কুরআনুল কারিমের ছেড়া ও পুরনো
পৃষ্ঠা পোড়ানোর বিধান
কুরআনুল কারিম আল্লাহ তা‘আলার কালাম, যা তিনি জিবরিল ‘আলাইহিস
সালামের মাধ্যমে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর নাযিল করেছেন। অতএব
যে আল্লাহ ও কিয়ামত দিবসের উপর ইমান রাখে, তার উপর কুরআনুল কারিমের প্রতি সম্মান প্রদর্শন
করা ও অপমানের স্থান থেকে তা রক্ষা করা অবশ্য কর্তব্য। কোনো
মুসহাফ/ কুরআন যদি পুরনো হয়, ছিড়ে যায় ও তার পৃষ্ঠাগুলো ব্যবহার অনুপযোগী হয়, তাহলে
এমন জায়গায় রাখা যাবে না, যেখানে অপমানের সম্মুখীন হয়, ময়লা-আবর্জনায় পতিত হয়, মানুষ
বা জীব-জন্তু দ্বারা পিষ্ট হয়।
পুরনো কুরআন যদি বাঁধাই করে পাঠ উপযোগী করা সম্ভব হয়, তাহলে
পরিত্যক্ত না রেখে ব্যবহার করাই শ্রেয়। অনুরূপ প্রকাশক বা কারো অবহেলা ও ভুলের
কারণে কুরআনুল কারিম যদি ভুল ছাপা হয়, আর সংশোধন করা সম্ভব হয়, তাহলে সংশোধন করে
পাঠ উপযোগী করা জরুরি।
পুরনো বা ভুলছাপার কুরআন যদি পাঠ উপযোগী করা সম্ভব না
হয়, তাহলে অসম্মান ও বিকৃতি থেকে সুরক্ষার জন্য মুসহাফগুলো পোড়ানো কিংবা নিরাপদ
স্থানে দাফন করা জরুরি।
শায়খ সালেহ আল-ফাওযান বলেন: “পোড়ানো ও দাফন করা উভয় পদ্ধতি সাহাবিদের থেকে প্রমাণিত”।[1]
শায়খ সালেহ আল-ফাওযান বলেন: “পোড়ানো ও দাফন করা উভয় পদ্ধতি সাহাবিদের থেকে প্রমাণিত”।[1]
প্রথম পদ্ধতি: পুরনো
কিংবা ভুলছাপার কুরআন যদি দাফন করার সিদ্ধান্ত হয়, তাহলে পবিত্র স্থানে দাফন করবে,
যেখানে ভবিষ্যতে অপমানের সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনা নেই, এবং যা দাফনকারীর দৃষ্টিতে
সবচেয়ে নিরাপদ স্থান। মসজিদ বা মসজিদের জায়গায় দাফন করতে কোনো সমস্যা নেই। অনেক সালফে
সালেহীন রহ. তাদের পুরনো কুরআন মসজিদে দাফন করেছেন। ইমাম আহমদ রহ. বলেন: “আবুল জাওযা
রাহিমাহুল্লাহর একটি কুরআন পুরনো হয়ে গিয়েছিল, অতঃপর মসজিদে গর্ত করা হয়, তিনি
সেখানে তা দাফন করেন”।[2]
দ্বিতীয় পদ্ধতি: পুরনো, ব্যবহার অনুপযুক্ত ও ভুলছাপার কুরআন সুরক্ষার দ্বিতীয় পদ্ধতি হচ্ছে পোড়ানো। উসমান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কুরাইশি হরফের কুরআন রেখে অবশিষ্ট কুরআন পোড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন। ইমাম বুখারি রহ. বর্ণনা করেন:
«فَأَرْسَلَ عُثْمَانُ إِلَى حَفْصَةَ أَنْ أَرْسِلِي إِلَيْنَا بِالصُّحُفِ نَنْسَخُهَا فِي الْمَصَاحِفِ ثُمَّ نَرُدُّهَا إِلَيْكِ ، فَأَرْسَلَتْ بِهَا حَفْصَةُ إِلَى عُثْمَانَ ، فَأَمَرَ زَيْدَ بْنَ ثَابِتٍ ، وَعَبْدَ اللَّهِ بْنَ الزُّبَيْرِ ، وَسَعِيدَ بْنَ الْعَاصِ ، وَعَبْدَ الرَّحْمَنِ بْنَ الْحَارِثِ بْنِ هِشَامٍ ، فَنَسَخُوهَا فِي الْمَصَاحِفِ ...وَأَرْسَلَ إِلَى كُلِّ أُفُقٍ بِمُصْحَفٍ مِمَّا نَسَخُوا ، وَأَمَرَ بِمَا سِوَاهُ مِنْ الْقُرْآنِ فِي كُلِّ صَحِيفَةٍ أَوْ مُصْحَفٍ أَنْ يُحْرَقَ».
“... অতঃপর উসমান রাদিয়াল্লাহু
‘আনহু হাফসা রাদিয়াল্লাহু আনহার নিকট বলে পাঠান, আমার নিকট মুসহাফগুলো পাঠিয়ে দিন,
আমরা তা একাধিক মুসহাফে নকল করে আপনার নিকট ফেরত পাঠাব। অতঃপর তিনি উসমানের নিকট তা পাঠিয়ে দেন। উসমান
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু জায়েদ ইবনে সাবেত, আব্দুল্লাহ ইবনে জুবায়ের, সায়িদ ইবনে আস ও
আব্দুর রহমান ইবনে হারেস ইবনে হিশামকে নির্দেশ দেন, তারা অনেক মুসহাফ তৈরি করেন...
অতঃপর তাদের লিখিত এক-এক কপি তিনি প্রত্যেক অঞ্চলে প্রেরণ করেন এবং বিভিন্ন সহিফা
ও মুসহাফসমূহে সংরক্ষিত কুরআনের অন্যান্য অংশ পোড়ানোর নির্দেশ দেন”।[3]
উসমান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু যখন কুরাইশি হরফের কুরআন রেখে অবশিষ্ট
মুসহাফ পোড়ানোর নির্দেশ দেন, তখন কোনো সাহাবি তার বিরোধিতা করেননি। ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু
‘আনহু যদিও ইখতিলাফ করেছেন, কিন্তু তা কুরআন পোড়ানো সংক্রান্ত ছিল না, বরং তার ইখতিলাফ
ছিল এক হরফের কুরআন রেখে অন্যান্য ভাষার কুরআন নিঃশেষ করা সংক্রান্ত।
মুহাম্মদ বিন সালেহ আল-উসাইমিন রহ. বলেন: “যদি মুসহাফ পোড়ানো
হয়, তাহলে ভালো করে পুড়ে ছাই করা জরুরি, কারণ অনেক সময় পোড়ানোর পরও হরফ অবশিষ্ট
থাকে”।[4]
পুরনো কুরআন দাফন করা অপেক্ষা পোড়ানো উত্তম। কারণ সাহাবিদের
উপস্থিতিতে উসমান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কুরাইশি ভাষা ব্যতীত অন্যান্য ভাষার কুরআন
পুড়িয়েছেন। দ্বিতীয়ত কখনো উপর থেকে মাটি সরে গেলে দাফনকৃত কুরআনের অসম্মান হওয়ার
সম্ভাবনা রয়েছে। তাই পোড়ানো ও পোড়ানোর পর ছাইগুলো দাফন করা অধিক শ্রেয়। [উল্লেখ্য
বর্তমানে সাউদী আরবস্থ বাদশাহ ফাহাদ কুরআন প্রিন্টিং প্রেসে পোড়ানোর মেশিন রয়েছে
সেখানে ভুল বা নষ্ট মুসহাফকে পোড়ানো হয়, যাকে মাহরাক্বা বলা হয়। (সম্পাদক)]
তৃতীয় পদ্ধতি: মিশিনের সাহায্যে মুসহাফের পৃষ্ঠাগুলো টুকরো টুকরো করে আরবি হরফগুলো নিঃশেষ করা, যদিও ভালো করে টুকরো করা খুব কঠিন কাজ। কেউ কেউ এ পদ্ধতি সমর্থন করলেও অনেকে তা অপছন্দ করেছেন।
চতুর্থ পদ্ধতি: অনেকে ব্যবহার অনুপযুক্ত কুরআন বা তার পৃষ্ঠাগুলো পানিতে ফেলে দেন, তার কোনো দলিল আমাদের জনা নেই। কোনো আদর্শ পূর্বপুরুষ এরূপ করেছেন মর্মে আমাদের নিকট কোনো তথ্য নেই। দ্বিতীয়ত পানিতে ভাসমান যে কোনো কাগজ ময়লা ও আবর্জনার স্থানে গিয়ে ঠেকতে পারে, তাই এ পদ্ধতি গ্রহণ করা ঠিক নয়।
শায়খ আব্দুর রহমান সুহাইম বলেন: “কুরআনুল কারিমের পুরনো
ও ব্যবহার অনুপযুক্ত পৃষ্ঠা প্রযুক্তির সাহায্যে পুনরায় ব্যবহার করা বা অন্য কোনো
কাজে লাগানো বৈধ নয়, বরং নিরাপদ স্থানে দাফন করা কিংবা পোড়ানো জরুরি”।[5]
দোয়া ও যিকর সংক্রান্ত কাগজে যদি আল্লাহর নাম, কুরআনের আয়াত
বা তার অংশ বিশেষ থাকে, তাহলে অবশ্যই তার সাথে সম্মানের ব্যবহার করা জরুরি। অনুরূপ
হাদিসের কিতাবের সাথে সম্মানের আচরণ করা জরুরি, যদিও তার মর্যাদা কুরআনের সমান নয়।
পড়ে থাকা কুরআনের আয়াত বা আল্লাহর নাম অবশ্যই সম্মানের স্থানে রাখবে, যদিও রাস্তায়
চলার সময় এগুলো তালাশ করে করে হাঁটা জরুরি নয়। আল্লাহ ভালো জানেন।
সমাপ্ত
_________________________________________________________________________________
লেখক: সানাউল্লাহ নজির আহমদ
সম্পাদনা: ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া
সূত্র: ইসলাম প্রচার ব্যুরো, রাবওয়াহ, রিয়াদ, সৌদিআরব
আরও পড়ুনঃ কুরআনুল কারিমের কসম করার বিধান
আরও পড়ুনঃ ‘সাদাকাল্লাহুল আজিম’ বলার বিধান
আরও পড়ুনঃ আল-কুরআন ও তার সুমহান মর্যাদা
আরও পড়ুনঃ আমরা কিভাবে কুরআন বুঝব?
আরও পড়ুনঃ কুরআন তিলাওয়াতের ফজিলত
আরও পড়ুনঃ কুরআন তিলাওয়াত : ফযীলত ও আদব
আরও পড়ুনঃ কুরআন শিক্ষা: বিধান, পদ্ধতি ও ফযীলত
আরও পড়ুনঃ কুরআনের কয়েকটি বিশেষ সূরা ও আয়াতের ফজীলত
আরও পড়ুনঃ পবিত্র কুরআন পড়ার ফযীলতের হাদিস সমুহ
পোস্টটি ভালো লাগলে শেয়ার করতে ভুলবেন না কিন্তু।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন