অনুবাদকের
কথা
সকল প্রশংসা আল্লাহ তা‘আলার জন্য, দুরুদ এবং
সালাম বর্ষিত হোক মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর, তাঁর পরিবার
পরিজন এবং সকল সাহাবীর উপর।
অতঃপর আল সুলাইল ইসলামিক সেন্টার (অসীলা) নামক
পুস্তিকাটি বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ করার কর্মসূচী গ্রহণ করলে, বাংলায় অনুবাদের
দায়িত্ব আমাকে দেওয়া হয়, বইটি আদ্দোপান্ত পড়ে এর যথাযথ গুরুত্ব অনুভব করি, কেননা
ভারত উপমহাদেশে এরকম একটি বই অত্যন্ত প্রয়োজন, কারণ সেখানে বিশেষ করে আমাদের
বাংলাদেশে বহু জায়গায় শির্ক এবং বিদ‘আতের মত গুরুতর অপরাধমূলক কাজ-কর্ম ব্যাপক হারে
চলছে। বহু লোক অন্ধ অনুকরণ এবং কুপ্রবৃত্তির বশবর্তী হয়ে এ ধরনের মারাত্মক অপরাধে
লিপ্ত অথচ তাদের অনেকেই জানে না যে, তা কুরআন হাদীস সম্মত নয় বরং কুরআন এবং হাদীস
এর কঠোর নিন্দা করে তা বর্জন করার নির্দেশ দিয়েছে।
আমাদের দেশের প্রায় প্রতিটি এলাকাতেই অসীলার নামে
বিভিন্ন ধরনের মারাত্মক এবং অত্যন্ত ভয়াবহ কাজ কর্ম চলছে, এর মাধ্যমে কেউ শির্কে
পতিত হচ্ছে; আবার কেউ কেউ বিদ‘আতের বেড়াজালে আটকা পড়ে পথভ্রষ্টতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এ ধরনের অসীলা ধরার
জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কোনো নির্দেশ বা খোলাফায়ে রাশেদীনের
কোনো বাস্তব আমল রয়েছে কি ? হ্যা, তবে যে অসীলার কথা আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন তা হলো এই
যে,
﴿وَٱبۡتَغُوٓاْ إِلَيۡهِ ٱلۡوَسِيلَةَ﴾ [المائدة: ٣٥]
“তোমরা তার নৈকট্য অন্বেষণ কর।” [সূরা
আল-মায়েদাহ:৩৫]
এ অসীলা কি? অসীলা কি ভাবে গ্রহণ করতে হবে? এর
ভাষা কি? কুরআন হাদীসের আলোকে যদি অসীলার সঠিক সংজ্ঞা এবং পদ্ধতি জানতে চান তবে এ
বইটিতে খোজে পাবেন। এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, বর্তমানে আমাদের দেশের প্রতিটি মাজার
এবং দরগায় যা হচ্ছে তার শতকরা প্রায় একশ ভাগই হয় শির্ক নয়তো বিদ‘আতের অন্তর্ভুক্ত। কুরআন
হাদীস থেকে যে অসীলা সাব্যস্ত রয়েছে তা এর
বহির্ভূত।
পরিশেষে বলব, বইটিতে
প্রণেতা যা বলতে চেয়েছেন, বাংলা ভাষায় অনুবাদ করতে গিয়ে তা হুবহু তুলে ধরার চেষ্টা
করেছি। তারপরও যদি ভাষার কোনো গড়মিল বা শব্দ বিন্নাসে কারো নিকট কোনো ভুল ত্রুটি
দৃষ্টিগোচর হয় তবে আমাদেরকে জানালে কৃতজ্ঞ থাকব এবং পরবর্তী সংস্করণে তা বিবেচনায়
রাখব ইন্শা আল্লাহ।
আমার প্রত্যাশা, পাঠক পাঠিকা এ অনুবাদ থেকে কিছুটা
হলে ও উপকৃত হবেন এবং শরিয়ত সম্মত অসীলা সম্পর্কে কিছু ধারণা লাভ করতে সক্ষম হবেন
ইন্শা আল্লাহ । হে আল্লাহ ! আমার এ ক্ষুদ্র প্রচেষ্টাকে কবুল করুন। আমীন ।
আপনাদের দো‘আ প্রার্থী :
মোহাম্মদ ইদরীস আলী
ভূমিকা
তাওহীদের
গুরুত্ব এবং উম্মতের মাঝে কিভাবে শির্ক প্রবেশ করল তার বর্ণনা
সকল প্রশংসা আল্লাহ তা‘আলার
জন্য, দুরুদ এবং শান্তির ধারা বর্ষিত হোক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর, তাঁর পরিবার পরিজন,
সহচরবৃন্দ এবং তাঁকে যারা ভালবাসে তাদের উপর।
অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা কোনো সৃষ্টিকে
অনর্থক সৃষ্টি করেননি, তাদেরকে অকারণে ছেড়ে দেননি, নিজ সল্পতার অনুভূতি থেকে সংখ্যায় অধিক হওয়ার জন্য সৃষ্টি করেননি, অনুরূপ নিজের দুর্বলতা থেকে শক্তি যোগানোর জন্য সৃষ্টি করেননি
বরং এক মহা কাজ ও বিরাট উদ্দেশ্যের জন্য সৃষ্টি করেছেন। সে লক্ষ্যে তাদের জন্য ভুমণ্ডল
ও নভোমণ্ডলকে নিয়োজিত এবং তাদের জীবন যা দ্বারা সুচারুরূপে পরিচালিত হবে তার
ব্যবস্থা করেছেন। তাদেরকে সৃষ্টি করেছেন কেবলমাত্র তাঁরই ইবাদত করার জন্য, তাঁরই
তাওহীদ প্রতিষ্ঠা করার জন্য, এবং সকল প্রকার ইবাদত কেবল তাঁর জন্যই নির্দিষ্ট করার
জন্য, যে ইবাদতকে আল্লাহ তা‘আলা ভালোবাসেন ও পছন্দ করেন, তা কথা হোক, কাজ হোক বা বিশ্বাস হোক।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
﴿ وَمَا خَلَقۡتُ ٱلۡجِنَّ وَٱلۡإِنسَ إِلَّا لِيَعۡبُدُونِ ٥٦ مَآ أُرِيدُ
مِنۡهُم مِّن رِّزۡقٖ وَمَآ أُرِيدُ أَن يُطۡعِمُونِ ٥٧ إِنَّ ٱللَّهَ هُوَ ٱلرَّزَّاقُ
ذُو ٱلۡقُوَّةِ ٱلۡمَتِينُ ٥٨ ﴾ [الذاريات: ٥٦، ٥٨]
“এবং
আমি জিন ও মানুষকে সৃষ্টি করেছি শুধুমাত্র আমার ইবাদত করার জন্য, আমি
তাদের নিকট জীবিকা চাইনা এবং এটাও চাইনা যে, তারা আমার জন্য
আহার যোগাবে। আল্লাহ তা‘আলাই জীবিকাদাতা, শক্তিধর
পরাক্রান্ত। [সূরা আয-যারিয়াহ/৫৫-৫৮]
এ কাজের মাহাত্ম্য এবং গুরুত্বের জন্য আল্লাহ
কিতাব অবতীর্ণ করেছেন এবং এর জন্য রাসূল পাঠিয়েছেন। তিনি বলেন :
﴿ يُنَزِّلُ ٱلۡمَلَٰٓئِكَةَ بِٱلرُّوحِ مِنۡ
أَمۡرِهِۦ عَلَىٰ مَن يَشَآءُ مِنۡ عِبَادِهِۦٓ أَنۡ أَنذِرُوٓاْ أَنَّهُۥ لَآ إِلَٰهَ
إِلَّآ أَنَا۠ فَٱتَّقُونِ ٢ ﴾ [النحل: ٢]
“তিনি স্বীয় নির্দেশে
বান্দাদের মধ্যে যার নিকট ইচ্ছা তার প্রতি ফেরেশতাদেরকে নির্দেশ দিয়ে এই মর্মে
পাঠান যে, তাদেরকে সতর্ক করে দাও, আমি
ব্যতীত কোনো সত্য উপাস্য নেই। অতএব, আমাকে তোমরা ভয় কর। [সূরা
আন-নাহল/২]
তিনি আরো বলেন :
﴿وَلَقَدۡ بَعَثۡنَا فِي كُلِّ أُمَّةٖ رَّسُولًا أَنِ ٱعۡبُدُواْ ٱللَّهَ وَٱجۡتَنِبُواْ
ٱلطَّٰغُوتَۖ﴾ [النحل: ٣٦]
“আমি প্রত্যেক উম্মতের মাঝে রাসূল প্রেরণ করেছি এ
মর্মে যে, তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর এবং তাগুতকে বর্জন কর। [সূরা
আন-নাহল/৩৬]
তিনি বলেন :
﴿ وَمَآ أَرۡسَلۡنَا مِن قَبۡلِكَ مِن رَّسُولٍ إِلَّا نُوحِيٓ إِلَيۡهِ أَنَّهُۥ
لَآ إِلَٰهَ إِلَّآ أَنَا۠ فَٱعۡبُدُونِ ٢٥ ﴾ [الانبياء: ٢٥]
“আমি আপনার পূর্বে যে রাসূলই প্রেরণ করেছি তাকে এ
নির্দেশ দিয়েছি যে, আমি ব্যতীত অন্য কোনো উপাস্য নেই। অতএব, তোমরা আমারই ইবাদত কর। [সূরা আম্বিয়া/২৫]
মানুষ প্রথম দিকে বিশুদ্ধ ফিতরাতের উপর এবং সঠিক
পথে ছিল, তখন শুধুমাত্র তারা আল্লাহর ইবাদত করতো। কিন্তু
যখনই তাদের মধ্যে আল্লাহর সহিত শির্কের আবির্ভাব ঘটেছে তখনই তিঁনি তাদের নিকট
রাসূল পাঠিয়েছেন, যেন তাঁরা শির্ক থেকে নিষেধ করেন এবং এক
আল্লাহর ইবাদতের দিকে তাদেরকে আহ্বান করেন। যেমন আল্লাহ বলেন,
﴿ كَانَ ٱلنَّاسُ أُمَّةٗ وَٰحِدَةٗ ﴾ [البقرة: ٢١٣]
“সকল মানুষ একই উম্মত ছিল’’।
ইবনে মাসউদ এবং উবাই ইবন কা‘ব (রা:) এর ক্বেরাতে এসেছে,
«كان الناس أمة واحدة فاختلفوا»
“সকল মানুষ একই উম্মত ছিল, অতঃপর
তারা বিভক্ত হয়ে গেল।”
আল্লাহ আরো বলেন:
﴿كَانَ ٱلنَّاسُ أُمَّةٗ وَٰحِدَةٗ فَبَعَثَ ٱللَّهُ ٱلنَّبِيِّۧنَ مُبَشِّرِينَ
وَمُنذِرِينَ وَأَنزَلَ مَعَهُمُ ٱلۡكِتَٰبَ بِٱلۡحَقِّ لِيَحۡكُمَ بَيۡنَ ٱلنَّاسِ
فِيمَا ٱخۡتَلَفُواْ فِيهِۚ وَمَا ٱخۡتَلَفَ فِيهِ إِلَّا ٱلَّذِينَ أُوتُوهُ مِنۢ
بَعۡدِ مَا جَآءَتۡهُمُ ٱلۡبَيِّنَٰتُ بَغۡيَۢا بَيۡنَهُمۡۖ فَهَدَى ٱللَّهُ ٱلَّذِينَ
ءَامَنُواْ لِمَا ٱخۡتَلَفُواْ فِيهِ مِنَ ٱلۡحَقِّ بِإِذۡنِهِۦۗ وَٱللَّهُ يَهۡدِي
مَن يَشَآءُ إِلَىٰ صِرَٰطٖ مُّسۡتَقِيمٍ ٢١٣ ﴾ [البقرة: ٢١٣]
“সকল মানুষ একই উম্মতের অন্তর্ভুক্ত
ছিল, অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা সুসংবাদদাতা
এবং ভীতি প্রদর্শনকারী হিসাবে রাসূল পাঠালেন এবং তাদের সহিত পাঠালেন সত্য কিতাব
যেন মানুষের মধ্যে বিতর্কমূলক বিষয়ে মীমাংসা করতে পারেন। বস্তুত: কিতাবের ব্যাপারে
অন্য কেউ মতভেদ করেনি; কিন্তু পরিস্কার নির্দেশ আসার পর
নিজেদের পারস্পারিক জেদবশত: তারাই করেছে, যাদেরকে কিতাব
দেওয়া হয়েছে, অতঃপর আল্লাহ ঈমানদারগণকে হেদায়াত করেছেন সেই
সত্য বিষয়ে, যে ব্যাপারে তারা মতভেদ করেছিল। বস্তুত: আল্লাহ
যাকে ইচ্ছা সরল পথ দেখান।” [সূরা আল-বাকারা/২১৩]
প্রথম দিকে মানুষের অবস্থা সম্পর্কে তিনি আরো
বলেন :
﴿وَمَا كَانَ ٱلنَّاسُ إِلَّآ أُمَّةٗ وَٰحِدَةٗ فَٱخۡتَلَفُواْۚ وَلَوۡلَا
كَلِمَةٞ سَبَقَتۡ مِن رَّبِّكَ لَقُضِيَ بَيۡنَهُمۡ فِيمَا فِيهِ يَخۡتَلِفُونَ ١٩
﴾ [يونس: ١٩]
“সকল মানুষ একই উম্মতভুক্ত ছিল, অতঃপর
তারা বিভক্ত হয়ে গেল, আর একটি কথা যদি তোমার প্রভুর পক্ষ
থেকে পূর্ব নির্ধারিত না হয়ে থাকত তবে তারা যে বিষয়ে বিরোধ করছে তার মীমাংসা হয়ে
যেত।” [সূরা ইউনুস/১৯]
আদম (আলাইহিস সালাম) এর মৃত্যুর পর তার সন্তানগণ প্রায়
দশ প্রজম্ম তাদের পিতৃ ধর্ম ইসলামের উপর ছিল; এরপর তারা
কুফরী করেছে। তাদের কুফরী করার কারণ ছিল, সৎ লোকদের ব্যাপারে
অধিক বাড়াবাড়ি। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿وَقَالُواْ لَا تَذَرُنَّ ءَالِهَتَكُمۡ وَلَا تَذَرُنَّ وَدّٗا وَلَا سُوَاعٗا
وَلَا يَغُوثَ وَيَعُوقَ وَنَسۡرٗا ٢٣ ﴾ [نوح: ٢٣]
“তারা বলল: তোমাদের প্রভুদেরকে ত্যাগ করোনা এবং আদ্দ, সুওয়া, ইয়াগুস, ইয়াউক
এবং নাসরকে ত্যাগ করোনা।” [সূরা নূহ/২৩]
তারা পাঁচজন সকলেই ভাল এবং সৎ লোক ছিল, তারা মানুষকে সৎকাজের নির্দেশ দিতো এবং অসৎ কাজের নিষেধ করতো। অতঃপর
তারা সকলেই একই মাসে মৃত্যুবরণ করলে তাদের পরে দ্বীনের শিক্ষা কমে যাওয়ার ভয়ে
সাধারণ লোক ভীত হয়ে পড়ল। তারপর তাদের কাজ কর্ম ও স্মৃতির কথা স্মরন করে ইবাদত করার
জন্য তারা প্রত্যেকেই নিজ নিজ স্থানে তাদের প্রতিমূর্তি তৈরী করে রেখে দিল। তখনো
তাদের পুজা করা হয়নি।
তারপর দ্বিতীয় স্তর এসে তাদেরকে পূর্বের লোকদের
চেয়ে অধিক ভালবাসতে শুরু করল কিন্তু তখনো পুজা করা হয়নি।
দীর্ঘ সময় পার হয়ে গেল এবং আলেমগণ মারা গেল।
এলাকা যখন আলেম মুক্ত হল; শয়তান এসে মুর্খ লোকদের বলল: এ
সৎলোকদের প্রতিমূর্তিতো এমনিই তৈরী করা হয়নি বরং তাদের অসীলা করে সুপারিশ হিসেবে আল্লাহর
নিকট চাওয়ার জন্যই তৈরী করা হয়েছে। অতঃপর তাদের পুজা করা শুরু হয়ে গেল।
তারা যখন পুজা শুরু করল, তখনই আল্লাহ নূহ আলাইহিস
সালামকে নবী হিসাবে তাদের নিকট পাঠালেন, তাদেরকে আদম এবং তার
সেসব সন্তানের ধর্মে ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য যাদের ধর্মে কোনো পরিবর্তন ছিল না। এর ফলে
যা ঘটেছিল সেসব কথা ও কাজ আল্লাহ তা‘আলা তার কিতাবে বর্ণনা
করেছেন।
তারপর নূহ আলাইহিস সালাম এবং জাহাজের অধিবাসীগণ
পৃথিবী আবাদ করলে আল্লাহ তাদের মধ্যে বরকত দিলেন, ফলে
পৃথিবীতে বিভিন্ন উম্মতের সৃষ্টি হলো এবং অজানা এক দীর্ঘ সময় তারা ইসলামের উপর
প্রতিষ্ঠিত ছিল।
অতঃপর শির্কের আবির্ভাব ঘটলে আল্লাহ তাদের নিকট
রাসূলগণকে প্রেরণ করতে থাকলেন। তাই আল্লাহ তা‘আলা প্রত্যেক উম্মতের নিকট রাসূল
প্রেরণ করেছেন, তাঁরা তাদেরকে আল্লাহর একত্ববাদের নির্দেশ
দিতেন এবং শির্ক থেকে নিষেধ করতেন।
বহু রাসূল এবং তাঁদের উম্মত রয়েছে যাদের সম্পর্কে
আমরা কিছু জানি না, কারণ আল্লাহ তাদের সম্পর্কে আমাদের কিছু
বলেননি। তিনি বলেন:
﴿مِنۡهُم مَّن قَصَصۡنَا عَلَيۡكَ وَمِنۡهُم مَّن لَّمۡ نَقۡصُصۡ عَلَيۡكَۗ﴾ [غافر: ٧٨]
‘‘তাদের
মধ্যে কারো কারো সম্পর্কে আপনাকে বলেছি এবং কারো কারো সম্পর্কে আপনাকে বলিনি’’। [সূরা গাফির:৭৮]
তবে আল্লাহ তা‘আলা ‘আদ জাতি সম্পর্কে আমাদের জানিয়েছেন।
যাদের মতো পৃথিবীতে আর কোনো জাতিকে সৃষ্টি করা হয়নি। অতঃপর আল্লাহ তাদের নিকট হূদ
আলাইহিস সালামকে পাঠালেন, আল্লাহ তা‘আলা
তাদের কর্ম সম্পর্কে কুরআনে উল্লেখ করেছেন।
হূদ আলাইহিস সালামের জাতির মধ্যে কিছু সময় তাওহীদ
ছিল, কিন্তু তা কতদিন সঠিকভাবে ছিল তা আমরা জানিনা।
তারপর আল্লাহ ইব্রাহীম আলাইহিস সালামকে পাঠালেন, তখন পৃথিবীতে কোনো মুসলিম ছিলনা; অতঃপর
তাঁর জাতির পক্ষ থেকে তার উপর যা হওয়ার তা হয়েছে, শুধূ তাঁর স্ত্রী সারা এবং লূত
আলাইহিস সালাম তাঁর প্রতি ঈমান এনেছেন।
ইব্রাহীম আলাইহিস সালামের জামানা থেকে তাঁর
সন্তানদের মধ্যে তাওহীদ কখনও একেবারে নাই হয়ে যায়নি। যেমন আল্লাহ বলেন:
﴿ وَجَعَلَهَا كَلِمَةَۢ بَاقِيَةٗ فِي عَقِبِهِۦ لَعَلَّهُمۡ يَرۡجِعُونَ ٢٨
﴾ [الزخرف: ٢٨]
“এ (তাওহীদের) ঘোষণাকে তিনি স্থায়ী বাণী হিসাবে
তাঁর পরবর্তীদের জন্য রেখে গিয়েছেন, যেন তারা প্রত্যাবর্তন
করে।” [সূরা আয-যুখরুফ: ২৮]
তিনি প্রথমে ইরাকে ছিলেন, তাঁর
জাতির ব্যবহারে অতিষ্ঠ হয়ে শামে গিয়ে সেখানে বসবাস করেন এবং সেখানেই মারা যান।
তাঁর স্ত্রী সারা তাঁকে একজন দাসী হাজারকে (হাজেরা)
উপহার দিলেন। তিনি তার সহিত মেলামেশা করলেন, তাতে ইসমা‘ঈল
আলাইহিস সালাম জন্ম গ্রহণ করলেন, এতে সারা কিছুটা হিংসা করতে
লাগলেন। অতঃপর আল্লাহ হাজারকে ‘সারা’ থেকে দূরে রাখার জন্য তাঁকে নির্দেশ দিলে
তিনি ‘হাজার’ এবং তার সন্তানকে নিয়ে মক্কায় রেখে আসলেন।
অতঃপর আল্লাহ তাঁকে এবং সারাকে একজন সন্তান (ইসহাক
আলাইহিস সালামকে) উপহার দিলেন। ইসহাক আলাইহিস সালাম থেকে জন্ম নিলেন ইয়া‘কুব
আলাইহিস সালাম।
আর তাঁর ঘটনা বুখারী শরীফে আব্দুল্লাহ ইবন আববাস রাদিয়াল্লাহু
আনহুমা থেকে বিস্তারিত বর্ণনা করা হয়েছে।
আর তখনই মক্কা এবং কাবা ঘরের দায়িত্ব ইসমাঈল
আলাইহিস সালামের হাতে আসল, তারপর তাঁর সন্তানদের হাতে। তাঁর
বহু সন্তান হেজাযে তথা মক্কা মদিনায় ছড়িয়ে পড়েছে। শত শত বছর তারা তাদের পিতৃ পুরুষ
ইব্রাহীম এবং ইসমাঈল আলাইহিস সালামের ধর্ম ইসলামের উপর ছিল। পরবর্তীতে আমর ইবন লুহাই
এসে তাদের মধ্যে শির্কের আবির্ভাব ঘটিয়ে ইব্রাহীম আলাইহিস সালামের দ্বীনকে বিকৃত
করেছে।
‘আমর ইবন লুহাই এর বিস্তারিত ঘটনা হলো : সে দান খয়রাত, সদকা ইত্যাদি ভাল
কাজের উপর লালিত পালিত হয়েছে এবং দ্বীনের প্রতিটি কাজে খুব আগ্রহী ছিল, যার ফলে মানুষ তাকে অত্যন্ত ভালবাসতো, এ
কারণে তারা তার অনুগত হয়ে গেল, এমন কি তারা তাকে শাসক বানিয়ে
দিল। অতঃপর সে মক্কার শাসক হয়ে গেলে তার হাতে চলে এসেছে ক্বাবা ঘরের দায়িত্ব। তারা
মনে করতো সেই বড় আলেম এবং সম্মানিত একজন অলী।
অতঃপর এক সময় সে শামে সফরে যায়, সেখানে
গিয়ে দেখলো মানুষ মূর্তি পূজা করছে, সেটা তার ভাল লেগে গেলে
মনে করল যে এটাই হয়তো সত্য। কারণ শাম এলাকা নবী রাসূলদের এলাকা, সে
কারণে শাম বাসীদের মর্যাদা হেজায এবং অন্যান্য এলাকা বাসীর চেয়ে অনেক বেশী। সে
মক্কায় ফিরে এল এবং তার সাথে হুবাল নামক একটি মূর্তি নিয়ে এল। সেটাকে ক্বাবা ঘরে
রেখে মক্কাবাসীদেরকে শির্কের দিকে আহ্বান করলে তারা তার আহবানে সাড়া দিয়ে শির্ক
করা শুরু করল।
হেজাযবাসী দ্বীনের দিক দিয়ে মক্কাবাসীর অনুগত, কারণ তারা ক্বাবা ঘর এবং হারামের দায়িত্বে আছে বিধায় তারাও
মক্কাবাসীর শির্কি কাজ দেখে সত্য মনে করে
তাদের সহিত শির্ক করা শুরু করল।
জাহেলিয়া যুগেও তা ছিল, সেই
সাথে দ্বীনে ইব্রাহীমের উপরও কিছু লোক বাকী ছিল, তারা মনে
করতো যে, তারা যে ধর্মের উপর আছে তাতে ‘আমর ইবন লুহাই কোনো পরিবর্তন
করেনি বরং সে যা নিয়ে এসেছে তা হচ্ছে বিদ‘আতে হাসানাহ।
নেযারের তালবিয়া ছিল:
لبيك لا شريك لك
إلا شريكا هو لك تملكه وما ملك
“আমি হাজির, তোমার
কোনো শরিক নেই কিন্তু একজন তোমার শরিক আছে, তুমি যার মালিক তবে
সে তোমার মালিক নয়।”
তাদের
মূর্তিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে পুরাতন মূর্তি হলো
(মানাত) সেটি সাগর তীরে কুদাইদ
নামক জায়গায় দাড় করানো ছিল। সমগ্র আরব একে সম্মান করতো, কিন্তু
আউস এবং খাযরাজ গোত্রদ্বয় একে সকলের চেয়ে বেশি সম্মান করতো।
তারপর তারা তায়েফে (লাত) কে গ্রহণ করল, কেউ কেউ বলেছেন: আসলে সে একজন সৎ লোক ছিল, হাজীদেরকে
সাতু বানিয়ে খাওয়াতো। সে মারা গেলে তারা তার কবরের পাশে এসে অবস্থান নিতে আরম্ভ
করলো।
অতঃপর তারা মক্কা এবং তায়েফের মাঝে নাখলা নামক
উপত্যকায় (উয্যা) কে গ্রহণ করল। এ তিনটি মূর্তিই সবচেয়ে বড় ছিল।
তারপর শির্ক বৃদ্ধির সাথে সাথে হেজাযের প্রায়
প্রতিটি জায়গাতেই মূর্তির সংখ্যা বৃদ্ধি হতে লাগল।
এমনি মূহুর্তে আল্লাহ তা‘আলা
তাদেরকে অন্ধকার থেকে আলোর পথে বের করে আনার জন্য মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম কে প্রেরণ করলেন। তিনি বলেন :
﴿ لَقَدۡ مَنَّ ٱللَّهُ عَلَى ٱلۡمُؤۡمِنِينَ إِذۡ بَعَثَ فِيهِمۡ رَسُولٗا مِّنۡ
أَنفُسِهِمۡ يَتۡلُواْ عَلَيۡهِمۡ ءَايَٰتِهِۦ وَيُزَكِّيهِمۡ وَيُعَلِّمُهُمُ ٱلۡكِتَٰبَ
وَٱلۡحِكۡمَةَ وَإِن كَانُواْ مِن قَبۡلُ لَفِي ضَلَٰلٖ مُّبِينٍ ١٦٤ ﴾ [ال عمران: ١٦٤]
“আল্লাহ তা‘আলা ঈমানদারদের
উপর অনুগ্রহ করেছেন যে, তাদের মাঝে তাদের নিজেদের মধ্য থেকে
একজন নবী প্রেরণ করেছেন। তিনি তাদের জন্য তাঁর আয়াত সমুহ পাঠ করেন, তাদেরকে
পরিশোধ্য করেন এবং তাদেরকে কিতাব ও হিকতম শিক্ষা দেন, যদি ও
তারা পূর্ব থেকেই পথ ভ্রষ্ট ছিল।” [সূরা আল ইমরান/১৬৪]
আল্লাহ তা‘আলা শির্ক থেকে
সতর্ক করে তাওহীদের দিকে দাওয়াত দেওয়ার জন্য তাঁকে প্রেরণ করেছেন। যেমন তিনি বলেন:
﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلۡمُدَّثِّرُ ١ قُمۡ فَأَنذِرۡ ٢ وَرَبَّكَ فَكَبِّرۡ ٣ وَثِيَابَكَ
فَطَهِّرۡ ٤ وَٱلرُّجۡزَ فَٱهۡجُرۡ ٥ وَلَا تَمۡنُن تَسۡتَكۡثِرُ ٦ وَلِرَبِّكَ فَٱصۡبِرۡ
٧ ﴾ [المدثر: ١، ٧]
“হে চাদরাবৃত, উঠে সতর্ক করুন, আপনার পালনকর্তার মাহাত্ম্য ঘোষনা করুন, আপনার
পোষাক পবিত্র করুন এবং অপবিত্রতা থেকে দূরে থাকুন এবং অধিক প্রতিদানের আশায় অন্যকে
কিছু দিবেন না এবং আপনার পালনকর্তার উদ্দেশ্যে ধৈর্য্য ধারণ করুন।” [সূরা
মুদ্দাসি্সর/ ১-৭]
“কুম ফা-আনযির অর্থ: শির্ক থেকে সতর্ক করা এবং
তাওহীদের দিকে অহবান করা। অ রববাকা ফাকাব্বির অর্থ: আর তোমার রবকে তাওহীদ
প্রতিষ্ঠা করে তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা কর। অ সিয়াবাকা ফাতাহহির’ অর্থ: শির্ক
থেকে তোমার আমলকে পবিত্র কর। অর রুজযা
ফাহজুর রুজয : মূর্তি, ফাহজুর:
তাকে ত্যাগ করে তার এবং তা থেকে বিমুক্তি ঘোষণা করা আর মুর্তিপূজারীদের সাথে
সম্পর্কচ্যুতি ঘোষণা কর।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন
মানুষকে সতর্কবাণী শুনালেন; তখন কিছু সংখ্যক লোক তার আহ্বানে
সাড়া দিল এবং অধিকাংশ লোক যা বলেছে তা সম্পর্কে আল্লাহ বলেন:
﴿ إِنَّهُمۡ كَانُوٓاْ إِذَا قِيلَ لَهُمۡ لَآ إِلَٰهَ إِلَّا ٱللَّهُ يَسۡتَكۡبِرُونَ
٣٥ وَيَقُولُونَ أَئِنَّا لَتَارِكُوٓاْ ءَالِهَتِنَا لِشَاعِرٖ مَّجۡنُونِۢ ٣٦ ﴾ [الصافات: ٣٥، ٣٦]
“যখন তাদেরকে বলা হতো যে, আল্লাহ
ব্যতীত কোনো যোগ্য উপাস্য নেই, তখন তারা আত্ম অহংকার করতো
এবং বলতো; আমরা কি একজন পাগল কবির কথায় আমাদের ইলাহ বা
মা‘বুদ ও উপাস্যদের ত্যাগ করব’’? তাদের কথার জবাব দিয়ে
আল্লাহ বলেন:
﴿ بَلۡ جَآءَ بِٱلۡحَقِّ وَصَدَّقَ ٱلۡمُرۡسَلِينَ ٣٧ ﴾ [الصافات: ٣٧]
‘‘বরং
তিনি সত্য নিয়ে আগমণ করেছেন এবং পূর্বের রাসূলদেরকে সত্যায়িত করেছেন।” [সূরা আস-সফ্ফাত/৩৫-৩৭]
অর্থাৎ তিনি আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে তাঁর শরীয়ত ও নির্দেশ সম্পর্কে সংবাদ
দিয়েছেন এবং তিনি সে সংবাদই দিয়েছেন, যে সংবাদ দিয়েছিল তাঁর
পূর্ববর্তী রাসূলগণ। যেমন আল্লাহ তা‘আলা অন্য আয়াতে বলেন:
﴿ مَّا يُقَالُ لَكَ إِلَّا مَا قَدۡ قِيلَ لِلرُّسُلِ مِن قَبۡلِكَۚ﴾ [فصلت: ٤٣]
‘‘আপনাকে
তো তাই বলা হবে, যা বলা হয়েছিল আপনার পূর্ববর্তী রাসূলদেরকে’’।
অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর
বহু অত্যাচার নির্যাতন করা হয়েছিল যা তাঁর জীবনী থেকে জানা যায়, আর
তা বিজয় লাভ এবং দ্বীন পরিপূর্ণ হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত চলেছিল। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ ٱلۡيَوۡمَ أَكۡمَلۡتُ لَكُمۡ دِينَكُمۡ وَأَتۡمَمۡتُ عَلَيۡكُمۡ نِعۡمَتِي
وَرَضِيتُ لَكُمُ ٱلۡإِسۡلَٰمَ دِينٗاۚ ﴾ [المائدة: ٣]
“আজকের দিনে আমি তোমাদের দ্বীনকে পূর্নাঙ্গ করে
দিলাম, আমার নেয়ামতকে তোমাদের উপর সম্পন্ন করে দিলাম এবং
ইসলামকে তোমাদের জন্য দ্বীন হিসাবে মনোনীত করলাম।”
অতঃপর যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম মারা গেলেন তখন তিনি তাঁর উম্মতকে একটি নির্ভেজাল সত্য পথে রেখে গেলেন, যার রাত্রি দিনের ন্যায় ষ্পষ্ট, ধ্বংসশীল
ব্যতীত এ থেকে কেউ পথ থেকে বিচ্যুত হয় না।
আবু যর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু
বলেন:
"لَقَدْ تَرَكَنَا مُحَمَّدٌ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ،
وَمَا يُحَرِّكُ طَائِرٌ جَنَاحَيْهِ فِي السَّمَاءِ إِلَّا أَذْكَرَنَا مِنْهُ عِلْمًا
"
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
আমাদেরকে এমন অবস্থায় রেখে গিয়েছেন যে, আকাশে কোনো পাখী উড়ার
জ্ঞানটুকু পর্যন্ত আমাদেরকে বর্ণনা করেছেন।[1]
আহমাদ ও তাবরানী, তাবরানীতে বেশি এসেছে যে:
«ما
بقى شىء يقرب من الجنة ويباعد من النار إلا وقد بين لكم»
আবু যার রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, “জান্নাতের
নিকটবর্তী করে এবং জাহান্নাম থেকে দূরে রাখে এমন সকল বিষয় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামের পক্ষ থেকে তোমাদেরকে স্পষ্ট বর্ণনা করা হয়েছে।”[2]
কিয়ামত পর্যন্ত কি হবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর উম্মতকে বলে গিয়েছেন। যেমন হুযাইফা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন:
«قَامَ فِينَا رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَقَامًا، مَا
تَرَكَ شَيْئًا يَكُونُ فِي مَقَامِهِ ذَلِكَ إِلَى قِيَامِ السَّاعَةِ، إِلَّا حَدَّثَ بِهِ»، حَفِظَهُ مَنْ حَفِظَهُ وَنَسِيَهُ مَنْ نَسِيَهُ»
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের
মাঝে এক দিন দাঁড়িয়ে কিয়ামত পর্যন্ত কি হবে তা স্পষ্ট বর্ণনা করে গিয়েছেন, যার সংরক্ষণ করার সে তা সংরক্ষণ করেছে আর যার ভুলার সে ভুলে গেছে[3]।
[বুখারী ও মুসলিম]
মুসলিম শরীফে আমর ইবন আখতব আল আনসারী রাদিয়াল্লাহু
‘আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন:
«صَلَّى بِنَا رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْفَجْرَ، وَصَعِدَ الْمِنْبَرَ فَخَطَبَنَا حَتَّى حَضَرَتِ الظُّهْرُ، فَنَزَلَ
فَصَلَّى، ثُمَّ صَعِدَ الْمِنْبَرَ، فَخَطَبَنَا حَتَّى حَضَرَتِ الْعَصْرُ، ثُمَّ نَزَلَ
فَصَلَّى، ثُمَّ صَعِدَ الْمِنْبَرَ، فَخَطَبَنَا حَتَّى غَرَبَتِ الشَّمْسُ، فَأَخْبَرَنَا
بِمَا كَانَ وَبِمَا هُوَ كَائِنٌ» فَأَعْلَمُنَا أَحْفَظُنَا
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
ফজরের নামায পড়ে মিম্বারে চড়লেন, অতঃপর তিনি যোহর পর্যন্ত
আমাদেরকে নসিহত করলেন, তারপর যোহরের নামায পড়ে আবার মিম্বারে
চড়ে আসর পর্যন্ত, আসরের নামায পড়ে সূর্যাস্ত পর্যন্ত
আমাদেরকে নসিহত করলেন, এতে যা আগে হয়েছে এবং যা ভবিষ্যতে হওয়ার
আছে তিনি তার বর্ণনা দিলেন, কাজেই আমাদের মধ্যে যিনি বেশি জানেন
তিনিই তা অধিক হেফজ করেছেন।[4]
তাঁর নসিহতের মধ্যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যে, শেষ জামানায় এ উম্মতের মাঝে
আবার শির্ক ফিরে আসবে। যেমন তিনি আবু হুরাইরার হাদীসে বলেছেন :
«لَا تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى تَضْطَرِبَ أَلَيَاتُ نِسَاءِ
دَوْسٍ، حَوْلَ ذِي الْخَلَصَةِ» وَكَانَتْ صَنَمًا تَعْبُدُهَا دَوْسٌ فِي الْجَاهِلِيَّةِ
بِتَبَالَةَ
‘‘ততক্ষণ
পর্যন্ত কিয়ামত সংঘটিত হবেনা যতক্ষণ না যিল খালাসার নিকট দাউস গোত্রের নারীদের নিতম্বগুলো
নড়াচড়া করবে[5]। [বুখারী
ও মুসলিম]।
যুল খালাসা হলো: একটি মূর্তি, জাহেলিয়া
যুগে ইয়ামানে তাবালা নামক একটি জায়গায় দাউস গোত্র এর পূজা করতো।
আয়েশা রাযিয়াল্লাহু আনহা হতে, তিনি
বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«لَا يَذْهَبُ اللَّيْلُ وَالنَّهَارُ حَتَّى تُعْبَدَ اللَّاتُ وَالْعُزَّى»
লাত এবং উয্যার পূজা পুনরায় শুরু হওয়া ব্যতীত দিবা
রাত্রি নিঃশেষ হবেনা।[6]
[অর্থাৎ কিয়ামত হবে না]
উপরোল্লেখিত হাদীসদ্বয় আল্লাহর সাথে শির্ক করা
থেকে সতর্ক এবং কঠোর হুশিয়ার থাকা মুসলিমের উপর ওয়াজিব করে দেয়। কেননা তা একটি মহা
ফেৎনা, নবীগণই তা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য এবং শির্ককে তাদের
থেকে দূরে রাখার জন্য আল্লাহর নিকট বিনীত প্রার্থনা করেছেন।
আল্লাহ তা‘আলা ইব্রাহীম
খলীল আলাইহিস সালাম দো‘আ বর্ণনা করে বলেন :
﴿ وَٱجۡنُبۡنِي وَبَنِيَّ أَن نَّعۡبُدَ ٱلۡأَصۡنَامَ ٣٥ ﴾ [ابراهيم: ٣٥]
“আমাকে এবং আমার সন্তানাদিকে মূর্তিপূজা থেকে
দূরে রাখুন।” [সূরা ইব্রাহীম/৩৫]
যদি ইব্রাহীম খলীল যিনি একাই একটি উম্মত, যাকে আল্লাহ বিভিন্ন বাক্য দ্বারা পরীক্ষা করার পর তিনি তা পূর্ণ
করেছেন, যেমন: আল্লাহ বলেন:
﴿ وَإِبۡرَٰهِيمَ ٱلَّذِي وَفَّىٰٓ ٣٧ ﴾ [النجم: ٣٧]
“এবং ইব্রাহীমকে স্মরণ করুন, যিনি
পূর্ণ করেছেন।” [সূরা আন-নাজম] সন্তানকে জবাই করার নির্দেশ দেওয়া হলে তিনি তাঁর
রবের নির্দেশ বাস্তবায়ন করেছেন, মূর্তি ভেঙ্গেছেন, মুশরিকদের প্রতি তাঁর কঠোর নিন্দা ছিল, এতকিছুর
পরেও তিনি মূর্তি পূজার মত শির্ককে ভীষন ভয় করতেন। কারণ তিনি জানতেন যে, আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো জন্য তা করা যাবেনা এবং তা কেবল তাঁর
হেদায়েত, তাওফীক এবং শক্তিতেই হয়ে থাকে। মানুষের মধ্যে কেউ
এর ক্ষমতা রাখে না। যদি ইব্রাহীম আলাইহিস সালামের এ অবস্থা হয় তবে অন্যদের অবস্থা
কী হবে?
আল্লাহ ইব্রাহীম আত্ তাইমীর উপর রহম করুন, তিনি বলেছেন : ইব্রাহীম আলাইহিস সালামের পর এমন কে আছে যে, এ কঠিন পরীক্ষা থেকে নিরাপদ থাকবে? শির্ক
এমন একটি কাজ যাতে পতিত হওয়া নিরাপদ নয়।
স্বর্ণ যুগের পর এ উম্মতের বহু বুদ্ধিমান লোকও
এতে পতিত হয়েছে, ফলে কবরের উপর মাসজিদ ও মাজার বানানো হয়েছে, এর জন্য সর্ব প্রকার ইবাদত করা হয়েছে এবং একে দ্বীন হিসাবে গ্রহণ
করেছে। আর এগুলো নূহ আলাইহিস সালামের জাতির মূর্তির ন্যায় বেদী ও মূর্তি।
বড় শির্কের সূচনা হয়ে থাকে এর উপকরণ এবং মাধ্যমের
মাধ্যমে। অতঃপর মানুষ যখন একে দ্বীন হিসাবে গ্রহণ করে তখন শয়তান তাদেরকে আল্লাহর
ইবাদত করা থেকে বেদী, মূর্তি, মাজার এবং কবর পূজার দিকে নিয়ে
যায়, ফলে তারা শির্কের মত মহা পাপে পতিত হয় যা আল্লাহ কখনো
ক্ষমা করবেন না।
আর তাই এখানে শির্ক এবং এর পদ্ধতিগুলো জানার
গুরুত্ব দেওয়াই একমাত্র পথ সেই
ব্যক্তির জন্য, যে
তার নিজেকে, তার
সন্তানাদি এবং পরিবার পরিজনের ব্যাপারে শির্কে পতিত হওয়ার ভয় করে।
এ ধরনের মাসলা মাসায়েলের ব্যাপারে মানুষের নিকট
জ্ঞানপূর্ণ আলোচনার প্রয়োজন অত্যাধিক। কেননা পৃথিবীর অধিকাংশ জায়গায় তা বিস্তার
লাভ করেছে এবং অনেকেই এর দ্বারা প্রতারিত হচ্ছে।
এজন্য আজ রাতের আলোচ্য বিষয় হচ্ছে, (অসীলা: এর
প্রকার ও হুকুমসমূহ) এটি এমন একটি বিষয় যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিটি মুসলিম
নর-নারীর তা জানা এবং বুঝা দরকার; কেননা অজ্ঞতাই শির্ক ও এর
প্রকারগুলো প্রসারের একমাত্র কারণ। এমনিভাবে কুপ্রবৃত্তির বশবর্তী কিছু লোকদের হাত
এ দিকে সম্প্রসারিত হয়েছে, ফলে তারা এ নিয়ে তাদের মনমত
খেলেছে। যেমন তারা অসীলার নাম করে আল্লাহর সহিত শির্ক করার দিকে মানুষকে আহ্বান
করে তারা নিজেরা পথভ্রষ্ট হয়েছে এবং বহু মানুষকে সৎ পথ থেকে পথ ভ্রষ্ট করেছে।
তাদের এ কুটিল মনোভাব থেকে আল্লাহ ব্যতীত কোনো রক্ষা
কারী নেই, অতঃপর শরয়ী জ্ঞানই প্রতিটি পথভ্রষ্টতার ঢাল এবং
প্রতিটি বিদ‘আত থেকে রক্ষাকারী, কারণ,
“আল্লাহ যার কল্যাণ চান তাকে দ্বীনের গভীর জ্ঞান দান করেন।” এ বিষয়ে জ্ঞানার্জন
করা একটি প্রশংসনীয় কাজ, এর দ্বারা মুসলিমগণ ছিনতাইকারী সন্দেহ
থেকে বাঁচতে পারবে এবং এর দ্বারাই জ্ঞানের হাতিয়ার বহন করতে পারবে, যার
মাধ্যমে কুপ্রবৃত্তির বশবর্তী লোকদের গর্দানে আঘাত করতে সক্ষম হবে এবং এর দ্বারাই
তার দ্বীনের অকাট্য প্রমাণের উপর আল্লাহর ইবাদত করতে পারবে।
হে প্রিয় ভাই সকল, এ আলোচনায়
আমি এ বিষয়ে কিছূ গুরুত্বপূর্ণ তত্ত্ব উল্লেখ করব। আল্লাহর তা‘আলার
নিকট এর জন্য সহযোগিতা এবং তাওফীক চাচ্ছি।
অসীলার
শাব্দিক ও পারিভাষিক অর্থ
এ মাহফীলে বক্তব্যের প্রথম বিষয় হলো: ‘‘আরব এবং শরিয়তের ভাষায় তাওয়াস্সুল বা অসীলার অর্থ’’
নিয়ে আলোচনা। কেননা এ বিষয়ে অধিকাংশ লোক যে কারণে পথভ্রষ্ট হয়েছে, তা হলো আরব এবং শরিয়তের ভাষায় তাওয়াস্সুল এর অর্থ সম্পর্কে
অজ্ঞতা। তারা তাওয়াস্সুল এর অর্থ করেছে
আরব এবং শরিয়তের ভাষার পরিপন্থি অর্থ, ফলে ধ্বংসে
নিমজ্জিত হয়েছে।
আরবদের ভাষায় তাওয়াস্সুল শব্দের কয়েকটি অর্থ হয়:
এক: তাওয়াস্সুল অর্থ : নৈকট্য লাভ করা, আর অসীলা অর্থ : নিকটবর্তী হওয়া।
আল
কামূসে বলা হয়েছে: وسّل
إلى الله تعالى توسيلا “ এমন কাজ করেছে যার মাধ্যমে সে আল্লাহর নিকটবর্তী হয়েছে। যেমন তাওয়াস্সুল।
এ অর্থই
আমাদের আজকের বিষয়, তাই আলোচনা তাতেই সীমাবদ্ধ রাখব।
আর শরিয়তের
ভাষায় তাওয়াস্সুল বা অসীলার অর্থ সম্পর্কে আল কুরআনে দু’টি আয়াত
এসেছে।
প্রথমটি হলো সূরা মায়েদায়, সেখানে
আল্লাহ বলেন :
﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ ٱتَّقُواْ ٱللَّهَ وَٱبۡتَغُوٓاْ إِلَيۡهِ
ٱلۡوَسِيلَةَ وَجَٰهِدُواْ فِي سَبِيلِهِۦ لَعَلَّكُمۡ تُفۡلِحُونَ ٣٥ ﴾ [المائدة: ٣٥]
“হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহর তাকওয়া
অবলম্বন কর এবং তার নৈকট্য অর্জন করতে সচেষ্ট হও এবং তার পথে সংগ্রাম কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার।” [সূরা মায়েদা/৩৫]
দ্বিতীয় আয়াত
সূরা ইসরায়, আল্লাহ বলেন :
﴿ قُلِ ٱدۡعُواْ ٱلَّذِينَ زَعَمۡتُم مِّن دُونِهِۦ فَلَا يَمۡلِكُونَ كَشۡفَ
ٱلضُّرِّ عَنكُمۡ وَلَا تَحۡوِيلًا ٥٦ أُوْلَٰٓئِكَ ٱلَّذِينَ يَدۡعُونَ يَبۡتَغُونَ
إِلَىٰ رَبِّهِمُ ٱلۡوَسِيلَةَ أَيُّهُمۡ أَقۡرَبُ وَيَرۡجُونَ رَحۡمَتَهُۥ وَيَخَافُونَ
عَذَابَهُۥٓۚ إِنَّ عَذَابَ رَبِّكَ كَانَ مَحۡذُورٗا ٥٧ ﴾ [الاسراء: ٥٦، ٥٧]
“হে নবী আপনি তাদেরকে বলে দিন, আল্লাহ
ব্যতীত যাদেরকে তোমরা উপাস্য মনে কর, তাদেরকে আহ্বান কর, তারা তোমাদের কষ্ট দূর করার ক্ষমতা রাখে না এবং তা পরিবর্তনও
করতে পারেনা। যাদেরকে তারা আহ্বান করে তারা নিজেরাই তো তাদের পালন কর্তার নৈকট্য
তালাশে ব্যাপ্ত যে, তাদের মধ্যে কে (আল্লাহর) বেশি নৈকট্যশীল
(হবে)। তারা তাঁর রহমতের আশা করে এবং তাঁর শাস্তিকে ভয় করে, নিশ্চয়
আপনার পালনকর্তার শাস্তি ভয়াবহ।” [সূরা ইসরা/ ৫৬-৫৭]
এ দু’টি আয়াতে তাওয়াস্সুলের
অর্থ কি ?
প্রথম আয়াতে আল্লাহ তা‘আলার
বাণীতে অসীলার অর্থ হলো: নৈকট্য লাভ করা। আর এটাই হচ্ছে ইবনে আব্বাস,
আতা, মুজাহিদ এবং ফার্রা রাদিয়াল্লাহু আনহুম এর মত।
কাতাদাহ বলেন: পছন্দনীয় কাজের মাধ্যমে নৈকট্য লাভ
করা।
আবু উবাইদাহ বলেন: তাওয়াসাসলতু ইলাইহি অর্থাৎ “তার
নিকটবর্তী হয়েছি। তিনি একটি কবিতা পাঠ করেন :
إذا
غفل الواشون عدنا لوَصْلنا * وعاد التصافي بيننا والوسائل
“যখন
কুৎসা রটনাকারীরা গাফেল হয়ে পড়ল তখন আমরা আমাদের সম্পর্ক পুণঃপ্রতিষ্ঠায় ফিরে এলাম,
আর আমাদের পরস্পরের মধ্যে ফিরে এল স্বচ্ছতা ও নৈকট্য।
ইবনে যাইদ বলেছেন: অসীলা অর্থ: মহব্বত, তখন অর্থ হবে, “তারা আল্লাহর প্রিয় হয়েছে।”
বস্তুত: এগুলো কোনো পরস্পর বিরোধী অর্থ নয়, বরং শব্দের পার্থক্য মাত্র, কেননা “আল্লাহর
প্রিয় হওয়া তাঁর নৈকট্য লাভেরই একটি প্রকার।”
মোটকথা: আল্লাহর বাণী وابتغوا إليه الوسيلة এর মধ্যকার ‘অসীলা’ শব্দটির অর্থ: তোমরা আল্লাহর আনুগত্যের মাধ্যমে তাঁর
নৈকট্য লাভ কর।
এ অর্থে মুফাস্সিরিনদের মাঝে কোনো মতভেদ নেই, যেমন ইবনে কাছীর রহমাতুল্লাহ আলাইহি বলেছেন।
আর দ্বিতীয় আয়াত, আল্লাহর বাণী يبتغون إلى ربهم الوسيلة এর মধ্যকার ‘অসীলা’ শব্দটির অর্থ: ‘তারা আল্লাহর আনুগত্যের মাধ্যমে তাঁর
নৈকট্য লাভ করে।’ যেমন তাফসীরে জালালাইনসহ ও অন্যান্য তাফসীরে এসেছে।
এ থেকে প্রতীয়মান হয় যে, শরিয়তের
পরিভাষায় এবং আরবদের ভাষায় অসীলা হলো: নিকটবর্তী হওয়া, নৈকট্যলাভ করা।
এ থেকে জানা গেল যে, কিছু
কিছু লোক ‘অসীলা’ শব্দের ব্যাখ্যায় ভুল করে থাকে, যার কারণে মুসলিমদের
বিশ্বাসে মহা অনিষ্টতা তৈরী হয়েছে।
আল্লামা শানকিতি (রহমতুল্লাহি আলাই্হি) বলেছেন: কিছু
সুফিবাদী সূরা মায়েদার আয়াতে অসীলার যা ব্যাখ্যা করেছে তা হলো এই: (একজন শাইখ বা
আলেম, যিনি কোনো ব্যক্তি এবং আল্লাহর মাঝে মাধ্যম হবে )!!!
এটি একটি পথভ্রষ্টতা, প্রকাশ্য
অপবাদ এবং আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের উপর অজানা কথা আরোপ করা।
আবার কিছু লোক ধারণা করে যে, ‘অসীলা’
হলো: নবী রাসূল, সৎলোক এবং অলীগণের সত্ত্বা। এ সবই বাতিল, এর কোনোই ভিত্তি নেই।
সাহাবা এবং তাবে‘ঈনদের তাফসীর থেকে প্রমাণিত হয়
যে, কোনো শাইখ বা আলেমের দ্বারা অসীলার ব্যাখ্যা করা মারাত্মক
ভুল যা শরিয়ত কখনো মেনে নিবেনা এবং স্বীকৃতিও দিবেনা।
কেননা সালাফগণ সকলেই একমত যে, আল্লাহ
তা‘আলার বাণী وابتغوا
إليه الوسيلة এ আয়াতে অসীলার অর্থ
হলো: আল্লাহর আনুগত্যের মাধ্যমে তাঁর নৈকট্য লাভ করা। এমনিভাবে তাঁর বাণী يبتغون إلى ربهم الوسيلة তে ও একই অর্থ।
ইবাদত সহীহ হওয়ার শর্তসমূহ:
আল্লাহ তা‘আলার নৈকট্য
লাভের দু’টি শর্ত রয়েছে, যা আল্লাহর
কিতাব এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সুন্নাত প্রমাণ করে এবং এর উপরই
এ উম্মতের সালাফগণ ঐক্যবদ্ধ।
প্রথম শর্ত: এ নৈকট্য লাভে আল্লাহর জন্য ইখলাস বা নিয়তের বিশুদ্ধতা। তিনি বলেন:
﴿ وَمَآ أُمِرُوٓاْ إِلَّا لِيَعۡبُدُواْ ٱللَّهَ مُخۡلِصِينَ لَهُ ٱلدِّينَ
حُنَفَآءَ ﴾ [البينة: ٥]
‘‘তাদেরকে
এ ছাড়া কোনো নির্দেশ দেওয়া হয়নি যে, তারা খাঁটি মনে একনিষ্ঠভাবে
আল্লাহর ইবাদত করবে’’। [সূরা আল-বাইয়্যেনাহ: ৫]
তিনি আরো
বলেন:
﴿فَٱعۡبُدِ ٱللَّهَ مُخۡلِصٗا لَّهُ ٱلدِّينَ ٢ ﴾ [الزمر: ٢]
“সুতরাং তুমি আল্লাহর ইবাদত কর, তাঁর জন্য দীনকে
খালেস করে”। [সূরা আয-যুমার:২]
তিনি আরও বলেন,
﴿ فَٱدۡعُواْ ٱللَّهَ مُخۡلِصِينَ لَهُ ٱلدِّينَ وَلَوۡ كَرِهَ ٱلۡكَٰفِرُونَ
١٤ ﴾ [غافر: ١٤]
‘‘তোমরা
একনিষ্ঠতার সহিত আল্লাহকে ডাক, যদিও কাফেরগণ তা অপছন্দ করে’’। [সূরা গাফির: ১৪]
সহীহ মুসলিমে আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন:
«قَالَ اللهُ تَبَارَكَ وَتَعَالَى: أَنَا أَغْنَى الشُّرَكَاءِ عَنِ الشِّرْكِ، مَنْ عَمِلَ عَمَلًا أَشْرَكَ فِيهِ
مَعِي غَيْرِي، تَرَكْتُهُ وَشِرْكَهُ»
“আল্লাহ তা‘আলা বলেন: আমি
শির্ক থেকে মুক্ত, যে ব্যক্তি এমন কোনো কাজ করবে যাতে আমার
সহিত অন্যকে অংশিদার করবে, আমি তাকে এবং তার শরীককে বর্জন
করি।”[7]
ইবনে মাজাহও হাদিসটি সংকলন করেছেন, তবে তার শব্দ
হচ্ছে,
«فَأَنَا
مِنْهُ بَرِيءٌ، وَهُوَ لِلَّذِي أَشْرَكَ»
“আমি এথেকে পবিত্র, আর তা
হচ্ছে মুশরিকদের থেকে।”[8]
দ্বিতীয় শর্ত: এ নৈকট্য লাভ হবে সে জিনিস থেকে যার উপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম ছিলেন। কাজেই যে ইবাদত তিনি করেননি এবং স্বীকৃতি দেননি; তা
দ্বারা আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা যায় না; যদিও সে কাজটি বিশুদ্ধ নিয়তে কেবলমাত্র
আল্লাহর জন্যই করে থাকুক। কেননা আল্লাহ তা‘আলার তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মুখে যা শরিয়ত হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছেন কেবল সেটার মাধ্যমেই
ইবাদত করার নির্দেশনা দিয়েছেন, তা দ্বারা নয় যা আমাদের মস্তিষ্ক চায় এবং আমাদের প্রবৃত্তি
ভালো মনে করে।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ٱتَّبِعُواْ مَآ أُنزِلَ إِلَيۡكُم مِّن رَّبِّكُمۡ وَلَا تَتَّبِعُواْ مِن
دُونِهِۦٓ أَوۡلِيَآءَۗ قَلِيلٗا مَّا تَذَكَّرُونَ ٣ ﴾ [الاعراف: ٣]
‘‘তোমাদের
প্রভুর নিকট থেকে তোমাদের প্রতি যা অবতীর্ণ করা হয়েছে তার অনুসরণ কর এবং তাঁকে
ব্যতীত অন্য কাউকে বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করোনা, বস্তুত: তোমরা
সামান্য কিছু সময় মাত্র তাকে স্মরণ করে থাক’’। [সূরা আরাফ/৩]
তিনি আরো বলেন:
﴿قُلۡ إِن كُنتُمۡ تُحِبُّونَ ٱللَّهَ فَٱتَّبِعُونِي يُحۡبِبۡكُمُ ٱللَّهُ وَيَغۡفِرۡ
لَكُمۡ ذُنُوبَكُمۡۚ وَٱللَّهُ غَفُورٞ رَّحِيمٞ ٣١ ﴾ [ال عمران: ٣١]
“তোমরা যদি আল্লাহকে ভালোবাসতে চাও তবে আমার
অনুসরণ কর, তাহলে আল্লাহ তোমাদেরকে ভালোবাসবেন,
তোমাদের পাপ ক্ষমা করে দিবেন, আর আল্লাহ ক্ষমাশীল,
অনুগ্রহকারী।” [সূরা আলে ইমরান/৩১]
বুখারী ও মুসলিম শরীফে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা
হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«مَنْ أَحْدَثَ فِي أَمْرِنَا هَذَا مَا لَيْسَ فِيهِ، فَهُوَ
رَدٌّ»
“যে ব্যক্তি আমার এ দ্বীনে কোনো নতুন জিনিস
প্রচলন করবে, যা এর অন্তর্ভুক্ত নয় তা প্রত্যাখ্যাত।”[9]
মুসলিমের বর্ণনায় এসেছে :
«مَنْ عَمِلَ عَمَلًا لَيْسَ عَلَيْهِ أَمْرُنَا فَهُوَ رَدٌّ»
“যে ব্যক্তি এমন কোনো কাজ করবে যা আমার দ্বীন
সমর্থন করেনা তা প্রত্যাখ্যাত।”[10]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর
নির্দেশের বহির্ভূত কোনো ইবাদত দ্বারা আল্লাহর নৈকট্য তালাশকারী কেবল ক্ষতিগ্রস্ত
এবং পাপীই হবে, যদিও তা আল্লাহর জন্য বিশুদ্ধ চিত্তে হয়।
বাইহাকী এবং অন্যান্যরা সাঈদ ইবন মুসাইয়্যেব হতে
বর্ণনা করেছেন, তিনি এক ব্যক্তিকে ফজর উদয় হওয়ার পর দুইয়ের
অধিক নামায পড়তে দেখেছেন, যাতে সে রুকু সিজদা বেশি বেশী করছে, অতঃপর তিনি তাকে নিষেধ করেছেন। সে বলল : হে আবু মুহাম্মদ ! এ
নামায পড়ার জন্য আল্লাহ কি আমাকে শাস্তি দিবেন? তিনি বললেন:
না, কিন্তু সুন্নাতের খেলাফ আমল করায় আপনাকে শাস্তি দিবেন।
উল্লেখিত আলোচনার আলোকে আমরা প্রতিটি
তাওয়াস্সুলের দিকে দেখব, তাতে কি উল্লেখিত দু’টি
শর্ত রয়েছে কিনা ? তাতে কি ইখলাস বা নিয়তের বিশুদ্ধতা রয়েছে? সেটা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর স্বীকৃত
কোনো কাজ কি না ?
অসীলার প্রকারসমূহ
এখন আমরা অন্য বিষয়ে আলোচনায় যেতে চাই, আর তা
হচ্ছে, অসীলা দুই প্রকার : বৈধ ও অবৈধ।
বৈধ অসীলা কি ? এবং এর দলীল
কি ? অবৈধ অসীলা কি ? এবং তা নিষেধের
দলীল কি ?
বৈধ অসীলা :
বৈধ অসীলা : আমরা জানি যে, আল্লাহ
তা‘আলা আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন আমরা যেন একমাত্র তারই
ইবাদত করি এবং তার সহিত যেন কাউকে অংশিদার না করি। দো‘আ একটি
বড় ইবাদত, যা অন্য কারো জন্য করা জায়েয নেই। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন :
﴿ وَقَالَ رَبُّكُمُ ٱدۡعُونِيٓ أَسۡتَجِبۡ لَكُمۡۚ إِنَّ ٱلَّذِينَ يَسۡتَكۡبِرُونَ
عَنۡ عِبَادَتِي سَيَدۡخُلُونَ جَهَنَّمَ دَاخِرِينَ ٦٠ ﴾ [غافر: ٦٠]
“এবং আপনার প্রভু বলেন যে, তোমরা
আমাকে ডাক, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দিব, নিশ্চয়ই
যারা আমার ইবাদত করা থেকে অহংকার করে তারা অতি সত্তর অপমাণিত লাঞ্ছিত হয়ে
জাহান্নামে প্রবেশ করবে।” [সূরা গাফের/৬০]
তিনি আরো বলেন:
﴿ وَأَنَّ ٱلۡمَسَٰجِدَ لِلَّهِ فَلَا تَدۡعُواْ مَعَ ٱللَّهِ أَحَدٗا ١٨ ﴾ [الجن: ١٨]
“সকল মাসজিদ আল্লাহর জন্য, কাজেই
তোমরা আল্লাহর সহিত কাউকে ডেকোনা।” [সূরা
আল-জিন, ১৮]
তিনি আরো বলেন:
﴿ وَأَنَّهُۥ لَمَّا قَامَ عَبۡدُ ٱللَّهِ يَدۡعُوهُ كَادُواْ يَكُونُونَ عَلَيۡهِ
لِبَدٗا ١٩ قُلۡ إِنَّمَآ أَدۡعُواْ رَبِّي وَلَآ أُشۡرِكُ بِهِۦٓ أَحَدٗا ٢٠ ﴾ [الجن: ١٩، ٢٠]
“আর এই যে, যখন আল্লাহর
বান্দা তাঁকে ডাকার জন্যে দন্ডায়মান হলো তখন তারা তার নিকট ভিড় জমালো। বলুন, আমি
তো কেবল আমার রবকে ডাকি, আমি তো তার সাথে কাউকে শরীক করি না” [সূরা জিন/১৯-২০]
আল্লাহ তা‘আলাকে নিম্নোক্ত
কয়েকটি পদ্ধতিতে তাকে ডাকা আমাদের জন্য বৈধ করেছেন:
1- আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে নির্দেশ
দিয়েছেন তাঁর সুন্দর সুন্দর নাম এবং উন্নত গুণাবলীর মাধ্যমে তাঁকে ডাকার জন্য, কাজেই আমরা বলব : হে আল্লাহ ! আমি আপনার কাছে চাই কারণ; আপনি
ব্যতীত কোনো সত্য ইলাহ নেই, চীরঞ্জীব, সর্বসত্তার ধারক, যেন আপনি আমার গোনাহসমূহ
ক্ষমা করে দেন, অথবা আমার ভার লাঘব করে দিন, অথবা আমার রোগীকে আরোগ্য দিন। .... .
.
2- আমাদের কৃত সৎকর্মের মাধ্যমে তাঁকে ডাকার জন্য বৈধ
করেছেন। যেমন: হে আল্লাহ তোমার প্রতি আমার ঈমান, তোমার রাসূল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সত্যয়ণ, তাঁর অনুসরণ অনুকরণের দ্বারা আমি চাই যেন আপনি আমাকে
ক্ষমা করুন, আমাকে দয়া করুন, অথবা আমার ভার লাঘব করে দিন, অথবা আমার রোগীকে আরোগ্য
দান করুন। ...
3- অন্য এক প্রকারে ডাকাও তিনি আমাদের জন্য বৈধ করেছেন, তা হলো: আমরা কোনো জীবিত উপস্থিত সৎ লোকের নিকট এসে বলতে পারি যে, হে অমুক; আপনি আমাদের জন্য আল্লাহর নিকট দো‘আ করুন, তিনি যেন আমাদিগকে দৃঢ় রাখেন, ক্ষমা করেন এবং আমাদের রুগীদেরকে ভাল করে দেন, ইত্যাদি।
প্রিয় ভাই সকল, এ তিন
প্রকার অসীলা, আমাদের দো‘আসমূহে যার মাধ্যমে আমরা আল্লাহর নৈকট্য তালাশ করতে পারি,
এগুলো আল্লাহ বৈধ করেছেন এবং আমাদের রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের
জন্য প্রবর্তন করেছেন।
তাহলে বৈধ অসীলা হলো: যা আল্লাহর কিতাব কুরআন
দ্বারা প্রমাণিত অথবা তা তাঁর রাসূলের সুন্নাত দ্বারা স্বীকৃত।
এখানে কেউ বলতে পারে যে, অসীলাটা
কি দো‘আর মধ্যেই সীমাবদ্ধ ? নাকি দো‘আসহ অন্যান্য ক্ষেত্রেও চলে ?
উত্তর : অসীলা হলো আল্লাহ তা‘আলা
ভালবাসেন এবং সন্তুষ্ট হন এমন সকল ইবাদতের মাধ্যমে তাঁর নৈকট্য লাভ করা। যেমন: দো‘আ, সুতরাং দো‘আ
আল্লাহর নৈকট্য লাভের একটি অসীলা। তদ্রূপ আল্লাহকে ভয় করা একটি অসীলা এবং তাঁর উপর
ভরসা করা অপর একটি অসীলা। অনুরূপ আরও বহু অসীলা রয়েছে...
কিন্তু যেহেতু দো‘আর
ব্যাপারে অসীলা নিয়ে উদ্দেশ্যমূলক সন্দেহ ও ধুম্রজাল তৈরী করা হয়েছে সেহেতু আলেমগণ
এ প্রকার (দো‘আর) অসীলার গুরুত্ব দিয়ে এর বৈধ অবৈধ দিক নিয়ে আলোচনা করেছেন।
সুতরাং দো‘আতে বৈধ অসীলা তিন প্রকার যা পূর্বে
উল্লেখ করা হয়েছে।
তন্মধ্যে প্রথমটি হচ্ছে: আল্লাহ তা‘আলার সুন্দর সুন্দর
নাম, সমুন্নত গুণাবলী এবং তাঁর প্রশংসনীয় কাজের মাধ্যমে তাঁর
নৈকট্য লাভ করা। এর দলীল হলো, আল্লাহ তা‘আলা
বলেন:
﴿ وَلِلَّهِ ٱلۡأَسۡمَآءُ ٱلۡحُسۡنَىٰ فَٱدۡعُوهُ بِهَاۖ وَذَرُواْ ٱلَّذِينَ
يُلۡحِدُونَ فِيٓ أَسۡمَٰٓئِهِۦۚ سَيُجۡزَوۡنَ مَا كَانُواْ يَعۡمَلُونَ ١٨٠ ﴾ [الاعراف: ١٨٠]
“আর আল্লাহর জন্যে সুন্দর সুন্দর নাম রয়েছে, তোমরা তাঁকে সে সব নামের মাধ্যমে ডাক এবং যারা তাঁর নাম বিকৃত
করে তোমরা তাদেরকে বর্জন কর, সত্বরই তাদেরকে তাদের কৃত
কর্মের প্রতিফল দেওয়া হবে।” [সূরা আরাফ/১৮০]
সুন্দর সুন্দর নামের সদৃশ হলো সমুন্নত গুণাবলী, কারণ নাম গুণের উপর প্রমাণ বহন করে, যা
থেকে তা নির্গত হয়।
আল্লাহর সুন্দর নামসমূহ অগণিত, কোনো
নির্দিষ্ট সংখ্যা নেই, যেমন আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু
আনহু এর হাদীস প্রমাণ করে, যা মুসনাদে ইমাম আহমদ ও অন্যান্য হাদীসে এসেছে: নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: কারো কোনো দুঃশ্চিন্তা ও দুর্ভাবনা আসলে সে যদি বলে:
«اللَّهُمَّ
إِنِّي عَبْدُكَ ابْنُ عَبْدِكَ ابْنُ أَمَتِكَ، نَاصِيَتِي بِيَدِكَ، مَاضٍ فِيَّ حُكْمُكَ، عَدْلٌ فِيَّ قَضَاؤُكَ، أَسْأَلُكَ بِكُلِّ اسْمٍ
هُوَ لَكَ، سَمَّيْتَ بِهِ نَفْسَكَ، أَوْ أَنْزَلْتَهُ فِي كِتَابِكَ، أَوْ عَلَّمْتَهُ
أَحَدًا مِنْ خَلْقِكَ، أَوِ اسْتَأْثَرْتَ بِهِ فِي عِلْمِ الْغَيْبِ عِنْدَكَ، أَنْ
تَجْعَلَ الْقُرْآنَ رَبِيعَ قَلْبِي، وَنُورَ بَصَرِي، وَجِلَاءَ حُزْنِي، وَذَهَابَ
هَمِّي، إِلَّا أَذْهَبَ اللَّهُ هَمَّهُ وَأَبْدَلَهُ مَكَانَ حُزْنِهِ فَرَحًا»
“হে আল্লাহ নিঃসন্দেহে আমি তোমার দাস, তোমার দাসের পুত্র, তোমার দাসীর পুত্র, আমার ললাটের কেশ গুচ্ছ তোমার হাতে, তোমার
বিচার আমার জীবনে যথার্থ, তোমার মীমাংসা আমার ভাগ্যলিপিতে
ন্যায় সঙ্গত, আমি তোমার নিকট তোমার সেই নামের বিনিময়ে
প্রার্থনা করছি, যে নাম তুমি নিজে নিয়েছ, বা
তুমি তোমার গ্রন্থে অবতীর্ণ করেছ, বা তোমার সৃষ্টির মধ্যে
কাউকে তা শিখিয়েছ, অথবা তুমি তোমার গায়বী জ্ঞানে নিজের নিকট
গোপন রেখেছ, তুমি কুরআনকে আমার হৃদয়ের বসন্ত কর, আমার বক্ষের জ্যোতি কর, আমার দুশ্চিন্তা
দূর করার এবং আমার উদ্বেগ চলে যাওয়ার কারণ বানিয়ে দাও।” তাহলে আল্লাহ তার দুঃশ্চিন্তা
ও দুর্ভাবনাকে আনন্দে পরিণত করে দেন।
এ হাদীসে আল্লাহর নৈকট্য লাভের কথা এসেছে তাঁর
সুন্দর নামসমুহের মাধ্যমে।
পূর্বে নবীগণ এবং সৎলোকগণ আল্লাহর সুন্দর নাম এবং
গুণাবলীর মাধ্যমে তাঁর নৈকট্য লাভ করতো, যেমন আল্লাহ তা‘আলা সুলাইমান আলাইহিস সালামের পক্ষ থেকে অনুরূপ নৈকট্যলাভের কথা
বর্ণনা করে বলেন:
﴿ وَقَالَ رَبِّ أَوۡزِعۡنِيٓ أَنۡ أَشۡكُرَ نِعۡمَتَكَ ٱلَّتِيٓ أَنۡعَمۡتَ
عَلَيَّ وَعَلَىٰ وَٰلِدَيَّ وَأَنۡ أَعۡمَلَ صَٰلِحٗا تَرۡضَىٰهُ وَأَدۡخِلۡنِي بِرَحۡمَتِكَ
فِي عِبَادِكَ ٱلصَّٰلِحِينَ ١٩ ﴾ [النمل: ١٩]
“এবং বলল: হে আমার প্রতিপালক! আপনি আমাকে সামর্থ
দিন যাতে আমি আপনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারি, আমার
প্রতি ও আমার পিতা-মাতার প্রতি আপনি যে অনুগ্রহ করেছেন তার জন্যে এবং আমি যেন
সৎকর্ম করতে পারি, যা আপনি পছন্দ করেন এবং আপনার অনুগ্রহে
আমাকে আপনার সৎকর্ম পরায়ন বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত করুন।” সূরা নামল/১৯
এটি হলো গুণাবলীর মাধ্যমে নৈকট্য অর্জন।
সহীহ বুখারীতে আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে
বর্ণিত, তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
আমাদেরকে নির্দেশ দিতেন যে, আমরা
«اللهُمَّ رَبَّ السَّمَاوَاتِ وَرَبَّ الْأَرْضِ وَرَبَّ الْعَرْشِ الْعَظِيمِ،
رَبَّنَا وَرَبَّ كُلِّ شَيْءٍ، فَالِقَ الْحَبِّ وَالنَّوَى، وَمُنْزِلَ التَّوْرَاةِ وَالْإِنْجِيلِ وَالْفُرْقَانِ، أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ كُلِّ
شَيْءٍ أَنْتَ آخِذٌ بِنَاصِيَتِهِ، اللهُمَّ أَنْتَ الْأَوَّلُ فَلَيْسَ قَبْلَكَ
شَيْءٌ، وَأَنْتَ الْآخِرُ فَلَيْسَ بَعْدَكَ شَيْءٌ، وَأَنْتَ الظَّاهِرُ فَلَيْسَ
فَوْقَكَ شَيْءٌ، وَأَنْتَ الْبَاطِنُ فَلَيْسَ دُونَكَ شَيْءٌ، اقْضِ عَنَّا الدَّيْنَ،
وَأَغْنِنَا مِنَ الْفَقْرِ»
“যখন আমাদের বিছানায় যাব তখন আমরা যেন বলি: হে
আল্লাহ! হে ভুমণ্ডল, নভোমণ্ডল ও
আরশের অধিপতি ! হে আমাদের ও সকল বস্তুর প্রতিপালক, হে তাওরাত, ইঞ্জিল ও ফুরকানের অবতারণকারী, আমি তোমার
নিকট প্রত্যেক অনিষ্টকারীর অনিষ্টতা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি, যার
ললাটের কেশ গুচ্ছ তুমি ধারণ করে আছ। হে আল্লাহ! তুমিই আদি, তোমার
পূর্বে কেউ নেই এবং তুমিই সর্বশেষ, তোমার পরে কেউ নেই, তুমিই সবার উপরে, তোমার
উপরে কেউ নেই, তুমিই সর্বনিকটে, তোমার চেয়ে নিকটে কেউ নেই। আমাদের পক্ষ থেকে
আমাদের ঋন পরিশোধ করে দাও এবং আমাদেরকে দারিদ্র থেকে মুক্তি দিয়ে সচ্ছল করে দাও।”[11]
তিরমিযীতে আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«أَلِظُّوا بِيَا ذَا الجَلَالِ وَالإِكْرَامِ»
তোমরা ‘ইয়া জালজালালী অল ইকারামের মাধ্যমে বেশি
করে আহ্বান করো’[12] অর্থাৎ
তা তোমাদের দো‘আর মধ্যে বেশি বেশি বলবে।
মুসনাদ এবং সুনানগ্রন্থসমূহে আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু
হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এর সহিত বসা ছিলেন এবং এক ব্যক্তি পাশে নামায পড়ছিলেন, তিনি
যখন রুকু, সিজদা এবং তাশাহ্হুদে দো‘আ
করছিলেন তখন তিনি দো‘আতে বলেছিলেন:
«اللَّهُمَّ
إِنِّي أَسْأَلُكَ بِأَنَّ لَكَ الْحَمْدُ، لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ الْمَنَّانُ، بَدِيعُ السَّمَوَاتِ وَالْأَرْضِ، يَا ذَا الْجَلَالِ
وَالْإِكْرَامِ، يَا حَيُّ يَا قَيُّومُ، فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ: «لَقَدْ دَعَا اللَّهَ بِاسْمِهِ الْعَظِيمِ، الَّذِي إِذَا دُعِيَ بِهِ أَجَابَ،
وَإِذَا سُئِلَ بِهِ أَعْطَى»
“হে আল্লাহ আমি তোমার নিকট প্রার্থনা করছি এ জন্য
যে, সকল প্রশংসা তোমারই, তুমি ব্যতীত কোনো যোগ্য উপাস্য নেই, তুমি পরম অনুগ্রহদাতা, আকাশমণ্ডলি ও
পৃথিবীর আবিস্কারক, হে মহিমাময় এবং মহানুভব, হে
চিরঞ্জিবী অবিনশ্বর, আমি তোমার নিকট প্রার্থনা করছি.....”
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর
সাথীদেরকে বললেন: তোমরা কি জান যে, সে কিসের মাধ্যমে দো‘আ করেছে? তারা বলল: আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলই
ভাল জানেন, তিনি বললেন: শপথ সেই সত্তার যার হাতে আমার প্রাণ, সে আল্লাহর সবচেয়ে বড় নামের মাধ্যমে দো‘আ
করেছে, যার মাধ্যমে দো‘আ করলে তিনি কবুল
করে থাকেন এবং কিছু চাওয়া হলে তিনি তা দিয়ে থাকেন। (এটি নাসায়ীর শব্দ)[13]
অনুরূপভাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তিকে তাশাহ্হুদে বলতে শুনেছেন:
اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ يَا أَللَّهُ بِأَنَّكَ
الْوَاحِدُ الْأَحَدُ الصَّمَدُ، الَّذِي لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ
وَلَمْ يَكُنْ لَهُ كُفُوًا أَحَدٌ، أَنْ تَغْفِرَ لِي ذُنُوبِي، إِنَّكَ
أَنْتَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ
(হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই আমি তোমার নিকট প্রার্থনা
করছি, হে এক ও অদ্বিতীয়, ভরসাস্থল
আল্লাহ, যিনি জনক নন জাতকও নন এবং যাঁর সমকক্ষ কেউ নেই, তুমি আমার পাপসমুহকে ক্ষমা করে দাও, নিশ্চয়ই
তুমি ক্ষমাশীল দয়াবান।)
তিনি বললেন: তাকে ক্ষমা করা হয়েছে। কথাটি তিনবার
বললেন। মেহজান ইবন আদরা থেকে নাসায়ী বর্ণনা করেছেন[14]।
এই একটি উদাহরণ। তাছাড়া আল্লাহর সুন্দর নাম এবং
সমুন্নত গুণাবলীর মাধ্যমে নৈকট্য লাভ করার বহু উদাহরণ রয়েছে। মুসলিমদের উচিৎ হলো, তারা যেন তাদের দো‘আয় এগুলো বলেন, কারণ তা দ্বারা দো‘আ করলে কবুল হওয়ার
সম্ভাবনা বেশি থাকে।
দ্বিতীয়ত:
দো‘আর ক্ষেত্রে বৈধ অসীলা হলো : কোনো মুসলিম তার কৃত সৎ
আমলের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য করবে। এর বহু দলীল রয়েছে, তার
মধ্যে অন্যতম হচ্ছে:
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
যারা বলে, হে আমাদের
প্রতিপালক, আমরা তোমার প্রতি ঈমান এনেছি, কাজেই
তুমি আমাদের পাপসমুহকে ক্ষমা করে দাও এবং জাহান্নামের আগুনের শাস্তি থেকে আমাদেরকে
বাঁচাও। [সূরা আল ইমরান/৩৬]
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:
(হে আমাদের প্রতিপালক, তুমি
যা অবতীর্ণ করেছ তার প্রতি আমরা ঈমান এনেছি এবং রাসূলের অনুসরণ করছি। অত:এব, আমাদেরকে সাক্ষিদের সাথে লিপিবদ্ধ কর।) [সূরা আল ইমরান/ ৫৩]
তিনি আরো বলেন:
(হে আমাদের প্রভু, নিশ্চয়ই
আমরা একজন আহ্বানকারীকে ঈমানের জন্য আহ্বান করতে শুনেছি যে, তোমরা
তোমাদের প্রতিপালকের প্রতি ঈমান আনয়ন কর, তাতেই আমরা ঈমান
আনলাম, হে আমাদের প্রভু, আমাদের
অপরাধসমূহ ক্ষমা কর ও আমাদের অমঙ্গলসমূহ আবৃত কর এবং পূণ্যবানদের সহিত আমাদিগকে
মৃত্যু দান কর।) [সূরা আল ইমরান/ ১৯৩]
তিনি আরো বলেন:
(আমার বান্দাদের মধ্যে একদল লোক ছিল যারা বলতো:
হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা ঈমান এনেছি, সুতরাং তুমি আমাদিগকে
ক্ষমা করে দাও এবং আমাদিগকে অনুগ্রহ কর, তুমিতো
অনুগ্রহশীলদের শ্রেষ্ঠ অনুগ্রহশীল।) [সূরা মুমিনূন/ ১০৯]
মুসনাদ এবং সুনানে আবু দাউদে বুরাইদাহ ইবন হুসাইব
হতে, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
এক ব্যক্তিকে বলতে শুনেছেন:
اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ أَنِّي أَشْهَدُ
أَنَّكَ أَنْتَ اللَّهُ، لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ، الْأَحَدُ الصَّمَدُ الَّذِي لَمْ يَلِدْ، وَلَمْ يُولَدْ، وَلَمْ يَكُنْ لَهُ كُفُوًا أَحَدٌ،
فَقَالَ: «لَقَدْ سَأَلْتَ اللَّهَ بِالِاسْمِ الَّذِي إِذَا سُئِلَ بِهِ أَعْطَى، وَإِذَا
دُعِيَ بِهِ أَجَابَ».
(হে আল্লাহ! আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে,
তুমি আল্লাহ, তুমি ব্যতীত কোনো যোগ্য উপাসক নেই, তুমি একক, ভরসাস্থল, যিনি
জনক নন এবং জাতকও নন এবং যার সমকক্ষ কেউ নেই, এ অসীলায় আমি
তোমার নিকট প্রার্থনা করছি।) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
(সে আল্লাহর নিকট তার সব চেয়ে বড় নামের মাধ্যমে চেয়েছে, যার
দ্বারা চাইলে তিনি দিয়ে থাকেন এবং দো‘আ করলে তিনি কবুল করে
থাকেন[15]।
এই ব্যক্তি সৎ আমলের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য
চেয়েছে, আর সেটি হচ্ছে: ইখলাসের সাক্ষ্য প্রদান করা। এবং সে
কথা, কাজ এবং বিশ্বাসে ইখলাসের উপর থাকার কারণে।
অনুরূপ এর উদাহরণ গুহার অধিবাসীদের ঘটনা, যা
আব্দুল্লাহ ইবন উমর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, সেটি হলো: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
"
انْطَلَقَ ثَلاَثَةُ رَهْطٍ مِمَّنْ كَانَ قَبْلَكُمْ حَتَّى أَوَوْا المَبِيتَ إِلَى غَارٍ، فَدَخَلُوهُ فَانْحَدَرَتْ صَخْرَةٌ مِنَ الجَبَلِ،
فَسَدَّتْ عَلَيْهِمُ الغَارَ، فَقَالُوا: إِنَّهُ لاَ يُنْجِيكُمْ مِنْ هَذِهِ
الصَّخْرَةِ إِلَّا أَنْ تَدْعُوا اللَّهَ بِصَالِحِ أَعْمَالِكُمْ، فَقَالَ رَجُلٌ
مِنْهُمْ: اللَّهُمَّ كَانَ لِي أَبَوَانِ شَيْخَانِ كَبِيرَانِ، وَكُنْتُ لاَ أَغْبِقُ
قَبْلَهُمَا أَهْلًا، وَلاَ مَالًا فَنَأَى بِي فِي طَلَبِ شَيْءٍ يَوْمًا، فَلَمْ
أُرِحْ عَلَيْهِمَا حَتَّى نَامَا، فَحَلَبْتُ لَهُمَا غَبُوقَهُمَا، فَوَجَدْتُهُمَا
نَائِمَيْنِ وَكَرِهْتُ أَنْ أَغْبِقَ قَبْلَهُمَا أَهْلًا أَوْ مَالًا، فَلَبِثْتُ
وَالقَدَحُ عَلَى يَدَيَّ، أَنْتَظِرُ اسْتِيقَاظَهُمَا حَتَّى بَرَقَ الفَجْرُ، فَاسْتَيْقَظَا،
فَشَرِبَا غَبُوقَهُمَا، اللَّهُمَّ إِنْ كُنْتُ فَعَلْتُ ذَلِكَ ابْتِغَاءَ وَجْهِكَ،
فَفَرِّجْ عَنَّا مَا نَحْنُ فِيهِ مِنْ هَذِهِ الصَّخْرَةِ، فَانْفَرَجَتْ شَيْئًا
لاَ يَسْتَطِيعُونَ الخُرُوجَ "، قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ:
" وَقَالَ الآخَرُ: اللَّهُمَّ كَانَتْ لِي بِنْتُ عَمٍّ، كَانَتْ أَحَبَّ النَّاسِ
إِلَيَّ، فَأَرَدْتُهَا عَنْ نَفْسِهَا، فَامْتَنَعَتْ مِنِّي حَتَّى أَلَمَّتْ بِهَا
سَنَةٌ مِنَ السِّنِينَ، فَجَاءَتْنِي، فَأَعْطَيْتُهَا عِشْرِينَ وَمِائَةَ دِينَارٍ
عَلَى أَنْ تُخَلِّيَ بَيْنِي وَبَيْنَ نَفْسِهَا، فَفَعَلَتْ حَتَّى إِذَا قَدَرْتُ
عَلَيْهَا، قَالَتْ: لاَ أُحِلُّ لَكَ أَنْ تَفُضَّ الخَاتَمَ إِلَّا بِحَقِّهِ، فَتَحَرَّجْتُ
مِنَ الوُقُوعِ عَلَيْهَا، فَانْصَرَفْتُ عَنْهَا وَهِيَ أَحَبُّ النَّاسِ إِلَيَّ،
وَتَرَكْتُ الذَّهَبَ الَّذِي أَعْطَيْتُهَا، اللَّهُمَّ إِنْ كُنْتُ فَعَلْتُ ابْتِغَاءَ
وَجْهِكَ، فَافْرُجْ عَنَّا مَا نَحْنُ فِيهِ، فَانْفَرَجَتِ الصَّخْرَةُ غَيْرَ أَنَّهُمْ
لاَ يَسْتَطِيعُونَ الخُرُوجَ مِنْهَا "، قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ: " وَقَالَ الثَّالِثُ: اللَّهُمَّ إِنِّي اسْتَأْجَرْتُ أُجَرَاءَ،
فَأَعْطَيْتُهُمْ أَجْرَهُمْ غَيْرَ رَجُلٍ وَاحِدٍ تَرَكَ الَّذِي لَهُ وَذَهَبَ،
فَثَمَّرْتُ أَجْرَهُ حَتَّى كَثُرَتْ مِنْهُ الأَمْوَالُ، فَجَاءَنِي بَعْدَ حِينٍ
فَقَالَ: يَا عَبْدَ اللَّهِ أَدِّ إِلَيَّ أَجْرِي، فَقُلْتُ لَهُ: كُلُّ مَا تَرَى
مِنْ أَجْرِكَ مِنَ الإِبِلِ وَالبَقَرِ وَالغَنَمِ وَالرَّقِيقِ، فَقَالَ: يَا عَبْدَ
اللَّهِ لاَ تَسْتَهْزِئُ بِي، فَقُلْتُ: إِنِّي لاَ أَسْتَهْزِئُ بِكَ، فَأَخَذَهُ
كُلَّهُ، فَاسْتَاقَهُ، فَلَمْ يَتْرُكْ مِنْهُ شَيْئًا، اللَّهُمَّ فَإِنْ كُنْتُ
فَعَلْتُ ذَلِكَ ابْتِغَاءَ وَجْهِكَ، فَافْرُجْ عَنَّا مَا نَحْنُ فِيهِ، فَانْفَرَجَتِ
الصَّخْرَةُ، فَخَرَجُوا يَمْشُونَ "
তোমাদের পূর্বে তিন ব্যক্তি কোথাও যাচ্ছিল, একটি গুহার নিকটে রাত্রি হয়ে গেলে তারা তাতে প্রবেশ করল, অতঃপর পাহাড় থেকে একটি পাথর এসে গুহার উপর পড়লে তারা তাতে আটকা
পড়ে গেল, অতঃপর তারা পরস্পর বলতে লাগল এ পাথর সরিয়ে আমরা
কখনো মুক্তি পাবনা, কিন্তু যদি তোমাদের সৎ আমলের মাধ্যমে
আল্লাহর নিকট দো‘আ কর। তাদের মধ্যে একজন বলল: হে আল্লাহ, আমার বৃদ্ধ পিতা-মাতা ছিল, আমি আমার
পরিবারকে এবং দাস দাসীকে তাদের পূর্বে কখনো দুধ পান করাতামনা, একদা
ঘাসের তালাশে বহু দূর চলে গেলাম, তাদের ঘুমের পূর্বে ফিরে
আসতে পারিনি, অতঃপর আমি ছাগলের দুধ দহন করে এসে দেখি তারা
ঘুমিয়ে পড়েছেন, এমতাবস্থায় আমি তাদেরকে জাগাতে পছন্দ করলামনা
এবং তাদের পূর্বে আমার পরিবার এবং দাস দাসীকে দুধ পান করানো ভাল মনে করলাম না, অতঃপর আমি পেয়ালা হাতে নিয়ে তাদের ঘুম থেকে জাগার অপেক্ষা করছি, অপেক্ষা করতে করতে ফজর উদিত হয়ে গেল, আর
আমার ছোট ছোট বাচ্চারা আমার পায়ের নিকট ক্ষুধার তাড়নায় চিৎকার করছে,
তারপর তারা ঘুম থেকে জাগলে তাদের দুধটুকু পান করলেন।
হে আল্লাহ! এ কাজ যদি আমি তোমার সন্তুষ্টি
অর্জনের জন্য করে থাকি তবে আমাদের থেকে এ পাথরের বিপদকে দূর করে দাও। অতঃপর পাথরটি
সামান্য সরে গেল কিন্তু তারা বের হতে পারল না।
অন্যজন বলল: হে আল্লাহ! আমার এক চাচাতো বোন ছিল, সে আমার নিকট সকলের চেয়ে প্রিয় ছিল, অতঃপর
আমি তাকে একদিন কুপ্রস্তাব দিলে সে রাজি হয়নি, কোনো এক বৎসর
সে অভাবে পড়ে আমার নিকট আসলে আমি তাকে একশত
বিশটি দিনার দিলাম এই শর্তে যে, সে নিজেকে আমার নিকট সপে
দিবে, তাতে সে রাজি হল, আমি তাকে আমার
আয়ত্বে নিয়ে আসলাম, অন্য বর্ণনায়: যখন আমি তার দু’পায়ের মাঝে বসলাম তখন সে বলল : তুমি আল্লাহকে ভয় কর! সতীত্বের হক
আদায় ব্যতীত তা তুমি নষ্ট করো না। অতঃপর তার নিকট থেকে ফিরে এলাম অথচ সে আমার নিকট
সকলের চেয়ে প্রিয় এবং তাকে দেওয়া স্বর্ণ মুদ্রাও ছেড়ে দিলাম।
হে আল্লাহ ! এ কাজ যদি আমি তোমার সন্তুষ্টির জন্য
করে থাকি তবে আমাদেরকে এ বিপদ থেকে রক্ষা কর।
অতঃপর পাথরটি সামান্য সরে গেল কিন্তু তারা বের
হতে পারল না।
তৃতীয় ব্যক্তি বলল: হে আল্লাহ! আমি কিছু কর্মচারী
নিয়োগ করেছিলাম এবং সকলকেই পারিশ্রমিক দিয়েছি কিন্তু এক ব্যক্তি তার পারিশ্রমিক না
নিয়ে চলে গেল, অতঃপর আমি তার পারিশ্রমিককে বাড়িয়েছি, বাড়তে বাড়তে বহু সম্পদ হয়ে গিয়েছে। বহু দিন পর সে এসে বলল:
আব্দুল্লাহ, আমার পারিশ্রমিক দাও। আমি বললাম: এখানে তুমি যা
দেখছ উট, গরু, ছাগল এবং কর্মচারী সবই
তোমার, সে বলল: আব্দুল্লাহ ! তুমি আমার সহিত ঠাট্টা করো না !
বললাম : আরে আমি তোমার সহিত ঠাট্টা করছি না। অতঃপর সে সব কিছু নিয়ে গেল, কোনো কিছু ছেড়ে যায়নি।
হে আল্লাহ, আমি যদি এ কাজ
তোমার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য করে থাকি তবে আমাদের বিপদকে দূর করে দাও।
অতঃপর পাথরটি সরে গেল এবং তারা সেখান থেকে বের
হয়ে চলে গেল। [বুখারী ও মুসলিম][16]।
সৎ আমলের দ্বারা আল্লাহর নৈকট্য লাভ করার
ব্যাপারে এটি একটি জলন্ত প্রমাণ, কারণ এই তিনজন লোকই কঠিন
অবস্থায় সৎ আমলকে আল্লাহ তা‘আলার নিকট অসীলা করেছে।
প্রথম ব্যক্তি পিতা-মাতার সহিত সদ্যবহার, তাদের সহিত নম্রভাব এবং তাদের প্রতি অনুগ্রহ করাকে অসীলা করেছে, আর এটি আল্লাহর নির্দেশের মধ্যে একটি আমল যা করার জন্য উৎসাহ
প্রদান করেছে। তিনি বলেন: (এবং তোমরা পিতা-মাতার প্রতি ইহসান কর।)
দ্বিতীয় ব্যক্তি এক মহিলার প্রেমে আশক্ত হয়ে তার
সহিত ব্যভিচার করার সুযোগ পেয়েও তা থেকে বিরত থাকাকে অসীলা করেছে। এটিও একটি ভাল
আমল। আল্লাহ তা‘আলা তাঁর সৎকর্ম পরায়ন বান্দাদের সম্পর্কে
বলেন: (এবং তারা ব্যভিচার করেনা।)
তৃতীয় ব্যক্তি আমানতকে সংরক্ষণ এবং তা আদায়ের
মাধ্যমে আল্লাহ তা‘আলার নিকট অসীলা করেছে। আর তা একজন চাকরের
হক্বকে যথাযথ সংরক্ষণ করে তা তাকে পুরোপুরি ফিরিয়ে দেয়ার মাধ্যমে আল্লাহর নিকট অসীলা
করেছে। তিনি বলেন: (হে মুমিনগণ তোমরা তোমাদের অঙ্গিকারগুলো আদায় কর।)
যখন তারা এগুলো করল, আল্লাহ
তাদের বিপদকে দূর করে দিলেন এবং তাদের উপর পতিত কঠিন অবস্থাকে দূরিভূত করে দিলেন।
এখানে সৎ আমলের
অসীলা করে আল্লাহর
নিকট দো‘আ করার উপকারিতার উপর একটি নির্দেশনা রয়েছে এতে, সেটি হলো : এর মাধ্যমে দো‘আ কুবল হওয়ার
সম্ভাবনা বেশী।
এমনি ভাবে আল্লাহর সুন্দর সুন্দর নাম এবং সমুন্নত
গুণাবলীর দ্বারা তাঁর নিকট দো‘আ। কেননা, দো‘আ কুবল হওয়ার কারণসমূহের মধ্যে তা একটি। এজন্যে যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঐ ব্যক্তিকে বলতে শুনেছেন যে, (হে আল্লাহ!
নিশ্চয়ই আমি তোমার নিকট প্রার্থনা করছি, হে এক ও অদ্বিতীয়, ভরসাস্থল আল্লাহ, যিনি জনক নন জাতক ও নন
এবং যাঁর সমকক্ষ কেউ নেই, তুমি আমার পাপসমুহকে ক্ষমা করে দাও
. . .।) তিঁনি বললেন: তাকে ক্ষমা করা হয়েছে। কথাটি তিনি তিনবার বললেন।
তৃতীয়ত
: কোনো জীবিত উপস্থিত লোকের দো‘আর মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য
লাভ করা, যিনি দ্বীনদার এবং পরহেজগারিতায় প্রসিদ্ধ।
কুরআন হাদীসে এর বহু দলীল রয়েছে।
তার মধ্যে: ইউসুফ আলাইহিস সালামের ভাইদের
সম্পর্কে আল্লাহ বলেন:
﴿ قَالُواْ يَٰٓأَبَانَا ٱسۡتَغۡفِرۡ لَنَا ذُنُوبَنَآ إِنَّا كُنَّا خَٰطِِٔينَ
٩٧ قَالَ سَوۡفَ أَسۡتَغۡفِرُ لَكُمۡ رَبِّيٓۖ إِنَّهُۥ هُوَ ٱلۡغَفُورُ ٱلرَّحِيمُ
٩٨ ﴾ [يوسف: ٩٧، ٩٨]
(তারা বলল: হে আমাদের বাবা! আমাদের পাপের জন্য
আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করুন, নিশ্চয়ই আমরা অপরাধী, বাবা বলল: আমি আমার প্রতিপালকের নিকট তোমাদের জন্য ক্ষমা
প্রার্থনা করবো, নিশ্চয়ই তিনি অতি ক্ষমাশীল দয়ালু।) [সূরা
ইউসুফ: ৯৭-৯৮] তারা তাদের পিতা ইয়াকুব আলাইহিস সালামের নিকট তাদের জন্য আল্লাহর
কাছে ক্ষমা চাইতে বলল, তিনি জীবিত এবং উপস্থিত ছিলেন।
এমনিভাবে মুমিনদের জন্য বৈধ করা হয়েছে যে, তারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জীবদ্দশায় তাঁর নিকট
এসে তাঁর মাধ্যমে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইবে। তিনি বলেন:
﴿وَلَوۡ أَنَّهُمۡ إِذ ظَّلَمُوٓاْ أَنفُسَهُمۡ جَآءُوكَ فَٱسۡتَغۡفَرُواْ ٱللَّهَ
وَٱسۡتَغۡفَرَ لَهُمُ ٱلرَّسُولُ لَوَجَدُواْ ٱللَّهَ تَوَّابٗا رَّحِيمٗا ٦٤ ﴾ [النساء: ٦٤]
“এবং তারা যদি স্বীয় জীবনের উপর অত্যাচার করার পর
আপনার নিকট এসে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতো এবং রাসূলও তাদের জন্য আল্লাহর
নিকট ক্ষমা চাইতো, তবে নিশ্চয়ই তারা আল্লাহকে তাওবা গ্রহণকারী
করুনাময়ী হিসাবে পেত।” [সূরা নিসা/ ৬৪]
এটি তাঁর জীবদ্দশায়, কিন্তু
তাঁর মৃত্যুর পর আমাদের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতে তাঁর নিকট বলা জায়েয নেই।
বরং আমরা কোনো সৎ জীবিত উপস্থিত লোকের মাধ্যমে আল্লাহর নিকট চাইতে পারি। যেমনিভাবে
সাহাবায়ে কেরামগণ করতেন, আল্লাহ তাদের সকলের উপর সন্তুষ্ট
হোন। এ কারণে উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
এর মৃত্যুর পর তাঁর চাচা আব্বাসকে আল্লাহর নিকট তাদের জন্য দো‘আ
করতে বললেন।
এ প্রকার অসীলা বৈধ হওয়ার অন্যতম একটি দলীল হলো, সেই
বেদুঈনের হাদীস, যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে বলল: হে আল্লাহর রাসূল! ধন সম্পদ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, পরিবার পরিজন অনাহারে থাকছে, অতএব আপনি
আমাদের জন্য আল্লাহর নিকট দো‘আ করুন, তিনি
যেন আমাদের উপর বৃষ্টি বর্ষন করেন। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম তাঁর দু’হাত তুলে দো‘আ
করলেন।[17]
অনুরূপভাবে আনাস ইবন মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহু এর বর্ণিত
হাদীসটি লক্ষ্য করুন, তাতে এসেছে যখন অনাবৃষ্টি হতো তখন উমর রাদিয়াল্লাহু
আনহু আববাস ইবন আব্দুল মুত্তালিব রাদিয়াল্লাহু আনহু এর মাধ্যমে বৃষ্টি চাইতেন।
তিনি বলতেন: হে আল্লাহ! আমরা আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অসীলায়
তোমার নিকট বৃষ্টি চাইতাম তুমি আমাদেরকে বৃষ্টি দিতে, আর এখন
আমরা আমাদের নবীর চাচার অসীলায় তোমার নিকট বৃষ্টি চাচ্ছি, তুমি
আমাদেরকে বৃষ্টি দাও। তিনি বলেন: অতঃপর
তাদেরকে বৃষ্টি দেওয়া হতো। [বুখারী][18]
“আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু আল্লাহর নিকট দো‘আ করতেন ফলে তাদেরকে বৃষ্টি দেওয়া হতো।
এ হাদীসে প্রমাণিত হয় যে, কোনো
সৎ জীবিত উপস্থিত ব্যক্তির নিকট তোমার জন্য আল্লাহর কাছে দো‘আ
চাওয়া বৈধ।
এটা প্রমাণ করে যে, এ প্রকার
অসীলা জায়েয আছে। কারণ মুয়াবিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহু ইয়াযিদ ইবন আসওয়াদকে উপস্থিত
রেখে তাদের জন্য আল্লাহর নিকট দো‘আ করতে বলেছেন।
এ কারণে ফেকাহবিদগণ ইসতিস্কার নামাযে উপস্থিত
কোনো সৎ জীবিত লোকের অসীলা করে বৃষ্টি চাওয়া মুস্তাহাব বলেছেন, তাতে
কবুল হওয়ার সম্ভাবনা বেশী।
দো‘আর ক্ষেত্রে বৈধ অসীলার
প্রকারের বর্ণনা এখানেই শেষ করলাম। এ সবগুলোই আল্লাহর বাণী:
﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ ٱتَّقُواْ ٱللَّهَ وَٱبۡتَغُوٓاْ إِلَيۡهِ
ٱلۡوَسِيلَةَ وَجَٰهِدُواْ فِي سَبِيلِهِۦ لَعَلَّكُمۡ تُفۡلِحُونَ ٣٥ ﴾ [المائدة: ٣٥]
“হে মুমিনগণ, তোমরা
আল্লাহকে ভয় কর এবং তাঁর নিকট অসীলা
তালাশ কর।” এর অন্তর্ভুক্ত।
শরিয়তের দৃষ্টিতে অবৈধ অসীলা
অসীলার প্রকারগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় প্রকার শুরু
করতে যাচ্ছি, আর সেটি হচ্ছে, শরিয়তের
দৃষ্টিতে অবৈধ অসীলা:
তা হলো প্রতিটি সেই অসীলা কুরআন বা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হাদীস থেকে যার কোনো দলীল নেই।
এর উদাহরণের ক্ষেত্রে আমি দো‘আর
সহিত সম্পৃক্ত উদাহরণগুলোই সীমাবদ্ধ রাখব, কেননা অবৈধ
অসীলাগুলো যেমন: আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে সৎলোক এবং নবী রাসূলগণের দোহাই দিয়ে
আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা। যেমন এ কথা বলা যে, হে আল্লাহ, আমি
তোমার নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অসীলায় বা আবু বকর রাদিয়াল্লাহু
আনহু এর অসীলায় বা অমুক শাইখের অসীলায় বলছি, তুমি আমার পাপগুলো
ক্ষমা করে আমাকে অনুগ্রহ কর।
এমনিভাবে কোনো পবিত্র ভূমি এবং কোনো ভালো সময়কে
অসীলা করা। যেমন: এ কথা বলা যে, হে আল্লাহ আমি কা‘বার অসীলায় এবং রমাযান ও কদরের
রাত্রির অসীলায় প্রার্থনা করছি, তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও
ইত্যাদি।
উল্লেখিত সবগুলো পদ্ধতিই শরিয়তের দৃষ্টিতে হারাম।
এবং তা সবচেয়ে নিকৃষ্ট বিদয়াত। কারণ এর কোনোটাই জায়েয হওয়ার উপর কুরআন হাদীসের
দলীল প্রমাণ নেই।
কুরআন হাদীস এবং এ উম্মতের সালাফদের থেকে যত
অসীলা এসেছে এর কোনটাতেই এমন কোনো অসীলা নেই, যাতে কোনো সৃষ্টির
দোহাই দিয়ে আল্লাহর নিকট চাওয়া হয়েছে। এটি
উম্মতের অধিকাংশ উলামার মত।
শাইখুল ইসলাম তার কিতাব (আল ইস্তিগাছা) এর মধ্যে
বলেছেন : এখনো আমি আমার সাধ্যমত সালাফগণ, ইমামগণ এবং
উলামাদের মতামত খুঁজছি যে, দো‘আর
ক্ষেত্রে তাদের কেউ কি সৎলোকদের অসীলা জায়েয স্বীকৃতি দিয়েছেন? বা
তাদের কেউ কি এরূপ করেছেন? এর কোনো কিছুই পাইনি ।
এরপর আবু মুহাম্মদ ইবন আব্দুস সালাম-এর ফাতওয়াগুলো
দেখেছি, তিনি ফাতওয়া দিয়েছেন যে, (নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম ব্যতীত কারো অসীলা জায়েয নেই, আর নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অসীলা জায়েয হওয়ার জন্যও শর্ত হচ্ছে যে, এ ব্যাপারে বর্ণিত সহীহ
হাদীস থাকতে হবে।)
বস্তুত আবু মুহাম্মদ যা বলেছেন সেটি সহীহ নয়, কেননা তার পূর্বে সালাফদের কেউ এ কথা বলেননি। তাছাড়া এ মাসআলায়
তার উল্লেখ করা দলীলও স্পষ্ট নয়, সামনে তা আসবে, বরং তিনি যা বলেছেন একথার কোনো প্রমাণ নেই।
আলেমগণ কোনো ব্যক্তির সত্তাকে অসীলা করার কঠোর
নিন্দা করেছেন।
ইমাম আবু হানিফা (রাহমতুল্লাহ আলাই্হি) বলেন: “কারও
জন্য এটা জায়েয নেই[19]
যে, সে আল্লাহকে তাঁর নিজ সত্তা ব্যতীত অন্য কারও অসীলা দিয়ে ডাকবে।”
এ ব্যাপারে অনুমোদিত দো‘আ
হলো সেই নির্দেশিত দো‘আ, যা আল্লাহর নিম্নোক্ত বাণী থেকে
পাওয়া যায়। তিনি বলেন,
﴿ وَلِلَّهِ ٱلۡأَسۡمَآءُ ٱلۡحُسۡنَىٰ فَٱدۡعُوهُ بِهَاۖ ﴾ [الاعراف: ١٨٠]
“আল্লাহর সুন্দর সুন্দর নাম রয়েছে তোমরা তা
দ্বারা তাঁকে ডাক।” [সূরা আল-আ‘রাফ: ১৮০]
আবু ইউসুফ (রহমতুল্লাহ আলাইহি) বলেন: আমি হারাম
মনে করি[20]
যে কেউ বলুক: বে হক্কে ফুলান (অমুকের অধিকারের অসীলায়), বা ‘বে
হক্কে আম্বিয়ায়েকা ও রুসুলিকা’ (তোমার নবী ও রাসূলগণের অধিকারের অসীলায়) এবং বে
‘হক্কিল বাইতুল হারাম ওয়াল মাশআরিল হারাম (বাইতুল হারাম ও মাশ‘আরিল হারামের হক্কের
অসীলায়)।
কুদুরী বলেন: কোনো সৃষ্টির মাধ্যম দিয়ে কোনো কিছু
চাওয়া জায়েয নেই, কারণ শ্রষ্টার উপর সৃষ্টির কোনো হক্ব নেই
বিধায় তা সবার ঐকমত্যে জায়েয হবে না।
এগুলো হানাফী আলেমগণের মত, শুধু
আমরাই সৃষ্টির সত্তাকে অসীলা করা বা তার বরাত দিয়ে চাওয়া হারাম বলি না, রবং আমাদের পূর্বেকার আলেমগণের মতও তাই। যদি এ পুস্তিকাটির কলেবর
বৃদ্ধি পাওয়ার আশংকা না থাকত, তবে তবে
যেমনিভাবে ইমাম আবু হানিফা এবং তার সহচরদের মতামত ও দলীলগুলো পেশ করেছি, তেমনি ভাবে আমি অন্যান্য পূর্বসূরী ইমামগণের মতামত ও দলীলগুলোও
পেশ করতাম।
সৃষ্টির সত্তাকে আল্লাহর নিকট অসীলা করা এবং আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোনো সৃষ্টিকে ডাকার মধ্যে পার্থক্য
গুরুত্বপূর্ণ দু’টি মাসআলার
আলোচনা অবশিষ্ট রয়েছে:
প্রথম মাসআলাটি হচ্ছে: কোনো সৃষ্টির সত্তাকে আল্লাহর নিকট অসীলা করা এবং
আল্লাহ ব্যতীত কোনো সৃষ্টির নিকট প্রার্থনা করা ও কিছু চাওয়ার মধ্যে পার্থক্য করা
ওয়াজিব।
কোনো সৃষ্টির
সত্তার অসীলা এবং তার দোহাই দিয়ে চাওয়ার উদাহরণ যেমন কেউ বলল: হে আল্লাহ! তোমার
নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অসীলায় বা তোমার নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সত্তার অসীলায় আমাকে ক্ষমা কর, আমাকে
অনুগ্রহ কর এবং জান্নাতে প্রবেশ করাও। এ প্রকার দো‘আ শির্ক
নয় বরং বিদ‘আত।
এ প্রকার দো‘আ যদি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ব্যতীত অন্য কারো নিকট
করে তবে তা ছোট শির্ক হবে, কিন্তু এতে সে দ্বীন থেকে সে বের
হয়ে যাবে না। যেমন কেউ বলল: হে আল্লাহ আব্বাস বা আব্দুল কাদীরের সত্তার অসীলায় . .
. ইত্যাদি।
অপরদিকে আল্লাহ তা‘আলার
ন্যায় কোনো সৃষ্টিকে ডাকা, যেমন কেউ বলল: হে আল্লাহর রাসূল! সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার বিপদ দূর করে দিন, বা আমার ঋণ পরিশোধ
করে দিন, অথবা আমার রোগ ভাল করে দিন। এটি অসীলা নয় বরং এটি
বড় শির্ক, তাতে সে ইসলাম থেকে বের হয়ে যাবে, কারণ
দো‘আ একটি ইবাদত, আর কোনো ইবাদত আল্লাহ
ব্যতীত অন্য কারো জন্য করা সকল আলেমের ঐকমত্যে বড় শির্ক। আল্লাহ তা‘আলা
তাঁর নবীকে বলেন:
﴿ وَلَا تَدۡعُ مِن دُونِ ٱللَّهِ مَا لَا يَنفَعُكَ وَلَا يَضُرُّكَۖ فَإِن
فَعَلۡتَ فَإِنَّكَ إِذٗا مِّنَ ٱلظَّٰلِمِينَ ١٠٦ ﴾ [يونس: ١٠٦]
“আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাউকে ডাকবেন না, যারা আপনার কোনো ক্ষতিও করতে পারবেনা এবং কোনো উপকারও করতে পারবেনা, তারপরও যদি আপনি এরকম করেন তবে আপনি জালেমদের অন্তর্ভুক্ত হবেন।”
[সূরা ইউনুস: ১০৬]
তিনি আরো বলেন:
﴿ ذَٰلِكَ بِأَنَّ ٱللَّهَ هُوَ ٱلۡحَقُّ وَأَنَّ مَا يَدۡعُونَ مِن دُونِهِۦ
هُوَ ٱلۡبَٰطِلُ وَأَنَّ ٱللَّهَ هُوَ ٱلۡعَلِيُّ ٱلۡكَبِيرُ ٦٢ ﴾ [الحج: ٦٢]
“আর আল্লাহই সত্য এবং আল্লাহ ব্যতীত যাদের তারা
ডাকে তারা বাতিল এবং নিশ্চয়ই আল্লাহ মহামহিম।” [সূরা হজ্জ/৬২]
তিনি আরো বলেন:
﴿ وَمَن يَدۡعُ مَعَ ٱللَّهِ إِلَٰهًا ءَاخَرَ لَا بُرۡهَٰنَ لَهُۥ بِهِۦ فَإِنَّمَا
حِسَابُهُۥ عِندَ رَبِّهِۦٓۚ إِنَّهُۥ لَا يُفۡلِحُ ٱلۡكَٰفِرُونَ ١١٧ ﴾ [المؤمنون: ١١٧]
“যে ব্যক্তি আল্লাহর সহিত অন্য কাউকে ইলাহ হিসাবে
ডাকবে যার প্রমাণ তার নিকট নেই, তার হিসাব তার পালন কর্তার
নিকট রয়েছে, নিশ্চয়ই কাফেরগণ মুক্তি পাবেনা।” [সূরা মুমিনূন/
১১৭]
তিনি আরো বলেন:
﴿ وَلَئِن سَأَلۡتَهُم مَّنۡ خَلَقَ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضَ لَيَقُولُنَّ
ٱللَّهُۚ قُلۡ أَفَرَءَيۡتُم مَّا تَدۡعُونَ مِن دُونِ ٱللَّهِ إِنۡ أَرَادَنِيَ ٱللَّهُ
بِضُرٍّ هَلۡ هُنَّ كَٰشِفَٰتُ ضُرِّهِۦٓ أَوۡ أَرَادَنِي بِرَحۡمَةٍ هَلۡ هُنَّ مُمۡسِكَٰتُ
رَحۡمَتِهِۦۚ قُلۡ حَسۡبِيَ ٱللَّهُۖ عَلَيۡهِ يَتَوَكَّلُ ٱلۡمُتَوَكِّلُونَ ٣٨ ﴾ [الزمر: ٣٨]
“আর যদি তাদেরকে জিজ্ঞাসা করেন যে,
আকাশ এবং জমীনকে কে সৃষ্টি করেছে? অবশ্যই তারা বলবে :
আল্লাহ! বলুন, আমাকে জানাও যে, আমার আল্লাহ যদি আমার কোনো ক্ষতি করতে চান, তবে
তোমরা আল্লাহকে ছাড়া আর যাদেরকে ডাক, সে সব কি আমার থেকে সে ক্ষতি দূর করতে পারে?
অথবা আল্লাহ যদি আমার প্রতি কোনো দয়া করতে চান, তবে কি সে সব আমার থেকে সে দয়া
রুখতে পারে? বলুন, আমার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট, তাঁর উপরই যেন ভরসাকারীগণ ভরসা করে” [সূরা
যুমার/৩৮]
তিনি আরো বলেন:
﴿ وَأَنَّ ٱلۡمَسَٰجِدَ لِلَّهِ فَلَا تَدۡعُواْ مَعَ ٱللَّهِ أَحَدٗا ١٨ ﴾ [الجن: ١٨]
“সকল মাসজিদ আল্লাহর জন্য, কাজেই
তোমরা আল্লাহর সাথে কাউকে ডেকোনা।” [সূরা
আল-জিন্ন, ১৮]
এ বিধান হলো সেই ব্যক্তির ব্যাপারে,
যে ব্যক্তি আল্লাহ ব্যতীত কারো নিকট এমন কিছু চাইবে যা তার ক্ষমতার বাইরে।
অতএব, তা যেন অসীলার মাসআলার সাথে মিশে না যায়,
কেননা অসীলা এক বিষয় আর আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও কাছে কিছু চাওয়া অন্য বিষয়।
দ্বিতীয়টি মাসআলাটি হচ্ছে: সৃষ্টির সত্তার অসীলা ধরা জায়েয হওয়ার কোনো দলীল বা
প্রমাণ নেই।
যারা সৃষ্টির সত্তার অসীলা জায়েয বলেছে, তাদের নিকট নির্ভেজাল কোনো দলীল বা প্রমাণ নেই। হয়তো তারা এমনসব
প্রমাণ পেশ করবে যা সহীহ কিন্তু মূলত তা অষ্পষ্ট, বরং তা তাদের
দাবীর সপক্ষে কোনো প্রমানই বহন করেনা। নতুবা তাদের পেশ করা দলীল হবে অশুদ্ধ; সনদের
দিক থেকে সহীহ নয়।
[সহীহ হাদীস দিয়ে ভুল পদ্ধতিতে দলীল গ্রহণ করার
প্রমাণ]
(একটি সন্দেহ ও তার অপনোদন)
যেমন: সহীহ বুখারীতে বর্ণিত আনাস রাদিয়াল্লাহু
আনহু এর হাদীস দ্বারা কোনো সত্তার অসীলা জায়েযের দলীল গ্রহণ করা। সেখানে এসেছে, “উমর
ইবনে খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু এর যামানায় যখন অনাবৃষ্টি হত, তখন
তিনি আব্বাস ইবন আব্দুল মুত্তালিব রাদিয়াল্লাহু আনহু এর অসীলায় বৃষ্টি চাইতেন, তিনি বলতেন: হে আল্লাহ আমরা তোমার নবীর অসীলায় বৃষ্টি চাইতাম
তুমি আমাদেরকে বৃষ্টি দিতে, আর এখন আমরা নবীর চাচার অসীলায়
বৃষ্টি চাচ্ছি, তুমি আমাদেরকে বৃষ্টি দাও। তিনি বলেন : তখন
আমাদেরকে বৃষ্টি দেওয়া হতো।”
কিছু লোক ধারণা করে যে, এ
অসীলা ছিল আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু এর সত্তার অসীলা, অথচ তা
সঠিক নয়। বরং এ অসীলা ছিল আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু এর দো‘আর
অসীলা। যেমনিভাবে তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে
করেছিলেন। কেননা সাহাবীগণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জীবদ্দশায়
তাঁর নিকট এসে তাঁকে অসীলা করে চাইতেন “তাঁকে বলতেন তাদের জন্য আল্লাহর নিকট দো‘আ করার জন্য। যেমন এসেছে এক বেদুইনের হাদীসে, যে
ব্যক্তি জুমআর দিন মাসজিদে এসেছে, আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুমআর খুৎবা দিচ্ছিলেন, অতঃপর সে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট বৃষ্টির জন্য দো‘আ
চাইলে তিনি আল্লাহর নিকট বৃষ্টি চাইলেন। আবার পরবর্তী জুমআতে সেই বেদুইন এসে
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট রাস্তা ঘাট বন্ধ হয়ে যাওয়ার
এবং ঘর বাড়ী ভেঙ্গে যাওয়ার অভিযোগ করে আল্লাহর নিকট তাঁকে বৃষ্টি থামানোর জন্য দো‘আ করতে বলল।
বস্তুত এ হলো বৈধ অসীলা।
একটু চিন্তা করে দেখুন, উমর
রাদিয়াল্লাহু আনহু কিভাবে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অসীলা পরিত্যাগ
করে তাঁর চাচার দো‘আর অসীলার দিকে ফিরে গেলেন,
কারণ তিনি জানেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এর মৃত্যুর পর তাঁর অসীলা চাওয়া অসম্ভব। কেননা তাঁর মাধ্যমে আল্লাহর
নিকট কিছু চাওয়া একটি ইবাদত, আর সেটি একটি আমল যা তাঁর
মৃত্যুর পর বন্ধ হয়ে গেছে।
তাছাড়া উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু এর এ কাজটি কোনো সত্তার
অসীলা জায়েয হওয়ার উপর দলীল গ্রহণ করাকে যে জিনিস বাতিল করে, তা
হলো: আল্লামা ইবনে হাজার (রহমতুল্লাহ আলাইহি) আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু এর দো‘আর গুণাগুণের যে বর্ণনা দিয়েছেন তা। তিনি উল্লেখ করেছেন যে, যুবাইর ইবন বাক্কার তার কিতাব (আল আনসাব) এ বলেছেন : যখন উমর রাদিয়াল্লাহু
আনহু আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু এর অসীলায় বৃষ্টি চাইলেন, তখন
আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেছিলেন: (হে আল্লাহ, যে কোনো বিপদ
শুধু অপরাধের কারণেই আসে এবং কেবল তাওবার মাধ্যমেই তা দূর হয়, কাজেই
তোমার নবীর নিকট আমার ব্যক্তিত্ব থাকার কারণে লোকজন আমার মাধ্যমে তোমার সম্মুখীন
হয়েছে, আমাদের অপরাধ নিয়ে তোমার নিকট এই হাত বাড়ালাম এবং
তাওবার মাধ্যমে তোমার নিকট আমাদের মাথা ঝুকালাম, তুমি
আমাদেরকে বৃষ্টি দাও।)
এই সেই অসীলা যা উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু এবং
সাহাবাবৃন্দ আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুর নিকট চেয়েছিলেন, তারা
তাকে আল্লাহর নিকট তাদের জন্য দো‘আ করতে বলেছিলেন। তাহলে
কিভাবে বলা যায় যে, তারা আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুর সত্তার
অসীলা এবং তার দোহাই দিয়ে চেয়েছিলেন? তা একেবারেই অসম্ভব
ব্যাপার।
অনুরূপভাবে হাফেজ ইসমাঈলী তার কিতাব (মুস্তাখরাজ)
এ সহীহ সনদে এ হাদীসটি নিয়ে এসেছেন এই শব্দে: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
এর যুগে তারা যখন অনাবৃষ্টিতে ভোগতো তখন তিঁনি তাদের জন্য বৃষ্টি চাইতেন, অতঃপর তাদেরকে বৃষ্টি দেওয়া হতো, কিন্তু
যখন উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু এর খেলাফত আসলো . . .)
এতে ষ্পষ্ট প্রমাণিত হয় যে, নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অসীলায় তাদের বৃষ্টি চাওয়া ছিল তাঁর জীবদ্দশায়।
[অপর একটি সন্দেহের অপনোদন]
উক্ত হাদীসের অনুরূপ আরেকটি হাদীস দ্বারা কেউ কেউ
দলীল পেশ করে সন্দেহে নিপতিত করতে থাকে, (অথচ তাও দলীল হিসেবে পেশ করার জন্য ভুল
পদ্ধতিতে পেশ করা হয়েছে) তা হচ্ছে, উসমান ইবন হানিফের হাদীস। হাদীসটি হচ্ছে, এক
অন্ধ ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এসে বলল: আপনি
আল্লাহর নিকট আমার আরোগ্যের জন্য দো‘আ করুন, তিনি
বললেন: তুমি যদি চাও তবে আমি তোমার জন্য দো‘আ করব, আর যদি ধৈর্য্য ধারণ কর তবে তোমার জন্য সেটিই ভাল। সে বলল: আপনি দো‘আ করুন, তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে নির্দেশ দিলেন ভালোভাবে অজু করে দু’রাকাত
নামায পড়ে এ দো‘আ করার জন্যে: (হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট
প্রার্থনা করছি এবং তোমার নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, রহমতের
নবীর মাধ্যমে তোমার সম্মুখীন হয়েছি, হে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমি আমার এ প্রয়োজনের জন্য আপনার মাধ্যমে আমার প্রতিপালকের দিকে
মুখ করেছি, যাতে আমাকে তা দেওয়া হয়। হে আল্লাহ! আমার
ব্যাপারে তুমি তাঁর সুপারিশ কবুল কর।) বর্ণনাকারী বললেন: লোকটি এরকম করলে তার রোগ
ভাল হয়ে গেল। হাদীসটি ইমাম আহমদ ও অন্যান্যরা সহীহ সনদে বর্ণনা করেছেন।
এই হাদীসটিও কোনো সত্তার অসীলার উপর দলীল বহন করে
না, বরং তা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের
জীবদ্দশায় তাঁর দো‘আর মাধ্যমে আল্লাহর নিকট চাওয়া হয়েছে। আর
এটিই বৈধ অসীলা।
আর এটি প্রমাণ করে যে, অন্ধ
ব্যক্তিটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে বলল: আপনি আমার রোগমুক্তির
জন্য আল্লাহর নিকট দো‘আ করুন। অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম তাকে দো‘আ করার অঙ্গিকার দিয়ে বলেছেন : তুমি যদি
চাও তবে তোমার জন্য দো‘আ করব আর যদি . . .)
তারপর অন্ধলোকটি দো‘আর জন্য
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জোর দিয়ে বলল যে, (আপনি
দো‘আ করুন।)
তারপরও লোকটির দো‘আ ছিল এই
: (হে আল্লাহ ! আমার ব্যাপারে তুমি তাঁর সুপারিশ গ্রহণ কর।) লোকটির এ কথার
মাধ্যমেই রাসূলের সত্তার অসীলা গ্রহণের সম্ভাবনা রহিত হয়ে গেল, কারণ
এ সুপারিশ হলো দো‘আ। অর্থাৎ “হে আল্লাহ আমার ব্যাপারে আপনি
আপনার নবীর সুপারিশ কবুল করুন”। অর্থাৎ আমার ব্যাপারে তাঁর দো‘আ।
হাদীসের কিছু কিছু বর্ণনায় এসেছে: (হে আল্লাহ
আমার ব্যাপারে তাঁর সুপারিশ গ্রহণ কর এবং তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ গ্রহণ কর।)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ব্যাপারে অন্ধ ব্যক্তির সুপারিশ
কিভাবে হয়?! বস্তুত তার অর্থ হচ্ছে, “তোমার নিকট আমার চাওয়া
হলো যে, তুমি আমার ব্যাপারে তোমার নবীর সুপারিশ গ্রহণ কর।
উল্লেখিত সবগুলো কথাই প্রমাণ করে যে, অন্ধ ব্যক্তির কথা ছিল (হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট প্রার্থনা
করছি এবং তোমার নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রহমতের নবীর মাধ্যমে
তোমার সম্মুখীন হয়েছি) এতে শব্দ গোপন রয়েছে, সেটি হলো: আমি
তোমার নিকট প্রার্থনা করছি এবং তোমার নবীর দো‘আর মাধ্যমে আমি
তোমার সম্মুখীন হয়েছি।)
নবী এবং সৎলোকদের সত্তার অসীলা নিষেধের অর্থ এই নয় যে, তাদের কোনো সত্তা এবং মর্যাদা নেই
প্রিয় ভাইসকল, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামের মৃত্যুর পর তাঁর অসীলা গ্রহণ করা এবং নবীগণ ও সৎলোকদের অসীলা গ্রহণ
করা আমাদের অপছন্দ হওয়ার অর্থ এটা নয় যে, আমরা তাদের সম্মান
ও মর্যাদাকে অস্বীকার করি, বা আমরা তাদের সম্পর্কে বিদ্বেষ
মনোভাব রাখি; যেমন অপবাদকারীগণ বলে থাকেন। তা একেবারেই
অসম্ভব। আমার পিতা-মাতা কুরবান হোক, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নিকট অধিক প্রিয় আমাদের নিজের নাফস, পরিবার
এবং ধন সম্পদের চেয়ে। এবং তাঁর সম্মান বহু উর্দ্ধে, ফলে তাঁর
প্রতি ঈমান আনা এবং তাঁকে মহব্বত করা ব্যতীত কারো ঈমান পূর্ণ হবে না।
রাসূলের জন্য আমাদের মহব্বত বা ভালবাসার দাবী
হলো: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে যেভাবে আল্লাহর ইবাদত
করতে বলেছেন, হুবহু সেভাবেই ইবাদত করব, তিনি
আমাদেরকে দ্বীনের মধ্যে বিদ‘আত সৃষ্টি করতে নিষেধ করেছেন এবং
তিনি ও তাঁর সাহাবাগণ রাদিয়াল্লাহু আনহুম যার উপর আছেন তা শক্তভাবে আঁকড়ে ধরার
জন্য নির্দেশ দিয়েছেন।
এর অতিরিক্ত কোনো কিছু করা ঘাটতি এবং ক্ষতি এবং
তা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ব্যাপারে এবং পবিত্র শরিয়ত যা আল্লাহ তা‘আলা রাসূলের সম্মানিত হস্তদ্বয়ের মাধ্যমে পরিপূর্ণ করেছেন তা
বর্ণনার ব্যাপারে অপবাদ দেওয়ার শামিল।
সুতরাং এ সমস্ত বাক্য, যা
বলা হয় যে: ‘যারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অসীলা গ্রহণ
করাকে জায়েয স্বীকৃতি দেয়না তারা তাঁর বিদ্বেষী’, এটি একটি
অপবাদ এবং প্রতারণা। এর দ্বারা তাদের উদ্দেশ্য হলো: কেবলমাত্র এক আল্লাহর ইবাদত
করা থেকে মানুষদের বাধা দেওয়া এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর
অনুসরণ থেকে দূরে রেখে কুপ্রবৃত্তি, মনগড়া মতবাদ এবং তারা যা
ভাল মনে করে তার অনুসরনের দিকে মানুষকে নিয়ে যাওয়া।
দেখুন একটি স্পষ্ট বাস্তব চিত্র, যা
আপনাকে প্রমাণ করে দিবে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এর মর্যাদা এবং সম্মান হয় সেই জিনিস দ্বারা যা শরিয়ত নিয়ে এসেছে, পক্ষান্তরে কোনো কৃপ্রবৃত্তি দ্বারা নয়। আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু
বলেন: “তাদের নিকট রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চেয়ে অধিক প্রিয়
কেউ ছিলনা, তারা যখন তাঁকে দেখতেন তখন কেউ দাড়াতেন না, কারণ তারা জানতেন যে, তিনি তা পছন্দ করেন
না।”[21]
এটি তিরমিযী বর্ণনা করেছেন।
এ ক্ষেত্রে দাড়ানো আগত ব্যক্তির সম্মান এবং তাকে
ভালবাসারই বহিঃপ্রকাশ, এতদসত্বেও সাহাবীগণ তা করতেন না, কেননা তারা জানতেন যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম তা পছন্দ করেন না। এতে কি বলা যায় যে, সাহাবায়ে
কেরামগণ রাসূলুল্লাহকে ভালোবাসতেন না? কখনো না,
তারা এ ধরণের অপবাদ থেকে বহু দূরে।
তারপর আরও একটি কথা হচ্ছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম দ্বীনের ব্যাপারে অধিক বাড়াবাড়ি এবং উচ্চ প্রশংসা বা তোষামোদ
করা থেকে সতর্ক করে দিয়েছেন যা আল্লাহর সহিত শির্ক করার দিকে নিয়ে যেতে পারে।
তিনি বলেছেন: (তোমরা আমার অধিক প্রশংসা করোনা
যেভাবে নাসারাগণ ইবনে মারিয়মের প্রশংসা করেছে, আমি বরং একজন
বান্দা, কাজেই তোমরা বল: আল্লাহর বান্দা ও তার রাসূল।)[22]
হাদীসটি উমর ইবন খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে ইমাম মুসলিম বর্ণনা করেছেন।
وصلى
الله وسلم على نبينا محمد وعلى آله وصحبه أجمعين .
সূচীপত্র
বিষয় পৃষ্ঠা
o
অনুবাদকের কথা - - - - - - - - - - - - - ১
o
তাওহীদের মহত্ম বর্ণনার
ভূমিকা - - -- - -- - ৩
o
অসীলার শাব্দিক ও
পারিভাষিক অর্থ - - - - - ১৭
· আরবদের ভাষায়
অসীলার দু’টি অর্থ - - -
১৮
·
আল কুরআনের দু’টি আয়াতে অসীলা - - ২০
·
ইবাদত সহীহ হওয়ার
শর্তসমুহ - - - - ২২
·
অসীলার প্রকার সমুহ - -
- - - -- - - - ২৫
·
বৈধ অসীলা - - - - - - -
- - - - - - - ২৫
·
বৈধ অসীলার প্রকারভেদ -
- - - - - - - - ২৭
·
প্রথম প্রকার - - - - -
- - - - - ---- - -- ২৭
·
দ্বিতীয় প্রকার - - - -
- - - - - - -- - - - ৩০
·
তৃতীয় প্রকার - - - - - - - - - - - - - - ৩৬
·
শরিয়তের দৃষ্টিতে অবৈধ
অসীলা - --- - - - ৩৯
·
সৃষ্টির সত্তাকে আল্লাহর
নিকট অসীলা করা এবং আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোনো সৃষ্টিকে ডাকার মধ্যে পার্থক্য ৪২
·
সৃষ্টির সত্তার
অসীলা জায়েয হওয়ার কোনো দলিল
আছে কি ? - - - - -
- - - ৪৪
·
নবীদের সত্তার অসীলা
হারাম হওয়ার অর্থ -- ৫০
·
সূচীপত্র - - - - - - -
- - - -
- - - - ৫৩
মোহাম্মদ ইদরীস আলী মাদানী
৩০/৫/২০০৮ ইং
ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া
২৭/৪/২০১৪ ইং
[19] ইমাম আবু হানিফা রহ. এর
শব্দ হচ্ছে, ‘লা ইয়াম্বাগী’। এ শব্দটি পূর্ববর্তী ইমাম ও মনিষীদের নিকট না জায়েয ও
কাজটি করা মুমিনের পক্ষে অসম্ভব এ ধরনের অর্থ বোঝাতো। [সম্পাদক]
[20] ইমাম আবু ইউসুফ,
‘আকরাহু’ শব্দটি ব্যবহার করেছেন। পূর্ববর্তী ইমামগণ ‘আকরাহু’ শব্দ দ্বারা হারাম
বোঝাতেন। এর জন্য দেখুন, ইবনুল কাইয়্যেম এর কিতাব ই‘লামুল মুওয়াক্কে‘য়ীন।
[সম্পাদক]
[22] মুসলিম, ৩৪৪৫।
_________________________________________________________________________________
সংকলন: ডক্টর আব্দুস সালাম বারজাস আল আব্দুল করীম
অনুবাদক: মোহাম্মদ ইদরীস আলী মাদানী
সম্পাদনা: ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া
সূত্র: আল মাকতাব আত তাআউনী লিদ দাওয়াহ ওয়া তাওইয়াতুল জালিয়াত, সালীল
আরও পড়ুনঃ আল্লাহকে পেতে মাধ্যম গ্রহণ
আরও পড়ুনঃ যখন চাইবে আল্লাহর কাছেই চাইবে
আরও পড়ুনঃ মাযার ও কবরের উদ্দেশ্যে কুরবানী, মান্নত ও হাদীয়া পেশ করা এবং এগুলোর প্রতি সম্মান প্রদর্শন
আরও পড়ুনঃ মাযারে প্রচলিত বিদআতসমূহ
আরও পড়ুনঃ কুরআন ও সহীহ হাদীসের মানদণ্ডে সূফীবাদ
আরও পড়ুনঃ আল্লাহ তাআলা কোথায় আছেন?
আরও পড়ুনঃ আল্লাহর অবস্থান বিবরণে আল কুরআন
আরও পড়ুনঃ আল্লাহ কি নিরাকার ?
“শিরক” বিষয়ের উপর আরও পড়তে এইখানে ক্লিক করুন।
পোস্টটি ভালো লাগলে শেয়ার করতে ভুলবেন না কিন্তু।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন