তাওহীদ ও ঈমান (৩য় পর্ব)
তাওহীদ ও ঈমান (৩য় পর্ব)
জাহান্নামের বিবরণ
জাহান্নাম হচ্ছে আযাবের আবাস যেটি মহান আল্লাহ তাআলা পরকালে কাফের, মুনাফেক এবং বদকার মুমিনদের জন্য তৈরী করেছেন।
এখানে আমরা আল্লাহ চাহেতো ধ্বংসের আবাস জাহান্নাম ও তার নানাবিধ শাস্তি সম্পর্কে আলোচনা করব। যাতে জাহান্নাম সম্পর্কে মনে ভীতির সঞ্চার হয় এবং তা থেকে বেঁচে থাকার তাড়না সৃষ্টি হয়। জাহান্নাম থেকে মুক্তি ও জান্নাত প্রাপ্তির নিশ্চয়তার জন্য অতি জরুরী হচ্ছে ঈমান ও সৎকর্ম সম্পাদন এবং শিরক সহ যাবতীয় অন্যায় অপরাধ পরিহার করণ। মহান আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করছি হে আল্লাহ তুমি আমাদের জান্নাত দান কর এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি প্রদান কর। জাহান্নাম সম্পর্কিত আমাদের আলোচনা কোরআন ও সহীহ হাদীসে বর্ণিত বিষয়াবলীর মাঝেই সীমিত থাকবে।
জাহান্নামের প্রসিদ্ধ কিছু নামঃ
সত্ত্বাগত ভাবে জাহান্নাম মূলত একটিই তবে প্রকৃতি ও বৈশিষ্টের দিক থেকে এর মধ্যে বিভিন্নতা রয়েছে। নিম্নে তার কিছু প্রসিদ্ধ নাম উল্লেখ করা হল।
১-আন্ নার: আল্লাহ তাআলা বলেন:
و من يعص الله و رسوله ويتعد حدوده يدخله نارا خالدا فيها و له عذاب مهين. {النساء:১৪}
যে কেউ আল্লাহ ও রাসূলের অবাধ্যতা করে এবং তার সীমা অতিক্রম করে তিনি তাকে নার তথা আগুনে প্রবেশ করাবেন। সে সেখানে চিরকাল থাকবে।তার জন্য রয়েছে অপমান জনক শাস্তি। {সূরা নিসা:১৪}
২- জাহান্নাম: আল্লাহ তাআলা বলেন:
إن الله جامع المنافقين و الكافرين في جهنم جميعا. {النساء:১৪০}
আল্লাহ তাআলা জাহান্নামের মাঝে মুনাফেক ও কাফেরদেরকে একই জায়গায় সমবেত করবেন।{সূরা নিসা:১৪০}
৩-আল-জা'হীম: আল্লাহ ইরশাদ করছেন:
والذين كفروا وكذبوا بآياتنا أولئك أصحاب الجحيم. {المائدة:১০}
যারা অবিশ্বাস করে এবং আমার নিদর্শনাবলীকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে তারা জাহীম তথা জাহান্নামের অধিবাসী।{সূরা মায়েদা:১০}
৪-আস-সা'ঈর: আল্লাহ তাআলা বলছেন:
إن الله لعن الكافرين و أعد لهم سعيرا. { الأحزاب:৬৪}
নিশ্চয় আল্লাহ কাফেরদেরকে অভিসম্পাত করেছেন এবং তাদের জন্য সা'ঈর তথা জ্বলন্ত অগ্নি (জাহান্নাম) প্রস্তুত রেখেছেন। {সূরা আহযাব:৬৪}
৫-সাক্বার: ইরশাদ হচ্ছে:
يوم يسحبون في النار على وجوههم ذوقوا مس سقر. { القمر:৪৮}
যেদিন তাদেরকে মুখ হিঁচড়ে টেনে নেয়া হবে জাহান্নামে, বলা হবেঃ সাক্বার তথা অগ্নির খাদ্য আস্বাদন কর। {সূর কামার:৪৮}
৬-আল্ হোত্বামাহ:আল্লাহ তাআলা বলছেন:
كلا لينبذن في الحطمة وما أدراك ما الحطمة نار الله الموقدة .{الهمزة:৪-৬}
কখনও না, সে অবশ্যই নিক্ষিপ্ত হবে হোতামাহ তথা পিষ্টকারীর মধ্যে। আপনি কি জানেন পিষ্টকারী কি? এটি আল্লাহর প্রজ্জ্বলিত অগ্নি।{সূরা হুমাযাহ:৪-৬}
৭-লাযা: আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করছেন:
كلا إنها لظى نزاعة للشوى تدعوا من أدبر وتولى. {المعارج:১৫-১৭}
কখনই নয়। নিশ্চয় এটি লাযা তথা লেলিহান অগ্নি। যা মাথা হতে চামড়া তুলে দেবে। সেই ব্যক্তিকে ডাকবে যে সত্যের প্রতি পৃষ্ঠপ্রদর্শন করেছিল ও বিমুখ হয়েছিল।
{সূরা মাআরিজ:১৫-১৭}
৮-দারুল বাওয়ার:আল্লাহ তাআলা বলেন:
أَلَمْ تَرَ إِلَى الَّذِينَ بَدَّلُوا نِعْمَةَ اللَّهِ كُفْرًا وَأَحَلُّوا قَوْمَهُمْ دَارَ الْبَوَارِ ﴿২৮﴾ جَهَنَّمَ يَصْلَوْنَهَا وَبِئْسَ الْقَرَارُ ﴿২৯﴾ {إبراهيم: ২৮-২৯}
আপনি কি তাদের দেখেননি, যারা আল্লাহর নেয়ামতকে কুফরে পরিণত করেছে এবং স্বজাতিকে সম্মুখীন করেছে দারুল বাওয়ার তথা ধ্বংসের আলয়ে- জাহান্নামের, তারা তাতে প্রবেশ করবে। সেটা কতইনা মন্দ আবাস। {সূরা ইবরাহীম:২৮-২৯}
জাহান্নামের অবস্থান:
১-মহান আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করছেন:
كلا إن كتاب الفجار لفي سجين. { المطففين:৭}
কখনই না,নিশ্চয় পাপাচারীদের আমলনামা সিজ্জীনে আছে।{সূরা আত্ তাতফীফ:৭}
২- হাদীসে এসেছে
وعن أبي هريرة رضي الله عنه أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال:((... وأما الكافر فإذا قبضت نفسه وذهب بها إلى باب الأرض يقول خزنة الأرض: ما وجدنا ريحا أنتن من هذه,فتبلغ بها إلى الأرض السفلى)). أخرجه الحاكم وابن حبان.
সাহাবী আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:(( ... আর কাফের! যখন তার জান কবজ করা হয় ও ভূ-মন্ডলের দরজায় নিয়ে যাওয়া হয় তখন দরজার দায়িত্বে নিয়োজিত রক্ষীরা বলে: এর চেয়ে দূর্গন্ধময় বাতাস আমরা আর কখনো পাইনি। অত:পর তাকে ভূ-তলের সর্ব নিম্নস্তরে পৌঁছে দেয়া হবে।[১]
জাহান্নামবাসীদের স্থায়িত্ব:
কাফের, মুশরিক ও মুনাফিকরা চিরস্থায়ীভাবে জাহান্নামে থাকবে। সেখান থেকে তাদের বের হওয়ার কোন সুযোগ নেই। আর অপরাধী তাওহীদবাদীরা আল্লাহ তাআলার ইচ্ছাধীন থাকবে। আল্লাহ ইচ্ছা করলে তাদের ক্ষমা করবেন আর চাইলে অপরাধ অনুপাতে শাস্তি দেবেন।
১-আল্লাহ তাআলা বলেন:
وَعَدَ اللَّهُ الْمُنَافِقِينَ وَالْمُنَافِقَاتِ وَالْكُفَّارَ نَارَ جَهَنَّمَ خَالِدِينَ فِيهَا هِيَ حَسْبُهُمْ وَلَعَنَهُمُ اللَّهُ وَلَهُمْ عَذَابٌ مُقِيمٌ {التوبة:৬৮}
আল্লাহ তাআলা মুনফেক পুরুষ ও মুনফেক নারী এবং কাফেরদের জন্য জাহান্নামের আগুনের ওয়াদা করেছেন। তাতে তারা চিরকাল পড়ে থাকবে। সেটিই তাদের জন্য যথেষ্ট। আল্লাহ তাদের প্রতি অভিসম্পাত করেছেন এবং তাদের জন্য রয়েছে স্থায়ী আযাব। {সূরা তাওবা:৬৮}
২-অন্যত্র ইরশাদ হচ্ছে:
إن الله لا يغفر أن يشرك به و يغفر ما دون ذلك لمن يشاء. {النساء:৪৮}
নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা তার সাথে শরীক স্থির করার অপরাধ ক্ষমা করেন না তিনি ক্ষমা করেন এরচেয়ে নিম্ন পর্যায়ের অপরাধ যাকে ইচ্ছা।{সূরা নিসা:৪৮}
জাহান্নামীদের চেহারার বিবরণ:
১-আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন:
ويوم القيامة ترى الذين كذبوا على الله وجوههم مسودة, أليس في جهنم مثوى للمتكبرين . {الزمر:৬০}
যারা আল্লাহর প্রতি মিথ্যা আরোপ করে, কেয়ামতের দিন আপনি তাদের মুখ কাল দেখবেন। অহংকারীদের আবাসস্থল জাহান্নাম নয় কি? {সূরা যুমার:৬০}
২-অন্যত্র ইরশাদ হচ্ছে:
وَوُجُوهٌ يَوْمَئِذٍ عَلَيْهَا غَبَرَةٌ ﴿৪০﴾ تَرْهَقُهَا قَتَرَةٌ ﴿৪১﴾ أُولَئِكَ هُمُ الْكَفَرَةُ الْفَجَرَةُ ﴿৪২﴾
{ عبس:৪০-৪২}
এবং অনেক মুখ মন্ডল সেদিন হবে ধূলি ধূসরিত। তাদেরকে কালিমা আচ্ছন্ন করে রাখবে। তারাই কাফের পাপিষ্ঠের দল।{সূরা আবাসা:৪০-৪২}
৩-আল্লাহ তাআলা আরো বলেন:
وَوُجُوهٌ يَوْمَئِذٍ بَاسِرَةٌ ﴿২৪﴾ تَظُنُّ أَنْ يُفْعَلَ بِهَا فَاقِرَةٌ ﴿২৫﴾
{ القيامة:২৪-২৫}
আর অনেক মুখমন্ডল সেদিন বিবর্ণ হয়ে পড়বে। তারা আশংকা করবে যে তাদের সাথে কোমর ভাঙ্গা আচরণ করা হবে। { সূরা ক্বেয়ামাহ:২৪-২৫}
৪-অন্যত্র বলা হচ্ছে:
وجوه يومئذ خاشعة, عاملة ناصبة, تصلى نارا حامية. {الغاشية:২-৪
অনেক মুখমন্ডল সেদিন হবে ভীত-সন্ত্রস্ত।ক্লিষ্ট,ক্লান্ত।তারা জ্বলন্ত আগুনে পতিত হবে।{সূরা গাশিয়াহ :২-৪}
৫-আরো ইরশাদ হচ্ছে:
تلفح وجوههم النار وهم فيها كالحون.{المؤمنون:১০৪}
আগুন তাদের মুখমন্ডল দগ্ধ করবে এবং তারা তাতে বীভৎস আকার ধারণ করবে।{সূরা মুমিনূন:১০৪}
জাহান্নামের প্রবেশদারের সংখ্যা:
মহান আল্লাহ তাআলা বলছেনঃ
وإن جهنم لموعدهم أجمعين, لها سبعة أبواب لكل باب منهم جزء مقسوم. {الحجر:৪৩-৪৪}
তাদের সবার নির্ধারিত স্থান হচ্ছে জাহান্নাম। এর সাতটি দরজা আছে, প্রত্যেক দরজার জন্য এক-একটি পৃথক দল আছে। {সূরা হিজর:৪৩-৪৪}
জাহান্নামের প্রবেশদার নিজ অধিবাসীদের উপর রুদ্ধ:
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেনঃ
إنها عليهم مؤصدة في عمد ممددة.{الهمزة:৮-৯}
নিশ্চয় তা (আগুন) তাদের উপর দিয়ে বন্ধ করে দেয়া হবে। উঁচু উঁচু স্তম্ভসমূহে।{সূরা হুমাযাহ:৮-৯}
কেয়ামতের ময়দানে জাহান্নামের আগমন:
১-আল্লাহ তাআলা বলেন:
وبرزت الجحيم للغاوين.{الشعراء:৯১}
এবং বিপথগামীদের সামনে উম্মোচিত করা হবে জাহান্নাম।{সূরা শু'আরা:৯১}
২-আল্লাহ তাআলা অন্যত্র ইরশাদ করছেন:
كَلَّا إِذَا دُكَّتِ الْأَرْضُ دَكًّا دَكًّا ﴿২১﴾ وَجَاءَ رَبُّكَ وَالْمَلَكُ صَفًّا صَفًّا ﴿২২﴾ وَجِيءَ يَوْمَئِذٍ بِجَهَنَّمَ يَوْمَئِذٍ يَتَذَكَّرُ الْإِنْسَانُ وَأَنَّى لَهُ الذِّكْرَى ﴿২৩﴾ { الفجر:২১-২৩}
এটা সঙ্গত নয়, যখন পৃথিবী চূর্ণ-বিচূর্ণ হবে। এবং আপনার পালনকর্তা ও ফেরেশতাগণ সারিবদ্ধভাবে উপস্থিত হবেন। এবং সেদিন জাহান্নামকে আনা হবে, সেদিন মানুষ স্মরণ করবে,কিন্তু এ স্মরণ তার কি কাজে আসবে? {সূরা আল-ফজর: ২১-২৩}
৩- হাদীসে এসেছে
وعن عبد الله بن مسعود رضي الله عنه قال:قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : (( يؤتى بجهنم يومئذ لها سبعون ألف زمام, مع كل زمام سبعون ألف ملك يجرونها)). أخرجه مسلم
প্রখ্যাত সাহাবী আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, কেয়ামতের দিন জাহান্নামকে উপস্থিত করা হবে। তার সত্তর হাজার রশি থাকবে, প্রত্যেক রশির সাথে সত্তর হাজার ফেরেশতা থাকবে যারা তাকে টেনে আনবে। [২]
জাহান্নামে পতিত হওয়া ও সর্ব প্রথম পুলসিরাত অতিক্রমকারী:
১-মহান আল্লাহ তাআলা বলছেন:
وَإِنْ مِنْكُمْ إِلَّا وَارِدُهَا كَانَ عَلَى رَبِّكَ حَتْمًا مَقْضِيًّا ﴿৭১﴾ ثُمَّ نُنَجِّي الَّذِينَ اتَّقَوْا وَنَذَرُ الظَّالِمِينَ فِيهَا جِثِيًّا ﴿৭২﴾
{مريم:৭১-৭২}
তোমাদের মধ্যে এমন কেউ নেই যে তথায় পৌছবে না। এটা আপনার পালনকর্তার অনিবার্য ফায়সালা। অত:পর আমি তাকওয়া অবলম্বনকারীদের উদ্ধার করব আর জালেমদেরকে নতজানু অবস্থায় ছেড়ে দেব। {সূরা মারইয়াম:৭১-৭২}
২- হাদীসে এসেছে
وعن أبي هريرة رضي الله عنه أن أن ناسا قالوا : يا رسول الله هل نرى ربنا يوم القيامة ... ুوفيه- ويضرب الصراط بين ظهري جهنم فأكون أنا و أمتي أول من يجيز. متفق عليه
বিশিষ্ট সাহাবী আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, কিছু লোক জানতে চাইলো : ইয়া রাসূলাল্লাহ, কেয়ামতের দিন আমরা কি আমাদের পালনকর্তা আল্লাহ তাআলাকে দেখতে পাব... -তাতে আছে- জাহান্নামের উপর পুলসিরাত স্থাপন করা হবে। আমি এবং আমার উম্মত সর্বপ্রথম সেটি অতিক্রম করব।[৩]
জাহান্নামের গভীরতা:
১- হাদীসে এসেছে
وعن أبي هريرة رضي الله عنه قال:كنا مع رسول الله صلى الله عليه وسلم إذ سمع وجبة, فقال النبي صلى الله عليه وسلم : تدرون ما هذا؟ قلنا : الله ورسوله أعلم, قال: هذا حجر رمي به في النار منذ سبعين خريفا فهو يهوي في النار الآن حتى انتهى إلى قعرها. أخرجه مسلم
সাহাবী আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করছেন, আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট বসা ছিলাম, হঠাৎ তিনি শিলাখন্ড পতিত হওয়ার বিকট একটি আওয়াজ শুনতে পেলেন। নবীজী আমাদের উদ্দেশ্যে বললেন : তোমরা কি জান এটি কি? বর্ণনাকারী বলেন: আমরা বললাম : আল্লাহ ও তদিয় রাসূল ভাল জানেন। তখন রাসূলুল্লাহ বললেন: এটি একটি পাথর খন্ড, সত্তর বছর পূর্বে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হয়েছে এবং এ সত্তর বছর যাবত ক্রমাগত নিচের দিকে পতিত হচ্ছে, শেষ পর্যন্ত এখন গিয়ে তার তলদেশে পৌছেছে। [৪]
২- হাদীসে এসেছে
وعن سمرة بن جندب رضي الله عنه أنه سمع نبي الله صلى الله عليه وسلم يقول: إن منهم من تأخذه النار إلى كعبيه, ومنهم من تأخذه إلى حجزته, ومنهم من تأخذه إلى عنقه. أخرجه مسلم
সাহাবী সামুরা বিন জুনদুব রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছেন, নবীজী বলেন, কোন কোন জাহান্নামীকে আগুন তার টাখনু পর্যন্ত পাকড়াও করবে। কারো কারো কোমর পর্যন্ত এবং কারো কারো গ্রীবাদেশ পর্যন্ত।[৫]
জাহান্নামবাসীদের আকৃতির বিশালতা:
১- হাদীসে এসেছে
عن أبي هريرة رضي الله عنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم:(( ضرس الكافر أو ناب الكافر مثل أحد, وغلظ جلده مسيرة ثلاث)). أخرجه مسلم.
বিশিষ্ট সাহাবী আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত,রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন: কাফেরের (মাড়ির) দাঁত উহুদ পাহাড় সদৃশ, এবং তাদের চামড়ার পুরুত্ব তিন দিনের ভ্রমনপথের দূরত্ব সমান।[৬]
২- হাদীসে এসেছে
وعن أبي هريرة رضي الله عنه أن النبي صلى الله عليه وسلم قال:((ما بين منكبي الكافر في النار مسيرة ثلاثة أيام للراكب المسرع)). متفق عليه
সাহাবী আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন: জাহান্নামে কাফেরের দুই কাঁধের মাঝের দূরত্ব অতি দ্রুতগামী আরোহীর তিন দিনের ভ্রমনপথের দূরত্ব সমান।[৭]
৩- হাদীসে এসেছে
وعن أبي هريرة رضي الله عنه عن النبي صلى الله عليه وسلم قال:(( ضرس الكافر يوم القيامة مثل أحد, وعرض جلده سبعون ذراعا,وعضده مثل البيضاء, وفخذه مثل ورقان,ومقعده من النار ما بيني وبين الربذة)). أخرجه أحمد والحاكم .
প্রখ্যাত সাহাবী আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী কারীম সাল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন: কেয়ামতের দিন কাফেরের দাঁত হবে উহুদ পাহাড় সদৃশ, তাদের চামড়ার প্রস্থ (পুরুত্ব) হবে সত্তর হাত, তাদের বাহু হবে বায়যা নামক স্থান সদৃশ, তাদের উরু হবে ওরকান নামক স্থান সদৃশ, আর জাহান্নামে তাদের বসার স্থানটি হবে আমি এবং রাবযাহ নামক স্থানের দূরত্ব সমান।[৮]
জাহান্নামের উত্তাপের তীব্রতা:
১- মহান আল্লাহ তাআলা বলেন:
وَنَحْشُرُهُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ عَلَى وُجُوهِهِمْ عُمْيًا وَبُكْمًا وَصُمًّا مَأْوَاهُمْ جَهَنَّمُ كُلَّمَا خَبَتْ زِدْنَاهُمْ سَعِيرًا ﴿৯৭﴾ ذَلِكَ جَزَاؤُهُمْ بِأَنَّهُمْ كَفَرُوا بِآَيَاتِنَا { الإسراء:৯৭-৯৮}
আমি কেয়ামতের দিন তাদের সমবেত করব তাদের মুখে ভর দিয়ে চলা অবস্থায়, অন্ধ, মুক ও বধির অবস্থায়। তাদের আবাসস্থল জাহান্নাম। যখনই নির্বাপিত হওয়ার উপক্রম হবে আমি তখন তাদের জন্য অগ্নি আরো বৃদ্ধি করে দেব। এটাই তাদের শাস্তি। কারণ তারা আমার নিদর্শনসমূহ অস্বীকার করেছে।{সূরা ইসরা: ৯৭-৯৮}
২- হাদীসে এসেছে
وعن أبي هريرة رضي الله عنه أن النبي صلى الله عليه وسلم قال:(( ناركم هذه التي يوقد ابن آدم جزء من سبعين جزءا من حر جهنم)) قالوا: والله إن كانت لكافية يا رسول الله, قال:(( فإنها فضلت عليها بتسعة وستين جزءا كلها مثل حرها)). متفق عليه
বিখ্যাত সাহাবী আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবীজী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলছেন: তোমাদের এ আগুন যা আদম সন্তান প্রজ্জ্বলিত করে জাহান্নামের (আগুনের) উষ্ণতার সত্তর ভাগের এক ভাগ। লোকেরা বলল: ইয়া রাসূলাল্লাহ যদি এটিই (দুনিয়ার আগুন) হতো তাহলেইতো যথেষ্ট ছিল। নবীজী বললেন: একে আরো উনসত্তরগুন বৃদ্ধি করা হয়েছে, প্রত্যেকটি এর উষ্ণতার অনুরূপ।[৯]
৩- হাদীসে এসেছে
وعن أبي هريرة رضي الله عنه قال:قال رسول الله صلى الله عليه وسلم :((اشتكت النار إلى ربي فقالت: رب أكل بعضي بعضا,فأذن لها بنفسين, نفس في الشتاء و نفس في الصيف, فأشد ما تجدون من الحر, وأشد ما تجدون من الزمهرير)). متفق عليه
সাহাবী আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: জাহান্নাম তার প্রতিপালক আল্লাহর নিকট অনুযোগ করে বলেছে: হে রব! আমার এক অংশ অন্য অংশকে খেয়ে ফেলছে। তখন আল্লাহ তাআলা তাকে দু'টো নি:শ্বাস ছাড়ার অনুমতি প্রদান করেন। একটি শীতের সময় অপরটি গ্রীষ্মে। অত:এব তোমরা যে তীব্র গরম অনুভব কর। এবং তোমরা যে তীব্র শীত অনুভব কর। (তা সেই নিশ্বাসের প্রতিক্রিয়া)।[১০]
জাহান্নামের জ্বালানী:
১- আল্লাহ তাআলা বলেন:
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا قُوا أَنْفُسَكُمْ وَأَهْلِيكُمْ نَارًا وَقُودُهَا النَّاسُ وَالْحِجَارَةُ عَلَيْهَا مَلَائِكَةٌ غِلَاظٌ شِدَادٌ لَا يَعْصُونَ اللَّهَ مَا أَمَرَهُمْ وَيَفْعَلُونَ مَا يُؤْمَرُونَ ﴿৬﴾ {التحريم:৬}
হে মুমিনগন, তোমরা নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে সেই অগ্নি থেকে রক্ষা কর, যার জ্বালানী ও ইন্ধন হবে মানুষ ও প্রস্তর। যাতে নিয়োজিত আছে পাষাণ হৃদয়, কঠোর স্বভাব ফেরেশতাগন। তারা আল্লাহ তাআলা যা আদেশ করেন, তা অমান্য করে না এবং যা করতে আদেশ করা হয়, তাই করে। {সূরা তাহরীম:৬}
২-আল্লাহ তাআলা আরো বলেন:
فَاتَّقُوا النَّارَ الَّتِي وَقُودُهَا النَّاسُ وَالْحِجَارَةُ أُعِدَّتْ لِلْكَافِرِينَ {البقرة:২৪}
তাহলে সে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা পাওয়ার চেষ্টা কর যার জ্বালানী হবে মানুষ ও পাথর। যা প্রস্তুত করা হয়েছে কাফেরদের জন্য। {সূরা বাকারা:২৪}
৩-অন্যত্র ইরশাদ হচ্ছে:
إنكم و ما تعبدون من دون الله حصب جهنم أنتم لها واردون.{ الأنبياء:৯৮}
তোমরা এবং আল্লাহর পরিবর্তে তোমরা যাদের উপাসনা করছ, সকলেই জাহান্নামের ইন্ধন। তোমরাই তাতে প্রবেশ করবে।{সূরা আম্বিয়া:৯৮}
জাহান্নামের বিভিন্ন স্তর:
জাহান্নাম সম্পূর্ণটাই কিন্তু একই স্তর বিশিষ্ট নয়। তার কিছু স্তর অন্য স্তর অপেক্ষা নিম্ন।
এর সর্বনিম্নস্তরে থাকবে মুনাফিকরা। কারণ তাদের কুফরী ছিল অন্যদের তুলনায় খুবই মারাত্মক। এবং তারাই মূলত মুমিনদের বেশি কষ্ট দিয়েছে এবং অপরদেরকে নির্যাতন করার সুযোগ তৈরী করে দিয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন:
إن المنافقين في الدرك الأسفل من النارولن تجد لهم نصيرا. {النساء:১৪৫}
নি:সন্দেহে মুনাফেকরা থাকবে জাহান্নামের সর্বনিম্ন স্তলে। আর আপনি কখনো তাদের কোন সাহায্যকারী পাবেন না। {সূরা নিসা:১৪৫}
জাহান্নামের ছায়ার বিবরণ:
১-আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করছেন:
وَأَصْحَابُ الشِّمَالِ مَا أَصْحَابُ الشِّمَالِ ﴿৪১﴾ فِي سَمُومٍ وَحَمِيمٍ ﴿৪২﴾ وَظِلٍّ مِنْ يَحْمُومٍ ﴿৪৩﴾ الواقعة:৪১-৪৩}
বামপার্শ্বস্থ লোক, কত না হতভাগ্য তারা, তারা থাকবে প্রখর বাষ্পে এবং উত্তপ্ত পানিতে, এবং ধুম্রকুঞ্জের ছায়ায়।{সূরা ওয়াক্বিয়া:৪১-৪৩}
২-অন্যত্র ইরশাদ হচ্ছে:
لَهُمْ مِنْ فَوْقِهِمْ ظُلَلٌ مِنَ النَّارِ وَمِنْ تَحْتِهِمْ ظُلَلٌ ذَلِكَ يُخَوِّفُ اللَّهُ بِهِ عِبَادَهُ يَا عِبَادِ فَاتَّقُونِ {الزمر:১৬}
তাদের জন্য উপর দিক থেকে এবং নীচের দিক থেকে আগুনের মেঘমালা (আচ্ছাদন) থাকবে। এ শাস্তি দ্বারা আল্লাহ তাঁর বান্দাদেরকে সতর্ক করেন যে, হে আমার বান্দাগণ, আমাকে ভয় কর। {সূরা যুমার:১৬}
৩-আল্লাহ তাআলা আরো বলেন:
انْطَلِقُوا إِلَى ظِلٍّ ذِي ثَلَاثِ شُعَبٍ ﴿৩০﴾ لَا ظَلِيلٍ وَلَا يُغْنِي مِنَ اللَّهَبِ ﴿৩১﴾ {المرسلات:৩০-৩১}
চল তোমরা তিন কুণ্ডলীবিশিষ্ট ছায়ার দিকে, যে ছায়া সুনিবিড় নয় এবং অগ্নির উত্তাপ থেকে রক্ষা করে না। {সূরা আল মুরসালাত:৩০-৩১}
জাহান্নামের রক্ষীবৃন্দ:
১-মহান আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করছেন:
سَأُصْلِيهِ سَقَرَ ﴿২৬﴾ وَمَا أَدْرَاكَ مَا سَقَرُ ﴿২৭﴾ لَا تُبْقِي وَلَا تَذَرُ ﴿২৮﴾ لَوَّاحَةٌ لِلْبَشَرِ ﴿২৯﴾ عَلَيْهَا تِسْعَةَ عَشَرَ ﴿৩০﴾ وَمَا جَعَلْنَا أَصْحَابَ النَّارِ إِلَّا مَلَائِكَةً وَمَا جَعَلْنَا عِدَّتَهُمْ إِلَّا فِتْنَةً لِلَّذِينَ كَفَرُوا
{المدثر:২৬-৩১}
আমি তাকে দাখিল করব অগ্নিতে। আপনি কি বুঝলেন অগ্নি কি? এটা অক্ষত রাখবে না এবং ছাড়বেও না। মানুষকে দগ্ধ করবে। এর উপর নিয়োজিত আছে উনিশজন ফেরেশতা। আমি জাহান্নমের তত্ত্বাবধায়ক ফেরেশতাই রেখেছি। আমি কাফেরদেরকে পরীক্ষা করার জন্যই তার এই সংখ্যা করেছি। {সূরা আল-মুদ্দাসসির:২৬-৩১}
২-জাহান্নামের রক্ষী মালেক, আল্লাহ বলেন:
ونادوا يا مالك ليقض علينا ربك قال إنكم ماكثون. {الزخرف:৭৭}
তারা ডেকে বলবে, হে মালেক, তোমার প্রতিপালক যেন আমাদেরকে নি:শেষ করে দিন। সে বলবে: তোমরা তো এখানেই অবস্থান করবে। {সূরা যুখরুফ:৭৭}
জাহান্নামের দল:
عن أبي سعيد الخدري رضي الله عنه عن النبي صلى الله عليه وسلم قال:( يقول الله تعالى : يا آدم, فيقول : لبيك و سعديك, والخير في يديك, فيقول: أخرج بعث النار, قال: وما بعث النار؟ قال: من كل ألف تسعمائة و تسعة وتسعين, فعنده يشيب الصغير {وتضع كل ذات حمل حملها وترى الناس سكارى وماهم بسكارى ولكن عذاب الله شديد} الحج:২}
قالوا : يا رسول الله,, وأينا ذلك الواحد ؟ قال: (أبشروا فإن منكم رجلا, ومن يأجوج و مأجوج ألف) متفق عليه
সাহাবী আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত,নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:আল্লাহ তাআলা বলবেন:হে আদম।আদম আলাইহিস সালাম বলবেন: লাব্বাইক (আমি হাজির)।আল্লাহ বলবেন: জাহান্নামের দল বের করুন। আদম আলাইহিস সালাম বলবেন: জাহান্নামের দল কি? আল্লাহ বলবেন: প্রত্যেক হাজার থেকে নয়শত নিরানব্বই জন। তখন ছোটরা বৃদ্ধ হয়ে যাবে।{এবং প্রত্যেক গর্ভবতী তার গর্ভপাত করবে এবং মানুষকে তুমি দেখবে মাতাল; অথচ তারা মাতাল নয় বস্তুত: আল্লাহর আযাব সুকঠিন।(সূরা হজ্জ্ব:২)।
সাহাবারা বললেন : ইয়া রাসূলাল্লাহ,, আমাদের সে একজন কে? নবীজী বললেন:তোমরা সুসংবাদ গ্রহন কর! কারণ তোমাদের মধ্যহতে একজন আর ইয়াজুজ মাজুজ থেকে একহাজার।[১১]
• জাহান্নামীদের জাহান্নামে প্রবেশ পদ্ধতি:
১-মহান আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন:
وَسِيقَ الَّذِينَ كَفَرُوا إِلَى جَهَنَّمَ زُمَرًا حَتَّى إِذَا جَاءُوهَا فُتِحَتْ أَبْوَابُهَا وَقَالَ لَهُمْ خَزَنَتُهَا أَلَمْ يَأْتِكُمْ رُسُلٌ مِنْكُمْ يَتْلُونَ عَلَيْكُمْ آَيَاتِ رَبِّكُمْ وَيُنْذِرُونَكُمْ لِقَاءَ يَوْمِكُمْ هَذَا قَالُوا بَلَى وَلَكِنْ حَقَّتْ كَلِمَةُ الْعَذَابِ عَلَى الْكَافِرِينَ ﴿৭১﴾ قِيلَ ادْخُلُوا أَبْوَابَ جَهَنَّمَ خَالِدِينَ فِيهَا فَبِئْسَ مَثْوَى الْمُتَكَبِّرِينَ ﴿৭২﴾ {الزمر:৭১-৭২}
কাফেরদেরকে জাহান্নামের দিকে দলে দলে হাঁকিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে। তারা যখন সেখানে পৌঁছবে, তখন তার দরজাসমূহ খুলে দেয়া হবে এবং জাহান্নামের রক্ষীরা তাদেরকে বলবে, তোমাদের কাছে কি তোমাদের মধ্য থেকে রাসূলগন আসেননি, যারা তোমাদের নিকট তোমাদের পালনকর্তার আয়াতসমূহ আবৃত্তি করতেন এবং এ দিনের সাক্ষাতের ব্যাপারে সতর্ক করতেন? তারা বলবে: হ্যাঁ, কিন্তু কাফেরদের প্রতি শাস্তির হুকুমই বাস্তবায়িত হয়েছে। বলা হবে, তোমরা জাহান্নামের দরজা দিয়ে প্রবেশ কর, সেখানে চিরকাল অবস্থানের জন্য। কত নিকৃষ্ট অহংকারীদের আবাসস্থল। {সূরা যুমার:৭১-৭২}
২-অন্যত্র ইরশাদ হচ্ছে:
بَلْ كَذَّبُوا بِالسَّاعَةِ وَأَعْتَدْنَا لِمَنْ كَذَّبَ بِالسَّاعَةِ سَعِيرًا ﴿১১﴾ إِذَا رَأَتْهُمْ مِنْ مَكَانٍ بَعِيدٍ سَمِعُوا لَهَا تَغَيُّظًا وَزَفِيرًا ﴿১২﴾ وَإِذَا أُلْقُوا مِنْهَا مَكَانًا ضَيِّقًا مُقَرَّنِينَ دَعَوْا هُنَالِكَ ثُبُورًا ﴿১৩﴾ لَا تَدْعُوا الْيَوْمَ ثُبُورًا وَاحِدًا وَادْعُوا ثُبُورًا كَثِيرًا ﴿১৪﴾ {الفرقان:১১-১৪}
যারা কেয়ামতকে অস্বীকার করে তাদের জন্য আমি প্রস্তুত রেখেছি জ্বলন্ত অগ্নি। অগ্নি যখন দূর হতে তাদেরকে দেখবে তখন তারা শুনতে পাবে তার ক্রুদ্ধ গর্জন ও হুঙ্কার। এবং যখন তাদেরকে শৃঙ্খলিত অবস্থায় জাহান্নামের কোন এক সংকীর্ণ স্থানে নিক্ষেপ করা হবে, তখন তারা সেখানে ধ্বংস তথা মৃত্যুকে আহ্বান করবে। বলা হবে আজ তোমরা এক মৃত্যুকে ডেকো না-অনেক মৃত্যুকে ডাক।
{সূরা আল-ফোরক্বান:১১-১৪}
৩-আল্লাহ তাআলা আরও বলেন:
يَوْمَ يُدَعُّونَ إِلَى نَارِ جَهَنَّمَ دَعًّا ﴿১৩﴾ هَذِهِ النَّارُ الَّتِي كُنْتُمْ بِهَا تُكَذِّبُونَ ﴿১৪﴾ {الطور:১৩-১৪}
যেদিন তাদেরকে জাহান্নামের অগ্নির দিকে ধাক্কা মেরে মেরে নিয়ে যাওয়া হবে। এবং বলা হবে এই সেই অগ্নি, যাকে তোমরা মিথ্যা বলতে। {সূরা আত্ব-তুর:১৩-১৪}
৪-আরও ইরশাদ হচ্ছে:
وَتَرَى الْمُجْرِمِينَ يَوْمَئِذٍ مُقَرَّنِينَ فِي الْأَصْفَادِ ﴿৪৯﴾ سَرَابِيلُهُمْ مِنْ قَطِرَانٍ وَتَغْشَى وُجُوهَهُمُ النَّارُ ﴿৫০﴾ {إبراهيم:৪৯-৫০}
সেদিন তুমি অপরাধিদেরকে পরস্পরে শৃঙ্খলিত অবস্থায় দেখবে। তাদের জামা হবে দাহ্য আলকাতরার এবং তাদের মুখমন্ডলকে আগুন আচ্ছন্ন করে ফেলবে।{সূরা ইবরাহীম:৪৯-৫০}
৫- হাদীসে এসেছে
وعن أبي هريرة رضي الله عنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم:((تخرج عنق من النار يوم القيامة, لها عينان تبصران, وأذنان تسمعان,ولسان ينطق يقول:إني وكلت بثلاثة: بكل جبار عنيد, وبكل من دعا مع الله إلها آخر, وبالمصورين )). أخرجه أحمد والترمذي.
বিশিষ্ট সাহাবী আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন: কেয়ামতের দিন জাহান্নাম থেকে একটি গ্রীবা (সদৃশ বস্তু) বের হয়ে আসবে। তার দু'টো চক্ষু থাকবে যার দ্বারা দেখবে, দু'টো কান থাকবে যার মাধ্যমে শুনবে, এবং যিহ্বা থাকবে যার মাধ্যমে কথা বলবে। সে বলবে: আমি তিন শ্রেণীর লোকের (শাস্তির) প্রতি দায়িত্ব প্রাপ্ত হয়েছি, প্রত্যেক অবাধ্য অহংকারীর প্রতি, যারা আল্লাহর সাথে অন্য ইলাহ-উপাস্যদের ডাকে এবং জীবন্ত প্রাণীর চিত্রাংকন কারীর প্রতি।[১২]
সর্বপ্রথম যাদের মাধ্যমে জাহান্নামকে প্রজ্জ্বলিত করা হবে:
عن أبي هريرة رضي الله عنه قال: سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول: ((إن أول الناس يقضى يوم القيامة عليه رجل استشهد, فأتي به فعرفه نعمه فعرفها,قال:فما عملت فيها؟ قال:قاتلت فيك حتى استشهدت, قال:كذبت, ولكنك قاتلت لأن يقال جريء فقد قيل,ثم أمر به فسحب على وجهه حتى ألقي في النار.
ورجل تعلم العلم و علمه و قرأ القرآن, فأتي به فعرفه نعمه فعرفها,قال:فما عملت فيها؟ قال: تعلمت العلم وعلمته, وقرأت فيك القرآن,قال:كذبت ولكنك تعلمت العلم ليقال عالم, وقرأت القرآن ليقال هو قارئ فقد قيل, ثم أمر به فسحب على وجهه حتى ألقي في النار.
ورجل وسع الله عليه, وأعطاه من أصناف المال كله,فأتي به فعرفه نعمه فعرفها,قال : فما عملت فيها؟ قال: ما تركت من سبيل تحب أن ينفق فيها إلا أنفقت فيها لك, قال:كذبت, ولكنك فعلت ليقال هو جواد, فقد قيل, ثم أمر به فسحب على وجهه, ثم ألقي في النار)). أخرجه مسلم.
প্রখ্যাত সাহাবী আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ইরশাদ করতে শুনেছি, নবীজী বলেন:কেয়ামতের দিন সর্বপ্রথম যাদের বিচার করা হবে, শাহাদত বরণকারী একজন লোক,তাকে উপস্থিত করা হবে এবং আল্লাহ প্রদত্ত্ব যাবতীয় নেয়ামত সম্পর্কে জ্ঞাত করা হবে সে সব নেয়ামতকে চেনে নেবে। তখন তাকে বলা হবে: এসব নেয়ামতের পরিপ্রেক্ষিতে তুমি কি কি আমল করেছ ? বলবে:আপনার তরে লড়াই-জিহাদ করেছি এবং শহীদ হয়ে গিয়েছি। বলা হবে: তুমি মিথ্যা বলছ। বরং তুমি লড়াই করেছ এজন্য যে, লোকেরা তোমাকে বীর-বাহাদুর বলবে। তাতো বলা হয়েছে। অত:পর তার ব্যাপারে রায় ঘোষণা হবে এবং তাকে চেহারার উপর ভর দিয়ে টেনে নিয়ে (যাওয়া হবে এবং) জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।
(দ্বিতীয় পর্যায়ে)আলেম ব্যক্তি যে নিজে দ্বীনী এলম শিক্ষা গ্রহণ করেছে, অপর শিক্ষা দিয়েছে। এবং কোরআন পড়েছে। তাকে উপস্থিত করা হবে এবং প্রদত্ত নেয়ামত সম্পর্কে জ্ঞাত করা হবে। সে সব নেয়ামতই চেনে ফেলবে। তখন বলা হবে এ সকল নেয়ামতের প্রতিকর্ম স্বরূপ তুমি কি করেছ? বলবে : আমি এলম শিখেছি ও অপরকে শিক্ষা দিয়েছি। এবং তোমার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে কোরআন পড়েছি। বলা হবে : তুমি মিথ্যা বলছ, বরং তুমি এলম শিখেছ যাতে লোকেরা তোমাকে আলেম বলে, আর কোরআন পড়েছ যাতে ক্বারী বলে। তাতো বলা হয়েছে। অত:পর তার ব্যাপারে নির্দেশ দেয়া হবে, ফলে চেহারার উপর ভর দিয়ে টেনে নিয়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।
তৃতীয় পর্যায়ে সে ব্যক্তি যাকে আল্লাহ প্রচুর প্রাচুর্য দিয়েছেন এবং সর্ব প্রকার সম্পদ তাকে দেয়া হয়েছে। তাকে উপস্থিত করা হবে: এবং সকল নেয়ামত চেনানো হবে। সে সবগুলো চেনে নেবে। তখন জিজ্ঞেস করা হবে : এসব নেয়ামতের প্রতিকর্ম হিসেবে তুমি কি করেছ ? সে বলবে: যে সব পথে খরচ করা তোমার পছন্দ ছিল, সে সকল পথেই আমি খরচ করেছি তোমার সন্তুষ্টির জন্য। বলা হবে, তুমি মিথ্যা বলছ। তুমি খরচ করেছ ঠিকই কিন্তু উদ্দেশ্য ছিল লোকেরা তোমারে দানবীর বলবে। তাতো বলা হয়ে গেছে। অত:পর তার রায় ঘোষণা হবে। ফলে তাকে মুখের উপর ভর দিয়ে টেনে নিয়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।[১৩]
জাহান্নামের অধিবাসী:
১-পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হচ্ছে:
والذين كفروا وكذبوا بآياتنا أولئك أصحاب النار هم فيها خالدون. {البقرة:৩৯}
আর যারা অস্বীকার করবে এবং আমার আয়াতগুলোকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করবে তারাই হবে জাহান্নামবাসী। অনন্তকাল সেখানে অবস্থান করবে। {সূরা বাকারা:৩৯}
২- হাদীসে এসেছে
وعن عياض بن حمار رضي الله عنه أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال:((...وأهل النار خمسة: الضعيف الذي لا زبر له,الذين هم فيكم تبعا لا يتبعون أهلا و لا مالا,والخائن الذي لا يخفى له طمع وإن دق إلا خانه,ورجل لا يصبح ولا يمسي إلا وهو يخادعك عن أهلك ومالك))وذكر البخل أو الكذب (( والشنظير الفحاش)). أخرجه مسلم.
সাহাবী ইয়ায বিন হিমার রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ... এবং জাহান্নামের অধিবাসী হচ্ছে পাঁচ শ্রেণীর লোক, দুর্বল যার কোন ( সুস্থ ) বিবেক ও সম্পদ নেই, যারা তোমাদের মাঝে অনুগত হয়ে থাকে এবং যাদের পরিবার ও সম্পদের প্রতি কোন মোহ নেই। বিশ্বাসঘাতক ও দুর্নীতিবাজ যার লোভ-লালসা অপ্রকাশ্য নয়-ছোট খাটো বিষয়েও খেয়ানত করে। এমন লোক যে সকাল বিকাল ( সার্বক্ষণিক ) তোমার পরিবার ও সম্পদের ব্যাপারে তোমার সাথে প্রতারণা করে। এবং তিনি কৃপণতা বা মিথ্যার কথা উল্লেখ করেছেন। (অর্থাৎ যারা এসবের সাথে সংশ্লিষ্ট ) এবং অতি অশ্লীল ও নোংরা স্বভাবের লোক। [১৪]
জাহান্নামের অধিকাংশ অধিবাসী:
عن ابن عباس رضي الله عنه قال:قال النبي صلى الله عليه وسلم ((...ورأيت النار, فإذا أكثر أهلها النساء يكفرن)) قيل أ يكفرن بالله؟ قال:((يكفرن العشير ويكفرن الإحسان,لو أحسنت إلى إحداهن الدهر ثم رأت منك شيئا, قالت: ما رأيت منك خيرا قط)). متفق عليه
প্রখ্যাত সাহাবী আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করছেন, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন: ... এবং আমি জাহান্নাম প্রত্যক্ষ করলাম, দেখলাম তার অধিকাংশ অধিবাসী হচ্ছে নারী যারা অকৃতজ্ঞতা করে। প্রশ্ন করা হল, তারা কি আল্লাহর সাথে অকৃতজ্ঞতা করে? নবীজী বললেন: তারা স্বামীর অকৃতজ্ঞতা করে এবং এহসান-অনুগ্রহের কথা ভুলে যায়, তাদের কারো প্রতি যদি তুমি যুগ যুগ ধরে অনুগ্রহ কর অত:পর তোমার মধ্যে (অপছন্দনীয়) কিছু দেখতে পায় তখন সাথে সাথে বলে ফেলে, তোমার থেকে আমি কখনো ভাল কিছু দেখতে পাইনি।[১৫]
• জাহান্নামীদের মধ্যে সবচে কঠিন শাস্তি ভোগকারী দল :
১-মহান আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করছেন:
أَلْقِيَا فِي جَهَنَّمَ كُلَّ كَفَّارٍ عَنِيدٍ ﴿২৪﴾ مَنَّاعٍ لِلْخَيْرِ مُعْتَدٍ مُرِيبٍ ﴿২৫﴾ الَّذِي جَعَلَ مَعَ اللَّهِ إِلَهًا آَخَرَ فَأَلْقِيَاهُ فِي الْعَذَابِ الشَّدِيدِ ﴿২৬﴾
{ق:২৪-২৬}
তোমরা উভয়েই নিক্ষেপ কর জাহান্নামে প্রত্যেক অকৃতজ্ঞ বিরুদ্ধবাদীকে। যে বাধা দিত মঙ্গল জনক কাজে, সীমালঙ্ঘনকারী, সন্দেহ পোষণকারীকে। যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে উপাস্য গ্রহণ করত, তাকে তোমরা কঠিন শাস্তিতে নিক্ষেপ কর।{সূরা ক্বাফ:২৪-২৬}
২-আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআলা আরো বলেন:
فَوَقَاهُ اللَّهُ سَيِّئَاتِ مَا مَكَرُوا وَحَاقَ بِآَلِ فِرْعَوْنَ سُوءُ الْعَذَابِ ﴿৪৫﴾ النَّارُ يُعْرَضُونَ عَلَيْهَا غُدُوًّا وَعَشِيًّا وَيَوْمَ تَقُومُ السَّاعَةُ أَدْخِلُوا آَلَ فِرْعَوْنَ أَشَدَّ الْعَذَابِ ﴿৪৬﴾ {غافر:৪৫-৪৬}
এবং ফেরআউন গোত্রকে শোচনীয় আযাব গ্রাস করল। সকাল ও সন্ধ্যায় তাদেরকে আগুনের সামনে পেশ করা হয় এবং যে কেয়ামত সঙ্ঘটিত হবে, সেদিন আদেশ করা হবে, ফেরআউন গোত্রকে কঠিনতর আযাবে দাখিল কর।{সূরা গাফের:৪৫-৪৬}
৩-অন্যত্র ইরশাদ হচ্ছে:
الَّذِينَ كَفَرُوا وَصَدُّوا عَنْ سَبِيلِ اللَّهِ زِدْنَاهُمْ عَذَابًا فَوْقَ الْعَذَابِ بِمَا كَانُوا يُفْسِدُونَ {النحل:৮৮}
যারা কাফের হয়েছে এবং আল্লাহর পথে বাধা সৃষ্টি করেছে, আমি তাদেরকে আযাবের পর আযাব বাড়িয়ে দেব। কারণ, তারা অনর্থ - অশান্তি সৃষ্টি করত।{সূরা নাহল:৮৮}
৪-আরও ইরশাদ হচ্ছে:
إِنَّ الْمُنَافِقِينَ فِي الدَّرْكِ الْأَسْفَلِ مِنَ النَّارِ وَلَنْ تَجِدَ لَهُمْ نَصِيرًا ..{النساء:১৪৫}
নি:সন্দেহে মুনাফেকরা রয়েছে জাহান্নামের সর্বনিম্ন স্তরে, আর তোমরা কখনো তাদের কোন সাহায্যকারী পাবে না। {সূরা আননিসা:১৪৫}
৫-আল্লাহ তাআলা আরোও বলছেন:
فَوَرَبِّكَ لَنَحْشُرَنَّهُمْ وَالشَّيَاطِينَ ثُمَّ لَنُحْضِرَنَّهُمْ حَوْلَ جَهَنَّمَ جِثِيًّا ﴿৬৮﴾ ثُمَّ لَنَنْزِعَنَّ مِنْ كُلِّ شِيعَةٍ أَيُّهُمْ أَشَدُّ عَلَى الرَّحْمَنِ عِتِيًّا ﴿৬৯﴾ ثُمَّ لَنَحْنُ أَعْلَمُ بِالَّذِينَ هُمْ أَوْلَى بِهَا صِلِيًّا ﴿৭০﴾ {مريم:৬৮-৭০}
সুতরাং আপনার পালনকর্তার কসম, আমি অবশ্যই তাদেরকে এবং শয়তানদেরকে একত্রে সমবেত করব, অত:পর অবশ্যই তাদেরকে নতজানু অবস্থায় জাহান্নামের চারপাশে উপস্থিত করব। অত:পর তাদের মধ্যে যারা জাহান্নামে প্রবেশের অধিক যোগ্য, আমি তাদের বিষয়ে ভালভাবে জ্ঞাত আছি। {সূরা মারইয়াম:৬৮-৭০}
৬-হাদীসে এসেছে
وعن أبي هريرة رضي الله عنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم:((تخرج عنق من النار يوم القيامة, لها عينان تبصران, وأذنان تسمعان,ولسان ينطق يقول:إني وكلت بثلاثة: بكل جبار عنيد, وبكل من دعا مع الله إلها آخر, وبالمصورين )). أخرجه أحمد والترمذي.
বিশিষ্ট সাহাবী আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন: কেয়ামতের দিন জাহান্নাম থেকে একটি গ্রীবা (সদৃশ বস্তু) বের হয়ে আসবে। তার দু'টো চক্ষু থাকবে যার দ্বারা দেখবে, দু'টো কান থাকবে যার মাধ্যমে শুনবে, এবং যিহ্বা থাকবে যার মাধ্যমে কথা বলবে। সে বলবে: আমি তিন শ্রেণীর লোকের (শাস্তির) প্রতি দায়িত্ব প্রাপ্ত হয়েছি: প্রত্যেক অবাধ্য অহংকারীর প্রতি, যারা আল্লাহর সাথে অন্য ইলাহ-উপাস্যেদের ডাকে এবং জীবন্ত প্রাণীর চিত্রাংকন কারীর প্রতি।[১৬]
৭- হাদীসে এসেছে
وعن عبد الله بن مسعود رضي الله عنه قال:قال رسول الله صلى الله عليه وسلم :((إن أشد الناس عذابا يوم القيامة المصورون )). متفق عليه.
বিশিষ্ট সাহাবী আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহু সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন: কেয়ামতের দিন সবচে কঠিন শাস্তি হবে (জীবন্ত প্রাণীর) চিত্রাংকন কারীর।[১৭]
৮- হাদীসে এসেছে
وعن عبد الله بن مسعود رضي الله عنه أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال:(( أشد الناس عذابا يوم القيامة رجل قتله نبي, أو قتل نبيا, وإمام ضلالة, وممثل من الممثلين)). أخرجه أحمد و الطبراني .
বিশিষ্ট সাহাবী আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন : কেয়ামত দিবসে সর্বাপেক্ষা কঠিন শাস্তি হবে যাদের, তারা হচ্ছে, এমন ব্যক্তি যাকে আল্লাহর কোন নবী হত্যা করেছেন অথবা যে ব্যক্তি কোন নবীকে হত্যা করেছে। পথ ভ্রষ্টতা ও গোমরাহীর ইমাম (নেতা-পথ প্রদর্শক) এবং ভাস্কর।[১৮]
জাহান্নামীদের মাঝে সবচে হালকা শাস্তি ভোগকারী ব্যক্তি:
১- হাদীসে এসেছে
عن النعمان بن بشير رضي الله عنه قال: سمعت النبي صلى الله عليه وسلم يقول:(( إن أهون أهل النار عذابا يوم القيامة رجل على أخمص قدميه جمرتان يغلي منهما دماغه كما يغلي المرجل بالقمقم)). متفق عليه
সাহাবী নুমান বিন বশীর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে ইরশাদ করতে শুনেছি : কেয়ামতের দিন জাহান্নামীদের মাঝে সবচে সহজ ও হালকা শাস্তি হবে যে ব্যক্তির, সে হল তার পায়ের তলাতে দু'টো জ্বলন্ত অঙ্গার থাকবে যার কারণে তার মগজ ছোট মুখ বিশিষ্ট হাড়ির ন্যায় ঊথলাতে থাকবে।[১৯]
২- হাদীসে এসেছে
وعن ابن عباس رضي الله عنهما أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: (( أهون أهل النار عذابا أبو طالب ্থ و هو منتعل بنعلين يغلي منهما دماغه)). أخرجه مسلم .
সাহাবী আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: জাহান্নামে সবচে হালকা শাস্তি ভোগ করবে আবু তালেব,সে (আগুনের) দুটো জুতা পরিহিত থাকবে যার ফলে তার মাথার মগজ টগবগ করে উথলাতে থাকবে।[২০]
৩- হাদীসে এসেছে
وعن أبي سعيد الخدري رضي الله عنه أنه سمع النبي صلى الله عليه وسلم ু وذكر عنده عمه أبو طالب فقال - : لعله تنفعه شفاعتي يوم القيامة, فيجعل في ضحضاح من النار يبلغ كعبيه يغلي منه أم دماغه)). متفق عليه
সাহাবী আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি নবী আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শুনেছেন, - তাঁর নিকট স্বীয় চাচা আবু তালেবের আলোচনা হচ্ছিল তখন নবীজী বলেছেন - সম্ভবত কেয়ামত দিবসে আমার শাফাআত তার উপকারে আসবে, তাকে অগভীর আগুনে রাখা হবে যে আগুন তার পায়ের টাখনু পর্যন্ত পৌঁছবে এবং তার কারণে মাথার মগজ উথলাতে থাকবে।[২১]
• সবচে সহজশাস্তি ভোগকারী জাহান্নামীকে কি বলা হবে:
১- আল্লাহ তাআলা বলছেন:
إِنَّ الَّذِينَ كَفَرُوا لَوْ أَنَّ لَهُمْ مَا فِي الْأَرْضِ جَمِيعًا وَمِثْلَهُ مَعَهُ لِيَفْتَدُوا بِهِ مِنْ عَذَابِ يَوْمِ الْقِيَامَةِ مَا تُقُبِّلَ مِنْهُمْ وَلَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ { المائدة:৩৬}
যারা কাফের, যদি তাদের কাছে পৃথিবীর সমুদয় সম্পদ এবং তৎসহ আরও তদনুরূপ সম্পদ থাকে আর এগুলো বিনিময়ে দিয়ে কেয়ামতের শাস্তি থেকে পরিত্রাণ পেতে চায়, তবুও তাদের কাছ থেকে তা কবুল করা হবে না। তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।{সূরা মায়েদা:৩৬}
২- হাদীসে এসেছে
وعن أنس بن مالك رضي الله عنه عن النبي صلى الله عليه وسلم قال: يقول الله تعالى لأهون أهل النار عذابا يوم القيامة : لو أن لك ما في الأرض من شيئ أ كنت تفتدي به؟ فيقول : نعم, فيقول : أردت منك أهون من هذا و أنت في صلب آدم : أن لا تشرك بي شيئا, فأبيت إلا أن تشرك بي)). متفق عليه .
বিশিষ্ট সাহাবী আনাস বিন মালেক রাদিয়াল্লাহ আনহু নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করছেন, নবীজী বলেন, মহান আল্লাহ তাআলা সবচে সহজ শাস্তি ভোগকারী জাহান্নামীকে জিজ্ঞেস করবেন: পৃথিবীস্থিত সমস্ত কিছু যদি তোমার হতো তুমি কি এ শাস্তির মুক্তিপণ হিসাবে সেগুলো দান করতে? সে বলবে, হ্যাঁ। তখন আল্লাহ তাআলা বলবেন: তুমি যখন আদমের ওরসে ছিলে আমি তোমার নিকট এরচেয়ে সহজ জিনিষ কামনা করেছিলাম যে তুমি কাউকে আমার সমকক্ষ - শরীক স্থির করবে না। অথচ তুমি তা অস্বীকার করেছ এবং শরীক স্থির করেছ। [২২]
• জাহান্নামের শিকল ও বেড়ি:
১-আল্লাহ তাআলা বলেন:
إنا أعتدنا للكافرين سلاسل وأغلالا و سعيرا. { الإنسان:৪}
আমি অবিশ্বাসি কাফেরদের জন্য প্রস্তুত রেখেছি শিকল, বেড়ি ও প্রজ্বলিত অগ্নি। {সূরা ইনসান:৪}
২-অন্যত্র ইরশাদ হচ্ছে:
الَّذِينَ كَذَّبُوا بِالْكِتَابِ وَبِمَا أَرْسَلْنَا بِهِ رُسُلَنَا فَسَوْفَ يَعْلَمُونَ ﴿৭০﴾ إِذِ الْأَغْلَالُ فِي أَعْنَاقِهِمْ وَالسَّلَاسِلُ يُسْحَبُونَ ﴿৭১﴾ فِي الْحَمِيمِ ثُمَّ فِي النَّارِ يُسْجَرُونَ ﴿৭২﴾ { غافر:৭০- ৭২}
যারা কিতাবের প্রতি এবং যে বিষয় দিয়ে আমি নবীগণকে প্রেরণ করেছি, সে বিষয়ের প্রতি মিথ্যারোপ করে। অতএব সত্বরই তারা জানতে পারবে, যখন বেড়ি ও শৃঙ্খল তাদের গলদেশে পড়বে তাদের-কে টেনে নিয়ে যাওয়া হবে ফুটন্ত পানিতে। অত:পর তাদেরকে আগুনে জ্বালানো হবে। { সূরা গাফের :৭০-৭২}
৩- আল্লাহ তাআলা আরোও ইরশাদ করেন:
إِنَّ لَدَيْنَا أَنْكَالًا وَجَحِيمًا ﴿১২﴾ وَطَعَامًا ذَا غُصَّةٍ وَعَذَابًا أَلِيمًا ﴿১৩﴾ { المزمل :১২-১৩}
নিশ্চয় আমার কাছে আছে শিকল ও অগ্নিকুন্ড। গলগ্রহ হয়ে যায় এমন খাদ্য এবং যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।{ সূরা মুয্যাম্মিল:১২-১৩}
৪-অন্যত্র ইরশাদ হচ্ছে:
خُذُوهُ فَغُلُّوهُ ﴿৩০﴾ ثُمَّ الْجَحِيمَ صَلُّوهُ ﴿৩১﴾ ثُمَّ فِي سِلْسِلَةٍ ذَرْعُهَا سَبْعُونَ ذِرَاعًا فَاسْلُكُوهُ ﴿৩২﴾ إِنّهُ كَانَ لَا يُؤْمِنُ بِاللَّهِ الْعَظِيمِ ﴿৩৩﴾ وَلَا يَحُضُّ عَلَى طَعَامِ الْمِسْكِينِ ﴿৩৪﴾ { الحاقة:৩০-৩৪}
ফেরেশতাদের-কে বলা হবে, ধর একে, গলায় বেড়ি পরিয়ে দাও, অত:পর নিক্ষেপ কর জাহান্নামে। অত:পর তাকে শৃঙ্খলিত কর সত্তর গজ দীর্ঘ এক শিকলে। নিশ্চয় সে মহান আল্লাহতে বিশ্বাসী ছিল না। এবং মিসকীনকে আহার্য দিতে উৎসাহিত করত না। {সূরা আল- হাক্কাহ:৩০-৩৪}
জাহান্নামীদের খানা-খাদ্যের বিবরণ:
১-আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করছেন:
إِنَّ شَجَرَةَ الزَّقُّومِ ﴿৪৩﴾ طَعَامُ الْأَثِيمِ ﴿৪৪﴾ كَالْمُهْلِ يَغْلِي فِي الْبُطُونِ ﴿৪৫﴾ كَغَلْيِ الْحَمِيمِ ﴿৪৬﴾
{ الدخان :৪৩-৪৬}
নিশ্চয়ই যাক্কুম বৃক্ষ, পাপীর খাদ্য হবে। গলিত তাম্রের মত পেটে ফুটতে থাকবে। যেমন ফুটে পানি। {সূরা আদ-দোখান:৪৩-৪৬}
২-আল্লাহ তাআলা অন্যত্র বলছেন:
أَذَلِكَ خَيْرٌ نُزُلًا أَمْ شَجَرَةُ الزَّقُّومِ ﴿৬২﴾ إِنَّا جَعَلْنَاهَا فِتْنَةً لِلظَّالِمِينَ ﴿৬৩﴾ إِنَّهَا شَجَرَةٌ تَخْرُجُ فِي أَصْلِ الْجَحِيمِ ﴿৬৪﴾ طَلْعُهَا كَأَنَّهُ رُءُوسُ الشَّيَاطِينِ ﴿৬৫﴾ فَإِنَّهُمْ لَآَكِلُونَ مِنْهَا فَمَالِئُونَ مِنْهَا الْبُطُونَ ﴿৬৬﴾ ثُمَّ إِنَّ لَهُمْ عَلَيْهَا لَشَوْبًا مِنْ حَمِيمٍ ﴿৬৭﴾ ثُمَّ إِنَّ مَرْجِعَهُمْ لَإِلَى الْجَحِيمِ ﴿৬৮﴾ {الصافات:৬২-৬৮}
এই কি উত্তম আপ্যায়ন না যাক্কুম বৃক্ষ? আমি যালেমদের জন্য একে তৈরী করেছি পরীক্ষা স্বরূপ। এটি একটি বৃক্ষ, যা উদগত হয় জাহান্নামের মূলে। এর গুচ্ছ শয়তানের মস্তকের মত। কাফেররা একে ভক্ষণ করবে এবং এর দ্বারা উদর পূর্ণ করবে। তদুপরি তাদেরকে দেয়া হবে ফুটন্ত পানির মিশ্রন। অত:পর তাদের প্রত্যাবর্তনস্থল হবে জাহান্নাম। {সূরা আস- সাফ্ফাত:৬২-৬৮}
৩-আরও ইরশাদ হচ্ছে:
لَيْسَ لَهُمْ طَعَامٌ إِلَّا مِنْ ضَرِيعٍ ﴿৬﴾ لَا يُسْمِنُ وَلَا يُغْنِي مِنْ جُوعٍ ﴿৭﴾ {الغاشية:৬-৭}
তাদের জন্য বিষাক্ত কাঁটাযুক্ত ব্যতীত কোন খাদ্য নেই।তা তাদেরকে পুষ্ট করবে না এবং তাদের ক্ষুদাও মেটাবে না।{সূরা আল গাশিয়া:৬-৭}
৪- আল্লাহ তাআলা অন্যত্র বলছেন:
فَلَيْسَ لَهُ الْيَوْمَ هَاهُنَا حَمِيمٌ ﴿৩৫﴾ وَلَا طَعَامٌ إِلَّا مِنْ غِسْلِينٍ ﴿৩৬﴾ لَا يَأْكُلُهُ إِلَّا الْخَاطِئُونَ ﴿৩৭﴾ { الحاقة:৩৫-৩৭}
অতএব, আজকের দিন এখানে তার কোন সুহৃদ নেই। এবং কোন খাদ্য নেই ক্ষত-নি:সৃত পুঁজ ব্যতীত। {সূরা আল হাক্কাহ:৩৬-৩৭}
• জাহান্নামীদের পানীয় এর বিবরণ:
১-আল্লাহ তাআলা বলেন:
وَاسْتَفْتَحُوا وَخَابَ كُلُّ جَبَّارٍ عَنِيدٍ ﴿১৫﴾ مِنْ وَرَائِهِ جَهَنَّمُ وَيُسْقَى مِنْ مَاءٍ صَدِيدٍ ﴿১৬﴾ يَتَجَرَّعُهُ وَلَا يَكَادُ يُسِيغُهُ وَيَأْتِيهِ الْمَوْتُ مِنْ كُلِّ مَكَانٍ وَمَا هُوَ بِمَيِّتٍ وَمِنْ وَرَائِهِ عَذَابٌ غَلِيظٌ ﴿১৭﴾ {إبراهيم:১৫ـ১৭}
তারা বিজয় কামনা করলো এবং প্রত্যেক উদ্ধত স্বৈরাচারী ব্যর্থকাম হলো। তাদের প্রত্যেকের জন্য পরিণামে জাহান্নাম রয়েছে এবং প্রত্যেককে পান করানো হবে গলিত পূঁজ। যা সে অতি কষ্টে গলধ:করণ করবে এবং তা গলধ:করণ করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়বে; সর্বদিক হতে তার নিকট আসবে মৃত্যু যন্ত্রনা;কিন্তু তার মৃত্যু ঘটবে না এবং সে কঠোর শাস্তি ভোগ করতেই থাকবে।{সূরা ইবরাহীম:১৫-১৭}
২-অন্যত্র ইরশাদ হচ্ছে:
وسقوا ماء حميما فقطع أمعاءهم. { محمد:১৫}
এবং তাদের পান করানো হবে ফুটন্ত পানি অত:পর তা তাদের নাড়িভূঁড়ি ছিন্ন বিছিন্ন করে দিবে। {সূরা মুহাম্মাদ:১৫}
৩- আরো ইরশাদ হচ্ছে:
إِنَّا أَعْتَدْنَا لِلظَّالِمِينَ نَارًا أَحَاطَ بِهِمْ سُرَادِقُهَا وَإِنْ يَسْتَغِيثُوا يُغَاثُوا بِمَاءٍ كَالْمُهْلِ يَشْوِي الْوُجُوهَ بِئْسَ الشَّرَابُ وَسَاءَتْ مُرْتَفَقًا
{ الكهف:২৯}
আমি যালেমদের জন্য অগ্নি প্রস্তুত করে রেখেছি, যার বেষ্টনী তাদেরকে পরিবেষ্টন করে থাকবে। যদি তারা পানীয় প্রার্থনা করে, তবে পূঁজের ন্যায় পানীয় দেয়া হবে, যা তাদের মুখমন্ডল দগ্ধ করবে। কত নিকৃষ্ট পানীয় এবং খুবই মন্দ আশ্রয়। {সূরা কাহাফ:২৯}
৪- আল্লাহ তাআলা অন্যত্র বলছেন:
هَذَا وَإِنَّ لِلطَّاغِينَ لَشَرَّ مَآَبٍ ﴿৫৫﴾ جَهَنَّمَ يَصْلَوْنَهَا فَبِئْسَ الْمِهَادُ ﴿৫৬﴾ هَذَا فَلْيَذُوقُوهُ حَمِيمٌ وَغَسَّاقٌ ﴿৫৭﴾ وَآَخَرُ مِنْ شَكْلِهِ أَزْوَاجٌ ﴿৫৮﴾
{ص:৫৫ـ৫৮}
এটাই (মুত্তাকীদের পরিণাম), আর সীমালঙ্ঘনকারীদের জন্য রয়েছে নিকৃষ্টতম ঠিকানা। তথা জাহান্নাম। তারা সেখানে প্রবেশ করবে। অতএব, কত নিকৃষ্ট সেই আবাসস্থল। এটা উত্তপ্ত পানি ও পূঁজ ;সুতরাং তারা একে আস্বাদন করুক। আরো আছে এরূপ বিভিন্ন ধরনের শাস্তি।{সূরা সোয়াদ:৫৫-৫৮}
জাহান্নামবাসীদের পোষাকের বিবরণ:
১-আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করছেন:
فَالَّذِينَ كَفَرُوا قُطِّعَتْ لَهُمْ ثِيَابٌ مِنْ نَارٍ يُصَبُّ مِنْ فَوْقِ رُءُوسِهِمُ الْحَمِيمُ
{ الحج: ১৯}
অত:এব যারা কাফের তাদের জন্য আগুনের পোষাক তৈরী করা হয়েছে। তাদের মাথার উপর ফুটন্ত পানি ঢেলে দেয়া হবে।{সূরা হজ্ব:১৯}
২-অন্যত্র ইরশাদ হচ্ছে:
وَتَرَى الْمُجْرِمِينَ يَوْمَئِذٍ مُقَرَّنِينَ فِي الْأَصْفَادِ ﴿৪৯﴾ سَرَابِيلُهُمْ مِنْ قَطِرَانٍ وَتَغْشَى وُجُوهَهُمُ النَّارُ ﴿৫০﴾
{إبراهيم:৪৯-৫০}
সে দিন তুমি অপরাধীদেরকে দেখবে শৃঙ্খলিত অবস্থায়। তাদের জামা হবে আলকাতরার এবং অগ্নি আছন্ন করবে তাদের মুখমন্ডল। {সূরা ইবরাহীম:৪৯-৫০}
জাহান্নামীদের বিছানা:
মহান আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করছেন:
لَهُمْ مِنْ جَهَنَّمَ مِهَادٌ وَمِنْ فَوْقِهِمْ غَوَاشٍ وَكَذَلِكَ نَجْزِي الظَّالِمِينَ
{الأعراف:৪১}
তাদের জন্য নরকাগ্নির শয্যা রয়েছে এবং উপর থেকে চাদর। আমি এমনিভাবে জালেমদের শাস্তি প্রদান করে থাকি।{সূরা আরাফ:৪১}
জাহান্নামবাসীদের অনুতাপ:
১- আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করছেন:
كَذَلِكَ يُرِيهِمُ اللَّهُ أَعْمَالَهُمْ حَسَرَاتٍ عَلَيْهِمْ وَمَا هُمْ بِخَارِجِينَ مِنَ النَّارِ
{البقرة:১৬৭}
এভাবেই আল্লাহ তাআলা তাদের কে দেখাবেন তাদের কৃতকর্ম তাদের অনুতপ্ত করার জন্য। তারা কস্মিনকালেও আগুন (জাহান্নাম) থেকে বের হতে পারবে না। {সূরা বাকারাহ: ১৬৭}
২- হাদীসে এসেছে
وعن أبي هريرة رضي الله عنه قال:قال النبي صلى الله عليه وسلم : ( لا يدخل أحد الجنة إلا أري مقعده من النار لو أساء ليزداد شكرا, ولا يدخل النار أحد إلا أري مقعده من الجنة لو أحسن, ليكون عليه حسرة). أخرجه البخاري
সাহাবী আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করছেন: কোন ব্যক্তিই জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না যতক্ষণ না জাহান্নামে তার অবস্থান দেখানো হয় যদি পাপ কর্ম করে থাকে। যাতে অধিক পরিমাণে শুকরিয়া ও কৃতজ্ঞতা আদায় করতে পারে। অনুরূপভাবে কোন ব্যক্তিই জাহান্নামে প্রবেশ করতে পারবে না, যতক্ষণ না জান্নাতে তার অবস্থান দেখানো হয় যদি পূণ্যকর্ম করে থাকে, যাতে বেশী করে অনুতাপ হয়।[২৩]
وعن أنس رضي الله عنه أن النبي صلى الله عليه وسلم قال: إن الله يقول لأهون أهل النار عذابا: لو أن لك ما في الأرض من شيئ أ كنت تفتدي به؟قال: نعم,قال : فقد سألتك ما هو أهون من هذا و أنت في صلب آدم : أن لا تشرك بي, فأبيت إلا الشرك)). متفق عليه .
বিশিষ্ট সাহাবী আনাস বিন মালেক রাদিয়াল্লাহ আনহু নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করছেন, নবীজী বলেন, মহান আল্লাহ তাআলা সবচে সহজ শাস্তি ভোগকারী জাহান্নামীকে জিজ্ঞেস করবেন: পৃথিবীস্থিত সমস্ত কিছু যদি তোমার হতো তুমি কি এ শাস্তির মুক্তিপণ হিসাবে সেগুলো দান করতে? সে বলবে, হ্যাঁ। তখন আল্লাহ তাআলা বলবেন: তুমি যখন আদমের ওরসে ছিলে আমি তোমার নিকট এরচেয়ে সহজ জিনিষ কামনা করেছিলাম যে তুমি কাউকে আমার সমকক্ষ - শরীক স্থির করবে না। অথচ তুমি তা অস্বীকার করেছ এবং শরীক স্থির করেছ। [২৪]
জাহান্নামীদের কথপোকথন:
১-আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআলা বলেন:
قَالَ ادْخُلُوا فِي أُمَمٍ قَدْ خَلَتْ مِنْ قَبْلِكُمْ مِنَ الْجِنِّ وَالْإِنْسِ فِي النَّارِ كُلَّمَا دَخَلَتْ أُمَّةٌ لَعَنَتْ أُخْتَهَا حَتَّى إِذَا ادَّارَكُوا فِيهَا جَمِيعًا قَالَتْ أُخْرَاهُمْ لِأُولَاهُمْ رَبَّنَا هَؤُلَاءِ أَضَلُّونَا فَآَتِهِمْ عَذَابًا ضِعْفًا مِنَ النَّارِ قَالَ لِكُلٍّ ضِعْفٌ وَلَكِنْ لَا تَعْلَمُونَ ﴿৩৮﴾ وَقَالَتْ أُولَاهُمْ لِأُخْرَاهُمْ فَمَا كَانَ لَكُمْ عَلَيْنَا مِنْ فَضْلٍ فَذُوقُوا الْعَذَابَ بِمَا كُنْتُمْ تَكْسِبُونَ ﴿৩৯﴾
{الأعراف:৩৮-৩৯}
আল্লাহ বলবেন: তোমাদের পূর্বে জিন ও মানবের যেসব সম্প্রদায় চলে গেছে, তাদের সাথে তোমরা ও জাহান্নামে প্রবেশ কর। যখন এক সম্প্রদায় প্রবেশ করবে; তখন অন্য সম্প্রদায়কে অভিসম্পাত করবে। এমনকি, যখন তাতে সবাই পতিত হবে, তখন পরবর্তীরা পূর্ববর্তীদের সম্পর্কে বলবে: হে আমাদের প্রতিপালক! এরাই আমাদের বিপদগামী করেছিল। অতএব আপনি তাদের দ্বিগুন শাস্তি দিন। আল্লাহ বলবেন: প্রত্যেকেরই দ্বিগুণ, তোমরা জান না। পূর্ববর্তী পরবর্তীদেরকে বলবে: তাহলে আমাদের উপর তোমাদের কোন শ্রেষ্ঠত্ব নেই। অতএব শাস্তি আস্বাদন কর স্বীয় কর্মের কারণে।
{সূরা আ'রাফ:৩৮-৩৯}
২- আল্লাহ তাআলা আরোও বলছেন:
ثُمَّ يَوْمَ الْقِيَامَةِ يَكْفُرُ بَعْضُكُمْ بِبَعْضٍ وَيَلْعَنُ بَعْضُكُمْ بَعْضًا وَمَأْوَاكُمُ النَّارُ وَمَا لَكُمْ مِنْ نَاصِرِينَ
{ العنكبوت:২৫}
এরপর কেয়ামতের দিন তোমরা একে অপরকে অস্বীকার করবে এবং এক অপরকে লা'নত করবে। তোমাদের ঠিকানা জাহান্নাম এবং তোমাদের কোন সাহায্যকারী নেই।{সূরা আল আনকাবূত:২৫}
৩-অন্যত্র ইরশাদ হচ্ছে:
لا تدعوا اليوم ثبورا واحدا و ادعوا ثبورا كثيرا. {الفرقان:১৪}
বলা হবে, তোমরা আজ এক মৃত্যুকে ডেকোনা-অনেক মৃত্যুকে ডাকো। {সূরা আল ফোরকান:১৪}
জাহান্নামে শাস্তিভোগকারী লোকদের কিছু নমুনা
১- কাফের ও মুনাফেক:
আল্লাহ তাআলা বলেন:
وَعَدَ اللَّهُ الْمُنَافِقِينَ وَالْمُنَافِقَاتِ وَالْكُفَّارَ نَارَ جَهَنَّمَ خَالِدِينَ فِيهَا هِيَ حَسْبُهُمْ وَلَعَنَهُمُ اللَّهُ وَلَهُمْ عَذَابٌ مُقِيمٌ
{ التوبة:৬৮}
আল্লাহ তাআলা মুনাফেক পুরুষ ও মুনাফেক নারীদের এবং কাফেরদের জন্য জাহান্নামের আগুনের ওয়াদা করেছেন, তাতে তারা সর্বদা পড়ে থাকবে। সেটাই তাদের জন্য যথেষ্ট। আর আল্লাহ তাদের প্রতি অভিসম্পাত করেছেন এবং তাদের জন্য রয়েছে স্থায়ী আযাব।
{সূরা তাওবা:৬৮}
২-ইচ্ছাকৃত ভাবে নিরপরাধ লোকদের হত্যাকারী:
১-পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হচ্ছে:
وَمَنْ يَقْتُلْ مُؤْمِنًا مُتَعَمِّدًا فَجَزَاؤُهُ جَهَنَّمُ خَالِدًا فِيهَا وَغَضِبَ اللَّهُ عَلَيْهِ وَلَعَنَهُ وَأَعَدَّ لَهُ عَذَابًا عَظِيمًا
{النساء:৯৩}
যে ব্যক্তি স্বেচ্ছাক্রমে মুসলমানকে হত্যা করে, তার শাস্তি হচ্ছে জাহান্নাম, তাতেই সে চিরকাল থাকবে। আল্লাহ তার প্রতি ক্রুদ্ধ হয়েছেন, তাকে অভিসম্পাত করেছেন এবং তার জন্য ভীষণ শাস্তি প্রস্তুত রেখেছেন। {সূরা নিসা:৯৩}
২- হাদীসে এসেছে
وعن عبد الله عمرو رضي الله عنهما عن النبي صلى الله عليه وسلم قال:من قتل معاهدا لم يرح رائحة الجنة وإن ريحها يوجد من مسيرة أربعين عاما. أخرجه البخاري
সহাবী আব্দুল্লাহ বিন আমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন: যে ব্যাক্তি কোন মুআহাদ (ইসলামী রাষ্ট্রে নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি প্রাপ্ত অমুসলিম ব্যাক্তি) কে হত্যা করবে সে জান্নাতের ঘ্রাণও পাবে না। যদিও জান্নাতের সুঘ্রাণ চল্লিশ বৎসর ভ্রমন পথের দূরত্ব থেকেও পাওয়া যায়।[২৫]
৩-যিনকার নারী ও পুরুষ:
عن سمرة بن جندب رضي الله عنه قال: كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يعني مما يكثر أن يقول لأصحابه : هل رأى أحد منكم من رؤيا؟ ـ وفيه ـ أنه قال ذات غداة: إنه أتاني الليلة آتيان, وإنهما ابتعثاني وإنهما قالا لي انطلق... فانطلقنا فأتينا على مثل التنور, فإذا فيه لغط و أصوات, قال: فاطلعنا فيه,فإذا فيه رجال و نساء عراة,وإذاهم يأتيهم لهب من أسفل منهم فإذا أتاهم ذلك اللهب ضوضوا, قال: قلت لهما ما هؤلاء؟... ـ وفيه ـ فقالا: وأما الرجال و النساء العراة الذين في مثل بناء التنور فهم الزناة والزواني ... . أخرجه البخاري
প্রসিদ্ধ সাহাবী সামুরা বিন জুন্দুব রাদিয়াল্লাহু আনহু বলছেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রায়ই তাঁর সাহাবীদের বলতেন: তোমাদের কেউ কি কোন সপ্ন দেখেছ? - সে হাদীসে আছে - তিনি একদিন সকালে বললেন: গত রাত (সপ্নে দেখি) দু'জন আগন্তক আমার নিকট আসল, তারা আমাকে জাগিয়ে তুলল এবং বলল আমাদের সাথে চলুন... আমরা চলছিলাম এক পর্যায়ে একটি তন্দুরী সদৃশ গর্তের নিকট এসে পৌঁছালাম, দেখি খুব শোরগোল ও চেঁচামেচি শোনা যাচ্ছে, এরপর আমরা তার ভিতরে কি আছে জানার জন্য তাকিয়ে দেখি, বিবস্ত্র অনেক নারী পুরুষ এবং তাদের নিম্ন দিক থেকে অগ্নিশিখা এসে তাদের উপর আছড়ে পড়ছে। যখন সেই অগ্নিশিখা আছড়ে পড়ে তখন তারা আওয়াজ করে চেচিয়ে উঠে। আমি সাথীদ্বয়ের নিকট জিজ্ঞেস করলাম এরা কারা?...- তাতে আছে - তারা জবাবে বললেন : ঐ বিবস্ত্র নারী পুরুষ যারা তন্দুরী সদৃশ ঘরে অবস্থান করছে তারা হচ্ছে যিনাকার নারী এবং যিনাকার পুরুষ...।[২৬]
৪- সুদখোর:
في حديث سمرة بن جندب رضي الله عنه السابق قال النبي صلى الله عليه وسلم : فانطلقنا حتى أتينا على نهر من دم فيه رجل قائم على وسط النهر,وعلى شط النهر رجل بين يديه حجارة, فأقبل الرجل الذي في النهر, فإذا أراد أن يخرج رمى الرجل بحجر في فيه فرده حيث كان, فجعل كلما جاء ليخرج رمى في فيه بحجر فيرجع كما كان فقلت ما هذا؟ ... قال والذي رأيته في النهر آكلوا الربا . أخرجه البخاري
সাহাবী সামুরা বিন জুন্দুব কর্তৃক বর্ণিত পূর্বের হাদীসে আছে, নবীজী বলেন: আমরা চলছিলাম এক পর্যায়ে একটি রক্তের নদীতে এসে পৌঁছালাম, দেখি একজন লোক নদীর মধ্যখানে দাড়িয়ে আছে আর অন্য একজন নদীর পাড়ে তার সামনে কিছু পাথর পড়ে আছে। নদীতে অবস্থানরত লোকটি এদিকে আসতে চাচ্ছে যখন বের হওয়ার ইচ্ছা করে তখনই দাড়ানো লোকটি তার মুখে একটি পাথর নিক্ষেপ করে এবং পূর্বে অবস্থানে ফেরত পাঠায়। এমনি করে যখনই সে বের হতে চায়, তখনই পাড়ের লোক পাথর নিক্ষেপ করে এবং পূর্বের অবস্থানে ফেরত যায়। আমি জিজ্ঞেস করলাম এ কে?... তারা বললেন : ঐযে নদীতে যাকে দেখেছেন সে হচ্ছে "সুদখোর"। [২৭]
৫-চিত্রাংকন কারী:
১-হাদীসে এসেছে
عن ابن عباس رضي الله عنهما قال: سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول: كل مصور في النار يجعل له بكل صورة صورها نفسا فتعذبه في جهنم . أخرجه مسلم
বিশিষ্ট সাহাবী আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বর্ণনা করছেন, আমি রাসূলুল্লাহ কে ইরশাদ করতে শুনেছি, নবীজী বলেন: প্রাণীর চিত্রাঙ্কনকারী জাহান্নামে যাবে। তার বানানো প্রত্যেক ছবির পরিবর্তে তার জন্য একটি করে জীবন বানানো হবে এবং জাহান্নামে শাস্তি দেয়া হবে। [২৮]
২- হাদীসে এসেছে
وعن عائشة رضي الله عنها قالت: دخل علي رسول الله صلى الله عليه وسلم وقد سترت سهوة لي بقرام فيه تماثيل, فلما رآه هتكه و تلون وجهه وقال : يا عائشة أشد الناس عذابا عند الله يوم القيامة الذين يضاهون بخلق الله, قالت عائشة: فقطعناه فجعلنا منه وسادة أو وسادتين . متفق عليه
উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন আমার ঘরে প্রবেশ করলেন, আমি ঘরের প্রবেশ পথে একটি পর্দা টানিয়েছিলাম যাতে প্রাণীর ছবি ছিল। রাসূলুল্লাহ তা দেখে ছিঁড়ে ফেললেন এবং তাঁর চেহারা বিবর্ণ হয়ে গেল। তিনি বললেন: আয়েশা! কেয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলার নিকট সবচেয়ে কঠিন আযাব সে সব লোকদের হবে যারা আল্লাহর সৃষ্টির সামঞ্জস্য স্থির করেছিল। (অর্থাৎ যারা তাঁর সৃষ্টির অনুরূপ আকৃতি অংকন করেছিল) আয়েশা বলেন: এরপর আমরা সেটি কেটে ফেললাম এবং তা দিয়ে একটি বা দুটি বালিশ বানিয়ে নিলাম। [২৯]
৩- হাদীসে এসেছে
وعن ابن عباس رضي الله عنهما قال سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول:من صور صورة في الدنيا كلف أن ينفخ فيها الروح يوم القيامة وليس بنافخ. متفق عليه
বিশিষ্ট সাহাবী আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ইরশাদ করতে শুনেছি: যে ব্যক্তি দুনিয়াতে কোন প্রাণীর ছবি অঙ্কন করবে, কেয়ামত দিবসে মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে তাকে তাতে প্রাণ সঞ্চারনের দায়িত্ব দেয়া হবে অথচ সে তাতে অক্ষম।[৩০]
৬-ইয়াতীমের সম্পদ ভক্ষনকারী:
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন:
إِنَّ الَّذِينَ يَأْكُلُونَ أَمْوَالَ الْيَتَامَى ظُلْمًا إِنَّمَا يَأْكُلُونَ فِي بُطُونِهِمْ نَارًا وَسَيَصْلَوْنَ سَعِيرًا ﴿১০﴾
{النساء:১০}
যারা অন্যায়-অন্যায্যভাবে ইয়াতীমদের অর্থ-সম্পদ ভক্ষণ করে, তারা নিজেদের পেটে আগুনই ভর্তি করেছে এবং সত্বরই তারা প্রজ্বলিত অগ্নিতে (জাহান্নামে) প্রবেশ করবে।
{সূরা নিসা: ১০}
৭-মিথ্যাবাদী, পরনিন্দা ও পরচর্চা কারী:
১-মহান আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করছেন:
وَأَمَّا إِنْ كَانَ مِنَ الْمُكَذِّبِينَ الضَّالِّينَ ﴿৯২﴾ فَنُزُلٌ مِنْ حَمِيمٍ ﴿৯৩﴾ وَتَصْلِيَةُ جَحِيمٍ ﴿৯৪﴾
{ الواقعة:৯২-৯৪}
আর যদি সে পথভ্রষ্ট মিথ্যারোপকারীদের একজন হয়। তবে তার আপ্যায়ন হবে উত্তপ্ত পানি দ্বারা। এবং সে নিক্ষিপ্ত হবে জাহান্নামে।{সূরা ওয়াকিয়া:৯২-৯৪}
২- হাদীসে এসেছে
وعن معاذ بن جبل رضي الله عنه قال: كنت مع النبي صلى الله عليه وسلم في سفر ـ وفيه ـ فقلت يا نبي الله, وإنا لمؤاخذون بما نتكلم به ؟ فقال: ثكلتك أمك يا معاذ,وهل يكب الناس في النار على وجوههم أو على مناخرهم إلا حصائد ألسنتهم . أخرجه الترمذي وابن ماجة
সাহাবী মুআয বিন জাবাল রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি এক সফরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে ছিলাম, -তাতে আছে- আমি বললাম: ইয়া নবীয়াল্লাহ; আমরা যে সব কথাবার্তা বলি তার কারণেও কি আমাদের ধরা হবে? নবীজী বললেন: মুআয-তোমার মা সন্তানহারা হউক- মানুষকে যে চেহারার উপর ভর করে অথবা নাকের উপর ভরকরে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবে, সেতো জিহ্বারই ফসল(কামাই)।[৩১]
৮-আল্লাহ তাআলার নাযিলকৃত বিধান গোপনকারী:
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআলা ইরশাদ করছেন:
إِنَّ الَّذِينَ يَكْتُمُونَ مَا أَنْزَلَ اللَّهُ مِنَ الْكِتَابِ وَيَشْتَرُونَ بِهِ ثَمَنًا قَلِيلًا أُولَئِكَ مَا يَأْكُلُونَ فِي بُطُونِهِمْ إِلَّا النَّارَ وَلَا يُكَلِّمُهُمُ اللَّهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَلَا يُزَكِّيهِمْ وَلَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ
{ البقرة:১৭৪}
নিশ্চয় যারা সেসব বিষয় গোপন করে যা আল্লাহ কিতাবে নাযিল করেছেন এবং সে জন্য অল্প মূল্য গ্রহণ করে, তারা আগুন ছাড়া নিজের পেটে আর কিছুই ঢুকায় না। কেয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা তাদের সাথে কথা বলবেন না এবং না তাদের পবিত্র করবেন না, বস্তুত: তাদের জন্য রয়েছে বেদনা দায়ক আযাব।{সূরা বাকারা:১৭৪}
জাহান্নামীদের ঝগড়া-বিবাদ:
অমুসলিম-কাফেরদের জন্য আল্লাহ তাআলা যে আযাব প্রস্তুত করে রেখেছেন তারা তা প্রত্যক্ষ করার পর নিজেদেরকে এবং পৃথিবীতে যেসকল বন্ধু বান্ধব ছিল তাদেরকে খুব ঘৃণা করতে লাগবে। তাদের মাঝে বিদ্যমান সকল মিল মুহাব্বত শত্রুতায় পরিবর্তিত হয়ে যাবে।এরপর জাহান্নামীরা একে অপরকে দোষারোপ করতে লাগবে। তাদের নিজস্ব অবস্থানগত বিভিন্নতার জন্য বিতর্কে লিপ্ত হয়ে পড়বে।
১- উপাসকদের স্বীয় উপাস্যদিগকে দোষারোপ করা:
قَالُوا وَهُمْ فِيهَا يَخْتَصِمُونَ ﴿৯৬﴾ تَاللَّهِ إِنْ كُنَّا لَفِي ضَلَالٍ مُبِينٍ ﴿৯৭﴾ إِذْ نُسَوِّيكُمْ بِرَبِّ الْعَالَمِينَ ﴿৯৮﴾ وَمَا أَضَلَّنَا إِلَّا الْمُجْرِمُونَ ﴿৯৯﴾
{ الشعراء:৯৬-৯৯}
তারা তথায় কথা কাটাকাটিতে লিপ্ত হয়ে বলবে, আল্লাহর কসম আমরা প্রকাশ্য বিভ্রান্তিতে লিপ্ত ছিলাম, যখন আমরা তোমাদেরকে বিশ্ব-পালনকর্তা আল্লাহর সমতুল্য গণ্য করতাম। আমাদেরকে দুষ্টকর্মীরাই গোমরাহ করেছিল। {সূরা আশ্ শোআরা:৯৬-৯৯}
২- দুর্বল-অধিনস্থদের অহংকারী নেত্রীবর্গদিগকে দোষারোপ করা:
وَإِذْ يَتَحَاجُّونَ فِي النَّارِ فَيَقُولُ الضُّعَفَاءُ لِلَّذِينَ اسْتَكْبَرُوا إِنَّا كُنَّا لَكُمْ تَبَعًا فَهَلْ أَنْتُمْ مُغْنُونَ عَنَّا نَصِيبًا مِنَ النَّارِ ﴿৪৭﴾ قَالَ الَّذِينَ اسْتَكْبَرُوا إِنَّا كُلٌّ فِيهَا إِنَّ اللَّهَ قَدْ حَكَمَ بَيْنَ الْعِبَادِ ﴿৪৮﴾
{غافر:৪৭-৪৮}
যখন তারা জাহান্নামে পরস্পর বিতর্ক করবে, অত:পর দুর্বলরা অহংকারীদেরকে বলবে, আমরা তোমাদের অনুসারী ছিলাম। তোমরা এখন জাহান্নামের আগুনের কিছু অংশ আমাদের থেকে নিবৃত করবে কি? অহংকারীরা বলবে, আমরা সবাইতো জাহান্নামে আছি। আল্লাহ তার বান্দাদের ফায়সালা করে দিয়েছেন। { সূরা গাফের:৪৭-৪৮}
৩-পথভ্রষ্ট নেতাদের সাথে অনুসারীদের বিতর্ক:
وَأَقْبَلَ بَعْضُهُمْ عَلَى بَعْضٍ يَتَسَاءَلُونَ ﴿২৭﴾ قَالُوا إِنَّكُمْ كُنْتُمْ تَأْتُونَنَا عَنِ الْيَمِينِ ﴿২৮﴾ قَالُوا بَلْ لَمْ تَكُونُوا مُؤْمِنِينَ ﴿২৯﴾ وَمَا كَانَ لَنَا عَلَيْكُمْ مِنْ سُلْطَانٍ بَلْ كُنْتُمْ قَوْمًا طَاغِينَ ﴿৩০﴾ فَحَقَّ عَلَيْنَا قَوْلُ رَبِّنَا إِنَّا لَذَائِقُونَ ﴿৩১﴾ فَأَغْوَيْنَاكُمْ إِنَّا كُنَّا غَاوِينَ ﴿৩২﴾ فَإِنَّهُمْ يَوْمَئِذٍ فِي الْعَذَابِ مُشْتَرِكُونَ ﴿৩৩﴾
{ الصافات:২৭-৩৩}
তারা একে অপরের সামনা সামনি হয়ে পরস্পরকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে। বলবে,তোমরা তো (শক্তি প্রয়োগ করে পথভ্রষ্ট করতে) আমাদের কাছে ডান দিক থেকে আসতে। তারা বলবে, বরং তোমরা তো বিশ্বাসীই ছিলে না। এবং তোমাদের উপর আমাদের কোন কর্তৃত্ব ছিল না, বরং তোমরাই ছিলে সীমানঙ্ঘনকারী সম্প্রদায়। আমাদের বিপক্ষে আমাদের পালনকর্তার উক্তিই সত্য হয়েছে, আমাদেরকে অবশ্যই শাস্তি আস্বাদন করতে হবে। আমরা তোমাদেরকে পথভ্রষ্ট করেছিলাম কারণ, আমরা নিজেরাই পথভ্রষ্ট ছিলাম। তারা সবাই সেদিন আযাবে শরীক হবে।{সূরা সাফ্ফাত:২৭-৩৩}
৪-কাফের ও তার সহচর শয়তানের বিতর্ক:
قَالَ لَا تَخْتَصِمُوا لَدَيَّ وَقَدْ قَدَّمْتُ إِلَيْكُمْ بِالْوَعِيدِ ﴿২৮﴾ مَا يُبَدَّلُ الْقَوْلُ لَدَيَّ وَمَا أَنَا بِظَلَّامٍ لِلْعَبِيدِ ﴿২৯﴾
{ق:২৭-২৯}
তার সহচর শয়তান বলবে: হে আমাদের প্রতিপালক, আমি তাকে অবাধ্য হতে প্ররোচিত করিনি, বস্তুত: সে নিজেই ছিল সুদূর পথভ্রন্তিতে লিপ্ত। আল্লাহ বলবেন, আমার সামনে বাকবিতন্ডা করোনা। আমিতো পূর্বেই তোমাদেরকে আযাব দ্বারা ভয় প্রদর্শন করেছিলাম। আমার কাছে কথা রদবদল হয় না এবং আমি বান্দাদের প্রতি জুলুমকারী নই।{সূরা ক্বাফ:২৭-২৯}
৫-মানুষের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ যখন তার নিজের বিপক্ষে বিতর্ক-বিবাদ করবে তখন বিষয় অতি মারাত্মক পর্যায়ে পৌছে যাবে।
وَيَوْمَ يُحْشَرُ أَعْدَاءُ اللَّهِ إِلَى النَّارِ فَهُمْ يُوزَعُونَ ﴿১৯﴾ حَتَّى إِذَا مَا جَاءُوهَا شَهِدَ عَلَيْهِمْ سَمْعُهُمْ وَأَبْصَارُهُمْ وَجُلُودُهُمْ بِمَا كَانُوا يَعْمَلُونَ ﴿২০﴾ وَقَالُوا لِجُلُودِهِمْ لِمَ شَهِدْتُمْ عَلَيْنَا قَالُوا أَنْطَقَنَا اللَّهُ الَّذِي أَنْطَقَ كُلَّ شَيْءٍ وَهُوَ خَلَقَكُمْ أَوَّلَ مَرَّةٍ وَإِلَيْهِ تُرْجَعُونَ ﴿২১﴾ {فصلت:১৯-২১}
যে দিন আল্লাহর শত্রুদেরকে অগ্নিকুন্ডের দিকে ঠেলে নেওয়া হবে। এবং ওদের বিন্যস্ত করা হবে বিভিন্ন দলে। তারা যখন জাহান্নামের কাছে পৌছবে, তখন তাদের কান, চক্ষু ও ত্বক তাদের কর্ম সম্পর্কে সাক্ষ্য দেবে। তারা তাদের ত্বককে বলবে, তোমরা আমাদের বিপক্ষে সাক্ষ্য দিলে কেন? তারা বলবে, যে আল্লাহ সবকিছুকে বাকশক্তি দিয়েছেন, তিনি আমাদেরকেও বাক শক্তি দিয়েছেন। তিনিই তোমাদেরকে প্রথমবার সৃষ্টি করেছেন এবং তোমরা তাঁরই দিকে প্রত্যাবর্তিত হবে।{সূরা ফুসসিলাত:১৯-২১}
• জাহান্নামীদের স্বীয় পালনকর্তার নিকট তাদের বিভ্রান্তকারীদের দেখা এবং শাস্তি দ্বিগুন করার প্রার্থনা
১- মহান আল্লাহ তাআলা বলেন:
وَقَالَ الَّذِينَ كَفَرُوا رَبَّنَا أَرِنَا الَّذَيْنِ أَضَلَّانَا مِنَ الْجِنِّ وَالْإِنْسِ نَجْعَلْهُمَا تَحْتَ أَقْدَامِنَا لِيَكُونَا مِنَ الْأَسْفَلِينَ { فصلت:২৯}
কাফেররা বলবে, হে আমাদের পালনকর্তা! যেসব জিন ও মানুষ আমাদেরকে পথভ্রষ্ট করেছিল, তাদের দেখিয়ে দাও, আমরা তাদেরকে পদদলিত করব, যাতে তারা যথেষ্ট অপমানিত হয়।{সূরা ফুসসিলাত:২৯}
২-অন্যত্র ইরশাদ হচ্ছে:
يَوْمَ تُقَلَّبُ وُجُوهُهُمْ فِي النَّارِ يَقُولُونَ يَا لَيْتَنَا أَطَعْنَا اللَّهَ وَأَطَعْنَا الرَّسُولَا ﴿৬৬﴾ وَقَالُوا رَبَّنَا إِنَّا أَطَعْنَا سَادَتَنَا وَكُبَرَاءَنَا فَأَضَلُّونَا السَّبِيلَا ﴿৬৭﴾ رَبَّنَا آَتِهِمْ ضِعْفَيْنِ مِنَ الْعَذَابِ وَالْعَنْهُمْ لَعْنًا كَبِيرًا ﴿৬৮﴾
{الأحزاب:৬৬-৬৮}
যেদিন অগ্নিতে তাদের মুখমন্ডল উলট পালট করা হবে; সেদিন তারা বলবে হায় আমরা যদি আল্লাহর আনুগত্য করতাম ও রাসূলের আনুগত্য করতাম। তারা আরও বলবে, হে আমাদের পালনকর্তা, আমরা আমাদের নেতা ও বড়দের কথা মেনেছিলাম, অত:পর তারা আমাদের পথভ্রষ্ট করেছিল। হে আমাদের পালনকর্তা তাদেরকে দ্বিগুন শাস্তি দিন এবং তাদেরকে মহা অভিসম্পাত করুন। {সূরা আহযাব:৬৬-৬৮}
জাহান্নামীদের মাঝে ইবলিসের ভাষণ:
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআলা যখন বিষয়টি চুড়ান্ত করবেন এবং স্বীয় বান্দাদের মাঝে ফায়সালা করবেন। ইবলিস জাহান্নামীদের মাঝে ভাষণ দেবে যাতে তাদের পেরেশানী, লজ্যা ও অনুতাপ বৃদ্ধি পায়।
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন:
وَقَالَ الشَّيْطَانُ لَمَّا قُضِيَ الْأَمْرُ إِنَّ اللَّهَ وَعَدَكُمْ وَعْدَ الْحَقِّ وَوَعَدْتُكُمْ فَأَخْلَفْتُكُمْ وَمَا كَانَ لِي عَلَيْكُمْ مِنْ سُلْطَانٍ إِلَّا أَنْ دَعَوْتُكُمْ فَاسْتَجَبْتُمْ لِي فَلَا تَلُومُونِي وَلُومُوا أَنْفُسَكُمْ مَا أَنَا بِمُصْرِخِكُمْ وَمَا أَنْتُمْ بِمُصْرِخِيَّ إِنِّي كَفَرْتُ بِمَا أَشْرَكْتُمُونِ مِنْ قَبْلُ إِنَّ الظَّالِمِينَ لَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ
.{ابراهيم:২২}
যখন সব কাজের ফায়সালা হয়ে যাবে, তখন শয়তান বলবে, নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদেরকে সত্য ওয়াদা দিয়েছিলেন এবং আমি তোমাদের সাথে ওয়াদা করেছি অত:পর তা ভঙ্গ করেছি। তোমাদের উপরতো আমার কোন ক্ষমতা ছিল না, কিন্তু এতটুকু যে, আমি তোমাদেরকে ডেকেছি তোমরা আমার ডাকে সাড়া দিয়েছ। অতএব তোমরা আমাকে ভৎর্সনা করোনা এবং নিজেদেরকেই ভৎর্সনা কর। আমি তোমাদের উদ্ধারে সাহায্যকারী নই এবং তোমরাও আমার উদ্ধারে সাহায্যকারী নও। ইতিপূর্বে তোমরা আমাকে যে আল্লাহর শরীক করেছিলে, আমি তা অস্বীকার করি। নিশ্চয় যারা জালেম তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রনাদায়ক শাস্তি। {সূরা ইবরাহীম:২২}
জাহান্নামের আরোও চাওয়া:
১-আল্লাহ তাআলা বলেন:
يوم نقول لجهنم هل امتلأت وتقول هل من مزيد. {ق:৩০}
যেদিন আমি জাহান্নামকে জিজ্ঞেস করব; তুমি কি পূর্ণ হয়ে গেছ? সে বলবে আরও আছে কি? {সূরা ক্বাফ:৩০}
২-হাদীসে এসেছে
وعن أنس بن مالك رضي الله عنه عن النبي صلى الله عليه وسلم أنه قال:لا تزال جهنم يلقى فيها و تقول: هل من مزيد, حتى يضع رب العزة فيها قدمه, فينزوي بعضها إلى بعض, وتقول قط قط بعزتك وكرمك, ولا يزال في الجنة فضل حتى ينشئ الله لها خلقا,فيسكنهم فضل الجنة. متفق عليه
বিশিষ্ট সাহাবী আনাস বিন মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহু নবী আকরাম সাল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করছেন, নবীজী বলেন, জাহান্নামের ভিতর একের পর এক নিক্ষেপ করা হতে থাকবে আর সে বলতে থাকবে আরো আছে কি? এক পর্যায়ে মহান রাব্বুল ইয্যত তাতে স্বীয় কদম রাখবেন ফলশ্রুতিতে তার কিছু অংশ অন্য অংশের সাথে মিশে সংকুচিত হয়ে যাবে এবং সে বলবে, তোমার ইয্যত ও করমের কসম আমার যথেষ্ট হয়ে গেছে। আর জান্নাতে কিছু অতিরিক্ত অংশ খালী থেকেই যাবে এক সময় আল্লাহ তাআলা তার জন্য একটি বিশেষ মাখলূক সৃষ্টি করবেন এবং তাদেরকে সেই অতিরিক্ত স্থানে থাকতে দেবেন।[৩২]
• জাহান্নামীদের হাল-অবস্থার কিছু নমুনা
ইরশাদ হচ্ছে:
إِنَّ الَّذِينَ كَفَرُوا بِآَيَاتِنَا سَوْفَ نُصْلِيهِمْ نَارًا كُلَّمَا نَضِجَتْ جُلُودُهُمْ بَدَّلْنَاهُمْ جُلُودًا غَيْرَهَا لِيَذُوقُوا الْعَذَابَ إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَزِيزًا حَكِيمًا ﴿৫৬﴾ { النساء:৫৬}
আমার আয়াতসমূহের প্রতি যে সব লোক অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করবে, আমি তাদের সত্তরই আগুনে নিক্ষেপ করব। তাদের চামড়াগুলো যখন জ্বলে-পুড়ে যাবে, তখন আমি আবার তা পালটে দেব অন্য চামড়া দিয়ে, যাতে তারা আযাব আস্বাদন করতে পার। নিশ্চয়ই আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী, হেকমতের অধিকারী। {সূরা নিসা:৫৬}
আল্লাহ তাআলা আরো বলেন:
إِنَّ الْمُجْرِمِينَ فِي عَذَابِ جَهَنَّمَ خَالِدُونَ ﴿৭৪﴾ لَا يُفَتَّرُ عَنْهُمْ وَهُمْ فِيهِ مُبْلِسُونَ ﴿৭৫﴾ وَمَا ظَلَمْنَاهُمْ وَلَكِنْ كَانُوا هُمُ الظَّالِمِينَ ﴿৭৬﴾ {الزخرف:৭৪-৭৬}
নিশ্চয় অপরাধীরা জাহান্নামের আযাবে চিরকাল থাকবে। তাদের থেকে আযাব লাঘব করা হবে না এবং তারা তাতেই থাকবে হতাশ হয়ে। আমি তাদের প্রতি জুলুম করিনি; কিন্তু তারাই ছিল জালেম। { সূরা যুখরুফ: ৭৪-৭৬}
অন্যত্র ইরশাদ হচ্ছে:
إِنَّ اللَّهَ لَعَنَ الْكَافِرِينَ وَأَعَدَّ لَهُمْ سَعِيرًا ﴿৬৪﴾ خَالِدِينَ فِيهَا أَبَدًا لَا يَجِدُونَ وَلِيًّا وَلَا نَصِيرًا ﴿৬৫﴾ يَوْمَ تُقَلَّبُ وُجُوهُهُمْ فِي النَّارِ يَقُولُونَ يَا لَيْتَنَا أَطَعْنَا اللَّهَ وَأَطَعْنَا الرَّسُولَا ﴿৬৬﴾ {الأحزاب:৬৪ـ৬৬)
নিশ্চয় আল্লাহ কাফেরদের অভিসম্পাত করেছেন এবং তাদের জন্য জ্বলন্ত অগ্নি প্রস্তুত রেখেছেন। তথায় তারা অনন্ত কাল থাকবে এবং কোন অভিভাবক ও সাহায্যকারী পাবে না। যেদিন অগ্নিতে তাদের মুখমন্ডল ওলট পালট করা হবে; সেদিন তারা বলবে হায় ! আমরা যদি আল্লাহর আনুগত্য করতাম এবং রাসূলের আনুগত্য করতাম। {সূরা আহযাব: ৬৪-৬৬}
আরোও ইরশাদ হচ্ছে:
وَالَّذِينَ كَفَرُوا لَهُمْ نَارُ جَهَنَّمَ لَا يُقْضَى عَلَيْهِمْ فَيَمُوتُوا وَلَا يُخَفَّفُ عَنْهُمْ مِنْ عَذَابِهَا كَذَلِكَ نَجْزِي كُلَّ كَفُورٍ { فاطر:৩৬}
আর যারা কাফের হয়েছে তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের আগুন। তাদেরকে মৃত্যুর আদেশও দেয়া হবে না যে, তারা মরে যাবে এবং তাদের থেকে তার শাস্তিও লাঘব করা হবে না। আমি প্রত্যেক অকৃতজ্ঞকে এভাবেই শাস্তি দিয়ে থাকি।{সূরা ফাতির: ৩৬}
আরো ইরশাদ হচ্ছে:
فَأَمَّا الَّذِينَ شَقُوا فَفِي النَّارِ لَهُمْ فِيهَا زَفِيرٌ وَشَهِيقٌ ﴿১০৬﴾ خَالِدِينَ فِيهَا مَا دَامَتِ السَّمَوَاتُ وَالْأَرْضُ إِلَّا مَا شَاءَ رَبُّكَ إِنَّ رَبَّكَ فَعَّالٌ لِمَا يُرِيدُ ﴿১০৭﴾ هود: ১০৬ـ ১০৭}
অতএব যারা হতভাগ্য তারা জাহান্নামে যাবে, সেখানে তারা আর্তনাদ ও চিৎকার করতে থাকবে।তারা সেখানে চিরকাল থাকবে, যতদিন আসমান ও যমীন বিদ্যমান থাকবে।তবে তোমার প্রতিপালক অন্য কিছু ইচ্ছা করলে ভিন্ন কথা। নিশ্চয় তোমার পালনকর্তা যা ইচ্ছা করতে পারেন। {সূরা হুদ:১০৬-১০৭}
আরো ইরশাদ হচ্ছে:
فَوَرَبِّكَ لَنَحْشُرَنَّهُمْ وَالشَّيَاطِينَ ثُمَّ لَنُحْضِرَنَّهُمْ حَوْلَ جَهَنَّمَ جِثِيًّا ﴿৬৮﴾ ثُمَّ لَنَنْزِعَنَّ مِنْ كُلِّ شِيعَةٍ أَيُّهُمْ أَشَدُّ عَلَى الرَّحْمَنِ عِتِيًّا ﴿৬৯﴾ ثُمَّ لَنَحْنُ أَعْلَمُ بِالَّذِينَ هُمْ أَوْلَى بِهَا صِلِيًّا ﴿৭০﴾ {مريم:৬৮ــ৭০}
সুতরাং আপনার পালন কর্তার কসম, আমি অবশ্যই তাদেরকে এবং শয়তানদেরকে একত্রে সমবেত করব, অত:পর অবশ্যই তাদেরকে নতজানু অবস্থায় জাহান্নামের চারপাশে উপস্থিত করব। অত:পর প্রত্যেক সম্প্রদায়ের মধ্যে যে দয়াময় আল্লাহর সর্বাধিক অবাধ্য, আমি অবশ্যই তাকে পৃথক করে নেব। অত:পর তাদের মধ্যে যারা জাহান্নামের অধিক যোগ্য, আমি তাদের বিষয়ে ভালভাবে জ্ঞাত আছি। {সূরা মারইয়াম:৬৮-৭০}
আরো ইরশাদ হচ্ছে:
إِنَّ جَهَنَّمَ كَانَتْ مِرْصَادًا ﴿২১﴾ لِلطَّاغِينَ مَآَبًا ﴿২২﴾ لَابِثِينَ فِيهَا أَحْقَابًا ﴿২৩﴾ لَا يَذُوقُونَ فِيهَا بَرْدًا وَلَا شَرَابًا ﴿২৪﴾ إِلَّا حَمِيمًا وَغَسَّاقًا ﴿২৫﴾ جَزَاءً وِفَاقًا ﴿২৬﴾ {النبأ: ২১ـ ২৬}
নিশ্চয় জাহান্নাম প্রতীক্ষায় থাকবে, সীমালঙ্ঘনকরীদের আশ্রয়স্থলরূপে, তারা তথায় শতাব্দীর পর শতাব্দী অবস্থান করবে। তথায় তারা কোন শীতল এবং পানীয় আস্বাদন করবে না। কিন্তু ফুটন্ত পানি ও পুঁজ পাবে। পরিপূর্ণ প্রতিফল হিসেবে।{সূরা নাবা:২১-২৬}
আরো ইরশাদ হচ্ছে:
وَلِلَّذِينَ كَفَرُوا بِرَبِّهِمْ عَذَابُ جَهَنَّمَ وَبِئْسَ الْمَصِيرُ ﴿৬﴾ إِذَا أُلْقُوا فِيهَا سَمِعُوا لَهَا شَهِيقًا وَهِيَ تَفُورُ ﴿৭﴾ تَكَادُ تَمَيَّزُ مِنَ الْغَيْظِ كُلَّمَا أُلْقِيَ فِيهَا فَوْجٌ سَأَلَهُمْ خَزَنَتُهَا أَلَمْ يَأْتِكُمْ نَذِيرٌ ﴿৮﴾ قَالُوا بَلَى قَدْ جَاءَنَا نَذِيرٌ فَكَذَّبْنَا وَقُلْنَا مَا نَزَّلَ اللَّهُ مِنْ شَيْءٍ إِنْ أَنْتُمْ إِلَّا فِي ضَلَالٍ كَبِيرٍ ﴿৯﴾ {الملك:৬ـ৯}
যারা তাদের পালনকর্তাকে অস্বীকার করেছে তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের শাস্তি। সেটা কতইনা নিকৃষ্ট স্থান। যখন তারা তথায় নিক্ষিপ্ত হবে, তখন তার উৎক্ষিপ্ত গর্জন শুনতে পাবে। ক্রোধে জাহান্নাম যেন ফেটে পড়বে। যখনই তাতে কোন সম্প্রদায় নিক্ষিপ্ত হবে তখন তাদেরকে তার সিপাহীরা জিজ্ঞাসা করবে, তোমাদের কাছে কি কোন সতর্ককারী আগমন করেনি? তারা হ্যাঁ, আমাদের কাছে সতর্ককারী আগমন করেছিল, অত:পর আমরা মিথ্যারোপ করেছিলাম এবং বলেছিলাম: আল্লাহ তাআলা কোন কিছু নাযিল করেননি। তোমরা মহাবিভ্রান্তিতে পড়ে রয়েছে।{সূরা মুলক: ৬-৯}
আরো ইরশাদ হচ্ছে:
إِنَّ الْمُجْرِمِينَ فِي ضَلَالٍ وَسُعُرٍ ﴿৪৭﴾ يَوْمَ يُسْحَبُونَ فِي النَّارِ عَلَى وُجُوهِهِمْ ذُوقُوا مَسَّ سَقَرَ ﴿৪৮﴾ {القمر:৪৭ـ৪৮}
নিশ্চয় অপরাধীরা পথভ্রষ্ট ও বিকারগ্রস্ত। যেদিন তাদেরকে মুখ হিঁচড়ে টেনে নেয়া হবে জাহান্নামে, বলা হবে:অগ্নির খাদ্য আস্বাদন কর।{সূরা ক্বামার:৪৭-৪৮}
আরো ইরশাদ হচ্ছে:
وَمَا أَدْرَاكَ مَا الْحُطَمَةُ ﴿৫﴾ نَارُ اللَّهِ الْمُوقَدَةُ ﴿৬﴾ الَّتِي تَطَّلِعُ عَلَى الْأَفْئِدَةِ ﴿৭﴾ إِنَّهَا عَلَيْهِمْ مُؤْصَدَةٌ ﴿৮﴾ فِي عَمَدٍ مُمَدَّدَةٍ ﴿৯﴾ {الهمزة:৪ـ৯}
কখনো নয়, সে অবশ্যই নিক্ষিপ্ত হবে হুতামায় (পিষ্টকারীতে)। আর আপনি জানেন কি; হুতামা কি? আল্লাহর প্রজ্বলিত আগুন, যা হৃদয় অভ্যন্তরে পৌছে যাবে, এতে তাদেরকে বেঁধে দেয়া হবে,উঁচু উঁচু স্তম্ভসমূহে।{সূরা হুমাযাহ :৪-৯}
عن أسامة بن زيد رضي الله عنهما أنه قال:سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول: يجاء بالرجل يوم القيامة فيلقى في النار فتندلق أقتابه في النار,فيدور كما يدور الحمار برحاه, فيجتمع أهل النارعليه فيقولون: يا فلان ما شأنك؟ أليس كنت تأمرنا بالمعروف و تنهانا عن المنكر؟ قال : كنت آمركم بالمعروف ولا آتيه, وأنهاكم عن المنكر وآتيه. متفق عليه
সাহাবী উসামা বিন যায়দ রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে ইরশাদ করতে শুনেছি: নবীজী বলেন, কিয়ামতের দিন একব্যক্তিকে উপস্থিত করা হবে, অত:পর জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে ফলে তথায় তার নাড়ী - ভূড়ী বের হয়ে পড়বে, অত:পর সে সেখানে চক্রাকারে ঘুরতে থাকবে যেমন গাধা তার পেষণযন্ত্রের চার পাশে ঘুরে। জাহান্নামীরা তার নিকট সমবেত হবে এবং বলবে, হে অমুক! তোমার খবর কি? তুমি না আমাদেরকে সৎকাজ করতে আদেশ করতে আর মন্দকাজ থেকে বাধা দিতে? সে বলবে : হ্যাঁ, আমি তোমাদেরকে আদেশ করতাম ঠিক কিন্তু নিজে আমল করতাম না আবার অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করতাম, কিন্তু সেটি নিজে করতাম।[৩৩]
জাহান্নামবাসীদের কান্না ও আর্তনাদ:
১- মহান আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন:
فَرِحَ الْمُخَلَّفُونَ بِمَقْعَدِهِمْ خِلَافَ رَسُولِ اللَّهِ وَكَرِهُوا أَنْ يُجَاهِدُوا بِأَمْوَالِهِمْ وَأَنْفُسِهِمْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَقَالُوا لَا تَنْفِرُوا فِي الْحَرِّ قُلْ نَارُ جَهَنَّمَ أَشَدُّ حَرًّا لَوْ كَانُوا يَفْقَهُونَ ﴿৮১﴾ فَلْيَضْحَكُوا قَلِيلًا وَلْيَبْكُوا كَثِيرًا جَزَاءً بِمَا كَانُوا يَكْسِبُونَ ﴿৮২﴾ { التوبة : ৮১-৮২}
এবং তারা বলেছে, এ গরমের মধ্যে তোমরা অভিযানে বের হয়ো না। বলে দাও, উত্তাপের দিক থেকে জাহান্নামের আগুন আরো তীব্র।যদি তাদের বিবেচনা শক্তি থাকত। অতএব তারা সামান্য হেসে নিক এবং তাদের কৃতকর্মের বদলাতে অনেক বেশি কাঁদবে। {সূরা তাওবা : ৮১-৮২}
২- আরো ইরশাদ হচ্ছে
وَهُمْ يَصْطَرِخُونَ فِيهَا رَبَّنَا أَخْرِجْنَا نَعْمَلْ صَالِحًا غَيْرَ الَّذِي كُنَّا نَعْمَلُ أَوَلَمْ نُعَمِّرْكُمْ مَا يَتَذَكَّرُ فِيهِ مَنْ تَذَكَّرَ وَجَاءَكُمُ النَّذِيرُ فَذُوقُوا فَمَا لِلظَّالِمِينَ مِنْ نَصِيرٍ { فاطر : ৩৭}
সেখানে তারা আর্তচিৎকার করে বলবে, হে আমাদের পালনকর্তা, আমাদের বের করে দিন, আমরা সৎ কাজ করব, পূর্বে যা করতাম, তা করব না। (আল্লাহ বলবেন) আমি কি তোমাদের এতটা বছর দেইনি, যাতে যা চিন্তা করার বিষয় চিন্তা করতে পারতে? উপরন্তু তোমাদের কাছে সতর্ককারীও আগমন করেছিল। অতএব আস্বাদন কর। জালেমদের জন্য কোন সাহায্যকারী নেই। {সূরা ফাতির : ৩৭}
৩-অন্যত্র ইরশাদ হচ্ছে:
لهم فيها زفير وهم فيها لا يسمعون {الأنبياء :১০০ }
সেখানে তারা চিৎকার - চেঁচামেচি করবে এবং সেখানে তারা কিছুই শুনতে পাবে না।
{সূরা আম্বিয়া : ১০০}
৪-আরোও ইরশাদ হচ্ছে:
وَإِذَا أُلْقُوا مِنْهَا مَكَانًا ضَيِّقًا مُقَرَّنِينَ دَعَوْا هُنَالِكَ ثُبُورًا ﴿১৩﴾ لَا تَدْعُوا الْيَوْمَ ثُبُورًا وَاحِدًا وَادْعُوا ثُبُورًا كَثِيرًا ﴿১৪﴾ {الفرقان:১৩-১৪}
যখন এক শিকলে কয়েকজন বাঁধা অবস্থায় জাহান্নামের কোন সংকীর্ণ স্থানে নিক্ষেপ করা হবে, তখন তারা মৃত্যুকে ডাকবে। বলা হবে, আজ তোমরা এক মৃত্যুকে ডেকো না - অনেক মৃত্যুকে ডাকো।{সূরা আল ফোরকান: ১৩-১৪}
৫- আরো ইরশাদ হচ্ছে:
وَيَوْمَ يَعَضُّ الظَّالِمُ عَلَى يَدَيْهِ يَقُولُ يَا لَيْتَنِي اتَّخَذْتُ مَعَ الرَّسُولِ سَبِيلًا {الفرقان : ২৭}
যালিম ব্যক্তি সেদিন নিজ হস্তদ্বয় দাঁত দ্বারা দংশন করতে করতে বলবে, হায় আফসোস! আমি যদি রাসূলের সাথে সুপথ অবলম্বন করতাম।{সূরা আল ফোরকান:২৭}
৬-আরোও ইরশাদ হচ্ছে:
وَقَالَ الَّذِينَ اتَّبَعُوا لَوْ أَنَّ لَنَا كَرَّةً فَنَتَبَرَّأَ مِنْهُمْ كَمَا تَبَرَّءُوا مِنَّا كَذَلِكَ يُرِيهِمُ اللَّهُ أَعْمَالَهُمْ حَسَرَاتٍ عَلَيْهِمْ وَمَا هُمْ بِخَارِجِينَ مِنَ النَّارِ { البقرة:১৬৭}
এভাবেই আল্লাহ তাআলা তাদের কে তাদের কৃতকর্ম দেখাবেন তাদের অনুতপ্ত করার জন্য। অথচ তারা জাহান্নাম থেকে বের হতে পারবে না।
{সূরা বাকারা:১৬৭}
জাহান্নামীদের প্রার্থনা-ফরিয়াদ:
জাহান্নামীরা জাহান্নামে প্রবেশ করার পর যখন কঠিন আযাব চারদিক থেকে তাদের ঘিরে ধরবে তখন সাহায্য ও পরিত্রাণ পাওয়ার আশায় সেখান থেকে ফরিয়াদ করতে থাকবে এবং বিভিন্ন জনেরে ডাকাডাকি করতে লাগবে। পর্যায়ক্রমে তারা আহ্বান করবে জান্নাতবাসীদের, জাহান্নাম রক্ষীদের, জাহান্নাম রক্ষী মালেককে, অনুরূপ ভাবে স্বীয় পালনকর্তা মহান আল্লাহ তাআলাকে। কিন্তু তাদের কোন আহ্বানেরই সন্তুষজনক সাড়া দেয়া হবে না বরং উক্ত সাড়াদানের মাধ্যমে তাদের অনুতাপ - আফসোসই বৃদ্ধি পেতে থাকবে। অত:পর তারা সকল আশা ছেড়ে দিয়ে কর্ণবিদারক চিৎকার ও আর্তনাদ জুড়ে দেবে।
১-আল্লাহ তাআলা বলেন:
وَنَادَى أَصْحَابُ النَّارِ أَصْحَابَ الْجَنَّةِ أَنْ أَفِيضُوا عَلَيْنَا مِنَ الْمَاءِ أَوْ مِمَّا رَزَقَكُمُ اللَّهُ قَالُوا إِنَّ اللَّهَ حَرَّمَهُمَا عَلَى الْكَافِرِينَ { الأعراف:৫০}
আর জাহান্নামীরা জান্নাতবাসীদের ডেকে বলবে : আমাদের উপর কিছু পানি ঢেলে দাও অথবা আল্লাহ প্রদত্ত তোমাদের জীবিকা হতে কিছু প্রদান কর, তারা বলবেম, আল্লাহ এসব জিনিষ কাফেরদের উপর হারাম করে দিয়েছেন। {সূরা আ'রাফ: ৫০}
২-আল্লাহ তাআলা আরও বলেন:
وَقَالَ الَّذِينَ فِي النَّارِ لِخَزَنَةِ جَهَنَّمَ ادْعُوا رَبَّكُمْ يُخَفِّفْ عَنَّا يَوْمًا مِنَ الْعَذَابِ ﴿৪৯﴾ قَالُوا أَوَ لَمْ تَكُ تَأْتِيكُمْ رُسُلُكُمْ بِالْبَيِّنَاتِ قَالُوا بَلَى قَالُوا فَادْعُوا وَمَا دُعَاءُ الْكَافِرِينَ إِلَّا فِي ضَلَالٍ ﴿৫০﴾ { غافر:৪৯-৫০}
জাহান্নামের অধিবাসীরা তার প্রহরীদেরকে বলবে: তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের নিকট প্রার্থনা কর, তিনি যেন আমাদের থেকে একদিনের আযাব লাঘব করে দেন। রক্ষীরা বলবে: তোমাদের নিকট কি সুস্পষ্ট প্রমাণাদিসহ তোমাদের রসূলগণ আসেননি? তারা বলবে : হ্যাঁ - এসেছিল।রক্ষীরা বলবে : তবে তোমরাই প্রার্থনা কর, বস্তুত: কাফেরদের প্রার্থনা ব্যর্থই হয়। {সূরা গাফের:৪৯-৫০}
৩-অন্যত্র ইরশাদ হচ্ছে:
وَنَادَوْا يَا مَالِكُ لِيَقْضِ عَلَيْنَا رَبُّكَ قَالَ إِنَّكُمْ مَاكِثُونَ ﴿৭৭﴾ لَقَدْ جِئْنَاكُمْ بِالْحَقِّ وَلَكِنَّ أَكْثَرَكُمْ لِلْحَقِّ كَارِهُونَ ﴿৭৮﴾ {الزخرف:৭৭- ৭৮ }
তারা চিৎকার করে বলবে: হে মালেক (জাহান্নামের রক্ষী) তোমার প্রতিপালক আমাদেরকে নিঃশেষ করে দিন। সে বলবেঃ নিশ্চয় তোমরা চিরকাল থাকবে।( আল্লাহ বলবেন) আমি তোমাদের কাছে সত্যধর্ম পৌছিয়েছিলাম ; কিন্তু তোমাদের অধিকাংশই সত্যধর্মে নিস্পৃহ। {সূরা যুখরুফ: ৭৭-৭৮}
৪-আরও ইরশাদ হচ্ছে:
قَالُوا رَبَّنَا غَلَبَتْ عَلَيْنَا شِقْوَتُنَا وَكُنَّا قَوْمًا ضَالِّينَ ﴿১০৬﴾ رَبَّنَا أَخْرِجْنَا مِنْهَا فَإِنْ عُدْنَا فَإِنَّا ظَالِمُونَ ﴿১০৭﴾ قَالَ اخْسَئُوا فِيهَا وَلَا تُكَلِّمُونِ ﴿১০৮﴾ {المؤمنون : ১০৬ ু ১০৮}
তারা বলবে: হে আমাদের পালনকর্তা, আমরা দুর্ভাগ্যের হাতে পরাভূত ছিলাম এবং আমরা ছিলাম বিভ্রান্ত জাতি। হে আমাদের পালনকর্তা ! এ থেকে আমাদেরকে উদ্ধার কর ; আমরা যদি পুনরায় তা (কুফরী ) করি, তবে তো আমরা অবশ্যই সীমালঙ্ঘনকারী হব। আল্লাহ বলবেন, তোমরা হীন অবস্থায় এখানেই পড়ে থাক এবং আমার সাথে কোন কথা বলোনা। { সূরা মুমিনূন: ১০৬-১০৮}
৫- জাহান্নামীরা যখন জাহান্নাম হতে বের হওয়ার ব্যাপারে সকল আশা ছেড়ে দেবে এবং যে কোন কল্যাণ থেকে একেবারে নিরাশ হয়ে যাবে, তখন কর্ণ বিদারক চিৎকার ও আর্তনাদ জুড়ে দেবে। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন:
قَالُوا رَبَّنَا غَلَبَتْ عَلَيْنَا شِقْوَتُنَا وَكُنَّا قَوْمًا ضَالِّينَ ﴿১০৬﴾ رَبَّنَا أَخْرِجْنَا مِنْهَا فَإِنْ عُدْنَا فَإِنَّا ظَالِمُونَ ﴿১০৭﴾ { هود: ১০৬ـ ১০৭}
অতএব যারা হতভাগ্য তারা জাহান্নামে যাবে, সেখানে তারা আর্তনাদ ও চিৎকার করতে থাকবে। তারা সেখানে চিরকাল থাকবে, যতদিন আসমান ও যমীন বিদ্যমান থাকবে। তবে তোমার প্রতিপালক অন্য কিছু ইচ্ছা করলে ভিন্ন কথা। নিশ্চয় তোমার পালনকর্তা যা ইচ্ছা করতে পারেন। {সূরা হুদ:১০৬-১০৭}
আল্লাহ তাআলার ক্রোধ, গযব ও শাস্তি থেকে পানাহ চাই। হে আল্লাহ তুমি আমাদের জান্নাত দান কর... এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি দাও... তুমিই আমাদের অভিভাবক... কতইনা উত্তম অভিভাবক...এবং কতইনা উত্তম সাহায্যকারী।
• জান্নাতে জাহান্নামীদের জন্য বরাদ্ধকৃত বাসগৃহগুলো জান্নাত অধিবাসীদের উত্তরাধিকার হয়ে যাওয়া।
عن أبي هريرة رضي الله عنه قال:قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: ما منكم من أحد إلا له منزلان: منزل في الجنة و منزل في النار, فإذا مات فدخل النار, ورث أهل الجنة منزله, فذلك قوله تعالى: أولئك هو الوارثون الذين يرثون الفردوس هم فيها خالدون. أخرجه ابن ماجة.
বিশিষ্ট সাহাবী আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমাদের প্রত্যেকেরই জন্য দুটি বাসগৃহ বরাদ্ধ আছে, একটি জান্নাতে আরেকটি জাহান্নামে। যদি কেউ মৃত্যুবরণ করে জাহান্নামে প্রবেশ করে তাহলে জান্নাত অধিবাসীরা উত্তরাধিকার সূত্রে তার বাসগৃহের মালিক হয়ে যায়। এটিই আল্লাহ তাআলার বাণী : তারাই হবে উত্তরাধিকারী, উত্তরাধিকার লাভ করবে ফেরদাউসের, যাতে তারা চিরস্থায়ী ভাবে থাকবে। [৩৪]
• তাওহীদবাদী পাপীদের জাহান্নাম থেকে বের হয়ে আসা।
عن جابر رضي الله عنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : يعذب ناس من أهل التوحيد في النار حتى يكونوا فيها حمما, ثم تدركهم الرحمة, فيخرجون و يطرحون على أبواب الجنة . قال: فيرش عليهم أهل الجنة الماء فينبتون كما ينبت الغثاء في حمالة السيل ثم يدخلون الجنة . أخرجه أحمد و الترمذي .
সাহাবী জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করছেন, তাওহীদ বাদী কিছু (পাপী) লোককে জাহান্নামে শাস্তি দেয়া হবে, এক পর্যায়ে তারা কয়লা হয়ে যাবে। অত:পর তাদেরকে বিশেষ রহমত ও দয়া স্পর্ষ করবে, ফলশ্রুতিতে তাদেরকে জাহান্নাম থেকে বের করা হবে এবং জান্নাতের দরজার উপর নিক্ষেপ করা হবে। এরপর জান্নাত অধিবাসীরা তাদের উপর পানি ছিটিয়ে দেবে ফলে তারা উৎপন্ন হবে যেমন করে স্রোতে ভেসে আসা খড়কুটুর উপর তৃণ উৎপন্ন হয়। এরপর তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে।[৩৫]
وعن أنس بن مالك رضي الله عنه أن النبي صلى الله عليه وسلم قال: يخرج من النار من قال: لا إله إلا الله وكان في قلبه من الخير ما يزن شعيرة, ثم يخرج من النار من قال : لا إله إلا الله وكان في قلبه من الخير ما يزن برة, ثم يخرج من النار من قال: لا إله إلا الله وكان في قلبه من الخير ما يزن ذرة. متفق عليه
বিশিষ্ট সাহাবী আনাস বিন মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ তাআলা ব্যতীত সত্যিকার কোন উপাস্য নেই মর্মে সাক্ষ্য দেবে এবং তার অন্তরে যবের দানা পরিমাণ ঈমানও অবশিষ্ট থাকবে তাকে (এক সময়ে) জাহান্নাম থেকে বের করা হবে। অত:পর বের করা হবে যারা আল্লাহ তাআলা ব্যতীত কোন সত্যিকার উপাস্য নেই মর্মে সাক্ষ্য দেবে এবং তাদের অন্তরে গমের দানা পরিমাণও ঈমান অবশিষ্ট থাকবে। এরপর বের করা হবে যারা সাক্ষ্য দেবে যে আল্লাহ ছাড়া আর কোন সত্যিকার উপাস্য নেই এবং তাদের অন্তরে অনু পরিমাণ ঈমানও অবশিষ্টি থাকবে।[৩৬]
জাহান্নামীদের সবচে কঠিন আযাব:
(১) জান্নাতের সর্বশ্রেষ্ঠ নেয়ামত হচ্ছে, মুমিনদের স্বীয় প্রতিপালককে স্বচোক্ষে দর্শন লাভ ও তাঁর সন্তুষ্টির ঘোষণায় আনন্দিত ও প্রফুল্ল হওয়া। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন:
وجوه يومئذ ناضرة إلى ربها ناظرة { القيامة:২২-২৩}
সে দিন অনেক মুখমন্ডল হবে উজ্জ্বল। স্বীয় পালনকর্তার দিকে তাকিয়ে থাকবে।{সূরা কিয়ামাহ :২২-২৩}
আরও ইরশাদ হচ্ছে:
وَعَدَ اللَّهُ الْمُؤْمِنِينَ وَالْمُؤْمِنَاتِ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا وَمَسَاكِنَ طَيِّبَةً فِي جَنَّاتِ عَدْنٍ وَرِضْوَانٌ مِنَ اللَّهِ أَكْبَرُ ذَلِكَ هُوَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ { التوبة:৭২}
আল্লাহ তাআলা মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীদের এমন জান্নাতসমূহের প্রতিশ্রুতি দিয়ে রেখেছেন যার নিম্নদেশ দিয়ে বইতে থাকবে নহরসমূহ, সেখানে তারা অনন্তকাল থাকবে, আরও ওয়াদা দিয়েছেন সে সকল উত্তম বাসস্থানসমূহের যা আদন নামক জান্নাতের মাঝে অবস্থিত। আর আল্লাহর সন্তুষ্টি হচ্ছে সর্বপেক্ষা বড় নেয়ামত, এটিই হচ্ছে মহান সফলতা। {সূরা তাওবা:৭২}
(২) আর জাহান্নামের সর্বাপেক্ষা কঠিন আযাব হচ্ছে তাদেরকে স্বীয় পালনকর্তার দর্শন লাভ থেকে বাধা গ্রস্ত হওয়া। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন:
كلا إنهم عن ربهم يومئذ لمحجوبون . ثم إنهم لصالوا الجحيم. {المطففين: ১৫-১৬}
কখনও নয়। অবশ্যই সেদিন তারা তাদের প্রতিপালকের দর্শন লাভ হতে বাধাগ্রস্ত হবে। অত:পর তারা অবশ্যই জাহান্নামে প্রবেশ করবে।{সূরা মুতাফফিফীন:১৫-১৬}
জান্নাত ও জাহান্নাম অধিবাসীদের চিরস্থায়ীভাবে থাকা:
فَأَمَّا الَّذِينَ شَقُوا فَفِي النَّارِ لَهُمْ فِيهَا زَفِيرٌ وَشَهِيقٌ ﴿১০৬﴾ خَالِدِينَ فِيهَا مَا دَامَتِ السَّمَوَاتُ وَالْأَرْضُ إِلَّا مَا شَاءَ رَبُّكَ إِنَّ رَبَّكَ فَعَّالٌ لِمَا يُرِيدُ ﴿১০৭﴾ وَأَمَّا الَّذِينَ سُعِدُوا فَفِي الْجَنَّةِ خَالِدِينَ فِيهَا مَا دَامَتِ السَّمَوَاتُ وَالْأَرْضُ إِلَّا مَا شَاءَ رَبُّكَ عَطَاءً غَيْرَ مَجْذُوذٍ ﴿১০৮﴾ { هود: ১০৬ـ ১০৮}
অতএব যারা হতভাগ্য তারা জাহান্নামে যাবে, সেখানে তারা আর্তনাদ ও চিৎকার করতে থাকবে। তারা সেখানে চিরকাল থাকবে, যতদিন আসমান ও যমীন বিদ্যমান থাকবে। তবে তোমার প্রতিপালক অন্য কিছু ইচ্ছা করলে ভিন্ন কথা। নিশ্চয় তোমার পালনকর্তা যা ইচ্ছা করতে পারেন। আর যারা সৌভাগ্যবান তারা যাবে জান্নাতে, সেখানেই চিরকাল থাকবে, যতদিন আসমান ও যমীন বর্তমান থাকবে। তবে তোমার প্রভূ অন্য কিছু ইচ্ছা করলে ভিন্ন কথা। এ দানের ধারাবাহিকতা কখনো ছিন্ন হওয়ার নয়। {সূরা হুদ:১০৬-১০৮}
(২) আরও ইরশাদ হচ্ছে:
إِنَّ الَّذِينَ كَفَرُوا لَوْ أَنَّ لَهُمْ مَا فِي الْأَرْضِ جَمِيعًا وَمِثْلَهُ مَعَهُ لِيَفْتَدُوا بِهِ مِنْ عَذَابِ يَوْمِ الْقِيَامَةِ مَا تُقُبِّلَ مِنْهُمْ وَلَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ ﴿৩৬﴾ يُرِيدُونَ أَنْ يَخْرُجُوا مِنَ النَّارِ وَمَا هُمْ بِخَارِجِينَ مِنْهَا وَلَهُمْ عَذَابٌ مُقِيمٌ ﴿৩৭﴾ {المائدة:৩৬-৩৭}
যারা কাফের, যদি তাদের কাছে পৃথিবীর সমুদয় সম্পদ এবং তৎসহ আরও তদনুরূপ সম্পদ থাকে আর এগুলো বিনিময়ে দিয়ে কেয়ামতের শাস্তি হতে পরিত্রাণ পেতে চায়, তবুও তাদের কাছ থেকে তা কবুল করা হবে না। তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। তারা জাহান্নাম থেকে বের হয়ে আসতে চাইবে কিন্তু তা থেকে বের হতে পারবে না। বস্তুত: তাদের জন্য রয়েছে চিরস্থায়ী শাস্তি। {সূরা মায়েদা:৩৬-৩৭}
(৩) হাদীসে এসেছে
عن ابن عمر رضي الله عنهما قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم:إذا صار أهل الجنة إلى الجنة, وأهل النار إلى النار جيئ بالموت حتى يجعل بين الجنة والنار, ثم يذبح,ثم ينادي مناد:يا أهل الجنة لا موت, يا أهل النار لا موت, فيزداد أهل الجنة فرحا إلى فرحهم, ويزداد أهل النار حزنا إلى حزنهم . متفق عليه
বিশিষ্ট সাহাবী আব্দুল্লাহ বিন উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যখন জান্নাতীরা জান্নাতে এবং জাহান্নামীরা জাহান্নামে প্রবেশ করবে। মৃত্যুকে উপস্থিত করা হবে এবং জান্নাত ও জাহান্নামের মাঝে রাখা হবে। অত:পর জবাই করে দেয়া হবে। এরপর জনৈক ঘোষক এ মর্মে ঘোষণা দেবেন: হে জান্নাত অধিবাসীবৃন্দ আর মৃত্যু হবে না, হে জাহান্নামবাসীরা আর মৃত্যু নেই। ঘোষণা শুনে জান্নাতীদের আনন্দ আরো বেড়ে যাবে পক্ষান্তরে জাহান্নামীদের মর্ম যাতনা আরও বৃদ্ধি পাবে।[৩৭]
জান্নাত ও জাহান্নামের আবরণ:
عن أبي هريرة رضي الله عنه أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: حجبت النار بالشهوات,وحجبت الجنة بالمكاره. متفق عليه
প্রখ্যাত সাহাবী আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন: জাহান্নামকে কামনার বস্তু দ্বারা ঢেকে দেয়া হয়েছে আর জান্নাতকে আবৃত করা হয়েছে অপছন্দনীয় ও কষ্টসাধ্য জিনিষ দ্বারা।[৩৮]
জান্নাত ও জাহান্নামের নৈকট্য:
عن عبد الله بن مسعود رضي الله عنه قال:قال النبي صلى الله عليه وسلم: الجنة أقرب إلى أحدكم من شراك نعله, و النار مثل ذلك. أخرجه البخاري
সাহাবী আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বণিত, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন: জান্নাত তোমাদের প্রত্যেকের স্বীয় জুতার ফিতার চেয়েও নিকটে, অনুরূপ ভাবে জাহান্নামও তাই। [৩৯]
জান্নাত ও জাহান্নামের বিতর্ক এবং তাদের মাঝে আল্লাহ তাআলার রায় প্রদান:
عن أبي هريرة رضي الله عنه عن النبي صلى الله عليه وسلم قال: تحاجت النار و الجنة, فقالت النار:أوثرت بالمتكبرين و المتجبرين, وقالت الجنة: فمالي لا يدخلني إلا ضعفاء الناس و سقطهم و عجزهم, فقال الله للجنة:أنت رحمتي, أرحم بك من أشاء من عبادي, و قال للنار:أنت عذابي, أعذب بك من أشاء من عبادي, ولكل واحدة منكم ملؤها... متفق عليه
বিশিষ্ট সাহাবী আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন: জাহান্নাম ও জান্নাত বিতর্কে উপনীত হল; জাহান্নাম বলছে: অহংকরী ও প্রতিপত্তিশালীদের মাধ্যমে আমাকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে, আর জান্নাত বলছে, আমার অবস্থাতো এই, যে আমাতে শুধু মাত্র দুর্বল, প্রভাব - প্রতিপত্তিহীন ও উপেক্ষিত লোকেরাই প্রবেশ করে। (এদের বিতর্ক শুনে ) আল্লাহ তাআলা জান্নাতকে লক্ষ্য করে বললেন: তুমি আমার রহমত ও করুণা, তোমার মাধ্যমে আমি আমার বান্দাদের যাকে ইচ্ছা অনুগ্রহ করব। আর জাহান্নামকে উদ্দেশ্য করে বললেন: তুমি আমার আযাব, তোমার মাধ্যমে আমার বান্দাদের যাকে ইচ্ছা শাস্তি দেব। তবে তোমাদের প্রত্যেককেই পরিপূর্ণ করা হবে...।[৪০]
জাহান্নাম থেকে সতর্কথাকা ও জান্নাত প্রার্থনা করা:
১-আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন:
وَاتَّقُوا النَّارَ الَّتِي أُعِدَّتْ لِلْكَافِرِينَ ﴿১৩১﴾ وَأَطِيعُوا اللَّهَ وَالرَّسُولَ لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُونَ ﴿১৩২﴾ {آل عمران:১৩১-১৩২}
এবং তোমরা সেই অগ্নিকে ভয় কর যা কাফেরদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে।এবং আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্য কর তাতে তোমরা কৃপা লাভ করতে পারবে।{সূরা আলে এমরান:১৩১-১৩২}
২- হাদীসে এসেছে
وعن عدي بن حاتم رضي الله عنه : أن النبي صلى الله عليه وسلم ذكر النار فأشاح بوجهه فتعوذ منها,ثم ذكر النار فأشاح بوجهه فتعوذ منها,ثم قال:اتقوا النار ولو بشق تمرة, فمن لم يجد فبكلمة طيبة. متفق عليه
সাহাবী আদী বিন হাতিম রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জাহান্নামের আলোচনা করলেন, তাঁর চেহারায় ভীতির ছাপ ফুটে উঠলো তিনি চেহারা ফিরিয়ে নিলেন এবং জাহান্নাম থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করলেন, তিনি আবারো আলোচনা করলেন এবং ভীতি ভরে চেহারা ফিরিয়ে নিলেন এবং আশ্রয় চাইলেন। অত:পর বললেন:এক টুকরো খেজুর দিয়ে হলেও তোমরা জাহান্নাম থেকে আত্মরক্ষা কর। আর যে তাতে অসমর্থ হবে তাহলে সুন্দর সুন্দর কথার মাধ্যমে।[৪১]
وعن أبي هريرة رضي الله عنه أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال : كل أمتي يدخلون الجنة إلا من أبى . قالوا : يا رسول الله ومن يأبى؟ قال : من أطاعني دخل الجنة, و من عصاني فقد أبى. متفق عليه
বিশিষ্ট সাহাবী আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন: আমার সকল উম্মত জান্নাতে প্রবেশ করবে কিন্তু যারা অস্বীকার করে তারা ব্যতীত। লোকেরা জিজ্ঞেস করলো : অস্বীকার করে কারা? নবীজী বললেন: যারা আমার আনুগত্য করবে তারা জান্নাতে যাবে আর যারা অবাধ্যতা করবে তারাই মূলত: অস্বীকার করল।[৪২]
হে আল্লাহ আমরা তোমার নিকট জান্নাত প্রার্থনা করছি এবং তাওফীক চাই এমন সব কথা ও কাজের যা জান্নাতের নিকটবর্তী করে দেয়। আর আশ্রয় চাই জাহান্নাম থেকে এবং এমনসব কথা ও কাজ থেকে যা জাহান্নামের নিকটবর্তী করে দেয়।
৬ - তাকদীরের ভাল-মন্দের প্রতি ঈমান:
القدر : দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে: প্রত্যেক বস্তু সম্পর্কে আল্লাহ তাআলার সম্যক জ্ঞান এবং সে সকল বিষয় সম্বন্ধে যার অস্তিত্ব দান বা বান্দা থেকে সঙ্ঘটনের ইচ্ছা তিনি করেছেন। অনুরূপ ভাবে জগৎসমূহ, জগতের নানাবিধ অবস্থা এবং তার যাবতীয় বস্তু ও বিষয়াবলী সম্পর্কে আল্লাহ তাআলার পরিজ্ঞান। আর এ সবকিছুর হিসাব ও লিখন সব লাওহে মাহফুজে সংরক্ষিত আছে।
আর কদর হচ্ছে নিজ সৃষ্টি সম্পর্কে আল্লাহ তাআলার গোপন-রহস্য যে ব্যাপারে না কোন নৈকট্যপ্রাপ্ত ফেরেশতা অবহিত হতে পেরেছে, না কোন প্রেরিত রাসূল।
ঈমান বিল কাদার (তাকদীরের ভাল - মন্দের প্রতি বিশ্বাস) এর তাৎপর্য হচ্ছে:
প্রত্যেক সঙ্ঘটিত ও সঙ্ঘটিতব্য বিষয় ভাল কি মন্দ সব আল্লাহ তাআলার সিদ্ধান্ত ও নির্ধারণ অনুযায়ী হয়ে থাকে মর্মে দৃঢ় বিশ্বাস পোষন করা।
যেমন আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করছেন:
إنا كل شىء خلقناه بقدر { القمر:৪৯}
আমি প্রত্যেক বস্তু সৃষ্টি করেছি নির্ধরিত পরিমাপে। {সূরা কামার:৪৯}
ঈমান বিল কাদারের রুকনসমূহ:
ঈমান বিল কাদার চারটি বিষয়কে অন্তর্ভূক্ত করে:
১-এক :
এ দৃঢ় বিশ্বাস পোষন করা যে, মহান আল্লাহ তাআলা সর্ববিষয়ে-একত্রে ও বিস্তারিত ভাবে- পরিজ্ঞাত। উক্ত বিষয়াদি তাঁর নিজ কর্ম সংশ্লিষ্টও হতে পারে, যেমন:সৃষ্টি করা, পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ করা, জীবিত করা, মৃত্যুদান করা এবং এ জাতীয় বিষয়াদি। আবার সৃষ্টিকুলের কর্ম সংশ্লিষ্টও হতে পারে। যেমন মানুষের কথা, কাজ ও তাদের অবস্থাদি অনুরূপ ভাবে জীব-জন্তু, উদ্ভিদ ও জড় পদার্থ ইত্যাদির অবস্থা ও পরিস্থিতি। মহান আল্লাহ তাআলা এ সকল বিষয়ে পরিপূর্ণরূপে পরিজ্ঞাত। যেমন ইরশাদ হচ্ছে:
اللَّهُ الَّذِي خَلَقَ سَبْعَ سَمَوَاتٍ وَمِنَ الْأَرْضِ مِثْلَهُنَّ يَتَنَزَّلُ الْأَمْرُ بَيْنَهُنَّ لِتَعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ وَأَنَّ اللَّهَ قَدْ أَحَاطَ بِكُلِّ شَيْءٍ عِلْمًا { الطلاق:১২}
আল্লাহই সৃষ্টি করেছেন সপ্ত আকাশ এবং পৃথিবীও তাদের অনুরূপ, এসবের মাঝে নেমে আসে তাঁর আদেশ, যাতে তোমরা বুঝতে পার যে আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান এবং জ্ঞানে আল্লাহ সবকিছুকে পরিবেষ্টন করে আছেন। {সূরা তালাক:১২}
২- দুই নম্বর:
দৃঢ়ভাবে এ বিশ্বাস পোষন করা যে, আল্লাহ তাআলা তাবৎ সৃষ্টিকুল, পৃথিবীর হাল পরিস্থিতি এবং রিযিক - জীবনোপকরণ সহ সবকিছুর হিসাব - পরিমাপ লাওহে মাহফূজে লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন। তিনি এর পরিমাণ, ধরণ, সময় ও অবস্থান সবই নির্ধারণ করে রেখেছেন। সুতরাং সেগুলো আল্লাহর নির্দেশ ব্যতীত পরিবর্তিত ও রূপান্তরিত হবে না এবং তাঁর অনুমোদন ছাড়া বৃদ্ধি ও হ্রাস পাবে না।যেরূপ আছে ঠিক সেরূপই থাকবে।
১- আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন:
أَلَمْ تَعْلَمْ أَنَّ اللَّهَ يَعْلَمُ مَا فِي السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ إِنَّ ذَلِكَ فِي كِتَابٍ إِنَّ ذَلِكَ عَلَى اللَّهِ يَسِيرٌ {الحج:৭০}
তুমি কি জান না যে, আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু রয়েছে আল্লাহ তা অবগত আছেন। এ সবই লিপিবদ্ধ আছে এক কিতাবে,অবশ্যই এটি আল্লাহ নিকট সহজ। {সূরা হজ্জ:৭০}
২-হাদীসে এসেছে
وعن عبد الله بن عمرو بن العاص رضي الله عنهما قال:سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول: كتب الله مقادير الخلائق قبل أن يخلق السماوات و الأرض بخمسين ألف سنة, قال وعرشه على الماء. أخرجه مسلم
সাহাবী আব্দুল্লাহ বিন আমর ইবনুল আস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, নবীজী বলেন: আল্লাহ তাআলা সৃষ্টিকুলের ভাগ্যলিপি আকাশ-যমীন সৃষ্টির পঞ্চাশ হাজার বছর আগে লিপিবদ্ধ (নির্ধারিত) করে রেখেছেন। বলেন: আর তার আরশ ছিল পানির উপর[৪৩]।
৩- তিন নম্বর:
এ দৃঢ় বিশ্বাস পোষন করা যে, এ নিখিল বিশ্ব এবং তাতে যাকিছু আছে, যা কিছু হয়েছে, যা কিছু হচ্ছে এবং যা কিছু হবে সব কিছুরই অস্তিত্ব আল্লাহ তাআলার ইচ্ছা ও চাহিদার ভিত্তিতেই বাস্তবায়িত হবে। সুতরাং মহান আল্লাহ যা চাইবেন, হবে আর যা চাইবেন না, হবে না। উক্ত বিষয়াদি তাঁর নিজ কর্ম সংশ্লিষ্টও হতে পারে, যেমন:সৃষ্টি করা, পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ করা, জীবিত করা, মৃত্যুদান করা এবং এ জাতীয় বিষয়াদি। আবার সৃষ্টিকুলের কর্ম সংশ্লিষ্টও হতে পারে, যেমন মানুষের কথা, কাজ ও তাদের অবস্থাদি অনুরূপভাবে জীব-জন্তু, উদ্ভিদ ও জড় পদার্থ ইত্যাদির অবস্থা - পরিস্থিতি।
১- আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন:
وربك يخلق ما يشاء ويختار . { القصص:৬৮}
আর তোমার প্রতিপালক যা ইচ্ছা করেন এবং যাকে ইচ্ছা মনোনীত করেন।
{সূরা কাসাস:৬৮}
২-আরো ইরশাদ হচ্ছে:
ويفعل الله ما يشاء. { إبراهيم:২৭}
আল্লাহ যা ইচ্ছা তাই করেন। ( সূরা ইবরাহীম:২৭)
৩-আরো ইরশাদ হচ্ছে:
ولو شاء ربك ما فعلوه . { الأنعام:১১২}
তোমার প্রতিপালক ইচ্ছা করলে তারা এমন কাজ করতে পারত না।{সূরা আনআম:১১২}
৪-আরো ইরশাদ হচ্ছে:
لِمَنْ شَاءَ مِنْكُمْ أَنْ يَسْتَقِيمَ ﴿২৮﴾ وَمَا تَشَاءُونَ إِلَّا أَنْ يَشَاءَ اللَّهُ رَبُّ الْعَالَمِينَ ﴿২৯﴾ { التكوير:২৮-২৯}
তোমাদের মধ্যে যে সরল পথে চলতে চায়, তার জন্য।মহান রাব্বুল আলামীন - আল্লাহ না চাইলে তোমরা কিছুই ইচ্ছা করতে পার না। {সূরা তাকভীর:২৮-২৯}
৪- চার নম্বর:
এ বিশ্বাস পোষন করা যে আল্লাহ তাআলা সব কিছুর সৃষ্টিকর্তা। নিখিল বিশ্ব এবং তাতে যা কিছু আছে সবকিছুর মূল, সিফাত এবং তাদের কর্মাবলী সবই তিনিই সৃজন করেছেন। তিনি ভিন্ন কোন সৃষ্টিকর্তা নেই এবং তিনি ব্যতীত কোন প্রতিপালক নেই।
১- আল্লাহ তাআলা বলেন:
اللَّهُ خَالِقُ كُلِّ شَيْءٍ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ وَكِيلٌ { الزمر:৬২}
আল্লাহ সব কিছুর স্রষ্টা এবং তিনিই সব কিছুর ব্যবস্থাপক। {সূরা যুমার:৬২}
إنا كل شيئ خلقناه بقدر.{ القمر:৪৯}
আমি প্রত্যেক কিছু সৃষ্টি করেছি নির্ধারিত পরিমাপে। {সূরা কামার:৪৯}
والله خلقكم وما تعملون .{ الصافات: ৯৬}
প্রকৃতপক্ষে আল্লাহই সৃষ্টি করেছেন তোমাদেরকে এবং তোমরা যা কিছু কর।{সূরা সাফফাত:৯৬}
তাকদীর-কে অজুহাত হিসাবে পেশ করা
আল্লাহ তাআলা মানুষের জন্য যে নিয়তি নির্ধারণ ও চুড়ান্ত করেছেন তা দুই প্রকার:
১-এক নম্বর:
মানুষের ইচ্ছা ও ক্ষমতা বহির্ভূত বিষয়ে তাঁর সিদ্ধান্ত ও নির্ধারণ:
এটি তার নিজের মাঝে পূর্ব হতে বিদ্যমানও থাকতে পারে যেমন তার শারীরিক দৈর্ঘ, প্রস্থ অনুরূপ ভাবে সুদর্শন হওয়া, দেখতে অসুন্দর হওয়া বা তার হায়াত, মওত ইত্যাদি।
অথবা তার অনিচ্ছা সত্বেও তার উপর আপতিত হতে পারে। যেমন বিভিন্ন ধরনের বিপদ মসীবত,অসুখ-বিসুখ, ধন-সম্পদ, ফসলাদি ও জান -জীবণ হ্রাস পাওয়া ইত্যাদি বিপদসমূহ যা কখনো বান্দার উপর শাস্তি স্বরূপ কখনো পরীক্ষা স্বরূপ আবার কখনো মর্যাদার স্তরের উন্নতি স্বরূপ আপতিত হয়।
যেসব আমল পূর্ব হতেই তার মাঝে বিদ্যমান বা তার নিজের কোন এখতিয়ার ছাড়াই তার উপর আপতিত হয় সেগুলোর ব্যাপারে মানুষদের জিজ্ঞেস করা হবে না এবং এ ব্যাপারে তাদের কোন হিসাবও নেয়া হবে না। বরং এ ক্ষেত্রে তার উপর আবশ্যক হচ্ছে, এ দৃঢ় বিশ্বাস পোষন করা যে, এগুলো সব আল্লাহর সিদ্ধান্ত ও নির্ধারণের কারণে হয়েছে এবং পরিপূর্ণ সন্তুষ্টি ও প্রসন্ন মনে এসবের উপর ধৈর্য্য ধারণ করা। সুতরাং নিখিল বিশ্বে বিপদাপদ যা কিছু সঙ্ঘটিত হয় তাতে অবশ্যই সবজান্তা, সর্বজ্ঞ আল্লাহ তাআলার অপার হিকমত রয়েছে।
১- আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন।
مَا أَصَابَ مِنْ مُصِيبَةٍ فِي الْأَرْضِ وَلَا فِي أَنْفُسِكُمْ إِلَّا فِي كِتَابٍ مِنْ قَبْلِ أَنْ نَبْرَأَهَا إِنَّ ذَلِكَ عَلَى اللَّهِ يَسِيرٌ { الحديد:২২}
পৃথিবীতে ও ব্যক্তিগত ভাবে তোমাদের উপর যত বিপদই আসে তা জহৎ সৃষ্টির পূর্বেই কিতাবে লিপিবদ্ধ আছে। নিশ্চয়ই এটি আল্লাহর পক্ষে সহজ।
২- হাদীসে এসেছে
وعن ابن عباس رضي الله عنهما قال:كنت خلف رسول الله صلى الله عليه وسلم يوما فقال : يا غلام إني أعلمك كلمات احفظ الله يحفظك, احفظ الله تجده تجاهك,إذا سألت فاسأل الله, وإذا استعنت فاستعن بالله, واعلم أن الأمة لو اجتمعت على أن ينفعوك بشيء لم ينفعوك إلا بشيء قد كتبه الله لك, ولو اجتمعوا على أن يضروك بشيء لم يضروك إلا بشيء قد كتبه الله عليك,رفعت الأقلام, وجفت الصحف. أخرجه أحمد و الترمذي.
বিশিষ্ট সাহাবী আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি একদিন রাসূলুল্লাহর পেছনে ছিলাম, তিনি আমাকে বললেন: হে বালক! আমি তোমাকে কয়েকটি বাক্য (বিষয়) শিক্ষা দেব।তুমি আল্লাহকে সংরক্ষণ কর আল্লাহ তোমাকে হেফাজত করবেন। আল্লাহ-কে সংরক্ষণ কর (সব সময়) তাঁকে তোমার সামনে পাবে।
যখন প্রার্থনা করবে তখন আল্লাহর কাছেই প্রার্থনা করবে, আর যখন সাহায্য চাইবে তখন আল্লাহর নিকটই সাহায্য চাইবে। জেনে রাখ! সকল মানুষ যদি তোমার কোন উপকার করবে মর্মে একত্রিত হয় তাহলে ততটুকু উপকারই করতে পারবে যা আল্লাহ নির্ধারণ করেছেন। আর সকল মানুষ যদি তোমার কোন ক্ষতি করবে মর্মে একত্রিত হয় তাহলে ততটুকু ক্ষতিই করতে পারবে যা আল্লাহ তোমার বিরুদ্ধে নির্ধারণ করেছেন। কলমগুলো উঠিয়ে নেয়া হয়েছে এবং ভাগ্যলিপি শুকিয়ে গিয়েছে।[৪৪]
৩- হাদীসে এসেছে
وعن أبي هريرة رضي الله عنه قال:قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : قال الله عز وجل : يؤذيني ابن آدم يسب الدهر و أنا الدهر, بيدي الأمر,أقلب الليل و النهار. متفق عليه
বিশিষ্ট সাহাবী আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন: বনী আদম আমাকে কষ্ট দেয় যে দাহারকে (যুগ-জামানা) গাল মন্দ করে, অথচ আমিই দাহার, আমার হাতেই সব কর্তৃত্ব-ক্ষমতা, দিন এবং রাত্রির পরিবর্তন করি।[৪৫]
২-দুই নম্বর:
আল্লাহ তাআলা কর্তৃক নির্ধারিত ও সিদ্ধান্তকৃত এমন কাজ, যা করা না করার ব্যাপারে বান্দার ক্ষমতা আছে এবং আল্লাহ প্রদত্ত বোধ-বিবেক, ক্ষমতা-সামর্থ ও এখতিয়ার বলে সম্পাদন করে। যেমন ঈমান ও কুফর.. আনুগত্য ও অবাধ্যতা..ভালকাজ করা ও মন্দকাজ করা।
সুতরাং এসকল ও এ জাতীয় অন্যান্য কাজের ব্যাপারেই বান্দার হিসাব নেয়া হবে, এবং এরই ভিত্তিতে ছাওয়াব ও শাস্তি দেয়া হবে।
কেননা আল্লাহ তাআলা অসংখ্য নবী-রাসূল প্রেরণ করেছেন, অসংখ্য কিতাব অবতীর্ণ করেছেন, হক্ব ও বাতেল চিিহ্নত করে দিয়েছেন, এরপর ঈমান ও আনুত্যের প্রতি উৎসাহ দিয়েছেন পাশাপাশি কুফর ও অবাধ্যতা থেকে সর্তক করেছেন, উপরন্তু মানুষকে বোধ ও বিবেক দ্বারা সমৃদ্ধ করেছেন এবং গ্রহণ করার ব্যাপারে পরিপূর্ণ সামর্থ ও ক্ষমতা প্রদান করেছেন। অতএব যে রাস্তাই সে গ্রহণ করবে সেটি সম্পূর্ণই তার নিজস্ব এখতিয়ারে (কারো চাপিয়ে দেয়ার কারণে নয়)। অবশ্য ভাল-মন্দ দুই রাস্তার যেটিই সে গ্রহণ করবে সেটি আল্লাহর ক্ষমতা ও ইচ্ছার অধীনে দাখিল থাকবে। কারণ আল্লার রাজত্বে তার ইলম ও ইচ্ছা (অনুমোদন) ব্যতীত কোন কিছু সঙ্ঘটিত হতে পারে না।
১- আল্লাহ তাআলা বলেন:
وقل الحق من ربكم فمن شاء فليؤمن... { الكهف: ২৯}
বল: সত্য তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে আগত। সুতরাং যার ইচ্ছা বিশ্বাস স্থাপন করুক (ঈমান গ্রহণ করুক) আর যার ইচ্ছা অবিশ্বাস করুক (কুফরী করুক)।{সূরা কাহফ:২৯}
২- আরো ইরশাদ হচ্ছে:
مَنْ عَمِلَ صَالِحًا فَلِنَفْسِهِ وَمَنْ أَسَاءَ فَعَلَيْهَا وَمَا رَبُّكَ بِظَلَّامٍ لِلْعَبِيدِ { فصلت : ৪৬}
যে নেক আমল করে সে নিজের উপকারের জন্যই করে, আর যে মন্দকর্ম কর্ম সম্পাদন করে তার ক্ষতি তার উপরই বর্তাবে। তোমার পালনকর্তা বান্দাদের উপর মোটেই যুলুম করেন না। {সূরা ফুসসিলাত:৪৬}
৩-অন্যত্র ইরশাদ হচ্ছে:
مَنْ كَفَرَ فَعَلَيْهِ كُفْرُهُ وَمَنْ عَمِلَ صَالِحًا فَلِأَنْفُسِهِمْ يَمْهَدُونَ { الروم:৪৪}
যে কুফর করে, তার কুফরের জন্য সে-ই দায়ী (তার ক্ষাতি তারই উপর বর্তাবে) আর যে নেক আমল করে তারা নিজেদের জন্যই সুখ-শয্যা রচনা করে।{সূরা আর রূম:৪৪}
৪-আরো ইরশাদ হচ্ছে:
إِنْ هُوَ إِلَّا ذِكْرٌ لِلْعَالَمِينَ ﴿২৭﴾ لِمَنْ شَاءَ مِنْكُمْ أَنْ يَسْتَقِيمَ ﴿২৮﴾ وَمَا تَشَاءُونَ إِلَّا أَنْ يَشَاءَ اللَّهُ رَبُّ الْعَالَمِينَ ﴿২৯﴾ { التكوير:২৭-২৯}
এটিতো কেবল বিশ্ব বাসীদের জন্য উপদেশ। তার জন্য, তোমাদের মধ্যে যে সরল পথে চলতে চায়। মহান রাব্বুল আলামীন - আল্লাহ না চাইলে তোমরা কিছুই ইচ্ছা করতে পার না। {সূরা তাকভীর:২৭-২৯}
• তাকদীরের বরাত দিয়ে অজুহাত দাড় করা কখন সঙ্গত হবে:
১- মানুষের পক্ষে বিপদ-মুসীবতের ক্ষেত্রে তাকদীরের বরাতে অজুহাত দাড় করা বৈধ। যেমন প্রথম ভাগে আলোচনা হয়েছে। সুতরাং সে যদি অসুস্থ হয় বা মৃত্যু বরণ করে অথবা অনিচ্ছা সত্বেও কোন বিপদে আক্রান্ত হয় তাহলে তার পক্ষে আল্লাহর এ সিদ্ধান্ত ও নির্ধারণের মাধ্যমে হুজ্জত ও অজুহাত পেশ করার বৈধতা আছে। বলবে: قدر الله و ما شاء فعل, আল্লাহ তাআলা নির্ধারণ করেছেন এবং তিনি যা চেয়েছেন, করেছেন। সে সময় তার জন্য আবশ্যক ও অত্যন্ত ফলদায়ক হচ্ছে, সবর করা আর পারলে সন্তুষ্ট থাকা তাতে অনেক ছাওয়াব পাওয়া যাবে। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন:
وَبَشِّرِ الصَّابِرِينَ ﴿১৫৫﴾ الَّذِينَ إِذَا أَصَابَتْهُمْ مُصِيبَةٌ قَالُوا إِنَّا لِلَّهِ وَإِنَّا إِلَيْهِ رَاجِعُونَ ﴿১৫৬﴾ أُولَئِكَ عَلَيْهِمْ صَلَوَاتٌ مِنْ رَبِّهِمْ وَرَحْمَةٌ وَأُولَئِكَ هُمُ الْمُهْتَدُونَ ﴿১৫৭﴾ و بشر البقرة : ১৫৫ـ১৫৭)
আপনি ধৈর্য্যশীলগনকে সুসংবাদ দান করুন, যারা তাদের উপর বিপদ আপতিত হলে বলে "নিশ্চয়ই আমরাতো আল্লাহর জন্যই এবং নিশ্চিতভাবে তাঁর দিকেই প্রত্যাবর্তনকারী" এরাইতো তারা যাদের উপর তাদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে বিশেষ অনুগ্রহ ও রহমত বর্ষিত হয়, আর এরাই হেদায়াত প্রাপ্ত।{সূরা বাকারা : ১৫৫-১৫৭}
২- মানুষের পক্ষে তাকদীরের বরাত দিয়ে পাপ ও অন্যায়কর্মের উপর অজুহাত দাড় করে অবশ্য পালনীয় ইবাদাত ত্যাগ করা বা নিষিদ্ধ ও হারাম কার্যাদি সম্পাদন করা বৈধ নয়। কেননা আল্লাহ তাআলা নেক কার্যাদি সম্পাদন এবং মন্দ কার্যাদি বর্জন করতে নির্দেশ দিয়েছেন। সাথে সাথে কাজ করার আদেশ দিয়েছেন আর তাকদীরের উপর ভরসা করে অলস বসে থাকতে নিষেধ করেছেন। তাকদীর যদি কারো পক্ষে হুজ্জত হতোই তাহলে আল্লাহ তাআলা রাসূলদের মিথ্যা প্রতিপন্নকারী কাফের যেমন নূহ আলাইহিস সালামের কওম এবং কওমে আদ, কওমে ছামূদ প্রমুখদের শাস্তি দিতেন না। অনুরূপ ভাবে অন্যায় - অপরাধকারীদের উপর দন্ডবিধি মোতাবেক হদ্দ কায়েমের নির্দেশ দিতেন না।
যে ব্যক্তির মতে তাকদীর অন্যায় - অপরাধকারীদের জন্য হুজ্জত, তাকে দোষারোপ ও শাস্তি দেয়া যাবে না। তাহলে কেউ যদি তার প্রতি অন্যায় করে সেও তাকে দোষারোপ ও শাস্তি দিতে পারবে না। এবং যে তার সাথে ভাল ব্যবহার করে এবং যে মন্দ ব্যবহার করে উভয়ের মাঝে পার্থক্য করতে পারবে না!। আসলে এটি একটি বাতিল মতবাদ ও অসার কথা।
• উপায়-উপকরণের কার্যকারিতা:
আল্লাহ তাআলা বান্দার জন্য ভাল মন্দ যা কিছুই নির্ধারণ করেছেন সেটি আসবাবের (উপায়-উপকরণের) সাথে যুক্ত করেই নির্ধারণ করেছেন। সুতরাং ভালকর্মের জন্য তার নির্ধারিত উপকরণ আছে আর সেটি হচ্ছে : ঈমান ও আনুগত্য পরায়ণতা। তদ্রুপ মন্দকর্মেরও নির্ধারিত উপায়-উপকরণ আছে আর তাহচ্ছে:কুফর ও অবাধ্য পরায়ণতা।
আর মানুষ কর্ম সম্পাদন করে ইচ্ছা-এরাদার মাধ্যমে যা আল্লাহ তার জন্য নির্ধারণ করেছেন এবং নিজ এখতিয়ারে যা আল্লাহ তাকে দান করেছেন। বান্দা আল্লাহ কর্তৃক লিখিত ও নির্ধারিত সুখ-সমৃদ্ধি বা দূ:খ-কষ্ট পর্যন্ত কেবলমাত্র ঐ উপায়-উপকরণের মাধ্যমেই পৌছতে পারে যা সে গ্রহণ করবে নিজ এখতিয়ারে যে এখতিয়ার আল্লাহ ই তাকে দিয়েছেন। অতএব জান্নাতে প্রবেশের কিছু উপায় - উপকরণ আছে। অনুরূপভাবে জাহান্নামে প্রবেশের কিছু উপায়-উপকরণ আছে।
১- আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন:
سَيَقُولُ الَّذِينَ أَشْرَكُوا لَوْ شَاءَ اللَّهُ مَا أَشْرَكْنَا وَلَا آَبَاؤُنَا وَلَا حَرَّمْنَا مِنْ شَيْءٍ كَذَلِكَ كَذَّبَ الَّذِينَ مِنْ قَبْلِهِمْ حَتَّى ذَاقُوا بَأْسَنَا قُلْ هَلْ عِنْدَكُمْ مِنْ عِلْمٍ فَتُخْرِجُوهُ لَنَا إِنْ تَتَّبِعُونَ إِلَّا الظَّنَّ وَإِنْ أَنْتُمْ إِلَّا تَخْرُصُونَ ﴿১৪৮﴾ {الأنعام:১৪৮}
যারা শিরক করেছে তারা সত্ত্বরই বলবে, যদি আল্লাহ চাইতেন তবে আমরা ও আমাদের পিতৃপুরুষরা শিরক করতাম না এবং কোন কিছুই হারাম করতাম না। এভাবে তাদের পূর্ববর্তীরাও মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছিল অবশেষে তারা আমার শাস্তি ভোগ করেছিল। বল: তোমাদের নিকট কোন যুক্তি আছে কি? থাকলে আমার নিকট তা পেশ কর। তোমরা শুধু কল্পনারই অনুসরণ কর এবং শুধু মনগড়া কথা বল। {সূরা আনআম:১৪৮}
২- আরো ইরশাদ হচ্ছে:
و أطيعوا الله و الرسول لعلكم ترحمون . { آل عمران:১৩২}
তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর আর আনুগত্য কর রাসূলের, যাতে তোমরা অনুগ্রহ প্রাপ্ত হও। {সূরা আলে ইমরান:১৩২}
৩- হাদীসে এসেছে
وعن أبي هريرة رضي الله عنه أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: ما منكم من نفس إلا وقد علم منزلها من الجنة و النار. قالوا: يا رسول الله, فلم نعمل ؟ أفلا نتكل؟ قال: لا, اعملوا فكل ميسر لما خلق له, ثم قرأ: فأما من أعطى واتقى, وصدق بالحسنى, فسنيسره لليسرى, و أما من بخل واستغنى, وكذب بالحسنى, فسنيسره للعسرى. متفق عليه.
বিশিষ্ট সাহাবী আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন: তোমাদের কেউই এমন নেই যাকে জান্নাত ও জাহান্নামে তার নিজস্ব ঠিকানা সম্পর্কে জানানো হয় না। সাহাবারা বললেন: ইয়া রাসূলাল্লাহ: তাহলে আমরা আমল করব কেন? আমরা কি আমল ছেড়ে ভরসা করে থাকব না? নবীজী বললেন: না, আমল করে যাও, কারণ প্রত্যেকেই যার জন্য তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে তার জন্য তাকে উপযোগীও করা হয়েছে। (সেটি তার জন্য সহজও করা হয়েছে) অত:পর তিনি তেলাওয়াত করলেন, অনন্তর যে দান ও তাকওয়া অবলম্বন করল, এবং যা উত্তম তাকে সত্য মনে করল, অচিরেই আমি তার জন্য সুগম করে দেব সহজ পথ। পক্ষান্তরে যে কার্পণ্য করল ও বেপরওয়া হল, এবং উত্তম জিনিস কে মিথ্যা মনে করল, অচিরেই আমি তার জন্য সহজ করে দেব কঠিন পথ।[৪৬]
• নিম্নোক্ত ক্ষেত্রাবলিতে তাকদীরকে তাকদীর দ্বারা প্রতিহত করা শরিয়ত সিদ্ধ।
১-যে তাকদীরের আসবাব সঙ্ঘটিত হয়ে গিয়েছে কিন্তু বিপরীতমুখী অন্য তাকদীরের আসবাবের কারণে এখনো তা বাস্তবায়িত হয়নি তাহলে ঐ তাকতদীরকে এ তাকদীরের মাধ্যমে প্রতিহত করা শরিয়ত সম্মত। যেমন শত্রুকে প্রতিহত করা লড়াই-যুদ্ধ দ্বারা, শীত-গরম প্রতিহত করা ইত্যাদি।
২-যে তাকদীর সঙ্ঘটিত ও প্রতিষ্ঠিত হয়েছে গিয়েছে সেটিকে অন্য তাকদীরের মাধ্যমে -যা তাকে দূর করে দেবে বা দেয়ার ক্ষমতা রাখে - প্রতিহত করা। যেমন: অসুস্থতার তাকদীরকে চিকিৎসার তাকদীর দিয়ে প্রতিহত করা, অপরাধের তাকদীরকে তাওবার তাকদীরের মাধ্যমে প্রতিহত করা এবং মন্দকর্মের তাকদীরকে ভালকর্মের তাকদীর দ্বারা প্রতিহত করা।
• আল্লাহর ইচ্ছা সকল বস্তুকে শামিল করে আছে :
বান্দার ভাল-মন্দ সকল কর্ম সৃষ্টি ও অস্তিত্বদানের দিক থেকে আল্লাহর দিকে সম্বন্ধযুক্ত করা রীতি বিরুদ্ধ বা শরিয়ত পরিপন্থী নয়। আল্লাহ সকলকিছুর সৃষ্টিকর্তা। তারই ধারাবাহিকতায় তিনি মানুষ এবং তাদের কর্ম সৃষ্টি করেছেন। তবে এখানে একটি বিষয় বিশেষভাবে প্রনিধানযোগ্য যে আল্লাহর ইচ্ছা কিন্তু তার সন্তুষ্টির প্রমাণ নয়।
সুতরাং কুফরী, অবধ্যতা এবং গোলযোগ-বি:শৃংখলা আল্লাহর ইচ্ছায়ই সঙ্ঘটিত হয় তবে আল্লাহ এগুলো পছন্দ করেন না, এর প্রতি সন্তুষ্ট হন না এবং এগুলোর নির্দেশও প্রদান করেন না। বরং তিনি এসব অপছন্দ, ঘৃণা ও নিষেধ করেন।
অতএব কোন জিনিষ অপছন্দনীয় ও ঘৃণিত হওয়া সেটিকে তাঁর ইচ্ছার আওতা বহির্ভূত হওয়াকে জরুরী করে না যে ইচ্ছা সকল বস্তুর সৃষ্টিকে শামিল করে। সুতরাং প্রত্যেক বস্তুকেই সৃষ্টি করেছেন আল্লাহই বিশেষ উদ্দেশ্যে ও বিশেষ হিকমতে যা তার রাজত্ব ও সৃষ্টির পরিচালনার বিশেষ কৌশল।
সর্বাধিক মর্যাদাবান ও পরিপূর্ণ মানুষ হচ্ছে যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের পছন্দনীয় বিষয়াবলীকে পছন্দ করে এবং তাদের অপছন্দনীয় বিষয়াদিকে অপছন্দ করে। এ ব্যতীত তাদের নিকট পছন্দ-অপছন্দের অন্য কোন মানদন্ড নেই।
সুতরাং তারা আদেশ করে যেসব বিষয়ে আদেশ করেন আল্লাহ ও তাঁর রাসূল এর বাইরে কোন বিষয়ে তারা আদেশ করেন না।
প্রত্যেক বান্দা প্রতি মহুর্তে মুহতাজ আল্লাহর যে কোন আদেশের প্রতি যা সে বাস্তবায়ন করবে কিংবা কোন নিষেধের প্রতি যার থেকে বেচে থাকবে এবং তাকদীরের প্রতি যার প্রতি সে সন্তুষ্ট থাকবে।
• তাকদীরের প্রতি সন্তুষ্ট থাকার বিধান:
তাকদীরের প্রতি সন্তুষ্টি তিন প্রকার:
১-তা'আত তথা ইবাদাত-আনুগত্যের প্রতি সন্তুষ্ট থাকা, এটি ওয়াজিব।
২-বিপদাপদের প্রতি সন্তুষ্ট থাকা, এটি মুস্তাহাব।
৩-কুফর, পাপাচার ও অবধ্যতা। এগুলোর ব্যাপারে সন্তুষ্টির নির্দেশ দেয়া হচ্ছে না বরং ঘৃণা ও অপছন্দ করার নির্দেশ দেয়া হচ্ছে। কেননা এসব আল্লাহ পছন্দ করেন না এবং এসব বিষয়ের প্রতি তিনি সন্তুষ্ট ও নন। যদিও তিনি -পছন্দ নাকরেই- ওগুলো সৃষ্টি করেছেন, তবে সেগুলো আল্লাহর পছন্দনীয় বিষয় পর্যন্ত পৌছে দেয়। যেমন তিনি শয়তানদের সৃষ্টি করেছেন।
সুতরাং আমরা আল্লাহ যা সৃষ্টি করেছেন তার প্রতি সন্তুষ্ট থাকব আর স্বয়ং ঐ কাজ ও বাস্তায়নকারীর প্রতি সন্তুষ্টও থাকব না, ভালও বাসব না।
অতএব একটি বিষয়কে এক বিবেচনায় ভালবাসব আবার অন্য বিবেচনায় অপছন্দ করব। যেমন অপছন্দনীয় ঔষধ। এটি অপছন্দনীয় ঠিক, তবে পছন্দনীয় অবস্থায় পৌছে দেয়। আর আল্লাহ পর্যন্ত পৌঁছার রাস্তা হচ্ছে তিনি যা পছন্দ করেন ও ভালবাসেন তা বাস্তবায়ন করে তাঁকে সন্তুষ্ট করা। যা কিছু সঙ্ঘটিত হচ্ছে বা হবে তার প্রত্যেকটির প্রতিই সন্তুষ্ট থাকতে হবে এমনটি কিন্তু নয়। আর যত কিছুই তিনি নির্ধারণ করেছেন এর প্রত্যেকটির প্রতিই সন্তুষ্ট থাকতে হবে এমন কোন নির্দেশও আমাদের দেয়া হয়নি। বরং আমরা আদিষ্ট হচ্ছি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নির্দেশের প্রতি সন্তুষ্ট থাকার যে নির্দেশ আমাদের দেয়া হয়েছে তার প্রতি সন্তুষ্ট থাকা।
• আল্লাহর ফায়সালা ভাল হোক কিংবা মন্দ তার দুটি দিক আছে:
১- সেটির সম্পৃক্ততা আল্লাহর সাথে এবং সম্বন্ধও তারই দিকে। সুতরাং এ দিকের বিবেচনায় বান্দা তার প্রতি সন্তুষ্ট থাকবে। অতএব আল্লাহর প্রতিটি সিদ্ধান্ত কল্যাণকর, ইনসাফ পূর্ণ ও হিকমতময়।
২- সেটির সম্পৃক্ততা বান্দার সাথে আর সম্বন্ধও তারই দিকে। এসব ফায়সালার কতক আছে যার প্রতি সন্তুষ্ট থাকা হবে। যেমন, ঈমান ও আনুগত্য-ইবাদাত। আর কিছু আছে যার প্রতি সন্তুষ্ট থাকা যাবে না। যেমন; কুফর ও অবাধ্যতা। অনুরূপভাবে আল্লাহও সেগুলোর প্রতি সন্তুষ্ট থাকেন না তাদের ভালবাসেন না এবং তা বাস্তবায়নের নির্দেশও প্রদান করেন না।
১- আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন:
وَرَبُّكَ يَخْلُقُ مَا يَشَاءُ وَيَخْتَارُ مَا كَانَ لَهُمُ الْخِيَرَةُ سُبْحَانَ اللَّهِ وَتَعَالَى عَمَّا يُشْرِكُونَ { القصص:৬৮}
তোমার প্রতিপালক যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন এবং যাকে ইচ্ছা মনোনীত করেন, এতে তাদের কোন হাত নেই। আল্লাহ পবিত্র, মহান এবং তারা যাকে শরীক করে তহতে তিনি অনে উর্দ্ধে।
২- অন্যত্র ইরশাদ হচ্ছে:
إِنْ تَكْفُرُوا فَإِنَّ اللَّهَ غَنِيٌّ عَنْكُمْ وَلَا يَرْضَى لِعِبَادِهِ الْكُفْرَ وَإِنْ تَشْكُرُوا يَرْضَهُ لَكُمْ {الزمر:৭}
তোমরা কুফরি করলে আল্লাহ তাআলা তোমাদের থেকে সম্পূর্ণ বেনিয়ায। তিনি তার বান্দাদের জন্য কুফরি পছন্দ করেন না। আর যদি তোমরা শুকরিয়া আদায় কর তবে তিনি তা পছন্দ করেন। ( সূরা যুমার:৭)
৩-আরো ইরশাদ হচ্ছে:
والله خلقكم وما تعملون. { الصافات:৯৬}
আর আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন তোমাদের এবং তোমরা যা কর। {সূরা সাফ্ফাত:৯৬}
• বান্দার যাবতীয় কর্ম মাখলূক তথা সৃষ্টিকৃত:
আল্লাহ তাআলা বান্দাকে সৃষ্টি করেছেন এবং সৃষ্টি করেছেন তার যাবতীয় কর্ম। তিনি তার কর্মাদি সম্পর্কে জানেন এবং সেটি সঙ্ঘটিত হওয়ার পূর্বেই তিনি তা লিখে রেখেছেন। সুতরাং বান্দা যখন ভাল কিংবা মন্দ কোন কাজ করে তখন আমাদের নিকট সে বিষয়ে পরিষ্কার হয়ে যায় যা আল্লাহ জানেন, সৃষ্টি করেছেন এবং লিখে রেখেছেন। বান্দার কর্ম সম্পর্কে আল্লাহ তাআলার জ্ঞান হচ্ছে পরিবেষ্টনকারী জ্ঞান। কারণ আল্লাহ তাআলা জ্ঞানের মাধ্যমে প্রত্যেক বস্তুকে পরিবেষ্টন করে আছেন। ভূ-মন্ডল ও নভোমন্ডলে তাঁর থেকে অণু পরিমাণও কিছু গোপন থাকে না।
১- আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন:
والله خلقكم وما تعملون. { الصافات:৯৬}
আর আল্লাহ তোমাদের সৃষ্টি করেছেন এবং তোমরা যা কর। {সূরা সাফ্ফাত:৯৬}
২- অন্যত্র ইরশাদ হচ্ছে:
وَعِنْدَهُ مَفَاتِحُ الْغَيْبِ لَا يَعْلَمُهَا إِلَّا هُوَ وَيَعْلَمُ مَا فِي الْبَرِّ وَالْبَحْرِ وَمَا تَسْقُطُ مِنْ وَرَقَةٍ إِلَّا يَعْلَمُهَا وَلَا حَبَّةٍ فِي ظُلُمَاتِ الْأَرْضِ وَلَا رَطْبٍ وَلَا يَابِسٍ إِلَّا فِي كِتَابٍ مُبِينٍ { الأنعام:৫৯}
গায়েবের চাবি কাঠি তাঁরই নিকট রয়েছে তিনি ব্যতীত আর কেউ তা জানেনা। স্থল ও জল ভাগের সব কিছুই তিনি অবগত রয়েছেন, তাঁর অবগতি ব্যতীত বৃক্ষ হতে একটি পাতাও ঝরে না এবং ভূ-পৃষ্ঠের অন্ধকারের মধ্যে একটি দানাও পড়ে না, এমনিভাবে কোন সরস ও নিরস বস্তুও পতিত হয় না; সমস্ত বস্তই সুস্পষ্ট কিতাবে লিপিবদ্ধ রয়েছে।
{সূরা আন'আম:৫৯}
৩- আরো ইরশাদ হচ্ছে:
وَمَا تَكُونُ فِي شَأْنٍ وَمَا تَتْلُو مِنْهُ مِنْ قُرْآَنٍ وَلَا تَعْمَلُونَ مِنْ عَمَلٍ إِلَّا كُنَّا عَلَيْكُمْ شُهُودًا إِذْ تُفِيضُونَ فِيهِ وَمَا يَعْزُبُ عَنْ رَبِّكَ مِنْ مِثْقَالِ ذَرَّةٍ فِي الْأَرْضِ وَلَا فِي السَّمَاءِ وَلَا أَصْغَرَ مِنْ ذَلِكَ وَلَا أَكْبَرَ إِلَّا فِي كِتَابٍ مُبِينٍ {يونس:৬১}
আর তুমি যে অবস্থাতেই থাকনা কেন? আর তুমি কুরআনের যে কোন স্থান হতেই পাঠ কর এবং তোমরা যে কাজই কর কিন্তু আমি তোমাদের নিকটেই উপস্থিত থাকি, যখন তোমরা তাতে আত্মনিয়োগ কর। অনু পরিমাণও কোন বস্তু তোমার প্রতিপালকের অগোচরে নয়, না যমীনে, না আসমানে, আর না কোন বস্তু তাহতে ক্ষুদ্রতর, না তা হতে বৃহত্তর, কিন্তু এই সমস্তই স্পষ্ট কিতাবে লিপিবদ্ধ রয়েছে। { সূরা ইউনুস:৬১}
৪- হাদীসে এসেছে
وعن عبد الله بن مسعود رضي الله عنه قال: حدثنا رسول الله صلى الله عليه وسلم وهو الصادق المصدوق:إن أحدكم يجمع خلقه في بطن أمه أربعين يوما, ثم يكون في ذلك علقة مثل ذلك, ثم يكون في ذلك مضغة مثل ذلك, ثم يرسل الملك, فينفخ فيه الروح, ويِؤمر بأربع كلمات: بكتب رزقه, وأجله,وعمله, وشقي أو سعيد. فوالذي لا إله غيره,إن أحدكم ليعمل بعمل أهل الجنة حتى يكون بينه و بينها إلا ذراع,فيسبق عليه الكتاب فيعمل بعمل أهل النار فيدخلها. وإن أحدكم ليعمل بعمل أهل النار, حتى يكون بينه و بينها إلا ذراع فيسبق عليه الكتاب, فيعمل بعمل أهل الجنة فيدخلها. متفق عليه
সাহাবী আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম - তিনি সত্যবাদী ও সত্যায়িত- আমাদের বর্ণনা করেছেন: নিশ্চয় তোমাদের প্রত্যেকের আকৃতিকে তার মায়ের উদরে চল্লিশন দিন পর্যন্ত জমাকরা হয়। অত:পর সেটি সেখানে রক্তপিন্ড হয় চল্লিশদিন যাবত। এরপর সেটি সেখানে গোশত পিন্ড হয় অনুরূপ সময়। অত:পর (নির্ধারিত) ফেরেশতা প্রেরণকরা হয়। সে এসে তার মধ্যে আত্মা ফূঁকে দেয়। এবং তাকে চারটি বিষয়ে নির্দেশ দেয়া হয়: তার রিযিক, মৃত্যু ও আমল লিপিবদ্ধ করতে বলা হয় এবং (আরো লিখতে বলা হয়) সে দূর্ভাগা নাকি ভাগ্যবান। শপথ সে আল্লাহর যিনি ব্যতীত আর কোন ইলাহ নেই, তোমাদের কেউ আহলে জান্নাতের আমল সদৃশ আমল করবে এক পর্যায়ে তার মাঝে ও জান্নাতের মাঝে মাত্র এক গজের দূরত্ব থাকবে সেসময় তার ভাগ্যলিপি সামনে এসে উপস্থিত হবে এবং জাহান্নামীদের আমল সদৃশ আমল করে বসবে আর তাতে প্রবেশ করবে।
অনুরূপভাবে তোমাদের কেউ জাহান্নাম অধিবাসীদের আমল সদৃশ আমল করবে এক পর্যায়ে তার মাঝে ও জাহান্নামের মাঝে মাত্র এক গজের দূরত্ব থাকবে তখন তার সামনে ভাগ্যলিপি এসে উপস্থিত হবে এবং জান্নাতীদের আমল সদৃশ আমল করবে অত:পর তাতে প্রবেশ করবে।[৪৭]
• ইনসাফ ও অনুগ্রহ:
আল্লাহ তাআলার কর্মাবলী ইনসাফ ও অনুগ্রহের মাঝে ঘূর্ণায়মান। তিনি কারো প্রতি যুলুম করবেন এটি কোনক্রমেই সম্ভব নয়। বান্দাদের সাথে হয়ত ইনসাফ ভিত্তিক মুআমালা করবেন নতুবা অনুগ্রহপূর্ণ। সুতরাং মন্দকর্ম সম্পাদনকারীর সাথে ইনসাফপূর্ণ আচরণ করেন।
যেমন ইরশাদ হচ্ছে:
وجزاء سيئة سيئة مثلها. {الشورى:৪০}
মন্দের প্রতিফল অনুরূপ মন্দ। {সূরা শূরা : ৪০}
আর সৎকর্মশীলদের সাথে আচরণ করেন অনুগ্রহপূর্ণ। আল্লাহ তাআলা বলেন:
من جاء بالحسنة فله عشر أمثالها.{الأنعام:১৬০}
যে নেককর্ম সম্পাদন করল তার জন্য রয়েছে তার দশগুন।{সূরা আনআম:১৬০}
• শরয়ী ও কাওনী নির্দেশাবলি:
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআলার দু'ধরণের নির্দেশাবলি রয়েছে। কাওনী নির্দেশাবলি ও শরয়ী নির্দেশাবলি।
• কাওনী নির্দেশাবলি তিন প্রকার:
১- সৃষ্টি ও অস্তিত্বদান বিষয়ক নির্দেশনা। এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে সকল সৃষ্টিজীবের প্রতি প্রেরিত।
আল্লাহ তাআলা বলেন:
الله خالق كل شيء وهو على كل شيئ وكيل. { الزمر:৬২}
আল্লাহ সমস্ত কিছুর স্রষ্টা এবং তিনি সমস্ত কিছুর কর্মবিধায়ক। {সূরা যুমার:৬২}
২- স্থিতি বিষয়ক নির্দেশনা। এ নির্দেশনা স্থিতি ও স্থায়িত্ব সম্বন্ধে আল্লাহর পক্ষ থেকে সকল মাখলূকাতের প্রতি প্রেরিত।
(ক) আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন:
إِنَّ اللَّهَ يُمْسِكُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ أَنْ تَزُولَا وَلَئِنْ زَالَتَا إِنْ أَمْسَكَهُمَا مِنْ أَحَدٍ مِنْ بَعْدِهِ إِنَّهُ كَانَ حَلِيمًا غَفُورًا {فاطر:৪১}
আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীকে আল্লাহই সংরক্ষণ করেন, যাতে তারা স্থানচ্যুত না হয়। তারা স্থানচ্যুত হলে তিনি ব্যতীত তাদেরকে সংরক্ষণ করবে? তিনিতো অতি সহনশীল, ক্ষমাপরায়ণ। {সূরা ফাতির:৪১}
(খ) আরো ইরশাদ হচ্ছে:
وَمِنْ آَيَاتِهِ أَنْ تَقُومَ السَّمَاءُ وَالْأَرْضُ بِأَمْرِهِ ثُمَّ إِذَا دَعَاكُمْ دَعْوَةً مِنَ الْأَرْضِ إِذَا أَنْتُمْ تَخْرُجُونَ
{ الروم:২৫}
এবং তাঁর নিদর্শনাবলীর মধ্যে রয়েছে যে, তাঁরই আদেশে আকাশ ও পৃথিবীর স্থিতি থাকে ; অত:পর আল্লাহ যখন তোমাদেরকে মৃত্তিকা হতে উঠে আসার জন্য একবার আহ্বান করবেন তখন তোমরা বের হয়ে আসবে। {সূরা রূম:২৫}
৩- উপকার-অপকার, নড়াচড়া-স্থিতি ও জীবন-মরণ ইত্যাদি বিষয়ক নির্দেশনা। আর এটি ফেরানো হয়েছে সকল মাখলূকাতের দিকে।
(ক) আল্লাহ তাআলা বলেন:
قُلْ لَا أَمْلِكُ لِنَفْسِي نَفْعًا وَلَا ضَرًّا إِلَّا مَا شَاءَ اللَّهُ وَلَوْ كُنْتُ أَعْلَمُ الْغَيْبَ لَاسْتَكْثَرْتُ مِنَ الْخَيْرِ وَمَا مَسَّنِيَ السُّوءُ إِنْ أَنَا إِلَّا نَذِيرٌ وَبَشِيرٌ لِقَوْمٍ يُؤْمِنُونَ {الأعراف:১৮৮}
তুমি বলে দাও, আমি আমার নিজের কোন উপকার ও ক্ষতির মালিক নই তবে আল্লাহ যা চান। আর যদি আমি গায়েব জানতামই তাহলে অধিক কল্যাণ লাভ করতাম আর আমাকে কোন ক্ষতি স্পর্শ করত না। আমিতো শুধুমাত্র একজন ভীতি প্রদর্শক ও সু সংবাদদাতা ঈমান আনয়নকারী সম্প্রদায়ের জন্য। {সূরা আ'রাফ:১৮৮}
(খ) আরো ইরশাদ হচ্ছে:
هُوَ الَّذِي يُسَيِّرُكُمْ فِي الْبَرِّ وَالْبَحْرِ حَتَّى إِذَا كُنْتُمْ فِي الْفُلْكِ وَجَرَيْنَ بِهِمْ بِرِيحٍ طَيِّبَةٍ وَفَرِحُوا بِهَا جَاءَتْهَا رِيحٌ عَاصِفٌ وَجَاءَهُمُ الْمَوْجُ مِنْ كُلِّ مَكَانٍ وَظَنُّوا أَنَّهُمْ أُحِيطَ بِهِمْ دَعَوُا اللَّهَ مُخْلِصِينَ لَهُ الدِّينَ لَئِنْ أَنْجَيْتَنَا مِنْ هَذِهِ لَنَكُونَنَّ مِنَ الشَّاكِرِينَ { يونس:২২}
তিনিই তোমাদিগকে জলে-স্থলে ভ্রমণ করান। এমনকি যখন তোমরা নৌকায় অবস্থান করা আর সেই নৌকাগুলো লোকদের নিয়ে অনুকূলে বায়ূর সাহায্যে চলতে থাকে, আর তারা তাতে আনন্দিত হয়, (হঠাৎ) তাদের উপর এক প্রচন্ড বায়ূ এসে পড়ে এবং প্রত্যেক দিক থেকে তাদের উপর তরঙ্গমালা ধেয়ে আসে, আর তারা মনে করে যে, তারা (বিপদে) বেষ্টিত হয়ে পড়েছে। (তখন) সকলে খাঁটি বিশ্বাসের সাথে আল্লাহকেই ডাকতে থাকে, যদি আপনি আমাদেরকে এটি হতে রক্ষা করেন, তবে আমরা অবশ্যই কৃতজ্ঞ হয়ে যাবো। {সূরা ইউনুস:২২}
৩- অন্যত্র ইরশাদ হচ্ছে:
هو الذي يحي و يميت فإذا قضى أمرا فإنما يقول له كن فيكون. { غافر:৬৮}
তিনিই জীবন দান করেন ও মৃত্যু ঘটান এবং যখন তিনি কিছু করার সিদ্ধান্ত নেন তখন বলেন: হয়ে যাও এবং তা হয়ে যায়। {সূরা গাফির: ৬৮}
বাকী থাকল শরয়ী নির্দেশনাবলী, এ নির্দেশনা আল্লাহর পক্ষ হতে শুধুমাত্র সাকালাইন তথা জিন ও মানুষের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে। আর এটিই দ্বীন। এটি ঈমান, ইবাদাত, লেন-দেন, আচার-আচরণ ও আখলাককে শামিল করে।
আল্লাহ তাআলার নাম ও গুণাবলি, তাঁর কার্যাবলী ও কাওনী নির্দেশনাবলীর উপর বিশ্বাসের দৃঢ়তার অনুপাতে বান্দার নিকট তাঁর শরয়ী নির্দেশনাবলী বাস্তবায়নের আগ্রহ ও উৎসাহ সৃষ্টি হয় এবং এর একটি বিশেষ স্বাদ অনুভূত হয়। এ ব্যাপারে সর্বাধিক ভাগ্যবান মানুষ তাঁরাই, যাঁরা নিজেদের রব সম্পর্কের সবচে বেশি অভিজ্ঞ। আর তাঁরা হচ্ছেন আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম অত:পর তাদের নির্দেশনার অনুসারীবৃন্দ।
আল্লাহ তাআলার শরয়ী নির্দেশনাবলীর বাস্তবায়নের কারণে আল্লাহ তাআলা পৃথিবীতে আমাদের জন্য আকাশ ও যমীনের বরকতের দারসমূহ উন্মোক্ত করে দেবেন এবং আখিরাতে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।
• আল্লাহর নির্দেশনাবলি দুই প্রকার:
১-শরয়ী নির্দেশনাবলী কখনো সংঘটিত হয়, আবার কখনো কখনো আল্লাহর ইচ্ছায় বান্দা তার বিরোধিতাও করে। যেমন:
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করছেন:
وقضى ربك ألا تعبدوا إلا إياه وبالوالدين إحسانا. {الإسراء:২৩}
আর তোমার প্রতিপালক নির্দেশ দিচ্ছেন; তোমরা একমাত্র আল্লাহর ইবাদত করবে আর পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করবে। {সূরা ইসরা:২৩}
২-কাওনী নির্দেশনাবলী অবশ্যই সঙ্ঘটিত হয়, মানুষের পক্ষে তার বিরোধিতা করা অসম্ভব। সেটি আবার দুই প্রকার:
(ক)আল্লাহর সরাসরি নির্দেশ (যা) অত্যাবশ্যকীয়ভাবে সঙ্ঘটিতব্য।
যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন:
إنما أمره إذا أراد شيئا أن يقول له كن فيكون.{يس:৮২}
তাঁর ব্যাপার শুধু এই, তিনি যখন কোন কিছুর ইচ্ছা করেন, তখন বলেন, হয়ে যাও, ফলে সেটি হয়ে যায়। {সূরা ইয়াসীন:৮২}
(খ) আল্লাহর কাওনী নির্দেশনা আর সেটি হচ্ছে কাওনী রীতি যা বিভিন্ন আসবাব ও নতীজা থেকে গঠিত হয়, যার কিছু অপর কিছুকে প্রভাবিত করে। আর প্রত্যেক কাওনী সববের একটি নতীজা থাকে। আর সুনানে কাওনী থেকে:
১- ইরশাদ হচ্ছে:
ذَلِكَ بِأَنَّ اللَّهَ لَمْ يَكُ مُغَيِّرًا نِعْمَةً أَنْعَمَهَا عَلَى قَوْمٍ حَتَّى يُغَيِّرُوا مَا بِأَنْفُسِهِمْ وَأَنَّ اللَّهَ سَمِيعٌ عَلِيمٌ
{ الأنفال: ৫৩}
এটি এ জন্য যে, যদি কোন সম্প্রদায় নিজের অবস্থার পরিবর্তন না করে, তবে আল্লাহ এমন নন যে, তিনি তাদেরকে যে সম্পদ দান করেছেন তা পরিবর্তন করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বশ্রোতা,সর্বজ্ঞ।
২- আরো ইরশাদ হচ্ছে:
وَإِذَا أَرَدْنَا أَنْ نُهْلِكَ قَرْيَةً أَمَرْنَا مُتْرَفِيهَا فَفَسَقُوا فِيهَا فَحَقَّ عَلَيْهَا الْقَوْلُ فَدَمَّرْنَاهَا تَدْمِيرًا
{ الإسراء:১৬}
আর আমি যখন কোন জনপদ ধ্বংস করতে চাই তখন তার সমৃদ্ধিশালী ব্যক্তিদেরকে সৎকর্ম করতে আদেশ দেই, কিন্তু তারা সেখানে অপকর্ম করে, তখন সে জনপদের উপর আদেশ (দন্ডাজ্ঞা) অবধারিত হয়ে যায়। এবং সেটি আমি সম্পূর্ণরূপে বিধ্বস্ত করি।
{সূরা ইসরা:১৬}
ইবলিস ও তার অনুসারীদের পক্ষে এ কাওনী রীতিকে বশীভূতকরার চেষ্টা করা সম্ভব যাতে করে এটি কোন কোন মানুষের ধ্বংসের কারণ হতে পারে। করুনাময় আল্লাহ তাআলা আমাদের জন্য সেসব থেকে মুক্তির লক্ষ্যে দুআ ও ইস্তেগফারের অনুমোদন করেছেন। দুআ হচ্ছে আল্লাহর আশ্রয় যিনি সকল কাওনী রীতিকে সৃষ্টি করেছেন। তিনি যে কোন সময় এবং যে ভাবে ইচ্ছা তার কার্যকারিতা নষ্ট করার ক্ষমতা রাখেন অনুরূপভাবে তার নতীজা (পরিণতি) ও পরিবর্তন করতে পারেন। যেমন তিনি নবী ইবরাহীম আলাইহিস সালামের ক্ষেত্রে আগুনের কার্যকরিতা নষ্ট করে দিয়েছিলেন। ইরশাদ হচ্ছে:
ুقلنا يا نار كوني بردا و سلاما على إبراهيم. {الأنبياء:৬৯}
আমি বললাম: হে আগুন! তুমি ইবরাহীমের জন্য শীতল ও নিরাপদ হয়ে যাও।
{সূরা আম্বিয়া:৬৯}
পাপ ও পুণ্যের প্রকারভেদ:
হাসানাহ (পুণ্য) দুই প্রকার:
১- পুণ্য যার সূত্র ঈমান ও নেক আমল,আর এটিই আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য।
২- পুণ্য যার কারণ মানুষের উপর আল্লাহর দান ও অনুগ্রহ যেমন আল্লাহ প্রদত্ত সম্পদ, সুস্থতা, সাহায্য ও ইয্যত-সম্মান ইত্যাদি।
এবং সাইয়িআত তথা পাপ দুই প্রকার:
১- এমন পাপ, যার কারণ শিরক ও অবাধ্যতা, আর তা হচ্ছে মানুষ দ্বারা সঙ্ঘটিত শিরক ও অবাধ্যতা।
২- এমন পাপ, যার কারণ হচ্ছে, পরীক্ষা বা আল্লাহর প্রতিশোধ, যেমন শারীরিক অসুস্থতা, সম্পদ ধ্বংস হয়ে যাওয়া এবং বিপর্যয় ইত্যাদি
সুতরাং আনুগত্য অর্থে যে পুণ্য তা আল্লাহর দিকে সম্পর্কিত করা হবে না। তিনিইতো এটি বান্দার জন্য অনুমোদিত করেছেন। তাদের শিক্ষা দিয়েছেন। বাস্তবায়ন করার নির্দেশ দিয়েছেন এবং তার উপর সহযোগিতা করেছেন।
আর আল্লাহ ও রাসূলের অবাধ্যতা অর্থে যে পাপ, সেটি যদি বান্দা তার নিজস্ব এখতিয়ার ও ইচ্ছায় আনুগত্যের উপর প্রাধান্য দিয়ে সম্পাদন করে। তাহলে এরূপ পাপ কর্মের দায়ের সম্পর্ক বাস্তবায়নকারী মানুষের দিকে করা হবে। আল্লাহর দিকে করা হবে না। কারণ আল্লাহ তা অনুমোদিত করেননি এবং বাস্তবায়ন করতে নির্দেশও প্রদান করেননি। বরং হারাম করেছেন এবং শাস্তির হুমকি দিয়েছেন।
যেমন আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন:
ما أصاب من حسنة فمن الله و ما أصاب من سيئة فمن نفسك وأرسلناك للناس رسولا وكفى بالله شهيدا. { النساء:৭৯}
তোমার নিকট যে কল্যাণ পৌছে সেটি আল্লাহর পক্ষ হতে আর যে অকল্যাণ আপতিত হয় তা তোমার নিজের পক্ষ হতে। আর আমি তোমাকে মানুষের (কল্যাণের) জন্য রাসূল করে প্রেরণ করেছি। এবং সাক্ষী হিসাবে আল্লাহই যথেষ্ট।{সূরা নিসা:৭৯}
আর নিয়ামত অর্থে পুণ্য যথা সম্পদ, সন্তান, সুস্থতা, সাহায্য এবং সম্মান আর শাস্তি ও পরীক্ষা অর্থে পাপ যেমন সম্পদ, জীবন ও ফল-ফসলে ঘাটতি ও বিপর্যয় ইত্যাদি।
এ ধরণের পাপ ও পুণ্য আল্লাহর পক্ষ হতে। কারণ আল্লাহ তাআলা নিজ বান্দাদের বিভিন্ন পরীক্ষায় ফেলেন পরীক্ষা করার জন্য। বা তাদের উন্নতি দান ও প্রশিক্ষণের জন্য।
মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন:
وَإِنْ تُصِبْهُمْ حَسَنَةٌ يَقُولُوا هَذِهِ مِنْ عِنْدِ اللَّهِ وَإِنْ تُصِبْهُمْ سَيِّئَةٌ يَقُولُوا هَذِهِ مِنْ عِنْدِكَ قُلْ كُلٌّ مِنْ عِنْدِ اللَّهِ فَمَالِ هَؤُلَاءِ الْقَوْمِ لَا يَكَادُونَ يَفْقَهُونَ حَدِيثًا ﴿৭৮﴾ { النساء: ৭৮}
আর যদি তাদের কোন কল্যাণ সাধিত হয় তাহলে বলে এটি আল্লাহর পক্ষ হতে। আর যদি কোন অকল্যাণ আপতিত হয় তাহলে বলে: এটি তোমার পক্ষ হতে। বলে দাও: সব কিছুই আল্লাহর পক্ষ হতে
। সুতরাং ঐ সম্প্রদায়ের কি হল! তারা কোন কথাই বুঝতে চায় না। { সূরা নিসা :৭৮}
• পাপকর্মের শাস্তি প্রতিরোধ প্রসঙ্গ:
মুমিন যদি কোন পাপ করে ফেলে তাহলে সে ঐ পাপের শাস্তি নিম্নোক্ত পদ্ধতিতে প্রতিরোধ করতে পারে:
তাওবা করতে পারে তাহলে আল্লাহ তার তাওবা কবুল করবেন।অথবা ইস্তিগফার করতে পারে তাহলে আল্লাহ তার পাপ ক্ষমা করে দেবেন অথবা নেক কর্ম সম্পাদন করতে পারে যা সে পাপ মিটিয়ে দিবে।অথবা তার জন্য তার মুমিন ভ্রাতৃবৃন্দ দু'আ করতে পারে এবং ইস্তেগফার করবে আর আল্লাহ ক্ষমা করে দেবেন।অথবা তারা তার জন্য তাদের কৃত আমলের ছাওয়াব দান করতে পারে যা তার উপকারে আসবে অথবা আল্লাহ তাআলা দুনিয়াতে মুসিবতে ফেলতে পারেন যা তার পাপের কাফফারা হয়ে যাবে অথবা বরযখে কোন বিপদে ফেলতে পারেন যা কাফফারা হিসেবে বিবেচিত হবে অথবা কিয়ামতের ময়দানে কোন বিপদে ফেলতে পারেন যা তার পাপের কাফফারা হবে অথবা তার জন্য তার নবী সুপারিশ করতে পারেন কিংবা পরম করুনাময় আল্লাহ তার প্রতি রহম করতে পারেন। আর আল্লাহ ক্ষমাকারী অতীব করুনাময়।
• আনুগত্য ও অবাধ্যতা
ইবাদত-আনুগত্য বহুবিধ কল্যাণের জন্ম দেয় এবং উত্তম আখলাকের উদ্ভব ঘটায়। আর পাপকর্ম ও অবাধ্যতা নানা অনিষ্টির জন্ম দেয় এবং বদ আখলাক সৃষ্টি করে। চন্দ্র, সূর্য, তৃণ-লতা, জীব-জন্তু, পাহাড়-সমুদ্র, স্বীয় প্রতিপালকের আনুগত্য স্বীকার করে তাঁকে মান্য করে চলে তাইতো দেখা যায় এদের থেকে অগণিত-অসংখ্য কল্যাণ বের হয়ে আসছে প্রতিনিয়ত। যার প্রকৃত সংখ্যা কেবলমাত্র আল্লাহ তাআলাই বলতে পারবেন আর কেউ নয়।
নবীগণ জীবন-প্রাণ উৎসর্গ করে আল্লাহর ইবাদত-আনুগত্যে জীবন পরিচালনা করেছেন। আর তাদের থেকে বেশুমার কল্যাণ বের হয়ে এসেছে যা আল্লাহ ব্যতীত আর কেউ জানেনা।
পক্ষান্তরে ইবলিস আল্লাহর অবাধ্য হয়েছে, তাঁকে অস্বীকার করে তাঁর নাফরমানী করেছে তার কারণে পৃথিবীতে অনেক অনিষ্টি ও বিশৃঙ্খলা জন্ম নিয়েছে। যত পাপ ও অন্যায় একারণেই সঙ্ঘটিত হয়ে চলেছে।
একই নিয়মে মানুষ যদি স্বীয় প্রতিপালকের ইবাদত-আনুগত্যে নিয়োজিত থাকে, শরয়ী বিধি-বিধান যথা নিয়মে পালন করে চলে তাহলে সীমাহীন কল্যাণ বের হয়ে আসবে যার প্রকৃত গণনা একমাত্র আল্লাহই ভাল জানবেন। এবং ঐ কল্যাণের সুফল সে নিজে এবং অন্য সকলে ভোগ করবে। আর যদি তারা আল্লাহর অবাধ্য হয়ে শরিয়ত নির্ধারিত সীমা লঙ্ঘন করে, পাপাচারিতায় মত্ত হয়ে সময় অতিবাহিত করে তাহলে পৃথিবীতে অনেক অনিষ্টি ও খারাপির উদ্ভব ঘটবে যার কুফল সেসহ অপরাপর সকল মানুষকে ভোগ করতে হবে।
• আনুগত্য ও অবাধ্যতার প্রভাব ও পরিণামঃ
মহান আল্লাহ নেককাজ ও আনুগত্যের মাঝে এমন শুভপরিণাম ও প্রভাব সৃষ্টি করেছেন যা প্রতিটি মানুষের কাছে প্রিয় ও সমাদৃত যার মাধ্যমে সে এক প্রকার মানসিক শান্তি ও স্বাদ অনুভব করে আর সে অনুভূতি উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেতে থাকে। সে স্বাদ অন্যায়ের স্বাদ হতে বহুগুণে বেশি। অনুরূপভাবে অবাধ্যতা ও পাপকর্মের মাঝেও কিছু মন্দপ্রভাব ও যন্ত্রণা রেখে দিয়েছেন যা পরিতাপ ও লজ্জার জন্ম দেয়, অনুশোচনার আগুনে দগ্ধ করে প্রতিনিয়ত। মানুষের যাবতীয় অকল্যাণ ও মন্দ অবস্থার মূল কারণ ও কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে তার পাপ ও অবাধ্যতা, অথচ আল্লাহ যা ক্ষমা করেন তার পরিমাণ অনেক বেশি।
বিষ মানুষের শরীরের জন্য যেরূপ ক্ষতিকর, পাপ ও অন্যায় তাদের অন্তরের জন্য অনুরূপ ক্ষতিকর। আল্লাহ তাআলা সৃষ্টিগতভাবে মানুষকে সুন্দর-সুশ্রী করে সৃষ্টি করেছেন। যদি তারা অন্যায় ও পাপাচারে জড়িত হয় তাদের ঐ সৌন্দর্য তুলে নেয়া হয়। আবার তওবা করে আল্লাহর পথে ফিরে আসলে পূর্বের সৌন্দর্যও ফেরত আসে এবং জান্নাতে তার উৎকর্ষ সাধন হবে।
হিদায়াত দান ও বিপথগামী করণ:
আল্লাহ তাআলা-সৃষ্টি ও কর্তৃত্ব তাঁরই। যা ইচ্ছা করতে পারেন-করেন এবং ইচ্ছামতে নির্দেশ ও ফায়সালা করেন। যাকে ইচ্ছা হিদায়াত দান করেন আবার যাকে ইচ্ছা বিপথগামী করেন। তাঁর রাজত্বই রাজত্ব। তাঁর সৃষ্টিই সৃষ্টি। যা করেন সে ব্যাপারে জবাবদিহী করতে হয় না বরং জবাবদিহী মানুষকেই করতে হবে। তাঁর অনুগ্রহের সীমা-পরিসীমা নেই, বহু নবী-রাসূল প্রেরণ করেছেন, বহু কিতাব অবতীর্ণ করেছেন। কোনটি সত্য আর কোনটি ভুল, কোনটি হিদায়াতের আর কোনটি গোমরাহীর ব্যাখ্যা করে সব রাস্তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে সকল ব্যাধি ও প্রতিবন্ধকতা অপসারিত করেছেন। হিদায়াত ও আনুগত্যের রাস্তা চিিহ্নত করণের উপকরণ দৃষ্টিশক্তি, শ্রবণশক্তি ও বিবেকবোধ দান করার মাধ্যমে হিদায়াত কবুলের শক্তি দান করেছেন। এরপর:
১. যে ব্যক্তি হেদায়াতকে প্রাধান্য দেবে, এর প্রতি উৎসাহী-উদ্যোগী হবে, অনুসন্ধান করবে, এর উপায়-উপকরণগুলোকে কাজে লাগাবে এবং তা লাভ করার জন্য শ্রম দেবে-কঠোর পরিশ্রম করবে আল্লাহ তাকে হিদায়াত দান করবেন। হিদায়াত লাভ ও এর পূর্ণতায় পৌছাঁতে সাহায্য করবেন। আর এটি বান্দার প্রতি আল্লাহর বিশেষ দান ও অনুগ্রহ।
আল্লাহ তাআলা বলেন:
وَالَّذِينَ جَاهَدُوا فِينَا لَنَهْدِيَنَّهُمْ سُبُلَنَا وَإِنَّ اللَّهَ لَمَعَ الْمُحْسِنِينَ
আর যারা আমার পথে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালায়, তাদেরকে আমি অবশ্যই আমার পথে পরিচালিত করব (হিদায়াত দান করব)। আর নিশ্চয় আল্লাহ সৎকর্মশীলদের সাথেই আছেন।[৪৮]
২. আর যে ব্যাক্তি গোমরাহী ও পথভ্রান্তিকে প্রাধান্য দেবে, এর প্রতি অনুরক্ত হবে, অন্বেষণ করবে, এবং গোমরাহীর আসবাব-উপকরণের অনুকূলে কাজ করবে তাহলে তা তার জন্য নিশ্চিত হয়ে যাবে এবং সে যেদিকে যেতে চেয়েছে আল্লাহ তাকে সেদিকে নিয়ে যাবেন। আল্লাহর সিদ্ধান্ত থেকে আর কেউ তাকে ফেরাতে পারবে না। আর এটি হচ্ছে আল্লাহর ইনসাফ।
আল্লাহ সুবহানাহু বলেন:
وَمَنْ يُشَاقِقِ الرَّسُولَ مِنْ بَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُ الْهُدَى وَيَتَّبِعْ غَيْرَ سَبِيلِ الْمُؤْمِنِينَ نُوَلِّهِ مَا تَوَلَّى وَنُصْلِهِ جَهَنَّمَ وَسَاءَتْ مَصِيرًا
'আর যে রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করে তার জন্য হিদায়াত প্রকাশ পাওয়ার পর এবং মুমিনদের পথের বিপরীত পথ অনুসরণ করে, আমি তাকে ফেরাব যে দিকে সে ফিরে এবং তাকে প্রবেশ করাব জাহান্নামে। আর আবাস হিসাবে তা খুবই মন্দ।'[৪৯]
• তাকদীরের প্রতি ঈমানের প্রতিফল:
তাকদীরের প্রতি ঈমান প্রতিটি মুসলিমের সুখ-সমৃদ্ধি, মানসিক প্রশান্তি ও নিশ্চিন্ততার মূল উৎস। সে জানে যে, প্রতিটি বিষয় সঙ্ঘটিত হয় আল্লাহর সিদ্ধান্তে। সুতরাং উদ্দেশ্য সাধন হলে উৎফুল্লে উদ্বেলিত হয়ে মনে দম্ভভাবের সৃষ্টি হয় না। আবার কাঙ্ক্ষিত বস্তু হাতছাড়া হয়ে গেলে কিংবা অনাকিঙ্ক্ষত কিছু সঙ্ঘটিত হয়ে গেলে মনোকষ্টে অস্থির-উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে না। কারণ তার জানা থাকে যে, সবকিছুই আল্লাহর সিদ্ধান্তে হয়, যা হবার তা হবেই।
১. আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন:
مَا أَصَابَ مِنْ مُصِيبَةٍ فِي الْأَرْضِ وَلَا فِي أَنْفُسِكُمْ إِلَّا فِي كِتَابٍ مِنْ قَبْلِ أَنْ نَبْرَأَهَا إِنَّ ذَلِكَ عَلَى اللَّهِ يَسِيرٌ ﴿২২﴾ لِكَيْ لَا تَأْسَوْا عَلَى مَا فَاتَكُمْ وَلَا تَفْرَحُوا بِمَا آَتَاكُمْ وَاللَّهُ لَا يُحِبُّ كُلَّ مُخْتَالٍ فَخُورٍ ﴿২৩﴾
'যমীনে এবং তোমাদের নিজেদের মধ্যে এমন কোন মুসীবত আপতিত হয় না, যা আমি সংঘটিত করার পূর্বে কিতাবে লিপিবদ্ধ রাখি না। নিশ্চয় এটা আল্লাহর পক্ষে খুবই সহজ। যাতে তোমরা আফসোস না কর তার উপর যা তোমাদের থেকে হারিয়ে গেছে এবং তোমরা উৎফুল্ল না হও, তিনি তোমাদেরকে যা দিয়েছেন তার কারণে। আর আল্লাহ কোন উদ্ধত ও অহঙ্কারীকে পছন্দ করেন না।'[৫০]
عَنْ صُهَيْبٍ رضي الله عنه قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَجَبًا لِأَمْرِ الْمُؤْمِنِ إِنَّ أَمْرَهُ كُلَّهُ خَيْرٌ وَلَيْسَ ذَاكَ لِأَحَدٍ إِلَّا لِلْمُؤْمِنِ إِنْ أَصَابَتْهُ سَرَّاءُ شَكَرَ فَكَانَ خَيْرًا لَهُ وَإِنْ أَصَابَتْهُ ضَرَّاءُ صَبَرَ فَكَانَ خَيْرًا لَهُ. أخرجه مسلم
'সাহাবী সুহাইব রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, মুমিনের প্রতিটি বিষয় বিস্ময়কর। তার প্রতিটি বিষয় কল্যাণকর। আর এটি শুধুমাত্র মুমিনের জন্য অন্য কারো জন্য নয়। যদি সুদিন আসে-সমৃদ্ধি অর্জন হয় তাহলে কৃতজ্ঞতা আদায় করে। এটি তার জন্য কল্যাণকর। আর যদি দুর্দিন আসে-দারিদ্রে আপতিত হয় তাহলে সবর করে, এটিও তার জন্য কল্যাণকর।'[৫১]
عَنْ سَعْدِ بْنِ أَبِي وَقَّاصٍ رضي الله عنه قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَجِبْتُ لِلْمُؤْمِنِ إِذَا أَصَابَهُ خَيْرٌ حَمِدَ اللَّهَ وَشَكَرَ وَإِنْ أَصَابَتْهُ مُصِيبَةٌ حَمِدَ اللَّهَ وَصَبَرَ فَالْمُؤْمِنُ يُؤْجَرُ فِي كُلِّ أَمْرِهِ حَتَّى يُؤْجَرَ فِي اللُّقْمَةِ يَرْفَعُهَا إِلَى فِي امْرَأَتِهِ . أخرجه أحمد وعبد الرزاق
'সা'দ বিন আবী ওয়াক্কাস রা. বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, আমি মুমিনের ব্যাপারে অতিশয় আশ্চর্য্য বোধ করি-অবাক হই তার কর্মকাণ্ডে, যদি তার কোন কল্যাণ সাধিত হয় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। আর যদি কোন মুসীবত আপতিত হয় ধৈর্য্য ধারণ করে। সুতরাং মুমিন তার প্রতিটি কাজের বিনিময়েই পুরস্কার প্রাপ্ত হয়। এমনকি নিজ স্ত্রীর মুখে তুলে দেয়া লোকমার বিনিময়েও তাকে প্রতিদান দেয়া হয়।'[৫২]
• এরই মাধ্যমে শেষ হল ঈমানের ছয় রুকন তথা আল্লাহর প্রতি ঈমান, ফেরেশতাদের প্রতি ঈমান, কিতাবসমূহের প্রতি ঈমান, রাসূলগণের প্রতি ঈমান, কিয়ামত দিবসের প্রতি ঈমান এবং তাকদীরের ভাল-মন্দের প্রতি ঈমান-এর বিস্তারিত বর্ণনা। প্রতিটি রুকনের প্রতি ঈমানের বিনিময়েই বান্দার বহুবিধ কল্যাণ ও উপকার সাধিত হয়।
• ঈমানের রুকনসমূহের প্রতিফল:
১্ল- আল্লাহর প্রতি ঈমান, হৃদয়ে তাঁর ভালবাসা সৃষ্টি করে। তাঁর প্রতি ভক্তি, ও সম্মানবোধকে জাগ্রত করে। তাঁর কৃতজ্ঞতা, আনুগত্য, ইবাদত, তাঁকে ভয় করা ও তাঁর নির্দেশাবলি বাস্তবায়ন করতে উদ্বুদ্ধ করে।
২- ফেরেশতাদের প্রতি ঈমান, অন্তরে তাদের প্রতি ভালবাসা সৃষ্টি করে, লজ্জাবোধ জন্ম নেয় এবং তাদের কাছ থেকে অনুগত্যের শিক্ষা অর্জিত হয়।
৩ - ৪- কিতাবসমূহ ও রাসূলগণের প্রতি ঈমানের মাধ্যমে আল্লাহর প্রতি ঈমানি দৃঢ়তা ও তাঁর ভালবাসা জন্ম নেয়। তাঁর বিধি-বিধান, পছন্দ-অপছন্দ, ও পরকালীন জীবনের অবস্থাদি সম্পর্কিত ধারণা অর্জিত হয়। এছাড়াও অন্তরে রাসূলগণের প্রতি ভালবাসা ও তাদের অনুসরণের স্পৃহা জাগ্রত হয়।
৫- কিয়ামত দিবসের প্রতি ঈমানের মাধ্যমে নেককাজ ও ইবাদত-বন্দিগির প্রতি আগ্রহ বৃদ্ধি পায় সাথে সাথে অন্যায় ও পাপকাজের প্রতি চরম ঘৃণা ও অনীহা সৃষ্টি হয়।
৬- তাকদিরের প্রতি ঈমানের মাধ্যমে মানসিক প্রশান্তি ও আত্মিক স্থিরতা সাধিত হয় এবং আল্লাহর সিদ্ধান্তের প্রতি সন্তুষ্ট থাকার মানসিকতা জন্ম নেয়।
একজন মুসলিমের জীবনে যখন উল্লেখিত গুণাগুণগুলো সন্বেবেশিত হবে তখন জান্নাতে প্রবেশের যোগ্য বলে বিবেচিত হবে। আর এটি আল্লাহ ও তদীয় রাসূলের আনুগত্য-অনুসরণ ব্যতীত পরিপূর্ণ হবে না। যেমন আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,
وَمَنْ يُطِعِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ يُدْخِلْهُ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا وَذَلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ ﴿১৩﴾
আর যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে আল্লাহ তাকে প্রবেশ করাবেন জান্নাতসমূহে, যার তলদেশে প্রবাহিত রয়েছে নহরসমূহ। সেখানে তারা স্থায়ী হবে। আর এটা মহা সফলতা।[৫৩]
১. বান্দার ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা যা-ই করেন- যে সিদ্ধান্তই গ্রহণ করেন তাতেই বান্দার প্রভুত কল্যাণ রয়েছে, রয়েছে প্রজ্ঞাপূর্ণ তাৎপর্য। অনুগ্রহ ও কল্যাণজনক সিদ্ধান্তাদি তাঁর ভালবাসার প্রমাণ বহন করে। আর শাস্তি ও প্রতিশোধমূলক কর্মকাণ্ড প্রমাণ করে ক্রোধ ও ক্ষোভের। তিনি বান্দাকে সম্মানিত ও মর্যাদাদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকেন এটি তাঁর মহব্বতের পরিচায়ক আর অপমান ও অপদস্ত করার যে সিদ্ধান্ত নেন সেটি তাঁর ক্রোধ ও ঘৃণার প্রমাণবাহী। আর সৃষ্টিজীবকে কখনো পরিপূর্ণরূপে দান করেন আবার কখনো হ্রাস করেন। এটি কিয়ামত সঙ্ঘটিত হবার প্রমাণ বহন করে। আল-ইহসান:১১
২. ইহসান হচ্ছে,
أن تعبد الله كأنك تراه، فإن لم تكن تراه فإنه يراك
অর্থাৎ,আল্লাহর ইবাদত তোমাকে এমনভাবে সম্পন্ন করা যেন তুমি তাঁকে দেখছ। আর তুমি যদি তাঁকে নাও দেখ, নিশ্চই তিনি তোমাকে দেখছেন।
১- আল্লাহ তাআলা বলেন,
إِنَّ اللَّهَ مَعَ الَّذِينَ اتَّقَوْا وَالَّذِينَ هُمْ مُحْسِنُونَ
নিশ্চয় আল্লাহ তাদের সাথে, যারা তাকওয়া অবলম্বন করে এবং যারা সৎকর্মশীল।[৫৪]
২- অন্যত্র ইরশাদ হচ্ছে,
وَتَوَكَّلْ عَلَى الْعَزِيزِ الرَّحِيمِ ﴿২১৭﴾ الَّذِي يَرَاكَ حِينَ تَقُومُ ﴿২১৮﴾ وَتَقَلُّبَكَ فِي السَّاجِدِينَ ﴿২১৯﴾ إِنَّهُ هُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ ﴿২২০﴾
আর তুমি মহাপরাক্রমশালী পরম দয়ালুর উপর তাওয়াক্কুল কর, যিনি তোমাকে দেখেন যখন তুমি দণ্ডায়মান হও, এবং সেজদাকারীদের মধ্যে তোমার উঠাবসা, নিশ্চয় তিনি সর্বশ্রোতা, মহাজ্ঞানী।[৫৫]
৩-আরও ইরশাদ হচ্ছে,
وَمَا تَكُونُ فِي شَأْنٍ وَمَا تَتْلُو مِنْهُ مِنْ قُرْآَنٍ وَلَا تَعْمَلُونَ مِنْ عَمَلٍ إِلَّا كُنَّا عَلَيْكُمْ شُهُودًا إِذْ تُفِيضُونَ فِيهِ وَمَا يَعْزُبُ عَنْ رَبِّكَ مِنْ مِثْقَالِ ذَرَّةٍ فِي الْأَرْضِ وَلَا فِي السَّمَاءِ وَلَا أَصْغَرَ مِنْ ذَلِكَ وَلَا أَكْبَرَ إِلَّا فِي كِتَابٍ مُبِينٍ ﴿৬১﴾
আর তুমি যে অবস্থাতেই থাক না কেন আর যা কিছু তিলাওয়াত কর না কেন আল্লাহর পক্ষ হতে কুরআন থেকে এবং তোমরা যে আমলই কর না কেন, আমি তোমাদের উপর সাক্ষী থাকি, যখন তোমরা তাতে নিমগ্ন হও। তোমার রব থেকে গোপন থাকে না যমীনের বা আসমানের অণু পরিমাণ কিছুই এবং তা থেেেক ছোট বা বড়, তবে (এর সব কিছুই) রয়েছে সুস্পষ্ট কিতাবে।[৫৬]
৩. ইসলাম ধর্মের স্তরসমূহ
ইসলাম ধর্মের তিনটি স্তর রয়েছে, এর কোন কোনটি অপরটির চেয়ে উচ্চতর। সেগুলো হচ্ছে, ইসলাম, ঈমান ও ইহসান; আর এটি সবগুলোর মধ্যে উচ্চতর। প্রতিটি স্তরের আবার কিছু রুকন রয়েছে।
عن عمر بن الخطاب رضي الله عنه قال: بَيْنَما نَحْنُ عِنْدَ رَسُولِ الله٬ صلى الله عليه وسلم ذَاتَ يَومٍ، إذْ طَلَعَ عَلَينَا رَجُلٌ شَدِيدُ بِيَاضِ الثِّيَابِ، شَدِيدُ سَوَادِ الشَّعَرِ، لا يُرَى عَلَيهِ أَثَرُ السَّفَرِ، وَلا يَـعْرِفُهُ مِنَّا أَحَدٌ، حَتَّى جَلَسَ إلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم، فَأَسْنَدَ رُكْبَتَيْـهِ إلَى رُكْبَتَيْـهِ، وَوَضَعَ كَفَّيْـهِ عَلَى فَخِذَيْـهِ، وَقَالَ: يَا مُـحَـمَّدُ أَخْبِرْنِي عَنِ الإسْلامِ؟
فَقَالَ رَسُولُ الله٬ صلى الله عليه وسلم: ্রالإسْلامُ أَنْ تَشْهَدَ أَنْ لا إلَـهَ إلَّا اللهُ وَأَنَّ مُـحَـمَّداً رَسُولُ الله صلى الله عليه وسلم، وَتُقِيمَ الصَّلاةَ، وَتُؤْتِي الزَّكَاةَ، وَتَصُومَ رَمَضَانَ، وَتَـحُجَّ البَيْتَ إنِ اسْتَطَعْتَ إلَيهِ سَبيلاًগ্ধ. قَالَ: صَدَقْتَ، قَالَ فَعَجِبْنَا لَـهُ يَسْأَلُـهُ وَيُصَدِّقُهُ، قَالَ: فَأَخْبِرْنِي عَنِ الإيمانِ؟
قَالَ: ্রأَنْ تُؤْمِنَ بِالله، وَمَلائِكَتِـهِ، وَكُتُبِـهِ، وَرُسُلِـهِ، وَاليَومِ الآخِرِ، وَتُؤْمِنَ بِالقَدَرِ خَيْرِهِ وَشَرِّهِগ্ধ قَالَ: صَدَقْتَ قَالَ: فَأَخْبِرْنِي عَنِ الإحْسَانِ؟
قَالَ: ্রأَنْ تَعْبُدَ اللهَ كَأَنَّكَ تَرَاهُ، فَإنْ لَـمْ تَـكُنْ تَرَاهُ فَإنَّهُ يَرَاكَগ্ধ قَال: فَأَخْبِرْنِي عَنِ السَّاعَةِ؟
قَالَ: ্রمَا المَسْؤُولُ عَنْـهَا بَأَعْلَـمَ مِنَ السَّائِلِগ্ধ قَالَ: فَأَخْبِرْنِي عَنْ أَمَارَتِـهَا؟ قَالَ: ্রأَنْ تَلِدَ الأَمَةُ رَبَّتَـهَا، وَأَنْ تَرَى الحفَاةَ العُرَاةَ العَالَةَ رِعَاءَ الشَّاءِ يَتَطَاوَلُونَ فِي البُنْيَانِগ্ধ قَالَ: ثُمَّ انْطَلَقَ، فَلَبِثْتُ مَلِيّاً ثُمَّ قَالَ لِي: ্রيَا عُمَرُ أَتَدْرِي مَنِ السَّائِلُ؟গ্ধ قُلْتُ: اللهُ وَرَسُولُـهُ أَعْلَـمُ، قَالَ: ্রفَإنَّهُ جِبْرِيلُ أَتَاكُمْ يُـعَلِّمُكُمْ دِيْنَكُمْগ্ধ. أخرجه مسلم.
উমর বিন খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, একদা আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট বসা ছিলাম, হঠাৎ আমাদের মাঝে উদিত হল এমন এক লোক যার পোষাকের শুভ্রতা ও চুলের কৃষ্ণতা ছিল সুতীব্র। তার মাঝে সফরের কোন নিদর্শন পরিলক্ষিত হচ্ছিল না এবং আমাদের কেউ তাকে চিনতেও পারছিল না। একপর্যায়ে নবীজীর নিকট এসে বসল, তাঁর হাটুদ্বয়ের সাথে নিজ হাটুদ্বয় মিলিয়ে বসল এবং হস্তদ্বয় তাঁর উরুর উপর রাখল এরপর বলল, হে মুহাম্মাদ, আমাকে ইসলাম সম্পর্কে বলুন?
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ইসলাম হচ্ছে, তোমার সাক্ষ্য দেয়া যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন সত্য ইলাহ নেই এবং মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল, সালাত কায়েম করা, যাকাত আদায় করা, রমযানের সিয়াম পালন করা আর সামর্থ থাকলে হজ করা। সে বলল, আপনি সত্য বলেছেন, এতে আমরা বিস্মিত হলাম (কারণ) সে জানতে চেয়ে প্রশ্ন করছে আবার সত্যায়নও করছে। এরপর বলল, এখন আমাকে ঈমান সম্পর্কে বলুন?
নবীজী বললেন, (ঈমান হচ্ছে) তোমাকে আল্লাহর প্রতি, তাঁর ফেরেশতাগণের প্রতি, তাঁর কিতাবসমূহের প্রতি, তাঁর রাসূলগণের প্রতি, কিয়ামত দিবসের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা, আরো বিশ্বাস স্থাপন করা তাকদীরের ভাল-মন্দের প্রতি। সে বলল, আপনি ঠিক বলেছেন। এখন আমাকে ইহসান সম্পর্কে বলুন?
নবীজী বললেন, আল্লাহর ইবাদত এমনভাবে সম্পন্ন করবে, যেন তুমি তাঁকে দেখছ। আর তুমি যদি তাঁকে নাও দেখ, নিশ্চই তিনি তোমাকে দেখছেন। সে বলল, এবার কিয়ামত সম্পর্কে বলুন?
রাসূলুল্লাহ বললেন, এ সম্পর্কে জিজ্ঞেসিত ব্যক্তি জিজ্ঞেসকারীর চেয়ে অধিক জ্ঞানবান নয়। সে বলল, তাহলে কিয়ামতের নিদর্শন সম্পর্কে বলুন,
রাসূলুল্লাহ বললেন, বাঁদী স্বীয় মনিবকে জন্ম দেয়া, নগ্নপদ, বিবস্ত্র বকরীর রাখালদের দেখতে পাবে গর্বভরে উঁচু উঁচু অট্টালিকায় বসবাস করছে। বর্ণনাকারী বলেন, অতপর সে চলে গেল, আমি বেশ কিছু সময় অপেক্ষা করলাম। এরপর নবীজী আমাকে বললেন, হে উমর, তুমি কি জান, প্রশ্নকারী কে? আমি বললাম আল্লাহ ও তাঁর রাসূল ভাল জানেন। নবীজী বললেন। তিনি জিবরাঈল, তোমাদেরকে তোমাদের দ্বীন শেখানোর জন্য এসেছিলেন।[৫৭]
৪. ইহসানের দু'টো স্তর রয়েছে:
১. প্রথম স্তর, মানুষকে নিজ রবের ইবাদত এমনভাবে করা যেন সে তাঁকে
দেখছে। (তার ইবাদতটি হবে) কামনা, প্রার্থনা, অনুরাগ, উৎসাহ ও আগ্রহের ইবাদত। সে ইবাদতের মাধ্যমে স্বীয় প্রেমাষ্পদ আল্লাহ তাআলাকে কামনা করবে। তাঁকে লাভ করতে চাইবে, তাঁর ইবাদত করবে এমনভাবে যেন তাঁকে দেখছে। আর এটি স্তরদ্বয়ের মাঝে উচ্চতর স্তর। "أن تعبد الله كأنك تراه " " তুমি আল্লাহর ইবাদত এমনভাবে করবে যেন তুমি তাঁকে দেখছ"
২. দ্বিতীয় স্তর, যদি এমন (ভাবের উদয়) না হয় যে, তুমি তাঁকে দেখে দেখে
ইবাদত ও কামনা করছ। তাহলে এমনভাবে কর যেন তিনি তোমাকে দেখছেন। তাঁকে ভয়কারীর ইবাদত (সদৃশ ইবাদত), তাঁর আযাব ও শাস্তি থেকে বাঁচার ইবাদত। তাঁর তরে হীন-অপদস্ত হওয়ার ইবাদত। "فإن لم تكم تراه فإنه يراك،، "অর্থাৎ তুমি যদি তাঁকে নাও দেখ তিনিতো তোমাকে দেখছেন।"
৫. আল্লাহর ইবাদত দু'টো বিষয়ের উপর ভিত্তিশীল,
(এক) আল্লাহকে সর্বোচ্চ পর্যায়ের ভালবাসা।
(দুই) তাঁকে সর্বোচ্চ পর্যায়ের সম্মান করা ও তাঁর সামনে নিজেকে সর্বোচ্চ পর্যায়ের হীন করা।
ভালবাসা আগ্রহ ও কামনার জন্ম দেয় আর সম্মান ও হীনতা সৃষ্টি করে ভীতি। এটিই হচ্ছে আল্লাহর ইবাদতে ইহসানের প্রকৃত রূপ। আর আল্লাহ ইহসানকারীদে ভালবাসেন।
১. আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,
وَمَنْ أَحْسَنُ دِينًا مِمَّنْ أَسْلَمَ وَجْهَهُ لِلَّهِ وَهُوَ مُحْسِنٌ وَاتَّبَعَ مِلَّةَ إِبْرَاهِيمَ حَنِيفًا ﴿১২৫﴾ ( النساء:১২৫)
আর দ্বীনের ব্যাপারে তার তুলনায় কে উত্তম, যে সৎকর্মপরায়ণ অবস্থায় আল্লাহর কাছে নিজকে পূর্ণ সমর্পণ করল এবং একনিষ্ঠভাবে ইবরাহীমের আদর্শ অনুসরণ করল।[৫৮]
وَمَنْ يُسْلِمْ وَجْهَهُ إِلَى اللَّهِ وَهُوَ مُحْسِنٌ فَقَدِ اسْتَمْسَكَ بِالْعُرْوَةِ الْوُثْقَى وَإِلَى اللَّهِ عَاقِبَةُ الْأُمُورِ
আর যে ব্যক্তি একনিষ্ঠ ও বিশুদ্ধচিত্তে আল্লাহর কাছে নিজকে সমর্পণ করে, সে তো শক্ত রশি আঁকড়ে ধরে। আর সকল বিষয়ের পরিণাম আল্লাহরই কাছে।[৫৯]
بَلَى مَنْ أَسْلَمَ وَجْهَهُ لِلَّهِ وَهُوَ مُحْسِنٌ فَلَهُ أَجْرُهُ عِنْدَ رَبِّهِ وَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ
হ্যাঁ, যে নিজকে আল্লাহর কাছে সমর্পণ করেছে এবং সে সৎকর্মশীলও, তবে তার জন্য রয়েছে তার রবের নিকট প্রতিদান। আর তাদের কোন ভয় নেই এবং তারা দুঃখিতও হবে না।[৬০]
• লাভজনক ব্যবসা:
পবিত্র কুরআনে দু'টো ব্যবসার কথা বলা হয়েছে; মুমিনদের ব্যবসা আর মুনাফিকদের ব্যবসা।
মুমিনদের ব্যবসা অত্যন্ত লাভজনক ব্যবসা। এটি দুনিয়া ও আখিরাত, উভয় জগতের সফলতা নিশ্চিত করে। আর এ ব্যবসার নাম হচ্ছে দ্বীন। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا هَلْ أَدُلُّكُمْ عَلَى تِجَارَةٍ تُنْجِيكُمْ مِنْ عَذَابٍ أَلِيمٍ ﴿১০﴾ تُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ وَتُجَاهِدُونَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ بِأَمْوَالِكُمْ وَأَنْفُسِكُمْ ذَلِكُمْ خَيْرٌ لَكُمْ إِنْ كُنْتُمْ تَعْلَمُونَ ﴿১১﴾ ( الصف:১০-১১)
হে ঈমানদারগণ, আমি কি তোমাদেরকে এমন এক ব্যবসায়ের সন্ধান দেব, যা তোমাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক আযাব থেকে রক্ষা করবে? তোমরা আল্লাহর প্রতি ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আনবে এবং তোমরা তোমাদের ধন-সম্পদ ও জীবন দিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদ করবে। এটাই তোমাদের জন্য কল্যাণকর, যদি তোমরা জানতে।[৬১]
আর মুনাফিকদের ব্যবসা ব্যর্থ ও লোকসানগ্রস্ত ব্যবসা। ইহকাল ও পরকাল, উভয় জগতে ক্ষতি ও দুর্ভোগের কারণ।
وَإِذَا لَقُوا الَّذِينَ آَمَنُوا قَالُوا آَمَنَّا وَإِذَا خَلَوْا إِلَى شَيَاطِينِهِمْ قَالُوا إِنَّا مَعَكُمْ إِنَّمَا نَحْنُ مُسْتَهْزِئُونَ ﴿১৪﴾ اللَّهُ يَسْتَهْزِئُ بِهِمْ وَيَمُدُّهُمْ فِي طُغْيَانِهِمْ يَعْمَهُونَ ﴿১৫﴾ أُولَئِكَ الَّذِينَ اشْتَرَوُا الضَّلَالَةَ بِالْهُدَى فَمَا رَبِحَتْ تِجَارَتُهُمْ وَمَا كَانُوا مُهْتَدِينَ ﴿১৬﴾ (البقرة : ১৪-১৬)
আর যখন তারা মুমিনদের সাথে মিলিত হয়, তখন বলে 'আমরা ঈমান এনেছি' এবং যখন গোপনে তাদের শয়তানদের সাথে একান্তে মিলিত হয়, তখন বলে, 'নিশ্চয় আমরা তোমাদের সাথে আছি। আমরা তো কেবল উপহাসকারী'। আল্লাহ তাদের প্রতি উপহাস করেন এবং তাদেরকে তাদের অবাধ্যতায় বিভ্রান্ত হয়ে ঘোরার অবকাশ দেন। এরাই তারা, যারা হিদায়াতের বিনিময়ে পথভ্রষ্টতা ক্রয় করেছে। কিন্তু তাদের ব্যবসা লাভজনক হয়নি এবং তারা হিদায়াতপ্রাপ্ত ছিল না।[৬২]
সমাপ্ত
_________________________________________________________________________________
[১] হাদীসটি সহীহ।বর্ণনায় হাকেম (১৩০৪) ও ইবনু হিব্বান (৩০১৩)
[২] সহীহ মুসলিম। হাদীস নং (২৮৪২)।
[৩] বুখারী ও মুসলিম। হাদীস নং যথাক্রমে (৮০৬) ও (১৮২)।
[৪] সহীহ মুসলিম। হাদীস নং (২৮৪৪)।
[৫] সহীহ মুসলিম। হাদীস নং (২৮৪৫)।
[৬] সহীহ মুসলিম। হাদীস নং (২৮৫১)।
[৭] বর্ণনায় বুখারী ও মুসলিম। হাদীস নং যথাক্রমে (৬৫৫১) এবং (৫২)।
[৮] হাদীসটি সহীহ। বর্ণনায় আহমাদ (৮৩২৭) এবং হাকেম (৮৭৫৯)। দেখুন আসসিলসিলাতুস সহীহাহ। ক্রমিক(১১০৫)।
[৯] বর্ণনায় বুখারী ও মুসলিম। হাদীস নং যথাক্রমে (৩২৬৫) ও (২৮৪৩)।
[১০] বর্ণনায় বুখারী ও মুসলিম। হাদীস নং যথাক্রমে (৩২৬০) ও (৬১৭)।
[১১] বর্ণনায় বুখারী মুসলিম। হাদীস নং যথাক্রমে (৩৩৪৮) এবং (২২২)।
[১২] হাদীসটি বিশুদ্ধ সনদে বর্ণিত হয়েছে। বর্ণনায় আহমাদ (৮৪১১) এবং তিরমিযী (২৫৭৪)।
[১৩] বর্ণনায় সহীহ মুসলিম (১৯০৫)।
[১৪] সহীহ মুসলিম ( ২৮৬৫ )।
[১৫] বুখারী ও মুসলিম। হাদীস নং যথা ক্রমে (২৯) এবং (৯০৭)।
[১৬] হাদীসটি বিশুদ্ধ সনদে বর্ণিত হয়েছে। বর্ণনায় আহমাদ (৮৪১১) এবং তিরমিযী (২৫৭৪)।
[১৭] বুখারী ও মুসলিম। হাদীস নং যথাক্রমে (৫৯৫০) ও (২১০৯)।
[১৮] হাদীসের সনদ যাইয়েদ, বর্ণনায় আহমাদ (৩৮৬৮) এবং তবরানী আল কাবীরে ( ১০/২৬০)।
[১৯] বর্ণনায় বুখারী ও মুসলিম। হাদীস নং যথাক্রমে (৬৫৬২) এবং (২১৩)।
[২০] বর্ণনায় সহীহ মুসলিম: হাদীস নং (২১২)।
[২১] বর্ণনায় বুখারী ও মুসলিম। হাদীস নং যথাক্রমে (৬৫৬৪) এবং (২১০)।
[২২] বর্ণনায় বুখারী মুসলিম। হাদীস নং যথাক্রমে (৬৫৫৭) এবং (২৮০৫)।
[২৩] বর্ণনায় বুখারী হাদীস নং (৬৫২৯)।
[২৪] বর্ণনায় বুখারী ও মুসলিম। হাদীস নং যথাক্রমে (৩৩৩৪) এবং (২৮০৫)।
[২৫] বর্ণনায় বুখারী, হাদীস নং (৩১৬৬)।
[২৬] বুখারী হাদীস নং (৭০৪৭)
[২৭] বর্ণনায় বুখারী হাদীস নং (১৩৮৬ )ূূ
[২৮] বর্ণনায় মুসলিম, হাদীস নং (২১১০)
[২৯] বর্ণনায় বুখারী ও মুসলিম। হাদীস নং যথাক্রমে (৫৯৫৪) ও (২১০৭)।
[৩০] বর্ণনায় বুখারী ও মুসলিম। হাদীস নং যথা ক্রমে (৭০৪২) ও (২১১০)।
[৩১] হাদীসটি সহীহ সনদে তিরমিজী (২৬১৬) ও ইবনে মাজাহ (৩৯৭৩) তে বর্ণিত হয়েছে।
[৩২] বুখারী ও মুসলিম। হাদীস নং যথাক্রমে (৪৮৪৮) ও (২৮৪৮)।
[৩৩] বর্ণনায় বুখারী হাদীস নং (৩২৬৭) এবং মুসলিম হাদীস নং (২৯৮৯)।
[৩৪] বর্ণনায় ইবনে মাজাহ, হাদীসের সনদ সহীহ, হাদীস নং (৪৩৪১)
[৩৫] হাদীস টি সহীহ। বর্ণনায় আহমাদ (১৫২৬৮) এবং তিরমিযী (২৫৯৭)।
[৩৬] বর্ণনায় বূখারী ও মুসলিম, হাদীস নং যথাক্রমে (৪৪) ও (১৯৩)।
[৩৭] বর্ণনায় বুখারী ও মুসলিম। হাদীস নং যথাক্রমে (৬৫৪৮) ও (২৮৫০)।
[৩৮] বর্ণনায় বুখারী ও মুসলিম। হাদীস নং যথাক্রমে ( ৬৪৮৭) ও (২৮২৩)।
[৩৯] বর্ণনায় বুখারী হাদীস নং (৬৪৮৮)
[৪০] বর্ণনায় বুখারী ও মুসলিম। হাদীস নং যথাক্রমে (৪৮৫০) ও (২৮৪৬)।
[৪১] বর্ণনায় বূখারী ও মুসলিম। হাদীস নং যথাক্রমে ( ৬৫৬৩) ও (১০১৬)।
[৪২] বর্ণনায় বুখারী ও মুসলিম। হাদীস নং যথাক্রমে (৭২৮০) ও (১৮৩৫)।
[৪৩] বর্ণনায় মুসলিম। হাদীস নং (২৬৫৩)।
[৪৪] হাদীসের সনদ সহীহ।বর্ণনায় আহমাদ (২৬৬৯) এবং তিরমিযী (২৫১৬)।
[৪৫] বর্ণনায় বুখারী ও মুসলিম। হাদীস নং যথা ক্রমে ( ৪৮২৬) ও (২২৪৬)।
[৪৬] বর্ণনায় বুখারী ও মুসলিম হাদীস নং যথা ক্রমে (৪৯৪৫) ও (২৬৪৭)।
[৪৭] বর্ণনায় বুখারী হাদীস নং (৩২০৮) ও মুসলিম হাদীস নং (২৬৪৩)।
[৪৮] সূরা আনকাবুত:৬৯।
[৪৯] সূরা নিসা :১১৫।
[৫০] সূরা হাদীদ:২২-২৩।
[৫১] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং (২৯৯৯)।
[৫২] হাদীসটি হাসান সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। বর্ণনায় আহমাদ, হাদীস নং (১৪৯২) উল্লোখিত ভাষ্য তাঁর। আরনাউত বলেন: এর সনদ হাসান। আরো বর্ণনা করেছেন, আব্দুর রাযযাক, হাদীস নং (২০৩১০)।
[৫৩] সূরা নিসা: ১৩।
[৫৪] সূরা আন-নাহল: ১২৮।
[৫৫] সূরা আশ- শুআরা: ২১৭-২২০।
[৫৬] সূরা ইউনুস: ৬১।
[৫৭] বর্ণনায় সহীহ মুসলিম, হাদীন নং (৮)।
[৫৮] সূরা নিসা:১২৫।
[৫৯] সূরা লুকমান: ২২।
[৬০] সূরা বাকারা:১১২।
[৬১] সূরা আস-সফ:১০-১১।
[৬২] সূরা আল-বাকারা: ১৪-১৬।
_________________________________________________________________________________
সংকলন: মুহাম্মদ বিন ইবরাহীম বিন আব্দুল্লাহ আত্ তুয়াইজিরী
অনুবাদক: ইকবাল হোসাইন মাসূম
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ শহীদ আব্দুর রহমান
সূত্র: ইসলাম প্রচার ব্যুরো, রাবওয়াহ, রিয়াদ, সৌদিআরব
আরও পড়ুনঃ প্রশ্নোত্তরে সহজ তাওহীদ শিক্ষা
আরও পড়ুনঃ তাওহীদের বিশ্বাস
আরও পড়ুনঃ শিরকের সংজ্ঞা ও প্রকারভেদ
আরও পড়ুনঃ শির্কের হাকিকত ও তার প্রকারসমূহ কি?
আরও পড়ুনঃ কোয়ান্টাম মেথড: এক ভয়াবহ শিরকী ফেতনার নাম!
আরও পড়ুনঃ মূর্তি বনাম ভাস্কর্য : সমকালীন বিতর্ক
আরও পড়ুনঃ কাশ্ফুশ্ শুবহাত (সংশয় নিরসন)
আরও পড়ুনঃ সৎব্যক্তিদের আসরসমূহ থেকে চার আসর
আরও পড়ুনঃ মুক্তিপ্রাপ্ত দলের পাথেয় (১ম পর্ব)
আরও পড়ুনঃ মুক্তিপ্রাপ্ত দলের পাথেয় (২য় পর্ব)
আরও পড়ুনঃ ১০টি ইসলাম ধ্বংসকারী বিষয়
আরও পড়ুনঃ ইসলাম বিনষ্টকারী কারণসমূহ
আরও পড়ুনঃ আল্লাহকে পেতে মাধ্যম গ্রহণ
আরও পড়ুনঃ যখন চাইবে আল্লাহর কাছেই চাইবে
আরও পড়ুনঃ মাযারে প্রচলিত বিদআতসমূহ
আরও পড়ুনঃ কুরআন ও সহীহ হাদীসের মানদণ্ডে সূফীবাদ
আরও পড়ুনঃ কোরআন-হাদীসের আলোকে শাফাআত
আরও পড়ুনঃ মুমিনদের শাফা‘আত
আরও পড়ুনঃ ভ্রান্ত তাবিজ-কবচ
আরও পড়ুনঃ আকীদার মানদণ্ডে তাবীজ
আরও পড়ুনঃ তাবীজ-কবজ, রিং, বালা, সুতা ইত্যাদী ব্যবহার
আরও পড়ুনঃ ইসলামের দৃষ্টিতে তাবিজ-কবচের বিধান
আরও পড়ুনঃ ইসলামের দৃষ্টিতে রাশিচক্র
আরও পড়ুনঃ যাদু, ভাগ্য গণনা ও দৈব কর্ম
আরও পড়ুনঃ ছবি ও মূর্তির ব্যাপারে ইসলামের হুকুম
আরও পড়ুনঃ শপথ
আরও পড়ুনঃ তাক্বদীরঃ আল্লাহ্র এক গোপন রহস্য (১ম পর্ব)
আরও পড়ুনঃ তাক্বদীরঃ আল্লাহ্র এক গোপন রহস্য (২য় পর্ব)
আরও পড়ুনঃ কুফরীর সংজ্ঞা ও প্রকারভেদ
আরও পড়ুনঃ রাসূল অবমাননার পরিণাম ও শাস্তি: আমাদের করণীয়
আরও পড়ুনঃ প্রশ্নোত্তরে ইসলামী জ্ঞান
ডাউনলোড করুনঃ বইঃ কিতাবুত্ তাওহীদের ব্যাখ্যা - ফ্রি ডাউনলোড
ডাউনলোড করুনঃ বইঃ দ্বীনী প্রশ্নোত্তর - ফ্রি ডাউনলোড
ডাউনলোড করুনঃ বই – ফতোওয়া আরকানুল ইসলাম (ফ্রি ডাউনলোড)
পোস্টটি ভালো লাগলে শেয়ার করতে ভুলবেন না কিন্তু।
আমি কি এগুলো ফেসবুকে শেয়ার করতে পারি?
উত্তরমুছুনযদি করি তবে কি আপনাদের ক্রেডিট দিতে হবে?
ক্রেডিট দিলে তা কি নামে দিতে হবে?