শুক্রবার, ৩ মে, ২০১৩

রিযকের হ্রাস-বৃদ্ধি আল্লাহর ইচ্ছাধীন

রিযকের হ্রাস-বৃদ্ধি আল্লাহর ইচ্ছাধীন



রিযকের হ্রাস-বৃদ্ধি আল্লাহর ইচ্ছাধীন

আল্লাহ তাআলা বলেন :

 বল, ‘আমার রব যার জন্য ইচ্ছা রিয্ক প্রশস্ত করেন অথবা সঙ্কুচিত করেনকিন্তু অধিকাংশ লোক তা জানে না সূরা সাবা : (৩৬)

আল্লাহ তাআলা নিজ বান্দাদের পরীক্ষা ও পরখ করার জন্য রিযক বৃদ্ধি বা হ্রাস করেনরিযক বৃদ্ধি যেমন আল্লাহর সন্তুষ্টির প্রমাণ নয়, অনুরূপ রিযকের সংকীর্ণতা তার অসন্তুষ্টির কারণ নয়অধিকাংশ মানুষ এ বিষয়টি জানে নাদুনিয়ার সচ্ছলতা কারো শুভলক্ষণের দলিল নয়, কারণ আখেরাতের সাফল্য নির্ভর করে নেক আমলের উপর, যা চিরস্থায়ী ও চিরকালদুনিয়াতে কখনো আল্লাহ অবাধ্যকে দেন সচ্ছলতা, আনুগত্যকে দেন সংকীর্ণতাআবার কখনো এর বিপরীত করেনকখনো উভয়কে সচ্ছলতা দেন, কখনো দেন সংকীর্ণতাকখনো অবাধ্য বা আনুগত্য একই ব্যক্তিকে এক সময় দেন সচ্ছলতা, অপর সময় দেন অস্বচ্ছলতাএসব কিছু নিয়ন্ত্রণ করেন আল্লাহ তাআলা নিজ প্রজ্ঞা ও হিকমতের ভিত্তিতে, যদি সচ্ছলতা সম্মান ও আল্লাহর সন্তুষ্টির প্রমাণ হতো, তাহলে এর অধিকারী একমাত্র অনুগতরাই হতো, অবাধ্যরা কখনো এর স্বাদ পেত নাআর যদি সংকীর্ণতা অপমান ও আল্লাহর গোস্বার কারণ হতো, তাহলে অবাধ্যরা সদা সংকীর্ণতা ভোগ করত, অথচ বাস্তব এমন নয়সারকথা সচ্ছলতা বা সংকীর্ণতা অবাধ্য বা অনুগত উভয়ের জন্যই সমান

কতক কাফের সচ্ছলতাকে সামনে রেখে তাদের পক্ষে আল্লাহর সন্তুষ্টির প্রমাণ পেশ করেছে, যদি আমাদের উপর আল্লাহর অনুকম্পা না হত, তাহলে তিনি আমাদেরকে সচ্ছলতা দিয়ে সম্মানিত করতেন নাহে রাসূলের অনুসারীগণ, আল্লাহর নিকট তোমরা তুচ্ছ বলেই বঞ্চিতবস্তুত সচ্ছলতা বা অস্বচ্ছলতা শুভ লক্ষণ বা অশুভ কোন লক্ষণ নয়, হতভাগা বা সৌভাগ্যবান হওয়ারও কোন আলামত নয়এ পার্থিব জগতে অনেক সচ্ছল ব্যক্তি বিদ্যমান যারা হতভাগা, আবার অনেক অসচ্ছল ব্যক্তি রয়েছে যারা সৌভাগ্যবানঅধিকাংশ লোকই তা জানে নাঅভাব, অস্বচ্ছলতা, প্রবৃদ্ধি, সচ্ছলতা ইত্যাদি আল্লাহর ইচ্ছার উপর নির্ভরশীল, নেককার বা বদকার বলে কোন বিষয় নেইসম্মান ও মর্যাদার কারণে যেমন কাউকে সচ্ছলতা প্রদান করা হয় না, আবার হীন ও তুচ্ছতার কারণে কাউকে অভাব দেয়া হয় নাসচ্ছলতা কখনো অবকাশ ও সুযোগ হিসেবে প্রদান করা হয়, অস্বচ্ছলতা কখনো মর্যাদা বৃদ্ধি ও পরীক্ষামূলক দেয়া হয়

তাবারি বলেছেন : দাম্ভিক কাফেররা আল্লাহর নবী ও রাসূলদের বলেছে : তোমাদের তুলনায় আমাদের সম্পদ ও সন্তান অধিক, আমাদেরকে আখেরাতে আযাব দেয়া হবে না, কারণ আল্লাহ যদি আমাদের বর্তমান ধর্ম ও আমলের উপর সন্তুষ্ট না হতেন, তাহলে আমাদেরকে তিনি অধিক সম্পদ ও সন্তান দান করতেন না, রিযকের ব্যাপারে স্বচ্ছলতা দিতেন না, তাই আল্লাহ আমাদেরকে যা দিয়েছেন, তা এ জন্যই দিয়েছেন যে, তিনি আমাদের আমলের উপর সন্তুষ্ট, আমরা তার প্রিয় পাত্রআল্লাহ তাআলা তার নবীকে বলেন : হে মুহাম্মদ তাদেরকে বল : নিশ্চয় আমার রব তার বান্দাদের থেকে যার জন্য ইচ্ছা রিযক বৃদ্ধি করেন, আর যার উপর ইচ্ছা তিনি সংকীর্ণ করেনমহব্বত, কল্যাণ কিংবা নৈকট্যের কারণে কাউকে তিনি ধন দৌলত প্রদান করেন না, আবার অসন্তুষ্টি ও গোস্বার কারণে তিনি কারো উপর সংকীর্ণতা করেন নাশুধু পরীক্ষার জন্য কাউকে প্রদান করেন, করো থেকে ছিনিয়ে নেনঅধিকাংশ লোক তা জানে নাএটা আল্লাহর একটা পরীক্ষা মাত্র, কিন্তু তাদের ধারণা, প্রিয়পাত্র হলে তিনি সচ্ছলতা দেন, আবার গোস্বার পাত্র হলে তিনি অভাবে পতিত করেন

আল্লামা শাওকানি বলেছেন : আল্লাহ যাকে অভাব দিতে চান, তার উপর তিনি অভাব সৃষ্টি করেনকখনো আল্লাহ কাফের ও অবাধ্যকে রিযক প্রদান করে অবকাশ দেন, আবার কখনো তিনি মুমিন ও আনুগত্যকারীকে অভাবের মাধ্যমে পরীক্ষা করেন, যেন তার সাওয়াব বৃদ্ধি পায়কাউকে স্বচ্ছলতা দেয়ার অর্থ এই নয় যে, আল্লাহ তার উপর ও তার আমলের প্রতি সন্তুষ্টআবার কাউকে অভাবে রাখার অর্থ এই নয় যে, আল্লাহ তার উপর অসন্তুষ্ট, কিংবা তার আমল পরিত্যাজ্যপার্থিব এসব বিষয় দ্বারা আখেরাতকে বুঝা ভুল ও স্পষ্ট বিভ্রান্তি

সহিহ মুসলিমে রয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :
" إنَّ اللّهَ لاَ يَنْظُرُ إلى صُوَرِكُمْ وَأَمْوَالِكُمْ ، ولكن يَنْظُرُ إلى قُلُوبِكُمْ وَأَعْمَالِكُمْ " انتهى .
নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের চেহারা ও সম্পদের দিকে তাকান না, কিন্তু তিনি তোমাদের অন্তর ও আমলের দিকে তাকান

অভিজ্ঞতার আলোকে প্রমাণিত যে,  প্রয়োজনের চেয়ে অধিক সম্পদ দ্বারা খুব কম লোকই সুখী হয়েছে, তবে আল্লাহ যাকে হিফাজত সুরক্ষা দিয়েছেন তার কথা ভিন্ন। 

আল্লাহ তাআলা বলেন :

 আর আল্লাহ যদি তার বান্দাদের জন্য রিয্ক প্রশস্ত করে দিতেন, তাহলে তারা জমিনে অবশ্যই বিদ্রোহ করত সূরা শুরা : (২৭) 

সহিহ বুখারী ও অন্যান্য কিতাবে আবুযর রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : অধিক সম্পদের মালিকরা কিয়ামতের দিন অল্প সম্বলের মালিক হবে, তবে যে তার সম্পদ দ্বারা ... করে হাদিস বর্ণনাকারী ইবনে শিহাব সামনে, বামে ও ডানে হাত নেড়ে এর অর্থ বর্ণনা করেনঅর্থাৎ অধিক সদকাকারীকিন্তু এদের সংখ্যা খুব কমইবনে মুবারক তার রাকায়েককিতাবে বর্ণনা করেন : রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : শয়তান বলেছে : ধনীরা আমার তিনটি প্রতারণার একটিতে অবশ্যই পড়বে : আমি তার সামনে সম্পদ সুসজ্জিত করে রাখব, ফলে সে তার হক আদায় করবে নাঅথবা আমি তার জন্য অপচয় ও অযথা খরচ করার রাস্তা উন্মুক্ত করে দেবঅথবা আমি তার কাছে সম্পদ প্রিয় করে দেব, ফলে সে তা অবৈধ পথেও উপার্জন করবে

সমাপ্ত

জিয়াদ আবু রাজায়ী
অনুবাদ : সানাউল্লাহ নজির আহমদ
সম্পাদনা : ড. আবু বকর মো. যাকারিয়া
সূত্র : ইসলাম প্রচার ব্যুরো, রাবওয়াহ, রিয়াদ, সৌদিআরব

পোস্টটি ভালো লাগলে শেয়ার করতে ভুলবেন না কিন্তু।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন