রবিবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০১৬

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেভাবে পবিত্রতা অর্জন করতেন (১ম পর্ব)

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেভাবে পবিত্রতা অর্জন করতেন (১ম পর্ব)



১ম পর্ব | ২য় পর্ব | ৩য় পর্ব

সূচীপত্র
ক্রম    শিরোনাম
১ লেখকের কথা
২ পূর্বাভাষ
৩ পবিত্রতা
৪ পবিত্রতার প্রকারভেদ
৫ অদৃশ্য পবিত্রতা
৬ দৃশ্যমান পবিত্রতা
৭ পানি কর্তৃক পবিত্রতা
৮ পানি সংক্রান্ত বিধান
৯ পানির সাধারণ প্রকৃতি
১০ পানির প্রকারভেদ
১১ পবিত্র ও পবিত্রতা বিধানকারী পানি
১২ পবিত্র তবে পবিত্রতা বিধানকারী নয়
১৩ যা নাপাক ও ব্যবহার করা হারাম
১৪ মাটি কর্তৃক পবিত্রতা
১৫ নাপাকীর প্রকারভেদ ও তা থেকে পবিত্রতা অর্জন
১৬ নাপাকীর প্রকারভেদ
১৭ ১. মানুষের মল-মূত্র
১৮ মল-মূত্র ত্যাগের শর‘ঈ নিয়ম
১৯ শৌচাগারে প্রবেশের সময় যে দো‘আ পড়তে হয়
২০ শৌচাগার থেকে বের হওয়ার সময় যে দো‘আ পড়তে হয়
২১ মল-মূত্র ত্যাগ সম্পর্কীয় মাসআলা
২২ মল-মূত্র ত্যাগের সময় কিবলামুখী হওয়া অথবা কিবলাকে পেছন দেওয়া জায়েয নয়
২৩ গোবর অথবা হাড় দিয়ে ইস্তিঞ্জা তথা মল-মূত্র পরিস্কার করা জায়েয নয়
২৪ পথে-ঘাটে, বৈঠকখানা অথবা ছায়াবিশিষ্ট গাছের তলায় মল-মূত্র ত্যাগ করা জায়েয নয়
২৫ ডান হাত দিয়ে ইস্তিঞ্জা করা না জায়িয
২৬ ঢিলা-কুলুপ ব্যবহার করলে বেজোড় ব্যবহার করতে হয়
২৭ ঢিলা-কুলুপ ব্যবহার করলে কমপক্ষে তিনটি ব্যবহার করতে হয়
২৮ মল-মূত্র ত্যাগের সময় আপনাকে কেউ যেন দেখতে না পায়
২৯ ভালোভাবে ইস্তিঞ্জা করতে হয় যাতে উভয় দ্বার পরিষ্কার হয়ে যায়
৩০ প্রস্রাব করার সময় কোনো ব্যক্তি সালাম দিলে উত্তর দেওয়া যাবে না
৩১ গোসলখানায় প্রস্রাব করা নিষেধ
৩২ অযু ও ইস্তিঞ্জার লোটা ভিন্ন হওয়া উচিত
৩৩ মল-মূত্র ত্যাগের প্রয়োজন দেখা দিলে তা প্রথমে সেরে নিবে। অতঃপর সালাত আদায় করবে
৩৪ মল-মূত্র ত্যাগের সময় সম্পূর্ণরূপে বসার প্রস্তুতি নিয়ে সতর খুলবে
৩৫ স্থির পানিতে প্রস্রাব করা নিষেধ
৩৬ ইস্তিঞ্জার পর হাত খানা ঘষে ধুয়ে নিবে
৩৭ তুলনামূলক নরম ও নিচু স্থানে প্রস্রাব করবে
৩৮ প্রস্রাবের ছিঁটা থেকে বাঁচার কঠিন নির্দেশ
৩৯ বিনা প্রয়োজনে বাটি বা পাত্রে প্রস্রাব করা নিষেধ
৪০ মুসলিমদের কবরস্থানে মল-মূত্র ত্যাগ করা নিষেধ
৪১ মল-মূত্র থেকে পবিত্রতা
৪২ ভূমির পবিত্রতা
৪৩ নাপাক কাপড়ের পবিত্রতা
৪৪ শাড়ীর নিম্নাংশের পবিত্রতা
৪৫ দুগ্ধপোষ্য শিশুর প্রস্রাব থেকে পবিত্রতা
৪৬ নাপাক জুতার পবিত্রতা
৪৭ ২. কুকুরের উচ্ছিষ্ট
৪৮ কুকুর কর্তৃক অপবিত্র থালা-বাসনের পবিত্রতা
৪৯ ৩. প্রবাহিত রক্ত, শুকরের গোশত ও মৃত জন্তু
৫০ মৃত পশুর চামড়া সংক্রান্ত বিধান
৫১ ৪. বীর্য
৫২ ৫. মযি
৫৩ মযি বের হলে গোসল করতে হয় না
৫৪ ৬. ওদি
৫৫ মনি, মযি ও ওদির মধ্যে পার্থক্য
৫৬ ৭. মহিলাদের ঋতুস্রাব
৫৭ ঋতুবতী সংক্রান্ত কিছু মাসআলা
৫৮ ঋতুবতী মহিলার সাথে মেলামেশা
৫৯ ঋতুবতী মহিলার কুরআন পাঠ
৬০ ঋতুবতী মহিলার সালাত-রোযা
৬১ ৮. লিকোরিয়া
৬২ লিকোরিয়ায় গোসল ফরয হয় না
৬৩ ৯. ইস্তিহাযা
৬৪ ইস্তিহাযা সংক্রান্ত মাসআলাসমূহ
৬৫ ১০. নিফাস
৬৬ নিফাস সংক্রান্ত বিধান
৬৭ ১১. জাল্লালা (মল ভক্ষণকারী পশু)
৬৮ ১২. ইঁদুর
৬৯ ১৩. গোশত খাওয়া এমন যে কোনো পশুর মল-মূত্র
৭০ ১৪. মদ
৭১ সালাত আদায়কারী ব্যক্তির নাপাকী থেকে পবিত্রতা
৭২ পবিত্রতা সংক্রান্ত বিশেষ সূত্র
৭৩ সন্দেহ ঝেড়ে মুছে নিশ্চিত অতীতের দিকে প্রত্যাবর্তন
৭৪ বিড়ালে মুখ দেওয়া থালা-বাসন
৭৫ প্রকৃতি সম্মত ক্রিয়াকলাপ
৭৬ খতনা বা মুসলমানি করা
৭৭ নাভির নিম্নাংশের লোম মুণ্ডন
৭৮ বগলের লোম ছেঁড়া
৭৯ নখ কাটা
৮০ মোছ কাটা
৮১ দাড়ি লম্বা করা
৮২ মিসওয়াক করা
৮৩ মিসওয়াক করার গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি সময়
৮৪ ঘুম থেকে জেগে
৮৫ প্রত্যেক অযুর সময়
৮৬ প্রত্যেক সালাতের সময়
৮৭ ঘরের ঢুকার সময়
৮৮ মুখ দুর্গন্ধ, রুচি পরিবর্তন কিংবা দীর্ঘকাল পানাহারবশত দাঁত হলুদবর্ণ হলে
৮৯ কুরআন মাজীদ পড়ার সময়
৯০ আঙ্গুলের সন্ধিগুলো ভালোভাবে ধৌত করা
৯১ অযুর সময় নাকে পানি ব্যবহার করা
৯২ ইস্তিঞ্জা করা
৯৩ ফিতরাত বা প্রকৃতির প্রকারভেদ
৯৪ ঘুম থেকে জেগে যা করতে হয়
৯৫ উভয় হাত তিনবার ধোয়া
৯৬ তিন বার নাক পরিষ্কার করা
৯৭ অযু
৯৮ কি জন্য অযু করতে হয়
৯৯ যে কোনো ধরণের সালাত আদায়ের জন্য
১০০ কা‘বা শরীফ তাওয়াফের জন্য
১০১ কুর‘আন মাজীদ স্পর্শ করার জন্য
১০২ অযুর  ফযিলত
১০৩ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেভাবে অযু করতেন
১০৪ অযুর শুরুতে নিয়্যাত করতেন
১০৫ বিসমিল্লাহ পড়ে অযু শুরু করতেন
১০৬ ডান দিক থেকে অযু শুরু করতেন
১০৭ দু’ হাত কব্জি পর্যন্ত তিন বার ধুয়ে নিতেন
১০৮ হাত ও পদযুগল ধোয়ার সময় আঙ্গুলগুলোর মধ্যবর্তী ফাঁকা জায়গাগুলো কনিষ্ঠাঙ্গুলি দিয়ে খিলাল করে নিতেন
১০৯ এক বা তিন চিল্লু (করতলভর্তি পরিমাণ) পানি ডান হাতে নিয়ে তিন তিন বার একই সাথে কুল্লি করতেন ও নাকে পানি দিতেন এবং বাম হাত দিয়ে নাকের ছিদ্রদ্বয় ভালোভাবে ঝেড়ে নিতেন
১১০ তিন বার সমস্ত মুখমণ্ডল ধুয়ে নিতেন
১১১ দাড়ি খেলাল করতেন
১১২ উভয় হাত কনুইসহ তিনবার ধুয়ে নিতেন
১১৩ সম্পূর্ণ মাথা একবার মাসাহ করতেন
১১৪ উভয় পা টাখনুসহ তিনবার ধুয়ে নিতেন
১১৫ অযু শেষে নিচের পরিধেয় বস্ত্রে পানি ছিঁটিয়ে দিতেন
১১৬ অযু শেষে নিম্নোক্ত দো‘আসমূহ পাঠ করতেন
১১৭ অযু শেষে দু’রাকাত সালাত পড়তেন
১১৮ অযুর  অঙ্গগুলো দু’ একবারও ধোয়া যায়
১১৯ অযুর  কোনো অঙ্গ ধোয়ার সময় কেশ পরিমাণও শুষ্ক রাখা যাবে না
১২০ এক অযু দিয়ে কয়েক ওয়াক্ত সালাত আদায় করা যায়
১২১ অযুর ফরয ও রুকনসমূহ
১২২ সমস্ত মুখমণ্ডল ধৌত করা
১২৩ কনুইসহ উভয় হাত ধৌত করা
১২৪ সম্পূর্ণ মাথা মাসাহ করা
১২৫ সরাসরি সম্পূর্ণ মাথা মাসাহ করা
১২৬ মাথায় দৃঢ়ভাবে বাঁধা পাগড়ীর উপর মাসাহ করা
১২৭ পাগড়ী ও কপাল উভয়টি মাসাহ করা
১২৮ উভয় পা টাখনুসহ ধৌত করা
১২৯ ধোয়ার সময় অঙ্গগুলোর মাঝে পর্যায়ক্রম বজায় রাখা
১৩০ অযুর  সময় অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলোর মাঝে ধারাবাহিকতা বজায় রাখা
১৩১ অযুর শর্তসমূহ
১৩২ অযুকারী মুসলিম হতে হবে
১৩৩ জ্ঞানসম্পন্ন হতে হবে
১৩৪ ভালমন্দ ভেদাভেদজ্ঞান সম্পন্ন হতে হবে
১৩৫ নিয়্যাত করতে হবে
১৩৬ শেষ পর্যন্ত নিয়্যাত বহাল থাকতে হবে
১৩৭ অযু চলাকালীন অযু ভঙ্গের কোনো কারণ না পাওয়া যেতে হবে
১৩৮ অযুর  পূর্বে মলমূত্র ত্যাগ করলে ইস্তিঞ্জা করতে হবে
১৩৯ অযুর  পানি জায়েয পন্থায় সংগৃহীত হতে হবে
১৪০ পানি প্রতিবন্ধক বস্তু অপসারণ করতে হবে
১৪১ মা‘যুরের জন্য সালাতের ওয়াক্ত উপস্থিত হতে হবে
১৪২ অযুর সুন্নাতসমূহ
১৪৩ মিসওয়াক করা
১৪৪ অযু করার পূর্বে উভয় হাত কব্জি পর্যন্ত ধৌত করা
১৪৫ অঙ্গগুলো ঘষেমলে ধৌত করা
১৪৬ প্রতিটি অঙ্গ তিন তিন বার ধৌত করা
১৪৭ অযু শেষে দো‘আ পড়া
১৪৮ ওযুশেষে দু’ রাকাত (তাহিয়্যাতুল উযু) সালাত আদায় করা
১৪৯ কোন বাড়াবাড়ি ব্যতীত স্বাভাবিক পন্থায় ভালোভাবে অযু করা
১৫০ যে যে কারণে অযু নষ্ট হয়
১৫১ মল-মূত্রদ্বার দিয়ে কোনো কিছু বের হলে
১৫২ ঘুম বা অন্য যে কোনো কারণে অচেতন হলে
১৫৩ কোনো আবরণ ছাড়া হাত দিয়ে লিঙ্গ বা গুহ্যদ্বার স্পর্শ করলে
১৫৪ উটের গোশত খেলে
১৫৫ মুরতাদ হয়ে গেলে
১৫৬ শরীর থেকে রক্ত বের হলে অযু নষ্ট হয় না
১৫৭ সালাতে অযু ইবনষ্ট হলে কি করতে হবে
১৫৮ যখন অযু করা মুস্তাহাব
১৫৯ যিকির ও দো‘আর জন্য
১৬০ ঘুমের পূর্বে
১৬১ অযু বিনষ্ট হলে
১৬২ প্রতি ওয়াক্ত সালাতের জন্য
১৬৩ মৃত ব্যক্তিকে কবরমুখে বহন করার পর
১৬৪ বমি হলে
১৬৫ আগুনে পাকানো কোনো খাবার খেলে
১৬৬ জুনুবী ব্যক্তি খাবার খেতে ইচ্ছে করলে
১৬৭ দ্বিতীয়বার সহবাসের জন্য
১৬৮ জুনুবী ব্যক্তি গোসল না করে শোয়ার ইচ্ছে করলে
১৬৯ মোজা, পাগড়ী ও ব্যান্ডেজের উপর মাসাহ
১৭০ মোজার উপর মাসাহ করার বিধান
১৭১ মোজা মাসাহ করার শর্তসমূহ
১৭২ সম্পূর্ণ পবিত্রাবস্থায় মোজা পরিধান করতে হবে
১৭৩ শুধু ছোট অপবিত্রতার জন্য মোজা মাসাহ করবে
১৭৪ শুধু শরী‘আত নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মাসাহ করতে হবে
১৭৫ মোজা জোড়া সম্পূর্ণরূপে পবিত্র হতে হবে
১৭৬ মোজা জোড়া টাখনু পর্যন্ত পদযুগল ঢেকে রাখতে হবে
১৭৭ জায়েয পন্থায় সংগৃহীত ও শরী‘আতসম্মত হতে হবে
১৭৮ মাসাহের সময়সীমা পূর্ণ হওয়ার পূর্বে মোজা খোলা যাবে না
১৭৯ যখন মাসাহ ভঙ্গ হয়
১৮০ গোসল ফরয হলে
১৮১ মাসাহের পর মোজা জোড়া খুলে ফেললে
১৮২ মাসাহের নির্ধারিত সময়সীমা পার হয়ে গেলে
১৮৩ মাসাহ করার পদ্ধতি
১৮৪ জাওরাবের উপর মাসাহ
১৮৫ পাগড়ীর উপর মাসাহ
১৮৬ ব্যান্ডেজের উপর মাসাহ
১৮৭ মোজা ও ব্যান্ডেজের উপর মাসাহ করার মধ্যে পার্থক্যসমূহ
১৮৮ ক্ষত বিক্ষত স্থানের শরঈ বিধান
১৮৯ গোসল
১৯০ যখন গোসল করা ফরয
১৯১ উত্তেজনাসহ বীর্যপাত হলে
১৯২ স্বপ্নদোষ
১৯৩ ঘুম থেকে জেগে পোশাকে আর্দ্রতা দেখতে পেলে
১৯৪ সে নিশ্চিত যে, এ আর্দ্রতা বীর্যের
১৯৫ সে নিশ্চিতভাবে জানে যে, এ আর্দ্রতা বীর্যের নয়
১৯৬ স্ত্রী সহবাস করলে
১৯৭ জানাবাত বিষয়ক বিধান
১৯৮ জুনুবী মহিলার কেশ সংক্রান্ত মাসআলা
১৯৯ জুনুবী ব্যক্তির সাথে মেলামেশা
২০০ জুনুবী ব্যক্তির পানাহার, নিদ্রা ও পুনঃসহবাস
২০১ কোনো কাফির মুসলিম হলে
২০২ যুদ্ধক্ষেত্রের শহীদ ব্যতীত যে কোনো মুসলিম ইন্তেকাল করলে
২০৩ মহিলাদের ঋতুস্রাব হলে
২০৪ নিফাস হলে
২০৫ জুনুবী অবস্থায় যা করা নিষেধ
২০৬ সালাত আদায় করা
২০৭ কা‘বা শরীফ তাওয়াফ করা
২০৮ কুরআন মাজীদ স্পর্শ করা
২০৯ কুরআন মাজীদ তিলাওয়াত করা
২১০ মসজিদে অবস্থান করা
২১১ গোসলের শর্তসমূহ
২১২ নিয়্যাত করতে হবে
২১৩ মুসলিম হতে হবে
২১৪ জ্ঞানসম্পন্ন হতে হবে
২১৫ ভালোমন্দ ভেদাভেদ জ্ঞান থাকতে হবে
২১৬ গোসল শেষ হওয়া পর্যন্ত পবিত্রতার্জনের নিয়্যাত স্থির থাকতে হবে
২১৭ গোসল চলাকালীন তা ভঙ্গকারী কোনো কারণ পাওয়া না যেতে হবে
২১৮ পানি জায়েয পন্থায় সংগৃহীত হতে হবে
২১৯ পানি পৌঁছতে বাধা এমন বস্তু অপসারিত হতে হবে
২২০ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেভাবে গোসল করতেন
২২১ প্রথমে নিয়্যাত করতেন
২২২ বিসমিল্লাহ বলে শুরু করতেন
২২৩ উভয় হাত কব্জি পর্যন্ত তিন বার ধুয়ে নিতেন
২২৪ বাম হাত দিয়ে লজ্জাস্থান পরিষ্কার করতেন
২২৫ বাম হাত ভালোভাবে ঘষে বা ধুয়ে নিতেন
২২৬ সালাতের অযুর ন্যায় অযু করতেন
২২৭ হাতের আঙ্গুল দিয়ে চুল খেলাল করতেন
২২৮ পুরো শরীরে পানি প্রবাহিত করতেন
২২৯ পূর্বের জায়গা ছেড়ে একটু দূরে গিয়ে পা ধুয়ে নিতেন
২৩০ খোলা জায়গায় গোসল করা নিষেধ
২৩১ গোসলের অযু দিয়েই সালাত পড়া যায়
২৩২ যখন গোসল করা মুস্তাহাব
২৩৩ জুমু‘আর দিন গোসল করা
২৩৪ হজ বা উমরার ইহরামের জন্য গোসল করা
২৩৫ মক্কায় প্রবেশের পূর্বে গোসল করা
২৩৬ প্রতিবার সহবাসের জন্য গোসল করা
২৩৭ মৃতকে গোসল দেওয়ার পর গোসল করা
২৩৮ মুশরিক ও কাফিরকে মাটিচাপা দিয়ে গোসল করা
২৩৯ মুস্তাহাযা মহিলার প্রতি সালাতের জন্য গোসল করা
২৪০ বেঁহুশ হওয়ার পর চেতনা ফিরে পেলে
২৪১ কাফির ব্যক্তি মুসলিম হলে
২৪২ দু’ ঈদের জন্য গোসল করা
২৪৩ ‘আরাফার দিন গোসল করা
২৪৪ তায়াম্মুম
২৪৫ তায়াম্মুমের বিধান
২৪৬ যখন তায়াম্মুম জায়েয
২৪৭ পানি না পেলে
২৪৮ অযু বা গোসলের জন্য যথেষ্ট পানি না পেলে
২৪৯ পানি অত্যন্ত ঠান্ডা হলে
২৫০ রোগাক্রান্ত বা আঘাতপ্রাপ্ত হলে
২৫১ পানি সংগ্রহে অপারগতা প্রমাণিত হলে
২৫২ মজুদ পানি ব্যবহার করলে কঠিন পিপাসায় মৃত্যুর ভয় হলে
২৫৩ তায়াম্মুমের শর্তসমূহ
২৫৪ নিয়্যাত করতে হবে
২৫৫ তায়াম্মুমকারী মুসলিম হতে হবে
২৫৬ জ্ঞানসম্পন্ন হতে হবে
২৫৭ ভালো-মন্দ ভেদাভেদ জ্ঞান রাখতে হবে
২৫৮ শেষ পর্যন্ত নিয়্যাত বহাল থাকতে হবে
২৫৯ তায়াম্মুম চলাকালীন অযু বা গোসল ওয়াজিব হয় এমন কারণ না পাওয়া যেতে হবে
২৬০ মাটি পবিত্র হতে হবে
২৬১ পূর্বে মল-মূত্র ত্যাগ করে থাকলে ইস্তিঞ্জা করতে হবে
২৬২ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেভাবে তায়াম্মুম করতেন
২৬৩ প্রথমে নিয়্যাত করতেন
২৬৪ বিসমিল্লাহ বলে শুরু করতেন
২৬৫ উভয় হাত মাটিতে মেরে মুখমণ্ডল ও কব্জিসহ হাত মাসাহ করতেন
২৬৬ তায়াম্মুমের রুকনসমূহ
২৬৭ সুনির্দিষ্ট নিয়্যাত করা
২৬৮ সমস্ত মুখমণ্ডল একবার মাসাহ করা
২৬৯ উভয় হাত কব্জিসহ একবার মাসাহ করা
২৭০ তায়াম্মুম ভঙ্গকারী কারণসমূহ
২৭১ যে কারণগুলো অযু নষ্ট করে তা তায়াম্মুমকেও নষ্ট করে
২৭২ পানি পাওয়া গেলে
২৭৩ পানিও নেই মাটিও নেই তখন কী করতে হবে
২৭৪ তায়াম্মুম করে সালাত পড়ার পর সময় থাকতে পানি পেলে




লেখকের কথা
الْـحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ، وَالصَّلاَةُ وَالسَّلاَمُ عَلَى نَبِيِّنَا مُحَمَّدٍ وَّعَلَى آلِهِ وَصَحَابَتِهِ وَالتَّابِعِيْنَ لـَهُمْ بِإِحْسَانٍ إِلَى يَوْمِ الدِّيْنِ.
সকল প্রশংসা আল্লাহ তা‘আলার জন্য যিনি সর্বজগতের রব। সালাত ও সালাম আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, তাঁর পরিবারবর্গ, সাহাবীগণ ও তা কিয়ামত আগত সকল অনুসারীদের ওপর।
মূলত ধর্মীয় জ্ঞানার্জন সর্বোৎকৃষ্ট কর্ম ও সর্বাধিক কল্যাণকর কাজ।
মু‘আবিয়া রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিততিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«مَنْ يُرِدِ اللهُ بِهِ خَيْرًا يُفَقِّهْهُ فِي الدِّيْنِ».
“আল্লাহ তা‘আলা যার সাথে কল্যাণের ইচ্ছে করেন তাকেই তিনি ধর্মীয় জ্ঞান দান করেন। কারণ, সঠিক ধর্মীয় জ্ঞানের ওপরই একমাত্র পুণ্যময় কর্ম নির্ভরশীল”।[1]
আল্লাহ তা‘আলা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কল্যাণকর জ্ঞান ও পুণ্যময় কর্মসহ দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন। তিনি বলেন,
﴿هُوَ ٱلَّذِيٓ أَرۡسَلَ رَسُولَهُۥ بِٱلۡهُدَىٰ وَدِينِ ٱلۡحَقِّ﴾ [التوبة: ٣٣]
“তিনিই আল্লাহ যিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কল্যাণকর জ্ঞান ও পুণ্যময় কর্মসহ দুনিয়াতে প্রেরণ করেছেন”। [সূরা আত-তাওবাহআয়াত: ৩৩]
আল্লাহ তা‘আলা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তাঁর নিকট জ্ঞান বর্ধনের প্রার্থনা করতে আদেশ করেন। তিনি বলেন,
﴿وَقُل رَّبِّ زِدۡنِي عِلۡمٗا﴾ [طه: ١١٤]
“আপনি বলুন! হে আমার রব! আপনি আমার জ্ঞান বৃদ্ধি করুন”। [সূরা ত্বা-হা, আয়াত: ১১৪]
উক্ত আয়াত ধর্মীয় জ্ঞানার্জন সর্বোৎকৃষ্ট কর্ম হওয়ার সুস্পষ্ট প্রমাণ। কারণ, আল্লাহ তা‘আলা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে শুধু জ্ঞান বৃদ্ধির জন্যই দো‘আ করতে আদেশ করেন, অন্য কিছুর জন্যে নয়।
অন্য দিকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শিক্ষার মজলিসকে জান্নাতের বাগান এবং আলিম সম্প্রদায়কে নবীগণের ওয়ারিশ বলে আখ্যায়িত করেছেন।
এ কথা সবারই জানা যে, যে কোনো কাজ করার পূর্বে সর্বপ্রথম সে কাজটি বিশুদ্ধরূপে কীভাবে সম্পাদন করা সম্ভব সে পদ্ধতি অবশ্যই জেনে নিতে হয়। নতুবা সে কাজটি সঠিকভাবে আদায় করা তদুপরি অভীষ্ট লক্ষ্যে উপনীত হওয়া কখনোই সম্ভবপর হয় না। যদি এ হয় সাধারণ কাজের কথা তাহলে কোনো ইবাদাত যার ওপর জাহান্নাম থেকে নিষ্কৃতি ও জান্নাত লাভ নির্ভর করে তা কী করে ধর্মীয় জ্ঞান ছাড়া সঠিকভাবে সম্পাদন করা সম্ভবপর হবে। অবশ্যই তা অসম্ভব। অতএব, এ দৃষ্টিকোণ থেকে মানুষ তিন ভাগে বিভক্ত:
১. যারা লাভজনক শিক্ষা ও পুণ্যময় কর্মের মাঝে সমন্বয় সাধন করতে পেরেছে। এরাই সত্যিকারার্থে নবী, চির সত্যবাদী, শহীদ ও পুণ্যবান লোকদের পথে উপনীত।
২. যারা লাভজনক শিক্ষা গ্রহণ করেছে ঠিকই; অথচ তদনুযায়ী আমল করছে না। এরাই হচ্ছে আল্লাহ তা‘আলার রোষানলে পতিত ইয়াহূদীদের একান্ত সহচর।
৩. যারা সঠিক জ্ঞান বহির্ভূত আমল করে থাকে। এরাই হচ্ছে পথভ্রষ্ট খ্রিস্টানদের একান্ত অনুগামী।
উক্ত দলগুলোর কথা আল্লাহ তা‘আলা কুরআন মাজীদে উল্লেখ করেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ٱهۡدِنَا ٱلصِّرَٰطَ ٱلۡمُسۡتَقِيمَ ٦ صِرَٰطَ ٱلَّذِينَ أَنۡعَمۡتَ عَلَيۡهِمۡ غَيۡرِ ٱلۡمَغۡضُوبِ عَلَيۡهِمۡ وَلَا ٱلضَّآلِّينَ ٧﴾ [الفاتحة: ٦،  ٧]
“(হে আল্লাহ!) আপনি আমাদেরকে সঠিক পথ প্রদর্শন করুন। তাদের পথ যাদের প্রতি আপনি অনুগ্রহ করেছেন। ওদের পথ নয় যাদের ওপর আপনি রোষান্বিত ও যারা পথভ্রষ্ট”। [সূরা আল-ফাতিহা, আয়াত: ৬-৭]
সর্বজন শ্রদ্ধেয় যুগ সংস্কারক শাইখ মুহাম্মাদ ইবন আব্দুল ওয়াহ্‌হাব রহ. বলেন,
وَأَمَّا قَوْلُهُ تَعَالَى﴿غَيۡرِ ٱلۡمَغۡضُوبِ عَلَيۡهِمۡ وَلَا ٱلضَّآلِّينَ فَالْـمَغْضُوْبُ عَلَيْهِمْ هُمُ الْعُلَمَاءُ الَّذِيْنَ لَمْ يَعْمَلُوْا بِعِلْمِهِمْ، وَالضَّالُّوْنَ الْعَامِلُوْنَ بِلاَ عِلْمٍ ؛ فَالأَوَّلُ صِفَةُ الْيَهُوْدِ وَالثَّانِيْ صِفَةُ النَّصَارَى، وَكَثِيْرٌ مِنَ النَّاسِ إِذَا رَأَى فِيْ التَّفْسِيْرِ أَنَّ الْيَهُوْدَ مَغْضُوْبٌ عَلَيْهِمْ وَأَنَّ النَّصَارَى ضَالُّوْنَ ظَنَّ الْـجَاهِلُ أَنَّ ذَلِكَ مَخْصُوْصٌ بِهِمْ وَهُوَ يَقْرَأُ أَنَّ رَبَّهُ فَارِضٌ عَلَيْهِ أَنْ يَّدْعُوَ بِهَذَا الدُّعَاءِ وَيَتَعَوَّذَ مِنْ طَرِيْقِ أَهْلِ هَذِهِ الصِّفَاتِ !! فَيَا سُبْحَانَ اللهِكَيْفَ يُعَلِّمُهُ اللهُ وَيَخْتَارُ لَهُ وَيَفْرِضُ عَلَيْهِ أَنْ يَّدْعُوَ رَبَّهُ دَائِمًا مَعَ أَنَّهُ لاَ حَذَرَ عَلَيْهِ مِنْهُ وَلاَ يَتَصَوَّرُ أَنَّ فِعْلَهُ هَذَا هُوَ ظَنُّ السُّوْءِ بِاللهِ!.
“উক্ত আয়াতে “মাগযুব ‘আলাইহিম” বলতে সে সকল আলিমদেরকে বুঝানো হচ্ছে যারা অর্জিত জ্ঞান মাফিক আমল করে না। আর “যাল্লীন” বলতে জ্ঞান বিহীন আমলকারীদেরকে বুঝানো হচ্ছে। প্রথম বৈশিষ্ট্য ইয়াহূদীদের আর দ্বিতীয় বৈশিষ্ট্য খ্রিস্টানদের। অনেকেই যখন তাফসীর পড়ে বুঝতে পারেন যে, ইয়াহূদীরাই হচ্ছে আল্লাহ তা‘আলার রোষানলে পতিত আর খ্রিস্টানরাই হচ্ছে পথভ্রষ্ট তখন তারা মূর্খতাবশতঃ এটাই ভাবেন যে, উক্ত বৈশিষ্ট্যদ্বয় শুধু ওদের মধ্যেই সীমিত; অথচ তাদের এতটুকুও বোধোদয় হয় না যে, তাই যদি হতো তা হলে আল্লাহ তা‘আলা কেন সালাতের প্রতিটি রাকাতে ওদের বৈশিষ্ট্যদ্বয় থেকে নিষ্কৃতি চাওয়া ফরয করে দিয়েছেন। সত্যিই তাদের এ রকম ধারণা আল্লাহ তা‘আলার প্রতি চরম কুধারণার শামিল”।
উক্ত আলোচনা থেকে যখন আমরা লাভজনক জ্ঞানের অপরিহার্যতা অনুধাবন করতে পেরেছি তখন আমাদের জানা উচিত যে, এ জাতীয় জ্ঞানের সঠিক সন্ধান কোথায় মেলা সম্ভব। সত্যিকারার্থে তা কুরআন ও হাদীসের পরতে পরতে লুক্কায়িত রয়েছে। তবে তা একমাত্র সহযোগী জ্ঞান ও হক্কানী আলিম সম্প্রদায়ের মাধ্যমেই অর্জন করতে হয়।
তবে একটি কথা বিশেষভাবে স্মরণ রাখতে হবে যে, আমলের ওপরই ইলমের প্রবৃদ্ধি নির্ভরশীল। যতই আমল করবে ততই জ্ঞান বাড়বে। বলা হয়, যে ব্যক্তি অর্জিত জ্ঞানানুযায়ী আমল করবে আল্লাহ তা‘আলা তাকে এমন কিছু জ্ঞান দান করবেন যা সে পূর্বে অর্জন করে নি।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَٱتَّقُواْ ٱللَّهَۖ وَيُعَلِّمُكُمُ ٱللَّهُۗ وَٱللَّهُ بِكُلِّ شَيۡءٍ عَلِيمٞ﴾ [البقرة: ٢٨٢]
“তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। তিনি তোমাদেরকে জ্ঞান দান করবেন, তিনি সর্বজ্ঞ”। [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ২৮২]
আল্লাহ তা‘আলা আমলকারী আলিমদের মর্যাদা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন,
﴿يَرۡفَعِ ٱللَّهُ ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ مِنكُمۡ وَٱلَّذِينَ أُوتُواْ ٱلۡعِلۡمَ دَرَجَٰتٖۚ وَٱللَّهُ بِمَا تَعۡمَلُونَ خَبِيرٞ﴾ [المجادلة: ١١]
“আল্লাহ তা‘আলা মুমিন ও জ্ঞানীদের মর্যাদা বাড়িয়ে দেন। তিনি তোমাদের কর্ম সম্পর্কে সবিশেষ অবহিত”। [সূরা আল-মুজাদালাহ, আয়াত: ১১]
আল্লাহ তা‘আলা জ্ঞানী মুমিনদের মর্যাদা বর্ণনা করে ক্ষান্ত হননি বরং তিনি আমাদের কর্ম সম্পর্কে তাঁর পূর্ণাবগতির সংবাদ দিয়ে এটাই বুঝাতে চাচ্ছেন যে, শুধু জ্ঞানই যথেষ্ট নয় বরং আমলও একান্ত প্রয়োজনীয়। আর তা জ্ঞান ও ঈমানের ঘনিষ্ঠ সংমিশ্রণের মাধ্যমেই একমাত্র সম্ভব।
বিশুদ্ধ জ্ঞান সঞ্চার ও গ্রহণযোগ্য আমলের পথ সুগম করার মানসেই এ পুস্তিকাটির সংকলন। সাধ্যমত নির্ভুলতার প্রতি লক্ষ্য রাখা হয়েছে। এরপরও সচেতন পাঠকের চোখে নিশ্চিত কোনো ভুল ধরা পড়লে সরাসরি লেখকের কর্ণগোচর করলে অধিক খুশি হবো। এ পুস্তক পাঠে কারোর সামান্যটুকুও উপকার হলে তখনই আমার শ্রম সার্থক হবে।
نَسْأَلُ اللهَ تَبَارَكَ وَتَعَالَى أَنْ يُّمِدَّنَا وَإِيَّاكَ بِالْعِلْمِ النَّافِعِ، وَيُوَفِّقَنَا لِلْعَمَلِ الصَّالِحِ، كَمَا نَسْأَلُهُ سُبْحَانَهُ أَنْ يُّرِيَنَا الْحَقَّ حَقًّا وَيَرْزُقَنَا اتِّبَاعَهُ، وَيُرِيَنَا الْبَاطِلَ بَاطِلًا وَيَرْزُقَنَا اجْتِنَابَهُ، إِنَّهُ سَمِيْعٌ مُجِيْبٌ، وَصَلَّى اللهُ عَلَى نَبِيِّنَا مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِهِ وَصَحْبِهِ أَجْمَعِيْنَ .


পূর্বাভাষ
আল্লাহ তা‘আলা ও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর সুদৃঢ় বিশ্বাস স্থাপনের পরপরই ইসলামের দ্বিতীয় রুকন ও বিধান হচ্ছে সালাত। একমাত্র সালাতই হচ্ছে মুসলিম ও অমুসলিমের মাঝে সুস্পষ্ট পার্থক্য বিধানকারী। ইসলামের বিশেষ স্তম্ভ। সর্বপ্রথম বস্তু যা দিয়েই কিয়ামতের দিবসে বান্দার হিসাব-নিকাশ শুরু করা হবে। তা বিশুদ্ধ তথা গ্রহণযোগ্য প্রমাণিত হলে বান্দার সকল আমলই গ্রহণযোগ্য বলে প্রমাণিত হবে। নতুবা নয়। সালাতের বিষয়টি কুরআন মাজীদে অনেক জায়গায় অনেকভাবেই আলোচিত হয়েছে। কখনো সালাত প্রতিষ্ঠার আদেশ দেওয়া হয়েছে। আবার কখনো এর মর্যাদা বর্ণিত হয়েছে। তেমনিভাবে কখনো এটির সাওয়াব ও পুণ্যের বিবরণ দেওয়া হয়েছে। আবার কখনো মানুষের জীবনে আকস্মিকভাবে আগতসমূহ বিপদাপদ সহজভাবে মেনে নেওয়ার জন্য সালাত ও ধৈর্যের সহযোগিতা নেওয়ার আদেশ দেওয়া হয়েছে। এ জন্যই এ সালাত সর্বদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অন্তরাত্মাকে সম্পূর্ণভাবে শীতল করে দিতো। তাই বলতে হয়, সালাত নবীদের ভূষণ ও নেককারদের অলঙ্কারবান্দা ও প্রভুর মাঝে গভীর সংযোগ স্থাপনকারীঅপরাধ ও অপকর্ম থেকে হিফাযতকারী।
তবে বাহ্যিক ও আভ্যন্তরীণ অপবিত্রতা থেকে যথাসাধ্য পবিত্রতা অর্জন ছাড়া কোনো সালাতই আল্লাহ তা‘আলার দরবারে গ্রহণযোগ্য নয়। এ কারণেই পবিত্রতার ব্যাপারটি ইসলামী শরী‘আতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।   


পবিত্রতা

আভিধানিক অর্থে পবিত্রতা বলতে দৃশ্য অদৃশ্য সকল ময়লা আবর্জনা থেকে পরিষ্কার ও পরিচ্ছন্ন হওয়াকে বুঝানো হয়। শরী‘আতের পরিভাষায় পবিত্রতা বলতে যে কোনো ভাবে দৃশ্যমান ময়লা আবর্জনা সাফাই এবং মাটি বা পানি কর্তৃক বিধানগত অপবিত্রতা থেকে নিষ্কৃতি পাওয়াকে বুঝানো হয়। মূলকথা, শরী‘আতের পরিভাষায় পবিত্রতা বলতে সাধারণত সালাতকুরআন তিলাওয়াত ইত্যাদি ইবাদতকর্ম সম্পাদনে প্রতিবন্ধক অপবিত্রতা থেকে নিষ্কৃতি পাওয়াকে বুঝানো হয়।

পবিত্রতার প্রকারভেদ:
শরী‘আতের পরিভাষায় পবিত্রতা দু’প্রকার : অদৃশ্য ও দৃশ্য পবিত্রতা।

অদৃশ্য পবিত্রতা : অদৃশ্য পবিত্রতা বলতে শির্ক ও সকল পাপ থেকে নিষ্কৃতি পাওয়াকে বুঝানো হয়। শির্ক থেকে মুক্তি তাওহীদ বাস্তবায়নের মাধ্যমে এবং পাপ থেকে মুক্তি পুণ্যময় কর্মসম্পাদনের মাধ্যমেই সম্ভব। মূলতঃ অদৃশ্য পবিত্রতা দৃশ্যময় পবিত্রতার চাইতে অনেক অনেক গুণ বেশী গুরুত্বপূর্ণ। বরং বলতে হয় : শির্ক বিদ্যমান থাকাবস্থায় কোনোভাবেই শারীরিক পবিত্রতার্জন সম্ভবপর নয়।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿إِنَّمَا ٱلۡمُشۡرِكُونَ نَجَسٞ﴾ [التوبة: ٢٨]
“মুশরিকরা একেবারেই অপবিত্র”। [সূরা আত-তাওবাহ, আয়াত: ২৮]
এর বিপরীতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إِنَّ الْـمُؤْمِنَ لاَيَنْجُسُ»
“ঈমানদার ব্যক্তি সত্যিকারার্থে কখনোই একেবারে অপবিত্র হতে পারে না”।[2]
তাই প্রতিটি মুসলিমের কর্তব্যনিজ অন্তরাত্মাকে শির্ক ও সন্দেহের পঙ্কিলতা থেকে মুক্ত করা। আর তা একমাত্র সম্ভব আল্লাহতে দৃঢ় বিশ্বাসএকনিষ্ঠতা ও তাওহীদ বাস্তবায়নের মাধ্যমে। তেমনিভাবে নিজ অন্তঃকরণকে হিংসা-বিদ্বেষশত্রুতাফাঁকি-ধাপ্পাবাজিদেমাগ-আত্মগরিমাআত্মশ্লাঘা তথা আত্মপ্রশংসা এবং যে কোনো পুণ্যময় কর্ম অন্যকে দেখিয়ে বা শুনিয়ে করার প্রবণতা জাতীয় পাপ-পঙ্কিলতা থেকে নিজকে পরিচ্ছন্নকরণ প্রতিটি মুসলমানের একান্ত কর্তব্য। আর তা একমাত্র সম্ভব সকল গুনাহ থেকে সত্যিকার তাওবার মাধ্যমে। ঈমানের দু’টি অঙ্গের এটিই হচ্ছে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। আর অন্যটি হচ্ছে বাহ্যিক পবিত্রতা।

দৃশ্যমান পবিত্রতা: দৃশ্যমান পবিত্রতা বলতে বাহ্যিক এবং আভ্যন্তরীণ অপবিত্রতা থেকে পবিত্রতা অর্জনকে বুঝানো হয়। আর এটিই হচ্ছে ঈমানের দ্বিতীয় অঙ্গ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«الطُّهُوْرُ شَطْرُ الإِيْمَاْنِ»
“পবিত্রতা ঈমানের অঙ্গ”।[3]
আর তা অবাহ্য নাপাকী থেকে পবিত্রতা অর্জনের মানসে অযুগোসল বা তায়াম্মুম এবং শরীরপোষাক, সালাতের জায়গা ইত্যাদি থেকে বাহ্যিক নাপাকী দূরীকরণের মাধ্যমেই সংঘটিত হয়ে থাকে।

বাহ্যিক পবিত্রতা অর্জনের দু’টি মাধ্যম : পানি ও মাটি

পানি কর্তৃক পবিত্রতা : পানি কর্তৃক পবিত্রতা অর্জনই হচ্ছে মৌলিক তথা সর্বপ্রধান। সাধারণতঃ আকাশ থেকে অবতীর্ণ এবং ভূমি থেকে উদ্গত অবিমিশ্র সকল পানি পবিত্র। তা সব ধরনের বাহ্যিক এবং আভ্যন্তরীণ অপবিত্রতা দূরীকরণে সক্ষম। যদিও কোনো পবিত্র বস্তুর সংমিশ্রণে উহার রংঘ্রাণ বা স্বাদ বদলে যায়।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إِنَّ الْـمَاءَ طَهُوْرٌ لاَيُنَجِّسُهُ شَيْءٌ».
“নিশ্চয় পানি পবিত্র ও পবিত্রতা বিধানকারী। কোনো বস্তু উহাকে অপবিত্র করতে পারে না”।[4]

পানি সংক্রান্ত বিধান :
সালাতের জন্য পবিত্রতা অর্জন তথা অযু করা আবশ্যক। কারণঅযু ব্যতীত সালাত আল্লাহর দরবারে কবুল হয় না।
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিততিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«لاَ تُقْبَلُ صَلاَةُ مَنْ أَحْدَثَ حَتَّى يَتَوَضَّأَ»
“অযু ভঙ্গকারীর সালাত গ্রহণযোগ্য হবে না যতক্ষণ না সে অযু করে”।[5]
আর অযুর জন্য পবিত্র পানির প্রয়োজন। তাই পানি সংক্রান্ত বিধানই আলোচনায় অগ্রাধিকার পায়।

পানির সাধারণ প্রকৃতি:
পানির সাধারণ প্রকৃতি হচ্ছে পবিত্রতা। তাই পুকুরনদীখালবিলকূপসাগরবিগলিত বরফবৃষ্টি ইত্যাদির পানি পবিত্র।
আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিততিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হলো যেআমরা বুযা‘আ কূপের পানি দ্বারা অযু করতে পারবো কিতা এমন কূপ যাতে অপবিত্র বস্তু নিক্ষেপ করা হয়। তখন তিনি বললেন:
«الْـمَاءُ طَهُوْرٌ لاَ يُنَجِّسُهُ شَيْءٌ»
“পানি বলতেই তা পবিত্র ও পবিত্রতা বিধানকারী। কোনো বস্তু একে অপবিত্র করতে পারে না”[6]
সমুদ্রের পানি সম্পর্কে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«هُوَ الطَّهُوْرُ مَاؤُهُ، الْحِلُّ مَيْتَتُهُ»
“সমূদ্রের পানি পবিত্র ও পবিত্রতা বিধানকারী এবং উহার মৃত হালাল”।[7]
তবে কোনো নাপাক বস্তু কর্তৃক পানির রংঘ্রাণ ও স্বাদের কোনো একটির পরিবর্তন ঘটলে তা নাপাক বলে পরিগণিত হবে। এ ব্যাপারে আলিমদের কোনো দ্বিমত নেই। 
মূলতঃ কূপনদী ইত্যাদির পানি সর্বদা এজন্য পবিত্র কেননা উহার পানি দু’ ক্বুল্লা তথা ২২৭ লিটার থেকে ও বেশি। এজন্যই কোনো নাপাক বস্তু উহাকে অপবিত্র করতে পারে না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إِذَا كَاْنَ الـْمَاْءُ قُلَّتَيْنِ لَمْ يَحْمِلِ الْـخَبَثَ»
“যদি পানি দু’ ক্বুল্লা তথা ২২৭ লিটার সমপরিমাণ হয় তাহলে উহা কোনো নাপাক বস্তু কর্তৃক অপবিত্র হবে না”।[8]
তবে দু’ ক্বুল্লা থেকে কম হলে যে কোনো নাপাক বস্তু উহাকে অপবিত্র করে দেয়। এ জন্যই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«لاَ يَغْتَسِلْ أَحَدُكُمْ فِي الـْمَاْءِ الدَّائِمِ وَهُوَجُنُبٌ»
“তোমাদের কেউ জুনুবী অবস্থায় (অর্থাৎ যখন গোসল ফরয হয়) স্থির পানিতে গোসল করবে না”।[9]
তিনি আরো বলেন,
«لاَ يَبُوْلَنَّ أَحَدُكُمْ فِي الـْمَاْءِ الدَّائِمِ الَّذِيْ لاَ يَجْرِيْ، ثُمَّ يَغْتَسِلُ فِيْهِ»
“তোমাদের কেউ স্থির পানিতে প্রস্রাব করবে না অতঃপর গোসল করবে না”।[10]
তিনি আরো বলেন,
«لاَ يَبُوْلَنَّ أَحَدُكُمْ فِي الـْمَاءِ الدَّائِمِ، ثُمَّ يَتَوَضَّأُ مِنْهُ»
“তোমাদের কেউ স্থির পানিতে প্রস্রাব করবে না অতঃপর অযু করবে না”।[11]


পানির প্রকারভেদ :
পানি আবার তিন প্রকার :
১. পবিত্র ও পবিত্রতা বিধানকারী পানি:
যে পানি নিজ প্রকৃতিগত বৈশিষ্ট্যের ওপর বহাল রয়েছে সে পানি পবিত্র ও পবিত্রতা বিধানকারী পানি। যেমন, বৃষ্টির পানি এবং ভূমি থেকে উদ্গত যে কোনো পানি। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَيُنَزِّلُ عَلَيۡكُم مِّنَ ٱلسَّمَآءِ مَآءٗ لِّيُطَهِّرَكُم بِهِ﴾ [الانفال: ١١]
“তিনি (আল্লাহ তা‘আলা) তোমাদেরকে পবিত্র করার জন্য আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষণ করেন”। [সূরা আল-আনফাল, আয়াত: ১১]
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকবীরে তাহরীমা ও কিরাতের মধ্যবর্তী স্থানে অনুচ্চস্বরে বলতেন:
«اللَّهُمَّ اغْسِلْ خَطَايَايَ بِالْـمَاءِ وَالثَّلْجِ وَالْبَرَدِ».
“হে আল্লাহ! আপনি আমার গুনাহগুলো পানিবরফ ও শিশির দিয়ে ধৌত করুন”।[12]
এ প্রকারের পানি আবার তিন ভাগে বিভক্ত :
ক. যা ব্যবহার করা হারাম। তবে তা বিধানগত নাপাকী (অযুগোসল কিংবা তায়াম্মুমের মাধ্যমে যা দূর করা হয়) দূর করতে সক্ষম না হলেও বাহ্য নাপাকী (মলমূত্রঋতুস্রাব ইত্যাদি) দূর করতে সক্ষম। এ পানি এমন যা জায়েয পন্থায় সংগৃহীত নয়। যেমন, আত্মসাৎ বা বলপ্রয়োগে ছিনিয়ে আনা পানি।
জাবির রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঐতিহাসিক ‘আরাফা ময়দানে বিদায়ী ভাষণে বলেন,
«إِنَّ دِمَاءَكُمْ وَأَمْوَالَكُمْ حَرَامٌ عَلَيْكُمْ كَحُرْمَةِ يَوْمِكُمْ هَذَا، فِيْ شَهْرِكُمْ هَذَا، فِيْ بَلَدِكُمْ هَذَا».
“নিশ্চয় তোমাদের জান ও সম্পদ সংহার করা পরস্পরের ওপর হারাম যেমনিভাবে হারাম তোমাদের এ দিনতোমাদের এ মাসে, তোমাদের এ শহরে”।[13]
খ. যা বিকল্প থাকাবস্থায় ব্যবহার করা মাকরূহ। এ পানি এমন যা নাপাক জ্বালানি কাঠ বা খড়কুটো দিয়ে উত্তপ্ত করা হয়েছে। কারণএ জাতীয় পানি নাপাকীর সূক্ষ্ম সংমিশ্রণ থেকে মুক্ত নয়।
হাসান ইবন ‘আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«دَعْ مَا يَرِيْبُكَ إِلَى مَا لاَ يَرِيْبُكَ».
“সন্দেহজনক বস্তু পরিত্যাগ করে সংশয়হীন বস্তু অবলম্বন কর”।[14]
তেমনিভাবে স্বচ্ছ ও নির্মল পানি থাকাবস্থায় কর্পূরতৈলআলকাতরা ইত্যাদি মিশ্রিত পানি ব্যবহার করা মাকরূহ।
গ. যা ব্যবহার করা সম্পূর্ণরূপে জায়েয। যেমনপুকুরনদীখালবিলকূপসাগরবিগলিত বরফবৃষ্টি ইত্যাদির পানি। এ সম্পর্কীয় প্রমাণ ইতোপূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে।
২. পবিত্র তবে পবিত্রতা বিধানকারী নয়:
যে পানির রংস্বাদ বা ঘ্রাণ পবিত্র কোনো বস্তুর সংমিশ্রণে বদলে গিয়েছে। এমনকি অন্য নাম ধারণ করেছে। যেমনশিরাশুরুয়া ইত্যাদি। তা পবিত্র তবে পবিত্রতা বিধানের কাজে তা ব্যবহার করা যাবে না। এ ব্যাপারে সকল আলিমের ঐকমত্য রয়েছে।
৩. যা নাপাক ও ব্যবহার করা হারাম :
যে পানিতে নাপাকী পড়েছেঅথচ তা দু’ ক্বুল্লা থেকে কম অথবা দু’ ক্বুল্লা বা ততোধিক কিন্তু নাপাকী পড়ে এর রংঘ্রাণ বা স্বাদের কোনো একটির পরিবর্তন ঘটেছে। এমতাবস্থায় সে পানি নাপাক ও ব্যবহার নিষিদ্ধ। এ সম্পর্কীয় প্রমাণাদি পূর্বোল্লিখিত হয়েছে। 

মাটি কর্তৃক পবিত্রতা:
পবিত্রতা অর্জনের ক্ষেত্রে পাক মাটি পানির স্থলাভিষিক্ত। পানি ব্যবহারে স্বাস্থ্যগত কোনো সমস্যার প্রবল সম্ভাবনা দেখা দিলে অথবা অযু-গোসলের পানি যোগানো অসম্ভব প্রমাণিত হলে পানির পরিবর্তে পবিত্র মাটি কর্তৃক পবিত্রতা অর্জন করার শরঈ বিধান রয়েছে।
আবু যর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিততিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«إِنَّ الصَّعِيْدَ الطَّيِّبَ طَهُوْرُ الـْمُسْلِمِ وَإِنْ لَمْ يَجِدِ الـْمَاءَ عَشْرَ سِنِيْنَ»

নিশ্চয় পবিত্র মাটি মুসলিমদের জন্য পবিত্রতা অর্জনের এক বিকল্প মাধ্যম। যদিও সে দশ বছর নাগাদ পানি না পায়[15]


নাপাকীর প্রকারভেদ ও তা থেকে পবিত্রতা অর্জন:
শরী‘আতের পরিভাষায় নাপাকী বলতে দূরীকরণ আবশ্যক এমন সকল ময়লা-আবর্জনাকে বুঝানো হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন,
﴿وَثِيَابَكَ فَطَهِّرۡ ٤﴾ [المدثر: ٤] 
তোমার পোষাক-পরিচ্ছদ পবিত্র রাখো। [সূরা আল-মুদ্দাস্‌সির, আয়াত: ৪]
আল্লাহ তাআলা আরো বলেন,
﴿وَيَسۡ‍َٔلُونَكَ عَنِ ٱلۡمَحِيضِۖ قُلۡ هُوَ أَذٗى فَٱعۡتَزِلُواْ ٱلنِّسَآءَ فِي ٱلۡمَحِيضِ وَلَا تَقۡرَبُوهُنَّ حَتَّىٰ يَطۡهُرۡنَۖ فَإِذَا تَطَهَّرۡنَ فَأۡتُوهُنَّ مِنۡ حَيۡثُ أَمَرَكُمُ ٱللَّهُۚ إِنَّ ٱللَّهَ يُحِبُّ ٱلتَّوَّٰبِينَ وَيُحِبُّ ٱلۡمُتَطَهِّرِينَ ٢٢٢﴾ [البقرة: ٢٢٢]
“তারা (সাহাবীগণ) আপনাকে ঋতুস্রাব সম্পর্কে জিজ্ঞেস করছে। আপনি বলুন! তা হচ্ছে অশুচিতা। অতএব, তোমরা ঋতুকালে স্ত্রীদের নিকট যাবে না ও তাদের সাথে সহবাসে লিপ্ত হবে না যতক্ষণ না তারা সম্পূর্ণরূপে পবিত্র হয়ে যায়। তবে যখন তারা (গোসল করে) ঋতুস্রাব থেকে পবিত্র হয়ে যাবে তখন তোমরা তাদের সাথে সে পথেই সহবাস করবে যে পথে সহবাস করা আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের জন্য হালাল করে দিয়েছেন অর্থাৎ সম্মুখ পথে। নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা তাওবাকারী ও পবিত্রতা অন্বেষণকারীদের ভালোবাসেন”। [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ২২২]

নাপাকীর প্রকারভেদ :
নিম্নে কিছু সংখ্যক নাপাকীর বর্ণনা তুলে ধরা হলো :
১. মানুষের মল-মূত্র :
মানুষের মল-মূত্র নাপাক।
‘আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিততিনি বলেন, 
«مَرَّ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيه وسلم بِقَبْرَيْنِ، فَقَالَ: إِنَّهُمَا لَيُعَذَّبَانِ، وَمَايُعَذَّبَانِ فِيْ كَبِيْرٍ، أَمَّا أَحَدُهُمَا فَكَانَ لاَ يَسْتَتِرُ مِنَ الْبَوْلِ، وَأَمَّا الآخَرُ فَكَانَ يَمْشِيْ بِالنَّمِيْمَةِ».
“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’টি কবরের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন তখন তিনি বললেন: কবর দু’টিতে শায়িত ব্যক্তিদ্বয়কে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। তবে উভয়কে বড় কোনো গুনাহ’র কারণে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে না। তাদের একজন প্রস্রাব থেকে সম্পূর্ণরূপে পবিত্রতা অর্জন করতো না। আর অপরজন চোগলখোরী করত (একজনের কথা আরেক জনকে বলে পরস্পরের মধ্যে দ্বন্দ্ব লাগিয়ে দিত)।[16]

মল-মূত্র ত্যাগের শর‘ঈ নিয়ম :
শৌচাগারে প্রবেশের সময় যে দো‘আ পড়তে হয় :
আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিততিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মল-মূত্র ত্যাগের জন্য শৌচাগারে প্রবেশের ইচ্ছে করতেন তখন বলতেন :
«اَللّٰهُمَّ إِنِّيْ أَعُوْذُبِكَ مِنَ الْـخُبْثِ وَالْـخَبَائِثِ»
“হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি আপনার নিকট অপবিত্র জিন্ন ও জিন্নীর (অনিষ্টতা) থেকে আশ্রয় চাচ্ছি”।[17]
তিনি আরো বলেন, শৌচাগার হচ্ছে জিন্ন ও শয়তানের অবস্থানক্ষেত্র। তাই যখন তোমরা সেখানে যাবে তখন বলবে :
«أَعُوْذُ بِاللهِ مِنَ الْـخُبْثِ وَالْـخَبَائِثِ».
“আমি আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাচ্ছি অপবিত্র জিন্ন ও জিন্নীর (অনিষ্ট) থেকে”।[18]
শৌচাগারে প্রবেশের পূর্বে بِسْمِ اللهِ টুকুও পড়ে নিবে।
‘আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিততিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«سَتْرُ مَا بَيْنَ أَعْيُنِ الْجِنِّ وَعَوْرَاتِ بَنِيْ آدَمَ، إِذَا دَخَلَ أَحَـدُهُمُ الـْخَلاَءَ؛ أَنْ يَقُوْلَ: بِسْمِ اللهِ».
“মানুষের সতর (যা ঢেকে রাখা ফরয) ও জিন্নদের চোখের মাঝে আড় হচ্ছে যখন মানুষ শৌচাগারে প্রবেশ করবে তখন বলবে, বিসমিল্লাহ”।[19]

শৌচাগার থেকে বের হওয়ার সময় যে দো‘আ পড়তে হয়:
‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিততিনি বলেন, যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শৌচাগার থেকে বের হতেন তখন বলতেন:
«غُفْرَانَكَ»
“হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছি”।[20]

মল-মূত্র ত্যাগ সম্পর্কীত মাসআলাসমূহ

১. মল-মূত্র ত্যাগের সময় কিবলামুখী হওয়া অথবা কিবলাকে পেছন দেওয়া জায়েয নয়।
আবু আইয়ূব আনসারী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিততিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إِذَا أَتَيْتُمُ الْغَائِطَ فَلاَ تَسْتَقْبِلُوْا الْقِبْلَةَ وَلاَ تَسْتَدْبِرُوْهَا بِبَوْلٍ وَلاَ غَائِطٍ»
“তোমরা যখন প্রস্রাব বা পায়খানার জন্য শৌচাগারে প্রবেশ করবে তখন কিবলামুখী হবে না এবং কিবলাকে পশ্চাতে ও দেবে না”।[21]
উক্ত হাদীস বর্ণনাকারী আবু আইয়ূব আনসারী রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমরা সিরিয়ায় সফর করলে সেখানের শৌচাগারগুলো কিবলামুখী দেখতে পাই। তখন আমরা আল্লাহর দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করে কিবলা ছেড়ে অন্য দিকে ফিরে ইস্তিঞ্জাকর্ম সম্পাদন করি।

২. গোবর অথবা হাড় দিয়ে ইস্তিঞ্জা তথা মল-মূত্র পরিস্কার করা জায়েয নয়।
সালমান ফারসী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিততিনি বলেন,
«لَقَدْ نَهَانَا رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيه وسلم أَنْ نَسْتَقْبِلَ الْقِبْلَةَ لِغَائِطٍ أَوْ بَوْلٍ، أَوْ نَسْتَنْجِيَ بِالْيَمِيْنِ، أَوْ نَسْتَنْجِيَ بِأَقَلَّ مِنْ ثَلاَثَةِ أَحْجَارٍ، أَوْ نَسْتَنْجِيَ بِرَجِيْعٍ أَوْ بِعَظْمٍ».
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে কিবলামুখী হয়ে মল-মূত্র ত্যাগডান হাতে ইস্তিঞ্জাতিনটি ঢিলার কমে ইস্তিঞ্জা এবং গোবর অথবা হাড় দিয়ে ইস্তিঞ্জা করতে নিষেধ করেছেন”।[22]
হাড় হচ্ছে জিন্নদের খাদ্য এবং মানবপালিত পশুর মল হচ্ছে জিন্নদের পশুর খাদ্য।
আব্দুল্লাহ ইবন মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিততিনি বলেন: জিন্নরা যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তাদের খাদ্য সম্পর্কে প্রশ্ন করে তখন তিনি বলেন,
«لَكُمْ كُلُّ عَظْمٍ ذُكِرَ اسْمُ اللهِ عَلَيْهِ يَقَعُ فِيْ أَيْدِيْكُمْ أَوْفَرَ مَا يَكُوْنُ لَحْمًا، وَكُلُّ بَعْرَةٍ عَلَفٌ لِدَوَابِّكُمْ».
“আল্লাহ তা‘আলার নাম উচ্চারিত হয়েছে এমন প্রতিটি হাড় তোমাদের খাদ্য। তা তোমরা গোশতে পরিপূর্ণ পাবে। তেমনিভাবে উটের প্রতিটি মলখণ্ড তোমাদের পশুর খাদ্য। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীদেরকে উদ্দেশ্য করে বলেন,
«فَلاَ تَسْتَنْجُوْا بِهِمَا، فَإِنَّهُمَا طَعَامُ إِخْوَانِكُمْ».
“অতএব তোমরা এ দু’টি বস্তু দিয়ে ইস্তিঞ্জা করবে না। কারণএগুলো তোমাদেরই ভাই জিন্নদের খাদ্য”।[23]

৩. পথে-ঘাটেবৈঠকখানা অথবা ছায়াবিশিষ্ট গাছের তলায় মল-মূত্র ত্যাগ করা জায়েয নয়।
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিততিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«اِتَّقُوْا اللَّعَّانَيْنِ، قَالُوْا: وَمَا اللَّعَّانَانِ يَا رَسُوْلَ اللهِ؟ قَالَ: الَّذِيْ يَتَخَلَّى فِيْ طَرِيْقِ النَّاسِ أَوْ فِيْ ظِلِّهِمْ».
“তোমরা অভিশাপের দু’টি কারণ হতে দূরে থাকো। সাহাবায়ে কেরাম রাদিয়াল্লাহু আনহুম বললেন: অভিশাপের কারণ দু’টি কীতিনি বললেন: পথে-ঘাটে অথবা ছায়াবিশিষ্ট গাছের তলায় মল-মূত্র ত্যাগ করা”।[24]
মু‘আয রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিততিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«اِتَّقُوْا الْـمَلاَعِنَ الثَّلاَثَةَ : اَلْبَرَازَ فِي الْمَوَارِدِ، وَقَارِعَةِ الطَّرِيْقِ، وَالظِّلِّ».
“তোমরা তিনটি অভিশাপের কারণ থেকে দূরে থাকো: নদী বা পুকুর ঘাটপথের মধ্যভাগ ও ছায়ায় মল ত্যাগ করা থেকে”।[25]

৪. ডান হাত দিয়ে লজ্জাস্থান স্পর্শ বা ইস্তিঞ্জা করা জায়েয নয়।
আবু ক্বাতাদাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিততিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إِذَا شَرِبَ أَحَدُكُمْ فَلاَ يَتَنَفَّسْ فِيْ الإِنَـاءِ، وَإِذَا أَتَى الـْخَلاَءَ فَلاَ يَمَسَّ ذَكَرَهُ بِيَمِيْنِهِ، وَلاَ يَتَمَسَّحْ بِيَمِيْنِهِ».
“তোমাদের কেউ যেন পানি পান করার সময় পানপাত্রে নিশ্বাস ত্যাগ না করে। শৌচাগারে প্রবেশ করলে যেন ডান হাত দিয়ে নিজ লজ্জাস্থান স্পর্শ না করে। এমনকি ডান হাত দিয়ে যেন ঢিলা-কুলুপও না করে”।[26]
আবু ক্বাতাদাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে আরো বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«وَلاَ يَسْتَنْجِ بِيَمِيْنِهِ»
“এমনকি ডান হাত দিয়ে কেউ যেন ইস্তিঞ্জাও না করে”।[27]

৫. ঢিলা-কুলুপ ব্যবহার করলে বেজোড় ব্যবহার করতে হয়।
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিততিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«وَمَنِ اسْتَجْمَرَ فَلْيُوْتِرْ».
“ঢিলা-কুলুপ ব্যবহার করলে বেজোড় ব্যবহার করবে”।[28]

৬. ঢিলা-কুলুপ ব্যবহার করলে কমপক্ষে তিনটি ব্যবহার করতে হয়।  
সালমান ফারসী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিততিনি বলেন,
«لَقَدْ نَهَانَا رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيه وسلم أَنْ لاَ يَسْتَنْجِيَ أَحَدُنَا بِأَقَلَّ مِنْ ثَلاَثَةِ أَحْجَارٍ».
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে নিষেধ করেন, যেন আমাদের কেউ তিনটি ঢিলার কম ব্যবহার না করে”।[29]
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিততিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إِذَا ذَهَبَ أَحَدُكُمْ إِلَى الْغَائِطِ فَلْيَذْهَبْ مَعَهُ بِثَلاَثَةِ أَحْجَارٍ يَسْتَطِيْبُ بِهِنَّ فَإِنَّهَا تُجْزِئُ عَنْهُ».
“তোমাদের কেউ পায়খানা করতে গেলে সাথে তিনটি ঢিলা নিবে এবং তা দিয়ে ইস্তিঞ্জা করবে। কারণএ তিনটি ঢিলাই তার জন্য যথেষ্ট”। (আবু দাউদ ৪০)
এ হাদীসটি ইস্তিঞ্জার সময় শুধু ঢিলা ব্যবহার যথেষ্ট হওয়ার প্রমাণ। 

৭. মল-মূত্র ত্যাগের সময় আপনাকে কেউ যেন দেখতে না পায়।
জাবির রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিততিনি বলেন,
«كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيه وسلم إِذَا أَرَادَ الْبَرَازَ اِنْطَلَقَ حَتَّى لاَ يَرَاهُ أَحَدٌ».
“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মল-মূত্র ত্যাগের ইচ্ছে করতেন তখন এতদূর যেতেন যাতে কেউ তাঁকে দেখতে না পায়”।[30]

৮. পানিঢিলা অথবা যে কোনো মর্যাদাহীন পবিত্র বস্তু দিয়ে ভালোভাবে ইস্তিঞ্জা করে নিবে যাতে উভয় দ্বার সম্পূর্ণরূপে পরিষ্কার হয়ে যায়।
ইস্তিঞ্জা মূলতঃ তিন প্রকারের:
ক. প্রথমে ঢিলা অতঃপর পানি দিয়ে ইস্তিঞ্জা করা। প্রয়োজনে উভয়টি একসঙ্গে ব্যবহার করা যেতে পারে। কারণতাতে অধিক পরিচ্ছন্নতা অর্জিত হয়। তবে এ ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করা কখনোই ঠিক হবে না। যেমনপ্রস্রাবের পর ঢিলা হাতে নিয়ে শৌচাগারের বাইরে চল্লিশ কদম দেওয়ালেফট-রাইট করাবার বার উঠা-বসা করাকেউ পানির পূর্বে ঢিলা ব্যবহার না করলে তাকে পশুর সাথে তুলনা ও ঘৃণা করা কিংবা কটু বাক্য বানে তাকে জর্জরিত করা ইত্যাদি ইত্যাদি। ব্যাপারটি এমন পর্যায়ে উপনীত হলে তা অবশ্যই বিদ‘আত বলে গণ্য হবে। কারণবিশুদ্ধ হাদীসে উভয়টি একসঙ্গে ব্যবহার করার কোনো প্রমাণ নেই।
খ. শুধু পানি দিয়ে ইস্তিঞ্জা করা।
গ. ইস্তিঞ্জার জন্য শুধু ঢিলা ব্যবহার করা।
শুধু ঢিলা দিয়ে ইস্তিঞ্জা করার প্রমাণ ইতিপূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে। শুধু পানি দিয়ে ইস্তিঞ্জা করার ব্যাপারে আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিততিনি বলেন,
«كَانَ رَسُوْلُ اللهِ  صلى الله عليه وسلم يَدْخُلُ الْخَلاَءَ، فَأَحْمِلُ أَنَا وَغُلاَمٌ نَحْوِيْ إِدَاوَةً مِنْ مَاءٍ وَعَنَـزَةً، فَيَسْتَنْجِيْ بِالْمَاءِ».
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পায়খানায় গেলে আমি এবং আমার সমবয়সী একটি ছেলে এক লোটা পানি ও একটি হাতের লাঠি নিয়ে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অপেক্ষায় থাকতাম। অতঃপর তিনি পানি দিয়ে ইস্তিঞ্জা করতেন”।[31]
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিততিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«نَزَلَتْ هَذِهِ الآيَةُ فِيْ أَهْلِ قُبَاءَ ﴿فِيهِ رِجَالٞ يُحِبُّونَ أَن يَتَطَهَّرُواْ﴾ [التوبة: ١٠٨]  قَالَ: كَانُوْا يَسْتَنْجُوْنَ بِالْـمَاءِ فَنَزَلَتْ فِيْهِمْ هَذِهِ الآيَةُ».
“উক্ত আয়াতটি “তাতে এমন লোক রয়েছে যারা অধিক পবিত্রতাকে পছন্দ করে” [সূরা আত-তাওবাহ, আয়াত: ১০৮] কুবাবাসীদের সম্পর্কেই অবতীর্ণ হয়েছে। তিনি বলেন: তারা পানি দিয়ে ইস্তিঞ্জা করতো। অতএবতাদের সম্পর্কেই উক্ত আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে”।[32]
উক্ত হাদীস ইস্তিঞ্জার জন্য শুধু ঢিলা ব্যবহারের চাইতে কেবল পানি দিয়ে ইস্তিঞ্জা করা উত্তম হওয়ার প্রমাণ।

৯. প্রস্রাব করার সময় কোনো ব্যক্তি সালাম দিলে উত্তর দেওয়া যাবে না। এমতাবস্থায় কোনো কথা ও বলা যাবে না।
আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিততিনি বলেন,
«مَرَّ رَجُلٌ، وَرَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيه وسلم يَبُوْلُ، فَسَلَّمَ، فَلَمْ يَرُدَّ عَلَيْهِ».
“জনৈক সাহাবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পাশ দিয়ে যাচ্ছিল যখন তিনি প্রস্রাব করছিলেন। তখন সে তাঁকে সালাম দিলে তিনি কোনো উত্তর দেন নি”।[33]
মুহাজির ইবন ক্বুনফুয রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিততিনি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রস্রাব করছিলেন এমতাবস্থায় তাঁর নিকট এসে তাঁকে সালাম করলে তিনি সালামের উত্তর দেন নি। তবে তিনি দ্রুত অযু সেরে তার নিকট এ বলে আপত্তি জানান :
«إِنِّيْ كَرِهْتُ أَنْ أَذْكُرَ اللهَ -عَزَّ وَ جَلَّ- إِلاَّ عَلَى طُهْرٍ أَوْ قَالَ: عَلَى طَهَارَةٍ».
“আমি অপবিত্র থাকাবস্থায় আল্লাহর নাম উচ্চারণ করা অপছন্দ করি”।[34]

১০. গোসলখানায় প্রস্রাব করা নিষেধ।
আব্দুল্লাহ ইবন মুগাফ্‌ফাল রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিততিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«لاَ يَبُوْلَنَّ أَحَدُكُمْ فِيْ مُسْتَحَمِّهِ، ثُمَّ يَغْتَسِلُ فِيْهِ»
“তোমাদের কেউ গোসলখানায় প্রস্রাব অতঃপর গোসল করবে না”।[35]

১১. অযু ও ইস্তিঞ্জার লোটা ভিন্ন হওয়া উচিত।
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিততিনি বলেন,
«كَاْنَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيه وسلم إِذَا أَتَى الْخَلاَءَ، أَتَيْتُهُ بِمَاءٍ فِيْ تَوْرٍ أَوْ رَكْوَةٍ، فَاسْتَنْجَى، ثُمَّ مَسَحَ يَدَهُ عَلَى الأَرْضِ، ثُمَّ أَتَيْتُهُ بِإِنَاءٍ آخَرَ فَتَوَضَّأَ».
“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন শৌচাগারে যেতেন তখন আমি জগ বা লোটায় পানি নিয়ে তাঁর জন্য অপেক্ষা করতাম। অতঃপর তিনি তা দিয়ে ইস্তিঞ্জা করতেন। এরপর তিনি জমিনে হাত ঘঁষে নিতেন। পুনরায় আমি আরেকটি লোটা পানি নিয়ে আসলে তিনি তা দিয়ে অযু করতেন”।[36]

১২. মল-মূত্র ত্যাগ বা ভোজনের বেশী প্রয়োজনীয়তা দেখা দিলে তা প্রথমে সেরে নিবে। অতঃপর সালাত আদায় করবে। কারণতা প্রথমে না সেরে সালাত আদায় করতে গেলে সালাতে মন স্থির হবে না বরং অস্থিরতায় ভুগতে হবে। 
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিততিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«لاَ صَلاَةَ بِحَضْرَةِ الطَّعَامِ، وَلاَ هُوَ يُدَافِعُهُ الأَخْبَثَانِ»
“খাবার উপস্থিত (প্রয়োজনও রয়েছে) এবং মল-মূত্রের চাপও রয়েছে এমতাবস্থায় সালাত আদায় হবে না”।[37]

১৩. মল-মূত্র ত্যাগের সময় সম্পূর্ণরূপে বসার প্রস্তুতি নিলেই কাপড় খুলবেতার পূর্বে নয়।
আনাস  রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিততিনি বলেন,
«كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيه وسلم إِذَا أَرَادَ الْحَاجَةَ، لَمْ يَرْفَعْ ثَوْبَهُ حَتَّى يَدْنُوَ مِنَ الأَرْضِ».
“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মল-মূত্র ত্যাগের ইচ্ছে করলে ভূমির নিকটবর্তী হলেই কাপড় খুলতেন। নইলে নয়”।[38]

১৪. স্থির পানিতে প্রস্রাব করা নিষেধ।
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিততিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«لاَ يَبُوْلَنَّ أَحَدُكُمْ فِي الـْمَاءِ الدَّائِمِ الَّذِيْ لاَ يَجْرِيْ ثُمَّ يَغْتَسِلُ مِنْهُ».
“তোমাদের কেউ স্থির পানিতে প্রস্রাব অতঃপর গোসল করবে না”।[39]

১৫. ইস্তিঞ্জা করার পর হাতখানা মাটি দিয়ে ঘষে অতঃপর ধুয়ে নিবে।
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিততিনি বলেন,
«قَضَى النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيه وسلم حَاجَتَهُ ثُمَّ اسْتَنْجَى مِنْ تَوْرٍ، ثُمَّ دَلَكَ يَدَهُ بِالأَرْضِ».
“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মল-মূত্র ত্যাগ করে এক লোটা পানি দিয়ে ইস্তিঞ্জা করেছেন। অতঃপর মাটি দিয়ে নিজের হাত খানা ঘঁষে নিয়েছেন”।[40]

১৬. বসার স্থান চাইতে তুলনামূলক নরম ও নিচু স্থানে প্রস্রাব করবে। যাতে প্রস্রাবের ছিঁটা-ফোঁটা নিজের শরীরে না পড়ে।

প্রস্রাবের ছিঁটা থেকে বাঁচার কঠিন নির্দেশ:
‘আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিততিনি বলেন, 
«مَرَّ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيه وسلم بِقَبْرَيْنِ، فَقَالَ: إِنَّهُمَا لَيُعَذَّبَانِ، وَمَايُعَذَّبَانِ فِيْ كَبِيْرٍ، أَمَّا أَحَدُهُمَا فَكَانَ لاَ يَسْتَتِرُ مِنَ الْبَوْلِ، وَأَمَّا الآخَرُ فَكَانَ يَمْشِيْ بِالنَّمِيْمَةِ».
“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুটি কবরের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন তখন তিনি বললেন: কবর দু’টিতে শায়িত ব্যক্তিদ্বয়কে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। তবে উভয়কে বড় কোনো গুনাহ’র কারণে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে না। তাদের একজন প্রস্রাব থেকে সম্পূর্ণরূপে পবিত্রতা অর্জন করতো না। আর অপরজন চোগলখোরী করতো (একজনের কথা আরেক জনকে বলে পরস্পরের মধ্যে দ্বন্দ্ব লাগিয়ে দিত)”।[41]
উক্ত হাদীস থেকে এটাই বুঝা গেলো যেপ্রস্রাবের ছিঁটা থেকে কঠিন সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। তাই যারা প্রস্রাব করার সময় সতর্কতা অবলম্বন করে নানিজের পোষাক-পরিচ্ছদকে প্রস্রাবের ছিঁটা থেকে রক্ষা করে নাএমনকি প্রস্রাবের পর পানি না পেলে ডেলা-কুলুপটিসু ইত্যাদিও ব্যবহার করে না তাদের জানা উচিতপ্রস্রাবের ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন না করা একদা কবরে শাস্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

১৭. বিনা প্রয়োজনে বাটি বা পাত্রে প্রস্রাব করা নিষেধ।
তবে কোনো প্রয়োজন থাকলে তা করা যেতে পারে।
উমাইমাহ বিনতে রুক্বাইক্বা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিততিনি বলেন,
«كَانَ لِلنَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَدَحٌ مِنْ عِيْدَانٍ تَحْتَ سَرِيْرِهِ، يَبُوْلُ فِيْهِ بِاللَّيْلِ».
“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খাটের নিচে কাঠের একটি পেয়ালা ছিল যাতে তিনি রাত্রিবেলায় প্রস্রাব করতেন”।[42]

১৮. মুসলিমদের কবরস্থানে মল-মূত্র ত্যাগ করা নিষেধ।
উক্ববাহ ইবন ‘আমির রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিততিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«مَا أُبَالِيْ أَوَسَطَ الْقُبُوْرِ قَضَيْتُ حَاجَتِيْ أَوْ وَسَطَ السُّوْقِ».
“আমার মতে কবরস্থানের মাঝখানে ও বাজারের মধ্যভাগে মল-মূত্র ত্যাগে কোনো পার্থক্য নেই। (মনুষ্যত্বের বিবেচনায় দু’টোই অপরাধ)”।[43]

মল-মূত্র থেকে পবিত্রতা 

ভূমির পবিত্রতা :
বিছানাঘর বা মসজিদের কোনো অংশে প্রস্রাব অথবা অন্য কোনো নাপাক (যা দৃশ্যমান) দেখা গেলে প্রয়োজন পরিমাণ পানি ঢেলে তা দূরীভুত করবে। একদা জনৈক গ্রাম্য ব্যক্তি মসজিদে নববীতে প্রস্রাব করলে সাহাবারা তার উপর ক্ষেপে যায়। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীদেরকে বললেন:
«دَعُوْهُ وَهَرِيْقُوْا عَلَى بَوْلِهِ سَجْلاً مِنْ مَاءٍ أَوْ ذَنُوْبًا مِنْ مَاءٍ فَإِنَّمَا بُعِثْتُمْ مُيَسِّرِيْنَ وَلَمْ تُبْعَثُوْا مُعَسِّرِيْنَ».
“তোমরা তাকে ছেড়ে দাওতাকে বাধা দিও না। তবে প্রস্রাবের উপর এক বালতি পানি ঢেলে দাও। কারণতোমাদেরকে সহজতার জন্যে পাঠানো হয়েছে কঠোরতার জন্যে নয়”।[44]
তিনি ওকে ডেকে আরো বললেন:                                       
«إِنَّ هَذِهِ الْـمَسَاجِدَ لاَ تَصْلُحُ لِشَيْءٍ مِنْ هَذَا الْبَوْلِ وَلاَ الْقَذَرِ، إِنَّمَا هِيَ لِذِكْرِ اللهِ عَزَّوَجَلَّ، وَالصَّلاَةِ، وَقِرَاءَ ةِ الْقُرْآنِ».
“এ মসজিদগুলো প্রস্রাব ও ময়লা করার জন্যে নয়। তা হচ্ছে আল্লাহর যিকির, সালাত ও কুরআন পড়ার স্থান”।[45]

নাপাক কাপড়ের পবিত্রতা:
পোশাক-পরিচ্ছদে নাপাক লেগে গেলে তা যদি দৃশ্যমান হয় প্রথমে তা হাত দিয়ে ঘষে (শুষ্ক হলে) অথবা যে কোনো পন্থায় (শুষ্ক না হলে) পরিষ্কার করে নিবে। অতঃপর তা পানি দিয়ে ধুয়ে নিবে।
আসমা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিততিনি বলেন, জনৈক মহিলা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে ঋতুস্রাব দ্বারা কলুষিত পোষাকের পবিত্রতা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন:
«إِذَا أَصَابَ ثَوْبَ إِحْدَاكُنَّ الدَّمُ مِنَ الْحَيْضَةِ فَلْتَقْرُصْهُ، ثُمَّ لْتَنْضَحْهُ بِمَاءٍ، ثُمَّ لْتُصَلِّيْ فِيْهِ».
“তোমাদের কারোর পোষাক ঋতুস্রাব দ্বারা কলুষিত হলে প্রথমে তা হাত দিয়ে ঘষে নিবে। অতঃপর তা পানি দিয়ে ধুয়ে নিলেই তাতে সালাত পড়া যাবে”।[46]

শাড়ীর নিম্নাংশের পবিত্রতা:
মহিলাদের বোরকাপাজামা ও শাড়ীর নিম্নাংশে কোনো নাপাকী লেগে গেলে হাঁটার সময় পরবর্তী মাটির ঘর্ষণ তা পবিত্র করে দিবে।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন,
«يُطَهِّرُهُ مَا بَعْدَهُ».
“পরবর্তী ধুলোমাটির মিশ্রণ উহাকে পবিত্র করে দিবে”।[47]


দুগ্ধপোষ্য শিশুর প্রস্রাব থেকে পবিত্রতা:
যে বাচ্চার খাদ্য শুধুমাত্র মায়ের দুধ সে ছেলে হলে এবং কোনো কাপড়ে প্রস্রাব করলে তার প্রস্রাবের উপর পানির ছিঁটা দিলেই কাপড়টি পাক হয়ে যাবে। আর সে মেয়ে হলে তা ধুয়ে নিতে হবে।
উম্মে ক্বাইস রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিততিনি বলেন,
«أَتَيْتُ بِابْنٍ لِيْ صَغِيْرٍ لَمْ يَأْكُلِ الطَّعَامَ إِلَى رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيه وسلم فَأَجْلَسَهُ فِيْ حِجْرِهِ فَبَالَ عَلَىْ ثَوْبِهِ فَدَعَا بِمَاءٍ فَنَضَحَهُ وَلَمْ يَغْسِلْهُ».
“আমি আমার একটি দুগ্ধপোষ্য শিশু নিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট উপস্থিত হলে তিনি তাকে কোলে উঠিয়ে নেন। অতঃপর শিশুটি তাঁর কোলে প্রস্রাব করে দেয়। তখন তিনি পানি আনতে বললেন। পানি আনা হলে তিনি তা কাপড়ে ছিঁটিয়ে দেন। তবে তিনি কাপড় ধোননি”।[48]
লুবাবাহ বিনতে হারিস রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিততিনি বলেন,
«بَالَ الْـحُسَيْنُ بْنُ عَلِيٍّ فِيْ حِجْرِ النَّبِىِّ  صلى الله عليه وسلم فَقُلْتُ: يَا رَسُوْلَ اللهِ! أَعْطِنِيْ ثَوْبَكَ وَالْبَسْ ثَوْبًا غَيْرَهُ، فَقَالَ: إِنَّمَا يُنْضَحُ مِنْ بَوْلِ الذَّكَرِ وَيُغْسَلُ مِنْ بَوْلِ الأُنْثَى».
“একদা হুসাইন ইবন ‘আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুমা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কোলে প্রস্রাব করে দিলে আমি তাঁকে বললাম: ময়লা (প্রস্রাবকৃত) কাপড়টি আমাকে দিন এবং আপনি অন্য একটি কাপড় পরে নিন। তখন তিনি বললেন: দুগ্ধপোষ্য ছেলের প্রস্রাব পানি ছিঁটিয়ে দিলেই পাক হয়ে যায়। আর মেয়েদের প্রস্রাব ধুয়ে নিতে হয়”।[49]
‘আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন,
«يُغْسَلُ مِنْ بَوْلِ الْـجَارِيَةِ، وَيُنْضَحُ مِنْ بَوْلِ الْغُلاَمِ مَا لَمْ يَطْعَمْ».
“মেয়েদের প্রস্রাব ধুয়ে নিতে হবে। আর দুগ্ধপোষ্য ছেলের প্রস্রাব পানি ছিঁটিয়ে দিলেই চলবে”।[50]

নাপাক জুতার পবিত্রতা:
জুতো-সেন্ডেলে নাপাকী লেগে গেলে ওগুলোকে মাটিতে ভালোভাবে ঘষে নিলেই চলবে, যাতে নাপাক দূর হয়ে যায়।  
আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিততিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إِذَا جَاءَ أَحَدُكُمْ إِلَى الـْمَسْجِدِ فَلْيَنْظُـرْ، فَإِنْ رَأَى فِيْ نَعْلَيْهِ قَذَرًا أَوْ أَذًى فَلْيَمْسَحْهُ، وَلْيُصَلِّ فِيْهِمَا».
“তোমাদের কেউ মসজিদে প্রবেশ করতে চাইলে জুতায় ময়লা (নাপাকী) আছে কিনা তা সর্বপ্রথম দেখে নিবে। তাতে ময়লা পরিলক্ষিত হলে ঘষে-মুছে পরিষ্কার করে নিবে এবং উক্ত জুতা পরাবস্থায়ই সালাত আদায় করবে”।[51]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন,
«إِذَا وَطِئَ أَحَدُكُمْ بِنَعْلِهِ الأَذَى ؛ فَإِنَّ التُّرَابَ لَهُ طَهُوْرٌ».
“তোমাদের কেউ নিজ জুতা দিয়ে ময়লা (নাপাকী) মাড়িয়ে গেলে পরবর্তী পবিত্র মাটির ঘর্ষণ উহাকে পবিত্র করে দিবে”।[52]

২. কুকুরের উচ্ছিষ্ট :
কুকুর কর্তৃক অপবিত্র থালা-বাসন ইত্যাদির পবিত্রতা :  
কুকুর কোনো থালা-বাসনে মুখস্থাপন করলে ওগুলোকে সাত বার ধুয়ে নিবে এবং উহার প্রথম বার মাটি দিয়ে ঘঁষে নিবে।
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিততিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«طُهُوْرُ إِنَاء أَحَدِكُمْ إِذَا وَلَغَ فِيْهِ الْكَلْبُ أَنْ يَغْسِلَهُ سَبْعَ مَرَّاتٍ أُوْلاَهُنَّ بِالتُّرَابِ».
“তোমাদের কারোর প্লেটে কুকুর মুখস্থাপন করলে উহাকে পবিত্র করতে হলে সাত বার পানি দিয়ে ধুয়ে নিবে এবং উহার প্রথম বার মাটি দিয়ে ঘষে নিবে”।[53]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন,
«إِذَا وَلَغَ الْكَلْبُ فِيْ إِنَاءِ أَحَدِكُمْ فَلْيُرِقْهُ، ثُمَّ لْيَغْسِلْهُ سَبْعَ مِرَارٍ».
“তোমাদের কারোর পানপাত্রে কুকুর মুখস্থাপন করলে তাতে খাদ্য পানীয় যা কিছু রয়েছে উহার সবটুকুই ঢেলে দিবে। অতঃপর উহাকে সাতবার ধুয়ে নিবে”।[54]

৩. প্রবাহিত রক্তশুকরের গোশত ও মৃত জন্তু:

উপরোক্ত বস্তুগুলো নাপাক। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿قُل لَّآ أَجِدُ فِي مَآ أُوحِيَ إِلَيَّ مُحَرَّمًا عَلَىٰ طَاعِمٖ يَطۡعَمُهُۥٓ إِلَّآ أَن يَكُونَ مَيۡتَةً أَوۡ دَمٗا مَّسۡفُوحًا أَوۡ لَحۡمَ خِنزِيرٖ فَإِنَّهُۥ رِجۡسٌ أَوۡ فِسۡقًا أُهِلَّ لِغَيۡرِ ٱللَّهِ بِهِ﴾ [الانعام: ١٤٥]
“আপনি (রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলে দিন! আমার নিকট অহীর মাধ্যমে প্রেরিত বিধানের মধ্যে আহারকারীর ওপর কোনো বস্তু হারাম করা হয়েছে এমন পাই নি। তবে শুধু মৃত জন্তুপ্রবাহিত রক্ত ও শূকরের গোশত যা হারাম করা হয়েছে। কেননাতা নিশ্চিত নাপাক ও শরী‘আত গর্হিত বস্তু যা আল্লাহ ছাড়া অন্যের নামে উৎসর্গ করা হয়েছে”। [সূরা আল-আন‘আম, আয়াত: ১৪৫]
তবে মৃত মাছ ও পঙ্গপাল পবিত্র ও তা খাওয়া জায়েয।
‘আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিততিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«أُحِلَّتْ لَنَا مَيْتَتَانِ وَدَمَانِ ؛ فَأَمَّا الْـمَيْتَتَانِ فَالْحُوْتُ وَالْجَرَادُ، وَأَمَّا الدَّمَانِ فَالْكَبِدُ وَالطِّحَالُ».
“আমাদের জন্য দু’টি মৃত জীব ও দু’ধরণের রক্ত হালাল করে দেওয়া হয়েছে। মৃত দু’টি হচ্ছে  মাছ ও পঙ্গপাল এবং রক্তগুলো হচ্ছে কলিজা ও তিল্লী”।[55]
এ ছাড়া সকল মৃত জীব নাপাক। তবে কোনো মুসলমান সে কখনোই এমনভাবে নাপাক হতে পারে না যে নাপাকী দূরীকরণ কোনোভাবেই সম্ভবপর নয়।
আবু হুরায়রা ও হুযাইফাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিততারা বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إِنَّ الْـمُسْلِمَ لاَ يَنْجُسُ».
“প্রকৃতপক্ষে মুসলিম কখনোই নাপাক হয় না”।[56]
যে জীবের রক্ত বহমান নয় সে ধরনের জীব প্রাণত্যাগ করলে তা নাপাক হয় না।
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিততিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
»إِذَا وَقَعَ الذُّبَابُ فِيْ شَرَابِ أَحَدِكُمْ فَلْيَغْمِسْهُ ثُمَّ لْيَنْزِعْهُ، فَإِنَّ فِيْ إِحْدَى جَنَاحَيْهِ دَاءً وَالأُخْرَى شِفَاءً».
“তোমাদের কারোর খাদ্যপানীয়তে মাছি বসলে ওকে তাতে ডুবিয়ে অতঃপর উঠিয়ে নিবে। কারণতার একটি ডানায় রয়েছে রোগ এবং অপরটিতে রয়েছে উপশম”।[57]

মৃত পশুর চামড়া সংক্রান্ত বিধান:

যে কোনো মৃত পশুর চামড়া (যা জীবিতাবস্থায় যবাই করে খাওয়া হালাল) দাবাগত (শুকিয়ে বা কোনো মেডিসিন ব্যবহার করে দূর্গন্ধমু্ক্ত করে নেওয়া) করে নিলে তা পাক হয়ে যাবে।
আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিততিনি বলেন, 
«تُصُدِّقَ عَلَىْ مَوْلاَةٍ لـِمَيْمُوْنَةَ بِشَاةٍ فَمَاتَتْ، فَمَرَّ بِهَا رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيه وسلم فَقَالَ : هَلاَّ أَخَذْتُمْ إِهَابَهَا فَدَبَغْتُمُوْهُ، فَانْتَفَعْتُمْ بِهِ ؟ فَقَالُوْا: إِنَّهَا مَيْتَةٌ فَقَالَ : إِنَّمَا حَرُمَ أَكْلُهَا».

“মাইমুনা রাদিয়াল্লাহু আনহার জনৈকা আযাদকৃত বান্দীকে একটি ছাগল ছাদকা দেওয়া হলে তা মরে যায়। ইতোমধ্যে ছাগলটির পাশ দিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যাচ্ছিলেন। তখন তিনি বললেন: তোমরা যদি এর চামড়া দাবাগত করে কাজে লাগাতে। সাহাবীগণ বললেন: ছাগলটি তো মৃত। তিনি বললেন: মৃত ছাগল খাওয়া হারাম। তবে তার চামড়া দাবাগত করে যে কোনো কাজে লাগানো জায়েয”।[58]

উম্মুল মুমিনীন সাওদাহ রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিততিনি বলেন,
«مَاتَتْ لَنَا شَاةٌ فَدَبَغْنَا مَسْكَهَا ثُمَّ مَازِلْنَا نَنْبِذُ فِيْهِ حَتَّى صَارَ شَنًّا».
“আমাদের একটি ছাগল মরে গেলে ওর চামড়া দাবাগত করে আমরা একটি মশক বানিয়ে নিয়েছিলাম। যাতে আমরা নাবীয (খেজুর পানিতে ভিজিয়ে যা তৈরি করা হয়) তৈরি করতাম। এমনকি মশকটি পুরাতন হয়ে যায়”।[59]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো ইরশাদ করেনঃ
«إِذَا دُبِغَ الإِهَابُ فَقَدْ طَهُرَ».
“কোনো কাঁচা চামড়া দাবাগত করা হলে তা পবিত্র হয়ে যায়”।[60]
উপরোক্ত হাদীসটি শূকর ব্যতীত যবেহ করে খাওয়া হালাল বা হারাম যে কোনো ধরণের পশুর চামড়া দাবাগত করলে পবিত্র হয়ে যায় তা প্রমাণ করে।
তবে যে পশুরা নিজ শিকারকে ছিঁড়ে-ফুঁড়ে খায় ওদের চামড়া কোনোভাবেই ব্যবহার করা যাবে না।
আবুল মালীহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিততিনি বলেন,  
«نَهَى رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيه وسلم عَنْ جُلُوْدِ السِّبَاعِ».
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিঁড়ে-ফুঁড়ে খায় এমন পশুদের চামড়া ব্যবহার করতে নিষেধ করেন”।[61]
মৃত পশুপাখির কেশরপশমপালক ইত্যাদি পবিত্র।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَمِنۡ أَصۡوَافِهَا وَأَوۡبَارِهَا وَأَشۡعَارِهَآ أَثَٰثٗا وَمَتَٰعًا إِلَىٰ حِينٖ﴾ [النحل: ٨٠]
“তেমনিভাবে আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের জন্য ব্যবস্থা করেছেন পশুদের পশমলোম ও কেশ হতে ক্ষণকালের গৃহসামগ্রী ও ব্যবহার উপকরণ”। [সূরা আন-নাহল, আয়াত: ৮০]

৪. বীর্য:
বীর্য বলতে উত্তেজনাসহ লিঙ্গাগ্র দিয়ে লাফিয়ে পড়া শুভ্র বর্ণের গাঢ় পানিকে বুঝানো হয়। তা নির্গত হলে গোসল ফরয হয়ে যায়। বীর্য পবিত্র বা অপবিত্র হওয়ার ব্যাপারে আলিমদের মধ্যে মতানৈক্য রয়েছে। তবে বিশুদ্ধ মত হচ্ছে বীর্য পবিত্র। এতদসত্ত্বেও বীর্য ভেজা হলে তা ধোয়া এবং শুষ্ক হলে তা খুঁটিয়ে ফেলা মুস্তাহাব।  
একদা আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার মেহমানখানায় জনৈক ব্যক্তি রাত্রিযাপন করলে তার স্বপ্নদোষ হয়ে যায়। অতঃপর সে নিজের বীর্যযুক্ত পোশাক ধুয়ে ফেলা লজ্জা ও ঝামেলাবোধ করছিল। এমতাবস্থায় ব্যাপারটি আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার কর্ণগত হলে তিনি তাকে বললেন:
«إِنَّمَا كَانَ يُجْزِئُكَ إِنْ رَأَيْتَهُ أَنْ تَغْسِلَ مَكَانَهُ، فَإِنْ لَمْ تَرَ نَضَحْتَ حَوْلَهُ، وَلَقَدْ رَأَيْتُنِيْ أَفْرُكُهُ مِنْ ثَوْبِ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيه وسلم فَرْكًا، فَيُصَلِّيْ فِيْهِ».
“তোমার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যেযেখানে বীর্য দেখবে সে জায়গাটুকু ধুয়ে ফেলবে। আর বীর্য দেখা না গেলে সন্দেহজনক জায়গার আশপাশে পানি ছিঁটিয়ে দিবে। নিশ্চয় আমি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাপড় থেকে বীর্য খুঁটে ফেলতাম। অতঃপর তিনি তা পরেই সালাত পড়তে যেতেন।”[62]
অন্য একটি বর্ণনায় রয়েছেঃ
«لَقَدْ رَأَيْتُنِيْ وَإِنِّيْ لَأَحُكُّهُ مِنْ ثَوْبِ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيه وسلم يَابِسًا بِظُفُرِيْ».
“নিশ্চয় আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাপড় থেকে নিজের নখ দিয়ে শুষ্ক বীর্য খুঁটে ফেলতাম”।[63]
তিনি আরো বলেন,
«كُنْتُ أَغْسِلُ الْجَنَابَةَ مِنْ ثَوْبِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيه وسلم فَيَخْرُجُ إِلَى الصَّلاَةِ، وَإِنَّ بُقَعَ الْـمَاءِ فِيْ ثَوْبِهِ».
“আমি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাপড় থেকে বীর্য ধুয়ে ফেলতাম। অতঃপর তিনি তা পরে সালাত পড়তে যেতেনঅথচ তাঁর কাপড়ে তখনো পানির দাগ পরিলক্ষিত হতো”।[64]

৫. মযী :
মযী বলতে সঙ্গমচিন্তা বা উত্তেজনাকর যৌন মেলামেশার সময় লিঙ্গাগ্র দিয়ে নির্গত আঠালো পানিকে বুঝানো হয়। তা অপবিত্র।

মযী বের হলে গোসল করতে হয় না:
শরীরে কোনো ধরণের যৌন উত্তেজনা অনুভব করলে লিঙ্গাগ্র দিয়ে অল্পসামান্য আঠালো পানি বের হওয়া একেবারেই স্বাভাবিক। তা থেকে নিষ্কৃতি পাওয়া যে কোনো সুস্থ পুরুষের পক্ষেই অসম্ভব। তাই ইসলামী শরী‘আত তা থেকে পবিত্রতার ব্যাপারে তেমন কোনো কঠোরতা প্রদর্শন করে নি। সুতরাং কারোর মযী বের হলে শুধু লিঙ্গ ও অণ্ডকোষ ধুয়ে অযু করে নিলেই চলবে। তবে শরীরের কোথাও লেগে গেলে তা ধুয়ে নিতে হবে।
‘আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিততিনি বলেন, আমার খুব মযী বের হতো। তবে আমি এ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করতে লজ্জাবোধ করতাম। কারণতাঁর কন্যা ফাতিমা আমার বিবাহ বন্ধনে ছিলেন। তাই আমি মিকদাদ ইবন আসওয়াদ রাদিয়াল্লাহু আনহুকে এ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে জেনে নিতে অনুরোধ করলাম। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বললেন:
«يَغْسِلُ ذَكَرَهُ وَيَتَوَضَّأُ»
“লিঙ্গ ধুয়ে অযু করে নিবে”।[65]
অন্য আরেকটি বর্ণনায় রয়েছে:
«لِيَغْسِلْ ذَكَرَهُ وَأُنْثِيَيْهِ وَلْيَتَوَضَّأْ وُضُوْءَ هُ لِلصَّلاَةِ»
“লিঙ্গ ও অণ্ডকোষ ধুয়ে নিবে এবং সালাতের অযুর ন্যায় অযু করে নিবে”।[66]
লুঙ্গিপাজামা ও প্যান্টের কোথাও মযী লেগে গেলে এক চিল্লু পানি হাতে নিয়ে সেখানে ছিঁটিয়ে দিলেই চলবে। তবে তা ধোয়াই সর্বোত্তম। কারণমযী তো নাপাকই। পাক তো আর নয়।
সাহল ইবন হুনাইফ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিততিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করেন:
«فَكَيْفَ بِمَا يُصِيْبُ ثَوْبِيْ مِنْهُ ؟ قَالَ: يَكْفِيْكَ بِأَنْ تَأْخُذَ كَفًّا مِنْ مَاءٍ، فَتَنْضَحَ بِهَا مِنْ ثَوْبِكَ حَيْثُ تَرَى أَنَّهُ أَصَابَهُ».
“মযী কাপড়ে লেগে গেলে কি করতে হবেরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: এক কোষ বা চিল্লু পানি নিয়ে কাপড়ের যেখানে মযী লেগেছে ছিঁটিয়ে দিবে। তাতেই যথেষ্ট হয়ে যাবে”।[67]
উক্ত হাদীসে “নাযহুন” শব্দটি হালকা ধোয়ার অর্থে ব্যবহৃত হওয়া অযৌক্তিক বা অস্বাভাবিক নয়। তাই ধোয়াই সর্বোত্তম।

৬. অদী:
অদী বলতে সাধারণত প্রস্রাবের আগে-পরে লিঙ্গাগ্র দিয়ে নির্গত শুভ্র বর্ণের গাঢ় ঘোলাটে পানিকেই বুঝানো হয়। তা থেকে পবিত্রতার জন্য লিঙ্গ ধুয়ে অযু করে নিলেই চলবে। তবে শরীরের কোনো জায়গায় অদী লেগে গেলে তাও ধুয়ে নিতে হবে।
মনীমযী ও অদীর মধ্যে পার্থক্য:
মযী হচ্ছে উত্তেজনার সময় লিঙ্গাগ্র দিয়ে নির্গত আঠালো পানি। আর মনী হচ্ছেচরম উত্তেজনাসহ লিঙ্গাগ্র দিয়ে লাফিড়ে পড়া শুভ্র বর্ণের গাঢ় পানি, যা মানব সৃষ্টির মৌলিক পদার্থ। এতে গোসল ফরয হয়। তেমনিভাবে অদী হচ্ছে প্রস্রাবের আগে-পরে নির্গত শুভ্র বর্ণের ঘোলাটে পানি। এতে গোসল ফরয হয় না।
৭. মহিলাদের ঋতুস্রাব:
ঋতুস্রাব বলতে প্রতি মাসে মহিলাদের যোনিদ্বার দিয়ে নির্গত নিয়মিত স্বাভাবিক রক্তস্রাবকে বুঝানো হয়। তা কোনো পোশাকে লেগে গেলে ঘষে-মলে ধুয়ে নিলেই চলবে।
আসমা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিততিনি বলেন, একদা জনৈকা মহিলা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ঋতুস্রাব মিশ্রিত পোশাকের পবিত্রতা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেন:
«إِحْدَانَا يُصِيْبُ ثَوْبَهَا مِنْ دَمِ الْـحَيْضَةِ، كَيْفَ تَصْنَعُ بِهِ ؟ قَالَ : تَحُتُّهُ، ثُمَّ تَقْرُصُهُ بِالْـمَاءِ، ثُمَّ تَنْضَحُهُ، ثُمَّ تُصَلِّيْ فِيْهِ».
“আমাদের কারো কারোর কাপড়ে কখনো কখনো ঋতুস্রাব লেগে যায়, তখন আমাদের করণীয় কীতিনি বললেন: বস্ত্রখণ্ডটি ঘষে-মলে পানি দিয়ে ধুয়ে নিবে। অতঃপর তা পরেই সালাত পড়তে পারবে”।[68]
তবে যৎসামান্য হলে তা না ধুলেও কোনো অসুবিধে নেই।
‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিততিনি বলেন,
«مَا كَانَ لإِحْدَانَا إِلاَّ ثَوْبٌ وَاحِدٌ تَحِيْضُ فِيْهِ ؛ فَإِنْ أَصَابَهُ شَيْءٌ مِنْ دَمٍ بَلَّتْهُ بِرِيْقِهَا ثُمَّ قَصَعَتْهُ بِرِيْقِهَا».
“আমাদের কারোর একটিমাত্র কাপড় ছিল যা সে ঋতুকালেও পরতো। অতএব, তাতে সামান্যটুকু রক্ত লেগে গেলে থুথু দিয়ে ভিজিয়ে নখ দিয়ে মলে নিতো”।[69]

ঋতুবতী সংক্রান্ত কিছু মাসআলা

ঋতুবতী মহিলার সাথে সহবাস করা নিষেধ:
ঋতুবতী মহিলার সাথে সহবাস করা মারাত্মক গুনাহ’র কাজ।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَيَسۡ‍َٔلُونَكَ عَنِ ٱلۡمَحِيضِۖ قُلۡ هُوَ أَذٗى فَٱعۡتَزِلُواْ ٱلنِّسَآءَ فِي ٱلۡمَحِيضِ وَلَا تَقۡرَبُوهُنَّ حَتَّىٰ يَطۡهُرۡنَۖ﴾ [البقرة: ٢٢٢]
“তারা আপনাকে নারীদের ঋতুস্রাব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করছে। আপনি বলে দিন, তা হচ্ছে অশুচিতা। অতএব, তোমরা ঋতুকালে স্ত্রীদের নিকট যাবে না। এমনকি তারা সম্পূর্ণরূপে পবিত্র হওয়া পর্যন্ত তাদের সাথে সহবাসেও লিপ্ত হবে না”। [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ২২২]
তবে ঘটনাচক্রে এমতাবস্থায় কেউ সহবাস করে ফেললে আল্লাহ তা‘আলার পাকড়াও থেকে বাঁচার জন্য তাঁর সন্তুষ্টির আশায় এক দিনার বা অর্ধ দিনার তাঁর রাস্তায় সদকা করে দিবে।
ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিততিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঋতুকালীন সহবাসকারী সম্পর্কে বলেন,
«يَتَصَدَّقُ بِدِيْنَارٍأَوْ نِصْفِ دِيْنَارٍ».
“সে এক দিনার (সাড়ে চার মাশা পরিমাণ স্বর্ণ) বা অর্ধ দিনার সদকা করে দিবে”।[70]


ঋতুবতী মহিলার সাথে মেলামেশা:
ঋতুবতী মহিলার সাথে খাওয়া-দাওয়াউঠা-বসামেলামেশাচুম্বনউত্তেজনাকর স্পর্শ বা জড়াজড়ি ইত্যাদি জায়েয।
মোট কথা, সহবাস ছাড়া যে কোনো কাজ ঋতুবতী মহিলার সাথে জায়েয।
আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিততিনি বলেন, ইয়াহূদী সম্প্রদায় তাদের মধ্যে কোনো মহিলা ঋতুবতী হলে তার সাথে খাওয়া-দাওয়ামেলামেশা এমনকি একই ঘরে বসবাস করাও বন্ধ করে দিতো। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন:
«اِصْنَعُوْا كُلَّ شَيْءٍ إِلاَّ النِّكَاحَ»
“ঋতুবতীর সাথে সহবাস ছাড়া সব কাজই করতে পারো”।[71]
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিততিনি বলেন,
«كَانَتْ إِحْدَانَا إِذَا كَانَتْ حَائِضًا، فَأَرَادَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيه وسلم أَنْ يُبَاشِرَهَا، أَمَرَهَا أَنْ تَتَّزِرَ فِيْ فَوْرِ حَيْضَتِهَا ثُمَّ يُبَاشِرُهَا، قَالَتْ: وَأَيُّكُمْ يَمْلِكُ إِرْبَهُ كَمَا كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيه وسلم يَمْلِكُ إِرْبَهُ».
“আমাদের কেউ ঋতুবতী হলে এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সাথে মেলামেশা করতে চাইলে ঋতুস্রাব চলমান থাকাবস্থায় তাকে মজবুত করে ইযার (নিম্নবসন) পরতে বলতেন। তখন তিনি তার সাথে মেলামেশা করতেন। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, তোমাদের কেউ কি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মতো নিজ যৌনতাড়নাকে সংবরণ করতে পারবেঅবশ্যই নয়”।[72]
এতদসত্ত্বেও যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এতো সতর্কতা অবলম্বন করেছিলেন। সরাসরি তিনি স্ত্রীদের সাথে মেলামেশা করতে যান নি। তাহলে আমরা নিজের ওপর কতটুকু ভরসা রাখতে পারবো তা আমরা ভালোভাবেই জানি।
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে আরো বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন:
«نَاوِلِيْنِيْ الْـخُمْرَةَ مِنَ الْـمَسْجِدِ، قَالَتْ: فَقُلْتُ: إِنِّيْ حَائِضٌ، فَقَالَ: إِنَّ حَيْضَتَكِ لَيْسَتْ فِيْ يَدِكِ».
“আমাকে মসজিদ থেকে বিছানাটা দাওতো। তিনি বলেন: আমি বলল­ম, আমি তো ঋতুবতী। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: স্রাব তো তোমার হাতে লেগে থাকে নি”।[73]
‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা আরো বলেন,
«كَانَ رَسُوْلُ اللهِ-صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَ سَلَّمَ- يَتَّكِئُ فِيْ حِجْرِيْ وَأَنَا حَائِضٌ، فَيَقْرَأُ الْقُرْآنَ».
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার কোলে ভর দিয়ে কুরআন শরীফ পড়তেন, অথচ আমি ঋতুবতী ছিলাম”।[74]


ঋতুবতী মহিলার কুরআন পাঠ:
জুনুবী ব্যক্তি ও ঋতুবতী মহিলার জন্য কুরআন শরীফ মুখস্থ তিলাওয়াত করা হারাম হওয়ার ব্যাপারে বিশুদ্ধ কোনো হাদীস পাওয়া যায় না। তবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পেশাব করার সময় যখন জনৈক সাহাবি তাঁকে সালাম দেন তখন তিনি অযু না করে সালামের উত্তর দেওয়া অপছন্দ করেন। এ থেকে আমাদের বুঝতে অসুবিধে হয় না যেজুনুবী ব্যক্তি ও ঋতুবতী মহিলার জন্য কুরআন তিলাওয়াত করা অবশ্যই অপছন্দনীয়।
মুহাজির ইবন ক্বুনফুয রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিততিনি বলেন,
«أَتَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيه وسلم وَهُـوَ يَبُوْلُ، فَسَلَّمْتُ عَلَيْهِ، فَلَمْ يَرُدَّ عَلَيَّ حَتَّى تَوَضَّأَ، ثُمَّ اعْتَذَرَ إِلَيَّ فَقَالَ: إِنِّيْ كَرِهْتُ أَنْ أَذْكُرَ اللهَ -عَزَّ وَجَلَّ- إِلاَّ عَلَى طُهْرٍ».
“আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট আসলাম যখন তিনি প্রস্রাব করছিলেন। অতঃপর আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সালাম দিলে তিনি অযু না করা পর্যন্ত অত্র সালামের উত্তর দেন নি। এতদ্ কারণে তিনি আমার নিকট এ বলে কৈফিয়ত দিয়েছেন যেপবিত্র না হয়ে আল্লাহ তা‘আলার নাম উচ্চারণ করা আমার নিকট খুবই অপছন্দনীয়”।[75]
তবে কুরআন তিলাওয়াত ছাড়া অন্য কোনো যিকির করায় কোনো অসুবিধে নেই। কেননা, ‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিততিনি বলেন, হজ করতে গিয়ে আমি ঋতুবতী হয়ে গেলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন:
«اِفْعَلِيْ مَا يَفْعَلُ الْحَاجُّ غَيْرَ أَنْ لاَ تَطُوْفِيْ بِالْبَيْتِ حَتَّى تَطْهُرِيْ»
“তুমি বাইতুল্লাহ তাওয়াফ ব্যতীত সব কাজই করতে পার যা হাজী সাহেবগণ করে থাকেন। তবে তাওয়াফ করবে পবিত্র হয়ে”।[76]
উম্মে ‘আতিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিততিনি বলেন,
«أَمَرَنَا رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيه وسلم أَنْ نُخْرِجَهُنَّ فِي الْفِطْرِ وَالأَضْحَى، الْعَوَاتِقَ وَالْـحُيَّضَ وَذَوَاتِ الْـخُدُوْرِ، فَأَمَّا الْـحُيَّضُ فَيَعْتَزِلْنَ الصَّلاَةَ وَيَشْهَدْنَ الـْخَيْرَ وَدَعْوَةَ الْـمُسْلِمِيْنَ وَيُكَبِّرْنَ مَعَ النَّاسِ».
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে আদেশ করেছেন যেন আমরা বয়স্কাঋতুবতী ও পর্দানশীন যুবতী মহিলারদেরকে নিয়ে দু’ ঈদের সালাতে উপস্থিত হই। তবে ঋতুবতীরা সালাতে উপস্থিত হবে না। শুধু তারা মুসলিমদের সাথে দো‘আয় ও কল্যাণকর কাজে অংশ নিবে এবং সবার সাথে তাকবীর বলবে”।[77]
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিততিনি বলেন,
«كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيه وسلم يَذْكُرُ اللهَ عَلَى كُلِّ أَحْيَانِهِ».
“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বদা আল্লাহ্’র যিকিরে মগ্ন থাকতেন”।[78]
উক্ত হাদীসগুলোর প্রতি গভীর দৃষ্টি দিলে এ ব্যাপারটি সহজে উদঘাটিত হয় যেজুনুবী ও ঋতুবতী মহিলাদের জন্য সাধারণ যিকির করায় কোনো অসুবিধে নেই। তবে কোনো হাফিযা মহিলা যদি কুরআন শরীফ ভুলে যাওয়ার আশঙ্কা করে তা হলে সে মুখস্থ কুরআন পড়তে ও কাউকে শুনাতে পারে।

ঋতুবতী মহিলার সালাত-সাওম:
ঋতুবতী মহিলা ঋতু চলাকালীন সময় সালাত-সাওম কিছুই আদায় করবে না। তবে যখন সে পবিত্র হবে তখন শুধু রোযাগুলো কাযা (নিদৃষ্ট সময়ে আদায় করতে না পারা কাজ পরবর্তী সময়ে হুবহু আদায় করা) করে নিবে।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা মহিলাদের ধার্মিকতার ত্রুটি-বিচ্যুতি বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন,
«أَلَيْسَ إِذَا حَاضَتْ لَمْ تُصَلِّ وَلَمْ تَصُمْ»
“এমন নয় কি যেমহিলাদের যখন ঋতুস্রাব হয় তখন তারা
সালাত-সাওম কিছুই আদায় করতে পারে না”।
[79]
মু‘আযা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিততিনি বলেন, আমি ‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা কে জিজ্ঞাসা করলাম: ঋতুবতী মহিলারা শুধু সাওম কাযা করবে, সালাত কাযা করবে না এমন হবে কেনতিনি বললেন: তুমি কি হারুরী তথা খারেজী মহিলা? (স্বভাবতঃ তারাই শরী‘আতের ব্যাপারে এমন উদ্ভট প্রশ্ন করে থাকে) আমি বললাম: আপনার ধারণা ঠিক নয়, তবে আমার শুধু জানার ইচ্ছে হচ্ছে। তিনি বলেন,
«كَانَ يُصِيْبُنَا ذَلِكَ فَنُؤْمَرُ بِقَضَاءِ الصَّوْمِ وَلاَ نُؤْمَرُ بِقَضَاءِ الصَّلاَةِ»
“আমাদের ও এমন হতো। তবে আমাদেরকে সাওম কাযা করতে বলা হতো; সালাত নয়”।[80]

৮. লিকোরিয়া (সাদাস্রাব):
লিকোরিয়া বলতে রোগবশতঃ মহিলাদের যোনিদ্বার দিয়ে নির্গত সাদা স্রাবকে বুঝানো হয়।
লিকোরিয়ায় গোসল ফরয হয় না:
মহিলাদের লিকোরিয়া হলে গোসল করতে হবে না। তবে তা নাপাক ও অযু বিনষ্টকারী। তাই তা কাপড়ে বা শরীরে লেগে গেলে ধুয়ে নিতে হবে এবং অযু করে নিয়মিত সালাত আদায় করতে হবে।

৯. ইস্তিহাযা:
ইস্তিহাযা বলতে হলদে বা মাটিবর্ণ রক্তস্রাবকে বুঝানো হয় যা রোগবশতঃ ঋতুকাল ছাড়া অন্য সময়ে মহিলাদের যোনিদ্বার দিয়ে নির্গত হয়।
ইস্তিহাযা সংক্রান্ত মাসআলাসমূহ:
মূলতঃ ইস্তিহাযা এক প্রকার ব্যাধি। তা চলাকালীন সালাত বন্ধ রাখা যাবে না।
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিততিনি বলেন, ফাতিমা বিনতে আবু হুবাইশ রাদিয়াল্লাহু আনহা একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করেন:
«يَا رَسُوْلَ اللهِ! إِنِّيْ اِمْرَأَةٌ أُسْتَحَاضُ فَلاَ أَطْهُرُ، أَفَأَدَعُ الصَّلاَةَ ؟ فَقَالَ: لاَ إِنَّمَا ذَلِكَ عِرْقٌ وَلَيْسَ بِالْحَيْضَةِ، فَإِذَا أَقْبَلَتِ الْـحَيْضَةُ فَدَعِـي الصَّلاَةَ، وَإِذَا أَدْبَرَتْ فَاغْسِلِيْ عَنْكِ الدَّمَ وَصَلِّيْ، ثُمَّ تَوَضَّئِيْ لِكُلِّ صَلاَةٍ، حَتَّى يَجِيْءَ ذَلِكَ الْوَقْتُ ».
“হে রাসুল! সর্বদা আমার স্রাব লেগেই আছে। কখনো পবিত্র হতে পারছি না। তাই বলে আমি সালাত পড়া বন্ধ রাখবো কিতিনি বললেন: না, সালাত পড়া বন্ধ রাখবে না। এ হচ্ছে রোগ যা কোনো নাড়ি বা শিরা থেকে বের হচ্ছে। এটা ঋতুস্রাব নয়। তাই যখন ঋতুস্রাব শুরু হবে তখন সালাত পড়া বন্ধ রাখবে। আর যখন সাধারণ নিয়মানুযায়ী ঋতুস্রাব শেষ হয়ে যাবে তখন স্রাব পরিষ্কার করে সালাত পড়বে। তবে প্রতি ওয়াক্ত সালাতের জন্য নতুন অযু করবে”।[81]
উক্ত হাদীস থেকে এটাই বুঝা যাচ্ছে যেমুস্তাহাযা মহিলা পবিত্র মহিলাদের ন্যায়। তবে মুস্তাহাযা মহিলা প্রতি বেলা সালাতের জন্য শুধু নতুন অযু করবে।
জানা থাকা প্রয়োজন যেঋতুস্রাবের রক্ত দুর্গন্ধময় গাঢ় কালো এবং
ইস্তিহাযার রক্ত মাটিয়া হলদে।
ফাতিমা বিনতে আবু হুবাইশ রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিততিনি বলেন, আমি মুস্তাহাযা হলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন:
«إِذَا كَانَ دَمُ الْـحَيْضَةِ ؛ فَإِنَّهُ أَسْوَدُ يُعْرَفُ، فَإِذَا كَانَ ذَلِكَ فَأَمْسِكِيْ عَنِ الصَّلاَةِ، فَإِذَا كَانَ الآخَرُ ؛ فَتَوَضَّئِيْ وَصَلِّيْ ؛ فَإِنَّمَا هُوَ عِرْقٌ».
“ঋতুস্রাবের রং কালো পরিচিত। যখন তা দেখতে পাবে সালাত পড়া বন্ধ রাখবে। তবে অন্য কোনো রং দেখা গেলে অযু করে সালাত আদায় করবে। কারণতা হচ্ছে শিরাজনিত”।[82]
উম্মে ‘আতিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিততিনি বলেন,
«كُنَّا لاَ نَعُدُّ الْكُدْرَةَ وَالصُّفْرَةَ بَعْدَ الطُّهْرِ شَيْئًا»
“আমরা নবীযুগে পবিত্রতার পর হলদে বা মাটিয়া স্রাবকে ঋতুস্রাব মনে করতাম না”।[83]

১০. নিফাস:
সন্তান প্রসবোত্তর স্রাবকে আরবীতে নিফাস বলা হয়। পবিত্রতার ক্ষেত্রে নিফাস ও ঋতুস্রাবের বিধান এক ও অভিন্ন।
নিফাস সংক্রান্ত বিধান:
নিফাসের সর্বশেষ সময় চল্লিশ দিন। এর চাইতে কম ও হতে পারে। যখনই স্রাব বন্ধ হবে গোসল করে সালাত পড়া শুরু করবে। স্রাব নির্গমন চল্লিশ দিনের বেশি চালু থাকলে তা ইস্তিহাযা হিসেবে গণ্য করা হবে। তখন প্রতি ওয়াক্ত সালাতের জন্য নতুন অযু করে সালাত পড়বে।
উম্মে সালামা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিততিনি বলেন,
«كَانَتِ النُّفَسَاءُ عَلَى عَهْدِ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيه وسلم تَقْعُدُ بَعْدَ نِفَاسِهَا أَرْبَعِيْنَ يَوْمًا».
“নিফাসী মহিলারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে চল্লিশ দিন পর্যন্ত সালাত-সাওম বন্ধ রাখতো। এ ছাড়া অন্যান্য বিধি-বিধানে ঋতুবতী ও নিফাসীর মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই”।[84]

১১. জাল্লালা (মল ভক্ষণকারী পশু):
জাল্লালা বলতে মানবমল ভক্ষণকারী সকল পশুকে বুঝানো হয়। এ জাতীয় পশু অপবিত্র। তবে এ জাতীয় পশুকে যখন অতটুকু সময় বেঁধে রাখা হবে যাতে ওদের মাংস ও দুধ থেকে নাপাকীর দুর্গন্ধ চলে যায় তখন ওদের মাংস ও দুধ খাওয়া যাবে। নতুবা নয়।
আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিততিনি বলেন,
«نَهَى رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيه وسلم عَنْ لُحُوْمِ الْـجَلاَّلَةِ وَأَلْبَانِهَا».
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মল ভক্ষণকারী পশুর গোশত ও দুধ খেতে নিষেধ করেছেন”।[85]
আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে আরো বর্ণিত, তিনি বলেন,
«نَهَى رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيه وسلم عَنِ الْـجَلاَّلَةِ فِي الإِبِلِ أَنْ يُرْكَبَ عَلَيْهَا، أَوْ يُشْرَبَ مِنْ أَلْبَانِهَا».
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মলভক্ষণকারী উটের পিঠে চড়তে ও উহার দুধ পান করতে নিষেধ করেছেন”।[86]
আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে আরো বর্ণিত:
«كَانَ صَلَّى اللهُ عَلَيه وسلم يَحْبِسُ الدَّجَاجَةَ الجَلاَّلَةَ ثَلاَثًا».
“তিনি মলভক্ষণকারী মুরগীকে (গোশত খেতে ইচ্ছে করলে) তিনদিন বেঁধে রাখতেন”।[87]
১২. ইঁদুর:
ইঁদুর অপবিত্র। অতএব, জমাট বাঁধা কোনো খাদ্যে ইঁদুর পতিত হলে ইঁদুর ও উহার পার্শ্ববর্তী খাদ্য ফেলে দিবে। অতঃপর অবশিষ্ট খাদ্য খাওয়া যাবে। মাইমূনা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিততিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ইঁদুর পড়া ঘিয়ের পবিত্রতা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন,
«أَلْقُوْهَا وَمَاحَوْلَهَا فَاطْرَحُوْهُ وَكُلُوْا سَمْنَكُمْ».
“ইঁদুর ও উহার পার্শ্ববর্তী ঘিটুকু ফেলে দিয়ে বাকি অংশটুকু খেতে পারবে”।[88]
অন্যদিকে ইঁদুর যদি তরল খাদ্য বা পানীয়তে পতিত হয় তা হলে দেখতে হবেযদি পূর্বের ন্যায় ইঁদুর ও উহার পার্শ্ববর্তী খাদ্য ও পানীয়টুকু ফেলে দেওয়া সম্ভব হয় যাতে অন্য অংশটুকুর স্বাদেগন্ধে বা রংয়ে ইঁদুরের কোনো আলামত অনুভূত না হয় তাহলে তা পাক হয়ে যাবে, অন্যথায় নয়। খাদ্য-পানীয়তে এ ছাড়া অন্য কোনো নাপাকী পড়লেও তাতে একই বিধান কার্যকর হবে।

১৩. গোশত খাওয়া হারাম এমন যে কোনো পশুর মল-মূত্র:
গোশত খাওয়া হারাম এমন যে কোনো পশুর মল-মূত্র নাপাক।
আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিততিনি বলেন,
«أَتَى النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيه وسلم الْغَائِطَ فَأَمَرَنِيْ أَنْ آتِيَهُ بِثَلاَثَةِ أَحْجَارٍ، فَوَجَدْتُ حَجَرَيْنِ وَالْتَمَسْتُ الثَّالِثَ فَلَمْ أَجِدْهُ، فَأَخَذْتُ رَوْثَةً فَأَتَيْتُهُ بِهَا، فَأَخَذَ الْحَجَرَيْنِ وَأَلْقَى الرَّوْثَةَ، وَقَالَ: هَذَا رِكْسٌ».
“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শৌচাগারে প্রবেশের পূর্বে আমাকে তিনটি ঢিলা উপস্থিত করার আদেশ দেন। অতঃপর আমি দু’টি ঢিলার ব্যবস্থা করলাম এবং অনেক খোঁজাখুঁজির পরও তৃতীয়টি জোটাতে পারি নি। অতএবআমি একটি গাধার মল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সম্মুখে উপস্থিত করলে তিনি অপর দু’টি ঢিলা নিয়ে সেটি ফেলে দিলেন এবং বললেন: এটি অপবিত্র”।[89]
তবে গোশত খাওয়া হালাল এমন সকল পশুর মল-মূত্র পবিত্র।
আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিততিনি বলেন, একদা উক্বল বা উরাইনাহ গোত্রের কিছু সংখ্যক লোক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট উপস্থিত হলে হঠাৎ তারা রোগাক্রান্ত হয়ে যায়। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে বললেন:
«إِنْ شِئْتُمْ أَنْ تَخْرُجُوْا إِلَى إِبِلِ الصَّدَقَةِ فَتَشْرَبُوْا مِنْ أَلْبَانِهَا وَأَبْوَالِهَا».
“তোমাদের ইচ্ছে হলে তোমরা সাদাকার উটের দুধ ও প্রস্রাব পান করতে পার”।[90]
আনাস  রাদিয়াল্লাহু আনহু আরো বলেন,
«كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيه وسلم يُصَلِّيْ قَبْلَ أَنْ يُبْنَى الـْمَسْجِدُ فِيْ مَرَابِضِ الْغَنَمِ».
“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদ নির্মাণের পূর্বে ছাগল রাখার জায়গায় সালাত পড়তেন”।[91]

১৪. মদ:
বিশুদ্ধ মতানুযায়ী মদ অপবিত্র। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ إِنَّمَا ٱلۡخَمۡرُ وَٱلۡمَيۡسِرُ وَٱلۡأَنصَابُ وَٱلۡأَزۡلَٰمُ رِجۡسٞ مِّنۡ عَمَلِ ٱلشَّيۡطَٰنِ فَٱجۡتَنِبُوهُ لَعَلَّكُمۡ تُفۡلِحُونَ ٩٠﴾ [المائ‍دة: ٩٠]
“হে মুমিনগণ! নিশ্চয় মদজুয়ামূর্তি এবং লটারীর তীর এসব অপবিত্র। শয়তানের কাজ ছাড়া আর কিছুই নয়। সুতরাং তোমরা এ থেকে সম্পূর্ণরূপে দূরে থাকবে। তা হলে তোমরা সফলকাম হবে”। [সূরা আল-মায়েদাহ, আয়াত: ৯০]

সালাত আদায়কারী ব্যক্তির নাপাকী থেকে পবিত্রতা:
যদি কোনো সালাত আদায়কারী ব্যক্তি সালাতের মধ্যে বা পরে নিজ কাপড়েশরীরে বা সালাতের স্থানে নাপাকী আছে বলে অবগত হয় তখন তা তিনের এক অবস্থা থেকে খালি হবে না:
ক. সালাত আদায়কারী ব্যক্তি যদি সালাতের মধ্যেই নাপাকী সম্পর্কে অবগত হয় এবং তা তখনই দূরীকরণ সম্ভবপর হয়। যেমনকোনো একটি কাপড়খণ্ডে নাপাকী রয়েছে এবং সতর খোলা ছাড়াই তা ফেলে দেওয়া সম্ভব তা হলে তখনই তা ফেলে দিবে। এতেই তার সালাত শুদ্ধ হয়ে যাবে।
খ. আর যদি সালাতের মধ্যেই তা দূরীকরণ সম্ভবপর না হয়। যেমনকাপড়েই নাপাকী রয়েছে, তবে তা ফেলে দিলে সতর খুলে যাবে অথবা নাপাকী শরীরে রয়েছে যা দূর করতে গেলে সতর খুলতে হবে। এমতাবস্থায় সালাত ছেড়ে দিয়ে নাপাকী দূর করবে এবং পুনরায় সালাত আদায় করে নিবে।
গ. আর যদি সালাত শেষে অবগত হয় যে, সালাতরত অবস্থায় তার শরীরেকাপড়ে বা সালাতের স্থানে নাপাকী ছিল তাহলে তার আদায়কৃত সালাত সম্পূর্ণরূপে বিশুদ্ধ।
আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিততিনি বলেন: একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে নিয়ে সালাত পড়ছিলেন। ইতোমধ্যে হঠাৎ তিনি নিজ জুতাদ্বয় পা থেকে খুলে নিজের বাম পার্শ্বে রাখলেন। তা দেখে সাহাবীগণও নিজ নিজ জুতাগুলো পা থেকে খুলে ফেললেন। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত শেষে সাহাবীগণকে বললেন:
«مَا بَالُكُمْ أَلْقَيْتُمْ نِعَالَكُمْ».
“তোমাদের কী হলোতোমরা জুতাগুলো খুলে ফেললে কেন? সাহাবীগণ বললেন: আপনাকে জুতা খুলতে দেখে আমরাও তা খুলে ফেললাম। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে উদ্দেশ্য করে বললেন:
«أَتَانِيْ جِبْرِيْلُ فَأَخْبَرَنِيْ أَنَّ فِيْهِمَا قَذَرًا أَوْ قَالَ: أَذًى، فَأَلْقَيْتُهُمَا، فَإِذَا جَاءَ أَحَدُكُمْ إِلَى الـْمَسْجِدِ فَلْيَنْظُرْ فِيْ نَعْلَيْهِ فَإِنْ رَأَى فِيْهِمَا قَذَرًا أَوْ أَذًى فَلْيَمْسَحْهُمَا وَلْيُصَلِّ فِيْهِمَا».
“জিবরীল আলাইহিস সালাম আমার নিকট এসে সংবাদ দিলেন যে, জুতাদ্বয়ে নাপাকী রয়েছে। তাই আমি জুতাদ্বয় খুলে ফেললাম। অতএবতোমাদের কেউ মসজিদে আসলে নিজ জুতাদ্বয় ভালোভাবে দেখে নিবে। যদি তাতে নাপাকী পরিলক্ষিত হয় তা হলে তা মুছে ফেলে তাতেই সালাত পড়বে”।[92]
তবে কোনো ব্যক্তি যদি সালাত শেষে জানতে পারে যেসে অযু বা ফরয গোসল বিহীন সালাত পড়েছে তাহলে তার সালাত কখনো শুদ্ধ হবে না যতক্ষণ না সে অযু বা ফরয গোসল সেরে সালাত পড়ে।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«لاَ تُقْبَلُ صَلاَةٌ بِغَيْرِطُهُوْرٍ».
“পবিত্রতা বিহীন কোনো সালাতই কবুল করা হয় না”।[93]

পবিত্রতা সংক্রান্ত বিশেষ সূত্র:
যে কোনো বস্তুর ক্ষেত্রে মূলনীতি হচ্ছে, এটি পবিত্র ও এর ভোজন-ব্যবহার জায়েয, যতক্ষণ না এর বিপরীত শরঈ কোনো সুস্পষ্ট প্রমাণ মিলে যায়। অতএবউক্ত সূত্রানুসারে যদি কোনো মুসলিম কোনো কাপড়পানি ও স্থানের পবিত্রতা-অপবিত্রতা নিয়ে সন্দেহ করে তা হলে তা পবিত্র বলেই গণ্য হবে। তেমনিভাবে উক্ত সূত্রানুযায়ী যে কোনো থালা-বাসনে পানাহার জায়েয। তবে স্বর্ণরৌপ্য দিয়ে তৈরি থালা-বাসনে পানাহার জায়েয নয়।
হুযাইফাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিততিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«لاَ تَشْرِبُوْا فِيْ آنِيَةِ الذَّهَبِ وَالْفِضَّةِ وَلاَ تَأْكُلُوْا فِيْ صِحَافِهَا، فَإِنَّهَا لَهُمْ فِي الدُّنْيَا وَلَنَا فِي الآخِرَةِ».
“তোমরা স্বর্ণরৌপ্য দিয়ে তৈরী থালা-বাসনে পানাহার করবে না। কারণসেগুলো দুনিয়াতে কাফিরদের জন্য আর পরকালে আমাদের জন্য”।[94]

সন্দেহ ঝেড়ে মুছে নিশ্চিত অতীতের দিকে প্রত্যাবর্তন:
আরেকটি সূত্র হচ্ছেসন্দেহ পরিত্যাগ করে নিশ্চিত অতীতাবস্থার দিকে ফিরে যাওয়া। যেমনকেউ ইতিপূর্বে পবিত্রতা অর্জন করেছে বলে নিশ্চিত। তবে বর্তমানে সে পবিত্র কি না এ ব্যাপারে সন্দিহান তা হলে সে উক্ত সূত্রানুযায়ী পবিত্র বলেই গণ্য। তেমনিভাবে কেউ যদি নিজের অপবিত্রতার ব্যাপারে নিশ্চিত। তবে কিছুক্ষণ পর সে নিজকে পবিত্র বলে সন্দেহ করছে তা হলে সে উক্ত সূত্রানুসারে অপবিত্র বলেই গণ্য হবে।
একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এমন এক ব্যক্তি সম্পর্কে যিনি সর্বদা সালাতরত অবস্থায় অযু নষ্ট হয়েছে বলে সন্দেহ করে থাকে অভিযোগ করা হলে তিনি বলেন,
«لاَ يَنْصَرِفُ حَتَّى يَسْمَعَ صَوْتًا، أَوْ يَجِدَ رِيْحًا»
“সালাত ছেড়ে দিবে না যতক্ষণ না সে বায়ু নির্গমনধ্বনি শুনতে পায় অথবা দুর্গন্ধ অনুভব করে”।[95]
কোনো জিনিসে নাপাকী লেগে গেলে নাপাকী দূর হয়েছে নিশ্চিত হওয়া পর্যন্ত ধুতে হবে। তবে নাপাকীর কোনো দাগ থেকে গেলে তাতে কোনো অসুবিধে নেই। খাওলা বিনতে ইয়াসার রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিততিনি বলেন, আমি বললাম: হে রাসূল! ঋতুস্রাব মিশ্রিত কাপড় ধোয়ার পরও দাগ থেকে যায় তখন কি করতে হবেতিনি বললেন:
«يَكْفِيْكِ غَسْلُ الدَّمِ، وَلاَ يَضُرُّكِ أَثَرُهُ».
“ঋতুস্রাবের রক্ত ধুয়ে ফেলাই তোমার জন্য যথেষ্ট। দাগ থেকে গেলে তাতে কোনো অসুবিধে নেই”।[96]
বিড়ালে মুখ দেওয়া থালা-বাসন:
বিড়াল কোনো থালা-বাসনে মুখ দিলে তা অপবিত্র হয় না।
আবু ক্বাতাদা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিততিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إِنَّهَا لَيْسَتْ بِنَجَسٍ، إِنَّهَا مِنَ الطَّوَّافِيْنَ عَلَيْكُمْ وَالطَّوَّافَاتِ»
“বিড়াল নাপাক নয়। কারণবিড়াল-বিড়ালী তোমাদের আশেপাশেই থাকে। ওদের নাগাল থেকে বাঁচা তোমাদের পক্ষে সম্ভবপর নয়”।[97]

সুনানুল ফিত্বরাহ (প্রকৃতি সম্মত ক্রিয়াকলাপ):
এমন কিছু ক্রিয়াকলাপ রয়েছে যা মানুষের স্বভাবগত ও প্রকৃতিসম্মত এবং সকল নবীদের নিকট তা ছিল পছন্দনীয়। সেগুলো নিম্নরূপ:

১. খাৎনা বা মুসলমানি করা:
খাৎনা বলতে পুরুষের লিঙ্গাগ্র ঢেকে রাখে এমন ত্বক ছেদনকেই বুঝানো হয়। তাতে পুরো লিঙ্গাগ্রটি উন্মুক্ত হয়ে যায়। তা পুরুষের জন্য ওয়াজিব।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জনৈক নবমুসলিমকে উদ্দেশ্য করে বলেন,
«أَلْقِ عَنْكَ شَعْرَ الْكُفْرِ وَاخْتَتِنْ».
“কুফুরীর কেশ ফেলে দিয়ে খাৎনা করে নাও”।[98]
এ কারণেই ইবরাহীম আলাইহিস সালাম আশি বছর বয়সে নিজ খাৎনাকর্ম সম্পাদন করেন।
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিততিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«اِخْتَتَنَ إِبْرَاهِيْمُ وَهُوَ اِبْنُ ثَمَانِيْنَ سَنَةً بِالْقَدُّوْمِ».
“ইবরাহীম আলাইহিস আশি বছর বয়সে কুড়াল দিয়ে নিজ খাৎনাকর্ম সম্পাদন করেন”।[99]
ইসলামী শরী‘আতে মহিলাদের খাৎনারও বিধান রয়েছে। তবে তা তাদের জন্য মুস্তাহাব। মহিলাদের খাৎনা বলতে ভগাঙ্কুরের উপরিভাগ একটুখানি কেটে দেওয়াকেই বুঝানো হয়।
উম্মে ‘আতিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিততিনি বলেন, জনৈকা মহিলা মদীনা শহরে মেয়েদের খাৎনা করাতো। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে উদ্দেশ্য করে বলেন,
«لاَ تُنْهِكِيْ، فَإِنَّ ذَلِكَ أَحْظَى لِلْمَرْأَةِ، وَأَحَبُّ إِلَى الْبَعْلِ».
“ভগাঙ্কুরাগ্র একটু করে কেটে দিবে, বেশি নয়। কারণভগাঙ্কুরটি মহিলাদের জন্য আনন্দদায়ক ও সুখকর এবং স্বামীর নিকট অধিক পছন্দনীয়”।[100]

১. নাভীর নিম্নাংশের লোম মুণ্ডন:
২. বগলের লোম ছেঁড়া।
৩. নখ কাটা।
৪. মোচ কাটা:
মোচ কাটা ওয়াজিব।
যায়েদ ইবন আরকাম রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিততিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«مَنْ لَمْ يَأْخُذْ مِنْ شَارِبِهِ فَلَيْسَ مِنَّا».
“যে মোচ কাটবে না সে আমার উম্মত নয়”।[101]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন,
«اِنْهَكُوْا الشَّوَارِبَ، وَأَعْفُوْا اللِّحَى».
“তোমরা মোচ এমনভাবে ছোট করবে যাতে ত্বকের রং পরিলক্ষিত হয় এবং দাড়ি লম্বা কর”।[102]
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিততিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«خَمْسٌ مِنَ الْفِطْرَةِ: الْخِتَانُ، وَالاِسْتِحْدَادُ، وَنَتْفُ الإِبِطِ، وَتَقْلِيْمُ الأَظْفَارِ، وَقَصُّ الشَّارِبِ».
“পাঁচটি বস্তু প্রকৃতিসম্মত: খাৎনা করানাভির নিচের লোম মুণ্ডনবগলের নিচের লোম ছেঁড়ানখ ও মোচ কাটা”।[103]
উক্ত কাজগুলো সর্বোচ্চ চল্লিশ দিনের মধ্যেই সম্পাদন করতে হবে।
আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিততিনি বলেন,
«وُقِّتَ لَنَا فِيْ قَصِّ الشَّارِبِ، وَتَقْلِيْمِ الأَظْفَارِ، وَنَتْفِ الإِبِطِ، وَحَلْقِ الْعَانَةِ أَنْ لاَ نَتْرُكَ أَكْثَرَ مِنْ أَرْبَعِيْنَ لَيْلَةٍ».
“মোচ কাটানখ কাটাবগলের লোম ছেঁড়া ও নাভিনিম্ন লোম মুণ্ডনের ব্যাপারে আমাদেরকে সময় নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে, যেন আমরা চল্লিশ দিনের বেশি এ কর্মগুলো সম্পাদন থেকে বিরত না থাকি”।[104]

৫. দাড়ি লম্বা করা:
দাড়ি লম্বা করা ওয়াজিব।
আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিততিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«خَالِفُوْا الْـمُشْرِكِيْنَ : وَفِّرُوْا اللِّحَى، وَأَحْفُوْا الشَّوَارِبَ».
“তোমরা আচার-আচরণে মুশরিকদের বিরোধিতা কর। অতএবতোমরা দাড়ি লম্বা কর এবং মোচ এতটুকু ছোট কর যাতে ত্বকের রং পরিলক্ষিত হয়”।[105]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন,
«أَحْفُوْا الشَّوَارِبَ، وَأَعْفُوْا اللِّحَى».
“তোমরা মোছকে গোড়া থেকেই কেটে ফেল এবং দাড়িকে নিজ অবস্থায় ছেড়ে দাও”।[106]
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিততিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«جُزُّوْا الشَّوَارِبَ وَأَرْخُوْا اللِّحَى، خَالِفُوْا الْمَجُوْسَ».
“তোমরা মোচ কেটে ফেল এবং দাড়ি লম্বা কর। এভাবে অগ্নিপূজকদের সাথে বিরোধিতা কর”।[107]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন,
«خَالِفُوْا الْـمُشْرِكِيْنَ : أَحْفُوْا الشَّوَارِبَ وَأَوْفُوْا اللِّحَى».
“তোমরা মুশরিকদের বিরোধিতা কর। অতএবমোচ মূল থেকে কেটে ফেল এবং দাড়ি লম্বা কর”।[108]
উক্ত হাদীসসমূহ থেকে আমরা জানতে পারলাম যেরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চার চার বার চার ধরনের শব্দ দিয়ে দাড়ি লম্বা করার আদেশ দিয়েছেন। এ থেকে ইসলামে দাড়ির কতটুকু গুরুত্ব তা সহজেই অনুধাবন করা যায়।

৬. মিসওয়াক করা:
সর্বদা মিসওয়াক করা মুস্তাহাব।
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিততিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«السِّوَاكُ مَطْهَرَةٌ لِلْفَمِ، مَرْضَاةٌ لِلرَّبِّ».
“মিসওয়াক মুখের পরিচ্ছন্নতা ও আল্লাহর সন্তুষ্টি প্রাপ্তির একটি বিশেষ মাধ্যম”।[109]

মিসওয়াক করার গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি সময়:
(ক) ঘুম থেকে জেগে:
ঘুম থেকে জেগে মিসওয়াক করা গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাত।
হুযাইফাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিততিনি বলেন,
«كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيه وسلم إِذَا قَامَ مِنَ اللَّيْلِ يَشُوْصُ فَاهُ بِالسِّوَاكِ».
“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘুম থেকে জেগে মিসওয়াক করতেন”।[110]
(খ) প্রত্যেক অযুর সময়:
প্রত্যেক অযুর সময় মিসওয়াক করা গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাত।
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিততিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«لَوْلاَ أَنْ أَشُقَّ عَلَى أُمَّتِيْ لأَمَرْتُهُمْ بِالسِّوَاكِ عِنْدَ كُلِّ وُضُوْءٍ».
“আমার উম্মতের জন্য আদেশটি মানা যদি কষ্টকর না হতো তাহলে আমি ওদেরকে প্রত্যেক অযুর সময় মিসওয়াক করতে আদেশ করতাম”।[111]
(গ) প্রত্যেক সালাতের সময়:
প্রত্যেক সালাতের সময় মিসওয়াক করা গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাত।
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিততিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«لَوْلاَ أَنْ أَشُقَّ عَلَى أُمَّتِيْ أَوْ عَلَى النَّاسِ لأَمَرْتُهُمْ بِالسِّوَاكِ مَعَ كُلِّ صَلاَةٍ».
“আমার উম্মত বা সকলের জন্য আদেশটি মানা যদি কষ্টকর না হতো তাহলে আমি ওদেরকে প্রত্যেক সালাতের সময় মিসওয়াক করতে আদেশ করতাম”।[112]
(ঘ) ঘরে ঢুকার সময়:
ঘরে বা মাসজিদে ঢুকার সময় মিসওয়াক করা গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাত।
‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিততিনি বলেন,
«كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيه وسلم إِذَا دَخَلَ بَيْتَهُ بَدَأَ بِالسِّوَاكِ».
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘরে প্রবেশ করেই মিসওয়াক করা আরম্ভ করতেন”।[113]
(ঙ) মুখ দুর্গন্ধরুচি পরিবর্তন কিংবা দীর্ঘকাল পানাহারবশত দাঁত হলুদবর্ণ হলে:
উক্ত মুহূর্তগুলোতে মিসওয়াক করা গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাত। কারণমিসওয়াকের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে মুখগহবরকে পরিচ্ছন্ন ও দুর্গন্ধমুক্ত রাখা। তেমনিভাবে যদি ঘুম থেকে জাগার পর মিসওয়াক করতে হয় তাহলে এ মুহূর্তগুলোতেও মিসওয়াক করা অবশ্যই কর্তব্য।
(চ) কুরআন মাজীদ পড়ার সময়:
কুরআন মাজীদ পড়ার সময়ও মিসওয়াক করা গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাত।
‘আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিততিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إِنَّ الْعَبْدَ إِذَا تَسَوَّكَ ثُمَّ قَامَ يُصَلِّيْ قَامَ الْـمَلَكُ خَلْفَهُ فَيَسْتَمِعُ لِقِرَاءَتِهِ فَيَدْنُوْ مِنْهُ  أَوْ كَلِمَةٌ نَحْوُهَا  حَتَّى يَضَعَ فَاهُ عَلَى فِيْهِ فَمَا يَخْرُجُ مِنْ فِيْهِ شَيْءٌ مِنَ الْقُرْآنِ إِلاَّ صَارَ فِيْ جَوْفِ الْـمَلَكِ، فَطَهِّرُوْا أَفْوَاهَكُمْ لِلْقُرْآنِ».
“বান্দা যখন মিসওয়াক করে সালাতে দাঁড়ায় তখন একজন
ফিরিস্তা তার পেছনে দাঁড়িয়ে কিরাআত শ্রবণ করতে থাকে। এমনকি ফিরিস্তা নামাযীর খুব নিকটে গিয়ে নিজ মুখ নামাযীর মুখে রাখে। তাতে করে নামাযীর মুখ থেকে কুর‘আনের কোনো অক্ষর বেরুতেই তা ফিরিস্তার পেটে চলে যায়। তাই তোমরা কুরআন পাঠের উদ্দেশ্যে নিজ মুখগহবর পরিচ্ছন্ন কর”।
[114]
জিহ্বার উপর মিসওয়াক করা মুস্তাহাব।
আবু মূসা আশ্‘আরী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিততিনি বলেন,
«أَتَيْنَا رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيه وسلم نَسْتَحْمِلُهُ فَرَأَيْتُهُ يَسْتَاكُ عَلَى لِسَانِهِ».
“আমরা কিছু সংখ্যক সাহাবা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট যুদ্ধারোহণ চাওয়ার জন্যে উপস্থিত হলাম। তখন আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিহ‌বার উপর মিসওয়াক করতে দেখেছি”।[115]
মিসওয়াক ডান দিক থেকে করা মুস্তাহাব।
‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিততিনি বলেন,
«كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيه وسلم يُعْجِبُهُ التَّيَمُّنُ فِيْ تَنَعُّلِهِ وَتَرَجُّلِهِ وَطُهُوْرِهِ وَفِيْ شَأْنِهِ كُلِّهِ».
“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতিটি কাজই ডান দিক থেকে শুরু করা পছন্দ করতেন। এমনকি জুতা পরামাথা আঁচড়ানোপবিত্রতার্জন তথা সর্ব ব্যাপারই”।[116]
মিসওয়াক করার পর মিসওয়াকটি ধুয়ে নিতে হয়।
‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিততিনি বলেন,
«كَانَ نَبِيُّ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيه وسلم يَسْتَاكُ، فَيُعْطِيْنِي السِّـوَاكَ لأَغْسِلَهُ، فَأَبْدَأُ بِهِ فَأَسْتَاكُ، ثُمَّ أَغْسِلُهُ وَأَدْفَعُهُ إِلَيْهِ».
“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিসওয়াক করে মিসওয়াকটি আমাকে ধোয়ার জন্য দিতেন। কিন্তু আমি মিসওয়াকটি না ধুয়ে বরং তা দিয়ে মিসওয়াক করতাম। পরিশেষে মিসওয়াকটি ধুয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ফেরত দিতাম”।[117]
উপরন্তু এ হাদীস থেকে একে অপরের মিসওয়াক ধোয়া ছাড়াই ব্যবহার করতে পারে বুঝা যায়।
(৭) আঙ্গুলের সন্ধিস্থলগুলো ভালোভাবে ধৌত করা:
আঙ্গুলের সন্ধিস্থলগুলোর উপর ও ভেতর উভয় দিক ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হয়। তেমনিভাবে কানের ভাঁজ তথা শরীরের যে কোনো স্থানে ময়লা জমে গেলে তা ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিতে হয়।
১. অযুর  সময় নাকে পানি ব্যবহার করা।
২. ইস্তিঞ্জা করা।
উপরোক্ত সবগুলো বিষয় একই সাথে একই হাদীসে উল্লিখিত হয়েছে।
‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিততিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«عَشْرٌ مِنَ الْفِطْرَةِ : قَصُّ الشَّارِبِ، وَإِعْفَاءُ اللِّحْيَةِ، وَالسِّوَاكُ، وَاسْتِنْشَاقُ الْـمَاءِ، وَقَصُّ الأَظْفَارِ، وَغَسْلُ الْبَرَاجِمِ، وَنَتْفُ الإِبِطِ، وَحَلْقُ الْعَانَةِ، وَانْتِقَاصُ الْـمَاءِ، قَالَ زَكَرِيَّا: قَالَ مُصْعَبٌ: وَنَسِيْتُ الْعَاشِرَةَ ؛ إِلاَّ أَنْ تَكُوْنَ الْمَضْمَضَةَ».
“দশটি কাজ স্বভাব ও প্রকৃতিসম্মত: মোচ কাটাদাড়ি লম্বা করামিসওয়াক করা, অযুর সময় নাকে পানি দেওয়ানখ কাটাআঙ্গুলের সন্ধিস্থলগুলো ধৌত করাবগলের লোম ছিঁড়ে ফেলানাভিনিম্ন লোম মুণ্ডন ও ইস্তিঞ্জা করা। হাদীস বর্ণনাকারী যাকারিয়া বলেন, ঊর্ধ্বতন হাদীস বর্ণনাকারী মুস‘আব বলেছেন: আমি দশম কর্মটি স্মরণ করতে পারছি না। সম্ভবতঃ দশম কর্মটি কুল্লি করা”।[118]

ফিতরাত বা প্রকৃতির প্রকারভেদ: ফিতরাত দু’প্রকার:
১. হৃদয়গত: হৃদয়গত ফিতরাত বলতে আল্লাহ তা‘আলার পরিচয়, ভালোবাসা এবং তাঁকে তিনি ভিন্ন অন্য সকল বস্তুর উপর অগ্রাধিকার দেওয়াকে বুঝানো হয়। এ জাতীয় ফিতরাত অন্তরাত্মা ও রূহকে নির্মল এবং বিশুদ্ধ করে তোলে।
২. শরীরগত: শরীরগত ফিত্রাত বলতে উপরোক্ত দশটি বিষয় তথা এ জাতীয় সকল প্রকৃতিসম্মত কর্মকে বুঝানো হয়। এ জাতীয় ফিত্রাত শরীরকে পাক ও পরিচ্ছন্ন করে। তবে উভয় ফিতরাত একে অপরের সহযোগী ও পরিপূরক।

ঘুম থেকে জেগে যা করতে হয়:
১. উভয় হাত তিনবার ধোয়া:
ঘুম থেকে জেগেই প্রথমে উভয় হাত তিনবার ধুয়ে নিতে হয়।
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিততিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إِذَا اسْتَيْقَظَ أَحَدُكُمْ مِنْ نَوْمِهِ فَلاَ يَغْمِسْ يَدَهُ فِي الإِنَاءِ حَتَّى يَغْسِلَهَا ثَلاَثًا، فَإِنَّهُ لاَ يَدْرِيْ أَيْنَ بَاتَتْ يَدُهُ».
“তোমাদের কেউ যেন ঘুম থেকে জেগেই তার হাত খানা তিনবার না ধুয়ে কোনো পানি ভর্তি পাত্রে প্রবেশ না করায়। কারণসে তো আর জানে না রাত্রি বেলায় তার হাত খানা কোথায় ছিলো”।[119]
২. তিনবার নাক পরিষ্কার করা:
ঘুম থেকে জেগে দ্বিতীয়তঃ যে কাজটি করতে হয় তা হচ্ছে তিনবার ভালোভাবে নাক ঝেড়ে পরিষ্কার করা।
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিততিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إِذَا اسْتَيْقَظَ أَحَدُكُمْ مِنْ مَنَامِهِ فَلْيَسْتَنْثِرْ ثَلاَثَ مَرَّاتٍ، فَإِنَّ الشَّيْطَانَ يَبِيْتُ عَلَى خَيَاشِيْمِهِ».
“তোমাদের কেউ ঘুম থেকে জেগে যেন তিনবার নাক ঝেড়ে নেয়। কারণশয়তান নাকের বাঁশিতে রাত্রিযাপন করে”।[120]



 লেখক: মোস্তাফিজুর রহমান ইবন আব্দুল আযীয আল-মাদানী
সম্পাদনা: ড. মোহাম্মদ মানজুরে ইলাহী
সূত্র: ইসলামহাউজ

পোস্টটি ভালো লাগলে শেয়ার করতে ভুলবেন না কিন্তু।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন