নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম কি নূরের তৈরি?
প্রশ্ন: আমি দু’টি কিতাবে পড়েছি নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর
প্রথম সৃষ্টি, আল্লাহ তাকে স্বীয় নূর থেকে সৃষ্টি করেছেন, এবং তার কারণে অন্যান্য
মখলুক সৃষ্টি করা হয়েছে। এ বিষয়ে আমার জ্ঞান পরিপক্ব নয়, অতএব আমাকে স্পষ্ট করে
বলুন। শোকরান।
উত্তর: আলহামদুলিল্লাহ,
এ জাতীয় একটি প্রশ্ন সৌদি আরবের
স্থায়ী ফতোয়া বোর্ড ‘লাজনায়ে দায়েমা’র নিকট করা হয়েছিল, আমরা এখানে প্রশ্নসহ তা উল্লেখ
করছি: “প্রশ্ন: অনেক মানুষের বিশ্বাস, সকল
বস্তু মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের নূর থেকে
সৃষ্টি, আর তার নূর আল্লাহর নূর থেকে সৃষ্টি। তারা এ মর্মে হাদিস বর্ণনা করে: “আমি আল্লাহর নূর, আর প্রত্যেক বস্তু আমার
নূর থেকে সৃষ্ট”। তারা আরো বর্ণনা করে:
“আল্লাহ তা‘আলা সর্বপ্রথম মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের
নূর সৃষ্টি করেছেন”। এ জাতীয় হাদিসের কোনো ভিত্তি আছে কি? তাদের
আরেকটি হাদিস নিম্নরূপ:
" أنا عرب بلا عين أي رب أنا أحمد بلا ميم أي أحد "
“আমি আরব আইন ব্যতীত অর্থাৎ আমি رب (রব), আমি আহমদ মীম ব্যতীত
অর্থাৎ আমি أحد (আহাদ), একক সত্ত্বা বা
আল্লাহ”। এ জাতীয় কথার কোনো ভিত্তি আছে কি?
উত্তর:
আলহামদুলিল্লাহ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লামকে আল্লাহর নূর যদি এ অর্থে বলা হয় যে, তিনি আল্লাহর জাতি ও সত্ত্বাগত
নূর, তাহলে তা কুরআন বিরোধী, কারণ কুরআনে তাকে মানুষ বলা হয়েছে। আর যদি তাকে এ
অর্থে নূর বলা হয় যে, তার নিকট আল্লাহর কাছ থেকে নূর বা ওহী এসেছে, যা মানুষের
হিদায়েতের উসিলা, যা দ্বারা আল্লাহ যাকে ইচ্ছা হিদায়েত করেন, তাহলে এ অর্থ ঠিক
আছে। ‘লাজনায়ে দায়েমাহ’ থেকে এ বিষয়ে একটি ফতোয়া প্রকাশিত হয়েছে, এখানে হুবহু তা উল্লেখ
করছি:
[নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম নূর অর্থ তার মধ্যে বিদ্যমান রিসালাত ও হিদায়েতের নূর, যে নূর দ্বারা আল্লাহ স্বীয় বান্দাদের থেকে যাকে ইচ্ছা হিদায়েত করেন। এ নূর আল্লাহ প্রদত্ত। আল্লাহ তা'আলা বলেন:
[নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম নূর অর্থ তার মধ্যে বিদ্যমান রিসালাত ও হিদায়েতের নূর, যে নূর দ্বারা আল্লাহ স্বীয় বান্দাদের থেকে যাকে ইচ্ছা হিদায়েত করেন। এ নূর আল্লাহ প্রদত্ত। আল্লাহ তা'আলা বলেন:
﴿وَمَا كَانَ لِبَشَرٍ أَن يُكَلِّمَهُ ٱللَّهُ إِلَّا وَحۡيًا أَوۡ مِن وَرَآيِٕ
حِجَابٍ أَوۡ يُرۡسِلَ رَسُولٗا فَيُوحِيَ بِإِذۡنِهِۦ مَا يَشَآءُۚ إِنَّهُۥ عَلِيٌّ
حَكِيمٞ ٥١ وَكَذَٰلِكَ أَوۡحَيۡنَآ إِلَيۡكَ رُوحٗا مِّنۡ أَمۡرِنَاۚ مَا كُنتَ تَدۡرِي
مَا ٱلۡكِتَٰبُ وَلَا ٱلۡإِيمَٰنُ وَلَٰكِن جَعَلۡنَٰهُ نُورٗا نَّهۡدِي بِهِۦ مَن
نَّشَآءُ مِنۡ عِبَادِنَاۚ وَإِنَّكَ لَتَهۡدِيٓ إِلَىٰ صِرَٰطٖ مُّسۡتَقِيمٖ ٥٢ صِرَٰطِ
ٱللَّهِ ٱلَّذِي لَهُۥ مَا فِي ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَمَا فِي ٱلۡأَرۡضِۗ أَلَآ إِلَى ٱللَّهِ
تَصِيرُ ٱلۡأُمُورُ ٥٣ ﴾ [الشورى: ٥١، ٥٣]
“কোনো মানুষের এ মর্যাদা নেই যে, আল্লাহ
তার সাথে সরাসরি কথা বলবেন, ওহীর মাধ্যম, পর্দার আড়াল অথবা কোনো দূত পাঠানো ছাড়া।
তারপর আল্লাহর অনুমতি সাপেক্ষে তিনি যা চান তাই ওহী প্রেরণ করেন। তিনি তো মহীয়ান,
প্রজ্ঞাময়। অনুরূপভাবে (উপরোক্ত তিনটি পদ্ধতিতে) আমি তোমার কাছে আমার নির্দেশ থেকে
‘রূহ’কে ওহী যোগে প্রেরণ করেছি। তুমি জানতে না কিতাব কী এবং ঈমান কী? কিন্তু আমি
একে আলো বানিয়েছি, যার মাধ্যমে আমি আমার বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা হিদায়েত দান
করি। আর নিশ্চয় তুমি সরল পথের দিন নির্দেশনা দাও। সেই আল্লাহর পথ, যিনি আসমানসমূহ
ও জমিনে যা কিছু আছে তার মালিক। সাবধান! সব বিষয়ই আল্লাহর কাছে ফিরে যাবে”।[1]
এ নূর নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাধনায় লব্ধ নূর নয়, যেমন অনেক জিন্দিক ও
বদ্বীন ধারণা করে। তিনি রক্ত, মাংস ও হাড্ডির সমন্বিত মানুষ
ছিলেন। চিরাচরিত নিয়ম পিতা-মাতার সমন্বয়ে তার সৃষ্টি হয়েছে, তার জন্মের পূর্বে
কখনো তার সৃষ্টি হয়নি।
আর কতক মানুষ যা বলে: “আল্লাহ তা‘আলা
সর্বপ্রথম নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের নূর সৃষ্টি
করেছেন”। অথবা বলে: “আল্লাহ তা‘আলা স্বীয় চেহারা থেকে একমুষ্টি
নূর গ্রহণ করেন, সে মুষ্টিই হচ্ছে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম। অতঃপর আল্লাহ তার দিকে দৃষ্টি দেন, ফলে তাতে
বহু নূরের জ্যোতি ছিটকে পড়ে, যার প্রত্যেক টুকরো থেকে তিনি একজন করে নবী সৃষ্টি
করেছেন। অথবা আল্লাহ তা‘আলা নবী সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের নূর থেকে সকল মখলুক সৃষ্টি করেছেন”। এ
হাদিস ও এ জাতীয় অন্যান্য হাদিস নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম থেকে প্রমাণিত নয়।] পূর্বের ফতোয়া থেকে স্পষ্ট এ জাতীয় বিশ্বাস বাতিল।
এ ছাড়া আরো বর্ণনা করা হয় যে, أنا عرب بلا عين ‘আমি আরব আইন ব্যতীত’, অথবা বলা হয় أنا أحمد بلا ميم ‘আমি আহমদ মীম ব্যতীত’ তার কোনো ভিত্তি নেই।
আল্লাহর রুবুবিয়াতের কোনো সিফাত, অথবা আল্লাহর সাথে খাস কোনো সিফাত দ্বারা কাউকে
ভূষিত করা বৈধ নয়, এ জাতীয় সিফাত একমাত্র আল্লাহর সাথেই খাস, অতএব কাউকে ‘রব’ বলা
কিংবা কাউকে ‘একক সত্ত্বা’ বলা বৈধ নয়। কোনো রাসূল বা কোনো মখলুককে রব বা একক
সত্ত্বা বলে আখ্যায়িত করা বৈধ নয়। সাল্লাল্লাহু ‘আলা নাবিয়্যিনা মুহাম্মদ ওয়ালিহি,
ওয়াসাহবিহি ওয়াসাল্লাম”।[2] ফতোয়াটি
এখানে শেষ।
একটি প্রশ্ন: এ কথা কি বলা যাবে যে, আল্লাহ তা‘আলা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সৃষ্টি করেছেন বলেই আসমান ও জমিন সৃষ্টি করেছেন? বলা হয়: “যদি নবী না হতেন আসমানসমূহ সৃষ্টি করা হত না”। এ কথার অর্থ কি, হাদিসটি কি সহি? বিষয়টি আমাদের সামনে স্পষ্ট করুন।
উত্তর: আলহামদুলিল্লাহ,
নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লামের জন্য আসমান ও জমিন সৃষ্টি করা হয়নি, বরং আসমান ও জমিন সৃষ্টির কারণ
আল্লাহ তা‘আলা নিম্নের আয়াতে বলে দিয়েছেন:
﴿ٱللَّهُ ٱلَّذِي خَلَقَ سَبۡعَ سَمَٰوَٰتٖ وَمِنَ ٱلۡأَرۡضِ مِثۡلَهُنَّۖ يَتَنَزَّلُ
ٱلۡأَمۡرُ بَيۡنَهُنَّ لِتَعۡلَمُوٓاْ أَنَّ ٱللَّهَ عَلَىٰ كُلِّ شَيۡءٖ قَدِيرٞ وَأَنَّ
ٱللَّهَ قَدۡ أَحَاطَ بِكُلِّ شَيۡءٍ عِلۡمَۢا ١٢﴾ [الطلاق : ١٢]
“তিনি আল্লাহ, যিনি সাত আসমান এবং
অনুরূপ জমিন সৃষ্টি করেছেন, এগুলির মাঝে তার নির্দেশ অবতীর্ণ হয় যেন তোমরা জানতে
পার যে, আল্লাহ সর্ববিষয়ে ক্ষমতাবান এবং আল্লাহর জ্ঞানতো সব কিছুকে বেষ্টন করে
আছে”।[3]
প্রশ্নে উল্লেখিত হাদিস নবী সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর মিথ্যা অপবাদ, তার কোনো ভিত্তি
নেই। হে আল্লাহ আমাদের নবী, তার পরিবারবর্গ ও তার সকল সাথীর উপর সালাত ও সালাম নাযিল
করুন। দেখুন: ফতোয়াল লাজনায়ে দায়েমাহ।
সমাপ্ত
_________________________________________________________________________________
মুফতী: ইলমী গবেষণা ও ফতোয়া বিষয়ক স্থায়ী কমিটি
অনুবাদক: সানাউল্লাহ নজির আহমদ
সম্পাদনা: ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া
সূত্র: ইসলাম প্রচার ব্যুরো, রাবওয়াহ, রিয়াদ, সৌদিআরব
আরও পড়ুনঃ প্রশ্নোত্তরে ইসলামী জ্ঞান
আরও পড়ুনঃ প্রশ্নোত্তরে সহজ তাওহীদ শিক্ষা
আরও পড়ুনঃ মহিলা বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ ফতোয়া
আরও পড়ুনঃ প্রশ্নোত্তরে সিয়াম (১ম পর্ব)
আরও পড়ুনঃ প্রশ্নোত্তরে সিয়াম (২য় পর্ব)
আরও পড়ুনঃ সিয়াম বিষয়ক নির্বাচিত ফাতওয়া (১ম পর্ব)
আরও পড়ুনঃ সিয়াম বিষয়ক নির্বাচিত ফাতওয়া (২য় পর্ব)
আরও পড়ুনঃ সিয়াম বিষয়ক নির্বাচিত ফাতওয়া (৩য় পর্ব)
আরও পড়ুনঃ রমজান বিষয়ক ফতোয়া
আরও পড়ুনঃ প্রশ্নোত্তরে হজ্জ ও উমরা (১ম পর্ব)
আরও পড়ুনঃ প্রশ্নোত্তরে হজ্জ ও উমরা (২য় পর্ব)
আরও পড়ুনঃ কুফরীর সংজ্ঞা ও প্রকারভেদ
আরও পড়ুনঃ শিরকের সংজ্ঞা ও প্রকারভেদ
আরও পড়ুনঃ মুক্তিপ্রাপ্ত দলের পাথেয় (১ম পর্ব)
আরও পড়ুনঃ মুক্তিপ্রাপ্ত দলের পাথেয় (২য় পর্ব)
আরও পড়ুনঃ কোয়ান্টাম মেথড: এক ভয়াবহ শিরকী ফেতনার নাম!
আরও পড়ুনঃ কুরআন ও সহীহ হাদীসের মানদণ্ডে সূফীবাদ
আরও পড়ুনঃ আল্লাহকে পেতে মাধ্যম গ্রহণ
আরও পড়ুনঃ যখন চাইবে আল্লাহর কাছেই চাইবে
আরও পড়ুনঃ তাবীজ-কবজ, রিং, বালা, সুতা ইত্যাদী ব্যবহার
আরও পড়ুনঃ ছবি ও মূর্তির ব্যাপারে ইসলামের হুকুম
আরও পড়ুনঃ আল্লাহর অবস্থান বিবরণে আল কুরআন
আরও পড়ুনঃ আল্লাহ তাআলা কোথায় আছেন?
আরও পড়ুনঃ আল্লাহ কি নিরাকার ?
আরও পড়ুনঃ ১০টি ইসলাম ধ্বংসকারী বিষয়
আরও পড়ুনঃ ইসলাম বিনষ্টকারী কারণসমূহ
আরও পড়ুনঃ তাক্বদীরঃ আল্লাহ্র এক গোপন রহস্য (১ম পর্ব)
আরও পড়ুনঃ তাক্বদীরঃ আল্লাহ্র এক গোপন রহস্য (২য় পর্ব)
আরও পড়ুনঃ কেয়ামতের ভয়াবহতা ও তারপর (১ম পর্ব)
আরও পড়ুনঃ কেয়ামতের ভয়াবহতা ও তারপর (২য় পর্ব)
আরও পড়ুনঃ কাশ্ফুশ্ শুবহাত (সংশয় নিরসন)
আরও পড়ুনঃ কাদিয়ানীরা নিন্দনীয় কেন?
ডাউনলোড করুনঃ বইঃ দ্বীনী প্রশ্নোত্তর - ফ্রি ডাউনলোড
ডাউনলোড করুনঃ বই – ফতোওয়া আরকানুল ইসলাম (ফ্রি ডাউনলোড)
ডাউনলোড করুনঃ বইঃ কিতাবুত্ তাওহীদের ব্যাখ্যা - ফ্রি ডাউনলোড
ডাউনলোড করুনঃ বইঃ যা হবে মরণের পরে - ফ্রি ডাউনলোড
ডাউনলোড করুনঃ বইঃ কিয়ামতের আলামত - ফ্রি ডাউনলোড
ডাউনলোড করুনঃ বইঃ – মহা প্রলয় (ফ্রি ডাউনলোড)
পোস্টটি ভালো লাগলে শেয়ার করতে ভুলবেন না কিন্তু।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন