আল্লাহ তা‘আলার দিদার প্রতিটি
মু’মিনের চির আকাঙ্ক্ষা। মু’মিনের জন্য জান্নাতে সর্বশ্রেষ্ঠ উপহার হলো আল্লাহর
দর্শন; কিন্তু দুনিয়াতে কি স্বচক্ষে বা স্বপ্নে আল্লাহকে দেখা সম্ভব? আহলে সুন্নত
ওয়াল জামা‘আতের সর্বসম্মত মত হলো, দুনিয়াতে স্বচক্ষে সরাসরি আল্লাহকে দেখা সম্ভব
নয়। এমনকি নবী রাসূলগণও দেখেন নি। স্বপ্নে দেখার ব্যাপারে তারা মতানৈক্য করেছেন। অধিকাংশ
‘আলেমের মতে স্বপ্নে আল্লাহকে দেখা সম্ভব; তবে সে যে আকৃতিতে আল্লাহকে দেখেছে তা
আল্লাহর হাকীকি বা আসল আকৃতি নয়।
এক ব্যক্তির দাবী যে, সে স্বপ্নে
আল্লাহকে দেখেছে। কেউ কেউ বলে থাকেন, ইমাম আহমদ রহ. একশত বার স্বপ্নে আল্লাহকে
দেখেছেন। একথাটা কি সঠিক?
আব্দুল আযীয ইবন আব্দুল্লাহ ইবন
বা‘য রহ. বলেছেন, “শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ রহ. ও অন্যান্য আলেমগণ বলেছেন,
মানুষ স্বপ্নে আল্লাহকে দেখতে পারে; তবে সে যে আকৃতিতে আল্লাহকে দেখেছে তা আল্লাহর
হাকীকি বা আসল আকৃতি নয়। কেননা আল্লাহ তা‘আলার সদৃশ কিছুই
নেই। আল্লাহ বলেছেন,
﴿لَيۡسَ كَمِثۡلِهِۦ شَيۡءٞۖ
وَهُوَ ٱلسَّمِيعُ ٱلۡبَصِيرُ ١١ ﴾ [الشورى: ١١]
“তাঁর মত কিছু নেই আর
তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা”। [সূরা আশ-শূরা, আয়াত: ১১]
অতএব,
তিনি কোনো কিছুর অনুরূপ নন। কেউ স্বপ্নে আল্লাহর সাথে কথা বলতে পারেন। তবে সে
মানুষ বা অন্য যে কোনো প্রাণীর আকৃতিতেই দেখুক না কেন তা আল্লাহর প্রকৃত আকৃতি নয়।
তার কোনো সদৃশ নেই, কেউ তার সমকক্ষ বা অনুরূপ নয়”। [1]
শাইখুল
ইসলাম তকীউদ্দিন রহ. বলেছেন, ‘বান্দার অবস্থা ভেদে আল্লাহকে দেখাও পার্থক্য হয়ে
থাকে। অধিকতর নেককার মানুষের দেখা সঠিক হওয়ার সম্ভাবনা বেশী; তবে সে যে আকৃতিতে বা
গুণাবলীতেই দেখুক তা আল্লাহর আকৃতি নয়। কেননা মূল হলো, আল্লাহর সদৃশ কিছুই নেই। সে
হয়ত আওয়াজ শুনতে পারে, তাকে বলা হতে পারে যে, তুমি এ কাজটি কর। তবে সৃষ্টিজগতের
কারো সাথেই তার মিল নেই। তাঁর কোনো সদৃশ বা উপমা নেই। তিনি এসব থেকে মুক্ত,
মহাপবিত্র স্বত্তা’।
দুনিয়াতে
স্বপ্নে আল্লাহর দীদার
দুনিয়ায়
বসে স্বপ্নযোগে আল্লাহকে দেখা সম্ভব কি না? -সে ব্যাপারে ‘আলেমদের মত হলো, মানুষ স্বপ্নে আল্লাহকে দেখতে পারে; তবে সে যে আকৃতিতে আল্লাহকে দেখেছে তা
আল্লাহর হাকীকি বা আসল রূপ নয়।
কিছু বিদ‘আতী ও ভ্রষ্ট সূফি ও
রাফেযিরা (শিয়ারা) মনে করেন যে, দুনিয়াতে স্বপ্নে আল্লাহর দীদার সম্ভব নয়। তারা
শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ রহ. এর দেওয়া মতের বিরুদ্ধে কটাক্ষ করে থাকেন এবং
বলেন যে, তার দেওয়া হাদীসের দলিলটি মওদু‘ তথা বানোয়াট; অথচ হাদীসটি সহীহ, যা
নিম্নোক্ত আলোচনা থেকে স্পষ্ট হবে।
নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বপ্নে আল্লাহকে দেখেছেন। নিম্নোক্ত হাদীস থেকে
একথা স্পষ্ট বুঝা যায়। উবাই ইবন কা‘ব এর স্ত্রী উম্মে তুফাইল থেকে বর্ণিত, তিনি
বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি,
«أَنَّهُ رَأَى رَبَّهُ عَزَّ وَجَلَّ فِي
النَّوْمِ فِي صُورَةِ شَابٍّ ذِي وَفْرَةٍ، قَدَمَاهُ فِي الْخُضْرَةِ، عَلَيْهِ
نَعْلَانِ مِنْ ذَهَبٍ، عَلَى وَجْهِهِ فِرَاشٌ مِنْ ذَهَبٍ».
“তিনি স্বপ্নে তার রবকে
পরিপূর্ণ একজন যুবকের আকৃতিতে ঘন কেশ বিশিষ্ট অবস্থায় দেখেছেন। তাঁর পদপযুগল সবুজ
কাপড়ে আবৃত ছিল। তিনি সোনার জুতা পরিহিত ছিলেন। তাঁর
চেহারায় সোনার চাদর ছিল।”[2]
অনুরূপভাবে আরো বর্ণিত
হয়েছে, উবাই ইবন কা‘ব এর স্ত্রী উম্মে তুফাইল থেকে। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি,
«أَنَّهُ رَأَى رَبَّهُ عَزَّ وَجَلَّ فِي
أَحْسَنِ صُورَةٍ، شَابًّا مُوَفَّرًا رِجْلَاهُ فِي الْخُضْرَةِ، عَلَيْهِ
نَعْلَانِ مِنْ ذَهَبٍ، عَلَى وَجْهِهِ فِرَاشٌ مِنْ ذَهَبٍ».
“তিনি
স্বপ্নে তার রবকে পরিপূর্ণ উত্তম একজন যুবকের আকৃতিতে চুল বিশিষ্ট দেখেছেন। তার
পদপযুগল সবুজ কাপড়ে আবৃত ছিল। এতে সোনার জুতা পরিহিত ছিল। তার চেহারায় সোনার চাদর
ছিল”। [3]
মু‘আয ইবন জাবাল
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«وَإِنِّي رَأَيْتُ رَبِّي عَزَّ وَجَلَّ فِي
مَنَامِي، فَرَأَيْتُهُ فِي أَحْسَنِ صُورَةٍ، فَقَالَ لِي: يَا مُحَمَّدُ، قُلْتُ:
لَبَّيْكَ رَبِّي، قَالَ: فِيمَ يَخْتَصِمُ فِيهِ الْمَلَأُ الْأَعْلَى؟ قُلْتُ: لَا
أَدْرِي رَبِّي، ثُمَّ قَالَ لِي: يَا مُحَمَّدُ، قُلْتُ: لَبَّيْكَ رَبِّي، قَالَ:
فِيمَا يَخْتَصِمُ فِيهِ الْمَلَأُ الْأَعْلَى؟ قُلْتُ: لَا أَدْرِي رَبِّ، فَوَضَعَ
كَفَّهُ بَيْنَ كَتِفَيَّ، فَوَجَدْتُ بَرْدَ أَنَامِلِهِ بَيْنَ ثَدْيَيَّ، فَتَجَلَّى
لِي كُلُّ شَيْءٍ، فَعَرَفْتُهُ».
“আমি আমার
রবকে স্বপ্নে উত্তম আকৃতিতে দেখেছি। তিনি আমাকে বললেন, হে মুহাম্মদ! আমি বললাম,
লাব্বাইকা রাব্বী (আমি উপস্থিত হে আমার রব)। তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি
জান উর্ধ্বজগতের লোকজন (সর্বোচ্চ ফিরিশতা পরিষদ) কী
নিয়ে বিতর্ক করে? আমি বললাম, হে আমার রব! আমি জানি না। তিনি আবার বললেন, হে
মুহাম্মদ! আমি বললাম, লাব্বাইকা রাব্বী (আমি উপস্থিত হে আমার রব)। তিনি আমাকে
জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি জান উর্ধ্বজগতের লোকজন (সর্বোচ্চ ফিরিশতা পরিষদ) কী নিয়ে
বিতর্ক করে? আমি বললাম, হে আমার রব! আমি জানি না। অতঃপর তিনি তাঁর হাতের তালু আমার
দুই কাঁধের মাঝে রাখলেন। অর্থাৎ বুকে রাখলেন। এতে তার হাতের আঙ্গুলের ঠাণ্ডা আমার
দু’স্তনের মাঝে অর্থাৎ বুকে অনুভব করতে লাগলাম। এতে আমার কাছে সব কিছু স্পষ্ট হয়ে
গেল। ফলে আমি উর্ধ্বজগতে (সর্বোচ্চ ফিরিশতা পরিষদ) কি হয় জানতে
পারলাম”।[4]
ইবন আব্বাস
রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«أَتَانِي اللَّيْلَةَ رَبِّي تَبَارَكَ
وَتَعَالَى فِي أَحْسَنِ صُورَةٍ، قَالَ أَحْسَبُهُ فِي الْمَنَامِ
فَقَالَ: يَا مُحَمَّدُ هَلْ تَدْرِي فِيمَ يَخْتَصِمُ المَلَأُ
الأَعْلَى؟ قَالَ: قُلْتُ: لَا، قَالَ:
فَوَضَعَ يَدَهُ بَيْنَ كَتِفَيَّ حَتَّى وَجَدْتُ بَرْدَهَا بَيْنَ ثَدْيَيَّ
أَوْ قَالَ: فِي نَحْرِي، فَعَلِمْتُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الأَرْضِ،
قَالَ: يَا مُحَمَّدُ، هَلْ تَدْرِي فِيمَ يَخْتَصِمُ المَلَأُ الأَعْلَى؟ قُلْتُ:
نَعَمْ، فِي الكَفَّارَاتِ، وَالكَفَّارَاتُ المُكْثُ فِي المَسَاجِدِ بَعْدَ
الصَّلَاةِ، وَالْمَشْيُ عَلَى الْأَقْدَامِ إِلَى الْجَمَاعَاتِ، وَإِسْبَاغُ
الوُضُوءِ فِي المَكَارِهِ، وَمَنْ فَعَلَ ذَلِكَ عَاشَ بِخَيْرٍ وَمَاتَ
بِخَيْرٍ، وَكَانَ مِنْ خَطِيئَتِهِ كَيَوْمِ وَلَدَتْهُ أُمُّهُ، وَقَالَ: يَا
مُحَمَّدُ، إِذَا صَلَّيْتَ فَقُلْ: اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ فِعْلَ
الخَيْرَاتِ، وَتَرْكَ المُنْكَرَاتِ، وَحُبَّ المَسَاكِينِ، وَإِذَا أَرَدْتَ
بِعِبَادِكَ فِتْنَةً فَاقْبِضْنِي إِلَيْكَ غَيْرَ مَفْتُونٍ، قَالَ:
وَالدَّرَجَاتُ إِفْشَاءُ السَّلَامِ، وَإِطْعَامُ الطَّعَامِ، وَالصَّلَاةُ
بِاللَّيْلِ وَالنَّاسُ نِيَامٌ».
“একবার রাতে সুমহান ও বরকতময় আমার রব আমার কাছে
সুন্দরতম রূপে এসেছিলেন। (রাবী বলেন: যতদূর মনে পড়ে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম ‘স্বপ্নে’ কথাটি
বলেছিলেন।) তিনি বললেন: হে মুহাম্মাদ! আপনি কি জানেন, কী নিয়ে মালা’-এ-‘আলা (সর্বোচ্চ ফিরিশতা পরিষদ)-এ বিতর্ক হচ্ছে? আমি বললাম: না। নবীজী
বলেন: তখন তিনি আমার কাঁধের
মাঝে তাঁর হাত রাখলেন। এমনকি
এর স্নিগ্ধতা আমি আমার বুকেও অনুভব করলাম। এতে আসমান ও জমিনের যা কিছু আছে সব আমি
জানতে পারলাম। তিনি বললেন: হে
মুহাম্মাদ! আপনি কি জানেন, কী নিয়ে মালা’-এ ‘আলায়
(সর্বোচ্চ ফিরিশতা পরিষদ) আলোচনা
হচ্ছে? আমি বললাম: হ্যাঁ, গুনাহের
কাফফারা বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে।
সালাতের পর মসজিদে অবস্থান করাও কাফফারা, জামা‘আতে
পায়ে হেঁটে যাওয়া, কষ্টের সময় পরিপূর্ণভাবে অযু করাও কাফফারা। যে
ব্যক্তি এই কাজ করবে তার জীবন হবে কল্যাণময়, আর মৃত্যুও
হবে কল্যাণময়। যেই দিন তাঁর মা তাকে ভূমিষ্ঠ করলেন গুনাহর ক্ষেত্রে তাঁর অবস্থা হবে
সেই দিনের মত। আমার
রব বললেন: হে মুহাম্মাদ! সালাত শেষে বলবেন: হে
আল্লাহ! আপনার কাছে আমি প্রত্যাশা করি
ভালো কাজ
করা এবং মন্দ কাজ পরিত্যাগের, দরিদ্রদের
প্রতি ভালোবাসা
পোষণের তওফীক। আপনি যখন বান্দাদের বিষয়ে ফিতনা
মুসীবতের ইরাদা করবেন তখন আমাকে যেন ফেতনা মুক্ত অবস্থায় উঠিয়ে নেন। নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: (সর্বোচ্চ ফিরিশতা
পরিষদে আরো
আলোচনা হচ্ছে) উচ্চ মর্যদা লাভের বিষয়ে। তা হল, সালামের
প্রসার সাধন, আহার প্রদান এবং লোকেরা যখন নিদ্রাভিভূত, তখন রাতের নফল সালাতে (তাহাজ্জুদে) নিমগ্ন হওয়া।”[5]
ইবন আববাস রাদিয়াল্লাহু আনহু
থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«أَتَانِي رَبِّي فِي أَحْسَنِ صُورَةٍ، فَقَالَ:
يَا مُحَمَّدُ، قُلْتُ: لَبَّيْكَ رَبِّي وَسَعْدَيْكَ، قَالَ: فِيمَ يَخْتَصِمُ
الْمَلَأُ الأَعْلَى؟ قُلْتُ: رَبِّ لاَ أَدْرِي، فَوَضَعَ يَدَهُ بَيْنَ
كَتِفَيَّ فَوَجَدْتُ بَرْدَهَا بَيْنَ ثَدْيَيَّ فَعَلِمْتُ مَا بَيْنَ
الْمَشْرِقِ وَالمَغْرِبِ، فَقَالَ: يَا مُحَمَّدُ، فَقُلْتُ: لَبَّيْكَ
وَسَعْدَيْكَ، قَالَ: فِيمَ يَخْتَصِمُ الْمَلَأُ الأَعْلَى؟ قُلْتُ: فِي
الدَّرَجَاتِ وَالكَفَّارَاتِ، وَفِي نَقْلِ الأَقْدَامِ إِلَى الجَمَاعَاتِ،
وَإِسْبَاغِ الوُضُوءِ فِي الْمَكْرُوهَاتِ، وَانْتِظَارِ الصَّلاَةِ بَعْدَ
الصَّلاَةِ، وَمَنْ يُحَافِظْ عَلَيْهِنَّ عَاشَ بِخَيْرٍ وَمَاتَ بِخَيْرٍ،
وَكَانَ مِنْ ذُنُوبِهِ كَيَوْمِ وَلَدَتْهُ أُمُّهُ».
“একবার রাতে সুমহান ও বরকতময় আমার রব আমার কাছে
সুন্দরতম রূপে এসেছিলেন। (রাবী বলেন: যতদূর মনে পড়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম ‘স্বপ্নে’ কথাটি
বলেছিলেন।) তিনি বললেন: হে মুহাম্মাদ! আপনি কি জানেন, কী নিয়ে মালা-এ-আলা (সর্বোচ্চ ফিরিশতা পরিষদ)-এ বিতর্ক হচ্ছে? আমি বললাম: না। নবীজী বলেন: তখন তিনি আমার কাঁধের মাঝে তাঁর
হাত রাখলেন। এমনকি এর স্নিগ্ধতা আমি আমার
বুকেও অনুভব করলাম। এতে আসমান ও জমিনের
যা কিছু আছে সব আমি জানতে পারলাম। তিনি
বললেন: হে মুহাম্মাদ! আপনি কি জানেন, কী নিয়ে মালা-এ ‘আলায় আলোচনা হচ্ছে? আমি বললাম:
হ্যাঁ, গুনাহের কাফফারা
বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে। সালাতের পর মসজিদে অবস্থান করাও কাফফারা, জামা‘আতে পায়ে হেঁটে যাওয়া, কষ্টের সময়
পরিপূর্ণভাবে উযু করাও
কাফফারা। যে ব্যক্তি এই কাজ
করবে তার জীবন হবে কল্যাণময়, আর মৃত্যুও
হবে কল্যাণময়। যেই দিন তার মা তাকে ভূমিষ্ঠ করলেন গুনাহর ক্ষেত্রে তার অবস্থা হবে
সেই দিনের মত।”[6]
মু‘আয ইবন জাবাল
রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«احْتُبِسَ عَنَّا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى
اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ذَاتَ غَدَاةٍ مِنْ صَلَاةِ الصُّبْحِ حَتَّى كِدْنَا
نَتَرَاءَى عَيْنَ الشَّمْسِ، فَخَرَجَ سَرِيعًا فَثُوِّبَ بِالصَّلَاةِ، فَصَلَّى
رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَتَجَوَّزَ فِي صَلَاتِهِ،
فَلَمَّا سَلَّمَ دَعَا بِصَوْتِهِ فَقَالَ لَنَا: «عَلَى مَصَافِّكُمْ كَمَا
أَنْتُمْ» ثُمَّ انْفَتَلَ إِلَيْنَا فَقَالَ: " أَمَا إِنِّي
سَأُحَدِّثُكُمْ مَا حَبَسَنِي عَنْكُمُ الغَدَاةَ: أَنِّي قُمْتُ مِنَ اللَّيْلِ
فَتَوَضَّأْتُ فَصَلَّيْتُ مَا قُدِّرَ لِي فَنَعَسْتُ فِي صَلَاتِي
فَاسْتَثْقَلْتُ، فَإِذَا أَنَا بِرَبِّي تَبَارَكَ وَتَعَالَى فِي أَحْسَنِ
صُورَةٍ، فَقَالَ: يَا مُحَمَّدُ قُلْتُ: لَبَّيْكَ رَبِّ، قَالَ: فِيمَ
يَخْتَصِمُ المَلَأُ الأَعْلَى؟ قُلْتُ: لَا أَدْرِي رَبِّ، قَالَهَا ثَلَاثًا
" قَالَ: " فَرَأَيْتُهُ وَضَعَ كَفَّهُ بَيْنَ كَتِفَيَّ حَتَّى
وَجَدْتُ بَرْدَ أَنَامِلِهِ بَيْنَ ثَدْيَيَّ، فَتَجَلَّى لِي كُلُّ شَيْءٍ
وَعَرَفْتُ، فَقَالَ: يَا مُحَمَّدُ، قُلْتُ: لَبَّيْكَ رَبِّ، قَالَ: فِيمَ يَخْتَصِمُ
المَلَأُ الأَعْلَى؟ قُلْتُ: فِي الكَفَّارَاتِ، قَالَ: مَا هُنَّ؟ قُلْتُ: مَشْيُ
الأَقْدَامِ إِلَى الجَمَاعَاتِ، وَالجُلُوسُ فِي المَسَاجِدِ بَعْدَ
الصَّلَوَاتِ، وَإِسْبَاغُ الوُضُوءِ فِي المَكْرُوهَاتِ، قَالَ: ثُمَّ فِيمَ؟
قُلْتُ: إِطْعَامُ الطَّعَامِ، وَلِينُ الكَلَامِ، وَالصَّلَاةُ بِاللَّيْلِ
وَالنَّاسُ نِيَامٌ. قَالَ: سَلْ. قُلْتُ: اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ فِعْلَ
الخَيْرَاتِ، وَتَرْكَ المُنْكَرَاتِ، وَحُبَّ المَسَاكِينِ، وَأَنْ تَغْفِرَ لِي
وَتَرْحَمَنِي، وَإِذَا أَرَدْتَ فِتْنَةً فِي قَوْمٍ فَتَوَفَّنِي غَيْرَ
مَفْتُونٍ، وَأَسْأَلُكَ حُبَّكَ وَحُبَّ مَنْ يُحِبُّكَ، وَحُبَّ عَمَلٍ
يُقَرِّبُ إِلَى حُبِّكَ "، قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ: «إِنَّهَا حَقٌّ فَادْرُسُوهَا ثُمَّ تَعَلَّمُوهَا».
“একদিন
ভোরে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের সালাতে আসতে দেরী করলেন। এমনকি
আমরা প্রায় সূর্য উঠে যাচ্ছে বলে প্রত্যক্ষ করছিলাম। এমন সময় তিনি দ্রুত বেরিয়ে
আসলেন। সালাতের ইকামত দেওয়া হল। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
সংক্ষিপ্তভাবে সালাত আদায় করলেন। সালাম শেষে তিনি উচ্চস্বরে ডাকলেন। আমাদের বললেন:
যেভাবে তোমরা আছ সেভাবেই তোমাদের কাতারে বসে থাক। এরপর তিনি আমাদের দিকে ফিরলেন।
বললেন: আজ ভোরে তোমাদের কাছে (যথাসময়ে বের হয়ে) আসতে আমাকে কিসে বিরত রেখেছিল সে
বিষয়ে আমি তোমাদের বলছি। আমি রাতেই উঠেছিলাম। অযু করে যা আমার তাকদীরে ছিল সে পরিমাণ
তাহাজ্জুদের সালাত আদায় করলাম। আমি সালাতে তন্দ্রাভিভূত হয়ে পড়লাম। ঘুম ভারী হয়ে
এল। হঠাৎ দেখি, মহান আল্লাহ্ তা‘আলা
সুন্দরতম রূপে আবির্ভূত হয়েছেন। তিনি বললেন: হে মুহাম্মাদ! আমি বললাম: রব আমার, বান্দা হাযির। তিনি
বললেন: মালা-এ-আলায় কি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে? আমি বললাম: হে
আমার রব, আমি তো জানি না। আল্লাহ্ তা‘আলা তিন বার উল্লিখিত উক্তি করলেন। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেন: আমি দেখলাম তিনি আমার কাঁধের দুই হাড্ডির মাঝে তাঁর হাত রাখলেন। আমার বুকে
তাঁর অঙ্গুলীসমূহের শীতল ছোয়া অনুভব করলাম। এতে প্রতিটি বস্তু আমার সামনে স্পষ্ট
হয়ে উঠল। সব আমি চিনে নিলাম। তিনি বললেন: হে মুহাম্মাদ! আমি বললাম রব আমার,
বান্দা হাযির। তিনি
বললেন: মালা-এ-আলায় কী নিয়ে আলোচনা হচ্ছে?
আমি বললাম: গুনাহের কাফফারা নিয়ে। তিনি বললেন: সেগুলো কি?
আমি বললাম: জামা‘আতের উদ্দেশ্যে পায়ে হেঁটে যাওয়া, সালাতের পরও মসজিদে অবস্থান করা, কষ্টের সময়ও
পরিপূর্ণভাবে অযু করা। তিনি বললেন: এরপর কি বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে? আমি বললাম: খাদ্য দান, নরম কথা, মানুষ যখন নিদ্রামগ্ন তখন রাতে সালাত (তাহাজ্জুদ) আদায় করা। তিনি
বললেন: আমার কাছে চাও। আমি বললাম: হে আল্লাহ্! আমি যাঞ্ছা করি কল্যাণকর কাজের।
মন্দ কাজ পরিত্যাগ করার। মিসকীনদের প্রতি ভালবাসা, মাফ করে দিন আমাকে, রহম করুন আমার ওপর। কোনো সম্প্রদায়ের ওপর যখন ফিতনা-মুসীবতের ইচ্ছা
করেন তখন আমাকে আপনি ফিতনামুক্ত মৃত্যু দিন। আমি চাই আপনার প্রতি ভালোবাসা। আপনাকে
যারা ভালোবাসেন তাদের ভালোবাসা এবং যে সব আমল আমাকে আপনার নিকট করবে সেসব আমলের ভালোবাসা।
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেছেন: এ বিষয়টি সত্য তোমরা এটি
পড় এবং তা শিখে নাও।”[7]
ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু
‘আনহুমা বলেছেন,
«إِنَّ مُحَمَّدًا صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ رَأَى رَبَّهُ عَزَّ وَجَلَّ»
আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলতেন,
«إِنَّ مُحَمَّدًا صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ، رَأَى رَبَّهُ مَرَّتَيْنِ: مُرَّةً بِبَصَرِهِ، وَمَرَّةً
بِفُؤَادِهِ».
“মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহকে দু’বার দেখেছেন। একবার স্বচক্ষে আরেকবার অন্তর দিয়ে।”[9]
উল্লিখিত হাদীসসমূহ থেকে এ কথা প্রতীয়মান হয় যে, রাসূলুল্লাহ্
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বপ্নে আল্লাহকে দুনিয়াতে দেখেছেন। হাফেয ইবন রজব
হাম্বলী রহ. এ বিষয়ে একটি কিতাবও রচনা করেছেন। কিতাবটির নাম:
(اختيار الأولى في شرح حديث اختصام الملأ
الأعلى).
এসব আলোচনা থেকে বুঝা
যায় যে, নবীগণ আল্লাহকে স্বপ্নে দুনিয়াতে দেখেছেন।
দুনিয়াতে
স্বচক্ষে জাগ্রতাবস্থায় আল্লাহকে দেখা
অধিকাংশ
‘আলেমের মতে, দুনিয়াতে স্বচক্ষে জাগ্রতাবস্থায় আল্লাহকে দেখা অসম্ভব। এমনকি নবী
রাসূলগণও দেখেন নি। মি‘রাজের রজনীতে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
সরাসরি আল্লাহকে দেখেন নি। তিনি আল্লাহর নূর দেখেছেন। তাছাড়া দাজ্জাল নিজেকে
আল্লাহ দাবী করে তার উপর ঈমান আনতে বলবে। কিন্তু একথা সকল মু’মিনই জানেন যে,
আল্লাহকে দুনিয়াতে সরাসরি দেখা যায় না। তাই দাজ্জালের কপালে কাফির শব্দ লেখা থাকবে।
এ ব্যাপারে কুরআন ও হাদীসের দলিল নিম্নরূপ:
আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿لَّا تُدۡرِكُهُ ٱلۡأَبۡصَٰرُ وَهُوَ يُدۡرِكُ ٱلۡأَبۡصَٰرَۖ وَهُوَ ٱللَّطِيفُ
ٱلۡخَبِيرُ ١٠٣﴾ [الانعام: ١٠٣]
“তিনি (আল্লাহ) দৃষ্টির অধিগম্য নন, তবে দৃষ্টিশক্তি তাঁর অধিগত এবং তিনিই সুক্ষ্মদশী ও সম্যক পরিজ্ঞাত।” [সূরা আল-আন‘আম, আয়াত: ১০৩]
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেছেন,
﴿وَمَا كَانَ لِبَشَرٍ أَن يُكَلِّمَهُ ٱللَّهُ إِلَّا وَحۡيًا أَوۡ مِن
وَرَآيِٕ حِجَابٍ أَوۡ يُرۡسِلَ رَسُولٗا فَيُوحِيَ بِإِذۡنِهِۦ مَا يَشَآءُۚ إِنَّهُۥ
عَلِيٌّ حَكِيمٞ ٥١ ﴾ [الشورى: ٥١]
“মানুষের এমন মর্যাদা নাই যে, আল্লাহ তার সাথে কথা বলবেন ওহীর মাধ্যম ব্যতিরেকে অথবা পর্দার অন্তরাল
ব্যতিরেকে অথবা এমন দূত প্রেরণ ব্যতিরেকে যে তাঁর অনুমতিক্রমে তিনি যা চান তা
ব্যক্ত করেন, তিনি সর্বোচ্চ ও প্রজ্ঞাময়।” [সূরা আশ-শূরা, আয়াত: ৫১]
যারা
আল্লাহকে দুনিয়াতে দেখতে চেয়েছে আল্লাহ তাদেরকে ভর্ৎসনা দিয়ে বলেছেন,
﴿هَلۡ يَنظُرُونَ إِلَّآ أَن
يَأۡتِيَهُمُ ٱللَّهُ فِي ظُلَلٖ مِّنَ ٱلۡغَمَامِ وَٱلۡمَلَٰٓئِكَةُ وَقُضِيَ ٱلۡأَمۡرُۚ
وَإِلَى ٱللَّهِ تُرۡجَعُ ٱلۡأُمُورُ ٢١٠ ﴾
[البقرة: ٢١٠]
“তারা কি এরই অপেক্ষা
করছে যে, মেঘের ছায়ায় আল্লাহ ও ফিরিশতাগণ
তাদের নিকট আগমন করবেন এবং সব বিষয়ের ফয়সালা করে দেওয়া হবে। আর আল্লাহর নিকটই সব
বিষয় প্রত্যাবর্তিত হবে।” [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ২১০]
﴿هَلۡ يَنظُرُونَ إِلَّآ أَن
تَأۡتِيَهُمُ ٱلۡمَلَٰٓئِكَةُ أَوۡ يَأۡتِيَ رَبُّكَ أَوۡ يَأۡتِيَ بَعۡضُ ءَايَٰتِ
رَبِّكَۗ يَوۡمَ يَأۡتِي بَعۡضُ ءَايَٰتِ رَبِّكَ لَا يَنفَعُ نَفۡسًا إِيمَٰنُهَا
لَمۡ تَكُنۡ ءَامَنَتۡ مِن قَبۡلُ أَوۡ كَسَبَتۡ فِيٓ إِيمَٰنِهَا خَيۡرٗاۗ قُلِ ٱنتَظِرُوٓاْ
إِنَّا مُنتَظِرُونَ ١٥٨ ﴾ [الانعام: ١٥٨]
“তারা কি এরই অপেক্ষা
করছে যে, তাদের নিকট ফিরিশতাগণ হাযির
হবে কিংবা তোমার রব উপস্থিত হবে অথবা প্রকাশ পাবে তোমার রবের নিদর্শনসমূহের কিছু?
যেদিন তোমার রবের নিদর্শনসমূহের কিছু প্রকাশ পাবে, সেদিন কোনো ব্যক্তিরই তার ঈমান উপকারে আসবে না। যে পূর্বে ঈমান আনে নি কিংবা সে তার ঈমানে কোনো
কল্যাণ অর্জন করে নি। বল, তোমরা
অপেক্ষা কর, আমরাও অপেক্ষা করছি।”
[সূরা: আল-আন‘আম, আয়াত: ১৫৮]
আল্লাহ তা‘আলা মূসা আলাইহিস সালামকে বলেছেন,
﴿وَلَمَّا جَآءَ مُوسَىٰ لِمِيقَٰتِنَا
وَكَلَّمَهُۥ رَبُّهُۥ قَالَ رَبِّ أَرِنِيٓ أَنظُرۡ إِلَيۡكَۚ قَالَ لَن تَرَىٰنِي
وَلَٰكِنِ ٱنظُرۡ إِلَى ٱلۡجَبَلِ فَإِنِ ٱسۡتَقَرَّ مَكَانَهُۥ فَسَوۡفَ تَرَىٰنِيۚ
فَلَمَّا تَجَلَّىٰ رَبُّهُۥ لِلۡجَبَلِ جَعَلَهُۥ دَكّٗا وَخَرَّ مُوسَىٰ صَعِقٗاۚ
فَلَمَّآ أَفَاقَ قَالَ سُبۡحَٰنَكَ تُبۡتُ إِلَيۡكَ وَأَنَا۠ أَوَّلُ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ
١٤٣﴾ [الاعراف: ١٤٢]
“আর যখন আমার নির্ধারিত
সময়ে মূসা এসে গেল এবং তাঁর রব তার সাথে কথা বললেন। সে বলল, ‘হে আমার রব, আপনি আমাকে দেখা দিন, আমি আপনাকে দেখব।’
তিনি বললেন, তুমি আমাকে দেখবে না; বরং
তুমি পাহাড়ের দিকে তাকাও। অতঃপর
তা যদি নিজ স্থানে স্থির থাকে তবে তুমি অচিরেই আমাকে দেখবে। অতঃপর যখন তাঁর রব
পাহাড়ের উপর নূর প্রকাশ করলেন তখন তা তাকে চূর্ণ করে দিল এবং মূসা বেহুঁশ হয়ে পড়ে
গেল। অতঃপর যখন তার হুঁশ আসল তখন সে বলল,
আপনি পবিত্র মহান, আমি আপনার নিকট তাওবা
করলাম এবং আমি মুমিনদের মধ্যে প্রথম।” [সূরা: আল-‘আরাফ, আয়াত: ১৪২]
আহলে কিতাবরা আসমান থেকে কিতাব নাযিলের কথা বললে আল্লাহ তাদেরকে
উদ্দেশ্য করে বলেন, হে নবী! তারা মূসা আলাইহিস সালামের কাছে এর চেয়েও মারাত্মক
দাবী করেছিল। আল্লাহ বলেন,
﴿يَسَۡٔلُكَ أَهۡلُ ٱلۡكِتَٰبِ
أَن تُنَزِّلَ عَلَيۡهِمۡ كِتَٰبٗا مِّنَ ٱلسَّمَآءِۚ فَقَدۡ سَأَلُواْ مُوسَىٰٓ أَكۡبَرَ
مِن ذَٰلِكَ فَقَالُوٓاْ أَرِنَا ٱللَّهَ جَهۡرَةٗ فَأَخَذَتۡهُمُ ٱلصَّٰعِقَةُ بِظُلۡمِهِمۡۚ
ثُمَّ ٱتَّخَذُواْ ٱلۡعِجۡلَ مِنۢ بَعۡدِ مَا جَآءَتۡهُمُ ٱلۡبَيِّنَٰتُ فَعَفَوۡنَا
عَن ذَٰلِكَۚ وَءَاتَيۡنَا مُوسَىٰ سُلۡطَٰنٗا مُّبِينٗا ١٥٣﴾ [النساء : ١٥٣]
“কিতাবীগণ তোমার নিকট
চায় যে, আসমান থেকে তুমি তাদের উপর
একটি কিতাব নাযিল কর। অথচ তারা মূসার কাছে এর চেয়ে বড় কিছু চেয়েছিল, যখন তারা বলেছিল, ‘আমাদেরকে সামনাসামনি
আল্লাহকে দেখাও’। ফলে
তাদেরকে তাদের অন্যায়ের কারণে বজ্র পাকড়াও করেছিল। অতঃপর তারা বাছুরকে
(উপাস্যরূপে) গ্রহণ করল, তাদের
নিকট স্পষ্ট প্রমাণসমূহ আসার পরও। তারপর আমি তা ক্ষমা করে দিয়েছিলাম এবং মূসাকে
দিয়েছিলাম সুস্পষ্ট প্রমাণ।” [সূরা: আন-নিসা, আয়াত: ১৫৩]
সালিম রহ. বলেন, আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা বলেছেন,
«فَقَامَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ
عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي النَّاسِ فَأَثْنَى عَلَى اللهِ بِمَا هُوَ أَهْلُهُ،
ثُمَّ ذَكَرَ الدَّجَّالَ، فَقَالَ: " إِنِّي لَأُنْذِرُكُمُوهُ، مَا مِنْ
نَبِيٍّ إِلَّا وَقَدْ أَنْذَرَهُ قَوْمَهُ، لَقَدْ أَنْذَرَهُ نُوحٌ قَوْمَهُ،
وَلَكِنْ أَقُولُ لَكُمْ فِيهِ قَوْلًا لَمْ يَقُلْهُ نَبِيٌّ لِقَوْمِهِ:
تَعَلَّمُوا أَنَّهُ أَعْوَرُ، وَأَنَّ اللهَ تَبَارَكَ وَتَعَالَى لَيْسَ
بِأَعْوَرَ " قَالَ ابْنُ شِهَابٍ: وَأَخْبَرَنِي عُمَرُ بْنُ ثَابِتٍ
الْأَنْصَارِيُّ، أَنَّهُ أَخْبَرَهُ بَعْضُ أَصْحَابِ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ
عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ
يَوْمَ حَذَّرَ النَّاسَ الدَّجَّالَ: «إِنَّهُ مَكْتُوبٌ بَيْنَ عَيْنَيْهِ
كَافِرٌ، يَقْرَؤُهُ مَنْ كَرِهَ عَمَلَهُ، أَوْ يَقْرَؤُهُ كُلُّ مُؤْمِنٍ»،
وَقَالَ: «تَعَلَّمُوا أَنَّهُ لَنْ يَرَى أَحَدٌ مِنْكُمْ رَبَّهُ عَزَّ وَجَلَّ
حَتَّى يَمُوتَ».
“এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুসলিমদের উদ্দেশ্যে একটি বক্তৃতা দিলেন। তাতে আল্লাহ তা‘আলার যথাযোগ্য প্রশংসা ও গুণাগুণ
বর্ণনার পর দাজ্জালের কথা উল্লেখ করলেন এবং
বললেন, আমি তোমাদেরকে দাজ্জালের ফিৎনা সম্পর্কে সতর্ক করছি যেমন প্রত্যেক নবী তাঁর সম্প্রদায়কে
এ সম্পর্কে সতর্ক
করেছেন। এমনকি
নূহ আলাইহিস সালাম ও তাঁর কাওমকে এ সম্পর্কে সতর্ক করেছেন। তবে এ সম্পর্কে আমি তোমাদেরকে একটি বিষয় পরিস্কারভাবে বলে দিচ্ছি
যা কোনো নবী তার সম্প্রদায়কে বলেন নি। তা হল
এই যে, তোমরা জেনে রাখ, দাজ্জাল কানা হবে। আল্লাহ তা‘আলা কানা নন। ইবন শিহাব রহ. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জনৈক সাহাবী যে
দিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাজ্জাল সম্পর্কে সতর্ক করেছেন সে
দিন তিনি বলেছেন, চক্ষুদ্বয়ের মাঝখানে কাফির লেখা থাকবে। যে ব্যক্তি তার কার্যক্রম
অপছন্দ করবে সে তা পাঠ করতে পারবে অথবা প্রত্যেক মু’মিন
ব্যক্তিই তা পাঠ করতে সক্ষম হবে। তিনি এ কথাও বলেছেন যে, তোমরা জেনে রাখ যে, তোমাদের কোনো ব্যক্তি মৃত্যুর পূর্বে তার রবকে দেখতে সক্ষম হবে না।”[10]
যারা
দাবী করেন যে, মি‘রাজের রজনীতে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
আল্লাহকে সরাসরি দেখেছেন, তাদের এ দাবীর খণ্ডন করে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা
বলেছেন,
عَنْ مَسْرُوقٍ، قَالَ: كُنْتُ مُتَّكِئًا عِنْدَ عَائِشَةَ،
فَقَالَتْ: يَا أَبَا عَائِشَةَ، ثَلَاثٌ مَنْ تَكَلَّمَ بِوَاحِدَةٍ مِنْهُنَّ فَقَدْ
أَعْظَمَ عَلَى اللهِ الْفِرْيَةَ، قُلْتُ: مَا هُنَّ؟ قَالَتْ: مَنْ زَعَمَ أَنَّ
مُحَمَّدًا صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَأَى رَبَّهُ فَقَدْ أَعْظَمَ عَلَى اللهِ
الْفِرْيَةَ، قَالَ: وَكُنْتُ مُتَّكِئًا فَجَلَسْتُ، فَقُلْتُ: يَا أُمَّ الْمُؤْمِنِينَ،
أَنْظِرِينِي، وَلَا تُعْجِلِينِي، أَلَمْ يَقُلِ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ: ﴿ وَلَقَدۡ رَءَاهُ بِٱلۡأُفُقِ ٱلۡمُبِينِ ٢٣ ﴾ [التكوير: ٢٣] ،
﴿ وَلَقَدۡ رَءَاهُ نَزۡلَةً أُخۡرَىٰ ١٣ ﴾
[النجم : ١٣] ؟ فَقَالَتْ: أَنَا أَوَّلُ هَذِهِ الْأُمَّةِ سَأَلَ عَنْ ذَلِكَ رَسُولَ
اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ: «إِنَّمَا هُوَ جِبْرِيلُ، لَمْ أَرَهُ
عَلَى صُورَتِهِ الَّتِي خُلِقَ عَلَيْهَا غَيْرَ هَاتَيْنِ الْمَرَّتَيْنِ، رَأَيْتُهُ
مُنْهَبِطًا مِنَ السَّمَاءِ سَادًّا عِظَمُ خَلْقِهِ مَا بَيْنَ السَّمَاءِ إِلَى
الْأَرْضِ»، فَقَالَتْ: أَوَ لَمْ تَسْمَعْ أَنَّ اللهَ يَقُولُ: ﴿ لَّا تُدۡرِكُهُ ٱلۡأَبۡصَٰرُ وَهُوَ يُدۡرِكُ ٱلۡأَبۡصَٰرَۖ وَهُوَ
ٱللَّطِيفُ ٱلۡخَبِيرُ ١٠٣ ﴾ [الانعام: ١٠٣] ، أَوَ لَمْ تَسْمَعْ أَنَّ اللهَ يَقُولُ: ﴿ ۞وَمَا كَانَ لِبَشَرٍ أَن
يُكَلِّمَهُ ٱللَّهُ إِلَّا وَحۡيًا أَوۡ مِن وَرَآيِٕ حِجَابٍ أَوۡ يُرۡسِلَ رَسُولٗا
فَيُوحِيَ بِإِذۡنِهِۦ مَا يَشَآءُۚ إِنَّهُۥ عَلِيٌّ حَكِيمٞ ٥١ ﴾ [الشورى: ٥١] ،
قَالَتْ: وَمَنْ زَعَمَ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَتَمَ
شَيْئًا مِنْ كِتَابِ اللهِ، فَقَدْ أَعْظَمَ عَلَى اللهِ الْفِرْيَةَ، وَاللهُ يَقُولُ: ﴿ ۞يَٰٓأَيُّهَا ٱلرَّسُولُ بَلِّغۡ
مَآ أُنزِلَ إِلَيۡكَ مِن رَّبِّكَۖ وَإِن لَّمۡ تَفۡعَلۡ فَمَا بَلَّغۡتَ رِسَالَتَهُ٦٧
﴾ [المائدة: ٦٧] ،
قَالَتْ: وَمَنْ زَعَمَ أَنَّهُ يُخْبِرُ بِمَا يَكُونُ فِي غَدٍ، فَقَدْ أَعْظَمَ
عَلَى اللهِ الْفِرْيَةَ، وَاللهُ يَقُولُ: {قُلْ لَا يَعْلَمُ مَنْ فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ الْغَيْبَ إِلَّا
اللهُ} [النمل: 65]
“মাসরুক রহ. থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, আমি আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহার কাছে হেলান
দিয়ে বসেছিলাম।
তখন তিনি বললেন, “হে আবু আয়েশা! তিনটি কথা এমন, যে এর কোন
একটি বলল, সে আল্লাহ সম্পর্কে ভীষণ অপবাদ দিল। আমি জিজ্ঞেস করলাম, সেগুলো কী? তিনি বললেন, যে এ কথা বলে যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার
রবকে দেখেছেন, সে আল্লাহর উপর ভীষণ অপবাদ দেয়। আমি তো হেলান অবস্থায় ছিলাম, এবার সোজা হয়ে বসলাম। বললাম, হে উম্মুল মু’মিনীন! থামুন। আমাকে সময় দিন, ব্যস্ত হবেন না। আল্লাহ তা‘আলা কুরআনে কি বলেন নি: “তিনি (রাসূল) তো তাঁকে (আল্লাহকে) স্পষ্ট দিগন্তে দেখেছেন।” [সূরা
আত-তাকওয়ীর, আয়াত: ২৩] অন্যত্রে “নিশ্চয়ই তিনি তাকে আরেকবার দেখেছিলেন” [সূরা আন-নাজম, আয়াত: ১৩] আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বললেন, আমিই এ উম্মতের প্রথম ব্যক্তি, যে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস
করেছিলাম। তিনি বলেছিলেন, তিনি তো ছিলেন জিবরীল আলাইহিস সালাম। কেবল এ দু’বার-ই আমি তাকে
তার আসল আকৃতিতে দেখেছি। আমি
তাকে আসমান থেকে অবতরণ করতে দেখেছি। তাঁর বিরাট দেহ ঢেকে ফেলেছিল আসমান ও জমিনের মধ্যবতী সবটুকু স্থান। আয়েশা
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা আরও বলেন, তুমি কি শোন
নি? আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, “তিনি
(আল্লাহ) দৃষ্টির অধিগম্য নন, তবে দৃষ্টিশক্তি তাঁর অধিগত এবং তিনিই সূক্ষ্মদর্শী ও
সম্যক পরিজ্ঞাত।” [সূরা আল-‘আনআম, আয়াত: ১০৩] এরূপ তুমি কি শোন
নি? আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, “মানুষের এমন মর্যাদা নেই যে, আল্লাহ তার সাথে কথা বলবেন ওহীর মাধ্যম ব্যতিরেকে অথবা পর্দার অন্তরাল
ব্যতিরেকে অথবা এমন দূত প্রেরণ ব্যতিরেকে যে তাঁর অনুমতিক্রমে তিনি যা চান তা ব্যক্ত
করেন, তিনি সর্বোচ্চ ও প্রজ্ঞাময়।” [সূরা আশ-শূরা, আয়াত: ৫১] আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেন, আর ঐ ব্যক্তিও আল্লাহর উপর ভীষণ অপবাদ দেয়, যে এমন কথা বলে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু্ আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর কিতাবের
কোনো কথা গোপন রেখেছেন। কেননা আল্লাহ তা‘আলা বলেন, “হে রাসূল! আপনার রবের কাছ থেকে যা অবতীর্ণ হয়েছে তা প্রচার করুন, যদি তা না করেন তবে আপনি তাঁর বার্তা প্রচারই করলেন না।” [সূরা আল-মায়েদা, আয়াত: ৬৭] তিনি (আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা) আরো বলেন, যে ব্যক্তি এ কথা বলে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু্ আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর ওহী
ব্যতীত কাল কী হবে তা অবহিত করতে পারেন, সেও আল্লাহর উপর ভীষণ অপবাদ দেয়। কেননা আল্লাহ তা‘আলা বলেন, “বল, আসমান ও জমিনে আল্লাহ ব্যতীত গায়েব সম্পর্কে কেউ জানে না।” [সূরা আন-নামল, আয়াত: ৬৫][11]
মাসরুক রহ. বলেন,
«قُلْتُ لِعَائِشَةَ: فَأَيْنَ قَوْلُهُ؟ ﴿ثُمَّ دَنَا فَتَدَلَّىٰ ٨ فَكَانَ قَابَ قَوۡسَيۡنِ أَوۡ أَد ۡنَىٰ ٩ فَأَوۡحَىٰٓ إِلَىٰ
عَبۡدِهِۦ مَآ أَوۡحَىٰ ١٠﴾ [النجم : ٨، ١٠] قَالَتْ: " إِنَّمَا ذَاكَ جِبْرِيلُ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ كَانَ يَأْتِيهِ فِي صُورَةِ الرِّجَالِ، وَإِنَّهُ أَتَاهُ فِي هَذِهِ الْمَرَّةِ
فِي صُورَتِهِ الَّتِي هِيَ صُورَتُهُ فَسَدَّ أُفُقَ السَّمَاءِ».
“আমি আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহাকে বললাম, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মি‘রাজ রজনীতে
যদি আল্লাহর দর্শন না
পেয়ে থাকেন, তাহলে আল্লাহর
এ বলার অর্থ কি দাঁড়াবে? “এরপর তিনি (রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর নিকটবর্তী হলেন এবং আরো নিকটবর্তী; ফলে তাদের মধ্যে ধনুকের ব্যবধান রইল বা তারও কম। তখন আল্লাহ
তার বান্দার
প্রতি যা ওহী করবার তা ওহী করলেন।” [সূরা আন-নাজম, আয়াত: ৮-১০] আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বললেন, তিনি তো ছিলেন জিবরীল আলাইহিস সালাম। তিনি রাসূলুল্লাহ্
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে (সাধারণ) পুরুষের আকৃতিতে আসতেন। কিন্তু তিনি এবার (আয়াতে উল্লিখিত সময়)
নিজস্ব আকৃতিতেই এসেছিলেন।
তাঁর দেহ আকাশের সীমা ঢেকে ফেলেছিল।”[12]
তাছাড়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মি‘রাজের রাতে আল্লাহকে সরাসরি দেখার কথা
জিজ্ঞেস করলে তিনি উত্তরে বলেছেন, তিনি আল্লাহর নূর অবলোকন করেছেন। যেমন নিম্নোক্ত
হাদীস তার প্রমাণ:
আবু যার
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«سَأَلْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ
عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، هَلْ رَأَيْتَ رَبَّكَ؟ قَالَ: «نُورٌ أَنَّى أَرَاهُ».
“আমি রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু্ আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করেছি, আপনি কি আপনার রবকে দেখেছেন? তিনি (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, “তিনি (আল্লাহ) নূর, আমি কি করে তা দৃষ্টির অধিগম্য করব? (কীভাবে তাকে দেখব?)।”[13]
আব্দুল্লাহ ইবন শাকীক রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«قُلْتَ لِأَبِي ذرٍّ، لَوْ رَأَيْتُ رَسُولَ
اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَسَأَلْتُهُ فَقَالَ: عَنْ أيِّ شيْءٍ كُنْتَ
تَسْأَلُهُ؟ قَالَ: كُنْتُ أَسْأَلُهُ هَلْ رَأَيْتَ رَبَّكَ؟ قَالَ أَبُو ذَرٍّ:
قَدْ سَأَلْتُ، فَقَالَ: «رَأَيْتُ نُورًا».
“আমি আবু যার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে বললাম, যদি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাক্ষাৎ
পেতাম, তবে অবশ্যই তাঁকে একটি কথা
জিজ্ঞেস করতাম। আবু যার
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, কী জিজ্ঞেস করতেন। তিনি বলেন, আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করতাম যে, আপনি কি আপনার রবকে দেখেছেন? আবু যার
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেছেন, “এ কথা তো
আমি তাঁকে
জিজ্ঞেস করেছিলাম, তিনি বলেছেন, আমি নূর
দেখেছি।”[14]
ইমাম
বুখারী রহ.ও সহীহ বুখারীতে এ ব্যাপারে স্পষ্টভাবে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহার হাদীস
বর্ণনা করে প্রমাণ করেছেন যে, দুনিয়াতে সরাসরি আল্লাহর দীদার অসম্ভব।
আয়িশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«مَنْ زَعَمَ أَنَّ مُحَمَّدًا رَأَى رَبَّهُ
فَقَدْ أَعْظَمَ، وَلَكِنْ قَدْ رَأَى جِبْرِيلَ فِي صُورَتِهِ وَخَلْقُهُ سَادٌّ
مَا بَيْنَ الأُفُقِ».
“যে ব্যক্তি মনে করবে যে, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর রবকে দেখেছেন, সে ব্যক্তি বড় ভুল করবে; বরং তিনি জিবরীল আলাইহিস সালামকে তাঁর আসল আকৃতি এবং অবয়বে দেখেছেন।
তিনি আকাশের দিগন্ত জুড়ে
অবস্থান করছিলেন।”[15]
মাসরূক রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«قُلْتُ لِعَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا:
يَا أُمَّتَاهْ هَلْ رَأَى مُحَمَّدٌ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَبَّهُ؟
فَقَالَتْ: لَقَدْ قَفَّ شَعَرِي مِمَّا قُلْتَ، أَيْنَ أَنْتَ مِنْ ثَلاَثٍ، مَنْ
حَدَّثَكَهُنَّ فَقَدْ كَذَبَ: مَنْ حَدَّثَكَ أَنَّ مُحَمَّدًا صَلَّى اللهُ
عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَأَى رَبَّهُ فَقَدْ كَذَبَ، ثُمَّ قَرَأَتْ: ﴿لَّا تُدۡرِكُهُ ٱلۡأَبۡصَٰرُ وَهُوَ يُدۡرِكُ ٱلۡأَبۡصَٰرَۖ وَهُوَ ٱللَّطِيفُ
ٱلۡخَبِيرُ ١٠٣﴾ [الانعام: ١٠٣] ﴿وَمَا كَانَ لِبَشَرٍ أَن يُكَلِّمَهُ ٱللَّهُ إِلَّا وَحۡيًا أَوۡ مِن
وَرَآيِٕ حِجَابٍ﴾ [الشورى:
٥١]. وَمَنْ حَدَّثَكَ أَنَّهُ يَعْلَمُ مَا فِي غَدٍ
فَقَدْ كَذَبَ، ثُمَّ قَرَأَتْ: ﴿ وَمَا تَدۡرِي نَفۡسٞ مَّاذَا تَكۡسِبُ غَدٗاۖ ٣٤﴾ [لقمان: ٣٤] .
وَمَنْ حَدَّثَكَ أَنَّهُ كَتَمَ فَقَدْ كَذَبَ، ثُمَّ قَرَأَتْ: ﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلرَّسُولُ بَلِّغۡ
مَآ أُنزِلَ إِلَيۡكَ مِن رَّبِّكَۖ ٦٧﴾ [المائدة: ٦٧] وَلَكِنَّهُ
«رَأَى جِبْرِيلَ عَلَيْهِ السَّلاَمُ فِي صُورَتِهِ مَرَّتَيْنِ».
“আমি আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহাকে জিজ্ঞেস
করলাম, “আম্মা! মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি তাঁর রবকে
দেখেছিলেন? তিনি বললেন, তোমার কথায় আমার গায়ের পশম কাঁটা দিয়ে খাড়া হয়ে গেছে। তিনটি কথা সম্পর্কে তুমি কি অবগত নও? যে তোমাকে এ তিনটি কথা বলবে সে মিথ্যা বলবে। যদি কেউ তোমাকে
বলে যে, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর রবকে দেখেছেন, সে মিথ্যাবাদী। তারপর তিনি পাঠ করলেন, “তিনি
দৃষ্টির অধিগম্য নহেন; কিন্তু
দৃষ্টিশক্তি তাঁর অধিগত এবং তিনিই সূক্ষ্মদর্শী, সম্যক পরিজ্ঞাত।” [সূরা আল-আন‘আম, আয়াত: ১০৩] “মানুষের এমন মর্যাদা নেই যে, আল্লাহ তার সাথে কথা
বলবেন, ওহীর মাধ্যম ছাড়া অথবা পর্দার অন্তরাল ব্যতিরেকে।” [সূরা আশ-শূরা, আয়াত: ৫১] আর যে ব্যক্তি তোমাকে বলবে যে, আগামীকাল কী হবে সে তা জানে, তাহলে সে মিথ্যাবাদী। তারপর তিনি তিলওয়াত করলেন, “কেউ জানে না আগামীকাল সে কী অর্জন করবে।” [সূরা
লোকমান, আয়াত: ৩৪] আর তোমাকে যে
বলবে যে, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোনো কথা গোপন রেখেছেন, তাহলেও সে মিথ্যাবাদী। এরপর তিনি পাঠ করলেন, “হে রাসূল! তোমার রবের কাছ থেকে তোমার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে, তা প্রচার কর।” [সূরা
আল-মায়েদা, আয়াত: ৬৭] হ্যাঁ, তবে রাসূল জিবরীল আলাইহিস সালামকে
তাঁর নিজস্ব আকৃতিতে
দু’বার দেখেছেন।”[16]
তাছাড়া
আখেরাতে মু’মিনের সবচেয়ে বড় পুরস্কার হলো আল্লাহর দর্শন। আর দুনিয়া হলো পরীক্ষার
স্থান। এখানে মু’মিন ও কাফির সবার বসবাস। অতএব এটা আল্লাহর দীদারের স্থান নয়।
আল্লাহ তাঁর মু’মিন বান্দার জন্য এটা বিশেষ নি‘আমত হিসেবে গচ্ছিত করে রেখেছেন। তবে
মানুষ আল্লাহকে দেখার ব্যাপারে যেসব দাবী করে থাকে তা শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ
রহ. এর মতে মানুষের ‘আমল অনুসারে হয়ে থাকে। মানুষ অনেক সময় ভাবে যে, সে আল্লাহকে
দেখেছে, প্রকৃতপক্ষে সে দেখে নি। অনেক সময় শয়তান তাকে ওয়াসওয়াসা দিয়ে কাল্পনিকভাবে
এসব মনে করিয়ে দেয়। যেমন, একজন দাবী করল যে, “সে আব্দুল কাদের জিলানী রহ. কে পানির
উপর একটি আসনে দেখেছে। আর সে তাকে বলল, আমি তোমার রব। তখন সে ব্যক্তি বলল, দূর হও
হে আল্লাহর দুশমন, তুমি আমার রব হতে পার না।” কেননা সে এমন সব আদেশ দিচ্ছে যা
আল্লাহর শানে অনুপযোগী। অতএব, দুনিয়াতে স্বপ্নে আল্লাহর দীদার সম্ভব। তবে স্বপ্নে
যদি শরি‘আত পরিপন্থী কোনো আদেশ নিষেধ দিয়ে
থাকে যেমন বলল, তোমার আর সালাত আদায় করতে হবে না, যাকাত দিতে হবে না, হজ করতে হবে
না ইত্যাদি, তাহলে বুঝতে হবে এটা শয়তান। এ ধরণের আদেশ মহান আল্লাহ দিতে পারেন না।
তবে আল্লাহ কারো সদৃশ নন।
• দুনিয়াতে আল্লাহর দীদার সম্পর্কে আহলে সুন্নত ওয়াল জামা‘আতের ‘আলেমদের মতামত:
১- ইমাম বায়হাকী রহ. নিম্নোক্ত হাদীসের ব্যাখ্যায়
বলেছেন,
ইবন
আব্বাস
রাদিয়াল্লাহু
‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«رأيت ربي جعدا أمرد عليه حلة خضراء».
তিনি বলেন,
“আলেমগণ এ হাদীসের ব্যাখ্যায় বলেছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
স্বপ্নে আল্লাহকে এভাবে দেখেছেন।” তিনি এ কথার স্বপক্ষে নিম্নোক্ত হাদীস দ্বারা
দলিল পেশ করেন:
উবাই ইবন কা’ব এর স্ত্রী উম্মে তুফাইল থেকে
বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে
শুনেছি,
«أَنَّهُ رَأَى رَبَّهُ عَزَّ وَجَلَّ فِي
أَحْسَنِ صُورَةٍ، شَابًّا مُوَفَّرًا رِجْلَاهُ فِي الْخُضْرَةِ، عَلَيْهِ
نَعْلَانِ مِنْ ذَهَبٍ، عَلَى وَجْهِهِ فِرَاشٌ مِنْ ذَهَبٍ».
“তিনি
স্বপ্নে তাঁর রবকে পরিপূর্ণ উত্তম একজন যুবকের আকৃতিতে চুল বিশিষ্ট দেখেছেন। তাঁর
পদপযুগল সবুজ কাপড়ে আবৃত ছিল। এতে সোনার জুতা পরিহিত ছিল। তাঁর চেহারায় সোনার চাদর
ছিল।”[18]
অতঃপর তিনি বলেন, “মানুষের স্বপ্নে বিভ্রম ও ভুলও
কিছু দেখতে পারে। দর্শনকারী সৎ ও অসৎ ভেদে এর ব্যাখ্যা হতে পারে।”[19]
২- ইমাম বাগভী রহ. বলেন, “স্বপ্নে আল্লাহকে দেখা
জায়েয। মু‘আয রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন,
«إني نعست فرأيت ربي».
“আমি তন্দ্রাচ্ছন্ন
অবস্থায় আমার রবকে দেখতে পেলাম।”
স্বপ্নে আল্লাহকে দেখা তার কুদরতের প্রকাশ ঘটা,
তার ন্যায়বিচার, বিপদাপদ দূর বা ভালো কিছু অর্জন ইত্যাদি হতে পারে। যেমন সে যদি
দেখে যে, আল্লাহ তাকে জান্নাতের ওয়াদা করেছেন বা ক্ষমা করেছেন বা জাহান্নাম থেকে
মুক্তি দিয়েছেন। যেহেতু আল্লাহর কথা সত্য, তার ওয়াদাও সত্য। আবার যদি দেখে যে,
আল্লাহ তার দিকে তাকিয়েছেন, তবে বুঝতে হবে যে, তিনি তার উপর রহমত বর্ষণ করবেন। আর
যদি তিনি তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন, তবে তা বান্দাহর জন্য গুনাহ থেকে সতর্কতা।
কেননা আল্লাহ বলেছেন,
﴿إِنَّ ٱلَّذِينَ يَشۡتَرُونَ
بِعَهۡدِ ٱللَّهِ وَأَيۡمَٰنِهِمۡ ثَمَنٗا قَلِيلًا أُوْلَٰٓئِكَ لَا خَلَٰقَ لَهُمۡ
فِي ٱلۡأٓخِرَةِ وَلَا يُكَلِّمُهُمُ ٱللَّهُ وَلَا يَنظُرُ إِلَيۡهِمۡ يَوۡمَ ٱلۡقِيَٰمَةِ
وَلَا يُزَكِّيهِمۡ وَلَهُمۡ عَذَابٌ أَلِيمٞ ٧٧﴾
[ال عمران: ٧٧]
“নিশ্চয় যারা আল্লাহর
অঙ্গীকার ও তাদের শপথের বিনিময়ে খরিদ করে তুচ্ছ মূল্য, পরকালে এদের জন্য কোনো অংশ নেই। আর
আল্লাহ তাদের সাথে কথা বলবেন না এবং কিয়ামতের দিন তাদের দিকে তাকাবেন না আর
তাদেরকে পবিত্রও করবেন না এবং তাদের জন্যই রয়েছে মর্মন্তুদ ‘আযাব।”
[সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ৭৭]
আর যদি তিনি স্বপ্নে তাকে দুনিয়ার কোনো সম্পদ দেন
তবে বুঝতে হবে এটা তার জন্য বালা-মুসিবত ও পরীক্ষা। শারীরিক অসুস্থতা দেখলে রোগ
ব্যাধি হবে। ধৈর্যধারণ করলে বিনিময়ে অনেক প্রতিদান পাবে। বান্দা এ ব্যাপারে নানা
পেরেশানীতে থাকবে, অবশেষে আল্লাহর রহমতপ্রাপ্ত হবে এবং শেষ পরিণতি উত্তম হবে।”[20]
৩- শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ রহ. বলেছেন,
وَقَدْ اتَّفَقَ أَئِمَّةُ الْمُسْلِمِينَ
عَلَى أَنَّ أَحَدًا مِنْ الْمُؤْمِنِينَ لَا يَرَى اللَّهَ بِعَيْنِهِ فِي
الدُّنْيَا وَلَمْ يَتَنَازَعُوا إلَّا فِي النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ خَاصَّةً مَعَ أَنَّ جَمَاهِيرَ الْأَئِمَّةِ عَلَى أَنَّهُ لَمْ يَرَهُ
بِعَيْنِهِ فِي الدُّنْيَا وَعَلَى هَذَا دَلَّتْ الْآثَارُ الصَّحِيحَةُ
الثَّابِتَةُ عَنْ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَالصَّحَابَةِ
وَأَئِمَّةِ الْمُسْلِمِينَ. وَلَمْ يَثْبُتْ عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ وَلَا عَنْ
الْإِمَامِ أَحْمَدَ وَأَمْثَالِهِمَا: أَنَّهُمْ قَالُوا إنَّ مُحَمَّدًا رَأَى
رَبَّهُ بِعَيْنِهِ بَلْ الثَّابِتُ عَنْهُمْ إمَّا إطْلَاقُ الرُّؤْيَةِ وَإِمَّا
تَقْيِيدُهَا بِالْفُؤَادِ وَلَيْسَ فِي شَيْءٍ مِنْ أَحَادِيثِ
الْمِعْرَاجِ الثَّابِتَةِ أَنَّهُ رَآهُ بِعَيْنِهِ وَقَوْلُهُ: {أَتَانِي
الْبَارِحَةَ رَبِّي فِي أَحْسَنِ صُورَةٍ} الْحَدِيثُ الَّذِي رَوَاهُ
التِّرْمِذِيُّ وَغَيْرُهُ إنَّمَا كَانَ بِالْمَدِينَةِ فِي الْمَنَامِ هَكَذَا
جَاءَ مُفَسَّرًا.
“সকল মুসলিম ‘আলেম এ কথায় একমত যে, দুনিয়াতে
স্বচক্ষে কোনো মু’মিনই আল্লাহকে দেখতে পাবে না। কিছু আলেম নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামের ব্যাপারে মতানৈক্য করেছেন, তিনি কি
আল্লাহকে দেখেছেন না দেখেন নি? তবে জমহুর আলেমের মতে, তিনি আল্লাহকে স্বচক্ষে দেখেন
নি। এ ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসালাম, সাহাবী ও তাবেয়ী থেকে
অনেক সহীহ হাদীস ও আসার বর্ণিত আছে। ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু ও ইমাম আহমদ
ইবন হাম্বল রহ. থেকে একথা সাব্যস্ত নেই যে, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম সরাসরি স্বচক্ষে আল্লাহকে দেখেছেন; বরং তাদের থেকে সাধারণ দেখা বা
অন্তরে দেখার কথা উল্লেখ আছে। মি‘রাজের হাদীসসমূহে একথা সাব্যস্ত নেই যে, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসালাম সরাসরি স্বচক্ষে আল্লাহকে দেখেছেন। ইমাম তিরমিযী
বর্ণিত হাদীস,
«أَتَانِي الْبَارِحَةَ رَبِّي فِي أَحْسَنِ
صُورَةٍ».
হাদীসটি
মদীনায় স্বপ্নে দেখার কথা বলা হয়েছে। এটা উক্ত হাদিসের ব্যাখ্যা। তাছাড়াও উম্মে
তুফাইল, ইবন আব্বাস ও অন্যান্যদের বর্ণিত আল্লাহকে দেখা সম্পর্কিত হাদীস মক্কায় মি‘রাজের
সময়কার বর্ণিত হাদীসের ব্যাখ্যা।[22]
ইবন তাইমিয়্যাহ রহ. আরো বলেন,
وَالنَّاسُ فِي رُؤْيَةِ اللَّهِ عَلَى
ثَلَاثَةِ أَقْوَالٍ: - فَالصَّحَابَةُ وَالتَّابِعُونَ وَأَئِمَّةُ
الْمُسْلِمِينَ عَلَى أَنَّ اللَّهَ يَرَى فِي الْآخِرَةِ بِالْأَبْصَارِ عِيَانًا
وَأَنَّ أَحَدًا لَا يَرَاهُ فِي الدُّنْيَا بِعَيْنِهِ؛ لَكِنْ يَرَى فِي
الْمَنَامِ وَيَحْصُلُ لِلْقُلُوبِ - مِنْ الْمُكَاشَفَاتِ وَالْمُشَاهَدَاتِ -
مَا يُنَاسِبُ حَالَهَا. وَمِنْ النَّاسِ مَنْ تَقْوَى مُشَاهَدَةُ قَلْبِهِ
حَتَّى يَظُنَّ أَنَّهُ رَأَى ذَلِكَ بِعَيْنِهِ؛ وَهُوَ
غالط وَمُشَاهَدَاتُ الْقُلُوبِ تَحْصُلُ بِحَسَبِ إيمَانِ الْعَبْدِ
وَمَعْرِفَتِهِ فِي صُورَةٍ مِثَالِيَّةٍ كَمَا قَدْ بُسِطَ فِي غَيْرِ هَذَا
الْمَوْضِعِ. (وَالْقَوْلُ الثَّانِي) قَوْلُ نفاة الْجَهْمِيَّة أَنَّهُ لَا
يَرَى فِي الدُّنْيَا وَلَا فِي الْآخِرَةِ. (وَالثَّالِثُ) قَوْلُ مَنْ يَزْعُمُ
أَنَّهُ يَرَى فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ. وَحُلُولِيَّةُ الْجَهْمِيَّة
يَجْمَعُونَ بَيْنَ النَّفْيِ وَالْإِثْبَاتِ فَيَقُولُونَ: إنَّهُ لَا يَرَى فِي
الدُّنْيَا وَلَا فِي الْآخِرَةِ وَإِنَّهُ يَرَى فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ.
“আল্লাহকে দেখা না দেখার ব্যাপারে মানুষ তিনভাগে বিভক্ত।
সাহাবী, তাবেয়ী ও মুসলিম ইমামগণ মনে করেন যে, মু’মিনরা আখেরাতে আল্লাহকে সরাসরি
স্বচক্ষে দেখতে পাবে, দুনিয়াতে সরাসরি দেখতে পাবে না। তবে স্বপ্নে মানুষের
অবস্থাভেদে ...এ রকম কিছু ঘটে থাকে। কোনো
কোনো মানুষের অন্তরের ... শক্তি বেশি, ফলে সে ধারণা করে, সে স্বচক্ষে আল্লাহকে
দেখেছেন। প্রকৃতপক্ষে এটা ভুল ধারণা। বান্দাহর ঈমান ও অনুরূপ জিনিস অবলোকন করার জ্ঞানের
স্তর হিসেবে অন্তরের মুশাহাদারও পার্থক্য হয়। দ্বিতীয় মত হলো, জাহমিয়্যাহরা মনে
করেন, আল্লাহকে দুনিয়া বা আখেরাতে কোনো ভাবেই দেখা যাবে না। তৃতীয় দল মনে করেন যে,
আল্লাহকে দুনিয়া ও আখেরাত উভয় জগতেই দেখা যায়। এরা হলো জাহমিয়্যাহ সম্প্রদায়ের হুলুল[23] বিশ্বাসে বিশ্বাসীগণ। এদের
উভয় দলই বাড়াবাড়িতে রয়েছে। একদল মনে করেন, আল্লাহকে দুনিয়া ও আখেরাতে কখনও দেখা
যাবে না। আবার আরেকদল মনে করেন, আল্লাহকে উভয় জগতেই দেখা যাবে।”[24]
৪- ইবন হাজার আসকালানী রহ. বলেন, স্বপ্নবিশারদগণ স্বপ্নে আল্লাহকে দেখা
জায়েয বলেছেন। তবে সে যে রূপেই দেখুক তা আল্লাহর আসল রূপ নয়, কেননা আল্লাহর আকার
আকৃতি মানুষের ধারণার বাইরে। স্বপ্নে আল্লাহর জাত কখনই দেখা সম্ভব নয়।[25]
৫- ইমাম ইবন জাওযী রহ. বলেন, কেউ যদি বলে আল্লাহকে দেখা সম্পর্কে আপনি কী
বলেন? তাদেরকে বলব, আল্লাহকে তার হুবহু আকৃতিতে দেখা যায় না; বরং কোনো একটা
উদাহরণস্বরূপ আকৃতিতে দেখা যায়। যাতে মানুষ বুঝতে পারে। যেমন, আল্লাহ কুরআনের
উদাহরণ দিয়েছেন আসমান থেকে পানি বর্ষণের সাথে। এ পানি দ্বারা যেমন সবাই উপকৃত হয় তেমনি কুরআন
দ্বারাও সবাই উপকৃত হয়। অতএব এর দ্বারা স্পষ্ট হলো যে, দুনিয়াতে আল্লাহকে তার নিজস্ব আকৃতিতে দেখা যাবে না। আল্লাহ এসব আকৃতি
থেকে পাক-পবিত্র। মানুষ তার আসল আকৃতি কল্পনা করতে পারে না।[26]
৬- শাইখ মুহাম্মদ সালিহ আল-উসাইমীন রহ.-কে এক অনুষ্ঠানে জিজ্ঞেস করা হলো,
কোনো মু’মিন আল্লাহকে দেখেছে বললে একথা কি সত্য? তিনি উত্তরে বলেছেন, দুনিয়াতে
স্বপ্নে আল্লাহকে দেখা যায় আর আখেরাতে যেহেতু ঘুম নেই, তাই সেখানে জাগ্রত
অবস্থাতেই সরাসরি স্বচক্ষে আল্লাহকে দেখবে। আসমানে ফিরিশতাদের আলোচনা সভার হাদীস
থেকে জানা যায় যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বপ্নে আল্লাহকে
দেখেছেন। নবী ছাড়া অন্যদের দেখা সম্পর্কে আমার জানা নেই। তাদের ক্ষেত্রে বাস্তবে
সংঘটিত হয়েছে কি হয় নি তা আমার জানা নেই। তবে ইমাম আহমদ ইবন হাম্বল রহ.-এর
ব্যাপারে বলা হয়ে থাকে যে, তিনি স্বপ্নে আল্লাহকে দেখেছেন। শাইখুল ইসলাম ইবন
তাইমিয়্যাহ রহ. বলেছেন, মানুষ স্বপ্নে আল্লাহকে দেখতে পারে, তাদের দীনদারীতা
অনুসারে উদাহরণস্বরূপ কোনো একটা আকৃতিতে দেখে। অর্থাৎ সে একটা ভালো স্বপ্নে
আল্লাহকে দেখে।[27]
এভাবে অনেক আলেমই মত ব্যক্ত করেছেন যে, দুনিয়াতে স্বপ্নে আল্লাহকে দেখা
সম্ভব। সরাসরি স্বচক্ষে জাগ্রত অবস্থায় কোনো মানুষই আল্লাহকে দেখেন নি। এমনকি নবী রাসূলরাও দেখেন নি।
তবে আখিরাতে আল্লাহকে দেখা যাবে। এটা শুধু মু’মিনদের জন্য বিশেষ নি‘আমত।
মু’মিনরা
জান্নাতে আল্লাহকে দেখতে পাবে
আল্লাহর দিদার
একমাত্র মু’মিন বান্দাহর
জন্যই। কাফিররা এ নি‘আমত থেকে বঞ্চিত হবে। আখেরাতে আল্লাহর
সাক্ষাতের ব্যাপারে কুরআন ও হাদীসের অসংখ্য আয়াত ও বাণী রয়েছে। এটা আহলে সুন্নাত
ওয়াল জামা‘আতের সর্বজন স্বীকৃত মত। শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ রহ. বলেছেন, যারা
আখিরাতে আল্লাহর দেখাকে অস্বীকার করবে তারা কাফির।[28] আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿وُجُوهٞ يَوۡمَئِذٖ نَّاضِرَةٌ
٢٢ إِلَىٰ رَبِّهَا نَاظِرَةٞ ٢٣ ﴾ [القيامة: ٢٢، ٢٣]
“সেদিন কতক মুখমণ্ডল হবে
হাস্যোজ্জ্বল। তাদের রবের প্রতি দৃষ্টিনিক্ষেপকারী।” [সূরা: আল-কিয়ামাহ, আয়াত:
২২-২৩]
﴿لِّلَّذِينَ أَحۡسَنُواْ ٱلۡحُسۡنَىٰ
وَزِيَادَةٞۖ وَلَا يَرۡهَقُ وُجُوهَهُمۡ قَتَرٞوَلَا ذِلَّةٌۚ أُوْلَٰٓئِكَ أَصۡحَٰبُ
ٱلۡجَنَّةِۖ هُمۡ فِيهَا خَٰلِدُونَ ٢٦ ﴾ [يونس : ٢٦]
“যারা ভালো কাজ করে
তাদের জন্য রয়েছে শুভ পরিণাম (জান্নাত) এবং আরও বেশি। আর ধূলোমলিনতা ও লাঞ্ছনা
তাদের চেহারাগুলোকে আচ্ছন্ন করবে না। তারাই জান্নাতবাসী। তারা তাতে স্থায়ী হবে।”
[সূরা: ইউনুস, আয়াত: ২৬] এখানে যিয়াদাহ বলতে আল্লাহর দীদারকে বুঝানো হয়েছে।
কোনো কোনো আয়াতে আল্লাহর
দীদারকে তাঁর সাথে সাক্ষাৎ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে,
﴿قُلۡ إِنَّمَآ أَنَا۠ بَشَرٞ
مِّثۡلُكُمۡ يُوحَىٰٓ إِلَيَّ أَنَّمَآ إِلَٰهُكُمۡ إِلَٰهٞ وَٰحِدٞۖ فَمَن كَانَ
يَرۡجُواْ لِقَآءَ رَبِّهِۦ فَلۡيَعۡمَلۡ عَمَلٗا صَٰلِحٗا وَلَا يُشۡرِكۡ بِعِبَادَةِ
رَبِّهِۦٓ أَحَدَۢا ١١٠﴾ [الكهف: ١١٠]
“বল, আমি তোমাদের মতই একজন মানুষ। আমার
নিকট ওহী প্রেরণ করা হয় যে, তোমাদের ইলাহ তো এক ইলাহ।
সুতরাং যে তার রবের সাক্ষাৎ কামনা করে, সে যেন সৎকর্ম করে
এবং তার রবের ইবাদাতে কাউকে শরীক না করে।” [সূরা: আল-কাহফ, আয়াত:
১১০]
﴿لَهُم مَّا يَشَآءُونَ فِيهَا
وَلَدَيۡنَا مَزِيدٞ ٣٥﴾ [ق: ٣٥]
“তারা যা চাইবে, সেখানে তাদের জন্য তাই থাকবে এবং
আমার কাছে রয়েছে আরও অধিক।” [সূরা: কাফ: ৩৫]
আখিরাতে যদি মু’মিনরা আল্লাহকে দেখতে না পায়, তবে
আল্লাহ কাফিরদেরকে এ নি‘আমত থেকে বঞ্চিত করার কী অর্থ? কেননা কাফিররা আল্লাহকে
দেখতে পাবে না। আল্লাহ বলেছেন,
﴿كَلَّآ إِنَّهُمۡ عَن رَّبِّهِمۡ
يَوۡمَئِذٖ لَّمَحۡجُوبُونَ ١٥﴾ [المطففين: ١٥]
“কখনো নয়, নিশ্চয় সেদিন তারা তাদের রব থেকে পর্দার আড়ালে থাকবে।” [সূরা আল-মুতাফফিফীন, আয়াত: ১৫]
আবদুল্লাহ ইবন কায়স রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«جَنَّتَانِ مِنْ فِضَّةٍ آنِيَتُهُمَا،
وَمَا فِيهِمَا، وَجَنَّتَانِ مِنْ ذَهَبٍ آنِيَتُهُمَا، وَمَا فِيهِمَا، وَمَا
بَيْنَ الْقَوْمِ وَبَيْنَ أَنْ يَنْظُرُوا إِلَى رَبِّهِمْ إِلَّا رِدَاءُ
الْكِبْرِيَاءِ عَلَى وَجْهِهِ فِي جَنَّةِ عَدْنٍ».
“দুটি জান্নাত এমন যে, এগুলোর পাত্রাদি ও সমুদয় সামগ্রী রুপার তৈরি। অন্য দুটি
জান্নাত এমন, যেগুলোর
পাত্রাদি ও সমুদয় সামগ্রী স্বর্ণের তৈরি। “আদন” নামক জান্নাতে জান্নাতিগণ আল্লাহর দীদার লাভ করবেন। এ সময় তাঁদের ও আল্লাহর মাঝে তাঁর
মহিমার চাদর ব্যতীত আর কোনো অন্তরায় থাকবে না।”[29]
সুহায়ব রাদিয়াল্লাহু
‘আনহু বর্ণনা করেন, নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«إِذَا دَخَلَ أَهْلُ
الْجَنَّةِ الْجَنَّةَ، قَالَ: يَقُولُ اللهُ تَبَارَكَ وَتَعَالَى: تُرِيدُونَ
شَيْئًا أَزِيدُكُمْ؟ فَيَقُولُونَ: أَلَمْ تُبَيِّضْ وُجُوهَنَا؟ أَلَمْ
تُدْخِلْنَا الْجَنَّةَ، وَتُنَجِّنَا مِنَ النَّارِ؟ قَالَ: فَيَكْشِفُ
الْحِجَابَ، فَمَا أُعْطُوا شَيْئًا أَحَبَّ إِلَيْهِمْ مِنَ النَّظَرِ إِلَى
رَبِّهِمْ عَزَّ وَجَلَّ».
“জান্নাতিগণ যখন জান্নাতে প্রবেশ করবেন
তখন আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে বলবেন, তোমরা কী চাও? আমি আরো
অনুগ্রহ বাড়িয়ে দিই। তারা বলবে, আপনি কি
আমাদের চেহারা আলোকোজ্জ্বল করে দেন
নি, আমাদের জান্নাতে দাখিল করেন
নি এবং জাহান্নাম থেকে নাজাত দেন নি? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, এরপর আল্লাহ তা‘আলা আবরণ তুলে নিবেন। আল্লাহর দীদার অপেক্ষা অতি প্রিয় কোনো বস্তু তাদের দেওয়া হয়
নি।”[30]
‘আতা ইবন ইয়াযীদ আল-লায়সী থেকে বর্ণিত। আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তাঁকে অবহিত
করেছেন যে,
“কিছু সংখ্যক লোক রাসূলল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বললো, হে আল্লাহর রাসূল, কিয়ামতের দিন আমরা কি আমাদের প্রভুকে দেখতে পাবো? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, পূর্ণিমার
রাতের চাঁদ দেখতে
তোমাদের কি কোনোরূপ অসুবিধা হয়? তারা বললো, না হে আল্লাহর রাসূল। তিনি আবার বললেন, মেঘমুক্ত আকাশে সূর্য দেখতে কি তোমাদের কোনোরূপ অসুবিধা
হয়? সবাই বললো, না। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বললেন, তোমরা ঐরূপ স্পষ্টভাবেই আল্লাহকে দেখতে পাবে।”[31]
আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে
বর্ণিত,
«أَنَّ نَاسًا فِي زَمَنِ رَسُولِ اللهِ
صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالُوا: يَا رَسُولَ اللهِ، هَلْ نَرَى رَبَّنَا
يَوْمَ الْقِيَامَةِ؟ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ:
«نَعَمْ» قَالَ: «هَلْ تُضَارُّونَ فِي رُؤْيَةِ الشَّمْسِ بِالظَّهِيرَةِ صَحْوًا
لَيْسَ مَعَهَا سَحَابٌ؟ وَهَلْ تُضَارُّونَ فِي رُؤْيَةِ الْقَمَرِ لَيْلَةَ
الْبَدْرِ صَحْوًا لَيْسَ فِيهَا سَحَابٌ؟» قَالُوا: لَا يَا رَسُولَ اللهِ،
قَالَ: " مَا تُضَارُّونَ فِي رُؤْيَةِ اللهِ تَبَارَكَ وَتَعَالَى يَوْمَ
الْقِيَامَةِ إِلَّا كَمَا تُضَارُّونَ فِي رُؤْيَةِ أَحَدِهِمَا».
“রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সময় লোকেরা
জিজ্ঞেস করলো, হে আল্লাহর রাসূল!
কিয়ামতের দিন আমরা কি আমাদের রবকে দেখতে পাবো? রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ। তিনি আরো বললেন, ঠিক দুপুরে মেঘমুক্ত
আকাশে পূর্ণিমার চাঁদ দেখতে কি তোমাদের কোনো অসুবিধা কিংবা কষ্ট হয়? তারা বললো, না, হে আল্লার রাসূল! তিনি বললেন, কিয়ামতের
দিন আল্লাহ তা‘আলাকে
দেখতে তোমাদের ততটুকু কষ্ট হবে, যতটুকু ঐ দু’টির যে কোনো একটি দেখতে কষ্ট হয়।”[32]
উক্ত
হাদীসসমূহ থেকে প্রতীয়মান হয় যে, আখেরাতে মু’মিনরা আল্লাহকে দেখতে পাবে। তবে
জাহমিয়্যাহ, মু‘তাযিলা, ইবাদ্বিয়্যাহ (খারেজী সম্প্রদায়ের একটি দল) ইত্যাদি বাতিল
সম্প্রদায়রা পরকালেও আল্লাহকে দেখাকে অস্বীকার করেন। তাদের মতে আল্লাহর কোনো রূপ
বা আকৃতি নেই, তার কোনো দিক নেই, আকার নেই, তিনি দুনিয়াতেও নেই আবার দুনিয়ার
বাইরেও নেই, উপর নিচ, ডান বাম ইত্যাদি কোনো দিকই নেই। তাই তারা আল্লাহর দর্শন
অস্বীকার করেন।
সমাপ্ত
[1] বায়ানু
তালবিসিল জাহমিয়্যাহ ফি বিদ‘ঈহিমুল কালামিয়্যাহ, শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ,
মাজমা’ আল-মালিক ফাহাদ লিতবা‘আতিল মাসহাফ, প্রথম সংস্করণ ১৪২৬ হি. পৃষ্ঠা:
১/৩২৬।
[2] রু’ইয়াতুল্লাহি,
দারাকুতনী, হাদীস নং ২৮৬, ইমাম আবু যুর‘আহ রহ. বলেন, হাদিসের সনদের সব রাবী সুপরিচিত,
মদীনায় তাদের প্রসিদ্ধ বংশ। মারওয়ান ইবন উসমান হলেন, মারওয়ান ইবন উসমান ইবন আবু
সাঈদ মু‘আল্লা আল-আনসারী। আর ‘উমারাহ
হলেন, ‘উমারাহ ইবন ‘আমের ইবন ‘উমার ইবন হাযম, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামের সাহাবী। ‘আমর ইবন হারিস ও সাঈদ ইবন আবু হিলাল সম্পর্কে কেউ কোনো
ধরণের দ্বিধা-সন্দেহ করে নি।
[3] রু’ইয়াতুল্লাহি,
দারাকুতনী, হাদীস নং ২৮৭, ইমাম হাইসামী রহ. হাদীসটিকে মাজমাউয যাওয়ায়েদে (৭/১৭৯)
মুনকার বলেছেন, তিনি বলেন,
رَوَاهُ الطَّبَرَانِيُّ، وَقَالَ ابْنُ
حِبَّانَ: إِنَّهُ حَدِيثٌ مُنْكَرٌ لِأَنَّ عُمَارَةَ بْنَ عَامِرِ بْنِ حَزْمٍ
الْأَنْصَارِيَّ لَمْ يَسْمَعْ مِنْ أُمِّ الطُّفَيْلِ، ذَكَرَهُ فِي تَرْجَمَةِ
عُمَارَةَ فِي الثِّقَاتِ.
[5] তিরমিযী, হাদীস
নং ৩২৩৩, তিনি বলেছেন, রাবীগণ এই হাদীসটির সনদে আবু কিলাবা ও ইবন আববাস
রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর মাঝে আরেক ব্যক্তির উল্লেখ করেছেন। কাতাদা (র) এটিকে আবূ
কিলাবা-খালিদ ইবন লাজলাজ-ইবন আববাস রাদিয়াল্লাহু আনহু সনদে রিওয়ায়ত করেছেন। আলবানী
রহ. হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।
[7] তিরমিযী, হাদীস
নং ৩২৩৫, তিনি হাদীসটিকে হাসান সহীহ বলেছেন। সুনান দারামি, হাদীস নং ২১৯৫। আল্লামা
হুসাইন সুলাইম বলেন, হাদিসের সনদটি সহীহ, যদি আব্দুর রহমান ইবন ‘আয়েশ রাদিয়াল্লাহু
‘আনহুর সাহাবী হওয়াটা নিশ্চিত হয়। আলবানী
রহ. হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।
[9] মু’জামুল
আওসাত, হাদীস নং ৫৭৬১, ইমাম তবরানী রহ. বলেন, হাদিসটি মুজাহিদ থেকে তার পুত্র
ইসমাঈল ছাড়া কেউ বর্ণনা করেন নি। ইমাম হাইসামী রহ. মাজমাউজ জাওয়ায়েদে (১/৭৯) বলেন,
হাদীসটি ইমাম তাবরানী বর্ণনা করেছেন এবং এর সব রাবী সহীহ।
رَوَاهُ الطَّبَرَانِيُّ فِي الْأَوْسَطِ،
وَرِجَالُهُ رِجَالُ الصَّحِيحِ، خَلَا جَهْوَرِ بْنِ مَنْصُورٍ الْكُوفِيِّ،
وَجَهْوَرُ بْنُ مَنْصُورٍ ذَكَرَهُ ابْنُ حِبَّانَ فِي الثِّقَاتِ.
[18] রু’ইয়াতুল্লাহি,
দারাকুতনী, হাদীস নং ২৮৭, ইমাম হাইসামী রহ. হাদীসটিকে মাজমাউজ জাওয়ায়েদে (৭/১৭৯)
মুনকার বলেছেন, তিনি বলেন,
رَوَاهُ الطَّبَرَانِيُّ، وَقَالَ ابْنُ
حِبَّانَ: إِنَّهُ حَدِيثٌ مُنْكَرٌ لِأَنَّ عُمَارَةَ بْنَ عَامِرِ بْنِ حَزْمٍ
الْأَنْصَارِيَّ لَمْ يَسْمَعْ مِنْ أُمِّ الطُّفَيْلِ، ذَكَرَهُ فِي تَرْجَمَةِ
عُمَارَةَ فِي الثِّقَاتِ.
_________________________________________________________________________________
লেখক: আব্দুল্লাহ আল মামুন আল-আযহারী
عبد الله المأمون الأزهري
সম্পাদনা: ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া
مراجعة: د/ أبو بكر محمد زكريا
উৎস: ইসলাম প্রচার ব্যুরো, রাবওয়াহ, রিয়াদ, সৌদিআরব
আরও পড়ুনঃ আল্লাহ তাআলা কোথায় আছেন?
আরও পড়ুনঃ আল্লাহ্ কি সর্বস্থানে বিরাজমান?
আরও পড়ুনঃ আল্লাহর অবস্থান বিবরণে আল কুরআন
আরও পড়ুনঃ আল্লাহ কি নিরাকার ?
পোস্টটি ভালো লাগলে শেয়ার করতে ভুলবেন না কিন্তু।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন