কেয়ামতের ভয়াবহতা ও তারপর (১ম পর্ব)
কেয়ামতের
ভয়াবহতা ও তারপর
بَلِ
السَّاعَةُ مَوْعِدُهُمْ وَالسَّاعَةُ أَدْهَى وَأَمَرُّ
বরং কিয়ামত
তাদের প্রতিশ্রুত সময়, আর কিয়ামত
অতি ভয়ঙ্কর ও তিক্ততর
সূচীপত্র
অনুবাদকের কথা
ভূমিকা
প্রথম
অধ্যায়:
বরযখের শাস্তি ও সুখ
মৃত্যুকালীন অবস্থা সম্পর্কে
আলোচনা
দুই ফেরেশতার প্রশ্ন পর্ব
মুনকার ও নাকীর প্রসঙ্গ
বরযখে শাস্তির কিছু দৃশ্য
কবরের আজাব সম্পর্কে
ইমামদের বক্তব্য
দ্বিতীয়
অধ্যায়:
কেয়ামত সংঘটন
শিঙ্গায় ফুঁৎকার প্রসঙ্গে
তৃতীয়
অধ্যায়:
কেয়ামতের ভয়াবহতা
পরকাল অস্বীকারকারীদের
দুর্দিন
আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীসমূহ মুষ্ঠিবদ্ধ করা
হাশরের ময়দানের অবস্থা
যারা সে দিন আল্লাহ তাআলার ছায়াতে আশ্রয় পাবে
কেয়ামতের দিন যাকে প্রথম
ডাকা হবে তিনি হলেন আদম আলাইহিস সালাম
যাকাত পরিত্যাগকারীর শাস্তি
কেয়ামতের দিন নবী করীম সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর হাউজে কাউসার
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর
শাফাআত
উম্মতে মুহাম্মাদীর হিসাব
হবে সর্বপ্রথম
হিসাব-নিকাশের প্রকৃতি
অনুসারীরা নেতাদের প্রত্যাখ্যান করবে
ফেরেশতাগণ মুশরিকদের থেকে
দায়মুক্তির ঘোষণা দেবে
মূর্তিগুলো অক্ষমতা প্রকাশ
করবে
উম্মতে মুহাম্মদী কেয়ামতের দিন অন্য সকল জাতির
বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিবে
হিসাব নিকাশ
যেভাবে শুরু
এমনিভাবে আজ ভুলে
যাওয়া হবে
যার হিসাবে কঠোরতা
হবে তাকে আজাব দেয়া হবে
সেদিন আল্লাহ ও
বান্দার মধ্যে কোন দোভাষী থাকবে না
সেদিন প্রথম যে
বিষয়টির হিসাব নেয়া হবে
সহজ হিসাব
প্রথম যে বিষয়ে ফয়সালা হবে
মানুষের অধিকার হরনের প্রতিকার
যারা লোক দেখানোর জন্য নেক
আমল করতো কেয়ামতে তাদের বিচার
হে আদম সন্তান! আমি অসুস্থ হয়েছিলাম তুমি
আমার সেবা করোনি
জান্নাত ও জাহান্নামে এক মুহুর্তের অনুভূতি
তাওহীদের মূল্যায়ন
পুলসিরাত সম্পর্কে হাদীস
সর্বশেষ যে ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে
মুমিনদের জাহান্নাম থেকে বের করার জন্য নবী করীম সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর শাফাআত
তাওহীদবাদী গুনাহগারদের জাহান্নাম থেকে মুক্ত করা
আরাফবাসীদের পরিচয়
পুলসিরাত ও জান্নাতের মধ্যে একটি প্রতিবন্ধক গেট
জাহান্নামে প্রবেশ করবে প্রতাপশালীরা আর জান্নাতে
যাবে দুর্বল অসহায় মানুষগুলো
চতুর্থ অধ্যায়
জাহান্নাম ও তার অধিবাসীদের বিবরণ
অনুসারীদের থেকে শয়তানের দায়মুক্তির চেষ্টা
জাহান্নামবাসীদের আফসোস ও
অনুতাপ
জাহান্নামের শাস্তি হবে চিরস্থায়ী
জাহান্নামের শিকল ও আলকাতরা
জাহান্নামের যাক্কুম বৃক্ষ
গলিত পুঁজ হবে
জাহান্নামীদের খাদ্য
সৎকাজে আদেশ করে ও অন্যায়
থেকে নিষেধ করে অথচ নিজে তা থেকে দূরে থাকে না এমন ব্যক্তির শাস্তি
জাহান্নামে সবচেয়ে
নিম্নমানের শাস্তির ধরন
জাহান্নামে
শাস্তির বিভিন্ন স্তর
নারীরা অধিকহারে
জাহান্নামে যাবে
পঞ্চম অধ্যায়
জান্নাত ও তার অধিবাসীদের বিবরণ
সর্বপ্রথম জান্নাতে প্রবেশ করবেন রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
প্রথম যারা জান্নাতে প্রবেশ করবে
জান্নাতে সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ মর্যাদা
জান্নাতের গেইটের আলোচনা
জান্নাতের বিভিন্ন স্তর
জান্নাতের সুউচ্চ কক্ষসমূহ
জান্নাতবাসীদের খাবার-দাবার
জান্নাতের তাবু
জান্নাতের বাজার
জান্নাতের নদ-নদী
জান্নাতের হুর সঙ্গী
জান্নাতের সুখ-শান্তি হবে চিরস্থায়ী
জান্নাতীদের সবচেয়ে বড় আনন্দ
জান্নাতবাসীরা পৃথিবীর অবিশ্বাসী সাথিদের অবস্থা দেখতে পাবে
অনুবাদকের
কথা
সকল বিষয়ে যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহ রাব্বুল
আলামীনের জন্য নিবেদিত। যিনি জীবন ও মৃত্যুর আবর্তন ঘটান, যাতে তিনি পরীক্ষা করতে
পারেন, কে ভালো কাজ করে আর কে করে মন্দ কাজ। তাঁর আরো প্রশংসা করি এ জন্য যে, তিনি যুগে যুগে
নবী ও গ্রন্থ পাঠিয়ে মানবসন্তানদেরকে জান্নাতের দিকে আহবান করেছেন আর জাহান্নাম
থেকে সতর্ক করেছেন।
কেয়ামত পর্যন্ত আমাদের পক্ষ হতে সালাত ও সালাম
নিবেদিত হোক আমাদের রাসূল, আল্লাহর বান্দা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম এর প্রতি। যিনি আজীবন মানুষকে অন্ধকার থেকে আলোর পথে নিয়ে আসতে লড়াই-সংগ্রাম করেছেন। তাঁর পরিবার
পরিজন, সাহাবীদের প্রতিও সালাত ও বরকত নাযিল হোক মহান রাব্বুল আলামীনের পক্ষ থেকে।
কেয়ামতের আলামত, কবরের আযাব, মরনের পরে ইত্যাদি
নামে অনেক বই-পুস্তক বাজারে পাওয়া যায়। কিন্তু কোনটিই যেন কুরআন ও সহীহ সুন্নাহর
মানদন্ডে একশ ভাগ উন্নীত বলে দাবী করতে পারছি না। সেখানে যেমন আছে দূর্বল হাদীসের
ছড়াছড়ি, তেমনি আছে সনদ-সুত্রবিহীন কথার ফুলঝুড়ি আর সপ্নের বর্ণনা ও অলীক
কল্প-কাহিনী। আহওয়ালুল কিয়ামাহ নামক আরবী বইটি বেশ অনেক আগেই হাতে এসেছে। পাঠ শেষে নিয়ত
করলাম অনুবাদ করে ফেলবো। চেষ্টা করলাম মাত্র। আল্লাহ যদি স্বীয় অনুগ্রহ
ও দয়ায় এ শ্রমটুকু কবুল করেন তাহলে তার দীন প্রচারে অংশ নেয়ার সওয়াব পাবো। আর যারা বইটি পড়বেন
ও অন্যকে উপকৃত করবেন তারা কি মাহরূম হবেন? না, কখনো নয়। কেননা আল্লাহর অনুগ্রহ ব্যাপক।
বইটির আলোচ্য বিষয়
সম্পর্কে কয়েকটি কথা:
এক. বইটি শুরু করা
হয়েছে কেয়ামত দিয়ে। তাই কেয়ামতের আলামতের বিষয়গুলো আলোচনা করা হয়নি।
দুই. কোন একটি বিষয়ে
একাধিক আয়াত ও হাদীস থাকা সত্বেও একটি আয়াত বা একটি হাদীস উল্লেখ করা হয়েছে। এ কারণে পাঠক
যেন এ কথা বুঝে না নেন যে, এ বিষয়ে এর বাহিরে কোন আয়াত বা হাদীস নেই।
তিন. অনুবাদের
ক্ষেত্রে সকল আয়াত ও হাদীসের আরবী টেক্সট দেয়া হয়েছে। যাতে সম্মানিত, ইমাম,
খতীব, ওয়ায়েজীনে কেরাম, দাওয়াত-কর্মী ভাইয়েরা সাধারণ পাঠকের চেয়ে বেশী উপকৃত হতে
পারেন। এবং এ বিষয়ে এ বইটি যেন তাদের জন্য একটি সংগ্রহ হিসাবে গণ্য হয়।
চার. অনুবাদ করার
সাথে সাথে কুরআনের আয়াত ও হাদীসের ব্যাখ্যা আমি নিজে সংযোজন করেছি। এটি মুল
গ্রন্থাকারের নয়। গ্রন্থকার শুধু শিরোনামের অধীনে আয়াত ও হাদীস উল্লেখ করেছেন। কোন ব্যাখ্যা
প্রদান করেননি। যেহেতু তিনি বইটি আরবীভাষীদের জন্য লিখেছেন তাই ব্যাখ্যা দেয়া প্রয়োজন মনে
করেননি।
আব্দুল্লাহ শহীদ আব্দুর রহমান
২০ জিলহজ, ১৪৩০ হিজরী
ভূমিকা
হে আল্লাহর বান্দাগণ! কেয়ামত
আসবেই। স্পষ্টভাবেই আসবে। আসবে সময় মত। কিন্তু
মানুষ কি এ জন্য উপদেশ গ্রহণ করছে? নিচ্ছ কি কোন প্রস্তুতি? আচ্ছা কেয়ামত না হয় আমরা দেখতে পাচ্ছি না এখন, কিন্তু প্রতিদিন আমাদের আত্মীয়-স্বজন, সহকর্মী, প্রতিবেশীর মৃত্যু তো আমরা প্রত্যক্ষ করছি। এটাতো অস্বীকার করতে পারি না, কিংবা
এতে সন্দেহ করতে পারি না। তা সত্বেও
এর জন্য আমরা কী প্রস্তুতি নিচ্ছি? কী উপদেশ ও শিক্ষা গ্রহণ করছি?
আসলে আপনার সত্যিকার বন্ধু সে, যে আপনাকে এগুলোর কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। আর আপনার সত্যিকার দুশমন সে, যে আপনাকে দুনিয়ার লোভ লালসার পথ দেখায়। আখেরাত সম্পর্কে আপনাকে করে বিভ্রান্ত ও সন্দেহপ্রবন।
আমাদের ভুলে গেল চলবে না এ পৃথিবী
একদিন ধ্বংস হয়ে যাবে। আমাদের
সকলের উপস্থিত হতে হবে মহান রাব্বুল আলামীন আল্লাহর কাছে। এরপর হয়ত আমরা যাবো জান্নাতে অথবা জাহান্নামে, যেখানের বসবাস হবে স্থায়ী। যেখানে
নেই কোন জীবনাবসান।
আল্লাহ তাআলা বলেন :
يَا
أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّ وَعْدَ اللَّهِ حَقٌّ فَلَا تَغُرَّنَّكُمُ الْحَيَاةُ
الدُّنْيَا وَلَا يَغُرَّنَّكُمْ بِاللَّهِ الْغَرُورُ ﴿5﴾ إِنَّ الشَّيْطَانَ
لَكُمْ عَدُوٌّ فَاتَّخِذُوهُ عَدُوًّا إِنَّمَا يَدْعُو حِزْبَهُ لِيَكُونُوا
مِنْ أَصْحَابِ السَّعِيرِ ﴿6﴾
হে মানুষ, নিশ্চয় আল্লাহর ওয়াদা সত্য; অতএব দুনিয়ার জীবন যেন তোমাদেরকে
কিছুতেই প্রতারিত না করে; আর বড়
প্রতারক(শয়তান) যেন তোমাদেরকে আল্লাহর ব্যাপারে প্রতারণা না করে। নিশ্চয় শয়তান তোমাদের শত্রু, অতএব তাকে শত্রু হিসেবে গণ্য কর। সে তার দলকে কেবল এজন্যই ডাকে যাতে তারা জ্বলন্ত আগুনের অধিবাসী হয়। (সূরা আল ফাতির, আয়াত : ৫-৬)
আল্লাহ তাআলা আরো বলেনঃ
يَا
أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا مَا لَكُمْ إِذَا قِيلَ لَكُمُ انْفِرُوا فِي سَبِيلِ
اللَّهِ اثَّاقَلْتُمْ إِلَى الْأَرْضِ أَرَضِيتُمْ بِالْحَيَاةِ الدُّنْيَا مِنَ
الْآَخِرَةِ فَمَا مَتَاعُ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا فِي الْآَخِرَةِ إِلَّا قَلِيلٌ
হে ঈমানদারগণ, তোমাদের কী হল, যখন তোমাদের বলা হয়, আল্লাহর রাস্তায় (যুদ্ধে) বের হ, তখন তোমরা যমীনের প্রতি প্রবলভাবে ঝুঁকে পড়? তবে কি তোমরা আখেরাতের পরিবর্তে দুনিয়ার
জীবনে সন্তুষ্ট হলে? অথচ দুনিয়ার
জীবনের ভোগ-সামগ্রী আখেরাতের তুলনায় একেবারেই নগণ্য। (সূরা আত তাওবা, আয়াত
৩৮)
আল্লাহ তাআলা আরো বলেনঃ
وَفَرِحُوا
بِالْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَمَا الْحَيَاةُ الدُّنْيَا فِي الْآَخِرَةِ إِلَّا
مَتَاعٌ
আর তারা দুনিয়ার জীবন নিয়ে উৎফুল্লতায়
আছে, অথচ আখিরাতের
তুলনায় দুনিয়ার জীবন খুবই নগণ্য। (সূরা
আর রাদ, আয়াত
২৬)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ
تعس عبد الدينار، تعس عبد الدرهم، تعس عبد الخميلة، تعس عبد الخميصة، إن أعطى
رضي وإن لم يعطى سخط، تعس وانتكش وإذا شيك فلا انتقش . طوبى لعبد آخذ بعنان فرسه
في سبيل الله أشعس رأسه مغبرة قدماه، إن كان في الحراسة كان في الحراسة وإن كان في
الساقة كان في الساقة، إن استأذن لم يؤذن له وإن شفع لم يشفع . أخرجه البخاري
টাকা-পয়সার দাস ধ্বংস হোক, রেশম কাপড়ের দাস ধ্বংস হোক, ধ্বংস হোক পোশাকের দাস। এদের অবস্থা হলো, তাদেরকে প্রদান করা হলে খুশী হয় আর না দিলে
অসন্তুষ্ট হয়। ধ্বংস হোক! অবনত হোক! কাঁটা বিঁধলে তা যেন উঠাতে না পারে।
তবে সৌভাগ্যবান আল্লাহর ঐ বান্দা
যে আল্লাহর পথে ঘোড়ার লাগাম ধরেছে, মাথার চুল এলোমেলো করেছে ও পদদ্বয় ধুলায় ধূসরিত করেছে। যদি তাকে পাহারার দায়িত্ব দেয়া তবে সে পাহারার দায়িত্ব পালন করে। যদি তাকে বাহিনীর পিছনে দায়িত্ব দেয়া হয় তবে তা পালন করে। যদি সে নেতার সাথে সাক্ষাত করার অনুমতি চায় তবে তাকে অনুমতি
দেয়া হয় না। যদি সে কারো জন্য শুপারিশ করে
তবে তার শুপারিশ গ্রহণ করা হয় না।” বর্ণনায় : বুখারী।
আমার কত বন্ধু-ইচ্ছে করলে আমি
তাদের নাম বলতে পারি- কুপ্রবৃত্তি চরিতার্থ করায় লিপ্ত রয়েছে, পাপাচারের জেলখানায় বন্দি হয়ে আছে, কিন্তু
তারা মৃত্যু ও মৃত্যু পরবর্তী হিসাব-নিকাশ থেকে একেবারে বেখবর।
আর আল্লাহ যখন আমাকে হেদায়েত
দিয়েছেন, তাঁর
আনুগত্য করার তাওফিক দিয়েছেন তখন আমার কাজ হলো তাদের নসীহত করা এবং সত্য-সঠিক পথে যেতে
সাহায্য করা।
চিন্তা করে দেখি আজ যদি আমার
মৃত্যু এসে যেত তাহলে আমি কিছুক্ষণ পর মাটির নিচে চলে যাবো। আমার পাপগুলো লিখিত থাকতো, সেগুলোই আমার সঙ্গী হতো। এ কথা
চিন্তা করলে নিজের কুপ্রবৃত্তি দমন হয়ে যেত। পাপাচারের
উপকরণগুলো আমার থেকে দূরে চলে যেত।
হে আল্লাহর বান্দা! আল্লাহকে
ভয় করুন। পৃথিবীর এ সুখ-শান্তি চলে যাচ্ছে,
আর আখেরাত ক্রমেই এগিয়ে আসছে।
মৃত্যুর সময়ের কথা একটু চিন্তা
করুন। তখন যদি আমার পাপের বোঝা ভারী
হয় সৎকর্মের চেয়ে তাহলে কত বড় সর্বনাশ হয়ে যাবে।
এক কবি চমৎকার বলেছেন :
فَلَوْ أنَّ إذَا مِتْنَا تُرِكْنَا
+ لَكَانَ المَوْتُ رَاحَةَ كُلِّ
حيٍّ
وَ لَكِنَّا إذَا مِتْنَا بُعِثْنَا
+ وَنُسْأَلُ بَعْدَهُ عَنْ كُلِّ
شَيءٍ
যদি এমন হত আমরা মরে যাবো আর
আমাদের ছেড়ে দেয়া হবে
তাহলে মৃত্যু হত সকল প্রাণীর
জন্য শান্তির বার্তা।
কিন্তু কথা হল আমরা যখন মরে
যাবো তখন আমাদের হাজির করা হবে
আর এরপর প্রশ্ন করা হবে সকল
বিষয় সম্পর্কে।
হে আল্লাহর বান্দা! আমি এ গ্রন্থে
বরযখের অবস্থা, প্রাণ
বের হয়ে যাওয়ার পরের অবস্থা, জান্নাত ও জাহান্নামের বর্ণনা ইত্যাদি দেয়ার চেষ্টা করেছি আল-কুরআন ও সহীহ হাদীসের
ভিত্তিতে। জীবনের প্রতি দীর্ঘ লোভ ও ভোগ-বিলাসিতার
আশা পরিত্যাগ করুন, আর মৃত্যু পরবর্তী সময়ের জন্য প্রস্তুতি নিন।
মহান রাব্বুল আলামীন মহান আল্লাহর
কাছে প্রার্থনা, তিনি
যেন এ পুস্তকটি দিয়ে পাঠকদের, সর্বোপরি সকলকে উপকৃত হওয়ার তাওফিক দিন। জান্নাত
লাভে আগ্রহীদের জন্য এটাকে সাহায্যকারী হিসাবে কবুল করুন।
আল্লাহ তাআলার কাছেই আমার সকল
বিষয় উপস্থাপিত। সকল বিষয়ে আমি তার উপর তাওয়াক্কুল
করি। আল্লাহ তাআলা আমার জন্য যথেষ্ট। তিনি সর্বোত্তম কর্ম-বিধায়ক। মহান পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়
আল্লাহর সামর্থ ছাড়া কেহ খারাপ কাজ থেকে ফিরে
থাকতে পারে না। আর তার তাওফিক ব্যতীত কেহ নেক
আমল করতে পারে না।
আব্দুল মালেক আল কুলাইব
কুয়েত
৪ জমাদিউস সানী ১৩৯৯ হিজরী
প্রথম
অধ্যায়:
বরযখের
শাস্তি ও সুখ
হে আল্লাহর বান্দা! মৃত্যুর
পর থেকে নিয়ে কেয়ামত পর্যন্ত সময়টাকে বলা হয় বরযখ।
আর আপনি অবশ্যই জানেন যে, আখেরাতের প্রথম মনযিল হল কবর। মৃত্যু বরণ করার পরপরই মৃত ব্যক্তির উপর ছোট কিয়ামত কায়েম
হয়ে যায়। মৃত ব্যক্তিকে কবরস্থ করার পর
প্রতি সকালে ও প্রতি বিকালে তাকে তার ঠিকানা দেখানো হয়। যদি সে জাহান্নামী হয় তবে জাহান্নাম দেখানো হয়। যদি জান্নাতী হয়, তাহলে
জান্নাত দেখানো হয়। ঈমানদারের কবরকে প্রশস্ত করে
দেয়া হয়। উত্থান দিবস পর্যন্ত তাকে এভাবে
তাকে সুখ-শান্তিতে রাখা হয়।
আর যে কাফের তার কবরকে সংকুচিত
করে দেয়া হয়। হাতুরী দিয়ে পিটানো হয়।
কবর থেকে উত্থিত না হওয়া পর্যন্ত
এ সময়টা হল বরযখী জীবন।
মৃত্যুকালীন
অবস্থা সম্পর্কে আলোচনা
আল্লাহ তাআলা বলেন :
حَتَّى
إِذَا جَاءَ أَحَدَهُمُ الْمَوْتُ قَالَ رَبِّ ارْجِعُونِ ﴿99﴾ لَعَلِّي أَعْمَلُ
صَالِحًا فِيمَا تَرَكْتُ كَلَّا إِنَّهَا كَلِمَةٌ هُوَ قَائِلُهَا وَمِنْ
وَرَائِهِمْ بَرْزَخٌ إِلَى يَوْمِ يُبْعَثُونَ ﴿100﴾
অবশেষে যখন তাদের কারো মৃত্যু
আসে, সে বলে, হে আমার রব, আমাকে ফেরত পাঠান, যেন আমি সৎকাজ করতে পারি যা আমি ছেড়ে দিয়েছিলাম।’ কখনো নয়, এটি একটি বাক্য যা সে বলবে। যেদিন তাদেরকে পুনরুত্থিত করা হবে সেদিন পর্যন্ত তাদের সামনে
থাকবে বরযখ।” সূরা আল মুমিনূন, আয়াত ৯৯-১০০
এ আয়াত
থেকে আমরা যা শিখতে পেলাম :
১- যখন মৃত্যু উপস্থিত হবে তখন
মানুষের চোখ খুলে যাবে। সে তখন
ভাল কাজ সম্পাদন করার জন্য আরো সময় কামনা করবে। কিন্তু তাকে আর সময় দেয়া হবে না।
২- মৃত্যুর সময় এ ধরনের প্রার্থনা
অনর্থক। এতে কোন ফল বয়ে আনে না।
৩- বরযখ এর প্রমাণ পাওয়া গেল।
৪- বরযখী জীবন শুরু হয় মৃত্যু
থেকে আর শেষ হবে পুনরুত্থান দিবসে।
আল্লাহ তাআলা আরো বলেনঃ
فَوَقَاهُ
اللَّهُ سَيِّئَاتِ مَا مَكَرُوا وَحَاقَ بِآَلِ فِرْعَوْنَ سُوءُ الْعَذَابِ ﴿45﴾
النَّارُ يُعْرَضُونَ عَلَيْهَا غُدُوًّا وَعَشِيًّا وَيَوْمَ تَقُومُ السَّاعَةُ
أَدْخِلُوا آَلَ فِرْعَوْنَ أَشَدَّ الْعَذَابِ ﴿46﴾
অতঃপর তাদের ষড়যন্ত্রের অশুভ
পরিণাম থেকে আল্লাহ তাকে রক্ষা করলেন আর ফিরআউনের অনুসারীদেরকে ঘিরে ফেলল কঠিন আযাব। আগুন, তাদেরকে সকাল-সন্ধ্যায় তার সামনে উপস্থিত করা হয়, আর যেদিন কিয়ামত সংঘটিত হবে (সেদিন ঘোষণা করা হবে), ফিরআউনের অনুসারীদেরকে কঠোরতম আযাবে প্রবেশ করাও।”(সূরা
আল গাফির, আয়াত ৪৫-৪৬)
এ আয়াত থেকে আমরা যা শিখতে পেলাম :
১- মুসা আলাইহিস সালাম ও তার
অনুসারীদের আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ফেরাউনের ষড়যন্ত্র থেকে রক্ষা করলেন।
২- ফেরআউনের অনুসারীদের পতন
হল।
৩- প্রতিদিন সকাল সন্ধ্যায় তাদের
দোযখ দেখানো হয়। এ কথা দিয়ে বরযখ ও তার শাস্তির বিষয়টি আবারও প্রমাণিত হল।
৪- কেয়ামেতর পর অপরাধীদের যে
শাস্তি হবে সেটা বরযখের শাস্তির চেয়ে কঠোরতম হবে।
এ প্রসঙ্গে হাদীসে এসেছে :
عن البراء بن عازب قال خرجنا مع رسول
الله صلى الله عليه وسلم في جنازة رجل من الأنصار فانتهينا إلى القبر ولما يلحد
فجلس رسول الله صلى الله عليه وسلم وجلسنا حوله كأن على رؤوسنا الطير وفي يده عود
ينكت بها في الأرض طويلا فرفع رأسه فقال أعوذ بالله من عذاب القبر قالها مرتين أو
ثلاثا ثم قال إن العبد المؤمن إذا كان في انقطاع من الدنيا وإقبال من الآخرة بعث
الله إليه ملائكة من السماء بيض الوجوه كأن وجوههم الشمس حتى يقعدوا منه مد البصر
معهم كفن من أكفان الجنة وحنوط من حنوط الجنة ويجيء ملك الموت حتى يقعد عند رأسه
فيقول أيتها النفس الطيبة اخرجي إلى مغفرة من الله ورضوان فتخرج تسيل كما تسيل
القطرة[من] في السقاء فيأخذها فإذا أخذها لم يدعوها في يده طرفة عين حتى يأخذوها
فيحولوها في ذلك الحنوط ثم يصعدون بها ويخرج منها كأطيب نفحة مسك وجدت على الأرض
فيصعدون بها إلى السماء الدنيا فيستفتح فيفتح لها فلا يمرون بأهل سماء إلا قالوا
ما هذا الروح الطيب فيقولون فلان بن فلان بأحسن أسمائه الذي كان يسمى بها في
الدنيا حتى ينتهي بها إلى السماء الدنيا فيستفتحون له فيفتح له فيشيعه من كل سماء
مقربوها إلى السماء التي تليها حتى ينتهي بها إلى السماء السابعة فيقول الله تعالى
ذكره اكتبوا كتابه في عليين وأعيدوه إلى الأرض فإنى منها خلقتهم وفيها أعيدهم
ومنها أخرجهم تارة أخرى فتعاد روحه في جسده ويأتيه ملكان فيجلسانه فيقولان من ربك
فيقول ربي الله فيقولان ما دينك فيقول ديني الإسلام فيقولان ما هذا الرجل الذي بعث
فيكم فيقول هو رسول الله صلى الله عليه وسلم فيقولان له وما يدريك فيقول قرأت في
كتاب الله فآمنت به وصدقت فينادي مناد من السماء أن صدق عبدي قال فذلك قوله { يثبت
الله الذين آمنوا بالقول الثابت في الحياة الدنيا وفي الآخرة } فينادي مناد من
السماء أن صدق عبدي فأفرشوه من الجنة وألبسوه منها وافتحوا له بابا إلى الجنة
فيأتيه من روحها ومن طيبها ويفسح له في قبره مد بصره ويأتيه رجل حسن الوجه حسن
الثياب طيب الريح فيقول أبشر بالذي يسرك فهذا يومك الذي كنت توعد فيقول من أنت
فوجهك الوجه يجيء بالخير فيقول أنا عملك الصالح فيقول رب أقم الساعة رب أقم الساعة
حتى أرجع إلى أهلي ومالي وإن العبد الفاجر أو الآخر إذا كان في انقطاع من الدنيا
وإقبال من الآخرة نزل عليه من السماء ملائكة سود الوجوه معهم أكفان المسوح حتى
يجلسوا منه مد البصر ويجيء ملك الموت فيجلس عند رأسه فيقول أيتها النفس الخبيثة
اخرجي إلى سخط من الله وغضب فتفرق في جسده تنقطع معها العروق والعصب كما ينزع
السفود من الصوف المبلول فيأخذها فإذا وقعت في يده لم يدعوها في يده طرفة عين حتى
يأخذوها فيضعوها في تلك المسوح ثم يصعدوا بها ويخرج منها كأنتن ريح جيفة وجدت على
الأرض فيصعدون فلا يمرون على ملأ من الملائكة إلا قالوا ما هذا الروح الخبيث قال
فيقولون فلان بأقبح أسمائه التي كان يسمى بها في الدنيا حتى ينتهوا بها إلى السماء
الدنيا فيستفتحون له فلا يفتح له ثم قرأ رسول الله صلى الله عليه وسلم ( لا تفتح لهم
أبواب السماء ولا يدخلون الجنة حتى يلج الجمل في سم الخياط) فيقول الله تعالى ذكره
اكتبوا كتابه في أسفل أرض في سجين في الأرض السفلى وأعيدوه إلى الأرض قال فتطرح
روحه ثم قرأ (ومن يشرك بالله فكأنما خر من السماء
فتتخطفه الطير أو تهوي به الريح في مكان سحيق) فتعاد روحه في جسده ويأتيه
ملكان فيجلسانه فيقولان له من ربك فيقول: هاه هاه لا أدري فيقولان ما دينك فيقول
هاه هاه لا أدري فيقولان ما هذا الرجل الذي بعث فيكم فيقول هاه هاه لا أدري فينادي
مناد من السماء أن كذب فأفرشوه من النار وألبسوه من النار وافتحوا له بابا من النار
فيأتيه من حرها وسمومها ويضيق عليه قبره حتى تختلف فيه أضلاعه ويأتيه رجل قبيح
الوجه قبيح الثياب منتن الريح فيقول أبشر بالذي يسوؤك هذا يومك الذي كنت توعد
فيقول من أنت فوجهك الوجه يجيء بالشر فيقول أنا عملك الخبيث فيقول رب لا تقم
الساعة رب لا تقم الساعة.
رواه أحمد وأبو داود والحاكم وصححه
الألباني في أحكام الجنائز
বারা ইবনে আযেব রা. থেকে বর্ণিত, এক আনসারী ব্যক্তির দাফন-কাফনের জন্য আমরা
একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাথে বের হলাম। আমরা কবরের কাছে পৌছে গেলাম তখনও কবর খোড়া শেষ হয়নি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেখানে বসলেন। আমরা তাঁর চার পাশে এমনভাবে বসে গেলাম যেন আমাদের মাথার উপর
পাখি বসেছে। আর তাঁর হাতে ছিল চন্দন কাঠ
যা দিয়ে তিনি মাটির উপর মৃদু পিটাচ্ছিলেন। তিনি
তখন মাথা জাগালেন আর বললেন, তোমরা কবরের শাস্তি থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করো। কথাটি তিনি দু বার কিংবা তিন বার বললেন। এরপর তিনি আরো বললেন, যখন কোন ঈমানদার বান্দা পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়ে আখেরাতের
দিকে যাত্রা করে তখন আকাশ থেকে তার কাছে ফেরেশতা আসে। তাদের চেহারা থাকবে সূর্যের মত উজ্জল। তাদের
সাথে থাকবে জান্নাতের কাফন ও সুগন্ধি। তারা
তার চোখ বন্ধ করা পর্যন্ত তার কাছে বসে থাকবে। মৃত্যুর ফেরেশতা এসে তার মাথার কাছে বসবে। সে বলবে, হে সুন্দর
আত্মা! তুমি আল্লাহ তাআলার ক্ষমা ও তার সন্তুষ্টির দিকে বেরিয়ে এসো। আত্মা বেরিয়ে আসবে যেমন বেড়িয়ে আসে পান-পাত্র থেকে পানির
ফোটা। সে আত্মাকে গ্রহণ করে এক মুহুর্তের
জন্যেও ছাড়বে না। তাকে সেই জান্নাতের কাফন পরাবে
ও সুগন্ধি লাগাবে। পৃথিবিতে যে মিশক আছে সে তার
চেয়ে বেশী সুগন্ধি ছড়াবে। তাকে
নিয়ে তারা আসমানের দিকে যেতে থাকবে। আর ফেরেশতাদের
প্রতিটি দল বলবে, কে এই
পবিত্র আত্মা? তাদের
প্রশ্নের উত্তরে তারা তার সুন্দর নাম নিয়ে বলবে যে, অমুক অমুকের ছেলে। এমনিভাবে
প্রথম আসমানে চলে যাবে। তার জন্য
প্রথম আসমানের দরজাগুলো খুলে দেয়া হবে। এমনি
করে প্রতিটি আসমান অতিক্রম করে যখন সপ্তম আসমানে যাবে তখন আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলবেন, আমার বান্দা আমলনামাটা ইল্লিয়ীনে লিখে
দাও। আর আত্মাটা দুনিয়াতে তার দেহের
কাছে পাঠিয়ে দাও। এরপর কবরে প্রশ্নোত্তরের জন্য
দুজন ফেরেশতা আসবে। তারা প্রশ্ন করবে, তোমার প্রভূ কে? সে বলবে আমার প্রভূ আল্লাহ। তারা প্রশ্ন করবে, তোমার
ধর্ম কি? সে উত্তর
দেবে, আমার
ধর্ম ইসলাম। তারা প্রশ্ন করবে এই ব্যক্তিকে
চেন, যাকে তোমাদের কাছে পাঠানো হয়েছে? সে উত্তরে বলবে, সে আল্লাহর
রাসূল। তারা বলবে, তুমি কিভাবে জানলে? সে উত্তরে বলবে, আমি আল্লাহর কিতাব পাঠ করেছি। তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছি। তাকে সত্য বলে স্বীকার করেছি।
তখন আসমান থেকে একজন আহবানকারী
বলবে, আমার
বান্দা অবশ্যই সত্য বলেছে। তাকে
জান্নাতের বিছানা বিছিয়ে দাও। তার কবর
থেকে জান্নাতের একটি দরজা খুলে দাও। জান্নাতের
সুঘ্রাণ ও বাতাস আসতে থাকবে। যতদূর
চোখ যায় ততদূর কবর প্রশস্ত করে দেয়া হবে। তার কাছে
সুন্দর চেহারার সুন্দর পোশাক পরিহিত সুগন্ধি
ছড়িয়ে এক ব্যক্তি আসবে। সে তাকে
বলবে, তুমি
সুসংবাদ নাও। সূখে থাকো। দুনিয়াতে এ দিনের ওয়াদা দেয়া হচ্ছিল তোমাকে।
মৃত ব্যক্তি সুসংবাদ দাতা এ
ব্যক্তিকে সে জিজ্ঞেস করবে, তুমি কে? সে উত্তরে
বলবে, আমি তোমার
নেক আমল (সৎকর্ম)। তখন সে বলবে, হে আমার রব! কেয়ামত সংঘটিত করুন! হে আমার
রব! কেয়ামত সংঘটিত করুন!! যেন আমি আমার সম্পদ ও পরিবারের কাছে ফিরে যেতে পারি।
আর যখন কোন কাফের দুনিয়া থেকে
বিদায় হয়ে আখেরাত পানে যাত্রা করে তখন তার কাছে কালো চেহারার ফেরেশতা আগমন করে। তার সাথে থাকে চুল দ্বারা তৈরী কষ্ট দায়ক কাপর। তারা চোখ বুজে যাওয়া পর্যন্ত তার কাছে বসে থাকে। এরপর আসে মৃত্যুর ফেরেশতা। তার মাথার কাছে বসে বলে, হে দুর্বিত্ত পাপিষ্ট আত্মা বের হয়ে আল্লাহর ক্রোধ ও গজবের দিকে চলো। তখন তার দেহে প্রচন্ড কম্পন শুরু হয়। তার আত্মা টেনে বের করা হয়, যেমন আদ্র রেশমের ভিতর থেকে লোহার ব্রাশ বের করা হয়। যখন আত্মা বের করা হয় তখন এক মুহুর্তের জন্যও ফেরেশতা তাকে
ছেড়ে দেয় না। সেই কষ্টদায়ক কাপড় দিয়ে তাকে
পেচিয়ে ধরে। তার লাশটি পৃথিবীতে পড়ে থাকে। আত্মাটি নিয়ে যখন উপরে উঠে তখন ফেরেশতারা বলতে থাকে কে এই
পাপিষ্ট আত্মা? তাদের
উত্তরে তার নাম উল্লেখ করে বলা হয় অমুক, অমুকের ছেলে। প্রথম আসমানে গেলে তার জন্য
দরজা খোলার অনুরোধ করা হলে দরজা খোলা হয় না।
এ সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ আয়াতটি পাঠ করলেন:
لَا
تُفَتَّحُ لَهُمْ أَبْوَابُ السَّمَاءِ وَلَا يَدْخُلُونَ الْجَنَّةَ حَتَّى
يَلِجَ الْجَمَلُ فِي سَمِّ الْخِيَاطِ
অর্থাৎ : তাদের জন্য আসমানের
দরজাসমূহ খোলা হবে না এবং তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না, যতক্ষণ না উট সূঁচের ছিদ্রতে প্রবেশ করে। (সূরা আরাফ, আয়াত ৪০)
অতঃপর আল্লাহ তাআলা বলবেন, তার আমলনামা সিজ্জীনে লিখে দাও যা সর্ব নিম্ন স্তর। এরপর তার আত্মাকে পৃথিবীতে নিক্ষেপ করা হবে।
এ কথা বলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ আয়াতটি পাঠ করেন :
وَمَنْ
يُشْرِكْ بِاللَّهِ فَكَأَنَّمَا خَرَّ مِنَ السَّمَاءِ فَتَخْطَفُهُ الطَّيْرُ
أَوْ تَهْوِي بِهِ الرِّيحُ فِي مَكَانٍ سَحِيقٍ
অর্থাৎ : আর যে আল্লাহর সাথে
শরীক করে, সে যেন
আকাশ থেকে পড়ল। অতঃপর পাখি তাকে ছোঁ মেরে নিয়ে
গেল কিংবা বাতাস
তাকে দূরের কোন জায়গায় নিক্ষেপ করল। (সূরা
আল হজ, আয়াত
: ৩১)
এরপর তার দেহে তার আত্মা চলে
আসবে। দু ফেরেশতা আসবে। তাকে বসাবে। এরপর
তাকে জিজ্ঞেস করবে, তোমার
প্রভূ কে? সে বলবে, হায়! হায়!! আমি জানি না। তারা তাকে আবার জিজ্ঞেস করবে, তোমার ধর্ম কি? সে বলবে, হায়!
হায়!! আমি জানি না। তারপর জিজ্ঞেস করবে, এ ব্যক্তি কে যাকে তোমাদের মধ্যে পাঠানো
হয়েছিল? সে উত্তর
দেবে, হায়!
হায়!! আমি জানি না। তখন আসমান থেকে এক আহবানকারী
বলবে, সে মিথ্যা
বলেছে। তাকে জাহান্নামের বিছানা বিছিয়ে
দাও। জাহান্নামের একটি দরজা তার জন্য
খুলে দাও। জাহান্নামের তাপ ও বিষাক্ততা
তার কাছে আসতে থাকবে। তার জন্য
কবরকে এমন সঙ্কুচিত করে দেয়া হবে যাতে তার হাড্ডিগুলো আলাদা হয়ে যাবে। তার কাছে এক ব্যক্তি আসবে যার চেহার বিদঘুটে, পোশাক নিকৃষ্ট ও দুর্গন্ধময়। সে তাকে বলবে, যে দিনের খারাপ পরিণতি সম্পর্কে তোমাকে বলা হয়েছিলো তা আজ উপভোগ করো। সে এই বিদঘুটে চেহারার লোকটিকে জিজ্ঞেস করবে, তুমি কে? সে বলবে, আমি তোমার অসৎকর্ম। এরপর
সে বলবে, হে প্রভূ!
আপনি যেন কেয়ামত সংঘটিত না করেন।
বর্ণনায়: আহমদ, আবু দাউদ, হাকেম। আলবানী
রহ. আহকামুল জানায়িয কিতাবে এ হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।
এ হাদীস থেকে আমরা যা জানতে পারলাম :
১- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার সঙ্গী সাথিদের নিয়ে অন্যের দাফন-কাফনে অংশ গ্রহণ করতেন।
২- কবরের শাস্তির বিষয়টি একটি
সত্য বিষয়। এটি বিশ্বাস করা ঈমানের অংশ।
৩- কবরের শাস্তি থেকে আল্লাহ
তাআলার কাছে আশ্রয় চাওয়া সুন্নত।
৪- ঈমানদার ও বেঈমানের মৃত্যুর
মধ্যে পার্থক্য।
৫- কবরে যাওয়ার পর ঈমানদার তার
পুরস্কার ও প্রতিদান পাওয়ার জন্য কেয়ামত তাড়াতাড়ি কামনা করবে। আর বেঈমান মনে করবে কেয়ামত কায়েম হলে তাদের জাহান্নামের আজাব শুরু হয়ে যাবে। তাই তারা কেয়ামত কামনা করবে না।
৬- ওয়াজ ও নসীহতের সময় কুরআনের
আয়াত তেলাওয়াত করেছেন ও কুরআন থেকে উদ্ধৃতি দিয়েছে রাসূলুল্লাহ সা.।
৭- কবরে ফেরেশতাদের প্রশ্ন ও
তার উত্তর দেয়া একটি সত্য বিষয়। এর প্রতি
বিশ্বাস রাখা ঈমানের অংশ।
৮- ইল্লিয়্যীন ও সিজ্জিনের পরিচয়
জানা গেল। এ দুটি জান্নাত ও জাহান্নামের
অংশ বিশেষ।
৯- বরযখী জীবনের সত্যতা এ হাদীস
দিয়েও প্রমাণিত হল।
১০- হে আমার রব! কেয়ামত সংঘটিত
করুন!! যেন আমি আমার সম্পদ ও পরিবারের কাছে ফিরে যেতে পারি। এ কথা দ্বারা ঈমানদার ব্যক্তি সম্পদ বলতে তার নেক আমলের সওয়াব ও পুরস্কার বুঝিয়েছেন। আর ঈমানদার ব্যক্তি জান্নাতে তার পরিবার পরিজনের সাথে মিলিত
হবেন। যদি তার পরিবারবর্গ ঈমানদার
ও সৎকর্মশীল হয়। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন:
وَالَّذِينَ
آَمَنُوا وَاتَّبَعَتْهُمْ ذُرِّيَّتُهُمْ بِإِيمَانٍ أَلْحَقْنَا بِهِمْ ذُرِّيَّتَهُمْ
وَمَا أَلَتْنَاهُمْ مِنْ عَمَلِهِمْ مِنْ شَيْءٍ كُلُّ امْرِئٍ بِمَا كَسَبَ
رَهِينٌ
আর যারা ঈমান আনে এবং তাদের
সন্তান-সন্ততি ঈমানের সাথে তাদের অনুসরণ করে, আমরা তাদের সাথে তাদের সন্তানদের মিলন ঘটাব এবং তাদের কর্মের
কোন অংশই কমাব না। প্রত্যেক ব্যক্তি তার কামাইয়ের
ব্যাপারে দায়ী থাকবে। (সূরা
আত তুর, আয়াত
২১)
১১- বরযখী জীবনের সুখ ও তার
শাস্তির কিছু বর্ণনা এ হাদীসের মাধ্যমে জানা গেল।
১২- হাদীসে জান কবচকারী ফেরেশতাকে
মালাকুল মউত বলা হয়েছে। এর অর্থ
মৃত্যুর ফেরেশতা। তার নাম কি, তা কুরআনে বা কোন সহীহ হাদীসে বলা হয়নি। আমরা যে এ ফেরেশতার নাম দিয়েছি আজরাঈল এটা কুরআন বা সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত
নয়। সম্ভব এটা ইহুদীদের থেকে এসেছে। তাই এ নামটি ব্যবহার করা উচিত নয়।
দুই ফেরেশতার
প্রশ্নপর্ব
হাদীসে এসেছে :
عن أنس بن مالك رضي الله عنه قال:
قال نبي الله صلى الله عليه وسلم : إن
العبد إذا وضع في قبره، وتولى عنه أصحابه ، وإنه ليسمع قرع نعالهم، أتاه ملكان،
فيقعدانه فيقولان : ما كنت تقول في هذا الرجل،
فأما المؤمن فيقول : أشهد أنه عبد الله ورسوله، فيقال له : انظر إلى مقعدك
من النار، قد أبدلك الله به مقعدا من الجنة ، فيراهما جميعاً. وأما المنافق والكافر فيقال له : ما كنت تقول
في هذا الرجل ؟ فيقول : لا أدري ، كنت أقول ما يقول الناس ، فيقال : لا دريت ولا
تليت ، ويضرب بمطارق من حديد ضربة ، فيصيح صيحة ، يسمعها من يليه غير الثقلين .
(متفق عليه)
আনাস ইবনে মালেক রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ মানুষকে
যখন তার কবরে রাখা হয় আর তার সাথিরা চলে যায়, তখন মৃত ব্যক্তি তাদের জুতার আওয়ায শুনতে পায়। এমন সময় দু জন ফেরেশ্তা এসে তাকে বসায়। তারা তাকে জিজ্ঞেস করে, এই ব্যক্তি সম্পর্কে তুমি কী ধারনা রাখতে? তখন ব্যক্তি যদি ঈমানদার হয়,
সে উত্তর দেবে, আমি স্বাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তিনি আল্লাহর বান্দা ও তার রাসূল। তাকে বলা হবে জাহান্নামে তোমার যেখানে অবস্থান ছিল সে দিকে তাকাও। আল্লাহ জাহান্নামের এ অবস্থানকে তোমার জন্য জান্নাত দিয়ে
পরিবর্তন করেছেন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনে, সে উভয় অবস্থানকেই দেখবে।
আর ব্যক্তি যদি মুনাফেক বা কাফের
হয়, যখন তাকে
প্রশ্ন করা হবে, এই ব্যক্তি
সম্পর্কে তুমি কী ধারনা রাখতে? তখন উত্তরে সে বলবে, আমি জানি
না। মানুষ যা বলত আমি তাই বলতাম। তাকে ফেরেশতাদ্বয় বলবে, তুমি জানলে না ও তাকে অনুসরণ করলে না। তখন তাকে
লোহার হাতুরী দিয়ে প্রচন্ড আঘাত করা হয়। ফলে এমন
চিৎকার দেয় যা মানুষ ও জিন ব্যতীত সকল প্রাণী শুনতে পায়।” বর্ণনায়: বুখারী ও মুসলিম
এ হাদীস
থেকে আমরা যা জানতে পারলাম :
১- মৃত ব্যক্তিকে কবরস্থ করার
সাথে সাথে তার আত্মাকে তার দেহে ফিরিয়ে আনা হয় প্রশ্নোত্তর পর্ব সম্পন্ন করার জন্য।
২- কোন কোন হাদীসে একটি প্রশ্নের
কথা উল্লেখ করা হয়েছে। বর্ণনাকারী
নিজ বর্ণনা সংক্ষেপ করার জন্য এটা করেছেন। এটা তার
অধিকারের মধ্যে গণ্য। আসলে
প্রশ্ন করা হবে তিনটি বিষয় সম্পর্কে। একটি
বিষয় উল্লেখ করার অর্থ বাকী দুটো বিষয় অস্বীকার করা নয়।
৩- তিনটি প্রশ্নের মধ্যে রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে চেনা ও তার অনুসরণ সম্পর্কে প্রশ্নটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, যে ব্যক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে আল্লাহর রাসূল বলে স্বাক্ষ্য দিয়েছে, সে প্রভূ হিসাবে আল্লাহ ও ধর্ম
হিসাবে ইসলামকে স্বীকার করে নিয়েছে। তাই যে এ একটি প্রশ্নের উত্তর দেবে এর মধ্যে বাকী দুটোর উত্তর
এমনিতেই এসে যাবে।
৪- মৃত্যুর পর ঈমানদারকে জাহান্নাম
দেখানো হবে। সে যে কত বড় বিপদ থেকে বেঁচে
গেছে এটি তাকে বুঝাবার জন্য।
৫- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে গভীরভাবে জানতে হবে। কাফের
ও মুনাফিকরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে যথাযথভাবে জানে না ও জানতে
চায় না।
মুনকার
ও নাকীর প্রসঙ্গ
হাদীসে এসেছে :
عن أبي هريرة رضي الله عنه قال : قال
رسول الله صلى الله عليه وسلم: إذا قبر الميت ( أو قال أحدكم ) أتاه ملكان أسودان
أزرقان . يقال لأحدهما : المنكر والآخر النكير . فيقولان : ما كنت تقول في هذا
الرجل ؟ فيقول ما كان يقول : هو عبد الله ورسوله . أشهد أن لا إله إلا الله وأن
محمدا عبده ورسوله . فيقولان : قد كنا نعلم أنك تقول هذا . ثم يفسح له في قبره
سبعون ذراعا في سبعين . ثم ينور له فيه . ثم يقال له : نم . فيقول أرجع إلى أهلي
فأخبرهم ؟ فيقولان : نم كنومة العروس الذي لا يوقظه إلا أحب أهله إليه ، حتى يبعثه
الله من مضجعه ذلك . وإن كان منافقا قال : سمعت الناس يقولون فقلت مثله . لا أدري
. فيقولان : قد كنا نعلم أنك تقول ذلك . فيقال للأرض : التئمي عليه . فتلتئم عليه
. فتختلف أضلاعه . فلا يزال فيها معذبا حتى يبعثه الله من مضجعه ذلك.
رواه الترمذي وقال : حديث حسن غريب
وقال الألباني سنده حسن وهو على شرط مسلم، صحيح الجامع 2/236
আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: যখন
তোমাদের মধ্য হতে কোন মৃত ব্যক্তিকে কবর দেয়া হয় তখন কালো ও নীল বর্ণের দু জন ফেরেশতা
আগমন করে। একজনের নাম মুনকার অন্যজনের
নাম হল নাকীর। তারা তাকে জিজ্ঞেস করে, এই ব্যক্তি সম্পর্কে তোমরা কী বলতে? সে বলবে, সে আল্লাহর বান্দা ও রাসূল। আমি স্বাক্ষ্য দিচ্ছি
যে, আল্লাহ
ব্যতীত কোন ইলাহ নেই এবং মুহাম্মদ তাঁর বান্দা ও রাসূল। তখন ফেরেশতাদ্বয় বলবে, আমরা আগেই জানতাম তুমি এ উত্তরই দেবে। এরপর
তার কবরকে সত্তর হাত প্রশস্ত করে দেয়া হয়। সেখানে
আলোর ব্যবস্থা করা হয়। এরপর
তাকে বলা হয়, এখন তুমি
নিদ্রা যাও। সে বলবে, আমি আমার পরিবারের কাছে ফিরে যাবো, তাদেরকে (আমার অবস্থা সম্পর্কে) এ সংবাদ
দেব। তখন ফেরেশতাদ্বয় তাকে বলে, তুমি ঘুমাও সেই নব বধুর মত যাকে তার প্রিয়জন ব্যতীত কেহ জাগ্রত করে
না। এমনিভাবে একদিন আল্লাহ তাকে
জাগ্রত করবেন।
আর যদি সে ব্যক্তি মুনাফেক হয়, সে উত্তর দেবে আমি তাঁর (রাসূলুল্লাহ)
সম্পর্কে মানুষকে যা বলতে শুনেছি তাই বলতাম। বাস্তব
অবস্থা আমি জানি না। তাকে
ফেরেশ্তাদ্বয় বলবে, আমরা
জানতাম, তুমি এই উত্তরই দেবে। তখন মাটিকে
বলা হবে তার উপর চাপ সৃষ্টি করো। মাটি
এমন চাপ সৃষ্টি করবে যে, তার হাড্ডিগুলো
আলাদা হয়ে যাবে। কেয়ামত সংঘটনের সময় তার উত্থান
পর্যন্ত এ শাস্তি অব্যাহত থাকবে।
বর্ণনায়: তিরমিজী, তিনি বলেছেন হাদীসটি হাসান গরীব। আলবানী রহ. বলেছেন হাদীসটির সুত্র হাসান। হাদীসটি ইমাম মুসলিমের বিশুদ্ধতার শর্তে উত্তীর্ণ।
হাদীসটি থেকে আমরা যা শিখতে পারলাম :
১- কবরে প্রশ্নকারী ফেরেশতাদের
নাম ও তাদের বর্ণ আলোচনা হল।
২- ঈমানদারদের জন্য কবর প্রশস্ত
করা হবে। কবরের অন্ধকার দূর করতে আলোর
ব্যবস্থা করা হবে।
৩- ঈমানদার কবরের প্রশ্নোত্তর
পর্বের পর পরিবারের কাছে ফিরে আসতে চাবে তার নিজের সফলতার সুসংবাদ শুনানোর জন্য ও পরিবারের
লোকেরা যেন এ সফলতা অর্জনের জন্য সৎকর্ম করে সে ব্যাপারে উৎসাহিত করার জন্য।
৪- ঈমানদার ব্যক্তি বরযখের জীবনে সুখ-নিদ্রায়
বিভোর থাকবে। যখন কেয়ামত সংঘটিত হবে তখন
তার নিদ্রা ভেঙ্গে যাবে ফলে সে অনেকটা বিরক্তির স্বরে বলবে :
يَا
وَيْلَنَا مَنْ بَعَثَنَا مِنْ مَرْقَدِنَا هَذَا مَا وَعَدَ الرَّحْمَنُ وَصَدَقَ
الْمُرْسَلُونَ (سورة يس : 52)
হায়! কে আমাদের নিদ্রাস্থল থেকে উঠালো? (তাদের
বলা হবে) এটা তো তা যার ওয়াদা পরম
করুণাময় করেছিলেন এবং রাসূলগণ সত্য বলেছিলেন। (সূরা ইয়াসীন, আয়াত ৫২)
৫- কাফের ও মুনাফেকরা কবরে
শাস্তি ভোগ করবে।
বরযখে শাস্তির কিছু দৃশ্য
হাদীসে এসেছে
عن سمرة بن جندب رضي الله عنه قال:
كان رسول الله صلى الله عليه وسلم - يعني - مما يكثر أن يقول لأصحابه : ( هل رأى
أحد منكم من رؤيا ) . قال : فيقص عليه من شاء الله أن يقص، وإنه قال ذات غداة :
(إنه أتاني الليلة آتيان، وإنهما ابتعثاني، وإنهما قالا لي انطلق، وإني انطلقت
معهما، وإنا أتينا على رجل مضطجع، وإذا آخر قائم عليه بصخرة، وإذا هو يهوي بالصخرة
لرأسه فيثلغ رأسه، فيتدهده الحجر ها هنا، فيتبع الحجر فيأخذه ، فلا يرجع إليه حتى
يصح رأسه كما كان ، ثم يعود عليه فيفعل به مثل ما فعل به مرة الأولى ، قال : قلت
لهما : سبحان الله ما هذان ؟ قال : قالا لي : انطلق انطلق ، قال : فانطلقنا ،
فأتينا على رجل مستلق لقفاه، وإذا آخر قائم عليه بكلوب من حديد ، وإذا هو يأتي أحد
شقي وجهه فيشرشر شدقه إلى قفاه ، ومنخره إلى قفاه ، وعينه إلى قفاه - قال : وربما
قال أبو رجاء : فيشق - قال : ثم يتحول إلى الجانب الآخر فيفعل به مثل ما فعل
بالجانب الأول، فما يفرغ من ذلك الجانب حتى يصح ذلك الجانب كما كان ، ثم يعود عليه
فيفعل مثل ما فعل المرة الأولى ، قال : قلت : سبحان الله ما هذان ؟ قال : قالا لي
: انطلق انطلق ، فانطلقنا ، فأتينا على مثل التنور - قال : وأحسب أنه كان يقول -
فإذا فيه لغط وأصوات ، قال : فاطلعنا فيه ، فإذا فيه رجال ونساء عراة ، وإذا هم
يأتيهم لهب من أسفل منهم ، فإذا أتاهم ذلك اللهب ضوضوا ، قال : قلت لهما : ما
هؤلاء ؟ قال : قالا لي : انطلق انطلق ، قال : فانطلقنا ، فأتينا على نهر - حسبت
أنه كان يقول - أحمر مثل الدم ، وإذا في النهر رجل سابح يسبح ، وإذا على شط النهر
رجل قد جمع عنده حجارة كثيرة ، وإذا ذلك السابح يسبح ما يسبح ، ثم يأتي ذلك الذي
قد جمع عنده الحجارة ، فيفغر له فاه فيلقمه حجرا فينطلق يسبح ، ثم يرجع إليه كلما
رجع إليه فغر له فاه فألقمه حجرا ، قال : قلت لهما : ما هذان ؟ قال : قالا لي :
انطلق انطلق ، قال : فانطلقنا ، فأتينا على رجل كريه المرآة، كأكره ما أنت راء
رجلا مرآة، فإذا عنده نار يحشها ويسعى حولها، قال : قلت لهما : ما هذا ؟ قال :
قالا لي : انطلق انطلق ، فانطلقنا ، فأتينا على روضة معتمة ، فيها من كل لون
الربيع، وإذا بين ظهري الروضة رجل طويل ، لا أكاد أرى رأسه طولا في السماء ، وإذا
حول الرجل من أكثر ولدان رأيتهم قط ، قال : قلت لهما : ما هذا ما هؤلاء ؟ قال :
قالا لي : انطلق انطلق ، قال : فانطلقنا فانتهينا إلى روضة عظيمة ، لم أر روضة قط
أعظم منها ولا أحسن، قال : قالا لي : ارق فيها ، قال : فارتقينا فيها ، فانتهينا
إلى مدينة مبنية بلبن ذهب ولبن فضة، فأتينا باب المدينة فاستفتحنا ففتح لنا
فدخلناها، فتلقانا فيها رجال شطر من خلقهم كأحسن ما أنت راء ، وشطر كأقبح ما أنت
راء ، قال : قالا لهم : اذهبوا فقعوا في ذلك النهر ، قال : وإذا نهر معترض يجري
كأن ماءه المحض في البياض ، فذهبوا فوقعوا فيه، ثم رجعوا إلينا قد ذهب ذلك السوء
عنهم، فصاروا في أحسن صورة، قال: قالا لي : هذه جنة عدن وهذاك منزلك ، قال : فسما
بصري صعدا ، فإذا قصر مثل الربابة البيضاء، قال: قالا لي: هذاك منزلك ، قال : قلت
لهما : بارك الله فيكما ذراني فأدخله ، قالا: أما الآن فلا، وأنت داخله، قال : قلت
لهما : فإني قد رأيت منذ الليلة عجبا ، فما هذا الذي رأيت ؟ قال : قالا لي : أما
إنا سنخبرك ، أما الرجل الأول الذي أتيت عليه يثلغ رأسه بالحجر، فإنه الرجل يأخذ
القرآن فيرفضه وينام عن الصلاة المكتوبة ، وأما الرجل الذي أتيت عليه، يشرشر شدقه
إلى قفاه، ومنخره إلى قفاه ، وعينه إلى قفاه ، فإنه الرجل يغدو من بيته ، فيكذب
الكذبة تبلغ الآفاق ، وأما الرجال والنساء العراة الذين في مثل بناء التنور ،
فإنهم الزناة والزواني ، وأما الرجل الذي أتيت عليه يسبح في النهر ويلقم الحجارة ،
فإنه آكل الربا ، وأما الرجل الكريه المرآة ، الذي عند النار يحشها ويسعى حولها،
فإنه مالك خازن جهنم ، وأما الرجل الطويل الذي في الروضة فإنه إبراهيم صلى الله
عليه وسلم، وأما الولدان الذين حوله فكل مولود مات على الفطرة). قال: فقال بعض
المسلمين: يا رسول الله ، وأولاد المشركين ؟ فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم:
(وأولاد المشركين ، وأما القوم الذين كانوا شطرا منهم حسن وشطرا منهم قبيح ، فإنهم
قوم خلطوا عملا صالحا وآخر سيئاً ، تجاوز الله عنهم ) .
সামুরা ইবনে জুনদুব রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম বহু সময়ে তার সাহাবীদের বলতেন, তোমাদের কেহ কি কোন সপ্ন
দেখেছে? তখন কেহ কেহ তাদের দেখা সপ্নের বিবরণ দিতেন। একদিন সকালে তিনি আমাদের
বললেন, গত রাতে আমার কাছে দু জন আগন্তুক আসলো। তারা আমাকে জাগালো আর বলল,
চলেন। আমি তাদের সাথে চললাম। আমরা এক ব্যক্তির কাছে আসলাম, দেখলাম সে শুয়ে আছে
আর তার কাছে এক ব্যক্তি পাথর নিয়ে দাড়িয়ে আছে। সে পাথর দিয়ে তার মাথায়
আঘাত করছে ফলে তার মাথা চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যাচ্ছে। একটু পর তার মাথা ভালো হয়ে
যাচ্ছে। আবার সে পাথরটি নিয়ে তার মাথায় আঘাত করছে। তার মাথা পূর্বের অবস্থায়
ফিরে যাচ্ছে আবার আঘাত করছে। এভাবেই চলছে। আমি তাদের বললাম,
ছুবহানাল্লাহ! এ দু ব্যক্তি কে? তারা আমাকে বলল, সামনে চলুন। আমরা চলতে থাকলাম।
অত:পর এক ব্যক্তির কাছে আসলাম, দেখলাম সে চিৎ হয়ে
শুয়ে আছে। আরেক ব্যক্তি তার মাথার কাছে কুঠার নিয়ে দাড়িয়ে আছে। তাকে উলট পালট করে তার
শরীর চিরছে। একবার চিৎ করছে আরেকবার উপুর করছে। যখন পিঠের দিকটা এ রকম করছে তখন সামনের দিকটা
ভালো হয়ে যাচ্ছে। আবার যখন সামনের দিকটায় এমন করছে তখন পিঠের দিকটা ভালো হয়ে যাচ্ছে। আমি দেখে
বললাম, ছুবহানাল্লাহ! এ দু ব্যক্তি কে? তারা বলল, আপনি সামনে চলুন। আমি তাদের সাথে
চলতে থাকলাম। এসে পৌছলাম বিশাল চুলার মত একটি গর্তের কাছে। তার মধ্যে শুনলাম চিৎকার। ভিতরের দিকে
তাকালাম। দেখলাম তার মধ্যে কিছু উলঙ্গ নারী ও পুরুষ। তাদের নীচ থেকে আগুনে শিখা
তাদের উপর আছরে পড়ে। তারা চিৎকার দিয়ে উঠে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, এরা
কারা? তারা আমাকে বলল, সামনে চলুন!সামনে চলুন!! আমি চলতে থাকলাম। আমি একটি নদীর
কাছে আসলাম। নদীটির পানি রক্তের মত লাল। দেখলাম এক ব্যক্তি নদীটির মধ্যে সাতার কাটছে। নদীর তীরে এক
ব্যক্তি দাড়ানো আছে। তার কাছে অনেকগুলো পাথর জমানো। যখন সে তীরের
দিক আসে তখন তার মুখ খুলে যায়। মুখে একটি পাথর নিক্ষেপ করা হয় আর সে তা গিলে
ফেলে। আবার সাতার কাটতে শুরু করে। আবার তার প্রতি পাথর নিক্ষেপ করা হয়। যখনই সে তীরে
ফিরে আসে তখনই তার প্রতি পাথর নিক্ষেপ করে আর সে তা গিলে ফেলে আবার সাতার কাটতে
থাকে।
আমি তাদের প্রশ্ন করলাম, কারা এ দু ব্যক্তি? তারা
আমাকে বলল, সামনে চলুন। আমরা সামনে
চললাম। এমন ব্যক্তির কাছে আসলাম যাকে দেখতে খূবই খারাপ। তার মত খারাপ চেহারা লোক
তুমি কখনো দেখোনি। তার কাছে আগুন আছে আর সে তাতে অনবরত ফুক দিয়ে জালিয়ে রাখার চেষ্টা করছে। আমি তাদের
জিজ্ঞেস করলাম, কে এই ব্যক্তি? তারা আমাকে বলল, সামনে চলুন। আমরা সামনে চললাম।
এরপর আমরা একটি একটি উদ্যানে আসলাম, যেখানে আছে
বিশাল বিশাল গাছ। আর আছে প্রত্যেক প্রকারের বসন্তকালীন ফুল। দেখলাম সেই উদ্যানে একজন
দীর্ঘকায় মানুষ। আমি তার মত দীর্ঘ মানুষ দেখিনি। তার চতুর্পাশে দেখলাম বহু সংখ্যক শিশু-কিশোর। আমি আমার
সঙ্গীদের জিজ্ঞেস করলাম, এরা কারা? তারা আমাকে বলল, সামনে চলুন! সামনে চলুন!! আমরা
চলতে থাকলাম। এসে পৌছলাম এমন একটি সুন্দর উদ্যানে যার মত সুন্দর উদ্যান আমি কখনো দেখিনি। আমাকে বলল,
উপরের দিকে উঠুন। আমি উঠলাম। এসে পৌছলাম এমন একটি শহরে যার বাড়ীঘরগুলো স্বর্ণ ও রৌপ্যের ইট দ্বারা নির্মিত। আমরা শহরের গেটে
এসে পৌছলাম। দরজা খোলার জন্য বললাম। দরজা খুলে দেয়া হল। দেখলাম সেখানে কিছু মানুষ
আছে যাদের শরীর অর্ধেক অংশ অত্যন্ত সুন্দর আর অর্ধেক অতি কুৎসিত। আমার সঙ্গীদ্বয়
তাদের বলল, তোমরা ঐ নদীতে যাও। নদীর পানি অত্যন্ত স্বচ্ছ। তারা নদীতে ঝাপ দিয়ে ফিরে
আসল। দেখা গেল তাদের পুরো শরীর সুন্দর হয়ে গেছে। সঙ্গীদ্বয় আমাকে বলল, এটা
হল জানাতে আদন। আর ঐগুলো হল আপনার বাসস্থান। আমার দৃষ্টি উপরে উঠে গেল। আমি দেখলাম সাদা মেঘের মত
শুভ্র একটি প্রাসাদ। আমাকে বলল, এটা আপনার ঘর। এরপর আমি তাদের উভয়কে
বললাম, আল্লাহ তোমাদের বরকত দিন, আমাকে একটু সুযোগ দাও আমি প্রবেশ করি। তারা আমাকে বলল,
এখনতো সম্ভব নয়।
তবে আপনি তো সেখানে প্রবেশ করবেন।
এরপর আমি তাদের উভয়কে বললাম, রাত থেকে শুরু করে
আমি আশ্চর্যজনক অনেক বিষয় দেখলাম। যা দেখলাম তা কী?
তারা বলল, আমরা আপনাকে এখনই বলছি। তা হল: যার
মাথায় আপনি পাথর দিয়ে মাথায় আঘাত করতে দেখেছেন সে হল এমন ব্যক্তি যে আল কুরআন
গ্রহণ করেছিলো কিন্তু পরে তা ছেড়ে দিয়েছে ও ফরজ নামাজ রেখে ঘুমিয়ে থেকেছে।
আর যার মাথায় কুঠার দিয়ে আঘাত করতে দেখেছেন, সে
হল এমন ব্যক্তি যে সকাল বেলা ঘর থেকে বের হত আর মিথ্যা ছড়িয়ে বেড়াতো পৃথিবীর
বিভিন্ন স্থানে।
আর যে চুলোর মধ্যে উলঙ্গ নারী ও পুরুষ দেখেছেন
তারা হল ব্যভিচারী নর নারী।
আর যাকে দেখেছেন রক্ত নদীতে সাতার কাটছে সে হল সুদখোর।
আর যাকে আগুন ফুকতে দেখেছেন সে হল জাহান্নামের
রক্ষী।
আর উদ্যানে যে দীর্ঘকায় মানুষটিকে দেখেছেন, তিনি
হলেন, ইবরাহীম আলাইহিস সালাম, আর তার চারিদিকের শিশু-কিশোররা হল, যারা স্বভাব
ধর্মের উপর শিশু অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছে।
এ কথা বলার সময় অনেকে প্রশ্ন করল, ইয়া
রাসূলাল্লাহ! মুশরিকদের শিশু সন্তাদেরও কি এ অবস্থা হবে? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, মুশরিকদের শিশু সন্তানদেরও এ অবস্থা হবে।
আর যে সকল মানুষকে দেখেছেন যে, তাদের কিছু অংশ
কুৎসিত আর কিছু অংশ সুন্দর, তারা হল এমন মানুষ যারা সৎকর্ম করেছে আবার পাপাচারেও
লিপ্ত হয়েছে। আল্লাহ তাদের ক্ষমা করে দিলেন। বর্ণনায়: বুখারী।
বুখারীর অন্য একটি বর্ণনায় এসেছে, যাকে কুঠার
দিয়ে মাথায় আঘাত করা হচ্ছে সে হল এমন ব্যক্তি যে মিথ্যা রচনা করত আর তা বিভিন্ন
প্রান্তে ছড়িয়ে দিত। কেয়ামত পর্যন্ত তাকে এভাবে শাস্তি দেয়া হবে। আর যার মাথায়
কুঠার দিয়ে আঘাত করা হচ্ছে সে হল এমন ব্যক্তি যে আল কুরআন শিখেছে আর রাত নিদ্রায়
কাটিয়েছে এবং দিনে কুরআন অনুযায়ী আমল করেনি। কেয়ামত পর্যন্ত তাকে এভাবে শাস্তি দেয়া হবে।
হাদীসটি থেকে আমরা যা শিখতে পারলাম :
১- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর
একটি স্বপ্নের বিবরণ হল এ হাদীস। আমরা জানি নবী ও রাসূলদের সপ্ন আমাদের সপ্নের মত
নয়। তাদের স্বপ্ন এক ধরনের অহী বা আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্দেশ।
২- কেয়ামত পর্যন্ত তাকে এভাবে শাস্তি দেয়া হবে,
হাদীসের এ বক্তব্য দ্বারা স্পষ্ট হল যে, এ শাস্তিটি বরযখ জীবনের শাস্তি। কেয়ামতের পর
হিসাব নিকাশ ও বিচারের পর তার চুরান্ত গন্তব্য স্থির করা হবে।
৩- আল কুরআন ধারন করে আবার তা ত্যাগ করার শাস্তি
জানা গেল। আল কুরআন অধ্যায়ন করে সে মোতাবেক জীবন পরিচালনা না করার পরিণাম জানতে পারলাম।
৪- যে ব্যক্তি মিথ্যা খবর প্রচার করে তার শাস্তির
কথা জানতে পারলাম।
৫- ব্যাভিচারী নারী ও পুরুষের শাস্তির চিত্র আমরা
অনুভব করলাম।
৬- সুদ খাওয়া ও সুদী লেনদেন করার শাস্তির একটি
চিত্র আমরা অবগত হলাম।
৬- যে সকল শিশু -কিশোর বয়:প্রাপ্ত হওয়ার আগেই
মুত্যুবরণ করে তারা জান্নাতে থাকবে। তারা কাফের পিতা-মাতা সন্তান হলেও। কারণ প্রতিটি
শিশু স্বভাবধর্ম ইসলাম নিয়ে জন্ম গ্রহণ করে। পিতা-মাতা তাকে ইহুদী বানায়। খৃষ্টান বানায় বা পৌত্তলিক
হতে পথ দেখায়।
৭- যে সকল মুসলিম পাপাচার করে ও সৎকর্ম করে তারা
একদিন না একদিন অবশ্যই জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভ করে জান্নাতে প্রবেশ করবে। কেহ আল্লাহ
তাআলার ক্ষমা লাভ করে শাস্তি ভোগ ব্যতীত মুক্তি পাবে। কেহ শাস্তি ভোগ করে মুক্তি
পাবে।
হাদীসে এসেছে
عن أنس بن مالك رضي الله عنه قال: قال
رسول الله صلى الله عليه وسلم : لما عرج بي مررت بقوم لهم أظفار من نحاس يخمشون
وجوههم وصدورهم ! فقلت : من هؤلاء يا جبريل ؟ قال : هؤلاء الذين يأكلون لحوم الناس
، ويقعون في أعراضهم.
رواه أحمد، أبو داود
وصححه الألباني في صحيح الجامع الصغير 5/51
আনাস ইবনে মালেক রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: যখন আমার প্রভূ আমাকে
উর্ধ্বে আরোহন (মিরাজে গমন) করালেন তখন আমি এমন একদল মানুষ দেখলাম যাদের হাতে
তামার বড় বড় নখ। এ নখ দিয়ে তারা তাদের মুখমন্ডল ও বক্ষ খামচাচ্ছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে
জিবরীল! এরা কারা? সে বলল, এরা হল ঐ সকল মানুষ যারা মানুষের গোশ্ত খেত, তাদের
সম্মানহানী ঘটাতো।
(বর্ণনায়: আহমাদ, আলবানী হাদীসটিকে সহীহ আল জামে
আস সগীর কিতাবে সহীহ বলে উল্লেখ করেছেন)
হাদীসটি থেকে আমরা যা শিখতে
পারলাম :
১- মিরাজের সময়ও
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে বরযখ, জাহান্নামের শাস্তি ও
জান্নাতের কিছু চিত্র দেখানো হয়েছে।
২- মানুষের গোশ্ত খাওয়ার
অর্থ হল তাদের দোষ চর্চা করা, গীবত করা, তাদের দোষ প্রচার করে সমাজে তাদের কে হেয়
প্রতিপন্ন বা মানহানী করা। যেমন
আল্লাহ তাআলা বলেন:
وَلَا
يَغْتَبْ بَعْضُكُمْ بَعْضًا أَيُحِبُّ أَحَدُكُمْ أَنْ يَأْكُلَ لَحْمَ أَخِيهِ
مَيْتًا فَكَرِهْتُمُوهُ. (سورة الحجرات : 12)
তোমরা একে অপরের গীবত করো
না। তোমাদের মধ্য কেউ কি নিজ
মৃত ভাইয়ের গোশ্ত খেতে পছন্দ করবে? তোমরাতো তা অপছন্দই করে থাকো। (সূরা আল হুজুরাত, আয়াত ১২)
এ আয়াতে অপরের দোষ চর্চাকে
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন নিজ মৃত ভাইয়ের গোশ্ত খাওয়ার সাথে তুলনা করেছেন। যারা এটা করে তারা মূলতঃ নিজ মৃত ভাইয়ের গোশ্ত খাওয়ার মত
নিকৃষ্ট কাজ করে। এটা এমন একটি অপরাধ যা
আল্লাহ নিজে ক্ষমা করবেন না। যতক্ষণ
না যার গীবত করা হয়েছে সে তাকে ক্ষমা না করে। এটা ইসলামী বিধানে একটি মানবাধিকার। যারা
গীবত করে, অপরের দোষ চর্চা করে সমাজে তাকে অপমান করে ততারা এ মানবাধিকার লঙ্ঘনের
অপরাধে অপরাধী। আল্লাহ তাদের ক্ষমা করবেন
না। যার গীবত করা হয়েছে, যাকে
অপমান করা হয়েছে তার কাছ থেকে ক্ষমা চেয়ে নিতে হবে অথবা তাকে যথাযথ ক্ষতিপুরণ দিয়ে
দায়মুক্ত হতে হবে।
৩- অপর মানুষের মান সম্মান
রক্ষা করা মুমিনদের দায়িত্ব। অন্যের
মান সম্মানে আঘাত করা ইসলামে হারাম করা হয়েছে। অপরের গোপন দোষ প্রচার করা, মিথ্যা অপবাদ দেয়া ইত্যাদি হারাম। তবে যথাযথ কর্তৃপক্ষ বা আদালতের কাছে সংশোধনের উদ্দেশ্যে
অপরাধীর বিরুদ্ধে অভিযোগ বা সত্য স্বাক্ষ্য প্রদান করা নিষেধ নয়।
কবরের আজাব সম্পর্কে ইমামদের বক্তব্য :
শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে
তাইমিয়া রহ. বলেন: সালাফে সালেহীন ইমামদের মতামত হল, যখন কোন ব্যক্তি মারা যায় তখন
সে সূখে থাকে অথবা শাস্তি ভোগ করতে থাকে। আর এ
সূখ বা শাস্তি তার আত্মা ও দেহ উভয়ে ভোগ করে থাকে। কখনো আত্মা দেহে আসে। তখন
দেহ ও আত্মা উভয়ে একসাথে সুখ বা শাস্তি ভোগ করে। অত:পর কেয়ামতের দিন আত্মা শরীরের সাথে একত্র হয়ে কবর থেকে উত্থিত হবে। (মজমু আল ফাতাওয়া)
ইমাম নববী রহ. বলেন: আহলে
সুন্নাত ওয়াল জামাআতের অনুসারীরা বিশ্বাস করেন যে কবরের শাস্তি একটি সত্য বিষয়। আর এ বিষয়ে কুরআন ও হাদীসের বহু সংখ্যক প্রমাণ রয়েছে। যেমন আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন:
النَّارُ
يُعْرَضُونَ عَلَيْهَا غُدُوًّا وَعَشِيًّا
আগুন, তাদেরকে সকাল-সন্ধ্যায় তার সামনে উপস্থিত করা হয়।
এ বিষয়ে যথেষ্ঠ পরিমাণে
হাদীস বর্ণিত হয়েছে। আর
আকল-বুদ্ধি এটাকে অসম্ভব মনে করে না। যদি
কারো আকল বা জ্ঞান এটাকে অসম্ভব মনে করে তবে তাকে বুঝতে হবে, এ বিষয়ে যখন কুরআন ও
হাদীসের সিদ্ধান্ত এসে গেছে তখন এটা মান্য করা অবশ্য কর্তব্য। এটা আমাদের জ্ঞানের পরিধির ভিতরে হোক বা বাহিরে, তাতে কিছু আসে যায় না।
আসল কথা হল, কবরের শাস্তির
বিশ্বাসটি আহলে সুন্নাতের আকীদা-বিশ্বাসের অন্তর্গত।
খারেজী, অধিকাংশ মুতাযিলা ও
মুরজিয়াদের একটি দল কবরের শাস্তির বিষয়টি অস্বীকার করে।
তিনি আরো বলেন: যদি মৃত
ব্যক্তির শরীর ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় বা পুড়ে ছাই হয়ে যায় কিংবা কোন জীব-জন্তুর
পেটে চলে যায় তাহলেও কবরের শাস্তি ভোগ করা সম্ভব।
যদি বলা হয়, আমরা দেখি মৃত ব্যক্তিকে কবরে যেভাবে রাখা হয়েছে সেভাবেই
আছে। কখন তাকে বসানো হল আর
কিভাবে তাকে শাস্তি দেয়া হল?
এর উত্তরে বলা যায়, আমরা
অনুভব না করলেও এটা ঘটা সম্ভব। যেমন
আমাদের পাশে কোন ব্যক্তি নিদ্রায় থাকে আর সে স্বপ্নে কত খারাপ অবস্থা ভোগ করতে
থাকে বা কত সুখ ভোগ করতে থাকে। অথচ
আমরা তার পাশে থেকেও তার কোন কষ্ট বা সুখ অনুভব করি না বা দেখি না।
এমনিভাবে নবী করীম সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে জিবরীল অহী নিয়ে আসতো। আর রাসূল কষ্ট করে সে অহী ধারন করতেন কিন্তু পাশে উপস্থিত সাহাবীগণ তা টের
পেতেন না। (শরহু মুসলিম)
দ্বিতীয়
অধ্যায়:
কেয়ামত
সংঘটন
যখন আল্লাহ রাব্বুল
আলামীনের নির্ধারিত সময় চলে আসবে তখন কেয়ামত সংঘটিত হবে। তিনি কেয়ামত সংঘটনের দায়িত্বশীল ফেরেশতাকে শিংগায় ফুৎকার দিতে নির্দেশ দিবেন। সে একটি ফুৎকার দেবে। ফলে যমীন ও পর্বতমালা সরিয়ে নেয়া হবে। এক
আঘাতে সব চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যাবে। আর
আকাশ বিদীর্ণ হয়ে যাবে। গ্রহ-নক্ষত্র
খসে পড়বে। আলো চলে যাবে। সমুদ্রগুলো অগ্নিউত্তাল হয়ে যাবে। দুষ্ট মানুষগুলো তখন মরে যাবে। কেয়ামত
যখন কায়েম হবে তখন পৃথিবীতে শুধু খারাপ মানুষের বসবাস থাকবে।
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন
বলেন:
يَا
أَيُّهَا النَّاسُ اتَّقُوا رَبَّكُمْ إِنَّ زَلْزَلَةَ السَّاعَةِ شَيْءٌ عَظِيمٌ
﴿1﴾ يَوْمَ تَرَوْنَهَا تَذْهَلُ كُلُّ مُرْضِعَةٍ عَمَّا أَرْضَعَتْ وَتَضَعُ
كُلُّ ذَاتِ حَمْلٍ حَمْلَهَا وَتَرَى النَّاسَ سُكَارَى وَمَا هُمْ بِسُكَارَى
وَلَكِنَّ عَذَابَ اللَّهِ شَدِيدٌ ﴿2﴾ (سورة الحج)
হে মানুষ, তোমরা তোমাদের রবকে ভয় কর। নিশ্চয় কিয়ামতের প্রকম্পন এক ভয়ঙ্কর ব্যাপার। যেদিন তোমরা তা দেখবে সেদিন প্রত্যেক স্তন্য দানকারিনী আপন
দুগ্ধপোষ্য শিশুকে ভুলে যাবে এবং প্রত্যেক গর্ভধারিণী তার গর্ভপাত করে ফেলবে, তুমি দেখবে মানুষকে মাতাল সদৃশ, অথচ তারা মাতাল নয়। তবে আল্লাহর আযাবই কঠিন। (সূরা হজ, আয়াত ১-২
فَإِذَا
نُفِخَ فِي الصُّورِ نَفْخَةٌ وَاحِدَةٌ ﴿13﴾ وَحُمِلَتِ الْأَرْضُ وَالْجِبَالُ
فَدُكَّتَا دَكَّةً وَاحِدَةً ﴿14﴾ فَيَوْمَئِذٍ وَقَعَتِ الْوَاقِعَةُ ﴿15﴾
وَانْشَقَّتِ السَّمَاءُ فَهِيَ يَوْمَئِذٍ وَاهِيَةٌ ﴿16﴾ وَالْمَلَكُ عَلَى
أَرْجَائِهَا وَيَحْمِلُ عَرْشَ رَبِّكَ فَوْقَهُمْ يَوْمَئِذٍ ثَمَانِيَةٌ ﴿17﴾
يَوْمَئِذٍ تُعْرَضُونَ لَا تَخْفَى مِنْكُمْ خَافِيَةٌ ﴿18﴾ (سورة الحاقة).
অতঃপর যখন শিংগায় ফুঁক দেয়া
হবে- একটি মাত্র ফুঁক। আর যমীন
ও পর্বতমালাকে সরিয়ে নেয়া হবে এবং মাত্র একটি আঘাতে এগুলো চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যাবে। ফলে সে দিন মহাঘটনা সংঘটিত হবে। আর আসমান বিদীর্ণ হয়ে যাবে। ফলে সেদিন
তা হয়ে যাবে দুর্বল বিক্ষিপ্ত। ফেরেশতাগণ
আসমানের বিভিন্ন প্রান্তে থাকবে। সেদিন
তোমার রবের আরশকে আটজন ফেরেশতা তাদের উর্ধ্বে বহন করবে। সেদিন তোমাদেরকে উপস্থিত করা হবে। তোমাদের
কোন গোপনীয়তাই গোপন থাকবে না। (সূরা
আল হাক্কাহ, আয়াত ১৩-১৮)
إِذَا
السَّمَاءُ انْفَطَرَتْ ﴿1﴾ وَإِذَا الْكَوَاكِبُ انْتَثَرَتْ ﴿2﴾ وَإِذَا
الْبِحَارُ فُجِّرَتْ ﴿3﴾ وَإِذَا الْقُبُورُ بُعْثِرَتْ ﴿4﴾ عَلِمَتْ نَفْسٌ مَا
قَدَّمَتْ وَأَخَّرَتْ ﴿5﴾ (سورة الانفطار)
যখন আসমান বিদীর্ণ হবে। আর যখন নক্ষত্রগুলো ঝরে পড়বে। আর যখন সমুদ্রগুলোকে একাকার করা হবে। আর যখন
কবরগুলো উন্মোচিত হবে। তখন প্রত্যেকে
জানতে পারবে, সে যা
আগে পাঠিয়েছে এবং যা পিছনে রেখে গেছে। (সূরা
ইনফিতার, আয়াত ১-৫)
إِنَّمَا
تُوعَدُونَ لَوَاقِعٌ ﴿7﴾ فَإِذَا النُّجُومُ طُمِسَتْ ﴿8﴾ وَإِذَا السَّمَاءُ
فُرِجَتْ ﴿9﴾ وَإِذَا الْجِبَالُ نُسِفَتْ ﴿10﴾ وَإِذَا الرُّسُلُ أُقِّتَتْ ﴿11﴾
لِأَيِّ يَوْمٍ أُجِّلَتْ ﴿12﴾ لِيَوْمِ الْفَصْلِ ﴿13﴾ وَمَا أَدْرَاكَ مَا
يَوْمُ الْفَصْلِ ﴿14﴾ وَيْلٌ يَوْمَئِذٍ لِلْمُكَذِّبِينَ ﴿15﴾ (سورة المرسلات)
তোমাদেরকে যা কিছুর ওয়াদা দেয়া
হয়েছে তা অবশ্যই ঘটবে। যখন তারকারাজি
আলোহীন হবে, আর আকাশ
বিদীর্ণ হবে, আর যখন
পাহাড়গুলি চূর্ণবিচূর্ণ হবে, আর যখন রাসূলদেরকে নির্ধারিত সময়ে উপস্থিত করা হবে; কান দিনের জন্য এসব স্থগিত করা হয়েছিল? বিচার দিনের জন্য। আর কিসে
তোমাকে জানাবে বিচার দিবস কি? মিথ্যারোপকারীদের জন্য সেদিনের দুর্ভোগ! (সূরা আল মুরসালাত, আয়াত ৭-১৫)
وَيَسْأَلُونَكَ
عَنِ الْجِبَالِ فَقُلْ يَنْسِفُهَا رَبِّي نَسْفًا ﴿105﴾ فَيَذَرُهَا قَاعًا
صَفْصَفًا ﴿106﴾ لَا تَرَى فِيهَا عِوَجًا وَلَا أَمْتًا ﴿107﴾ يَوْمَئِذٍ
يَتَّبِعُونَ الدَّاعِيَ لَا عِوَجَ لَهُ وَخَشَعَتِ الْأَصْوَاتُ لِلرَّحْمَنِ
فَلَا تَسْمَعُ إِلَّا هَمْسًا ﴿108﴾ (سورة طه)
আর তারা তোমাকে পাহাড় সম্পর্কে
জিজ্ঞাসা করে। বল, আমার রব এগুলোকে সমূলে উৎপাটন করে বিক্ষিপ্ত করে দিবেন, তারপর তিনি তাকে মসৃণ সমতলভূমি করে দিবেন
তাতে তুমি কোন বক্রতা ও উচ্চতা দেখবে না। সদিন তারা আহ্বানকারীর (ফেরেশতার)
অনুসরণ করবে। এর কোন এদিক সেদিক হবে না এবং
পরম করুণাময়ের সামনে সকল আওয়াজ নিচু হয়ে যাবে। তাই মৃদু আওয়াজ ছাড়া তুমি কিছুই শুনতে পাবে না। (সূরা ত্বা-হা, আয়াত ১০৫-১০৮)
يَوْمَ
تَرْجُفُ الْأَرْضُ وَالْجِبَالُ وَكَانَتِ الْجِبَالُ كَثِيبًا مَهِيلًا. (سورة
المزّمّل: 14)
যেদিন যমীন ও পর্বতমালা প্রকম্পিত
হবে এবং পাহাড়গুলো চলমান বালুকারাশিতে পরিণত হবে। (সূরা মুযযাম্মমিল, আয়াত
১৪)
وَيَوْمَ
نُسَيِّرُ الْجِبَالَ وَتَرَى الْأَرْضَ بَارِزَةً وَحَشَرْنَاهُمْ فَلَمْ
نُغَادِرْ مِنْهُمْ أَحَدًا ﴿47﴾ وَعُرِضُوا عَلَى رَبِّكَ صَفًّا لَقَدْ
جِئْتُمُونَا كَمَا خَلَقْنَاكُمْ أَوَّلَ مَرَّةٍ بَلْ زَعَمْتُمْ أَلَّنْ
نَجْعَلَ لَكُمْ مَوْعِدًا ﴿48﴾ وَوُضِعَ الْكِتَابُ فَتَرَى الْمُجْرِمِينَ
مُشْفِقِينَ مِمَّا فِيهِ وَيَقُولُونَ يَا وَيْلَتَنَا مَالِ هَذَا الْكِتَابِ
لَا يُغَادِرُ صَغِيرَةً وَلَا كَبِيرَةً إِلَّا أَحْصَاهَا وَوَجَدُوا مَا
عَمِلُوا حَاضِرًا وَلَا يَظْلِمُ رَبُّكَ أَحَدًا ﴿49﴾ (سورة الأحقاف)
আর যেদিন আমি পাহাড়কে চলমান
করব এবং তুমি যমীনকে দেখতে পাবে দৃশ্যমান, আর আমি তাদেরকে একত্র করব। অতঃপর
তাদের কাউকেই ছাড়ব না। আর তাদেরকে
তোমার রবের সামনে উপস্থিত করা হবে কাতারবদ্ধ করে। (আল্লাহ তাআলা বলবেন) তোমরা আমার কাছে এসেছ তেমনভাবে, যেমন আমি তোমাদেরকে প্রথমবার সৃষ্টি করেছিলাম; বরং তোমরা তো ভেবেছিলে আমি তোমাদের
জন্য কোন প্রতিশ্রুত মুহূর্ত রাখিনি। আর আমলনামা
রাখা হবে। তখন তুমি অপরাধীদেরকে দেখতে
পাবে ভীত, তাতে
যা রয়েছে তার কারণে। আর তারা
বলবে, হায় ধ্বংস
আমাদের! কী হল এ কিতাবের! তা ছোট-বড় কিছুই ছাড়ে না, শুধু সংরক্ষণ করে এবং তারা যা করেছে, তা হাজির পাবে। আর তোমার রব কারো প্রতি যুলম করেন না। (সূরা
আল কাহাফ, আয়াত ৪৭-৪৯)
হাদীসে এসেছে
عن عبدالله بن عمرو قال : قال رسول الله
صلى الله عليه وسلم " يخرج الدجال في أمتي فيمكث أربعين (لا أدري : أربعين
يوما ، أو أربعين شهرا، أو أربعين عاما) . فيبعث الله عيسى بن مريم كأنه عروة
بن مسعود . فيطلبه فيهلكه . ثم يمكث الناس سبع سنين . ليس بين اثنين عداوة . ثم
يرسل الله ريحا باردة من قبل الشأم . فلا يبقى على وجه الأرض أحد في قلبه مثقال
ذرة من خير أو إيمان إلا قبضته . حتى لو أن أحدكم دخل في كبد جبل لدخلته عليه ،
حتى تقبضه" . قال : سمعتها من رسول الله صلى الله عليه وسلم . قال "
فيبقى شرار الناس في خفة الطير وأحلام السباع . لا يعرفون معروفا ولا ينكرون منكرا
. فيتمثل لهم الشيطان فيقول : ألا تستجيبون ؟ فيقولون : فما تأمرنا ؟ فيأمرهم
بعبادة الأوثان . وهم في ذلك دار رزقهم ، حسن عيشهم . ثم ينفخ في الصور . ثم يرسل
الله - أو قال ينزل الله - مطرا كأنه الطل أو الظل ( نعمان الشاك ) فتنبت منه
أجساد الناس . ثم ينفخ فيه أخرى فإذا هم قيام ينظرون . ثم يقال : يا أيها الناس !
هلم إلى ربكم . وقفوهم إنهم مسؤلون . قال ثم يقال : أخرجوا بعث النار . فيقال : من
كم ؟ فيقال : من كل ألف ، تسعمائة وتسعة وتسعين . قال فذاك يوم يجعل الولدان شيبا
. وذلك يوم يكشف عن ساق " .
আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আমার উম্মতের মধ্যে দাজ্জালের আভির্ভাব হবে। সে চল্লিশ-আমি
জানি না চল্লিশ দিবস, না মাস, না বছর-অবস্থান করবে। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ঈসা
ইবনে মারইয়াম আলাইহিস সালাম কে পাঠাবেন। তাকে দেখতে উরওয়া ইবনে মাসউদের মত মনে হবে। তিনি দাজ্জাল-কে
খোজ করবেন ও হত্যা করবেন। এরপর মানুষ সাত বছর এমনভাবে কাটাবে যে দুজন
মানুষের মধ্যে কোন শত্রুতা থাকবে না। এরপর আল্লাহ রাব্বুল আলামীন উত্তর দিক থেকে হিমেল
বায়ু প্রেরণ করবেন। যাদের অন্তরে অনু পরিমাণ ঈমান রয়েছে তারা সকলে এতে মৃত্যু বরণ করবে। ঈমানদার ও ভাল
মানুষের কেহ বেঁচে থাকবে না। যদি তোমাদের কেহ পাহাড়ের সুরক্ষিত গুহায় প্রবেশ
করে তাকেও এ বাতাস পেয়ে বসবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে
আরো শুনেছি যে, দুরাচারী মানুষগুলো অবশিষ্ট থাকবে পাখির মত দ্রুত আর বাঘের মত
হিংস্র। তারা ভালকে ভাল হিসাবে জানবে না আর মন্দ-কে মন্দ মনে করবে না। শয়তান মানুষের
আকৃতিতে তাদের কাছে এসে বলবে তোমরা ভাল কাজে সাড়া কেন দাও না? তারা বলবে তুমি
আমাদের কী করতে বলো? সে তাদের মুর্তির উপাসনা করতে আদেশ করবে। তারা সুন্দর জীবনোপকরণ
নিয়ে জীবন যাপন করবে। অতঃপর একদিন শিংগায় ফুঁক দেয়া হবে। (তখন সব কিছু
ধ্বংস হয়ে যাবে) এরপর একদিন প্রচন্ড বৃষ্টি বর্ষিত হবে। এ বৃষ্টির কারণে মানুষের
দেহগুলো উদ্ভিদের মত উত্থিত হবে। এরপর আবার শিংগায় ফুঁক দেয়া হবে তখন মানুষেরা দাড়িয়ে
যাবে ও এদিক সেদিক তাকাতে থাকবে। তারপর বলা হবে হে মানব সকল! তোমাদের প্রতিপালকের
দিকে আসো। তোমরা দাড়িয়ে যাও, তোমাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এরপর আল্লাহ তাআলা বলবেন,
জাহান্নামীদের বের করে আনো। জিজ্ঞাসা করা হবে কত জন থেকে কত জন বের করে আনবো?
উত্তর দেয়া হবে, প্রত্যেক হাজার থেকে নয় শত নিরানব্বই জনকে বের করে নাও। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, সেটিই এমন দিন যা শিশুদের বৃদ্ধ করে দেবে। আর এ দিনটিতে
আল্লাহ তাআলা নিজ পায়ের গোছা উম্মুক্ত করবেন। (বর্ণনায় : মুসলিম হাদীস
নং ২২৫৮)
হাদীসটি থেকে আমরা যা শিখতে পারলাম :
১- কেয়ামতের বড় আলামতের
একটি হল দাজ্জালের আভির্ভাব।
২- কেয়ামতের বড় আলামতের
একটি হল ঈসা আলাইহিস সালাম এর আগমন।
৩- ঈসা আলাইহিস সালাম
দাজ্জালকে শেষ করে দিবেন। এরপর
সুখ শান্তির রাজত্ব কায়েম হবে যা সাত বছর স্থায়ী হবে।
৪-রহমতের বায়ু প্রেরণ করে
কেয়ামতের পূর্বে আল্লাহ ঈমানদারদের মৃত্যু ঘটাবেন। এটিও কেয়ামতের একটি বড় আলামত।
৫- কেয়ামতের পূর্বক্ষণে
পৃথিবীতে কোন ভাল মানুষ থাকবে না। হিংস্র,
দুর্বিত্ত, দূরাচার ব্যক্তিদের উপর কেয়ামত সংঘটিত হবে।
৬- কেয়ামতের পূর্বে সর্বত্র
শয়তানের তৎপরতায় পৌত্তলিকতা বা মুর্তি পুজার ব্যাপক প্রচলন ঘটবে। তখন মানুষ সচ্ছলতার সাথে সুন্দর জীবনোপকরণসহ জীবন যাপন
করবে।
৭- মানুষের উন্নত জীবন-যাপন
দেখে বিভ্রান্ত হওয়ার অবকাশ নেই। এটা
তাদের সত্যতা, সত্যবাদিতা বা গ্রহণযোগ্যতার আলামত নয়।
৮- প্রথম শিংগায় ফুঁৎকারে
পৃথিবীর সবকিছু ধ্বংস হয়ে যাবে। আর
দ্বিতীয় ফুঁৎকারে মানুষ জীবন ফিরে পাবে।
৯- মুষলধারে বৃষ্টির
মাধ্যমে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মানুষকে পূনর্জীবিত করবেন।
১০- জাহান্নামীদের সংখ্যা
অনেক বেশী হবে। প্রতি হাজার মানুষে একজন
বাদে সকলে জাহান্নামে যাবে।
১১- আল্লাহ রাব্বুল আলামীন
কেয়ামতের পর নিজের পায়ের গোছা উম্মুক্ত করবেন। যেমন তিনি বলেন:
يَوْمَ
يُكْشَفُ عَنْ سَاقٍ وَيُدْعَوْنَ إِلَى السُّجُودِ فَلَا يَسْتَطِيعُونَ (سورة
القلم:42)
সে দিন পায়ের গোছা উম্মুক্ত
করা হবে। আর তাদেকে সিজদা করার জন্য
আহবান জানানো হবে, কিন্তু তারা সক্ষম হবে না। (সূরা আল কলম, আয়াত ৪২)
১২- আল্লাহ রাব্বুল
আলামীনের পা রয়েছে, তবে তা তাঁর মহান সত্ত্বার জন্য যেমন উপযোগী তেমনই।
শিঙ্গায়
ফুঁৎকার প্রসঙ্গে
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এ
প্রসঙ্গে বলেন:
وَنُفِخَ
فِي الصُّورِ فَصَعِقَ مَنْ فِي السَّمَاوَاتِ وَمَنْ فِي الْأَرْضِ إِلَّا مَنْ
شَاءَ اللَّهُ ثُمَّ نُفِخَ فِيهِ أُخْرَى فَإِذَا هُمْ قِيَامٌ يَنْظُرُونَ ﴿68﴾
وَأَشْرَقَتِ الْأَرْضُ بِنُورِ رَبِّهَا وَوُضِعَ الْكِتَابُ وَجِيءَ
بِالنَّبِيِّينَ وَالشُّهَدَاءِ وَقُضِيَ بَيْنَهُمْ بِالْحَقِّ وَهُمْ لَا
يُظْلَمُونَ ﴿69﴾ (سورة الزمر)
আর শিঙ্গায় ফুঁক দেয়া হবে। ফলে আল্লাহ যাদেরকে ইচ্ছা করেন তারা ছাড়া আসমানসমূহে যারা
আছে এবং পৃথিবীতে যারা আছে সকলেই বেহুঁশ হয়ে পড়বে। তারপর আবার শিঙ্গায় ফুঁক দেয়া হবে, তখন তারা দাঁড়িয়ে তাকাতে থাকবে। আর যমীন
তার রবের নূরে আলোকিত হবে, আমলনামা উপস্থিত করা হবে এবং নবী ও সাক্ষীগণকে আনা হবে, তাদের মধ্যে ন্যায়বিচার করা হবে। এমতাবস্থায় যে, তাদের
প্রতি যুলম করা হবে না। (সূরা
যুমার, আয়াত
৬৮-৬৯)
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এ
প্রসঙ্গে আরো বলেন:
وَنُفِخَ
فِي الصُّورِ فَإِذَا هُمْ مِنَ الْأَجْدَاثِ إِلَى رَبِّهِمْ يَنْسِلُونَ (سورة
يس :51)
আর শিঙ্গায় ফুঁক দেয়া হবে, তৎক্ষণাৎ তারা কবর থেকে তাদের রবের দিকে
ছুটে আসবে। (সূরা ইয়াসীন, আয়াত ৫১)
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এ
প্রসঙ্গে আরো বলেন:
وَيَوْمَ
يُنْفَخُ فِي الصُّورِ فَفَزِعَ مَنْ فِي السَّمَاوَاتِ وَمَنْ فِي الْأَرْضِ
إِلَّا مَنْ شَاءَ اللَّهُ وَكُلٌّ أَتَوْهُ دَاخِرِينَ (سورة النمل :87)
আর যেদিন শিঙ্গায় ফুঁক দেয়া
হবে, সেদিন
আসমানসমূহ ও যমীনে যারা আছে সবাই ভীত হবে; তবে আল্লাহ যাদেরকে চাইবেন তারা ছাড়া। আর সবাই
তাঁর কাছে হীন অবস্থায় উপস্থিত হবে। (সূরা
আল নামল, আয়াত
৮৭)
এ আয়াতসমূহ থেকে আমরা যা শিখতে পারলাম :
১- প্রথম শিঙ্গা ফুৎকারে
আকাশ মন্ডলী ও পৃথিবীতে যারা থাকবে সকলেই বেহুশ হয়ে যাবে। তবে আল্লাহ যাদের রক্ষা করবেন তারা বেহুশ হবে না।
২- দ্বিতীয় বার শিঙ্গা ফুঁক
দিলে সকলেই জীবিত হয়ে উঠবে।
৩- দুই বার শিঙ্গা ফুকের
বিষয়টি প্রমাণিত হল।
৪- দ্বিতীয় বার শিঙ্গায় ফুৎকারের
পর পৃথিবী আলোকিত হবে।
হিসাব-নিকাশ শুরু হবে।
৫- দ্বিতীয় আয়াতে যে শিঙ্গা
ফুৎকারের কথা এসেছে সেটা দ্বিতীয় ও শেষ ফুঁৎকার।
৬- তৃতীয় আয়াতে যে ফুৎকারের
কথা আলোচিত হয়েছে সেটা হল প্রথম ফুৎকার।
৭- শুধু পৃথিবীর অধিবাসীরা
নয়। আকাশের অধিবাসীরাও কেয়ামতের
ভয়াবহতায় কম্পিত হবে।
হাদীসে এসেছে :
عن أبي هريرة رضي الله هنه قال: قال
رسول الله صلى الله عليه وسلم : ما بين النفختين أربعون . قال : أربعون يوما ؟ قال
: أبيت ، قال : أربعون شهرا ؟ قال : أبيت ، قال : أربعون سنة ؟ قال : أبيت . قال :
ثم ينزل الله من السماء ماء ، فينبتون كما ينبت البقل ، ليس من الإنسان شيء إلا
يبلى ، إلا عظما واحدا وهو عجب الذنب ، ومنه يركب الخلق يوم القيامة (متفق عليه)
আবু হুরাইরা রা. থেকে
বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: দুই
শিঙ্গায় ফুৎকারের মধ্যে সময় হল চল্লিশ। লোকেরা
প্রশ্ন করল, হে আবু হুরাইরা উহা কি চল্লিশ দিন? আমি (আবু হুরাইরা) না বললাম। তারা জিজ্ঞেস করল, তাহলে কি চল্লিশ মাস? আমি বললাম, না। তারা জিজ্ঞেস করল তাহলে কি চল্লিশ বছর? আমি বললাম, না। রাসূলুল্লা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: এরপর
আল্লাহ তাআলা আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করবেন। তখন
মানুষেরা জেগে উঠবে যেমন উদ্ভিদ উদগত হয়। মানুষের
দেহের কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না। থাকবে
শুধু মেরুদন্ডের একটি হাড্ডি। আর
এটি দিয়েই কেয়ামতের দিন সৃষ্টিজীবকে আবার তৈরী করা হবে। (বুখারী ও মুসলিম)
হাদীসটি থেকে আমরা যা শিখতে পারলাম :
১- কেয়ামত সংঘটনে দু বার
শিঙ্গায় ফুঁক দেয়া হবে।
বুখারী ও মুসলিম বর্ণিত এ হাদীসটি থেকে আমরা তা জানতে পারলাম। অবশ্য বেশ কিছু আলেম তিন বার বা চার বার শিঙ্গা ফুকেঁর কথা বলেছেন। কিন্তু আল কুরআনের আয়াত ও সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত দু
বার শিঙ্গা ফুকেঁর বিষয়টি অধিকতম বিশুদ্ধ।
২- দু ফুৎকারের মাঝে সময়
চল্লিশ দিন না মাস না বছর? কোনটি আসলে উদ্দেশ্য? বিভিন্ন হাদীসে চল্লিশ বছরের কথা
বলা হয়েছে। কিন্তু সে হাদীসগুলো দুর্বল
সুত্রের। আসল কথা হলো বিষয়টি অস্পষ্ট
রাখা হয়েছে।
৩- কেয়ামতের সময় কবরে
মানুষের দেহের কোন কিছু অবশিষ্ট থাকবে না। শুধু
একটি মেরুদন্ডের হাড় আল্লাহ তাআলা অক্ষত রাখবেন। সেটি দিয়ে মানুষকে আবার সৃষ্টি করবেন।
তৃতীয়
অধ্যায়:
কেয়ামতের
ভয়াবহতা
যখন মানুষ কবর থেকে উঠে দাড়াবে তাদের বলা হবে,
তোমরা আসো তোমাদের প্রতিপালকের কাছে, আর থামো, তোমাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে তখন
সকল মানুষ হতাশায় আতঙ্কিত হয়ে পড়বে। পরাক্রমশালী এক অদ্বিতীয় প্রভুর সামনে সকলে মাথা
নত করে দেবে। তারা সেদিন এ আহবানে সাড়া দিতে দৌড়াদৌড়ি আরম্ভ করে দেবে।
আল্লাহ তাআলা বলেন:
يَوْمَئِذٍ
يَتَّبِعُونَ الدَّاعِيَ لَا عِوَجَ لَهُ وَخَشَعَتِ الْأَصْوَاتُ لِلرَّحْمَنِ فَلَا
تَسْمَعُ إِلَّا هَمْسًا
সেদিন তারা আহ্বানকারীর (ফেরেশতার)
অনুসরণ করবে। এর কোন এদিক সেদিক হবে না এবং
পরম করুণাময়ের সামনে সকল আওয়াজ নিচু হয়ে যাবে। তাই মৃদু আওয়াজ ছাড়া তুমি কিছুই শুনতে পাবে না। (সূরা তা-হা, আয়াত
১০৮)
وَعَنَتِ
الْوُجُوهُ لِلْحَيِّ الْقَيُّومِ وَقَدْ خَابَ مَنْ حَمَلَ ظُلْمًا ﴿111﴾ وَمَنْ
يَعْمَلْ مِنَ الصَّالِحَاتِ وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَلَا يَخَافُ ظُلْمًا وَلَا هَضْمًا
﴿112﴾
আর চিরঞ্জীব, চিরপ্রতিষ্ঠিত সত্তার সামনে সকলেই অবনত
হবে। আর সে অবশ্যই ব্যর্থ হবে যে
যুল্ম বহন করবে। এবং যে
মুমিন অবস্থায় ভাল কাজ করবে সে কোন জুলুম বা ক্ষতির আশংকা করবে না।
(সূরা তা-হা আয়াত ১১১-১১২)
فَذَرْهُمْ
يَخُوضُوا وَيَلْعَبُوا حَتَّى يُلَاقُوا يَوْمَهُمُ الَّذِي يُوعَدُونَ ﴿42﴾
يَوْمَ يَخْرُجُونَ مِنَ الْأَجْدَاثِ سِرَاعًا كَأَنَّهُمْ إِلَى نُصُبٍ
يُوفِضُونَ ﴿43﴾ خَاشِعَةً أَبْصَارُهُمْ تَرْهَقُهُمْ ذِلَّةٌ ذَلِكَ الْيَوْمُ
الَّذِي كَانُوا يُوعَدُونَ ﴿44﴾ (سورة المعارج )
অতএব তাদেরকে ছেড়ে দাও, তারা (বেহুদা কথায়) মত্ত থাকুক আর খেল-তামাশা
করুক যতক্ষণ না তারা দেখা পায় সেদিনের, যার প্রতিশ্রুতি তাদেরকে দেয়া হয়েছে। যেদিন
দ্রুতবেগে তারা কবর থেকে বের হয়ে আসবে, যেন তারা কোন লক্ষ্যের দিকে ছুটছে অবনত চোখে। লাঞ্ছনা তাদেরকে আচ্ছন্ন করবে! এটিই সেদিন যার ওয়াদা তাদেরকে দেয়া হয়েছিল। (সূরা মাআরিজ, আয়াত ৪২-৪৪)
পরকাল
অস্বীকারকারীদের দুর্দিন
আমাদের মানব সমাজে বহু
মানুষ আছে যারা পরকালকে অস্বীকার করে থাকে। তারা
বলে থাকে দুনিয়ার জীবনই জীবন। যা
দেখি না তা বিশ্বাস করি না। পরকাল অস্বীকার করার ফলে তারা যে পরকালের শিকার হবে না
তা কিন্তু নয়। কেহ আগুনের দাহ্য শক্তি অস্বীকার করলেও আগুন তাকে পেলে দগ্ধ
করবেই।
আল্লাহ
তাআলা এদের সম্পর্কে বলেন :
وَيْلٌ
يَوْمَئِذٍ لِلْمُكَذِّبِينَ ﴿10﴾ الَّذِينَ يُكَذِّبُونَ بِيَوْمِ الدِّينِ ﴿11﴾
وَمَا يُكَذِّبُ بِهِ إِلَّا كُلُّ مُعْتَدٍ أَثِيمٍ ﴿12﴾ إِذَا تُتْلَى عَلَيْهِ
آَيَاتُنَا قَالَ أَسَاطِيرُ الْأَوَّلِينَ ﴿13﴾ كَلَّا بَلْ رَانَ عَلَى
قُلُوبِهِمْ مَا كَانُوا يَكْسِبُونَ ﴿14﴾ كَلَّا إِنَّهُمْ عَنْ رَبِّهِمْ
يَوْمَئِذٍ لَمَحْجُوبُونَ ﴿15﴾ ثُمَّ إِنَّهُمْ لَصَالُو الْجَحِيمِ ﴿16﴾ ثُمَّ
يُقَالُ هَذَا الَّذِي كُنْتُمْ بِهِ تُكَذِّبُونَ ﴿17﴾ (سورة المطففين)
সেদিন ধ্বংস অস্বীকারকারীদের জন্য। যারা প্রতিদান দিবসকে অস্বীকার করে। আর সকল
সীমালঙ্ঘনকারী পাপাচারী ছাড়া কেউ তা অস্বীকার করে না। যখন তার কাছে আমার আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করা হয় তখন সে বলে, পূর্ববর্তীদের রূপকথা। কখনো নয়, বরং তারা যা অর্জন করত তা-ই তাদের অন্তরসমূহকে ঢেকে দিয়েছে। কখনো নয়, নিশ্চয় সেদিন তারা তাদের রব থেকে পর্দার আড়ালে থাকবে। তারপর নিশ্চয় তারা প্রজ্জ্বলিত আগুনে প্রবেশ করবে। তারপর বলা হবে, এটাই
তা যা তোমরা অস্বীকার করতে। (সূরা
আল মুতাফফিফিন, আয়াত
১০-১৭)
وَنُفِخَ
فِي الصُّورِ فَإِذَا هُمْ مِنَ الْأَجْدَاثِ إِلَى رَبِّهِمْ يَنْسِلُونَ ﴿51﴾
قَالُوا يَا وَيْلَنَا مَنْ بَعَثَنَا مِنْ مَرْقَدِنَا هَذَا مَا وَعَدَ
الرَّحْمَنُ وَصَدَقَ الْمُرْسَلُونَ ﴿52﴾ إِنْ كَانَتْ إِلَّا صَيْحَةً وَاحِدَةً
فَإِذَا هُمْ جَمِيعٌ لَدَيْنَا مُحْضَرُونَ ﴿53﴾ فَالْيَوْمَ لَا تُظْلَمُ نَفْسٌ
شَيْئًا وَلَا تُجْزَوْنَ إِلَّا مَا كُنْتُمْ تَعْمَلُونَ ﴿54﴾
আর শিঙ্গায় ফুঁক দেয়া হবে, তৎক্ষণাৎ তারা কবর থেকে তাদের রবের দিকে ছুটে আসবে। তারা বলবে, হায় আমাদের দুর্ভোগ! কে আমাদেরকে আমাদের নিদ্রাস্থল থেকে উঠালো? (তাদেরকে বলা হবে) এটা তো তা যার ওয়াদা পরম করুনাময় করেছিলেন এবং রাসূলগণ
সত্য বলেছিলেন। তা ছিল শুধুই একটি বিকট আওয়াজ, ফলে তৎক্ষণাৎ তাদের সকলকে আমার সামনে উপস্থিত
করা হবে। সুতরাং আজ কাউকেই কোন যুলম করা
হবে না এবং তোমরা যা আমল করছিলে শুধু তারই প্রতিদান তোমাদের দেয়া হবে। (সূরা ইয়াসীন, আয়াত ৫১-৫৪)
وَيَوْمَ
الْقِيَامَةِ تَرَى الَّذِينَ كَذَبُوا عَلَى اللَّهِ وُجُوهُهُمْ مُسْوَدَّةٌ
أَلَيْسَ فِي جَهَنَّمَ مَثْوًى لِلْمُتَكَبِّرِينَ (سورة الزمر)
আর যারা আল্লাহর প্রতি মিথ্যারোপ
করে কিয়ামতের দিন তুমি তাদের চেহারাগুলো কালো দেখতে পাবে। অহঙ্কারীদের বাসস্থান জাহান্নামের মধ্যে নয় কি? (সূরা যুমার, আয়াত ৬০)
وَقَالُوا
إِنْ هِيَ إِلَّا حَيَاتُنَا الدُّنْيَا وَمَا نَحْنُ بِمَبْعُوثِينَ ﴿29﴾ وَلَوْ
تَرَى إِذْ وُقِفُوا عَلَى رَبِّهِمْ قَالَ أَلَيْسَ هَذَا بِالْحَقِّ قَالُوا
بَلَى وَرَبِّنَا قَالَ فَذُوقُوا الْعَذَابَ بِمَا كُنْتُمْ تَكْفُرُونَ ﴿30﴾
قَدْ خَسِرَ الَّذِينَ كَذَّبُوا بِلِقَاءِ اللَّهِ حَتَّى إِذَا جَاءَتْهُمُ
السَّاعَةُ بَغْتَةً قَالُوا يَا حَسْرَتَنَا عَلَى مَا فَرَّطْنَا فِيهَا وَهُمْ
يَحْمِلُونَ أَوْزَارَهُمْ عَلَى ظُهُورِهِمْ أَلَا سَاءَ مَا يَزِرُونَ ﴿31﴾
وَمَا الْحَيَاةُ الدُّنْيَا إِلَّا لَعِبٌ وَلَهْوٌ وَلَلدَّارُ الْآَخِرَةُ
خَيْرٌ لِلَّذِينَ يَتَّقُونَ أَفَلَا تَعْقِلُونَ ﴿32﴾ (سورة الأنعام)
আর তারা বলেছিল, আমাদের এ দুনিয়ার জীবন ছাড়া কিছু নেই এবং আমরা পুনরুজ্জীবিত
হব না। আর যদি
তুমি দেখতে যখন তাদেরকে দাঁড় করানো হবে তাদের রবের সামনে এবং তিনি বলবেন, এটা কি সত্য
নয়? তারা
বলবে, হ্যাঁ, আমাদের রবের কসম! তিনি বলবেন, সুতরাং তোমরা যে কুফরী করতে তার কারণে
আযাব আস্বাদন কর। যারা
আল্লাহর সাক্ষাৎ অস্বীকার করেছে তারা অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, এমনকি যখন হঠাৎ তাদের কাছে কিয়ামত এসে যাবে, তারা বলবে, হায় আফসোস! সেখানে আমরা যে ত্রুটি করেছি তার উপর। তারা তাদের পাপসমূহ তাদের পিঠে বহন করবে; সাবধান! তারা যা বহন করবে তা
কত নিকৃষ্ট! আর দুনিয়ার জীবন খেলাধুলা ও তামাশা ছাড়া কিছু না। আর যারা তাকওয়া অবলম্বন করে তাদের জন্য আখিরাতের আবাস উত্তম। অতএব
তোমরা কি বুঝবে না? (সূরা
আল আনআম, আয়াত
২৯-৩২)
وَيْلٌ
يَوْمَئِذٍ لِلْمُكَذِّبِينَ ﴿28﴾ انْطَلِقُوا إِلَى مَا كُنْتُمْ بِهِ
تُكَذِّبُونَ ﴿29﴾ انْطَلِقُوا إِلَى ظِلٍّ ذِي ثَلَاثِ شُعَبٍ ﴿30﴾ لَا ظَلِيلٍ
وَلَا يُغْنِي مِنَ اللَّهَبِ ﴿31﴾ إِنَّهَا تَرْمِي بِشَرَرٍ كَالْقَصْرِ ﴿32﴾
كَأَنَّهُ جِمَالَةٌ صُفْرٌ ﴿33﴾ وَيْلٌ يَوْمَئِذٍ لِلْمُكَذِّبِينَ ﴿34﴾ (سورة
المرسلات)
মিথ্যারোপকারীদের জন্য সেদিনের
দুর্ভোগ! (তাদেরকে বলা হবে), তোমরা যা অস্বীকার করতে সেদিকে গমন কর। যাও তিন
শাখা বিশিষ্ট আগুনের ছায়ায়, যা ছায়াদানকারী নয় এবং তা জাহান্নামের জ্বলন্ত অগ্নিশিখার মোকাবেলায় কোন কাজেও
আসবে না। নিশ্চয় তা (জাহান্নাম) ছড়াবে
প্রাসাদসম স্ফুলিঙ্গ। তা যেন
হলুদ উষ্ট্রী। মিথ্যারোপকারীদের জন্য সেদিনের
দুর্ভোগ! (সূরা আল মুরসালাত, আয়াত ২৮-৩৪)
আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীসমূহ মুষ্ঠিবদ্ধ করা
মহা পরাক্রমশালী আল্লাহ তাআলা এরপর আকাশসমূহকে
ডান হাতে আর পৃথিবীগুলোকে অন্য হাতে মুষ্ঠিবদ্ধ করবেন। অত:পর বলবেন, কোথায়
শক্তিধর স্বৈরাচারীরা? কোথায় অহংকারীরা?
আল্লাহ তাআলা এ প্রসঙ্গে বলেন:
وَمَا
قَدَرُوا اللَّهَ حَقَّ قَدْرِهِ وَالْأَرْضُ جَمِيعًا قَبْضَتُهُ يَوْمَ
الْقِيَامَةِ وَالسَّماوَاتُ مَطْوِيَّاتٌ بِيَمِينِهِ سُبْحَانَهُ وَتَعَالَى
عَمَّا يُشْرِكُونَ (سورة الزمر)
আর তারা আল্লাহ-কে যথাযোগ্য
মর্যাদা দেয়নি। অথচ কিয়ামতের দিন গোটা পৃথিবীই
থাকবে তাঁর মুষ্ঠিতে এবং আকাশসমূহ তাঁর ডান হাতে ভাঁজ করা থাকবে। তিনি পবিত্র, তারা যাদেরকে শরীক করে তিনি তাদের ঊর্ধ্বে। (সূরা যুমার, আয়াত
৬৭)
يَوْمَ
نَطْوِي السَّمَاءَ كَطَيِّ السِّجِلِّ لِلْكُتُبِ كَمَا بَدَأْنَا أَوَّلَ خَلْقٍ
نُعِيدُهُ وَعْدًا عَلَيْنَا إِنَّا كُنَّا فَاعِلِينَ (سورة الأنبياء : 104)
সে দিন আমি আসমানসমূহকে গুটিয়ে
নেব, যেভাবে
গুটিয়ে রাখা হয় লিখিত দলীল-পত্রাদি। যেভাবে
আমি প্রথম সৃষ্টির সূচনা করেছিলাম সেভাবেই পুনরায় সৃষ্টি করব। ওয়াদা পালন করা আমার কর্তব্য। নিশ্চয়
আমি তা পালন করব। (সূরা আল আম্বিয়া, আয়াত ১০৪)
হাদীসে এসেছে
عن أبي هريرة رضي الله عنه عن النبي
صلى الله عليه وسلم قال: يقبض الله الأرض ، ويطوي السماوات بيمينه ، ثم يقول : أنا
الملك ، أين ملوك الأرض
আবু হুরাইরা রা. থেকে
বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আল্লাহ তাআলা পৃথিবী
মুষ্ঠিবদ্ধ করবেন আর আকাশকে নিজ ডান হাতে ভাজ করে ধরবেন অতঃপর বলবেন, আমিই বাদশা। কোথায় আজ পৃথিবীর রাজা-বাদশাগণ? (বর্ণনায় : বুখারী ও
মুসলিম)
عن عبد الله بن عمر رضي الله عنهما
قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: يطوي الله عز وجل السماوات يوم القيامة .
ثم يأخذهن بيده اليمنى . ثم يقول : أنا الملك . أين الجبارون ؟ أين المتكبرون ؟ ثم
يطوي الأرضين بشماله . ثم يقول : أنا الملك . أين الجبارون ؟ أين المتكبرون ؟
আব্দুল্লাহ ইবনে উমার রা.
থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
কেয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা আকাশসমূহকে ভাঁজ করে ফেলবেন। অতঃপর তা ডান হাতে ধারণ করবেন আর বলবেন, আমি বাদশা। কোথায় আজ স্বৈরাচরীরা? কোথায় আজ অহংকারীরা? এরপর পৃথিবীগুলোকে বাম হাতে ভাঁজ
করে ধরবেন। অত:পর বলবেন, কোথায় আজ
স্বৈরাচরীরা? কোথায় আজ অহংকারীরা? (বর্ণনায় : মুসলিম)
হাশরের ময়দানের অবস্থা
হাদীসে এসেছে:
عن سهل بن سعد رضي الله عنه قال: قال
رسول الله صلى الله عليه وسلم : يحشر الناس يوم القيامة على أرض بيضاء ، عفراء ،
كقرصة النقي ، ليس فيها علم لأحد. (رواه مسلم2150)
সাহল ইবনে সাআদ রা. থেকে
বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: কেয়ামতের
দিবসে মানুষকে সাদা পোড়ামাটি রংয়ের উদ্ভিদহীন একটি যমীনে একত্র করা হবে। যেখানে কারো জন্য কোন আলামত থাকবে না। (বর্ণনায়: মুসলিম, হাদীস নং ২১৫০)
عن عائشة رضي الله عنها قالت: سمعت
رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول : يحشر الناس يوم القيامة حفاة عراة غرلا . قلت
: يا رسول الله ! النساء والرجال جميعا ، ينظر بعضهم إلى بعض ؟ قال صلى الله عليه
وسلم : يا عائشة ! الأمر أشد من أن ينظر بعضهم إلى بعض. (متفق عليه)
আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত তিনি
বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে বলতে শুনেছি তিনি
বলতেন: কেয়ামতের দিন মানুষকে উলঙ্গ, খালি পায়ে ও খতনাবিহীন অবস্থায় একত্র করা হবে। আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! পুরুষ ও নারী সকলকে একত্র
করা হবে আর একজন অপর জনের দিকে তাকাবে?
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: হে আয়েশা! সেদিন
অবস্থা এমন ভয়াবহ হবে যে একজন অপর জনের দিকে তাকানোর ফুরসত পাবে না। (বর্ণনায়: বুখারী ও মুসলিম)
কাফেররা অন্ধ ও চেহারার উপর ভর করে উপস্থিত হবে :
আল্লাহ তাআলা বলেন:
وَمَنْ
أَعْرَضَ عَنْ ذِكْرِي فَإِنَّ لَهُ مَعِيشَةً ضَنْكًا وَنَحْشُرُهُ يَوْمَ
الْقِيَامَةِ أَعْمَى ﴿124﴾ قَالَ رَبِّ لِمَ حَشَرْتَنِي أَعْمَى وَقَدْ كُنْتُ
بَصِيرًا ﴿125﴾ قَالَ كَذَلِكَ أَتَتْكَ آَيَاتُنَا فَنَسِيتَهَا وَكَذَلِكَ
الْيَوْمَ تُنْسَى ﴿126﴾
আর যে আমার স্মরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে
নেবে, তার জন্য হবে নিশ্চয় এক সংকুচিত জীবন এবং আমি তাকে কিয়ামত
দিবসে উঠাবো অন্ধ অবস্থায়। সে বলবে, হে আমার রব, কেন আপনি আমাকে অন্ধ অবস্থায় উঠালেন? অথচ আমি তো ছিলাম দৃষ্টিশক্তি সম্পন্ন? তিনি বলবেন, এমনিভাবেই
তোমার নিকট আমার নিদর্শনাবলী এসেছিল, কিন্তু তুমি তা ভুলে গিয়েছিলে এবং সেভাবেই আজ তোমাকে ভুলে যাওয়া হল। (সূরা ত্বা-হা, আয়াত ১২৪-১২৬)
তিনি আরো বলেন:
وَنَحْشُرُهُمْ
يَوْمَ الْقِيَامَةِ عَلَى وُجُوهِهِمْ عُمْيًا وَبُكْمًا وَصُمًّا مَأْوَاهُمْ
جَهَنَّمُ كُلَّمَا خَبَتْ زِدْنَاهُمْ سَعِيرًا (سورة الإسراء : 97)
আর আমি কিয়ামতের দিনে তাদেরকে
একত্র করব উপুড় করে, অন্ধ, মূক ও বধির অবস্থায়। তাদের আশ্রয়স্থল জাহান্নাম; যখনই তা নিস্তেজ হবে তখনই আমি তাদের জন্য আগুন বাড়িয়ে দেব। (সূরা আল ইসরা, আয়াত ৯৭)
হাদীসে এসেছে:
عن أنس بن مالك رضي الله عنه أن رجلا
قال : يا رسول الله ! كيف يحشر الكافر على وجهه يوم القيامة ؟ قال " أليس
الذي أمشاه على رجليه في الدنيا ، قادرا على أن يمشيه على وجهه يوم القيامة ؟
" . قال قتادة : بلى . وعزة ربنا !
আনাস রা. থেকে বর্ণিত যে, এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস
করল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! কিয়ামতের দিন কাফেরদের কিভাবে চেহারার উপর উপুর করে উঠানো
হবে? তিনি বললেন: যে মহান সত্ত্বা দুনিয়াতে দু পা দিয়ে চলাচল করিয়েছেন, তিনি কি
কিয়ামতের দিন মুখ-মন্ডল দিয়ে চলাচল করাতে পারবেন না? কাতাদা বললেন : অবশ্যই তিনি
পারবেন, মহান রবের সম্মানের কসম করে বলছি। (বুখারী ও মুসলিম)
عن أبي هريرة رضي الله عنه أن رسول
الله صلى الله عليه وسلم قال: يعرق الناس يوم القيامة حتى يذهب عرقهم في الأرض
سبعين ذراعا، ويلجمهم حتى يبلغ آذانهم
আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: কেয়ামতের দিন মানুষ ঘর্মক্ত হবে। এমনকি যমীনের সত্তর হাত
ঘামে ডুবে যাবে। তাদের ঘামে তারা কান পর্যন্ত ডুবে যাবে। (বুখারী ও মুসলিম)
عن المقداد بن الأسود رضي الله عنه
قال: سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول : تدني الشمس ، يوم القيامة ، من
الخلق ، حتى تكون منهم كمقدار ميل . قال سليم بن عامر : فوالله ! ما أدري ما يعني
بالميل ؟ أمسافة الأرض، أم الميل الذي تكتحل به العين . قال : فيكون الناس على قدر
أعمالهم في العرق . فمنهم من يكون إلى كعبيه . ومنهم من يكون إلى ركبتيه. ومنهم من
يكون إلى حقويه. ومنهم من يلجمه العرق إلجاما . قال وأشار رسول الله صلى الله عليه
وسلم بيده إلى فيه .
মিকদাদ ইবনে আসওয়াদ রা.
থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে বলতে
শুনেছি তিনি বলেছেন: কিয়ামত দিবসে সূর্য মানুষের খুব নিকটবর্তী হবে। এমনকি এর দুরত্ব এক মাইল পরিমাণ হবে। এ সম্পর্কে সুলাইম ইবনে আমের বলেন, আল্লাহর শপথ! মাইল
বলতে এখানে কোন মাইল তিনি বুঝিয়েছেন আমি তা জানি না। জমির দূরত্ব পরিমাপের মাইল বুঝিয়েছেন, না সুরমা দানির মাইল (শলাকা) বুঝিয়েছেন?
মানুষ তার আমল অনুযায়ী ঘামের মধ্যে থাকবে। কারো
ঘাম হবে পায়ের গিরা বরাবর। কারো
ঘামের পরিমাণ হবে হাটু বরাবর। কারো
ঘামের পরিমাণ হবে কোমর বরাবর। আবার
কারো ঘামের পরিমাণ হবে তার মুখ বরাবর। (বর্ণনায়:
মুসলিম ২১৯৬)
হে আল্লাহর বান্দা! আপনি
এভাবে চিন্তা করে দেখতে পারেন, আমার অবস্থা তখন কেমন হবে? আমি কি সেদিন সৌভাগ্যবান
হবো না দুর্ভাগা? আমার জীবনের অধিকাংশ কাজ কি সৎ কাজ হয়েছে না পাপাচার বেশী হয়েছে?
আমি কি মদ, ব্যভিচার, জুয়া, প্রতারণা, মিথ্যা কথা, দুর্নীতি, আমানতের খেয়ানত,
অপরের সম্পদ আত্নসাৎ, অপরের মানহানি, অপরের দোষ চর্চা, অপবাদ, মিথ্যা
মামলা-মুকাদ্দামা, সূদী কারবার, ঘুষ লেনদেন, খাবারে ভেজাল, ওয়াদা খেলাফী, ঋণ
খেলাফী, ইসলামের শত্রুদের সাথে বন্ধুত্ব, ইসলাম অনুসারীদের নিয়ে উপহাস তামাশা
ইত্যাদি অনৈতিক কাজগুলো পরিহার করে চলতে পেরেছি, না এগুলো ছিলো আমার জীবনের নিত্য
দিনের সঙ্গী? কাজেই কেয়ামতের এ কঠিন দিনের মুখোমুখী হওয়ার ব্যাপারে আল্লাহ-কে ভয়
করুন। সকল বিষয়ে আল্লাহ-কে ভয় করে
সাবধানতার সাথে পথ চলুন। দুনিয়ার
জীবনে একবার ব্যর্থ হলে তা কাটিয়ে উঠা যায়। কিন্তু
কেয়ামতের সময়ের ব্যর্থতার কোন প্রতিকার নেই। কাজেই
এখন থেকেই নিজের আমলের হিসাব নিজে করতে থাকুন।
আল্লাহ তাআলা বলেন :
كَلَّا
إِذَا دُكَّتِ الْأَرْضُ دَكًّا دَكًّا ﴿21﴾ وَجَاءَ رَبُّكَ وَالْمَلَكُ صَفًّا
صَفًّا ﴿22﴾ وَجِيءَ يَوْمَئِذٍ بِجَهَنَّمَ يَوْمَئِذٍ يَتَذَكَّرُ الْإِنْسَانُ
وَأَنَّى لَهُ الذِّكْرَى ﴿23﴾ يَقُولُ يَا لَيْتَنِي قَدَّمْتُ لِحَيَاتِي ﴿24﴾
কখনো নয়, যখন পৃথিবীকে চূর্ণ-বিচূর্ণ
করা হবে পরিপূর্ণভাবে। আর তোমার
রব ও ফেরেশতাগণ উপস্থিত হবেন সারিবদ্ধভাবে। আর সেদিন
জাহান্নামকে উপস্থিত করা হবে, সেদিন মানুষ স্মরণ করবে, কিন্তু সেই স্মরণ তার কী উপকারে আসবে? সে বলবে, হায়!
যদি আমি কিছু আগে পাঠাতাম আমার এ জীবনের জন্য!’(সূরা আল ফাজর, আয়াত ২১-২৪)
যারা সে দিন আল্লাহ তাআলার ছায়াতে আশ্রয় পাবে
عن أبي هريرة رضي الله عنه قال: قال
رسول الله صلى الله عليه وسلم : إن الله
يقول يوم القيامة : أين المتحابون بجلالي . اليوم أظلهم في ظلي . يوم لا ظل إلا
ظلي. (رواه مسلم 1988)
আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লা সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: আল্লাহ তাআলা কেয়ামতের দিন বলবেন, যারা পরস্পরকে
ভালোবেসেছে আমারই জন্য তারা আজ কোথায়? আজ আমি তাদেরকে আমার ছায়ায় ছায়া দান করবো। আজ এমন দিন আমার
ছায়া ব্যতীত আর কোন ছায়া নেই। (বর্ণনায় : মুসলিম ১৯৮৮)
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ- رَضِيَ اللهُ عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ- صَلَّى الله ُعَلَيْهِ وَسَلَّمَ- قَالَ : سَبْعَةٌ يُظِلُّهُمُ اللهُ فِي ظِلِّهِ يَوْمَ لَا ظِلَّ إلَّا ظِلُّهُ: إمَامٌ عَادِلٌ، وَشَابٌّ نَشَأَ فِيْ عِبَادَةِ اللهِ، وَرَجُلٌ قَلْبُهُ مُعَلَّقٌ فِيْ المَسَاجِدِ، وَرَجُلَانِ تَحَابَّا فِيْ اللهِ اجْتَمَعَا عَلَيْهِ وَتَفَرَّقَا عَلَيْهِ، وَرَجُلٌ دَعَتْهُ امْرَأَةٌ ذَاتَ مَنْصَبٍ وَجَمَالٍ فَقَالَ : إنِّي أخَافُ اللهَ، وَرَجُلٌ تَصَدَّقَ بِصَدَقَةٍ فَأَخْفَاهَا حَتَّى لَا تَعْلَمَ شِمَالُهُ مَا تُنْفِقُ يَمِيْنُهُ، وَرَجُلٌ ذَكَرَ اللهَ خَالِيًا فَفَاضَتْ عَيْنَاهُ ) متفق عليه(
আবু হুরাইরা রা. হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: কেয়ামত দিবসে সাত ব্যক্তিকে আল্লাহ তাআলা তার আরশের ছায়াতলে আশ্রয় দিবেন, যেদিন তার ছায়া ব্যতীত ভিন্ন কোন ছায়া থাকবে না- ন্যায়পরায়ন বাদশা; এমন যুবক যে তার যৌবন ব্যয় করেছে আল্লাহর ইবাদতে; ঐ ব্যক্তি যার হৃদয় সর্বদা সংশিষ্ট থাকে মসজিদের সাথে ; এমন দু ব্যক্তি, যারা আল্লাহর জন্য একে অপরকে ভালোবেসেছে, এবং বিচ্ছিন্ন হয়েছে তারই জন্য ; এমন ব্যক্তি, যাকে কোন সুন্দরী নেতৃস্থানীয়া এক রমণী আহ্বান করল অশ্লীল কর্মের প্রতি, কিন্তু প্রত্যাখ্যান করে সে বলল, আমি আল্লাহকে ভয় করি ; এমন ব্যক্তি, যে এরূপ গোপনে দান করে যে, তার বাম হাত ডান হাতের দান সম্পর্কে অবগত হয় না। আর এমন ব্যক্তি, নির্জনে যে
আল্লাহকে স্মরণ করে এবং তার দু-চোখ বেয়ে বয়ে যায় অশ্রুধারা। (বুখারী
ও মুসলিম)
عن أبي اليسر كعب بن عمرو رضي الله
عنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: من أنظر معسرا أو وضع له ، أظله الله
يوم القيامة تحت ظل عرشه ، يوم لا ظل إلا ظله. (رواه مسلم 103)
আবু ইয়াসার কাআব ইবনে আমর
রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: যে কোন ঋণগ্রস্ত বা অভাবী ব্যক্তিকে সুযোগ দেবে অথবা
তাকে ঋণ আদায় থেকে অব্যাহতি দেবে আল্লাহ তাআলা তাকে নিজ ছায়ায় আশ্রয় দিবেন। (মুসলিম ১০৩)
কেয়ামতের দিন যাকে প্রথম ডাকা হবে, তিনি হলেন আদম আলাইহিস সালাম
عن أبي هريرة رضي الله عنه أن النبي
صلى الله عليه وسلم قال: أول من يدعى يوم القيامة آدم ، فتراءى ذريته ، فيقال :
هذا أبوكم آدم ، فيقول : لبيك وسعديك ، فيقول : أخرج بعث جهنم من ذريتك ، فيقول :
يا رب كم أخرج ، فيقول : أخرج من كل مائة تسعة وتسعين . فقالوا : يا رسول الله ،
إذا أخذ منا من كل مائة تسعة وتسعون ، فماذا يبقى منا ؟ قال : إن أمتي في الأمم
كالشعرة البيضاء في الثور الأسود
আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত যে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: কেয়ামতের দিন যাকে প্রথম ডাকা হবে তিনি হলেন আদম আলাইহিস সালাম। তিনি তার সন্তানদের দেখবেন। বলা হবে এ হল তোমাদের পিতা আদম। তিনি
তখন বলবেন, উপস্থিত হয়েছি হে প্রভূ! আপনার কাছেই কল্যাণ। আল্লাহ তাআলা তাকে বলবেন, তোমার
সন্তানদের মধ্যে জাহান্নাম বাসীদের নিয়ে আসো। আদম বলবেন, হে প্রভূ, কত জনকে নিয়ে আসবো? আল্লাহ বলবেন, শত করা নিরানব্বই জনকে নিয়ে
আসো। এ কথা শুনে সাহাবায়ে কেরাম
বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! যখন আমাদের একশ জনের মধ্য হতে নিরানব্বই জনকে জাহান্নামে
নিয়ে যাওয়া হবে তাহলে বাকী থাকবে কে? রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন অন্যান্য উম্মতের সংখ্যার তুলনায় আমার
উম্মত হবে এমন অল্প যেমন একটি কালো ষাড়ের গায়ে সাদা পশম থাকে। (বর্ণনায় : বুখারী)
عن أبي سعيد الخدري رضي الله عنه قال:
قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: يقول الله تعالى : يا آدم ، فيقول : لبيك
وسعديك ، والخير في يديك، فيقول : أخرج بعث النار ، قال: وما بعث النار ؟ قال : من
كل ألف تسعمائة وتسعة وتسعين، فعنده يشيب الصغير، وتضع كل ذات حمل حملها، وترى
الناس سكارى وما هم بسكارى، ولكن عذاب الله شديد . قالوا : يا رسول الله ، وأينا
ذلك الواحد ؟ ثم قال : والذي نفسي بيده ، إني أرجو أن تكونوا ربع أهل الجنة .
فحمدنا الله وكبرنا ، فقال : أرجو أن تكونوا ثلث أهل الجنة . فحمدنا الله وكبرنا ،
فقال : أرجو أن تكونوا نصف أهل الجنة . فحمدنا الله وكبرنا ، فقال : ما أنتم في
الناس إلا كالشعرة السوداء في جلد ثور أبيض ، أو كشعرة بيضاء في جلد ثور أسود أو
كالرقمة في ذراع الحمار. (متفق عليه)
আবু সায়ীদ খুদরী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি
বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: আল্লাহ
বলবেন হে আদম! তখন আদম বলবেন, হে প্রভূ আমি উপস্থিত। আপনার হাতেই সৌভাগ্য ও সকল কল্যাণ। আল্লাহ
বলবেন, জাহান্নামীদের আমার কাছে
উপস্থিত করো। আদম বলবেন, কত জন জাহান্নামী? আল্লাহ
বলবেন প্রতি হাজারে নয় শত নিরানব্বই জন। রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন এটা হল সেই সময় যখন ভয়াবহ অবস্থার কারণে
বাচ্চারাও বুড়ো হয়ে যাবে। প্রসব
কারীনিরা প্রসব করে দেবে। আর
তুমি মানুষকে দেখবে নেশাগ্রস্ত অথচ তারা নেশাগ্রস্ত নয়। কিন্তু আল্লাহর শাস্তি অত্যন্ত কঠিন। সাহাবায়ের
কেরামের কাছে বিষয়টা কঠিন মনে হল। তারা
বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! তাহলে আমাদের মধ্যে কোন ব্যক্তি সে, যে মুক্তি পাবে? রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: যার
হাতে আমার প্রাণ তার শপথ করে বলছি, আমি
আশা করি জান্নাতীদের চার ভাগের একভাগ হবে তোমরা। এ কথা শুনে আমরা আলহামদুলিল্লাহ বললাম ও আল্লাহ আকবর বললাম। তিনি বললেন, যার
হাতে আমার প্রাণ তার শপথ করে বলছি, আমি
আশা করি জান্নাতীদের তিন ভাগের একভাগ হবে তোমরা। এ কথা শুনে আমরা আলহামদুলিল্লাহ বললাম ও আল্লাহ আকবর বললাম। তিনি বললেন, যার
হাতে আমার প্রাণ তার শপথ করে বলছি, আমি
আশা করি জান্নাতীদের অর্ধেক হবে তোমরা। এ
কথা শুনে আমরা আলহামদুলিল্লাহ বললাম ও আল্লাহ আকবর বললাম। তিনি বললেন, অন্যান্য জাতির তুলনায়
তোমাদের সংখ্যা হবে এমন যেন একটি কালো ষাড়ের গায়ে কিছু সাদা লোম থাকে। অথবা গাধার পায়ের গোছার সাদা অংশের মত। (বর্ণনায় : বুখারী
ও মুসলিম)
হাদীস দুটো থেকে শিক্ষা, মাসায়েল ও জ্ঞাতব্য :
এক. দেখা গেল এক হাদীসে শত করা
নিরানব্বই জন জাহান্নামী হবে বলা হয়েছে। আবার
অন্য হাদীসটিতে এক হাজারে নয় শত নিরা নব্বই জনের কথা বলা হয়েছে। আসলে কোনটি সঠিক।
এর উত্তর হলো দুটোই সঠিক। যেখানে একশ জনে নিরানব্বই জনের কথা বলা হয়েছে সেখানে
উম্মতে মুহাম্মাদী উদ্দেশ্য হবে। অর্থাৎ
মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আগমনের পরে যে সকল মানুষ জন্ম গ্রহণ
করেছে তাদের একশ জনের একজন জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাবে। আর যেখানে এক হাজারে নয় শত নিরানব্বই জনের কথা বলা হয়েছে সেখানে পৃথিবীর শুরু
থেকে শেষ পর্যন্ত যত মানুষ জন্ম নিয়েছে তাদের হাজারে একজন মুক্তি পাবে।
দুই. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জান্নাতীদের
চার ভাগের এক ভাগ, তিন ভাগের এক ভাগ সর্বশেষে
অর্ধেক হবে তার অনুসারীদের মধ্য থেকে যে কথা বলেছেন সেটা হল তার আশা-আকাংখা। আর
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তার এ আশা পূরণ করবেন বলে হাদীসে এসেছে।
তিন. উম্মতে মুহাম্মাদীর ফজিলত ও শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণিত হল এ
হাদীস দিয়ে। মোট জনসংখ্যার আনুপাতিক
হারে তারা জান্নাত বাসীদের মধ্যে সংখ্যায় অনেক বেশী হবে।
চার. যখন জাহান্নামী আর জান্নাতীদের বাছাই করা হবে তখনকার
অবস্থার ভয়াবহতার একটি চিত্র এ হাদীসে তুলে ধরা হয়েছে।
আল্লাহ নিজে এ সম্পর্কে
বলেছেন :
وَامْتَازُوا
الْيَوْمَ أَيُّهَا الْمُجْرِمُونَ ﴿59﴾أَلَمْ أَعْهَدْ إِلَيْكُمْ يَا بَنِي
آَدَمَ أَنْ لَا تَعْبُدُوا الشَّيْطَانَ إِنَّهُ لَكُمْ عَدُوٌّ مُبِينٌ ﴿60﴾
وَأَنِ اعْبُدُونِي هَذَا صِرَاطٌ مُسْتَقِيمٌ ﴿61﴾ وَلَقَدْ أَضَلَّ مِنْكُمْ
جِبِلًّا كَثِيرًا أَفَلَمْ تَكُونُوا تَعْقِلُونَ ﴿62﴾ هَذِهِ جَهَنَّمُ الَّتِي
كُنْتُمْ تُوعَدُونَ ﴿63﴾ اصْلَوْهَا الْيَوْمَ بِمَا كُنْتُمْ تَكْفُرُونَ ﴿64﴾
(سورة يس)
আর [বলা হবে] হে অপরাধীরা, আজ তোমরা পৃথক হয়ে যাও। হে বনী আদম, আমি কি
তোমাদেরকে এ মর্মে নির্দেশ দেইনি যে, তোমরা শয়তানের উপাসনা করো না। নিঃসন্দেহে
সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু ? আর আমারই
ইবাদাত কর। এটিই সরল পথ। আর অবশ্যই শয়তান তোমাদের বহু দলকে পথভ্রষ্ট করেছে। তবুও কি তোমরা অনুধাবন করনি? এটি সেই জাহান্নাম, যার সম্পর্কে তোমরা ওয়াদাপ্রাপ্ত হয়েছিলে। তোমরা যে কুফরী করতে সে কারণে আজ তোমরা এতে প্রবেশ কর। (সূরা ইয়াসীন, আয়াত
৫৯-৬৪)
পাঁচ. ভাল কোন কিছু শুনলে আলহামদুলিল্লাহ বলা ও আল্লাহু আকবর বলা সুন্নাত।
যাকাত পরিত্যাগকারীর শাস্তি
আল্লাহ তাআলা বলেন:
وَلَا
يَحْسَبَنَّ الَّذِينَ يَبْخَلُونَ بِمَا آَتَاهُمُ اللَّهُ مِنْ فَضْلِهِ هُوَ
خَيْرًا لَهُمْ بَلْ هُوَ شَرٌّ لَهُمْ سَيُطَوَّقُونَ مَا بَخِلُوا بِهِ يَوْمَ
الْقِيَامَةِ وَلِلَّهِ مِيرَاثُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَاللَّهُ بِمَا
تَعْمَلُونَ خَبِيرٌ (سورة آل عمران)
আর আল্লাহ যাদেরকে তাঁর অনুগ্রহ
থেকে যা দান করেছেন তা নিয়ে যারা কৃপণতা করে তারা যেন ধারণা না করে যে, তা তাদের জন্য কল্যাণকর। বরং তা তাদের জন্য অকল্যাণকর। যা নিয়ে তারা কৃপণতা করেছিল, কিয়ামত দিবসে তা দিয়ে তাদের বেড়ি পরানো হবে। আর আসমানসমূহ ও যমীনের উত্তরাধিকার আল্লাহরই জন্য। আর তোমরা যা আমল কর সে ব্যাপারে আল্লাহ সম্যক জ্ঞাত। (সূরা আলে ইমরান, আয়াত
১৮০)
وَالَّذِينَ
يَكْنِزُونَ الذَّهَبَ وَالْفِضَّةَ وَلَا يُنْفِقُونَهَا فِي سَبِيلِ اللَّهِ
فَبَشِّرْهُمْ بِعَذَابٍ أَلِيمٍ ﴿34﴾ يَوْمَ يُحْمَى عَلَيْهَا فِي نَارِ
جَهَنَّمَ فَتُكْوَى بِهَا جِبَاهُهُمْ وَجُنُوبُهُمْ وَظُهُورُهُمْ هَذَا مَا
كَنَزْتُمْ لِأَنْفُسِكُمْ فَذُوقُوا مَا كُنْتُمْ تَكْنِزُونَ ﴿35﴾
এবং যারা সোনা ও রূপা (টাকা-পয়সা)
পুঞ্জীভূত করে রাখে, আর তা
আল্লাহর রাস্তায় খরচ করে না, তুমি তাদের বেদনাদায়ক আযাবের সুসংবাদ দাও। যেদিন জাহান্নামের আগুনে তা গরম করা হবে, অতঃপর তা দ্বারা তাদের কপালে, পার্শ্বে এবং পিঠে সেঁক দেয়া হবে। (আর বলা হবে) এটা তা-ই যা তোমরা নিজদের জন্য জমা করে রেখেছিলে, সুতরাং তোমরা যা জমা করেছিলে তার স্বাদ উপভোগ কর। (সূরা আত তাওবা, আয়াত ৩৪-৩৫)
আয়াত দুটো থেকে শিক্ষা ও মাসায়েল :
এক. কৃপণতা একটি নিন্দনীয়
কাজ।
দুই. কৃপণতা কখনো কল্যাণ
বয়ে আনে না।
তিন. ধন-সম্পদ আল্লাহ
তাআলারই দান।
চার. কৃপণতা করে সঞ্চিত
ধন-সম্পদ কেয়ামতে শাস্তির কারণ হবে।
পাঁচ. টাকা পয়সা ধন-সম্পদে
গরিবদের যে অধিকার আছে তা যাকাত দানের মাধ্যমে আদায় না করলে কেয়ামতে এগুলো শাস্তির
মাধ্যম হবে।
ছয়. এ অপরাধে কি ধরনের
শাস্তি দেয়া হবে তা বর্ণনা করা হয়েছে।
হাদীসে এসেছে
عن أبي هريرة رضي الله عنه قال: قال
رسول الله صلى الله عليه وسلم : من آتاه الله مالا فلم يؤد زكاته مثل له ماله
شجاعا أقرع ، له زبيبتان ، يطوقه يوم القيامة ، يأخذ بلهزمتيه - يعني بشدقيه -
يقول : أنا مالك أنا كنزك . ثم تلا هذه الآية : { ولا يحسبن الذين يبخلون بما
آتاهم الله من فضله } . إلى آخر الآية .
আবু হুরাইরা রা. থেকে
বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : যাকে
আল্লাহ তাআলা সম্পদ দিলেন কিন্তু সে যাকাত আদায় করলো না তার সম্পদকে বিষধর
চুলওয়ালা সাপে পরিণত করা হবে। যার শিংয়ের মত দুটো বিষাক্ত দাঁত থাকবে। কেয়ামতের দিন এ সাপ তার গলায় পেঁচিয়ে দেয়া হবে। এ দিয়ে সে তাকে দংশন করতে থাকবে আল বলবে, আমি তোমার
সম্পদ, আমি তোমার সঞ্চয়। এ
কথা বলার পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ আয়াতটি শেষ পর্যন্ত
পাঠ করলেন :
وَلَا
يَحْسَبَنَّ الَّذِينَ يَبْخَلُونَ بِمَا آَتَاهُمُ اللَّهُ مِنْ فَضْلِهِ هُوَ
خَيْرًا لَهُمْ بَلْ هُوَ شَرٌّ لَهُمْ سَيُطَوَّقُونَ مَا بَخِلُوا بِهِ يَوْمَ
الْقِيَامَةِ
আর আল্লাহ যাদেরকে তাঁর অনুগ্রহ
থেকে যা দান করেছেন তা নিয়ে যারা কৃপণতা করে তারা যেন ধারণা না করে যে, তা তাদের জন্য কল্যাণকর। বরং তা তাদের জন্য অকল্যাণকর। যা নিয়ে তারা কৃপণতা করেছিল, কিয়ামত দিবসে তা দিয়ে তাদের বেড়ি পরানো হবে। বর্ণনায় : বুখারী
হাদীসে এসেছে :
عن أبي هريرة رضي الله عنه قال: قال
رسول الله صلى الله عليه وسلم: ما من صاحب ذهب ولا فضة ، لا يؤدي منها حقها ، إلا
إذا كان يوم القيامة ، صفحت له صفائح من نار ، فأحمي عليها في نار جهنم . فيكوى
بها جنبه وجبينه وظهره . كلما بردت أعيدت له . في يوم كان مقداره خمسين ألف سنة .
حتى يقضى بين العباد . فيرى سبيله . إما إلى الجنة وإما إلى النار .
আবু হুরাইরা রা. থেকে একটি
দীর্ঘ হাদীসে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
যে সকল স্বর্ণ রৌপ্য (টাকা পয়সা) সঞ্চয়কারী সম্পদের হক (যাকাত) আদায় করেনি,
সেগুলোকে কেয়ামতের দিন আগুনে দিয়ে পাত বানানো হবে। জাহান্নামের আগুনে তা গরম করা হবে। অত:পর
তা দিয়ে তার পার্শদেশ, কপাল ও পিঠে দাগ দেয়া হবে। যখনই তা ঠান্ডা হবে আবার গরম করা হবে। সে
দিনটির সময়ের পরিমাণ হবে হাজার। এ
শাস্তি হবে মানুষের মধ্যে বিচার ফয়সালার পূর্বে। এরপর জান্নাতীরা জান্নাতে যাবে আর জাহান্নামীরা যাবে জাহান্নামে। (বর্ণনায় :মুসলিম)
এ হাদীসটি থেকে আমরা যা শিখতে পারলাম:
এক. দরিদ্র মানুষের অধিকার
যাকাত আদায় না করে সম্পদ সঞ্চয় করে রাখা অন্যায়
দুই. সঞ্চয়কৃত সম্পদ দিয়েই
সম্পদের মালিককে শাস্তি দেয়া হবে।
তিন. হিসাব নিকাশ ও জান্নাত
জাহান্নামের ফয়সালা হওয়ার পূর্বে এ শাস্তি দেয়া হবে।
চার. পৃথিবীর সময়ের হিসাবে
কেয়ামত দিবসের সময়ের পরিমাণ হবে হাজার বছর।
হাদীসে এসেছে
عن جابر رضي الله عنه قال: قال رسول
الله صلى الله عليه وسلم: ما من صاحب
كنز لا يفعل فيه حقه ، إلا جاء كنزه يوم
القيامة شجاعا أقرع يتبعه ، فاغرا فاه فإذا أتاه فر منه ، فيناديه ربه عز وجل : خذ
كنزك الذي خبأته ، فأنا أغنى منك ، فإذا رأى أنه لا بد له منه ، سلك يده في فيه ،
فيقضمها قضم الفحل.
জাবের রা. থেকে একটি দীর্ঘ হাদীসে বর্ণিত, তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: যে সঞ্চিত সম্পদের মালিক তার
পাওনা (যাকাত) আদায় করেনি, কেয়ামতের দিন সেই সম্পদ একটি বিষধর সাপ হয়ে আসবে। সাপটি মুখ হা করে তাকে ধাওয়া করতে থাকবে
আর সে পালাতে চেষ্টা করবে। আল্লাহ তাআলা
তাকে ডাক দিয়ে বলবেন, তোমার সম্পদ গ্রহণ করো, যা তুমি সঞ্চয় করেছিলে। আমি তোমার সম্পদের মুখাপেক্ষী নই। যখন সে দেখবে যে সাপটি থেকে বাঁচা সম্ভব
নয় তখন সে নিজেই তার মুখে হাত ডুকিয়ে দেবে। সাপটি এমনভাবে তার হাত গ্রাস করবে যেমন উট ঘাস মুখে নেয়। (বর্ণনায় : মুসলিম)
কেয়ামতের
দিন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর হাউজে কাউসার
কেয়ামতের দিন মুসলিমগণ নবী করীম
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর হাউজে কাউসারে পানি পানের জন্য সমবেত হবে। এর পানি দুধের চেয়ে সাদা, মেশকের চেয়ে এর সুঘ্রাণ তীব্র
আর তার পাত্রগুলো আকাশের নক্ষত্রের মত। যে এ
থেকে একবার পানি পান করবে সে আর কখনো পিপাসিত হবে না।
হাদীসে এসেছে
عن أبي هريرة رضي الله عنه قال: قال
رسول الله صلى الله عليه وسلم: ترد علي أمتي الحوض ، وأنا أذود الناس عنه ؛ كما
يذود الرجل إبل الرجل عن إبله ، قالوا : يا نبي الله ! أتعرفنا ؟ قال : نعم ، لكم
سيما ليست لأحد غيركم ، تردون علي غرا محجلين من آثار الوضوء . وليصدن عني طائفة
منكم ، فلا يصلون ، فأقول : يا رب ! هؤلاء من أصحابي ؟ ! فيجيبني ملك فيقول : وهل
تدري ما أحدثوا بعدك ؟ !
আবু হুরাইরা রা. থেকে
বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: হাউজে
কাউসারে আমার উম্মত সমবেত হবে। আমি
অনেক মানুষকে এমনভাবে তাড়িয়ে দেব যেমন একজনের উট অন্য জনের উটের পাল থেকে তাড়িয়ে
দেয়া হয়। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন,
ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি কি আমাদের তখন চিনবেন? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম বললেন, হ্যা, তোমাদের এমন কিছু আলামত আছে যা অন্যদের নেই। তোমরা আমার কাছে উপস্থিত হবে আর তোমাদের অজুর স্থানগুলো
চকমক করতে থাকবে। তোমাদের একটি দলকে আমার
থেকে দুরে সরিয়ে দেয়া হবে, তারা হাউজের কাছে পৌছতে পারবে না। সে সময় আমি বলব, হে আমার প্রভূ এরা আমার অনুসারী। তখন এক ফেরেশতা উত্তর দেবে, আপনি কি জানেন আপনার পরে তারা কি প্রচলন করেছে?
(বর্ণনায়: মুসলিম)
এ হাদীসটি থেকে আমরা যা শিখতে পারলাম:
এক. উম্মতের সকল মানুষ
হাউজে কাউসারে পানি পানের জন্য ভীর করবে।
দুই. অজুর আলামত দেখে
মুসলমানদের চেনা যাবে।
তিন. অজুর ফজিলত।
চার. মুসলমানদের একটি অংশকে
হাউজে কাউসার থেকে তাড়িয়ে দেয়া হবে। কারণ
তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম গত হওয়ার পর ইসলামে নতুন বিষয়ের
প্রচলন করেছে বা তাতে লিপ্ত হয়েছে।
পাঁচ. ইসলামে বিদআত প্রচলন
ও তার অনুসরণ একটি মহা-পাপ।
হাদীসে এসেছে
عن أسماء بنت أبي بكر رضي الله عنهما
قالت : قال النبي صلى الله عليه وسلم: إني على الحوض حتى أنظر من يرد علي منكم ،
وسيؤخذ ناس دوني ، فأقول : يا رب مني ومن أمتي ، فيقال : هل شعرت ما عملوا بعدك ،
والله ما برحوا يرجعون على أعقابهم .
আবু বকর রা. এর মেয়ে আসমা
থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: আমি
হাউজে কাউসারে থাকব আর দেখব তোমাদের কে কে আসছে। কিন্তু কিছু মানুষকে আমার অনুমতি ব্যতীত নিয়ে যাওয়া হবে। তখন আমি বলব, হে প্রভূ! এরা আমার অনুসারী, আমার উম্মতের অংশ। আমাকে বলা হবে, আপনি কি জানেন, আপনার পরে এরা কি কাজ
করেছে? আল্লাহর শপথ! তারা পিছনে ফিরে যাবে। (বর্ণনায়:
বুখারী ও মুসলিম)
হাউজে কাউসারে মুসলিম উম্মাহ কখন সমবেত হবে? এ
বিষয়ে উলামাদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। অনেকে বলেছেন, এটা পুলসিরাতের পূর্বে হবে। আবার কেহ কেহ
বলেছেন এটা হিসাব-কিতাব, মিযান ও পুলসিরাতের পরে হবে।
আমি মনে করি প্রথম মতটি অধিকতর সঠিক। কারণ নবী করীম সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার সাহাবীদের সাক্ষাতের ওয়াদা করেছেন হাউজে কাউসারে কাছে। যেমন হাদীসে
এসেছে
عن عبد الله بن زيد بن عاصم رضي الله
عنه أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال للأنصار: إنكم ستلقون بعدي أثرة ،
فاصبروا حتى تلقوني على الحوض .
আব্দুল্লাহ বিন যায়েদ ইবনে আসেম রা. থেকে বর্ণিত,
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আনসারদের উদ্দেশ্যে বলেছেন: আমার পরে
তোমরা অধিকার ভোগের ক্ষেত্রে শাসকদের অগ্রাধিকার দেখতে পাবে। তোমরা তখন ধৈর্য ধারণ করবে
হাউজে কাউসারে আমার কাছে সাক্ষাত লাভ পর্যন্ত।
হাদীসে এসেছে
عن عبد الله بن عمرو بن العاص رضي
الله عنهما قال: قال النبي صلى الله عليه وسلم: حوضي مسيرة شهر ، ماؤه أبيض من
اللبن ، وريحه أطيب من المسك ، وكيزانه كنجوم السماء ، من شرب منها فلا يظمأ أبدا
আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস রা. বলেন: নবী করীম
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: আমার হাউজের প্রশস্ততা হবে এক মাসের সমান
দূরত্ব। তার পানি দুধের চেয়েও সাদা, সুঘ্রান মেশকের চেয়ে উত্তম। আর তার পাত্রগুলো আকাশের
নক্ষত্রের মত। যে তা থেকে পান করবে কখনো পিপাসিত হবে না। (বর্ণনায় : বুখারী ও
মুসলিম)
এ হাদীসটি দিয়ে বুঝা যায় কেয়ামত সংঘটনের পর পরই
জান্নাত জাহান্নাম নির্ধারণ হওয়ার আগে হাউজে কাউসারে সমবেত হওয়ার বিষয়টি চলে আসবে।
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর শাফাআত
কেয়ামতের পর জান্নাত-কে ঈমানদারদের নিকটে নিয়ে
আসা হবে। তারা তাতে প্রবেশ করার জন্য অস্থির হয়ে যাবে। অপরদিকে আল্লাহ রাব্বুল
আলামীন বিচার, হিসাব নিকাশে দেরী করবেন। তখন মানুষেরা নবী ও রাসূলদের কাছে যাবে আল্লাহর
কাছে শুপারিশ করার জন্য। তখন প্রত্যেক নবীই বলবে, আমি আমার জন্য চিন্তিত
তোমরা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে যাও।
জান্নাত ঈমানদারদের নিকটবর্তী করা সম্পর্কে
আল্লাহ তাআলা বলেন:
وَأُزْلِفَتِ
الْجَنَّةُ لِلْمُتَّقِينَ غَيْرَ بَعِيدٍ
আর জান্নাতকে মুত্তাকীদের অদূরে কাছেই আনা হবে। (সূরা কাফ, আয়াত ৩১)
তিনি আরো বলেন:
وَإِذَا
الْجَنَّةُ أُزْلِفَتْ
আর যখন জান্নাতকে নিকটকর্তী করা হবে। (সূরা আত তাকবীর, আয়াত ১৩)
একটি দীর্ঘ হাদীসে এসেছে :
عن أبي هريرة و حذيفة رضي الله عنهما
قالا: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: يجمع الله تبارك وتعالى الناس . فيقوم
المؤمنون حتى تزلف لهم الجنة . فيأتون آدم فيقولون : يا أبانا استفتح لنا الجنة .
فيقول : وهل أخرجكم من الجنة إلا خطيئة أبيكم آدم ! لست بصاحب ذلك . اذهبوا إلى
ابني إبراهيم خليل الله
আবু হুরাইরা ও হুজাইফা রা. থেকে বর্ণিত তারা বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: আল্লাহ তাআলা যখন সকল মানুষকে একত্র করবেন তখন
ঈমানদারগণ দাঁড়িয়ে যাবে জান্নাতে প্রবেশ করার জন্য। তারা আদম আলাইহিস সালাম এর
কাছে এসে বলবে, হে আমাদের পিতা! আমাদের জন্য জান্নাত খুলে দেয়ার জন্য আবেদন করুন। আদম আলাইহিস
সালাম উত্তরে বলবেন, তোমরা কি জান না, তোমাদের পিতা আদমের ভুলের
কারণে তোমাদের জান্নাত থেকে বের করে দেয়া হয়েছে? আমার আবেদন করার অধিকার
নেই। বরং তোমরা ইবারহীম খলীলুল্লাহর কাছে যাও. . . .। (বর্ণনায়: মুসলিম)
হাদীসে এ বিষয়ে বিস্তারিত এভাবে এসেছে:
عن أبي هريرة رضي الله عنه قال: أتي رسول الله صلى الله عليه وسلم بلحم ، فرفع إليه الذراع ،
وكانت تعجبه ، فنهس منها نهسة ثم قال : ( أنا سيد الناس يوم القيامة ، وهل تدرون مم
ذلك ؟ يجمع الله الناس الأولين والآخرين في صعيد واحد ، يسمعهم الداعي وينفذهم
البصر ، وتدنو الشمس ، فيبلغ الناس من الغم والكرب ما لا يطيقون ولا يحتملون ،
فيقول الناس : ألا ترون ما قد بلغكم ، ألا تنظرون من يشفع لكم إلى ربكم ؟ فيقول
بعض الناس لبعض : عليكم بآدم ، فيأتون آدم عليه السلام فيقولون له : أنت أبو البشر
، خلقك الله بيده ، ونفخ فيك من روحه ، وأمر الملائكة فسجدوا لك ، اشفع لنا إلى
ربك ، ألا ترى إلى ما نحن فيه ، ألا ترى إلى ما قد بلغنا ؟ فيقول آدم : إن ربي قد
غضب اليوم غضبا لم يغضب قبله مثله ، ولن يغضب بعده مثله ، وإنه نهاني عن الشجرة
فعصيته ، نفسي نفسي نفسي ، اذهبوا إلى غيري ، اذهبوا إلى نوح . فيأتون نوحا
فيقولون : يا نوح ، إنك أنت أول الرسل إلى أهل الأرض ، وقد سماك الله عبدا شكورا ،
اشفع لنا إلى ربك ، ألا ترى إلى ما نحن فيه ؟ فيقول : إن ربي عز وجل قد غضب اليوم
غضبا لم يغضب قبله مثله ، ولن يغضب بعده مثله ، وإنه قد كانت لي دعوة دعوتها على
قومي ، نفسي نفسي نفسي ، اذهبوا إلى غيري ، اذهبوا إلى إبراهيم . فيأتون إبراهيم
فيقولون : يا إبراهيم ، أنت نبي الله وخليله من أهل الأرض ، اشفع لنا إلى ربك ،
ألا ترى إلى ما نحن فيه ؟ فيقول لهم : إن ربي قد غضب اليوم غضبا لم يغضب قبله مثله
، ولن يغضب بعده مثله ، وإني قد كنت كذبت ثلاث كذبات - فذكرهن أبو حيان في الحديث
- نفسي نفسي نفسي ، اذهبوا إلى غيري ، اذهبوا إلى موسى . فيأتون موسى فيقولون : يا
موسى ، أنت رسول الله ، فضلك الله برسالته وبكلامه على الناس ، اشفع لنا إلى ربك ،
ألا ترى إلى ما نحن فيه ؟ فيقول : إن ربي قد غضب اليوم غضبا لم يغضب قبله مثله ،
ولن يغضب بعده مثله ، وإني قد قتلت نفسا لم أومر بقتلها ، نفسي نفسي نفسي ، اذهبوا
إلى غيري ، اذهبوا إلى عيسى . فيأتون عيسى فيقولون : يا عيسى ، أنت رسول الله ،
وكلمته ألقاها إلى مريم وروح منه ، وكلمت الناس في المهد صبيا ، اشفع لنا ، ألا
ترى إلى ما نحن فيه ؟ فيقول عيسى : إن ربي قد غضب اليوم غضبا لم يغضب قبله مثله قط
، ولن يغضب بعده مثله - ولم يذكر ذنبا - نفسي نفسي نفسي ، اذهبوا إلى غيري ،
اذهبوا إلى محمد صلى الله عليه وسلم . فيأتون محمدا صلى الله عليه وسلم فيقولون :
يا محمد أنت رسول الله ، وخاتم الأنبياء ، وقد غفر الله لك ما تقدم من ذنبك وما
تأخر ، اشفع لنا إلى ربك ، ألا ترى إلى ما نحن فيه ؟ فأنطلق فآتي تحت العرش ، فأقع
ساجدا لربي عز وجل ، ثم يفتح الله علي من محامده وحسن الثناء عليه شيئا لم يفتحه
على أحد قبلي ، ثم يقال : يا محمد ارفع رأسك ، سل تعطه ، واشفع تشفع ، فأرفع رأسي
فأقول : أمتي يا رب ، أمتي يا رب ، فيقال : يا محمد أدخل من أمتك من لا حساب عليهم
من الباب الأيمن من أبواب الجنة ، وهم شركاء الناس فيما سوى ذلك من الأبواب ، ثم
قال : والذي نفسي بيده ، إن ما بين المصراعين من مصاريع الجنة كما بين مكة وحمير ،
أو : كما بين مكة وبصرى )
আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে একদিন বকরীর ডানার গোশত পরিবেশন করা হল। তিনি এটা পছন্দ
করতেন। তিনি এটি দাতের কিনারা দিয়ে চিবাতে লাগলেন। তখন তিনি বললেন, কেয়ামতের
দিন আমি হব সকল মানুষের নেতা। তোমরা কি জান এটা কিভাবে হবে? কেয়ামতের দিন
আল্লাহ তাআলা আমার পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকল মানুষকে একত্র করবেন একটি প্রান্তরে। তারা সকলকে
শুনবে ও দেখবে। সূর্য মানুষের নিকটবর্তী হবে। মানুষেরা এমন দু:চিন্তা অস্থিরতায় বন্দি হবে, যা
তারা সহ্য করতে পারবে না আবার এর থেকে বাঁচতেও পারবে না। তখন মানুষেরা একে অপরকে
বলবে, দেখছো আমরা কি দুরবস্থায় পতিত হয়েছি? আমাদের জন্য আমাদের প্রতিপালকের কাছে
কে শুপারিশ করবে আমরা কি সে সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করবো না? চলো আমরা আদম আলাইহিস
সালাম এর কাছে যাই। তারা আদম আলাইহিস সালাম এর কাছে এসে বলবে, হে আদম! আপনি মানুষের পিতা। আল্লাহ আপনাকে
নিজ হাতে সৃষ্টি করেছেন। তিনি নিজে আপনার মধ্যে আত্মা ফুকে দিয়েছেন। তিনি আপনাকে
সেজদা করার জন্য ফেরেশতাদের নির্দেশ দিয়েছেন। আপনি আমাদের জন্য আমাদের
প্রতিপালকের কাছে শুপরিশ করুন। আপনি কি দেখছেন না আমরা কি দুরাবস্থায় আছি? আপনি
কি দেখছেন না আমরা কি বিপদে পতিত হয়েছি? আদম আলাইহিস সালাম বলবেন, আমার প্রতিপালক
আজ এমন রাগ করেছেন যা পূর্বে কখনো করেননি। এরপরেও এ রকম রাগ করবেন না। তিনি তো আমাকে সেই গাছের
কাছে যেতে নিষেধ করেছিলেন। কিন্তু আমি তা অমান্য করেছি। তোমরা অন্যের কাছে যাও। নূহের কাছে যাও। তারা নূহ আলাইহিস
সালাম এর কাছে এসে বলবে হে নূহ! আপনি পৃথিবীতে প্রথম রাসূল। আল্লাহ আপনাকে কৃতজ্ঞ
বান্দা বলে অভিহিত করেছেন। আপনি আমাদের জন্য শুপারিশ করুন। আপনি কি দেখছেন
না আমরা কি বিপদে পড়েছি? তিনি বলবেন, আমার প্রতিপালক আজ এমন রাগ করেছেন যা পূর্বে
কখনো করেননি। এরপরেও এ রকম রাগ করবেন না। আমি আমার জাতির বিরুদ্ধে দুআ করেছিলাম। আমি আমার চিন্তা
করছি। তোমরা ইবরাহীম আলাইহিস সালাম এর কাছে যাও। তারা ইবরাহীম আলাইহিস
সালাম এর কাছে আসবে। তারা বলবে, আপনি আল্লাহর নবী ও পৃথিবী বাসীর
মধ্যে তার খলীল (বন্ধু)। আপনি আমাদের জন্য শুপারিশ করুন। আপনি কি দেখছেন
না আমরা কি বিপদে পড়েছি? তিনি বলবেন, আমার প্রতিপালক আজ এমন রাগ করেছেন যা পূর্বে
কখনো করেননি। এরপরেও এ রকম রাগ করবেন না। আমি কিছু মিথ্যা বলেছিলাম। তাই আমি আমার চিন্তা করছি। তোমরা অন্যের
কাছে যাও। তোমরা মূছা আলাইহিস সালাম এর কাছে যাও। তারা মূছা আলাইহিস সালাম এর কাছে এসে বলবে, হে
মূছা আপনি আল্লাহ তাআলার রাসূল। আল্লাহ আপনার সাথে কথা বলে আপনাকে ধন্য করেছেন। আপনি আমাদের
জন্য শুপারিশ করুন। আপনি কি দেখছেন না আমরা কি বিপদে পড়েছি? তিনি বলবেন, আমার প্রতিপালক আজ এমন
রাগ করেছেন যা পূর্বে কখনো করেননি। এরপরেও এ রকম রাগ করবেন না। আমি একজন মানুষকে হত্যা
করেছিলাম। অথচ আমি এ ব্যাপারে আদিষ্ট ছিলাম না। এখন আমার চিন্তা আমি করছি। তোমরা ঈছা আলাইহিস সালাম
এর কাছে যাও। তারা ঈছা আলাইহিস সালাম এর কাছে এসে বলবে হে ঈছা! আপনি আল্লাহর রাসূল, আপনি দোলনাতে
থাকাকালেই মানুষের সাথে কথা বলেছেন। আপনাকে আল্লাহর বাক্য ও তার পক্ষ থেকে রূহ বলে
আখ্যায়িত করা হয়েছে। যা মারইয়ামের কাছে পাঠানো হয়েছে। আপনি আমাদের
জন্য শুপারিশ করুন। আপনি কি দেখছেন না আমরা কি বিপদে পড়েছি? তিনি বলবেন, আমার প্রতিপালক আজ এমন
রাগ করেছেন যা পূর্বে কখনো করেননি। আমার চিন্তা আমি করছি। তোমরা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে যাও। তারা আমার কাছে এসে বলবে, হে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম আপনি আল্লাহ রাসূল ও সর্বশেষ নবী। আল্লাহ তাআলা আপনার
পূর্বের ও পরের সকল পাপ ক্ষমা করেছেন। আপনি আমাদের জন্য শুপারিশ করুন। আপনি কি দেখছেন
না আমরা কি বিপদে পড়েছি? আমি চলে আসবো তখন আরশের নীচে। আর আমার প্রতিপালকের জন্য
সেজদা করবো। তখন আল্লাহ আমার জন্য তার রহমত উম্মুক্ত করবেন। আমাকের এমন প্রশংসা ও
গুণাগুণ বর্ণনার বাণী অন্তরে গেথে দিবেন যা আমার পূর্বে কাউকে দেয়া হয়নি। অত:পর আমাকে বলা
হবে, হে মুহাম্মদ! তোমার মাথা উঠাও। তুমি প্রার্থনা করো, তোমার প্রার্থনা কবুল করা
হবে। তুমি শুপারিশ করো তোমার শুপারিশ কবুল করা হবে। তখন আমি বলবো, হে
প্রতিপালক! আমার উম্মত নিয়ে আমি চিন্তিত! আমার উম্মত নিয়ে আমি চিন্তিত! আমার উম্মত
নিয়ে আমি চিন্তিত!! তখন বলা হবে, হে মুহাম্মদ! তোমার উম্মতদের জান্নাতে প্রবেশ
করাও। তবে তাদেরকে যাদের কোন হিসাব-নিকাশ হবে না। তাদের জান্নাতের ডান পাশের
দরজা দিয়ে প্রবেশ করাও। অবশ্য অন্যসব দরজা দিয়েও তারা প্রবেশ করতে পারবে। যার হাতে
মুহাম্মাদের জীব তার শপথ, জান্নাতের গেটের দু পাটের মধ্যে প্রশস্ততা হবে মক্কা ও
বসরার মধ্যে দূরত্বের সমান। (বর্ণনায় : বুখারী ও মুসলিম)
এ হাদীসটি থেকে আমরা যা শিখতে পারলাম:
এক. হাদীসে দেখা যায় নবীগণ সেদিন প্রত্যেকে নিজেদের অন্যায়গুলোর কথা মনে করবেন। আসলে নবীগণ সকল অন্যায় ও পাপাচার থেকে মুক্ত ছিলেন। তবে তারা যে পাপের কথা বলবেন তা হল আল্লাহ তাআলার প্রতি
তাদের বিনয় ও পরিপূর্ণ আত্ন-সমর্পনের প্রকাশ।
দুই. ইবারহীম আলাইহিস সালাম যে মিথ্যা বলেছিলেন এ সম্পর্কে হাদীসে এসেছে যে,
ইবারহীম আলাইহিস সালাম তিনটি মিথ্যা কথা বলেছিলেন। প্রথমটি হল, তাকে যখন মূর্তি পুজার উৎসবে যেতে বলা হল, তখন তিনি বলেছিলেন আমি
অসুস্থ। দ্বিতয়টি হল, যখন তিনি
মূর্তিগুলো ভেঙ্গে বড় মূর্তিটি রেখে দিয়েছিলেন আর লোকরা জিজ্ঞস করল এটা কে করেছে?
তখন তিনি বলেছিলেন, বড় মূর্তিটি এ কাজ করেছে। তৃতীয়টি হল, যখন তিনি নিজ স্ত্রী সারাকে নিয়ে সফর করছিলেন তখন এক অত্যাচারী
লোকের থেকে নিজেকে বাচানোর জন্য স্ত্রী সম্পর্কে বলেছিলেন, এ আমার বোন।
আসলে এগুলো ইবরাহীমের
দৃষ্টিভংগিতে মিথ্যা ছিল না। কিন্তু
কোন কোন শ্রোতার কাছে এগুলো মিথ্যার মত
মনে হয়েছে। আর এগুলো মিথ্যা হলেও
নিন্দনীয় মিথ্যা নয়। এগুলো
নন্দিত মিথ্যা। নবী ইবরাহীম আলাইহিস সালাম
কেয়ামতের সময় যে বলবেন আমি মিথ্যা বলেছি সেটা আল্লাহর কাছে চরম বিনয় ও পূর্ণ
আত্নসমর্পনের বহি:প্রকাশ হিসাবেই বলবেন। সেদিন
ভয়াবহতা এমন হবে যে, আল্লাহর নৈকট্যপ্রাপ্ত বান্দাগনও তাদের অনেক ভাল কাজকে খারাপ
বলে ধারনা করতে থাকবে।
তিন. সকল নবী ও রাসূলদের উপর আমাদের রাসূল মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম এর শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণিত হল।
চার. আল্লাহ তাআলার কাছে দুআ-প্রার্থনার সুন্নত তরিকা হল, দুআর শুরুতে তার গুণগান,
প্রশংসা ও হামদ-সানা করা। রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেই ভয়াবহ সময়েও আল্লাহ তাআলার হামদ-প্রশংসার
সুন্দর এ আদর্শটি ভুলে যাবেন না।
উম্মতে মুহাম্মাদীর হিসাব হবে সর্বপ্রথম
কেয়ামতের এ দিন আল্লাহ
রাব্বুল আলামীন নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর অনুসারী
মুসলিমদের বিশেষভাবে সম্মানিত করবেন। সকল
পূর্ববর্তী জাতিগুলোকে দাঁড় করিয়ে রেখে মুসলিম জাতির হিসাব-নিকাশ বিচার ফয়সালা করে
দিবেন। যদিও মুসলিম জাতি দুনিয়াতে
আভির্ভাবের দিক দিয়ে অন্যান্য জাতিগুলোর পরে এসেছে কিন্তু কিয়ামতের দিন তাদের
নিষ্পত্তি আগে করা হবে। এটি
উম্মতে এক বিশাল সম্মান ও পুরস্কার।
হাদীসে এসেছে :
عن أبي هريرة رضي الله عنه قال: قال
رسول الله صلى الله عليه وسلم: نحن الآخرون ونحن السابقون يوم القيامة . بيد أن كل أمة أوتيت
الكتاب من قبلنا . وأوتيناه من بعدهم . ثم هذا اليوم الذي كتبه الله علينا . هدانا
الله له . فالناس لنا فيه تبع . اليهود غدا . والنصارى بعد غد .
আবু হুরাইরা রা. থেকে
বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: আমরা
শেষে এসেছি কিন্তু কেয়ামতের দিন সকলের আগে থাকবো। যদিও অন্য সকল জাতিগুলো (ইহুদী ও খৃষ্টান) কে গ্রন্থ দেয়া হয়েছে আমাদের
পূর্বে, আমাদের গ্রন্থ দেয়া হয়েছে তাদের পরে। অত:পর জেনে রাখো এই (জুমার) দিনটি আল্লাহ আমাদের দান করেছেন। তিনি এ ব্যাপারে আমাদের সঠিক পথে দিশা দিয়েছেন। আর অন্য লোকেরা এ ব্যাপারে আমাদের পিছনে আছে। ইহুদীরা জুমার পরের দিন (শনিবার) উদযাপন করে আর
খৃষ্টানেরা তার পরের দিন (রবিবার) উদযাপন করে। (বর্ণনায়: বুখারী ও মুসলিম)
এ হাদীসটি থেকে আমরা যা শিখতে পারলাম:
এক. মুসলিম জাতির মর্যাদা। ইহুদী
ও খৃষ্টানদের চেয়ে মুসলমানদের মর্যাদা আল্লাহর কাছে অনেক বেশী। ইসলামের বর্তমানে ইহুদী খৃষ্টানেরা তো কাফের বা
অবিশ্বাসী। তাদের চেয়ে মুসলিম উম্মাহ
শ্রেষ্ঠ এতে কোন সন্দেহ নেই। আর
ইসলামপূর্ব যুগের ইহুদী খৃষ্টানেরা যারা কাফের ছিল না, তাদের চেয়েও মুসলিম উম্মাহ
শ্রেষ্ঠ। এটি এ হাদীস দিয়েও প্রমাণিত
হল।
দুই. জুমার দিনের ফজিলত জানা গেল। মুলত
হাদীসটি জুমার দিনে ফজিলত সম্পর্কিত। উদ্দেশ্য
হল সাপ্তাহিক প্রার্থনার দিন নির্বাচনে ইহুদী ও খৃষ্টানেরা যেমন আমাদের পিছনে পড়ে
গেছে তেমনি কেয়ামত দিবসেও তারা আমাদের পিছনে থাকবে। ইহুদীরা শুক্রবারের পরের দিন সাপ্তাহিক প্রার্থনা করে থাকে। আর খৃষ্টানের শুক্রবারের দুদিন পর সাপ্তাহিক প্রার্থনা
পালন করে থাকে।
আবু হুরাইরা ও হুযাইফা রা.
থেকে আরেকটি বর্ণনায় এসেছে :
أن النبي صلى الله عليه وسلم قال: نحن الآخرون من أهل الدنيا والأولون يوم القيامة المقضي لهم
قبل الخلائق .
নবী করীম সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: পৃথিবীতে বসবাসকারী জাতিগুলোর মধ্যে আমাদের আগমন
সর্বশেষে আর কেয়ামতের দিনে আমাদের ফয়সালা করা হবে সকল সৃষ্টি জীবের পূর্বে।
(বর্ণনায়: মুসলিম)
হাদীসে আরো এসেছে :
عن ابن عباس رضي الله عنهما أن النبي
صلى الله عليه وسلم قال: نحن آخر الأمم وأول من يحاسب يقال أين الأمة الأمية ونبيها
فنحن الآخرون الأولون.
ইবনে আব্বাস রা. থেকে
বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: আমরা হলাম জাতিসমূহের
সর্বশেষ। কিন্তু কেয়ামতে আমাদের
হিসাব সর্ব প্রথম করা হবে। তখন
বলা হবে: উম্মী (আসল) জাতি ও তাদের নবী কোথায়? তাই আমরা সর্বশেষ অথচ (মর্যাদায়)
প্রথম। (বর্ণনায় : ইবনে মাজা, আল-বানী রহ. সহীহ আল জামে গ্রন্থে হাদীসটি-কে সহীহ বলে
উল্লেখ করেছেন)
হিসাব-নিকাশের প্রকৃতি
আল্লাহ আহকামুল হাকেমীন
সেদিন কম-বেশী, ছোট-বড় সকল কাজ-কর্ম, কথা ও বিশ্বাস সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবেন।
আল্লাহ তাআলা বলেন:
اقْتَرَبَ
لِلنَّاسِ حِسَابُهُمْ وَهُمْ فِي غَفْلَةٍ مُعْرِضُونَ (سورة الأنبياء : 1)
মানুষের হিসাব-নিকাশের সময় আসন্ন, অথচ তারা উদাসীনতায় মুখ ফিরিয়ে রয়েছে। (সূরা আল-আম্বিয়া, আয়াত: ১)
আল্লাহ তাআলা বলেন:
إِنَّ
إِلَيْنَا إِيَابَهُمْ ﴿25﴾ ثُمَّ إِنَّ عَلَيْنَا حِسَابَهُمْ ﴿26﴾ (سورة
الغاشية)
নিশ্চয় আমারই নিকট তাদের প্রত্যাবর্তন। তারপর নিশ্চয় তাদের হিসাব-নিকাশ আমারই দায়িত্বে। (সূরা আল গাশিয়া, আয়াত ২৫-২৬)
আল্লাহ তাআলা বলেন:
فَلَنَسْأَلَنَّ
الَّذِينَ أُرْسِلَ إِلَيْهِمْ وَلَنَسْأَلَنَّ الْمُرْسَلِينَ ﴿6﴾ فَلَنَقُصَّنَّ
عَلَيْهِمْ بِعِلْمٍ وَمَا كُنَّا غَائِبِينَ ﴿7﴾ (سورة الأعراف)
সুতরাং আমি অবশ্যই তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ
করব যাদের নিকট রাসূল প্রেরিত হয়েছিল এবং অবশ্যই আমি রাসূলদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করব। অতঃপর অবশ্যই আমি তাদের নিকট জেনে- শুনে বর্ণনা করব। আর আমি তো অনুপস্থিত ছিলাম না। (সূরা আল আরাফ, আয়াত
৬-৭)
وُجُوهٌ
يَوْمَئِذٍ نَاضِرَةٌ ﴿22﴾ إِلَى رَبِّهَا نَاظِرَةٌ ﴿23﴾ وَوُجُوهٌ يَوْمَئِذٍ
بَاسِرَةٌ ﴿24﴾ تَظُنُّ أَنْ يُفْعَلَ بِهَا فَاقِرَةٌ ﴿25﴾ (سورة القيامة)
সেদিন কতক মুখমণ্ডল হবে হাস্যোজ্জল। তাদের রবের প্রতি দৃষ্টিনিক্ষেপকারী। আর সেদিন অনেক মুখমণ্ডল হবে বিবর্ণ-বিষন্ন। তারা ধারণা করবে যে, এক বিপর্যয় তাদের উপর আপতিত করা হবে। (সূরা
আল কিয়ামাহ, আয়াত
২২-২৫)
অনুসারীরা নেতাদের প্রত্যাখ্যান করবে
দুনিয়াতে যে সকল মানুষ আল্লাহকে বাদ অন্যের ইবাদত
বন্দেগী করেছে কেয়ামতের দিন তারা তাদের অনুসারীদের প্রত্যাখ্যান করবে। এমনিভাবে
আল্লাহর বিধি-বিধান না মেনে যে সকল নেতাদের নির্দেশ পালন করা হয়েছে তারাও সেদিন
তাদের প্রত্যাখ্যান করবে।
আল্লাহ তাআলা বলেন:
وَاتَّخَذُوا
مِنْ دُونِ اللَّهِ آَلِهَةً لِيَكُونُوا لَهُمْ عِزًّا ﴿81﴾ كَلَّا سَيَكْفُرُونَ
بِعِبَادَتِهِمْ وَيَكُونُونَ عَلَيْهِمْ ضِدًّا ﴿82﴾ (سورة مريم)
আর তারা আল্লাহ ছাড়া বহু
ইলাহ গ্রহণ
করেছে, যাতে
ওরা তাদের সাহায্যকারী হতে পারে। কখনো
নয়, এরা তাদের
ইবাদাতের কথা অস্বীকার করবে
এবং তাদের বিপক্ষ হয়ে যাবে। (সূরা
মারইয়া, আয়াত
৮১-৮২)
وَيَوْمَ
نَحْشُرُهُمْ جَمِيعًا ثُمَّ نَقُولُ لِلَّذِينَ أَشْرَكُوا مَكَانَكُمْ أَنْتُمْ
وَشُرَكَاؤُكُمْ فَزَيَّلْنَا بَيْنَهُمْ وَقَالَ شُرَكَاؤُهُمْ مَا كُنْتُمْ
إِيَّانَا تَعْبُدُونَ (سورة
يونس)
আর যেদিন আমি তাদের সকলকে একত্র
করব, অতঃপর যারা শির্ক করেছে, তাদেরকে বলব, থাম, তোমরা ও তোমাদের শরীকরা। অতঃপর
আমি তাদের মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটাব। আর তাদের
শরীকরা বলবে, তোমরা
তো আমাদের ইবাদাত করতে না। (সূরা
ইউনূস, আয়াত
২৮)
إِذْ
تَبَرَّأَ الَّذِينَ اتُّبِعُوا مِنَ الَّذِينَ اتَّبَعُوا وَرَأَوُا الْعَذَابَ
وَتَقَطَّعَتْ بِهِمُ الْأَسْبَابُ ﴿166﴾ وَقَالَ الَّذِينَ اتَّبَعُوا لَوْ أَنَّ
لَنَا كَرَّةً فَنَتَبَرَّأَ مِنْهُمْ كَمَا تَبَرَّءُوا مِنَّا كَذَلِكَ
يُرِيهِمُ اللَّهُ أَعْمَالَهُمْ حَسَرَاتٍ عَلَيْهِمْ وَمَا هُمْ بِخَارِجِينَ
مِنَ النَّارِ ﴿167﴾ (سورة البقرة)
যখন অনুসরনীয় ব্যক্তিরা অনুসারীদের
থেকে আলাদা হয়ে যাবে এবং তারা আযাব দেখতে পাবে। আর তাদের সব সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যাবে। আর যারা
অনুসরণ করেছে, তারা
বলবে, যদি আমাদের
ফিরে যাওয়ার সুযোগ হত, তাহলে
আমরা তাদের থেকে আলাদা হয়ে যেতাম, যেভাবে তারা আলাদা হয়ে গিয়েছে। এভাবে
আল্লাহ তাদেরকে তাদের আমলসমূহ দেখাবেন তাদের আক্ষেপের জন্য, আর তারা আগুন থেকে বের
হতে পারবে না। (সূরা আল বাকারা, আয়াত ১৬৬-১৬৭)
وَلَوْ
تَرَى إِذِ الظَّالِمُونَ مَوْقُوفُونَ عِنْدَ رَبِّهِمْ يَرْجِعُ بَعْضُهُمْ
إِلَى بَعْضٍ الْقَوْلَ يَقُولُ الَّذِينَ اسْتُضْعِفُوا لِلَّذِينَ اسْتَكْبَرُوا
لَوْلَا أَنْتُمْ لَكُنَّا مُؤْمِنِينَ ﴿31﴾ قَالَ الَّذِينَ اسْتَكْبَرُوا
لِلَّذِينَ اسْتُضْعِفُوا أَنَحْنُ صَدَدْنَاكُمْ عَنِ الْهُدَى بَعْدَ إِذْ
جَاءَكُمْ بَلْ كُنْتُمْ مُجْرِمِينَ ﴿32﴾ وَقَالَ الَّذِينَ اسْتُضْعِفُوا
لِلَّذِينَ اسْتَكْبَرُوا بَلْ مَكْرُ اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ إِذْ تَأْمُرُونَنَا
أَنْ نَكْفُرَ بِاللَّهِ وَنَجْعَلَ لَهُ أَنْدَادًا وَأَسَرُّوا النَّدَامَةَ
لَمَّا رَأَوُا الْعَذَابَ وَجَعَلْنَا الْأَغْلَالَ فِي أَعْنَاقِ الَّذِينَ
كَفَرُوا هَلْ يُجْزَوْنَ إِلَّا مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ ﴿33﴾ (سورة سبأ)
আর তুমি যদি দেখতে যালিমদেরকে, যখন তাদের রবের কাছে দাঁড় করিয়ে দেয়া হবে
তখন তারা পরস্পর বাদানুবাদ করতে থাকবে। যাদেরকে
দুর্বল করে রাখা হয়েছিল তারা অহঙ্কারীদেরকে বলবে, তোমরা না থাকলে অবশ্যই আমরা মুমিন হতাম। যারা অহঙ্কারী ছিল তারা, তাদেরকে বলবে, যাদেরকে দুর্বল করে রাখা হয়েছিল, তোমাদের কাছে হেদায়েত আসার পর আমরা কি তোমাদেরকে তা থেকে বাধা
দিয়েছিলাম? বরং তোমরাই ছিলে অপরাধী। আর যাদেরকে দুর্বল করে রাখা
হয়েছিল তারা, যারা
অহঙ্কারী ছিল তাদেরকে বলবে, বরং এ ছিল তোমাদের দিন-রাতের চক্রান্ত, যখন তোমরা আমাদেরকে আদেশ দিয়েছিলে যেন আমরা আল্লাহকে অস্বীকার করি এবং তাঁর সমকক্ষ স্থির করি। আর তারা যখন আযাব দেখবে তখন তারা অনুতাপ গোপন করবে। আর আমি কাফিরদের গলায় শৃঙ্খল পরিয়ে দিব। তারা যা করত কেবল তারই প্রতিফল তাদেরকে দেয়া হবে। (সূরা সাবা, আয়াত ৩১-৩৩)
এসকল আয়াতে আমরা দেখলাম
কিভাবে অনুগত অনুসারীরা কেয়ামতের সময় পরস্পরকে প্রত্যাখ্যান করবে। যারা আল্লাহ তাআলার দীনকে বাদ দিয়ে বিভিন্ন পীর, দরবেশ,
নেতা-নেত্রী, দেব-দেবীর অননুসরণ করেছে তাদের ও যারা অনুসৃত হয়েছে তাদের অবস্থা
এমনই হবে কেয়ামতের ময়দানে। তারা
সেদিন রাজাধিরাজ আল্লাহ তাআলার সম্মুখে পরস্পরকে প্রত্যাখ্যান করবে। একে অন্যকে দোষারোপ করে ঝগড়ায় লিপ্ত হবে।
ফেরেশতাগণ মুশরিকদের থেকে দায়মুক্তির ঘোষণা দিবে
আরবের মুশরিকরা
ফেরেশতাদের-কে আল্লাহ তাআলার কন্যা বলে জ্ঞান করতো। তাই তারা ফেরেশতাদের পূজা করতো। কেয়ামতের
দিনে এ পূজ্য ফেরেশতাগণ মুশরিকদের পুজার সাথে তাদের কোন রকম সম্পর্ক ছিলো না বলে
ঘোষণা দেবে।
এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা
বলেন:
وَيَوْمَ
يَحْشُرُهُمْ جَمِيعًا ثُمَّ يَقُولُ لِلْمَلَائِكَةِ أَهَؤُلَاءِ إِيَّاكُمْ
كَانُوا يَعْبُدُونَ ﴿40﴾ قَالُوا سُبْحَانَكَ أَنْتَ وَلِيُّنَا مِنْ دُونِهِمْ
بَلْ كَانُوا يَعْبُدُونَ الْجِنَّ أَكْثَرُهُمْ بِهِمْ مُؤْمِنُونَ ﴿41﴾ (سورة
سبأ)
আর স্মরণ কর, যেদিন তিনি তাদের সকলকে সমবেত করবেন তারপর ফেরেশতাদেরকে বলবেন, এরা কি তোমাদেরই পূজা করত? তারা (ফেরেশতারা) বলবে, আপনি পবিত্র মহান, আপনিই আমাদের অভিভাবক, তারা নয়। বরং তারা জিনদের পূজা করত। এদের
অধিকাংশই তাদের প্রতি ঈমান রাখত। (সূরা
সাবা, আয়াত
৪০-৪১)
فَالْيَوْمَ
لَا يَمْلِكُ بَعْضُكُمْ لِبَعْضٍ نَفْعًا وَلَا ضَرًّا وَنَقُولُ لِلَّذِينَ
ظَلَمُوا ذُوقُوا عَذَابَ النَّارِ الَّتِي كُنْتُمْ بِهَا تُكَذِّبُونَ (سورة سبأ)
ফলে আজ তোমাদের একে অপরের কোন
উপকার কিংবা অপকার করার ক্ষমতা কেউ রাখবে না। আর আমি যালিমদের উদ্দেশ্যে বলব, তোমরা আগুনের আযাব আস্বাদন কর যা তোমরা অস্বীকার করতে। (সূরা সাবা, আয়াত ৪২)
ফেরেশতাগণ বলবেন,
ছুবহানাল্লাহ! আমরা তো আপনারই বান্দা। আমরা
আপনারই ইবাদত করি। এরা কিভাবে পূজা করলো? আসলে
তারা শয়তানের পূজা করেছে। এর
সাথে হে আল্লাহ আমাদের কোন সম্পর্ক নেই। মুল
কথা হলো: আল্লাহ ব্যতীত যাদের ইবাদত-বন্দেগী, পূজা-অর্চনা করা হয় তারা সেদিন কোন
উপকারে আসবে না। না পূজাকারী কোন উপকার পাবে
আর না পূজিত কোন কাজে আসবে। সবাই
সেদিন অসহায় হয়ে থাকবে।
মূর্তিগুলো অক্ষমতা প্রকাশ করবে
দুনিয়াতে যারা মূর্তি পুজা
করেছিল কেয়ামতে সেসকল মূর্তিগুলো তাদের পূজারীদের কোন রকম সাহায্য করতে অক্ষমতা
প্রকাশ করবে।
এ প্রসঙ্গে আল্লহ তাআলা বলেন:
وَيَوْمَ
يَقُولُ نَادُوا شُرَكَائِيَ الَّذِينَ زَعَمْتُمْ فَدَعَوْهُمْ فَلَمْ
يَسْتَجِيبُوا لَهُمْ وَجَعَلْنَا بَيْنَهُمْ مَوْبِقًا (سورة الكهف : 52)
আর যেদিন তিনি বলবেন, তোমরা
ডাক আমার শরীকদের, যাদেরকে তোমরা (শরীক) মনে করতে।
অতঃপর তারা তাদেরকে ডাকবে, কিন্তু তারা তাদের ডাকে সাড়া দেবে না। আর আমি তাদের মধ্যে রেখে দেব ধ্বংসস্থল। (সূরা আল কাহাফ, আয়াত ৫২)
আল্লাহ তাআলা আরো বলেন:
وَقِيلَ
ادْعُوا شُرَكَاءَكُمْ فَدَعَوْهُمْ فَلَمْ يَسْتَجِيبُوا لَهُمْ وَرَأَوُا
الْعَذَابَ لَوْ أَنَّهُمْ كَانُوا يَهْتَدُونَ (سورة القصص : 64)
আর বলা হবে, তোমাদের
দেবতাগুলোকে ডাক, অতঃপর তারা তাদেরকে ডাকবে, তখন তারা তাদের ডাকে সাড়া দেবে না। আর তারা আযাব দেখতে পাবে। হায়, এরা যদি সৎপথ প্রাপ্ত হত! (সূরা আল কাসাস, আয়াত ৬৪)
আল্লাহ তাআলা বলেন:
وَلَقَدْ
جِئْتُمُونَا فُرَادَى كَمَا خَلَقْنَاكُمْ أَوَّلَ مَرَّةٍ وَتَرَكْتُمْ مَا
خَوَّلْنَاكُمْ وَرَاءَ ظُهُورِكُمْ وَمَا نَرَى مَعَكُمْ شُفَعَاءَكُمُ الَّذِينَ
زَعَمْتُمْ أَنَّهُمْ فِيكُمْ شُرَكَاءُ لَقَدْ تَقَطَّعَ بَيْنَكُمْ وَضَلَّ
عَنْكُمْ مَا كُنْتُمْ تَزْعُمُونَ (سورة الأنعام : 94)
আর নিশ্চয় তোমরা এসেছ আমার
কাছে একা একা, যেরূপ সৃষ্টি করেছি আমি তোমাদেরকে প্রথমবার এবং আমি তোমাদেরকে যা
দান করেছি, তা তোমরা ছেড়ে রেখেছ তোমাদের পিঠের পেছনে। আর আমি তোমাদের সাথে তোমাদের সুপারিশকারীদের দেখছি না, যাদের তোমরা মনে করেছ
যে, নিশ্চয় তারা তোমাদের মধ্যে (আল্লাহর) অংশীদার। অবশ্যই ছিন্ন হয়ে গেছে তোমাদের পরস্পরের সম্পর্ক। আর তোমরা যা ধারণা করতে, তা তোমাদের থেকে হারিয়ে গিয়েছে। (সূরা আল আনআম, আয়াত ৯৪)
কেয়ামতের দিন
আল্লাহ তাআলা শিরককারীদের বলবেন, দুনিয়াতে
তোমরা যে সকল দেব-দেবী, মূর্তি, মানুষ, জন্তু-জানোয়ার-কে আমার সাথে শরীক করতে
তাদের থেকে আজকে সাহায্য চাও। তাদের-কে বলো
তোমাদের উদ্ধার করতে। তখন শিরককারীরা
তাদের ডাকবে, কিন্তু তারা কোন উত্তর দেবে না।
যারা ঈসা আলাইহিস
সালাম কে আল্লাহর পুত্র বলে গ্রহণ করেছে তিনি তাদের থেকে সম্পর্কচ্ছেদের ঘোষণা দিবেন-
وَإِذْ
قَالَ اللَّهُ يَا عِيسَى ابْنَ مَرْيَمَ أَأَنْتَ قُلْتَ لِلنَّاسِ اتَّخِذُونِي
وَأُمِّيَ إِلَهَيْنِ مِنْ دُونِ اللَّهِ قَالَ سُبْحَانَكَ مَا يَكُونُ لِي أَنْ
أَقُولَ مَا لَيْسَ لِي بِحَقٍّ إِنْ كُنْتُ قُلْتُهُ فَقَدْ عَلِمْتَهُ تَعْلَمُ
مَا فِي نَفْسِي وَلَا أَعْلَمُ مَا فِي نَفْسِكَ إِنَّكَ أَنْتَ عَلَّامُ
الْغُيُوبِ ﴿116﴾ مَا قُلْتُ لَهُمْ إِلَّا مَا أَمَرْتَنِي بِهِ أَنِ اعْبُدُوا
اللَّهَ رَبِّي وَرَبَّكُمْ وَكُنْتُ عَلَيْهِمْ شَهِيدًا مَا دُمْتُ فِيهِمْ
فَلَمَّا تَوَفَّيْتَنِي كُنْتَ أَنْتَ الرَّقِيبَ عَلَيْهِمْ وَأَنْتَ عَلَى
كُلِّ شَيْءٍ شَهِيدٌ ﴿117﴾ (سورة المائدة)
আর আল্লাহ যখন বলবেন, হে মারইয়ামের পুত্র ঈসা, তুমি কি মানুষদেরকে বলেছিলে যে, তোমরা আল্লাহ ছাড়া আমাকে ও আমার মাতাকে
ইলাহরূপে গ্রহণ কর? সে বলবে, আপনি পবিত্র মহান, যার অধিকার আমার নেই তা বলা আমার জন্য
সম্ভব নয়। যদি আমি তা বলতাম তাহলে অবশ্যই
আপনি তা জানতেন। আমার অন্তরে যা আছে তা আপনি
জানেন, আর আপনার
অন্তরে যা আছে তা আমি জানি না; নিশ্চয় আপনি গায়েবী বিষয়সমূহে সর্বজ্ঞাত। আমি তাদেরকে কেবল তাই বলেছি, যা আপনি আমাকে আদেশ করেছেন যে, তোমরা আমার রব ও তোমাদের রব আল্লাহর ইবাদাত কর। আর যতদিন আমি তাদের মধ্যে ছিলাম ততদিন আমি তাদের উপর সাক্ষী ছিলাম। অতঃপর যখন আপনি আমাকে উঠিয়ে নিলেন তখন আপনি ছিলেন তাদের পর্যবেক্ষণকারী। আর আপনি সব কিছুর উপর সাক্ষী। (সূরা আল মায়েদা, আয়াত
১১৬-১১৭)
ঈসা আলাইহিস সালাম
কেয়ামতের দিন বলবেন, হে আল্লাহ! আমি কিভাবে বলি, আমি আপনার পুত্র আর আমার মাতা
মরিয়ম আপনার স্ত্রী। এটা বলার অধিকার
আমাকে কে দিয়েছে? আপনি তো জানেন আপনি যা আদেশ করেছেন আমি শুধু সেটাই বলেছি। আমি তাদের বলেছি আল্লাহ তাআলা হলেন, আমার ও তোমাদের প্রভূ। তোমরা তারই ইবাদত করো। আর এটাই সঠিক পথ। যতদিন আমি তাদের
মধ্যে ছিলাম ততদিন আপনি দেখেছে আমি কি বলেছি তাদের। যখন আপনি আমাকে নিয়ে আসলেন তখন থেকে তারা যা কিছু করেছে ও বলেছে সে সম্পর্কে
আমার কোন দায়িত্ব নেই।
ভাবার বিষয় হল,
মারইয়াম আলাইহিস সালাম ও ঈসা আলাইহিস সালাম এর কত মর্যাদা আল্লাহ তাআলা দিয়েছেন। যারা তাদের সম্মানে বাড়াবাড়ি করে আল্লাহর সাথে তাদের শরীক
বানালো আল্লাহ তাদের শাস্তি দিবেন। কারণ তারা
আল্লাহর প্রতি মিথ্যা আরোপ করেছে। আল্লাহ যা বলেননি
ধর্মের ব্যাপারে তারা তা বলেছে। তাই তারা
মিথ্যাবাদী। এ জন্য আল্লাহ তাআলা বলবেন:
قَالَ
اللَّهُ هَذَا يَوْمُ يَنْفَعُ الصَّادِقِينَ صِدْقُهُمْ لَهُمْ جَنَّاتٌ تَجْرِي
مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا أَبَدًا رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمْ
وَرَضُوا عَنْهُ ذَلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ (سورة المائدة: 119)
আল্লাহ বলবেন, এটা হল সেই দিন যেদিন সত্যবাদীগণকে তাদের
সততা উপকার করবে। তাদের জন্য আছে জান্নাতসমূহ
যার নীচে প্রবাহিত হবে নদীসমূহ। সেখানে
তারা হবে স্থায়ী। আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট
হয়েছেন, তারাও
তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছে। এটা মহাসাফল্য। (সূরা
আল মায়েদা, আয়াত
১১৯)
আল্লাহ তার প্রিয় বান্দা
ঈসা আলাইহিস সালাম এর বক্তব্য সমর্থ করে এ কথাটি বলবেন।
উম্মতে মুহাম্মদী কেয়ামতের দিন অন্য সকল জাতির বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিবে
এটা মুসলিম উম্মাহর জন্য এক বিশেষ মর্যাদা। কেয়ামত দিবসে তারা
সকল জাতির মিথ্যাচারের বিপক্ষে সাক্ষ্য দেবে। কেয়ামতের দিন যখন সকল নবী
রাসূল ও তাদের সম্প্রদায়কে একত্র করা হবে তখন ঐ সকল জাতিরা নবী রাসূলদের আহবানের
বিষয়টি অস্বীকার করবে। তারা বলবে আমাদের কাছে নূহ আলাইহিস সালাম দাওয়াত
পৌছে দেয়নি। আবার কেহ বলবে আপনি আমাদের কাছে হুদ, সালেহ, শুআইব কে পাঠিয়েছিলেন হয়ত কিন্তু
তারা আমাদের কাছে আপনার বাণী পৌছে দেয়নি। এভাবে তারা তাদের নবী রাসূলদের মিথ্যা প্রতিপন্ন
করবে নিজেদের বাঁচার তাগিদে। তখন উম্মতে মুহাম্মাদী সকল নবীদের পক্ষে আর তাদের
মিথ্যাবাদী উম্মতদের বিপক্ষে স্বাক্ষী দিবে।
হাদীসে এসেছে-
عن أبي سعيد الخدري رضي الله عنه قال:
قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: يجاء بنوح يوم القيامة ، فيقال له : هل بلغت ؟
فيقول : نعم يا رب ، فتسأل أمته : هل بلغكم ، فيقولون : ما جاءنا من نذير ، فيقول
: من شهودك ، فيقول : محمد وأمته ، فيجاء بكم فتشهدون ، ثم قرأ رسول الله صلى الله
عليه وسلم : { وكذلك جعلناكم أمة وسطا - قال : عدلا - لتكونوا شهداء على الناس
ويكون الرسول عليكم شهيدا }. رواه البخاري.
আবু সায়ীদ খুদরী রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: কেয়ামতের দিন নূহ কে ডাকা
হবে। তাকে প্রশ্ন করা হবে, তুমি কি তোমার দায়িত্ব পালন করেছো? সে বলবে, হ্যাঁ, হে
প্রভূ। এরপর তার জাতিকে প্রশ্ন করা হবে, সে কি তোমাদের কাছে আমার বাণী পৌছে দিয়েছে?
তখন তারা বলবেম না, আমাদের কাছে কোন সতর্ককারী আসেনি। তখন আল্লাহ নূহকে বলবেন,
তোমার স্বাক্ষী কারা? সে উত্তর দেবে, মুহাম্মদ ও তার উম্মত। তখন তোমাদের ডাকা হবে আর
তোমরা তার পক্ষে সাক্ষ্য দেবে। এ কথা বলার পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম এ আয়াতটি পাঠ করলেন : আর এমনি ভাবে তোমাদের আমি মধ্যবর্তী (ন্যায়
পরায়ণ) জাতি হিসাবে সৃষ্টি করেছি। যাতে তোমরা মানুষের উপর স্বাক্ষী হতে পারো আর
রাসূল তোমাদের উপর স্বাক্ষী হবেন। (বর্ণনায়: বুখারী)
আর আবু সায়ীদ খুদরী রা. থেকে আরেকটি বর্ণনায়
এসেছে,
قال رسول الله صلى الله
عليه وسلم: يجيء النبي يوم القيامة ومعه الرجل ، والنبي ومعه الرجلان ،
والنبي ومعه الثلاثة ، وأكثر من ذلك ، فيقال له : هل بلغت قومك ؟ فيقول : نعم ،
فيدعى قومه ، فيقال لهم : هل بلغكم هذا ؟ فيقولون : لا ، فيقال له : من يشهد لك ؟
فيقول : محمد وأمته ، فيدعى محمد وأمته فيقال لهم : هل بلغ هذا قومه؟ فيقولون :
نعم ، فيقال : وما علمكم بذلك ؟ فيقولون : جاءنا نبينا ، فأخبرنا أن الرسل قد
بلغوا فصدقناه ، فذلك قوله : { وكذلك جعلناكم أمة وسطا لتكونوا شهداء على الناس
ويكون الرسول عليكم شهيدا }
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
কেয়ামতের দিন নবীদের ডাকা হবে। কারো সাথে একজন অনুসারী থাকবে কারো সাথে থাকবে
দুজন আবার কারো সাথে থাকবে তিন জন বা এর বেশী। তাদের জাতিকে ডাকা হবে। তাদের জিজ্ঞাসা
করা হবে, এ ব্যক্তি কি তোমাদের কাছে আমার বাণী পৌছে দিয়েছিল? তারা উত্তর দেবে, না,
আমাদের কাছে আপনার বাণী পৌছে দেয়নি। তখন নবীকে প্রশ্ন করা হবে তুমি কি আমার বাণী পৌছে
দিয়েছো? সে বলবে, হ্যা, দিয়েছি। তখন তাকে বলা হবে তোমার পক্ষে কে আছে স্বাক্ষী?
তখন নবী বলবেন, আমার পক্ষে স্বাক্ষী আছে মুহাম্মদ ও তার উম্মত। তখন মুহাম্মদ ও
তার অনুসারীদের ডাকা হবে। তাদের জিজ্ঞাসা করা হবে এ ব্যক্তি কি তার জাতির
কাছে আমার বানী পৌছে দিয়েছে? তখন তারা বলবে, হ্যা, সে তার জাতির কাছে আপনার বাণী
পৌছে দিয়েছে। তখন তাদের প্রশ্ন করা হবে তোমরা এটা কিভাবে জানলে? তারা উত্তর দিবে, আমাদের
কাছে আমাদের নবী এসেছিলেন, তিনি আমাদের বলেছেন, এ নবী তার জাতির কাছে আপনার বাণী
পৌছে দিয়েছে। এটা হল আল্লাহ তাআলার সেই বাণীর প্রতিফলন: আর এমনি ভাবে তোমাদের আমি মধ্যবর্তী
(ন্যায় পরায়ণ) জাতি হিসাবে সৃষ্টি করেছি। যাতে তোমরা মানুষের উপর স্বাক্ষী হতে পারো আর
রাসূল তোমাদের উপর স্বাক্ষী হবেন। (বর্ণনায়: আহমাদ, আলবানী রহ. হাদীসটিকে সহীহ
বলেছেন।)
হিসাব নিকাশ
যেভাবে শুরু
এরপর আল্লাহ তাআলা
তার বান্দাদের থেকে হিসাব নিতে শুরু করবেন। যার হিসাবে কঠোরতা করবেন সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে।
হিসাব নিকাশের
ভয়াবহতা সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন:
وَأَنْذِرْهُمْ
يَوْمَ الْحَسْرَةِ إِذْ قُضِيَ الْأَمْرُ وَهُمْ فِي غَفْلَةٍ وَهُمْ لَا
يُؤْمِنُونَ (سورة مريم: 39)
আর তাদেরকে সতর্ক করে দাও পরিতাপ
দিবস সম্পর্কে যখন সব বিষয়ের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়ে যাব, অথচ তারা রয়েছে উদাসীনতায় বিভোর এবং তারা ঈমান আনছে না। (সূরা মারইয়াম, আয়াত ৩৯)
يَوْمَ
تَجِدُ كُلُّ نَفْسٍ مَا عَمِلَتْ مِنْ خَيْرٍ مُحْضَرًا وَمَا عَمِلَتْ مِنْ
سُوءٍ تَوَدُّ لَوْ أَنَّ بَيْنَهَا وَبَيْنَهُ أَمَدًا بَعِيدًا وَيُحَذِّرُكُمُ
اللَّهُ نَفْسَهُ وَاللَّهُ رَءُوفٌ بِالْعِبَادِ (سورة آل عمران :30)
যেদিন প্রত্যেকে উপস্থিত পাবে
যে ভাল আমল সে করেছে এবং যে মন্দ আমল সে করেছে তা। তখন সে কামনা করবে, যদি মন্দ
কাজ ও তার মধ্যে বহুদূর ব্যবধান হত! আর আল্লাহ তোমাদেরকে তার নিজের ব্যাপারে সাবধান
করছেন এবং আল্লাহ বান্দাদের প্রতি অত্যন্ত স্নেহশীল। (সূরা আলে ইমরান. আয়াত ৩০
হিসাব নিকাশ শুরু সম্পর্কে
হাদীসে এসেছে
عن عبد الله بن مسعود عن النبي صلى
الله عليه وسلم أنه قال: لا تزول قدما ابن آدم يوم القيامة من عند ربه حتى يسأل عن
خمس : عن عمره فيما أفناه ، وعن شبابه فيما أبلاه ، وعن ماله من أين اكتسبه وفيما
أنفقه ، وماذا عمل فيما علم
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ থেকে
বর্ণিত যে নবী কারী, সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: পাঁচটি প্রশ্নের
সম্মুখীন হওয়ার আগে কোন মানব সন্তান কেয়ামতের দিন পা নাড়াতে পারবে না। তাকে প্রশ্ন করা হবে জীবন সম্পর্কে; সে কি কাজে আয়ু শেষ
করেছে? প্রশ্ন করা হবে তার যৌবন সম্পর্কে ; কি কাজে সে তাকে বার্ধক্যে পৌছে
দিয়েছে? প্রশ্ন করা হবে তার ধন-সম্পদ সম্পর্কে; কিভাবে সে তা আয় করেছে আর কি কাজে
তা ব্যয় করেছে? আর প্রশ্ন করা হবে সে যা জ্ঞান অর্জন করেছে সে মোতাবেক কাজ করেছে
কি না? (বর্ণনায়: তিরিমিজী, আলবানী রহ. হাদীসটিকে হাসান বলেছেন, দেখুন সহীহ আল
জামে)
এমনিভাবে আজ ভুলে যাওয়া হবে
হাদীসে এসেছে :
عن أبي هريرة قال: قالوا : يا رسول
الله ! هل نرى ربنا يوم القيامة ؟ " قال : هل تضارون في رؤية الشمس في
الظهيرة ، ليست في سحابة ؟ " قالوا : لا . قال " فهل تضارون في رؤية
القمر ليلة البدر ، ليس في سحابة ؟ " قالوا : لا . قال " فوالذي نفسي
بيده ! لا تضارون في رؤية ربكم إلا كما تضارون في رؤية أحدهما . قال فيلقى العبد
فيقول : أي فل ! ألم أكرمك ، وأسودك ، وأزوجك ، وأسخر لك الخيل والإبل ، وأذرك
ترأس وتربع ؟ فيقول : بلى . قال فيقول : أفظننت أنك ملاقي ؟ فيقول : لا . فيقول :
فإني أنساك كما نسيتني . ثم يلقى الثاني فيقول : أي فل ! ألم أكرمك ، وأسودك ،
وأزوجك ، وأسخر لك الخيل والإبل ، وأذرك ترأس وتربع ؟ فيقول : بلى . أي رب ! فيقول
: أفظننت أنك ملاقي ؟ فيقول : لا . فيقول : فإني أنساك كما نسيتني . ثم يلقى
الثالث فيقول له مثل ذلك . فيقول : يا رب ! آمنت بك وبكتابك وبرسلك وصليت وصمت
وتصدقت . ويثني بخير ما استطاع . فيقول : ههنا إذا . قال ثم يقال له : الآن نبعث
شاهدنا عليك . ويتفكر في نفسه : من ذا الذي يشهد علي ؟ فيختم على فيه . ويقال
لفخذه ولحمه وعظامه : انطقي . فتنطق فخذه ولحمه وعظامه بعمله . وذلك ليعذر من نفسه
. وذلك المنافق . وذلك الذي يسخط الله عليه " . رواه مسلم.
আবু হুরাইরা রা.
থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: সাহাবায়ে কেরাম প্রশ্ন করলেন: ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমরা কি
কেয়ামত দিবসে আমাদের প্রতিপালক আল্লাহকে দেখতে পাবো? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: আচ্ছা দুপুর বেলা যখন মেঘ না থাকে তখন সূর্যকে দেখার
জন্য কি তোমাদের ভীর করতে হয়? সাহাবায়ে কেরাম উত্তরে বললেন, না। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রশ্ন
করলেন: পূর্ণিমার রাতে যখন আকাশে মেঘ না থাকে তখন চাঁদ দেখার জন্য কি তোমাদের ভীর
করতে হয়? সাহাবায়ে কেরাম উত্তরে বললেন: না। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: যার হাতে আমার
প্রাণ তার শপথ! তোমাদের প্রতিপালককে দেখার জন্য সেদিন তোমাদের কোন কষ্ট করতে হবে
না। যেমন সূর্য ও চন্দ্র দেখার জন্য তোমাদের
কোন কষ্ট করতে হয় না। আল্লাহ এক বান্দার
সাথে সাক্ষাত দিবেন। আল্লাহ বলবেন: হে
ব্যক্তি আমি কি তোমাকে সম্মানিত করিনি? আমি কি তোমাকে নেতা বানাইনি? আমি কি তোমাকে
বিবাহ করাইনি। আমি কি তোমার জন্য বাহনের ব্যবস্থা
করিনি? সে ব্যক্তি উত্তর দেবে অবশ্যই আপনি
করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলবেন, তুমি কি আমার সাথে
সাক্ষাতের বিশ্বাস রাখতে? সে বলবে, না। আল্লাহ তখন বলবেন: আজ আমি তোমাকে ভুলে গেলাম যেমন তুমি
আমাকে ভুলে গিয়েছিলে।
এরপর দ্বিতীয় এ
ব্যক্তিকে আনা হবে। আল্লাহ বলবেন: হে ব্যক্তি আমি কি তোমাকে
সম্মানিত করিনি? আমি কি তোমাকে নেতা বানাইনি? আমি কি তোমাকে বিবাহ করাইনি। আমি কি তোমার জন্য বাহনের ব্যবস্থা করিনি? সে ব্যক্তি উত্তর দেবে অবশ্যই আপনি করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলবেন, তুমি কি আমার সাথে সাক্ষাতের বিশ্বাস
রাখতে? সে বলবে, না। আল্লাহ তখন বলবেন: আজ আমি তোমাকে ভুলে গেলাম যেমন তুমি আমাকে ভুলে গিয়েছিলে।
এরপর তৃতীয় এক
ব্যক্তিকে সাক্ষাত দিবেন। আল্লাহ তাআলা তাকে
অপর দুজনের মত করেই প্রশ্ন করবেন। সে বলবে, আমি
আপনার প্রতি বিশ্বাস রেখেছি। আপনার কিতাব,
আপনার রাসূলদের প্রতি বিশ্বাস রেখেছি। নামাজ পড়েছি, রোযা
রেখেছি, দান-সদকা করেছি। সাধ্যমত আপনার
প্রশংসা করেছি। তার উত্তর শুনে আল্লাহ বলবেন, তাই নাকি?
তাহলে এখনই তোমার বিরুদ্ধে স্বাক্ষী উপস্থিত করি। তারপর (তোমার উত্তর সম্পর্কে) তুমি ভেবে দেখবে। বলা হবে, কে আছে তার সম্পর্কে স্বাক্ষ্য দেবে? এরপর তার মুখ সীল করে দেয়া হবে। তার রান, তার গোশত, তার হাড্ডিকে বলা হবে, তোমরা কথা বলো। এরা তাদের জানা মতে তথ্য দিতে শুরু করবে। এভাবে আল্লাহ নিজে স্বাক্ষ্য দেয়ার দায় থেকে মুক্ত থাকবেন। আসলে এ ব্যক্তিটি ছিল দুনিয়ার জীবনে মুনাফিক। এ জন্য আল্লাহ তাআলা তার প্রতি ক্রুদ্ধ হবেন। (বর্ণনায় : মুসলিম)
এ হাদীসটি থেকে আমরা যা শিখতে পারলাম:
এক. কেয়ামত দিবসে
আল্লাহ তাআলাকে দর্শন করার জন্য সাহাবায়ে কেরামের প্রবল আগ্রহ। আল্লাহর সাক্ষাত লাভের আকাংখা ঈমানের একটি গুরুত্বপূর্ণ
পরিচয়।
দুই. আল্লাহকে
দেখার বিষয়টি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বাস্তব উদাহরণ দিয়ে
বুঝিয়ে দিয়েছেন। যা মুর্খ ও জ্ঞানী সকল মানুষের বোধগম্য। যখন তার একটি সৃষ্টিকে একত্রে সকল মানুষ দেখতে পারে তখন
স্রষ্টাকে যে দেখতে কারো কষ্ট হবে না তা সহজেই বুঝা যায়।
তিন. যারা আল্লাহ
তাআলার সাথে সাক্ষাতের প্রতি ঈমান রাখতো না তারাও আল্লাহর সাক্ষাত পাবে তবে সেটা
তাদের জন্য সুখকর হবে না।
চার. যারা সমাজ,
রাষ্ট্র বা প্রতিষ্ঠানের নেতা তাদের দায়িত্ব কর্তব্য সম্পর্কে বিশেষভাবে প্রশ্ন
করা হবে।
পাঁচ. মুনাফিকরা
দুনিয়ার জীবনে মুনাফিকি করে পার পেয়ে গেলেও আল্লাহ তাআলার সাক্ষাতের সময় ধরা খেয়ে
যাবে।
যার হিসাবে জওয়াব চাওয়া হবে তাকে আজাব দেয়া হবে
হাদীসে এসেছে
عن عائشة أم المؤمنين رضي الله عنها
أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: ليس أحد يحاسب يوم القيامة إلا هلك . فقلت :
يا رسول الله ، أليس قد قال الله تعالى : { فأما من أوتي كتابه بيمينه فسوف يحاسب
حسابا يسيرا } . فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم : إنما ذلك العرض ، وليس أحد
يناقش الحساب يوم القيامة إلا عذب.
উম্মুল মুমিনীন
আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম বলেছেন: কেয়ামতের দিন যার হিসাব তলব করা হবে সেই ধ্বংস হয়ে যাবে। আমি (আয়েশা) তখন বললাম, আল্লাহ তাআলা কি বলেননি : আর যার
ডান হাতে আমল নামা দেয়া হবে তার হিসাব নেয়া হবে সহজ ভাবে? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন বললেন: এখানে আমলের হিসাব প্রদর্শনের কথা বলা হয়েছে। যার হিসাবেই জওয়াব তলব করা হবে তাকে শাস্তি দেয়া হবে। (বর্ণনায়: বুখারী ও মুসলিম)
এ হাদীসটি থেকে আমরা যা শিখতে পারলাম:
এক. কিয়ামতে দিন
যার হিসাবে নিয়ে পর্যালোচনা করা হবে তার রেহাই নেই।
দুই. আমাদের মুমিনদের
মাতা আয়েশা রা. ইলম, প্রজ্ঞা, কুরআনের জ্ঞান কতখানি ছিল যে তিনি কুরআনের আয়াত দিয়ে
আল্লাহর রাসূলের কথা বিচার করতে চেয়েছন। তাই দীনি ক্ষেত্রে বড়দের সকল কথাই যাচাই বাছাই না করে মেনে নিতে হবে এ ধারনা
সঠিক নয়।
তিন. আল কুরআনে
যেখানে বলা হয়েছে যাদের ডান হাতে আমল নামা দেয়া হবে তাদের হিসাব সহজ করা হবে, এর
অর্থ হল তাদের কাছে সহজে আমল নামা পেশ করা হবে।
চার. কেয়ামতের দিন
যার হিসাব পর্যালোচনা করা হবে সে আটকে যাবে। তাই আল্লাহ তাআলার কাছে সর্বদা বিনা হিসাবে জান্নাত লাভের প্রার্থনা করা উচিত।
সেদিন আল্লাহ ও বান্দার মধ্যে কোন দোভাষী থাকবে না
সেদিন আল্লাহ
তাআলা তার বান্দার সাথে সরাসরি কথা বলবেন। কোনো মাধ্যমের প্রয়োজন হবে না।
হাদীসে এসেছে
عن عدي بن حاتم رضي الله عنه قال: قال
رسول الله صلى الله عليه وسلم: ما منكم من أحد إلا سيكلمه ربه ليس بينه وبينه
ترجمان ، فينظر أيمن منه فلا يرى إلا ما قدم من عمله ، وينظر أشأم منه فلا يرى إلا
ما قدم ، وينظر بين يديه فلا يرى إلا النار تلقاء وجهه ، فاتقوا النار ولو بشق
تمرة ) .
আদী ইবনে হাতেম
রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: তোমাদের মধ্যে
প্রতিটি ব্যক্তি সেদিন আল্লাহ তাআলার সাথে সরাসরি কথা বলবে। কোন দোভাষী বা মধ্যস্থ থাকবে না। মানুষ তখন তার ডান
দিকে তাকাবে দেখতে পাবে শুধু তাদের প্রেরিত কর্ম। আর বাম দিকে তাকাবে দেখবে শুধু নিজ কৃত কর্ম। সামনের দিকে তাকাবে দেখবে শুধু জাহান্নামের আগুন। কাজেই তোমরা আগুন থেকে সাবধান হও নিজেদের বাঁচাও যদি একটি খেজুরের টুকরা দান
করার বিনিময়েও হয়। (বর্ণনায়: বুখারী)
এ হাদীসটি থেকে আমরা যা শিখতে পারলাম:
এক. সামান্য নেক আমলেরও
অবজ্ঞা করা উচিত নয়। সুযোগ
আসা মাত্রই যে কোন নেক আমল করা উচিত। কেহ
যদি একটি খেজুরের অংশ দান করার সুযোগ পায় তাহলে তা দান করে হলেও আল্লাহ তাআলার
শাস্তি ও জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচার চেষ্টা করা উচিত।
সেদিন প্রথম যে
বিষয়টির হিসাব নেয়া হবে
সেদিন প্রথম যে
বিষয়টির হিসাব নেয়া হবে তা হল, নামাজ। যদি এটি শুদ্ধভাবে
কবুল হয় তবে তার সকল আমল শুদ্ধ বলে ধরা হবে। আর যদি এট বরবাদ হয়ে যায় তখন সকল আমলই বরবাদ হয়ে যাবে।
হাদীসে এসেছে :
আনাস ইবনে হাকীম
আদ-দবী যিনি যিয়াদ অথবা ইবনে যিয়াদের ভয়ে মদীনাতে এসেছিলেন ও আবু হুরাইরা রা. এর
সাথে সাক্ষাত করলেন, তিনি বলেন, হে যুবক! আমি কি তোমাকে একটি হাদীস শুনাবো? আমি
বললাম, অবশ্যই শুনাবেন। আল্লাহ আপনার
প্রতি রহম করুন! তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন
:
إن أول ما يحاسب الناس به يوم القيامة
من أعمالهم الصلاة قال يقول ربنا جل وعز لملائكته وهو أعلم انظروا في صلاة عبدي
أتمها أم نقصها فإن كانت تامة كتبت له تامة وإن كان انتقص منها شيئا قال انظروا هل
لعبدي من تطوع فإن كان له تطوع قال أتموا لعبدي فريضته من تطوعه ثم تؤخذ الأعمال
على ذاكم . رواه أحمد وأبو داود.
মানুষের আমলের
মধ্যে প্রথম যে বিষয়টির হিসাব নেয়া হবে তাহল, নামাজ। আমাদের প্রতিপালক আল্লাহ তাআলা নিজে ভালমত জানা সত্বেও তার ফেরেশতাদের বলবেন:
আমার এ বান্দার নামাজের প্রতি তাকাও। সে নামাজ পূর্ণ
করেছে তা ত্রুটি করেছে? যদি সে তা পূর্ণ করে থাকে তার ব্যাপারে পূর্ণতা লেখে দাও। আর যদি সে ত্রুটি করে থাকে তাহলে তার নফল নামাজের প্রতি
খেয়াল করো। তার নফল থেকে ফরজের অপূর্ণতা পূর্ণ করে
দাও। এরপর তার সকল আমলই এভাবে মুল্যায়ন করা হবে। (বর্ণনায়: আহমাদ, আবু দাউদ। আলবানী রহ. হাদীসটিকে
সহীহ বলেছেন।)
সহজ হিসাব
অনেক ঈমানদার মানুষ যারা পাপাচারে লিপ্ত হয়েছিল
আল্লাহ তাদের পাপগুলো স্মরণ করিয়ে দিবেন ও ক্ষমা করে জান্নাত দান করবেন।
হাদীসে এসেছে
عن عبد الله بن عمر رضي الله عنهما
قال: سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول : إن الله يدني المؤمن، فيضع عليه
كنفه ويستره، فيقول : أتعرف ذنب كذا : أتعرف ذنب كذا ؟ فيقول : نعم أي رب ، حتى
إذا قرره بذنوبه ، ورأى في نفسه أنه هلك ، قال : سترتها عليك في الدنيا ، وأنا
أغفرها لك اليوم ، فيعطى كتاب حسناته . وأما الكفار والمنافقون فينادي بهم على رؤس
الخلائق ، فيقول الأشهاد : { هؤلاء الذين كذبوا على ربهم ألا لعنة الله على
الظالمين } . رواه البخاري ومسلم.
আব্দুল্লাহ ইবনে উমার রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন,
আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন: আল্লাহ
ঈমানদারদের কাছাকাছি হবেন। নিজের উপর একটা পর্দা রেখে দিবেন। আর তাকে বলবেন,
তুমি কি সেই পাপটি সম্পর্কে জানো? সেই পাপটির কথা কি তোমার মনে আছে? সে উত্তরে
বলবে, হ্যা, প্রভূ। এভাবে সে সকল পাপের কথা স্বীকার করবে। আর ধারনা করবে আমি ধ্বংস হয়ে গেছি। আল্লাহ তাআলা
তখন তাকে বলবেন, আমি দুনিয়াতে তোমার পাপগুলো গোপন রেখেছি আর আজ তা ক্ষমা করে দিলাম। এ কথা বলে তার
নেক আমলের দফতর তাকে দেয়া হবে। আর যারা কাফের বা মুনাফিক সকলের সামনে তাদের ডাকা
হবে। ফেরেশতারা বলবে, এরাইতো তাদের প্রতিপালক সম্পর্কে মিথ্যা বলেছে। জালিমদের উপর
আল্লাহর অভিসম্পাত। (বর্ণনায়: বুখারী ও মুসলিম)
কেয়ামতের ভয়াবহতায় আরো গতি সঞ্চয় করবে আল্লাহ
তাআলার ক্রোধ। যেমন আমরা উপরের হাদীসগুলোতে দেখলাম। শাফাআত সম্পর্কিত হাদীসে দেখলাম সকল নবীই বলবেন,
আজ আমার প্রভূ আমার প্রতি অত্যন্ত ক্রোধান্বিত হয়েছেন। আমাদের সকলের কর্তব্য হবে
আল্লাহ তাআলার ক্রোধ থেকে তাঁর কাছেই আশ্রয় প্রার্থনা করা।
প্রথম যে বিষয়ে ফয়সালা হবে
হাদীসে এসেছে
عن عبد الله بن مسعود رضي الله عن
قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: أول ما يقضى بين الناس يوم القيامة ، في
الدماء. رواه البخاري ومسلم.
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি
বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: কেয়ামতের দিন প্রথম যে
বিষয়ে মানুষের মধ্যে ফয়সালা করা হবে তা হবে রক্তপাতের বিচার। (বুখারী ও মুসলিম)
বিশেষ জ্ঞাতব্য : একটি হাদীসে বলা হল, প্রথম
ফয়সালা হবে নামাজ সম্পর্কে। এ হাদীসে বলা হল, প্রথম ফয়সালা হবে রক্তপাত ও
হত্যার।
এ দু হাদীসের মধ্যে কোন বৈপরিত্য নেই। প্রথম হাদীসে
আল্লাহ তাআলার হক বা অধিকার সম্পর্কে বলা হয়েছে। অর্থাৎ আল্লাহ তাআলার হক
বা অধিকার বিষয়ে প্রথম হিসাব হবে নামাজের। আর মানুষের অধিকার ক্ষুন্নের বিষয়ে প্রথম বিচার
হবে রক্তপাত ঘটানো ও হত্যাকান্ডের।
মানুষের অধিকার হরনের প্রতিকার
পৃথিবীতে বসে এক জন মানুষ অন্যজনের প্রতি যে
জুলুম, অত্যাচার, নিপীড়ন করেছে, অধিকার ক্ষুন্ন করেছে, সম্পদ ও সম্মানের উপর যে
আঘাত করেছে তার বিচার হবে কেয়ামতের দিন। এ বিচারের ধরণ সম্পর্কে হাদীসে এসেছে -
عن أبي هريرة رضي الله عنه قال: قال
رسول الله صلى الله عليه وسلم: من كانت له مظلمة لأحد من عرضه أو شيء فليتحلله منه
اليوم ، قبل أن لا يكون دينار ولا درهم ، إن كان له عمل صالح أخذ منه بقدر مظلمته
، وإن لم تكن له حسنات أخذ من سيئات صاحبه فحمل عليه. رواه البخاري.
আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের প্রতি
কোন অন্যায় করেছে, অথবা তার সম্মানহানী করেছে কিংবা অন্যকোনভাবে তার ক্ষতি করেছে
সে যেন যেদিন কোন টাকা-পয়সা কাজে আসবে না সে দিন আসার পূর্বে আজই (দুনিয়াতে
থাকাবস্থায়) তার প্রতিকার করে নেয়। কেয়ামতের বিচারে অন্যায়কারীর কোন নেক আমল থাকলে
তা থেকে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তির পাওনা আদায় করা হবে। আর যদি অন্যায়কারীর নেক
আমল না থাকে তাহলে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তির পাপগুলো তার উপর চাপিয়ে দেয়া হবে। (বুখারী)
হাদীসে আরো এসেছে -
عن أبي هريرة رضي الله عنه أن رسول
الله صلى الله عليه وسلم قال: أتدرون ما المفلس ؟ قالوا : المفلس فينا من لا درهم
له ولا متاع . فقال : إن المفلس من أمتي ، يأتي يوم القيامة بصلاة وصيام وزكاة ،
ويأتي قد شتم هذا ، وقذف هذا ، وأكل مال هذا ، وسفك دم هذا ، وضرب هذا . فيعطى هذا
من حسناته وهذا من حسناته . فإن فنيت حسناته ، قبل أن يقضى ما عليه ، أخذ من
خطاياهم فطرحت عليه . ثم طرح في النار. رواه مسلم.
আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: তোমরা কি জান দরিদ্র অসহায় ব্যক্তি কে? সাহাবায়ে কেরাম
বললেন, আমাদের মধ্যে দরিদ্র অসহায় ব্যক্তিতো সে যার কোন টাকা পয়সা বা সম্পদ নেই। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: আমার উম্মতের মধ্যে সত্যিকার দরিদ্র অসহায় হলো সেই
ব্যক্তি যে কেয়ামতের দিন সালাত, সিয়াম ও যাকাতসহ অনেক ভাল কাজ নিয়ে উপস্থিত হবে,
অথচ দুনিয়াতে বসে সে কাউকে গালি দিয়েছিল, কারো প্রতি অপবাদ দিয়েছিল, করো সম্পদ
আত্নসাত করেছিল, কারো রক্তপাত ঘটিয়েছিল, কাউকে মারধোর করেছিল ফলে তার নেক আমলগুলো
থেকে নিয়ে তার দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের পাওনা আদায় করা হবে। এভাবে যখন তার
নেক আমলগুলো শেষ হয়ে যাবে ক্ষতিগ্রস্তদের দেয়ার জন্য আর কিছু থাকবে না তখন তাদের
পাপগুলো তাকে দেয়া হবে ফলে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে। (মুসলিম)
এ হাদীস দুটো থেকে আমরা যা শিখতে পারলাম:
এক. গুনাহ, পাপ বা অপরাধ দু
প্রকার। প্রথম প্রকার হল যা দ্বারা
আল্লাহ তাআলার অধিকার বা হক ক্ষুন্ন হয়, যেমন শিরক করা, নামাজ পরিত্যাগ করা, হজ
আদায় না করা ইত্যাদি। আর
দ্বিতীয় প্রকার হল যা দ্বারা মানবাধিকার বা হুকুকুল ইবাদ ক্ষুন্ন হয়। যেমন করো সম্পদ দখল করা, গালি দেয়া, মারধোর করা ইত্যাদি। প্রথম প্রকারের পাপগুলো ক্ষমা করা আল্লাহর দায়িত্বে থাকে। আল্লাহ তাআলা ইচ্ছা করলে এগুলো ক্ষমা করে দিতে পারেন। আর দ্বিতীয় প্রকার পাপগুলো আল্লাহ তাআলা ক্ষমা করবেন না। যতক্ষণ না ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি ক্ষমা না করে।
দুই. দুনিয়াতে বসে মৃত্যুর
পূর্বেই ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের ক্ষতিপূরণ আদায় করতে হবে। বা তার কাছ থেকে দাবী ছাড়িয়ে নিতে হবে।
তিন. যার মাধ্যমে ব্যক্তি
ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তার নেক আমল বা সৎকর্ম থেকে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের পাওনা
পরিশোধ করা হবে। এমনি পাওনা পরিশোধ করতে
করতে যদি নেক আমলগুলো শেষ হয়ে যায় তাহলে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তির পাপগুলো তার উপর
চাপিয়ে দিয়ে তার পাওনা পরিশোধ করা হবে।
চার. আলোচিত ব্যক্তি আসলে
ধনীই ছিল। তার অনেক নেক আমল ছিল। কিন্তু এগুলো এমনভাবে আর এমন সময়ে নি:শেষ হয়ে গেল যে,
তা অর্জন করার আর কোন পথই থাকলো না। এ
জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ ব্যক্তিকে সত্যিকার অসহায়
বলেছেন। কারণ দুনিয়াতে কেহ নি:স্ব
হয়ে গেলে সে আবার পরিশ্রম করে সম্পদ অর্জন করতে পারে। কিন্তু বিচার দিবসে কেহ নি:স্ব হয়ে গেলে তার সামনে আর সম্পদ অর্জনের সুযোগ
থাকে না।
পাঁচ. রাসূলুল্লা সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর এ হাদীস আমাদেরকে মানুষের অধিকার রক্ষার ব্যাপারে যত্নবান
হতে নির্দেশ দেয়। মানুষের সম্মান, সম্পদ,
শরীর সবকিছু আমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে। এগুলোর
কোনটি ক্ষতিগ্রস্ত করলে মানবাধিকার লংঘিত হয়।
যারা লোক দেখানোর জন্য নেক আমল করতো কেয়ামতে তাদের বিচার
হাদীসে এসেছে
عن أبي هريرة رضي
الله عنه قال: سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول: إن أول الناس يقضى يوم القيامة عليه
رجل استشهد فأتي به فعرفه نعمها فعرفها، قال فما عملت فيها، قال : قاتلت فيك حتى
استشهدت، قال: كذبت، ولكنك قاتلت لأن يقال جريء فقد قيل، ثم أمر به فسحب على وجهه
حتى ألقى في النار. ورجل تعلم العلم وعلمه وقرأ القرآن فأتي به فعرفه نعمه فعرفها،
قال: فما عملت فيها، قال: تعلمت العلم وعلمته وقرأت فيك القرآن، قال: كذبت، ولكنك
تعلمت العلم ليقال: عالم وقرأت القرآن ليقال هو قارئ فقد قيل، ثم أمر به فسحب على
وجهه حتى ألقى في النار. ورجل وسع الله عليه وأعطاه من أصناف المال كله فأتي به
فعرفه نعمه فعرفها، قال: فما عملت فيها، قال: ما تركت من سبيل تحب أن ينفق فيها
إلا أنفقت فيها لك، قال : كذبت ولكنك فعلت ليقال هو جواد، فقد قيل، ، ثم أمر به
فسحب على وجهه حتى ألقى في النار. (
مسلم1905 )
আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে বলতে শুনেছি তিনি বলেছেন: কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম যার বিচার করা হবে, সে হচ্ছে এমন ব্যক্তি যে শহীদ হয়েছিল। তাকে হাজির করা হবে এবং আল্লাহ তার নিয়ামতের কথা তাকে বলবেন। এবং সে তার প্রতি সকল নিয়ামত চিনতে পারবে। তখন আল্লাহ তাকে বলবেন তুমি কি কাজ করে এসেছ? সে বলবে, আমি তোমার পথে যুদ্ধ করেছি, শেষ পর্যন্ত শহীদ হয়েছি। আল্লাহ বলবেন : তুমি মিথ্যা বলেছ, তুমি তো যুদ্ধ করেছ লোকে তোমাকে বীর বলবে এ উদ্দেশ্যে। আর তা বলা হয়েছে। অত:পর
নির্দেশ দেয়া হবে, এবং তাকে
টেনে উপুর করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।
তারপর এমন ব্যক্তির বিচার করা
হবে, যে নিজে
জ্ঞান অর্জন করেছে ও অন্যকে শিক্ষা দিয়েছে এবং কুরআন তেলাওয়াত করেছে। তাকে হাজির করা হবে। আল্লাহ তাকে তার নিয়ামতের কথা স্মরণ করিয়ে দিবেন। সে স্বীকার করবে। তাকে
জিজ্ঞেস করবেন কি কাজ করে এসেছ? সে বলবে আমি জ্ঞান অর্জন করেছি, অন্যকে শিখিয়েছি এবং আপনার জন্য কুরআন তেলাওয়াত করেছি। আল্লাহ বলবেন, তুমি
মিথ্যা বলেছ। তুমি জ্ঞান অর্জন করেছ এ জন্য
যে লোকে তোমাকে জ্ঞানী বলবে। কুরআন
তেলাওয়াত করেছ এ উদ্দেশ্যে যে, লোকে তোমাকে কারী বলবে। আর তা
বলা হয়েছে। এরপর নির্দেশ দেয়া হবে তাকে
উপুর করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করার জন্য।
তারপর বিচার করা হবে এমন ব্যক্তির, যাকে আল্লাহ দুনিয়াতে সকল ধরণের সম্পদ
দান করেছিলেন। তাকে হাজির করে আল্লাহ নেয়ামতের
কথা স্মরণ করিয়ে দিবেন। সে সকল
নেয়ামত স্মরণ করবে। আল্লাহ বলবেন, কি করে এসেছ? সে বলবে, আপনি যে সকল খাতে খরচ করা পছন্দ করেন আমি তার সকল খাতে সম্পদ ব্যয় করেছি, কেবল আপনারই জন্য। আল্লাহ বলবেন তুমি মিথ্যা বলেছ। তুমি সম্পদ এ উদ্দেশ্যে খরচ করেছ যে, লোকে তোমাকে দানশীল বলবে। আর তা
বলা হয়েছে। এরপর নির্দেশ দেয়া হবে, এবং তাকে উপুর করে জাহান্নামে নিক্ষেপ
করা হবে। (বর্ণনায় : মুসলিম)
হে আদম সন্তান! আমি অসুস্থ হয়েছিলাম তুমি আমার সেবা করোনি
عن أبي هريرة رضي الله عنه قال: قال
رسول الله صلى الله عليه وسلم: إن الله عز وجل يقول ، يوم القيامة : يا ابن آدم !
مرضت فلم تعدني . قال : يا رب ! كيف أعودك ؟ وأنت رب العالمين . قال : أما علمت أن
عبدي فلانا مرض فلم تعده . أما علمت أنك لو عدته لوجدتني عنده ؟ يا ابن آدم !
استطعمتك فلم تطعمني . قال : يا رب ! وكيف أطعمك ؟ وأنت رب العالمين . قال : أما
علمت أنه استطعمك عبدي فلان فلم تطعمه ؟ أما علمت أنك لو أطعمته لوجدت ذلك عندي ؟
يا ابن آدم ! استسقيتك فلم تسقني . قال : يا رب ! كيف أسقيك ؟ وأنت رب العالمين .
قال : استسقاك عبدي فلان فلم تسقه . أما أنك لو سقيته وجدت ذلك عندي
আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: কেয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা
বলবেন, হে মানব সন্তান! আমি অসুস্থ হয়েছিলাম, তুমি আমার সেবা করোনি। মানব সন্তান
বলবে, হে আমার প্রভূ! কিভাবে আমি আপনার সেবা করব, আপনিতো সৃষ্টিকুলের প্রতিপালক?
আল্লাহ বলবেন: তুমি কি জানতে না যে আমার অমুক বান্দা অসুস্থ হয়ে পড়েছিলো? তুমি তো
তাকে সেবা করোনি। তুমি কি জানতে না, যদি তার সেবা করতে তাহলে তার কাছে আমাকে পেতে?
হে মানব সন্তান! আমি খাবার চেয়েছিলাম, তুমি আমাকে
খাদ্য দাওনি। মানব সন্তান বলবে, হে আমার প্রভূ! কিভাবে আমি আপনাকে খাদ্য দেব, আপনিতো
সৃষ্টিকুলের প্রতিপালক? আল্লাহ বলবেন: তুমি কি জানতে না যে আমার অমুক বান্দা খাবার
চেয়েছিলো? তুমি তো খাবার দাওনি। তুমি কি জানতে না, যদি তাকে খাবার দিতে তাহলে তা
আমার কাছে পেতে?
হে মানব সন্তান! আমি পানি পান করতে চেয়েছিলাম,
তুমি আমাকে পানি পান করাওনি। মানব সন্তান বলবে, হে আমার প্রভূ! কিভাবে আমি আপনাকে
পানী পান করাবো, আপনিতো সৃষ্টিকুলের প্রতিপালক? আল্লাহ বলবেন: তুমি কি জানতে না যে
আমার অমুক বান্দা পিপাসিত ছিল? তুমি তো তাকে পানী পান করাওনি। তুমি কি জানতে না, যদি
তাকে পানী পান করাতে তাহলে তা আমার কাছে পেতে? (মুসলিম)
এ হাদীস থেকে আমরা জানতে পারলাম, কেহ অসুস্থ হয়ে
পড়লে, ক্ষুধা-পিপাসায় কষ্ট পেলে সেবা ও সাহায্য পাওয়া তার একটি অধিকার। সামর্থ থাকা
সত্বেও এ অধিকার আদায় না করলে কেয়ামতের দিন আল্লাহর কাছে জওয়াব দিতে হবে।
জান্নাত ও জাহান্নামে এক মুহুর্তের অনুভূতি
عن أنس بن مالك رضي الله عنه قال: قال
رسول الله صلى الله عليه وسلم: يؤتى بأنعم أهل الدنيا ، من أهل النار ، يوم
القيامة . فيصبغ في النار صبغة . ثم يقال : يا ابن آدم ! هل رأيت خيرا قط ؟ هل مر
بك نعيم قط ؟ فيقول : لا . والله ! يا رب ! ويؤتى بأشد الناس بؤسا في الدنيا ، من
أهل الجنة . فيصبغ صبغة في الجنة . فيقال له : يا ابن آدم ! هل رأيت بؤسا قط ؟ هل
مر بك شدة قط ؟ فيقول : لا . والله ! يا رب ! ما مر بي بؤس قط . ولا رأيت شدة قط. رواه مسلم.
আনাস বিন মালেক রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: কেয়ামতের দিন পৃথিবীর সবচেয়ে
ধনবান সূখী ব্যক্তিকে উপস্থিত করা হবে। তাকে জাহান্নামে একটি চোবানি দিয়ে উঠানো হবে। অত:পর তাকে
প্রশ্ন করা হবে, তুমি কি কখনো কল্যাণ দেখেছো? তুমি কি কখনো সুখ-শান্তি
পেয়েছো? সে উত্তরে বলবে, না আল্লাহর শপথ!
হে প্রভূ।
এরপর পৃথিবীর সবচেয়ে হতভ্যাগ্য ও দরিদ্র লোকটিকে
উপস্থিত করা হবে। যে জান্নাত লাভ করেছে। তাকে জান্নাতে একটি চুবানি দেয়া হবে। অত:পর তাকে
প্রশ্ন করা হবে, তুমি কি কখনো অভাব দেখেছো? তুমি কি কখনো কষ্টে পতিত হয়েছিলে? সে
উত্তরে বলবে, না, আল্লাহর শপথ হে প্রভূ! আমি পৃথিবীতে কখনো কষ্ট দেখেনি। কখনো বিপদে
পড়িনি। (বর্ণনায় মুসলিম)
এ হাদীসে দু ব্যক্তির দৃষ্টান্ত তুলে ধরা হয়েছে। প্রথম ব্যক্তি
জাহান্নামের আজাবের একটু ছোয়া পেয়ে পৃথিবীর সকল সূখের কথা একেবারে ভুলে যাবে। আর দ্বিতীয়
ব্যক্তি জান্নাতের একটু ছোয়া পেয়ে পৃথিবীর সকল দু:খ কষ্টের কথা ভুলে যাবে।
عن أنس بن مالك رضي الله عنه قال: قال
رسول الله صلى الله عليه وسلم: يؤتى بالرجل يوم القيامة من أهل الجنة ، فيقول له : يا ابن
آدم ! كيف وجدت منزلك ؟ فيقول : أي رب ! خير منزل ، فيقول : سل وتمن ، فيقول : يا
رب ما أسأل ولا أتمنى إلا أن تردني إلى الدنيا ، فأقتل في سبيلك عشر مرار، لما يرى
من فضل الشهادة ، ويؤتى بالرجل من أهل النار، فيقول له : يا ابن آدم ! كيف وجدت
منزلك ؟ فيقول : أي رب ! شر منزل، فيقول له : أتفتدي منه بطلاع الأرض ذهبا ؟ فيقول
: أي رب ! نعم، فيقول : كذبت قد سألتك أقل من ذلك وأيسر ، فلم تفعل فيرد إلى النار
আনাস বিন মালেক রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: কেয়ামতের দিন জান্নাত
লাভকারী এক ব্যক্তিকে উপস্থিত করা হবে। তাকে বলা হবে, হে মানব সন্তান! তুমি তোমার ঘর
কেমন পেয়েছো? সে উত্তরে বলবে, হে প্রভূ! সর্বোৎকৃষ্ট ঘর পেয়েছি। আল্লাহ তাআলা
তাকে বলবেন, কিছু চাও, কিছু আকাংখা করো। সে উত্তরে বলবে আমি কিছু চাই না, কিছুই আকাংখা
করি না। শুধু আকাংখা করি যদি আমাকে পৃথিবীতে ফেরৎ পাঠিয়ে দিতেন আর আমি আপনার পথে দশবার
নিহত (শহীদ) হতে পারতাম। সে এ কথা বলবে যখন জান্নাতে শহীদের মর্যাদা দেখতে
পাবে।
এরপর জাহান্নামীদের থেকে এক ব্যক্তিকে উপস্থিত
করা হবে। তাকে বলা হবে হে মানব সন্তান! তোমার ঠিকানা কেমন পেয়েছো? সে বলবে, সবচেয়ে
নিকৃষ্ট স্থান পেয়েছি। তাকে প্রশ্ন করা হবে পৃথিবী পরিমাণ স্বর্ণ খরচ
করে হলও তুমি কি এ অবস্থান মুক্তি কামনা করবে? সে বলবে, হ্যাঁ, হে প্রভূ! আল্লাহ
বলবেন, তুমি মিথ্যা বলেছো। জাহান্নাম থেকে মুক্তির বিনিময়ে তোমার কাছে এর
চেয়ে অনেক কম ও অনেক সহজ বিষয় চাওয়া হয়েছিলো তা-ই তুমি পারোনি। এরপর তাকে আবার
জাহান্নামে ফেরত পাঠানো হবে। (আহমাদ, আলবানী রহ. হাদীসটিকে সহীহ জামে কিতাবে
সহীহ বলে উল্লেখ করেছেন, হাদীস নং ৩১১/৬)
এ হাদীস থেকে আমরা জানতে পারলাম, একজন জান্নাতী
ব্যক্তি পৃথিবীর কোন কিছু আকাংখা করবে না। শুধু আল্লাহর পথে যুদ্ধ করে নিহত হওয়া কামনা করবে। কারণ সে যখন
কেয়ামতের দিন শহীদদের অভাবনীয় মর্যাদা দেখবে তখন এটা ছাড়া আর কিছু কামনা করবে না। এ হাদীস দ্বারা
আমরা আল্লাহর পথে যুদ্ধ করে শহীদ হওয়ার ফজীলত ও মর্যাদা জানতে পারলাম।
জাহান্নাম মুক্তি ও জান্নাত লাভ করার জন্য
চেষ্টা-প্রচেষ্টা করা খুব কঠিন কাজ নয়।
তাওহীদের মূল্যায়ন
তাওহীদ বা আল্লাহ তাআলার একত্ববাদে অবিচল বিশ্বাস
ইসলাম ধর্মের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যার তাওহীদি আকীদা-বিশ্বাসে সমস্যা আছে তার কোন
নেক আমল কাজে আসবে না। দুনিয়া পরিমাণ সম্পদ ছদকা বা আল্লাহর পথে নিজের
প্রাণ ও সম্পদ সবকিছু কুরবানী দিলেও নয়। অপরপক্ষে যারা তাওহীদি আকীদা বিশ্বাস নির্ভেজাল
হবে ও এর উপর অবিচল থাকবে তার অন্য কোন নেক আমল না থাকলেও তাওহীদের কারণে সে একদিন
জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাবে। কেয়ামত পরবর্তী বিচারেও তাওহীদের মূল্যায়ন করা
হবে গুরুত্বের সাথে। হাদীসেেএর দৃষ্টান্ত এভাবে এসেছে
عن عبد الله بن
عمرو بن العاص رضي الله عنهما قال: سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول: إن الله سيخلص رجلا من أمتي على رؤوس الخلائق يوم القيامة
فينشر عليه تسعة وتسعين سجلا ، كل سجل مثل مد البصر ثم يقول : أتنكر من هذا شيئا ؟
أظلمك كتبتي الحافظون ؟ يقول : لا يا رب . فيقول : أفلك عذر ؟ فيقول : لا يا رب ،
فيقول : بلى إن لك عندنا حسنة وإنه لا ظلم عليك اليوم ، فيخرج بطاقة فيها أشهد أن
لا إله إلا الله وأشهد أن محمدا عبده ورسوله ، فيقول : احضر وزنك ، فيقول : يا رب
ما هذه البطاقة مع هذه السجلات ؟ فقال فإنك لا تظلم . قال : فتوضع السجلات في كفة
والبطاقة في كفة فطاشت السجلات وثقلت البطاقة ، ولا يثقل مع اسم الله شيء
আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস রা. থেকে বর্ণিত যে
তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে বলতে শুনেছি,
কেয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা সকল মানুষের মধ্য থেকে এক ব্যক্তিকে মুক্তি দিবেন এভাবে
যে তার সামনে নিরানব্বইটি পাপের দফতর উপস্থিত করা হবে। প্রতিটি দফতরের পরিধি হবে
চোখের নজরের পরিধির মত বিশাল। আল্লাহ তাআলা তাকে বলবেন, তুমি কি এর কোনটি
অস্বীকার করো? আমার লেখক ফেরেশতারা কি তোমার প্রতি অন্যায় করে এসব লিখেছে? সে
উত্তরে বলবে, না, হে আমার প্রভূ! আল্লাহ বলবেন এসব পাপের ব্যাপারে তোমার কোন
যুক্তিসঙ্গত কারণ বা বক্তব্য আছে? সে উত্তরে বলবে, না, হে আমার প্রভূ! আল্লাহ
তাআলা বলবেন, তাহলে শোন, তোমার জন্য আমার কাছে একটি মাত্র নেক আমল আছে। আর আজ তোমার
প্রতি কোন জুলুম করা হবে না। এরপর আল্লাহ একটি টিকেট বের করবেন। তাতে লেখা আছে,
আমি স্বাক্ষ্য দিচ্ছি যে আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই। আরো স্বাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মদ
আল্লাহ তাআলার বান্দা ও রাসূল। এরপর আল্লাহ বলবেন, আমি এ টিকেটটির ওযন দেব। লোকটি বলবে, হে
আমার প্রভূ! এ টিকেটটির সাথে এতগুলো বিশাল দফতরের ওযন দিলে কী লাভ হবে? আল্লাহ
তাআলা বলবেন, তোমার উপর কোন জুলুম করা হবে না।
এই টিকেটটি এক পাল্লায় রাখা হবে আর পাপের
দফতরগুলো রাখা হবে অন্য পাল্লায়। টিকেটটির পাল্লা ভারী হয়ে যাবে। আসলে আল্লাহ
তাআলার নামের সামনে কোন কিছু কি ভারী হতে পারে?
(বর্ণনায় : আহমাদ, তিরমিজী, হাকেম, আলবানী রহ.
হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। দেখুন সিলসিলাতুল আহাদীস আস সহীহা নং ১৩৫)
এ হাদীসে আমরা দেখলাম আলোচ্য ব্যক্তি পাহাড়সম পাপ
করেছিলো। কিন্তু আল্লাহর একত্ববাদে তার বিশ্বাস ছিল নির্ভেজাল। তার বিশ্বাস ছিল শিরকমুক্ত। সে বিশ্বাসী ছিল
মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর রেসালাতের প্রতিও। এ কারণে সে
মুক্তি পেয়ে গেছে। আমরা কি পেরেছি আমাদের তাওহীদ-কে নির্ভেজাল করতে? আমরা কি পেরেছি ছোট-বড় সকল
শিরক থেকে সর্বদা নিজেকে পবিত্র রাখতে? আসলে আমরা পারিনি। কখনো জেনে কখনো না জেনে
বুঝে আমরা বিভিন্ন শিরকে লিপ্ত হয়ে পড়ছি। আল্লাহকে ভালবাসতে যেয়ে, তার রাসূলের প্রতি
মুহাব্বাতের প্রকাশ করতে যেয়েও আমরা অহরহ শিরকে লিপ্ত হচ্ছি। তাই আমাদের সকলের উচিত বার
বার নিজের তাওহীদি বিশ্বাসকে যাচাই করে নেয়া। শিরকের ধারে কাছেও না
যাওয়া। যদি কখনো কেহ বলে, এটা শিরক। ব্যস, সাথে সাথে তা পরিহার করা।
আলোচ্য ব্যক্তি শুধু মুখে মুখে কালেমায়ে শাহাদত
উচ্চারণ করেছে বলে মুক্তি পায়নি। মুখে মুখে তো কোটি কোটি লোক উচ্চারণ করে।
পুলসিরাত সম্পর্কে হাদীস
عن أبي سعيد الخدري رضي الله عنه قال:
قلنا : يا رسول الله ، هل نرى ربنا يوم القيامة ؟ قال : ( هل تضارون في رؤية الشمس
والقمر إذا كانت صحوا ) . قلنا : لا ، قال : ( فإنكم لا تضارون في رؤية ربكم يومئذ
إلا كما تضارون في رؤيتهما ) . ثم قال : ( ينادي مناد : ليذهب كل قوم إلى ما كانوا
يعبدون ، فيذهب أصحاب الصليب مع صليبهم ، وأصحاب الأوثان مع أوثانهم ، وأصحاب كل
آلهة مع آلهتهم ، حتى يبقى من كان يعبد الله ، من بر أو فاجر ، وغبرات من أهل
الكتاب ، ثم يؤتى بجهنم تعرض كأنها سراب ، فيقال لليهود : ما كنتم تعبدون ؟ قالوا
: كنا نعبد عزير ابن الله ، فيقال : كذبتم ، لم يكن لله صاحبة ولا ولد ، فما
تريدون ؟ قالوا : نريد أن تسقينا ، فيقال : اشربوا ، فيتساقطون في جهنم . ثم يقال
للنصارى : ما كنتم تعبدون ؟ فيقولون : كنا نعبد المسيح ابن الله ، فيقال : كذبتم ،
لم يكن لله صاحبة ولا ولد ، فما تريدون ؟ فيقولون : نريد أن تسقينا ، فيقال :
اشربوا ، فيتساقطون ، حتى يبقى من كان يعبد الله ، من بر أو فاجر ، فيقال لهم : ما
يحبسكم وقد ذهب الناس؟ فيقولون : فارقناهم ونحن أحوج منا إليه اليوم ، وإنا سمعنا
مناديا ينادي : ليلحق كل قوم بما كانوا يعبدون ، وإنما ننتظر ربنا ، قال : فيأتيهم
الجبار في صورة غير صورته التي رأوه فيها أول مرة ، فيقول : أنا ربكم ، فيقولون :
أنت ربنا ، فلا يكلمه إلا الأنبياء ، فيقول : هل بينكم وبينه آية تعرفونه ،
فيقولون : الساق ، فيكشف عن ساقه ، فيسجد له كل مؤمن ، ويبقى من كان يسجد لله رياء
وسمعة ، فيذهب كيما يسجد فيعود ظهره طبقا واحدا ، ثم يؤتى بالجسر فيجعل بين ظهري
جهنم ) . قلنا : يا رسول الله ، وما الجسر ؟ قال : ( مدحضة مزلة ، عليه خطاطيف
وكلاليب ، وحسكة مفلطحة لها شوكة عقيفة ، تكون بنجد ، يقال لها : السعدان ، المؤمن
عليها كالطرف وكالبرق وكالريح ، وكأجاويد الخيل والركاب ، فناج مسلم وناج مخدوش ،
ومكدوس في نار جهنم ، حتى يمر آخرهم يسحب سحبا ، فما أنتم بأشد لي مناشدة في الحق
قد تبين لكم من المؤمن يومئذ للجبار ، وإذا رأوا أنهم قد نجوا ، في إخوانهم ،
يقولون : ربنا إخواننا ، كانوا يصلون معنا ، ويصومون معنا ، ويعملون معنا ، فيقول
الله تعالى : اذهبوا فمن وجدتم في قلبه مثقال دينار من إيمان فأخرجوه ، ويحرم الله
صورهم على النار ، فيأتونهم وبعضهم قد غاب في النار إلى قدمه ، وإلى أنصاف ساقيه ،
فيخرجون من عرفوا ، ثم يعودون ، فيقول : اذهبوا فمن وجدتم في قلبه مثقال نصف دينار
فأخرجوه ، فيخرجون من عرفوا ثم يعودون ، فيقول : اذهبوا فمن وجدتم في قلبه مثقال
ذرة من إيمان فأخرجوه ، فيخرجون من عرفوا ) . قال أبو سعيد : فإن لم تصدقوني
فاقرؤوا : { إن الله لا يظلم مثقال ذرة وإن تك حسنة يضاعفها } . ( فيشفع النبيون
والملائكة والمؤمنون ، فيقول الجبار : بقيت شفاعتي ، فيقبض قبضة من النار ، فيخرج
أقواما قد امتحشوا ، فليقون في نهر بأفواه الجنة يقال له : ماء الحياة ، فينبتون
في حافتيه كما تنبت الحبة في حميل السيل ، قد رأيتموها إلى جانب الصخرة ، إلى جانب
الشجرة ، فما كان إلى الشمس منها كان أخضر ، وما كان منها إلى الظل كان أبيض ،
فيخرجون كأنهم اللؤلؤ ، فيجعل في رقابهم الخواتيم ، فيدخلون الجنة ، فيقول أهل
الجنة : هؤلاء عتقاء الرحمن ، أدخلهم الجنة بغير عمل عملوه ، ولا خير قدموه ،
فيقال لهم : لكم ما رأيتم ومثله معه. رواه البخاري ومسلم
আবু সায়ীদ আল খুদরী রা. বলেন, আমরা বললাম, ইয়া
রাসূলাল্লাহ! কেয়ামতের দিন আমরা কি আমাদের প্রতিপালককে দেখতে পাবো? তিনি বললেন,
তোমরা কি সূর্য বা চাঁদকে দেখতে ভীড় করো
যখন আকাশ পরিস্কার থাকে? আমরা বললাম, না, ইয়া রাসূলাল্লাহ! তিনি বললেন, তাহলে
তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে দেখতে কষ্ট করতে হবে না যে রকম সূর্য বা চন্দ্রকে দেখতে
তোমাদের কষ্ট করতে হয় না। অত:পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম বলেন, একজন ঘোষণাকারী ঘোষণা করবে, প্রত্যেক জাতি যেন যার যার উপাস্য নিয়ে
উপস্থিত হয়। তখন ক্রুশ পুজারীরা তাদের ক্রুশ নিয়ে উপস্থিত হবে। মূর্তিপুজারীরা তাদের
মূর্তি নিয়ে উপস্থিত হবে। এভাবে প্রত্যেক জাতি তাদের উপাস্যগুলো নিয়ে
উপস্থিত হবে। কিন্তু যারা একমাত্র আল্লাহ তাআলার ইবাদত করতো -সৎকর্মশীল ও পাপী- তারা আর
ইসলামপূর্ব ইহুদী খৃষ্টানদের মধ্যে যারা খাটি একত্বাবাদী ছিল তারা অবশিষ্ট থাকবে। এরপর তাদের
জাহান্নামে নিয়ে যাওয়া হবে। সংখ্যায় মনে হবে বন্যার ঢলের মত। ইহুদীদের প্রশ্ন
করা হবে, তোমরা কার উপাসনা করতে? তারা বলবে আমরা আল্লাহর পুত্র উযাইরের উপাসনা
করতাম। তাদের বলা হবে, তোমরা মিথ্যা বলেছো। আল্লাহর কোন স্ত্রী পুত্র নেই। তাদের জিজ্ঞাসা
করা হবে, এখন তোমরা কি চাও? তারা বলবে, আমরা পানি পান করতে চাই। তাদের বলা হবে,
ঠিক আছে পান করো। তারপর তারা জাহান্নামে পতিত হবে।
এরপর খৃষ্টানদের জিজ্ঞাসা করা হবে তোমরা কার
উপাসনা করতে? তারা বলবে আমরা আল্লাহর পুত্র মসীহ এর উপাসনা করতাম। তাদের বলা হবে,
তোমরা মিথ্যা বলেছো। আল্লাহর কোন স্ত্রী পুত্র নেই। তাদের জিজ্ঞাসা
করা হবে, এখন তোমরা কি চাও? তারা বলবে, আমরা পানি পান করতে চাই। তাদের বলা হবে,
ঠিক আছে পান করো। তারপর তারা জাহান্নামে পতিত হবে।
এরপর যারা আল্লাহ তাআলার উপাসনা করতো - তাদের
মধ্যে থাকবে পাপী ও নেককার সকলেই - তাদের বলা হবে লোকেরা চলে গেছে তোমরা গেলে না
কেন? কিসে তোমাদের আটকে রেখেছে? তারা বলবে আমরা তাদের থেকে আলাদা ছিলাম। তাদের থেকে
আলাদা থাকাটাই আমাদের জন্য প্রয়োজন ছিল এটা আজ বুঝে এসেছে। আমরা একজন ঘোষকের ঘোষণা
শুনেছি সে ঘোষণা করেছে প্রত্যেক জাতি যার যার উপাস্য নিয়ে হাজির হোক। এ ঘোষণা শুনে
আমরা আমাদের প্রতিপালকের অপেক্ষায় থাকলাম। এরপর তাদের কাছে আসবেন মহাপরাক্রমশালী আল্লাহ। তিনি আগের দেখা
আকৃতি থেকে ভিন্ন আকৃতিতে আসবেন। তিনি বলবেন, আমি তোমাদের প্রতিপালক। তারা বলবে, আপনি
আমাদের প্রতিপালক। বুখারীর বর্ণনায় এসেছে তারা বলবে, এটা আমাদের অবস্থান। যতক্ষণ না আমাদের
প্রতিপালক আমাদের কাছে আসেন। আমাদের প্রতিপালক যখন আসবেন আমরা তাকে চিনতে
পারবো। আল্লাহ তাদের কাছে এমন আকৃতিতে আসবেন যে তারা দেখে চিনতে পারবে। নবীগণই তাঁর
সাথে কথা বলবেন। তিনি জিজ্ঞেস করবেন, তোমাদের আর তোমাদের প্রভূর মধ্যে এমন কোন আলামত আছে যা
দেখে তোমরা তাকে চিনতে পারো? তখন তারা বলবে, তাঁর পায়ের গোছা আমরা চিনি। তখন তিনি তাঁর
পায়ের গোছা উম্মুক্ত করবেন। প্রত্যেক ঈমানদার ব্যক্তি তাকে সেজদা করবে। কিন্তু যারা
মানুষকে দেখানো বা শুনানোর জন্য নামাজ পড়তো তারা সেজদা করতে পারবে না। তারা চেষ্টা
করবে সেজদা দিতে কিন্তু তাদের পিঠ একটি সোজা কাঠের তক্তার মত শক্ত হয়ে যাবে। অত:পর
জাহান্নামের উপর একটি পুল স্থাপন করা হবে। এ কথা শুনে সাহাবীগণ জিজ্ঞাসা করলো ইয়া রাসূলাল্লাহ!
পুলটি কি ধরনের হবে? তিনি বললেন, পুলটি হবে পিচ্ছিল, লোহার কাটা ওয়ালা, দীর্ঘ,
তাতে থাকবে আরো এমন কাটা যা দেখতে নজদ এলাকার সাদান কাটার মত। ঈমানদার ব্যক্তিরা কেহ পার
হবে চোখের পলকের গতিতে, কেহ পার হবে বিজলীর গতিতে, কেহ পার হবে বাতাসের গতিতে, কেহ
পার হবে ঘোড়া বা যানবাহনের গতিতে। এভাবে একদল সহি সালামতে পার হয়ে যাবে। একদল পার হবে
অনেক কষ্টে। আর একদল পার হতে গিয়ে পতিত হবে জাহান্নামে। এমনকি সর্বশেষ ব্যক্তি
সাতার দেয়ার মত হামাগুরি দিয়ে করে পুল পার হবে। সেদিনটি হবে এমনি একটি
কঠিন ও ভয়াবহ দিন। সেদিন মহাপরাক্রমশালীর কাছে সত্যিকার ঈমানদারগণ প্রকাশ হয়ে পড়বেন। যখন ঈমানদারগণ
দেখবে যে তারা নিজেরা মুক্তি পেয়েছে কিন্তু নিজেদের অনেক সঙ্গী সাথী জাহান্নামে
পতিত হয়েছে তখন তারা বলবে, হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের এ ভাইয়েরা তো আমাদের সাথে
নামাজ পড়েছে, আমাদের সাথে রোযা রেখেছে, আমাদের সাথে অন্যান্য নেক আমল করেছে। আল্লাহ তাআলা
তখন বলবেন, তোমরা যাও। যার মধ্যে তোমরা একটি দীনার পরিমাণ ঈমান পাবে
তাকে বের করে আনো। আল্লাহ তাদের শরীরকে জাহান্নামের আগুনের জন্য হারাম করে দিবেন। তাদের নিয়ে আসা
হবে। কারো শরীর পা পর্যন্ত, কারো শরীর অর্ধ গোছা পর্যন্ত জাহান্নামের আগুন স্পর্ষ
করেছে। এভাবে পরিচিত জনকে বের করে আনা হবে। এরপর আল্লাহ তাআলা আবার বলবেন, এবার যাও। যাদের মধ্যে
অর্ধেক দীনার পরিমাণ ঈমান পাবে তাদের বের করে আনো। তারা যাবে ও যাদের চিনতে
পারবে তাদের বের করে আনবে। এরপর আল্লাহ বলবেন, আবার যাও যাদের অন্তরে অনু
পরিমাণ ঈমান পাবে তাদেরকে জাহান্নাম থেকে বের করে নিয়ে আসো। তারা যাদের চিনবে তাদের
বের করে আনবে। হাদীসটির বর্ণনাকারী আবু সায়ীদ রা. বলেন, যদি তোমরা আমার কথা বিশ্বাস না করো
তবে আল্লাহ তাআলার এ বাণীটি পড়ে দেখ : আল্লাহ কারো প্রতি অনু পরিমাণ জুলুম করেন না। যদি কোন ভাল
থাকে তাকে তিনি অনেক গুণে বাড়িয়ে দেন।
নবীগণ, ফেরেশতাগণ ও ঈমানদারগণ শুপারিশ করবেন। এরপর
মহাপরাক্রমশালী আল্লাহ তাআলা বলবেন, আমার শুপারিশ বাকী আছে। তিনি জাহান্নাম থেকে
অগ্নিদগ্ধ এক মুষ্ঠিকে বের করে আনবেন। তাদের জান্নাতের সম্মুখে একটি নদীতে ছেড়ে দিবেন। সেই নদীটির নাম
মা-উল হায়াত (জীবন নদী) সেখানে তারা নতুনভাবে গঠিত হবে যেমন ভাবে নতুন পলি পেয়ে
উদ্ভিদ অংকুরিত হয়। যেমনটি তোমরা দেখে থাকো যে রোদ লাগা বৃক্ষটি সবুজ হয় আর রোদের আড়ালে থাকা
বৃক্ষটি সাদা হয়ে যায়। তারা এ নদী থেকে বের হয়ে আসবে হীরার মত উজ্জল হয়ে। তাদের গল দেশে
সীলমোহর করে দেয়া হবে। তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে। তখন জান্নাতবাসীরা বলবে,
এরা হল দয়াময় আল্লাহর পক্ষ থেকে মুক্তিপ্রাপ্ত। আল্লাহ তাআলা তাদের
জান্নাতে প্রবেশ করালেন কিন্তু তারা দুনিয়াতে কোন সৎকর্ম করেনি ও কোন কল্যাণকর
কিছু সংগ্রহও করেনি। তখন তাদের বলা হবে, যা তোমরা পেলে তা তো তোমাদের
জন্য আছেই, সাথে সাথে তাদের প্রতি যে অনুগ্রহ করা হয়েছে তার অনুরূপ অনুগ্রহ তোমরা
লাভ করবে। (বর্ণনায় : বুখারী ও মুসলিম)
সর্বশেষ যে ব্যক্তি
জান্নাতে প্রবেশ করবে
পুলসিরাত সম্পর্কিত একটি দীর্ঘ হাদীসের শেষাংশে
এসেছে
ويبقى رجل مقبل بوجهه على النار ،
فيقول : يا رب ، قد قشبني ريحها ، وأحرقني ذكاؤها ، فاصرف وجهي عن النار ، فلا
يزال يدعو الله ، فيقول : لعلك إن أعطيتك أن تسألني غيره ، فيقول : لا وعزتك لا
أسألك غيره ، فيصرف وجهه عن النار ، ثم يقول بعد ذلك : يا رب قربني إلى باب الجنة
، فيقول : أليس قد زعمت أن لا تسألني غيره ، ويلك ابن آدم ما أغدرك ، فلا يزال
يدعو ، فيقول : لعلي إن أعطيتك ذلك تسألني غيره ، فيقول : لا وعزتك لا أسألك غيره
، فيعطي الله من عهود ومواثيق أن لا يسأله غيره ، فيقربه إلى باب الجنة ، فإذا رأى
ما فيها سكت ما شاء الله أن يسكت ، ثم يقول : رب أدخلني الجنة ، ثم يقول : أوليس
قد زعمت أن لا تسألني غيره ، ويلك يا ابن آدم ما أغدرك ، فيقول : يا رب لا تجعلني
أشقى خلقك ، فلا يزال يدعو حتى يضحك ، فإذا ضحك منه أذن له بالدخول فيها ، فإذا
دخل فيها. رواه البخاري ومسلم
এক ব্যক্তি জাহান্নামের দিকে মুখ করা অবস্থায়
থাকবে। তখন সে বলবে, হে আমার প্রভূ! জাহান্নামের গরম বায়ু আমাকে শেষ করে দিল। আমার চেহারাটা
আপনি জাহান্নাম থেকে অন্য দিকে ফিরিয়ে দিন। সে এভাবে আল্লাহ তাআলার কাছে বার বার প্রার্থনা
করতে থাকবে। আল্লাহ তাকে বলবেন, তোমার এ প্রার্থনা কবুল হলে এরপর তুমি যেন আর কিছু না চাও। সে বলবে, আপনার
মর্যাদার কসম করে বলছি, এরপর আপনার কাছে আর কিছু চাবো না। তখন জাহান্নামের দিক থেকে
তার চেহারা ফিরিয়ে দেয়া হবে। তারপর সে আবার বলতে শুরু করবে, হে আমার প্রভূ!
আমাকে একটু জান্নাতের দরজার নিকটবর্তী করে দেন। আল্লাহ বলবেন, তুমি কি
বলোনি এরপর আর কিছু চাইবে না? ধিক হে মানব সন্তান। তুমি কোন কথা রাখো না। কিন্তু এ
ব্যক্তি প্রার্থনা করতই থাকবে। আল্লাহ তাআলা বলবেন, আমার তো মনে হয় তোমার এ দাবী
পুরণ করা হলে আবার অন্য কিছু চাইবে। সে বলবে, আপনার মর্যাদার কসম করে বলছি, এরপর
আপনার কাছে আর কিছু চাইবো না। সে আর কিছু চাইবে না এ শর্তে আল্লাহ তাআলা তাকে
জান্নাতের গেটের নিকটবর্তী করে দিবেন। যখন সে জান্নাতে গেটের দিকে তাকিয়ে জান্নাতের সূখ
শান্তি দেখবে তখন কিছুক্ষণ চুপ থেকে আবার প্রার্থনা করতে শুরু করবে, হে আমার প্রভু
আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করিয়ে দিন। আল্লাহ বলবেন, তুমি কি বলোনি এরপর আর কিছু চাইবে
না? ধিক হে মানব সন্তান। তুমি কোন কথা রাখো না। সে বলবে, হে আমার প্রভূ
আমাকে আপনার সৃষ্টির মধ্যে সবচেয়ে দুর্ভাগা করে রাখবেন না। এভাবে সে প্রার্থনা করতে
থাকবে। অবশেষে আল্লাহ হাসি দিবেন। তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। (বর্ণনায় :
বুখারী ও মুসলিম)
মুমিনদের জাহান্নাম থেকে বের করার জন্য নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর শাফাআত
কেয়ামতের পর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম এর একটি শাফাআত হবে সকলের জন্য। আর সেটা বিচার - ফয়সালা শুরু করার আবেদন সম্পর্কে। সকল নবী ও রাসূল
এ ব্যাপারে শাফাআত করতে অস্বীকার করবে, নিজেদের অপরাগতা প্রকাশ করবে। শেষে আখেরী নবী মুহাম্মদ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শাফাআত করবেন। এটা হল সাধারণ শাফাআত। সকল মানুষ এ
শাফআত দ্বারা উপকৃত হবে।
আরেকটি শাফাআত হবে যে সকল মুমিন পাপের কারণে
জাহান্নামে গেছে তাদের উদ্ধার ও মুক্তির জন্য নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম শাফাআত করবেন।
যেমন হাদীসে এসেছে -
عن أبي هريرة رضي الله عنه قال: قال
رسول الله صلى الله عليه وسلم: لكل نبي دعوة مستجابة . فتعجل كل نبي دعوته . وإني
اختبأت دعوتي شفاعة لأمتي يوم القيامة . فهي نائلة ، إن شاء الله ، من مات من أمتي
لا يشرك بالله شيئا. رواه البخاري ومسلم
আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: প্রত্যেক নবীর রয়েছে কিছু
দুআ যা অবশ্যই কবুল করা হয়। সকল নবী এ দুআগুলো করার ব্যাপারে তাড়াহুড়ো করেছেন। কিন্তু আমার
উম্মতকে কেয়ামতের দিন শাফাআত করার জন্য এ দুআগুলো আমি ব্যবহার করিনি। ইনশা আল্লাহ সেই
শাফাআত পাবে আমার অনুসারী ঐ সকল ব্যক্তিবর্গ যারা কখনো আল্লাহ তাআলার সাথে কোন
কিছু শরীক করেনি। (বর্ণনায়: বুখারী ও মুসলিম)
হাদীসে আরো এসেছে
عن أبي هريرة رضي الله عنه قال: قلت :
يا رسول الله ، من أسعد الناس بشفاعتك يوم القيامة ؟ فقال : ( لقد ظننت ، يا أبا
هريرة ، أن لا يسألني عن هذا الحديث أحد أول منك ، لما رأيت من حرصك على الحديث ،
أسعد الناس بشفاعتي يوم القيامة من قال : لا إله إلا الله ، خالصا من قبل نفسه ) .
رواه البخاري
আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি
জিজ্ঞেস করলাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ, কেয়ামতের দিন আপনার শাফাআত দ্বারা কে ভাগ্যবান
হবে? তিনি বললেন, হে আবু হুরাইরা আমি জানি তোমার পূর্বে কেহ এ হাদীস সম্পর্কে
জিজ্ঞাসা করেনি। তোমাকে হাদীসের বিষয়ে বেশী আগ্রহী দেখছি। কেয়ামতের দিন আমার শাফাআত
দ্বারা সবচেয়ে ভাগ্যবান হবে ঐ ব্যক্তি যে অন্তর দিয়ে নির্ভেজাল পদ্ধতিতে বলেছে
আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই। (বর্ণনায় : বুখারী)
এ দুটো হাদীস পাঠে আমরা জানতে পারলাম কেয়ামতের
দিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর শাফাআত দ্বারা কারা ধন্য হবে। যারা অন্তর দিয়ে
শিরক মুক্ত থেকে আল্লাহ তাআলার তাওহীদে বিশ্বাস করেছে তারাই নবী করীম সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর শাফাআত পাবে। তারা যতই পাপী হোক না কেন।
আমাদের সমাজে আমরা এমন কিছু লোক দেখি যারা রাসূলের
শাফাআত লাভ করার জন্য বিভিন্ন শিরক ও বিদআতী কাজে লিপ্ত হয়ে থাকে। আর বলে এগুলো
করে আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর শাফাআত লাভ করতে পারবো। তাদের জেনে রাখা
উচিত, আল্লাহর সাথে শিরক করে কখনো নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শাফাআত
লাভ করা যাবে না। ঈমান যদি সম্পূর্ণ শিরকমুক্ত থাকে তখন পাপের পাহাড় যত বড়ই হোক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর শাফাআত লাভ ও আল্লাহ তাআলার বিশেষ ক্ষমায় জাহান্নাম থেকে
মুক্তি লাভ করা সম্ভব হবে। কিন্তু ঈমান যদি সম্পূর্ণ শিরকমুক্ত না থাকে
তাহলে নেক আমলের পাহাড় নিয়ে উপস্থিত হলেও জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভের সুযোগ নেই। আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর শাফাআত লাভে ধন্য হওয়ারও সম্ভাবনা নেই।
তাওহীদবাদী গুনাহগারদের
জাহান্নাম থেকে মুক্ত করা
হাদীসে এসেছে-
عن أبي سعيد الخدري رضي الله عنه قال:
قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: أما أهل النار الذين هم أهلها ، فإنهم لا
يموتون فيها ولا يحيون . ولكن ناس أصابتهم النار بذنوبهم ( أو قال بخطاياهم )
فأماتهم إماتة . حتى إذا كانوا فحما ، أذن بالشفاعة . فجيء بهم ضبائر ضبائر . فبثوا
على أنهار الجنة . ثم قيل : يا أهل الجنة أفيضوا عليهم . فينبتون نبات الحبة تكون
في حميل السيل. رواه مسلم
আবু সায়ীদ আল খুদরী রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: যারা জাহান্নামবাসী তারা
মরবেও না আবার বাঁচবেও না। কিন্তু যে সকল (ঈমানদার) মানুষ পাপের কারণে
জাহান্নামে যাবে তাদের এক ধরনের মৃত্যু ঘটানো হবে। তারা পুরে কয়লা হয়ে যাবে। তখন তাদের
ব্যাপারে শুপারিশ করার অনুমতি দেয়া হবে। তাদেরকে এক এক দল করে জাহান্নাম থেকে বের করা হবে। অত:পর জান্নাতের
নদীতে রাখা হবে। এরপর বলা হবে হে জান্নাতবাসীরা! তোমরা তাদের উপর পানি ঢালো। ফলে তারা
উদ্ভিদের মত জীবন লাভ করবে যেমন বন্যার পানির পলি পেয়ে উদ্ভিদ জন্ম লাভ করে থাকে। (বর্ণনায় :
মুসলিম)
এ হাদীসের ব্যাখ্যায় ইমাম নববী রহ. বলেন: কুফরী
করার কারণে যারা জাহান্নামে যাবে তারা চিরকাল সেখানে অবস্থান করবে। তাদের কখনো
মৃত্যু হবে না। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন:
وَالَّذِينَ
كَفَرُوا لَهُمْ نَارُ جَهَنَّمَ لَا يُقْضَى عَلَيْهِمْ فَيَمُوتُوا وَلَا
يُخَفَّفُ عَنْهُمْ مِنْ عَذَابِهَا كَذَلِكَ نَجْزِي كُلَّ كَفُورٍ. سورة الفاطر
: 36)
আর যারা কুফরী করে, তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের আগুন। তাদের প্রতি এমন কোন ফয়সালা দেয়া হবে না যে, তারা মারা যাবে, এবং তাদের থেকে জাহান্নামের আযাবও লাঘব করা হবে না। এভাবেই আমি প্রত্যেক অকৃতজ্ঞকে প্রতিফল দিয়ে থাকি। (সূরা আল ফাতির, আয়াত ৩৬)
এমনিভাবে আল্লাহ তাআলা
বলেন:
ثُمَّ
لَا يَمُوتُ فِيهَا وَلَا يَحْيَا (سورة الأعلى : 13)
তারপর সে সেখানে মরবেও না
আর বাঁচবেও না। (সূরা আল আলা, আয়াত ১৩)
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আকীদা এটাই যে
জান্নাতের সুখ আর জাহান্নামের শাস্তি চিরস্থায়ী। তবে এ হাদীসে বর্ণিত
মৃত্যু হল আল্লাহ তাআলার তাওহীদ বা একত্ববাদে বিশ্বাসী জাহান্নামীদের জন্য। তাদের শাস্তির
অনুভূতি লোপ করে মৃত্যুর মত এক ধরনের অনুভুতিহীনতা দান করা হবে। তাদের নিজ পাপ
অনুযায়ী শাস্তি ভোগ করানো হবে। তাদের এক ধরনের অনুভূতিহীনতা প্রদান করা হবে। এটাকে বলা হয়েছে
তারা কয়লা হয়ে যাবে। এরপর তাদের নতুন জীবন দান করা হবে। কাজেই মৃত্যু
দেয়া হবে না বলে যে বাণী এসেছে সেটা কাফেরদের জন্য প্রযোজ্য। (শরহে মুসলিম)
আরাফবাসীদের পরিচয়
আরাফ হল, জান্নাত ও জাহান্নামের মধ্যে একটি
প্রাচীর। জান্নাতে প্রবেশের প্রতীক্ষায় কিছু সময়ের জন্য যারা সেখানে অবস্থান করবেন
তাদের-কে বলা হয় আরাফবাসী।
আল্লাহ তাআলা বলেন:
وَنَادَى
أَصْحَابُ الْجَنَّةِ أَصْحَابَ النَّارِ أَنْ قَدْ وَجَدْنَا مَا وَعَدَنَا
رَبُّنَا حَقًّا فَهَلْ وَجَدْتُمْ مَا وَعَدَ رَبُّكُمْ حَقًّا قَالُوا نَعَمْ
فَأَذَّنَ مُؤَذِّنٌ بَيْنَهُمْ أَنْ لَعْنَةُ اللَّهِ عَلَى الظَّالِمِينَ ﴿44﴾
الَّذِينَ يَصُدُّونَ عَنْ سَبِيلِ اللَّهِ وَيَبْغُونَهَا عِوَجًا وَهُمْ
بِالْآَخِرَةِ كَافِرُونَ ﴿45﴾ وَبَيْنَهُمَا حِجَابٌ وَعَلَى الْأَعْرَافِ
رِجَالٌ يَعْرِفُونَ كُلًّا بِسِيمَاهُمْ وَنَادَوْا أَصْحَابَ الْجَنَّةِ أَنْ
سَلَامٌ عَلَيْكُمْ لَمْ يَدْخُلُوهَا وَهُمْ يَطْمَعُونَ ﴿46﴾ وَإِذَا صُرِفَتْ
أَبْصَارُهُمْ تِلْقَاءَ أَصْحَابِ النَّارِ قَالُوا رَبَّنَا لَا تَجْعَلْنَا
مَعَ الْقَوْمِ الظَّالِمِينَ ﴿47﴾ وَنَادَى أَصْحَابُ الْأَعْرَافِ رِجَالًا
يَعْرِفُونَهُمْ بِسِيمَاهُمْ قَالُوا مَا أَغْنَى عَنْكُمْ جَمْعُكُمْ وَمَا
كُنْتُمْ تَسْتَكْبِرُونَ ﴿48﴾ أَهَؤُلَاءِ الَّذِينَ أَقْسَمْتُمْ لَا
يَنَالُهُمُ اللَّهُ بِرَحْمَةٍ ادْخُلُوا الْجَنَّةَ لَا خَوْفٌ عَلَيْكُمْ وَلَا
أَنْتُمْ تَحْزَنُونَ ﴿49﴾ (سورة الأعراف)
আর জান্নাতের অধিবাসীগণ আগুনের
অধিবাসীদেরকে ডাকবে যে, আমাদের
রব আমাদেরকে যে ওয়াদা দিয়েছেন তা আমরা সত্য পেয়েছি। সুতরাং তোমাদের রব তোমাদেরকে যে ওয়াদা দিয়েছেন, তা কি তোমরা সত্যই পেয়েছ? তারা
বলবে হ্যাঁ, অতঃপর এক ঘোষক তাদের মধ্যে ঘোষণা
দেবে যে, আল্লাহর
লানত যালিমদের উপর। যারা আল্লাহর পথে বাধা প্রদান
করত এবং তাতে বক্রতা সন্ধান করত এবং তারা ছিল আখিরাতকে অস্বীকারকারী আর তাদের মধ্যে
থাকবে পর্দা এবং আরাফের উপর থাকবে কিছু লোক, যারা প্রত্যেককে তাদের চিহ্ন দ্বারা চিনবে। আর তারা
জান্নাতের অধিবাসীদেরকে ডাকবে যে, তোমাদের উপর সালাম। তারা
(এখনো) তাতে প্রবেশ করেনি তবে তারা আশা করবে। আর যখন তাদের দৃষ্টিকে আগুনের অধিবাসীদের প্রতি ফেরানো হবে, তারা বলবে, হে আমাদের রব, আমাদেরকে যালিম কওমের অন্তর্ভুক্ত করবেন
না। আর আরাফের অধিবাসীরা এমন লোকদেরকে
ডাকবে, যাদেরকে
তারা চিনবে তাদের চিহ্নের মাধ্যমে, তারা
বলবে, তোমাদের
দল এবং যে বড়াই তোমরা করতে তা তোমাদের উপকারে আসেনি। এরাই কি তারা যাদের ব্যাপারে তোমরা কসম করতে যে, আল্লাহ তাদেরকে রহমতে শামিল করবেন না? তোমরা জান্নাতে প্রবেশ কর। তোমাদের উপর কোন ভয় নেই এবং তোমরা দুঃখিত হবে না। (সূরা আল আরাফ, আয়াত ৪৪-৪৯)
আরাফবাসীদের পরিচয় সম্পর্কে হাদীসে এসেছে
হুযাইফা রা. বলেন: আরাফবাসী হল এমন এক দল, যাদের
সৎকর্ম এত পরিমাণ যে তা তাদের জাহান্নামে যেতে দেয় না আবার পাপাচার এত পরিমাণ যে
তা জান্নাতে প্রবেশ করতে দেয় না। (অর্থাৎ পাপ ও পুণ্য সমানে সমান) যখন তাদের মুখ
জাহান্নামবাসীদের দিকে ফেরানো হবে তখন তারা বলবে, হে আমাদের প্রভূ! আমাদেরকে যালিম কওমের অন্তর্ভুক্ত করবেন না। তারা এমনি অবস্থায় থাকবে। তখন
তোমার প্রতিপালক বলবেন, যাও, তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করো। তোমাদের ক্ষমা করে দিলাম। (বর্ণনায়:
হাকেম, তিনি বলেছেন, হাদীসটি বুখারী ও মুসলিমের শর্তে সহীহ। ইমাম জাহাবী এ কথার সাথে একমত পোষণ করেছেন।)
ইবনে কাসীর রহ. আরাফ ও
আরাফবাসীদের পরিচয় প্রসঙ্গে বলেন: সূরা আরাফে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কথা দ্বারা
বুঝা গেল জান্নাত ও জাহান্নামের মধ্যে একটি প্রাচীর আছে। যার কারণে জাহান্নামীরা জান্নাতের কাছে যেতে পারবে না। ইবনে জরীর রহ. বলেন, এই প্রাচীর সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেছেন,
فَضُرِبَ
بَيْنَهُمْ بِسُورٍ لَهُ بَابٌ بَاطِنُهُ فِيهِ الرَّحْمَةُ وَظَاهِرُهُ مِنْ
قِبَلِهِ الْعَذَابُ (سورة الحديد: 13)
তারপর তাদের মাঝখানে একটি প্রাচীর
স্থাপন করে দেয়া হবে, যাতে
একটি দরজা থাকবে। তার ভিতরভাগে থাকবে রহমত এবং
তার বহির্ভাগে থাকবে আযাব। (সূরা
আল হাদীদ, আয়াত
১৩)
আর সূরা আরাফে আল্লাহ এ
প্রাচীরের কাছে অবস্থানকারীদের সম্পর্কে বলেছেন : এবং আরাফের উপর থাকবে কিছু লোক।
আরবী ভাষায় উঁচু স্থানকে
আরাফ বলা হয়।
আরাফবাসী কারা হবে এ
সম্পর্কে তাফসীরবিদদের মধ্যে মতভেদ আছে। তবে
সকলের মতামত একত্র করলে যে ফলাফল বের হয়ে আসে তা হল, যাদের সৎকর্ম ও পাপাচারের
পরিমাণ সমানে সমান হবে তারাই হবে আরাফবাসী। সাহাবী
হুযাইফা, ইবনে আব্বাস, ইবনে মাসউদ রা. প্রমূখের মতামত এ রকমই। (তাফসীরে ইবনে কাসীর)
পুলসিরাত ও জান্নাতের মধ্যে একটি প্রতিবন্ধক গেট
যখন মুমিনগণ পুলসিরাত অতিক্রম করে জাহান্নাম থেকে
মুক্তি পাবেন আর আল্লাহ তাআলা শাফাআতের অনুমতি দিয়ে বহু সংখ্যক লোককে জাহান্নাম
থেকে মুক্তি দান করবেন তখন যে সকল মানুষ দ্বারা অন্যেরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তারা
পুলসিরাতের প্রতিবন্ধক গেটে আটকা পড়ে যাবে। তাদের আটকে দেয়া হবে এ জন্য, যে সকল মানুষের
অধিকার সে ক্ষুন্ন করেছে তাদের প্রতিকার আদায় করা হবে তার থেকে।
এ প্রসঙ্গে হাদীসে এসেছে :
عن أبي سعيد الخدري رضي الله عنه قال:
قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: يخلص المؤمنون من النار ، فيحبسون على قنطرة
بين الجنة والنار ، فيقتص لبعضهم من بعض مظالم كانت بينهم في الدنيا ، حتى إذا
هذبوا ونقوا أذن لهم في دخول الجنة. رواه البخاري
আবু সায়ীদ আল খুদরী রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: মুমিনগণ জাহান্নাম থেকে
মুক্তি পাবে কিন্তু তারা জান্নাত ও জাহান্নামের মধ্যবর্তী একটি গেটে আটকে যাবে। তখন দুনিয়াতে
তারা একজন অপর জনের প্রতি যে জুলুম ও অন্যায় আচরণ করেছে তার প্রতিকার ও বিচার করা
হবে। যখন দায়মুক্ত হবে ও তারা পবিত্র হবে
তখন জান্নাতে প্রবেশের অনুমতি পাবে। (বর্ণনায়: বুখারী)
হাফেজ ইবনে হাজার রহ. বলেছেন : সম্ভবত এরাই হবে
আরাফবাসী। যারা অন্য লোকের অধিকার হরণ বা তাদের উপর জুলুম-অত্যাচার করার কারণে জান্নাতে
প্রবেশের পথে আটকে যাবে।
জাহান্নামে প্রবেশ করবে প্রতাপশালীরা আর জান্নাতে যাবে দুর্বল অসহায় মানুষগুলো
হাদীসে এসেছে
عن أبي هريرة رضي الله عنه قال: قال
رسول الله صلى الله عليه وسلم: تحاجت الجنة والنار ، فقالت النار : أوثرت
بالمتكبرين والمتجبرين ، وقالت الجنة : ما لي لا يدخلني إلا ضعفاء الناس وسقطهم .
قال الله تبارك وتعالى للجنة : أنت رحمتي أرحم بك من أشاء من عبادي ، وقال للنار :
إنما أنت عذابي أعذب بك من أشاء من عبادي ، رواه البخاري ومسلم
আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: জান্নাত ও জাহান্নাম পরস্পর বিতর্ক করবে। জাহান্নাম বলবে,
আমাকে প্রতাপশালী, শক্তিধর, স্বৈরাচারদের দেয়া হয়েছে। আর জান্নাত বলবে, আমার যে
কী হলো? শুধু আমার এখানে দুর্বল আর সমাজের পতিত মানুষগুলো আসছে। তখন আল্লাহ
জান্নাতকে বলবেন: তুমি হলে আমার রহমত ও করুনা। আমার বান্দাদের মধ্যে যাকে
ইচ্ছা আমার রহমত দ্বারা অনুগ্রহ করি। আর তিনি জাহান্নাম-কে বলবেন: আর তুমি হলে আমার
আযাব। বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা আমি আমার আযাব দিয়ে শাস্তি দিয়ে থাকি। (বর্ণনায় :
বুখারী ও মুসলিম)
সংকলন: আব্দুল মালেক আলী আল-কুলাইব
অনুবাদক: আব্দুল্লাহ শহীদ আব্দুর রহমান
সূত্র: ইসলাম প্রচার ব্যুরো, রাবওয়াহ, রিয়াদ, সৌদিআরব
২য় পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন।
ডাউনলোড করুনঃ বইঃ কিয়ামতের আলামত - ফ্রি ডাউনলোড
ডাউনলোড করুনঃ বইঃ যা হবে মরণের পরে - ফ্রি ডাউনলোড
আরও পড়ুনঃ বিবিধ চিত্তাকর্ষক হাদিসসমূহ
আরও পড়ুনঃ কুরআনের আলোকে জান্নাত ও জাহান্নাম
আরও পড়ুনঃ জান্নাতে কি হবে?
আরও পড়ুনঃ জান্নাতে নারীদের অবস্থা
আরও পড়ুনঃ কোরআন-হাদীসের আলোকে শাফাআত
আরও পড়ুনঃ মুমিনদের শাফা‘আত
আরও পড়ুনঃ কবরের আযাব
পোস্টটি ভালো লাগলে শেয়ার করতে ভুলবেন না কিন্তু।
আমার দ্বীনী ভাইয়েরা দয়া করে পিডিএফ ফরম্যাটে আপলোড় করবেন
উত্তরমুছুন