শনিবার, ১৬ এপ্রিল, ২০১৬

কুরআন ও সহীহ হাদীসের আলোকে ব্যভিচার ও সমকামিতার ভয়াবহ পরিণতি


ক্রম   বিষয়
1.     অবতরণিকা
2.     ব্যভিচার
3.     লজ্জাস্থান হিফাযতের বিশেষ কয়েকটি ফযীলত
4.     লজ্জাস্থান হিফাযত সফলতা অর্জনের একটি বিশেষ মাধ্যম
5.     লজ্জাস্থান হিফাযতকারী কখনো নিন্দিত নয়
6.     লজ্জাস্থান হিফাযত জান্নাতে প্রবেশের একটি বিশেষ চাবিকাঠি
7.     লজ্জাস্থান হিফাযত একান্তভাবে নেককারের পরিচয় বহন করে
8.     লজ্জাস্থান হিফাযত আল্লাহ তা‘আলার ক্ষমা পাওয়ার এক বিশেষ মাধ্যম
9.     লজ্জাস্থান হিফাযত আল্লাহ তা‘আলার বিশেষ ডাকে সাড়া দেওয়া
10.    লজ্জাস্থান হিফাযত অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধানের এক বিশেষ মাধ্যম
11.   লজ্জাস্থান হিফাযত সফলতাকামীদের পথ
12.  লজ্জাস্থান হিফাযত সম্মানেরই মুকুট
13.  লজ্জাস্থান রক্ষার পথে একান্ত বাধাসমূহ
14.  মহিলাদের নতুন নতুন মডেলের পোশাক-পরিচ্ছদ
15.  টিভি চ্যানেল
16.  ইন্টারনেট
17.  অশ্লীল ম্যাগাজিন ও রুচিহীন পত্র-পত্রিকা
18.  ক্যামেরাযুক্ত অত্যাধুনিক মোবাইল সেট
19.  নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা এবং গোপনে সহাবস্থান
20.  অসৎ বন্ধু-বান্ধবী
21.  বিলম্বে বিবাহ করা
22.  অপর কোনো পুরুষ বা মহিলার সাথে যে কোনো ধরনের শৈথিল্য দেখানো
23. যত্রতত্র চোখের দৃষ্টি ক্ষেপন
24.  বিশেষভাবে চারটি অঙ্গকে শরী‘আত সম্মতভাবে পরিচালিত করলে অনেকগুলো গুনাহ থেকে বাঁচা সম্ভব
25.  চোখ ও দৃষ্টিশক্তি
26. মন ও মনোভাব
27.  মুখ ও বচন
28. পদ ও পদক্ষেপ
29.  ব্যভিচারের অপকার ও তার ভয়াবহতা
30. ব্যভিচারের স্তর বিন্যাস
31.  ব্যভিচারের শাস্তি
32. দণ্ডবিধি সংক্রান্ত কিছু কথা
33. দণ্ডবিধি প্রয়োগের সময় চেহারার প্রতি লক্ষ্য রাখবে
34. যে কোনো দণ্ডবিধি মসজিদে প্রয়োগ করা যাবে না
35. সমকাম বা পায়ুগমন
36. সমকামের অপকার ও তার ভয়াবহতা
37. ধর্মীয় অপকারসমূহ
38. চারিত্রিক অপকারসমূহ
39. মানসিক অপকারসমূহ
40.  শারীরিক অপকারসমূহ
41.  সমকামিতার শাস্তি
42.  সমকামিতার চিকিৎসা
43. রোগাক্রান্ত হওয়ার আগের চিকিৎসা
44.  দৃষ্টিশক্তি হিফাযতের মাধ্যমে
45.  তা থেকে দূরে রাখে এমন বস্তু নিয়ে ব্যস্ততার মাধ্যমে
46. রোগাক্রান্ত হওয়ার পর চিকিৎসা
47.  সংক্ষিপ্তাকারে প্রস্তাবিত চিকিৎসাসমূহ
48. নিম্নোক্ত কয়েকটি কাজ করলে কারোর মধ্যে ধীরে ধীরে লজ্জাবোধ জন্ম নেয়


ভূমিকা
সমাজ নিয়ে যারা গবেষণা করেন এবং সমাজ-জমির বুক থেকে যারা আগাছা তুলে ফেলার চেষ্টা করেন, তাদের মধ্যে লেখক মোস্তাফিজুর রহমান মাদানী সাহেব একজন। হক জেনে ও মেনে নিয়ে তার প্রচার করার গুরুদায়িত্ব এবং তার পথে তার অদম্য প্রয়াস ও প্রচেষ্টা আমাকে মুগ্ধ করেছে।
সমাজ-সংস্কারের সহায়করূপে কাজে দেবে তার এ পুস্তিকাটিও। সমাজে এত পাপ ও পাপীর দাপট যে, অনেকের সাপ থেকে বাঁচা সম্ভব, কিন্তু পাপ থেকে বাঁচা সহজ নয়। বিশ্বায়নের যুগে দীন-বিমুখ সমাজ বহুবিধ পাপের বন্যায় হাবুডুবু খাচ্ছে। তা দেখে-শুনে প্রত্যেক দায়িত্বশীলের যে কর্তব্য হওয়া উচিৎ, তার কিঞ্চিৎ বহিঃপ্রকাশ এ পুস্তিকার প্রণয়ন।
মহান আল্লাহর কাছে আকুল মিনতি, তিনি যেন আমাদেরকে ও লেখককে কলমের জিহাদ চালিয়ে যাওয়ার তাওফীক দিন। দেশ-বিদেশে ইসলামী সর্বাঙ্গ-সুন্দর পরিবেশ গড়ার মহান লক্ষ্যে পুস্তক রচনার কাজ চালিয়ে যাওয়ার তাওফীক দিন এবং পাঠক-পাঠিকাকে পুস্তিকার নির্দেশানুযায়ী আমল করার প্রেরণা ও মুসলিম ঘর ও সমাজ গড়ার চেতনা দান করুন। আমীন।
বিনীত-
আব্দুল হামীদ আল-ফাইযী আল-মাদানী
আল-মাজমাআহ, সঊদী আরব
৩০/১১/১১


অবতরণিকা
সকল প্রশংসা একমাত্র আল্লাহ তাআলার জন্যে যিনি আমাদেরকে নিখাদ তাওহীদের দিশা এবং সুন্নাত ও বিদআতের পার্থক্যজ্ঞান দিয়েছেন। অসংখ্য সালাত ও সালাম তাঁর জন্য যিনি আমাদেরকে তা-কিয়ামত সফল জীবন অতিবাহনের পথ বাতলিয়েছেন। তাঁর পরিবারবর্গ ও সাহাবীগণের প্রতিও রইল অসংখ্য সালাম।
প্রতিনিয়ত লোকমুখে কিংবা পত্র-পত্রিকায় ব্যভিচার ও সমকামিতার দীর্ঘ ফিরিস্তি শুনে বা পড়ে প্রতিটি ধর্মপ্রাণ মুসলিমই কমবেশি মর্মব্যথা অনুভব না করে পারেন না। আমি ও তাদেরই একজন। এমনকি সকল আত্মমর্যাদা সম্পন্ন মানুষই সর্বদা এ কথা ভেবে কম শঙ্কিত নন যে, হয়তো বা এক দিন আমাকেও এ কথা শুনতে হবে যে, তোমার পরিবার কিংবা বংশেও তো এ রকম গর্হিত কাজ সম্পন্ন হচ্ছে; অথচ এ সম্পর্কে তোমার এতটুকুও খবর নেই। তাই অতি সত্বর এ সর্বনাশা ব্যাপক ব্যাধি থেকে উত্তরণের জন্য যে কোনো সঠিক পন্থা অনুসন্ধান করা নিজস্ব ধর্মীয় কর্তব্য বলে জ্ঞান করি। তাই প্রথমতঃ সবাইকে মৌখিকভাবে এ গর্হিত কর্ম প্রতিরোধের প্রতি প্রয়োজনীয় উৎসাহ প্রদান এবং এর ভয়ঙ্করতা বুঝাতে সচেষ্ট হই। কিন্তু তাতে আশানুরূপ কোনো ফল পাওয়া যায়নি। ভাবলাম হয়তো বা কেউ মনযোগ দিয়ে শুনছেন না অথবা তা দীর্ঘক্ষণ ক্রিয়াশীল থাকার জন্য প্রয়োজন আন্দাযকাল মনোন্তকরণে বিদ্ধকরণকর্ম সম্পাদিত হচ্ছে না। তাই লেখালেখিকে দ্বিতীয় মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করি; অথচ আমি এ ক্ষেত্রে নবাগত। কতটুকু সফলকাম হতে পারবো তা আল্লাহ মালুম। তবুও প্রয়োজনের খাতিরে ভুল-ত্রুটির প্রচুর সম্ভাবনা পশ্চাতে রেখে ক্ষুদ্র কলম খানা হস্তে ধারণের দুঃসাহসিকতা দেখাচ্ছি। সফলতা তো একমাত্র আল্লাহ তাআলারই হাতে। তবে নিয়্যাতের ওপরই সকল কর্মের ফলাফল নির্ভরশীল রাসূল মুখনিঃসৃত এ মহান বাণীই আমার দীর্ঘ পথসঙ্গী।
অত্যন্ত আনন্দের বিষয় হচ্ছে এই যে, এ পুস্তিকাটিতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পৃক্ত যতগুলো হাদীস উল্লেখ হয়েছে সাধ্যমত উহার বিশুদ্ধতার প্রতি সযত্ন দায়িত্বশীল দৃষ্টি রাখা হয়েছে। এ ব্যাপারে নিদেনপক্ষে সর্বজন শ্রদ্ধেয় প্রখ্যাত হাদীস বিশারদ আল্লামা নাসেরুদ্দীন আলবানী রহ.-এর হাদীস শুদ্ধাশুদ্ধ নির্ণয়ন নীতি গ্রহণ করা হয়েছে। এতদসত্ত্বেও সকল যোগ্য গবেষকদের পুনর্বিবেচনার সুবিধার্থে প্রতিটি হাদীসের সাথে তার প্রাপ্তিস্থাননির্দেশ সংযোজন করা হয়েছে। তবুও সম্পূর্ণরূপে নিরেট নির্ভুল হওয়ার জোর দাবি করার ধৃষ্টতা দেখাচ্ছি না।
শব্দ ও ভাষাগত প্রচুর ভুল-ভ্রান্তি বিজ্ঞ পাঠকবর্গের চক্ষুগোচরে আসা অস্বাভাবিক কিছু নয়। তবে ভুল গুরুসামান্য যতটুকুই হোক না কেন লেখকের দৃষ্টিগোচর করলে চরম কৃতজ্ঞতাপাশে আবদ্ধ থাকবো। যে কোনো কল্যাণকর পরামর্শ দিয়ে দাওয়াতী স্পৃহাকে আরো বর্ধিত করণে সর্বসাধারণের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করছি। আল্লাহ তাআলা সবার সহায় হোন।
এ পুস্তিকা প্রকাশে যে কোনো জনের যে কোনো ধরনের সহযোগিতার জন্য সমুচিত কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনে এতটুকুও কোতাহী করছি না। ইহ ও পরকালে আল্লাহ তাআলা প্রত্যেককে আকাঙ্খাতীত কামিয়াব করুন তাই হচ্ছে আমার সর্বোচ্চ প্রত্যাশা। আমীন সুম্মা আমীন ইয়া রাব্বাল আলামীন।
সর্বশেষে জনাব শাইখ আব্দুল হামীদ ফায়যী সাহেবের প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ না করে পারছিনে। যিনি অনেক ব্যস্ততার মাঝেও আমার আবেদনক্রমে পাণ্ডুলিপিটি আদ্যপান্ত অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে দেখেছেন এবং তার অতীব মূল্যবান মতামত ব্যক্ত করেছেন। আল্লাহ তাআলা তাকে এর উত্তম প্রতিদান দিন এবং তার জ্ঞান আরো বাড়িয়ে দিন এ আশা রেখে এখানেই শেষ করলাম।
লেখক



ব্যভিচার

ব্যভিচার একটি মারাত্মক অপরাধ। হত্যার পরই যার অবস্থান। কারণ, তাতে বংশ পরিচয় সঠিক থাকে না। লজ্জাস্থানের হিফাযত হয় না। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির সামাজিক সম্মান রক্ষা পায় না। মানুষে মানুষে কঠিন শত্রুতার জন্ম নেয়। দুনিয়ার সুস্থ পারিবারিক ব্যবস্থা এতটুকুও অবশিষ্ট থাকে না। একে অন্যের মা, বোন, স্ত্রী, কন্যাকে সম্পূর্ণরূপে বিনষ্ট করে দেয়। এ কারণেই তো আল্লাহ তাআলা এবং তদীয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হত্যার পরই এর উল্লেখ করেছেন।
আল্লাহ তাআলা বলেন,
﴿وَٱلَّذِينَ لَا يَدۡعُونَ مَعَ ٱللَّهِ إِلَٰهًا ءَاخَرَ وَلَا يَقۡتُلُونَ ٱلنَّفۡسَ ٱلَّتِي حَرَّمَ ٱللَّهُ إِلَّا بِٱلۡحَقِّ وَلَا يَزۡنُونَۚ وَمَن يَفۡعَلۡ ذَٰلِكَ يَلۡقَ أَثَامٗا ٦٨ يُضَٰعَفۡ لَهُ ٱلۡعَذَابُ يَوۡمَ ٱلۡقِيَٰمَةِ وَيَخۡلُدۡ فِيهِۦ مُهَانًا ٦٩ إِلَّا مَن تَابَ وَءَامَنَ وَعَمِلَ عَمَلٗا صَٰلِحٗا فَأُوْلَٰٓئِكَ يُبَدِّلُ ٱللَّهُ سَيِّ‍َٔاتِهِمۡ حَسَنَٰتٖۗ وَكَانَ ٱللَّهُ غَفُورٗا رَّحِيمٗا ٧٠﴾ [الفرقان: ٦٧،  ٦٩]
আর যারা আল্লাহ তাআলার পাশাপাশি অন্য কোনো উপাস্যকে ডাকে না। আল্লাহ তাআলা যাকে হত্যা করতে নিষেধ করেছেন যথার্থ (শরী‘আত সম্মত) কারণ ছাড়া তাকে হত্যা এবং ব্যভিচার করে না। যারা এগুলো করবে তারা অবশ্যই কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হবে। কিয়ামতের দিন তাদেরকে দ্বিগুণ শাস্তি দেওয়া হবে এবং তারা ওখানেই চিরস্থায়ীভাবে লাঞ্ছিতাবস্থায় থাকবে, তবে যারা তাওবা করে নেয়, ঈমান আনে এবং সৎকর্ম করে; আল্লাহ তাআলা তাদের পাপগুলো পুণ্য দিয়ে পরিবর্তন করে দিবেন। আল্লাহ তাআলা অত্যন্ত ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু [সূরা আল-ফুরকান, আয়াত: ৬৮-৭০]
আব্দুল্লাহ ইবন মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«قَالَ رَجُلٌ: يَا رَسُوْلَ اللهِ! أَيُّ الذَّنْبِ أَكْبَرُ عِنْدَ اللهِ؟ قَالَ: أَنْ تَدْعُوَ لِلَّهِ نِدًّا وَهُوَ خَلَقَكَ ، قَالَ: ثُمَّ أَيٌّ؟ قَالَ: أَنْ تَقْتُلَ وَلَدَكَ خَشْيَةَ أَنْ يَّطْعَمَ مَعَكَ ، قَالَ: ثُمَّ أَيٌّ؟ قَالَ: أَنْ تُزَانِيَ بِحَلِيْلَةِ جَارِكَ»
জনৈক ব্যক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলো: হে আল্লাহর রাসূল! কোনো পাপটি আল্লাহ তাআলার নিকট মহাপাপ বলে বিবেচিত? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আল্লাহ তাআলার সাথে কাউকে শরীক করা; অথচ তিনিই তোমাকে সৃষ্টি করেছেন। সে বললো, অতঃপর কী? তিনি বললেন, নিজ সন্তানকে হত্যা করা ভবিষ্যতে তোমার সঙ্গে খাবে বলে। সে বললো, অতঃপর কী? তিনি বললেন, নিজ প্রতিবেশীর স্ত্রীর সঙ্গে ব্যভিচার করা[1]
আল্লাহ তাআলা কুরআন মাজীদে ব্যভিচারের কঠিন নিন্দা করেন। তিনি বলেন,
 ﴿وَلَا تَقۡرَبُواْ ٱلزِّنَىٰٓۖ إِنَّهُۥ كَانَ فَٰحِشَةٗ وَسَآءَ سَبِيلٗا ٣٢﴾ [الاسراء: ٣٢]
তোমরা যিনা তথা ব্যভিচারের নিকটবর্তীও হয়ো না। কারণ, তা অশ্লীল ও নিকৃষ্ট আচরণ [সূরা আল-ইসরা, আয়াত: ৩২]
তবে এ ব্যভিচার মুহরিমা (যে মহিলাকে বিবাহ করা শরীআতের দৃষ্টিতে হারাম) এর সাথে হলে তা আরো জঘন্য। এ কারণেই আল্লাহ তাআলা নিজ বাপ-দাদার স্ত্রীদেরকে বিবাহ করা সম্পর্কে বলেন,
﴿وَلَا تَنكِحُواْ مَا نَكَحَ ءَابَآؤُكُم مِّنَ ٱلنِّسَآءِ إِلَّا مَا قَدۡ سَلَفَۚ إِنَّهُۥ كَانَ فَٰحِشَةٗ وَمَقۡتٗا وَسَآءَ سَبِيلًا ٢٢﴾ [النساء: ٢٢]
তোমরা নিজেদের বাপ-দাদার স্ত্রীদেরকে বিবাহ করো না, তবে যা গত হয়ে গেছে তা আল্লাহ তাআলা ক্ষমা করে দিবেন। নিশ্চয় তা অশ্লীল, অরুচিকর ও নিকৃষ্টতম পন্থা [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ২২]
বারা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমার চাচার সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ হয়। তার হাতে ছিলো একখানা যুদ্ধের ঝাণ্ডা আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম: আপনি কোথায় যাচ্ছেন? তিনি বললেন,
«بَعَثَنِيْ رَسُوْلُ اللهِ e إِلَى رَجُلٍ نَكَحَ اِمْرَأَةَ أَبِيْهِ ؛ فَأَمَرَنِيْ أَنْ أَضْرِبَ عُنُقَهُ ، وَآخُذَ مَالَهُ»
আমাকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন এক ব্যক্তির নিকট পাঠিয়েছেন, যে নিজ পিতার স্ত্রী তথা তার সৎ মায়ের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে আদেশ করেছেন তার গর্দান কেটে দিতে এবং তার সম্পদ হরণ করতে[2]
মুহরিমাকে বিবাহ করা যদি এতো বড় অপরাধ হয়ে থাকে তা হলে তাদের সাথে ব্যভিচার করা যে কতো বড়ো অপরাধ হবে তা সহজেই বুঝা যায়।

যৌনাঙ্গ হিফাযতের বিশেষ কয়েকটি ফযীলত:

১. যৌনাঙ্গ হিফাযত সফলতা অর্জনের একটি বিশেষ মাধ্যম:
আল্লাহ তাআলা লজ্জাস্থান হিফাযতকারীকে সফলকাম বলেছেন। এর বিপরীতে অবৈধ যৌন সংযোগকারীকে ব্যর্থ, নিন্দিত ও সীমালঙ্ঘনকারী বলে আখ্যায়িত করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন,
﴿قَدۡ أَفۡلَحَ ٱلۡمُؤۡمِنُونَ ١ ٱلَّذِينَ هُمۡ فِي صَلَاتِهِمۡ خَٰشِعُونَ ٢ وَٱلَّذِينَ هُمۡ عَنِ ٱللَّغۡوِ مُعۡرِضُونَ ٣ وَٱلَّذِينَ هُمۡ لِلزَّكَوٰةِ فَٰعِلُونَ ٤ وَٱلَّذِينَ هُمۡ لِفُرُوجِهِمۡ حَٰفِظُونَ ٥ إِلَّا عَلَىٰٓ أَزۡوَٰجِهِمۡ أَوۡ مَا مَلَكَتۡ أَيۡمَٰنُهُمۡ فَإِنَّهُمۡ غَيۡرُ مَلُومِينَ ٦ فَمَنِ ٱبۡتَغَىٰ وَرَآءَ ذَٰلِكَ فَأُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡعَادُونَ ٧﴾ [المؤمنون: ١،  ٧]
মুমিনরা অবশ্যই সফলকাম। যারা সালাতে অত্যন্ত মনোযোগী। যারা অযথা ক্রিয়া-কলাপ থেকে বিরত। যারা যাকাত দানে অত্যন্ত সক্রিয়। যারা নিজ যৌনাঙ্গ হিফাযতকারী। তবে যারা নিজ স্ত্রী ও অধিকারভুক্ত দাসীদের সঙ্গে যৌনকর্ম সম্পাদন করে তারা অবশ্যই নিন্দিত নয়। এ ছাড়া অন্য পন্থায় যৌনক্রিয়া সম্পাদনকারী অবশ্যই সীমালঙ্ঘনকারী [সূরা আল-মুমিনূন, আয়াত: ১-৭]

২. যৌনাঙ্গ হিফাযতকারী কখনো নিন্দিত নয়, বরং সে একান্তভাবে সবার প্রশংসা পাওয়ার উপযুক্ত:
আল্লাহ তাআলা কুরআন মাজীদে ব্যাপকভাবে মানব জাতির নিন্দা করেছেন। তবে যারা নিন্দিত নয় তাদের মধ্যে যৌনাঙ্গ হিফাযতকারী অন্যতম।
আল্লাহ তাআলা বলেন,
﴿وَٱلَّذِينَ هُمۡ لِفُرُوجِهِمۡ حَٰفِظُونَ ٢٩ إِلَّا عَلَىٰٓ أَزۡوَٰجِهِمۡ أَوۡ مَا مَلَكَتۡ أَيۡمَٰنُهُمۡ فَإِنَّهُمۡ غَيۡرُ مَلُومِينَ ٣٠ فَمَنِ ٱبۡتَغَىٰ وَرَآءَ ذَٰلِكَ فَأُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡعَادُونَ ٣١﴾ [المعارج: ٢٩،  ٣١]   
আর যারা নিজ যৌনাঙ্গ হিফাযতকারী। তবে যারা নিজ স্ত্রী ও অধিকারভুক্ত দাসীদের সঙ্গে যৌনকর্ম সম্পাদন করে তারা অবশ্যই নিন্দিত নয়। এ ছাড়া অন্যান্য পন্থায় যৌনক্রিয়া সম্পাদনকারীরা অবশ্যই সীমালংঘনকারী [সূরা আল-মাআরিজ, আয়াত: ২৯-৩১]
লজ্জাস্থান হিফাযতের কারণেই মারইয়াম আলাইহাস সালাম মহিলাদের মধ্যে বিশেষ পূর্ণতা লাভ করেছেন এবং পবিত্র কুরআন মাজীদে বিশেষভাবে আলোচিত হয়েছেন।
আল্লাহ তাআলা বলেন,
﴿وَمَرۡيَمَ ٱبۡنَتَ عِمۡرَٰنَ ٱلَّتِيٓ أَحۡصَنَتۡ فَرۡجَهَا فَنَفَخۡنَا فِيهِ مِن رُّوحِنَا وَصَدَّقَتۡ بِكَلِمَٰتِ رَبِّهَا وَكُتُبِهِۦ وَكَانَتۡ مِنَ ٱلۡقَٰنِتِينَ ١٢﴾ [التحريم: ١٢]
আল্লাহ তাআলা আরো দৃষ্টান্ত দিয়েছেন ইমরান তনয়া মারইয়ামের। যে নিজ সতীত্ব রক্ষা করেছে। ফলে আমরা তার মধ্যে আমার রূহ ফুঁকে দিয়েছি এবং সে তার প্রভুর বাণী ও তাঁর কিতাবসমূহ সত্য বলে গ্রহণ করেছে। সে ছিলো অনুগতদের অন্যতম [সূরা ইবরাহীম, আয়াত: ১২]

৩. লজ্জাস্থান হিফাযত জান্নাতে প্রবেশের একটি বিশেষ চাবিকাঠি:
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লজ্জাস্থান হিফাযতকারীকে জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছেন।
আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«يَا شَبَابَ قُرَيْشٍ! احْفَظُوْا فُرُوْجَكُمْ، لاَ تَزْنُوْا، أَلاَ مَنْ حَفِظَ فَرْجَهُ فَلَهُ الْـجَنَّةُ»
হে কুরাইশ যুবকরা! তোমরা নিজ যৌনাঙ্গ হিফাযত করো। কখনো ব্যভিচার করো না। জেনে রাখো, যে ব্যক্তি নিজ লজ্জাস্থান হিফাযত করতে পেরেছে তার জন্যই তো জান্নাত[3]
সাহল ইবন সাআদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«مَنْ يَّضْمَنْ لِيْ مَا بَيْنَ لَـحْيَيْهِ وَمَا بَيْنَ رِجْلَيْهِ أَضْمَنْ لَهُ الْـجَنَّةَ»
যে ব্যক্তি উভয় চোয়ালের মধ্যভাগ তথা জিহ্বা এবং উভয় পায়ের মধ্যভাগ তথা লজ্জাস্থান হিফাযত করার দায়িত্ব গ্রহণ করবে আমি তার জন্য জান্নাতের দায়িত্ব গ্রহণ করবো[4]
উবাদাহ ইবন সামিত রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«اِضْمَنُوْا لِيْ سِتًّا مِنْ أَنْفُسِكُمْ أَضْمَنْ لَكُمُ الْـجَنَّةَ: اُصْدُقُوْا إِذَا حَدَّثْتُمْ، وَأَوْفُوْا إِذَا وَعَدْتُمْ، وَأَدُّوْا الْأَمَانَةَ إِذَا ائْتُمِنْتُمْ، وَاحْفَظُوْا فُرُوْجَكُمْ، وَغُضُّوْا أَبْصَارَكُمْ، وَكُفُّوْا أَيْدِيَكُمْ»
তোমরা নিজ থেকেই ছয়টি কাজের দায়িত্ব গ্রহণ করলে আমি তোমাদের জন্য জান্নাতের দায়িত্ব গ্রহণ করবো। তোমরা কথা বললে সত্য বলবে। ওয়াদা করলে তা পুরা করবে। কেউ তোমাদের নিকট কোনো কিছু আমানত রাখলে তা যথাযথভাবে আদায় করবে। লজ্জাস্থানকে হিফাযত করবে। চোখকে নিম্নগামী করবে এবং হাতকে অসৎ কর্ম থেকে বিরত রাখবে[5]
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إِذَا صَلَّتِ الْـمَرْأَةُ خَمْسَهَا، وَصَامَتْ شَهْـرَهَا، وَحَصَّنَتْ فَرْجَهَا، وَأَطَاعَتْ بَعْلَهَا؛ دَخَلَتْ مِنْ أَيِّ أَبْوَابِ الْـجَنَّةِ شَاءَتْ»
কোন মহিলা যদি রীতি মতো পাঁচ বেলা সালাত পড়ে, রামাদানের সাওম পালন করে এবং নিজ লজ্জাস্থানকে হিফাযত করে; উপরন্তু তার স্বামীর আনুগত্য করে তা হলে সে জান্নাতের যে কোনো গেট দিয়ে চায় ঢুকতে পারবে[6]

৪. লজ্জাস্থান হিফাযত একান্তভাবে নেককারের পরিচয় বহন করে:
আল্লাহ তাআলা বলেন,
﴿فَٱلصَّٰلِحَٰتُ قَٰنِتَٰتٌ حَٰفِظَٰتٞ لِّلۡغَيۡبِ بِمَا حَفِظَ ٱللَّهُ﴾ [النساء: ٣٤] 
সুতরাং যে সমস্ত নারী পুণ্যবতী তারাই স্বামীর আনুগত্য করে এবং তার অনুপস্থিতে তার সম্পদ ও নিজ সতীত্ব রক্ষা করে। যা আল্লাহ তাআলা রক্ষা করলেই তা রক্ষা পাওয়া সম্ভব [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৩৪]

৫. লজ্জাস্থান হিফাযত আল্লাহ তাআলার ক্ষমা পাওয়ার এক বিশেষ মাধ্যম:
আল্লাহ তাআলা বলেন,
﴿إِنَّ ٱلۡمُسۡلِمِينَ وَٱلۡمُسۡلِمَٰتِ وَٱلۡمُؤۡمِنِينَ وَٱلۡمُؤۡمِنَٰتِ وَٱلۡقَٰنِتِينَ وَٱلۡقَٰنِتَٰتِ وَٱلصَّٰدِقِينَ وَٱلصَّٰدِقَٰتِ وَٱلصَّٰبِرِينَ وَٱلصَّٰبِرَٰتِ وَٱلۡخَٰشِعِينَ وَٱلۡخَٰشِعَٰتِ وَٱلۡمُتَصَدِّقِينَ وَٱلۡمُتَصَدِّقَٰتِ وَٱلصَّٰٓئِمِينَ وَٱلصَّٰٓئِمَٰتِ وَٱلۡحَٰفِظِينَ فُرُوجَهُمۡ وَٱلۡحَٰفِظَٰتِ وَٱلذَّٰكِرِينَ ٱللَّهَ كَثِيرٗا وَٱلذَّٰكِرَٰتِ أَعَدَّ ٱللَّهُ لَهُم مَّغۡفِرَةٗ وَأَجۡرًا عَظِيمٗا ٣٥﴾ [الاحزاب: ٣٥]
নিশ্চয় মুসলিম পুরুষ ও মহিলা, মুমিন পুরুষ ও মহিলা, অনুগত পুরুষ ও মহিলা, সত্যবাদী পুরুষ ও মহিলা, ধৈর্যশীল পুরুষ ও মহিলা, বিনয়ী পুরুষ ও মহিলা, সাদাকাকারী পুরুষ ও মহিলা, সাওম পালনকারী পুরুষ ও মহিলা, নিজ লজ্জাস্থান হিফাযতকারী পুরুষ ও মহিলা এবং আল্লাহ তাআলাকে অধিক স্বরণকারী পুরুষ ও মহিলা এদের জন্যই আল্লাহ তাআলা রেখেছেন তাঁর ক্ষমা ও মহাপ্রতিদান [সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ৩৫]

৬. লজ্জাস্থান হিফাযত আল্লাহ তাআলার বিশেষ ডাকে সাড়া দেওয়া:
আল্লাহ তাআলা বলেন,
﴿قُل لِّلۡمُؤۡمِنِينَ يَغُضُّواْ مِنۡ أَبۡصَٰرِهِمۡ وَيَحۡفَظُواْ فُرُوجَهُمۡۚ ذَٰلِكَ أَزۡكَىٰ لَهُمۡۚ إِنَّ ٱللَّهَ خَبِيرُۢ بِمَا يَصۡنَعُونَ ٣٠ وَقُل لِّلۡمُؤۡمِنَٰتِ يَغۡضُضۡنَ مِنۡ أَبۡصَٰرِهِنَّ وَيَحۡفَظۡنَ فُرُوجَهُنَّ ٣١﴾ [النور: ٣٠،  ٣١]
“(হে মুহাম্মাদ) তুমি মুমিনদেরকে বলে দাও, যেন তারা নিজ দৃষ্টিকে সংযত করে এবং নিজ লজ্জাস্থানকে হিফাযত করে। এটাই তাদের জন্য প্রবিত্র থাকার সর্বোত্তম মাধ্যম। নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা তাদের কর্ম সম্পর্কে অধিক অবগত। তেমনিভাবে তুমি মুমিন মহিলাদেরকেও বলে দাওঃ যেন তারা নিজ দৃষ্টিকে সংযত করে এবং নিজ লজ্জাস্থানকে হিফাযত করে [সূরা আন-নূর, আয়াত: ৩০-৩১]

৭. লজ্জাস্থান হিফাযত অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধানের এক বিশেষ মাধ্যম:
আল্লাহ তাআলা বলেন,
﴿وَلۡيَسۡتَعۡفِفِ ٱلَّذِينَ لَا يَجِدُونَ نِكَاحًا حَتَّىٰ يُغۡنِيَهُمُ ٱللَّهُ مِن فَضۡلِهِ﴾ [النور: ٣٣]
যাদের বিয়ে করার (অর্থনৈতিক) কোনো সামর্থ্য নেই তারা যেন নিজ লজ্জাস্থানকে হিফাযত করে যতক্ষণ না আল্লাহ তাআলা তাদেরকে নিজ অনুগ্রহে অভাবমুক্ত করে দেন [সূরা আন-নূর, আয়াত: ৩৩]

৮. লজ্জাস্থান হিফাযত সফলতাকামীদের পথ, বিপথগামীদের নয়:
আল্লাহ তাআলা বলেন,
﴿يُرِيدُ ٱللَّهُ لِيُبَيِّنَ لَكُمۡ وَيَهۡدِيَكُمۡ سُنَنَ ٱلَّذِينَ مِن قَبۡلِكُمۡ وَيَتُوبَ عَلَيۡكُمۡۗ وَٱللَّهُ عَلِيمٌ حَكِيمٞ ٢٦ وَٱللَّهُ يُرِيدُ أَن يَتُوبَ عَلَيۡكُمۡ وَيُرِيدُ ٱلَّذِينَ يَتَّبِعُونَ ٱلشَّهَوَٰتِ أَن تَمِيلُواْ مَيۡلًا عَظِيمٗا ٢٧ يُرِيدُ ٱللَّهُ أَن يُخَفِّفَ عَنكُمۡۚ وَخُلِقَ ٱلۡإِنسَٰنُ ضَعِيفٗا ٢٨﴾ [النساء: ٢٦،  ٢٨]
আল্লাহ তাআলা চান তোমাদের জন্য (তাঁর হালাল-হারামসমূহ) বর্ণনা করতে এবং তোমাদের পূর্ববর্তীদের আদর্শসমূহ প্রদর্শন করতে; ওপরন্তু তোমাদের তাওবা গ্রহণ করতে। আল্লাহ তাআলা তো মহাজ্ঞানী ও বিজ্ঞানময়। আল্লাহ তাআলা চান তোমাদেরকে ক্ষমা করে দিতে। এ দিকে প্রবৃত্তি পূজারীরা চায় তোমরা যেন ঘোর অধঃপতনে পতিত হও। আল্লাহ তাআলা চান তোমাদের সাথে লঘু ব্যবহার করতে। কারণ, মানুষকে তো মূলতঃ দুর্বল রূপেই সৃষ্টি করা হয়েছে [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ২৬-২৮]

৯. লজ্জাস্থান হিফাযত সম্মানেরই মুকুট:
আজ পর্যন্ত কেউ উক্ত বাস্তবতা অস্বীকার করে নি। আদি যুগ থেকে মানুষ সাধুতা ও পবিত্রতা নিয়ে গর্ব করে আসছে।
ইবরাহীম ইবন আবু বকর ইবন আইয়াশ রহ. বলেন, আমি আমার পিতার মৃত্যুর সময় তাঁর পার্শ্বেই অবস্থান করছিলাম। আমি কাঁদতে শুরু করলে তিনি আমাকে বললেন, তুমি কাঁদো কেন? তোমার পিতা তো কখনো ব্যভিচার করে নি।

লজ্জাস্থান রক্ষার পথে একান্ত বাধাসমূহ

যৌনাঙ্গ রক্ষার ফলাফল যখন জান্নাতই তখন এর পথে যে কোনো বাধা থাকা নিতান্তই স্বাভাবিক। তাই নিম্নে এ জাতীয় কিছু বাধা সম্পর্কে বিশেষভাবে আলোকপাত করা হয়েছে।

১. মহিলাদের নতুন নতুন মডেলের পোশাক-পরিচ্ছদ:
বর্তমান যুগের মহিলারা বাজারে উঠেই নতুন নতুন মডেলের পোশাক-পরিচ্ছদ খুঁজে বেড়ায়। যা সামনে পায় তাই খরিদ করে। যদিও তা পাশ্চাত্য স্টাইলের এবং ইসলামী শরীআত বিরোধীই হোক না কেন। মূলতঃ এ পোশাক-পরিচ্ছদ মুসলিম মহিলাদেরকে ধ্বংস করার একটি বিরাট মাধ্যম। যা ইসলামের শত্রুরা আজ ইসলামের বিরুদ্ধেই ব্যবহার করে যাচ্ছে। কারণ, ইসলামের দৃষ্টিতে মেয়েলি পোশাকের মূল উদ্দেশ্যই হচ্ছে, পূর্ণাঙ্গ শরীর ঢেকে রাখা এবং ভারিক্কিপনা অবলম্বন করা তথা উলঙ্গতা ও চঞ্চলতা থেকে দূরে থাকা। যেন মহিলারা ফিতনা ও খবিস লোকদের খপ্পর থেকে দূরে থাকতে সক্ষম হয়।
অন্য দিকে পাশ্চত্য স্টাইলের পোশাকসমূহের উদ্দেশ্যই হচ্ছে, উলঙ্গতা ও বেলেল্লাপনা। যাতে যুবক-যুবতীদের লুক্কায়িত কু-প্রবৃত্তি জাগরিত হয় এবং তাদের মধ্যে যৌন ফ্যাসাদ সৃষ্টি হয়। লজ্জা, সাধুতা ও পবিত্রতা বলতে যেন তাদের মধ্যে আর কিছুই অবশিষ্ট না থাকে। মানুষ যেন প্রবৃত্তির গোলাম হয়ে যায়।

২. টিভি চ্যানেল:
বর্তমান যুগের টিভি চ্যানেলগুলোতে যে কোনো অনুষ্ঠান, নাটক, গান কিংবা ছায়াছবিই দেখানো হোক না কেন তার অধিকাংশই প্রেম-ভালোবাসা, ফ্যামিলিগত অশ্লীলতা, স্বামী-স্ত্রীর যৌন কেলেঙ্কারী, উলঙ্গতা, নির্লজ্জতা, চুমোচুমি, শরীআতের বিরোধিতা কিংবা শরীআতের কোনো ব্যাপার নিয়ে ঠাট্টা-মশকারা করা ছাড়া তেমন আর গুরুত্বপূর্ণ কিছুই নয়। যেমন, বহু বিবাহ নিয়ে ঠাট্টা করা কিংবা মহিলাদের ওপর পুরুষের কর্তৃত্ব নিয়ে তামাশা করা ইত্যাদি ইত্যাদি।
সুতরাং কোনো যুবক-যুবতী দীর্ঘ সময় এ সমস্ত অশ্লীলতা, উলঙ্গতা ও নির্লজ্জতা তথা প্রেম-ভালোবাসার আবেগ তাড়িত রকমারি ডায়ালগ শুনে নিজের সাধুতা ও সতীত্ব কীভাবে রক্ষা করতে পারবে ?
নিচে এ সম্পর্কে জনৈকা যুবতীর সুস্পষ্ট হুবহু উক্তি উল্লেখ করা হয়েছে, যা শুনে আমরা প্রত্যেকেই সময় থাকতে নিজ নিজ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারি।
সে একদা নাম উল্লেখ না করার শর্তে এবং চিকিৎসা পরামর্শ নেওয়ার উদ্দেশ্যে বলে: আমি ছোট বেলা থেকেই প্রেম জনিত ছায়াছবি দেখতে অভ্যস্ত। এমনকি তা দেখতে এখন আমার খুবই ভালো লাগে। এতে করে এখন আমার মধ্যে এমন এক ধরনের অদম্য যৌন স্পৃহা জন্ম নিয়েছে যা সত্যিই অস্বাভাবিক। আর এটা আমার জন্য নতুন কিছুই নয়। কারণ, আমি সাবালক হওয়ার বহু পূর্বেই যৌন সংক্রান্ত সব কিছুই জেনে ফেলি। ...এখন আমি আমার মধ্যে এক অদম্য যৌন আবেগ অনুভব করছি। যা আমার পুরো অনুভূতিকে এখন কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে। আমি এখন রাত্রি বেলায় এতটুকুও ঘুমোতে পারছি না ঘুমোতে গেলে অনেক ধরনের চিন্তা ও স্বপ্ন আমাকে ঘিরে নেয়। যখনই আমি আবেগ তাড়িত কোনো ফিল্ম দেখি অথবা এ জতীয় কোনো উপন্যাস পড়ি তখনই আমার আবেগ ও যৌন উত্তেজনা অত্যধিক বেড়ে যায়। তখনই আমার মনে হয়, আহ্! কেউ যদি এখন আমার সাথে যৌনসঙ্গমে লিপ্ত হতো। এ পরিস্থিতিতে আমি এখন কি করতে পারি দয়া করে সুন্দর পরামর্শ দিয়ে আমাকে কৃতার্থ করবেন

৩. ইন্টারনেট:
এর খপ্পরে পড়েছে বহু যুবক-যুবতী। তারা এখন একে উত্তেজনা বৃদ্ধির এক মাধ্যম হিসেবেই গ্রহণ করেছে। সময় পেলেই তারা অশ্লীল অবস্থানগুলোতে অবস্থান নিয়ে যৌন সঙ্গম, ব্যভিচার ও সমকামিতার প্রকাশ্য অনুশীলন দেখতে চায়।
এ কথা সবারই জানা যে, ইন্টারনেটে জীবন ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের সকল বিষয়ের বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায়। তবে তা ব্যবহারের সময় কিছু ধর্মীয় বিধি-বিধান অবশ্যই মানতে হবে। অন্তরে সর্বদা আল্লাহভীতি জাগরূক থাকতে হবে।

৪. অশ্লীল ম্যাগাজিন ও রুচিহীন পত্র-পত্রিকা:
মানব জীবনে এগুলোর প্রভাব অত্যন্ত ব্যাপক। কারণ, এগুলো উলঙ্গতা ও বেহায়াপনা শিক্ষা দেয়। এগুলোতে নতুন নতুন মডেলের পোশাক পরিহিতা বহু নারী ও পুরুষ প্রদর্শিত হয়। তাতে করে পাশ্চাত্য মডেলের সকল পোশাক-পরিচ্ছদ মুসলিম সমাজে প্রচলন পায়। যা খরিদ করে মুসলিমরাই নিজের অজান্তে কাফিরদের অর্থনৈতিক শক্তি ও সামর্থ যোগান দেয়; অথচ তারা জানে না যে, প্রত্যেক জাতিরই নিজস্ব পোশাক রয়েছে। যা অন্যের জন্য কোনোভাবেই মানানসই নয়।

৫. ক্যামেরাযুক্ত অত্যাধুনিক মোবাইল সেট:
এগুলো চরিত্র নষ্টের আরেকটি বিরাট মাধ্যম। প্রেম-ভালোবাসার জগতে মোবাইলের ব্যবহার তো সবারই জানা। এর সাথে আরো যুক্ত হয়েছে ক্যামেরাযুক্ত অত্যাধুনিক মোবাইল সেট। যাতে অশ্লীল ছায়াছবি ও কুরুচিপূর্ণ যৌনসঙ্গম ধারণ করা ও অন্যের কাছে খুব দ্রুত পৌঁছিয়ে দেওয়া যায়। ফলে তা তথাকথিত প্রেম-ভালোবাসাকে ব্যভিচার ও সমকামিতার দিকে অতি দ্রুত অগ্রসর করে।
এ কথা সবারই জানা যে, মোবাইলের মাধ্যমে অন্যের সাথে দ্রুত যোগাযোগ রক্ষা করা যায়। তবে তা ব্যবহারের সময় কিছু ধর্মীয় বিধি-বিধান অবশ্যই মানতে হবে। অন্তরে সর্বদা আল্লাহভীতি জাগরূক থাকতে হবে।

৬. নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা এবং গোপনে সহাবস্থান:
নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা অন্তরের বিক্ষিপ্ততা এবং যৌন উত্তেজনাকে বৃদ্ধি করার একটি বিরাট মাধ্যম। কারণ, কোনো পুরুষ অন্য কোনো নারীর সাথে অবাধ মেলামেশার সুযোগ পেলেই তো সে তাকে ধীরে ধীরে নিজের প্রতি আকর্ষণ করার সুযোগ পায়। তেমনিভাবে কোনো নারী অন্য কোনো পুরুষের সাথে অবাধ মেলামেশার সুযোগ পেলেই তো সে তাকে ধীরে ধীরে নিজের প্রতি আকর্ষণ করার সুযোগ পায়। অন্যথায় নয়। আর তখনই উভয়ের মধ্যে পরস্পর গোপনে মিলনের চিন্তা আসে এবং তখনই ব্যভিচার সংঘটিত হয়।
আল্লামা ইবনুল-কাইয়্যেম রহ. বলেন, এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশাই সকল বিপদ ও অঘটনের মূল। এরই কারণে আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে মানুষের ওপর ব্যাপক শাস্তি নেমে আসে এবং এরই কারণে দুনিয়াতে ব্যক্তি ও সমষ্টিগত ফ্যাসাদ সৃষ্টি হয়।
আর পোপনে নারী-পুরুষের সহাবস্থান তো ব্যভিচারের প্রতি কয়েক ধাপ এগিয়ে যাওয়া বৈ কি?
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«لاَ يَخْلُوَنَّ رَجُلٌ بِامْرَأَةٍ إِلاَّ كَانَ ثَالِثَهُمَا الشَّيْطَانُ»
কোনো পুরুষ অন্য কোনো মহিলার সাথে একান্তে মিলিত হলে শয়তান হয় তাদের তৃতীয় জন[7]

৭. অসৎ বন্ধু-বান্ধব:
বন্ধু-বান্ধব তো এতোই প্রভাবশালী হয় যে, কোনো বন্ধু ইচ্ছে করলেই তার অপর বন্ধুকে দিয়ে যে কোনো অঘটন ঘটাতে পারে। এ ব্যাপারে পুরুষের চাইতে মহিলারাই বেশি পারদর্শী এবং তারাই পুরুষের চাইতে বেশি নিজ বান্ধবী কর্তৃক প্রভাবিত হয়। এ কারণেই বন্ধু-বান্ধব চয়ন করার সময় খুবই সতর্ক থাকতে হবে। বন্ধু-বান্ধব যেন দীনদার ও চরিত্রবান হয়। যাতে একে অপরকে নেক কাজে সহযোগিতা করতে পারে। কেউ গাফিল হলে অন্য জন তাকে নেক কাজে পুনরুজ্জীবিত করতে পারে। কেউ পথভ্রষ্ট হলে অন্য জন তাকে সতর্ক করতে পারে।
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«الرَّجُلُ عَلَى دِيْنِ خَلِيْلِهِ؛ فَلْيَنْظُرْ أَحَدُكُمْ مَنْ يُخَالِلُ»
মানুষ তার একান্ত বন্ধুর ধর্মই গ্রহণ করে থাকে। সুতরাং তোমাদের প্রত্যেকেই যেন একটু ভেবে দেখে যে, সে কার সাথে বন্ধুত্ব পাতাতে যাচ্ছে[8]

৮. বিলম্বে বিবাহ করা:
বিবাহ হচ্ছে বৈধ পন্থায় যৌন উত্তেজনা প্রশমনের একটি বিরাট মাধ্যম। সুতরাং কেউ বিবাহ করতে বা বসতে দীর্ঘ দিন বিলম্ব করলে সে স্বভাবতই তার অদম্য যৌন উত্তেজনা প্রশমনের বৈধ কোনো ক্ষেত্র না পাওয়ার দরুন তা অক্ষেত্রে অপচয় করতে পারে। এ জন্যই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুবকদেরকে দ্রুত বিবাহ করার পরামর্শ দিয়েছেন। 
আব্দুল্লাহ ইবন মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«يَا مَعْشَرَ الشَّبَابِ! مَنِ اسْتَطَاعَ مِنْكُمُ الْبَاءَةَ فَلْيَتَزَوَّجْ ، فَإِنَّهُ أَغَضُّ لِلْبَصَرِ وَأَحْصَنُ لِلْفَرْجِ ، وَمَنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَعَلَيْهِ بِالصَّوْمِ ، فَإِنَّهُ لَهُ وِجَاءٌ»
হে যুবকরা! তোমাদের কেউ বিবাহ করতে সক্ষম হলে সে যেন দ্রুত বিবাহ করে নেয়। কারণ, তা চক্ষুকে নিম্নগামী করে এবং লজ্জাস্থানকে করে পবিত্র। আর যে ব্যক্তি বিবাহ করতে সক্ষম নয় সে যেন সাওম পালন করে কারণ, তা সত্যিই যৌন উত্তেজনা প্রশমনকারী[9]

৯. অপর কোনো পুরুষ বা মহিলার সাথে যে কোনো ধরনের শৈথিল্য দেখানো:
উক্ত শৈথিল্য পোশাক-পরিচ্ছদের ক্ষেত্রেও হতে পারে। তা যেমন মহিলার ক্ষেত্রে হতে পারে তেমনিভাবে তা পুরুষের ক্ষেত্রেও হতে পারে। তবে তা পুরুষের ক্ষেত্রে খুবই কম; কিন্তু কোনো মহিলা যদি আঁট-সাঁট, পাতলা, খাটো কিংবা জায়গায় জায়গায় খোলা ও কারুকার্যময় পোশাক পরে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়ায় তা হলে পুরুষরা স্বভাবতই তাকে লজ্জা ও চরিত্রহীনা মনে করে তার প্রতি অতি সত্বর ঝুঁকে পড়বে। তেমনিভাবে কোনো পুরুষও যদি ফাসিকের পোশাক পরিধান করে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়ায় তা হলে খারাপ মহিলারাও স্বভাবতই তার পিছু নিবে।
উক্ত শিথিলতা আবার কখনো কখনো আচার-আচরণ এবং চলাফেরার ঢংয়ের মধ্যেও হতে পারে। তাতে করে মহিলাদের প্রতি পুরুষদের সরল দৃষ্টি আকৃষ্ট হবে এবং তাদের সুপ্ত উত্তেজনা জেগে উঠবে। তেমনিভাবে মহিলারাও পুরুষদের প্রতি আকৃষ্ট হবে এবং তাদের সুপ্ত উত্তেজনা জেগে উঠবে।
আবার তা কখনো কখনো কথা-বার্তার ঢংয়েও হতে পারে। কারণ, কোনো মহিলা অপর পুরুষের সাথে ইচ্ছাকৃত কোমল ও সুমিষ্ট এবং দীর্ঘ অপ্রয়োজনীয় আলাপ করলে স্বভাবতই পুরুষরা তার প্রতি আকৃষ্ট হবে। আর এ জন্যই আল্লাহ তাআলা মহিলাদেরকে পুরুষদের সাথে ইচ্ছাকৃত বিনম্র কথা বলতে নিষেধ করেছেন।
আল্লাহ তাআলা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রীদেরকে উদ্দেশ্য করে বলেন,
﴿إِنِ ٱتَّقَيۡتُنَّۚ فَلَا تَخۡضَعۡنَ بِٱلۡقَوۡلِ فَيَطۡمَعَ ٱلَّذِي فِي قَلۡبِهِۦ مَرَضٞ وَقُلۡنَ قَوۡلٗا مَّعۡرُوفٗا﴾ [الاحزاب: ٣٢]
তোমরা যদি মহান আল্লাহ তাআলাকে ভয় করে থাকো তা হলে অন্য পুরুষের সাথে কথা বলতে কোমল কন্ঠে কথা বলো না। তা হলে যে কোনো অন্তরের রোগী তোমাদের প্রতি প্রলুব্ধ হবে। তবে তোমরা ন্যায় সঙ্গত কথা বলবে [সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ৩২]

১০. যত্রতত্র চোখের দৃষ্টি ক্ষেপন:
দৃষ্টি নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে পুরুষরা যেমন আদিষ্ট তেমনিভাবে মহিলারাও। কোনো যুবক-যুবতী যদি চরিত্রহীন বা চরিত্রহীনা হয়ে থাকে তা হলে এর মূলে রয়েছে যত্রতত্র দৃষ্টি ক্ষেপন।
এ ছাড়াও যৌনাঙ্গ রক্ষার পেছনে বাধা হিসেবে নিম্নোক্ত বিষয়গুলোকেও গণ্য করা হয়:
যৌনকর্ম সম্পর্কীয় আলোচনা, গানের নেশা, খারাপ উপন্যাস ও খারাপ কবিতা পড়ার নেশা, শয়তানের কুমন্ত্রণার কাছে হার মানা, কুপ্রবৃত্তির অনুসরণ, দীর্ঘ আশা ও দুনিয়ার ভালোবাসা, নিয়ন্ত্রণহীন সুখভোগ এবং সন্তানদের প্রতি অভিভাবকদের লাগাতার অবহেলা ইত্যাদি ইত্যাদি।
আল্লাহ তাআলা শুধু যৌনকর্মকেই হারাম করেন নি, বরং তিনি এরই পাশাপাশি সব ধরনের অশ্লীলতাকেও হারাম করেছেন।
আল্লাহ তাআলা বলেন,
﴿قُلۡ إِنَّمَا حَرَّمَ رَبِّيَ ٱلۡفَوَٰحِشَ مَا ظَهَرَ مِنۡهَا وَمَا بَطَنَ وَٱلۡإِثۡمَ وَٱلۡبَغۡيَ بِغَيۡرِ ٱلۡحَقِّ وَأَن تُشۡرِكُواْ بِٱللَّهِ مَا لَمۡ يُنَزِّلۡ بِهِۦ سُلۡطَٰنٗا وَأَن تَقُولُواْ عَلَى ٱللَّهِ مَا لَا تَعۡلَمُونَ ٣٣﴾ [الاعراف: ٣٣]
(হে মুহাম্মাদ) তুমি ঘোষণা করে দাও, নিশ্চয় আমার প্রভু হারাম করে দিয়েছেন প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য সকল ধরনের অশ্লীলতা, পাপকর্ম, অন্যায় বিদ্রোহ, আল্লাহ তাআলার সাথে কাউকে শরীক করা; যে ব্যাপারে তিনি কোনো দলীল-প্রমাণ অবতীর্ণ করেন নি এবং আল্লাহ তাআলা সম্পর্কে অজ্ঞতাবশত কিছু বলা [সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ৩৩]
আল্লাহ তাআলা যখন ব্যভিচারকর্মকে নিষেধ করে দিয়েছেন তখন তিনি সে সকল পথকেও নীতিগতভাবে রোধ করে দিয়েছেন যেগুলোর মাধ্যমে স্বভাবতঃ ব্যভিচারকর্ম সংঘটিত হয়ে থাকে। এ জন্যই আল্লাহ তাআলা পুরুষ ও মহিলা উভয় জাতিকে লজ্জাস্থান হিফাযতের পূর্বে সর্বপ্রথম নিজ দৃষ্টিকে সংযত করতে আদেশ করেন।
আল্লাহ তাআলা বলেন,
﴿قُل لِّلۡمُؤۡمِنِينَ يَغُضُّواْ مِنۡ أَبۡصَٰرِهِمۡ وَيَحۡفَظُواْ فُرُوجَهُمۡۚ ذَٰلِكَ أَزۡكَىٰ لَهُمۡۚ إِنَّ ٱللَّهَ خَبِيرُۢ بِمَا يَصۡنَعُونَ ٣٠ وَقُل لِّلۡمُؤۡمِنَٰتِ يَغۡضُضۡنَ مِنۡ أَبۡصَٰرِهِنَّ وَيَحۡفَظۡنَ فُرُوجَهُنَّ ٣١﴾ [النور: ٣٠،  ٣١]
“(হে মুহাম্মাদ) তুমি মুমিনদেরকে বলে দাওঃ যেন তারা নিজ দৃষ্টিকে সংযত করে এবং নিজ লজ্জাস্থানকে হিফাযত করে। এটাই তাদের জন্য প্রবিত্র থাকার সর্বোত্তম মাধ্যম। নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা তাদের কর্ম সম্পর্কে অধিক অবগত। তেমনিভাবে তুমি মুমিন মহিলাদেরকেও বলে দাওঃ যেন তারা নিজ দৃষ্টিকে সংযত করে এবং নিজ লজ্জাস্থানকে হিফাযত করে [সূরা আন-নূর, আয়াত: ৩০-৩১]
আল্লাহ তাআলা আরো বলেন,
﴿يَعۡلَمُ خَآئِنَةَ ٱلۡأَعۡيُنِ وَمَا تُخۡفِي ٱلصُّدُورُ ١٩﴾ [غافر: ١٩] 
তিনিই চক্ষুর অপব্যবহার এবং অন্তরের গোপন বস্তু সম্পর্কেও অবগত [সূরা গাফির, আয়াত: ১৯]
আল্লাহ তাআলা কাউকে অন্য কারোর ঘরে বিনা অনুমতিতে প্রবেশ করতে নিষেধ করেছেন। যাতে চক্ষুর অপব্যবহার না হয় এবং তা সম্পূর্ণরূপে রক্ষা পায়।
আল্লাহ তাআলা বলেন,
﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ لَا تَدۡخُلُواْ بُيُوتًا غَيۡرَ بُيُوتِكُمۡ حَتَّىٰ تَسۡتَأۡنِسُواْ وَتُسَلِّمُواْ عَلَىٰٓ أَهۡلِهَاۚ ذَٰلِكُمۡ خَيۡرٞ لَّكُمۡ لَعَلَّكُمۡ تَذَكَّرُونَ ٢٧ فَإِن لَّمۡ تَجِدُواْ فِيهَآ أَحَدٗا فَلَا تَدۡخُلُوهَا حَتَّىٰ يُؤۡذَنَ لَكُمۡۖ وَإِن قِيلَ لَكُمُ ٱرۡجِعُواْ فَٱرۡجِعُواْۖ هُوَ أَزۡكَىٰ لَكُمۡۚ وَٱللَّهُ بِمَا تَعۡمَلُونَ عَلِيمٞ ٢٨﴾ [النور: ٢٧،  ٢٨]
হে ঈমানদারগণ! তোমরা নিজেদের গৃহ ছাড়া অন্য কারো গৃহে গৃহবাসীদের অনুমতি না নিয়ে এবং তাদেরকে সালাম না করে প্রবেশ করো না। এটাই তো তোমাদের জন্য অনেক শ্রেয়। আশাতো তোমরা উক্ত উপদেশ গ্রহণ করবে। আর যদি তোমরা উক্ত গৃহে কাউকে না পাও তা হলে তোমরা তাতে একেবারেই প্রবেশ করো না যতক্ষণ না তোমাদেরকে তাতে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়। যদি তোমাদেরকে বলা হয় যে, ফিরে যাও, তাহলে তোমরা ফিরে যাবে। এটাই তো তোমাদের জন্য পবিত্র থাকার সর্বোত্তম মাধ্যম। আল্লাহ তাআলা তোমাদের কর্ম সম্পর্কে বিশেষভাবে অবগত [সূরা আন-নূর: ২৭-২৮]
আল্লাহ তাআলা বিশেষভাবে মহিলাদেরকে অপর পুরুষ থেকে পর্দা করতে আদেশ করেছেন। যাতে পুরুষের লোভাতুর দৃষ্টি তার অপূর্ব সেŠন্দর্যের উগ্র আকর্ষণ থেকে রক্ষা পায় এবং ক্রমান্বয়ে সে ব্যভিচারের দিকে ধাবিত না হয়।
আল্লাহ তাআলা বলেন,
﴿وَلَا يُبۡدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا مَا ظَهَرَ مِنۡهَاۖ وَلۡيَضۡرِبۡنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلَىٰ جُيُوبِهِنَّۖ وَلَا يُبۡدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا لِبُعُولَتِهِنَّ أَوۡ ءَابَآئِهِنَّ أَوۡ ءَابَآءِ بُعُولَتِهِنَّ أَوۡ أَبۡنَآئِهِنَّ أَوۡ أَبۡنَآءِ بُعُولَتِهِنَّ أَوۡ إِخۡوَٰنِهِنَّ أَوۡ بَنِيٓ إِخۡوَٰنِهِنَّ أَوۡ بَنِيٓ أَخَوَٰتِهِنَّ أَوۡ نِسَآئِهِنَّ أَوۡ مَا مَلَكَتۡ أَيۡمَٰنُهُنَّ أَوِ ٱلتَّٰبِعِينَ غَيۡرِ أُوْلِي ٱلۡإِرۡبَةِ مِنَ ٱلرِّجَالِ أَوِ ٱلطِّفۡلِ ٱلَّذِينَ لَمۡ يَظۡهَرُواْ عَلَىٰ عَوۡرَٰتِ ٱلنِّسَآءِۖ وَلَا يَضۡرِبۡنَ بِأَرۡجُلِهِنَّ لِيُعۡلَمَ مَا يُخۡفِينَ مِن زِينَتِهِنَّۚ وَتُوبُوٓاْ إِلَى ٱللَّهِ جَمِيعًا أَيُّهَ ٱلۡمُؤۡمِنُونَ لَعَلَّكُمۡ تُفۡلِحُونَ﴾ [النور: ٣١] 
মহিলারা যেন তাদের সৌন্দর্য (শরীরের সাথে এঁটে থাকা অলংকার বা আকর্ষণীয় পোষাক) প্রকাশ না করে। তবে যা স্বভাবতই প্রকাশ পেয়ে যায় (বোরকা, চাদর, মোজা ইত্যাদি) তা প্রকাশ পেলে কোনো অসুবিধে নেই। তারা যেন তাদের ঘাড়, গলা ও বক্ষদেশ (চেহারাসহ) মাথার ওড়না দিয়ে আবৃত রাখে। তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, নিজের ছেলে, স্বামীর ছেলে, ভাই, ভাইপো, বোনপো, স্বজাতীয় মহিলা, মালিকানাধীন দাস, যৌন কামনা রহিত অধীন পুরুষ, নারীদের গোপনাঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ বালক ছাড়া অন্য কারো নিকট নিজ সৌন্দর্য প্রকাশ না করে। তেমনিভাবে তারা যেন সজোরে ভূমিতে নিজ পদযুগল ক্ষেপণ না করে। কারণ, তাতে করে তাদের আভ্যন্তরীণ সৌন্দর্য প্রকাশ পাবে, বরং হে মুমিনগণ! তোমরা সবাই আল্লাহ তাআলার দিকে প্রত্যাবর্তন করো। তখনই তোমরা সফলকাম হতে পারবে [সূরা আন-নূর, আয়াত: ৩১]

কোনো ব্যক্তি চারটি অঙ্গকে সঠিক ও শরীআত সম্মতভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলেই সত্যিকারার্থে সে অনেকগুলো গোনাহ বিশেষভাবে ব্যভিচার থেকে রক্ষা পেতে পারে। তেমনিভাবে তার ধার্মিকতাও অনেকাংশে রক্ষা পাবে। আর তা হচ্ছে:

১. চোখ ও দৃষ্টিশক্তি। তা রক্ষা করা লজ্জাস্থানকে রক্ষা করার শামিল।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«غُضُّوْا أَبْصَارَكُمْ ، وَاحْفَظُوْا فُرُوْجَكُمْ»
তোমাদের চোখ নিম্নগামী করো এবং লজ্জাস্থান হিফাযত করো[10]
হঠাৎ কোনো হারাম বস্তুর উপর চোখ পড়ে গেলে তা তড়িঘড়ি ফিরিয়ে নিতে হবে। দ্বিতীয়বার কিংবা একদৃষ্টে ওদিকে তাকিয়ে থাকা যাবে না।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুকে উদ্দেশ্য করে বলেন,
 يَا عَلِيُّ! لاَ تُتْبِعِ النَّظْرَةَ النَّظْرَةَ ، فَإِنَّ لَكَ الْأُوْلَى ، وَلَيْسَتْ لَكَ الْآخِرَةُ 
হে আলী! বার বার দৃষ্টি ক্ষেপণ করো না। কারণ, হঠাৎ দৃষ্টিতে তোমার কোনো দোষ নেই। তবে ইচ্ছাকৃত দ্বিতীয় দৃষ্টি অবশ্যই দোষের[11]
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হারাম দৃষ্টিকে চোখের যিনা বলে আখ্যায়িত করেছেন। যেমনিভাবে কোনো ব্যক্তির হাত, পা, মুখ, কান, মনও ব্যভিচার করে থাকে। তবে মারাত্মক ব্যভিচার হচ্ছে লজ্জাস্থানের ব্যভিচার। যাকে বাস্তবার্থেই ব্যভিচার বলা হয়।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إِنَّ اللهَ كَتَبَ عَلَى ابْنِ آدَمَ حَظَّهُ مِنَ الزِّنَا ، أَدْرَكَ ذَلِكَ لاَ مَحَالَةَ، فَزِنَا الْعَيْنَيْنِ النَّظَرُ، وَزِنَا اللِّسَانِ الْـمَنْطِقُ، وَالْيَدَانِ تَزْنِيَانِ فَزِنَاهُمَا الْبَطْشُ، وَالرِّجْلاَنِ تَزْنِيَانِ فَزِنَاهُمَا الْـمَشْيُ، وَالْفَمُ يَزْنِيْ فَزِنَاهُ الْقُبَلُ، وَالْأُذُنُ زِنَاهَا الِاسْتِمَاعُ، وَالنَّفْسُ تَمَنَّى وَتَشْتَهِيْ، وَالْفَرْجُ يُصَدِّقُ ذَلِكَ وَيُكَذِّبُهُ»
নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা প্রত্যেক আদম সন্তানের জন্য যিনার কিছু অংশ বরাদ্দ করে রেখেছেন। যা সে অবশ্যই করবে। চোখের যিনা হচ্ছে অবৈধভাবে কারোর দিকে দৃষ্টি ক্ষেপণ, মুখের যিনা হচ্ছে অশ্লীল কথোপকথন, হাতও ব্যভিচার করে, তবে তার ব্যভিচার হচ্ছে অবৈধভাবে কাউকে হাত দিয়ে ধরা, পাও ব্যভিচার করে তবে তার ব্যভিচার হচ্ছে কোনো ব্যভিচার সংঘটনের জন্য রওয়ানা করা, মুখও ব্যভিচার করে তবে তার ব্যভিচার হচ্ছে অবৈধভাবে কাউকে চুমু দেওয়া, কানের ব্যভিচার হচ্ছে অশ্লীল কথা শ্রবণ করা, মনও ব্যভিচারের কামনা-বাসনা করে। আর তখনই লজ্জাস্থান তা বাস্তবায়িত করে অথবা করে না[12]
দৃষ্টিই সকল অঘটনের মূল। কারণ, কোনো কিছু দেখার পরই তো তা মনে জাগে। মনে জাগলে তার প্রতি চিন্তা আসে। চিন্তা আসলে অন্তরে তাকে পাওয়ার কামনা-বাসনা জন্মে। কামনা-বাসনা জন্মিলে তাকে পাওয়ার খুব ইচ্ছে হয়। দীর্ঘ দিনের ইচ্ছে প্রতিজ্ঞার রূপ ধারণ করে। আর তখনই কোনো কর্ম সংঘটিত হয়। যদি পথিমধ্যে কোনো ধরনের বাধা না থাকে।
দৃষ্টির কুফল হচ্ছে আফসোস, ঊর্ধ্বশ্বাস ও অন্তরজ্বালা। কারণ, মানুষ যা চায় তার সবটুকু সে কখনোই পায় না। আর তখনই তার ধৈর্যচ্যুতি ঘটে।
অত্যন্ত আশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে এই যে, দৃষ্টি হচ্ছে তীরের ন্যায়। 
অন্তরকে নাড়া দিয়েই তা লক্ষ্যবস্ত্ততে পৌঁছায়। একেবারে শান্তভাবে নয়।
আরো আশ্চর্যের কাহিনী এই যে, দৃষ্টি অন্তরকে ক্ষতবিক্ষত করে দেয়। আর এ ক্ষতের ওপর অন্য ক্ষত (আবার তাকানো) সামান্যটুকু হলেও আরামপ্রদ। যার নিশ্চিত নিরাময় কখনোই সম্ভবপর নয়।

২. মন ও মনোভাব। এ পর্যায় খুবই কঠিন। কারণ, মানুষের মনই হচ্ছে ন্যায়-অন্যায়ের একমাত্র উৎস। মানুষের ইচ্ছা, স্পৃহা, আশা ও প্রতিজ্ঞা মনেরই সৃষ্টি। সুতরাং যে ব্যক্তি নিজ মনকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে সে নিজ কু-প্রবৃত্তির ওপর বিজয় লাভ করবে। আর যে ব্যক্তি নিজ মনকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না নিশ্চিতভাবে সে কুপ্রবৃত্তির শিকার হবে। পরিশেষে তার ধ্বংস একেবারেই অনিবার্য।
মানুষের মনোভাবই পরিশেষে দুরাশার রূপ নেয়। মনের দিক থেকে সর্বনিকৃষ্ট ব্যক্তি সে যে দুরাশায় সন্তুষ্ট। কারণ, দুরাশাই হচ্ছে সকল ধরনের আলস্য ও বেকারত্বের পুঁজি। এটিই পরিশেষে লজ্জা ও আফসোসের মূল কারণ হয়ে দাঁড়ায়। দুরাশাগ্রস্ত ব্যক্তি আলস্যের কারণে যখন বাস্তবতায় পৌঁছুতে পারে না তখনই তাকে শুধু আশার ওপরই নির্ভর করতে হয়। মূলতঃ বাস্তববাদী হওয়াই একমাত্র সাহসীর পরিচয়।
মানুষের ভালো মনোভাব আবার চার প্রকার:
১. দুনিয়ার লাভার্জনের মনোভাব।
২. দুনিয়ার ক্ষতি থেকে বাঁচার মনোভাব।
৩. আখিরাতের লাভার্জনের মনোভাব।
৪. আখিরাতের ক্ষতি থেকে বাঁচার মনোভাব।
নিজ মনোভাবকে উক্ত চারের মধ্যে সীমিত রাখাই যে কোনো মানুষের একান্ত কর্তব্য। এগুলোর যে কোনটিই মনে জাগ্রত হলে তা অতি তাড়াতাড়ি কাজে লাগানো উচিৎ। আর যখন এগুলোর সব কটিই মনের মাঝে একত্রে জাগ্রত হয় তখন সব চাইতে গুরুত্বপূর্ণটিকেই প্রাধান্য দিতে হবে। যা এখনই না করলে পরে করা সম্ভবপর হবে না।
কখনো এমন হয় যে, অন্তরে একটি প্রয়োজনীয় কাজের মনোভাব জাগ্রত হলো যা পরে করলেও চলে অথচ এরই পাশাপাশি আরেকটি এমন কাজের মনোভাবও অন্তরে জন্মালো যা এখনই করতে হবে। না করলে তা পরবর্তীতে কখনোই করা সম্ভবপর হবে না। এ ক্ষেত্রে আপনাকে প্রয়োজনীয় বস্তুটিকেই অগ্রাধিকার দিতে হবে। কেউ কেউ অপরটিকে অগ্রাধিকার দিয়ে থাকেন যা শরীআতের মৌলিক নীতি পরিপন্থী।
তবে সর্বোৎকৃষ্ট চিন্তা ও মনোভাব সেটিই যা একমাত্র আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি কিংবা পরকালের জন্যই হবে। এ ছাড়া যত চিন্তা-ভাবনা রয়েছে তা হচ্ছে শয়তানের ওয়াসওয়াসা অথবা ভ্রান্ত আশা।
যে চিন্তা-ফিকির একমাত্র আল্লাহ তাআলার জন্য তা আবার কয়েক প্রকার:
১. কুরআন মাজীদের আয়াতসমূহ নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করা এবং তাতে নিহিত আল্লাহ তাআলার মূল উদ্দেশ্য বুঝতে চেষ্টা করা।
২. দুনিয়াতে আল্লাহ তাআলার যে প্রকাশ্য নিদর্শনসমূহ রয়েছে তা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করা এবং তা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা। এরই মাধ্যমে আল্লাহ তাআলার নাম ও গুণাবলী, কৌশল ও প্রজ্ঞা, দান ও অনুগ্রহ বুঝতে চেষ্টা করবে। কুরআন মাজীদে আল্লাহ তাআলা এ ব্যাপারে মানুষকে মনোনিবেশ করার জন্য উৎসাহ প্রদান করেছেন।
৩. মানুষের ওপর আল্লাহ তাআলার যে অপার অনুগ্রহ রয়েছে তা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করা। তাঁর দয়া, ক্ষমা ও ধৈর্য নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করা।
উক্ত ভাবনাসমূহ মানুষের অন্তরে আল্লাহ তাআলার একান্ত পরিচয়, ভয়, আশা ও ভালোবাসার জন্ম দেয়।
৪. নিজ অন্তর ও আমলের দোষ-ত্রুটি নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করা। এরূপ চিন্তা-চেতনা খুবই কল্যাণকর, বরং একে সকল কল্যাণের সোপানই বলা চলে।
৫. সময়ের প্রয়োজন ও নিজ দায়িত্ব নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করা। সত্যিকার ব্যক্তি তো সেই যে নিজ সময়ের প্রতি বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়ে থাকে।
ইমাম শাফে‘ঈ রহ. বলেন, আমি সূফীদের নিকট মাত্র দুটি ভালো কথাই পেয়েছি। যা হচ্ছে: তারা বলে থাকে, সময় তলোয়ারের ন্যায়। তুমি তাকে ভালো কাজে নিঃশেষ করবে। নতুবা সে তোমাকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে উপনীত করবে। তারা আরো বলে, তুমি অন্তরকে ভালো কাজে লাগাবে। নতুবা সে তোমাকে খারাপ কাজেই লাগাবে।
মনে কোনো চিন্তা-ভাবনার উদ্রেক তা ভালো অথবা খারাপ যাই হোক না কেন দোষের নয়। বরং দোষ হচ্ছে খারাপ চিন্তা-চেতনাকে মনের মধ্যে দীর্ঘক্ষণ স্থান দেওয়া কারণ, আল্লাহ তাআলা মানুষকে দুটি চেতনা তথা প্রবৃত্তি দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। যার একটি ভালো অপরটি খারাপ। একটি সর্বদা একমাত্র আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টিই কামনা করে। পক্ষান্তরে অন্যটি গায়রুল্লাহ্র সন্তুষ্টিই কামনা করে। ভালোটি অন্তরের ডানে অবস্থিত যা ফেরেশতা কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত। অপরটি অন্তরের বামে অবস্থিত যা শয়তান কর্তৃক নিয়ন্তিত। পরস্পরের মধ্যে সর্বদা যুদ্ধ ও সংঘর্ষ অব্যাহত। কখনো এর জয় আবার কখনো ওর জয়। তবে সত্যিকারের বিজয় ধারাবাহিক ধৈর্য, সতর্কতা ও আল্লাহ্ভীরুতার ওপরই নির্ভরশীল।
অন্তরকে কখনো খালি রাখা যাবে না। ভালো চিন্তা-চেতনা দিয়ে ওকে ভর্তি রাখতেই হবে। নতুবা খারাপ চিন্তা-চেতনা তাতে অবস্থান নিবেই। সূফীবাদীরা অন্তরকে কাশ্ফের জন্য খালি রাখে বিধায় শয়তান সুযোগ পেয়ে তাতে ভালোর বেশে খারাপের বীজ বপন করে। সুতরাং অন্তরকে সর্বদা ধর্মীয় জ্ঞান ও হিদায়াতের উপকরণ দিয়ে ভর্তি রাখতেই হবে।

৩. মুখ ও বচন। কখনো অযথা কথা বলা যাবে না। অন্তরে কথা বলার ইচ্ছা জাগলেই চিন্তা করতে হবে, এতে কোনো ফায়দা আছে কি না? যদি তাতে কোনো ধরনের ফায়দা না থাকে তা হলে সে কথা কখনো বলবে না। আর যদি তাতে কোনো ধরনের ফায়দা থেকে থাকে তাহলে দেখবে, এর চাইতে আরো লাভজনক কোনো কথা আছে কি না? যদি থেকে থাকে তাহলে তাই বলবে, অন্যটা নয়।
কারোর মনোভাব সরাসরি বুঝা অসম্ভব। তবে কথার মাধ্যমেই তার মনোভাব সম্পূর্ণরূপে বুঝে নিতে হয়।
ইয়াহয়া ইবন মুআয রহ. বলেন, অন্তর হচ্ছে ডেগের ন্যায়। তাতে যা রয়েছে অথবা দেওয়া হয়েছে তাই রন্ধন হতে থাকবে। বাড়তি কিছু নয়। আর মুখ হচ্ছে চামচের ন্যায়। যখন কেউ কথা বলে তখন সে তার মনোভাবই ব্যক্ত করে। অন্য কিছু নয়। যেভাবে আপনি কোনো পাত্রে রাখা খাদ্যের স্বাদ জিহ্বা দিয়ে অনুভব করতে পারেন ঠিক তেমনিভাবে কারোর মনোভাব আপনি তার কথার মাধ্যমেই টের পাবেন।
মন আপনার প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের নিয়ন্ত্রক ঠিকই। তবে সে আপনার কোনো না কোনো অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সহযোগিতা ছাড়া যে কোনো কাজ সম্পাদন করতে পারে না। সুতরাং আপনার মন যদি আপনাকে কোনো খারাপ কথা বলতে বলে তখন আপনি আপনার জিহ্বার মাধ্যমে তার কোনো সহযোগিতা করবেন না। তখন সে নিজ কাজে ব্যর্থ হবে নিশ্চয় এবং আপনিও গুনাহ কিংবা তার অঘটন থেকে রেহাই পাবেন।
এ জন্যই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«لاَ يَسْتَقِيْمُ إِيْمَانُ عَبْدٍ حَتَّى يَسْتَقِيْمَ قَلْبُهُ ، وَلاَ يَسْتَقِيْمُ قَلْبُهُ حَتَّى يَسْتَقِيْمَ لِسَانُهُ»
কোনো বান্দার ঈমান ঠিক হয় না যতক্ষণ না তার অন্তর ঠিক হয়। তেমনিভাবে কোনো বান্দার অন্তর ঠিক হয় না যতক্ষণ না তার মুখ ঠিক হয়[13]
সাধারণত মন মুখ ও লজ্জাস্থানের মাধ্যমেই বেশি অঘটন ঘটায় তাই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে যখন জিজ্ঞাসা করা হলো কোন জিনিস সাধারণতঃ মানুষকে বেশির ভাগ জাহান্নামের সম্মুখীন করে? তখন তিনি বলেন,
«الْفَمُ وَالْفَرْجُ»
মুখ ও লজ্জাস্থান[14]
একদা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুআয ইবন জাবাল্ রাদিয়াল্লাহু আনহু কে জান্নাতে যাওয়া ও জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাওয়ার সহযোগী আমল বলে দেওয়ার পর আরো কিছু ভালো আমলের কথা বলেন। এমনকি তিনি সকল ভালো কাজের মূল, কাণ্ড ও চূড়া সম্পর্কে বলার পর বলেন,
«أَلاَ أُخْبِرُكَ بِمِلاَكِ ذَلِكَ كُلِّهِ؟! قُلْتُ: بَلَى يَا نَبِيَّ اللهِ! فَأَخَذَ بِلِسَانِهِ ، قَالَ: كُفَّ عَلَيْكَ هَذَا ، فَقُلْتُ: يَا نَبِيَّ اللهِ! وَإِنَّا لَـمُؤَاخَذُوْنَ بِمَا نَتَكَلَّمُ بِهِ؟! فَقَالَ: ثَكِلَتْكَ أُمُّكَ يَا مُعَاذُ! وَهَلْ يَكُبُّ النَّاسَ فِيْ النَّارِ عَلَى وُجُوْهِهِمْ أَوْ عَلَى مَنَاخِرِهِمْ إِلاَّ حَصَائِدُ أَلْسِنَتِهِمْ»
আমি কি তোমাকে এমন বস্তু সম্পর্কে বলবো যার ওপর এ সবই নির্ভরশীল? আমি বললাম, হে আল্লাহর নবী! আপনি দয়া করে তা বলুন। অতঃপর তিনি নিজ জিহ্বা ধরে বললেন, এটাকে তুমি অবশ্যই নিয়ন্ত্রণ করবে। তখন আমি বললাম, হে আল্লাহর নবী! আমাদেরকে কথার জন্যও কি পাকড়াও করা হবে? তিনি বললেন, তোমার কল্যাণ হোক! হে মুআয! একমাত্র কথার কারণেই বিশেষভাবে সে দিন মানুষকে উপুড় করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে[15]
অনেক সময় একটিমাত্র কথাই মানুষের দুনিয়া ও আখিরাত এমনকি তার সকল নেক আমল ধ্বংস করে দেয়।
জুন্দাব ইবন আব্দুল্লাহ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«قَالَ رَجُلٌ: وَاللهِ لاَ يَغْفِرُ اللهُ لِفُلاَنٍ ، فَقَالَ اللهُ تَعَالَى: مَنْ ذَا الَّذِيْ يَتَأَلَّى عَلَيَّ أَنْ لاَ أَغْفِرَ لِفُلاَنٍ ، فَإِنِّيْ قَدْ غَفَرْتُ لِفُلاَنٍ وَأَحْبَطْتُ عَمَلَكَ»
জনৈক ব্যক্তি বললো, আল্লাহর কসম, আল্লাহ তাআলা ওকে ক্ষমা করবেন না। তখন আল্লাহ তাআলা বললেন, কে সে? যে আমার ওপর কসম খেয়ে বলে যে, আমি ওমুককে ক্ষমা করবো না। অতএব, আল্লাহ তাআলা তাঁর ওপর শপথকারীকে উদ্দেশ্য করে বললেন, আমি ওকেই ক্ষমা করে দিলাম এবং তোমার সকল নেক আমল ধ্বংস করে দিলাম[16]
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু উক্ত হাদীস বর্ণনা করার পর বলেন,
«وَالَّذِيْ نَفْسِيْ بِيَدِهِ لَتَكَلَّمَ بِكَلِمَةٍ أَوْبَقَتْ دُنْيَاهُ وَآخِرَتَه»
সে সত্তার কসম যাঁর হাতে আমার জীবন! লোকটি এমন কথাই বলেছে যা তার দুনিয়া ও আখিরাত সবই ধ্বংস করে দিয়েছে[17]
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন,
«إِنَّ الْعَبْدَ لَيَتَكَلَّمُ بِالْكَلِمَةِ مَا يَتَبَيَّنُ مَا فِيْهَا يَهْوِيْ بِهَا فِيْ النَّارِ أَبْعَدَ مَا بَيْنَ الـْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ»
বান্দা কখনো কখনো যাচাই বাছাই ছাড়াই এমন কথা বলে ফেলে যার দরুন সে জাহান্নামে এতদূর পর্যন্ত নিক্ষিপ্ত হয় যতদূর দুনিয়ার পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্তের মাঝের ব্যবধান[18]
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন,
«وَإِنَّ أَحَدَكُمْ لَيَتَكَلَّمُ بِالْكَلِمَةِ مِنْ سَخَطِ اللهِ، مَا يَظُنُّ أَنْ تَبْلُغَ مَا بَلَغَتْ ، فَيَكْتُبُ اللهُ عَلَيْهِ بِهَا سَخَطَهُ إِلَى يَوْمِ يَلْقَاهُ»
তোমাদের কেউ কখনো এমন কথা বলে ফেলে যাতে আল্লাহ তাআলা তার ওপর অসন্তুষ্ট হন। সে কখনো ভাবতেই পারে নি কথাটি এমন এক মারাত্মক পর্যায়ে পৌঁছবে। অথচ আল্লাহ তাআলা উক্ত কথার দরুনই কিয়ামত পর্যন্ত তার ওপর তাঁর অসন্তুষ্টি অবধারিত করে ফেলেন[19]
উক্ত জটিলতার কারণেই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজ উম্মতকে সর্বদা ভালো কথা বলা অথবা চুপ থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি বলেন,
«مَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ فَلْيَقُلْ خَيْراً أَوْ لِيَصْمُتْ»
যার আল্লাহ তাআলা ও পরকালের ওপর বিশ্বাস রয়েছে সে যেন ভালো কথা বলে অথবা চুপ থাকে[20]
সালফে সালেহীনগণ আজকের দিনটা ঠাণ্ডা কিংবা গরম এ কথা বলতেও অত্যন্ত সঙ্কোচ বোধ করতেন। এমনকি তাদের জনৈককে স্বপ্নে দেখার পর তাঁর সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, আমাকে এখনো এ কথার জন্য আটকে রাখা হয়েছে যে, আমি একদা বলেছিলাম, আজ বৃষ্টির কতই না প্রয়োজন ছিলো! অতএব, আমাকে বলা হলো, তুমি এটা কীভাবে বুঝলে যে, আজ বৃষ্টির খুবই প্রয়োজন ছিলো; বরং আমিই আমার বান্দার কল্যাণ সম্পর্কে অধিক পরিজ্ঞাত।
অতএব, জানা গেলো, জিহ্বার কাজ খুবই সহজ। কিন্তু তার পরিণাম অত্যন্ত ভয়াবহ।
সবার জানা উচিৎ যে, আমাদের প্রতিটি কথাই লিপিবদ্ধ হচ্ছে। তা যতই ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র হোক না কেন।
আল্লাহ তাআলা বলেন,
﴿مَّا يَلۡفِظُ مِن قَوۡلٍ إِلَّا لَدَيۡهِ رَقِيبٌ عَتِيدٞ ١٨﴾ [ق: ١٨] 
মানুষ যাই বলুক না কেন তা লিপিবদ্ধ করার জন্য দুজন তৎপর প্রহরী (ফিরিশতা) তার সাথেই রয়েছে [সূরা ক্বাফ, আয়াত: ১৮]
মানুষ তার জিহ্বা সংক্রান্ত দুটি সমস্যায় সর্বদা ভুগতে থাকে। একটি কথার সমস্যা। আর অপরটি চুপ থাকার সমস্যা। কারণ, অকথ্য উক্তিকারী গুনাহ্গার বক্তা শয়তান। আর সত্য কথা বলা থেকে বিরত ব্যক্তি গুনাহ্গার বোবা শয়তান।

৪. পদ ও পদক্ষেপ। অর্থাৎ সাওয়াবের কাজ ছাড়া অন্য কোনো কাজে পদক্ষেপণ করা যাবে না।
মনে রাখতে হবে যে, প্রতিটি জায়েয কাজ একমাত্র নিয়্যাতের কারণেই সাওয়াবে রূপান্তরিত হয়।
উক্ত দীর্ঘ আলোচনা থেকে আমরা সহজে এ কথাই বুঝতে পারলাম যে, কোনো ব্যক্তি তার চোখ, মন, মুখ ও পা সর্বদা নিজ নিয়ন্ত্রণে রাখলে তার থেকে কোনো গুনাহ বিশেষ করে ব্যভিচার কর্মটি কখনো প্রকাশ পেতে পারে না। কারণ, দেখলেই তো ইচ্ছে হয়। আর ইচ্ছে হলেই তো তা মুখ খুলে বলতে মনে চায়। আর তখনই তা অধীর আগ্রহে পাওয়ার অপেক্ষায় থাকে।
বিচ্যুতি তথা স্খলন যখন দুধরনেরই তথা পায়ের ও মুখের তাই আল্লাহ তাআলা উভয়টিকে কুরআন মাজীদের মধ্যে একই সঙ্গে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন,
﴿وَعِبَادُ ٱلرَّحۡمَٰنِ ٱلَّذِينَ يَمۡشُونَ عَلَى ٱلۡأَرۡضِ هَوۡنٗا وَإِذَا خَاطَبَهُمُ ٱلۡجَٰهِلُونَ قَالُواْ سَلَٰمٗا ٦٣﴾ [الفرقان: ٦٢]
দয়ালু আল্লাহর বান্দা ওরাই যারা নম্রভাবে চলাফেরা করে এ পৃথিবীতে। মূর্খরা যখন তাদেরকে (তাচ্ছিল্যভরে) সম্বোধন করে তখন তারা বলে: তোমাদেরকে অনেক অনেক ধন্যবাদ! আমরা সবই সহ্য করে গেলাম; তোমাদের সঙ্গে আমাদের কোনো দ্বন্দ্ব নেই [সূরা আল-ফুরকান, আয়াত: ৬৩]
যেমনিভাবে আল্লাহ তাআলা দেখা ও ভাবাকে একত্রে উল্লেখ করেছেন।
আল্লাহ তাআলা বলেন,
﴿يَعۡلَمُ خَآئِنَةَ ٱلۡأَعۡيُنِ وَمَا تُخۡفِي ٱلصُّدُورُ ١٩﴾ [غافر: ١٩] 
তিনি চক্ষুর অপব্যবহার এবং অন্তরের গোপন বস্তু সম্পর্কেও অবগত [সূরা গাফির, আয়াত: ১৯]

ব্যভিচারের অপকার ও তার ভয়াবহতা

১. কোনো বিবাহিতা মহিলা ব্যভিচার করলে তার স্বামী, পরিবার ও আত্মীয়-স্বজন মারাত্মকভাবে লাঞ্ছিত হয়। জনসমক্ষে তারা আর মাথা উঁচু করে কথা বলতে সাহস পায় না।
২. কোনো বিবাহিতা মহিলার ব্যভিচারের কারণে যদি তার পেটে সন্তান জন্ম নেয় তা হলে তাকে হত্যা করা হবে অথবা জীবিত রাখা হবে। যদি তাকে হত্যাই করা হয় তা হলে দুটি গুনাহ একত্রেই করা হলো। আর যদি তাকে জীবিতই রাখা হয় এবং তার স্বামীর সন্তান হিসেবেই তাকে ধরে নেওয়া হয় তখন এমন ব্যক্তিকেই পরিবারভুক্ত করা হলো যে মূলতঃ সে পরিবারের সদস্য নয় এবং এমন ব্যক্তিকেই ওয়ারিশ বানানো হলো যে মূলতঃ ওয়ারিশ নয়। তেমনিভাবে সে এমন ব্যক্তির সন্তান হিসেবেই পরিচয় বহন করবে যে মূলতঃ তার পিতা নয়। আরো কতো কি?
৩. কোনো পুরুষ ব্যভিচার করলে তার বংশ পরিচয়ে গরমিল সৃষ্টি হয় এবং একজন পবিত্র মহিলাকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেওয়া হয়।
৪. ব্যভিচারের কারণে ব্যভিচারীর ওপর দরিদ্রতা নেমে আসে এবং তার বয়স কমে যায়। তাকে লাঞ্ছিত হতে হয় এবং তারই কারণে সমাজে মানুষে মানুষে বিদ্বেষ ছড়ায়।
৫. ব্যভিচার ব্যভিচারীর অন্তরকে বিক্ষিপ্ত করে দেয় এবং ধীরে ধীরে তাকে রোগাক্রান্ত করে তোলে। তেমনিভাবে তার মধ্যে চিন্তা, ভয় ও আশঙ্কার জন্ম দেয়। তাকে ফিরিশতা থেকে দূরে সরিয়ে নেয় এবং শয়তানের নিকটবর্তী করে দেয়। সুতরাং অঘটনের দিক দিয়ে হত্যার পরেই ব্যভিচারের অবস্থান। যার দরুন বিবাহিতের জন্য এর শাস্তিও জঘন্য হত্যা।
৬. কোনো ঈমানদারের জন্য এ সংবাদ শ্রবণ করা সহজ যে, তার স্ত্রীকে হত্যা করা হয়েছে; কিন্তু এ সংবাদ শ্রবণ করা তার জন্য অবশ্যই কঠিন যে, তার স্ত্রী কারোর সঙ্গে ব্যভিচারে লিপ্ত হয়েছে।
সা‘দ ইবন উবাদা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«لَوْ رَأَيْتُ رَجُلاً مَعَ اِمْرَأَتِيْ لَضَرَبْتُهُ بِالسَّيْفِ غَيْرَ مُصْفَحٍ»
আমি কাউকে আমার স্ত্রীর সঙ্গে ব্যভিচার করতে দেখলে তৎক্ষনাৎই আমি তার গর্দান উড়িয়ে দেবো[21]
উল্লিখিত উক্তিটি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কানে পৌঁছতেই তিনি বললেন,
«أَتَعْجَبُوْنَ مِنْ غَيْرَةِ سَعْدٍ؟ وَاللهِ لَأَنَا أَغْيَرُ مِنْهُ ، وَاللهُ أَغْيَرُ مِنِّيْ ، وَمِنْ أَجْلِ غَيْرَةِ اللهِ حَرَّمَ الْفَوَاحِشَ مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَمَا بَطَنَ»
তোমরা কি আশ্চর্য হয়েছো সা‘দের আত্মসম্মানবোধ দেখে? আল্লাহর কসম খেয়ে বলছিঃ আমার আত্মসম্মানবোধ তার চেয়েও বেশি এবং আল্লাহ তাআলার আরো বেশি। যার দরুন তিনি হারাম করে দিয়েছেন প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য সকল ধরনের অশ্লীলতাকে[22]
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন,
«يَا أُمَّةَ مُحَمَّدٍ! وَاللهِ مَا مِنْ أَحَدٍ أَغْيَرُ مِنَ اللهِ أَنْ يَّزْنِيَ عَبْدُهُ أَوْ تَزْنِيَ أَمَتُهُ»
হে মুহাম্মাদ-এর উম্মতরা! আল্লাহর কসম খেয়ে বলছি: আল্লাহ তাআলার চাইতেও আর কারোর আত্মসম্মানবোধ বেশি হতে পারে না। এ কারণেই তো তাঁর অসহ্য যে, তাঁর কোনো বান্দা অথবা বান্দী ব্যভিচার করবে[23]
৭. ব্যভিচারের সময় ব্যভিচারী ও ব্যভিচারিণীর ঈমান সঙ্গে থাকে না।
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إِذَا زَنَى الرَّجُلُ خَرَجَ مِنْهُ الْإِيْمَانُ؛ كَانَ عَلَيْهِ كَالظُّلَّةِ، فَإِذَا انْقَطَعَ رَجَعَ إِلِيْهِ الْإِيْمَانُ»
যখন কোনো পুরুষ ব্যভিচার করে তখন তার ঈমান তার অন্তর থেকে বের হয়ে মেঘের ন্যায় তার উপরে চলে যায়। অতঃপর যখন সে ব্যভিচারকর্ম সম্পাদন করে ফেলে তখন আবারো তার ঈমান তার নিকট ফিরে আসে[24]
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে আরো বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«مَنْ زَنَى أَوْ شَرِبَ الْـخَمْرَ نَزَعَ اللهُ مِنْهُ الْإِيْمَانَ كَمَا يَخْلَعُ الْإِنْسَانُ الْقَمِيْصَ مِنْ رَأْسِهِ»
যে ব্যক্তি ব্যভিচার অথবা মদ পান করলো আল্লাহ তাআলা তার ঈমান ছিনিয়ে নিবেন যেমনিভাবে কোনো মানুষ তার জামা নিজ মাথার উপর থেকে খুলে নেয়[25]
৮. ব্যভিচারের কারণে ব্যভিচারী ও ব্যভিচারিণীর ঈমানে ঘাটতি আসে।
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে আরো বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«لاَ يَزْنِيْ الزَّانِيْ حِيْنَ يَزْنِيْ وَهُوَ مُؤْمِنٌ ، وَلاَ يَسْرِقُ حِيْنَ يَسْرِقُ وَهُوَ مُؤْمِنٌ ، وَلاَ يَشْرَبُ الْخَمْرَ حِيْنَ يَشْرَبُهَا وَهُوَ مُؤْمِنٌ ؛ وَالتَّوْبَةُ مَعْرُوْضَةٌ بَعْدُ»
ব্যভিচারী যখন ব্যভিচার করে তখন সে ঈমানদার থাকে না। চোর যখন চুরি করে তখন সে ঈমানদার থাকে না। মদ পানকারী যখন মদ পান করে তখন সে ঈমানদার থাকে না। তবে এরপরও তাদেরকে তাওবা করার সুযোগ দেওয়া হয়[26]
৯. ব্যভিচারের প্রচার-প্রসার কিয়ামতের অন্যতম আলামত।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إِنَّ مِنْ أَشْرَاطِ السَّاعَةِ أَنْ يُّرْفَعَ الْعِلْمُ ، وَيَثْبُتَ الْجَهْلُ، وَيُشْرَبَ الْخَمْرُ، وَيَظْهَرَ الزِّنَا»
কিয়ামতের অন্যতম আলামত হচ্ছে ইলম উঠিয়ে নেওয়া হবে, মূর্খতা ছেয়ে যাবে, (প্রকাশ্যে) মদ্য পান করা হবে এবং প্রকাশ্যে ব্যভিচার সংঘটিত হবে[27]
আব্দুল্লাহ ইবন মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«مَا ظَهَرَ الرِّبَا وَالزِّنَا فِيْ قَرْيَةٍ إِلاَّ أَذِنَ اللهُ بِإِهْلاَكِهَا»
কোনো এলাকায় সুদ ও ব্যভিচার ছড়িয়ে পড়লে আল্লাহ তাআলা তখন সে জনপদের জন্য ধ্বংসের অনুমতি দিয়ে দেন
১০. ব্যভিচারের শাস্তির মধ্যে এমন তিনটি বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা অন্য কোনো দণ্ডবিধিতে নেই। যা নিম্নরূপ:
ক. বিবাহিত ব্যভিচারীর শাস্তি তথা হত্যা খুব ভয়ানকভাবেই প্রয়োগ করা হয়। এমনকি অবিবাহিত ব্যভিচারীর শাস্তি কমানো হলেও তাতে দুটি শাস্তি একত্রেই থেকে যায়। বেত্রাঘাতের মাধ্যমে শারীরিক শাস্তি এবং দেশান্তরের মাধ্যমে মানসিক শাস্তি।
খ. আল্লাহ তাআলা এর শাস্তি দিতে গিয়ে ব্যভিচারী অথবা ব্যভিচারিণীর প্রতি দয়া করতে নিষেধ করেছেন।
গ. আল্লাহ তাআলা এর শাস্তি জনসমক্ষে দেওয়ার জন্য আদেশ করেছেন। লুক্কায়িতভাবে নয়।
১১. ব্যভিচার থেকে দ্রুত তাওবা করে খাঁটি নেক আমল বেশি বেশি করতে না থাকলে ব্যভিচারী অথবা ব্যভিচারিণীর খারাপ পরিণামের বিপুল আশঙ্কা থাকে। মৃত্যুর সময় তাদের ঈমান নসীব নাও হতে পারে। কারণ, বার বার গুনাহ করতে থাকা ভালো পরিণামের বিরাট অন্তরায়। বিশেষ করে কঠিন প্রেম ও ভালোবাসার ব্যাপারগুলো এমনই।
প্রসিদ্ধ একটি ঘটনায় রয়েছে, জনৈক ব্যক্তিকে মৃত্যুর সময় কালেমা পড়তে বলা হলে সে বলে,
«أَيْنَ الطَّرِيْقُ إِلَى حَمَّامِ مِنْجَاب»
মিনজাবের গোসলখানায় কীভাবে যেতে হবে, কোন পথে”?
এর ঘটনায় বলা হয়, জনৈক ব্যক্তি তার ঘরের দরোজায় দাঁড়ানো ছিলো। এমতাবস্থায় তার পাশ দিয়ে জনৈকা সুন্দরী মহিলা যাচ্ছিলো। মহিলাটি তাকে মিনজাব গোসলখানার পথ জিজ্ঞাসা করলে সে তার ঘরের দিকে ইশারা করে বললো, এটিই মিনজাব গোসলখানা। অতঃপর মহিলাটি তার ঘরে ঢুকলে সেও তার পেছনে পেছনে ঘরে ঢুকলো। মহিলাটি যখন দেখলো, সে অন্যের ঘরে এবং লোকটি তাকে ধোকা দিয়েছে তখন সে তার প্রতি খুশি প্রকাশ করে বললো, তোমার সঙ্গে একত্রিত হতে পেরে আমি খুবই ধন্য। সুতরাং কিছু খাবার-দাবার ও আসবাবপত্র জোগাড় করা প্রয়োজন যাতে করে আমরা উভয় একত্রে শান্তিতে বসবাস করতে পারি। দ্রুত লোকটি ঘর থেকে বেরিয়ে গিয়ে প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র খরিদ করে আনলো। ফিরে এসে দেখলো, মহিলাটি ঘরে নেই। কারণ, সে ভুলবশত ঘরে তালা লাগিয়ে যায় নি। অথচ মহিলাটি যাওয়ার সময় ঘরের কোনো আসবাবপত্র সঙ্গে নেয় নি। তখন লোকটি আধ পাগল হয়ে গেলো এবং গলিতে গলিতে এ বলে ঘুরে বেড়াতে লাগলো:
يَا رُبَّ قَائِلَةٍ يَوْماً وَقَدْ تَعِبَتْ     كَيْفَ الطَّرِيْقُ إِلَى حَمَّامِ مِنْجَابِ
হে অমুক! যে একদা ক্লান্ত হয়ে বলেছিলে, মিনজাবের গোসলখানায় কীভাবে যেতে হয়, কোন পথে”?
একদা সে উক্ত ছন্দটি বলে বেড়াতে লাগলো এমন সময় জনৈকা মহিলা ঘরের জানালা দিয়ে প্রত্যুক্তি করে বললো,
هَلاَّ جَعَلْتَ سَرِيْعاً إِذْ ظَفِرْتَ بِهَا   حِرْزاً عَلَى الدَّارِ أَوْ قُفْلاً عَلَى الْبَابِ
কেন তুমি তাকে পাওয়ার সাথে সাথে দ্রুত দরোজা বন্ধ করে ফেলো নি অথবা ঘরে তালা লাগিয়ে যাও নি?
তখন তার চিন্তা আরো বেড়ে যায় এবং প্রথমোক্ত ছন্দ বলতে বলতেই তার মৃত্যু হয়। নাঊযু বিল্লাহ
১২. কোনো জাতির মধ্যে ব্যভিচারের ব্যাপক প্রচার ও প্রসার তাদের ওপর আল্লাহ তাআলার ব্যাপক আযাব নিপতিত হওয়ার এক বিশেষ কারণ।
আব্দুল্লাহ ইবন মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«مَا ظَهَرَ فِيْ قَوْمٍ الزِّنَا أَوِ الرِّبَا إِلاَّ أَحَلُّوْا بِأَنْفُسِهِمْ عَذَابَ اللهِ»
কোনো জাতির মধ্যে ব্যভিচারের ব্যাপক প্রচার ও প্রসার ঘটলে তারা নিজেরাই যেন হাতে ধরে তাদের ওপর আল্লাহ তাআলার আযাব নিপতিত করলো[28]
মাইমূনাহ রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«لاَ تَزَالُ أُمَّتِيْ بِخَيْرٍ مَا لَمْ يَفْشُ فِيْهِمْ وَلَدُ الزِّنَا ، فَإِذَا فَشَا فِيْهِمْ وَلَدُ الزِّنَا؛ فَأَوْشَكَ أَنْ يَّعُمَّهُمُ اللهُ بِعَذَابٍ»
আমার উম্মত সর্বদা কল্যাণের ওপর থাকবে যতক্ষণ না তাদের মধ্যে জারজ সন্তানের আধিক্য দেখা না দিবে। যখন তাদের মধ্যে জারজ সন্তান বেড়ে যাবে তখনই আল্লাহ তাআলা তাদেরকে ব্যাপক আযাব দিবেন[29]

ব্যভিচারের স্তর বিন্যাস

১. অবিবাহিতা মেয়ের সঙ্গে ব্যভিচার। এতে মেয়েটির সম্মানহানি ও চরিত্র বিনষ্ট হয়। কখনো কখনো ব্যাপারটি সন্তান হত্যা পর্যন্ত পৌঁছোয়।
২. বিবাহিতা মহিলার সঙ্গে ব্যভিচার। এতে উপরন্তু স্বামীর সম্মানও বিনষ্ট হয়। তার পরিবার ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছায়। তার বংশ পরিচয়ে ব্যাঘাত ঘটে। কারণ, সন্তানটি তারই বলে বিবেচিত হয়, অথচ সন্তানটি মূলতঃ তার নয়।
যেন এমন ঘটনা ঘটতেই না পারে সে জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বামী অনুপস্থিত এমন মহিলার বিছানায় বসা ব্যক্তির এক ভয়ানক রূপ চিত্রায়ন করেছেন।
আব্দুল্লাহ ইবন আমর রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«مَثَلُ الَّذِيْ يَجْلِسُ عَلَى فِرَاشِ الْـمُغِيْبَةِ مَثَلُ الَّذِيْ يَنْهَشُهُ أَسْوَدُ مِنْ أَسَاوِدِ يَوْمِ الْقِيَامَةِ»
যে ব্যক্তি স্বামী অনুপস্থিত এমন কোনো মহিলার বিছানায় বসে তার দৃষ্টান্ত সেই ব্যক্তির ন্যায় যাকে কিয়ামতের দিন কোনো বিষাক্ত সাপ দংশন করে[30]
৩. যে কোনো প্রতিবেশী মহিলার সঙ্গে ব্যভিচার। এতে উপরন্তু প্রতিবেশীর অধিকারও বিনষ্ট হয় এবং তাকে চরম কষ্ট দেওয়া হয়।
মিক্বদাদ ইবন আসওয়াদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«لَأَنْ يَّزْنِيَ الرَّجُلُ بِعَشْرِ نِسْوَةٍ أَيْسَرُ عَلَيْهِ مِنْ أَنْ يَّزْنِيَ بِامْرَأَةِ جَارِهِ»
সাধারণ দশটি মহিলার সাথে ব্যভিচার করা এতো ভয়ঙ্কর নয় যতো ভয়ঙ্কর নিজ প্রতিবেশীর স্ত্রীর সাথে ব্যভিচার করা[31]
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন,
«لاَ يَدْخُلُ الْـجَنَّةَ مَنْ لاَ يَأْمَنُ جَارُهُ بَوَائِقَهُ»
যার অনিষ্ট থেকে তার প্রতিবেশী নিরাপদ নয় সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না[32]
৪. যে প্রতিবেশী সালাতের জন্য অথবা ধর্মীয় জ্ঞানার্জনের জন্য কিংবা জিহাদের জন্য ঘর থেকে বের হয়েছে তার স্ত্রীর সঙ্গে ব্যভিচার।
বুরাইদাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«حُرْمَةُ نِسَاءِ الْـمُجَاهِدِيْنَ عَلَى الْقَاعِدِيْنَ كَحُرْمَةِ أُمَّهَاتِهِمْ ، وَمَا مِنْ رَجُلٍ مِنَ الْقَاعِدِيْنَ يَخْلُفُ رَجُلاً مِنَ الْـمُجَاهِدِيْنَ فِيْ أَهِلِهِ فَيَخُوْنُهُ فِيْهِمْ إِلاَّ وُقِفَ لَهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ ، فَيَأْخُذُ مِنْ عَمَلِهِ مَا شَاءَ ، فَمَا ظَنُّكُمْ؟»
মুজাহিদদের স্ত্রীদের সম্মান যুদ্ধে না গিয়ে ঘরে বসে থাকা লোকদের নিকট তাদের মায়েদের সম্মানের মতো। কোনো ঘরে বসে থাকা ব্যক্তি যদি কোনো মুজাহিদ পুরুষের পরিবারের দায়িত্ব নিয়ে তাদের তত্ত্বাবধানের ব্যাপারে আমানতের খিয়ানত করে তখন তাকে মুজাহিদ ব্যক্তির প্রাপ্য আদায়ের জন্য কিয়ামতের দিন দাঁড় করিয়ে রাখা হবে। অতঃপর মুজাহিদ ব্যক্তি ঘরে বসা ব্যক্তির আমল থেকে যা মনে চায় নিয়ে নিবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমাদের কি এমন ধারণা হয় যে, তাকে এতটুকু সুযোগ দেওয়ার পরও সে এ প্রয়োজনের দিনে ওর সব আমল না নিয়ে ওর জন্য একটুখানি রেখে দিবে?”[33]
৫. আত্মীয়া মহিলার সঙ্গে ব্যভিচার। এতে উপরন্তু আত্মীয়তার বন্ধনও বিনষ্ট করা হয়।
৬. মাহরাম বা এগানা (যে মহিলাকে বিবাহ করা শরীআতের দৃষ্টিতে চিরতরের জন্য হারাম) মহিলার সঙ্গে ব্যভিচার। এতে উপরন্তু মাহরামের অধিকারও বিনষ্ট করা হয়।
৭. বিবাহিত ব্যক্তির ব্যভিচার। আর তা মারাত্মক এ জন্যই যে, তার উত্তেজনা প্রশমনের জন্য তো তার স্ত্রীই রয়েছে। তবুও সে ব্যভিচার করে বসলো।
৮. বুড়ো ব্যক্তির ব্যভিচার। আর তা মারাত্মক এ জন্যই যে, তার উত্তেজনা তো তেমন আর উগ্র নয়। তবুও সে ব্যভিচার করে বসলো।
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«ثَلاَثَةٌ لاَ يُكَلِّمُهُمُ اللهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَلاَ يُزَكِّيْهِمْ وَلاَ يَنْظُرُ إِلَيْهِمْ وَلـَهُمْ عَذَابٌ أَلِيْمٌ: شَيْخٌ زَانٍ، وَمَلِكٌ كَذَّابٌ، وَعَائِلٌ مُسْتَكْبِرٌ»
তিন ব্যক্তির সঙ্গে আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন কথা বলবেন না, তাদেরকে গোনাহ থেকে পবিত্র করবেন না, তাদের দিকে দয়ার দৃষ্টিতেও তাকাবেন না এবং তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। বৃদ্ধ ব্যভিচারী, মিথ্যুক রাষ্ট্রপতি এবং অহঙ্কারী গরীব[34]
৯. মর্যাদাপূর্ণ মাস, স্থান ও সময়ের ব্যভিচার। এতে উপরন্তু উক্ত মাস, স্থান ও সময়ের মর্যাদা বিনষ্ট হয়।
কোনো ব্যক্তি শয়তানের ধোকায় পড়ে ব্যভিচার করে ফেললে এবং তা কেউ না জানলে অথবা বিচারকের নিকট তা না পৌঁছলে তার উচিৎ হবে যে, সে তা লুকিয়ে রাখবে এবং আল্লাহ তাআলার নিকট কায়মনোবাক্যে খাঁটি তাওবা করে নিবে। অতঃপর বেশি বেশি নেক আমল করবে এবং খারাপ জায়গা ও সাথী থেকে দূরে থাকবে।
আল্লাহ তাআলা বলেন,
﴿وَهُوَ ٱلَّذِي يَقۡبَلُ ٱلتَّوۡبَةَ عَنۡ عِبَادِهِۦ وَيَعۡفُواْ عَنِ ٱلسَّيِّ‍َٔاتِ وَيَعۡلَمُ مَا تَفۡعَلُونَ ٢٥﴾ [الشورا: ٢٥] 
তিনিই (আল্লাহ তাআলা) তাঁর বান্দাদের তাওবা কবুল করেন এবং সমূহ পাপ মোচন করেন। আর তোমরা যা করো তাও তিনি জানেন [সূরা আশ-শূরা, আয়াত: ২৫]
আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«اِجْتَنِبُوْا هَذِهِ الْقَاذُوْرَاتِ الَّتِيْ نَهَى اللهُ عَنْهَا، فَمَنْ أَلَمَّ بِهَا فَلْيَسْتَتِرْ بِسِتْرِ اللهِ، وَلْيَتُبْ إِلَى اللهِ، فَإِنَّهُ مَنْ يُبْدِ لَنَا صَفْحَتَهُ نُقِمْ عَلَيْهِ كِتَابَ اللهِ تَعَالَى»
তোমরা ব্যভিচার থেকে দূরে থাকো যা আল্লাহ তাআলা তোমাদের জন্য নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন। এরপরও যে ব্যক্তি শয়তানের ধোকায় পড়ে তা করে ফেলে সে যেন তা লুকিয়ে রাখে। যখন আল্লাহ তাআলা তা গোপনই রেখেছেন। তবে সে যেন এ জন্য আল্লাহ তাআলার নিকট তাওবা করে নেয়। কারণ, যে ব্যক্তি তা আমাদের তথা প্রশাসনের নিকট প্রকাশ করে দিবে তার ওপর আমরা অবশ্যই আল্লাহ তাআলার বিধান প্রয়োগ করবোই[35]
উক্ত কারণেই মায়িয ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট বার বার ব্যভিচারের স্বীকারোক্তি করছিলেন তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার প্রতি এতটুকুও ভ্রূক্ষেপ করেন নি। চার বারের পর তিনি তাকে এও বললেন, হয়তো বা তুমি তাকে চুমু দিয়েছো, ধরেছো কিংবা তার প্রতি দৃষ্টিপাত করেছো। কারণ, এতে করে তিনি তাকে ব্যক্তিগতভাবে আল্লাহ তাআলার নিকট খাঁটি তাওবা করার সুযোগ করে দিতে চেয়েছিলেন।
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«أَتَى رَسُوْلَ اللهِ e رَجُلٌ مِنَ الـْمُسْلِمِيْنَ، وَهُوَ فِيْ الـْمَسْجِدِ، فَنَادَاهُ، فَقَالَ: يَا رَسُوْلَ اللهِ! إِنِّيْ زَنَيْتُ، فَأَعْرَضَ عَنْهُ، فَتَنَحَّى تِلْقَاءَ وَجْهِهِ، فَقَالَ: يَا رَسُوْلَ اللهِ! إِنِّيْ زَنَيْتُ، فَأَعْرَضَ عَنْهُ، حَتَّى ثَنَّى ذَلِكَ عَلَيْهِ أَرْبَعَ مَرَّاتٍ، فَلَمَّا شَهِدَ عَلَى نَفْسِهِ أَرْبَعَ شَهَادَاتٍ دَعَاهُ رَسُوْلُ اللهِ e فَقَالَ: أَبِكَ جُنُوْنٌ؟ قَالَ: لاَ، قَالَ: فَهَلْ أُحْصِنْتَ؟ قَالَ: نَعَمْ، فَقَالَ النَّبِيُّ e: اِذْهَبُوْا بِهِ فَارْجُمُوْهُ»
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট জনৈক মুসলিম আসলো। তখনো তিনি মসজিদে। অতঃপর সে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ডেকে বললো: হে আল্লাহর রাসূল! আমি ব্যভিচার করে ফেলেছি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার প্রতি কোনো রূপ ভ্রূক্ষেপ না করে অন্য দিকে তাঁর চেহারা মুবারক মুড়িয়ে নিলেন। সে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চেহারা বরাবর এসে আবারো বললো: হে আল্লাহর রাসূল! আমি ব্যভিচার করে ফেলেছি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবারো তার প্রতি কোনো রূপ ভ্রূক্ষেপ না করে অন্য দিকে তাঁর চেহারা মুবারক মুড়িয়ে নিলেন। এমন কি সে উক্ত স্বীকারোক্তি চার চার বার করলো। যখন সে নিজের ওপর ব্যভিচারের সাক্ষ্য চার চার বার দিয়েছে তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে ডেকে বললেন, তুমি কি পাগল? সে বললো, না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি কি বিবাহিত? সে বললো: জী হ্যাঁ। অতঃপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীগণকে বললেন, তোমরা একে নিয়ে যাও এবং রজম তথা প্রস্তর নিক্ষেপে হত্যা করো[36]
বুরাইদাহ রাদিয়াল্লাহু আনহুর বর্ণনায় রয়েছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মায়িয ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহুকে বলেছিলেন,
«وَيْحَكَ! اِرْجِعْ فَاسْتَغْفِرِ اللهَ وَتُبْ إلَيْهِ»
আহা! তুমি ফিরে যাও। অতঃপর আল্লাহ তাআলার নিকট ক্ষমা চাও এবং তাঁর নিকট তাওবা করে নাও[37]
আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«لَمَّا أَتَى مَاعِزُ بْنُ مَالِكٍ إِلَى النَبِيِّ e قَالَ لَهُ: لَعَلَّكَ قَبَّلْتَ أَوْ غَمَزْتَ أَوْ نَظَرْتَ ، قَالَ: لاَ يَا رَسُوْلَ اللهِ!»
যখন মায়িয ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট আসলো তখন তিনি তাকে বললেন, হয়তো বা তুমি তাকে চুমু দিয়েছো, ধরেছো কিংবা তার প্রতি দৃষ্টিপাত করেছো। সে বললো, না, হে আল্লাহর রাসূল![38]
তবে বিচারকের নিকট ব্যাপারটি (সাক্ষ্য সবুতের মাধ্যমে) পৌঁছলে অবশ্যই তাকে বিচার করতে হবে। তখন আর কারোর ক্ষমার ও সুপারিশের কোনো সুযোগ থাকে না।
এ কারণেই তো রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাফওয়ান ইবন উমাইয়াহকে চোরের জন্য সুপারিশ করতে চাইলে তাকে বললেন,
«هَلاَّ كَانَ ذَلِكَ قَبْلَ أَنْ تَأْتِيَنِيْ بِهِ؟!»
আমার নিকট আসার পূর্বেই কেন তা করলে না[39]
তেমনিভাবে উসামা রাদিয়াল্লাহু আনহু জনৈকা কুরাশী চুন্নি মহিলার জন্য সুপারিশ করতে চাইলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে অত্যন্ত রাগতস্বরে বললেন,
«يَا أُسَامَةُ! أَتَشْفَعُ فِيْ حَدٍّ مِنْ حُدُوْدِ اللهِ ؟!»
হে উসামা! তুমি কি আল্লাহ তাআলার দণ্ডবিধির ব্যাপারে সুপারিশ করতে আসলে?!”[40]
আব্দুল্লাহ ইবন আমর ইবনুল আস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«تَعَافَوْا الْـحُدُوْدَ فِيْمَا بَيْنَكُمْ ، فَمَا بَلَغَنِيْ مِنْ حَدٍّ فَقَدْ وَجَب»
তোমরা দণ্ডবিধি সংক্রান্ত ব্যাপারগুলো একে অপরকে ক্ষমা করো। কারণ, আমার নিকট এর কোনো একটি পৌঁছলে তা প্রয়োগ করা আমার ওপর আবশ্যক হয়ে যাবে[41]
এ কথা মনে রাখতে হবে যে, শুধুমাত্র তিনটি পদ্ধতিতেই কারোর ওপর ব্যভিচারের দোষ প্রমাণিত হয়। যা নিম্নরূপ:
১. ব্যভিচারী একবার অথবা চারবার ব্যভিচারের সুস্পষ্ট স্বীকারাক্তি করলে। কারণ, জুহাইনী মহিলা ও উনাইস রাদিয়াল্লাহু আনহু এর রজমকৃতা মহিলা ব্যভিচারের স্বীকারোক্তি একবারই করেছিলো। অন্য দিকে মায়িয ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট চার চারবার ব্যভিচারের স্বীকারোক্তি করেছিলেন। কিন্তু সংখ্যার ব্যাপারে হাদীসটির বর্ণনাসমূহ মুযতারিব তথা এক কথার নয়। কোনো কোন বর্ণনায় চার চার বারের কথা। কোনো কোন বর্ণনায় তিন তিন বারের কথা। আবার কোনো কোন বর্ণনায় দু দু বারের কথারও উল্লেখ রয়েছে।
তবুও চার চারবার স্বীকারোক্তি নেওয়াই সর্বোত্তম। কারণ, হতে পারে স্বীকারোক্তিকারী এমন কাজ করেছে যাতে সে শাস্তি পাওয়ার উপযুক্ত হয় না। যা বার বার স্বীকারোক্তির মাধ্যমে প্রকাশ পেতে পারে। আর এ কথা সবারই জানা যে, ইসলামী দণ্ডবিধি যে কোনো যুক্তিসঙ্গত সনেদহ কিংবা অজুহাতের কারণে রহিত হয় এবং যা উমার, আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস এবং অন্যন্য সাহাবীগণ থেকেও বর্ণিত। আল্লামা ইবনুল মুনযির রহ. এ ব্যাপারে উলামায়ে কিরামের ঐকমত্যেরও দাবি করেছেন। তেমনিভাবে চার চারবার স্বীকারোক্তির মাধ্যমে ব্যভিচারীকে ব্যক্তিগতভাবে আল্লাহ তাআলার নিকট খাঁটি তাওবা করারও সুযোগ দেওয়া হয়। যা একান্তভাবেই কাম্য।
তবে স্বীকারাক্তির মধ্যে ব্যভিচারের সুস্পষ্ট উল্লেখ এবং দণ্ডবিধি প্রয়োগ পর্যন্ত স্বীকারোক্তির ওপর স্বীকারকারী অটল থাকতে হবে। অতএব কেউ যদি এর আগেই তার স্বীকারোক্তি প্রত্যাহার করে নেয় তা হলে তার কথাই তখন গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত হবে। তেমনিভাবে স্বীকারকারী জ্ঞানসম্পন্নও হতে হবে।
২. ব্যভিচারের ব্যাপারে চার চার জন সত্যবাদী পুরুষ এ বলে সুস্পষ্ট সাক্ষ্য দিলে যে, তারা সত্যিকারার্থেই ব্যভিচারী ব্যক্তির সঙ্গমকর্ম স্বচক্ষে দেখেছে।
আল্লাহ তাআলা বলেন,
﴿وَٱلَّٰتِي يَأۡتِينَ ٱلۡفَٰحِشَةَ مِن نِّسَآئِكُمۡ فَٱسۡتَشۡهِدُواْ عَلَيۡهِنَّ أَرۡبَعَةٗ مِّنكُمۡۖ﴾ [النساء: ١٥] 
তোমাদের স্ত্রীদের মধ্য থেকে কেউ ব্যভিচার করলে তোমরা তাদের বিরুদ্ধে তোমাদের মধ্য থেকে চার চার জন সাক্ষী সংগ্রহ করো [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১৫]
৩. কোনো মহিলা গর্ভবতী হলে; অথচ তার কোনো স্বামী নেই।
উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু তার যুগে এমন একটি বিচারে রজম করেছেন। তবে এ প্রমাণ হেতু যে কোনো মহিলার ওপর দণ্ডবিধি প্রয়োগ করতেই হবে ব্যাপারটি এমন নয়। এ জন্য যে, গর্ভটি সন্দেহবশত সঙ্গমের কারণেও হতে পারে অথবা ধর্ষণের কারণেও। এমনকি মেয়েটি গভীর নিদ্রায় থাকাবস্থায়ও তার সঙ্গে উক্ত ব্যভিচার কর্মটি সংঘটিত হতে পারে। তাই উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু তাঁর যুগেই শেষোক্ত দুটি অজুহাতে দু জন মহিলাকে শাস্তি দেন নি। তবে কোনো মেয়ে যদি গর্ভবতী হয়; অথচ তার কোনো স্বামী নেই এবং সে এমন কোনো যুক্তিসঙ্গত অজুহাতও দেখাচেছ না যার দরুন দণ্ডবিধি রহিত হয় তখন তার ওপর ব্যভিচারের উপযুক্ত দণ্ডবিধি প্রয়োগ করা যেতে পারে।
উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু একদা তাঁর এক সুদীর্ঘ খুৎবায় বলেন,
«وَإِنَّ الرَّجْمَ حَقٌّ فِيْ كِتَابِ اللهِ تَعَالَى عَلَى مَنْ زَنَى ، إِذَا أَحْصَنَ مِنَ الرِّجَالِ وَالنِّسَاءِ ، إِذَا قَامَتِ الْبَيِّنَةُ أَوْ كَانَ الْحَبْلُ أَوِ الْاِعْتِرَافُ»
নিশ্চয় রজম আল্লাহ তাআলার বিধানে এমন পুরুষ ও মহিলার জন্যই নির্ধারিত যারা ব্যভিচার করেছে; অথচ তারা বিশুদ্ধ বিবাহের মাধ্যমে ইতিপূর্বে নিজ স্ত্রী অথবা স্বামীর সাথে সম্মুখ পথে সঙ্গম করেছে এবং স্বামী-স্ত্রী উভয় জনই তখন ছিলো প্রাপ্তবয়স্ক ও স্বাধীন যখন ব্যভিচারের উপযুক্ত সাক্ষী-প্রমাণ মিলে যায় অথবা মহিলা গর্ভবতী হয়ে যায় অথবা ব্যভিচারী কিংবা ব্যভিচারিণী ব্যভিচারের ব্যাপারে স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তি দেয়[42]

ব্যভিচারের শাস্তি

কেউ শয়তানের ধোকায় পড়ে ব্যভিচার করে ফেললে সে যদি অবিবাহিত হয় তা হলে তাকে একশটি বেত্রাঘাত ও এক বছরের জন্য দেশান্তর করা হবে। আর যদি সে বিবাহিত হয় তা হলে তাকে রজম তথা পাথর মেরে হত্যা করা হবে।
আল্লাহ তাআলা বলেন,
 ﴿ٱلزَّانِيَةُ وَٱلزَّانِي ۡلِدُواْ كُلَّ وَٰحِدٖ مِّنۡهُمَا مِاْئَةَ جَلۡدَةٖۖ وَلَا تَأۡخُذۡكُم بِهِمَا رَأۡفَةٞ فِي دِينِ ٱللَّهِ إِن كُنتُمۡ تُؤۡمِنُونَ بِٱللَّهِ وَٱلۡيَوۡمِ ٱلۡأٓخِرِۖ وَلۡيَشۡهَدۡ عَذَابَهُمَا طَآئِفَةٞ مِّنَ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ ٢﴾ [النور: ٢]
ব্যভিচারিণী ও ব্যভিচারী; তাদের প্রত্যেককে তোমরা একশ করে বেত্রাঘাত করবে। আল্লাহর বিধান কার্যকরী করণে তাদের প্রতি দয়া যেন তোমাদেরকে প্রভাবিত করতে না পারে যদি তোমরা আল্লাহ তাআলা ও পরকালে বিশ্বাসী হয়ে থাকো এবং মুমিনদের একটি দল যেন তাদের শাস্তি প্রত্যক্ষ করে [সূরা আন-নূর, আয়াত: ২]
আবু হুরায়রা ও যায়েদ ইবন খালিদ জুহানী রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত তারা বলেন,
«جَاءَ أَعْرَابِيٌّ فَقَالَ: يَا رَسُوْلَ اللهِ! اِقْضِ بَيْنَنَا بِكِتَابِ اللهِ، فَقَامَ خَصْمُهُ فَقَالَ: صَدَقَ، اِقْضِ بَيْنَنَا بِكِتَابِ اللهِ ، فَقَالَ الْأَعْرَابِيُّ: إِنَّ ابْنِيْ كَانَ عَسِيْفاً عَلَى هَذَا، فَزَنَى بِامْرَأَتِهِ ، فَقَالُوْا لِيْ: عَلَى ابْنِكَ الرَّجْمُ، فَفَدَيْتُ ابْنِيْ مِنْهُ بِمِئَةٍ مِنَ الْغَنَمِ وَوَلِيْدَةٍ، ثُمَّ سَأَلْتُ أَهْلَ الْعِلْمِ فَقَالُوْا: إِنَّمَا عَلَى ابْنِكَ جَلْدُ مِئَةٍ وَتَغْرِيْبُ عَامٍ، فَقَالَ النَّبِيُّ e: لَأَقْضِيَنَّ بَيْنَكُمَا بِكِتَابِ اللهِ ، أَمَّا الْوَلِيْدَةُ وَالْغَنَمُ فَرَدٌّ عَلَيْكَ، وَعَلَى ابْنِكَ جَلْدُ مِئَةٍ وَتَغْرِيْبُ عَامٍ، وَأَمَّا أَنْتَ يَا أُنَيْسُ! فَاغْدُ عَلَى امْرَأَةِ هَذَا فَارْجُمْهَا ، فَغَدَا عَلَيْهَا أُنَيْسٌ فَرَجَمَهَا»
জনৈক বেদুঈন ব্যক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এসে বললো: হে আল্লাহর রাসূল! আপনি আমাদের মাঝে কোরআনের ফায়সালা করুন। তার প্রতিপক্ষও দাঁড়িয়ে বললো: সে সত্য বলেছে। আপনি আমাদের মাঝে কোরআনের ফায়সালা করুন। তখন বেদুঈন ব্যক্তিটি বললো: আমার ছেলে এ লোকটির নিকট কামলা খাটতো। ইতিমধ্যে সে এর স্ত্রীর সাথে ব্যভিচার করে বসে। সবাই আমাকে বললো: তোমার ছেলেটিকে পাথর মেরে হত্যা করতে হবে। তখন আমি আমার ছেলেটিকে ছাড়িয়ে নেই এ লোকটিকে একটি বান্দী ও একশটি ছাগল দিয়ে। অতঃপর অত্র এলাকার আলিমদেরকে জিজ্ঞাসা করলে তারা বললো, তোমার ছেলেকে একশটি বেত্রাঘাত ও এক বছরের জন্য দেশান্তর করতে হবে। এরপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি তোমাদের মাঝে কুরআনের বিচার করছি, বান্দী ও ছাগলগুলো তোমাকে ফেরত দেওয়া হবে এবং তোমার ছেলেটিকে একশটি বেত্রাঘাত ও এক বছরের জন্য দেশান্তর করতে হবে। আর হে উনাইস! তুমি এর স্ত্রীর নিকট যাও। অতঃপর তাকে রজম করো। অতএব, উনাইস তার নিকট গেলো। অতঃপর তাকে রজম করলো[43]
উবাদা ইবন সামিত রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«خُذُوْا عَنِّيْ، خُذُوْا عَنِّيْ، فَقَدْ جَعَلَ اللهُ لَـهُنَّ سَبِيْلاً ، الْبِكْرُ بِالْبِكْرِ جَلْدُ مِئَةٍ وَنَفْـيُ سَنَةٍ ، وَالثَّيِّبُ بِالثَّيِّبِ جَلْدُ مِئَةٍ وَالرَّجْمُ»
তোমরা আমার নিকট থেকে বিধানটি সংগ্রহ করে নাও। তোমরা আমার নিকট থেকে বিধানটি সংগ্রহ করে নাও। আল্লাহ তাআলা তাদের জন্য একটি ব্যবস্থা দিয়েছেন তথা বিধান অবতীর্ণ করেছেন। অবিবাহিত যুবক-যুবতীর শাস্তি হচ্ছে, একশটি বেত্রাঘাত ও এক বছরের জন্য দেশান্তর। আর বিবাহিত পুরুষ ও মহিলার শাস্তি হচ্ছে, একশটি বেত্রাঘাত ও রজম তথা পাথর মেরে হত্যা[44]
উক্ত হাদীসে বিবাহিত পুরুষ ও মহিলাকে একশটি বেত্রাঘাত করার কথা থাকলেও তা করতে হবে না। কারণ, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মায়িয ও গামিদী মহিলাকে একশটি করে বেত্রাঘাত করেন নি। বরং অন্য হাদীসে তাদেরকে শুধু রজম করারই প্রমাণ পাওয়া যায়।
আরেকটি কথা হচ্ছে, শরীআতের সাধারণ নিয়ম হলো, কারোর ওপর কয়েকটি দণ্ডবিধি একত্রিত হলে এবং তার মধ্যে হত্যার বিধানও থাকলে তাকে শুধু হত্যাই করা হয়। অন্যগুলো করা হয় না। উমার ও উস্মান রাদিয়াল্লাহু আনহুমা এটির ওপরই আমল করেছেন এবং আব্দুল্লাহ ইবন মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকেও ইহা বর্ণিত হয়েছে। তবে আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু তার যুগে জনৈক ব্যক্তিকে রজমও করেছেন এবং বেত্রাঘাতও। আব্দল্লাহ ইবন আব্বাস, উবাই ইবন কা‘ব এবং আবু যরও এ মত পোষণ করেন।
আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«ضَرَبَ رَسُوْلُ اللهِ e وَغَرَّبَ، وَضَرَبَ أَبُوْ بَكْرٍ t وَغَرَّبَ، وَضَرَبَ عُمَرُ t وَغَرَّبَ»
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মেরেছেন (বেত্রাঘাত করেছেন) ও দেশান্তর করেছেন, আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু মেরেছেন ও দেশান্তর করেছেন এবং উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু মেরেছেন ও দেশান্তর করেছেন[45]
ইমরান ইবন হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«أَتَتِ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِمْرَأَةٌ مِنْ جُهَيْنَةَ، وَهِيَ حُبْلَى مِنَ الزِّنَا، فَقَالَتْ: يَا نَبِيَّ اللهِ! أَصَبْتُ حَدًّا فَأَقِمْهُ عَلَيَّ، فَدَعَا رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَلِيَّهَا، فَقَالَ: أَحْسِنْ إِلَيْهَا، فَإِذَا وَضَعَتْ فَأْتِنِيْ بِهَا، فَفَعَلَ، فَأَمَرَ بِهَا، فَشُكَّتْ عَلَيْهَا ثِيَابُهَا، ثُمَّ أُمِرَ بِهَا فَرُجِمَتْ، ثُمَّ صَلَّى عَلَيْهَا، فَقَالَ عُمَرُ: أَتُصَلِّيْ عَلَيْهَا يَا نَبِيَّ اللهِ! وَقَدْ زَنَتْ؟! فَقَالَ: لَقَدْ تَابَتْ تَوْبَةً لَوْ قُسِّمَتْ بَيْنَ سَبْعِيْنَ مِنْ أَهْلِ الْمَدِيْنَةِ لَوَسِعَتْهُمْ، وَهَلْ وَجَدْتَ أَفْضَلَ مِنْ أَنْ جَادَتْ بِنَفْسِهَا لِلَّهِ تَعَالَى»
একদা জনৈকা জুহানী মহিলা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট আসলো। তখন সে ব্যভিচার করে গর্ভবতী। সে বললো: হে আল্লাহর নবী! আমি ব্যভিচারের শাস্তি পাওয়ার উপযুক্ত। অতএব, আপনি তা আমার ওপর প্রয়োগ করুন। অতঃপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার অভিভাবককে ডেকে বললেন, এর ওপর একটু দয়া করো। এ যখন সন্তান প্রসব করবে তখন তুমি তাকে আমার নিকট নিয়ে আসবে। লোকটি তাই করলো। অতঃপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আদেশ করলে তার কাপড় শরীরের সাথে শক্ত করে বেঁধে দেওয়া হলো। এরপর তাকে রজম করা হলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার জানাযার সালাত পড়ান। উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আশ্চর্যান্বিতের স্বরে বললেন, আপনি এর জানাযার সালাত পড়াচ্ছেন; অথচ সে ব্যভিচারিণী?! রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সে এমন তাওবা করেছে যা মদীনাবাসীর সত্তরজনকে বন্টন করে দেওয়া হলেও তা তাদের জন্য যথেষ্ট হবে। তুমি এর চাইতেও কি উৎকৃষ্ট কোনো কিছু পেয়েছো যে তার জীবন স্বেচ্ছায় আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টির জন্য বিলিয়ে দিয়েছে[46]
উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু একদা তার এক সুদীর্ঘ খুৎবায় বলেন,
«إِنَّ اللهَ بَعَثَ مُحَمَّداً بِالْـحَقِّ، وَأَنْزَلَ عَلَيْهِ الْكِتَابَ، فَكَانَ فِيْمَا أَنْزَلَ اللهُ عَلَيْهِ آيَةُ الرَّجْمِ، قَرَأْنَاهَا، وَوَعَيْنَاهَا، وَعَقَلْنَاهَا، فَرَجَمَ رَسُوْلَ الله صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَرَجَمْنَا بَعْدَهُ، فَأَخْشَى إِنْ طَالَ بِالنَّاسِ زَمَانٌ أَنْ يَّقُوْلَ قَائِلٌ: مَا نَجِدُ الرَّجْمَ فِيْ كِتَابِ اللهِ، فَيَضِلُّوْا بِتَرْكِ فَرِيْضَةٍ أَنْزَلَهَا اللهُ»
নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সত্য দীন দিয়ে পাঠিয়েছেন এবং তাঁর ওপর কুরআন অবতীর্ণ করেছেন। আল্লাহ তাআলা তাঁর ওপর যা অবতীর্ণ করেছেন তার মধ্যে রজমের আয়াতও ছিলো। আমরা তা পড়েছি, মুখস্থ করেছি ও বুঝেছি। অতঃপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রজম করেছেন এবং আমরাও তাঁর ইন্তেকালের পর রজম করেছি। আশঙ্কা হয় বহু কাল পর কেউ বলবে, আমরা কুরআন মাজীদে রজম পাই নি। অতঃপর তারা আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে নাযিলকৃত একটি ফরয কাজ ছেড়ে পথভ্রষ্ট হয়ে যাবে[47]
উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু যে আয়াতের প্রতি ইঙ্গিত করেছেন, তা হচ্ছে:
﴿الشَّيْخُ وَالشَّيْخَةُ إِذَا زَنَيَا ، فَارْجُمُوْهُمَا أَلْبَتَّةَ ، نَكَالاً مِّنَ اللهِ ، وَاللهُ عَزِيْزٌ حَكِيْمٌ
বয়স্ক (বিবাহিত) পুরুষ ও মহিলা যখন ব্যভিচার করে তখন তোমরা তাদেরকে সন্দেহাতীতভাবে পাথর মেরে হত্যা করবে। এটি হচ্ছে আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে তাদের জন্য শাস্তিস্বরূপ এবং আল্লাহ তাআলা পরাক্রমশালী ও সুকৌশলী
উক্ত আয়াতটির তিলাওয়াত রহিত হয়েছে। তবে উহার বিধান এখন ও কিয়ামত পর্যন্ত চালু থাকবে।
কোনো অবিবাহিত ব্যভিচারী কিংবা ব্যভিচারিণী যদি এমন অসুস্থ অথবা দুর্বল হয় যে, তাকে নিয়মতান্ত্রিকভাবে একশটি বেত্রাঘাত করা হলে তার মৃত্যুর আশঙ্কা রয়েছে তা হলে তাকে একশটি বেত একত্র করে একবার প্রহার করা হবে।
সাঈদ ইবন সাদ ইবন উবাদাহ রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«كَانَ فِيْ أَبْيَاتِنَا رُوَيْجِلٌ ضَعِيْفٌ ، فَخَبُثَ بِأَمَةٍ مِنْ إِمَائِهِمْ ، فَذَكَرَ ذَلِكَ سَعِيْدٌ لِرَسُوْلِ اللهِ e ، فَقَالَ: اِضْرِبُوْهُ حَدَّهُ ، فَقَالُوْا: يَـا رَسُوْلَ اللهِ! إِنَّهُ أَضْعَفُ مِنْ ذَلِكَ ، فَقَالَ: خُذُوْا عِثْكَالاً فِيْهِ مِئَةُ شِمْرَاخٍ ، ثُمَّ اضْرِبُوْهُ بِهِ ضَرْبَةً وَاحِدَةً ، فَفَعَلُوْا»
আমাদের এলাকায় জনৈক দুর্বল ব্যক্তি বসবাস করতো। হঠাৎ সে জনৈকা বান্দির সাথে ব্যভিচার করে বসে। ব্যাপারটি সাঈদ রাদিয়াল্লাহু আনহু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জানালে তিনি বললেন, তাকে তার প্রাপ্য শাস্তি দিয়ে দাও তথা একশটি বেত্রাঘাত করো। উপস্থিত সকলে বললো, হে আল্লাহর রাসূল! সে তো তা সহ্য করতে পারবে না। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, একটি খেজুর বিহীন একশটি শাখাগুচ্ছ বিশিষ্ট থোকা নিয়ে তাকে তা দিয়ে এক বার মারবে। অতএব, তারা তাই করলো[48]
অমুসলিমকেও ইসলামী বিচারাধীন রজম করা যেতে পারে।
জাবির ইবন আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«رَجَمَ النَّبِيُّ  رَجُلاً مِنْ أَسْلَمَ ، وَرَجُلاً مِنَ الْيَهُوْدِ وَامْرَأَة»
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আসলাম বংশের একজন পুরুষকে এবং একজন ইয়াহূদী পুরুষ ও একজন মহিলাকে রজম করেন[49]
ব্যভিচারের কারণে কোনো সন্তান জন্ম নিলে এবং ভাগ্যক্রমে সে জীবনে বেঁচে থাকলে তার মায়ের সন্তান রূপেই সে পরিচয় লাভ করবে। বাপের সন্তান রূপে নয়। কারণ, তার কোনো বৈধ বাপ নেই। অতএব, ব্যভিচারীর পক্ষ থেকে সে কোনো মিরাস পাবে না।
আবু হুরায়রা ও আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত তারা বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«الْوَلَدُ لِلْفِرَاشِ وَلِلْعَاهِرِ الحَجَرُ»
সন্তান মহিলারই এবং ব্যভিচারীর জন্য শুধু পাথর তথা রজম[50]
আব্দুল্লাহ ইবন আমর রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«مَنْ عَاهَرَ أَمَةً أَوْ حُرَّةً فَوَلَدُهُ وَلَدُ زِنَا ، لاَ يَرِثُ وَلاَ يُوْرَثُ»
যে ব্যক্তি কোনো বান্দী অথবা স্বাধীন মহিলার সঙ্গে ব্যভিচার করলো তার সন্তান হবে ব্যভিচারের সন্তান। সে মিরাস পাবে না এবং তার মিরাসও কেউ পাবে না[51]
যে কোনো ঈমানদার পবিত্র পুরুষের জন্য কোনো ব্যভিচারিণী মেয়েকে বিবাহ করা হারাম। তেমনিভাবে যে কোনো ঈমানদার সতী মেয়ের জন্যও কোনো ব্যভিচারী পুরুষকে বিবাহ করা হারাম।
আল্লাহ তাআলা বলেন,
﴿ٱلزَّانِي لَا يَنكِحُ إِلَّا زَانِيَةً أَوۡ مُشۡرِكَةٗ وَٱلزَّانِيَةُ لَا يَنكِحُهَآ إِلَّا زَانٍ أَوۡ مُشۡرِكٞۚ وَحُرِّمَ ذَٰلِكَ عَلَى ٱلۡمُؤۡمِنِينَ ٣﴾ [النور: ٣]
একজন ব্যভিচারী পুরুষ আরেকজন ব্যভিচারিণী অথবা মুশরিকা মেয়েকেই বিবাহ করে এবং একজন ব্যভিচারিণী মেয়েকে আরেকজন ব্যভিচারী পুরুষ অথবা মুশরিকই বিবাহ করে। মুমিনদের জন্য তা করা হারাম [সূরা আন-নূর, আয়াত: ৩]

দণ্ডবিধি সংক্রান্ত কিছু কথা:
কাউকে লুক্কায়িতভাবে ব্যভিচার কিংবা যে কোনো হারাম কাজ করতে দেখলে তা তড়িঘড়ি বিচারককে না জানিয়ে তাকে ব্যক্তিগতভাবে নসীহত করা ও পরকালে আল্লাহ তাআলার কঠিন শাস্তির ভয় দেখানো উচিত।
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«مَنْ سَتَرَ مُسْلِماً سَتَرَهُ اللهُ فِيْ الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ»
কোনো মুসলমানের দোষ লুকিয়ে রাখলে আল্লাহ তাআলা দুনিয়া ও আখিরাতে তার দোষও লুকিয়ে রাখবেন[52]

দণ্ডবিধি প্রয়োগের সময় চেহারার প্রতি লক্ষ্য রাখবে:
কারোর ওপর শরীআত কর্তৃক নির্ধারিত কোনো দণ্ডবিধি প্রয়োগ করার সময় তার চেহারার প্রতি অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে যাতে তা আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে ক্ষত-বিক্ষত না হয়ে যায়।
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إِذَا ضَرَبَ أَحَدُكُمْ فَلْيَتَّقِ الْوَجْهَ»
কেউ কাউকে (দণ্ডবিধি প্রয়োগের ক্ষেত্রে) মারলে তার চেহারার প্রতি অবশ্যই লক্ষ্য রাখবে যাতে তা আঘাতপ্রাপ্ত না হয়[53]

যে কোনো দণ্ডবিধি মসজিদে প্রয়োগ করা যাবে না:
আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«لاَ تُقَامُ الْـحُدُوْدُ فِيْ الْـمَسَاجِدِ»
মসজিদে কোনো দণ্ডবিধি কায়েম করা যাবে না[54]
হাকীম ইবন হিযাম রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«نَهَى رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنْ يُّسْتَقَادَ فِيْ الـْمَسْجِدِ، وَأَنْ تُنْشَدَ فِيْهِ الْأَشْعَـارُ، وَأَنْ تُقَامَ فِيْهِ الْـحُدُوْدُ»
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে কারোর থেকে প্রতিশোধ নিতে, কবিতা আবৃত্তি করতে ও দণ্ডবিধি কায়েম করতে নিষেধ করেছেন[55]
দুনিয়াতে কারোর ওপর শরীআতের কোনো দণ্ডবিধি কায়েম করা হলে তা তার জন্য কাফফারা হয়ে যায় তথা তার অপরাধটি ক্ষমা করে দেওয়া হয়। পরকালে এ জন্য তাকে কোনো শাস্তি দেওয়া হবে না।
উবাদাহ ইবন সামিত রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«مَنْ أَصَابَ مِنْكُمْ حَدًّا، فَعُجِّلَتْ لَهُ عُقُوْبَتُهُ ؛ فَهُوَ كَفَّارَتُهُ، وَإِلاَّ فَأَمْرُهُ إِلَى اللهِ، إِنْ شَاءَ عَذَّبَهُ، وَإِنْ شَاءَ غَفَرَ لَهُ»
যে ব্যক্তি (শয়তানের ধোকায় পড়ে) এমন কোনো হারাম কাজ করে ফেলেছে যাতে শরীআতের নির্দিষ্ট কোনো দণ্ডবিধি রয়েছে। অতঃপর তাকে দুনিয়াতেই সে দণ্ড দেওয়া হয়েছে। তখন তা তার জন্য কাফ্ফারা হয়ে যাবে। আর যদি তা তার ওপর প্রয়োগ না করা হয় তা হলে সে ব্যাপারে আল্লাহ তাআলাই ভালো জানেন। চায়তো আল্লাহ তাআলা তাকে পরকালে শাস্তি দিবেন নয়তো বা ক্ষমা করে দিবেন[56]
কোনো এলাকায় ইসলামের যে কোনো দণ্ডবিধি একবার প্রয়োগ করা সে এলাকায় চল্লিশ দিন যাবৎ বারি বর্ষণ থেকেও অনেক উত্তম।
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«حَدٌّ يُعْمَلُ بِهِ فِيْ الْأَرْضِ خَيْرٌ لِأَهْلِ الْأَرْضِ مِنْ أَنْ يُّمْطَرُوْا أَرْبَعِيْنَ صَبَاحًا»
বিশ্বের বুকে ধর্মীয় কোনো দণ্ডবিধি প্রয়োগ করা তা বিশ্ববাসীদের জন্য অনেক উত্তম চল্লিশ দিন লাগাতার বারি বর্ষণ থেকেও[57]

সমকাম বা পায়ুগমন

সমকাম বা পায়ুগমন বলতে পুরুষে পুরুষে একে অপরের মলদ্বার ব্যবহারের মাধ্যমে নিজ যৌন উত্তেজনা নিবারণ করাকেই বুঝানো হয়।
সমকাম একটি মারাত্মক গুনাহের কাজ। যার ভয়াবহতা কুফরের পরই। হত্যার চাইতেও মারাত্মক। বিশ্বে সর্বপ্রথম লূত আলাইহিস সালামের সম্প্রদায়ই এ কাজে লিপ্ত হয় এবং আল্লাহ তাআলা তাদেরকে এমন শাস্তি প্রদান করেন যা ইতিঃপূর্বে কাউকে প্রদান করেন নি তিনি তাদেরকে সমূলে ধ্বংস করে দিয়েছেন। তাদের ঘরবাড়ি তাদের ওপরই উল্টিয়ে দিয়ে ভূমিতে তলিয়ে দিয়েছেন। অতঃপর আকাশ থেকে পাথর বর্ষণ করেছেন।
আল্লাহ তাআলা বলেন,
﴿وَلُوطًا إِذۡ قَالَ لِقَوۡمِهِۦٓ أَتَأۡتُونَ ٱلۡفَٰحِشَةَ مَا سَبَقَكُم بِهَا مِنۡ أَحَدٖ مِّنَ ٱلۡعَٰلَمِينَ ٨٠ إِنَّكُمۡ لَتَأۡتُونَ ٱلرِّجَالَ شَهۡوَةٗ مِّن دُونِ ٱلنِّسَآءِۚ بَلۡ أَنتُمۡ قَوۡمٞ مُّسۡرِفُونَ ٨١﴾ [الاعراف: ٨٠،  ٨١]
আর আমরা লূত আলাইহিস সালামকে নবুওয়াত দিয়ে পাঠিয়েছি। যিনি তাঁর সম্প্রদায়কে বললেন, তোমরা কি এমন মারাত্মক অশ্লীল কাজ করছো যা ইতিঃপূর্বে বিশ্বের আর কেউ করে নি। তোমরা স্ত্রীলোকদেরকে বাদ দিয়ে পুরুষ কর্তৃক যৌন উত্তেজনা নিবারণ করছো। প্রকৃতপক্ষে তোমরা হচ্ছো সীমালংঘনকারী সম্প্রদায় [সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ৮০-৮১]
আল্লাহ তাআলা উক্ত কাজকে অত্যন্ত নোংরা কাজ বলে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি বলেন,
﴿وَلُوطًا ءَاتَيۡنَٰهُ حُكۡمٗا وَعِلۡمٗا وَنَجَّيۡنَٰهُ مِنَ ٱلۡقَرۡيَةِ ٱلَّتِي كَانَت تَّعۡمَلُ ٱلۡخَبَٰٓئِثَۚ إِنَّهُمۡ كَانُواْ قَوۡمَ سَوۡءٖ فَٰسِقِينَ ٧٤﴾ [الانبياء: ٧٤] 
আর আমরা লূতকে জ্ঞান ও প্রজ্ঞা দিয়েছি এবং তাকে উদ্ধার করেছি এমন জনপদ থেকে যারা নোংরা কাজ করতো। মূলতঃ তারা নিকৃষ্ট প্রকৃতির ফাসিক সম্প্রদায় ছিলো [সূরা আল-আম্বিয়া, আয়াত: ৭৪]
আল্লাহ তাআলা অন্য আয়াতে সমকামীদেরকে যালিম বলে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি বলেন,
 ﴿قَالُوٓاْ إِنَّا مُهۡلِكُوٓاْ أَهۡلِ هَٰذِهِ ٱلۡقَرۡيَةِۖ إِنَّ أَهۡلَهَا كَانُواْ ظَٰلِمِينَ﴾ [العنكبوت: ٣١]
ফিরিশতারা (ইবরাহীম আলাইহিস সালামকে) বললেন, আমরা এ জনপদবাসীদেরকে ধ্বংস করে দেবো। এর অধিবাসীরা নিশ্চয় যালিম [সূরা আল-‘আনকাবূত, আয়াত: ৩১]
লূত আলাইহিস সালাম এদেরকে বিশৃঙ্খল জাতি হিসেবে উল্লেখ করেন।
আল্লাহ তাআলা তাঁর কথাই হুবহু কুরআন মাজীদে উল্লেখ করে বলেন,
﴿قَالَ رَبِّ ٱنصُرۡنِي عَلَى ٱلۡقَوۡمِ ٱلۡمُفۡسِدِينَ ٣٠﴾ [العنكبوت: ٣٠] 
লূত আলাইহিস সালাম বললেন, হে আমার রব! আপনি আমাকে এ বিপর্যয় সৃষ্টিকারী সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে সাহায্য করুন [সূরা আল-‘আনকাবূত, আয়াত: ৩০]
ইবরাহীম আলাইহিস সালাম তাদের ক্ষমার জন্য জোর সুপারিশ করলেও তা শুনা হয় নি, বরং তাঁকে বলা হয়েছে:
﴿يَٰٓإِبۡرَٰهِيمُ أَعۡرِضۡ عَنۡ هَٰذَآۖ إِنَّهُۥ قَدۡ جَآءَ أَمۡرُ رَبِّكَۖ وَإِنَّهُمۡ ءَاتِيهِمۡ عَذَابٌ غَيۡرُ مَرۡدُودٖ ٧٦﴾ [هود: ٧٦] 
হে ইবরাহীম! এ ব্যাপারে আর একটি কথাও বলো না। (তথা তাদের ধ্বংসের ব্যাপারে) তোমার রবের ফরমান এসে গেছে এবং তাদের ওপর এমন এক শাস্তি আসছে যা কিছুতেই টলবার মতো নয় [সূরা হূদ, আয়াত: ৭৬]
যখন তাদের শাস্তি নিশ্চিত হয়ে গেলো এবং তা ভোরে ভোরেই আসবে বলে লূত আলাইহিস সালামকে জানিয়ে দেওয়া হলো তখন তিনি তা দেরী হয়ে যাচ্ছে বলে আপত্তি জানালে তাকে বলা হলো:
 ﴿أَلَيۡسَ ٱلصُّبۡحُ بِقَرِيبٖ﴾ [هود: ٨١] 
সকাল কি অতি নিকটেই নয়?! কিংবা সকাল হতে কি এতই দেরী?!” [সূরা হূদ, আয়াত: ৮১]
আল্লাহ তাআলা লূত আলাইহিস সালামের সম্প্রদায়ের শাস্তির ব্যাপারে বলেন,
﴿فَلَمَّا جَآءَ أَمۡرُنَا جَعَلۡنَا عَٰلِيَهَا سَافِلَهَا وَأَمۡطَرۡنَا عَلَيۡهَا حِجَارَةٗ مِّن سِجِّيلٖ مَّنضُودٖ ٨٢ مُّسَوَّمَةً عِندَ رَبِّكَۖ وَمَا هِيَ مِنَ ٱلظَّٰلِمِينَ بِبَعِيدٖ ٨٣﴾ [هود: ٨٢،  ٨٣]
অতঃপর যখন আমার ফরমান জারি হলো তখন ভূ-খণ্ডটির উপরিভাগকে নিচু করে দিলাম এবং ওর উপর পোড়া মাটির পাথর বর্ষণ করতে লাগলাম, যা ছিলো একাধারে এবং যা বিশেষভাবে চিহ্নিত ছিলো আপনার রবের ভাণ্ডারে। আর উক্ত জনপদটি এ যালিমদের থেকে বেশি একটা দূরে নয়। [সূরা হূদ, আয়াত: ৮২-৮৩]
আল্লাহ তাআলা অন্য আয়াতে বলেন,
﴿فَأَخَذَتۡهُمُ ٱلصَّيۡحَةُ مُشۡرِقِينَ ٧٣ فَجَعَلۡنَا عَٰلِيَهَا سَافِلَهَا وَأَمۡطَرۡنَا عَلَيۡهِمۡ حِجَارَةٗ مِّن سِجِّيلٍ ٧٤ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَأٓيَٰتٖ لِّلۡمُتَوَسِّمِينَ ٧٥ وَإِنَّهَا لَبِسَبِيلٖ مُّقِيمٍ ٧٦ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَأٓيَةٗ لِّلۡمُؤۡمِنِينَ ٧٧﴾ [الحجر: ٧٣،  ٧٧] 
অতঃপর তাদেরকে সূর্যোদয়ের সময়েই এক বিকট আওয়াজ পাকড়াও করলো। এরপরই আমরা জনপদটিকে উল্টিয়ে উপর-নিচ করে দিলাম এবং তাদের উপর পোড়া মাটির পাথর বর্ষণ করলাম। অবশ্যই এতে নিদর্শন রয়েছে পর্যবেক্ষণশক্তি সম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য। আর উক্ত জনপদটি (উহার ধ্বংস স্তূপ) স্থায়ী তথা বহু প্রাচীন লোক চলাচলের পথি পার্শ্বেই এখনও বিদ্যমান। অবশ্যই এতে রয়েছে মুমিনদের জন্য নিশ্চিত নিদর্শন। [সূরা আল-হিজর, আয়াত: ৭৩-৭৭]
আল্লাহ তাআলা ও তদীয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সমকামীদেরকে তিন তিন বার লা‘নত দিয়েছেন যা অন্য কারোর ব্যাপারে দেন নি।
আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«لَعَنَ اللهُ مَنْ عَمِلَ عَمَلَ قَوْمِ لُوْطٍ، لَعَنَ اللهُ مَنْ عَمِلَ عَمَلَ قَوْمِ لُوْطٍ، لَعَنَ اللهُ مَنْ عَمِلَ عَمَلَ قَوْمِ لُوْطٍ»
আল্লাহ তাআলা সমকামীকে লানত করেন। আল্লাহ তাআলা সমকামীকে লানত করেন। আল্লাহ তাআলা সমকামীকে লানত করেন।[58]
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«مَلْعُوْنٌ مَنْ عَمِلَ عَمَلَ قَوْمِ لُوْطٍ ، مَلْعُوْنٌ مَنْ عَمِلَ عَمَلَ قَوْمِ لُوْطٍ ، مَلْعُوْنٌ مَنْ عَمِلَ عَمَلَ قَوْمِ لُوْطٍ»
সমকামীরাই অভিশপ্ত। সমকামীরাই অভিশপ্ত। সমকামীরাই অভিশপ্ত।[59]
বর্তমান যুগে সমকামের বহুল প্রচার ও প্রসারের কথা কানে আসতেই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সে ভবিষ্যদ্বাণীর কথা স্মরণে এসে যায় যাতে তিনি বলেন,
«إِنَّ أَخْوَفَ مَا أَخَافُ عَلَى أُمَّتِيْ عَمَلُ قَوْمِ لُوْطٍ»
আমি আমার উম্মতের ওপর সমকামেরই বেশি আশঙ্কা করছি।[60]
ফুযাইল ইবন ইয়ায রহ. বলেন,
«لَوْ أَنَّ لُوْطِيًّا اغْتَسَلَ بِكُلِّ قَطْرَةٍ مِّنَ السَّمَاءِ لَقِيَ اللهَ غَيْرَ طَاهِرٍ»
কোনো সমকামী আকাশের সমস্ত পানি দিয়ে গোসল করলেও সে আল্লাহ তাআলার সাথে অপবিত্রাবস্থায়ই সাক্ষাৎ করবে[61]

সমকামিতার অপকার ও তার ভয়াবহতা

সমকামিতার মধ্যে এতো বেশি ক্ষতি ও অপকার নিহিত রয়েছে যার সঠিক গণনা সত্যিই দুষ্কর। যা ব্যক্তি ও সমষ্টি পর্যায়ের এবং দুনিয়া ও আখিরাত সম্পর্কীয়। যার কিয়দংশ নিম্নরূপ:

ধর্মীয় অপকারসমূহ:
প্রথমতঃ তা কবীরা গুনাহসমূহের একটি। তা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে অনেক অনেক নেক আমল থেকে দূরে সরিয়ে রাখে। এমনকি তা যে কারোর তাওহীদ বিনষ্টে বিশেষ ভূমিকা রাখে। আর তা এভাবে যে, এ নেশায় পড়ে শ্মশ্রুবিহীন ছেলেদের সাথে ধীরে ধীরে ভালোবাসা জন্ম নেয়। আর তা একদা তাকে শির্ক পর্যন্ত পৌঁছিয়ে দেয়। কখনো ব্যাপারটি এমন পর্যায়ে দাঁড়ায় যে, সে ধীরে ধীরে অশ্লীলতাকে ভালোবেসে ফেলে এবং সাধুতাকে ঘৃণা করে। তখন সে হালাল মনে করেই সহজভাবে উক্ত কর্মতৎপরতা চালিয়ে যায়। তখন সে কাফির ও মুরতাদ হতে বাধ্য হয়। এ কারণেই বাস্তবে দেখা যায় যে, যে যত বেশি শির্কের দিকে ধাবিত সে তত বেশি এ কাজে লিপ্ত। তাই লূত সম্প্রদায়ের মুশরিকরাই এ কাজে সর্বপ্রথম লিপ্ত হয়।
এ কথা সবারই জানা থাকা উচিৎ যে, শির্ক ও ইশক পরস্পর অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। আর ব্যভিচার ও সমকামিতার পূর্ণ মজা তখনই অনুভূত হয় যখন এর সাথে ইশক জড়িত হয়। তবে এ চরিত্রের লোকদের ভালোবাসা এক জায়গায় সীমাবদ্ধ থাকে না। বরং তা এক স্থান থেকে অন্য স্থানে পরিবর্তনশীল। আর তা একমাত্র শিকারের পরিবর্তনের কারণেই হয়ে থাকে।

চারিত্রিক অপকারসমূহ:
প্রথমতঃ সমকামই হচ্ছে চারিত্রিক এক অধঃপতন। স্বাভাবিকতা বিরুদ্ধ। এরই কারণে লজ্জা কমে যায়, মুখ হয় অশ্লীল এবং অন্তর হয় কঠিন, অন্যদের প্রতি দয়া-মায়া সম্পূর্ণরূপে নিঃশেষ হয়ে একেবারেই তা এককেন্দ্রিক হয়ে যায়, পুরুষত্ব ও মানবতা বিলুপ্ত হয়, সাহসিকতা, সম্মান ও আত্মমর্যাদাবোধ বিনষ্ট হয়। নির্যাতন ও অঘটন ঘটাতে তা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে সাহসী করে তোলে। উচ্চ মানসিকতা বিনষ্ট করে দেয় এবং তা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে বেকুব বানিয়ে তোলে। তার ওপর থেকে মানুষের আস্থা কমে যায়। তার দিকে মানুষ খিয়ানতের সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকায়। উক্ত ব্যক্তি ধর্মীয় জ্ঞান থেকে বঞ্চিত হয় এবং উত্তরোত্তর সার্বিক উন্নতি থেকে ক্রমান্বয়ে পিছে পড়ে যায়।

মানসিক অপকারসমূহ:
উক্ত কর্মের অনেকগুলো মানসিক অপকার রয়েছে, যা নিম্নরূপ:
১. অস্থিরতা ও ভয়-ভীতি অধিক হারে বেড়ে যায়। কারণ, আল্লাহ তাআলার আনুগত্যের মধ্যেই রয়েছে সার্বিক শান্তি ও নিরাপত্তা। যে ব্যক্তি একমাত্র আল্লাহ তাআলাকেই ভয় করবে আল্লাহ তাআলা তাকে অন্য সকল ভয় থেকে মুক্ত রাখবেন। আর যে ব্যক্তি একমাত্র আল্লাহ তাআলাকে ভয় করবে না তাকে সকল ভয় এমনিতেই ঘিরে রাখবে। কারণ, শাস্তি তো যে কোনো অপরাধ মূলক কাজের অনুরূপ হওয়াই শ্রেয়।
২. মানসিক বিশৃঙ্খলতা ও মনের অশান্তি তার নিকট প্রকট হয়ে দেখা দেয়। এ হচ্ছে আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে সে ব্যক্তির জন্য নগদ শাস্তি যে ব্যক্তি একমাত্র আল্লাহ তাআলা ছাড়া অন্যকে ভালোবাসবে। আর এ সম্পর্ক যতই ঘনিষ্ঠ হবে মনের অশান্তি ততই বেড়ে যাবে।
আল্লামা ইবন তাইমিয়্যাহ রহ. বলেন, এ কথা সবারই জানা উচিৎ যে, কেউ কাউকে ভালোবাসলে (যে ভালোবাসা একমাত্র আল্লাহ তাআলার জন্য নয়) সে প্রিয় ব্যক্তি অবশ্যই তার প্রেমিকের ক্ষতি সাধন করবে এবং এ ভালোবাসা অবশ্যই প্রেমিকের যে কোনো ধরনের শাস্তির কারণ হবে।
৩. এ ছাড়াও উক্ত অবৈধ সম্পর্ক অনেক ধরনের মানসিক রোগের জন্ম দেয় যা বর্ণনাতীত। যার দরুন তাদের জীবনের স্বাদ একেবারেই নিঃশেষ হয়ে যায়।
৪. এ জাতীয় লোকেরা একাকী থাকাকেই বেশি ভালোবাসে এবং তাদের একান্ত শিকার অথবা উক্ত কাজের সহযোগী ছাড়া অন্য কারোর সাথে এরা একেবারেই মিশতে চায় না।
৫. এ জাতীয় লোকদের মাঝে স্বকীয়তা ও ব্যক্তিত্বহীনতা ধীরে ধীরে জন্ম নেয় এবং তাদের মেযাজ পরিবর্তন হয়ে যায়। যে কোনো কাজে এরা স্থির সিদ্ধান্ত নিতে পারে না।
৬. এদের নিজেদের মাঝে ক্রমান্বয়ে পরাজয় ভাব জন্ম নেয়। নিজের ওপর তখন এরা কোনো ব্যাপারেই আস্থাশীল হতে পারে না।
৭. এ জাতীয় মানুষের নিজের মধ্যে এক জাতীয় পাপ বোধ জন্ম নেয়। যার দরুন সে মনে করে সবাই আমার ব্যাপারটা জেনে ফেলেছে। সুতরাং মানুষের ব্যাপারে তার একটা খারাপ ধারণা জন্ম নেয়।
৮. এ জাতীয় লোকদের মাঝে হরেক রকমের ওয়াসওয়াসা ও অমূলক 
চিন্তা জন্ম নেয়। এমনকি ধীরে ধীরে সে পাগলের রূপ ধারণ করে।
৯. এ জাতীয় লোক ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রণহীন যৌন তাড়নায় আক্রান্ত হয়ে পড়ে। সদা সর্বদা সে যৌন চেতনা নিয়েই ব্যস্ত থাকে।
১০. এদের মধ্যে ধীরে ধীরে মানসিক টানাপড়েন ও বেপরোয়াভাব জন্ম নেয়।
১১. তেমনিভাবে এদের মধ্যে বিরক্তি ভাব, নিরাশা, কুলক্ষুণে ভাব, আহাম্মকি জযবাও জন্ম নেয়।
১২. এদের দেহের কোষসমূহের ওপরও এর একটা বিরাট প্রভাব রয়েছে। যার দরুন এ ধরনের লোকেরা নিজকে পুরুষ বলে মনে করে না। এ কারণেই এদের কাউ কাউকে মহিলাদের সাজ-সজ্জা গ্রহণ করতেও দেখা যায়।

শারীরিক অপকারসমূহ:
শারীরিক ক্ষতির কথা তো বলাই বাহুল্য। কারণ, আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান কিছু দিন পর পরই এ সংক্রান্ত নতুন নতুন রোগ আবিষ্কার করে। চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা এ জাতীয় কোনো একটি রোগের ঔষুধ খুঁজতে খুঁজতেই দেখা যায় নতুন আরেকটা রোগ আবিষ্কৃত হয়ে গেছে। এই তো হচ্ছে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যদ্বাণীর সত্যিকার ফলাফল।
আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«لَمْ تَظْهَرِ الْفَاحِشَةُ فِيْ قَوْمٍ قَطُّ ، حَتَّى يُعْلِنُوْا بِهَا إِلاَّ فَشَا فِيْهِمُ الطَّاعُوْنُ وَالْأَوْجَاعُ الَّتِيْ لَمْ تَكُنْ مَضَتْ فِيْ أسْلاَفِهِمْ الَّذِيْنَ مَضَوْا»
কোনো সম্প্রদায়ের মাঝে ব্যভিচার তথা অশ্লীলতা প্রকাশ্যে ছড়িয়ে পড়লে তাদের মধ্যে অবশ্যই মহামারি ও বহু প্রকারের রোগ-ব্যাধি ছড়িয়ে পড়বে যা তাদের পূর্ববর্তীদের মধ্যে ছিলো না[62]

সুতরাং ব্যাধিগুলো নিম্নরূপ:
১. এ জাতীয় মানুষের নিজ স্ত্রীর প্রতি ধীরে ধীরে অনীহা জন্ম নেয়।
২. এ জাতীয় মানুষের লিঙ্গের কোষগুলো একেবারেই ঢিলে হয়ে যায়। যদ্দরুন পেশাব ও বীর্যপাতের ওপর কোনো নিয়ন্ত্রণই থাকে না।
৩. এ জাতীয় লোকেরা টাইফয়েড এবং ডিসেন্ট্রিয়া রোগেও আক্রান্ত হয়।
৪. এরই ফলে সিফিলিস রোগেরও বিশেষ প্রাদুর্ভাব ঘটে। লিঙ্গ, হৃদ্পিন্ড, আঁত, পাকস্থলী, ফুসফুস ও অণ্ডকোষের ঘা এর মাধ্যমেই এ রোগের শুরু। এমনকি পরিশেষে তা অঙ্গ বিকৃতি, অন্ধত্ব, জিহ্বার ক্যান্সার এবং অঙ্গহানীর বিশেষ কারণও হয়ে দাঁড়ায়। এটি ডাক্তারদের ধারণায় একটি দ্রুত সংক্রামক ব্যাধি।
৫. কখনো কখনো এরা গনোরিয়ায়ও আক্রান্ত হয় এবং এ রোগে 
আক্রান্তের সংখ্যা সাধারণতঃ একটু বেশি। আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্টে বলা হয়
, ১৯৭৫ সালে উক্ত রোগে প্রায় পঁচিশ কোটি মানুষ আক্রান্ত হয়। বর্তমানে ধারণা করা হয়, এ জাতীয় রোগীর হার বছরে বিশ থেকে পঞ্চাশ কোটি। যার অধিকাংশই যুবক।
এ জাতীয় রোগে প্রথমত লিঙ্গে এক ধরনের জ্বলন সৃষ্টি হয়। এরই পাশাপাশি তাতে বিশ্রী ধরনের এক প্রকার পুঁজও জন্ম নেয়। এটি বন্ধ্যত্বের একটি বিশেষ কারণও বটে। এরই কারণে ধীরে ধীরে প্রস্রাবের রাস্তাও বন্ধ হয়ে যায়। প্রস্রাবের সময় জ্বালাপোড়া অনুভূত হয়। উক্ত জ্বলনের কারণে ধীরে ধীরে লিঙ্গাগ্রের ছিদ্রের আশপাশ লাল হয়ে যায়। পরিশেষে সে জ্বলন মুত্রথলী পর্যন্ত পৌঁছোয়। তখন মাথা ব্যাথা, জ্বর ইত্যাদি শুরু হয়ে যায়। এমনকি এর প্রতিক্রিয়া শরীরের রক্তে পৌঁছলে তখন হৃদপিণ্ডে জ্বলন সৃষ্টি হয়, আরো কতো কী?
৬. হেরপেস রোগও এ সংক্রান্ত একটি অন্যতম ব্যাধি। আমেরিকার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একটি রিপোর্টে বলা হয়, হেরপেসের এখনো কোনো চিকিৎসা উদ্ভাবিত হয় নি এবং এটি ক্যান্সারের চাইতেও মারাত্মক। শুধু এমেরিকাতেই এ রোগীর হার বছরে বিশ কোটি এবং ব্রিটিনে এক লক্ষ।
এ রোগ হলে প্রথমে লিঙ্গাগ্রে চুলকানি অনুভূত হয়। অতঃপর চুলকানির জায়গায় লাল ধরনের ফোস্কা জাতীয় কিছু দেখা দেয় যা দ্রুত বড় হয়ে পুরো লিঙ্গে এবং যার সাথে সমকাম করা হয় তার গুহ্যদ্বারে ছড়িয়ে পড়ে। এগুলোর ব্যাথা খুবই চরম এবং এগুলো ফেটে গিয়ে পরিশেষে সেস্থানে জ্বলন ও পুঁজ সৃষ্টি হয়। কিছু দিন পর রান ও নাভীর নীচের অংশও ভীষণভাবে জ্বলতে থাকে। এমনকি তা পুরো শরীরেও ছড়িয়ে পড়ে এবং তা মগজ পর্যন্তও পৌঁছোয়। এ রোগের শারীরিক ক্ষতির চাইতেও মানসিক ক্ষতি আরো অনেক বেশি।
৭. এইডসও এ সংক্রান্ত একটি অন্যতম রোগ। এ রোগের ভয়ঙ্করতা নিম্নের ব্যাপারগুলো থেকে একেবারেই সুস্পষ্ট হয়ে যায়ঃ
ক. এ রোগে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা অনেক বেশি।
খ. এ রোগ খুবই অস্পষ্ট। যার দরুন এ সংক্রান্ত প্রশ্ন অনেক বেশি। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা সেগুলোর তেমন আশানুরূপ কোনো উত্তর দিতে পারছেন না।
গ. এ রোগের চিকিৎসা একেবারেই নেই অথবা থাকলেও তা অতি স্বল্প মাত্রায়।
ঘ. এ রোগ দ্রুত বিস্তার লাভ করে।
এইডস-এর কারণে মানুষের মধ্যে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা একেবারেই দুর্বল হয়ে পড়ে। যার দরুন যে কোনো ছোট রোগও তাকে সহজে কাবু করে ফেলে। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, এ রোগে আক্রান্ত শতকরা ৯৫ জনই সমকামী এবং এ রোগে আক্রান্তদের শতকরা ৯০ জনই তিন বছরের মধ্যে মৃত্যু বরণ করে।
৮. এ জাতীয় লোকেরা ভালোবাসার ভাইরাস অথবা ভালোবাসার রোগ নামক এক নতুন ব্যাধিতেও কখনো কখনো আক্রান্ত হয়। তবে এটি এইডস চাইতেও অনেক ভয়ানক। এ রোগের তুলনায় এইডস একটি খেলনা মাত্র।
এ রোগে কেউ আক্রান্ত হলে ছয় মাস যেতে না যেতেই তার পুরো শরীর ফোস্কা ও পুঁজে ভরে যায় এবং দ্রুত ক্ষরণ হতে হতেই সে পরিশেষে মারা যায়। সমস্যার ব্যাপার হলো এই যে, এ রোগটি একেবারেই লুক্কায়িত থাকে যতক্ষণ না যৌন উত্তেজনা প্রশমনের সময় এ সংক্রান্ত হরমোনগুলো উত্তেজিত হয়। আর তখনই উক্ত ভাইরাসগুলো নব জীবন পায়। তবে এ রোগ যে কোনো পন্থায় সংক্রমণ করতে সক্ষম। এমনকি বাতাসের সাথেও।

সমকামিতার শাস্তি

কারোর ব্যাপারে সমকাম প্রমাণিত হয়ে গেলে তাকে ও তার সমকামী সঙ্গীকে শাস্তি স্বরূপ হত্যা করতে হয়।
আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«مَنْ وَجَدْتُمُوْهُ يَعْمَلُ عَمَلَ قَوْمِ لُوْطٍ فَاقْتُلُوْا الْفَاعِلَ وَالْـمَفْعُوْلَ بِهِ»
কাউকে সমকাম করতে দেখলে তোমরা উভয় সমকামীকেই হত্যা করবে[63]
উক্ত হত্যার ব্যাপারে সাহাবীগণের ঐকমত্য রয়েছে। তবে হত্যার ধরনের ব্যাপারে তাদের পরস্পরের মধ্যে মতানৈক্য রয়েছে।
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«اُرْجُمُوْا الْأَعْلَى وَالْأَسْفَلَ ، اُرْجُمُوْهُمَا جَمِيْعاً»
তোমরা উপর-নিচের উভয়কেই রজম করে হত্যা করো[64]
আবু বকর, ‘আলী, ‘আব্দুল্লাহ ইবন যুবাইর রাদিয়াল্লাহু আনহুম এবং হিশাম ইবন আব্দুল মালিক রহ. সমকামীদেরকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করেছেন।
মুহাম্মাদ ইবন মুনকাদির রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«كَتَبَ خَالَدُ بْنُ الْوَلِيْدِ إِلَى أَبِيْ بَكْرٍ الصِّدِّيْقِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا أَنَّهُ وَجَدَ رَجُلاً فِيْ بَعْضِ ضَوَاحِيْ الْعَرَبِ يُنْكَحُ كَمَا تُنْكَحُ الـْمَرْأَةُ، فَجَمَعَ لِذَلِكَ أَبُوْ بَكْرٍ أَصْحَابَ رَسُوْلِ اللهِ e ، وَفِيْهِمْ عَلِيُّ بْنُ أَبِيْ طَالِب t ، فَقَالَ عَلِيٌّ t: إِنَّ هَذَا ذَنْبٌ لَمْ تَعْمَلْ بِهِ أُمَّةٌ إِلاَّ أُمَّةً وَاحِدَةً ، فَفَعَلَ اللهُ بِهِمْ مَا قَدْ عَلِمْتُمْ، أَرَى أَنْ تَحْرِقَهُ بِالنَّارِ، فَاجْتَمَعَ رَأْيُ أَصْحَابِ رَسُوْلِ اللهِ e أَنْ يُّحْرَقَ بِالنَّارِ، فَأَمَرَ بِهِ أَبُوْ بَكْرٍ أَنْ يُّحْرَقَ بِالنَّارِ»
খালিদ ইবন ওয়ালীদ রাদিয়াল্লাহু আনহু একদা আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহুর নিকট এ মর্মে একটি চিঠি পাঠালেন যে, তিনি আরবের কোনো এক মহল্লায় এমন এক ব্যক্তিকে পেয়েছেন যাকে দিয়ে যৌন উত্তেজনা নিবারণ করা হয় যেমনিভাবে নিবারণ করা হয় মহিলা দিয়ে। তখন আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু সকল সাহাবীগণকে একত্রিত করে এ ব্যাপারে তাদের পরামর্শ চেয়েছেন। তাদের মধ্যে আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুও তখন উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, এটি এমন একটি গুনাহ যা বিশ্বে শুধুমাত্র একটি উম্মতই সংঘটন করেছে। আল্লাহ তাআলা ওদের সঙ্গে যে ব্যবহার করেছেন তা সম্পর্কে আপনারা অবশ্যই অবগত। অতএব আমার মত হচ্ছে, তাকে আগুনে জ্বালিয়ে দেওয়া হবে। উপস্থিত সকল সাহাবারাও উক্ত মতের সমর্থন করেন। তখন আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু তাকে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়ার ফরমান জারি করেন।[65]
আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«يُنْظَرُ أَعْلَى بِنَاءٍ فِيْ الْقَرْيَةِ ، فَيُرْمَى اللُّوْطِيُّ مِنْهَا مُنَكَّساً، ثُمَّ يُتْبَعُ بِالْحِجَارَةِ»
সমকামীকে মহল্লার সর্বোচ্চ প্রাসাদের ছাদ থেকে উপুড় করে নিক্ষেপ করা হবে। অতঃপর তার উপর পাথর মারা হবে।[66]
সমকামীর জন্য পরকালের শাস্তি হচ্ছে আল্লাহ তাআলা তার প্রতি রহমতের দৃষ্টিতে কখনো তাকাবেন না।
আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«لاَ يَنْظُرُ اللهُ إِلَى رَجُلٍ أَتَى رَجُلاً أَوِ امْرَأَةً فِيْ الدُّبُرِ»
আল্লাহ তাআলা এমন ব্যক্তির প্রতি রহমতের দৃষ্টিতে কখনো তাকাবেন না যে সমকামে লিপ্ত হয় অথবা কোনো মহিলার মলদ্বারে গমন করে।[67]

সমকামিতার চিকিৎসা

উক্ত রোগ তথা সমকামের নেশা থেকে বাঁচার উপায় অবশ্যই রয়েছে। তবে তা এ জাতীয় রোগীর পক্ষ থেকে সাদরে গ্রহণ করার অপেক্ষায় রয়েছে। আর তা হচ্ছে দু প্রকার:

১. রোগাক্রান্ত হওয়ার আগের চিকিৎসা:
তা আবার দু ধরনের:
ক. দৃষ্টিশক্তি হিফাযতের মাধ্যমে: কারণ, দৃষ্টিই হচ্ছে শয়তানের বিষাক্ত একটি তীর যা শুধু মানুষের আফসোসই বাড়িয়ে দেয়। সুতরাং শ্মশ্রুবিহীন ছেলেদের প্রতি দৃষ্টিপাত করা থেকে একেবারেই বিরত থাকতে হবে। তা হলেই সমকামের প্রতি অন্তরে আর উৎসাহ জন্ম নিবে না। এ ছাড়াও দৃষ্টিশক্তি নিয়ন্ত্রণের অনেকগুলো ফায়দা রয়েছে যা নিম্নরূপঃ
১. তাতে আল্লাহ তাআলার আদেশ মানা হয়। যা ইবাদতেরই একাংশ এবং ইবাদাতের মধ্যেই সমূহ মানব কল্যাণ নিহিত রয়েছে।
২. বিষাক্ত তীরের প্রভাব থেকে অন্তর বিমুক্ত থাকে। কারণ, দৃষ্টিই হচ্ছে শয়তানের একটি বিষাক্ত তীর।
. মন সর্বদা আল্লাহ অভিমুখী থাকে।
৪. মন সর্বদা সন্তুষ্ট ও শক্তিশালী থাকে।
৫. অন্তরে এক ধরনের নূর তথা আলো জন্ম নেয় যার দরুন সে উত্তরোত্তর ভালোর দিকেই ধাবিত হয়।
আল্লাহ তাআলা বলেন,
﴿قُل لِّلۡمُؤۡمِنِينَ يَغُضُّواْ مِنۡ أَبۡصَٰرِهِمۡ وَيَحۡفَظُواْ فُرُوجَهُمۡۚ﴾ [النور: ٣٠] 
“(হে রাসূল!) আপনি মুমিনদেরকে বলে দিন যে, তারা যেন তাদের দৃষ্টি সংযত রাখে এবং নিজ লজ্জাস্থান হিফাযত করে। [সূরা আন-নূর, আয়াত: ৩০]
এর কয়েক আয়াত পরই আল্লাহ তাআলা বলেন,
 ﴿ٱللَّهُ نُورُ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِۚ مَثَلُ نُورِهِۦ كَمِشۡكَوٰةٖ فِيهَا مِصۡبَاحٌ﴾ [النور: ٣٥]
 আল্লাহ তাআলাই আকাশ ও পৃথিবীর জ্যোতি। (সত্যিকার ঈমানদারের অন্তরে) তাঁর জ্যোতির উপমা যেন একটি দীপাধার। যার মধ্যে রয়েছে একটি প্রদীপ। [সুরা আন-নূর, আয়াত: ৩৫]
৬. এরই মাধ্যমে হক্ব ও বাতিল এবং সত্য ও মিথ্যার মাঝে বিশেষ প্রভেদজ্ঞান সৃষ্টি হয় যার দরুন দৃষ্টি সংযতকারীর যে কোনো ধারণা অধিকাংশই সঠিক প্রমাণিত হয়। ঠিক এরই বিপরীতে আল্লাহ তাআলা লূত সম্প্রদায়ের সমকামীদেরকে অন্তর্দৃষ্টিশূন্য বলে আখ্যায়িত করেছেন।
আল্লাহ তাআলা বলেন,
﴿لَعَمۡرُكَ إِنَّهُمۡ لَفِي سَكۡرَتِهِمۡ يَعۡمَهُونَ ٧٢﴾ [الحجر: ٧٢]
 আপনার জীবনের কসম! ওরা তো মত্ততায় বিমূঢ় হয়েছে তথা হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে। [সূরা আল-হিজর, আয়াত: ৭২]
. এরই মাধ্যমে অন্তরে দৃঢ়তা, সাহসিকতা ও শক্তি জন্ম নেয় এবং মানুষ তাকে সম্মান করে।
আল্লাহ তাআলা বলেন,
﴿وَلِلَّهِ ٱلۡعِزَّةُ وَلِرَسُولِهِۦ وَلِلۡمُؤۡمِنِينَ وَلَٰكِنَّ ٱلۡمُنَٰفِقِينَ لَا يَعۡلَمُونَ﴾ [المنافقون: ٨] 
সম্মান ও ক্ষমতা তো আল্লাহ তাআলা, তদীয় রাসূল ও (সত্যিকার) ঈমানদারদের জন্য; কিন্তু মুনাফিকরা তো তা জানে না। [সূরা আল-মুনাফিকূন, আয়াত: ৮]
আল্লাহ তাআলা আরো বলেন,
﴿ مَن كَانَ يُرِيدُ ٱلۡعِزَّةَ فَلِلَّهِ ٱلۡعِزَّةُ جَمِيعًاۚ إِلَيۡهِ يَصۡعَدُ ٱلۡكَلِمُ ٱلطَّيِّبُ وَٱلۡعَمَلُ ٱلصَّٰلِحُ يَرۡفَعُهُ﴾ [فاطر: ١٠]
কেউ ইজ্জত ও সম্মান চাইলে সে যেন জেনে রাখে, সকল সম্মানই তো আল্লাহ তাআলার। (অতএব, তাঁর কাছেই তা কামনা করতে হবে। অন্যের কাছে নয়) তাঁরই দিকে পবিত্র বাণীসমূহ তথা যিকির ইত্যাদি আরোহণ করে এবং নেক আমল তিনিই উন্নীত করেন। [সূরা আল-ফাতির, আয়াত: ১০]
সুতরাং আল্লাহর আনুগত্য, যিকির ও নেক আমলের মাধ্যমেই তাঁরই নিকট সম্মান কামনা করতে হবে।
৮. তাতে করে মানব অন্তরে শয়তান ঢুকার সুগম পথটি বন্ধ হয়ে যায়। কারণ, সে তো দৃষ্টি পথেই মানব অন্তরে প্রবেশ করে খালিস্থানে বাতাস প্রবেশের চাইতেও অতি দ্রুত গতিতে। অতঃপর সে দেখা বস্তুটির সুন্দর দৃশ্যটুকু দৃষ্টি ক্ষেপণকারীর মানসপটে স্থাপন করে। সে দৃষ্ট বস্তুটির মূর্তি এমনভাবে তৈরি করে যে, অন্তর তখন তাকে নিয়েই ব্যস্ত হতে বাধ্য হয়। এরপর সে অন্তরকে অনেক ধরনের আশা ও অঙ্গীকার দিতে থাকে। সে অন্তরে উত্তরোত্তর কুপ্রবৃত্তির তাড়না জাগিয়ে তোলে। এমনকি সে মনের মাঝে উত্তেজনার আগুন জ্বালিয়ে দিয়ে তাতে বহু প্রকারের গুনাহের জ্বালানি ব্যবহার করে আরো উত্তপ্ত করতে থাকে। অতঃপর হৃদয়টি সেই উত্তপ্ত আগুনে লাগাতার পুড়তে থাকে। সে অন্তর্দাহ থেকেই বিরহের উত্তপ্ত ঊর্ধ্ব শ্বাসের সৃষ্টি।
৯. এরই মাধ্যমে অন্তর সর্বদা মঙ্গলজনক কর্ম সম্পর্কে চিন্তা করার সুযোগ পায়। অবৈধ দৃষ্টি ক্ষেপণে মানুষ সে সুযোগ থেকে বঞ্চিত থাকে। অন্তর গাফিল হয়ে যায়। প্রবৃত্তি পুঁজায় ধাবিত হয় এবং সকল ব্যাপারে এক ধরনের গোলযোগ সৃষ্টি হয়।
এ কারণেই আল্লাহ তাআলা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এ জাতীয় লোকদের আনুগত্য করতে নিষেধ করেন।
আল্লাহ তাআলা বলেন,
﴿وَلَا تُطِعۡ مَنۡ أَغۡفَلۡنَا قَلۡبَهُۥ عَن ذِكۡرِنَا وَٱتَّبَعَ هَوَىٰهُ وَكَانَ أَمۡرُهُۥ فُرُطٗا﴾ [الكهف: ٢٨]
যার অন্তরকে আমরা আমার স্মরণে অমনোযোগী করে দিয়েছি এবং যে তার খেয়াল-খুশির অনুসরণ করে এমনকি যার কার্যকলাপ সীমাতিক্রম করেছে আপনি তার আনুগত্য করবেন না। [সূরা আল-কাহাফ, আয়াত: ২৮]
১০. অন্তর ও দৃষ্টির মাঝে এমন এক সুগভীর সম্পর্ক রয়েছে যে, একটি খারাপ হলে অন্যটি খারাপ হতে বাধ্য। তেমনিভাবে একটি সুস্থ থাকলে অন্যটিও সুস্থ থাকতে বাধ্য। সুতরাং যে ব্যক্তি দৃষ্টিকে নিয়ন্ত্রণ করবে তার অন্তরও তারই নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
খ. তা থেকে দূরে রাখে এমন বস্তু নিয়ে ব্যস্ততার মাধ্যমে: আর তা হচ্ছে আল্লাহ তাআলা সম্পর্কে অধিক ভয় বা অধিক ভালোবাসা। অর্থাৎ অন্যকে ভালোবাসার কারণে আল্লাহ তাআলার ভালোবাসা না পাওয়ার আশঙ্কা করা অথবা আল্লাহ তাআলাকে এমনভাবে ভালোবাসা যে, তিনি ভিন্ন অন্যকে আর ভালোবাসার সুযোগ না পাওয়া যার ভালোবাসা আল্লাহ তাআলার ভালোবাসার অধীন নয়। কারণ, এ কথা একেবারেই সত্য যে, আল্লাহ তাআলা মানব অন্তরে জন্মগতভাবেই এমন এক শূন্যতা রেখে দিয়েছেন যা একমাত্র তাঁরই ভালোবাসা পরিপূর্ণ করতে পারে। সূতরাং কারোর অন্তর উক্ত ভালোবাসা থেকে খালি হলে তিনি ভিন্ন অন্যদের ভালোবাসা তার অন্তরে অবশ্যই জায়গা করে নিতে চাইবে। তবে কারোর মধ্যে নিমোক্ত দুটি গুণ থাকলেই সে উপরোক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে, যা নিম্নরূপ:
১. বিশুদ্ধ অন্তর্দৃষ্টি। যার মাধ্যমে সে প্রিয়-অপ্রিয়ের স্তরসমূহের মাঝে পার্থক্য করতে পারে। তখনই সে মূল্যবান বন্ধুকে পাওয়ার জন্য নিম্নমানের বন্ধুকে ছাড়তে পারবে এবং বড় বিপদ থেকে বাঁচার জন্য ছোট বিপদ মাথা পেতে মেনে নিতে পারবে।
২. ধৈর্য ও দৃঢ় প্রতিজ্ঞা। যার ওপর নির্ভর করে সে উক্ত কর্মসমূহ আঞ্জাম দিতে পারবে। কারণ, এমন লোকও আছে যাদের মধ্যে প্রথমোক্ত গুণ রয়েছে। তবে সে তা বাস্তবায়ন করতে পারছে না তার মধ্যে দ্বিতীয় গুণটি না থাকার দরুন। 
সুতরাং কারোর মধ্যে আল্লাহ তাআলার ভালোবাসা এবং যার ভালোবাসা আল্লাহ তাআলার ভালোবাসার অধীন নয় তার ভালোবাসা একত্র হতে পারে না। অন্য কথায়, যার মধ্যে আল্লাহ তাআলার ভালোবাসা নেই সেই একমাত্র মহিলাদের অথবা শ্মশ্রুবিহীন ছেলেদের ভালোবাসায় মত্ত থাকতে পারে।
দুনিয়ার কোনো মানুষ যখন তাঁর ভালোবাসায় কারোর অংশীদারি সহ্য করতে পারে না তখন আল্লাহ তাআলা কেন তাঁর ভালোবাসায় অন্যের অংশীদারি সহ্য করবেন? আর এ কারণেই আল্লাহ তাআলা তাঁর ভালোবাসায় শির্ক কখনোই ক্ষমা করবেন না।

ভালোবাসার আবার কয়েকটি স্তর রয়েছে, যা নিম্নরূপ:
১. সাধারণ সম্পর্ক জাতীয় ভালোবাসা যার দরুন এক জনের মন অন্য জনের সঙ্গে লেগে যায়। আরবী ভাষায় এ সম্পর্ককে আলাক্বাহ বলা হয়।
২. ভালোবাসায় মন উপচে পড়া। আরবী ভাষায় এ জাতীয় ভালোবাসাকে স্বাবাবাহ বলা হয়।
৩. এমন ভালোবাসা যা মন থেকে কখনো ভিন্ন হয় না। আরবী ভাষায় এ জাতীয় ভালোবাসাকে গারাম বলা হয়।
৪. নিয়ন্ত্রণহীন ভালোবাসা। আরবী ভাষায় এ জাতীয় ভালোবাসাকে ইশক বলা হয়। এ জাতীয় ভালোবাসা আল্লাহ তাআলার শানে প্রযোজ্য নয়।
৫. এমন ভালোবাসা যার দরুন প্রিয়ের সঙ্গে মিলনের আকাঙ্খা সৃষ্টি হয়। আরবী ভাষায় এ জাতীয় ভালোবাসাকে শাওক বলা হয়। এমন ভালোবাসা আল্লাহ তাআলার শানে অবশ্যই প্রযোজ্য।
উবাদাহ ইবন সামিত, ‘আয়েশা, আবু হুরায়রা ও আবু মূসা রাদিয়াল্লাহু আনহুম থেকে বর্ণিত তাঁরা বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«مَنْ أَحَبَّ لِقَاءَ اللهِ أَحَبَّ اللهُ لِقَاءَهُ ، وَمَنْ كَرِهَ لِقَاءَ اللهِ كَرِهَ اللهُ لِقَاءَهُ»
যে ব্যক্তি আল্লাহ তাআলার সাক্ষাৎ চায় আল্লাহ তাআলাও তার সাক্ষাৎ চাইবেন এবং যে ব্যক্তি আল্লাহ তাআলার সাক্ষাৎ চায় না আল্লাহ তাআলাও তার সাক্ষাৎ চাইবেন না[68]
৬. এমন ভালোবাসা যার দরুন কোনো প্রেমিক তার প্রেমিকার একান্ত গোলাম হয়ে যায়। এ জাতীয় ভালোবাসাই শির্কের মূল। কারণ, ইবাদতের মূল কথাই তো হচ্ছে, প্রিয়ের একান্ত আনুগত্য ও অধীনতা। আর এ কারণেই আল্লাহ তাআলার নিকট মানুষের জন্য সর্বোচ্চ সম্মানজনক গুণ হচ্ছে তাঁর আব্দ বা সত্যিকার গোলাম হওয়া তথা বিনয় ও ভালোবাসা নিয়েই আল্লাহ তাআলার অধীনতা স্বীকার করা। আর এ জন্যই আল্লাহ তাআলা জিন্ন ও মানব জাতিকে সৃষ্টি করেছেন এবং যা ইসলামের মূল কথাও বটে। আর এ কারণেই আল্লাহ তাআলা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বিশেষ বিশেষ স্থানগুলোতে আব্দ শব্দে উল্লেখ করেছেন।
আল্লাহ তাআলা দাওয়াতী ক্ষেত্রে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আব্দ শব্দে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন,
﴿وَأَنَّهُۥ لَمَّا قَامَ عَبۡدُ ٱللَّهِ يَدۡعُوهُ كَادُواْ يَكُونُونَ عَلَيۡهِ لِبَدٗا ١٩﴾ [الجن: ١٩] 
আর যখন আল্লাহর বান্দা (রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁকে (আল্লাহ তাআলাকে) ডাকার (তাঁর ইবাদত করার) জন্য দন্ডায়মান হলো তখন তারা (জিন্নরা) সবাই তাঁর নিকট ভিড় জমালো। [সূরা আল-জিন্ন, আয়াত: ১৯]
আল্লাহ তাআলা নবুওয়াতের চ্যালেঞ্জের ক্ষেত্রেও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আব্দ শব্দে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন,
 ﴿وَإِن كُنتُمۡ فِي رَيۡبٖ مِّمَّا نَزَّلۡنَا عَلَىٰ عَبۡدِنَا فَأۡتُواْ بِسُورَةٖ مِّن مِّثۡلِهِ﴾ [البقرة: ٢٣]
আমরা আমাদের বান্দার (রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের) প্রতি যা অবতীর্ণ করেছি তোমরা যদি তাতে সন্দিহান হও তবে সেরূপ একটি সূরা নিয়ে আসো। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ২৩]
আল্লাহ তাআলা ইসরার ক্ষেত্রেও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আব্দ শব্দে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন,
﴿سُبۡحَٰنَ ٱلَّذِيٓ أَسۡرَىٰ بِعَبۡدِهِۦ لَيۡلٗا مِّنَ ٱلۡمَسۡجِدِ ٱلۡحَرَامِ إِلَى ٱلۡمَسۡجِدِ ٱلۡأَقۡصَا﴾ [الاسراء: ١]
পবিত্র সে সত্তা যিনি নিজ বান্দাকে (রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে) রাত্রিবেলা ভ্রমণ করিয়েছেন মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আকসায় (বাইতুল মাকদিসে) [সূরা আল-ইসরা, আয়াত:১]
সুপারিশের হাদীসের মধ্যেও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আব্দ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। কিয়ামতের দিবসে ঈসা আলাইহিস সালামের নিকট সুপারিশ চাওয়া হলে তিনি বলবেন:
«اِئْتُوْا مُحَمَّدًا، عَبْدًا غَفَرَ اللهُ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ وَمَا تَأَخَّرَ»
তোমরা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট যাও। তিনি আল্লাহ তাআলার এমন এক বান্দা যার পূর্বাপর সকল গুনাহ আল্লাহ তাআলা ক্ষমা করে দিয়েছেন।[69]
উক্ত হাদীসে সুপারিশের উপযুক্ততার প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। আর তা হচ্ছে ক্ষমা প্রাপ্ত আল্লাহ তাআলার খাঁটি বান্দা হওয়ার দরুন।
উক্ত নিরেট ভালোবাসা বান্দার নিকট আল্লাহ তাআলার একান্ত প্রাপ্য হওয়ার দরুন আল্লাহ তাআলা তিনি ভিন্ন অন্য কাউকে বন্ধু বা সুপারিশকারী হিসেবে গ্রহণ করতে নিষেধ করেছেন।
আল্লাহ তাআলা বলেন,
﴿مَا لَكُم مِّن دُونِهِۦ مِن وَلِيّٖ وَلَا شَفِيعٍ﴾ [السجدة: ٤]
তোমাদের জন্য তিনি ভিন্ন অন্য কোনো বন্ধু এবং সুপারিশকারী নেই [সূরা আস-সাজদাহ, আয়াত: ৪]
তিনি আরো বলেন,
﴿لَيۡسَ لَهُم مِّن دُونِهِۦ وَلِيّٞ وَلَا شَفِيعٞ﴾ [الانعام: ٥١]
ওদের (মুমিনদের) জন্য তিনি (আল্লাহ তাআলা) ভিন্ন না আছে কোনো বন্ধু আর না আছে কোনো সুপারিশকারী [সূরা আল-আনআম, আয়াত: ৫১]
তেমনিভাবে পরকালে তিনি ভিন্ন অন্য কোনো বন্ধু কারোর কোনো কাজেও আসবে না।
আল্লাহ তাআলা বলেন,
﴿وَلَا يُغۡنِي عَنۡهُم مَّا كَسَبُواْ شَيۡ‍ٔٗا وَلَا مَا ٱتَّخَذُواْ مِن دُونِ ٱللَّهِ أَوۡلِيَآءَۖ وَلَهُمۡ عَذَابٌ عَظِيمٌ﴾ [الجاثية: ١٠] 
তাদের ধন-সম্পদ এবং আল্লাহ ভিন্ন অন্য কোনো বন্ধু সে দিন তাদের কোনো কাজেই আসবে না। উপরন্তু তাদের জন্য রয়েছে মহাশাস্তি [সূরা আল-জাসিয়াহ, আয়াত: ১০]
মূলকথা, ভালোবাসায় আল্লাহ তাআলার সঙ্গে কাউকে শরীক করে সত্যিকার ইবাদত করা যায় না। তবে আল্লাহ তাআলার জন্য কাউকে ভালোবাসা এর বিপরীত নয়। বরং তা আল্লাহ তাআলাকে ভালোবাসার পরিপূরকও বটে।
আবু উমামাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«مَنْ أَحَبَّ لِلَّهِ وَأَبْغَضَ لِلَّهِ وَأَعْطَى لِلَّهِ وَمَنَعَ لِلَّهِ فَقَدِ اسْتَكْمَلَ الْإِيْمَانَ»
যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য কাউকে ভালোবাসলো, আল্লাহর জন্য কারোর সাথে শত্রুতা পোষণ করলো, আল্লাহর জন্য কাউকে দিলো এবং আল্লাহর জন্য কাউকে বঞ্চিত করলো সে যেন নিজ ঈমানকে পরিপূর্ণ করে নিলো[70]
এমনকি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভালোবাসাকে অন্য সবার ভালোবাসার ওপর প্রধান্য না দিলে সে ব্যক্তি কখনো পূর্ণ ঈমানদার হতে পারবে না।
অতএব, আল্লাহ তাআলার জন্য কাউকে ভালোবাসা যতই কঠিন হবে ততই আল্লাহ তাআলার ভালোবাসা কঠিন হবে।
ধর্মীয় দৃষ্টিকোণে ভালোবাসা আবার চার প্রকার। যে গুলোর মাঝে ব্যবধান না জানার দরুনই অনেকে এ ক্ষেত্রে পথভ্রষ্ট হয়। আর তা নিম্নরূপ:
ক. আল্লাহ তাআলাকে ভালোবাসা, তবে তা নিরেট ভালোবাসা না হলে কখনো তা কারোর ফায়দায় আসবে না।
খ. আল্লাহ তাআলা যা ভালোবাসেন তাই ভালোবাসা। যে এ ভালোবাসায় যত অগ্রগামী সে আল্লাহ তাআলার ভালোবাসায় তত অগ্রগামী।
গ. আল্লাহ তাআলার জন্য ভালোবাসা। এ ভালোবাসা উক্ত ভালোবাসার পরিপূরক।
ঘ. আল্লাহ তাআলার সাথে অন্য কাউকে তাঁর সমপর্যায়েই ভালোবাসা। আর এটিই হচ্ছে শির্ক।
আরো এক প্রকারের ভালোবাসা রয়েছে যা আমাদের আলোচ্য বিষয় নয়। আর তা হচ্ছে স্বভাবগত ভালোবাসা। যেমন, স্ত্রী-সন্তানের ভালোবাসা।
৭. চূড়ান্ত ভালোবাসা। কাউকে এমন চরমভাবে ভালোবাসা যে, প্রেমিকের অন্তরে আর কাউকে ভালোবাসার কোনো জায়গাই থাকে না। আরবী ভাষায় এ জাতীয় ভালোবাসাকে খুল্লাহ্ এবং এ জাতীয় প্রেমিককে খালীল বলা হয়। আর এ জাতীয় ভালোবাসা শুধুমাত্র দু জন নবীর জন্যই নির্দিষ্ট। যারা হচ্ছেন ইবরাহীম আলাইহিস সালাম ও মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।
জুন্দাব রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তাঁর মৃত্যুর পাঁচ দিন পূর্বে এ কথা বলতে শুনেছি। তিনি বলেন,
«إِنِّيْ أَبْرَأُ إِلَى اللهِ أَنْ يَّكُوْنَ لِيْ مِنْكُمْ خَلِيْلٌ ، فَإِنَّ اللهَ تَعَالَى قَدِ اتَّخَذَنِيْ خَلِيْلاً ، كَمَا اتَّخَذَ إِبْرَاهِيْمَ خَلِيْلاً ، وَ لَوْ كُنْتُ مُتَّخِذًا مِنْ أُمَّتِيْ خَلِيْلاً لاَتَّخَذْتُ أَبَا بَكْرٍ خَلِيْلاً»
তোমাদের মধ্য থেকে কেউ আমার খলীল হোক এ ব্যাপার থেকে আমি আল্লাহ তাআলার নিকট মুক্তি চাচ্ছি। কারণ, আল্লাহ তাআলা আমাকে নিজ খলীল হিসেবে চয়ন করেছেন যেমনিভাবে চয়ন করেছেন ইবরাহীম আলাইহিস সালামকে। আমি যদি আমার উম্মত থেকে কাউকে খলীল বানাতাম তা হলে আবু বকরকেই আমার খলীল বানাতাম[71]
খলীলের চাইতে হাবীবের মর্যাদা কখনোই উন্নত হতে পারে না। কারণ, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনোই কাউকে নিজ খলীল বানাননি। তবে হযরত আয়েশা তার হাবীবাহ ছিলেন এবং আবু বকর, উমার ও অন্যান্যরা তাঁর হাবীব ছিলেন।
এ কথা সবার জানা থাকা প্রয়োজন যে, ভালোবাসার পাত্র আবার দু প্রকার, যা নিম্নরূপ:
ক. স্বকীয়ভাবে যাকে ভালোবাসতে হয়। অন্য কারোর জন্য তার ভালোবাসা নয়। আর তা এমন সত্তার ব্যাপারে হতে পারে যার গুণাবলী চূড়ান্ত পর্যায়ের ও চিরস্থায়ী এবং যা তার থেকে কখনো ভিন্ন হয় না। তা একমাত্র আল্লাহ তাআলার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। কারণ, মানুষ কাউকে দু কারণেই ভালোবাসে। আর তা হচ্ছে মহত্ত্ব ও পরম সৌন্দর্য। উক্ত দুটি গুণ আল্লাহ তাআলার মধ্যে চূড়ান্ত পর্যায়েরই রয়েছে। তাতে কোনো সন্দেহ নেই। অতএব, একান্ত স্বকীয়ভাবে তাঁকেই ভালোবাসতে হবে। তিনি ভিন্ন অন্য কাউকে নয়।
আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে সব কিছু দিচ্ছেন, সুস্থ রাখছেন, সীমাহীন করুণা করছেন, তাঁর শানে অনেক অনেক দোষ করার পরও তিনি তা লুকিয়ে রাখছেন এবং ক্ষমা করে দিচ্ছেন, তিনি আমাদের দোআ কবুল করছেন, আমাদের সকল বিপদাপদ কাটিয়ে দিচ্ছেন; অথচ আমাদের প্রতি তাঁর কোনো প্রয়োজন নেই বরং তিনি বান্দাকে গুনাহ করার সুযোগ দিচ্ছেন, তাঁরই ছত্রছায়ায় বান্দা তার প্রবৃত্তির সকল চাহিদা মিটিয়ে নিচ্ছে যদিও তা তাঁর বিধান রিরুদ্ধ। সুতরাং আমরা তাঁকেই ভালো না বেসে আর কাকে ভালোবাসবো? বান্দার প্রতি তাঁর পক্ষ থেকে শুধু কল্যাণই কল্যাণ নেমে আসছে; অথচ তাঁর প্রতি বান্দার পক্ষ থেকে অধিকাংশ সময় খারাপ আমলই উঠে যাচ্ছে, তিনি অগণিত নিয়ামত দিয়ে বান্দার প্রিয় হতে চান; অথচ তিনি তার মুখাপেক্ষী নন। আর বান্দা গুনাহর মাধ্যমে তাঁর অপ্রিয় হতে চায়; অথচ সর্বদা সে তাঁর মুখাপেক্ষী। তারপরও আল্লাহর অনুগ্রহ কখনো বন্ধ হচ্ছে না। আর বান্দার গুনাহও কখনো কমছে না
দুনিয়ার কেউ কাউকে ভালোবাসলে সে তার স্বার্থের জন্যই ভালোবাসে কিন্তু আল্লাহ তাআলা বান্দাকে ভালোবাসেন একমাত্র তারই কল্যাণে। তাতে আল্লাহ তাআলার কোনো লাভ নেই।
দুনিয়ার কেউ কারোর সাথে কখনো লেনদেন করে লাভবান না হলে সে তার সাথে দ্বিতীয়বার আর লেনদেন করতে চায় না। লাভ ছাড়া সে সামনে এক কদমও বাড়াচ্ছে না। কিন্তু আল্লাহ তাআলা বান্দার সাথে লেনদেন করছেন একমাত্র তারই লাভের জন্য। নেক আমল একে দশ, সাতশ পর্যন্ত। এমনকি আরো অনেক বেশি। আর গুনাহ একে এক এবং দ্রুত মার্জনীয়।
আল্লাহ তাআলা বান্দাকে সৃষ্টি করেছেন একমাত্র তাঁরই জন্যে। আর দুনিয়া ও আখিরাতের সব কিছু সৃষ্টি করেছেন একমাত্র বান্দার জন্যে।
বান্দার সকল চাওয়া-পাওয়া একমাত্র তাঁরই নিকটে। তিনিই সবচেয়ে বড় দাতা। বান্দাকে তিনি তাঁর নিকট চাওয়া ছাড়াই আশাতীত অনেক কিছু দিয়েছেন। তিনি বান্দার পক্ষ থেকে কম আমলে সন্তুষ্ট হয়েই তাঁর নিকট তা ধীরে ধীরে বাড়াতে থাকেন এবং গুনাহগুলো ক্ষমা করে দেন। তিনি তাঁর নিকট বার বার কোনো কিছু চাইলে বিরক্ত হন না। বরং এর বিপরীতে তিনি তাতে প্রচুর সন্তুষ্ট হন। তিনি তাঁর নিকট কেউ কিছু না চাইলে খুব রাগ করেন।
আমাদের সবার জানা থাকা উচিৎ যে, আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি-অসন্তুষ্টি রক্ষা করে চলার নামই বিলায়াত। যার মূলে রয়েছে তাঁর একান্ত ভালোবাসা। শুধু সালাত, সিয়াম কিংবা মুজাহাদার নামই বিলায়াত নয়। বান্দার খারাপ কাজে তিনি লজ্জা পান। কিন্তু বান্দা তাতে একটুও লজ্জা পায় না। তিনি বান্দার গোনাহসমূহ লুকিয়ে রাখেন; কিন্তু বান্দা তার গোনাহগুলো লুকিয়ে রাখতে রাজি নয়। তিনি বান্দাকে অগণিত নি‘আমত দিয়ে তাঁর সন্তুষ্টি কামনার প্রতি তাকে উদ্বুদ্ধ করেন; কিন্তু বান্দা তা করতে অস্বীকার করে। তাই তিনি এ উদ্দেশ্যে যুগে যুগে রাসূল ও তাদের নিকট কিতাব পাঠান। এরপরও তিনি এ উদ্দেশ্যে প্রতি শেষ রাতে দুনিয়ার আকাশে নেমে এসে বলতে থাকেনঃ কে আছো আমার কাছে চাইবে আমি তাকে সবই দেবো। কে আছো আমার কাছে ক্ষমা চাইবে আমি তাকে ক্ষমা করে দেবো। তিনি বান্দার প্রতি এতো মেহেরবান যে মা-ও তার সন্তানের প্রতি এতো মেহেরবানী করে না বান্দার তাওবা দেখে তিনি এতো বেশি খুশি হন যতটুকু খুশি হয় না সে ব্যক্তিও যে ধু ধু মরুভূমিতে খাদ্য-পানীয়সহ তার সওয়ারী হারিয়ে জীবনের আশা ছেড়ে দেওয়ার পর আবার তা ফিরে পেয়েছে। তাঁর আলোকে দুনিয়া আলোকিত। তিনি সর্বদা জাগ্রত। তাঁর জন্য কখনো ঘুম শোভা পায় না। তিনি সত্যিকার ইনসাফগার। তাঁর নিকট রাত্রের আমল উঠে যায় দিনের আমলের পূর্বে। দিনের আমল উঠে যায় রাতের আমলের পূর্বে। নূরই তাঁর আচ্ছাদন। সে আচ্ছাদন সরিয়ে ফেললে তাঁর চেহারার আলোকরশ্মি তাঁর দৃষ্টির দূরত্ব পর্যন্ত তাঁর সকল সৃষ্টিকে জ্বালিয়ে ফেলবে। সুতরাং একমাত্র তাঁকেই ভালোবাসতে হবে।
জান্নাতের সর্ববৃহৎ নি‘আমত হবে সরাসরি আল্লাহ তাআলার সাক্ষাৎলাভ। আর আত্মার সর্বচূড়ান্ত স্বাদ তাতেই নিহিত রয়েছে। তা এখন থেকেই তাঁর ভালোবাসার মাধ্যমে অর্জন করতে হবে এবং তাঁর ভালোবাসার মধ্যেই দুনিয়াতে আত্মার সমূহ তৃপ্তি নিহিত। এটাই মুমিনের জন্য দুনিয়ার জান্নাত। এ কারণেই আলিমগণ বলে থাকেন: দুনিয়ার জান্নাত যে পেয়েছে আখিরাতের জান্নাত সেই পাবে। তাই আল্লাহ প্রেমিকদের কারো কারোর কখনো কখনো এমন ভাব বা মজা অনুভব হয় যার দরুন সে বলতে বাধ্য হয় যে, এমন মজা যদি জান্নাতীরা পেয়ে থাকেন তা হলে নিশ্চই তাঁরা সুখে রয়েছেন।
খ. অন্যের জন্য যাকে ভালোবাসতে হয়। অর্থাৎ দুনিয়ার কাউকে ভালোবাসতে হলে তা একমাত্র আল্লাহ তাআলার জন্যই ভালোবাসতে হবে। স্বকীয়ভাবে নয়। তবে এ কথা বিশেষভাবে মনে রাখতে হবে যে, আল্লাহ তাআলার জন্য কোনো বস্তু বা ব্যক্তিকে ভালোবাসা কখনো মনের বিপরীতও হতে পারে। তবে তা তাঁর সন্তুষ্টির জন্যই মেনে নিতে হবে যেমনিভাবে সুস্থতার জন্য অপছন্দ পথ্য খাওয়া মেনে নিতে হয়।
অতএব, সর্ব নিকৃষ্ট ভালোবাসা হচ্ছে আল্লাহ তাআলার সাথে কাউকে ভালোবাসা। আর সর্বোৎকৃষ্ট ভালোবাসা হচ্ছে এককভাবে আল্লাহ তাআলাকে ভালোবাসা এবং তাঁর ভালোবাসার বস্তুকে সর্বদা প্রাধান্য দেওয়া
ভালোবাসাই সকল কাজের মূল। চাই সে কাজ ভালোই হোক বা খারাপ। কারণ, কোনো ব্যক্তিকে ভালোবাসলেই তার মর্জিমাফিক কাজ করতে ইচ্ছা হয় এবং কোনো বস্তুকে ভালোবাসলেই তা পাওয়ার জন্য মানুষ কর্মোদ্যোগী হয়। সুতরাং সকল ধর্মীয় কাজের মূল হচ্ছে আল্লাহ তাআলা ও তদীয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভালোবাসা যেমনিভাবে সকল ধর্মীয় কথার মূল হচ্ছে আল্লাহ তাআলা ও তদীয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর দৃঢ় বিশ্বাসের অপূর্ব স্বীকৃতি।
কোনো ভালোবাসা কারোর জন্য লাভজনক প্রমাণিত হলে তার প্রভাব তথা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াও তার জন্য লাভজনক হতে বাধ্য। আর কোনো ভালোবাসা কারোর জন্য ক্ষতিকর হলে তার প্রভাব তথা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াও তার জন্য ক্ষতিকর হতে বাধ্য। তাই আল্লাহ তাআলাকে ভালোবেসে তাঁকে পাওয়ার জন্য কান্না করলে বা তাঁকে না পাওয়ার দরুন হৃদয়ে ব্যথা অনুভূত হলে তা বান্দার কল্যাণেই আসবে। ঠিক এরই বিপরীতে কোনো সুন্দরী মেয়ে অথবা শ্মশ্রুবিহীন সুদর্শন কোনো ছেলেকে ভালোবেসে তাঁকে পাওয়ার জন্য কান্না করলে বা তাঁকে না পাওয়ার দরুন হৃদয়ে ব্যথা অনুভূত হলে তা কখনোই বান্দার কল্যাণে আসবে না। বরং তা তার জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর বলেই প্রমাণিত হবে।
সুন্দরী কোনো নারী অথবা শ্মশ্রুবিহীন সুদর্শন কোনো ছেলেকে এমনভাবে ভালোবাসা যে, তার সন্তুষ্টিকে আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টির ওপর প্রাধান্য দেওয়া হয়, কখনো আল্লাহ তাআলার অধিকার ও তার অধিকার পরস্পর সাংঘর্ষিক হলে তার অধিকারকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়, তার জন্য মূল্যবান সম্পদ ব্যয় করা হয়, অথচ আল্লাহ তাআলার জন্য মূল্যহীন সম্পদ, তার জন্য মূল্যবান সময় ব্যয় করা হয় যা আল্লাহ তাআলার জন্য করা হয় না, সর্বদা তার নৈকট্য অর্জনের চেষ্টা করা হয় ; অথচ আল্লাহ তাআলার নৈকট্য অর্জনের এতটুকুও চেষ্টা করা হয় না এমন ভালোবাসা বড় শির্ক যা ব্যভিচার চাইতেও অত্যন্ত মারাত্মক।

২. রোগাক্রান্ত হওয়ার পর চিকিৎসা:
তাওহীদ বিরোধী উক্ত রোগে কেউ আক্রান্ত হলে তাকে সর্ব প্রথম এ কথা অবশ্যই বুঝতে হবে যে, সে উক্ত রোগে আক্রান্ত হয়েছে শুধু মূর্খতা এবং গাফিলতির দরুনই। অতএব, সর্ব প্রথম তাকে আল্লাহ তাআলার তাওহীদ তথা একত্ববাদ, তাঁর সাধারণ নীতি ও নিদর্শন সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করতে হবে। অতঃপর তাকে এমন কিছু প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য ইবাদত করতে হবে যার দরুন সে উক্ত মত্ততা থেকে রক্ষা পেতে পারে। এরই পাশাপাশি সে আল্লাহ তাআলার নিকট সবিনয়ে সর্বদা এ দোআ করবে যে, আল্লাহ তাআলা যেন তাকে উক্ত রোগ থেকে ত্বরিত মুক্তি দেন। বিশেষ করে সম্ভাবনাময় স্থান, সময় ও অবস্থায় দোআ করবে। যেমন, আযান ও ইক্বামতের মধ্যবর্তী সময়, রাত্রের শেষ তৃতীয়াংশ, সাজদাহ এবং জুমু‘আর দিনের শেষ বেলা ইত্যাদি ইত্যাদি।

সংক্ষিপ্তাকারে প্রস্তাবিত চিকিৎসাসমূহঃ:
১. প্রথমে আল্লাহ তাআলার নিকট উক্ত গুনাহ থেকে খাঁটি তাওবা করে নিন। কারণ, কেউ আল্লাহ তাআলা নিকট একমাত্র তাঁরই সন্তুষ্টি পাওয়ার জন্য অথবা তাঁরই কঠিন শাস্তি থেকে বাঁচার জন্য তাওবা করে নিলে আল্লাহ তাআলা অবশ্যই তা কবুল করবেন এবং তাকে সেভাবেই চলার তাওফীক দিবেন।
২. আল্লাহ তাআলার প্রতি দৃঢ় একনিষ্ঠ হোন। আর এটিই হচ্ছে এর একান্ত মহৌষধ। আল্লাহ তাআলা তাঁর নবী ইউসুফ আলাইহিস সালামকে এ একনিষ্ঠতার কারণেই ইশ্ক্ব এবং প্রায় নিশ্চিত ব্যভিচার থেকে রক্ষা করেন।
আল্লাহ তাআলা বলেন,
﴿كَذَٰلِكَ لِنَصۡرِفَ عَنۡهُ ٱلسُّوٓءَ وَٱلۡفَحۡشَآءَۚ إِنَّهُۥ مِنۡ عِبَادِنَا ٱلۡمُخۡلَصِينَ﴾ [يوسف: ٢٤]
তাকে (ইউসুফ আলাইহিস সালামকে) মন্দ কাজ ও অশ্লীলতা থেকে বিরত রাখার জন্যই এভাবে আমি আমার নিদর্শন দেখালাম। কারণ, তিনি তো ছিলেন আমার একান্ত একনিষ্ঠ বান্দাহ্দের অন্যতম [সূরা ইউসুফ, আয়াত: ২৪]
৩. ধৈর্য ধরুন। কারণ, কোনো অভ্যাসগত কঠিন পাপ ছাড়ার জন্য ধৈর্যের একান্তই প্রয়োজন। সুতরাং ধৈর্য ধারণের বার বার কসরত করতে হবে। এমনিভাবেই ধীরে ধীরে এক সময় ধৈর্য ধারণ অভ্যাসে পরিণত হবে।
আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«وَمَنْ يَّتَصَبَّرْ يُصَبِّرْهُ اللهُ ، وَمَا أُعْطِيَ أَحَدٌ عَطَاءً خَيْراً وَأَوْسَعَ مِنَ الصَّبْرِ»
যে ব্যক্তি ধৈর্য ধারণ করার চেষ্টা করবে আল্লাহ তাআলা অবশ্যই তাকে ধৈর্য ধারণ করার শক্তি দিবেন। আল্লাহ তাআলা কাউকে এমন কিছু দেন নি যা ধৈর্যের চাইতেও উত্তম এবং বিস্তর কল্যাণকর[72]
এ কথা অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে, মনের কোনো চাহিদা পূরণ করা থেকে ধৈর্য ধারণ করা যে কারোর জন্য অবশ্যই অনেক সহজ তা পূরণ করার পর যে কষ্ট, শাস্তি, লজ্জা, আফসোস, লাঞ্ছনা, ভয়, চিন্তা ও অস্থিরতা পেয়ে বসবে তা থেকে ধৈর্য ধারণ করার চাইতে। তাই একেবারে শুরুতেই ধৈর্য ধারণ করতে হবে।
৪. মনের বিরোধিতা করতে শিখুন। যে ব্যক্তি আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য মনের বিরোধিতা করবে আল্লাহ তাআলা তাকে অবশ্যই সঠিক পথে পরিচালিত করবেন।
আল্লাহ তাআলা বলেন,
﴿وَٱلَّذِينَ جَٰهَدُواْ فِينَا لَنَهۡدِيَنَّهُمۡ سُبُلَنَاۚ وَإِنَّ ٱللَّهَ لَمَعَ ٱلۡمُحۡسِنِينَ ٦٩﴾ [العنكبوت: ٦٩] 
যারা আমার উদ্দেশ্যে সংগ্রাম করে আমি অবশ্যই তাদেরকে আমার পথে পরিচালিত করবো। আল্লাহ তাআলা নিশ্চয় সৎকর্মশীলদের সাথেই রয়েছেন [সূরা আল-আনকাবূত, আয়াত: ৬৯]
৫. আল্লাহ তাআলা যে সর্বদা আপনার কর্মকাণ্ডের প্রতি দৃষ্টিপাত করেই আছেন তা অনুভব করতে শিখুন। সুতরাং উক্ত কাজ করার সময় মানুষ আপনাকে না দেখলেও আল্লাহ তাআলা যে আপনার প্রতি দেখেই আছেন তা ভাবতে হবে। এরপরও যদি আপনি উক্ত কাজে লিপ্ত থাকেন তখন অবশ্যই এ কথা ভাবতে হবে যে, আল্লাহ তাআলার সম্মান ও মর্যাদা আপনার অন্তরে নেই। তাই আল্লাহ তাআলা আপনার উক্ত কর্ম দেখলেও আপনার এতটুকুও লজ্জা হয় না। আর যদি আপনি এমন বিশ্বাস করেন যে, আল্লাহ তাআলা আপনার কর্মকাণ্ড দেখছেনই না তা হলে তো আপনি নিশ্চয় কাফির।
৬. জামা‘আতে সালাত পড়ার প্রতি বিশেষভাবে যত্নবান হোন।
 আল্লাহ তাআলা বলেন,
﴿إِنَّ ٱلصَّلَوٰةَ تَنۡهَىٰ عَنِ ٱلۡفَحۡشَآءِ وَٱلۡمُنكَرِۗ﴾ [العنكبوت: ٤٥]
নিশ্চয় সালাত অশ্লীল ও মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে [সূরা আল-আনকাবূত, আয়াত: ৪৫]
৭. বেশি বেশি নফল সাওম পালন করতে চেষ্টা করুন। কারণ, সাওমের মধ্যে বিশেষ ফযীলতের পাশাপাশি উত্তেজনা প্রশমনেরও এক বাস্তবমুখী ব্যবস্থা রয়েছে। তেমনিভাবে সাওম আল্লাহভীরুতা শিক্ষা দেওয়ার জন্যও এক বিশেষ সহযোগী।
আব্দুল্লাহ ইবন মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«يَا مَعْشَرَ الشَّبَابِ! مَنِ اسْتَطَاعَ مِنْكُمُ الْبَاءَةَ فَلْيَتَزَوَّجْ، فَإِنَّهُ أَغَضُّ لِلْبَصَرِ، وَأَحْصَنُ لِلْفَرْجِ ، وَمَنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَعَلَيْهِ بِالصَّوْمِ ، فَإِنَّهُ لَهُ وِجَاءٌ»
হে যুবকরা! তোমাদের কেউ স্ত্রী সঙ্গমে সক্ষম হলে সে যেন দ্রুত বিবাহ করে নেয়। কারণ, বিবাহ তার চোখকে নিম্নগামী করবে এবং তার লজ্জাস্থানকে হিফাযত করবে। আর যে বিবাহ করতে সক্ষম নয় সে যেন রোযা রাখে। কারণ, সাওম তার জন্য একান্ত যৌন উত্তেজনা প্রতিরোধক[73]
৮. বেশি বেশি কুরআন তিলাওয়াত করুন। কারণ, কুরআন হচ্ছে সর্ব রোগের চিকিৎসা। তাতে নূর, হিদায়াত, মনের আনন্দ ও প্রশান্তি রয়েছে। সুতরাং উক্ত রোগে রোগাক্রান্ত ব্যক্তির জন্য বেশি বেশি কুরআন তিলাওয়াত, মুখস্থ ও তা নিয়ে চিন্তা-গবেষণা করা অবশ্যই কর্তব্য যাতে তার অন্তর ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে যায়।
৯. বেশি বেশি আল্লাহর যিকির করুন। কারণ, আল্লাহ তাআলার যিকিরে অন্তরের বিরাট একটা প্রশান্তি রয়েছে এবং যে অন্তর সর্বদা আল্লাহর যিকিরে ব্যস্ত থাকে শয়তান সে অন্তর থেকে বহু দূরে অবস্থান করে। সুতরাং এ জাতীয় ব্যক্তির জন্য যিকির অত্যন্ত উপকারী।
১০. আল্লাহ তাআলার সকল বিধি-বিধানের প্রতি যত্নবান হোন। তা হলে আল্লাহ তাআলাও আপনার প্রতি যত্নবান হবেন। আপনাকে জিন্ন ও মানব শয়তান এবং অন্তরের কুপ্রবৃত্তি থেকে রক্ষা করবেন আলা আপনার ধার্মিকতা, সততা, মানবতা এবং সম্মানও রক্ষা করবেন।
১১. অতি তাড়াতাড়ি বিবাহ কার্য সম্পাদন করুন। তা হলে যৌন উত্তেজনা প্রশমনের জন্য সহজেই আপনি একটি হালাল ক্ষেত্র পেয়ে যাবেন।
১২. জান্নাতের হুরের কথা বেশি বেশি স্মরণ করুন। যাদের চোখ হবে বড় বড় এবং যারা হবে অতুলনীয়া সুন্দরী লুক্কায়িত মুক্তার ন্যায়। নেককার পুরুষদের জন্যই আল্লাহ তাআলা তাদেরকে সৃষ্টি করেছেন। সুতরাং তাদেরকে পেতে হলে দুনিয়ার এ ক্ষণিকের অবৈধ স্বাদ পরিত্যাগ করতেই হবে।
১৩. শ্মশ্রুবিহীন সে প্রিয় ছেলেটি থেকে খুব দূরে থাকুন যাকে দেখলে 
আপনার অন্তরের সে লুক্কায়িত কামনা-বাসনা দ্রুত জাগ্রত হয়। এমন দূরে থাকবেন যে
, সে যেন কখনো আপনার চোখে না পড়ে এবং তার কথাও যেন আপনি কখনো শুনতে না পান। কারণ, বাহ্যিক দূরত্ব অন্তরের দূরত্ব সৃষ্টি করতে অবশ্যই বাধ্য।
১৪. তেমনিভাবে উত্তেজনাকর সকল বস্তু থেকেও দূরে থাকুন যেগুলো আপনার লুক্কায়িত কামনা-বাসনাকে দ্রুত জাগ্রত করে। অতএব মহিলা ও শ্মশ্রুবিহীন ছেলেদের সাথে মেলামেশা করবেন না। বিশ্রী ছবি ও অশ্লীল গান শুনবেন না। আপনার নিকট যে অডিও ভিডিও ক্যাসেট, ছবি ও চিঠি রয়েছে সবগুলো দ্রুত নস্যাৎ করে দিন। উত্তেজনাকর খাদ্যদ্রব্য আপাতত বন্ধ রাখুন। তা কিছু দিনের জন্য গ্রহণ করবেন না। ইতিঃপূর্বে যেখানে উক্ত কাজ সম্পাদিত হয়েছে সেখানে আর যাবেন না।
১৫. লাভজনক কাজে ব্যস্ত থাকুন। কখনো একা ও অবসর থাকতে চেষ্টা করবেন না। পড়াশুনা নিয়ে ব্যস্ত থাকতে পারেন। আত্মীয়-স্বজনের সাথে সাক্ষাৎ করতে পারেন। ইত্যবসরে ঘরের প্রয়োজনসমূহ পূরণ করতে পারেন। কুরআন শরীফ মুখস্থ করতে পারেন অথবা অন্ততপক্ষে বেচাকেনা নিয়েও ব্যস্ত হতে পারেন ইত্যাদি ইত্যাদি।
১৬. সর্বদা শয়তানের ওয়াসওয়াসা প্রতিরোধ করতে চেষ্টা করুন। কোনো কুমন্ত্রণাকে এতটুকুর জন্যও অন্তরে স্থান দিবেন না।
১৭. নিজের মনকে দৃঢ় করুন। কখনো নিরাশ হবেন না। কারণ, এ ব্যাধি এমন নয় যে তার কোনো চিকিৎসা নেই। সুতরাং আপনি নিরাশ হবেন কেন?
১৮. উচ্চাকাঙ্খী হোন। উচ্চাভিলাসের চাহিদা হচ্ছে এই যে, আপনি সর্বদা উন্নত গুণে গুণান্বিত হতে চাইবেন। অরুচিকর অভ্যাস ছেড়ে দিবেন। লাঞ্ছনার স্থানসমূহে কখনো যাবেন না। সমাজের সম্মানি ব্যক্তি সেজে সমাজের গুরুত্বপূর্ণ নেতৃত্ব হাতে নিবেন।
১৯. অভিনব বিরল চিকিৎসাসমূহ থেকে দূরে থাকুন। যেমন, কেউ উক্ত কাজ ছাড়ার জন্য এভাবে মানত করলো যে, আমি যদি এমন কাজ আবারো করে ফেলি তা হলে আল্লাহ তাআলার জন্য ছয় মাস সিয়াম পালন করা অথবা দশ হাজার রিয়াল সাদাকা করা আমার ওপর বাধ্যতামূলক হয়ে যাবে। তেমনিভাবে এ বলে কসম খেলো যে, আল্লাহর কসম! আমি আর এমন কাজ করবো না। শুরুতে কসমের কাফফরার ভয়ে অথবা মানত ওয়াজিব হওয়ার ভয়ে উক্ত কাজ করা থেকে বেঁচে থাকলেও পরবর্তীতে তা কাজে নাও আসতে পারে।
কখনো কখনো কেউ কেউ কোনো অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়াই যৌন উত্তেজনা প্রশমনকারী কোনো কোনো ঔষুধ সেবন করে। তা একেবারেই ঠিক নয়। কারণ, তাতে হিতে বিপরীতও হতে পারে।
২০. নিজের মধ্যে প্রচুর লজ্জাবোধ জন্ম দেওয়ার চেষ্টা করুন। কারণ, লজ্জাবোধ একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র। যা কল্যাণই কল্যাণ এবং তা ঈমানেরও একটি বিশেষ অঙ্গ বটে। লজ্জাবোধ মানুষকে ভালো কাজ করতে উৎসাহ যোগায় এবং খারাপ কাজ থেকে দূরে রাখে।

নিম্নোক্ত কয়েকটি কাজ করলে যে কোনো ব্যক্তির মাঝে ধীরে ধীরে লজ্জাবোধ জন্ম নেয়:
১. বেশি বেশি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনী পড়বেন।
২. সাহাবায়ে কেরাম রাদিয়াল্লাহু আনহুম ও প্রসিদ্ধ লজ্জাশীল সালফে সালেহীনদের জীবনী পড়বেন।
৩. লজ্জাশীলতার ফলাফল সম্পর্কে ভালোভাবে চিন্তা করবেন। বিশেষ করে লজ্জাহীনতার ভীষণ কুফল সম্পর্কেও সর্বদা ভাববেন।
৪. এমন কথা ও কাজ থেকে বিরত থাকবেন যা বললে বা করলে লজ্জাবোধ কমে যায়।
৫. লজ্জাশীলদের সাথে বেশি বেশি উঠাবসা করবেন এবং লজ্জাহীনদের থেকে একেবারেই দূরে থাকবেন।
৬. বার বার লজ্জাশীলতার কসরত করবেন। তা হলে একদা আপনি অবশ্যই লজ্জাশীলদের অন্তর্ভুক্ত হবেন।
বিশেষ করে বাচ্চাদের মধ্যে এমন গুণ থাকা অবশ্যই প্রয়োজনীয়। তখনই সে বড় হলে তা তার বিশেষ কাজে আসবে।
ওয়াহাব ইবন মুনাব্বিহ রহ. বলেন,
 إِذَا كَانَ فِيْ الصَّبِيِّ خَصْلَتَانِ: الْـحَيَاءُ وَالرَّهْبَةُ رُجِيَ خَيْرُهُ
কোনো বাচ্চার মধ্যে দুটি গুণ থাকলেই তার কল্যাণের আশা করা যায়। তম্মধ্যে একটি হচ্ছে লজ্জা আর অপরটি হচ্ছে ভয়-ভীতি
ইমাম আসমা‘ঈ রহ. বলেন,
 مَنْ كَسَاهُ الْـحَيَاءُ ثَوْبَهُ لَمْ يَرَ النَّاسُ عَيْبَهُ
লজ্জা যার ভূষণ হবে মানুষ তার দোষ দেখতে পাবে না
২১. যারা অন্য জন কর্তৃক এ জাতীয় নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন (বিশেষ করে তা উঠতি বয়সের ছেলেদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য) তাদের একান্তই কর্তব্য হচ্ছে সর্বদা সতর খোলা রাখা থেকে সতর্ক থাকা। চাই তা খেলাধুলার সময় হোক বা অন্য কোনো সময়। কারণ, এরই মাধ্যমে সাধারণত অন্য জন তার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে থাকে।
২২. সাজ-সজ্জায় স্বাভাবিকতা বজায় রাখবেন। উঠতি বয়সের ছেলেদের ক্ষেত্রে এটি বিশেষভাবেই প্রযোজ্য। সুতরাং এদের জন্য কখনোই উচিৎ নয় যে, এরা কড়া সুগন্ধি ব্যবহার করবে। ব্যতিক্রমধর্মী আঁটসাঁট পোশাক পরবে। সাজ-সজ্জার ব্যাপারে কাফির ও মহিলাদের অনুসরণ করবে। মাথা আঁচড়ানো বা চুলের ভাঁজের প্রতি গুরুত্ব দিবে। কারণ, তা অন্যের ফিৎনার কারণ।
২৩. উঠতি বয়সের ছেলেদের আরেকটি কর্তব্য হচ্ছে, তারা যে কারোর সঙ্গে মজা বা রঙ্গ-তামাশা করা থেকে বিরত থাকবে। কারণ, অধিক কৌতুক মানুষের সম্মান বিনষ্ট করে দেয় এবং বোকাদেরকে তার ব্যাপারে অসভ্য আচরণ করতে সাহসী করে তোলে। তবে জায়িয কৌতুক একেবারেই নিষিদ্ধ নয়। কিন্তু তা নেককারদের সঙ্গেই হওয়া উচিৎ এবং তা ভদ্রতা ও মধ্যপন্থা বজায় রেখেই করতে হবে।
২৪. আত্ম সমালোচনা করতে শিখবেন। সময় থাকতে এখনই নিজের মনের সঙ্গে ভালোভাবে বুঝাপড়া করে নিবেন। চাই আপনি ছোটই হোন অথবা বড়। সেই কর্মটি আপনিই করে থাকুন অথবা তা আপনার সাথেই করা হোক না কেন।
আপনি যদি বড় বা বয়স্ক হয়ে থাকেন তা হলে আপনি নিজ মনকে এ বলে প্রশ্ন করবেন যে, এখনো আমি কিসের অপেক্ষায় রয়েছি? এ রকম মারাত্মক কাজটি এখনো ছাড়ছিনে কেন? আমি কি সরাসরি আল্লাহ তাআলার শাস্তির অপেক্ষা করছি? না কি মৃত্যুর অপেক্ষায় রয়েছি?
আর যদি আপনি অল্প বয়স্ক বা ছোট হয়ে থাকেন তা হলে আপনি নিজ মনকে এ বলে প্রশ্ন করবেন যে, আমি কি এ ব্যাপারে নিশ্চিত যে, আমি অনেক দিন বাঁচবো। না কি যে কোনো সময় আমার মৃত্যু আসতে পারে; অথচ আমি তখনো উক্ত গোনাহে লিপ্ত। আর যদি আমি বেঁচেই থাকি তা হলে এমন ঘৃণ্য কাজ নিয়েই কি বেঁচে থাকবো? আমার যৌবন কি এ কাজেই ব্যয় হতে থাকবে? আমি কি বিবাহ করবো না? তখন আমার স্ত্রী ও সন্তানের কী পরিণতি হবে? আমি কি কোনো এক দিন মানুষের কাছে লাঞ্ছিত হবো না? আমি কি কখনো কঠিন রোগে আক্রান্ত হবো না? আমার কারণেই কি এ পবিত্র সমাজ ধ্বংসের পথে এগুচ্ছে না? আমি কি আল্লাহ তাআলার শাস্তি ও অভিশাপের কারণ হচ্ছি না? কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলার সামনে আমার অবস্থান কী হবে?
২৫. উক্ত কর্মের পরিণতি নিয়ে বিশেষভাবে চিন্তা করবেন। কারণ, কিছুক্ষণের মজার পরই আসছে দীর্ঘ আপসোস, লজ্জা, অপমান ও শাস্তি।
২৬. মনে রাখবেন, এ জাতীয় মজার কোনো শেষ নেই। এ ব্যাধি হচ্ছে চুলকানির ন্যায়। যতই চুলকাবেন ততই চুলকানি বাড়বে। একটি শিকার মিললেই আরেকটি শিকারের ধান্ধায় থাকতে হবে। কখনোই আপনার এ চাহিদা মিটবে না।
২৭. নেককারদের সাথে উঠাবসা করবেন ও বদকারদের থেকে বহু দূরে থাকবেন। কারণ, নেককারদের সাথে উঠাবসা করলে অন্তর সজীব হয়, ব্রেইন আলোকিত হয়। আর বদকারদের থেকে দূরে থাকলে ধর্ম ও ইজ্জত রক্ষা পায়।
২৮. বেশি বেশি রুগ্ন ব্যক্তির শুশ্রূষা করবেন, বার বার মৃত ব্যক্তির লাশ দেখতে যাবেন, মৃত ব্যক্তিকে দাফন করবেন ও তার কবর যিয়ারত করবেন। তেমনিভাবে মৃত্যু ও মৃত্যুর পরের অবস্থা নিয়েও চিন্তা-ভাবনা করবেন। কারণ, তা যৌন উত্তেজনা প্রশমনের এক বিশেষ সহযোগী।
২৯. কারোর হুমকির সামনে কোনো ধরনের নতি স্বীকার করবেন না। বরং তা দ্রুত প্রশাসনকে জানাবেন। বিশেষ করে এ ব্যাপারটি ছোটদের ক্ষেত্রেই বেশি প্রযোজ্য। কারণ, এ কথাটি আপনি বিশেষভাবেই জেনে রাখবেন যে, এ জাতীয় ব্যক্তিরা যতই কাউকে ভয় দেখাক না কেন তারা এ ব্যাপারে উক্ত ব্যক্তির কঠিনতা বা সিদ্ধান্তের দৃঢ়তা দেখলে অবশ্যই পিছপা হতে বাধ্য হবে।
কেউ এ ব্যাপারে নিজকে অক্ষম মনে করলে সে যেন দ্রুত তা নিজ পিতা, বড় ভাই, আস্থাভাজন শিক্ষক অথবা কোনো ধার্মিক ব্যক্তিকে জানায়, যাতে তাঁরা তাকে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করতে পারে।
৩০. বেশি বেশি সাধুতা ও তাওবাকারীদের কাহিনী সম্ভার পড়বেন। কারণ, তাতে বহু ধরনের শিক্ষা, আত্মসম্মানের প্রতি উৎসাহ এবং বিশেষভাবে অসম্মানের প্রতি নিরুৎসাহ সৃষ্টি হবে।
৩১. বেশি বেশি করে গুরুত্বপূর্ণ ইসলামী ক্যাসেটসমূহ বিশেষ মনযোগ সহ শ্রবণ করবেন এবং গানের ক্যাসেটসমূহ শুনা থেকে একেবারেই বিরত থাকবেন।
৩২. সমাজের যে যে নেককার ব্যক্তিরা যুবকদের বিষয়সমূহ নিয়ে বিশেষভাবে চিন্তা-ভাবনা করছেন তাদের কারোর নিকট নিজের এ দুরবস্থা বিস্তারিত জানাবেন যাতে তাঁরা আপনাকে এ ব্যাপারে সঠিক পরামর্শ দিতে পারেন। বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের নিকটও আপনার এ অবস্থার পূর্ণ বিবরণ দিতে পারেন যাতে তিনি আপনাকে উপযুক্ত চিকিৎসা দিতে পারেন অথবা উত্তেজনা প্রশমনের কোনো পদ্ধতি বাতলিয়ে দিতে পারেন।
প্রত্যেক বিবেকবান মানুষেরই এ কথা জানা উচিত যে, শরীআত ও বিবেককে আশ্রয় করেই কোনো মানুষ তার সার্বিক কল্যাণ ও তার পরিপূর্ণতা এবং সকল অঘটন অথবা অন্ততপক্ষে তার কিয়দংশ থেকে নিষ্কৃতি লাভ করে থাকে।
সুতরাং বিবেকবানের সামনে যখন এমন কোনো ব্যাপার এসে পড়ে যার মধ্যে ভালো ও খারাপ উভয় দিকই রয়েছে তখন তার ওপর দুটি কর্তব্য এসে পড়ে। তম্মধ্যে একটির সম্পর্ক জ্ঞানের সাথে এবং অপরটির সম্পর্ক কাজের সাথে। অর্থাৎ তাকে সর্ব প্রথম এ কথা জানতে হবে যে, উক্ত উভয় দিকের মধ্য থেকে কোনটি অধিক গুরুত্বপূর্ণ। অতএব সে সেটিকেই প্রাধান্য দিবে। আর এ কথা সবারই জানা যে, কোনো মেয়ে বা শ্মশ্রুবিহীন ছেলের প্রেমে পড়ার মধ্যে দুনিয়াবী বা ধর্মীয় কোনো ফায়েদা নেই। বরং তাতে দীন-দুনিয়ার অনেকগুলো গুরুতর ক্ষতি রয়েছে, যার কিয়দংশ নিম্নরূপ:
ক. আল্লাহ তাআলার ভালোবাসা ও তাঁর স্মরণ থেকে বিমুখ হয়ে তাঁর কোনো সৃষ্টির ভালোবাসা ও তার স্মরণে নিমগ্ন হওয়া। কারণ, উভয়টি একত্রে সমভাবে কারোর হৃদয়ে অবস্থান করতে পারে না।
খ. তার অন্তর আল্লাহ তাআলা ছাড়া অন্যকে ভালোবাসার দরুন নিদারুণ কষ্ট ও শাস্তির সম্মুখীন হয়। কারণ, প্রেমিক কখনো চিন্তামুক্ত হতে পারে না। বরং তাকে সর্বদা চিন্তাযুক্তই থাকতে হয়। প্রিয় বা প্রিয়াকে না পেয়ে থাকলে তাকে পাওয়ার চিন্তা এবং পেয়ে থাকলে তাকে আবার কখনো হারানোর চিন্তা।
গ. প্রেমিকের অন্তর সর্বদা প্রিয় বা প্রিয়ার হাতেই থাকে। সে তাকে যেভাবেই চালাতে চায় সে সেভাবেই চলতে বাধ্য। তখন তার মধ্যে কোনো নিজস্ব ইচ্ছা অবশিষ্ট থাকে না। এর চাইতে আর বড় কোনো লাঞ্ছনা আছে কি?
ঘ. দীন-দুনিয়ার সকল কল্যাণ থেকে সে বঞ্চিত হয়। কারণ, ধর্মীয় কল্যাণের জন্য তো আল্লাহ তাআলার প্রতি অন্তরের উন্মুখতা একান্ত প্রয়োজনীয়। আর তা প্রেমিকের পক্ষে একেবারেই অসম্ভব। অন্য দিকে দুনিয়াবী কল্যাণ তো দীনি কল্যাণেরই অধীন। দীনি কল্যাণ যার হাত ছাড়া হয় দুনিয়ার কল্যাণ সুস্থভাবে কখনো তার হস্তগত হতে পারে না।
ঙ. দীন-দুনিয়ার সকল বিপদ তার প্রতি দ্রুত ধাবিত হয়। কারণ, মানুষ যখন আল্লাহ তাআলা ছাড়া অন্য কারোর প্রেমে পড়ে যায় তখন তার 
অন্তর আল্লাহ বিমুখ হয়ে পড়ে। আর কারোর অন্তর আল্লাহ বিমুখ হলে শয়তান তার অন্তরে হাঁটু গেড়ে বসে। তখনই সকল বিপদাপদ তার দিকে দ্রুত ধাবমান হয়। কারণ
, শয়তান তো মানুষের আজন্ম শত্রু। আর কারোর কঠিন শত্রু যখন তার ওপর কাবু করতে পারে তখন কি সে তার যথাসাধ্য ক্ষতি না করে এমনিতেই বসে থাকবে?!
চ. শয়তান যখন প্রেমিকের অন্তরে অবস্থান নিয়ে নেয় তখন সে উহাকে বিক্ষিপ্ত করে ছাড়ে এবং তাতে প্রচুর ওয়াসওয়াসা (কুমন্ত্রণা) ঢেলে দেয়। কখনো কখনো এমন হয় যে, সে একান্ত বদ্ধ পাগলে পরিণত হয়। লাইলী প্রেমিক ঐতিহাসিক প্রেমপাগল মজনুর কথা তো আর কারোর অজানা নয়।
ছ. এমনকি প্রেমিক কখনো কখনো প্রেমের দরুন প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে নিজের সকল অথবা কিছু বাহ্যেন্দ্রিয় হারিয়ে বসে। প্রত্যক্ষ তো এভাবে যে, প্রেমে পড়ে তো অনেকে নিজ শরীরই হারিয়ে বসে। ধীরে ধীরে তার শরীর অত্যন্ত দুর্বল হয়ে পড়ে। তখন তার কোনো ইন্দ্রিয়ই আর সুস্থভাবে বাহ্যিক কোনো কাজ সমাধা করতে পারে না।
একদা জনৈক যুবককে আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা এর নিকট হাযির করা হলো। তখন তিনি আরাফা ময়দানে অবস্থানরত। যুবকটি একেবারেই দুর্বল হয়ে হাড্ডিসার হয়ে গেলো। তখন ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা উপস্থিত জনতাকে জিজ্ঞাসা করলেন: যুবকটির কী হলো? লোকেরা বললো, সে প্রেমে পড়েছে। এ কথা শুনেই তিনি তখন থেকে পুরো দিন আল্লাহ তাআলার নিকট প্রেম থেকে আশ্রয় কামনা করেন।
পরোক্ষ বাহ্যেন্দ্রিয় লোপ তো এ ভাবেই যে, প্রেমের দরুন তার অন্তর যখন বিনষ্ট হয়ে যায় তখন তার বাহ্যেন্দ্রিয়গুলোও আর সঠিক কাজ করে না। তখন তার চোখ আর তার প্রিয়ের কোনো দোষ দেখে না। কান আর প্রিয়কে নিয়ে কোনো গাল শুনতে বিরক্তি বোধ করে না। মুখ আর প্রিয়ের অযথা প্রশংসা করতে লজ্জা পায় না।
জ. ইশকের পর্যায়ে যখন কেউ পৌঁছে যায় তখন তার প্রিয় পাত্রই তার চিন্তা-চেতনার একান্ত কেন্দ্রবিন্দুতে রূপান্তরিত হয়। তখন তার সকল শারীরিক ও মানসিক শক্তিসমূহ অচল হয়ে পড়ে। তখন সে এমন রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত হয় যার চিকিৎসা একেবারেই দুষ্কর।
এ ছাড়াও প্রেমের আরো অনেক ক্ষতিকর দিক রয়েছে। যেমন, কোনো প্রেমিক যখন লোক সমাজে তার প্রেমের কথা প্রকাশ করে দেয় তখন তার প্রিয়ের ওপর সর্ব প্রথম বিশেষভাবে যুলুম করা হয়। কারণ, মানুষ তখন অনর্থকভাবে তাকে এ ব্যাপারে দোষারোপ করতে থাকে। এমনকি তার ব্যাপারে কোনো মানুষ কোনো কথা বানিয়ে বললেও অন্যরা তা বিশ্বাস করতে একটুও দেরি করে না। এমন কি শুধু প্রিয়ের ওপরই যুলুম সীমাবদ্ধ থাকে না। বরং তা তার সমস্ত পরিবারবর্গের ওপরও বর্তায়। কারণ, এতে করে তাদেরও প্রচুর মানহানী হয়। অন্যদেরকেও মিথ্যারোপের গুনাহে নিমজ্জিত করা হয়। আর যদি প্রিয় বা প্রিয়াকে পাওয়ার জন্য অন্যের সহযোগিতা নেওয়া হয় তখন তারাও গুনাহ্গার হয়। এ পথে যারা বাধা সৃষ্টি করে তাদের অনেককে কখনো কখনো হত্যাও করা হয়। কতো কতো গভীর সম্পর্ক যে এ কারণে বিচ্ছিন্ন করা হয় তার কোনো ইয়ত্তা নেই। কতো প্রতিবেশী বা আত্মীয়ের অধিকার যে এ ক্ষেত্রে বিনষ্ট হয় তার কোনো হিসেব নেই। আর যদি এ ক্ষেত্রে যাদুর সহযোগিতা নেওয়া হয় তা হলে একে তো শির্ক আবার এর ওপর কুফুরী। আর যদি প্রিয় বা প্রিয়া মিলেই যায় তখন একে অপরকে নিজ স্বার্থ হাসিলের জন্য অন্যের ওপর যুলুম করতে সহযোগিতা করে এবং একে অপরের সন্তুষ্টির জন্য কতো মানুষের কতো মাল যে হরণ করে তার কোনো হিসেব নেই। আর যদি প্রিয় বা প্রিয়া অত্যন্ত চতুর হয়ে থাকে তখন সে প্রেমিককে আশা দিয়ে দিয়ে তার সকল সম্পদ বিনষ্ট করে দেয়। কখনো সে এমন কান্ড একই সঙ্গে অনেকের সাথেই করে বেড়ায়। তখন প্রেমিক রাগ করে কখনো তাকে হত্যা বা মারাত্মকভাবে আহত করে। আরো কতো কি?
সুতরাং কোনো বুদ্ধিমান এতো কিছু জানার পরও এ জাতীয় প্রেমে কখনো আবদ্ধ হতে পারে না।
আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে এ জাতীয় অবৈধ সম্পর্ক থেকে দূরে রাখুন। আমীন! সুম্মা আমীন। ইয়া রাব্বাল-আলামীন।
وَصَلَّى اللهُ عَلَى نَبِيِّنَا مُحَمَّدٍ وَّعَلَى آلِهِ وَصَحْبِهِ أَجْمَعِيْنَ
হে আল্লাহ! আপনি আমাদের সকলকে উক্ত রোগসমূহ থেকে বাঁচার তাওফীক দান করুন। আমীন, সুম্মা আমীন।
প্রতিনিয়ত লোকমুখে কিংবা পত্র-পত্রিকায় ব্যভিচার ও সমকামিতার দীর্ঘ ফিরিস্তি শুনে বা পড়ে প্রতিটি ধর্মপ্রাণ মুসলিমই কমবেশি মর্মব্যথা অনুভব না করে পারেন না। এমনকি সকল আত্মমর্যাদা সম্পন্ন মানুষই সর্বদা এ কথা ভেবে কম শঙ্কিত নন যে, হয়তোবা এক দিন আমাকেও এ কথা শুনতে হবে যে, তোমার পরিবার কিংবা বংশেও তো এ রকম গর্হিত কাজ সম্পন্ন হচ্ছে অথচ এ সম্পর্কে তোমার এতটুকুও খবর নেই। তাই অতি সত্বর এ সর্বনাশা ব্যাপক ব্যাধি থেকে উত্তরণ ও সমাজ-সংস্কারের জন্য এবং বিশ্বায়নের যুগে দীন-বিমুখ সমাজ, যারা বহুবিধ পাপের বন্যায় হাবুডুবু খাচ্ছে তাদের জন্য এ পুস্তিকার প্রণয়ন।



[1] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৪৪৭৭, ৪৭৬১, ৬০০১, ৬৮১১, ৬৮৬১, ৭৫২০, ৭৫৩২; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৮৬
[2] আবু দাউদ, হাদীস নং ৪৪৫৭; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ২৬৫৬
[3] সহীহুত তারগীবী ওয়াত তারহীবী, হাদীস নং ২৪১০
[4] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬৪৭৪
[5] সহীহুত তারগীবী ওয়াত তারহীবী, হাদীস নং ১৯০১
[6] সহীহুত তারগীবী ওয়াত তারহীবী, হাদীস নং ১৯৩১
[7] তিরমিযী, হাদীস নং ১১৭১
[8] তিরমিযী, হাদীস নং ২৩৭৮
[9] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫০৬৫; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৪০০
[10] আহমদ: ৫/৩২৩; হাকিম: ৪/৩৫৮, ৩৫৯; ইবন হিব্বান, হাদীস নং ২৭১; বায়হাক্বী: ৬/২৮৮
[11] আবু দাউদ, হাদীস নং ২১৪৯; তিরমিযী, হাদীস নং ২৭৭৭; আহমদ: ৫/৩৫১, ৩৫৩, ৩৫৭; হাকিম: ২/১৯৪; বায়হাক্বী: ৭/৯০
[12] আবু দাউদ, হাদীস নং ২১৫২, ২১৫৩, ২১৫৪
[13] মুসনাদ আহমাদ, হাদীস নং ১৩০৪৮
[14] তিরমিযী, হাদীস নং ২০০৪; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৪৩২২; আহমদ: ২/২৯১, ৩৯২, ৪৪২; হাকিম: ৪/৩২৪; ইবন হিব্বান, হাদীস নং ৪৭৬; সহীহ বুখারী/আদাবুল মুফরাদ, হাদীস নং ২৯২; বায়হাক্বী/শুআবুল ঈমান, হাদীস নং ৪৫৭০
[15] তিরমিযী, হাদীস নং ২৬১৬; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৪০৪৪; আহমদ: ৫/২৩১, ২৩৭; আব্দু ইবন হুমাইদ/মুন্তাখাব, ১১২; আব্দুর রায্যাক, হাদীস নং ২০৩০৩; বায়হাক্বী/শুআবুল ঈমান, হাদীস নং ৪৬০৭
[16] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৬২১
[17] আবু দাউদ, হাদীস নং ৪৯০১
[18] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬৪৭৭; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৯৮৮
[19] তিরমিযী, হাদীস ২৩১৯; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৪০৪০; আহমদ ৩/৪৬৯; হাকিম ১/৪৪-৪৬; ইবন হিব্বান, হাদীস ২৮০; মালিক: ২/৯৮৫
[20] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬০১৮, ৬০১৯; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪৭, ৪৮; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৪০৪২
[21] সহীহ বুখারী, হাদীস নং 6846, 7416; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৪৯৯
[22] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬৮৪৬; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৪৯৯
[23] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১০৪৪; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৯০১
[24] আবু দাউদ, হাদীস নং ৪৬৯০
[25] হাকিম: ১/২২; কান্যুল উম্মাল, হাদীস নং ১২৯৯৩
[26] আবু দাউদ, হাদীস নং ৪৬৮৯; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৪০০৭
[27] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৮০; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৬৭১
[28] সহীহুত তারগীবী ওয়াত তারহীবী, হাদীস নং ২৪০২
[29] সহীহুত তারগীবী ওয়াত তারহীবী, হাদীস নং ২৪০০
[30] সহীহুত তারগীবী ওয়াত তারহীবী, হাদীস নং ২৪০৫
[31] আহমদ: ৬/৮; সহীহুত তারগীবী ওয়াত তারহীবী, হাদীস ২৪০৪
[32] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪৬
[33] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৮৯৭
[34] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১০৭
[35] হাকিম: ৪/২৭২
[36] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫২৭১; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৬৯১
[37] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৬৯৫
[38] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬৮২৪
[39] আবু দাউদ, হাদীস নং ৪৩৯৪; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ২৬৪৪; নাসাঈ: ৮/৬৯; আহমদ ৬/৪৬৬; হাকিম ৪/৩৮০; ইবনুল জারূদ, হাদীস নং ৮২৮
[40] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬৭৮৮; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৬৮৮; আবু দাউদ, হাদীস নং ৪৩৭৩; তিরমিযী, হাদীস ১৪৩০; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ২৫৯৫
[41] আবু দাউদ, হাদীস নং ৪৩৭৬
[42] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬৮২৯; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৬৯১; তিরমিযী, হাদীস ১৪৩২; আবু দাউদ, হাদীস নং ৪৪১৮; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ২৬০১
[43] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৬৯৫, ২৬৯৬; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৬৯৭, ১৬৯৮; তিরমিযী, হাদীস ১৪৩৩; আবু দাউদ, হাদীস নং ৪৪৪৫; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ২৫৯৭
[44] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৬৯০; সুনান আবু দাউদ, হাদীস নং ৪৪১৫, ৪৪১৬; সুনান তিরমিযী, হাদীস নং ১৪৩৪; সুনান ইবন মাজাহ, হাদীস নং ২৫৯৮
[45] তিরমিযী, হাদীস নং ১৪৩৮
[46] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৬৯৬; আবু দাউদ, হাদীস নং ৪৪৪০; তিরমিযী, হাদীস ১৪৩৫; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ২৬০৩
[47] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬৮২৯; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৬৯১; আবু দাউদ, হাদীস নং ৪৪১৮
[48] আহমদ: ৫/২২২; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ২৬২২
[49] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৭০১
[50] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২০৫৩, ২২১৮, ৬৮১৮; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৪৫৭, ১৪৫৮; ইবন হিব্বান, হাদীস ৪১০৪; হাকিম, হাদীস নং ৬৬৫১; তিরমিযী, হাদীস ১১৫৭; বায়হাক্বী, হাদীস নং ১৫১০৬; আবু দাউদ, হাদীস নং ২২৭৩; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ২০৩৫, ২০৩৭; আহমদ, হাদীস নং ৪১৬, ৪১৭
[51] ইবন মাজাহ, হাদীস নং ২৭৯৪
[52] তিরমিযী, হাদীস ১৪২৫; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ২৫৯২
[53] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫৫৯; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৬১২; আবু দাউদ, হাদীস নং ৪৪৯৩
[54] ইবন মাজাহ, হাদীস নং ২৬৪৮
[55] আবু দাউদ, হাদীস নং ৪৪৯০
[56] তিরমিযী, হাদীস ১৪৩৯; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ২৬৫২
[57] ইবন মাজাহ, হাদীস নং ২৫৮৬
[58] আহমদ, হাদীস ২৯১৫; ইবন হিব্বান, হাদীস নং ৪৪১৭; বায়হাক্বী, হাদীস নং ৭৩৩৭, ১৬৭৯৪; ত্বাবরানী/কাবীর, হাদীস নং ১১৫৪৬; আবু ইয়া‘লা, হাদীস নং ২৫৩৯; আব্দুবদ ইবন হুমাইদ, হাদীস নং ৫৮৯; হাকিম ৪/৩৫৬
[59] সহীহুত-তারগীবী ওয়াত-তারহীবী, হাদীস নং ২৪২০
[60] তিরমিযী, হাদীস নং ১৪৫৭; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ২৬১১; আহমদ ২/৩৮২; সহীহুত-তারগীবী ওয়াত-তারহীবী, হাদীস নং ২৪১৭
[61] দূরী/যম্মুল্লিওয়াত্ব: ১৪২
[62] ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৪০৯১; হাকিম, হাদীস নং ৮৬২৩; ত্বাবরানী/আওসাত, হাদীস নং ৪৬৭১
[63] সুনান আবু দাউদ, হাদীস নং ৪৪৬২; তিরমিযী, হাদীস নং ১৪৫৬; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ২৬০৯; বায়হাক্বী, হাদীস নং ১৬৭৯৬; হাকিম, হাদীস নং ৮০৪৭, ৮০৪৯
[64] ইবন মাজাহ, হাদীস নং ২৬১০
[65] বায়হাক্বী/শুআবুল ঈমান, হাদীস নং ৫৩৮৯
[66] ইবন আবী শাইবাহ, হাদীসং ২৮৩২৮; বায়হাক্বী: ৮/২৩২
[67] ইবন আবী শাইবাহ, হাদীস নং ১৬৮০৩; তিরমিযী, হাদীস নং ১১৬৫
[68] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬৫০৭, ৬৫০৮; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৬৮৩, ২৬৮৪, ২৬৮৫, ২৬৮৬
[69] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৪৪৭৬; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৯৩
[70] আবু দাউদ, হাদীস নং ৪৬৮১; ত্বাবরানী/কাবীর, হাদীস নং ৭৬১৩, ৭৭৩৭, ৭৭৩৮
[71] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৫৩২
[72] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৪৬৯, ৬৪৭০; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১০৫৩
[73] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৯০৫, ৫০৬৬; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৪০০
________________________________________________________________________________________

লেখক: মোস্তাফিজুর রহমান ইবন আব্দুল আযীয আল-মাদানী
সম্পাদনা: ড. মোহাম্মদ মানজুরে ইলাহী
সূত্র: ইসলামহাউজ

আরও পড়ুনঃ ব্যভিচা
আরও পড়ুনঃ কবীরা গুনাহ

পোস্টটি ভালো লাগলে শেয়ার করতে ভুলবেন না কিন্তু।

৩টি মন্তব্য: