ভূমিকা
الحمد لله رب العالمين، والصلاة والسلام على أشرف المرسلين، نبينا محمد، وعلى آله وأصحابه أجمعين.
যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহ তা‘আলার যিনি সমগ্র জাহানের প্রতিপালক। আর সালাত ও সালাম নাযিল হোক সমস্ত নবীগণের সেরা ও সর্ব শ্রেষ্ঠ নবী আমাদের নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর। আরও সালাত ও সালাম নাযিল হোক তার পরিবার, পরিজন ও সাথী-সঙ্গীদের উপর।
মনে রাখতে হবে, মানুষের অন্তর হল, তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের রাজা আর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ হল, তার অধীনস্থ প্রজা। যখন রাজা ঠিক হয়, তখন তার অধীনস্থ প্রজারাও ঠিক থাকে। আর যখন রাজা খারাপ হয়, তার অধীনস্থ প্রজারাও খারাপ হয়। নোমান ইবনে বাসির রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«أَلا وَإِنَّ فِي الجَسِد مُضْغَةً إِذَا صَلَحتْ صَلَح الجَسَدُ كُلُّهُ، وَإذَِا فَسَدتْ فَسَد الجَسَدُ كُلُّهُ، أَلا وَهِيَ اْلَقْلبُ»
অর্থ, সাবধান! তোমাদের দেহে একটি গোস্তের টুকরা আছে, যখন টুকরাটি ঠিক থাকে তখন সমগ্র দেহ ঠিক থাকে, আর যখন গোস্তের টুকরাটি খারাপ হয় তখন তোমাদের পুরো দেহ খারাপ হয়ে যায়, আর তা হল, মানবাত্মা বা অন্তর।
মানবাত্মা হল, শক্তিশালী দুর্গের মত, যার আছে অনেকগুলো দরজা, জানালা ও প্রবেশদ্বার। আর শয়তান হল, অপেক্ষমাণ সুযোগ সন্ধানী শত্রুর মত, যে সব সময় দুর্গে প্রবেশের জন্য সুযোগ খুঁজতে এবং চেষ্টা করতে থাকে; যাতে দুর্গের নিয়ন্ত্রণ ও কর্তৃত্ব নিজেই করতে পারে।
এ দুর্গকে রক্ষা করতে হলে, তার দরজা ও প্রবেশদ্বারসমূহে অবশ্যই পাহারা দিতে হবে। দুর্গের প্রবেশ দ্বারাসমূহ রক্ষা না করতে পারলে দুর্গকে রক্ষা করা কোনভাবেই সম্ভব নয়। সুতরাং, একজন জ্ঞানীর জন্য কর্তব্য হল, তাকে অবশ্যই দুর্গের দরজা ও প্রবেশদ্বারসমূহ চিহ্নিত করে তাতে প্রহরী নির্ধারণ করে দেয়া, যাতে সে তার স্বীয় দুর্গ- মানবাত্মা-কে অপেক্ষমাণ, সুযোগ সন্ধানী শত্রু-শয়তান হতে রক্ষা ও মানবাত্মা হতে তাকে প্রতিহত করতে পারে। আর শয়তানটি যাতে তার কোন ক্ষতি করতে তার উপর প্রাধান্য বিস্তার করতে না পারে। আর একটি কথা মনে রাখতে হবে মানবাত্মার জন্য শয়তানের প্রবেশদ্বার অসংখ্য অগণিত; সব গুলোকে বন্ধ করে দিতে হবে। দৃষ্টান্তস্বরূপ কয়েকটি বলা যেতে পারে, যেমন: হিংসা, বিদ্বেষ, লোভ-লালসা, কৃপণতা, রাগ, ক্ষোভ, দুশমনি, খারাপ ধারণা, দুনিয়ার মহব্বত, তাড়াহুড়া করা, দুনিয়ার ভোগ-বিলাস ও চাকচিক্যের সাথে সম্পৃক্ত হওয়া, ঘর-বাড়ী এবং নারী-গাড়ীর মোহে পড়া ইত্যাদি।
আমরা আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এর অপার অনুগ্রহে এ কিতাবে মানবাত্মার জন্য বিধ্বংসী বিষয়সমূহের আলোচনার ধারাবাহিকতায় শয়তানের প্রবেশদ্বারসমূহ হতে সর্বশেষটি অর্থাৎ দুনিয়ার মহব্বত বিষয়ে আলোচনা করব। দুনিয়ার হাকিকত কি, দুনিয়াতে মুমিনদের অবস্থান ও দুনিয়ার সাথে তাদের সম্পর্কের মান-দণ্ড কেমন হওয়া উচিত, তা এ কিতাবে সংক্ষিপ্ত আকারে তুলে ধরতে প্রয়াস চালাবো। তারপর দুনিয়ার মহব্বত ও আসক্তির কারণে মানব জীবনে কি কি প্রভাব পড়তে পারে, কি ক্ষতি হতে পারে, তার প্রতিবিধান কি এবং দুনিয়ার প্রতি আসক্তির কারণসমূহ আলোচনা করব।
এ পুস্তিকাটি তৈরি করা ও এটিকে একটি সন্তোষজনক অবস্থানে দাঁড় করাতে যারা বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেছেন, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশে আমি কখনোই ভুলবো না।
আর আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এর নিকট প্রার্থনা করি যে, তিনি যেন দুনিয়াকে আমাদের লক্ষ্য না বানান, আমাদের জ্ঞানের চূড়ান্ত পর্যায় নির্ধারণ না করেন এবং আমাদের গন্তব্য যেন জাহান্নাম না করেন।
আমরা আল্লাহ তা‘আলার নিকট আরও প্রার্থনা করি, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন যেন, আমাদের দুনিয়া ও আখিরাতের স্থায়ী ও চিরন্তন কল্যাণ দান করেন এবং আমাদের ক্ষমা করেন। আমীন।
وصلى الله وسلم على نبينا محمد وعلى آله وصحبه أجمعين.
সালেহ আল-মুনাজ্জেদ