হিল্লা,
তালাক ও ফতোয়া : যে কথাগুলো না বললেই নয়
প্রাককথন :
বাংলাদেশে অদূর ভবিষ্যতে ফতোয়া নিয়ে ফতোয়াবাজী বন্ধ হবার
কোনো লক্ষণ দেখি না। উচ্চ আদালত পর্যন্ত গড়াবার পর নানা ঘটনা পরম্পরায় শেষ পর্যন্ত
ফতোয়া বহালই রইল। তদ্যপি ইসলাম বিষয়ে অজ্ঞতা কিংবা বিদ্বেষবশত বেশ কিছু ইসলামী
পরিভাষার মতো ফতোয়া শব্দকেও কলঙ্কিত করার ধারা বজায় রেখেছে কতিপয় মিডিয়া। ক’দিন
পরপরই দেখা যায় গ্রাম্য শালিসকে ফতোয়াবাজী হিসেবে চালিয়ে ইসলামের এই পরিভাষাটির
বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করা হয়।
৩১/০১/২০১৩ ইং রোজ বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের একটি জাতীয়
দৈনিকের নারী পাতায় রহিমা আক্তার নামে এক লেখিকা ‘ফতোয়ার
কালো অধ্যায় হিল্লা বিয়ে’ শীর্ষক
একটি ফিচার লিখেন। লেখাটি শুধু আমাকে নয়, আমার মতো
লাখ লাখ ইসলামপ্রেমী পাঠককে তীব্র ব্যথিত এবং প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ করে। বলাবাহুল্য
একটি দায়িত্বশীল জাতীয় দৈনিকের কাছে এমন হঠকারী ও অবিবেচনাপ্রসূত লেখা একেবারেই
অনভিপ্রেত।
লেখিকা রহিমা আক্তার ধর্ম সম্পর্কে শুধু অজ্ঞই নন, একজন ধর্মবিদ্বেষীও বটে। ফতোয়া কী, ফতোয়া কেন এবং কারা ফতোয়া দিতে পারবেন- এ সম্পর্কে
ইসলামের বাস্তব দৃষ্টিভঙ্গি না জেনে ফতোয়া শব্দ নিয়ে বিষোদ্গার অনভিপ্রেত। ফতোয়া
বন্ধের দাবীও চরম হঠকারী বৈ কী। সমাজে যেসব লোক অনধিকার চর্চা করে ফতোয়া দেন তার জন্য
তাদের নিন্দা হতে পারে না। ফতোয়া বন্ধের দাবী তোলা তো আরও হাস্যকর। হাতুড়ে ডাক্তারের
অপরাধে সব ডাক্তারের চিকিৎসাসেবা বন্ধের দাবী চূড়ান্ত মূঢ়তা এবং কাণ্ডজ্ঞানহীনতা বটে।
বিকৃত হিল্লা বিয়ে নিয়ে শরীয়তের সমালোচনা
রহিমা আক্তার শুরুতেই লিখেছেন, ‘সভ্য
পৃথিবীতে অসংখ্য সঙ্কটের মধ্যে ফতোয়া একটি অনাকাঙ্ক্ষিত সমস্যা বা ঘটনা। ফতোয়া
হচ্ছে একটি লাইসেন্সবিহীন রাষ্ট্রবিরোধী অস্ত্র, যা ধর্মের
নামে ব্যবহার করা হচ্ছে। এ লাইসেন্সবিহীন ধর্মাস্ত্র বর্তমানে নিঃসন্দেহে সভ্য
মানবসমাজের জন্য বিপজ্জনক তো বটেই, তার সঙ্গে
মোট জনসংখ্যার অর্ধেক জনগোষ্ঠী নারীসমাজের জন্য এক ভয়ানক রূপরেখা। আর এ ফতোয়ার
একটি কালো অধ্যায়ের নাম হলো হিল্লা বিয়ে।’
ইসলাম সম্পর্কে যারা ন্যূনতম জ্ঞান
রাখেন তারাও জানেন, নারীর অধিকার ও সম্মান প্রতিষ্ঠায়
ইসলামই একমাত্র বাস্তবসম্মত গ্যারান্টি দিয়েছে। ইসলামই
প্রথম নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা করে শান্তির সমাজ কায়েম করেছে। ইসলাম
শুধু নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা করেই শেষ করে নি, নারীর
সম্মান ও মর্যাদা সমুন্নত রাখতে যার পর
নাই গুরুত্ব দিয়েছে। যখন আরবে নারীদের অধিকার দূরের কথা, কন্যাসন্তানদের
জীবিত কবর দেয়া হতো, তখন ইসলাম ধর্মই নারীদের পূর্ণ
মর্যাদা দেয়ার পাশাপাশি তাদের অধিকার সংরক্ষণ করেছে।
বাংলাদেশের আদালতে ফতোয়া
ফতোয়ার কেতাবী সংজ্ঞায় না গিয়ে সহজে
বলা যায় ফতোয়া বিশেষজ্ঞ আলেমের মতামত বা সমাধান, কোনো
বিচারিক রায় নয়। অর্থাৎ ইসলামের কোনো ইবাদত বা বিধি-বিধান
সম্পর্কে কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে বিশেষজ্ঞ
আলেমের মতামত, পরামর্শ বা সমাধানকে ফতোয়া বলে। এটা
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম থেকে শুরু হয়েছে এবং কিয়ামত
অবধি চলবে।
নওগাঁর এক প্রত্যন্ত অঞ্চলে অনাকাঙ্ক্ষিত এক গ্রাম্য
শালিসের জেরে ২০০১ সালে বিচারপতি গোলাম রব্বানী ও হাবিবুর রহমানের বেঞ্চ ফতোয়া
নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। এর প্রতিবাদে সারা দেশ জেগে ওঠে। উলামায়ে কিরামের আন্দোলনে
কয়েকজন ব্যক্তি প্রাণও হারান। বাংলাদেশের শীর্ষ দুই শায়খুল হাদীস আল্লামা আজিজুল
হক এবং মুফতী আমিনী গ্রেফতার হন। প্রতিবাদে সারা দেশের তাওহিদী জনতা ক্ষোভে ফেটে
পড়ে। তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পেছনে এ রায় এবং তৎপরবর্তী ঘটনাবলি বিরাট
ভূমিকা রাখে।
কিন্তু নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে বিএনপি জামাতজোট এই রায়ের
কার্যক্রম স্থগিত রাখে। ২০০৯ সালে আওয়ামী জোট পুনরায় ক্ষমতায় এলে আবার এ মামলার
কার্যক্রম সচল করা হয়। ২০১১ সালে হাইকোর্টে ফতোয়াবিরোধী রায় বহাল
রাখে। আবারও সারা দেশে ক্ষোভে উত্তাল হলে আদালত পাঁচজন শীর্ষ আলেমকে এ্যামিকাস
কিউরি নিযুক্ত করেন। তীব্র আন্দোলন এবং শীর্ষ আলেমদের রাজনৈতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক
তৎপরতার প্রভাবে অবশেষে ওই বছরের ১২ মে সুপ্রিমকোর্ট এর নিষ্পত্তি করে।
এতে বলা হয়, ‘ইসলামী
বিধিবিধান সম্পর্কে ইসলামী বিশেষজ্ঞ আলেমরা ফতোয়া দিতে পারবেন। তবে এটা কোনো
বিচারিক রায়ের মতো হবে না বা বাস্তবায়ন করা যাবে না।’ এ
বিষয়ে আলেমরাও একমত। শরীয়তের বিধি-বিধান
বাস্তবায়নের দায়িত্ব সরকার বা আদালতের, কোনো
ব্যক্তি বা সংগঠনের নয়। প্রথম কথা, ফতোয়া হলো
ইসলামী বিধি-বিধানের সুন্দরতম সমাধানের একটি
মাধ্যম। অথচ লেখিকা এটিকে অসভ্য, অনাকাঙ্ক্ষিত, লাইসেন্সবিহীন
ধর্মাস্ত্র হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।
হিল্লা বিয়ে
‘হিল্লা’ শব্দটি
সঠিক নয়। আরবীতে শব্দটি হলো ‘হীলাহ্’; অর্থাৎ
কৌশল, ফন্দি, ছল, চাতুরী
ইত্যাদি। পরিভাষায় হিল্লা বলা হয় : ‘কোনো স্বামীর তিন তালাক প্রাপ্তা স্ত্রীকে এ
শর্তে বিয়ে করা যে, বিয়ের পর সহবাস শেষে স্ত্রীকে তালাক দেবে; যেন সে পূর্বের
স্বামীর জন্য হালাল হয়। আর পূর্বস্বামী তাকে পুনরায় বিয়ে করতে পারে’। অনেক অজ্ঞ, মূর্খ
ও ইসলামবিদ্বেষী লোক এই হিল্লা বিয়েকে ইসলামের একটি বিধান
বলে চালিয়ে দিতে চায়। অথচ ইসলামের সঙ্গে এর দূরতম সম্পর্কও
নেই। শরীয়তে হিল্লা বিয়ে বলে কিছু নেই। বিশুদ্ধ মতানুসারে এ বিয়ে
বাতিল ও অশুদ্ধ, এর ফলে নারী তিন তালাকদাতা স্বামীর জন্য হালাল হয় না। হিল্লাকারী
এবং হিল্লাপ্রার্থী উভয়কে হাদীসে অভিশম্পাত করা হয়েছে। আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু
‘আনহু বলেন,
«لَعَنَ
النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْمُحَلِّلَ وَالْمُحَلَّلَ لَهُ»
‘হালালকারী ও যার জন্য হালাল করতে আগ্রহী, তাদের উভয়কে নবী
সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম অভিশাপ
দিয়েছেন।’ [আবদুর
রাযযাক, মুসান্নাফ : ৩৬১৯০]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের দ্বিতীয়
খলীফা উমর ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলতেন,
«لَا
أُوتِيَ بِمُحَلِّلٍ وَلَا مُحَلَّلٍ لَهُ إِلَّا رَجَمْتُهُمَا»
‘আমার কাছে
যে কোনো হালালকারী ও যার জন্য হালাল করতে আগ্রহীকেই আনা হোক না কেন, আমি তাদের
প্রতি ‘রজম’ তথা প্রস্তর নিক্ষেপের শাস্তি প্রয়োগ করব।’ [আবদুর রাযযাক, মুসান্নাফ
: ৩৬১৯১; বাইহাকী, আস-সুনান আল-কুবরা : ১৪১৯১]
শায়খ ইবন তাইমিয়া রহিমাহুল্লাহ বলেন, এর
উদাহরণ হচ্ছে, কোনো ব্যক্তি যখন তার স্ত্রীকে তিন তালাক প্রদান করে,
তখন স্ত্রী তার ওপর হারাম হয়ে যায়, যাবৎ না স্ত্রী সে ছাড়া অন্য স্বামীকে বিয়ে
করে। আল্লাহ যেমন কুরআনে উল্লেখ করেছেন, যেরূপ এসেছে তাঁর নবীর সুন্নাহে এবং যার
ওপর সকল উম্মতের ঐক্যমত। যখন কোনো ব্যক্তি এ নারীকে তালাক দেয়ার নিয়তে বিয়ে করে, যাতে
সে তার পূর্বের স্বামীর জন্য হালাল হয়, তখন এ বিয়ে হারাম ও বাতিল বলে পরিগণিত হয়। এভাবে বিয়ে
করার পর তাকে রাখুক বা আলাদা করুক কিংবা আকদের
সময় শর্ত করুক বা তার আগে শর্ত করুক অথবা শাব্দিক কোনো শর্ত ছাড়া উভয়ের মধ্যে শুধু
প্রস্তাব আকারে থাকুক আর পুরুষ ও নারীর অবস্থা এবং মোহর থাকুক শর্তের ন্যায় বা এসব
কিছুই না থাকুক; এমনকি নারী ও তার অভিভাবকের সম্পূর্ণ অজান্তে যদি পুরুষ ইচ্ছা করে
যে তাকে বিয়ে করবে আর তালাক দেবে, যেন তিন তালাকদাতার জন্য সে হালাল হয়, তবে তিন
তালাকদাতা জানুক বা না জানুক- সর্বাবস্থায় এ তালাক বাতিল হবে।
যদিও হিল্লাকারী এ ধারণা করে যে, এটা একটা ভালো কাজ এবং
তাকে তার স্বামীর কাছে ফিরিয়ে দিলে তাদের ওপর বিরাট অনুগ্রহ হবে; কারণ তালাকের
কারণে তাদের নিজেদের, তাদের সন্তানের ও তাদের দাম্পত্য জীবন ক্ষতিগ্রস্ত ও দুর্বিষহ
হয়েছে ইত্যাদি। ইসলামের দৃষ্টিতে এ বিয়ের কোনো মূল্য নেই, এটা বিয়ে হিসেবে গণ্য হয়
না, এ বিয়ের ফলে তিন তালাকদাতার তাকে বিয়ে করা বৈধ হবে না, যতক্ষণ না কোনো ব্যক্তি
তাকে চুক্তি, প্রতারণা ও লুকোচুরি ছাড়া আগ্রহসহ বিয়ে করে, সহবাসে লিপ্ত হয়ে একে
অপরের সঙ্গে মেলামেশা করে। অতপর যখন তাদের মাঝে বিচ্ছেদ সৃষ্টি হয় মৃত্যুর কারণে অথবা
(কোনো প্রকার পূর্বচুক্তি কিংবা বুঝাপড়া ব্যতীত) তালাক বা খুলা‘ করার কারণে, তখনই
শুধু প্রথম স্বামীর জন্য এ নারীকে বিয়ে করা বৈধ। আর যদি এ হিল্লাকারী তাকে তালাক
না দিয়ে স্থায়ীভাবে রাখতে চায়, তাহলে নতুনভাবে আকদের মাধ্যমে বিয়ে করা জরুরী। কারণ
পূর্বের আকদ ছিল (নিয়্যতের অশুদ্ধতার কারণে) বাতিল ও ফাসেদ। তা দিয়ে
এ স্ত্রীর সঙ্গে অবস্থান করা বৈধ নয়। এটাই আল-কুরআন ও হাদীসের ভাষ্য। এটাই
সাহাবায়ে কিরাম, সকল তাবেঈ ও তৎপরবর্তী আলেমগণের অভিমত।
তাই হিল্লা বিয়ের সঙ্গে শরীয়তকে জড়িয়ে নির্বিচার
সমালোচনা অবিবেচনাপ্রসূত। এদিকে শরীয়তে তালাক ব্যবস্থা রাখা
হয়েছে বিকল্পহীন অবস্থায় উপনীত হলে সংসার মুলতবির একটি সুষ্ঠু পথ হিসেবে। তালাকের
পূর্বাপর বিধান ও শরীয়তে করণীয় সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা না থাকায় সমাজে যেভাবে
তালাক দেয়া হয় তার অধিকাংশই আল্লাহর বিধানের সঙ্গে চরম বেয়াদবী ও ধৃষ্টতা
প্রদর্শনের পর্যায়ে পড়ে। তাছাড়া শরীয়ত সব সময় তালাককে নিরুৎসাহিত করে।
ইসলামের দৃষ্টিতে তালাক
শরীয়তে তালাক শব্দকে খুব গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা হয়।
তালাক শব্দ নিয়ে কেউ ঠাট্টা-মশকরা করতে পারে না। ছোট-খাটো পরিস্থিতিতে কেউ শব্দটি
উচ্চারণ করতে পারে না। এ কারণে তালাক শব্দ একমাত্র পাগল ছাড়া যে কেউ উচ্চারণ করলে
তা কার্যকর হয়ে যাবে। তিন তালাক একসঙ্গে দেবার অনুমতি নেই। তাই কেউ তার স্ত্রীর
প্রতি ইঙ্গিত করে কিংবা তার স্ত্রীর নাম ধরে অথবা তাকে সম্বোধন করে সাধারণভাবে এক
বা দুই তালাক উচ্চারণ করলে তা তালাক ‘রজঈ’ বা প্রত্যাহারযোগ্য হিসেবে গণ্য হবে।
স্বামী চাইলেই স্ত্রীকে যে কোনো মুহূর্তে ফিরে নিতে পারবেন।
অবশ্য কেউ শরীয়তের নিয়ম লঙ্ঘন করে তিন তালাক একসঙ্গে উচ্চারণ
করলে তা কার্যকর হয়ে যাবে কী না এ ব্যাপারে দু’টি মত প্রসিদ্ধ।
এক. চার ইমাম তথা ইমাম আবু হানিফা, মালেক, শাফে‘ঈ ও
আহমাদ ইবন হাম্বলসহ শহুরে ইমামগণ বলেন, এতে করে তিন তালাকই পতিত হবে, তবে এর জন্য তালাকদাতা
গুনাহগার হবে। কারণ সে বিদ‘আতচর্চা করেছে।
দুই. অনেক সাহাবী, তাবে‘ঈ, তাবে তাবে‘ঈন ও সুক্ষ্নদর্শী
অনেক আলেম যেমন শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যা, ইবনুল কাইয়্যেমসহ অধিকাংশ আহলে হাদীস
বলেন যে, এর দ্বারা এক তালাক হবে।
এখানে উল্লেখযোগ্য যে, প্রবন্ধটিতে আমরা দলীল-প্রমাণাদি
দিয়ে ভারী করতে চাচ্ছি না, বিষয়টি ফকীহ ও জ্ঞানীদের সবসময় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু
ছিল এবং থাকবে।
কিন্তু একটি কথা অনস্বীকার্য যে, এ ব্যাপারে রাষ্ট্র
চাইলে দু’টি মতের একটিকে রাষ্ট্রিয়ভাবে গ্রহণ করতে পারে। অথবা যারা তিন তালাক এক
সাথে দিবে, তাদের এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে সর্বোচ্চ শাস্তি ছাড়া যে কোনো
শাস্তিই দিতে পারে।
কিন্তু তা না করে শরী‘য়াতের দৃষ্টিভঙ্গীর তোয়াক্কা না
করে আমাদের দেশে তিন তালাককে এক তালাক হিসেবে চালানো এবং মৌখিক তালাক অগ্রহণীয় বলে
যে আইন করা হয়েছে তা নারী-পুরুষের নিপুণ স্রষ্টা এবং সর্বোচ্চ কল্যাণকামী আল্লাহর
সঙ্গে মাতব্বরী ও অনধিকার চর্চার পর্যায়ে পড়ে।
কেউ যদি রাগের মাথায় কিংবা আবেগের বশে কাউকে গুলি করে বা
কারো গলায় ছুরি চালায় তবে কি সে আহত বা নিহত হবে না? ভুল করে যদি কেউ কাউকে সজোরে
চপেটাঘাত করে তবে কি সে গালে যাতনা অনুভব করবে না? নাকি স্যরি বললে মনের জ্বালার
সঙ্গে গাল জ্বলাও তৎক্ষণাৎ বন্ধ হয়ে যাবে? তাহলে কি করে মুখের তালাককে অকার্যকর
ধরে তালাকের মত একটি গুরুত্বপূর্ণ শরঈ বিধানকে অসম্মান করা হবে। যত্রতত্র এ
বিধানকে প্রয়োগযোগ্য করা হবে?
তালাক যেভাবেই উচ্চারিত হোক শরীয়ত সেটাতে সিরিয়াসলি নেয়
নারীকে শায়েস্তা করতে নয়; তার সম্মান রক্ষার্থে। এটা তার জন্য শাস্তি নয়, বরং তার জন্য রহমত। স্ত্রী হিসেবে নারীর যে সম্মান,
তালাক তা কমিয়ে দেয়। যে স্বামী কথায় কথায় বা রাগের মাথায় স্ত্রীকে তালাক
দিতে পারে, সে মূলত স্ত্রীকে অসম্মানই করে। এটা অনেকটা এরকম
যে, আপনি একটা খেলনার পুতুল দিয়ে ইচ্ছে মতো খেললেন, এরপর যখন মন চায় ভেঙে ফেললেন।
স্ত্রী নিশ্চয় খেলনা নন। স্ত্রী হলেন জীবনসঙ্গীনী। জীবন
বলতে জীবনের হাসি-কান্না, সুখ-দুঃখ, মান-সম্মান
স্ত্রী সবকিছুরই অংশীদার। বিনা অজুহাতে, রাগের মাথায় তাকে তালাক দেয়ার
অর্থ তাকে অসম্মান করা। তালাক হলো আল্লাহ তা‘আলার হালাল করা সবচে অপ্রিয় বিষয়। ইবন
উমরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেন,
«أَبْغَضُ
الْحَلَالِ إِلَى اللَّهِ تَعَالَى الطَّلَاقُ»
‘আল্লাহ
আ‘আলার কাছে সবচে অপ্রিয় হালাল বিষয় হলো তালাক।’ [আবূ দাউদ : ২১৭৮; ইবন মাজা :
২০১৮, শায়খ আলাবানী হাদীসটিকে ‘যঈফ’ বলেছেন।]
অর্থাৎ তালাকের অনুমতি দেয়া হয়েছে একমাত্র অনন্যোপায় হলে। যে ক্ষেত্রে
স্বামী স্ত্রীর কোনোভাবেই একসঙ্গে থাকা সম্ভব হয় না, তখন
তালাক দেয়া যায়। এই নিকৃষ্ট হালালকে যখন যত্রতত্র ব্যবহার করা হয়, তখন
তা ক্ষমতার অপব্যবহার হয়। স্ত্রী হিসেবে নারীর সম্মান তখন ধুলোয় মিশিয়ে দেয়া হয়।
নারীর মর্যাদা রক্ষায় তালাক
ইসলাম মনে করে নারীর একটা সম্মানজনক জীবন আছে। যে জীবনে
বারবার তাকে তালাক শুনতে হবে না, বরং সম্মানের সঙ্গে সে জীবন
যাপন করতে পারবে। এ জন্যই ইসলাম একটা নির্দিষ্ট সংখ্যক তালাকের অনুমতি স্বামীকে
দিয়েছে। এর অর্থ, স্ত্রীকে সতর্ক করার জন্য স্বামী সর্বোচ্চ
তিনবার এই শব্দ ব্যবহার করার অনুমতি পাবে। প্রথম দু’বার
ব্যবহারের পর ভুল শুধরে ফিরিয়ে নেয়ার অবকাশ আছে। কিন্তু তৃতীয়বার আর সেই অবকাশ
নেই। একসঙ্গে তিন তালাক দেয়াকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তাঁর
পুণ্যাত্মা সাহাবীগণ প্রচণ্ড রকম অপছন্দ করতেন। এ জন্য একসঙ্গে তিন তালাককে বিদ‘আতী
তালাক বলা হয় ফিকহের পরিভাষায়।
মূলত তালাক দেয়ার সুন্নাহ সমর্থিত নিয়ম হলো, একবার কেবল এক তালাক দেয়া। এরপর তিন ঋতু পর্যন্ত অপেক্ষা করা।
যদি বনিবনা হয়ে যায়, তাহলে এর মধ্যে ঋতু পরবর্তী
পবিত্রতাকালীন সময়ে স্বামী তার স্ত্রীকে ফিরিয়ে নিতে পারবে। আর যদি বনিবনা না হয়, তাহলে তিন ঋতু অতিবাহিত হলে বিবাহ ভেঙে যাবে। তবে দেখুন ইসলামের
মাহাত্ম্য.. এখন আবার স্বামী-স্ত্রী বিবাহ করতে চাইলে মাঝখানে অন্য কোনো বিয়ে
লাগবে না। স্বামী সরাসরি স্ত্রীকে বিয়ে করে নিতে পারবে। এভাবে আবার প্রয়োজন হলে
দ্বিতীয় তালাক দিতে পারবে স্বামী। এরপর আবার তিন ঋতু পর্যন্ত অপেক্ষা করবে। চাইলে
ফিরিয়ে নিবে, না ফেরালে বিয়ে ভেঙে যাবে। বিয়ে ভাঙ্গার পর
চাইলে অন্য কোনো বিয়ে ছাড়াই আবার ফিরিয়ে নিতে পারবে। দেখুন, দুই
দুই বার তালাক দেয়ার পর অন্য কারো সঙ্গে বিয়ে ছাড়া ফিরিয়ে নেয়ার ব্যবস্থা ইসলাম
রেখেছে।
তালাক মানে কী? জীবনের এক বড় বন্ধন
থেকে মুক্ত করে দেয়া। বন্ধন ভেঙে গেলে বা ভেঙে দিলে তা কয় বার জোড়া লাগতে পারে? একবার? দুইবার? এরপরও
যদি এই বন্ধন ভেঙে দেয়া হয়, তাহলে তা আর জোড়া লাগার অবকাশ
রাখে না। জোড়া লাগলেও সে বন্ধনের আর মূল্য থাকে না। তখন তা নিছক বালিকার হাতের
পুতুল হয়ে যায়। চাইলে সে তাকে নিয়ে খেলে, চাইলে তা ভেঙে
ফেলে।
এজন্য তৃতীয়বার তালাক দেয়ার পর বিয়ে পুরোপুরি ভেঙে যায়।
তখন আর তিন ঋতু পর্যন্ত ফিরিয়ে নেয়ার সুযোগ থাকে না। তখন বরং ইসলাম নারীর পক্ষে
থাকে। স্বামীর অত্যাচার থেকে সরিয়ে নিতে ইসলাম নারীকে পছন্দমতো দ্বিতীয় স্বামী
গ্রহণ করার সুযোগ দেয় এবং প্রথম স্বামী আবার ফিরিয়ে নিতে চাইলেও তাকে সহজে এ সুযোগ
দেয়া হয় না। বরং দ্বিতীয়বার সে নারীর অন্যত্র বিয়ে হলে এবং সে স্বামী স্বেচ্ছায়
তালাক দিলে ইদ্দত পার হবার পরেই কেবল প্রথম স্বামী তাকে গ্রহণ করতে পারে। এই
স্বাভাবিক বিয়েই যখন হয় কেবলই প্রথম স্বামীর কাছে ফিরে আসার জন্য তখন সেটাকেই
‘হিল্লা বিয়ে’ নামে নামকরণ করা হয়। এটি একটি অপপদ্ধতি। এটি কোনো ইসলামী পদ্ধতি নয়।
সুতরাং এর জন্য ইসলাম দায়ী হতে পারে না। দায়ী হবেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিগণই।
দেখুন, এ বিধান যদি না থাকত, তাহলে প্রতিদিনই স্বামী তার স্ত্রীকে তিন তালাক দিত। কথায় কথায়, রাগের মাথায় সবসময়ই ‘তালাক তালাক’ বলত। এরপর প্রতিদিনই আবার মায়া করে তাকে স্ত্রী হিসেবে ফিরিয়ে
নিত। এভাবে মায়ার এ বন্ধন আর বন্ধন থাকত না। তা হয়ে যেত খেলার পুতুল। কোনো নারী
নিশ্চয় এতকিছু বোঝার পর ইসলামের এই সুন্দর বিধানকে অসম্মান করবেন না। বরং নিজের
সম্মান যদি নারী বুঝেন তাহলে ইসলামের এ বিধান
পেয়ে নিজেকে সম্মানিতই মনে করবেন।
তালাকদাতা তার স্ত্রীকে ফিরিয়ে পাবেন কিভাবে
স্বামী যখন তার স্ত্রীকে তালাক দেয়, আর এ তালাক যদি
প্রথম অথবা দ্বিতীয় হয় এবং স্ত্রীর ইদ্দত (যেমন তার বাচ্চা প্রসব করা, যদি তালাক
অবস্থায় গর্ভবতী থাকে, অথবা তার তিন ঋতু অতিবাহিত হওয়া) এখনো শেষ না হয়, তাহলে তার
স্ত্রীকে কথার মাধ্যমেই রুজ‘আত তথা ফিরিয়ে নেয়া সম্ভব, যেমন বলা : আমি তোমাকে রুজ‘আত
করে নিলাম তথা ফিরিয়ে নিলাম অথবা আমি তোমাকে রেখে দিলাম, তাহলে রুজ‘আত হয়ে যাবে,
অথবা কোনো কাজের দ্বারা রুজ‘আত উদ্দেশ্য করা, যেমন রুজ‘আতের উদ্দেশ্যে সহবাস করা,
তাহলেও রুজ‘আত শুদ্ধ।
এ ক্ষেত্রে সুন্নত হচ্ছে রুজ‘আতের জন্য সাক্ষী রাখা,
যেমন দু’জন ব্যক্তিকে তার রুজ‘আত সম্পর্কে জানানো আল্লাহ তা‘আলার বাণী অনুসারে,
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ فَإِذَا بَلَغۡنَ
أَجَلَهُنَّ فَأَمۡسِكُوهُنَّ بِمَعۡرُوفٍ أَوۡ فَارِقُوهُنَّ بِمَعۡرُوفٖ وَأَشۡهِدُواْ
ذَوَيۡ عَدۡلٖ مِّنكُمۡ وَأَقِيمُواْ ٱلشَّهَٰدَةَ لِلَّهِۚ ذَٰلِكُمۡ يُوعَظُ بِهِۦ
مَن كَانَ يُؤۡمِنُ بِٱللَّهِ وَٱلۡيَوۡمِ ٱلۡأٓخِرِۚ وَمَن يَتَّقِ ٱللَّهَ يَجۡعَل
لَّهُۥ مَخۡرَجٗا ٢ ﴾ [الطلاق: ٢]
‘অতপর যখন তারা তাদের ইদ্দতের শেষ সীমায় পৌঁছবে, তখন
তোমরা তাদের ন্যায়ানুগ পন্থায় রেখে দেবে অথবা ন্যায়ানুগ পন্থায় তাদের পরিত্যাগ
করবে এবং তোমাদের মধ্য থেকে ন্যায়পরায়ন দুইজনকে সাক্ষী বানাবে। আর আল্লাহর জন্য সঠিক
সাক্ষ্য দেবে। তোমাদের মধ্যে যে আল্লাহ ও আখিরাত দিবসের প্রতি ঈমান আনে এটি দ্বারা
তাকে উপদেশ দেয়া হচ্ছে। যে আল্লাহকে ভয় করে, তিনি তার জন্য উত্তরণের
পথ তৈরী করে দেন।’ {সূরা আত-তালাক, আয়াত : ২}
আর যদি স্ত্রী এক তালাকের পর অথবা দুই তালাকের পর ইদ্দত
শেষ করে ফেলে, তাহলে নতুন করে আকদ করা জরুরী। এ ক্ষেত্রে সে অন্য পুরুষের ন্যায়
মেয়ের অভিভাবক বা স্বয়ং মেয়েকে প্রস্তাব দেবে, যখন মেয়ে ও তার অভিভাবক সম্মত হয়
এবং মোহরে সন্তোষ প্রকাশ করে, তখন দু’জন সাক্ষীর উপস্থিতিতে আকদ সম্পন্ন করতে হবে।
আর যদি তিন তালাক দেয়, তাহলে এ স্ত্রী তার ওপর হারাম হয়ে
যাবে। যতক্ষণ না শরীয়ত সম্মতভাবে স্ত্রী অন্য স্বামীকে বিয়ে করে এবং তার সঙ্গে
সহবাসে লিপ্ত হয়, অতঃপর তালাক বা মৃত্যুর কারণে তার থেকে আলাদা হয়। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ
করেন,
﴿ فَإِن طَلَّقَهَا
فَلَا تَحِلُّ لَهُۥ مِنۢ بَعۡدُ حَتَّىٰ تَنكِحَ زَوۡجًا غَيۡرَهُ ﴾ [البقرة: ٢٣٠]
‘অতএব যদি সে তাকে তালাক দেয় তাহলে সে পুরুষের জন্য হালাল হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত
ভিন্ন একজন স্বামী সে গ্রহণ না করে।’ {সূরা আল-বাকারা, আয়াত : ২৩০}
তবে কোনো ব্যক্তির সঙ্গে এমন চুক্তি বৈধ নয় যে, তাকে
বিয়ে করে তালাক দিয়ে দেবে। এটা গর্হিত কর্ম। এটা কবীরা গুনাহ। এ বিয়ের কারণে স্ত্রী পূর্বের
স্বামীর জন্য হালাল হবে না। বরং হিল্লাকারী ও যার জন্য হিল্লা করা হয় উভয়কে
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লানত করেছেন। যেমনটি আমরা ইতোপূর্বে
উল্লেখ করেছি। [শায়খ আবদুল আযীয ইবন বায রহ., ফতোয়ায়ে তালাক : ১/১৯৫-২১০]
আল-কুরআনুল কারীমে তালাক
তালাক নামে একটি স্বতন্ত্র সূরাই রয়েছে আল-কুরআনে। তালাক
সম্পর্কে সবচে বিস্তারিত বিধান বর্ণিত হয়েছে সূরা আল-বাকারার দুটি আয়াতে, যার
আংশিক আলোচনা ইতোমধ্যে উদ্ধৃত হয়েছে। মুসলিম মাত্রেই যে কোনো বিষয়ে জানতে চাই আল্লাহর
ফয়সালা, আল্লাহ কুরআনে কী বলেছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার
কী ব্যাখ্যা দিয়েছেন এবং সাহাবায়ে কেরাম ও তৎপরবর্তী মনীষীদের বক্তব্য ও মতামত কী
? তাই এখানে তালাক সংক্রান্ত দুইটি আয়াতের অনুবাদ ও সংক্ষিপ্ত তাফসীর উল্লেখ করা
যাক। এতে করে পাঠকবৃন্দ আল-কুরআনের মূল বক্তব্য আত্মস্থ ও যথাযথ অনুধাবন করতে
পারবেন ইনশাআল্লাহ।
আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন,
﴿ ٱلطَّلَٰقُ مَرَّتَانِۖ
فَإِمۡسَاكُۢ بِمَعۡرُوفٍ أَوۡ تَسۡرِيحُۢ بِإِحۡسَٰنٖۗ وَلَا يَحِلُّ لَكُمۡ أَن تَأۡخُذُواْ
مِمَّآ ءَاتَيۡتُمُوهُنَّ شَيًۡٔا إِلَّآ أَن يَخَافَآ أَلَّا يُقِيمَا حُدُودَ
ٱللَّهِۖ فَإِنۡ خِفۡتُمۡ أَلَّا يُقِيمَا حُدُودَ ٱللَّهِ فَلَا جُنَاحَ عَلَيۡهِمَا
فِيمَا ٱفۡتَدَتۡ بِهِۦۗ تِلۡكَ حُدُودُ ٱللَّهِ فَلَا تَعۡتَدُوهَاۚ وَمَن يَتَعَدَّ
حُدُودَ ٱللَّهِ فَأُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلظَّٰلِمُونَ ٢٢٩ فَإِن طَلَّقَهَا فَلَا تَحِلُّ
لَهُۥ مِنۢ بَعۡدُ حَتَّىٰ تَنكِحَ زَوۡجًا غَيۡرَهُۥۗ فَإِن طَلَّقَهَا فَلَا جُنَاحَ
عَلَيۡهِمَآ أَن يَتَرَاجَعَآ إِن ظَنَّآ أَن يُقِيمَا حُدُودَ ٱللَّهِۗ وَتِلۡكَ
حُدُودُ ٱللَّهِ يُبَيِّنُهَا لِقَوۡمٖ يَعۡلَمُونَ ٢٣٠ ﴾ [البقرة: ٢٢٩، ٢٣٠]
অর্থ : ‘তালাক দু’বার। অতঃপর
বিধি মোতাবেক রেখে দেবে কিংবা সুন্দরভাবে ছেড়ে
দেবে। আর তোমাদের জন্য হালাল নয় যে, তোমরা তাদেরকে যা দিয়েছ, তা থেকে কিছু নিয়ে নেবে। তবে উভয়ে যদি আশঙ্কা করে যে, আল্লাহর
সীমারেখায় তারা অবস্থান করতে পারবে না।
সুতরাং তোমরা যদি আশঙ্কা কর যে, তারা
আল্লাহর সীমারেখা কায়েম রাখতে পারবে না তাহলে
স্ত্রী যা দিয়ে নিজকে মুক্ত করে নেবে তাতে কোন
সমস্যা নেই। এটা আল্লাহর সীমারেখা। সুতরাং
তোমরা তা লঙ্ঘন করো না। আর যে আল্লাহর
সীমারেখাসমূহ লঙ্ঘন করে, বস্তুত তারাই যালিম। অতএব যদি সে তাকে তালাক দেয় তাহলে সে
পুরুষের জন্য হালাল হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত
ভিন্ন একজন স্বামী সে গ্রহণ না করে। অতঃপর সে
(স্বামী) যদি তাকে তালাক দেয়, তাহলে তাদের উভয়ের অপরাধ হবে না যে, তারা
একে অপরের নিকট ফিরে আসবে, যদি দৃঢ়
ধারণা রাখে যে,
তারা আল্লাহর সীমারেখা কায়েম রাখতে
পারবে। আর এটা আল্লাহর সীমারেখা, তিনি তা এমন
সম্প্রদায়ের জন্য স্পষ্ট করে দেন, যারা জানে। {সূরা
আল-বাকারা, আয়াত : ২২৯-২৩০}
আয়াতদ্বয়ের সংক্ষিপ্ত তাফসীর :
যে তালাক থেকে ফিরে নেবার সুযোগ রয়েছে তা হলো দুই তালাক, একটির পর একটি। প্রত্যেক তালাক প্রদানের পর আল্লাহর বিধান হলো : হয়তো
স্ত্রীকে সন্তুষ্টচিত্তে সদুপায়ে ফেরত নেবে এবং ফেরত নেবার পর সুন্দরভাবে বসবাস করবে
অথবা তাকে সুন্দর ব্যবহার করে তার পথ ছেড়ে দেবে। আর তা হলো তার হকসমূহগুলো দিয়ে তাকে
বিদায় দেওয়া এবং পরবর্তীতে তাকে মন্দভাবে স্মরণ না করা। আর হে স্বামীবৃন্দ, তোমরা তাদের মোহর ইত্যাদি যা দিয়েছ তা ফেরত নেওয়া তোমাদের জন্য বৈধ
নয়। তবে স্বামী-স্ত্রী যদি বৈবাহিক অধিকারাবলি কায়েম করার ব্যাপারে আশঙ্কা করে তবে
তাদের বিষয় উত্থাপন করা হবে অভিভাবকবৃন্দের কাছে। অভিভাবকগণ যদি স্বামী-স্ত্রীর ব্যাপারে
শঙ্কা বোধ করেন যে তারা আল্লাহর বিধান কায়েম করবে না, তবে স্বামী-স্ত্রীর
জন্য তাতে কোনো অপরাধ হবে না স্ত্রী তার তালাকের বিনিময়ে স্বামীকে যা প্রদান করবে।
এই বিধানগুলো হলো হালাল ও হারামের মধ্যে আল্লাহর সীমারেখা। অতএব তোমরা তা অতিক্রম কর
না। আর যারা আল্লাহর সীমারেখা অতিক্রম করবে তারাই নিজেদেরকে আল্লাহর শাস্তির সম্মুখীন
করার মাধ্যমে নিজেদের ওপর যুলুম করবে।
তারপর যদি স্বামী আপন স্ত্রীকে তিন তালাক দিয়ে দেন, তবে সে
আর তার জন্য হালাল হবার নয়। তবে যদি অন্য কোনো পুরুষকে যথাযথভাবে বিয়ে করে এবং তার
সঙ্গে সহবাস করে। আর এ বিয়ে হয় আগ্রহের ভিত্তিতে; প্রথম স্বামীর
জন্য হালাল বানানোর হিলা হিসেবে হয়। অতপর পরের স্বামী যদি তাকে তালাক প্রদান করে কিংবা
তিনি মারা যান এবং তার ইদ্দত পূর্ণ হয়, তবে তখনই কেবল প্রথম স্বামীর
কাছে ফিরে আসার সুযোগ রয়েছে। আর তা নতুন বিয়ে এবং নতুন মহর নির্ধারণের মাধ্যমে স্বামী-স্ত্রীর
জন্য আল্লাহর নির্ধারিত বিধি-বিধান পালন করতে পারবে বলে যদি তারা আত্মপ্রত্যয়ী হয়।
আর এসব হলো আল্লাহর নির্ধারিত বিধি-বিধান যা তিনি এমন কওমের জন্য বর্ণনা করেছেন যারা
তাঁর বিধানাবলি ও সীমারেখা সম্পর্কে জানে। কারণ, এরাই মূলত এ
থেকে উপকৃত হয়। [আত-তাফসীরুল মুইয়াসসার, উপর্যুক্ত আয়াত দ্রষ্টব্য]
মুফাসসির ইব্ন আবী হাতেমের ব্যাখ্যা
তৃতীয়
হিজরী শতাব্দীর প্রখ্যাত মুফাসসির ইবন আবী হাতেম রহ. বলেন, {তালাক দু’বার,
অতঃপর বিধি মোতাবেক রেখে দেবে
কিংবা সুন্দরভাবে ছেড়ে দেবে।} এর ব্যাখ্যায় ইব্ন আব্বাস
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, ব্যক্তি যখন তার স্ত্রীকে দুই তালাক দেয়, তৃতীয় তালাকের
ব্যাপারে তার উচিত আল্লাহকে ভয় করা, হয়তো তাকে সুন্দরভাবে রেখে দেবে, তার সঙ্গে সুন্দর
ব্যবহার করবে, অথবা তাকে সুন্দরভাবে পরিত্যাগ করবে, তার অধিকার থেকে তাকে বঞ্চিত
কিংবা তার ওপর যুলম করবে না। সাহাবী ‘আবূ রাযীন’ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, এক ব্যক্তি
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসালামের কাছে এসে বলে, হে আল্লাহর রাসূল,
আল্লাহ তো বলেছেন : {তালাক দু’বার, অতঃপর বিধি
মোতাবেক রেখে দেবে কিংবা সুন্দরভাবে ছেড়ে
দেবে।} কিন্তু তৃতীয় তালাক কোথায় ? তিনি বলেন, {সুন্দরভাবে
ছেড়ে দেয়া} মুফাসসির সুদ্দী রহ. বলেন, {অথবা সুন্দরভাবে
ছেড়ে দেয়া} অর্থাৎ তার অধিকার তাকে বুঝিয়ে দেয়া, তাকে কষ্ট বা গালি না দেয়া।
ইকরিমা
রহ. ও হাসান রহ. বলেন, {ইসলাম পূর্বে ও ইসলামের প্রাথমিক যুগে} স্বামীরা তাদের
স্ত্রীদের দেয়া মোহরানা ও অন্যান্য সম্পদ ভোগ করত, এতে তারা নিজেদের কোনো অপরাধ
বোধ করত না, অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা নাযিল করেন, {আর
তোমাদের জন্য হালাল নয় যে, তোমরা তাদেরকে
যা দিয়েছ, তা
থেকে কিছু নিয়ে নেবে।} এরপর স্ত্রীদের সম্পদ
তাদের অনুমতি ও সন্তুষ্টি ব্যতীত স্বামীদের ভক্ষণ করা বৈধ নয়। {সুতরাং
তোমরা যদি আশঙ্কা কর যে, তারা
আল্লাহর সীমারেখা কায়েম রাখতে পারবে না তাহলে
স্ত্রী যা দিয়ে নিজেকে মুক্ত করে নেবে তাতে কোন সমস্যা নেই।} এর অর্থ ইব্ন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু
‘আনহুমা বলেন, অর্থাৎ স্ত্রীর আল্লাহর বিধান লঙ্ঘন করা, স্বামীর প্রতি কর্তব্যে
অবহেলা করা ও তার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা, যেমন তাকে বলা, ‘আল্লাহর শপথ আমি তোমার সঙ্গে
সদাচারণ করব না, বিছানায় তোমাকে সুযোগ দেব না, তোমার আনুগত্য করব না ইত্যাদি। যদি
সে এমন করে, তাহলে স্বামীর জন্য বৈধ তার থেকে ফিদিয়া গ্রহণ করে তাকে পরিত্যাগ করা।
তবে তাকে মোহরানা বাবদ যা দেয়া হয়েছিল, তার চেয়ে অধিক গ্রহণ করবে না। আর তার
রাস্তা পরিষ্কার করে দেয়া, যদি দুর্ব্যবহার তার {স্ত্রীর) পক্ষ থেকে হয়। {এটা
আল্লাহর সীমারেখা, সুতরাং
তোমরা তা লঙ্ঘন করো না, আর যে আল্লাহর
সীমারেখাসমূহ লঙ্ঘন করে, বস্তুত তারাই যালিম।} ইমাম যাহহাক রাহিমাহুল্লাহ এর ব্যাখ্যায় বলেন, এ
হচ্ছে আল্লাহর আনুগত্যের সীমারেখা, তোমরা এর সীমালঙ্ঘন কর না, তিনি বলেন, যদি কেউ
এ নিয়ম পরিহার করে তালাক দেয়, সে নিজের ওপর যুলম করল। [তাফসীর ইব্ন আবী হাতেম
লেখক : ইব্ন আবী হাতেম রাযী (মৃ. ৩২৭ হি.), প্রকাশক : মাকতাবাতু নাজার মুস্তফা
আল-বায, দেশ : রিয়াদ, মক্কা আল-মুকাররামাহ, প্রকাশকাল : ১৪১৭ হি. মোতাবেক ১৯৯৭ই.
প্রথম প্রকাশ}
ফতোয়া কী?
ফতোয়া হল একটি আরবী শব্দ। ফতোয়া বা ফাতওয়া (আরবী : فتوى; বহুবচন ফাতাওয়া আরবী : فتاوى) হলো মতামত, বিধান
ও সমাধান, যা কোনো ঘটনা বা অবস্থার প্রেক্ষিতে
ইসলামী শরীয়তের দলীলের আলোকে মুফতি বা ইসলামী আইন-বিশেষজ্ঞ প্রদান করে থাকেন।[১] যখন কোনো ব্যক্তি সরাসরি কুরআন ও হাদিসের
আলোকে উদ্ভূত সমস্যার সমাধান বের করতে অপারগ হন তখন তিনি মুফতীর কাছে এই বিষয়ের
সমাধান চান। এটিকে ইসলামের পরিভাষায় ইসতিফতা (আরবিতে :اِسْتِفْتَاء) বলে। মুফতি তখন ইসলামী শরি‘আতের
আলোকে সমস্যার সমাধান জানিয়ে দেন। এ সমাধান প্রদান করাকে ইসলামের পরিভাষায় ইফতা
(আরবীতে:إِفْتَاء ) বলে এবং প্রদত্ত সমাধান বা
বিধানটিকে ফতোয়া বলে। যা কুরআন সুন্নাহ তথা ইসলামী শরীয়তের
একটি মর্যাদাপূর্ণ পরিভাষা। দীন-ধর্ম সম্পর্কে জিজ্ঞাসার পর
একজন দীন ইসলাম সম্পর্কে প্রাজ্ঞ মুফতী কুরআন-হাদীস ও ইসলামী আইন শাস্ত্র
অনুযায়ী যে সমাধান দেন তাই ‘ফতোয়া’। ইসলামী
বিধান বর্ণনাকারীকে বলে ‘মুফতী’ আর যে সকল
প্রতিষ্ঠান এই দায়িত্ব পালন করেন তাকে বলে ‘দারুল ইফতা’[1]।
ফতোয়ার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা
উদ্ধৃত ফতোয়ার সংজ্ঞা থেকে
সহজেই অনুমেয় মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য ফতোয়ার ভূমিকা কী
এবং তা কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ ও আবশ্যকীয় বিষয়। আমরা
যেহেতু বিশ্বাস করি আমরা দুনিয়া আমাদের স্থায়ী নিবাস নয়। আখেরাতে
আমাদের ফিরে যেতে হবে। মহান আল্লাহর সামনে দাঁড়াতে হবে। দুনিয়ার আমাল তথা কাজ-কর্মের
হিসেব দিতে হবে। তাই দুনিয়াতে আল্লাহ তা‘আলার
বিধান অনুযায়ীই আমল করতে হবে। আমরা এও জানি যে,
কোনো বিষয়ে আমল করার জন্য
সে ব্যাপারে সম্যক অবগতি থাকা দরকার। সুতরাং একজন মুসলিম
যদি ইসলামী রীতি মানতে চায়, তবে তারও সে ব্যাপারে না জেনে আমল করা সম্ভব নয়, তাই বাধ্য
হয়ে তিনি তা জানতে চাইবেন এ ব্যাপারে একজন প্রাজ্ঞ ব্যক্তির কাছে, এটাই তো
স্বাভাবিক। তারপর এ বিষয়ে প্রাজ্ঞ ব্যক্তি যেই সমাধান জানাবেন ইসলামী
পরিভাষায় তাই হল ‘ফতোয়া’।
আমরা কি বলতে পারি কেউ এভাবে
ইসলামী সমাধান জানতে চাইলে তাকে সমাধান জানানো যাবে না?! যদি তাই হয় তবে সাধারণ মুসলিম ভাই-বোনেরা শরী‘য়াত
অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করবেন কীভাবে? সব
মানুষেরা কি নিজে নিজে ধর্মীয়
জ্ঞানে প্রাজ্ঞ হয়ে নিজের সমাধান নিজেই দিতে
পারবেন? সাধারণ
মুসলিমের জন্য ফতোয়া ছাড়া মুসলিম হিসেবে টিকে থাকাই তো সম্ভব নয়।
ফতোয়া দেয়া আমাদের সাংবিধানিক অধিকার
আমরা মুসলিম। মুসলিম
হিসেবে ইসলামী বিধান যথা সম্ভব পালন করব এটা আমাদের সাংবিধানিক অধিকার, যা সংবিধানের বিভিন্ন ধারায় স্বীকৃত।
এখানে আমরা একটি ধারা উল্লেখ করছি- ৪১
(১) আইন,
জনশৃঙ্খলা ও নৈতিকতা সাপেক্ষে (ক) প্রত্যেক নাগরিকের যে কোন
ধর্মাবলম্বন,
পালন বা প্রচারের অধিকার রহিয়াছে। (খ) প্রত্যেক ধর্মীয়
সম্প্রদায় ও উপ-সম্প্রদায়ের নিজস্ব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান স্থাপন, রক্ষণ ও
ব্যবস্থাপনার অধিকার রহিয়াছে’। [গণপ্রজাতন্ত্রী
বাংলাদেশের সংবিধান]
আপনাদের কাছে আমার প্রশ্ন হল-
কোনো ধর্ম প্রচার কী সম্ভব তার বিধান বর্ণনা করা ছাড়া? বিধান
সম্পর্কে না জেনে তা কি পালন করা
যায়? সুতরাং সংবিধান অনুযায়ী সাধারণ
মুসলমান একজন প্রাজ্ঞ মুফতীর কাছে ধর্মীয় বিষয়ে সমাধান জানার অধিকার রাখেন। আর প্রাজ্ঞ মুফতী তার ধর্মীয় সমাধান
জানানোর অধিকার রাখেন। অন্যথায়
ধর্ম প্রচারই সম্ভব নয়। যেদিন
থেকে ইসলাম সেদিন থেকেই ফতোয়া। আল্লাহ রাব্বুল
আলামীন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে
যেসব দায়িত্ব দিয়েছেন তার মধ্যে একটি হলো ফতোয়া তথা
ইসলামী সমাধান জানানো। আল্লাহ পৃথিবীতে সকল নবীকে
প্রেরণ করেছেন মানুষকে আল্লাহর বিধান সম্পর্কে অবগত করে তাদেরকে তাওহীদের পথে
আনতে। এ জন্য সাধারণ মানুষকেও বলা হয়েছে না জানা বিষয়ে প্রশ্ন করে জেনে নিতে। আর
সেটাই তো ফতোয়া। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন,
﴿ وَمَآ أَرۡسَلۡنَا
قَبۡلَكَ إِلَّا رِجَالٗا نُّوحِيٓ إِلَيۡهِمۡۖ فَسَۡٔلُوٓاْ أَهۡلَ ٱلذِّكۡرِ إِن
كُنتُمۡ لَا تَعۡلَمُونَ ٧ ﴾ [الانبياء: ٧]
‘আর তোমার পূর্বে আমি পুরুষই পাঠিয়েছিলাম, যাদের প্রতি
আমি ওহী পাঠাতাম। সুতরাং তোমরা জ্ঞানীদেরকে জিজ্ঞাসা কর যদি তোমরা না জান।’ {সূরা
আল-আম্বিয়া, আয়াত : ৭}
মানুষকে দীন শেখানো, তাদের মাঝে দীনের জ্ঞান বিতরণ করা
এবং তাদের ধর্মীয় পিপাসা নিবারণ করা ছিল নবী ‘আলাইহিমুস সালামগণের অন্যতম পবিত্র
দায়িত্ব। আল-কুরআনুল কারীমে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের
দায়িত্ব ও কর্মসূচি সম্পর্কে আল্লাহ পরিষ্কার বলেছেন,
﴿كَمَآ أَرۡسَلۡنَا
فِيكُمۡ رَسُولٗا مِّنكُمۡ يَتۡلُواْ عَلَيۡكُمۡ ءَايَٰتِنَا وَيُزَكِّيكُمۡ وَيُعَلِّمُكُمُ
ٱلۡكِتَٰبَ وَٱلۡحِكۡمَةَ وَيُعَلِّمُكُم مَّا لَمۡ تَكُونُواْ تَعۡلَمُونَ ١٥١ ﴾ [البقرة: ١٥١]
‘যেভাবে আমি তোমাদের মধ্যে একজন রাসূল প্রেরণ করেছি তোমাদের
মধ্য থেকে, যে তোমাদের কাছে আমার আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করে, তোমাদেরকে পবিত্র করে এবং কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দেয়। আর তোমাদেরকে
শিক্ষা দেয় এমন কিছু যা তোমরা জানতে না।’ {সূরা আল-বাকারা, আয়াত : ১৫১}
ফতোয়ার বিস্তৃতি
ও প্রাসঙ্গিকতা
মুসলিম জীবনে
ফতোয়ার পরিধি ও বিস্তৃতি খুবই ব্যাপক। একজন মুসলিমের
পারিবারিক, রাষ্ট্রিক ও অর্থনৈতিক- এককথায় সর্বক্ষেত্রে ফতোয়ার প্রয়োজন। সালাত, সাওম, হজ, যাকাত, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ
বিয়ে-তালাক, মীরাছ-উত্তরাধিকার-
সর্বত্রই ফতোয়া মুসলিমের জন্য সঠিক
সমাধান জানার পথ। সুতরাং ইসলামী জীবনে ফতোয়া এক অপরিহার্য
অনুসঙ্গ। এছাড়া একজন মুসলিম খাঁটি মুসলিম
হিসেবে টিকে থাকতে পারে না। পারে না আল্লাহর যাবতীয় আদেশ ও নিষেধ
পুরোপুরি বাস্তবায়ন করতে।
কারা দেবেন ফতোয়া
ফতোয়া দেবার অধিকার কেবল ইসলামী আইন শাস্ত্র নিয়ে
যারা পড়াশোনা করে কোনো স্বীকৃত প্রতিষ্ঠান থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে সনদ সংগ্রহ
করেছেন। তিনি যখন কুরআন, হাদীস, ইজমা ও কিয়াসের
ভিত্তিতে ইসলামী আইন শাস্ত্রের রীতি মেনে ফতোয়া দেবেন
তখন তাঁর ফতোয়া হতে পারে গ্রহণযোগ্য।
ফতোয়া ও
বিচার ব্যবস্থা
ইসলামী শরীয়তে বিচার ব্যবস্থা ও ফতোয়া দু’টি এক জিনিস
নয়। আমাদের অজ্ঞতাবশত: দু’টিকে একসঙ্গে গুলিয়ে
ফেলার কারণেই আমাদের সমাজে এই ভুল বুঝাবুঝির মুল কারণ। সমাধান জানানো মুফতীর
কাজ, কিন্তু
তা প্রয়োগ করার কোনো অধিকার তার নেই। আর ইসলামী সরকার কর্তৃক
নিযুক্ত বিচারক তা প্রয়োগ করবেন।
সুতরাং আমাদের দেশে সংঘটিত দোর্রা মারা ও পাথর নিক্ষেপ করে কাউকে হত্যা করা কী ফতোয়ার দোষ? আর সত্যিকারার্থে
কী সব ঘটনা সত্যিকার মুফতীর ফতোয়ার কারণে হচ্ছে? না গ্রাম্য মোড়লদের সালিসি সিদ্ধান্তের কারণে? একবার শান্ত
মাথায় ভাবি।
গ্রাম্য সালিসি সিদ্ধান্ত ও ফতোয়া
শব্দের অপপ্রয়োগ
উপরোক্ত আলোচনা মনযোগ সহকারে পড়লে আমরা নিশ্চয়
বুঝে যাব আমাদের দেশে কী পরিমাণ বিভ্রান্তি ছড়ানো
হচ্ছে ফতোয়ার মত পবিত্র শব্দ নিয়ে। কী কৌশলে ইসলামের এই পবিত্র শব্দকে কলুষিত করা
হচ্ছে গ্রাম্য মোড়লদের সালিসি দরবারী সিদ্ধান্তকে ফতোয়া
বলে।
কৃতজ্ঞতা :
দৈনিক আমার দেশ, ৩১/০১/২০১৩ সংখ্যা।
সানাউল্লাহ নাজির আহমদ, হিল্লা বিয়ে।
মুফতি লুৎফর রহমান ফরাজী, ‘ফতোয়া’ : অপপ্রচারের
শিকার এক মজলুম ইসলামী শব্দ’।
মুফতি ইউসুফ সুলতান, তালাক ও বিয়ে সংক্রান্ত ফতোয়া।
ইউকিপিডিয়া, আরবী ও বাংলা সংস্করণ।
সংকলন : আলী হাসান তৈয়ব
সম্পাদনা : ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া
সূত্র : ইসলাম প্রচার ব্যুরো, রাবওয়াহ, রিয়াদ, সৌদিআরব
আরও পড়ুনঃ হিল্লা বিয়ে
আরও পড়ুনঃ বিয়ে : করণীয় ও বর্জনীয়
আরও পড়ুনঃ বিয়ের প্রস্তাব : করণীয় ও বর্জনীয়
আরও পড়ুনঃ বিবাহে প্রচলিত কু-প্রথা
আরও পড়ুনঃ ইসলামের দৃষ্টিতে আন্তধর্ম বিয়ে
আরও পড়ুনঃ সদ্য বিবাহিত ছেলে-মেয়ের জন্য অমূল্য উপদেশ
পোস্টটি ভালো লাগলে শেয়ার করতে ভুলবেন না কিন্তু।
একজন মেয়ে কি ছেলেকে তালাক দিতে পারবে?
উত্তরমুছুনযদি কোন নারী তার স্বামী কে ছারার উদ্দেশ্য করে দুরত্ব বজায় রাখে। কিন্তু স্বামী তাকে ছারতে চায়না বরং তাকে আগে তুলনায় অস্বাভাবিক যৌন ও মানসিক নির্যাতন করে । আর স্ত্রী আগে থেকে পরবর্তী স্বামী নির্ধারণ করে রাখে। ওই নারীর কি করনিয়।
উত্তরমুছুনভুল করে রাগের মাথায় হঠাৎ ৩ তালাক দিল কার নাম নেই নায়,কোন পুরুষ ছিল না। এখন ২ জন এ সংসার করতে চাই কি উপা???
উত্তরমুছুন