মুসলিমদের মান-মর্যাদার প্রতি শ্রদ্ধা-প্রদর্শন ও তাদের অধিকার-রক্ষা এবং তাদের প্রতি দয়া-দাক্ষিণ্যের গুরুত্ব
মুসলিমদের মান-মর্যাদার প্রতি শ্রদ্ধা-প্রদর্শন ও তাদের অধিকার-রক্ষা এবং তাদের প্রতি দয়া-দাক্ষিণ্যের গুরুত্ব
আল্লাহ তা‘আলা
বলেন,
﴿ وَمَن يُعَظِّمۡ حُرُمَٰتِ ٱللَّهِ فَهُوَ خَيۡرٞ لَّهُۥ عِندَ رَبِّهِۦۗ
﴾ [الحج: ٣٠]
অর্থাৎ “কেউ আল্লাহর (দ্বীনের)
প্রতীকসমূহের সম্মান করলে তার প্রতিপালকের নিকট তার জন্য এটাই উত্তম।” (সূরা হাজ্জ্ব ৩০ আয়াত)
আরো বলেন,
﴿وَمَن يُعَظِّمۡ شَعَٰٓئِرَ ٱللَّهِ فَإِنَّهَا مِن تَقۡوَى ٱلۡقُلُوبِ
﴾ [الحج: ٣٢]
অর্থাৎ “কেউ আল্লাহর (দ্বীনের)
প্রতীকসমূহের সম্মান করলে এটা তো তার হৃদয়ের সংযমশীলতারই বহিঃপ্রকাশ।” (সূরা হাজ্জ্ব ৩২ আয়াত)
তিনি বলেন,
﴿ وَٱخۡفِضۡ جَنَاحَكَ لِمَنِ ٱتَّبَعَكَ مِنَ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ ٢١٥ ﴾ [الشعراء: ٢١٥]
অর্থাৎ “বিশ্বাসীদের জন্য তুমি
তোমার বাহুকে অবনমিত রাখ।” (হিজ্র ৮৮আয়াত)
তিনি আরো বলেন,
﴿مَن قَتَلَ نَفۡسَۢا بِغَيۡرِ نَفۡسٍ أَوۡ فَسَادٖ فِي ٱلۡأَرۡضِ فَكَأَنَّمَا
قَتَلَ ٱلنَّاسَ جَمِيعٗا وَمَنۡ أَحۡيَاهَا فَكَأَنَّمَآ أَحۡيَا ٱلنَّاسَ جَمِيعٗاۚ
﴾ [المائدة: ٣٢]
অর্থাৎ “যে ব্যক্তি নরহত্যা
অথবা পৃথিবীতে ধ্বংসাত্মক কাজ করার দণ্ডদান উদ্দেশ্য ছাড়া কাউকে হত্যা করল, সে যেন পৃথিবীর সকল মানুষকেই হত্যা করল। আর কেউ কারো প্রাণরক্ষা
করলে সে যেন পৃথিবীর সকল মানুষের প্রাণ রক্ষা করল।” (সূরা মায়েদাহ ৩২ আয়াত)
হাদীসসমূহ:
1/227. وَعَنْ أَبِي مُوسَى رضي
الله عنه، قَالَ : قَالَ رَسُولُ الله ﷺ: «المُؤْمِنُ للْمُؤْمِنِ
كَالبُنْيَانِ يَشُدُّ بَعْضُهُ بَعْضَاً». وشبَّكَ بَيْنَ أصَابِعِهِ .
مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
১/২২৭। আবূ মূসা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘এক মু’মিন অপর মু’মিনের জন্য অট্টালিকার ন্যায়, যার এক অংশ
অন্য অংশকে মজবূত করে রাখে।’’ তারপর তিনি (বুঝাবার জন্য)
তাঁর এক হাতের আঙ্গুলগুলি অপর হাতের আঙ্গুলের ফাঁকে ঢুকালেন।[1]
2/228. وَعَنهُ، قَالَ : قَالَ رَسُولُ الله ﷺ: «مَنْ مَرَّ في
شَيْءٍ مِنْ مَسَاجِدِنا، أَوْ أَسْوَاقِنَا، وَمَعَهُ نَبْلٌ فَلْيُمْسِكْ، أَوْ
لِيَقْبِضْ عَلَى نِصَالِهَا بكَفّه ؛ أنْ يُصِيبَ أحَداً مِنَ المُسْلِمِينَ
مِنْهَا بِشَيْء». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
২/২২৮। উক্ত রাবী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতেই বর্ণিত, তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে
ব্যক্তি তীর সঙ্গে নিয়ে আমাদের কোনো মসজিদ অথবা কোনো বাজারের ভিতর দিয়ে অতিক্রম
করবে, তার উচিত হবে, হাতের তালু দ্বারা
তার ফলাকে ধরে নেওয়া। যাতে কোনো মুসলিম তার দ্বারা কোনো প্রকার কষ্ট না পায়।’’ (বুখারী
ও মুসলিম)
[2]
3/229. وَعَنِ النُّعمَانِ بنِ بَشِيرٍ رَضِيَ الله عَنهُمَا،
قَالَ : قَالَ رَسُولُ الله ﷺ: «مَثَلُ المُؤْمِنينَ في تَوَادِّهِمْ
وتَرَاحُمِهمْ وَتَعَاطُفِهمْ، مَثَلُ الجَسَدِ إِذَا اشْتَكَى مِنْهُ عُضْوٌ
تَدَاعَى لَهُ سَائِرُ الجَسَدِ بِالسَّهَرِ والحُمَّى». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
৩/২২৯। নু’মান
ইবনে বাশীর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘মু’মিনদের
একে অপরের প্রতি সম্প্রীতি, দয়া ও মায়া-মমতার উদাহরণ (একটি)
দেহের মত। যখন দেহের কোন অঙ্গ পীড়িত হয়, তখন তার জন্য সারা
দেহ অনিদ্রা ও জ্বরে আক্রান্ত হয়।’’ (বুখারী ও মুসলিম)[3]
4/230. وَعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، قَالَ : قَبَّلَ النَّبيُّ ﷺ الحَسَنَ بْنَ عَليٍّ رَضِيَ الله
عَنهُمَا، وَعِنْدَهُ الأَقْرَعُ بْنُ حَابِس، فَقَالَ الأقْرَعُ : إن لِي عَشرَةً
مِنَ الوَلَدِ مَا قَبَّلْتُ مِنْهُمْ أحَداً . فَنَظَرَ إِلَيْهِ رَسُول الله ﷺ،
فَقَالَ: «مَنْ لا يَرْحَمْ لاَ يُرْحَمْ !». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
৪/২৩০। আবূ হুরাইরাহ্
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি
বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাসান ইবনে আলী
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা-কে চুমু দিলেন। ঐ
সময় তাঁর নিকট আক্বরা‘ ইবন হাবেস বসা ছিলেন। আক্বরা‘ বললেন, ‘আমার
দশটি ছেলে আছে, আমি তাদের কাউকেই কোনোদিন চুমু দেইনি।’ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘‘যে দয়া করে না, তার প্রতি দয়া করা হয় না।’’ (বুখারী
ও মুসলিম)[4]
5/231. وَعَن عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنهَا،
قَالَتْ : قَدِمَ نَاسٌ مِنَ الأعْرَابِ عَلَى رَسُولِ الله ﷺ، فَقَالُوا :
أتُقَبِّلُونَ صِبْيَانَكُمْ ؟ فَقَالَ: «نَعَمْ»قَالُوا : لَكِنَّا
وَاللهِ مَا نُقَبِّلُ! فَقَالَ رَسُولُ الله ﷺ: «أَوَ أَمْلِك إنْ كَانَ اللهُ
نَزَعَ مِنْ قُلُوبِكُم الرَّحْمَةَ !». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
৫/২৩১। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা
কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, কিছু বেদুঈন
লোক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে বলল, ‘আপনারা
কি আপনাদের শিশু-সন্তানদেরকে চুমু দিয়ে থাকেন?’ নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘হ্যাঁ।’’ তারা বলল, ‘কিন্তু আল্লাহর কসম! আমরা চুমু
দেই না।’ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘আল্লাহ যদি তোমাদের অন্তর থেকে দয়া উঠিয়ে নেন, তবে
আমি কি তার মালিক করে দিতে পারি?’’ (বুখারী ও মুসলিম) [5]
6/232. وَعَن جَرِيرِ بنِ عَبدِ اللهِ رضي
الله عنه، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: «مَنْ لاَ يَرْحَمِ النَّاسَ لاَ
يَرْحَمْهُ الله». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
৬/২৩২। জারীর ইবনে আব্দুল্লাহ
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি
বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি মানুষের প্রতি দয়া করবে না, আল্লাহও
তার প্রতি দয়া করবেন না।’’ (বুখারী ও মুসলিম) [6]
7/233. وَعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي
الله عنه : أنّ
رَسُولَ اللهِ ﷺ، قَالَ: «إِذَا صَلَّى أحَدُكُمْ للنَّاسِ فَلْيُخَفِّفْ،
فَإنَّ فِيهِم الضَّعِيفَ وَالسَّقِيمَ وَالكَبيرَ، وَإِذَا صَلَّى أحَدُكُمْ
لِنَفْسِهِ فَلْيُطَوِّل مَا شَاءَ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
৭/২৩৩। আবূ হুরাইরাহ
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘তোমাদের কেউ যখন
লোকদের নিয়ে নামায পড়ে, তখন সে যেন সংক্ষেপ করে। কারণ তাদের
মাঝে দুর্বল, অসুস্থ ও বৃদ্ধ লোক থাকে। আর যখন কেউ একাকী
নামায পড়ে, তখন সে ইচ্ছামত দীর্ঘ করতে পারে।’’
(বুখারী ও মুসলিম) [7]
8/234. وَعَن عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنهَا، قَالَتْ : إنْ كَانَ
رَسُول الله ﷺ لَيَدَعُ العَمَلَ، وَهُوَ يُحبُّ أنْ يَعْمَلَ بِهِ؛ خَشْيَةَ أنْ
يَعمَلَ بِهِ النَّاسُ فَيُفْرَضَ علَيْهِمْ. مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
৮/২৩৪। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি
বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো কখনো
(নফল) আমল করতে পছন্দ করা সত্ত্বেও এই ভয়ে ছেড়ে দিতেন যে, লোকেরা
তা আমল করবে এবং তার ফলে তাদের উপর তা ফরয করে দেওয়া হবে। (বুখারী ও মুসলিম) [8]
9/235. وَعَنْهَا رَضِيَ اللهُ عَنْهَا، قَالَتْ : نَهَاهُمُ
النَّبيُّ ﷺ عنِ الوِصَالِ رَحمَةً لَهُمْ، فَقَالُوا : إنَّكَ تُوَاصِلُ ؟ قَالَ:
«إنّي لَسْتُ كَهَيْئَتِكُمْ، إنِّي أَبِيْتُ يُطْعِمُنِي رَبِّي وَيَسقِيني».
مُتَّفَقٌ عَلَيهِ .
৯/২৩৫। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা হতেই বর্ণিত, তিনি
বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীদেরকে
দয়াপূর্বক ‘সওমে ওয়িসাল’ (বিনা ইফতারে
একটানা রোযা) রাখতে নিষেধ করেছেন। তাঁরা বললেন, ‘‘আপনি তো ‘সওমে ওয়িসাল’ রাখছেন?’’ তিনি
বললেন, ‘‘আমি তোমাদের মত নই। আমাকে তো আমার প্রতিপালক রাতে
পানাহার করান।’’ (বুখারী ও মুসলিম) [9]
অর্থাৎ পানাহারকারীর মত শক্তি
দান করেন।
10/236. وَعَنْ أَبِي قَتادَةَ الحَارِثِ بنِ رِبعِي
رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ الله ﷺ: «إنِّي لأَقُومُ إِلَى
الصَّلاةِ، وَأُرِيدُ أَنْ أُطَوِّلَ فِيهَا، فَأسْمَعُ بُكَاءَ الصَّبيِّ
فَأَتَجَوَّزَ في صَلاَتِي كَرَاهِيَةً أَنْ أَشُقَّ عَلَى أُمِّهِ». رواه
البخاري
১০/২৩৬। আবূ কাতাদাহ্ হারেস
ইবনে রিব‘য়ী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘আমি নামায পড়তে
দাঁড়াই এবং আমার ইচ্ছা হয় তা দীর্ঘ করি। অতঃপর আমি শিশুর কান্নার আওয়াজ শুনি। ফলে
আমি তার মায়ের কষ্ট হওয়াটা অপছন্দ মনে করে নামায সংক্ষিপ্ত করি।’’ (বুখারী) [10]
11/237. وَعَن جُندُبِ بنِ عَبدِ اللهِ رضي
الله عنه، قَالَ : قَالَ رَسُولُ الله ﷺ: «مَنْ صَلَّى صَلاةَ الصُّبْحِ
فَهُوَ في ذِمَّةِ الله فَلاَ يَطْلُبَنَّكُمُ الله مِنْ ذِمَّته بشَيءٍ، فَإنَّهُ
مَنْ يَطْلُبْهُ منْ ذمَّته بشَيءٍ يُدْركْهُ، ثُمَّ يَكُبُّهُ عَلَى وَجْهِهِ في
نَارِ جَهَنَّمَ». رواه مسلم
১১/২৩৭। জুন্দুব ইবনে আব্দিল্লাহ
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি ফজরের
নামায (জামা‘আতে) পড়ল, সে আল্লাহর যিম্মাদারীতে চলে এল।
সুতরাং আল্লাহ যেন তোমাদের কাছে তার যিম্মার কিছু দাবী না করেন। কারণ, যার কাছেই তিনি তাঁর যিম্মার কিছু দাবী করবেন, তাকে
পাকড়াও করবেন। অতঃপর তিনি তাকে উপুড় করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন।’’(মুসলিম) [11]
(বলা বাহুল্য, যে নামায
পড়ে, সে আল্লাহর যিম্মাদারীতে। সুতরাং সে সম্মান ও শ্রদ্ধার
পাত্র; তার সাথে সম্মানের সাথে ব্যবহার কর)
12/238. وَعَنِ ابنِ عُمَرَ رَضِيَ الله عَنهُمَا : أنَّ رَسُولَ
الله ﷺ، قَالَ: «المُسْلِمُ أَخُو المُسْلِم، لا يَظْلِمهُ، وَلاَ يُسْلِمُهُ.
مَنْ كَانَ في حَاجَة أخيه، كَانَ اللهُ في حَاجَته، وَمَنْ فَرَّجَ عَنْ مُسْلِم
كُرْبَةً، فَرَّجَ اللهُ عَنْهُ بها كُرْبَةً مِنْ كُرَبِ يَومِ القِيَامَةِ،
وَمَنْ سَتَرَ مُسْلِماً سَتَرَهُ اللهُ يَومَ القِيامَةِ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
১২/২৩৮। ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু
‘আনহুমা কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘মুসলিম মুসলিমের
ভাই, সে তার উপর অত্যাচার করবে না এবং তাকে অত্যাচারীর হাতে
ছেড়ে দেবে না। যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের প্রয়োজন পূর্ণ করবে, আল্লাহ
তার প্রয়োজন পূর্ণ করবেন। যে ব্যক্তি কোনো মুসলিমের কোনো এক বিপদ দূর করে দেবে, আল্লাহ কিয়ামতের দিন তার বহু বিপদের একটি বিপদ দূর করে দেবেন। আর
যে ব্যক্তি কোনো মুসলিমের দোষ-ত্রুটি গোপন করবে, আল্লাহ
কিয়ামতে তার দোষ-ত্রুটি গোপন করবেন।’’ (বুখারী, মুসলিম) [12]
13/239. وَعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي
الله عنه، قَالَ : قَالَ رَسُولُ الله ﷺ: «المُسْلِمُ أخُو المُسْلِمُ، لاَ
يَخُونُهُ، وَلاَ يَكْذِبُهُ، وَلاَ يَخْذُلُهُ، كُلُّ المُسْلِمِ عَلَى المُسْلِم
حَرَامٌ عِرْضُهُ وَمَالهُ وَدَمُهُ، التَّقْوى هاهُنَا، بحَسْب امْرىءٍ مِنَ
الشَّرِّ أنْ يَحْقِرَ أخَاهُ المُسْلِم». رواه الترمذي، وَقالَ: «حديث
حسن».
১৩/২৩৯। আবূ হুরাইরাহ
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘মুসলিম মুসলিমের
ভাই। সে তার বিশ্বাসঘাতকতা করবে না, তাকে মিথ্যা বলবে না (বা
মিথ্যাবাদী ভাববে না), তার সাহায্য না করে তাকে অসহায় ছেড়ে
দেবে না। এক মুসলিমের মর্যাদা, মাল ও খুন অপর মুসলিমের জন্য
হারাম। তাকওয়া তথা আল্লাহ-সচেতনতা এখানে (অন্তরে) রয়েছে। কোনো মুসলিম ভাইকে তুচ্ছ
মনে করাটাই একটি মানুষের মন্দ হওয়ার জন্য যথেষ্ট।’’ (তিরমিযী, হাসান
সূত্রে) [13]
14/240. وَعَنهُ، قَالَ : قَالَ رَسُولُ الله ﷺ: «لاَ
تَحَاسَدُوا، وَلاَ تَنَاجَشُوا، وَلاَ تَبَاغَضُوا، وَلاَ تَدَابَرُوا، وَلاَ
يَبعْ بَعْضُكُمْ عَلَى بَيْع بَعْض، وَكُونُوا عِبَادَ الله إخْوَاناً،
المُسْلِمُ أخُو المُسْلم : لاَ يَظْلِمُهُ، وَلا يَحْقِرُهُ، وَلاَ يَخْذُلُهُ،
التَّقْوَى هاهُنَا - وَيُشِيرُ إِلَى صَدرِهِ ثَلاَثَ مَرَّاتً - بحَسْب امْرئٍٍ
مِنَ الشَّرِّ أنْ يَحقِرَ أخَاهُ المُسْلِمَ، كُلُّ المُسْلم عَلَى المُسْلم
حَرَامٌ، دَمُهُ وَمَالُهُ وَعِرْضُهُ». رواه مسلم
১৪/২৪০। উক্ত বর্ণনাকারী
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকেই বর্ণিত, তিনি
বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘তোমরা একে অপরের প্রতি হিংসা করো না, কেনা-বেচাতে
জিনিসের মূল্য বাড়িয়ে একে অপরকে ধোঁকা দিয়ো না, একে অপরের
প্রতি শত্রুতা রেখো না, এক অপর থেকে (ঘৃণাভরে) মুখ ফিরায়ো না
এবং একে অপরের (জিনিস) কেনা-বেচার প্রস্তাবের উপর কেনা-বেচা করো না। আর হে আল্লাহর
বান্দারা! তোমরা ভাই-ভাই হয়ে যাও। মুসলিম মুসলিমের ভাই। সে তার প্রতি যুলুম করবে
না, তাকে তুচ্ছ ভাববে না এবং তাকে অসহায় অবস্থায় ছেড়ে দেবে
না। তাকওয়া তথা আল্লাহ-সচেতনতা এখানে (অন্তরে) রয়েছে। (তিনি নিজ বুকের দিকে ইঙ্গিত
করে এ কথা তিনবার বললেন।) কোন মুসলিম ভাইকে তুচ্ছ ভাবা একটি মানুষের মন্দ হওয়ার
জন্য যথেষ্ট। প্রত্যেক মুসলিমের রক্ত, মাল এবং তার মর্যাদা
অপর মুসলিমের উপর হারাম।’’ (মুসলিম) [14]
16/241. وَعَن أَنَسٍ رضي
الله عنه، عَنِ النَّبيّ ﷺ، قَالَ: «لاَ يُؤمِنُ أحَدُكُمْ حَتَّى يُحِبَّ
لأخِيهِ مَا يُحِبُّ لنَفْسِهِ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
১৬/২৪১। আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘তোমাদের মধ্যে কেউ (পূর্ণ) মু’মিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না সে তার ভাইয়ের
জন্য তাই পছন্দ করবে, যা সে নিজের জন্য পছন্দ করে।’’ (বুখারী
ও মুসলিম) [15]
17/242. وَعَنهُ، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: «انْصُرْ
أخَاكَ ظَالماً أَوْ مَظْلُوماً».فَقَالَ رجل : يَا رَسُولَ اللهِ، أنْصُرُهُ
إِذَا كَانَ مَظْلُوماً، أرَأيْتَ إنْ كَانَ ظَالِماً كَيْفَ أنْصُرُهُ ؟ قَالَ: «تحْجُزُهُ
ـ أَوْ تمْنَعُهُ ـ مِنَ الظُلْمِ فَإِنَّ ذلِكَ نَصرُهُ». رواه البخاري
১৭/২৪২। উক্ত সাহাবী
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকেই বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘তোমার ভাইকে সাহায্য
কর, সে অত্যাচারী হোক অথবা অত্যাচারিত।’’ তিনি
(আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল! অত্যাচারিতকে সাহায্য করার বিষয়টি তো বুঝলাম; কিন্তু অত্যাচারীকে কিভাবে সাহায্য করব?’ তিনি
বললেন, ‘‘তুমি তাকে অত্যাচার করা হতে বাধা দেবে, তাহলেই তাকে সাহায্য করা হবে।’’(বুখারী) [16]
18/243. وَعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي
الله عنه : أنَّ رَسُولَ الله ﷺ، قَالَ: «حَقُّ
المُسْلِم عَلَى المُسْلِم خَمْسٌ : رَدُّ السَّلامِ، وَعِيَادَةُ المَريض،
وَاتِّبَاعُ الجَنَائِزِ، وَإجَابَةُ الدَّعْوَة، وتَشْميتُ العَاطِسِ».
مُتَّفَقٌ عَلَيهِ .
وفي رواية لمسلم:
«حَقُّ المُسْلِم عَلَى المُسْلِم ستٌّ : إِذَا لَقيتَهُ فَسَلِّمْ عَلَيهِ،
وَإِذَا دَعَاكَ فَأجبْهُ، وإِذَا اسْتَنْصَحَكَ فَانْصَحْ لَهُ، وإِذَا عَطَسَ
فَحَمِدَ الله فَشَمِّتْهُ، وَإِذَا مَرِضَ فَعُدْهُ، وَإِذَا مَاتَ فَاتَّبِعْهُ»
১৮/২৪৩। আবূ হুরাইরাহ
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘মুসলিমের উপর মুসলিমের
পাঁচটি অধিকার রয়েছেঃ (১) সালামের জবাব দেওয়া, (২) রোগীকে
দেখতে যাওয়া, (৩) জানাযায় অংশ গ্রহণ করা, (৪)
দাওয়াত গ্রহণ করা এবং (৫) কেউ হাঁচি দিলে তার জবাব দেওয়া।’’ (বুখারী ও মুসলিম)
মুসলিমের অন্য এক বর্ণনায় আছে, ‘‘মুসলিমের উপর মুসলিমের অধিকার ছয়টিঃ তুমি তার সঙ্গে সাক্ষাৎ
করলে তাকে সালাম দাও, সে তোমাকে দাওয়াত দিলে তার দাওয়াত
গ্রহণ কর, সে তোমার কাছে উপদেশ চাইলে তুমি তাকে উপদেশ দাও, সে হাঁচি দিয়ে ‘আলহামদু লিল্লাহ’ বললে তার জবাব দাও, সে অসুস্থ হলে তাকে
দেখতে যাও এবং সে মারা গেলে তার জানাযায় অংশ গ্রহণ কর।’’ (বুখারী ও মুসলিম) [17]
19/244. وَعَنْ أَبِي عُمَارَةَ البَرَاءِ بنِ عَازِبٍ رَضِيَ اللهُ
عَنهُمَا، قَالَ : أَمَرَنَا رَسُولُ اللهِ ﷺ بِسَبعٍ، وَنَهَانَا عَن سَبعٍ :
أمَرَنَا بعيَادَة المَرِيض، وَاتِّبَاعِ الجَنَازَةِ، وتَشْمِيتِ العَاطسِ،
وَإبْرَارِ المُقْسِم، ونَصْرِ المَظْلُوم، وَإجَابَةِ الدَّاعِي، وَإِفْشَاءِ
السَّلامِ، ونَهَانَا عَنْ خَواتِيمٍ أَوْ تَخَتُّمٍ بالذَّهَبِ، وَعَنْ شُرْبٍ
بالفِضَّةِ، وَعَن الميَاثِرِ الحُمْرِ، وَعَن القَسِّيِّ، وَعَنْ لُبْسِ الحَريرِ
والإسْتبْرَقِ وَالدِّيبَاجِ . مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
১৯/২৪৪। আবূ ‘উমারাহ বারা’ ইবনে আযেব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে সাতটি কাজ
করতে নির্দেশ দিয়েছেন এবং সাতটি কাজ করতে নিষেধ করেছেন। তিনি রোগীকে দেখতে যেতে, জানাযায় অংশগ্রহণ করতে, কেউ হাঁচি দিলে তার
জবাব দিতে, শপথকারীর শপথ রক্ষা করতে, নিপীড়িতদের
সাহায্য করতে, সালামের প্রসার ঘটাতে এবং কেউ দাওয়াত দিলে তা
গ্রহণ করতে নির্দেশ দিয়েছেন। আর তিনি আমাদেরকে সোনার আংটি পরতে, রূপার
পাত্র ব্যবহার করতে, রেশমের জিনপোশ, কাস্সী, ইস্তাবরাক ও দীবাজ (সর্বপ্রকার রেশমী পোশাক) ব্যবহার করতে নিষেধ
করেছেন। (বুখারী
ও মুসলিম) [18]
[1] সহীহুল বুখারী ৪৮১, ১৪৩২, ২৪৪৫, ৬০২৭, ৬০২৮, ৭৪৭৬, মুসলিম ২৫৮৫, ২৬৮৭, তিরমিযী ১৯২৮, নাসায়ী ২৫৫৬, ২৫৬০, আবূ দাউদ ৫১৩১, আহমাদ ১৯০৮৭, ১৯১২৭, ১৯১৬৩, ১৯২০৭
[7] সহীহুল বুখারী ৭০৩, মুসলিম ৪৬৭, তিরমিযী ২৩৬, নাসায়ী ৮২৩, আবূ দাউদ ৭৯৪, ৭৯৫, আহমাদ ৭৬১১, ২৭৪৪০, ৮৮৬০, ৯৭৪৯, ৯৯৩৩, ১০১৪৪, ১০৫৫৫
[8] সহীহুল বুখারী ১১২৮, ১১৭৭, মুসলিম ৭১৮, আবূ দাউদ ১২৯২, ১২৯৩, আহমাদ ২৩৫৩৬, ২৪০৩০, ২৪০৩৮, ২৪৮২২, ২৪৮৩৫, ২৪৮৫৭, ২৪৯১৬
[14] সহীহুল বুখারী ৫১৪৪, ৬০৬৬, মুসলিম ২৫৬৪, ২৫৬৩, তিরমিযী ১১৩৪, ১৯৮৮, নাসায়ী ৩২৩৯, ৪৪৯৬, ৪৫০৬, ৪৫০৭, আবূ দাউদ ৩৪৩৮, ৩৪৪৩, ৪৯১৭, ইবনু মাজাহ ১৮৬৭, ২১৭২, ২১৭৪ আহমাদ ৭৬৭০, ৭৮১৫, ৮০৩৯, ২৭৩৩৪, ৮২৯৯, ২৭৪৮৮,মুওয়াত্তা মালেক
১৩৯১, ১৬৮৪
[15] সহীহুল বুখারী ১৩, মুসলিম ৪৫, তিরমিযী ২৫১৫, নাসায়ী ৫০১৬, ৫০১৭, ইবনু মাজাহ ৬৬, আহমাদ ১১৫৯১, ১২৩৫৪, ১২৩৭২, ১২৩৯০, ১২৭৩৪, ১২৯৯৪, দারেমী ২৭৪০
[17] সহীহুল বুখারী ১২৪০, মুসলিম ২১৬২, তিরমিযী ২৭৩৭, নাসায়ী ১৯৩৮, আবূ দাউদ ৫০৩০, ইবনু মাজাহ ১৪৩৫, আহমাদ ২৭৫১১, ১০৫৮৩
[18] সহীহুল বুখারী ১২৩৯, ২৪৪৫, ৫১৫৭, ৫৬৩৫, ৫৬৫০,৫৮৩৮, ৫৮৪৯, ৫৮৬৩, ৬২২২, ৬২৩৫, ৬৬৫৪, মুসলিম ২০৬৬, তিরমিযী ১৭৬০, ২৮০৯, নাসায়ী ১৯৩৯, ৩৭৭৮, ৫৩০৯, ইবনু মাজাহ ২১১৫, আহমাদ ১৮০৩৪, ১৮০৬১, ১৮১৭০
____________________________________________________________________________________________________________
সংকলন : ইমাম মুহিউদ্দীন আবু যাকারিয়া ইয়াহইয়া ইবন শরফ আন-নাওয়াবী রহ.
হাদীসের শুদ্ধাশুদ্ধি নির্ণয় : শাইখ মুহাম্মাদ নাসিরুদ্দীন আলবানী রহ.
অনুবাদক : বিশিষ্ট আলেমবর্গ
অনুবাদ সম্পাদনা : আব্দুল হামীদ ফাইযী
আরও পড়ুনঃ মুসলমানের আদব বা শিষ্টাচার
আরও পড়ুনঃ সচ্চরিত্র
আরও পড়ুনঃ মুসলমানের চারিত্রিক গুণাবলী
আরও পড়ুনঃ রহমানের বান্দাদের গুণাবলী
আরও পড়ুনঃ একজন সফল অভিভাবকের গুণাবলি
আরও পড়ুনঃ স্বামী-স্ত্রীর অধিকার
আরও পড়ুনঃ স্ত্রীর উপর স্বামীর অধিকার
আরও পড়ুনঃ স্ত্রীদের সাথে সদ্ব্যবহার করার অসিয়ত
আরও পড়ুনঃ ইসলামে নারীর অধিকার
আরও পড়ুনঃ ইসলামে শ্রমিকের অধিকার
আরও পড়ুনঃ মুসলিমের হক
আরও পড়ুনঃ সন্তানের হক
আরও পড়ুনঃ পথের হক
পোস্টটি ভালো লাগলে শেয়ার করতে ভুলবেন না কিন্তু।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন