﴿ الشفاعة في ضوء
القرآن والسنة ﴾
বিষয় সূচী
* ভূমিকা
* শাফাআতের অর্থ
* শাফাআতের প্রকারভেদ
* শরীয়ত সম্মত শাফাআতের প্রকারভেদ
* শাফাআতের মালিক কে?
* শাফাআতের পার্থক্য
* শাফাআত কখন অনুষ্ঠিত হবে?
* শাফাআত কারা করবেন?
* শাফাআতের শর্ত
* কারা শাফাআত থেকে বঞ্চিত হবে?
* শাফাআত ব্যতীত কেউ কি জান্নাতে প্রবেশ করবে?
* কার নিকট শাফাআতের দু’আ -করব?
* শাফাআতের দু’আ কীভাবে করব?
* গাইরুল্লাহর নিকট শাফাআতের দু’আ করার হুকুম
* শাফাআত সম্পর্কে মুফসসিরগণের অভিমত
* শাফাআত সম্পর্কে আকাঈদ শাস্ত্রবিদদের মতামত
* একটি বিশেষ আবেদন
ভূমিকা
বিসমিল্লাহির
রাহমানির রাহীম
সকল প্রশংসা আল্লাহর
। সালাত-সালাম বর্ষিত হোক রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর উপর।
এবং তাঁর পরিবার-পরিজন, সাহাবী ও অনুসারীদের উপর।
কোরআন-সুন্নাহ
ও ইজমায়ে উম্মত দ্বারা একথা প্রমাণিত যে, আল্লাহ তাআলাই হচ্ছেন দুনিয়া ও আখিরাতের
সর্বময় কর্তৃত্ব, রাজত্বের অধিকারী । সব কিছুর মালিকানা তাঁরই।
আল্লাহ তাআলা বলেনঃ
বস্তুতঃ ইহকাল ও পরকাল আল্লাহরই। ( সূরা নাজম : ২৫)
জেনে রাখো, সৃষ্টি ও কর্তৃত্ব তাঁরই। ( সূরা আ’রাফ : ৫৪)
আকাশ ও জমীনে যা কিছু আছে সবই আল্লাহর। ( সূরা বাকারা : ২৮৪)
বলো হে নবী, যাবতীয় বিষয় আল্লাহরই
এখতিয়ারে। ( সূরা আলে ইমরান : ১৫৪)
আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন বলবেন,
(আজ রাজত্ব কার ?
সে তো একক প্রবল-পরাক্রান্ত আল্লাহর । ( সূরা মুমিন : ১৬
তিনি আরো বলবেন,
আজ তোমাদের কেউ
কারো ক্ষতি বা উপকার করার ক্ষমতা রাখবে না। ( সূরা সাবা : ৪২)
তিনি তাঁর নবীকে এভাবে জানিয়ে দিয়েছেন:
হে নবী! বিচার
দিবস সম্বন্ধে তুমি কী জান? আবার বলছি, বিচার দিবস সম্বন্ধে তুমি কী জান?” এটা সেই দিন যেদিন কেউ কারো জন্য কিছু করার সামর্থ
রাখবে না। সেইদিন একক কর্তৃত্ব হবে স্রেফ আল্লাহর । ( সূরা ইনফিতার : ১৭ - ১৯)
আল্লাহ তাআলা
যেমন ইহকাল ও পরকালের একমাত্র মালিক, ঠিক তেমনিভাবে শাফাআতের একচ্ছত্র মালিক তিনিই
। সর্বপ্রকার শাফাআত তাঁরই এখতিয়ার বা কর্তৃত্বাধীন।
আল্লাহ তাআলা বলেনঃ
বলো হে নবী!
যাবতীয় শাফাআত একমাত্র আল্লাহরই এখতিয়ারে। আসমান-জমীনের কর্তৃত্ব একমাত্র তাঁরই। অত:পর
তার দিকেই তোমাদেরকে ফিরিয়ে নেয়া হবে। ( সূরা যুমার : ৪৪)
আল্লাহর একটি
সিফাতি নাম আছে شفيع -সুফারিশকারী। বান্দাদের প্রতি রহমত ও কারণা বশত: আল্লাহ নিজেই নিজের সত্ত্বার
কাছে সুপারিশ করবেন। অতঃপর শাফাআতের কথা বা চিন্তা বান্দাদের অন্তরে সৃষ্টি করবেন
এবং যাকে ইচ্ছা শাফাআতের অনুমতি দিবেন।
আকাইদ
শাস্ত্রবিদগণ বলেছেনঃ
هوالذي يشفع بنفسه إلى نفسه ليرحم عبده
فيأذن هو لمن يشاء أن يشفع فيه فصارت الشفاعة في الحقيقة إنما هي له والذي يشفع
عنده إنما يشفع بإذنه وأمره بعد شفاعته سبحانه إلى نفسه وهي إرادته من نفسه أن
يرحم عبده . (مجوعة التوحيد : 678)
“তিনি নিজেই নিজ সত্ত্বার কাছে সুপারিশ
করবেন বান্দার প্রতি দয়া করার জন্য। অতঃপর তিনি যাকে ইচ্ছা করেন, সুপারিশের অনুমতি
দেবেন। প্রকৃতপক্ষে শাফাআত তাঁরই কতৃত্বাধীন। আর যে ব্যক্তি তাঁর নিকট সুপারিশ
করবে সে তো আল্লাহর নিজ সত্ত্বার নিকট
সুপারিশ করার পর তাঁরই অনুমতি ও নির্দেশে সুপারিশ করবে। তাই এ শাফাআত হচ্ছে
বান্দার প্রতি তাঁর দয়া প্রদর্শনের ইচ্ছা মাত্র”।(মাজমুআতুত তাওহীদ : পৃঃ ২৭৮)
এজন্যই বিশ্ব
বিখ্যাত মুসলিম দার্শনিক ইমাম ফখরুদ্দীন রাজী (রহ.) বলেছেন,
لأن في يوم القيامة لا يملك أحد شيئا ولا
يقدر أحد على الشفاعة إلا بإذن الله فيكون الشفيع في الحقيقة هو الله الذي يأذن في
تلك الشفاعة ...
وهذا
هو المراد من قوله تعالى : قل لله الشفاعة
جميعا . (تفسير الكبير ج /24-25 ص
/285)
কেননা কিয়ামতের
দিন কেউ কিছুই করতে পারবে না। আল্লাহর অনুমতি ছাড়া শাফাআতের উপরও কেউ সক্ষম হবে
না। সুতরাং প্রকৃত শাফাআতকারী হলেন সেই আল্লাহ তাআলা যিনি এ শাফাআতের অনুমতি
প্রদান করবেন।...আর এটাই আল্লাহর নিম্নোক্ত বাণী দ্বারা উদ্দেশ্য “বলো হে নবী, সকল সাফাআত একমাত্র আল্লাহর”। (তাফসীরে কবীর. খণ্ড ২৪-২৫, পৃ: ২৮৫)
বস্তুত
শাফাআতের মালিকানা ও কর্তৃত্ব এককভাবে তাঁর নিজের জন্যই সংরক্ষিত। আল্লাহ তাআলা নিজের
কাছে নিজের সুপারিশের পরে যারা সুপারিশ করবেন তারা তো তাঁরই অনুমতি বা নির্দেশ
ক্রমেই করবেন এবং তা তাঁরই রহমতের প্রাকাশের কারণেই। এ হচ্ছে তাঁর ব্যক্তিগত
ইচ্ছার প্রতিফলন। নবীগণের শাফাআত তো তাঁরই শাফাআতের প্রতিফলন মাত্র । তাঁর নির্দেশ
বা অনুমতিক্রমে এ শাফাআত তথা সুপারিশ মূলত: তাঁরই সুপারিশের নামান্তর, যা
রাস্তবায়ন করবেন নবী, ওলী, শহীদ, ফেরেশতা ও অন্যদের দ্বারা। সুতরাং তিনি ছাড়া কোনো
شفيع সুপারিশকারী নেই। তাই তো মহান আল্লাহ কোরআনুল করীমে
স্পষ্ট ঘোষণা করেনঃ
“তিনি ছাড়া তোমাদের কোনো অভিভাবক বা সুপারিশকারী নেই। তবুও কি তোমরা শিক্ষা
গ্রহণ করবে না?। (সূরা সাজদাহ : ৪)
তিনি আরো বলেনঃ
“তিনি ছাড়া তাদের জন্য অন্য কোনো অভিভাবক বা সুপারিশকারী নেই”। (সূরা আন আম : ৫১)
তিনি আরো বলেনঃ
তবে কি তারা
আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্য কাউকে শাফাআতকারী গ্রহণ করেছে ? (সূরা যুমার : ৪৩)
তিনি আরও বলেন,
তাঁর অনুমতি
ছাড়া তো কোনো সুপারিশকারীই হতে পারে না।
(সূরা ইউনুস : )
এজন্য শাফাআত
প্রার্থনা একমাত্র আল্লাহরই নিকট করতে হবে। কেননা, আদালতে আখিরাতের ভয়ঙ্কর দিনে কেউ
নিজের ক্ষমতাবলে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে আকাশ ও পৃথিবীর মালিক রাজাধিরাজ ক্বাহহার যুল
যালাল মহাপ্রতিপশালী আল্লাহর দরবারে শাফাআত করতে পারবে-এমন শক্তি কারো নেই। না আছে
কোন পয়গাম্বরের, না আছে কোন ওলি-দরবেশের আর না আছে অন্য কারোর। এমন কি, টু শব্দটি
করারও সাহস কারো থাকবে না। বরং সেদিন শাফাআত অস্তিত্ব লাভ করবে একমাত্র আল্লাহর
অনুমতির মাধ্যমে। তাঁর অনুমতি ব্যতীত কেউ কারো জন্য শাফাআত করতে পারবে না। এবং তার
অনুমতি ছাড়া কোন সুপারিশকারীও থাকবে না।
যেমন আল্লাহ তাআলা বলেনঃ
তাঁর অনুমতি লাভ না করে শাফাআত করাবার কেউ নেই। (সূরা
ইউনুসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ৩)
কে আছে এমন যে, তাঁর অনুমতি ব্যতীত তাঁর নিকট শাফাআত
করতে পারবে? (সূরা বাক্বারা : ২৫৫)
তিনি যার জন্য সুপারিশের অনুমতি দিবেন সে
সুপারিশ অন্য কারো কাজে আসবে না। (সূরা সাবা : ২৩)
দয়াময় আল্লাহ যাকে অনুমতি দিবেন ও যার কথায় তিনি
সন্তুষ্ট হবেন সে ছাড়া কারো সুপারিশ সেদিন কোনো কাজে আসবে না। ( সূরা ত্বা-হা : ১০৯)
আল্লাহ তাআলা কাফেরদেরকে নয় বরং ঈমানদারদেরকে সম্বোধন
করে বলেনঃ
হে ঈমানদারগণ!
আমি তোমাদেরকে যে রিযিক দিয়েছে তা থেকে তোমরা (আল্লাহর পথে) ব্যয় করো সে দিন আসার
পূর্বে যেদিন বেচা-কেনা, বন্ধুত্ব ও শাফাআত কিছুই থাকবে না। সত্য
প্রত্যাখ্যানকারীরাই প্রকৃত যালিম বা অপরাধী। ( সূরা বাকারা : ১৫৪)
এআয়াতে
ولا
شفاعة শাফাআত বা সুপারিশ নেই, এ কথার
অর্থ হচ্ছে, আল্লাহর অনুমতি ব্যতীত কেউ
কারো জন্য সুপারিশ করতে পারবে না। বরং আল্লাহর অনুমতির মাধ্যমে শাফাআত অস্তিত্ব
লাভ করবে।
বিশ্বনবী
মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কিয়ামতের দিন সায়্যিদুশ শুফাআ’ বা শাফাআতকারীদের সর্দার হবেন। এ সত্ত্বেও তাঁর পক্ষেও আল্লাহর
অনুমতি ব্যতীত কারো জন্য শাফাআত করা সম্ভব হবে না। যতক্ষণ না তাকে সিজদাবনত কর,
তাঁরই শাফাআত কবুল করা হবে” বলে অনুমতি
দেয়া হবে। যেমন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নিজেই বলেছেনঃ
آتي
تَحْتَ الْعَرْشِِ فَأَخِرُّ سَاجِدًا ... ثُمَّ يُقَالُ
আমি আরশের নিচে আসব আর সিজদায় লুটিয়ে পড়ব তারপর বলা হবেঃ
إرْفَعْ
رَأسَكَ, قُلْ تُسْمَعْ, وَسَلْ تُعْطَ, وَاشْفَعْ تُشَفَّعْ
হে মুহাম্মদ!
তোমার মাথা উঠাও, বল, শোনা হবে। প্রার্থনা কর, তোমাকে দেয়া হবে। সুপারিশ করো,
তোমার সুপারিশ গ্রহণ করা হবে”।
লক্ষ্যণীয় যে, আল্লাহ যাল্লা শানুহু রাসূল (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে শাফাআতের অনুমতি দিয়েছেন এবং এও জানিয়ে দিয়েছেন যে, তার
শাফাআত মঞ্জুর করা হবে। অর্থাৎ ক্ষমাকারী বা উদ্ধারকারী হিসাবে আল্লাহই সার্বভৌম
কর্তৃত্ববান।
কিয়ামতের দিন মহানবী নিজেই আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করে
বলবেনঃ
يَارَبِّ
وَعَدْتَّنِيْ الشَّفَاعَةَ فَشَفِّعْنِي فِي خَلْقِكَ (شرح العقيدة الطحاوية /226 مكتبة الطائف)
হে আমার রব!
আপনি আমাকে শাফাআতের ওয়াদা দিয়েছিলেন। অতএব আমাকে আপনার সৃষ্টির জন্য সুপারিশকারী
বনিয়ে দিন”। )শরহু আকীদাতিত তাহাভিয়া, পৃ : ২২৬)
তখন তাঁকে
সুপারিশকারী বানিয়ে দেয়া হবে। অতএব বুঝা গেল যে, কিয়ামত দিবসে অনুষ্ঠিত শাফাআত
একমাত্র আল্লাহরই অনুমতি সাপেক্ষ। অর্থাৎ যাকে ইচ্ছা সুপারিশের অনুমতি দেয়া ও যাকে
ইচ্ছা না দেয়া এবং যার জন্য ইচ্ছা করতে দেয়া আর যার জন্য ইচ্ছা করতে না দেয়া এবং
কারো শাফাআত শোনা বা না শোনা আর তা কবুল করা বা না করা সর্বশক্তিমান আল্লাহর একক
এখতিয়ারে। তিনি ছাড়া যে-ই হোক না কেন তাঁর অনুমতি ব্যতীত কেউ শাফাআত করার সাহস
করতে পারবে না। তাই যারা আদালতে আখিরাতে বিশ্বনবী মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম)-এর শাফাআত লাভের উচ্চাকাঙ্খা রাখে তার জন্য উচিত, শাফাআত ও দোয়া
কবুলের মালিক মহান আল্লাহর দরবারেই শাফাআত ও অন্যান্য বিষয়ে দু’আ করা। যাতে তিনি রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে
আমাদের জন্য শাফাআত করার অনুমতি প্রদান করেন। যেমনিভাবে সমস্ত সৃষ্টিকুল তাঁরই
নিকট প্রার্থনা করে থাকে।
আল্লাহ তাআলা বলেনঃ
আকাশ ও পৃথিবীর সবাই তাঁরই সমীপে প্রার্থনা করে। ( সূরা
আর-রাহমান : ২৯)
তাই রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
বলেছেনঃ
لِيَسْأَلْ
أَحَدُ كُمْ رَبَّهُ حَاجَاتَهِ كُلَّهَا حَتّى يَسْألَ شَسْعَ نَعْلِه اِذَا
انْقَطَعَ (رواه
الترمذي وابن حبان, صحيح الأذكار /50)
“তোমাদের প্রত্যেককেই নিজ পালনকর্তা আল্লাহর নিকট যাবতীয় হাজাত ও প্রযোজনের
প্রার্থনা করা কর্তব্য; এমন কি নিজের জুতার ফিতাও প্রার্থনা করবে যদি তা ছিড়ে যায়”। (বর্ণনায় তিরমিযী, হাকিম, মিশকাত ও সহীহুল আযকার, পৃ :
৫০)
প্রসঙ্গতঃ
উল্লেখ্য, আখেরাতে অনুষ্ঠেয় শাফাআতের প্রর্থনার বিষয়টি আমাদের অনেকের কাছেই
অস্পষ্ট। আবার অনেককে শাফাআত প্রার্থনায় অত্যন্ত আন্তরিক দেখা গেলেও যার নিকট
প্রার্থনা করা কর্তব্য ও ফরজ তারা তাঁর নিকট শাফাআত প্রার্থনা করছেন না বরং তাঁরা
শিরকি প্রার্থনায় লিপ্ত রয়েছেন । এটা ইসলাম আদৌ অনুমোদন করে না। এ শিরক-মিশ্রিত
শাফাআত প্রার্থনার মূলোৎপাটন করে সময়ের একটি দ্বীনি ও সামাজিক চাহিদা পূরণের
লক্ষ্যে কলম হাতে নিয়েছি এবং কোরআন-হাদীসের আলোকে তা প্রমাণ করার প্রয়াস পাচ্ছি।
জানি, মানুষ
ভুলের ঊর্ধে নয়, মানুষ পরিপূর্ণতা দাবি করতে পারে না। তাই সুধী পাঠকবর্গের কাছে
আমার অনুরোধ, শরীয়তের এ গুরুত্বপূর্ণ মাসআলাটি কোরআন-হাদীসের সাথে মিলিয়ে আপনারা
চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন। এবং ভুলত্রুটি ধরা পড়লে দয়া করে আমাকে জানালে কৃতার্থ হবো এবং সংশোধনে সচেষ্ট হবো
ইনশা আল্লাহ।
বইটি রচনা এ
প্রকাশনায় যারা আমাকে সার্বিক সহযোগিতা ও অনুপ্রেরণা দান করেছেন তাদের সকলের কাছে
আমি ঋণী ও কৃতজ্ঞ। যাদের আর্থিক সহযোগিতায় বইটি প্রকাশ করা সম্ভব হলো তাদেরকে অশেষ
মুবারকবাদ। আল্লাহ তাদের উত্তম পুরস্কারে ভূষিত করুন। যাদের উদ্দেশ্যে এ বই রচনা ও
প্রকাশ করা হলো তাঁরা উপকৃত হোক এটাই আমার একমাত্র কামনা। জনাব মুহাম্মদ আব্দুল
হাকীম তাফাদার সাহেবের সম্পাদনায় পান্ডুলিপিটি তৈরী হয়েছে। তাঁকে অশেষ ধন্যবাদ।
আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে শিরক মুক্ত হয়ে তার ইবাদত করা, তাওহীদের পথে চলা এবং
কেবল তাঁরই নিকট প্রার্থনা করার তাওফীক দান করুন। আমীন”
سبحان ربك رب العزة عما يصفون وسلام على المرسلين
والحمد لله رب العلمين
শাফাআতের অর্থ :
শাফাআত-এর
শাব্দিক অর্থ হচ্ছে, সুপারিশ, মাধ্যম ও দু’আ বা প্রার্থনা। পারিভাষিক অর্থ হচ্ছে,
سُؤَالُ الْخَيْرِ لِلْغَيْرِ (الإرشاد إلى صحيح
الاعتقاد/267)
অর্থাৎ
অপরের জন্য কল্যাণ প্রার্থনা করা। (আল ইরশাদ ইলা সহীহিল ই’তিক্বাদ : ২৬৭)
কেউ কেউ
বলেছেনঃ
وَهِيَ
السُّؤَالُ فِيْ التَّجَاوزِ عَنْ الذُّنُوْبِ وَ الْجَرَائِمِ (الكواشف الجلية
/490 ط /4)
শাফাআত হচ্ছে
পাপ ও আযাব হতে মুক্তির প্রার্থনা করা। (আল-কাওয়াশিফুল জালিয়্যাহ : ৪র্থ সংস্করণ, পৃ
: ৪৯০)
শাফাআতের প্রকারভেদ
আখেরাতে
অনুষ্ঠিত শাফাআত সম্পর্কে দু’প্রকার আক্বিদাহ
বিদ্যমান।
এক. শরীয়ত সম্মত
শাফাআত
দুই. শিরকী শাফাআত
শরীয়ত সম্মত শাফাআত
যে শাফাআতের দু’আ বা প্রার্থনা আল্লাহ তাআলার নিকট করা হয় তাকে শরীয়ত
সম্মত শাফাআত বলা হয়। একে শাফাআতে মুসতাবাহ বা শরীয়ত স্বীকৃত শাফাআতও বলা হয়। আবার
শাফাআতে মাকবুলাও বলা হয়।
শিরকী শাফাআত
যে শাফাআতের দু’আ গাইরুল্লাহ তথা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারোর নিকট করা হয়
তাকে শিরকী শাফাআত বলা হয়। এর অপর নাম শাফাআতে মানফিয়্যাহ বা নিষিদ্ধ শাফাআত। একে
শাফাআতে মারফুদ্বাহও বলা হয়।
(দেখুনঃ
মাজমুআতুত তাওহীদ পৃঃ ২৭৮, কাওয়াশিফুল জালিয়্যাহ পৃঃ ৪৯০, ৪র্থ সংস্করণ ও আকাইদের কিতাবসমূহ)
আল্লামা ইবনুল কাইয়্যিম (রহ.) বলেছেন,
فالشفاعة التي أبطلها شفاعة الشريك فإنه لا شريك
له والتي أثبتها شفاعة العبد المأمور. (مجموعة التوحيد /278)
আল্লাহ তাআলা
যে শাফাআতকে বাতিল করেছেন তা হলো শিরকী শাফাআত। কেননা তাঁর কোন শরীক নেই। আর তিনি
যে শাফাআতকে সাব্যস্ত করেছেন তা হলো তাঁর অনুমোদনপ্রাপ্ত বান্দার শাফাআত।
(মুজমুআতুত তাওহীদ, পৃঃ ২৭৮)
শরীয়ত সম্মত শাফাআতের প্রকারভেদ
কোরআন-হাদীস
স্বীকৃত শাফাআত হচ্ছে সর্বমোট আট প্রকার। ইসলামী আক্বীদার কিতাব-পত্রে মোট আট
প্রকার শাফাআতের উল্লেখ রয়েছে। একে শাফাআতে মুছতাবাও বলা হয়। আবার শাফাআতে
মাকবুলাও বলা হয়।
• ১ম প্রকার শাফাআত
‘আশ্ শাফাআতুল উজমা’ বা সর্ববৃহৎ
শাফাআত যা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম- এর জন্য খাস। আর্থাৎ আল্লাহ তাআলা
নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে শাফাআতে কুবরা’ ও মাকামে মাহমূদের মর্যদা দান করবেন। হাশরের মাঠে
দীর্ঘকাল অবস্থানে ক্লান্ত লোকেরা বিচারের আবেদন জানালে বিশ্বনবী মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সৃষ্টিকূলের বিচার কাজ শুরু করার প্রর্থনা জানাবেন রাব্বুল
আলামীনের দরবারে।
• ২য় প্রকার শাফাআত
সৃষ্টির বিচার ও তাদের হিসাব-নিকাশ শেষ হলে জান্নাতীদেরকে জান্নাতে
প্রবেশের অনুমতিদানের জন্য রাসূলের শাফাআত।
• ৩য় প্রকার শাফাআত
চাচা আবু তালিব এর শাস্তি হালকা করার জন্য রাসূলের শাফাআত। এই তিন প্রকারের
শাফাআত আমাদের নবীজীর একক বৈশিষ্ট্য। এতে আর কেউ শরীক নন।
• ৪র্থ প্রকার শাফাআত
একত্ববাদে বিশ্বাসী গুনাহগার মুমিনবান্দা, যারা জাহান্নামের উপযুক্ত কিন্তু
তাদেরকে জাহান্নামে না পাঠানোর জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের
শাফাআত।
• ৫ম প্রকারের শাফাআত
যে সব গুণাহগার
মুমিন একত্ববাদে বিশ্বাসী হয়েও জাহান্নামে প্রবেশ করবে তাদেরকে জাহান্নাম হতে বের
করার জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শাফাআত করবেন।
• ৬ষ্ঠ প্রকার শাফাআত
বেহেশতবাসীদের
মধ্যে কোন কোন বেহেশতীর দরজা ও মর্যদা বৃদ্ধির জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম-এর শাফাআত ।
• ৭ম প্রকার শাফাআত
যাদের
নেকী-বদী, পাপ-পূণ্য সমান হবে তাদেরকে বেহেশতে প্রবেশ করিয়ে দেয়ার জন্য রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর শাফাআত। তারা ‘আহলে আ’রাফ বলে কেউ কেউ মন্তব্য করেছেন।
• ৮ম প্রকার শাফাআত
কোন কোন
উম্মতকে বিনা হিসাব ও আজাবে বেহেশতে প্রবেশ করিয়ে দেয়ার জন্য রাসূলের শাফাআত। যেমন
তিনি উক্কাশা বিন মিহসান (রাঃ) এর জন্য আল্লাহর দরবারে দু’আ করেছিলেন যে, তাকে যেন সেই সত্তর হাজার লোকদের অন্তর্ভুক্ত
করা হয় যাদেরকে বিনা হিসাব ও বিনা আজাবে জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে।
বিঃ দ্রঃ শেষোক্ত ৫ প্রকার শাফাআতের মধ্যে আমাদের নবীজীর সাথে অন্যান্যরা শাফাআত করবেন। যেমন, নবীগণ, ফেরেশতাগণ, সিদ্দীকগণ, শহীদগণ, নেককার বান্দাগণ সকলেই শাফাআত করবেন, অবশ্য আল্লাহর অনুমতিক্রমে।
দেখুনঃ (শরহুল
আকীদাতিল ওয়াসিতিয়্যা, পৃঃ ১৫৭-১৫৮, শরহুল আকীদাতিত তাহাভিয়া পৃঃ ২২৭-২২৮,
আল-কাওয়াশিফুল জালিয়্যাহ পৃঃ ৪৯১, ৪র্থ সংস্কারণ)
শাফাআতের মালিক কে?
মহান আল্লাহ তাআলাই
হচ্ছেন শাফাআতের একচ্ছত্র মালিক। কেননা, শাফাআত একমাত্র তাঁরই অধিকারে, তাঁরই
ক্ষমতাধীন। সর্বপ্রকার শাফাআতের চাবিকাঠি একমাত্র তাঁরই হাতে।
আল্লাহ তাআলা
বলেনঃ
হে নবী! বলে
দিন, সকল শাফাআত একমাত্র আল্লাহ তাআলারই অধিকারে। ( সূরা যুমারঃ
৪৪)
আল্লাহ তাআলা আরও বলেনঃ
আল্লাহ তাআলা ব্যতীত তোমাদের সাহায্যকারী ও সুপারিশকারী আর কেউ নেই।
(সূরা সাজদাহ : ৪)
আরও ইরশাদ হচ্ছে,
আর এ দ্বারা (কোরআন দ্বারা) আপনি তাদেরকে সতর্ক করে দিন,
যারা ভয় করে যে, তাদেরকে তাদের রবের দিকে সমবেত করা হবে, (এ অবস্থায় যে) তিনি ছাড়া
তাদের জন্য থাকবে না কোন সাহায্যকারী আর না সুপারিশকারী। হয়ত তারা তাকওয়া অবলম্বন
করবে। (আনআমঃ ৫১)
আল্লাহ তাআলা
আরও বলেনঃ
“এবং আপনি এই কোরআন দ্বারা উপদেশ প্রদান করুন যাতে কোন ব্যক্তি নিজের
কর্মকাণ্ডের কারণে ধ্বংসের শিকার না হয় যখন আল্লাহ ছাড়া তার জন্য কোন সাহায্যকারী ও
সুপারিশকারী থাকবে না”। ( সূরা আনআম
: ৭০)
তিনি আরও বলেনঃ
কে আছে এমন, যে
সুপারিশ করবে তাঁর কাছে তাঁর অনুমতি ছাড়া। ( সূরা বাক্বারা : ২৫৫)
শাফাআতের পার্থক্য
আমরা আখেরাতে
অনুষ্ঠিত শাফাআত বিষয়ে আলোচনা করছি। আমাদের আলোচ্য বিষয় হচ্ছে الشفاعة في أمر
الآخرة বা আখেরাতে
অনুষ্ঠিত শাফাআত। পার্থিব বিষয়ে শাফাআত বা الشفاعة في أمر
الدنياআমাদের আলোচ্য
বিষয় নয়। কারণ, ভাল কাজের জন্য পরস্পরের শাফাআত সম্পূর্ণ বৈধ ও জায়েজ। এতে কোন
মতভেদ নেই। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন:
“যে ব্যক্তি সৎকাজের জন্য কোন সুপারিশ করবে তা থেকে সেও একটি অংশ পাবে, আর
যে ব্যক্তি মন্দ কাজের জন্য সুপারিশ করবে সেও তার বোঝার একটি অংশ পাবে”। (সূরা নিসা : ৮৫)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
اِشْفَعُوْا
تُؤْجَرُوْا
তোমরা সুপারিশ
কর পুরস্কার পাবে”। (সহীহ বুখারী)
তাই পার্থিব
বিষয়ে পরস্পরের জন্য সুপারিশ করা জায়েয ও কোরআন-সুন্নাহ সম্মত।
তবে আকাইদ শাস্ত্রবিদগণ বলেছেন,
اَلشَّفَاعَةُ
عِنْدَ اللهِ لَيْسَتْ كَالشَّفَاعَةِ عِنْدَ الْبَشَرِ (شرح العقيدة الطحاوية
/135)
“আল্লাহর কাছে
সুপারিশ করার বিষয় টি মানুষের কাছে সুপারিশ করার মত নয়। (শরহু আকীদাতুত্ তাহাভী
পৃঃ ১৩৫)
শায়খ হাফেজ কাজী ইবরাহীম সাহেব নিজ ফতোয়ায় উভয় শাফাআতের মধ্যে পার্থক্য সমূহ এভাবে তুলে ধরেছেন,
شفاعة
المخلوق عند المخلوق
সৃষ্টির নিকট সৃষ্টির শাফাআত
|
شفاعة
المخلوق عند الخالق
সৃষ্টিকর্তা (আল্লাহ)- এর নিকট সৃষ্টির শাফাআত
|
1- الشفيع غير
مخلوق للمشفوع عنده
১। শাফাআতকারী শাফাআত গ্রহণকারীর সৃষ্টি নয়।
|
1- الشفيع مخلوق
للمشفوع عنده
১।
শাফাআতকারী শাফাআত গ্রহণকারীর সৃষ্টি।
|
2-الشفيع
غير مأمور بل شريك للمشفوع عنده
২।
শাফাআতকারী শাফাআত গ্রহণকারীর আদিষ্ট দাস নয়, বরং শাফাআতকৃত বিষয়ে তার সম
অংশীদার।
|
2- الشفيع
مأمور للمشفوع عنده
২।
শাফাআতকারী শাফাআত গ্রহণকারীর আদিষ্ট দাস মাত্র।
|
3- الشفيع
غير محتاج إلى الإذن
৩।
শাফাআতকারী শাফাআত গ্রহণকারীর অনুমতির মুখাপেক্ষী নয়।
|
3- الشفيع
محتاج إلى الإذن كل الاحتياج
৩।শাফাআতকারী
সম্পূর্ণরূপেই শাফাআতগ্রহণকারী র অনুমতির মুখাপেক্ষী ।
|
4- الشفيع
هو الذي يحرك المشفوع عنده حتى يقبل
৪।
শাফাআতকারীই শাফাআতগ্রহণকারীকে তা কবুল করতে প্রেরণা যোগায়।
|
4-
المشفوع عنده هو الذي يحرك الشفيع حتى يشفع
৪।
শাফাআতগ্রহণকারীই শাফাআতকারীকে তা করতে উৎসাহিত করেন।
|
5- الشفيع يشفع لمن ارتضاه
المشفوع عنده وقد لايرتضيه فيقبل الشفاعة كرها
৫।
শাফাআতকারী শাফাআতগ্রহণকারীর পছন্দনীয় অপছন্দনীয় সকল ব্যক্তির জন্যই তা করতে
পারে এবং অনেক ক্ষেত্রে অপছন্দনীয় ব্যক্তির ব্যাপারে কৃত শাফাআত বাধ্য হয়ে তাকে
গ্রহণ করতে হয়।
|
5 -الشفيع لايشفع
إلا لمن ارتضاه المشفوع عنده
৫। শাফাআতকারী শাফাআত গ্রহণকারীর পছন্দনীয় ব্যক্তি
ছাড়া আর কারো জন্য শাফাআত করতেই পারেনা।
|
6- هذه
الشفاعة شفاعة الشفيع في الحقيقة لأنه الذي تحرك للشفاعة دون تحريك من المشفوع
عنده
৬।
শাফাআতকারীই মূলতঃ এ শাফাআতের স্বত্ত্ব ও কৃতিত্বের দাবীদার। কেননা, সে-ই বিনাপ্রেরণায়
শাফাআতে উদ্যোগী হয়েছে, শাফাআত গ্রহণকারীর কোন প্রেরণাই এ ক্ষেত্রে ছিল না।
|
6- هذه
الشفاعة في الحقيقة هي شفاعة المشفوع عنده فإنه الذي أذن والذي قبل والذي رضي
والذي وفق
৬।
শাফাআতগ্রহণকারীই মূলত: এ শাফাআতের মালিক। কেননা, শাফাআতকারীকে তিনিই নির্দেশ
দিবেন, তিনিই কবুল করবেন, তিনিই পছন্দ করবেন ও তাওফীক দিবেন।
|
7- هذه
الشفاعة تطلب من الشفيع
৭।
প্রয়োজনগ্রস্থ ব্যক্তিকে শাফাআতকারীর নিকটই এ শাফাআত চাইতে হয়।
|
7- هذه
الشفاعة لاتطلب الا من المشفوع عنده ولا تطلب من الشفيع
৭। এ শাফাআত
কেবলমাত্র শাফাআত গ্রহণকারীর নিকট চাইতে হবে। শাফাআতকরীর নিকট কিছুতেই চাওয়া
যাবে না।
|
8- هذه
الشفاعة تجعل الفرد شفعا لأنهما شريكان في الأمر
৮। শাফাআতকারীর
অনুরোধে ও শাফাআত গ্রহণকারীর ব্যবস্থাপনার দ্বারা যেহেতু প্রয়োজন পূরণ হয়ে থাকে
তাই এ শাফাআত তাদের প্রত্যেককে অপরের জোড় ও অংশীদারে পরিণত করেছে। তারা একই বিষয়ে সমানে শরীক।
|
8- هذه
الشفاعة لاتجعل الوتر شفعا لأنه خلق هذه الشفاعة وأذن لها والشفاعة المخلوقة
المأذونة هي شفاعته في الحقيقة والمخلوق لايشارك الخالق في شيء فهو لايشارك
الخالق في شيء فهو لا يزال وترا
৮। শাফাআতকারীর ভূমিকা শুধু আদেশ পালন করা। তাঁর এ
শাফাআত তাকে শাফাআত গ্রহণকারীর জোড় বা অংশীদারে পরিণত করেনা। কেননা, আল্লাহই এ
শাফাআতের স্রষ্টা ও নির্দেশ দাতা। তা ছাড়া সৃষ্ট কোন বিষয়েই স্রষ্টার শরীক হতে
পারে না। তিনি সর্বদাই বোজাড় ও অংশীদারহীন।
|
النتيجة
قياس
شفاعة الخالق على شفاعة المخلوقين قياس فاسد وبهذا القياس الفاسد عبدت الأصنام
واتخذت الشفعاء والفرق بينهما هو الفرق بين الخالق والمخلوق والرب والمربوب والسيد
والعبد والمالك والمملوك والغني والفقير (مجموعة التوحيد)
সৃষ্টিকর্তার
শাফাআতকে সৃষ্টির শাফাআতের উপর কিয়াস করা, ভ্রান্ত ও অগ্রহণযোগ্য কিয়াস। এমন ভুল
কিয়াস করেই মূর্তি-প্রতিমা পূজার সূচনা হয়েছে। বিভিন্ন শাফাআতকারী গ্রহণ ও স্থির
করা হয়েছে। যা নিতান্তই ভুল। উভয় শাফাআতের মাঝে পার্থক্য সৃষ্টিকর্তা ও সৃষ্ট,
প্রতিপালক ও প্রতিপালিত, মুনিব ও দাস, মালিক ও মালিকানাভুক্ত এবং বেনিয়াজ-অভাবহীন
ও অভাবী-মুখাপেক্ষীর মাঝে পার্থক্যের মত। (মাজমুআতুত তাওহীদ)
শাফাআত কখন অনুষ্ঠিত হবে ?
শাফাআতের
একমাত্র মালিক মহান আল্লাহ তাআলা। তাঁর অনুমতিক্রমে কিয়ামতের দিবসে শাফাআত
অনুষ্ঠিত হবে।
ইমাম ইবনে
জারীর আত তাবারী রহ. ﯚ
ﯛ ﯜ ﯝ
ﯞ ﯟ ﯠ
আয়াতের
ব্যখ্যায় লিখেছেনঃ
وَفِي هَذِهِ الْآيَةِ بَيَانٌ أنَّ
الشَّفَاعَةَ إِنَّمَا تَقَعُ في الدَّارِ الْآخِرَةِ بِإذْنِه
এ আয়াতে উল্লেখ
রয়েছে যে, শাফাআত পরকালে কিয়ামত দিবসেই আল্লাহর অনুমতিক্র অনুষ্ঠিত হবে। (ফাতহুল মাজীদ : ১৭৮)
আল্লাহর অনুমতি
ছাড়া কিয়ামতের ময়দানে কেউ শাফাআত করতে পারবে না। কেননা আদালতে আখিরাতে কোন
শ্রেষ্ঠতম পয়গাম্বর এবং কোন নিকটতম ফিরিশাতাও সর্বশক্তিমান আল্লাহর দরবারে বিনা
অনুমতিতে একটি শব্দও উচ্চারণ করার সাহস পাবে না।
আল্লাহ তাআলা বলেনঃ
কে আছে এমন, যে
আল্লাহর অনুমতি ব্যতীত তাঁর নিকট শাফাআত করতে পারবে”?
(সূরা বাক্বারা : ২৫৫)
আল্লাহ তাআলা বলেনঃ
দয়াময় আল্লাহ যাকে অনুমতি দিবেন ও যার কথা তিনি পছন্দ
করবেন সে ছাড়া কারো শাফাআত সেদিন কোন কাজে আসবে না। ( সূরা ত্বা-হা : ১০৯)
আল্লাহ তাআলা বলেনঃ
এমন একদিন আসবে
যেদিন কেউ আল্লাহর অনুমতি ছাড়া কথা বলতে পারবে না। ( সূরা হূদ : ১০৫)
আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন সম্পর্কে বলেছেনঃ
এসব লোকেরা তো
আল্লাহর কদর যতটুকু করা উচিত ছিল তা করলো না অথচ কিয়ামতের দিন গোটা পৃথিবী তার
মুঠোর মধ্যে থাকবে। আর আকাশসমূহ থাকবে তাঁর ডান হাতের মধ্যে পেঁচানো বা ভাজ করা
অবস্থায়। এসব লোকেরা যে শিরক করে তা হতে তিনি সম্পূর্ণ পবিত্র ও বহু ঊর্ধে। (সূরা
যুমার : ৬৭)
শাফাআত কারা করবেন?
আদালতে আখিরাতে
মহান আল্লাহর অনুমতিক্রমে যারা শাফাআত করবেন তারা হচ্ছেন, নবীগণ, ফিরিশতাবৃন্দ,
শহীদগণ, আলেম-ওলামাগণ, হাফেজে কোরআন এবং নাবালগ সন্তান। তাঁদের শাফাআত
কোরআন-হাদীসের অকাট্য প্রমাণাদি দ্বারা প্রমানিত। তাদের মধ্যে সায়্যিদুশ শুফাআ বা
শাফাআতকারীদের সর্দার হলেন বিশ্বনবী মুহাম্মদ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম । যেমন তিনি বলেছেনঃ
أَنَا
أَوَّلُ شَافِعٍ وَ أَوَّلُ مُشَفَّعٍ (متفق عليه)
“আমিই প্রথম
সুপারিশকারী এবং আমার শাফাআতই প্রথম গ্রহণ করা হবে। (বুখারী, মুসলিম)
তিনি আরও বলেছেন,
يَشْفَعُ
يَوْمَ الْقِيَامَةِ ثَلاَثَةٌ : اَلْأَنْبِيَاءُ ثُمَّ الْعُلَمَاءُ ثُمَّ
الشُّهَدَاءُ (رواه ابن ماجة والبيهقي والبزار)
“তিন শ্রেণীর
লোক কিয়ামতের দিন সুপারিশ করবেন, নবী-রাসূরগণ, আলেম-ওলামা ও শহীদগণ”। (ইবনু মাজাহ, বাইহাকী ও বাজ্জার)
তিনি আরও বলেছেনঃ
يَشْفَعُ الشَّهِيْدُ
فِي سَبْعِيْنَ مِنْ أَهْلِ بَيْتِه (رواه مسلم)
“শহীদ তার
পরিবারের সত্তর জনের জন্য সুপারিশ করবে”। (বর্ণনায় আবু দাউদ)
তিনি আরও বলেছেন।
اِقرءوا
القرآن فإنه يأتي يوم القيامة شفيعا لأهله
(رواه مسلم)
“তোমরা কোরআন পাঠ কর। কেননা এ কোরআন
তার পাঠকারীর জন্য কিয়ামতের দিন সুপারিশকারী হয়ে আবির্ভূত হবে”। (বর্ণনায় মুসলিম)
শাফাআতের শর্ত
তবে এখানে লক্ষণীয়
বিষয় হচ্ছে, উপরোল্লিখিত সুপারিশকারীগণ আদালতে আখিরাতে স্বেচ্ছায় যার-তার জন্য
সুপারিশ করতে পারবে না। বরং তাদের সুপারিশ অস্তিত্ব লাভ করবে দুটি শর্তেঃ
প্রথম শর্তঃ
শাফাআতকারীকে
শাফাআতের জন্য আল্লাহর পক্ষ হতে অনুমতি প্রদান করা। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেছেন, কে
আছে এমন, যে তাঁর অনুমতি ব্যতীত শাফাআত করতে পারবে? (সূরা বাক্বারা : ২৫৫)
তাঁর অনুমতি
লাভ না করে সুপারিশ করার কেউ নেই। (সূরা ইউনুস : ৩)
এতে স্পষ্ট যে,
সুপারিশকারীকে অবশ্যই সুপারিশের অনুমতি প্রাপ্ত হতে হবে। অর্থাৎ বিনা অনুমতিতে
সুপারিশ করার কেউ নেই। সুপারিশ স্বেচ্ছামূলক নয়, বরং তা হবে অনুমতি ক্রমে।
দ্বিতীয় শর্ত, যার
জন্য সুপারিশ করা হবে তার প্রতি আল্লাহর সন্তুষ্টি থাকা। যেমন আল্লাহ তাআলা
বলেছেনঃ
“এবং যার প্রতি তিনি (আল্লাহ) সন্তুষ্ট, তার জন্য ছাড়া অন্য কারো জন্য তারা
শাফাআত করে না”। ( সূরা আম্বিয়া : ২৮)
এতে প্রতীয়মান
হচ্ছে যে, সুপারিশ তারাই পাবেন যারা আল্লাহর প্রিয়জন হবেন।
আল্লাহর নিকট অপ্রিয়
এমন কারো জন্য কোন সুপারিশ চলবে না। এটি আরো পরিস্কার হয়ে যায় কোরআন বর্ণিত নিম্নোক্ত
ঘটনাবলীর দ্বারা যে, আল্লাহ তাআলা মহা প্লাবন হতে কেনআনকে রক্ষা করার ব্যাপারে নবী
নূহ আলাইহিস সালামের সুপারিশ গ্রহণ করেননি। পিতা আজরের জন্যে ইবরাহীম আলাইহিস
সালামের ক্ষমা করে দেয়ার সুপারিশ গ্রহণ করেননি। আর মুনাফিকদের ব্যাপারে নবী
মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আল্লাহ তাআলার বলেছেন।
“হে নবী! তুমি
তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর, অথবা তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা না কর। যদি তুমি তাদের জন্য সত্তর বারও ক্ষমা প্রার্থনা
কর তথাপিও আল্লাহ তাদেরকে কখনো ক্ষমা করবেন না”। (সূরা তাওবা : ৮০)
এ শর্ত দু’টোকে আল্লাহ তাআলা অপর এক আয়াতে একাত্রে বলেছেনঃ
আর আসমানসমূহে
অনেক ফেরেশতা রয়েছে, তাদের সুপারিশ কোনই কাজে আসবে না। তবে আল্লাহ যাকে ইচ্ছা করেন
এবং যার প্রতি তিনি সন্তুষ্ট, তার ব্যাপারে অনুমতি দেয়ার পর। (সূরা নাজম : ২৬)
(শরহুল
আক্বিদাতিল ওয়াসিতিয়্যাহ, পৃ : ১৫৯, কাওয়াশিফুল জালিয়্যাহ, পৃ :৪৯০)
মোদ্দা কথা:
সর্বশক্তিমান মহান
আল্লাহর আদালতে যোগ্য সুপারিশকারী নির্বাচনের কারণে সুপারিশ গ্রহণ করা হয় না, বরং
সুপারিশ করার জন্য আল্লাহর অনুমোদন ও সুপারিশ যার জন্য করা হবে তাকে আল্লাহর প্রিয়
পাত্র হওয়ার কারণেই মাত্র সুপারিশ গ্রহণ করা হয়।
সুতরাং
উপরোল্লিখিত শর্তদ্বয়ের বর্তমানেই শাফাআত অস্তিত্ব লাভ করবে এবং সুপারিশকারীরা
সুপারিশ করবেন। সুপারিশকারীদের সরদার জনাব নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম কিয়ামতের দিন সিজদায় লুটিয়ে পড়বেন এবং আল্লাহ তাআলাকে বলবেনঃ
يَارَبِّ وَعَدْتَنِي الشَّفَاعَةَ
فَشَفِّعْنِيْ فِيْ خَلْقِكَ (شرح العقيدة
الطحاوية /226. الطائف)
“হে আমার রব,
আপনি আমাকে শাফাআত এর ওয়াদা দিয়েছেন। এতএব আপনার সৃষ্টির জন্য সুপারিশ কবুল করুন।” (শরহু আক্বীদাতিত্ তাহাভীয়া পৃঃ ২২৬)
আল্লামা মাহমূদ আলুসী বাগদাদী (রহ.) বলেনঃ
والمعنى
أن الله تعالى مالك الشفاعة كلها لا يستطيع أحد شفاعتما إلا أن يكون المشفوع مرتضى
والشفيع مأذونا له وكلاهما مفقودان ههنا... وقوله تعالى( ﭫ ﭬ
ﭭ ﭮ ﭯ البقرة:١٠٧
استئناف
تعليلي لكون الشفاعة جميعا له
عزوجل كأنه قيل: له ذلك لأنه جل وعلا مالك كله فلا يتصرف أحد بشيء منه بدون إذنه
ورضاه . فالسماوات والأرض كناية عن كل ماسواه سبحانه)
আয়াতের অর্থ
হচ্ছে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনই গোটা শাফাআতের একচ্ছত্র মালিক। সুতরাং অন্য কেই
শাফাআতের সামান্যতম অধিকারও রাখে না। কিন্তু যদি শাফাআত প্রাপ্ত ব্যক্তি আল্লাহর
সন্তুষ্টি প্রাপ্ত হয় এবং শাফাআতকারী ব্যক্তি আল্লাহর অনুমতি প্রাপ্ত হয় (তবে সে
শাফাআত করবে) আর উভয়টি এখানে (দুনিয়ায়) অনুপস্থিত।...আর আল্লাহর বাণীঃ (আকাশ এবং
পৃথিবীর একক আধিপত্য তাঁরই) শাফাআতের একচ্ছত্র মালিকানা আল্লাহর হওয়ার এটিও একটি
পৃথক কারণ । এখানে যেন বলা হচ্ছে, সমস্ত শাফাআত আল্লাহরই অধিকারে কেননা আল্লাহ
জাল্লা শানুহু হলেন সমস্ত রাজত্বের নিয়ন্ত্রণকারী । সুতরাং আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ
তার অনুমতি ও সন্তুষ্টি ব্যতীত শাফাআতের সামন্যতমও অধিকার রাখে না।
আলোচ্য আয়াতে
আকাশ ও পৃথিবীকে উল্লেখ করে আল্লাহ ব্যতীত বাকী সবকিছুকেই বুঝিয়েছেন” (রূহুল মাআনী ২৪শ পারা, পৃ: ৯-১১)
আল্লামা
তাফতাজানী (রহঃ) বলেন, ইমাম মাকদিসী রহ.
বলেছেন,
যে ব্যক্তি বলে
যে, কোন মাখলুক আল্লাহর সমীপে তাঁর অনুমতি ছাড়া শাফাআত করবে তবে সে যেন বিশ্ব মুসলিমের
ইজমা ও কোরআনের সুস্পষ্ট বর্ণনাসমূহের বিরোধীতা করল। ... (শরহু আকাঈদ আন্নাসাফী)
কারা শাফাআত থেকে বঞ্চিত হবে?
কিয়ামত দিবসে
অনুষ্ঠিত শাফাআত থেকে বঞ্চিত হবে যারা প্রকাশ্য শিরক ও কুফরীর গুনাহে লিপ্ত ছিল
এবং এরই উপর মৃত্যুবরণ করেছে। তাদের সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,
“আহলে কিতাবের মধ্যে যারা কাফের এবং যারা মুশরিক, তারা জাহান্নামের আগুনে
স্থায়ী ভাবে থাকবে। তারাই সৃষ্টির অধম”। (সূরা বায়্যিনাহ : ৬)
যারা চিরস্থায়ীভাবে
জাহান্নামে থাকবে তাদের কোন রক্ষাকারী বা সাহায্যকারী নেই।
এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ বলেনঃ
“হে নবী, সে ব্যক্তিকে কে বাঁচাতে পারে
যার উপর আযাবের ফয়সালা হয়ে গেছ,তুমি কি তাকে বাঁচাতে পার যে জাহান্নামে রয়েছে”? (সূরা যুমার ১৯)
এতে বুঝা গেল,
এ সব জাহান্নামীদের জন্য কোন শাফাআতকারী নেই। নেই কোন রক্ষাকারী। তাদের ব্যাপারে
কোন শাফাআত গ্রহণও করা হবে না। কারণ, তারা ঈমানশূন্য। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেনঃ
“সুতরাং সুপারিশকারীদের শাফাআত তাদের কোন উপকারে আসবে না”।
তিনি আরও বলেনঃ
“যালিমদের জন্য কোন বন্ধু নেই এবং এমন কোন শাফাআতকারী নেই যার শাফাআত
গ্রাহ্য হবে”। (সূরা গাফির : ১৮)
এ ছাড়া যারা
আল্লাহর দ্বীনের মধ্যে বিকৃতি এনেছে অথবা এর মধ্যে পরিবর্তন করেছে তাদের অবস্থাও
সম্পূর্ণ আশংকাজনক । কারণ, তারা হাউজে কাউসারের পানি পান করতে পারবে না। স্বয়ং
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে এই বলে তাড়িয়ে দেবেনঃ
سُحْقًا
سُحْقًا لِمَنْ غَيّرَ بَعْدي وَ فِي رواية : سُحْقًا سُحْقًا لِمَنْ بَدَّلَ
بَعْدِيْ(متفق عليه)
“তারা দূর হও, ধ্বংস হও যারা আমার পর (দ্বীনের মধ্যে) পরিবর্তন বা রদবদল
করেছে”। (বুখারী, মুসলিম)
তাই আমাদের
সবাইকে অত্যন্ত সতর্ক হতে হবে। আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামকে পুরোপুরিভাবে মেনে চলতে হবে এবং কোন অবস্থাতেই আল্লাহর দ্বীনের
অপব্যাখ্যা করা যাবে না, সম্পূর্ণ অবিকৃতভাবেই তা গ্রহণ করতে হবে। বস্তুত: তাওহীদ
হচ্ছে মানুষের চিরমুক্তির সুনিশ্চিত সনদ আর শিরক হচ্ছে ধ্বংসের মূল। তাই
তাওহীদবাদী ঈমানদার লোক মহাপাপী হলেও মুক্তি পাবে। আর মুশরিক মহাজ্ঞানী ও গুণধর হলেও
অমার্জনীয় অপরাধী। এজন্য ইসলামের নবী বলেছেনঃ
فَهِيَ
نَائِلَةٌ إِنْ شَاءَ اللهُ مَنْ مَاتَ مِنْ أُمَّتِيْ لاَيُشْرِكُ بِاللهِ
شَيْئاَ (رواه اليخاري ومسلم كذا في عقيدة المؤمن /127)
“আমার উম্মতের
মধ্যে এই শাফাআত ইনশাআল্লাহ সে ব্যক্তি লাভ করবে যে আল্লাহর সাথে কোন কিছুকে শরীক
না করা অবস্থায় মৃত্যু বরণ করেছে। (বুখারী, মুসলিম। সূত্র আকীদাতুল মু’মিন : ১২৭)
হে আল্লাহ
আমাদের সবাইকে শিরক মুক্ত জীবন যাপনের তাওফীক দান করুন। আমিন।
শাফাআত ব্যতীত কেউ কি জান্নাতে প্রবেশ
করবে?
তার জবাবে আকাইদ শাস্ত্রবিদগণ বলেছেনঃ
نَعَمْ
يخْرُجُ اللهُ أقْوَامًا مِنَ النَّارِ بِغَيْرِ شَفَاعَةٍ بَلْ بِفَضْلِه
وَرَحْمَتِه وَيَبْقى فِى الْجَنَّةِ
(شرح
العقيدة الطحاوية كذا في مختصر الأسئلة والأجوبة الأصولية على العقيدة الواسطية
/119)
“হ্যাঁ, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কিছু লোককে শাফাআত ছাড়াই তাঁর অশেষ অনুগ্রহ ও
করুণাবলে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন এবং তারা আল্লাহর অনুগ্রহেই জান্নাতে চিরকাল
অবস্থান করবে...।
কেননা, আবু
সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম তাঁর দীর্ঘ একটি হাদীসে বলেছেনঃ
فَيَقُوْلُ
اللهُ شَفَعَتْ الْمَلاَئِكَةُ وَشَفَعَ الْنَبِيُّوْنَ وَ شَفَعَ الْمُؤْمِنُوْنَ
وَ لَمْ يَبْقَ إلاَّ اَرْحَمُ الرَّاحِمِيْنَ فَيَقْبِضُ قَبْضَةً مِنَ النَّارِ
فَيخْرجُ مِنْهَا قَوْمًا لَمْ يَعْمَلُوْا خَيْرًا قَطُّ .
(رواه البخاري و مسلم وأحمد)
“তখন আল্লাহ তাআলা
বলবেন যে, ফেরেশতারা শাফাআত করল, নবীরাও শাফাআত করল, মুমিনবৃন্দ শাফাআত করল এবং
শেষ পর্যন্ত আল্লাহ মহা করুণাময় ছাড়া অন্য কেউ অবশিস্ট থাকল না। অতঃপর আল্লাহ তাআলা
জাহান্নামের অগ্নি হতে একমুষ্টি গ্রহণ করবেন এবং সেখান থেকে এমন একদল লোককে বের
করে নিয়ে আসবেন যার কখনো কোন সৎকর্ম করেনি”। (বর্ণনায় বুখারী, মুসলিম ও আহমদ)
মহান আল্লাহ
বলেন,
“বল, হে আমার
বান্দারা যারা নিজেদের উপর চরম বাড়াবাড়ী করেছো, তোমরা আল্লাহর রহমত হতে নিরাশ
হয়োনা”। (সূরা যুমার : ৫৩)
তিনি অন্যত্র বলেনঃ
فَأَقُولُ ياَرَبِّ ائذَن لِي فِيْمَنْ قَالَ :(لاَ إِلَهَ إِلاَّ
اللَّهَ ) فَيَقُوْلُ :
وَعِِزَّتِي
وَجَلاَلِيْ وَكِبْرِياَئيِ وَعَظْمَتِيْ لَأخْرِجَنَّ
مِنْهَا مَنْ
قَالَ : (لاَإِلَهَ إِلاَّ اللهَ) (رواه مسلم كذا في شرح العقيدة الطحاوية /230)
তখন আমি বলব,
হে আমার রব! যে ব্যক্তি “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” বলেছে তার ব্যাপারে আমাকে (শাফাআতের) অনুমতি দিন।
প্রতি-উত্তরে আল্লাহ তাআলা বলবেন “আমার শ্রেষ্ঠত্ব, বড়ত্ব, মহত্ব, ও ইজ্জতের কসম করে বলছি আমিই সেখান হতে
এদেরকে বের করে নিয়ে আসব যারা বলেছে “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ”।
(মুসলিম, শরহু আকীদাতুত্ তাহাভিয়া : ২৩০)
তাঁর দয়া ও
রহমতের একশ ভাগ হতে মাত্র এক ভাগ তিনি গোটা সৃষ্টিকুলের মাঝে বিতরণ করেছেন। আর
নিরানব্বই ভাগ দয়া ও রহমত তিনি কিয়ামত দিবসে প্রকাশ করার জন্য সংরক্ষিত রেখেছেন।
সত্যি তিনি ‘আররাহমানুর রাহিমীন’-সবচে বড় দয়াশীল। দয়ার আকর তিনি। তাই সর্বাবস্থায় তাঁরই
উপর ভরসা করতে হবে। কোন বিষয়েই গাইরুল্লাহর উপর ভরসা করা যাবে না। তিনি বলেছেনঃ
“আর আল্লাহর উপরই ভরসা কর যদি তোমরা মুমিন হয়ে থাক”।(সূরা মায়েদা: ২৩)
তিনি আরও বলেনঃ
পথভ্রষ্ট
লোকেরা ব্যতীত নিজ রবের রহমত থেকে আর কে নিরাশ হতে পারে”? (সূরা হিজর: ৫৬)
“তিনি (আল্লাহ) যদি সূক্ষ্মভাবে হিসেব কষতে শুরু করেন তাহলে কার এমন দুঃসাহস
আছে যে নিজ বলে জান্নাত লাভ করার দাবী করতে পারে?। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম একথাই বলেছেন। তিনি বলেনঃ
اعْلَمُوْا وَسَدٍّدُوْا وَقَرٍبُوْا
وَاعْلَمُوْا أَنَّ أَحَدًا لَنْ يدْخُلَهُ عَمَلُه الْجَنَّةَ
আমল কর এবং নিজের সাধ্যমত সর্বাধিক সঠিক কাজ করার
চেষ্টা কর এবং সত্যের কাছাকাছি থাক, জেনে রাখবে, কোন ব্যক্তিকে শুধু তার আমল
জান্নাতে প্রবেশ করাতে পারবেনা।
লোকেরা বললোঃ হে আল্লাহর রাসূল আপনার আমলও কি পারবে না?
তিনি বললেনঃ
وَلاَ أَنَا إِلاَّ
أَنْ يَتَغَمَّدَنِي اللهُ بِرَحْمَتِهِ
“না, আমিও না; তবে আমার রব তাঁর রহমত দ্বারা আমাকে আচ্ছাদিত করে নিয়েছেন।”
(বর্ণনায় বুখারী, মুসলিম আহমদ খঃ ৬ পৃঃ ১২৫, শরহু
আকীদাতুত্ তাহাভিয়া, পৃঃ ৫০৬)
আল্লাহর উপর
ভরসা করা তাওহীদ ও ঈমানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দাবী। বান্দা তার দ্বীন, দুনিয়া ও
আখেরাতের যাবতীয় কল্যাণ ও নিয়ামত আল্লাহর কাছেই কামনা করবে। নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাই দু’আ করতেনঃ
اَللَّهُمَّ
مَا اَصْبَحَ بِيْ مِنْ نِعْمَةٍ اَوْ بِأَحَدٍ مِنْ خَلْقِكَ فَمِنْكَ وَحْدَكَ لاَشَرِيْكَ
لَكَ فَلَكَ الْحَمَدُ وَلَكَ الشُكْرُ (رواه أبو داود والنسائي وابن
حبان )
“হে আল্লাহ! আমি অথবা আপনার কোন সৃষ্টি যে অশেষ নিয়ামতের ভান্ডার নিয়ে
প্রভাতে উপনীত হয় তা একক ভাবে আপনারই পক্ষ হতে। আপনি এক, আপনার কোন অংশীদার নেই।
সুতরাং সকল প্রকার প্রশংসা আপনারই, আপনার জন্যই সকল কৃতজ্ঞতা”। (বর্ণনায় আবু দাউদ, নাসাই ও ইবনু হিব্বান)
কার নিকট শাফাআতের দু’আ করব?
যেহেতু আল্লাহ
তাআলাই শাফাআতের একমাত্র মালিক। শাফাআতের চাবিকাঠি একমাত্র তাঁরই হাতে। এতে কারো
বিন্দু পরিমাণও অংশ নেই এবং আদালতে আখিরাতে তাঁর অনুমতি ব্যতীত কেউ শাফাআত করতে
সক্ষম হবে না। সেহেতু আমরা শাফাআতের দু’আ মহান আল্লাহর নিকটই করব। অপরদিকে দু’আ হচ্ছে নামায, রোজার মত একটি শ্রেষ্ঠ ইবাদত। বরং ইবাদতের মগজ।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
( الدُّعَاءُ
هُوَ الْعِباَدَةُ )
দু’আই হচ্ছে ইবাদত। (বর্ণনায় তিরমিযী ২/১৭৫)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেছেনঃ
(اَلدُّعَاءُ مُخُّ الْعِبَادَةِ)
দু’আ ইবাদতের মগজ
বা মূল। (তিরমিযীঃ ২/১৭৫)
আর ইবাদত
একমাত্র মহান রবের জন্য সুনির্দিষ্ট। ইবাদতে অন্য কাউকে শরীক করার নাম শিরকে আকবর।
দু’আ যেহেতু ইবাদত, তাই দু’আ একমাত্র আল্লাহর নিকটেই করতে হবে।
আল্লাহ তালা বলেনঃ
তোমাদের রব
বলেছেন, তোমরা আমার নিকট দু’আ কর, আমি
তোমাদের দু’আ কবুল করব। (সূরা গাফির : ৬০)
তিনি আরও বলেছেনঃ
তোমরা তোমাদের রবের নিকট সংগোপনে ও বিনয়ের সাথে দু’আ কর। নিশ্চয় তিনি সীমালঘনকারীদের পছন্দ করেন না। ( সূরা
আ’রাফ : ৫৫)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
إِذَا
سأَلْتَ فَاسْئَلِ اللَهَ وَإِذَا اسْتَعَنْتَ فَاسْتَعِنْ بِاللهِ (رواه الترمذي
وابن ماجة)
“যখন তুমি কিছু চাইবে তখন আল্লাহর নিকট
চাইবে। আর যখন সাহায্য চাইবে তখন আল্লাহর কাছেই চাইবে। (তিরমিযী ২/১৭৫)
আমরা সূরা ফাতিহাতে বলিঃ
আমরা একমাত্র
আপনারই ইবাদত করি এবং আপনার নিকটই সাহায্য চাই। (সূরা ফাতিহা : ৫)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
مَنْ
لَمْ يَسألِ اللهَ يَغْضَب عَلَيْهِ
(رواه الترمذي و ابن ماجة )
যে ব্যক্তি আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করে না, আল্লাহ
তার প্রতি রাগান্বিত হন। (তিরমিযী, ইবনু মাজাহ, আদাবুল মুফরাদ ও আহমদ)
এতএব, যখন আমরা
দু’আ করব, তখন কেবল আল্লাহর কাছেই করব। আল্লাহ ব্যতীত অন্যের নিকট কখনও কোন কিছুর
জন্য দু’আ করব না। তাই শাফাআতের দু’আ আল্লাহর দরবারেই করব। কেননা, ইসলামের নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
مَنْ لَمْ يَدْعُ اللهَ يَغَضَبْ
عَلَيْهِ (رواه الحاكم. صحيح الأذكار من 49)
“যে ব্যক্তি আল্লাহর নিকট দু’আ করে না তার প্রতি আল্লাহর ক্রোধ রয়েছে”। (হাকিম, সহীহুল আযকার পৃঃ ৪৯)
তিনি আরও বলেছেঃ
ادْعُوْا
اللهَ وَاَنْتُمْ مُوْقِنُوْنَ
بِالْاِجاَبَةِ (رواه الترمذي)
দু’আ কবুলের বিশ্বাস নিয়ে তোমরা আল্লাহর নিকট দু’আ করবে। (তিরমিযী)
জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ
রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ
করেছেন, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা মুমিন ব্যক্তিকে তাঁর সামনে দাঁড় করাবেন এবং
বলবেনঃ
عَبْدِىْ
ِانِّى أَمَرْتُكَ اَنْ تَدْعُوَنِي وَوَعدتكَ أنْ اَسْتَجِيْب لَكَ فَهَلْ كُنْتَ
تَدْعُوْنِي ؟ فَيَقُوْلُ: نَعَمْ يَارَبِّ ... (رواه الإمام أحمد والحاكم)
হে আমার
বান্দা! আমার নিকট দু’আ করতে আমি
তোমাকে আদেশ করেছিলাম। এবং আমি এই ওয়াদাও দিয়েছিলাম যে, আমি তোমার দু’আ কবুল করব। তুমি কি আমার নিকট দু’আ করেছিলে? তখন সে বলবে হ্যাঁ, হে আমার প্রভু”। (আহমদ ও হাকীম)
তাই প্রত্যেক
মুসলমানের ভেবে দেখা উচিত যে, কার নিকট তার দু’আ করা কর্তব্য। যারা গাইরুল্লাহর নিকট দু’আ করছেন তারা কি কিয়ামতের দিন আল্লাহর নিকট হ্যাঁ-বাচক উত্তর দিতে পারবেন ?
শাফাআতের দু’আ কিভাবে করব?
শাফাআত প্রার্থনা একমাত্র আল্লাহর কাছেই করব এবং বলবঃ
اَللهُمَّ
شَفِّعْ فِيَّ نَبِيّكَ
হে আল্লাহ!
আপনার নবীকে আমার জন্য সুপারিশকারী বানিয়ে দিন।
অথবা বলবঃ
اَللهم
ارْزُقْني شَفَاعَةَ نَبِيِّكَ
হে আল্লাহ! আপনার নবীর শাফাআত আমাকে দান করুন।
অথবা বলবঃ
يَارَبِّ
اجْعَلْنِيْ مِمَّنْ تُشَفٍّعُ فِيْهِمْ نَبِيكَ
হে আমার রব!
আমাকে ঐ সকল লোকদের অন্তর্ভুক্ত করে দিন যাদের জন্য আপনি আপনার নবীর শাফাআত কবুল
করবেন।
অথবা বলবঃ
اَللهم
لاَتَحْرِمْنِيْ شَفَاعَةَ نَبِيِّكَ
হে আল্লাহ! আপনার নবীর শাফাআত হতে আমাকে বঞ্চিত করবেন
না।
(আকীদাতুল মু’মিন-১২৯)
কেননা, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একজন সাহাবীকে শাফাআত প্রার্থনা শিক্ষা দিয়ে
বলেছেন, যে তুমি বলঃ
اَللهم
شَفِّعْهُ فِيَّ
হে আল্লাহ! আপনি তাকে আমার জন্য শাফাআতকারী বানিয়ে দিন”। (তিরমিযী)
এবং মৃত শিশুর জানাযায় এ দু’আ পাঠ করতে বলেছেন
وَاجْعَلْهُ
لَنَا شَافِعًا
وَّ مُشَفَّعًا
হে আল্লাহ! এ শিশুকে আমাদের জন্য শাফায়াতকারী ও মঞ্জুরযোগ্য শাফাআত কারীতে পরিণত করুন”। (মুসলিম)
গাইরুল্লাহর
কাছে শাফাআতের দু’আ করার হুকুম
গাইরুল্লাহ তথা
আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো কাছে শাফাআতের দু’আ বা প্রার্থনা করা শিরক। কারণ, দু’আ ইবাদত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
الدُّعَاءُ
هُوَ الْعِبَادَةُ
অর্থাৎ “দু’আই ইবাদত।
(তিরমিযী)
আর ইবাদত
একমাত্র আল্লাহর জন্যই নির্দিষ্ট। ইবাদতে তাঁর আর কোন শরীক নেই। আর শিরক হচ্ছে,
গাইরুল্লাহকে ইবাদতে অংশীদার করার নাম। সুতরাং দু’আ যেহেতু ইবাদত, সেহেতু একমাত্র আল্লাহ তাআলারই কাছে দু’আ করতে হবে। আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো কাছে শাফাআত বা অন্য
কোন কিছুর দু’আ করা শিরক। কেননা দু’আ ইবাদত। যে গাইরুল্লাহর নিকট দু’আ করল সে তার ইবাদত করল। কিন্তু আমরা তো ইবাদত করি
একমাত্র আল্লাহর।
উপরোক্ত আলোচনা
থেকে একথা স্পষ্ট হয়ে গেল যে, শাফাআত প্রার্থনা একমাত্র আল্লাহর নিকট করতে হবে।
আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নিকট শাফাআত প্রার্থনা করা শিরক। কেননা একদিকে দু’আ ইবাদত এবং অপরদিকে সমস্ত শাফাআত একমাত্র আল্লাহর
ক্ষমতাধীন। এতে অন্য কারো বিন্দুমাত্র অংশ নেই। তাই গাইরুল্লাহর নিকট শাফাআত
প্রার্থনা শিরকে আকবর। বাংলাদেশের কোন কোন অঞ্চলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম কে আহবান করে কবিতার মত করে জপ করে প্রার্থনা জানানো হয়, বলা হয়,
হে আল্লাহর রাসূল মুহাম্মদ - আল্লাহর ওয়াস্তে করুন আপনি শাফাআত
এই কবিতাটি দুটি কারণে শিরকের অন্তর্ভুক্ত।
প্রথমতঃ
‘শাফাআত করুন’ বাক্যটি রিজিক
দান করুন, ক্ষমা করুন ইত্যদি দু’আর বাক্যের মত।
যা এ কবিতায় মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আহবান করে তার নিকট শাফাআতের দু’আ করা হয়েছে। আর দু’আ ইবাদত, যা একমাত্র আল্লাহর জন্য নির্দিষ্ট। এ কবিতায় রাসূলকে দু’আর মত শ্রেষ্ঠতম ইবাদতে আল্লাহর সাথে শরীক করা হয়েছে।
অথচ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেই আল্লাহর বান্দা, আল্লাহরই দরবারে
প্রার্থী। সুতরাং এমনটি করা শিরক।
দ্বিতীয়তঃ
এ কবিতায়
রাসূলের কাছে এমন একটি দয় ও করুণা প্রার্থনা করা হয়েছে যা এককভাবে আল্লাহর
এখতিয়ারে, তাঁরই ক্ষমতা ও ইচ্ছাধীন। আর যা সম্পূর্ণরূপে আল্লাহর ক্ষমতাধীন, এমন
কিছুর প্রার্থনা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো কাছে করা শিরক। বস্তুতঃ শাফাআত একমাত্র
আল্লাহর ক্ষমতাধীন, একক এখতিয়ারে। সুতরাং রাসূলের কাছে শাফাআত প্রার্থনা করা শিরক।
কেননা এ ব্যাপারে তাঁর নিজস্ব কোন ক্ষমতা নেই। আল্লাহর অনুমতি ছাড়া তিনিও করো জন্য
শাফাআত করতে সক্ষম হবেন না। আল্লাহ তাআলা এক মুমিন বান্দার তাওহীদ দীপ্ত উক্তি
কুরআনে বর্ণনা করেছেন।
যদি মহান দয়াময়
আল্লাহ আমার কোন ক্ষতি সাধন করতে চান তবে তাদের
শাফাআত-সুপারিশ আমার কোন কাজে আসবে না, আমাকে তারা বাঁচাতেও পারবে না”। (সূরা - ইয়াসীন-২৩)
শিরকের প্রতিবাদ করে আল্লাহ তাআলা অন্যত্র বলেনঃ
“তবে কি তারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্য
কাউকে শাফাআতকারী গ্রহণ করেছে।” (সূরা যুমার :
৪৩)
তৃতীয়তঃ
রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আল্লাহর মত দূর থেকে ডাকাডাকি করা, তাঁর নিকট শাফাআতের দু’আ করা প্রকাশ্য শিরক। কারণ, কোন গাইরুল্লাহকে এরূপে
ডাকাডাকি করাকে আকাঈদ শাস্ত্রবিদগন شِرْكُ
الدَّعْوَةِ বা আহবানের শিরক বলে ঘোষণা করেছেন। অন্যথায় তাওহীদ
শিরকের মাঝে কোন পার্থক্য থাকে না। কেননা আল্লাহ তাআলা খোদ নবীজীকে শিখিয়ে
দিয়েছেনঃ
(বল, আমি
একমাত্র আমার রবকে ডাকি এবং তার সাথে কাউকেই শরীক করি না। (সূরা জিন : ২০
আল্লাহ তালা আরও শিখিয়েছেনঃ
‘তুমি আল্লাহ ছাড়া এমন কাউকে ডেকো না, যে না তোমার কোন উপকার করতে পারে, আর
না কোন ক্ষতি করতে পারে। যদি তা কর তবে নিশ্চয়ই তুমি যালিমদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে
যাবে।‘ (সূরা ইউনুস : ১০৬)
অত্যন্ত
দুঃখজনক হলেও সত্য যে, কিছু লোক এর চেয়েও জগন্য শিরকে লিপ্ত রয়েছে। তারা
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আহবান করে বলে:
يَارَسُوْلَ
الْكِبْرِيَاءِ احْفَظْ عَنْ كُلِّ الْبَلاَءِ : اِسْتَجِبْ هَذَا الدُّعَاءَ يَا
مُحَمَّدْ عَرَبِيْ
হে রাসূলে কিবরিয়া সর্ব প্রকার বালা মুসিবত হতে রক্ষা
করুন, হে মুহাম্মদে আরবী! এই দু’আ কবুল করুন।! (নাউযুবিল্লাহ)
এ যে মারাত্বক
শিরক ও জঘন্য কুফরী কথা, তা কোন ব্যাখ্যার অপেক্ষা রাখে না। একজন সাধারণ লেখা-পড়া
জানা ব্যক্তিও বুঝে যে দু’আ একমাত্র
আল্লাহরই কাছে করতে হয়, কোন সৃষ্টির কাছে নয়। কেননা সকল নবী-রাসূলই আল্লাহর দরবারে
প্রার্থনা করেছেন এবং তারা নিজেরাই সব চেয়ে কঠিন বালা মুসিবতের শিকার হয়েছিলেন।
অন্যদেরকে এ থেকে রক্ষা করার প্রশ্নই উঠে না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম নিজেই বলেছেনঃ
أشَدُّ النَّاسِ بَلاَءً اَلْأَنْبِيَاءُ
ثُمَّ الصَّالِحُوْنَ . وَفي رواية : ثُمَّ الْأَمْثَلُ فَالْأَمْثَلُ
“সর্বাপেক্ষা বেশী বালা-মুসীবতের শিকার হয়েছেন নবী-রাসূলগণ অতঃপর নেককার
বান্দাগণ”
আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আহবান করছি বালা-মুসিবত হতে রক্ষা করার জন্য। আর আল্লাহ তাআলা
তাঁকে বলেছেনঃ
“হে নবী বলে দাও, আল্লাহ যা চান তা ছাড়া আমি আমার নিজের জন্যও ক্ষতি বা
উপকার করার ক্ষমতা রাখি না”। (সূরা ইউনুস
: ৪৯)
তিনি আরও বলেছেনঃ
বল ! আমি
তোমাদের কোন ক্ষতি করা বা সৎপথে আনার ক্ষমতা রাখি না”। (সূরা জিন: ২১)
তিনি আরও
বলেছেনঃ
“আল্লাহ যদি তোমাকে কোন দুঃখ-কষ্ট দেন তবে তিনি ছাড়া তা অপসারণকারী আর কেউ
নেই। (সূরা আনআম: ১৭)
এ জন্যই রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বীয় আদরের কন্যা কলিজার টুকরা ফাতিমা
রাদিয়াল্লাহু আনহাকে বলেছেনঃ
يَا
فَاطِمة بِنْت مُحَمَّدِِ سَلِيْنِي مِنْ مَالِي مَاشِئْتِ , لَا أغْنِيْ عَنْكِ
مِنَ اللهِ شَيْئاً (متفق عليه)
“হে মুহাম্মদের কন্যা ফাতিমা, আমার
সম্পদ থেকে যা খুশী চেয়ে নাও। কিন্তু আল্লাহর কাছে (জবাবদিহি করার ব্যাপারে) তোমার
কোন উপকার করার ক্ষমতা আমার নেই”। (বুখারী,
মুসলিম)
এখানে রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক নিজ মেয়েকে মুহাম্মদের মেয়ে বলে সম্বোধন করাটা সবিশেষ
তাৎপর্যপূর্ণ। এতে বুঝানো হয়েছে যে, আল্লাহর
কাছে কারো গ্রহণ যোগ্যতা তার পিতৃ বা বংশ পরিচয়ের নিক্তিতে হবে না, হবে নিজ
নিজ ঈমান, আমলের মূল্য ও মানের ভিত্তিতে।
যেখানে তিনি
নিজের মেয়েকে রক্ষা করতে পারবেন না সেখানে অমুক-তমুককে কীভাবে রক্ষা করবেন? তাই
আকাঈদ শাস্ত্রবিদগণ বলেছেনঃ
فَإِذَا كَانَ سَيِّدُ الْخَلْقِ وَ
أَفْضَلُ الْشُفَعَاءِ يَقُوْلُ لأخَصِّ النَّاسِ بِهِ : لاَ أَمْلِكُ لَكُمْ مِنَ
اللهِ شَيْئاً فَماَ الظَّن بِغَيْرِه
(شرح العقيدة الطحاوية : 237)
“যদি সৃষ্টির সেরা ও সর্বোত্তম সুপারিশকারী তাঁর একান্ত বিশেষ ব্যক্তিদের
বলেনঃ
لَااَمْلِكُ لَكُمْ مِنَ اللهِ شَيْئاً
অর্থাৎ আল্লাহর
সামনে আমি তোমাদের কোন উপকার করে দেয়ার ক্ষমতা রাখি না” তাহলে অন্যদের বেলায় কি ধারণা ? (শরহু আকীদাতুত তাহাভিয়া : ২৩৭)
নবীজীর শাফাআত
এক প্রকার দু’আ। তিনিও শাফাআতের প্রার্থনা জানাবেন
একমাত্র আল্লাহর দরবারে। যেমন তিনি বলেছেন:
لِكُلِّ
نَبيٍ دَعْوَةٌ مُسْتَجَابَةٌ
وَإِنِّي إخْتَبَأتُ دَعْوَتِى شَفَاعَةً لِاُمَّتي يَوْمَ الْقِيَامَةِ (رواه
البخاري و مسلم)
অর্থাৎ:
প্রত্যেক নবীর জন্য এমন একটি দু’আ রয়েছে যা
আল্লাহর কাছে মকবুল। আর আমি নিজ দু’আটি কিয়ামতের দিন আমার উম্মতের শাফাআতের জন্য সংরক্ষিত করে রেখেছি”। (বর্ণনায় বুখারী, মুসলিম)
সুতরাং আল্লাহ
ছাড়া অন্য কারো কাছে দু’আ করা যাবে না।
শাফাআত সম্পর্কে প্রাজ্ঞ মুফাসসিরগনের
অভিমত
ইমাম বায়যাভী তাঁর তাফসীরে বায়যাভীতে লিখেনঃ
والمعنى
أنه مالك الشفاعة كلها لايستطيع أحد شفاعة إلا بإذنه ولا يستقل بها وقوله ( ﭫ ﭬ
ﭭ ﭮﭯ البقرة: ١٠٧) تقرير لبطلان
اتخاذ الشفاعة من دونه بأنه مالك الملك كله لا يملك أحد أن يتكلم في أمره دون إذنه
ورضاه . فاندرج في ذلك ملك الشفاعة فإذا كان هو مالكها بطل اتخاذ الشفعاء من دونه
كائن من كان (تفسير البيضاوي ج/2 ص 154)
“আয়াতের অর্থ হলঃ তিনিই (আল্লাহ) সমস্ত
শাফাআতের একমত্র মালিক। তাঁর অনুমতি ব্যতীত অন্য কেউ শাফাআত করার ক্ষমতা রাখে না
এবং (তিনি ব্যতীত অন্য কেউ) শাফাআতের ব্যাপারে স্বয়ংসম্পূর্ণ নন। ‘আসমান-জমীনের রাজত্ব একমাত্র তাঁরই’ আল্লাহর এ বাণী গাইরুল্লাহকে শাফাআতকারী হিসাবে গ্রহণ
করাকে বাতিল সাব্যস্ত করেছে। এজন্য যে, তিনিই সমস্ত রাজত্বের একমাত্র মালিক, তাঁর
অনুমতি এবং সন্তুষ্টি ব্যতীত কেউ তাঁর কোন বিষয়ে কথা বলার অধিকার রাখে না। সুতরাং
এতে (তাঁর সর্বময় কর্তৃত্বের ভিতরে) শাফাআতের মালিকানা অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেল। অতএব
যখন তিনিই শাফাআতের একমাত্র মালিক তখন তিনি ছাড়া অন্য কাউকে শাফাআতকারী হিসাবে
গ্রহণ করা বাতিল হয়ে গেল, তিনি যে-ই হোক না কেন?
(বায়যাভীঃ ২য় খন্ডঃ পৃঃ ১৫৪ বায়যাভী কামিল পৃঃ ৬১৩)
ইমাম আবু জাফর
মুহাম্মদ ইবনে জারীর আততাবারী তাঁর বিখ্যাত তাফসীর গ্রন্থে লিখেনঃ
( ﮔ ﮕ ﮖ ﮗ. قل لهم أفردوا الله
بألوهية فإن الشفاعة لله وحده لا يشفع عنده إلا من أذن له ورضي قوله .
অর্থাৎ তুমি
তাদেরকে বলে দাও, তোমরা এককভাবে আল্লাহর ইবাতদ কর। কেননা সমস্ত শাফাআত একমাত্র
আল্লাহরই জন্য। যাকে তিনি অনুমতি দিবেন এবং যার কথায় তিনি সন্তুষ্ট হবেন সে
ব্যক্তি ছাড়া আর কেউ তার নিকট শাফাআত করতে পারবে না। (মুখতাসারু তাফসীরিত্ তাবারী
: ২য় খন্ড পৃ: ২৮১)
ইমাম আবু আব্দিল্লাহ
মুহাম্মদ ইবনে আহমদ আল কুরতুবী তাঁর বিখ্যাত তাফসীর গ্রন্থ الجامع لأحكام القرآن -এ
লিখেন,
(বলে
দাও, সব শাফাআত একমাত্র আল্লাহর জন্যই) এ আয়াতটি এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট দলীল যে,
শাফাআত একমাত্র আল্লাহরই এখতিয়ারে। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেছেন (কে আছে এমন, যে
আল্লাহর অনুমতি ব্যাতীত তাঁর নিকট শাফাআত করতে পারবে?) অতএব তাঁর পক্ষ থেকে
শাফাআতের অনুমতি ব্যতীত কেউ শাফাআতকারী হতে পারবে না। (শাফাআতের অনুমতি প্রাপ্ত
ব্যক্তিগণ শুধু তাদের জন্য সুপারিশ করবে যাদের প্রতি আল্লাহ সন্তুষ্ট। সূরা
আম্বিয়া : ২৮)
শায়খ আবু বকর জাবির আল জাযাইরী তাঁর বিখ্যাত তাফসীর
গ্রন্থে লিখেন-
( ﮔ
ﮕ ﮖ ﮗ ) أي أخبرهم أن جميع الشفاعات لله وحده فشفاعة
الأنبياء والشهداء والعلماء والأطفال مملوكة لله فلايشفع أحد إلا بإذنه- (ثم أمر تعالى
رسوله أن يعلن عن الحقيقة وإن كانت عند المشركين مرّا (
ﮔ ﮕ ﮖ ﮗ ) أي جميع أنواع الشفاعات هي ملك لله مختصة به
فلا يشفع أحد إلا بإذنه إذا فاطلبوا من مالكها الذي له ملك السموات والأرض لاممن
هو مملوك ل ه (أيسر التفاسير لكلام العلي الكبير. ج : 4 ص : 49- 50 )
(বলে দাও, সব
শাফাআত একমাত্র আল্লাহর জন্য।) অর্থাৎ তুমি তাদেরকে জানিয়ে দাও, সমস্ত শাফাআত
একমাত্র আল্লাহরই অধিকারে। সুতরাং নবী, শহীদ, ওলামাগণের এবং নাবালক বাচ্চাদের
শাফাআত আল্লাহরই মালিকানাভুক্ত। অতএব তাঁর অনুমতি ব্যতীত কেউ শাফাআত করতে পারবে
না।
অতঃপর আল্লাহ
তাআলা তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে শাফাআতের হাক্বীকত সম্পর্কে
পরিষ্কার ঘোষণা দেয়ার জন্য নির্দেশ দিলেন, যদিও তা অংশীবাদীদের নিকট তিক্ত হয়।
(বলে দাও, সব
শাফাআত একমাত্র আল্লাহরই অধিকারে।) অর্থাৎ সর্ব প্রকার শাফাআত আল্লাহরই
মালিকানাধীন। তাঁর জন্য সুনির্দিষ্ট। সুতরাং তাঁর অনুমতি ব্যতীত কেউ শাফাআত করতে
পারবে না। কাজেই তোমরা শাফাআত প্রার্থনা কর শাফাআতের মালিকের কাছেই, যিনি আকাশ ও
পৃথিবীর মালিক। তার নিকট প্রার্থনা করো না, যে নিজেই আল্লাহর মামলুক বা মালিকাধীন।
(আয়সারুত-তাফাসীরঃ ৪৯-৫০, ৪র্থ খন্ড)
শায়খ আব্দুর
রহমান ইবনে নাসির আসসা’দী, তাঁর
বিশ্বখ্যাত তাফসীর গ্রন্থ-
تيسير
الكريم الرحمن فى تفسير كلام المنان -এ লিখেনঃ
(قل) لهم : ( ﮔ ﮕ
ﮖ ﮗ ) لأن الأمر كله لله وكل شفيع فهو يخافه ولا يقدر
أن يشفع عنده أحد إلا بإذنه فإذا أراد رحمة عبده أذن للشفيع الكريم عنده أن يشفع
رحمة بالاثنين ثم قرر أن الشفاعة كلها له بقوله: (
ﭫ ﭬ
ﭭ ﭮﭯ البقرة: نت ١٠٧) أي جميع ما
فيها من الذوات والأفعال والصفات فالواجب أن تطلب الشفاعة ممن يملكها وتخلص له
العبادة .
তুমি তাদেরকে
বলে দাও, ‘সমস্ত শাফাআত একমাত্র আল্লাহরই
এখতিয়ারে’। কেননা সর্বপ্রকার কর্তৃত্ব
আল্লাহরই। এবং প্রত্যেক শাফাআতকারীই তাঁকে ভয় করে, এবং তাঁর অনুমতি ব্যতীত কেউ
শাফাআত করার ক্ষমতা রাখে না। অতএব যখন আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দার প্রতি দয়ার ইচ্ছা
করেন তখন তিনি শাফাআতকারী ব্যক্তিকে তাঁর দরবারে শাফাআত করার জন্য অনুমতি প্রদান
করেন। উভয়ের (শাফাআতকারী ও যার জন্য শাফাআত করা হবে) প্রতি দয়াদ্র হয়ে। অতঃপর তিনি
তাঁর জন্যই সমস্ত শাফাআত সাব্যস্ত করেন। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ (আসমান -জমীনের
মালিকানা একমাত্র তাঁর)... অতঃএব, অবশ্য করণীয় হচ্ছে, শাফাআতের মালিকের নিকট
শাফাআত প্রার্থনা করা এবং ইবাদতকে শুধুমাত্র তাঁর জন্য খালেস করা । (তাইসীরুল কারীমির রহমান, পৃ: ৬৭২)
সম্মানিত
পাঠকবৃন্দ! এই হচ্ছে শাফাআত সংশ্লিষ্ট কুরআনের তাফসীর। আপনারা এ থেকে নিশ্চয়ই ধারণা
পেয়েছেন যে, সমস্ত শাফাআতের একচ্ছত্র মালিক হচ্ছেন আল্লাহ তাআলা। সর্বপ্রকারের
শাফাআত তাঁরই অধিকারে। তাঁর অনুমতি ব্যতীত কেউ শাফাআত করতে পারবে না। তাই ঈমানের
অনিবার্য দাবী হলো শাফাআতের মালিকের নিকট শাফাআত প্রার্থনা করা। কেননা, বান্দার
সকল চাওয়া-পাওয়া তাঁর মালিক ও মা’বুদ আল্লাহর
কাছেই হওয়া চাই। অন্য কোন বান্দার কাছে নয়।
মর্যদায় শ্রেষ্ঠ হলেও নবীজীও আল্লাহর একজন বান্দা মাত্র। এ ব্যাপারে বিস্তারিত
জানার জন্য নিম্নোক্ত কুরআনের তাফসীর গ্রন্থসমূহ দেখতে পারেনঃ
তাফসীর গ্রন্থ
|
গ্রন্থকার
|
পৃষ্ঠা-খন্ড
|
|
১
|
তাফসীরে
ফতহুল কাদীর
|
ইমাম শাওকানী
|
খঃ ৪, পৃঃ
৪৬৭
|
২
|
তাফসীরুল
কুরআনিল আজীম
|
ইবনু কাসীর
|
খঃ১,পৃঃ ৩৩১,খ: ৩ পৃঃ ৫৮৯
|
৩
|
তাফসীরে
জালালাইন
|
সয়ূতী-মহল্লী
|
পৃঃ ৩৮৮, ৪৮১
|
৪
|
তাফসীরে রুহুল
মায়ানী
|
আলূসী বগদাদী
|
২৪শ পারা পৃ:
৯ -১১
|
৫
|
সাফওয়াতুত
তাফাসীর
|
মুহাম্মদআলী
সাবূনী
|
খ: ২ পৃ: ১৫৪
|
৬
|
তাফসীর ফী
জিলালিল কুরআন
|
সাইয়্যেদ কুতুব শহীদ
|
খ: ৫, পৃ:
৩০৫৫
|
৭
|
তাফসীরে
কাশশাফ
|
ইমাম যমখশরী
|
খ: ৩ পৃ: ৪০০
|
৮
|
মুখতাসারু
তাফসীরিত তাবারী
|
সাবূনী
|
খ: ১ পৃ: ৩৪৬
|
৯
|
তাফসীরে হক্কানী
|
আব্দুল হক
মোহাদ্দিসে দেহলভী
|
খ: ৬ পৃ:
১২০-২১-৮৯
|
১০
|
ফাতহুল বায়ান
|
আবু তৈয়্যেব
বোখারী
|
খ: ১২ পৃ:
১২৩
|
১১
|
বাহরুল মুহীত
|
আবু হায়্যান
আন্দুলুসী
|
খ: ৭ পৃ: ৪৩১
|
১২
|
তাফসীরে কবীর
|
ইমাম
রাজী
|
খ: ২৪/২৫ পৃ:
২৮৫
|
বইয়ের কলেবর
বৃদ্ধির আশংকায় তাফসীর সংক্রান্ত আলোচনা এতটুকুতেই সীমিত রাখালাম।
শাফাআত সম্বন্ধে আকাঈদ শাস্ত্রবিদদের
মতামত
ইমাম ইবনু আবিল ইজ্জ আল হানাফী شرح العقيدة
الطحاوية -গ্রন্থে লিখছেনঃ
فالحاصل
: أن الشفاعة عند الله ليست كالشفاعة عند البشر فإن الشفيع عند البشر كما أنه شافع
للطالب شفعه فى الطلب بمعنى أنه صار شفعا فيه بعد أن كان وترا فهو أيضا قد شفع المشفع المشفوع إليه وبشفاعته
صار فاعلا للمطلوب فقد شفع الطالب والمطلوب منه والله تعالى وتر لايشفعه أحد
فلايشفع عنده أحد إلا بإذنه فالأمر كله إليه فلاشريك له بوجه , فسيد الشفعاء يوم القيامة
إذا سجد وحمد الله فقال له الله : (ارْفَعْ رَأسَكَ وَقُلْ تُسْمَعُ وَسَلْ تُعْطَ
وَاشْفَعْ تُشَفَّعْ) فيحد له حدا فيدخلهم الجنة فالأمر كله لله كما قال : ( ﭰ
ﭱ ﭲ ﭳ
ﭴﭵ آل
عمران: ١٥٤
وقال تعالى ( ﮧ ﮨ ﮩ
ﮪ ﮫ آل عمران: ١٢٨
وقال تعالى : ﮞ
ﮟ ﮠ ﮡﮢ الأعراف: ٥٤ شرح
العقيدة الطحاوية ص : 235-236)
মোদ্দাকথাঃ আল্লাহর কাছে সুপারিশ করার বিষয়টি মানুষের
কাছে সুপারিশ করার মত নয়। কেননা, মানুষের কাছে যে ব্যক্তি সুপারিশ করে প্রার্থনার
ক্ষেত্রে সে যেমন সুপারিশ প্রার্থীর জন্য সুপারিশ করে তার শরীক ও সহযোগী হয়ে যায়
তেমনি ভাবে সুপারিশ প্রার্থী ব্যক্তি একাও বেজোড় থাকার পর সে প্রার্থনার ক্ষেত্রে
সুপারিশকারীর সহযোগী বা জোড় হয়ে যায়। সুপারিশকারী এবং তার নিকট সুপারিশ
প্রার্থনাকারী ব্যক্তি উভয়ে শাফাআতের মাধ্যমে উদ্দেশ্য অর্জন করে। অর্থাৎ সুপারিশ
প্রার্থী এবং সে যাকে সুপারিশকারী ধরেছে উভয় মিলে প্রার্থনা করে বা সুপারিশ করে।
অথচ আল্লাহ তাআলা বেজোড় যার সহযোগী বা জোড় হওয়ার মত কেউ নেই। কাজেই তাঁর নিকট তাঁর অনুমতি ছাড়া কেউ সুপারিশ
করতে পারবে না। বরং শাফাআতের যাবতীয় ব্যাপার তাঁরই দিকে সমর্পিত। এবং কোন দিক
থেকেই কেউ তাঁর শরীক নয়। তিনি সম্পূর্ণ লা-শরীক। এ কারণেই শাফাআতকারীদের সরদার- মুহাম্মদ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও কিয়ামতের দিন যখন সিজদায় লুটিয়ে পড়বেন এবং মহান
আল্লাহর প্রশংসা করবেন তখন আল্লাহ তাআলা তাঁকে বলবেনঃ “হে মুহাহম্মদ!তুমি মাথা উঠাও, এবং বল, শ্রবণ করা হবে,
তুমি যাঞ্চা কর দেয়া হবে, তুমি সুপারিশ কর তোমার সুপারিশ কবুল করা হবে”। অতঃপর তাঁকে একটি সীমা নির্ধারণ করে দেয়া হবে এবং এ সীমা অনুযায়ী তিনি
লোকদেরকে বেহেশতে প্রবেশ করাবেন। (সে দিনের) যাবতীয় কর্তৃত্ব একমাত্র আল্লাহর ।
যেমন তিনি বলেনঃ
“বল! সমস্ত কর্তৃত্ব আল্লাহর জন্য নির্দিষ্ট”। (সূরা আলে ইমরান: ১৫৪)
তিনি অন্যত্র বলেনঃ
“হে নবী তোমার কোন কর্তৃত্ব নেই”। (সূরা আলে ইমরানঃ ১২৮)
আল্লাহ তাআলা আরও বলেনঃ
“জেনে রাখ, সৃষ্টিও আদেশ একমাত্র তাঁরই”। (আ’রাফঃ ৫৪)
(শরহুল আকীদাতিত তাহাভিয়াঃ ২৩৫-২৩৬)
শাইখুল ইসলাম আল্লামা ইবনুল কায়্যিম
(রহ. বলেনঃ
وأخبر أن الشفاعة كلها له أنه لايشفع
عنده أحد إلا لمن أذن الله أن يشفع له فيه ورضي له قوله وعمله وهم أهل التوحيد
الذين لم يتخذوا من دون الله شفعاء من دونه فيكون أسعد الناس بشفاعته من يأذن الله
تعالى صاحب التوحيد الذي لم يتخذ شفيعا من دون الله والشفاعة التي اثبتها الله تعالى
ورسوله صلى الله عليه وسلم هي الشفاعة الصادرة عن إذنه لمن وحده والتي نفاها الله
تعالى هي الشفاعة الشركية التي في قلوب المشركين المتخذين من دون الله شفعاء
فيعاملون بنقيض مقصودهم من شفاعتهم ويفوز بها الموحدون (تيسير العزيز الحميد /247)
অর্থাৎ আল্লাহ
তাআলা জানিয়ে দিয়েছেন যে, সমস্ত শাফাআত তাঁরই এখতিয়ারভুক্ত। যাদের তিনি অনুমতি দান
করবেন এবং যার কথা ও কাজে তিনি সন্তুষ্ট, সে ব্যতীত আর কেউ তাঁর নিকট শাফাআত করতে
পারবে না। তারা হচ্ছেন নির্ভেজাল-একনিষ্ঠ তাওহীদবাদী, যারা আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে
সুপারিশকারী হিসাবে গ্রহণ করেনি। আর তাদের মধ্য থেকে যাকে ইচ্ছা তাকে সুপারিশ করার
অনুমতি দিবেন। আর তারা যেহেতু তাকে ছাড়া অন্য কাউকে সুপারিশকারী হিসাবে গ্রহণ
করেনি, সেহেতু রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর শাফাআত দ্বারা
সর্বাপেক্ষা ভাগ্যবান ঐ ব্যক্তি হবে যার ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা অনুমতি দান করবেন।
আর সে হচ্ছে একনিষ্ঠ তাওহীদবাদী যে আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাউকে সুপারিশকারী হিসাবে
গ্রহণ করেনি। আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে শাফাআতের
স্বীকৃতি দান করেছেন, তা হচ্ছে ঐ শাফাআত যা তাঁর অনুমতিক্রমে একনিষ্ঠ তাওহীদবাদীর
জন্য প্রকাশ পাবে এবং আল্লাহ তাআলা যে শাফাআতের অস্বীকার করেছেন, তা হচ্ছে শিরকী
শাফাআত যা ঐ সমস্ত শিরিকবাদীদের অন্তরে বদ্ধমূল রয়েছে, যারা আল্লাহ ছাড়া অন্যকে
সুপারিশকারী হিসাবে গ্রহণ করেছে। অতএব, শিরকবাদীদের ব্যাপারে তাদের শিরকী শাফাআতের
কারণে তাদের উদ্দশ্যের বিপরীত আচরণ করা হবে এবং একনিষ্ঠ তাওহীদবাদীরা স্বীকৃত
শাফাআতের দ্বারা সফলকাম হবেন। (তাইসীরুল আযীযিল হামীদঃ ২৪৭)
শায়খ মুহাম্মদ বিন আব্দুল ওহ্হাব كشف
الشبهات
কিতাবে লিখেনঃ
فإذا
كانت الشفاعة كلها لله ولا تكون إلا بعد إذنه ولايشفع النبي صلى الله عليه وسلم و
لاغيره في أحد حتى يأذن الله فيه ولا يأذن إلا لأهل التوحيد تبين لك أن الشفاعة
كلها لله واطلبها منه واقول: اللهم لا تحرمنى شفاعته ، اللهم شفعه فيّ ، وأمثال
هذا...
অর্থাৎ,
বস্তুতপক্ষে যখন সমস্ত শাফাআত একমাত্র আল্লাহরই জন্য সংরক্ষিত এবং তা আল্লাহর
অনুমতি সাপেক্ষ। আর নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বা অন্য কেউ আল্লাহর
অনুমতি ব্যতীত কারো জন্য শাফাআত করতে সক্ষম হবেন না। আল্লাহর অনুমতি একমাত্র
একনিষ্ঠ তাওহীদবাদীদের জন্যই নির্দিষ্ট । একখ তোমার কাছে এ কথা পরিষ্কার হয়ে গেল
যে, সকল প্রকার শাফাআতের মালিক হচ্ছেন আল্লাহ। সুতরাং আমি তাঁরই নিকট শাফাআত
প্রার্থনা করি এবং বলিঃ “হে আল্লাহ!
তুমি আমাকে রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর শাফাআত হতে বঞ্চিত করো
না। হে আল্লাহ! তুমি তাঁকে আমার জন্য শাফাআতকারী বানিয়ে দাও। অনুরূপ অন্যান্য দু’আও আল্লাহর নিকট করতে হবে।(কাশফুশ শুবহাতঃ১৬)
শায়খ সালেহ বিন ফাওজান বলেনঃ
والشفاعة حق ولكنها ملك لله وحده كما قال
تعالى ( ﮔ ﮕ ﮖ ﮗ ) فهي
تطلب من الله لا من الأموات لأن الله لم يرخص فى طلب الشفاعة من الملائكة ولا من
الأنبياء ولا غيرهم لأنها ملكه سبحانه وتطلب منه ليأذن للشافع أن يشفع
অর্থাৎ শাফাআত
অবশ্যই সত্য। কিন্তু এর মালিকানা একমাত্র আল্লাহরই। যেমন আল্লাহ তেআলা বলেনঃ (বলে
দাও, সমস্ত শাফাআত আল্লাহর।) এতএব শাফাআত প্রার্থনা আল্লাহরই নিকট করতে হবে মৃতদের
নিকট নয়। কেননা আল্লাহ তাআলা ফিরিশতাগণ, নবীগণ এবং অন্যানের নিকট শাফাআত
প্রার্থানা করার অনুমতি দেন নি। এজন্য যে, তিনিই শাফাআতের একচ্ছত্র মালিক এবং তার
নিকট শাফাআত প্রার্থনা করবে যেন, তিনি সুপারিশকারীকে তার জন্য শাফাআত করার অনুমতি
প্রদান করেন। (আল ইরশাদ ইলা সহীহিল ই’তিক্বাদঃ ৫১-৫২)
আল্লামা আবু বকর জাবের আল জাযায়েরী
তাঁর সুবিখ্যাত عقيدة المؤمن গ্রন্থে
শাফাআতের প্রার্থনা প্রসঙ্গে বলেছেনঃ
فلا
يطلب الشفاعة من أحد ولا يسألها من غير الله عز وجل إذ الشفاعات كلها لله تعالى
وليس لأحد سواه منها شيء قال تعالى : (
ﮔ ﮕ ﮖ ﮗ ) وقال تعالى
( ﯚ ﯛ
ﯜ ﯝ ﯞ ﯟ ﯠﯡ ) ومن أراد شفاعة
النبي صلى الله عليه وسلم فليسألها من الله تعالى وليقل اللهم شفع فيّ نبيك أو اللهم
ارزقني شفاعة نبيك أو يارب اجعلني ممن تشفع فيهم نبيك ... (عقيدة المؤمن /129
সুতরাং আল্লাহ
ছাড়া অন্য কারো কাছে শাফাআত চাওয়া কিংবা প্রত্যাশা করা যাবে না। কেননা শাফাআতের
একচ্ছত্র অধিকার একমাত্র আল্লাহরই এবং তিনি ব্যতীত অন্য কারো এতে বিন্দুমাত্র
অধিকার নেই। ইরশাদ হচ্ছেঃ বল হে রাসূল! শাফাআত সম্পূর্ণটাই আল্লাহর হাতে” আরও ইরশাদ হচ্ছে “কে আছে, আল্লাহর কাছে তার অনুমতি ব্যতীত
শাফাআত চাইবে”? যে ব্যক্তি
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর শাফাআত প্রত্যাশা করে সে যেন
আল্লাহরই কাছে চায় এবং বলে, হে আল্লাহ ! আমার জন্য তোমার নবীকে শাফাআতকারী করে দিন” অথবা বল, হে আল্লাহ! আমার জন্য তোমার নবীর শাফাআত নসীব
করুন” অথবা বল, হে আমার রব! আমাকে ঐ সকল
লোকদের অন্তর্ভুক্ত করে দিন যাদের জন্য আপনি আপনার নবীকে শাফাআতকারী বানাবেন।
(আকীদাতুল মুমিন পৃঃ ১২৯)
একটি বিশেষ আবেদন
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ তাআলা সম্পর্কে জানিয়েছেন যে, “আল্লাহ তাআলা প্রত্যেক রাতের এক তৃতীয়াংশ বাকী থাকতে
দুনিয়ার আকাশে অবতরণ করেন। তারপর দুনিয়াবাসীকে উদ্দেশ্য করে বলতে থাকেনঃ
مَنْ
يَدْعُوْني فَاسْتَجِيْب لَهُ مَنْ يَسْأَلُنِي فَأعْطِيْهِ مَنْ يَسْتَغْفِرْنِي
فَأغْفِر لَهُ
“কে আছে আমাকে ডাকবে, তার ডাকে আমি
সাড়া দিব, কে আছে আমার কাছে প্রার্থনা করবে আমি তাকে দান করব, আর কে আছে আমার নিকট
ক্ষমা প্রার্থনা করবে, আমি তাকে ক্ষমা করে দিব”। (মুয়াত্তা ইমাম মালিক, বুখারী, মুসলিম)
আমরা সবাই জানি
যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ তাআলার ব্যাপারে যে সংবাদ
দান করেছেন তা হচ্ছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পরিবেশিত খবর । আর
তিনি হচ্ছেন এমন এক মহান ব্যক্তি যিনি ‘আপন রব ও মা’বুদ’ সম্পর্কে মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বেশী জ্ঞানী, সবচেয়ে
উত্তম নসীহতকারী, সবচেয়ে বেশী সত্যবাদী ও বিশ্বস্ত। আর তিনি নিজেই তাঁর উম্মতকে
জানিয়েছেন যে, আল্লাহ তাআলা রাতের তিন ভাগের একভাগ সময় বাকী থাকতে দুনিয়ার আকাশে
অবতরণ করে তাঁরই নিকট প্রার্থনা করতে বলেন এবং এ সময়ের প্রার্থনা কবুল করবেন বলে
ওয়াদা করেছেন।
এহেন অবস্থায়
কী করে একজন মুসলমান নিজেকে রাসূলের উম্মত বলে পরিচয় দেয় আবার শেষ রাতে
গাইরুল্লাহকে আহবান করে! এটি কি রাসূলের শিক্ষা নিয়ে উপহাসের শামিল নয়? আর কেমন
করেই বা তারা শেষ রাত্রে অর্থাৎ ফজরের আজানের পূর্বে এবং রমজান মাসে সাহরীর সময়
নিয়মিত বলেঃ মুহাম্মদ ইয়া রাসূলাল্লাহ! শাফাআত কি-জিয়ে লিল্লাহ!
অর্থাৎ “হে আল্লাহর রাসূল মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম! আল্লাহর ওয়াস্তে শাফাআত করুন!”
তাঁরা দূর
দূরান্ত থেকে আল্লাহর প্রিয় বান্দা ও রাসূল মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামকে ডেকে তাঁরই নিকট শাফাআত প্রার্থনা করলেন। তারা ভুলে গেলেন যে, শেষ
রাতে আল্লাহকে ডেকে একমাত্র আল্লাহরই কাছে প্রার্থনা করার জন্য স্বয়ং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর উম্মতকে আদেশ করেছেন।
সকলের প্রতি
সম্মান রেখে অনুরোধ জানাচ্ছি যে, আপনারা অন্যান্য প্রার্থনার মত শাফাআতের
প্রার্থনাও কেবল আল্লাহর কাছেই জানান। কেননা তিনি দু’আ কবুলের ওয়াদা দিয়েছেন এবং নিশ্চয়ই তিনি ওয়াদা ভঙ্গ
করেন না।
তিনি ঈমানদার
সৎ কর্মীদের দু’আ কবুল করেন এবং তাদের প্রতি স্বীয়
অনুগ্রহ বাড়িয়ে দেন। (সূরা শূরা : ২৬)
তাই আমরা
আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করে বলিঃ
রোজ হাশরের মালিক ওগো তুমি মেহেরবান,
মুহাম্মদের
শাফাআত করো মোদের দান।
এমন বললে শিরক
মুক্ত থাকা যায়, তাওহীদ রক্ষা পায় এবং শাফাআতের প্রার্থনাও সঠিক জায়গায় করা হয়।
আল্লাহই একমাত্র তাওফীকদাতা, তিনি সকলের আশ্রয়, তিনি করুণা ও অনুগ্রহের একক আকর
তাঁরই সমীপে আকুতি ও প্রার্থনা জানাই- হে আল্লাহ! তোমার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এর শাফাআত থেকে আমাদের বঞ্চিত করো না। বঞ্চিত করোনা তোমার করুণা থেকে।
سبحان ربك رب العزة عما يصفون وسلام على
المرسلين والحمد لله رب العلمين.
সমাপ্ত
সম্পাদনা : ইকবাল হোছাইন মাছুম
সূত্র : ইসলাম প্রচার ব্যুরো, রাবওয়াহ, রিয়াদ, সৌদিআরব
আরও পড়ুনঃ মুমিনদের শাফা‘আত
আরও পড়ুনঃ অলী আওলিয়াদের অসীলা গ্রহণ : ইসলামি দৃষ্টিকোণ
আরও পড়ুনঃ আল্লাহকে পেতে মাধ্যম গ্রহণ
আরও পড়ুনঃ মাযারে প্রচলিত বিদআতসমূহ
আরও পড়ুনঃ আল্লাহকে পেতে মাধ্যম গ্রহণ
আরও পড়ুনঃ মাযারে প্রচলিত বিদআতসমূহ
আরও পড়ুনঃ মাযার ও কবরের উদ্দেশ্যে কুরবানী, মান্নত ও হাদীয়া পেশ করা এবং এগুলোর প্রতি সম্মান প্রদর্শন
আরও পড়ুনঃ যখন চাইবে আল্লাহর কাছেই চাইবে
“শিরক” বিষয়ের উপর আরও পড়তে এইখানে ক্লিক করুন।
পোস্টটি ভালো লাগলে শেয়ার করতে ভুলবেন না কিন্তু।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন