কবীরা গুনাহ
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
সকল প্রশংসা একমাত্র আল্লাহর । আমরা শুধু তারই প্রশংসা করি এবং তার নিকট সাহায্য প্রার্থনা করি ও তার নিকট ক্ষমা চাই। আল্লাহ যাকে হেদায়েত দিবেন কেউ তাকে গোমরাহ করতে পারবে না। আর আল্লাহ যাকে গোমরাহ করেন তাকে কেউ পথ দেখাতে পারে না এবং আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া প্রকৃত কোন উপাস্য নেই। তিনি একক, তার কোন শরীক নেই। আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মদ সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর বান্দা ও রাসূল।
ইরশাদ হচ্ছে-
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ حَقَّ تُقَاتِهِ وَلَا تَمُوتُنَّ إِلَّا وَأَنْتُمْ مُسْلِمُونَ ﴿102﴾
يَاأَيُّهَا النَّاسُ اتَّقُوا رَبَّكُمُ الَّذِي خَلَقَكُمْ مِنْ نَفْسٍ وَاحِدَةٍ وَخَلَقَ مِنْهَا زَوْجَهَا وَبَثَّ مِنْهُمَا رِجَالًا كَثِيرًا وَنِسَاءً وَاتَّقُوا اللَّهَ الَّذِي تَسَاءَلُونَ بِهِ وَالْأَرْحَامَ إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلَيْكُمْ رَقِيبًا
(النساء:১)
আরো বলেন-
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَقُولُوا قَوْلًا سَدِيدًا ﴿70﴾ يُصْلِحْ لَكُمْ أَعْمَالَكُمْ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ وَمَنْ يُطِعِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ فَقَدْ فَازَ فَوْزًا عَظِيمًا ﴿71﴾
(الأحزاب:৭০-৭১)
নিশ্চয় সর্বোত্তম কথা হল আল্লাহর কিতাব। আর সর্বোত্তম আর্দশ হল রাসূলের আদর্শ। আর সর্ব নিকৃষ্ট বিষয় হল মনগড়া ও নব প্রবর্তিত বিষয় তথা বিদআত, আর প্রতিটি বিদআতই হল গোমরাহী। আর প্রতিটি গোরাহীর পরিনাম জাহান্নাম।
আল্লাহ বলেন:
إِنْ تَجْتَنِبُوا كَبَائِرَ مَا تُنْهَوْنَ عَنْهُ نُكَفِّرْ عَنْكُمْ سَيِّئَاتِكُمْ وَنُدْخِلْكُمْ مُدْخَلًا كَرِيمًا ﴿31﴾
(النساء:৩১)
উল্লিখিত আয়াতে আল্লাহ তাআলা যারা কবীরা গুনাহ থেকে বেচে থাকবে তাদেরকে দয়া ও অনুগ্রহে জান্নাতে প্রবেশ করানোর দায়িত্ব নিয়েছেন, কারণ ছগীরা গুনাহ বিভিন্ন নেক আমল যেমন- সালাত, সওম, জুমআ, রমযান ইত্যাদির মাধ্যমে মাফ হয়ে যাবে।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
الصلوات الخمس والجمعة إلى الجمعة ورمضان إلي رمضان مكفرات لما بينهن إذا اجتنبت الكبائر. (رواه مسلم)
‘‘পাচ ওয়াক্ত সালাত, এক জুমআ হতে অন্য জুমআ এবং এক রমযান হতে অন্য রমযান মধ্যবর্তী সময়ের গুনাহগুলোকে ক্ষমা করিয়ে দেয়, যদি বড় গুনাহ হতে বেচে থাকা যায়।’’ (মুসলিম)উল্লেখিত হাদীসের দ্বারা স্পষ্টভাবে বুঝা যাচ্ছে যে, কবীরা গুনাহ হতে বেচে থাকা অতীব জরুরী । যদিও জ্ঞানীরা বলেন, তওবা ও ক্ষমা প্রার্থনার ফলে কোন কবীরা গুনাহ অবশিষ্ট থাকে না । আর একই গুনাহ বার বার করলে তা ছগীরা থাকে না।
অতএব কবীরা গুনাহ হতে বেচে থাকতে হলে তা সম্পর্কে আমাদের সঠিক ধারণা থাকা অত্যন্ত প্রয়োজন।
হুযাইফা ইবনুল ইয়ামন রা. বলেন - লোকেরা রাসূল সা.কে ভাল ভাল বিষয়গুলি জিজ্ঞাসা করত এবং আমি খারাপ বিষয়গুলো সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতাম এজন্য যে, যাতে আমাকে খারাপ বিষয়গুলো স্পর্শ করতে না পারে। কবি বলেন-
عرفت الشر لا للشر لكن لتوقيه
ومن لم يعرف الخير من الشر يقع فيه
‘‘আমি খারাপ সম্পর্কে জেনেছি তা করার উদ্দেশে নয়,বরং খারাপি হতে রক্ষা পেতে। কারণ, যে লোক মন্দ সম্পর্কে কোন ধারণা রাখে না সে তাতে পতিত হয়।’’বিষয়টাকে অত্যন্ত গুরুত্ব পূর্ণ মনে করে যে সব কবীরা গুনাহ হাফেয ইমাম শামসুদ্দিন আয-যাহাবী তার প্রসিদ্ধ কিতাব ‘‘আল কাবায়ের’’ এ উল্লেখ করেছেন সে গুলোসহ আরো কিছু কবীরা গুনাহের আলোচনা করা হয়েছে।
এসব কবীরা গুনাহ সম্পর্কে জানা থাকলে হয়ত এ গুনাহ হতে বেচে থাকাও সম্ভব হবে।
এখানে প্রতিটি কবীরা গুনাহের আলোচনার সাথে একটি বা দু’টি করে কুরআন ও হাদীসের বিশুদ্ধ প্রমাণ উল্লেখ করা হয়েছে এবং প্রয়োজন অনুসারে কোন কোন স্থানে বিষয়টির সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করা হয়েছে। আল্লাহর নিকটই আমরা সাহায্য প্রার্থনা করি।
আল্লাহর সুন্দর নামসমূহ এবং মহৎ গুণাবলীর মাধ্যমে র্প্রাথনা করছি যে,এই রিসালার মধ্যে যে বিষয়গুলি রয়েছে তার দ্বারা আমাকে এবং সমস্ত মুসলমানকে প্রতিদান দিবেন ঐ দিন যে দিন কোন ধন সম্পদ ও সন্তান কারো উপকারে আসবে না। একমাত্র ঐ ব্যক্তি উপকৃত হবে যে আল্লাহর নিকট সরল মন নিয়ে উপস্থিত হবেন । আর এই আমল সহ অন্য সমস্ত আমল একমাত্র আল্লাহর জন্য। তিনি তার সন্তুষ্টি অর্জন ও কুরআন, হাদীসের অনুসৃত পথ নির্দেশনা অনুসলরণ করার তওফীক দিন।
وآخر دعوانا ان الحمد لله رب العالمين.
কবীরা গুনাহ কি?
একারণেই আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস রা. বলেন- কবীরা গুনাহ সাত হতে সত্তর পর্যন্ত-(তাবারী বিশুদ্ধ সনদে)।
ইমাম শামসুদ্দিন আয-যাহাবী বলেন, উক্ত হাদীসে কবীরা গুনাহের নির্দিষ্ট সংখ্যা উল্লেখ করা করা হয়নি।
শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যা রহ. বলেন, কবীরা গুনাহ হল: যে সব গুনাহের কারণে দুনিয়াতে আল্লাহ তাআলা কর্তৃক শাস্তির বিধান আছে এবং আখিরাতে শাস্তির ধমক দেয়া হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, যে সব গুনাহের কারণে কুরআন ও হাদীসে ঈমান চলে যাওয়ার হুমকি বা অভিশাপ ইত্যাদি এসেছে তাকেও কবীরা গুনাহ বলে।
ওলামায়ে কেরাম বলেন, তওবা ও ক্ষমা প্রার্থনার ফলে কোন কবীরা গুনাহ অবশিষ্ট থাকে না আবার একই ছগীরা গুনাহ বার বার কারার কারণে তা ছগীরা (ছোট ) গুনাহ থাকে না।
ওলামায়ে কেরাম কবীরা গুনাহের সংখ্যা সত্তরটির অধিক উল্লেখ করেছেন। যা নীচে তুলে ধরা হলঃ
১ নং কবীরা গুনাহ
الشرك بالله
আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করা
শিরক দুই প্রকারঃ
১. শিরকে আকবার, আল্লাহর সাথে আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোন কিছুর ইবাদত করা। অথবা যে কোন প্রকারের ইবাদতকে আল্লাহ ছাড়া অন্য কিছুর জন্য নিবেদন করা যেমন- আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো উদ্দেশ্যে প্রাণী জবেহ করা ইত্যাদি।
যদি কোন ব্যক্তি ইবাদতের কিছু অংশে গাইরুল্লাহকে শরীক করার মুহূর্তে আল্লাহর ইবাদত করে তবুও তা শিরক ।
দীলল:
إِنَّ اللَّهَ لَا يَغْفِرُ أَنْ يُشْرَكَ بِهِ وَيَغْفِرُ مَا دُونَ ذَلِكَ لِمَنْ يَشَاءُ (النساء:৪৮)
‘‘নিঃসন্দেহে আল্লাহ তাআলা তার সাথে শিরক করাকে ক্ষমা করবেন না। তবে শিরক ছাড়া অন্যান্য গুনাহ যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করবেন।’’ (নিসা: ৪৮)২.শিরকে আসগার বা ছোট শিরক: রিয়া অর্থাৎ লোক দেখানোর উদ্দেশ্য নিয়ে আমল করা ইত্যাদি।
আল্লাহ তাআলা বলেন:
الَّذِينَ هُمْ عَنْ صَلَاتِهِمْ سَاهُونَ ﴿5﴾ الَّذِينَ هُمْ يُرَاءُونَ ﴿6﴾ (الماعون: ৪-৬)
‘‘অতএব দুর্ভোগ সে সব মুসল্লীর যারা তাদের সালাত সম্পর্কে বে-খবর যারা তা লোক দেখানোর জন্য করে।’’ (মাউন:৪-৬)রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আল্লাহ তাআলা বলেন:
أٍنا أغنى الشركاء عن الشرك من عمل عملا اشرك معي فيه غيري تركته وشركه. (رواه مسلم:৫৩০০)
‘‘আমি অংশিদারিত্ব থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত। যে ব্যক্তি কোন কাজ করে আর ঐ কাজে আমার সাথে অন্য কাউকে শরীক করে, আমি ঐ ব্যক্তিকে তার শিরকে ছেড়ে দেই।’’ (মুসলিম:৫৩০০)
২ নং কবীরা গুনাহ
قتل النفس
মানুষ হত্যা করা
আল্লাহ বলেন:—
وَالَّذِينَ إِذَا أَنْفَقُوا لَمْ يُسْرِفُوا وَلَمْ يَقْتُرُوا وَكَانَ بَيْنَ ذَلِكَ قَوَامًا ﴿67﴾ وَالَّذِينَ لَا يَدْعُونَ مَعَ اللَّهِ إِلَهًا آَخَرَ وَلَا يَقْتُلُونَ النَّفْسَ الَّتِي حَرَّمَ اللَّهُ إِلَّا بِالْحَقِّ وَلَا يَزْنُونَ وَمَنْ يَفْعَلْ ذَلِكَ يَلْقَ أَثَامًا ﴿68﴾ يُضَاعَفْ لَهُ الْعَذَابُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَيَخْلُدْ فِيهِ مُهَانًا ﴿69﴾ إِلَّا مَنْ تَابَ وَآَمَنَ وَعَمِلَ عَمَلًا صَالِحًا
(الفرقان:৬৮-৭০)
‘‘এবং যারা আল্লাহর সাথে অন্য উপাস্যের এবাদত করে না,আল্লাহ যার হত্যা অবৈধ করেছেন সঙ্গত কারণ ব্যতীত তাকে হত্যা করে না এবং ব্যভিচার করে না। আর যারা এসব কাজ করে তারা শাস্তির সম্মুখীন হবে। কিয়ামত দিবসে তাদের শাস্তি দ্বিগুন হবে এবং লাঞ্চিত অবস্থায় সেথায় তারা চিরকাল বসবাস করবে। কিন্তু তারা নয়, যারা তওবা করে বিশ্বাস স্থাপন করে এবং সৎকর্ম করে।’’ (সূরা আল-ফোরকান:৬৮-৭০)উল্লিখিত আয়াতে আল্লাহ তাআলা হত্যা করতে নিষেধ করেছেন। আর যারা হত্যা করে তাদের জন্য কঠিন শাস্তির কথা উল্লেখ করেছেন। সুতরাং শরীয়ত অনুমোদিত কারণ ছাড়া মানুষ হত্যা করা কবীরা গুনাহ।
৩নং কবীরা গুনাহ
السحر
যাদু
আল্লাহ বলেন:
وَلَكِنَّ الشَّيَاطِينَ كَفَرُوا يُعَلِّمُونَ النَّاسَ السِّحْرَ. (البقرة:১০২)
‘‘কিন্তু শয়তানেরা কুফরী করে মানুষকে যাদু শিক্ষা দিত।’’ (বাকারা:১০২)আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত রাসূলে কারীম সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন:
اجتنبوا السبع الموبقات الشرك بالله والسحر وقتل النفس التي حرم الله إلا بالحق وأكل الرباء وأكل مال اليتيم والتولي يوم الزحف وقذف المحصنات المؤمنات الغافلات. (رواه البخاري:২৫৬০)
‘‘তোমরা সাতটি ধ্বংসাত্মক বিষয় থেকে বেচে থাকবে সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞাসা করলেন ইয়া রাসূলুল্লাহ ঐ ধ্বংসাত্মাক বিষয় গুলি কি? তিনি জবাবে বলেন১- আল্লাহর সাথে শরিক করা,
২- যাদু করা,
৩- অন্যায় ভাবে কাউকে হত্যা করা যা আললাহ তাআলা হারাম করে দিয়েছেন,
৪- সুদ খাওয়া,
৫-এতিমের সম্পদ আত্মসাৎ করা,
৬- জিহাদের ময়দান থেকে পলায়ন করা,
৭- সতী সাধ্বী মুমিন মহিলাকে অপবাদ দেয়া।’’ (বুখারী:২৫৬)
৪ নং কবীরা গুনাহ
ةرك الصلاة বা (সালাত ত্যাগ করা)
আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন:
فَخَلَفَ مِنْ بَعْدِهِمْ خَلْفٌ أَضَاعُوا الصَّلَاةَ وَاتَّبَعُوا الشَّهَوَاتِ فَسَوْفَ يَلْقَوْنَ غَيًّا ﴿59﴾ إِلَّا مَنْ تَابَ وَآَمَنَ وَعَمِلَ صَالِحًا ﴿60﴾
(مريم ৫৯-৬০)
‘‘তাদের পর আসলো (অপদার্থ) বংশধর। তারা সালাত নষ্ট করল ও লালসার বশবর্তী হল, সুতরাং তারা অচিরেই কু-কর্মের শাস্তি প্রত্যক্ষ করবে। কিন্তু তারা নয় যারা তওবা করেছে, ঈমান এনেছে ও নেক কাজ করেছে।’’ (মারইয়াম ৫৯-৬০)হাদীসে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন-
بين الرجل وبين الشرك والكفر ةرك الصلاة. (مسلم:১১৬)
‘‘কোন মুমিন ব্যক্তি এবং শিরক ও কুফরের মধ্যে পার্থক্য হল সালাত ত্যাগ করা।’’ (মুসলিম) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
العهد الذي بيننا وبينهم الصلاة فمن تركها فقد كفر. (أحمد:২১৮৫৯)
‘‘আমাদের ও তাদের মধ্যে পার্থক্য হল সালাত, যে তা পরিত্যাগ করল সে কাফের হয়ে গেল।’’ (আহমাদ:২১৮৫৯)
৫নং কাবীরা গুনাহ
منع الزكاة বা যাকাত আদায় না করা
আল্লাহ বলেন-
وَلَا يَحْسَبَنَّ الَّذِينَ يَبْخَلُونَ بِمَا آَتَاهُمُ اللَّهُ مِنْ فَضْلِهِ هُوَ خَيْرًا لَهُمْ بَلْ هُوَ شَرٌّ لَهُمْ سَيُطَوَّقُونَ مَا بَخِلُوا بِهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ
(آل عمران:১৮০)
‘‘আর আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদের যা দান করেছেন, তাতে যারা কৃপণতা করে। এই কার্পণ্য তাদের জন্য মঙ্গলজনক হবে বলে তারা যেন ধারণা না করে। বরং এটা তাদের পক্ষে একান্তই ক্ষতিকর হবে। যাতে তারা কার্পণ্য করবে সে সকল ধন সম্পদ কিয়ামতের দিনে তাদের গলায় বেড়ী বানিয়ে পরানো হবে।’’ (আল ইমরান:১৮০)
৬নং কবীরা গুনাহ
إفطار يوم من رمضان بلا عذر
সঙ্গত কারণ ছাড়া রমযানের সওম ভঙ্গ করা বা না রাখা।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
بني الإسلام على خمس شهادة أن لا إله إلا الله وأن محمدا رسول الله وإقام الصلوة وإيناء الزكاة وحج البيت وصوم رمضان.
(رواه البخارى:৭)
‘‘ইসলাম পাঁচটি ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। (১) এ কথার সাক্ষ্য দেয়া যে, আল্লাহ ছাড়া আর কোন সত্যিকার উপাস্য নেই এবং মুহাম্মদ সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল,
(২) সালাত প্রতিষ্ঠা করা,
(৩) যাকাত দেয়া,
(৪) হজ্জ করা,
(৫) রামযান মাসের সওম রাখা।’’] (বুখারী:৭)
৭ নং কবীরা গুনাহ
ترك الحج مع القدرة عليه
সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও হজ্জ না করা
আল্লাহ রাববুল আলামীন বলেন-
وَلِلَّهِ عَلَى النَّاسِ حِجُّ الْبَيْتِ مَنِ اسْتَطَاعَ إِلَيْهِ سَبِيلًا وَمَنْ كَفَرَ فَإِنَّ اللَّهَ غَنِيٌّ عَنِ الْعَالَمِينَ ﴿97﴾
(آل عمران: ৯৭)
‘‘আর এ ঘরের হজ্জ করা সে সকল মানুষের জন্য অবশ্য কর্তব্য যারা সেথায় যাওয়ার সামর্থ্য রাখে । আর যে প্রত্যাখ্যান করবে সে জেনে রাখুক আল্লাহ সারা বিশ্বের কোন কিছুরই মখোপেক্ষী নয়।’’ (আল-ইমরান:৯৭)
৮নং কবীরা গুনাহ
عقوق الوالدين
মাতা-পিতার অবাধ্য হওয়া
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
الا أنيئكم بأكبر الكبائر الإشراك بالله وعقوق الوالدين وقول الزور..
(رواه البخارى:৬৪৬০)
‘‘আমি কি তোমাদেরকে সবচেয়ে বড় গুনাহ কি তা বলে দিব না ? আর তা হল আল্লাহর সাথে শরীক করা, মাতা-পিাতার অবাধ্য হওয়া এবং মিথ্যা কথা বলা।’’ (বুখারী:৬৪৬)
৯ নং কবীরা গুনাহ
هجر الأقارب وتقطيع الأرحام
আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা এবং নিকট আত্মীয়দের পরিত্যাগ করা।
আল্লাহ বলেন-
فَهَلْ عَسَيْتُمْ إِنْ تَوَلَّيْتُمْ أَنْ تُفْسِدُوا فِي الْأَرْضِ وَتُقَطِّعُوا أَرْحَامَكُمْ
(محمد: ২২-২৩)
‘‘ক্ষমতা লাভের পর স্মভবত: তোমরা পৃথিবীতে ফাসাদ করবে এবং আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করবে। এদের প্রতিই আল্লাহ অভিস্মপাত করেন, অতঃপর তাদেরকে বধির ও দৃষ্টিহীন করেন।’’ (মুহাম্মদ:২২-২৩)রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
لايدخل الجنة قاطع رحم. . (رواه المسلم:৪৬৩৩)
‘‘আত্মীয়তার ছিন্নকারী বেহেশতে প্রবেশ করবে না।’’ ( মুসলিম:৪৬৩৩)
১০ নং কবীরা গুনাহ
الزنا
ব্যভিচার করা
আল্লাহ তাআলা বলেন-
وَلَا تَقْرَبُوا الزِّنَا إِنَّهُ كَانَ فَاحِشَةً وَسَاءَ سَبِيلًا (الإسراء: ৩২)
‘‘তোমরা ব্যভিচারের কাছেও যেও না । নিশ্চয়ই এটা অশ্লীল কাজ ওঅতি মন্দ পথ।’’ (ইসরা:৩২)রাসূলেকারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
إذا زنى العبد خرج منه الإيمان فكان على رأسه كالظلة فإذا أقلع رجع إليه
(رواه الترمذى:২৫৪৯)
‘‘যখন কোন মানুষ ব্যভিচারে লিপ্ত হয়, তখন তার থেকে ঈমান বের হয়ে যায়। ঈমান তার মাথার উপর ছায়ার মত অবস্থান করে যাখন সে বিরত থাকে ঈমান আবার ফিরে আসে।’’ (তিরমিযি:২৫৪৯)রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
كتب على ابن آدم نصيبه من الزنا مدرك ذلك لا محالة فالعينان زناهما النظر والأذنان زناهما الاستماع واللسان زناهما الكلام واليد زناهما البطش والرجل زناهما الخطى والقلب يهوي ويتمنى ويصدق ذلك الفرج. (رواه مسلم:৪৮০২)
‘‘আদম সন্তানের উপর ব্যভিচারের কিছু অংশ লিপিবদ্ধ হয়েছে সে অবশ্যই তার মধ্যে লিপ্ত হবে। দুই চক্ষুর ব্যভিচার হল দৃষ্টি এবং তার দুই কানের ব্যভিচার শ্রবণ, মুখের ব্যভিচার হল কথা বলা, হাতের ব্যভিচার হল স্পর্শ করা ও পায়ের ব্যভিচার হল পদক্ষেপ আর অন্তরে ব্যভিচারের আশা ও ইচ্ছার সঞ্চার হয়, অবশেষে লজ্জাস্থান একে সত্যে অথবা মিথ্যায় পরিণত করে।’’ (মুসলিম:৪৮০২)
১১ নং কবীরা গুনাহ
اللواط وإتيان المرأة في الدبر
পুং মৈথূন এবং স্ত্রীর মলদ্বারে সঙ্গম করা
আল্লাহ বলেন-
وَلُوطًا إِذْ قَالَ لِقَوْمِهِ أَتَأْتُونَ الْفَاحِشَةَ مَا سَبَقَكُمْ بِهَا مِنْ أَحَدٍ مِنَ الْعَالَمِينَ ﴿80﴾ إِنَّكُمْ لَتَأْتُونَ الرِّجَالَ شَهْوَةً مِنْ دُونِ النِّسَاءِ بَلْ أَنْتُمْ قَوْمٌ مُسْرِفُونَ ﴿81﴾ (الأعراف: ৮০-৮১)
‘‘এবং লুতকেও পাঠিয়েছিলাম, সে তার সম্প্রদায়কে বলেছিল, ‘‘তোমরা এমন অশ্লীল কাজ করছ যা তোমাদের পূর্বে বিশ্বে কেউ করেনি। তোমরা তো কাম-তৃপ্তির জন্য নারী বাদদিয়ে পুরুষের নিকট গমন কর, তোমরা তো সীমালঙ্গনকারী সম্প্রদায়।’’ (আ‘রাফ; ৮০-৮১)রাসূল সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
من وجدتموه يعمل عمل قوم لوط فاقتلوا الفاعل والمفعول. (رواه الترمذى:১২৭৬)
‘‘তোমরা কাউকে লূত সম্প্রদায়ের কাজ (সমকাম) করতে দেখলে যে করে এবং যার সাথে করা হয় উভয়কে হত্যা কর।’’ (তিরমিযি:১২৭৬)রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন-
لا ينظر الله إلى رجل اتى رجلا او إمرآة في الدبر. (الترمذي:১০৮৬ صحيح الجامع)
‘‘আল্লাহ তাআলা ঐ ব্যক্তির প্রতি দৃষ্টি দিবেন না, যে কোন পুরুষের সাথে সমাকামিতায় লিপ্ত হয় অথবা কোন মহিলার পিছনের রাস্তা দিয়ে সহবাস করে।’’ (তিরমিযী , সহীহ আল জামে)
১২ নং কবীরা গুনাহ
أكل الربا
সুদ খাওয়া
আল্লাহ তাআলা বলেন-
الَّذِينَ يَأْكُلُونَ الرِّبَا لَا يَقُومُونَ إِلَّا كَمَا يَقُومُ الَّذِي يَتَخَبَّطُهُ الشَّيْطَانُ مِنَ الْمَسِّ. (البقرة: ২৭৫)
‘‘যারা সুদ খায় তারা দাড়াবে ঐ ব্যক্তির ন্যায় যাকে শয়তান স্পর্শ দ্বারা পাগল করে দেয়।’’ (বাকারা : ২৭৫)রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
الربا ثلاثة وسبعون بابا أيسرها مثل أن ينكح الرجل أمه وإن أربى الربي عرض الرجل المسلم. (رواه الحاكم. صحيح الجامع)
‘‘সুদের গুনাহের ৭৩টি স্তর রয়েছে। যার মধ্যে সবচেয়ে হাল্কা হল নিজ মাতাকে বিবাহ করা। সর্বনিম্নস্তর হলো কোন মুসলমানের ইজ্জত সম্ভ্রম হরণ করা।’’ (হাকেম, সহীহ আল জামে)
১৩ নং কবীরা গুনাহ
أكل مال اليتيم
এতিমের সম্পদ ভক্ষণ করা
আল্লাহ বলেন-
الَّذِينَ يَأْكُلُونَ أَمْوَالَ الْيَتَامَى ظُلْمًا إِنَّمَا يَأْكُلُونَ فِي بُطُونِهِمْ نَارًا وَسَيَصْلَوْنَ سَعِيرًا ﴿10﴾
. (النساء: ১০)
‘‘যারা এতিমের অর্থ-সম্পদ অন্যায়ভাবে খায়, তারা নিজেদের পেটে আগুনই ভর্তি করেছে এবং সত্তরই তারা অগ্নিতে প্রবেশ করবে।’’ (নিসা: ১০)
১৪ নং কবীরা গুনাহ
الكذب على الله عز وجل وعلى رسوله
আল্লাহ এবং তার রাসূলৈর উপর মিথ্যা আরোপ করা
আল্লাহ বলেন-
وَيَوْمَ الْقِيَامَةِ تَرَى الَّذِينَ كَذَبُوا عَلَى اللَّهِ وُجُوهُهُمْ مُسْوَدَّةٌ . (الزمر: ৬০)
‘‘যারা আল্লাহর প্রতি মিথ্যা আরোপ করে কেয়ামতের দিন আপনি তাদের মুখ কাল দেখবেন।’’ (যুমার: ৬০)রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
من كذب علي متعمدا فليتبوأ مقعده من النار.(البخاري:১০৭)
‘‘যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃত ভাবে আমার প্রতি মিথ্যা আরোপ করে সে যেন তার অবস্থান জাহান্নাম করে নেয়।’’ (বুখারী:১০৭) হাসান রাহ. বলেন- স্মরণ রাখতে হবে, যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তার রাসূল যা হারাম করেননি তা হারাম করল, আর যা হালাল বলেননি তা হালাল বলল, সে আল্লাহ ও তার রাসূল এর প্রতি মিথ্যা আরোপ করল এবং কুফরী করল।’’
১৫ নং কবীরা গুনাহ
الفرار من الزحف
যুদ্ধের ময়দান থেকে পলায়ন করা
আল্লাহ বলেন-
وَمَنْ يُوَلِّهِمْ يَوْمَئِذٍ دُبُرَهُ إِلَّا مُتَحَرِّفًا لِقِتَالٍ أَوْ مُتَحَيِّزًا إِلَى فِئَةٍ فَقَدْ بَاءَ بِغَضَبٍ مِنَ اللَّهِ وَمَأْوَاهُ جَهَنَّمُ وَبِئْسَ الْمَصِيرُ
(الأنفال:16)
‘‘&আর যে ব্যক্তি লড়াইয়ের ময়দান হতে পিছু হটে যাবে সে আল্লাহর গযব সাথে নিয়ে প্রত্যাবর্তন করবে অবশ্য যে লড়াইয়ের কৌশল পরিবর্তন করতে কিংবা নিজ সৈন্যদের নিকট স্থান নিতে আসে সে ব্যতীত।’’ (আনফাল:১৬)অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় বর্তমান যুগে মুসলমানরা শুধু যুদ্ধের ময়দান থেকে পলায়ন করে না বরং আল্লাহর রাস্তায় জিহাদে কোন ধরনের অংশই নিতেই চায় না। আল্লাহ আমাদেরকে ক্ষমা করুন।
১৬নং কবীরা গুনাহ
غش الإمام للرعية وظلمه لهم
শাসক ব্যক্তি কর্তৃক প্রজাদেরকে ধোকা দেয়া এবং তাদের উপর অত্যাচার করা
আল্লাহ বলেন-
إِنَّمَا السَّبِيلُ عَلَى الَّذِينَ يَظْلِمُونَ النَّاسَ وَيَبْغُونَ فِي الْأَرْضِ بِغَيْرِ الْحَقِّ أُولَئِكَ لَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ ﴿42﴾. (الشورى:৪২)
‘‘শুধু তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে, যারা মানুষের উপর অত্যাচার চালায় এবং পৃথিবীতে অন্যায়ভাবে বিদ্রোহ করে বেড়ায়। তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রনাদায়ক শাস্তি।’’ (সূরা আশ-শূরা : ৪২)রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
من غشنا فليس منا) رواه مسلم:৪৮৬৭)
‘‘যে আমাদেরকে ধোকা দেয় সে আমাদের অন্তভুক্ত নয়।’’ (মুসলিম:৪৮৬৭)রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন-
الظلم ظلماة يوم القيامة . (رواه البخارى:২২৬৭)
‘‘অত্যাচার কেয়ামতের দিন চরম অন্ধকার হবে।’’ ( বুখারী:২২৬৭) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
أيما راع غش رعيته فهو في النار,(ابن عساكر. صحيح الجامع)
‘‘যে শাসক তার অধীনস্থদের ধোকা দেয়, তার ঠিকানা জাহান্নাম।’’ (ইবনে আসাকির , সহীহ আল জামে) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
من ولي من أمنور المسلمين شيئا فاحتجت دون خلتهم وحاجتهم وفقرهم وفاقتهم احجتب الله عنه يوم القيامة دون خلته وفاقته. (رواه أبو داؤد:২৫৫৯)
‘‘যে ব্যক্তি কোন বিষয়ে মুসলমানদের প্রতিনিধিত্ব করার দায়িত্ব পান, অতঃপর সে তাদের অভাব-অনটন ও প্রয়োজনের সময় নিজেকে গোপন করে রাখে, আল্লাহ তাআলা কেয়ামতের দিন তার অভাব দূরকরণের প্রতি লক্ষ্য রাখবেন না।’’ (আবু দাউদ:২৫৫৯)বর্তমানে আমাদের অবস্থা অত্যন্ত দুঃখজনক কারণ আমরা আমাদের ক্ষমতার অপব্যবহার করি। । আর বাতিলের ব্যাপারে একেবারেই নিশ্চুপ, নির্বিকার এবং অন্যায়ের কোন প্রতিকার নেই।
১৭ নং কবীরা গুনাহ
গর্ব, অহংকার, আত্মম্ভরিতা, হট-ধর্মিতা
আল্লাহ বলেন-
إِنَّهُ لَا يُحِبُّ الْمُسْتَكْبِرِينَ. (النحل:২৩)
‘‘নিশ্চয় আল্লাহ অহংকারীকে পছন্দ করেন না’’ (সূরা নাহল:২৩)যে ব্যক্তি সত্যের বিরুদ্ধে অহংকার করে তার ঈমান তার কোন উপকার করতে পারে না। ইবলিস-এর অবস্থা এর জ্বলন্ত প্রমাণ।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
لايدخل الجنة من كان في قلبه مثقال ذرة من كبر، قال رجل إن الرجل يحب أن يكون ثوبه حسنا ونعله حسنة؟ قال صلى الله هليه وسلم: فإن الله جميل يحب الجمال، الكبر بطر الحق وغمط الناس. (رواه مسلم:১৩১)
‘‘যার অন্তরে এক বিন্দু পরিমান অহংকার রয়েছে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না। জনৈক ব্যক্তি বললেন, কোন ব্যক্তি চায় তার জামা-কাপড়, জুতা -সেন্ডেল সুন্দর হোম তাহলে এটাও কি অহংকার? রাসূল সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তর দিলেন, আল্লাহ নিজে সুন্দর এবং তিনি সৌন্দর্যকে পছন্দ করেন। (অর্থাৎ এগুলি অহংকারের অর্ন্তভুক্ত নয়) অহংকার হলো সত্যকে গোপন করা আর মানূষকে অবজ্ঞা করা।’’ (মুসলিম)আল্লাহ বলেন-
وَلَا تُصَعِّرْ خَدَّكَ لِلنَّاسِ وَلَا تَمْشِ فِي الْأَرْضِ مَرَحًا إِنَّ اللَّهَ لَا يُحِبُّ كُلَّ مُخْتَالٍ فَخُورٍ
(لقمان:১৮)
‘‘অহংকার বশে তুমি মানুকে অবজ্ঞা করোনা এবং পৃথিবীতে অহংকারের সাথে পদচারণা করো না। কখনো আল্লাহ কোন দাম্ভিক অহংকারীকে পছন্দ করেন না ।’’ (লোকমান:১৮)রাসূল সা বলেন-
يقول الله تبارك وتعالى: العظمة إزاري والكبرياء ردائي فمن نازعني فيهما القيته في النار.
(أبوداود:৬৪৬০)
‘‘আল্লাহ তাআলা বলেন-: মহত্ব আমার পরিচয় আর অহংকার আমার চাদর, যে ব্যক্তি এ দু’টি নিয়ে টানা হেচাড়া করবে আমি তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবো।’’ (মুসলিম)
১৮ নং কবীরা গুনাহ
شهادة الزور
মিথ্যা সাক্ষী দেয়া
আল্লাহ বলেন-
وَالَّذِينَ لَا يَشْهَدُونَ الزُّورَ. (الفرقان : ৭২)
‘‘ তারা মিথ্যা ও বাতিল কাজে যোগদান করে না ।’’ (সূরা আল ফুরকান: ৭২)রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
ألا أنبئكم بأكبر الكبائر ؟ الإشراك بالله وعقوق الوالدين وقول الزور. . (رواه البخارى:৬৪৬০)
‘‘আমি কি তোমাদেরকে সবচেয়ে বড় গুনাহ সম্পর্কে অবগত করব না? তা হল আল্লাহর সাথে শিরক করা, মাত-পিতার অবাধ্য হওয়া, মিথ্যা সাক্ষ্য প্রদান করা।’’ (বুখারী:৬৪৬০)
১৯ নং কবীরা গুনাহ
شرب الخمر
মাদক দ্রব্য সেবন করা
আল্লাহ বলেন-
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا إِنَّمَا الْخَمْرُ وَالْمَيْسِرُ وَالْأَنْصَابُ وَالْأَزْلَامُ رِجْسٌ مِنْ عَمَلِ الشَّيْطَانِ فَاجْتَنِبُوهُ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ. (المائدة: ৯০)
‘‘হে মুমিনগন ! এই যে মদ, জুয়া, প্রতিমা এবং ভাগ্য নিধারক শরসমূহ, এসব শয়তানের অপবিত্র কাজ ছাড়া আর কিছু নায় । অতএব এগুলো তেকে বেচে থাক-যাতে তোমরা কল্যাণ প্রাপ্ত হও।’’ (সূরা আল-মায়েদা: ৯০)রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
كل مسكر خمر وكل خمر حرام. (مسلم:৩৭৩৪)
‘‘প্রত্যেক নেশা জাতীয় দ্রব্য হল মদ আর সকল প্রকার মদ হারাম।’’ (মুসলিম:৩৭৩৪)
لعن الله الخمر وشاربها سافيها وبائعها ومتبائعنا وعاصرها ومعتصرها وحاملها والمحمولة إليه وآكل ثمنها. (أبوداؤد:৩১৮৯)
‘‘আল্লাহ মদ পানকারী, বিক্রেতা, ক্রোতা, প্রস্ত্ততকারী, বহনকারী এবং যার জন্য বহন করা হয় সকলকে অভিসম্পাত দিয়েছেন। ’’ (আবূ দাউদ:৩১৮৯)
২০নং কবীরা গুনাহ
القمار
জুয়া খেলা
আল্লাহ বলেন-
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا إِنَّمَا الْخَمْرُ وَالْمَيْسِرُ وَالْأَنْصَابُ وَالْأَزْلَامُ رِجْسٌ مِنْ عَمَلِ الشَّيْطَانِ فَاجْتَنِبُوهُ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ ﴿90﴾.(المائدة: 90)
‘‘হে মুমিনগন ! এই যে মদ ,জুয়া, প্রতিমা এবং ভাগ্য নিধারক শরসমূহ, এসব শয়তানের অপবিত্র কাজ ছাড়া আর কিছু নয় । অতএব তোমরা এগুলো থেকে বেচে থাক-যাতে তোমরা কল্যাণ প্রাপ্ত হও।’’ (মায়েদা: ৯০)
২১নং কবীরা গুনাহ
قذف المحصنات
সতী সাধ্বী নারীর প্রতি ব্যভিচারের অপবাদ দেয়া
আল্লাহ বলেন-
إِنَّ الَّذِينَ يَرْمُونَ الْمُحْصَنَاتِ الْغَافِلَاتِ الْمُؤْمِنَاتِ لُعِنُوا فِي الدُّنْيَا وَالْآَخِرَةِ وَلَهُمْ عَذَابٌ عَظِيمٌ. (النور: ২৩)
‘‘যারা সতী সাধ্বী ঈমানদার নারীদের প্রতি অপবাদ আরোপ করে, তারা ইহকাল ও পরকালে অভিশপ্ত এবং তাদের জন্য রয়েছে মহা শাস্তি।’’ (আন নূর: ২৩) কোন সতী সাধ্বী নারীকে ব্যভিচারের অপবাদ দেয়াকে কযফ বলে (قذف) বলে।
২২ নং কবীরা গুনাহ
الغلول من الغنيمة
গনীমতের মাল আত্নসাৎ করা
যে ব্যক্তি গনীমতের মাল পাওনাদেরদের মধ্যে বন্টন পূর্বে কোন কিছু আত্নসাৎ করে করে, সে,কেয়ামতের দিন ঐ সম্পদকে বহন করা অবস্থায় উপস্থিত হবে।
আল্লাহ বলেন-
وَمَنْ يَغْلُلْ يَأْتِ بِمَا غَلَّ يَوْمَ الْقِيَامَةِ. (آل عمران:161)
‘‘আর যে ব্যক্তি গনীমাতের মালে খেয়ানত করল সে কেয়ামতের দিবসে সেই খেয়ানতকৃত বস্ত্ত বহন করে উপস্থিত হবে।’’ (সূরা আল-ইমরান:১৬১) শুধু যুদ্ধলব্ধ সম্পদে নয় এমন সকল সম্পদ যাতে অন্যের অধিকার আছে তা আত্নসাৎ বা তাতে খিয়ানত এ শাস্তির অন্তর্ভুক্ত হবে।
২৩ নং কবীরা গুনাহ
السرقة
চুরি করা
আল্লাহ বলেন-
وَالسَّارِقُ وَالسَّارِقَةُ فَاقْطَعُوا أَيْدِيَهُمَا جَزَاءً بِمَا كَسَبَا نَكَالًا مِنَ اللَّهِ وَاللَّهُ عَزِيزٌ حَكِيمٌ
(المائدة: ৩৮)
‘‘যে পুরুষ চুরি করে এবং যে নারী চুরি করে তাদের হাত কেটে দাও এটা তাদের কৃতকর্মের ফল ও আল্লাহর নির্ধারিত আদর্শ দন্ড, আল্লাহ পরাক্রান্ত জ্ঞানময়।’’ (সূরা মায়েদা: ৩৮)
২৪ নং কবীরা গুনাহ
قطع الطريق
ডাকাতি করা
অর্থাৎ মানুষের সম্পদ ছিনতাই এবং চুরি করা অথবা বল প্রয়োগের মাধ্যমে তাদের থেকে নিয়ে নেয়া। বা তাদের পিছু নিয়োতদের ইজ্জত স্মভ্রম বিনষ্ট করা।
আল্লাহ বলেন-
إِنَّمَا جَزَاءُ الَّذِينَ يُحَارِبُونَ اللَّهَ وَرَسُولَهُ وَيَسْعَوْنَ فِي الْأَرْضِ فَسَادًا أَنْ يُقَتَّلُوا أَوْ يُصَلَّبُوا أَوْ تُقَطَّعَ أَيْدِيهِمْ وَأَرْجُلُهُمْ مِنْ خِلَافٍ أَوْ يُنْفَوْا مِنَ الْأَرْضِ ذَلِكَ لَهُمْ خِزْيٌ فِي الدُّنْيَا وَلَهُمْ فِي الْآَخِرَةِ عَذَابٌ عَظِيمٌ. (المائدة: ৩৩)
‘‘আর যারা আল্লাহ, তার রাসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে এবং দেশে হাঙ্গামা সৃষ্টি করেতে সচেষ্ট হয়, তাদের শাস্তি হচ্ছে, তাদেরকে হত্যা করা হবে, অথবা ক্রুশবিদ্ধ করা হবে, অথবা তাদের হস্তপদসমূহ বিপরীত দিক থেকে কেটে দেয়া হবে। কিংবা দেশান্তর করা হবে। এটা হল তাদের পাথির্ব লাঞ্ছনা, আর পরকালের তাদের জন্য রয়েছে মহা শাস্তি।’’ (সূরা আল-মায়েদা: ৩৩)
২৫ নং কবীরা গুনাহ
اليمين الغموس
মিথ্যা শপথ
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
من خلف على يمين صبر يقطع بها مال امرئ مسلم وهو فيها فاجر لقي الله وهو عليه غضبان (البخاري:৬৬৪৭)
‘‘যে ব্যক্তি মিথ্যা শপথ করে এবং তা দ্বারা কোন মুসলামের সম্পদকে অন্যায় ভাবে আত্মসাৎ করে সে আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করবে এমন অবস্থায় যে, আল্লাহ তার উপর ক্রোধান্বিত।’’ (বুখারী:৬৬৪৭) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
الكبائر : الإشراك بالله وعقوق الوالدين وقتل النفس واليمين الغموس. (البخاري:৬১৮২)
‘‘কবীরা গুনাহ হল আল্লাহর সাথে শরীক করা । মাতা-পিতার নাফরমানী করা, হত্যা করা ও মিথ্যা শপথ করা’’। (বুখারী:৬১৮২)
২৬ নং কবীরাগুনাহ
الظلم
যুলুম , অত্যাচারা করা
জুলুম বিভিন্ন ভাবে হতে পারে। মানুষের সম্পদ অন্যায় ভাবে ভক্ষণ করা অন্যায়ভাবে প্রহার করা, গালি দেয়া, তাদের উপর বাড়াবাড়ি করা, দুর্বলদের উপর চড়াও হওয়া ও অন্যান্য যে সকল কাজে মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয় তা সবই যুলুম। আল্লাহ বলেন-
وَسَيَعْلَمُ الَّذِينَ ظَلَمُوا أَيَّ مُنْقَلَبٍ يَنْقَلِبُونَ. (الشعراء : 227)
‘‘অত্যাচারী রা শীঘ্রই জানবে তাদের গন্তব্য স্থল কোথায়।’’ (সূরা আশ-শুআরা: ২২৭)নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন-
اةفوا الظلم فانه يوم القيامة. (مسلم:৪৬৭৫)
‘‘তোমরা যুলুম করা থেকে বেচে থাক, কারণ যুলম কেয়ামতের দিন গভীর অন্ধকার পরিণতি হবে’’ (মুসলিম:৪৬৭৫)
২৭ নং কবীরা গুনাহ
المكاس
চাদাবাজী ওঅন্যায় টোল আদায়
বাস্তবিক পক্ষে এটি এক ধরনের ডাকাতি, কারণ এতে মানুষের উপর এক ধরনের জরিমানা নির্ধারণ করা হয়। চাঁদা উসূলকারী, লেখক এবং গ্রহণকারী গুনাহের মধ্যে সমানভাবে শামিল। এরা সবাই হারাম ভক্ষণকারী চাদাবাজ মূলত যুলুমের বড় সহযোগি শুধু তাই নয় বরং সে জুলুমকারী ও অত্যাচারী।
আল্লাহ বলেন-
إِنَّمَا السَّبِيلُ عَلَى الَّذِينَ يَظْلِمُونَ النَّاسَ وَيَبْغُونَ فِي الْأَرْضِ بِغَيْرِ الْحَقِّ أُولَئِكَ لَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ. (الشورى: ৪২)
‘‘ব্যবস্থা নেয়া হবে শুধূ তাদের বিরুদ্ধে যারা মানুষের উপর অত্যাচার চালায় এবং পৃথিবীতে অন্যায় ভাবে বিদ্রোহ করে করে বেড়ায়। তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রনা দায়ক শাস্তি।’’ ( সূরা আশ-শুরা : ৪২) নবী করীম এরশাদ করেন-
أتدرون من المفلس ؟ إن المفلس من أمتي من يأتي يوم القيامة بصلاة وصيام وزكاة ويأتي وقد شتم هذا وقذف هذا وأكل مال هذا وسفك دم هذا وضرب هذا فيعطي هذا من حسناته وهذا من حسناته فان فنيت حسناته قبل أن يقضى ما عليه أخذ من خطايا هم فطرحت عليه ثم طرح في النار. (رواه مسلم:৭৬৮৬)
তোমরা কি জান প্রকৃত দরিদ্র কে আমার উম্মতের মধ্যে? প্রকৃত দরিদ্র ঐ ব্যক্তি, যে কেয়ামতের দিন অনেক সালাত, সওম, যাকাত, নিয়ে উপস্থিত হবে। তবে সে দুনিয়াতে কাউকে হত্যা করেছে, মিথ্যা অপবাদ দিয়েছে, করেছে, কাউকে গাল-মন্দ করেছে, কারো সম্পদ আত্মসাৎ করেছে, কাউকে মেরেছে অথবা কাউকে প্রহার করেছে । কেয়ামাতের দিন এ ব্যক্তির নেক আমল বা ছওয়াব তাদের (তার দ্বারা যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে) দেয়া হবে। যদি তার নেক আমলের ছওয়াব পাওনাদারদের পাওনা পরিশোধ করার পূর্বেই শেষ হয়ে যায় তাখন তাদের গুনাহগুলোকে তার উপর চাপিয়ে দেয়া হবে এবং তার পর তাকের জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে ।’’ (মুসলিম:৭৬৮৬)
২৮ নং কবীরা গুনাহ
اكل الحرام وتناوله على أي وجه كان
হারাম খাওয়া, তা যে কোন উপায়ে হোক না কেন
আল্লাহ বলেন-
وَلَا تَأْكُلُوا أَمْوَالَكُمْ بَيْنَكُمْ بِالْبَاطِلِ. (البقرة:188)
‘‘তোমরা একে অন্যের সম্পদ অন্যায়ভাবে ভক্ষণ করো না।’’ (সূরা আল বাকারা: ১৮৮)রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
الرجل يطيل السفر أشعث أغبر يمد يده إلى السماء يا رب يا رب ومطعمه حرام ومشربه حرام وملبسه حرام وغذي بالحرام فأنى يستجاب لذلك . (رواه مسلم:১৬৮৬)
‘‘কোন ব্যক্তি দীর্ঘপথ অথিক্রমা করলো, বিক্ষিপ্ত চুল, ধূলা-বালিযুক্ত শরীর, দুই হাত আসমানের দিকে উঠিয়ে দুআ করতে থাকে আর বলতে থাকে: হে প্রভু! হে প্রভু! অথচ তার খাদ্য হারাম, পানীয় হারাম, পোষাক হারাম এবং হারাম দ্বারা শক্তি সঞ্চয় করা হয়েছে। তাহলে কিভাবে তার দুআ কবুল করা হবে?’’(মুসলিম:১৬৮৬)
২৯ নং কবীরা গুনাহ
الانتحار
আত্মাহত্যা করা
আল্লাহ তাআলা বলেন-
وَلَا تَقْتُلُوا أَنْفُسَكُمْ إِنَّ اللَّهَ كَانَ بِكُمْ رَحِيمًا ﴿29﴾ وَمَنْ يَفْعَلْ ذَلِكَ عُدْوَانًا وَظُلْمًا فَسَوْفَ نُصْلِيهِ نَارًا وَكَانَ ذَلِكَ عَلَى اللَّهِ يَسِيرًا ﴿30﴾(النساء: ২৯-৩০)
‘‘তোমরা নিজেদের হত্যা করো না, নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা তোমাদের প্রতি দয়ালু আর যে কেউ সীমালংঘন কিংবা জুলমের বশবর্তী হয়ে এরূপ করবে তাকে খুব শীঘ্র আগুনে নিক্ষেপ করা হবে।’’ (সূরা আন-নিসা: ২৯-৩০)রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
من قتل نفسه بحديد فحديدته في يده يتوجأ به في بطنه في نار جهنم خالدا مخلدا أبدا، ومن شرب سما فقتل نفسه فهو يتحساه في نار جهنم خالدا مخلدا فيها أبدا، ومن تردى من جبل فقتل نفسه فهو يتردى في نار جهنم خالد مخلدا فيها أبدا. (مسلم:১৫৮)
‘‘যে ব্যক্তি ধারালো অস্ত্র দ্বারা নিজেকে হত্যা করে সে উক্ত অস্ত্র দ্বারা দোযখের আগুনে নিজের পেটে আঘাত করতে থাকবে। সে চিরদিন এই জাহান্নামে অবস্থান করবে। যে বিষ পান করে নিজেকে হত্যা করল সে চিরদিন জাহান্নামে অবস্থানকালে হত্যা করতে থাকবে। আর যে নিজেকে পাহাড় থেকে ফেলে দিয়ে হত্যা করবে সেও চিরদিন জাহান্নামে অবস্থান করবে এবং পাহাড় থেকে নিক্ষিপ্ত হতে থাকবে। ’’ (মসলিম:১৫৮)
৩০ নং কবীরা গুনাহ
الكذب في غالب أقواله
অধিকাংশ সময় মিথ্যা বলা
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন-
وإن الكذب يهدي إلى الفجور، وإن الفجور يهدي إلى النار، وإن الرجل ليكذب حتى يكتب عند الله كذابا. (رواه البخارى:৫৬২৯)
‘‘মিথ্যা পাপাচারের দিকে পথ দেখায় । আর পাপাচার জাহান্নামে নিয়ে যায়। মানুষ মিথ্যা বলতে থাকলে আল্লাহর নিকট মিথ্যুক হিসাবে তার নাম লেখা হয়।’’ (বুখারী:৫৬২৯) আল্লাহ বলেন-
فَنَجْعَلْ لَعْنَةَ اللَّهِ عَلَى الْكَاذِبِينَ. (أل عمران: 61)
‘‘এবং তাদের প্রতি আল্লাহর অভিসম্পাত যারা মিথ্যাবাদী।’’ (আল-ইমরান: ৬১)
৩১ নং কবীরা গুনাহ
الحكم بغير ما أنزل الله
মানব রচিত বিধানে দেশ পরিচালনা ও বিচার ফয়সালা করা
আল্লাহ বলেন-
وَمَنْ لَمْ يَحْكُمْ بِمَا أَنْزَلَ اللَّهُ فَأُولَئِكَ هُمُ الْكَافِرُونَ ﴿44﴾. (المائدة:44)
‘‘এবং যারা আল্লাহর বিধান অনুসারে বিচার কার্য পরিচালনা করে না তারা কাফের।’’ (সূরা আল-মায়েদা: ৪৪)তিনি আরো বলেন-
وَمَنْ لَمْ يَحْكُمْ بِمَا أَنْزَلَ اللَّهُ فَأُولَئِكَ هُمُ الْكَافِرُونَ ﴿44﴾. (المائدة: 45)
এবং যারা আল্লাহর বিধান অনুসারে বিচার কার্য পরিচালনা করে না তারা জালেম।’’ তিনি আরো বলেন-
وَمَنْ لَمْ يَحْكُمْ بِمَا أَنْزَلَ اللَّهُ فَأُولَئِكَ هُمُ الْفَاسِقُونَ. (المائدة:47)
‘‘যারা আল্লাহর বিধান অনুসারে বিচারকর্য পরিচালনা করে না তারা ফাসেক।’’ (সূরা আল-মায়েদা : ৪৭)
৩২ নং কবীরা গুনাহ
أخذ الرشوة على الحكم
বিচার ফয়সালার ক্ষেত্রে ঘুষ গ্রহণ করা
আল্লাহ বলেন:
وَلَا تَأْكُلُوا أَمْوَالَكُمْ بَيْنَكُمْ بِالْبَاطِلِ وَتُدْلُوا بِهَا إِلَى الْحُكَّامِ لِتَأْكُلُوا فَرِيقًا مِنْ أَمْوَالِ النَّاسِ بِالْإِثْمِ وَأَنْتُمْ تَعْلَمُونَ. (البقرة: 188)
‘‘তোমরা অন্যায়ভাবে একে অপরের সম্পদ ভোগ করো না এবং জনগণের সম্পদের কিয়দাংশ জেনে শুনে অন্যায়ভাবে গ্রাস করার উদ্দেশ্যে বিচারকগণের কাছে পেশ করো না।’’ (বাকারা: ১৮৮) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
لعنة الله على الراشي والمرتشي. (احمد)
‘‘আল্লাহ তাআলা ঘুষ দাতা ও গ্রহীতা উভয়ের উপর অভিশাপ করেছেন।’’ (আহমাদ) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
من شفع لأخيه شفاعة فأهدى له هدية فقبلها منه فقد أتى بابا عظيما من أبواب الربا. (أحمد:৬৬৮৯)
‘‘যদি কোন ব্যক্তি তার ভাইয়ের জন্য কোন বিষয় সুপারিশ করে, পরে তার জন্য হাদিয়া বা উপটোকন প্রেরণ করা হয়, সে তা গ্রহণ করে। তাহলে উক্ত ব্যক্তি এক মারাত্মক ধরনের সুদের দ্বারে প্রবেশ করল।’’(আহমদ:৬৬৮৯)
৩৩ নং কবীরা গুনাহ
تشبه النساء بالرجال وتشبه الرجال بالنساء
মহিলা পুরুষের বেশ ধারণ করা এবং পুরুষের মহিলার বেশ ধারণ করা
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
لعن الله المتشبهات من النساء بالرجال والمتشبهين من الرجال بالنساء. (روا أبوداود:৩৫৭৪) .
‘‘আল্লাহ তাআলা পুরুষের বেশ ধারনকারী মহিলাদেরকে অভিশাপ করেছেন এবং মহিলাদের বেশ ধারনকারী পুরুষের উপর অভিশাপ করেছেন।’’ (আবুদাউদ: ৩৫৭৪))
৩৪ নং কবীরা গুনাহ
الديوث المستحسن على أهله
আপন স্ত্রীকে ব্যভিচারে সুযোগ দেয়া
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
ثلاثة قد حرم الله عليهم الجنة مدمن الخمر والعاق والديوث الذي يقر في أهله الخبث. (رواه أحمد:৫৮৩৯)
‘‘তিন ব্যক্তির জন্য আল্লাহর জন্য জান্নাত হারাম করেছেন, (১) যে মদ তৈরী করে
(২) যে মাতা-পিতার নাফরমানী করে
(৩) ঐ চরিত্রহীন ব্যক্তি যে নিজ স্ত্রীকে অশ্লীলতা ও ব্যভিচারে করতে সুযোগ দেয়।’’ (আহমাদ:৫৮৩৯)
দাইউস ঐ ব্যক্তিকে বলে যে তার স্ত্রী অশ্লীল কাজ বা ব্যভিচার করলে সে ভাল মনে করে গ্রহণ করে অথবা প্রতিবাদ না করে চুপ থাকে।
৩৫ নং কবীরা গুনাহ
المحلل والمحلل له
হালাল কারী এবং যার জন্য হালাল করা হয় উভয়ে গুনাহগার
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
لعن الله المحلل والمحلل له. (رواه أحمد:৭৯৩৭)
‘‘হালালকারী এবং যার জন্য হালাল করা হয় উভয়ের প্রতি আল্লাহ অভিশাপ করেছেন।’’ (আহমাদ:৭৯৩৭) এর ব্যাখ্যা হল: কেউ কারো তিন তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রীকে এ শর্তে বিবাহ করে যে, সে সহবাস করে আবার তালাক দিয়ে দিবে, যাতে প্রথম স্বামী পুণরায় বিবাহ করতে পারে, এই ব্যক্তিকে মুহাল্লিল বা হালালকারী বলে।
৩৬ নং কবীরা গুনাহ
عدم التنزه من البول
পেশাব থেকে বেচে না থাকা
ইবনে আববাস রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন-
مر النبي صلى الله عليه وسلم بقبرين فقال إنهما ليعذبان وما يعذبان في كبير أما أحدهما فكان لايسةةر من البول وأما الآخر فكان يمشي النميمة. (مسلم:৬১১)
‘‘নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’টি কবরের পাশ দিয়ে অতিক্রম করেন এবং বলেন, এ দুই কবরবাসীকে শাস্তি দেয়া হচ্ছে। কিন্তু কোন বড় বড় ধরনের কাজের জন্যে শাস্তি দেয়া হচ্ছে না। তাদের একজনের অভ্যাস ছিল সে প্রসাব থেকে পবিত্রতা অর্জন করতো না। আর অন্য জন মানুষের একজনের দোষ অন্যের কাছে বলে বেড়াত।’’ (বুখারী, মুসলিম:৬১১) আল্লাহ তাআলা বলেন-
وَثِيَابَكَ فَطَهِّرْ ﴿4﴾ (المدثر:4)
‘‘এবং তোমার কাপড়কে তুমি পবিত্র করা।’’ (সূরা আল-মুদ্দাসসির:৪) অতএব, আপনাদের কাপড়ে ও শরীরে যেন পেশাব না জড়ায়। যদি কোন কারণে জড়িয়েও যায় তাহলে তা সাথে সাথে পবিত্র করে নিবেন।
আমরা আমাদের নিজের জন্য ও আপনাদের জন্য এই বিপদ হতে মহান আল্লাহর দয়া ও রহমতের দ্বারা পরিত্রাণ কামনা করছি।
৩৭ নং কবীরা গুনাহ
من وسم دابة في الوجه
চতুষ্পদ জন্তুর চেহারা বিকৃতি করা
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন-
أما بلغكم أني لعنت من وسم البهيمة في وجهها أو ضربها في وجهها. (روا أبوداود:২২০১)
‘‘তোমাদের নিকট কি পৌছে নাই যে, যে ব্যক্তি চতুষ্পদ জন্তুর চেহারা বিকৃত করে অথবা চেহারার উপর আঘাত করে আমি তার উপর অভিশাপ করছি।’’ (আবু দাউদ:২২০১)
৩৮ নং কবীরা গুনাহ
التعلم للدنيا وكتمان العلم
দুনিয়া অর্জনের লক্ষ্যে ইলমে দ্বীন শিক্ষা করা এবং সত্যেকে গোপন করা
আল্লাহ বলেন-
إِنَّ الَّذِينَ يَكْتُمُونَ مَا أَنْزَلْنَا مِنَ الْبَيِّنَاتِ وَالْهُدَى مِنْ بَعْدِ مَا بَيَّنَّاهُ لِلنَّاسِ فِي الْكِتَابِ أُولَئِكَ يَلْعَنُهُمُ اللَّهُ وَيَلْعَنُهُمُ اللَّاعِنُونَ ﴿159﴾ إِلَّا الَّذِينَ تَابُوا وَأَصْلَحُوا وَبَيَّنُوا فَأُولَئِكَ أَتُوبُ عَلَيْهِمْ وَأَنَا التَّوَّابُ الرَّحِيمُ ﴿160﴾ (البقرة: ১৫৯-১৬০)
‘‘আমি যে সব স্পষ্ট নিদর্শন ও পথনির্দেশ অবতীর্ণ করেছি মানুষের জন্য কিতাবে তা স্পষ্টভাবে ব্যক্ত করার পরও যারা তা গোপন রাখে আল্লাহ তাদের অভিসম্পাত দেন এবং অভিশাপকারীরাও তাদের অভিশাপ দেয়। কিন্তু যারা তওবা করে ও নিজেদের সংশোধন করে আর সত্যকে সুস্পষ্টভাবে ব্যক্ত করে। তাদেরই প্রতি আমি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’’ (সূরা আল-বাকারা: ১৫৯-১৩০)রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন-
من تعلم العلم ليباهي به العلماء أو يماري به السفهاو أو يصرف به وجوه الناس إليه أدخله الله جهنم. (رواه ابن ماجه:২৫৬)
‘‘যে ব্যক্তি জ্ঞানীদের উপর প্রধান্য বিস্তার করার লক্ষ্যে অথবা মূর্খের সাথে বিতর্কের উদ্দেশ্যে অথবা মানুষের দৃষ্টি তার প্রতি আকৃষ্ট করার জন্য ধর্মীয় জ্ঞান অর্জন করে আল্লাহ তাকে জাহান্নামে প্রবেশ করাবেন।’’ (ইবনে মাজা:২৫৬) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
من ةعلم علما مما يبةغي به وجه الله لا يةعلمه الا ليصيب به عرضا من الدنيا لم يجد عرف الجنة يوم القيامة. (أبوداؤد:৩১৭৯)
‘‘যে ব্যক্তি দ্বীনি এলেম শিক্ষা করল ধন সম্পদ লাভের উদ্দেশ্যে, সে কেয়ামতের দিন জান্নাতের ঘ্রাণও পাবে না।’’ (আবু দাউদ:৩১৭৯)
৩৯ নং কবীরা গুনাহ
الخيانة
খিয়ানত করা
আল্লাহ তাআলা বলেন-
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا لَا تَخُونُوا اللَّهَ وَالرَّسُولَ وَتَخُونُوا أَمَانَاتِكُمْ وَأَنْتُمْ تَعْلَمُونَ ﴿27﴾. (الأنفال: ২৭)
‘‘ঈমানদারগণ আল্লাহ ও তার রাসূলের সাথে খেয়ানত করো না এবং জেনে শুনে নিজেদের পারস্পরিক আমানতের খেয়ানত করো না। (সূরা আল-আনফাল: ২৭)রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
لاايمان لمن لا امانة له، ولا دين لمن لا عهد له. (رواه أحمد:১১৯৩৫)
‘‘যার আমানতদারী নাই, তার ঈমান নাই, আর যার প্রতিজ্ঞা পূরণ নাই তার ধর্ম নাই।’’ (আহমদ:১১৯৩৫)রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
أربع من كن فيه كان ممنافقا خالصا ومن كانت فيه خصلة منهن كانت فيه خصلة من النفاق حتى يدعها، اذا ائتمن خان .(رواه البخاري:৩৩)
‘‘চারটি দোষ যার মধ্যে পাওয়া যাবে সে হবে প্রকৃত মুনাফেক । আর যার মধ্যে এর একটি পাওয়া যাবে তার মধ্যে নিফাকের একটি দোষ পাওয়া গেল, যতক্ষণ না সে ঐ দোষ বর্জন করবে (১) যাখন তার নিকট আমানত রাখা হয়া সে, খেয়ানত করে।’’ (বুখারী:৩৩)
৪০ নং কবীরা গুনাহ
المن
খোটা দেয়া
আল্লাহ বলেন-
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا لَا تُبْطِلُوا صَدَقَاتِكُمْ بِالْمَنِّ وَالْأَذَى. (البقرة: ২৬৪)
‘‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা অনুগ্রহের কথা প্রকাশ করে এবং কষ্ট দিয়ে নিজেদের দানু ছদকা ধংস করো না।’’ (সূরা আল-বাকারা: ২৬৪)রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
ثلاثة لا يكلمهم الله يوم القيامة ولا ينظر إليهم ولا يزكيهم ولهم عذاب أليم، المسبل إزاره والمنان الذي لا يعطي شيئا الا منه، المنفق سلعته بالحلف الكذب. (رواه مسلم:১৫৫)
‘‘তিন ব্যক্তির সাথে আল্লাহ তাআলা কেয়ামতের দিন কোন কথা বলবেন না, তাদের প্রতি অনুগ্রহের দৃষ্টি দিবেন না, তাদেরকে গুনাহ হতে পবিত্র করবেন না এবং তাদের জন্যে রয়েছে যন্ত্রদায়ক শাস্তি। (১) যে ব্যক্তি পরিধেয় কাপড় টখনু-গিরার নীচে ঝুলিয়ে দেয়,
(২) খোটাদানকারী, যে কোন কিছূ দান করে খোটা দেয়
(৩) যে মিথ্যা শপথ করে দ্রব্যসামগ্রী বিক্রি করে।’’ (মুসলিম:১৫৫)
৪১ নং কবীরা গুনাহ
التكذيب بالقدر
তাকদীরকে অস্বীকার করা
রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন-
لو ان الله تعالى عذب أهل سماواته وأرضيه لعذبهم وهو غير ظالم لهم ولورحمهم كانت رحمته خيرا لهم من أعمالهم ولوكان لرجل أحد أو مثل احد ذهبا ينفقه في سبيل الله لا يقبله الله عزوجل منه حتى يؤمن بالقدر خيره شره ويعلم أن ما أصابه لم يكن ليخظئه وما أخطأه لم يكن ليصيبه وإنك إن مت على غير هذا ادخلت النار. (كتاب السنة للحافظ ابن ابي عاصم الشيباني، باسناد صحيح)
‘‘যদি আল্লাহ তাআলা আসামান ও যমীনের সকল অধিবাসীকে আযাব দেন তাহলে তার আযাব দেয়াটা কোন প্রকার অন্যায় হবে না । আর যদি দয়া করেন তবে তা তাদের আমলের তুলনায় অনেক বেশী হবে। যাদি কোন ব্যক্তির নিকট ওহুদ পাহাড় পরিমাণ স্বর্ণ থাকে এবং তা আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করে আল্লাহ তার এ দান বিন্দু পরিমাণও গ্রহণ করবেন না, যতক্ষন পর্যন্ত না সে তাকদীরের প্রতি ঈমান আনয়ন করবে আর এ কথা বিশ্বাস করবে যে, কোন ব্যক্তি সঠিক কাজ করল সে তা তকদীর অনুযায়ী করেছে এট ভুল করা তার জন্য নির্ধারিত ছিল না। আর যে ভুল করল এটা সঠিকভাবে করা তার পক্ষে সম্ভব ছিল না। যদি তুমি এ বিশ্বাসের রাইরে মৃত্যু বরণ কর তাহলে জাহান্নামে প্রবেশ করবে।’’ (সহীহ, কিতাবুস সুন্নাহ: ইবনে আবী আসিম আশ-শায়বানী)
৪২ নং কবীরা গুনাহ
المتسمع على الناس ما يسرونه
মানুষের নিটক অন্যের গোপন তথ্য ফাঁস করা
আল্লাহ বলেন-
وَلَا تَجَسَّسُوْا . ০الحجرات: ১২)
‘‘তোমরা মানুষের ত্রুটি বিচ্যুতি খুজে বেড়াবে না।’’ (সূরা আল-হুজরাত: ১২)রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
من استمع الى حديث قوم وهم له كارهون أو يفرون منه صب في أذنه الانك يوم القيامة ومن صور صورة عذب وكلف ان ينفخ فيها وليس بنافخ ومن تحلم يحلم لم يره كلف ان يعقد بين شعيرتين ولن يفعل. (رواه البخاري:৬৫২০)
‘‘যে ব্যক্তি কোন সম্প্রদায়ের লোকের কথা শ্রবণ করার চেষ্টা করে তাদের অনচ্ছিা সত্ত্বেও, তাহলে কেয়ামতের দিন তার কানে গলিত শীশা ঢালা হবে, আর যে ব্যক্তি কোন জীবজন্তুর ছবি অংকন করে তাকে কঠিন শাস্তি দেয়া হবে। তাকে বলা হবে তুমি এ ছবিতে প্রাণ সঞ্চার কর, কিন্তু সে পারবে না। আর যে ব্যক্তি এমন স্বপ্ন বর্ণনা করল যা সে দেখেনি তাকে শাস্তি হিসেবে দু’টি যবের দানাকে একত্রে জোড়া লাগাতে বলা হবে । কিন্তু তা সে মোটেই পারবে না।’’ (বুখারী:৬৫২০)
৪৩ নং কবীরা গুনাহ
النميمة
পরনিন্দা করা
আল্লাহ বলেন-
وَلَا تُطِعْ كُلَّ حَلَّافٍ مَهِينٍ ﴿10﴾ هَمَّازٍ مَشَّاءٍ بِنَمِيمٍ ﴿11﴾. (القلم : 10-11)
‘‘যে বেশী শপথ করে এবং যে পশ্চাতে নিন্দা করে একের কথা অপরের নিকট লাগিয়ে ফিরে আপনি তার আনুগত্য করবে না।’’ (সূরা আল - কলম:১০-১১)নমীমাহ বলা হয, যে ব্যক্তি একের কথা অপরের নিকট বলে বেড়ায় পারস্পরিক ঝগড়া-ফাসাদ সৃষ্টি করার উদ্দেশে। আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস রা. বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দু’টি কবরের কাছ দিয়ে যাচ্ছিলেন এবং বললেন , এ কবরবাসীদের শাস্তি দেয়া হচ্ছে। তবে কোন বড় ব্যাপারে নয়, তাদের একজন এমন ব্যক্তি যে একের কথা অন্যের নিকট লাগাতো। (বূখারী)
৪৪ নং কবীরা গুনাহ
اللعن
অভিশাপ করা
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
سباب المسلم فسوق وقتاله كفر. (رواه البخاري:৪৬)
‘‘মুসলমানদের অভিশাপ করা অন্যায় এবং তাকে হত্যা করা কুফর।’’ (বুখারী:৪৬) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
ان العبد اذا لعن شيئ صعدت اللعنة الى السماء فتغلق أبواب السماء دونها ثم تهبط الى الأرض فتغلق أبوابها دونها ثم تأخذ يمينا وشالا فاذا لم تجد مساغا رجعت الى الذي لعن فان كان لذلك أهلا والا رجعت الى قائلها. (رواه ابو داود:৪২৫৯)
‘‘কোন লোক যখন অন্য কাউকে অভিশাপ করে তথন অভিশাপটি আকাশে উঠতে চেষ্টা করে । কিন্তু তার জন্য আকাশের দরজাগুলি বন্ধ হয়ে যায়। অতঃপর যমীনের দিকে অবতরণ করে। কিন্তু জমিনের দরজাগুলোও বন্ধ হয়ে যায়। অহতঃপর অভিশাপটি ডানে বামে ঘুরতে থাকে। কোথাও যাওয়ার সুযোগ না পেয়ে যার উপর করা হল তার নিকট যায়, যদি সে অভিশাপের উপযুক্ত হয়। অন্যথায় অভিশাপকারীর উপর প্রত্যাবর্তন করে।’’ (আবু দাউদ:৪৬৫৯) যে কারণেই হোক কোন মুসলিম ভইয়ের উপর অভিশাপ করা সম্পূর্ণ হারাম। খারাপ দোষে দুষ্ট ব্যক্তিদের উপর তাদের দোষ উল্লেখ করে অভিশাপ করা যায়। যেমন অত্যাচারীদের উপর আল্লাহর অভিশাপ, কাফেরদের উপর আল্লাহর অভিশাপ, প্রাণীর ছবি অংকনকারীদের উপর আল্লাহর অভিশাপ ইত্যাদি।
৪৫ নং কবীরা গুনাহ
الوفاء وعدم الوفاء بالعهد
গাদ্দারী করা, ওয়াদা পালন না করা
রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
أربع من كن فيه ان ممنافقا خالصا ومن كانت فيه خصلت منهن كانت فيه خصلة من النقثاق حتى يدعها إذا ائتمن خان وإذا حدث كذب وإذا عاهد غدر واذا خاصم فجر. (رواه البخاري:৩৩)
‘‘চারটি দোষ যার মথ্যে পাওয়া যাবে সে খাটি মুনাফেক হবে। আর যার মধ্যে এর একটি পাওয়া যাবে তার মধ্যে মুনাফেকের একটি চরিত্র পাওয়া গেল । যতক্ষণ পর্যন্ত যে উক্ত অভ্যাস ত্যাগ না করে। যখন আমানত রাখার হয় সে খেয়ানত করে আর যখন কথা বলে মিথ্যা বলে, যখন প্রতিজ্ঞা করে তখন গাদ্দারী করে আর যখন ঝগড়া করে তখন গালি দেয়।’’ (বুখারী:৩৩) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
لكل غادر لواء يوم القيامة، يرفع له بقدر غدرته، ألا ولا غادر أعظم غدرا من أمير عامة. (رواه مسلم:৩২৭২)
‘‘প্রত্যেক ওয়াদা অঙ্গকারীর জন্যে কেয়ামতের দিন একটি নিদর্শন থাকবে তার গাদ্দারীর পরিমাণ অনুযায়ী তাকে উচ্চ করা হবে। তবে জনগনের সাথে প্রতারণাকারী শাসকে চেয়ে বড় গাদ্দার আর কেউ হবে না।’’ (মুসলিম:৩২৭২)
৪৬ নং কবীর গুনাহ
تصديق الكاهن والمنجم
গণক ও জ্যোতির্বিদদের বিশ্বাস করা
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
من اتى عرافا أو كاهنا فصدقه يما يقول فقد كفر بما أنزل على محمد. (رواه احمد:১২৫)
‘‘যে ব্যক্তি গণক বা জ্যোতিষীর নিকট আসলো এবং তারা যা বললো তা সত্য বলে গ্রহণ করলো সে মূলতঃ মুহাম্মদ সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর যা নযিল করা হয়েছে তাকেই অস্বীকার করলো।’’ (আহমাদ:১২৫) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
من أتى عرافا فاسأله عن شيئ لم تقبل له صلاة أربعين ليلة (رواه مسلم:৪১৩৭)
‘‘যে ব্যক্তি কোন গণকের নিকট আসলো তার পর তাকে ভাগ্য সম্পর্কে কিছু জিজ্ঞাসা করল চল্লিশ দিন পর্যন্ত তার সালাত কবুল হবে না।’’ (মুসলিম:৪১৩৭)
৪৭ নং কবীরা গুনাহ
نشوز المرأة على زوجها
স্বামীর অবাধ্য হওয়া
আল্লাহ বলেন-
وَاللَّاتِي تَخَافُونَ نُشُوزَهُنَّ فَعِظُوهُنَّ وَاهْجُرُوهُنَّ فِي الْمَضَاجِعِ وَاضْرِبُوهُنَّ فَإِنْ أَطَعْنَكُمْ فَلَا تَبْغُوا عَلَيْهِنَّ سَبِيلًا إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلِيًّا كَبِيرًا ﴿34﴾ (النساء: ৩৪)
‘‘আর তাদের স্ত্রীদের মধ্যে অবাধ্যতার আশংকা কর তাদের সদুপদেশ দাও তাদের শয্যা ত্যাগ করো এবং প্রহার কর। যদি তাতে তারা অনুগত হয়ে যায় তবে তাদের জন্যে কোন পথ অনুসন্ধান করো না। নিশ্চয় আল্লাহ সবার উপরে শ্রেষ্ঠ।’’ (নিসা:৩৪) রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এশাদ করেন-
اذا دعا الرجل امرأته الى فراشه فأبت فباتت غضبان عليها لعنتها الملائكة حتى تصبح.
(رواه البخاري:২৯৯৮)
‘‘যদি কোন পুরুষ তার স্ত্রীকে বিছানায় আহবান করে আর স্ত্রী অস্বীকার করার ফলে স্বামী রাগান্বিত অবস্থায় রাত্রিযাপন করে তখন ঐ স্ত্রীর উপর ফেরেশতারা অভিশাপ করতে থাকে।’’ (বুখারী:২৯৯৮) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
لو كنت آمر أحدا أن يسجد لغير الله لآمرت المرأة أن تسجد لزوجها والذي نفس محمد بيده لا تؤدي المرأة حق ربها حتى تؤدي حق زوجها كله لو سألها نفسها وهي على قتب لم تمنعه. ( رواه احمد:১০৭৯)
‘‘যদি তাদেরকে আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে সেজদা করার আদেশ দিতাম তাহলে নারীদের প্রতি আদেশ দিতাম আরা যেন তাদের স্বামীদের সেজদা করে। ঐ সত্তার শপথ করে বলছি যার হাতে আমার জীবন, মহিলারা ঐ পর্যন্ত আল্লাহর হক আদায় করতে পারে না যতক্ষণ পর্যন্ত সে স্বামীর হক আদায় না করে, এমনকি স্বামী যদি যাত্রা পথে ঘোড়ার পৃষ্ঠেও তাকেও আহবান করে তখনও তাকে বাধা না দেয়।’’ (আহমাদ:১০৭৯) সুতরাং তাদেরকে আল্লাহর ছাড়া অন্য কাউকে সেজাদা করার আদেশ দিতাম তাহলে নারীদের প্রতি আদেশ দিতাম তারা যেন তাদের স্বামীদের সেজদা করে। ঐ সত্তার শপথ করে বলছি, যার হাতে আমার জীবন, মহিলারা ঐ পর্যন্ত আল্লাহর হক আদায় করতে পারে না যতক্ষণ পর্যন্ত সে স্বামীর হক আদায় না করে, এমনকি স্বামী যদি যাত্রা পথে ঘোড়ার পিঠেও তাকে আহবান করে তখনও তাকে বাধা না দেয়।’’ (আহমাদ, সহীহ আল জামে)
সুতরাং নারীদের কর্তব্য, তারা সর্বাবস্থায় স্বামীর সন্তুষ্টি অর্জনে সচেষ্ট হবে এবং তার অসন্তুষিট হতে বেচে থাকবে, কখনো স্বামীকে জৈবিক চাহিদা পূরণে বাধা দেবে না। তবে যদি শরয়ী কোন আপত্তি থাকে তবে যেমন - হায়েয নেফাস অথবা ফরয সওম ইত্যাদি অবস্থায় শুধু সহবাস হতে নিষেধ করতে পারে। মহিলাদের জন্য কর্তব্য হল সর্বদা স্বামীর নিকট লজ্জাবতী হওয়া, তার আদেশের আনুগত্য করা, তার সকল প্রকার অপছন্দনীয় কাজ হতে বিরত থাকা।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
اطلعة في الجنة فرأيت أكثرها أهلها الفقراء واطلعت في النار فرايت أكثر أهلها النساء. (رواه البخارى:৩০০২)
‘‘আমি জান্নাতে উকি মেরে দেখি, জান্নাতে অধিকাংশ অধিবাসী দরিদ্র এবং জাহান্নামে উকি মেরে দেখি, তার অধিকাংশ অধিবাসী মহিলা।’’ (বুখারী:৩০০২)অত্র হাদীসের ব্যাখ্যায় ইমাম হাফেয শামসুদ্দিন আয-যাহাবী বলেন, মহিলাদের আল্লাহ ও তার রাসূলের প্রতি আনুগত্যের অভাব। স্বামীর অবাধ্যতা এবং পর্দাহীনতাই এর মূল কারণ। মহিলারা যখন ঘর থেকে বের হয় তখন সর্বোচ্চ সুন্দর পোশাক পরে বিশেষ সাজ-সজ্জা অবলম্ভন করে, যা মানুষকে ফিৎনায় পড়তে বাধ্য করে। সে নিজে নিরাপদে থাকলেও মানুষ তার থেকে নিরাপদ থাকে না।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
المرأة عورة، فإذا خرجت استشرفها الشيطان, (الترمذي:১০৯৩)
‘‘মহিলারা আবরণীয় । কিন্তু যখন তারা রাস্তায় বের হয় তখন শয়তান তাকে মাথা উঁচু করে দেখে।’’ (তিরমিযি:১০৯৩) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
المرأة عورة، وإنها إذا خرجت من بيتها اسبشرفها الشيطان، وإنها لا تكون أقرب الى الله منها في قعر بيتها. (رواه الترمذي:১০৯৩)
‘‘মহিলারা হল আবরণীয়, তারা যখন ঘর হতে বের হয় তখন শয়তান তাদেরকে মাথা উচু করে দেখে। তারা যত বেশী ঘরের কোণে অবস্থান করবে ততই আল্লার নৈকট্য লাভ করবে।’’ (তিরমিজী, সহীহ আল জামে) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
ما تركت بعدي في الناس فتنة أضر على الرجال من النساء. (مسلم:৭৪০৬)
‘‘আমার পরে পুরুষদের উপর মহিলাদের মত ক্ষতিকর আর কোন ফিৎনা আমি রেখে যাইনি।’’ (মুসলিম:৭৪০৬)মহিলাদের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ তার ঘর অবস্থান করা। আল্লাহর ইবাদত, স্বামীর আনুগত্য, তার অধিকার সর্ম্পকে সচেতন থাকা, স্বামীর উপর কোন প্রকার বাড়াবাড়ি না করা এবং আপন চরিত্রে কোন প্রকার কলংক না জড়ানো।
উল্লেখিত প্রতিটি হাদীসে স্ত্রীর কাছে স্বামীর অধিকার যে কত বড় তা বুঝানো হয়েছে। বাস্তবিক পক্ষে এ বিষয়টি বিশ্লেষণ করার কারণ, বর্তমানে এটি মহিলাদের জন্যে মহা প্রলয়ংকারী বিপদে পরিণত হয়েছে।
হে মুসলিম ভাইয়েরা ! আপনাদের প্রতি আমার বিনীত উপদেশ এই যে, আপনারা এমন নারীদের বিবাহ করবেন যারা মুমিনা, পর্দানশীল, স্বামীর অনুগত, আপনার ধন স্পদ রক্ষাকারিণী এবং সে পর্দাহীনভাবে সাজ-সজ্জা গ্রহণ করে রাস্তায় বের হবে না। আর আপনার আনুগত্য করবে।
যদি আপনার স্ত্রী মুমিনা ও অনুগতা মহিলা হয় তাহলে আপনি হিতাকাঙ্খী হবেন, তার সাথে কোন রকমের হঠকারিতাপূর্ণ আচরণ করবেন না।
রাসূল কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
استوصوا بالنساء خيرا، فإن المرأة خلقت من ضلع، وان أعوج شيئ في الضلع أعلاه، فإن ذهبت تقيمه كسرته، وان تركته لم يزل أعوج، فاستوصوا بالنساء خيرا. (رواه البخاري:৩০৮৪)
‘‘তোমরা মেয়েদের সাথে ভাল ব্যবহার করবে। তাদেরকে বাম পাজরের হাড় হতে সৃষ্টি করা হয়েছে। আর পাজরের হাড় সবচেয়ে বাকা হয়, যদি তুমি সোজা করতে চেষ্টা কর ভেঙ্গে যাবে, আর যদি ছেড়ে তাও তাহলে সর্বদা বাকা তাকবে। সুতরাং তাদের সাথে সৎ ব্যবহার করতে থাক।’’ (বুখারী:৩০৮৪) তাদের সাথে সৎ ব্যবহার হল, আল্লাহর আদেরশের আনুগত্য করার নির্দেশ দেয়া এবং নিষেধ কাজ হতে বিরত থাকতে আদেশ করা। এগুলি তাদেরকে জান্নাতের পথের নিয়ে যায়।
৪৮ নং কবীরাগুনাহ
التصوير في الثياب والحيطان والحجر وغيره
কাপড় , দেয়াল ও পাথর ইত্যাদিতে প্রাণীর ছবি আকা
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
إن الذين يصنعون هذه الصور يعذبون يوم القيامة، يقال لهم: أحيوا ما خلقتم. (رواه البخاري:৪৭৮৩)
‘‘যারা চিত্রাংকন করে তাদেরকে কেয়ামতের দিন শাস্তি দেয়া হবে। আর তাদেরকে বলা হবে তোমরা যা সৃষ্টি করেছিলে তাদের আত্মা ও জীবন দান কর।’’ (বুখারী:৪৭৮৩) আয়েশা রা, হতে বর্ণিত তিনি বলেন-
دخل علي رسول الله صلى الله عليه وسلم : وقد سترت سهوة لي بقرام فيه تماثيل، فلما رآه هتكه، وتلون وجهه، قال يا عائشة: أشد الناس عذابا يوم القيامة الذين يضاهون بخلق الله، قالت عائشة: فقطعناه، وسادة أو وسادتين, (رواه البخاري:৫৪৯৮)
‘‘একদিন রাসূল কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমার ঘরে প্রবেশ করলেন। তখন ঘরের দরজায় এমন একটি পর্দা টানানো ছিল যার মধ্যে প্রাণীর ছবি আকা ছিল। তিনি দেখা মাত্র পর্দাটি ছিড়ে ফেললেন ও তার চেহারার বিবর্ণ হয়ে গেল। তিনি বললেন, হে আয়েশা !,কেয়ামতের দিন সবচেয়ে বেশী শাস্তি দেয়া হবে ঐ সব লোকদের যারা আল্লাহর সৃষ্টির সাথে সাদৃর্শ অবলমবন করে কিছু তৈরী করে। আয়েশা রা. বলেন, আমি উক্ত পর্দা কেটে একটি ফথবা দুটি বালিশ তৈরী করি।’’ (বুখারী:৫৪৯৮)
৪৯ নং কবীরা গুনাহ
اللطم والنياحة وشق الثوب وحلق الرأس ونةفه والدعاء بالويل والثبور عند المصيبة
শোক প্রকাশার্থে চেহারার উপর আঘাত করা, মাতম করা, কাপড় ছেড়া, মাথা মুন্ডানো বা চুল উঠানো, বিপদের সময় ধ্বংসের জন্য দুআ করা।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
ليس منا من لطم الخدود وشق الجيوب ودعا بدعوى الجاهلية. (رواه البخاري:১২১২)
‘‘শোক প্রকাশ করতে যেয়ে যে চেহারার উপর প্রহার করে এবং কাপড় ছিড়ে ফেলে এবং জাহিলিয়্যাতের অভ্যাসের অনুসরন করে সে আমার উম্মতের অর্ন্তভুক্ত নয়।’’ (বুখারী:১২১২)
৫০ নং কবীরা গুনাহ
البغي
অন্যায় ভাবে বিদ্রোহ করা
আল্লাহ বলেন-
إِنَّمَا السَّبِيلُ عَلَى الَّذِينَ يَظْلِمُونَ النَّاسَ وَيَبْغُونَ فِي الْأَرْضِ بِغَيْرِ الْحَقِّ أُولَئِكَ لَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ
(الشورى: ৪২)
‘‘ব্যবস্থা নেয়া হবে কেবল তাদের বিরুদ্ধে যারা মানুষের উপর অত্যাচার করে এবং পৃথিবীতে অন্যায়ভাবে বিদ্রোহকরে বেড়ায়, তাদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি। ’’ (শুরা: ৪২)রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
ان الله اوحى إلي أن تواضعوا حتى لا يفخر أحد على أحد، ولا يبغي أحد على أحد. (أبوداود:৪২৫০)
‘‘আল্লাহ তাআলা আমার নিকট ওহী প্রেরণ করেন যে, ,তোমরা বিনয়ী হও, কেউ যেন কারো উপর গর্ব না করে আর কোউ যেন কারো উপর অন্যায়ভাবে বিদ্রোহ না করে।’’ (আবুদাউদ:৪২৫০) রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
ما من ذنب أجدر أن يعجل الله تعالى لصاحبه العقوبة في الدنيا مع ما يدخره له في الاخرة من البغي وقطيعة الرحم. (رواه أحمد:৪২০১)
‘‘আত্মীয়তা ছিন্ন করা এবং অন্যায় ভাবে বিদ্রোহ করা এমন দু’টি মারাত্বক অপরাধ যার শাস্তি আখেরাতে নির্ধারিত থাকা সত্বেও দুনিয়াতে দেয়া হবে।’’ (আহমাদ:৪২০১)
৫১ নং কবীরা গুনাহ
الاستطالة على الضعيف والمملوك والجارية والزوجة والدابة
র্দুবল, চাকর-চাকরানী , স্ত্রী ও চতুষ্পদ জন্তুর উপর অত্যাচার করা
রাসুলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
من ضرب غلاما له حدا لم يأته، أو لطمه، فان كفارته أن يعتقه. (مسلم:৩১৩১)
‘‘যে ব্যক্তি তার গোলামকে শাস্তি দিল এমন কোন অভিযোগে যা সে করে নাই, তার প্রতিকার হলো তাকে মুক্ত করে দেয়া।’’ (মুসলিম:৩১৩১) রাসূল সা. বলেন-
ان الله يعذب الذين يعذبون الناس في الدنيا. (مسلم:৪৭৩৪)
‘‘আল্লাহ তাআলা ঐ সব লোকদের শাস্তি দিবেন যারা দুনিয়াতে মানুষদের কষ্ট দিত।’’ (মুসলিম:৪৭৩৪)
৫২ নং কবীরা গুনাহ
أذى الجار
প্রতিবেশীদের কষ্ট দেয়া
রাসূল বলেন-
لايدخل الجنة من لا يأمن جاره بوائقه. (مسلم:৬৬)
‘‘ঐ ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না যার প্রতিবেশী তার অত্যাচার থেকে নিরাপদ থাকে না।’’ (মুসলিম:৬৬)
৫৩ নং কবীরা গুনাহ
أذى المسلمين وشتمهم
মুসলমানদের কষ্ট দেয়া ও গালি দেয়া
আল্লাহ তাআলা বলেন-
وَالَّذِينَ يُؤْذُونَ الْمُؤْمِنِينَ وَالْمُؤْمِنَاتِ بِغَيْرِ مَا اكْتَسَبُوا فَقَدِ احْتَمَلُوا بُهْتَانًا وَإِثْمًا مُبِينًا
(الأحزاب: ৫৮(
‘‘যারা বিনা অপরাধে মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীদের কষ্ট দেয়, তারা মিথ্যা অপবাদ ও প্রকাশ্য পাপের বোঝা বহন করে।’’ (সূরা আল আহযাব: ৫৮) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
إن الشر الناس عند الله منـزلة يوم القيامة من تركه الناس اتقاء شره ০البخاري:৫৫৭২)
‘‘কেয়ামাতের দিন আল্লাহর কাছে মর্যাদার দিকে দিয়ে ঐ ব্যক্তি সর্ব নিকৃষ্ট, যাকে মানুষ তার অনিষ্টতা হতে বাচার লক্ষ্যে এড়িয়ে চলে।’’ (বুখারী:৫৫৭২)
৫৪ নং কবীরা গুনাহ
إسبال الإزار والثوب تعززا وخيلاو ونحوه
অহংকার করে লুঙ্গি কাপড় ইত্যাদি ঝুলিয়েপরিধান করা।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
ما أسفل من الكعبين من الإزار في النار. (البخاري:৫৩৪১)
‘‘গোড়ালির নীচে যে কাপড় পরা হবে, তা জাহান্নামে যাবে।’’ (বুখারী:৫৩৪১) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
لاينظر الله إلى من جر إزاره بطرا. (رواه البخاري:৫৩৪২)
‘‘কেয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা ঐ ব্যক্তির দিকে রহমতের দৃষ্টি দিবেন না যে অহংকার করে কাপড় পরিধান করে।’’ (বুখারী:৫৩৪২)বর্তমানে এ ব্যধি একেবারে সাধারণ হয়েছে। প্রায় সবার মধ্যে এ সমস্যাটি পরিলক্ষিত হচ্ছে। অনেকেই দেখা যায় তারা গোড়ালির নীচে কাপড় পরধিান করে, অনেক সময় মাটি পর্যন্ত কাপড় ঝুলিয়ে দেয়া। আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে বিপদ থেকে রাকষা করুন। অবশ্য এ নিষেধাজ্ঞা পুরুষদের জন্য।
৫৫ নং কবীরা গুনাহ
الأكل والشرب في آنية الذهب أو الفضة
স্বর্ণ রৌপ্যের পাত্রে পানাহার করা
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
إن الذي يأكل أو يشرب في إناء الذهب أو الفضة إنما يجرجر في بطنه نار جهنم. (رواه البخاري:৫২০৩)
‘‘যে ব্যক্তি স্বর্ণ ও রূপার প্লেটে খায় বা পান করে সে মূলতঃ তার পেটে জাহান্নামের আগুনকেই স্থান দেয়।’’ (বূখারী:৫২০৩)
৫৬ নং কবীরা গুনাহ
لبس الحرير والذهب للرجال
পুরুষের স্বর্ণ ও রেশমী কাপড় পরিধান করা
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
انما يلبس الحرير في الدنيا من لا خلاق له في الآخرة. (البخاري:৬০৫৫)
‘‘দুনিয়াতে যে ব্যক্তি রেশমী কাপড় পরে তার জন্যে আখেরাতে কোন অংশই নেই। (বুখারী:৬০৫৫)
৫৭ নং কবীরা গুনাহ
إباق العبد
গোলামের পলায়ন করা
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
إذا أبق العبد لم يقبل له صلاة . (مسلم:১০৩)
‘‘গোলাম যখন পলায়ন করে তখন তার কোন নামাযই গ্রহণ করা হয় না।’’ (মুসলিম:১০৩)অন্য বর্ণনায় আছে, যতক্ষণ না সে তার মনিবের নিকট প্রত্যাবর্তন করে।
৫৮ নং কবীরা গুনাহ
الذبح لغير الله عز وجل
আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো উদ্দেশে পশু যবেহ করা
রাসূল বলেন-
لعن الله من ذبح لغير الله (مسلم:৩৬৫৭)
‘‘যে ব্যক্তি গাইরুল্লাহর জন্য জবেহ করে তার উপর আল্লাহর অভিশাপ ।’’ (মুসলিম:৩৬৫৭)গাইরুল্লাহর জন্য জবেহ করা দৃষ্টান্ত যেমন, কেউ জবেহ করার সময় বলে, আমি শয়তানের নামে জবেহ করাছি, অথবা দেব-দেবীর নামে অথবা পীর সাহেবদের নামে জবেহ করছি ইত্যাদি।
৫৯ নং কবীরা গুনাহ
من ادعى إلى غير أبيه وهو يعلم
জেনে শুনে অন্যকে পিতা বলে স্বীকৃতি দেয়া
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
من ادعى إلى غير أبيه وهو يعلم، فالجنة عليه حرام. (البخاري:৩৯৮২)
‘‘যে ব্যক্তি জেনে শুনে নিজের পিতাকে বাদ দিয়ে অন্যকে পিতা বলে ঘোষণা দেয় তার উপর জান্নাত হারাম করা হয়েছে।’’ (বুখারী৩৯৮২)
৬০ নং কবীরা গুনাহ
الجدل والمراء واللد
তর্ক-বির্তক, ঝগড়া এবং শত্রুতা পোষণ করা
অর্থাৎ কারো কথার ভুল-ভ্রান্তি প্রকাশের দোষ তালাশ করা । একটি দীর্ঘ হাদীসে বর্ণিত আছে,
من خاصم في باطل وهو يعلمه لم يزل في سخط الله حتى ينـزع
(أبوداود:৩১২৩)
‘‘যে ব্যক্তি অনর্থক কোন বিষয়ে জেনে শুনে বির্তক করে সে ঐ পর্যন্ত আল্লাহর অসন্তুষ্টি জীবন যাপন করে যতক্ষণ না সে বির্তক থেকে ফিরে আসে।’’ (আবু দাউদ:৩১২৩) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
ما ضل قوم بعد هدي كانوا عليه إلا أوتو الجدال. (الترمذي:৩১৭২, صحيح الجامع)
‘‘কোন জাতি সঠিক পথের উপর থাকার পর পথভ্রষ্ট হয় নাই, কিন্তু যখনই তারা বিতর্কে লিপ্ত হয়েছে তখনই পথভ্রষ্ট হযেছে।’’ (তিরমিজী:৩১৭ , সহীহ আল জামে) অর্থাৎ সত্য অন্বেষণ বা উদঘাটনের জন্য নয়, বিতর্ক করার জন্য বিতর্কে লিপ্ত হয়।
৬১ নং কবীরা গুনাহ
منع فضل الماء
প্রয়োজনের অতিক্তি পানি দান করতে অস্বীকার করা
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
من منع فضل ماء أوكلا منعه الله فضله يوم القيامة. (رواه أحمد:৬৩৮২ صحيح الجامع)
‘‘যে ব্যক্তি অতিরিক্ত পানি ও অতিরিক্ত ঘাস দান করা থেকে বিরত থাকে আল্লাহ তাকে কেয়ামতের দিন দয়া ও সওয়াবের দিতে অস্বীকার করবেন।’’ (আহমদ:৬৩৮২)
৬২ নং কবীরা গুনাহ
نقص الكيل و الميزان
ওযনে ও মাপে কম দেয়া
আল্লাহ তাআলা বলেন-
وَيْلٌ لِلْمُطَفِّفِينَ. (المطففين: ১)
‘‘যারা মাপে কম দেয় তাদের জন্য দুভোর্গ।’’ (মুতাফেফীন:১)
৬৩ নং কবীরা গুনাহ
الأمن من مكر الله
আল্লাহর পাকড়াও হতে নিশ্চিত হওয়া
রাসূল কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ কথাটি বেশী বলতেন-
يا مقلب القلوب ثبت قلوبنا على دينك فقيل له يا رسول الله أتخاف علينا فقال رسول الله : إن القلوب بين إصبعين من أصابع الرحمن. يقبلها كيف يشاء. (الترمذي:২০৬৬)
হে অন্তর পরিবর্তনকারী ! আপনি আমাদের অন্তরকে আপনার দ্বীনের উপর অটল রাখুন । অতঃপর তাকে জিজ্ঞাসা করা হলো, হে আল্লাহর রাসূল! সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপনি কি আমাদের ঈমানের ব্যাপারে আশংকা করেন? রাসূল সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তর দিলেন, মানুষের অন্তর দয়াময় আল্লাহরই দুই আঙ্গুলের মাঝে , তিনি যেভাবে ইচ্ছা করেন সেভাবে পরিবর্তন করেন।’’ (তিরমিজী:২০৬৬)সুতরাং হে মুসলিম ভাইয়েরা! আপনাদের ঈমান, আমল, নামায. ও সকল প্রকার নেক আমল যতই বেশী ও সুন্দর হোক না কেন অহংকার করবেন না। কারণ এগুলো আল্লাহর দয়া ছাড়া আর কিছু নয়। যদি কোন না কোন সময় তিনি এগুলি আপনার থেকে ছিনিয়ে নিয়ে যান তখন আপনি উটের পেটের চেয়েও বেশী খালী হয়ে যাবেন। আপনি আপনার আমলের কারণে গর্ব করা হতে বিরত থাকুন এবং এমন কথা বলবেন না যা অজ্ঞ ও মূর্খরা বলে, যেমন আমরা অমুকের চেয়ে ভাল । আমার আল্লাহ তো মানুষের অন্তরের গোপন প্রকাশ্য সকল বিষয়ে অবগত। আপনার দুর্বলতা, গুনাহের আধিক্য, আমল কম হওয়ার অনুভুতি অন্তরে স্থান দিয়ে সর্বদা আল্লাহর ভয়ে ভীত থাকুন এবং এমন একটি অবস্থায় থাকুন যে অবস্থার বর্ণনা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাদীসে দিয়েছেন-
তিনি বলেন-
أملك عليك لسانك، وليسعك بيتك، وابك على خطيئتك. (الترمذي. صحيح الجامع)
‘‘তোমার সংসারে ব্যস্তাতা সত্ত্বেও তুমি জিহবাকে সংযত রাখবে, গুনাহের কাজের উপর কান্নাকাটি করবে।’’ (তিরমিজী) ঐসব লোকদের মতো হয়ো না যাদের সম্পর্কে আল্লাহ বলেন-
أَفَأَمِنُوا مَكْرَ اللَّهِ فَلَا يَأْمَنُ مَكْرَ اللَّهِ إِلَّا الْقَوْمُ الْخَاسِرُونَ ﴿99﴾ (الأعراف: ৯৯)
‘‘তারা কি? আল্লাহর পাকড়াওয়ের ব্যাপারে নির্ভয় হয়ে গেছে? ক্ষতিগ্রস্ত লোকজন ব্যতীত কেউ আল্লাহর পাকড়াও থেকে নির্ভয় হয় না।’’ (আরাফ: ৯৯)বস্ত্তত আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রাথনা কর এবং সর্বদা এ কথা গুলো বলতে থাক-
يا مقلب القلوب ثبت قلوبنا على دينك.
‘‘হে অন্তরের পরিবর্তকারী! তুমি আমাদের অন্তরকে তোমার দ্বীনের উপর অটল অবিচল রাখ।’’
৬৪ নং কবীরা গুনাহ
اكل الميتة والدم ولحم الخنزير
মৃত জন্তু, প্রবহিত রক্ত এবং শুকরের গোস্ত খাওয়া
আল্লাহ বলেন-
قُلْ لَا أَجِدُ فِي مَا أُوحِيَ إِلَيَّ مُحَرَّمًا عَلَى طَاعِمٍ يَطْعَمُهُ إِلَّا أَنْ يَكُونَ مَيْتَةً أَوْ دَمًا مَسْفُوحًا أَوْ لَحْمَ خِنْزِيرٍ فَإِنَّهُ رِجْسٌ. (الانعام:১৪৫)
‘‘আপনি বলে দিন, যে বিধান ওহীর মাধ্যমে আমার কাছে পৌছেছে, তন্মধ্যে আমি কোন ভক্ষণকারীর জন্যে কোন হারাম খাদ্য পাইনি। মৃত ও প্রবাহিত রক্ত এবং শুকরের গোস্ত ব্যতীত । এটা অপবিত্র।’’ (সূরা আল-আন আম : ১৪৫)রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
من لعب بالنردشير، فكأنما صبغ يده في لحم الخنـزير ودمه. (مسلم:৪১৯৪)
‘‘যে ব্যক্তি চওসর (দাবা জাতীয়) খেলায় প্রবৃত হয়, সে যেন তার হাতকে শুকরের রক্তে রঞ্জিত করার মত অন্যায় করে।’’ (মুসলিম:৪১৯৪) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শুকরের রক্ত গগোস্ত হাতে নেয়াকে গুনাহ সাব্যস্ত করেছেন শৃধু তাই নয় বরং বড় গুনাহ বলে অভিহিত করেছেন। সুতরাং শুকরের গোস্ত খাওয়া যে কাত বড় গুনাহ তা সহজেই অনুমান করা যায়। আল্লাহ আমাদের সকলকে এ বিপদ হতে রাক্ষা করুন।
৬৫ নং কবীর গুনাহ
تارك صلاة الجمعة والجماعة فيصلى وحده من غير عذر
জুমুআর সালাত ও জামাত চেড়ে দিয়ে বিনা কারণে একা একা সালাত আদায় করা
রাসূল বলেন-
ليتهين أقوام عن ودعهم الجمعات أو ليختمن الله على قلوبهم ثم ليكونن من الغافلين. (الدارمى:১৫২৪)
‘‘যদি মানুষ জুমুআর সালাত পরিত্যাগ করা থেকে বিরত না থাকে তাহলে আল্লাহ তাদের অন্তরে মোহর মেরে দিবেন যার ফলে তারা অলস ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত হবে।’’ (দারমী:১৫২৪) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
من سمع النداء فلم يأته فلا صلاة له الا من عذر . (ابن ماجة:৭৮৫)
‘‘যে ব্যক্তি আযান শুনল অথচ কোন প্রকার ওজর ছাড়া সালাতের জামাতে উপস্থিত হল না তার সালাত আল্লাহর নিকট কবুল হয় না।’’ (ইবনে মাজাহ:৭৮৫)
৬৬ নং কবীরা গুনাহ
اليأس من روح الله تعالى والقنوط
আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হওয়া
আল্লাহ বলেন-
وَلَا تَيْئَسُوا مِنْ رَوْحِ اللَّهِ إِنَّهُ لَا يَيْئَسُ مِنْ رَوْحِ اللَّهِ إِلَّا الْقَوْمُ الْكَافِرُونَ
(يوسف: ৮৭)
‘‘তোমরা আল্লার রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয় আল্লাহ রহমত হতে একমাত্র কাফের সম্প্রাদায়ই নিরাশ হয়।’’ (ইউসুফ: ৮৭) রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
لايموتن أحدكم إلا وهو يحسن الظن بالله.
(مسلم:৫১২৫)
‘‘তোমাদের কেউ যেন আল্লাহর প্রতি ভাল ধারণা পোষণ ছাড়া মৃত্যুবরণ না করে।’’ (মুসলিম:৫১২৫)
৬৭ নং কবীরা গুনাহ
تكفير المسلم
মুসলমানকে কাফের বলে আখ্যায়িত করা
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
من قال لأخيه كافر فقد باء بها أحدهما. (البخاري:৫৬৩৮)
‘‘যে ব্যক্তি তার কোন মুসলমান ভাইকে বলে, হে কাফের! এর পরিণাম তাদের কোন না কোন একজনের উপর বর্তাবেই।’’ (বুখারী:৫২৩৮)
৬৮ নং কবীরা গুনাহ
المكر والخديعة
ষড়যন্ত্র করা এবং ধোক দেয়া
আল্লাহ তাআলা বলেন-
يَحِيقُ الْمَكْرُ السَّيِّئُ إِلَّا بِأَهْلِهِ. (فاطر: ৪৩)
‘‘কুচক্রের শাস্তি কারও উপর পতিত হয় না, কুচক্রীর উপরই পতিত হয়।’’ (ফাতের:৪৩)রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
المكر اوالخديعة في النار . (رواه ابيهقي , السلسلة الصحيحة)
‘‘কুচক্র এবং ধোকাবাজীর স্থান জাহান্নাম।’’ (বায়হাকী,সহীহ)
৬৯ নং কবীরা গুনাহ
من تجسس على المسلمين ودل على عوارتهم
মুসলামনদের ত্রুটি - বিচ্যুতি তালাশ করা এবং তাদের গোপন তথ্য প্রকাশ করা
আল্লাহ বলেন-
وَلَا تُطِعْ كُلَّ حَلَّافٍ مَهِينٍ ﴿10﴾ هَمَّازٍ مَشَّاءٍ بِنَمِيمٍ ﴿11﴾. (القلم: ১০-১১)
‘‘আপনি আনুগত্য করবেন না ঐ ব্যক্তির যে কথায় কথায় শপথ করে, যে লাঞ্ছিত, যে অন্যকে দোষারোপ করে ও পশ্চাতে নিন্দা করে, যে একের কথা অপরের নিকট বলে বেড়ায়।’’ (আল-কলম-:১০-১১)একটি দীর্ঘ হাদীসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
ومن قال في مؤمن ما ليس فيه، أسكنه الله ردغه الخبال حتى يخرج ما قال، وليس بخارج. (أبوداود:৩১২৩)
‘‘যে ব্যক্তি কোন মুমিন সম্পর্কে এমন দোষ বর্ণনা করে যা তার মধ্যে আদৌ নেই, আল্লাহ জাহান্নামীদের নির্গত পচা গলা পুজের মধ্যে তার স্থান নির্ধারন করে দিবেন। সে যা বলেছে তা বের করে দিতে চাবে, কিন্তু পারবেনা’’ (আবূ দাউদ:৩১২৩)
৭০ নং কবীরা গুনাহ
سب احد من الصحابة رضوان الله عليهم
কোন সাহাবীকে গালি দেয়া
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
لاتسبوا أصحابي، فوالذي نفسي بيده لو أنفق أحدكم مثل أحد ذهبا ما بلغ مد أحدهم ولانصيفه. (البخاري:৩৩৯৭)
‘‘তোমরা আমার সাহাবীদেরকে গালি দিও না। যদি তোমাদের কেউ ওহুদ পাহাড় পরিমাণ আল্লাহর রাস্তায় দান করে তবুও তাদের কারো একটি মুটি বা আধা মুটি পরিমান দানের সমান হবে না।’’ (বুখারী:৩৩৯৮) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
من سب أصحابي فعليه لعنة الله و الملائكة والناس أجمعين. (رواه الطبراني. صحيح الجامع)
‘‘যে ব্যক্তি আমার সাহাবীকে গালি দেয় তার উপর আল্লাহ তাআলা, ফেরেশতা এবং সমস্ত মানুষের অভিসাপ।’’ (তাবারানী, সহীহ আল জামে)
৭১ নং কবীরা গুনাহ
القضاء السوء
অন্যায় বিচার
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
قاضيان في النار وقاض في الجنة، قاض عرف الحق فقضى به فهو في اللجنة، وقاض عرف الحق فجار متعمدا أو قضى بغير علم فهما في النار.
(رواه الترمذى:১২৪৪)
‘‘দু’জন বিচারক জাহান্নামে যাবে এবং একজন বিচারক জান্নাতে যাবে। যে বিচারক মূল সত্যকে উদঘাটন করে এবং তদনুসারে বিচার করে সে জানণাতে যাবে। আর একজন বিচারকার্যে সত্যকে উদঘাটন করাার পর জেনে শুনে অন্যায়ভাবে বিচার করছে সে জাহান্নামে যাবে। অথবা যে না জেনে শুনে বিচার করে সে জাহান্নামে যাবে।’’ (জামে তিরমিযি:১২৪৪)
৭২ নং কবীরা গুনাহ
الفجور عند الخصومة
ঝগড়া করার সময় অতিরিক্ত গালি দেয়া
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
أربع من كن فيه كان منافقا خالصا، ومن كانت فيه خصلة منهن كانت فيه خصلة من النفاق حتى يدعها: إذا ائتمن خان وإذا حدث كذب وإذا عاهد غدر. وإذاخاصم فجر. (البخاري:৩৩)
‘‘চারটি দোষ যার মধ্যে পাওয়া যাবে সেই প্রকৃত মুনাফেক। যার মধ্যে এর একটি পাওয়া যাবে তার নিকট মুনাফেকের একটি চরিত্র পাওয়া গেল। যখন আমানত রাখা হয় সে খেয়ানত করে, যখন কথা বলে মিথ্যা বলে, যখন চুক্তি করে তা ভঙ্গ করে আর যখন ঝগড়া করে গাল মন্দ করে।’’ (বুখারী:৩৩)
৭৩ নং কবীরা গুনাহ
الطعن في الأنساب
কোন বংশ বা তার লোকদের খারাপ গুণে অভিহিত করা
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
اثنتان في الناس هما بهم كفر: الطعن في الأنساب و النياحت على الميت. (مسلم:১০০)
‘‘দু’টি দোষ মানুষের মধ্যে কুফর সমতুল্য । (১) বংশের কুৎসা রটানো।
(২) মৃত ব্যক্তির জন্য আনুষ্ঠানিক কান্নাকাটি করা।’’ (মুসলিম১০০)
৭৪ নংকবীরা গুনাহ
النياحت على الميت
মৃত ব্যক্তির জন্য আনুষ্ঠানিক ও উচ্চ শব্দে কান্নাকাটি করা
যেমন পূর্বের হাদীসে এ সম্পর্কে পরোপুরি নিষেধ এসেছে।
৭৫ নং কবীরা গুনাহ
تغيير منار الارض
জমিনের সীমানা উঠিয়ে ফেলা বা পরিবর্তন করা
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
لعن الله من غير منار الأرض. (مسلم:৩৬৫৭)
‘‘আল্লাহর অভিশাপ করেছেন ঐ ব্যক্তির উপর যে জমিনের সীমানা পরিবর্তন করে।’’ (মুসলিম:৩৬৫৭)
৭৬ নং কবীরা গুনাহ
من سن سنة سيئة أو دعا الى ضلالة
অপসংস্কৃতি ও কু-প্রথার প্রচলন করা অথবা বিভ্রান্তির দিকে আহবান করা
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
ومن سن في الإسلام سنة سيئة فعليه وزرها ووزر من عمل بها من بعده من غير أن ينقص من أوزارهم شيئ.
(مسلم:১৬৯১)
‘‘যে ব্যক্তি ইসলামের মধ্যে কোন কুপ্রথা বা বিদআত চালু করল সে নিজেতো গুনাহগার হবেই এবং তার পরে যে ব্যক্তি ঐ কুপ্রথার উপর আমল কররবে তার গুনাহ ও তারউপর বর্তাবে, তবে এ কারণে ঐ ব্যক্তির গুনাহের অংশ বিন্দু পরিমাণ ও কমানো হবে না।’’ (মুসলিম:১৬৯১)রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
ومن دعا إلى ضلالة، كان عليه في الإثم مثل آثام من تبعه لاينقص ذلك من آثامهم شيئا. (مسلم:৪৮৩১)
‘‘যে ব্যক্তি কোন গোমরাহীর প্রতি মানুষকে আহবান করে ঐ ব্যক্তি গুনাহের মধ্যে ঐ পরিমাণ অংশীদার হবে যে পরিমান গুনাহ ঐ গোমরাহীর অনুসারীদের হবে। তবে এ কারণে তাদের গুনাহের পরিমাণ একটু ও কমানো হবে না। ’’ (মুসলিম:৪৮৩১)
৭৭নং কবীরা গুনাহ
الواصلة لشعرها والنامصة والمةنمصة والمةفلجة والواشمة
নারী অন্যের চুল ব্যবহার করা, শরীরে উলকি আকা, ভ্রু উপড়ানো, দাত ফাক করা
রাসূল কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
لعن الله الواشمات و المستوشمات والنامصات والمتنمصات والمتفلجات للحسن المغيرات خلق الله. (رواه مسلم:৩৯৬৬)
‘‘আল্লাহ তাআলা অভিশাপ করেন এমন সব নারীদের যারা অন্যের অঙ্গ খোদাই করে নিজের শরীরে তা করাতে চায়, যারা ভ্রু উঠিয়ে ফেলে এবং যারা সৌন্দর্যের জন্য দাত সরু ও উহার ফাক বড় করে, যারা আল্লাহর সৃষ্টিকে বদলে নেয়।’’ (মুসলিম:৩৯৬৬) তিনি আরো বলেন-
لعن الله الواصلة والمسةوصلة والواشمة والمسةوشمة. (رواه البخارى:৫৪৭৭)
‘‘সে নারীর উপর আল্লাহর অভিশাপ যে অন্য নারীর মাথায় কৃত্রিম চুল স্থাপন করে কিংবা নিজ মাথায় মেকী চুল স্থাপন করে এবং যে অন্যের গাত্রে উল্কি করে অথবা নিজের গাত্রে উল্কি করায়।’’ (বুখারী:৫৪৭৭)
৭৮ নংকবীরা গুানাহ
أشار إلى أخيه بحديدة
ধারালো অস্ত্র দিয়ে কারো দিকে ইশারা করা
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
من أشار إلى إخيه بحديدة، فإن الملائكة تلعنه، وإن كان أخاه لأبيه وأمه. (مسلم:৪৭৪১)
‘‘যে ব্যক্তি তার কোন ভাইয়ের দিকে ধারালো অস্ত্র দ্বারা ইশারা করে ফেরেশতাগণ তার উপর অভিশাপ করতে থাকে, যদিও সে তার আপন ভাই হয়।’’ (মুসলিম:৪৭৪১) অন্য একটি হাদীসের কঠোর ধমকির কারণ ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
فإنه لا يدري أحدكم لعل الشيطان ينـزع في يده فيقع في حفرة من النار. (مسلم:৪৮৪২)
‘‘হতে পারে শয়তান তার হাতে থেকে অস্ত্র নিয়ে ব্যবহার করবে। ফলে সে জাহান্নামের গুহায় নিপতিত হবে।’’ (মুসলিম:৪৮৪২)
৭৯ নং কবীরা গুনাহ
الإلحاد في الحرم
হারাম শরীফে ধর্মদ্রোহী কাজ করা
আল্লাহ তাআলা বলেন-
إِنَّ الَّذِينَ كَفَرُوا وَيَصُدُّونَ عَنْ سَبِيلِ اللَّهِ وَالْمَسْجِدِ الْحَرَامِ الَّذِي جَعَلْنَاهُ لِلنَّاسِ سَوَاءً الْعَاكِفُ فِيهِ وَالْبَادِ وَمَنْ يُرِدْ فِيهِ بِإِلْحَادٍ بِظُلْمٍ نُذِقْهُ مِنْ عَذَابٍ أَلِيمٍ. (الحج: ২৫)
‘‘এবং মসজিদে হারাম যা আমি করেছি স্থায়ী ও বহিরাগত সকলের জন্য সমান। আর তাতে যে অন্যায় ভাবে কোন ধর্মদ্রোহী কাজ করার ইচ্ছা করে, আমি তাকে যন্ত্রনাদায়ক শাস্তি আস্বাদান করাবো।’’ (হজ্ব: ২৫)এ বিষয় যা আলোচিত হল গুলো মারাত্বক কবীরা গুনাহ যা পবিত্র কুরআনর হাদীসের আলোকে উলামায়ে কেরাম উল্লেখ করেছেন এবং বিশেষ করে ইমাম হাফেয শামসুদ্দীন আয যাহাবী রহ, আল-কাবায়ের কিতাবে সংকলন করেছেন। আল্লাহ যেন এ সকল গুনাহ থেকে বেচে থাকতে সাহায্য করেন এবং আমাদেরকে তাওফীক দিবেন, যে সব কাজ তিনি পছন্দ করেন না, এবং সন্তুষ্ট হন না, এসব কাজ থেকে বেচে থাকতে। এবং আমরা ঐ সব গুনাহ যা আমাদের থেকে প্রকাশ পেয়েছে আল্লাহ যেন আমাদের ঐ সকল পাপ ক্ষমা করেন এবং আল্লার নিকট প্রার্থনা করি তিনি যেন আমাদের ঐসব লোকদের অর্ন্তভুক্ত না করেন যাদের সম্পর্কে রাসূল সা. বলেন,
اتدرون من المفلس إن المفلس من أمتي من يأتي يوم القيامة بصلاة وصيام وزكاة ويأتي وقدشتم هذا وقذف هذا. مسلم৭৬৮২)
‘‘তোমরা কি জান আমার উম্মতের মধ্যে দরিদ্র কে? মনে রাখবে আমার উম্মতের মধ্যে দিরদ্র হল ঐ লোক যে কেয়ামাতের দিন অনেক নামায, রোযা, ও যাকাত নিয়ে উপস্থিত হবে অথচ সে দুনিয়াতে কাউকে গালি দিয়েছে, কাউকে অপবাদ দিয়েছে, কারো সম্পদ ভক্ষণ করেছে আবার কাউকে রক্তাক্ত বা প্রহার করেছে, অতঃপর আল্লাহ তার পুণ্য হতে তার দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত, অত্যাচারিত ব্যক্তিদের পাওনা আদায় করে দিবেন। যখন পাওনাদারদের পাওনা পরিশোধ করার পূবেই তরা পুণ্য শেষ হয়ে যাবে,তখন তাদের পাপগুলি তার উপর চাপিয়ে দেয়া হবে, তারপর তাকে কজাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।’’ (মুসলিম৭৬৮২)
সমাপ্ত
মূল : ইমাম শামসুদ্দীন আয-যাহাবী ( রহ.)
অনুবাদক : জাকেরুল্লাহ বিন আবুল খায়ের
সম্পাদনায় : আব্দুল্লাহ শহীদ আব্দুর রহমান
সূত্র : ইসলাম প্রচার ব্যুরো, রাবওয়াহ, রিয়াদ, সৌদিআরব
পোস্টটি ভালো লাগলে শেয়ার করতে ভুলবেন না কিন্তু।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন