সহীহ সুন্নাহ’র আলোকে জান্নাতের বৈশিষ্ট্য (২য় পর্ব)
চতুর্দশ পরিচ্ছেদ
জান্নাতবাসীদের
খাদ্য ও পানীয়
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ وَفَٰكِهَةٖ مِّمَّا
يَتَخَيَّرُونَ ٢٠ وَلَحۡمِ طَيۡرٖ مِّمَّا يَشۡتَهُونَ ٢١ ﴾ [الواقعة: ٢٠، ٢١]
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া
তা‘আলা আরও বলেন:
﴿ هَٰذَا ذِكۡرٞۚ
وَإِنَّ لِلۡمُتَّقِينَ لَحُسۡنَ مََٔابٖ ٤٩ جَنَّٰتِ عَدۡنٖ مُّفَتَّحَةٗ لَّهُمُ
ٱلۡأَبۡوَٰبُ ٥٠ مُتَّكِِٔينَ فِيهَا يَدۡعُونَ فِيهَا بِفَٰكِهَةٖ كَثِيرَةٖ وَشَرَابٖ
٥١ ﴾ [ص: ٤٩، ٥١]
“এ এক স্মরণ। মুত্তাকীদের জন্য রয়েছে উত্তম আবাস—
চিরস্থায়ী জান্নাত, যার দরজাসমূহ তাদের জন্য উন্মুক্ত।
সেখানে তারা আসীন হবে হেলান দিয়ে, সেখানে তারা বহুবিধ ফলমূল
ও পানীয় চাইবে।”[2]
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
﴿ إِنَّ ٱلۡأَبۡرَارَ يَشۡرَبُونَ مِن كَأۡسٖ كَانَ مِزَاجُهَا كَافُورًا
٥ عَيۡنٗا يَشۡرَبُ بِهَا عِبَادُ ٱللَّهِ يُفَجِّرُونَهَا تَفۡجِيرٗا ٦ ﴾ [الانسان: ٥، ٦]
“নিশ্চয় সৎকর্মশীলেরা পান করবে এমন
পূর্ণপাত্র-পানীয় থেকে যার মিশ্রণ হবে কাফূর— এমন একটি প্রস্রবণ যা থেকে আল্লাহর
বান্দাগণ পান করবে, তারা এ প্রস্রবণকে যথেচ্ছা প্রবাহিত করবে।”[3]
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া
তা‘আলা আরও বলেন:
﴿مَنۡ عَمِلَ سَيِّئَةٗ فَلَا يُجۡزَىٰٓ إِلَّا مِثۡلَهَاۖ وَمَنۡ عَمِلَ
صَٰلِحٗا مِّن ذَكَرٍ أَوۡ أُنثَىٰ وَهُوَ مُؤۡمِنٞ فَأُوْلَٰٓئِكَ يَدۡخُلُونَ ٱلۡجَنَّةَ
يُرۡزَقُونَ فِيهَا بِغَيۡرِ حِسَابٖ٤٠﴾ [غافر:٤٠]
“কেউ মন্দ কাজ করলে সে শুধু তার কাজের অনুরূপ
শাস্তিই প্রাপ্ত হবে। আর যে পুরুষ কিংবা নারী মুমিন হয়ে সৎকাজ করবে তবে তারা
প্রবেশ করবে জান্নাতে, সেখানে তাদেরকে দেয়া হবে অগণিত রিযিক।”[4]
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
﴿ يُطَافُ عَلَيۡهِم بِصِحَافٖ مِّن ذَهَبٖ وَأَكۡوَابٖۖ وَفِيهَا مَا
تَشۡتَهِيهِ ٱلۡأَنفُسُ وَتَلَذُّ ٱلۡأَعۡيُنُۖ وَأَنتُمۡ فِيهَا خَٰلِدُونَ ٧١ ﴾ [الزخرف: ٧١]
“স্বর্ণের থালা ও পানপাত্র নিয়ে তাদেরকে প্রদক্ষিণ
করা হবে; সেখানে মন যা চায় এবং যাতে নয়ন তৃপ্ত হয় তাই থাকবে। আর সেখানে তোমরা
স্থায়ী হবে।”[5]
৫৯. জাবের
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি:
«إِنَّ أَهْلَ الْجَنَّةِ
يَأْكُلُونَ فِيهَا , وَيَشْرَبُونَ , وَلاَ يَتْفُلُونَ , وَلاَ يَبُولُونَ , وَلاَ
يَتَغَوَّطُونَ , وَلاَ يَمْتَخِطُونَ» . قَالُوا : فَمَا بَالُ الطَّعَامِ ؟ قَالَ
: «جُشَاءٌ وَرَشْحٌ كَرَشْحِ الْمِسْكِ , يُلْهَمُونَ التَّسْبِيحَ وَالتَّحْمِيدَ
كَمَا يُلْهَمُونَ النَّفَسَ» . (رواه مسلم) .
“নিশ্চয়ই জান্নাতবাসীগণ
সেখানে খাবে এবং পান করবে; তারা সেখানে থুথু ফেলবে না, প্রস্রাব করবে না, পায়খানা
করবে না এবং তাদের নাক থেকে শ্লেষ্মাও বের হবে না। সাহাবীগণ জিজ্ঞাসা করলেন: তাহলে
খাবারের অবস্থা কি হবে? জবাবে তিনি বললেন: “ঢেকুরের মাধ্যমেই তা হযম হয়ে যাবে; আর
সেখানকার ঘাম হবে মিশকের ন্যায় সুগন্ধময়। আর তাদেরকে
ইলহাম করা হবে (স্বাভাবিকভাবে বের হবে) তাসবীহ ও তাহমীদ (আল্লাহর প্রশংসা),
যেমনিভাবে শ্বাসপ্রশ্বাসের ইলহাম (তোমাদেরকে স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ) করানো হয়।”[6]
৬০. আনাস ইবন মালেক
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
« إن طير الجنة كأمثال البخت
, ترعى في شجر الجنة » . فقال أبو بكر رضي الله عنه : يا رسول الله ! إن هذه لطير
ناعمة . فقال أكلتها أنعم منها , ( قالها ثلاثا ) , وأني لأرجو أن تكون ممن يأكل منها
يا أبا بكر » . (رواه أحمد) .
“নিশ্চয়ই
জান্নাতের পাখি হবে খোরাসানী উটের মত, সেগুলো জান্নাতের গাছে গাছে চরবে।” অতঃপর
আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন: হে আল্লাহ রাসূল! নিশ্চয়ই এই পাখিগুলো মোলায়েম
ও স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ হবে। তখন তিনি বললেন: “সেগুলো যারা খাবে, তারা তার চেয়ে বেশি মোলায়েম
ও স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ (তিনি এই কথাটি তিনবার বলেছেন); আর আমি অবশ্যই কামনা করি যে,
তুমি হবে তাদেরই একজন, যার তা থেকে খাবে।”[7]
৬১. সালেম ইবন ‘আমির
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:
«كان أصحاب رسول الله صلى
الله عليه و سلم يقولون : إن الله لينفعنا بالأعراب و مسائلهم . قال : أقبل أعرابي
يوما , فقال : يا رسول الله ! قد ذكر الله عز و جل في الجنة شجرة مؤذية , و ما كنت
أرى أن في الجنة شجرة تؤذي صاحبها . فقال رسول الله صلى الله عليه و سلم : فما هي ؟
قال : السدر , فإن لها شوكا مؤذيا . قال رسول الله صلى الله عليه و سلم : أليس
الله يقول: ﴿ في سدر مخضود ﴾ يخضد الله شوكه , فيجعل مكان
كل شوكة ثمرة , فإنها لتنبت ثمرا تفتق الثمرة منها عن اثنين و سبعين لونا من طعام
, ما فيها لون يشبه الآخر » .
“রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীগণ বলতেন: নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা
বেদুইনগণ ও তাদের প্রশ্ন করার মাধ্যমে আমাদের অনেক উপকার করেছেন। বর্ণনাকারী বলেন:
কোন একদিন এক বেদুইন আগমন করল, তারপর বলল: হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহ তা‘আলা
জান্নাতের মধ্যে একটি কষ্টদায়ক বৃক্ষ থাকবে বলে উল্লেখ করেছেন, অথচ আমি মনে করি না
যে, জান্নাতে এমন কোন বৃক্ষ থাকবে, যা জান্নাতবাসীকে কষ্ট দিবে। তখন রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞাস করলেন: “সেই বৃক্ষটি কোনটি?” সে বলল:
কুলবৃক্ষ; কেননা, তার মাঝে কষ্টদায়ক কাঁটা রয়েছে। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: “আল্লাহ তা‘আলা কি বলেননি:
﴿ في سدر مخضود ﴾ [যাতে আছে কাঁটাহীন কুলগাছ] ? আল্লাহ
তা‘আলা তার কাঁটা কেটে দিয়েছেন, তারপর প্রত্যেকটি কাঁটার জায়গায় একটি করে ফলের
ব্যবস্থা করেছেন; সুতরাং সেই বৃক্ষটি অনেক ফল দিবে, তার ফল থেকে বাহাত্তর রঙের
খাবার বেরিয়ে আসবে, তাতে একটি রঙের সাথে অন্যটির কোন মিল থাকবে না।”[8]
৬২. আনাস ইবন মালেক
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:
« بلغ عبد الله بن سلام مقدم النبي صلى الله عليه و سلم
المدينة , فأتاه , فقال : إني سائلك عن ثلاث لا يعلمهن إلا نبي . قال : ما أول أشراط
الساعة ؟ وما أول طعام يأكله أهل الجنة ؟ ومن أي شيء ينزع الولد إلى أبيه ومن أي شيء
ينزع إلى أخواله ؟ فقال رسول الله صلى الله عليه و سلم : « أخبرني بهن آنفا جبريل » . فقال
عبد الله ابن سلام : ذاك عدو اليهود من الملائكة . فقال رسول الله صلى الله عليه و
سلم : « أما أول أشراط الساعة فنار تحشرالناس من المشرق إلى المغرب , وأما أول طعام
يأكله أهل الجنة فزيادة كبد الحوت , وأما الشبه في الولد فإن الرجل إذا غشي المرأة
فسبقها ماؤه كان الشبه له وإذا سبق ماؤها كان الشبه لها » . قال أشهد أن لا إله إلا الله
وأنك رسول الله صلى الله عليه و سلم .
ثم قال : يا رسول الله ! إن
اليهود قوم بهت , إن علموا بإسلامي قبل أن تسألهم بهتوني عندك . فجاءت اليهود , ودخل
عبد الله البيت , فقال النبي صلى الله عليه و سلم : « أي رجل فيكم عبد الله بن سلام
» . قالوا : أعلمنا وابن أعلمنا , وأخيرنا وابن أخيرنا
. فقال رسول الله صلى الله عليه و سلم : «أفرأيتم إن أسلم عبد الله ؟» . قالوا
: أعاذه الله من ذلك . فخرج عبد الله إليهم , فقال أشهد أن لا إله إلا الله وأشهد أن
محمدا رسول الله . فقالوا : شرنا وابن شرنا , ووقعوا فيه » . (رواه البخاري) .
“আবদুল্লাহ
ইবন সালাম রা. এর নিকট নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের আগমনের সংবাদ পৌঁছলে
তিনি তাঁকে কয়েকটি প্রশ্ন করলেন। তিনি বললেন: আমি আপনাকে তিনটি প্রশ্ন করছি;
এগুলোর সঠিক উত্তর নবী ব্যতীত অন্য কেউ জানে না— (১) কিয়ামতের সর্বপ্রথম আলামত ও
লক্ষণ কী? (২) জান্নাতবাসীদের সর্বপ্রথম খাবার কী? এবং (৩) কি কারণে সন্তান
আকৃতিতে কখনও পিতার অনুরূপ, আবার কখনও বা মায়ের অনুরূপ হয়? নবী সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: এই বিষয়গুলো সম্পর্কে এইমাত্র জিবরাঈল আ. আমাকে জানিয়ে
গেলেন। আবদুল্লাহ ইবন সালাম রা. একথা শুনে বললেন, ফিরিশতাদের মধ্যে তিনিই ইয়াহূদীদের
শত্রু। নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম (তার প্রশ্নের জবাবে) বললেন: (১)
কিয়ামত নিকটবর্তী হওয়ার সর্বপ্রথম লক্ষণ হল লেলীহান আগুন, যা মানুষকে পূর্বদিক
থেকে পশ্চিম দিকে ধাওয়া করে নিয়ে যাবে এবং সবাইকে সমবেত করবে; (২) জান্নাতবাসীগণ
সর্বপ্রথম যে খাবার ভক্ষণ করবে, তা হল মাছের কলিজার অতিরিক্ত অংশ; (৩) যদি নারীর
আগে পুরুষের বীর্যপাত ঘটে, তবে সন্তান পিতার অনুরূপ হয়; আর যদি পুরুষের আগে নারীর
বীর্যপাত ঘটে, তবে সন্তান মায়ের অনুরূপ হয়। আবদুল্লাহ ইবন সালাম বললেন: আমি
সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো হক্ব ইলাহ (উপাস্য) নেই এবং নিশ্চয়ই আপনি
আল্লাহর রাসূল।
অতঃপর সে বলল: হে আল্লাহর
রাসূল! ইয়াহূদীগণ এমন একটি সম্প্রদায়, যারা অন্যের কুৎসা রটনায় অত্যন্ত পটু। আমার
ইসলাম গ্রহণ করার বিষয়টি প্রকাশ হওয়ার পূর্বে আমার অবস্থা সম্পর্কে তাঁদেরকে
জিজ্ঞাসা করুন। নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে ডাকলেন, তারা হাযির
হল। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, তোমাদের মাঝে আবদুল্লাহ ইবন সালাম কেমন লোক? জবাবে তারা
বলল, তিনি আমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ব্যক্তি এবং সর্বোত্তম ব্যক্তির পুত্র; তিনি
আমাদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তি এবং সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তির পুত্র। নবী
সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: আচ্ছা বলত, যদি আবদুল্লাহ ইবন সালাম ইসলাম
গ্রহণ করে, তাহলে কেমন হবে? তোমরা তখন কি করবে? তারা বলল, আল্লাহ তাকে এ কাজ থেকে
রক্ষা করুন। নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবার এ কথাটি বললেন, তারাও আগের
মত করে উত্তর দিল। তখন আবদুল্লাহ ইবন সালাম বেরিয়ে আসলেন এবং বললেন: أشهد أن لا إله إلا الله
وأشهد أن محمدا رسول الله
(আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো হক্ক ইলাহ নেই এবং মুহাম্মদ
সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল)। এ কথা শুনে ইয়াহূদীগণ বলতে লাগল,
সে আমাদের মধ্যে মন্দ লোক এবং মন্দ লোকের ছেলে। আর তারা তাকে হেয় প্রতিপন্ন করার
উদ্দেশ্য আরও নানান কথাবার্তা বলতে শুরু করল।”[9]
৬৩. আবূ উমামা
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:
« إن الرجل من أهل الجنة ليشتهي
الشراب من شراب الجنة , فيجيء إليه الإبريق , فيقع في يده , فيشرب , فيعود إلى مكانه
» .
“নিশ্চয়ই
জান্নাতবাসীদের মধ্য থেকে এক ব্যক্তি জান্নাতের পানীয় থেকে পানীয় গ্রহণ করার
আকঙ্খা প্রকাশ করবে, অতঃপর তার নিকট জগ বা এ জাতীয় পানপাত্র চলে আসবে এবং তার
হাতের মধ্যে পানীয় ঢালবে, তারপর সে পান করবে; অতঃপর সেই পাত্র আবার তার জায়গায়
ফিরে যাবে।”[10]
* * *
পঞ্চদশ পরিচ্ছেদ
জান্নাতবাসীদের
পোষাক-পরিচ্ছদ
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ يُحَلَّوۡنَ فِيهَا
مِنۡ أَسَاوِرَ مِن ذَهَبٖ وَلُؤۡلُؤٗاۖ وَلِبَاسُهُمۡ فِيهَا حَرِيرٞ ٢٣ ﴾ [الحج: ٢٣]
“সেখানে তাদেরকে অলংকৃত করা হবে সোনার কাঁকন ও
মুক্তা দ্বারা এবং সেখানে তাদের পোষাক-পরিচ্ছদ হবে রেশমের।”[11]
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া
তা‘আলা আরও বলেন:
﴿ يُحَلَّوۡنَ فِيهَا
مِنۡ أَسَاوِرَ مِن ذَهَبٖ وَيَلۡبَسُونَ ثِيَابًا خُضۡرٗا مِّن سُندُسٖ وَإِسۡتَبۡرَقٖ
مُّتَّكِِٔينَ فِيهَا عَلَى ٱلۡأَرَآئِكِۚ نِعۡمَ ٱلثَّوَابُ وحَسُنَتۡ مُرۡتَفَقٗا
٣١ ﴾ [الكهف: ٣١]
“সেখানে তাদেরকে স্বর্ণ কংকনে অলংকৃত করা হবে,
তারা পরবে সূক্ষ্ম ও পুরু রেশমের সবুজ বস্ত্র, আর তারা সেখানে থাকবে হেলান দিয়ে
সুসজ্জিত আসনে; কত সুন্দর পুরস্কার ও উত্তম বিশ্রামস্থল!”[12]
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
﴿ عَٰلِيَهُمۡ ثِيَابُ
سُندُسٍ خُضۡرٞ وَإِسۡتَبۡرَقٞۖ وَحُلُّوٓاْ أَسَاوِرَ مِن فِضَّةٖ وَسَقَىٰهُمۡ رَبُّهُمۡ
شَرَابٗا طَهُورًا ٢١ ﴾ [الانسان: ٢١]
“তাদের আবরণ হবে সূক্ষ্ম সবুজ রেশম ও স্থূল রেশম, আর তারা অলংকৃত হবে রৌপ্য নির্মিত কংকনে, আর
তাদের রব তাদেরকে পান করাবেন পবিত্র পানীয়।”[13]
৬৪. আবূ হুরায়রা
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন:
« مَنْ يَدْخُلُ الْجَنَّةَ
يَنْعَمُ لاَ يَبْأَسُ , لاَ تَبْلَى ثِيَابُهُ , وَلاَ يَفْنَى شَبَابُهُ » . (رواه مسلم) .
“যে ব্যক্তি জান্নাতে
প্রবেশ করবে, সে ব্যক্তি শুধু সুখ-শান্তি উপভোগ করবে, কখনও দুঃখ-কষ্ট ভোগ করবে না;
তার পোষাক-পরিচ্ছদ পুরাতন হবে না এবং তার যৌবন কখনও বিনষ্ট হবে না।”[14]
৬৫. আবদুল্লাহ ইবন
মাস‘উদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«أول زمرة يدخلون الجنة كأن
وجوههم ضوء القمر ليلة البدر , والزمرة الثانية على لون أحسن كوكب درى فى السماء ,
لكل رجل منهم زوجتان من الحور العين , على كل زوجة سبعون حلة , يرى مخ سوقهما من وراء
لحومهما وحللها كما يرى الشراب الأحمر فى الزجاجة البيضاء » . (رواه الطبراني) .
“সর্বপ্রথম যে দল
জান্নাতে প্রবেশ করবে, তাদের মুখমণ্ডল মনে হবে যেন পূর্ণিমার রাতের চাঁদের আলোর মত
উজ্জ্বল। আর দ্বিতীয় দল হবে আকাশের সর্বাধিক দীপ্তিমান উজ্জ্বল তারকার মত সুন্দর
বর্ণের। আর তাদের প্রত্যেকের জন্য ডাগর চক্ষুবিশিষ্টা হূরদের মধ্য থেকে দু’জন
স্ত্রী থাকবে, প্রত্যেক স্ত্রী’র গায়ে থাকবে সত্তর সেট পোষাক, যার সৌন্দর্যের ফলে
গোশত ও তার পোষাক ভেদ করে পায়ের নলার হাঁড়ের মজ্জা ঠিক তেমনিভাবে দেখা যাবে,
যেমনিভাবে সাদা গ্লাসের মধ্যে লাল পানীয় দেখা যায়।”[15]
৬৬. আবদুল্লা ইবন
‘আমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:
« جاء رجل إلى النبي صلى الله
عليه و سلم , فقال : يا رسول الله ! أخبرنا عن ثياب أهل الجنة خلقا تخلق أم نسجا تنسج
؟ فضحك بعض القوم , فقال رسول الله صلى الله عليه و سلم : مم تضحكون ؟! من جاهل يسأل
عالما ؟ ثم أكب رسول الله صلى الله عليه و سلم , ثم قال : أين السائل ؟ قال : هو ذا
أنا يا رسول الله . قال : لا , بل تشقق عنها ثمر الجنة ثلاث مرات » . (رواه أحمد) .
“কোনো
এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের আগমন করল, তারপর বলল: হে
আল্লাহর রাসূল! আপনি আমাদেরকে জান্নাতবাসীদের কাপড় সম্পর্কে বলে দিন, তা কি সৃষ্টি
করা হবে, নাকি বয়ন করা হবে? তখন কাওমের (সম্প্রদায়ের) কেউ কেউ হাসল, তারপর
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: তোমরা কেন হাসছ?! অজ্ঞ
ব্যক্তি জ্ঞানী ব্যক্তির নিকট প্রশ্ন করার কারণে? অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম (প্রশ্নকর্তার বিষয়ে) মনোনিবেশ করলেন, তারপর বললেন:
প্রশ্নকর্তা কোথায়? সে বলল: হে আল্লাহর রাসূল! এই তো আমি। তখন তার প্রশ্নের জবাবে
তিনি বললেন: না; বরং (গাছ থেকে হবে) জান্নাতের ফলসমূহ থেকে তা ফেটে বেরিয়ে আসবে। (এই কথাটি তিনি
তিনবার বলেছেন)।”[16]
* * *
ষোড়শ পরিচ্ছেদ
জান্নাতের
বিছানা
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ فِيهَا سُرُرٞ
مَّرۡفُوعَةٞ ١٣ وَأَكۡوَابٞ مَّوۡضُوعَةٞ ١٤ وَنَمَارِقُ مَصۡفُوفَةٞ ١٥ وَزَرَابِيُّ
مَبۡثُوثَةٌ ١٦ ﴾ [الغاشية: ١٣، ١٦]
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া
তা‘আলা আরও বলেন:
﴿ مُتَّكِِٔينَ
عَلَىٰ فُرُشِۢ بَطَآئِنُهَا مِنۡ إِسۡتَبۡرَقٖۚ وَجَنَى ٱلۡجَنَّتَيۡنِ دَانٖ ٥٤
﴾ [الرحمن: ٥٤]
“সেখানে তারা হেলান দিয়ে বসবে এমন ফরাশে যার
অভ্যন্তরভাগ হবে পুরু রেশমের। আর দুই উদ্যানের ফল হবে কাছাকাছি।”[18]
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
﴿ مُتَّكِِٔينَ
عَلَىٰ رَفۡرَفٍ خُضۡرٖ وَعَبۡقَرِيٍّ حِسَانٖ ٧٦ ﴾ [الرحمن: ٧٦]
৬৭. আবূ সা‘ঈদ খুদরী
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম
আল্লাহ তা‘আলার বাণী:﴿ وَفُرُشٖ مَّرۡفُوعَةٍ
٣٤ ﴾ [আর সমুচ্চ শয্যাসমূহ] প্রসঙ্গে বলেছেন:
«
ارتفاعها كما بين السماء والأرض , مسيرة ما بينها خمسمائة عام » . (رواه ابن أبي الدنيا و الترمذي) .
“তার
(বিছানার) উচ্চতা হবে আসমান এবং যমীনের মধ্যকার উচ্চতার মত, তার মধ্যকার আয়তন হল
পাঁচশত বছরের ভ্রমণপথের দূরেত্বের সমান।”[20]
৬৮. আবদুল্লাহ ইবন
মাস‘উদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলার বাণী: ﴿ بَطَآئِنُهَا
مِنۡ إِسۡتَبۡرَقٖۚ ﴾ [যার অভ্যন্তরভাগ হবে পুরু রেশমের]
প্রসঙ্গে বলেছেন:
« قد أُخبرتم بالبطائن , فكيف بالظاهر ؟!» . (رواه البيهقي) .
“তোমাদেরকে অভ্যন্তরভাগের ব্যাপারে জানানো হয়েছে, সুতরাং
(ভেবে দেখ) তার বর্হিভাগের অবস্থা কেমন হতে পারে?! [21]
* * *
সপ্তদশ পরিচ্ছেদ
জান্নাতবাসীদের
নারীসমষ্টি
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ وَحُورٌ عِينٞ
٢٢ كَأَمۡثَٰلِ ٱللُّؤۡلُوِٕ ٱلۡمَكۡنُونِ ٢٣ ﴾ [الواقعة: ٢٢، ٢٣]
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া
তা‘আলা আরও বলেন:
﴿ إِنَّ لِلۡمُتَّقِينَ
مَفَازًا ٣١ حَدَآئِقَ وَأَعۡنَٰبٗا ٣٢ وَكَوَاعِبَ أَتۡرَابٗا ٣٣ ﴾ [النبا: ٣١، ٣٣]
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
﴿ إِنَّآ أَنشَأۡنَٰهُنَّ
إِنشَآءٗ ٣٥ فَجَعَلۡنَٰهُنَّ أَبۡكَارًا ٣٦ عُرُبًا أَتۡرَابٗا ٣٧ ﴾ [الواقعة: ٣٥، ٣٧]
৬৯. আনাস ইবন মালেক রাদিয়াল্লাহু
‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন:
«لروحة في سبيل الله أو غدوة
خير من الدنيا وما فيها ولقاب قوس أحدكم من الجنة أو موضع قيد يعني سوطه خير من الدنيا
وما فيها , ولو أن امرأة من أهل الجنة اطلعت إلى أهل الأرض لملأت ما بينهما ريحا ,
لأضاءت ما بينهما , ولنصيفها على رأسها خير من الدنيا وما فيها» . (رواه البخاري) .
“আল্লাহর
রাস্তায় একটি সকাল অথবা একটি বিকাল অতিবাহিত করা দুনিয়া ও তার মধ্যকার সবকিছু থেকে
উত্তম। আর তোমাদের কারোর ধনুকের কিংবা চাবুক রাখার মত জান্নাতের জায়গাটুকু দুনিয়া
ও তার মধ্যকার সবকিছু থেকে উত্তম। জান্নাতী কোনো মহিলা যদি দুনিয়াবাসীদের প্রতি
উঁকি দেয়, তাহলে আসমান ও যমীনের মধ্যবর্তী সবকিছু সুরভীতে ভরপুর হয়ে যাবে এবং
উভয়ের মধ্যবর্তী সবকিছু আলোকিত হয়ে যাবে। আর তার মাথার ওড়না দুনিয়া ও তার মধ্যকার
সবকিছু থেকে উত্তম।”[25]
৭০. আবূ হুরায়রা
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন:
« إن أول زمرة يدخلون الجنة
على صورة القمر ليلة البدر , و التي تليها على أضوإ كوكب دري في السماء , لكل امرئ
منهم زوجتان اثنتان , يرى مخ سوقهما من وراء اللحم , وما في الجنة أعزب » . (رواه البخاري) .
“সর্বপ্রথম
যে দল জান্নাতে প্রবেশ করবে, তাদের মুখমণ্ডল হবে পূর্ণিমার রাতের চাঁদের মত
উজ্জ্বল। তারপর যে দল তাদের অনুগামী হবে, তাদের মুখমণ্ডল হবে আকাশের সর্বাধিক
দীপ্তিমান উজ্জ্বল তারকার মত। আর তাদের প্রত্যেকের জন্য এমন দু’জন স্ত্রী থাকবে,
যাদের সৌন্দর্যের ফলে গোশত ভেদ করে পায়ের নলার হাঁড়ের মজ্জা দেখা যাবে। আর
জান্নাতের মধ্যে কোনো অবিবাহিত নেই।”[26]
৭১. আবূ সা‘ঈদ খুদরী
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
« إِنَّ الرَّجُلَ لَيَتَّكِئُ
فِى الْجَنَّةِ سَبْعِينَ سَنَةً قَبْلَ أَنْ يَتَحَوَّلَ ، ثُمَّ تَأْتِيهِ امْرَأَتُهُ
، فَتَضْرِبُ مَنْكِبَيْهِ ، فَيَنْظُرُ وَجْهَهُ فِى خَدِّهَا أَصْفَى مِنَ الْمِرْآةِ
، وَإِنَّ أَدْنَى لُؤْلُؤَةٍ عَلَيْهَا تُضِىءُ مَا بَيْنَ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ
، فَتُسَلِّمُ عَلَيْهِ ، قَالَ : فَيَرُدُّ السَّلامَ , وَيَسْأَلُهَا مَنْ أَنْتِ؟
فَتَقُولُ : أَنَا مِنَ الْمَزِيدِ ، وَإِنَّهُ لَيَكُونُ عَلَيْهَا سَبْعُونَ ثَوْبًا
, أَدْنَاهَا مِثْلُ النُّعْمَانِ مِنْ طُوبَى ، فَيَنْفُذُهَا بَصَرُهُ حَتَّى يَرَى
مُخَّ سَاقِهَا مِنْ وَرَاءِ ذَلِكَ ، وَإِنَّ عَلَيْهَا مِنَ التِّيجَانِ , إِنَّ
أَدْنَى لُؤْلُؤَةٍ منها لَتُضِىءُ مَا بَيْنَ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ » . (رواه الطبراني) .
“নিশ্চয়ই
জান্নাতের মধ্যে পুরুষ ব্যক্তি একভাবে সত্তর বছর হেলান দিয়ে থাকবে, অতঃপর তার নিকট
তার স্ত্রী আসবে এবং সে তার দুই কাঁধের উপর (মৃদু) আঘাত করবে; তারপর সে তার সামনের
দিকে লক্ষ্য করে দেখবে তার (স্ত্রী’র) গণ্ডদেশ (গাল) আয়নার চেয়েও অনেক বেশি
স্বচ্ছ; তার চেহারার উপর একটি ছোট্ট মুক্তাদানার আলোর প্রতিবিম্ব নিশ্চিতভাবে
পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যকার সমপরিমাণ জায়গাকে আলোকিত করে দিবে; অতঃপর তার স্ত্রী
তাকে সালাম পেশ করবে; রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: তারপর
সেও সালামের জবাব পেশ করবে এবং তাকে জিজ্ঞাসা করবে: তুমি কে? তখন সে বলবে: আমি
(তোমার জন্য) অতিরিক্ত বরাদ্ধ; আর তার পোশাক হবে সত্তরটি, তন্মধ্যে সবচেয়ে
নিম্নমানের পোশাকটির অবস্থা হবে ‘তুবা’ নামক বৃক্ষ থেকে উৎপাদিত ‘নু‘মান’ নামক
পাহাড়ের মত; তারপর সেই পোশাক তাকে পরানো হবে, তারপরেও এর বাইরে থেকে সৌন্দর্যের
ফলে তার পায়ের নলার হাঁড়ের মজ্জা দেখা যাবে; আর তার মাথায় থাকবে (মুক্তার) মুকুট,
যার মধ্যকার ছোট্ট একটি মুক্তাদানা পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যকার সমপরিমাণ জায়গাকে
আলোকিত করে দিবে।”[27]
অর্থসহ
হাদিসের বিশেষ শব্দ-তালিকা:
(أَنَا مِنَ الْمَزِيدِ): অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলার বাণী: ﴿ لَهُم مَّا يَشَآءُونَ
فِيهَا وَلَدَيۡنَا مَزِيدٞ ٣٥ ﴾ [ق: ٣٥] [এখানে তারা যা কামনা করবে তা-ই থাকবে এবং আমার কাছে রয়েছে তারও বেশি। -
সূরা ক্বাফ: ৩৫]।
(النُّعْمَان): আরাফাতের পাহাড়।
(فَيَنْفُذُهَا): তার দৃষ্টি এই কাপড়সমূহকে অতিক্রম করবে।
(طُوبَى): এমন বৃক্ষের নাম, যার থেকে জান্নাতবাসীদের কাপড় বেরিয়ে আসবে।
৭৩. মু‘আয ইবন জাবাল
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«لا تؤذى امرأة زوجها في الدنيا
؛ الا قالت زوجته من الحور العين : لا تؤذيه قاتلك الله ؛ فإنما هو عندك دخيل , يوشك
أن يفارقك إلينا » . (رواه أحمد و الترمذي) .
“দুনিয়ার
জীবনে কোনো স্ত্রী তার স্বামীকে কষ্ট দিলে ডাগর চক্ষুবিশিষ্টা হূরদের মধ্য থেকে
তার স্ত্রী বলে: তুমি তাকে কষ্ট দিও না, আল্লাহ তোমাকে ধ্বংস করুন; কারণ, সে তো
তোমার নিকট আগন্তুক, শীঘ্রই সে তোমাকে ছেড়ে আমাদের নিকট চলে আসবে।”[28]
* * *
অষ্টাদশ পরিচ্ছেদ
জান্নাতের
মধ্যে দৈহিক মিলন
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿وَفِيهَا مَا تَشۡتَهِيهِ
ٱلۡأَنفُسُ وَتَلَذُّ ٱلۡأَعۡيُنُۖ وَأَنتُمۡ فِيهَا خَٰلِدُونَ ٧١ ﴾ [الزخرف: ٧١]
৭৪. যায়েদ ইবন আরকাম
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:
« جاء رَجُلٌ مِنْ الْيَهُودِ
إلى رسول الله صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ , فَقَالَ : يَا أَبَا الْقَاسِمِ
! أَلَسْتَ تَزْعُمُ أَنَّ أَهْلَ الْجَنَّةِ يَأْكُلُونِ فِيهَا وَيَشْرَبُونَ ؟ وَقَالَ
لِأَصْحَابِهِ : إِنْ أَقَرَّ لِي بِهَا ؛ خَصَمْتُهُ . فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى
اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : « بَلَى ؛ وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ , إِنَّ أَحَدَهُمْ
لَيُعْطَى قُوَّةَ مِائَةِ رَجُلٍ فِي الْمَطْعَمِ وَالْمَشْرَبِ وَالْجِمَاعِ» . فَقَالَ
لَهُ الْيَهُودِيُّ : فَإِنَّ الَّذِي يَأْكُلُ وَيَشْرَبُ يكُونُ لَهُ الْحَاجَةُ
؟ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : «حَاجَةُ أَحَدِهِمْ
عَرَقٌ يَفِيضُ مِنْ جُلُودِهِمْ مِثْلُ الْمِسْكِ ؛ فَإِذَا الْبَطْنُ قَدْ ضَمُرَ
» . (رواه
النسائي) .
“ইয়াহূদীদের
মধ্য থেকে এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট আসল,
তারপর বলল: হে আবূল কাসেম! তুমি কি মনে কর না যে, জান্নাতের অধিবাসীগণ সেখানে খাবে
এবং পান করবে? এবং সাথে সাথে সে (ইয়াহূদী ব্যক্তি) তার সঙ্গীদেরকে বলল: যদি সে
আমার নিকট তা স্বীকার করে, তাহলে আমি তাকে পরাজিত করতে পারব। অতঃপর জবাবে
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: হ্যাঁ, অবশ্যই; যাঁর হাতে
আমার জীবন, তাঁর শপথ! তাদের প্রত্যেককে খাওয়া-দাওয়া, পান করা ও যৌন মিলনের
ক্ষেত্রে একশত পুরুষের ক্ষমতা দান করা হবে।” তখন তাঁকে উদ্দেশ্য করে ইয়াহূদী বলল:
যে ব্যক্তি খাবে এবং পান করবে, তাহলে তার প্রাকৃতিক প্রয়োজনের কী হবে? জবাবে
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: তাদের প্রকৃতিক প্রয়োজন হল
ঘাম, যা তাদের ত্বক থেকে মিশকের ন্যায় প্রবাহিত হবে; আর যখন (তাদের) পেট হবে হালকা
পাতলা।”[30]
অর্থসহ
হাদিসের বিশেষ শব্দ-তালিকা:
( الحاجة ): অর্থাৎ প্রস্রাব ও
পায়খানা।
(خَصَمْتُهُ): আমি তাকে পরাজিত করব।
৭৫. আনাস ইবন মালেক
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন:
« يعطى المؤمن في الجنة قوة
كذا وكذا من الجماع » . قيل : يا رسول الله ! أو
يطيق ذلك ؟ قال : « يعطى قوة مائة رجل » . (رواه الترمذي) .
“মুমিন
ব্যক্তিকে জান্নাতের মধ্যে এই এই পরিমাণ যৌনক্ষমতা প্রদান করা হবে”। বলা হল: হে
আল্লাহর রাসূল! সে কি এমন ক্ষমতা রাখবে? জবাবে তিনি বললেন: তাকে একশত পুরুষের
ক্ষমতা দেয়া হবে।”[31]
* * *
ঊনবিংশ পরিচ্ছেদ
জান্নাতের
মধ্যে হূর কর্তৃক সঙ্গীত পরিবেশন
৭৬. আবদুল্লাহ ইবন
ওমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
« إن أزواج أهل الجنة ليغنين
أزواجهن بأحسن أصوات ما سمعها أحد قط , إن مما يغنين به :
نحن الخيرات الحسان
أزواج قوم كرام
ينظرن بقرة أعيان
وإن مما يغنين به :
نحن الخالدات فلا يمتنه
نحن الآمنات فلا يخفنه
نحن المقيمات فلا يظعنه »
(رواه الطبراني) .
“নিশ্চয়ই
জান্নাতের স্ত্রীগণ (হূরগণ) তাদের স্বামীদের উদ্দেশ্য করে এমন সুন্দর সুরে সঙ্গীত
পরিবেশন করবে, যা কেউ কোনো দিন শুনে নি; আর তারা যেসব সঙ্গীত পরিবেশন করবে,
তন্মধ্যে একটি হল:
আমরা
হলাম উত্তম, সুন্দরী
স্বামীগণ
হলেন সম্প্রদায়ের মধ্যে সম্মানিত
তারা
দেখে আনন্দের চোখে।
আর তারা যেসব সঙ্গীত
পরিবেশন করবে, তন্মধ্যে আরও একটি হল:
আমরা
হলাম চিরস্থায়ী, সুতরাং আমরা কখনও তাকে ছেড়ে মরব না
আমারা
হলাম নিরাপদ, সুতরাং তারা তাকে ভয় করবে না
৭৭. আবূ উমামা
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
« ما من عبد يدخل الجنة؛ إلا
يجلس عند رأسه وعند رجليه ثنتان من الحور العين ؛ تغنيانه بأحسن صوت سمعه الجن والإنس
وليس بمزامير الشيطان , ولكن بتحميد الله وتقديسه » . (رواه
الطبراني) .
“যে
কোনো বান্দাই জান্নাতে প্রবেশ করবে, তার মাথা ও দুই পায়ের নিকট দুইজন ডাগর
চক্ষুবিশিষ্টা হূর বসবে এবং মানুষ ও জিন জাতি কখনও যে গান শুনেছে তার থেকেও সুন্দর
স্বরে-সুরে তারা উভয়ে সঙ্গীত পরিবেশন করবে; আর সেই সঙ্গীত শয়তানের বাদ্যযন্ত্রের
মাধ্যমে পরিবেশিত হবে না, বরং তা পরিবেশিত হবে আল্লাহ তা‘আলার প্রশংসা ও পবিত্রতা
বর্ণনার মাধ্যমে।”[33]
৭৮. আনাস ইবন মালেক
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
« إن الحور العين ليغنين فى
الجنة ؛ ويقلن :
نحن الحور الحسان خبئنا لأزواج كرام» .
“নিশ্চয়ই
ডাগর চক্ষুবিশিষ্টা হূরগণ
জান্নাতের মধ্যে সঙ্গীত পরিবেশন করবে; আর তারা বলবে:
আমরা
হলাম সুন্দরী হূর
* * *
বিংশ পরিচ্ছেদ
জান্নাতবাসীদের
অলঙ্কার
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ يُحَلَّوۡنَ فِيهَا
مِنۡ أَسَاوِرَ مِن ذَهَبٖ وَلُؤۡلُؤٗاۖ وَلِبَاسُهُمۡ فِيهَا حَرِيرٞ ٢٣ ﴾ [الحج: ٢٣]
“সেখানে তাদেরকে অলংকৃত করা হবে সোনার কাঁকন ও
মুক্তা দ্বারা এবং সেখানে তাদের পোষাক-পরিচ্ছদ হবে রেশমের।”[35]
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ عَٰلِيَهُمۡ ثِيَابُ
سُندُسٍ خُضۡرٞ وَإِسۡتَبۡرَقٞۖ وَحُلُّوٓاْ أَسَاوِرَ مِن فِضَّةٖ وَسَقَىٰهُمۡ رَبُّهُمۡ
شَرَابٗا طَهُورًا ٢١ ﴾ [الانسان: ٢١]
“তাদের আবরণ হবে সূক্ষ্ম সবুজ রেশম ও স্থূল রেশম, আর তারা অলংকৃত হবে রৌপ্য নির্মিত কংকনে, আর
তাদের রব তাদেরকে পান করাবেন পবিত্র পানীয়।”[36]
৭৯. আবূ হুরায়রা
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«لو كان أدنى أهل الجنة حليه
عدلت بحلية أهل الدنيا جميعًا ؛ لكان ما يحليه الله به فى الآخرة أفضل من حلية أهل
الدنيا جميعًا » . (رواه الطبراني) .
“যদি
একজন নিম্নমানের জান্নাতবাসীর অলঙ্কারকে দুনিয়াবাসীদের সকলের অলঙ্কারের সাথে
বিনিময় বা পরিমাপ করা হয়, তাহলে আল্লাহ তা‘আলা ঐ জান্নাতবাসীকে পরকালে যে অলঙ্কার
পরিয়ে দিবেন, তা গোটা দুনিয়াবাসীর অলঙ্কারের চেয়ে অনেক বেশি উত্তম হবে।”[37]
৮০. মিকদাম ইবন
মা‘দিকারাব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম শহীদকে দেওয়া বৈশিষ্ট্য আলোচনা করতে গিয়ে বলেছেন:
« ... ويوضع على رأسه تاج
الوقار , الياقوتة منه خير من الدنيا وما فيها » . (رواه الترمذي و ابن ماجه) .
“
... এবং তার মাথায় সম্মান ও মর্যাদার মুকুট পরিয়ে দেয়া হবে, তার মধ্যকার একটি
ইয়াকুত পাথর দুনিয়া ও দুনিয়ার মধ্যে যা কিছু আছে, তার চেয়ে অনেক বেশি উত্তম হবে।”[38]
* * *
একবিংশ পরিচ্ছেদ
জান্নাতের রুমাল
৮১. আনাস ইবন মালেক
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:
« أهدي للنبي صلى الله عليه
و سلم جبة سندس , وكان ينهى عن الحرير , فعجب الناس منها , فقال : « والذي نفس محمد
بيده ؛ لمناديل سعد بن معاذ في الجنة أحسن من هذا » . (رواه البخاري و مسلم) .
“নবী
সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে রেশমী জুব্বা হাদিয়া দেওয়া হল, অথচ তিনি রেশমী
কাপড় ব্যবহারে নিষেধ করতেন; তবে সাহাবীগণ কাপড়টি দেখে আনন্দিত হলেন। তখন তিনি
বললেন: সেই সত্তার কসম, যাঁর হাতে মুহাম্মদের প্রাণ! জান্নাতে সা‘দ ইবন মু‘আযের
রুমালগুলো এর চেয়ে উৎকৃষ্ট।”[39]
* * *
দ্বাবিংশ
পরিচ্ছেদ
জান্নাতবাসীদের
বাজার (মেলা)
৮২. আনাস ইবন মালেক
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
« إِنَّ فِى الْجَنَّةِ لَسُوقًا
يَأْتُونَهَا كُلَّ جُمُعَةٍ , فَتَهُبُّ رِيحُ الشَّمَالِ , فَتَحْثُو فِى وُجُوهِهِمْ
وَثِيَابِهِمْ , فَيَزْدَادُونَ حُسْنًا وَجَمَالاً , فَيَرْجِعُونَ إِلَى أَهْلِيهِمْ
وَقَدِ ازْدَادُوا حُسْنًا وَجَمَالاً , فَيَقُولُ لَهُمْ أَهْلُوهُمْ : وَاللَّهِ
! لَقَدِ ازْدَدْتُمْ بَعْدَنَا حُسْنًا وَجَمَالاً! فَيَقُولُونَ : وَأَنْتُمْ وَاللَّهِ
! لَقَدِ ازْدَدْتُمْ بَعْدَنَا حُسْنًا وَجَمَالاً » . (رواه امسلم) .
“নিশ্চয়ই
জান্নাতের মধ্যে একটি বাজার থাকবে, তাতে প্রত্যেক জুমার দিন জান্নাতবাসীগণ আগমন
করবে; অতঃপর উত্তরের বাতাস প্রবাহিত হবে এবং তা ছড়িয়ে পড়বে তাদের চেহারা ও
পোষাক-পরিচ্ছদের মধ্যে; অতঃপর তাদের সৌন্দর্য ও শোভা বৃদ্ধি পাবে, তারপর তারা
তাদের পরিবার পরিজনের নিকট ফিরে যাবে এমতাবস্থায় যে, আগের চেয়ে তাদের সৌন্দর্য ও
শোভা বৃদ্ধি পেয়েছে। তারপর তাদেরকে উদ্দেশ্য করে তাদের পরিবার পরিজন বলবে: আল্লাহর
কসম! আমাদের পরবর্তীতে তোমাদের সৌন্দর্য ও শোভা অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে! অতঃপর তারাও
বলবে: আর তোমরা, আল্লাহর কসম! আমাদের পরবর্তীতে তোমাদেরও সৌন্দর্য ও শোভা অনেক
বৃদ্ধি পেয়েছে!”[40]
* * *
ত্রয়োবিংশ
পরিচ্ছেদ
জান্নাতবাসীগণ
কর্তৃক তাদের প্রতিপালক আল্লাহ তা‘আলার প্রতি দৃষ্টিদান
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ وُجُوهٞ يَوۡمَئِذٖ
نَّاضِرَةٌ ٢٢ إِلَىٰ رَبِّهَا نَاظِرَةٞ ٢٣ ﴾ [القيامة: ٢٢، ٢٣]
৮৩. আবূ হুরায়রা
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:
« قال أناس : يا رسول الله
! هل نرى ربنا يوم القيامة ؟ فقال : « هل تضارون في الشمس ليس دونها سحاب ؟ » . قالوا
: لا يا رسول الله . قال : « هل تضارون في القمر ليلة البدر ليس دونه سحاب ؟ » . قالوا
: لا يا رسول الله . قال : « فإنكم ترونه يوم القيامة كذلك » . (رواه البخاري و مسلم) .
“লোকজন
(সাহাবীগণ) বলল: হে
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমরা কি কিয়ামতের দিন আমাদের রবকে
দেখতে পাব? জবাবে তিনি বলেন: মেঘমুক্ত
পূর্ণিমার রাতের চাঁদকে দেখার ব্যাপারে তোমরা কি সন্দেহ পোষণ কর? তাঁরা বললেন, না,
হে আল্লাহর রাসূল! তিনি বললেন, মেঘমুক্ত আকাশে সূর্য দেখার ব্যাপারে কি তোমাদের
কোন সন্দেহ আছে? সবাই বললেন, না। তখন তিনি বললেন: নিঃসন্দেহে তোমরাও আল্লাহকে
অনুরূপভাবে দেখতে পাবে।”[42]
৮৪. সুহাইব
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
« إِذَا دَخَلَ أَهْلُ الْجَنَّةِ
الْجَنَّةَ ؛ يَقُولُ اللَّهُ تَبَارَكَ وَتَعَالَى
: تُرِيدُونَ شَيْئًا أَزِيدُكُمْ ؟ فَيَقُولُونَ : أَلَمْ تُبَيِّضْ وُجُوهَنَا ؟
أَلَمْ تُدْخِلْنَا الْجَنَّةَ وَتُنَجِّنَا مِنَ النَّار؟ . قَالَ : « فَيَكْشِفُ
الْحِجَابَ , فَمَا أُعْطُوا شَيْئًا أَحَبَّ إِلَيْهِمْ مِنَ النَّظَرِ إِلَى رَبِّهِمْ
عَزَّ وَجَلَّ » . (رواه مسلم) . ثم تلا هذه الآية : ﴿ لِّلَّذِينَ أَحۡسَنُواْ
ٱلۡحُسۡنَىٰ وَزِيَادَةٞۖ ﴾ [يونس: ٢٦] .
“জান্নাতীগণ
যখন জান্নাতে প্রবেশ করবে, তখন আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে বলবেন: তোমরা কি চাও আমি আরও
অনুগ্রহ বাড়িয়ে দেই? তারা বলবে: আপনি কি আমাদের চেহারা আলোকোজ্জ্বল করে দেননি?
আপনি কি আমাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করাননি? আর আপনি কি আমাদেরকে জাহান্নাম থেকে
মুক্তি দেননি? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেন: এরপর আল্লাহ তা‘আলা পর্দা উঠিয়ে নিবেন; অতএব আল্লাহর দীদার
অপেক্ষা অতি প্রিয় কোন বস্তু তাদের দেয়া হয়নি বা হবে না।”[43] অতঃপর তিনি এই
আয়াত তিলাওয়াত করেন: ﴿ لِّلَّذِينَ أَحۡسَنُواْ
ٱلۡحُسۡنَىٰ وَزِيَادَةٞۖ ﴾
[যারা ইহসানের সাথে আমল
করে (উত্তমরূপে কাজ করে) তাদের জন্য আছে জান্নাত এবং আরো বেশি][44]।
* * *
চতুর্বিংশ
পরিচ্ছেদ
রবের
সামনে দণ্ডায়মানে ভীত ব্যক্তির জন্য দু’টি জান্নাত
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ وَلِمَنۡ خَافَ مَقَامَ رَبِّهِۦ جَنَّتَانِ ٤٦ فَبِأَيِّ ءَالَآءِ
رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ ٤٧ ذَوَاتَآ أَفۡنَانٖ ٤٨ فَبِأَيِّ ءَالَآءِ رَبِّكُمَا
تُكَذِّبَانِ ٤٩ فِيهِمَا عَيۡنَانِ تَجۡرِيَانِ ٥٠ فَبِأَيِّ ءَالَآءِ رَبِّكُمَا
تُكَذِّبَانِ ٥١ فِيهِمَا مِن كُلِّ فَٰكِهَةٖ زَوۡجَانِ ٥٢ فَبِأَيِّ ءَالَآءِ رَبِّكُمَا
تُكَذِّبَانِ ٥٣ ﴾ [الرحمن: ٤٦، ٥٣]
“আর যে তার রবের সম্মুখে উপস্থিত হওয়ার ভয় রাখে,
তার জন্য রয়েছে দুটি উদ্যান। কাজেই তোমরা উভয়ে তোমাদের রবের কোন্ অনুগ্রহে
মিথ্যারোপ করবে? উভয়ই বহু শাখা-পল্লববিশিষ্ট।
কাজেই তোমরা উভয়ে তোমাদের রবের কোন অনুগ্রহে মিথ্যারোপ করবে? উভয় উদ্যানে রয়েছে
প্রবাহমান দুই প্রস্রবণ। কাজেই তোমরা উভয়ে তোমাদের রবের কোন অনুগ্রহে
মিথ্যারোপ করবে? উভয় উদ্যানে রয়েছে প্রত্যেক ফল দুই দুই প্রকার।
কাজেই তোমরা উভয়ে তোমাদের রবের কোন অনুগ্রহে মিথ্যারোপ করবে?”[45]
৮৫. আবূ মূসা / কায়স
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
« إن في الجنة خيمة من لؤلؤة
مجوفة , عرضها ستون ميلا , في كل زاوية منها أهل ما يرون الآخرين , يطوف عليهم المؤمنون
, وجنتان من فضة آنيتهما وما فيهما , وجنتان من ذهب آنيتهما وما فيهما , وما بين القوم
وبين أن ينظروا إلى ربهم إلا رداء الكبرياء على وجهه في جنة عدن » . (رواه البخاري و مسلم) .
“জান্নাতের
মধ্যে ফাঁপা মূর্তির একটি তাঁবু থাকবে; এর প্রশস্ততা হবে ষাট মাইল। এর এক কোণের জন
অপর কোণের জনকে দেখতে পাবে না। ঈমানদার লোকেরা তাদের কাছে যাবে। এতে থাকবে দু’টি
উদ্যান, যার সমুদয় পাত্র এবং ভেতরের সকল বস্তু হবে রূপার তৈরি। অনুরূপ আরও দু’টি
দু’টি উদ্যান থাকবে, যার পাত্রসমূহ এবং অভ্যন্তরীণ সকল বস্তু হবে স্বর্ণের তৈরি।
আর ‘জান্নাতে আদন’ এর মধ্যে জান্নাতবাসী এবং তাদের প্রতিপালকের দর্শন লাভের
মাঝখানে আল্লাহর বড়ত্বের প্রভাবময় আভা ভিন্ন আর কিছু থাকবে না।”[46]
* * *
পঞ্চবিংশ
পরিচ্ছেদ
জান্নাতে
মুমিন ব্যক্তির দৈর্ঘ্য
৮৬. আবূ হুরায়রা
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
« خلق الله عز و جل آدم على صورته , طوله ستون ذراعا , فلما خلقه ؛ قال : اذهب فسلم على أولئك
النفر من الملائكة جلوس , فاستمع ما يحيونك ؛ فإنها تحيتك وتحية ذريتك » . فقال
: السلام عليكم . فقالوا : السلام عليك ورحمة الله . فزادوه : ورحمة الله . فكل من
يدخل الجنة على صورة آدم , فلم يزل الخلق ينقص بعد حتى الآن » . (رواه البخاري و مسلم) .
“আল্লাহ
তা‘আলা আদম আ. কে তাঁর যথাযথ আকৃতিতে সৃষ্টি করেছেন, তাঁর উচ্চতা ছিল ষাট হাত।
তিনি তাঁকে সৃষ্টি করে বললেন: তুমি যাও, উপবিষ্ট ফিরিশতাদের এই দলকে সালাম কর এবং
মনোযোগ সহকারে শোন- তারা তোমার সালামের কী জবাব দেয়? কারণ, এটাই হবে তোমার এবং
তোমার বংশধরের সম্ভাষণ (তাহিয়্যা), তাই তিনি গিয়ে বললেন: ‘আসসালামু আলাইকুম’। তারা
জবাবে বললেন: ‘আসসালামু আলাইকা ওয়া রাহমাতুল্লাহ’। তাঁরা বাড়িয়ে বললেন: ‘ওয়া
রাহমাতুল্লাহ’ বাক্যটি। তারপর নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম আরও বললেন: প্রত্যেক ব্যক্তি, যারা জান্নাতে প্রবেশ করবে, তারা আদম আ.
এর আকৃতি বিশিষ্ট হবে। তারপর থেকে এই পর্যন্ত মানুষের আকৃতি ক্রমশঃ হ্রাস পেয়ে
আসছে।”[47]
* * *
ষড়বিংশ পরিচ্ছেদ
আল্লাহর
পক্ষ থেকে সার্বক্ষণিক সন্তুষ্টি
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ لِلَّذِينَ ٱتَّقَوۡاْ
عِندَ رَبِّهِمۡ جَنَّٰتٞ تَجۡرِي مِن تَحۡتِهَا ٱلۡأَنۡهَٰرُ خَٰلِدِينَ فِيهَا وَأَزۡوَٰجٞ
مُّطَهَّرَةٞ وَرِضۡوَٰنٞ مِّنَ ٱللَّهِۗ وَٱللَّهُ بَصِيرُۢ بِٱلۡعِبَادِ ١٥ ﴾ [ال عمران: ١٥]
“যারা তাকওয়া অবলম্বন করে তাদের জন্য তাদের
প্রতিপালকের নিকট রয়েছে জান্নাতসমূহ, যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত। সেখানে তারা
স্থায়ী হবে। আর পবিত্র স্ত্রীগণ এবং আল্লাহর নিকট থেকে সন্তুষ্টি। আর আল্লাহর
বান্দাদের সম্পর্কে সম্যক দ্রষ্টা।”[48]
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ إِنَّ ٱلَّذِينَ
ءَامَنُواْ وَعَمِلُواْ ٱلصَّٰلِحَٰتِ أُوْلَٰٓئِكَ هُمۡ خَيۡرُ ٱلۡبَرِيَّةِ ٧ جَزَآؤُهُمۡ
عِندَ رَبِّهِمۡ جَنَّٰتُ عَدۡنٖ تَجۡرِي مِن تَحۡتِهَا ٱلۡأَنۡهَٰرُ خَٰلِدِينَ فِيهَآ
أَبَدٗاۖ رَّضِيَ ٱللَّهُ عَنۡهُمۡ وَرَضُواْ عَنۡهُۚ ذَٰلِكَ لِمَنۡ خَشِيَ رَبَّهُۥ
٨ ﴾ [البينة: ٧، ٨]
“নিশ্চয় যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকাজ করেছে, তারাই
সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ। তাদের রবের কাছে আছে তাদের পুরস্কার : স্থায়ী জান্নাত, যার নিচে
নদী প্রবাহিত, সেখানে তারা চিরস্থায়ী হবে। আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট এবং তারাও
তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট। এটি তার জন্য, যে তার রবকে ভয় করে।”[49]
৮৭. আবূ সা‘ঈদ খুদরী
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
« إن الله تبارك وتعالى يقول
لأهل الجنة : يا أهل الجنة ! فيقولون : لبيك ربنا , وسعديك , فيقول : هل رضيتم ؟ فيقولون
: وما لنا لا نرضى وقد أعطيتنا ما لم تعط أحدا من خلقك . فيقول : أنا أعطيكم أفضل من
ذلك ؟ قالوا : يا رب وأي شيء أفضل من ذلك ؟ فيقول : أحل عليكم رضواني فلا أسخط عليكم
بعده أبدا » . (رواه البخاري و مسلم) .
“আল্লাহ
তা‘আলা জান্নাতীগণকে সম্বোধন করে বলবেন: হে জান্নাতবাসীগণ! তারা জবাবে বলবে, হে
আমাদের প্রভু! হাযির, আমরা আপনার সমীপে হাযির। এরপর আল্লাহ তা‘আলা বলবেন, তোমরা কি
সন্তুষ্ট হয়েছে? তারা বলবে, আপনি আমাদেরকে এমন বস্তু দান করেছেন, যা আপনার
মাখলুকাতের ভিতর থেকে আর কাউকে দান করেননি; অতএব আমরা কেন সন্তুষ্ট হব না? তখন
তিনি বলবেন: আমি এর চেয়েও উত্তম কিছু তোমাদেরকে দান করব। তারা বলবে: হে প্রভু! এর
চেয়েও উত্তম কোন বস্তু? আল্লাহ তা‘আলা বলবেন: তোমাদের উপর আমার সন্তুষ্টি অবধারিত
করব; এরপর আমি আর কখনও তোমাদের উপর অসন্তুষ্ট হব না।”[50]
* * *
সপ্তবিংশ
পরিচ্ছেদ
জান্নাতে
চিরস্থায়ীভাবে অবস্থান
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ إِنَّ ٱلَّذِينَ
ءَامَنُواْ وَعَمِلُواْ ٱلصَّٰلِحَٰتِ كَانَتۡ لَهُمۡ جَنَّٰتُ ٱلۡفِرۡدَوۡسِ نُزُلًا
١٠٧ خَٰلِدِينَ فِيهَا لَا يَبۡغُونَ عَنۡهَا حِوَلٗا ١٠٨ ﴾ [الكهف: ١٠٧، ١٠٨]
“নিশ্চয় যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকাজ করেছে তাদের
আতিথেয়তার জন্য রয়েছে জান্নাতুল ফিরদাউস। সেখানে তারা চিরকাল
থাকবে, সেখান থেকে তারা স্থানান্তরিত হতে চাইবে না।”[51]
৮৮. আবূ সা‘ঈদ খুদরী
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
« إِذَا دَخَلَ أَهْلُ الْجَنَّةِ
الْجَنَّةَ ؛ يُنَادِى مُنَادٍ : إِنَّ لَكُمْ
أَنْ تَصِحُّوا فَلاَ تَسْقَمُوا أَبَدًا , وَإِنَّ لَكُمْ أَنْ تَحْيَوْا فَلاَ تَمُوتُوا
أَبَدًا , وَإِنَّ لَكُمْ أَنْ تَشِبُّوا فَلاَ تَهْرَمُوا أَبَدًا , وَإِنَّ لَكُمْ
أَنْ تَنْعَمُوا فَلاَ تَبْتَئِسُوا أَبَدًا » . فَذَلِكَ قَوْلُهُ عَزَّ وَجَلَّ
: ﴿وَنُودُوا أَنْ تِلْكُمُ الْجَنَّةُ أُورِثْتُمُوهَا بِمَا كُنْتُمْ تَعْمَلُونَ﴾ » . (رواه مسلم) .
“যখন
জান্নাতবাসীগণ জান্নাতে প্রবেশ করবে, তখন এক ঘোষক এই বলে ঘোষণা করবে: নিশ্চয়ই তোমাদের
জন্য সুস্থতা রয়েছে, সুতরাং তোমরা আর কখনও অসুস্থ হবে না; আর তোমারা জীবিত, সুতরাং
তোমরা কখনও মৃত্যুবরণ করবে না; তোমরা নিশ্চয়ই যুবক হয়ে গেছ, সুতরাং তোমরা কখনও
বৃদ্ধ হবে না; তোমাদের এখন সুখের জীবন, সুতরাং তোমরা আর কখনও দুঃখিত ও চিন্তিত হবে
না। অতএব এটাই হল আল্লাহ তা‘আলার বাণী’র চরম বাস্তবতা: ﴿وَنُودُوا أَنْ تِلْكُمُ
الْجَنَّةُ أُورِثْتُمُوهَا بِمَا كُنْتُمْ تَعْمَلُونَ﴾ [আর তাদেরকে সম্বোধন করে বলা হবে, ‘তোমরা যা করতে
তারই জন্য তোমাদেরকে এ জান্নাতের ওয়ারিস করা হয়েছে।’][52]।”[53]
অর্থসহ
হাদিসের বিশেষ শব্দ-তালিকা:
(لاَ تَبْتَئِسُوا): তোমরা দুঃখ-কষ্ট অনুভব
করবে না।
৮৯. আবূ সা‘ঈদ খুদরী
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
« يؤتى بالموت كهيئة كبش أملح
, فينادي مناد : يا أهل الجنة ! فيشرئبون وينظرون , فيقول : هل تعرفون هذا ؟ فيقولون
: نعم ؛ هذا الموت , وكلهم قد رآه . ثم ينادي : يا أهل النار ! فيشرئبون وينظرون ,
فيقول : هل تعرفون هذا ؟ فيقولون : نعم ؛ هذا الموت , وكلهم قد رآه , فيذبح . ثم يقول
يا أهل الجنة ! خلود فلا موت , ويا أهل النار ! خلود فلا موت . ثم قرأ : ﴿ وأنذرهم يوم الحسرة إذ قضي الأمر وهم في غفلة وهؤلاء في غفلة أهل الدنيا وهم لا يؤمنون﴾ » . (رواه البخاري و مسلم) .
“কিয়ামতের
দিন মৃত্যুকে একটি ধূসর রঙের মেষের আকৃতিতে আনা হবে; তখন একজন ঘোষণাকারী ঘোষণা
দিয়ে বলবে: হে জান্নাতবাসী! তখন তাঁরা ঘাড় মাথা উঁচু করে দেখতে থাকবে; তখন ঘোষক
বলবে: তোমরা কি একে চিন? তারা বলবে: হ্যাঁ, এ তো মৃত্যু। কারণ, তারা প্রত্যেকেই
একে দেখেছে। তারপর ঘোষণাকারী আবার ডাক দিয়ে বলবে: হে জাহান্নামবাসী! তখন তারা মাথা
উঁচু করে দেখতে থাকবে; তখন ঘোষক বলবে: তোমরা কি একে চিন? তারা বলবে: হ্যাঁ, এ তো
মৃত্যু। কেননা, তারা প্রত্যেকেই একে দেখেছে। তারপর (সেটি) যবেহ করা হবে। আর ঘোষক
বলেবেন: হে জান্নাতবাসী! স্থায়ীভাবে (এখানে) থাক; তোমাদের আর কোন মৃত্যু নেই। আর
হে জাহান্নামবাসী! স্থায়ীভাবে (এখানে) থাক; তোমাদের আর কোন মৃত্যু নেই। এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম পাঠ করলেন: ﴿ وأنذرهم يوم الحسرة إذ قضي
الأمر وهم في غفلة وهؤلاء في غفلة أهل الدنيا وهم لا يؤمنون﴾ [আর তাদেরকে সতর্ক করে দিন পরিতাপের দিন সম্বন্ধে, যখন সব
সিদ্ধান্ত হয়ে যাবে। অথচ তারা রয়েছে গাফলতিতে নিমজ্জিত এবং তারা ঈমান আনছে না।][54]।”[55]
* * *
অষ্টাবিংশ পরিচ্ছেদ
জান্নাতবাসীদের
কাতার সংখ্যা
৯০. বুরায়দা
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
« أهل الجنة عشرون ومائة صف , ثمانون منها من هذه الأمة , وأربعون من سائر
الأمم » . (رواه الترمذي) .
“জান্নাতবাসীদের
কাতার (সারি) সংখ্যা হবে একশত বিশটি; তন্মধ্যে আশি সারি হবে এই উম্মত (উম্মাতে
মুহাম্মাদী) থেকে; আর বাকি সকল উম্মত হবে চল্লিশ কাতার।”[56]
৯১. আবদুল্লাহ ইবন
মাস‘উদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
« كنا مع النبي صلى الله عليه
و سلم في قبة , فقال : « أترضون أن تكونوا
ربع أهل الجنة » . قلنا : نعم , قال: « أترضون أن تكونوا ثلث أهل الجنة » . قلنا
: نعم , قال : « أترضون أن تكونوا شطر أهل الجنة » . قلنا: نعم , قال : «والذي
نفس محمد بيده ؛ إني لأرجو أن تكونوا نصف أهل الجنة , وذلك أن الجنة لا يدخلها إلا
نفس مسلمة , وما أنتم في أهل الشرك إلا كالشعرة البيضاء في جلد الثور الأسود أو كالشعرة
السوداء في جلد الثور الأحمر» . (رواه البخاري و مسلم) .
“একদা
আমরা কোনো এক তাঁবুতে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের
সঙ্গে ছিলাম; তখন তিনি বললেন: তোমরা জান্নাতীদের এক-চতুর্থাংশ হবে, এটা কি তোমরা
পছন্দ কর? আমরা বললাম: হ্যাঁ; তিনি আবার বললেন: তোমরা জান্নাতীদের এক-তৃতীয়াংশ
হবে, এটা কি তোমরা পছন্দ কর? আমরা বললাম: হ্যাঁ। তখন নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বললেন: শপথ ঐ মহান সত্তার, যাঁর হাতে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লামের জান! আমি দৃঢ়ভাবে প্রত্যাশী যে, তোমরা বেহেশতীদের অর্ধেক হবে। আর এটা
চিরন্তন সত্য যে, বেহেশতে কেবলমাত্র মুসলিমগণই প্রবেশ করতে পারবে। আর মুশরিকদের
মুকাবিলায় তোমরা হচ্ছ এমন, যেমন কালো ষাঁড়ের চামড়ার উপর শুভ্র পশম, অথবা লাল
ষাঁড়ের চামড়ার উপর কালো পশম।”[57]
* * *
ঊনত্রিংশ
পরিচ্ছেদ
সর্বশেষ
জান্নাতে প্রবেশকারী ব্যক্তি
৯২. আবূ হুরায়রা
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:
সাহাবীগণ নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে
জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমরা কি
কিয়ামতের দিন আমাদের রবকে দেখতে পাব? জবাবে তিনি বলেন:
« هل
تمارون في القمر ليلة بدر ليس دونه حجاب
(سحاب) ؟ » . قالوا : لا يا رسول الله ! قال: « فهل تمارون في الشمس ليس دونها
سحاب ؟ » . قالوا : لا , قال: « فإنكم ترونه كذلك , يحشر الناس يوم القيامة , فيقول
: من كان يعبد شيئا ؛ فليتبع , فمنهم من يتبع الشمس , ومنهم من يتبع القمر , ومنهم
من يتبع الطواغيت , وتبقى هذه الأمة فيها منافقوها , فيأتهم الله , فيقول : أنا ربكم
, فيقولون : هذا مكاننا حتى يأتينا ربنا , فإذا جاء ربنا ؛ عرفناه , فيأتيهم الله
, فيقول : أنا ربكم . فيقولون : أنت ربنا , فيدعوهم , و يضرب الصراط بين ظهراني جهنم , فأكون
أول من يجوز من الرسل بأمته , ولا يتكلم يومئذ أحد إلا الرسل, وكلام الرسل يومئذ :
اللهم سلم سلم , وفي جهنم كلاليب مثل شوك السعدان , هل رأيتم شوك السعدان ؟ » . قالوا : نعم , قال : فإنها مثل شوك السعدان , غير أنه لا يعلم قدرعظمها
إلا الله , تخطف الناس بأعمالهم , فمنهم من يوبق بعمله , ومنهم من يخردل ثم ينجو ,
حتى إذا أراد الله رحمة من أراد من أهل النار ؛ أمر الله الملائكة أن يخرجوا من كان
يعبد الله , فيخرجونهم ويعرفونهم بآثار السجود , وحرم الله على النار أن تأكل أثر السجود
, فيخرجون من النار , فكل ابن أدم تأكله النار إلا أثر السجود , فيخرجون من النار قد
امتحشوا , فيصب عليهم ماء الحياة , فينبتون كما تنبت الحبة في حميل السيل , ثم يفرغ
الله من القضاء بين العباد , ويبقى رجل بين الجنة والنار ( وهو آخر أهل النار دخولا
الجنة ) , مقبل بوجهه قبل النار , فيقول : يا رب ! اصرف وجهي عن النار ؛ قد قشبني ريحها
, وأحرقني ذكاؤها , فيقول : هل عسيت إن أفعل ذلك بك أن تسأل غير ذلك ؟ فيقول : لا
, وعزتك . فيعطي الله ما يشاء من عهد وميثاق , فيصرف الله وجهه عن النار.
فإذا أقبل به على الجنة ؛ رأى بهجتها ؛ سكت ما شاء
الله أن يسكت , ثم قال : يا رب ! قدمني عند باب الجنة, فيقول الله له : أليس قد أعطيت
العهود والميثاق أن لا تسأل غير الذي كنت سألت ؟ فيقول : يا رب ! لا أكون أشقى خلقك
. فيقول : فما عسيت إن أعطيتك ذلك أن لا تسأل غيره ؟ فيقول : لا , وعزتك لا أسأل غير
ذلك . فيعطي ربه ما شاء من عهد وميثاق , فيقدمه إلى باب الجنة , فإذا بلغ بابها ؛ فرأى
زهرتها وما فيها من النضرة والسرور , فسكت ما شاء الله أن يسكت , فيقول : يارب ! أدخلني
الجنة , فيقول الله : ويحك يا بن آدم ! ما أغدرك ! أليس قد أعطيت العهد والميثاق أن
لا تسأل غير الذي أعطيت ؟ فيقول : يا رب ! لا تجعلني أشقى خلقك . فيضحك الله عز و جل
منه , ثم يأذن له في دخول الجنة , فيقول : تمن , فيتمنى , حتى إذا انقطعت أمنيته ؛
قال الله عز و جل : تمن كذا وكذا , أقبل . يذكره ربه حتى إذا انتهت به الأماني, قال
الله تعالى: لك ذلك ومثله معه , و ذلك الرجل آخر أهل الجنة دخولا الجنة » . (أخرجه البخاري و مسلم) .
“মেঘমুক্ত পূর্ণিমার রাতের চাঁদকে
দেখার ব্যাপারে তোমরা কি সন্দেহ পোষণ কর? তাঁরা বললেন, না, হে আল্লাহর রাসূল! তিনি
বললেন, মেঘমুক্ত আকাশে সূর্য দেখার ব্যাপারে কি তোমাদের কোন সন্দেহ আছে? সবাই
বললেন, না। তখন তিনি বললেন: নিঃসন্দেহে তোমরাও আল্লাহকে অনুরূপভাবে দেখতে পাবে।
কিয়ামতের দিন সকল মানুষকে সমবেত করা হবে। তারপর আল্লাহ তা‘আলা বলবেন: যে যার
উপাসনা করত, সে যেন তার অনুসরণ করে; তাই তাদের কেউ সূর্যের অনুসরণ করবে, কেউ
চন্দ্রের অনুসরণ করবে, কেউ তাগুতের অনুসরণ করবে। আর অবশিষ্ট থাকবে শুধু এ উম্মাহ,
তবে তাদের সাথে মুনাফিকরাও থাকবে। তাদের মাঝে এ সময় আল্লাহ তা‘আলা শুভাগমন করবেন
এবং বলবেন: “আমি তোমাদের রব।” তখন তারা বলবে, যতক্ষণ পর্যন্ত আমাদের রবের শুভাগমন
না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা এখানেই থাকব। আর তাঁর যখন শুভাগমন হবে, তখন আমরা
অবশ্যই তাঁকে চিনতে পারব। তখন তাদের মাঝে মহান পরাক্রমশালী আল্লাহ আগমন করবেন এবং
বলবেন: “আমি তোমাদের রব।” তারা বলবে, হ্যাঁ, আপনিই আমাদের রব। আল্লাহ তা‘আলা তাদের
ডাকবেন। আর জাহান্নামের উপর একটি সেতুপথ (পুলসিরাত) স্থাপন করা হবে। রাসূলগণের
মধ্যে আমিই সবার আগে আমার উম্মত নিয়ে এ পথ অতিক্রম করব। সেদিন রাসূলগণ ব্যতীত আর
কেউ কথা বলবে না। আর রাসূলগণের কথা হবে: ‘اللهم سلم سلم’ (আল্লাহুম্মা
সাল্লিম সাল্লিম), অর্থাৎ হে আল্লাহ! রক্ষা করুন, রক্ষা করুন। আর জাহান্নামে বাঁকা
লোহার বহু শলাকা থাকবে; সেগুলো হবে সা‘দান কাঁটার মত। তোমরা কি সা‘দান কাঁটা
দেখেছ? তারা বলবে, হ্যাঁ, দেখেছি। তিনি বলবেন,
সেগুলো দেখতে সা‘দান[58] কাঁটার মতই। তবে সেগুলো কত বড় হবে তা একমাত্র আল্লাহ
ব্যতীত আর কেউ জানে না। সে কাঁটা লোকের আমল অনুযায়ী তাদের তড়িৎ গতিতে ধরবে। তাদের
কিছু লোক ধ্বংস হবে আমলের কারণে। আর কারোর পায়ে জখম হবে, কিছু লোক কাঁটায় আক্রান্ত
হবে, তারপর নাজাত পেয়ে যাবে। জাহান্নামীদের থেকে যাদের প্রতি আল্লাহ তা‘আলা রহমত
করতে ইচ্ছা করবেন, তাদের ব্যাপারে ফেরেশতাগণকে নির্দেশ দেবেন যে, যারা আল্লাহর
ইবাদত করত, তাদের যেন জাহান্নাম থেকে বের করে আনা হয়। ফেরেশতাগণ তাদের বের করে
আনবেন এবং সিজদার চিহ্ন দেখে তাঁরা তাদের চিনতে পারবেন। কেননা, আল্লাহ তা‘আলা
জাহান্নামের জন্য সিজদার চিহ্নগুলো মিটিয়ে দেয়া হারাম করে দিয়েছেন। ফলে তাদেরকে
জাহান্নাম থেকে বের করে আনা হবে। কাজেই সিজদার চিহ্ন ছাড়া আগুন বনী আদমের সব কিছুই
গ্রাস করে ফেলবে। অবশেষে, তাদেরকে অঙ্গারে পরিণত অবস্থায় জাহান্নাম থেকে বের করা
হবে। তাদের উপর ‘আবে-হায়াত’ ঢেলে দেয়া হবে, ফলে তারা স্রোতে বাহিত ফেনার উপর গজিয়ে
উঠা উদ্ভিদের মত সঞ্জীবিত হয়ে উঠবে। এরপর আল্লাহ তা‘আলা বান্দাদের বিচার কাজ
সমাপ্ত করবেন। কিন্তু একজন লোক জান্নাত ও জাহান্নামের মাঝখানে থেকে যাবে। তার
মুখমণ্ডল তখনও জাহান্নামের দিকে ফিরানো থাকবে। জাহান্নামবাসীদের মধ্যে জান্নাতে
প্রবেশকারী সেই শেষ ব্যক্তি। সে তখন নিবেদন করবে, হে আমার রব! জাহান্নাম থেকে আমার
চেহারা ফিরিয়ে দিন, এর দূষিত হাওয়া আমাকে বিষিয়ে তুলছে, এর লেলিহান শিখা আমাকে
যন্ত্রনা দিচ্ছে। তখন আল্লাহ তা‘আলা বলবেন: তোমার নিবেদন গ্রহণ করা হলে, তুমি এ
ছাড়া আর কিছু চাইবে না তো? সে বলবে, না, আপনার ইজ্জতের শপথ! সে তার ইচ্ছামত আল্লাহ
তা‘আলাকে অঙ্গিকার ও প্রতিশ্রুতি দিবে। কাজেই আল্লাহ তা‘আলা তার চেহারাকে
জাহান্নামের দিক থেকে ফিরিয়ে দেবেন। এরপর সে যখন জান্নাতের দিকে মুখ ফিরাবে, তখন
সে জান্নাতের অপরূপ সৌন্দর্য দেখতে পাবে। যতক্ষণ আল্লাহর ইচ্ছা সে চুপ করে থাকবে।
তারপর সে বলবে, হে আমার রব! আপনি জান্নাতের দরজার কাছে পৌঁছিয়ে দিন। তখন আল্লাহ
তা‘আলা তাকে বলবেন, তুমি পূর্বে যা চেয়েছিলে, তা ছাড়া আর কিছু চাইবে না বলে তুমি
কি অঙ্গীকার ও প্রতিশ্রুতি দাওনি? তখন সে বলবে, হে আমার রব! তোমার সৃষ্টির সবচেয়ে
হতভাগ্য ব্যক্তি আমি হতে চাই না। আল্লাহ তাতক্ষণিক বলবেন, তোমার এটি পুরণ করা হলে
তুমি এ ছাড়া কিছু চাইবে না তো? সে বলবে, না, আপনার ইজ্জতের কসম! এছাড়া আর কিছুই
চাইব না। এ ব্যাপারে সে তার ইচ্ছানুযায়ী অঙ্গিকার ও প্রতিশ্রুতি দেবে। সে যখন
জান্নাতের দরজায় পৌঁছবে, তখন জান্নাতের অনাবিল সৌন্দর্য্য ও তার অভ্যন্তরীণ সুখ
শান্তি ও আনন্দঘন পরিবেশ দেখতে পাবে। যতক্ষণ আল্লাহ তা‘আলা ইচ্ছা করবেন, সে চুপ
করে থাকবে। এরপর সে বলবে, হে আমার রব! আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করিয়ে দাও! তখন
পরাক্রমশালী মহান আল্লাহ বলবেন: হে আদম সন্তান, কি আশ্চর্য! তুমি কত প্রতিশ্রুতি
ভঙ্গকারী! তুমি কি আমার সঙ্গে অঙ্গিকার করনি এবং প্রতিশ্রুতি দাওনি যে, তোমাকে যা
দেয়া হয়েছে, তা ছাড়া আর কিছু চাইবে না? তখন সে বলবে, হে আমার রব! আপনার সৃষ্টির
মধ্যে সবচেয়ে হতভাগ্য আমাকে করবেন না। এতে
আল্লাহ হেসে দেবেন। এরপর তাকে জান্নাতে প্রবেশের অনুমতি দিবেন এবং বলবেন, চাও। তখন সে চাইবে, এমনকি তার চাওয়ার আকাঙ্খা ফুরিয়ে
যাবে। তখন পরাক্রমশালী মহান আল্লাহ বলবেন: এটা চাও, ওটা চাও। এভাবে তার রব তাকে
স্মরণ করিয়ে দিতে থাকবেন। অবশেষে যখন তার আকাঙ্খা শেষ হয়ে যাবে, তখন আল্লাহ তা‘আলা
বলবেন: এ সবই তোমার, এর সাথে আরও সমপরিমাণ (তোমাকে দেয়া হল); আর এই ব্যক্তিই হল
জান্নাতে প্রবেশ করার দিক থেকে সর্বশেষ ব্যক্তি।”[59]
* * *
ত্রিংশ পরিচ্ছেদ
জান্নাতের
চিত্র বর্ণনাতীত
৯৩. আবূ হুরায়রা
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন:
« قال الله تعالى : أعددت
لعبادي الصالحين ما لا عين رأت , ولا أذن سمعت , ولا خطر على قلب بشر » ؛ مصداق
ذلك في كتاب الله : فاقرؤوا إن شئتم : ﴿ فَلَا تَعۡلَمُ
نَفۡسٞ مَّآ أُخۡفِيَ لَهُم مِّن قُرَّةِ أَعۡيُنٖ جَزَآءَۢ بِمَا كَانُواْ يَعۡمَلُونَ
١٧ ﴾ [السجدة: ١٧] » . (رواه البخاري و مسلم) .
“আল্লাহ
তা‘আলা বলেন: আমি আমার সৎকর্মশীল বান্দাদের জন্য এমন কিছু প্রস্তুত করে রেখেছি, যা
কোনো চোখ কখনও দেখে নি, কোনো কান কখনও শুনেনি এবং যার কল্পনা কোনো মানুষের মনে
কখনও উদয় হয় নি; এ রকম কথা আল্লাহর কিতাবের মধ্যে আছে; সুতরাং তোমরা ইচ্ছা করলে
পাঠ করতে পার: ﴿ فَلَا تَعۡلَمُ
نَفۡسٞ مَّآ أُخۡفِيَ لَهُم مِّن قُرَّةِ أَعۡيُنٖ جَزَآءَۢ بِمَا كَانُواْ يَعۡمَلُونَ
١٧ ﴾ [অতএব কেউই জানে না তাদের জন্য চোখ জুড়ানো কী
লুকিয়ে রাখা হয়েছে তাদের কৃতকর্মের পুরস্কারস্বরূপ][60]।”[61]
৯৪. সাহল ইবন সা‘দ
আস-সা‘দী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
« موضع سوط في الجنة خير من الدنيا وما فيها » . (رواه البخاري) .
“জান্নাতের
মধ্যে এক চাবুক পরিমাণ জায়গার মূল্যমান দুনিয়া এবং তার মধ্যে যা কিছু আছে তার চেয়ে
উত্তম।”[62]
৯৫. আবূ হুরায়রা
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
« ولقاب قوس أحدكم في الجنة
خير مما طلعت عليه الشمس أو تغرب » . (رواه البخاري) .
“আর
জান্নাতে তোমাদের কারও একটি ধনুকের পরিমাণ জায়গাও ঐ পরিমাণ জায়গার চেয়ে অনেক বেশি
উত্তম, যেই পরিমাণ জায়গায় সূর্যোদয় হয় এবং সূর্যাস্ত যায় (অর্থাৎ গোটা পৃথিবীর
চেয়ে উত্তম)।”[63]
৯৬. আনাস ইবন মালেক
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
« أدنى أهل الجنة درجة لمن
يقوم على رأسه عشرة آلاف خادم بيد كل واحد صفحتان : واحدة من ذهب ، والأخرى من فضة
» . (رواه
الطبراني) .
“মর্যাদার
দিক থেকে সর্বনিম্ন মানের জান্নাতবাসী হবেন ঐ ব্যক্তি, যার মাথার পাশে দাঁড়িয়ে
থাকবে এক হাজার খাদেম, তাদের প্রত্যেকের হাতে থাকবে দু’টি করে পাত্র: একটি হবে
স্বর্ণের, আর অপরটি হবে রৌপ্যের।”[64]
সবশেষে বলা যায়, এটি হলো
সর্বশেষ হাদিস, যার মাধ্যমে ‘সহীহ সুন্নাহ’র আলোকে জান্নাতের বৈশিষ্ট্য’ বিষয়ক
সংকলনটি সমাপ্ত হল; আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা‘আলা’র নিকট প্রার্থনা করি, তিনি যেন
একে আমার জন্য ও আমার মুমিন ভাইদের জন্য চেষ্টা-সাধনা ও গবেষণার ব্যাপারে এবং বহু
মূল্যবান এই পণ্য অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে মূল্যবান ও উৎকৃষ্ট ত্যাগ স্বীকারে
সাহায্যকারী বানিয়ে দেন; যেমনিভাবে আল্লাহ
সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা’র নিকট প্রার্থনা করি, তিনি যেন আমাদের জন্য জান্নাতের পথকে
সহজ করে দেন, আমাদের সকলকে জান্নাতের অধিবাসীদের অন্তর্ভুক্ত করে নেন এবং সেখানে
আমাদেরকে আমাদের নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে সমবেত করে
দেন; নিশ্চয়ই তিনি সকল কিছুর উপর ক্ষমতাবান এবং আবেদন গ্রহণে যথাযোগ্য।
* * *
গ্রন্থপঞ্জি
১. ‘তাখরীজুল এহইয়া’ ( تخريج الإحياء ), হাফেয আল-‘ইরাকী, জাতীয় সংস্করণের প্রান্ত-টীকাসহ।
২. ‘আত-তারগীব ওয়াত
তারহীব’ ( الترغيب
و الترهيب ), হাফেয আল-মুনযেরী,
প্রকাশনা: দারুল ফিকর।
৩. ‘সিলসিলাতুল আহাদীসা
আস-সহীহা’ ( سلسلة
الأحاديث الصحيحة ): আলবানী, প্রকাশনা: আল-মাকতাবু
আল-ইসলামী।
৪. ‘সুনানু ইবনি মাজাহ’ ( سنن ابن ماجه ): ইবনু মাজাহ আল-কাযবিনী, বিন্যাস: মুহাম্মদ ফুয়াদ
আবদুল বাকী, প্রকাশনা: দারুল ফিকর।
৫. ‘সানানু আবি দাউদ’ ( سنن أبي داود ), আবূ দাউদ আস-সিজিসতানী, দারু এহইয়াউস সুন্নাহ
আন-নবুবীয়াহ।
৬. ‘সুনানুত তিরমিযী’ ( سنن الترمذي ), আবূ ঈসা আত-তিরমিযী, প্রকাশনা: দারুল ফিকর।
৭. ‘সুনানুদ দারেমী’ ( سنن الدارمي ), আবূ মুহাম্মদ আদ-দারেমী, বৈরুত।
৮. ‘সুনানুন নাসায়ী’ ( سنن النسائي ), আবূ আবদির রহমান আন-নাসায়ী, দারুত তুরাস।
৯. ‘সহীহুল বুখারী মা‘আ
ফাতহিল বারী’ ( صحيح
البخاري مع فتح الباري ):দারুল
ফিকর।
১০. ‘সহীহু মুসলিম মা‘আ
শরহিন নববী’ ( صحيح
مسلم مع شرح النووي ):
মাকতাবতু যাহরান।
১১. ‘যিলালুল জান্নাত ফী
তাখরীজিস সুন্নাহ’ ( ظلال
الجنة في تخريج السنة ): আলবানী, প্রকাশনা:
আল-মাকতাবু আল-ইসলামী।
১২. ‘কিতাবুস সুন্নাহ’ ( كتاب السنة ): ইবনু আবি ‘আসেম, প্রকাশনা: আল-মাকতাবু আল-ইসলামী।
১৩. ‘আল-লুওলুও ওয়াল
মারজান ফীমা ইত্তাফাকা ‘আলাইহে আশ-শাইখান’ (اللؤلؤ
و المرجان فيما اتفق عليه الشيخان ):
মুহাম্মদ ফুয়াদ আবদুল বাকী, দারুত তুরাস।
১৪. ‘মাজমা‘উয যাওয়ায়েদ’
( مجمع
الزوائد ): আল-হাইছামী, মাকতাবাতুল
কুদস।
১৫. ‘মিফতাহু কুনুযিস
সুন্নাহ’ ( مفتاح
كنوز السنة ):
ফিনসানক, অনুবাদ: মুহাম্মদ ফুয়াদ আবদুল বাকী, দারুত তুরাস।
১৬. ‘আল-মুয়াত্তা’ ( الموطأ ): ইমাম মালেক ইবন আনাস, বিন্যাস: মুহাম্মদ ফুয়াদ
আবদুল বাকী, দারুত তুরাস।
১৭. ‘সহীহুল বুখারী’ (صحيح
البخاري): আল-মাকতাবা আশ-শামেলা (المكتبة
الشاملة), দ্বিতীয় প্রকাশ (الإصدار
الثاني)। [অনুবাদক
]।
১৮. ‘সহীহু মুসলিম’ ( صحيح مسلم ): আল-মাকতাবা আশ-শামেলা ( المكتبة
الشاملة ), দ্বিতীয় প্রকাশ ( الإصدار الثاني )। [ অনুবাদক]।
* * *
সূচীপত্র
০ দ্বিতীয়
সংস্করণের ভূমিকা
০ প্রথম সংস্করণের
ভূমিকা
প্রথম পরিচ্ছেদ: জান্নাতের ঘ্রাণ
দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ: জান্নাতের
দরজাসমূহ
তৃতীয় পরিচ্ছেদ: সর্বপ্রথম যার
জন্য জান্নাত খুলে দেয়া হবে
চতুর্থ পরিচ্ছেদ: জান্নাতে
সর্বপ্রথম প্রবেশকারী মানুষ
পঞ্চম পরিচ্ছেদ: জান্নাতবাসীগণ
কর্তৃক জান্নাতে প্রবেশের বিবরণ
ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ: সর্বনিম্ন মানের
জান্নাতবাসীর মর্যাদা
সপ্তম পরিচ্ছেদ: জান্নাতের
স্তরসমূহ
নবম পরিচ্ছেদ: জান্নাতের
ভিত্তি ও তার মাটি
দশম পরিচ্ছেদ: জান্নাতের
প্রাসাদ, কক্ষ ও তাঁবুসমূহ
একাদশ পরিচ্ছেদ: জান্নাতের নদী
ও ঝর্ণাসমূহ
দ্বাদশ পরিচ্ছেদ: নবী সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাউযের বিবরণ
ত্রয়োদশ পরিচ্ছেদ: জান্নাতের বৃক্ষ
চতুর্দশ পরিচ্ছেদ: জান্নাতবাসীদের
খাদ্য ও পানীয়
পঞ্চদশ পরিচ্ছেদ: জান্নাতবাসীদের
পোষাক-পরিচ্ছদ
ষোড়শ পরিচ্ছেদ: জান্নাতের
বিছানা
সপ্তদশ পরিচ্ছেদ: জান্নাতবাসীদের
নারীসমষ্টি
অষ্টাদশ পরিচ্ছেদ: জান্নাতের মধ্যে
দৈহিক মিলন
ঊনবিংশ পরিচ্ছেদ: জান্নাতের মধ্যে
হূর কর্তৃক সঙ্গীত পরিবেশন
বিংশ পরিচ্ছেদ: জান্নাতবাসীদের
অলঙ্কার
একবিংশ পরিচ্ছেদ: জান্নাতের রুমাল
দ্বাবিংশ পরিচ্ছেদ: জান্নাতবাসীদের
বাজার (মেলা)
ত্রয়োবিংশ পরিচ্ছেদ: জান্নাতবাসীগণ
কর্তৃক তাদের প্রতিপালক আল্লাহ তা‘আলার প্রতি দৃষ্টিদান
চতুর্বিংশ পরিচ্ছেদ: রবের সামনে
দণ্ডায়মানে ভীত ব্যক্তির জন্য দু’টি জান্নাত
পঞ্চবিংশ পরিচ্ছেদ: জান্নাতে মুমিন
ব্যক্তির দৈর্ঘ্য
ষড়বিংশ পরিচ্ছেদ: আল্লাহর পক্ষ
থেকে সার্বক্ষণিক সন্তুষ্টি
সপ্তবিংশ পরিচ্ছেদ: জান্নাতে
চিরস্থায়ীভাবে অবস্থান
অষ্টাবিংশ পরিচ্ছেদ: জান্নাতবাসীদের
কাতার সংখ্যা
ঊনত্রিংশ পরিচ্ছেদ: সর্বশেষ
জান্নাতে প্রবেশকারী ব্যক্তি
ত্রিংশ পরিচ্ছেদ: জান্নাতের চিত্র
বর্ণনাতীত।
০ গ্রন্থপঞ্জি।
০ সূচীপত্র।
* * *
[7] ইমাম
আহমদ র. হাদিসটি উৎকৃষ্ট সনদে বর্ণনা করেছেন, যা আল-মুনযেরী ‘আত-তারগীব’ ( الترغيب ) নামক গ্রন্থের মধ্যে (৬ / ২৯৮) বলেছেন; আর ইরাকী
(৩০০৮) বলেন: তার সনদ বিশুদ্ধ।
[8] ইবনু
আবিদ দুনিয়া হাদিসটি বর্ণনা করেছেন; হাফেয আল-মুনযেরী ‘আত-তারগীব’ ( الترغيب )
নামক গ্রন্থের মধ্যে (৬ / ৩০) বলেছেন: তার সনদ বিশুদ্ধ।
[9] বুখারী,
আস-সহীহ, অধ্যায়: সাহাবীদের ফযীলত (كتاب فضائل الصحابة), পরিচ্ছেদ: নবী
সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিভাবে তাঁর সাহাবীদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ তৈরি
করেছেন (باب كيف آخى النبي صلى الله
عليه و سلم بين أصحابه), হাদিস নং- ৩৭২৩
[10] ইবনু
আবিদ দুনিয়া হাদিসটি ‘মাওকুফ’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন; আর হাফেয আল-মুনযেরী
‘আত-তারগীব’ ( الترغيب ) নামক গ্রন্থের মধ্যে (৬ / ২৯৬) বলেছেন: তার সনদ
উৎকৃষ্ট।
[15] তাবারানী
হাদিসটি সহীহ সনদে বর্ণনা করেছেন, যা হাফেয আল-মুনযেরী ‘আত-তারগীব’ ( الترغيب )
নামক গ্রন্থের মধ্যে (৬ / ৩০১) বলেছেন।
[16] ইমাম
আহমদ র. হাদিসটি বর্ণনা করেছেন; আর শাইখ আলবানীও তার ‘আস-সিলসিলাতুস সহীহা’ (السلسلة
الصحيحة) নামক গ্রন্থেরে মধ্যে (৪ / ৬৪০) হাদিসটি বর্ণনা করেছেন।
[20] ইবনু
আবিদ দুনিয়া; তিরমিযী (৪ / ৮৬), তিনি বলেছেন: “হাদিসটি হাসান গরীব, হাদিসটিকে আমরা
শুধু রাশেদীন ইবন সা‘দ কর্তৃক বর্ণিত হাদিস হিসেবেই জানি।”
আমি বলি: বরং
ইবনু হিব্বান ও বায়হাকী র. এর মতে, ইবনু ওহাব এই হাদিসটির মত হাদিস বর্ণনা
করেছেন, যেমনিভাবে হাফেয ইবনু কাছীর এই
হাদিসটি উল্লেখ করেছেন (৪ / ৩১২)।
অতঃপর আমি ইমাম
আহমদ র. এর নিকট এই হাদিসটির অপর আরেকটি সনদ পেয়েছি, ইবনু কাছীর র. (৪ / ৩১২) ইবনু
লাহি‘আ’র হাদিস হিসেবে উদ্ধৃতি দিয়ে বর্ণনা করেছেন, অতঃপর তিনি বলেছেন: আমাদেরকে দাররাজ
হাদিস বর্ণনা করেছেন এবং তিনি তার ‘তাদলীস’ হওয়া সম্ভাবনাকে নাকচ করে দিয়েছেন;
সুতরাং হাদিসটি উৎকৃষ্ট এবং তার সনদগুলো দ্বারা শক্তিশালী, আলহামদুলিল্লাহ।
[21] ইমাম
বায়হাকী র. হাদিসটি হাসান সনদে ‘মাওকুফ’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন, যা হাফেয আল-মুনযেরী
‘আত-তারগীব’ ( الترغيب ) নামক গ্রন্থের মধ্যে (৬ / ৩০৩) বলেছেন।
[25] বুখারী,
আস-সহীহ, অধ্যায়: জিহাদ (كتاب الجهاد والسير), পরিচ্ছেদ: ডাগর চক্ষু
বিশিষ্ট হুর ও তাদের গুণাবলী, তাদের দর্শনে দৃষ্টি স্থির থাকে না এবং তাদের চোখের
মনি অতীব কালো ও চোখের সাদা অংশ অতীব শুভ্র (باب الحور العين وصفتهن يحار فيها الطرف شديدة سواد العين شديدة بياض
العين), হাদিস নং- ২৬৪৩।
[27] তাবারানী
হাদিসটি উৎকৃষ্ট সনদে ‘আল-আওসাত’ ( الأوسط ) এর মধ্যে বর্ণনা করেছেন, যা হাইছামী ‘আল-মাজমা’ ( المجمع ) নামক গ্রন্থের মধ্যে (১০ / ৪১৮) বলেছেন।
[28] আহমদ;
তিরমিযী; আর আলবানী হাদিসটিকে ‘সহীহুল জামে’ ( صحيح الجامع ) এর মধ্যে সহীহ বলেছেন,
ক্রমিক নং- ৭০৬৯
[30] ইমাম নাসায়ী
র. সহীহ সনদে ‘আল-কুবরা’ ( الكبرى ) নামক গ্রন্থের মধ্যে হাদিসখানা বর্ণনা করেছেন; যা
হাফেয ইরাকী ‘তাখরীজুল আহইয়ায়ে’ ( تخريج
الأحياء) নামক গ্রন্থের মধ্যে বলেছেন।
[32] তাবারানী
হাদিসটি হাসান সনদে বর্ণনা করেছেন, যা হাফেয ইরাকী ‘তাখরীজুল আহইয়ায়ে’ ( تخريج الأحياء) নামক গ্রন্থের
মধ্যে (৩০১১) বলেছেন ।
[33] তাবারানী
হাদিসটি হাসান সনদে বর্ণনা করেছেন, যা হাফেয ইরাকী ‘তাখরীজুল আহইয়ায়ে’ ( تخريج الأحياء) নামক গ্রন্থের
মধ্যে (৩০১১) বলেছেন ।
[37] তাবারানী
হাদিসটি হাসান সনদে ‘আল-আওসাত’ ( الأوسط ) এর মধ্যে বর্ণনা করেছেন, যা হাফেয ইরাকী ‘তাখরীজুল
আহইয়ায়ে’ ( تخريج الأحياء) নামক
গ্রন্থের মধ্যে (৩০০৪) বলেছেন।
[38] ইমাম
তিরমিযী ও ইবনু মাজাহ র. সহীহ সনদে হাদিসটি বর্ণনা করেছেন; দেখুন: ‘মিশকাতুল
মাসাবীহ’ (৩ / ৩৫৮)।
[39] বুখারী,
আস-সহীহ, অধ্যায়: হিবা ও তার ফযীলত (كتاب الهبة وفضلها), পরিচ্ছেদ: মুশরিকদের
হাদিয়া গ্রহণ করা (باب قبول الهدية من المشركين),
হাদিস নং- ২৪৭৩; মুসলিম (১৬ / ২৩ - নববী)।
[42] বুখারী,
আস-সহীহ, অধ্যায়: কোমল হওয়া (كتاب الرقاق), পরিচ্ছেদ: সিরাত হল জাহান্নামের পুল (باب الصراط جسر جهنم), হাদিস নং- ৬২০৪; মুসলিম
(৩ / ১৭ - নববী)।
[43] মুসলিম (৩ / ১৭ - নববী)।
[46] বুখারী,
আস-সহীহ, অধ্যায়: তাফসীর (كتاب التفسير), পরিচ্ছেদ: সূরা
আর-রাহমানের তাফসীর (باب تفسير سورة الرحمن),
হাদিস নং- ৪৫৯৭; মুসলিম (৩ / ১৬ - নববী)।
[47] বুখারী,
আস-সহীহ, অধ্যায়: অনুমতি প্রার্থনা (كتاب الاستئذان), পরিচ্ছেদ: সালামের সূচনা
প্রসঙ্গে (باب بدء السلام),
হাদিস নং- ৫৮৭৩; মুসলিম (১৭ / ১৭৭ - নববী)।
[50] বুখারী,
আস-সহীহ, অধ্যায়: কোমল হওয়া (كتاب الرقاق), পরিচ্ছেদ: জান্নাত ও জাহান্নামের বর্ণনা (باب صفة الجنة والنار), হাদিস নং- ৬১৮৩; মুসলিম
(১৭ / ১৬৮ - নববী)।
[55] বুখারী,
আস-সহীহ, অধ্যায়: তাফসীর (كتاب التفسير), পরিচ্ছেদ: সূরা
মারইয়ামের তাফসীর (باب تفسير سورة مريم),
হাদিস নং- ৪৪৫৩; মুসলিম (১৭ / ১৮৫ - নববী)।
[57] বুখারী,
আস-সহীহ, অধ্যায়: কোমল হওয়া (كتاب الرقاق), পরিচ্ছেদ: হাশরের অবস্থা (باب كيف الحشر), হাদিস নং- ৬১৬৩; মুসলিম
(৩ / ৯৫ - নববী)।
[58] সা‘দান
চতুর্পাশ্বে কাঁটা বিশিষ্ট এক প্রকার গাছ, মরু অঞ্চলে জন্মে, যার কাঁটাগুলো বাঁকা
হয়ে থাকে। এগুলো উটের খাদ্য।
[59] বুখারী,
অধ্যায়: সালাতের বিবরণ (كتاب صفة الصلاة),
পরিচ্ছেদ: সিজদার ফযিলত (باب فضل السجود), হাদিস নং- ৭৭৩; মুসলিম (৩ / ৮১ - নববী)।
[61] বুখারী,
আস-সহীহ, অধ্যায়: সৃষ্টির সূচনা (كتاب بدء الخلق), পরিচ্ছেদ: জান্নাতের বর্ণনা প্রসঙ্গে যা এসেছে এবং
তা (আল্লাহর) সৃষ্টি (باب ما جاء في صفة الجنة
وأنها مخلوقة), হাদিস নং- ৩০৭২; মুসলিম (১৭ / ১৬৬ - নববী)।
[62] বুখারী,
আস-সহীহ, অধ্যায়: সৃষ্টির সূচনা (كتاب بدء الخلق), পরিচ্ছেদ: জান্নাতের বর্ণনা প্রসঙ্গে যা এসেছে এবং
তা (আল্লাহর) সৃষ্টি (باب ما جاء في صفة الجنة
وأنها مخلوقة), হাদিস নং- ৩০৭৮
[63] বুখারী,
আস-সহীহ, অধ্যায়: সৃষ্টির সূচনা (كتاب بدء الخلق), পরিচ্ছেদ: জান্নাতের বর্ণনা প্রসঙ্গে যা এসেছে এবং
তা (আল্লাহর) সৃষ্টি (باب ما جاء في صفة الجنة
وأنها مخلوقة), হাদিস নং- ৩০৮০
[64] তাবারানী
হাদিসটি শক্তিশালী সনদে বর্ণনা করেছেন, যা হাফেয ইবনু হাজার ‘আল-ফাতহ’ (৬ / ৩২৪)
নামক গ্রন্থের মধ্যে বলেছেন।
_________________________________________________________________________________
সংকলন : ওয়াহিদ ইবন আবদিস সালাম বালী
অনুবাদক : মোঃ আমিনুল ইসলাম
সম্পাদনা : ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া
সূত্র : ইসলাম প্রচার ব্যুরো, রাবওয়াহ, রিয়াদ, সৌদিআরব
আরও পড়ুনঃ জান্নাতে কি হবে?
আরও পড়ুনঃ কুরআনের আলোকে জান্নাত ও জাহান্নাম
আরও পড়ুনঃ জান্নাতে নারীদের অবস্থা
পোস্টটি ভালো লাগলে শেয়ার করতে ভুলবেন না কিন্তু।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন