মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর, ২০১৩

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহর উপর আমলের আবশ্যকতা আর তার অস্বীকারকারীর কাফের হওয়া

بسم الله الرحمن الرحيم

ভূমিকা

সমস্ত প্রশংসা সৃষ্টিকুলের মহান রব আল্লাহর জন্য। উত্তম পরিণতি কেবল মুত্তাকীদের জন্য। সালাত ও সালাম নাযিল হোক তার বান্দা ও রাসূল আমাদের নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর; যাকে সকল সৃষ্টির জন্য রহমত ও সমস্ত বান্দাদের জন্য দলীল হিসেবে প্রেরণ করা হয়েছে। আরও নাযিল হোক তার পরিবার-পরিজন ও সাথী-সঙ্গীদের উপর; যারা অত্যন্ত আমানতদারিতা ও দৃঢ়তার সাথে তাদের পবিত্র মহান প্রভুর কিতাব ও তাদের নবীর সুন্নাহ্‌কে বহন করেছে এবং শব্দ ও অর্থ পরিপূর্ণ সংরক্ষণ করে তাদের পরবর্তীদের নিকট পৌঁছিয়েছে। আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট ও তাদের খুশি করুন এবং আমাদেরকে তাদের সুন্দর অনুসারী হিসেবে কবুল করুন। 
পূর্বের ও পরবর্তী যুগের সমস্ত আলেম এ বিষয়ে একমত যে, কোনো বিধান প্রমাণ করা ও কোনো বস্তুকে হারাম ও হালাল সাব্যস্ত করার ক্ষেত্রে প্রথম গ্রহণযোগ্য মূল উৎস হচ্ছে, আল্লাহর কিতাব, যার সামনে বা পিছন কোনোদিক থেকেই তাতে বাতিল অনুপ্রবেশ করতে পারে না, তারপর আল্লাহর রাসূলের সুন্নাহ্‌, যিনি ওহী ছাড়া নিজের থেকে কোনো কথা বলেন না, এ দুটি হচ্ছে মূল উৎস। তারপর গ্রহণযোগ্য মূল উৎস হচ্ছে, উম্মতের ‘আলেমদের ‘ইজমা‘। এ তিনটি ব্যতীত অন্যান্য উৎসের বিষয়ে আলেমগণের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। তন্মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে কিয়াস; তবে অধিকাংশ আলেমের মতে এটিজ্জত বা দলীল হিসেবে গণ্য হবে; যদি তার মধ্যে গ্রহণযোগ্যতার শর্তগুলো পাওয়া যায়। এ মূল উৎসগুলোর সাব্যস্ত করণে দলীল-প্রমাণাদি অগণিত ও অসংখ্য; যা এত প্রসিদ্ধ যে উল্লেখের প্রয়োজন পড়ে না।

[আহকাম তথা বিধি-বিধান সাব্যস্ত করার গ্রহণযোগ্য মূল উৎসসমূহ]

প্রথম মূল উৎস: আল্লাহর কিতাব

প্রথম মূল উৎস হচ্ছে, আল্লাহর কিতাব, আল্লাহর কিতাবের বিভিন্ন আয়াত দ্বারা আল্লাহর কিতাবের অনুসরণ করা, আল্লাহর কিতাবকে আঁকড়ে ধরা এবং আল্লাহ প্রদত্ত সীমানার সামনে অবস্থান করা ফরয হওয়া প্রমাণিত।
আল্লাহ তাআলা বলেন,
﴿ ٱتَّبِعُواْ مَآ أُنزِلَ إِلَيۡكُم مِّن رَّبِّكُمۡ وَلَا تَتَّبِعُواْ مِن دُونِهِۦٓ أَوۡلِيَآءَۗ قَلِيلٗا مَّا تَذَكَّرُونَ ٣ ﴾ [الاعراف: ٣] 
“তোমাদের প্রতি তোমাদের রবের পক্ষ থেকে যা নাযিল করা হয়েছে, তা অনুসরণ কর এবং তাকে ছাড়া অন্য অভিভাবকের অনুসরণ করো না। তোমরা সামান্যই উপদেশ গ্রহণ কর”।[1]
আল্লাহ তাআলা আরও বলেন,
﴿وَهَٰذَا كِتَٰبٌ أَنزَلۡنَٰهُ مُبَارَكٞ فَٱتَّبِعُوهُ وَٱتَّقُواْ لَعَلَّكُمۡ تُرۡحَمُونَ ١٥٥ ﴾ [الانعام: ١٥٥]   
“আর এটি কিতাব- যা আমি নাযিল করেছি- বরকতময়। সুতরাং, তোমরা তার অনুসরণ কর এবং তাকওয়া অবলম্বন কর; যাতে তোমরা রহমতপ্রাপ্ত হও”[2]
আল্লাহ তাআলা আরও বলেন,
﴿ قَدۡ جَآءَكُم مِّنَ ٱللَّهِ نُورٞ وَكِتَٰبٞ مُّبِينٞ ١٥ يَهۡدِي بِهِ ٱللَّهُ مَنِ ٱتَّبَعَ رِضۡوَٰنَهُۥ سُبُلَ ٱلسَّلَٰمِ وَيُخۡرِجُهُم مِّنَ ٱلظُّلُمَٰتِ إِلَى ٱلنُّورِ بِإِذۡنِهِۦ وَيَهۡدِيهِمۡ إِلَىٰ صِرَٰطٖ مُّسۡتَقِيمٖ ١٦ ﴾ [المائ‍دة: ١٥،  ١٦] 
“অবশ্যই তোমাদের নিকট আল্লাহর পক্ষ থেকে আলো ও স্পষ্ট কিতাব এসেছে। এর মাধ্যমে আল্লাহ তাদেরকে শান্তির পথ দেখান, যারা তার সন্তুষ্টি অনুসরণ করে এবং তার অনুমতিতে তিনি তাদেরকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে বের করেন। আর তাদেরকে সরল পথের দিকে হিদায়াত দেন”।[3]
আল্লাহ তাআলা আরও বলেন,
﴿إِنَّ ٱلَّذِينَ كَفَرُواْ بِٱلذِّكۡرِ لَمَّا جَآءَهُمۡۖ وَإِنَّهُۥ لَكِتَٰبٌ عَزِيزٞ ٤١ لَّا يَأۡتِيهِ ٱلۡبَٰطِلُ مِنۢ بَيۡنِ يَدَيۡهِ وَلَا مِنۡ خَلۡفِهِۦۖ تَنزِيلٞ مِّنۡ حَكِيمٍ حَمِيدٖ ٤٢﴾ [فصلت: ٤١،  ٤٢] 
“নিশ্চয় যারা উপদেশ [কুরআন] আসার পরও তা অস্বীকার করে, [তাদেরকে অবশ্যই এর পরিণাম ভোগ করতে হবে] আর নিশ্চয় এক সম্মানিত গ্রন্থ। বাতিল এতে অনুপ্রবেশ করতে পারে না, না সামনে থেকে না পিছন থেকে। এটি প্রজ্ঞাময়, স-প্রশংসিতের পক্ষ থেকে নাযিল কৃত”[4]
আল্লাহ তাআলা আরও বলেন,
﴿وَأُوحِيَ إِلَيَّ هَٰذَا ٱلۡقُرۡءَانُ لِأُنذِرَكُم بِهِۦ وَمَنۢ بَلَغَۚ١٩﴾ [الانعام: ١٩]   
“আর এ কুরআন আমার কাছে ওহী করে পাঠানো হয়েছে যেন তোমাদেরকে ও যার কাছে এটা পৌছবে তাদেরকে এর মাধ্যমে আমি সতর্ক করি”[5]
আল্লাহ তাআলা আরও বলেন,
 ﴿ هَٰذَا بَلَٰغٞ لِّلنَّاسِ وَلِيُنذَرُواْ بِهِۦ٥٢ ﴾ [ابراهيم: ٥٢] 
“এটা মানুষের জন্য পয়গাম। আর যা দ্বারা তাদেরকে সতর্ক করা হয়”[6]
উল্লেখিত আয়াত ছাড়াও এ বিষয়ে আরও অনেক আয়াতই বিদ্যমান আছে
আর এ বিষয়ে বহু বিশুদ্ধ হাদিসও অনেক রয়েছে, যাতে আল্লাহর কিতাবকে মজবুত করে ধরার এবং অনুসরণ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে; যাতে প্রমাণিত হয়, যে ব্যক্তি আল্লাহর কিতাবকে মজবুত করে আঁকড়ে ধরবে, সে হিদায়াতের উপর থাকবে, আর যে ব্যক্তি আল্লাহর কিতাবকে বর্জন করবে, সে গোমরাহ হবে।
তন্মধ্য থেকে কিছু হাদিস:
      রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিদায় হজের ভাষণে সমবেত সাহাবীদের সম্বোধন করে বলেন,
« إِنِّي تاركٌ فيكُمْ مَا لَنْ تضلوا إِن اعْتَصَمْتُمْ بِهِ كِتَابَ اللهِ  »، رواه مسلم في صحيحه
“আমি তোমাদের নিকট এমন একটি বস্তু রেখে যাচ্ছি, যদি তোমরা তাকে মজবুত করে পাকড়াও কর, তবে তোমরা কখনোই গোমরাহ হবে না। তা হল আল্লাহর কিতাব”[7]
      সহীহ মুসলিমে যায়েদ ইবন আরকাম রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে আরও বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إِنِّي تارك فِيكُمْ ثِقْلَين أَوَّلهُما كِتابُ الله فيهِ الهُدَى والنُّور فَخُذوا بِكتَابِ اللهِ وَتَمَسّكُوا بِهِ »
“আমি তোমাদের মধ্যে দুটি বিষয় রেখে যাব, তার একটি হল, আল্লাহর কিতাব, তাতে রয়েছে হিদায়াত ও নূর। তোমরা আল্লাহর কিতাবকে আঁকড়ে ধর এবং তার প্রতি অবিচল থাক”[8] 
হাদিসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর কিতাবের প্রতি উৎসাহ প্রদান করেন এবং আকৃষ্ট করেন। তারপর তিনি বলেন,
«وَأَهْلُ بَيْتي أذَكِّركُمُ الله في أهل بيتي أذكركم الله في أهل بيتي »
“এবং আমার আহলে বাইত। আমার পরিবার পরিজন সম্পর্কে আমি তোমাদের আল্লাহকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, আমার পরিবার পরিজন সম্পর্কে আমি তোমাদের আল্লাহকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই”[9]
      অপর শব্দে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরআন সম্পর্কে বলেন,
«هو حبل الله من تمسك به كان على الهدى ومن تركه كان على الضلال».
“এটি আল্লাহর রশি, যে তাকে মজবুত করে ধরবে, সে হিদায়াতের উপর থাকবে আর যে ব্যক্তি তাকে ছেড়ে দেবে-মজবুত করে ধরবে না- সে অবশ্যই গোমরাহির উপর থাকবে”[10] 
এ বিষয়ে আরও অনেক হাদিস বিদ্যমান। আল্লাহর কিতাবকে মজবুত করে ধরা, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহ্‌সহ আল্লাহর কিতাব অনুযায়ী বিচার ফায়সালা করা ফরয হওয়ার বিষয়ে সাহাবী ও তাদের পরবর্তী জ্ঞানী ও ঈমানদারগণের ঐকমত্য দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। যা এর উপর দলীল-প্রমাণাদি পেশ করে আলোচনার পরিমণ্ডল দীর্ঘায়িত করার প্রয়োজনীয়তা লোপ করে দেয়। 

দ্বিতীয় মূল উৎস: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহ।

[এ ব্যাপারে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, তাঁর সাহাবী ও তাদের পরবর্তী আলেম ও ঈমানদার থেকে বিশুদ্ধ পদ্ধতিতে আসা বর্ণনাসমূহ]
শরী‘আতের যে তিনটি গ্রহণযোগ্য মূল উৎসের ব্যাপারে আলেমদের মধ্যে কোনো মতানৈক্য নেই তার দ্বিতীয়টি হচ্ছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে আসা বিশুদ্ধ হাদীসসমূহ। সাহাবায়ে কেরাম ও তাদের পরবর্তী জ্ঞানী ও ঈমানদারগণ এ মহান মূল উৎসটিতে বিশ্বাসী ছিলেন; তাঁরা এর দ্বারা ইসলামী বিধানের উপর দলীল পেশ করেছেন এবং উম্মতদের তা শিখিয়েছেন। এ বিষয়ে তারা অসংখ্য লেখনি লিখে গেছেন এবং উসূলে ফিকহ (ফিকহের নীতি) ও উসূলে হাদীস (হাদীসের নীতি) এর কিতাবসমূহে তারা বিষয়টি আরও স্পষ্ট করেছেন। এটি (অর্থাৎ রাসূলের হাদীস) বিধি-বিধানের জন্য মূল উৎস হওয়ার বিষয়ে প্রমাণাদি অসংখ্য অগণিত। যেমন,
 মহান আল্লাহর কিতাবে আল্লাহ তাআলা কর্তৃক এ উম্মতকে রাসূলের অনুকরণ ও অনুসরণ করার বহু নির্দেশ প্রদান। কারণ,
-  এ নির্দেশগুলো রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগ থেকে সর্বকালের সকল দুনিয়াবাসীর উপর প্রযোজ্য। কেননা, তিনি কোনো বিশেষ সময় বা বিশেষ গোষ্ঠীর নবী নন, তিনি সমগ্র বিশ্ববাসীর প্রতি নবী-কেয়ামত অবধি যত মানুষ দুনিয়াতে আগমন করবে তাদের সবার নবী। এ কারণেই কিয়ামত পর্যন্ত সকলকেই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসরণ ও আনুগত্য করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
-  তাছাড়া তিনিই আল্লাহর কিতাবের ব্যাখ্যা দানকারী, আল্লাহর কিতাবের অস্পষ্ট বিষয়গুলির বর্ণনাকারীও তিনি। তিনি তার কথা, কর্ম ও স্বীকৃতি দ্বারা আল্লাহর কুরআনের বিধানগুলোর বর্ণনা দেন। যেমন, যদি হাদিস তথা -রাসূলের সুন্নাত- না থাকত তাহলে সালাতের রাকাত, সালাত আদায়ের পদ্ধতি ও সালাতের ওয়াজিবসহ বিভিন্ন বিধান জানার কোনো উপায় থাকত না। অনুরূপভাবে রোজা, হজ ও যাকাতের বিধানসমূহ বিস্তারিত জানার কোনো উপায় থাকত না। ভালো কাজের আদেশ ও অসৎ কাজ হতে নিষেধ করার বিষয়টিও মানুষের নিকট অজ্ঞাত থেকে যেত। মু‘আমালাত, মু‘আশারাত, লেন-দেন, বেচা-কেনা, মানুষের সাথে কথা-বার্তা বলা, চলা-ফেরা, উঠা-বসা করা, হারাম হালাল সম্পর্কে জানা, ও শাস্তি ও হদ কায়েম করা ইত্যাদির বিধান সম্পর্কে মানুষ কখনোই জানতে পারত না।

এ বিষয়টির উপর কুরআন থেকে প্রমাণ:

      এ বিষয়ে যে সব আয়াত এসেছে তন্মধ্যে সূরা- আলে ইমরানের আয়াতটি অন্যতম, যাতে আল্লাহ তাআলা বলেন,
﴿وَأَطِيعُواْ ٱللَّهَ وَٱلرَّسُولَ لَعَلَّكُمۡ تُرۡحَمُونَ ١٣٢﴾ [ال عمران: ١٣٢] 
“আর তোমরা আনুগত্য কর, আল্লাহ ও রাসূলের, যাতে তোমাদেরকে দয়া করা হয়”।[11]
      অনুরূপ সূরা আন-নিসাতে আল্লাহর বাণী,
﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ أَطِيعُواْ ٱللَّهَ وَأَطِيعُواْ ٱلرَّسُولَ وَأُوْلِي ٱلۡأَمۡرِ مِنكُمۡۖ فَإِن تَنَٰزَعۡتُمۡ فِي شَيۡءٖ فَرُدُّوهُ إِلَى ٱللَّهِ وَٱلرَّسُولِ إِن كُنتُمۡ تُؤۡمِنُونَ بِٱللَّهِ وَٱلۡيَوۡمِ ٱلۡأٓخِرِۚ ذَٰلِكَ خَيۡرٞ وَأَحۡسَنُ تَأۡوِيلًا ٥٩ ﴾ [النساء : ٥٩] 
হে মুমিনগণ, তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর আনুগত্য কর রাসূলের এবং তোমাদের মধ্য থেকে কর্তৃত্বের অধিকারীদের। অতঃপর কোনো বিষয়ে যদি তোমরা মতবিরোধ কর তাহলে তা আল্লাহ ও রাসূলের দিকে প্রত্যার্পণ করাও -যদি তোমরা আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান রাখ। এটি উত্তম এবং পরিণামে উৎকৃষ্টতর[12]
      সূরা আন-নিসাতে আল্লাহ তাআলা আরও বলেন,
﴿مَّن يُطِعِ ٱلرَّسُولَ فَقَدۡ أَطَاعَ ٱللَّهَۖ وَمَن تَوَلَّىٰ فَمَآ أَرۡسَلۡنَٰكَ عَلَيۡهِمۡ حَفِيظٗا ٨٠﴾ [النساء : ٨٠] 
“যে রাসূলের আনুগত্য করল, সে আল্লাহরই আনুগত্য করল। আর যে বিমুখ হল, তবে আমি তোমাকে তাদের উপর তত্ত্বাবধায়ক করে প্রেরণ করিনি”।[13]
কিভাবে তার আনুগত্য করা ও বিবদমান বিষয় আল্লাহ ও রাসূলের সুন্নতের দিকে প্রত্যাবর্তন করা সম্ভব হবে যদি সুন্নাতকে প্রমাণ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া না হয় অথবা দাবী করা হয় যে সুন্নাহ্‌ সংরক্ষিত নয়? সুন্নাহ্‌ যদি সংরক্ষিত না হয়, তাহলে বুঝতে হবে আল্লাহ তার বান্দাদের এমন বস্তুর দিক নির্দেশনা দিচ্ছেন যা কোনো অস্তিত্ব নেই। যা সম্পূর্ণ বাতিল, আল্লাহর প্রতি খারাপ ধারণা করা এবং আল্লাহর সাথে কুফরি করার নামান্তর।
      আল্লাহ তাআলা সূরা আন-নাহলে বলেন,
﴿وَأَنزَلۡنَآ إِلَيۡكَ ٱلذِّكۡرَ لِتُبَيِّنَ لِلنَّاسِ مَا نُزِّلَ إِلَيۡهِمۡ وَلَعَلَّهُمۡ يَتَفَكَّرُونَ ٤٤ ﴾ [النحل: ٤٤] 
“আর আমরা তোমার প্রতি নাযিল করেছি কুরআন; যাতে তুমি মানুষের জন্য স্পষ্ট করে দিতে পার, যা তাদের প্রতি নাযিল হয়েছে। আর যাতে তারা চিন্তা করে।”[14]
      একই সূরাতে পরবর্তী অপর একটি আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন,
﴿وَمَآ أَنزَلۡنَا عَلَيۡكَ ٱلۡكِتَٰبَ إِلَّا لِتُبَيِّنَ لَهُمُ ٱلَّذِي ٱخۡتَلَفُواْ فِيهِ وَهُدٗى وَرَحۡمَةٗ لِّقَوۡمٖ يُؤۡمِنُونَ ٦٤ ﴾ [النحل: ٦٤] 
“আর আমরা তোমার উপর কিতাব নাযিল করেছি, শুধু এ জন্য যে, যে বিষয়ে তারা মতভেদ করছে, তা তাদের জন্য তুমি স্পষ্ট করে দেবে এবং এটি হিদায়াত ও রহমত সেই কওমের জন্য যারা ঈমান আনে।”[15]
আল্লাহ তাআলা তাঁর রাসূলের উপর তাদের জন্য নাযিলকৃত কুরআনের বর্ণনা করার দায়িত্ব কীভাবে দেন যদি রাসূলের সুন্নার কোনো অস্তিত্ব না থাকে? অথবা যদি রাসূলের সুন্নাহকে প্রমাণ হিসেবে গ্রহণ করা না হয়?
      অনুরূপভাবে আল্লাহ তা‘আলা সূরা আন-নূরে বলেন,   
﴿قُلۡ أَطِيعُواْ ٱللَّهَ وَأَطِيعُواْ ٱلرَّسُولَۖ فَإِن تَوَلَّوۡاْ فَإِنَّمَا عَلَيۡهِ مَا حُمِّلَ وَعَلَيۡكُم مَّا حُمِّلۡتُمۡۖ وَإِن تُطِيعُوهُ تَهۡتَدُواْۚ وَمَا عَلَى ٱلرَّسُولِ إِلَّا ٱلۡبَلَٰغُ ٱلۡمُبِينُ ٥٤﴾ [النور: ٥٤] 
বল, তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর এবং রাসূলের আনুগত্য কর। তারপর যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও, তবে সে শুধু তার উপর অর্পিত দায়িত্বের জন্য দায়ী এবং তোমাদের উপর অর্পিত দায়িত্বের জন্য তোমরাই দায়ী। আর যদি তোমরা তার আনুগত্য কর, তবে তোমরা হিদায়াত প্রাপ্ত হবে। আর রাসূলের দায়িত্ব শুধু স্পষ্টভাবে পৌঁছে দেওয়া।[16]
      আল্লাহ তা‘আলা সূরা নূরে আরও বলেন,
﴿وَأَقِيمُواْ ٱلصَّلَوٰةَ وَءَاتُواْ ٱلزَّكَوٰةَ وَأَطِيعُواْ ٱلرَّسُولَ لَعَلَّكُمۡ تُرۡحَمُونَ٥٦﴾ [النور: ٥٦] 
“আর তোমরা সালাত কায়েম কর, যাকাত দাও এবং রাসূলের আনুগত্য কর, যাতে তোমরা রহমতপ্রাপ্ত হতে পার।”[17]
      আল্লাহ সূরা আ‘রাফে বলেন, 
﴿ قُلۡ يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّاسُ إِنِّي رَسُولُ ٱللَّهِ إِلَيۡكُمۡ جَمِيعًا ٱلَّذِي لَهُۥ مُلۡكُ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِۖ لَآ إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ يُحۡيِۦ وَيُمِيتُۖ فَ‍َٔامِنُواْ بِٱللَّهِ وَرَسُولِهِ ٱلنَّبِيِّ ٱلۡأُمِّيِّ ٱلَّذِي يُؤۡمِنُ بِٱللَّهِ وَكَلِمَٰتِهِۦ وَٱتَّبِعُوهُ لَعَلَّكُمۡ تَهۡتَدُونَ ١٥٨ ﴾ [الاعراف: ١٥٧] 
“বল, হে মানুষ, আমি তোমাদের সবার প্রতি আল্লাহর রাসূল, যার রয়েছে আসমানসমূহ ও জমিনের রাজত্ব। তিনি ছাড়া কোনো সত্য ইলাহ নাই। তিনি জীবন দান করেন ও মৃত্যু দেন। সুতরাং তোমরা আল্লাহর প্রতি ঈমান আন ও তার প্রেরিত উম্মী নবীর প্রতি, যে আল্লাহ ও তার বাণীসমূহের প্রতি ঈমান রাখে। আর তোমরা তার অনুসরণ কর, আশা করা যায়, তোমরা হিদায়াত লাভ করবে।”[18]
উল্লেখিত আয়াতগুলো দ্বারা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় যে, হিদায়াত ও রহমত একমাত্র রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আনুগত্য করার মধ্যেই নিহিত। সুতরাং, তার সুন্নতের অনুসরণ-অনুকরণ ও তদনুযায়ী আমল করা ছাড়া হিদায়াত লাভ কিভাবে সম্ভব? অথবা এ কথা বলা যে, তার সুন্নতের কোনো বিশুদ্ধতা নাই অথবা তার সুন্নতের উপর ভরসা করা যাবে না, তার হিদায়াত কিভাবে অর্জিত হবে?
      আল্লাহ তা‘আলা সূরা আন-নূরে বলেন,
﴿فَلۡيَحۡذَرِ ٱلَّذِينَ يُخَالِفُونَ عَنۡ أَمۡرِهِۦٓ أَن تُصِيبَهُمۡ فِتۡنَةٌ أَوۡ يُصِيبَهُمۡ عَذَابٌ أَلِيمٌ ٦٣ ﴾ [النور : ٦٣]
“অতএব যারা তার নির্দেশের বিরুদ্ধাচরণ করে, তারা যেন তাদের ওপর বিপর্যয় নেমে আসা অথবা যন্ত্রণাদায়ক আযাব পৌছার ভয় করে।”[19]
      সূরা আল-হাশরে আল্লাহ তাআলা বলেন,
﴿وَمَآ ءَاتَىٰكُمُ ٱلرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَىٰكُمۡ عَنۡهُ فَٱنتَهُواْۚ وَٱتَّقُواْ ٱللَّهَۖ إِنَّ ٱللَّهَ شَدِيدُ ٱلۡعِقَابِ ٧ ﴾ [الحشر: ٧] 
রাসূল তোমাদের যা দেয় তা গ্রহণ কর, আর যা থেকে সে তোমাদের নিষেধ করে, তা থেকে বিরত হও এবং আল্লাহকেই ভয় কর, নিশ্চয় আল্লাহ শাস্তি প্রদানে কঠোর।[20]
এ বিষয়ে আরও অনেক আয়াত রয়েছে যেগুলো প্রমাণ করে যে আল্লাহর রাসূলের আনুগত্য করা ও তিনি যা নিয়ে দুনিয়াতে আগমন করেছেন তার আনুগত্য করাও ফরয; যেমনটি এর পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে যে, আল্লাহর কিতাবের অনুসরণ-অনুকরণ করা, আল্লাহর কিতাবকে আঁকড়ে ধরা, আল্লাহর কিতাবের আদেশ নিষেধ পালন করা ফরয। এ দুটি-কুরআন ও সূন্নাহ-একটি অপরটির সম্পূরক ও অবিচ্ছেদ্য মূল উৎস। দুটির কোনোটিকেই অস্বীকার করা যাবে না। যদি কোনো ব্যক্তি একটিকে অস্বীকার করে, সে অপরটিকেও অস্বীকার করল এবং মিথ্যারোপ করল। আর এ জাতীয় কাজ সকল উম্মতে মুসলিমাহ্‌র ঈমানদার ও জ্ঞানীদের ঐকমত্যে কুফরি, ভ্রষ্টতা ও ইসলামের গণ্ডি থেকে বের হয়ে যাওয়া।

এ বিষয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদিস থেকে প্রমাণ:

     যারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে ছিলেন এবং যারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে ছিলেন না কিয়ামত পূর্ব দুনিয়াতে আগমন করবে এমন সবার জন্য আল্লাহর রাসূলের আনুগত্য করা ও তার আনিত দ্বীনের অনুসরণ করা ফরয হওয়া এবং তার নাফরমানি করা নিষিদ্ধ হওয়া বিষয়ে বর্ণিত হাদিসসমূহ মুতাওয়াতির – তথা নিরবিচ্ছিন্নভাবে অগণিত অসংখ্য লোকের বর্ণনার কারণে অকাট্যভাবে প্রমাণিত হওয়ার -পর্যায়ভুক্ত।
      তন্মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, বুখারি ও মুসলিমে আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
«مَنْ أَطَاعَنِي فَقد أَطَاعَ الله ومَن عَصَانِي فقد عَصَى الله»
“যে ব্যক্তি আমার আনুগত্য করল, সে আল্লাহর আনুগত্য করল আর যে আমার বিরুদ্ধাচরণ করল, সে আল্লাহর বিরুদ্ধাচরণ করল।”[21]
      অনুরূপভাবে সহীহ বুখারীতে আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
«كلّ أمَّتي يَدخُلونَ الجنةَ إِلا مَن أَبَى قِيلَ يا رسولَ اللهِ ومَن يَأبَى قَالَ مَن أَطَاعَني دَخَلَ الجنة ومَن عَصَاني فَقد أَبَى»
“যে ব্যক্তি অস্বীকার করে, সে ব্যক্তি ব্যতীত আমার সকল উম্মত জান্নাতে প্রবেশ করবে; সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন: হে আল্লাহর রাসূল! কোন ব্যক্তি অস্বীকার করে? তখন তিনি বললেন: যে ব্যক্তি আমার আনুগত্য করবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে; আর যে ব্যক্তি আমার অবাধ্য, সে ব্যক্তিই অস্বীকার করে।”[22]
      ইমাম আহমদ, আবু দাউদ ও হাকিম বিশুদ্ধ সনদে মিকদাম ইবনে মা‘দি কারাব রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন
«ألا إني أوتيتُ هذا الكتاب، ومثلَهُ معهُ، ألا يُوشِكُ رَجُلٌ شَبْعان على أريكته، يقولُ: عليكم بِهذَا القُرآن، فيما وَجدْتُم فيه من حلالٍ فأحِلُّوهُ، وما وجدْتُم فيه من حرام فَحَرِّموهُ».
“জেনে রাখ, নিশ্চয়ই আমাকে এই কিতাব দেয়া হয়েছে এবং তার সাথে তার অনুরূপ বস্তুও (সুন্নাহ) দেওয়া হয়েছে। সাবধান! অচিরেই কোনো কোনো ব্যক্তি এমন পাওয়া যাবে যে তার খাটের উপর বসে বসে বলবে: তোমাদের উপর আবশ্যক হল এই কুরআনকে গ্রহণ করা; সুতরাং তোমরা তাতে যা হালাল হিসেবে পাবে, তাকে হালাল বলে মেনে নেবে, আর তাতে যা হারাম হিসেবে পাবে, তাকে হারাম বলে ঘোষণা করবে[23]
      আবু দাউদ ও ইবন মাজাহ বিশুদ্ধ সনদে ইবনে আবু রাফে তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
«لا أَلْفَينَّ أَحَدَكُم مُتّكِئًا عَلى أَريكتِهِ يَأتِيهِ الأمْرُ مِن أَمْري مَمّا أَمَرْتُ بِهِ أو نَهَيْتُ عَنْهُ فَيقولُ لا ندْري، ما وَجَدْنا في كِتابِ اللهِ اتَّبَعْنَاه ».
“আমি যেন তোমাদের কাউকে এমন দেখতে না পাই যে সে  তার খাটের উপর হেলান দিয়ে বসে থাকবে[24], তার নিকট আমার নির্দেশিত অথবা আমার নিষেধকৃত কোনো বিষয় পৌঁছবে, তখন সে বলবে, আমি জানি না, আমরা আল্লাহর কিতাবে যা পাব তা-ই কেবল অনুসরণ করব।[25]
      হাসান ইবনে জাবের হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি মিকদাম ইবন মা‘দি কারাব রাদিয়াল্লাহু আনহুকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন,
«حَرّمَ رَسولُ الله r يومَ خَيْبَر أَشْياءَ ثم قَالَ يُوشِكُ أَحَدُكُم أَن يُكذِّبَني وَهو مُتّكِئ يُحًدّث بحدِيثي فَيقولُ بَيْنَنا وَبَيْنكُم كِتابُ اللهِ فما وَجَدْنَا فِيهِ من حَلالٍ اسْتَحْلَلْنَاهُ وَمَا وَجَدْنا فيه من حَرام حَرّمْنَاهُ أَلا إِنَّ مَا حَرّمَ رسُولُ اللهِ مِثْلُ مَا حَرّمَ الله» أخرجه الحاكم والترمذي وابن ماجه بإِسناد صحيح.
“রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খাইবারের দিন কিছু জিনিসকে হারাম করেন। তারপর তিনি বলেন, অচিরেই তোমাদের কেউ কেউ আমাকে অমান্য করার মাধ্যমে মিথ্যারোপ করবে, সে হেলান দেয়া অবস্থায় থাকবে, তার কাছে আমার হাদিস বর্ণনা করা হবে, তখন সে বলবে, আমাদের মধ্যে ও তোমাদের মধ্যে ফায়সালা কারী আল্লাহর কিতাব। তাতে যে সব জিনিস হালাল পাব তাকে আমরা হালাল মনে করব, আর তাতে যে সব জিনিস হারাম পাব, তাকে আমরা হারাম মনে করব। সাবধান, মনে রাখবে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে সব বস্তুকে হারাম বলবে, তা আল্লাহ যে সব বস্তুকে হারাম বলবে তারই মত।[26]
     তদ্রূপ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে অসংখ্য সনদে বর্ণিত যে, তিনি তার সাহাবীদের থেকে যারা উপস্থিত ছিল, তাদের ওসিয়ত করেন, তারা যেন অনুপস্থিত ব্যক্তিদের নিকট দ্বীনের দাওয়াত পৌছিয়ে দেন এবং তিনি তাদের বলতেন, হতে পারে যার নিকট পৌঁছানো হল, সে শ্রোতার চেয়ে অধিক সংরক্ষণকারী বা সমঝদার হবে। যেমন,
      বুখারী ও মুসলিমে বর্ণিত, আরাফার দিন বিদায় হজের ভাষণে ও কুরবানির দিনে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সমবেত সাহাবীদের সম্বোধন করে বলেন,
  «فليبلغ الشاهد الغائب فرب من يبلغه أوعى له ممن سمعه »
“উপস্থিত ব্যক্তি অনুপস্থিত ব্যক্তিকে পৌঁছিয়ে দেবে। হতে পারে যার কাছে পৌঁছানো হল, সে যার থেকে শুনেছে তার থেকে অধিক সংরক্ষণকারী হবে।”[27]
যদি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাত যে শুনবে এবং যার কাছে তা পৌঁছবে তার উপর প্রমাণ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত না হবে, অনুরূপভাবে যদি রাসূলের সুন্নাত কিয়ামত পর্যন্ত স্থায়ী না হবে, তাহলে তিনি সুন্নাতকে মানুষের নিকট পৌঁছানোর জন্য নির্দেশ দিতেন না। রাসূলের নির্দেশ দেওয়া দ্বারা জানা গেল যে, সুন্নাহ্‌ দ্বারা প্রমাণ গ্রহণ করা যারা রাসূলের মুখ থেকে সরাসরি শোনে তাদের ক্ষেত্রে যেমন জরুরী অনুরূপভাবে যাদের নিকট বিশুদ্ধ সনদে সুন্নতটি পৌঁছল তাদের জন্যও জরুরী।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীগণ রাসূলের মুখের থেকে উচ্চারিত কথা ও কর্মগুলিকে যথাযথ সংরক্ষণ করেন এবং তারা তাদের পরবর্তী লোক তাবে‘ঈগণের নিকট তা পৌঁছান, তারপর তাবে‘ঈগণ তাদের পরবর্তী লোকদের নিকট পৌঁছান। এভাবে নির্ভরযোগ্য আলেমগণ প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম এবং যুগের পর যুগ রাসূলের সুন্নাহকে মানুষের নিকট পৌঁছানোর ধারাবাহিকতা বজায় রাখেন। তারা লেখনির মাধ্যমে তাদের কিতাবসমূহের মধ্যে সূন্নাহকে সংরক্ষণ করেন। কোনোটি সহীহ বা বিশুদ্ধ আর কোনোটি সহীহ নয় তাও তারা স্পষ্ট করেন। বিশুদ্ধ হাদীস ও দুর্বল হাদীস চেনার জানার জন্য বিভিন্ন ধরনের কায়দা কানুন তারা নির্ধারণ করেন, যাতে কোনোটি সহীহ আর কোনোটি দুর্বল তা জানা যায়। আর আহলে ইলম তথা জ্ঞানীগণ হাদিসের কিতাব বুখারি মুসলিমসহ অন্যান্য কিতাবগুলোকে গ্রহণ করেছেন এবং পরিপূর্ণভাবে হেফয ও সংরক্ষণ করেছেন যেমনিভাবে আল্লাহ তাআলা স্বীয় কিতাবকে বিকৃতকারী নাস্তিক ও বাতিলপন্থীদের হাত থেকে পরিপূর্ণভাবে সংরক্ষণ করেছেন, যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন,
﴿إِنَّا نَحۡنُ نَزَّلۡنَا ٱلذِّكۡرَ وَإِنَّا لَهُۥ لَحَٰفِظُونَ ٩ ﴾ [الحجر: ٩] 
“নিশ্চয় আমরা কুরআন নাযিল করছি, আর আমরা অবশ্যই তার সংরক্ষণকারী”। [সূরা আল-হিজর: ৯]
     এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নতও অবতীর্ণ ওহী। আল্লাহ তাআলা যেমনিভাবে স্বীয় কিতাব কুরআনকে হেফাজত ও সংরক্ষণ করেছেন, অনুরূপভাবে সুন্নতকেও হেফাজত ও সংরক্ষণ করেছেন। সুন্নতের হেফাজতের জন্য যুগে যুগে আল্লাহ তাআলা বিজ্ঞ আলেমগণের সুব্যবস্থা করেছেন; এ সব আলেম বাতিলপন্থীরা হাদিস ও সুন্নতের মধ্যে যে সব বিকৃতি ও পরিবর্তন করার প্রচেষ্টা চালিয়েছিল, তা প্রতিহত করেন, জাহেল অজ্ঞ লোকদের অপব্যাখ্যাকে রোধ করেন।  মিথ্যুক, অজ্ঞ, নাস্তিকরা হাদিস ও সুন্নাহ্‌ সম্পর্কে যে সব অপবাদ দেন, তা দূর করেন। কারণ, আল্লাহ তাআলা হাদিসকে কুরআনে করীমের ব্যাখ্যা হিসেবে নির্ধারণ করেছেন, কুরআনের যে সব বিধান সংক্ষেপে বর্ণিত তার ব্যাখ্যা ও বিস্তারিত আলোচনা হাদিসই তুলে ধরেছে এবং কুরআনে যে সব আহকাম বর্ণিত হয় নি সেগুলো হাদিসেই আলোচনা করা হয়। যেমন, কোনো মহিলার দুধ পান সংক্রান্ত বিধি-বিধান, মিরাসের অনেক বিধান, স্ত্রীর সাথে তার ফুফু অথবা খালাকে একত্রে বিবাহ করা নিষিদ্ধ হওয়া সহ বিভিন্ন বিধানগুলোর আলোচনা শুধু হাদিসেই এসেছে। কুরআনে এ সব বিধান নিয়ে কোনো আলোচনা করা হয়নি।

সুন্নতের যথাযথ সম্মান ও তার উপর আমল করা ওয়াজিব হওয়া বিষয়ে সাহাবায়ে কেরাম, তাবে‘ঈন ও তাদের পরবর্তীদের বর্ণনা:

     রাসূলের সুন্নাত (তথা তাঁর কথা, কাজ, অনুমোদন, শারীরিক ও গুণগত বৈশিষ্ট্য) এর যথাযথ সম্মান ও তার উপর আমল করা ফরয হওয়ার বিষয়ে সাহাবায়ে কেরাম, তাবে‘ঈন ও তাদের পরবর্তীদের কিছু কথা এখানে তুলে ধরা হচ্ছে।
      যেমন, বুখারি ও মুসলিমে আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মৃত্যুর পর আরবের কিছু লোক মুরতাদ হল। আবু বকর সিদ্দিক রাদিয়াল্লাহু আনহু সাহসিকতার সাথে বললেন, আল্লাহর কসম যে ব্যক্তি সালাত ও যাকাতের মাঝে পার্থক্য করবে, আমি তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করব। তার কথা শোনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, আপনি তাদের বিরুদ্ধে কীভাবে যুদ্ধ ঘোষণা করবেন, অথচ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«أمِرْتُ أَنْ أقَاتِلَ النَّاسَ حَتى يَقُولُوا لا إِلهَ إِلا الله فَإِذا قَالوها عَصَمُوا مِني دِمَاءَهُم وَأَموَالَهُم إِلا بحقَّها » 
“আমাকে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ তথা ‘আল্লাহ ব্যতীত কোনো হক ইলাহ নেই’ একথার ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত মানুষের সাথে যুদ্ধ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে, যখন সে তা বলবে, তখন তার জান মাল নিরাপদ হয়ে যাবে, তবে এ কালেমার হক বা দাবী অনুযায়ী হলে সেটা ভিন্ন কথা”।
তার কথা শোনে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, ‘যাকাত কি আল্লাহর হক নয়? আল্লাহর কসম যদি একটি রশিও যা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে যাকাত হিসেবে তারা প্রদান করত তা দিতে যদি কেউ অস্বীকার করে, আমি তা দিতে অস্বীকার করার কারণে তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করব।’ তারপর ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, আমি বুঝতে পারলাম, আল্লাহ তাআলা আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু এর অন্তরকে যুদ্ধের জন্য খুলে দিয়েছেন এবং এটিই হক। সাহাবীগণ তাঁর আহ্বানে সাড়া দিলেন, তারা মুরতাদদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন এবং তাদের পুনরায় ইসলামের দিকে ফিরিয়ে আনেন। আর যারা মুরতাদ হওয়ার পর সেটার উপর অবিচল থেকেছিল তাদের তারা হত্যা করেছিলেন। এ ঘটনার মধ্যে সুন্নতের যথাযথ সম্মান ও তার উপর আমল করা জরুরি হওয়ার সু-স্পষ্ট প্রমাণ রয়েছে।
      একজন দাদী আবু বকরের নিকট এসে সে তার উত্তরাধিকার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে, আবু বকর সিদ্দিক রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, তোমার জন্য আল্লাহর কিতাবে কোনো অংশ বর্ণিত হয় নি। আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তোমার জন্য কোনো অংশ বর্ণনা করেছেন বলে আমার জানা নেই। তবে আমি মানুষকে জিজ্ঞাসা করব, তারপর তিনি সাহাবীগণকে জিজ্ঞেস করলেন, তখন একজন সাহাবী সাক্ষ্য দিলেন যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাদিকে ‘সুদুস’ তথা ছয় ভাগের একভাগ দিয়েছেন। তারপর তিনি দাদির জন্য ‘সুদুস’ বা ছয় ভাগের একভাগের ফায়সালা প্রদান করেন।
      অনুরূপভাবে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু তার আমেল তথা কর্মকর্তাদের মানুষের মাঝে বিচার ফায়সালার ক্ষেত্রে নির্দেশ দিয়েছিলেন যে তারা যেন প্রথমে আল্লাহর কিতাব থেকে ফয়সালা গ্রহণ করে, যদি আল্লাহর কিতাবে ফায়সালা খুঁজে না পায়, তারা যেন আল্লাহর রাসূলের সূন্নাহ্‌ দ্বারা ফায়সালা করে।
      তদ্রূপ যখন গর্ভের সন্তানকে নষ্ট তথা কারো আঘাতজনিত কারণে গর্ভপাত হয়ে মৃত অবস্থায় প্রসব হয়ে গেলে সে সন্তানের রক্তপণের বিধান সম্পর্কে ‘উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুর নিকট কোনো সমাধান না থাকাতে তিনি সাহাবীগণকে জিজ্ঞেস করেন। তখন মুহাম্মদ ইবনে মাসলামাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু ও মুগীরা ইবনে শু‘বা রাদিয়াল্লাহু আনহু দাড়িয়ে বললেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ বিষয়ে একটি দাস বা দাসী স্বাধীন করে দেওয়ার ফায়সালা করেছিলেন। এটা শোনার উপর ‘উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু সেটা অনুসারে ফয়সালা দিয়েছিলেন।
      স্বামীর মৃত্যুর পর স্বামীর ঘরে মহিলার ইদ্দত পালন করার বিষয় ‘উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু এর অজানা থাকাতে ফায়সালা দেয়া তার নিকট কঠিন মনে হল, তখন ফুরাই‘আহ্ বিনতে মালেক ইবন সিনান রাদিয়াল্লাহু আনহা, যিনি আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহুর বোন ছিলেন, তিনি বললেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার স্বামীর মৃত্যুর পর তাকে স্বামীর ঘরে ইদ্দত পালন করার নির্দেশ দেন। তারপর ‘উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু মহিলার কথা অনুযায়ী বিষয়টির ফায়সালা করেন।
      অনুরূপভাবে ‘উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু তার কর্মকর্তা ওলিদ ইবন ‘উকবার উপর মদ পান করার অপরাধের হদ কায়েম করার ফায়সালা সুন্নাহ্‌ দ্বারাই করেছিলেন।
      আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু রাদিয়াল্লাহু আনহু এর নিকট যখন এ সংবাদ পৌঁছল যে, ‘উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু হজ্জে তামাত্তু করতে নিষেধ করেন তখন আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু হজ ও ওমরা উভয়েরই এহরাম বাঁধেন এবং বলেন, ‘আল্লাহর রাসূলের সূন্নাহকে আমি কারো কথায় ছাড়বো না।’
      এক লোক আবু বকর ও ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহুর কথা দ্বারা আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাসের নিকট তামাত্তু হজের উপর ইফরাদ হজের বিষয়টিকে প্রাধান্য দেওয়ার দলীল পেশ করলে ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, ‘আমি আশংকা করছি তোমাদের উপর আসমান থেকে পাথরের বৃষ্টির মত বিপর্যয় নেমে আসার। আমি তোমাদেরকে বলি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আর তোমরা বল আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু ও ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন।’ যদি সুন্নতের বিপরীতে আবু বকর ও ওমরের কথা দিয়ে দলীল পেশ করলে, তার উপর শাস্তির আশংকা করা হয়, তাহলে যারা আবু বকর ও ওমর থেকে নীচের লোক তাদের কথায় অথবা নিজের মতামত ও ইজতিহাদের ভিত্তিতে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সূন্নাহকে যারা ছেড়ে দেন তাদের পরিণতি কি হতে পারে?!
      যখন কিছু লোক আব্দুল্লাহ ইবন ওমরের নিকট সুন্নাহ্‌ বিষয়ে বিতর্ক করল, তখন আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু তাদের বললেন, আমরা কী ওমরের আনুগত্য করার জন্য নির্দেশিত নাকি রাসূলের সুন্নার আনুগত্য করার প্রতি নির্দেশিত?
      ইমরান ইবন হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুমা যখন হাদিস আলোচনা করছিলেন, তখন এক ব্যক্তি তাকে বলল, আপনি আমাদেরকে আল্লাহর কিতাব থেকে বর্ণনা করুন। এ কথা শোনে তিনি খুব ক্ষুব্ধ হয়ে তাকে বলেন, সুন্নাহ্‌ আল্লাহর কিতাবেরই ব্যাখ্যা। যদি সুন্নাহ না হত, তাহলে আমরা জোহরের সালাত চার রাকাত, মাগরিবের সালাত তিন রাকাত, ফজরের সালাত দুই রাকাত জানতে পারতাম না। যাকাতের বিধান বিস্তারিত জানতে পারতাম না এবং শরিয়তের অন্যান্য বিষয়গুলো জানার সুযোগ হত না।
বস্তুত রাসূলের সুন্নাহর যথাযথ সম্মান, তার উপর আমল ফরয হওয়া ও তার বিরোধিতা করার পরিণতি বিষয়ে সাহাবীগণ থেকে অনেক বর্ণনা ও ভাষ্য এসেছে। যেমন,
      আব্দুল্লাহ ইবন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু যখন এ হাদিস বর্ণনা করেন,
«لا تَمْنَعُوا إِمَاءَ اللهِ مَسَاجِدَ اللهِ »  
“তোমরা আল্লাহর দাসীদেরকে (মহিলাদেরকে) মসজিদে গমনে বাধা দিও না”[28] 
তখন তার কোনো এক ছেলে বলে বসল, ‘আল্লাহর কসম, আমরা তাদের মসজিদে গমনে বাধা দিব।’ তার কথা শোনে আব্দুল্লাহ খুব ক্ষুব্ধ হলেন এবং তাকে কঠিন বকা দিলেন এবং বললেন, আমি তোমাকে বলছি আল্লাহর রাসূল বলেছেন আর তুমি বলছ, ‘আমরা অবশ্যই তাদের বাধা দেব।’ (তোমার এ কথা বলা কখনই ঠিক হয়নি।)  
      রাসূলের সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবন মুগাফফাল রাদিয়াল্লাহু আনহু তার কোনো এক আত্মীয়কে দেখলেন যে সে পাথরকুচি নিক্ষেপ করছে তিনি তাকে নিষেধ করলেন এবং বললেন, নিশ্চয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
«نهى الخذف وقال إٍنه لا يصيد صيدًا ولا ينكأ عدوا ولكنه يكسر السن ويفقأ العين » 
“পাথরকুচি নিক্ষেপ করতে নিষেধ করেছেন এবং তিনি বলেছেন, ‘এর দ্বারা কোনো শিকারী শিকার করা যায় না এবং কোনো দুশমনকে আঘাত করা যায় না বরং এতে মানুষের দাত ভাঙ্গা হয় এবং চোখ নষ্ট করা হয়”[29] 
তারপর তিনি দেখতে পেলেন যে তার সে আত্মীয় আবারও পাথরকুচি নিক্ষেপ করছে, তখন তিনি বললেন, ‘আমি তোমার সাথে কখনোই কথা বলব না। আমি তোমাকে খবর দিলাম আল্লাহর রাসূল পাথর নিক্ষেপ করেছেন তারপরও তুমি পাথর নিক্ষেপ করলে?
      ইমাম বাইহাকী রহ. আইয়ুব সাখতিয়ানি রহ. থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, যখন তুমি কোনো ব্যক্তিকে সুন্নাহ্‌ থেকে কোনো হাদীস শোনাও, তখন যদি সে বলে, তুমি এটা রেখে আমাকে কুরআন থেকে শোনাও, তাহলে মনে রাখবে যে নিঃসন্দেহ লোকটি গোমরাহ তথা পথভ্রষ্ট।
      ইমাম আওযা‘ঈ রহ. বলেন, সুন্নাহ্‌ হলো আল্লাহর কিতাবের বিচারক অথবা সুন্নাহ্‌ আল্লাহর কিতাবের শর্তমুক্তভাবে বর্ণিত বিধানসমূহের জন্য শর্ত আরোপকারী অথবা সুন্নাহ এমন সব বিধান নিয়ে এসেছে যা আল্লাহর কিতাবে নেই। যেমন, আল্লাহর বাণী-     
﴿وَأَنزَلۡنَآ إِلَيۡكَ ٱلذِّكۡرَ لِتُبَيِّنَ لِلنَّاسِ مَا نُزِّلَ إِلَيۡهِمۡ وَلَعَلَّهُمۡ يَتَفَكَّرُونَ ٤٤﴾ [النحل: ٤٤] 
“আর আমরা তোমার প্রতি নাযিল করেছি কুরআন; যাতে তুমি মানুষের জন্য স্পষ্ট করে দিতে পার, যা তাদের প্রতি নাযিল হয়েছে। আর যাতে তারা চিন্তা করে।” [সূরা আন-নাহল: ৪৪]
আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী-
«أَلا إِني أوتِيتُ الكِتابَ ومثلَه مَعَهُ »     
মনে রাখবে, আমাকে কিতাব দেয়া হয়েছে, এবং তার সাথে তার মত আরও দেয়া হয়েছে।[30] 
তা পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে।
      ইমাম বাইহাকী রহ. আমের আশ-শা‘বী থেকে বর্ণনা করেন, তিনি কতক লোককে বলেন,إِنما هلكتم في حين تركتم الآثار   ‘তোমরা তো তখনই ধ্বংস হয়েছ যখন তোমরা ভাষ্য বা নির্দেশনা ছেড়ে দিয়েছ’ এ কথা দ্বারা তাঁর উদ্দেশ্য হচ্ছে যখন তোমরা সহীহ হাদিসসমূহ ছেড়ে দিয়েছ তখনই তোমরা ধ্বংস হয়ে গেলে।
      ইমাম বাইহাকী রহ. আওযায়ী রহ. থেকে আরও বর্ণনা করেন, তিনি তার কতক সাথীকে বলেন, যখন তোমাদের নিকট রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কোনো হাদিস পৌঁছে, তখন এর বিপরীত অন্য কোনো কথা বলা থেকে তুমি সম্পূর্ণ বিরত থাক। কারণ, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর পক্ষ থেকে মুবাল্লিগ বা প্রচারকারী ছিলেন। [তার কথাই আল্লাহর কথা]
      ইমাম বাইহাকী রহ. বিশিষ্ট ইমাম সূফিয়ান ইবন সা‘ঈদ আস-সাওরী রহ. থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, প্রকৃত ইলম হচ্ছে, হাদিসের ইলম।
      ইমাম মালেক রহ. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কবরের দিক ইশারা করে বলেন, একমাত্র এ কবরওয়ালা ছাড়া আমরা সবাই বিতর্কিত। আমরা প্রত্যাখ্যানকারী ও প্রত্যাখ্যাত। (অর্থাৎ এ কবরবাসী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ রকম নয়, তার কোনো কথা বাদ দেওয়া যাবে না)
      ইমাম আবু হানিফা রহ. বলেন, যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণিত কোনো হাদিস সামনে আসে তখন তা মাথা ও চোখের উপর।
      ইমাম শাফে‘ঈ রহ. বলেন, যখন আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বিশুদ্ধ হাদিস বর্ণনা করা সত্ত্বেও যদি সেটা গ্রহণ না করি, তবে মনে রাখবে, আমি তোমাদের সাক্ষ্য করে বলছি, আমার বিবেক নষ্ট হয়ে গেছে।
      তিনি আরও বলেন, আমি যখন কোনো কথা বলি, আর হাদিস আমার কথার বিপক্ষে হয়, তাহলে আমার কথাকে তোমরা দেয়ালের ওপর নিক্ষেপ কর।
      ইমাম আহমদ ইবন হাম্বল রহ. তার কোনো কোনো সাথীকে বলেছিলেন, ‘তোমরা আমার তাকলীদ করো না, মালেক রহ. ও শাফেয়ী রহ. এরও তাকলীদ করো না, তোমরা আমরা যেখান থেকে গ্রহণ করেছি, সেখান থেকে গ্রহণ কর।
      তিনি আরও বলেন, আমি সে সব লোকদের বিষয়ে আশ্চর্য বোধ করি, যারা হাদিসের সনদ সম্পর্কে জানে, হাদিসটি সহীহ কিনা তাও জানে, তারপরও সুফিয়ানের নিকট যায় তার মতামতের জন্য। অথচ আল্লাহ তাআলা বলেন,
﴿فَلۡيَحۡذَرِ ٱلَّذِينَ يُخَالِفُونَ عَنۡ أَمۡرِهِۦٓ أَن تُصِيبَهُمۡ فِتۡنَةٌ أَوۡ يُصِيبَهُمۡ عَذَابٌ أَلِيمٌ ٦٣﴾ [النور : ٦٣]
“অতএব যারা তার নির্দেশের বিরুদ্ধাচরণ করে, তারা যেন তাদের ওপর বিপর্যয় নেমে আসা অথবা যন্ত্রণাদায়ক আযাব পৌছার ভয় করে।”[31] 
তিনি বলেন, তোমরা কি জান ফিতনা তথা বিপর্যয় কি? ফিতনা হল, আল্লাহর সাথে শির্ক করা, হতে পারে যখন কোনো ব্যক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কোনো কথাকে প্রত্যাখ্যান করবে, তখন তার অন্তরে আল্লাহর দ্বীনের প্রতি বক্রতা ঢেলে দেয়া হবে, তখন সে ধ্বংস হবে।
      ইমাম বাইহাকী রহ. বিশিষ্ট তাবে‘ঈ মুজাহিদ ইবন জাবার রহ. হতে বর্ণনা করেন, আল্লাহ তাআলার বাণী-
﴿فَإِن تَنَٰزَعۡتُمۡ فِي شَيۡءٖ فَرُدُّوهُ إِلَى ٱللَّهِ وَٱلرَّسُولِ﴾ [النساء : ٥٩] 
অতঃপর কোনো বিষয়ে তোমাদের মধ্যে মতভেদ ঘটলে তা উপস্থাপন কর আল্লাহ ও রাসূলের নিকট[32] 
এ আয়াতের ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, আল্লাহর দিকে প্রত্যার্পণ করার অর্থ, আল্লাহর কিতাবের দিক প্রত্যর্পণ করা আর আল্লাহর রাসূলের দিকে প্রত্যার্পণ করার অর্থ, রাসূলের সুন্নতের দিক প্রত্যার্পণ করা।
      ইমাম বাইহাকী রহ. যুহরী রহ. থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমাদের পূর্বের আলেমগণ বলতেন, সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরাই হচ্ছে মুক্তি পাওয়া।
      আল্লামা ইবনে কুদামাহ রহ. স্বীয় ‘রাওদাতুন নাযের’ গ্রন্থে উসুলুল আহকাম তথা ‘শরীয়তের বিধি-বিধানের মূল উৎস’ বর্ণনায় যা লিখেছেন তার সরাসরি ভাষ্য হচ্ছে, “দলীল-প্রমাণাদি গ্রহণের দ্বিতীয় মূল উৎস হচ্ছে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহ্‌। আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কথা প্রামাণ্য হওয়ার দলীল হচ্ছে, তার মু‘জিযাসমূহ; সেগুলোর তার সত্যবাদিতার উপর প্রমাণ বহন করছে। আর আল্লাহ তাআলা তার অনুসরণ-অনুকরণ করার নির্দেশ দিয়েছেন এবং তার আদেশের বিরোধিতা করার পরিণতি সম্পর্কে সতর্ক করেছেন।’
      হাফেয ইবনে কাসীর রহ. আল্লাহ তাআলার বাণী-
﴿فَلۡيَحۡذَرِ ٱلَّذِينَ يُخَالِفُونَ عَنۡ أَمۡرِهِۦٓ أَن تُصِيبَهُمۡ فِتۡنَةٌ أَوۡ يُصِيبَهُمۡ عَذَابٌ أَلِيمٌ ٦٣ ﴾ [النور : ٦٣]
“অতএব যারা তার নির্দেশের বিরুদ্ধাচরণ করে, তারা যেন তাদের ওপর বিপর্যয় নেমে আসা অথবা যন্ত্রণাদায়ক আযাব পৌছার ভয় করে”[33]
-এর তাফসীরে বলেন, এখানে ‘তার নির্দেশের’ বলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রদর্শিত পথ, তার অনুসৃত পদ্ধতি, তার দেখানো নিয়ম, তার সুন্নাহ্‌ ও তার শরীয়ত বুঝানো হয়েছে। সুতরাং সকল কথা ও কর্ম তার কথা ও কর্মের সাথে পরিমাপ করা হবে, অতঃপর যে কথা ও কর্ম তার কথার সাথে মিলবে তা গ্রহণ করা হবে আর যে কথা ও কর্ম তার সাথে মিলবে না তা যে বলেছে বা করেছে তার উপর প্রত্যাখ্যান করা হবে, সে যেই হোক না কেন। যেমন, বুখারি মুসলিম সহ বিভিন্ন হাদিসের কিতাবসমূহে এসেছে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«مَنْ عَمِلَ عَمَلًا ليسَ عَليهِ أَمْرُنا فَهُوَ رَدّ »
“যে ব্যক্তি এমন কোনো আমল করে, যার উপর আমার নির্দেশনা নাই তা প্রত্যাখ্যাত”।[34] 
তাহলে আয়াতের অর্থ হচ্ছে, যে ব্যক্তি প্রকাশ্যে বা গোপনে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আনিত দ্বীনের বিরোধিতা করে, সে যেন ভয় করে এবং সতর্ক হয় যে أَن تُصِيبَهُمۡ فِتۡنَةٌ তাকে ফিতনা পেয়ে বসবে অর্থাৎ কুফর, নেফাক বা বিদআত তার অন্তরে ঢেলে দেয়া হবে অথবা أَوۡ يُصِيبَهُمۡ عَذَابٌ أَلِيمٌ কঠিন শাস্তির মুখোমুখি হবে; সেটা হতে পারে দুনিয়াতেই যেমন, হত্যা অথবা শাস্তি প্রয়োগ অথবা বন্দীত্ব ইত্যাদি অবমাননাকর জীবন, যেমনটি ইমাম আহমদ রহ. বর্ণিত হাদীসে এসেছে, যা মুহাদ্দিস আবদুর রাযযাক বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, তাকে মা‘মার হাদীস বর্ণনা করেছেন, তিনি হামাম ইবন মুনাব্বিহ থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, এ হাদিসটি আমাদেরকে আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«مثَلي وَمثَلُكمْ كمَثَلِ رجلٍ اسْتَوْقَدَ نارًا فَلمّا أَضَاءَتْ مَا حَوْلَهَا جَعَلَ الفراشُ وهَذِهِ الدّوابُّ اللائِي يَقَعْنَ في النَّار يَقَعْنَ فِيهّا وَجَعَلَ يَحْجُزُهُنّ وَيَغْلِبْنَهُ فَيَقْتحِمْنَ فِيَها قَالَ فَذَلِك مَثَلي وَمَثَلَكمْ أَنا آخُذُ بحَجْزِكُم عَن النَّار هَلُمّ عَن النارِ فَتَغْلِبُوني وَتقْتَحِمُونَ فِيهَا »
“আমার দৃষ্টান্ত ও তোমাদের দৃষ্টান্ত এমন এক ব্যক্তির মত, যে আগুন জ্বালালো, তারপর যখন আগুনের আশ-পাশ আলোকিত হল, তখন কীট-পতঙ্গ, পোকা-মাকড় যেগুলো আগুনের মধ্যে ঝাপ দেয়, তাতে তারা পড়তে আরম্ভ করল। আর লোকটি তাদের বাধা দিল, কিন্তু তারা তাকে পরাভূত করে তাতেই ঝাঁপ দিচ্ছিল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমার দৃষ্টান্ত এ লোকটির মতই; আমি তোমাদের কোমর ধরে তোমাদের আগুন থেকে দূরে সরাচ্ছি, বলতে থাকছি, আগুন! আগুন! তা থেকে দূরে থাক, কিন্তু তোমরা আমাকে পরাভূত করে তাতেই ঝাঁপ দিচ্ছ।[35] বুখারি ও মুসলিম হাদিসটিকে মুহাদ্দিস আব্দুর রাযযাক কর্তৃক বর্ণিত হাদিস হিসেবে সংকলন করেন।’
      আল্লামা সুয়ুতী রহ. তার ‘মিফতাহুল জান্নাহ ফিল ইহতিজাজ বিস্‌সূন্নাহ’ কিতাবে লেখেন-
তোমরা জেনে রাখ! -আল্লাহ তোমাদের প্রতি দয়া করুন- যে ব্যক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদিস -চাই তা তার কথা হোক বা কর্ম হোক- দলীল হওয়াকে অস্বীকার করল, সে কুফরি করল, সে ইসলামের গণ্ডি থেকে বের হয়ে গেল। তার হাশর ইয়াহূদী ও নাসারাদের সাথে হবে অথবা আল্লাহর ইচ্ছানুযায়ী কোনো কাফের দলের সাথে হবে।’
সুন্নতের গুরুত্ব, সুন্নতের উপর আমল করা বাধ্যতামূলক হওয়া এবং সুন্নতের বিরোধিতা করা থেকে সাবধানতা অবলম্বন করার বিষয়ে সাহাবী, তাবে‘ঈ ও তাদের পরবর্তী আহলে ইলম থেকে অসংখ্য বাণী বর্ণিত রয়েছে। আশা করি, আমরা এখানে যে সব আয়াত, হাদিস ও বাণী উল্লেখ করেছি, তা হকের অনুসন্ধানকারীর জন্য যথেষ্ট। আমরা আল্লাহর কাছে আমাদের জন্য এবং সমস্ত মুসলিমদের জন্য কামনা করি এমন সব আমলের তাওফীক যা তাঁকে খুশি করে আর নিরাপত্তা কামনা করি তার বিক্ষুব্ধ হওয়া কারণসমূহ হতে। আর আল্লাহ কাছে আমাদের কামনা তিনি যেন আমাদের সবাইকে সঠিক পথের হিদায়াত দেন। নিশ্চয় তিনি শ্রবণকারী ও নিকটবর্তী।
وصلى الله وسلم على عبده ورسوله نبينا محمد وعلى آله وأصحابه وأتباعه بإحسان.
আব্দুল আযীয ইবন আব্দুল্লাহ ইবন বায রহ.


সূচীপত্র
ভূমিকা
আহকাম সাব্যস্ত হওয়ার জন্য গ্রহণযোগ্য মূল উৎসগুলোর আলোচনা
প্রথম মূল উৎস: আল্লাহর কিতাব
দ্বিতীয় মূল উৎস: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহ।
এ বিষয়ে রাসূল, সাহাবী ও তাবে‘ঈদের থেকে বর্ণিত ভাষ্যসমূহ:
এ বিষয়টির উপর কুরআন থেকে প্রমাণ
এ বিষয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদিস থেকে প্রমাণ
সুন্নতের যথাযথ সম্মান ও তার উপর আমল করা ফরয হওয়ার ব্যাপারে বিষয়ে সাহাবায়ে কেরাম, তাবে‘ঈন ও তাদের পরবর্তীদের বর্ণনা






[1] সূরা আ‘রাফ, আয়াত: ৩
[2] সূরা আন‘আম, আয়াত: ১৫৫
[3] সূরা মায়েদা, আয়াত: ১৫, ১৬
[4] সূরা ফুসসিলাত, আয়াত: ৪১, ৪২
[5] সূরা আন‘আম, আয়াত: ১৯
[6]  সূরা ইবরাহীম, আয়াত: ৫২
[7] মুসলিম, হজ অধ্যায়; হাদিস: ১২১৮, আবুদাউদ, মানাসেক অধ্যায়, হাদিস: ১৯০৫, ইবন মাজাহ, মানাসেক অধ্যায়, হাদিস: ৩০৭৪
[8] মুসলিম, ফাযায়েলে সাহাবা অধ্যায়, হাদিস: ২৪০৮, আহমদ, হাদিস: ৩৬৭/৪, দারেমী, ফাযায়েলে কুরআন অধ্যায়, ৩৩১৬
[9] মুসলিম, ফাযায়েলে সাহাবা অধ্যায়, হাদিস: ২৪০৮, আহমদ, হাদিস: ৩৬৭/৪, দারেমী ফাযায়েলে কুরআন অধ্যায়, হাদিস: ৩৩১৬
[10]মুসলিম, ফাযায়েলে সাহাবা অধ্যায়, হাদিস: ২৪০৮, আহমদ, হাদিস: ৩৬৭/৪, দারেমী ফাযায়েলে কুরআন অধ্যায়, হাদিস: ৩৩১৬
[11] সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৩২
[12] সূরা নিসা, আয়াত: ৫৯
[13] সূরা নিসা, আয়াত: ৮০
[14] সূরা নাহল আয়াত: ৪৪
[15] সূরা নাহল, আয়াত: ৬৪
[16] সূরা নূর, আয়াত: ৫৪
[17] সূরা নূর আয়াত: ৫৪
[18] সূরা আরাফ, আয়াত: ১৫৭
[19] সূরা আন-নূর, আয়াত: ৬৩
[20]  সূরা হাশর, আয়াত: ৭
[21] বুখারি, জিহাদ অধ্যায়, হাদিস: ২৭৯৭, মুসলিম, ইমারাহ অধ্যায়, হাদিস: ১৮৩৫, আন-নাসায়ী, ৫৫১০, ইবন মাজাহ্‌, জিহাদ অধ্যায়, হাদিস: ২৮৫৯, আহমদ, ৩৮৭/২
[22] বুখারী, আস-সহীহ: হাদিস নং- ৬/২৬৫৫/ ৬৮৫১, মুসলিম, হাদিস: ১৮৩৫, নাসায়ী, ৫৫১০, ইবন মাজাহ্‌, মুকাদ্দিমা, ৩, আহমাদ, ৩৬১/২
[23] মুসনাদ আহমাদ ৪/১৩০, তিরমিযী, ইলম অধ্যায়; হাদিস: ২৬৬৪, আবু দাউদ, সূন্নাহ অধ্যায়, হাদিস: ৪৬০৬, ইবন মাজাহ, ১২।
[24] এ জাতীয় বসার মধ্যে না মানার অহঙ্কার ফুটে উঠবে। সে অহঙ্কারী হওয়ার কারণে রাসূলের হাদীসকে মানতে চাইবে না। [সম্পাদক]
[25] তিরমিযী, ইলম অধ্যায়; হাদিস: ২৬৬৩, আবু দাউদ সূন্নাহ অধ্যায়, হাদিস: ৪৬০৫, ইবন মাজাহ, ১৩, আহমদ: ৮/৬
[26] তিরমিযী, ইলম অধ্যায়; হাদিস: ২৬৬৪, আবু দাউদ, সূন্নাহ অধ্যায়, হাদিস: ৪৬০৪, ইবন মাজাহ, ১২, আহমদ: ১৩২/৪, দারেমী ৫৮৬
[27] বুখারি, হজ অধ্যায়, হাদিস: ১৬৫৪, মুসলিম, ১৯৭৯, ইবন মাজাহ, হাদিস: ২৩৩, আহমদ, হাদিস: ৩৭/৫, দারেমী, হাদিস: ১৯১৬
[28] বুখারি, জুম‘আ অধ্যায়, হাদিস: ৮৫৮, মুসলিম, সালাত অধ্যায়, হাদিস: ৪৪২, তিরমিযী, জুম‘আ অধ্যায়, হাদিস: ৫৭০, নাসায়ী, মাসাজেদ অধ্যায়, ৭০৬, আবু দাউদ, সালাত অধ্যায়, হাদিস: ৫৬৮, ইবনে মাজাহ, হাদিস: ১৬, আহমদ: ১৬/২, দারেমী, ৪৪২।
[29] বুখারি, আদব অধ্যায় হাদিস: ৫৮৬৬, মুসলিম, শিকার ও জবেহ অধ্যায় হাদিস: ১৯৫৪, নাসায়ী কাসামাহ অধ্যায়, হাদিস: ৪৮১৫, ইবনে মাজাহ, শিকার অধ্যায়, ৩২২৭, আহমদ, হাদিস ৫৬/৫, দারেমী, মুকাদ্দিমা, হাদিস: ৪৪০

[30] তিরমিযী, ইলম অধ্যায়, হাদিস ২৬৬৪, আবুদ দাউদ, সূন্নাহ আধ্যায়, হাদিস: ৪৬০৪, ইবন মাজাহ, মুকাদ্দিমাহ, হাদিস: ১২।
[31] সূরা নূর, আয়াত: ৬৩
[32] সূরা আন-নিসা: ৫৯
[33] সূরা আন-নূর, আয়াত: ৬৩।
[34] বুখারি সুলাহ অধ্যায়, হাদিস: ২৫৫০, মুসলিম বিচার ফায়সালাহ অধ্যায়, হাদিস: ১৭১৮, আবু দাউদ সূন্নাহ অধ্যায়, হাদিস, ৪৬০৬, ইবন মাজাহ; মুকাদ্দিমাহ, হাদিস: ১৪, আহমদ, হাদিস: ২৫৬/৬
[35] বুখারি, রিকাক অধ্যায়, হাদিস: ৬১১৮, মুসলিম, ফাযায়েল অধ্যায়, হাদিস: ২২৪৪, তিরমিযী, আমসাল অধ্যায়, হাদিস: ২৮৭৪, আহমদ, হাদিস: ৩১২/২
_________________________________________________________________________________

লেখক: আব্দুল আযীয ইবন আব্দুল্লাহ ইবন বায রহ. 
অনুবাদক: জাকের উল্লাহ আবুল খায়ের 
সম্পাদনা : ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া
সূত্র : ইসলামহাউজ

পোস্টটি ভালো লাগলে শেয়ার করতে ভুলবেন না কিন্তু।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন