মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৩

মদিনায় গমনকারীদের মারফতে রাসূলের জন্য সালাম পাঠানোর বিধান

মদিনায় গমনকারীদের মারফতে রাসূলের জন্য সালাম পাঠানোর বিধান



মদিনায় গমনকারীদের মারফতে রাসূলের জন্য সালাম পাঠানোর বিধান

প্রশ্ন: হাজীদের যারা মদিনায় গমন করেন তাদের মারফতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম- এর জন্য সালাম প্রেরণের বিধান কি? 
উত্তর: 
আলহামদু লিল্লাহ,
এ কাজটি শরিয়ত সম্মত নয়। এ ধরণের আমলের প্রচলন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগে ছিল না। এবং মুসলমান আলেমরা এ ধরনের কোন আমল করেছেন তার কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি। কারণ, যে কোন মুসলমানের জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর সালাম দেয়া, দুনিয়ার যে কোন স্থান হতেই সম্ভব। আর আল্লাহ তায়ালা দায়িত্ব নিয়েছেন যে, তিনি এ সালাত ও সালামকে তার ফেরেশতাদের মাধ্যমে পৌছে দেবেন, যাদের তিনি এ দায়িত্বেই নিয়োজিত করেছেন। মনে রাখতে হবে, যে কোন ব্যক্তি যে কোন স্থান হতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর সালাম দেবে, তার সালাম অবশ্যই পৌছানো হবে, এতে কোনরূপ সন্দেহ-সংশয়ের অবকাশ নাই। সুতরাং, মদিনা মুনাওয়ারা যিয়ারতকারীকে সালাম পৌছানোর দায়িত্ব দেয়ার কোন প্রয়োজন নাই। তার সম্পর্কে নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারবে না যে, সে কি পৌছতে পারবে নাকি পথে মারা যাবে! অথবা সে কি ভুলে যাবে নাকি নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যাবে?
আব্দুল্লাহ বিন মাসদ রা. হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, 
পৃথিবীতে আল্লাহর কতক ভ্রমণকারী ফেরেশতা রয়েছে, তারা আমার উম্মাতের সালাম আমার নিকট পৌছে দেয়। (নাসায়ী:১২৮২)‌‌ শায়খ আলবা‌‌নি সহিহ তারগিবে(১৬৬৪)হাদিসটিকে সহিহ আখ্যায়িত করেছেন। 

আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, 
তোমরা তোমাদের ঘরসমূহকে কবর বানাবে না, আর আমার কবরকে উৎসবের স্থানে পরিণত করবে না। আর আমার উপর দরূদ পাঠ কর, কারণ, তোমাদের সালাত আমার নিকট পৌঁছানো হয়, তোমরা যেখানেই থাকো না কেন। আবু দাউদ(২০৪২); আল্লামা আলবানি হাদিসটিকে সহিহ আল-জামেতে(৭২২৬) সহিহ বলে মন্তব্য করেছেন। 

আল-লুজনা আদ-দায়িমার আলেমগণ বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিংবা অন্য কোনো মৃত ব্যক্তিকে সালাম পৌঁছানোর জন্য অন্য কাউকে দায়িত্ব দেয়া শরিয়ত অনুমোদিত নয়। বরং, বিদআত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, সকল বিদআতই গোমরাহি, আর সব গোমরাহির শেষ পরিণতি জাহান্নাম। 
সুতরাং, আমাদের কর্তব্য হলো, এ ধরনের কাজ হতে বিরত থাকা এবং যারা এ ধরনের কাজ করে তাদের সতর্ক করা। এবং জানিয়ে দেয়া যে, এটি শরিয়ত সম্মত নয়। যাতে তারা এ ধরনের কাজ হতে বিরত থাকে। আমাদের উপর আল্লাহর রহমত ও মহা করুণা যে, তিনি আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর দেয়া আমাদের সালামকে তাঁর নিকট পৌঁছিয়ে দেন। পৃথিবীর পশ্চিম প্রান্ত কিংবা পূর্ব প্রান্ত যেখান থেকেই আমরা সালাম দেই না কেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে প্রমাণিত, তিনি বলেন, 
পৃথিবীতে ভ্রমণকারী আল্লাহর কতক ফেরেশতা রয়েছে, তারা আমার উম্মাতের সালাম আমার নিকট পৌঁছে দেয়। (বর্ণনায়, ইমাম আহমাদ, নাসায়ি ও অন্যান্যরা) 
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন, 
তোমাদের সর্বত্তোম দিন হলো জুমুআর দিন, তাই তোমরা ঐদিনে আমার উপর বেশি বেশি করে দুরূদ পাঠ করবে। কারণ, তোমাদের দুরুদ আমার নিকট পৌঁছানো হয়, তোমরা যেখানেই থাকো না কেন। 
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন, 
তোমরা আমার কবরকে উৎসবের জায়গা বানাবে না এবং নিজেদের ঘরকে কবর বানাবে না। আর তোমরা আমার উপর দরূদ পড়বে, কারণ, তোমাদের দরূদ আমার নিকট পৌঁছানো হয়,তোমরা যেখানেই থাক না কেন? 
এ সম্পর্কে আরো বহু হাদিস বর্ণিত হয়েছে।
(শায়খ আব্দুল আজীজ বিন বায, শায়খ আব্দুল আজীজ আলে শেখ, শায়খ ছালেহ আল ফাওজান এবং বকর আবু জায়েদ। ফতোয়া আললুজনা আদদায়েমাহ ৩০,২৯/১৬)

মুহাম্মদ বিন সউদ ইসলামি ইউনিভার্সিটির শিক্ষাবিভাগের সদস্য, শেখ আব্দুর রহমান বিন নাসের আল বাররাক বলেন, মদিনায় সফর কারী ব্যক্তির মাধ্যমে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট সালাম পাঠানোর কোন প্রমাণ নাই। সাহাবায়ে কিরাম, সালাফে সালেহীন, তাবেয়ীন এবং আহলে ইলমদের কারোরই এ অভ্যাস ছিল না। তারা কেউ অপরের মাধ্যমে নবীর উপর সালাম পাঠাতেন না। এবং তাদের কারো হতেই এ ধরনের কোন বর্ণনা পাওয়া যায় না। কারণ, রাসূল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি উম্মতের দেয়া সালাম ও দরূদ কোন মাধ্যম ছাড়া এমনিতেই পৌঁছানো হয়ে থাকে। যেমন, সহিহ হাদিসে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, 
তোমরা তোমাদের ঘরকে কবর বানিও না, আর আমার কবরকে উৎসব উদযাপনের জায়গায় পরিণত করো না। আমার উপর দরূদ পড়, তোমাদের দরূদ আমার নিকট পৌছানো হয় তোমরা যেখানেই থাক না কেন। আবু দাউদ(২০৪২); 
এর উপর ভিত্তি করে বলা যায়, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি অন্যের মাধ্যমে সালাম পাঠানোর ইবাদতটি সম্পূর্ণ বিদআত। বরং মৃত ব্যক্তির প্রতি সালাম পাঠানোর কোন বিধান শরিয়ত সম্মত নয়। মৃত ব্যক্তির উপর সেই পাঠাবে যে তার কবর যিয়ারত করবে। যেমন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জান্নাতুল বাকী যিয়ারত করতেন, তাদের সালাম দিতেন এবং তাদের জন্য দোয়া করতেন। তিনি তার সাহাবিদের শিখিয়ে দিতেন, তোমরা কবর যিয়ারত কালে এভাবে বলবে, 
 ( السَّلامُ عَلَيْكُمْ أَهْلَ الدِّيَارِ مِنْ الْمُؤْمِنِينَ وَالْمُسْلِمِينَ ، وَإِنَّا إِنْ شَاءَ اللَّهُ لَلاحِقُونَ ، أَسْأَلُ اللَّهَ لَنَا وَلَكُمْ الْعَافِيَةَ ) أخرجه مسلم (975)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আয়েশা রা.কে বলেন, তুমি বল,
 (السَّلامُ عَلَى أَهْلِ الدِّيَارِ مِنْ الْمُؤْمِنِينَ وَالْمُسْلِمِينَ ، وَيَرْحَمُ اللَّهُ الْمُسْتَقْدِمِينَ مِنَّا وَالْمُسْتَأْخِرِينَ ، وَإِنَّا إِنْ شَاءَ اللَّهُ بِكُمْ لَلاحِقُونَ ) أخرجه مسلم (974) ،
তবে অনুপুস্থিত জীবিত ব্যক্তির জন্য সালাম পাঠানোতে কোন অসুবিধা নাই। তার জন্য অপরের মাধ্যমে সালাম পাঠানো জায়েয আছে। 
মোট কথা: আল্লাহ তায়ালা এ উম্মাতের উপর খুশি হন, যখন তারা তাদের নবীর উপর দরূদ ও সালাম পাঠ করে। আর তারা যত বেশি এ আমল করে, আল্লাহ তায়ালা ততবেশি খুশি হন। হাদিসে বর্ণিত আছে, 
আল্লাহ তায়ালা তার কবরে কিছু ফেরেশতা নিয়োগ করেছেন তারা তার উম্মাতের পক্ষ হতে তাদের সালাত ও সালাম তার নিকট পৌছায়।
আল্লাহই ভালো জানেন।

শায়খ মুহাম্মদ বিন উসাইমিন রহ. বলেন, তা সত্বেও আমরা বলি, আর যদি তুমি তার উপর দুনিয়ার সর্বশেষ প্রান্ত থেকেও সালাম পাঠাও তবে তোমাদের সালাম তার নিকট পৌছবে। কারণ, আল্লাহ তায়ালা পৃথিবীতে বিচরণকারী কিছু ফেরেশতাদের নিয়োজিত করেছেন, যখন তোমাদের কেউ রাসূলের উপর সালাম পাঠায়, তারা সে সালাম রাসূলের নিকট পৌঁছে দেয়। 
সূতরাং আমরা যদি এখন বলি,  " اللهم صلِّ وسلِّم على رسول الله " আমাদের এ সালামকে তাঁর নিকট পৌঁছানো হবে। সালাতে আমরা বলে থাকি, " السلام عليك أيها النبي ورحمة الله وبركاته " তখনো আমাদের সালাম তাঁর নিকট পৌছানো হয়।
আমি মদিনাতে অনেক মানুষকে বলতে শুনেছি, আমার পিতা আমাকে ওসিয়ত করেছেন, যাতে আমি রাসূলের উপর সালাম প্রেরণ করি। তিনি আমাকে বলেন, আমার পক্ষ থেকে রাসূলের উপর সালাম পাঠ করবে। এটি সর্ম্পূণ ভূল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জীবিত নন, তাহলে জীবিত ব্যক্তির সালামের ন্যায় তাঁর নিকট প্রেরণ করা যেত! আর যদি তোমার পিতা রাসূলের উপর সালাম দিয়ে থাকেন, তার সালাম পৌছানোর জন্য তোমার চেয়ে বেশি ক্ষমতা সম্পন্ন এবং তোমার চেয়ে অধিক বিশ্বাসী রয়েছে যারা তোমার পিতার সালামকে রাসূলের প্রতি পৌঁছাবে। আর তারা হলো আল্লাহর নিয়োজিত ফেরেশতা বৃন্দ।
সুতরাং, এর কোন প্রয়োজন নাই যে, তুমি কারো মাধ্যমে সালাম পাঠাবে। আমরা বলি, তুমি তোমার জায়গা হতে অথবা দুনিয়ার যে কোন জায়গা হতে বলবে,  السلام عليك أيها النبي এটি অতিদ্রুত ও সুন্দরভাবে তার নিকট পৌছানো হবে, তাতে কোন প্রকার সন্দেহ সংশয়ের অবকাশ নাই। 
আল্লাহই ভালো জানেন।


মুফতী : সৌদিআরবের সর্বোচ্চ ওলামা পরিষদ
অনুবাদক : জাকেরুল্লাহ আবুল খায়ের
সম্পাদনা : ইকবাল হোছাইন মাছুম
সূত্র : ইসলাম প্রচার ব্যুরো, রাবওয়াহ, রিয়াদ, সৌদিআরব


আরও পড়ুনঃ ঈদে মীলাদুন্নবী (শরীয়তের দৃষ্টিতে কতটুকু শুদ্ধ)


“ফতোওয়া” বিষয়ের উপর আরও পড়তে এইখানে ক্লিক করুন।
“প্রশ্নোত্তর” বিষয়ের উপর আরও পড়তে এইখানে ক্লিক করুন।
“বিদ’আত” বিষয়ের উপর আরো পড়তে এইখানে ক্লিক করুন।

পোস্টটি ভালো লাগলে শেয়ার করতে ভুলবেন না কিন্তু।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন