কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে জান্নাত ও জাহান্নাম
কুরআন ও সুন্নাহ্র আলোকে জান্নাত ও জাহান্নাম
ভূমিকা
الحمد لله وحده، والصلاة والسلام على أشرف الأنبياء والمرسلين، نبينا محمد وعلى آله وأصحابه أجمعين، أما بعد:
জান্নাত ও জাহান্নাম সম্পর্কে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা ও সংক্ষিপ্ত গবেষণা। এ গবেষণাটি একাধিক কিতাব ও বিভিন্ন তথ্যসূত্র থেকে এখানে একত্র করা হয়েছে এবং সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো আলোচনা করা হয়েছে। জান্নাত ও জাহান্নাম কাকে বলে, প্রতিটির সংজ্ঞা, গুণাগুণ এবং কিভাবে জান্নাতে প্রবেশ করা যাবে এবং জাহান্নাম থেকে বাঁচা যাবে? তার উপায় ও উপকরণগুলো এখানে আলোচনায় বিশেষভাবে স্থান পেয়েছে।
বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার কারণ আমাদের কারোই অজানা নয়। কারণ, প্রতিটি মানুষের গন্তব্য হয় জান্নাত অথবা জাহান্নাম। এ কারণেই জান্নাত ও জাহান্নামের বিষয়টি স্পষ্ট হওয়া অতীব জরুরি। আমরা আল্লাহর নিকট জান্নাত কামনা করি এবং জাহান্নাম থেকে আশ্রয় চাই।
এ বিষয়টি আলোচনা করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার কারণ হল, যে আমলগুলো জান্নাতে নিয়ে যায়, সে সব আমলসমূহের প্রতি মানুষকে উৎসাহ দেয়া এবং যে আমলগুলো জাহান্নাম থেকে বাঁচায় ও মুক্তি দেয়, সে সব আমলসমূহের প্রতি ভয় প্রদর্শন ও সতর্ক করা।
আমি আলোচ্য বিষয়টিকে নিম্ন লিখিত পদ্ধতিতে গবেষণা আকারে সাজিয়েছি।
প্রথম অধ্যায়: জান্নাত ও জাহান্নামের সংজ্ঞা ও বর্ণনা
প্রথম পরিচ্ছেদ: জান্নাত ও জাহান্নামের সংজ্ঞা ও নাম সমূহ
প্রথম আলোচনা: জান্নাতের সংজ্ঞা ও নামসমূহ
দ্বিতীয় আলোচনা: জাহান্নামের সংজ্ঞা ও নামসমূহ
দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ: জান্নাত ও জাহান্নাম বর্তমানে আছে কিনা?
প্রথম আলোচনা: জান্নাত বর্তমান থাকার প্রমাণ
দ্বিতীয় আলোচনা: জাহান্নাম বর্তমান থাকার প্রমাণ
দ্বিতীয় অধ্যায়: জান্নাতীদের নেয়ামত ও জাহান্নামীদের আযাবের বর্ণনা
প্রথম পরিচ্ছেদ: জান্নাতীদের নেয়ামতসমূহ
প্রথম আলোচনা: মানসিক নেয়ামতসমূহ
দ্বিতীয় আলোচনা: দৈহিক নেয়ামতসমূহ
দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ: জাহান্নামীদের আযাব
প্রথম আলোচনা: মানসিক শাস্তি
দ্বিতীয় আলোচনা: দৈহিক শাস্তি
তৃতীয় অধ্যায়: জান্নাতের পথ ও জাহান্নাম থেকে বাঁচার উপায়
প্রথম পরিচ্ছেদ: জান্নাতের পথ ও জান্নাতে প্রবেশের কারণসমূহ
প্রথম আলোচনা: জান্নাতে প্রবেশের কারণসমূহ
দ্বিতীয় আলোচনা: জান্নাতে প্রবেশ করা আল্লাহর দয়া দ্বারা, আমল দ্বারা নয়।
দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ: জাহান্নামের পথ জাহান্নাম থেকে বাঁচার উপায়।
প্রথম আলোচনা: যে সব কারণসমূহ জাহান্নামের দিকে নিয়ে যায়।
দ্বিতীয় আলোচনা: আমরা আমাদের নিজেদের এবং আমাদের পরিবার-পরিজনদের জাহান্নাম থেকে বাঁচাবো।
সকল প্রশংসা কেবলই আল্লাহর যিনি আমাকে এ গবেষণা কাজটি সম্পন্ন করতে উল্লেখযোগ্য কোন বিপদের সম্মুখীন করেননি। বরং এ বিষয়ে গবেষণাটি ছিল, উপকারী ও উপযোগী। আল্লাহর প্রশংসা ও শুকরিয়া আদায় করার পর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি আমার সম্মানিত ওস্তাদের; যার নাম মুহাম্মদ আস-সুলাইম। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাকে দুনিয়া ও আখিরাতে উত্তম প্রতিদান দান করুন। তিনি এ গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা কাজটি সম্পন্ন করতে গিয়ে আমাকে যথেষ্ট সহযোগিতা করেছেন। আল্লাহ সর্বজ্ঞ। আর সালাত ও সালাম নাযিল হোক নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর, তার পরিবার পরিজনের উপর ও তার সাহাবীদের উপর।
গবেষক
আব্দুর রহমান ইব্ন সাঈদ আল কাহতানী
[১৪২২ হিজরি সনের প্রথম দিকে গবেষণাটি সম্পন্ন করেন]
প্রথম অধ্যায়
জান্নাত ও জাহান্নামের পরিচিতি এবং নামসমূহের আলোচনা
প্রথম পরিচ্ছেদ: জান্নাতের পরিচিতি ও জান্নাতের নামসমূহ:
জান্নাত: জান্নাত শব্দের আভিধানিক অর্থ বাগান। এ শব্দ থেকেই জিনান বলা হয়ে থাকে। আর আরবরা খেজুর গাছকেও জান্নাত বলে আখ্যায়িত করত([1])।
মুখতার আল-কামুসে জান্নাত শব্দের অর্থ: জান্নাত অর্থ- খেজুর গাছ, বিভিন্ন ধরনের গাছ বিশিষ্ট বাগান। এর বহুবচন জিনানুন([2])।
পরিভাষায় জান্নাতের সংজ্ঞা: এটি সেই ঘরের একটি ব্যাপক নাম [যে ঘরকে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তার অনুসারীদের জন্য তৈরি করে রেখেছেন] যাতে রয়েছে অফুরন্ত ও অসংখ্য নেয়ামত, অনাবিল আনন্দ ও প্রশান্তি, অন্তহীন খুশি, আনন্দ ও চিরস্থায়ী শান্তি ([3])।
জান্নাতের নামসমূহ:
জান্নাতের নাম, অর্থ ও শব্দের উৎপত্তি সম্পর্কে আল্লামা ইবনুল কাইয়েম রহ. বলেন, জান্নাতের সিফাতসমূহের বিবেচনায় জান্নাতের নাম একাধিক, কিন্তু জান্নাত একাধিক নয় জান্নাত একটিই। সুতরাং, এ দিকটির বিবেচনায় একাধিক নামের অর্থ অভিন্ন আর জান্নাতের সিফাতসমূহের দিক বিবেচনায় প্রতিটি নামের অর্থ ভিন্ন। অনুরূপভাবে আল্লাহর নাম, আল্লাহর কিতাবের নাম, আল্লাহর রাসূলদের নাম, আখিরাতের নাম ও জাহান্নামের নাম ইত্যাদি([4])। [এগুলো সবই এক, কিন্তু সিফাত একাধিক হওয়ার কারণে এগুলোর নাম একাধিক]
জান্নাতের নামসমূহ:
১- জান্নাত: আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এরশাদ করেন,
﴿ٱدۡخُلُواْ ٱلۡجَنَّةَ بِمَا كُنتُمۡ تَعۡمَلُونَ ٣٢﴾ [النحل: ٣٢]
“জান্নাতে প্রবেশ কর, যে আমল তোমরা করতে তার কারণে”[5]।
২- দারুস-সালাম: আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এরশাদ করেন,
﴿وَٱللَّهُ يَدۡعُوٓاْ إِلَىٰ دَارِ ٱلسَّلَٰمِ وَيَهۡدِي مَن يَشَآءُ إِلَىٰ صِرَٰطٖ مُّسۡتَقِيمٖ ٢٥﴾ [يونس: ٢٥]
“আর আল্লাহ শান্তির আবাসের দিকে আহ্বান করেন এবং যাকে ইচ্ছা হিদায়াত দেন সরল পথের দিকে”([6]) আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আরও এরশাদ করেন,
﴿۞لَهُمۡ دَارُ ٱلسَّلَٰمِ عِندَ رَبِّهِمۡۖ وَهُوَ وَلِيُّهُم بِمَا كَانُواْ يَعۡمَلُونَ١٢٧ ﴾ [الانعام: ١٢٧]
“তাদের জন্য তাদের রবের নিকট রয়েছে শান্তির আবাস এবং তারা যে আমল করত, তার কারণে তিনি তাদের অভিভাবক”।([7]) [যাবতীয় সকল বিপদ আপদ হতে এটি একটি শান্তি ও নিরাপত্তার ঘর([8]).।]
৩- দারুল খুলুদ ([9]): আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন,
﴿ ٱدۡخُلُوهَا بِسَلَٰمٖۖ ذَٰلِكَ يَوۡمُ ٱلۡخُلُودِ ٣٤ ﴾ [ق: ٣٤]
“তোমরা তাতে শান্তির সাথে প্রবেশ কর। এটাই স্থায়িত্বের দিন”[10]।
৪- দারুল মুকামাহ: আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন,
﴿ ٱلَّذِيٓ أَحَلَّنَا دَارَ ٱلۡمُقَامَةِ مِن فَضۡلِهِۦ لَا يَمَسُّنَا فِيهَا نَصَبٞ وَلَا يَمَسُّنَا فِيهَا لُغُوبٞ ٣٥ ﴾ [فاطر: ٣٥]
‘যিনি নিজ অনুগ্রহে আমাদেরকে স্থায়ী নিবাসে স্থান দিয়েছেন, যেখানে কোন কষ্ট আমাদেরকে স্পর্শ করে না এবং যেখানে কোন ক্লান্তিও আমাদেরকে স্পর্শ করে না [11].’।
৫- জান্নাতুল মাওয়া: আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন,
﴿عِندَهَا جَنَّةُ ٱلۡمَأۡوَىٰٓ ١٥﴾ [النجم: ١٥]
“যার কাছে জান্নাতুল মা’ওয়া অবস্থিত”[12] ।
৬- জান্নাতু আদন [13]: আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন,
﴿جَنَّٰتِ عَدۡنٍ ٱلَّتِي وَعَدَ ٱلرَّحۡمَٰنُ عِبَادَهُۥ بِٱلۡغَيۡبِۚ إِنَّهُۥ كَانَ وَعۡدُهُۥ مَأۡتِيّٗا ٦١﴾ [مريم: ٦١] .
“তা চিরস্থায়ী জান্নাত, যার ওয়াদা পরম করুণাময় তাঁর বান্দাদের দিয়েছেন গায়েবের সাথে। নিশ্চয় তাঁর ওয়াদা-কৃত বিষয় অবশ্যম্ভাবী”[14]।
৭- আল ফিরদাউস: আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এরশাদ করেন,
﴿ إِنَّ ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ وَعَمِلُواْ ٱلصَّٰلِحَٰتِ كَانَتۡ لَهُمۡ جَنَّٰتُ ٱلۡفِرۡدَوۡسِ نُزُلًا ١٠٧﴾ [الكهف: ١٠٧]
“নিশ্চয় যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকাজ করেছে, তাদের মেহমানদারির জন্য রয়েছে জান্নাতুল ফেরদাউস” [15], [16] ।
৮- জান্নাতুন নাঈম: আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এরশাদ করেন,
﴿ إِنَّ ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ وَعَمِلُواْ ٱلصَّٰلِحَٰتِ لَهُمۡ جَنَّٰتُ ٱلنَّعِيمِ ٨﴾ [لقمان: ٨]
“নিশ্চয় যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে তাদের জন্য রয়েছে নিআমতপূর্ণ জান্নাত;”
৯- আল মাকামুল আমীন: আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এরশাদ করেন,
﴿إِنَّ ٱلۡمُتَّقِينَ فِي مَقَامٍ أَمِينٖ ٥١﴾ [الدخان: ٥١] ([17]) ([18]).
“নিশ্চয় মুত্তাকীরা থাকবে নিরাপদ স্থানে”,
১০- মাকয়াদু সিদকীন: আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এরশাদ করেন,
﴿فِي مَقۡعَدِ صِدۡقٍ عِندَ مَلِيكٖ مُّقۡتَدِرِۢ ٥٥﴾ [القمر: ٥٥]
“যথাযোগ্য আসনে, সর্বশক্তিমান মহা অধিপতির নিকটে”([19]).।
দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ: জাহান্নামের সংজ্ঞা ও নামসমূহ:
অভিধানে نار – (নার) শব্দের অর্থ: আগুন যা মানুষ দেখতে পায়, প্রচণ্ড আগুনের তাপ অথবা এমন তাপ যা জ্বালিয়ে দেয়। আল্লাহর বাণীতে উল্লেখিত আগুনকেও نار বলা হয়ে থাকে। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন,
﴿ٱلنَّارُ وَعَدَهَا ٱللَّهُ ٱلَّذِينَ كَفَرُواْۖ ٧٢﴾ [الحج: ٧٢]
“সেটা আগুন। যারা কুফরী করে, আল্লাহ তাদেরকে এর ওয়াদা দিয়েছেন”([20]) ।
আর نار শব্দের বহু বচন أنْوُرٌ - نيران - أنيار ([21]).
আর পরিভাষায় نار শব্দের অর্থ: যারা আল্লাহর নাফরমানি করে তাদের জন্য যে আগুন তৈরি করে রাখা হয়েছে, তাকে نار বা জাহান্নাম বলা হয়। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এরশাদ করেন,
﴿وَٱلَّذِينَ كَفَرُواْ وَكَذَّبُواْ بَِٔايَٰتِنَآ أُوْلَٰٓئِكَ أَصۡحَٰبُ ٱلنَّارِۖ هُمۡ فِيهَا خَٰلِدُونَ ٣٩﴾ [البقرة: ٣٩]
“আর যারা কুফরী করেছে এবং আমার আয়াতসমূহকে অস্বীকার করেছে, তারাই আগুনের অধিবাসী। তারা সেখানে স্থায়ী হবে”[22]।
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আরও বলেন,
﴿ إِنَّ ٱللَّهَ لَعَنَ ٱلۡكَٰفِرِينَ وَأَعَدَّ لَهُمۡ سَعِيرًا ٦٤ ﴾ [الاحزاب: ٦٤] .
“নিশ্চয় আল্লাহ কাফিরদেরকে লা‘নত করেছেন এবং তাদের জন্য জ্বলন্ত আগুন প্রস্তুত রেখেছেন”([23])।
জাহান্নামের নামসমূহ: [আল্লাহর নিকট আমরা জাহান্নাম হতে আশ্রয় চাই]
১- নার: আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এরশাদ করেন,
﴿ٱلنَّارُ وَعَدَهَا ٱللَّهُ ٱلَّذِينَ كَفَرُواْۖ ٧٢﴾ [الحج: ٧٢]
“সেটা আগুন। যারা কুফরী করে, আল্লাহ তাদেরকে এর ওয়াদা দিয়েছেন” ([24]).।
২- জাহান্নাম: আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এরশাদ করেন,
﴿ إِنَّ جَهَنَّمَ كَانَتۡ مِرۡصَادٗا ٢١ ﴾ [النبا: ٢١]
“নিশ্চয় জাহান্নাম গোপন ফাঁদ”([25]).।
৩- জাহীম: আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এরশাদ করেন,
﴿ وَبُرِّزَتِ ٱلۡجَحِيمُ لِمَن يَرَىٰ ٣٦ ﴾ [النازعات: ٣٦]
“আর জাহান্নামকে প্রকাশ করা হবে তার জন্য যে দেখতে পায়” ([26]).।
৪-সায়ীর: আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এরশাদ করেন,
﴿فَرِيقٞ فِي ٱلۡجَنَّةِ وَفَرِيقٞ فِي ٱلسَّعِيرِ ٧ ﴾ [الشورى: ٧]
“একদল থাকবে জান্নাতে আরেক দল জ্বলন্ত আগুনে” [27]।
৫-সাকার: আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এরশাদ করেন,
﴿ وَمَآ أَدۡرَىٰكَ مَا سَقَرُ ٢٧ لَا تُبۡقِي وَلَا تَذَرُ ٢٨ ﴾ [المدثر: ٢٧، ٢٨]
“কিসে তোমাকে জানাবে জাহান্নামের আগুন কী? এটা অবশিষ্টও রাখবে না এবং ছেড়েও দেবে না” [28]।
৬- হুতামা: আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এরশাদ করেন,
﴿ كَلَّاۖ لَيُنۢبَذَنَّ فِي ٱلۡحُطَمَةِ ٤ ﴾ [الهمزة: ٤]
“কখনো নয়, অবশ্যই সে নিক্ষিপ্ত হবে হুতামা’য়”[29]।
৭- হাবিয়া: আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এরশাদ করেন,
﴿وَأَمَّا مَنۡ خَفَّتۡ مَوَٰزِينُهُۥ ٨ فَأُمُّهُۥ هَاوِيَةٞ ٩ وَمَآ أَدۡرَىٰكَ مَا هِيَهۡ ١٠ نَارٌ حَامِيَةُۢ ١١﴾ [القارعة: ٨، ١١]
“আর যার পাল্লা হালকা হবে, তার আবাস হবে হাবিয়া। আর তোমাকে কিসে জানাবে হাবিয়া কি? প্রজ্বলিত অগ্নি”[30]। [31]
দ্বিতীয় অধ্যায়
জান্নাত ও জাহান্নাম বর্তমান আছে কিনা? এবং কোথায় আছে?
প্রথম পরিচ্ছেদ: জান্নাত জাহান্নাম বিদ্যমান থাকার প্রমাণ
আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ হতে বর্ণিত, মিরাজের ঘটনায় তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ হতে বর্ণনা করেন।
«ثم انطلق بي جبريل حتى انتهى بي إلى سدرة المنتهى، فغشيها ألوانٌ لا أدري ما هي، قال: ثم دخلت الجنة، فإذا فيها جنابذ([32]) اللؤلؤ، وإذا ترابها المسك » ([33]).
“তারপর জিবরীল আ. আমাকে নিয়ে চলতে থাকে। সিদরাতুল মুনতাহা পর্যন্ত পৌঁছলে তাকে কতক রঙ এসে ডেকে ফেলে। আমি বুঝতে পারিনি এটি কি? তিনি বলেন, ‘তারপর আমি জান্নাতে প্রবেশ করলাম’। জান্নাতকে আমি দেখতে পেলাম, মণি-মুক্তার গম্বুজ। আরও দেখতে পেলাম, জান্নাতের মাটি হল, মিসক”।
وعن أبي هريرة رضي الله عنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : «لـَمّا خلق الله الجنة والنار أرسل جبرائيل إلى الجنة، فقال: انظر إليها، وإلى ما أعددت لأهلها فيها، فجاء فنظر إليها، وإلى ما أعد الله لأهلها فيها... ثم قال: اذهب إلى النار فانظر إليها، وإلى ما أعددت لأهلها فيها، فنظر إليها فإذا هي يركب بعضها بعضاً.. »
আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বলেন, “আল্লাহ রাব্বুল আলামীন জান্নাত ও জাহান্নাম সৃষ্টি করার পর জিবরীল আলাইহিস সালামকে জান্নাতে পাঠান এবং বলেন, তুমি জান্নাতের দিকে তাকাও এবং দেখ আমি জান্নাতে জান্নাতিদের জন্য কি কি তৈরি করে রেখেছি। তারপর সে জান্নাতে প্রবেশ করে এবং আল্লাহ রাব্বুল আলামীন জান্নাতিদের জন্য কি কি তৈরি করে রেখেছেন তা দেখেন। তারপর আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এরশাদ করেন, তুমি এখন জাহান্নামে প্রবেশ কর, তারপর সে জাহান্নামে প্রবেশ করল, আল্লাহ বললেন, দেখ আমি জাহান্নামীদের জন্য কি কি তৈরি করে রেখেছি। তারপর সে জাহান্নামের দিকে তাকিয়ে দেখে জাহান্নামের এক অংশ অপর অংশের উপর দাপাদাপি করছে” [34]।
ইমাম তাহাবী রহ. বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, জান্নাত ও জাহান্নাম আল্লাহর মাখলুক, কখনো তা ধ্বংস হবে না এবং ক্ষয় হবে না। কারণ, আল্লাহ মাখলুককে সৃষ্টির পূর্বে জান্নাত ও জাহান্নাম সৃষ্টি করেন। আর জান্নাত ও জাহান্নাম উভয়টির জন্য তিনি মাখলুক হতে অধিবাসী সৃষ্টি করেন। যাদের তিনি জান্নাত দেবেন তা হবে তার পক্ষ হতে তাদের প্রতি অনুগ্রহ। আর যাদের তিনি জাহান্নামে দেবেন তা হবে তার প্রতি আল্লাহর পক্ষ হতে ইনসাফ। প্রত্যেকেই তার সুবিধা অনুযায়ী আমল করবে এবং তাকে যে জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে সে দিকে ধাবিত হবে। আর ভালো ও মন্দ বান্দার উপর নির্ধারিত ([35]).।
বর্তমানের জান্নাত বিদ্যমান থাকার উপর হাদিস দ্বারা প্রমাণ:
কা’ব ইবন মালেক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বলেন,
« إنما نسمة المؤمن طائرٌ يعْلُقُ في شجر الجنة، حتى يرجعه الله تبارك وتعالى إلى جسده يوم يبعثه »
“মুমিনের আত্মা জান্নাতে পাখির মত, জান্নাতের গাছের সাথে কিয়ামতের দিন পর্যন্ত ঝুলতে থাকবে। তারপর যখন কিয়ামতের দিন সমগ্র মানুষকে পুনরায় জীবন দান করা হবে, তখন আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাদের রুহকে তাদের দেহে আবার ফেরত দেবেন”[36]।[37]
দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ: জান্নাত ও জাহান্নামের অবস্থান:
জান্নাতের অবস্থান: আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন,
﴿كَلَّآ إِنَّ كِتَٰبَ ٱلۡأَبۡرَارِ لَفِي عِلِّيِّينَ ١٨ وَمَآ أَدۡرَىٰكَ مَا عِلِّيُّونَ ١٩﴾ [المطففين: ١٨، ١٩]
“কখনো নয়, নিশ্চয় নেককার লোকদের আমলনামা থাকবে ইল্লিয়্যীনে । কিসে তোমাকে জানাবে ‘ইল্লিয়্যীন’ কী” ([38])?
আব্দুল্লাহ ইবন্ আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ বলেন, ‘ইল্লিয়্যীন’ অর্থ জান্নাত, অথবা সপ্তম আকাশে আরশের নিচে অবস্থিত একটি স্থান([39])।
ইমাম ইবন্ কাসীর রহ. আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, ইল্লিয়্যিন শব্দটি ‘উলু শব্দ হতে নির্গত। যখন কোন বস্তু উপরে অবস্থান করে, তখন তার মর্যাদা বৃদ্ধি পায় এবং তার মহত্ব বাড়তে থাকে। এ কারণেই আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তার বড়ত্ব ও মহত্ব বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন,
﴿وَمَآ أَدۡرَىٰكَ مَا عِلِّيُّونَ ١٩﴾ [المطففين: ١٩]
“কিসে তোমাকে জানাবে ‘ইল্লিয়্যীন’ কী”?([40])
ইমাম ইবন্ কাসির রহ. আল্লাহর বাণী-
﴿وَفِي ٱلسَّمَآءِ رِزۡقُكُمۡ وَمَا تُوعَدُونَ ٢٢﴾ [الذاريات: ٢٢]
“আকাশে রয়েছে তোমাদের রিযিক ও প্রতিশ্রুত সব কিছু” ([41]) এর তাফসীরে বলেন, এখানে তোমাদের রিযিক অর্থ বৃষ্টি আর তোমাদের যা প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে, তার অর্থ হল, জান্নাত([42]), ([43])।
জাহান্নামের স্থান:
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন,
﴿ كَلَّآ إِنَّ كِتَٰبَ ٱلۡفُجَّارِ لَفِي سِجِّينٖ ٧ وَمَآ أَدۡرَىٰكَ مَا سِجِّينٞ ٨ كِتَٰبٞ مَّرۡقُومٞ ٩ ﴾ [المطففين: ٧، ٩]
“কখনো নয়, নিশ্চয় পাপাচারীদের ‘আমলনামা সিজ্জীনে। কিসে তোমাকে জানাবে ‘সিজ্জীন’ কী? লিখিত কিতাব”। এ বিষয়ে ইমাম ইবনে কাসীর রহ., ইমাম বগবী রহ. ও ইমাম ইবনে রজব রহ. একাধিক হাদিস উল্লেখ করেন, তাতে তিনি বলেন, সিজ্জীন হল, সপ্ত যমীনের নিচে। অর্থাৎ, যেমনি-ভাবে জান্নাত সাত আসমানের উপরে অনুরূপভাবে জাহান্নাম সপ্ত যমীনের নীচে একটি স্থান([44])।
» « اللهم إنا نسألك الجنة، ونعوذ بك من النار.
[“হে আল্লাহ আমরা তোমার নিকট জান্নাত চাই এবং জাহান্নামের আগুন থেকে আশ্রয় চাই”]([45])।
দ্বিতীয় অধ্যায়:
জান্নাতীদের নেয়ামত ও জাহান্নামীদের আযাবের বর্ণনা
প্রথম পরিচ্ছেদ: জান্নাতীদের নেয়ামতসমূহ।
প্রথম আলোচনা- জান্নাতীদের মানসিক শান্তি
দ্বিতীয় আলোচনা- জান্নাতীদের দৈহিক শান্তি।
দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ: জাহান্নামীদের আযাব বা শাস্তি
প্রথম আলোচনা: জাহান্নামীদের মানসিক আযাব বা শাস্তি
দ্বিতীয় আলোচনা: জাহান্নামীদের দৈহিক আযাব বা শাস্তি।
প্রথম পরিচ্ছেদ:
জান্নাতীদের নেয়ামতসমূহ
প্রথম প্রকার নেয়ামত: মনস্তাত্বিক নেয়ামত
আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বলেন,
«إن الله تبارك وتعالى يقول لأهل الجنة: يا أهل الجنة! فيقولون: لبيك ربنا وسعديك، والخير في يديك، فيقول: هل رضيتم؟! فيقولون: وما لنا لا نرضى يا ربِّ، وقد أعطيتنا ما لم تُعطِ أحداً من خلقك، فيقول: ألا أعطيكم أفضل من ذلك؟! فيقولون: وأي شيء أفضل من ذلك؟ فيقول: أُحلُّ عليكم رضواني، فلا أسخط عليكم بعده أبداً»
“আল্লাহ রাব্বুল আলামীন জান্নাতীদের ডেকে বলবেন, হে জান্নাতবাসী! উত্তরে তারা বলবেন: হে রব, ‘আমরা তোমার দরবারে উপস্থিত, আমরা তোমার নিকট সফলতা কামনা করছি, যাবতীয় কল্যাণ তোমারই হাতে’ তখন আল্লাহ তাদের বলবেন, তোমরা কি আমার প্রতি রাজি-খুশি? তারা বলবে, হে আমাদের রব রাজি-খুশি না হওয়ার কি আছে? তুমি আমাদের এমন সবকিছু দিয়েছ, যা তুমি তোমার আর কোন মাখলুককে দাওনি। তারপর আল্লাহ বলবেন, আমি কি তোমাদের এর চেয়েও উত্তম কিছু দান করব? তখন তারা বলবে, কোন জিনিস এর চেয়ে উত্তম? তখন আল্লাহ ঘোষণা দেবেন, “তোমাদের প্রতি আমার সন্তুষ্টি অবধারিত, আমি আর কখনো তোমাদের প্রতি অসন্তুষ্ট হব না” [46], [47]।
জান্নাতীদের দ্বিতীয় প্রকার নেয়ামত: মনস্তাত্বিক নেয়ামত ও শান্তি
এক- জান্নাতের নহরসমূহ:
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন,
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন,
﴿مَّثَلُ ٱلۡجَنَّةِ ٱلَّتِي وُعِدَ ٱلۡمُتَّقُونَۖ فِيهَآ أَنۡهَٰرٞ مِّن مَّآءٍ غَيۡرِ ءَاسِنٖ وَأَنۡهَٰرٞ مِّن لَّبَنٖ لَّمۡ يَتَغَيَّرۡ طَعۡمُهُۥ وَأَنۡهَٰرٞ مِّنۡ خَمۡرٖ لَّذَّةٖ لِّلشَّٰرِبِينَ وَأَنۡهَٰرٞ مِّنۡ عَسَلٖ مُّصَفّٗىۖ وَلَهُمۡ فِيهَا مِن كُلِّ ٱلثَّمَرَٰتِ وَمَغۡفِرَةٞ مِّن رَّبِّهِمۡۖ كَمَنۡ هُوَ خَٰلِدٞ فِي ٱلنَّارِ وَسُقُواْ مَآءً حَمِيمٗا فَقَطَّعَ أَمۡعَآءَهُمۡ ١٥﴾ [محمد: ١٥]
“মুত্তাকীদেরকে যে জান্নাতের ওয়াদা দেয়া হয়েছে তার দৃষ্টান্ত হল, তাতে রয়েছে নির্মল পানির নহরসমূহ, দুধের ঝর্ণাধারা, যার স্বাদ পরিবর্তিত হয়নি, পানকারীদের জন্য সুস্বাদু সুরার নহরসমূহ এবং আছে পরিশোধিত মধুর ঝর্ণাধারা। তথায় তাদের জন্য থাকবে সব ধরনের ফলমূল আর তাদের রবের পক্ষ থেকে ক্ষমা। তারা কি তাদের ন্যায়, যারা জাহান্নামে স্থায়ী হবে এবং তাদেরকে ফুটন্ত পানি পান করানো হবে ফলে তা তাদের নাড়িভুঁড়ি ছিন্নÑবিচ্ছিন্ন করে দেবে”[48]?
আয়াতের তাফসীর: মুত্তাকীদেরকে যে জান্নাতের ওয়াদা দেয়া হয়েছে তার দৃষ্টান্ত অর্থাৎ গুণাগুণ হল- তাতে রয়েছে নির্মল পানির নহরসমূহ, দুধের ঝর্ণাধারা, যার স্বাদ পরিবর্তিত হয়নি। এ কথার অর্থ, পঁচে গলে যার স্বাদ পরিবর্তন হয়নি এবং দুর্গন্ধ ছড়ায়নি।
‘এবং আছে পরিশোধিত মধুর ঝর্ণাধারা’ তাকে পা পৃষ্ট করেনি এবং ইতঃপূর্বে হাত বদল হয়নি। ‘তথায় তাদের জন্য থাকবে সব ধরনের ফলমূল আর তাদের রবের পক্ষ থেকে ক্ষমা। তারা কি তাদের ন্যায়, যারা জাহান্নামে স্থায়ী হবে’ অর্থাৎ যারা এ ধরনের নেয়ামতসমূহের মধ্যে থাকবে তারা কি ওদের মত হবে, যারা চিরদিন জাহান্নামে থাকবে?([49]) ,([50])।
দুই, তিন- ‘হুর’ তথা সুন্দরী নারী ও জান্নাতীদের বাসস্থান:
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন,
﴿فِيهِنَّ قَٰصِرَٰتُ ٱلطَّرۡفِ لَمۡ يَطۡمِثۡهُنَّ إِنسٞ قَبۡلَهُمۡ وَلَا جَآنّٞ ٥٦ ﴾ [الرحمن: ٥٦]
“সেখানে থাকবে এমন নারীগণ যাদের দৃষ্টি সীমাবদ্ধ থাকবে স্বামীর প্রতি, যাদেরকে ইতঃপূর্বে স্পর্শ করেনি কোন মানুষ আর না কোন জিন”। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন,
﴿وَحُورٌ عِينٞ ٢٢ كَأَمۡثَٰلِ ٱللُّؤۡلُوِٕ ٱلۡمَكۡنُونِ ٢٣ جَزَآءَۢ بِمَا كَانُواْ يَعۡمَلُونَ ٢٤ ﴾ [الواقعة: ٢٢، ٢٤]
“আর থাকবে ডাগর-চোখা হুর, যেন তারা সুরক্ষিত মুক্তা, তারা যে আমল করত তার প্রতিদানস্বরূপ”। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আরও বলেন,
﴿مُتَّكِِٔينَ عَلَىٰ سُرُرٖ مَّصۡفُوفَةٖۖ وَزَوَّجۡنَٰهُم بِحُورٍ عِينٖ ٢٠ ﴾ [الطور: ٢٠]
“সারিবদ্ধ পালঙ্কে তারা হেলান দিয়ে বসবে; আর আমি তাদেরকে মিলায়ে দেব ডাগর-চোখা হুর-এর সাথে”। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বলেন,
«في الجنة خيمة من لؤلؤة مجوفة عرضها ستون ميلاً، في كل زاوية منها أهل ما يرون الآخرين، يطوف عليهم المؤمن »
“জান্নাতের মধ্যে মর্মর পাথরে সুশোভিত গোলাকার তাঁবু রয়েছে যার প্রস্থ ষাট মাইল। তাঁবুগুলোর প্রতিটি কোণে কিছু লোক রয়েছে, তার এক কোণে যারা থাকবে তারা অপর কোণের লোকদের দেখতে পাবে না। মুমিনরা তাদের উপর ঘুরে বেড়াবে ([51])।
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন জান্নাতীতের বাসস্থান ও জান্নাতের রুম সমূহের বর্ণনা দিয়ে বলেন,
﴿لَٰكِنِ ٱلَّذِينَ ٱتَّقَوۡاْ رَبَّهُمۡ لَهُمۡ غُرَفٞ مِّن فَوۡقِهَا غُرَفٞ مَّبۡنِيَّةٞ تَجۡرِي مِن تَحۡتِهَا ٱلۡأَنۡهَٰرُۖ وَعۡدَ ٱللَّهِ لَا يُخۡلِفُ ٱللَّهُ ٱلۡمِيعَادَ ٢٠﴾ [الزمر: ٢٠]
“কিন্তু যারা নিজদের রবকে ভয় করে তাদের জন্য রয়েছে কক্ষসমূহ যার উপর নির্মিত আছে আরও কক্ষ। তার নিচ দিয়ে নদী প্রবাহিত। এটি আল্লাহর ওয়াদা; আল্লাহ ওয়াদা খেলাফ করেন না” [52]।
আল্লামা ইব্ন কাসীর রহ. বলেন, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তার নেককার বান্দাদের বিষয়ে বর্ণনা দিয়ে বলেন, তাদের জন্য রয়েছে, জান্নাতে কামরাসমূহ। অর্থাৎ উঁচু উঁচু প্রাসাদ। مِّن فَوْقِهَا غُرَفٌ مَّبْنِيَّةٌ، ‘যার উপর নির্মিত আছে আরও কক্ষ’ অর্থাৎ, এক তলার উপর আরেক তলা, অত্যন্ত মজবুত, সু-সজ্জিত ও সু-উচ্চ কামরা সমূহ [53]।
আবু মালেক আশয়ারী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বলেন,
«إن في الجنة غرفاً يُرى ظاهرُها من باطنها، وباطنُها من ظاهرها، أعدّها الله تعالى لمن أطعم الطعام، وألان الكلام، وتابع الصيام، وأفشى السلام، وصلّى بالليل والناس نيام »
জান্নাতে এমন কতক কামরা আছে, যার বাহির থেকে ভিতর এবং ভিতর থেকে বাহির সবকিছু দেখা যায়। এ কামরাগুলো আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তৈরি করেছেন, তাদের জন্য যারা মানুষকে খানা খাওয়ায়, মানুষের সাথে ভালো ব্যবহার করে, নিয়মিত সাওমের পাবন্দি করে, সালামের প্রসার করে এবং রাতে মানুষ যখন ঘুমায়, তখন সালাত আদায় করে [54]।
আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, তারা রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’কে জান্নাতের ঘরসমূহ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে উত্তরে তিনি বলেন,
«لَبِنةٌ من فضة، ولَبِنةٌ من ذهب، ومِلاطها([55]) المسك الأذفرُ، وحصباؤها اللؤلؤُ والياقوتُ، وتُربَتُها الزعفران، من يدخلها: ينعم ولا يبأس، ويخلدُ ولا يموت، لا تبلى ثيابهم، ولا يفنى شبابهم »
“জান্নাতের একটি ইট রুপার অপরটি স্বর্ণের আর তার আস্তর হল, মিসক। আর তার সূরকী হল, মুণি মুক্তার পাথর। জান্নাতের মাটি হল, যাফরান। যে ব্যক্তি জান্নাতে একবার প্রবেশ করবে, সে জান্নাতের নেয়ামত ভোগ করতে থাকবে কখনো সে হতাশ হবে না, জান্নাতে চির কাল থাকবে তাতে সে কখনো মরবে না, তাদের কাপড় কখনো পুরাতন হবে না এবং তাদের যৌবন কখনো শেষ হবে না” [56]।
আল্লামা ইবনুল কাইয়্যেম রহ. তার ‘আন-নুনিয়া’ নামক বিশিষ্ট কাব্যগ্রন্থে জান্নাতের আসনসমূহ ও তার সৌন্দর্যের বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন,
“তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি সুসংহত ও মজবুত কাবা যাকে পাথর ও খুঁটির দ্বারা আবৃত করা হয়েছে তার তাওয়াফ করে, সে সর্বদা সাফা মারওয়া ওয়াদিয়ে মুহাস্সার ও দুটি সবুজ রেখার মাঝে দৌড়তে থাকে। সে মিনার নিকটে যাওয়ার জন্য চেষ্টা করছে কিন্তু খাইফ তাকে নিকটে যাওয়া থেকে প্রতিরোধ করছে”।
তিনি আরও বলেন, “যারা তাদের চক্ষুকে বিরত রাখে, তারা তাদের প্রিয়া ছাড়া অন্য কোন মাহবুবকে তালাশ করে না। তাদের চোখ তাদের প্রিয় মানুষটির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। অন্য কোন যুবকের প্রতি তার দৃষ্টি যায় না”।
তিনি আরও বলেন, “ঐ লোক তার চোখ বিরত রাখার নয়, যে দূর্বল। সুতরাং তারা দুই প্রকার। হে চক্ষু উন্মুক্তকারী ব্যক্তি, অবশ্যই পরবর্তীতে শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে। সে অবশ্যই সৌন্দর্য ও অনুগ্রহ উভয়টি থেকে খালি হবে।
তিনি আরও বলেন, “হে জ্ঞানীজন! তুমি জান্নাতের আসনসমূহের বর্ণনা শোন! তারপর তুমি তোমার জন্য ডাগর চোখ বিশিষ্ট নারী যারা সৌন্দর্য ও সৃষ্টির দিক বিবেচনায় পরিপূর্ণ এবং সর্বাধিক সুন্দর নারী হিসেবে পরিগণিত”।([57])
ব্যাখ্যা দানকারী বলেন, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন,
﴿وَزَوَّجۡنَٰهُم بِحُورٍ عِينٖ ٢٠﴾ [الطور: ٢٠]
“আর আমি তাদেরকে মিলায়ে দেব ডাগর-চোখা হউর-এর সাথে”[58]।
আল্লামা মুজাহিদ বলেন, الحور শব্দটি حوراء শব্দের বহুবচন। ‘হুর’ বলা হয়-কুমারী নারী, ধবধবে সাদা, কালো চোখ বিশিষ্ট সুন্দরী নারী যাদের দিকে তাকালে তাদের দেহের আকৃতি ও দৈহিক সৌন্দর্য দেখে চক্ষুদ্বয় অভিভূত হয়।
কিন্তু বিশুদ্ধ হল, الحور শব্দটি নির্গত হল, الحور في العين، হতে। অর্থাৎ, কঠিন ধবধবে সাদা যার মধ্যে রয়েছে, কঠিন কালো। মোট কথা তার মধ্যে দুটি অর্থই বিদ্যমান([59]) ([60]).।
চার, পাঁচ: জান্নাতীদের খাদ্য ও পানীয়
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন,
﴿وَبَشِّرِ ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ وَعَمِلُواْ ٱلصَّٰلِحَٰتِ أَنَّ لَهُمۡ جَنَّٰتٖ تَجۡرِي مِن تَحۡتِهَا ٱلۡأَنۡهَٰرُۖ كُلَّمَا رُزِقُواْ مِنۡهَا مِن ثَمَرَةٖ رِّزۡقٗا قَالُواْ هَٰذَا ٱلَّذِي رُزِقۡنَا مِن قَبۡلُۖ وَأُتُواْ بِهِۦ مُتَشَٰبِهٗاۖ وَلَهُمۡ فِيهَآ أَزۡوَٰجٞ مُّطَهَّرَةٞۖ وَهُمۡ فِيهَا خَٰلِدُونَ ٢٥﴾ [البقرة: ٢٥]
“আর যারা ঈমান এনেছে এবং নেক কাজ করেছে তুমি তাদেরকে সুসংবাদ দাও যে, তাদের জন্য রয়েছে জান্নাতসমূহ, যার তলদেশ দিয়ে প্রবাহিত হবে নদীসমূহ। যখনই তাদেরকে জান্নাত থেকে কোন ফল খেতে দেয়া হবে, তারা বলবে, ‘এটা তো পূর্বে আমাদেরকে খেতে দেয়া হয়েছিল’। আর তাদেরকে তা দেয়া হবে সাদৃশ্যপূর্ণ করে এবং তাদের জন্য তাতে থাকবে পূতঃপবিত্র স্ত্রীগণ এবং তারা সেখানে হবে স্থায়ী”[61]। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আরও বলেন,
﴿إِنَّ ٱلۡمُتَّقِينَ فِي ظِلَٰلٖ وَعُيُونٖ ٤١ وَفَوَٰكِهَ مِمَّا يَشۡتَهُونَ ٤٢ كُلُواْ وَٱشۡرَبُواْ هَنِيَٓٔۢا بِمَا كُنتُمۡ تَعۡمَلُونَ ٤٣ إِنَّا كَذَٰلِكَ نَجۡزِي ٱلۡمُحۡسِنِينَ ٤٤ ﴾ [المرسلات: ٤١، ٤٤]
“নিশ্চয় মুত্তাকীরা থাকবে ছায়া ও ঝর্ণা-বহুল স্থানে, আর ফলমূল-এর মধ্যে, যা তারা চাইবে। (তাদেরকে বলা হবে) ‘তোমরা যে আমল করতে তার প্রতিদানস্বরূপ তৃপ্তির সাথে পানাহার কর; সৎকর্ম-শীলদের আমরা এমন-ই প্রতিদান দিয়ে থাকি” [62]।
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন,
﴿وَفَٰكِهَةٖ مِّمَّا يَتَخَيَّرُونَ ٢٠ وَلَحۡمِ طَيۡرٖ مِّمَّا يَشۡتَهُونَ ٢١﴾ [الواقعة: ٢٠، ٢١]
“আর (ঘোরাফেরা করবে) তাদের পছন্দমত ফল নিয়ে। আর পাখির গোস্ত নিয়ে, যা তারা কামনা করবে”[63]।
জাবের ইব্ন আব্দুল্লাহ রাদিআল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বলেন,
«يأكل أهل الجنة فيها ويشربون، ولا يتغوّطون، ولا يمتخّطون، ولا يبولون، ولكن طعامهم ذاك جشاء كرشح المسك، يُلهَمون التسبيح والتحميد كما يُلهَمون النَّفَس »
“জান্নাতীরা জান্নাতে খাবে এবং পান করবে, কিন্তু তারা জান্নাতে পেশাব পায়খানা করবে না এবং তাদের নাক দিয়ে কোন সর্দি বের হবে না। তাদের খাদ্যগুলো হবে মিসকের ফোটার মত একটি ঢেকুর মাত্র। তাদের মুখ থেকে তাসবীহ ও তাহমীদ নিশ্বাসের মত বের হতে থাকব[64] ,[65]।
দ্বিতীয় অধ্যায়
জাহান্নামীদের শাস্তি
প্রথম বিষয়: মনস্তাত্বিক শাস্তি বা মানসিক আযাব:
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন,
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন,
﴿وَقَالَ ٱلشَّيۡطَٰنُ لَمَّا قُضِيَ ٱلۡأَمۡرُ إِنَّ ٱللَّهَ وَعَدَكُمۡ وَعۡدَ ٱلۡحَقِّ وَوَعَدتُّكُمۡ فَأَخۡلَفۡتُكُمۡۖ وَمَا كَانَ لِيَ عَلَيۡكُم مِّن سُلۡطَٰنٍ إِلَّآ أَن دَعَوۡتُكُمۡ فَٱسۡتَجَبۡتُمۡ لِيۖ فَلَا تَلُومُونِي وَلُومُوٓاْ أَنفُسَكُمۖ مَّآ أَنَا۠ بِمُصۡرِخِكُمۡ وَمَآ أَنتُم بِمُصۡرِخِيَّ إِنِّي كَفَرۡتُ بِمَآ أَشۡرَكۡتُمُونِ مِن قَبۡلُۗ إِنَّ ٱلظَّٰلِمِينَ لَهُمۡ عَذَابٌ أَلِيمٞ ٢٢﴾ [ابراهيم: ٢٢]
“আর যখন যাবতীয় বিষয়ের ফয়সালা হয়ে যাবে, তখন শয়তান বলবে, ‘নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদেরকে ওয়াদা দিয়েছিলেন সত্য ওয়াদা, তোমাদের উপর আমার কোন আধিপত্য ছিল না, তবে আমিও তোমাদেরকে ওয়াদা দিয়েছিলাম, এখন আমি তা ভঙ্গ করলাম। তোমাদেরকে দাওয়াত দিয়েছি, আর তোমরা আমার দাওয়াতে সাড়া দিয়েছ। সুতরাং তোমরা আমাকে ভর্ৎসনা করো না, বরং নিজদেরকেই ভর্ৎসনা কর। আমি তোমাদের উদ্ধারকারী নই, আর তোমরাও আমার উদ্ধারকারী নও। ইতঃপূর্বে তোমরা আমাকে যার সাথে শরীক করেছ, নিশ্চয় আমি তা অস্বীকার করছি। নিশ্চয় যালিমদের জন্য রয়েছে বেদনাদায়ক আযাব’ [66]।
জাহান্নামীদের জন্য সবচেয়ে বড় আযাব হল, আল্লাহর দর্শন থেকে তাদের বঞ্চিত হওয়া। জাহান্নামীদের মাঝে আর আল্লাহর মাঝে একটি পর্দা থাকবে। ফলে তারা আল্লাহকে দেখতে পাবে না। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এরশাদ করেন,
﴿كَلَّآ إِنَّهُمۡ عَن رَّبِّهِمۡ يَوۡمَئِذٖ لَّمَحۡجُوبُونَ ١٥ ثُمَّ إِنَّهُمۡ لَصَالُواْ ٱلۡجَحِيمِ ١٦ ثُمَّ يُقَالُ هَٰذَا ٱلَّذِي كُنتُم بِهِۦ تُكَذِّبُونَ ١٧﴾ [المطففين: ١٥، ١٧]
“কখনো নয়, নিশ্চয় সেদিন তারা তাদের রব থেকে পর্দার আড়ালে থাকবে। তারপর নিশ্চয় তারা প্রজ্বলিত আগুনে প্রবেশ করবে। তারপর বলা হবে, এটাই তা যা তোমরা অস্বীকার করতে” [67]।
দ্বিতীয় বিষয় : জাহান্নামীদের দৈহিক শাস্তি
জাহান্নামীদের সবচেয়ে বড় শাস্তি হল, তাদের মধ্যে যারা কাফের ও মুনাফেক তারা চিরকাল জাহান্নামের অবস্থান করবে। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এ বিষয়ে এরশাদ করে বলেন,
﴿إِنَّ ٱلۡمُجۡرِمِينَ فِي عَذَابِ جَهَنَّمَ خَٰلِدُونَ ٧٤ لَا يُفَتَّرُ عَنۡهُمۡ وَهُمۡ فِيهِ مُبۡلِسُونَ ٧٥ ﴾ [الزخرف: ٧٤، ٧٥]
“নিশ্চয় অপরাধীরা জাহান্নামের আযাবে স্থায়ী হবে; তাদের থেকে আযাব কমানো হবে না এবং তাতে তারা হতাশ হয়ে পড়বে”[68]। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এরশাদ করে বলেন,
﴿فَذُوقُواْ فَلَن نَّزِيدَكُمۡ إِلَّا عَذَابًا ٣٠﴾ [النبا: ٣٠]
“সুতরাং তোমরা স্বাদ গ্রহণ কর। আর আমি তো কেবল তোমাদের আযাবই বৃদ্ধি করব”[69]। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আরও বলেন,
﴿ وَسُقُواْ مَآءً حَمِيمٗا فَقَطَّعَ أَمۡعَآءَهُمۡ ١٥ ﴾ [محمد: ١٥]
“এবং তাদেরকে ফুটন্ত পানি পান করানো হবে ফলে তা তাদের নাড়িভুঁড়ি ছিন্নÑবিচ্ছিন্ন করে দেবে”[70]?
আল্লামা সা’দী রহ. বলেন, তাদেরকে জাহান্নামে অত্যন্ত গরম পানি পান করানো হবে([71]).।
জাহান্নামীদের আরেকটি শাস্তি হল, জাহীম ও যাক্কুম: আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন,
﴿ِإنَّ شَجَرَتَ ٱلزَّقُّومِ ٤٣ طَعَامُ ٱلۡأَثِيمِ ٤٤ كَٱلۡمُهۡلِ يَغۡلِي فِي ٱلۡبُطُونِ ٤٥ كَغَلۡيِ ٱلۡحَمِيمِ ٤٦ خُذُوهُ فَٱعۡتِلُوهُ إِلَىٰ سَوَآءِ ٱلۡجَحِيمِ ٤٧ ثُمَّ صُبُّواْ فَوۡقَ رَأۡسِهِۦ مِنۡ عَذَابِ ٱلۡحَمِيمِ ٤٨ ذُقۡ إِنَّكَ أَنتَ ٱلۡعَزِيزُ ٱلۡكَرِيمُ ٤٩﴾ [الدخان: ٤٣، ٤٩]
“নিশ্চয় যাক্কূম বৃক্ষ, পাপীর খাদ্য ; গলিত তামার মত, উদরসমূহে ফুটতে থাকবে। ফুটন্ত পানির মত, (বলা হবে) ‘ওকে ধর, অতঃপর তাকে জাহান্নামের মধ্যস্থলে টেনে নিয়ে যাও। তারপর তার মাথার উপর ফুটন্ত পানির আযাব ঢেলে দাও। (বলা হবে) ‘তুমি আস্বাদন কর, নিশ্চয় তুমিই সম্মানিত, অভিজাত” [72]।
আয়াতের ব্যাখ্যায় আল্লামা সা’দী রহ. বলেন [73], [74], কিয়ামত দিবসের কথা আলোচনা করার পর, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন জানিয়ে দেন যে, মানুষকে সেদিন দুটি ভাগে ভাগ করা হবে। একদল জান্নাতে যাবে এবং একদল জাহান্নামে যাবে। যারা জাহান্নামে যাবে তারা অপরাধী যারা আল্লাহর নাফরমানি ও আল্লাহর সাথে কুফরী করেছিল। আর তাদের খাদ্য হবে, জাক্কুম বৃক্ষ। এটি একটি অতীব খারাপ ও ভয়ানক বৃক্ষ। আর তাদের খাদ্য হবে দুর্গন্ধযুক্ত, পঁচা গলা পিতের মত। যার গন্ধ ও স্বাদ হবে খুব তীক্ত ও অসহনীয়। আর তাদের দেয়া হবে, গরম খাওয়ার, তা তাদের উদরসমূহে ফুটতে থাকবে ফুটন্ত গরম পানির মত। আযাবে আক্রান্ত ব্যক্তিকে বলা হবে, তুমি বেদনাদায়ক শাস্তি ও ভয়াবহ আযাব উপভোগ করতে থাক। [إِنَّكَ أَنتَ ٱلۡعَزِيزُ ٱلۡكَرِيمُ] অর্থাৎ তোমার বিশ্বাস অনুযায়ী তুমি শক্তিশালী তুমি নিজেকে আল্লাহর আযাব হতে বিরত রাখতে সক্ষম হবে। আর তুমি আল্লাহর নিকট সম্মানী। তোমাকে কোন শাস্তি স্পর্শ করবে না। কিন্তু মনে রাখবে, আজকের দিন তুমি বুঝতে পারবে তুমি কি সম্মানী নাকি নিকৃষ্ট, অপমানিত ও লাঞ্ছিত।[75]
তৃতীয় অধ্যায়
জান্নাতের পথ ও জাহান্নাম থেকে বাঁচার উপায়
প্রথম পরিচ্ছেদ: জান্নাতের পথ ও জান্নাতে প্রবেশের কারণসমূহ
প্রথম আলোচনা: যে সব কারণগুলো জান্নাতের দিকে নিয়ে যায়
দ্বিতীয় আলোচনা: জান্নাতে প্রবেশ করা আল্লাহর রহমতের দ্বারাই হয়ে থাকে, আমল দ্বারা নয়
দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ: জাহান্নাম হতে মুক্তি ও জাহান্নামে প্রবেশের কারণসমূহ
প্রথম আলোচনা: জাহান্নামে প্রবেশের কারণসমূহ
দ্বিতীয় আলোচনা: আল্লাহর আযাব থেকে আমরা নিজেদের কীভাবে বাঁচাবো?
প্রথম পরিচ্ছেদ:
জান্নাতের পথ ও জান্নাতে প্রবেশের কারণসমূহ
প্রথম আলোচনা: জান্নাতের প্রবেশের কারণ
১- আল্লাহ ও তার রাসূলের আনুগত্য করা। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন,
﴿وَمَن يُطِعِ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥ يُدۡخِلۡهُ جَنَّٰتٖ تَجۡرِي مِن تَحۡتِهَا ٱلۡأَنۡهَٰرُ خَٰلِدِينَ فِيهَاۚ وَذَٰلِكَ ٱلۡفَوۡزُ ٱلۡعَظِيمُ ١٣﴾ [النساء: ١٣]
“আর যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে আল্লাহ তাকে প্রবেশ করাবেন জান্নাতসমূহে, যার তলদেশে প্রবাহিত রয়েছে নহরসমূহ। সেখানে তারা স্থায়ী হবে। আর এটা মহা সফলতা”[76]।
২-উপকারী ইলমের অনুসন্ধান করা।[কুরআন ও সুন্নাহের ইলম]
৩- ঈমান ও আমলে সালেহ [নেক আমলসমূহ]
নেক আমলসমূহ:
ক- ইসলাম ও ঈমানের রুকন সমূহকে পরিপূর্ণরূপে আদায় করা।
খ- সুন্দর চরিত্র, আত্মীয়তার সম্পর্ক অটুট রাখা, ফকীর মিছকীনদের জন্য ব্যয় করা, মেহমানের মেহমানদারি করা ইত্যাদি।
জান্নাতের দিকে নিয়ে যাওয়ার মাধ্যমসমূহ:
-মাতা-পিতার সাথে ভালো ব্যবহার করা
- আল্লাহর যিকির করা
-দয়া করা
-সালামের প্রসার
-দুর্বল অসহায় ও গরীব লোকদের প্রতি দয়া করা, দ্বীনের ব্যাপারে মানুষকে সহযোগিতা করা। ([77]).
দ্বিতীয় আলোচনা: জান্নাতে প্রবেশ করা আল্লাহর দয়ায় হয়ে থাকে আমলের মাধ্যমে নয়।
প্রমাণ: আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বলেন,
«قاربوا وسدِّدوا، واعلموا أنه لن ينجو أحد منكم بعمله » قالوا: يا رسول الله، ولا أنت؟ قال: « ولا أنا إلاّ أن يتغمّدني الله برحمة منه وفضل »
“তোমরা আল্লাহর নৈকট্য অর্জন কর এবং আমলসমূহকে সুন্দর কর, আর মনে রাখবে তোমাদের কেউ তার আমল দ্বারা জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি পাবে না। সাহাবীরা জিজ্ঞাসা করল, আপনিও কি নাজাত পাবেন না হে আল্লাহর রাসূল! রাসূল বললেন, না আমিও না, তবে যদি আল্লাহ তাঁর রহমত ও দয়া দ্বারা আমাবে ঢেকে ফেলে তাহলে আমি নাজাত পাব [78]।
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বলেন,
« سدِّدوا، وقاربوا، وأبشروا؛ فإنه لا يُدخِل أحداً الجنة عملُهُ » قالوا: ولا أنت يا رسول الله؟ قال: « ولا أنا، إلاّ أن يتغمدني الله بمغفرة ورحمة » وفي لفظ: « واعلموا أن أحبّ العمل إلى الله أدومه وإن قلّ »
“তোমরা তোমাদের আমলসমূহকে সংশোধন কর, আল্লাহর নৈকট্য অর্জন কর এবং তোমরা সু-সংবাদ গ্রহণ কর। কারণ, কাউকে তার আমল জান্নাতে প্রবেশ করাবে না। সাহাবীরা জিজ্ঞাসা করল, হে আল্লাহর আপনিও কি আপনার আমলের কারণে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবেন না। উত্তরে তিনি বলেন, আমিও না, তবে যদি আল্লাহর রহমত ও ক্ষমা আমার অনুকুলে থাকে। অপর শব্দে বর্ণিত, তোমরা মনে রাখবে, আল্লাহর নিকট সর্বাধিক প্রিয় আমল হল যা স্থায়ী হয়, যদিও তা কম” [79]।
ইমাম নববী রহ. বলেন, উল্লেখিত হাদিস সমূহের বাহ্যিক অর্থ হক পন্থীদের জন্য প্রমাণ। কারণ তারা বলেন, কোন ব্যক্তি সাওয়াব বা জান্নাত তার আমল দ্বারা লাভ করতে পারবে না। আর আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এর বাণী:
﴿ٱدۡخُلُواْ ٱلۡجَنَّةَ بِمَا كُنتُمۡ تَعۡمَلُونَ ٣٢﴾ [النحل: ٣٢]
“তোমরা তোমাদের আমলের কারণে জান্নাতে প্রবেশ কর” [80]।
﴿وَتِلۡكَ ٱلۡجَنَّةُ ٱلَّتِيٓ أُورِثۡتُمُوهَا بِمَا كُنتُمۡ تَعۡمَلُونَ ٧٢﴾ [الزخرف: ٧٢]
“আর এটিই জান্নাত, তোমাদের নিজেদের আমলের ফলস্বরূপ তোমাদেরকে এর অধিকারী করা হয়েছে” [81]। এবং এ ধরনের আরও যত আয়াত আছে, যাতে প্রমাণিত হয়, মানুষ তাদের আমলের মাধ্যমেই জান্নাতে প্রবেশ করবে, এগুলো উল্লেখিত হাদিসসমূহের সাথে সাংঘর্ষিক নয়। বরং আয়াতের অর্থ হল, জান্নাতে প্রবেশ করা আমলের দ্বারা হবে, কিন্তু আমল করার তাওফিক, হিদায়েত, আমলে এখলাস ও আমল কবুল করা আল্লাহর রহমত ও দয়ার কারণেই হয়ে থাকে। সুতরাং এ কথা বলা বাহুল্য যে শুধু আমল দ্বারা কোন ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। আর এটিই হল, হাদিসের মর্মার্থ। মোট কথা, একজন লোক জান্নাতে আমলের করার মাধ্যমে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর তা হল, আল্লাহর রহমত। আল্লাহ সর্বজ্ঞ।([82]
দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ
জাহান্নাম থেকে মুক্তি ও জাহান্নামের প্রবেশের কারণ
প্রথম আলোচনা: জাহান্নামের দিকে নিয়ে যাওয়ার কারণগুলো:
জাহান্নামের দিকে নিয়ে যাওয়ার কারণ অসংখ্য ও অগণিত। আল্লাহ আমাদের হেফাযত করুন। সামগ্রিক কারণ হল, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নাফরমানি করা। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন,
﴿وَمَن يَعۡصِ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥ وَيَتَعَدَّ حُدُودَهُۥ يُدۡخِلۡهُ نَارًا خَٰلِدٗا فِيهَا وَلَهُۥ عَذَابٞ مُّهِينٞ ١٤﴾ [النساء: ١٤]
“আর যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নাফরমানী করে এবং তাঁর সীমারেখা লঙ্ঘন করে আল্লাহ তাকে আগুনে প্রবেশ করাবেন। সেখানে সে স্থায়ী হবে। আর তার জন্যই রয়েছে অপমানজনক আযাব”[83]।
জাহান্নামে প্রবেশের আরও কারণ:
১- আল্লাহর সাথে শরিক করা।
২- নবী ও রাসূলদের অস্বীকার করা।
৩- কুফরী করা।
৪- হিংসা করা।
৫- যুলম ও অত্যাচার করা।
৬- আমানতের খিয়ানত করা
৭- আত্মীয়তা সম্পর্ক ছিন্ন করা।
৮- কার্পণ্য করা।
৯- মুনাফেকি করা।
১০- আল্লাহর আযাব হতে নির্ভীক হওয়া।
১১- আল্লাহর রহমত হতে নিরাশ হওয়া।
১২- কুরআন ও হাদিসে যে সব কবীরাগুনাহের কথা উল্লেখ করা হয়েছে সে সব কবীরা গুনাহে লিপ্ত হওয়া।[84]
২- নবী ও রাসূলদের অস্বীকার করা।
৩- কুফরী করা।
৪- হিংসা করা।
৫- যুলম ও অত্যাচার করা।
৬- আমানতের খিয়ানত করা
৭- আত্মীয়তা সম্পর্ক ছিন্ন করা।
৮- কার্পণ্য করা।
৯- মুনাফেকি করা।
১০- আল্লাহর আযাব হতে নির্ভীক হওয়া।
১১- আল্লাহর রহমত হতে নিরাশ হওয়া।
১২- কুরআন ও হাদিসে যে সব কবীরাগুনাহের কথা উল্লেখ করা হয়েছে সে সব কবীরা গুনাহে লিপ্ত হওয়া।[84]
দ্বিতীয় আলোচনা: কিভাবে আমরা আমাদের নিজেদের ও আমাদের পরিবার-পরিজনদের জাহান্নাম থেকে বাঁচাবো?
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন,
﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ قُوٓاْ أَنفُسَكُمۡ وَأَهۡلِيكُمۡ نَارٗا وَقُودُهَا ٱلنَّاسُ وَٱلۡحِجَارَةُ عَلَيۡهَا مَلَٰٓئِكَةٌ غِلَاظٞ شِدَادٞ لَّا يَعۡصُونَ ٱللَّهَ مَآ أَمَرَهُمۡ وَيَفۡعَلُونَ مَا يُؤۡمَرُونَ ٦﴾ [التحريم: ٦]
“হে ঈমানদারগণ, তোমরা নিজেদেরকে ও তোমাদের পরিবার-পরিজনকে আগুন হতে বাঁচাও যার জ্বালানি হবে মানুষ ও পাথর; যেখানে রয়েছে নির্মম ও কঠোর ফেরেশতাকুল, যারা আল্লাহ তাদেরকে যে নির্দেশ দিয়েছেন সে ব্যাপারে অবাধ্য হয় না। আর তারা তা-ই করে যা তাদেরকে আদেশ করা হয়”[85]।
আল্লামা সা’দী রহ. বলেন, তোমাদের মধ্যে যাদের প্রতি আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ঈমানের মত নেয়ামত দিয়ে অনুগ্রহ করেছে, তোমরা ঈমানের আবশ্যকীয় বিষয় ও শর্তসমূহ পূরণ কর। আর তোমরা তোমাদের নিজেদের এবং পরিবার-পরিজনদের ভয়াবহ জাহান্নাম যার কথা উল্লেখ করা হয়েছে তার আগুন থেকে বাঁচাও। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এরশাদ করেন, [قُوٓاْ أَنفُسَكُمۡ وَأَهۡلِيكُمۡ نَارٗا] “তোমরা নিজেদেরকে ও তোমাদের পরিবার-পরিজনকে আগুন হতে বাঁচা”। আর তোমাদের আত্মরক্ষার উপায় হল, আল্লাহর আদেশকে নিজেদের জন্য বাধ্যতামূলক করা, তার আদেশ পালনে দায়িত্বশীল হওয়া এবং তার নিষিদ্ধ বিষয় হতে সম্পূর্ণ বিরত থাকা। আর আল্লাহ রাব্বুল আলামীন যে সব কর্মে অসন্তুষ্ট হন বা আযাব দেন, সে সব কর্ম থেকে তাওবা করা। আর পরিবার পরিজন, সন্তান সন্ততিকে জাহান্নাম থেকে বাঁচানোর উপায় হল, তাদের উত্তম শিক্ষা দেয়া, শাসন করা, তাদেরকে আল্লাহর আদেশ নিষেধ মানার উপর বাধ্য করা। একজন মানুষ ততক্ষণ পর্যন্ত নিরাপদ হতে পারবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত সে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাকে যা করার নির্দেশ দিয়েছে তা না করবে। আর স্ত্রী সন্তান একজন মানুষের অভিভাবকত্বে ও পরিচালনার অন্তর্ভুক্ত। আর আল্লাহ রাব্বুল আলামীন জাহান্নামকে এত ভয়াবহ করে মানুষের নিকট তুলে ধরেছেন, যাতে মানুষ আল্লাহর আদেশের প্রতি উদাসীন না হয়([86]).। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এরশাদ করেন,
﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ هَلۡ أَدُلُّكُمۡ عَلَىٰ تِجَٰرَةٖ تُنجِيكُم مِّنۡ عَذَابٍ أَلِيمٖ ١٠ ﴾ [الصف: ١٠]
“হে ঈমানদারগণ, আমি কি তোমাদেরকে এমন এক ব্যবসায়ের সন্ধান দেব, যা তোমাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক আযাব থেকে রক্ষা করবে”[87]? তারপর আল্লাহ রাব্বুল আলামীন উল্লেখ করেন:
1 –تُؤۡمِنُونَ بِٱللَّهِ وَرَسُولِهِۦ
“তোমরা আল্লাহর প্রতি ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আনবে”
2 – وَتُجَٰهِدُونَ فِي سَبِيلِ ٱللَّهِ بِأَمۡوَٰلِكُمۡ وَأَنفُسِكُمۡۚ ذَٰلِكُمۡ خَيۡرٞ لَّكُمۡ إِن كُنتُمۡ تَعۡلَمُونَ
“এবং তোমরা তোমাদের ধনÑসম্পদ ও জীবন দিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদ করবে। এটাই তোমাদের জন্য কল্যাণকর, যদি তোমরা জানতে”।
সুতরাং, মনে রাখতে হবে, এ দুটি হল, আল্লাহর অনুমতিক্রমে জান্নাতে প্রবেশের এবং জাহান্নাম হতে মুক্তির কারণ। আমরা আল্লাহর নিকট জাহান্নাম থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি এবং আল্লাহর নিকট জান্নাত চাচ্ছি। [88]
আল্লামা সা’দী রহ. আয়াত দু’টির তাফসীরে বলেন, এটি পরম করুণাময় আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের পক্ষ তাঁর মুমিন বান্দাদের জন্য মহৎ ব্যবসা, মহান উদ্দেশ্য ও উন্নত চাহিদা লাভের প্রতি অসিয়ত, পথ দেখানো এবং দিক নির্দেশনা, যার দ্বারা কঠিন আযাব থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে এবং মহা নেয়ামতের সফলতা অর্জন করা যাবে। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বিষয়টি এমনভাবে উপস্থাপন করেছেন, যাতে বুঝা যায় বিষয়টি এমন যার প্রতি প্রতিটি বিচক্ষণ লোক বলতেই আগ্রহ করবে এবং প্রতিটি জ্ঞানী লোক তার দিক মাথা উঁচু করে দেখবে। সুতরাং, বিষয়টি এমন- যেমন বলা হল, এ ব্যবসাটি কি যার এত মূল্য? তখন বলল, আল্লাহ ও তার রাসূলের প্রতি ঈমান আনা। আর এ কথা আমরা সবাই জানি পরিপূর্ণ ঈমান হল আল্লাহ রাব্বুল আলামীন যে সব বিষয়ে অটল বিশ্বাস করার নির্দেশ দিয়েছেন, তার প্রতি অটল বিশ্বাস করা। এ বিশ্বাসের অপরিহার্য দাবী হল শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের আমল। অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের আমলসমূহের অন্যতম মূল্যবান আমল হল, আল্লাহর রাহে জিহাদ করা, এ কারণেই আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এরশাদ করেন,
[وَتُجَٰهِدُونَ فِي سَبِيلِ ٱللَّهِ بِأَمۡوَٰلِكُمۡ وَأَنفُسِكُمۡۚ]
অর্থাৎ তোমরা তোমাদের জান মাল দিয়ে ইসলামের দুশমনদের প্রতিহত করা, আল্লাহর দ্বীনকে বিজয় করা এবং আল্লাহর কালিমাকে আল্লাহর যমীনে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য তোমরা তোমাদের সম্পদ হতে যা তোমাদের জন্য সহজ হয় তা ব্যয় করবে। কিন্তু এ কাজটি যদিও তোমার জন্য অপছন্দনীয় হয় এবং তোমার জন্য কষ্টকর হয় কিন্তু মনে রাখবে এটি তোমার জন্য উত্তম। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এরশাদ করেন,
[خَيۡرٞ لَّكُمۡ إِن كُنتُمۡ تَعۡلَمُونَ]
এটাই তোমাদের জন্য কল্যাণকর, যদি তোমরা জানতে।[89]জাহান্নাম থেকে বাঁচার কারণসমূহ:
আল্লাহর আদেশ অনুযায়ী আমল করা এবং আল্লাহ যে সব কর্মে নারাজ হন তা হতে দূরে থাকা: যখন কোন ব্যক্তি তার প্রভুর আনুগত্য করে এবং আল্লাহ রাব্বুল আলামীন যা করতে নিষেধ করেছেন, তা হতে বিরত থাকে তাহলে সে আসবাব সমূহের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করল। তাওফিক ও কবুল আল্লাহর হাতে। আল্লাহর নিকট আমরা তার ফযল ও অনুগ্রহ কামনা করি। জাহান্নাম থেকে বাঁচার কারণগুলো আরও বিস্তারিত জানতে চাইলে আহলে ইলমরা এ বিষয়ে যে সব কিতাব লিপিবদ্ধ করেছেন তা দেখুন। সালাত ও সালাম নাযিল হোক আমাদের নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ এর উপর এবং তার সমগ্র সাহাবীদের উপর।[90]
পরিশিষ্ট
সমস্ত প্রশংসা কেবলই আল্লাহর জন্য এবং তাঁরই জন্য পূর্বের ও পরবর্তীর যাবতীয় প্রশংসা। আল্লাহর অপার অনুগ্রহে জান্নাত ও জাহান্নাম বিষয়ে গবেষণাটি শেষ করছি। এ গবেষণায় রয়েছে জান্নাত ও জাহান্নামের সংজ্ঞা, নামসমূহ, জান্নাতের নেয়ামতসমূহ ও জাহান্নামের আযাব এবং যে সব উপকরণগুলো জান্নাত ও জাহান্নামের দিকে মানুষকে নিয়ে যায় তার বর্ণনা।
এ গবেষণামুলক রিসালাটির উল্লেখযোগ্য দিক হল, এখানে সংক্ষিপ্ত আকারে জান্নাত ও জাহান্নামের সংজ্ঞা জান্নাত ও জাহান্নামের বর্ণনার উপর কিছু প্রমাণাদি একত্র করা হয়েছে, যাতে একজন পাঠক খুব দ্রুত তার লক্ষ্যে পৌঁছতে পারে এবং জান্নাতের লাভ করতে আগ্রহী হয় এবং জাহান্নাম থেকে বাঁচতে চেষ্টা করে।
আর অসিয়ত ও উপদেশ হল:
প্রথমত: আল্লাহকে ভয় করার প্রতি অসিয়ত যাতে একজন বান্দা জান্নাত লাভে সক্ষম হয় এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি পায়।
দ্বিতীয়ত: জান্নাত ও জাহান্নাম বিষয়ে আরো বিস্তারিত লেখার জন্য উপদেশ দেই। যাতে যারা এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চায় তাদের জন্য সহজ হয় এবং যারা সত্যিকার ইলমকে বাড়াতে চায় তাদের জন্য পাথেয় হয়।
وآخر دعوانا أن الحمد لله رب العالمين، والصلاة [والسلام] على نبينا محمد [وعلى آله وأصحابه ومن تبعهم بإحسان إلى يوم الدين.
_______________________________________________________________________________________
[1]. মুহাম্মদ বিন আবু বকর আর রাযি, মুখতারুস সিহাহ পৃ: ৪৮ [দেখুন: আল্লামা ইবন মানজুর, লিসানুল আরব, পৃ: ১৩/৯৯ এবং আল্লামা আছফাহানী, মুফরাদাতুল কুরআন, পৃ: ২০৪।
[2]. আহমদ তাহের আযযাবী, মুখতারুল কামুস, পৃ: ১১৭।
[3]. এ শব্দটি মূলত: নির্গত হয়েছে ‘সতর’ ও ‘তাগতিয়া’ শব্দদ্বয় হতে। এ কারণেই গর্বজাত সন্তানকে জানিন বলা হয়ে থাকে। কারণ, সে মায়ের পেটে অদৃশ্য ও গোপন থাকে। এবং এ কারণেই বাগানকে জান্নাত বলা হয়ে থাকে, কারণ, তার অভ্যন্তর গাছ গাছালী দ্বারা আবৃত বা গোপন থাকে। আর এ শব্দটি শুধু মাত্র যেখানে অধিক পরিমাণে বিভিন্ন ধরনের গাছ থাকে সে বাগানের ক্ষেত্রে ব্যবহার হয়ে থাকে। দেখুন: আল্লামা ইবনুল কাইয়েম রহ. এর ‘হাদিয়ুল আরওয়াহ ইলা বিলাদিল আফরাহ’ পৃ: ১১১।
[4]. আল্লামা ইবনুল কাইয়েম, হাদিয়ুল আরওয়াহ, পৃ: ১১১।
[5]. সূরা আন-নাহাল আয়াত: ৩২
[6]. সূরা ইউনুস, আয়াত: ২৫
[7]. সূরা আল-আনয়াম, আয়াত: ১২৭
[8]. হাদিয়ুল আরহওয়াহ ইলা বিলাদিল আফরাহ পৃ: ১১৩
[9]. এ বলে নামকরণ করার কারণ হল, জান্নাতীরা কখনোই তা হতে বের হবে না। আল্লাহ তা’আলা বলেন,
﴿عَطَآءً غَيۡرَ مَجۡذُوذٖ ١٠٨﴾ [هود: ١٠٨]
‘অব্যাহত প্রতিদানস্বরুপ’। সূরা হুদ, আয়াত: ১০৮। আল্লাহ আরও বলেন,
﴿ إِنَّ هَٰذَا لَرِزۡقُنَا مَا لَهُۥ مِن نَّفَادٍ ٥٤﴾ [ص: ٥٤]
‘নিশ্চয় এটি আমার দেয়া রিযিক, যা নি:শেষ হওয়ার নয়’। সূরা সাদ, আয়াত: ৫৪। আল্লাহ আরও বলেন,
﴿وَمَا هُم مِّنۡهَا بِمُخۡرَجِينَ ٤٨ ﴾ [الحجر: ٤٨]
‘তবে তারা তা হতে বের হবে না’। সূরা আল-হিজর আয়াত: ৪৮।
[10]. সূরা ক্বাফ, আয়াত: ৩৪।
[11]. সূরা ফাতের, আয়াত: ৩৫।
[12]. সূরা আন-নজম, আয়াত: ১৫।
[13]. জান্নাতে আদন: অর্থাৎ স্থায়ী ও চিরঞ্জীব জান্নাত। প্রবাদে বলা হয়ে থাকে, عَدَن المكان যখন তা নিয়ে দাঁড়ায়। সুতরাং এ হল, জান্নাত যাকে প্রতিষ্ঠিত করা হল, হাদিয়ুল আরওয়াহ, পৃ: ১১৪।
[14]. সূরা মারয়াম, আয়াত: ৬১।
[15]. সূরা কাহাফ, আয়াত: ১০৭।
[16].ফিরদাউস: এমন বাগান যাতে রয়েছে সব ধরনের গাছ গাছালি এবং বিভিন্ন বাগানে যা থাকে তা সবই এক জায়গায় অর্থাৎ ঐ বাগানে পাওয়া যায়, তাকে জান্নাতুল ফিরদাউস বলা হয়ে থাকে। দেখুন: আল্লামা ইবনে হাজরের ফতহুল বারী ১৩/৬, কামুসুল মুহিত পৃ: ৭২৫। ফিরদাউস: এমন জান্নাত যা সব জান্নাতের বিষয়ে ব্যবহার করা যায় অথবা সর্বত্তোম ও সর্ব উৎকৃষ্ট জান্নাতকে জান্নাতুল ফিরদাউস বলা হয়ে থাকে। মনে রাখতে হবে, এ জান্নাতটি অন্যান্য জান্নাতের তুলনায় এ নামে নাম করণ করা বিষয়ে অধিক উপযুক্ত। [হাদিয়ুল আরওয়াহ পৃ: ১১৬] আল্লামা ইবনুল কাইয়েম রহ. বলেন, জান্নাত হল, গোলাকার গম্বুজের মত। সর্বোৎকৃষ্ট, প্রশস্ত ও সর্বোত্তম জান্নাত হল, জান্নাতুল ফিরদাউস। আর এ জান্নাতের ছাদ হল, আল্লাহর আরশ। যেমন, সহীহ হাদিসে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বলেন,
« إذا سألتم الله فاسألوه الفردوس؛ فإنه أوسط الجنة، وأعلى الجنة، وفوقه عرش الرحمن، ومنه تفجَّر أنهار الجنة »
“তোমরা যখন আল্লাহর নিকট জান্নাত কামনা করবে তখন জান্নাতুল ফিরদাউস কামনা করবে। কারণ, তা হল, উৎকৃষ্ট জান্নাত ও উন্নত জান্নাত। এ জান্নাতের উপর রয়েছে পরম করুণাময় আল্লাহর আরশ। তা হতে জান্নাতের নহর সমূহ প্রবাহিত হয়”। [বুখারি ২৭৯০, ৭৪২৩] হাদিয়ুল আরওয়াহ পৃ: ৮৪।
[17]. সূরা দুখান, আয়াত: ৫১।
[18]. মাকাম শব্দের অর্থ: অবস্থানের জায়গা। আর আল আমীন অর্থ সব ধরনের খারাবী ও বিপদ-আপদ হতে নিরাপদ হওয়া। এটি ঐ জান্নাতকে বলা হয়, যে জান্নাত সব ধরনের নিরাপত্তাজনিত বিষয়গুলোকে অন্তর্ভূক্ত করে। [হাদিয়ুল আরওয়াহ, পৃ: ১১৬]
[19].মাকয়াদে সিদক: এটি একটি জান্নাতের নাম। এ জান্নাতকে এ নামে নাম করণ করার, এ জান্নাতে যত সুন্দর সুন্দর আসন ও বসার স্থান চাওয়া হয়, সবই পাওয়া যায়। যেমন বলা হয় ‘সত্যিকার মহব্বত’ যখন তার মধ্যে সত্যিকার ও পরিপূর্ণরূপে মহব্বত পাওয়া যায়। [হাদিয়ুল আরওয়াহ, পৃ: ১১৭]
[20]. সূরা আল-হজ, আয়াত: ৭২।
[21].কামুসুল মুহিত, পৃ: ৬২৮,৬৩০ মু’জামুল ওসিত, ২৯২/২, আল্লামা ইসফাহানী, মুফরাদাতু আলফাজিল কুরআন পৃ: ৮২৮।
[22]. সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ৩৯
[23] . সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ৬৪।
[24] . সূরা আল-হজ্জ, আয়াত: ৭২।
[25]. সূরা নাবা আয়াত: ২১, ২২।
[26]. সূরা আন-নাজেয়াত, আয়াত: ৩৬।
[27]. সূরা আশ-শূরা, আয়াত: ৭।
[28]. সূরা আল-মুদ্দাচ্ছের, আয়াত: ২৭, ২৮।
[29]. সূরা আল-হুমাজাহ, আয়াত: ৪।
[30]. সূরা আল-কারিয়াহ, আয়াত: ৮-১১।
[31]. আল্লাহ তা’আলা বলেন,
﴿ ۞أَلَمۡ تَرَ إِلَى ٱلَّذِينَ بَدَّلُواْ نِعۡمَتَ ٱللَّهِ كُفۡرٗا وَأَحَلُّواْ قَوۡمَهُمۡ دَارَ ٱلۡبَوَارِ ٢٨ جَهَنَّمَ يَصۡلَوۡنَهَاۖ وَبِئۡسَ ٱلۡقَرَارُ ٢٩ ﴾ [ابراهيم: ٢٨، ٢٩]
তুমি কি তাদেরকে দেখ না, যারা আল্লাহর নিআমতকে কুফরী দ্বারা পরিবর্তন করেছে এবং তাদের কওমকে ধ্বংসের ঘরে নামিয়ে দিয়েছে? জাহান্নামে, যাতে তারা দগ্ধ হবে, আর তা কতইনা নিকৃষ্ট অবস্থান! [সূরা ইবরাহিম, আয়াত: ২৮, ২৯] আল্লামা ইবনে কাসীর রহ. কুরআনে আজীমের তাফসীরে লিখেন, দারুল বাওয়ার হল জাহান্নাম ৫৩৯/২। ইমাম বগবী রহ. ও স্বীয় তাফসীরে এ কথার দিকে ইশারা করেছেন। ৫৩/৩।
[32]. এ শব্দটির অর্থ গব্মুজ এটি বহু বচন, এর এক বচন جنبذة। বুখারি নবীদের আলোচনা অধ্যায়ে শব্দটি উল্লেখ করা হয়েছে। এ হাদীসটি আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের পক্ষে প্রমাণস্বরূপ। তারা বলেন, জান্নাত ও জাহান্নাম বর্তমানে মাখলুক এবং জান্নাত আসমানে। দেখুন: ইমাম মুসলিম, শরহে নববী, পৃ: ৫৭৯/৩।
[33]. মুত্তাফাকুন আলাইহ : বুখারি সালাত অধ্যায়, পরিচ্ছেদ: মেরাজের সময় সালাত ফরয হওয়ার পদ্ধতি: হাদিস নং: ৩৪৯ ও নবীদের আলোচনা অধ্যায়, হাদীস নং: ৩৩৪২। মুসলিম কিতাবুল ঈমান, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আসমানের দিকে রাতে নিয়ে যাওয়া বিষয়ে আলোচনা: হাদীস নং: ১৬২।
[34]. তিরমিযি, জান্নাতের বর্ণনা অধ্যায়, পরিচ্ছেদ: ‘জান্নাতকে পরিপূর্ণ করা হয়েছে পরিশ্রম দ্বারা আর জাহান্নামকে পরিপূর্ণ করা হয়েছে প্রবৃত্তি দ্বারা’ হাদীস নং ২৫৬০। নাসায়ী কিতাবুল আইমান ওয়ান নুজুর, আল্লাহর ইজ্জতের কসম খাওয়া বিষয়ে আলোচনা: হাদিস নং: ৩৭৭২। আল্লামা আলবানী বিশুদ্ধ তিরমিযিতে হাদিসটিকে সহীহ বলে আখ্যায়িত করেছেন। দেখুন- ২০/৩ সহীহ নাসায়ী ৫/৩।
[35]. আবু জাফর আত-ত্বাহাবী, আকীদাতু-তহাবী [শুধু ইবারত], পৃ: ১২।
[36]. ইমাম আহমদ স্বীয় মুসনাদে পৃ: ৪৫৫/৩, তাহকীক কৃত সংস্ককরণে পৃ: ৫৭/২৫। আর নাসায়ী জানায়েয অধ্যায়ে, পরিচ্ছেদ: মুমিনদের রুহ বিষয়ে আলোচনা; হাদীস নং ২০৭৩-
« إنما نسمة المؤمن طائر في شجر الجنة حتى يبعثه الله إلى جسده يوم القيامة »
অর্থ, মুমিনের আত্মা জান্নাতের গাছের মধ্যে উড়ন্ত পাখির মত। কিয়ামতের দিন আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাদের রুহকে তাদের দেহে ফেরত দেবেন। ইবনে মাযা, যুহদ অধ্যায়, কবরের আলোচনায় হাদিসটি উল্লেখ করা হয়েছে, হাদীস নং: ৪২৭১। বিশুদ্ধ নাসায়ীতে আলবানী রহ. হাদীসটিকে সহীহ বলে আখ্যায়িত করেন, পৃ: ৪৪৫/২। সিলসিলাতুল আহাদীস-সহীহাহ গ্রন্থে ৭২০/২, ৯৯৫। ইমাম ইবনে কাসীর স্বীয় তাফসীরে
أحمد عن الشافعي عن مالك عن ابن شهاب، عن عبد الرحمن بن كعب بن مالك عن أبيه:
এ সনদটি উল্লেখ করার পর লিখেন, ‘এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সনদ এবং শক্তিশালী মতন’।
[37]. আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রা. এর হাদিসে শহীদদের আলোচনায় রয়েছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বলেন,
« أرواحهم في جوف طير خضر لها قناديل معلقة بالعرش تسرح من الجنة حيث شاءت، ثم تأوي إلى تلك القناديل »
“শহীদদের রুহসমূহ হুলুদ পাখির পেটের মধ্যে তাদের জন্য রয়েছে, আরশের সাথে ঝুলানো প্রজ্জলিত বাতি, তারা তাদের ইচ্ছা মত যেখানে ইচ্ছা সেখানে ভ্রমণ করতে থাকে তারপর তারা আবার ঐ সব বাতির নিকট চলে আসে”। মুসলিম, হাদীস নং: ১৮৮৭। আব্দুল্লাহ বিন উমর রা. এর হাদীস রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ এরশাদ করেন,
« إن أحدكم إذا مات عرض عليه مقعده بالغداة والعشي، إن كان من أهل الجنة فمن أهل الجنة، وإن كان من أهل النار فمن أهل النار، يقال: هذا مقعدك حتى يبعثك الله إليه يوم القيامة »
অর্থ, যখন তোমাদের কেউ মারা যায় তখন সকাল বিকাল তার অবস্থান কোথায় হবে তা তুলে ধরা হয়। যদি লোকটি জান্নাতী হয়, তার জান্নাতের অবস্থান তাকে দেখানো হয়, আর যদি লোকটি জাহান্নামী হয়, তবে তাকে জাহান্নামের অবস্থান দেখানো হয়। তাকে বলা হয়, এ তোমার অবস্থান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কিয়ামতের দিন তোমাকে এখানে প্রেরণ করবেন। বুখারি, ১৩৭৯, মুসলিম: ২৮৬৬। আল্লামা ইবনুল কাইয়ুম রহ. বলেন, রুহকে পেশ করা দ্বারা এ কথা প্রমাণিত হয় না রুহগুলো কবরে বা কবরের আশপাশে। বরং এ কথা প্রমাণিত হয়, কবরের সাথে রুহের সম্পৃক্ততা রয়েছে; তার আসনে রুহকে পেশ করা হয়ে থাকে। কারণ, রুহের অবস্থা ভিন্ন একটি অবস্থা রয়েছে। রূহ কখনো সময় রফিকে আ’লাতে অবস্থান করে, কিন্তু দেহের সাথে সম্পৃক্ত। ফলে যখন কোন ব্যক্তি তাকে সালাম দেয়, সে তার স্বীয় অবস্থান থেকে সালামের উত্তর দেয়। দেখুন- আল্লামা সুয়ুতীর ব্যাখ্যা সুনানে নাসায়ীতে পৃ: ১০৯/৪।
[38] .সূরা আল-মুতাফফিফিন, আয়াত: ১৮-১৯।
[39] .তাফসীরে বগবী, ৪৬০/৪, তাফসীরে ইবন কাসীর ৪৮৭/৪।
[40]. আল্লামা ইবন্ কাসীর, তাফসীরুল কুরআনুল আজীম, ৪৮৭/৪।
[41]. সূরা আয-যারিয়াত, আয়াত: ২২।
[42] .আল্লামা ইবনে কাসীর, তাফসীরুল কুরআনুল আজীম, ২৩৬/৪।
[43]. ইমাম বুখারির বর্ণিত হাদিসে অতিবাহিত হয়েছে। হাদীস নং ২৭৯০, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বলেন,
« إذا سألتم الله فاسألوه الفردوس، فإنه أوسط الجنة، وأعلى الجنة، وفوقه عرش الرحمن...»
“তোমরা যখন আল্লাহর নিকট জান্নাত কামনা করবে, তখন জান্নাতুল ফিরদাউস কামনা করবে। কারণ, তা হল, উত্তম জান্নাত উৎকৃষ্ট জান্নাত ও উন্নত জান্নাত। এ জান্নাতের উপর রয়েছে পরম করুণাময় আল্লাহর আরশ...”
[44]. দেখুন তাফসীরে বগবী, ৫৪৮/৪, তাফসীরে ইবনে কাসীর ৪৮৬, ৪৮৭/৪। জাহান্নাম থেকে ভয় পদর্শন ইবনে রজবের পৃ: ১-৬২ অনুরূপভাবে ইমাম ইবনুল কাইয়ুমের হাদীয়ুল আরওয়াহ ইলা বিলাদিল আফরাহ, পৃ:৮২-৮৪।
[45]. আল্লাহর নিকট আমাদের প্রার্থণা আল্লাহ যেন লেখকের দু’আ কবুল করেন। তাকে এবং তার সহকর্মী যিনি তার সাথে মারা যান উভয়কে শহীদদের উচ্চ আসনে আরোহণ করান। কারণ, তিনি সম্মানী তিনি রহমান। আর মহান স্থানে তাদের উভয়কে তাদের মাতা-পিতার সাথে একত্র করেন।
[46]. মুত্তাফাকুন আলাইহ : বুখারি, কিতাবুর রিকাক, জান্নাত ও জাহান্নামের আলোচনা, হাদীস নং: ৬৫৪৯। মুসলিম, জান্নাত ও জান্নাতের নেয়ামতসমূহের আলোচনা অধ্যায়, পরিচ্ছেদ: জান্নাতীদের প্রতি আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এর সন্তুষ্টি তাদের প্রতি তিনি আর কোন দিন অসন্তুষ্ট হবেন না, হাদিস নং: ২৮২৯।
[47]. মনস্তাত্বিক নেয়ামত বিষয়ে আবু সাঈদ খুদরী রা. হতে আরো বর্ণিত যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ এরশাদ করেন,
«يجاء بالموت يوم القيامة كأنه كبش أملح، فيوقف بين الجنة والنار، فيقال: يا أهل الجنة، هل تعرفون هذا؟ فيشرئبّون وينظرون ويقولون: نعم هذا الموت، ويقال: يا أهل النار، هل تعرفون هذا؟ فيشرئبّون وينظرون ويقولون: نعم هذا الموت، فيُؤمَر به فيُذبح، ثم يقال: يا أهل الجنة خلود فلا موت، ويا أهل النار خلود فلا موت»
“মৃত্যুকে কিয়ামতের দিন একটি মেষের আকৃতিতে উপস্থিত করা হবে এবং জান্নাত ও জাহান্নামের মাঝে রাখা হবে। তারপর বলা হবে, হে জান্নাতবাসী তোমরা একে চেন? তখন তারা মাথা উঁচু করবে এবং দেখে বলবে, হ্যাঁ আমরা চিনি, এ হল মৃত্যু। তারপর জাহান্নামীদের বলা হবে, হে জাহান্নামবাসী, তোমরা একে চেন? তখন তারা মাথা উঁচু করবে এবং দেখে বলবে, হ্যাঁ আমরা চিনি, এ হল মৃত্যু। তারপর আদেশ দেয়া হবে যবেহ করার জন্য। তখন তাকে যবেহ করা হবে। তারপর জান্নাতীদের বলা হবে, হে জান্নাতীগণ, তোমরা জান্নাতে চিরদিন থাকবে আর কোন দিন তোমরা মৃত্যুবরণ করবে না। এবং জাহান্নামীদের বলা হবে, হে জাহান্নামীরা, তোমরা জাহান্নামে চিরদিন থাকবে, আর কোন দিন তোমরা মৃত্যুবরণ করবে না। সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৮৪৯। আব্দুল্লাহ বিন ওমর রা. হতেও অনুরূপ বর্ণিত। তাতে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বলেন,
« فيزداد أهل الجنة فرحاً إلى فرحهم، ويزداد أهل النار حزناً إلى حزنهم »
“তখন জান্নাতীদের আনন্দ আরো বৃদ্ধি পাবে। আর জাহান্নামীদের অশান্তি আরও বৃদ্ধি পাবে”। সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৮৫০। আর মনস্তাত্বিক নেয়ামতের মধ্যে সবচেয়ে বড় নেয়ামত হল, আল্লাহর চেহারার দিকে তাকানো। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন,
﴿۞لِّلَّذِينَ أَحۡسَنُواْ ٱلۡحُسۡنَىٰ وَزِيَادَةٞۖ ٢٦﴾ [يونس: ٢٦] .
“যারা ভালো কাজ করে তাদের জন্য রয়েছে শুভ পরিণাম (জান্নাত) এবং আরও বেশি কিছু”। [সূরা ইউনুস, আয়াত: ২৬] আয়াতে ‘আল-হুসনা’ অর্থ জান্নাত আর ‘যিয়াদা’ বা আরো বেশী কিছু অর্থ আল্লাহর দিকে তাকানো। আল্লাহ তা’আলা আরও বলেন,
﴿لَهُم مَّا يَشَآءُونَ فِيهَا وَلَدَيۡنَا مَزِيدٞ ٣٥﴾ [ق: ٣٥]
“তারা যা চাইবে, সেখানে তাদের জন্য তাই থাকবে এবং আমার কাছে রয়েছে আরও অধিক”। সূরা ক্বাফ, আয়াত: ৩৫] এখানে ‘মাযিদ’ বা অধিক দ্বারা উদ্দেশ্য আল্লাহর চেহারার দিকে তাকানো। আল্লাহ তা’আলা আরও বলেন,
﴿وُجُوهٞ يَوۡمَئِذٖ نَّاضِرَةٌ ٢٢ إِلَىٰ رَبِّهَا نَاظِرَةٞ ٢٣ ﴾ [القيامة: ٢٢، ٢٣]-
“সেদিন কতক মুখমণ্ডল হবে হাস্যোজ্জ্বল। তাদের রবের প্রতি দৃষ্টি নিক্ষেপকারী”। সূরা কিয়ামাহ, আয়াত: ২২, ২৩] হাদিসে বর্ণিত আছে যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বলেন,
«فيكشف الحجاب، فما أُعطوا شيئاً أحبّ إليهم من النظر إلى ربهم » [مسلم، برقم 181].
“তারপর পর্দা খোলা হবে, [তখন তারা আল্লাহর দিকে তাকাবে।] জান্নাতীদেরকে তাদের প্রভূর দিকে তাকানোর চেয়ে বড় প্রিয় আর কোন কিছু দেয়া হয়নি”। সহীহ মুসলিম, হাদিস নং: ১৮১]
[48]. সূরা মুহাম্মদ, আয়াত: ১৫।
[49]. তাফসীরে বগবী: ১৮১/৪, তাফসীরে ইবনে কাসীর: ১৭৭/৪।
[50]. জান্নাতের নহরসমূহের মধ্যে রয়েছে, হাউজে কাউছার যা একমাত্র রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’কে দেয়া হয়েছে। এর দু’প্রান্ত মর্মর পাথরে শোভিত। অন্য বর্ণনায় এসেছে, ‘এর দু’ প্রান্ত কারুকার্যপূর্ণ মর্মর পাথরে সুশোভিত’। সহীহ বুখারী, ৪৯৬৪ ও ৬৫৮১।
আর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ এর হাউজ কিয়ামতের মূহুর্তে তার প্রস্থ একমাসের রাস্তা আর দৈর্ঘ্য আসমান ও যমীনের দূরত্বের সমান দূরত্ব। যে ব্যক্তি সে হাউজ থেকে একবার পানি পান করবে সে আর কখনো পিপাসিত হবে না। সহীহ বুখারি, হাদীস নং ৬৫৭৯, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২২৯২। অচীরেই এমন একটি দিবস আসবে, সেদিন এ হাউজ হতে প্রতিহত করা হবে, কতক লোকদের। আমরা আল্লাহর নিকট নিরাপত্তা চাই।
রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বলেন,
«ليردن عليّ أناس من أصحابي » وفي رواية: « أقوام أعرفهم ويعرفوني، ثم يُحال بيني وبينهم، فأقول: إنهم من أمتي، فيقال: إنك لا تدري ما أحدثوا بعدك، فأقول: سُحقاً سُحقاً لمن غيَّر بعدي » وقال ابن عباس: سُحقاً: بُعداً [البخاري، برقم 6583، ومسلم، برقم 2292].
“অবশ্যই আমার সাহাবাদের কতক লোক কিয়ামতের দিন (আমার হাউজের নিকট) আমার উদ্দেশ্যে আগমন করবে’। অপর এক বর্ণনায় এসেছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বলেন, “এমন এক সম্প্রদায়ের লোকেরা আগমন করবে, যাদের আমি চিনি এবং তারাও আমাকে চিনে। তারপর তাদের মাঝে ও আমার মাঝে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হবে। তখন আমি বলব, তারা আমার উম্মত তাদের কেন বাধা দাও? তখন বলা হবে, তুমি জাননা, তারা তোমার পর কি কি আবিষ্কার করেছিল! এ কথা শোনে আমি যারা আমার পর [আমার দ্বীনের মধ্যে] পরিবর্তন পরিবর্ধন করেছিল তাদের জন্য বলব, দুর হও, দুর হও”। আব্দুল্লাহ ইব্ন আব্বাস রা. বলেন, سُحقاً শব্দের অর্থ بُعداً দূর হও। সহীহ বুখারি, হাদিস নং ৬৫৮৩, সহীহ মুসলিম, হাদিস নং ২২৯২।
[51]. মুত্তাফাকুন আলাইহ : সহীহ বুখারি, তাফসীর অধ্যায়, সূরা আর-রহমান এর তাফসীর: হাদীস নং: ৪৮৭৯। সহীহ মুসলিম, জান্নাত ও তার নেয়ামতসমূহের বর্ণনা অধ্যায়, পরিচ্ছেদ: জান্নাতের তাঁবু সমূহের আলোচনা, হাদীস নং: ২৮৩৮। সহীহ মুসলিমের অপর এক বর্ণনায় এসেছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বলেন,
« إن للمؤمن في الجنة لخيمةً من لؤلؤة واحدةٍ مجوفة طولها في السماء ستون ميلاً »
“জান্নাতে মুমিনদের জন্য মণি মুক্ত দ্বারা একটি তাঁবু থাকবে, যার দৈর্ঘ্য আসমানে ষাট মাইল। উভয় বর্ণনায় বর্ণিত দৈর্ঘ্য ও প্রস্থের বর্ণনার মধ্যে কোন পার্থক্য নাই। জান্নাতের প্রশস্ততা সমতল হওয়ার দিক বিবেচনায় ষাট মাইল। আর জান্নাতের দৈর্ঘ্য আসমানে ষাট মাইল। সুতরাং জান্নাতের দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ উভয়টি বরাবর। ইমাম নববী, শরহে সহীহ মুসলিম, দেখুন: ১৭৫/১৭।
[52].সূরা আয-যুমার, আয়াত: ২০।
[53]. দেখুন- আল্লামা ইবনে কাসীরের তাফসীরুল কুরআন আল আযীম, পৃ: ৬৭২/৪।
[54]. আহমদ, মুসনাদ ৩৪৩/৫, ইবনে হিব্বান ৬৪১, তিরমিযি আলী রা. হতে, অধ্যায়: জান্নাতের বর্ণনা, পরিচ্ছেদ: জান্নাতের রুমসমূহের বর্ণনা। হাদিস নং ২৫২৭। আল্লামা আলবানী সহীহ সুনান আত-তিরমিযিতে হাদিসটিকে হাসান বলে আখ্যায়িত করেন। জামে তিরমিযি: ২২০/২ হাদিস নং ২১১৯।
[55]. মাটি: যা দেয়ালের সাথে আস্তর হিসেবে ব্যবহার করা হয়। দেখুন, আন-নিহায়া হাদীসের শব্দের অর্থ সমূহের বর্ণনায়, পৃ: ৩৫৭/৪।
[56]. তিরমিযি, জান্নাতের বর্ণনা অধ্যায়, পরিচ্ছেদ: জান্নাতের গুণাগুণ ও নেয়ামত সমূহের বর্ণনা, হাদিস নং ২৫২৬, আহমদ ৩০৫/২। আল্লামা আলবানী রহ. বিশুদ্ধ তিরমিযিতে হাদীসটিকে সহীহ বলে আখ্যায়িত করেছেন, পৃ: ৩১১/২।
[57]. আল্লামা ইবনুল কাইয়্যুমের কাসিদার ব্যাখ্যা আহমদ বিন ঈসার ৫৪২/২ -৫৪৮।
[58]. সূরা আত-তূর. আয়াত: ২০।
[59]. আল্লামা ইবনুল কাইয়্যুমের কাসিদার ব্যাখ্যা আহমদ বিন ঈসার ৫৪২/২ -৫৪৮।
[60]. হুরদের গুণাগুণ সম্পর্কিত হাদিস অনেক। অনুরুপভাবে জান্নাতীদের আবাস স্থানের গুণাগুণ সম্পর্কিত হাদিসও অনেক। নিম্নে সংক্ষেপে কয়েকটি হাদিসের কথা আলোচনা করা হল। হুরের বর্ননা সম্পর্কে অনেক হাদিস বর্ণিত। যেমন আবু হুরাইরা রা. হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বলেন,
« إن أول زمرة يدخلون الجنة على صورة القمر ليلة البدر، والذين يلونهم على أشد كوكب دُرِّيّ في السماء إضاءة، لكل امرئٍ منهم زوجتان اثنتان يُرى مُخُّ سُوقهما من وراء اللحم، وما في الجنة أعزب »
“প্রথম গ্রুপ যেটি জান্নাতে প্রবেশ করবে, তারা চৌদ্দ তারিখের চাঁদের আকৃতিতে প্রবেশ করবে, তারপর যারা জান্নাতে প্রবেশ করবে, তারা আকাশে প্রজ্জলিত নক্ষত্রের মত হবে। তাদের প্রত্যেকের জন্য দুইজন স্থী থাকবে। তাদের স্ত্রীদের সৌন্দর্য এত বেশি হবে, চামড়ার উপর দিয়ে তাদের পায়ের নলার মগজ দেখা যাবে। আর জান্নাতে আশ্চর্য্য বলতে কিছু নাই”। সহীহ বুখারি, হাদিস নং ৩২৪৫, ৩২৫৪, ৩৩২৭ আর সহীহ মুসলিমে এ শব্দে হাদীস নং ২৮৩৪। আনাস রা. হতে হাদিস বর্ণিত,
« ولو أن امرأة من نساء أهل الجنة اطّلعت على أهل الأرض لأضاءت ما بينهما، ولملأت ما بينهما ريحاً، ولَـنَصِيفُها على رأسها – يعني خمارَها – خير من الدنيا وما فيها »
“জান্নাতের কোন নারী যদি যমীনবাসীর উপর উঁকি মারত, তাহলে সমগ্র দুনিয়া আলোকিত হয়ে যেত, আসমান ও মধ্যবর্তী স্থান সুঘ্রাণে পরিপূর্ণ হয়ে যেত। তাদের মাথার উপর যে ওড়না ব্যবহার করা হয়, দুনিয়া ও দুনিয়াতে যা কিছু আছে তা হতে অধিক উত্তম”। বুখারি হাদিস নং ৬৫৬৮, ২৭৯৬। আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রা. হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বলেন,
«أول زمرة يدخلون الجنة كأنّ وجوههم ضوء القمر ليلةَ البدر، والزمرة الثانية على لون أحسن كوكب دُرّيّ في السماء، لكل رجل منهم زوجتان من الحور العين، على كل زوجة سبعون حُلّة، يُرى مُخُّ سُوقهما من وراء لحومِهِما، وحُللهما، كما يُرى الشَّرابُ الأحمرُ في الزجاجة البيضاء »
“প্রথম দল যেটি জান্নাতে প্রবেশ করবে, তাদের চেহারা চৌদ্দ তারিখের চাঁদের মত উজ্জল হবে। আর দ্বিতীয় জামাত যারা জান্নাতে প্রবেশ করবে, তারা আসমানে প্রজ্জলিত নক্ষত্র হতেও অধিক সুন্দর হবে। তাদের প্রতিটি ব্যক্তির জন্য ‘হুরে ঈন’ থেকে দুটি করে স্ত্রী থাকবে। আর প্রতিটি স্ত্রীর জন্য সত্তুরটি চাদর থাকবে। তাদের পায়ের গোড়ালীর মগজ তাদের চামড়ার উপর থেকে দেখা যাবে। আর তাদের চাদরের সৌন্দর্য হল, সাদা কাঁচের গ্লাসে লাল মদের মত”। তাবরানী, আল-মু‘জাম আল-কাবীর ১৬০/১ হাদিস নং ১০৩২১, আল্লামা ইবুল কাইয়ুম রহ. হাদিয়ুল আরওয়াহ, পৃ: ৩৪৬ কিতাবে লিখেন, এ হাদিসটির সনদ বুখারির শর্তানুযায় সহীহ। আর আল্লামা হাইসামী মাজমায়ুয যাওয়ায়েদ ৪১১/১০ কিতাবে লিখেন, ইবনে মাসউদ হতে বর্ণিত হাদিসটির সনদ বিশুদ্ধ।
জান্নাতীদের ঘর-বাড়ী, প্রাসাদ ও বাসস্থান সম্পর্কে একাধিক হাদিস বর্ণিত, যেমন আবু হুরাইরা রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
« أن النبي صلى الله عليه وسلم رأى امرأة وقصراً من ذهب لعمر في الجنة، »
রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ ওমর রা. এর জান্নাতে একজন রমণী ও একটি স্বর্ণের প্রাসাদ দেখতে পান। বুখারি হাদিস নং: ৩২৪২, ৭০২৪ এবং মুসলিম: ২৩৪৯, ২৩৪৫ অপর একটি হাদিসে বর্ণিত-
«وجاء جبريل عليه السلام ، إلى النبي صلى الله عليه وسلم وأمره أن يبشّر خديجة ببيت في الجنة من قصبٍ، لا صَخَبَ فيه ولا نَصَبَ »
একবার জিবরীল আ. রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ এর নিকট এসে তাকে নির্দেশ দেন তিনি যেন খাদিজা রা. এ সু-সংবাদ দেন, জান্নাতে তার জন্য মণিমুক্তা দ্বারা একটি বাড়ী রয়েছে, যাতে কোন প্রকার ছিদ্র নাই এবং কোন ফাটল নাই। বুখারি হাদিস নং ৩৮২০ এবং মুসলিম ২৪৩২। এখানে قصب শব্দের অর্থ গোলাকার মণি মুক্তা। আবার কেউ কেউ বলেন, মণিমুক্তা ও ইয়াকুত পাথর খচিত ঘর। ফতহুল বারী ১৩৮/৭। ওসমান রা. হতে বর্ণিত রাসূল. বলেন,
« من بنى مسجداً لله بنى الله له بيتاً في الجنة »
“যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য একটি মসজিদ নির্মাণ করবে, আল্লাহ তা’আলা জান্নাতে তার জন্য একটি ঘর নির্মাণ করবে”। মুসলিম: ৫৩৩ বুখারি: ৪৫০ শব্দগুলো মুসলিমের। উম্মে হাবীবা রা. হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বলেন,
«ما من مسلم يصلي لله كل يوم ثنتي عشرة ركعة تطوعاً غير فريضة إلا بنى الله له بيتاً في الجنة، أو إلا بُنِيَ له بيت في الجنة »
“যদি কোন ব্যক্তি প্রতিদিন ফরয সালাত ছাড়া বার রাকাত নফল সালাত আদায় করে, আল্লাহ তা’আলা তার জন্য জান্নাতে একটি বাড়ী বানাবে। অথবা তার জন্য জান্নাতে একটি বাড়ী বানানো হবে। সহীহ মুসলিম-৭২৮। ইমাম তিরমিযি ব্যখ্যা করে বলেন যে, এখানে সালাত দ্বারা উদ্দেশ্য হল, সুন্নাতে রাওয়াতেব সমূহ।
আর কামরাবাসীদের জান্নাতে অধিক সম্মান ও উচ্চাসন থাকবে। এ কারণে আবু সাঈদ খুদরী রা. এর হাদিসে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বলেন,
« إن أهل الجنة ليتراءون أهل الغرف من فوقهم كما تتراءون الكوكب الدرّي الغابر من الأفق من المشرق أو المغرب، لتفاضل ما بينهم » ، قالوا: يا رسول الله: تلك منازل الأنبياء، لا يبلغها غيرهم، قال: «بلى، والذي نفسي بيده، رجال آمنوا بالله، وصدّقوا المرسلين »
“নিশ্চয় জান্নাতীরা জান্নাতে তাদের মাথার উপর থেকে কামরাবাসীদের দেখতে পাবে যেমনটি দেখতে পাবে প্রজ্জলিত নক্ষত্র আসমানের পশ্চিম বা পূর্ব প্রান্তে উদীয়মান। জান্নাতীদের মধ্যে তাদের মর্যাদা ও সম্মান অধিক হওয়ার কারণে। সাহাবীরা জিজ্ঞাসা করল, হে আল্লাহর রাসূল, এতো নবীদের স্তর। এ স্তরে নবীরা ছাড়া অন্য কেউ পৌছতে পারবে না। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বললেন, হ্যাঁ, আমি সে সত্ত্বার কসম করে বলছি যার হাতে আমার জীবন, তারা হল, ঐ সব লোক যারা আল্লাহর প্রতি ঈমান এনেছে এবং নবীদের বিশ্বাস করেছেন। সহীহ মুসলিম-২৮৩১।
[61]. সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ২৫।
[62]. সূরা আল-মুরসালাত, আয়াত: ৪১-৪৪।
[63]. সূরা আল-ওয়াকেয়া, আয়াত: ২০, ২১।
[64]. সহীহ মুসলিম, কিতাবুল জান্নাহ ও নেয়ামতসমূহের বর্ণনা। পরিচ্ছেদ: জান্নাত ও জান্নাতীদের গুনাগুণের বর্ণনা এবং তাদের তাসবীহ- হাদিস নং ২৮৩৫।
[65]. জান্নাতীদের আল্লাহ তা’আলা কত নেয়ামত দান করবেন তা একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না। যেমন আবু হুরাইরা রা. হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বলেন,
« يقول الله تعالى: أعددت لعبادي الصالحين ما لا عين رأت، ولا أذن سمعت، ولا خطر على قلب بشر، فاقرأوا إن شئتم: ﴿فَلَا تَعۡلَمُ نَفۡسٞ مَّآ أُخۡفِيَ لَهُم مِّن قُرَّةِ أَعۡيُنٖ جَزَآءَۢ بِمَا كَانُواْ يَعۡمَلُونَ ١٧﴾ [السجدة: ١٧]
“অতঃপর কোন ব্যক্তি জানে না তাদের জন্য চোখ জুড়ানো কী জিনিস লুকিয়ে রাখা হয়েছে, তারা যা করত, তার বিনিময়স্বরূপ”।[সূরা আস-সাজদা, আয়াত: ১৭] আল্লাহ তা’আলা বলবেন, আমি আমার নেক বান্দাদের জন্য এমন সব জিনিস তৈরি করেছি যা কোন চোখ কখনো দেখেনি, কোন কান শুনেনি এবং কোন মানুষের অন্তর কখনো তা চিন্তা করেনি। তোমরা যদি চাও এ কথার সমর্থনে এ আয়াত-
﴿ فَلَا تَعۡلَمُ نَفۡسٞ مَّآ أُخۡفِيَ لَهُم مِّن قُرَّةِ أَعۡيُنٖ جَزَآءَۢ بِمَا كَانُواْ يَعۡمَلُونَ ١٧ ﴾ [السجدة: ١٧]
“অতঃপর কোন ব্যক্তি জানে না তাদের জন্য চোখ জুড়ানো কী জিনিস লুকিয়ে রাখা হয়েছে, তারা যা করত, তার বিনিময়স্বরূপ”। [সূরা সেজদা, আয়াত: ১৭] - তিলাওয়াত করতে পার। বুখারি-৩২৪৪, মুসলিম-২৮২৪। আবু হুরাইরা রা. হতে বর্ণিত হাদীসে এসেছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বলেন,
«أول زمرة تدخل الجنة على صورة القمر ليلة البدر، ثم الذين يلونهم على أشدّ كوكب دُرّيٍّ في السماء إضاءة: لا يبولون، ولا يتغوّطون، ولا يتفلون، ولا يمتخّطون، أمشاطهم الذهب، ورشحهم المسك، ومجامرهم الألوّة الأنجوم عود الطيب، وأزواجهم الحور العين، على خلق رجل واحد، على صورة أبيهم آدم ستون ذراعاً في السماء»
“সর্ব প্রথম যে দলটি জান্নাতের প্রবেশ করবে তার আকৃতি হবে চৌদ্দ তারিখের চাঁদের আকৃতি। তারপর যারা তাদের কাছাকাছি জান্নাতের প্রবেশ করবেন, তাদের আকৃতি হবে আকাশে প্রজ্জলিত নক্ষত্রের মত, তারা সেখানে পেশাব করবে না, পায়খানা করবে না, তাদের কোন থুথু হবে না, তাদের চিরনি হবে স্বর্ণের, তাদের ঘাম হবে মিশকের, তাদের স্ত্রীরা হবে ডাগর চোখ বিশিষ্ট হুর। তাদেরকে একই ব্যক্তির আকৃতিতে সৃষ্টি করা হবে। অর্থাৎ, তাদের পিতা আদম আ. এর আকৃতি। তাদের দৈর্ঘ্য হবে ষাট গজ। অপর এক বর্ণনায় বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বলেন,
«... ولكل واحد منهم زوجتان، كل واحدة منهما يُرى مخُّ ساقها من وراء اللحم من الحسن، لا اختلاف بينهم ولا تباغض، قلوبهم على قلب رجل واحد »، [البخاري، 3245، 3246، 3254، 3327، ومسلم، برقم 2834]
“প্রতিটি জান্নাতীর জন্য দু’জন করে স্ত্রী থাকবে, তারা এত সুন্দর হবে, তাদের চামড়ার উপর দিয়ে তাদের পায়ের গোড়ালীর মগজ পর্যন্ত দেখা যাবে। জান্নাতীদের মধ্যে কোন ধরনের বিভেদ ও মতবিরোধ থাকবে না, কোন ধরনের হিংসা-বিদ্বেষ থাকবে না। তাদের অন্তর এক ব্যক্তির অন্তরের মত হবে। বুখারি: ৩২৪৫, ৩২৪৬, ৩৩২৭ এবং মুসলিম, ২৮৩৪।
রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ আরও বলেন,
« وأبواب الجنة ثمانية، ما بين مصراعين من مصاريع الجنة مسيرة أربعين سنة، وليأتين عليها يوم وهو كظيظ من الزحام » [مسلم، برقم 234، ورقم 2967].
“জান্নাতের দরজাসমূহ আটটি। জান্নাতের দরজাসমূহের দুটি চৌকাটের দূরত্ব চল্লিশ বছরের দূরত্বের সমান। অচীরেই তার উপর এমন একটি দিন আসবে সেদিন মানুষের ভিড়ের কারণে জান্নাতের দরজাগুলো লোকারণ্য থাকবে। মুসলিম: হাদিস নং ২৩৪, ২৯৬৭।
« وأول من يدخل الجنة فيستفتح فتفتح له أبوابها محمد صلى الله عليه وسلم،» [مسلم، برقم 196، 197] .
‘সর্ব প্রথম যিনি জান্নাতে প্রবেশ করবে তিনি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’। তিনি দরজা খুলে দেয়ার জন্য অনুমতি চাইলে তার জন্য দরজা খুলে দেয়া হবে। [মুসলিম: ১৯৬, ১৯৭] জান্নাতের স্তরসমূহ: সবোর্চ্চ স্তর হল, ‘ওয়াসিলা’ - এটি রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ এর জন্য খাস। এটি আল্লাহর আরশের অতি কাছের একটি স্তর এবং আল্লাহর নিকট সর্বাধিক প্রিয়। মুসলিম: ৩৮৪, আল্লামা ইবনুল কাইয়্যেমের হাদীয়ূল আরওয়াহ পৃ: ৯৯।
জান্নাতুল ফিরদাউস: রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বলেন,
«إن في الجنة مائة درجة أعدّها الله للمجاهدين في سبيله، كل درجتين ما بينهما كما بين السماء والأرض، فإذا سألتم الله فاسألوه الفردوس، فإنه أوسط الجنة، وأعلى الجنة، وفوقه عرش الرحمن» [البخاري، 2790، 7423]،
“জান্নাতে একশটি স্তর আছে এ সব স্তরসমূহকে আল্লাহ তা’আলা আল্লাহর রাহের মুজাহিদদের জন্য তৈরি করেছেন, দুটি দরজার মধ্যবর্তী স্থানের দূরত্ব আসমান ও যমীনের দূরত্বের সমান। আর যখন তোমরা জান্নাত কামনা কর, তখন তোমরা জান্নাতুল ফিরদাউস কামনা কর। কারণ এটি জান্নাতের মধ্যমণি এবং উন্নত জান্নাত। তার উপর রয়েছে আল্লাহর আরশ। বুখারি ২৭৯০,৭৪২৩। আবু সাঈদ খুদরী রা. হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ এরশাদ করেন-
«أنه يقال لصاحب القرآن يوم القيامة إذا دخل الجنة: اقرأ واصعد، فيقرأ ويصعد بكل آية درجة، حتى يقرأ آخر شيء معه » [أحمد في المسند، 3/40]،
“কিয়ামতের দিন কুরআনওয়ালাকে বলা হবে, যখন সে জান্নাতে প্রবেশ করবে, তুমি তিলাওয়াত কর এবং উপরের দিক উঠতে থাক তখন সে প্রতি আয়াত তিলাওয়াতের অনুকুলে জান্নাতের একটি স্তর অতিক্রম করতে থাকবে। এভাবে চলতে চলতে শেষ আয়াত পর্যন্ত তিলাওয়াত করবে”। আহমদ রহ. মুসনাদ [৪০/৩]।
আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা. হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বলেন,
«يُقال لصاحب القرآن: اقرأ، وارقَ، ورتِّل كما كنت تُرتّل في الدنيا، فإن منزلتك عند آخر آية تقرؤها» [الترمذي، برقم 3003، وأحمد، 2/192، وحسنه الألباني في صحيح الترمذي، 3/10].
কুরআনওয়ালাকে বলা হবে, তুমি কুরআন পড় এবং উপরের দিক উঠতে থাক। দুনিয়াতে তুমি যেভাবে কুরআন তিলাওয়াত করতে, সেভাবে তিলাওয়াত কর। কারণ, তোমার অবস্থান শেষ আয়াত যা তুমি দুনিয়াতে তিলাওয়াত করতে”। [তিরমিযি ৩০০৩, আহমদ: ১৯২/২, আল্লামা আলবানী সহীহ তিরমিযি ১০/৩ তে হাদীসটিকে সহীহ আখ্যায়িত করেন] মোট কথা জান্নাতীদের জন্য জান্নাতে রয়েছে তাদের মন যা চায়। চোখে যা দেখতে পায়। সাধারণ একজন জান্নাতীকে বলা হবে,
«ولك ما اشتهت نفسك، ولذّت عينك» [انظر: سورة الزخرف، الآيات: 70-73، ومسلم، برقم 189].
“তোমার জন্য রয়েছে, তোমার মন যা চায়, তা এবং তোমার চোখ যাতে খুশি হয় তা। দেখুন- [সূরা যুখরফ, আয়াত: ৭০-৭৩, মুসলিম হাদীস নং: ১৮৯]
আর মুমিনদের জন্য জান্নাতে সব চেয়ে বড় নেয়ামত হল, আল্লাহর চেহারার দিকে তাকানো। সুহাইব রা. হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বলেন,
«إذا دخل أهل الجنة الجنة يقول الله تعالى: تريدون شيئاً أزيدكم؟ فيقولون: ألم تُبيِّض وجوهنا، وتدخلنا الجنة وتنجِّنا من النار؟ فيكشف الحجاب، فما أُعطوا شيئاً أحبّ إليهم من النظر إلى ربهم » [مسلم، برقم 181].
“যখন জান্নাতীরা জান্নাতে প্রবেশ করবে, তখন আল্লাহ তা’আলা জান্নাতীদের বলবে, তোমরা আর কিছু চাও? আমি তোমাদের বাড়িয়ে দেব। তখন তারা বলবে, তুমি কি আমাদের চেহারাকে উজ্জল করনি? আমাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করাওনি? এবং জাহান্নাম হতে নাজাত দাওনি? তারপর আল্লাহ তা’আলা তার আবরণ খুলে দেবে। জান্নাতীদের জন্য আল্লাহর দিকে তাকানোর চেয়ে অধিক উত্তম কোন নেয়ামত তাদের দেয়া হয়নি”। [মুসলিম: হাদিস নং: ১৮১]
[66]. এ বিষয়টির উপর আল-ইবন আব্দুর রহমান রহ. স্বীয় কিতাব ‘ফাওযুল আযীম’-এ পাঠকের উপকারার্থে অনেক গুলো আয়াত উল্লেখ করেন। যেমন- আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন,
﴿أَلَمۡ تَكُنۡ ءَايَٰتِي تُتۡلَىٰ عَلَيۡكُمۡ فَكُنتُم بِهَا تُكَذِّبُونَ ١٠٥ قَالُواْ رَبَّنَا غَلَبَتۡ عَلَيۡنَا شِقۡوَتُنَا وَكُنَّا قَوۡمٗا ضَآلِّينَ ١٠٦ رَبَّنَآ أَخۡرِجۡنَا مِنۡهَا فَإِنۡ عُدۡنَا فَإِنَّا ظَٰلِمُونَ ١٠٧ قَالَ ٱخۡسَُٔواْ فِيهَا وَلَا تُكَلِّمُونِ ١٠٨ إِنَّهُۥ كَانَ فَرِيقٞ مِّنۡ عِبَادِي يَقُولُونَ رَبَّنَآ ءَامَنَّا فَٱغۡفِرۡ لَنَا وَٱرۡحَمۡنَا وَأَنتَ خَيۡرُ ٱلرَّٰحِمِينَ ١٠٩ فَٱتَّخَذۡتُمُوهُمۡ سِخۡرِيًّا حَتَّىٰٓ أَنسَوۡكُمۡ ذِكۡرِي وَكُنتُم مِّنۡهُمۡ تَضۡحَكُونَ ١١٠ إِنِّي جَزَيۡتُهُمُ ٱلۡيَوۡمَ بِمَا صَبَرُوٓاْ أَنَّهُمۡ هُمُ ٱلۡفَآئِزُونَ ١١١﴾ [المؤمنون: ١٠٥، ١١١]
‘আমার আয়াতসমূহ কি তোমাদের কাছে পাঠ করা হত না?’ তারপর তোমরা তা অস্বীকার করতে’। তারা বলবে, ‘হে আমাদের রব, দুর্ভাগ্য আমাদেরকে পেয়ে বসেছিল, আর আমরা ছিলাম পথভ্রষ্ট’। ‘হে আমাদের রব, এ থেকে আমাদেরকে বের করে দিন, তারপর যদি আমরা আবার তা করি তবে অবশ্যই আমরা হব যালিম। ’আল্লাহ বলবেন, ‘তোমরা ধিকৃত অবস্থায় এখানেই থাক, আর আমার সাথে কথা বলো না।’ আমার বান্দাদের একদল ছিল যারা বলত, ‘হে আমাদের রব, আমরা ঈমান এনেছি, অতএব আমাদেরকে ক্ষমা ও দয়া করুন,আর আপনি সর্বশ্রেষ্ঠ দয়ালু। তারপর তাদেরকে নিয়ে তোমরা ঠাট্টা করতে। অবশেষে তা তোমাদেরকে আমার স্মরণ ভুলিয়ে দিয়েছিল। আর তোমরা তাদের নিয়ে হাসি-তামাশা করতে।’ নিশ্চয় আমি তাদের ধৈর্যের কারণে আজ তাদেরকে পুরস্কৃত করলাম; নিশ্চয় তারাই হল সফলকাম। [সূরা আল-মুমিন, আয়াত: ১০৫-১১১] আল্লাহ বলেন,
﴿ إِنَّ ٱلَّذِينَ كَفَرُواْ يُنَادَوۡنَ لَمَقۡتُ ٱللَّهِ أَكۡبَرُ مِن مَّقۡتِكُمۡ أَنفُسَكُمۡ إِذۡ تُدۡعَوۡنَ إِلَى ٱلۡإِيمَٰنِ فَتَكۡفُرُونَ ١٠ قَالُواْ رَبَّنَآ أَمَتَّنَا ٱثۡنَتَيۡنِ وَأَحۡيَيۡتَنَا ٱثۡنَتَيۡنِ فَٱعۡتَرَفۡنَا بِذُنُوبِنَا فَهَلۡ إِلَىٰ خُرُوجٖ مِّن سَبِيلٖ ١١ ذَٰلِكُم بِأَنَّهُۥٓ إِذَا دُعِيَ ٱللَّهُ وَحۡدَهُۥ كَفَرۡتُمۡ وَإِن يُشۡرَكۡ بِهِۦ تُؤۡمِنُواْۚ فَٱلۡحُكۡمُ لِلَّهِ ٱلۡعَلِيِّ ٱلۡكَبِيرِ ١٢ ﴾ [غافر: ١٠، ١٢]
“নিশ্চয় যারা কুফরী করেছে তাদেরকে উচ্চকণ্ঠে বলা হবে; ‘তোমাদের নিজদের প্রতি তোমাদের (আজকের) এ অসন্তোষ অপেক্ষা অবশ্যই আল্লাহর অসন্তোষ অধিকতর ছিল, যখন তোমাদেরকে ঈমানের প্রতি আহ্বান করা হয়েছিল তারপর তোমরা তা অস্বীকার করেছিলে’। তারা বলবে, ‘হে আমাদের রব, আপনি আমাদেরকে দু’বার মৃত্যু দিয়েছেন এবং দু’বার জীবন দিয়েছেন। অতঃপর আমরা আমাদের অপরাধ স্বীকার করছি। অতএব (জাহান্নাম থেকে) বের হবার কোন পথ আছে কি’? [তাদেরকে বলা হবে] ‘এটা তো এজন্য যে, যখন আল্লাহকে এককভাবে ডাকা হত তখন তোমরা তাঁকে অস্বীকার করতে আর যখন তাঁর সাথে শরীক করা হত তখন তোমরা বিশ্বাস করতে। সুতরাং যাবতীয় কর্তৃত্ব সমুচ্চ, মহান আল্লাহর’। [সূরা গাফের, আয়াত: ১০, ১২] আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন,
﴿ وَقَالَ ٱلَّذِينَ فِي ٱلنَّارِ لِخَزَنَةِ جَهَنَّمَ ٱدۡعُواْ رَبَّكُمۡ يُخَفِّفۡ عَنَّا يَوۡمٗا مِّنَ ٱلۡعَذَابِ ٤٩ قَالُوٓاْ أَوَ لَمۡ تَكُ تَأۡتِيكُمۡ رُسُلُكُم بِٱلۡبَيِّنَٰتِۖ قَالُواْ بَلَىٰۚ قَالُواْ فَٱدۡعُواْۗ وَمَا دُعَٰٓؤُاْ ٱلۡكَٰفِرِينَ إِلَّا فِي ضَلَٰلٍ ٥٠ ﴾ [غافر: ٤٩، ٥٠]
“আর যারা আগুনে থাকবে তারা আগুনের দারোয়ানদেরকে বলবে, ‘তোমাদের রবকে একটু ডাকো না! তিনি যেন একটি দিন আমাদের আযাব লাঘব করে দেন।’ তারা বলবে, ‘তোমাদের কাছে কি সুস্পষ্ট প্রমাণাদিসহ তোমাদের রাসূলগণ আসেনি’? জাহান্নামীরা বলবে, ‘হ্যাঁ অবশ্যই’। দারোয়ানরা বলবে, ‘তবে তোমরাই দো‘আ কর। আর কাফিরদের দো‘আ কেবল নিষ্ফলই হয়”। [সূরা গাফের, আয়াত: ৪৯, ৫০] আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আরও বলেন,
﴿ وَنَادَوۡاْ يَٰمَٰلِكُ لِيَقۡضِ عَلَيۡنَا رَبُّكَۖ قَالَ إِنَّكُم مَّٰكِثُونَ ٧٧ لَقَدۡ جِئۡنَٰكُم بِٱلۡحَقِّ وَلَٰكِنَّ أَكۡثَرَكُمۡ لِلۡحَقِّ كَٰرِهُونَ ٧٨ ﴾ [الزخرف: ٧٧، ٧٨]
“তারা চিৎকার করে বলবে, ‘হে মালিক, তোমার রব যেন আমাদেরকে শেষ করে দেন’। সে বলবে, ‘নিশ্চয় তোমরা অবস্থানকারী’।‘অবশ্যই তোমাদের কাছে আমি সত্য নিয়ে এসেছিলাম; কিন্তু তোমাদের অধিকাংশই ছিলে সত্য অপছন্দকারী”। [সূরা যুখরফ, আয়াত: ৭৭, ৭৮]
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আরও বলেন,
﴿ وَنَادَىٰٓ أَصۡحَٰبُ ٱلۡجَنَّةِ أَصۡحَٰبَ ٱلنَّارِ أَن قَدۡ وَجَدۡنَا مَا وَعَدَنَا رَبُّنَا حَقّٗا فَهَلۡ وَجَدتُّم مَّا وَعَدَ رَبُّكُمۡ حَقّٗاۖ قَالُواْ نَعَمۡۚ فَأَذَّنَ مُؤَذِّنُۢ بَيۡنَهُمۡ أَن لَّعۡنَةُ ٱللَّهِ عَلَى ٱلظَّٰلِمِينَ ٤٤ ﴾ [الاعراف: ٤٤]
“আর জান্নাতের অধিবাসীগণ আগুনের অধিবাসীদেরকে ডাকবে যে, ‘আমাদের রব আমাদেরকে যে ওয়াদা দিয়েছেন তা আমরা সত্য পেয়েছি। সুতরাং তোমাদের রব তোমাদেরকে যে ওয়াদা দিয়েছেন, তা কি তোমরা সত্যই পেয়েছ’? তারা বলবে, ‘হ্যাঁ’। অতঃপর এক ঘোষক তাদের মধ্যে ঘোষণা দেবে যে, আল্লাহর লা’নত যালিমদের উপর”। [সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ৪৪] আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন,
﴿ وَنَادَىٰٓ أَصۡحَٰبُ ٱلنَّارِ أَصۡحَٰبَ ٱلۡجَنَّةِ أَنۡ أَفِيضُواْ عَلَيۡنَا مِنَ ٱلۡمَآءِ أَوۡ مِمَّا رَزَقَكُمُ ٱللَّهُۚ قَالُوٓاْ إِنَّ ٱللَّهَ حَرَّمَهُمَا عَلَى ٱلۡكَٰفِرِينَ ٥٠ ٱلَّذِينَ ٱتَّخَذُواْ دِينَهُمۡ لَهۡوٗا وَلَعِبٗا وَغَرَّتۡهُمُ ٱلۡحَيَوٰةُ ٱلدُّنۡيَاۚ فَٱلۡيَوۡمَ نَنسَىٰهُمۡ كَمَا نَسُواْ لِقَآءَ يَوۡمِهِمۡ هَٰذَا وَمَا كَانُواْ بَِٔايَٰتِنَا يَجۡحَدُونَ ٥١ ﴾ [الاعراف: ٥٠، ٥١]
“আর আগুনের অধিবাসীরা জান্নাতের অধিবাসীদেরকে ডেকে বলবে, ‘আমাদের উপর কিছু পানি অথবা তোমাদেরকে আল্লাহ যে রিযক দিয়েছেন, তা ঢেলে দাও’। তারা বলবে, ‘নিশ্চয় আল্লাহ তা কাফিরদের উপর হারাম করেছেন’। ‘যারা তাদের ধর্মকে গ্রহণ করেছে খেলা ও তামাশারূপে এবং তাদেরকে দুনিয়ার জীবন প্রতারিত করেছে’। সুতরাং আজ আমি তাদেরকে ভুলে যাব, যেমন তারা তাদের এই দিনের সাক্ষাতকে ভুলে গিয়েছিল। আর (যেভাবে) তারা আমার আয়াতসমূহকে অস্বীকার করত। [সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ৫০, ৫১]
[67]. সূরা আল-মুতাফফিফিন, আয়াত: ১৫, ১৭।
[68]. সূরা যুখরুফ, আয়াত: ৭৪,৭৫।
[69]. সূরা আন-নাবা, আয়াত: ৩০।
[70]. সূরা মুহাম্মদ: আয়াত: ১৫
[71]. আব্দুর রহমান নাসের আসসা’দী, তাফসীরুল করিম আররহমান পৃ: ৭৮৬।
[72]. সূরা আদ-দুখান, আয়াত: ৪৩-৪৯।
[73]. আল্লামা সা’দী, তাইসীরুল কারিম আররহমান পৃ: ৭৭৪।
[74]. মানুষকে ভয় দেখানো এবং সতর্ক করার উদ্দেশ্যে আল্লাহ তা’আলা তার স্বীয় কিতাব কুরআন কারীমে জাহান্নামের শাস্তির কথা অনেকবার উল্লেখ করেছেন এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ হাদীসে অসংখ্যবার জাহান্নামের শাস্তির বর্ণনা দিয়েছেন। আল্লাহ তা’আলা বলেন,
﴿فَٱتَّقُواْ ٱلنَّارَ ٱلَّتِي وَقُودُهَا ٱلنَّاسُ وَٱلۡحِجَارَةُۖ أُعِدَّتۡ لِلۡكَٰفِرِينَ ٢٤ ﴾ [البقرة: ٢٤]
“তাহলে আগুনকে ভয় কর যার জ্বালানী হবে মানুষ ও পাথর, যা প্রস্তুত করা হয়েছে কাফিরদের জন্য”। [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ২৪] আল্লাহ তা’আলা আরও বলেন,
﴿فَأَنذَرۡتُكُمۡ نَارٗا تَلَظَّىٰ ١٤ لَا يَصۡلَىٰهَآ إِلَّا ٱلۡأَشۡقَى ١٥ ٱلَّذِي كَذَّبَ وَتَوَلَّىٰ ١٦ ﴾ [الليل: ١٤، ١٦]
অতএব আমি তোমাদের সতর্ক করে দিয়েছি লেলিহান আগুন সম্পর্কে, তাতে নিতান্ত হতভাগা ছাড়া কেউ প্রবেশ করবে না; যে অস্বীকার করেছে এবং মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। [সূরা আল-লাইল, আয়াত: ১৪, ১৬]
রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ নিজেও মানুষকে জাহান্নামের আগুন ও শাস্তি হতে ভয় দেখান ও সতর্ক করেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বলেন,
« أنا آخذ بحُجَزكم عن النار، هلمَّ عن النار هلمَّ عن النار، فتغلبوني تقحمون فيها » [مسلم، 2284].
“আমি তোমাদের জাহান্নাম থেকে বাঁচানোর জন্য তোমাদের কোমর পেঁচিয়ে ধরব। আর তোমাদের বলতে থাকব, জাহান্নাম থেকে দূর হও, জাহান্নাম থেকে দূর হও। কিন্তু তোমরা আমাকে পরাহত করবে, তোমরা জাহান্নামে প্রবেশ করবে। [মুসলিম, হাদিস নং: ২২৮৪]
[75].আল্লাহ তা’আলা যে ভয় দেখান তার একটি প্রমাণ হল, আল্লাহ জাহান্নামের দরজাসমূহের বর্ণনা দিয়ে বলেন,
﴿وَإِنَّ جَهَنَّمَ لَمَوۡعِدُهُمۡ أَجۡمَعِينَ ٤٣ لَهَا سَبۡعَةُ أَبۡوَٰبٖ لِّكُلِّ بَابٖ مِّنۡهُمۡ جُزۡءٞ مَّقۡسُومٌ ٤٤ ﴾ [الحجر: ٤٣، ٤٤]
‘আর নিশ্চয় জাহান্নাম তাদের সকলের প্রতিশ্রুত স্থান’। ‘তার সাতটি দরজা রয়েছে। প্রতিটি দরজার জন্য রয়েছে তাদের মধ্য থেকে নির্দিষ্ট একটি শ্রেণী’। [সূরা আল-হিজর, আয়াত: ৪৩, ৪৪] রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বর্ণনা দেন-
«أن أهل النار يلعن بعضهم بعضاً، وكلما دخلت أمة لعنت أختها،
জাহান্নামীরা একে অপরের উপর অভিশাপ করবে, যখনই একটি জামাত জাহান্নামে প্রবেশ করবে, অপর জামাত তাদের অভিশাপ দেবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বলেন,
أن عمق النار في دركاتها سبعون عاماً يقول: « هذا حجر رُمي به في النار منذ سبعين خريفاً، فهو يهوي في النار الآن حتى انتهى إلى قعرها» [مسلم، برقم 2844].
“জাহান্নামের গভীরতা সত্তুর বছরের রাস্তা। তিনি বলেন, এটি একটি পাথর যাকে সত্তুর বছর থেকে নিক্ষেপ করা হয়েছে। আর সেটি এখন পর্যন্ত নীচের দিকে যাচ্ছে। পাথরটি ততদিন পর্যন্ত জাহান্নামে যেতে থাকবে যতদিন সে তার একেবারে গভীরে না পৌঁছবে। [মুসলিম, হাদিস নং: ২৮৪৪] রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ আরও বলেন,
«أن أهون أهل النار عذاباً يوم القيامة رجل على أخمص قدميه جمرتان يغلي منهما دماغه كما يغلي المرجل، ما يرى أن أحداً أشدّ منه عذاباً» [مسلم، برقم 213].
“কিয়ামতের দিন সর্বাধিক হালকা আযাব যাকে দেয়া হবে, সে হল, ঐ ব্যক্তি যাকে আগুনের কয়লার দুটি জুতো পরানো হবে। তার মগজ এরকম টগবগ করতে থাকবে যেমনটি টগবগ করতে থাকে পাতিলের গরম পানি। অথচ সে তার মত এত কষ্ট বা শাস্তি আর কাউকে দিচ্ছে বলে বিশ্বাস করতে পারবে না। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’বলেন,
« يُؤتى بجهنم يوم القيامة لها سبعون ألف زمام، مع كل زمام سبعون ألف مَلَك يجرّونها » [مسلم، برقم 2842].
“কিয়ামতের জাহান্নামকে উপস্থিত করা হবে, তখন তার জন্য সত্তরটি লাগাম থাকবে। প্রতিটি লাগামের সাথে সত্তুর হাজার ফেরেশতা থাকবে তারা জাহান্নাম টেনে নিয়ে আসবে। মুসলিম, হাদিস নং ২৮৪২। আল্লাহ তা’আলা বলেন,
﴿ ٖ يُصَبُّ مِن فَوۡقِ رُءُوسِهِمُ ٱلۡحَمِيمُ ١٩ يُصۡهَرُ بِهِۦ مَا فِي بُطُونِهِمۡ وَٱلۡجُلُودُ ٢٠ ﴾ [الحج: ١٩، ٢٠]
“তাদের মাথার উপর থেকে ঢেলে দেয়া হবে ফুটন্ত পানি। যার দ্বারা তাদের পেটের অভ্যন্তরে যা কিছু রয়েছে তা ও তাদের চামড়াসমূহ বিগলিত করা হবে”। [ সূরা আল-হজ্জ, আয়াত: ১৯, ২০] আল্লাহ তা’আলা আরও বলেন,
﴿ وَتَرَى ٱلۡمُجۡرِمِينَ يَوۡمَئِذٖ مُّقَرَّنِينَ فِي ٱلۡأَصۡفَادِ ٤٩ سَرَابِيلُهُم مِّن قَطِرَانٖ وَتَغۡشَىٰ وُجُوهَهُمُ ٱلنَّارُ ٥٠ ﴾ [ابراهيم: ٤٩، ٥٠]
“আর সে দিন তুমি অপরাধীদের দেখবে তারা শিকলে বাঁধা। তাদের পোশাক হবে আলকাতরার এবং আগুন তাদের চেহারাসমূহকে ঢেকে ফেলবে”। [সূরা ইবরাহিম, আয়াত: ৪৯, ৫০]
আল্লাহ তা’আলা জাহান্নামীদের দেহকে জাহান্নামে বড় করে দেবেন যাতে তাদের কষ্ট বেশি হয়। যেমন আবু হুরাইরা রা. হতে বর্ণিত রাসূর সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বলেন,
« ما بين منكبي الكافر مسيرة ثلاثة أيام للراكب المسرع » [البخاري، برقم 6552، ومسلم، برقم 2852]
“একজন কাফেরের কাঁধ একজন দ্রূতগামী আরোহীর তিন দিনের রাস্তার সমান চওড়া। [বুখারি হাদিস নং: ৬৫৫২, মুসলিম হাদিস নং: ২৮৫২] রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ আরও বলেন,
« ضرس الكافر أو ناب الكافر مثل أحد، وغِلَظُ جلده مسيرة ثلاث » [مسلم، برقم 2851].
“একজন কাফেরের দাঁত ওহুদ পাহাড়েরর সমান। আর তার চামড়া মোটা হওয়ার দূরত্ব তিন দিনের পথ। [মুসলিম, হাদিস নং: ২৮৫১]
জাহান্নামীরা কিয়ামত দিবসে তারা নিজেরাও ক্ষতির সম্মূখীন হবে এবং তাদের পরিবার পরিজনদেরও ক্ষতির সম্মূখীন করবে। আর এটি তাদের জন্য সু-স্পষ্ট ক্ষতি, আল্লাহর নিকট আমরা জাহান্নাম হতে আশ্রয় চাই। জাহান্নামীদের শাস্তি সম্পর্কে আল্লাহ তা’আলা বলেন,
﴿ إِنَّ ٱلَّذِينَ كَفَرُواْ بَِٔايَٰتِنَا سَوۡفَ نُصۡلِيهِمۡ نَارٗا كُلَّمَا نَضِجَتۡ جُلُودُهُم بَدَّلۡنَٰهُمۡ جُلُودًا غَيۡرَهَا لِيَذُوقُواْ ٱلۡعَذَابَۗ إِنَّ ٱللَّهَ كَانَ عَزِيزًا حَكِيمٗا ٥٦ ﴾ [النساء: ٥٦]
“নিশ্চয় যারা আমার আয়াতসমূহকে অস্বীকার করেছে, অচিরেই আমি তাদেরকে প্রবেশ করাব আগুনে। যখনই তাদের চামড়াগুলো পুড়ে যাবে তখনই আমি তাদেরকে পালটে দেব অন্য চামড়া দিয়ে যাতে তারা আস্বাদন করে আযাব। নিশ্চয় আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আরও বলেন,
﴿ يَوۡمَ تُقَلَّبُ وُجُوهُهُمۡ فِي ٱلنَّارِ يَقُولُونَ يَٰلَيۡتَنَآ أَطَعۡنَا ٱللَّهَ وَأَطَعۡنَا ٱلرَّسُولَا۠ ٦٦ ﴾ [الاحزاب: ٦٦]
“যেদিন তাদের চেহারাগুলো আগুনে উপুড় করে দেয়া হবে, তারা বলবে, ‘হায়, আমরা যদি আল্লাহর আনুগত্য করতাম এবং রাসূলের আনুগত্য করতাম”! [সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ৬৬] আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এরশাদ করে বলেন,
﴿ يَوۡمَ يُسۡحَبُونَ فِي ٱلنَّارِ عَلَىٰ وُجُوهِهِمۡ ذُوقُواْ مَسَّ سَقَرَ ٤٨ ﴾ [القمر: ٤٨]
“সেদিন তাদেরকে উপুড় করে টেনে হিঁচড়ে জাহান্নামে নেয়া হবে। (বলা হবে) জাহান্নামের ছোঁয়া আস্বাদন কর”। [সূরা আল-কামার, আয়াত: ৪৮] হাদিসে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বলেন,
«يحشر المتكبرون يوم القيامة أمثال الذر في صور الرجال، يغشاهم الذل من كل مكان، يُساقون إلى سجن في جهنم، يُسمَّى بولس، تعلوهم نارُ الأنيار، يسقون من عصارة أهل النار طينة الخَبَال » [الترمذي، برقم 2623، وأحمد، 2/189، وحسنه الألباني في صحيح الترمذي، 2/304].
“কিয়ামতের দিন অহংকারীদের একজন মানুষের আকৃতিতে অণুকণার মত করে একত্র করা হবে। তাদের চতুর্দিক থেকে অপমান ও লাঞ্ছনা গ্রাস করে ফেলবে। তাদেরকে জাহান্নামের মধ্যে বুলস নামক জেল খানায় টেনে নেয়া হবে। তাদের মাথার উপর থাকবে জাহান্নামের উত্তপ্ত আগুন। তাদের পান করানো হবে, জাহান্নামীদের দেহের পঁচা-গন্ধ পুজ ইত্যাদি”। তিরমিযি, হাদিস নং: ২৬২৩ আহমাদ হাদিস নং: ১৮৯/২ আর আল্লামা আলবানী সহীহ তিরমিযিতে হাদিসটিকে সহীহ বলে আখ্যায়িত করেন ৩০৪/২। আব্দুল্ল্লাহ ইবন্ কাইস রা. এর হাদিসে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বলেন,
« إن أهل النار ليبكون حتى لو أجريت السفن في دموعهم لجرت، وإنهم ليبكون الدم » يعني مكان الدمع، [الحاكم، 4/605، وصححه ووافقه الذهبي، وحسنه الألباني في الأحاديث الصحيحة، 4/245، برقم 1679].
জাহান্নামীরা কিয়ামতের দিন এ রকম কাঁদতে থাকবে যদি তাদের চোখের পানিতে কেউ নৌকা চালাতে চায় তবে সে নৌকা চালাতে পারবে। আর সেদিন তাদের চোখের পানি হবে রক্ত। অর্থাৎ চোখের পানির পরিবর্তে তাদের চোখ থেকে রক্ত বের হবে। [হাকিম ৬০৪/৪ এবং হাদিসটিকে সহীহ বলে আখ্যায়িত করেন। আর ইমাম যাহবী তার সাথে ঐকমত পোষণ করেন। আর আল্লামা আলবানী আহাদিসে সহীহা কিতাবে হাদিসটি হাসান বলে আখ্যায়িত করেন। দেখুন: ২৪৫/৪, হাদিস নং: ১৬৭৯]
আল্লাহ তা’আলা তার কিতাবে জাহান্নামীদের শাস্তি অনেক বর্ণনা করেছেন এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ হাদিসে অনেক সতর্ক করেছেন। আমরা আল্লাহর নিকট জান্নাতুল ফিরদাউস কামনা করি এবং জাহান্নাম থেকে আশ্রয় চাই।
[76] সূরা আন- নিসা, আয়াত: ১৩।
[77].জান্নাতে প্রবেশের কারণসমূহ নিম্নরূপ: আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূলের আনুগত্য করা, কথা ও কাজে সত্যবাদী হওয়া. আমানতের হেফাযত করা, ওয়াদ পূর্ণ করা, প্রতিবেশীর প্রতি দয়া করা, ইয়াতীমের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া, একজন মুসলিম ভাইয়ের বিপদে সহযোগিতা করা, বিপদগ্রস্ত লোকের সাহায্য করা, একজন মুসলিমের দোষ গোপন করা, তাকে সাহায্য করা, একমাত্র আল্লাহর জন্য ইবাদাত করা, আল্লাহর উপর ভরসা করা, আল্লাহ ও তার রাসূলের জন্য মহব্বত রাখা, আল্লাহকে ভয় করা, আল্লাহর রহমতের আশা করা, আল্লাহর নিকট তাওবা করা, আল্লাহর আদেশের উপর ধৈর্য ধারণ করা, আল্লাহর নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করা, আল্লাহর কুরআন তিলাওয়াত করা, আল্লাহকে ডাকা, সৎ কাজের আদেশ দেয়া ও অসৎ কাজ হতে নিষেধ করা, কাফের ও মুনাফেকদের বিরুদ্ধে জিহাদ করা, আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা, যে তোমাকে বঞ্চিত করে তাকে তুমি দেবে আর যে তোমার প্রতি অবিচার করে তুমি তাকে ক্ষমা করবে, যাবতীয় কর্মে ইনসাফ করা, আল্লাহর মাখলুকের প্রতি ইনসাফ করা, মানুষকে খানা খাওয়ানো, সালামের প্রসার করা, গভীর রাতে সালাত আদায় করা আল্লাহর দিকে মানুষকে আহ্বান করা, আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূল, আল্লাহর কিতাব, মুসলিমদের ইমাম ও সাধারণ মুসলিমদের হিতাকাংখী হওয়া ইত্যাদি। এ সব আমল ও এ ধরনের যে সব আমল আছে যে গুলো দ্বারা একজন বান্দা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে। আর এটিই হল, মহান সফলতা ও বড় পাওনা। দেখুন মাজমুয়ায়ে ফতওয়ায়ে শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যাহ। [৪২২-৪২৩/১০]
[78]. মুসলিম মুনাফেকদের গুণাগুণ বর্ণনা অধ্যায়, পরিচ্ছেদ : কেউ তার আমল দ্বারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না বরং আল্লাহর রহমতের দ্বারা প্রবেশ করবে। হাদিস নং ২৮১৬।
[79]. মুত্তাফাকুন আলাইহ : বুখারি রিকাক অধ্যায়, পরিচ্ছেদ: আমলে মধ্যম পন্থা অবলম্বন করা ও আমল সবসময় করা, হাদিস নং ৬৪৬৪, ৪৬৬৭ এবং মুসলিম মুনাফেকদের গুণাগুণ বর্ণনা অধ্যায়, পরিচ্ছেদ কেউ তার আমল দ্বারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না বরং আল্লাহর রহমতের দ্বারা প্রবেশ করবে, হাদিস নং ২৮১৮।
[80]. সূরা আন-নাহল, আয়াত: ৩২।
[81]. সূরা যুখরফ, আয়াত: ৭২।
[82]. ইমাম নববী, শরহে সহীহ মুসলিম ১৬৬/১৭।
[83]. সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১৪।
[84].এ ছাড়াও জাহান্নামে প্রবেশের আরও অনেকগুলো কারণ রয়েছে। যেমন, অশ্লীল কাজ ও অপকর্ম করা, প্রকাশ্যে বা গোপনে অশ্লীল ও অসামাজিক কাজে লিপ্ত হওয়া, খিয়ানত করা, জিহাদের ময়দান হতে পলায়ন করা, অহংকার করা, নেয়ামতের নাশুকরী করা, আল্লাহর সীমালংঘন করা, আল্লাহ যা হারাম করেছেন তা অমান্য করা, আল্লাহকে বাদ দিয়ে মাখলুককে ভয় করা, খালেককে বাদ দিয়ে মাখলুক থেকে আশা করা, খালেকের উপর ভরসা না করে মাখলুকের উপর ভরসা করা, কুরআন ও সুন্নাহের বিরোধিতা করা, আল্লাহর নাফরমানি করে মাখলুকের আনুগত্য করা, সাতটি ধ্বংসাত্বক বিষয় থেকে বিরত না থাকা, ঘুষ দেয়া, গীবত করা, চোগলখোরি করা, মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া, মদ্যপান করা, বড়াই করা, অহংকার করা, চুরি করা, মিথ্যা কসম খাওয়া, নারীরা পুরুষের সাথে এবং পুরুষরা নারীদের সাথে সাদৃশ্য অবলম্বন করা, দান করে খোটা দেয়া, মিথ্যা কসম দ্বারা মাল বিক্রি করা, গণক ও জ্যোতিষকে বিশ্বাস করা, প্রাণীর ছবি বানানো, কবরে সেজদা করা, মৃত ব্যক্তির উপর আওয়াজ করে কান্না করা, পুরুষদের জন্য কাপড় ঝুলিয়ে পরিধান করা, পুরুষদের রেশমি কাপড় ও অলংকার পরিধান করা, প্রতিবেশিকে কষ্ট দেয়া, ওয়াদা খেলাফ করা, এছাড়াও আরও অন্যন্য আমলসমূহ। দেখুন: মাজমুয়ায়ে ফতওয়া শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যাহ রহ. এর। ৪২৩-৪২৪/১০, ইমাম যাহবী রহ. এর কবীরা গুনাহ এবং ইবনে নুহাসের তাম্বীহুল গাফেলীন।
[85]. সূরা আত-তাহরীম, আয়াত: ৬।
[86]. তাফসীরে সা’দী পৃ: ৮৭৪।
[87]. সূরা আস-সফ, আয়াত: ১০।
[88]. হে আল্লাহ! তুমি লেখকের দু’আটি কবুল কর এবং তাকে তুমি জান্নাত দান কর এবং জাহান্নাম হতে মুক্তি দাও।
[89] .তাফসীরে সা’দী পৃ: ৮৬০
[90]. জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচার সবচেয়ে বড় কারণ, জান্নাতে প্রবেশের কারণসমূহ দ্বারা আমল করা এবং জাহান্নামে প্রবেশের কারণসমূহ হতে দূরে থাকা। জান্নাতে প্রবেশ ও জাহান্নাম থেকে বাঁচার কারণগুলোর আলোচনা আল-ইবন আব্দুর রহমান করছেন যা পূর্বের দুটি পরিচ্ছেদ অতিবাহিত হয়েছে। আল্লাহর নিকট কামনা করি আল্লাহ যেন আমাদের এ গবেষণাটিকে কবুল করেন এবং গবেষণা দ্বারা আল্লাহ গবেষকের মর্যাদাকে বৃদ্ধি করেন এবং তাকে জান্নাতুল ফিরদাউস ও শহীদদের উচ্চ মর্যাদা দান করেন। কারণ, আল্লাহ তা’আলা সম্মানী, তিনি দয়ালু করুণাময়। তিনি তার ইহসান, করম, ফযল ও দয়া দ্বারা আমাদের দয়া করেন। আর সালাত ও সালাম নাযিল হোক আমাদের নবী মুহাম্মদের উপর তার পরিবার পরিজন ও সমগ্র সাহাবীদের উপর ।
_______________________________________________________________________________________
তাহকীক: ড. সাআদ বিন আলী বিন ওহাফ আল-কাহতানী
অনুবাদক: জাকের উল্লাহ আবুল খায়ের
সম্পাদনা: ড. মোহাম্মদ মানজুরে ইলাহী
সূত্র: ইসলাম প্রচার ব্যুরো, রাবওয়াহ, রিয়াদ, সৌদিআরব
আরও পড়ুনঃ কুরআনের আলোকে জান্নাত ও জাহান্নাম
পোস্টটি ভালো লাগলে শেয়ার করতে ভুলবেন না কিন্তু।
আসসালামু আলাইকুম
উত্তরমুছুনআমি ইসলামহাউজ এডমিন থেকে বলছি। আপনারা আমাদের কন্টেন্ট ব্যবহার করেন প্রচুর পরিমানে। কিন্তু ইসলাম প্রচার ব্যুরো, রাবওয়াহ এটা না লিখে সরাসরি ইসলাম হাউজ থেকে নেওয়া, তারপর লিঙ্কও দিবেন। কারণ এটা আমানতদারী। আমাদের ওয়েবসাইটটির প্রচার করলে আপনিও সওয়াবের অধিকারী হবেন।
ওআলাইকুম আসসালাম.....
উত্তরমুছুনইন-শা-আল্লাহ্.....