مِنْ أُمَّتِي سَبْعُونَ أَلْفًا
بِغَيْرِ حِسَابٍ قَالُوا وَمَنْ هُمْ يَا رَسُولَ اللهُ قَالَ هُمْ الَّذِينَ
َلَا يَسْتَرْقُونَ وَلَا يَتَطَيَّرُونَ وَلَا يَكْتَوُونَ وَعَلَى رَبِّهِمْ
يَتَوَكَّلُونَ فَقَامَ عُكَّاشَةُ فَقَالَ ادْعُ اللهَ يَا نَبِيَّ اللهِ أَنْ
يَجْعَلَنِي مِنْهُمْ قَالَ أَنْتَ مِنْهُمْقَالَ: فَقَامَ رَجُلٌ، فَقَالَ: يَا نَبِيَّ اللهِ، ادْعُ اللهِ
أَنْ يَجْعَلَنِي مِنْهُمْ، قَالَ: «سَبَقَكَ بِهَا عُكَّاشَةُ»» رواه مسلم
“ইমরান ইবন হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুথেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামবলেছেন: আমার উম্মতের মধ্য থেকে সত্তর হাজার লোক বিনা হিসেবে
জান্নাতে যাবে। সাহাবিগণ জিজ্ঞেস করলেন: ইয়া রাসূলুল্লাহ! ঐ সৌভাগ্যবানরা কারা? তিনি বললেন: তারা হল ঐ সমস্ত লোক যারা কোনো দিন (অসুস্থতার
কারণে) কোনো ঝাড়-ফুক চেয়ে বেড়ায় না, কুলক্ষণ
গ্রহণ করে না, (রোগের কারণে) ছেক দেয়ার ব্যবস্থা
করে না বরং তারা শুধু তাদের রবের উপর ভরসা করে থাকে। উক্কাসা রাদিয়াল্লাহু
আনহুবললেন: হে আল্লাহর রাসূল, আমার জন্য দু‘আ করুন আমিও যেন
তাদের একজন হতে পারি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামবললেন: তুমি
তাদের একজন। একথা শুনে উপস্থিত একজন
ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বলল, হে আল্লাহর নবী, আপনি আল্লাহর নিকট দু‘আ
করুন আল্লাহ যেন আমাকেও তাদের অন্তর্ভুক্ত করেন। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, তোমার পূর্বে উক্কাসা পাশ করে ফেলছে।[17]
সাবেত ইবনে কাইস রাদিয়াল্লাহু
আনহু জান্নাতী:
عَنْأَنَسِبْنِمَالِكٍرضي الله عنه قَالَ: لَمَّانَزَلَتْهَذِهِالْآيَةُ: {يَاأَيُّهَاالَّذِينَآمَنُوالَاتَرْفَعُواأَصْوَاتَكُمْفَوْقَصَوْتِالنَّبِيِّ}
[الحجرات: 2] إِلَىقَوْلِهِ {وَأَنْتُمْلَاتَشْعُرُونَ} [الزمر: 55] ،وَكَانَثَابِتُبْنُقَيْسِبْنِالشَّمَّاسِرَفِيعَالصَّوْتِ،فَقَالَ:
أَنَاالَّذِيكُنْتُأَرْفَعُصَوْتِيعَلَىرَسُولِاللَّهِصَلَّىاللهُعَلَيْهِوَسَلَّمَحَبِطَعَمَلِي،أَنَامِنْأَهْلِالنَّارِ،وَجَلَسَفِيأَهْلِهِحَزِينًا،فَتَفَقَّدَهُرَسُولُاللَّهِصَلَّىاللهُعَلَيْهِوَسَلَّمَ،فَانْطَلَقَبَعْضُالْقَوْمِإِلَيْهِ،فَقَالُوالَهُ:
تَفَقَّدَكَرَسُولُاللَّهِصَلَّىاللهُعَلَيْهِوَسَلَّمَمَالَكَ؟فَقَالَ: أَنَاالَّذِيأَرْفَعُصَوْتِيفَوْقَصَوْتِالنَّبِيِّ،وَأَجْهَرُبِالْقَوْلِحَبِطَعَمَلِي،وَأَنَامِنْأَهْلِالنَّارِ،فَأَتَوْاالنَّبيَّصَلَّىاللهُعَلَيْهِوَسَلَّمَ،فَأَخْبَرُوهُبِمَاقَالَ،فَقَالَ:
«لَا،بَلْهُوَمِنْأَهْلِالْجَنَّةِ»قَالَأَنَسٌ:
" وَكُنَّانَرَاهُيَمْشِيبَيْنَأَظْهُرِنَا،وَنَحْنُنَعْلَمُأَنَّهُمِنْأَهْلِالْجَنَّةِ،
“আনাস ইবন মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন “হে
ঈমানদারগণ, তোমরা তোমাদের স্বরকে রাসূলের স্বরের উপর উঠিও না” এ আয়াত- নাযিল হল,
সাবেত ইবন কাইস ইবন শামাস যার গলার আওয়াজ মোটা ছিল, তিনি বললেন, আমি রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সম্মুখে বড় আওয়াজে কথা বলি। সুতরাং, আমার আমল
বরবাদ হয়ে গেছে এবং আমি জাহান্নামী। এ কারণে ঘর থেকে বের হওয়া থেকে বিরত থাকেন এবং
হতাশ হয়ে বাড়ীতে বসে থাকেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার খোঁজ নিলেন,
তখন কতক লোক তাকে গিয়ে বলল, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তোমাকে খুঁজছে;
তোমার কি হয়েছে? তখন সে বলল, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর
উচ্চ স্বরে কথা বলি এবং আওয়াজ বড় করি। ফলে আমার আমল নষ্ট হয়ে গেছে এবং আমি
জাহান্নামী। তারপর লোকেরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দরবারে সাবেত
ইবন কাইস ইবন শামাস যা বলছে, সে সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
অবহিত করলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: না, সে জান্নাতী। আনাস
ইবন মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমরা তাকে আমাদের সামনে দিয়ে হেটে যেতে দেখতাম
এবং আমরা জানতাম যে, সে একজন জান্নাতী মানুষ...।[18]
সা‘আদ ইবন আল-আখরাম রাদিয়াল্লাহু আনহু জান্নাতী:
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ،رضي الله عنه أَنَّ أَعْرَابِيًّا جَاءَ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ، فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ،
دُلَّنِي عَلَى عَمَلٍ إِذَا عَمِلْتُهُ دَخَلْتُ الْجَنَّةَ، قَالَ: «تَعْبُدُ
اللَّهَ لَا تُشْرِكُ بِهِ شَيْئًا، وَتُقِيمُ الصَّلَاةَ الْمَكْتُوبَةَ، وَتُؤَدِّي الزَّكَاةَ الْمَفْرُوضَةَ، وَتَصُومُ رَمَضَانَ» ،
قَالَ: وَالَّذِي نَفْسُ مُحَمَّدٍ بِيَدِهِ، لَا أَزِيدُ عَلَى هَذَا شَيْئًا
أَبَدًا، وَلَا أَنْقُصُ مِنْهُ، فَلَمَّا وَلَّى، قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ
عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ سَرَّهُ أَنْ يَنْظُرَ إِلَى رَجُلٍ مِنْ أَهْلِ
الْجَنَّةِ، فَلْيَنْظُرْ إِلَى هَذَا»
আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত,
তিনি বলেন, একজন গ্রাম্য লোক রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দরবারে এসে
বলল, হে আল্লাহর রাসূল আপনি আমাকে এমন কিছু আমল বাতলে দিন, তার উপর আমল করে আমি
যাতে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে
বললেন, আল্লাহর ইবাদত করবে, তার সাথে কাউকে শরিক করবে না, ফরয সালাত কায়েম করবে,
যাকাত আদায় করবে এবং রমযান মাসের রোজা রাখবে। লোকটি বলল, ঐ সত্তার কসম যার হাতে
মুহাম্মদের জীবন, আমি এর উপর কোনো কিছু কখনোই বাড়াবো না এবং কমাবো না। যখন লোকটি
চলে যাচ্ছিল, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যার মনে চায় কোন
জান্নাতী লোক দেখতে তাহলে সে যেন এ লোকটির দিক তাকায়।[19]
লোকটির নাম নাম সা‘আদ ইবন আল-আখরাম।
বিলাল ইবন রাবাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু জান্নাতী:
عَنْأَبِيهُرَيْرَةَرضي الله عنهقَالَقَالَرَسُوْلُاللهِصَلَّى
اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَلِبِلَالٍعِنْدَصَلَاةِالْغَدَاةِيَابِلَالُحَدِّثْنِيبِأَرْجَىعَمَلٍعَمِلْتَهُفِيالْإِسْلَامِمنفعةفَإِنِّيسَمِعْتُالليلةخشفنَعْلَيْكَبَيْنَيَدَيَّفِيالْجَنَّةِقَالَبلالمَاعَمِلْتُعَمَلًاأَرْجَىعِنْدِيمنفعةمنأَنِّيلَمْأَتَطَهَّرْطَهُورًاتَامًّافِيسَاعَةِمِنْلَيْلٍأَوْنَهَارٍإِلَّاصَلَّيْتُبِذَلِكَالطُّهُورِمَاكُتِبَلِيأَنْأُصَلِّيَ
অর্থ, আবু
হুরাইরা রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
একদিন ফজরের সালাতের পর বিলাল রা. কে জিজ্ঞেস করলেন, হে বেলাল! ইসলাম গ্রহণের
পর তোমার
এমন কি আমল আছে, যার বিনিময়ে তুমি
পুরস্কৃত হওয়ার আশা কর? কেননা, আজ রাতে আমি জান্নাতে আমার সামনে তোমার
হাটার আওয়াজ শুনতে পেয়েছি। বিলাল বললেন, আমি আশা করার মত অধিক গুরুত্বপূর্ণ কোন আমল
করিনি। তবে রাতে বা দিনে যখনই আমি ওজু করি, তখন ওই ওজু দ্বারা যতটুকু আল্লাহ তাওফিক দেন ততটুকু নফল সালাত আদায় করি।[20]
যে সব নারীদের
জান্নাতী বলে ঘোষণা দেয়া হয়
খাদীজা রাদিয়াল্লাহু আনহা জান্নাতি:
খাদীজা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামদুনিয়াতেই জান্নাতের একটি ঘরের সুসংবাদ
দিয়েছেন। প্রমাণ-
عَنْ عَائِشَةَ رضي الله عنها قَالَتْ بَشَّرَ رَسُولُ اللهُخَدِيجَةَ
بِنْتَ خُوَيْلِدٍ بِبَيْتٍ فِي الْجَنَّةِ
“আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামখাদিজা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে জান্নাতে একটি ঘরের সু-সংবাদ দিয়েছেন।[21]”
عَنْأَبِيهُرَيْرَةَ،رضي الله عنه قَالَ: سَمِعْتُهُيَقُولُ:
أَتَىجِبْرِيلُالنَّبِيَّصَلَّىاللهُعَلَيْهِوَسَلَّمَ،فَقَالَ: «هَذِهِخَدِيجَةُقَدْأَتَتْكَ،مَعَهَاإِنَاءٌفِيهِإِدَامٌأَوْطَعَامٌأَوْشَرَابٌ،فَإِذَاهِيَأَتَتْكَفَاقْرَأْعَلَيْهَاالسَّلَامَمِنْرَبِّهَاوَبَشِّرْهَابِبَيْتٍفِيالْجَنَّةِمِنْقَصَبٍلَاصَخَبَفِيهِوَلَانَصَبَ»
“আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এর কাছে জিবরীল আ. এসে বললেন, এই যে, খাদিজা রাদিয়াল্লাহু আনহা তোমার
কাছে, একটি পাত্র যাতে রয়েছেতরকারী, খাদ্য ও পানীয়, তা নিয়ে উপস্থিত হবে। যখন সে তোমার কাছে
আসবে, তখন তুমি তোমার রবের পক্ষ থেকে তার নিকট
সালাম পৌছাও এবং তাকে মনি-মুক্তা দ্বারা নির্মিত জান্নাতের একটি প্রসাদের সু-সংবাদ
দাও, যাতে কোন চিল্লা-পাল্লা নাই এবং কোন কষ্ট-ক্লেশ নাই।[22]
ফাতেমা রাদিয়াল্লাহু আনহা
জান্নাতী নারীদের সরদার:
عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا، قَالَتْ: أَقْبَلَتْ فَاطِمَةُ تَمْشِي كَأَنَّ مِشْيَتَهَا
مَشْيُ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ
عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَرْحَبًا بِابْنَتِي»
ثُمَّ أَجْلَسَهَا عَنْ يَمِينِهِ، أَوْ عَنْ شِمَالِهِ، ثُمَّ أَسَرَّ إِلَيْهَا حَدِيثًا
فَبَكَتْ، فَقُلْتُ لَهَا: لِمَ تَبْكِينَ؟
ثُمَّ أَسَرَّ إِلَيْهَا حَدِيثًا فَضَحِكَتْ، فَقُلْتُ: مَارَأَيْتُ كَاليَوْمِ فَرَحًا أَقْرَبَ مِنْ حُزْنٍ،
فَسَأَلْتُهَا عَمَّا قَالَ: فَقَالَتْ: مَا
كُنْتُ لِأُفْشِيَ سِرَّ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، حَتَّى
قُبِضَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَسَأَلْتُهَا فَقَالَتْ: أَسَرَّ
إِلَيَّ: «إِنَّ جِبْرِيلَ كَانَ يُعَارِضُنِي
القُرْآنَ كُلَّ سَنَةٍ مَرَّةً، وَإِنَّهُ عَارَضَنِي العَامَ مَرَّتَيْنِ، وَلاَ
أُرَاهُ إِلَّا حَضَرَ أَجَلِي، وَإِنَّكِ
أَوَّلُ أَهْلِ بَيْتِي لَحَاقًا بِي». فَبَكَيْتُ، فَقَالَ: «أَمَا تَرْضَيْنَ أَنْ تَكُونِي سَيِّدَةَ نِسَاءِ أَهْلِ الجَنَّةِ، أَوْ نِسَاءِ
المُؤْمِنِينَ» فَضَحِكْتُ لِذَلِكَ
“আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদিন
ফাতেমা পায়ে হেটে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দরবারে আসছিল। তার হাটা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হাটার মতই ছিল। তাকে
দেখে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, স্বাগতম আমার মেয়ের প্রতি! তার
পর তাকে তার ডান বা বাম দিকে বসালেন, তারপর তার কানে কানে কিছু কথা বললে, সে কেঁদে
দিল, তখন আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম তুমি কেন কাঁদছ? তারপর আবারও সে কানে কানে কিছু
কথা বলল, তখন সে হেসে দিল। তখন আমি বললাম, আজকের দিনের মত এত বেশি খুশি তোমাকে আমি
আর কখনো দেখিনি। আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
তোমাকে কি বলছে? তখন সে বলল, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গোপন কথা
কারও নিকট প্রকাশ করব না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মৃত্যুর পর
তাকে জিজ্ঞাসা করলাম তখন সে বলল, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে
বললেন, জিবরীল প্রতি বছর একবার করে আমার নিকট কুরআন পেশ করে থাকে। কিন্তু এ বছর সে
দুইবার কুরআন পেশ করেছে। এর কারণ, এটাই যে, আমার সময় ফুরিয়ে আসছে। আর আমার
পরিবারের মধ্যে তুমিই সবার আগে আমার সাথে সম্পৃক্ত হবে। এ কথা শোনে আমি কাঁদি। তারপর তিনি বললেন, তুমি কি এতে খুশি নও যে, তুমি জান্নাতী নারীদের বা মুমিন
নারীদের সরদার হবে? এ কথা শোনে আমি হাসলাম।[23]
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা জান্নাতি:
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামজান্নাতের সু-সংবাদ দিয়েছেন। প্রমাণ-
عَنْ عَائِشَةَ، رضي الله عنها أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه
وسلم قَالَ: «أَمَا
تَرْضِيْنَ أَنْ تَكُوْنِيْ زَوْجَتِيْ فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ؟»قُلْتُ: بَلَى
وَاللهِ، قَالَ: «فَأَنْت زَوْجَتِيْ فِيْ الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ»
“আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামবলেছেন: হে
আয়েশা তুমি কি এতে সন্তুষ্ট নও যে, তুমি দুনিয়া ও আখিরাতে আমার স্ত্রী হবে? ‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বললেন কেন নয়? তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামবললেন: তুমি দুনিয়া ও আখিরাতে
আমার স্ত্রী।[24]
উম্মে সুলাইমরাদিয়াল্লাহু আনহা জান্নাতি:
আবু তালহা রাদিয়াল্লাহু আনহু এর স্ত্রী উম্মে সুলাইমরাদিয়াল্লাহু আনহাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামদুনিয়াতে জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছেন।
عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهُ رضي الله عنه أَنَّ رَسُولَ اللهُ صلى
الله عليه وسلم قَالَ: «أُرِيتُ
الْجَنَّةَ فَرَأَيْتُ امْرَأَةَ أَبِي طَلْحَةَ ثُمَّ سَمِعْتُ خَشْخَشَةً
أَمَامِي فَإِذَا بِلَالٌ »
“জাবের ইবন আবদুল্লাহ
রাদিয়াল্লাহু আনহুথেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামবলেছেন: আমাকে জান্নাত দেখানো হল, আমি আবু তালহা রাদিয়াল্লাহু আনহুএর স্ত্রী উম্মে সুলাইমকে
সেখানে দেখতে পেলাম। অতঃপর আমি সামনে অগ্রসর হয়ে কোন মানুষের চলার আওয়াজ পেলাম।
হঠাৎদেখলাম যে, সে হচ্ছে বেলাল।[25]
মারিয়াম বিনতে ইমরান, ফাতেমা
বিনতে মুহাম্মদ,
খাদিজা, ফেরাউনের স্ত্রী আসিয়া জান্নাতি নারীদের সরদার:
মারিয়াম
বিনতে ইমরান, ফাতেমা বিনতে
মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামএর স্ত্রী খাদিজা, ফেরাউনের স্ত্রী আসিয়া জান্নাতি নারীদের সরদার হবে।
عَنْ جَابِرٍرضي الله عنه قَالَ: قَالَ رَسُولَ اللهُ صلى الله عليه
وسلم: «سَيِّداتُ نِسَاءِ أَهْلِ
الْجَنَّةِ بَعْدَ مَرْيَمَ بنتِ عِمْرَانَ، فَاطِمَةُ، وَخَدِيجَةُ، وَآسِيَةُ
امْرَأَةُ فِرْعَوْنَ.»
“জাবের
রাদিয়াল্লাহু আনহুথেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামবলেছেন:
জান্নাতি নারীদের সরদার মারিয়াম বিনতে ইমরান এর পরে ফাতেমা, খাদিজা ও ফেরাউনের স্ত্রী আসিয়া।[26]
গুমাইসা বিনতে মিলহান রাদিয়াল্লাহু আনহুা জান্নাতি
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ رضي الله عنه
قَالَ قَالَ رَسُولَ اللهُ صلى الله عليه وسلم «دَخَلْتُ الْجَنَّةَ فَسَمِعْتُ خَشَفَةً فَقُلْتُ مَا
هَذِهِ الْخَشَفَةَ فَقِيلَ هَذِهِ الغُّمَيْصَاءُ بِنْتُ مِلْحَانَ »
“আনাস
রাদিয়াল্লাহু আনহুথেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামবলেছেন: আমি
জান্নাতে প্রবেশ করে আমার সামনে কারো চলার আওয়াজ পেলাম। আমি (জিবরীলকে) জিজ্ঞেস
করলাম এ কিসের আওয়াজ? আমাকে বলা হল যে
এটা গুমাইসা বিনতে মিলহানের চলার আওয়াজ।[27]
উল্লেখ্য যে
গুমাইসা বিনতে মিলহানের শ্বশুর ও ছেলে ওহুদ যুদ্ধে শহীদ হয়েছিল। আর তার ভাই হারাম
ইবন মিলহান বি’র মা‘উনার ঘটনায় শহীদ
হয়েছিল। আর সে নিজে কুবরুস দ্বীপে আক্রমণ করে
প্রত্যাবর্তনকারী সৈন্যদের অন্তর্ভুক্ত ছিল। আর ঐ
সফরেই তিনি আল্লাহর প্রিয় হয়ে গিয়েছিলেন। (ইন্নালিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)
রবী‘ বিনতে মুয়াওয়ায রাদিয়াল্লাহু
আনহা জান্নাতী:
রবী‘ বিনতে মুয়াওয়ায তিনি একজন আনসারী মহিলা। বাই‘য়াতে যে দুই মহিলা অংশ
গ্রহণ করেন, তাদের মধ্যে তিনি একজন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে
জান্নাতী বলে সু-সংবাদ দেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«لا يدخل النار احد ممن
بايع تحت الشجرة»
গাছের নিচে বাইয়াতে অংশ গ্রহণকারী কেউ জাহান্নামে যাবে না।[28]
ইসলামের মধ্যে সর্ব প্রথম শাহাদাতের গৌরব অর্জনকারী নারী সুমাইয়া বিনতে খাইয়াত জান্নাতী:
ইসলামের মধ্যে সর্ব প্রথম শাহাদাতের গৌরব অর্জনকারী নারী সুমাইয়া বিনতে খাইয়াত জান্নাতী:
সুমাইয়া বিনতে খাইয়াত ইসলামে সর্বপ্রথম নারী শহীদ। তিনি অপর ধৈর্যশীল
ঈমানদার শহীদ ইয়াসের ইবন আমের এর স্ত্রী এবং আম্মার ইবন ইয়াসের রাদিয়াল্লাহু আনহুর
মাতা। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে এ বলে জান্নাতের ঘোষণা দেন।
তিনি বলেন, صبرًا آل ياسر فإن موعدكم الجنة“ইয়াসের পরিবার ধৈর্য ধারণ কর, অবশ্যই জান্নাত তোমাদের জন্য
অবধারিত।”
এ বিষয়ে অপর একটি শব্দ জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, اصبر اللهم اغفر لآل
ياسرধৈর্য ধারণ কর, হে আল্লাহ তুমি
ইয়াসের পরিবারকে ক্ষমা কর’। অপর একটি বর্ণনায় জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত তিনি বলেন, আম্মার ও তার পরিবারকে যখন
শাস্তি দেয়া হচ্ছিল, তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামতাদের নিকট দিয়ে
অতিক্রম করেন এবং তাদের উপর অকথ্যনির্যাতনের দৃশ্য দেখে বলেন,أبشروا
آل عمار وآل ياسر فإن موعدكم الجنة তোমরা আম্মার ও ইয়াসের পরিবারকে সু-সংবাদ দাও- তাদের জন্য জান্নাত অবধারিত।[29]
সুয়াইরা আল-আসা‘দিয়াহ
রাদিয়াল্লাহু আনহা জান্নাতী:
ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
أَلاَ أُرِيكَ امْرَأَةً مِنْ أَهْلِ الجَنَّةِ؟ قُلْتُ:
بَلَى، قَالَ: هَذِهِ المَرْأَةُ السَّوْدَاءُ،
أَتَتِ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَتْ: إِنِّي أُصْرَعُ، وَإِنِّي أَتَكَشَّفُ،
فَادْعُ اللَّهَ لِي، قَالَ: «إِنْ شِئْتِ صَبَرْتِ
وَلَكِ الجَنَّةُ، وَإِنْ شِئْتِ دَعَوْتُ اللَّهَ أَنْ يُعَافِيَكِ» فَقَالَتْ:
أَصْبِرُ، فَقَالَتْ: إِنِّي أَتَكَشَّفُ، فَادْعُ اللَّهَ
لِي أَنْ لاَ أَتَكَشَّفَ، فَدَعَا لَهَا
আমি তোমাকে একজন জান্নাতী নারী দেখাব না? আমি বললাম হ্যাঁ; তিনি বললেন, এ
কালো মহিলা। মহিলাটি একদিন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দরবারে এসে
বললেন, আমি মৃগী রোগের কারণে বেঁহুস হয়ে পড়ি এবং কাপড়-চোপড় খুলে ফেলি। আপনি আমার
জন্য দো‘আ করেন আমি যাতে ভালো হয়ে যাই। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বললেন, যদি তুমি চাও ধৈর্য ধারণ কর এবং তার বিনিময়ে তুমি জান্নাতে যাবে। আর যদি
চাও আমি তোমার জন্য আল্লাহর কাছে দো‘আ করি তাতে তুমি ভালো হয়ে যাবে। তখন মহিলাটি
বলল, আমি ধৈর্য ধারণ করব। তারপর সে বলল, আমি উলঙ্গ হয়ে যাই, আপনি আল্লাহর নিকট
দো‘আ করেন, আমি যাতে উলঙ্গ না হই। তখন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম তার জন্য দো‘আ করেন।[30]
মহিলাটির নাম সুয়াইরা আল-আসা‘দিয়াহ রাদিয়াল্লাহু আনহুা।
উম্মুল মু’মিনীন হাফসা রাদিয়াল্লাহু আনহা জান্নাতি:
عَنْ أَنَسٍ، رضي الله عنهقَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِصلى الله عليه
وسلم: «قَالَ
جِبْرِيْلُ عليه الصلاة والسلام ، راجِعْ حَفْصَةَ فَاِنَّهَا صَوَامَةٌ قَوَامَةٌ
، وَاِنَّهَا زَوَّجْتُكَ فِيْ الْجَنَّةِ، فَرَاجَعَهَا»
“আনাস
রাদিয়াল্লাহু আনহুথেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামবলেছেন: জিবরীল
আমাকে বলেছে যে, আপনি হাফসা থেকে ফিরিয়ে নিন; কেননা সে অধিক
রোজাদার ও অধিক নফল সালাত আদায়কারী এবং সে জান্নাতে আপনার স্ত্রী।[31]
উম্মে হারাম বিনতে মিলহান রাদিয়াল্লাহু আনহা জান্নাতী:
উম্মে হারাম বিনতে মিলহান রাদিয়াল্লাহু আনহা ছিলেন, আনাস ইবন মালেক রাদিয়াল্লাহু
আনহু এর খালা। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে জান্নাতের
সু-সংবাদ দেন। তিনি একদিন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেন,
তিনি বলেন,
«أَوَّلُ جَيْشٍ مِنْ أُمَّتِي يَغْزُونَ البَحْرَ
قَدْ أَوْجَبُوا»، قَالَتْ أُمُّ حَرَامٍ: قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ أَنَا
فِيهِمْ؟ قَالَ: «أَنْتِ فِيهِمْ»، ثُمَّ قَالَ
النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَوَّلُ جَيْشٍ مِنْ أُمَّتِي
يَغْزُونَ مَدِينَةَ قَيْصَرَ مَغْفُورٌ لَهُمْ»، فَقُلْتُ: أَنَا فِيهِمْ يَا
رَسُولَ اللَّهِ؟ قَالَ: «لاَ»
আমার উম্মতের সর্ব প্রথম যে সৈন্য দলটি সমুদ্রে যুদ্ধ পরিচালনা করবে, তারা
তাদের জন্য জান্নাতকে অবধারিত করে নেবে। এ কথা শোনে উম্মে হারাম রাদিয়াল্লাহু আনহা বললেন, হে আল্লাহর রাসূল আমি তাদের মধ্যে থাকতে চাই।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি তাদের তাদের মধ্য হতে। তারপর
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমার মধ্য যে সৈন্য দলটি রোম সম্রাট
সীজারের শহরে যুদ্ধ করবে, তারা সবাই ক্ষমা প্রাপ্ত হবে। আমি বললাম, হে আল্লাহর
রাসূল! আমি তাদের অন্তর্ভুক্ত হতে চাই। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বললেন, না।[32]
জাহান্নামের দুঃসংবাদ প্রাপ্তরা
আমর ইবন লুহাই জাহান্নামী:
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رضي الله عنهقَالَقَالَ رَسُولُ اللهِصلى الله
عليه وسلم: «رَأَيْتُ عَمْرَو بْنَ لُحَيِّ بْنِ
قَمْعَةَ بْنِ خِنْدِفَ أَبَا بَنِي كَعْبٍ هَؤُلَاءِ يَجُرُّ قُصْبَهُ فِي
النَّارِ » رواه مسلم
“আবুহুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহুথেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামবলেছেন: আমি ‘আমর ইবন লুহাই ইবন কাময়া
ইবন খান্দাফ, বানি কা‘বদের পূর্বতন পুরুষকে দেখেছি যে, সে জাহান্নামে স্বীয় নাড়ীভুঁড়ি টেনে নিয়ে চলছে”।
অন্য হাদীসে এসেছে, এ আমর ইবন আমেরই
সর্বপ্রথম মূর্তির নামে পশু ছেড়েছে। তাই আমর ইবন আমের আল খুযা‘য়ী জাহান্নামী হবে। প্রমাণ-
عَنْ أبِي هُرَيْرَةَ رضي الله عنه قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه
وسلم: «رَأَيْتُ عَمْرَو بْنَ
عَامِرٍ الْخُزَاعِيَّ يَجُرُّ قُصْبَهُ فِي النَّارِ وَكَانَ أَوَّلَ مَنْ
سَيَّبَ السُّيُوبَ» ]رواه مسلم[
““আবুহুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহুথেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: আমি ‘আমর ইবন আমের আল খুযায়ীকে
দেখেছি যে সে জাহান্নামে স্বীয় নাড়ি-ভুঁড়ি টেনে নিয়ে চলছে, সে ছিল ঐ ব্যক্তি যে, সর্বপ্রথম মূর্তির নামে পশু ছেড়েছিল”।[33]
অপর বর্ণনায় তাকে আবু সামামা আমর ইবন মালেক বলা হয়েছে এবং তাকে জাহান্নামী আখ্যা দেওয়া হয়েছে
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামবলেন, আমি আবু সামামা ‘আমর ইবন মালেককে জাহান্নামে তার নাড়ি-ভুঁড়িহেচড়ে
নিয়ে চলতে দেখেছি:
عَنْ جَابِرِ رضي الله عنه : عَنِ
النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ رَأَيْتُ أَبَا ثُمَامَةَ عَمْرَو بْنَ
مَالِكٍ يَجُرُّ قُصْبَهُ فِي النَّارِ (رواه مسلم)
“জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহুআলাইহিওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমি আবু সামামা
‘আমর ইবন মালেককে জাহান্নামে তার নাড়ি-ভুঁড়িহেচড়ে নিয়ে চলতে দেখেছি।[34]”
বদরের যুদ্ধে নিহত ১৪ জন কোরাইশ
নেতা জাহান্নামী:
عَنْ أَبِي طَلْحَةَ رضي الله عنه أَنَّ نَبِيَّ اللهِصلى الله عليه
وسلمأَمَرَ يَوْمَ بَدْرٍ بِأَرْبَعَةٍ وَعِشْرِينَ رَجُلًا مِنْ صَنَادِيدِ
قُرَيْشٍ فَقُذِفُوا فِي طَوِيٍّ مِنْ أَطْوَاءِ بَدْرٍ خَبِيثٍ مُخْبِثٍ قَامَ
عَلَى شَفَةِ الرَّكِيِّ فَجَعَلَ يُنَادِيهِمْ بِأَسْمَائِهِمْ وَأَسْمَاءِ
آبَائِهِمْ يَا فُلَانُ بْنَ فُلَانٍ وَيَا فُلَانُ بْنَ فُلَانٍ أَيَسُرُّكُمْ
أَنَّكُمْ أَطَعْتُمْ اللهَ وَرَسُولَهُ فَإِنَّا قَدْ وَجَدْنَا مَا وَعَدَنَا
رَبُّنَا حَقًّا فَهَلْ وَجَدْتُمْ مَا وَعَدَ رَبُّكُمْ حَقًّا» [رواه البخاري]
“আবু তালহা
রাদিয়াল্লাহু আনহুথেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, বদরের যুদ্ধের দিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকোরাইশদের ২৪ জন নেতাকে
বদরের কুয়া সমূহের মধ্যে একটি দুর্গন্ধ ময় কুয়ায় নিক্ষেপ করার জন্য নির্দেশ দিলেন, তাদেরকে সেখানে নিক্ষেপ করার পর তিনি কুয়ার পাশে দাঁড়িয়ে
সমস্ত সরদারদেরকে তাদের পিতার নামসহ ডাকলেন, হে অমুকের ছেলে অমুক, হে অমুকের ছেলে
অমুক! তোমাদের কি একথা পছন্দ লাগছে যে, তোমরা আল্লাহ্ এবং তাঁর রসূলের আনুগত্য কর নাই? আমাদের সাথে আমাদের রব যে অঙ্গিকার করেছিল তা আমরা সত্য
পেয়েছি, তোমাদের সাথে তোমাদের রব যে ওয়াদা
করেছিল তা কি তোমরা সত্য পেয়েছ”?[35]
খন্দকের যুদ্ধে অংশ গ্রহণকারী
কাফের-মুশরেকরা জাহান্নামী:
عَنْ عَلِيٍّرضي الله عنهقَالَلَمَّا كَانَ يَوْمُ الْأَحْزَابِ قَالَ
رَسُولُ اللهِصلى الله عليه وسلم :«مَلَأَ اللهُ بُيُوتَهُمْ وَقُبُورَهُمْ
نَارًا شَغَلُونَا عَنْ الصَّلَاةِ الْوُسْطَى حَتَّى غَابَتْ الشَّمْسُ » ]رواه البخارى[
“আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুথেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, খন্দকের যুদ্ধের দিন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামবলেছেন: আল্লাহ্ তাদের ঘর ও কবর সমূহকে আগুন দিয়ে ভরে দিন, তারা আমাদেরকে মধ্যবর্তী সালাত (আসরের) আদায় করা থেকে বিরত
রেখেছে, এমনকি সূর্য ডুবে গেছে”।[36]
[1]মুসলিম,
হাদিস: ১৯৭
[2]মুসলিম,
হাদিস: ১৯৬
[3]তিরমিযি,
মানাকেব অধ্যায়, হাদিস:২৮৯৭
[4]তিরমিযি,
হাদিস: ৩৭৪১; ইবনে মাযাহ, হাদিস:১১৮
[5]
তিরমিযি, মানাকেব অধ্যায়, হাদিস: ৩৭৪৭; ইবনে
মাযাহ, হাদিস: ১৩৩
[6]বুখারি,
হাদিস: ৩২৪২
[7]তিরমিযি,
মানাকেব অধ্যায়, হাদিস: ১৬৯২
[8]বুখারি,
হাদিস: ৩২৪৮
[9]আহমদ,
আল্লামা আলবানীর সিলসিলাতুল আহাদিস আস সহীহা, হাদিস: ২১৬০
[10]মুসলিম,
মানাকেব অধ্যায়, হাদিস: ২৪৮৩
[11]ইবনে
আসাকের, আল্লামা আলবানির সিলসিলাতুল আহাদিস আস-সহীহ, হাদিস নং ১৪০৬
[12]সুনানে
ইবনে মাযাহ, হাদিস:১৯০
[13]তিরমিযি,
হাদিস: ৩৭৯৭
[15]আমহদ,
হাদিস: ২৪০৮০
[17]মুসলিম,
হাদিস: ২১৮
[18]আহমদ,
হাদিস: ১২৩৯৯
[20]বুখারি,
হাদিস: ১৬৮২
[21]মুসলিম,
ফাযায়েল অধ্যায়, হাদিস: ২৪৩৪
[22]বুখারি,
হাদিস: ৩৮২০; মুসলিম, হাদিস: ২৪৩২
[23]বুখারি,
হাদিস: ২৬২৪
[24]হাকেম,
আল্লামা আলবানীর সিলসিলাতুল আহাদিস, আস-সহীহা, হাদিস: ১১৪২
[25]মুসলিম,
কিতাবুল ফাযায়েল, হাদিস: ২৪৫৭
[26]তাবরানী,
আল্লামা আলবানীর সিলসিলাতুল আহাদিস আস-সহীহা, হাদিস: ১৪৩২
[27]মুসলিম,
হাদিস: ২৪৫৬
[28]তিরমিযি,
হাদিস: ৩৮৬০, আবু দাউদ, হাদিস: ৪৬৫৩, আহমদ, হাদিস: ১৪৭৭৮
[29]দেখুন,
হাকেম, হাদিস: ৩৮৮/৩, আল-মাজমা: ২৯৩/৯
[30]বুখারী,
হাদিস: ৫৬৫২, মুসলিম, হাদিস: ২৫৭৬
[31]হাকেম,
সহীহ আল জামে আস-সগীর লিলআলবানী, হাদিস নং ৪৭২৭
[32]বুখারি,
হাদিস: ২৯২৪
[33]মুসলিম,হাদিস:
২৮৫৬
[34]
মুসলিম, হাদিস: ৯০৪
[35]বুখারি,
হাদিস: ৩৯৭৬
[36]বুখারি,
হাদিস: ২৯৩১
সংকলক: জাকেরুল্লাহ আবুল খায়ের
সম্পাদনা: ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া
সূত্র: ইসলামহাউজ
পোস্টটি ভালো লাগলে শেয়ার করতে ভুলবেন না কিন্তু।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন