ইবাদতে মধ্যমপন্থা অবলম্বন
ইবাদতে মধ্যমপন্থা অবলম্বন
আল্লাহ তা‘আলা
বলেন,
﴿ طه ١ مَآ أَنزَلۡنَا عَلَيۡكَ ٱلۡقُرۡءَانَ لِتَشۡقَىٰٓ ٢ ﴾ [طه: ١، ٢]
অর্থাৎ “ত্বা-হা-। তোমাকে কষ্ট
দেওয়ার জন্য আমি তোমার প্রতি কুরআন অবতীর্ণ করিনি।” (সূরা ত্বাহা ১-২ আয়াত)
তিনি আরো বলেন,
﴿ يُرِيدُ ٱللَّهُ بِكُمُ ٱلۡيُسۡرَ وَلَا يُرِيدُ بِكُمُ ٱلۡعُسۡرَ ﴾ [البقرة: ١٨٥]
অর্থাৎ “আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের জন্য সহজ করতে চান, তোমাদের
জন্য কঠিনতা তাঁর কাম্য নয়।” (সূরা বাক্বারাহ ১৮৫ আয়াত)
1/146 وعن عائشة رضي الله عنها : أنَّ النَّبيّ ﷺ دخل عَلَيْهَا
وعِندها امرأةٌ، قَالَ: «مَنْ هذِهِ ؟»قَالَتْ: هذِهِ فُلاَنَةٌ تَذْكُرُ
مِنْ صَلاتِهَا . قَالَ: «مَهْ، عَلَيْكُمْ بِمَا تُطِيقُونَ، فَواللهِ لاَ
يَمَلُّ اللهُ حَتَّى تَمَلُّوا»وكَانَ أَحَبُّ الدِّينِ إِلَيْهِ مَا دَاوَمَ
صَاحِبُهُ عَلَيهِ . مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
১/১৪৬। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহ থেকে বর্ণিত, একদা
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর নিকট গেলেন, তখন এক
মহিলা তাঁর কাছে (বসে) ছিল। তিনি বললেন, ‘‘এটি কে?’’ আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহ
বললেন, ‘অমুক মহিলা, যে প্রচুর নামায
পড়ে।’ তিনি বললেন, ‘‘থামো! তোমরা
সাধ্যমত আমল কর। আল্লাহর কসম! আল্লাহ ক্লান্ত হন না, যতক্ষণ
না তোমরা ক্লান্ত হয়ে পড়।’’ আর সেই আমল তাঁর নিকট প্রিয়তম
ছিল, যেটা তার আমলকারী লাগাতার করে থাকে।[1]
‘আল্লাহ ক্লান্ত হন না’- এ কথার অর্থ এই যে, তিনি সওয়াব দিতে
ক্লান্ত হন না। অর্থাৎ তিনি তোমাদেরকে সওয়াব ও তোমাদের আমলের প্রতিদান দেওয়া বন্ধ
করেন না এবং তোমাদের সাথে ক্লান্তের মত ব্যবহার করেন না; যে
পর্যন্ত না তোমরা নিজেরাই ক্লান্ত হয়ে আমল ত্যাগ করে বস। সুতরাং তোমাদের উচিত, তোমরা সেই আমল গ্রহণ করবে, যা একটানা করে
যেতে সক্ষম হবে। যাতে তাঁর সওয়াব ও তাঁর অনুগ্রহ তোমাদের জন্য নিরবচ্ছিন্ন থাকে।
2/147 وَعَن أَنَسٍ رضي الله عنه،
قَالَ : جَاءَ ثَلاثَةُ رَهْطٍ إِلَى بُيُوتِ أزْوَاجِ النَّبيّ ﷺ، يَسْأَلُونَ
عَنْ عِبَادَةِ النَّبيّ ﷺ، فَلَمَّا أُخْبِروا كَأَنَّهُمْ تَقَالُّوهَا
وَقَالُوا : أَيْنَ نَحْنُ مِنَ النَّبيِّ ﷺ وَقدْ غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ
ذَنْبِهِ وَمَا تَأخَّرَ. قَالَ أحدُهُم : أمَّا أنا فَأُصَلِّي اللَّيلَ أبداً .
وَقالَ الآخَرُ : وَأَنَا أصُومُ الدَّهْرَ أَبَداً وَلا أُفْطِرُ . وَقالَ الآخَر
: وَأَنا أعْتَزِلُ النِّسَاءَ فَلاَ أتَزَوَّجُ أبَداً . فَجَاءَ رَسُولُ الله ﷺ
إلَيهِم، فَقَالَ: «أنْتُمُ الَّذِينَ قُلْتُمْ كَذَا وَكَذَا ؟ أَمَا واللهِ
إنِّي لأخْشَاكُمْ للهِ، وَأَتْقَاكُمْ لَهُ، لَكِنِّي أصُومُ وَأُفْطِرُ،
وأُصَلِّي وَأَرْقُدُ، وَأَتَزَوَّجُ النِّساءَ، فَمَنْ رَغِبَ عَنْ سُنَّتِي
فَلَيْسَ مِنِّي». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
২/১৪৭। আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন যে, তিন ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর স্ত্রীদের বাসায় এলেন। তাঁরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম-এর ইবাদত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন। অতঃপর যখন তাঁদেরকে এর সংবাদ দেওয়া
হল তখন তাঁরা যেন তা অল্প মনে করলেন এবং বললেন, ‘আমাদের
সঙ্গে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর তুলনা কোথায়? তাঁর
তো আগের ও পরের সমস্ত গোনাহ মোচন করে দেওয়া হয়েছে। (সেহেতু আমাদের তাঁর চেয়ে বেশী
ইবাদত করা প্রয়োজন)।’ সুতরাং তাঁদের মধ্যে একজন বললেন, ‘আমি সারা জীবন রাতভর নামায পড়ব।’ দ্বিতীয়জন
বললেন, ‘আমি সারা জীবন রোযা রাখব, কখনো
রোযা ছাড়ব না।’ তৃতীয়জন বললেন, ‘আমি
নারী থেকে দূরে থাকব, জীবনভর বিয়েই করব না।’ অতঃপর
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁদের নিকট এলেন এবং বললেন, ‘‘তোমরা এই এই কথা বলেছ? শোনো! আল্লাহর
কসম! আমি তোমাদের চেয়ে বেশী আল্লাহকে ভয় করি, তার ভয় অন্তরে
তোমাদের চেয়ে বেশী রাখি। কিন্তু আমি (নফল) রোযা রাখি এবং রোযা ছেড়েও দিই, নামায পড়ি এবং নিদ্রাও যাই। আর নারীদের বিয়েও করি। সুতরাং যে
আমার সুন্নত হতে মুখ ফিরিয়ে নিবে, সে আমার দলভুক্ত নয়।’’[2]
3/148 وَعَنِ ابنِ مَسعُودٍ رضي الله عنه : أنَّ
النَّبيّ ﷺ، قَالَ: «هَلَكَ المُتَنَطِّعُونَ»قالها ثَلاثاً . رواه مسلم
৩/১৪৮। ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু
‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘দ্বীনের ব্যাপারে নিজের পক্ষ থেকে
কঠোরতা অবলম্বনকারীরা ধ্বংস হয়ে গেল। (অথবা
ধ্বংস হোক।)’’ এ কথা তিনি তিনবার বললেন।[3]
4/149 عَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، عَنِ
النَّبيّ ﷺ، قَالَ: «إنَّ الدِّينَ يُسْرٌ، وَلَنْ يُشَادَّ الدِّيْنُ إلاَّ
غَلَبَهُ، فَسَدِّدُوا وَقَارِبُوا وَأبْشِرُوا، وَاسْتَعِينُوا بِالغَدْوَةِ
وَالرَّوْحَةِ وَشَيءٍ مِنَ الدُّلْجَةِ». رواه البخاري .
وفي رواية لَهُ:
«سَدِّدُوا وَقَارِبُوا، وَاغْدُوا وَرُوحُوا، وَشَيءٌ مِنَ الدُّلْجَةِ،
القَصْدَ القَصْدَ تَبْلُغُوا».
৪/১৪৯। আবূ হুরাইরাহ
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘নিশ্চয় দ্বীন সহজ।
যে ব্যক্তি অহেতুক দ্বীনকে কঠিন বানাবে, তার উপর দ্বীন জয়ী
হয়ে যাবে। (অর্থাৎ মানুষ পরাজিত হয়ে আমল ছেড়ে দিবে।) সুতরাং তোমরা সোজা পথে থাক
এবং (ইবাদতে) মধ্যমপন্থা অবলম্বন কর। তোমরা সুসংবাদ নাও। আর
সকাল-সন্ধ্যা ও রাতের কিছু অংশে ইবাদত করার মাধ্যমে সাহায্য নাও।’’[4]
বুখারীর অন্য এক বর্ণনায় আছে, ‘‘তোমরা সরল পথে থাকো, মধ্যমপন্থা অবলম্বন কর, সকাল-সন্ধ্যায় চল (ইবাদত কর) এবং রাতের কিছু
অংশে। আর তোমরা মধ্যমপন্থা অবলম্বন কর, মধ্যমপন্থা
অবলম্বন কর, তাহলেই গন্তব্যস্থলে পৌঁছে
যাবে।’’
অর্থাৎ অবসর সময়ে উদ্যমশীল মনে
আল্লাহর ইবাদত কর; যে সময়ে ইবাদত করে তৃপ্তি পাওয়া যায় এবং
তা মনে ভারী বা বিরক্তিকর না হয়। আর তাহলেই অভীষ্টলাভ করতে পারবে। যেমন বুদ্ধিমান
মুসাফির উক্ত সময়ে সফর করে এবং যথাসময়ে সে ও তার সওয়ারী বিশ্রাম গ্রহণ করে। (না
ধীরে চলে এবং না তাড়াহুড়া করে।) ফলে সে বিনা কষ্টে যথা সময়ে গন্তব্যস্থলে পৌঁছে
যায়।
5/150 وَعَن أَنَسٍ رضي الله عنه،
قَالَ : دَخَلَ النَّبيُّ ﷺ المَسْجِدَ فَإِذَا حَبْلٌ مَمْدُودٌ بَيْنَ
السَّارِيَتَيْنِ، فَقَالَ: «مَا هَذَا الحَبْلُ ؟»قالُوا : هَذَا حَبْلٌ
لِزَيْنَبَ، فَإِذَا فَتَرَتْ تَعَلَّقَتْ بِهِ . فَقَالَ النَّبيُّ ﷺ: «حُلُّوهُ،
لِيُصلِّ أَحَدُكُمْ نَشَاطَهُ فَإِذَا فَتَرَ فَلْيَرْقُدْ». مُتَّفَقٌ
عَلَيهِ
৫/১৫০। আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, একদা নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে প্রবেশ করলেন। হঠাৎ দেখলেন যে, একটি
দড়ি দুই স্তম্ভের মাঝে লম্বা করে বাঁধা রয়েছে। তারপর তিনি
বললেন, ‘‘এই দড়িটা কি (জন্য)’’? লোকেরা
বলল, ‘এটি যয়নাবের দড়ি। যখন তিনি (নামায পড়তে পড়তে) ক্লান্ত
হয়ে পড়েন, তখন এটার সঙ্গে ঝুলে যান!’ নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘এটিকে খুলে ফেল।
তোমাদের মধ্যে (যে নামায পড়বে) তার উচিত, সে যেন মনে
স্ফূর্তি থাকাকালে নামায পড়ে। তারপর সে যখন ক্লান্ত হয়ে পড়বে, তখন
সে যেন শুয়ে যায়।’’[5]
6/151 وَعَن عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنهَا : أنَّ رَسُولَ الله ﷺ،
قَالَ: «إِذَا نَعَسَ أَحَدُكُمْ وَهُوَ يُصَلِّي فَلْيَرْقُدْ حَتَّى يَذْهَبَ
عَنْهُ النَّومُ، فإِنَّ أحدكم إِذَا صَلَّى وَهُوَ نَاعِسٌ لا يَدْرِي لَعَلَّهُ
يَذْهَبُ يَسْتَغْفِرُ فَيَسُبُّ نَفْسَهُ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
৬/১৫১। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যখন নামায পড়া অবস্থায়
তোমাদের কারো তন্দ্রা আসবে, তখন তাকে ঘুমিয়ে যাওয়া উচিত, যতক্ষণ না তার ঘুম চলে যাবে। কারণ, তোমাদের
কেউ যদি তন্দ্রা অবস্থায় নামায পড়ে, তাহলে সে অনুভব করতে
পারবে না যে, সম্ভবতঃ সে ক্ষমা প্রার্থনা করতে গিয়ে
প্রকৃতপক্ষে নিজেকে গালি দিচ্ছে।[6]
7/152 وَعَنْ أَبِي عَبدِ اللهِ جَابِرِ بنِ سَمُرَةَ رَضِيَ الله
عَنهُما، قَالَ: كُنْتُ أصَلِّي مَعَ النَّبيِّ ﷺ الصَّلَوَاتِ، فَكَانتْ صَلاتُهُ
قَصْداً وَخُطْبَتُهُ قَصْداً . رواه مسلم
৭/১৫২। আবূ আব্দুল্লাহ জাবের
ইবনে সামুরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন যে, ‘আমি
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে নামায পড়তাম। সুতরাং তাঁর নামাযও
মধ্যম হত এবং তাঁর খুৎবাও মধ্যম হত।’[7]
8/153 وعَنْ أَبِي جُحَيْفَة وَهْب بنِ عَبدِ اللهِ رضي الله عنه، قَالَ : آخَى النَّبيُّ ﷺ بَيْنَ سَلْمَانَ وَأَبي الدَّرْداءِ،
فَزارَ سَلْمَانُ أَبَا الدَّرداءِ فَرَأى أُمَّ الدَّرداءِ مُتَبَذِّلَةً،
فَقَالَ : مَا شَأنُكِ ؟ قَالَتْ : أخُوكَ أَبُو الدَّردَاءِ لَيْسَ لَهُ حَاجَةٌ
في الدُّنْيَا، فَجاءَ أَبُو الدَّرْدَاءِ فَصَنَعَ لَهُ طَعَاماً، فَقَالَ لَهُ :
كُلْ فَإِنِّي صَائِمٌ، قَالَ : مَا أنا بِآكِلٍ حَتَّى تَأكُلَ فَأَكَلَ،
فَلَمَّا كَانَ اللَّيلُ ذَهَبَ أَبُو الدَّردَاءِ يَقُومُ فَقَالَ لَهُ : نَمْ،
فَنَامَ، ثُمَّ ذَهَبَ يَقُومُ فَقَالَ لَهُ : نَمْ . فَلَمَّا كَانَ مِن آخِر
اللَّيلِ قَالَ سَلْمَانُ : قُمِ الآن، فَصَلَّيَا جَمِيعاً فَقَالَ لَهُ
سَلْمَانُ: إنَّ لِرَبِّكَ عَلَيْكَ حَقّاً، وَإِنَّ لِنَفْسِكَ عَلَيكَ حَقّاً،
وَلأَهْلِكَ عَلَيكَ حَقّاً، فَأعْطِ كُلَّ ذِي حَقٍّ حَقَّهُ، فَأَتَى النَّبيَّ ﷺ
فَذَكَرَ ذلِكَ لَهُ فَقَالَ النَّبيُّ ﷺ: «صَدَقَ سَلْمَانُ». رواه
البخاري
৮/১৫৩। আবূ জুহাইফা ওয়াহব ইবনে
আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন যে, নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (হিজরতের পর মদীনায়) সালমান ও আবূ দারদার মাঝে
ভ্রাতৃত্ব স্থাপন করলেন। অতঃপর সালমান (একদিন তাঁর দ্বীনী ভাই) আবূ দারদার সঙ্গে
সাক্ষাৎ করতে (তাঁর বাড়ী) গেলেন। তিনি (আবূ দারদার স্ত্রী) উম্মে দারদাকে দেখলেন, তিনি মলিন কাপড় পরে আছেন। সুতরাং তিনি তাঁকে বললেন,
‘তোমার এ অবস্থা কেন?’ তিনি বললেন, ‘তোমার
ভাই আবূ দারদার দুনিয়ার কোনো প্রয়োজনই নেই।’ (ইতোমধ্যে) আবূ
দারদাও এসে গেলেন এবং তিনি তাঁর জন্য খাবার তৈরী করলেন। অতঃপর তাঁকে বললেন, ‘তুমি খাও। কেননা, আমি রোযা রেখেছি।’ তিনি বললেন, ‘যতক্ষণ না তুমি খাবে, আমি খাব না।’ সুতরাং আবূ দারদাও (নফল রোযা
ভেঙ্গে দিয়ে তাঁর সঙ্গে) খেলেন। অতঃপর যখন রাত এল, তখন (শুরু
রাতেই) আবূ দারদা নফল নামায পড়তে গেলেন। সালমান তাঁকে বললেন, ‘(এখন)
শুয়ে যাও।’ সুতরাং তিনি শুয়ে গেলেন। কিছুক্ষণ পর আবার তিনি (বিছানা
থেকে) উঠে নফল নামায পড়তে গেলেন। আবার সালমান বললেন, ‘শুয়ে
যাও।’ অতঃপর যখন রাতের শেষাংশ এসে পৌঁছল, তখন
তিনি বললেন, ‘এবার উঠে নফল নামায পড়।’ সুতরাং
তাঁরা দু’জনে একত্রে নামায পড়লেন। অতঃপর সালমান তাঁকে বললেন, ‘নিশ্চয় তোমার উপর তোমার প্রভুর অধিকার রয়েছে। তোমার প্রতি তোমার
আত্মারও অধিকার আছে এবং তোমার প্রতি তোমার পরিবারেরও অধিকার রয়েছে। অতএব তুমি
প্রত্যেক অধিকারীকে তার অধিকার প্রদান কর।’ অতঃপর তিনি নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে তাঁকে সমস্ত ঘটনা শুনালেন। নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘সালমান ঠিকই বলেছে।’’[8]
9/154 وعَنْ أَبِي محمد عبدِ اللهِ بنِ عَمْرو بن العَاصِ رَضي
الله عنهما، قَالَ : أُخْبِرَ النَّبيُّ ﷺ أنِّي أقُولُ: وَاللهِ لأَصُومَنَّ
النَّهَارَ، وَلأَقُومَنَّ اللَّيلَ مَا عِشْتُ. فَقَالَ رَسُولُ الله ﷺ: «أنتَ
الَّذِي تَقُولُ ذلِكَ؟» فَقُلْتُ
لَهُ : قَدْ قُلْتُهُ بأبي أنْتَ وأمِّي يَا رسولَ الله . قَالَ: «فَإِنَّكَ
لاَ تَسْتَطِيعُ ذلِكَ فَصُمْ وَأَفْطِرْ، وَنَمْ وَقُمْ، وَصُمْ مِنَ الشَّهْرِ
ثَلاثةَ أيَّامٍ، فإنَّ الحَسَنَةَ بِعَشْرِ أمْثَالِهَا وَذَلكَ مِثلُ صِيامِ
الدَّهْرِ» قُلْتُ
: فَإِنِّي أُطيقُ أَفْضَلَ مِنْ ذلِكَ، قَالَ: «فَصُمْ يَوماً وَأَفْطِرْ
يَوْمَيْنِ»قُلْتُ : فَإنِّي أُطِيقُ أفضَلَ مِنْ ذلِكَ، قَالَ: «فَصُمْ
يَوماً وَأفْطِرْ يَوماً فَذلِكَ صِيَامُ دَاوُد عليه السلام، وَهُوَ أعْدَلُ
الصيامِ» .
وفي رواية: «هُوَ
أفْضَلُ الصِّيامِ» فَقُلْتُ:
فَإِنِّي أُطيقُ أفْضَلَ مِنْ ذلِكَ، فَقَالَ رسولُ الله ﷺ: «لاَ أفضَلَ مِنْ
ذلِكَ»، وَلأنْ أكُونَ قَبِلْتُ الثَّلاثَةَ الأَيّامِ الَّتي قَالَ رَسُول
الله ﷺ أحَبُّ إليَّ مِنْ أهْلي وَمَالي.
وفي رواية: «أَلَمْ
أُخْبَرْ أنَّكَ تَصُومُ النَّهَارَ وتَقُومُ اللَّيلَ ؟»قُلْتُ : بَلَى، يَا
رَسُول الله، قَالَ: «فَلاَ تَفْعَلْ : صُمْ وَأَفْطِرْ، وَنَمْ وَقُمْ ؛ فإنَّ
لِجَسَدِكَ عَلَيْكَ حَقّاً، وَإِنَّ لِعَيْنَيكَ عَلَيْكَ حَقّاً، وَإِنَّ
لِزَوْجِكَ عَلَيْكَ حَقّاً، وَإِنَّ لِزَوْرِكَ عَلَيْكَ حَقّاً، وَإنَّ
بِحَسْبِكَ أنْ تَصُومَ في كُلِّ شَهْرٍ ثَلاثَةَ أيَّامٍ، فإنَّ لَكَ بِكُلِّ
حَسَنَةٍ عَشْرَ أمْثَالِهَا، فَإِنَّ ذلِكَ صِيَامُ الدَّهْر»فَشَدَّدْتُ
فَشُدِّدَ عَلَيَّ، قُلْتُ : يَا رَسُول الله، إنِّي أجِدُ قُوَّةً، قَالَ: «صُمْ
صِيَامَ نَبيِّ الله دَاوُد وَلاَ تَزد عَلَيهِ»
قُلْتُ : وَمَا كَانَ صِيَامُ دَاوُد ؟ قَالَ: «نِصْفُ الدَّهْرِ»فَكَانَ
عَبدُ الله يقول بَعدَمَا كَبِرَ : يَا لَيتَنِي قَبِلْتُ رُخْصَة رَسُول الله ﷺ
.
وفي
رواية: «أَلَمْ أُخْبَرْ أَنَّكَ تَصُومُ الدَّهرَ، وَتَقْرَأُ القُرآنَ كُلَّ
لَيْلَة ؟»فقلت : بَلَى، يَا رَسُول الله، وَلَمْ أُرِدْ بذلِكَ إلاَّ
الخَيرَ، قَالَ: «فَصُمْ صَومَ نَبيِّ اللهِ دَاوُد، فَإنَّهُ كَانَ أعْبَدَ
النَّاسِ، وَاقْرَأ القُرْآنَ في كُلِّ شَهْر»قُلْتُ : يَا نَبيَّ اللهِ،
إنِّي أُطِيقُ أَفْضَلَ مِنْ ذلِكَ ؟ قَالَ: «فاقرأه في كل عشرين»قُلْتُ :
يَا نبي الله، إني أطيق أفضل من ذلِكَ ؟ قَالَ: «فَاقْرَأهُ في كُلِّ عَشْر»قُلْتُ
: يَا نبي اللهِ، إنِّي أُطيقُ أَفْضَلَ مِنْ ذلِكَ ؟ قَالَ: «فاقْرَأهُ في
كُلِّ سَبْعٍ وَلاَ تَزِدْ عَلَى ذلِكَ»فشدَّدْتُ فَشُدِّدَ عَلَيَّ وَقالَ لي
النَّبيّ ﷺ: «إنَّكَ لا تَدرِي لَعَلَّكَ يَطُولُ بِكَ عُمُرٌ»قَالَ :
فَصِرْتُ إِلَى الَّذِي قَالَ لي النَّبيُّ ﷺ . فَلَمَّا كَبِرْتُ وَدِدْتُ أنِّي
كُنْتُ قَبِلتُ رُخْصَةَ نَبيِّ الله ﷺ . وفي رواية: «وَإِنَّ لِوَلَدِكَ
عَلَيْكَ حَقّاً».
وفي
رواية: «لاَ صَامَ مَنْ صَامَ الأَبَدَ» ثلاثاً .
وفي
رواية: «أَحَبُّ الصِيَامِ إِلَى اللهِ تَعَالَى صِيَامُ دَاوُد، وَأَحَبُّ
الصَّلاةِ إِلَى اللهِ تَعَالَى صَلاةُ دَاوُدَ: كَانَ يَنَامُ نِصفَ اللَّيلِ،
وَيَقُومُ ثُلُثَهُ، وَيَنَامُ سُدُسَهُ، وَكَانَ يَصُومُ يَوماً وَيُفطِرُ
يَوماً، وَلاَ يَفِرُّ إِذَا لاقَى».
وفي
رواية قال: «أنْكَحَني أَبي امرَأةً ذَاتَ حَسَبٍ وَكَانَ يَتَعَاهَدُ كنَّتَهُ -
أي : امْرَأَةَ وَلَدِهِ - فَيَسْأَلُهَا عَنْ بَعْلِهَا . فَتقُولُ لَهُ : نِعْمَ
الرَّجُلُ مِنْ رَجُلٍ لَمْ يَطَأْ لَنَا فِرَاشاً، وَلَمْ يُفَتِّشْ لَنَا
كَنَفاً مُنْذُ أتَيْنَاهُ . فَلَمَّا طَالَ ذلِكَ عَلَيهِ ذَكَرَ ذلك للنَّبيِّ ﷺ،
فَقَالَ: «القَنِي بِهِ»فَلَقيتُهُ بَعد ذلك، فَقَالَ: «كَيْفَ تَصُومُ
؟»قُلْتُ : كُلَّ يَومٍ، قَالَ: «وَكَيْفَ تَخْتِمُ ؟»قُلْتُ : كُلَّ
لَيْلَةٍ، وَذَكَرَ نَحْوَ مَا سَبَقَ، وَكَانَ يَقْرَأُ عَلَى بَعْضِ أهْلِهِ
السُّبُعَ الَّذِي يَقْرَؤُهُ، يَعْرِضُهُ مِنَ النَّهَارِ ليَكُونَ أخَفّ عَلَيهِ
باللَّيلِ، وَإِذَا أَرَادَ أنْ يَتَقَوَّى أفْطَرَ أيَّاماً وَأحْصَى وَصَامَ
مِثْلَهُنَّ كرَاهِيَةَ أنْ يَترُكَ شَيئاً فَارَقَ عَلَيهِ النَّبيَّ ﷺ . كُلّ
هذِهِ الروَايَاتِ صَحِيحَةٌ، مُعظمُها في الصَّحِيحَين، وَقَلِيل مِنْهَا في
أحدِهِما .
৯/১৫৪। আব্দুল্লাহ ইবনে ‘আমর ইবনে ‘আস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু
বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে আমার ব্যাপারে
সংবাদ দেওয়া হল যে, আমি বলছি, ‘আল্লাহর
কসম! আমি যতদিন বেঁচে থাকব ততদিন দিনে রোযা রাখব এবং রাতে নফল নামায পড়ব।’ সুতরাং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, ‘‘তুমি এ কথা বলছ?’’ আমি তাঁকে বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসূল! নিঃসন্দেহে আমি এ কথা বলেছি, আমার
পিতা-মাতা আপনার জন্য কুরবান হোক।’ তিনি বললেন,
‘‘তুমি এর সাধ্য রাখ না। অতএব তুমি রোযা রাখ এবং (কখনো) ছেড়েও দাও। অনুরূপ
(রাতের কিছু অংশে) ঘুমাও এবং (কিছু অংশে) নফল নামায পড় ও মাসে তিন দিন রোযা রাখ।
কারণ, নেকীর প্রতিদান দশগুণ রয়েছে। তোমার এই রোযা জীবনভর
রোযা রাখার মত হয়ে যাবে।’’ আমি বললাম, ‘আমি
এর অধিক করার শক্তি রাখি।’ তিনি বললেন, ‘‘তাহলে
তুমি একদিন রোযা রাখ, আর দু’দিন রোযা
ত্যাগ কর।’’ আমি বললাম, ‘আমি এর বেশী
করার শক্তি রাখি।’ তিনি বললেন, ‘‘তাহলে
একদিন রোযা রাখ, আর একদিন রোযা ছাড়। এ হল দাঊদ ‘আলাইহিস সালাম-এর
রোযা। আর এ হল ভারসাম্যপূর্ণ রোযা।’’
অন্য এক বর্ণনায় আছে যে, ‘‘এটা সর্বোত্তম রোযা।’’ কিন্তু আমি বললাম, ‘আমি এর চেয়ে বেশী (রোযা) রাখার ক্ষমতা রাখি।’ রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘এর চেয়ে উত্তম রোযা
আর নেই।’’ (আব্দুল্লাহ বলেন,) ‘যদি আমি
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নির্দেশ অনুযায়ী (প্রত্যেক মাসে) তিন দিন
রোযা রাখার পদ্ধতি গ্রহণ করতাম, তাহলে তা আমার নিকট আমার
পরিবার ও সম্পদ অপেক্ষা প্রিয় হত।’
অন্য এক বর্ণনায় আছে, (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন,) ‘‘আমি কি এই
সংবাদ পাইনি যে, তুমি দিনে রোযা রাখছ এবং রাতে নফল নামায পড়ছ?’’ আমি বললাম, ‘সম্পূর্ণ সত্য,
হে আল্লাহর রাসূল!’ তিনি বললেন, ‘‘পুনরায়
এ কাজ করো না। তুমি রোযাও রাখ এবং (কখনো) ছেড়েও দাও। নিদ্রাও যাও এবং নামাযও পড়।
কারণ তোমার উপর তোমার দেহের অধিকার আছে। তোমার উপর তোমার চক্ষুদ্বয়ের অধিকার আছে।
তোমার উপর তোমার স্ত্রীর অধিকার আছে এবং তোমার উপর তোমার অতিথির অধিকার আছে। তোমার
জন্য প্রত্যেক মাসে তিন দিন রোযা রাখা যথেষ্ট। কেননা, প্রত্যেক
নেকীর পরিবর্তে তোমার জন্য দশটি নেকী রয়েছে আর এটা জীবনভর রোযা রাখার মত।’’ কিন্তু আমি কঠোরতা অবলম্বন করলাম। যার ফলে আমার উপর কঠিন
করে দেওয়া হল। আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমি সামর্থ্য
রাখি।’ তিনি বললেন, ‘‘তুমি আল্লাহর নবী
দাউদ ‘আলাইহিস সালাম-এর রোযা রাখ এবং তার চেয়ে বেশী করো না।’’
আমি বললাম, ‘দাউদের রোযা কেমন ছিল?’ তিনি
বললেন, ‘‘অর্ধেক জীবন।’’ অতঃপর
আব্দুল্লাহ বৃদ্ধ হয়ে যাওয়ার পর বলতেন, ‘হায়! যদি আমি
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অনুমতি গ্রহণ করতাম (তাহলে কতই না
ভাল হত)!’
আর এক বর্ণনায় আছে, (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন,)
‘‘আমি সংবাদ পেয়েছি যে, তুমি সর্বদা রোযা রাখছ এবং
প্রত্যহ রাতে কুরআন (খতম) পড়ছ।’’ আমি বললাম,
‘(সংবাদ) সত্যই, হে আল্লাহর রাসূল! কিন্তু এতে আমার
উদ্দেশ্য ভাল ছাড়া অন্য কিছু নয়।’ তিনি বললেন,
‘‘তুমি আল্লাহর নবী দাউদের রোযা রাখ। কারণ, তিনি
লোকের মধ্যে সবচেয়ে বেশী ইবাদতগুযার ছিলেন। আর প্রত্যেক মাসে (একবার কুরআন খতম)
পড়।’’ আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর নবী! আমি
এর অধিক করার শক্তি রাখি।’ তিনি বললেন, ‘‘তাহলে
তুমি কুড়ি দিনে (কুরআন খতম) পড়।’’ আমি বললাম,
‘হে আল্লাহর নবী! আমি এর থেকে বেশী করার সামর্থ্য রাখি।’ তিনি
বললেন, ‘‘তাহলে তুমি প্রত্যেক দশদিনে (কুরআন খতম) পড়।’’ আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর নবী! আমি এর চেয়েও
বেশী ক্ষমতা রাখি।’ তিনি বললেন, ‘‘তাহলে
তুমি প্রত্যেক সাতদিনে (খতম) পড় এবং এর বেশী করো না (অর্থাৎ এর চাইতে কম সময়ে
কুরআন খতম করো না।)’’ কিন্তু আমি কঠোরতা অবলম্বন করলাম। যার ফলে আমার উপর কঠিন করে দেওয়া হল। আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম আমাকে বলেছিলেন, ‘‘তুমি জান না, সম্ভবতঃ
তোমার বয়স সুদীর্ঘ হবে।’’ আব্দুল্লাহ বলেন, সুতরাং
আমি ঐ বয়সে পৌঁছে গেলাম, যার কথা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম আমাকে বলেছিলেন। অবশেষে আমি যখন বৃদ্ধ হয়ে গেলাম, তখন
আমি আকাঙ্ক্ষা করলাম, হায়! যদি আমি আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অনুমতি গ্রহণ করে নিতাম।
অন্য এক বর্ণনায় আছে, (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন,)
‘‘আর তোমার উপর তোমার সন্তানের অধিকার আছে---।’’
অন্য এক বর্ণনায় আছে, ‘‘তার কোন রোযা নেই (অর্থাৎ রোযা বিফল যাবে) সে সর্বদা রোযা
রাখে।’’ এ কথা তিনবার বললেন।
অন্য এক বর্ণনায় আছে, ‘‘আল্লাহর নিকট প্রিয়তম রোযা হচ্ছে দাউদ ‘আলাইহিস সালাম-এর
রোযা এবং আল্লাহর নিকট প্রিয়তম নামায হচ্ছে দাউদ ‘আলাইহিস সালাম-এর নামায। তিনি মধ্য রাতে
শুতেন এবং তার তৃতীয় অংশে নামায পড়তেন এবং তার ষষ্ঠ অংশে ঘুমাতেন। তিনি একদিন রোযা
রাখতেন ও একদিন রোযা ছাড়তেন। আর যখন শত্রুর সামনা-সামনি হতেন তখন (রণভূমি হতে)
পলায়ন করতেন না।’’
আরোও এক বর্ণনায় আছে, (আব্দুল্লাহ ইবন ‘আমর) বলেন, আমার পিতা
আমার বিবাহ এক উচ্চ বংশের মহিলার সঙ্গে দিয়েছিলেন। তিনি পুত্রবধুর প্রতি খুবই
লক্ষ্য রাখতেন। তিনি তাকে তার স্বামী সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতেন। সে বলত, ‘এত ভালো লোক যে, সে কদাচ আমার বিছানায় পা
রাখেনি এবং যখন থেকে আমি তার কাছে এসেছি, সে কোনদিন আবৃত
জিনিস স্পর্শ করেনি (অর্থাৎ মিলনের ইচ্ছাও ব্যক্ত করেনি।)’ যখন
এই আচরণ অতি লম্বা হয়ে গেল, তখন
তিনি (আব্দুল্লাহর পিতা) এ কথা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জানালেন।
অতঃপর তিনি বললেন, ‘‘তাকে আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে বল।’’ সুতরাং পরবর্তীতে আমি তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করলাম। অতঃপর তিনি
বললেন, ‘‘তুমি কিভাবে রোযা রাখ?’’ আমি
বললাম, ‘প্রত্যেক দিন।’ তিনি বললেন, ‘‘কিভাবে কুরআন খতম কর?’’ আমি বললাম, ‘প্রত্যেক রাতে।’ অতঃপর তিনি ঐ কথাগুলি
বর্ণনা করলেন, যা পূর্বে গত হয়েছে। তিনি (আব্দুল্লাহ ইবনে ‘আমর)
তাঁর পরিবারের কাউকে (কুরআনের) ঐ সপ্তম অংশ পড়ে শুনাতেন, যা
তিনি (রাতের নফল নামাযে) পড়তেন। দিনের বেলায় তিনি তা পুনঃ পড়ে নিতেন,
যাতে তার তার উপর সহজ হয়। আর যখন তিনি শক্তিমান হতে চাইতেন তখন কয়েকদিন রোযা
ভাঙ্গতেন আর গুণে রাখতেন, তারপর সে দিনগুলোর অনুপাতে রোযা রাখতেন, যাতে করে রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে যে অবস্থার উপর ছেড়েছেন সে অবস্থার ব্যতিক্রম
হয় এমন অপছন্দনীয় কাজ সংঘটিত না হয়। এ বর্ণনাগুলো সবই সহীহ বর্ণনা; যার বেশিরভাগই
বুখারী ও মুসলিমে এসেছে অথবা এ দুটির একটিতে আছে।[9]
10/155 وعَنْ أَبِي رِبعِي حَنظَلَةَ بنِ الربيعِ الأُسَيِّدِيِّ
الكَاتِب أَحَدِ كُتَّابِ رَسُولِ الله ﷺ قَالَ : لَقِيَنِي أَبُو بَكر رضي الله عنه، فَقَالَ : كَيْفَ أنْتَ يَا حنْظَلَةُ ؟ قُلْتُ : نَافَقَ حَنْظَلَةُ
! قَالَ : سُبْحَانَ الله مَا تَقُولُ ؟! قُلْتُ: نَكُونُ عِنْدَ رَسُولِ الله ﷺ
يُذَكِّرُنَا بِالجَنَّةِ وَالنَّارِ كأنَّا رَأيَ عَيْنٍ، فإِذَا خَرَجْنَا مِنْ
عِنْدِ رَسُول الله ﷺ عَافَسْنَا الأَزْواجَ وَالأَوْلاَدَ وَالضَّيْعَاتِ نَسينَا
كَثِيراً، قَالَ أَبُو بكر رضي الله عنه : فَوَالله
إنَّا لَنَلْقَى مِثْلَ هَذَا، فانْطَلَقْتُ أَنَا وأبُو بَكْر حَتَّى دَخَلْنَا
عَلَى رَسُول الله ﷺ . فقُلْتُ : نَافَقَ حَنْظَلَةُ يَا رَسُول اللهِ ! فَقَالَ
رَسُول الله ﷺ: «وَمَا ذَاكَ ؟»قُلْتُ : يَا رَسُول اللهِ، نَكُونُ
عِنْدَكَ تُذَكِّرُنَا بِالنَّارِ والجَنَّةِ كأنَّا رَأيَ العَيْن فإِذَا
خَرَجْنَا مِنْ عِنْدِكَ عَافَسْنَا الأَزْواجَ وَالأَوْلاَدَ وَالضَّيْعَاتِ
نَسينَا كَثِيراً . فَقَالَ رَسُول الله ﷺ: «وَالَّذِي نَفْسي بِيَدِهِ، لَوْ
تَدُومُونَ عَلَى مَا تَكُونونَ عِنْدِي، وَفي الذِّكْر، لصَافَحَتْكُمُ
الملائِكَةُ عَلَى فُرُشِكُمْ وَفي طُرُقِكُمْ، لَكِنْ يَا حَنْظَلَةُ سَاعَةً
وسَاعَةً»ثَلاَثَ مَرَات . رواه مسلم
১০/১৫৫। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর একজন লেখক আবূ রিব‘য়ী হান্যালাহ ইবন রাবী‘ আল-উসাইদী
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, একদা আবূ বাকর
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বললেন, ‘হে হানযালাহ! তুমি কেমন আছ?’ আমি বললাম, ‘হানাযালাহ মুনাফিক হয়ে গেছে!’ তিনি
(আশ্চর্য হয়ে) বললেন, ‘সুবহানাল্লাহ! এ কি কথা বলছ?’ আমি বললাম, ‘(কথা এই যে, যখন)
আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকটে থাকি, তিনি
আমাদের সামনে এমন ভঙ্গিমায় জান্নাত ও জাহান্নামের আলোচনা করেন, যেন
আমরা তা স্বচক্ষে দেখছি। অতঃপর যখন আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম-এর নিকট থেকে বের হয়ে আসি, তখন স্ত্রী
সন্তান-সন্ততি ও অন্যান্য (পার্থিব) কারবারে ব্যস্ত হয়ে অনেক কিছু ভুলে যাই।’ আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, ‘আল্লাহর কসম! আমাদেরও তো এই অবস্থা হয়।’ সুতরাং
আমি ও আবূ বকর গিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খিদমতে হাজির
হলাম। অতঃপর আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসূল! হানযালাহ মুনাফিক
হয়ে গেছে।’ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বললেন, ‘‘সে কি কথা?’’ আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমরা যখন আপনার নিকটে থাকি, তখন
আপনি আমাদেরকে জান্নাত-জাহান্নামের কথা এমনভাবে শুনান; যেমন
নাকি আমরা তা প্রত্যক্ষভাবে দেখছি। অতঃপর আমরা যখন আপনার নিকট থেকে বের হয়ে যাই
এবং স্ত্রী সন্তান-সন্ততি ও কারবারে ব্যস্ত হয়ে পড়ি, তখন
অনেক কথা ভুলে যাই। (এ কথা শুনে) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বললেন, ‘‘সেই সত্তার কসম, যাঁর হাতে
আমার প্রাণ আছে! যদি তোমরা সর্বদা এই অবস্থায় থাকতে, যে
অবস্থাতে তোমরা আমার নিকটে থাক এবং সর্বদা আল্লাহর স্মরণে মগ্ন থাকতে, তাহলে ফিরিশ্তাগণ তোমাদের বিছানায় ও তোমাদের পথে তোমাদের সঙ্গে
মুসাফাহা করতেন। কিন্তু ওহে হানযালাহ! (সর্বদা মানুষের এক অবস্থা থাকে না।) কিছু
সময় (ইবাদতের জন্য) ও কিছু সময় (সাংসারিক কাজের জন্য)।’’ তিনি
এ কথা তিনবার বললেন।[10]
11/156 وَعنِ ابنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، قَالَ :
بَينَمَا النَّبيُّ ﷺ يَخطُبُ إِذَا هُوَ بِرَجُلٍ قَائِمٍ فَسَأَلَ عَنْهُ،
فَقَالُوا : أَبُو إسْرَائيلَ نَذَرَ أنْ يَقُومَ في الشَّمْسِ وَلاَ يَقْعُدَ،
وَلاَ يَسْتَظِل، وَلاَ يَتَكَلَّمَ، وَيَصُومَ، فَقَالَ النَّبيّ ﷺ: «مُرُوهُ،
فَلْيَتَكَلَّمْ، وَلْيَسْتَظِلَّ، وَلْيَقْعُدْ، وَلْيُتِمَّ صَوْمَهُ». رواه
البخاري
১১/১৫৬। ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু
‘আনহু বলেন, কোন এক সময় নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুৎবাহ দিচ্ছিলেন। হঠাৎ তিনি দেখলেন যে, একটি লোক (রোদে) দাঁড়িয়ে আছে। অতঃপর তিনি তাঁর সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করলেন। লোকেরা বলল, ‘আবূ ইসরাঈল। ও নযর
মেনেছে যে, ও রোদে দাঁড়িয়ে থাকবে, বসবে
না, ছায়া গ্রহণ করবে না, কথা বলবে না
এবং রোযা রাখবে।’ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘তোমরা ওকে আদেশ কর, ও যেন কথা বলে, ছায়া গ্রহণ করে, বসে এবং রোযা পুরা করে।’’[11]
[1] সহীহুল বুখারী ৪৩, ১১২২, ১১৫১, ১৯৬৯, ১৯৭০, ১৯৮৭, ৬৪৬১, ৬৪৬২, ৬৪৬৪, ৬৪৬৫, ৬৪৬৬, ৬৪৬৭, মুসলিম ৭৪১, ৭৮২, ৭৮৩, ৭৮৫, ১১৫৬, ২৮১৮, নাসায়ী ৭৬২, ১৬২৬, ১৬৪২, ১৬৫২, ২১৭৭, ২৩৪৭, ২৩৪৯, ২৩৫১, ৫০৩৫, আবূ দাউদ ১৩১৭, ১৩৬৮, ১৩৭০, ২৪৩৪, ইবনু মাজাহ ১৭১০, ৪২৩৮, আহমাদ ২৩৫২৩, ২৩৬০৪, ২৩৬৪২, ২৩৬৬০, ৪২৪০৯, ২৫৬০০
[4] সহীহুল বুখারী ৩৯, ৫৬৭৩, ৬৪৬৩, মুসলিম ২৮১৬, নাসয়ী ৫০৩৪, ইবনু মাজাহ ৪২০১, আহমাদ ৭১৬২, ৭৪৩০, ৭৫৩৩, ২৭৪৭০
[5] সহীহুল বুখারী ১১৫০, মুসলিম ৭৮৪, নাসায়ী ১৬৪৩, আবূ দাউদ ১৩১২, ইবনু মাজাহ ১৩৭১, আহমাদ ১১৫৭৫, ১২৫০৪, ১২৭০৮, ১৩২৭৮
[6] সহীহুল বুখারী ২১২, মুসলিম ৪৮৬, তিরমিযী ৩৫৫, নাসায়ী ১৬২, আবূ দাউদ ১৩১০, ইবনু মাজাহ ১৩৭০, আহমাদ ২৩৭৬৬, ২৫১৩৩, ২৫১৭১, ২৫৬৯৯,মুওয়াত্তা মালেক -২৫৯, দারেমী ১৩৮৩
[7] মুসলিম ৮৬৬, তিরমিযী ৫০৭, নাসায়ী ১৪১৫, ১৪১৭, ১৪১৮, ১৪৩৫, ১৫৮২, ১৫৮৩, ১৫৮৪, ১৬০০, ১৬০২, আবূ দাউদ ১০৯৩, ১০৯৪, ১১০১, ১২৯৩, ইবনু মাজাহ ১১০৬, ১১১৬, আহমাদ ২০৩০৬, ২০৩১৬, ম২০৩২২, ২০৩৩৫, দারেমী ১৫৫৭
[9] সহীহুল বুখারী ১৯৭৬, ১১৩১, ১১৩২, ১১৫৩, ১৯৭৪, ১৯৭৫, ১৯৭৭, ১৯৭৮, ১৯৭৯, ১৯৮০, ৩৪১৮, ৩৪১৯, ৩৪২০, ৫০৫২, মুসলিম ১১৫৯, তিরমিযী ৭৭০, নাসায়ী ১৬৩০, ২৩৪৪, ২৩৮৮, ২৩৮৯, ২৩৯০, ২৩৯১, ২৩৯২, ২৩৯৩, ২৩৯৬, ২৩৯৪, ২৩৯৭, ২৩৯৯, আবূ দাউদ ১৩৮৮, ১৩৮৯, ১৩৯০, ১৩৯১, ১৪২৭, ২৪৪৮, ইবনু মাজাহ ১৩৪৬, ১৭১২, আহমাদ ৬৪৪১, ৬৪৫৫, ৬৪৮০, ৬৪৯১, ৬৭২১
____________________________________________________________________________________________________________
সংকলন : ইমাম মুহিউদ্দীন আবু যাকারিয়া ইয়াহইয়া ইবন শরফ আন-নাওয়াবী রহ.
হাদীসের শুদ্ধাশুদ্ধি নির্ণয় : শাইখ মুহাম্মাদ নাসিরুদ্দীন আলবানী রহ.
অনুবাদক : বিশিষ্ট আলেমবর্গ
অনুবাদ সম্পাদনা : আব্দুল হামীদ ফাইযী
সূত্র : ইসলামহাউজ
আরও অনেক বিষয়ের জন্য এখানে ক্লিক করুন।
পোস্টটি ভালো লাগলে শেয়ার করতে ভুলবেন না কিন্তু।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন