সুন্নাতকে আঁকড়ে ধরা এবং বিদ‘আত থেকে
সতর্ক থাকা ওয়াজিব
প্রশংসা সেই আল্লাহর যিনি আমাদের জন্য দ্বীনকে
পরিপূর্ণ করেছেন, আমাদের উপর নেয়ামতকে সম্পূর্ণ করেছেন এবং ইসলামকে
দ্বীন হিসাবে আমাদের জন্য মনোনীত করেছেন। সালাত ও সালাম বর্ষিত হোক তার সেই বান্দা
ও রাসূলের উপর যাকে প্রেরণ করা হয়েছে তাঁর রবের আনুগত্যের দিকে আহ্বানকারী এবং
বাড়াবাড়ি, বিদ‘আত ও পাপ থেকে সতর্ককারী
হিসেবে। আল্লাহ তাঁর উপর, তাঁর পরিবার পরিজন, সকল
সাথীবর্গ এবং কিয়ামত পর্যন্ত তাঁর পথের অনুসারী ও তাঁর সুন্নাতের অনুসারীদের উপর
রহমত বর্ষণ করুন।
অতঃপর,
সাপ্তাহিক উর্দু পত্রিকা (ইদারাত) এ প্রকাশিত
একটি প্রবন্ধ দেখতে পেলাম যা ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি শিল্প এলাকা কানপুর থেকে
প্রকাশিত হয়। এর প্রথম পৃষ্ঠার বিষয়বস্তু ছিল: ‘‘সৌদী আরব ও
এর আকীদা আঁকড়ে ধরা এবং বিদ‘আত প্রতিরোধের সংগ্রাম করার
বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলুন’’। সালাফী
আকীদার উপর এ অপবাদ দেওয়া দ্বারা
লেখকের উদ্দেশ্য হলো আহলে সুন্নাতের মধ্যে বিচ্ছিন্নতা সৃষ্টি করা এবং বিদ‘আত ও কুসংস্কারের উপর উৎসাহ দেওয়া ।
এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, এটি একটি খারাপ উদ্দেশ্য
এবং ভয়ঙ্কর পদক্ষেপ, যার উদ্দেশ্য হলো দ্বীন ইসলামের ক্ষতি করা এবং বিদ‘আত ও ভ্রষ্টতা প্রচার করা। তারপর এ প্রবন্ধটি রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লামের জন্ম দিবস পালনের উপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে এবং
একে কেন্দ্র করেই সৌদী আরবের আকীদা বাস্তবায়ন সম্পর্কে কথা বলেছে। কাজেই এ বিষয়ে
সতর্ক করে দেওয়াটাই ভালো মনে করছি। সুতরাং আমি বলব:
রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এবং অন্য যে কারো জন্ম দিবস পালন করা জায়েয নেই বরং তা নিষেধ করা
ওয়াজিব, কারণ তা দ্বীনের মধ্যে একটি নব আবিষ্কৃত বিদ‘আত যা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম কখনো করেননি, তিনি তাঁর নিজের জন্য বা তাঁর
পূর্বে মৃত্যুবরণকারী কোনো নবী, তাঁর মেয়েগণ বা স্ত্রীগণ বা
তাঁর কোনো আত্মীয়-স্বজন অথবা কোনো সাহাবীর জন্ম দিবস পালন করার নির্দেশ দেননি।
এমনকি তাঁর কোনো খালীফায়ে রাশেদ বা সাহাবী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুম
অথবা কোনো তাবে‘ঈ এবং স্বর্ণযুগে সুন্নাতে মুহাম্মাদিয়ার
কোনো আলেম তা করেননি। অথচ তারাই সুন্নাত সম্পর্কে সকলের চেয়ে বেশী অবগত
এবং রাসূলের মহব্বতের ক্ষেত্রে সর্বাগ্রে এবং তাদের পরবর্তী লোকদের
চেয়ে তাঁর বেশী অনুসরণকারী। যদি তা পালন করা ভালো হতো, তাহলে অবশ্যই তারা আমাদের
চেয়ে আগে পালন করতেন।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে
সুন্নাতকে আঁকড়ে ধরার নির্দেশ দিয়েছেন এবং বিদ‘আত সৃষ্টি করা
থেকে নিষেধ করেছেন। কারণ ইসলাম একটি পরিপূর্ণ দ্বীন, আল্লাহ তা‘আলা এবং তার রাসূল যা শরীয়ত হিসাবে দিয়েছেন এবং যা আহলে সুন্নাত ও
জামা‘আত তথা সাহাবা ও তাবে‘ঈগণ গ্রহণ করেছেন তা-ই স্বয়ংসম্পূর্ণ।
নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম থেকে প্রমাণ রয়েছে যে, তিনি বলেছেন,
«من أحدث في أمرنا هذا ما ليس منه فهو رد»
متفق على صحته
“যে
ব্যক্তি আমার এ দ্বীনের মধ্যে নতুন কোনো জিনিস আবিষ্কার করবে যা এর অন্তর্ভুক্ত নয়
তা প্রত্যাখ্যাত।”[1]
অন্য বর্ণনায় এসেছে:
«من عمل عملا ليس عليه أمرنا فهو رد»
“যে ব্যক্তি এমন কোনো আমল করবে যা আমার শরীয়ত
সমর্থিত নয় তা প্রত্যাখ্যাত।”
তিনি
অন্য হাদীসে আরও বলেন:
«عليكم بسنتي وسنة الخلفاء الراشدين المهديين
من بعدي تمسكوا بها وعضوا عليها بالنواجذ وإياكم ومحدثات الأمور فإن كل محدثة بدعة
وكل بدعة ضلالة»
“তোমাদের উপর ওয়াজিব হলো: তোমরা আমার সুন্নাতকে
আঁকড়ে ধর এবং আমার পর সুপথ প্রাপ্ত খলীফাদের সুন্নাতকে আঁকড়ে ধর এবং তা দন্ত
দ্বারা দৃঢ়তার সাথে ধারণ কর আর (দ্বীনে) নব রচিত কর্মসমূহ হতে সাবধান থাক! কেননা
প্রতিটি নব রচিত কর্ম হচ্ছে বিদ‘আত এবং সকল বিদ‘আত হচ্ছে ভ্রষ্টতা।”[2]
এবং তিনি জুম‘আর দিন তাঁর খুৎবায় বলেন:
«أما
بعد فإن خير الحديث كتاب الله وخير الهدي هدي محمد صلى الله عليه وسلم وشر الأمور
محدثاتها وكل بدعة ضلالة»
“অতঃপর
সর্বোত্তম বাণী হলো আল্লাহর কিতাব এবং সর্বোত্তম হেদায়েত হলো মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হেদায়েত আর নিকৃষ্টতর কাজ হলো দ্বীনে নব
আবিষ্কৃত কাজ এবং প্রতিটি বিদ‘আতই ভ্রষ্টতা।”[3]
উপরোল্লেখিত হাদীসগুলোতে বিদ‘আত
সৃষ্টি করা থেকে সতর্ক করা হয়েছে যে, তা একটি ভ্রষ্টতা, এবং এর ভয়াবহতা থেকে সকল উম্মতকে সতর্ক করা হয়েছে এবং এর
নিকটবর্তী হওয়া ও এর উপর আমল করা থেকে ভীতি প্রদর্শন করা হয়েছে। এ অর্থে আরো বহু হাদীস রয়েছে ।
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন,
﴿وَمَآ ءَاتَىٰكُمُ ٱلرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَىٰكُمۡ عَنۡهُ فَٱنتَهُواْۚ﴾ [الحشر: ٧]
“আর রাসূল তোমাদেরকে যা দেন তা তোমরা গ্রহণ কর এবং যা
থেকে বারণ করেন তা থেকে তোমরা বিরত থাক।” [সূরা হাশর, ৭]
তিনি আরও বলেন:
﴿فَلۡيَحۡذَرِ ٱلَّذِينَ يُخَالِفُونَ عَنۡ أَمۡرِهِۦٓ أَن تُصِيبَهُمۡ فِتۡنَةٌ
أَوۡ يُصِيبَهُمۡ عَذَابٌ أَلِيمٌ ٦٣ ﴾ [النور: ٦٣]
“অতএব, যারা তাঁর আদেশের
বিরুদ্ধাচরণ করে তারা এ বিষয়ে সতর্ক হোক যে, তাদেরকে বিপর্যয়
স্পর্শ করবে অথবা যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি তাদেরকে গ্রাস করবে।” [সূরা নূর, ৬৩]
তিনি আরও বলেন:
﴿ لَّقَدۡ كَانَ لَكُمۡ فِي رَسُولِ ٱللَّهِ أُسۡوَةٌ حَسَنَةٞ لِّمَن كَانَ
يَرۡجُواْ ٱللَّهَ وَٱلۡيَوۡمَ ٱلۡأٓخِرَ وَذَكَرَ ٱللَّهَ كَثِيرٗا ٢١ ﴾ [الاحزاب: ٢١]
“তোমাদের মধ্যে
যারা আল্লাহ ও শেষ দিবসের আশা রাখে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে, তাদের
জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জীবনে
রয়েছে উত্তম আদর্শ।” [সূরা আহযাব/২১]
তিনি আরও বলেন:
﴿ وَٱلسَّٰبِقُونَ ٱلۡأَوَّلُونَ مِنَ ٱلۡمُهَٰجِرِينَ وَٱلۡأَنصَارِ وَٱلَّذِينَ
ٱتَّبَعُوهُم بِإِحۡسَٰنٖ رَّضِيَ ٱللَّهُ عَنۡهُمۡ وَرَضُواْ عَنۡهُ وَأَعَدَّ لَهُمۡ
جَنَّٰتٖ تَجۡرِي تَحۡتَهَا ٱلۡأَنۡهَٰرُ خَٰلِدِينَ فِيهَآ أَبَدٗاۚ ذَٰلِكَ ٱلۡفَوۡزُ
ٱلۡعَظِيمُ ١٠٠ ﴾ [التوبة: ١٠٠]
“আর যারা সর্বপ্রথম হিজরতকারী, আনসার
এবং যারা তাদের অনুসরণ করেছে, আল্লাহ সে সকল লোকদের প্রতি সন্তুষ্ট
হয়েছেন এবং তারাও তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছে। আর তাদের জন্য প্রস্তুত রেখেছেন সেই
জান্নাত যার তলদেশ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে নদীসমূহ। সেখানে তারা চিরকাল থাকবে। এটাই
হলো মহা কৃতকার্যতা।” [সূরা তাওবা/১০০]
তিনি আরও বলেন:
﴿ٱلۡيَوۡمَ أَكۡمَلۡتُ لَكُمۡ دِينَكُمۡ وَأَتۡمَمۡتُ عَلَيۡكُمۡ نِعۡمَتِي وَرَضِيتُ
لَكُمُ ٱلۡإِسۡلَٰمَ دِينٗاۚ﴾ [المائدة: ٣]
“আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণাঙ্গ করলাম, তোমাদের উপর আমার নেয়ামতকে সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে দ্বীন
হিসাবে তোমাদের জন্য মনোনীত করলাম। [সূরা মায়েদা/৩]
এ সকল আয়াত স্পষ্ট প্রমাণ করে যে, আল্লাহ
তা‘আলা এ উম্মতের জন্য দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে দিয়েছেন এবং তার
নেয়ামতকে তাদের উপর সম্পন্ন করেছেন। তিনি তার নবীকে মৃত্যুদান করেননি যতক্ষণ না
তিনি স্পষ্টভাবে উম্মতের নিকট তা পৌঁছিয়েছেন এবং আল্লাহ যা শরীয়ত করেছেন তা তাদের
জন্য বর্ণনা করেছেন, চাই তা কথা হোক বা কাজ হোক এবং এও স্পষ্ট বলে দিয়েছেন যে, তাঁর
মৃত্যুর পরে যারা নতুন কিছু আবিষ্কার করে দ্বীনের অন্তর্ভুক্ত করবে তা কথা হোক বা
কাজ হোক এ সবই বিদ‘আত বলে গণ্য হবে এবং তা এর আবিষ্কারকের
উপর ফিরিয়ে দেওয়া হবে যদিও তার উদ্দেশ্য ভালো থাকে।
তাছাড়া রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এর সকল সাহাবী এবং তাদের পরবর্তী সালাফদের নিকট থেকে বিদ‘আত
থেকে সতর্কতা এবং ভীতি প্রদর্শন সাব্যস্ত রয়েছে। তা কেবল দ্বীনের মধ্যে অতিরিক্ত
হওয়ার কারণেই হয়েছে এবং সে শরিয়ত প্রবর্তনের কারণে যার অনুমতি আল্লাহ দেননি এবং
আল্লাহদ্রোহী ইয়াহূদী ও খৃষ্টানদের সামঞ্জস্য বিধানের কারণে; কারণ তারা তাদের
দ্বীনের মধ্যে অতিরিক্ত করেছে এবং যা আল্লাহ বলেননি তা দ্বীনের মধ্যে আবিষ্কার
করেছে। আর এতে (এভাবে বিদ‘আত চালু করলে) দ্বীনের সংকীর্ণতা এবং অপরিপূর্ণতার অপবাদ
আসে অথচ সকলেরই জানা যে, এটি করা হলে মহা ফেৎনার সৃষ্টি করবে
এবং অত্যন্ত খারাপ কাজ বলে বিবেচিত হবে, সাথে সাথে তা আল্লাহর সে বাণীর বিরোধী হবে
যেখানে তিনি বলেছেন, الْيَوْمَ
أَكْمَلْتُ
لَكُمْ دِينَكُمْ “আজকের দিনে তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে
দিলাম।” অনুরূপভাবে রাসূলের সেই হাদীসগুলোরও বিরোধী হবে যাতে তিনি বিদ‘আত থেকে
তিনি সতর্ক করেছেন ও বিরত থাকতে বলেছেন।
তদ্রূপ, এ সকল জন্মোৎসব ও অন্যান্য উৎসবের আবিষ্কার
করায় প্রতীয়মান হয় যে, আল্লাহ তা‘আলা এ
উম্মতের জন্য দ্বীনকে পরিপূর্ণ করেননি এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমল করার মত রিসালত তার জাতির জন্য যথাযথভাবে পৌঁছাননি, পরবর্তীতে এ বিদ‘আতরে প্রর্বতক লোকগুলো এসে আল্লাহর শরিয়তে এমন
কিছু বিধান আবিষ্কার করল যার অনুমতি
আল্লাহ দেননি, তারা মনে করেছে তা হয়তো তাদেরকে আল্লাহর
নিকটবর্তী করে দিবে। এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, এতে মহাবিপদ
রয়েছে এবং আল্লাহ ও তার রাসূলের উপর মারাত্মক অভিযোগ উত্থাপন করা হয়েছে। অথচ
আল্লাহ তার বান্দার জন্য দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে দিয়েছেন এবং তার নেয়ামতকে সম্পন্ন
করেছেন। আর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম
স্পষ্টভাবে পৌঁছে দিয়েছেন। এমন কোনো পথ, যা জান্নাতের দিকে নিয়ে যাবে এবং জাহান্নাম
থেকে দূরে রাখবে তিনি তা উম্মাতের জন্য স্পষ্ট করে বর্ণনা করতে পিছপা হন নি। যেমন
সহীহ মুসলিমে আব্দুল্লাহ ইবন আমর ইবন ‘আস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা
থেকে এসেছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«إِنَّهُ
لَمْ يَكُنْ نَبِيٌّ قَبْلِي إِلَّا كَانَ حَقًّا عَلَيْهِ أَنْ يَدُلَّ أُمَّتَهُ
عَلَى خَيْرِ مَا يَعْلَمُهُ لَهُمْ، وَيُنْذِرَهُمْ شَرَّ مَا يَعْلَمُهُ
لَهُمْ»
“আল্লাহ ইতোপূর্বে যে কোনো নবীই প্রেরণ করেছেন
তার দায়িত্ব ছিল, তিনি তার উম্মতের জন্য যা ভালো মনে করেন
তার দিক নির্দেশনা দেওয়া এবং তাদের জন্য যা ক্ষতি মনে করেন তা থেকে তাদেরকে ভীতি
প্রদর্শন করা।”[4]
প্রকাশ থাকে যে, আমাদের নবী
মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বোত্তম ও
সর্বশেষ নবী এবং প্রচার ও নসিহতের দিক দিয়ে পরিপূর্ণ, কাজেই
যদি জন্মোৎসব পালন করা আল্লাহর মনোনীত দ্বীনের অংশ হত তাহলে অবশ্যই রাসূল তা তাঁর
উম্মতের জন্য বর্ণনা করতেন অথবা তাঁর সাহাবীগণ তা পালন করতেন। যেহেতু এর কোনোটিই
সাব্যস্ত নেই, বিধায় বুঝতে হবে যে, তা ইসলামের অন্তর্ভুক্ত
নয়। বরং তা নব আবিষ্কৃত জিনিস যা থেকে রাসূল তাঁর উম্মতকে সতর্ক করেছেন। যেমন
পূর্বে উল্লেখিত হাদীসগুলোতে বর্ণনা করা হয়েছে।
উল্লেখিত প্রমাণপঞ্জির উপর আমল করতে গিয়ে আলেমগণের
বড় একটি জামায়াত জন্মোৎসব পালনের প্রকাশ্য অস্বীকৃতি জানিয়েছেন এবং এ থেকে সতর্ক
করে দিয়েছেন। শরীয়তের নীতি হচ্ছে: হালাল হারাম এবং মানুষের ঝগড়া বিবাদের ক্ষেত্রে
প্রত্যাবর্তনস্থল হলো: আল্লাহর কিতাব এবং রাসূলের সুন্নাত তথা কুরআন ও হাদীস। যেমন
আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:
﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ أَطِيعُواْ ٱللَّهَ وَأَطِيعُواْ ٱلرَّسُولَ
وَأُوْلِي ٱلۡأَمۡرِ مِنكُمۡۖ فَإِن تَنَٰزَعۡتُمۡ فِي شَيۡءٖ فَرُدُّوهُ إِلَى ٱللَّهِ
وَٱلرَّسُولِ إِن كُنتُمۡ تُؤۡمِنُونَ بِٱللَّهِ وَٱلۡيَوۡمِ ٱلۡأٓخِرِۚ ذَٰلِكَ خَيۡرٞ
وَأَحۡسَنُ تَأۡوِيلًا ٥٩ ﴾ [النساء: ٥٩]
“হে যারা ঈমান এনেছ, তোমরা আল্লাহর নির্দেশ পালন
কর, নির্দেশ পালন কর রাসূলের এবং তোমাদের মধ্যে যারা ক্ষমতার
অধিকারী তাদের। অতঃপর তোমরা যদি কোনো বিষয়ে বিবাদে লিপ্ত হয়ে পড় তাহলে তা আল্লাহ ও
তার রাসূলের প্রতি প্রত্যর্পণ কর; যদি তোমরা আল্লাহ ও কিয়ামত
দিবসের প্রতি ঈমানদার হয়ে থাক। আর এটাই কল্যাণকর এবং পরিণতির দিকে দিয়ে উত্তম।” [সূরা
নিসা/৫৯]
তিনি আরও বলেন:
﴿ وَمَا ٱخۡتَلَفۡتُمۡ فِيهِ مِن شَيۡءٖ فَحُكۡمُهُۥٓ
إِلَى ٱللَّهِۚ ﴾ [الشورى: ١٠]
“আর তোমরা যে ব্যাপারে মতভেদ করছ তার ফয়সালা তো আল্লাহর
নিকট।” [সূরা শূরা/১০]
এখন যদি আমরা এ ( জন্মোৎসব পালন ) বিষয়টি আল্লাহর
কিতাবের দিকে প্রত্যাবর্তন করি তাহলে দেখতে পাব যে, রাসূল যা
নিয়ে এসেছেন শুধু সে ব্যাপারে তিনি আমাদেরকে তাঁর অনুসরণ করার নির্দেশ দিয়েছেন এবং
তিনি যা করতে নিষেধ করেছেন তা থেকে আমাদেরকে সতর্ক করে দিয়েছেন, সেই
সাথে আমাদেরকে বলে দিয়েছেন যে আল্লাহ তা‘আলা এ উম্মাতের জন্য
দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে দিয়েছেন। আর এ জন্মোৎসব পালন তার অন্তর্ভুক্ত নয় যা রাসূল সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিয়ে এসেছেন, কাজেই
তা সে দ্বীনের অন্তর্ভুক্ত নয় যে দ্বীন আল্লাহ আমাদের জন্য পরিপূর্ণ করে দিয়েছেন
এবং যে দ্বীনের ব্যাপারে রাসূলের অনুসরণের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন।
আর যদি এ (জন্মোৎসব পালন) বিষয়টি নিয়ে রাসূলের
সুন্নাতের দিকেও প্রত্যাবর্তন করি তাহলে দেখতে পাব যে, তিনি তা কখনো করেননি, তা করার নির্দেশও দেননি এবং তাঁর কোনো সাহাবাও করেননি, বিধায়
বুঝতে হবে তা দ্বীনের অন্তর্ভুক্ত নয় বরং তা নব আবিষ্কৃত বিদ‘আত
এবং উৎসব পালনের ক্ষেত্রে ইয়াহূদী ও খৃষ্টানদের সাথে অন্ধ অনুসরণের নামান্তর। এর
দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, যাদের সামান্যমাত্র জ্ঞান এবং হক্ব
তালাশের ইনসাফ ও আগ্রহ রয়েছে তারা বুঝতে
পারবেন, জন্মোৎসব পালন করা ইসলামের কোনো অংশ নয় বরং তা নব আবিষ্কৃত বিদ‘আত; যা পরিত্যাগ করার জন্য এবং তা থেকে
সতর্ক থাকার জন্য আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম নির্দেশ দিয়েছেন।
বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় অধিকাংশ লোক তা পালন করার
কারণে জ্ঞানীদের জন্য ধোঁকায় পড়া উচিৎ নয়, কেননা অধিকাংশ লোক
করলেই তা হক্ব বুঝা যায় না বরং তা জানা যায় কেবল শর‘ঈ দলীলের মাধ্যমেই। যেমন
আল্লাহ তা‘আলা ইয়াহূদী ও খৃষ্টানদের ব্যাপারে বলেছেন,
﴿ وَقَالُواْ لَن يَدۡخُلَ ٱلۡجَنَّةَ إِلَّا
مَن كَانَ هُودًا أَوۡ نَصَٰرَىٰۗ تِلۡكَ أَمَانِيُّهُمۡۗ قُلۡ هَاتُواْ بُرۡهَٰنَكُمۡ
إِن كُنتُمۡ صَٰدِقِينَ ١١١ ﴾ [البقرة: ١١١]
“এবং তারা বলে ইয়াহূদী ও খৃষ্টান ব্যতীত কেউ
জান্নাতে প্রবেশ করবে না, এটা তাদের মনের আকাঙ্খা মাত্র। হে
নবী, আপনি তাদের বলে দিন, তোমরা যদি
সত্যবাদী হয়ে থাক তাহলে তোমাদের প্রমাণ পেশ কর। [সূরা বাকারা/১১১]
তিনি আরও বলেন:
﴿ وَإِن تُطِعۡ أَكۡثَرَ مَن فِي ٱلۡأَرۡضِ يُضِلُّوكَ عَن سَبِيلِ ٱللَّهِۚ﴾ [الانعام: ١١٦]
“আর যদি আপনি পৃথিবীর অধিকাংশ লোকের অনুকরণ করেন
তবে তারা আপনাকে আল্লাহর রাস্তা হতে
বিপথগামী করে ফেলবে।” [সূরা আল-আন‘আম/১১৬]
তাছাড়া এ সকল উৎসব বিদ‘আত
হওয়ার সাথে সাথে অধিকাংশ সময় এবং কোনো কোন এলাকায় কিছু কিছু জঘন্য কাজ হয়ে থাকে
যেমন: নারী-পুরুষের একসাথে অবাধে চলাফেরা, গান বাজনা, মদ গাঁজা এবং মাদকদ্রব্য সেবন ইত্যাদি খারাপ কাজ হয়ে থাকে।
কখনো কখনো এর চেয়েও মারাত্মক শির্কের মত কাজ কর্ম হয়ে থাকে, আর তা রাসূল সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বা অলি আওলিয়ার ব্যাপারে অধিক বাড়াবাড়ির
মাধ্যমে বা তাদের নিকট কোনো কিছু চাওয়া অথবা তাদের ক্ষমতাতীত কোনো ব্যাপারে
সহযোগিতা চাওয়ার মাধ্যমে এবং এ ধারণা করা যে রাসূল গায়েবী এবং এ রকম আরো অনেক
কিছুই জানেন, যে ধারণা করলে মানুষ কাফের হয়ে যায়।
অথচ রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম থেকে সহীহ সনদে এসেছে, তিনি বলেছেন,
«إياكم والغلو في الدين فإنما أهلك من كان
قبلكم الغلو في الدين»
“তোমরা
দ্বীনের মধ্যে অধিক বাড়াবাড়ি করা থেকে বেঁচে থাক, কেননা
দ্বীনের মধ্যে অধিক বাড়াবাড়িই তোমাদের পূর্ববর্তী লোকজনকে ধ্বংস করেছে।”[5]
তিনি আরও বলেন:
«لا تطروني كما أطرت النصارى ابن مريم، إنما أنا عبد فقولوا عبد
الله ورسوله» أخرجه البخاري في صحيحه
“তোমরা
আমার প্রশংসায় সীমালঙ্ঘন করো না যেমন খৃষ্টানরা ঈসা (আলাইহিস সালাম) এর ব্যাপারে
করেছে, বরং আমি কেবল একজন বান্দা, কাজেই
তোমরা বলো যে, আমি আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসূল।”[6]
আরও যে
সকল জিনিস অদ্ভুত ও আশ্চর্য্য মনে হয় তা হলো: বহু লোক এ নিয়ে ব্যস্ত থাকে এবং
চেষ্টা করে এ সকল বিদ‘আতী অনুষ্ঠানে উপস্থিত হওয়ার জন্য এবং
এর বিরোধীদেরকে প্রতিহত করার জন্য। পক্ষান্তরে জুম‘আ ও জামায়াতে সালাত আদায়ের মত
যে সকল জিনিস আল্লাহ তার উপর ওয়াজিব করেছেন তা থেকে বিরত থাকে, এ
নিয়ে কোনো কথা বলেনা এবং এটি অন্যায়ও মনে করে না। কোনো সন্দেহ নেই যে, এটি হচ্ছে একবারে দুর্বলতম ঈমান, জ্ঞানের স্বল্পতা
এবং অন্তরে পাপ ও অন্যায়ের প্রভাব বিস্তার। আল্লাহর নিকট আমাদের এবং সকল মুসলিমের
জন্য সুস্থতা কামনা করি।
এর চেয়েও অধিক আশ্চর্য্যের ব্যাপার হলো: তাদের
কিছু লোক ধারণা করে যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম জন্মোৎসবে উপস্থিত হন, এ জন্য তারা সালাম দিয়ে
তাঁর সম্মানে দাঁড়িয়ে যায়, আর এটি সবচেয়ে ভ্রান্ত ধারণা এবং চরম
মুর্খতা। কেননা রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম
কিয়ামতের পূর্বে তাঁর কবর থেকে বের হবেন না, কোনো মানুষের
সাথে সম্পর্ক রাখবেন না এবং তাদের কোনো অনুষ্ঠানেও উপস্থিত হবেন না। বরং কিয়ামত
পর্যন্ত তিনি তাঁর কবরেই অবস্থান করবেন এবং তাঁর রূহ মোবারক আল্লাহর নিকট সম্মানিত
ঘরে ইল্লিয়্যিনের সর্বোচ্চে রয়েছে। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ ثُمَّ إِنَّكُمۡ يَوۡمَ ٱلۡقِيَٰمَةِ تُبۡعَثُونَ
١٦ ﴾ [المؤمنون: ١٦]
“অতঃপর অবশ্যই তোমারা কিয়ামতের দিন উত্তোলিত হবে।
[সূরা মুমিনূন/১৬]
নবী সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«أنا أول من ينشق القبر يوم القيامة وأنا أول
شافع وأول مشفّع»
“আমিই
সর্বপ্রথম কিয়ামতের দিন কবর থেকে উঠব এবং আমিই প্রথম সুপারিশকারী আর আমার সুপারিশই
সর্বপ্রথম গ্রহণ করা হবে।”[7]
এ সকল আয়াত ও হাদীস এবং এ অর্থে আরো যে সকল আয়াত
ও হাদীস রয়েছে তা প্রমাণ করে যে, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং সকল মৃত ব্যক্তিই কিয়ামতের দিন তারা তাদের
কবর থেকে উঠবে, আর তাতে সকল মুসলিম আলেমের ঐকমত্য রয়েছে, এর মধ্যে কোনো দ্বিমত নেই। কাজেই প্রতিটি মুসলিমের উচিৎ হলো এসব
ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা এবং মুর্খ ও জাহেলগণ যে বিদ‘আত
ও কুসংস্কার আবিষ্কার করছে যার কোনো প্রমানপঞ্জি আল্লাহ অবতীর্ণ করেননি তা থেকে
বিরত থাকা।
তবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এর উপর সালাত ও সালাম পাঠ করা নৈকট্য লাভের উত্তম মাধ্যম এবং তা
সৎকর্মসমূহের অন্তর্ভুক্ত। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ إِنَّ ٱللَّهَ وَمَلَٰٓئِكَتَهُۥ يُصَلُّونَ عَلَى ٱلنَّبِيِّۚ يَٰٓأَيُّهَا
ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ صَلُّواْ عَلَيۡهِ وَسَلِّمُواْ تَسۡلِيمًا ٥٦ ﴾ [الاحزاب: ٥٦]
“আল্লাহ
এবং তাঁর ফেরেস্তামণ্ডলী নবীর উপর সালাত পাঠ করে. কাজেই হে যারা ঈমান এনেছ, তোমরা
তার উপর সালাত পাঠকর এবং যথাযথ সালাম দাও।” [সূরা আল-আহযাব/৫৬]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেন:
»من
صلى علي واحدة صلى الله عليه بها عشراً»
“যে
ব্যক্তি আমার উপর একবার সালাত পাঠ করবে আল্লাহ তার উপর দশবার সালাত পাঠ করবেন।”[8]
আর তা সকল সময়েই পাঠ করা যাবে, বিশেষ
করে ফরয সালাতের শেষ দিকে পড়ার তাকিদ রয়েছে বরং প্রতি সালাতের শেষ তাশাহহুদে পড়া
বহু আলেমের নিকট ওয়াজিব এবং বিভিন্ন জায়গায় যেমন, আযানের পর, তাঁর
নাম উল্লেখ করার পর এবং জুম‘আর রাত্রি ও জুম‘আর দিনে তা পাঠ করা মুস্তাহাব। বহু
হাদীস তা প্রমাণ করে।
এ মাসআলার ব্যাপারে এ সতর্কতাই দিতে চেয়েছি, যাকে আল্লাহ সঠিক বিবেক দিয়েছেন এবং হেদায়েত করেছেন তার জন্য এতটুকুই
ইনশাআল্লাহ যথেষ্ট ।
অতীব দুঃখের বিষয় হলো, এ
সকল বিদ‘আতী অনুষ্ঠান পালন করা হয় মুসলিমদের দ্বারাই, তারা তাদের নিজস্ব মতবাদে বিশ্বাসী হয়ে রাসূলের মহব্বতে তা করছে।
যারা এরকম বলছে তাদেরকে বলব, আপনি যদি
সুন্নী হন এবং রাসূলের পুরোপুরি অনুসরণ করেন তাহলে কি রাসূল তা কখনো করেছেন? বা তাঁর কোনো সাহাবী অথবা কোনো তাবে‘ঈ
করেছেন? নাকি তা ইসলামের শত্রু ইয়াহূদী ও খৃষ্টান এবং তাদের
মত আরও যারা আছে তাদের অন্ধ অনুকরণ-অনুসরণ?
রাসূলের মহব্বত শুধু তাঁর জন্মোৎসব পালনের
মাধ্যমে প্রকাশ হয় না বরং তিনি যে নির্দেশ দিয়েছেন তার অনুসরণ অনুকরণের মাধ্যমে, তাঁর দেওয়া সংবাদ বিশ্বাসের মাধ্যমে, তাঁর
নিষেধাবলী থেকে বিরত থাকার মাধ্যমে এবং তার শিখানো পদ্ধতিতে আল্লাহর দেওয়া শর‘ঈ বিধানের মাধ্যমে ইবাদত করার দ্বারাই তা প্রকাশ পায়। এমনিভাবে
তাঁর নাম উল্লেখ হওয়ার পর, সালাতের মধ্যে এবং প্রত্যেক সময়ে
ও সর্বক্ষেত্রে তাঁর উপর দুরুদ পাঠ করা তাঁর মহব্বতের বহিঃপ্রকাশ। কিন্তু এ সকল
বিদ‘আতী কাজের নিন্দা করা ওয়াহাবী নয় যেমনটি পত্রিকার লেখক বলেছেন। বরং ওয়াহাবী
বলে যাদের বলা হচ্ছে, তাদের আকীদা-বিশ্বাস হলো: আল্লাহর কিতাব ও রাসূলের সুন্নাতকে
পুরোপুরি আঁকড়ে ধরা, তাঁর দিক নির্দেশনার উপর চলা, খোলাফায়ে রাশেদীন এবং তাবে‘ঈদের পথে চলা, সালফে সালেহীন ও ইমামগণ
যে পথে চলেছেন সে পথে চলা, আল্লাহকে জানার ব্যাপারে, তার সিফাত বা গুণাগুণের ক্ষেত্রে ও তার প্রশংসার ক্ষেত্রে কুরআন
এবং হাদীস যেভাবে সাব্যস্ত করেছে এবং সাহাবীগণ যেভাবে তা গ্রহণ করেছে সেভাবে
সাব্যস্তের ক্ষেত্রে মুফতি ও ফকিহদের পথে
চলা। এগুলো যেভাবে এসেছে তারা তা সেভাবেই সাব্যস্ত করে এবং বিশ্বাস করে, কোনো ধরনের পরিবর্তন পরিবর্ধন, রহিতকরণ এবং
বিনা উদাহরণে তা সাব্যস্ত করে। তাবে‘ঈ, জ্ঞানী, পরহেযগার, ঈমানদার এবং তাবে তাবে‘ঈসহ এ উম্মাতের সালাফ ও ইমামগণ যার উপর চলেছেন তা-ই তারা আঁকড়ে
ধরে আছে।
তারা এ বিশ্বাস করে যে, ঈমানের
ভিত্তি ও নীতি হচ্ছে আল্লাহ তা‘আলার একত্ববাদ ও মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তার রাসূল হিসাবে সাক্ষ্য দেওয়া, আর এটিই এক আল্লাহর প্রতি ঈমানের মূল ভিত্তি এবং তা ঈমানের শাখার
মধ্যে সর্বোত্তম শাখা। তারা এও জানে যে, এ ভিত্তির জন্য সকল
মুসলিমের ঐক্যমতে ঈমান, আমল ও মুখের স্বীকৃতির প্রয়োজন হয়, তা প্রমাণ করে যে এক আল্লাহর ইবাদত করা ও তার সাথে কাউকে অংশিদার
না করা এবং তিনি ব্যতীত অন্য কারো ইবাদত করা থেকে বেঁচে থাকা প্রত্যেকের উপর
ওয়াজিব। আর এটিই জ্বীন ও মানব সৃষ্টি, নবী রাসূল প্রেরণ এবং
কিতাব অবতীর্ণ করার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। তা এক আল্লাহর জন্য পরিপূর্ণ বশ্যতা ও ভালোবাসার
স্বীকৃতি, এমনিভাবে পরিপূর্ণ অনুকরণ ও সম্মানের অন্তর্ভুক্ত।
এটি সেই দ্বীন যা ব্যতীত অন্য কোনো দ্বীন আল্লাহ গ্রহণ করবেন না, না
পূর্ববর্তীদের নিকট থেকে আর না পরবর্তীদের থেকে। কারণ সকল নবীই ইসলামের উপর থেকে
এর দাওয়াত নিয়ে এসেছেন এবং যা আল্লাহর নিকট আত্মসমর্পণের অন্তর্ভুক্ত তার দাওয়াত
নিয়ে এসেছেন। কাজেই যে ব্যক্তি তাঁর নিকট আত্মসমর্পনের সাথে সাথে অন্যের নিকটও
আত্মসমর্পণ করবে ও তাকে এবং অন্যকে ডাকবে সে মুশরিকদের মধ্যে গণ্য হবে, আর যে ব্যক্তি তার নিকট আত্মসমর্পণ করবে না সে তার ইবাদত থেকে
অহংকারী বলে গণ্য হবে।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَلَقَدۡ بَعَثۡنَا فِي كُلِّ أُمَّةٖ رَّسُولًا أَنِ ٱعۡبُدُواْ ٱللَّهَ وَٱجۡتَنِبُواْ
ٱلطَّٰغُوتَ﴾ [النحل: ٣٦]
“অবশ্যই আমরা প্রত্যেক জাতির নিকট রাসূল প্রেরণ
করেছি এ প্রত্যাদেশ দিয়ে যে তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর এবং তাগুতকে পরিহার কর। [সূরা
নাহল/৩৬]
তাদের আক্বীদা হলো: মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল হওয়ার উপর সাক্ষ্য প্রদান করা
এবং বিদ‘আত, কুসংস্কার ও রাসূলের আনীত
শরীয়তের পরিপন্থী প্রতিটি বিষয় ত্যাগ করা। আর এটাই শাইখ মুহাম্মদ ইবন আব্দুল ওয়াহহাব
রাহিমাহুল্লাহ এর আক্বীদা। এ আক্বীদার দ্বারাই তিনি আল্লাহর দ্বীন পালন করেন এবং
এর দিকে তিনি মানুষকে আহ্বান করেন। আর যে ব্যক্তি এ আক্বীদার পরিপন্থী কোনো মাস্আলা
মাসায়েল বা মতবাদ তার দিকে সম্পর্কযুক্ত করবে তা হবে ডাহা মিথ্যা, প্রাকশ্য
অপবাদ এবং বিনা জ্ঞানে কথা বলা। এ সকল অপবাদীদেরকে আল্লাহ তার অঙ্গিকারানুযায়ী
বদলা দিবেন। ইখলাস ও তাওহীদ, আল্লাহর একত্ববাদের সাক্ষ্য
দেওয়া এবং আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্য কারো ইবাদতের বিষয়টি রহিত করে শুধুমাত্র আল্লাহর
জন্য তা পরিপূর্ণভাবে সাব্যস্ত করার ক্ষেত্রে কুরআন, হাদীস ও
ইজমা যা প্রমাণ করে তার উপর তিনি তার মূল্যবান প্রতিবেদন, গবেষণা
এবং গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থাদি প্রকাশ করেছেন। তার প্রকাশিত গ্রন্থাদি,
প্রসিদ্ধ দাওয়াত ও কাজকর্ম এবং তার বড় বড় জ্ঞানী সহচরবৃন্দ ও ছাত্রদের মতামত
সম্পর্কে যে ব্যক্তি জানতে পারবে সে বুঝতে পারবে যে এক আল্লাহর ইবাদত করার সাথে
সাথে বিদ‘আত ও কুসংস্কার রহিতের ক্ষেত্রে তিনি সালাফ তথা
উম্মতের উত্তম পূর্বসূরী ও সম্মানিত ইমামদের তরিকায় আছেন। আর এর উপরই সৌদী হুকুমত
বা শাসন রয়েছে এবং সৌদী আলেমগণও এর উপরই চলেছেন। সৌদী হুকুমত ও আলেমগণ যাবতীয় বিদ‘আত, কুসংস্কার এবং সকল প্রকার বাড়াবাড়ি, যা
থেকে রাসূল নিষেধ করেছেন, তার বিরুদ্ধে জোরালো ভূমিকা রাখছেন।
সৌদী মুসলিম জনগণ এবং সরকার প্রতিটি মুসলিমকে
যথাযথ সম্মান করে থাকে এবং সে যে কোনো জায়গার বা যে কোনো দিকেরই হোক না কেন
তাদেরকে ভালোবাসা এবং সম্মানের দৃষ্টিতে দেখে। আর যারা বিদ‘আত, কুসংস্কার, বিদ‘আতী
উৎসব পালনের মত ভ্রান্ত মতবাদ নিয়ে আছে, যার অনুমতি আল্লাহ ও রাসূল দেননি, তাদেরকে
তারা ঘৃণা করেন এবং তা করতে নিষেধ করেন, কারণ তা নব আবিষ্কৃত
জিনিস, আর প্রতিটি নব আবিষ্কৃত জিনিসই বিদ‘আত।
বস্তুত মুসলিমগণকে রাসূলের অনুসরণ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে কোনো বিদ‘আত সৃষ্টির জন্য নয়, কারণ ইসলাম একটি
পরিপূর্ণ দ্বীন, আল্লাহ এবং রাসূল যা শরীয়ত হিসাবে দিয়েছেন
এবং সম্মানিত সাহাবী ও তাবে‘ঈগণ যা গ্রহণ করেছেন এবং যারা
তাদের অনুসরণ করেন তা-ই যথেষ্ট।
রাসূলের জন্মোৎসবের বিদ‘আতী অনুষ্ঠান পালন এবং
এতে যে সকল বাড়াবাড়ি বা শির্ক ইত্যাদি হয়, তার বাধা প্রদান করা অনৈসলামিক কাজ নয়
বা রাসূলের অসম্মান নয়, বরং এটাই রাসূলের অনুসরণ-অনুকরণ এবং
তাঁর নির্দেশ বাস্তবায়ন। যেমন তিনি বলেছেন,
«إياكم والغلو في الدين فإنما أهلك من كان
قبلكم الغلو في الدين»
“তোমরা
দ্বীনের মধ্যে অধিক বাড়াবাড়ি করা থেকে বেঁচে থাক, কেননা
দ্বীনের মধ্যে অধিক বাড়াবাড়িই তোমাদের পূর্ববর্তী লোকজনকে ধ্বংস করেছে।”
তিনি আরও বলেন:
«لا تطروني كما أطرت النصارى ابن
مريم، إنما أنا عبد فقولوا عبد الله ورسوله» أخرجه البخاري في صحيحه
“তোমরা
আমার প্রশংসায় সীমালঙ্ঘন করো না যেমন খৃষ্টানগণ ঈসা (আলাইহিস সালাম) এর ব্যাপারে
করেছে, বরং আমি কেবল একজন বান্দা, কাজেই
তোমরা বল যে আমি আল্লাহর বান্দা ও তার রাসূল।”
উল্লেখিত প্রবন্ধ সম্পর্কে এ সতর্কতাই দিতে
চেয়েছি। আল্লাহ আমাদের এবং সকল মুসলিমকে যেন দ্বীন সম্পর্কে বুঝার ও এর উপর দৃঢ়
থাকার তাওফীক দান করেন এবং সুন্নাতকে শক্ত
করে আঁকড়ে ধরা ও বিদ‘আত থেকে বেচে থাকার উপর অনুগ্রহ করেন। নিশ্চয়ই
তিনি অনুগ্রহশীল করুনাময়।
وصلى الله
وسلم على نبينا محمد وآله وصحبه.
বিদ‘আতের অর্থ এবং ইবাদতের ক্ষেত্রে এর প্রয়োগ
প্রশ্ন: শরীয়তে কোন আমল কখন বিদ‘আত
বলে গণ্য হবে? বিদ‘আত প্রয়োগ কি শুধু
ইবাদতের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে? নাকি ইবাদত এবং আদান-প্রদান তথা
লেনদেনের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য?
উত্তর: শরীয়তে বিদ‘আত হলো:
প্রতিটি সেই ইবাদত, মানুষ নতুনভাবে যা আবিষ্কার করেছে, অথচ কুরআন
ও হাদীসে এর কোনো অস্তিত্ব নেই এবং সুপথপ্রাপ্ত চার খলিফার আমলেও নেই।
নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«من أحدث في أمرنا هذا ما ليس منه
فهو رد» متفق على صحته
“যে
ব্যক্তি আমার এ দ্বীনের মধ্যে নতুন কোনো জিনিস সৃষ্টি করবে যা এর অন্তর্ভুক্ত নয়
তা প্রত্যাখ্যাত।[9]
তিনি আরও বলেছেন :
«من عمل عملا ليس عليه أمرنا فهو رد» أخرجه
مسلم في صحيحه
“যে ব্যক্তি এমন কোনো আমল করবে যা আমার শরিয়ত
সমর্থন করে না তা প্রত্যাখ্যাত।”[10]
তিনি ইরবাদ ইবন সারিয়া রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু এর হাদীসে আরো বলেন:
«عليكم بسنتي وسنة الخلفاء الراشدين المهديين
من بعدي تمسكوا بها وعضوا عليها بالنواجذ وإياكم ومحدثات الأمور؛ فإن كل محدثة
بدعة وكل بدعة ضلالة»
“তোমাদের উপর ওয়াজিব হলো: তোমরা আমার সুন্নাতকে
আঁকড়ে ধরা এবং আমার পর সুপথপ্রাপ্ত খলীফাদের সুন্নাতকে আঁকড়ে ধরা, এবং
তা দন্ত দ্বারা দৃঢ়তার সাথে ধারণ করা। আর তোমরা (দ্বীনে) নব রচিত কর্মসমূহ হতে
সাবধান থাক! কেননা প্রতিটি নব রচিত কর্ম হচ্ছে বিদ‘আত এবং
সকল বিদ‘আত হচ্ছে
ভ্রষ্টতা।”[11]
এ অর্থে আরও বহু হাদীস রয়েছে।
আরবী ভাষায় বিদ‘আত প্রযোজ্য
হয় প্রতিটি সেই নব আবিষ্কৃত জিনিসের উপর যার কোনো পূর্ব নমুনা নেই। কিন্তু তা (নব আবিষ্কৃত
জিনিস) দ্বীনের অন্তর্ভুক্ত না হলে এর সাথে নিষেধের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।
পক্ষান্তরে লেনদেনের ক্ষেত্রে যা শরীয়ত সমর্থিত তা শর‘য়ী বন্ধন এবং যা এর পরিপন্থী
তা বাতিল বন্ধন হিসাবে প্রযোজ্য, একে শরীয়তে বিদ‘আত বলা যাবে না, কারণ তা ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত
নয়।
ইমাম নববী (রহ:)
কর্তৃক বর্ণিত বিদ‘আতের প্রকারভেদ
প্রশ্ন:
ইমাম নাওয়াওয়ী (রহ:) তার ব্যাখ্যাগ্রন্থে বিদ‘আতকে পাঁচ ভাগে
ভাগ করে বলেছেন, “কোনো বিদ‘আত ওয়াজিব, এর
উদাহরণ: নাস্তিক্যবাদের উপর ধর্মতত্ত্ববিদদের দলীলের পদ্ধতি। আবার কোনো কোনোটি মুস্তাহাব, এর উদাহরণ: ইলমি বিভিন্ন বিষয়ে পুস্তক লেখা। আবার কোনো কোনোটি বৈধ, এর উদাহরণ: খাবারের
বিভিন্ন প্রকার বৃদ্ধি করা। আর কোনো কোনো বিদ‘আত হারাম ও মাকরুহ, এ
দু’টো সকলের নিকট স্পষ্ট।”
অথচ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
বলেন: (প্রতিটি বিদ‘আতই ভ্রষ্টতা) এর দ্বারা ইমাম নাওয়াওয়ীর উদ্দেশ্য
কি? তা বর্ণনাসহ বিস্তারিত বলার জন্য আপনাকে অনুরোধ করছি, আল্লাহ আপনাকে বরকতময় করুন।
উত্তর: আপনি ইমাম নাওয়াওয়ী থেকে যে পাঁচ প্রকার বিদ‘আত তুলে ধরেছেন তা আলেমগণের একটি জামায়াতও উল্লেখ করেছেন। তারা
বলেছেন: বিদ‘আত পাঁচ প্রকার: ওয়াজিব, মুস্তাহাব, মুবাহ (অনুমোদিত), হারাম ও মাকরুহ।
তবে অন্য আলেমগণ বলেছেন: সকল প্রকার বিদ‘আতই ভ্রষ্টতা, এর মধ্যে কোনো প্রকারভেদ নেই
বরং সবগুলোই ভ্রষ্টতা যেমন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ( সকল প্রকার বিদ‘আতই ভ্রষ্টতা)। আহমাদ, আবু দাউদ, তিরমিযী ও ইবনে মাজাহ।
এমনিভাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বহু সহীহ হাদীস এসেছে, তন্মধ্যে
সহীহ সহীহ মুসলিমে জাবের ইবন আব্দুল্লাহ
আল আনসারী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, তিনি
বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুম‘আর
দিন তাঁর খুৎবায় বলেন:
«أما بعد فإن خير الحديث كتاب الله وخير
الهدي هدي محمد صلى الله عليه وسلم وشر الأمور محدثاتها وكل بدعة ضلالة»
“অতঃপর
সর্বোত্তম বাণী হলো: আল্লাহর কিতাব এবং সর্বোত্তম হেদায়েত হলো: মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হেদায়েত, আর নিকৃষ্টতর কাজ হলো এর নব আবিষ্কৃত কাজ, এবং প্রতিটি বিদ‘আতই ভ্রষ্টতা।”[12]
এ অর্থে কয়েকটি আরও হাদীস এসেছে, আয়েশা ও
ইরবাদ ইবন সারিয়ার হাদীসসহ বহু হাদীস।
আর এটাই সত্য যে, ইমাম নওয়াওয়ী
ও অন্যান্যরা বিদ‘আতের যে প্রকার উল্লেখ করেছেন এ ধরনের কোনো
প্রকার বাস্তবে নেই বরং সব বিদ‘আতই ভ্রষ্টতা।
কারণ, বিদ‘আত হয় কেবল দ্বীনের
ক্ষেত্রে, মুবাহ বা অনুমোদিত কোনো জিনিসের ক্ষেত্রে নয়।
যেমন: নতুন কোনো খাবার তৈরী করা যা এর আগে কেউ তৈরী করেনি, শরীয়তের
পরিভাষায় একে বিদ‘আত বলা হয় না যদিও শাব্দিক অর্থে তা বিদ‘আত। কেননা শাব্দিক অর্থে বিদ‘আত বলা হয়: ‘পূর্ব
নমুনা ব্যতীত নতুনভাবে কোনো জিনিস আবিষ্কার করা’কে। যেমন আল্লাহ তা‘আলা
বলেন:
﴿ بَدِيعُ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِۖ ﴾ [البقرة: ١١٧]
“আল্লাহ ভূমন্ডল ও নভোমন্ডলের নবউদ্ভাবক।
[সূরা বাকারা ১১৭] অর্থাৎ “পূর্ব
নমুনা ব্যতীত তিনি এর আবিষ্কারক ও উদ্ভাবক।”
কিন্তু শরীয়তের পরিভাষায় কোনো ব্যাপারটি তখনই বিদ‘আত বলা যাবে, যখন কেউ এমন কোনো জিনিস তৈরী
করল যার প্রমাণ কুরআন ও হাদীসে নেই। আর এটিই সত্য যা আলেমগণের একটি দল মেনে নিয়ে
এর স্বীকৃতি প্রদান করেছেন এবং যারা এর বিরোধিতা করছেন তাদেরকে প্রত্যাখ্যান
করেছেন।
ইসলামের শত্রু এবং নাস্তিকদের প্রতিউত্তর দেওয়ার
ব্যাপারে দলীল প্রস্তুত করা এবং বই লেখাকে বিদ‘আত বলা যাবে
না, কারণ তা আল্লাহ ও তার রাসূলের নির্দেশের অন্তর্ভুক্ত
বিধায় তা বিদ‘আত নয়। কেননা কুরআনুল কারীম স্পষ্ট আয়াতের
মাধ্যমে আল্লাহর শত্রুদের প্রতিউত্তর দিয়েছে এবং তাদের সন্দেহের মুখোশ উদ্ঘাটন করে
দিয়েছে এবং রাসূলের সুন্নাতও ইসলামের শত্রুদের প্রতিউত্তর দিয়েছে। এমনিভাবে
সাহাবাদের যুগ থেকে বর্তমান যুগ পর্যন্ত মুসলিমগণ তাদের দাঁতভাঙ্গা জবাব দিচ্ছে।
এর
কোনটিই বিদ‘আত নয় বরং ওয়াজিব পালিত হচ্ছে এবং আল্লাহর পথে
জিহাদ হচ্ছে, তাই এগুলো কোনোভাবেই বিদ‘আত
নয়। তদ্রূপ মাদরাসা, সেতু ইত্যাদি নির্মাণ করা যা মুসলিমদের
উপকার হয় তাকে শরীয়তে বিদ‘আত বলা হবে না, কেননা
শরীয়তই শিক্ষা গ্রহণ করার নির্দেশ দিয়েছে। আর মাদরাসা তৈরী শিক্ষা গ্রহণ করতে
সাহায্য করছে, এমনিভাবে গরীবদের সাথে সম্পর্ক রাখা, কারণ আল্লাহ তা‘আলা গরীব ও অসহায়দের প্রতি
অনুগ্রহ করার নির্দেশ দিয়েছেন। কেউ যদি তাদের জন্য কোনো ঘর তৈরী করে তাদের সাথে সম্পর্ক
গড়ে তবে এটিই আল্লাহর নির্দেশ, তদ্রূপ নদীর উপর কোনো সেতু
তৈরী করা, এসব কিছুই মানুষের উপকারের জন্য,
তা বিদ‘আত নয় বরং তা ইসলামেরই নির্দেশ। তা কেবল শাব্দিক
অর্থেই বিদ‘আত হবে। যেমন
উমর রা: তারাবীহ এর সালাতের জন্য যখন লোকদেরকে এক ইমামের পিছনে জমা
করেছিলেন তখন তিনি বলেছিলেন: نعمت البدعة هذه
“এটি কতইনা ভালো বিদ‘আত”! অথচ তারাবীর সালাত
সুন্নাতে মুয়াক্কাদা, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম পড়েছেন এবং সাহাবাদেরকে তা পড়ার জন্য উৎসাহ প্রদান
করেছেন, কাজেই তা বিদ‘আত নয় বরং তা
সুন্নাত। কিন্তু উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু একে শাব্দিক অর্থে বিদ‘আত বলেছেন; কারণ পূর্বে এভাবে এক ইমামের পেছনে সালাত পড়া হত না
বরং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সময় এবং
তাঁর পরে দুইজন বা তিনজন করে ছোট ছোট জামাতে পড়া হত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিন দিন জামাতে পড়েছেন, তার
পর ছেড়ে দিয়েছেন এবং বলেছেন:
«إني أخشى أن تفرض عليكم صلاة
الليل»
“রাত্রির সালাত তোমাদের উপর ফরয
হয়ে যাওয়ার ভয় করছি।”
অতঃপর তিনি তাঁর উম্মতের উপর এ সালাত ফরয হয়ে যাওয়ার
ভয়ে জামাতে পড়া ছেড়ে দিয়েছেন। কিন্তু তিনি যখন
মৃত্যুবরণ করলেন তখন এ ভয় দূর হয়ে গেল, অতঃপর উমর রাদিয়াল্লাহু
‘আনহু তা জামাতে পড়ার নির্দেশ দেন।
মোটকথা রমাযানের রাত্রির (তারাবীর) সালাত পড়া
সুন্নাতে মুয়াক্কাদা, শরীয়তের দৃষ্টিতে তা বিদ‘আত
নয়। এর দ্বারা জানা যায় যে, আল্লাহর বিধানের বাইরে দ্বীনের
মধ্যে মানুষ নতুন যা সৃষ্টি করবে তা-ই বিদ‘আত,
যা ভ্রষ্টতা হিসেবে স্বীকৃত, আর তাই তা করা জায়েয নেই
এবং একে ওয়াজিব, সুন্নাত , মুবাহ ..
ইত্যাদি হিসাবে ভাগ করাও জায়েয নেই। কারণ তা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে সাব্যস্ত শর‘ঈ দলীলের পরিপন্থী, যেমনটি
পূর্বে আলোচিত হয়েছে।
বিদ‘আতীদের সাথে উঠাবসার
হুকুম
প্রশ্ন: বিদ‘আতীদের আলোচনা এবং তাদের পাঠদানের
আসরে বসা জায়েয আছে কি?
উত্তর: তাদের সাথে বসা এবং তাদেরকে সাথী হিসাবে গ্রহণ
করা জায়েয নেই, বরং তাদের উপর ঘৃণা করা এবং তাদেরকে বিদ‘আত থেকে সতর্ক করে দেওয়া ওয়াজিব।
দ্বীনি চাকুরীর
ক্ষেত্রে বিদ‘আতীদেরকে চাকুরী দেওয়ার
হুকুম
প্রশ্ন: আমাদের ইয়ামানে কিছু লোক মাসজিদ তৈরী করে, তারা সকলেই ভালোলোক, সুন্নাত কি তারা তেমন
বুঝে না কিন্তু ঐ মাসজিদ তৈরীর কাজে বিদ‘আতীদেরকে নিযুক্ত করে
থাকে অর্থাৎ তাদের আকীদা ভ্রান্ত এবং আহলে সুন্নাতগণ সেখানে ভিড় জমায় এবং তা জোরে
দখল করে তারা কাজ নেয়, এর হুকুম কি?
উত্তর: যে কোনো কাজ হিকমতের সাথে করতে হবে জোরে
নয়, অথবা দায়িত্বশীলদের সাথে সমঝোতার মাধ্যমে আহলে সুন্নাত ও
জামায়াতের লোকদের নিয়োগ করতে হবে যেন কোনো মতপার্থক্য বা ফেতনা সৃষ্টি না হয়। আর
যদি মাসজিদ বিদ‘আতীরা করে থাকে তবুও কৌশলে কাজ নিতে হবে যেন
ফেতনা সৃষ্টি না হয়, তা না হলে তারা বলবে: আমরা মাসজিদ
বানাবো তোমরা জোর করে দখল করবে কেন? পারলে তোমরাও বানাও।
তাদের উচিৎ হলো: তারা যেন ধীরস্থিরে এ কাজগুলো করে যাতে আহলে সুন্নাতগণ ইমামতি এবং
মুয়াজ্জিনের দায়িত্ব পালন করতে পারে।
প্রকাশ্য বিদ‘আতের নিন্দা করার পদ্ধতি
প্রশ্ন: একজন ব্যক্তিত্বসম্পন্ন লোক যার বিদ‘আত প্রচারিত হয়, বিশেষ করে আকীদা এবং তার
ব্যাপারে অধিক বাড়াবাড়ি করা হয়। আমরা যখন তার বিদ‘আত এবং
ভুলের নিন্দা করি তখন কিছু লোক বলে থাকে যে, হক্ব হচ্ছে তার দোষ ও গুণ উভয়টিই
উল্লেখ করা এবং দাওয়াতী ক্ষেত্রে তার যে ভূমিকা রয়েছে সে হিসাবে তার প্রকাশ্য
সমালোচনা করা ঠিক নয়। আপনার নিকট সঠিক পদ্ধতি জানতে চাচ্ছি, এ
ক্ষেত্রে কি তার গুণগুলো উল্লেখ করা দরকার? এবং তার পূর্ববর্তী
দাওয়াতী কাজের জন্য কি তার প্রকাশ্য ভুলগুলো মানুষের সম্মুখে উল্লেখ করা যাবে না? (তিনি মিসরের একজন ক্বারী)
উত্তর: শর‘ঈ দলীল, উৎসাহ, ভয় ভীতি এবং ভালো পদ্ধতির মাধ্যমে বিদ‘আত এবং প্রকাশ্য অন্যায়ের নিন্দা করা আলেমগণের উপর ওয়াজিব এবং তখন
বিদ‘আতীর ভালো গুণগুলো উল্লেখ করা জরুরী নয় কিন্তু সৎকর্মের
নির্দেশদাতা ও অসৎকর্মের নিষেধকারী যদি বিদ‘আতীকে তার তাওবা
করার উপর উৎসাহ দিতে গিয়ে উল্লেখ করে তবে ভালো এবং তা দাওয়াত গ্রহণ ও তাওবা করার
একটি পদ্ধতি।
বিদ‘আতীদের সাথে সালাত পড়ার হুকুম
প্রশ্ন: কোনো এলাকার অধিবাসীরা যদি বিদ‘আতী হয় সেখানে অবস্থানকারীর হুকুম কি? সে কি
তাদের সাথে জুম‘আ এবং জামাতে সালাত পড়বে? নাকি একাকী আদায়
করবে, না তার উপর থেকে জামাত রহিত হয়ে যাবে?
উত্তর: প্রতিটি সৎলোক এবং অসৎলোকের পিছনে জুম‘আর সালাত
পড়া ওয়াজিব, জুম‘আর ইমাম যদি তার বিদ‘আতের
দ্বারা দ্বীন থেকে বের হয়ে না যায়, তবে তার পিছনে সালাত পড়বেন।
ইমাম আবু জা‘ফর তাহাবী (রহ:) তার প্রসিদ্ধ আকিদায় বলেন: ‘‘আহলে কিবলার প্রতিটি সৎ এবং পাপী লোকের পিছনে সালাত পড়া যাবে এবং তাদের কেউ মারা গেলে তার জানাযা পড়া যাবে’’।
ইমাম আবু জা‘ফর তাহাবী (রহ:) তার প্রসিদ্ধ আকিদায় বলেন: ‘‘আহলে কিবলার প্রতিটি সৎ এবং পাপী লোকের পিছনে সালাত পড়া যাবে এবং তাদের কেউ মারা গেলে তার জানাযা পড়া যাবে’’।
আকীদায়ে তাহাবীয়ার ব্যাখ্যাকারক, যিনি একজন বিজ্ঞ
গবেষক, তিনি صلوا خلف كل بر وفاجر এ বাক্যের
ব্যাখ্যায় বলেছেন:
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
“প্রতিটি সৎলোক এবং অসৎলোকের পিছনে সালাত পড়ুন।”
এ বর্ণনাটি আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে মাকহুল বর্ণনা করেছেন।[13]
আর তা দারাকুতনী বর্ণনা করেছেন এবং বলেছেন, মাকহুল আবু হুরাইরার সাক্ষাত পাননি, এর সনদে মু‘আবিয়া ইবন সালেহ রয়েছেন যিনি সমালোচিত, ইমাম মুসলিম তার সহীহ মুসলিমে তাকে গ্রহণযোগ্য বিবেচনা করে তার থেকে গ্রহণ করেছেন। অনুরূপভাবে মু‘আবিয়া ইবন সালেহ থেকে দারাকুতনী এবং আবু দাউদও মাকহুলের সনদে তা বর্ণনা করেছেন এবং তিনি আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
“প্রতিটি মুসলিম সৎ ও অসৎলোকের সাথে সালাত পড়া তোমাদের উপর ওয়াজিব, যদিও সে কবিরা গুনাহ করে থাকে এবং প্রতিটি সৎ ও অসৎ আমীরের নেতৃত্বে জিহাদ করা তোমাদের উপর ওয়াজিব, যদিও সে কবিরা গুনাহ করে থাকে।”[14]
“প্রতিটি সৎলোক এবং অসৎলোকের পিছনে সালাত পড়ুন।”
এ বর্ণনাটি আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে মাকহুল বর্ণনা করেছেন।[13]
আর তা দারাকুতনী বর্ণনা করেছেন এবং বলেছেন, মাকহুল আবু হুরাইরার সাক্ষাত পাননি, এর সনদে মু‘আবিয়া ইবন সালেহ রয়েছেন যিনি সমালোচিত, ইমাম মুসলিম তার সহীহ মুসলিমে তাকে গ্রহণযোগ্য বিবেচনা করে তার থেকে গ্রহণ করেছেন। অনুরূপভাবে মু‘আবিয়া ইবন সালেহ থেকে দারাকুতনী এবং আবু দাউদও মাকহুলের সনদে তা বর্ণনা করেছেন এবং তিনি আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
“প্রতিটি মুসলিম সৎ ও অসৎলোকের সাথে সালাত পড়া তোমাদের উপর ওয়াজিব, যদিও সে কবিরা গুনাহ করে থাকে এবং প্রতিটি সৎ ও অসৎ আমীরের নেতৃত্বে জিহাদ করা তোমাদের উপর ওয়াজিব, যদিও সে কবিরা গুনাহ করে থাকে।”[14]
অনুরূপভাবে সহীহ বুখারীতে এসেছে যে,
আব্দুল্লাহ ইবন উমর এবং আনাস ইবন মালেক
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হাজ্জাজ ইবন ইউসুফ সাকাফীর পিছনে সালাত
পড়েছেন অথচ সে ফাসেক ও যালেম ছিল।
বুখারীতে আরও এসেছে যে, নবী
সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
“তারা তোমাদের সালাত পড়ালে যদি সঠিকভাবে আদায় করে তবে তোমাদের জন্য সওয়াব রয়েছে, আর যদি ভুল করে তাহলেও তোমাদের জন্য সওয়াব আছে এবং তাদের ভুল তাদের উপর বর্তাবে।”[15]
“তারা তোমাদের সালাত পড়ালে যদি সঠিকভাবে আদায় করে তবে তোমাদের জন্য সওয়াব রয়েছে, আর যদি ভুল করে তাহলেও তোমাদের জন্য সওয়াব আছে এবং তাদের ভুল তাদের উপর বর্তাবে।”[15]
আব্দুল্লাহ ইবন উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
যে ব্যক্তি ‘‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’’ বলবে তার পিছনে সালাত পড় এবং যে ব্যক্তি ‘‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’’ পড়বে তার জানাযা পড়। দারাকুতনী, বিভিন্ন সনদে বর্ণনা করেছেন[16] এবং তিনি তা দুর্বল বলেছেন।
যে ব্যক্তি ‘‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’’ বলবে তার পিছনে সালাত পড় এবং যে ব্যক্তি ‘‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’’ পড়বে তার জানাযা পড়। দারাকুতনী, বিভিন্ন সনদে বর্ণনা করেছেন[16] এবং তিনি তা দুর্বল বলেছেন।
জেনে রাখ, আল্লাহ তোমাকে দয়া করুন,
ইমামদের ঐকমত্যে যে ব্যক্তির বিদ‘আত এবং ফাসেকী
সম্পর্কে জানা যাবে না, তার পিছনে সালাত পড়া জায়েয। কোনো মুক্তাদির জন্য ইমামের পিছনে
একতেদা করার ব্যাপারে ইমামের আক্বীদা জানাটা শর্ত নয় এবং তাকে পরীক্ষা করাও জরুরী
নয় যে তাকে বলবে: আপনার আকিদা কি? বরং যার অবস্থা জানা যাবে না
তার পিছনে সালাত পড়বে। আর যদি বিদ‘আতের দিকে আহ্বানকারী কোনো
বিদ‘আতী বা প্রকাশ্যে অপরাধকারী কোনো ফাসেক ইমাম নিযুক্ত
থাকে, যেমন জুম‘আ, ঈদ বা হজ্জ্বের সময়
আরাফার ইমাম ইত্যাদি, যদি তার পিছনে ব্যতীত সালাত পড়া সম্ভব
না হয় তাহলে সকল পূর্ববর্তী সালাফ ও পরবর্তী আলেমদের মতে তার পিছনে সালাত পড়া
চলবে।
যে ব্যক্তি অসৎলোকের পিছনে জুম‘আ
এবং জামাতে সালাত পড়া ছেড়ে দিবে অধিকাংশ আলেমের মতে সে নিজেই বিদ‘আতী।
এ ব্যাপারে সঠিক মত হলো: সে তার পিছনে সালাত পড়ে নিবে এবং পুনরায় তা আদায় করতে হবে
না। কেননা সাহাবীগণ অসৎ ইমামের পিছনে জুম‘আ ও জামাতে সালাত পড়তেন এবং তা পুনরায়
আদায় করতেন না। যেমন আব্দুল্লাহ ইবন উমর
এবং আনাস ইবন মালেক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হাজ্জাজ ইবন ইউসুফের পিছনে সালাত পড়েছেন। তেমনিভাবে
আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ ও অন্যান্যরা ওলীদ ইবন ‘উকবার পিছনে সালাত পড়েছেন অথচ সে মদপান
করতো, এমনকি সে একবার ফজরের সালাত চার রাকাত পড়ে বলেছিল: আরো
বেশী পড়ব নাকি? তখন ইবনে মাসউদ বলেছিলেন: সালাত বেশী পড়লেও
আজ থেকে আমরা তোমার সাথে আছি। অনুরূপভাবে সহীহ বুখারীতে এসেছে যে উসমান রাদিয়াল্লাহু
‘আনহুকে যখন ঘেরাও করে রাখা হয়েছিল তখন অন্য এক ব্যক্তি সালাত
পড়িয়েছিল অতঃপর উছমান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল: আপনি হলেন জনগণের ইমাম আর এ ব্যক্তি
ফেৎনার ইমাম, তখন তিনি বলেছিলেন: ‘‘হে
ভাতিজা, মানুষ যা করে তার মধ্যে সর্বোৎকৃষ্ট আমল হলো সালাত, তারা যদি ভালো করে তবে তোমরাও তাদের সাথে ভালো কর আর যদি তারা
খারাপ করে তবে তাদের খারাপী থেকে বেঁচে থাকো’’।
বস্তুত ফাসেক এবং বিদ‘আতীর
নিজের সালাত সহীহ, সুতরাং যদি কেউ তাদের পিছনে সালাত পড়লে তার
সালাতও বাতিল হবে না। হ্যাঁ, তবে কেউ বিদ‘আতীর পিছনে সালাত পড়া অপছন্দ করেছেন;
কারণ, সৎকাজের নির্দেশ এবং অসৎকাজের নিষেধ করা ওয়াজিব।
এ থেকে বলা যায় যে, যে
ব্যক্তি প্রকাশ্যে বিদ‘আত এবং অপকর্ম করে যাবে তাকে ইমাম
নিযুক্ত করা যাবে না, কেননা সে তো তা‘যীরি শাস্তির হক্বদার;
যতক্ষণ না সে তাওবা করবে। যদি তাওবা না করা পর্যন্ত তাকে পরিত্যাগ করে থাকা সম্ভব
হয়, তবে তা উত্তম। আর যদি কিছু লোক তার পিছনে সালাত পড়া ত্যাগ করে অন্যের পিছনে সালাত
পড়লে অন্যায় কাজ দূর করতে তা ভূমিকা রাখবে, সে অন্যায় কাজ থেকে তাওবা করবে বা তাকে
পদচ্যুত করা হবে, অথবা লোকেরা তার পিছনে সালাত আদায় করা ত্যাগ করবে তখন শর‘ঈ
স্বার্থ হাসিলের স্বার্থে তার পিছনে সালাত আদায় করা পরিত্যাগ করা যাবে, তবে শর্ত
হচ্ছে এর জন্য জুম‘আ এবং জামাত যেন ছুটে না যায় সেটা খেয়াল রাখতে হবে।
কিন্তু যদি তার পিছনে সালাত না পড়লে মুক্তাদির জুম‘আ
ও জামাত ছুটে যায়, তাহলে তার পিছনেই সালাত না পড়া কেবল বিদ‘আতী, সাহাবীগণের মত ও
পথের বিরোধী লোকেদেরই কাজ। এমনিভাবে সরকার যদি কোনো বিদ‘আতীকে
ইমাম নিযুক্ত করে এবং তার পিছনে সালাত ত্যাগ করায় কোনো শর‘ঈ কল্যাণ না হয় তাহলে
তার পিছনে সালাত পড়া ত্যাগ করবে না বরং এ অবস্থায় তার পিছনে সালাত পড়াটাই ভালো।
কারো পক্ষে যদি প্রকাশ্য অন্যায়কারীকে ইমামতি না
দেওয়া সম্ভব হয় তাহলে সেটাই তার উপর ওয়াজিব, কিন্তু যদি অন্য
কেউ ইমাম নিযুক্ত করায় তাকে সরানো সম্ভব না হয় অথবা তার অন্যায়ের ক্ষতির পরিমাণ
থেকে কম ক্ষতির মাধ্যমে তাকে ইমামতি থেকে হটানো সম্ভব না হয় বরং তাকে হটালে যদি
বেশী ক্ষতি হয় তবে তাকে হটানো ঠিক নয়, কারণ শরীয়ত এসেছে
কল্যাণ বাস্তবায়ন করার জন্য এবং সাধ্যমত ফেৎনা দূর করে তা কমিয়ে আনার জন্য। আর অসৎ
ইমামের পিছনে জুম‘আ ও জামাত পড়ার চেয়ে তা ত্যাগ করার ক্ষতির পরিমাণ বেশী। বিশেষ
করে যখন জুম‘আ ও জামাত থেকে বিরত থাকার মাধ্যমে অন্যায় দূর না হয় তখন তো কোনো
অকল্যাণ (বিদ‘আতী ও ফাসেক ঈমাম) দূর করাও সম্ভব হচ্ছে না কিন্তু ঠিকই শর‘ঈ কল্যাণ (জুম‘আ
ও জামাত) অচল হয়ে যাচ্ছে।
আর যদি অসৎ লোকের পিছনে জুম‘আ
ও জামাত না পড়ে সৎলোকের পিছনে পড়া সম্ভব হয় তাহলে তাই ভালো, আর
তখন বিনা কারণে অসৎলোকের পিছনে সালাত পড়া আলেমগণের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। কেউ বলেছেন
তার পিছনে সালাত পড়লে পুনরায় আদায় করতে হবে, আবার কেউ কেউ
বলেছেন তা পুনরায় আদায় করার প্রয়োজন নেই। এ ব্যাপারে মাসআলার কিতাবে বিস্তারিত
আলোচনা করা হয়েছে।” এখানেই ব্যাখ্যাকারের কথা শেষ।
শেষ মাসআলার ব্যাপারে সঠিক মত হলো: উপরোল্লেখিত
প্রমাণাদি দ্বারা বুঝা যায় যে, তার পিছনে সালাত পড়ে ফেললে
দ্বিতীয়বার তা আদায় করতে হবে না। কেননা আসল হলো, যে কোনো সালাত
পড়ে ফেললে তা পুনরায় আদায় করা ওয়াজিব না হওয়া, কাজেই কোনো নির্দিষ্ট
দলীল ছাড়া তা চাপিয়ে দেওয়া যাবে না। আর এ রকম দলীল আছে বলে আমার জানা নেই।
বিদ‘আতীর জানাযা পড়া
প্রশ্ন: বিদ‘আতীদের জানাযা
না পড়ার হুকুম কি?
উত্তর: তাদের বিদ‘আত যদি
কুফরির পর্যায়ে না পৌঁছে তাহলে তাদেরকে এ কাজ থেকে বিরত রাখার জন্য আলেমগণ তাদের
উপর জানাযা না পড়লে ভালো হয়, কিন্তু যদি তাদের বিদ‘আত কুফরির পর্যায়ে পৌঁছে যেমন খারেজী, মু‘তাযিলা
এবং জাহমিয়াদের বিদ‘আত, তাহলে তাদের
জানাযা পড়া যাবে না।
বিভিন্ন প্রবন্ধ ও ফাতাওয়াসমূহ ১৩/১৬১
যার বিদ‘আত
কুফরির পর্যায়ে, তার জানাযা না পড়া
প্রশ্ন: আলেমগণ যদি বিদ‘আতীদের
জানাযা পড়া ছেড়ে দেন তাহলে তাদের উপর সাধারণ লোকের জানাযা ত্যাগ করা কি আলেমগণের
আদর্শ অনুসরণ করা হবে না?
উত্তর: মুসলিম মৃত ব্যক্তির উপর জানাযা পড়া
ওয়াজিব; যদিও সে বিদ‘আতী হয়, তাদের বিদ‘আত যদি তাদেরকে ইসলাম থেকে বের করে না দেয় তাহলে সাধারণ লোক তাদের
জানাযা পড়ে দিবে। কিন্তু তাদের বিদ‘আত যদি কুফরির পর্যায়ে হয়
তাহলে তাদের জানাযা পড়া যাবে না এবং তাদের জন্য ক্ষমাও চাওয়া যাবে না যেমন জাহমিয়া, মু‘তাযিলা এবং রাফেযী (যারা আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু
এবং আহলে বাইতের নিকট দো‘আ ও সাহায্য চাইতো)। কারণ আল্লাহ তা‘আলা
মুনাফেক ও এ রকম লোকদের সম্পর্কে বলেন:
﴿ وَلَا تُصَلِّ عَلَىٰٓ أَحَدٖ مِّنۡهُم مَّاتَ
أَبَدٗا وَلَا تَقُمۡ عَلَىٰ قَبۡرِهِۦٓۖ إِنَّهُمۡ كَفَرُواْ بِٱللَّهِ وَرَسُولِهِۦ
وَمَاتُواْ وَهُمۡ فَٰسِقُونَ ٨٤ ﴾ [التوبة: ٨٤]
“আর তাদের কেউ মৃত্যুবরণ করলে তার উপর সালাত
পড়বেন না এবং তার কবরে দাঁড়াবেন না। তারাতো আল্লাহ এবং তার রাসূলের প্রতি
অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করেছে, বস্তুত তারা ফাসেক অবস্থায় মৃত্যুবরণ
করেছে।: [সূরা তাওবা/৮৪]
মুখে
উচ্চারণ করে সালাতের নিয়ত পড়া বিদ‘আত
প্রশ্ন: একজন মিসরীয় প্রশ্নকারী বলেন: সালাতে
মুখে আওয়াজ করে উচ্চারণ করে নিয়ত পড়ার
হুকুম কি?
উত্তর: মুখে উচ্চারণ করে নিয়ত পড়া বিদ‘আত, আওয়াজ করে পড়া এর চেয়েও মহা অন্যায়।
সুন্নাত হচ্ছে: মনে মনে নিয়ত (তথা স্থির সিদ্ধান্ত গ্রহণ) করা; কেননা আল্লাহ
প্রকাশ্য ও গোপনীয় সব বিষয় জানেন।
তিনি বলেন:
﴿قُلۡ أَتُعَلِّمُونَ ٱللَّهَ بِدِينِكُمۡ وَٱللَّهُ يَعۡلَمُ مَا فِي ٱلسَّمَٰوَٰتِ
وَمَا فِي ٱلۡأَرۡضِۚ وَٱللَّهُ بِكُلِّ شَيۡءٍ عَلِيمٞ ١٦ ﴾ [الحجرات: ١٦]
“হে নবী আপনি বলুন: তোমরা কি তোমাদের দ্বীনের
ব্যাপারে আল্লাহকে শিখাতে চাও? অথচ আকাশ ও যমীনে যা কিছু আছে
সব কিছুই আল্লাহ জানেন। [সূরা হুজুরাত/১৬]
মুখে উচ্চারণ করে নিয়ত পড়া রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে সাব্যস্ত নেই, তাঁন
কোনো সাহাবা এবং চার মাযহাবের কোনো ইমামের নিকট থেকেও সাব্যস্ত নেই। কাজেই এর
দ্বারা বুঝা যায় যে, তা জায়েয নেই বরং নব আবিষ্কৃত বিদ‘আত।
চাশতের সালাতে
নির্দিষ্ট আয়াত পাঠ করা
প্রশ্ন: আমি চাশতের সালাতে নিম্ন দু’টি শুকরিয়া আদায়ের আয়াত পড়তে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছি,
﴿رَبِّ أَوۡزِعۡنِيٓ أَنۡ أَشۡكُرَ نِعۡمَتَكَ
ٱلَّتِيٓ أَنۡعَمۡتَ عَلَيَّ وَعَلَىٰ وَٰلِدَيَّ وَأَنۡ أَعۡمَلَ صَٰلِحٗا تَرۡضَىٰهُ
وَأَدۡخِلۡنِي بِرَحۡمَتِكَ فِي عِبَادِكَ ٱلصَّٰلِحِينَ ١٩ ﴾ [النمل: ١٩]
এবং
﴿ وَوَصَّيۡنَا ٱلۡإِنسَٰنَ بِوَٰلِدَيۡهِ إِحۡسَٰنًاۖ حَمَلَتۡهُ أُمُّهُۥ كُرۡهٗا
وَوَضَعَتۡهُ كُرۡهٗاۖ وَحَمۡلُهُۥ وَفِصَٰلُهُۥ ثَلَٰثُونَ شَهۡرًاۚ حَتَّىٰٓ إِذَا
بَلَغَ أَشُدَّهُۥ وَبَلَغَ أَرۡبَعِينَ سَنَةٗ قَالَ رَبِّ أَوۡزِعۡنِيٓ أَنۡ أَشۡكُرَ
نِعۡمَتَكَ ٱلَّتِيٓ أَنۡعَمۡتَ عَلَيَّ وَعَلَىٰ وَٰلِدَيَّ وَأَنۡ أَعۡمَلَ صَٰلِحٗا
تَرۡضَىٰهُ وَأَصۡلِحۡ لِي فِي ذُرِّيَّتِيٓۖ إِنِّي تُبۡتُ إِلَيۡكَ وَإِنِّي مِنَ
ٱلۡمُسۡلِمِينَ ١٥ ﴾ [الاحقاف: ١٥]
এতে কি আমি বিদ‘আতী হয়ে
গিয়েছি? নাকি আমার ইচ্ছানুযায়ী যে কোনো আয়াত পড়তে পারব?
উত্তর: যতক্ষণ পর্যন্ত আপনি এ ধারণা না করবেন যে, তা পড়া বিশেষ সুন্নাত, ততক্ষণ পর্যন্ত আপনি
ইচ্ছানুযায়ী পড়তে পারবেন, কোনো অসুবিধা নেই। কারণ বিশেষ
সুন্নাতের কোনো ভিত্তি নেই কিন্তু যেহেতু আল্লাহ বলেছেন: তোমার যা সহজ হয় তাই পড়। [সূরা মুজ্জাম্মেল ২০]। কাজেই আপনার পক্ষে যা
সহজ হয় তা যদি পড়েন তবে কোনো অসুবিধা নেই। কিন্তু যদি এ বিশেষ দু’টি
আয়াত সুন্নাত হিসাবে পড়ে থাকেন তাহলে এর কোনো ভিত্তি নেই। কারণ শরীয়তে বিদ‘আতের কোনো স্থান নেই এবং বিনা প্রমাণে কেউ বলবে না যে, তা সুন্নাত এবং তা বিদ‘আত। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«من عمل عملا ليس عليه أمرنا فهو
رد»
“যে ব্যক্তি এমন কোনো আমল করবে যা আমার শরীয়ত
সমর্থিত নয় তা প্রত্যাখ্যাত।”[17]
আপনি যদি মনে করেন যে, এ দু’টি আয়াত অত্যন্ত মহৎ এবং তা পড়তে ভালোবাসেন কিন্তু আপনার এ
বিশ্বাস নেই যে তা পড়া বিশেষ সুন্নাত, তাহলে আপনি তা পড়তে
পারেন, কোনো অসুবিধা নেই।
জুম‘আর পরে যোহরের সালাত পড়ার হুকুম
প্রশ্ন: একটি দেশে প্রায় পয়ত্রিশটি মাসজিদ রয়েছে
যার মধ্যে জুম‘আর সালাত আদায় করা হয়, মুসল্লিগণ
জুম‘আর সালাত আদায়ের পর আবার যোহরের সালাত পড়ে থাকে, এটা জায়েয কি না?
উত্তর: শর‘ঈ প্রমাণ এবং প্রয়োজনের দ্বারা বুঝা
যায় যে, প্রাপ্ত বয়স্ক, স্বাধীন ও
মুকীম পুরুষদের ব্যাপারে একটি ফরয আদায়ের জন্যই আল্লাহ তা‘আলা
যোহরের সময় জুম‘আর সালাত পড়ার বিধান করেছেন। কাজেই মুসলিমগণ
যখন তা আদায় করবে তখন আর দ্বিতীয় কোনো ফরয আদায় করতে হবে না, না
যোহর এবং না অন্য কোনো সালাত বরং জুম‘আর সালাতই সেই সময়ের ফরয।
নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম, তাঁর
সাহাবীবৃন্দ এবং তাদের পরবর্তী সালাফগণ জুম‘আর সালাত আদায়ের
পর অন্য কোনো সালাত আদায় করতেন না। বরং আপনি যা উল্লেখ করেছেন তা তাদের কয়েক যুগ
পর আবিষ্কৃত হয়েছে। এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, তা একটি নব আবিষ্কৃত
বিদ‘আত যার সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«إياكم ومحدثات الأمور فإن كل محدثة بدعة وكل
بدعة ضلالة»
“(দ্বীনে) নব রচিত কর্মসমূহ হতে সাবধান থাক!
কেননা প্রতিটি নব রচিত কর্ম হচ্ছে বিদ‘আত এবং সকল বিদ‘আত হচ্ছে ভ্রষ্টতা।”[18]
তিনি আরো বলেন: (من أحدث
في أمرنا هذا ما ليس منه فهو رد)
“যে ব্যক্তি আমাদের এ দ্বীনের মধ্যে নতুন কোনো জিনিস
আবিষ্কার করবে যা এর অন্তর্ভুক্ত নয়, তা প্রত্যাখ্যাত।”
এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, জুম‘আর সালাতের পর যোহরের সালাত পড়া একটি নতুন কাজ যা রাসূলের
সুন্নাতে নেই, কাজেই তা প্রত্যাখ্যাত এবং তা বিদ‘আত ও ভ্রষ্টতার অন্তর্ভুক্ত; যা থেকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে সতর্ক করেছেন। আলেমগণও এ ব্যাপারে
সতর্ক করে দিয়েছেন। তাদের মধ্যে জামাল উদ্দীন আল কাসেমী তার (বিদ‘আত
ও দিবস পালন থেকে মাসজিদের সংস্কার) নামক কিতাবে, আল্লামা মুহাম্মদ
আহমাদ আব্দুস সালাম তার (সুন্নাত ও বিদ‘আত) নামক কিতাবে
সতর্ক করেছেন।
যদি কেউ বলে যে, জুম‘আর সালাত সঠিক না হওয়ার ভয়ে আমরা এটা সতর্কতামূলক করে থাকি। এর
উত্তরে প্রশ্নকারীকে বলা যায় যে, আসল হলো জুম‘আর
সালাত সঠিক হয়ে যাওয়া এবং যোহরের সালাত ওয়াজিব না হওয়া বরং যার উপর জুম‘আ ফরয তার জন্য জুম‘আর সময় যোহরের সালাত
জায়েয না হওয়া। সতর্কতামূলক পালন করা হয় তখন, যখন সুন্নাত
গোপনীয় থাকে এবং মনে সন্দেহ জাগে।
কিন্তু এ ক্ষেত্রেতো কোনো সন্দেহ হওয়ার কথা নয়, বরং আমরা প্রমাণের ভিত্তিতে জানি যে, ওয়াজিব
হচ্ছে শুধু জুম‘আর সালাত, কাজেই এ সময়ে
জুম‘আর পরিবর্তে অন্য কোনো সালাত পড়া জায়েয নেই এবং তা সঠিক
না হওয়ার অজুহাতে এর সাথে অন্য সালাত যোগ করাও জায়েয নেই। দ্বীনের প্রয়োজনে জানা
যায় যে, এতে নতুন কোনো বিধান তৈরী করা যার কোনো নির্দেশ
আল্লাহ দেননি এবং এ সময়ে যোহরের সালাত পড়া শর‘ঈ প্রমাণের
পরিপন্থী। কাজেই তা ত্যাগ করে এ থেকে সতর্ক থাকতে হবে এবং তা করার নির্ভরযোগ্য
কোনো কারণ নেই বরং তা মানুষকে সঠিক পথ থেকে দূরে রাখার জন্য শয়তানের কুমন্ত্রণা
এবং আল্লাহর নির্দেশ বহির্ভূত দ্বীনের বিধান গড়া। যেমন কারো কারো জন্য সতর্কতামূলক
অজু করার কুমন্ত্রণা দিয়ে থাকে ফলে তাকে অজুর মাধ্যমে কষ্ট দেয়, যা থেকে সে সহজে
সরতে পারে না। যখনই সে অজু শেষ করতে চায় তখনই কুমন্ত্রণা দেয় যে তার অজু সঠিক হয়নি, এটা করেনি সেটা করেনি, এমনিভাবে কেউ কেউ সালাতে
তাকবীরে তাহরিমার সময় কুমন্ত্রণা দেয় যে, তাকবীর দেয় নি তখন
সে একের পর এক তাকবীর দিতে থাকে ফলে দেখা যায় সে তাকবীর দিতে দিতে ইমাম ক্বেরাত
শেষ করে ফেলে বা রাকাত শেষ করে ফেলে। এটি শয়তানের কুমন্ত্রণা এবং কোনো মুসলিমের
আমল বাতিল করা ও তার আমলে ভেজাল লাগানোর জন্য তার প্রচেষ্টা।
শয়তানের কুমন্ত্রণা ও ষড়যন্ত্র থেকে আমাদের এবং
সকল মুসলিমের জন্য আল্লাহর নিকট নিরাপত্তা ও সুস্থতা চাচ্ছি। নিশ্চয় তিনি
প্রার্থনা গ্রহণকারী।
মোটকথা জুম‘আর সালাতের পর
যোহরের সালাত পড়া বিদ‘আত, পথভ্রষ্টতা
এবং আল্লাহর নির্দেশের বাহিরে শরিয়ত গড়া। কাজেই তা ছেড়ে দিয়ে নিজেরা এ থেকে সতর্ক
থাকা, সধারণ মানুষকে সতর্ক করা এবং শুধু জুম‘আর
সালাত আদায় করা ওয়াজিব। যেমন এর উপর চলেছেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাহাবীগণ এবং বর্তমান পর্যন্ত তাদের
অনুসারীগণ। আর তা-ই নিঃসন্দেহে সত্য। ইমাম মালেক ইবন আনাস রাহেমাহুল্লাহ বলেন ‘‘এ উম্মাতের পরবর্তী লোকগণকে তা-ই সংশোধন করতে পারবে যা
পূর্ববর্তীগণকে সংশোধন করেছিল’’। এমনিভাবে তার পূর্বের এবং
পরের ইমামগণও এ কথা বলেছেন।
তারাবীর সালাতে
সালামের পর পর নবীর উপর জোরে আওয়াজ করে দুরুদ পাঠ করার হুকুম
প্রশ্ন: সৌদী আরব থেকে একজন জিজ্ঞাসা করেছেন যে, তারাবীর সালাতে সালামের পর পর নবীর উপর জোরে আওয়াজ করে দুরুদ পাঠ
করা এবং খলিফাদের উপর রাদিয়াল্লাহু আনহুম পাঠ করার হুকুম কি?
উত্তর: আমরা যতটুকু জানি, শরিয়তে
এর কোনো ভিত্তি নেই। বরং এটি একটি নব আবিষ্কৃত বিদ‘আত। কাজেই
তা ছেড়ে দেওয়া উচিৎ, এ উম্মাতের পরবর্তী লোকগণকে তা-ই সংশোধন
করতে পারবে যা পূর্ববর্তীগণকে সংশোধন করেছিল। আর তা হচ্ছে: কুরআন ও হাদীসের অনুসরণ
করা এবং এ উম্মাতের সালাফগণ যে পথে চলেছেন সে পথে চলে এবং এর পরিপন্থী বিষয় থেকে
সতর্ক থাকা।
কুরআন পাঠ শেষে (সদাকাল্লাহুল আযীম) বলার
হুকুম
প্রশ্ন: আমি এ কথা বলতে বহু শুনেছি যে, কুরআন তেলাওয়াত শেষে (সদাকাল্লাহুল আযীম) বলা বিদ‘আত, আবার কেউ কেউ বলেন: এটি বলা জায়েয।
তাদের দলীল হলো আল্লাহর বাণী:
﴿ قُلۡ صَدَقَ ٱللَّهُۗ فَٱتَّبِعُواْ مِلَّةَ
إِبۡرَٰهِيمَ حَنِيفٗاۖ﴾ [ال عمران: ٩٥]
“বলুন: আল্লাহ সত্য বলেছেন, কাজেই
তোমরা ইব্রাহীম এর সঠিক মিল্লাত অনুসরণ কর।” [সূরা আল ইমরান/৯৫]
এমনিভাবে কিছু শিক্ষিত লোক আমাকে বলেছেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন
তেলাওয়াতকারীকে থামতে বলতেন তখন তিনি বলতেন ‘‘যথেষ্ট হয়েছে
থাম’’ কিন্তু (সদাকাল্লাহুল আযীম) বলতেন না। আমার প্রশ্ন
হচ্ছে: কুরআন তেলাওয়াত শেষে (সদাকাল্লাহুল ‘আযীম) বলা জায়েয কি ? এ
ব্যাপারে বিস্তারিত বলার জন্য অনুরোধ করছি।
উত্তর: কুরআন তেলাওয়াত শেষে অধিকাংশ লোকের
(সদাকাল্লাহুল ‘আযীম) বলাটা অভ্যাস হয়ে গেছে অথচ এর কোনো ভিত্তি নেই। আর এর অভ্যাস
করাও ঠিক নয়। বরং তা শর‘ঈ নিয়মের ভিত্তিতে বিদ‘আতের
অন্তর্ভুক্ত, যে ব্যক্তি মনে করবে যে তা বলা সুন্নাত তাকে
অবশ্যই তা বলা ত্যাগ করতে হবে। যেহেতু এর কোনো দলীল নেই বিধায় এর অভ্যাস করাও ঠিক
নয়। আর আল্লাহর বাণী: (قل صدق الله) এ (কুরআন পাঠ শেষের) ব্যাপারে
বলা হয়নি, বরং এখানে আল্লাহ তা‘আলা
রাসূলকে বলেছেন তিনি যেন আহলে কিতাবদের বলে দেন যে, তাওরাত ও
অন্যান্য কিতাবে যা বর্ণনা করেছেন তা তিনি সত্য বলেছেন এবং কুরআনে তার বান্দাদের
জন্য যা বলেছেন এ ব্যাপারে তিনি সত্যবাদী। কিন্তু তা প্রমাণ করে না যে, কুরআন তেলাওয়াত বা কিছু আয়াত অথবা কোনো সূরা পাঠ শেষে তা বলা
মুস্তাহাব, কেননা এর কোনো প্রমাণ নেই এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার সাহাবীগণ থেকে তা সাব্যস্ত নেই।
আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এর উপর সূরা নিসার প্রথম থেকে পাঠ করে
فَكَيْفَ
إِذَا جِئْنَا مِن كُلِّ أمَّةٍ بِشَهِيدٍ وَجِئْنَا بِكَ عَلَى هَـؤُلاء شَهِيداً
পর্যন্ত পৌঁছেন তখন রাসূল তাকে বললেন: ‘হাসবুকা’ حسبك
ইবনে মাসউদ বলেন: অতঃপর আমি রাসূলের দিকে তাকিয়ে
দেখলাম তাঁর দু চোখ দিয়ে অশ্রু ঝরছে অর্থাৎ উল্লেখিত আয়াতে কিয়ামতের দিন তাঁর মহা
অবস্থানের কথা স্মরণ করে তিনি কাঁদছেন। আয়াতে বলা হয়েছে, হে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম, আপনাকে আপনার
উম্মতের উপর সাক্ষী হিসাবে আনা হবে। যতটুকু জানি, আলেমগণের কেউ বলেননি যে, রাসূলের (হাসবুকা) বলার পর ইবনে মাসউদ (সদাকাল্লাহুল ‘আযীম)
বলেছেন।
তেলাওয়াতকারীর (সদাকাল্লাহুল আযীম) বলে পড়া শেষ
করা শরীয়তে এর কোনো ভিত্তি নেই, কিন্তু কোনো কারণে যদি কেউ
কখনো তা বলে ফেলে তাহলে অসুবিধা নেই।
ঈদের সালাতের
পূর্বে জামাতবদ্ধভাবে তাকবীর দেওয়ার হুকুমের ব্যাপারে বিস্তারিত বর্ণনা
প্রশংসা সেই আল্লাহর যিনি বিশ্বের প্রতিপালক, সালাত ও সালাম বর্ষিত হোক আমাদের নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর, তাঁর পরিবার
পরিজন এবং তাঁর সকল সাহাবীগণের উপর। অতঃপর শাইখ আহমাদ ইবন মুহাম্মদ জামাল (আল্লাহ
তার পছন্দনীয় ব্যাপারে তাকে তাওফীক দান করুন) কিছু এলাকা ভিত্তিক দৈনিক পত্রিকায়
যা প্রচার করেছেন তা অবগত হয়েছি। মাসজিদে ঈদের সালাতের পূর্বে জামাতবদ্ধভাবে
তাকবীর দেওয়া বিদ‘আত হিসাবে নিষেধ করায় তিনি আশ্চর্য্যবোধ
করেছেন। তিনি তার উল্লেখিত লেখায় চেষ্টা করেছেন জামাতে তাকবীর দেওয়ার দলীল পেশ করে
বলতে যে, তা বিদ‘আত নয় এবং তা থেকে নিষেধ
করা ঠিক নয়, তার এ মতকে কিছু লেখকও সমর্থন দিয়েছেন।
যে ব্যক্তির আসল ব্যাপার জানা নেই,
তার উপর গড়মিল লাগার ভয়ে স্পষ্ট করে বলতে চাই যে, তাকবীর
দেওয়ার সঠিক নিয়ম হলো: ঈদের রাত্রি, রমাযানে ঈদের সালাতের
পূর্বে, যিল- হজ্জের প্রথম দশ দিন এবং তাশরিকের দিনগুলোতে। এ
সময়গুলোতে তাকবীর দেওয়া শরীয়তসম্মত এবং এতে বহু ফযিলত রয়েছে। ঈদুল ফিতরে তাকবীর
দেওয়ার প্রমাণ হলো:
﴿ وَلِتُكۡمِلُواْ ٱلۡعِدَّةَ وَلِتُكَبِّرُواْ ٱللَّهَ عَلَىٰ مَا هَدَىٰكُمۡ
وَلَعَلَّكُمۡ تَشۡكُرُونَ ﴾ [البقرة: ١٨٥]
“যেন
তোমরা গণনা পূরণ কর এবং তোমাদেরকে হেদায়েত দান করার কারণে আল্লহর মহত্ত্ব বর্ণনা
কর এবং তোমরা যেন কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন কর। [সূরা বাকারা/১৮৪]
জিল হজ্জের প্রথম দশ দিন এবং তাশরিকের দিনগুলোতে
তাকবীর দেওয়ার প্রমাণ হলো:
﴿ لِّيَشۡهَدُواْ مَنَٰفِعَ لَهُمۡ وَيَذۡكُرُواْ ٱسۡمَ ٱللَّهِ فِيٓ أَيَّامٖ
مَّعۡلُومَٰتٍ عَلَىٰ مَا رَزَقَهُم مِّنۢ بَهِيمَةِ ٱلۡأَنۡعَٰمِۖ ﴾ [الحج: ٢٨]
“যাতে
তারা তাদের কল্যাণের স্থান পর্যন্ত উপস্থিত হতে পারে এবং তিনি তাদেরকে চতুস্পদ জন্তু
হতে যা রিযিক হিসাবে দিয়েছেন ওর উপর নির্দিষ্ট দিনগুলোতে আল্লাহর নাম স্মরণ করতে
পারে। [সূরা হজ্জ/২৮]
এবং
﴿ ۞وَٱذۡكُرُواْ ٱللَّهَ فِيٓ أَيَّامٖ مَّعۡدُودَٰتٖۚ ﴾ [البقرة: ٢٠٣]
“আর তোমরা নির্দিষ্ট দিনগুলোতে আল্লাহকে স্মরণ
কর। [সূরা বাকারা/২০৩]
এ নির্দিষ্ট দিনগুলোতে যে যিকির পাঠ করা বৈধ তা
হলো: তাকবীরে মুতলাক ও মুকাইয়াদ বা সাধারণ তাকবীর ও নির্দিষ্ট তাকবীর। আর এর
প্রমাণ হলো হাদীস ও সালাফ তথা সম্মানিত পূর্বসূরীদের আমল।
বৈধ তাকবীরের নিয়ম হলো: প্রত্যেক মুসলিম একাকী
জোরে আওয়াজ করে তাকবীর দিবে যেন অন্যরা শুনতে পায়, অতঃপর
তারাও শুনে শুনে তাকবীর দিবে।
আর জামাতবদ্ধভাবে বিদ‘আতী
তাকবীর হলো: দুইজন বা ততোধিক লোক একসাথে একই সুরে নির্দিষ্ট শব্দে আওয়াজ করে
তাকবীর দিবে, একসাথে শুরু করবে এবং এক সাথেই শেষ করবে, এ পদ্ধতির যেমন কোনো ভিত্তি নেই তেমনি এর কোনো দলীলও নেই, বরং তা তাকবীরের শব্দের ক্ষেত্রে বিদ‘আত; যা করার প্রমাণ আল্লাহ অবতীর্ণ করেননি। কাজেই যে ব্যক্তি এ রকম
তাকবীরের নিন্দা করবে সে হক্বের উপর থাকবে। কারণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাণী হলো,
«من عمل عملا ليس عليه أمرنا فهو رد»
“যে ব্যক্তি এমন কোনো আমল করবে যা আমার শরীয়ত
সমর্থিত নয় তা প্রত্যাখ্যাত।”
এবং তাঁর বাণী :
«وإياكم ومحدثات الأمور فإن كل محدثة بدعة
وكل بدعة ضلالة»
“(দ্বীনে) নব রচিত কর্মসমূহ হতে সাবধান থাক!
কেননা প্রতিটি নব রচিত কর্ম হচ্ছে বিদ‘আত এবং সকল বিদ‘আত হচ্ছে ভ্রষ্টতা।”[19]
আর জামাতবদ্ধভাবে তাকবীর দেওয়া যেহেতু নব আবিষ্কৃত
কাজ সুতরাং তা বিদ‘আত, আর মানুষ যদি
শরীয়ত বিরোধী কোনো আমল করে তবে অবশ্যই এর নিন্দা করতে হবে এবং তাদেরকে নিষেধ করতে
হবে, কেননা ইবাদত হলো “তাওক্বীফী” বা কুরআন ও হাদীসের উপর
সীমাবদ্ধ, কাজেই কুরআন ও হাদীস যা প্রমাণ করবে শুধু তাই করা
বৈধ। আর শর‘ঈ প্রমাণের বিরোধী মানুষের কোনো কথা ও মতামত কোনো
প্রমাণ হতে পারে না, এমনিভাবে ‘মাসালেহ মুরসালা’ বা
‘জনস্বার্থ’ ইবাদতের ক্ষেত্রে প্রমাণ হতে পারে না। বরং ইবাদত সাব্যস্ত হয় কুরআন, হাদীস ও সুস্পষ্ট ‘ইজমা’র দ্বারা।
বৈধ তাকবীর হলো : শর‘ঈ প্রমাণের ভিত্তিতে তাকবীরের
যে শব্দ এবং পদ্ধতি সাব্যস্ত আছে, এর দ্বারা কোনো মুসলিম
একাকী তাকবীর দেওয়া বৈধ।
সৌদী আরবের মুফতী মহামান্য শাইখ মুহাম্মদ ইবন ইব্রাহীম
জামাতী তাকবীরের নিন্দা করে তা নিষেধ করেছেন এবং এ ব্যাপারে ফাতাওয়াও প্রকাশ
করেছেন এবং আমার নিকট থেকেও এর নিন্দার বহু ফাতাওয়া প্রকাশিত হয়েছে। এমনিভাবে
ফাতাওয়া ও গবেষণার স্থায়ী কমিটির পক্ষ থেকে তা নিষেধের ফাতাওয়া বের হয়েছে। আর শাইখ
হামূদ ইবন আব্দুল্লাহ আল তুয়াইজিরী তা নিন্দা করা ও নিষেধের ব্যাপারে মূল্যবান
পুস্তক লিখেছেন এবং তা ছাপিয়ে প্রচার করা হচ্ছে, এতে তিনি
জামাতী তাকবীর নিষেধের যথেষ্ট প্রমাণাদি নিয়ে এসেছেন।
আর ইবন উমর এবং অন্যান্য লোকজনের মিনাতে তাকবীর
দেওয়ার ব্যাপারে শাইখ আহমাদ যে প্রমাণ পেশ করেছেন এর মধ্যে জামাতে তাকবীর দেওয়ার
কোনো দলীল নেই, কারণ ইবন উমর ও লোকজনের মিনাতে তাকবীর দেওয়া জামাতবদ্ধভাবে
ছিল না বরং তা ছিল শর‘ঈ তাকবীর। কেননা সুন্নাতের উপর আমল
করতে গিয়ে মানুষকে স্মরণ করিয়ে দেওয়ার জন্য তিনি একাকী জোরে আওয়াজ করে তাকবীর
দিতেন এবং তা শুনে লোকজনও আলাদা আলাদাভাবে তাকবীর দিত। এতে ইবন উমর ও লোকজনের
মধ্যে এমন কোনো কথা হয়নি যে, তারা জামাতবদ্ধভাবে একই সুরে
একসাথে শুরু করবে এবং একসাথে শেষ করবে, যেমন বর্তমানে লোকজন
জামাতী তাকবীর দিয়ে থাকে। এমনিভাবে সলফে সালেহীন থেকে তাকবীরের ব্যাপারে যত বর্ণনা
আছে তা সবই শর‘ঈ পদ্ধতির উপর সীমাবদ্ধ। যে ব্যক্তি এর উল্টা
বুঝবে তার প্রমাণ পেশ করা উচিৎ। তদ্রূপ ঈদের সালাত, তারাবীহ, রাত্রির সালাত এবং বিতর সালাতের জন্য মানুষকে ডাকা সবই বিদ‘আত, এর কোনো ভিত্তি নেই।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম থেকে বহু সহীহ হাদীস এসেছে যে, তিনি ঈদের সালাত
আযান এবং ইকামা ব্যতীত আদায় করেছেন। আমার জানা মতে কোনো আলেম বলেননি যে, মানুষকে ডাকার জন্য নির্দিষ্ট শব্দ রয়েছে। আর যে ব্যক্তি তা বলবে
সে যেন প্রমাণ পেশ করে, আসলে এর কোনো প্রমাণ নেই। যে কোনো ইবাদত
কথা হোক বা কাজ হোক কুরআন ও হাদীসের বিনা দলীলে কারো জন্য সাব্যস্ত করা উচিৎ নয়।
যেমন পূর্বে বলা হয়েছে।
বিদ‘আত প্রচলনের নিষেধ এবং এ থেকে
সতর্ক থাকার শর‘ঈ প্রমাণাদি থাকার কারণে বিদ‘আত
প্রচলন করা উচিৎ নয়। যেমন আল্লাহ তা‘আলার বাণী:
﴿ أَمۡ لَهُمۡ شُرَكَٰٓؤُاْ شَرَعُواْ لَهُم مِّنَ ٱلدِّينِ مَا لَمۡ يَأۡذَنۢ
بِهِ ٱللَّهُۚ﴾ [الشورا: ٢١]
“তাদের কি শরীক রয়েছে যারা তাদের জন্য দ্বীনের
বিধান গড়বে যার অনুমতি আল্লাহ তাদের দেননি। [সূরা শূরা/২১]
এবং পূর্বে উল্লেখিত দু’টি
হাদীস, আর তা হলো:
নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«من أحدث في أمرنا هذا ما ليس منه فهو رد»
“যে ব্যক্তি আমার এ দ্বীনের মধ্যে নতুন কোনো জিনিস
সৃষ্টি করবে যা এর অন্তর্ভুক্ত নয় তা প্রত্যাখ্যাত”।
আর জুম‘আর খুৎবায় তাঁর ভাষণ
ছিল:
«أما بعد، فإن خير الحديث كتاب الله وخير
الهدي هدي محمد صلى الله عليه وسلم وشر الأمور محدثاتها وكل بدعة ضلالة»
“অতঃপর
সর্বোত্তম বাণী হলো: আল্লাহর কিতাব এবং সর্বোত্তম হেদায়েত হলো: মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হেদায়েত। আর নিকৃষ্টতর কাজ হলো এর নব আবিষ্কৃত কাজ, এবং প্রতিটি বিদ‘আতই ভ্রষ্টতা।” এ অর্থে বহু হাদীস ও বাণী রয়েছে।
আল্লাহর নিকট আমাদের জন্য এবং শাইখ আহমাদসহ সকল
মুসলিম ভাইয়ের জন্য দ্বীন সম্পর্কে বুঝার এবং এর উপর কায়েম থাকার তাওফীক প্রার্থনা
করছি, আমাদের সকলকে যেন সঠিক পথের পথ প্রদর্শক করে হক্ব
প্রতিষ্ঠার সহযোগী বানিয়ে দেন, এবং আমাদেরসহ সকল মুসলিমকে
যেন এর পরিপন্থী বিষয়গুলো থেকে রক্ষা করেন। নিশ্চয়ই তিনি মহান করুনাময়। সালাত ও
সালাম বর্ষিত হোক নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর
উপর তাঁর পরিবার পরিজন এবং তাঁর সকল সাহাবীগণের উপর।
নির্বাহী পরিচালক
দাওয়া, ইরশাদ, ফাতওয়া ও গবেষণা
অফিস
আল্লামা আব্দুল আযীয ইবন আব্দুল্লাহ ইবন বায র:
সুফীদের
নিকট আল্লাহর যিকিরের পদ্ধতি
প্রশ্ন: সুফীগণ আল্লাহর গুণাবলীর যিকির বাদ দিয়ে
শুধু ‘আল্লাহ’ শব্দের যিকির করে কেন?
সাধারণ মুসলিমগণ কেন শুধু ‘আল্লাহ’ শব্দের যিকির
না করে কালেমায়ে তাওহীদ এবং আল্লাহর গুণাবলীর যিকির করে?
সুফীগণ বলে: (আল্লাহ) শব্দের যিকির অধিক মূল্যবান, কিন্তু সাধারণ মুসলিমগণ বলে: (লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ) এর যিকির
অধিক মূল্যবান।
উত্তর: কুরআনের আয়াত এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে সাব্যস্ত বহু সহীহ হাদীস প্রমাণ করে
যে, সর্বোৎকৃষ্ট বাণী হচ্ছে: কালেমায়ে তাওহীদ তথা (লা-ইলাহা
ইল্লাল্লাহ) যেমন রাসূলের বাণী:
«الإيمان بضع وسبعون شعبة فأفضلها قول لا إله
إلا الله»
“ঈমানের সত্তরেরও অধিক শাখা রয়েছে,
তন্মধ্যে সর্বোৎকৃষ্ট হচ্ছে: লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলা।”[20]
তিনি আরও বলেন:
«أحب الكلام إلى الله أربع: سبحان الله،
والحمد لله، ولاإله إلا الله، والله أكبر»
“আল্লাহর
নিকট সবচেয়ে প্রিয় কথা হচ্ছে চারটি: সুবহানাল্লাহ, আলহামদু
লিল্লাহ, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ এবং আল্লাহু আকবার।”[21]
আল্লাহ তা‘আলা তার
মহাগ্রন্থ আল-কুরআনে বহু জায়গায় এ কালেমা উল্লেখ করেছেন।
তন্মধ্যে আল্লাহর বাণী:
﴿ شَهِدَ ٱللَّهُ أَنَّهُۥ لَآ إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ ﴾ [ال عمران: ١٨]
“আল্লাহ সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, আল্লাহ
ব্যতীত অন্য কোনো যোগ্য উপাসক নেই। [সূরা আল ইমরান/১৮]
এবং
﴿ فَٱعۡلَمۡ أَنَّهُۥ لَآ إِلَٰهَ إِلَّا ٱللَّهُ وَٱسۡتَغۡفِرۡ لِذَنۢبِكَ
﴾ [محمد: ١٩]
“সুতরাং জেনে রাখুন, আল্লাহ
ব্যতীত অন্য কোনো যোগ্য উপাসক নেই, কাজেই আপনি আপনার পদস্খলনের
জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন।” [সূরা মুহাম্মদ/১৯]
সকল মুসলিমের উচিৎ হলো এ কালেমা (লা-ইলাহা
ইল্লাল্লাহ) দ্বারা যিকির করা এবং সাথে ‘সুবহানাল্লাহ’, ‘আলহামদু
লিল্লাহ’, ‘আল্লাহু আকবার’, ‘লা হাওলা
অলা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’ যোগ করা। এ সবগুলোই বৈধ এবং ভালো বাক্য।
আর সুফীদের যিকির হলো: আল্লাহ্ আল্লাহ্, অথবা হু হু। এটি হলো বিদ‘আত,
এগুলো দ্বারা যিকির করা বৈধ নয়, কারণ তা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তাঁর কোনো সাহাবী থেকে সাব্যস্ত নেই,
বিধায় তা বিদ‘আত। কেননা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«من عمل عملا ليس عليه أمرنا فهو رد»
“যে ব্যক্তি এমন কোনো আমল করবে যা আমার শরিয়তে নেই তা
প্রত্যাখ্যাত।”
এবং তাঁর বাণী:
«من أحدث في أمرنا هذا ما ليس منه فهو رد»
متفق عليه
“যে
ব্যক্তি আমার এ দ্বীনের মধ্যে নতুন কোনো জিনিস সৃষ্টি করবে যা এর অন্তর্ভুক্ত নয়, তা প্রত্যাখ্যাত। [বুখারী ও মুসলিম]
সুতরাং ‘আল্লাহ’ ‘আল্লাহ’ এর দ্বারা আমল করা
জায়েয নেই এবং আমল করলেও গ্রহণযোগ্য হবে না। কাজেই আল্লাহ যা শরিয়ত করেননি তা
দ্বারা ইবাদত করা পূর্বোল্লেখিত হাদীসের ভিত্তিতে কোনো মুসলিমের পক্ষে জায়েয নেই।
কারণ আল্লাহ তা‘আলা মুশরিকদের নিন্দা করে বলেছেন:
﴿ أَمۡ لَهُمۡ شُرَكَٰٓؤُاْ شَرَعُواْ لَهُم مِّنَ ٱلدِّينِ مَا لَمۡ يَأۡذَنۢ
بِهِ ٱللَّهُۚ ﴾ [الشورى: ٢١]
“তাদের
কি শরীক রয়েছে যারা তাদের জন্য দ্বীনের বিধান গড়বে যার অনুমতি আল্লাহ তাদের দেননি।
[সূরা শূরা/২১]
আল্লাহ সকলকে তার পছন্দনীয় কাজ করার তাওফীক দান
করুন।
শির্ক ও বিদ‘আতী কিছু কাজের বর্ণনা এবং মুক্তিপ্রাপ্ত দলের হাকীকত:
প্রশ্ন: নিম্নোক্ত কাজগুলো যারা করে তাদের
ব্যাপারে আল্লাহ ও তার রাসূলের হুকুম কি?
তারা আযানের শব্দে বলে থাকে:
«أشهد أن عليا ولي الله، وحي على خيرالله وعلى
عترة محمد وعلى خير العترة»
(আশহাদু
আন্না ‘আলিয়্যান অলিয়্যুল্লাহ, হাই আলা খাইরিল্লাহ, অ-আলা ইতরাতি মুহাম্মদ, অ-আলা খাইরিল
ইতরাহ)।
আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আলী
হচ্ছে আল্লাহর অলী, তোমরা আল্লাহর ভালোর দিকে এসো, মুহাম্মদের পরিবারের দিকে এবং সবচেয়ে ভালো পড়শীর দিকে এসো।
আর যদি তাদের কেউ মৃত্যুবরণ করে তবে তার আত্মীয়
স্বজন একটি বকরী জবাই করে থাকে যার নাম দেয় আকীকা এবং কোনো হাড্ডি ভাঙ্গবে না, অতঃপর হাড্ডি ও গোবরগুলো কবর দিয়ে দেয়। তারা ধারণা করে যে, এটিই ভালো কাজ, তা করা অবশ্যই জরুরী। এ
ক্ষেত্রে যে ব্যক্তি সুন্নাতে মুহাম্মাদীয়ার উপর আছে এবং তাদের সাথে বংশীয় সম্পর্ক
রয়েছে তার ভূমিকা কি? তাদেরকে ভালোবাসা, তাদেরকে
সম্মান করা, তাদের দাওয়াত গ্রহণ করা এবং তাদের সাথে বিবাহ
সম্পর্ক গড়া কি জায়েয? প্রকাশ থাকে যে, তারা
তাদের এ আকীদা প্রকাশ্যে বাস্তবায়ন করে এবং তারা বলে তারাই মুক্তিপ্রাপ্ত দল, তারা হক্বের উপর আছে আর আমরা বাতিলের উপর আছি।
উত্তর: আল্লাহ তা‘আলা তার নবীর
জবান দিয়ে আযান এবং ইকামাতের শব্দগুলো বলে দিয়েছেন। আব্দুল্লাহ ইবন যায়েদ ইবন আব্দু
রব্বিহ আল আনসারী স্বপ্নে আযানের শব্দগুলো দেখলে রাসূলের নিকট গিয়ে জানালেন, তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বললেন: (এ স্বপ্নটি সত্য)।[22]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন,
বেলালকে যেন তা জানিয়ে দেন এর দ্বারা আযান দেওয়ার জন্য, কারণ
তার আওয়াজ উঁচু। অতঃপর বেলাল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু রাসূলের
মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত এ শব্দ দ্বারাই আযান দিতেন। তার আযানে প্রশ্নে উল্লেখিত
শব্দগুলো ছিল না।
এমনিভাবে আব্দুল্লাহ ইবন উম্মে মাকতুম রাদিয়াল্লাহু
‘আনহু মাঝে মধ্যে রাসূলের সামনে আযান দিতেন, তার
আযানেও এ ধরনের শব্দ ছিল না। রাসূলের সামনে বেলালের আযানের হাদীসগুলো বুখারী ও
মুসলিমসহ অন্যান্য হাদীসে এসেছে, তদ্রূপ আবু মাহযুরার আযান
যা তিনি মক্কায় দিতেন, তাতেও এ শব্দগুলো ছিল না। তার আযানের
শব্দগুলোও সহীহ মুসলিমসহ অন্যান্য হাদীসে এসেছে। এতে বুঝা যায় যে, আযানে
এ শব্দগুলো বলা বিদ‘আত, অবশ্যই তা
ত্যাগ করতে হবে। কারণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
“যে ব্যক্তি আমার এ দ্বীনের মধ্যে নতুন কোনো জিনিস
আবিষ্কার করবে যা এর অন্তর্ভুক্ত নয় তা প্রত্যাখ্যাত।”
অন্য বর্ণনায় :
“যে ব্যক্তি এমন কোনো আমল করবে যা আমার শরীয়ত
সমর্থিত নয় তা প্রত্যাখ্যাত।”
এবং জুম‘আর খুৎবায় তিনি
বলেছিলেন :
“অতঃপর
সর্বোত্তম বাণী হলো: আল্লাহর কিতাব এবং সর্বোত্তম হেদায়েত হলো: মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হেদায়েত, আর নিকৃষ্টতর কাজ হলো এর নব আবিষ্কৃত কাজ, এবং প্রতিটি বিদ‘আতই ভ্রষ্টতা।” [দেখুন: সহীহ
মুসলিম] এ অর্থে বহু হাদীস ও বাণী রয়েছে।
অথচ সকল খলীফা তাদের মধ্যে আলী এবং সকল সাহাবী
আযানের ক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম যে পথে চলেছেন তারাও সে পথেই চলেছেন, এ ধরনের
কোনো শব্দ তারা ব্যবহার করেননি।
আলী রাদিয়াল্লাহু
‘আনহু কূফায় প্রায় পাঁচ বছর খলিফা হিসাবে ছিলেন তখন তার সম্মুখে বেলালের আযান
দেওয়া হতো, প্রশ্নে উল্লেখিত শব্দগুলো যদি আযানে থাকত তবে
আযানের মধ্যে বলতে তিনি কোনো ভয় করতেন না, কেননা তিনি সকল
সাহাবী থেকে রাসূলের সুন্নাত ও জীবন সম্পর্কে অধিক জানতেন।
আর কিছু কিছু লোক আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু সম্পর্কে
যা বলে যে, তিনি আযানের মধ্যে (হাইয়া আলা খাইরিল্লাহ) বলতেন, এর সত্যতার কোনো ভিত্তি নেই।
ইবনে উমর এবং আলী ইবন হুসাইন যয়নুল আবেদীন তার
পিতা থেকে, তাদের নিকট যে বর্ণনা এসেছে যে, তারা
আযানের মধ্যে (হাই ‘আলা খাইরিল্লাহ) বলতেন, তাদের থেকে এর
সত্যতা সাব্যস্তের ব্যাপারে সন্দেহ আছে, যদিও কোনো কোনো আলেম তা সহীহ বলেছেন, কিন্তু দ্বীনের ব্যাপারে তাদের জ্ঞান সম্পর্কে যতটুকু জানা যায়
তাতে এ কথার সত্যতা ঠিক করা যায় না। কারণ বেলাল ও আবু মাহযুরার আযান তাদের অজানা
নয়। আর ইবনে উমর তা শুনেছেন এবং আযানের সময় উপস্থিত ছিলেন। আর আলী ইবন হুসাইন
অন্যান্য লোকদের চেয়ে অধিক জ্ঞানী ছিলেন, কাজেই জেনে শুনে
তারা আযানের ক্ষেত্রে রাসূলের বিরোধিতা করবেন এ ধারণা করা কারো পক্ষে উচিৎ নয়।
যদিও তা মেনে নেওয়া যায় যে, তাদের
থেকে যা এসেছে তা সহীহ, আমরা বলব এটি তাদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ
অর্থাৎ মাউকুফ, আর তাদের বা অন্য কারো কথা দ্বারা সহীহ
হাদীসের মোকাবিলা করা জায়েয নেই, কেননা হাদীস এবং কুরআনই
মানুষের মধ্যে ফায়সালাকারী, যেমন আল্লাহ তা‘আলা
বলেছেন:
﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ أَطِيعُواْ ٱللَّهَ وَأَطِيعُواْ ٱلرَّسُولَ
وَأُوْلِي ٱلۡأَمۡرِ مِنكُمۡۖ فَإِن تَنَٰزَعۡتُمۡ فِي شَيۡءٖ فَرُدُّوهُ إِلَى ٱللَّهِ
وَٱلرَّسُولِ إِن كُنتُمۡ تُؤۡمِنُونَ بِٱللَّهِ وَٱلۡيَوۡمِ ٱلۡأٓخِرِۚ ذَٰلِكَ خَيۡرٞ
وَأَحۡسَنُ تَأۡوِيلًا ٥٩ ﴾ [النساء: ٥٩]
“হে
যারা ঈমান এনেছ, তোমরা আল্লাহর নির্দেশ পালন কর, নির্দেশ পালন কর রাসূলের এবং তোমাদের মধ্যে যারা ক্ষমতাসীন তাদের।
অতঃপর তোমরা যদি কোনো বিষয়ে বিবাদে লিপ্ত হয়ে পড় তাহলে তা আল্লাহ ও তার রাসূলের
প্রতি প্রত্যর্পণ কর; যদি তোমরা আল্লাহ ও কিয়ামত দিবসের
প্রতি ঈমান এনে থাক। আর এটাই কল্যাণকর এবং পরিণতির দিকে দিয়ে উত্তম। [সূরা নিসা/৫৯]
আযানের ব্যাপারে তাদের থেকে বর্ণিত এ শব্দ (হাইয়া
‘আলা খাইরিল আমাল) রাসূল থেকে সাব্যস্ত সহীহ হাদীসে আযানের শব্দে খুঁজে দেখলাম
তাতে এ শব্দগুলো নেই।
আর আলী ইবন হুসাইনের নিকট থেকে যে বর্ণনা এসেছে
যে, রাসূলের সামনে এ শব্দে আযান দেওয়া হতো, এর উত্তর হচ্ছে
যে, তিনি হয়তো প্রথম অবস্থায় যে আযান দেওয়া হতো তা উদ্দেশ্য করেছেন,
যদি তিনি তা-ই উদ্দেশ্য করেন, তবে আমি বলব, রাসূলের
জীবনে এবং তাঁর পরবর্তীতে বেলাল, ইবনে উম্মে মাকতুম এবং আবু
মাহযুরার আযানে যে শব্দে স্থায়ীভাবে আযান
দেওয়া হতো তা দ্বারা পূর্বের শব্দ রহিত হয়ে গেছে। আর তাদের আযানের মধ্যে প্রশ্নে
উল্লেখিত শব্দগুলো নেই।
তারপর আরও বলা যায়, যদি ধরে
নেওয়া হয় যে উল্লেখিত শব্দগুলো প্রাথমিক অবস্থায় রাসূলের সম্মুখে যে আযান দেওয়া হতো
তার মধ্যে ছিল, তবে তাও এখন মেনে নেওয়া যায় না,
কারণ যে শব্দে প্রথম থেকেই আযান দেওয়া হতো সে শব্দগুলো সহীহ হাদীসে রয়েছে, এ হাদীসগুলোতে উল্লেখিত শব্দগুলো নেই, বিধায় বুঝা গেল যে, তা বাতিল এবং বিদ‘আত।
তারপর আরও বলা যায়, আলী ইবন হুসাইন একজন তাবে‘ঈ, তিনি যদিও মারফূ হিসাবে অর্থাৎ রাসূল
থেকে বর্ণনা করেন তাহলেও বলব এটি মুরসাল, আর মুরসালে তাবে‘ঈ অধিকাংশ আলেমের নিকট গ্রহণযোগ্য নয়, যেমন
ইমাম আবু উমর ইবন আব্দুল বা’র কিতাবুত তামহীদে তুলে ধরেছেন।
মুরসাল হাদীসের পরিপন্থী কোনো বিষয় যদি সহীহ হাদীসে না পাওয়া যায় তাহলেও এ মুরসাল গ্রহণযোগ্য
নয়, তাহলে যেখানে এ মুরসাল হাদীসে সহীহ হাদীসের বিরোধী
কথা পাওয়া যায় সেখানে কিভাবে এ মুরসাল গ্রহণযোগ্য হতে পারে?
আর উল্লেখিত দলটি যা করে থাকে যে, যদি
তাদের কেউ মৃত্যুবরণ করে তবে তার আত্মীয় স্বজন একটি বকরী জবাই করে থাকে যার নাম
দেয় আকীকা এবং কোনো হাড্ডি ভাঙ্গবে না, অতঃপর হাড্ডি ও
গোবরগুলো কবর দিয়ে দেয়। তারা ধারণা করে যে, এটিই ভালো কাজ, তা করা অবশ্যই জরুরী।
উত্তর হলো: এটি হলো বিদ‘আত, ইসলামী শরিয়তে এর কোনো ভিত্তি নেই, কাজেই
সকল প্রকার বিদ‘আত ও অপরাধের ন্যায় তা ছেড়ে দিয়ে আল্লাহর
নিকট তাওবা করা উচিৎ; কেননা আল্লাহর নিকট তাওবা করায় পূর্বের সকল অপরাধ ক্ষমা হয়ে
যায়। সুতরাং সকল প্রকার বিদ‘আত এবং পাপ পঙ্কিলতা থেকে তাওবা
করা ওয়াজিব। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ وَتُوبُوٓاْ إِلَى ٱللَّهِ جَمِيعًا أَيُّهَ ٱلۡمُؤۡمِنُونَ لَعَلَّكُمۡ تُفۡلِحُونَ
﴾ [النور: ٣١]
“হে মুমিনগণ, তোমরা সকলেই
আল্লাহর নিকট তাওবা কর, হয়তো তোমরা সফলকাম হতে পারবে। [সূরা
নূর, ৩১]
তিনি আরও বলেন:
﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ تُوبُوٓاْ إِلَى ٱللَّهِ تَوۡبَةٗ نَّصُوحًا
﴾ [التحريم: ٨]
“হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহর
নিকট তাওবা নাসুহ্ (খাটি তাওবা) কর। [সূরা তাহরীম/৮]
আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম থেকে যে সকল সহীহ হাদীস এসেছে, তাতে শর‘ঈ আকীকা
হলো: কোনো সন্তান জন্মগ্রহণের সপ্তম দিনে যা জবাই করা হয়, ছেলের
পক্ষে দু’টি খাসী আর মেয়ের পক্ষে একটি খাসী জবাই করা।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাসান এবং
হুসাইনের পক্ষে আকীকা করেছেন। আকীকাদাতা ইচ্ছা করলে এর গোশত ফকীর মিসকীন, পাড়া প্রতিবেশী এবং বন্ধুবান্ধবের মাঝে বন্টন করে দিতে পারে অথবা
পাক করে তাদেরকে দাওয়াত দিয়ে খাওয়াতে পারে। আর এটিই শর‘ঈ
আকীকা, তা সুন্নাতে মুয়াক্কাদা, তবে
কেউ তা না করলে তার পাপ হবে না।
আর প্রশ্নকারীর প্রশ্ন, যে ব্যক্তি সুন্নাতে মুহাম্মাদিয়ার
উপর আছে এবং তাদের (বিদ‘আতীদের) সাথে বংশীয় সম্পর্ক রয়েছে
তার ভূমিকা কি? তাদেরকে ভালোবাসা, তাদেরকে
সম্মান করা, তাদের দাওয়াত গ্রহণ করা এবং তাদের সাথে বিবাহ
সম্পর্ক গড়া কি জায়েয? প্রকাশ থাকে যে, তারা
তাদের এ আকীদা প্রকাশ্যে বাস্তবায়ন করে এবং তারা বলে তারাই মুক্তিপ্রাপ্ত দল, তারা হক্বের উপর আছে আর
আমরা বাতিলের উপর আছি।
উত্তর: প্রশ্নে বর্ণিত আকীদাই যদি তাদের আকীদা হয়, তাওহীদ ও ইখলাসের ব্যাপারে আহলে সুন্নাতের অনুরূপ হয় এবং আল্লাহর
সাথে, আহলে বাইত ও অন্যদের সাথে শির্ক না করে তবে তাদের সাথে
বিবাহ দেওয়া এবং বিবাহ করানো কোনো অসুবিধা নেই। এমনিভাবে তাদের জবাইকৃত পশু খাওয়া, তাদের অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়া এবং তাদের প্রাপ্য অনুযায়ী তাদেরকে
ভালোবাসা ও তাদের সাথে যে পরিমাণ বাতিল রয়েছে সে পরিমাণ বিদ্বেষ রাখা জায়েয। কেননা
তারা মুসলিম, কিছু কিছু বিদ‘আত ও
অপরাধে জড়িয়ে গেছে যা তাদেরকে ইসলামের গণ্ডি থেকে বের করে দেয়নি। এমতাবস্থায়
তাদেরকে নসিহত করে সুন্নাহ ও হক্বের দিকে দাওয়াত দেওয়া এবং বিদ‘আত
ও অন্যায় থেকে তাদেরকে সতর্ক করা ওয়াজিব। অতঃপর তারা যদি তা গ্রহণ করে ঠিক হয়ে যায়
তাহলে এটিই উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য। আর যদি তারা প্রশ্নে উল্লেখিত বিদ‘আত
করেই যায় তাহলে অবশ্যই তাদেরকে বয়কট করতে হবে এবং তাদের কোনো অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়া যাবেনা
যতক্ষণ না তারা আল্লাহর নিকট তাওবা করে বিদ‘আত ও অন্যায়গুলো
ত্যাগ করবে। যেমন কোনো শর‘ঈ কারণ ব্যতীত তাবুকের যুদ্ধে অংশ গ্রহণ
করা থেকে বিরত থাকায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম কা‘ব ইবনে মালেক আল আনসারী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু
এবং তার সাথীদেরকে বয়কট করেছিলেন। কিন্তু যদি তাদের কোনো প্রতিবেশী অথবা
নিকটাত্মীয় তাদেরকে বয়কট না করে তাদের সাথে উঠাবসার মাধ্যমে নসিহত করায় অধিক উপকার
মনে করে এবং তা গ্রহণ করার সম্ভাবনা থাকে; তবে তাদেরকে বয়কট
না করায় কোনো অসুবিধা নেই। কারণ তাদেরকে বয়কটের উদ্দেশ্য হলো হক্বের দিক নির্দেশনা
দেওয়া এবং তাদেরকে জানিয়ে দেওয়া যে, তারা যে অপরাধ করছে তা
সন্তোষজনক নয়, যেন তারা এ থেকে ফিরে আসে। কিন্তু তাদেরকে
বয়কটের কারণে যদি ইসলামি কল্যাণের ক্ষতি হয় এবং যারা হক্বের উপর আছে তাদেরকে
পরিহার করে বাতিলকে অধিক গ্রহণ করে তাহলে তাদেরকে তাদের অবস্থায় ছেড়ে দেওয়াই ভালো।
যেমন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছেড়ে
দিয়েছিলেন মুনাফেকদের সরদার আব্দুল্লাহ ইবন উবাই ইবন সালূলকে, কেননা
তাকে ছেড়ে দেওয়া মুসলিমদের জন্য কল্যাণকর ছিল।
আর যদি এ ফেরকাটি আহলে বাইত যেমন ‘আলী, ফাতেমা, হাসান, হুসাইন
এবং অন্যান্য আহলে বাইতগণের নিকট দো‘আ বা কোনো কিছু চাওয়া ইত্যাদির মাধ্যমে তাদের
ইবাদত করা, অথবা এ বিশ্বাস করা যে, তারা
গায়েবী ইত্যাদি জানেন, যে বিশ্বাসের মাধ্যমে ইসলাম থেকে বের হয়ে
যায়, তাহলে তাদের সাথে বিবাহের আদান প্রদান, তাদেরকে ভালোবাসা
এবং তাদের জবাইকৃত পশু খাওয়া জায়েয নেই, বরং তাদেরকে ঘৃণা
করা এবং পরিহার করা ওয়াজিব যতক্ষণ না এক আল্লাহর উপর ঈমান আনবে। যেমন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
﴿ قَدۡ كَانَتۡ لَكُمۡ أُسۡوَةٌ حَسَنَةٞ فِيٓ إِبۡرَٰهِيمَ وَٱلَّذِينَ مَعَهُۥٓ
إِذۡ قَالُواْ لِقَوۡمِهِمۡ إِنَّا بُرَءَٰٓؤُاْ مِنكُمۡ وَمِمَّا تَعۡبُدُونَ مِن
دُونِ ٱللَّهِ كَفَرۡنَا بِكُمۡ وَبَدَا بَيۡنَنَا وَبَيۡنَكُمُ ٱلۡعَدَٰوَةُ وَٱلۡبَغۡضَآءُ
أَبَدًا حَتَّىٰ تُؤۡمِنُواْ بِٱللَّهِ وَحۡدَهُۥٓ إِلَّا قَوۡلَ إِبۡرَٰهِيمَ لِأَبِيهِ
لَأَسۡتَغۡفِرَنَّ لَكَ وَمَآ أَمۡلِكُ لَكَ مِنَ ٱللَّهِ مِن شَيۡءٖۖ رَّبَّنَا عَلَيۡكَ
تَوَكَّلۡنَا وَإِلَيۡكَ أَنَبۡنَا وَإِلَيۡكَ ٱلۡمَصِيرُ ٤ ﴾ [الممتحنة: ٤]
“তোমাদের জন্যে ইবরাহীম ও তার অনুসারীদের মধ্যে
রয়েছে উত্তম আদর্শ, তারা তাদের সম্প্রদায়কে বলেছিল: তোমাদের
সঙ্গে এবং তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে যার ইবাদত কর তার সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক
নেই। আমরা তোমাদেরকে মানি না। তোমাদের ও আমাদের মধ্যে চির কালের জন্য সৃষ্টি হলো
শত্রুতা ও বিদ্বেষ, যদি না তোমরা এক আল্লাহর প্রতি ঈমান আন।
তবে ব্যতিক্রম তার পিতার প্রতি ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম) এর উক্তি: আমি নিশ্চয়ই
তোমার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করবো এবং তোমার ব্যাপারে আমি আল্লাহর নিকট কোনো অধিকার
রাখি না। (ইবরাহীম ও তার অনুসারীগণ বলেছিল:) হে আমাদের রব! আমরা তো আপনারই উপর
নির্ভর করেছি, আপনারই অভিমুখী হয়েছি এবং আপনার নিকটই
প্রত্যাবর্তন।” [সূরা মুমতাহিনা /৪]
তিনি আরও বলেন:
﴿ وَمَن يَدۡعُ مَعَ ٱللَّهِ إِلَٰهًا ءَاخَرَ لَا بُرۡهَٰنَ لَهُۥ بِهِۦ فَإِنَّمَا
حِسَابُهُۥ عِندَ رَبِّهِۦٓۚ إِنَّهُۥ لَا يُفۡلِحُ ٱلۡكَٰفِرُونَ ١١٧ ﴾ [المؤمنون: ١١٧]
“যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে অন্য ইলাহকে ডাকে, যে বিষয়ে তার নিকট কোনো প্রমাণ নেই; তার
হিসাব তার রবের নিকট আছে, নিশ্চয় কাফিরগণ সফলকাম হবে না।” [সূরা
মু’মিনূন /১১৭]
তিনি
আরও বলেন:
﴿ذَٰلِكُمُ ٱللَّهُ رَبُّكُمۡ لَهُ ٱلۡمُلۡكُۚ وَٱلَّذِينَ تَدۡعُونَ مِن دُونِهِۦ
مَا يَمۡلِكُونَ مِن قِطۡمِيرٍ ١٣ إِن تَدۡعُوهُمۡ لَا يَسۡمَعُواْ دُعَآءَكُمۡ وَلَوۡ
سَمِعُواْ مَا ٱسۡتَجَابُواْ لَكُمۡۖ وَيَوۡمَ ٱلۡقِيَٰمَةِ يَكۡفُرُونَ بِشِرۡكِكُمۡۚ
وَلَا يُنَبِّئُكَ مِثۡلُ خَبِيرٖ ١٤ ﴾ [فاطر: ١٣، ١٤]
“তিনিই
আল্লাহ, তোমাদের প্রতিপালক, সার্বভৌমত্ব
তারই। আর তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে যাদেরকে ডাকো তারা তো খেজুরের আঁটির আবরনেরও
অধিকারী নয়। তোমরা তাদেরকে আহ্বান করলে তারা তোমাদের আহবানে সাড়া দিবে না। তোমরা
তাদেরকে যে শরীক করেছ তা তারা কিয়ামতের দিন অস্বীকার করবে। সর্বজ্ঞের ন্যায় কেউ
তোমাকে অবহিত করবে না।” [সূরা ফাতির/১৩-১৪]
তিনি আরও বলেন:
﴿قُل لَّا يَعۡلَمُ مَن فِي ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِ ٱلۡغَيۡبَ إِلَّا ٱللَّهُۚ
وَمَا يَشۡعُرُونَ أَيَّانَ يُبۡعَثُونَ ٦٥ ﴾ [النمل: ٦٥]
“বলুন: আল্লাহ ব্যতীত আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে কেউ গায়েবী
বিষয়ের জ্ঞান রাখে না এবং তারা জানে না কখন তারা পুনরুত্থিত হবে।” [সূরা নামল/৬৫]
তিনি আরও বলেন:
﴿ ۞وَعِندَهُۥ مَفَاتِحُ ٱلۡغَيۡبِ لَا يَعۡلَمُهَآ إِلَّا هُوَۚ ﴾ [الانعام: ٥٩]
“আর গায়েবের চাবিকাঠি তাঁরই নিকট রয়েছে, তিনি ব্যতীত আর কেউ তা জানে না।” [সূরা আল-আন‘আম/৫৯]
আরও বলেন:
﴿ قُل لَّآ أَمۡلِكُ لِنَفۡسِي نَفۡعٗا وَلَا ضَرًّا إِلَّا مَا شَآءَ ٱللَّهُۚ
وَلَوۡ كُنتُ أَعۡلَمُ ٱلۡغَيۡبَ لَٱسۡتَكۡثَرۡتُ مِنَ ٱلۡخَيۡرِ وَمَا مَسَّنِيَ ٱلسُّوٓءُۚ
إِنۡ أَنَا۠ إِلَّا نَذِيرٞ وَبَشِيرٞ لِّقَوۡمٖ يُؤۡمِنُونَ ١٨٨ ﴾ [الاعراف: ١٨٨]
“আপনি বলুন: আল্লাহ যা ইচ্ছা করেন তা ব্যতীত আমি
আমার নিজের ভালো মন্দ, মঙ্গল- অমঙ্গল বিষয়ে কোনো অধিকার রাখি
না, আমি যদি অদৃশ্য বিষয়ের তত্ত্ব এবং খবর রাখতাম তাহলে আমি
প্রভূত কল্যাণ লাভ করতে পারতাম আর কোনো অমঙ্গল আমাকে স্পর্শ করতে পারতো না। আমি
শুধু মুমিন সম্প্রদায়ের জন্যে একজন ভীতি প্রদর্শনকারী ও সুসংবাদদাতা।” [সূরা আ’রাফ/১৮৮
এ অর্থে আরও বহু আয়াত রয়েছে।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম থেকে সহীহ সনদে এসেছে যে, তিনি বলেছেন: গায়েবের
চাবি হলো পাঁচটি, আল্লাহ ব্যতীত এগুলো কেউ জানে না, অতঃপর তিনি পাঠ করলেন:
﴿ إِنَّ ٱللَّهَ عِندَهُۥ عِلۡمُ ٱلسَّاعَةِ وَيُنَزِّلُ ٱلۡغَيۡثَ وَيَعۡلَمُ
مَا فِي ٱلۡأَرۡحَامِۖ وَمَا تَدۡرِي نَفۡسٞ مَّاذَا تَكۡسِبُ غَدٗاۖ وَمَا تَدۡرِي
نَفۡسُۢ بِأَيِّ أَرۡضٖ تَمُوتُۚ إِنَّ ٱللَّهَ عَلِيمٌ خَبِيرُۢ ٣٤ ﴾ [لقمان: ٣٤]
“কিয়ামতের জ্ঞান শুধু আল্লাহর নিকট রয়েছে, তিনি বৃষ্টি বর্ষণ করেন এবং জরায়ুতে যা রয়েছে তিনি তা জানেন, কেউ জানে না আগামীকাল সে কি অর্জন করবে এবং কেউ জানে না কোনো স্থানে
তার মৃত্যু ঘটবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সর্ব বিষয়ে অবহিত।”
[সূরা লোকমান/৩৪]
তাঁর নিকট থেকে সহীহ সনদে আরও এসেছে যে, তিনি বলেছেন,
«من مات وهو يدعو لله ندا دخل النار»
“যে
ব্যক্তি আল্লাহর সাথে শির্ক করার পর তওবা না করে মৃত্যুবরণ করবে সে জাহান্নামে
প্রবেশ করবে।”[23]
বুখারী ও মুসলিমে এসেছে, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করা হয়েছে,
সবচেয়ে বড় পাপ কোনটি? তিনি বললেন, তোমার সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর
সাথে শির্ক করা।”[24]
সহীহ মুসলিমে আলী ইবন আবু তালেব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: “যে ব্যক্তি আল্লাহ ব্যতীত অন্যের নামে পশু জবাই করবে
তার উপর আল্লাহর অভিসম্পাত বর্ষণ হবে।”[25]
এক আল্লাহর জন্য ইবাদতে ইখলাস ওয়াজিব হওয়া, তার সাথে শির্ক করা হারাম হওয়া এবং মহান আল্লাহ একমাত্র তিনিই যে
গায়েবের খবর জানেন, এর উপর প্রমাণিত বহু হাদীস রয়েছে।
আমি পূর্বে যা উল্লেখ করেছি হক্ব তালাশকারীর জন্য
ইনশাআল্লাহ তাই যথেষ্ট, আর আল্লাহই একমাত্র তাওফীকদাতা, তিনি যাকে ইচ্ছা করেন তাকে সঠিক পথের দিক নির্দেশনা দেন।
আর তারা যেটা বলছে যে, তারাই
মুক্তিপ্রাপ্ত দল, তারা হক্বের উপর রয়েছে এবং অন্যরা বাতিলের
উপর আছে। এর উত্তরে বলা যায় যে, কেউ কোনো কিছু দাবী করলেই
তার দাবী মেনে নেওয়া যায়না, বরং তার দাবীর সত্যতার
প্রমাণাদিরও প্রয়োজন হয়, যেমন আল্লাহ তা‘আলা
বলেছেন: “তোমরা যদি সত্যবাদী হয়ে থাক তাহলে তোমাদের প্রমাণাদি পেশ কর।” [সূরা নামল/৬৪]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “মানুষের দাবী অনুযায়ী যদি তাদেরকে দেওয়া হতো তাহলে কিছু লোক
অবশ্যই মানুষের জান ও মাল দাবী করে নিয়ে যেত।” হাদীসটি ইবনে আব্বাস থেকে সহীহ সনদে বর্ণিত।[26]
তাছাড়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত বেশ কয়েকটি হাদীস এসেছে যে, তিনি
বলেছেন:
«افترقت اليهود على إحدى وسبعين فرقة وافترقت
النصارى على اثنتين وسبعين فرقة وستفترق هذه الأمة على ثلاث وسبعين فرقة كلها في
النار إلا واحدة. قيل من هي يا رسول الله؟ قال:من كان على مثل ما أن عليه وأصحابي»
“ইয়াহূদীগণ
একাত্তর দলে বিভক্ত হয়েছে, খৃষ্টানগণ বায়াত্তর দলে বিভক্ত
হয়েছে এবং আমার এ উম্মত তেয়াত্তর দলে বিভক্ত হবে। সবগুলো দলই জাহান্নামে যাবে কিন্তু
একটি দল (বাদ দিয়ে) বলা হলো: হে আল্লাহর রাসূল! সে দল কোনটি? তিনি
বললেন: যারা আমি এবং আমার সাহাবাগণের পথে আছে তারা।”
এ হাদীস এবং এ অর্থে আরও যে সকল হাদীস রয়েছে
যেমন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাণী:
«كُلُّ أُمَّتِي يَدْخُلُونَ الجَنَّةَ إِلَّا مَنْ أَبَى»، قَالُوا: يَا رَسُولَ اللَّهِ، وَمَنْ يَأْبَى؟
قَالَ: «مَنْ أَطَاعَنِي دَخَلَ الجَنَّةَ، وَمَنْ عَصَانِي
فَقَدْ أَبَى»
“আমার প্রতিটি উম্মত জান্নাতে প্রবেশ করবে কিন্তু
যে ব্যক্তি অস্বীকার করবে (সে নয়)। বলা হলো: হে আল্লাহর রাসূল কে অস্বীকার করে? তিনি বললেন: যে ব্যক্তি আমার আনুগত্য করবে সে ব্যক্তি জান্নাতে
প্রবেশ করবে আর যে ব্যক্তি আমার নাফরমানী করবে সেই অস্বীকার করল।”[27]
এ হাদীসগুলোই প্রমাণ করে যে, এ
উম্মতের মধ্যে মুক্তিপ্রাপ্ত দল হচ্ছে: যারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং সাহাবাগণের আমল, কথা
এবং বিশ্বাসের উপর দৃঢ় ও অটল আছেন তারা।
কুরআন এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সুন্নাত প্রমাণ করে যে, মুক্তিপ্রাপ্ত
দল হচ্ছে, যারা আল্লাহর কিতাব ও রাসূলের সুন্নাতকে অনুসরণ করবে এবং সাহাবীগণের পথে
চলবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ قُلۡ إِن كُنتُمۡ تُحِبُّونَ ٱللَّهَ فَٱتَّبِعُونِي
يُحۡبِبۡكُمُ ٱللَّهُ وَيَغۡفِرۡ لَكُمۡ ذُنُوبَكُمۡۚ وَٱللَّهُ غَفُورٞ رَّحِيمٞ ٣١
﴾ [ال عمران: ٣١]
“হে নবী বলে দিন, তোমরা যদি আল্লাহকে ভালোবাসার
দাবী কর, তবে আমার অনুসরণ কর, তাহলেই আল্লাহ তোমাদেরকে ভালোবাসবেন এবং তোমাদের
পাপসমূহ ক্ষমা করে দিবেন।” [সূরা আলে ইমরান/৩১]
তিনি আরও বলেন:
﴿ وَٱلسَّٰبِقُونَ ٱلۡأَوَّلُونَ مِنَ ٱلۡمُهَٰجِرِينَ وَٱلۡأَنصَارِ وَٱلَّذِينَ
ٱتَّبَعُوهُم بِإِحۡسَٰنٖ رَّضِيَ ٱللَّهُ عَنۡهُمۡ وَرَضُواْ عَنۡهُ وَأَعَدَّ لَهُمۡ
جَنَّٰتٖ تَجۡرِي تَحۡتَهَا ٱلۡأَنۡهَٰرُ خَٰلِدِينَ فِيهَآ أَبَدٗاۚ ذَٰلِكَ ٱلۡفَوۡزُ
ٱلۡعَظِيمُ ١٠٠ ﴾ [التوبة: ١٠٠]
“আর যারা সর্বপ্রথম হিজরতকারী, আনসার
এবং যারা তাদের অনুসরণ করেছে, আল্লাহ সে সকল লোকদের প্রতি সন্তুষ্ট
হয়েছেন এবং তারাও তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছে। আর তাদের জন্য প্রস্তুত রেখেছেন সেই
জান্নাত যার তলদেশ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে নদীসমূহ। সেখানে তারা চিরকাল থাকবে। এটাই
হলো মহা কৃতকার্যতা।” [সূরা তাওবা/১০০]
এ দু’টি আয়াত প্রমাণ করে যে, আল্লাহকে ভালোবাসার প্রমাণ হলো: আমল, কথা
এবং আকীদার ক্ষেত্রে তার রাসূলের অনুসরণ করা এবং তাঁর সাহাবাদের মধ্যে যারা
মুহাজের, আনসার এবং তাদের অনুসারীদেরকে যারা আমল, কথা এবং আকীদার ক্ষেত্রে অনুসরণ করেছে তারা সকলেই জান্নাতবাসী
এবং তারাই সফলকাম, আল্লাহ তাদের উপর সন্তুষ্ট এবং তারাও
আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট, তিনি তাদেরকে চির দিনের জন্য
জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।
আশা করি তা সে ব্যক্তির জন্য স্পষ্ট হয়ে গেছে যার
সামান্যতম দ্বীনের জ্ঞান রয়েছে। আল্লাহর নিকট আকুল আবেন: তিনি যেন আমাদেরকে এবং
সকল মুসলিম ভাইকে সঠিক রাস্তা দেখান, যে রাস্তা নবীগণ, সিদ্দিকগণ, শহীদগণ এবং নেক্কারদেরকে
দেখিয়েছেন। তিনি যেন আমাদেরকে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এবং তাঁর সাহাবীগণের অনুসারী বানিয়ে দেন। নিশ্চয় তিনি তা করতে সক্ষম। সালাত
ও সালাম বর্ষিত হোক তার বান্দা, রাসূল, বন্ধু
এবং ওহীর সংরক্ষক আমাদের নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লামের উপর, তাঁর পরিবার পরিজন, সকল
সাহাবী এবং কিয়ামত পর্যন্ত তাদের অনুসারীদের উপর।
আল্লাহর সিফাত
বা গুণের অপব্যাখ্যার হুকুম
প্রশ্ন: আল্লাহর গুণাগুণের ক্ষেত্রে অপব্যাখ্যার
হুকুম কি?
উত্তর: অপব্যাখ্যা নিন্দনীয় কাজ, আল্লাহর
গুণাগুণের ক্ষেত্রে অপব্যাখ্যা জায়েয নেই। বরং তা যেভাবে এসেছে সেভাবেই সাব্যস্ত
করতে হবে, আল্লাহর জন্য যেভাবে সাব্যস্ত করা উচিৎ সেভাবেই এর
প্রকাশ্য অর্থ সাব্যস্ত করতে হবে এবং কোনো ধরনের পরিবর্তন পরিবর্ধন,
রহিতকরণ, পদ্ধতিকরণ এবং সামঞ্জস্যকরণ ব্যতীতই। আল্লাহ
তা‘আলা তার গুণাগুণ এবং নামের ব্যাপারে বলেছেন:
﴿فَاطِرُ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِۚ جَعَلَ لَكُم مِّنۡ أَنفُسِكُمۡ أَزۡوَٰجٗا
وَمِنَ ٱلۡأَنۡعَٰمِ أَزۡوَٰجٗا يَذۡرَؤُكُمۡ فِيهِۚ لَيۡسَ كَمِثۡلِهِۦ شَيۡءٞۖ وَهُوَ
ٱلسَّمِيعُ ٱلۡبَصِيرُ١١﴾ [الشورى: ١١]
“তার মত কোনো কিছু নেই এবং তিনি শুনেন ও দেখেন।” [সূরা
শূরা/১১]
কাজেই আমাদের উচিৎ হলো, তা যেভাবে
এসেছে হুবহু সেভাবেই সাব্যস্ত করা। আর আহলে সুন্নাত ও জামাতও একই কথা বলেছেন যে, এগুলো যেভাবে এসেছে সেভাবে সাব্যস্ত কর, বিনা
পরিবর্তন পরিবর্ধনে, বিনা অপব্যাখ্যায়, বিনা
পদ্ধতিকরণে। বরং আল্লাহর জন্য যেভাবে সাব্যস্ত করা উচিৎ সেভাবেই এর প্রকাশ্য অর্থ
বিনা অপব্যাখ্যায় ও বিনা পদ্ধতিকরণে স্বীকার করে নাও। কাজেই আল্লাহর বাণী :
﴿ ٱلرَّحۡمَٰنُ عَلَى ٱلۡعَرۡشِ ٱسۡتَوَىٰ ٥ ﴾ [طه: ٥]
তে বলা হবে: রহমান (আল্লাহ) আরশের উপর উঠেছেন। [সূরা
তাহা/৫] এখানে ‘ইসতেওয়া’ এবং এ রকম অন্যান্য আয়াতে ‘ইসতেওয়া’ হলো: আল্লাহর জন্য যে
রকম থাকা উচিৎ সে রকম, তার সাথে সৃষ্টির কোনো সামঞ্জস্য নেই।
আহলে হক্বদের নিকট ‘ইসতেওয়া’র অর্থ হলো: উঁচু এবং উপরে উঠা।
এমনিভাবে কুরআন ও হাদীসে আল্লাহর গুণাগুণের ব্যাপারে
যে সকল গুণ এসেছে যেমন: চোখ, কান, হাত, পা ইত্যাদি, এ সবগুলোই আল্লাহর নিজস্ব গুণ, এতে সৃষ্টির কোনো সামঞ্জস্যতা নেই।
আর সাহাবীগণ এবং তাদের পরবর্তীতে আহলে সুন্নাতের
ইমামগণ যেমন: আউযা‘ঈ, সাওরী, মালেক, আবু হানিফা, আহমাদ, ইসহাক
এবং অন্যান্য ইমামগণ (রহিমাহুমুল্লাহ) এর উপরই চলেছেন। যেমন নূহ আলাইহিস সালামের ব্যাপারে
আল্লাহর বাণী:
﴿ وَحَمَلۡنَٰهُ عَلَىٰ ذَاتِ أَلۡوَٰحٖ وَدُسُرٖ ١٣ تَجۡرِي بِأَعۡيُنِنَا﴾ [القمر: ١٣، ١٤]
“তখন নূহকে আরোহণ করালাম কাষ্ঠ ও পেরেক নির্মিত
এক নৌযানে, যা আমার চোখের সামনে চলল।” [সূরা কামার ১৩-১৪]
মূসা আলাইহিস
সালামের ব্যাপারে আল্লাহর বাণী:
﴿ وَلِتُصۡنَعَ عَلَىٰ عَيۡنِيٓ ﴾ [طه: ٣٩]
“যেন তুমি আমার চোখের সামনে প্রতিপালিত হও। [সূরা
ত্বহা/৩৯]
আহলে সুন্নাতগণ এ দু’টি
আয়াতের ব্যাখ্যা করে বলেছেন যে, (تجري
بأعيننا) থেকে উদ্দেশ্য হলো:
আল্লাহ তা‘আলা তার নিয়ন্ত্রনে একে চালিয়েছেন যতক্ষণ না তা জূদী
পাহাড়ে গিয়ে থেমেছে। এমনিভাবে ولتصنع على عيني থেকে উদ্দেশ্য হলো, মূসা আলাইহিস
সালামকে যারা লালন পালন করেছে তারা আল্লাহর নিয়ন্ত্রনে এবং তার তাওফীকে করেছে।
তদ্রূপ নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লামের ব্যাপারে তাঁর বাণী:
﴿ وَٱصۡبِرۡ لِحُكۡمِ رَبِّكَ فَإِنَّكَ بِأَعۡيُنِنَاۖ ﴾ [الطور: ٤٨]
“আপনি আপনার রবের নির্দেশের অপেক্ষায় ধৈর্য্য
ধারণ করুন, কেননা আপনি আমার চোখের সামনেই আছেন।” [সূরা তূর
৪৮]
এ সকল ব্যাখ্যা অপব্যাখ্যা নয় বরং আরবী ভাষায় এবং
এর পদ্ধতিতে প্রসিদ্ধ ব্যাখ্যা।
এমনিভাবে হাদীসে কুদসীতে আল্লাহর বাণী:
«من تقرب إلي شبراً تقربت إليه ذراعاً ومن تقرب
إلي ذراعاً تقرب إليه باعاً، ومن أتاني يمشي
أتيته هرولةً»
“যে
ব্যক্তি আমার দিকে এক বিগত পরিমাণ এগিয়ে আসবে আমি তার দিকে এক হাত পরিমাণ এগিয়ে
যাই, যে ব্যক্তি আমার দিকে এক হাত এগিয়ে আসবে আমি তার দিকে
এক গজ পরিমাণ এগিয়ে যাই এবং যে ব্যক্তি আমার দিকে পায়ে হেটে আসবে আমি তার দিকে
দৌড়ে যাই।” এখানে “আল্লাহর আসা” তার যেভাবে আসা উচিৎ বিনা পরিবর্তন পরিবর্ধন, বিনা উদাহরণ এবং বিনা পদ্ধতিকরণে হুবহু সেভাবেই সাব্যস্ত করে।
এমনিভাবে শেষ রাত্রিতে তার নিম্ন আকাশে নেমে আসা, শোনা, দেখা, রাগান্বিত
হওয়া, সন্তুষ্ট হওয়া, হাসি-খুশী
ইত্যাদি স্থায়ী গুণাবলীর সবগুলোই তার জন্য যেভাবে সাব্যস্ত করা উচিৎ বিনা পরিবর্তন
পরিবর্ধন, রহিতকরণ, উদাহরণ এবং বিনা
পদ্ধতিকরণে হুবহু সেভাবেই সাব্যস্ত করে আল্লাহ তা‘আলার বাণী: (তার মত কোনো কিছু নেই এবং তিনি শুনেন ও
দেখেন।) এবং এ অর্থে আরো যে সকল আয়াত রয়েছে, এর উপর আমল করা।
কিন্তু গুণাগুণের অপব্যাখ্যা এবং এর প্রকাশ্য অর্থ
থেকে পরিবর্তন করা হচ্ছে জাহমিয়া এবং মু‘তাযিলাদের মত বিদ‘আতীদের
কাজ, আর সেটি হচ্ছে বাতিল মাযহাব যা আহলে সুন্নাতগণ নিন্দা করেছেন এবং এ থেকে তারা
মুক্ত, এদের থেকে বিরত থাকার জন্য সতর্ক করে দিয়েছেন।
আউলিয়াদের
কবরে ফাতেহা পাঠের হুকুম
প্রশ্ন: কবর যিয়ারত করতে গিয়ে তাতে ফাতেহা পাঠ
করা বিশেষ করে আউলিয়াদের কবরে, যেমন করে থাকে পার্শ্ববর্তী
কিছু আরবীয় দেশে। তাদের মধ্যে কিছু লোক বলে থাকে যে, আমরা
শির্ক করতে চাইনা কিন্তু কোনো অলির মাযার যদি যিয়ারত না করি তাহলে ঘুমের মধ্যে
স্বপ্নে বলে দেয় যে আমাকে যিয়ারত করনি কেন? এর হুকুম কি?
আল্লাহ
আপনাকে ভালো প্রতিদান দিন।
উত্তর: মুসলিম পুরুষদের জন্য কবর যিয়ারত করা
সুন্নাত, যেমন আল্লাহ তা বৈধ করেছেন রাসূলের বাণী দ্বারা:
«زوروا القبور فإنها تذكركم الآخرة»
“তোমরা
কবর যিয়ারত কর; কেননা তা তোমাদেরকে আখেরাতের কথা স্মরণ করিয়ে দিবে।”[28]
বুরাইদা ইবন হুসাইব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু
হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম সাহাবাদেরকে কবর যিয়ারতের জন্য এ দো‘আ শিক্ষা
দিতেন যে, তারা যেন বলে:
«السلام عليكم أهل الديار من المؤمنين
والمسلمين، وإنا إن شاء الله بكم لاحقون، نسأل الله لنا ولكم العافية»
“হে
কবরের অধিবাসী মুমিন ও মুসলিমগণ, তোমাদের প্রতি সালাম বর্ষিত
হোক, আমরাও ইনশাআল্লাহ তোমাদের সাথে মিলিত হচ্ছি। আমরা
আল্লাহর নিকট আমাদের জন্য এবং তোমাদের জন্য নিরাপত্তা প্রার্থনা করছি।”[29]
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু
আনহা হতে সহীহ সনদে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কবর যিয়ারত করতেন তখন তিনি বলতেন:
السلام عليكم دار
قوم مؤمنين وإنا إن شاء الله بكم لاحقون، يرحم الله المستقدمين منا والمستأخرين،
اللهم اغفر لأهل بقيع الغرقد
“হে
কবরের অধিবাসী মুমিনগণ, তোমাদের প্রতি সালাম বর্ষিত হোক, আমরাও ইনশাআল্লাহ তোমাদের সাথে মিলিত হচ্ছি। আল্লাহ আমাদের পূর্বে
গমনকারী এবং পরবর্তী গমনকারীদেরকে রহমত করুন। হে আল্লাহ, বাকী
আল- গারকাদের অধিবাসীদেরকে ক্ষমা করুন।”
যিয়ারতের সময় তিনি সূরা ফাতেহা বা কুরআন থেকে
অন্য কিছু পাঠ করেন নি, কাজেই যিয়ারতের সময় তা পাঠ করা বিদ‘আত। এমনিভাবে কুরআনের যে কোনো আয়াত পাঠ করা বিদ‘আত, কারণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে
ব্যক্তি আমাদের এ দ্বীনের মধ্যে নতুন কোনো জিনিস সৃষ্টি করবে যা এর অন্তর্ভুক্ত নয়
তা প্রত্যাখ্যাত।”
সহীহ মুসলিমের বর্ণনায় এসেছে, “যে ব্যক্তি এমন
কোনো আমল করবে যা আমার শরীয়ত সমর্থিত নয় তা প্রত্যাখ্যাত।”
এবং জুম‘আর খুৎবায় তিনি
বলেছিলেন :
“অতঃপর সর্বোত্তম বাণী হলো, আল্লাহর কিতাব এবং
সর্বোত্তম হেদায়েত হলো, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এর হেদায়েত, আর নিকৃষ্টতর কাজ হলো এর নব আবিষ্কৃত
কাজ, এবং প্রতিটি বিদ‘আতই ভ্রষ্টতা।”
দেখুন, সহীহ মুসলিম এবং সুনান নাসায়ী, তবে নাসায়ী আরো একটু বাড়িয়ে বর্ণনা করেছে, “আর
প্রতিটি পথভ্রষ্টতা জাহান্নামে”। কাজেই সকল মুসলিমের উচিৎ হলো কবর যিয়ারত ও
অন্যান্য ক্ষেত্রে শরীয়তকেই নির্ধারিত করা এবং বিদ‘আত থেকে
সতর্ক থাকা।
সকল মুসলিমের কবর যিয়ারত করা বৈধ, চাই
উঁচু দরজার ওলি হোক বা না হোক, প্রতিটি মুমিন নর-নারীই
আল্লাহর অলি। আল্লাহ বলেন:
﴿ أَلَآ إِنَّ أَوۡلِيَآءَ ٱللَّهِ لَا خَوۡفٌ عَلَيۡهِمۡ وَلَا هُمۡ يَحۡزَنُونَ
٦٢ ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ وَكَانُواْ يَتَّقُونَ ٦٣ ﴾ [يونس: ٦٢، ٦٣]
“জেনে রাখ, নিশ্চয়ই আল্লাহর অলিদের কোনো ভয় নেই
এবং তারা চিন্তিতও হবে না, যারা ঈমান এনেছে এবং তারা
আল্লাহকে ভয় করতো।” [সূরা ইউনুস/৬২-৬৩]
তিনি আরো বলেন:
﴿وَمَا كَانُوٓاْ أَوۡلِيَآءَهُۥٓۚ إِنۡ أَوۡلِيَآؤُهُۥٓ
إِلَّا ٱلۡمُتَّقُونَ وَلَٰكِنَّ أَكۡثَرَهُمۡ لَا يَعۡلَمُونَ ٣٤ ﴾ [الانفال: ٣٤]
“তারা আল্লাহর অলি ছিল না, আল্লাহর
অলি হচ্ছে তাকওয়ার অধিকারীগণ কিন্তু অধিকাংশ লোক তা জানেনা।” [সূরা আনফাল/৩৪]
যিয়ারতকারী বা অন্য যে কারো জন্য মৃতের নিকট দো‘আ
চাওয়া বা তাদের নিকট প্রার্থনা করা, তাদের জন্য মান্নত করা
জায়েয নেই। তাদের নিজেদের জন্য বা কোনো রুগীর জন্য অথবা শত্রুদের উপর বিজয় লাভ বা অন্য কোনো প্রয়োজনের
ব্যাপারে তাদের নৈকট্য লাভ করে তাদের সুপারিশের আশায় তাদের কবরের পার্শ্বে বা অন্য
কোথাও তাদের জন্য পশু জবাই করা জায়েয নেই। কারণ এগুলো হচ্ছে ইবাদত, আর
ইবাদত সবগুলোই একমাত্র আল্লাহর জন্য।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ وَمَآ أُمِرُوٓاْ إِلَّا لِيَعۡبُدُواْ ٱللَّهَ
مُخۡلِصِينَ لَهُ ٱلدِّينَ حُنَفَآءَ﴾ [البينة: ٥]
“তাদেরকে শুধুমাত্র একনিষ্ঠতার সাথে এক আল্লাহর
ইবাদত করার নির্দেশই দেওয়া হয়েছে।” [সূরা আল-বাইয়্যেনাহ /৫]
তিনি আরও বলেন:
﴿ وَمَا خَلَقۡتُ ٱلۡجِنَّ وَٱلۡإِنسَ إِلَّا
لِيَعۡبُدُونِ ٥٦ ﴾ [الذاريات: ٥٦]
“আমি জ্বিন এবং মানুষকে সৃষ্টি করেছি কেবলমাত্র
আমারই ইবাদত করার জন্য।” [সূরা আয-যারিয়াহ /৫৬]
তিনি আরও বলেন:
﴿ وَأَنَّ ٱلۡمَسَٰجِدَ لِلَّهِ فَلَا تَدۡعُواْ
مَعَ ٱللَّهِ أَحَدٗا ١٨ ﴾ [الجن: ١٨]
“এবং সকল মাসজিদ আল্লাহর জন্য, কাজেই
তোমরা আল্লাহর সাথে অন্য কাউকে ডেকো না।” [সূরা জ্বিন ১৮]
তিনি আরও বলেন:
﴿ ۞وَقَضَىٰ رَبُّكَ أَلَّا تَعۡبُدُوٓاْ إِلَّآ
إِيَّاهُ﴾ [الاسراء: ٢٣]
“এবং তোমার রব নির্দেশ দিয়েছেন যে,
তোমরা কেবলমাত্র তারই ইবাদত কর।” [সূরা ইসরা/২৩]
তিনি আরও বলেন:
﴿ فَٱدۡعُواْ ٱللَّهَ مُخۡلِصِينَ لَهُ ٱلدِّينَ
وَلَوۡ كَرِهَ ٱلۡكَٰفِرُونَ ١٤ ﴾ [غافر: ١٤]
“তোমরা একনিষ্ঠতার সাথে তাকে ডাক, যদিও
কাফেরগণ তা অপছন্দ করে।” [সূরা গাফের/১৪]
আরও বলেন:
﴿ قُلۡ إِنَّ صَلَاتِي وَنُسُكِي وَمَحۡيَايَ
وَمَمَاتِي لِلَّهِ رَبِّ ٱلۡعَٰلَمِينَ ١٦٢ لَا شَرِيكَ لَهُۥۖ وَبِذَٰلِكَ أُمِرۡتُ
وَأَنَا۠ أَوَّلُ ٱلۡمُسۡلِمِينَ ١٦٣ ﴾ [الانعام: ١٦٢، ١٦٣]
“হে নবী, আপনি তাদের বলে
দিন, আমার সালাত, আমার কোরবানী, আমার
জীবন ও মৃত্যু বিশ্ব প্রতিপালক আল্লাহর জন্য। তার কোনো অংশিদার নেই,
আর এ নির্দেশই আমাকে দেওয়া হয়েছে এবং আমিই সর্ব প্রথম আত্মসমর্পণকারী।” [সূরা
আল-আন‘আম/১৬২-১৬৩] এ অর্থে আরও বহু আয়াত রয়েছে।
তাছাড়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম থেকে সহীহ সনদে এসেছে, তিনি বলেছেন,
«فَإِنَّ حَقُّ اللهِ عَلَى الْعِبَادِ أَنْ يَعْبُدُوهُ،
وَلَا يُشْرِكُوا بِهِ شَيْئًا»
“বান্দার উপর আল্লাহর হক্ব হচ্ছে: তারা তাঁর
ইবাদত করবে এবং তাঁর সাথে কাউকে অংশিদার করবে না।” হাদীসটি মু‘আয রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু
থেকে বর্ণিত।[30]
এ হাদীস সকল ইবাদতকে শামিল করে তথা, সালাত, সাওম, রুকু, সিজদাহ, হজ্জ, দো‘আ, কোরবানী, মান্নত ইত্যাদি সকল প্রকার ইবাদত এর অন্তর্ভুক্ত।
এমনিভাবে পূর্বে উল্লেখিত আয়াতগুলোও সকল প্রকার
ইবাদতকে শামিল করে।
সহীহ
মুসলিমে আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«لَعَنَ اللهُ مَنْ ذَبَحَ لِغَيْرِ اللهِ»
“যে ব্যক্তি আল্লাহ ব্যতীত অন্যের নামে জবাই করবে
তার উপর আল্লাহ লা‘নত বর্ষিত হবে।”[31]
সহীহ বুখারীতে উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু
থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«لاَ تُطْرُونِي، كَمَا أَطْرَتْ
النَّصَارَى ابْنَ مَرْيَمَ، فَإِنَّمَا أَنَا عَبْدُهُ، فَقُولُوا عَبْدُ اللَّهِ،
وَرَسُولُهُ»
“তোমরা আমার অত্যাধিক প্রশংসা করো না যেমন
খৃষ্টানগণ ঈসা (আলাইহিস সালাম) এর ব্যাপারে করেছে, বরং আমি
কেবল একজন বান্দা, কাজেই তোমরা বল যে আমি আল্লাহর বান্দা ও
তার রাসূল।”[32]
এছাড়াও এক আল্লাহর ইবাদত করার নির্দেশ এবং তার
সাথে শির্ক করা এবং শির্কের অসিলা অবলম্বন করা নিষেধের বহু হাদীস রয়েছে।
আর মহিলাদের জন্য কোনো কবর যিয়ারত নেই, কারণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«لَعَنَ الله زائرات القبور»
“কবর যিয়ারতকারিনী মহিলার উপর আল্লাহ অভিসম্পাত
করেছেন।”[33]
কেননা এদের কবর যিয়ারতের ফলে পুরুষদের পক্ষ থেকে
ফেৎনার সম্মুখীন হতে পারে।
ইসলামের প্রাথমিক অবস্থায় সকলের জন্য কবর যিয়ারত
নিষিদ্ধ ছিল, অতঃপর যখন ইসলাম ও তাওহীদ ব্যপকতা লাভ করেছে
তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম সকলের জন্য
কবর যিয়ারতের অনুমতি দিয়েছেন, তারপর ফেৎনার ভয়ে শুধু
মহিলাদেরকে নিষেধ করে দিয়েছেন।
আর কাফেরদের কবর যিয়ারত স্মৃতি এবং উপদেশ গ্রহণ
করার জন্য হলে কোনো অসুবিধা নেই। কিন্তু তাদের জন্য দো‘আ বা ক্ষমা চাওয়া যাবে না।
কেননা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে
সহীহ সনদে এসেছে যে, তিনি তাঁর মা’র
জন্য আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাওয়ার অনুমতি চাইলে আল্লাহ তাঁকে অনুমতি দেননি, তারপর তার কবর যিয়ারতের অনুমতি চাইলে আল্লাহ তাঁকে অনুমতি দিলেন, কারণ তিনি জাহেলিয়া যুগে তার স্বজাতীর ধর্মের উপর মৃত্যুবরণ
করেছেন।
আল্লাহর নিকট সকল নর-নারী মুসলিম ভাইয়ের জন্য
দ্বীন বুঝার এবং কথায়, কাজে ও বিশ্বাসে এর উপর কায়েম থাকার
তাওফীক প্রার্থনা করছি। আমাদেরসহ সকল মুসলিমকে যেন এর পরিপন্থী বিষয়গুলো থেকে
রক্ষা করেন। নিশ্চয়ই তিনি এর অভিভাবক এবং এর উপর ক্ষমতাবান। সালাত ও সালাম বর্ষিত
হোক নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর, তাঁর পরিবার পরিজন এবং তাঁর সকল সাহাবীগণের উপর।
এ কথাটির কোনো ভিত্তি নেই বরং তা বিদ‘আত এবং নিন্দনীয়
প্রশ্ন: ব্রিটেন থেকে ইসলামি জামাত প্রশ্ন করেছে
যে, কেউ কেউ দো‘আ কুনুতে বলে থাকেন: بين سقفنا وكهيعص تكفينا (বাইনা সাকফিনা ও কাফ-হা-ইয়া-আইন সদ তাকফীনা)
এর হুকুম কি? যারা তা বলে তাদের পিছনে কি সালাত হবে?
উত্তর: এ আমলটি নিন্দনীয় এবং বিদ‘আত, ইসলামে এর কোনো ভিত্তি নেই। সে যদি এ বিদ‘আত
ছেড়ে দিয়ে তাওবা না করে তাহলে দায়িত্বশীলদের উচিৎ হলো; তাকে
ইমামতি থেকে বাদ দিয়ে ভালো একজন ইমাম নিয়োগ করা। কেননা আল্লাহ তা‘আলা
বলেন,
﴿وَٱلۡمُؤۡمِنُونَ وَٱلۡمُؤۡمِنَٰتُ بَعۡضُهُمۡ
أَوۡلِيَآءُ بَعۡضٖۚ يَأۡمُرُونَ بِٱلۡمَعۡرُوفِ وَيَنۡهَوۡنَ عَنِ ٱلۡمُنكَرِ﴾ [التوبة: ٧١]
“মুমিন নর-নারী একজন অপরজনের বন্ধু,
তারা সৎকর্মের নির্দেশ দেয় এবং অসৎকর্মের নিষেধ করে।” [সূরা তাওবা/৭১]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«مَنْ رَأَى مِنْكُمْ مُنْكَرًا فَلْيُغَيِّرْهُ بِيَدِهِ،
فَإِنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَبِلِسَانِهِ، فَإِنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَبِقَلْبِهِ، وَذَلِكَ
أَضْعَفُ الْإِيمَانِ»
“তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি কোনো অন্যায় হতে দেখবে
সে যেন তা হাত দ্বারা প্রতিহত করে, তা করা সম্ভব না হলে মুখ
দ্বারা নিষেধ করবে, অতঃপর তাও যদি সম্ভব না হয় তাহলে অন্তরে
ঘৃনা করবে, আর এটিই সবচেয়ে দুর্বলতম ঈমান।”[34]
নবীর
সম্মানের দ্বারা অসিলা গ্রহণ করার হুকুম
প্রশ্ন: যে মুসলিম আল্লাহর ফরযগুলো আদায় করে এবং
নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সম্মান দ্বারা অসিলা
গ্রহণ করে তার হুকুম কি? তাকে কি মুশরিক বলা যাবে? অনুগ্রহ করে উপকার করবেন।
উত্তর: যে মুসলিম আল্লাহকে এক জানবে, তাকে ডাকবে, এক আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে
এবং লা-ইলা-হা ইল্লাল্লাহর অর্থের উপর পূর্ণ বিশ্বাস রাখবে যে, আল্লাহ
ব্যতীত ইবাদতের যোগ্য কোনো উপাসক নেই এবং বিশ্বাস করবে যে, মুহাম্মদ
সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর সত্য রাসূল, জ্বিন ও মানুষের নিকট তাঁকে পাঠিয়েছেন, সে
একজন মুসলিম। কারণ সে কালেমার সাক্ষ্য দিয়েছে এবং রাসূলকে বিশ্বাস করেছে। অতঃপর সে
যদি কোনো অপরাধ করে তাহলে তার ঈমানের ঘাটতি হবে যেমন: ব্যভিচার করা,
চুরি করা ও সূদ খাওয়া যতক্ষণ না তা হালাল মনে করবে। কিন্তু শয়তানের
প্ররোচনায় পড়ে যদি এ অপরাধ করে ফেলে তাহলে তার ঈমানের ঘাটতি হবে এবং ঈমানের
দুর্বলতা হবে।
আর যদি নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এর সম্মানের অসিলা করে বলে, হে আল্লাহ, আমি
রাসূলের সম্মান বা তাঁর হক্বের অসিলায় তোমার নিকট প্রার্থনা করছি, তাহলে
অধিকাংশ আলেমের নিকট তা বিদ‘আত, তার
ঈমান কমে যাবে কিন্তু মুশরিক বা কাফের হবে না। যেমন অন্যান্য অপরাধের দ্বারা ইসলাম থেকে বের হয়ে যায় না; বরং সে মুসলিমই
থেকে যাবে। কারণ দো‘আ এবং দো‘আর পদ্ধতিগুলো কুরআন ও হাদীসের উপর সীমাবদ্ধ। এতে
নবীর সম্মান, বা তাঁর হক্ব বা অন্যান্য নবীদের সম্মান বা
হক্ব অথবা আহলে বাইতের অন্য কারো সম্মান বা হক্বের দ্বারা অসীলা গ্রহণ করার কোনো প্রমাণ
পাওয়া যায় না।
সুতরাং তা ছেড়ে দেওয়া ওয়াজিব। কিন্তু তা শির্ক নয়
বরং শির্কের মাধ্যম, তা করলে মুশরিক হবে না বরং অধিকাংশ আলেমের
নিকট সে বিদ‘আতে পতিত হবে; ফলে তার ঈমান কমে যাবে, কেননা দো‘আর পদ্ধতিগুলো কুরআন ও হাদীসের
উপর সীমাবদ্ধ।
কাজেই যে কোনো মুসলিম আল্লাহর গুণ এবং নামের
দ্বারা অসিলা গ্রহণ করবে। যেমন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَلِلَّهِ ٱلۡأَسۡمَآءُ ٱلۡحُسۡنَىٰ فَٱدۡعُوهُ
بِهَاۖ﴾ [الاعراف: ١٨٠]
“আর আল্লাহর রয়েছে সুন্দর সুন্দর নাম, সুতরাং এর দ্বারা তোমরা তাকে ডাক।” [সূরা আল-আ‘রাফ/১৮০]
অনুরূপ তাওহীদ ও ঈমানের দ্বারা অসীলা গ্রহণ করবে, যেমন হাদীসে এসেছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেন:
«اللهم إني أسألك بأني أشهدُ أنك أنت الله لا
إله إلا أنت الأحد الصمدُ الذي لم يلد ولم يولد ولم يكن له كفوا أحد»
“হে
আল্লাহ, আমি তোমারই নিকট প্রার্থনা করি, কেননা
আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি নিশ্চয়ই তুমি আল্লাহ, তুমি ছাড়া ইবাদতের
যোগ্য কোনো উপাসক নেই, একক সত্তা, যার
নিকট সকল কিছু মুখাপেক্ষী, তিনি জন্ম দেননি এবং জন্ম নেননি, আর তাঁর সমকক্ষ কেউ নেই।”[35]
এটি হচ্ছে তাওহীদের দ্বারা অসীলা গ্রহণ করা।
এমনিভাবে সৎ আমল দ্বারা অসীলা গ্রহণ করাও
অনুমোদিত। যেমন, পাহাড়ের গর্তে আটকে পড়া লোকদের ঘটনা বর্ণনার হাদীসে এসেছে যে, রাত্রি বা বৃষ্টির কারণে কিছু লোক গর্তে প্রবেশ করলে একটি বড়
পাথর এসে গর্তের মুখ বন্ধ করে দিল। তারা চেষ্টা করেও তা সরাতে পারল না। অতঃপর তারা
একে অপরকে বলল, এ পাথর থেকে মুক্তি পাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই; কিন্তু যদি তোমরা
তোমাদের কৃত সৎ আমলের দ্বারা দো‘আ কর। তারপর তারা তাদের সৎ
আমলের অসীলায় দো‘আ করল। তাদের একজন তার মাতা-পিতার সাথে সদ্যবহারের
দ্বারা অসিলা করল ফলে পাথরটি সামান্য সরে গেল, অপর একজন
ব্যভিচার থেকে বিরত থাকার দ্বারা অসীলা করল, তার একজন চাচাত বোন ছিল,
সে তাকে খুব ভালোবাসতো, একদিন তাকে কাছে পাওয়ার জন্য
চাইল কিন্তু সে তাতে রাজি হলো না, অতঃপর চাচাত বোনের খুব
অভাব দেখা দিলে তার নিকট এসে কিছু সাহায্য চাইল। সে বলল: তুমি যদি আমার কথায় রাজি
হও তাহলে আমি তোমাকে সাহায্য করতে পারি, অতঃপর মেয়েটি একশত
বিশটি সোনার দিনারের বদলায় রাজি হলো। তারপর সে যখন ব্যভিচারের জন্য তার দু’পায়ের উপর বসল তখন মেয়েটি বলল: আল্লাহকে ভয় কর, সতীত্বের
হক্ব আদায় ব্যতীত তা নষ্ট করো না। তখন সে আল্লাহর ভয়ে উঠে গেল, ব্যভিচার
করেনি এবং একশত বিশটি দিনারও ছেড়ে দিল। তা স্মরণ করে বলল, হে আল্লাহ,
তুমিতো জন, আমি এ কাজ তোমার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য
করেছিলাম কাজেই আমাদের এ বিপদ থেকে তুমি রক্ষা কর। পাথরটি আরো একটু সরে গেল কিন্তু
এতে তারা বের হতে পারল না, অতঃপর তৃতীয় ব্যক্তি তার আমানত
আদায়ের দ্বারা অসীলা গ্রহণ করে বলল, তার নিকট এক শ্রমিকের পয়সা বাকী ছিল, সে তা না নিয়ে চলে গেলে সে তা ব্যবসার মাধ্যমে বাড়িয়েছে, বাড়তে বাড়তে উঁট, গরু, ছাগল
এবং রাখালসহ বহু সম্পদ হয়েছে। তারপর একদিন সে ব্যক্তি এসে তার পারিশ্রমিক চাইলে সবগুলো
দিয়ে দিল। তা স্মরণ করে বলল, হে আল্লাহ, তুমিতো জান, আমি এ কাজ তোমার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য করেছিলাম কাজেই তুমি আজ
আমাদেরকে এ বিপদ থেকে রক্ষা কর, ফলে পাথরটি সরে গেল এবং তারা সকলেই গর্ত থেকে বের
হয়ে চলে গেল।”[36]
এতে প্রমাণিত হয় যে, সৎ আমল
দ্বারা অসীলা গ্রহণ করা দো‘আ কবুল হওয়ার কারণ। আর নবী সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সম্মানের অসীলা বা আবু বকর সিদ্দিক, উমর, আলী (রাদিয়াল্লাহু আনহুম) বা আহলে বাইতের কারো
অথবা তাদের মত অন্য কারো সম্মানের অসীলা গ্রহণ করার কোনো ভিত্তি নেই বরং তা বিদ‘আত। শর‘ঈ অসীলা হলো: আল্লাহর নাম বা গুণাবলী
বা তার প্রতি ঈমানের দ্বারা অসীলা গ্রহণ করা। যেমন কেউ বলল: হে আল্লাহ, আমি তোমার নিকট চাচ্ছি তোমার প্রতি ঈমানের অসিলায় বা তোমার নবীর
প্রতি ঈমানের অসিলায়, বা তোমার প্রতি আমার মহব্বতের অসীলায়
বা তোমার নবীর প্রতি আমার মহব্বতের অসীলায়, তা ভালো আর এটিই শর‘ঈ অসীলা।
অথবা তাওহীদের দ্বারা অসীলা গ্রহণ,
যেমন কেউ বলল: হে আল্লাহ, আমি তোমারই নিকট চাই, কেননা আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি নিশ্চয়ই তুমি আল্লাহ, তুমি
ছাড়া ইবাদতের যোগ্য কোনো উপাসক নেই, তুমি এক ও একক সত্তা।
এটিও ভালো।
অথবা মাতা-পিতার সাথে সদ্ব্যবহার, সালাতের
প্রতি যত্নবান হওয়া এবং ব্যভিচার থেকে বিরত থাকার দ্বারা অসীলা গ্রহণ করা, এ সবগুলোই সৎ আমলের অসীলা গ্রহণ। আর এগুলোই আলেমগণ স্বীকৃতি দিয়েছেন।
কিন্তু নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সম্মানের
অসীলা বা অন্য কারো সম্মানের অসীলা গ্রহণ করা বিদ‘আত। পূর্বে
তা উল্লেখ করা হয়েছে এবং অধিকাংশ আলেমের মত হলো যে, তা জায়েয নেই।
নবীদের
নির্দশনগুলো খুঁজে বের করে এতে সালাত পড়া বা এর উপর মাসজিদ তৈরী করার হুকুম
প্রশ্ন: যে সকল জায়গায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত পড়েছেন সেখানে মাসজিদ বানানো ভালো? নাকি ঐ অবস্থায় ছেড়ে দেওয়া বা সাধারণ বিনোদনের জায়গা বানানো ভালো?
উত্তর: নবীদের নির্দশনগুলো খুঁজে বের করে এতে সালাত
পড়া বা এর উপর মাসজিদ তৈরী করা কোনো মুসলিমের পক্ষে জায়েয নেই, কারণ
তা শির্কের বাহন, এ জন্যে
উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তা থেকে লোকদেরকে নিষেধ করতেন
এবং বলতেন: “তোমাদের পূর্ববর্তী জাতি তাদের নবীদের নির্দশনাবলী অনুসরণের দ্বারা
ধ্বংস হয়েছে। শির্কের বাহন ধ্বংস করতে এবং বিদ‘আত থেকে লোকদেরকে
সতর্ক করতে তিনি হুদাইবিয়ার সেই বৃক্ষটি কেটে ফেলেছেন যার নীচে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাই‘আত করা হয়েছিল, কারণ
তিনি কিছু লোককে দেখলেন তারা সেখানে গিয়ে এর নীচে সালাত পড়ছে। তিনি কাজে এবং
চরিত্রে জ্ঞানী ছিলেন, শির্কের মাধ্যম এবং এর কারণগুলো ধ্বংস
করতে আগ্রহী ছিলেন। আল্লাহ তাকে উম্মতে মুহাম্মদীয়ার পক্ষ থেকে উত্তম বদলা দিন।
তার কারণেই মক্কা, তাবুক ইত্যাদি রাস্তায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নির্দশনাবলীতে কোনো সাহাবী মাসজিদ
তৈরী করেন নি। কেননা তারা জানতেন যে, তা বিদ‘আত;
যা থেকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম সতর্ক
করে গেছেন এবং তা শরীয়ত বিরোধী, তা বড় শির্কে পতিত হওয়ার
কারণ হতে পারে।
আয়েশা
(রাদিয়াল্লাহু আনহা) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “যে ব্যক্তি আমার এ দ্বীনের মধ্যে নতুন
কোনো জিনিস সৃষ্টি করবে যা এর অন্তর্ভুক্ত নয়, তা প্রত্যাখ্যাত।”
সহীহ মুসলিমে তাঁর বাণী: “যে ব্যক্তি এমন কোনো আমল
করবে যা আমার শরিয়ত সমর্থিত নয় তা প্রত্যাখ্যাত।”
এবং জুম‘আর খুৎবায় তিনি
বলেছিলেন :
“অতঃপর সর্বোত্তম বাণী হলো আল্লাহর কিতাব এবং
সর্বোত্তম হেদায়েত হলো মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এর হেদায়েত, আর
নিকৃষ্টতর কাজ হলো এর নব আবিষ্কৃত কাজ, এবং প্রতিটি বিদ‘আতই ভ্রষ্টতা।”
এ অর্থে আরও বহু হাদীস রয়েছে ।
মাকামে ইব্রাহীম ও ক্বাবা শরীফের দেওয়াল বা কাপড়ে মুছা জায়েয নেই
প্রশ্ন: কিছু লোককে দেখেছি মাকামে ইব্রাহীমকে
সম্মান করে এবং বরকত হাসিলের জন্য তা স্পর্শ করে, এমনিভাবে কা‘বা
শরীফকেও স্পর্শ করে থাকে, তা করার হুকুম কি? বিস্তারিত
জানতে চাই।
উত্তর: মাকামে ইব্রাহীম, ক্বাবা
শরীফের দেওয়াল বা কাপড়ে মুছা, এ সবই না জায়েয,
শরিয়তে এর কোনো ভিত্তি নেই। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম তা করেননি। বরং তিনি হাজরে আসওয়াদকে চুম্বন করেছেন,
তা স্পর্শ করেছেন এবং ভিতর থেকে ক্বাবার দেওয়াল স্পর্শ করেছেন। তিনি যখন ভিতরে
প্রবেশ করেছিলেন তখন ভিতর থেকে ক্বাবার দেওয়ালে বুক এবং গাল লাগিয়েছেন এবং এক
কর্ণারে তাকবীর দিয়েছেন ও দো‘আ করেছেন। আর বাহির থেকে তিনি
তা কখনো করেছেন বলে কিছু সাব্যস্ত নেই। বলা হয়ে থাকে যে, তিনি
মুলতাযাম (ক্বাবা ঘরের দরজার চৌকাট) ধরেছিলেন, এর সনদ দুর্বল, প্রকৃত পক্ষে কিছু সাহাবা এ রকম করেছিলেন, কাজেই
কেউ যদি তা করে ফেলে তাহলে কোনো অসুবিধা নেই। আর মুলতাযাম ধরাতেও অসুবিধা নেই। আর
হাজরে আসওয়াদকে চুম্বন করা সুন্নাত।
ক্বাবার কাপড় বা দেওয়ালে মুছা বা লেগে থাকা উচিৎ
নয়, কারণ এর কোনটিরই যেমনি কোনো ভিত্তি নেই তেমনি তা
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বা কোনো সাহাবী
থেকে সাব্যস্তও নেই, পরবর্তীতে মানুষ তা তৈরী করেছে, বিধায়
তা বিদ‘আত।
ক্বাবা শরীফের নিকট কোনো কিছু চাওয়া বা দো‘আ করা অথবা এর দ্বারা বরকত হাসিল করা বড় শির্ক, কারণ
এতে আল্লাহ ব্যতীত অন্যের ইবাদত করা হয়। সুতরাং যে ব্যক্তি ক্বাবার নিকট রোগমুক্তি
চাইবে অথবা রোগ ভালো হওয়ার আশায় মাকামে ইব্রাহীমে মুছবে সে বড় শির্কে পতিত হবে।
তলোয়ার
দ্বারা নিজেকে আঘাত করার উৎসব পালন করা নিন্দনীয় কাজ
প্রশ্ন: একটি ব্যাপার দেখে আমি এবং আমার পরিবারের
সকলেই অত্যন্ত হতভম্ব হয়েছি, আর তা হলো: আমাদের গ্রামে কিছু
অনুষ্ঠান এবং জন্মোৎসব পালন করা হয়, এতে কিছু আশ্চর্য
আশ্চর্য কাজ হয়ে থাকে। কিছু লোক তলোয়ার বা খঞ্জর দিয়ে নিজেকে আঘাত করে এবং হাত বা
হাতের আঙ্গুল কেটে ফেলে। এ সব কাণ্ড কি যুক্তিসঙ্গত? এটি কি
শয়তানের কাজ? নাকি জাদু টোনা? যদি
শয়তানের কাজ হয়ে থাকে তাহলে তা কিভাবে দেখবেন যে, কেউ যদি
বলে তা ঠিক নয় বরং তা জাদু, তাহলে পরের দিনই সে মারাত্মক
অসুস্থ হয়ে পড়ে যা থেকে ভালো হওয়ার সম্ভাবনা কম। কিন্তু যদি তাদের নিকট ক্ষমা চায়
তাহলেই ভালো হয়। নিশ্চয়ই তা একটি ফেৎনা, আমরা এর সম্মুখীন
হচ্ছি। এ ব্যাপারে আমাদেরকে একটি সঠিক দিক নির্দেশনা দিন, আল্লাহ
আপনাকে উত্তম বদলা দিন।
উত্তর: সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য, সালাত
ও সালাম বর্ষিত হোক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এর উপর। অতঃপর প্রশ্নকারী উল্লেখ করেছেন যে, কিছু
লোক অনুষ্ঠান এবং উৎসব পালনের সময় তাদের হাত এবং হাতের অঙ্গুলি কেটে ফেলে এবং যে
ব্যক্তি এর নিন্দা করবে তাকে বিভিন্ন রোগে আক্রমন করে। এ সবই শয়তানী কাজ, মানুষের জন্য সাজিয়েছে তার আনুগত্য করার জন্য, এমন
কি সে যদি বলে: আল্লাহর নাফরমানী করে তার আনুগত্য করতে তারা তা-ই করে থাকে।
আর এ অপরাধীগণ যে কাজ করে থাকে তা হলো: জাদুর
মাধ্যমে তারা লোকদের চোখে ধাঁধাঁ বা ভেলকি লাগিয়ে রাখে ফলে তারা মনে করে যে, হাত-পা অথবা হাত-পায়ের আঙ্গুল কেটে ফেলে, আসলে
এর কিছুই নয়, সবকিছুই মিথ্যা এবং জাদু টোনা।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿قَالَ أَلۡقُواْۖ فَلَمَّآ أَلۡقَوۡاْ سَحَرُوٓاْ أَعۡيُنَ ٱلنَّاسِ وَٱسۡتَرۡهَبُوهُمۡ
وَجَآءُو بِسِحۡرٍ عَظِيمٖ ١١٦ ﴾ [الاعراف: ١١٦]
“অতঃপর যখন তারা তাদের রশিগুলো নিক্ষেপ করল তখন
লোকদের চোখ ধাঁধিয়ে ফেলল এবং তাদেরকে ভীত সন্ত্রস্ত করে তুলল, এবং
তারা মহাজাদু প্রদর্শন করল।” [সূরা আরাফ/১১৬]
কাজেই জাদুকর অন্য লোকদের চোখকে জাদু করে ফলে, তারা রশি এবং লাঠিকে সাঁপ দেখতে পায়, যেমন
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿قَالَ بَلۡ أَلۡقُواْۖ فَإِذَا حِبَالُهُمۡ وَعِصِيُّهُمۡ يُخَيَّلُ إِلَيۡهِ
مِن سِحۡرِهِمۡ أَنَّهَا تَسۡعَىٰ ٦٦ ﴾ [طه: ٦٦]
“মুসা বললেন, বরং তোমরা নিক্ষেপ কর,
তখনই তার মনে হলো যেন তাদের লাঠি এবং রশিগুলো ছুটাছুটি করছে।” [সূরা ত্বা-হা/৬৬]
মোটকথা, এ সকল জাদুকরী কাজ ভ্রান্ত। এর নিন্দা
করা ওয়াজিব। আর সরকারের উচিৎ হলো: তাদেরকে এবং তাদের মত যারা আছে সকলকে এ কাজ থেকে
নিষেধ করা এবং তাদেরকে শাস্তি দেওয়া। ইসলামী শাসন হলে তাদের ক্ষতি থেকে মানুষকে
রক্ষার জন্য তাদের উপর ইসলামী আইন বাস্তবায়ন করা ওয়াজিব। তেমনি কারো জন্মোৎসব পালন
করার কোনো ভিত্তি নেই বরং তা মানুষের তৈরী করা বিদ‘আত, ইসলামে কারো কোনো জন্মোৎসব নেই। বরং নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাণী অনুযায়ী ইসলামে উৎসব হলো: ঈদুল আযহা
এবং ঈদুল ফিতর, হাজিদের জন্য আরাফা দিবস, এবং
মিনার দিনগুলো।
কিন্তু নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বা হুসাইন বা অন্য কারো জন্মোৎসব পালন করা ইসলামের স্বর্ণযুগের পর পরবর্তী
লোকদের তৈরী করা বিদ‘আত। কাজেই তা ছেড়ে দিয়ে তাওবা করা, একে অপরকে সৎকাজে সহযোগিতা করা, পরস্পরে সৎ
পরামর্শ দেওয়া এবং আল্লাহ ও রাসূলের বিধানের দিকে ফিরে আসা সকল মুসলিমের উপর
ওয়াজিব। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর
অনুসরণেই রয়েছে সকল কল্যাণ এবং তাঁর ও সাহাবীগণের বিরোদ্ধচারণ রয়েছে যাবতীয় অমঙ্গল।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
“যে ব্যক্তি আমার এ দ্বীনের মধ্যে নতুন কোনো জিনিস
সৃষ্টি করবে যা এর অন্তর্ভুক্ত নয় তা প্রত্যাখ্যাত।”
তিনি আরো বলেন : “যে ব্যক্তি এমন কোনো আমল করবে
যা আমার শরিয়ত সমর্থিত নয় তা প্রত্যাখ্যাত।”
সহীহ বুখারীতে জাবের ইবন আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু
‘আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম জুম‘আর খুৎবায় বলেছেন,
“অতঃপর
সর্বোত্তম বাণী হলো, আল্লাহর কিতাব এবং সর্বোত্তম হেদায়েত হলো: মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হেদায়েত, আর
নিকৃষ্টতর কাজ হলো এর নব আবিষ্কৃত কাজ, এবং প্রতিটি বিদ‘আতই ভ্রষ্টতা।”
ইমাম
নাসায়ী আরো একটু বাড়িয়ে বর্ণনা করেছেন: “এবং প্রতিটি ভ্রষ্টতাই জাহান্নামে।”
অনুরূপ ইরবাদ্ব ইবন সারিয়ার হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “এবং নব রচিত কর্মসমূহ থেকে
সাবধান থাক; কেননা প্রতিটি নব আবিষ্কৃত কাজ হচ্ছে বিদ‘আত এবং
সকল বিদ‘আত হচ্ছে ভ্রষ্টতা।”
অতএব মিসর, ইরাক, ইরানসহ সকল জায়গার মুসলিম ভাইদের প্রতি আমার উপদেশ হলো: তারা যেন
এ সকল নিন্দনীয় উৎসব পালন করা ছেড়ে দিয়ে শরিয়ত সম্মত ইসলামি উৎসবগুলো পালন করে এবং
রাত্রে বা দিনের বেলায় উপযুক্ত সময়ে তাদের মাজলিস যেন কুরআন ও হাদীসের আলোকে
দ্বীনের জ্ঞান শিক্ষার জন্য হয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এর সেই বাণীর উপর আমল করার লক্ষ্যে যা সহীহ হাদীসে এসেছে:
“তোমাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ সেই ব্যক্তি, যে কুরআন শিক্ষা করে এবং শিক্ষা দেয়।”[37]
এবং তাঁর বাণী:
“আল্লাহ যার কল্যাণ চান, তাকে
তিনি দ্বীনের জ্ঞান শিক্ষা দান করেন।”[38]
এবং তাঁর বাণী:
“যে ব্যক্তি জ্ঞান শিক্ষার জন্য বের হবে আল্লাহ
তার জন্য জান্নাতের পথকে সহজ করে দিবেন।”[39]
কারো জন্মোৎসব পালনের জন্য একত্রিত হওয়া বিদ‘আত, কাজেই তা ছেড়ে দেওয়া এবং তা থেকে
সতর্কতা অবলম্বন করে ভালো পদ্ধতি এবং সদোপদেশের মাধ্যমে পরস্পরে সহযোগিতা করা উচিৎ
যেন প্রকৃত মুমিন নর-নারীগণ তা বুঝতে পারে এবং মাজলিস যেন হয় আল্লাহ ও রাসূলের
আনুগত্যের জন্য, দ্বীনের জ্ঞান শিক্ষা গ্রহণ এবং বুঝার জন্য, ও পরস্পরে ভালো এবং তাকওয়াপূর্ণ কাজে সহযোগিতা করার জন্য। কিন্তু
কারো জন্মোৎসব পালন করার জন্য একত্রিত হওয়া বিদ‘আত, বিশেষ করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এর জন্মোৎসব পালনের জন্য একত্রিত হওয়া। কারণ তিনি উম্মতের জন্য তা বিধান
করেন নি, যেমন পূর্বে আলোচনা করা হয়েছে। যদি তাঁর জন্মোৎসব
পালন বৈধ হত তাহলে তিনি তা নিজে করতেন এবং তাঁর সাহাবীগণকে পালন করা শিক্ষা দিতেন,
ফলে তাঁর পরবর্তীতে সাহাবীগণ নিজেরা পালন করতেন এবং লোকদেরকে তা শিক্ষা দিতেন তারা
তা পালন করতো। যেহেতু এর কোনো কিছুই হয় নি, বিধায় বুঝতে হবে যে তা বিদ‘আত।
বাড়ী তৈরীর কাজ অর্ধেক বা পূর্ণ হলে পশু
জবাই করা
প্রশ্ন: একজন সুদানী মুসলিম ভাই প্রশ্ন করে
বলছেন: আমাদের দেশে একটি রেওয়াজ আছে যে, কোনো ব্যক্তি ঘর
তৈরী করতে গিয়ে অর্ধেকে পৌঁছিলে বা ঘরের কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর সেখানে উঠার পূর্বেই
পশু জবাই করে আত্মীয় স্বজন এবং প্রতিবেশীদেরকে দাওয়াত করে খাওয়ানো হয়। এ ব্যাপারে
আপনার মতামত কি? নতুন ঘরে উঠার পূর্বে এমন কোনো ভালো কাজ আছে
কি যা করা বৈধ। অনুগ্রহ করে তা জানাবেন।
উত্তর: সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য, সালাত ও
সালাম বর্ষিত হোক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর, তাঁর
পরিবার পরিজন, সকল সাহাবী এবং তাঁর পথের অনুসারীদের উপর। অতঃপর
এ ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনার প্রয়োজন। যদি এ পশু জবাই করা দ্বারা জ্বিন হতে রক্ষা
বা অন্য কোনো উদ্দেশ্য হয়, যেমন এর দ্বারা সে বা ঐ ঘরে বসবাসকারীগণ নিরাপদে থাকবে, এমন উদ্দেশ্য থাকে, তাহলে তা জায়েয নেই বরং তা বিদ‘আত।
আর যদি জ্বিনের জন্য জবাই করে থাকে, তাহলে বড় শির্ক হবে, কেননা
তা হবে গাইরুল্লাহ তথা আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারও ইবাদত করা।
আর যদি তার উপর আল্লাহর নেয়ামতের কৃতজ্ঞতা
প্রকাশার্থে ঘরের অর্ধেক বা ঘর সম্পন্ন হওয়ার পর পশু জবাই করে আত্মীয় স্বজন এবং
প্রতিবেশীদেরকে দাওয়াত করে খাওয়ায় তাহলে কোনো অসুবিধা নেই। ভাড়াটে ঘরে না থেকে
নিজে ঘর তৈরী করে থাকার মত তার উপর আল্লাহর নেয়ামতের কৃতজ্ঞতা প্রকাশার্থে অধিকাংশ
লোক এটিই করে থাকে। এমনিভাবে কিছু লোক ভ্রমণ থেকে নিরাপদে বাড়ীতে পৌঁছার কারণে
আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশার্থে আত্মীয় স্বজন এবং প্রতিবেশীদেরকে দাওয়াত করে থাকে।
কেননা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ভ্রমণ থেকে
ফিরে আসতেন তখন উঁট জবাই করে লোকদেরকে খাওয়াতেন।
রজব মাসে
সংঘটিত বিদ‘আতসমূহ
প্রশ্ন: কিছু লোক রজব মাসকে কিছু ইবাদতের জন্য
নির্দিষ্ট করে থাকে। যেমন, রাগায়েবের সালাত এবং ২৭শে রজবের রাত্রি জাগরণ। শরীয়তে
এর কোনো ভিত্তি আছে কি?
উত্তর: রাগায়েবের সালাত বা ২৭ শে রজবে উৎসব পালন
করা এই ধারণায় যে, এ তারিখে ইসরা এবং মেরাজ হয়েছে এ সবই বিদ‘আত, শরীয়তে এর কোনো ভিত্তি নেই। বিজ্ঞ আলেমগণ
এ থেকে সতর্ক করেছেন এবং আমিও এ ব্যাপারে কয়েকবার লেখার মাধ্যমে লোকদেরকে স্পষ্ট
জানিয়ে দিয়েছি যে, রাগায়েবের সালাত বিদ‘আত।
কিছু লোক রজব মাসের প্রথম জুম‘আ রাত্রিতে তা করে থাকে। এমনিভাবে
২৭ শে রজবে উৎসব পালন করে থাকে এ ধারণায় যে, এ তারিখে ইসরা
এবং মেরাজ হয়েছে এ সবই বিদ‘আত, শরীয়তে
এর কোনো ভিত্তি নেই।
ইসরা এবং মেরাজের সঠিক তারিখ জানা যায় না, যদি জানাও যায় তাহলে এ নিয়ে উৎসব পালন করা জায়েয নেই কারণ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো তা পালন
করেননি, তদ্রূপ তাঁর সুপথ প্রাপ্ত খলিফাগণ এবং বাকী অন্যান্য
সাহাবীগণও কখনো তা পালন করেননি। যদি তা পালন করা সুন্নাত হত তাহলে তারা অবশ্যই
করতেন।
তাদের অনুসরণ এবং তাদের পথে চলার মধ্যেই সকল
কল্যাণ রয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ وَٱلسَّٰبِقُونَ ٱلۡأَوَّلُونَ مِنَ ٱلۡمُهَٰجِرِينَ
وَٱلۡأَنصَارِ وَٱلَّذِينَ ٱتَّبَعُوهُم بِإِحۡسَٰنٖ رَّضِيَ ٱللَّهُ عَنۡهُمۡ وَرَضُواْ
عَنۡهُ وَأَعَدَّ لَهُمۡ جَنَّٰتٖ تَجۡرِي تَحۡتَهَا ٱلۡأَنۡهَٰرُ خَٰلِدِينَ فِيهَآ
أَبَدٗاۚ ذَٰلِكَ ٱلۡفَوۡزُ ٱلۡعَظِيمُ ١٠٠ ﴾ [التوبة: ١٠٠]
“আর যারা সর্ব প্রথম হিজরতকারী, আনসার
এবং যারা তাদের অনুসরণ করেছে, আল্লাহ সে সকল লোকদের প্রতি সন্তুষ্ট
হয়েছেন এবং তারাও তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছে। আর তাদের জন্য প্রস্তুত রেখেছেন সেই
জান্নাত যার তলদেশ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে নদীসমূহ। সেখানে তারা চিরকাল থাকবে। এটাই
হলো মহা কৃতকার্যতা। [সূরা তাওবা/১০০]
এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম থেকে সহীহ সনদে এসেছে যে, তিনি বলেছেন: “যে
ব্যক্তি আমার এ দ্বীনের মধ্যে নতুন কোনো জিনিস সৃষ্টি করবে যা এর অন্তর্ভুক্ত নয়
তা প্রত্যাখ্যাত।”[40]
তিনি আরও বলেন : “যে ব্যক্তি এমন কোনো আমল করবে
যা আমার শরিয়ত সমর্থিত নয় তা প্রত্যাখ্যাত।”[41]
এবং তিনি তাঁর
জুম‘আর খুৎবায় বলেছেন,
“অতঃপর সর্বোত্তম বাণী হলো: আল্লাহর কিতাব এবং
সর্বোত্তম হেদায়েত হলো: মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম
এর হেদায়েত, আর
নিকৃষ্টতর কাজ হলো এর নব আবিষ্কৃত কাজ, এবং প্রতিটি বিদ‘আতই ভ্রষ্টতা।”[42]
কাজেই সকল মুসলিমের উচিৎ হলো: সুন্নাতের অনুসরণ
করা এবং এর উপর দৃঢ় থেকে পরস্পরে নসিহত গ্রহণ করা এবং সকল প্রকার বিদ‘আত থেকে সতর্ক থাকা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লামের নির্দেশ এবং সেই বাণীর উপর আমল করার লক্ষ্যে যেখানে আল্লাহ বলেছেন :
﴿وَتَعَاوَنُواْ عَلَى ٱلۡبِرِّ وَٱلتَّقۡوَىٰۖ﴾ [المائدة: ٢]
“তোমরা পরস্পরে ভালো এবং তাকওয়াপূর্ণ কাজে
সহযোগিতা কর।” [সূরা মায়েদা/২]
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
﴿وَٱلۡعَصۡرِ ١ إِنَّ ٱلۡإِنسَٰنَ لَفِي خُسۡرٍ
٢ إِلَّا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ وَعَمِلُواْ ٱلصَّٰلِحَٰتِ وَتَوَاصَوۡاْ بِٱلۡحَقِّ
وَتَوَاصَوۡاْ بِٱلصَّبۡرِ ٣ ﴾ [العصر: ١، ٣]
“কসম যুগের, নিশ্চয়ই মানুষ
ক্ষতিগ্রস্ত, কিন্তু তারা নয় যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে এবং
পরস্পরকে হক্বের তাকীদ করে এবং তাকীদ করে ধৈর্যের।” [সূরা আসর ১-৩]
তদ্রূপ নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এর বাণী:
«الدِّينُ
النَّصِيحَةُ» قُلْنَا: لِمَنْ؟ قَالَ: «لِلَّهِ وَلِكِتَابِهِ وَلِرَسُولِهِ وَلِأَئِمَّةِ
الْمُسْلِمِينَ وَعَامَّتِهِمْ»
“দ্বীন হচ্ছে উপদেশ বা কল্যাণ কামনা, বলা হলো, কার জন্য হে আল্লাহর রাসূল? তিনি
বললেন: আল্লাহর জন্য, তার কিতাবের জন্য, তার
রাসূলের জন্য এবং মুসলিমদের ইমাম ও সাধারণ জনগণের জন্য।”[43]
তবে রজব মাসে উমরা করাতে কোনো অসুবিধা নেই, কারণ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে ইবনে উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে সাব্যস্ত আছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম রজব মাসে উমরা করেছেন এবং সালাফগণও রজব
মাসে উমরা করতেন। যেমন হাফেয ইবনে রজব তার কিতাব (আল লাতায়েফ) এ উমর, তার ছেলে আব্দুল্লাহ
এবং আয়েশার হাদীস উল্লেখ করেছেন এবং ইবনে সিরিন হতে বর্ণিত আছে যে, সালাফগণও
এ রকম করেছেন।
মৃত্যুপথ যাত্রী ব্যক্তির পাশে যে সকল বিদ‘আতী কথা বলা হয়
প্রশ্ন: কিছু লোক মৃত্যুপথ যাত্রী ব্যক্তির নিকট
(বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম) শব্দটির পরিবর্তে ৭৮৬ বলে থাকে, সূরা
ওয়াকি‘আ ৪২ বার, যারিয়াহ ৬০ বার, ইয়াসীন
৪১ বার এবং (ইয়া লাতীফ) শব্দটি ১৬৬৪১ বার পড়ে থাকে, এ রকম
করা কি জায়েয আছে? অনুগ্রহ করে জানতে চাই।
উত্তর: শরীয়তে এ রকম নির্দিষ্ট সংখ্যার আমল আছে
বলে আমার জানা নেই, আর এ শব্দের পরিবর্তে সংখ্যা বলা এবং তা
সুন্নাত হিসাবে বিশ্বাস করা হচ্ছে বিদ‘আত। এমনিভাবে মৃত্যুপথ
যাত্রী ব্যক্তির নিকট এভাবে পাঠ করা মৃত্যুর সময় হোক বা মৃত্যুর পর হোক এর কোনো ভিত্তি
নেই। কিন্তু দিবা-রাত্রি বেশী বেশী করে কুরআন তেলাওয়াত করা ভালো, কুরআন
তেলাওয়াতের শুরুতে, খাওয়া, পানাহার, ঘরে প্রবেশ, স্বামী-স্ত্রী সহবাস ইত্যাদি
কাজ কর্মের সময় বিসমিল্লাহ বলা সুন্নাত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম হতে এসেছে যে, তিনি বলেছেন: “যে কাজে বিসমিল্লাহ
বলা হয় না এ রকম প্রতিটি কাজই লেজ কাটা।”[44]
অনুরূপভাবে ইয়া লাতীফ বা ইয়া আল্লাহ ইত্যাদি শব্দ নির্দিষ্ট সংখ্যায় পাঠ করা
সুন্নাত নয় বরং তা বিদ‘আত, শরীয়তে এর
কোনো ভিত্তি নেই।
তবে সংখ্যা নির্দিষ্ট না করে বেশী বেশী দো‘আ করা বৈধ, যেমন কেউ বলল: ইয়া লাতীফ! উলতুফ
বিনা (হে অমায়িক! আমাদেরকে অনুগ্রহ কর, বা আমাদেরকে ক্ষমা কর, বা রহমত কর বা সঠিক রাস্তা দেখাও) ইত্যাদি। তদ্রূপ ইয়া আল্লাহ, ইয়া রহমান, ইয়া রহীম, ইয়া
গাফুর, ইয়া হাকীম, ইয়া আযীযু আমাদেরকে
অনুগ্রহ কর, বিজয় কর, আমাদের আমল এবং
অন্তরকে সংশোধন কর ইত্যাদি বলাও জায়েয। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ وَقَالَ رَبُّكُمُ ٱدۡعُونِيٓ أَسۡتَجِبۡ لَكُمۡۚ﴾ [غافر: ٦٠]
“আর তোমাদের প্রভু বললেন, তোমরা
আমাকে ডাক আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দিব।” [সূরা গাফের ৬০]
তিনি আরও বলেন:
﴿وَإِذَا سَأَلَكَ عِبَادِي عَنِّي فَإِنِّي قَرِيبٌۖ
أُجِيبُ دَعۡوَةَ ٱلدَّاعِ إِذَا دَعَانِۖ فَلۡيَسۡتَجِيبُواْ لِي وَلۡيُؤۡمِنُواْ
بِي لَعَلَّهُمۡ يَرۡشُدُونَ ١٨٦ ﴾ [البقرة: ١٨٦]
“আর আমার বান্দা যখন আমার ব্যাপারে আপনাকে
জিজ্ঞাসা করে তখন (বলুন) আমি তাদের অতি নিকটে, কোনো আহ্বানকারী
আমাকে ডাকলে আমি তার আহবানে সাড়া দেই।” [সূরা বাকারা/১৮৬] তবে শর্ত হচ্ছে, এ যিকির
এর জন্য যা বাড়ানো বা কমানো যাবে না এমন সংখ্যা নির্দিষ্ট করা যাবে না।
কিন্তু যে ব্যাপারে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে নির্দিষ্ট সংখ্যা এসেছে যেমন : (লা ইলাহা
ইল্লাল্লাহু অহদাহু লা শারীকা লাহু, লাহুল মুলকু অলাহুল
হামদু অহুওয়া আলা কুল্লি শাইয়্যিন কাদীর) প্রতিদিন একশত বার। এটি নবী সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে সাব্যস্ত রয়েছে। এমনিভাবে
(সুবহানাল্লাহি অবিহামদিহী ) সকাল সন্ধায় একশত বার, প্রত্যেক
ফরয সালাতের শেষে সুবহানাল্লাহ, অলহামদু লিল্লাহ এবং আল্লাহু
আকবার তেত্রিশ বার করে এবং একবার (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু অহদাহু লা শারীকা লাহু, লাহুল মুলকু অলাহুল হামদু অহুওয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদীর) পড়ে
শতবার পূর্ণ করবে।[45]
এগুলো এবং এ অর্থে আরও যা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম থেকে নির্দিষ্ট সংখ্যায় সাব্যস্ত রয়েছে সেগুলোকে নির্দিষ্ট সংখ্যায় করা
যাবে।
মৃত্যুপথ যাত্রী ব্যক্তির নিকট মৃত্যুর পূর্বে
যদি কিছু আয়াত পাঠ করা হয় তাহলে কোনো অসুবিধা নেই, কেননা নবী
সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এর প্রমাণ রয়েছে।
আর মৃত্যুর পূর্বে তাকে (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ) এর
তালকীন দেওয়াই মুস্তাহাব, কেননা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “তোমরা তোমাদের মৃতদেরকে লা ইলাহা
ইল্লাল্লাহর তালকীন দাও।”[46]
আলেমগণের সঠিক মতে, এখানে ‘মৃত’ শব্দ
দ্বারা উদ্দেশ্য হলো: মৃত্যুপথ যাত্রী ব্যক্তি, কারণ তারাই
তালকীন থেকে উপকার লাভ করে থাকে।
জানাযায় বিদ‘আত
প্রশ্ন: ঐ জাতীর ব্যাপারে আল্লাহ ও তার রাসূলের
হুকুম কি? যখন তাদের কেউ মৃত্যুবরণ করে তখন তার আত্মীয় স্বজন
একটি বকরী জবাই করে থাকে যার নাম দেয় আকীকা এবং এর কোনো হাড় ভাঙ্গবে না। অতঃপর
হাড্ডি ও গোবরগুলো কবর দিয়ে দেয় এই ধারণায় যে, এটিই ভালো কাজ, যা করা অবশ্যই জরুরী।
উত্তর: ইসলামী শরীয়তে এর কোনো ভিত্তি নেই, কাজেই সকল প্রকার বিদ‘আত ও অপরাধের ন্যায়
তা ছেড়ে দিয়ে আল্লাহর নিকট তাওবা উচিৎ। কেননা আল্লাহর নিকট তাওবা করায় পূর্বের সকল
অপরাধ ক্ষমা হয়ে যায়, আর
সকল প্রকার বিদ‘আত এবং পাপ পঙ্কিলতা থেকে তাওবা করা
ওয়াজিব। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ وَتُوبُوٓاْ إِلَى ٱللَّهِ جَمِيعًا أَيُّهَ ٱلۡمُؤۡمِنُونَ لَعَلَّكُمۡ تُفۡلِحُونَ
٣١ ﴾ [النور: ٣١]
“হে
মুমিনগণ, তোমরা সকলেই আল্লাহর নিকট তাওবা কর, হয়তো
তোমরা সফলকাম হতে পারবে।” [সূরা নূর ৩১]
তিনি আরও বলেন:
﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ تُوبُوٓاْ إِلَى ٱللَّهِ تَوۡبَةٗ نَّصُوحًا﴾ [التحريم: ٨]
“হে
মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহর নিকট তাওবা নাসূহ (খাটি) কর। [সূরা
তাহরীম/৮]
আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম থেকে যে সকল সহীহ হাদীস এসেছে তাতে শর‘ঈ আকীকা
হলো: কোনো সন্তান জন্ম গ্রহণের সপ্তম দিনে যা জবাই করা হয় তা। ছেলের পক্ষে দু’টি খাসী আর মেয়ের পক্ষে একটি খাসী জবাই করা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাসান এবং হুসাইনের পক্ষে আকীকা করেছেন।
আকীকাদাতা ইচ্ছা করলে এর গোশত ফকীর মিসকীন, পাড়া প্রতিবেশী
এবং বন্ধুবান্ধবের মাঝে বন্টন করে দিতে পারে অথবা রান্না করে তাদেরকে দাওয়াত দিয়ে
খাওয়াতে পারে। আর এটিই শর‘ঈ আকীকা, তা সুন্নাতে
মুয়াক্কাদা, তবে কেউ তা না করলে তার পাপ হবেনা।
মৃত
ব্যক্তির উপর কুরআন পড়া এবং তার বুকের উপর কুরআন রাখার হুকুম, শোক
পালনের নির্দিষ্ট কোনো সময় আছে কি?
প্রশ্ন: নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বোন প্রশ্ন করে
বলছেন: মৃত ব্যক্তির উপর কুরআন পড়া এবং তার পেটের উপর কুরআন রাখার হুকুম কি, শোক পালনের নির্দিষ্ট কোনো সময় আছে কি? যেমন
বলা হয়ে থাকে যে, শোক পালনের নির্দিষ্ট সময় হলো: তিন দিন? অনুগ্রহ করে এর হুকুম জানিয়ে উপকার করবেন।
উত্তর: মৃতের উপর বা কবরের উপর কুরআন পড়ার সঠিক
কোনো ভিত্তি নেই, তা করা বৈধ নয় বরং তা বিদ‘আত।
এমনিভাবে তার পেটের উপর কুরআন রাখাও বৈধ নয়। তবে কোনো কোনো আলেম বলেছেন: পেটের উপর
লোহা বা ভারী কোনো জিনিস রাখার জন্য যেন লাশ ফোলে না যায়।
আর শোক পালনের নির্দিষ্ট কোনো দিন নেই, বরং তা মৃত্যুর পর থেকেই পালন করতে পারে জানাযার আগে বা পরে, এর কোনো নির্ধারিত সময় নেই, দিবা- রাত্রির
যে কোনো সময় তা পালন করতে পারে। এমনিভাবে ঘরে, বাইরে, রাস্তায় বা মাসজিদে বা কবরস্থানে ইত্যাদি যে কোনো জায়গায় শোক
পালন করতে পারে।
চল্লিশা বা
বাৎসরিক শোক পালন শরীয়ত পরিপন্থী
প্রশ্ন: শোক পালনের ক্ষেত্রে চল্লিশা, বাৎসরিক পালন এবং কুরআন তেলাওয়াত (কুরআন খানী) ইত্যাদি রেওয়াজের
হুকুম কি?
উত্তর: শরীয়তে এ সমস্ত ইবাদতের যেমন কোনো স্থান
নেই, তেমনি এর কোনো ভিত্তিও নেই বরং তা বিদ‘আত
এবং জাহেলী যুগের কাজ। কেউ মারা গেলে শোক
পালনের জন্য আত্মীয় স্বজন এবং পাড়া প্রতিবেশীদেরকে দাওয়াত করে খাওয়ানো ঠিক নয় বরং বিদ‘আত। এমনিভাবে সাপ্তাহিক বা বাৎসরিক অনুষ্ঠান করা জাহেলিয়া যুগের বিদ‘আত। মৃতের পরিবারের সদস্যদের করণীয় হলো ধৈর্য্য ধারণ করে পূণ্যের
আশা করা এবং ধৈর্যশীলদের মত বলা (ইন্না লিল্লাহি অ-ইন্না ইলাইহি রাজি‘উন)। আল্লাহ
তাদেরকে অঙ্গীকার দিয়েছেন, তাদের উপর তাদের রবের পক্ষ থেকে রহমত নাযিল হবে এবং
তারাই হেদায়েত প্রাপ্ত। [সূরা বাকারা ১৫৭] কিন্তু মৃত ব্যক্তির লোকেরা তাদের
নিজেদের জন্য খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা করলে কোনো অসুবিধা নেই।
মুসলিমদের জন্য বৈধ কাজ হলো: তাদের কেউ মারা গেলে
তার জন্য আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাওয়া এবং রহমত কামনা করা আর এ সমস্ত জাহেলিয়া যুগের
অনুষ্ঠানাদি ছেড়ে দেওয়া। আত্মীয় স্বজন এবং প্রতিবেশীদের জন্য করণীয় হলো: মৃতের
পরিবারের জন্য খাবার তৈরী করা, কেননা তারা বিপদগ্রস্ত। আব্দুল্লাহ ইবন জা‘ফর ইবন আবু তালেব রাদিয়াল্লাহু
‘আনহু এর হাদীসে এসেছে যে, “জা’ফর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু যখন মুতার যুদ্ধে
শহীদ হন তখন নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাদীনায়
তাঁর পরিবারকে নির্দেশ দিলেন জা‘ফরের পরিবারের জন্য খাবার তৈরী করতে,
তিনি বলেছিলেন: কেননা তাদের উপর সেই জিনিস এসেছে যা তাদেরকে ব্যস্ত রাখবে।”
কিন্তু মৃতের পরিবার অন্য লোকদের জন্য খাবার তৈরী করবে না। তারা যদি তাদের নিজেদের
জন্য বা দূরবর্তী মেহমানদের জন্য তৈরী করে তাহলে কোনো অসুবিধা নেই।
মৃতের পক্ষ
থেকে লোকদেরকে খাওয়ানোর জন্য দিন তারিখ নির্দিষ্ট করা নব আবিষ্কৃত বিদ‘আত
প্রশ্ন: একজন মুসলিম মারা গেল, তার
ছেলে-মেয়ে এবং ধন সম্পদ রয়েছে, মৃতের পক্ষ থেকে বকরী জবাই
করে লোকদেরকে সপ্তম দিনে বা চল্লিশার দিনে দাওয়াত করে খাওয়ানো জায়েয হবে কি?
উত্তর: মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে সদকা করা বৈধ। আর
ফকীর মিসকিনকে খাওয়ানো, পাড়া প্রতিবেশীদেরকে অনুগ্রহ করা ভালো
কাজ; যা করার জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম উৎসাহ দিয়েছেন। কিন্তু মৃত্যুর সময় বা নির্দিষ্ট দিনে যেমন সপ্তম দিনে
বা চল্লিশে, বা বৃহস্পতিবারে বা জুম‘আরাতে
বা শুক্রবারে বকরী, গরু, উঁট বা পাখী
ইত্যাদি জবাই করে মৃতের নামে সদকা করা বিদ‘আত এবং নব আবিষ্কৃত
কাজ, যা সালাফদের যুগে ছিল না। কাজেই তা পরিহার ওয়াজিব।
কেননা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
‘‘যে ব্যক্তি আমার এ
দ্বীনের মধ্যে নতুন কোনো জিনিস সৃষ্টি করবে যা এর অন্তর্ভুক্ত নয় তা প্রত্যাখ্যাত।”
তিনি আরও
বলেন: “আর তোমরা নবআবিষ্কৃত কাজ থেকে বেঁচে থাক কেননা প্রতিটি নবআবিষ্কৃত কাজ হচেছ
বিদ‘আত এবং সকল বিদ‘আত হচ্ছে ভ্রষ্টতা।”
পরিবার এবং
মা দিবসের ব্যাপারে ইসলামের হুকুম
আমি ‘‘নাদওয়াহ’’ নামক একটি পত্রিকায় ৩০/১১/১৩৮৪ তারিখে একটি লেখা দেখতে পেলাম, যার শিরোনাম ছিল: (মা এবং পরিবারকে সম্মান করা)। লেখক বিভিন্ন
দিক দিয়ে পাশ্চাত্য সভ্যতা তুলে ধরে বলেছেন: বৎসরে একটি দিনকে নির্দিষ্ট করা দরকার, যেখানে মাকে সম্মান করা হবে। তিনি বলেছেন: চিন্তাবিদগণ এ
দিনটি উদ্ভাবন করতে গিয়ে আরেকটি জিনিস
ভুলে গেছে। সেটি হলো: এতীম অনাথ শিশুরা যখন মা দিবসে অন্যান্য শিশুদেরকে তাদের মা’দের সম্মানে আনন্দ স্ফুর্তি করতে দেখে তখন তারা মনে কষ্ট পায়, কাজেই এ দিনে গোটা পরিবারকে সম্মানের কথা বলেছেন লেখক এবং ইসলাম
এ দিনটিকে ঈদ হিসাবে স্বীকৃতি না দেওয়ায় তিনি ক্ষমা চেয়েছেন, কেননা
ইসলামী শরীয়ত সর্বদা মাকে সম্মান করা এবং তার সাথে সদ্ব্যবহার করা ওয়াজিব করেছে।
সুতরাং মা’র সম্মানের জন্য বৎসরে কোনো একটি দিনকে নির্দিষ্ট
করার প্রয়োজনীয়তা বাকী রাখে নি।
ইসলাম এ দিবসটি স্বীকৃতি না দেওয়ায় তিনি ক্ষমা
চেয়ে এবং এ দিবসটি উদ্ভাবকদের অন্য একটি ভালো কাজ ভুলে যাওয়ার সমালোচনা করে ভালোই
করেছেন, কিন্তু তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে সাব্যস্ত স্পষ্ট হাদীসের বিরোধী বিদ‘আতসমূহের দিকে যেমনি কোনো ইঙ্গিত করেননি তেমনি এর ক্ষতি, এতে কাফের ও মুশরিকদের সামঞ্জস্যতার দিকেও কোনো ইঙ্গিত করেন নি।
কাজেই আমি অতি সংক্ষেপে লেখক এবং অন্যান্যদেরকে
বলতে চাই: এ বিদ‘আতসহ আরো অন্যান্য যে সকল বিদ‘আত
ইসলামের শত্রুগণ এবং এ দ্বীনে বিদ‘আত প্রচলনে অজ্ঞ লোকগণ
তৈরী করেছে এতে ইসলামের দুর্ণাম করেছে এবং লোকজনকে ইসলাম থেকে দূরে রেখেছে। আর এতে
নারী-পুরুষের একসাথে অবাধে চলাফেরার কারণে যে ক্ষতি হয়েছে তা আল্লাহ ব্যতীত কেউ
বলতে পারবে না।
অথচ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম থেকে বহু সহীহ হাদীস এসেছে, যাতে তিনি দ্বীনের মধ্যে বিদ‘আত
সৃষ্টি করা এবং ইয়াহূদী, খৃষ্টান ও মুশরিকদের মত ইসলামের
শত্রুদের সামঞ্জস্য করা থেকে সতর্ক করেছেন। যেমন তাঁর বাণী:
“যে ব্যক্তি আমার এ দ্বীনের মধ্যে নতুন কোনো জিনিস
সৃষ্টি করবে যা এর অন্তর্ভুক্ত নয় তা প্রত্যাখ্যাত।”[47]
সহীহ মুসলিমে এসেছে : “যে ব্যক্তি এমন কোনো আমল
করবে যা আমার শরীয়ত সমর্থিত নয় তা প্রত্যাখ্যাত।” অর্থাৎ এটি প্রবর্তকের উপর
ফিরিয়ে দেওয়া হবে।
এবং তিনি তাঁর জুম‘আর
খুৎবায় বলতেন :
“অতঃপর সর্বোত্তম বাণী হলো: আল্লাহর কিতাব এবং
সর্বোত্তম হেদায়েত হলো: মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এর হেদায়েত, আর
নিকৃষ্টতর কাজ হলো এর নব আবিষ্কৃত কাজ, এবং প্রতিটি বিদ‘আতই ভ্রষ্টতা।”[48]
এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, মাকে
বা পরিবারকে সম্মান করার জন্য বৎসরে একটি দিনকে নির্দিষ্ট করা নব আবিষ্কৃত কাজের অন্তর্ভুক্ত;
যা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম করেন নি এবং
তাঁর কোনো সাহাবীও করেননি, সুতরাং তা পরিহার করে এ থেকে
সতর্ক থাকা এবং আল্লাহ ও তার রাসূল যা শরিয়ত হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন এর মধ্যেই
সীমাবদ্ধ থাকা ওয়াজিব।
আর লেখক পূর্বে যে ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, ইসলামী শরীয়ত সর্বদা মাকে সম্মান করার বিধান করেছে এবং তার সাথে সদ্যবহারের
জন্য উৎসাহ দিয়েছে, তা সত্য বলেছেন। কাজেই মাকে সম্মান করা, তার
সাথে সদ্ব্যবহার করা, তার প্রতি অনুগ্রহ করা এবং তার কথা শোনার
ব্যাপারে আল্লাহ যা বিধান করেছেন তার উপরই সীমাবদ্ধ থাকা মুসলিমদের উপর ওয়াজিব। আর
দ্বীনে নব কাজের উদ্ভাবন করা যা থেকে আল্লাহ সতর্ক করেছেন তা এবং ইসলামের শত্রুদের
সামঞ্জস্যতা, তাদের পথে চলা এবং তাদের চিন্তাধারায় যা ভালো
কাজ তা ভালো মনে করাই বিদ‘আত।
এ সম্মান শুধু মা’র জন্য নয়
বরং মা-বাবা উভয়কে সম্মান করা, তাদের প্রতি অনুগ্রহ করা এবং
সার্বিক দিক দিয়ে তাদের সাথে সম্পর্ক রাখার জন্য ইসলাম বিধান করেছে,
সেই সাথে তাদের অবাধ্যতা, তাদের সাথে সম্পর্ক
বিচ্ছিন্ন করা থেকে সতর্ক করার সাথে সাথে মা’র হক্ব আদায়ের
ব্যাপারে ইসলাম বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। কেননা মা সন্তানকে অধিক গুরুত্ব দিয়ে থাকেন
এবং সন্তানকে গর্ভে ধারণ করা, দুধ পান করান এবং লালন পালনের
ক্ষেত্রে অধিক কষ্ট করে থাকেন।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿۞وَقَضَىٰ رَبُّكَ أَلَّا تَعۡبُدُوٓاْ إِلَّآ
إِيَّاهُ وَبِٱلۡوَٰلِدَيۡنِ إِحۡسَٰنًاۚ﴾ [الاسراء: ٢٣]
“আর তোমার রব নির্দেশ দিয়েছেন যে, একমাত্র
তারই ইবাদত কর এবং মা-বাবার প্রতি অনুগ্রহ কর।” [সূরা ইসরা/২৩]
তিনি আরও বলেন:
﴿ وَوَصَّيۡنَا ٱلۡإِنسَٰنَ بِوَٰلِدَيۡهِ حَمَلَتۡهُ
أُمُّهُۥ وَهۡنًا عَلَىٰ وَهۡنٖ وَفِصَٰلُهُۥ فِي عَامَيۡنِ أَنِ ٱشۡكُرۡ لِي وَلِوَٰلِدَيۡكَ
إِلَيَّ ٱلۡمَصِيرُ ١٤ ﴾ [لقمان: ١٤]
“আমি তো মানুষকে তার পিতা-মাতার প্রতি সদাচারণের
নির্দেশ দিয়েছি। তার মা তাকে কষ্টের পর কষ্টবরণ করে গর্ভে ধারণ করা এবং তার দুধ
ছাড়ানো হয় দুই বছরে। সুতরাং আমার প্রতি ও তোমার পিতা-মাতার প্রতি কৃতজ্ঞ হও।
প্রত্যাবর্তন তো আমারই নিকট।” [সূরা লোকমান/১৪]
তিনি আরও বলেন:
﴿فَهَلۡ عَسَيۡتُمۡ إِن تَوَلَّيۡتُمۡ أَن تُفۡسِدُواْ فِي ٱلۡأَرۡضِ وَتُقَطِّعُوٓاْ
أَرۡحَامَكُمۡ ٢٢ ﴾ [محمد: ٢٢]
“ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হলে সম্ভবত: তোমরা পৃথিবীতে
বিপর্যয় সৃষ্টি করবে এবং তোমাদের আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করবে।” [সূরা মুহাম্মদ/২২]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম থেকে সহীহ সনদে এসেছে, তিনি বলেছেন,
«أَلاَ
أُنَبِّئُكُمْ بِأَكْبَرِ الكَبَائِرِ؟» ثَلاَثًا، قَالُوا: بَلَى يَا رَسُولَ اللَّهِ،
قَالَ: «الإِشْرَاكُ بِاللَّهِ، وَعُقُوقُ الوَالِدَيْنِ - وَجَلَسَ وَكَانَ
مُتَّكِئًا فَقَالَ - أَلاَ وَقَوْلُ الزُّورِ»
“আমি কি তোমাদেরকে সবচেয়ে বড় পাপ সম্পর্কে বলব না? একথা তিনি তিনবার বললেন। তারা বললেন হ্যাঁ, বলুন
ইয়া রাসূলাল্লাহ, তিনি বললেন: আল্লাহর সাথে শির্ক করা এবং
মা-বাবার অবাধ্য হওয়া, তিনি হেলান দিয়ে বসা ছিলেন অতঃপর সোজা
হয়ে বসে বললেন: খবরদার! মিথ্যা বলা এবং মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া।”[49]
এক ব্যক্তি তাঁকে জিজ্ঞাসা করে বললেন: হে আল্লাহর
রাসূল, আমার নিকট থেকে ভালো ব্যবহার পাওয়ার সবচেয়ে যোগ্য কে?
তিনি বললেন: তোমার মা
সে বলল: তারপর কে?
তিনি বললেন: তোমার মা
সে বলল: তারপর কে?
তিনি বললেন: তোমার মা
সে বলল: তারপর কে?
তিনি বললেন: তোমার বাবা। অতঃপর তোমার নিকটতম প্রতিবেশী
তারপর তোমার নিকটতম।”[50]
তিনি আরও বললেন: “আত্মীয়তার সম্পর্কচ্ছিন্নকারী
জান্নাতে প্রবেশ করবে না।”[51]
তাঁর নিকট থেকে সহীহ সনদে আরও এসেছে যে, তিনি বলেছেন: “যে ব্যক্তি তার রিযিক বৃদ্ধি এবং বয়স বাড়াতে ভালোবাসে
সে যেন আত্মীয়তা সম্পর্ক বজায় রাখে।”[52]
মাতা-পিতার সাথে সদ্যবহার, আত্মীয়তা
সম্পর্ক বজায় রাখা এবং মা’র হক্বের অধিক গুরুত্বের ব্যাপারে
বহু আয়াত এবং হাদীস রয়েছে। উপরে যেগুলো উল্লেখ করেছি আশা করি তাই যথেষ্ট। যে
ব্যক্তি তা নিয়ে চিন্তা ভাবনা করবে সে ব্যক্তি স্পষ্ট প্রমাণ পাবে যে, সর্বদা মাতা-পিতার প্রতি সম্মান, তাদের
প্রতি অনুগ্রহ এবং সকল আত্মীয়ের প্রতি অনুগ্রহ করা ওয়াজিব এবং তাদের অবাধ্য হওয়া ও
আত্মীয়তা সম্পর্ক ছিন্ন করা সবচেয়ে দূষনীয় এবং কবীরা গুনাহের অন্তর্ভুক্ত যা
আল্লাহকে রাগান্বিত করা ও জাহান্নামে যাওয়া বাধ্য করে। আল্লাহর নিকট এ থেকে আশ্রয়
চাই। পাশ্চাত্য সভ্যতা মা’কে সম্মানের জন্য বৎসরে একটি দিনকে
নির্দিষ্ট করে বাকী দিনগুলোতে অবহেলা করাসহ বাবা এবং প্রতিবেশীদেরকে যে অবহেলা করে
এর চেয়ে ইসলামী সভ্যতা বহুগুণে ভালো।
জ্ঞানীদের অজানা নয় যে, এতে
মহা ফেৎনা ফাসাদ সংঘটিত হওয়ার সাথে সাথে আল্লাহর বিধানেরও পরিপন্থী এবং তা রাসূলের
সতর্ক করা কাজে পতিত হওয়া ওয়াজিব করে। এগুলো দিনকে নির্দিষ্ট করা এবং লোকদের
জন্মোৎসব পালন, স্বাধীনতা দিবস, ক্ষমতা
দখল ইত্যাদি ইত্যাদি দিবস পালনেরই অন্তর্ভুক্ত। এ সকল কার্যকলাপ সবই নব আবিষ্কৃত
কাজ যাতে মুসলিগণ আল্লাহর শত্রু বিধর্মীদের অন্ধ অনুসরণ করে চলেছে। পক্ষান্তরে
শরিয়তের সতর্ক করা এবং নিষিদ্ধ করা কাজ থেকে গাফেল হয়ে আছে। এটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে সাব্যস্ত সহীহ হাদীসের বাস্তবায়ন যে
তিনি বলেছেন: অবশ্যই তোমরা তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের হুবহু অনুকরণ করবে, এমন কি তারা যদি ষাণ্ডার গর্তে প্রবেশ করে তাহলে অবশ্যই তোমরাও
সেখানে প্রবেশ করবে। সাহাবায়ে কেরাম বলল: হে আল্লাহর রাসূল, তারা
কি ইয়াহূদী ও খৃষ্টান? তিনি বললেন: তবে আর কে?
অন্য শব্দে এসেছে: আমার উম্মত পূর্ববর্তী উম্মতের পদাঙ্ক অনুসরণ করবে বিঘতে
বিঘতে এবং হাতে হাতে। তারা বলল: হে আল্লাহর রাসূল, তারা কি
পারস্য এবং রুম? তিনি বললেন তাহলে আর কে? অর্থাৎ
তারাই।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এ উম্মতের পূর্ববর্তী উম্মত ইয়াহূদী, খৃষ্টান, অগ্নিপুজক, কাফের ইত্যাদি জাতির চরিত্র এবং
কাজ কর্মের অনুসরণের ব্যাপারে যা বলেছেন তাই হয়েছে, এমন কি
ইসলাম একেবারে সংখ্যালগু হয়ে গেছে। আর কাফেরদের রীতি, তাদের
চরিত্র এবং কাজকর্ম বহুলোকদের নিকট ইসলামের কাজকর্ম থেকে ভালো মনে হচ্ছে, শুধু তাই নয় বরং সৎকর্মগুলো মন্দ এবং মন্দগুলো সৎকর্ম, বিদ‘আতগুলো সুন্নাত আর সুন্নাতগুলো বিদ‘আত হিসাবে অনেকের নিকট পরিচিতি লাভ করেছে। এর কারণ হলো অজ্ঞতা এবং
ইসলামের সুন্দর চরিত্র ও সৎকর্মগুলো পরিহার করা। ইন্নালিল্লাহি অ-ইন্না ইলাইহি
রাজিউন। আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করি তিনি যেন সকল মুসলিমকে দ্বীন বুঝার মাধ্যমে
তাদের অবস্থাগুলো ঠিক করে নেয়ার তাওফীক দান করেন, তাদের
নেতাদেরকে যেন সঠিক রাস্তা দেখান, এবং আমাদের আলেম ও
লেখকদেরকে যেন দ্বীনের শিষ্টাচারিতা তুলে ধরার সাথে সাথে বিদ‘আত
এবং সকল প্রকার নব আবিষ্কৃত যা ইসলামের দুর্ণাম করে এবং লোকজনকে ইসলাম থেকে দূরে
রাখে তা থেকে সতর্ক করে দেওয়ার তাওফীক দান করেন। নিশ্চয়ই তিনি প্রতিটি জিনিসের উপর
ক্ষমতাবান। সালাত ও সালাম হোক আল্লাহর বান্দা ও রাসূল মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ উপর, তাঁর পরিবার, সকল সাহাবী এবং কিয়ামত পর্যন্ত যারা তাদের পথে চলবে ও তাদের
অনুসরণ করবে তাদের উপর।
কিছু লোক মিথ্যা
বিজ্ঞপ্তি প্রচার করে থাকে
রিয়াদের একটি মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষিকার নিকট
থেকে একটি চিঠি এসেছে, তাতে তিনি একটি বিজ্ঞাপন সম্পর্কে
জিজ্ঞাসা করছেন যা বিভিন্ন স্কুলে বিতরণ করা হয়েছে। বিজ্ঞাপনের বিষয়বস্তু এই:
আল্লাহ তা‘আলা বলেন: ‘‘অতএব, তুমি আল্লাহর ইবাদত কর এবং কৃতজ্ঞদের
অন্তর্ভুক্ত হও’’। [সূরা যুমার/৬৬]
‘‘অতঃপর যারা তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে,
তাকে সম্মান করে, তাকে সাহায্য করে এবং তার সাথে অবতীর্ণ
নূরের অনুসরণ করে তারাই সফলতা লাভ করবে’’। [সূরা আ‘রাফ/১৫৭]
‘‘তাদের
জন্য দুনিয়া এবং পরকালে রয়েছে সুসংবাদ, আল্লাহর বাণীর কোনো পরিবর্তন
নেই, এটিই হচ্ছে মহা বিজয়’’ [সূরা
ইউনুস/৬৪]
‘‘আল্লাহ
মুমিনগণকে পার্থিব জীবনে এবং পরকালে মজবুত বাক্য দ্বারা মজবুত করেন,
আর জালেমদেরকে পথভ্রষ্ট করেন এবং তিনি যা ইচ্ছা তাই করেন’’।
[সূরা ইব্রাহীম/২৭]
এ আয়াতগুলো অন্যদের নিকট পাঠালে কল্যাণ এবং মঙ্গল
বয়ে আনে, কাজেই আপনি তা বিভিন্ন জায়গায় নয়টি কপি পাঠালে
চারদিনের মধ্যেই আপনার জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে। তা কোনো ঠাট্টা বিদ্রুপ নয় বা
আল্লাহর আয়াতের সাথে কোনো খেলা নয়। আপনি চার দিন পরেই এর ফল দেখতে পাবেন।
এ বিজ্ঞাপনটি অন্যের নিকট পাঠানো আপনার উচিৎ, কিছুদিন পূর্বে এটি এক ব্যবসায়ীর নিকট পৌঁছিলে সাথে সাথে তিনি তা
অন্যের নিকট পাঠিয়েছেন। অতঃপর তার ব্যবসায় অন্যান্য সময়ের লাভের চেয়ে সাত হাজার
দিনার বেশী লাভের খবর এসেছে। অন্য দিকে তা এক ডাক্তারের নিকট পৌঁছিলে তিনি এর
অবহেলা করেছেন ফলে গাড়ি এক্সিডেন্টে পড়ে সে পুরোপুরি বিকৃত হয়ে গেছেন, তার লাশ ছড়িয়ে ছিটে পড়ে থাকল আর লোকজন তা নিয়ে বলাবলি করছে। এটি
ঘটার কারণ হলো: সে অবহেলা করে তা বিতরণ করেনি। হঠাৎ করে তা একটি নিকটমত আরবী দেশের
একজন কন্ট্রাকটরের নিকট পৌঁছানো হলে সে তা বিতরণে অবহেলা করল ফলে তার বড় ছেলে গাড়ি
এক্সিডেন্টে পড়ে মারা গেল। সুতরাং আপনি এর পঁচিশটি কপি অন্যের নিকট পাঠান, দেখবেন চার দিনের মধ্যেই সুসংবাদ পেয়ে যাবেন। আর তা অবহেলা করা
থেকে সতর্ক থাকবেন। তা ঠিকমত পালন করে কেউ কেউ হাজার হাজার টাকা লাভ করেছে, আর যে ব্যক্তি তা অবহেলা করবে তার জীবন এবং ধন সম্পদ মহা বিপদে
থাকবে। কাজেই আল্লাহ আপনাদেরকে তা প্রচার করার তাওফীক দান করুন। নিশ্চয়ই তিনি
তাওফীকদাতা।
এ চিঠিটি হাতে পেয়েই আমি নিম্নের লেখাটি লিখেছি:
এ বিজ্ঞাপন এবং এর লেখকের ধারণায় এতে যে উপকার হয়
এবং তা অবহেলায় যে ক্ষতি এবং বিপদ বয়ে আনে এ সবই মিথ্যা, এর
সত্যতার কোনো ভিত্তি নেই, বরং তা মিথ্যাবাদীদের বানানো
মিথ্যা কাহিনী। দেশে বা দেশের বাহিরে কোথাও তা বিতরণ করা জায়েয নেই,
বরং তা নিন্দনীয় কাজ। যে ব্যক্তি তা করবে সে পাপী এবং আগে-পরে শাস্তির যোগ্য
হবে। কারণ বিদ‘আতের ক্ষতি অত্যন্ত মহা এবং এর পরিণাম অত্যন্ত
ভয়াবহ। এভাবে এ বিজ্ঞপ্তির প্রচারণা অত্যন্ত নিকৃষ্টতর বিদ‘আত
এবং আল্লাহর উপর মিথ্যারোপ করার শামিল। অথচ আল্লাহ তা‘আলা
বলেন:
﴿إِنَّمَا يَفۡتَرِي ٱلۡكَذِبَ ٱلَّذِينَ لَا
يُؤۡمِنُونَ بَِٔايَٰتِ ٱللَّهِۖ وَأُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡكَٰذِبُونَ ١٠٥ ﴾ [النحل: ١٠٥]
“যারা আল্লাহর আয়াতের প্রতি ঈমান রাখে না, তারাই
মিথ্যারোপ করে, আর তারাই হচ্ছে মিথ্যাবাদী।” [সূরা নাহল/১০৫]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “যে ব্যক্তি আমার এ দ্বীনের মধ্যে নতুন কোনো জিনিস সৃষ্টি করবে
যা এর অন্তর্ভুক্ত নয় তা প্রত্যাখ্যাত।” [বুখারী ও মুসলিম]
তিনি আরও বলেন : “যে ব্যক্তি এমন কোনো আমল করবে
যা আমার শরিয়ত সমর্থিত নয় তা প্রত্যাখ্যাত।”
সকল মুসলিমের উচিৎ হলো: কারো হাতে এ জিজ্ঞপ্তিটি
পৌঁছিলে সাথে সাথে তা ছিড়ে নষ্ট করে ফেলা এবং লোকদেরকে এ থেকে সতর্ক করে দেওয়া।
আমরা এবং বহু আলেম তা অবহেলা করে ছিড়ে ফেলেছি কিন্তু আমাদেরতো ভালো ছাড়া কোনো ক্ষতি
হয়নি। এর মতই আরেকটি বিজ্ঞপ্তি যা মদীনার মাসজিদের খাদেমের নামে প্রচার করা হয়ে
থাকে এবং এ রকম অন্যান্য বিজ্ঞাপনও এর মতই যা উপরে উল্লেখ করেছি। কিন্তু তা
আল্লাহর বাণী: ‘‘বরং তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর এবং কৃতজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত
হও’’। এর পরিবর্তে সেটি ‘‘হে নবী আপনি
বলুন: আমরা রহমানের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছি এবং তার উপরই ভরসা করি’’। [সূরা মুলক/২৯] দ্বারা শুরু করা হয়েছে। সবগুলোই মিথ্যা এবং
বানোয়াট, এর সত্যতার কোনো ভিত্তি নেই, এতে
কারো উপকার তো হবেই না বরং তা প্রচারকারী ও বিতরণকারী গুনাহগার হবে। কেননা তা পরস্পরে
অসৎকাজের সহযোগিতা এবং বিদ‘আত প্রচার ও এর প্রতি মানুষকে
উৎসাহ প্রদান করার নামান্তর।
আল্লাহর নিকট আমাদের এবং সকল মুসলিম ভাইদের জন্য
এর অনিষ্টতা থেকে আশ্রয় চাই, যে ব্যক্তি তা তৈরী করেছে
আল্লাহ তার জন্য যথেষ্ট। আল্লাহর নিকট প্রার্থনা তিনি যেন এর মিথ্যা প্রচারকারী, তার প্রতি মিথ্যারোপকারী এবং মানুষের উপকারী জিনিস থেকে অনুপকারী
জিনিসের দ্বারা ব্যস্ত রাখার দরুন তাকে পুরোপুরি বদলা দেন। আল্লাহর জন্য এবং তার
বান্দার জন্য উপদেশ হিসাবে এর উপর এ সতর্কবাণী দেওয়া হয়েছে।
হজ্জ
মৌসুমে মক্কা মুকাররামায় ‘‘মুশরিকদের থেকে পবিত্র’’ নামে র্যালী বের করা বিদ‘আত
সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য, সালাত
ও সালাম হোক আল্লাহর বান্দা ও রাসূল মুহাম্মদ ইবন আব্দুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর, তাঁর পরিবার, সকল সাহাবী এবং যারা তাঁর পথের অনুসরণ করবে তাদের উপর।
আল্লাহ তা‘আলা মুশরিকদের
থেকে সর্বদা পবিত্র থাকা তার সকল মুমিন বান্দার উপর ওয়াজিব করেছেন। এ ব্যাপারে
তিনি কুরআন অবতীর্ণ করে বলেন: “তোমাদের জন্যে ইবরাহীম আ: ও তার অনুসারীদের মধ্যে
রয়েছে উত্তম আদর্শ, তারা তাদের সম্প্রদায়কে বলেছিল: তোমাদের
সঙ্গে এবং তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে যার ইবাদত কর তার সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক
নেই। আমরা তোমাদেরকে মানি না। তোমাদের ও আমাদের মাঝে চিরকালের জন্য সৃষ্টি হলো
শত্রুতা ও বিদ্বেষ, যতক্ষণ না তোমরা এক আল্লাহর প্রতি ঈমান
আন।” [সূরা মুমতাহিনা/৪]
এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লামের শেষ জীবনে এ ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলার অবতীর্ণ
বাণী হলো, “সম্পর্কচ্ছেদ করা হলো আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের পক্ষ থেকে সেই মুশরিকদের
সাথে, যাদের সাথে তোমরা চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলে।” [সূরা তাওবা/১]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম থেকে সহীহ সনদে এসেছে তিনি নবম হিজরীতে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে লোকদের হজ্জ করানোর জন্য এবং মুশরিকদের থেকে পবিত্রতার ঘোষণা
দেওয়ার জন্য পাঠিয়েছিলেন। অতঃপর তার পিছনেই
আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে পাঠালেন লোকদেরকে তা জানিয়ে
দেওয়ার জন্য। এমনিভাবে আবু বকর, আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু এর
সাথে দু’জন মুয়াজ্জিনকে পাঠালেন চারটি কথা ঘোষণা দেওয়ার জন্য
:
“মুমিন ব্যতীত জান্নাতে কেউ প্রবেশ করবে না।
আগামী বছর থেকে কোনো মুশরিক হজ্জ করতে পারবে না।
উলঙ্গ হয়ে কেউ ক্বাবা ঘর তাওয়াফ করতে পারবে না।
এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এর সাথে কারো কোনো চুক্তি থাকলে তা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য সীমাবদ্ধ
থাকবে, আর যার কোনো চুক্তি নেই সে চার মাস পৃথিবীতে ঘুরে
দেখতে পারে।”
যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:
“সুতরাং তোমরা চার মাস পৃথিবীতে ঘুরে নাও।” [সূরা তাওবা/২]
চার মাস পর যদি কেউ ইসলাম গ্রহণ না করে তাহলে নবী
সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের সাথে যুদ্ধ করার
নির্দেশ দিয়েছেন। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন: “অতঃপর যখন নিষিদ্ধ
মাসগুলো অতিবাহিত হবে।” অর্থাৎ আল্লাহর বাণী:
﴿ فَإِذَا ٱنسَلَخَ ٱلۡأَشۡهُرُ ٱلۡحُرُمُ فَٱقۡتُلُواْ ٱلۡمُشۡرِكِينَ حَيۡثُ
وَجَدتُّمُوهُمۡ وَخُذُوهُمۡ وَٱحۡصُرُوهُمۡ وَٱقۡعُدُواْ لَهُمۡ كُلَّ مَرۡصَدٖۚ فَإِن
تَابُواْ وَأَقَامُواْ ٱلصَّلَوٰةَ وَءَاتَوُاْ ٱلزَّكَوٰةَ فَخَلُّواْ سَبِيلَهُمۡۚ
إِنَّ ٱللَّهَ غَفُورٞ رَّحِيمٞ ٥ ﴾ [التوبة: ٥]
“অতঃপর
যখন নিষিদ্ধ মাসগুলো অতিবাহিত হয়ে যাবে তখন ঐ মুশরিকদেরকে যেখানে পাও হত্যা কর, তাদেরকে ধরে আন, তাদেরকে অবরোধ করে রাখ এবং
ঘাঁটিস্থলসমূহে তাদের সন্ধানে অবস্থান কর। অতঃপর যদি তারা তাওবা করে সালাত আদায়
করে এবং যাকাত প্রদান করে; তবে তাদের পথ ছেড়ে দাও। নিশ্চয়ই
আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম করুণাময়।” [সূরা তাওবা/৫]
এতে উল্লেখিত মাস থেকে বেধে দেওয়া নির্ধারিত সময়কে
বুঝানো হয়েছে। আর এটিই মুশরিকদের থেকে পবিত্রতার নিয়ম, সূরা
তাওবার শুরুতে তাফসীরবিদগণ এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম থেকে সাব্যস্ত হাদীসগুলোও স্পষ্ট করে দিয়েছে।
আর মুশরিকদের থেকে পবিত্রতার ঘোষণা দেওয়ার জন্য
হজ্জ মৌসুমে মক্কা মোকাররমায় র্যালী বের করা বা মিছিল বের করা বিদ‘আত, এর কোনো ভিত্তি নেই, এতে মহা ফেৎনা ফাসাদ
এবং অনিষ্টতা সৃষ্টি হয়। কাজেই যারা এ রকম করে তাদেরকে এ কাজ পরিহার করা উচিৎ। তা বিদ‘আত হওয়ার কারণে এবং এতে মহা ফেৎনা ফাসাদ ও অনিষ্টতা সৃষ্টি হওয়ার
কারণে সরকারেরও এ থেকে বাধা দেওয়া কর্তব্য।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
“হে নবী, বলুন, তোমরা যদি
আল্লাহকে ভালোবাসার দাবী কর, তবে আমার অনুসরণ কর তবে আল্লাহ তোমাদেরকে ভালোবাসবেন।”
[সূরা আলে ইমরান/৩১]
এ ধরনের আমল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং কোনো সাহাবাদের জীবনীতে নেই। এটি যদি ভালো
হত তাহলে অবশ্যই তারা করতেন। আল্লাহ বলেন: “তাদের কি শরীক রয়েছে? যারা
তাদের জন্য দ্বীনের সেই বিধান গড়বে যার অনুমতি আল্লাহ দেননি?।”
[সূরা শূরা/২১]
তিনি আরও বলেন: “আর রাসূল তোমাদেরকে যা দেন তোমরা
তা গ্রহণ কর এবং যা থেকে বারণ করেন তা পরিহার কর।” [সূরা হাশর/৭]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেন: “যে ব্যক্তি আমার এ দ্বীনের মধ্যে নতুন কোনো জিনিস সৃষ্টি করবে
যা এর অন্তর্ভুক্ত নয় তা প্রত্যাখ্যাত।” [বুখারী ও মুসলিম]
এবং জাবের রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু
হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম তাঁর জুম‘আর
খুৎবায় বলেছেন, “অতঃপর সর্বোত্তম বাণী হলো: আল্লাহর কিতাব এবং সর্বোত্তম হেদায়েত
হলো: মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হেদায়েত, আর নিকৃষ্টতর কাজ হলো এর নব আবিষ্কৃত কাজ, এবং
প্রতিটি বিদ‘আতই ভ্রষ্টতা।”[53]
তিনি আরও বলেছেন :
“যে ব্যক্তি এমন কোনো আমল করবে যা আমার শরিয়ত
সমর্থিত নয় তা প্রত্যাখ্যাত।”[54]
বিদায় হজ্জের ভাষণে তিনি বলেছিলেন: “তোমরা আমার
নিকট থেকে তোমাদের হজ্জের কাজসমূহ শিখে নাও।”[55]
তিনি বিদায় হজ্জে এ ধরনের কোনো র্যালী বা মিছিল, বের করেননি, এমনিভাবে তাঁর পরে কোনো সাহাবীও
এ রকম করেননি। সুতরাং হজ্জ মৌসুমে তা করা দ্বীনের মধ্যে নব আবিষ্কৃত একটি বিদ‘আত; যা থেকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম সতর্ক করে গেছেন। তিনি যেটি করেছেন তা হলো: সূরা তাওবা অবতীর্ণ হওয়ার
পর নবম হিজরীতে দু’জন আহবায়ক পাঠিয়েছেন যেন লোকদেরকে জানিয়ে
দেন যে, পরবর্তী বছরে কোনো মুশরিক হজ্জ করতে পারবে না, উলঙ্গ হয়ে ক্বাবার তাওয়াফ করতে পারবে না, মুমিন
ব্যতীত কেউ জান্নাতে প্রবেশ করবে না এবং চার মাস পর মুশরিকদের সাথে কোনো চুক্তি
থাকবে না, কিন্তু যাদের সাথে চুক্তির সীমাবদ্ধ সময় এর চেয়ে
অধিক রয়েছে তা নির্ধারিত সময় পর্যন্ত থাকবে। এ আহ্বান বিদায় হজ্জের সময় ছিল না, কারণ এর উদ্দেশ্য নবম হিজরীতেই সাধিত হয়ে গেছে।
ইহকাল ও
পরকালের সকল কল্যাণ এবং সুখ নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এর অনুসরণ, তাঁর পথে চলা এবং তাঁর সাহাদের পথে
চলার মধ্যেই নিহিত রয়েছে, কেননা তারা ও তাদের অনুসারীগণই
মুক্তিপ্রাপ্ত এবং বিজয়ী দল।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন: “আর যারা সর্বপ্রথম হিজরতকারী, আনসার
এবং যারা তাদের অনুসরণ করেছে, আল্লাহ সে সকল লোকদের প্রতি সন্তুষ্ট
হয়েছেন এবং তারাও তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছে। আর তাদের জন্য প্রস্তুত রেখেছেন সেই
জান্নাত যার নিম্নদেশ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে নদীসমূহ। সেখানে তারা চিরকাল থাকবে।
এটাই হলো মহা কৃতকার্যতা।” [সূরা তাওবা/১০০]
আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করি তিনি যেন আমাদেরকে
এবং সকল মুসলিমকে উপকারী জ্ঞানার্জন, সৎ আমল, দ্বীনের
সঠিক বুঝ দান করেন, এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম, তাঁর সাহাবা এবং কিয়ামত
পর্যন্ত তাদের অনুসারীদের পথে চলার তাওফীক দান করেন। ফেৎনার ভ্রষ্টতা, শয়তানের কুমন্ত্রনা এবং সকল প্রকার বিদ‘আত
থেকে রক্ষা করেন। নিশ্চয়ই তিনি এর অবিভাবক ও এর উপর ক্ষমতাবান।
وصلى الله وسلم
على عبده ورسوله محمد وآله وصحبه أجمعين
সূচীপত্র
- সুন্নাতকে আঁকড়ে ধরে বিদ‘আত
থেকে সতর্ক থাকা -২
- বিদ‘আতের অর্থ এবং
ইবাদতের ক্ষেত্রে এর প্রয়োগ-২৭
- ইমাম নববী র: কর্তৃক বিদ‘আতের
প্রকারভেদ-------২৯
- বিদ‘আতীদের সাথে উঠাবসার
হুকুম--------------৩৫
- দ্বীনি চাকুরীর ক্ষেত্রে বিদ‘আতীদের
হুকুম----------৩৫
- প্রকাশ্য বিদ‘আতের
নিন্দার পদ্ধতি----------------৩৭
- বিদ‘আতীদের সাথে সালাত
পাড়ার হুকুম----------৩৮
- বিদ‘আতীর জানাযা
পড়া------------------------৪৫
- যার বিদ‘আত কুফরির
পর্যায়ে, তার জানাযার হুকুম-৪৫
- মুখে উচ্চারণ করে সালাতের নিয়ত
---------------৪৬
- চাশতের সালাতে নির্দিষ্ট আয়াত পাঠ
করা----------৪৭
- জুম‘আর পরে যোহরের সালাত
পড়ার হুকুম--------৪৯
- তারাবীর সালাতে সালামের পর পর নবীর উপর জোরে
আওয়াজ করে দুরুদ পাঠ করার হুকুম:-----------৫৪
- কুরআন পাঠ শেষে (সদাকাল্লাহুল আযীম) বলার
হুকুম: ------------------------------------------------৫৫
- ঈদের সালাতের পূর্বে জামাতবদ্ধভাবে তাকবীর
দেওয়ার হুকুম
-------------------------------------------৫৭
- সুফিদের নিকট আল্লাহর যিকিরের পদ্ধতি
---------৬৬
- শির্ক ও বিদ‘আতী কিছু
কাজের বর্ণনা এবং মুক্তিপ্রাপ্ত দলের হাকীকত:
---------------------------------৬৯
- সিফাত বা গুণের অপব্যাখ্যার হুকুম
------------- ৯০
- আউলিয়াদের কবরে ফাতেহা পাঠের হুকুম-------
৯৪
- এ কথাটির কোনো ভিত্তি নেই বরং তা বিদ‘আত -১০২
- নবীর সম্মানের দ্বারা অসিলার হুকুম ---- ---
-১০৩
- নবীদের নির্দশনগুলোতে সালাত পড়া বা এর উপর
মাসজিদ তৈরী করার হুকুম: --------------------- ১১০
- মাকামে ইব্রাহীম ও ক্বাবা শরীফের দেওয়াল বা
কাপড়ে মুছা জায়েয নেই ------------------------------- ১১২
- তলোয়ার দ্বারা নিজেকে আঘাত করার উৎসব পালন
করা নিন্দনীয় কাজ:------------------------------ -১১৪
- বাড়ী তৈরীর কাজ অর্ধেক বা পূর্ণ হলে পশু জবাই
করার হুকুম: -----------------------------------------১২০
- রজব মাসে সংঘটিত বিদ‘আতসমূহ:-------------১২২
- মৃত্যুপথ যাত্রী ব্যক্তির পাশে যে সকল বিদ‘আতী কথা বলা
হয়:---------------------------------------
১২৬
- জানাযার বিদ‘আত:--------------------------
১২৯
- মৃত ব্যক্তির উপর কুরআন পড়া এবং তার বুকের
উপর কুরআন রাখার হুকুম--------------------------- ১৩১
- চল্লিশা বা বাৎসরিক শোক পালন ভিত্তিহীন------১৩৩
- মৃতের পক্ষ থেকে লোকদেরকে খাওয়ানোর জন্য দিন
তারিখ নির্দিষ্ট করা বিদ‘আত:------------------- ১৩৫
- পরিবার ও মা দিবসের ব্যাপারে ইসালামের
হুকুম-১৩৬
- কিছু লোক মিথ্যা বিজ্ঞপ্তি প্রচার করে
থাকে:------ ১৪৫
- হজ্জ মৌসুমে র্যালী বের করা------------------১৫০
- সূচীপত্র ------------------------------
-----১৫৮
১/১/২০১০ খৃ:
সমাপ্ত
[5] মুসনাদে আহমাদ, হাদীস
নং ৩২৩৮, নাসায়ী মানাসেকে হাজ্জ
অধ্যায়, কংকর সংগ্রহ অনুচ্ছেদ,
হাদীস নং ৩০৫৭, ইবনে মাজাহ মানাসেক অধ্যায়, কংকর নিক্ষেপের পরিমাণ অনুচ্ছেদ, হাদীস নং ৩০২৯।
[33] আহমাদ; হাদীস নং ২০৩১, আবু দাউদ; হাদীস নং ৩২৩৬, তিরমিযী; হাদীস নং ৩২০ এবং নাসায়ী, হাদীস নং ২০৪৩।
_________________________________________________________________________________
সংকলন: শাইখ আবদুল আযীয ইবন আব্দুল্লাহ ইবন বায
অনুবাদক: মোহাম্মাদ ইদরীস আলী মাদানী
সম্পাদনা: উবাইদুল্লাহ ইবন সোনা মিয়া - ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া
সূত্র: ইসলাম প্রচার ব্যুরো, রাবওয়াহ, রিয়াদ, সৌদিআরব
আরও পড়ুনঃ সুন্নতের আলো ও বিদআতের আঁধার
আরও পড়ুনঃ দীনে ইসলামে বিদআত : ক্ষতি ও কুপ্রভাব
আরও পড়ুনঃ বিদ’আত থেকে সাবধান!
আরও পড়ুনঃ বিদ‘আতের দশটি কুফল
আরও পড়ুনঃ বিদ’আতের অর্থ এবং তার কুপ্রভাব
আরও পড়ুনঃ বিদ্আত পরিচিতির মূলনীতি
আরও পড়ুনঃ আল্লাহকে পেতে মাধ্যম গ্রহণ
আরও পড়ুনঃ যখন চাইবে আল্লাহর কাছেই চাইবে
আরও পড়ুনঃ মুখে সশব্দে নিয়ত পড়া প্রসঙ্গ
আরও পড়ুনঃ পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের পর মুনাজাত
আরও পড়ুনঃ মুহাররম মাসঃ সুন্নাত ও বিদআত
আরও পড়ুনঃ রজব মাস: এ সব বিদ’আত দূর হওয়া আবশ্যক
আরও পড়ুনঃ রজব মাসের বেদআত : শরিয়তের দৃষ্টিভঙ্গি
আরও পড়ুনঃ শাবান মাস: সুন্নত উপেক্ষিত বিদ'আত সমাদৃত
আরও পড়ুনঃ শবে বরাতঃ সঠিক দৃষ্টিকোণ
আরও পড়ুনঃ ঈদে মীলাদুন নবী (সা.) কেন বিদ'আত?
আরও পড়ুনঃ বিভিন্ন প্রকরের “খতম” এর বিদ’আত
“বিদ’আত” বিষয়ের উপর আরও পড়তে এইখানে ক্লিক করুন।
“প্রশ্নোত্তর” বিষয়ের উপর আরও পড়তে এইখানে ক্লিক করুন।
“ফতোওয়া” বিষয়ের উপর আরও পড়তে এইখানে ক্লিক করুন।
পোস্টটি ভালো লাগলে শেয়ার করতে ভুলবেন না কিন্তু।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন