নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেভাবে পবিত্রতা অর্জন করতেন (৩য় পর্ব)
যখন গোসল করা ফরয:
নিম্নোক্ত চারটি কারণের যে কোনো একটি কারণ সংঘটিত হলে যে কোনো পুরুষ বা
মহিলার উপর গোসল করা ফরয। উপরন্তু মহিলাদের গোসল ফরয হওয়ার জন্য আরো দু’টি বাড়তি
কারণ রয়েছে। সে কারণগুলো নিম্নরূপ:
১. উত্তেজনাসহ বীর্যপাত হলে:
উত্তেজনাসহ বীর্যপাত হলে গোসল ফরয হয়ে যায়। তেমনিভাবে
স্বপ্নদোষ হলেও। তবে তাতে উত্তেজনার শর্ত নেই।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَإِن كُنتُمۡ جُنُبٗا
فَٱطَّهَّرُواْۚ﴾ [المائدة: ٦]
“তোমরা জুনুবী হলে ভালোভাবে গোসল করে নিবে”। [সূরা আল-মায়েদাহ, আয়াত: ৬]
আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি
বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إِنَّمَا الْـمَاءُ مِنَ الْـمَاءِ».
“বীর্যপাত
হলেই গোসল করতে হয়”।[233]
‘আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু
থেকে বর্ণিত,
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إِذَا رَأَيْتَ الْمَذْيَ فَاغْسِلْ ذَكَرَكَ، وَتَوَضَّأْ
وُضُوْءَكَ لِلصَّلاَةِ، فَإِذَا فَضَخْتَ الْمَاءَ فَاغْتَسِلْ».
স্বপ্নদোষ:
যে কোনো ব্যক্তির (পুরুষ হোক বা মহিলা) স্বপ্নদোষ হলে তদুপরি কাপড়ে বা
শরীরে বীর্যের কোনো দাগ পরিলক্ষিত হলে তাকে গোসল করতে হবে। তবে কোনো দাগ পরিলক্ষিত
না হলে তাকে গোসল করতে হবে না। যদিও স্বপ্নদোষের পুরো চিত্রটি তার মনে পড়ে।
পুরুষের যেমন স্বপ্নদোষ হয় তেমনিভাবে মহিলাদেরও হয়।
উম্মুল মুমিনীন উম্মে
সালামা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন একদা উম্মে সুলাইম রাদিয়াল্লাহু আনহা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলেন: মহিলাদের স্বপ্নদোষ হলে গোসল করতে হবে কি? তিনি বললেন:
«نَعَمْ، إِذَا رَأَتِ الْـمَاءَ»
“হ্যাঁ, যদি সে (কাপড়ে বা শরীরে) বীর্য দেখতে
পায়। উম্মে সালামা রাদিয়াল্লাহু আনহা এ কথা শুনে লজ্জায় মুখ ঢেকে নিলেন এবং বলেন, হে রাসুল! মেয়েদেরও কি
স্বপ্নদোষ হয়? তখন তিনি বললেন”:
«نَعَمْ، تَرِبَتْ يَمِيْنُكِ، فَبِمَ يُشْبِهُهَا وَلَدُهَا»
“হ্যাঁ, তোমার হাত ধূলিধূসরিত হোক,
(যদি তাদের স্বপ্নদোষ নাই হয়) তাহলে সন্তান কীভাবে তাদের রং ও
রূপ ধারণ করে”।[235]
অন্য বর্ণনায় রয়েছে:
«إِنَّ مَاءَ الرَّجُلِ غَلِيْظٌ أَبْيَضُ،
وَمَاءُ الـْمَرْأَةِ رَقِيْقٌ أَصْفَرُ فَإِذَا عَلاَ مَاؤُهَا مَاءَ الرَّجُلِ
أَشْبَهَ الْوَلَدُ أَخْوَالَهُ، وَإِذَا عَلاَ مَاءُ الرَّجُلِ مَاءَهَا أَشْبَهَ
أَعْمَامَهُ».
“পুরুষের
বীর্য গাঢ় শুভ্র। আর মেয়েদের বীর্য পাতলা হলদে। যদি মহিলার বীর্য পুরুষের বীর্যের
আগে ও অধিকহারে পতিত হয় তাহলে বাচ্চাটি মামাদের রং ও গঠন ধারণ করবে। আর যদি
পুরুষের বীর্য মহিলার বীর্যের আগে ও অধিকহারে পতিত
হয় তাহলে বাচ্চাটি চাচাদের রং ও গঠন ধারণ করবে”।[236]
ঘুম থেকে জেগে পোশাকে
আর্দ্রতা দেখতে পেলে:
কেউ ঘুম থেকে জেগে নিজ
পোশাকে আর্দ্রতা দেখতে পেলে তা তিনের এক অবস্থা থেকে খালি হবে না। তা নিম্নরূপ:
১. সে নিশ্চিত যে, এ আর্দ্রতা বীর্যের।
এমতাবস্থায় তাকে গোসল
করতে হবে। স্বপ্নদোষের কথা স্মরণে আসুক বা নাই আসুক।
যুবাইদ ইবন সাল্ত
রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«خَرَجْتُ مَعَ عُمَرَ بْنِ الْـخَطَّابِ رضي الله عنهما إِلَى الْـجُـرُفِ،
فَنَظَرَ فَإِذَا هُوَ قَدِ احْتَلَمَ، وَصَلَّى، وَلَمْ يَغْتَسِلْ فَقَالَ:
وَاللهِ مَا أُرَانِيْ إِلاَّ قَدِ احْتَلَمْتُ وَمَا شَعَرْتُ، وَصَلَّيْتُ،
وَمَا اغْتَسَلْتُ، فَاغْتَسَلَ، وَغَسَـلَ مَا رَأَى فِيْ ثَوْبِهِ، وَنَضَحَ مَا
لَمْ يَرَ، وَأَذَّنَ، وَأَقَامَ، ثُمَّ صَلَّى بَعْدَ اِرْتِفَاعِ الضُّحَى».
“উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুর সাথে জুরুফের দিকে
রওয়ানা হলাম। হঠাৎ তিনি পোশাকের দিকে লক্ষ্য করে বুঝতে পারলেন যে, স্বপ্নদোষ হওয়ার পরও তিনি
গোসল না করে সালাত পড়েছেন। অতঃপর তিনি বললেন: আল্লাহর কসম! আমার স্বপ্নদোষ হয়েছে;
অথচ আমার খবর নেই। এমতাবস্থায় আমি গোসল না করে সালাত পড়েছি। এরপর
তিনি গোসল করেন এবং কাপড়ের দৃষ্ট নাপাকীটুকু ধুয়ে ফেলেন ও অদৃষ্ট নাপাকীটুকুর জন্য
পানি ছিঁটিয়ে দেন। পরিশেষে তিনি দ্বিপ্রহরের পূর্ব মুহূর্তে আযান-ইকামাত দিয়ে উক্ত
সালাত আদায় করেন”।[237]
২. সে নিশ্চিত যে, এ আর্দ্রতা বীর্যের নয়।
এমতাবস্থায় তাকে গোসল করতে হবে না। বরং দৃষ্ট নাপাকীটুকু ধুয়ে ফেলবে।
৩. সে নিশ্চিতভাবে জানে
না যে, এ আর্দ্রতা বীর্যের না মযির।
এ প্রকার আবার দু’য়ের এক
অবস্থা থেকে খালি নয়। তা নিম্নরূপঃ
ক.
সে স্মরণ করতে পারছে যে,
সে ঘুমানোর পূর্বে নিজ স্ত্রীর সাথে কোলাকুলি, চুমাচুমি ইত্যাদি করেছে অথবা সে সহবাসের চিন্তা ও কামোত্তেজনার সহিত
স্ত্রীর দিকে তাকিয়েছে। এমতাবস্থায় তাকে গোসল করতে হবে না। বরং সে লিঙ্গ ও অন্ডকোষ
ধুয়ে সালাতের অযুর ন্যায় অযু করবে। কারণ, সাধারণত এ সকল
পরিস্থিতিতে মযিই বের হয়ে থাকে।
খ. সে স্মরণ করতে পারছে যে, সে ঘুমের পূর্বে উপরোক্ত আচরণ
করে নি; যাতে মযি বের হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এমতাবস্থায়
তাকে গোসল করতে হবে।
‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু
আনহা থেকে বর্ণিত,
তিনি বলেন,
«سُئِلَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيه وسلم عَنِ الرَّجُلِ
يَجِدُ الْبَلَلَ، وَلاَ يَذْكُرُ اِحْتِلاَمًا ؟ قَالَ: يَغْتَسِلُ، وَعَنِ
الرَّجُلِ يَرَى أَنَّهُ قَدِ احْتَلَمَ، وَلاَ يَجِدُ الْبَلَلَ ؟ قَالَ: لاَ
غُسْلَ عَلَيْهِ».
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হলো
যে, জনৈক ব্যক্তি নিজ পোশাকে আর্দ্রতা পেয়েছে। তবে স্বপ্নদোষের কথা তার
স্মরণে নেই। সে কি করবে? তিনি বললেন: গোসল করবে। অন্য
ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলো যে, তার স্বপ্নদোষ
হয়েছে ঠিকই। তবে সে নিজ পোশাকে আর্দ্রতা দেখতে পায় নি। সে কি করবে? তিনি
বললেন: তাকে গোসল করতে হবে না”।[238]
২.
স্ত্রীসহবাস করলে:
স্ত্রীসঙ্গম
করলে গোসল করতে হয়। বীর্যপাত হোক বা নাই হোক।
আল্লাহ
তা‘আলা বলেন,
﴿وَإِن كُنتُمۡ جُنُبٗا
فَٱطَّهَّرُواْ﴾ [المائدة: ٦]
“তোমরা জুনুবী হলে ভালোভাবে গোসল করে নিবে”। [সূরা আল-মায়েদাহ, আয়াত: ৬]
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু
আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إِذَا جَلَسَ بَيْنَ شُعَبِهَا الأَرْبَعِ،
وَمَسَّ الْخِتَانُ الْخِتَانَ، فَقَدْ وَجَبَ الْغُسْلُ»
“যখন কোনো পুরুষ স্ত্রীসঙ্গমের জন্য পূর্ণ
প্রস্তুতি নিয়ে নেয় এবং পুরুষের লিঙ্গাগ্র স্ত্রীর যোনিদ্বারকে অতিক্রম করে
(বীর্যপাত হোক বা নাই হোক) তখন গোসল ওয়াজিব হয়ে যায়”।[239]
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إِذَا جَلَسَ بَيْنَ شُعَبِهَا الأَرْبَعِ ثُمَّ جَهَدَهَا،
فَقَدْ وَجَبَ الْغَسْلُ».
“যখন কোনো পুরুষ স্ত্রীসঙ্গমের জন্য পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে নেয়। অতঃপর রমণের
মাধ্যমে নিজ স্ত্রীকে ক্লান্ত ও পরিশ্রান্ত করে দেয়। এমতাবস্থায় তার বীর্যপাত হোক
বা নাই হোক তাকে অবশ্যই গোসল করতে হবে”।[240]
জানাবত (বীর্যপাত
সংক্রান্ত অপবিত্রতা) বিষয়ক বিধান
জুনুবী মহিলার কেশ
সংক্রান্ত মাসআলা:
জানাবতের গোসলের সময়
মহিলাদের (মজবুত করে বাঁধা) বেণী খুলতে হয় না।
উম্মু সালামা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বললাম: হে আল্লাহর রাসুল! আমি খুব মজবুত করে বেণী বেঁধে
থাকি। জানাবতের গোসলের সময় তা খুলতে হবে কি? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম তদুত্তরে বললেন:
«لاَ، إِنَّمَا يَكْفِيْكِ أَنْ تَحْثِيَ عَلَىْ رَأْسِكِ ثَلاَثَ
حَثَيَاتٍ، ثُمَّ تُفِيْضِيْنَ عَلَيْكِ الـْمَاءَ فَتَطْهُرِيْنَ».
“বেণী খুলতে হবে না। তোমার জন্য এটিই যথেষ্ট যে, মাথার উপর তিন কোষ পানি ঢেলে
দিবে। অতঃপর পুরো শরীরে পানি প্রবাহিত করবে। তাতেই পবিত্র হয়ে যাবে। তবে ঋতুস্রাব
থেকে পবিত্র হওয়ার জন্য যে গোসল করা হয় তাতে বেণী খোলা মুস্তাহাব”।[241]
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে ঋতুশেষে গোসল করার সময় আদেশ করের।
«اُنْقُضِيْ شَعْرَكِ، وَاغْتَسِلِي»
জুনুবী ব্যক্তির সাথে মেলামেশা বা মোসাফাহা:
জুনুবী ব্যক্তি বাস্তবিকপক্ষে এমনভাবে নাপাক হয় না যে, তাকে ছোঁয়া যাবে না। শুধু
এতটুকু যে, ইসলামী শরী‘আত তাকে বিধানগতভাবে নাপাক
সাব্যস্ত করে গোসল করা ফরয করে দিয়েছে। সুতরাং তার সাথে উঠা-বসা, মেলামেশা, খাওয়া-পান করা, মোসাফাহা ইত্যাদি জায়েয।
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«لَقِيَنِيْ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيه وسلم وَأَنَا
جُنُبٌ، فَأَخَذَ بِيَدِيْ فَمَشَيْتُ مَعَهُ حَتَّى قَعَدَ فَانْسَلَلْتُ
فَأَتَيْتُ الرَّحْلَ فَاغْتَسَلْتُ ثُمَّ جِئْتُ وَهُوَ قَاعِدٌ، فَقَالَ: أَيْنَ
كُنْتَ يَا أَبَا هِرٍّ؟ فَقُلْتُ لَهُ: يَا رَسُوْلَ اللهِ! لَقِيْتَنِيْ وَأَنَا
جُنُبٌ، فَكَرِهْتُ أَنْ أُجَالِسَكَ حَتَّى أَغْتَسِلَ، فَقَالَ: سُبْحَانَ اللهِ
يَا أَبَا هِرٍّ، إِنَّ الْـمُؤْمِنَ لاَ يَنْجُسُ».
“একদা জুনুবী অবস্থায় রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে আমার সাক্ষাৎ হয়। তিনি আমার হাত ধরলে আমি
তাঁর সাথে চলতে থাকি। অতঃপর তিনি এক জায়গায় বসলেন। ইত্যবসরে আমি চুপে চুপে ঘরে এসে
গোসল সেরে তাঁর নিকট উপস্থিত হই। তিনি তখনো বসা ছিলেন। তিনি আমাকে বললেন: হে আবু
হুরায়রা! তুমি কোথায় ছিলে?
আমি বললামঃ হে আল্লাহর রাসূল! আপনি আমার সাথে সাক্ষাৎ করেছেন;
অথচ আমি জুনুবী। অতএব, গোসল করার
পূর্বেই আপনার সাথে উঠাবসা করবো তা আমি পছন্দ করি নি। তিনি বললেন: সুবহানাল্লাহ্!
(আশ্চর্য) মুমিন ব্যক্তি (বাস্তবিকপক্ষে) কখনো নাপাক হয় না”।[243]
আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«أَرْسَلَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيه وسلم إِلَىْ رَجُلٍ
مِنَ الأَنْصَارِ، فَجَاءَ وَرَأْسُهُ يَقْطُرُ، فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ
عَلَيه وسلم لَعَلَّنَا أَعْجَلْنَاكَ، فَقَالَ: نَعَمْ، فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ
صَلَّى اللهُ عَلَيه وسلم إِذَا أُعْجِلْتَ أَوْ قُحِطْتَ فَعَلَيْكَ الْوَضُوْءَ».
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
জনৈক আনসারীকে ডেকে পাঠালে সে দ্রুত গোসল সেরে তাঁর নিকট উপস্থিত হয়। তখনো তার
মাথা থেকে পানি ঝরছিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন তাকে
বললেন: মনে হয় আমি তোমাকে তাড়াহুড়োয় ফেলে দিয়েছি। সে বললো: জী হ্যাঁ। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বললেন: যখন সঙ্গম সম্পন্ন অথবা বীর্যপাত না হয় তখন অযু করলেই চলবে গোসল
করতে হবে না। তবে সালাতের জন্য অবশ্যই গোসল করতে হবে”।[244]
জুনুবী ব্যক্তির পানাহার, নিদ্রা ও পুনঃসহবাস:
জুনুবী ব্যক্তি লজ্জাস্থান ধৌত করে শুধু অযু
সেরেই ঘুমুতে বা কোনো খাদ্য গ্রহণ করতে পারে।
একদা উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রশ্ন করেনঃ আমরা কেউ জুনুবী অবস্থায় ঘুমাতে
পারবো কি? তিনি
বললেন:
«نَعَمْ، إِذَا تَوَضَّأَ»
‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«كَانَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيه وسلم إِذَا كَانَ
جُنُبًا، فَأَرَادَ أَنْ يَأْكُلَ أَوْ يَنَامَ، تَوَضَّأَ وُضُوْءَهُ لِلصَّلاَةِ».
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
জুনুবী অবস্থায় যখন ঘুমুতে অথবা কিছু খেতে ইচ্ছে করতেন তখন সালাতের অযুর ন্যায় অযু
করে নিতেন”।[246]
জুনুবী অবস্থায় আবারো সহবাস করতে চাইলে অযু করে
নিতে হয়।
আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إِذَا أَتَىْ أَحَدُكُمْ أَهْلَهُ، ثُمَّ أَرَادَ أَنْ يَعُوْدَ،
فَلْيَتَوَضَّأْ».
৩. কোনো কাফির ব্যক্তি
মুসলিম হলে। চাই সে আদতেই কাফির থেকে থাকুক অতঃপর মুসলিম হয়েছে অথবা ইসলাম গ্রহণ করার
পর মুরতাদ (পুনরায় কাফির) হয়ে অতঃপর মুসলিম হয়েছে।
ক্বাইস ইবন ‘আসিম
রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«أَتَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيه وسلم أُرِيْدُ
الإِسْلاَمَ، فَأَمَرَنِيْ أَنْ أَغْتَسِلَ بِمَاءٍ وَسِدْرٍ».
“আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট ইসলাম গ্রহণের
জন্য আসলে তিনি আমাকে বরই পাতা মিশ্রিত পানি দিয়ে গোসল করতে আদেশ করেন”।[248]
তেমনিভাবে যখন কোনো ব্যক্তি ইসলাম গ্রহণের মাধ্যমে নিজ অন্তরকে নিষ্কলুষ
করে নিল তখন তার শরীরকেও গোসলের মাধ্যমে পবিত্র করে নিতে হবে।
৪. যুদ্ধক্ষেত্রের শহীদ
ব্যতীত যে কোনো মুসলিম ইন্তেকাল করলে।
আব্দুল্লাহ ইবন ‘আববাস্
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«بَيْنَمَا رَجُلٌ وَاقِفٌ مَعَ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ
عَلَيه وسلم بِعَرَفَـةَ، إِذْ وَقَعَ مِنْ رَاحِلَتِهِ، فَوَقَصَتْهُ فَمَاتَ،
فَذُكِرَ ذَلِكَ لِلنَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيه وسلم فَقَالَ: اِغْسِلُوْهُ
بِمَاءٍ، وَ سِدْرٍ، وَكَفِّنُوْهُ فِيْ ثَوْبَيْنِ، وَلاَ تُحَنِّطُوْهُ، وَلاَ
تُخَمِّرُوْا رَأْسَهُ، فَإِنَّ اللهَ يَبْعَثُهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مُلَبِّيًا».
“একদা জনৈক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের
সাথেই হজ মৌসুমে আরাফায় অবস্থান করছিল। এমতাবস্থায় হঠাৎ সে উট থেকে পড়ে গেলে তার
ঘাড় ভেঙ্গে যায়। কিছুক্ষণ পর সে মারা গেলে তার ব্যাপারটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামের কর্ণগোচরে আনা হলে তিনি বললেন: তাকে বরই পাতা মিশ্রিত পানি
দিয়ে গোসল দাও। অতঃপর তাকে খোশবু লাগিয়ে ইহরামের কাপড় দু’টিতেই কাফন দিয়ে দাও।
কিন্তু তার মাথা ঢেকে দিবে না। কারণ, আল্লাহ তা‘আলা তাকে কিয়ামতের দিবসে
তালবিয়্যাহ্ পড়াবস্থায়ই পুনরুত্থিত করবে”।[249]
উম্মে ‘আতিয়্যাহ রাদিয়াল্লাহু
আনহা থেকে বর্ণিত,
তিনি বলেন,
«دَخَلَ عَلَيْنَا
النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيه وسلم وَ نَحْنُ نَغْسِلُ اِبْنَتَهُ فَقَالَ:
اِغْسِلْنَهَا ثَلاَثًا أَوْ خَمْسًا أَوْ أَكْثَرَ مِنْ ذَلِكَ إِنْ رَأَيْتُنَّ
ذَلِكَ بِمَاءٍ وَ سِدْرٍ».
“নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নিকট এসেছেন যখন আমরা তাঁর মেয়েকে গোসল
দিচ্ছিলাম। অতঃপর তিনি বললেন: তোমরা ওকে বরই পাতা মিশ্রিত পানি দিয়ে তিন বার, পাঁচ বার অথবা যতবার প্রয়োজন
গোসল দাও”।[250]
৫. মহিলাদের ঋতুস্রাব হলে। তবে গোসল বিশুদ্ধ হওয়ার জন্য ঋতুস্রাব বন্ধ হওয়া পূর্ব
শর্ত।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَيَسَۡٔلُونَكَ
عَنِ ٱلۡمَحِيضِۖ قُلۡ هُوَ أَذٗى فَٱعۡتَزِلُواْ ٱلنِّسَآءَ فِي ٱلۡمَحِيضِ وَلَا
تَقۡرَبُوهُنَّ حَتَّىٰ يَطۡهُرۡنَۖ فَإِذَا تَطَهَّرۡنَ فَأۡتُوهُنَّ مِنۡ حَيۡثُ
أَمَرَكُمُ ٱللَّهُۚ إِنَّ ٱللَّهَ يُحِبُّ ٱلتَّوَّٰبِينَ وَيُحِبُّ ٱلۡمُتَطَهِّرِينَ
٢٢٢﴾ [البقرة: ٢٢٢]
“তারা (সাহাবীগণ) আপনাকে ঋতুস্রাব সম্পর্কে জিজ্ঞেস করছে ; আপনি বলুনঃ তা হচ্ছে অশুচিতা।
অতএব, তোমরা ঋতুকালে স্ত্রীদের নিকট যাবে না ও তাদের সাথে
সহবাসে লিপ্ত হবে না যতক্ষণ না তারা সম্পূর্ণরূপে পবিত্র হয়ে যায়। তবে যখন তারা
(গোসল করে) ঋতুস্রাব থেকে পবিত্র হয়ে যাবে তখনই তোমরা তাদের সাথে সম্মুখ পথে সহবাস
করবে। নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা তাওবাকারী ও পবিত্রতা অন্বেষণকারীদের ভালোবাসেন”। [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ২২২]
‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«كَانَتْ فَاطِمَةُ بِنْتُ
أَبِيْ حُبَيْشٍ تُسْتَحَاضُ، فَسَأَلَتِ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيه وسلم
فَقَالَ: ذَلِكَ عِرْقٌ وَلَيْسَتْ بِالْـحَيْضَةِ، فَإِذَا أَقْبَلَتِ الْـحَيْضَةُ
فَدَعِي الصَّلاَةَ، وَإِذَا أَدْبَرَتْ فَاغْتَسِلِيْ وَصَلِّيْ».
“ফাতিমা
বিনতে আবু হুবাইশ রাদিয়াল্লাহু আনহার
ইস্তিহাযা হতো। তাই তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এ সম্পর্কে
জিজ্ঞাসা করলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, এ হচ্ছে রোগ যা কোনো নাড়ি বা
শিরা থেকে বের হচ্ছে। ঋতুস্রাব নয়। তাই যখন ঋতুস্রাব শুরু হবে তখন সালাত বন্ধ
রাখবে। আর যখন সাধারণ নিয়মানুযায়ী ঋতুস্রাব শেষ হয়ে যাবে তখন গোসল করে সালাত পড়বে।”[251]
৬.
নিফাস বা সন্তান প্রসবোত্তর স্রাব নির্গত হলে। তবে নিফাস থেকে গোসল
শুদ্ধ হওয়ার জন্য তা সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে যাওয়া পূর্ব শর্ত। নিফাস ঋতুস্রাবের
ন্যায়। বরং তা ঋতুস্রাবই বটে। বাচ্চাটি মায়ের পেটে থাকাবস্থায় তার নাভিকূপের মধ্য
দিয়ে তন্ত্রী যোগে এ ঋতুস্রাবই খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করতো। তাই বাচ্চা ভূমিষ্ঠ হওয়ার
পর ঋতুস্রাবটুকু কোনো বিতরণক্ষেত্র না পাওয়ার দরুন যোনিপথে বের হয়ে আসছে। নিফাস
সন্তান প্রসবের সাথে সাথে অথবা উহার পরপরই বের হয়। তেমনিভাবে তা সন্তান প্রসবের এক
দু’ তিন দিন পূর্ব থেকেও প্রসব বেদনার সাথে বের হয়। শরী‘আতের পরিভাষায় ঋতুস্রাবকেও
নিফাস বলা হয়।
‘আয়েশা
রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«خَرَجْنَا مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيه وسلم ، وَلاَ
نَرَى إِلاَّ الْـحَجَّ، حَتَّى إِذَا كُنَّا بِسَرِفَ أَوْ قَرِيْبًا مِنْهَا
حِضْتُ فَدَخَلَ عَلَيَّ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيه وسلم، وَ أَنَا أَبْكِيْ
فَقَالَ: مَا لَكِ أَنُفِسْتِ؟ قُلْتُ: نَعَمْ، قَالَ: إِنَّ هَذَا شَيْءٌ
كَتَبَهُ اللهُ عَلَى بَنَاتِ آدَمَ، فَاقْضِيْ مَا يَقْضِي الْـحَاجُّ غَيْرَ
أَنْ لاَ تَطُوْفِيْ بِالْبَيْتِ حَتَّى تَغْتَسِلِيْ».
“আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে হজের উদ্দেশ্যে রওয়ানা
হলাম। ইতোমধ্যে আমরা সারিফ নামক স্থানে পৌঁছুলে আমার ঋতুস্রাব শুরু হয়ে যায়। অতঃপর
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে কাঁদতে দেখে বললেন: কী হলো, তোমার
কি নিফাস্ তথা ঋতুস্রাব শুরু হয়েছে? আমি বললামঃ জি হ্যাঁ!
তিনি বললেন: এ ব্যাপারটি পূর্ব থেকেই আল্লাহ তা‘আলা মহিলাদের জন্য অবধারিত
করে রেখেছেন। অতএব, তুমি হাজী সাহেবানরা যাই করে তাই করবে। তবে তুমি পবিত্র হয়ে গোসলের
পূর্বে তাওয়াফ করবে না”।[252]
উক্ত
হাদীসে ঋতুস্রাবকে নিফাস্ বলা হয়েছে। অতএব, বুঝা গেলো, উভয়ের
বিধান একই।
সমস্ত
আলিম সম্প্রদায় নিফাসের পর গোসল করা ওয়াজিব হওয়ার ব্যাপারে একমত।
জুনুবী
অবস্থায় যা করা নিষেধ
জুনুবী ব্যক্তি পাঁচটি কাজ করতে পারবে না
যতক্ষণ না সে সম্পূর্ণরূপে পবিত্র হয়ে যায়। সে কাজগুলো নিম্নরূপ:
১. সালাত পড়া:
জুনুবী অবস্থায় সালাত পড়া জায়েয নেই।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ
ءَامَنُواْ لَا تَقۡرَبُواْ ٱلصَّلَوٰةَ وَأَنتُمۡ سُكَٰرَىٰ حَتَّىٰ تَعۡلَمُواْ مَا
تَقُولُونَ وَلَا جُنُبًا إِلَّا عَابِرِي سَبِيلٍ حَتَّىٰ تَغۡتَسِلُواْ﴾ [النساء: ٤٣]
“হে ঈমানদারগণ! তোমরা
নেশাগ্রস্ত বা জুনুবী অবস্থায় সালাতের নিকটবর্তী হবে না যতক্ষণ না তোমরা বোধ শক্তি
ফিরে পাও এবং গোসল কর। তবে পথ অতিক্রমের উদ্দেশ্যে তোমরা মসজিদের উপর দিয়ে চলতে
পার”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৪৩]
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে
বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«لاَ تُقْبَلُ صَلاَةُ مَنْ
أَحْدَثَ حَتَّى يَتَوَضَّأَ».
২. কা‘বা শরীফ তাওয়াফ করা:
জুনুবী অবস্থায় কা‘বা শরীফ তাওয়াফ করা
নাজায়েয।
আব্দুল্লাহ ইবন
‘আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«الطَّوَافُ حَوْلَ
الْبَيْتِ مِثْلُ الصَّلاَةِ، إِلاَّ أَنَّكُمْ تَتَكَلَّمُوْنَ فِيْهِ، فَمَنْ
تَكَلَّمَ فِيْهِ فَلاَ يَتَكَلَّمَنَّ إِلاَّ بِخَيْرٍ».
“কা‘বা শরীফ তাওয়াফ
করা সালাতের ন্যায়। তবে তাতে কথা বলা যায়। অতএব, তোমরা কথা বলতে চাইলে কল্যাণকর কথাই বলবে”।[254]
৩. কুরআন মাজীদ স্পর্শ
করা:
জুনুবী অবস্থায় কুরআন
মাজীদ স্পর্শ করা নাজায়েয।
‘আমর ইবন হাযম, হাকীম ইবন হিযাম
ও আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুম থেকে বর্ণিত, তারা বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«لاَ يَمَسُّ الْقُرآنَ إِلاَّ
طَاهِرٌ».
৪. কুরআন মাজীদ তিলাওয়াত করা:
জুনুবী অবস্থায় কুরআন মাজীদ পড়া যাবে না।
‘আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«كَانَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى
اللهُ عَلَيه وسلم يُقْرِئُنَا الْقُرْآنَ عَلَى كُلِّ حَالٍ مَا لَمْ يَكُنْ
جُنُبًا، وَفِيْ رِوَايَةٍ: كَانَ يَخْرُجُ مِنَ الْـخَلاَءِ فَيُقْرِئُنَا
الْقُرْآنَ، وَيَأْكُـلُ مَعَنَا اللَّحْمَ، وَ لَمْ يَكُنْ يَحْجُبُهُ أَوْ
قَالَ: يَحْجِزُهُ عَنِ الْقُرْآنِ شَيْءٌ سِوَى الْـجَنَابَةِ».
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুনুবী অবস্থা ছাড়া
যে কোনো সময় আমাদেরকে কুরআন পড়াতেন। অন্য বর্ণনায় রয়েছেঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম শৌচাগার সেরে আমাদেরকে কুরআন পড়াতেন ও গোশত খেতেন। অর্থাৎ
জুনুবী অবস্থা ছাড়া তিনি কখনো আমাদেরকে কুরআন পড়ানো বন্ধ করতেন না”।[256]
‘আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে আরো বর্ণিত
তিনি অযু শেষে বললেন: এভাবেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অযু
করেছেন। অতঃপর তিনি সামান্যটুকু কুরআন পাঠ করলেন। এরপর বললেন:
«هَذَا لِمَنْ لَيْسَ بِجُنُبٍ،
فَأَمَّا الْـجُنُبُ فَلاَ، وَلاَ آيَةً».
“জুনুবী ব্যক্তি ছাড়া
সবাই কুরআন পড়তে পারবে। তবে জুনুবী ব্যক্তি একেবারেই
পড়তে পারবে না। এমনকি একটি আয়াতও নয়”।[257]
৫. মসজিদে অবস্থান করা:
জুনুবী অবস্থায় মসজিদে অবস্থান করা না
জায়েয।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ
ءَامَنُواْ لَا تَقۡرَبُواْ ٱلصَّلَوٰةَ وَأَنتُمۡ سُكَٰرَىٰ حَتَّىٰ تَعۡلَمُواْ مَا
تَقُولُونَ وَلَا جُنُبًا إِلَّا عَابِرِي سَبِيلٍ حَتَّىٰ تَغۡتَسِلُواْ﴾ [النساء: ٤٣]
“হে ঈমানদারগণ! তোমরা
নেশাগ্রস্ত বা জুনুবী অবস্থায় সালাতের নিকটবর্তী হবে না যতক্ষণ না তোমরা বোধ শক্তি
ফিরে পাও এবং গোসল কর। তবে পথ অতিক্রমের উদ্দেশ্যে তোমরা মসজিদের উপর দিয়ে চলতে
পার”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৪৩]
‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেন,
«وَجِّهُوْا هَذِهِ
الْبُيُوْتَ عَنِ الـْمَسْجِدِ ؛ فَإِنِّيْ لاَ أُحِلُّ الـْمَسْجِدَ لِحَائِضٍ
وَلاَ جُنُبٍ».
“তোমরা
মসজিদমুখী ঘরের দরজাগুলো বন্ধ করে দাও। কারণ, ঋতুবতী বা জুনুবী ব্যক্তির জন্য মসজিদে অবস্থান করা জায়েয
নয়”।[258]
হাদীসটি সনদের দিক দিয়ে দুর্বল। তবে উহার
শেষাংশের সমর্থন উক্ত আয়াতে রয়েছে।
তবে জুনুবী ব্যক্তি মসজিদের উপর দিয়ে পথ
অতিক্রম করতে পারে যা পূর্বের আয়াতে উল্লেখ হয়েছে।
ঋতুবতী এবং নিফাসী মহিলাও মসজিদের উপর
দিয়ে পথ অতিক্রম করতে পারে। যদি মসজিদ নাপাক হওয়ার ভয় না থাকে।
‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু
আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«قَالَ لِيْ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى
اللهُ عَلَيه وسلم : نَاوِلِيْنِي الْـخُمْرَةَ مِنَ الْـمَسْجِدِ، قَالَتْ
فَقُلْتُ: إِنِّيْ حَائِضٌ فَقَالَ: تَنَاوَلِيْهَا فَإِنَّ الْـحَيْضَةَ لَيْسَتْ
فِيْ يَدِكِ».
“আমাকে রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: মসজিদ থেকে সালাতের বিছানাটি দাও দেখি। আমি
বললাম: আমি ঋতুবতী। তিনি বললেন: দাও, ঋতুস্রাব তো আর তোমার হাতে লাগেনি”।[259]
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে
বর্ণিত, তিনি বলেন,
«بَيْنَمَا رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى
اللهُ عَلَيه وسلم فِي الْـمَسْجِدِ فَقَالَ: يَا عَائِشَةُ! نَاوِلِيْنِي
الثَّوْبَ فَقَالَتْ: إِنِّيْ حَائِضٌ فَقَالَ: إِنَّ حَيْضَتَكِ لَيْسَتْ فِيْ
يَدِكِ».
“একদা রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে অবস্থান করছিলেন। এমতাবস্থায় তিনি বললেন: হে
‘আয়েশা! (মসজিদ থেকে) আমাকে কাপড়টি দাও দেখি। ‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু
আনহা বললেন: আমি ঋতুবতী। রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: ঋতুস্রাব তো আর তোমার হাতে লাগে নি”।[260]
মাইমূনা রাদিয়াল্লাহু
আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«كَانَ رَسُوْلُ
اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيه وسلم يَدْخُلُ عَلَى إِحْدَانَا، وَهِيَ حَائِضٌ
فَيَضَعُ رَأْسَهُ فِيْ حِجْرِهَا فَيَقْرَأُ الْقُرْآنَ، ثُمَّ تَقُوْمُ
إِحْدَانَا بِخُمْرَتِهِ فَتَضَعُهَا فِي الْـمَسْجِدِ وَهِيَ حَائِضٌ».
“রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের কোনো একজন ঋতুবতী থাকাবস্থায় তার নিকট এসে
কোলে মাথা রেখে কুরআন তিলাওয়াত করতেন। তেমনিভাবে আমাদের কোনো একজন ঋতুবতী
থাকাবস্থায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সালাতের বিছানাটি মসজিদে
রেখে আসতো”।[261]
গোসলের শর্তসমূহ:
গোসলের শর্ত আটটি, তা নিম্নরূপঃ
১. নিয়্যাত করতে হবে। অতএব, নিয়্যাত ব্যতীত
গোসল শুদ্ধ হবে না।
২. গোসলকারী মুসলিম হতে হবে। অতএব, কাফিরের গোসল
শুদ্ধ হবে না যতক্ষণ না সে মুসলিম হয়।
“আমি বললাম: হে আল্লাহর রাসূল! আমি ভালোভাবে মাথায় বেণী
বেঁধে থাকি। তা জানাবাতের গোসলের সময় খুলতে হবে কি? অন্য বর্ণনায় রয়েছে, তা জানাবাত ও ঋতুস্রাবের গোসলের সময় খুলতে হবে
কি? রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: বেণী খুলতে হবে না। তোমার জন্য যথেষ্ট এই
যে, তুমি তোমার মাথায় তিন চিল্লু পানি ঢেলে দিবে। পুনরায়
পুরো শরীরে পানি প্রবাহিত করবে। তাতেই তুমি পবিত্র হয়ে যাবে। তবে ঋতুস্রাব পরবর্তী
গোসলের সময় বেণী খোলা মুস্তাহাব”।[270]
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম তাঁকে ঋতুশেষে গোসল করার সময় আদেশ করেন:
কাফির
ব্যক্তি মুসলমান হলে কোনো কোনো আলেমের মতে গোসল করা মুস্তাহাব। তবে বিশুদ্ধ মত
হচ্ছে এমন ব্যক্তির জন্য গোসল করা ওয়াজিব। ক্বাইস ইবন ‘আসিম রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«أَتَيْتُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم أُرِيْدُ الإِسْلاَمَ،
فَأَمَرَنِيْ أَنْ أَغْتَسِلَ بِمَاءٍ وَسِدْرٍ».
“আমি নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট ইসলাম গ্রহণের জন্য আসলে তিনি আমাকে বরই
পাতা মিশ্রিত পানি দিয়ে গোসল করতে আদেশ করেন”।[299]
তেমনিভাবে যখন কোনো
ব্যক্তি ইসলাম গ্রহণের মাধ্যমে নিজ অন্তরকে নিষ্কলুষ করে নিল তখন তার শরীরকেও
গোসলের মাধ্যমে পবিত্র করে নিতে হবে।
১০. দু’ ঈদের সালাতের
জন্য গোসল করা:
দু’ ঈদের সালাতের জন্য গোসল করা
মুস্তাহাব। যাযান থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«سَأَلَ رَجُلٌ
عَلِيًّا رضي الله عنه عَنِ الْغُسْلِ، قَالَ: اِغْتَسِلْ كُلَّ يَوْمٍ إِنْ
شِئْتَ، فَقَالَ: لاَ، الْغُسْلَ الَّذِيْ
هُوَ الْغُسْلُ، قَالَ: يَوْمَ الْـجُمُعَةِ، وَيَوْمَ عَرَفَةَ، وَيَوْمَ
النَّحْرِ، وَيَوْمَ الْفِطْرِ».
“জনৈক ব্যক্তি ‘আলী রাদিয়াল্লাহু
আনহু কে গোসল সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, তোমার ইচ্ছে হলে প্রতিদিনই গোসল করতে পার। সে বললঃ সাধারণ গোসল
সম্পর্কে আপনাকে জিজ্ঞাসা করা হয় নি; বরং জিজ্ঞাসা করা হয়েছে এমন গোসল সম্পর্কে যা অবশ্যই করতে হয়।
তিনি বললেন: জুমু‘আ, ‘আরাফাহ,
ঈদুল আযহা ও ঈদুল ফিতর দিবসে গোসল করতে
হয়”।[300]
নাফে’ রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«كَانَ عَبْدُ اللهِ بْنُ عُمَرَ – رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا - يَغْتَسِلُ
يَوْمَ الْفِطْرِ، وَفِيْ رِوَايَةٍ: فِي الْعِيْدَيْنِ الأَضْحَى وَالْفِطْرِ،
قَبْلَ أَنْ يَّغْدُوَ إِلَى الْـمُصَلَّى».
“আব্দুল্লাহ ইবন উমার
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা দিবসে ঈদগাহে যাওয়ার পূর্বে গোসল করে নিতেন”।[301]
সাঈদ ইবন মুসাইয়িব রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«سُنَّةُ الْفِطْرِ ثَلاَثٌ: الْـمَشْيُ
إِلَى الـْمُصَلَّى، وَالأَكْلُ قَبْلَ الْـخُرُوْجِ، وَالاِغْتِسَالُ».
“ঈদুল ফিতর দিবসের সুন্নাত
তিনটি: ঈদগাহের দিকে হেঁটে যাওয়া, বের হওয়ার পূর্বে যৎসামান্য আহার গ্রহণ ও গোসল করা”।[302]
১১. আরাফার দিন গোসল করা:
হাজীদের জন্য আরাফার দিন গোসল করা
মুস্তাহাব।
নাফি রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«كَانَ عَبْدُ اللهِ
بْنُ عُمَرَ – رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا - يَغْتَسِلُ
لإِحْرَامِـهِ قَبْلَ أَنْ يُّحْرِمَ، وَلِدُخُوْلِ مَكَّةَ، وَلِوُقُوْفِهِ
عَشِيَّةَ عَرَفَةَ».
“আব্দুল্লাহ ইবন উমার
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা ইহরাম বাঁধার পূর্বে, মক্কায় প্রবেশ ও আরাফার ময়দানে অবস্থানের জন্য গোসল করতেন”।[303]
তায়াম্মুম
আরবী ভাষায়
তায়াম্মুম শব্দটি ইচ্ছা পোষণের অর্থে ব্যবহৃত হয়। শরী‘আতের পরিভাষায় তায়াম্মুম
বলতে পানি না পেলে অথবা তা ব্যবহারে অপারগ হলে সাওয়াবের নিয়্যাতে এবং নাপাকী
দূরীকরণের উদ্দেশ্যে পবিত্র মাটি দিয়ে সমস্ত মুখ মণ্ডল ও উভয় হাত কব্জিসহ ভালোভাবে
মর্দন করাকে বুঝানো হয়।
তায়াম্মুমের বিধান:
তায়াম্মুমের বিধানটি কুরআন, হাদীস ও ইজমা’ কর্তৃক প্রমাণিত।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَإِن كُنتُم مَّرۡضَىٰٓ
أَوۡ عَلَىٰ سَفَرٍ أَوۡ جَآءَ أَحَدٞ مِّنكُم مِّنَ ٱلۡغَآئِطِ أَوۡ لَٰمَسۡتُمُ
ٱلنِّسَآءَ فَلَمۡ تَجِدُواْ مَآءٗ فَتَيَمَّمُواْ صَعِيدٗا طَيِّبٗا فَٱمۡسَحُواْ
بِوُجُوهِكُمۡ وَأَيۡدِيكُم مِّنۡهُۚ مَا يُرِيدُ ٱللَّهُ لِيَجۡعَلَ عَلَيۡكُم مِّنۡ
حَرَجٖ وَلَٰكِن يُرِيدُ لِيُطَهِّرَكُمۡ وَلِيُتِمَّ نِعۡمَتَهُۥ عَلَيۡكُمۡ لَعَلَّكُمۡ
تَشۡكُرُونَ﴾ [المائدة: ٦]
“তোমরা রোগাক্রান্ত
বা মুসাফির হলে কিংবা স্ত্রী সহবাস করলে অতঃপর পানি না পেলে পবিত্র মাটি দিয়ে
সমস্ত মুখমণ্ডল ও উভয় হাত (কব্জিসহ) মাসাহ করবে। আল্লাহ তা‘আলা তোমাদেরকে সমস্যায়
ফেলতে চান না। বরং তিনি চান তোমাদেরকে পবিত্র করতে এবং তোমাদের উপর নিজ নিয়ামত
পরিপূর্ণ করে দিতে যেন তোমরা তাঁর নিকট কৃতজ্ঞ হতে পার”। [সূরা আল-মায়েদাহ, আয়াত: ৬]
ইমরান ইবন হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«كُنَّا فِيْ سَفَرٍ مَعَ
النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فَصَلَّى
بِالنَّاسِ فَلَمَّا انْفَتَلَ مِنْ صَلاَتِهِ إِذَا هُوَ بِرَجُلٍ مُعْتَزِلٍ
لَمْ يُصَلِّ مَعَ الْقَوْمِ، قَالَ: مَا مَنَعَكَ يَا فُلاَنُ أَنْ تُصَلِّيَ
مَعَ الْقَوْمِ ؟ قَالَ: أَصَابَتْنِيْ جَنَابَةٌ وَلاَ مَاءَ، قَالَ: عَلَيْكَ
بِالصَّعِيْدِ فَإِنَّهُ يَكْفِيْكَ».
“আমরা রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে সফরে ছিলাম। এমতাবস্থায় তিনি সকলকে নিয়ে
সালাত আদায় করলেন। সালাত শেষে তিনি দেখলেন, জনৈক ব্যক্তি সবার সাথে সালাত আদায় না করে সামান্য দূরে অবস্থান করছে।
তখন তিনি বললেন: তোমার কি হয়েছে, সবার সঙ্গে সালাত পড়োনি
কেন? সে বলল: আমি জুনুবী, অথচ পানি নেই।
তিনি বললেন: মাটি ব্যবহার (তায়াম্মুম) কর। তোমার জন্য মাটিই যথেষ্ট”।[304]
জাবির ইবন আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থকে বর্ণিত তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«أُعْطِيْتُ خَمْسًا لَمْ
يُعْطَهُنَّ أَحَدٌ قَبْلِيْ : جُعِلَتْ لِيَ الأَرْضُ مَسْجِدًا وَطَهُوْرًا».
“আমাকে পাঁচটি বস্তু দেওয়া হয়েছে যা ইতিপূর্বে কাউকে দেওয়া হয়নি।
তম্মধ্য হতে একটি হচ্ছে: মাটিকে আমার জন্য পবিত্রতার্জনের মাধ্যম ও মসজিদ হিসেবে
নির্ধারণ করা হয়েছে”।[305]
অনুরূপভাবে সকল আলিমের ঐকমত্যে ইসলামী শরী‘আতে তায়াম্মুমের বিধান রয়েছে।
মুসলিমদের জন্য
পবিত্রতার্জনের মাধ্যম দু’টিঃ একটি পানি, অপরটি মাটি। আর তা পানি না পেলে অথবা পানি ব্যবহারে অপারগ হলে। অতএব,
যে ব্যক্তি পানি পেল এবং সে তা ব্যবহারে সক্ষমও বটে তখন তাকে
অবশ্যই পানি দিয়ে পবিত্রতার্জন করতে হবে। আর যে ব্যক্তি পানি পেল না অথবা সে তা
ব্যবহারে একান্ত অপারগ তখন সে অযুর পরিবর্তে তায়াম্মুম করবে। বিশুদ্ধ মতে তার এ
তায়াম্মুমটি পানি না পাওয়া পর্যন্ত নাপাকী দূরীকরণে সম্পূর্ণরূপে যথেষ্ট। সুতরাং
যে ইবাদাতের জন্য পানি দিয়ে পবিত্রতার্জন ওয়াজিব সে ইবাদাত সম্পাদনের জন্য পানির
অবর্তমানে মাটি দিয়ে পবিত্রতার্জন আবশ্যক। তেমনিভাবে যে ইবাদাতের জন্য পানি দিয়ে
পবিত্রতার্জন মুস্তাহাব সে ইবাদাত সম্পাদনের জন্য পানির অবর্তমানে মাটি দিয়ে
পবিত্রতার্জনও মুস্তাহাব। বিশুদ্ধ মতে কোনো ব্যক্তি পানি না পেলে বা পানি ব্যবহারে
অপারগ হলে যখন ইচ্ছে তায়াম্মুম করতে পারে এবং তার এ তায়াম্মুমটি যে কোনো ইবাদাত
সংঘটনের জন্য যথেষ্ট যতক্ষণ না সে পানি পায় অথবা অযু কিংবা গোসল ভঙ্গের কোনো কারণ
পাওয়া না যায়। তেমনিভাবে একটি তায়াম্মুম নিয়্যাতানুসারে যে কোনো ছোটবড় নাপাকী
দূরীকরণে একান্ত যথেষ্ট।
যখন তায়াম্মুম জায়েয:
মুসাফির বা মুক্বীম থাকাবস্থায় যে কোনো কারণে কারোর অযু বা গোসল
ভঙ্গ হলে নিম্নোক্ত অবস্থাগুলোতে তায়াম্মুম করা জায়েয:
১. পানি না পেলে:
পানি না পেলে তায়াম্মুম করা জায়েয। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿فَلَمۡ تَجِدُواْ
مَآءٗ فَتَيَمَّمُواْ صَعِيدٗا طَيِّبٗا﴾ [المائدة: ٦]
“অতঃপর তোমরা পানি না পেলে পবিত্র মাটি দিয়ে তায়াম্মুম করবে”। [সূরা আল-মায়েদাহ, আয়াত: ৬]
এ সম্পর্কীয় হাদীস পূর্বে উল্লেখ হয়েছে।
২. অযু বা গোসলের জন্য যথেষ্ট এতটুকু পানি
না পেলে:
অযু বা গোসলের জন্য যথেষ্ট এতটুকু পানি না পেলে তায়াম্মুম করা
জায়েয। অতএব, যতটুকু পানি আছে তা
দিয়ে অযু বা গোসল করবে এবং বাকী অঙ্গগুলোর জন্য তায়াম্মুম করবে।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿فَٱتَّقُواْ ٱللَّهَ
مَا ٱسۡتَطَعۡتُمۡ﴾ [التغابن: ١٦]
“তোমরা যথাসাধ্য
আল্লাহকে ভয় কর”। [সূরা আত-তাগাবুন, আয়াত: ১৬]
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إِذَا أَمَرْتُكُمْ بِشَيْءٍ
فَأْتُوْا مِنْهُ مَا اسْتَطَعْتُمْ، وَإِذَا نَهَيْتُكُمْ عَنْ شَيْءٍ فَدَعُوْهُ».
“যখন আমি তোমাদেরকে
কোনো কাজের আদেশ করব তখন তোমরা তা যথাসাধ্য পালন করবে। আর যখন তোমাদেরকে কোনো কাজ
করতে নিষেধ করব তখন তা হতে তোমরা অবশ্যই বিরত থাকবে”।[306]
৩. পানি অত্যন্ত ঠাণ্ডা হলে:
যখন পানি অতিশয়
ঠান্ডা যা ব্যবহারে নিশ্চিত ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে এবং গরম করারও কোনো ব্যবস্থা
নেই এমতাবস্থায় তায়াম্মুম করা জায়েয।
‘আমর ইবন ‘আস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে
বর্ণিত, তিনি বলেন,
«اِحْتَلَمْتُ فِيْ لَيْلَةٍ بَارِدَةٍ
غَزْوَةِ ذَاتِ السَّلاَسِلِ، فَأَشْفَقْتُ إِنِ اغْتَسَلْتُ أَنْ أَهْلِكَ !
فَتَيَمَّمْتُ، ثُمَّ صَلَّيْتُ بِأَصْحَابِيْ الصُّبْحَ، فَذَكَرُوْا ذَلِكَ
لِلنَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ: يَا عَمْرُو! صَلَّيْتَ بِأَصْحَابِكَ وَأَنْتَ
جُنُبٌ ؟ فَأَخْبَرْتُهُ بِالَّذِيْ مَنَعَنِيْ مِنَ الاِغْتِسَالِ وَقُلْتُ:
إِنِّيْ سَمِعْتُ اللهَ يَقُوْلُ: ﴿وَلَا تَقۡتُلُوٓاْ
أَنفُسَكُمۡۚ إِنَّ ٱللَّهَ كَانَ بِكُمۡ رَحِيمٗا﴾ [النساء: ٢٩] فَضَحِكَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم، وَلَمْ يَقُلْ شَيْئًا».
“যাতুস সালাসিল” নামক
গাযওয়ায় থাকাবস্থায় এক হিমশীতল রাত্রিতে অকস্মাৎ আমার স্বপ্নদোষ হয়ে গেলে মৃত্যুর
আশঙ্কায় গোসল না করে আমি তায়াম্মুম করেছি। এমতাবস্থায় আমি সাথীদেরকে নিয়ে ফজরের
সালাত আদায় করেছি। অতঃপর আমার সাথীরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে
এ ব্যাপারে অবগত করালে তিনি আমাকে ডেকে বললেন: হে ‘আমর! তুমি কি জুনুবী
থাকাবস্থায় নিজ সাথীদেরকে নিয়ে সালাত পড়েছ? তখন আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আমার গোসল না
করার কারণটি জানিয়েছি এবং কৈফিয়ত স্বরূপ বলেছি: আমি কুরআন
মাজীদে পেয়েছি, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, তোমরা নিজে
নিজকে হত্যা করো না। নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের প্রতি অত্যন্ত দয়ালু। তাই আমি
গোসল করিনি। কৈফিয়তটি শুনা মাত্রই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
হেসে দিলেন এবং আমাকে আর কিছুই বলেন নি”।[307]
৪. রোগাক্রান্ত বা
আঘাতপ্রাপ্ত হলে:
রোগাক্রান্ত বা
আঘাতপ্রাপ্ত হলে এবং পানি ব্যবহারে রোগ বেড়ে যাওয়া বা আরোগ্য হতে বিলম্ব হওয়ার
আশঙ্কা দেখা দিলে তখন তায়াম্মুম করা জায়েয। জাবির ইবন আব্দুল্লাহ ও আব্দুল্লাহ ইবন
‘আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, তারা বলেন,
«خَرَجْنَا فِيْ سَفَرٍ فَأَصَابَ رَجُلًا
مِّنَّا حَجَرٌ فَشَجَّهُ فِيْ رَأْسِهِ ثُمَّ احْتَلَمَ، فَسَأَلَ أَصْحَابَهُ
فَقَالَ: هَلْ تَجِدُوْنَ لِيْ رُخْصَةً فِي التَّيَمُّمِ؟ فَقَالُوْا: مَا نَجِدُ
لَكَ رُخْصَةً، وَأَنْتَ تَقْدِرُ عَلَى الْـمَاءِ، فَاغْتَسَلَ فَمَاتَ، فَلَمَّا
قَدِمْنَا عَلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم
أُخْبِرَ بِذَلِكَ فَقَالَ: قَتَلُوْهُ قَتَلَهُمُ اللهُ! أَلاَ سَأَلُوْا
إِذْ لَمْ يَعْلَمُوْا، فَإِنَّمَا شِفَاءُ الْعِيِّ السُّؤَالُ، إِنَّمَا كَانَ
يَكْفِيْهِ أَنْ يَتَيَمَّمَ وَيَعْصِرَ أَوْ يَعْصِبَ عَلَى جُرْحِهِ خِرْقَةً
ثُمَّ يَمْسَحَ عَلَيْهَا وَيَغْسِلَ سَائِرَ جَسَدِهِ».
“আমরা সফরে বের হলে
আমাদের একজনের মাথায় পাথর পড়ে তার মাথা ফেটে যায়। ইতোমধ্যে তার স্বপ্নদোষ হয়। তখন
সে তার সাথীদেরকে এ মর্মে জিজ্ঞাসা করে যে, তোমরা শরী‘আতে আমার জন্য তায়াম্মুম করার কোনো সুযোগ খুঁজে পাচ্ছো কি?
তারা বললঃ না, তোমার জন্য তায়াম্মুমের
কোনো সুযোগ নেই। কারণ, তুমি পানি ব্যবহারে সক্ষম। অতঃপর
সে গোসল করার সাথে সাথেই মারা যায়। এরপর আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের
নিকট পৌঁছুলে তাঁকে এ সম্পর্কে জানানো হলে তিনি (তিরস্কার স্বরূপ) বললেন: ওরা বেচারাকে
মেরে ফেলেছে। আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে ধ্বংস করুক। তারা যখন ব্যাপারটি সম্পর্কে অবগত
নয় তখন তারা কাউকে জিজ্ঞাসা করে নি কেন? কারণ, জিজ্ঞাসাই হচ্ছে অজ্ঞানতার উপশম।
তায়াম্মুমই তার জন্য যথেষ্ট ছিল। ক্ষতের উপর ব্যান্ডেজবেঁধে তাতে মাসাহ এবং বাকী
শরীর ধৌত করে নিলেই চলতো”।[308]
৪. পানি সংগ্রহে অপারগতা প্রমাণিত হলে:
পানি সংগ্রহে অপারগতা প্রমাণিত হলে
তায়াম্মুম করা জায়েয। যেমন, শত্রু, চোর-ডাকাত বা অগ্নিকাণ্ডের হাতে নিজ
মান-সম্মান, ধন-সম্পদ বা জীবন
হারানোর ভয়। তেমনিভাবে সে খুবই অসুস্থ নড়চড়ে অক্ষম এবং পানি এনে দেওয়ার মতো
আশেপাশে কেউ নেই।
৫. মজুদ পানি ব্যবহার করলে কঠিন পিপাসায়
মৃত্যুর ভয় হলে:
পানি সামান্য যা
ব্যবহার করলে কঠিন পিপাসায় মৃত্যুর ভয় হয় এমতাবস্থায় পানি ব্যবহার না করে
প্রয়োজনের জন্য মজুদ রেখে তায়াম্মুম করা জায়েয। এ ব্যাপারে আলিমদের ঐকমত্য রয়েছে। মোট
কথা, যে কোনো কারণে পানি সংগ্রহে অক্ষম বা
পানি না পেলে কিংবা পানি ব্যবহারে নিশ্চিত অসুবিধে দেখা দিলে তায়াম্মুম করা জায়েয।
তায়াম্মুমের শর্তসমূহ:
তায়াম্মুমের শর্ত আটটি তা নিম্নরূপ:
১. নিয়্যাত করতে হবে। অতএব, নিয়্যাত ব্যতীত
তায়াম্মুম শুদ্ধ হবেনা।
২. তায়াম্মুমকারী মুসলিম হতে হবে। অতএব, কাফিরের
তায়াম্মুম শুদ্ধ হবে না যতক্ষণ না সে মুসলিম হয়।
নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেভাবে তায়াম্মুম করতেন
২. প্রথমে নিয়্যাত
করতেন।
এ সম্পর্কীয় হাদীস পূর্বে উল্লেখ হয়েছে।
২. “বিসমিল্লাহ” বলে তায়াম্মুম শুরু করতেন।
৩. উভয় হাত
মাটিতে প্রক্ষেপণ করে ধুলো ঝেড়ে প্রথমে সমস্ত মুখমণ্ডল অতঃপর উভয় হাত কব্জিসহ
মাসাহ করতেন।
‘আম্মার ইবন ইয়াসির রাদিয়াল্লাহু আনহু
থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«بَعَثَنِيْ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى
اللهُ عَلَيه وسلم فِيْ حَاجَةٍ فَأَجْنَبْتُ، فَلَمْ أَجِدِ الْـمَاءَ،
فَتَمَرَّغْتُ فِي الصَّعِيْدِ كَمَا تَمَرَّغُ الدَّابَّةُ، ثُمَّ أَتَيْتُ
النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم فَذَكَرْتُ
ذَلِكَ لَهُ فَقَالَ: إِنَّمَا كَانَ يَكْفِيْكَ أَنْ تَقُوْلَ بِيَدَيْكَ
هَكَذَا، فَضَرَبَ بِكَفَّيْهِ الأَرْضَ ضَرْبَةً وَاحِدَةً وَنَفَخَ فِيْهِمَا،
ثُمَّ مَسَحَ بِهِمَا وَجْهَهُ وَكَفَّيْهِ، وَفِيْ رِوَايَةٍ: وَضَرَبَ
بِيَدَيْهِ إِلَى الأَرْضِ فَنَفَضَ يَدَيْهِ فَمَسَحَ وَجْهَهُ وَكَفَّيْهِ».
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে কোনো এক
প্রয়োজনে সফরে পাঠালে অকস্মাৎ আমার স্বপ্নদোষ হয়ে যায়। পানি না পেয়ে আমি পশুর
ন্যায় মাটিতে গড়াগড়ি দিয়েছি। অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এ সম্পর্কে
জানালে তিনি বললেন: মাটিতে দু’হাত মেরে তায়াম্মুম করাই তোমার জন্য যথেষ্ট ছিল।
এরপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উভয় হাত একবার মাটিতে প্রক্ষেপণ করে তাতে
ফুঁ মেরে তা দিয়ে সমস্ত মুখমণ্ডল ও হস্তযুগল কব্জি পর্যন্ত মাসাহ করেন। অন্য
বর্ণনায় রয়েছেঃ তিনি উভয় হাত মাটিতে প্রক্ষেপণ করে ঝেড়েমেড়ে তা দিয়ে মুখমণ্ডল ও
উভয় হাত কব্জি পর্যন্ত মাসাহ করেন”।[309]
তায়াম্মুমের রুকনসমূহ
তায়াম্মুমের রুকন তিনটিঃ
“প্রতিটি কর্ম নিয়্যাত নির্ভরশীল। যেমন নিয়্যাত তেমনই ফল। যেমন, কেউ
যদি দুনিয়ার্জন বা কোনো রমণীকে বিবাহ করার উদ্দেশ্যে হিজরত (নিজ আবাসভূমি ত্যাগ)
করে সে তাই পাবে যে জন্য সে হিজরত করেছে”।[310]
২.
সমস্ত মুখমণ্ডল একবার মাসাহ করা।
৩.
উভয় হাত কব্জি সহ একবার মাসাহ করা।
এ
সম্পর্কীয় হাদীস ইতোপূর্বে উল্লেখ হয়েছে।
তায়াম্মুম ভঙ্গকারী কারণসমূহ :
এমন দু’টি কারণ রয়েছে যা তায়াম্মুমকে ইবনষ্ট করে দেয়। কারণ দু’টি
নিম্নরূপ:
১. যে কারণগুলো অযু বিনষ্ট করে তা তায়াম্মুমকেও বিনষ্ট করে। কারণ, তায়াম্মুম অযু
বা গোসলের স্থলাভিষিক্ত। তাই অযু বা গোসল যে যে কারণে ইবনষ্ট হয় সে সে কারণে
তায়াম্মুমও বিনষ্ট হয়।
২. পানি পাওয়া গেলে তায়াম্মুম বিনষ্ট হয়ে যাবে। অতএব, যে ব্যক্তি পানি
না পাওয়ার দরুন তায়াম্মুম করেছে সে পানি পেলেই তার তায়াম্মুম ভেঙ্গে যাবে।
আবু যর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إِنَّ الصَّعِيْدَ
الطَّيِّبَ طَهُوْرُ الـمُسْلِمِ ؛ وَإِنْ لَمْ يَجِدِ الْـمَاءَ عَشْرَ سِنِيْنَ،
فَإِذَا وَجَدَ الْـمَاءَ فَلْيُمِسَّهُ بَشَرَتَهُ».
“পবিত্র মাটি মুসলিমের পবিত্রতার জন্য
নিশ্চিত মাধ্যম যদিও সে দশ বছর যাবত পানি না পায়। যখনই সে পানি পাবে তখনই অযু বা
গোসল করে নিবে। তবে কোনো কারণে পানি ব্যবহারে অক্ষম হওয়ার দরুন তায়াম্মুম করে
থাকলে পানি থাকা সত্ত্বেও তার তায়াম্মুম বহাল থাকবে। তবে যখনই সে পানি ব্যবহারে
সক্ষম হবে তখনই তার তায়াম্মুম ভেঙ্গে যাবে”।[311]
পানিও নেই মাটিও নেই এমতাবস্থায় কী করতে
হবে:
পানিও নেই মাটিও নেই এবং এর কোনো একটি সংগ্রহ করাও সম্ভবপর হয়নি
অথবা পেয়েছে তবে অযু বা তায়াম্মুম করা তার পক্ষে অসম্ভব এমতাবস্থায় সে অযু বা
তায়াম্মুম না করেই সালাত আদায় করবে। যেমন, কোনো ব্যক্তির হাত-পা সম্পূর্ণরূপে বাঁধা। অযু বা তায়াম্মুম করা
কোনোমতেই তার পক্ষে সম্ভবপর নয়। এমতাবস্থায় সে অযু বা তায়াম্মুম ছাড়াই সালাত আদায়
করবে।
‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«اسْتَعَرْتُ مِنْ أَسْمَاءَ
قِلاَدَةً فَهَلَكَتْ، فَأَرْسَلَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيه وسلم نَاسًا
مِّنْ أَصْحَابِهِ فِيْ طَلَبِهَا فَأَدْرَكَتْهُمُ الصَّلاَةُ فَصَلُّوْا
بِغَيْرِ وُضُوْءٍ، فَلَمَّا أَتَوْا النَّبِيَّ صَلَّى
اللهُ عَلَيه وسلم شَكَوْا ذَلِكَ إِلَيْهِ، فَنَزَلَتْ آيَةُ التَّيَمُّمِ،
فَقَالَ أُسَيْدُ بْنُ حُضَيْرٍ: جَزَاكِ اللهُ خَيْرًا، فَوَاللهِ! مَا نَزَلَ
بِكِ أَمْرٌ قَطُّ إِلاَّ جَعَلَ اللهُ لَكِ مِنْهُ مَخْرَجًا، وَجَعَلَ
لِلْمُسْلِمِيْنَ فِيْهِ بَرَكَةً».
“আমি আমার বোন আসমা
থেকে একটি হার ধার নিয়ে সফরে রওয়ানা করলে অকস্মাৎ তা হারিয়ে যায়। তখন রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সে হারের খোঁজে কিছু সংখ্যক সাহাবীকে পাঠালেন। ইতোমধ্যে
সালাতের সময় হলে পানি না পাওয়ার দরুন তারা অযু না করেই সালাত আদায় করেন। তারা
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট ব্যাপারটি জানানোর পরপরই
তায়াম্মুমের আয়াত অবতীর্ণ হয়। তখন উসাইদ ইবন হুযাইর রাদিয়াল্লাহু আনহু ‘আয়েশাকে
উদ্দেশ্য করে বললেন: আল্লাহ তা‘আলা আপনার কল্যাণ করুক! আল্লাহর কসম! আপনার কোনো
সমস্যা হলেই আল্লাহ তা‘আলা আপনাকে সে সমস্যা থেকে উদ্ধার করেন এবং তাতে নিহিত
রাখেন মুসলিমদের জন্য প্রচুর কল্যাণ ও সমৃদ্ধি”।[312]
উক্ত হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
সাহাবীদেরকে পুনরায় সালাত আদায় করতে আদেশ করেন নি। এ থেকে বুঝা
যায় পানি বা মাটি না পেলে নাপাক অবস্থায় সালাত পড়া জায়েয।
অতএব, পানি পেলে অযু করবে। পানি না পেলে বা পানি ব্যবহারে অক্ষম হলে
তায়াম্মুম করবে। পানি বা মাটি কিছুই না পেলে নাপাক অবস্থায় সালাত পড়ে নিবে।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿فَٱتَّقُواْ ٱللَّهَ
مَا ٱسۡتَطَعۡتُمۡ﴾ [التغابن: ١٦]
“তোমরা যথাসাধ্য
আল্লাহকে ভয় কর”। [সূরা আত-তাগাবুন, আয়াত: ১৬]
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,
﴿وَمَا جَعَلَ عَلَيۡكُمۡ
فِي ٱلدِّينِ مِنۡ حَرَجٖ﴾ [الحج: ٧٨]
“আল্লাহ তা‘আলা ধর্মীয় ব্যাপারে তোমাদের ওপর কোনো কঠোরতা
আরোপ করেন নি”। [সূরা আল-হাজ, আয়াত: ৭৮]
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إِذَا أَمَرْتُكُمْ بِشَيْءٍ
فَأْتُوْا مِنْهُ مَا اسْتَطَعْتُمْ، وَإِذَا نَهَيْتُكُمْ عَنْ شَيْءٍ فَدَعُوْهُ».
“যখন আমি তোমাদেরকে কোনো কাজের আদেশ করব তখন তোমরা তা যথাসাধ্য
পালন করবে। আর যখন আমি তোমাদেরকে কোনো কাজ করতে নিষেধ করব তখন তা হতে তোমরা বিরত
থাকবে”।[313]
তায়াম্মুম করে সালাত পড়ার পর সময় থাকতে
পানি পেলে:
যে কোনো কারণে
তায়াম্মুম করে সালাত পড়ার পর সময় থাকতে পানি পেলে অথবা পানি ব্যবহারে সক্ষম হলে
পুনরায় অযু করে সালাত আদায় করতে হবে না। যদিও উক্ত সালাত দ্বিতীয়বার পড়ার সময়
থাকে। তেমনিভাবে যদি কোনো ব্যক্তি পানি বা মাটি পায়নি অথবা তা ব্যবহারে অক্ষম তখন
সে পবিত্রতা ছাড়াই সালাত পড়েছে। পুনরায় সালাতের সময় থাকতেই সে পানি বা মাটি পেয়েছে
অথবা তা ব্যবহারে সক্ষম হয়েছে এমতাবস্থায় আদায়কৃত সালাত তাকে দ্বিতীয়বার আদায় করতে
হবে না।
আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে
বর্ণিত, তিনি বলেন,
«خَرَجَ رَجُلاَنِ فِيْ سَفَرٍ فَحَضَرَتِ
الصَّلاَةُ وَلَيْسَ مَعَهُمَا مَاءٌ، فَتَيَمَّمَا صَعِيْدًا طَيِّبًا،
فَصَلَّيَا ثُمَّ وَجَدَا الْمَاءَ فِي الْوَقْتِ، فَأَعَادَ أَحَدُهُمَا
الصَّلاَةَ وَالْوُضُوْءَ، وَلَمْ يُعِدِ الآخَرُ ثُمَّ أَتَيَا رَسُوْلَ اللهِ
صَلَّى اللهُ عَلَيه وسلم فَذَكَرَا ذَلِكَ لَهُ، فَقَالَ لِلَّذِيْ لَمْ يُعِدْ:
أَصَبْتَ السُّنَّةَ وَأَجْزَأَتْكَ صَلاَتُكَ، وَقَالَ لِلَّذِيْ تَوَضَّأَ
وَأَعَادَ: لَكَ الأَجْرُ مَرَّتَيْنِ».
“দু’ ব্যক্তি সফরে
বের হয়েছে। অতঃপর সালাতের সময় হলে পানি না পাওয়ার দরুন তারা পবিত্র মাটি দিয়ে
তায়াম্মুম করে সালাত আদায়ের পরপরই ওয়াক্ত থাকতে পানি পেয়েছে। এমতাবস্থায় তাদের
একজন অযু করে উক্ত সালাত দ্বিতীয়বার আদায় করে এবং অন্যজন তা করে নি। এরপর উভয়
ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এসে ব্যাপারটি তাঁকে
জানালে তিনি যে ব্যক্তি অযু করে সালাত পুনর্বার আদায় করে নি তাকে বললেন: তুমি
সুন্নাহ অনুযায়ী কাজ করেছ এবং তোমার পূর্বের সালাতই তোমার জন্য যথেষ্ট।
দ্বিতীয়জনকে বললেন: তোমার দু’বার সালাত পড়ার সাওয়াব হয়েছে”।[314]
সালাত পুনর্বার আদায় না করা যখন সুন্নাহ তখন দ্বিতীয়বার সালাত আদায়
করা অবশ্যই সুন্নাহ বিরোধী।
وَصَلَّى اللهُ عَلَى نَبِيِّنَا مُحَمَّدٍ وَّعَلَى اٰلِهِ
وَصَحْبِهِ أَجْمَعِيْنَ.
সমাপ্ত
আল্লাহ তা‘আলা ও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামের ওপর সুদৃঢ় বিশ্বাস স্থাপনের পরপরই ইসলামের দ্বিতীয় রুকন ও বিধান
হচ্ছে সালাত। এটি ইসলামের বিশেষ স্তম্ভ। সালাত নবীদের ভূষণ ও নেককারদের অলঙ্কার, বান্দা ও প্রভুর মাঝে গভীর সংযোগ স্থাপনকারী, অপরাধ ও অপকর্ম থেকে হিফাযতকারী। তবে বাহ্যিক ও আভ্যন্তরীণ অপবিত্রতা থেকে
যথাসাধ্য পবিত্রতা অর্জন ছাড়া কোনো সালাতই আল্লাহ তা‘আলার দরবারে গ্রহণযোগ্য নয়। এ কারণেই পবিত্রতার ব্যাপারটি ইসলামী শরী‘আতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অত্র গ্রন্থে নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেভাবে পবিত্রতা অর্জন করতেন তার বর্ণনা দেওয়া
হয়েছে।
[7] আবু দাউদ, হাদীস নং ৮৩; তিরমিযী, হাদীস নং ৬৯; নাসাঈ, হাদীস নং ৩৩১; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৩৯২,
৩৯৩, ৩৯৪; আহমাদ ৭১৯২।
[103] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫৮৮৯, ৫৮৯১,
৬২৯৭; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৫৭;
তিরমিযী, হাদীস নং ২৭৫৬; নাসাঈ, হাদীস
নং ৯, ১০, ১১; ইবন মাজাহ,
হাদীস নং ২৯৪।
[118] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৬১; আবু দাউদ, হাদীস
নং ৫৩; তিরমিযী, হাদীস নং ২৭৫৭; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ২৯৫।
[137] তিরমিযী, হাদীস নং ২৫; আবু দাউদ, হাদীস
নং ১০১; নাসাঈ, হাদীস নং ৭৮; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৪০৩, ৪০৪, ৪০৫,
৪০৬।
[152] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৮৫, ১৮৬;
সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৩৫; আবু দাউদ, হাদীস নং ১১৮; তিরমিযী, হাদীস নং ৩২, ৩৪; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৪৪০, ৪৪১, ৪৪২, ৪৪৩।
[163] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৫৭; তিরমিযী, হাদীস
নং ৪২; আবু দাউদ, হাদীস নং ১৩৮; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৪১৭।
[256] তিরমিযী, হাদীস নং ১৪৬;
আবু দাউদ, হাদীস নং ২২৯;
নাসাঈ, হাদীস নং ২৬৬,
২৬৭; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৬০০।
[282] আবু দাউদ, হাদীস নং ৩৫৪; তিরমিযী, হাদীস নং ৪৯৭; নাসাঈ, হাদীস
নং ১৩৮১; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ১১০০।
_________________________________________________________________________________
পোস্টটি ভালো লাগলে শেয়ার করতে ভুলবেন না কিন্তু।
লেখক: মোস্তাফিজুর রহমান ইবন আব্দুল আযীয আল-মাদানী
সম্পাদনা: ড. মোহাম্মদ মানজুরে ইলাহী
সূত্র: ইসলামহাউজ
সম্পাদনা: ড. মোহাম্মদ মানজুরে ইলাহী
সূত্র: ইসলামহাউজ
আরও পড়ুনঃ প্রশ্নোত্তরে ইসলামী জ্ঞান
আরও পড়ুনঃ প্রশ্নোত্তরে সহজ তাওহীদ শিক্ষা
আরও পড়ুনঃ মহিলা বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ ফতোয়া
আরও পড়ুনঃ প্রশ্নোত্তরে সিয়াম (১ম পর্ব)
আরও পড়ুনঃ প্রশ্নোত্তরে সিয়াম (২য় পর্ব)
আরও পড়ুনঃ সিয়াম বিষয়ক নির্বাচিত ফাতওয়া (১ম পর্ব)
আরও পড়ুনঃ সিয়াম বিষয়ক নির্বাচিত ফাতওয়া (২য় পর্ব)
আরও পড়ুনঃ সিয়াম বিষয়ক নির্বাচিত ফাতওয়া (৩য় পর্ব)
আরও পড়ুনঃ রমজান বিষয়ক ফতোয়া
আরও পড়ুনঃ প্রশ্নোত্তরে হজ্জ ও উমরা (১ম পর্ব)
আরও পড়ুনঃ প্রশ্নোত্তরে হজ্জ ও উমরা (২য় পর্ব)
ডাউনলোড করুনঃ বইঃ দ্বীনী প্রশ্নোত্তর - ফ্রি ডাউনলোড
ডাউনলোড করুনঃ বই – ফতোওয়া আরকানুল ইসলাম (ফ্রি ডাউনলোড)
পোস্টটি ভালো লাগলে শেয়ার করতে ভুলবেন না কিন্তু।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন