শুক্রবার, ৭ জুন, ২০১৩

জান্নাতের পথে

  

بِسمِ اللَّهِ الرَّحمٰنِ الرَّحيمِ

লাভ-লোকসানের মাঝে একজন মুসলিমের একটি মূল্যবান দিন

প্রিয় ভাই!

 আল্লাহ্ তা‘আলার হক আদায়ে সচেষ্ট হোন। আল্লাহ্ তা‘আলা আপনাকে হেফাযত করবেন।
আপনি কি ফজরের সালাত জামা‘আতের সাথে আদায় করেছেন? ফজরের সালাতে আল্লাহ্ তা‘আলার যে সকল হক রয়েছে দিবসের শুরুতে তা কি আপনি যথাযথ আদায় করেছেন? 
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ বিষয়ে বলেছেন:
مَنْ صَلَّى الْفَجْرَ فِيْ جَمَاعَةٍ فَهُوَ فِيْ ذِمَّةِ اللهِ
‘যে ব্যক্তি ফজরের সালাত জামা‘আতের সাথে আদায় করল, আল্লাহ স্বয়ং ঐ ব্যক্তির হেফাযতকারী হয়ে যান।’’[1]

 আপনি কি পাঁচ ওয়াক্তের সালাত আল্লাহর ধ্যানে ভয় ও বিনয় নম্রতা এবং একাগ্রচিত্তে (অর্থাৎ খুশু খুযুর সাথে) আদায় করেছেন?
মহান আল্লাহ্ বলেন:
﴿حَٰفِظُواْ عَلَى ٱلصَّلَوَٰتِ وَٱلصَّلَوٰةِ ٱلۡوُسۡطَىٰ وَقُومُواْ لِلَّهِ قَٰنِتِينَ ٢٣٨﴾ [البقرة: ٢٣٨]
‘‘তোমরা সালাতের প্রতি যত্নবান হও, বিশেষকরে মধ্যবর্তী (‘আসরের) সালাতের এবং আল্লাহর সামনে (সালাতে) তোমরা বিনম্রচিত্তে দাঁড়াও।’’[2]

• পাঁচ ওয়াক্ত ফরয সালাতের পূর্বে ও পরে যে সমস্ত সুন্নাত সালাত রয়েছে আপনি কি সেগুলো সঠিকভাবে আদায় করেন? আপনি কি প্রতিদিন বার বার তাওবাহ্ করেন এবং বেশী বেশী ইসতেগফার ও ক্ষমা প্রার্থনা করেন? 
মহান আল্লাহ্ এ বিষয়ে বলেন:
﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ تُوبُوٓاْ إِلَى ٱللَّهِ تَوۡبَةٗ نَّصُوحًا﴾ [التحريم: ٨]
‘‘হে মু’মিনগণ! তোমরা আল্লাহ্‌র কাছে তাওবাহ কর---খাঁটি ও বিশুদ্ধ (খালেস) তাওবাহ।’’[3]

• হে মুসলিম! আপনার শরীরের অঙ্গ প্রতঙ্গের প্রতিটি জোড়ার জন্য সাদকাহ দেয়া আবশ্যক। আর আপনার জন্য এটি খুব সহজেই সম্ভব। (কেননা) চাশতের সময় দু’রাকাত সালাত আদায় করলে তা জোড়াগুলোর (সাদকাহ হিসেবে) গণ্য হয়ে যায়। যা মহান আল্লাহ্‌র দিকে প্রত্যাবর্তনকারী সত্যবাদী লোকদের সালাত।

• যে দিনটিতে আপনি কুরআন থেকে কিছুই পাঠ করেন নি সে দিনটি আপনার জন্য একটি অন্ধকার দিন, যাতে কোন বরকত বা কল্যাণ নেই। কারণ; সময়ের বরকত নেবেন তো কুরআন পড়েই নেবেন।
আল্লাহ্ বলেন:
﴿كِتَٰبٌ أَنزَلۡنَٰهُ إِلَيۡكَ مُبَٰرَكٞ لِّيَدَّبَّرُوٓاْ ءَايَٰتِهِۦ وَلِيَتَذَكَّرَ أُوْلُواْ ٱلۡأَلۡبَٰبِ ٢٩ ﴾ [ص: ٢٩]
‘‘এক কল্যাণময় কিতাব আমি তোমার প্রতি নাযিল করেছি, যাতে মানুষ এর আয়াতসমূহ অধ্যয়ন ও অনুধাবন করে এবং বোধশক্তি সম্পন্ন ব্যক্তিরা এত্থেকে গ্রহণ করে উপদেশ।’’[4]

• কঠিন হৃদয় একটি মারাত্মক ও বিপদজনক বিষয়। আর এ কঠিন হৃদয়কে বিগলিত করার ঔষধ হলো: মহান আল্লাহ্‌র যিক্‌র ও তার স্মরণ। 
আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:
﴿أَلَا بِذِكۡرِ ٱللَّهِ تَطۡمَئِنُّ ٱلۡقُلُوبُ ٢٨ ﴾ [الرعد: ٢٨] 
‘‘জেনে রাখ, আল্লাহ্‌র স্মরণেই মনে প্রশান্তি আসে।’’[5]
অনুরূপভাবে কঠিন হৃদয় থেকে পরিত্রাণের আরও যে পথ আছে তা হলো, সালাতে পঠিত যিক্‌র আয্‌কার এবং সকাল-সন্ধায় আল্লাহর যিক্‌র করা।

• হে মুসলিম! কী ভাবে আপনার ঈমানের নিরাপত্তা অর্জিত হতে পারে অথচ আপনি হারাম দৃশ্যের দিকে জেনেশুনেও তাকিয়ে থাকেন? 
অথচ আল্লাহ্ বলেন:
﴿ قُل لِّلۡمُؤۡمِنِينَ يَغُضُّواْ مِنۡ أَبۡصَٰرِهِمۡ وَيَحۡفَظُواْ فُرُوجَهُمۡۚ ﴾ [النور: ٣٠]
‘‘মু’মিনদেরকে বলে দিন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত করে রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হিফাযত করে।’’[6]

• সেটিই হবে আপনার জন্য বরকতময় দিন, যেদিন আপনি কোন অভাবীকে কিছু দান খয়রাত করতে পেরেছেন, অথবা সেবাদানের মাধ্যমে কান মুসলিমের মন জয় করতে পেরেছেন কিংবা দু’জন বিবাদমান মানুষের মাঝে ঝগড়াঝাটি মীমাংসা করে দিয়েছেন।
এ বিষয়ে আল্লাহ্ সুবহানাহূ ওয়া তা‘আলা বলেন:
﴿ ۞لَّا خَيۡرَ فِي كَثِيرٖ مِّن نَّجۡوَىٰهُمۡ إِلَّا مَنۡ أَمَرَ بِصَدَقَةٍ أَوۡ مَعۡرُوفٍ أَوۡ إِصۡلَٰحِۢ بَيۡنَ ٱلنَّاسِ﴾ [النساء: ١١٤]
‘‘তাদের অধিকাংশ গোপন পরামর্শের মধ্যে কোন কল্যাণ নেই, তবে কল্যাণ আছে ঐ লোকের মধ্যে যে ব্যক্তি নির্দেশ দেয় দান-খয়রাত, সৎকাজের ও মানুষের মধ্যে বিরোধ মিটিয়ে দেয়ার কাজে।’’[7]

• আপনি কিন্তু আখিরাতের পথে পা বাড়িয়ে দিনে দিনে এগিয়ে চলছেন। সুতরাং সে পথের জন্য পাথেয় নিতে ভুলে যাবেন না।
আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:
﴿وَتَزَوَّدُواْ فَإِنَّ خَيۡرَ ٱلزَّادِ ٱلتَّقۡوَىٰۖ ﴾ [البقرة: ١٩٧] 
‘‘এবং (পরকালের জন্য) তোমরা পাথেয় সংগ্রহ কর, আর তাক্ওয়া অর্জন করা হলো শ্রেষ্ঠ পাথেয়।’’[8]

• রাত জেগে সালাত আদায়, নফল সাওম পালন, রোগীদের সেবা-সুশ্রূষা, কবর যিয়ারত, জানাযার লাশের সাথে যাওয়া, যিক্‌র-আয্‌কারের মজলিসে যাওয়া (অর্থাৎ কুরআন-হাদীস চর্চা ও আলোচনার অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ), আল্লাহ্‌র ভয়ে কান্নাকাটি করা, মহান আল্লাহ্‌র নিদর্শনসমূহে চিন্তা-গবেষণা করা, অন্তরে সহীহ আকীদা পোষণ করা, জিহবার হেফাযত করা এবং নেককার লোকদের প্রতি ভালবাসা স্থাপন- এসবগুলোতে রয়েছে এমন নূর বা আলো যা আপনার ঈমানের নূরকে আরও বৃদ্ধি করে দেয়। আল্লাহ্ তাঁর নূরের দিকে যাকে ইচ্ছা তাকে হেদায়েত করে থাকেন। 

প্রশ্ন-১: আপনি কি আল্লাহ্‌র রহমত সম্পর্কে ধারণা রাখেন?
উত্তর: রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«إِنَّ للهِ مِائَةَ رَحْمَةٍ أَنْزَلَ مِنْهَا رَحْمَةً وَاحِدَةً بَيْنَ الْجِنِّ وَاالإِنْسِ وَالْبَهَائِمِ وَالْهَوَامِّ فَبِهَا يَتَعَاطَفُونَ وَبِهَا يَتَرَاحَمُونَ وَبِهَا تَعْطِفُ الْوَحْشُ عَلٰى وَلَدِهَا وَأَخَّرَ الله  تِسْعًا وَتِسْعِينَ رَحْمَةً يَرْحَمُ بِهَا عِبَادَهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ»
‘আল্লাহ্ তা‘আলার একশ’টি রহমত রয়েছে যা থেকে একটি মাত্র রহমত তিনি জ্বিন, মানব, জন্তু-জানোয়ারদের উপর নাযিল করে (ভাগ করে দিয়েছেন)। আর এর ফলেই তারা একে অপরের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করে, দয়াদ্র হয়। আর এর ফলে হিংস্র প্রাণীও তার সন্তান-সন্তুতির প্রতি সহানুভূতিশীল থাকে। অথচ বাকী নিরানববইটি রহমত আল্লাহ্ তা‘আলা কিয়ামতের দিনের জন্য রেখে দিয়েছেন যার দ্বারা তিনি তাঁর বান্দাদের উপর সেদিন দয়া করবেন।’[9]

প্রশ্ন-২: একজন মা কি তার সন্তানকে আগুনে নিক্ষেপ করতে পারে?
উত্তর: উমর ইবন্ খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে কয়েকজন বন্দী আসল। তাদের মধ্য থেকে এক মহিলা ব্যস্ত হয়ে কী যেন খুঁজছিল। অবশেষে সে একটি শিশু সন্তান পেয়ে তাকে নিজের বুকে জড়িয়ে নিয়ে দুধ পান করাল। তখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: ‘তোমরা কি মনে কর যে, এ মহিলা তার সন্তানকে আগুনে নিক্ষেপ করতে পারে?’ আমরা বললাম: ‘আল্লাহ্‌র শপথ! কক্ষনো নয়।’ তখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: ‘এ মহিলা তার সন্তানের উপর যেমন স্নেহময়ী, অবশ্যই আল্লাহ্ তা‘আলা তাঁর বান্দাদের উপর এর চেয়েও অনেক অনেক বেশী দয়ালু।’[10]

প্রশ্ন-৩: আপনি কি দান খয়রাত, সাদকাহ, ক্ষমা এবং বিনয়ী হওয়ার ফযীলত জানেন?
উত্তর: রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«مَا نَقَصَتْ صَدَقَةٌ مِنْ مَالٍ وَمَا زَادَ اللهُ عَبْدًا بِعَفْوٍ إِلاَّ عِزًّا وَمَا تَوَاضَعَ أَحَدٌ للهِ إِلاَّ رَفَعَهُ اللهُ»
দান খয়রাত কখনও সম্পদের কোন ঘাটতি করে না, আর ক্ষমার কারণে আল্লাহ্ কেবল সম্মান বৃদ্ধিই করেন এবং যে কেউ আল্লাহ্‌র জন্য বিনয়ী হয় অবশ্যই আল্লাহ্ তাকে উচ্চ মর্যাদায় আসীন করেন।’[11]

প্রশ্ন-৪: নিম্নোক্ত সূরাটির ফযীলত সম্পর্কে কী জানেন?
উত্তর: রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীদের জিজ্ঞেস করলেন: ‘তোমাদের কেউ কি এক রাতে কুরআনের এক তৃতীয়াংশ পড়তে পারবে?’ তারা এটাকে কঠিন মনে করল এবং বলল: ‘হে আল্লাহ্‌র রাসূল! আমাদের মধ্যে কেইবা সেটা করতে সক্ষম হবে?’ তখন তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন :
﴿ قُلۡ هُوَ ٱللَّهُ أَحَدٌ ١ ٱللَّهُ ٱلصَّمَدُ ٢ لَمۡ يَلِدۡ وَلَمۡ يُولَدۡ ٣ وَلَمۡ يَكُن لَّهُۥ كُفُوًا أَحَدُۢ ٤ ﴾ [الاخلاص: ١،  ٤] 
 এ সূরাটি (একবার পড়লে) পুরা কুরআনের তিন ভাগের এক ভাগ (তিলাওয়াত করার সাওয়াব পাওয়া যায়)।’’[12]

প্রশ্ন-৫: আপনি কি সাওমপালনকারী, রাত জেগে দাঁড়িয়ে (তাহাজ্জুদের) সালাত আদায়কারী এবং আল্লাহ্‌র পথে জিহাদকারীর সওয়াব পেতে চান?
উত্তর: রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«اَلسَّاعِيْ عَلَى الأَرْمَلَةِ وَالْمِسْكِيْنَ كَالْمُجَاهِدِ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ ....»
যে ব্যক্তি কোনো বিধবা এবং মিসকীনের প্রয়োজন পূরণের চেষ্টা করে সে যেন আল্লাহ্‌র পথের মুজাহিদ।
বর্ণনাকারী বলেন: আমার মনে হয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এটাও বলেছেন যে, ‘(ঐ দরদী ব্যক্তির) উদাহরণ হলো তার মত যে ব্যক্তি কোন ক্লান্তি অনুভব না করে রাত জেগে দাঁড়িয়ে (তাহাজ্জুদের) সালাত আদায় করে এবং কোন বিরতি না দিয়ে (দিনের বেলায়) সাওম পালন করে।’’[13]

প্রশ্ন-৬: আপনি কি জানেন জান্নাতের সবচেয়ে ছোট্ট মর্যাদার অধিকারী ব্যক্তি কে?
উত্তর: রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ‘‘জাহান্নাম থেকে যে লোকটি সবশেষে বের হবে এবং সবার শেষে জান্নাতে প্রবেশ করবে সে লোকটি সম্পর্কে আমি জানি।’’ ঐ লোকটি জাহান্নাম থেকে মুক্তি পেয়ে হামাগুড়ি দিয়ে বের হয়ে আসবে। মহান আল্লাহ্ তখন তাকে বলবেন: (হে বান্দা) যাও, তুমি এখন জান্নাতে প্রবেশ কর। সে জান্নাতে প্রবেশ করতে গিয়ে মনে করবে যে, লোকজন ঢুকার পর জান্নাতের সব জায়গা ভরে গেছে। আর বোধ হয়, কোন খালি যায়গা নেই। সে ফিরে গিয়ে বলবে, হে (আমার) রব! আমি তো দেখছি জান্নাত ভরে গেছে। তখন মহান আল্লাহ্ পুনরায় তাকে বলবেন: (হে বান্দা) যাও, জান্নাতে প্রবেশ কর। সে জান্নাতে প্রবেশ করতে গিয়ে আবারো সে মনে করবে যে, (বেশেতী লোকদের দ্বারা) সেটা ভরে গেছে। সে ফিরে গিয়ে বলবে, হে (আমার) রব! আমি তো দেখলাম জান্নাত পরিপূর্ণ হয়ে গেছে। তখন মহান আল্লাহ্ (তৃতীয়বার) আবারো বলবেন: যাও, জান্নাতে প্রবেশ কর। তোমার জন্য রয়েছে দুনিয়ার আয়তনের সমপরিমাণ জান্নাত এবং দশ দুনিয়ার সমান বিশালাকার জান্নাত। লোকটি তখন বলবে: হে (আমার) রব! তুমি সবকিছুর মালিক হওয়া সত্বেও কি আমার সাথে ঠাট্টা করছো? (অর্থাৎ আমার মত সাধারণ মানুষের জন্য কি এতবড় জান্নাত! এটা কি সম্ভব!?) বর্ণনাকারী বললেন: শপথ করে বলছি, আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে (এ বিবরণ দেয়ার সময়) এমনভাবে হাসতে দেখেছি যে, তার মাড়ীর দাঁতগুলোও প্রকাশিত হয়ে পড়েছিল। তারপর তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: এ রকম জান্নাত হলো সবচেয়ে নিম্নমানের জান্নাতীর মর্যাদা।’’[14]

প্রশ্ন-৭: আপনি কি জানেন যে, মুমিনের জন্য জান্নাতে একটি মুক্তার তাঁবু থাকবে?
উত্তর: রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«إِنَّ لِلْمُؤْمِنِ فِي الْجَنَّةِ لَخَيْمَةً مِنْ لُؤْلُؤَةٍ وَاحِدَةٍ مُجَوَّفَةٍ طُولُهَا سِتُّونَ مِيلاً لِلْمُؤْمِنِ فِيهَا أَهْلُونَ يَطُوفُ عَلَيْهِمْ الْمُؤْمِنُ فَلاَ يَرَى بَعْضُهُمْ بَعْضًا»
‘মুমিনের জন্য জান্নাতে এমন একটি মুক্তার তাঁবু রয়েছে যার ভিতরের ফাঁকা অংশটির উচ্চতা হবে আকাশ পর্যন্ত ষাট মাইল। সেখানে প্রত্যেক মুমিনের জন্য এমন কয়েকজন স্ত্রী থাকবে যাদের মাঝে সে মেলামেশা করবে অথচ তাদের একজন স্ত্রী অপরজনকে দেখতে পাবে না।’’[15]

প্রশ্ন-৮: আপনি কি জানেন যে, জান্নাতে বাজার রয়েছে?
উত্তর: রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ‘জান্নাতে রয়েছে একটি বাজার যাতে প্রতি জুমার দিন মুমিনগণ আসবেন। তাদের উপর সেদিন উত্তরা বায়ূ প্রবাহিত হতে থাকবে। আর এ মৃদুমন্দ বায়ূ তাদের চেহারা ও পোষাকের উপর দিয়ে বয়ে যাবে। ফলে তাদের সৌন্দর্য ও লাবণ্যতা বেড়ে যাবে। তারপর তারা তাদের পরিবারের কাছে সৌন্দর্য এবং লাবণ্যতা নিয়ে ফিরে যাবে। স্বামীদেরকে দেখে স্ত্রীরা বলতে থাকবে, আল্লাহ্‌র কসম! তোমাদের সৌন্দর্য ও লাবণ্যতা বহুগুণ বেড়ে গেছে। অতঃপর স্বামীরাও বলবে যে, আল্লাহ্‌র শপথ! আমাদের যাওয়ার পরে তোমাদের সৌন্দর্য ও লাবণ্যতাও বহু বৃদ্ধি পেয়েছে।’[16]

প্রশ্ন-৯: আপনি কি জান্নাতের গাছগাছালি সম্পর্কে কিছু পড়েছেন?
উত্তর: রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«إِنَّ فِي الْجَنَّةِ لَشَجَرَةً يَسِيرُ الرَّاكِبُ فِي ظِلِّهَا مِائَةَ عَامٍ لَا يَقْطَعُهَا»
জান্নাতে এমন গাছও রয়েছে যার নীচ দিয়ে অত্যন্ত পারদর্শী একজন ঘোড়সওয়ার প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত দ্রুতগামী ঘোড়া নিয়ে একশত বছর দৌড়েও সেটা অতিক্রম করতে পারবে না।’[17]

প্রশ্ন-১০: আপনি কি জানেন যে, জান্নাতে কেউ অবিবাহিত থাকবে না?
উত্তর: রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«إِنَّ أَوَّلَ زُمْرَةٍ تَدْخُلُ الْجَنَّةَ عَلَى صُورَةِ الْقَمَرِ لَيْلَةَ الْبَدْرِ وَالَّتِي تَلِيهَا عَلَى أَضْوَإِ كَوْكَبٍ دُرِّيٍّ فِي السَّمَاءِ لِكُلِّ امْرِئٍ مِنْهُمْ زَوْجَتَانِ اثْنَتَانِ يُرَى مُخُّ سُوقِهِمَا مِنْ وَرَاءِ اللَّحْمِ وَمَا فِي الْجَنَّةِ أَعْزَبُ»
‘প্রথম যে দলটি জান্নাতে প্রবেশ করবে তারা পূর্ণিমার চাঁদের মত উজ্জ্বল চেহারা বিশিষ্ট হবে। আর যারা তাদের পরে জান্নাতে প্রবেশ করবে তারা উর্ধাকাশের সমুজ্জ্বল নক্ষত্রের চেয়েও বেশী আলোকিত হবে। তাদের প্রত্যেকের জন্যই থাকবে এমন দুজন স্ত্রী, যাদের শরীরের মাংস ভেদ করে তার অভ্যন্তরীণ অস্থি-মজ্জাও দেখা যাবে। আর জান্নাতে কেউই অবিবাহিত থাকবে না।’[18]

প্রশ্ন-১১: আপনি কি জান্নাতের নারীদের সম্পর্কে কিছু জানেন?
উত্তর: রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«غَدْوَةٌ فِي سَبِيلِ اللهِ أَوْ رَوْحَةٌ خَيْرٌ مِنْ الدُّنْيَا ....»
‘আল্লাহ্‌র পথে একটি সকাল বা একটি সন্ধ্যা ব্যয় করা দুনিয়া ও তাতে যা কিছু আছে তার সবকিছু থেকেও উত্তম। যদি জান্নাতের কোন নারী দুনিয়ার দিকে তাকাত তাহলে (তাদের সৌন্দর্যে) আসমান ও যমীনের মধ্যবর্তী স্থানগুলো আলোকিত হয়ে পড়ত এবং সুগন্ধে ভরে যেত। আর তার মাথার ওড়নাটি দুনিয়া ও তাতে যা কিছু আছে তা থেকে উত্তম।’[19]

প্রশ্ন-১২: জান্নাতে কি মানুষের পেশাব পায়খানার প্রয়োজন হবে ?
উত্তর: রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ‘জান্নাতবাসীগণ সেখানে খাবার ও পানীয় গ্রহণ করবেন। কিন্তু তারা কোন পায়খানা করবে না, তাদের সর্দি কাশি হবে না অনুরূপভাবে পেশাবও করবে না। বরং তাদের খাবারের পরে ঢেকুর আসবে যা থেকে মিশ্কের সুগন্ধ বের হবে। আল্লাহ তা‘আলার ইলহামে শ্বাস প্রশ্বাসের সাথে তারা মা‘বূদের তাসবীহ করবে এবং তাকবীর বলবে।’[20]

প্রশ্ন-১৩: আল্লাহ্ জান্নাতে তাঁর নেক বান্দাদের জন্য যা তৈরী করে রেখেছেন সে ব্যাপারে কি আপনি চিন্তা করেছেন?
উত্তর: রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ‘আল্লাহ্ বলেন,
«أَعْدَدْتُ لِعِبَادِي الصَّالِحِينَ مَا لاَ عَيْنٌ رَأَتْ وَلاَ أُذُنٌ سَمِعَتْ وَلاَ خَطَرَ عَلَى قَلْبِ بَشَرٍ .......»
‘‘আমি আমার সৎ বান্দাদের জন্য এমন কিছু তৈরী করে রেখেছি যা কোন চক্ষু কোন দিন দেখেনি, কোন কান কোন দিন শুনেনি, এমনকি কোন মানুষের মনে তা কল্পনায়ও আসেনি। তোমরা এ আয়াতটি পড়ে দেখ যেখানে আল্লাহ বলেছেন :
﴿ فَلَا تَعۡلَمُ نَفۡسٞ مَّآ أُخۡفِيَ لَهُم مِّن قُرَّةِ أَعۡيُنٖ جَزَآءَۢ بِمَا كَانُواْ يَعۡمَلُونَ ١٧ ﴾ [السجدة: ١٧] 
‘‘কেউই জানে না তাদের জন্য চোখ জুড়ানো কী (নিয়ামত) লুকিয়ে রাখা হয়েছে তাদের কৃতকর্মের পুরস্কারস্বরূপ!’’[21]

প্রশ্ন-১৪: আপনি কি এমন একটি পথ চান যা আপনাকে জান্নাতে পৌঁছে দিবে?
উত্তর: রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ . لَا تَدْخُلُونَ الْجَنَّةَ حَتَّى تُؤْمِنُوا وَلَا تُؤْمِنُوا حَتَّى تَحَابُّوا أَوَلَا أَدُلُّكُمْ عَلَى شَيْءٍ إِذَا فَعَلْتُمُوهُ تَحَابَبْتُمْ أَفْشُوا السَّلَامَ بَيْنَكُمْ»
‘যার হাতে আমার প্রাণ, তাঁর শপথ করে বলছি, তোমরা ততক্ষণ জান্নাতে প্রবেশ করবে না যতক্ষণ ঈমানদার না হবে। আর যতক্ষণ তোমরা পরস্পরকে ভাল না বাসবে ততক্ষণ তোমরা ঈমানদার হতে পারবে না। আমি কি তোমাদেরকে এমন একটি বিষয় বলে দেব না যা করলে তোমরা পরস্পরকে ভালবাসবে? তোমাদের মধ্যে একে অপরের প্রতি ভালবাসার সৃষ্টি হবে। আর সে কাজটি হল, তোমরা পরস্পর একজন আরেকজনকে বেশী বেশী সালাম দাও।’[22]

প্রশ্ন-১৫ : আপনি কি জানেন আল্লাহ্ শহীদদের জন্য কি সম্মানী রেখেছেন?
উত্তর: রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: জান্নাতে প্রবেশ করার পর দুনিয়ায় যা আছে সে সব সম্পদের মালিক করে দিলেও কেউই দুনিয়াতে আর ফিরে আসার আকাঙ্ক্ষা করবে না। তবে, একমাত্র আল্লাহ্‌র পথে যারা শহীদ হয়েছে তারা ব্যতীত। তারা দুনিয়াতে ফিরে আসতে চাইবে এ আকাঙ্ক্ষায় যে, সেখানে ফিরে গিয়ে দশবার শহীদ হবে এবং ১০ বার ফিরে আসবে। শহীদ হওয়ার কারণে তাদের যে সম্মানী দেয়া হবে সে মহা পুরস্কার দেখেই তারা এ আকাঙ্খা করতে থাকবে।’[23]

প্রশ্ন-১৬: আপনি কি ইয়াতিমের লালন-পালন করার ফযীলত সম্পর্কে জানেন?
উত্তর: রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«أَنَا وَكَافِلُ الْيَتِيمِ فِي الْجَنَّةِ هَكَذَا .....»
‘আমি এবং ইয়াতিমের লালন-পালনকারী জান্নাতে এত কাছাকাছি থাকব। এ বলে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার তর্জনী ও মধ্যমা আঙ্গুল দু’টি দিয়ে ইঙ্গিত করে এবং এ দুয়ের মাঝে ফাঁক করে দেখালেন’[24]।

প্রশ্ন-১৭: আপনি কি চান যে, আল্লাহ্ আপনার জন্য জান্নাতে মেহমানদারীর ব্যবস্থা করুক?
উত্তর: রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«مَنْ غَدَا إِلَى الْمَسْجِدِ وَرَاحَ أَعَدَّ اللهُ لَهُ نُزُلَهُ مِنْ الْجَنَّةِ كُلَّمَا غَدَا أَوْ رَاحَ»
‘যে কেউ সকালে অথবা বিকালে মসজিদে গমন করে, এবং যতদিন যতবার সকাল বিকাল সে মসজিদে গমন করে ততবারই আল্লাহ্ তার জন্য জান্নাতে মেহমানদারীর ব্যবস্থা করেন।’[25]

প্রশ্ন-১৮: আপনি কি নিম্নোক্ত হাদীসের উপর আমল করেছেন?
উত্তর: রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«اللَّهُمَّ أَعْطِ مُنْفِقًا خَلَفًا وَيَقُولُ الآخَرُ اللَّهُمَّ أَعْطِ مُمْسِكًا تَلَفًا»
‘আল্লাহ্‌র বান্দারা প্রতিদিন প্রভাতে উপনীত হলেই দু’জন ফেরেশ্তা নাযিল হয়ে দো‘আ করতে থাকে। তাদের একজন বলতে থাকে: হে আল্লাহ! দানকারীকে এর বিনিময় প্রদান কর। অপর জন বলতে থাকে: হে আল্লাহ্! কৃপণকে বিনষ্ট করে দাও।’[26]

প্রশ্ন-১৯: আপনি কি চান যে আল্লাহ্ আপনার উপর রহমত বর্ষণ করুক?
উত্তর: রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«مَنْ صَلَّى عَلَيَّ صَلاَةً صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ بِهَا عَشْرًا»
‘যে কেউ আমার উপর একবার দুরূদ পাঠ করবে তার বিনিময়ে আল্লাহ্ তার উপর দশবার দুরূদ পাঠ করবেন।’[27]

প্রশ্ন-২০: আপনি কি আপনার প্রভুর নৈকট্য লাভ করতে চান?
উত্তর: রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«أقرب ما يكون العبد من ربه وهو ساجد فأكثروا الدعاء»
‘বান্দা যখন আল্লাহকে সিজদা করে ঐ সময় সে তার রবের সবচেয়ে নিকটে পৌঁছে যায়। সুতরাং সে অবস্থায় তোমরা বেশী বেশী করে দো‘আ কর। (কারণ এটি দু‘আ কবূলের উত্তম সময়)

প্রশ্ন-২১: আপনি কি নিম্নোক্ত অসীয়ত শুনেছেন?
উত্তর: আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন:
«أَوْصَانِي خَلِيلِي صلى الله عليه وسلم بِثَلاَثٍ صِيَامِ ثَلاَثَةِ أَيَّامٍ مِنْ كُلِّ شَهْرٍ وَرَكْعَتَيْ الضُّحَى وَأَنْ أُوتِرَ قَبْلَ أَنْ أَرْقُدَ»
আমার অন্তরঙ্গ বন্ধু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে অসীয়ত করেছেন, যেন আমি প্রতি মাসে তিনদিন সাওম পালন করি, চাশতের সময়ে দু’ রাকাত সালাত আদায় করি এবং ঘুমানোর পূর্বেই বিতরের সালাত পড়ে নেই’।’[28]

প্রশ্ন-২২: আপনি কি এটা চান যে, মৃত্যুর পরও আপনার নেক আমলের ধারা জারী থাকুক?
উত্তর: মসজিদ নির্মাণ, পানির কূপ খনন, সন্তান-সন্তুতিদেরকে সৎ শিক্ষা প্রদান এবং দ্বীনি ইলমের প্রচার করা যেমন, দ্বীনি বই ছাপা, প্রচার-প্রসার করা, ক্যাসেট কপি ও বিলি করা এবং এ সমস্ত কাজে আর্থিক সহায়তা প্রদান। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«إِذَا مَاتَ الْإِنْسَانُ انْقَطَعَ عَنْهُ عَمَلُهُ إِلَّا مِنْ ثَلَاثَةٍ إِلَّا مِنْ صَدَقَةٍ جَارِيَةٍ أَوْ عِلْمٍ يُنْتَفَعُ بِهِ أَوْ وَلَدٍ صَالِحٍ يَدْعُو لَهُ»
‘মানুষ যখন মরে যায় তখন তার কাজের ধারাও বন্ধ হয়ে যায়, তবে তিনটি বিষয় ব্যতীত। (ক) সাদাকায়ে জারিয়াহ বা চলমান দান, (খ) এমন জ্ঞান যা দ্বারা উপকৃত হওয়া যায়। (গ) আর এমন নেক সন্তান-সন্তুতি যারা তার জন্য দো‘আ করে।’[29]

প্রশ্ন-২৩: আপনি কি চান আপনার দো‘আ কবুল হোক?
উত্তর: রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«مَا مِنْ عَبْدٍ مُسْلِمٍ يَدْعُو لِأَخِيهِ بِظَهْرِ الْغَيْبِ إِلَّا قَالَ الْمَلَكُ وَلَكَ بِمِثْلٍ»
‘যখন কোন মুসলিম তার অপর মুসলিম ভাইয়ের জন্য তার অনুপস্থিতিতে দো‘আ করে তখনই ফেরেশতা বলে যে, ‘তোমার জন্যও অনুরূপ হউক’[30]। (অর্থাৎ তুমি তোমার মুসলিম ভাই বন্ধুর জন্য যেসব ভাল জিনিষ পাওয়ার জন্য দো‘আ করছ সে সব নেয়ামত তুমিও পেয়ে যাবে।)

প্রশ্ন-২৪: আপনি কি চান যে, আপনার গোনাহ বেশী হলেও তা ক্ষমা হয়ে যাক?
উত্তর: রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
‘যে ব্যক্তি একদিনে سُبْحَانَ اللهِ وَبِحَمْدِه ১০০ বার বলবে, তার গুনাহ্ সাগরের ফেনা পরিমাণ হলেও তা মাফ করে দেওয়া হবে[31]।

প্রশ্ন-২৫: আপনি কি জান্নাতে একটি ঘর চান?
উত্তর: রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«مَا مِنْ عَبْدٍ مُسْلِمٍ يُصَلِّي لِلَّهِ كُلَّ يَوْمٍ ثِنْتَيْ عَشْرَةَ رَكْعَةً تَطَوُّعًا غَيْرَ فَرِيضَةٍ إِلاَّ بَنَى اللهُ لَهُ بَيْتًا فِي الْجَنَّةِ أَوْ إِلاَّ بَنَي لَهُ بَيْتًا فِي الْجَنَّةِ»
‘যে কোন মুসলিম বান্দাহ্ আল্লাহ্‌কে খুশী করার জন্য প্রতিদিন ফরয ব্যতীত আরো ১২ রাক‘আত (সুন্নাত ও নফল) সালাত আদায় করে, আল্লাহ্ তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর বানিয়ে দেন’।’[32]

প্রশ্ন-২৬: আপনি কি আপনার উপর প্রশান্তি আসুক ও আল্লাহর রহমত দ্বারা আবৃত হতে চান?
উত্তর: রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«لَا يَقْعُدُ قَوْمٌ يَذْكُرُونَ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ إِلَّا حَفَّتْهُمُ الْمَلَائِكَةُ، وَغَشِيَتْهُمُ الرَّحْمَةُ، وَنَزَلَتْ عَلَيْهِمِ السَّكِينَةُ، وَذَكَرَهُمُ اللهُ فِيمَنْ عِنْدَهُ»
যারা আল্লাহ্‌র যিক্‌র করতে বসে (অর্থাৎ কুরআন হাদীসের আলোচনা করে, তা শিখে ও শিখায়। তাসবীহ-তাহলীল, দো‘আ দুরূদ ও ইসতেগফার করে। আর এগুলো করে নবীজীর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তরীকায়) ফেরেশতারা তাদের চারপাশে এসে জড় হয়, আল্লাহর রহমত দ্বারা তাদের ঢেকে রাখে, তাদের উপর প্রশান্তি নাযিল হয় এবং আল্লাহ্ (এতে খুশী হয়ে) তাঁর নিকটস্থ (ফেরেশতাদের) কাছে ঐ সব যিক্‌রকারী বান্দাদের সম্পর্কে (প্রশংসামূলক) আলোচনা করেন।’[33]

প্রশ্ন-২৭: এই হাদীসটি লক্ষ্য করেছেন কী?
উত্তর: রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«مَا يُصِيبُ الْمُسْلِمَ مِنْ نَصَبٍ وَلاَ وَصَبٍ وَلَا هَمٍّ وَلاَ حُزْنٍ وَلاَ أَذًى وَلاَ غَمٍّ حَتّٰى الشَّوْكَةِ يُشَاكُهَا إِلاَّ كَفَّرَ اللهُ بِهَا مِنْ خَطَايَاهُ»
‘কোন মুসলিম ব্যক্তির দুঃখ, ক্লান্তি, দুশ্চিন্তা, কষ্ট কিংবা পেরেশানী এমনকি একটি ছোট কাঁটা বিধলেও এ কষ্টের বিনিময়ে আল্লাহ্ তার গোনাহ মাফ করে দেন (যদি সে ধৈর্য ধারণ করে)[34]।

প্রশ্ন-২৮: আপনি কি পূর্ণ এক রাত্রি সালাত আদায় করার সওয়াব পেতে চান?
উত্তর: রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«مَنْ صَلَّى الْعِشَاءَ فِي جَمَاعَةٍ فَكَأَنَّمَا قَامَ نِصْفَ اللَّيْلِ وَمَنْ صَلَّى الصُّبْحَ فِي جَمَاعَةٍ فَكَأَنَّمَا صَلَّى اللَّيْلَ كُلَّهُ»
‘যে ব্যক্তি ইশার সালাত জামা‘আতে পড়ল, সে যেন অর্ধ-রাত্রি সালাত আদায় করল। আর যে ব্যক্তি ফজরের সালাত জামা‘আতে আদায় করল, সে যেন সমস্ত রাত্রি সালাত আদায় করল।’[35]

প্রশ্ন-২৯: আপনি কি পাহাড় পরিমাণ সওয়াব চান?
উত্তর: রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«مَنْ شَهِدَ الْجَنَازَةَ حَتَّى يُصَلِّيَ فَلَهُ قِيرَاطٌ وَمَنْ شَهِدَ حَتَّى تُدْفَنَ كَانَ لَهُ قِيرَاطَانِ قِيلَ وَمَا الْقِيرَاطَانِ قَالَ مِثْلُ الْجَبَلَيْنِ الْعَظِيمَيْنِ»
‘যে ব্যক্তি কোন জানাযায় সালাত শেষ হওয়া পর্যন্ত শরীক হয়, তার জন্য রয়েছে এক ক্বীরাত পরিমাণ সওয়াব; আর যে ব্যক্তি দাফন সম্পন্ন হওয়া পর্যন্ত শরীক হয়, তার জন্য রয়েছে দু’ ক্বীরাত্’ পরিমাণ সওয়াব। একজন প্রশ্ন করল, ‘দু’ ক্বীরাত্ কী?’ রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তর দিলেন: (২ কিরাত হলো) ‘দুইটি বড় পাহাড়ের সমান’।’[36]

প্রশ্ন-৩০: আপনি কি সারাক্ষণ আল্লাহ্‌র হেফাযতে থাকতে চান?
উত্তর: রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
مَنْ صَلَّى الْصُّبْحَ فَهُوَ فِيْ ذِمَّةِ اللهِ
‘যে ব্যক্তি ফজরের সালাত জামা‘আতে পড়ে, সে ব্যক্তি আল্লাহ্‌র হেফাযতে থাকে।’[37]

প্রশ্ন-৩১: আপনি কি চান জাহান্নামকে আল্লাহ আপনার কাছ থেকে ৭০ বছরের রাস্তা দূরে সরিয়ে দিক?
উত্তর: রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«مَا مِنْ عَبْدٍ يَصُومُ يَوْمًا فِي سَبِيلِ اللهِ إِلاَّ بَاعَدَ اللهُ بِذَلِكَ الْيَوْمِ وَجْهَهُ عَنْ النَّارِ سَبْعِينَ خَرِيفًا»
‘যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌র রাস্তায় (অর্থাৎ খালেস দিলে শুধুমাত্র আল্লাহকে খুশী করার জন্য) একদিন সাওম পালন করবে, আল্লাহ্ সেই দিনের সাওমের বিনিময়ে তার কাছ থেকে জাহান্নামকে দূরে সরিয়ে দিয়ে তার ও জাহান্নামের মধ্যে ৭০ বছরের রাস্তার দূরত্ব সৃষ্টি করে দেবেন।’[38]

প্রশ্ন-৩২: আপনি কি এমন কোন পথ চান যা আপনাকে সহজে জান্নাতে পৌঁছে দেবে?
উত্তর: রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«وَمَنْ سَلَكَ طَرِيقًا يَلْتَمِسُ فِيهِ عِلْمًا سَهَّلَ اللَّهُ لَهُ بِهِ طَرِيقًا إِلَى الْجَنَّةِ»
‘যে ব্যক্তি দ্বীনি ইলম অর্জনের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেবে, আল্লাহ্ এর বিনিময়ে তার জন্য জান্নাতে যাওয়ার পথ সহজ করে দিবেন।’[39]

প্রশ্ন-৩৩: আপনি কি প্রতিদিন সহজেই এক হাজার নেকী অর্জন করতে চান?
উত্তর: রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: ‘তোমাদের মধ্যে এমন কেউ কি আছে যে প্রতিদিন এক হাজার নেকী অর্জন করতে চায়?’ তার সাথে বসা এক ব্যক্তি তাঁকে প্রশ্ন করল: ‘একদিনে এক হাজার নেকী- এটা কী ভাবে সম্ভব?’
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন:
«يُسَبِّحُ مِائَةَ تَسْبِيحَةٍ فَيُكْتَبُ لَهُ أَلْفُ حَسَنَةٍ أَوْ يُحَطُّ عَنْهُ أَلْفُ خَطِيئَةٍ»
‘এক শ বার তাসবীহ পাঠ করলে (অর্থাৎ ১০০ বার সুবহানাল্লাহ পড়লে) এতে তার জন্য এক হাজার নেকী লেখা হবে অথবা এক হাজার গুনাহ্ তার আমলনামা থেকে মুছে যাবে।’[40]
[বি: দ্র:-অত্র পুস্তিকায় হাদীসের নম্বর হিসেবে বুখারীতে ফাতহুল বারী এবং মুসলিম ও ইবনু মাজায় মুহাম্মাদ ফুয়াদ আবদুল বাকীর নম্বর অনুসরণ করা হয়েছে।]

_________________________________________________________________

[1] মুসলিম : ৬৫৭
[2] সূরা আল-বাকারাহ : ২৩৮
[3] সূরা আত-তাহরীম: ৮
[4] সূরা সাদ : ২৯
[5] সূরা আর-রা‘দ : ২৮
[6] সূরা আন-নূর : ৩০
[7] সূরা আন-নিসা : ১১৪
[8] সূরা আল-বাকারাহ : ১৯৭
[9] বুখারী : ৬৪৬৯, মুসলিম : ২৭৫২
[10] বুখারী, মুসলিম
[11] মুসলিম : ২৫৮৮
[12] বুখারী : ৫০১৫
[13] বুখারী ও মুসলিম।
[14] বুখারী, মুসলিম
[15] বুখারী : ৪৮৮০, মুসলিম : ২৮৩৮
[16] মুসলিম
[17] বুখারী : ৩০১২
[18] মুসলিম : ২৮৩৪, ইবনু মাজাহ : ৪৩৩৩
[19] বুখারী : ৬৫৬৮
[20] মুসলিম
[21] সূরা আস্-সাজদাহ : ১৭, বুখারী : ৪৭৭৯, মুসলিম : ২৮২৪
[22] মুসলিম, ইবনু মাজাহ
[23] বুখারী, মুসলিম
[24] বুখারী: ৫৩০৪।
[25] বুখারী : ৬৬২, মুসলিম : ৪৬৭
[26] বুখারী : ১৪৪২, মুসলিম : ১০১০
[27] মুসলিম
[28] বুখারী : ১৯৮১, মুসলিম : ৭২১
[29] মুসলিম : ১৬৩১।
[30] মুসলিম : ২৭৩২।
[31] বুখারী ও মুসলিম।
[32] মুসলিম : ৭২৮
[33] বুখারী : ৫৬৪২
[34] বুখারী ও মুসলিম।
[35] মুসলিম : ৬৫৬।
[36] বুখারী : ১৩২৫ ও মুসলিম : ৯৪৫
[37] মুসলিম : ৬৫৭
[38] বুখারী : ২৮৪০, মুসলিম : ১১৫৩
[39] মুসলিম : ২৬৯৯
[40] মুসলিম : ২৬৯৮

_________________________________________________________________



আবু আব্দির রহমান 
অনুবাদক : ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া
সূত্র : ইসলাম প্রচার ব্যুরো, রাবওয়াহ, রিয়াদ, সৌদিআরব



আরও পড়ুনঃ জান্নাতে কি হবে?

পোস্টটি ভালো লাগলে শেয়ার করতে ভুলবেন না কিন্তু।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন