কবর ওয়ালা মসজিদে সালাত/নামাজ পরার হুকুম কি?
শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু
আল্লামা শায়খ মুহাম্মদ বিন সালেহ আল উসাইমীন (রাহ.)
প্রশ্নঃ কোন মসজিদে কবর থাকলে সেখানে নামায আদায় করার হুকুম কি?
উত্তরঃ কবর সংশ্লিষ্ট মসজিদে নামায আদায় করা দু’ভাগে বিভক্তঃ
প্রথম প্রকারঃ প্রথমে কবর ছিল। পরবর্তীতে তাকে কেন্দ্র করে মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে ওয়াজিব হচ্ছে এই মসজিদ পরিত্যাগ করা; বরং মসজিদ ভেঙ্গে ফেলা। যদি না করা হয় তবে মুসলিম শাসকের উপর আবশ্যক হচ্ছে উক্ত মসজিদ ধ্বংস করে ফেলা।
দ্বিতীয় প্রকারঃ প্রথমে মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে। পরে সেখানে কোন মৃতকে দাফন করা হয়েছে। তখন ওয়াজিব হচ্ছে, কবর খনন করে মৃত ব্যক্তি বা তার হাড়-হাড্ডি সেখান থেকে উত্তোলন করে, মুসলমানদের গোরস্থানে দাফন করা। এই মসজিদে শর্ত সাপেক্ষে ছালাত আদায় করা জায়েয। আর তা হচ্ছে, কবর যেন মসজিদের সম্মুখভাগে না হয়। কেননা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কবরের দিকে ছালাত আদায় করতে নিষেধ করেছেন।
কেউ প্রশ্ন করতে পারে, নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর কবর তো মসজিদের মধ্যে? এর জবাব কি?
এর জবাব হচ্ছে, নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর মৃত্যুর পূর্বেই মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে। একথা সবার জানা যে, তাঁকে মসজিদের মধ্যে দাফন করা হয়নি; বরং মসজিদ থেকে সম্পূর্ণ আলাদা স্থান, তাঁর নিজ গৃহে তাঁকে দাফন করা হয়েছে। কিন্তু পরবর্তীতে ৮৮ হিঃ সনে খলীফা ওয়ালিদ বিন আবদুল মালিক তার অধিনস্থ মদীনার আমীর ওমর বিন আবদুল আযীযকে পত্র মারফত নির্দেশ প্রদান করেন, মসজিদে নববী ভেঙ্গে পূণঃনির্মাণ করার সময় যেন উম্মুল মু’মেনীন তথা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর স্ত্রীদের গৃহগুলোকে মসজিদের আওতার মধ্যে নিয়ে আসা হয়। তখন ওমর বিন আবদুল আযীয মদীনার নেতৃস্থানীয় লোক এবং ফিক্বাহবিদদেরকে একত্রিত করে তাঁদের সামনে খলীফার পত্র পড়ে শোনান। বিষয়টি তাদের কাছে খুবই কঠিন মনে হয়। তাঁরা বললেন, কবর ও গৃহগুলোকে বর্তমান অবস্থাতেই রেখে দেয়া উচিত। উপদেশ গ্রহণ করার জন্য এটাই সর্বাধিক সঠিক উপায়। বর্ণিত আছে যে, সাঈদ বিন মুসাইয়্যেব আয়েশা (রাঃ)এর গৃহ তথা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর কবর শরীফকে মসজিদের মধ্যে শামিল করার ব্যাপারে দৃঢ়ভাবে বাধা প্রদান করেন। কেননা তিনি আশংকা করছিলেন যে, এই কবরকে মসজিদে রূপান্তরিত করা হতে পারে। যা হাদীছের ভাষায় নিষিদ্ধ। বিষয়টি ওমর লিখে পাঠালেন খলীফা ওয়ালিদের কাছে। কিন্তু ওয়ালিদ তার নির্দেশই বাস্তবায়ন করার আদেশে অটল রইলেন। ফলে বাধ্য হয়ে ওমর খলীফার নির্দেশ মোতাবেক কবরকে মসজিদের মধ্যে শামিল করে ফেললেন।
অতএব আপনি দেখলেন, নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর কবর মূলতঃ মসজিদের মধ্যে দেয়া হয়নি। আর কবরের উপর মসজিদও বানানো হয়নি। সুতরাং যারা মসজিদে দাফন করা বা কবরের উপর মসজিদ তৈরীর বৈধতার পক্ষে কথা বলে তাদের কোন দলীল নেই। নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)থেকে বিশুদ্ধভাবে প্রমাণিত হয়েছে তিনি বলেন:
لَعْنَةُ اللَّهِ عَلَى الْيَهُودِ وَالنَّصَارَى اتَّخَذُوا قُبُورَ أَنْبِيَائِهِمْ مَسَاجِدَ
“ইহুদী ও খৃষ্টানদের প্রতি আল্লাহর লা’নত (অভিসম্পাত), তারা তাদের নবীদের কবর সমূহকে মসজিদে রূপান্তরিত করেছে।”
রাসূলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুমূর্ষু অবস্থায় ইহুদী খৃষ্টানদের কার্যকলাপ থেকে কঠিনভাবে সতর্ক করার উদ্দেশ্যে উপরোক্ত বাণী পেশ করেন। উম্মে সালামা (রাঃ) হাবশায় হিজরত করে খৃষ্টানদের গীর্জা বা উপাসনালয়ে স্থাপিত বহু মূর্তী দেখেছিলেন। বিষয়টি নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর কাছে উল্লেখ করলে তিনি বলেন:
أُولَئِكَ قَوْمٌ إِذَا مَاتَ فِيهِمُ الْعَبْدُ الصَّالِحُ أَوِ الرَّجُلُ الصَّالِحُ بَنَوْا عَلَى قَبْرِهِ مَسْجِدًا وَصَوَّرُوا فِيهِ تِلْكَ الصُّوَرَ أُولَئِكَ شِرَارُ الْخَلْقِ عِنْدَ اللَّهِ
“ওরা এমন জাতি, তাদের মধ্যে কোন নেক বান্দা বা সৎলোক মৃত্যু বরণ করলে তার কবরের উপর তারা মসজিদ তৈরী করত এবং ঐ মূর্তিগুলো স্থাপন করত। ওরা আল্লাহর কাছে সৃষ্টির মধ্যে সর্বনিকৃষ্ট।”
আবদুল্লাহ্ বিন মাসঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)বলেন,
“সর্বাধিক নিকৃষ্ট লোক হচ্ছে তারা, যাদের জীবদ্দশায় ক্বিয়ামত অনুষ্ঠিত হবে। আর যারা কবর সমূহকে মসজিদে রূপান্তরিত করেছে।” ইমাম আহমাদ উত্তম সনদে হাদীছটি বর্ণনা করেন।
অতএব মু’মিন কখনই ইহুদী-খৃষ্টানদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে সন্তুষ্ট হবে না এবং সৃষ্টি কুলের মধ্যে সর্বনিকৃষ্ট হবে না।
আরও পড়ুনঃ কবর, মাযার ও মৃত্যু সম্পর্কীত কতিপয় বিদ’আত
আরও পড়ুনঃ মৃত্যু ও কবর সম্পর্কে করণীয় ও বর্জনীয়
আরও পড়ুনঃ মাযারে প্রচলিত বিদআতসমূহ
আরও পড়ুনঃ আল্লাহকে পেতে মাধ্যম গ্রহণ
আরও পড়ুনঃ যখন চাইবে আল্লাহর কাছেই চাইবে
আরও পড়ুনঃ মুহাররম মাসঃ সুন্নাত ও বিদআত
আরও পড়ুনঃ রজব মাস: এ সব বিদ’আত দূর হওয়া আবশ্যক
আরও পড়ুনঃ রজব মাসের বেদআত : শরিয়তের দৃষ্টিভঙ্গি
আরও পড়ুনঃ শাবান মাস: সুন্নত উপেক্ষিত বিদ'আত সমাদৃত
আরও পড়ুনঃ ঈদে মীলাদুন নবী (সা.) কেন বিদ'আত?
আরও পড়ুনঃ বিভিন্ন প্রকরের “খতম” এর বিদ’আত
“বিদ’আত” বিষয়ের উপর আরও পড়তে এইখানে ক্লিক করুন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন