বিশ্বনবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনাদর্শ (২য় পর্ব)
১ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন।
বিশ্বনবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনাদর্শ (২য় পর্ব)
(ইমাম ইবনুল কাইয়্যেম রহ. এর যাদুল মা‘আদ হতে সংক্ষেপিত)
(ক) হাদী প্রসঙ্গে তাঁর আদর্শমালা[91]:
১. রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উট ও ছাগলপাল হাদী হিসেবে প্রেরণ করেন এবং তাঁর স্ত্রীদের পক্ষ হতে হাদী হিসেবে গরু প্রেরণ করেন। তিনি হজ্জ ও ওমরার সময় এবং (হুদায়বিয়ার সন্ধি কালে) অবস্থান স্থলে হাদী যবেহ্ করেন।
২. তাঁর আদর্শ ছিল, হাদী হিসেবে প্রেরিত ছাগলপালের গলায় বেড়ি লাগানো, সেগুলোর গলায় ছুরির আঘাতে দাগ করা নয়। তিনি স্বীয় হাদী প্রেরণের পর (ইহরাম বাঁধার পূর্বমুহুর্ত পর্যন্ত) কোনো হালাল বিষয়াদিকে নিজের উপর হারাম মনে করেন নি।
৩. তিনি হাদি হিসেবে উট প্রেরণ করলে সেগুলিকে ‘তাক্বলীদ’-গলায় বেড়ী লাগাতেন, বা ‘এশআর’ করতেন- অর্থাৎ উটের ডান কুজেঁ ছুরির আঘাতে সামান্য দাগ লাগাতেন।
৪. তিনি হাদী প্রেরণ করার সময় দূতকে বলে দিতেন যে, কোনো হাদী মৃত্যুমুখী হলে সেটি যবেহ্ করে দেবে, অতঃপর তার রক্তে স্বীয় জুতা রঙ্গিন করে তার উপরিভাগে রেখে দেবে, সে নিজে কিংবা সাথীবর্গের কেউ সে পশুর গোশ্ত ভঙ্গন করবে না, অতঃপর গোশ্ত অন্য লোকদের মাঝে বন্টন করে দেবে।
৫. তিনি হাদীতে সাহাবীদের অংশীদার করে দিতেন, উটে সাতভাগ এবং গরুতে সাত ভাগ।
৬. তিনি রাখালকে বিশেষ প্রয়োজনে অন্য সওয়ারী পাওয়া পর্যন্ত হাদীতে আরোহণ করার অনুমতি দেন।
৭. তাঁর আদর্শ ছিল: উটকে দাঁড়ানো ও বাম পা বাঁধানো অবস্থায় নহর করা, তিনি নহর করার সময় ‘বিসমিল্লাহ’ ও ‘আল্লাহু আকবর’ বলতেন।
৮. তিনি নিজ হাতেই কুরবানীর পশু যবেহ্ করেন, আবার কখনো অন্যকে অবশিষ্টগুলো যবেহ্ করার দায়িত্ব প্রদান করেন।
৯. তিনি ছাগল-দুম্বা যবেহ্ করার সময় তাঁর এক পা দিয়ে ছাগল-দুম্বার পাঁজর দাবিয়ে রাখতেন, অতঃপর ‘বিসমিল্লাহি-আল্লাহু আকবর’ বলে যবেহ্ করতেন।
১০. তিনি উম্মতকে কুরবানী ও হাদীর গোশ্ত খাওয়া ও জমা রাখার অনুমতি দিয়েছেন।
১১. তিনি কখনো হাদীর গোশ্ত বন্টন করে দিতেন, আবার কখনো বলেন: যার ইচ্ছা কিছু অংশ রেখে দেবে।
১২. তাঁর আদর্শ ছিল ওমরার হাদী যবেহ্ করা মারওয়া পাহাড়ের নিকটে, আর হজ্জে কেরানের হাদী যবেহ্ করা মিনাতে।
১৩. তিনি কখনও ইহরাম থেকে হালাল হওয়ার পূর্বে স্বীয় হাদী নহর করেননি, বরং তিনি শুধুমাত্র সূর্যোদয়ের পর এবং জমরাতে কংকর নিক্ষেপের পরই হাদী নহর করেন এবং সূর্যোদয়ের পূর্বে হাদী নহর করার অনুমতি কখনও তিনি দেননি।”
১. রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনও কুরবানী করা পরিত্যাগ করেননি এবং তিনি দু’টি দুম্বা দিয়ে কুরবানী করতেন এবং ঈদের সালাতের পর সেগুলো যবেহ্ করতেন। তিনি বলেন: “আইয়্যামে তাশরীক্ব তথা ১১, ১২, ১৩ তারিখও কুরবানীর পশু যবেহ করার দিবস।”[93]
২. তিনি আরো বলেন: যে কেউ ঈদের সালাতের পূর্বে কুরবানী করলো, তার কুরবানী বলতে কিছুই হলো না, বরং সেটা কেবল খাবার গোশ্ত হলো, যা সে নিজের পরিবার-পরিজনের জন্য আগাম ব্যবস্থা করলো।”[94]
৩. তিনি ছাগল-মেষ জাতীয় পশুর ছয় মাসের ছানা এবং পাঁচ বছর উত্তীর্ণ উট, আর দু’বছর উত্তীর্ণ গরু কুরবানী করার নির্দেশ দেন।
৪ তাঁর আদর্শ ছিল কুরবানীর জন্য সুন্দর ও ত্রুটিমুক্ত পশু বাচাই করা। তিনি কান-কাটা, শিং-ভাঙ্গা, এক চোখ-কানা, নেংড়া, পা ভাঙ্গা, ও অতি দুর্বল পশু দিয়ে কুরবানী করতে নিষেধ করেন এবং তিনি চোখ-কান ত্রুটিমুক্ত হওয়ার প্রতি লক্ষ্য রাখার নির্দেশ দেন।
৫. তিনি আরো নির্দেশ দেন, যে ব্যক্তি কুরবানী করার ইচ্ছা রাখে সে যেন যিল-হাজ্জ মাসের প্রথম দশক প্রবেশের পর নিজের নখ-চুলের কিছুই না কাটে।
৬. তাঁর আদর্শ ছিল ঈদগাহে কুরবানী করা।”[95]
৭. তাঁর আদর্শ ছিল একটি ছাগল এক পরিবারের পক্ষ হতে যথেষ্ট হবে বলে মনে করা, যদিও সংখ্যায় তারা একাধিক হয়ে থাকে।”
১. সহীহ্ সনদে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে প্রমাণিত যে, তিনি বলেছেন: “প্রত্যেক নবজাত শিশু তার আক্বীকার সাথে দায়বন্ধ থাকে, যেটি তার পক্ষ থেকে সপ্তম দিনে যবেহ্ করা হয় এবং তার মাথা-মুণ্ডন করা হয় ও নাম রাখা হয়।”[97]
২. তিনি আরো বলেছেন: “ছেলের পক্ষ থেকে দু’টি ছাগল এবং মেয়ের পক্ষ থেকে একটি ছাগল যবেহ্ করা হবে।”[98]
১. রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ক্রয় ও বিক্রয় করেন, তবে নবুওয়াত লাভের পর তাঁর ক্রয় অধিক ছিল বিক্রয় অপেক্ষা, তিনি মজুরী করেন[100] এবং অন্যকে মজুর নিয়োগ করেন, তিনি উকীল-প্রতিনিধি নিয়োগ করেন এবং অন্যের প্রতিনিধিত্ব করেন, তবে তাঁর প্রতিনিধি নিয়োগ অধিক ছিল তাঁর প্রতিনিধিত্ব করা অপেক্ষা।
২. তিনি নগদ মূল্যে ও বাকী মূল্যে ক্রয় করেন, তিনি নিজে সুপারিশ করেন এবং তাঁর নিকট সুপারিশকরা হয়, তিনি বন্ধক দিয়ে এবং বন্ধক ছাড়া ঋণ গ্রহণ করেন এবং তিনি ধার নেন।
৩. তিনি দান-খায়রত করেন করেন এবং দান গ্রহণ করেন, তিনি নিজে উপহার-উপঢৌকন প্রদান করেন এবং উপহার গ্রহণ করেন এবং তার প্রতিদান প্রদান করেন, আর উপহার গ্রহণের ইচ্ছা না হলে প্রদানকারীর নিকট অপারগতা প্রকাশ করেন, রাজা-বাদশাগণ তাঁর নিকট হাদীয়া-উপঢৌকন প্রেরণ করতো, তিনি তাদের হাদীয়া গ্রহণ করতেন এবং তা সাহাবীদের মাঝে বন্টন করে দিতেন।
৪. তাঁর লেন-দেন সর্বাধিক উত্তম ছিল, তিনি কারো থেকে কিছু ঋণ হিসেবে গ্রহণ করলে তার চেয়ে উত্তম পরিশোধ করতেন এবং তার ধন-সম্পদ ও পরিবার-পরিজনের জন্য বরকতের দু‘আ করতেন, তিনি একবার ঋণ হিসেবে একটি উট গ্রহণ করেন, অতঃপর তার মালিক কর্কশ ভাষায় তাঁর নিকট মূল্য পরিশোধের দাবী করলে সাহাবীগণ তাকে মার-ধর করার ইচ্ছা করেন, তখন তিনি বলেন: তাকে ছেড়ে দাও, কেননা হকদারের কথা বলার অধিকার রয়েছে।”[101]
৫. অজ্ঞ-মুর্খদের কঠোরতা তাঁর দৈর্ঘ-ক্ষমাশীলতাকে আরো বৃদ্ধি করতো, তিনি রাগাম্বিত ব্যক্তিকে নির্দেশ দেন, সে যেন নিজের রাগের অগ্নিষ্ফুলিঙ্গকে অযুর পানির দ্বারা নিবিয়ে ফেলে এবং বসে পড়ে যদি সে দাঁড়ানো থাকে এবং শয়তান থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করে।
৬. তিনি কারো উপর গর্ব-অহংকার করতেন না, বরং সাথীদের সামনে বিনয় নম্রতা প্রকাশ করতেন এবং ছোট-বড় সবাইকে সালাম দিতেন।
৭. তিনি কখনো কৌতুক ও রসিকতা করতেন, তবে তিনি কৌতুক ও রসিকতায় সত্য বলতেন, তিনি কখনো ‘তাওরিয়া’ বা ইঙ্গিতে কথা প্রকাশ করতেন, তবে তিনি তাতে সত্য ছাড়া বলতেন না।
৮. তিনি একদা নিজেই দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণ করেন, নিজ হাতেই জুতা সেলাই করেন, নিজ হাতেই কাপড় বহন করেন, পানির ঢোলে তালি লাগান, ছাগলের দুধ দোহন করেন, কাপড় সেলাই করেন, নিজের ও পরিবার-পরিজনের খেদমত করেন এবং সাহাবীদের সঙ্গে মসজিদে নির্মাণ কাজে ইট বহন করেন।
৯. তাঁর বক্ষ কল্যাণের জন্য সৃষ্টির মধ্যে সর্বাধিক উন্মুক্ত ছিল, তাঁর অন্তর সর্বাধিক পবিত্র ছিল।
১০. তাঁকে দুটি বিষয়ের যে কোনো একটি গ্রহণ করার এখতিয়ার দেওয়া হলে তিনি সর্বদাই অপেক্ষাকৃত সহজতরটি গ্রহণ করতেন, যদি না হয় তা গুনাহর বিষয়।
১১. তিনি ব্যক্তিগত কোনো বিষয়ে কখনো প্রতিশোধ গ্রহণ করেননি, তবে আল্লাহর বিধান লঙ্ঘিত হলে শুধু আল্লাহর জন্যই প্রতিশোধ গ্রহণ করতেন। ১২. তিনি পরামর্শ দিতেন এবং পরামর্শ গ্রহণ করতেন, রোগীর দেখা-শুনা করতেন এবং জানাযায় শরীক হতেন, লোকদের দাওয়াত গ্রহণ করতেন এবং বিধবা, অভাবগ্রস্ত দুর্বলদের অভাব পূরণের লক্ষ্যে তাদের সাথে হেঁটে যেতেন।
১৩. কেউ তাঁকে পছন্দনীয় কোনো বস্তু উপহার দিলে তিনি তার জন্য দু‘আ করতেন এবং বলতেন: যে কেউ কারো প্রতি সদাচরণ করলো, অতঃপর সে ঐ আচরণকারীকে বললো:
«جزاك الله خيراً».
‘জাযাকা-ল্লাহু খাইরান’
১. সহীহ্ সনদে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে প্রমাণিত যে, তিনি বলেছেন: দুনিয়ার বস্তসমূহ হতে নারী ও সুগন্ধিকে আমার নিকট পছন্দনীয় করা হয়েছে এবং সালাতের মধ্যে আমার চোখের প্রশান্তি রাখা হয়েছে।”[104]
তিনি আরো বলেছেন: “হে যুব সমাজ ! তোমাদের মধ্যে যে সাধ্য রাখে সে যেন বিবাহ করে।”[105]
তিনি আরো বলেছেন: “তোমরা অত্যধিক মমতাময়ী ও অধিক সন্তান প্রসবকারিণী নারী বিবাহ করো।”[106]
২. তাঁর আদর্শ ছিল স্ত্রীদের সাথে সদয় ব্যবহার ও মহৎ চরিত্রময় জীবন-যাপন করা। তিনি বলতেন: “তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম সে ব্যক্তি, যে নিজের পরিবারের নিকট সর্বোত্তম, আর আমি আমার পরিবারের নিকট তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম।”[107]
৩. স্ত্রীদের কেউ অবৈধ নয় এমন কোনো বিষয় কামনা করলে তিনি তার সে বাসনা পূরণ করতেন। উম্মুল মু’মিনীন আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহার নিকট আনসারী মেয়েদেরকে গোপনে প্রবেশ করাতেন, যারা তাঁর সাথে খেলা-ধুলা করতো। উম্মুল মু’মিনীন আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা পান করার পর তিনি পাত্র হাতে নিয়ে সে স্থানে মুখ রেখে পান করেন যেখানে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা মুখ রেখে পান করেছিলেন, তিনি কখনো কখনো তার কোলে ঠেস লাগাতেন এবং কখনো তাঁর মাথা আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা-এর কোলে রেখে কুরআন তেলাওয়াত করতেন, অথচ কখনো তিনি হায়েয অবস্থায় হতেন, আবার কখনো তাকে হায়েয অবস্থায় পায়জামা পরিধান করতে আদেশ করতেন, অতঃপর তিনি পায়জামার উপর সহবাস করতেন।
৪. তিনি আসরের সালাত শেষে তাঁর স্ত্রীদের নিকট গমন করে তাদের খোজ-খবর নিতেন, অতঃপর রাতে যার পালা তার সাথে রাত্রি যাপন করতেন।
৫. তিনি স্ত্রীগণের মাঝে রাত যাপন এবং খোর-পোষ সমান করে বন্টন করতেন, কখনো কখনো তিনি তাঁর কোনো এক স্ত্রীর প্রতি হাত প্রসারিত করতেন অন্য স্ত্রীদের উপস্থিতিতে।
৬. তিনি স্ত্রীদের সাথে রাতের শেষভাগে ও প্রথমভাগে যৌন-মিলন করতেন, আর রাতের প্রথমাংশে স্ত্রী-সহবাস করলে কখনো গোসল করে ঘুমিয়ে যেতেন, আবার কখনো অযু করে ঘুমিয়ে পড়তেন। তিনি বলেন: “সে ব্যক্তি অভিশপ্ত বা আল্লাহর রহমত থেকে বহিষ্কৃত, যে নিজের স্ত্রীর পশ্চাতভাগ দিয়ে যৌনসঙ্গম করে।”[108] তিনি আরো বলেন: “তোমাদের কেউ যদি স্ত্রী-সহবাসের পূর্বে বলে:
«اللهم جنبنا الشيطان وجنب الشيطان ما رزقتنا».
‘আল্লা-হুম্মা জান্নিবনাশ শায়ত্বা-না, ওয়া জান্নিবিশ শায়তানা মিম্মা রাযাক্বতানা।
“হে আল্লাহ! তুমি আমাদের থেকে শয়তানকে দূরে রাখো, আর আমাদেরকে তুমি (এ মিলনের ফলে) যে সন্তান দান করবে তার থেকেও শয়তানকে দূরে রাখো। তাহলে যদি সে মিলনের মাধ্যমে সন্তান গর্ভধারণ নির্ধারিত থাকে, তবে শয়তান কখনো তার ক্ষতি করতে পারবে না।”[109]
৭. তিনি বলেন: যখন তোমাদের কেউ কোনো নারীকে বিবাহ করে অথবা দাসক্রয় করে কিংবা চতুষ্পদ জন্তু ক্রয় করে, তখন তার ললাট ধারণ করে ‘বিসমিল্লাহ্’ বলে এবং আল্লাহর নিকট তাতে বরকতের জন্যে দু‘আ করে বলে:
«اللهم إني أسألك خيرها وخير ما جبلت عليه وأعوذ بك من شرها ومن شر ما جبلت عليه».
“আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসআলুকা খাইরাহা, ওয়া খাইরামা জুবিলাত্ আলাইহি, ওয়া আয়ুযুবিকা মিন শাররিহা ওয়া শাররিমা জুবিলাত্ আলাইহি।”
“তোমার নিকট এর কল্যাণের প্রার্থনা জানাই এবং তার সেই কল্যাণময় স্বভাবেরও আহ্বান জানাই যার উপর তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে, আর আমি তোমার আশ্রয় চাই তার অনিষ্ট হতে এবং তার প্রবৃত্তির অকল্যাণ হতে যার উপর তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে।”[110]
৮. তিনি বিবাহিতদের জন্যে দু‘আ করে বলতেন:
«بارك الله لك وبارك عليك وجمع بينكما في خير».
‘বারকাল্লাহু লাকা, ওয়া বারাকা ‘আলাইকা, ওয়া জামা‘আ বাইনাকুমা ফী খাইরিন।”
“আল্লাহ তোমার জন্য বরকত দিন, আর তোমার উপর বরকত নাযিল হোক এবং তোমাদের দু’জনকে কল্যাণে একত্রিত করুন।”[111]
৯. তিনি সফরকালে স্ত্রীদের মাঝে লটারী দিতেন, লটারীতে যার নাম উঠতো সে তাঁর সঙ্গে যেতো, অন্যদের জন্য সেই সময়টি গণনা করতেন না।
১০. তাঁর আদর্শ ছিল না গৃহ-বাসভবনের প্রতি অতিশয় মনোযোগ প্রদান করা, উচ্চতা বিশিষ্ট-দীর্ঘ করা, সাজিয়ে-নক্স করা এবং সম্প্রসারিত করা।
১১. তিনি[112] তালাক প্রদান করেছিলেন, অতঃপর তালাক প্রত্যাহার করে নেন, তিনি নিজের স্ত্রীদের নিকট এক মাস গমণ করবেন না বলে শপথ করে ঈলায়ে মুয়াক্কাত (বা নির্ধরিত সময়ের ঈলা) করেন, তবে তিনি কখনই ‘যিহার’ করেন নি।”[113]
(ক) আহার প্রসঙ্গে তাঁর আদর্শমালার বিবরণ:
১. যা কিছু খাবার উপস্থিত করা হতো তা তিনি ফিরিয়ে দিতেন না, আর যা কিছু মওজুদ নেই তার জন্য ভনিতা বা কৃত্রিমতা করতেন না, বরং পবিত্র-হালাল বস্তুসমূহ হতে যা কিছু তাঁর সামনে পেশ করা হতো তা থেকে খেয়ে নিতেন। কিন্তু তাঁর রুচিসম্মত না হলে হারাম না বলে তা পরিত্যাগ করতেন, রুচিসম্মত না হওয়া সত্ত্বেও কোনো কিছু নিজের উপর জরবদস্তি করে খেতেন না। তিনি কখনই কোনো খাবারে দোষ প্রকাশ করেন নি, খাবার তাঁর রুচিসম্মত হলে খেয়েছেন, আ রুচিসম্মত না হলে পরিত্যাগ করেছেন, যেমন তিনি অভ্যস্ত না হওয়ায় ‘দ্বাব্ব’[115] খাননি।
২. যা কিছু মওজুদ থাকতো তা হতে তিনি আহার করতেন, আর কিছুই না পেলে তিনি ধৈর্যধারণ করতেন, এমনকি তিনি ক্ষুধার কারণে পেটে পাথর বাঁধেন, এক চাঁদ, দু’চাঁদ ও তিন চাঁদ অতিবাহিত হতো, কিন্তু তার ঘরে আগুন প্রজ্বলন করা হতো না।
৩. তাঁর আদর্শ ছিল না যে, নিজেকে একই প্রকার খাবারের উপর অভ্যস্ত করে নেওয়া এমনভাবে যে, তা ছাড়া অন্য কিছুই খাবেন না।
৪. তিনি ভেঁড়া, দুম্বা ও মুরগীর গোশ্ত এবং হুবারা পাখির গোশ্ত, জঙ্গলী গাধার গোশ্ত, খারগোশ ও সামুদ্রিক খাদ্য এবং ভূনা খাদ্য খেয়েছেন। কাঁচা খেজুর ও শুকনা খেজুর খেয়েছেন। তিনি ‘সারীদ’- অর্থাৎ গোশ্ত ও রুটি মেশানো এক প্রকার উপাদেয় খাবার খেয়েছেন। তিনি যায়তুনের তৈল দিয়ে রুটি খেয়েছেন। তিনি তাজা খেজুরের সাথে খিরা খেয়েছেন। তিনি রান্নাকৃত কদু খেয়েছেন এবং তিনি সেটি পছন্দ করতেন। তিনি ডেকচিতে অবশিষ্ট শুকনা গোশতের টুকরো খেয়েছেন এবং তিনি দুধের সর দিয়ে খেজুর খেয়েছেন।
৫. তিনি গোশ্ত পছন্দ করতেন এবং তাঁর নিকট অত্যধিক পছন্দনীয় ছিল বকরীর বাহু ও অগ্রবর্তী অংশ।
৬. তিনি স্বদেশের নবাগত ফল খেতেন এবং তা থেকে আত্মরক্ষা করতেন না।
৭. অধিকাংশ সময় তাঁর খাবার যমীনের উপর দস্তরখানে রাখা হতো।
৮. তিনি ডান-হাতে আহার করার নির্দেশ দিতেন এবং বাম-হাতে খেতে নিষেধ করতেন। এবং বলতেন: “শয়তান বাম-হাতে খায় এবং বাম হাতে পান করে।”[116]
৯. তিনি তিন আঙ্গুলে আহার করতেন এবং তিনি আহার শেষে আঙ্গুল চেটে খেতেন।”[117]
১০. তিনি হেলান দিয়ে খাবার খেতেন না।”[118]
আর হেলান বা ঠেস্ লাগানো তিন প্রকারে হয়ে থাকে : - ১. একপার্শ্বে ঝুঁকে আহার করা, ২. চারজানু হয়ে বসে আহার করা, ৩. এক হাতের উপর ঠেস্ দিয়ে বসে অপর হাতে আহার করা, উক্ত তিন প্রকারই নিন্দিত। তিনি উভয় হাঁটু খাড়া অবস্থায় পাছার উপর বসে আহার করতেন এবং বলতেন: “আমি বসি যেভাবে একজন দাস বসে আর আহার করি যেভাবে একজন দাস আহার করে।
১১. যখন তিনি খাবারে হাত রাখতেন তখন
«بسم الله».
‘বিসমিল্লাহ্’ বলতেন এবং তিনি আহারকারীকে ‘বিসমিল্লাহ্’ বলার নির্দেশ দিতেন, তিনি আরো বলেন: “যখন তোমাদের কেউ খাবার খায় তখন শুরুতে যেন ‘বিসমিল্লাহ্’ বলে, আর যে শুরুতে ‘বিসমিল্লাহ্’ বলতে ভুলে গেলো সে যেন বলে:
«بسم الله في أوله وآخره»
‘বিসমিল্লাহি ফী আওয়ালিহী ওয়া আখিরীহী।”
“শুরুতে ও শেষে আল্লাহর নামে।”[119]
১২. তিনি বলেন: “যে খাবারে আল্লাহর নাম নেয়া হয় না, শয়তান তাকে নিজের জন্য হালাল করে নেয়।”[120]
১৩. তিনি খাবার খেতে বসে মেহমানদের সাথে কথা বলতেন এবং তাদের উপর বারংবার খাবার উঠিয়ে দিতেন, যেমনটি অতি আপ্যায়ণকারী লোকেরা করে থাকে।
১৪. যখন তার সামনে থেকে খাবার খাওয়ার পর বাকী অংশ উঠিয়ে নেওয়া হতো তখন তিনি বলতেন:
«الحمد لله حمداً كثيراً طيباً مباركا فيه غير مكفي ولا مودع ولا مستغنى عنه ربنا».
‘আল-হামদু লিল্লাহি হামদান কাসিরান ত্বাইয়েবান মুবারাকান ফীহি, গাইরা মুকফিয়্যীন, ওয়ালা-মুয়াদ্দা‘য়ীন, ওয়ালা-মুসতাগনান ‘আনহু রাব্বানা।”
“পাক-পবিত্র, বরকতময় অনেক অনেক প্রশংসা আল্লাহর জন্য, হে আমাদের প্রভু! যে খাদ্য হতে নির্লিপ্ত হতে পারবো না, আর যা থেকে কখনই চিরতরে বিদায় নিতে পারবো না এবং তা হতে অমুখাপেক্ষীও হবো না।”[121]
১৫. তিনি কারো নিকট পানাহার করলে তাদের জন্যে দু‘আ না করা পর্যন্ত বের হতেন না এবং বলতেন:
«أفطر عندكم الصائمون وأكل طعامكم الأبرار وصلت عليكم الملائكة».
‘আফতারা ইন্দাকুমুস সায়েমূন, ওয়া-‘আকালা ত্বা‘আমাকুমুল আবরার, ওয়া-স্বাল্লাত্ আলাইকুমুল মালাইকা।”
“তোমাদের সাথে ইফতার করলো রোযাদারগণ, তোমাদের আহার গ্রহণ করলো সৎ লোকগণ এবং তোমাদের জন্য শান্তি কামনা করলো ফেরেশতাগণ।”[122]
১৬. যদি কেউ মিসকীন-অভাবগ্রস্ত লোকদের মেহমানদারী করতো তিনি তার জন্যে দু‘আ করতেন এবং তার প্রশংসা করতেন।
১৭. তিনি ছোট কিংবা বড়, স্বাধীন কিংবা ক্রীতদাস, বেদুঈন কিংবা মুহাজির বা ভিনদেশী যে কারো সাথে বসে পানাহার করতে ঘৃণা করতেন না।
১৮. রোযারত অবস্থায় তাঁর সামনে খাবার পেশ করা হলে তিনি বলতেন: আমি রোযাদার।”[123] এবং মেহমানের প্রতি নির্দেশ জারী করেন যে, যদি সে রোযাদার হয়, তাহলে যেন মেজবানের জন্যে দু‘আ করে, আর যদি সে রোযাদার না হয় তাহলে যেন আহার করে।”[124]
১৯. কেউ বিশেষভাবে খাবার তৈরী করে তাঁকে দাওয়াত দিলে, তখন তার সাথে অন্য কেউ এসে শামিল হলে, তিনি মেজবানকে তার সম্পর্কে অবহিত করে বলতেন: এই ব্যক্তি আমাদের সাথে এসেছে, তোমার ইচ্ছা হলে তাকে অনুমতি দিতে পার, নতুবা তুমি চাইলে সে চলে যাবে।”[125]
২০. সাহাবীদের কেউ কেউ তাঁর নিকট অভিযোগ করলো যে, তারা পানাহার করে পরিতৃপ্তি লাভ করে না, তখন তিনি তাদেরকে নির্দেশ প্রদান করেন যে, তোমরা বিচ্ছিন্নভাবে না হয়ে একত্রে খাবার খাও এবং আল্লাহর নাম নিবে, এতে তোমাদের খাদ্যে বরকত হবে।”[126]
২১. তিনি বলেছেন : “আদম-সন্তান পেটের চেয়ে অধিক নিকৃষ্ট কোনো পাত্র পূর্ণ করেনি, তার জন্যে কয়েকটি লোকমাই যথেষ্ট ছিল, যদ্বারা স্বীয় পিঠ সোজা রাখবে, আর অত্যধিক প্রয়োজন হলে এক -তৃতীয়াংশ খাবারের জন্য, এক-তৃতীয়াংশ পানীয়ের জন্য এবং এক-তৃতীয়াংশ শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য।”[127]
২২. এক রাত্রে তিনি ঘরে প্রবেশ করে খাবার তালাশ করে কিছুই পেলেন না, তখন তিনি বললেন:
«اللهم أطعم من أطعمني واسق من سقاني».
‘আল্লা-হুম্মা আত্বয়িম মান আত্বআমানী, ওয়াসকি মান-সাক্বানী।”
“হে আল্লাহ! যে আমাকে আহার করাবে তুমি তাকে আহার করাও, আর যে আমাকে পান করাবে তুমি তাকে পান করাও।’[128]
১. পান করা প্রসঙ্গে তাঁর আদর্শমালা ছিল সর্বাপেক্ষা পূর্ণাঙ্গ, যাতে স্বাস্থ্যের হেফাযত হয়। ঠান্ডা-মিষ্টি পানীয় তাঁর নিকট সর্বাধিক পছন্দনীয় ছিল। তিনি কখনো খালেস দুধ পান করতেন, আবার কখনো পানি-মিশ্রিত দুধ, তিনি দুধ পান করে বলতেন:
«اللهم بارك لنا فيه وزدنا منه».
‘আল্লা-হুম্মা বারিক লানা-ফিহ্, ওয়াযিদনা-মিনহু,
“হে আল্লাহ্ ! তুমি আমাদের এ খাদ্যে বরকত দাও এবং তা আরো বেশী করে দাও, নিঃসন্দেহে এমন কোনো বস্তু নেই যা খানা-পিনার জন্য যথেষ্ট হতে পারে একমাত্র দুধ ব্যতীত।”[130]
২. খাবারের উপর পান করা তাঁর আদর্শ ছিল না, তাঁর জন্যে রাতের প্রথমভাগে ‘নবীয’ বানানো হতো এবং তিনি তা সকালে এবং আগামী রাতে এবং দ্বিতীয় দিনে ও রাতে এবং তৃতীয় দিন আসর পর্যন্ত পান করতেন, অতঃপর অবশিষ্টগুলি খাদেমকে পান করাতেন অথবা ঢেলে দিতে নির্দেশ দিতেন।
‘নাবীয’ মানে পানিতে পাকা খেজুর ঢেলে রেখে তা মিষ্টি করা, তিন দিন পর নেশাদ্রব্যে পরিণত হওয়ার আশঙ্কায় তিনি তা পান করতেন না।
৩. তাঁর অভ্যাসগত আদর্শ ছিল বসাবস্থায় পান করা এবং যে দাঁড়ানো অবস্থায় পান করে তাকে তিনি ধমক দেন, তবে তিনি একদা দাঁড়ানো অবস্থায় পান করেন, কেউ বলেন: তা বিশেষ প্রয়োজনে ছিল, আর কেউ বলেন: নিষেধাজ্ঞা রহিত করার জন্য ছিল, আবার কেউ বলেন : উভয়টি জায়েয ঘোষণা করার জন্য ছিল।
৪. তিনি পানি পান করতে তিনবার নিঃশ্বাস নিতেন এবং বলতেন: “এটি অধিক তৃপ্তিদায়ক, অধিক হযমকারী এবং অধিক উপকারী।”[131] এখানে তিনি তিনবার ‘নিঃশ্বাস নিতেন’ এর অর্থ হচ্ছে, তিনি পাত্রের বাইরে নিঃশ্বাস ফেলতেন, যেরূপ অন্য বর্ণনায় রয়েছে, তিনি বলেছেন: “যখন তোমাদের কেউ পান করে তখন যেন পাত্রের মধ্যে নিঃশ্বাস না ফেলে, বরং নিঃশ্বাস ফেলার সময় মুখ থেকে পাত্র সরিয়ে নিবে।”[132] তিনি পাত্রের ফাটল দিয়ে কিংবা মশকের মুখে মুখ লাগিয়ে পান করতে নিষেধ করেছেন।
৫. আর তিনি ‘আল-হামদুলিল্লাহ্’ বলতেন যখন পান শেষ করতেন এবং বলেন: “নিশ্চয় আল্লাহ্ সেই বান্দার উপর রাযী হন যে খাবার আহার করলে ‘আল-হামদুলিল্লাহ্’- বলে এবং পানীয় পান করলে ‘আল-হামদুলিল্লাহ’, বলে।”[133]
৬. তাঁর জন্যে মিষ্টি পানি আনা হতো, ভাল-উত্তম পানি যা লবণাক্ত নয় এবং তা থেকে তিনি গতকালের পুরানোটি গ্রহণ করতেন।
৭. তিনি পান করার পর অবশিষ্ট অংশ ডানে উপস্থিত ব্যক্তিকে দিতেন যদিও তাঁর বামে কোনো প্রবীণ ব্যক্তি থাকে।
৮. তিনি খাবার পাত্র ঢেকে রাখতে এবং মুখ বন্ধ করতে নির্দেশ দিতেন, যদিও এক টুকরা কাঠ দিয়ে হয় এবং যেন সে সময় ‘বিসমিল্লাহ্’ বলা হয় সে নির্দেশনা দিতেন।”
১. তিনি দিনে ও রাত্রে এবং প্রকাশ্যে ও গোপনে মানুষকে আল্লাহর দিকে আহ্বান করতেন, তিনি নবুওয়াতের প্রথমভাগে তিন বছর মক্কায় গোপনীয়ভাবে আল্লাহর প্রতি আহ্বান করেন, অতঃপর আল্লাহর বাণী:
﴿ فَٱصۡدَعۡ بِمَا تُؤۡمَرُ وَأَعۡرِضۡ عَنِ ٱلۡمُشۡرِكِينَ ٩٤ ﴾ [الحجر: ٩٤]
‘‘তুমি যে বিষয়ে আদিষ্ট হয়েছো, তা প্রকাশ্যে প্রচার করো এবং মুশরিকদের উপেক্ষা কর।”[135] এই আয়াত অবতীর্ণ হলে তিনি প্রকাশ্যে দ্বীনের দাওয়াত ও তাবলীগ আরম্ভ করেন এবং আল্লাহর পথে কোনো নিন্দুকের নিন্দার পরোয়া করেন নি, বরং ছোট -বড়, স্বাধীন-ক্রীতদাস, নারী-পুরুষ ও জ্বিন-ইনসান সবাইকে আল্লাহর দিকে আহ্বান করেন।
২. মক্কায় তাঁর সাহাবীদের উপর নিপীড়ন কঠোরতর হয়ে উঠলে তিনি তাদেরকে হাবশায় হিজরত করার অনুমতি প্রদান করেন।
৩. তিনি তায়েফ গমন করেন এ আশায় যে, তায়েফবাসী ইসলাম গ্রহণ করে তাঁর সাহায্য করবে, তাই তিনি সেখানে পৌঁছে তাদেরকে দ্বীনের প্রতি দাওয়াত দেন, কিন্তু তিনি সাহায্য-সহযোগিতাকারীরূপে কাউকে পেলেন না, বরং তারা তাঁকে সর্বাপেক্ষা কঠিন কষ্ট দিলো এবং তারা তাঁর সাথে এরূপ মন্দ আচরণ করলো যা তিনি তাঁর নিজের কাওম থেকেও পান নি। অবশেষে তারা তায়েফ থেকে তাঁকে মক্কার দিকে বহিষ্কার করলো, অতঃপর তিনি মুত‘আম ইবনে আদীর আশ্রয়ে মক্কায় প্রবেশ করেন।
৪. তিনি মক্কায় দশ বছর পর্যন্ত প্রকাশ্যে দ্বীনের দাওয়াত দিতে থাকেন, তিনি প্রত্যেক বছর হজ্জের মৌসুমে নতুন উদ্যমে ইসলামের দাওয়াত শুরু করতেন এবং হাজীদের তাঁবুতে গিয়ে তাদের ইসলামের দাওয়াত দিতেন এবং ‘ওকায, মাজিন্নাহ ও যিল-মজায’ প্রভৃতি মেলা মৌসুমে গিয়ে ইসলামের দাওয়াত দিতেন, এমনকি তিনি আরবের বিভিন্ন গোত্র ও তাদের অবস্থান-স্থল প্রসঙ্গে জিজ্ঞেস করে তাদের কাছে দাওয়াত পৌঁছাতেন।
৫. অতঃপর মিনার পাহাড়ী এলাকার ‘আকাবা’য় মদীনার ‘খাযরাজ’ গোত্রের ছয় জন লোকের সাথে দেখা হয়, তিনি তাদেরকে ইসলামের দাওয়াত দিলে তারা সবাই ইসলাম গ্রহণ করে ধন্য হয়, অতঃপর তারা মদীনায় প্রত্যাবর্তন করে লোকদেরকে ইসলামের পথে দাওয়াত দিতে থাকে, ফলে মদীনার ঘরে ঘরে দ্বীনের দাওয়াত ছড়িয়ে পড়ে, বস্তুত মদীনায় এমন কোনো ঘর বাকী ছিল না যাতে ইসলাম প্রবেশ করেনি।
৬. পরবর্তী বছর হজ্জ মৌসুমে তাদের ১২ জন লোক আসে, তিনি তাদেরকে মিনার ‘আকাবা’র কাছে বাই‘আত চান। তারা আল্লাহর রাসূলের নিকট বাই‘আত করেন। সে বাই‘য়াতের দফাসমূহ ছিল: তারা তাঁর কথা শুনবে এবং মানবে, তাঁর জন্যে নিজেদের ধন-সম্পদ ব্যয় করবে, সৎ কাজের আদেশ এবং অসৎ কাজ হতে বারণ করবে, আল্লাহর জন্য দাওয়াতের কথা বলবে, এ ব্যাপারে কোনো নিন্দুকের নিন্দার পরোয়া তারা করবে না, তারা তাঁর সাহায্য করবে এবং নিজেদের প্রাণ, সন্তান-সন্তুতি এবং পরিবারের হেফযতের মতোই তাঁর হেফাযত করবে এবং পুরষ্কার স্বরূপ তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত। অতঃপর তারা মদীনায় ফিরে যায়, তখন তিনি তাদের সাথে ‘আব্দুল্লাহ্ ইবনে উম্মে মাকতূম ও মুস্‘আব ইবনে ওমাইর, রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা-কে কুরআন শিক্ষা ও আল্লাহর দিকে দ্বীনের দাওয়াত প্রদানের জন্যে মদীনায় প্রেরণ করেন, ফলে তাদের দাওয়াতে অনেক লোক ইসলাম গ্রহণ করে, যাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল উছাইদ ইবনে হুদাইর ও সা‘দ ইবনে মু‘আয রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা।
৭. অতঃপর তিনি মুসলিমদের মদীনায় হিজরত করে চলে যাওয়ার অনুমতি প্রদান করেন, তখন মুসলিমগণ দ্বীন রক্ষার্থে জন্মভুমি মক্কা ত্যাগ করে মদীনায় হিজরত শুরু করে, অবশেষে তিনি ও তাঁর সাথী আবু বকর হিজরত করেন।
৮. তিনি মুহাজির ও আনসারদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব বন্ধন স্থাপন করেন। তখন তাদের সংখ্যা ছিল ৯০ জন পুরুষ।”
১. সহীহ্ সনদে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “সকল মুসলিমের অঙ্গীকার জনিত দায়িত্ব-কর্তব্যবোধ একই ধরনের। ফলে তাদের সাধারণ ব্যক্তিরাও তা মেনে চলতে বাধ্য। অর্থাৎ একজন কোনো অঙ্গীকার বা চুক্তি করলে সকলে তা মেনে চলবে।”[137] তিনি আরো বলেন: “যার সাথে কোনো জাতির সন্ধি-চুক্তি রয়েছে, সে যেন চুক্তির মেয়াদ পূর্ণ হওয়া অবধি চুক্তি ভঙ্গ না করে। আর সে যেন সে সময় শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোনোভাবেই তার ব্যতিক্রম না করে। অথবা সন্ধি-চুক্তি তাদের দিকে এমনভাবে ছুঁড়ে ফেলে যেন সে ও অপরপক্ষ এতে সমান সমান হয়ে যায়।”[138] তিনি আরও বলেন, “যে ব্যক্তি কোনো লোককে তার জানের নিরাপত্তা দেওয়ার পর তাকে হত্যা করল, আমি সে হত্যাকারীর সাথে সম্পর্কছিন্নকারী।”[139]
৩. যখন ‘মুছাইলামাতুল কায্যাব-এর দু’জন দূত তাঁর নিকট এসে তার ব্যাপারে কথা-বার্তা বললো, তখন তিনি বলেন: “যদি না নিয়ম হচ্ছে দূতদেরকে হত্যা করা হয় না, নচেৎ আমি তোমাদের উভয়ের গর্দান উড়িয়ে দিতাম।”[140] তাই তাঁর আদর্শ এভাবে জারী হয় যে, কোনো প্রেরীত- দুতকে হত্যা না করা।” সে থেকে রাসূলের নিয়ম চলে আসছে যে, কোনো দূতকে হত্যা করা হয় না।
৪. কোনো প্রেরিত দূত তাঁর নিকট এসে ইসলাম গ্রহণ করলে, তিনি তাকে বাধা দিয়ে রেখে দিতেন না, বরং তাকে স্বদেশে ফিরিয়ে দিতেন।
৫. সাহাবীদের কেউ তাঁর অনুমতি ছাড়া শত্রুদের সাথে এমন কোনো সন্ধি-চুক্তি করলে যাতে মুসলিমদের কোনো ক্ষতি নেই, তখন তিনি তা অনুমোদন করে দিতেন।
৬. তিনি কুরাইশদের সাথে দশ বছর যাবৎ যুদ্ধ বন্ধের উপর শান্তি -চুক্তি করেন এ শর্তে যে, কুরাইশদের কোনো লোক মুসলিম হয়ে তাঁর নিকট আসলে তিনি তাকে ফিরিয়ে দেবেন, কিন্তু তাঁর নিকট থেকে কেউ আশ্রয় লাভের জন্যে কুরাইশদের নিকট চলে গেলে তারা তাকে ফেরত পাঠাবে না, তবে আল্লাহ্ তাআলা মুহাজির মহিলাদেরকে ফেরত পাঠানোর বিষয়টি রহিত করে দেন এবং তাদেরকে পরীক্ষা করার নির্দেশ প্রদান করেন, ফলে যে মু’মিনা বলে জানতে পারা যাবে, তাকে কাফেরদের নিকট ফেরত পাঠানো হবে না।[141]
৭. তিনি মুসলিমদের প্রতি এ মর্মে নির্দেশ জারী করেন, যে নারী মুসলিম হয়ে হিজরত করে মদীনায় এসে যায়, তার কাফের স্বামী মাহর হিসেবে যা কিছু তার পিছনে ব্যয় করেছে, তা তাকে ফেরত দেওয়া হবে, আবার মুসলিমের স্ত্রী কাফেরদের নিকট চলে গেলে অনুরূপ মুসলিম স্বামীদেরকে মাহর ইত্যাদি ফেরত দেওয়া কাফেরদের উপর জরুরী ছিল। কিন্তু কাফেরগণ যদি তা ফেরত না দেয় এবং মুসলিমগণ এর প্রতিশোধ নিতে চায়, তবে কাফেরদের প্রাপ্য মাহর মুসলিমদের প্রাপ্য পরিমাণে আটক করে আটককৃত মাহর থেকে মুসলিম স্বামীকে তার ব্যয়কৃত অর্থের পরিমাণ দেওয়া হবে।
৮. কুরাইশদের কোনো পুরুষ মুসলিম হয়ে তাঁর কাছে চলে আসলে, অতঃপর হোদায়বিয়ার শর্তানুযায়ী তারা তাকে ধরে নিতে আসলে তিনি তাদেরকে বাধা দিতেন না, তবে ফেরত যাওয়ার জন্য আগন্তুক ব্যক্তির উপর না জবরদস্তি করতেন, আর না ফেরত যাওয়ার আদেশ দিতেন। যদি কোনো নির্যাতিত মুসলিম তাদের কাউকে হত্যা করে কিংবা তাদের মাল লুন্ঠন করে পালিয়ে যেতে সক্ষম হতো এবং এসে তাঁর সাথে মিলিত না হতো, তখন তিনি তাতে অসম্মতি প্রকাশ করতেন না এবং কুরাইশদের জন্য তিনি তার জিম্মাদার হন নি[142]
৯. তিনি খায়বরবাসীদের সাথে সন্ধি-চুক্তি করেন যখন তিনি তাদের উপর যুদ্ধে বিজয়ী হন এ শর্তে যে, তারা খায়বর নগরী হতে বহিষ্কৃত হবে এবং নিজেদের সাথে সাওয়ারীর উপর যতটা সম্ভব ধন-সম্পদ নিয়ে যাবে, তবে স্বর্ণ-রূপা ও সমরাস্ত্র আল্লাহর রাসূলের জন্য রেখে যাবে।
১০. তিনি খায়বরের কৃষিভূমি এই শর্তে সেখানকার অধিবাসী ইয়াহূদীদেরকে বর্গা-বন্দোবস্ত দেন যে, তারা এতে চাষ করে ফসল উৎপন্ন করবে, বিনিময়ে উৎপন্ন ফসলের অর্ধেক লাভ করবে এবং তিনি যতোদিন চাইবেন তাদেরকে খায়বরে থাকার সুযোগ দেবেন, আবার যখনই তিনি ইচ্ছা করবেন তাদেরকে বহিষ্কার করবেন, তাই তিনি প্রত্যেক বছর উৎপন্ন ফসলাদি অনুমান করে বন্টন করার জন্য লোক প্রেরণ করতেন, সে অনুমান করে মুসলিমদের অংশ নির্ধারণ করে নিতো এবং ইয়াহূদীরা তাদের অংশ নিয়ে নিতো।”
(খ) রাজা-বাদশাহ ও আমীরদেরকে ইসলামের দাওয়াত এবং তাঁদের প্রতি দূত ও চিঠি প্রেরণ প্রসঙ্গে তাঁর আদর্শমালা[143]:
১. রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হুদায়বিয়া থেকে ফিরে আসার পর বিভিন্ন রাজা-বাদশাহ ও আমীরদের নামে চিঠি পাঠান এবং তাদের প্রতি দূত প্রেরণ করেন। তিনি রোমান সম্রাট হেরাক্লিয়াসের প্রতি দাওয়াতী পত্র পাঠান এবং দেহইয়াতুল কালবী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু-কে দূত হিসেবে প্রেরণ করেন, ফলে সে ইসলাম গ্রহণ করার ইচ্ছা করেছিল, কিন্তু পরিশেষে ইসলাম গ্রহণ করেনি।
২. তিনি হাবশার বাদশাহ নাজাশীর প্রতি চিঠি ও দূত প্রেরণ করেন, ফলে বাদশাহ্ নাজাশী ইসলাম গ্রহণ করে ধন্য হন।
৩. তিনি আবু মূসা আশ্‘আরী ও মু‘আয ইবনে জাবাল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমাকে ইসলামের দাওয়াতের জন্যে ‘ইয়ামেন দেশে’ প্রেরণ করেন, ফলে তাঁদের দাওয়াতে অধিকাংশ ইয়ামেনবাসী স্বেচ্ছায় যুদ্ধ-বিগ্রহ ছাড়াই ইসলাম গ্রহণ করে।”
১. রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের প্রকাশ্য অবস্থাকে গ্রহণ করতেন এবং গোপনীয় রহস্যকে আল্লাহর উপর সোপর্দ করতেন, তাদের বিরুদ্ধে দলীল-প্রমাণ দিয়ে জেহাদ করতেন, তাদেরকে উপেক্ষা করে চলতেন, তাদের প্রতি কঠোরতা করতেন এবং তাদের সাথে হৃদয়স্পর্শী কথা বলতেন।
২. তিনি তাদের অন্তঃকরণ নিজের দিকে আকৃষ্ট করার লক্ষ্যে তাদের হত্যা করেননি, ওমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু এক মুনাফিকের গর্দান উড়িয়ে দিতে চাইলে তিনি উত্তরে বলেন : না, লোকেরা যেন একথা বলতে না পারে যে, মুহাম্মাদ তো নিজের সাথীদেরকে হত্যা করছে।”[145]
আল্লাহ্ জাল্লা-শানুহুর যিকর প্রসঙ্গে তাঁর আদর্শমালা ছিল সর্বাধিক পূর্ণাঙ্গ, বরং তাঁর প্রতিটি কথা-বার্তা ছিল আল্লাহর যিকর ও তাঁর পছন্দনীয় বিষয়ে। উম্মতের প্রতি তাঁর সকল আদেশ-নিষেধ ও বিধি-বিধান প্রণয়ন করা ছিল তাঁর পক্ষ থেকে আল্লাহর যিকরের অন্তর্ভুক্ত। তাঁর চুপ থাকা ছিল অন্তরে আল্লাহর যিকর, সুতরাং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শ্বাস-প্রশ্বাসে, উঠা-বসা ও শায়িত, চলা-ফেরা, সফর-ইকামা সকল অবস্থায়ই আল্লাহুর যিকর জারী ছিল।”
১. তিনি সকালে বলতেন:
«أصبحنا على فطرة الإسلام, وكلمة الإخلاص, ودين نبينا محمد r وملة أبينا إبراهيم حنيفًا مسلمًا وما كان مِنَ المشركين»
‘আস্ববাহনা ‘আলা-ফিৎরাতিল ইসলাম, ওয়া-‘আলা কালিমাতিল ইখলাস্ব, ওয়া-আলা দ্বীনে নবীয়্যিনা মুহাম্মাদ রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, ওয়া-‘আলা মিল্লাতে আবীনা ইবরাহীমা হানীফাম মুসলিমান, ওয়ামা-কানা মিনাল মুশরিকিন।”
“আল্লাহর অনুগ্রহ আমরা প্রত্যুষে উপনীত হয়েছি ইসলামের ফিৎরাতের উপর ও ইখলাসের বাণীর উপর এবং আমাদের নবী মুহাম্মাদ রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দ্বীনের উপর, আমাদের পিতা ইবরাহীম আলাইহিস সালাম-এর মিল্লাতের উপর, তিনি ছিলেন একনিষ্ঠ মুসলিম এবং তিনি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন না।”[148]
তিনি আরও বলতেন,
«اللهم بك أصبحنا وبك أمسينا وبك نحيا ونموت وإليك النشور»
“আল্লাহুম্মা বিকা আসবাহনা, ওয়াবিকা আমসাইনা, ওয়াবিকা নাহইয়া ওবিকা নামূতু, ওয়াইলাইকান নুশূর”।[149]
“হে আল্লাহ, আমরা তোমার সাহায্যে সকালে উপনীত হয়েছি, তোমার সাহায্যে বিকালে উপনীত হয়েছি, তোমার সাহায্যে জীবিত থাকি ও মরি, আর তোমার কাছেই প্রত্যাবর্তন।”
যখন তোমাদের কেউ প্রত্যুষে উপনীত হবে, তখন সে বলবে:
«أَصْبَحْنَا وأَصْبَحَ المُلْكُ للهِ رَبِّ العَالَمِينَ, اللَّهُمَّ إنِّي أَسْأَلُكَ خَيْرَ هذا الْيَومِ فَتْحَهُ وَنَصْرَهُ ونُورَهُ وَبَرَكَتَه وهِدَايَتَهُ, وَأعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ ما فيهِ وَشَرِّ مَا بَعْدَهُ, ثُمَّ إِذَا أَمْسَى, فَلْيَقُلْ مِثْلَ ذلِكَ»
‘আস্ববাহনা ওয়া-আস্ববাহাল মুলকু লিল্লাহি রাব্বিল ‘আলামীন, আল্লা-হুম্মা ইন্নি আসআলুকা খাইরা হাযাল-ইয়াউমি, ফাতহাহু ওয়া নাসরাহু, ওয়া নূরাহু ওয়া বারাকাতাহু ওয়া হুদাহু, ওয়া আউযুবিকা মিন শাররি মা-ফীহি, ওয়া-শাররি মা বা‘দাহু।’
“আল্লাহু রাব্বুল আলামীনের অনুগ্রহে আমরা এবং সকল সৃষ্টিজগত প্রভাতে উপনীত হয়েছি। হে আল্লাহ ! আমি তোমার নিকট কামনা করি এই দিনের কল্যাণ, বিজয়, সাহায্য, নূর ও বরকত এবং হেদায়াত, আর আমি তোমার কাছে আশ্রয় চাই এই দিনের এবং এই দিনের পরের অকল্যাণ হতে। অতঃপর যখন সন্ধা হবে অনুরূপ বলবে।”[150]
২. তিনি আরও বলেন: সর্বশ্রেষ্ঠ ইস্তেগফার হলো, বান্দা বলবে:
« اللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّي, لَا إلهَ إلَّا أَنْتَ خَلَقْتَنِي وَأَنَا عَبْدُكَ, وَأَنَا عَلَى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ ما اسْتَطَعْتُ, أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا صَنَعْتُ, أَبُوءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَيَّ, وَأَبُوءُ بِذَنْبِي؛ فَاغْفِرْ لي؛ إِنَّهُ لا يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا أَنْتَ»
‘আল্লা-হুম্মা আন্তা রাব্বী, লা-ইলাহা ইল্লা-আন্তা, খালাক্বতানী ওয়া-আনা আব্দুকা, ওয়া-আনা ‘আলা-‘আহদিকা ওয়া ওয়া‘দিকা মাস্তাতা‘তু, আউযুবিকা মিন্-শাররি মা সানা‘তু, আবূয়ু লাকা বি-নি‘মাতিকা ‘আলাইয়্যা, ওয়া-আবূয়ু লাকা বিযাম্বী, ফাগফিরলী ফাইন্নাহু লা-ইয়াগফিরুয্যুনূবা ইল্লা আন্তা।”
“হে আল্লাহ ! তুমিই আমার প্রতিপালক, তুমি ছাড়া সত্য কোনো মা‘বুদ নেই, তুমি আমাকে সৃষ্টি করেছো, আমি তোমার বান্দা, আমি যথাসাধ্য তোমার সাথে কৃত অঙ্গীকারের উপর দৃঢ় থাকবো, আমার কৃতকর্মের কু-ফল ও মন্দ পরিণাম হতে তোমার নিকট আশ্রয় চাই, তুমি আমাকে যেসব নে‘আমত দান করেছো আমি তা স্বীকার করছি এবং স্বীকার করছি আমার গুনাহের কথা, অতএব তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও, যেহেতু তুমি ছাড়া আর কেউ গুনাহ ক্ষমা করতে পারবে না।
মুহাম্মাদ রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন; যে কেউ উক্ত দু‘আটি দিনের বেলায় দৃঢ় প্রত্যয়ের সাথে বলে এবং সন্ধা হওয়ার আগেই মারা যায়, তাহলে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে, আর যে ব্যক্তি তা রাত্রিবেলায় আন্তরিকতার সাথে বলে এবং সকাল হওয়ার আগেই মারা যায়, তাহলে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।”[151]
৩. তিনি আরও বলেছেন: যে ব্যক্তি দৈনিক এ দু‘আটিকে শতবার পাঠ করবে:
«لَا إلهَ إلَّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ, لَهُ المُلْكُ وَلَهُ الحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شيءٍ قَدِيرٌ»
“লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহ্দাহু, লা-শারিকালাহু, লাহুল মুলকু, ওয়ালাহুল হাম্দু, ওয়াহুয়াআলা কুল্লি শাইয়্যিন ক্বাদীর।”
“আল্লাহ্ ছাড়া ইবাদতের যোগ্য কোনো ইলাহ বা সত্য মা‘বুদ নেই, তিনি এক, তাঁর কোনো অংশীদার নেই, রাজত্ব তাঁরই জন্যে এবং সকল প্রশংসা তাঁরই জন্যে, তিনি সকল বিষয়ের উপর সর্বশক্তিমান”, তাহলে সে দশজন দাস মুক্ত করার সমপরিমাণ পুণ্য লাভ করবে, তার জন্য একশত নেকী লেখা হবে ও একশত গুনাহ মাফ করা হবে, সে উক্ত দিবসে সন্ধ্যা পর্যন্ত শয়তানের (প্ররোচনা ও বিভ্রান্তি) হতে সুরক্ষিত থাকবে, আর কিয়ামতের দিন তার থেকে উত্তম আমল নিয়ে কেউ আসবে না, কিন্তু ঐ ব্যক্তি যে তার চেয়েও অধিক পরিমাণে আমল করেছে।’[152]’
৪. তিনি সকাল-সন্ধ্যায় এ দু‘আ করতেন:
«اللَّهُمَّ إِنِّي أسألُكَ العَافِيَةَ في الدُّنْيَا والآخِرَةِ, اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْألُكَ العَفْوَ والعافيةَ في ديني ودُنْيَايَ وَأَهْلِي وَمَالِي, اللَّهُمَّ اسْتُر عَوْرَاتِي, وآمِنْ رَوْعَاتِي, اللّهُمَّ احْفَظْنِي مِنْ بَيْنِ يَدَيَّ ومِنْ خَلْفِي وَعَنْ يَمِيني وَعَنْ شِمَالي, وَمِنْ فَوقِي, وَأَعُوذُ بِعَظَمَتِكَ أَنْ أُغْتَالَ مِنْ تَحْتِي»
“আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকাল ‘আফিয়াতা ফিদ দুনিয়া ওয়াল আখেরাতে, আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকাল ‘আফওয়া ওয়াল ‘আফিয়াতা ফী দীনী ওয়া দুনইয়া-য়া ওয়া আহলি ওয়া মা-লি, আল্লাহুম্মাসতুর ‘আওরাতী, ওয়া আমিন রাও‘আতী। আল্লাহুম্মাহফাযনী মিন বাইনে ইয়াদাইয়্যা ওয়ামিন খালফী ওয়া ‘আন ইয়ামীনী ওয়ান শিমালী, ওয়ামিন ফাওক্বী, ওয়া আ‘উযু বি ‘আযমাতিকা আন-উগতালা মিন তাহতী”।
“হে আল্লাহ ! আমি তোমার নিকট দুনিয়া ও আখেরাতের নিরাপত্তা কামনা করছি, হে আল্লাহ্ ! আমি তোমার নিকট ক্ষমা চাচ্ছি এবং আমার দ্বীন ও দুনিয়ার, আমার পরিবার-পরিজনের এবং আমার ধন-সম্পদের নিরাপত্তা কামনা করছি। হে আল্লাহ ! তুমি আমার দোষ-ত্রুটিসমূহ ঢেকে রাখো এবং আমার চিন্তা ও উদ্বিগ্নতাকে শান্তি ও নিরাপত্তায় রুপান্তরিত করে দাও, হে আল্লাহ! তুমি আমাকে নিরাপদে রাখো আমার সম্মুখের বিপদ হতে এবং পশ্চাদের বিপদ হতে, আমার ডানের বিপদ হতে এবং আমার বামের বিপদ হতে, আর উর্ধ্বদেশের গযব হতে, তোমার মহত্বের দোহাই দিয়ে তোমার নিকট আশ্রয় কামনা করছি, আমার নিম্নদেশ হতে আগত বিপদ হতে, তথা মাটি ধ্বসে আকষ্মিক মৃত্যু হতে।”[153]
৫. তিনি আরো বলেছেন: যে কেউ এ দু‘আটি দৈনিক সকাল-সন্ধ্যায় তিন তিন বার করে পাঠ করে:
«بِسْمِ اللهِ الَّذِي لا يَضُرُّ مَعَ اسْمِهِ شيءٌ في الأرض وَلَا في السَّمَاءِ وَهُوَ السَّمِيعُ العَلِيمُ»
‘বিসমিল্লাহিল-লাযী, লা-ইয়াদুররু, মা‘আ ইসমিহী সাইয়্যুন, ফিল আরদি ওয়ালা ফিস্-সামায়ি, ওয়া হুয়াস্-সামী‘উল আলীম।’
“আমি সেই আল্লাহুর নামে আরম্ভ করছি, যার নামে শুরু করলে আকাশ ও পৃথিবীর কোনো বস্তুই কোনরূপ অনিষ্ট সাধন করতে পারে না। বস্তুত: তিনিই হচ্ছেন সর্বশ্রোতা সর্বজ্ঞাতা”, তাহলে কোনো বস্তুই তার কোনোরূপ অনিষ্ট সাধন করতে পারবে না।”[154]
৬. আবু বকর সিদ্দীক্ব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তাঁকে বলেন: আপনি আমাকে শিক্ষা দিন, সকাল-সন্ধ্যায় আমি কোনো দু‘আটি পাঠ করবো, তখন জবাবে তিনি বলেন তুমি বলবে:
«اللَّهُمَّ فَاطِرَ السَّمَاواتِ والأرضِ, عَالِمَ الغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ, رَبَّ كُلِّ شيءٍ وَمَلِيكَهُ ومَالِكه, أَشْهَدُ أَنْ لا إلهَ إلَّا أنْتَ, أعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ نفسِي, وَمِنْ شَرِّ الشَّيْطَانِ وَشِرْكِه, وَأَنْ أقْتَرِفَ عَلَى نَفْسِي سُوءًا أَوْ أَجُرَّهُ إِلَى مُسْلِمٍ»
“আল্লা-হুম্মা ফা-তিরিস- সামাওয়াতি ওয়াল আরযি, আ-লিমাল গাইবি ওয়াশ-শাহাদাতি, লা-ইলাহা ইল্লা-আন্তা, রাব্বা কুল্লি-শাইয়্যিন ওয়া মালীকাহ্, আউযুবিকা মিন্-শাররি নাফ্সী, ওয়া-মিন শাররিশ-শায়তানে ওয়া শিরকিহ্, ওয়া আন-আক্বতারিফা ‘আলা-নাফসী সূআন, আউ আজুররুহু ইলা-মুসলিম।
“হে আল্লাহ! তুমি আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টিকর্তা, তুমি গোপন ও প্রকাশ্য সবকিছুই জান, তুমি সকল বস্তুর প্রভু-প্রতিপালক এবং সকল কিছুর মালিক, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি তুমি ছাড়া ইবাদতের যোগ্য কোনো মা‘বুদ নেই, আমি আমার প্রবৃত্তির অনিষ্ট হতে এবং শয়তান ও তার শির্কের অনিষ্ট হতে তোমার আশ্রয় প্রার্থনা করছি, আর আমি নিজের অনিষ্ট করা হতে এবং কোনো মুসলিমের অনিষ্ট করা হতে তোমার আশ্রয় চাচ্ছি।” তিনি আরো বলেন: হে আবু বকর! তুমি সকাল-সন্ধ্যায় এবং তোমার শয়নকালে তা পাঠ করবে।[155]
১. তিনি ঘর থেকে বের হওয়ার সময় বলতেন:
«بِسْمِ اللهِ, توكلتُ على اللهِ, اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ أَنْ أَضِلَّ أوْ أُضَلَّ أَوْ أزلَّ أَوْ أُزَلَّ, أَوْ أَظْلِمَ أَوْ أُظْلَمَ أو أَجهلَ أَوْ يُجْهَلَ عَليَّ»
‘বিসমিল্লাহি তাওয়াক্কালতু আলাল্লাহ, আল্লা-হুম্মা ইন্নি আ‘উযুবিকা আন আদিল্লা আউ উদাল্লা, আযিল্লা আউ উযাল্লা, আযলিমা আউ উযলামা, আজহালা আউ উজহালা ‘আলাইয়া।
“আল্লাহর নাম নিয়ে তাঁরই উপর ভরসা করে বের হলাম, অসৎ কাজ থেকে বেঁচে থাকার এবং সৎকাজ করার কারো ক্ষমতা নেই আল্লাহর সাহায্য ছাড়া; হে আল্লাহ্ ! আমি তোমার নিকট প্রার্থনা করছি অন্যকে পথভ্রষ্ট করতে অথবা অন্যের দ্বারা আমি পথভ্রষ্ট হতে, আমি অন্যকে পদঙ্খলন করতে অথবা অন্যের দ্বারা পদঙ্খলিত হতে, আমি অন্যকে অবজ্ঞা করতে অথবা নিজে অপরের দ্বারা অবজ্ঞা হওয়া থেকে।”[157]
২. তিনি আরো বলেন: যে ব্যক্তি ঘর থেকে বের হওয়ার সময় বললো:-
«بِسْمِ اللهِ, تَوَكَّلْتُ عَلَى اللهِ ولا حَوْلَ ولَا قُوَّةَ إِلَّا باللهِ»
‘‘বিসমিল্লাহি তাওয়াক্কালতু আলা-ল্লাহু, ওয়ালা হাওলা, ওয়ালা কুয়্যাতা ইল্লা-বিল্লাহ্”।
“আল্লাহর নাম নিয়ে তাঁরই উপর ভরসা করে বের হলাম, অসৎ কাজ থেকে বেঁচে থাকার এবং সৎকাজ করার কারো ক্ষমতা নেই আল্লাহর সাহায্য ছাড়া।” তখন তাকে সম্বোধন করে বলা হয় যে, আল্লাহ্ তোমার জন্য যথেষ্ট, তুমি সুরক্ষিত হয়েছ এবং তুমি সঠিক পথ প্রাপ্ত হয়েছ, আর শয়তান তোমার থেকে বহু দূরে সরে গেছে।”[158]
৩. তিনি প্রত্যুষে ফজরের সালাতের জন্য মসজিদে গমনকালে বলতেন:
«اللَّهُمَّ اجْعَل في قلبِي نورًا, واجْعَل في لسَانِي نورًا, واجْعَل في سَمْعِي نورًا, واجْعَل في بَصَرِي نورًا, واجْعَل مِنْ خَلْفِي نُورًا, وَمِنْ أَمَامِي نُورًا, واجْعَل مِنْ فَوْقِي نُورًا, واجْعَل مِنْ تَحْتِي نُورًا, اللَّهُمَّ أَعْظِمَ لي نُورًا»
“আল্লা-হুম্মাজ-আল-ফী-ক্বালবী নূরান, ওয়া ফী- বাসারী নূরান, ওয়া ফী-সাম‘য়ী নূরান, ওয়া আন-য়ামীনী নূরান, ওয়া আন্-য়্যাসারী নূরান, ওয়া ফাওক্বী নূরান, ওয়া তাহ্তী নূরান, ওয়া আমা-মী নূরান, ওয়া খাল্ফী নূরান, আল্লা-হুম্মা আ‘য়যিম লী নূরান।”
হে আল্লাহ ! তুমি আমার অন্তরে এবং জবানে ‘নূর’ জ্যোতি সৃষ্টি করে দাও, আমার শ্রবণ শক্তিতে এবং আমার দর্শণ শক্তিতে জ্যোতি সৃষ্টি করে দাও, আমার উপরে, আমার নিচে, আমার ডানে, আমার বামে, আমার সামনে, আমার পিছনে জ্যোতি সৃষ্টি করে দাও, হে আল্লাহ! তুমি জ্যোতিকে আমার জন্য অনেক বড় করে দাও।”[159]
৪. তিনি আরো বলেন: যখন কোনো ব্যক্তি স্বগৃহে প্রবেশ করে তখন সে বলবে:
«اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ خَيْرَ الْمَوْلِجِ وَخَيْرَ الْمَخْرَجِ, بِسْمِ اللهِ وَلَجْنَا, وَعَلَى اللهِ رَبِّنَا تَوَكَّلْنَا»
‘আল্লা-হুম্মা ইন্নী আস্আলুকা খাইরাল মাওলিজি ওয়া খাইরাল মাখরাজি, বিসমিল্লাহি ওয়ালাজনা, ওয়া বিসমিল্লাহি খারাজনা, ওয়া ‘আলাল্লাহি রাব্বিনা তাওয়াক্কাল-না।
“হে আল্লাহ্! আমি তোমার নিকট উত্তম প্রত্যাগমন ও উত্তম বহির্গমন প্রার্থনা করছি, আল্লাহর নামে আমরা প্রবেশ করি, আল্লাহর নামেই বের হই এবং আমাদের প্রভু আল্লাহর উপরই আমরা ভরসা করি।” অতঃপর নিজ পরিবারবর্গের উপর সালাম করবে।[160]
১. তিনি মসজিদে প্রবেশকালে বলতেন:
«أَعُوذُ باللهِ العظيم, وبوجهه الكريم, وسلطانِه القديم مِنَ الشيطانِ الرجيمِ»
‘আউযু বিল্লাহিল আযীম, ওয়া বিওয়াজহিহিল কারীম, ওয়া বিসুলতানিহিল কাদীম, মিনাশ শায়তানির রাজীম
“আমি বিতাড়িত শয়তান হতে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করছি তাঁর করুণাময় সত্বা ও সার্বভৌম শক্তির নামে।”[162]
২. তিনি বলেন: যখন তোমাদের কেউ মসজিদে প্রবেশ করবে, নবীজীর উপর সালাত-সালাম পাঠ করে বলবে:
«اللَّهُمَّ افْتَح لي أبوابَ رحمتِكَ»
‘আল্লা-হুম্মাফতাহ্-লী আবওয়াবা রাহমাতিকা”
হে আল্লাহ ! তুমি আমার জন্য তোমার রহমতের দ্বার খুলে দাও;-
আর যখন মসজিদ হতে বের হবে তখন বলবে:
«اللَّهُمَّ إِنِّي أسألُك مِنْ فَضْلِكَ»
‘আল্লা-হুম্মা ইন্নী আস্আলুকা মিন ফাদলিকা।
হে আল্লাহ ! আমি তোমার অনুগ্রহ কামনা করছি।”[163]
মুহাম্মাদ রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চাঁদ দেখে বলতেন:
«اللَّهُمَّ أَهِلَّهُ عَلَيْنَا بِالأَمْنِ وَالإيمانِ, وَالسَّلَامَةِ والإسْلَامِ, رَبِّي وَربُّكَ اللهُ»
‘আল্লা-হুম্মা আহিল্লাহু ‘আলাইনা বিল-আমনি ওয়াল ঈমান, ওয়াস-সালা-মাতি ওয়াল ইসলাম, রাব্বী ওয়া রাব্বুকা-ল্লাহ্।
হে আল্লাহ ! এই নতুন চাঁদকে আমাদের নিরাপত্তা ও ঈমান, শান্তি ও ইসলামের সাথে উদিত কর, আল্লাহ্ আমাদের এবং তোমার (চাঁদের) প্রভু-প্রতিপালক।”[165]
১. সহীহ্ সনদে রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে প্রমাণিত যে, তিনি বলেন: আল্লাহ্ হাঁচি পছন্দ করেন এবং হাই তোলা অপছন্দ করেন, অতএব যখন তোমাদের কেউ হাঁচি দিয়ে
«الحمد لله»
‘আল-হামদুলিল্লাহ্’ বলে, তখন যে মুসলিমই তা শুনে তার উপর
«يَرْحَمُكَ اللهُ»
‘ইয়ারহামুকাল্লাহ্’ বলা কর্তব্য হয়ে দাঁড়ায়।
আর হাই উঠার ব্যাপারটি হয়ে থাকে শয়তানের পক্ষ হতে, কাজেই তোমাদের কারো হাই উঠার উপক্রম হলে সে যেন তা সাধ্যমত চেপে রাখার চেষ্টা করে, কারণ কেউ হাই তুললে তাতে শয়তান হাসে।”[167]
২. তিনি যখন হাঁচি দিতেন তখন মুখের উপর নিজের হাত বা কাপড় রাখতেন এবং হাঁচির আওয়াজ নিচু বা নিম্নগামী করতেন।”[168]
৩. তিনি যখন হাঁচি দিতেন তখন কেউ
«يَرْحَمُكَ اللهُ»
‘ইয়ারহামুকাল্লাহ্’ বললে তিনি জবাবে বলতেন:
«يَرْحَمُنا اللهُ وإياكم, ويَغْفِرُ لَنَا وَلَكُمْ»
‘‘ইয়ারহামুনা-ল্লাহু ওয়া ইয়্যাকুম, ওয়া ইয়াগফিরু লানা ওয়া লাকুম”
৪. তিনি আরো বলেন : তোমাদের কেউ হাঁচি দিয়ে বলবে:
«الحمدُ للهِ»
‘আল-হামদুলিল্লাহ্’-সকল প্রশংসা আল্লাহুর জন্য, তখন তার ভাই অথবা সাথী বলবে:
«يَرْحَمُكَ اللهُ»
‘ইয়ারহামুকাল্লাহ্’ আল্লাহ্ তোমার উপর রহমত বর্ষণ করুণ, তার জন্য সাথী- ‘ইয়ারহামুকাল্লাহ্’ বললে সে যেন জবাবে বলে:
«يهديكم الله ويصلح بالكم»
আল্লাহ্ তোমাদের সৎপথে প্রদর্শণ করুন এবং তোমাদের অবস্থা ভাল করুন।”[169]
৫. তিনি আরো বলেন: তোমাদের কেউ হাঁচি দিয়ে
«الحمدُ للهِ»
‘আল-হাম্দুলিল্লাহ্’ বললে, তার জবাবে তোমরা
«يَرْحَمُكَ اللهُ»
‘‘ইয়ারহামুকাল্লাহ্’ বলবে, আর যদি সে হাঁচি দিলে
«الحمدُ للهِ»
‘আল- হাম্দুলিল্লাহ্’ না বলে, তাহলে তোমরাও
«يَرْحَمُكَ اللهُ»
আর যদি কেউ তিনবারের অধিক হাঁচি দিতো, তাহলে তিনি চতুর্থ বারে ‘ইয়ারহামুকাল্লাহ্’ বলতেন না, বরং বলতেন: এই ব্যক্তি সর্দ্দি রোগে আক্রান্ত।[171]
৬. সহীহ্ সনদে প্রমাণিত যে, ইয়াহূদীগণ তাঁর উপস্থিতিতে হাঁচি দিতে চেষ্টা করতো এবং আশা করতো যে, তিনি জবাবে তাদেরকে
«يَرْحَمُكَ اللهُ»
‘ইয়ারহামুকুমুল্লাহ্’ আল্লাহ্ তোমাদের প্রতি রহমত বর্ষণ করুন- বলবেন, কিন্তু তিনি জবাবে বলতেন:
«يَهْدِيكُمُ اللهُ وَيُصْلحُ بالَكُم»
“ইয়াহদীকুমুল্লাহ ওয়া ইউসলিহু বালাকুম”।
“আল্লাহ্ তোমাদের সৎপথ প্রদর্শণ করুন এবং তোমাদের অবস্থা ভাল করুন।”[172]
তিনি ইরশাদ করেন: যে কেউ কোনো বিপদগ্রস্ত লোক দেখে বলে:
«الحمد لله الذي عافاني مما ابتلاك به وفضلني على كثير ممن خلق تفضيلا»
‘আল-হামদু লিল্লাহিল্লাযি আ-ফা-নী মিন্মাব-তালাকা বিহী, ওয়া ফায্যালানী আরা কাসীরিন মিম্মান খালাকা তাফযীলা;-
“সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য যিনি আমাকে নিরাপদে রেখেছেন সেই বিপদ থেকে যা দিয়ে তোমাকে পরীক্ষা করেছেন এবং তাঁর সৃষ্টি জগতের অনেকের উপর আমাকে শ্রেষ্ঠত্ব প্রদান করেছেন”, তাহলে সে উক্ত বিপদে আক্রান্ত হবে না, তা যে ধরণেরই হোক।”[174]
মুহাম্মাদ রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বীয় উম্মতকে নির্দেশ দেন, যখন তারা গাধার ডাক শুনে তখন যেন শয়তান হতে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করে, আর যখন মোরগের ডাক শুনে তখন যেন আল্লাহর অনুগ্রহ কামনা করে।”[176]
রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অত্যাধিক রাগাম্বিত ব্যক্তিকে নির্দেশ দেন, সে যেন অযু করে এবং বসে পড়ে যদি সে দাঁড়ানো থাকে, আর শোয়ে পড়ে যদি সে বসা থাকে এবং বিতাড়িত শয়তান হতে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করে।”
১. রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তারজী‘য়ের সাথে আযান এবং তারজী‘য় ছাড়া আযান উভয়টি সুন্নাত করেন।[179] আর ইকামতের শব্দগুলো দু’বার দু’বার ও একবার একবার করে উচ্চারণ করার বিধান করেন, কিন্তু ‘ক্বাদ-ক্বামাতিস্ সালাহ্’ বাক্যটি কখনই একবার বলেননি।
২. তিনি স্বীয় উম্মতের জন্য বিধান করেন যে, আযান শ্রবণকারী ঠিক সেই বাক্যগুলির পুনারাবৃত্তি করবে যেগুলি মুয়াযযিন বলে থাকে, কিন্তু ‘হাইয়্যা আলাস্-সালাহ’ ও হাইয়্যা আলাল-ফালাহ্’ বাক্যদ্বয়ের পরিবর্তে ‘লা-হাওলা ওয়ালা কুয়্যাতা ইল্লা-বিল্লাহ্’ বলা তাঁর থেকে সহীহ্ সনদে প্রমাণিত আছে।
৩. তিনি বলেন: যে ব্যক্তি মুয়ায্যিনের আযান শুনে এ দু‘আটি পাঠ করে:
«وأنا أشهد أن لا إله إلا الله وأن محمداً رسول الله رضيت بالله رباً وبمحمد رسولاً وبالإسلام ديناً»
‘আশহাদু আল-লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু, ওয়া-আন্না মুহাম্মাদান রাসুলু্ল্লাহ্, রাযীদু বিল্লাহি রাববান, ওয়া বিমুহাম্মাদিন রাসূলান, ওয়া বিল-ইসলামে দ্বীনান;
“আমি সাক্ষ্য প্রদান করছি যে, আল্লাহ্ ছাড়া সত্য কোনো মা‘বুদ নেই এবং মুহাম্মদ রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার রাসূল, আর আল্লাহকে রব, মুহাম্মাদকে রাসূল এবং ইসলামকে দ্বীন হিসেবে প্রহণ করে আমি সন্তুষ্ট;” তার সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়।[180]
৪. তিনি আযান শ্রবণকারীর জন্যে বিধান প্রদান করেন যে, সে মুয়াযযিনের আযানের জবাবের পর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর সালাত-সালাম পাঠ করে এ দু‘আটি পড়বে :
«اللهم رب هذه الدعوة التامة والصلاة القائمة آت محمداً الوسيلة والفضيلة وابعثه مقاماً محموداً الذي وعدته».
‘আল্ল-হুম্মা রাববা হাযিহিদ দাওয়াতিত তাম্মতি, ওয়াস সালাতিল ক্বায়েমাতি,আতি-মাহ্ মুদানিল ওয়াসিলাতা, ওয়াল-ফাযীলাতা, ওয়াবআসহু মাকামাম মাহ্ মুদানিল্লাযি ওয়াআদ্তাহ,
হে আল্লাহ্ ! এই পূর্ণাঙ্গ আহ্বান ও প্রতিষ্ঠিত সালাতের প্রভু, তুমি মুহাম্মাদ রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে উসীলা এবং ফযীলত তথা উচ্চতম মর্যাদা দান করো এবং তাঁকে তোমার ওয়াদাকৃত প্রশংসিত স্থানে পৌঁছিয়ে দাও।”[181]
৫. তিনি আরো বলেছেন: আযান ও ইকামতের মধ্যবর্তী সময়ের দু‘আ প্রত্যাখ্যাত হয় না।”[182]
১. রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যিল-হাজ্জ মাসের প্রথম দশ দিনে বেশী বেশী দু‘আ করতেন এবং তাতে অধিকহারে তাসবীহ, ‘তাকবীর, তাহলীল ও তাহমীদ তথা ‘সুবহানাল্লাহ্, আল-হামদুলিল্লাহ্, লা-ইলাহা ইল্লল্লাহ, আল্লাহু আকবর’ পাঠ করার নির্দেশ দেন।”
১. কুরআনের অংশবিশেষ তাঁর জন্য নির্দিষ্ট ছিল, যা তিনি নিয়মিত তিলাওয়াত করতেন এবং তাতে তিনি কখনই অলসতা করতেন না।
২. তাঁর তিলাওয়াত ছিল ধীরে ধীরে স্পষ্ট ও সুন্দরভাবে, তীব্রতা ও তাড়াহুড়ার সাথে নয়, বরং প্রতিটি অক্ষর সুস্পষ্ট করে উচ্চারণ করতেন।
৩. তাঁর তিলাওয়াত ছিল বিভক্ত ও সাইজ করা। তিনি প্রত্যেকটি আয়াত শেষে থেমে যেতেন। তিনি ধীরে ধীরে স্পষ্ট ও সুন্দরভাবে সূরা আবৃত্তি করতেন, এমনকি বড় সূরা আরো অত্যাধিক বড় হয়ে যেতো।
৪. তিনি মদ্দের হরফকে টেনে দীর্ঘায়িত করে পড়তেন, অতএব ‘আর- রাহমা-ন’ ও ‘আর রাহী-ম’ শব্দদ্বয় টেনে দীর্ঘায়িত করে পাঠ করতেন।
৫. তিনি তিলাওয়াতের শুরুতে আল্লাহর নিকট বিতাড়িত শয়তান হতে আশ্রয় প্রার্থনা করে বলতেন:
«أَعُوذُ باللهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ»
‘আ‘উযু বিল্লাহি মিনাশ শায়ত্বানির রাজীম;-
“আমি বিতাড়িত শয়তান হতে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি।”
আবার কখনো বলতেন:
«اللَّهُمَّ إِنِّي أعُوذُ بِكَ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ مِنْ هَمْزِهِ وَنَفْخِهِ وَنَفْثِهِ»
‘আল্লা-হুম্মা আউযু বিকা মিনাশ্ শায়ত্বানীর রাজীম, মিন হামযিহী, ওয়া নাফখিহী, ওয়া নাফসিহী।”[185]
“হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি বিতাড়িত শয়তান এবং তার কুমন্ত্রনা, ফুৎকার ও ওয়াসওয়াসা হতে।
৬. তিনি দাঁড়ানো, বসা, শোয়া এবং অযু অবস্থায় ও অযু ছাড়া সর্বাবস্থায় কুরআন তিলাওয়াত করতেন, একমাত্র গোসল ফরয হওয়া ছাড়া অন্য কিছু তাঁকে কুরআন তিলাওয়াত হতে বিরত রাখতো না।
৭. তিনি সুললিত কন্ঠে কুরআন তিলাওয়াত করতেন এবং বলেন: “যে ব্যক্তি সুললিত কন্ঠে কুরআন পাঠ করে না সে আমাদের দলভুক্ত নয়।”[186]
তিনি আরো বলেন: ‘‘সুললিত কন্ঠে তিলাওয়াত করে কুরআনের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করো।”[187]
৮. তিনি কখনো অন্যের মুখ থেকে কুরআন তিলাওয়াত শুনতে ভালবাসতেন।”[188]
৯. তিনি সিজদার আয়াত পাঠের পর ‘আল্লাহু আকবর’- বলে সিজদা করতেন এবং কখনো সিজদায় বলতেন:
«سَجَدَ وَجْهِي للذي خَلَقَهُ, وَشَقَّ سمعَه وبصرَه بحولِه وقوتِه»
‘সাজাদা ওয়াজহী লিল্লাজী খালাকাহু, ওয়া-শাক্কা সাম‘আহু ওয়া বাচ্বারাহূ, বি-হাওলিহী ওয়া কুওয়াতিহী;
“আমার মুখমণ্ডল (সহ আমার সমগ্র দেহ) সিজদায় অবনমিত সেই মহান সত্তার জন্য যিনি তাকে সৃষ্টি করেছেন এবং তার কর্ণ ও তার চক্ষু উদ্ভিন্ন করেছেন স্বীয় ইচ্ছা ও শক্তিতে।”[189]
আবার কখনো বলতেন:
«اللهم اكتب لي بها عندك أجراً وضع عني بها وزراً، واجعلها لي عندك ذُخراً وتقبلها منّي كما تقبلتها من عبدك داود»
‘আল্লাহুম্মা উকতুব লী বিহা ইনদাকা আজরান, ওয়াদ্বা‘ ‘আন্নী বিহা ওয়িযরান, ওয়াজ‘আলহা লী ইনদাকা যুখরান ওয়া তাকাব্বালহা মিন্নী কামা তাকাব্বালতাহা মিন আবদিকা দাঊদ’
“হে আল্লাহ, এর দ্বারা তোমার নিকট আমার জন্য নেকী লিখে রাখো এবং এর দ্বারা আমার পাপরাশি দূর করে দাও এবং একে আমার জন্য গচ্ছিত সম্পদ হিসেবে জমা করে রাখো, আর একে আমার নিকট হতে কবুল করো যেমন কবুল করেছো তোমার বান্দা দাউদ্ (আলাইহিস সালাম) হতে।”[190]
আর সিজদায়ে তিলাওয়াত হতে মাথা উত্তোলনকালে তাকবীর বলা তাঁর থেকে প্রমাণিত নেই, আর না তিনি তাশাহুদ পাঠ করেন, আর না সালাম ফিরান।”
১. রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খোৎবা দেওয়ার সময় তাঁর চোখ দু’টি লাল হয়ে যেতো, স্বর উচ্চ হতো এবং তাঁর রাগভাব খুব বেড়ে যেতো, মনে হয় যেন তিনি কোনো সৈন্য বাহিনীকে সকাল-সন্ধ্যায় হামলার ভয় প্রদর্শনকারী, তিনি বলতেন: আমি ও কিয়ামত দিবস প্রেরিত হয়েছি এরূপ, তখন তিনি নিজের তর্জনী ও মধ্যম আঙ্গুলী একত্রিত করতেন, তিনি আরো বলতেন:
«أما بعدُ... فإن خير الحديث كتاب الله, وخير الهدْي هَدْيُ محمد صلى الله عليه وسلم, وشَرَّ الأُمُورِ محدثاتها, وكلّ بدعة ضلالة»
“অতঃপর, নিশ্চয়ই সর্বশ্রেষ্ঠ বাণী আল্লাহর কিতাব এবং সর্বোত্তম জীবনাদর্শ ‘মুহাম্মাদ রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জীবনাদর্শ, আর নিকৃষ্টতম বিষয় হলো দ্বীনে নবাবিষ্কৃত বিদ‘আত এবং প্রত্যেক বিদ‘আতই পথভ্রষ্টতা।”[192]
২. তিনি যখনই খোৎবা প্রদান করতেন তখনই আল্লাহর প্রশংসার মাধ্যমে আরম্ভ করতেন, তিনি সাহাবীদেরকে ‘খোৎবাতুল হাজাহ্- (প্রয়োজনের খোৎবা) তথা এই খোৎবাটি শিক্ষা দিতেন:
«الحمدُ لله نَحْمَدُهُ وَنَسْتَعِيْنُهُ وَنَسْتَغْفِرُهُ, وَنَعُوذُ باللهِ مِنْ شُرُورِ أَنْفُسِنَا وَسَيِّئاتِ أعمالِنَا, مَنْ يَهْدِ اللهُ فَلاَ مُضِلَّ لَهُ, وَمَنْ يُضْلِلْ فلا هَادِيَ لَهُ, وَأَشْهَدُ أَنْ لَا إلهَ إلَّا اللهُ, وأَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ»
সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য, আমরা তাঁরই প্রশংসা করি এবং তাঁরই নিকট সাহায্য কামনা করি, তাঁরই নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করি এবং সকল বিপর্যয় ও কুকীর্তি হতে আত্মরক্ষার জন্য আমরা তাঁরই সাহায্য প্রার্থনা করি, আল্লাহ যাকে হেদায়াত দান করেন তার কোনো পথভ্রষ্টকারী নেই, আর যাকে তিনি পথভ্রষ্ট করেন তার কোনো পথ প্রদর্শণকারী নেই। আমি সাক্ষ্য প্রদান করছি যে, আল্লাহ্ ব্যতীত সত্যিকার কোনো মা‘বুদ নেই এবং আমি আরো সাক্ষ্য প্রদান করছি যে, মুহাম্মাদ রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বান্দা ও রাসূল।’
অতঃপর তিনি এ তিনটি আয়াত পাঠ করতেন:
﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ ٱتَّقُواْ ٱللَّهَ حَقَّ تُقَاتِهِۦ وَلَا تَمُوتُنَّ إِلَّا وَأَنتُم مُّسۡلِمُونَ ١٠٢ ﴾ [ال عمران: ١٠٢]
‘‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে যথাযথ ভাবে ভয় করো এবং তোমরা মুসলিম না হয়ে মরো না।” সূরা আলে ইমরান, আ: ১০২,
﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّاسُ ٱتَّقُواْ رَبَّكُمُ ٱلَّذِي خَلَقَكُم مِّن نَّفۡسٖ وَٰحِدَةٖ ﴾ [النساء: ١]
‘‘হে মানবমণ্ডলী ! তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে ভয় করো, যিনি তোমাদেরকে এক ব্যক্তি হতে সৃষ্টি করেছেন।” সূরা নিসা, আ: ১,
﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ ٱتَّقُواْ ٱللَّهَ وَقُولُواْ قَوۡلٗا سَدِيدٗا ٧٠ ﴾ [الاحزاب: ٧٠]
‘‘হে মু’মিনগণ ! তোমরা আল্লাকে ভয় করো এবং সঠিক কথা বলো।” সূরা আহযাব, আ: ৭০-৭১,
৩. তিনি সাহাবীদেরকে সকল গুরুত্বপূর্ণ কাজে ইস্তিখারা করার নিয়ম শিক্ষা দিতেন যেমনভাবে তিনি তাদেরকে কুরআনের সূরা শিক্ষা দিতেন এবং বলতেন: যখন তোমাদের কেউ কোনো কাজের ইচ্ছা করবে, তখন সে যেন ফরয সালাত ছাড়া দু’রাকাত নফল পড়ে, তারপর এ দু‘আটি পড়ে:
«اللَّهُمَّ إِنِّي أستخيرُكَ بعلمكَ وأستقدرُكَ بقدرتِك وأسألُكَ مِنْ فضلِكَ العظيمِ, فإنَّكَ تقدرُ ولا أقدرُ, وتعلمُ ولا أعلمُ, وأنْتَ عَلَّامُ الغيوبِ, اللَّهُمَّ إِنْ كُنْتَ تعلمُ أَنَّ هذا الأمرَ – وَيُسَمِّي حَاجَتَهَ – خَيْرٌ لي في ديني ومعاشِي وعاقبةِ أَمْرِي – أو قال: عاجِلِه وآجِلِه – فاقْدُرْهُ لي وَيَسِّرْهُ لي, ثم بَارِكْ لي فيه, وإِنْ كُنْتَ تعلمُ أَنَّ هذا الأمرَ شَرٌّ لي في ديني ومعاشي وعاقبةِ أمري – أو قال: عاجِله وآجله – فاصرفْهُ عني واصرفْنِي عَنْهُ واقْدُرْ لي الخيرَ حَيْثُ كَانَ ثُمَّ رَضِّنِي بِهِ»
‘আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসতাখীরুকা বি’ইলমিকা, ওয়া আস্তাক্বদিরুকা বিকুদরাতিকা, ওয়া আসআলুকা মিন ফাদলিকাল আযীম, ফাইন্নাকা তাক্বাদিরু ওয়ালা-আক্বদিরু, ওয়া-তা‘লামু ওয়ালা-আ‘লামু, ওয়া-আন্তা আল্লামুল গুয়ূব, আল্লা-হুম্মা ইন-কুন্তা তা‘লামু আন্না হা-যাল আমরা, {‘হা-যাল আম্রা’ বলার সময় নিজের প্রয়োজনের কথা মনে করবে} খায়রুন-লী ফী-দ্বীনী ওয়া-আ-ক্বিবাতি আমরী /ফী-আ-জিলি আমরী ওয়া-আজিলিহী, ফাক্বদিরহু-লী, ওয়া-ইয়াসসিরহু-লী, সুম্মা বা-রিকলী-ফীহি, ওয়া ইন-কুন্তা তা‘লাম আন্না-হা-যাল আম্রা, {এখানেও পুনরায় নিজের প্রয়োজনের কথা মনে করবে} শাররুল -লী ফী-দ্বীনী ওয়া-মা‘আশী ওয়া-আ-ক্বিবাতি আমরী /ফী-আ-জিলি আমরী ওয়া-আজিলিহী, ফাসরিফহু ‘আন্নী, ওয়াসরিফনী ‘আনহু’ ওয়াকদুর লিয়াল খাইরা হাইসু কানা, ছুম্মা রাদ্দ্বিনী বিহী”[193]
“হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট তোমারই জ্ঞানের সাহায্যে এ বিষয়ে ইস্তিখারা (কল্যাণ প্রার্থনা) করছি এবং তোমার শক্তির বদৌলতে তোমার নিকট এ বিষয়ে কল্যাণ লাভের সামর্থ প্রার্থনা করছি এবং তোমার নিকট এ বিষয়ে কল্যাণ লাভের সামর্থ প্রার্থনা করছি এবং তোমার নিকট তোমারই মহান অনুগ্রহ ও কল্যাণের ভাণ্ডার থেকে প্রার্থনা করছি, কারণ তুমি তো সব কিছু করার ক্ষমতা রাখো আর আমার তো ক্ষমতা নেই এবং তুমি তো সবই জান, আর আমি জানি না, আর তুমিই তো গায়েবের একমাত্র মহাজ্ঞানী, -হে আল্লাহ! তুমি যদি জান যে, আমার মনস্থ করা এই বিষয়টি আমার জন্য কল্যাণকর হবে আমার দ্বীনি ও দুনয়াবী জীবনে এবং শেষ পরিণামে, কিংবা আমার জলদি কাজে অথবা বিলম্বিত কাজে, তাহলে সে কাজাটি আমার জন্য নির্ধারণ করে দাও এবং তা আমার জন্য সহজ করে দাও, আর তাতে আমার জন্য বরকত দান করো, পক্ষান্তরে তুমি যদি জান যে, আমার মনস্থ করা এই বিষয়টি আমার জন্য ক্ষতিকর হবে আমার জলদি কাজে অথবা বিলম্বিত কাজে, তাহলে তাকে আমার থেকে দূরে সরিয়ে দাও এবং আমাকেও তা থেকে ফিরিয়ে রাখো, আর আমার জন্য কল্যাণ নির্ধারণ করো তা যেখানেই রয়েছে এবং তার উপর আমাকে সন্তুষ্ট রাখো।”
১. রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো বিছানার উপর ঘুমাতেন, আর কখনো চর্মনির্মিত বিছানার উপর, কখনো চাটাইয়ের উপর। আবার কখনো যমীনের উপর, আর কখনো চৌকির উপর, তাঁর বিছানা ছিল চামড়ার, যার ভিতরকার উপকরণ ছিল খেজুর বৃক্ষের ছাল, আর অনুরূপ ছিল তাঁর বালিশ।
২. তিনি প্রয়োজনের অতিরিক্ত ঘুমাতেন না এবং প্রয়োজনীয় ঘুম থেকে নিজেকে বঞ্চিতও করতেন না।
৩. তিনি রাতের প্রথমাংশে ঘুমাতেন এবং শেষাংশে জাগ্রত হয়ে আল্লাহর ইবাদত করতেন, আবার কখনো মুসলিমদের স্বার্থ রক্ষার্থে রাতের প্রথমাংশেও জাগ্রত থাকতেন।
৪. তিনি সফরকালে যখন শেষরাতে বিশ্রাম করতেন তখন তিনি তাঁর ডান কাতে শুতেন, আর যখন তিনি ফজরের কিচুক্ষণ আগে বিশ্রাম করতেন তখন বাহু খাড়া করে হাতের পাঞ্জার উপর মাথা রাখতেন।
৫. তিনি ঘুমালে সাহাবীদের কেউ তাঁকে জাগ্রত করতো না যতক্ষণ না তিনি নিজেই জাগ্রত হতেন, বস্তুত: তাঁর চক্ষুদ্বয় ঘুমালেও তার অন্তর ঘুমাতো না।
৬. তিনি যখন ঘুমানোর উদ্দেশ্যে তাঁর শয্যায় গমন করতেন, তখন বলতেন:
«باسمكَ اللَّهُمَّ أَحْيَا وأموتُ»
‘বিইসমিকা আল্লা-হুম্মা আহইয়া ওয়া আমূতু; -
হে আল্লাহ! তোমারই নামে আমার মৃত্যুবরণ ও আমার জীবনধারণ।”[195] এবং তিনি স্বীয় দু’হাতের তালু মিলাতেন, অতঃপর সূরা ইখলাস ‘কুল হুআল্লাহু আহাদ’ এবং ‘মু‘আউয়াযাতাইন’ তথা ‘কুল আউযু বি রাব্বিল ফালাক্ব’ ও ‘ক্বুল আউযু বি রাব্বিন নাস’ পাঠ করে তাতে ফুঁক দিতেন, তারপর দু’হাতের তালু দ্বারা দেহের যতটা অংশ সম্ভব মাসেহ করতেন। মাসেহ আরম্ভ করতেন তাঁর মস্তক ও মুখমণ্ডল এবং দেহের সামনের দিক থেকে, আর তিনি এরূপ তিনবার করতেন।”[196]
৭. তিনি ডান কাতে ঘুমাতেন এবং গালের নিচে হাত রেখে বলতেন:
«اللَّهُمَّ قِني عَذَابَكَ يَوْمَ تَبْعُثُ عِبَادَكَ»
‘আল্লা-হুম্মা ক্বিনী আযা-বাকা ইয়াওমা তাব‘আসু ইবা-দাকা;
“হে আল্লাহ! তুমি আমাকে তোমার আযাব হতে রক্ষা করো যেদিন তুমি তোমার বান্দাদের পুনরুত্থান ঘটাবে।”[197]
তিনি তাঁর কোনো সাহাবীকে লক্ষ্য করে বলেন: যখন তুমি শয্যায় গমন করবে তখন সালাতের অযুর ন্যায় অযু করবে, অতঃপর তোমার ডান কাতে শুয়ে বলবে:
«اللَّهُمَّ إِنِّي أسلمتُ نَفْسِي إليكَ, ووجَّهتُ وَجْهِي إليكَ, وَفَوَّضْتُ أَمْرِي إليكَ, وألجأتُ ظهري إليكَ, رغبةً ورهبةً إليكَ, لا ملجأ ولا مَنْجَى مِنْكَ إِلَّا إليكَ, آمنتُ بِكَتَابِكَ الذي أنزلتَ, وبنبيكَ الذي أرسلتَ»
“আল্লাহুম্মা ইন্নি আসলামতু নাফসী ইলাইকা, ওয়াওয়াজ্জাহতু ওয়াজহী ইলাইকা, ওয়াআলজা’তু যাহরী ইলাইকা, রাগবাতান ওয়া রাহবাতান ইলাইকা, লা মালজাআ ওয়ালা মানজাআ মিনকা ইল্লা ইলাইকা, আ-মানতু বিকিতাবিকাল্লাযী আনযালতা, ওয়াবিনাবিয়্যিকাল্লাযী আরসালতা”।
“হে আল্লাহ্! আমি আমার নফসকে তোমার কাছে সমর্পন করলাম, আমার চেহারাকে তোমার প্রতি নিবিষ্ট করলাম। আমার সমগ্র কার্যক্রম তোমার প্রতি ন্যস্ত করলাম, আমার পৃষ্ঠদেশকে তোমার আশ্রয় ঠেকালাম, তোমার নিকট আমার রহমতের আশা-ভরসা এবং তোমার শাস্তির ভয়-ভীতি সহকারে, তুমি ছাড়া কোথাও আশ্রয়স্থল ও মুক্তির উপায় নেই, আমি ঈমান আনলাম তোমার কিতাবের উপর, যা তুমি নাযিল করেছো এবং তোমার নবীর উপর, যাকে তুমি প্রেরণ করেছো”। এ কথা বলার পর যদি তুমি সেই রাতে মারা যাও, তাহলে তুমি ইসলামের উপরই মারা যাবে”[198]
৮. তিনি রাত্রে জাগ্রত হয়ে বলতেন:
«اللَّهُمَّ رَبَّ جبريلَ, وميكائيلَ, وإسرافيلَ فَاطِرَ السَّماواتِ والأَرْضِ، عالمَ الغيبِ والشهادةِ, أنتَ تحكمُ بَيْنَ عبادِك فِيْمَا كانوا فيهِ يختلفونَ, اهْدِني لما اخْتُلِفَ فيه من الحقِّ بإذنِكَ, إنك تهدي مَنْ تشاءُ إلى صراطٍ مستقيم»
“আল্লাহুম্মা রাব্বা জীবরীল ওয়া মীকাঈলা ওয়া ইসরাফীলা, ফাত্বীরাস সামাওয়াতি ওয়াল আরদ্বি, ‘আলিমাল গাইবি ওয়াশ শাহাদাতি, আন্তা তাহ্কুমু বাইনা ইবাদিকা ফীমা কানূ ফীহি ইয়াখতালিফূন; ইহদিনী লিমাখতুলিফা ফীহি মিনাল হাক্কী বি ইযনিকা ইন্নাকা তাহদী মান তাশা’উ ইলা সীরাতিম্মুস্তাক্বীম”
‘‘হে আল্লাহ্! জিবরাঈল, মীকাঈল ও ইসরাফীল -এর রব, আকাশমণ্ডল ও পৃথিবীর সৃষ্টিকর্তা, গায়েব ও উপস্থিতের মহাজ্ঞানী, তুমিই তোমার বান্দাদের মাঝে ফায়সালা দিয়ে থাক যে সব বিষয়ে তারা মতবিরোধ করে, অতএব বিরোধপূর্ণ বিষয়াবলীতে তুমি আমাকে স্বীয় অনুগ্রহে সত্যের প্রতি পথ প্রদর্শণ করো, কেননা তুমি যাকে চাও সরল-সঠিক পথে পরিচালিত করে থাকো।”[199]
৯. তিনি বিছানায় জাগ্রত হয়ে বলতেন:
«الحَمْدُ للهِ الَّذِي أَحْيَانَا بَعْدَ مَا أَمَاتَنَا وَإِلَيْهِ النُّشُور»
‘আল্ হাম্দু লিল্লাহিল্লাযী আহ্ইয়ানা বা’দামামাতানা, ওয়া ইলাইহিন নুশুর।”
“সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি আমাদের মৃত্যু দান করার পর পুনরায় জীবন দান করেছেন এবং তাঁরই দিকে প্রত্যাবর্তন।
আর তখন তিনি মিসওয়াক করতেন এবং অনেক সময় সূরা আলে ইমরানের শেষ দশটি আয়াত পাঠ করতেন।”[200]
১০. তিনি ভোরে মোরগের ডাক শুনে জাগ্রত হতেন, তখন তিনি আল হামদুলিল্লাহ্, আল্লাহু আকবার, লা-ইলা-হা ইল্লাল্লাহ, বলতেন এবং আল্লাহর দরবারে দু‘আ করতেন।
১১. তিনি বলেন: “সৎ-ভালো স্বপ্ন আল্লাহর পক্ষ থেকে এবং খারাপ স্বপ্ন শয়তানের পক্ষ থেকে। অতএব কোনো ব্যক্তি অপছন্দনীয় স্বপ্ন দেখলে সে যেন তার বাঁ দিকে তিনবার থু-তু নিক্ষেপ করে এবং শয়তানের অনিষ্ট হতে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করে, তাহলে এ স্বপ্ন তার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। আর সে এ স্বপ্ন কারো নিকট বর্ণনা করবে না। পক্ষান্তরে যদি সে ভালো স্বপ্ন দেখে থাকে, তাহলে তার উচিত সুসংবাদ গ্রহণ করা এবং তা ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছাড়া কারো নিকট তা বিবৃত না করা।”[201]
তিনি আরো বলেন: তোমাদের কেউ অপছন্দনীয় স্বপ্ন দেখলে সে যে কাতে শুয়েছিল তা যেন পরিবর্তন করে নেয় এবং উঠে সালাত পড়ে।”[202]
১. রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অত্যধিক খোশবু ব্যবহার করতেন এবং খোশবু-সুবাস পছন্দ করতেন এবং তিনি কখনো খোশবু ফিরিয়ে দিতেন না।”[204] তাঁর নিকট সর্বাপেক্ষা পছন্দনীয় ছিল মেশক আম্বরের সুগন্ধি।
২. তিনি মিসওয়াক করা পছন্দ করতেন, তিনি রোযারত অবস্থায় এবং রোযা ছাড়া অবস্থায় মিসওয়াক করতেন, অনুরূপ নিদ্রা হতে জাগ্রতকালে, অযু করার সময়, সালাতের সময় এবং ঘরে প্রবেশ কালে মিসওয়াক করতেন।
৩. তিনি সুরমা লাগাতেন এবং বলতেন: তোমাদের সর্বোত্তম সুরমা হলো ‘ইস্মদ’ তথা কালো সুরমা, যা চক্ষু পরিস্কার করে এবং চুল উৎপন্ন করে।”[205]
৪. তিনি কখনো নিজেই মাথায় ও দাড়িতে চিরুনী করতেন, আবার কখনো উম্মুল মু’মিনীন আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা তাঁর মাথা ও দাড়িতে চিরুণী করে দিতেন আর মাথা মুন্ডন করা। আর মাথা মুণ্ডনের ব্যাপারে তার নিয়ম ছিল সম্পূর্ণ মাথা মুণ্ডন করা অথবা সম্পূর্ণ চুল রেখে দেওয়া।
৫. হজ্জ-ওমরা ছাড়া অন্য সময় মাথা মুণ্ডন তাঁর থেকে সহীহ্ সনদে প্রমাণিত নেই, আর তাঁর চুল ছিল কাঁধের উপর প্রচুর, জুম্মার উপরে এবং ওফরার চেয়ে কম, যা তাঁর কানদ্বয়ের লতির সাথে লেগেছিল।
৬. তিনি ‘ক্বযা‘অ’- তথা মাথার চুলের কিছু অংশ মুণ্ডন করে কিছু অংশে চুল রেখে দিতে নিষেধ করেন।
৭. তিনি আরো বলেন: তোমরা কাফের-মুশরিকদের বিরোধিতা করো, দাড়ি লম্বা করো এবং গোঁফ কেটে ফেলো।”[206]
৮. পোষাক-পরিচ্ছেদ হতে যা কিছু সহজ সাধ্য হতো, তাই তিনি পরিধান করতেন, কখনো পশমের তৈরী, আবার কখনো তুলা-সুতার তৈরী, আর কখনো উলের তৈরী পোষাক। আর তাঁর নিকট সব চেয়ে প্রিয় ও পছন্দনীয় পোষাক ছিল ‘ক্বামীস’-তথা বড় জামা।”[207]
৯. তিনি ডোরাকাটা ইয়ামানী চাদর ও ডোরাকাটা সবুজ চাদর পরিধান করেছেন, তিনি জুব্বা, ক্বাবা (এমন কাপড় যার হাতা ও মধ্যভাগ ছোট, পিছনে ফাড়া) জামা, পায়জামা, লুঙ্গি, চাদর, চর্মের মোজা, জুতা ও পাগড়ি পরিধান করেছেন।
১০. তিনি কখনো পাগড়ির একাংশ মুখের তালুর নিচ দিয়ে দিতেন, পাগড়ির কিনারা কখনো পিছনে ঝুলে রাখতেন, আর কখনো ঝুলে রাখতেন না।
১১. তিনি কখনো কখনো কালো রং এর কাপড় পরিধান করেন, আবার কখনও কখনও লাল-ডোরকাটা ‘হুল্লা’ তথা লুঙ্গি ও চাদর পরিধান করেছিলেন।”[208]
১২. তিনি রূপার আংটি পরেছেন, আর তার নকশার দিক হাতের কব্জির দিকে রাখতেন।
১৩. তিনি যখন কোনো নতুন কাপড় পরতেন, তখন প্রথমে তার নাম উল্লেখ করতেন, তারপর এ দু‘আটি পাঠ করতেন:
«اللَّهُمَّ أَنْتَ كَسَوْتَنِي هَذَا القَمِيْصَ أَو الرِّدَاءَ أو العمامَةَ, أَسألُكَ خَيْرَهُ وَخَيْرَ مَا صُنِعَ لَهُ, وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّهِ وَشَرِّ ما صُنِعَ لَهُ»
‘আল্লা-হুম্মা আনতা কাসাওতানী হাযা (আল কামীস আও আররিদা’ আও আল-‘ইমামাহ), আস্আলুকা খায়রাহু ওযা-খায়রা মা-সুনিআ লাহু, ওয়া-‘আউযুবিকা মিন শাররিহী, ওয়া-শাররি মা-সুনি‘আ লাহু।
হে আল্লাহ! তোমারই জন্য সকল প্রশংসা, তুমিই এ কাপড় (অথবা চাদর অথবা পাগড়ী) আমাকে পরিয়েছো, আমি তোমার নিকট এর মধ্যে নিহিত কল্যাণ এবং এটি যে জন্য তৈরী করা হয়েছে সেসব কল্যাণ প্রার্থনা করি, আর আমি এর অনিষ্ট এবং এটি তৈরীর অনিষ্ট হতে তোমার আশ্রয় কামনা করি।”[209]
১৪. তিনি যখন তাঁর জামা পরতেন তখন ডান দিক থেকে শুরু করতেন।
১৫. তিনি অযু করা, জুতা পরিধান করা, মাথা আঁচড়ানো এবং আদান-প্রদান ডান দিক থেকে করতে ভালোবাসতেন।
১৬. তিনি যখন হাঁচি দিতেন তখন মুখের উপর নিজের হাত বা কাপড় রাখতেন এবং হাঁচির আওয়াজ নিচু করতেন।
১৭. তিনি পর্দানশীন কুমারী মেয়েদের চাইতেও অধিক লজ্জাশীল ছিলেন।”[210]
১৮. তিনি হাঁসির বিষয় হলে হাঁসতেন এবং কাঁদার বিষয় হলে কাঁদতেন, তবে তাঁর অধিকাংশ হাঁসা ছিল মুচকি হাসি, আর সর্বাধিক হাসির সময় তাঁর দু’পার্শ্বের দাঁত দেখা যেতো, তিনি কখনই মুখগহ্বর বা কন্ঠতালু পর্যন্ত প্রকাশ করে ক্বাহ্-ক্বাহ্ করে হাসেন নি, পক্ষান্তরে তাঁর কান্নাও অনুরূপ ছিল, তিনি কখনই অশ্রুসিক্ত হতো এবং তাঁর বক্ষে ফুটন্ত হাঁড়ির ন্যায় আওয়াজ শোনা যেতো।”
১. রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোনো কাওমের কাছে গমন করলে তাদের সালাম করতেন, তাদের নিকট হতে প্রত্যাবর্তন কালেও সালাম করতেন এবং সালামের ব্যপক প্রচলন করার নির্দেশ দেন।
২. তিনি বলেন: “ছোট সালাম করবে বড়কে, চলাচলকারী সালাম করবে অবস্থানকারী ব্যক্তিকে, আরোহী ব্যক্তি সালাম করবে পদচারীকে এবং কম সংখ্যক লেকেরা সালাম করবে বেশী সংক্যক লোককে।”[212]
৩. তিনি কারো সাথে সাক্ষাৎকালে প্রথমেই সালাম করতেন, আর কেউ তাঁকে সালাম করলে, তিনি সাথে সাথে অনুরূপ কিংবা তার চেয়ে উত্তমরূপে উত্তর দিতেন, কিন্তু সালাত অথবা প্রাকৃতিক প্রয়োজন পূর্ণ করা ইত্যাদি বিশেষ কারণে সালামের উত্তর বিলম্বিত করতেন।
৪. তিনি প্রথমে
«السَّلامُ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَةٌ اللهِ»
‘আসসালামু ‘আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ্, বলে সালাম করতেন। অর্থাৎ তোমাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক এবং আল্লাহর রহমতও। প্রথমে সালাম প্রদানকারীর পক্ষ থেকে
«عليكَ السَّلامُ»
‘আলাইকাস্ সালাম’ বলা তিনি অপছন্দ করতেন (কারণ এটা মৃতদের সালাম) এবং তিনি সালাম প্রদানকারীর সালামের জবাবে বলতেন:
«وَعَلَيكَ السلام»
‘ওয়া ‘আলাইকাস সালাম’, আরবী শব্দ ‘ওয়াও’-এর যোগ করে বলতেন।
৫. তাঁর আদর্শ ছিল, যদি জনসাধারণের সমাবেশ খুব বড় ও বিরাট হতো যেখানে এক সালাম সবার নিকট পৌঁছে না, তখন তিনি তিনবার সালাম দিতেন।
৬. তাঁর আদর্শ ছিল, মসজিদে প্রবেশকারী প্রথমে দু’রাকাত ‘তাহিয়্যাতুল মসজিদ’ আদায় করবে, অতঃপর মসজিদের সমাবেশে এসে তাদের সালাম করবে।
৭. তিনি হাতের ইশারায় অথবা মাথা নাড়িয়ে অথবা আঙ্গুলের ইশারায় সালামের উত্তর দিতেন না, তবে শুধু সালাতরত অবস্থায় তিনি ইশারায় সালামের উত্তর দেন।
৮. তিনি শিশু কিশোরদের নিকট দিয়ে পথ অতিক্রম করার সময় তাদের সালাম করেন, অনুরূপ মহিলাদের সমাবেশ দিয়ে পথ অতিক্রম করার সময় তাদের সালাম করেন। আর সাহাবীগণ জুম‘আর সালাত পড়ে ফেরার পথে এক বৃদ্ধা মহিলাকে সালাম করতেন[213]।
৯. তিনি অনুপস্থিতের জন্য সালাম বহনও করাতেন এবং নিজেও করতেন।[214] আর তাঁকে কেউ অন্যের প্রেরিত সালাম পৌঁছালে, তিনি সালাম প্রেরণকারী ও বহণকারী উভয়কে সালামের উত্তর দিতেন।[215]
১০. তাঁকে জিজ্ঞেস করা হলো: এক ব্যক্তি যখন তার ভাই বা বন্ধুর সাথে সাক্ষাৎ করে, সে কি তার প্রতি মাথা ঝুকাবে? তিনি উত্তরে বলেন: না, আবার জিজ্ঞেস করা হলো: সে কি তাকে জড়িয়ে ধরবে এবং চুমো খাবে ? উত্তরে তিনি বলেন: না, আবার জিজ্ঞেস করা হলো: সে কি তার হাত নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে মুসাফাহা করবে? উত্তরে তিনি বলেন: হ্যাঁ,।”[216]
১১. তিনি পরিবার -পরিজনের নিকট অপ্রত্যাশিতভাবে-হঠাৎ এসে উপনীত হতেন না; যাতে তারা ভয় পায়, বরং তিনি তাদের সালাম করতেন এবং তাদেরকে বিবিধ (কুশলাদির) প্রশ্ন করতেন অথবা তাদের অবস্থা সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করতে করতে প্রবেশ করতেন।
১২. তিনি রাত্রিবেলায় পরিবার-পরিজনের নিকট গমন করলে এমনভাবে সালাম করতেন যা নিদ্রিত লোকদের জাগাতো না, তবে জাগ্রত লোকেরা তাঁর সালাম শুনে নিতো।”[217]
১৩. তাঁর আদর্শ ছিল যে, যখন অনুমতিপ্রার্থীকে জিজ্ঞেস করা হয়, তুমি কে? তখন সে জবাবে বলবে: আমি অমুকের পুত্র অমুক, অথবা সে নিজের উপনাম বা ডাকনাম ইত্যাদি বলবে, আর সে যেন ‘আমি’ বা এ ধরণের অস্পষ্ট কিছু না বলে।
১৪. তিনি তিনবার করে অনুমতি চাইতেন, অনুমতি দেওয়া না হলে তিনি ফিরে যেতেন।
১৫. তিনি সাহাবীদেরকে অনুমতি চাওয়ার পূর্বে সালাম করা শিক্ষা দিতেন।
১৬. তিনি কারো বাড়ীতে গেলে তাদের দরজার সামনে দাঁড়াতেন না, বরং ডান কিংবা বাম দিকে সরে দাঁড়াতেন।
১৭. তিনি বলেন: “দৃষ্টি পড়ার কারণেই তো অনুমতি নেবার ব্যবস্থা করা হয়েছে।”[218]
১. রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সৃষ্টির মধ্যে সর্বাধিক শুদ্ধভাষায় বাক্যালাপে পারদর্শী এবং তাদের মাঝে সর্বাপেক্ষা মাধুর্যপূর্ণ বক্তব্য প্রদানকারী ছিলেন।
২. তিনি দীর্ঘক্ষণ নীরব থাকতেন, বিনা প্রয়োজনে কথা বলতেন না, আর যেই বিষয়টি তাঁর সাথে সম্পৃক্ত নয় সেই ব্যাপার তিনি কোনো কথা বলতেন না, তিনি যে বিষয়ে সাওয়াবের আশা করতেন শুধু সেই বিষয়েই কথা বলতেন।
৩. তিনি ‘জাওয়ামেউল কালিম’-তথা ব্যাপক অর্থবোধক সংক্ষিপ্ত বাক্য’ দ্বারা সুস্পষ্ট ভাষায় কথা বলতেন, যা গণনাকারী গণনা করতে সক্ষম হতো, তা অতিদ্রুত ও তাড়াহুড়া করে বলা হতো না, যা সংরক্ষণ করা যায় না, আর না তা কর্তিত ও বিচ্ছিন্ন ছিল; যার মাঝে দীর্ঘ নীরবতা হতো।
৪. তিনি স্বীয় ভাষণে সর্বাপেক্ষা সুন্দর শব্দ চয়ন করতেন এবং স্বীয় উম্মতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াদি মনোনীত করতেন, তিনি কখনো গালমন্দকারী ও অশালীন বাক্য উচ্চারণকারী ছিলেন না।
৫. তিনি উচ্চামর্যাদাসম্পন্ন শব্দ অনোপযুক্ত লোকদের শানে ব্যবহার করা, কিংবা অপছন্দনীয় শব্দ মর্যাদাসম্পন্ন লোকদের শানে ব্যবহার করা অপছন্দ করতেন, সুতরাং তিনি কোনো মুনাফিক ব্যক্তিকে ‘সাইয়্যেদ’- বা নেতা বলে সম্বোধন করতে নিষেধ করেন এবং আবু জাহালকে আবুল হাকাম বলতে বারণ করেন, অনুরূপ কোনো রাজা-বাদশাকে রাজাধিরাজ অথবা পৃথিবীতে আল্লাহর খলীফা ইত্যাদি বলতে নিষেধ করেন।
৬. তিনি সেই ব্যক্তিকে দিকনির্দেশনা দেন যাকে শয়তান কোনো হোঁচট খাইয়েছে (বা কুমন্ত্রণা দিয়েছে) সে যেন আল্লাহর নাম ধারণ করে বলে, ‘বিসমিল্লাহ’। তাকে (শয়তানকে) যেন লা‘নত বা গালি-গালাজ না করে। অনুরূপ ‘শয়তান ধ্বংস হোক’ ইত্যাদি না বলে[220]।
৭. তিনি সুন্দর নাম পছন্দ করতেন এবং তিনি নির্দেশ দেন যে, কেউ তাঁর নিকট দূত প্রেরণ কালে যেন সুন্দর নাম ও সুন্দর চেহারা বিশিষ্ট লোককে দূত হিসেবে প্রেরণ করে। আর তিনি নামের অর্থের প্রতি লক্ষ্য করতেন, তিনি ব্যক্তির সাথে তার নামের সংযুক্তি করতেন।
৮. তিনি বলেন: আল্লাহর নিকট সর্বাপেক্ষা পছন্দনীয় নাম হলো ‘আব্দুল্লাহ’ আল্লাহর বান্দা, ও আব্দুর রহমান’ -করুণাময় আল্লাহর বান্দা। আর সর্বাধিক সত্য নাম হলো ‘হারেস’- যমীন আবাদকারী ও ‘হাম্মাম’-অত্যাধিক চিন্তা-ভাবনাকারী। পক্ষান্তরে সর্বাপেক্ষা মন্দ নাম হলো ‘হারব’- লড়াই-যুদ্ধ এবং ‘মুররাহ’- তিক্ত স্বাদযুক্ত।”[221]
৯. তিনি ‘আস্বিয়াহ’-পাপী মহিলা’- নাম পরিবর্তন করে তাকে বলেন: তুমি ‘জামীলাহ্’ সুন্দরী ও সচ্চরিত্রবর্তী মহিলা। অনুরূপ তিনি ‘আস্রম’ অভাবী- নাম পরিবর্তন করে ‘যুরাআহ্’-ফসল ও বীয বপণকারী নামকরণ করেন। তিনি মদীনায় আগমন করে তার পুরাতন নাম ‘ইয়াসরিব’ পরিবর্তন করে তাইয়্যেবাহ্’ পবিত্র, উত্তম ভুমি নামকরণ করেন।
১০. তিনি নিজের সাথীদের ডাকনাম বা উপনাম রাখতেন, অনেক সময় শিশু-কিশোরদেরও ডাকনাম রাখেন এবং স্বীয় স্ত্রীদের কারো কারো ডাকনাম রাখেন।
১১. তাঁর আদর্শ ছিল যার ছেলেসন্তান আছে, আর যার ছেলে-সন্তান নেই উভয়ের ডাকনাম রাখা এবং তিনি বলেন: তোমরা আমার নামে নাম রেখো, কিন্তু আমার ডাকনামে ডাকনাম রেখো না।”[222]
১২. তিনি রাতের আহারের নাম ‘আশা-উন’ পরিত্যাগ করে ‘আতামাহ্’ তথা অন্ধকার শব্দটিকে প্রাধান্য দিয়ে বলতে নিষেধ করেন এবং আঙ্গুর ফলকে ‘কারম’ বলতে বারণ করে বলেন: কারম তো হলো ঈমানদারের ক্বলব।”[223]
১৩. তিনি নিম্নোক্ত বাক্যাবলী ব্যবহার করতে নিষেধ করেন: অমুক অমুক নক্ষত্রের কারণে আমাদের উপর বৃষ্টি হয়েছে, আল্লাহ যা চায় এবং তুমি যা চাও তাই হয়[224], আল্লাহ্ ছাড়া অন্যের নামে শপথ করা, বেশী বেশী কসম করা, অথবা কসমে এরূপ বলা: যদি অমুক কাজ করে, তাহলে সে ইয়াহূদী বা খ্রীষ্টান হয়ে যাবে, মালিক নিজের ক্রিত দাস-দাসীকে আমার বান্দা ও আমার বান্দী বলা, আমার আত্মা ‘খবীস’ কলুষিত হয়ে গেছে এরূপ বলা[225], অথবা শয়তান ধ্বংস হোক বলা, আর ‘হে আল্লাহ ! তুমি ইচ্ছা করলে আমাকে ক্ষমা কর, এরূপ বলতে নিষেধ করেন, বরং দৃঢ়তা সহকারে দু‘আ করতে বলেন।
১৪. তিনি যুগ বা কালকে গালি দেওয়া, বাতাসকে গালি দেওয়া, জ্বরকে গালি দেওয়া[226], মোরগকে গালি দেওয়া[227] এবং ইসলাম পূর্ব জাহেলী যুগের আহ্বান থেকে নিষেধ করেন, যেমন বংশের খোঁটা দেওয়া বা নির্বিচারে বংশের পক্ষপাতিত্ব করা ইত্যাদি হতে নিষেধ করেন।”
১. রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সামনের দিকে ভর দিয়ে চলতেন, যেন তিনি নিম্নভুমিতে অবতরণ করছেন, তাঁর চলাফেরা ছিল সর্বাপেক্ষা দ্রুতগতির, সুন্দর, শান্তশিষ্ট ও ধীরস্থিরভাবে।
২. তিনি কখনও খালি পায়ে, আবার কখনও জুতা পরে চলাফেরা করতেন।
৩. তিনি উট, ঘোড়া, খচ্ছর ও গাধার উপর আরোহন করেন, তিনি ঘোড়ার উপর কখনো লাগাম পরানো অবস্থায়, আবার কখনো লাগাম পরানো ছাড়াই আরোহণ করেন, আবার কখনো কাউকে সাওয়ারীর উপর সামনে ও পিছনে উঠিয়ে নিতেন।
৪. তিনি যমীনের উপর, আবার কখনো চাটাইয়ের উপর, আবার কখনো বিছানার উপর বসতেন।
৫. তিনি বালিশের উপর ঠেস লাগাতেন, আবর কখনো নিজের বাম-পার্শ্বের উপর, আবার কখনো নিজের ডান-পার্শ্বের উপর।
৬. তিনি ‘কুরফুসা’ করে বসতেন[229], তেমনি তিনি কখনো চিৎ হয়ে শোতেন, আবার কখনো এক পায়ের উপর অপর পা রাখতেন, দুর্বলতার কারণে প্রয়োজন বিশেষ সাহাবীদের কারো উপর ঠেস লাগাতেন।
৭. তিনি কোনো ব্যক্তি সূর্য ও ছায়ার মাঝখানে বসতে নিষেধ করেন।
৮. তিনি কোনো বৈঠক আল্লাহর যিকর হতে খালি হওয়া অপছন্দ করে বলেন: “যে কেউ কোনো বৈঠকে বসে আল্লাহর যিকর না করে, তাহলে সেই বৈঠক আল্লাহর নিকট তার জন্য হতাশা ও আক্ষেপের কারণ হবে।”[230]
৯. তিনি আরো বলেন: যে ব্যক্তি কোনো মজলিসে বসলো যেখানে অত্যাধিক আলাপ- আলোচনা হয়, আর সে ঐ মজলিস হতে উঠার পূর্বে
«سبحانكَ اللَّهُمَّ وبحمدكَ, أشهدُ أَنْ لَا إلهَ إِلَّا أَنْتَ, أستغفرُكَ وأتوبُ إليك»
‘সুবহা-নাকাল্লা-হুম্মা ওয়া-বিহামদিকা, আশহাদু আল্ লা-ইলা-হা ইল্লা আন্তা, আস্তাগফিরুকা ওয়া-আতূবু ইলাইকা।”
“তোমার পবিত্রতা বর্ণনা করি হে আল্লাহ্! তোমারই প্রশংসার সাথে, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তুমি ছাড়া ইবাদতের যোগ্য কোনো মা‘বূদ নেই, আমি তোমার নিকট ক্ষমা ভিক্ষা করছি এবং তোমার নিকট তাওবা করছি।” এ দু‘আটি পাঠ করলো, তাহলে তার জন্য তা কাফ্ফারাস্বরূপ হবে।”[231]
আল্লাহর কোনো সুস্পষ্ট নে‘আমত লাভের পর, অনুরূপ কোনো সুস্পষ্ট বিপদ কেটে যাবার পর কৃতজ্ঞতাস্বরূপ সিজদা করা তাঁর এবং সাহাবীদের আদর্শ ছিল।”
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কোনো প্রয়োজন পূরণের কথা জানানো হলে তিনি সিজদায় পড়ে যান।[233]
(২৮) আশংকা, বিপদাপদ ও দুশ্চিন্তার চিকিৎসা প্রসঙ্গে তাঁর আদর্শমালা[234]
১. রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিপদাপদের সময় বলতেন:
«لَا إلهَ إلَّا اللهُ العَظِيمُ الحَلِيمُ, لَا إلهَ إلَّا اللهُ رَبُّ العَرْشِ العَظِيمُ, لَا إلهَ إلَّا اللهُ رَبُّ السَّمَاواتِ السَّبْعِ, ورَبُّ الأرضِ رَبُّ العَرْشِ الكَرِيمُ»
“লা ইলাহ ইল্লাল্লাহুল আযীমুল হালীম, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু রাব্বুল আরশিল আযীম, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু রাব্বুস সামাওয়াতিস সাব‘য়ী ওয়ারাব্বিল আরদ্বি, রাব্বিল ‘আরশিল কারীম।”
“আল্লাহ ছাড়া ইবাদতের যোগ্য কোনো মা‘বুদ নেই, তিনি মহান সহনশীল, আল্লাহ্ ছাড়া ইবাদতের যোগ্য কোনো মা‘বুদ নেই, তিনি মহান আরশের রব, আল্লাহ্ ছাড়া ইবাদতের যোগ্য কোনো মা‘বুদ নেই, তিনি সপ্ত-আকাশ ও পৃথিবীর রব এবং সম্মানিত আরশের মালিক”[235]।
২. তাঁর নিকট কোনো কঠিন ও চিন্তাযুক্ত কাজ আপতিত হলে বলতেন:
«يا حَيُّ يا قَيُّومُ بِرَحْمَتِكَ أستَغيثُ»
ইয়া-হাইয়্যু ইয়া-ক্বাইয়ুম, বিরাহমাতিকা আস্তাগীস;-
“হে চিরঞ্জীব, হে সদা রক্ষণাবেক্ষণকারী ! তোমারই অনুগ্রহে সাহায্য প্রার্থনা করছি।”[236]
তিনি বলেন: দুশ্চিন্তা, দু:খ-কষ্টে পতিত ব্যক্তির দু‘আ হলো:
«اللَّهُمَّ رَحمَتَكَ أَرجُو؛ فَلَا تَكِلْنِي إلَى نَفْسِي طَرْفَةَ عَيْنٍ, وأصْلِحْ لِي شَأنِي كُلَّهُ, لَا إلهَ إلَّا أَنْتَ»
‘আল্লা-হুম্মা রাহমাতাকা আরজু, ফালা-তাকিলনী ইলা-নাফসী ত্বারফাতা-আইনিন, ওয়া-আসলিহলী শানী-কুল্লাহু, লা-ইলাহা ইল্লা-আন্তা;
“হে আল্লাহ্! তোমারই রহমতের আকাঙ্খী আমি, সুতরাং তুমি চোখের পলক পরিমাণ এক মুহুর্তের জন্যও আমাকে আমার নিজের উপর ছেড়ে দিও না, তুমি আমার সমস্ত কাজ সুন্দর করে দাও, তুমি ছাড়া ইবাদতের যোগ্য কোনো মা‘বুদ নেই।”[237]
আর কোনো কঠিন কাজ উপনীত হলে তিনি সালাত পড়তেন।”[238]
৩. তিনি আরো বলেন: যদি কোনো চিন্তা-ভাবনা ও দুশ্চিন্তাগ্রস্ত ব্যক্তি নিম্নোক্ত দু‘আটি পাঠ করে, তাহলে আল্লাহ্ তার দুশ্চিন্তা দূরীভূত করবেন এবং চিন্তা-ভাবনার স্থলে শান্তি-খুশী সঞ্চারিত করবেন:
«اللَّهُمَّ إِنِّي عَبْدُكَ, ابنُ عَبْدِكَ, ابْنُ أمتك, نَاصِيَتِي بِيَدِكَ, مَاضٍ فِيَّ حكْمُكَ, عَدْلٌ فيَّ قَضَاؤُكَ, أَسْأَلُكَ بِكُلِّ اسْمٍ هُوَ لَكَ, سَمِّيْتَ بِهِ نَفْسَكَ, أَوْ أَنْزَلْتَه في كِتَابِكَ, أو عَلَّمْتَهُ أَحَدًا مِنْ خَلْقِك, أو اسْتأثَرتَ بِهِ في عِلْمِ الغَيْبِ عِنْدَكَ: أَنْ تَجْعَلَ القُرآنَ العَظِيمَ رَبيعَ قَلبي, وَنُورَ صَدْرِي, وجلاءَ حُزْنِي, وذهابَ هَمِّي»
‘আল্ল-হুম্মা ইন্নী ‘আব্দুকা ওয়া-ইবনু ‘আব্দিকা, ওয়া-ইবনু আমতিকা, না-সিয়াতী বিয়াদিকা, মাযিন ফীয়্যা হুকমুকা, আদলুন ফীয়্যা -ক্বাযা-উকা, আস্আলুকা বিকুল্লি- ইস্মিন হুয়া-লাকা, সাম্মাইতা বিহী নাফসাকা, আউ আল্লামতাহু আহাদান মিন খালক্বিকা, আউ আনযালতাহু ফী কিতাবিকা, আউ ইস্তা’সারতা বিহী ফী ইলমিল গাইবে ইন্দাকা, আন-তাজ‘আলাল কুরআনা রাবী‘য়া-ক্বালবী, ওয়া-নুরা সাদ্রী, ওয়া-জালায়া- হুযনী, ওয়া-যাহাবা হাম্মী,
“হে আল্লাহ্! আমি তোমার বান্দা এবং তোমার এক বান্দার পুত্র, আর তোমার এক বান্দীর পুত্র, আমার কপাল তোমারই হাতে, আমার উপর তোমার নির্দেশ কার্যকর, আমার প্রতি তোমার ফায়সালা ইনসাফের উপর প্রতিষ্ঠিত, আমি সেই সমস্ত নামের প্রত্যেকটির বদৌলতে চাচ্ছি যেসব দিয়ে তুমি নিজের নমকরণ করেছো অথবা তোমার যে নাম তুমি তোমার কিতাবে নাযিল করেছো অথবা তোমার সৃষ্টজীবের মধ্যে কাউকে শিখিয়ে দিয়েছো অথবা স্বীয় ইলমের ভাণ্ডারে নিজের জন্য সংরক্ষণ করে রেখেছো, এ সবের বিনিময়ে তোমার নিকট এই কাতর প্রার্থনা জানাই যে, তুমি কুরআনকে বানিয়ে দাও আমার হৃদয়ের জন্য প্রশান্তি, আমার বক্ষের জ্যোতি, আমার চিন্তা-ভাবনার অপসারণকারী এবং উদ্বেগ-উৎকন্ঠার বিদুরণকারী।”[239]
৪. তিনি আশংকার সময় সাহাবীদের এ দু‘আটি শিক্ষা দিতেন:
«أعوذُ بكلماتِ اللهِ التامةِ من غضبِه وعقابِه وَشَرِّ عبادِه, ومِنْ هَمَزَاتِ الشَّيَاطِينِ, وأعوذُ بِكَ رَبِّ أَنْ يَحْضُرُون»
‘আ‘উযু বিকালিমাতিল্লাহিত তাম্মা-তি, মিন গযবিহী ওযা ‘ইক্বাবিহী, ওয়া শাররি-‘ইবাদিহী, ওয়া মিন হামাযা-তিশ শায়াত্বীনি, ওয়া আ‘উযু বিকা-রাব্বি- আঁই য়াহদ্বুরূন।”
“আমি আল্লাহর পরিপূর্ণ কালিমাসমূহের মাধ্যমে আশ্রয় প্রার্থনা করছি তাঁর গযব ও আযাব হতে এবং তাঁর বান্দাদের অনিষ্ট হতে, আর শয়তানদের কুমন্ত্রণা হতে, হে রব! আমি তোমার আশ্রয় কামনা করছি তাদের উপস্থিতি থেকে।”[240]
৫. তিনি আরো বলেন: যে কেউ বিপদে পতিত হয়ে এ দু‘আটি পাঠ করে, তাহলে আল্লাহ সেই বিপদের বিনিময়ে তাকে সাওয়াব প্রদান করবেন এবং সেটা অপেক্ষা উত্তম কিছু তাকে দান করবেন:
« إِنَّا للهِ وإِنَّا إِلَيْهِ رَاجِعُون, اللَّهُمَّ أجُرْنِي في مُصِيبَتِي واخْلُفْ لِي خَيْرًا منها»
‘ইন্না-লিল্লাহি ওয়া-ইন্না ইলাইহি রাজি‘উন, আল্লা-হুম্মা আজুরনী ফী মুসীবাতী ওয়াআখলিফলী খাইরাম-মিনহা।”
“নিশ্চয়ই আমরা আল্লাহর জন্যে এবং আমাদেরকে তাঁরই দিকে ফিরে যেতে হবে। হে আল্লাহ ! আমাকে আমার বিপদের প্রতিদান দান করো এবং সেটা অপেক্ষা উত্তম স্থলাভিষিক্ত কিছু প্রদান করো।”[241]
১. রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বৃহস্পতিবার ও দিনের প্রথম দিকে সফরে রওয়ানা হওয়া হওয়া পছন্দ করতেন।”[243]
২. সফরসঙ্গী ছাড়া মুসাফিরের পক্ষে রাতে একাকী সফর করা তিনি পছন্দ করতেন না। অনুরূপ কোনো ব্যক্তি একাকী সফর করা তিনি অপছন্দ করতেন।”[244]
৩. তিনি মুসাফিরদের প্রতি নির্দেশ জারী করেন যে, তারা তিনজন হলে যেন নিজেদের মধ্য হতে একজনকে আমীর নিযুক্ত করে।”[245]
৪. তিনি সাওয়ারীতে আরোহণ করে তিনবার ‘আল্লাহু আকবার’ বলতেন। অতঃপর নিম্নোক্ত দু‘আসমূহ পাঠ করতেন:-
﴿سُبۡحَٰنَ ٱلَّذِي سَخَّرَ لَنَا هَٰذَا وَمَا كُنَّا لَهُۥ مُقۡرِنِينَ ١٣ ﴾ [الزخرف: ١٣] «اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ فِي سفَرِي هذا البِرَّ والتقوى, ومن العملِ مَا تَرْضَى اللَّهُمَّ هَوِّن عَليْنَا سَفَرَنَا هَذَا واطْوِ عَنَّا بُعْدَه, اللَّهُمَّ أَنْتَ الصاحبُ في السفرِ, والخليفةُ في الأهلِ, اللَّهُمَّ اصْحَبْنَا في سَفَرِنَا واخْلُفْنَا في أهْلِنَا»
‘সুবহানাল্লাযী সাখ্খারা লানা হাযা, ওয়ামা কুন্না লাহু মুক্বরিনীন, ওয়া-ইন্না ইলা-রবিবনা লামুনক্বালিবুন,
আল্লা-হুম্মা ইন্না নাসআলুকা ফী সাফারিনা-হাযাল বিররা্ ওয়াত তাক্বওয়া, ওয়ামিনাল আমালে মা তারদ্বা, আল্লা-হুম্মা হাওয়েন ‘আলাইনা সাফারানা-হাযা, ওয়াত্বওয়ি ‘আন্না বু‘দাহ্, আল্লা-হুম্মা আসহিবনা ফী-সাফারিনা, ওয়াখলুফনা ফী আহলিনা।”
“পাক-পবিত্র সেই মহান সত্বা,যিনি এটিকে আমাদের জন্য বশীভূত করে দিয়েছেন, অন্যথায় একে বশীভুত করতে আমরা সক্ষম ছিলাম না, আর আমরা অবশ্য আমাদের প্রতিপালকের নিকট প্রত্যাবর্তনকারী,
হে আল্লাহ! আমাদের এই সফরে আমরা তোমার নিকট প্রার্থনা করছি নেকী ও তাক্বওয়ার এবং এমন আমলের সামর্থ যাতে তুমি রাযী-খুশী হও, হে আল্লাহ ! তুমি আমাদের জন্য এই সফরকে সহজ-সাধ্য করে দাও এবং এর দূরত্বকে আমাদের জন্য গুটিয়ে দাও, হে আল্লাহ! তুমি সফরে আমাদের সাথী এবং পরিবারে আমাদের প্রতিনিধি রক্ষণাবেক্ষণকারী হোন।”[246]
আর তিনি সফর থেকে প্রত্যাবর্তনকালে এ দু‘আটি অতিরিক্ত পড়তেন:
«آيبونَ تَائِبُونَ عَابِدُونَ لِرَبِّنَا حَامِدُونَ»
আ-য়েবূনা তা-য়েবূনা ‘আ-বিদূন, লি-রব্বিনা হামিদূন,
“আমরা প্রত্যাবর্তনকারী নিরাপত্তার সাথে, আমরা তাওবাকারী, আমরা নিজেদের প্রভুর ইবাদতকারী ও প্রশংসাকারী।”[247]
৫. যখন তিনি উঁচু ভুমিতে উঠতেন তখন ‘আল্লাহু আকবার’ তাকবীর বলতেন এবং যখন সমভুমি-উপত্যকার দিকে নামতেন ‘সুবহানাল্লাহ্-বলতেন।”[248]
এক ব্যক্তি বললো: ইয়া রাসুলুল্লাহ্! আমি সফরে যেতে মনস্থ করেছি, তখন তিনি বলেন: তুমি অবশ্যই ‘তাক্বওয়া’- অবলম্বন করবে, আর প্রত্যেক উঁচু জায়গায় উঠার সময় তাকবীর বলবে।”[249]
৬. সফরকালে ভোরের আলো উদ্ভাসিত হলে তিনি বলতেন:
«سَمَّعَ سَامِعٌ بِحَمْدِ الله وحُسْنِ بِلَائِهِ عَلَيْنَا, ربَّنَا صَاحِبْنَا وأَفْضِلْ عَلَيْنَا عَائِذًا باللهِ مِنَ النَّارِ»
“সাম্মা‘আ সামি‘য়ূন বিহামদিল্লাহ ওয়াহুসনি বালায়িহী ‘আলাইনা, রাব্বানা সাহিবনা, ওয়া আফদেল আলাইনা, ‘আয়েযান বিল্লাহি মিনান না-রী।”
“এক সাক্ষ্যদানকারী সাক্ষ্য দিল আল্লাহর প্রশংসার, আর অগণিত নিয়ামত আমাদের উপর উত্তমরূপে বর্ষিত হলো, হে আমাদের প্রতিপালক আমাদের সঙ্গে থাকুন, প্রদান করুন আমাদের উপর অফুরন্ত নিয়ামত, আমি আল্লাহর নিকট জাহান্নামের আগুন হতে আশ্রয় প্রার্থনাকারী।”[250]
৭. তিনি সফরকালে পরিবার-পরিজনকে বিদায় দানের সময় বলতেন:
«أَستَوْدِعُ اللهَ دِينَكَ وَأَمَانَتَكَ وخَواتِيمَ أَعْمَالِكَ»
‘আস্তাওদিউল্লাহা দ্বীনাকা, ওয়া-আমা-নাতাকা, ওয়া-খাওয়াতীমা আ‘মা-লিকা’
“আমি তোমার দ্বীন-ধর্ম, তোমার আমানত এবং তোমার আমলসমূহের সমাপ্তি আল্লাহর হেফাযতে রেখে যাচ্ছি।”[251]
৮. তিনি বলেন: তোমাদের কেউ সফরে কোনো স্থানে অবতরণ করলে তখন বলবে:
«أعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللهِ التَّامَّاتِ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ»
‘আউযু বিকালিমাতিল্লাহিত্ তা-ম্মাতি মিন মার্রি মা-খালাক;-
“আমি আল্লাহর পরিপূর্ণ কালেমাসমূহের মাধ্যমে আশ্রয় প্রার্থনা করছি তাঁর সৃষ্টির অনিষ্ট হতে;- তাহলে সেই স্থান ত্যাগ করা পর্যন্ত কোনো বস্তু তার কোনো ক্ষতি সাধন করতে পারবে না।”[252]
৯. তিনি মুসাফিরের প্রয়োজন পূর্ণ হওয়ার পর অবিলম্বে নিজের পরিবার-পরিজনের নিকট আসার নির্দেশ দিতেন।
১০. তিনি মহিলাকে মাহরাম পুরুষ সাথী ছাড়া সফর করতে নিষেধ করতেন, যদিও তার দুরত্ব হয় ডাকযোগের তথা প্রায় ১২ মাইল।
তিনি কাফের শুত্রুদের হস্তগত হওয়ার আশংকায় কুরআন নিয়ে কাফেরদের দেশে সফর করতে নিষেধ করেছেন।
১১. তিনি মুসলিমকে কাফের-মুশরিকদের মাঝে বসবাস করতে নিষেধ করেন, যদি সে হিজরত করার শক্তি-সামর্থ রাখে এবং বলেন: “কাফের-মুশরিকদের মাঝে যে সকল মুসলিম বসবাস করে, তাদের সাথে আমার সম্পর্ক ছিন্ন।”[253]
তিনি আরো কলেন: যে কেউ কাফের-মুশরিকের সঙ্গী হয় এবং তার সাথে বসবাস করে সেও তার মতো।”[254]
১২. তাঁর সফর চার প্রকার ছিল: ১. হিজরতের সফর, ২. জিহাদের সফর, আর এটাই ছিল সর্বাপেক্ষা অধিক ৩. ওমরার সফর, ৪. হজ্জের সফর।
১৩. তিনি সফরে চার রাকাতের ফরয সালাতকে কসর করে দু’রাকাত পড়তেন, সফরের উদ্দেশ্যে বের হওয়ার সময় হতে ফিরে আসা পর্যন্ত। আর তিনি সফরে শুধুমাত্র ফরয সালাত আদায় করতেন, তবে তিনি ফজরের সুন্নাত ও বিতর নিয়মিত পড়তেন।
১৪. তিনি স্বীয় উম্মতের জন্য কোনো নির্দিষ্ট পরিমাপ বা দূরত্ব নির্ধারণ করেননি যা অতিক্রম করার পর সালাত কসর করা কিংবা রোযা ছেড়ে দেওয়া বিধেয় হবে।[255]
১৫. তাঁর আদর্শ ছিল না সফরে সাওয়ারীতে আরোহণ কালে ‘জম্‘অ’ করা-তথা দুই ওয়াক্তের সালাত একত্রিত করে আদায় করা, আর না অবতরণের কালে, বরং তিনি শুধু সফর দ্রুতগতিতে হলেই ‘জম‘অ’ করতেন, সুতরাং সূর্য ঢলার আগে তিনি সফর শুরু করলে, তখন যোহরকে আসরের সময় পর্যন্ত বিলম্বিত করতেন, অতঃপর সাওয়ারী হতে অবতরণ করে যোহর ও আসর একত্রিত করে আদায় করতেন, আর সফর শুরু করার আগেই সূর্য ঢলে গেলে, তখন তিনি যোহরের সালাত পড়ে সাওয়ারিতে আরোহণ করতেন, অনুরূপ সফর দ্রুতগতিতে হলে তিনি মাগরিবের সালাত বিলম্বিত করে এশার সালাতের সাথে একত্রিত করে এশার ওয়াক্তে আদায় করতেন।
১৬. তিনি সফরে দিবারাত্রে নফল সালাত সাওয়ারীর উপরই পড়তেন, সাওয়ারী যে দিকেই ফিরে আছে সেই দিকেই সালাত আদায় করতেন এবং রুকু-সিজদা ইশারার মাধ্যমে আদায় করতেন এবং সিজদার সময় মাথা রুকু হতে অধিক নত করতেন[256]।
১৭. তিনি মাহে রামযানে সফর করেন এবং রোযা ভঙ্গ করেন, সাহাবীদের রোযা রাখা ও না রাখা উভয়ের অনুমতি দেন।
১৮. তিনি সফরে সর্বদা কিংবা অধিকাংশ সময়ে চর্মের মোজা পরিধান করতেন।
১৯. তিনি কোনো ব্যক্তিকে সফরে দীর্ঘদিন অতিবাহিত করার পর হঠাৎ রাত্রিবেলায় পরিবারবর্গের নিকট ফিরে আসতে নিষেধ করেন।”[257]
২০. তিনি বলেন: ফেরেশ্তাগণ সেসব কাফেলার সফরসঙ্গী হয় না, যাদের সাথে কুকুর অথবা ঘন্টা থাকে।”[258]
২১. তিনি সফর থেকে ফিরে এসে প্রথমে মসজিদে গিয়ে দু’রাকাত সালাত আদায় করতেন, অতঃপর পরিবারের শিশু-কিশোরদের সাথে সাক্ষাৎ করতেন।
২২. তিনি সফর থেকে প্রত্যাবর্তনকারীর সাথে প্রীতিভরে আলিঙ্গন করতেন এবং নিজ পরিবারের লোক হলে তাকে চুমু দিতেন।”
১. রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর আদর্শ ছিল নিজের চিকিৎসা করা এবং নিজ পরিবার ও সাহাবীদের কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে চিকিৎসা করার আদেশ করা।
২. তিনি বলেন: আল্লাহ্ এমন কোনো রোগ সৃষ্টি করেননি, যার কোনো চিকিৎসা নেই।”[260] তিনি আরো বলেন: হে আল্লাহর বান্দারা! তোমরা চিকিৎসা করো।”[261]
৩. তিনি তিন প্রকারে রোগীর চিকিৎসা করতেন: ১. প্রাকৃতিক ঔষধসমূহ দ্বারা ২. ‘ইলাহী দাওয়া’-তথা শির্কমুক্ত ঝাঁড়-ফুঁক দ্বারা, ৩. উভয়ের সমষ্টির দ্বারা।
৪. তিনি মাদকদ্রব্য ও অপবিত্র বস্তু দ্বারা, চিকিৎসা করতে নিষেধ করেন।
৫. তাঁর সাহাবীদের কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে তিনি তাকে দেখতে যেতেন, তিনি মরণমুখী ইয়াহূদী ছেলেটিকে দেখতে যান যে তাঁর খেদমত করতো এবং তাঁর মরণমুখী চাচা (আবু তালিব)-কে দেখতে যান অথচ সে মুশরিক ছিল এবং উভয়ের উপর ইসলাম পেশ করেন, ইয়াহূদী ছেলেটি ইসলাম গ্রহন করলো, কিন্তু তাঁর চাচা (আবু তালিব) ইসলাম গ্রহণ করেনি।
৬. তিনি রোগীর নিকটবর্তী হতেন এবং তার মাথার নিকট বসতেন এবং তার অবস্থা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতেন।
৭. তাঁর আদর্শ ছিল না যে, রোগীকে দেখতে যাওয়ার জন্য কোনো দিন বা কোনো সময় নির্দিষ্ট করা, বরং তিনি স্বীয় উম্মতের জন্য দিবারাত্র ও সর্বক্ষণ রোগী দেখতে যাওয়ার বিধান প্রদান করেছেন।”
১. রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: জ্বরের উৎপত্তি, অথবা বলেছেন: কঠিন জ্বরের উৎপত্তি জাহান্নামের উত্তাপ হতে, সুতরাং তোমরা পানির দ্বারা তা ঠাণ্ডা করো।”[263]
২. তিনি আরো বলেন: “তোমাদের কেউ জ্বরে আক্রান্ত হলে তার উপর তিন রাত যাবৎ ভোরে ঠান্ডা পানি ঢেলে দেওয়া উচিৎ।
৩. তিনি জ্বরে আক্রান্ত হলে এক বালতি পানি আনতে বলতেন, তারপর তার উপর ঢেলে দিতেন এবং গোসল করাতেন। একদা জ্বর সম্পর্কে তাঁর নিকট আলোচনা করা হয়, তখন এক ব্যক্তি জ্বরকে গালি দিলে তিনি বলেন: তোমরা জ্বরকে গালি দিও না, কেননা জ্বর মানুষের পাপরাশিকে দূর করে যেমন কামারের হাপর লোহার ময়লা দূর করে থাকে।”[264]
৪. জনৈক ব্যক্তি এসে বললো: ইয়া রাসুলুল্লাহ্! আমার ভাই পেটের অভিযোগ করছে, অন্য বর্ণনায় রয়েছে, তার পেট ছুটেছে, অর্থাৎ দস্ত শুরু হয়েছে, তখন তিনি বললেন: তাকে মধু পান করাও।”[265] তিনি সে মধুর সাথে পানি মিশিয়ে খালি পেটে খেতেন।
৫. এক দল লোক মদীনায় এসে ‘ইস্তিস্ক্বা’- রোগের অভিযোগ করলে তিনি তাদেরকে বলেন: যদি তোমরা যাকাতের উট চারণক্ষেত্রে গিয়ে সেগুলোর পেশাব ও দুধ পান-করতে, অতঃপর তারা অনুরূপ করলে সুস্থ্ হয়ে যায়।”[266] আর ‘ইস্তিস্ক্বা’-এক প্রকার রোগবিশেষ যাতে পেট ফুলে যায় এবং পিপাসার নিবৃত্তি হয় না।
৬. তিনি ওহুদ যুদ্ধে আহত হলে তাঁর কন্যা ফাতিমা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা চাটাই-এর একটি টুকরা নিয়ে আগুনে পুড়ে সে ছাই তাঁর ক্ষতস্থানে লাগিয়ে দিলে সাথে সাথে রক্ত বন্ধ হয়ে যায়।
তিনি উবাই ইবনে কা‘আব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু-এর নিকট একজন ডাক্তার প্রেরণ করেন, সে তার একটি রগ-ধমনী কেটে গরম লৌহা দিয়ে দাগ লাগায়।
তিনি বলেন: (অনেক) রেগের নিরাময় তিনটি জিনিসে, মধু পান করা, সিংগা লাগানো এবং গরম লোহা দিয়ে দাগানো, তবে আমি আমার উম্মতকে গরম লোহা দ্বারা দাগাতে নিষেধ করছি।”[267]
তিনি আরো বলেন: লোহা গরম করে দাগ লাগানো আমি পছন্দ করি না।”[268] অর্থাৎ একান্ত বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া লোহা গরম করে দাগ লাগাবে না, যেহেতু তাতে অত্যধিক কষ্ট রয়েছে।
৭. তিনি অসুখের সময় শিঙ্গা লাগান এবং শিঙ্গাদানকারীকে তার মজুরী প্রদান করেন, আর বলেন: “তোমরা যে পদ্ধতিতে চিকিৎসা করাও, শিঙ্গা লাগানো তার মধ্যে অন্যতম।”[269] তিনি ইহরাম অবস্থায় ব্যথার কারণে মাথায় শিঙ্গা লাগান।”[270]
তিনি স্বীয় উরুর উপরিভাগে ‘ওসা’-তথা হাড় ভাঙ্গা ছাড়া ব্যথা’-এর কারণে শিঙ্গা লাগান।
তিনি তিনটি শিঙ্গা লাগাতেন, একটি স্কন্ধের মধ্যবর্তী পিছনের অংশে এবং অপর দু’টি দু’কাঁধের পার্শ্বের রগের উপর, তিনি (খাইবর হতে ফেরার পথে ইয়াহূদী মহিলা কর্তৃক) বিষ মিশ্রিত বকরী হতে আহার করার পর স্কন্ধের মধ্যবর্তী পিছনের অংশে তিন বার শিঙ্গা লাগান এবং তিনি সাহাবীদের শিঙ্গা লাগানোর নির্দেশ দেন।
৮. কেউ মাথা ব্যথার অভিযোগ করলে তিনি তাকে বলতেন: তুমি শিঙ্গা লাগাও। আর কেউ তার দু’পায়ের ব্যথার অভিযোগ করলে তাকে মেহেদী দ্বারা পাঁদ্বয় খেজাব-রং করার নির্দেশ দিতেন।”[271]
৯. সুনানে তিরমিযীতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাল্লামের খাদেমা উম্মু রাফে‘অ সালমা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা হতে বর্ণিত, কোনো সময় তাঁর শরীরে আঘাত লাগলে, অথবা কাটা বিদ্ধ হলে, তিনি তার উপর মেহেদী লাগাতেন[272]।
১০. তিনি আরো বলেন: ‘এরকুন নাসা’ রোগের নিরাময় হলো দুম্বার পাছার নির্জাস, যা প্রতি দিন প্রত্যুষে থুতুর উপর তথা মুখ ধৌত করার পূর্বে পান করবে।”[273]
আর ‘এরকুন নাসা’ সেই ব্যাথাকে বলা হয়, যা উরুর উপরিভাগের জোড়া থেকে শুরু হয়ে পিছন দিয়ে নিচের দিকে নেমে আসে।
১১. তিনি শরীর কশা ও পেট মলীন ও নরম করার ঔষধ সম্পর্কে বলেন, “তোমরা নীম-পাতা ও জিরা ব্যবহার করো, কেননা তাতে প্রত্যেক রোগের নিরাময় রয়েছে একমাত্র মৃত্যু ছাড়া।”[274]
১২. তিনি আরো বলেন: তোমাদের সর্বোত্তম সুরমা হলো ‘ইস্মদ’-তথা কালো সুরমা, যা চক্ষু পরিস্কার করে এবং চুল উৎপন্ন করে।”[275]
১৩. তিনি আরো বলেন: যে ব্যক্তি প্রত্যুষে সাতটি আলীয়া তথা ‘আজওয়া খেজুর খেয়ে নেবে, সে দিন কোনো বিষ বা জাদুটোনা তার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না।”[276]
১৪. তিনি আরো বলেন: তোমরা রোগীদেরকে পানাহারের উপর জবরদস্তি করো না, কেননা আল্লাহই তাদেরকে পানাহার করান।”[277]
১৫. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সুহাইব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু-কে চক্ষুপীড়া অবস্থায় খেজুর খাওয়াতে অসম্মতি প্রকাশ করেন, তবে কয়েকটি খেজুর খাওয়ায় সম্মতি দেন, আর তিনি আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু-কে ‘রুতাব’-তথা তাজা খেজুর হতে আত্মরক্ষার নির্দেশ দেন যখন সে চক্ষুপীড়ায় ভুগছিল।
১৬. তিনি বলেন: যখন তোমাদের কারো খাবারের পাত্রে মাছি পড়ে, তাহলে অবশ্যই গোটা মাছিটা তাতে ডুবিয়ে দেবে, অতঃপর মাছিটি দূরে ছুড়ে ফেলে দেবে, কারণ তার এক ডানাতে রোগ নিরাময়ের ব্যবস্থা, আর অপর ডানাতে রোগজীবাণু রয়েছে, আর মাছি প্রথমে রোগজীবানুযুক্ত পাখাটি খাবারের মধ্যে ঢুকিয়ে থাকে, তাই দ্বিতীয় ডানাটা পাত্রে ঢুকিয়ে দিতে হবে।”[278]
১৭. তিনি আরো বলেন: ‘তালবীনা’ রোগীর প্রাণে শক্তি সঞ্চার করে এবং দুশ্চিন্তা দূরীভূত করে।”[279]
আর ‘তালবীনা’ হলো এক প্রকার লঘু পাক খাদ্য, যা গম-যবের আটা ভুষি সহ পানিযোগে তৈরী করা হয়।
১৮. তিনি বলেন: তোমরা কালাজিরা ব্যবহার করো, কেননা তাতে মৃত্যু ব্যতীত আর সকল রোগের চিকিৎসা রয়েছে।”[280]
১৯. তিনি বলেন: তোমরা কুষ্ঠ রোগগ্রস্ত ব্যক্তি থেকে পলায়ন করো, যেভাবে পলায়ন করে থাকো ব্যাঘ্র থেকে।”[281]
তিনি আরো বলেন: অসুস্থ্ রোগীকে সুস্থ্ ব্যক্তির নিকট রাখবে না।”[282]
২০. সাক্বীফ গোত্রের প্রতিনিধি দলের মধ্যে এক লোক কুষ্ঠ রোগগ্রস্থ রোগী ছিল, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার প্রতি দূত প্রেরণ করে বলেন: তুমি ফিরে যাও, আমরা তোমরা বাই‘আত গ্রহণ করে নিয়েছি।”[283]
১. রাসুলু্ল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জ্বিন-শয়তান ও বদ-নযর হতে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করতেন এবং বদ-নযর দূরীকরণার্থে ঝাড়ফুঁক করার নির্দেশ দেন, আর বলেন: “বদ-নযর লাগা এক বাস্তব সত্য, যদি কোনো বস্তু ভাগ্য অতিক্রম করে থাকতো, তাহলে বদ-নযরই ভাগ্য অতিক্রম করতো, আর যদি তোমাদের কারো নিকট গোসল করে পানি দানের জন্য অনুরোধ করা হয়, তখন সে যেন গোসল করে পানি দেয়।”[285]
২. তিনি একটি মেয়েকে দেখতে পেলেন যে, তার চেহারায় বদ-নযর লাগার লাগার আলামত রয়েছে, তখন তিনি বললেন: একে ঝাঁড়ফুঁক কর, কেননা তার উপর বদ-নযর লেগেছে।”[286] উক্ত হাদীসে উল্লেখিত ‘সাফ‘আহ’-শব্দের মর্মার্থ: জ্বিন-শয়তানের বদ-নযর।
৩. তিনি সেই সাহাবীকে লক্ষ্য করে বলেন, যিনি বিচ্ছুতে দংশিত ব্যক্তিকে সূরা ফাতিহা পড়ে ঝাড়ফুঁক করার ফলে সে সুস্থ হয়েছিল, কে তোমাকে জানালো যে, সূরা ফাতিহা ঝাড়ফুঁকের কাজ করে?[287]
৪. এক ব্যক্তি তাঁর নিকট এসে বললো: গতরাত আমাকে বিচ্ছু দংশন করেছে, তখন তিনি বলেন: যদি তুমি সন্ধ্যাবেলায় বলতে:
«أَعُوذُ بِكَلِماتِ اللهِ التَّامَّاتِ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ»
‘আউযু বিকালিমাতিল্লাহিত্ তা-ম্মাতি মিন শাররি মা-খালাক;
“আমি আল্লাহর পরিপূর্ণ কালেমাসমূহের মাধ্যমে আশ্রয় প্রার্থনা করছি তাঁর সৃষ্টির অনিষ্ট হতে,- তাহলে কোনো বস্তু তোমরা ক্ষতি করতে পারতো না।”[288]
(গ) উভয়ের সমষ্টি সহজ ও উপকারী চিকিৎসা প্রসঙ্গে তাঁর আদর্শমালা:
১. যখন কোনো লোক অসুস্থ হয়ে পড়তো, অথবা আহত কিংবা জখমী হতো, তখন তিনি তর্জনী আঙ্গুলটি যমীনে রাখতেন, অতঃপর তা উঠিয়ে বলতেন:
«بِسْمِ اللهِ تُرْبَةُ أَرْضِنَا, بِريقةِ بَعْضِنَا يُشْفَى سَقِيمُنَا, بإِذْنِ رَبِّنَا»
‘বিসমিল্লাহি তুর্বাতু আরদিনা, বি-রীক্বাতি বা’যিনা, ইউশফা সাক্বীমুনা, বিইযনি রাবিবনা;-
“আল্লাহর নামে, আমাদের দেশের মাটি এবং আমাদের একজনের থুতু, আমাদের প্রতিপালকের হুকুমে যেন আমাদের রোগী আরোগ্য লাভ করে।”[289]
২. কোনো সাহাবী তাঁর নিকট ব্যথার অভিযোগ করলে তিনি বলেন: তুমি শরীরে ব্যথার স্থানে নিজের হাত রেখে এ দু‘আটি সাতবার বলো:
«أَعُوذُ بِعِزَّةِ اللهِ وقُدْرَتِهِ مِنْ شَرِّ مَا أَجِدُ وأُحَاذِرُ»
‘আউযু বিইয্যাতিল্লাহি ওয়া ক্বুদরাতিহী মিন শাররি মা-আজিদু ওয়া উহাযিরু; যে অনিষ্ট আমি অনুভব করছি, আর যার আমি আশংকা করছি তা হতে আমি আল্লাহুর নিকট তাঁর মর্যাদা ও কুদরতের মাধ্যমে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।”[290]
আর তিনি সূরা ফালাক্ব ও সূরা নাস পড়ে নিজের কোনো বিবির ব্যথার স্থানে ডান-হাত বুলাতেন এবং এ দু‘আটি পাঠ করতেন:
«اللَّهُمَّ رَبَّ النَّاسِ أَذْهِبِ البَاسَ, واشْفِ أَنْتَ الشَّافِي, لَا شِفَاءَ إِلَّا شِفَاؤُكَ, شِفَاءً لا يُغَادِرُ سَقَمًا»
‘আল্লা-হুম্মা রাববান নাসে! আযহিবিল বা’স, ওয়াশফি আন্তাশ শাফি, লা-শিফাআন্ ইল্লা শিফা-উকা, শিফা-আন্ লা-ইউগাদিরু সুকুমান;- অর্থাৎ হে আল্লাহ্ মানুষের প্রভু! এ ব্যথা দূর করে দাও এবং আরোগ্য করে দাও, তুমিই তো একমাত্র শেফাদানকারী, তোমার শেফা ছাড়া আর কোনো শেফা নেই, সুতরাং এমন শেফা দান কর যা কোনো রোগকে না ছাড়ে।”[291]
তিনি রোগী দেখতে গেলে বলতেন:
«لَا بأسَ طهورٌ إنْ شَاءَ اللهُ»
‘লা-বা’ছা, ত্বাহুরুন ইন্শা-আল্লাহ্;-
অর্থাৎ ভয়ের কিছুই নেই, ইন-শা আল্লাহ্ পাপরাশী হতে পবিত্রতা (অর্জিত হবে)।”[292]
আল-হামদুলিল্লাহ্ সমাপ্ত।
সূচীপত্র
ক্রমিক
|
বিষয়াবলী
|
পৃষ্ঠা
|
1.
|
অনুবাদকের
কথা
|
|
2.
|
ভূমিকা
|
|
3.
|
পবিত্রতা
অর্জন ও প্রাকৃতিক প্রয়োজন পূরণ করা প্রসঙ্গে তাঁর আদর্শমালা
|
|
4.
|
সালাত
আদায় করা প্রসঙ্গে তাঁর আদর্শমালা
|
|
5.
|
জুমু‘আহ্ প্রসঙ্গে তাঁর আদর্শমালা
|
|
6.
|
দু
ঈদ প্রসঙ্গে তাঁর আদর্শমালা
|
|
7.
|
সূর্য
গ্রহণ প্রসঙ্গে তাঁর আদর্শমালা
|
|
8.
|
ইস্তিস্কা
প্রসঙ্গে তাঁর আদর্শমালা
|
|
9.
|
সালাতুল
খাওফ প্রসঙ্গে তাঁর আদর্শমালা
|
|
10.
|
মৃত
ব্যক্তির কাফন-দাফন প্রসঙ্গে তাঁর আদর্শমালা
|
|
11.
|
যাকাত
প্রসঙ্গে তাঁর আদর্শমালা
|
|
12.
|
সিয়াম
বা রোজা প্রসঙ্গে তাঁর আদর্শমালা
|
|
13.
|
হজ্জ-ওমরাহ্
প্রসঙ্গে তাঁর আদর্শমালা
|
|
14.
|
হাদী, কুরবানী ও আকীকাহ্ প্রসঙ্গে তাঁর আদর্শমালা
|
|
15.
|
ক্রয়-বিক্রয়
ও লেন-দেন প্রসঙ্গে তাঁর আদর্শমালা
|
|
16.
|
বিবাহ-শাদী
ও পারিবারিক জীবন-যাপন প্রসঙ্গে তাঁর আদর্শমালা
|
|
17.
|
পানাহার
প্রসঙ্গে তাঁর আদর্শমালা
|
|
18.
|
ইসলামের
দাওয়াত প্রসঙ্গে তাঁর আদর্শমালা
|
|
19.
|
আল্লাহর
যিকর প্রসঙ্গে তাঁর আদর্শমালা
|
|
20.
|
আযান
ও আযানের সময় আল্লাহর যিকর প্রসঙ্গে তাঁর আদর্শমালা
|
|
21.
|
যিল-হাজ্জ
মাসে আল্লাহর যিকর প্রসঙ্গে তাঁর আদর্শমালা
|
|
22.
|
কুরআন
তিলাওয়াত প্রসঙ্গে তাঁর আদর্শমালা
|
|
23.
|
খোৎবা
প্রসঙ্গে তাঁর আদর্শমালা
|
|
24.
|
ঘুমানো, জাগ্রত হওয়া ও স্বপ্ন প্রসঙ্গে তাঁর আদর্শমালা
|
|
25.
|
ফিৎরাত, পোষাক ও সৌন্দর্যের উপকরণ প্রসঙ্গে তাঁর আদর্শমালা
|
|
26.
|
সালামের
আদান-প্রদান ও অনুমতি প্রসঙ্গে তাঁর আদর্শমালা
|
|
27.
|
কথা-বার্তা
ও নীরবতা, বক্তব্য, নামকরণ প্রসঙ্গে
তাঁর আদর্শমালা
|
|
28.
|
উঠা-বসা
ও চলাফেরা প্রসঙ্গে তাঁর আদর্শমালা
|
|
29.
|
সিজদায়ে
শোক্র প্রসঙ্গে তাঁর আদর্শমালা
|
|
30.
|
আশংকা, বিপদাপদ ও দুশ্চিন্তার চিকিৎসা প্রসঙ্গে তাঁর আদর্শমালা
|
|
31.
|
সফর-ভ্রমন
প্রসঙ্গে তাঁর আদর্শমালা
|
|
32.
|
ডাক্তারী-চিকিৎসা
ও রোগীর-দেখা-শোনা প্রসঙ্গে তাঁর আদর্শমালা
|
[14] অর্থাৎ ‘রাআল’-‘যাকাওয়ান’ গোত্রদ্বয়ের লোকেরা বি‘রে মা‘উনার নিকট বিশ্বাসঘাতকতা করে সত্তর জন সাহাবীকে হত্যা করলে তাদের উপর বদ-দো‘আস্বরূপ এক মাস পর্যন্ত তিনি কুনূতে নাযিলাহ্ পাঠ করেন। অনুবাদক।
[57] ১ ওসক্ব = ৬০ নববী সা‘, আর ১ সা’ = প্রায় আড়াই কেজি, সুতরাং ৫ ওসক্ব = ৭৫০ কেজি নেসাব পূর্ণ হলে।’’ অনুবাদক
[89] কেননা ক্বারেন হাজীর জন্য তাওয়াফে ওমরাহ ও তাওয়াফে ইফাযাহ্ এবং একটি সায়ী যথেষ্ট, আর বিদায়ী তাওয়াফ তো ঋতুবর্তী মহিলা ছাড়া বহিরাগত সকল হাজীদের উপরই ওয়াজিব।’’-অনুবাদক
[91] মক্কার হারাম শরীফে হজ্জ-উমরা একই সফরে করার সুযোগ গ্রহণ করার কারণে শোকরিয়াস্বরূপ যে পশু যবেহ করতে হয় সে নির্দিষ্ট পশুকে হাদী বলা হয়।’’ অনুবাদক।
[113] শরীয়াতের পরিভাষায় ‘যিহার’ মানে কোনো ব্যক্তি তার স্ত্রীকে এ কথা বলা যে, তুমি আমার জন্য আমার মাতার পৃষ্ঠদেশের ন্যায়-হারাম, এটা তালাক অপেক্ষা কঠোরতর। অনুবাদক।
[179] আযানে তারজী‘য় শব্দের মর্মার্থ হলো: মুয়াযযিন কর্তৃক ‘শাহাদত বাণীদ্বয়’ উচ্চঃস্বরে বলার পর দ্বিতীয় বার নিম্নস্বরে পাঠ করা।’’ অনুবাদক।
[214] তিনি উম্মুল মু’মিনীন খাদিজা ও আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা-কে জিবরীল আমীন আলাইহিস সালাম-এর সালাম পৌছান। অনুবাদক।
[220] কারণ এর মাধ্যমে শয়তানের মনে অহঙ্কার এসে যায় এবং সে মনে করে যে বনী আদম তার প্ররোচনাকে বড় কর দেখছে। আর যদি আল্লাহর নাম নেওয়া হয়, তখন সে হীন হয়ে যায়। সম্পাদক
[222] বুখারী, মুসলিম। অর্থাৎ, একই ব্যক্তির নাম মুহাম্মদ এবং ডাকনাম আবুল ক্বাসিম রাখা যাবে না।’’ অনুবাদক।
[229] কুরফুসা বলা হয়, নিতম্ব মাটিতে রেখে হাঁটুদ্বয় খাড়া করে পেটের সাথে হাটু মিশিয়ে দুই হাত দিয়ে দুই পায়ের নলা জড়িয়ে ধরা।
[292] বুখারী।
_________________________________________________________________________________
সংকলন: ড. আহমাদ ইবন উসমান আল-মাযইয়াদ
অনুবাদ: মুহাম্মাদ আলীমুল্লাহ
সম্পাদনা: ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া
সূত্র: ইসলামহাউজ
পোস্টটি ভালো লাগলে শেয়ার করতে ভুলবেন না কিন্তু।
আরও পড়ুনঃ নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের গুণাবলী
আরও পড়ুনঃ নবী করীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নামায আদায়ের পদ্ধতি
আরও পড়ুনঃ দো‘আর গুরুত্ব ও মাহাত্ম্য এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কতিপয় দো‘আর নমুনা
আরও পড়ুনঃ রাসূল যেভাবে রমজান যাপন করেছেন (১ম পর্ব)
আরও পড়ুনঃ নবীগৃহে ঈদ
আরও পড়ুনঃ বিদায় হজের খুতবা : কিছু আলোকপাত
আরও পড়ুনঃ নবী জীবনী
আরও পড়ুনঃ বিশ্ব মানবতার প্রতি মহানবীর ১০ অবদান
ডাউনলোড করুনঃ ছালাতুর রাসূল (ছাঃ) - ১ম পর্ব
ডাউনলোড করুনঃ ছালাতুর রাসূল (ছাঃ) - ২য় পর্ব
ডাউনলোড করুনঃ বইঃ রাসূল (সা)-এর নামায (ফ্রি ডাউনলোড)
ডাউনলোড করুনঃ বইঃ সিয়াম - রাসূলুল্লাহ্র রোজা (ফ্রি ডাউনলোড)
ডাউনলোড করুনঃ মহানবী (সাঃ) এর জীবনী গ্রন্থঃ আর রাহীকুল মাখতূম – ফ্রি ডাউনলোড
পোস্টটি ভালো লাগলে শেয়ার করতে ভুলবেন না কিন্তু।
হাদীস কোরআন এবং হালাল বাজার ইসলামিক টিমের মতে আপনার ওয়েব সাইট টি অনেক তথ্যবহুল একটি সাইট
উত্তরমুছুন