অন্তর বিধ্বংসী বিষয়: আসক্তি
ভূমিকা
الحمد لله رب العالمين، والصلاة والسلام على نبينا محمد، وعلى آله وصحبه أجمعين.
যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের জন্য যিনি সমগ্র সৃষ্টিকুলের রব। আর সালাত ও সালাম নবীগণের সেরা ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী আমাদের নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর এবং তার পরিবার-পরিজন ও সাথী-সঙ্গীদের সকলের উপর।
মনে রাখতে হবে, আসক্তি ও আসক্তির আনুষঙ্গিক বিষয় নিয়ে কথা বলা বর্তমান যুগে প্রতিটি নর নারীর জন্য অতি জরুরি। কারণ, বর্তমানে আসক্তি-উত্তেজনা ও এর প্রভাব এতই বৃদ্ধি পেয়েছে, যা আমাদের দেশ ও সমাজ এক অজানা গন্তব্যের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। তারপরও দেশ, জাতি ও সমাজকে পশুত্ব ও পাশবিকতার করাল গ্রাস থেকে রক্ষা করার জন্য এ বিষয়ে জাতিকে সতর্ক করা ও খুঁটিনাটি বিষয়গুলো জানিয়ে দেয়া একান্ত জরুরী। পুস্তিকাটিতে আসক্তির বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করা হবে। যেমন,
আসক্তি কি?
আসক্তিকে কেন সৃষ্টি করা হয়েছে?
আসক্তির পূজা করে নিষিদ্ধ বিষয়সমূহে জড়িত হওয়ার কারণগুলো কি?
আসক্তির চিকিৎসা কি? ইত্যাদি বিষয়গুলো এ কিতাবে আলোচনা করা হবে।
যারা এ কিতাবটি তৈরি করতে এবং কিতাবের বিষয়গুলোকে একত্র করতে আমাদের সহযোগিতা করেছেন আমরা তাদের সবাইর জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ ও যাবতীয় কল্যাণ কামনা করছি এবং তাদের জন্য আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের দরবারে প্রার্থনা করি, মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন যেন তাদেরকে আরও বেশি বেশি করে ভাল কাজ করার তাওফিক দেন। আমীন!
হে আল্লাহ! তুমি হালাল দান করে আমাদের হারাম বিমুখ কর, আর তোমার আনুগত্য দ্বারা তোমার অবাধ্যতা থেকে আমাদের হেফাজত কর। আর তোমার অনুগ্রহ দ্বারা আমাদেরকে গাইরুল্লাহ থেকে হেফাজত কর।
وصلى الله وسلم على نبينا محمد وعلى آله وصحبه أجمعين.
আসক্তি বা شهوة এর সংজ্ঞা
আসক্তি বা شهوة এর আভিধানিক অর্থ:
আল্লামা ইবন ফারেস রহ. বলেন, شهوة শব্দটি সীন, হা ও মুতাল হরফ ওয়াও দ্বারা গঠিত একটি আরবী শব্দ। অর্থাৎ, আসক্তি, বাসনা, আকাঙ্ক্ষা, কামনা ইত্যাদি। আরবীতে বলা হয়- رجل شهوان، অর্থাৎ, লোকটি প্রলুব্ধ, লোভী ও আকাঙ্খাকারী।
আল্লামা ফাইরুযাবাদী রহ. বলেন,
شهي الشئ وشهاه يشهاه شهوةً
এ কথাটি তখন বলা হয়ে থাকে, যখন লোকটি কোন বস্তুর আকাঙ্ক্ষা করে, বস্তুটিকে মহব্বত করে, বস্তুটির বিষয়ে তার আগ্রহ থাকে এবং সে বস্তটি কামনা করে।
আসক্তি বা شهوة এর পারিভাষিক অর্থ:
পরিভাষায় شهوة [আসক্তির চাহিদা] এর একাধিক অর্থ আছে। আমরা গুরুত্বপূর্ণ দু‘একটি অর্থ এখানে আলোচনা করব।
এক. এটি মানুষের দৈহিক একটি স্বভাব যার উপর ভিত্তি করেই মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তার স্বীয় বান্দাদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে মানব সৃষ্টির রহস্য, মহান উদ্দেশ্য ও মহৎ লক্ষ্য সাধিত হয়।
দুই. আসক্তি হল, নারী ও পুরুষের সংসার করার আগ্রহ।
তিন. কোন বস্তুর প্রতি অন্তরের চাহিদা।
আসক্তি সৃষ্টির কারণ
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মানবকে সৃষ্টি করার সাথে তার মধ্যে এমন একটি মানবিক চাহিদা দান করেন, যা দ্বারা আল্লাহ মানব সৃষ্টির উদ্দেশ্য সম্পর্কে একটি ধারণা দেন।
ইমাম ইবন তাইমিয়্যাহ রহ. বলেন, “আমরা আমাদের দুনিয়ার জীবনের সামগ্রিক কল্যাণ অর্জনে যাতে সহযোগিতা লাভ করতে পারি, তাই মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদের মধ্যে আসক্তি ও কামনা-বাসনাকে সৃষ্টি করেছেন। এ ছাড়াও তিনি আমাদের মধ্যে খাদ্যের চাহিদা ও তা ভোগ করার চাহিদা সৃষ্টি করেছেন। মূলত: এটি মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের অনেক বড় নেয়ামত। দুনিয়াতে বেঁচে থাকা এবং দৈহিক ক্ষমতা সচল রাখার জন্য খাদ্য-পানীয় আমাদের অপরিহার্য, খাদ্য পানীয় ছাড়া আমাদের বেঁচে থাকা কোন ক্রমেই সম্ভব নয়। অনুরূপভাবে বিবাহ করা, স্বামী-স্ত্রী উভয়ে মিলে-মিশে ঘর-সংসার করার নাম। আর এটিও একটি মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের অনেক বড় নেয়ামত। বিবাহ দ্বারা বংশ পরিক্রমা ও তার ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকে। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদের যে সব কর্ম ও ইবাদত-বন্দেগী করার নির্দেশ দিয়েছেন, যদি আমরা আমাদের শক্তি দ্বারা তা পালন করতে পারি, তাহলে আমরা দুনিয়া ও আখিরাতের যাবতীয় কল্যাণ লাভে সক্ষম হব এবং আমরা সে সব লোকদের অন্তর্ভুক্ত হব, যাদের মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বিশেষ নেয়ামত দান করেছেন এবং দুনিয়াতে তাদের সৌভাগবান করেছেন। আর যদি আমরা আমাদের আসক্তির পুজা করি এবং যে সব কর্ম আমাদের ক্ষতির কারণ হয়, তা করতে থাকি, যেমন- হারাম খাওয়া, অন্যায়ভাবে উপার্জন করা, অপচয় করা, আমাদের স্ত্রীদের বিষয়ে সীমালঙ্ঘন করা ইত্যাদি, তাহলে আমরা মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের দরবারে জালেম ও অন্যায়কারী হিসেবে পরিগণিত হব। আমরা কখনোই আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এর নেয়ামতের শুকর গুজার বান্দা হিসেবে বিবেচিত হব না”[1]।
উল্লেখিত আলোচনা হতে একটি বিষয় স্পষ্ট হয়, আর তা হল, কামনা-বাসনা ও আসক্তি মূলত: কোন খারাপ কিছু নয়, তবে তার ব্যবহারের কারণে তা ভালো ও খারাপে পরিণত। কামনা-বাসনা ও আসক্তিকে যদি বৈধ, ভালো ও কল্যাণমুলক কাজে ব্যবহার করা হয়, তখন তা অবশ্যই ভালো এবং এবং প্রসংশনীয়। আর তা না করে যদি তাকে খারাপ ও মন্দ কাজে ব্যবহার করা হয়, তখন তা অবশ্যই খারাপ বলে বিবেচিত হবে। এ জন্য এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, একজন মানুষ তার কামনা-বাসনা ও আসক্তির পরিচালক, সে তার কামনা-বাসনা ও আসক্তিকে যেভাবে চালাবে তা সেভাবেই চলতে বাধ্য থাকবে।
এতে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের আরও বড় হিকমত হল, যদি মানুষের মধ্যে কামনা-বাসনা ও আসক্তি না থাকত, তাহলে সে কখনোই বিবাহ করত না, সন্তান লাভের প্রতি তার কোন আকর্ষণ থাকত না এবং সন্তানের চাহিদা থাকত না। ফলে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের মানব সৃষ্টির যে উদ্দেশ্য তা হাসিল হত না এবং তার প্রতিফলন ঘটতো না। এ কারণে বলা চলে, আমাদের সৃষ্টির বিশেষ হিকমত ও বুদ্ধিমত্তা হল, মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদেরকে এমন এক আসক্তি বা কামনা দিয়ে সৃষ্টি করেছেন, যার মধ্যে রয়েছে আমাদের অস্তিত্ব ও স্থায়িত্ব। অন্যথায় আমরা টিকে থাকতে পারতাম না, আমাদের বংশ-পরিক্রমা ও তার ধারাবাহিকতা বন্ধ হয়ে যেত এবং দুনিয়ার স্বাভাবিক গতি রুদ্ধ হত। কিন্তু কামনা-বাসনা ও আসক্তির চাহিদা কখনো কখনো মানব জাতির ধ্বংসের কারণ হয়ে থাকে এবং তাদের বিপর্যয় ডেকে আনে।
আর সৃষ্টির বিষয়ে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের চিরন্তন পদ্ধতি হল, তিনি বিভিন্ন হিকমত ও মহান উদ্দেশ্যকে সামনে রেখেই তাদের সৃষ্টি করেন। আর দুনিয়াতে তিনি মানুষকে পরীক্ষা করেন। যারা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবে, তাদের জন্য রয়েছে উত্তম বিনিময়। আর যারা পরীক্ষায় ফেল করবে তাদের জন্য রয়েছে অসহনীয় যন্ত্রণা ও কঠিন শাস্তি। আর পরীক্ষার বিশেষ অংশ হল, মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদের কামনা-বাসনা ও আসক্তির চাহিদা দিয়ে সৃষ্টি করেন, যাতে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন পার্থক্য স্পষ্ট করে দিতে পারেন কে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের অনুগত বান্দা, আর কে অবাধ্য। তিনি আরও স্পষ্ট করেন কে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের পবিত্র বান্দা, আর কে অপবিত্র ও অপরাধী।
মালেক ইব্ন দীনার রহ. বলেন, “দুনিয়ার জীবনের চাহিদা যার নিকট প্রাধান্য পায়, শয়তান তাকে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের আশ্রয় হতে দূরে সরিয়ে দেয়”।
হাসান বছরী রহ. বলেন,
رَُّب مَسُتورٍ سَبَتْهُ شَهْوَةٌ
فَتَعَرَّى سِتْرُهُ فَانْهَتَكا
صَاحِبُ الشَّهْوَةِ عَبْدٌ فَإذَِا
غَلَبَ الشَّهْوَةَ أَضْحَى مَلِكا
“অনেক আত্মগোপনে থাকা মানুষকে তার আসক্তি বন্দি করে ফেলে। অতঃপর যখন সে গোপন পর্দা খুলে যায় তখন তা আবরণ শুন্য হয়ে পড়ে। কামনা-বাসনা ও আসক্তির পুজারী হল একজন দাস কিন্তু যখন সে তার আসক্তিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে তখন সে সত্যিকার বাদশায় পরিণত হয়”[2]।
দুনিয়াতে পুরুষের সবচেয়ে বড় চাহিদা হল নারী। এ কারণে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কুরআনে করীমে নারীদের কথা প্রথমে আলোচনা করেন। তিনি মানব জাতিকে জানিয়ে দেন যে, নারীদের ফিতনা সর্বাধিক মারাত্মক, ক্ষতিকর এবং সমাজ ও ব্যক্তি জীবনে এর প্রভাব অত্যন্ত শক্তিশালী ও ভয়াবহ। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কুরআনের করীমে এরশাদ করেন.
﴿زُيِّنَ لِلنَّاسِ حُبُّ ٱلشَّهَوَٰتِ مِنَ ٱلنِّسَآءِ وَٱلۡبَنِينَ وَٱلۡقَنَٰطِيرِ ٱلۡمُقَنطَرَةِ مِنَ ٱلذَّهَبِ وَٱلۡفِضَّةِ وَٱلۡخَيۡلِ ٱلۡمُسَوَّمَةِ وَٱلۡأَنۡعَٰمِ وَٱلۡحَرۡثِۗ ذَٰلِكَ مَتَٰعُ ٱلۡحَيَوٰةِ ٱلدُّنۡيَاۖ وَٱللَّهُ عِندَهُۥ حُسۡنُ ٱلۡمََٔابِ﴾ [آل عمران : 14[.
“মানুষের জন্য সুশোভিত করা হয়েছে কামনা-বাসনা ও আসক্তির ভালবাসা- নারী, সন্তানাদি, রাশি রাশি সোনা-রূপা, চিহ্নিত ঘোড়া, গবাদি পশু ও শস্যখেত। এগুলো দুনিয়ার জীবনের ভোগ সামগ্রী। আর আল্লাহ, তাঁর নিকট রয়েছে উত্তম প্রত্যাবর্তনস্থল”। [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৪]
উসামা ইবন যায়েদ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«مَا تَرَكْتُ بَعْدِي فتِنْةً أَضَرَّ عَلَى الرِّجَالِ مِنَ النِّسَاءِ»
“আমি আমার পরে পুরুষদের জন্য অধিক ক্ষতিকর নারীদের চেয়ে খারাপ কোন ফিতনা রেখে যাইনি”[3]।
আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« اتَّقُوا الدُّنْيَا، وَاتَّقُوا النِّسَاءَ؛ فَإِنَّ أَوَّلَ فِتْنَةِ بَنِي إِسْرَائِيلَ كَانَتْ فِي النِّسَاءِ»
“তোমরা দুনিয়া বিষয়ে সতর্ক থাক এবং তোমরা নারীদের বিষয়ে সতর্ক থাক। কারণ, বনী ইসরাইলদের সর্বপ্রথম ফিতনা ছিল নারীদের বিষয়ে”[4]।
নিষিদ্ধ বিষয়সমূহে লিপ্ত হওয়ার কারণ
প্রথম: ঈমানের দুর্বলতা:
ঈমান হল মুমিনের আত্মরক্ষার জন্য সবচেয়ে মজবুত ও বড় হাতিয়ার; ঈমানই মুমিনের জন্য সবচেয়ে বড় দুর্গ ও আশ্রয়স্থল, যা তাকে খারাপ, মন্দ, ঘৃণিত, নিকৃষ্ট ও নিষিদ্ধ কাজে লিপ্ত হওয়া থেকে রক্ষা করে। যখন কোন মানুষ আল্লাহর আনুগত্য হতে দূরে সরে যায়, তখন তার ঈমান দুর্বল হয় এবং সে অন্যায় ও আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের নাফরমানী করা ও অবাধ্য হওয়ার সাহস পায়। এ কারণেই কোন কোন মনীষী বলেন, তিনটি জিনিস হল, তাকওয়ার নিদর্শন। এক. শক্তি-সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও খারাপ কামনা-বাসনা ও আসক্তির চাহিদাকে ছেড়ে দেয়া। দুই. নফসের বিরোধিতা করে নেক আমলসমূহ পালন করা। তিন. নিজের প্রয়োজন থাকা সত্ত্বেও আমানতকে তার হকদারের নিকট পৌঁছে দেয়া। এ তিনটি কাজ যে ব্যক্তি করবে তা প্রমাণ করে যে, লোকটির মধ্যে ঈমান ও দ্বীনদারি আছে। কারণ, তার সামনে হারাম কাজ অপেক্ষমাণ কিন্তু সে কেবল আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের ভয়ে তা হতে বিরত থাকছে। সে তার নফসের চাহিদার বিরুদ্ধে স্বীয় আত্মাকে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের ইবাদত বন্দেগীতে লিপ্ত থাকতে বাধ্য করছে। তার শত প্রয়োজন থাকা সত্ত্বেও আমানতের খেয়ানত করে নি। অন্যের আমানতকে প্রকৃত হকদারের নিকট পৌঁছে দিয়েছে।
দ্বিতীয়. অসৎ সঙ্গ:
আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« الرَّجُلُ عَلَى دِينِ خَلِيلِهِ، فَلْيَنْظُرْ أَحَدُكُمْ مَنْ يُخَاللُِ »
“মানুষ তার বন্ধুর স্বভাবের উপরই প্রতিষ্ঠিত হয়ে থাকে, সুতরাং তোমরা দেখে শোনে বন্ধু নির্বাচন করবে”[5]।
সাধারণত মানুষ যে সব অন্যায়, পাপাচার, অপরাধ ও অপকর্ম করে থাকে, তার অধিকাংশের কারণ হল, তার অসৎ সঙ্গী। যাদের সঙ্গী খারাপ হয়, তারা ইচ্ছা করলেও ভালো থাকতে পারে না। সঙ্গীরা তাদের খারাপ ও অন্যায় কাজের দিকে নিয়ে যায়।
একজন সতের বছরের যুবক তার জীবনে প্রথম অপকর্মের বর্ণনা দিয়ে বলল, “আমি প্রথমে আমার এক বন্ধুর বাসায় তার সাথে সাক্ষাত করতে গিয়ে সেখানে নিষিদ্ধ সিনেমা দেখি। আমি তার কামরায় অবস্থান করলে সে একটি ভিডিও ফিল্ম চালালে আমি তার সাথে বসে তা দেখতে থাকি। এ ছিল আমার জীবনের সর্ব প্রথম অপরাধ”।
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন নোংরামি, অশ্লীলতা ও ব্যভিচারকে নিষেধ করেন এবং বেহায়াপনা হতে বিরত থাকার নির্দেশ দেন। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন,
﴿لَّا يُحِبُّ ٱللَّهُ ٱلۡجَهۡرَ بِٱلسُّوٓءِ مِنَ ٱلۡقَوۡلِ إِلَّا مَن ظُلِمَۚ وَكَانَ ٱللَّهُ سَمِيعًا عَلِيمًا ١٤٨﴾ [سورة النساء : 148[.
মন্দ কথার প্রচার আল্লাহ পছন্দ করেন না, তবে কারো উপর যুলম করা হলে ভিন্ন কথা। আর আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞানী। [সূরা নিসা, আয়াত: ১৪৮]
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« لَيْسَ المؤْمِنُ بِالطَّعَّانِ وَلَا اللَّعَّان وَلَا الفَاحِشِ وَلَا البَذِيءِ »
“ঈমানদার ব্যক্তি খোটাদানকারী নয়, অভিশাপকারীও নয়; অনুরূপভাবে অশ্লীল ও খারাপ বচন বিশিষ্ট ও নোংরা ব্যক্তিও হতে পারে না”[6]।
তৃতীয়: দৃষ্টির হেফাজত করা:
মানুষ যখন রাস্তায় বের হয় তখন তাকে অবশ্যই দৃষ্টির হেফাজত করতে হবে। কারণ, মানুষের দৃষ্টি হল, ইবলিসের বিষাক্ত হাতিয়ার বা তীর। দৃষ্টি হেফাজত করতে না পারলে বিভিন্ন ধরনের অপকর্মের শিকার হতে হয়। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তার বান্দাদের দৃষ্টির ব্যাপারে অধিক সতর্ক করেন এবং ভয় দেখান। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন,
﴿قُل لِّلۡمُؤۡمِنِينَ يَغُضُّواْ مِنۡ أَبۡصَٰرِهِمۡ وَيَحۡفَظُواْ فُرُوجَهُمۡۚ ذَٰلِكَ أَزۡكَىٰ لَهُمۡۚ إِنَّ ٱللَّهَ خَبِيرُۢ بِمَا يَصۡنَعُونَ ٣٠ ﴾ [ سورة النور : 30[
“মুমিন পুরুষদেরকে বল, তারা তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখবে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হিফাযত করবে। এটাই তাদের জন্য অধিক পবিত্র। নিশ্চয় তারা যা করে সে সম্পর্কে আল্লাহ সম্যক অবহিত”। [সূরা নূর, আয়াত: ৩০]
চতুর্থ: বেকারত্ব:
বেকারত্ব যুবকদের জন্য মারাত্মক ক্ষতি। শুধু ক্ষতিই নয়, এটি মানব জীবনের জন্য বড় একটি অভিশাপ। যখন তাদের কোন কাজ না থাকে তখন তাদের মস্তিষ্কে খারাপ চিন্তা ঢুকে পড়ে এবং বেকারত্ব তাদের খারাপ ও অশ্লীল কাজের দিকে নিয়ে যায়। তারা খারাপ, অন্যায় ও অশ্লীল কাজের চক আঁকতে থাকে। ধীরে ধীরে তাদের অবস্থা এমন হয় তারা শুধু খারাপ চিন্তাই করতে থাকে। ভালো কোন চিন্তা তাদের মাথায় কাজ করে না। ফলে সে এমন খারাপ অভ্যাসের অনুশীলন করতে থাকে, যা তার জীবনকে ধ্বংসের দ্বার-প্রান্তে পৌঁছে দেয়।
মানবাত্মা যখন আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের আনুগত্য ও ইবাদত বন্দেগীতে সময় ব্যয় করবে না তখন সে অবশ্যই আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এর নাফরমানিতে সময় নষ্ট করবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বীয় বাণীতে এ কথাটিই বলেছেন। আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« نعْمَتَانِ مَغْبوُنٌ فيِهِمَا كَثيِرٌ مِنَ الناَّسِ: الصِّحَّةُ، وَالفَرَاغُ »
“দুটি নেয়ামত এমন আছে যার মধ্যে অধিকাংশ মানুষ প্রতারিত। এক- সুস্থতা দুই-অবসরতা”[7]। বেকার থাকা একটি বড় মুসিবত এবং আত্মার জন্য মারাত্মক ক্ষতি। যদি মানুষ কোন ভালো কাজে ব্যস্ত না থাকে, তাহলে শয়তান অবশ্যই তাকে খারাপ কাজের দিকে নিয়ে যায়।
পঞ্চম: নিষিদ্ধ কাজে শৈথিল্য:
মানুষ যখন কোন কাজে শিথিলতা দেখায়, তখন তা ধীরে ধীরে বড় আকার ধারণ করে। অধিকাংশ সময় মেয়েদের প্রতি তাকানো ও তাদের সাথে সংমিশ্রণ মানুষকে অশ্লীল কাজ করতে বাধ্য করে। অথচ প্রথম যখন একজন মানুষ কোন মেয়ের সাথে কথা-বার্তা বলে ও তার দিকে তাকায় তখন তার খারাপ কোন উদ্দেশ্য থাকে না। কিন্তু ধীরে ধীরে তার অবনতি হতে থাকে এবং তা বড় আকার ধারণ করে। ছোট হারাম বা ছোট গুণাহের প্রতি শৈথিল্য তাকে বড় হারাম বা কবীরা গুণাহের দিক নিয়ে যায়।
বর্তমান সময়ে অনেক পরিবার এমন আছে, যারা চাকরানিকে তাদের যুবক ছেলের সাথে মিশতে কোন বাধা দেয় না, তারা মনে করে, এতে কোন সমস্যা নাই। কারণ, আমাদের ছেলেরা কি ঘরের চাকরানির সাথে কোন অপকর্ম করতে পারে? কিন্তু পরবর্তীতে যখন দুর্ঘটনা ঘটে যায়, তখন তারা লজ্জায় নিজের আঙ্গুল নিজেই কাটতে থাকে।
আবার অনেক পরিবার আছে যারা তাদের মেয়েদের ড্রাইভারের সাথে ছেড়ে দেয়। মনে করে সে একজন ড্রাইভার তার সাথে কি আমাদের মেয়েরা কোন খারাপ চিন্তা করতে পারে? কিন্তু না, দেখা যায় এর পরিণতি খুবই খারাপ হয়। মেয়েরা ড্রাইভারের প্রেমে পড়ে যায় এবং অনেক সময় তা-ই ঘটে যা তুমি কোন দিন চিন্তাই করতে পার নি।
এ ধরনের অনেক ঘটনাই আমাদের শৈথিল্যের কারণে সমাজে সংঘটিত হচ্ছে, যা একজন মানুষকে মহা বিপদ ও ধ্বংসের মধ্যে নিপতিত করে।
ষষ্ট: যৌন উত্তেজক বস্তুর সাথে উঠবস করা:
হারাম বা নিষিদ্ধ কাজে একজন মানুষ তখন লিপ্ত হয়, যখন বিভিন্ন ধরনের যৌন উত্তেজক কাজ যেমন, গান, বাজনা, সিনেমা, মেয়েদের সাথে কথা বলা ও হাসি ঠাট্টা ইত্যাদির সাথে তার সংশ্রব থাকে। এ কারণেই শরীয়ত অপকর্মের সকল উপাদানকে নিষেধ করে। যেমন, শরিয়ত রাস্তার মাঝে বসা হতে নিষেধ করে। কারণ রাস্তায় বসলে বিভিন্ন ধরনের নোংরা ছবি, পোষ্টার ও মেয়েদের দেখারা আশঙ্কা থাকে যেগুলো একজন মানুষের যৌন উত্তেজনাকে বৃদ্ধি করে এবং অপকর্মের দিক উৎসাহ যোগায়।
আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إِيَّاكُم وَالجُلُوسَ فِي الطُّرُقَاتِ فقالوا يا رسول الله ما لنا بُدٌّ، من مجالسنا نتحدث فيها. قال فَإِذَا أَبَيْتُمْ إِلَّا المَجْلِسَ فَأَعْطُواالطَّرِيقَ حَقَّهَ قالوا: وما حقه؟ قال غَضُّ البَصَرِ، وَكَفُّ الأَذَى، وَرَدُّ السَّلَامِ، والأمرُ بِالمَعْرُوفِ، والنهيُ عَنِ المُنْكَرِ»
“তোমরা রাস্তার মাঝে বসা হতে বিরত থাক। রাসূল সা. এ কথা শোনে সাহাবীরা বলল, হে আল্লাহর রাসূল রাস্তায় বসা ছাড়া আমাদের কোন উপায় নাই। আমরা রাস্তায় বসে কথাবার্তা বলি। তাদের কথার উত্তরে রাসূল সা. বললেন, যদি রাস্তায় বসা ছাড়া তোমাদের কোন উপায় না থাকে তাহলে তোমরা রাস্তার হক আদায় করবে। এ কথা শোনে সাহাবীরা বলল, হে আল্লাহর রাসূল রাস্তার হক কি? তিনি বলেন, রাস্তার হক হল, চক্ষুকে অবনত করা, রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তুকে হটানো, সালামের উত্তর দেয়া, ভালো কাজের আদেশ দেয়া এবং খারাপ কাজ হতে নিষেধ করা”[8]। ইসলামী শরীয়ত এবাদতের স্থানেও নারী ও পুরুষের একত্রিকরণ ও তাদের সাথে সংমিশ্রণ যা যৌন উত্তেজনাকে বৃদ্ধি করে তা নিষেধ করেছেন। কারণ, মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সালাতে নারীদের কাতারকে পুরুষের কাতার থেকে আলাদা করেছেন, নারীদের জন্য মসজিদে প্রবেশের দরজা আলাদা করার নির্দেশ দিয়েছেন এবং নারীদের মসজিদ থেকে পুরুষদের পরে বের হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। আর এ গুলো সবই হল, যাতে একজন মানুষ যৌন উত্তেজনা হতে দূরে ও সতর্ক থাকে।
গান-বাজনা, সিনেমা, হোটেল, রেস্তোরা, খেলাধুলার অনুষ্ঠান, অশ্লীল পত্র-পত্রিকা, ম্যাগাজিন, ইত্যাদি যেগুলোতে নারীদের উলঙ্গ ছবি চাপানো হয়, এগুলো সবই যৌন উত্তেজক ও চরিত্র হননকারী। বর্তমানে ইন্টারনেট ও ফেসবুক মানুষের চরিত্র ধ্বংস করার জন্য একটি বড় ধরনের উপকরণ বা মাধ্যম। এতে শুধু চরিত্রই নষ্ট হয় না বরং এতে রয়েছে সময়ের অপচয়, অনর্থক কাজে লিপ্ত থাকা ইত্যাদি। আর সময়ের অপচয় ও সময় নষ্ট করা একজন মানুষের জীবনের জন্য খুবই মারাত্মক ও ক্ষতিকর।
কামনা-বাসনা ও আসক্তির সাথে কি ধরনের আচরণ করবে?
যখন একজন মুসলিমের আসক্তি বা খারাপ কোন কামনা-বাসনা জাগ্রত হয়, আর তার সামনে হারাম ও নিষিদ্ধ বিষয়গুলোকেই সুশোভিত করা হয়, তার জন্য অশ্লীল ও অপকর্ম করার সুযোগ সৃষ্টি হয় এবং খারাপ কাজটি করার জন্য যা দরকার তার সবকিছু তার হাতের নাগালে থাকে, তখন সে কি করবে? এ অবস্থায় তার জন্য দুটি পথ খোলা থাকে, এক- সে ঐ খারাপ কাজটিতে জড়িয়ে পড়া, অপরটি হল, খারাপ কাজে জড়িত না হওয়া। এ অবস্থায় সে তার কামনা-বাসনা ও আসক্তির সাথে কি ধরনের আচরণ করবে?! বা তার করণীয় কী হবে?
এ সময় তার জন্য তিনটি পদ্ধতি নির্দিষ্ট করা যেতে পারে, যা তাকে এ ধরনের গুনাহ হতে বাচার জন্য সহযোগিতা করবে এবং তাকে মারাত্মক বিপদ নিশ্চিত ধ্বংস থেকে মুক্তি দেবে।
প্রথমত: তুমি বলবে, হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি, তুমি আমাকে হেফাজত কর! কারণ; আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের প্রতি ঈমান আনা ও আল্লাহকে ভয় করা, সব নিরাপত্তার একমাত্র গ্যারান্টি। তিনিই বান্দাকে হারাম ও নিষিদ্ধ কাজ থেকে রক্ষাকারী এবং যৌনাচারের পিছনে দৌড়-ঝাপ দেয়া, পাপাচারে নিয়োজিত হওয়া থেকে মুক্তি দাতা।
ইউসুফ আ. যখন এ ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হলেন, তখন তিনি সাথে সাথে বললেন, (معاذ الله) হে আল্লাহ! আমি তোমার আশ্রয় কামনা করছি। তার এ কথা বলার কারণেই, মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাকে অশ্লীল কাজে লিপ্ত হওয়া থেকে হেফাজত করেন এবং তার থেকে নারীদের সব ধরনের ষড়যন্ত্রকে রুখে দেন। আর ঐ ব্যক্তিকেও আল্লাহ তা‘আলা হেফাজত করবে যে কিয়ামতের দিন আল্লাহর আরশের নিচে ছায়া লাভের প্রত্যাশায় এ কথা বলবে, হে আল্লাহ! আমি তোমাকে ভয় করি। কারণ, হাদিসে বর্ণিত আছে, যে দিন আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের আরশের ছায়া ছাড়া আর কোন ছায়া থাকবে না, সেদিন আল্লাহ তা‘আলা সাত ব্যক্তিকে তার আরশের ছায়ার তলে ছায়া দেবেন। তার মধ্যে এক ব্যক্তি সে, যাকে কোন সুন্দর ও সম্ভ্রান্ত রমণী তার সাথে অপকর্মের দাওয়াত দিল, কিন্তু সে বলল, আমি অবশ্যই আল্লাহকে ভয় করি[9]।
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন
« سَبْعَةٌ يُظلُهُمُ الله في ظِِّلهِ، ومنهم... وَرَجُلٌ طَلَبْتُه امْرَأَةٌ ذَاتُ مَنْصِبٍ وَجَمَالٍ فَقَالَ: إنِّي أَخَافُ الله »
আল্লামা ইবন হাজার রহ. বলেন, এ কথাটি কেবল মুখে বলবে যাতে সে অন্যায় ও অশ্লীল থেকে বিরত থাকতে পারে। অথবা অন্তর থেকে বলবে, আর এটি তার জন্য আরো অধিক নিরাপদ।
আল্লামা ইবন হাজার রহ. আরো বলেন, “বাক্যটি সে মুখে উচ্চারণ করবে, যাতে তার মন ও আসক্তি চাহিদা পুরণ ও অশ্লীল কাজে লিপ্ত হওয়া থেকে সতর্ক থাকে এবং অন্তর থেকে বলারও অবকাশ আছে। এ অবস্থার মধ্যে অন্তর ও মুখ উভয়ের একযোগে এ ধরনের বাক্য উচ্চারণ করা একটি বড় বিষয় এবং এর প্রভাব খুবই বৃহৎ। এ ধরনের প্রেক্ষাপট এমন কথা একমাত্র তার থেকে প্রকাশ পেতে পারে, যাকে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন নিজেই হেফাজত করেন এবং যার ভিতর ও বাহিরে কোন পার্থক্য নাই। যার ফলে সে গোপনে আল্লাহকে তেমন ভয় করে, যেমনটি ভয় করে প্রকাশ্যে।
একজন মুমিন যখন বাস্তবে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের হেফাজতে লালিত হয় এবং আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের নামসমূহের অনুশীলন করতে থাকে, তখন সে অবশ্যই তার কামনা-বাসনা ও আসক্তির চাহিদার ক্ষেত্রে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের আদেশ নিষেধের উপর অটল ও অবিচল থাকে এবং আসক্তির কু-মন্ত্রণা ও পূজা করা হতে নাজাত পাবে।
তারপর যারা গোপনে আল্লাহকে ভয় করে তাদের জন্য জান্নাতকে সহজ করা হয়েছে, আখেরাতে সে জান্নাত লাভে ধন্য হবে। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন,
﴿وَأُزۡلِفَتِ ٱلۡجَنَّةُ لِلۡمُتَّقِينَ غَيۡرَ بَعِيدٍ ٣١ هَٰذَا مَا تُوعَدُونَ لِكُلِّ أَوَّابٍ حَفِيظٖ ٣٢ مَّنۡ خَشِيَ ٱلرَّحۡمَٰنَ بِٱلۡغَيۡبِ وَجَآءَ بِقَلۡبٖ مُّنِيبٍ ٣٣ ﴾ [سورة ق : 31-33[.
আর জান্নাতকে মুত্তাকীদের অদূরে, কাছেই আনা হবে। এটাই, যার ওয়াদা তোমাদেরকে দেয়া হয়েছিল। প্রত্যেক আল্লাহ অভিমুখী অধিক সংরক্ষণশীলদের জন্য। যে না দেখেই রহমানকে ভয় করত এবং বিনীত হৃদয়ে উপস্থিত হত। [সূরা ক্বাফ, আয়াত: ৩১-৩৩]
অর্থাৎ যখন লোক চক্ষুর আড়াল হয়, তখনও সে আল্লাহকে ভয় করে। কোন এক কবি বলেছিলেন,
وَإذَِا خَلَوْتَ برِِيبَةٍ فِي ظُلْمَةٍ وَالنفّْسُ دَاعِيَةٌ إِلَى الطُّغْيَانِ
فَاسْتَحِ مِنْ نَظَرِ الإِلَهِ وَقُلْ لَهَا إِنَّ الَّذِي خَلَقَ الظَّلَامَ يَرَانِي
“যখন তুমি গভীর অন্ধকারে একা থাক বা তোমাকে কেউ দেখে না আর তোমার অন্তর তোমাকে খারাপ কাজের প্রতি আহ্বান করে, তখন তুমি তোমার প্রভুর দৃষ্টির প্রতি মনোযোগ দাও আর তুমি তোমার আত্মাকে বল, যে সত্ত্বা অন্ধকারকে সৃষ্টি করেছন, তিনি অবশ্যই আমাকে দেখছেন”।
ইমাম শাফে‘য়ী রহ. বলেন,
إذَِا ما خَلْوتَ الدَّهْرَ يَوْماً فَلَا تَقُلْ
خَلَوْتُ وَلَكِنْ قُلْ عَلَيَّ رَقِيبُ
وَلا تْحَسَبنَّ الله يَغْفَلُ سَاعَةً
وَلَا أَنَّ مَا تُخْفِي عَلَيْهِ يَغِيبُ
“তুমি যখন একা থাক তখন তুমি এ কথা বল না, আমি একা, আমাকে কেউ দেখছে না। বরং তুমি বল, অবশ্যই আমার উপর পাহারাদার নিযুক্ত আছে। আর তুমি এ কথা মনে করো না যে, আল্লাহ ক্ষণিকের জন্যও বেখবর, কিংবা তুমি যা তার কাছে গোপন রাখ তা আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কাছে গায়েব থাকবে”।
একজন মুমিন যখন উল্লেখিত মানসিকতা ও ধ্যান-ধারণা অনুযায়ী জীবন যাপন করবে এবং সে অনুযায়ী আমল করবে, তখন সে অবশ্যই একজন চরিত্রবান ও উন্নত মানুষ বলে বিবেচিত হবে। সে একজন মুত্তাকী হিসেবে পরিগণিত হবে; তাকে দুনিয়ার কোন বস্তু বা চাহিদা পরাভূত করতে পারবে না এবং আসক্তি তাকে গোলাম বানাতে পারবে না। শয়তান শত চেষ্টা করেও তার উপর প্রাধান্য বিস্তার করতে পারবে না। তার কু-আসক্তি তাকে কোন খারাপ কাজের দিকে নিয়ে যেতে পারবে না। বরং যখন তাকে তার আসক্তি কোন খারাপ, অন্যায় ও অশ্লীল কাজের দিকে আহ্বান করবে তখন সে এ বলে চিৎকার দেবে নিশ্চয় আমি আল্লাহকে ভয় করি। আমি আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের নিকট শয়তানের কু-মন্ত্রণা থেকে আশ্রয় চাই। আর শয়তান যখন তাকে প্রতারণা দিতে চায়, তখন সে শয়তানকে বলবে, আমার উপর তোমার কোন কর্তৃত্ব চলবে না।
আর যখন তোমার খারাপ ও অসৎ সঙ্গীরা তার জন্য অশ্লীল ও খারাপ কাজগুলোকে সুশোভিত করবে, তখন তুমি তাদের এ বলে চুপ করে দেবে, আমি জাহিলদের বন্ধু বানাতে চাই না। মনে রাখবে যখন কোন বান্দা এ ধরনের ধ্যান-ধারণা ও মানসিকতা নিয়ে জীবন যাপন করবে, তখন অবশ্যই তার মধ্যে এ কথার একটি প্রভাব দেখা যাবে। অর্থাৎ তুমি একজন আল্লাহওয়ালা লোক ও তোমার মধ্যে আল্লাহর ভয় আছে।
এ ব্যক্তির অবস্থা সম্পর্কে তুমি একটু চিন্তা করে দেখ, সে তাদের তিন জনের একজন হবে, যাদের মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাদের নেক আমলের কারণে গুহা হতে নাজাত দিয়েছিলেন। যখন তারা গুহাভ্যন্তরে আটকে গিয়েছিলে এবং আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের দরবারে তাদের নিজেদের নেক আমলের মাধ্যমে দো‘আ করেছিলেন।
«اللَّهُمَّ كَانَتْ لِي بنِتْ عَمٍّ كَانَتْ أَحَبَّالناَّسِ إلَيَّ، فَأَرَدتهُا عَنْ نَفْسِهَا، فَامْتنَعَتْ مِنيِّ، حَتىَّ أَلَمَّتْ بهَا سَنةَ مِنَ السِّنيِنَ، فَجَاءَتْنِي، فَأَعْطَيْتُهَا عِشْرِينَ وَمِائَةَ دِيناَرٍ عَلَى أَنْ تُخَلِّيَ بَيْنِي وَبَيْنَ نَفْسِهَا، فَفَعَلَتْ، حَتَّى إِذَا قَدِرْتُ عَلَيْهَاقَالَتْ: لَا أُحِلُّ لَكَ أَنْ تَفُضَّ الخاَتَمَ إِلَّا بِحَقِّهِ، -وفي رواية :اتَّقِ الله وَلَا تَفُضَّ الخاَتَمَ إلَِّا بحقِّهِ- فَتَحَرَّجْتُ مِنَ الوُقُوعِ عَلَيْهَا، فَانْصَرَفْتُ عَنهْا وَهِيَ أَحَبُّ الناَّسِ إلَيَّ، وَتَرَكْتُ الذَّهَبَ الَّذِي أَعْطَيْتُهَا، اللَّهُمَّ إنْ كُنتُ فَعَلْتُ ذَلكَ ابْتغِاءَ وَجْهِكَ فَافْرُجْ عَناَّ مَا نَحْنُ فيِهِ. فَانْفَرَجَتِ الصَّخْ»
“তাদের একজন বলল, হে আল্লাহ! আমার একজন চাচাতো বোন ছিল সে আমার নিকট দুনিয়ার সব কিছু থেকে প্রিয় ছিল এবং আমি তাকে সবার চেয়ে অধিক ভালোবাসতাম। আমি তার সাথে অপকর্ম করতে চাইলে সে আমাকে বাধা দেয়। অথচ আমি সুদীর্ঘ কাল পর্যন্ত তার প্রতীক্ষায় ছিলাম। তার সাথে মেলামেশা করার জন্য সে আমাকে একশত বিশ দিনার যোগান দেয়ার শর্ত দিলে, দীর্ঘ সাধনার পর আমি আমি একশত বিশ দিনার তার হাতে তুলে দিই। তারপর সে আমার সাথে মেলামেশা করতে বাধ্য হয়ে সম্মতি দেয়। তারপর যখন আমি তার উপর সামর্থ্য লাভ করি, সে আমাকে বলে, আমি তোমার জন্য আংটি খোলাকে তার হক আদায় করা ছাড়া হালাল মনে করি না। অপর বর্ণনায় আছে সে বলে, আল্লাহকে ভয় কর, তুমি এ সীলটি অন্যায্যভাবে খুলবে না। তার কথা শোনে তার সাথে মেলামেশা করতে সংকোচ বোধ করি এবং সাথে সাথে তার থেকে দূরে সরে যাই। অথচ, সে দুনিয়ার সব মানুষের চেয়ে প্রিয় ছিল। আর তাকে আমি যে স্বর্ণ-মুদ্রা দিয়েছিলাম তা তার নিকট রেখে আসি। লোকটি তার জীবনের এ মহৎ কাজটির কথা স্মরণ করে বলে, হে আল্লাহ এ কাজটি যদি আমি তোমার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে করে থাকি, তাহলে তুমি আমাদেরকে এ বিপদ থেকে উদ্ধার কর। তারপর পাথরটি সরে গেল”[10]।
এ বান্দার অবস্থার দিকে একটু চিন্তা করে দেখ, সে কীভাবে একটি নিষিদ্ধ কাজের দিকে ধাবিত হল এবং জীবনের সব চেষ্টা তার দিকে ব্যয় করল। কিন্তু যখন সে তার প্রেমিকার উপর উঠে বসল, যেভাবে একজন পুরুষ তার স্ত্রীর উপর উঠে বসে। তারপর যখন তাকে বলা হল, তুমি আল্লাহকে ভয় কর! তখন সে তা হতে বিরত থাকল এবং সাথে সাথে উঠে দাঁড়াল, অথচ সে হল, তার নিকট সবচেয়ে প্রিয় ব্যক্তি।
একেই বলা হয় আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের প্রতি সত্যিকার ঈমান, যে ঈমান বান্দার অন্তরে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের ভয় সৃষ্টি করে, প্রকাশ্যে ও গোপনে আল্লাহকে সামনে রাখে।
দ্বিতীয় মূলনীতি:
চক্ষুর খেয়ানত হতে বেচে থাকা:
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন,
﴿يَعۡلَمُ خَآئِنَةَ ٱلۡأَعۡيُنِ وَمَا تُخۡفِي ٱلصُّدُورُ ١٩ ﴾ [ سورة غافر : 19[.
“চক্ষুসমূহের খেয়ানত এবং অন্তরসমূহ যা গোপন রাখে তিনি তা জানেন”। [সূরা গাফের, আয়াত: ১৯]
ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা خائنة الأعين এর অর্থ সম্পর্কে বলেন,
“কোন ব্যক্তি অপর পরিবারের কোন ঘরে প্রবেশ করে, ঐ পরিবারের বয়স্ক মেয়েদের দিকে তাকিয়ে থাকে, এটিকে বলা হয় চোখের খেয়ানত। অথবা রাস্তায় হাটার সময় একজন সুন্দর নারী দেখতে পেয়ে, তার দিক সে বার বার তাকায়। যখন তারা অন্যমনষ্ক হয়, তখন তার দিকে তাকায় আবার যখন তারা সতর্ক হয়, তখন সে তার থেকে চোখকে সরিয়ে নেয়। আবার যখন তারা অন্য মনষ্ক হয় তখন তার দিকে তাকায় আবার যখন তারা বুঝতে পারে তখন চোখকে সরিয়ে নেয়। একে বলা হয় চোখের খেয়ানত।
সুফিয়ান রহ. বলেন, একজন লোক যখন কোন মজলিশে বসে আর রাস্তা দিয়ে কোন নারী অতিক্রম করতে দেখলে সে গোপনে তার দিক তাকায়। যখন লোকেরা দেখে যে লোকটি মহিলাটির দিকে তাকাচ্ছে, তখন সে চোখ সরিয়ে ফেলে তার দিকে তাকায় না। আর যখন তারা গাফেল হয়, তখন সে আবার তাকায়। একে বলা হয়, চোখের খেয়ানত। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন,
﴿يَعۡلَمُ خَآئِنَةَ ٱلۡأَعۡيُنِ وَمَا تُخۡفِي ٱلصُّدُورُ ١٩ ﴾ [ سورة غافر : 19[.
“চক্ষুসমূহের খেয়ানত এবং অন্তরসমূহ যা গোপন রাখে তিনি তা জানেন”। [সূরা গাফের, আয়াত: ১৯]
অর্থাৎ লোকটি তার অন্তরে যে খারাপ চাহিদাকে গোপন করে তা মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন অবশ্যই জানেন।
একজন বান্দাকে অবশ্যই মনে রাখতে হবে, সে অবশ্যই আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের সামনে দণ্ডায়মান। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তার আমল সম্পর্কে সম্যক জ্ঞাত এবং তাকে তার আমল বিষয়ে একদিন অবশ্যই জিজ্ঞাসা করা হবে। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন,
﴿وَلَا تَقۡفُ مَا لَيۡسَ لَكَ بِهِۦ عِلۡمٌۚ إِنَّ ٱلسَّمۡعَ وَٱلۡبَصَرَ وَٱلۡفُؤَادَ كُلُّ أُوْلَٰٓئِكَ كَانَ عَنۡهُ مَسُۡٔولٗا ٣٦ ﴾ [ سورة الإسراء : 36[.
আর যে বিষয় তোমার জানা নাই তার অনুসরণ করো না। নিশ্চয় কান, চোখ ও অন্তকরণ- এদের প্রতিটির ব্যাপারে সে জিজ্ঞাসিত হবে। [সূরা আল-ইসরা, আয়াত: ৩৬]
তাকে অবশ্যই তার এ ধরনের দৃষ্টি; যা ইবলিসের তীরসমূহের একটি তীর, সে সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে। আর তা হল, যৌন উত্তেজনার প্রথম ধাপ। এ কারণেই বলা যায়, নিষিদ্ধ কাজের প্রথম ধাপের সাথে তার শেষ ধাপের সম্পর্ক রয়েছে। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন,
﴿قُل لِّلۡمُؤۡمِنِينَ يَغُضُّواْ مِنۡ أَبۡصَٰرِهِمۡ وَيَحۡفَظُواْ فُرُوجَهُمۡۚ ذَٰلِكَ أَزۡكَىٰ لَهُمۡۚ إِنَّ ٱللَّهَ خَبِيرُۢ بِمَا يَصۡنَعُونَ ٣٠ ﴾ [ سورة النور : 30[.
“মুমিন পুরুষদেরকে বল, তারা তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখবে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হিফাযত করবে। এটাই তাদের জন্য অধিক পবিত্র। নিশ্চয় তারা যা করে সে সম্পর্কে আল্লাহ সম্যক অবহিত”। [সূরা নূর, আয়াত: ৩০]
মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মুমিনদের নির্দেশ দেন যে, তারা যেন তাদের চক্ষুকে তাদের জন্য যা নিষেধ করা হয়েছে, তা থেকে হেফাজত করে এবং তারা যেন তাদের জন্য যা হালাল করা হয়েছে তা ছাড়া অন্য কোন বস্তুর দিকে না তাকায়। যদি হঠাৎ করে তার ইচ্ছার বাইরে কোন নিষিদ্ধ বস্তুর উপর দৃষ্টি পড়ে যায়, তখন সে তাড়াতাড়ি তা থেকে তার দৃষ্টিকে ফিরিয়ে নিবে।
চোখের হেফাজতকে লজ্জা স্থানের হেফাজতের পূর্বে উল্লেখ করার কারণ
চোখের হেফাজতকে লজ্জা স্থানের হেফাজতের পূর্বে উল্লেখ করার কারণ হল, মানুষের দৃষ্টি যিনা, ব্যভিচার ও অপকর্মের বার্তা বাহক ও প্রারম্ভিকতা। এ কারণেই মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কুরআন করীমে তাকে প্রথমে উল্লেখ করেন।
ইমাম ইবনুল কাইয়্যেম রহ. বলেন, মানুষ যত ধরনের অন্যায়, যিনা, ব্যভিচার ও অপরাধ করে থাকে, সব কিছুর মূল কারণ হল মানুষের দৃষ্টি। দৃষ্টি মানুষের অন্তরে প্রথমে উদ্রেককে জাগ্রত করে, আর যখন কোন কিছুর উদ্রেক হয় তা রূপান্তরিত হয় চিন্তায়, চিন্তা থেকে জাগ্রত হয় চাহিদা বা আসক্তি। আর আসক্তি হতে জাগ্রত হয় ইচ্ছা তারপর ইচ্ছাটি ধীরে ধীরে শক্তিশালী হয়ে তা রূপ নেয় প্রত্যয়ে তারপর তা সংঘটিত হয় ব্যভিচারে; যদি কোন বাধাদানকারী বাধা না দেয়। এ বিষয়ে আরও বলা হয়ে থাকে চোখের হেফাজতের উপর ধৈর্য ধরা তার পরবর্তী কর্মের শাস্তির উপর ধৈর্য ধারণ হতে সহজ।
এ কারণেই কোন এক কবি বলেন,
كلُّ الحَوَادِثِ مَبْدَاهَا مِنَ النظََّرِ
وَمُعْظَمُ الناَّرِ مِنْ مُسْتَصْغَرِ الشَّرَرِ
كمْ نظَْرٍة بَلغَتْ في قلبِ صَاحِبِهَا
كَمَبْلَغِ السَّهْمِ بَيْنَ القَوْسِ وَالوَتَرِ
والعَبْدُ مَا دَامَ ذَا طَرْفٍ يُقَلِّبُهُ
فِي أَعْيُنِ الغِيدِ مَوْقُوفٌ عَلَى الخطََرِ
يسُّر مْقَلَتُه ما ضَرَّ مُهْجَتَهُ
لَا مَرْحَباً بِسُرُورٍ عَادَ باِلضّرََرِ
“সব ধরনের অপকর্মের মুলে কারণ হল, দৃষ্টি। বড় বড় আগুনের মূল হচ্ছে কোন অগ্নিস্ফুলিঙ্গকে ছোট জ্ঞান করা। এমন বহু দৃষ্টি রয়েছে, যা সে দৃষ্টিপ্রদানকারীর অন্তরে এমনভাবে নাড়া দেয়; যেমন কোন তীর তার বাঁকা ধনুক ও সুতার মাঝে নাড়া দেয়। আর কোন মানুষ যতক্ষণ চক্ষুপালক বিশিষ্ট হবে, এবং তা সুন্দরীদের চোখের সামনে নাড়াচাড়া করবে ততক্ষণ সে সর্বদা বিপদে থাকবে। তার চোখের পালক এমন কিছু গোপন করবে যা তার সম্মান হানি করবে, সুতরাং এমন আনন্দের জন্য কোন শুভেচ্ছা নেই, যে আনন্দ ক্ষতি নিয়েই ফিরে আসে।
আর এ দৃষ্টির একটি বড় বিপদ হচ্ছে, এটি আফসোস এবং বড় বড় দীর্ঘশ্বাসের উদ্রেক করে, তখন বান্দা এমন কিছু দেখে যা করতে সে সক্ষম নয় আর তা থেকে ধৈর্য ধারণ করতেও সে অপারগ।” [11]
ঐসব লোকেরা বাজারে গিয়ে সুন্দর সুন্দর নারীদের বেপর্দা অবস্থায় দেখে, তাদের অন্তর আফসোস করতে থাকে এবং তারা তাদের অন্তরে না পাওয়ার ব্যথা ও কষ্ট অনুভব করে।
কউ কেউ বলতে পারে যে, অধিকাংশ দৃষ্টিই ব্যভিচার পর্যন্ত গড়ায় না এবং তার সাথে নিষিদ্ধ কাজ পর্যন্ত যায় না।
আমরা বলব, বরং দৃষ্টির শেষ পরিণতি হল, আফসোস, ব্যথা ও কষ্ট। কারণ, সে তার সামনে এমন একটি ফেতনা দেখতে পায়, যা সে লাভ করতে সক্ষম হয় না। ফলে সে আফসোস এবং ব্যথা অনুভব করতে থাকে। অনেক সময় সে চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়, তখন তার আফসোস, গ্লানি ও দুশ্চিন্তা আরও বৃদ্ধি পায়”।
তারপর আল্লামা ইবনুল কাইয়্যেম রহ. বলেন, “এটি একটি বড় আযাব, তুমি একটি বিষয় হাসিল করতে চাইলে তা না পাওয়ার কষ্টের উপর ধৈর্য ধারণ করতে পারলে না, আবার তা লাভ করার ক্ষমতাও তুমি রাখ না। এর চেয়ে বড় আযাব আর কী হতে পারে? কোন এক কবি বলেন,
وَُكنتَْ مَتَى أَرَْسْلَت طْرفَك رَائِداً
لقَلْبكَِ يَوْماً أَتْعَبَتْكَ المَناَظِرُ
رَأَيَت الَّذِي لَا كُلّهُ أَنْتَ قَادِرٌ
عَلَيْهِ وَلَا عَنْ بَعْضِهِ أَنْتَ صَابِرُ
যখন তুমি কোন দিন তোমার চক্ষুদ্বয়কে তোমার মনের পরিচালক হিসেবে অনুসন্ধানকারী হিসেবে লাগামহীনভাবে ছেড়ে দিলে, তখন সে দৃষ্টিসমূহের দৃশ্য তোমাকে ব্যথিত করবে। তুমি যা দেখলে তার পুরোটা লাভ করতে তুমি সক্ষম নও, আর না তুমি আংশিকের উপরও ধৈর্যশীল।
যারা তাদের চক্ষুকে স্বাধীনভাবে ছেড়ে দেয়, তারা তা হতে বিরত থাকতে পারে না। সে অপকর্মের মধ্যেই হাবুডুবু খেতে থাকে। যেমন, কোন এক কবি বলেন,
يَا نَاظرِاً مَا أَقْلَعَتْ لحَظَاتُهُ
حَتّىَ تَشَحَّطَ بَيْنَهُنَّ قَتِيلَا
“হে দর্শক তুমি তোমার দৃষ্টিকে বিরত রাখলে না। তুমি তোমার চোখের অপকর্মেই জীবনকে ব্যয় করলে”।
এর চেয়েও বড় আশ্চর্য হল, দৃষ্টি মানুষের অন্তরকে আহত করে তখন ব্যথার উপর ব্যথা তাকে আরও অধিক কষ্ট দিতে থাকে। তারপর তার ক্ষতের ব্যথা বার বার আহত করা হতে তাকে কেউ বারণ করে না। কবি বলেন,
مَا زِلْت تُتْبِعُ نَظْرَةً فِي نَظْرَةٍ
فِي إثْرِ كُلِّ مَلِيحَةٍ وَمَلِيحِ
وَتُظُّن ذَاكَ دَوَاءَ جُرْحِكَ وَهْوَ فِي الت
تَحْقِيقِ تَجْرِيحٌ عَلَى تَجْرِيحِ
فَذَبَحَت طرْفَكَ بِاللِّحَاظِ وَباِلبُكا
فَالقَلْبُ مِنكَْ ذَبيِحٌ ايُّ ذَبِيحِ
‘তুমি প্রতি সুন্দর পুরুষ ও নারীর প্রতি একের পর এক দৃষ্টি দিয়েই যাচ্ছ, আর তুমি মনে করছ যে এটা বোধ হয় তোমার ক্ষতের ঔষধ, প্রকৃতপক্ষে তা ক্ষতের উপর ক্ষতই বাড়িয়ে দেয়; এভাবে তুমি তোমার দৃষ্টিশক্তিকে দেখা ও কান্নার মধ্যে যবাই করে দিলে, সুতরাং তোমার অন্তর ও মন তোমার দ্বারা শুধু যবাই হতে থাকল, সেটা যে কোন ধরনের যবাই তা বলার অপেক্ষা রাখে না।’
আর এ জন্যই বলা হয়ে থাকে, “দৃষ্টিকে ক্ষণিকের জন্য বিরত রাখতে সচেষ্ট হওয়া আজীবন আফসোস করা থেকে উত্তম।[12]”
যে ব্যক্তি হারামের দিকে তাকিয়ে থাকে তার দৃষ্টান্ত হচ্ছে ঐ ব্যক্তির মত যে, সাগরের পানি পান করে তৃপ্তি পেতে চায়, তুমি কি তার পিপাসা নিবারিত হতে দেখেছ? কখনও তার পিপাসা নিবারণ হয় না বরং সে পানি পান করার কারণে তার পানির পিপাসা আরও বৃদ্ধি পায়। অনুরূপভাবে যে ব্যক্তি হারামের দিকে তাকায় সেও আসক্তির চাহিদা মিটাতে না পারার কারণ তার চাহিদা আরও চাঙ্গা হতে থাকে”।
ঐ হাদীসটির বিষয়ে চিন্তা করে দেখুন, যেখানে অশ্লীল কাজে লিপ্ত হওয়া ও চোখের খিয়ানত বা চোখের হেফাজত না করার মধ্যে সম্পর্ক দেখানো হয়েছে, আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« إِنَّ الله كَتَبَ عَلَى ابْنِ آدَمَ حَظهَُّ مِنَ الزِّنَا، أَدْرَكَ ذَلكَِ لَا مَحَالةََ، فَزِنَا العَيْنِ النَّظَرُ، وَزِنَا اللِّسَانُ المَنْطِقُ، وَالنَّفْسُ تَمَنَّى وَتَشْتَهِي، وَالفَرْجُ يُصَدِّقُ ذَلِكَ كُلَّهُ أَوْ يُكَذِّبُهُ »
“আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আদম সন্তানের উপর যিনার কিছু অংশ নির্ধারণ করে রেখেছেন। জীবদ্দশায় তাতে সে আক্রান্ত হবেই। যেমন- চোখের যিনা হল দৃষ্টি, মুখের যিনা হল কথা, আর আত্মা কামনা করে ও আসক্তি তৈরী করে। আর লজ্জাস্থান তার আশার সত্যায়ন করে বা মিথ্যায় পরিণত করে”[13]।
চিন্তা করে দেখ! দৃষ্টি কত মারাত্মক! এ হাদিসে দৃষ্টিকে ব্যভিচার বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। একজন মুমিন অবশ্যই ব্যভিচারকে ঘৃণা করে এবং তা হতে দূরে থাকে।
আল্লামা ইবনুল জাওযী রহ. বলেন, “হে বন্ধু! – আল্লাহ তোমাকে তাওফিক দান করুন- তুমি দৃষ্টির অনিষ্টতা থেকে নিজেকে বাঁচাও! এ দৃষ্টি বহু ইবাদতকারীকেই ধ্বংস করেছে! কত পরহেজগার মুত্তাকীকে দ্বীন থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে! তুমি দৃষ্টির হেফাজত কর! কারণ, দৃষ্টিই হল সব বিপদের মূল কারণ। তবে শুরুতে তার চিকিৎসা করা সহজ। কিন্তু যদি তা বার বার হয়ে থাকে, তখন তা শক্তিশালী ব্যাধিতে পরিণত হয়; তার চিকিৎসা আর সহজ হয় না, তখন তার চিকিৎসা খুবই কষ্টকর।”[14]
দৃষ্টি নেশার পাত্র, আর তার নেশা হল, প্রেম। আর প্রেমের নেশা মদের নেশা হতেও মারাত্মক। কারণ, মদ পানে নেশাগ্রস্থ মাতাল, তাদের আবার জ্ঞান ফিরে আসে, আর প্রেমের নেশায় যারা মাতাল, তাদের কখনোই জ্ঞান ফিরে আসে না।
আর দৃষ্টি ও আসক্তি উভয় মানুষকে প্রেমের দিকে টেনে নিয়ে যায়। আর অন্তরসমূহ ধ্বংসের জন্য এ হল, সর্বাধিক ক্ষতিকর ও মারাত্মক ব্যাধি। তুমি এ ভয়ানক ও ক্ষতিকর তীরের আঘাত থেকে সতর্ক থাক। কারণ, তার আঘাতে যদি তুমি হত্যা না হও, তোমাকে তা অবশ্যই যখমী করে দিবে। আর যখন যখমী বা আঘাত অধিক হবে, তখন তোমার ধ্বংস অনিবার্য।
হঠাৎ দৃষ্টি:
জারীর ইব্ন আব্দুল্লাহ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে হঠাৎ দৃষ্টি পড়া সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে, তিনি আমাকে নির্দেশ দেন যে, আমি যেন আমার দৃষ্টিকে ফিরিয়ে রাখি।
হঠাৎ দৃষ্টি বা [نظر الفجاءة] এর অর্থ হল, অনিচ্ছায় বা হঠাৎ কোন অপরিচিত নারীর উপর দৃষ্টি পড়া। এ ধরনের দৃষ্টির বিধান হল, প্রথমবার এতে কোন গুনাহ নাই। তবে শর্ত হল, সাথে সাথে চক্ষুকে ফিরিয়ে নিতে হবে। আর যদি সে তার দৃষ্টিকে দীর্ঘায়িত করে, তখন তার উপর গুনাহ অবশ্যই বর্তাবে।”[15]
ইবন বুরাইদা রাদিয়াল্লাহু আনহু তার পিতা হতে বর্ণনা করেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুকে বলেন,
« يَا عَليُّ، لَا تُتْبِعِ النَّظْرَةَ النَّظْرَةَ؛ فَإِنَّ لَكَ الأُولَى وَلَيْسَتْ لَكَ الآخِرَةُ »
“হে আলী! তুমি প্রথম দৃষ্টির পর দ্বিতীয় বার দেখবে না। কারণ, তোমার জন্য প্রথম দৃষ্টি, আর পরবর্তী দৃষ্টি তোমার জন্য নয়”[16]।
অর্থাৎ প্রথম দৃষ্টির পর আবার দেখো না এবং একবার তাকানোর পর দ্বিতীয়বার তাকাবে না। অনিচ্ছাকৃত প্রথম দৃষ্টির কারণে তোমার কোন গুনাহ হবে না। কিন্তু তোমার জন্য দ্বিতীয়বার তাকানোর কোন অনুমতি নাই। কারণ, এতে তোমার ইচ্ছা যুক্ত হওয়ার কারণে তোমার গুনাহ হবে।
[এখানে এ কথা স্পষ্ট হয়, ইচ্ছা করে যদি প্রথমবার তাকায় তাহলেও গুনাহ হবে। আর যদি অনিচ্ছায় তাকায় এবং সাথে সাথে চোখ ফিরিয়ে নেয়, তাহলে গুনাহ হবে না।]
যে সব লোক মশকরা করে বলে, প্রথমবার দেখে যদি কোন ব্যক্তি চোখ বন্ধ করা পর্যন্ত দীর্ঘ সময় তাকিয়ে থাকে তার কোন গুনাহ হবে না, তাদের কথা যে ভ্রান্ত তা এ ব্যাখ্যার দ্বারা স্পষ্ট প্রমাণিত হল। কারণ, এখানে বলা হয়েছে ইচ্ছা করে তাকানো অপরাধ। চাই প্রথমবার হোক অথবা দ্বিতীয় বার।
মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন,
﴿قُلۡ أَرَءَيۡتُمۡ إِنۡ أَخَذَ ٱللَّهُ سَمۡعَكُمۡ وَأَبۡصَٰرَكُمۡ وَخَتَمَ عَلَىٰ قُلُوبِكُم مَّنۡ إِلَٰهٌ غَيۡرُ ٱللَّهِ يَأۡتِيكُم بِهِۗ ٱنظُرۡ كَيۡفَ نُصَرِّفُ ٱلۡأٓيَٰتِ ثُمَّ هُمۡ يَصۡدِفُونَ ٤٦ ﴾ [ سورة الأنعام: 46]
বলুন, ‘তোমরা কি ভেবে দেখেছ, আল্লাহ্ যদি তোমাদের শ্রবণশক্তি ও দৃষ্টিশক্তি কেড়ে নেন এবং তোমাদের হৃদয়ে মোহর করে দেন তবে আল্লাহ্ ছাড়া আর কোন প্রকৃত ইলাহ্ আছে যে তোমাদের এগুলো ফিরিয়ে দেবে?’ দেখুন, আমরা কিরূপে আয়াতসমূহ বিশদভাবে বর্ননা করি; এরপরও তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়। [সূরা আল-আন‘আম, আয়াত: ৩০]
চক্ষু হল, আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের পক্ষ হতে বড় নেয়ামত। গুনাহের কারণে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন যাতে চক্ষু না নিয়ে যায় সে জন্য আল্লাহকে ভয় করতে হবে।
হারাম থেকে চক্ষুকে বিরত রাখার মধ্যে অনেক ফায়দা:
১. আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের আদেশের আনুগত্য করা যাতে রয়েছে অনেক সৌভাগ্য ও কল্যাণ।
২. (চক্ষুর চাহনি নামীয়) বিষাক্ত তীরের আঘাত থেকে অন্তর নিরাপদ থাকে।
৩. অন্তরে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের সাথে সখ্যতা ও তার উপর ঐক্য গড়ে উঠে। যারা তাদের অন্তরকে হারামের মধ্যে ছেড়ে দেয়, তাদের অন্তর মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের এ সখ্যতা থেকে বঞ্চিত হয়। কারণ, অন্তর বিক্ষিপ্ত থাকার কারণে তা আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের জন্যই বিশেষভাবে নির্ধারিত হয়না এবং তাঁর জন্যই মহব্বতপূর্ণ হতে পারে না।
৪. চোখের হেফাজত না করলে আত্মা যেমন দুর্বল ও হতাশাগ্রস্ত হয় অনুরূপভাবে চোখের হেফাজতের কারণে মানবাত্মা শক্তিশালী ও প্রশান্তি লাভে ধন্য হয়।
৫. অন্তর নুরের আলো দ্বারা আলোকিত হয়, পক্ষান্তরে চোখের হেফাজত না করলে অন্তর অন্ধকারে ছেয়ে যায়।
৬. চক্ষুর হেফাজত দ্বারা একজন বান্দার মধ্যে হক ও বাতিল এবং সত্য ও মিথ্যার মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় করার মত সত্যিকার যোগ্যতা ও দূরদর্শিতা সৃষ্টি হয়। আর তা সঠিক সিদ্ধান্তে উপনীত হতে ও উন্নত অবস্থানে পৌছতে সাহায্য করে। আর মানুষের সাথে সব ধরনের লেন-দেনে কার্যকর ভূমিকা রাখতে সহায়ক হয়।
৭. অন্তরে সাহসিকতা ও অবিচলতা সৃষ্টি করে। ফলে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তার জন্য আধ্যাত্মিক শক্তি যথা, দূরদর্শিতা, প্রমাণ এবং বাহ্যিক শক্তি যথা, ক্ষমতা ও শক্তি উভয়কে একত্র করে দেন।
৮.শয়তানের প্রবেশদ্বার বন্ধ করে দেয়। কারণ, দৃষ্টি হল শয়তানের জন্য সবচেয়ে বড় দরজা।
৯. অন্তর ভালো চিন্তার জন্য খালি হয় এবং ভালো কাজেই ব্যস্ত থাকে।
কারণ, যখন কোন অন্তর নারী ও সুন্দর ছেলেদের ছবি তাদের চিন্তা ও প্রেম-ভালোবাসা নিয়ে ব্যস্ত থাকে, তখন সে কীভাবে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের আয়াত সম্পর্কে চিন্তা করবে? হাদিস থেকে একটি মাসআলা শিখবে? ফিকাহ-বিদদের কথা কীভাবে সে বুঝবে? এবং আসমান ও জমিনের বিষয়ে কীভাবে চিন্তা করবে?
১০. চোখের হেফাজতের দ্বারা অন্তর নিরাপদ থাকে। কারণ, অন্তর ও চক্ষু উভয়ের মাঝে নিবিড় সম্পর্ক ও সংযোগ রয়েছে, উভয়ের একটি অপরটি দ্বারা প্রভাবিত হয় এবং একটি কর্ম অপরটিকে প্রাণচাঞ্চল্যটা দান করে। ফলে একটি সংশোধন হলে অপরটির সংশোধন হয়, আর একটি নষ্ট হলে অপরটি নষ্ট হয়। যখন বান্দার দৃষ্টি নিরাপদ থাকে তখন তার আত্মাও নিরাপদ ও ঠিক থাকে, আর যখন মানুষের দৃষ্টি সঠিক না থাকে এবং খারাপ বস্তুর দিক দেখার কারণে নষ্ট হয়ে যায়, তখন তার অন্তর বা আত্মাও খারাপ ও নষ্ট হয়ে যায়। এ কারণেই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« اضمَنُوا لِي سِتّاً مِنْ أَنْفُسِكُمْ أَضمَنُ لَكُمُ الجَنَّةَ: اصْدُقُوا إذَِا حَدَّثْتُمْ، وَأَوْفُوا إذَِا وَعَدتُمْ، وَأَدُّوا إذَِا اؤتمُنِتْمُْ، وَاحْفَظوُا فُرُوجَكُمْ، وَغُضُّوا أَبْصَارَكُمْ، وَكُفُّوا أَيْدِيَكُمْ »
“তোমরা আমার জন্য ছয়টি জিনিসের দায়িত্ব নাও আমি তোমাদের জান্নাতের দায়িত্ব নেব। যখন কথা বল, সত্য বল। আর যখন ওয়াদা কর, তখন তা পুরা কর, আর যখন তোমার নিকট আমানত রাখা হয় তা তুমি হকদারদের নিকট পৌছে দাও। তোমরা তোমাদের লজ্জাস্থানের হেফাজত কর। তোমাদের চক্ষুকে অবনত রাখ আর তোমাদের হাতদ্বয় হারাম থেকে গুটিয়ে রাখ”[17]।
তৃতীয় মূলনীতি
খারাপ ভাবনা প্রতিহত করা:
খারাপ ভাবনা প্রতিহত করা:
খারাপ ভাবনাসমূহ মানবাত্মাকে ব্যাধিগ্রস্ত ও রোগী বানিয়ে দেয়। মানুষ যখন তার খারাপ ভাবনাসমূহকে প্রতিহত না করে এবং তা নিয়েই ব্যস্ত থাকে, তখন তা চিন্তা হিসেবে দেখা দেয়। তারপর তা চিন্তা থেকে উন্নতি লাভ করে সাধারণ ইচ্ছার রূপ নেয়। তারপর সাধারণ ইচ্ছা থেকে তা উন্নতি লাভ করে তা প্রচণ্ড ইচ্ছাশক্তির রূপ নেয় তারপর তা দৃঢ় প্রত্যয় ও প্রতিজ্ঞায় রূপ নেয়। তারপর সে অপকর্মের প্রতি অগ্রসর হয় এবং হারামে লিপ্ত হয়। সুতরাং, প্রথমেই একজন মানুষ তার আত্মাকে খারাপ ভাবনার উদ্রেক থেকে রক্ষা করবে এবং খারাপ ভাবনার সাথে নিজেকে ছেড়ে দিবে না।
অন্তরের বাসনা এটি একটি কঠিন বিষয়। মানুষের ভালো ও মন্দের সূত্রই হল অন্তরের বাসনা। অন্তরে কোন বাসনা জাগ্রত হলে, তা যদি প্রাথমিক অবস্থায় প্রতিহত করা হয়, তাহলে তুমি তোমার আসক্তির নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে এবং তোমার নফসকে পরাজিত করলে। আর যদি তোমার আসক্তি তোমার উপর বিজয়ী হয়, তাহলে তুমি অবশ্যই গহ্বরে নিপতিত হবে।
মানবাত্মায় বাসনা বারবার উদৃত হতেই থাকে শেষ পর্যন্ত তা সেটি তার রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রবেশ করে, আর যখন তা তার রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রবেশ করে তখন তা বাতিল ও ভ্রান্ত আশায় পরিণত হবে। তখন অবস্থা এমন দাঁড়ায় যেমন মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কুরআনে করীমে এরশাদ করেন,
﴿وَٱلَّذِينَ كَفَرُوٓاْ أَعۡمَٰلُهُمۡ كَسَرَابِۢ بِقِيعَةٖ يَحۡسَبُهُ ٱلظَّمَۡٔانُ مَآءً حَتَّىٰٓ إِذَا جَآءَهُۥ لَمۡ يَجِدۡهُ شَيۡٔٗا وَوَجَدَ ٱللَّهَ عِندَهُۥ فَوَفَّىٰهُ حِسَابَهُۥۗ وَٱللَّهُ سَرِيعُ ٱلۡحِسَابِ ٣٩ ﴾ [ سورة النور : 39[.
“আর যারা কুফরী করে তাদের আমলসমূহ মরুভূমির মরীচিকার মত, পিপাসা কাতর ব্যক্তি যাকে পানি মনে করে থাকে, কিন্তু যখন সে সেটার কাছে আসে তখন দেখে সেটা কিছুই নয় এবং সে পাবে সেখানে আল্লাহ্কে, অতঃপর তিনি তাকে তার হিসাব পূর্ণমাত্রায় দেবেন।” [সূরা আন-নূর: ৩৯]
সবচেয়ে নিকৃষ্ট মনোবৃত্তির অধিকারী হচ্ছে সে ব্যক্তি, যে মিথ্যা আকাঙ্ক্ষা ও আশার ঘর বাধে। কারণ, মিথ্যা আশা হল অভাবীদের পুঁজি এবং বেকার লোকদের অবলম্বন, আর মানুষের জন্য সবচেয়ে ক্ষতিকর বস্তু। কারণ এটি মানুষের মধ্যে অক্ষমতা, অলসতা ও হতাশার জন্ম দেয়। বান্দাকে যখন তার অন্তরের বাসনার উপর চলতে ছাড় দেয়া হয়, তখন সে হারামে পতিত হয়। তারপর খালেস তাওবার মাধ্যমে আত্মাকে নাপাকী হতে মুক্ত করা ছাড়া তার কোন চিকিৎসা নাই।
আর যদি বান্দা গুনাহের স্বাদ ও পবিত্র থাকার স্বাদ এবং গুনাহের স্বাদ ও শত্রুকে পরাভূত ও শত্রুর উপর শক্তিমত্তার স্বাদ, অনুরূপভাবে গুনাহের স্বাদ ও শয়তানকে পরাস্ত ও তাকে বিফল-মনোরথ করার স্বাদের মধ্যে তুলনা করে তবে সে অবশ্যই তা গ্রহণ করবে যা তার বাহির ও ভিতরকে সংশোধন করার কারণ হবে।
একটি কথা মনে রাখতে হবে, আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের পক্ষ হতে মানবাত্মার মধ্যে কিছু ভালো ভাবনার উৎপত্তি হয়; আবার কিছু ভাবনা আসে শয়তানের পক্ষ হতে, অনুরূপ কিছু ভাবনা তৈরী হয় নিজের আসক্তি থেকেও।
নফস মানুষকে খারাপ কাজের আদেশ দিয়ে থাকে। প্রতিটি কাজের আগেই সেখানে কিছু চিন্তা-দৃষ্টিভঙ্গী থাকে। মানুষের অন্তর, জ্ঞান ও নফসের মধ্যে চিন্তা গবেষণা ছাড়া কোন কিছুই হঠাৎ করে বাস্তবায়িত হয়েছে এ কথা কখনোই বলা যাবে না। প্রতিটি বস্তু বাস্তবে অস্তিত্বে আসার জন্য প্রথমে বিষয়টি নিয়ে চিন্তা এ ফিকির অতিবাহিত হতে হয়।
প্রাথমিক পর্যায়ে যখন কোন কিছুর চিকিৎসা বা সংশোধন হয়, তখন তা পরবর্তীতে খুবই সহজ ও সরল হবে। আর এ কাজটি মানুষ যত তাড়াতাড়ি করবে তার সংশোধনও তত তাড়াতাড়ি হবে।
মানুষ তার ভাবনা-চিন্তাকে কখনোই শেষ করে দিতে পারবে না। কারণ ভাবনা-চিন্তা মানুষের অন্তরে এসে আঘাত করবেই, সে তাতে পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হবে না।
শয়তান কোন কোন সাহাবীর অন্তরেও আল্লাহ্ সম্পর্কে মারাত্মক কু-মন্ত্রণা ঢেলে দিত। যেমন, আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কতক সাহাবী রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দরবারে এসে তাকে জিজ্ঞাসা করল, হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের অন্তরে এমন কিছু কামনা বাসনা জাগ্রত হয়, যা আমরা আমাদের মুখে বলতে লজ্জাবোধ করি। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, বাস্তবেই কি তোমরা এ ধরনের অনুভব কর? তারা বলল হা, হে আল্লাহর রাসূল! রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এটাই হল সত্যিকার ঈমান”[18]।
আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ব্যক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে বলল, হে আল্লাহ রাসূল! আমাদের অন্তরে এমন এমন খারাপ বিষয় জাগ্রত হয়, তা মুখে উচ্চারণ করার চেয়ে আমাদের কয়লা হয়ে যাওয়া অধিক প্রিয়। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “আল্লাহু আকবর, আল্লাহু আকবর, আল্লাহু আকবর। সব প্রশংসা সেই আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এর যিনি শয়তানের ষড়যন্ত্র ও ধোঁকাকে কু-মন্ত্রণায় রূপান্তর করে দিয়েছেন।[19]”
অর্থাৎ, সব প্রশংসা আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের। কারণ, শয়তান তোমাদের থেকে একমাত্র কু-মন্ত্রণার উদ্রেক -যা তোমরা অপছন্দ কর- তা ছাড়া কোন কিছুই হাসিল করতে পারেনি। আর শয়তানের কু-মন্ত্রণাকে তোমরা যে অপছন্দ করছ তাই প্রমাণ করে যে তোমরা সত্যিকার ঈমানদার।
যখন কোন মানুষের অন্তরে শয়তান কু-মন্ত্রণা দেয়, তখন তার উচিত হল, তার চিকিৎসা করা। এ ধরনের কু-মন্ত্রণা যখন মুসলিমের অন্তরে আসবে, তখন একজন মুসলিমের করণীয় কি?
১. বিতাড়িত শয়তান হতে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করবে।
২. শয়তানের কু-মন্ত্রণাকে ঈমানী চিন্তা-ভাবনা দ্বারা পরিবর্তন করবে। কারণ, নফস হল জাঁতাকলের মত, তা কোন কিছুকে পিষতেই চায়। যদি কোন ব্যক্তি তার জাঁতাকলে গম রাখে, তাহলে তা পিষলে সেখান থেকে আটা বের হবে। আর যদি কোন ব্যক্তি তার জাঁতাকলে বালি ও বটের দানা রাখে, তা হলে তা পিষলে তার থেকে বালি ও বটের দানাই বের হবে, অন্য কিছু নয়।
শয়তানের কু-মন্ত্রণা থেকে বাচার জন্য সহায়ক ভালো ভাবনা-চিন্তাসমূহ:
১. আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এর আজমত ও বড়ত্ব, আসমান ও জমিনের সৃষ্টি সম্পর্কে চিন্তা করা।
২. ইসলামী শরীয়তের জ্ঞান অর্জন করা। একজন মানুষের জন্য ইলম অর্জন ও জ্ঞানের চর্চা নিয়ে লিপ্ত থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ কাজ। অনেক আলেমগণের অবস্থা এমন যে তারা হারাম বা অন্যায় কাজ করার মত কোন সময়ই তাদের থাকে না। কারণ, তারা সবসময় শরীয়তের ইলম ও মুসলিম মিল্লাতের সমস্যা সমাধানের কাজে ব্যস্ত থাকে।
৩. আখিরাত ও তার ভয়াবহতা নিয়ে চিন্তা করা। যেমন, মৃত্যু, কবরের আযাব, হাউজে কাউসার, শাফা‘আত, মীযান, পুলসিরাত, জান্নাত, জাহান্নাম ইত্যাদি বিষয়ে চিন্তা করা।
৪. হালাল রুজি উপার্জনের জন্য চিন্তা করা। যেমন, ব্যবসা-বাণিজ্য, চাকুরী ইত্যাদি বিষয়ে চিন্তা ফিকির করতে হবে। দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণে অবসর সময়গুলোকে ব্যয় করা ও কাজে লাগানোর জন্য ফিকির করা।
আল্লামা ইবনুল কাইয়্যেম রহ. বলেন, উল্লেখিত সবকিছুকে যদি তুমি লাভ করতে চাও, তবে যে সব জিনিষ তোমার জানা জরুরি সে সব বিষয়গুলো জানতে এবং তা হাসিল করতে তোমার চিন্তাকে ব্যয় করতে হবে। যেমন, তাওহীদ সম্পর্কে তোমার জানতে হবে এবং তার দায়িত্ব কি তা তোমাকে জানতে হবে। মৃত্যুর পর জান্নাতে প্রবেশ নাকি জাহান্নামে প্রবেশ এ বিষয়ে চিন্তা করার মাধ্যমে তোমাকে অবশ্যই সময় ব্যয় করতে হবে। আর খারাপ ও বদ আমলের পরিণতি সম্পর্কে চিন্তা করতে হবে এবং তার থেকে বাচার উপায় কি তা নিয়ে তোমাকে ভেবে বের করতে হবে। ইচ্ছা ও দৃঢ়তার বিষয়ে তোমাকে অবশ্যই মনে রাখতে হবে, যে সব কর্মের ইরাদা করলে তোমাকে দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ নিশ্চিত করবে তারই ইরাদা করতে হবে। আর যে সব কর্মের ইরাদা তোমার ক্ষতির কারণ হয় তা পরিহার করতে হবে।
আল্লাহ্র নেককার বান্দাদের মতে, মানবাত্মার জন্য খেয়ানতের আকাঙ্ক্ষা করা, চিন্তা-ফিকিরকে খিয়ানত বিষয়ে ব্যয় করা, স্বয়ং খিয়ানত হতে অধিক ক্ষতিকর।’[20]
সুতরাং যেহেতু মানুষের অন্তরে সব সময় বিভিন্ন কর্মের উদ্রেক ও চিন্তা জাগ্রত হতেই থাকে, আর তা ধীরে ধীরে ইরাদায় রূপ নেয়। তারপর তা প্রত্যয় ও দৃঢ়তায় রূপ নেয়, তাই প্রতিটি স্তরে তাকে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে, শুধু ভাবনা-চিন্তার পর্যায়ের চিকিৎসাই যথেষ্ট নয়। আমাদেরকে অবশ্যই ভাবনা-চিন্তার পর্যায় ও পরবর্তী প্রতিটি পর্যায়ের চিকিৎসায় মনোনিবেশ করতে হবে।
আল্লামা ইবনুল কাইয়্যেম রহ. বলেন, ‘তুমি ভাবনাকে প্রতিহত কর। যদি তা করতে সক্ষম না হও তবে তা চিন্তায় রূপ নেবে। তখন তোমাকে অবশ্যই চিন্তা দূর করার জন্য চেষ্টা করতে হবে। আর তাও যদি করতে সক্ষম না হও তাহলে তা আসক্তিতে পরিণত হবে। তখন তোমাকে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে হবে। আর যদি যুদ্ধ করে তা প্রতিহত করতে না পার তখন তা প্রতিজ্ঞায় রূপ নেবে, তখন তোমাকে তা দূর করার জন্য মরণপণ চেষ্টা করতে হবে। তাতে যদি তুমি ফেল কর, তবে তা বাস্তবে রূপ নেবে এবং কর্মে পরিণত হবে। তারপর যদি তাকে তা বিপরীত কোন ভালো কাজ দ্বারা প্রতিহত না কর, তখন তা তোমার অভ্যাসে পরিণত হবে। তখন তার থেকে ফিরে আসা তোমার জন্য পাহাড়কে জায়গা থেকে সরানোর চেয়েও কঠিন কাজ হবে।’[21]
একটি কথা মনে রাখতে হবে, অন্তরের কু-বাসনাকে সংশোধন করা চিন্তার সংশোধনের চেয়ে অধিক সহজ। আর চিন্তাকে সংশোধন করা ইচ্ছার সংশোধনের চেয়ে অধিক সহজ। আর ইচ্ছার সংশোধন করা খারাপ কর্ম সংশোধন করা হতে সহজ। আর খারাপ কর্ম ঠিক করা অভ্যাস পরিত্যাগ করা হতে সহজ।
যদি তুমি বল কোন জিনিস তোমাকে এ ধরনের কু-মন্ত্রণা ও খারাপ ভাবনা চিন্তাতে গা ভাসিয়ে দেয়া প্রতিহত করতে সাহায্য করবে?
আমরা বলব, এ বিষয়ে কয়েকটি বিষয় সহযোগিতা করবে। যেগুলো একটি অপরটির উপর নির্ভরশীল।
১. এটা ঈমান রাখা ও দৃঢ়ভাবে জানা যে, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদের অন্তরের অন্তঃস্থলে যে সমস্ত ভাবনা উদিত হয় তা সবই জানেন। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন,
﴿يَعۡلَمُ خَآئِنَةَ ٱلۡأَعۡيُنِ وَمَا تُخۡفِي ٱلصُّدُورُ ١٩ ﴾ [ سورة غافر : 19[.
চক্ষুসমূহের খেয়ানত এবং অন্তরসমূহ যা গোপন রাখে তিনি তা জানেন। [সূরা গাফের, আয়াত: ১৯]
﴿وَإِن تَجۡهَرۡ بِٱلۡقَوۡلِ فَإِنَّهُۥ يَعۡلَمُ ٱلسِّرَّ وَأَخۡفَى ٧ ﴾ [ سورة طه : 7[.
“আর যদি তুমি উচ্চস্বরে কথা বল তবে তিনি গোপন ও অতি গোপন বিষয় জানেন।” [সূরা তাহা, আয়াত: ৭]
বান্দা যখন মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তার অন্তরের বিষয়সমূহ জানার কারণে লজ্জা অনুভব করবে, তখন সে তার অন্তরে যে সব কু ভাবনা-চিন্তা জাগ্রত হয়, তা থেকে সে দূরে থাকবে। এ বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ তাই বিষয়টি গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করতে হবে।
২. চিন্তা ফিকির করা:
তোমার অন্তরে যখন কু-মন্ত্রণা ও খারাপ চিন্তার উদ্রেক হয়, তখন তুমি আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের বড়ত্ব সম্পর্কে চিন্তা করবে, আর আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের নাম ও গুণসমূহকে তোমার অন্তরে হাজির করবে। অন্তরে এ কথা চিন্তা করবে, মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কঠিন আযাব দাতা, শাস্তি দানকারী ও প্রতিশোধ গ্রহণকারী। তিনি সবকিছুর উপর ক্ষমতাবান, শক্তিশালী ও উচ্চ মর্যাদার অধিকারী।
৩. লজ্জাবোধ করা:
আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কুদরত ও তিনি যে আমাদের অন্তরের গোপন বিষয়গুলো জানেন তা বিশ্বাস করার পর তোমাকে অবশ্যই আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের থেকে লজ্জা করতে হবে। তুমি খারাপ চিন্তা ও শয়তানী চিন্তা হতে নিজেকে দূরে রাখতে চেষ্টা করবে। যখন তুমি কোন অপকর্ম করছ, ঠিক তখন যদি তোমার পরিচিত কেউ অথবা তোমার কোন বন্ধু তোমার নিকট প্রবেশ করে তখন তোমার কি অবস্থা হবে তা চিন্তা করে দেখ এবং তুমি কি করবে? মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন যিনি তোমাকে দেখছেন তার থেকে লজ্জা করা আরও অধিকতর শ্রেয়।
৪. আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের বড়ত্ব ও কুদরত সম্পর্কে চিন্তা করা।
৫. আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের রহমত হতে বঞ্চিত হওয়া এবং আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের দরবারে তুমি একেবারে মূল্যহীন ব্যক্তি হিসেবে পরিণত হওয়ার ভয় করা।
৬. আপন অন্তরের আত্মসম্মানবোধ জাগ্রত করা। ফলে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের মহব্বত ছাড়া আর কোন কিছুর মহব্বতকে অন্তরে স্থান না দেয়া বিষয়ে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হওয়া।
৭. অন্তরে শয়তানের কু-মন্ত্রণা বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে, যাতে তা অবশিষ্ট ঈমানকে খেয়ে না ফেলে।
৮. মানুষের অন্তরের কু-মন্ত্রণা পাখিকে শিকার করার জন্য নিক্ষিপ্ত দানা-পানির মত। শয়তান তা মানুষের সামনে দানার মত ছিটিয়ে দেয়, যাতে মানুষ তা গ্রহণ করে। শয়তানের প্রতিটি কু-মন্ত্রণাই হল মানুষের জন্য তার ঈমানকে শিকার করার জন্য পেতে রাখা ফাঁদ ও জাল।
৯. মনে রাখতে হবে, শয়তানের কু-মন্ত্রণা কখনোই ঈমানের সাথে একত্র হতে পারে না।
১০. একটি কথা জানতে হবে মানুষের অন্তরে শয়তানের কু-মন্ত্রণা কুল কিনারা হীন সমুদ্রের মত যার কোন শেষ নেই। যে ব্যক্তি তাতে প্রবেশ করবে তার ডুবে মরাটা অনিবার্য।
আসক্তির চিকিৎসা
বান্দার প্রতি আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের অপার অনুগ্রহ হল, তিনি তার বান্দাদের অনর্থক ছেড়ে দেননি এবং অনর্থক সৃষ্টি করেন নি। বরং তিনি তাদের জন্য তাদের জীবনে যত ব্যাধি, সংক্রামক ও বক্রতা আছে তার চিকিৎসার জন্য মজবুত দ্বীন নাযিল করেছেন। জীবনের সবচেয়ে বড় গুরুত্বপূর্ণ ব্যাধি হল, নিষিদ্ধ কামনা-বাসনা, কুআসক্তি বা নিষিদ্ধ চাহিদা। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এ মারাত্মক ব্যাধির জন্য একাধিক চিকিৎসা নির্ধারণ করেছেন; যার দ্বারা খারাপ বাসনা ও কুআসক্তির উত্তেজনা স্তিমিত হয় এবং তার দৌরাত্ম্য দূর হয়। নিম্নে এগুলোর সংক্ষিপ্ত আলোচনা তুলে ধরা হল।
এক. বিবাহ:
আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের বলেন,
« يَا مَعْشَرَ الشَّبَابِ، مَنِ اسْتَطَاعَ مِنْكُمُ البَاءَةَ فَلْيَتَزَوَّجْ؛ فَإنِّهُ أَغَضُّ للِبَصَرِ، وَأحْصَنُ لِلْفَرْجِ »
“হে যুবক সম্প্রদায় তোমাদের মধ্যে যাদের ক্ষমতা আছে তারা যেন বিবাহ করে। কারণ, তোমাদের চোখের জন্য অধিক হেফাজতকারী এবং তোমাদের লজ্জাস্থানের সংরক্ষক”[22]।
উল্লেখিত হাদিসে الباءة শব্দের অর্থ স্ত্রী মিলনে সক্ষম ও বিবাহের খরচ। যখন কোন ব্যক্তি বিবাহের ক্ষমতা রাখে এবং তার নফস বিবাহের প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করে, তাহলে তাকে অবশ্যই বিবাহ করতে হবে।
বিবাহ হল, হালাল উপায়ে মানুষ তার মানবিক ও জৈবিক চাহিদা মেটানোর একটি পথ; যা মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মানুষের জন্য বৈধ বিধান হিসেবে চালু করেছেন। বিবাহ হল নবী ও রাসুলগণের সুন্নাত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যারা তাদের নিজেদের উপর বিবাহকে হারাম করেছিল তাদের বিষয়ে বলেন,
« لَكِنِّي أُصَلِّي وَأَنَامُ وَأَصُومُ وَأُفْطِرُ وَأَتَزَوَّجُ النِّسَاءَ، فَمَنْ رَغِبَ عَنْ سُنَّتِي فَلَيْسَ مِنِّي »
“কিন্তু আমি সালাত আদায় করি, ঘুমাই, রোজা রাখি ইফতার করি এবং নারীদের বিবাহ করি। সুতরাং এ গুলো সবই হল আমার আদর্শ। আর যে ব্যক্তি আমার আদর্শ থেকে দূরে সরে সে আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়”[23]।
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«النِّكَاحُ مِنْ سُنَّتِي، فَمَنْ لَمْ يَعْمَلْ بِسُنَّتِي فَلَيْسَ مِنِّي، وَتَزَوَّجُوا فَإِنِّي مُكَاثِرٌ بِكُمُ الأُمَمَ، وَمَنْ كَانَ ذَا طَوْلٍ فَلْيَنْكِحْ، وَمَنْ لَمْ يَجِدْ فَعَلَيْهِ بِالصِّيَامِ؛ فَإِنَّ الصَّوْمَ لَهُ وِجَاءٌ»
“বিবাহ আমার সুন্নাত। যে আমার সুন্নাত অনুযায়ী আমল করে না, সে আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়। তোমরা বিবাহ কর, কারণ আমি আমার উম্মতের আধিক্য নিয়ে আল্লাহর দরবারে গর্ব করব। যার সামর্থ্য আছে সে অবশ্যই বিবাহ করবে আর যার সামর্থ্য নাই তার উপর কর্তব্য হল রোজা রাখা। কারণ, রোজা তার জন্য প্রতিষেধক”[24]।
বিবাহের মাধ্যমে মানুষের দ্বীন ও ঈমানের সংরক্ষণ হয়। আর যিনা ব্যভিচার দ্বারা মানুষ যে নুরের দ্বারা আলোকিত, তা ছিনিয়ে নেয়া হয়।
আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুর কতক গোলাম ছিল, তিনি তাদের জ্ঞান শিক্ষা দেয়ার জন্য নির্বাচন করেছিলেন। তিনি তাদের বলতেন, “যদি তোমরা বিবাহ করতে চাও তবে আমি তোমাদের বিবাহ দিয়ে দেব। কারণ, বান্দা যখন ব্যভিচার করে তার অন্তর থেকে ঈমানকে ছিনিয়ে নেয়া হয়”।[25]
তিনি তাদের আরও বলেন, “তোমরা বিবাহ কর! কারণ, বান্দা যখন কোন ব্যভিচার করে তখন তার ঈমানের নুর ছিনিয়ে নেয়া হয়”।[26]
ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু আরও বলেন, “বিবাহ ছাড়া কোন ইবাদাতকারীর ইবাদত প্রকৃতভাবে কবুল হয় না।”[27] অর্থাৎ কোন ইবাদত-কারী বান্দার ইবাদত বা দ্বীন বিবাহ করা ছাড়া পরিপূর্ণ হয় না। অবিবাহিত ব্যক্তির দ্বীন ও ইবাদত সর্বদা অপূর্ণ থেকে যায়। কারণ, তার জন্য এ সম্ভাবনা রয়েছে, সে বিবাহ না করাতে কোন হারাম বা যিনা ব্যভিচারে লিপ্ত হতে পারে”।
যে ব্যক্তি তার নিজের ব্যাপারে হারাম কাজে লিপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করে, তার জন্য বিবাহ করা হজের চেয়েও অধিক গুরুত্বপূর্ণ ফরয। অথচ হজ হল ইসলামের রোকনসমূহের একটি রোকন। তা স্বত্বেও যে ব্যক্তি হজ ও বিবাহ দুটিকে এক সাথে আদায় করতে সক্ষম নয় তাকে অবশ্যই হজের উপর বিবাহকে প্রাধান্য দিতে হবে।
নেককার মহিলা বা স্ত্রী অর্ধ দ্বীনের ব্যাপারে সাহায্যকারী:
আনাস ইবন মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« مَنْ رَزَقَه الله امْرَأَةً صَالحَة فَقَدْ أَعَانَهُ عَلَى شَطْرِ دِينِهِ، فَلْيَتَّقِ الله فِي الشَّطْرِ الثَّانِي »
“আল্লাহ রাব্বুল আলামীন যাকে নেককার স্ত্রী লাভের তাওফীক দেন, তাকে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন অর্ধেক দ্বীনের বিষয়ে সাহায্য করল, বাকী অর্ধেকের বিষয়ে সে যেন আল্লাহকে ভয় করে”[28]।
আল্লামা মুনাবি রহ. বলেন, দ্বীনের জন্য সবচেয়ে বড় ক্ষতিকর ও মহা মুসিবত হল, দুটি জিনিষ।
এক- পেটের চাহিদা,
দুই-যৌন চাহিদা।
এক- পেটের চাহিদা,
দুই-যৌন চাহিদা।
দ্বিতীয় চাহিদা মেটানোর জন্য তাকে বিবাহ করতে হবে। যদি কোন ব্যক্তি দ্বীনদার ও সৎ নারীকে বিবাহ করে, তাহলে সে ব্যভিচার থেকে মুক্ত থাকবে এবং সে অর্ধেক চাহিদা মেটাতে পারবে। তারপর তার অবশিষ্ট অর্ধেক চাহিদা বাকী থাকল। আর তা হল তার পেটের চাহিদা। এ চাহিদা মেটানোর জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে তাকওয়া অর্জন করার উপদেশ দেন। তাকওয়ার মাধ্যমে তার দ্বীনদারি পূর্ণতা লাভ করে এবং আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদের যে দ্বীন দিয়েছেন সে দ্বীনের উপর অটল অবিচল থাকার তাওফিক হাসিল হয়।
এখানে [হাদীসে] নেককার নারীর কথা বলার কারণ হল, নারী যদি দ্বীনদার ও নেককার না হয়, তার দ্বারা ব্যভিচার থেকে মুক্তি পেলেও লোকটি তার স্ত্রীর কারণে কোন অপকর্ম ও খারাপ কাজে জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে এবং তার স্ত্রী তাকে হারাম উপার্জন ইত্যাদির প্রতি উদ্বুদ্ধ করতে পারে; যা তার পরিণতির জন্য খুবই খারাপ।[29]
আল্লামা কুরতবী রহ. বলেন, বর্তমানকালে কেউ অন্যায়-পাপ থেকে সবর করার ক্ষমতা না রাখে, তার জন্য ওয়াজিব হবে দ্বীনদার স্ত্রী তালাশ করা; যার মাধ্যমে সে তার দ্বীনদারি ঠিক রাখতে পারে।[30]
বিবাহের মধ্যে রয়েছে ছাওয়াব আর ব্যভিচারে রয়েছে গুনাহ:
বিবাহের সবচেয়ে কল্যাণকর ও বিশেষ দিক হল, যৌন চাহিদা মিটানোতে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এর পক্ষ হতে সাওয়াবের অধিকারী হওয়া যায়। যেমন, হাদিসে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«وَفِي بُضْعِ أَحَدِكُمْ صَدَقَةٌ قالوا: يا رسول الله، أيأتي أحدنا شهوته ويكون له فيها أجر؟!، قال أَرَأَيْتُمْ لَوْ وَضَعَهَا فِي الحَرَامِ أَكَانَ عَلَيْهِ فِيهَا وِزْرٌ؟ فَكَذَلكَِ إذَِا وَضَعَهَا فِي الحَلَالِ كَانَ لَهُ أَجْرٌ»
“তোমাদের কেউ তার স্ত্রীর সাথে সহবাস করাতে তার জন্য রয়েছে, সদকার সাওয়াব। এ কথা শোনে সাহাবীরা বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা যদি আমাদের স্ত্রীদের সাথে যৌন চাহিদা মেটাই তাতেও কি আমাদের ছাওয়াব রয়েছে? তখন তিনি বললেন, যদি লোকটি কোন হারাম কাজে লিপ্ত হত তাহলে তার গুনাহ হত কিনা? অনুরূপভাবে যখন সে হারাম থেকে বিরত থেকে হালাল কাজে লিপ্ত হও তখন অবশ্যই তোমাদের জন্য ছাওয়াব ও বিনিময় থাকবে”[31]।
ইমাম নববী রহ. বলেন, যে সব কাজগুলো মুবাহ বা হালাল ইবাদতের নিয়ত দ্বারা তা ইবাদতে পরিণত হয়। যেমন, স্ত্রী সহবাসের দ্বারা যদি কোন ব্যক্তি স্ত্রীর অধিকার আদায়, তার সাথে সুন্দর ব্যবহার, নেক সন্তান লাভ, নিজের নফসকে ও স্ত্রীকে ব্যভিচার থেকে হেফাজত করা, খারাপ বা হারামের দিকে তাকানো থেকে বিরত রাখা, খারাপ চিন্তা ও ফিকির হতে বিরত রাখা ইত্যাদি ভালো ও নেক উদ্দেশ্য লাভের নিয়ত করে, তাহলে স্ত্রী সহবাস অবশ্যই ইবাদত বলে পরিগণিত হবে।’[32]
মনে রাখতে হবে বিবাহ হল, একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যা যুবকদের অনৈতিক চিন্তাধারা থেকে হেফাজত করে এবং যিনা-ব্যভিচার থেকে রক্ষা করে। বিবাহের মাধ্যমে একজন যুবক হারাম বিষয়ে চিন্তা করা এবং হারাম কাজের ইচ্ছা করা হতে বিরত থাকে।
বিবাহিত ব্যক্তিকে পবিত্র ও সৎ থাকতে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সাহায্য করে:
কোনো ব্যক্তি যদি বিবাহের মাধ্যমে পবিত্র থাকতে চায়, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন স্বীয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জবানে তাকে সাহায্য করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কারণ, মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বান্দা থেকে সব ধরনের অশ্লীলতা দূর করতে চান এবং তাকে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তার জন্য যে সব কর্মকে হালাল করেছেন, তার দিকে ধাবিত করতে এবং হারাম থেকে বিরত রাখতে চান। আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« ثَلَاثَةٌ حَقٌّ عَلَى الله عَوْنهُمُْ: المُجَاهِدُ فِي سَبيِلِ الله، والمكاتَبُ الَّذِي يُرِيدُ الأدََاءَ، وَالنَّاكِحُ الَّذِي يُرِيدُ العَفَافَ »
“তিন ব্যক্তিকে সাহায্য করা আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের উপর ওয়াজিব। এক- আল্লাহর রাস্তার মুজাহিদ। দুই- চুক্তিবদ্ধ গোলাম[33] যে মুক্তিপণ আদায় করতে চায়। তিন- বিবাহিত ব্যক্তি যে পবিত্র থাকতে চায়”[34]।
যদি কোন ব্যক্তি এমন হয়, একটি স্ত্রী দ্বারা তার আসক্তির চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না এবং সে তার নিজের বিষয়ে হারাম কাজে লিপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে, তাহলে তার উপর একাধিক বিবাহ করা ওয়াজিব, যাতে সে হারাম থেকে বাচতে পারে। আর যদি এক স্ত্রী দ্বারা তার আসক্তির ক্ষুধা নিবারণ হচ্ছে, তবে একটি স্ত্রী নিয়ে থাকাতে তার কষ্ট হচ্ছে, তাহলে তার জন্য পরবর্তী বিবাহ করা মোস্তাহাব।
দুই- রোজা রাখা:
রোজা যুবকদের অপকর্ম, যিনা, ব্যভিচার ও অশ্লীল কাজে লিপ্ত হওয়া থেকে হেফাজত করে। এ কারণেই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুবকদের রোজার চিকিৎসা গ্রহণ করার প্রতি উপদেশ দেন।
আব্দুল্লাহ ইব্ন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে ছিলাম। তখন তিনি আমাদের হাদিস বর্ণনা করে বলেন,
«مَنِ اسْتَطَاعَ البَاءَةَ فَلْيَتَزَوَّجْ؛ فَإِنَّهُ أَغَضُّ لِلْبَصَرِ، وَأَحْصَنُ لِلْفَرْجِ، وَمَنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَعَلَيْهِ بِالصَّوْمِ فَإِنَّهُ لَهُ وِجَاءٌ »
“তোমাদের মধ্যে যাদের ক্ষমতা আছে তারা যেন বিবাহ করে। কারণ, বিবাহ তোমাদের চোখের জন্য অধিক হেফাজতকারী এবং তোমাদের লজ্জাস্থানের সংরক্ষক। আর যে ব্যক্তি বিবাহ করার সামর্থ্য রাখে না তাকে অবশ্যই রোজা রাখতে হবে। কারণ, রোজা তার জন্য প্রতিষেধক”[35]।
আল্লামা ইবনুল কাইয়্যেম রহ. বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুবকদের প্রথমে শেফাদানকারি চিকিৎসা অর্থাৎ বিবাহের দিকে পথ দেখান। কিন্তু তাতে যদি কেউ অক্ষম হয় তাকে তার পরিবর্তে কি করতে হবে তার প্রতি দিক-নির্দেশনা প্রদান করেন। আর তা হল, রোজা রাখা। কারণ, রোজা মানুষের আসক্তির চাহিদাকে দুর্বল করে এবং আসক্তির উৎপাতকে দমিয়ে ও সংকোচিত করে দেয়। মানুষের আসক্তি সাধারণত খাদ্যের আধিক্য ও বিভিন্নতার কারণে শক্তিশালী হয়ে থাকে। বিভিন্ন ধরনের খাদ্য গ্রহণ ও অধিক খাদ্য একজন মানুষের আসক্তির চাহিদাকে বাড়িয়ে দেয়। আর রোজা রাখা দ্বারা তা অনেকটা কমে যায়। যখন একজন মানুষ রোজা রাখতে থাকে, তখন সে খাসিকৃত জন্তুর মত হয়ে যায়। যে ব্যক্তি সব সময় রোজা রাখে তার যৌন চাহিদা ও আসক্তি দুর্বল হবে না এমন মানুষ খুব কমই পাওয়া যায়।’[36]
তাছাড়া আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন -হাদিসে কুদসীতে- মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন,
«والصَّوْمُ جُنَّةٌ... »
“রোজা মুমিনের জন্য ডাল স্বরূপ”।[37]
ডাল স্বরূপ এ কথার অর্থ হল, রোজা রক্ষাকারী ও গোপনকারী। রোজা মানবাত্মাকে আসক্তির চাহিদা ও তার উত্তেজনা থেকে হেফাজত করে এবং মানুষকে হারামে লিপ্ত হওয়া হতে বাঁচায়। কারণ, খাদ্য মানুষের যৌন চাহিদা বাড়িয়ে দেয়। আর রোজার মানেই হল খাদ্য-পানীয় থেকে বিরত থাকা।
আল্লামা কুরতবি রহ. বলেন, ‘খাদ্য যত কম হবে, আসক্তি ততই দুর্বল হবে। আর আসক্তি যত দুর্বল হবে তার গুনাহ কম হবে’।[38]
তিন. দৈহিক শক্তিকে কল্যাণকর ও নেক আমলে ব্যয় করা:
যুবকদের কর্তব্য হল, তারা তাদের দৈহিক শক্তি ও যৌবনকে গুরুত্ব দেবে এবং বিভিন্ন ধরনের নেক ও জন কল্যাণমূলক কাজে তাদের নিজেদের সময় ও যৌবনকে ব্যয় করবে। সামাজিক ও ধর্মীয় কাজে যুবকরা সময়কে অধিক হারে ব্যয় করতে পারে। যেমন, আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের দ্বীনের দিকে মানুষকে দাওয়াত দেওয়া, সমাজের হত-দরিদ্র ও অভাবী মানুষদের সাহায্য এগিয়ে আসা এবং মানুষের বিপদ ও দুর্যোগের সময় যুবকরা তাদের সাহায্যার্থে ঝাঁপিয়ে পড়া ইত্যাদি। এছাড়াও সমাজে যে কোন ধরনের জন কল্যাণমুলক কাজে তারা নেতৃত্বই দিতে পারে।
চার. অন্যদের মধ্যে যৌন উত্তেজনা ছড়ানো হতে বিরত থাকা:
বর্তমানে আমরা যে যুগের মধ্যে বসবাস করি, তা হল, নোংরামি, বেহায়াপনা, নির্লজ্জতা ও অশ্লীলতার যুগ। এ যুগে মারা-মারি, কাটা-কাটি, হত্যা, গুম, চিন্তাই ইত্যাদি প্রায় নিত্য দিনের ঘটনা। রাস্তা-ঘাট, হাট-বাজার, দোকান-পাট যেখানেই তাকাই সেখানেই আমরা দেখতে পাই অশ্লীল গান-বাজনা, নগ্ন সিনেমা, উলঙ্গ ছবি, নারী-পুরুষের অবাধ মেলা-মেশা ইত্যাদি। এ সবের কারণে বর্তমানে যুব সমাজের চরিত্র প্রায় ধ্বংসের কাছাকাছি, তাদের নৈতিক অবক্ষয় ও অধঃ:পতন অপ্রতিরোধ্য। বর্তমানে আমরা আমাদের যুগে যে অবস্থা দেখতে পাচ্ছি, অতীতে আমাদের বাপ-দাদারা তা কোনদিন চিন্তাও করেন নি।
বর্তমান যুগে মানুষের পোশাকগুলো তৈরি করা হচ্ছে এমনভাবে যাতে পোশাক পরিধান করার পরও একজন মানুষ অর্ধ-উলঙ্গ থাকে। তাদের দেখলেই মানুষের নফসের কামনা আরও বৃদ্ধি পায়। বর্তমানে নারীদের পোশাক বানানো ও ডিজাইন করার জন্য কিছু লোক নিযুক্ত আছে, তারা সবসময় এ চিন্তা করে, কোন ধরনের পোশাক বানালে মানুষ তাদের প্রতি বেশি আকৃষ্ট হবে এবং বিভিন্ন ধরনের ফিতনায় লিপ্ত হবে।
অনেককে আমরা বলতে শুনি তারা বলে, নারীদের পোশাকের অবস্থা এমন যে, তারা যদি তাদের পোশাক পরিধান না করে উলঙ্গ থাকত, তাহলে এতটা ফিতনার আশঙ্কা হত না। কারণ, তাদের এ পোশাকের আকর্ষণ তাদের নেংটা থাকার চেয়েও অধিক মারাত্মক। এ পোশাক তাদেরকে তাদের প্রকৃত সুন্দরের চেয়েও বেশী আকর্ষণীয় করে তোলে।
অনুরূপভাবে বোরকা নারীদের সৌন্দর্যকে আরও বাড়িয়ে দেয়। বাস্তবে মহিলাটি এতটা সুন্দর না হলেও যখন বোরকা পরে তখন মানুষ তার প্রতি মাথা উঁচু করে দেখতে থাকে। মনে করে মেয়েটি কতই না সুন্দর। কিন্তু বাস্তবে যখন সে তার চেহারা খুলবে তখন তার এ সৌন্দর্য আর অবশিষ্ট থাকে না।
ইয়াহুদীরা তৈরি করেছে তাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করার জন্য কিছু প্রতিষ্ঠান বানিয়েছে। তারা তাদের নারীদের থেকে কতক গায়িকা ও মডেল তৈরি করে তাদেরকে নোংরা পোশাক পরিধান করিয়ে বাজারে ছেড়ে দেয়, টিভি চ্যানেলে তাদের প্রদর্শিত হয়। তাদের দেখে আমাদের দেশের নারীরা তাদের নারীদের অনুকরণ করতে থাকে এবং তারাও তাদের সাজে সাজতে পছন্দ করে। তাদের দেখে দেখে আমাদের দেশের নারীরাও একই ধরণের পোশাক পরিধান করে, যা আমাদের দেশের নারীদের কপালে কলংকের দাগ টেনে দেয়। কল, কারখানা ও গার্মেন্টসগুলোতেও নারীদের জন্য ঐ ধরনের পোশাক তৈরি করা হয়। যার কারণে বাজারে অশালীন পোশাক ছাড়া শালীন ও ভদ্র কোন পোশাক পাওয়াই বর্তমানে দুষ্কর। বরং বর্তমান বাজারে অধিকাংশ পোশাকই হল, তাদের ষড়যন্ত্র ও পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সহায়ক।
পাঁচ. কোন নারী দেখে আকৃষ্ট হলে, স্বীয় স্ত্রীর নিকট চলে আসা:
মনে রাখতে হবে, আসক্তি পূজা করা শুধু অবিবাহিত লোকদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। বরং বিবাহিত লোকও অনেক সময় তার নিজের স্ত্রীকে বাদ দিয়ে অন্য নারীর প্রতি ঝুঁকে পড়ে। অনেক সময় দেখা যায় বিবাহিত লোক অবিবাহিত লোকের চেয়ে আরও বেশি ফিতনার কারণ হয়। কারণ, সে নারীদের সাথে মিশছে তাদের সাথে সহবাস করছে। ফলে সে নারীদের সাথে মেলামেশা করা কি মজা তা জানে। আর যে কোন কিছুর মজা বা স্বাদ কি তা জানে আর যে জানে না উভয় সমান হতে পারে না।
সুতরাং বিবাহিত লোকদের এ বিষয়ে অধিক সতর্ক থাকতে হবে। তারা তাদের নিজেদের হেফাজত করার জন্য অধিক চেষ্টা করবে। যদি কোন অপরিচিত নারীর দিক দৃষ্টির কারণে অথবা নিষিদ্ধ বা উলঙ্গ ছবি ইত্যাদি দেখার কারণে তার অন্তরে কোন অপকর্ম বা খারাপ কাজের উদ্রেক হয়, তখন সে যেন দ্রুত তার স্ত্রীর নিকট গিয়ে তার স্বীয় প্রয়োজন পূর্ণ করে এবং তার নফসের চাহিদা মেটায়।
জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একজন নারীকে দেখে তিনি তার স্ত্রী যয়নাবের নিকট আসল। তখন যয়নব রাদিয়াল্লাহু আনহু তার শরীরকে পরিষ্কার করার জন্য মালিশ করতে ছিল। তারপর সে তার হাজত পূরণ করল এবং সাহাবীদের নিকট বের হয়ে বলল,
« إنَِّ المرَْأَةَ تُقْبلُِ فِي صُورَة شَيطْاَنٍ، وَتُدْبرُِ فِي صُورَة شَيطْاَنٍ، فَإذَِا أَبْصَرَ أَحَدَكُمُ امْرَأَةً فَلْيأَتِْ أَهْلَهُ؛ فَإنَِّ ذَلكَِ يَرُدُّ مَا فِي نَفْسِهِ »
“নারীরা শয়তানের আকৃতিতে সামনের দিক অগ্রসর হয় আবার শয়তানের আকৃতিতে চলে যায়। তোমাদের যখন কোন নারী দেখে যৌন চাহিদা জেগে উঠে, তাহলে সাথে সাথে তোমরা তোমাদের স্ত্রীদের নিকট এসে চাহিদা মেটাবে। কারণ, এতে তোমাদের অন্তরে যে খারাপ ভাবের উদ্রেক করেছে তা দূর করে দেবে”[39]। অপর এক বর্ণনায় তিনি বলেন,
« فإنَ مَعَهَا مِثَل الَّذِي مَعَهَا »
“তার সাথে তাই আছে যা তোমার স্ত্রীর মধ্যে রয়েছে”।[40]
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একজন নারীকে দেখল, এর অর্থ হল, একজন নারীর উপর হঠাৎ করে তার দৃষ্টি পড়ল। এতে কোন গুনাহ নাই। অথবা এ ঘটনা পর্দার বিধান নাযিল হওয়ার পূর্বের; তখন নারীদের দিকে তাকানো বৈধ ছিল।
-----
আবী কাবশা আল-আনমারী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন তার সাথীদের সাথে বসা ছিলেন, তারপর তিনি মজলিশ থেকে উঠে ভিতরে প্রবেশ করলেন এবং গোসল করে বের হলেন। তাকে দেখে আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! নিশ্চয় কোন ঘটনা ঘটছে! তখন তিনি বললেন,
« أَجَلْ، مَرَّتْ بِي فُلَانَةٌ فَوَقَعَ فِي قَلْبِي شَهْوَةُ النِّسَاءِ، فَأَتَيْتُ بَعْضَ أَزْوَاجِي فَأَصَبْتُهَا، فَكَذَلكَِ فَافْعَلُوا؛ فَإِنَّهُ مِنْ أَمَاثِلِ أَعْمَالِكُمْ إِتْيَانُ الحَلَالِ »
“আমার নিকট দিয়ে একজন নারী অতিক্রম করতে দেখে আমার অন্তরে নারীর আকর্ষণ জাগ্রত হয়। তারপর আমি আমার একজন স্ত্রীর নিকট হাজির হয়ে তার সাথে সহবাস করি। তোমরাও তাই কর। কারণ, হালালের কাছে গমন করা তোমাদের সর্বোত্তম আমলেরই নামান্তর”[41]।
ইমাম নববী রহ. বলেন, কোন ব্যক্তি যখন কোন নারীকে দেখে তার যৌন উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়, তার জন্য মুস্তাহাব হল, সে তার স্ত্রীর নিকট আসবে এবং তার সাথে সহবাস করে, সে তার যৌন ক্ষুধা নিবারণ করবে, তার অন্তরকে তার চাহিদা অনুযায়ী একত্র করবে এবং আত্মাকে শান্তি দেবে। শয়তান মানুষকে নারীদের ফিতনায় লিপ্ত হওয়ার দাওয়াত দিতে থাকে। কারণ, মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন পুরুষদের নারীদের প্রতি আকর্ষণ দিয়েই সৃষ্টি করেছেন। তারা নারীদের দিকে দেখে এবং তাদের সাথে সম্পৃক্ত যে কোন কিছু দেখে তাদের প্রতি আকৃষ্ট হয় এবং মজা পায়। সুতরাং, বলা বাহুল্য যে, নারীরা শয়তানের মতই। শয়তান যেমন মানুষকে খারাপ ও অপকর্মের দিকে আহ্বান করে অনুরূপভাবে নারীরাও তাদের সাজ-সজ্জা ও পর্দা-হীনতা দিয়ে পুরুষদের অপকর্ম ও ব্যভিচারের দিকে ডাকতে থাকে। এতে এ কথা স্পষ্ট হয়, নারীরা যেন বেপর্দা হয়ে বিনা প্রয়োজনে পুরুষদের সাথে হাটে বাজারে রাস্তা ঘাটে বের না হয়। আর পুরুষদের কর্তব্য হল, তারা নারীদের প্রতি তাকাবে না এবং তাদের দেখলে চক্ষুকে অবনত করে রাখবে।[42]
উপরের দুটি হাদিসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার নিজের গোপন বিষয়ে যে স্পষ্ট কথা বলেন, তাতে অনেকেই বিষয়টিকে আশ্চর্য মনে করেন। রাসূল সা. এর অন্তরে কিভাবে খারাপ চিন্তা আসল? আবার তিনি তা সাহাবীদের নিকট কীভাবে বললেন? কিন্তু তারা যখন তার কারণ সম্পর্কে জানবে তখন আর আশ্চর্যবোধ করবে না। কারণ, বিষয়টি খুবই মারাত্মক ও ক্ষতিকর। এ কারণেই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার নিজের বিষয়টি স্পষ্টভাবে তুলে ধরেন, যাতে মুসলিমরা তার থেকে শিক্ষালাভ করে এবং তার অনুকরণ করে।
ছয়. প্রয়োজন ছাড়া নারীদের ঘর থেকে বের হতে নিষেধ করা:
নারীরা যখন ঘর থেকে বের হয়, তখন শয়তান মাথা উঁচা করে দেখতে থাকে এবং শয়তান তাদের মানুষের দৃষ্টিতে খুব সুন্দর করে দেখায়। বাস্তবে তার যতটুকু সৌন্দর্য আছে শয়তান একটু বেশি করে দেখায়, যাতে মানুষকে সে অশ্লীল কাজ ও অপকর্মের মধ্যে লিপ্ত করতে পারে।
সুতরাং অভিভাবকদের উচিত হল, তারা যেন তাদের মেয়েদের রাস্তায় বের হওয়া হতে নিষেধ করে এবং প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাহিরে যেতে না দেয়; যাতে তারা তাদের ইজ্জত, সম্মান ও পবিত্রতা সংরক্ষণ করতে পারে।
সাত. ঘরের মধ্যে ব্যক্তিগত ইবাদতগুলো অধিকহারে করা:
তোমরা তোমাদের ঘরকে কবর বানাবে না; যেখানে কোন জিকির নাই, দো‘আ নাই এবং ইবাদত বন্দেগী নাই। বরং, তোমরা তোমাদের ঘরকে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের ইবাদত বন্দেগী দ্বারা আবাদ কর, ঘরে সালাত আদায় কর ও কুরআন তিলাওয়াত কর। আর ঘরের মধ্যে সালাত আদায়ের জন্য একটি জায়গা নির্ধারণ করবে যেখানে তোমরা নফল সালাত আদায় করবে, কুরআন তিলাওয়াত করবে। কুরআনের তিলাওয়াত শোনার জন্য একটি টেপরেকর্ড বা কম্পিউটার রাখবে। ঘরের মধ্যে কুরআন ও হাদীস ভিত্তিক দীনি বই পুস্তক রাখবে এবং এগুলো তালীমের পরিবেশ কায়েম করবে; যাতে তোমাদের পরিবারের দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ নিশ্চিত হয়। এগুলো মানুষকে তাদের প্রভুর দিকে ধাবিত করবে এবং আসক্তির চাহিদা দুর্বল হবে।
আট. দো‘আ করা:
দো‘আ হল মুমিনের সত্যিকার ও মজবুত হাতিয়ার। দো‘আ কখনোই বেকার যায় না। মুমিনের দায়িত্ব হল, সে সবসময় দো‘আর হাতিয়ারকে ব্যবহার করবে। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন,
﴿وَإِذَا سَأَلَكَ عِبَادِي عَنِّي فَإِنِّي قَرِيبٌۖ أُجِيبُ دَعۡوَةَ ٱلدَّاعِ إِذَا دَعَانِۖ فَلۡيَسۡتَجِيبُواْ لِي وَلۡيُؤۡمِنُواْ بِي لَعَلَّهُمۡ يَرۡشُدُونَ ١٨٦ ﴾ [ سورة البقرة : 186[.
আর যখন আমার বান্দাগণ তোমাকে আমার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবে, আমি তো নিশ্চয় নিকটবর্তী। আমি আহ্বানকারীর ডাকে সাড়া দেই, যখন সে আমাকে ডাকে। সুতরাং তারা যেন আমার ডাকে সাড়া দেয় এবং আমার প্রতি ঈমান আনে। আশা করা যায় তারা সঠিক পথে চলবে। [সূরা বাকারাহ, আয়াত: ১৮৬]
ওবাদাহ ইবন সামেত রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«مَا عَلَى الأرَْضِ مُسْلمِ يَدْعُو الله بدَِعْوَة إلَّا آتَاهُ الله إيَاهَا، أَوْ صَرَفَ عَنْهُ مِنَ السُّوءِ مِثْلَهَا؛ مَا لمَ يَدْعُ بإِثْمٍ أَوْ قَطيِعَةِ رَحِمٍ فقال رجل من القوم: إذاً نكثر. قال الله أَكْثَر»
“জমিনের বুকে কোন মুসলিম ব্যক্তি যখন আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের নিকট কোন কিছু চায় আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাকে তা দান করবেই। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তার থেকে সমপরিমাণ অকল্যাণ দূর করবে। তবে শর্ত তার দো‘আ যেন কোন অন্যায় অথবা আত্মীয়তার সম্পর্ক কর্তন করার জন্য না হয়। এ কথা শোনে একজন লোক বলল, তাহলে আমরা আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের দরবারে অধিক হারে দো‘আ করব। তখন বলল, আল্লাহ তোমাদের চেয়ে অধিক দো‘আ কবুলকারী”[43]।
আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের নবী ইউসুফ আ. সম্পর্কে চিন্তা করে দেখ, যখন আসক্তি চাহিদার মুহূর্তে তাকে নিষিদ্ধ ও হারাম কাজের দিকে আহ্বান করা হয়, তখন সে কি বলেছিল। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তার কাহিনীর বর্ণনা দিতে গিয়ে ইরশাদ করেন,
﴿قَالَ رَبِّ ٱلسِّجۡنُ أَحَبُّ إِلَيَّ مِمَّا يَدۡعُونَنِيٓ إِلَيۡهِۖ وَإِلَّا تَصۡرِفۡ عَنِّي كَيۡدَهُنَّ أَصۡبُ إِلَيۡهِنَّ وَأَكُن مِّنَ ٱلۡجَٰهِلِينَ ٣٣ فَٱسۡتَجَابَ لَهُۥ رَبُّهُۥ فَصَرَفَ عَنۡهُ كَيۡدَهُنَّۚ إِنَّهُۥ هُوَ ٱلسَّمِيعُ ٱلۡعَلِيمُ ٣٤ ﴾ [ سورة يوسف : 33-34[.
সে (ইউসুফ) বলল, ‘হে আমার রব, তারা আমাকে যে কাজের প্রতি আহ্বান করছে তা থেকে কারাগারই আমার নিকট অধিক প্রিয়। আর যদি আপনি আমার থেকে তাদের চক্রান্ত প্রতিহত না করেন তবে আমি তাদের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ব এবং আমি মূর্খদের অন্তর্ভুক্ত হব’। অতঃপর তার রব তার আহ্বানে সাড়া দিলেন এবং তার থেকে তাদের চক্রান্ত প্রতিহত করলেন। নিশ্চয় তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ। [সূরা ইউসূফ, আয়াত: ৩৩-৩৪]
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আদর্শ হল তিনি আসক্তির ফিতনা হতে বাঁচা ও তা প্রতিহত করার জন্য তার সাহাবীদের দো‘আ শেখাতেন।
শাকাল ইবন হামিদ রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদিন আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি আমাদের একটি দো‘আ শিখিয়ে দিন। উত্তরে তিনি বলেন, তুমি বল,
« اللَّهُمَّ إنِّي أَعُوذُ بكَ مِنْ شَرِّ سَمْعِي، وَمِنْ شَرِّ بَصَرِي، وَمِنْ شَرِّ لسَانِي، وَمِنْ شَرِّ قَلْبيِ، وَمِنْ شَرِّ مَنيِيِِّ »
“হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট আমার কর্ণের অনিষ্টতা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করি, আমার চোখের অনিষ্টতা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করি, আমার মুখের অনিষ্টতা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করি, আমার অন্তরের অনিষ্টতা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করি এবং আমার বীর্যের অনিষ্টতা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করি”[44]।
এখানে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বীর্যের অকল্যাণ থেকে আশ্রয় চেয়েছেন। আর বীর্যের অকল্যাণ বলে আসক্তি ও অসৎ প্রেরণা থেকে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের নিকট আশ্রয় চাওয়াই উদ্দেশ্য।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলতেন,
« اللَّهُمَّ إنِّي أَسْألَكَُ الهُدَى، وَالتقَّى، وَالعَفَافَ، وَالغِنَى »
“হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট হিদায়াত, তাকওয়া, পবিত্রতা ও অমুখাপেক্ষিতা চাই”[45] এখানে তিনি পবিত্রতা চেয়েছেন, যা কু- আসক্তিকে দমিয়ে রাখা ও তার চিকিৎসার জন্য একান্ত প্রয়োজন।
সুতরাং তুমি অবশ্যই সতর্ক থাকবে, যাতে তোমার নিজের নফস তোমাকে ধোঁকায় না ফেলতে পারে এবং তোমাকে দো‘আ করা হতে বিরত রাখতে না পারে। কারণ, ইবরাহীম আ. ও মূর্তিপূজা বর্জনের জন্য তার নিজের [তাকওয়া ও ঈমানি দৃঢ়তার] ওপর নির্ভর করেন নি বরং আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের দরবারে দো‘আ ও প্রার্থনা করেন। তিনি বলেন,
﴿وَٱجۡنُبۡنِي وَبَنِيَّ أَن نَّعۡبُدَ ٱلۡأَصۡنَامَ ٣٥ ﴾ [ سورة إبراهيم : 35[.
আর স্মরণ কর ‘যখন ইবরাহীম বলল, ‘আর আমাকে ও আমার সন্তানদেরকে মূর্তি পূজা থেকে দূরে রাখুন’। [সূরা ইবরাহীম, আয়াত: ৩৫]
তিনি শুধু মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন দরবারে ছোট গুনাহ থেকে বাচার প্রার্থনা করেন নি বরং তিনি বড় শির্ক হতে বাঁচার জন্য আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের দরবারে প্রার্থনা করেন। সুতরাং, তুমি কখনোই এ কথা বলবে না আমি একজন দ্বীনদার যুবক, আমি ইমাম, খতিব, বক্তা, তালেবে ইলম এবং আমি একজন দা‘য়ী। সবারই উচিত সে তার নিজের বিষয়ে ফিতনায় লিপ্ত হওয়া হতে ভয় করবে। আর আমরা যখন আমাদের নিজের বিষয়ে ভয় করব, তখন আমরা আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের নিকট প্রার্থনা করব এবং তার নিকট ফিরে যাব, যাতে তিনি আমাদের গুনাহ থেকে হেফাজত করেন। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন,
﴿وَلَوۡلَآ أَن ثَبَّتۡنَٰكَ لَقَدۡ كِدتَّ تَرۡكَنُ إِلَيۡهِمۡ شَيۡٔٗا قَلِيلًا ٧٤ ﴾ [ سورة الإسراء [74.
“আর আমি যদি তোমাকে অবিচল না রাখতাম, তবে অবশ্যই তুমি তাদের দিকে কিছুটা ঝুঁকে পড়তে” [সূরা আল-ইসরা, আয়াত: ৭৪]
إذَِا لَم يَكنْ عَوْنٌ مِنَ الله للْفَتَى
فَأَوَّلُ مَا يَجْنِي عَلَيْهِ اجْتِهَادُهُ
একজন যুবককে যখন আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সহযোগিতা না করে তখন প্রথম যে বস্তুটি তার বিপদ ডেকে আনে তা হচ্ছে, তার ইজতিহাদ[46]।
নয়. কু-আসক্তির পিছনে দৌড়ার ক্ষতি সম্পর্কে চিন্তা ফিকির করা:
ইয়াহিয়া ইবন মুয়ায রহ. বলেন, যে ব্যক্তি তার দেহকে ভোগ-বিলাসের মধ্যে কাজে লাগাতে পছন্দ করে, সে তার নিজের জন্য অপমান-অপদস্থের গাছ বপন করা ছাড়া আর কিছুই করল না।
আব্দুস সামাদ আয-যাহেদ রহ. বলেন, যে ব্যক্তি এ কথা জানল না যে, কু-আসক্তি হল ষড়যন্ত্রের একটি জাল, সে একজন নির্বোধ।
দুনিয়া ও আখিরাতে ব্যভিচার ও অশ্লীল কাজের ক্ষতি সম্পর্কে যখন কোন মানুষ চিন্তা করবে তখন সে অবশ্যই জানতে পারবে কু-আসক্তি ও নিষিদ্ধ কাজের পিছনে দৌড়ার ক্ষতি কি?
পবিত্র লোকদের ঘটনা
ইতিহাসের পাতায় আমরা এমন অনেক লোককে দেখতে পাই যারা দুনিয়া থেকে বিদায় নিলেও তাদের পবিত্রতা ও চারিত্রিক গুণাবলির কারণে তাদের আলোচনা আমরণ চলতে থাকবে। তারা মরেও আমাদের মধ্যে জীবিত। তারা আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের সন্তুষ্টি লাভের জন্য তাদের নিজেদের কু-আসক্তি হতে নিজেদের বিরত রাখেন। ফলে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাদের আলোচনা চিরন্তন করেন এবং তাদের জীবনীকে আমাদের মধ্যে সমুন্নত রাখেন।
নিম্নে তাদের কয়েক জনের কাহিনী আলোচনা করা হল:
এক. ইউসুফ আ. এর ঘটনা:
পৃথিবীর ইতিহাসে নারী ও পুরুষের মাঝে সবচেয়ে বড় ফিতনা সংঘটিত হয় মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সম্মানিত নবী ইউসুফ আ. কে কেন্দ্র করে। ইউসুফ আ. কে বাদশাহ তার রাজ প্রাসাদে আশ্রয় দেয়। সেখানে ইউসুফ আ. অগ্নি পরিক্ষার সম্মূখীন হন। বাদশাহর স্ত্রী ইউসুফ আ. এর সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে তার প্রেমে পড়ে যায়। তার সাথে অপকর্ম করতে ইউসুফ আ. কে বাধ্য করে এবং তার জন্য যাবতীয় উপকরণগুলো একত্র করে। যেমন, মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তার মহান কিতাব কুরআনে কারীমে তা উল্লেখ করে বলেন,
﴿وَرَٰوَدَتۡهُ ٱلَّتِي هُوَ فِي بَيۡتِهَا عَن نَّفۡسِهِۦ وَغَلَّقَتِ ٱلۡأَبۡوَٰبَ وَقَالَتۡ هَيۡتَ لَكَۚ قَالَ مَعَاذَ ٱللَّهِۖ إِنَّهُۥ رَبِّيٓ أَحۡسَنَ مَثۡوَايَۖ إِنَّهُۥ لَا يُفۡلِحُ ٱلظَّٰلِمُونَ ٢٣ ﴾ [ سورة يوسف : 23[.
আর যে মহিলার ঘরে সে ছিল, সে তাকে কুপ্ররোচনা দিল এবং দরজাগুলো বন্ধ করে দিল আর বলল, ‘এসো’। সে বলল, আল্লাহর আশ্রয় (চাই)। নিশ্চয় তিনি আমার মনিব, তিনি আমার থাকার সুন্দর ব্যবস্থা করেছেন। নিশ্চয় যালিমগণ সফল হয় না। [সূরা ইউসুফ, আয়াত: ২৩]
বিষয়টি এখানেই শেষ হয়নি। বরং এ কথা বলার পরও তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের ষড়যন্ত্র চলতে থাকে। তার সাথে কামভাব পূরণ করার লক্ষে মহিলাটি তাকে তার দিকে আহ্বান করে। ইউসুফ আ. নিরুপায় হয়ে তার থেকে পালিয়ে দৌড়ে দরজার সামনে চলে আসে। তখন মহিলাটি পিছন থেকে তার জামা টেনে ধরে পিছন দিক থেকে তার জামাটি ছিঁড়ে ফেলে। মহিলার স্বামী আজিজে মিসর তাদের দেখে ফেললে মহিলাটি ইউসূফ আ. এর বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ দেয়। মহিলাটি তার সাথে অপকর্ম করতে জোর জবরদস্তি করতে থাকে। কিন্তু ইউসূফ আ. এতে রাজি না হলে তাকে বিনিময়ে জেলখানায় যাওয়ার প্রস্তাব দেয়। কিন্তু ইউসূফ আ. তার সাথে অশ্লীল কাজ করতে অস্বীকার করেন এবং জেলখানায় যেতে সম্মত হন। সে হারাম কাজ করার চেয়ে জেলখানায় জুলুম, নির্যাতন ও বিভিন্ন ধরনের কষ্ট সহ্য করতে সম্মত হন।
এ ঘটনা বিষয়ে চিন্তা করলে অবশ্যই স্পষ্ট হবে যে, আল্লাহর নবী ইউসুফ আ. এর জন্য অপকর্মের যাবতীয় সব ধরনের উপকরণ সহজ হাজির ছিল। ইচ্ছা করলে সে তা করতে পারত। কারণ, তিনি ছিলেন একজন অবিবাহিত যুবক, স্বীয় আসক্তিকে ব্যয় করার মত কোন ক্ষেত্র ছিল না। আর সে ছিল একজন গোলাম তার আত্ম-মর্যাদা বা সম্মানহানির তেমন কোন ভয় ছিল না, যেমনটি একজন স্বাধীন বা মুনিবের ভয় থাকে।
আর অপরদিকে যে নারী তাকে অপকর্মের প্রতি আহ্বান করছে, সে ছিল একজন সুন্দরী রমণী ও ক্ষমতাধর নারী। সে ইউসুফ আ. এর মনিব আর ইউসুফ আ. হল তার হুকুমের গোলাম বা চাকর। তিনি যা আদেশ দেবেন বা নিষেধ করবেন তা পালন করতে সে বাধ্য। খাদেম হওয়ার কারণে তার ঘরে প্রবেশ করা ইউসুফ আ. এর জন্য কোন বাধা ছিল না। যখন ইচ্ছা সে ঘরে প্রবেশ করতে পারত। তার স্বামী বাড়ি থাকত না। মহিলার স্বামীর আত্ম-মর্যাদাবোধ ছিল খুবই কম। যখন সে ঘটনা জানতে পারল সে আশানুরূপ কোন ব্যবস্থা ইউসুফ আ. ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে নেয়নি। বরং সে ইউসুফ আ. কে বলল, হে ইউসুফ তুমি বিরত থাক, আর তার স্ত্রীকে বলল, তুমি আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর। তাকে যেভাবে ব্যভিচারের দাওয়াত দেয়া হয়েছে, তাতে তাদের মাঝে কোন প্রতিবন্ধকতা ছিল না। এমনকি ক্ষমতাধর নারীটি তার সাথে অপকর্ম না করলে তাকে জেল খানায় পাঠানোর হুমকি দেয়। এত কিছুর পরও তিনি ধৈর্য ধারণ করেন। আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের মজবুত রশিকে আঁকড়ে ধরেন এবং স্বীয় প্রভু ও মাওলার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করেন।
চিন্তা করে দেখ, তিনি তার নফসকে কিভাবে দমিয়ে রাখলেন? মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এর বিনিময় তাকে উচ্চ মর্যাদা ও সম্মানের অধিকারী করেন। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাকে তার খালেস বান্দা হিসেবে নির্বাচন করেন এবং মুহসীন ও মুখলিসদের অন্তর্ভুক্ত করেন।
ইউসূফ আ. এর ধৈর্য ধারণ করার কারণ :
প্রথমত: আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের ভয়। ইউসূফ আ. এর অন্তরে ছিল আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের ভয়। তাই তিনি নফসের পূজা থেকে বেঁচে যান।
দ্বিতীয়ত: তার প্রতি আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের সাহায্য ও তাওফীক। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন,
﴿وَلَقَدۡ هَمَّتۡ بِهِۦۖ وَهَمَّ بِهَا لَوۡلَآ أَن رَّءَا بُرۡهَٰنَ رَبِّهِۦۚ كَذَٰلِكَ لِنَصۡرِفَ عَنۡهُ ٱلسُّوٓءَ وَٱلۡفَحۡشَآءَۚ إِنَّهُۥ مِنۡ عِبَادِنَا ٱلۡمُخۡلَصِينَ ٢٤ ﴾ [ سورة يوسف : 24[.
আর সে মহিলা তার প্রতি আসক্ত হল, আর সেও তার প্রতি আসক্ত হত, যদি না তার রবের স্পষ্ট প্রমাণ প্রত্যক্ষ করত। এভাবেই, যাতে আমি তার থেকে অনিষ্ট ও অশ্লীলতা দূর করে দেই। নিশ্চয় সে আমার খালেস বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত। [সূরা ইউসুফ, আয়াত: ২৪]
তৃতীয়ত: আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের নাফরমানির কারণ হতে পলায়ন করা।
ইউছফ আ. বলেন, ‘আমি আল্লাহকে ভয় করি’ এ কথা বলে ঘরে বসে থাকেন নি। বরং তিনি এ কথা বলে সাথে সাথে দৌড় দিয়ে পালাতে এবং ঘর থেকে বের হতে চেষ্টা করেন।
গুনাহের স্থান ত্যাগ করা মানুষকে গুনাহ হতে নাজাত দেয় এবং কু-আসক্তি থেকে হেফাজত করে। আর গুনাহের স্থানে অবস্থান করা মানুষকে গুনাহের প্রতি আকৃষ্ট করে এবং গুনাহের উৎসাহ প্রধান করে। সুতরাং তোমরা যদি নাজাত পেতে চাও তবে তোমরা গুনাহের স্থান ত্যাগ কর।
চতুর্থত: আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের নিকট সাহায্য প্রার্থনা করা: মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন,
﴿قَالَ رَبِّ ٱلسِّجۡنُ أَحَبُّ إِلَيَّ مِمَّا يَدۡعُونَنِيٓ إِلَيۡهِۖ وَإِلَّا تَصۡرِفۡ عَنِّي كَيۡدَهُنَّ أَصۡبُ إِلَيۡهِنَّ وَأَكُن مِّنَ ٱلۡجَٰهِلِينَ ٣٣ ﴾ [ سورة يوسف : 33[.
সে (ইউসুফ) বলল, ‘হে আমার রব, তারা আমাকে যে কাজের প্রতি আহ্বান করছে তা থেকে কারাগারই আমার নিকট অধিক প্রিয়। আর যদি আপনি আমার থেকে তাদের চক্রান্ত প্রতিহত না করেন তবে আমি তাদের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ব এবং আমি মূর্খদের অন্তর্ভুক্ত হব’। [সূরা ইউসুফ, আয়াত: ৩৩]
পঞ্চমত: ইউসুফ আ. দ্বীনদার ও মুত্তাকী হওয়া:
মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন,
﴿إِنَّهُۥ مِنۡ عِبَادِنَا ٱلۡمُخۡلَصِينَ ﴾ [ سورة يوسف : 24[.
“নিশ্চয় সে আমার খালেস বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত।” [সূরা ইউসুফ, আয়াত: ২৪]
ষষ্ঠ: কু-প্রবৃত্তি ও খারাপ কামনার উপর দুনিয়ার শাস্তিকে প্রাধান্য দেয়া:
﴿ قَالَ رَبِّ ٱلسِّجۡنُ أَحَبُّ إِلَيَّ مِمَّا يَدۡعُونَنِيٓ إِلَيۡهِۖ ﴾ [يوسف: ٣٣]
“তিনি বলেছিলেন, হে আমার রব! তারা যে দিকে আমাকে আহ্বান করছে তা থেকে জেল আমার কাছে অধিক প্রিয়”। [সূরা ইউসুফ, আয়াত: ৩৩]
এ ঘটনার মধ্যে বিভিন্ন উপদেশ ও নসিহত রয়েছে যেগুলো একজন মুসলিমের জন্য পালন করা খুবই জরুরি। বিশেষ করে যুবকদের জন্য এ ঘটনা থেকে উপদেশ গ্রহণ করা ও এ ঘটনার শিক্ষণীয় বিষয়গুলো হতে উপকৃত হওয়া অত্যন্ত জরুরী। একজন যুবক যখন এ ঘটনাটি পড়বে তখন যেন শুধু তা জানা ও আবিষ্কার করার মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে শিক্ষালাভ ও উপকৃত হওয়ার মানসিকতা নিয়ে পাঠ করে।
বিশিষ্ট আবেদ জুরাইজের ঘটনা:
আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« كَانَ جُرَيْجٌ فِي صَوْمَعَتِهِ، فَقَالَتِ امْرَأَةٌ: لَأَفْتِنَنَّ جُرَيْجاً. فَتَعَرَّضتْ لَهُ فَكَلَّمَتْهُ، فَأَبَى، فَأَتَتْ رَاعِيا فَأمَكَنتَهُْ مِنْ نَفْسِهَا، فَوَلدََتْ غُلَاما،ً فَقَالتَْ: هُوَ مِنْ جُرَيْجٍ. فَأتَوْهُ وَكَسَرُوا صَوْمَعَتهَُ، فَأنْزَلوُهُ وَسَبوُّهُ، فَتوََضأ وَصَلَّى، ثُمَّ أَتَى الغُلَامَ فَقَالَ: مَنْ أَبُوكَ يَا غُلَامُ؟ قَالَ الرَّاعِي »
“যুরাইয তার স্বীয় গির্জায় সর্বদা আল্লাহর ইবাদতে মগ্ন ছিল। তখন একজন মহিলা বলল, আমি যুরাইযকে ফিতনায় ফেলব। তারপর সে তার সাথে গিয়ে কথা বলতে চাইলে সে তার সাথে কথা বলতে অস্বীকার করে। তারপর সে একজন রাখালের নিকট গেলে মহিলাটি তাকে তার সাথে অপকর্ম করার সুযোগ দেয়। তারপর মহিলাটি একটি পুত্র সন্তান প্রসব করে বলল, এ জুরাইজের সন্তান। এ কথা শোনে লোকেরা তার উপর চড়াও হল এবং তার গির্জাকে ভেঙে চুরমার করে ফেলল। তারা তাকে তার ইবাদত-গাহ হতে বের করে দিল এবং গালি-গালাজ করল। নিরুপায় হয়ে জুরাইজ ওযু করল এবং সালাত আদায় করল। তারপর সে বাচ্চাটিকে জিজ্ঞাসা করল তোমার পিতা কে? উত্তরে সে বলল, রাখাল”।
এখানে লক্ষ্য করে দেখ, মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন জুরাইজের সম্মান ও মর্যাদাকে সমুন্নত রাখতে কিভাবে গোলামটিকে কথা বলার শক্তি দান করেন! কারণ সব ধরনের সুযোগ থাকা সত্ত্বেও কেবল আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের ভয়ে সে ঐ মহিলাকে ছেড়ে দেয়।
রবী‘ ইবন খুসাইমের ঘটনা:
রবী ইবন খুসাইমের গোত্রের লোকেরা এক অতি সুন্দরী নারীকে রবীর নিকট গিয়ে নিজেকে পেশ করতে বাধ্য করে; যাতে সে তাকে ফিতনার মধ্যে ফেলে। আর তারা বলল, যদি তুমি এ কাজে সফল হও, আমরা তোমাকে এক হাজার দেরহাম দেব।
এ ঘটনা থেকে আমরা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় শিখতে পারি, তা হল, মানুষের মধ্য থেকে কতক শয়তান মানুষ আছে, যারা সৎ লোকের সততাকে নষ্ট করার জন্য টাকা পয়সা ব্যয় করতে সর্বদা প্রস্তুত থাকে। তাদের উদ্দেশ্য হল, দ্বীনের বিরোধিতা করা এবং ইসলামের দাওয়াতের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা।
তাদের প্রস্তাব অনুযায়ী মহিলাটি তার সাধ্যানুযায়ী নতুন ও সুন্দর কাপড় পরিধান করল এবং খুব সাজ-সজ্জা ও সুগন্ধি মাখল। তারপর যখন লোকটি মসজিদ থেকে সালাত আদায় করে বের হল, তখন মহিলাটি তার সামনে এসে দাঁড়াল। রবী‘ তার দিকে তাকাল এবং মহিলার অবস্থাটি তাকে আতঙ্কে ফেলল। তারপর মহিলাটি তার সামনে দিয়ে হাঁটছিল।
রবী‘ তাকে ডেকে বলল, যদি তোমার শরীরে জ্বরা রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটে এবং তোমার এ সৌন্দর্য ও রূপ বিকৃত করে দেয়া হয়, তখন কেমন হবে?
অথবা এ মুহূর্তে মালাকুল মাওত এসে তোমার প্রাণটি নিয়ে যায়, তাহলে কেমন হবে?
অথবা যদি মুনকার নকীর ফেরেশতা এসে তোমাকে জিজ্ঞাসা করে তখন তোমার উত্তর কি হবে?
এ সব কথা শোনে সে মহিলাটি একটি বিকট আওয়াজ করল, তারপর বেহুশ হয়ে মাটিতে পড়ে গেল।
তারপর সে তার পুরো জীবনকে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের ইবাদত বন্দেগীতে কাটিয়ে দেয়। আর যে দিন সে মারা যায় সে একটি অগ্নিদগ্ধ ছাগলের মত হয়ে যায়[47]।
সুরাই ইবন দীনার রহ. এর ঘটনা:
একবার সুরাই ইবন দীনার মিসর শহরে গিয়ে পৌঁছল। তখন এ শহরে একজন নামকরা সুন্দরী মহিলা ছিল। শহরের লোকেরা তার সৌন্দর্য ও রূপের কারণে ফিতনার মুখোমুখি হত এবং বিভিন্ন ধরনের সমস্যায় পড়ত। বিষয়টি মহিলা জানতে পেরে বলল, আমি সুরাই ইবন দিনারকে ফিতনায় ফেলব। তারপর সে তার সন্ধান করে তার বাড়িতে গেল। তার ঘরের দরজা দিয়ে প্রবেশ করার সময় সে তার সৌন্দর্য প্রকাশ করল এবং শরীরের কাপড়-চোপড় খুলে ফেলল। মহিলাটির অবস্থা দেখে তাকে জিজ্ঞাসা করল, তুমি কি চাও? তখন সে বলল, তোমার মধ্যে আমার প্রতি কোন আগ্রহ আছে কি? তখন সে উত্তরে বলল,
وََكْم ذي مَعاصٍ نَالَ مِنْهُنَّ لَذَّةً
وَمَاتَ فَخَلَّاهَا وَذَاقَ الدَّوَاهِيَا
تَصرم لَذاتُ المَعَاصِي وَتَنقَضِي
وَتَبْقَى تِبَاعَاتُ المَعَاصِي كَمَا هِيَا
فَيا سَوْأتَا والله رَاءٍ وَسَامِعٌ
لِعَبْدٍ بِعَيْنِ الله يَغْشَى المَعَاصِيَا
অনেক অপকর্মকারী নারীদের থেকে কতই না মজা উপভোগ করেছেন। কিন্তু যখন মারা যায় তখন সে তাকে রেখেই যায়। আর কঠিন আযাবে আক্রান্ত হয়। গুণাহের মজা বা স্বাদ অচিরেই শেষ হয়ে যায়। তবে গুণাহের পরিণতি পূর্বের মতই বাকী থাকে। হায় দুঃখ সে বান্দার জন্য! আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাকে দেখে এবং শোনে, কিন্তু সে আল্লাহর সামনেই গুনাহের কাজে লিপ্ত হয়।[48]
আবু বকর আল-মিসকি রহ. এর ঘটনা:
আল্লামা ইবনুল জাওযী রহ. বলেন, আবু বকর আল মিসকি রহ. কে জিজ্ঞাসা করা হল, আমরা সব সময় তোমার শরীর থেকে মিশকের সুঘ্রাণ অনুভব করি এর কারণ কি? তখন সে বলল, আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের শপথ করে বলছি, সুদীর্ঘ অনেক বছর পর্যন্ত আমি কোন মিশক ব্যবহার করিনি। কিন্তু এর কারণ হল, একজন নারী আমার সাথে ধোঁকাবাজি করে, আমাকে তার ঘরে নিয়ে যায়। আমাকে তার ঘরে প্রবেশ করিয়ে সে তার ঘরের সব দরজা জানালা বন্ধ করে দেয়। তারপর সে আমাকে তার সাথে অপকর্ম করার জন্য প্রলোভন দেয়। আমি তার অবস্থা দেখে কি করব, তা নিয়ে ভীষণ চিন্তায় পড়ি। তারপর আল্লাহর অপার অনুগ্রহে আমি মহিলার সব ষড়যন্ত্র বানচাল করে দেই। আমি তাকে বললাম, আমি একটু বাথরুমে যাব। তারপর সে তার এক বাঁদিকে নির্দেশ দিলে সে আমাকে বাথরুমে নিয়ে গেল। আমি বাথ রুমে প্রবেশ করে, সেখান থেকে কিছু পায়খানা ও ময়লা আবর্জনা নিয়ে আমার পুরো শরীরে মাখাই। তারপর আমি এ অবস্থায় মহিলাটির নিকট ফিরে আসি। আমার অবস্থা দেখে মহিলাটি অবাক হয়ে গেল। তারপর সে আমাকে ঘর থেকে বাহির করে দেয়ার নির্দেশ দিল। আমি সেখান থেকে চলে আসলাম এবং গোসল করে নিলাম।
তারপর ঐ দিন রাতে আমি যখন ঘুমালাম তখন স্বপ্নে দেখতে পেলাম এক লোক আমাকে বলছে, তুমি এমন একটি কাজ করছ, যা তুমি ছাড়া আর কেউ কোন দিন করে নি। আমি তোমার দেহকে মিশকের ঘ্রাণ দ্বারা সুগন্ধযুক্ত করে দেব। দুনিয়া ও আখিরাত উভয় জাহানে তোমার সুঘ্রাণ মানুষ পেতে থাকবে। তারপর থেকে আজ পর্যন্ত আমার শরীর থেকে মিশকের ঘ্রাণ বের হতে থাকে[49]।
নারীদের কাহিনী:
ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু তার খিলাফতের আমলে মুসলিমদের ঘরে ঘরে তাদের অবস্থা সম্পর্কে জানার জন্য ঘুরে বেড়াত। তখন সে একজন মহিলাকে বলতে শুনল, সে বলতেছে-
تطاول هذا الليل وَاسْوَدَّ جانبه
وأرقني إذ لا حبيب ألاعبه
فلولا الذي فوق السموات عرشه
لزعزع من هذا السرِيرِ جوانبه
“আজকের রাতটি অনেক দীর্ঘ ও গভীর অন্ধকার। আর আমার ঘুম দূর হয়েছে এ কারণে যে, এখানে আমার কোন বন্ধু নাই যার সাথে খেলাধুলা করে রাত যাপন করব। যদি সে সত্তা না থাকত, যার আরশ আসমানের উপর। তাহলে এ খাটের আশপাশ ওলট পালট হয়ে যেত”।
পরদিন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু সকাল বেলা মহিলাটি তার দরবারে ডেকে নিয়ে আসার জন্য লোক পাঠালেন। ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু তাকে জিজ্ঞাসা করল এ ধরনের কথাগুলো তুমি বলছিলে? তখন সে বলল, হা, তখন তাকে জিজ্ঞাসা করা হল, তুমি এ কথাগুলো কেন বললে, তখন সে বলল, আমি আমার স্বামীকে এক যুদ্ধে পাঠাই। তারপর ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু হাফসা রাদিয়াল্লাহু আনহার নিকট গিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, মহিলারা স্বামী ছাড়া কতদিন ধৈর্য ধারণ করে থাকতে পারে। তখন সে বলল, ছয় মাস। তারপর থেকে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু ছয় মাস পর সৈন্যদলকে বাড়ীতে ফেরত পাঠাতেন[50]।
আসক্তির গহ্বরে পড়ে যারা নিজেদের পতনকে নিশ্চিত করেছে তাদের কিছু ঘটনা
উপরে আমরা কতক ধৈর্যশীলদের কথা উল্লেখ করি, যারা তাদের আসক্তির চাহিদার উপর ধৈর্যধারণ করে ইতিহাসের পাতায় স্থান করে নেয় এবং পরবর্তী প্রজন্মের জন্য আদর্শ ও অনুকরণীয় হয়ে থাকে। কিন্তু তাদের বিপরীতে এমন কতক লোক আছে যারা তাদের আসক্তির চাহিদার কাছে হার মানে এবং আল্লাহ আযাব ও গজবের অংশীদার হয়।
আবদুহ ইবন আব্দুর রহীম (আল্লাহ লোকটির দুর্নাম জিইয়ে রাখুন) ২৭৮ হিজরিতে মারা যায়। এ কমবখত লোকটি একজন মুসলিম মুজাহিদ ছিল, মুসলিমদের পক্ষ নিয়ে রোমানদের সাথে একাধিক যুদ্ধে সে অংশ গ্রহণ করে। কোন এক যুদ্ধে মুসলিম সৈন্যরা রুমের একটি শহরকে ঘেরাও করে ফেললে তখন লোকটি ঐ দুর্গে রোমানদের একজন সুন্দরী মহিলা দেখতে পেল। তাকে দেখে সে তার প্রেমে পড়ল। তার নিকট সে বার্তা পাঠাল যে, তোমার নিকট পৌছার উপায় কি? তখন সে তাকে বলল, তুমি নাসারা বা খৃষ্টান হয়ে যাও আমার নিকট চলে আস।
লোকটি তার প্রস্তাবে সম্মতি জ্ঞাপন করল এবং মুসলিমদের স্বার্থের বিরুদ্ধে কাজ করল। সে ঐ মহিলার নিকট অবস্থান করল। এ ঘটনার ফলে মুসলিমরা খুব চিন্তিত হল এবং তারা খুব কষ্ট পেল। অনেক দিন পর মুসলিমরা ঐ দুর্গ দিয়ে অতিক্রম করলে তারা দেখতে পেল লোকটি ঐ মহিলার সাথেই আছে। তখন তারা জিজ্ঞাসা করল, তোমার কুরআনের কি অবস্থা? তোমার ইলমের কি অবস্থা? তোমার সালাতের অবস্থা কি? তোমার জিহাদের কি অবস্থা? এবং তোমার সিয়ামের কি অবস্থা?
তখন সে বলল, আমি সমগ্র কুরআন ভুলে গেছি কেবল আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের এ বাণী ছাড়া: মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন,
﴿رُّبَمَا يَوَدُّ ٱلَّذِينَ كَفَرُواْ لَوۡ كَانُواْ مُسۡلِمِينَ ٢ ذَرۡهُمۡ يَأۡكُلُواْ وَيَتَمَتَّعُواْ وَيُلۡهِهِمُ ٱلۡأَمَلُۖ فَسَوۡفَ يَعۡلَمُونَ ٣ ﴾ [ سورة الحجر : 2-3[.
“যারা কুফরী করেছে, তারা একসময় কামনা করবে যদি তারা মুসলমান হত! তাদেরকে ছেড়ে দাও, আহারে ও ভোগে তারা মত্ত থাকুক এবং আশা তাদেরকে গাফেল করে রাখুক, আর অচিরেই তারা জানতে পারবে।” [সূরা আল-হিজর, আয়াত: ২-৩][51]
- বর্ণিত আছে মিসরের একজন লোক সে মসজিদে পাঁচওয়াক্ত সালাতের আযান দিত এবং সব সময় মসজিদে অবস্থান করত। সে সর্বদা আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের আদেশের আনুগত্য করত এবং তার চেহারা আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের ইবাদতের কারণে নুরের আলোতে ছিল পরিপূর্ণ। একদিন সে তার রুটিন মোতাবেক আযান দেয়ার জন্য মিনারে উঠল। মিনারের নিচে খৃস্টানদের একটি বাড়ি ছিল। লোকটি বাড়িটির দিকে তাকিয়ে বাড়ি ওয়ালার একজন মেয়েকে দেখতে পেল। তাকে দেখে লোকটির মনে তার প্রতি ভালোবাসা জন্মিল। তারপর সে আযান না দিয়ে মিনার থেকে নেমে তার ঘরে প্রবেশ করল। তাকে দেখে মেয়েটি বলল, তোমার কি হয়েছে? তুমি কি চাও? সে বলল, আমি তোমাকে চাই! সে বলল, কেন? বলল, তুমি আমার ভালোবাসা কেড়ে নিলে এবং আমার অন্তর ভালোবাসার আগুন জালিয়ে দিলে। মেয়েটি বলল, আমি কখনোই তোমার আহ্বানে সাড়া দিব না। সে বলল, আমি তোমাকে বিবাহ করব। মেয়েটি বলল, তুমি একজন মুসলিম আর আমি খৃষ্টান। আমার পিতা আমাকে তোমার নিকট বিবাহ দেবে না। তখন সে বলল, আমি তাহলে খৃষ্টান হয়ে যাব। সে বলল, যদি তুমি তা কর তবে আমি তোমার সাথে বিবাহ করতে রাজি আছি। তারপর লোকটি ঐ মেয়েকে বিবাহ করার উদ্দেশ্যে খৃস্টান হয়ে গেল এবং তাদের সাথে তাদের ঘরেই অবস্থান করল। পরদিন লোকটি ঐ বাড়ির ছাদের উপর উঠলে ছাদ থেকে পড়ে মারা গেল। তারপর সে ঐ মেয়েকেও পেল না, আর নিজের দ্বীনকেও বরবাদ করল[52]।
আমরা আল্লাহ রাব্বুল নিকট তাঁর দ্বীনের উপর অবিচল থাকা কামনা করি।
পরিশিষ্ট
কু-আসক্তি বিষয়ে যে আলোচনা তুলে ধরা হল, তাতে শুধু যুবক-যুবতী কিংবা খারাপ প্রকৃতির লোকেরা আক্রান্ত হয় তা ঠিক নয়। বরং অনেক সময় দেখা যায়, যারা ভালো ও সৎলোক বলে পরিচিত এবং যারা উন্নত ও স্বাভাবিক জীবন যাপন করে তারাও আসক্তির বেড়াজালে আক্রান্ত হয়ে পড়ে। এছাড়াও যারা মানুষকে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের দিকে আহ্বান করে, আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের দ্বীনের সত্যিকার ইলম অর্জনে সর্বদা নিয়োজিত থাকে, মানুষকে দীনি ইলম ও শরীয়তের মাসলা-মাসায়েল শিক্ষা দেয়, জন কল্যাণমুলক কাজের জন্য মানুষকে উদ্ভুদ্ধ করে এবং তারা মানুষকে কু-আসক্তি হতে দূরে থাকার জন্য বিভিন্ন ধরনের ওয়াজ নছিহত করে থাকে, তারাও দেখা যায় তাদের নফস বা কু-আসক্তির ধোঁকায় পড়ে যায়। বরং অনেক সময় দেখা যায় তাদের কু-আসক্তি ও নফসের চাহিদা অন্য খারাপ লোকদের তুলনায় আরও বেশি মারাত্মক আকার ধারণ করে। কিন্তু তারা তাদের কু-আসক্তি ও নফসের চাহিদাকে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের ভয়ে এবং আখিরাতের বিনিময় ও ছাওয়াব লাভের আশায় নিয়ন্ত্রণ করে এবং দমিয়ে রাখে।
সুতরাং এ দুনিয়ার অবস্থার প্রতি সূক্ষ্ম ও গভীরভাবে চিন্তা করলে, একজন ব্যক্তি এর কল্যাণ গ্রহণ করতে পারবে এবং দুনিয়ার অকল্যাণ হতে মুক্ত থাকতে পারবে। পক্ষান্তরে যে এর খারাপ পরিণতি দেখতে পাবে না ও এ সম্পর্কে সাবধান হবে না, তার উপর তার ইন্দ্রিয় প্রাধান্য পাবে, ফলে তা তার জন্য কষ্টের কারণ হবে এবং তাকে অজস্র জ্বালা যন্ত্রণা সহ্য করতে হবে।
মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের দরবারে আমাদের পরম চাওয়া হল, তিনি যেন আমাদেরকে হারাম হতে বিরত রাখেন এবং আমাদের মাঝে ও হারামের মাঝে নির্মাণ করেন বরযখ বা পর্দা, সুদৃঢ় প্রাচীর ও মজবুত প্রতিবন্ধক। আর আমাদেরকে তাদের অন্তর্ভুক্ত করেন, যারা যখন কোন ভুল বা অপরাধ করে, সাথে সাথে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করে। আর যখন তারা কোন ভালো কাজ করেন, তখন তারা খুশী হন। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের নিকট আমাদের আরও প্রার্থনা হল, তিনি যেন আমাদের আসক্তিকে তিনি যা পছন্দ করেন এবং যে সব কাজে সন্তুষ্ট হন সে কাজে ব্যবহার করতে পারি, সে তাওফীক দেন। আমীন
وصلى الله وسلم على نبينا محمد، وعلى آله وصحبه أجمعين.
মুহাম্মাদ সালেহ আল মুনাজ্জেদ
অনুশীলনী
তোমার সামনে দুই স্তরের প্রশ্ন পেশ করা হল। এক ধরনের প্রশ্ন যেগুলোর উত্তর তুমি সাথে সাথে দিতে পারবে। আর এক ধরনের উত্তর তুমি সাথে সাথে দিতে পারবে না, বরং তোমাকে একটু চিন্তাভাবনা করে উত্তর দিতে হবে।
প্রথম স্তরের প্রশ্ন:
১. আসক্তি দ্বারা কি বোঝানো হয়েছে?
২ নিষিদ্ধ আসক্তির প্রতি মানুষকে ধাবিত করার তিনটি কারণ উল্লেখ কর।
৩. চক্ষুকে অবনত করার অনেক উপকার আছে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি আলোচনা কর।
৪. নিষিদ্ধ আসক্তির চিকিৎসা কি?
দ্বিতীয় ধরনের প্রশ্ন:
আসক্তিকে কেন সৃষ্টি করেছেন?
যখন তোমরা কু-আসক্তি ও নিষিদ্ধ বিষয়ের মুখোমুখি হও তখন তোমাদের করণীয় কি?
কেন চোখের হেফাজতকে লজ্জা-স্থানের হেফাজতের পূর্বে উল্লেখ করা হল?
আজিজে মিসরের স্ত্রীর সাথে সংঘটিত ইউসূফ আ. এর ঘটনা থেকে আমরা কি শিখতে পারি?
সূচীপত্র
আসক্তির সংজ্ঞা
আসক্তিকে কেন সৃষ্টি করা হল?
যে সব কারণে মানুষ নফসের ধোকায় পড়ে
আসক্তির সাথে কি আচরণ করব?
আসক্তির চিকিৎসা
পবিত্র লোকদের কাহিনী
প্রদস্খলন যাদের হয় তাদের ঘটনা
আসক্তির পিছনে পড়ে যারা নিজেদের পতনকে নিশ্চিত করে তাদের ঘটনা:
পরিশিষ্ট
অনুশীলনী
_______________________________________________________________________________________
[1] আল-ইস্তেকামাহ ৩৪১-৩৪২/১
[2] হুলিয়াতুল আওলিয়া ২/৩৬৫, জাম্মুল হাওয়া ২২
[3] বুখারি ৫০৩৬ মুসলিম ২৭৪০
[4] মুসলিম ২৭৪২
[5] আবু দাউদ ৪৭৩৩, তিরমিযি ২৩৭৮, আল্লামা আলবানি হাদিসটিকে হাসান বলে আখ্যায়িত করেন।
[6] তিরমিযি ১৯৭৭ আল্লামা আলবানি হাদিসটিকে হাসান বলে আখ্যায়িত করেন।
[7][7] বুখারি ৬৪১২
[8] বুখারি ২৪৬৫, মুসলিম ২১২১; তবে শব্দটি মুসলিমের।
[9] বুখারি ৬৬০, মুসলিম ১০৩১
[10] বুখারি ২২৭২
[11] আল-জাওয়াবুল কাফী (১০৬)।
[12] আল-জাওয়াবুল কাফী (১০৬-১০৭)
[13] বুখারি ৬২৫৭ মুসলিম ২৬৫৭
[14] যাম্মুল হাওয়া (৯৪)
[15] তুহফাতুল আহওয়াযী (৮/৪৯)।
[16] আবু দাউদি ২১৪৯ ও তিরমিযি ২৭৭৭।
[17] ইমাম আহমদ ২২২৫১ আলবানী রহ হাসান বলে মন্তব্য করেছেন।
[18] মুসলিম : ১৩২
[19] আবু দাউদ: ৫১১২; শু‘আইব আরনাউত সহীহ বলেছেন।
[20] ইবনুল কাইয়্যেম, আল-ফাওয়ায়েদ: ১৭৬।
[21] আল-ফাওয়ায়েদ: ৩১।
[22] মুসলিম ১৪০০
[23] মুসলিম ১৪০১
[24] ইবনে মাজা ১৮৪৬। আল্লামা আলবানী রহ. হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।
[25] ইহইয়াউ উলুমিদ্দীন ২/২৩
[26] তারিখু দিমাশক ৫০/১২৩; যাম্মুল হাওয়া ১৯৩।
[27] ইহইয়াউ উলুমিদ্দীন ২/২৩
[28] মুস্তাদরাকে হাকেম ২৬৮১ এবং হাকেম তা সহীহ বলেছেন, আর যাহাবী তার সাথে ঐকমত্য পোষণ করেছেন।
[29] ফায়যুল কাদীর ৬/১৭৭।
[30] কুরতুবী ৪/২৯।
[31] মুসলিম ১০০৬
[32] শারহুন নববী আলা মুসলিম ৭/৯২।
[33] মুকাতাব সে দাসকে বলা হয়; যে তার মনিবকে কিছু সম্পদ দেয়ার বিনিময়ে স্বাধীন হবে বলে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে। [মু‘জামু লুগাতিল ফুকাহা ১/৪৫৫]
[34] তিরমিযি ১৬৫৫।
[35] বুখারি ১৯০৫, মুসলিম ১৪০০
[36] ইবনুল কাইয়্যেম, রাওদাতুল মুহিব্বীন ২১৯।
[37] বুখারী: ৭৪৯২।
[38] তাফসীরুল কুরতুবী: ২/২৭৫।
[39] মুসলিম: ১৪০৩।
[40] তিরমিযি ১১৫৮; আল্লামা আলবানী রহ. হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।
[41] আহমদ ১৮৫৬৭; আল্লামা আলবানী রহ. হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।
[42] শারহুন নববী আলা মুসলিম: ৯/১৭৮।
[43] তিরমিযি ৩৫৭৩ আল্লামা আলবানী রহ. হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।
[44] আবু দাউদ ১৫৫১ তিরমিযি ৩৪৯২ নাসায়ী ৫৪৫৬ হাকেম হাদীসটি সহীহ বলে মন্তব্য করেছেন।
[45] মুসলিম ২৭২১
[46] নফহুত তীব মিন গুসনিল উন্দুলুসির রাতীব ৬/১৭৭।
[47] সিফাতুস সাফওয়া ৩/১৯১।
[48] যাম্মুল হাওয়া ২৫৩; রাওদাতুল মুহিব্বীন, ৩৩৯।
[49] আল-মাওয়ায়েয ওয়াল মাজালিস ২২৪।
[50] মুসান্নাফে আবদির রাযযাক ৭/১৫২; সুনানুল বাইহাকী ৯/২৯।
[51] আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া ১১/৭৪।
[52] আল-জাওয়াবুল কাফী: ১১৮।
_________________________________________________________________________________
সংকলন : মুহাম্মাদ সালেহ আল-মুনাজ্জেদ
অনুবাদক : জাকের উল্লাহ আবুল খায়ের
সম্পাদনা : ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া
সূত্র : ইসলাম প্রচার ব্যুরো, রাবওয়াহ, রিয়াদ, সৌদিআরব
আরও পড়ুনঃ অন্তর বিধ্বংসী বিষয়: দুনিয়ার মহব্বত
আরও পড়ুনঃ অন্তর-বিধ্বংসী বিষয়সমূহ : নিফাক
আরও পড়ুনঃ অন্তর-বিধ্বংসী বিষয়সমূহ : ঝগড়া-বিবাদ
আরও পড়ুনঃ অন্তরের আমল: দ্বীনদারি
পোস্টটি ভালো লাগলে শেয়ার করতে ভুলবেন না কিন্তু।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন