ইসলামে নারীর অধিকার
ইসলাম তার শিক্ষা ও আদর্শের মাধ্যমে মানব প্রকৃতিকে- যা দিয়ে আল্লাহ তা‘আলা মানুষকে
সৃষ্টি করেছেন- সমর্থন ও শক্তিশালী করে। আল্লাহ তা'আলা মানুষকে
দ্ব্যর্থহীন কিছু মৌলিক বৈশিষ্ট্য দিয়ে নারী-পুরুষ দুই শ্রেণীতে সৃষ্টি করেছেন।
এরা যাতে একে অপরের সম্পূরক হয়। এ ক্ষেত্রে নারী-পুরুষ ঠিক রাত-দিনের মতো। যে
দুয়ের সমন্বয়ে হয় একটি দিন। কিংবা বলা যায় ইতি ও নেতিবাচক স্রোত তথা জোয়ার-ভাটার
মতো, যে দুইয়ের যোগে গঠিত হয় বিদু্ৎ-শক্তি। এ
বিদু্ৎ-শক্তি সঞ্চার করে বহু জড় পদার্থে প্রাণ ও প্রাণস্পন্দন।
আল্লাহ তা‘আলা নারীকে যেসব অনন্য বৈশিষ্ট্যে শোভিত
করেছেন, তার অন্যতম হলো আচার-আচরণে আহ্লাদের প্রাচুর্য ও
আবেগের বাহুল্য। তেমনি গঠন-প্রকৃতিতেও নারী কোমলতা ও এমন নম্রতায় সমুজ্জ্বল,
যা পুরুষের সঙ্গে বসবাসরত পরিবেশে তার স্বাধীনতাকে করে
সীমাবদ্ধ। আল্লাহ তা‘আলা নারীকে স্বভাব-চরিত্রেও বানিয়েছেন কোমল। যাতে সে শুষে নিতে
পারে পুরুষের যাবতীয় রুক্ষতা। কেড়ে নিতে পারে তার হৃদয়-অন্তর। নারীর সান্বিধ্য
পুরুষকে দেয় মানসিক আশ্রয়। যেখানে এলে তার টেনশন-অস্থিরতা লঘু হয়। কেটে যায় সব ক্লান্তি ও
বিস্বাদ। একইভাবে সে যাতে হয় মমতাময়ী এবং শিশুর লালন-পালনে উপযুক্ত।
আবেগ ও অনুভূতিপ্রবণ এক কোমল সৃষ্টি নারী। অপরের
সুখের জন্য নারীই পারে সবচে বেশি ত্যাগের মহত্ব প্রকাশ করতে। এসব মানবিক গুণ ও
সহজাত উপাদান ছাড়া কোনো পরিবার ও সমাজ টেকসই হয় না। বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান প্রমাণ
করেছে, নারীই সবচে বেশি কঠিন মানসিক চাপ বহন করতে সক্ষম। মানসিক আঘাত সারাতে
নারীই রাখতে পারে সবচে বেশি কার্যকর ভূমিকা।
অন্যদিকে আল্লাহ তা‘আলা পুরুষকে
সৃষ্টি করেছেন রূঢ়তা ও কঠোরতা দিয়ে। যা তাকে স্থান ও কালের বিবেচনায় বৃহত্তর অঙ্গনে
বিচরণের সুযোগ এনে দেয়। মানুষ যেসব ঝুঁকির সম্মুখীন হয় তা থেকে আত্মরক্ষায়
শারীরিকভাবে পুরুষ অধিক সক্ষম। তাই শত্রু কর্তৃক তুলনামূলক সে কমই আক্রান্ত
হয়। তেমনি তার মানসিক গঠনেও দৃঢ়তা বেশি। এ কারণে সে অনেক দুর্ঘটনার সামনেও অবিচল
থাকতে পারে। যেমন অকস্মাৎ কোনো সরীসৃপ বা ভীমদর্শন প্রাণীর আবির্ভাব ইত্যাদি। এ
জন্যই সে নারীর তুলনায় বেশি নিরাপত্তা ও সাহসিকতার সঙ্গে ভীতিকর, ঝুঁকিপূর্ণ ও
বিভীষিকাময় পরিস্থিতিতে এগিয়ে যায়। এ কারণেই সে নিরব নিষুতি রাতেও আতঙ্ক জাগানিয়া
নানা প্রান্ত বীরদর্পে অতিক্রম করতে পারে। নিরাপদে ফিরে আসতে পারে স্বজনের কাছে।
যা পারে না একজন নারী।
উল্লেখ্য, সাধারণত আমরা যখন পুরুষ বা নারীর বৈশিষ্ট্য
আলোচনা করি, তা কিন্তু ব্যতিক্রম অবস্থার অস্তিত্ব অস্বীকার
করে না। কারণ, অনেক সময় নারীর বৈশিষ্ট্যের জায়গায় দেখা যায়
পুরুষকে। যেমন পুরুষের স্বকীয় স্থানে দেখা যায় নারীকেও।
পুরুষের তুলনায় নারীর মর্যাদা
নারী-পুরুষের প্রকৃতিগত সম্পর্ক বিষয়ে এমন
ব্যতিক্রমী বক্তব্যকে অনেকে প্রমাণ হিসেবে হাজির করেন, সমান গুরুত্ব সত্ত্বেও প্রকৃতির ভিন্নতায় যার সম্পর্ক
রাত-দিনের মতো। পূর্বাপর বিবেচনায় না এনে বক্তব্যকে ভুল বোঝার একটি সরল দৃষ্টান্ত
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিচে উল্লেখিত বক্তব্য :
يَا مَعْشَرَ النِّسَاءِ تَصَدَّقْنَ فَإِنِّي أُرِيتُكُنَّ
أَكْثَرَ أَهْلِ النَّارِ. فَقُلْنَ وَبِمَ يَا رَسُولَ اللهِ؟ قَالَ : تُكْثِرْنَ
اللَّعْنَ وَتَكْفُرْنَ الْعَشِيرَ. مَا رَأَيْتُ مِنْ نَاقِصَاتِ عَقْلٍ وَدِينٍ أَذْهَبَ
لِلُبِّ الرَّجُلِ الْحَازِمِ مِنْ إِحْدَاكُنَّ. قُلْنَ وَمَا نُقْصَانُ دِينِنَا
وَعَقْلِنَا يَا رَسُولَ اللهِ؟ قَالَ : أَلَيْسَ شَهَادَةُ الْمَرْأَةِ مِثْلَ نِصْفِ
شَهَادَةِ الرَّجُلِ؟ قُلْنَ بَلَى. قَالَ: فَذَلِكَ مِنْ نُقْصَانِ عَقْلِهَا. أَلَيْسَ
إِذَا حَاضَتْ لَمْ تُصَلِّ وَلَمْ تَصُمْ؟ قُلْنَ: بَلَى. قَالَ: فَذَلِكَ مِنْ نُقْصَانِ
دِينِهَا.
'হে নারী সমপ্রদায়, তোমরা বেশি বেশি সদকা করো। কেননা, আমি তোমাদের বেশি জাহান্নামের অধিবাসী দেখেছি।' মহিলারা বললেন,
কেন হে
আল্লাহর রাসূল? তিনি বললেন, 'তোমরা অধিকহারে
অভিশাপ দাও এবং স্বামীর অকৃজ্ঞতা দেখাও। বুদ্ধিমান পুরুষকে নির্বুদ্ধি বানাতে অল্প
বুদ্ধি ও খাটো দীনদারির আর কাউকে তোমাদের চেয়ে অধিক পটু দেখিনি।' তাঁরা বললেন, হে আল্লাহর রাসূল, আমাদের জ্ঞান ও দীনের অল্পতা কী? তিনি বললেন, 'মহিলাদের সাক্ষী কি
পুরুষদের সাক্ষীর অর্ধেক নয়?' তাঁরা বললেন, জী, হ্যা। তিনি বললেন, 'এটিই তাদের জ্ঞানের অল্পতা। যখন তাদের মাসিক শুরু হয় তখন কি
তারা নামায ও রোজা বাদ দেয় না?' তাঁরা বললেন, জী, হ্যা। তিনি বললেন, 'এটিই তাদের দীনদারির স্বল্পতা।'[1]
এ বক্তব্যের প্রেক্ষাপট হলো, সেটি ছিল ঈদের দিন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম চাইছিলেন তাঁদেরকে সদকা দানে উদ্বুদ্ধ করতে। বাস্তবে এটি ছিল এমন কথা
বলে হাস্য-কৌতুক করার আদর্শ সময়, যা আংশিক সত্য। তা
হলো, কিছু ক্ষেত্রে নারীর সাক্ষী
পুরুষের সাক্ষীর অর্ধেকের মর্যাদা রাখে এবং মাসিক অবস্থায় তাদের নামায পুরোপুরি ক্ষমা করা
হয় আর রমজানের রোজা অন্য সময় আদায় করতে হয়। দোষের ক্ষেত্রে গুণ বলে এখানে কৌতুক
করা হয়েছে। অর্থাৎ জ্ঞানে ও দীনে কম হলে কী হবে বুদ্ধিমান পুরুষকে পর্যন্ত বোকা
বানিয়ে ছাড়ে!
পক্ষান্তরে জাহান্নামে তাদের সংখ্যা বেশি হওয়া- তা তো স্বাভাবিক। কেননা, বাস্তবে তাদের সংখ্যা পুরুষের চেয়ে অনেক বেশি। এছাড়া অন্য
কারণও তো রয়েছে। এদিকে স্বামীর অকৃজ্ঞতা তারাই বেশি প্রদর্শন করে থাকে। আসলে এটিই
তো আবেগী মনের অপরিহার্য দাবি। যাহোক স্বাভাবিকভাবে ইসলামে পুরুষের মর্যাদার
তুলনায় নারীর মর্যাদা তিন রকম :
ক. নারী যেসব অবস্থায় পুরুষের
সমান :
ইসলাম নারীকে পুরুষের সহোদরা বানিয়েছে (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম যেমন ইরশাদ করেছেন[2]) এবং
নারী-পুরুষকে একে অপরের শুভাকাঙ্ক্ষী বানিয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা যেমন ইরশাদ করেন,
وَالْمُؤْمِنُونَ وَالْمُؤْمِنَاتُ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاءُ بَعْضٍ يَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ
وَالْمُؤْمِنُونَ وَالْمُؤْمِنَاتُ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاءُ بَعْضٍ يَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ
'আর মুমিন পুরুষ ও
মুমিন নারীরা একে অপরের বন্ধু, তারা ভালো কাজের আদেশ
দেয় আর অন্যায় কাজ থেকে নিষেধ করে।'[3]
আল্লাহ তা'‘আলা আরও বলেন,
لِلرِّجَالِ نَصِيبٌ مِمَّا اكْتَسَبُوا وَلِلنِّسَاءِ نَصِيبٌ
مِمَّا اكْتَسَبْنَ
'পুরুষদের জন্য রয়েছে
অংশ, তারা যা উপার্জন করে তা থেকে
এবং নারীদের জন্য রয়েছে অংশ, যা তারা উপার্জন করে
তা থেকে।'[4]
আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র বলেন,
مَنْ عَمِلَ صَالِحًا مِنْ ذَكَرٍ أَوْ أُنْثَى وَهُوَ مُؤْمِنٌ
فَلَنُحْيِيَنَّهُ حَيَاةً طَيِّبَةً وَلَنَجْزِيَنَّهُمْ أَجْرَهُمْ بِأَحْسَنِ
مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ (7)
'যে মুমিন অবস্থায় নেক
আমল করবে, পুরুষ হোক বা নারী, আমি তাকে পবিত্র জীবন দান করব এবং তারা যা করত তার তুলনায়
অবশ্যই আমি তাদেরকে উত্তম প্রতিদান দেব।'[5]
আরেক জায়গায় আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
إِنَّ الْمُسْلِمِينَ وَالْمُسْلِمَاتِ وَالْمُؤْمِنِينَ
وَالْمُؤْمِنَاتِ وَالْقَانِتِينَ وَالْقَانِتَاتِ وَالصَّادِقِينَ
وَالصَّادِقَاتِ وَالصَّابِرِينَ وَالصَّابِرَاتِ وَالْخَاشِعِينَ وَالْخَاشِعَاتِ
وَالْمُتَصَدِّقِينَ وَالْمُتَصَدِّقَاتِ وَالصَّائِمِينَ وَالصَّائِمَاتِ
وَالْحَافِظِينَ فُرُوجَهُمْ وَالْحَافِظَاتِ وَالذَّاكِرِينَ اللَّهَ كَثِيرًا
وَالذَّاكِرَاتِ أَعَدَّ اللَّهُ لَهُمْ مَغْفِرَةً وَأَجْرًا عَظِيمًا
'নিশ্চয় মুসলিম পুরুষ
ও নারী, মুমিন পুরুষ ও নারী, অনুগত পুরুষ ও নারী,
সত্যবাদী
পুরুষ ও নারী, ধৈর্যশীল পুরুষ ও নারী, বিনয়াবনত পুরুষ ও নারী, দানশীল পুরুষ ও নারী, সিয়ামপালনকারী পুরুষ
ও নারী, নিজদের লজ্জাস্থানের হিফাযতকারী
পুরুষ ও নারী, আল্লাহকে অধিক স্মরণকারী
পুরুষ ও নারী, তাদের জন্য আল্লাহ মাগফিরাত ও মহান
প্রতিদান প্রস্তুত রেখেছেন।'[6]
আদম ও হাওয়া আলাইহিমাস- সালামের
জান্নাত থেকে বেরিয়ে আসার ঘটনার রেশ ধরে ইসলাম নারীর ওপর অর্ধেক দায়িত্ব দিয়েছে। পবিত্র
কুরআনে এ ঘটনা বিবৃত হয়েছে এভাবে :
وَقُلْنَا يَا آَدَمُ اسْكُنْ أَنْتَ وَزَوْجُكَ الْجَنَّةَ وَكُلَا
مِنْهَا رَغَدًا حَيْثُ شِئْتُمَا وَلَا تَقْرَبَا هَذِهِ الشَّجَرَةَ فَتَكُونَا
مِنَ الظَّالِمِينَ) فَأَزَلَّهُمَا الشَّيْطَانُ عَنْهَا فَأَخْرَجَهُمَا مِمَّا
كَانَا فِيهِ وَقُلْنَا اهْبِطُوا بَعْضُكُمْ لِبَعْضٍ عَدُوٌّ وَلَكُمْ فِي
الْأَرْضِ مُسْتَقَرٌّ وَمَتَاعٌ إِلَى حِينٍ فَتَلَقَّى آَدَمُ مِنْ رَبِّهِ
كَلِمَاتٍ فَتَابَ عَلَيْهِ إِنَّهُ هُوَ التَّوَّابُ الرَّحِيم
‘আর আমি বললাম, 'হে আদম, তুমি ও তোমার স্ত্রী জান্নাতে বসবাস কর এবং তা থেকে আহার কর স্বাচ্ছন্দ্যে,
তোমাদের ইচ্ছানুযায়ী এবং এই গাছটির নিকটবর্তী হয়ো না, তাহলে তোমরা
যালিমদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে। অতঃপর শয়তান তাদেরকে জান্নাত থেকে স্খলিত করল।
অতঃপর তারা যাতে ছিল তা থেকে তাদেরকে বের করে দিল, আর আমি বললাম, 'তোমরা নেমে যাও। তোমরা একে অপরের শত্রু। আর তোমাদের জন্য যমীনে রয়েছে
নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত আবাস ও ভোগ-উপকরণ'[7]।
এ ব্যাপারে বরং পুরুষই বড় দায়িত্ব বহন করে। কেননা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত তার হাতে। পবিত্র কুরআনই সে ইঙ্গিত দিচ্ছে। ইরশাদ হয়েছে,
এ ব্যাপারে বরং পুরুষই বড় দায়িত্ব বহন করে। কেননা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত তার হাতে। পবিত্র কুরআনই সে ইঙ্গিত দিচ্ছে। ইরশাদ হয়েছে,
فَوَسْوَسَ إِلَيْهِ الشَّيْطَانُ قَالَ يَا آَدَمُ هَلْ أَدُلُّكَ
عَلَى شَجَرَةِ الْخُلْدِ وَمُلْكٍ لَا يَبْلَى (120) فَأَكَلَا مِنْهَا فَبَدَتْ
لَهُمَا سَوْآَتُهُمَا وَطَفِقَا يَخْصِفَانِ عَلَيْهِمَا مِنْ وَرَقِ الْجَنَّةِ
وَعَصَى آَدَمُ رَبَّهُ فَغَوَى
‘অতঃপর শয়তান তাকে কুমন্ত্রণা দিল, বলল, 'হে আদম, আমি কি তোমাকে বলে দিব অনন্ত
জীবনপ্রদ গাছ এবং অক্ষয় রাজত্ব সম্পর্কে?' অতঃপর তারা উভয়েই সে গাছ থেকে খেল। তখন তাদের উভয়ের সতর
তাদের সামনে প্রকাশ হয়ে পড়ল এবং তারা জান্নাতের গাছের পাতা দিয়ে নিজদেরকে আবৃত
করতে লাগল এবং আদম তার রবের হুকুম অমান্য করল; ফলে সে বিভ্রান্ত হল’।[8]
খ. যেসব অবস্থায় নারী পুরুষের চেয়ে ভিন্ন :
ইসলাম একজন মাতাকে পিতার চেয়ে বেশি হক দিয়েছে[9]। যেমন
সৌদি আরবে সরকারি চাকরিজীবি মায়েদের জন্য বার্ষিক ছুটির অতিরিক্ত প্রসবকালীন ছুটি
হাদীসে বর্ণিত নিফাসের
মেয়াদ[10]
অনুযায়ী কমপক্ষে পঁয়তাল্লিশ দিন দেয়া হয়। তেমনি তাকে পবিত্র কুরআনে উল্লেখিত মেয়াদ[11]
অনুযায়ী স্বামী মারা গেলে বার্ষিক ছুটির অতিরিক্ত প্রায় একশ দিনের বিশেষ ছুটি দেয়া
হয়। অথচ পুরুষদের জন্য এ ধরনের কোনো ছুটির ব্যবস্থা নেই। একইভাবে ইসলাম নারীদের
জন্য সোনা ও রেশমী কাপড় ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে। পুরুষের জন্য দেয়নি। নারীদের
মাসে প্রায় এক সপ্তাহ এবং বছরে প্রায় একমাস সালাত মাফ করা হয়েছে, যা পুরুষের ক্ষেত্রে করা হয়নি।
শুধু তাই নয়, নারীদের প্রতিপালনে ইসলাম যে মর্যাদা রেখেছে পুরুষদের জন্য তা রাখা হয়নি।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
لاَ يَكُونُ لأَحَدِكُمْ ثَلاَثُ بَنَاتٍ
أَوْ ثَلاَثُ أَخَوَاتٍ فَيُحْسِنُ إِلَيْهِنَّ إِلاَّ دَخَلَ الْجَنَّةَ.
'তোমাদের যে কারও যদি তিনজন
কন্যা বা বোন থাকে আর সে তাদের সুন্দরমত দেখাশুনা করে, তবে সে অবশ্যই জান্নাতে প্রবেশ করবে।'[12]
তেমনিভাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম আরও ইরশাদ করেছেন,
خَيْرُكُمْ
خَيْرُكُمْ لأَهْلِهِ
এ হাদীসে স্ত্রীর সঙ্গে সদ্ব্যবহারকে পুরুষের
চারিত্রিক মর্যাদার মাপকাঠি নির্ধারণ করা হয়েছে। সুতরাং এখন আমরা কি বলবো যে ইসলাম
পুরুষের বিপক্ষে বর্ণবৈষম্যকে প্রশ্রয় দিয়েছে?
গ. পুরুষের কিছু যোগ্যতা ও বৈশিষ্ট্য :
পুরুষের ওপর ইসলাম পরিবারের নেতৃত্বভার অর্পণ
করেছে এবং উত্তরাধিকারে তার অংশ বেশি দিয়েছে। কারণ, নারীর ভরণ-পোষণ তার দায়িত্বে। আর কিছু ক্ষেত্রে নারীর সাক্ষীকে পুরুষের অর্ধেক
গণ্য করেছে। বিনিময়ে তাকে এমন কিছু দায়িত্ব দেয়া হয়েছে, যা নারীকে দেয়া হয়নি। পুরুষের ওপর পরিবারের আর্থিক ভার
ন্যস্ত করা হয়েছে। পরিবারের মৌলিক অর্থিক খাতগুলো তাকেই সামলাতে হয়। আর তাকেই
নিযুক্ত করা হয়েছে পরিবারের তত্ত্বাবধায়ক।
আমরা দেখতে পাই, ইসলাম অনেক ক্ষেত্রে নারী-পুরুষকে একইরকম অধিকার দিয়েছে। পাশাপাশি উভয়ের আলাদা
বৈশিষ্ট্যও রেখেছে। এভাবেই ইসলাম উভয়ের মধ্যে সমতা বিধান করেছে। তবে এ সমতা দিনের
সঙ্গে দিনের কিংবা রাতের সঙ্গে রাতের সমতার মতো নয়। বরং তা গুরুত্বের দিক দিয়ে রাত
ও দিনের সমতার মতো। যেমন আদর্শ জীবন কিছুতেই উভয়টিকে উপেক্ষা করতে পারে না। আর
যেমন একটি দিবস রাত বা দিনের কোনোটির প্রয়োজনকেই উপেক্ষা করতে পারে না।
সাধারণভাবে আমরা যখন ইসলাম নিয়ে আলোচনা করি, তখন ইসলাম ও ইসলাম অনুসারী তথা মুসলিমদের আচরণের মধ্যে
পার্থক্য মাথায় রাখা উচিত। ইসলাম ও মুসলিম দুটি ভিন্ন জিনিস। কেননা মুসলিম অনেক সময় ইসলামী
শিক্ষা থেকে বিচ্যুত হতে পারে। মুসলিম নারীমাত্রেরই উচিত,
পুরুষের
সঙ্গে সমানাধিকার দাবি না জানিয়ে ইসলাম তাকে যে অধিকারগুলো দিয়েছে তা দাবি করা। কেননা, সমানাধিকার নিতে গেলে ইসলাম প্রদত্ত অনেক প্রাকৃতিক অধিকারও
তাকে হারাতে হয়।
নারীর অবাস্তব সমানাধিকারের দাবিদাররা যার গান
গায় আমরা যদি সেই ফরাসি বিপ্লবের নথিপত্র এবং গণতান্ত্রিক দেশসহ বহু দেশের সংবিধান
ঘেঁটে দেখি, তাহলে দেখবো অনেক ক্ষেত্রেই
তারা নারীর সেই অধিকারগুলোর স্বীকৃতি মাত্র সেদিন দিয়েছে, ইসলাম যা প্রতিষ্ঠা করেছে চৌদ্দশ বছর আগে! শুধু তাই নয়, বরং অনেক অধিকার এমনও আছে যার স্বীকৃতি আজো তারা দেয়নি।
যেমন পরিবারে নারীর আর্থিক দায়িত্ব ক্ষমা করা এবং তাকে যাবতীয় অর্থনৈতিক ভার থেকে
অব্যহতি দেয়া ইত্যাদি।[14]
সুতরাং এসব বাস্তবতা সম্পর্কে অবগতির পরও কি কোনো
জ্ঞানসম্পন্ন মুসলিম রমণী ইসলামের দেয়া তার অধিকার ও বৈশিষ্ট্যসমূহকে অবজ্ঞা করে পশ্চিমাদের
নারীদের তথাকথিত অধিকার দাবি করবেন?
নারীর উত্তরাধিকার কিছু
ক্ষেত্রে পুরুষের অর্ধেক কেন
পূর্বে যে প্রাকৃতিক বাস্তবতার কথা আলোচিত হয়েছে
তা থেকে অগ্রসর হয়ে পরিবারের জীবনোপকরণ সংগ্রহের ভার ন্যস্ত করেছে ইসলাম পুরুষের
কাঁধে। পুরুষের স্ত্রী-সন্তান, অক্ষম পিতা-মাতা
কিংবা কামাইয়ের অযোগ্য ভাই অথবা দায়িত্ব নেয়ার কেউ নেই এমন বিবাহিত বোন হোক- সবার রুটি-রুজির দায়িত্ব তার
ওপর। পক্ষান্তরে এ সংক্রান্ত কোনো দায়িত্ব নারীর ওপর দেয়া হয়নি। এমনকি তার
পিতা-মাতা বা যারা তাকে ছোট থেকে প্রতিপালন করেছেন- তাদের কারো দায়িত্বও তার ওপর ন্যস্ত করা হয়নি।
উদারণত এ জন্যই ইসলাম মুসলিমকে অনুমতি দেয় না তার সম্পদের যাকাত আপন স্ত্রী বা সন্তানদের দিতে। কেননা, তাকে নিজের দায়িত্বের অংশ হিসেবেই তাদের প্রয়োজন পুরো করতে হবে; সদকার অংশ থেকে তাদের ওপর খরচ করবে কেন। এ কারণে যাকাত কেবল সীমিত কয়েকটি খাতেই ব্যয় করতে হবে; এর বাইরে কোথাও ব্যয় করা যাবে না। এসব খাত হয়তো হকদার ব্যক্তির সমস্যা স্থায়ী বা সাময়িকভাবে দূর করবে অথবা উচ্চতর কোনো কল্যাণ বয়ে আনবে। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন,
উদারণত এ জন্যই ইসলাম মুসলিমকে অনুমতি দেয় না তার সম্পদের যাকাত আপন স্ত্রী বা সন্তানদের দিতে। কেননা, তাকে নিজের দায়িত্বের অংশ হিসেবেই তাদের প্রয়োজন পুরো করতে হবে; সদকার অংশ থেকে তাদের ওপর খরচ করবে কেন। এ কারণে যাকাত কেবল সীমিত কয়েকটি খাতেই ব্যয় করতে হবে; এর বাইরে কোথাও ব্যয় করা যাবে না। এসব খাত হয়তো হকদার ব্যক্তির সমস্যা স্থায়ী বা সাময়িকভাবে দূর করবে অথবা উচ্চতর কোনো কল্যাণ বয়ে আনবে। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন,
إِنَّمَا الصَّدَقَاتُ لِلْفُقَرَاءِ وَالْمَسَاكِينِ
وَالْعَامِلِينَ عَلَيْهَا وَالْمُؤَلَّفَةِ قُلُوبُهُمْ وَفِي الرِّقَابِ وَالْغَارِمِينَ
وَفِي سَبِيلِ اللَّهِ وَاِبْنِ السَّبِيلِ فَرِيضَةً مِنَ اللَّهِ وَاللَّهُ
عَلِيمٌ حَكِيمٌ
'নিশ্চয় সদাকা হচ্ছে ফকীর ও
মিসকীনদের জন্য এবং এতে নিয়োজিত কর্মচারীদের জন্য, আর যাদের অন্তর আকৃষ্ট করতে হয় তাদের জন্য; (তা বণ্টন করা যায়) দাস আযাদ করার ক্ষেত্রে, ঋণগ্রস্তদের মধ্যে, আল্ল্লাহর রাস্তায়
এবং মুসাফিরদের মধ্যে। এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত, আর আল্লাহ মহাজ্ঞানী,
প্রজ্ঞাময়।'[15]
তাছাড়া নারীরা তাদের সঞ্চিত সম্পদ স্বতন্ত্রভাবে সংরক্ষণ করতে পারবেন- চাই তার মালিক হন বিয়ের আগে কিংবা পরে। উপরন্তু তিনি আপন স্বামীকে তার নিজস্ব সম্পদের তত্ত্বাবধায়কও নিযুক্ত করতে পারবেন। ইসলাম এ জন্য বিবাহপূর্ব ও বিবাহপরবর্তী সময়ে তার স্বতন্ত্র আইনী সত্তা সংরক্ষণেরও নিশ্চয়তা দিয়েছে। সুতরাং বিয়ের আগে মেয়েরা যেমন তার পিতার পরিবারের সঙ্গে সম্পৃক্ত, বিয়ের পরও তার অবস্থা তেমনি। বিয়ের পর তার গোত্রনামে কোনো পরিবর্তন আসবে না। যেমনটি প্রচলিত বস্তুগতভাবে সভ্য অনেক সমাজে। সেখানে বিয়ের আগে মেয়েরা গোত্রের নামে পরিচিত হয় আর বিয়ের পর সমাজ বা আইন তাকে স্বামীর বংশ পরিচয়ে অধিকার দেয়। যেন বিয়ের পর তার মালিকানা পিতার পরিবার থেকে স্বামীর পরিবারে স্থানান্তরিত হয়েছে!
তাছাড়া নারীরা তাদের সঞ্চিত সম্পদ স্বতন্ত্রভাবে সংরক্ষণ করতে পারবেন- চাই তার মালিক হন বিয়ের আগে কিংবা পরে। উপরন্তু তিনি আপন স্বামীকে তার নিজস্ব সম্পদের তত্ত্বাবধায়কও নিযুক্ত করতে পারবেন। ইসলাম এ জন্য বিবাহপূর্ব ও বিবাহপরবর্তী সময়ে তার স্বতন্ত্র আইনী সত্তা সংরক্ষণেরও নিশ্চয়তা দিয়েছে। সুতরাং বিয়ের আগে মেয়েরা যেমন তার পিতার পরিবারের সঙ্গে সম্পৃক্ত, বিয়ের পরও তার অবস্থা তেমনি। বিয়ের পর তার গোত্রনামে কোনো পরিবর্তন আসবে না। যেমনটি প্রচলিত বস্তুগতভাবে সভ্য অনেক সমাজে। সেখানে বিয়ের আগে মেয়েরা গোত্রের নামে পরিচিত হয় আর বিয়ের পর সমাজ বা আইন তাকে স্বামীর বংশ পরিচয়ে অধিকার দেয়। যেন বিয়ের পর তার মালিকানা পিতার পরিবার থেকে স্বামীর পরিবারে স্থানান্তরিত হয়েছে!
আমরা যদি সূরা নিসার একাদশ আয়াত নিয়ে গবেষণা করি, তাহলে দেখতে পাই পুরুষকে পৈতৃক সম্পত্তিতে বেশি দেয়া হয়েছে
তার কিছু দায়িত্ব ও কল্যাণের সঙ্গে শর্তযুক্ত করে। যখন সরাসরি এ দায়িত্ব চলে যাবে, তখন অতিরিক্ত অংশটুকুও চলে যাবে। কেননা আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন,
يُوصِيكُمُ
اللَّهُ فِي أَوْلَادِكُمْ لِلذَّكَرِ مِثْلُ حَظِّ الْأُنْثَيَيْنِ فَإِنْ كُنَّ
نِسَاءً فَوْقَ اثْنَتَيْنِ فَلَهُنَّ ثُلُثَا مَا تَرَكَ وَإِنْ كَانَتْ
وَاحِدَةً فَلَهَا النِّصْفُ وَلِأَبَوَيْهِ لِكُلِّ وَاحِدٍ مِنْهُمَا السُّدُسُ مِمَّا
تَرَكَ إِنْ كَانَ لَهُ وَلَدٌ فَإِنْ لَمْ يَكُنْ لَهُ وَلَدٌ وَوَرِثَهُ
أَبَوَاهُ فَلِأُمِّهِ الثُّلُثُ فَإِنْ كَانَ لَهُ إِخْوَةٌ فَلِأُمِّهِ
السُّدُسُ مِنْ بَعْدِ وَصِيَّةٍ يُوصِي بِهَا أَوْ دَيْنٍ آَبَاؤُكُمْ
وَأَبْنَاؤُكُمْ لَا تَدْرُونَ أَيُّهُمْ أَقْرَبُ لَكُمْ نَفْعًا فَرِيضَةً مِنَ
اللَّهِ إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلِيمًا حَكِيمًا ﴿11﴾
'আল্লাহ তোমাদেরকে
তোমাদের সন্তানদের সম্পর্কে নির্দেশ দিচ্ছেন,
এক
ছেলের জন্য দুই মেয়ের অংশের সমপরিমাণ। তবে যদি তারা দুইয়ের অধিক মেয়ে হয়, তাহলে তাদের জন্য হবে,
যা সে
রেখে গেছে তার তিন ভাগের দুই ভাগ; আর যদি একজন মেয়ে হয়
তখন তার জন্য অর্ধেক। আর তার মাতা পিতা উভয়ের প্রত্যেকের জন্য ছয় ভাগের এক ভাগ সে
যা রেখে গেছে তা থেকে, যদি তার সন্তান থাকে।
আর যদি তার সন্তান না থাকে এবং তার ওয়ারিস হয় তার মাতা পিতা তখন তার মাতার জন্য তিন
ভাগের এক ভাগ। আর যদি তার ভাই-বোন থাকে তবে তার মায়ের জন্য ছয় ভাগের এক ভাগ। অসিয়ত
পালনের পর, যা দ্বারা সে অসিয়ত
করেছে অথবা ঋণ পরিশোধের পর। তোমাদের মাতা পিতা ও তোমাদের সন্তান-সন্ততিদের মধ্য
থেকে তোমাদের উপকারে কে অধিক নিকটবর্তী তা তোমরা জান না। আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত। নিশ্চয় আল্লাহ
সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।'[16]
আয়াতে দেখা গেল একমাত্র মেয়ে তার পিতার অর্ধেক
সম্পত্তির উত্তরাধিকারীণি হয় আর অবশিষ্ট অর্ধেক সম্পত্তির অংশীদার হয় নারী-পুরুষ
উভয়ে অথবা দুই মেয়ে থাকলে তারা পিতামাতার সম্পদের দুই তৃতীয়াংশের মালিক হয় আর
অবশিষ্ট তৃতীয়াংশ বণ্টিত হয় নারী-পুরুষ উভয়ের মধ্যে। অতএব মীরাস বা
উত্তরাধিকারের অংশ নির্ধারিত হয় দায়িত্বের স্তরের সঙ্গে সম্পৃক্ত আত্মীয়তার স্তর
অনুপাতে।
আর সাধারণত এই উত্তরাধিকার সম্পদের মালিকানা লাভের একমাত্র উপায় হয় না। বরং তা একমাত্র উপায় হওয়া সমীচীনও নয়, মানুষ যার ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীল। কেননা আল্লাহ তা‘আলা মানুষকে নারী-পুরুষ দুই শ্রেণীতে সৃষ্টি করেছেন এবং তাদের প্রত্যেককে এমনসব স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যে সমুজ্জ্বল করেছেন, একটি সমাজের জন্য যার কোনো বিকল্প নেই। তাছাড়া তাদের প্রত্যেককে জ্ঞান ও ব্যক্তিগত অর্জনের সুযোগও দান করেছেন। তবে যে ব্যক্তি অক্ষম, তার ভার অর্পণ করেছেন সমাজের সুস্থ অংশের ওপর। এজন্যই তার সম্পদে ওই অক্ষম ব্যক্তির জন্য একটি অংশ রেখেছেন এবং তার নাম দিয়েছেন ফরজকৃত যাকাত। তদুপরি তাদেরকে অতিরিক্ত সদকা করতে উদ্বুদ্ধ করেছেন।
আর সাধারণত এই উত্তরাধিকার সম্পদের মালিকানা লাভের একমাত্র উপায় হয় না। বরং তা একমাত্র উপায় হওয়া সমীচীনও নয়, মানুষ যার ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীল। কেননা আল্লাহ তা‘আলা মানুষকে নারী-পুরুষ দুই শ্রেণীতে সৃষ্টি করেছেন এবং তাদের প্রত্যেককে এমনসব স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যে সমুজ্জ্বল করেছেন, একটি সমাজের জন্য যার কোনো বিকল্প নেই। তাছাড়া তাদের প্রত্যেককে জ্ঞান ও ব্যক্তিগত অর্জনের সুযোগও দান করেছেন। তবে যে ব্যক্তি অক্ষম, তার ভার অর্পণ করেছেন সমাজের সুস্থ অংশের ওপর। এজন্যই তার সম্পদে ওই অক্ষম ব্যক্তির জন্য একটি অংশ রেখেছেন এবং তার নাম দিয়েছেন ফরজকৃত যাকাত। তদুপরি তাদেরকে অতিরিক্ত সদকা করতে উদ্বুদ্ধ করেছেন।
পক্ষান্তরে পশ্চিমা সমাজে নারী যদি পৈত্রিক
সম্পদে সমানাধিকার চায়, তাহলে তা সে তখনই
পাবে যখন সে পুরুষের সঙ্গে পরিবারে সমান দায়িত্ব পালন করবে। এর বিনিময়ে তার সম্পদে
বিশেষত মানব রচিত আইনে তার তালাকের পর বিচ্ছেদের সময় তার সম্পদ নারী-পুরুষের মধ্যে
সমানভাবে বণ্টিত হয়। অথচ অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় এই সম্পদ সঞ্চয়ে অনেক ক্লেশ সহ্য
করেছে অথবা সে মাত্রই এ সম্পদ অর্জন করেছে আর তার স্বামী এ সম্পদ অর্জনে কোনোভাবেই
কোনো অবদান রাখেনি।
অতএব, প্রতিটি মুসলিম
রমণীর উচিত, আল্লাহ প্রদত্ত তার হক ও অধিকার সম্পর্কে জানা এবং নিজের প্রাপ্য
অধিকার বুঝে নেয়া। আর মুসলিম পুরুষদেরও উচিত, আপন স্ত্রী-কন্যা ও বোনের প্রাপ্য
অধিকার ঠিক মতো পরিশোধ করা। কিন্তু দুঃখের সঙ্গে লক্ষ্য করি অনেক মুসলিম পরিবারেই
ভাইয়েরা সহোদর বোনদের কুরআন বণ্টিত পদ্ধতিতে পিতার সম্পত্তি না দিয়ে গড়পড়তা দিয়ে
থাকেন। এটা স্পষ্টই যুলম এবং অবৈধ কাজ। কে জানে, হয়তো আল্লাহর হুকুমের যথাযথ
অনুসরণ না করার আযাব স্বরূপই হয়তো ইদানীং আমাদের মা-বোনরা ইসলামের সঙ্গে সাংঘর্ষিক
নারী অধিকারের কথায় কান দিচ্ছে। আল্লাহ তা‘আলা আমাদের সবাইকে তার বণ্টিত হকগুলো
যথাযথ আদায় করার তাওফীক দান করুন। আমীন।
[2]. তিরমিযী,
তাহারাত অধ্যায়।
[5]. সূরা
আন-নাহল, আয়াত : ৯৭।
[6]. সূরা
আল-আহযাব, আয়াত : ৩৫।
[7]. সূরা
আল-বাকারা, আয়াত : ৩৫-৩৬।
[9]. যেমন দেখুন,
বুখারী, আদব অধ্যায়।
[10]. তিরমিযী,
তাহারাত অধ্যায়।
[11]. সূরা
আল-বাকারা, আয়াত : ২৩৪।
[12]. তিরমিযী,
সদাচার ও সুসম্পর্ক অধ্যায়।
[13]. তিরমিযী,
মানাকেব অধ্যায়।
[14]. দুয়ালিবী,
মানবাধকিার, পৃ. ৪-৫; আরও দেখুন, ১৭৮৭ সালে প্রকাশিত আমেরিকার সংবিধান। আমেরিকায়
১৯২০ সাল পর্যন্ত কেবল শ্বেতাঙ্গ স্বাধীনরাই নাগরিকত্ব পেত এবং নারীকে কোনো সরাসরি
নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ দেয়া হতো না। দেখুন, ডারইউন, সাংবিধানিক
অভিজ্ঞতা।
_________________________________________________________________________________
লেখক: আলী হাসান তৈয়ব
সম্পাদনা : মো: আবদুল কাদের
সূত্র : ইসলাম প্রচার ব্যুরো, রাবওয়াহ, রিয়াদ, সৌদিআরব
পোস্টটি ভালো লাগলে শেয়ার করতে ভুলবেন না কিন্তু।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন